|| সূচনা পর্ব ||
---" আপনি এতো রাতে ছাদে কি করছেন??"
হঠাৎ কোনো পুরুষালি কন্ঠস্বর শুনে চমকে উঠলাম আমি। তড়িৎ পিছে ফিরে তাকাতেই দেখলাম কেউ নেই। তাহলে এই কন্ঠস্বর কার? আমি তো ভুল শুনিনি! আচ্ছা, কোনো চোর নয়তো? নিজেকে সংগত করে দৃঢ় স্বরে বললাম,
---"কে বলছেন? কে আপনি?"
---"সেটা না হয় আজানাই থাক। এখন আপনি ছাদ ত্যাগ করুন এই সময়ে আশেপাশে অনেক খারাপ জ্বীনে'রা ঘুরাফেরা করে তাই ভালো হবে আপনি ছাদ ত্যাগ করুন। আর হ্যাঁ এই অসময়ে কখনো ছাদে আসবেন না।"
কী মধুর সেই কন্ঠস্বর। কন্ঠ যেন ফুলের সুগন্ধী ছড়াচ্ছে৷ সাথে তো এক নাম না জানা পবিত্র আতরের সুঘ্রাণ আছেই। আগন্তুকটির কন্ঠস্বর খুবই ভালো লাগছে।
---"আজব লোক তো আপনি। আপনি কে হ্যাঁ, যে আমাকে এতো জ্ঞান দিচ্ছেন? আমি আপনার কোন কথা শুনতে বাধ্য নই।"
--- "আপনি নামাজ পড়েন?"
অদ্ভুত প্রশ্ন তো! আমার ছাদে আসা নিয়ে নামাজের কী সম্পর্ক? কিছুটা বিরক্ত চাপলো মস্তিষ্কে। বিরক্তির সাথেই উত্তর দিলাম,
---"হ্যাঁ তাতে আপনার কি?"
---"আমার তো মনে হচ্ছে না।"
---"কোনদিক দিয়ে মনে হয়না আমি নামাজ পড়ি না?"
---"নামাজী মেয়েরা পর্দাশীল হয়, নম্র এবং ভদ্র হয়। আপনার ব্যবহার এবং পর্দাবিহীন অবস্থায় সেটা একদমই ফুটে ওঠছে না৷ আপনি তো এই মাঝরাতে পর্দা না করে চুল খোলা রেখে ছাদে এসেছেন!"
এইরে পুরো সাড়ে সর্বনাশ। ছি ছি ছি! কি লজ্জ, কি লজ্জা। কুরআন তিলওয়াত শোনার কৌতুহলে ভুলেই গেছি ওড়নার কথা। আমি কোনোরূপ কথা না বাড়িয়ে লজ্জার সাথে দৌড়ে চলে আসলাম, ছাদ হতে।
এখন আমার পরিচয়টা দিই?
আমি হচ্ছি মিহিতা। আব্বুজান আর ফুপি কে নিয়েই আমার পরিবার। আমার বয়স যখন পনেরোর কোঠায় তখন হঠাৎ মা মারা যান। মায়ের মৃত্যু টা ছিলো অদ্ভুত যা আজও জানতে পারিনি। আব্বুজান একজন মসজিদের ইমাম এবং আমাদের এলাকার মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা। তাই সবার কাছে সম্মানের আমার বাবা। আম্মাজান মারা যাওয়ার কিছুদিন পরই ফুপা মারা যান। ওনার মৃত্যুর কারণ টাও আমি আজও জানতে পারিনি। ফুপা মারা যাওয়ার পর আব্বুজান ফুপি কে আমাদের বাসায় নিয়ে আসেন।
.
ফুপি কে পেয়ে মনে হতো নিজের মা কে পেয়েছি। তিনি আমাকে নিজের মেয়ের মতো আগলে রাখেন। আমি ছোট থেকে কুরআন প্রেমি। তাই কুরআন তিলওয়াত শুনলেই একপ্রকার ছটফট করি। রাতে যখন বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিলাম তখন হঠাৎ সুমধুর তিলওয়াত শ্রবণ হয়। এতোটাই অপরূপ কন্ঠস্বর যে যে মন ছুঁয়ে গেলো। যেখান থেকে তিলওয়াত শোনা যাচ্ছিলো আমি সেদিকে ছুটতে লাগলাম। কন্ঠস্বরটা উপর থেকে আসছে। ছাদে গিয়ে দেখি কেউ নেই, ছাদ পুরো ফাঁকা। তাহলে আওয়াজ টা কোথা থেকে আসছিলো?? এগুলা ভাবতে ভাবতেই সেই অদৃশ্য কন্ঠটি শুনি।
রুমে এসে বুঝলাম হৃদপিন্ড অসম্ভব রকম লাফাচ্ছে। কী অদ্ভুত এক পরিস্থিতি। আমি কি না শেষে লাজ-লজ্জা ভুলে এরকম ভুল করে বসলাম? নিজের মাথায় গাট্টা মেরে পুণরায় বিছানায় শুয়ে পরলাম। আমি আর এই রাতে তেমন কিছু না ভেবে ঘুমিয়ে পড়ি।
সকালে,
ফজরের আযানের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। তাড়াতাড়ি উঠে ওযু করে নামাজ পরে নিলাম। নামাজ পড়ে জায়নামাজ ভাঁজ করে এসে ফুপি কে রান্নার কাজে সাহায্য করতে লাগলাম। এটা আমার প্রতিদিনের রুটিনই বলা যায়।
---"যা মিহি তোর বাবা কে গিয়ে চা-টা দিয়ে আয়।"
---"আচ্ছা ফুপিমা।"
বলেই চা টা নিয়ে বাবার রুমের দিকে গেলাম।
---"আব্বুজান আসবো??"
---"হ্যা মা, এসো।"
তারপর বাবাকে গিয়ে চা টা দিলাম। আর বাবাও হাসিমুখে আমার হাত থেকে চায়ের কাপ টি নিলেন এবং আমি তার থেকে একটু দূরত্বে বসলাম। বাবার সামনে বসতেই মনের মধ্যে খচখচ শুরু হলো। বারংবার মাথায় চাড়া দিচ্ছে গতকালের অপ্রস্তুত ঘটনাটি। ওড়নার এক অংশ আঙুলে পেঁচানো বন্ধ করে নিশ্চুপ হয়ে রইলাম। বাবা তখন প্রশান্তির সাথে চায়ে চুমুক দিকে ব্যস্ত।
---"আব্বুজান, আপনি যদি অনুমতি দেন তাহলে একটা প্রশ্ন করতাম?"
---"অনুমতি দিলাম। নির্ভয়ে বলো মা!"
---"আপনি কি উপর তলা ভাড়া দিয়েছেন?"
---"না তো মা, দেইনি। কিন্তু হঠাৎ এই প্রশ্নের কারণ?"
---"আসলে আব্বুজান কাল রাতে আমি অচেনা কারো কোরআন পাঠ করতে শুনেছি, তাই আপনাকে প্রশ্ন করলাম।"
---"তুমি কি নিশ্চিত মা?"
---"হ্যা, আব্বুজান।"
---"আচ্ছা, সমস্যা নেই এইগুলা নিয়ে মাথা ঘামিও না।"
---"আচ্ছা আব্বুজান, আমি আসছি।"
---"খোদা হাফেজ।"
---"আল্লাহ হাফেজ।"
| চলবে |
.
বলেই আমি আবার ফুপিমার কাছে চলে আসলাম।ফুপিকে নাস্তা বানাতে সাহায্য করলাম।
---"যা মিহিতা, খাবার গুলো টেবিলে রেখে আয়।"
---"আচ্ছা ফুপিমা।"
খাবার গুলো সপ্তপর্ণে টেবিলে নিয়ে গেলাম এবং আব্বুজান কে ডেকে এনে ফুপিসহ নাস্তা সারলাম।
আব্বুজান চলে গেলো মাদ্রাসায়। আর আমি গোছগাছ করতে লাগলাম। গোছগাছ করে ফুপির কাছে চলে এলাম।
---"কী রে মিহিতা? আবার আসলি কেন?"
---"এমনি ফুপিমা ভালো লাগছিলো না একা একা, তাই চলে আসলাম"
---"আচ্ছা তুই রুমে যা আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছি।"
---"আচ্ছা ফুপিমা।"
বলেই নিজের রুমে চলে আসলাম। সব শূণ্য এবং ফাঁকা অনুভব হচ্ছে। বলা বাহুল্য, একাকীত্ব ঝেঁকে ধরেছে আমায়। তার উপর গতকালের ঘটনা আমায় বেশ অস্থির করে রেখেছে।
---"আচ্ছা গতকাল কুরআন তিলাওয়াত করছিলো?কে ছিলো সেই স্নিগ্ধ কন্ঠের অধিকারী?"
এগুলোই ভাবছিলো মিহিতা। তখনই রুমে ফুপিমা প্রবেশ করলো এবং বললো,
---"কী ভাবছিস?"
---"কিছু না ফুপিমা। আসো, পাশে বসো।"
---"হুম বসলাম। এখন বল কি বলবি?"
---"ভালো লাগছে না ফুপিমা গল্প শুনাও না, প্লিজ।অনেকদিন কোনো গল্প শোনা হয় না।"
বলেই সন্তপর্ণে ফুপিমার কোলে মাথা রাখলাম। আহ! এখানে যেন মায়ের স্বাধ পাই। ফুপিমা পরম স্নেহে আমার চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে বললেন,
---"আচ্ছা বলছি। আজ তোকে জ্বিনের গল্প বলবো।"
---"ফুপিমা ভূত বলতে কিছু আছে?"
---"ভূত বলতে কিছু নেই পাগলি। থাকলে জ্বীন রয়েছে। তোর ফুপার অনেক জ্বীন বন্ধু ছিলো। উনি জ্বীনদের নিয়েই কাজ করতেন।"
---"আগে কখনো বলোনি কেন?"
---"তুই ভয় পাবি ভেবে কখনো বলিনি।"
---"তোমার মেয়ে ভিতু নয় বুঝলে? সে অত্যন্ত সাহসি।"
ফুপিমা আমার গাল টেনে মিষ্টি হেসে বললো,
---"হুম বুঝেছি।"
এই বলেই আরও অনেক গল্প করতে লাগলাম। গল্প করতেই যোহরের আযান দিয়ে ফেললো।
---"আচ্ছা মিহি যা নামাজ পড়ে নে।"
---"আচ্ছা ফুপিমা!" উত্তরের সাথে মিষ্টি হাসি উপহার দিলাম।
শাওয়ার নিয়ে ওযু করে নামাজ পড়ে নিলাম। তারপর কিছুক্ষণ কুরআন পড়ে নিলাম। কুরআন পড়তে পড়তে ঘড়ির কাঁটা দুটো বিশে গিয়ে ঠেকলো। পড়া শেষ করে দ্রুত বাইরে আসলাম। ডাইনিং এ এসে দেখি আব্বুজান আর ফুপিমা আমার জন্য অপেক্ষা করছেন খাবার টেবিলে। আমি দ্রুত সেদিকেই ছুটলাম। ভিষণ লজ্জা অনুভূত হলো! আমার সময় খেয়াল না থাকায় এই দুটো মানুষকে কতটা অপেক্ষা করালাম। আমিও না!
---"দুঃখিত আব্বুজান, ফুপিমা দেরি হওয়ার জন্য।কুরআন পড়তে গিয়ে দেরি হয়ে গেলো। আসলে সময়ের দিকে খেয়াল ছিলো না।"
---"সমস্যা নেই মা। আসো আমার পাশে বসো।"
---"হ্যাঁ আব্বু।"
বলেই আব্বুজানের পাশের চেয়ার টেনে বসলাম। আব্বুজান স্নেহের সাথে আমার পাতে খাবার তুলে দিলেন। আমিও হেসে খেতে শুরু করলাম। খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ করে নিজের রুমে চলে আসলাম।
বিকালে ছাদে উঠলাম। চারপাশে কোলাহলের শব্দ। হিম হাওয়া পাখির কিচিরমিচির ডাক বেশ ভালোই লাগছে। শুকনো কাপড় গুলো নিয়ে নামলাম ছাদ থেকে।
সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ আদায় করে ফুপির সাথে চা খাচ্ছি এবং গল্প করছি। এমন সময় কলিংবেল বাজলো এবং আমি ছুটে গেলাম দেখতে, যে কে এসেছে? দরজা খুলে আমি তো যেমন অবাক হলাম তেমনই খুশির জোয়ারে আমার হৃদয় ভরপুর। দরজায় দাঁড়ানো ব্যক্তিটি আমার ছোট বেলার এবং আমার সব সময়ের সঙ্গী তিথি। ওকে দেখে আমি জড়িয়ে ধরলাম।
---আল্লাহ শুকুর তুই এসেছিস।কোথায় ছিলি এতোদিন?জানিস তোকে কতো মিস করেছি?
---ওলে লে আমার সোনাপাখিটা। এখন তো আমি এসে গেছি তাইনা।
---আরে মিহি কি করছিস কি?ওকে ভিতরে তো আসতে দে।
---এই রে একদম ভুলে গেছি। আয় আয় ভেতরে আয়।
বলেই তিথি কে ভেতরে নিয়ে আসলাম।
---তা বল কেমন আছিস?
---এইতো ভালো তুই?
--- আলহামদুলিল্লাহ। কই ছিলি এতোদিন?
