হিয়ার মাঝে
Season : 2
Part: 1
writer. moyej uddin
..................................
-দুই বছর আমার লগে প্রেম করিয়া। তুই নাকি ময়না আমায় করবি না বিয়া। আমি এ জ্বালা সইবো কেমন করে মইরা জামু যদি না পাই তরে...(আমি)
(রিমি রান্না করছিলো। সেখান থেকে দৌড়ে চলে এলো আর বলল)
-এই এই তুমি আমাকে বিয়ে করার আগে। কার সাথে প্রেম করছো??(রিমি)
-আরে না আমি এমনি গান গাইছিলাম পাগলি
-না কুত্তা তুই প্রেম করছিস
-আরে না কি বলো আমি প্রেম করি নাই
-আমি তোর কোনো কথা শুনবো না। তুই তোর ফোন আমি বাসায় একটা ফোন করবো।
-ফোন করে কি বলবে??
-তুই দে আগে ফোন টা
-এই যে না (মোবাইল টা ওর হাতে দিলাম)
-হ্যালো বাবা(রিমি ফোন করতে করতে আবার রান্না ঘরে চলে গেলো)
কি জন্য যে গান টা গাইলাম। কপালে বেশী সুখ থাকলে যা হয় আর কি। কি যে হবে এখন আল্লাই যানে
-এই ধর তোর ফোন বাবা আসছে (রিমি)
-মামা আসছে। ওহহ তাহলে তো ভালই(আমি)
-তোর ভালো না। আমি এই যে বাবার সাথে চলে যাবো। আর ফিরবো না তোর কাছে।
-কি করছি আমি??
-তুই বিয়ের আগে প্রেম করছিস
-না করি নাই
-না করলে হবে না। সত্যি কথা সব বেরিয়ে আসছে আজ। আর একটা কথা বলবি না তুই। আমার সাথে আয়। আর ব্যাগ টা গুছিয়ে দে।
কি আর করা। ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছি আর ওর কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করছি....
-না গেলে ভালো হতো(আমি)
-তোর মতো মানুষ এর কাছে আমি থাকবো না।(রিমি)
-আমি সত্যি প্রেম করি নি
-চোপপপ আর প্রেম সম্পর্কে একটা কথাও বলবি না তুই
হঠাৎ বাসার মধ্যে কারও সালাম এর আওয়াজ শুনলাম। মামা আসছে মনে হয়। তাই এগিয়ে গেলাম....
-আসসালামু আলাইকুম(আমি)
-ওয়াআলাই কুমুস সালাম (মামা)
-মামা কেমন আছেন???
-হ্যা ভালো তুমি কেমন আছো
-হুমমম ভালো
হঠাৎ রিমি এসে সালাম দিয়ে বাবার বুকে কান্না শুরু করে দিলো।
-আরে কান্না করছিস কেনো??(মামা)
-বাবা অনেক মিস করছিলাম তোমাকে।(রিমি)
-আরে পাগলি কান্না করে না। আমি তো এসে গেছি
দুজন অনেকক্ষণ ধরে কান্না করছিলো। দেখতে দেখতে কখন যে চোখে যে পানি এসে গেছে খেয়াল ই করি নাই। সেই পুরোনো কথা মনে পড়ে গেলো। যখন কোনো বন্ধুর সাথে ঝগড়া করে এসে মায়ের কোলে কান্না করতাম। রিমি তো ওর বাবার বুকে আছে। আর আমি! আমি তো....
-শুভ..(মামা)
-হ্যা মামা বলেন (চোখের পানি মুছে)
-আমি আজকেই কিন্তু রিয়া মা কে নিয়ে চলে যাবো।
-আচ্ছা।
-এই মামা কে ভেতরে নিয়ে বসতে দাও(আমি)
রিমি একটা ভেংচি কেটে মামা কে ভেতরে নিয়ে গেলো।
বিকেল বেলা....