---চাচ্চুর কাছে গিয়েছিলাম। সরি তোকে বলতে পারি নি।
---আরে প্রবলেম নেই।
---এই ভাবে দুই বান্ধুবি গল্প করতে লাগলাম।গল্প করতে করতে এশার আযান দিয়ে দিলো।
---আচ্ছা আজ না হয় আমি আসি
---থেকে গেলো হতো না?(মন খারাপ করে বলি)
---নাহ রে বাসায় যেতে হবে আর্জেন্ট।
---আচ্ছা যা........ফিআমানিল্লাহ।
---আল্লাহ হাফেজ
বলেই তিথি নিজের বাসায় চলে গেলো।তিথি যাওয়ার পরপরই আমি এশার নামাজ আদায় করে নিলাম।রাতে ঘুমানোর আগে সেই ছেলেটার তিলওয়াত শোনার জন্য মনটা ছটফট করছে।যদি আরেকবার শুনতে পেতাম?
.
.
তিথি যাওয়ার পরপরই আমি এশার নামাজ আদায় করে নিলাম।রাতে ঘুমানোর আগে সেই ছেলেটার তিলওয়াত শোনার জন্য মনটা ছটফট করছে।যদি আরেকবার শুনতে পেতাম?
কিন্তু এই তিলওয়াত কেই বা করে সেটা আগে জানতে হবে।আজ ওরনা নিয়েই শুয়েছি।
কিছুক্ষণ পর আবার সেই কুরআন তিলাওয়াত শুনলাম। সত্যি কি অপরুপ তার কন্ঠ।আমি আবার ছাদের দিকে ছুটলাম।ছাদে গিয়ে আবারো ফলাফল শূন্য পেলাম।মন টা খারাপ হয়ে গেলো। ভালো ভাবে চারপাশে তাকিয়ে দেখি চাদের আলোয় ছাদটা আলোকিত হয়ে আছে।ভালোই লাগছে তাই ছাদে দাড়িয়ে পরিবেশ টা উপভোগ করতে লাগলাম।
---আপনি আবার এখানে?
এবার সত্যি সত্যিই ভয় পেয়ে গেলাম।
---কে আপনি?কোথা থেকে কথা বলছেন আর আমাদের ছাদেই বা কি করেন?
বলেই চারপাশে খুজতে লাগলাম কোথা থেকে ছেলেটি কথা বলছে?
---খুজে লাভ নেই।আমি না চাইলে আপনি কখনোই আমাকে দেখতে পারবেন না।তাই আপনি এখন আসতে পারেন।
---আপনার কথাই বা আমি কোন আক্কেলে শুনতে যাবো।
---আমার কথা শুনলেই আপনার মঙ্গল তাই যা বলছি শুনুন।
---আমি আপনার কথা মানতে বাধ্য নই।আমার ছাদ আমি যখন ইচ্ছে আসবো যখন ইচ্ছে যাবো।অপরিচিতো কারো কথা শুনবো না।
---দেখুন আমি আপনার ভালোর জন্যই বলছি।আশেপাশে অনেক বদজ্বীন রা ঘুরাফেরা করছে।তারা একদমই ভালো নয়।এদের মতলব খারাপ।তাই আল্লাহর দোহাই আপনি ছাদ ত্যাগ করুন।
---- ওরা আমার কিছুই করতে পারবে না আপনি আগে আপনার পরিচয় দিন।
---আমার পরিচয় জেনে আপনি কি করবেন?
---কিছুই না।
---তাহলে জানার দরকার নেই।ছাদ থেকে যান ওযু করে শুয়ে পড়বেন।আল্লাহ হাফেজ।
---আরে শুনুন।হ্যালোওও কই আপনি?
কোনো সাড়াশব্দ পেলাম না।এতো তাড়াতাড়ি কই চলে গেলো আশ্চর্য তো।আমি আর তেমন কিছু না ভেবে ছাদ থেকে রুমে চলে আসলাম।হঠাৎ ওয়াশরুমের দিকে নজর গেলো।উনি বলেছিলেন ওযু করে নিতে।আমিও ওযু করে শুয়ে পড়লাম।এখন শুধু ওনার কথা ভাবছি।কেন ওনার কথা আমি ফেলতে পারলাম না?কে উনি?এরকম অনেক প্রশ্নই মাথায় ঘুরঘুর করছে।ভাবতে ভাবতে যে কখন ঘুমিয়ে পড়লাম জানি না।ফজরের আযানে ঘুম ভাঙল। উঠে ওযু করে এসে নামাজ পড়ে নিলাম।প্রতিদিনের মতো আজও ফুপিমা কে হেল্প করতে লাগলাম।বাবাকে চা দিয়ে রুমে চলে আসলাম।কেন যেন মনটা খুব অশান্ত লাগছে।
---মিহি নাস্তা করতে আয়।
---আসছি ফুপিমা।
বলেই নাস্তার জন্য গেলাম। নাস্তা শেষ করে বাবা নিজের মাদ্রাসায় চলে গেলো।আমিও রুমে চলে আসলাম।একটু পরেই ফুপি আসলো আমার কাছে।
---কি রে মন খারাপ নাকি তোর?
---না ফুপিমা এমনি।
---তাহলে কি শরীর খারাপ?(আমার কপালে হাত দিয়ে)
---আরে সত্যিই আমার কিছু হয় নাই।
---আচ্ছা তোকে কিছু বানিয়ে দেই।
---বিকালে দিও ফুপি।
---আচ্ছা আমি যাই রান্না ফেলে আসছি।
---আচ্ছা যাও।
ফুপিমা চলে গেল।আমি কি করবো ভাবছি।সেই কুরআন তিলাওয়াতের কথা বারবার মনে পড়ছে।বুঝতে পারছি না কে সে?কোথা থেকেই বা আওয়াজ টা আসে।আবার ছাদের সেই ছেলেটাই বা কে?
হঠাৎ কলিংবেল বাজলো।উঠে দরজা খুলতে গেলাম।আমার আগেই ফুপি দরজা খুলে দিয়েছে।তিথি এসেছে।তিথি কে পেলেই আমার আর কিছুই লাগে না।দুইজন বসে গল্প করতে লাগলাম।ছাদের ব্যপারটা এবং কুরআন তিলাওয়াতের ব্যপারটা ভুলে গেলাম।
সন্ধ্যার দিকে আবারও মনটা খারাপ হয়ে গেলো। তিথি বুঝতে পেরে বললো,
--- কি রে মন খারাপ?
--- কই না তো।
--- তাহলে এমন মুখ ভার করে বসে আছিস কেন??
--- আজ কেমন জানি বরিং লাগছে। সময় কাটানোর জন্য তেমন কিছু নেই তাই আর কি।
--- ওওহ এই ব্যপার?তো চল বাইরে থেকে কোথাও ঘুরে আসি।
--- নাহ বাইরে যেতে ইচ্ছে করছে না আর এখন তো সন্ধ্যা। এই ভোর সন্ধ্যায় বের হওয়াটা মটেও ঠিক হবে না।
--- আরেএ কিচ্ছু হবে না চল।
--- প্লিজ তিথি জোর করিস না। আব্বুজান জানলে রেগে যাবে + কষ্ট পাবে কারণ কখনোই তার অনুমতি ছাড়া কিছু করিনি।
--- আরে জানতে পারলে তো জানবে। আচ্ছা ঠিক আছে ফুপির থেকে অনুমতি নিয়ে যাই তাহলে?
বলেই আমাকে টেনে ফুপির কাছে নিয়ে গেলো। ফুপির থেকে অনুমতি নিতে গেলে প্রথমে ফুপি রাজি হয়না কিন্তু তিথির জোরাজোরি তে পরে রাজি হয় যায়।
কিন্তু তবুও আমার অমত ছিলো। আমাকে একপ্রকার জোর করেই নিয়ে গেলো।
--- চল মার্কেটে যাই?
--- কিইই...পাগল হয়েছিস?এতো দূরে কখনোই যাবো না।
--- আরেহ, গেলে তোরই ভালো লাগবে। এই রিকশা ওয়ালা মামা *** মার্কেট যাবেন?\
---আমার মন কেমন জানি কু ডাকছে; ভয় ভয় লাগছে
---দোস্ত প্লিজ চল না।
---রিক্সা ঠিক করে ফেলেছি তাই আর যাবোনা এখন চল।
বলেই জোর করে টেনে রিক্সায় উঠালো।
একটু পর পরই কোলাহল ছেড়ে নির্জন রাস্তায় ঢুকে গেলাম।
দুইপাশে ঘন ঘন গাছপালা কেমন যেনো সুবিধার মনে হচ্ছে না।গাছগুলোও অদ্ভুত ভয় ভয় লাগছে।আল্লাহ আল্লাহ করে এই পথ শেষ হলেই বাচিঁ।নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য তিথির সাথে কথা বলতে লাগলাম।হঠাৎ কয়েকটা বটগাছ দেখতে পেলাম।দেখতে অনেক ভয়ানক লাগছে। আর আশে পাশে তেমন মানুষ ও নেই।ভয়ে ভয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই মার্কেটে পৌছালাম।
মার্কেট এসে ভালোই লাগছে।নিজের জন্য কিছুই কিনলাম না।বাবার জন্য একটা টূপি কিনলাম।ফুপিমার জন্য তসবিহ কিনলাম।হঠাৎ দুইটা জিনিসের উপর নজর আটকে গেলো।একটা মিনি কুরআন এবং আরেকটা ছোট চিকচিক বাতি।বাতি টা খুব সুন্দর আর এরকম এত্তো সুন্দর দুইটা জিনিস আমি কখনো দেখিনি। এই দুইটাও নিলাম।এগুলো কিনতে কিনতে এশার আযান দিয়ে দিলো।
---তিথি অনেক দেরি হয়ে গেছে প্লিজ চল।
---ওকে চল।
বাইরে বের হলাম এক সাথে। কিন্তু এখন পড়লাম আরেক ঝামেলায়।একটা রিক্সাও নেই।মানুষজনও কম।
---দেখেছিস তিথি আমি ঠিক এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম।
---আরে কিছু হবেনা।চল শর্তকাটে যাই।
---আচ্ছা।
তারপর দুইজন মিলে হাটতে লাগলাম।আশেপাশে মানুষজন একদমই নেই।কিছুক্ষণ পর সামনে আবার বটগাছ পড়লো।উপরে তাকালাম না নিচের দিকে তাকিয়ে হাটতে লাগলাম তিথিরা সাথে। নইলে উপরের দিয়ে তাকালে ভয় লাগে।
---দোস্ত প্লিজ তাড়াতাড়ি চল।এমনি দেরি হয়ে যাচ্ছে।আবার,ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গেলে তো পুরো অন্ধকার, কিছুই দেখা যাবে না।
---আরে তুই একটু বেশি ভয় পাচ্ছিস কিছুই হবে না হাটতে থাক।
আমি আর কথা বাড়ালাম না।হঠাৎ কেমন জানি ফিল হচ্ছে কেউ আমাদের দেখছে।আশে পাশে তাকাতেই দেখি চারপাশে বড় বড় গাছপালা।
আমি তাকাতেই গাছ গুলো কেমন যানি নড়ছে।আস্তে আস্তে গাছ নড়ার বেগ বাড়তে লাগলো।এতো বাতাস যে চারপাশে ধুলোবালি উড়ার কারণে যেটুকুও দেখা যাচ্ছিলো তাও দেখতে পারছি না।হঠাৎ তিথির আর্তনাদ শোনা গেলো।
---মিহি আমাকে বাচা আমি বিপদে পড়েছি।মিহিইই তিথির কথা শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম এবং বললাম,
---তিথি ভয় পাস না আমি আছি এখন তুই কোথায় আছিস সেটা আমাকে বল।(জোরে চিৎকার করে বললাম)
---প্লিজ মিহি আমাকে বাচা।(কাদতে কাদতে)
---আওয়াজ টা জঙ্গলের দিক থেকে আসছে। অন্য সময় হলে আমি দেখলেই ভয় পেতাম। কিন্তু আজ আমার প্রানের বন্ধু বিপদে আছে তাই ভয় কে প্রস্রয় না দিয়ে জঙ্গলে ঢুকতে নিলাম হঠাৎ কেউ আমার হাত ধরে পেছন থেকে টানলো।
আমিও পেছনে আমার হাত ধরে পেছন থেকে টানলো।আমিও পেছনে ফিরলাম।অন্ধকারে চেহারা টা বোঝা যাচ্ছিলো না কিন্তু এইটুকু বুঝেছি যে এটা একটা ছেলে।কারণ উনি আমার থেকেও বেশ লম্বা।তবে ওনার হাত বরফের মতো ঠান্ডা।
---এই সময়ে জঙগলের দিকে কেন যাচ্ছিলেন?
---(কন্ঠটা কেমন চেনা চেনা লাগছে।ও হ্যা মনে পড়েছে।উনার সাথে তো ছাদে কথা বলেছিলাম।)
---কি হলো.....বোবা হয়ে গেছেন নাকি?
---আমার বান্ধুবি বিপদে পড়েছে। প্লিজ ওকে বাচাতে আমার সাহায্য করুন।
---এতো রাতে আপনার বান্ধবী জংগলে কি করবে?
---কেউ হয়তো নিয়ে গেছে।
---সেইটা হয়তো আপনার মনের ভুল।কই আমিও তো এই দিক দিয়েই যাচ্ছিলাম।কোনো আওয়াজ পেলাম না তো।
---বিশ্বাস করুন আমার মনের ভুল নয়।আমি সত্যি স্পষ্ট শুনেছি তিথির আওয়াজ।
---আচ্ছা যদি সত্যিই হতো তাহলে আমি শুনলাম না কেন?
---আপনার কানে যে পোকা ঢুকছে তাই।(বিড়বিড় করে)
---কিছু বললেন?
---কই কিছু বলিনি তো।আচ্ছা যদি তিথি এখানে নাই থাকে তাহলে তিথি গেলো কই?
---ওনাকে তো দেখলাম উনি সামনে এগিয়ে গেছেন আর আপনি এখানে হাবলার মতো দাড়িয়ে আছেন।
---দেখুন একদম বাজে কথা বলবেন না।আমি কি ইচ্ছা করে দাড়িয়ে আছি নাকি?যখন বাসায় যাচ্ছিলাম তখন চারপাশে এতো বাতাস বইতে লাগলো যে ধুলাবালির কারনে কিছুই দেখতে পারিনি।আবার চারপাশে যা অন্ধকার হয়েছিল যে ভয়ে বুক শেষ।
---যখন ভয় ছিলো তাহলে কোন আক্কেলে জংগলে ঢুকছিলেন?জানেন না জংগলে কত জন্তু জানোয়ার আছে?
---আরে বললাম তো ভুল হয়েছে।এখন আমি বাসায় কি করে যাবো?
---আমি পৌছে দিচ্ছি আসুন আমার সাথে।
---আপনাকে কেন বিশ্বাস করবো?
---ওকে আপনি থাকুন আমি যাই?
বলেই চলে যেতে চাচ্ছিলো আমি ওনার হাত ধরে আটকালাম।
---আপনি কোথায় যাচ্ছেন? একা একা ভয় করছে।
---আপনিই তো বললেন আমার সাথে যাবেন না তো কি করার আমিই যাচ্ছি।
---এই বলে চলে যাবেন একটা মেয়ে কে একা ছেড়ে।
---সাহায্য করতে চেয়েছিলাম কিন্তু আপনি তো চান না আমার সাথে যেতে তাই থাকুন বদজ্বীন দের সাথে।
ভয়ে আমি উনাকে জড়িয়ে ধরলাম এবং বললাম এখানে থাকতে।আমাকে নিয়ে চলুন প্লিজ
---আচ্ছা ঠিকাচ্ছে ছাড়ুন।
.
আমার এতোক্ষণে মনে পড়লো আমি ওনাকে জড়িয়ে ধরেছি।সাথে সাথে ওনাকে ছেড়ে গিয়ে দাড়াই।
---ইস কি করলাম এটা আমি?কখনো কোন ছেলের দিকে ফিরেও তাকাইনি আর কিনা ডিরেক্ট....... আল্লাহ এগুলো কি হচ্ছে আমার সাথে?
---তো এখন যাওয়া হোক?নাকি এখানেই দাড়িয়ে থাকবেন?
---না না চলুন।
বলেই ওনার সাথে হাটতে লাগলাম।ওনার সাথে থেকে কেন জানি ভয় টা উধাও হয়ে গেছে।মনের মধ্যে কোনরকম ভয় নেই।নিরবতা ভেঙে ওনাকে জিগ্যেস করলাম,
---আচ্ছা আপনার পরিচয়টা তো দিলেন না?
---কি করবেন পরিচয় দিয়ে?
---আমি পরিচয় জানতে চাইলে আপনি এমন করেন কেন?
---কেমন করলাম?
---অদ্ভুত তো আপনি মানুষ এর থেকে মানুষ তো পরিচয় জানতেই পারে স্বাভাবিক।
---আর যদি বলি আমি মানুষ নই তাহলে?
---মানে?(অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকালাম)
---না কিছু না এমনি মজা করলাম।(বলেই উনি হাসলো)
ওনার হাসির আওয়াজ টা বেশি নয় আবার কমও নয়।একদম অস্বাভাবিক। একজন মানুষ কি করে এতোটা নিখুঁত ভাবে সব মেনে চলতে পারে?আমি আর এতো কিছু না ভেবে বললাম,
---আচ্ছা ঠিক আছে। আপনার বেশি কিছু বলতে হবে না। আপনি শুধু আপনার নাম টা বলুন যদি আপনার আপত্তি না থাকে।
---আপত্তি আছে।
---এমা। আবার কিসের আপত্তি?
---আরহাম।
---ও আচ্ছা। আবার প্রশ্ন করলাম,
---আচ্ছা আপনি থাকেন কোথায়?
---আপনার বাসা এসে গেছে আপনি এখন যান আমি আসছি আল্লাহ হাফেজ।
আমি সামনে তাকিয়ে দেখলাম আমি সত্যি সত্যি বাসায় এসে গেছি।কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি কি করে চলে আসলাম।হয়তো কথা বলতে বলতে কখন রাস্তা শেষ হয়ে গেছে খেয়াল করিনি।যাই হোক আরহাম কে একটা ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। ছেলেটা কতো কিছু করলো আমার জন্য।
ভেবেই পাশ ফিরে ধন্যবাদ দিতে যাবো দেখি উনি নেই।এমা উনি কোথায় গেলো?একটু আগে তো এখানেই ছিলো।এতো কম সময়ে কোথায় চলে গেলো?আশেপাশে ফিরে ফিরে দেখলাম কিন্তু কোথাও কেউ নেই।হয়তো চলে গেছে।
বাসায় এসে দেখলাম বাবা ফুপি বসে আছে আর তাদের সামনে বসে তিথি কাদছে মাথা নিচু করে।আমি আব্বুজান কে ডাক দিলাম।সাথে সাথে তিনজন আমার দিকে তাকালো।ফুপি তো একপ্রকার দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে এবং বলে,
---শোকর আল্লাহ তুই ফিরে এসেছিস।কোথায় ছিলি তুই?
---ফুপিমা আমি পথ হারিয়ে ফেলেছিলাম।
---পথ যখন হারিয়ে ফেলবি তখন তোকে কে যেতে বলেছিলো তাও আমার অনুমতি ছাড়া?
---ক্ষমা করে দিবেন আব্বুজান।
---ক্ষমা তাও তোমাকে? আমাকে না বলে বাইরে গেছো তবুও ক্ষমা?
---আসলে দোষ টা আমার ছিলো মিহি যেতে চায় নি তবুও জোর করে নিয়ে গেছি।আর আমার অসাবধানতার কারনেই ওকে হারিয়ে ফেলেছিলাম তাই আমাকে যা বলার বলুন তাও ওকে কিছু বলবেন না।
---কেন নিজেকে এতো দোষারোপ করছিস তিথি?প্রথমে তোকে যদি না বলতাম যে বরিং লাগছে তাহলে হয়তো তুই কোথাও যাওয়ার কথা বলতি না।
আব্বুজান আর কিছু না বলে ভিতরে চলে গেলেন।এতে খুবই কষ্ট পেলাম।তিথি আবার বলতে লাগলো,
---প্লিজ মিহি আমাকে ক্ষমা করে দে।তখন কথা বলতে বলতে চারপাশে কি হচ্ছিলো সেটা আমি বুঝতেই বাড়িতে আসার পরপরই আমার তোর কথা মনে পড়ে।ছুটে বাইরে এসে তোকে খুজতে লাগি।কিন্তু কোথাও পাই নি।শেষ মেষ তোকে পাবো বলে তোদের বাসায় চলে আসি।কিন্তু এখানেও তোকে পাইনি।ক্ষমা করে দিস বোন আমায়।(কাদতে কাদতে)
---ধুর পাগলি ক্ষমা চাইছিস কেন?আমিতো জানি তুই না বুঝে ভুল করে ফেলেছিস।কিন্তু এখন দেখ সব ঠিক আছে,আমি চলে এসেছি(চোখ মুছে দিতে দিতে)তাই নো কান্না। আমি আবার বলি,
---যা এখন বাসায় যা কেদে কেদে মুখটাকে গোল আলু করে ফেলেছিস। এখন গিয়ে খেয়ে ঘুমিয়ে পড় কেমন?আল্লাহ হাফেজ।
---আচ্ছা।
বলেই তিথি চলে গেলো।আমি ফুপির সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে রুমে এসে ফ্রেশ এবং অযু করে এশার এর কাজা নামাজ আদায় করে নিলাম।
আরহাম এর কথা এখনো কাউকে বলি নি।নামাজ পড়ে গিয়ে ডিনার করতে গেলাম।আব্বুজান খেতে আসেননি। হয়তো এখনো আমার উপর রেগে আছেন।আমি আর কি করার খেলাম না।ফুপিমাও খেলেন না।কারোই গলা দিয়ে খাবার নামবে না।আমি রুমে এসে মন খারাপ করে শুয়ে পড়লাম।খুব একা একা লাগছে আজ নিজেকে। কেউ পাশে নেই আজ।
আব্বুজান আজ পর্যন্ত কখনোই আমার সাথে এমন ব্যবহার করেননি।সব সময়ই আমায় আগলে রাখতেন।এগুলো ভাবতে ভাবতে যে কখন চোখের কোনা বেয়ে দুফোটা জল গড়িয়ে পড়লো বুঝতে পারি নি।এভাবেই রাত পার হয়ে গেলো। সেদিন কুরআন তিলওয়াত শুনলে হয়তো মনটা হালকা হতো কিন্তু ভাগ্য আজ আমার সহায় নয়।হঠাৎ ফজরের আজান শুনতে পেলাম ওয়াসরুমে গিয়ে অযু করে নামাজ পড়ে নিলাম। নামাজ পড়ে সোজা ছাদে চলে এলাম।
এখনো চারপাশে আলো তেমন ফুটেনি। ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখতে লাগলাম।শুনেছি আমাদের প্রিয়নবি হযরত মুহম্মদ (স) এর যখন মন খারাপ হতো তখন তিনি আকাশের দিলে তাকিয়ে থাকতেন। আমারও মন খারাপ লাগছে তাই আপাতত সঙী হিসেবে এই আকাশ টা কেই করি। এক মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি আরহাম এর কথা। ওর আচরণ, কন্ঠ, হাসি সব গুলোই অপরূপ লাগে আমার কাছে।
এইগুলোই ভাবছিলাম হঠাৎ আমার কাধে কেউ হাত রাখলো, এতে আমি বেশ চমকে গেলাম সাথে ভয়ও। পিছে ফিরে তাকানোর সাহস হচ্ছিলো না। তার বলা কথা তে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম এবং পেছনে তাকালাম।
.
.
ParT 06
.
এইগুলোই ভাবছিলাম হঠাৎ আমার কাধে কেউ হাত রাখলো, এতে আমি বেশ চমকে গেলাম সাথে ভয়ও। পিছে ফিরে তাকানোর সাহস হচ্ছিলো না। তার বলা কথা তে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম এবং পেছনে তাকালাম।
---কি রে মা মন খারাপ?
--- না আব্বুজান।
--- তাহলে ছাদে এসেছিস কেন?
--- এমনি আব্বুজান ইচ্ছে হচ্ছিলো ছাদে আসার তাই চলে আসলাম।
--- আমার উপর রেগে আছিস তাইনা মা?
--- আরে না আব্বুজান কেন রাগবো তুমি বলোতো??
--- তোকে যে বকেছি তাই।
আমি আর কিছু বললাম না। চুপ করে মাথা নিচু করে রাখলাম।
---জানিস মা তোর মায়ের মৃত্যর পর আমি অনেকটা ভেঙ্গে পড়েছিলাম।আমি কিছু নিয়ে বাচার অবস্থাতেই ছিলাম না।কারণ তোর মাকে অনেক ভালোবেসে আগলে রেখেছিলাম।তোর মায়ের শেষ অস্তিত্ব হলি তুই তাই তোকেই আকড়ে ধরে বেচে আছি আমি।এখন যদি তোকেও হারিয়ে ফেলি তাহলে আমি কি নিয়ে বল কি নিয়ে?
বলেই বাবা কাদতে লাগলো।বাবার কথা গুলো শুনে আমিও কেদে দিলাম।বাবাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম আর বললাম,
---আর কখনো তোমার পারমিশন ছাড়া কিছু করবো না বাবা।আর কোথাও ছেড়ে যাবো না।
বলেই কাদতে লাগলাম।তারপর বাবা চোখের পানি মুছে দিয়ে বলতে লাগলেন।
---পাগলি মেয়ে আর কাদতে হবে না।এখন চল নাস্তা করবি।
---হ্যা আব্বুজান চলুন।
বলেই আব্বুজানের সাথে গিয়ে খাবার টেবিলে বসলাম।আমি ফুপি আর আব্বুকে সার্ভ করে নিজেও বসলাম।আজ আব্বুজান নিজের হাতে আমাকে খাইয়ে দিলো এবং নিজেও খেয়ে নিলো।আমার আজ নিজেকে অনেক সখি মনে হচ্ছে।
---আচ্ছা মা আমি যাই সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে।আর হ্যা আমাকে না বলে কোথাও যাবি না।
---আচ্ছা আব্বুজান তুমি একদম চিন্তা করিও না আর সাবধানে থেকো।ফিআমানিল্লাহ!
---খোদা হাফেজ।
আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আব্বুজান মাদ্রাসায় চলে গেলো।আমি রান্না ঘরে চলে গেলাম। দেখি ফুপি রান্না করছে।
---ওওওও ফুপিমা তুমি একা হাতে আর কতো করবে আমাকেও দাও।
---না থাক তুই গিয়ে বিশ্রাম নে।
---বিশ্রাম নিবো তো ঠিকি কিন্তু সেটা আমি না তুমি।
---মানে?