-শুভ আমরা বিকেলের ট্রেনেই তাহলে ফিরবো(মামা)
-আজ থেকে যান
-না আজেকই ফিরবো বাবা(রিমি)
-আচ্ছা আমরা আজকেই যাই
আমি আর কিছু বললাম মা। শুধু মাথা নেরে হা উত্তর দিলাম
-আচ্ছা তুমিও আমাদের সাথে চলো(মামা)
-না বাবা ওর অফিস আছে। অফিস ছুটি হবে না এখন(রিমি)
-হ্যা মামা রিমি ঠিক বলেছে। তার থেকে ভালো আমি আপনাদের এগিয়ে দিয়ে আসি। (আমি)
-আচ্ছা ঠিক আছে।(মামা)
-রিমি তোমার ব্যাগ গোছানো হইছে??(আমি)
-হ্যা অনেক আগেই গুছিয়ে রাখছি
-হুমমম তাহলে দেড়ি না করে এখনি বেড়িয়ে পড়ি আবার ট্রেন ধরতে হবে।
-হুমম মামা চলেন
আমরা স্টেশনে পৌছেগেলাম। ট্রেন আসবে একটু পরেই। আজ অনেক ভিড়। বসার জায়গা টুকুও নেই। তিনজনই দাড়িয়ে আছি। আমি প্রথমে তারপর মামা তারপর রিমি দাড়িয়ে ছিলো। পাশঘুরে তার কাছে গিয়ে বললাম...
-এই যে টাকা গুলো রাখো(আমি)
-লাগবে না (রিমি)
-রাখো লাগবে(জোড় করেই হাতের মধ্যে দিলাম)
ট্রেন ইতেমধ্যে এসে স্টেশনে পৌছালো
ওনেক ভিড় মামা ট্রেনে উঠেছে কিন্তু রিমি উঠতে পারছে না। আমি ভালো ভাবে উঠিয়ে দওয়ার জন্য আমি ট্রেনে উঠলাম.....হঠাৎ
-সে কি ট্রেন তো ছেড়ে দিলো(রিমি)
-যাক ভালো হয়েছে। শুভ তাহলে আমাদের সাথে যেতে পারবে।
(রিমির দিকে তাকিয়ে দেখি রাগ ফুলতেছে। তখন আমি বললাম)
-না মামা আমি সামনের স্টেশনে নেমে। গাড়ি করে বাসায় পৌছে যাবো
-তবুও তুমও যাবে না??
-না মামা যাবো তো।
-হুহ
-চলেন এখন সিট খুঁজে বের করি।
-হুমম চলো
সিট খুঁজে মামা আর রিমি বসে আছে আর আমও দাড়িয়ে আছি। রিমি জানালার দিকে তাকিয়ে ছিলো। মুখ টা রাগে লাল হয়ে আছে। একটা সাধারন জিনিস কে বড় করে নিলো। বুঝাতেও পারলাম না।
।
ট্রেন এর গতি কমে আসলো। মনে হয় সামনেই স্টেশন...
-মামা আসি তাহলে। সামনে স্টেশন।(আমি)
-আচ্ছা দেখে যেয়ো(মামা)
-রিমি আসি তাহলে। বাসায় গিয়ে ফোন দিয়ো
-.......(কিছু বলল না। একবার শুধু তাকালো)
আমি সেখান থেকে চলে আসলাম দরজার কাছে। দাড়িয়ে আছি হঠাৎ কোত্থেকে একটা লোক এসে বলল।
-এই যে আপনার মেয়ে। আপনাকে কতক্ষণ ধরে খুঁজতেছিলাম। কোথায় গিয়েছিলেন। মেয়েকে দেখে রাখবেন। (এটা বলে একটা বাচ্চা মেয়েকে আমার কোলে দিয়ে চলে গেলো)
-এ এই যে ভাই(আমি)
সে দৌড়ে চলে গেলো বগির অন্য সাইডে....
ট্রেন স্টেশনে এসে থেমে গেছে...
আমি নেমে গেলাম। না নামলে আবার পরের স্টেশন টা অনেক দূরে। স্টেশনে নেমে দাড়িয়ে আছি... আর মেয়ে টাকে দেখছি। দেখে মনে হয় ২ বছর বয়স। একে নিয়ে এখন কি করি???
চিন্তায় মাথাটা শেষ। কার না কার মেয়ে। অনেক্ষন থাকলাম স্টেশনে। কেউ মেয়েটার খোঁজ করলো না। সন্ধ্যাও নেমে আসছে। মেয়েটাকে নিয়ে বাসার দিকে রওনা হলাম....
বাচ্চা মেয়ে কখনো লালন করি নি। আগে আমি আর মা যে বাসায় থাকতাম। ওখানে একটা কাকা ছিলো। রিমি আসার পর বাসা চেন্জ করছি। এখন তেমন পরিচিত কেউ নেই। একে লালন করা একটা যুদ্ধর মতো হয়ে যাবে। আবার অফিস ও আছে। কি যে হবে এবার আল্লাই জানে। যাই হোক ফেলে তো আর দেয়া যাবে না। একটা ভালো বিষয় হলো। মেয়েটা বাবা বলে বার বার ডাকছে.....মেয়েটাকে নিয়ে বাসায় ফিরলাম
বাসায় ফেরার পর দেখি মেয়েটা কান্না করছে। এতক্ষণ তো ভালো ভাবেই ছিলো....
অনেক থামানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু কাজ হলো না। হঠাৎ মনে হলো খুদা লাগছে মনে হয়।
ফ্রিজ এ দুধ ছিলো, সেটা গরম করে খাইয়ে দিলাম। এখন চুপচাপ। হুহ। মেয়েটা মাঝে মাঝে ডাকছে
-আব্ব বা বা আব্ব বা বা
শুনতে খুব ভালো লাগছিলো....
হিয়ার মাঝে
Season : 2
Part: 2
................................................
হঠাৎ মনে হলো খুদা লাগছে মনে হয়।
ফ্রিজ এ দুধ ছিলো, সেটা গরম করে খাইয়ে দিলাম। এখন চুপচাপ। হুহ। মেয়েটা মাঝে মাঝে ডাকছে
-আব্ব বা বা আব্ব বা বা
শুনতে খুব ভালো লাগছিলো....
হঠাৎ রিমি ফোন দিলো....
-হ্যালো(রিমি)
-হ্যা কখন গেছো???(আমি)
-কিছুক্ষণ আগে আসছি
-ওহহহ। এখন কি করো???
-ফ্রেস হবো
-হুমম ভালো
-আপনি রাতে খেয়েছেন??
-না
-তা খাবি কেন?? আমি বাসায় থাকতেও জ্বালাইছিস, এখন বাসায় নেই তাও জ্বালাচ্ছিস
-কই, কি করলাম
-তুই তাড়াতাড়ি খেয়ে নিবি। আমি ফ্রেস হয়ে ফোন দিচ্ছি
-আচ্ছা ঠিক আছে
-হুমমম
-শোনো শোনো একটা কথা
-কি কথা???
-আচ্ছা আগে ফ্রেস হয়ে নাও তারপর
-হুমম ঠিক আছে....
কিছুক্ষণ পর আবার ফোন দিলো
-হ্যালো(রিমি)
-হ্যা বলো(আমি)
-খেয়েছেন??
-হ্যা খেয়েছি। তুমি খাইছো??
-হুমমম।
-হুমমম
-কি যেনো বলতে চাইছিলেন বলেন এখন
-ওহহ হ্যা। বড় একটা কান্ড ঘটে গেছে..ট্রেনে যখন তোমাদের থেকে বিদায় নিয়ে গেটে এসে দাড়িয়ে আছি তখনই.......(পুরো ঘটনা বললাম)
-এহহ কি বলো??
-হ্যা সত্যি বলছি
-তুমি ওকে রাখতে পারবা???
-জানি না। তবে এখন ঘুমাচ্ছে।
-হুমমম
-কি করবো এখন
-দেখো চিন্তা করো না। কালকের দিনটা দেখো। যদি কেউ বাচ্চা টার খোঁজ না পায় তাহলে আমি ফিরবো।
-হুমমম ঠিক আছে
-আর এখনি ঘুমিয়ে পড়ো
-একটা কথা ছিলো
-হ্যা বলো
-এভাবে রাগ করে গেলে কেনো??
-দুইটা কারন আছে
-কি কি!!!
-বাড়ির সবাইকে খুব মিস করছিলাম
-আমাকে বললেই তো পাড়তে। আমি কি যেতে মানা করতাম??
-আর একটা কারন শোনো আগে
-হ্যা বলো
-আরেকটা কারন হলো, প্রেম করার জন্য আসছি
-কিহহহ?? কার সাথে??
-আরে গাধা তোমার সাথে
-তুমি না এমন এমন পাগলামি করো। যা বলার মতো না
-হুমমম। আচ্ছা ঘুমাও এখন
-হুমমম সকালে কথা হবে
-হ্যা আর মেয়েটাকে দেখে রেখো।
-হ্যা ঠিক আছে। বায়
-ওকে বায়
পরদিন সকালে....
-এখন তো অফিসের সময় হয়ে গেছে বাচ্চা টাকে কি করবো এখন?? অনেক ভেবে চিন্তে অফিসে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। বাসা থেকে বের হয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি। বাচ্চা টা কোলেই ছিলো। হঠাৎ একজন আঠা দিয়ে বিদ্যুৎ এর খুটিতে একটা কাগজ লাগিয়ে দিলো। আমি সেটা পড়ছিলাম....