---মানে হলো এইযে আজ আমি রান্না করবো তুমি যাও নিজের রুমে।
---আরে আমার কথা টা তো শুন।
---কোনো কথা নয় আজ আমিই রাধবো।
বলেই ফুপিকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বের করে দিলাম রান্নাঘর থেকে।তারপর আমি রান্নাঘরর দাড়িয়ে ভাবতে লাগলাম কি রাধা যায় সেটা।কিছুক্ষণ পরই ডিসাইড করলাম বিরিয়ানি এবং পায়েস রাধবো।যেই ভাবা সেই কাজ শুরু করে দিলাম।পিয়াজ ভাজতে যেয়ে হাতে তেল ছিটে আসলো ফলে হাতের একটু খানি জায়গা তে ফোসকা পড়ে গেলো।চিল্লালাম না কারণ চিল্লালে ফুপি আর রাধতে দিবে না।জ্বালা টা সহ্য করে রান্না টা শেষ করলাম এখনো জ্বালা করছে।
দুপুরের আগেই রান্না কমপ্লিট করলাম। রান্না শেষে আমি রুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে অযু করে নিলাম নামাজের জন্য।ফোস্কায় পানি লাগায় আরো জালা করতে লাগলো তবুও পরোয়া করলাম না।তাড়াতাড়ি নামাজ আদায় করে নিলাম।আরও জালা বেড়ে গেলো তাই আর উপায় না পেয়ে মলম লাগিয়ে নিলাম এবং ওরনা দিয়ে হাত টা ঢেকে নিলাম যেন কেউ না দেখতে পায়।তারপর খাবার টেবিলে গেলাম এবং দেখলাম আব্বুজান এবং ফুপি খাবার নিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছেন।আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে বসে পড়লাম।
---বেশি দেরি করে ফেলিনি তো আব্বু
---না মা দেরি হয়নি।আমিও মাত্রই আসলাম।
---ওওও আচ্ছা। তা টেষ্ট করে দেখো কেমন হয়েছে?
---আজ তুমি রেধেছো বুঝি?
---হ্যা আব্বুজান(মুচকি হেসে)
---তাহলে তো খেয়ে দেখতেই হয় কি বলো বোন?
---হ্যা তা তো অবশ্যই।
বলেই দুই জন খাবার মুখে দিলো।আমি খেলাম না উৎসাহের সাথে তাদের দিকে তাকিয়ে রইলাম।আব্বুজান তার মুখটা কেমন জানি গম্ভীর হয়ে গেলো।এখন ভয় করছে।রান্না খারাপ হয় নি তো।আব্বুজান পায়েস টা এক চামচ খেলেন।এখনো কিছু বলছে না।এর মানে কি পায়েস টাও ভালো হয় নি?ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
---কি হলো ভালো লাগে নি খাবার টা?
আব্বুজান এবার আমার দিকে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকালো।এতে তো আমার যায় যায় অবস্তা।হঠাৎ বাবা আর ফুপি একে অপরের দিকে তাকালো এবং এক সাথে হেসে দিলো।আমি ব্যপারটা ঠিক বুঝতে পারছি না।হঠাৎ এমন করে হাসছে কেন?আমি তাদের দিকে ভ্রু কুচতে তাকালাম এবং বলতে লাগলাম,
---এখানে এতো হাসির কি হলো?
---দেখেছেন ভাই সামান্য রান্নার জন্য আমাদের মিহির কি অবস্তা হয়েছে
বলেই ফুপি আবার হাসতে লাগলো।
--- হ্যা বোন ঠিক বলেছিস।(হাসতে হাসতে)
--- আব্বুজান তোমাদের যদি আমাকে নিয়ে মজা করা শেষ হয়ে থাকে তাহলে এখন অন্তত বলো কেমন হয়েছে??
--- খুববব ভালো রান্না করেছিস মা একদম পারফেক্ট।
--- সত্যিই????
--- হ্যা রে মিহি ৩ সত্যি।
--- ধন্যবাদ ফুপিমা।
বলে আমিও খেতে লাগলাম।
--- পাগলি।
খাবার এতোটাও খারাপ না ভালোই খেলাম। খাওয়া শেষে বাবা মাদ্রাসায় চলে গেলেন। আমি আর ফুপি মিলে টেবিল পরিষ্কার করতে লাগলাম। রান্নাঘরে গিয়ে খাবার ২প্লেট সরিয়ে রাখলাম। এক প্লেট তিথির জন্য আরেক প্লেট আরহাম এর। কিন্তু আফসোস আজ তিথি আসলো না। তাই মনটা খারাপ হয়ে গেলো। কেন যে আসলো না কে জানে?
রাতে শুয়ে আছি তিথি আজ আর আসেনি। খুব খারাপ লাগলো।
হঠাৎ আবার সেই কুরআন তিলয়াত শুনলাম। কি মধুর সেই তিলয়াত। রাত বাজে এখন ২:০৬মিনিট। এতো রাতে কেই বা সবসময় তিলয়াত করে?? আর একটা ব্যাপার লক্ষ করেছি যখনই আমি ছাদে কুরআন তিলয়াত শুনতে যাই সাথে সাথেই তিলয়াত বন্ধ হয়ে যায় আর আরহাম এর আওয়াজ শুনতে পাই। আচ্ছা এই আরহাম প্রতিদিন রাতে আমাদের ছাদে কি করে?? আর ও কোথা থেকেই বা কথা বলে আমাকে দেখে?? আজ যে করেই হোক সকল রহস্য বের করতেই হবে।
ছাদে যাওয়ার সময় আমার রান্না করা খাবার গুলোর কথা মনে পড়লো। তাড়াতাড়ি গিয়ে খাবার গুলো নিয়ে ছাদে উঠলাম। গিয়ে দেখি কেউ নেই আবার সেই বরাবরের মতোই তিলয়াত বন্ধ হয়ে গেলো। বুঝলাম না কি হচ্ছে এইগুলো??
.
.
.
.
চলবে
আবারও সেই কন্ঠস্বর পেলাম।কিন্তু আওয়াজ শুনে মনে হচ্ছে আরহাম আমার সামনাসামনি দাড়িয়ে আছেন কিন্তু আমার সামনে কেউই নেই।এটা আবার কি করে সম্ভব?
---কি হলো কি নিয়ে এতো ভাবছেন?
---না না কই কিছু না তো।
---তাহলে ছাদে কি করছেন?
---ঘুম আসছিলো না তাই চলে আসলাম।
---আর আসার দরকার নেই আপনি এখনি ছাদ ত্যাগ করুন।
---আচ্ছা আপনি এমন কেন বলুন তো ছাদে আসলেই তাড়িয়ে দেন আর আপনিই বা আমাদের ছাদে কি করেন?
এই প্রশ্ন করাতে উনি জবাব দিলেন না।এবার আমি আমার প্রশ্নের ভান্ডার খুলতে শুরু করলাম।
---কি হলো বলুন,আপনাকে কেন আমি দেখতে পারিনা আর আমাদের ছাদেই বা কি করেন?
---সত্যিই টা বললে আপনি ভয় পাবেন তাই বলবো না
---আমি ভয় পাবো না আপনি বলুন।(এহহহহ আসছে আমাকে ভয় দেখাতে। আমি ভয় পাই না হুম)
হঠাৎ চারপাশ টা কেমন ঠান্ডা হয়ে গেলো আর কি সুন্দর সুগন্ধ মন ছুয়ে যাচ্ছে।কিন্তু হঠাৎ এরকম পরিবেশ সৃষ্টি হলো কেন?
---আমি আপনাদের মতো সাধারণ মানুষ নই।আমি একজন জ্বীন।
জ্বীন সেটা শুনে আমি অবাক হয়ে যাই।ভাবতেই পারছি না আমার সামনে একজন জ্বীন দাড়িয়ে আছে আর আমি তার সাথে এতোদিন কথা বলেছি।কিন্তু আমার একদমই ভয় লাগছে না। কিন্তু কেন?আমি তো এগুলো তে প্রচুর ভয় পাই।তাহলে আজ এখন কেন ভয় লাগছে না?
---কি হলো এভাবে হা করে তাকিয়ে আছেন কেন?
---আপনি তো অদৃশ্য তাহলে আমিই বা কার দিকে তাকাবো?
---ও আচ্ছা তা ভয় করছে না?
---একটুও না।
---কেন?
---জানি না
---আচ্ছা এখন বলুন কেন এসেছেন?
---আসলে.......
বলেই খাবারের প্লেট সামনে এগিয়ে দিলাম।খাবার ঢাকা থাকায় উনি বুঝতে পারলেন না ভিতরে কি আছে।
---কি এগুলো?
---আপনার জন্য।
---কি আছে এতে?
---আপনি নিজেই দেখে নিন।(মুচকি হেসে)
ওকে বলেই উনি আমার হাত থেকে খাবারের প্লেট টা নিলেন।নেওয়ার সময় আমার হাতে ওনার অল্প ছোয়া লাগে।আমি শিউরে উঠি।বরফের মতো ঠান্ডা হাত।
উনাকে এখন অল্প অল্প দেখা যাচ্ছে ছায়ার মতো।উনি প্লেট উল্টিয়ে দেখলেন বিরিয়ানি এবং পায়েস।
---ওয়াও পায়েস?
---হুম পায়েস।বিরিয়ানি পছন্দ হয় নি?(মন খারাপ করে)
---আসলে আমাদের মিষ্টি খাবারই বেশি প্রিয়।
---ওওওও বুঝলাম।
---কি বুঝলেন?
---এইযে আপনাদের মিষ্টি খাবার পছন্দের।
---হা হা হা! হ্যাঁ।
বলেই উনি খেতে লাগলেন। আমার ভালোই লাগছে মোমেন্ট টা। কিন্তু ওনাকে দেখতে পারছি না একটাই সমস্যা।
---আচ্ছা আপনাকে দেখতে পাচ্ছি না কেন?
---আমি অদৃশ্য হয়ে আছি তাই।
---ওও আচ্ছা সামনেয় আসেন না কেন?
---সমস্যা আছে তাই আসিনা।
---কিসের সমস্যা?
---আমার খাওয়া শেষ এই নিন বাটি।আর পায়েসের জন্য শুকরিয়া।
উনি আমার সামনে আছেন সেটা অনুভব করতে পাচ্ছি।
---কেমন লাগলো খেতে?(উৎসাহিত হয়ে)
---খুন ভালো হয়েছে।আপনি রেধেছেন তাই না?
---হুম।(মৃদু হেসে)
---আচ্ছা ঠিক আছে।এখন আপনি ছাদ ত্যাগ করুন।আল্লাহ হাফেজ। আর হ্যা অযু করে ঘুমাবেন।
---আরেকটু থাকি না।
---অনেক থেকেছেন এখন যান, গিয়ে ঘুমান।
---আচ্ছা আল্লাহ হাফেজ।
বলেই উনাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বাটি নিয়ে চলে আসলাম ছাদ থেকে।কিচেন এ গিয়ে বাটি গুলো ধুয়ে লাইট অফ করে রুমে চলে আসলাম।আজ উনার উপর অনেক রাগ করেছি।উনি আমাকে একটুও বুঝে না।বারবার ধমক দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেয়।হুহ আমিও আর যাবো না দেখি কি করে।
এগুলো ভাবতে ভাবতে শুয়ে পড়লাম।অযু করার কথা ভুলেই গেছি।
মাঝরাতে হঠাৎ কিসের আওয়াজ পেলাম।আওয়াজ টা বাইরে থেকে আসছে।কিন্তু কিসের শব্দ বুঝতে পারছি না।আমি বললাম।
---কে? কে ওখানে?
কোন শব্দ নেই।হঠাৎ আব্বুজানের গলা শুনতে পেলাম।
---মা আমি। দেখে যাও এখানে কতো সুন্দর ফুল।
---কোথায় ফুল আব্বুজান?
---বাগানে এসে দেখে যাও।
---আচ্ছা আব্বুজান আসছি।
বলেই আমি দরজা খুলে বাগানে গেলাম।কিন্তু আব্বু নেই।কোথায় গেলো?এখানেই তো ছিলো আর আমাকে ডাকছিলো।
হঠাৎ কারো হাসির শব্দ পেলাম।এতে আমি বেশ ভয় পেয়ে যাই।কি হচ্ছে আমার সাথে এসব?হঠাৎ আমার থেকে দূরে একটা অবয়ক দেখতে পেলাম।চেহারাও অনেক বিস্রি।চোখ নেই অথচ সেখান থেকে ঘন ঘন রক্ত ঝরছে।এ মুখের এক সাইড কংকাল আরেক সাইড কালো কালো ফোস্কা দিয়ে ভরা।
কি অবস্থা চেহারা আর পুরো শরীরের অবস্থার কথা কি বলবো।পারলে আমি এখনি বমি করে দেই এমন অবস্থা। চাদের আলো থাকায় এক অবয়বের চেহারা বোঝা যাচ্ছিলো।
আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো বিস্রি ভাবে।আমি ভয়ে আর ঘেন্নায় শেষ।দৌড়ে পালাবো তাও পারছি না মনে হচ্ছে পায়ে কেউ শক্ত ভাবে বেধে রেখেছে।কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।
যেই আমাকে ধরতে যাবে তখনি অবয়ক জোরে দূরে গিয়ে পড়ে।বুঝলাম না ব্যাপার টা।হঠাৎ আমার সামনে কেউ এসে দাড়ালো।সাদা জোব্বা পড়া এবং তার শরীর থেকে এক অদ্ভুত আলো বের হচ্ছে।তার সুগন্ধি তে বুঝতে বাকি রইলো না এটা কে।এটা আরহাম সেই আমার সামনে।অবয়কটি উঠে আবার তেড়ে আসলো আমাদের দিকে।আরহাম হাত মুঠো করে কিছু একটা গুনগুন করে পড়ে হাতে আগুনের গোলা সৃষ্টি করলো।আমি বেশ অবাক হয়ে যাই।আগুনের গোলটি অবয়কটির দিকে ছুড়ে মারলো আর সে চিল্লাতে লাগলো।শেষে একটা কথাই বললো ঃ
---আমি ফিরে আসবো।
বলেই সে উধাও হয়ে গেলো।আমি এখনো ভয়ের দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে আছি। এমন দৃশ্য কখনোই দেখিনি। আর ভাবাতো দূরে থাক।আরহাম আমার দিকে ফিরলো এবং আমার গালে তার এক হাত মেখে বললোঃ
---আপনি ঠিক আছেন তো?