আরে এখানে এই মেয়েটার বর্ননা দেওয়া আছে। যে কাগজটা লাগালো। তাকে ডাকার জন্য তাকালাম। কিন্তু নেই। কাগজে একটা মোবাইল নাম্বার ছিলো সেটাতে ফোন দিলাম....
-হ্যালো কে বলছেন??(ওপাশ থেকে)
-আপনার কি কেউ হারাইছে?? তার জন্য কি আপনি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন???(আমি)
-হ্যা আমার ভাগনি
-হ্যা ও এখন আমার কাছে আছে........ এই ঠিকানায় চলে আসেন
-ওকে ভাইয়া থ্যাংকস
একটু পর সেই লোকটা আসলো
-আপনি কি ফোনের সেই ব্যাক্তি??(আমি)
-হুমমম ভাই
-ওকে হারালেন কিভাবে???
-ট্রেনে উঠতে গিয়ে।
-মেয়েটা তো কোলেই থাকার কথা তাহলে হারালো কিভাবে??
-ট্রেনে অনেক ভিড় ছিলো। আমি ওকে নিয়ে উঠতে পাড়ছিলাম না। একজনকে নিতে বললাম। সে নিয়ে ভেতরে গেলো। আর খুঁজে পেলাম না
-তারপর টুকু আমি বলি......(আগের ঘটনা গুলো বললাম)
-ভাইয়া থ্যাংক ইউ
-হুমমম। একটা কথা
-হ্যা বলেন
-ওর বাবা মা কোথায়??
-তারা নেই
-কি হইছে??
-এক্সিডেন্ট এ দুজনই মারা গেছে।
-ওহহ
হঠাৎ রিমির ফোন....
-আচ্ছা ভাইয়া এই নেন মেয়েটা
-লোকটা অনেক বার থ্যাঙ্ক দিয়ে চলে গেলো।
এদিকে ফোনটা বেজেই চলছে...
-হ্যা বলো(ফোনটা রিসিভ করে বললাম)
-ফোন ধরছিলে না কেনো??
-মেয়েটার ঠিকানা পাওয়া গেছে। একটা লোক মাত্রই নিয়ে গেলো। তার সাথে কথা বলছিলাম
-হুমম এখন হাল্কা লাগছে তাই না??
-না
-কেনো??
-মেয়েটা অনেক সুন্দর করে বাবা ডাকছে। নিজের মেয়ের কাছ থেকে যে শুনবো। সেই ভাগ্য টা তো এখনো হলো না
-যা শয়তান
-হি হি হি
-কোথায় এখন??
-অফিস যাই এখন। অনেক লেট হয়ে গেছে
-ওকে ওকে যাও। পরে কথা হবে তাহলে
-হুমমম মিস ইউ
-মিস ইউ টু
-উম্মাম্মাহহহহ
-এই কি করলা??
-কিসি দিলাম
-ফিরিয়ে নাও বলছি
-আমাকে একটা দাও তাহলেই ফিরে আসবে
-হুমমম
-কি হুমম ফিরিয়ে দাও
-উম্মাম্মাহ......
সন্ধ্যায় বাসায় ফিরলাম। কিন্তু বাসায় ফিরে আমি যা দেখলাম। আমার চোখ কপালে উঠে গেলো.....
-রিমি তুমি এখানে! (আমি)
-..............(রিমি কোনো কথা বলছে না মনটা অনেক ভাড়)
-এই কি হয়েছে তোমার??? এখনি চলে আসলে তাও আবার কিছু না বলে।
-কিছু না
-না কিছু একটা হয়েছে।
-পরে বলছি এখন একটু খেয়ে নাও
-না আগে বলো
-প্লিজ রাতের খাবার টা খাও তার পর বলি
-আচ্ছা চলো
রাতের খাওয়া শেষে....
-একটু বাইরে যাবো চলো(রিমি)
-এখন???(আমি)
-হুমমম। চলো
-ওকে
হাটাছি দুজনই হঠাৎ রিমি বলল
-তোমাকে একটা কথা বলার আছে(রিমি)
-হ্যা বলো (আমি)
-কাল যে আমি তোমার সাথে রাগ করে বাড়িতে গিয়েছিলাম। রাগটা এমনি ছিলো, তবে বাড়িতে যাওয়ার একটা কারন ছিলো।
-কি কারন??
-আমি বাড়িতে গিয়ে মাকে সাথে নিয়ে ডাক্তার দেখাই। সন্দেহ বশেত।
-কি জন্য?? জ্বর হইছে তোমার??
-না শোনো আগে
-হ্যা বলো
-জানি না কথা টা শোনার পর তুমি কি করবে?? হয়তো আমাকে ভালোই বাসবে না
-আরে কি যে বলো না। আমি তোমাকে এত্ত ভালবাসি যে। যেটা তুমি অনুমানই করতে পারবে না
-সেটা জানি। কিন্তু কথাটা শোনার পড় সব ভালবাসা উধাও হয়ে যাবে।
-আরে না যাবে না। তুমি বলো
-আমাকে ছেড়ে যাবে না তো(হাতটা ধরে বলল)
-আরে না কেনো যাবো??তুমি কথাটা বলো প্লিজ
-হুমম আমি কখনো মা হতে পারবো না (কথাটা বলে রিমি কাঁদতে শুরু করলো)
আমি স্বভাবিক ভাবেই বললাম
-এই কথা ডাক্তার বলেছে??
-হুমমমম
-শিওর??
-হ্যা রিপোর্ট ও দিয়েছে?(এখন খুব কান্না করছে)
রিমির কান্না দেখে আমারও খুব কান্না পাচ্ছে। ওর কান্না আটকাতে হবে..
-এই বাসায় চলো তো (আমি)
-কেনো??(রিমি চোখের পানি মুছে)
-কেনো কেনো করবি না। বাসায় চল তোর মজা দেখাচ্ছি
রিমি ভয়ে প্রায় শেষ। ওকে বাসায় নিয়ে এসে রুমে বসালাম
-তোর সাহস তো কম না। ওইরকম কথা কেমন করে বলিস আমাকে??(আমি)
-কোন কথা??(রিমি)
-আমি যে তোকে ছেড়ে যাবো এই কথা
(এটা বলার সাথে সাথে রিমি উঠে এসে অনেক জোড়ে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো)
-তুমি আমাকে এত ভালবাসো??(রিমি)
-হুমমম। তোমার সত্যি অনেক সাহস। আর এই কথা এভাবে বলার কি আছে?? মা হবে না তো কি হইছে?? তুমি আমার সব। তুমি চলে গেলে তো আমি একা হয়ে যাব তাই না??
হিয়ার মাঝে
Season : 2
Part: 3
.................................................
-হুমমম। তোমার সত্যি অনেক সাহস। আর এই কথা এভাবে বলার কি আছে?? মা হবে না তো কি হইছে?? তুমি আমার সব। তুমি চলে গেলে তো আমি একা হয়ে যাব তাই না??(আমি)
-হুমমমম(রিমি)
-কি হুমমমম। আর কখনো আর ও রকম কথা বলবা না
-আচ্ছা বলব না
-হুমমম
-রাতে কি খাবো??
-কিছুই খাবো না
-ইহহহ তাই না খেয়ে থাকবো??
-হুমমম না খেয়ে থাকবো আজ
-না
-তাহলে তুমি রান্না করো আজ
-ওকে চলো একটু দেখিয়ে দাও
-না একাই করবা
-না না চলো চলো
-না যাবো না। দেখি কিভাবে নিয়ে যাও
-দাড়াও দেখাচ্ছি মজা
(কোলে তুলে নিয়ে রান্না ঘরে নিয়ে গেলাম)
-এই যে চেয়ার মুছে দিলাম এখানে বসো
(রিমি কোনো কথা বলল না। বসে পড়লো)
-বলো কি রান্না করবো??
-ভাত আর আলু ভর্তা
-কিহহহ?? আলু ভর্তা কেন??
-আমার ইচ্ছা হইছে তাই। অনেক দিন হলো খাই নি
-তুমি খেতে পারবে না। তোমার অভ্যাস নেই
-তুমি তো পারবে??
-হ্যা তা পারবো
-তাহলে আমিও পারবো।
-কিন্তু
-কোনো কিন্তু না যা বলছি তাই করো
-জ্বি মহারানী
(রিমি একটু মুচকি হাসলো)
রান্না শেষে...
-ভর্তা টা তুমি বানাও(আমি)
-না আজ সব তুমি করবে। আর আমাকে খাওয়াই দিতে হবে।
-এহহ পারবে না
-তো থাকো আমি গেলাম ঘুমাতে। তোমার টা তুমি খাও
-ওই নাহ শোনো দিবো তো
-হুমমম
-শেষ হলো।
-এই যে হা করছি
-হুমমম (খাওয়াই দিলাম)
-লবন কম হইছে একটু দাও
-হুমম ওকে।
-হুমমম
রিমিও প্লেট টা হাতে নিয়ে খাওয়াই দিলো। তারপর বলল
-আজকে রাতে ঘুমাবো না (রিমি)
-তাহলে কি করবে??