আমি কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে কোন উত্তর না দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলাম এবং কাদতে লাগলাম।
---আমার খুব ভয় লাগছে আরহাম।খুব ভয় লাগছে
.
.
.
আরহাম আমার দিকে ফিরলো এবং আমার গালে তার এক হাত মেখে বললোঃ
---আপনি ঠিক আছেন তো?
আমি কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে কোন উত্তর না দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলাম এবং কাদতে লাগলাম।
---আমার খুব ভয় লাগছে আরহাম।খুব ভয় লাগছে।
--- আমি এসে গেছি না। এখন কোন ভয় নেই। আমি থাকতে আপনার দিকে কেউ চোখ তুলে তাকাতেও পারবে না।
উনি পরম যত্নে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে শান্তনা দিতে লাগলো। আমিও আস্তে আস্তে স্বস্তি ফিল করলাম। ওনার বুকে এক অন্যরকম শান্তি। একটু পর ওনার বুক থেকে মাথা উঠিয়ে ওনার দিকে তাকালাম। ওনাকে আমি এখনো দেখতে পারলাম না। এতে মন খারাপ হয়ে গেলো এবং ওনাকে ছেড়ে একটু দূরে গিয়ে মাথা নিচু করে দাড়ালাম।
--- কি হলো হঠাৎ এমন ব্যবহার করলেন কেন?
--- তো কি করবো। আপনাকে তো একবারও দেখতেই পেলাম না।
--- আরে দেখার জন্য এতো ব্যস্ত হচ্ছেন কেন?? আমার হুকুম নেই তাই আপনাকে আমার মুখ দেখাতে পারবো না।
--- কিসের হুকুম আবার??
--- সেইটা আপনাকে বলতে পারবো না।
আমি কিছু বললাম না। হঠাৎ উনি আমার বাম হাত স্পর্শ করলেন। ওনার ঠান্ডা হাতের স্পর্শে আমি কেপে উঠলাম।
--- হাতে কি হয়েছে??
আমার এতোক্ষণে মনে পড়লো হাতের ফোস্কা টার কথা। ওনার থেকে নিজের হাত ছাড়াতে চাইলাম কিন্তু উনি আরও শক্ত করে ধরলো এবং বললো,
--- কি হলো উত্তর দিচ্ছেন না কেন??
--- ইয়ে মানে....
--- কি মানে মানে করছেন?
--- আসলে,
--- আবার?
--- আসলে আজ রান্না করার সময় অসাবধানতার ফলে এমন হয়েছে।
--- এতো কেয়ারলেস কেন আপনি? কোন কাজই কি ঠিক মতো করতে পারেন না??
--- তার মানে আপনি কি বলতে চাইছেন আমি অকর্মার ঢেকি?(রেগে)
--- তা নয়তো কি??আজ আমি ঠিক সময়ে না পৌছালে আপনার কি হতো ভাবতে পারছেন আপনি??
--- (সত্যিই তো। ধুর কেন যে এতো রাতে কারো শুনতে গেলাম ধুর। আমি আসলেই একটা অকর্মার ঢেকি।)
--- আবার কি ভাবছেন??
--- কিছু না হাত ছাড়ুন আমার।(অভিমানী সুরে)
--- আমার উপর অভিমান হয়েছে বুঝি?
--- আপনি কে যে আপনার উপর অভিমান করবো আর কেনই বা করতে যাবো??
--- তখন ওইভাবে বলেছি তাই।
--- বুঝতেই যখন পারেন তাহলে জিগ্যেস করবেন কেন?
---আমিতো আপনার ভালোর জন্যই বলি।এতো রাতে একটা মেয়ে ছাদে গেলে বদজ্বীনের তো নজর লাগবেই।আর অবশ্য লেগে গেছে।সে একটু আগে আপনাকে আক্রমণ করলো তার নজর তো লেগেই গেলো।
আমি ভয়াত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালাম।
---এতো ভয় পাবার কারণ নেই। আমি আপনার পাশে আছি।আমি থাকতে কখনো কোন বিপদ আপনাকে স্পর্শ করতে পারবে না।
আমার কেন যেন আরহাম এর প্রতি বিশ্বাস টা অনেক বেশি। উনি আবার বললেন,
----এখন বাসায় যান।আরেকটু পরেই ফজরের আযান দিবে।আর হ্যাঁ গিয়েই অযু করে নিবেন।
---আচ্ছা (মৃদু হেসে)
---তাহলে আমি আসি। আল্লাহ হাফেজ
---ফিআমানিল্লাহ।
উনি আমার গালে আলতো করে স্পর্শ করেই হাওয়ায় মিশিয়ে গেলেন।আমিও আর ১ সেকেন্ডে না দাড়িয়ে বাসায় চলে আসলাম।যদি আবার কিছু ঘটে সেই ভয়ে।আস্তে করে মেইম দরজা টা বন্ধ করে নিজের রুমে চলে আসলাম।অযুর কথা মনে পড়তেই ওয়াসরুমে দৌড়ে গিয়ে অযু করতে চলে গেলাম।অযু করতে গিয়ে খেয়াল করলাম হাতের ফোস্কা টা নেই।
---(ওমা ফোস্কা টা কোথায় গেলো?এতোক্ষণ তো ছিলো?তাহলে হঠাৎ উধাও হয়ে গেলো কি করে?)
এগুলো ভাবতে ভাবতে ফোস্কা যেদিকে ছিলো সেখানে হাত বুলাতে লাগলাম।ভালো করে হাত টা দেখার জন্য চোখের সামনে নিলাম।তখনি হাত থেকে সেই মিষ্টি সুগন্ধি টা পেলাম।আর তখনই মনে পড়লো এখানে আরহাম হাত বুলিয়ে ছিলো। আরহাম এখানে স্পর্শ করার আগ পর্যন্ত ফোস্কা টা ছিলো।কিন্তু আরহাম স্পর্শ করার পর এখন আর নেই।তার মানে কি আরহাম ই ঠিক করে দিয়েছে?এগুলোই ভাবছিলাম।ভাবতে ভাবতে অযু করে রুমে এসে বসলাম।কিছুক্ষণের মধ্যেই আযান দিলো।আযান শেষে নামাজ পড়ে নিলাম।তারপর প্রতিদিনের মতো করে ফুপির কাছে গিয়ে ফুপিকে সাহায্য করতে গেলাম।সময় অনুযায়ী বাবার চা, তার রুমে দেওয়ার জন্য গেলাম।
---আব্বুজান আসবো?
---হ্যা মা এসো।
---নাও তোমার চা
আব্বুজান চা টা নিলেন।আমার কেন যেন কাল রাতের বিষয়টি বাবাকে বলতে ইচ্ছে হচ্ছিলো
---আব্বুজান কিছু কথা ছিলো।
---হ্যা মা বলো।
---আসলে........
---নির্ভয়ে বলো মা কি বলবে?
---আসলে.......
বলেই বাবাকে কাল রাতের সব ঘটনা খুলে বললাম।বাবা চিন্তিত হয়ে পড়লেন।কিছুক্ষণ পর বললেন,
---তোমাকে যে বাচিয়েছে সে কে জানো?
---(বাবাকে কি আরহাম এর কথা বলে দিবো?না থাক না বলাই ভালো।কিন্তু মিথ্যাই বা কি করে বলি?)
---কি হলো মা বলো,চিনো তুমি তাকে?
---(আমি বাবার থেকে সত্যি লুকাতে পারবো না।)
---কে সে?
---বাবা তার নাম আরহাম।
---আরহামমম্ম?(অবাক হয়ে)
---হ্যা বাবা কিন্তু কি হয়েছে এমন করে উঠলে কেন?
.
.
---হ্যা বাবা কিন্তু কি হয়েছে এমন করে উঠলেন কেন?
---আরহাম কে আমি ভালো করেই চিনি মা।
---কি করে? (অবাক হয়ে)
---আরহাম আমার অনেক সাহায্য করেছে।এখন ও তোমায় সাহায্য করছে।সত্যিই আমরা কৃতজ্ঞ আরহাম এর কাছে।
---আচ্ছা আব্বুজান আপনি কি তাকে দেখেছেন?
---না মা। আজও তাকে দেখিনি।
---ওওওহ আচ্ছা।
---আর হ্যা সেদিন বলে ছিলে না কে এতো সুন্দর করে কুরআন তিলাওয়াত করে?
---হ্যা আব্বুজান।
---সেটা আরহাম ই করে।
---সত্যিইইই।(অবাক হয়ে)
---হ্যা।(হেসে)
---কিন্তু আব্বুজান উনি আমাদের এখানেই বা কি করে সবসময়?
---তা তো জানি না মা।
---কিন্তু এতোদিন আরহাম সম্পর্কে বলো নি কেন আমাকে?
---ভয় পেতে তুমি মা।
---আমি মটেও ভিতু না।
---হাহাহা তা তুমি আরহাম সম্পর্কে জানো কি করে?
আরহামের সাথে কথাবার্তা সেই প্রথম দিন থেকে যা যা হয়েছিলো সব খুলে বললাম।আব্বুজান আরও অবাক হয়ে গেলো,
--- এতোকিছু হয়ে গেলো আর আমি কিছুই টের পেলাম না??
--- ক্ষমা করে দিও আব্বুজান আসলে....
--- তবে যাই হোক সেদিন আরহাম যদি না থাকতো তাহলে হয়তো সত্যি সত্যিই তোকে হারিয়ে ফেলতাম।
--- ওওওহ আব্বুজান!
--- আর হ্যা আরহামের ব্যাপারে এবং এসবের ব্যাপারে কাউকে কিছুই বলবি না।কারণ আশেপাশে শত্রুর অভাব নেই।
--- আচ্ছা আব্বুজান তুমি যা বলবে তাই হবে।
--- কি হবে হুম? বাবা আর মেয়ে তো ভালোই গল্প করছো আর আমাকে ভুলেই গেলে??
---ও ফুপিমা।কি যে বলনা তোমাকে ছাড়া বুঝি গল্প জমে?
---হুম হুম হয়েছে এখন খেতে আসো।
বলেই এক সাথে গিয়ে সকালের নাস্তা টা সেরে নিলাম।নাস্তা করেই বাবা চলে গেলেন মাদ্রাসায়।আমি রুমে চলে আসলাম এবং ভাবতে লাগলাম কাল রাতের ঘটনা এবং আজ বাবার বলা কথা গুলো।আরহাম কেন সামনে আসে না?রাতে ঘুম না হওয়ায় ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে যাই মনে নেই।
এই দিকে,
---কি কাল সব ঠিক মতো করেছো তো?
---না হয়নি।(মাথা নিচু করে)
---কিইই কালও হলো না শিট।
---আমি আবার যাবো।
---তুই একটা মুর্খ তোকে দিয়ে কিছুই হবে না।
---দয়া করে আরেকটা সুযোগ দেন।দেখবেন সব ঠিকমতো করবো।
---ওকে দিলাম সুযোগ এবারও যদি না পারো তাহলে.... বলেই গলায় হাত দিয়ে ইশারা দিলো কেটে দিবে।
অবয়কটি ভয় পেয়ে যায় এবং বলতে লাগে,
---না না আমি পারবো।
---তো এখান থেকে যাও।
আদেশ পাওয়ার সাথে সাথেই অবয়কটি চলে গেলো।এবং সে আদেশকারী ভিলেনি হাসি দিয়ে বলতে লাগে,
---তোকে আমার হাত থেকে কেউ বাচাতে পারবে না মিহিতা।তোকে সহ তোর পুরো পরিবার কেই আমি ধ্বংস করে দিবো।ধ্বংস হবি তুই আর তোর পুরো পরিবার।
বলেই জোরে জোরে হাসতে লাগলো। আরেকজন লুকিয়ে সব শুনে এবং বলে,
---(আমি থাকতে কখনো মিহি না তার পরিবারের কোন ক্ষতি হতে দিবোনা।ওদের রক্ষার জন্যই আল্লাহ আমাকে তাদের রহমত হিসেবে পাঠিয়েছে। আর তোর বিনাশ মিহির হাতেই লেখা।আল্লাহ তোদের বোঝার তৌফিক দান করুক।আমিন)
ঘুম থেকে উঠে দেখি তিথি আমার পাশে বসে আছে।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ১২ঃ৪০ মিনিট বাজে।হায় আল্লাহ এতোক্ষণ ঘুমালাম?ভেবেই লাফ দিয়ে উঠলাম।
.
.
.
.
চলবে
(আজ কেউ ছোট বলবেন না। আজ আমার লেখার মতো অবস্থা নেই। লিখতে একদমি ইচ্ছে করছিলো না তবুও এই টা লিখলাম। কারণ এই গল্পটি আমি তেমন দিতে পারিনি। তাই দিলাম বদরাগি বর আজ আর দিবো না। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ধন্যবাদ)
তিথি আমার লাফ দিয়ে ওঠা দেখে উত্তেজিত হয়ে বললো,
---কি হলো মিহি এমন করে উঠলি কেন?
---আরে না না তেমন কিছু না ঘুমিয়েছি দেরি হয়ে গিয়েছে তাই আর কি এভাবে লাফ দিয়ে উঠেছি।
---ওওও আচ্ছা,
--- হুম,তা তুই কখন এলি?
---এইতো দুই ঘন্টা হলো।
---দুই ঘন্টা হলো আর তুই আমাকে একবার ডাকলিও না?(অবাক হয়ে)
---কেমনে ডাকবো বল এসে দেখি মরার মতো ঘুমাচ্ছিস তাই ভাবলাম না জাগানোই ভালো।
---হুম বুঝলাম।
এই বলেই দুইজন আরো অনেক গল্প করতে লাগলাম।কিছুক্ষণের মধ্যে যোহরের আযান কানে ভেসে আসলো।তিথি বললো,
---শোন আমি যাই হুম আল্লাহ হাফেজ।
---আল্লাহ হাফেজ। (মুচকি হেসে)
তিথি চলে গেলো।তিথি যাওয়ার পরপরই আমি শাওয়ার নিয়ে অযু করে নামাজ পড়ে নিলাম।এভাবেই কেটে গেলো দুইদিন।
এই দুদিনে আরহাম এর সাথে আর কথা হয়নি।না শুনেছি সেই মিষ্টি সুরের কুরআন তিলাওয়াত। মনটায় কেমন যেনো ব্যথা অনুভব হচ্ছিলো। মনে হচ্ছে কি জেনো একটা মূল্যবান কিছু হারিয়ে ফেলেছি।বুকের চিন চিন ব্যথা আর যে সহ্য হচ্ছে না।দুইরাত না চাইতেও আরহাম এর জন্য অশ্রু ফেলেছি।
তাহাজ্জুদ নামাজে আল্লাহর কাছে বলেছি,
---(হ্যা আল্লাহ তুমি দয়া করে আরহামকে এনে দাও।আমি যে আর পারছি না,তার থেকে দূরে থাকতে।প্রতিটা মিনিট যে দিন মনে হচ্ছে । আল্লাহ জানি না কেন মনে হচ্ছে তবুও তোমার দোহাই আরহাম কে ফিরিয়ে দাও আমার কাছে)
কাদতে কাদতে কথা গুলো এবং মোনাজাত শেষ করলাম।পাশে ফিরতেই দেখি একটা সাদা ছায়া।প্রথমে ভয় পেলেও পরে বুঝেছি যে এটা আরহাম।আমার ঠোটের হাসি ফুটে উঠলো।
---আ আ আপনি এখানে?
---আপনি যেভাবে আমাকে স্মরণ করেছেন না এসে থাকতে পারি?
---ক ক কে আপনাকে স্মরণ করলো?
---আপনি ছাড়া আর কেই বা করবে?
---ক ক কই স্মরণ করলাম?
---এই দুই দিনে অনেক বার করেছেন এখন এসে তো দেখি কেদে কেদে নিজের নাজেহাল অবস্থা বানিয়েছেন।
আমি কিছু বললাম না।ওনার দিকে একপলক তাকিয়ে মাথা নিচু করে ফেললাম।তারপর আমার চুপ থাকা দেখে আমার কাছে এসে আমার চোখের পানিগুলো পরম যত্নে মুছে দিলেন।আমি তা চোখ বন্ধ করে অনুভব করতে লাগলাম।আমি আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলাম না ওনাকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেদে উঠলাম এবং বললাম,
---কোথায় ছিলেন আপনি এই দুইদিম?কোথায় চলে গিয়েছিলেন?একবারও আমার কথা মনে পড়লো না যে আমি কি করে থাকবো?জানেন কত কষ্ট পেয়েছি আমি?সারাদিন রাত আপনার কথা মনে পড়েছে। বারবার আপনার কাছে ছুটে যেতে ইচ্ছে করছিলো।কেন বুঝেন না আমাকে?
বলেই আবার কাদতে লাগলাম।উনি মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলতে লাগছে,
---আচ্ছা শান্ত হোন।আমিতো এখন চলে এসেছি আমার মিহিতা পাগলির কাছে। কাদেনা মিহিতা পাখি।
---যান আপনার সাথে কাট্টি।আপনি খুব পচা আমাকে একটুও ভালোবাসেন না।শুধুই কষ্ট দেন।(অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে গাল ফুলিয়ে)
তিথি আমার লাফ দিয়ে উঠা দেখে উত্তেজিত হয়ে বললো,
---কি হলো মিহি এমন করে উঠলি কেন?
---আরে না না তেমন কিছু না ঘুমিয়েছি দেরি হয়ে গিয়েছে তাই আর কি এভাবে লাফ দিয়ে উঠেছি।
---ওওও আচ্ছা, তা তুই কখন এলি?
---এইতো দুই ঘন্টা হলো।
---দুই ঘন্টা হলো আর তুই আমাকে একবার ডাকলিও না?(অবাক হয়ে)
---কেমনে ডাকবো বল এসে দেখি মরার মতো ঘুমাচ্ছিস তাই ভাবলাম না জাগানোই ভালো।
---হুম বুঝলাম।
এই বলেই দুইজন আরো অনেক গল্প করতে লাগলাম।কিছুক্ষণের মধ্যে যোহরের আযান কানে ভেসে আসলো।তিথি বললো,
---শোন আমি যাই হুম আল্লাহ হাফেজ।
---আল্লাহ হাফেজ। (মুচকি হেসে)
তিথি চলে গেলো।তিথি যাওয়ার পরপরই আমি শাওয়ার নিয়ে অযু করে নামাজ পড়ে নিলাম।এভাবেই কেটে গেলো দুইদিন।এই দুদিনে আরহাম এর সাথে আর কথা হয়নি।না শুনেছি সেই মিষ্টি সুরের কুরআন তিলাওয়াত। মনটায় কেমন যেনো ব্যথা অনুভব হচ্ছিলো। মনে হচ্ছে কি জেনো একটা মূল্যবান কিছু হারিয়ে ফেলেছি।বুকের চিন চিন ব্যথা আর যে সহ্য হচ্ছে না।দুইরাত না চাইতেও আরহাম এর জন্য অশ্রু ফেলেছি।
তাহাজ্জুদ নামাজে আল্লাহর কাছে বলেছি,
---(হ্যা আল্লাহ তুমি দয়া করে আরহামকে এনে দাও।আমি যে আর পারছি না,তার থেকে দূরে থাকতে।প্রতিটা মিনিট যে এক দিন মনে হচ্ছে।আল্লাহ জানি না কেন মনে হচ্ছে তবুও তোমার দোহাই আরহাম কে ফিরিয়ে দাও আমার কাছে)কাদতে কাদতে কথা গুলো এবং মোনাজাত শেষ করলাম।পাশে ফিরতেই দেখি একটা সাদা ছায়া।প্রথমে ভয় পেলেও পরে বুঝেছি যে এটা আরহাম।আমার ঠোটের হাসি ফুটে উঠলো।
---আ আ আপনি এখানে?
---আপনি যেভাবে আমাকে স্মরণ করেছেন না এসে থাকতে পারি?
---ক ক কে আপনাকে স্মরণ করলো?
---আপনি ছাড়া আর কেই বা করবে?
---ক ক কই স্মরণ করলাম?
---এই দুই দিনে অনেক বার করেছেন এখন এসে তো দেখি কেদে কেদে নিজের নাজেহাল অবস্থা বানিয়েছেন।
আমি কিছু বললাম না।ওনার দিকে একপলক তাকিয়ে মাথা নিচু করে ফেললাম।তারপর আমার চুপ থাকা দেখে আমার কাছে এসে আমার চোখের পানিগুলো পরম যত্নে মুছে দিলেন।আমি তা চোখ বন্ধ করে অনুভব করতে লাগলাম।আমি আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলাম না ওনাকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেদে উঠলাম এবং বললাম,
---কোথায় ছিলেন আপনি এই দুইদিম?কোথায় চলে গিয়েছিলেন?একবারও আমার কথা মনে পড়লো না?যে আমি কি করে থাকবো?জানেন কত কষ্ট পেয়েছি আমি?সারাদিন রাত আপনার কথা মনে পড়েছে। বারবার আপনার কাছে ছুটে যেতে ইচ্ছে করছিলো।কেন বুঝেন না আমাকে?বলেই আবার কাদতে লাগলাম।উনি মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলতে লাগছে,
---আচ্ছা শান্ত হোন।আমিতো এখন চলে এসেছি আমার মিহিতা পাগলির কাছে। কাদেনা মিহিতা পাখি।
---যান আপনার সাথে কাট্টি।আপনি খুব পচা আমাকে একটুও ভালোবাসেন না।শুধুই কষ্ট দেন।(অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে গাল ফুলিয়ে)
---আরে বাবা এতো রাগ করছেন কেন?আচ্ছা আপনাকে কি 'তুমি' করে বলতে পারি?
---না পারবেন না।
---কেন?
---আমি বলেছি তাই।
---আচ্ছা তাহলে আমিই চলে যাই।
বলেই উনি চলে যেতে নিলেন আমি ওনাকে হাত ধরে আটকালাম এবং আবার জড়িয়ে ধরে কাদতে কাদতে বললাম,
---এমন করেন কেন আপনি?একটু অভিমান করার অধিকারও নেই আমার?বারবার চলে যাওয়ার কথা বলেন আমার বুঝি কষ্ট হয় না।আর আপনার যেভাবে ইচ্ছে সেভাবেই আমাকে ডাকতে পারেন।এতো পার্মিশন নেওয়ার কি আছে?
---আচ্ছা মিহি পাখি তোমার যা ইচ্ছা তাই হবে।বিয়ে করবে আমাকে?
বিয়ের কথা শুনে ওনার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালাম।
---কি করে সম্ভব? (অবাক হয়ে)
---তুমি চাইলে সবই সম্ভব।
---মানুষ আর জ্বীনের মিলন কেমনে সম্ভব আরহাম।(ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
---হয় মিহি শুধু তুমি আমি না আরও অনেক মানুষ আর জ্বীনদের বিয়ে হয়েছে,সংসার করেছে।
---কিন্তু কি করে?
---তুমি শুধু বলো বিয়ে করবে কিনা?
---হ্যা কিন্তু.....
---ভালোবাসায় সবই সম্ভব মিহি পাখি সবটা আমার উপর ছেড়ে দাও।(আমার গালে আলতো করে হাত রেখে বললো)
আমি সামান্য লজ্জা পেয়ে নিচে তাকিয়ে থাকি।কিছুক্ষণ নিরবতার পর উনি বললেন,
---আচ্ছা মিহি আমার যাওয়া লাগবে এখন,
---আরেকটু থাকেন না,
---না মিহি খুবই আর্জেন্ট যেতেই হবে।
---আচ্ছা সাবধানে যাবেন কেমন ফিআমানিল্লাহ।
--- আল্লাহ হাফেজ।
বলেই আরহাম চলে গেলো।আমিও আর দেরি না করে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়লাম। হয়তো এইটা ঘুম টা আমার জন্য বেশিক্ষণ এর ছিলো না। হলো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ঝড়, যেটা কখনো কল্পনা তেও ভাবিনি।
.
.
.
.
.