-শহর টা দেখবো
-এখন বাইরে যাওয়া যাবে না।
-বাইরে তো না
-তাহলে কিভাবে দেখবে??
-কেনো। বাসার ছাদ কি নেই??
-আরে ছাদ থেকে তো একটু দেখ যায়
-যে টুকুই দেখা যাক না কেনো। আর আকাশ তো আছে সেটাও দেখবো
-ওকে ওকে চলেন
-দাড়াও
-কি
-আপনি বললা কেন??
-তুমি রানী তো তাই
-কথা ঘুরানোর চেষ্টা করবা না
-ওকে সরি
-সরি বলে কাজ হবে না।
-তাহলে
-শাস্তি
-কি শাস্তি??
-এখান থেকে কোলে করে উপরে নিয়ে ছাদে যেতে হবে
-মাথা ঠিক আছে তোমার??
-হ্যা একদম ঠিক আছে
-কি বলো এগুলা! তুমি যেতো ভাড়ি। আর ছাদ ৪ তলায়
-তো কি হইছে। আমি যা বলছি সেটাই করতে হবে।
-ওকে রাজি তবে একটা শর্ত আছে।
-কি শর্ত??
-মাঝ রাস্তায় স্টপিজ দেওয়ার সুজোগ দিবা
-হা হা হা হা হা ঠিক আছে।
তারপর ওকে কোলে করে নিয়ে উপরে যাচ্ছি। আর নিজের মনকে বকা দিচ্ছি। কি জন্য যে আপনি করে বলতে গেলাম। হঠাৎ রিমি বলল
-আপনাকে একটা কিসি দিতে ইচ্ছা করছে(রিমি)
-আমার এদিকে প্রান যায় যায় ভাব। আর এর আবদার কি! (ফিস ফিস করে বললাম)
-এই কি বললা??
-কই কিছু না
-তাহলে দিবো??
-হুমম
তারপর একটা কিসি দিয়ে দিলো। প্রায় ২ মিনিট এর মতো...ততক্ষণে আমি ছাদে পৌছে গেছি
-দেওয়া হয়নি?? ছাদে এসে গেছি তো(আমি)
-হুমম হইছে
(রিমির চোখে পানি। এবার আর আমি কিছু বললাম না। দুজনেই চুপ চাপ বসে আছি। হাল্কা বাতাস আছে। গাড়ির হর্ন এর শব্দ আসছে অনেক।)
দুজনই অনেক্ষণ চুপচাুপ ছিলাম। তারপর রিমি বলল
-আমি তোমাকে এত ভালবাসি কেনো??(রিমি)
-আমিও যে তোমাকে অনেক ভালোবাসি তাই(শুভ)
-হুমমমম
-আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি
-হুমম করো
-তখন চোখে পানি আসছিলো কেনো??
-কখন??
-একটা চুমু যে দিলা তখন
-ওহহ। জানি না। তবে আমি তোমাকে এত ভালবাসি যে। তোমার মধ্যে হারিয়ে গিয়েছিলাম।
-হুমমম
(আবারও দুজন চুপচাপ)
রাত তখন ১ টা
-এই অনেক রাত হইছে চলো এখন (আমি)
-হুমমম চলো(রিমি)
সারারাত থাকতে চাইলো। কিন্তু এখন কিছু বলল না কেনো! যাই হোক রাজি হইছে ভালো হইছে। আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে।
পরদিন সকালে...অফিস যাওয়ার সময়
-এই আমি তোমার সাথে অফিসে যাবো
-আরে না।
-যাবো। আর শুধু এগিয়ে দিয়ে আসবো
-ওকে ওকে চলো। তুমি তো আর বায়না ধরলে ছাড়বে না।
আমরা একটা অটোতে চড়লাম। হঠাৎ অটো টা একটা বাস এর সাথে ধাক্কা লেগে উল্টে যায়। অটোর ভেতরে যারা ছিলো সবাই কম বেশি ব্যাথা পায়। আমি রিমির কাছে গেলাম দেখি এখনো রাস্তা থেকে উঠে দাড়ায় নি। রিমি মনে হয় বেশী ব্যাথা পেয়েছে। যখনি রিমি কে তুলতে গেলাম। তখন মনে হলো অনেক ঠান্ডা তার শরীর টা! তাহলে কি রিমি আর নেই। তখন তার। মাথার দিকে তাকালাম। দেখি ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। আমি তখন জোড়ে চিৎকার দিলাম.....রিমিইইইইইইইইই
-এই এই কি হয়েছে(রিমি)
-তুমি ঠিক আছো তো। তোমার কিছু হয় নি তো?? (আমি)
-আরে না। কিছু হয় নি তো
(তারপর বুঝলাম, এটা স্বপ্ন ছিলো! হুহ)
-এই কি হয়েছে?? কোনো দুঃস্বপ্ন দেখছো???(রিমি)
-হ্যা (আমি)
-কি স্বপ্ন??