চলবে

(নেক্সট পর্বে ধামাকা আছে। গল্পের মোর অন্যদিকে যাবে।)
রাতে ঘুমাচ্ছিলাম।হঠাৎ মনে হলো আমি ভাসছি।কিন্তু কি করে সম্ভব? স্বপ্ন ভাবলাম তাই আবার নিশ্চিন্তে ঘুমোতে লাগলাম পর মূহুর্তে মনে হলো সত্যি সত্যিই ভাসছি।তাই চোখ খুললাম সাথে সাথেই। চোখ খুলতেই আমি ছিটকে দূরে গিয়ে একটা গাছের সাথে ধাক্কা খেলাম।হ্যা আমি এখন সেই জংগল টাতেই আছি।অদৃশ্য কিছু আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে এবং দূরে ফেলেছে।আমি অনেক ব্যথা পাই।পায়ে এবং হাতে পুরো শরীরেই ব্যথা অনুভব হচ্ছে।উঠে দাড়ানোর মতো শক্তিটাও নাই।হঠাৎ অদৃশ্য হাত আমার চুলের মুঠি ধরে শূন্যে উঠালো। ব্যথায় আমি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি কিন্তু বরাবরই ব্যর্থ হচ্ছি।ব্যথায় চিৎকার দিচ্ছি বার বার।হঠাৎ অদৃশ্য অট্ট হাসি শুনতে পেলাম।
---তোর সৌন্দর্য নিয়ে খুব বড়াই তাইনা?এখন দেখ তোর কি দশা করি।
---কে আপনি?কেন আমাকে আঘাত করছেন?কি ক্ষতি করেছি আমি আপনার?কেন আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন?ছাড়ুন আমায়।
---আহ এতো প্রশ্ন আমার একদমই পছন্দ না আর আজ তোকে তো মেরেই ছাড়বো।
বলেই আবার আমাকে অবয়কটি দূরে ছিটকে ফেললো।এবার আরো বেশি ব্যথা পেলাম।ঠোট ফেটে রক্ত বের হয়ে গেলো।কপালে হাত দিয়ে দেখি সেখানটাও কেটে গেছে।কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।এবার বহু কষ্টে উঠে দাড়ালাম এবং ভাবতে লাগলাম কি করবো।আর বেশি কিছু না ভেবে দোয়া দুরুদ পড়তে লাগলাম।কারণ এখন আমার একমাত্র এইগুলোই বাচাতে পারে।দোয়া দুরুদ পড়লে সামনা সামনি আক্রমণ না করলেও কিছুক্ষন পরপরই সাইড দিয়ে এসে আমাকে আছড় কাটছে এতে আমার পড়নের জামা প্রায় অনেকাংশ ছিড়ে গেছে।ভয়ে আর ব্যথায় কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।হঠাৎ মাথা কেমন জানি ঝিমঝিম করতে লাগলো।চোখে ঝাপসা দেখতে লাগলাম।বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে।আস্তে আস্তে জ্ঞান হারাতে লাগলাম।তারপর আর কিছু মনে নেই।সকালে যখন আমার জ্ঞান ফিরলো দেখি আমার চারপাশে অনেকেই দাড়িয়ে আছে।আশে পাশে তাকিয়ে দেখি আমি রাস্তায়।আব্বুজান আমার থেকে একটু দূরে দাড়িয়ে আছেন কেমন যেনো মনমরা হয়ে আছে।ফুপিমা মুখ লুকিয়ে কান্না করছে।আর যারা আমার চারপাশে দাড়িয়ে কানাকানি করছে।বুঝলাম না কেন সবাই এমন করছে?কি হচ্ছে এখানে?তারপর নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি আমি অর্ধলগ্ন অবস্থায়।আমি জোরে চিৎকার দিলাম এতে ফুপিমা আমার কাছে আসলো। আমি কাদতে লাগলাম।কখনো কোন পরপুরুষ আমার হাতের নখও দেখেনি আর আজ কিনা আমি অর্ধলগ্ন অবস্থায় তাও এতো গুলো মানুষের সামনে।বুক ফেটে কান্না আসছে কি থেকে কি হয়ে গেলো।ফুপিমা কে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কাদছি।ফুপিও কাদছে।
---এহ মেয়ের ন্যাকা কান্না দেখো এমন ভাব দেখাচ্ছে যে কিছুই জানেনা।(প্রতিবেশি)
---এভাবে কেন বলছেন আপা আমাদের মেয়ের কি দোষ?(ফুপিমা)
---সব দোষ তো আপনাদের ওই নষ্টা মেয়েটারই ছি ছি ছি এই মেয়ের চরিত্রে অনেক দোষ আছে।(প্রতিবেশী)
---হ্যা আপা এই মেয়ের চরিত্রে অনেক দোষ আছে।(আরেকজন)
---একদম আমার মেয়ের চরিত্র সম্পর্কে বাজে কথা বলবেন না।আমাএ মেয়েকে আপনারা ভালো করেই চিনেন তবুও এগুলো বলতে কলিজা কাপলো না?(বাবা)
---ওকে তো ভালো ভদ্রই ভাবতাম এবং চিনতাম কিন্তু এখন আসল রুপ তো বেরিয়ে গেছে সবার সামনে তাইনা?(প্রতিবেশী)
---মানে? কি বলতে চাইছেন আপনারা?(আমি)
---ওই পড়ামুখি নষ্টা মেয়ে একদম চুপ কর।লজ্জা করে না মাঝরাতে অন্য পরপুরুষের সাথে ফস্টিনস্ট করতে?এটা কি তোর প্রতিদিনের ব্যবসা নাকি?
---চুপ করুন আপনি ওকে কি কখনো নিজের চোখে অসভ্যতামি করতে দেখেছেন যে মুখে যা আসছে তাই বলছেন।আপনি একজন মেয়ে মনে রাখবেন।(ফুপিমা)
---ওরে বাপরে চোরের মায়ের বড় গলা।আপনাদের বংশই নষ্টা বংশ তাই একের পর এক ঝামেলা লেগেই আছে।আর ভাই আপনি আপনার এই নষ্টা মেয়ে কে বিয়ে দিয়ে নয়তো অন্য কিছু করে বিদায় করেন।এই নষ্টা মেয়ে আমরা আমাদের গ্রামে রাখতে দিবো না।(প্রতিবেশী)
---মিহি ওনাদের মেয়ে তাই ওকে রাখবে কি রাখবে না সেটা নিশ্চয়ই আপনাকে বলে দিতে হবে না আন্টি।(তিথি)
--- ওই ছোকড়ি নাষ্টা মেয়ের সম্পর্কে গুণগান গাইতে আসোস কেন রে?(প্রতিবেশি)
--- আর আপনি মিহির সম্পর্কে না জেনে নষ্টা নষ্টা করে চিল্লাচ্ছেন কেন??(তিথি)
--- তিথি তুই প্লিজ চুপ কর ওরা বড় তাই ওদের যা ইচ্ছা বলতে দে।(আমি)
--- বড় বলে যা ইচ্ছা বলবে??(তিথি)
--- আমরা যা ইচ্ছা বলতাসি না যদি এই মেয়ে নষ্টা নাই হতো তাহলে এমন অর্ধলগ্ন অবস্থায় কেন পড়ে ছিলো রাস্তায়??(অপরজন)
--- আরে এরে গ্রাম থেইকা বাইর করো নইলে আমাগো গ্রামের মাইয়া গো অমঙ্গল হইবো।(প্রতিবেশি)
--- হ হ ঠিক কইসেন।(অপরজন)
--- একদম বাজে কথা বলবেন না আমার মেয়েকে নিয়ে। আমার মেয়ে আমার সাথে আমার বাড়িতেই থাকবে।এতে আপনাদের অসুবিধে কোথায়?(বাবা)
--- উ হু হু একদম না আপনার এই চরিত্রহীন মাইয়ারে আমরা আমাগো গ্রামে রাখমু না।(প্রতিবেশী)
--- এসব শুনে লজ্জায় ঘৃণায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে। কেউ একবারও এটা জিজ্ঞেস করলো না আমার ওপর দিয়ে কী গেছে। কি হয়েছিল আমি ঠিক আছি কিনা ছি ভাবতে খারাপ লাগছে এই মানুষগুলোকে আপন ভেবেছিলাম এবং তাদের বিপদে-আপদে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তাদের উপকারের তারা এই প্রতিদান দিল? কতটা সম্মান করতাম এদের এনারা আজ আমাকে গ্রাম থেকে বের করে দিতে চাইছে। হে আল্লাহ এগুলো দেখার আগে আমার মৃত্যু কেন দিলে না কি এমন ভুল করেছিলাম যার জন্য এত কিছু সহ্য করতে হচ্ছে। যদি আত্মহত্যা মহাপাপ না হতো তাহলে হয়তো অনেক আগেই করে ফেলতাম।
আর আরহাম আপনি কোথায় একবারও কি আমার কথা মনে পরল না? আপনি না বলেছেন আমাকে সকল বিপদে সাহায্য করবেন তাহলে আজ কেন করলেন আপনি কি তাহলে আমার ঠকালেন?
এগুলো ভাবছিলাম আর নীরবে চোখের জল ফেলছিলাম।
---- ওই ছোকরি তুই এখনো গ্রাম ছেড়ে বিদায় হোসনি?
খাড়া তোরে পিডাইয়া বাইর করতাছি। (প্রতিবেশী)
বলেই আমার দিকে তেড়ে আসছিলেন তখনি,
.
.
.
.
.
চলবে
বলেই আমার দিকে তেড়ে আসছিলেন তখনি এক যুবক আমার সামনে এসে দাড়ালেন এবং বললেন,
---আমি ওকে বিয়ে করে সসম্মানে বউ করে নিয়ে যেতে চাই।
কন্ঠটা কেমন যেনো চেনা চেনা লাগছে।কিন্তু উনি কেন আমায় বিয়ে করে আমার সম্মান বাচাতে চায়?
--- (আমার আব্বুজান কে উদ্দেশ্য করে) দেখেছেন ভাইজান আপনার মাইয়ার নাগরের অভাব নাই। দেখেন একটা চইলা আসছে। খোজ নিয়ে দেখেন আরও নাগর বেড়োরে।(প্রতিবেশী)
---একদম আজেবাজে কথা বলেবেন না।আমি ওনাকে চিনিও না রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম তখনই আপনাদের ঝামেলা আমি দেখি।আর ওনাকে দেখে মনে হচ্ছে অনেকটাই অসুস্থ। একবারো ওনার খবর নিয়েছেন?আসলেও যে মেয়েটি কি করেছে তা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন?আজ তো ওনার কোনো বিপদও হতে পারতো?তা না করে ওনাকে এই অবস্থায় রেখে তামাসা শুরু করেছেন?উল্টা পাল্টা যাই মুখে আসছে তাই বলে যাচ্ছেন।আপনাদের বিবেক বলতে কি কিছু আছে?নাকি সেটা ব্যবহার করার প্রয়োজন বোধ করেননি আর আপনাদের মতো কিছু বিবেকহীন মানুষদের জন্য আজ ওনার মতো নিরীহ মেয়েরা বিনা কারণে কস্ট পাচ্ছে বড় বড় শাস্তি ভোগ করছে।(ছেলেটি)
---আমার গ্রামে এসে তুই আমাকেই ধমকাছ?(প্রতিবেশী)
---দুঃখিত আমি আপনাকে বা এখানের কাউকেই ধমকাচ্ছি না শুধু বুঝাচ্ছিলাম।আপনাদের মধ্যে মনুষ্যত্ব লোপ পেয়েছে সেগুলো আকড়ে ধরুন। কিন্তু আপনারা মনুষ্যত্বের কি বুঝেন বুঝলে তো মেয়েটা কে এখনো এই রাস্তায় রাখতেন না বাসায় গিয়ে তার প্রাথমিক চিকিৎসা করতেন তারপর কি হয়েছে ব্যাপার টা কি সেগুলোও তো জানতে চাইতেন তাইনা?? কিন্তু তা না করে রাস্তায় সবার সামনে মেয়েটা কে আর তার পরিবার কে অপমানই করে যাচ্ছেন।(ছেলেটি)
ওনার কথায় কেউ কিছু বলে না মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি যুবকটির দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।সে আমার হয়ে কতো প্রতিবাদ করছে।উনি আমার দিকে ফিরে একটি চাদর আমার গায়ে জড়িয়ে দিলেন।আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি তার দিকে।তারপর আবার কিছুক্ষণ পর আরেকজন বলেন,
--- তবে মিহি ভুল করুক বা না করুক ও কে আমরা গ্রামে রাখতে পারবো না।(প্রতিবেশি)
--- ঠিক আছে রাখতে বলেছে কে আমি ওকে সমস্ত সম্মান এর সাথে বিয়ে করবো। এমন দিন আসবে যেদিন আপনারা সবাই আফসোস করবেন ওর জন্য সেটা মাথায় রাখবেন।(ছেলেটি)
বলেই ছেলেটি আমার আব্বুজানের দিকে গেলেন এবং বললেন,
---আপনিই ওনার বাবা?
---হ্যা।
---একটু আমার সাথে অন্যদিকে আসুন কিছু কথা আছে।
বলেই ওনারা অন্যদিকে চলে গেলো এবং কথা বলতে লাগলো।আমি কিছুই বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে এসব?কিচ্ছুক্ষণ পর কথা বলে আবার আগের যায়গায় আসলেন।ব্যপার টা একটুও বুঝলাম না।বাবা এসেই বলা শুরু করলেন,
---আচ্ছা আপনাদের যদি এতোই সমস্যা তাহলে আমিও আর আমার মেয়েকে এই তুচ্ছ গ্রামে রাখতে চাই না।যেখানে আমার মেয়ের কোনো সম্মান নেই সেখানে থাকার কোনো প্রশ্নই আসে না।তাই আমি ঠিক করেছি আমার মেয়েকে এই ছেলেটির সাথে বিয়ে দিবো।
.
.
.
.
আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।কি বলছে বাবা আমি যে আরহাম কে ভালোবাসি। ওকে ছাড়া অন্য কাউকে মনে জায়গা দেওয়া যে আমার পক্ষে অসম্ভব। হ্যা আবার ওনাকে বিয়ে না করলেও যে বাবা আরও বেশি অপমানিত হবে।হে আল্লাহ তুমি আমায় এ কোন গোলকধাঁধায় ফেললা?কেন এতো পরীক্ষা নিচ্ছো আমার?এগুলোই ভাবছিলাম ততোক্ষনে কাজি এসে হাজির।কেউ একেবারের জন্যও জিজ্ঞেস করলো না এই বিয়েতে আমার মত আছে কি নেই?কি আর করার শেষে বাধ্য হয়েছি বিয়েটা করতে।আরহাম যদি আমায় সত্যি ভালোবাসতো তাহলে ও এসে বিয়েটা ভাঙ্গতে পারতো কিন্তু না সে আসেনি।এখন আমি এক অচেনা ছেলের বউ হয়ে গেলাম।এই ছেলেটির জায়গায় আরহাম থাকলে কি বেশি ক্ষতি হয়ে যেতো আল্লাহ? বিয়ে হওয়ার পর ফুপিকে ঝাপটা ধরে কাদতে লাগলাম। ফুপিও কাদছে।
--- ভালো থাকিস মা নিজের খেয়াল রাখিস ঠিকমতো এখন তোর যে অনেক দায়িত্ব।(কাঁদতে কাঁদতে)
--- তুমিও ভালো থেকো ফুপিমা আর বাবা নিজের খেয়াল রেখো ঔষুধ খেয়ো সময়মতো।(কাঁদতে কাঁদতে)
--- আমাকে ক্ষমা করে দিস মা আমার যে আর কোনো উপায় ছিলো না তোকে রক্ষা করার।
--- না আব্বুজান তোমার কোনো দোষ নেই আল্লাহ যা চাইছেন তাইতো হচ্ছে তাইনা??