-দেখি তুমি মারা গেছো??(কান্না করে)
-আরে গাধা এই তো আমি
-হুমম
-আবার দেখি কান্নাও করে! স্বপ্ন দেখে কান্না করতে হবে!
-হু
-হইছে কান্না করতে হবে না। কাছে আসো জড়িয়ে ধরে থাকি। তাহলে আর আমাকে নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখতে হবে না
-আচ্ছা ঠিক আছে
-পাগল একটা
।।
হিয়ার মাঝে
Season : 2
END PART
................................................
-হইছে কান্না করতে হবে না। কাছে আসো জড়িয়ে ধরে থাকি। তাহলে আর আমাকে নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখবে না(রিমি)
-আচ্ছা ঠিক আছে(আমি)
-পাগল একটা
-হুমমম
সকাল বেলা....
-এই ওঠো অফিস যাবে না??
-না যাবো না আজ
-না যেতে হবে। ওঠো ওঠো
-না থাক আজ যাবো না
-না উঠো যেতে হবে। নয়তো পানি দিবো
-না না উঠছি উঠছি
-হুমম ঠিক আছে।
বেড়িয়ে অফিসে গেলাম। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরবো এমন সময় একটা ফোন আসে....
-হ্যালো কে বলছেন??(আমি)
-ভাই আসলে আমি ওই মেয়েটার মামা(লোকটি)
-কোন মেয়েটা??
-ওই যে যাকে আপনি পেয়েছিলেন। আর পড়ে গিয়ে আমি যে নিয়ে আসলাম....
-ওহহ হ্যা হ্যা বলেন
-এখন কি আমার সাথে দেখা করতে পারবেন??
-এখন??
-হুমমম
(এদিকে রিমি ফোন দিয়ে তারাতারি যেতে বলছে)
-কি ভাই আসবেন না??(লোকটি)
--হ্যা কিন্তু কোথায় দেখা করবো।
-যেখানে আমরা প্রথমে দেখা করছিলাম সেখানে..
-আচ্ছা ঠিক আছে।
আমি সে জায়গায় গিয়ে দেখি লোকটি মেয়েটাকে নিয়ে দাড়িয়ে আছে...
-কেমন আছেন??(লোকটি)
-হ্যা ভালো আপনি??(আমি)
-ভালো
(আমি মেয়েটা কে দেখে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম)
-তা কি মনে করে ডেকেছেন??(আমি)
-আমার একটা অনেক বড় উপকার করতে হবে। করবেন??
-হ্যা পারলে করবো
-আসলে ভাইয়া মেয়েটাকে আপনার কাছে জীবনের মতো রেখে দেন
-আরে না কি বলেন। আমার কাছে রাখবো কেনো???ওর আরও আত্মীয় স্বজন। আর বড় কথা হলো। আপনি আছেন
-পাড়লে তো তাদের কাছে দিতাম। ওর মা বাবার বিয়ে টা হয়েছিলো লাভ ম্যারেজ। দুই পরিবারের কেউ ই মেনে নেয় নি। তাই বাচ্চা টাকে তাদের কাছে দেই নি
-তাহলে আপনি রাখেন
-আমি বিদেশ যাচ্ছি ভাই
-হুমমমম
-ভাই প্লিজ। প্লিজ ভাই। আমার এই উপকার টা করেন।
-আচ্ছা ভেবে দেখি।
-না ভাই। এখন সময় নেই। আপনি এখনি নিয়ে যান
(মেয়েটার দিকে তাকালাম। ভাবছি নিয়ে যাবো কি না?? আবার রিমি কিছু বলবে না তো)
-কি নিবেন না?? আচ্ছা নিতে হবে না।
-না না দাড়ান নিবো
-ভাইয়া আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ
-হুমম আমার কোলে দিন
(লোকটি আমার কোলে মেয়েটাকে দিয়ে, আরও অনেক কথা বলল। তারপর চলে গেলো)
আমি বাসার দিকে রওনা হলাম
বাসায় যাওয়ার পর
-রিমি রিমি(দরজায় টোকা দিয়ে)
একটু পর দরজা খুললো মনটা ভাড়। রিমি নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
-ভেতরে আসেন (রিমি)
-এদিকে তাকাও (আমি)
রিমি আমার দিকে তাকিয়ে হ হয়ে আছে।
-এটা কেএএএএ(রিমি)
-এটা আমার দ্বিতীয় বউ এর মেয়ে। খুব সুন্দর দেখতে তাই না??
-কি বললি তুই। আমি আগেই সন্দেহ করছিলাম। তোর মধ্যে কিছু গড়বড় আছে।
-তাই।
-হ্যা কুত্তা তাই। আমি এখনি চলে যাবো।
-আরে শোনো আগে।
-কোনো কথা শুনবো না
-আরে এটা সেইদিনের বাচ্চা মেয়েটি
-কিহহহ??
-হ্যারে পাগলি
-তোমার কাছে কিভাবে??
-তাহলে শোনো......(আগের সব ঘটনা বললাম)
-তাহলে এখন থেকে মেয়েটা আমাদের??
-হুমমম
-দেখি আমার কোলে দাও তো
-এই যে নাও
(রিমি বাচ্চা টাকে কোলো নিয়ে আদর করতে লাগল)
-এই যে ওর জন্য অনেক কিছু লাগবে
-কি কি লাগবে। আমাকে লিস্ট করে দিও কাল নিয়ে আসবো।
-আচ্ছা
-আর একটা কথা
-কি??
(রিমি বাচ্চা টাকে বিছানায় রেখে আমার কাছে আসলো)
-হঠাৎ কি হলো তোমার?? মারবে নাকি???
-হ্যা একদম মেরে ফেলবো
গালে একটা চুমু দিয়ে বলল। সত্যি তোমাকে পাওয়া আমার অনেক বড় ভাগ্যের ব্যাপার
-আরে না গাধী কি যে বলো(আমি)
-সত্যি বলছি
-আচ্ছা আমি ফ্রেস হবো।আর রান্না কি করছো নাকি করতে হবে??
-করেছি আমি সব
-আর বাচ্চা টার জন্য?
-আমি কি জানি নাকি নিয়ে আসবা।
-হুমমম
-আচ্ছা তুমি ফ্রেস হয়ে আসো। আমি খাবারের ব্যাবস্থা করছি।
-ঠিক আছে.....
রাতে খাবারের পর শুয়ে পড়লাম। আমাদের দুজনের মাঝখানে বাচ্চা টাকে রেখে দিয়েছি।
-এই মেয়েটা তো ঘুমিয়েছে। এবার তুমি ঘুমাও(আমি)
-না ঘুম আসছে না (রিমি)
-ওহহ
-ওই মেয়েটার নাম কি???
-ওহহহ নোওওও। এটা তো শোনা হয় নি।
-তুমি যে গাধা তা আবার প্রমান দিলে
-এখন কি করবো
-ফোন দিয়ে জেনে নাও
-ওকে দিচ্ছি
-না দাড়াও দাড়াও আগেই দিয়ো না
-কেনো??
-ভাবতে দাও
(রিমি মুখে আঙুল দিয়ে ভাবছে)
-এই ফোন দিতে হবে না। ওর নাম আমরা রাখবো(রিমি)
-কিইই??
-জ্বি....ওর বাবা তো এখন আমরা তাই আমাদের পছন্দে নাম রাখবো
-ওকে
-তাহলে তুমি একটা নাম দাও
-উমমমমম হিয়া
-কিহহহ! হিয়া!
-হুমম
-না রিয়া
-না হিয়া
-হ্যা হ্যা রিয়া
-না না হিয়া
-তাহলে ওর মামাকে ফোন দিয়ে নামটা জেনে নাও
-না রিয়াই থাক
-হুমম বুঝতে হবে তো। রিমির মেয়ে রিয়া।
-হুমম ভালো এখন ঘুমাও
-না ঘুম পাড়িয়ে দাও
-তুমিও কি রিয়ার মতো বাচ্চা??
-হ্যা বাচ্চাই তো
-কিহহহ
-জ্বি। এখন কথা না বলে মাথায় হাত বুলিয়ে দাও
-ওকে দিচ্ছি
-আর হ্যা নামটা ভালোভাবে মনে রাখবা ওর নাম রিয়া(বলতে বলতে ও ঘুমিয়ে গেলো
-পাগলি একটা......
।।
।।
।।
।।
।।
।।
।।
।।
।।
।।
।।
।।
।।
.............END............
No comments:
Post a Comment