--- হুম মা সবসময় আল্লাহর উপর ভরসা রাখিস দেখবি তোর খারাপ কিছু হবে না। আর বাবা আমার মেয়ে টা কে ভালো রেখো আমি তোমায় অনেক ভরসা করে ওকে তোমার কাছে তুলে দিচ্ছি।
--- চিন্তা করবেন না বাবা আমি আমার দায়িত্ব সম্পূর্ণ ভাবে পূরণ করবো আমি মিহিতার ছায়া হয়ে সবসময় তার পাশে থাকবো।
.
.
.
.
.
.
আমি ওনার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে ফেললাম কি থেকে কি হয়ে গেলো সেটাই ভাবছি। বাইরে তাকিয়ে দেখলাম কিছু বডিগার্ড। আমি তো অবাক বডিগার্ড মানে তো উনি অনেক বড়লোক তাই নিজের সেফটির জন্য বডিগার্ড রেখেছেন। বেশি কিছু ভাবলাম না।উনি আমার দিকে ওনার হাত বাড়িয়ে দিলেন আমার অনিচ্ছা সত্যেও ওনার হাতে আমার হাত রাখলাম। আরপর উনি আমার হাত ধরে গাড়ির কাছে নিয়ে যাচ্ছেন। গাড়ির পাশেও বডিগার্ড দাঁড়িয়ে আছেন। একজন বডিগার্ড গাড়ির দরজা খুলে দিলো। আমি ভেতরে গিয়ে বসলাম এবং আমার পাশে ছেলেটি বসলো মানে আমার স্বামী। তার বডিগার্ড দরজা টা লাগিয়ে ড্রাইভিং সিটে এসে বসলো আর ড্রাইভিং শুরু করলো। আমি একনজরে বাইরের তাকিয়ে তাকিয়ে রইলাম এবং ভাবতে লাগলাম আরহাম এর কথা।
.
.
.
.
.
চলবে

(সরি অল লেট হওয়ার জন্য। কেমন লাগলো জানাবেন ধন্যবাদ)
চুপচাপ জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি।উনি কিছুক্ষণ পরপরই জিজ্ঞেস করছে 'খারাপ লাগছে কিনা,খুদা লেগেছে কিনা Etc.আমার প্রতি একটু বেশিই কেয়ারিং।আমি এমনই একজন হাসবেন্ড চাইছিলাম কিন্তু আজ চাইছি না।ওনার বদলে যদি আরহাম থাকতো তাহলে কতোই না ভালো হতো।প্রায় দুইঘন্টা পর একটি বাড়ির গেট দিয়ে গাড়িটি ঢুকলো।আমি তো অবাক কারণ অদ্ভুত সুন্দর বাড়ি কখনোই দেখিনি,কল্পনাও করিনি।বাড়িটি সাদা পাথরের তৈরি।অনেক অংশই কাচের দেয়াল।বাড়িটির দুপাশে খুব সুন্দর ঝর্না।ঝর্নার মাঝে পদ্ম ফুল।বাড়িটি লোকালয় থেকে অনেকটা ই ভিতরে।চারপাশে গাছগাছালির বাহার।অসম্ভব সুন্দর, মন কারার মতো একটা জায়গা।আমি হা করে দেখছি বলে উনি বললেন,
---এগুলো পরেও দেখতে পারবেন এখন ভেতরে গিয়ে ফ্রেশ হবেন,রেস্ট নিবেন,নামাজও বাকি আছে।
ওনার কথায় কিছু টা লজ্জাবোধ করলাম।তারপর ওনার পেছনে পেছনে ভেতরে ঢুকলাম।ভেতরে ঢুকে তো আরো অবাক।বাইরের থেকে ভিতরটা আরো অনেক সুন্দর। সব দামী দামী আসবাবপত্র।উনি একজন সার্ভেন্ট কে ডাকলেন এবং বললেন রুমে নিয়ে ফ্রেশ হয়ে আমার হাতে পায়ে মাথায় মলম লাগিয়ে দিতে বলে।সার্ভেন্টও সম্মতি দিয়ে দুইজন আমাকে নিয়ে উপরের রুমে গেলো।তবে আমি সার্ভেন্ট রা নিকাব পরা শুধু তাদের চোখ গুলোই দেখা যাচ্ছে। রুমটায় পশ্চিম দিকে বিরাট বড় দেয়ালের সাথে আলমারি ফিক্সড করা,উত্তর দিকে মাঝখানে একটা বড় বেড রাখা এবং দুইপাশে দুইটা বেডবক্স ।উত্তরের দেওয়ালে বিরাট বড় আল্লাহ আরবি তে সুন্দর করে ডিজাইন করা।বেড বরাবর বেলকনি।দক্ষিণের বাতাস যেন মন ছুয়ে যাচ্ছে।তারপর আরেক পাশে টেবিলের উপর কুরআন এবং নানা ধরনের হাদিসের বই রাখা । সার্ভেন্ট আমায় বলে যেন আমি ফ্রেশ হয়ে নেই।আমিও সম্মতি জানিয়ে ফ্রেশ হতে গেলাম।ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখি কেউ নেই।তাই আমি বেরিয়ে গেলাম। বেরিয়ে দেখি বিছানায় একটা থ্রি পিছ। আমিও আর দেরি না করে পড়ে ফেললাম।কারণ বাসা থেকে জামা কাপড় আনিনি।চেঞ্জ করে পেছনে তাকাতেই দেখি একটা সার্ভেন্ট খাবার নিয়ে এবং হাতে মেডিসিন নিয়ে দাড়িয়ে আছে। একটা জিনিস খেয়াল করলাম ওদের দেখতে অদ্ভুত রকমের আর সবাই নিকাব পড়া।ওদের দিকে ফিরতেই একজন বললো খেয়ে নিতে।আমি ও খেয়ে নিলাম।তারপর আরেকজন সার্ভেন্ট আমায় আঘাতের স্থানে মলম লাগিয়ে দিতে লাগলো।ওদের হাত গুলোও ঠান্ডা কিন্তু কেন সেটা বুঝতে পারছি না।তবুও ওদের জিজ্ঞেস করলাম।
---তোমাদের হাত এতো ঠান্ডা কেন আর তোমরা নিকাবই বা পড়ে আছো কেন?
---বোন এখানের পরিবেশ ঠান্ডা এবং পর্দা করা ফরজ তাই মাহাজন(মালিক) আমাদের পর্দা করতে বলেছেন।
---ওওও আচ্ছা।
মলম লাগিয়ে ওরা চলে গেলো। আমিও বসে রইলাম।পরে নামাজের কথা মনে পড়লো। তাড়াতাড়ি ফজর এবং যোহরের কাজা নামাজ পড়ে নিলাম।জায়নামাজ টা ভাজ করে আলমারির দিকে গেলাম রাখতে।আলমারি খুলে অবাক।এতো বোরকা হিজাব কার জন্য রেখেছেন?জামা কাপড়ের জায়গায় বোরকা হিজাব?দেখি অন্য টা খুলে।অন্যটার পার্ট খুলে আরো অবাক।পুরোটাই জুয়েলারি দিয়ে ভরা। মনে হচ্ছে দুইটা জুয়েলারি দোকান উঠিয়ে নিয়ে এসেছে।আরেক পার্ট খুললাম,এখানে সব মেয়েদের জামাকাপড়।আমি আজ অনেক বেশি অবাক হচ্ছি।এই ছেলে এতো কিছু কখন ই বা আনলো?আরেক পার্ট খুলে আরো বেশি অবাক। পুরোটাতেই জায়নামাজ তসবিহ দিয়ে ভরা।শেষ একটাই আছে সেটা হয়তো ওনার। কিছু না ভেবে জায়নামাজ টা রাখলাম।
---কি করছেন আপনি?
কোন ছেলের কন্ঠ শুনে চমকে পেছনে তাকালাম।উনি আমার চমকানো দেখে হেসে বললেন,
---আরে ভয় পাবেন না আমিই আপনার স্বামী।
---আপনি এতো বোরকা,জামাকাপড় এবং জুয়েলারি কার জন্য এনেছেন?
---যাকে বিয়ে করেছি তার জন্যই তো সব।আর বিয়ে তো আপনাকেই করেছি তাই অবশ্যই আপনারই হবে তাই না?
---তাই বলে এতো গুলো?(অবাক হয়ে)
---হ্যা তো?
---আমি এতোকিছু দিয়ে কি করবো?
---পড়বেন।
---দরকার তো পড়বে অবশ্যই। আচ্ছা আপনি রেস্ট নিন। অনেক ধকল গেছে আপনার উপর। আমি যাই।
---ফিআমানিল্লাহ।
উনি চলে গেলেন।উনি যাওয়ার পর আমি বিছানায় শুতেই ঘুমিয়ে পড়লাম।
এইদিকে,
---কি সবদিকে ভালো ভাবে নজর রাখছো তো?
---হ্যা কুমার। কুমারী একদম সুরক্ষিত । আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। আল্লাহ ভরসা।
---হুম ঠিক আছে।
বলেই আমার রুমে চলে আসলো এবং আমার মাথার পাশে বসলো।আরহামের দুচোখ বেয়ে জল পড়ছে। হ্যা মিহিতার সাথে যার বিয়ে হয়েছে সে আর কেউ নয় আরহাম।সেই তার জন্য এতোকিছু করেছে।আরহাম পরম যত্নে মিহিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
---(মিস্টিপাখি আমায় ক্ষমা করো।তোমায় খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তাই না?চিন্তা করো না আমি তোমায় আর কষ্ট দিবো না।সব সময় আগলিয়ে রাখবী তোমায়।আর গত রাতের মতো কেউ তোমার সাথে আর কিছু করার দুঃসাহস করতে পারবে না।)
গতরাতে,
আরহান কে ওরা আটকিয়ে রেখেছিলো,যারা মিহিতার শত্রু।আরহামের একটু ভুলের জন্য ওরা তাকে কিছুক্ষণের জন্য আটকিয়ে রাখতে পেরেছিলো।আরহামের প্রথমে জ্ঞান ছিলো না।যখন জ্ঞান ফিরে তখন দেখে সে বন্ধি। হঠাৎ মিহিতার কথা মনে পড়লো তারপর চোখ বুঝে অনুভব করতে লাগলো।চোখ বন্ধ করতেই সে মিহিতার অবস্তা দেখতে পায়।তাড়াতাড়ি চোখ খুলে সে তার শক্তির সাহায্যে মুক্তি পেয়ে গেলো।মুক্তি পেতেই তাড়াতাড়ি মিহিতার কাছে গেলো।মিহিতা যখন পড়ে যাবে ঠিক তখনি আরহাম এসে ধরে ফেলে।মিহিতার তখন জ্ঞান ছিলো না।মিহিতার অবস্তা দেখে আরহাম আগুনের দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো অবয়কটির দিকে।অবয়কটি হেসে উঠলো এবং বললো,
---ইসস আরেকটু দেরি করতে পারলি না?আরেকটু দেরি করলেই তো এই মেয়েকে উপরেই পাঠিয়ে দিতাম।
---আমি থাকতে তো মিহিতার কিছু হতেই দিবো না আজ তো তুই আমার কলিজা তে আঘাত করেছিস।তোর দিন শেষ।তোকে সেদিন ই মারা উচিত ছিলো কিন্তু তবুও তোকে সুযোগ দিয়েছিলাম ভালো পথে আসার জন্য কিন্তু তা না করে আবার এসেছিস ওকে মারতে।তোকে আজ আমার হাত থেকে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ রক্ষা করতে পারবে না।(চরম রেগে)
বলেই আরহাম ঝাপিয়ে পড়লো অবয়কটির উপর।প্রায় অনেক ধস্তাধস্তির পর আরহাম অবয়কটাকে মেরে ফেললো।তারপর মিহিতার সামনে যায় এবং দেখে এখনো জ্ঞান ফিরে নেই।আরহাম মিহিতাকে জংগল থেকে বের করে ওদের বাড়ির বাইরে আসে কারণ এই অবস্তায় আরহাম বাসায় যেতে পারবে না।তাই রাস্তায় শুয়ে তার ক্ষত স্থান গুলো সারাতে থাকলো।হঠাৎ আবার পেছন থেকে আরহামকে কেউ একজন আঘাত করলো আরহাম এতে অনেকটা রেগে যায় এবং পিছে তাকায়।পিছে তাকিয়ে দেখে আরেকটি অবয়ক। অবয়ক আরহামের দিকে তেড়ে আসছিলো তাই তাকে মাড়তে আরহাম ও যায় অনেকক্ষণ ধস্তাধস্তির পর একেও আরহাম মেরে ফেলে।কিন্তু আরহাম অনেকটাই দেরি করে ফেলে যার কারনে ফজরের আযান দিয়ে দেয় এবং লোকজনের চলাচল শুরু হয়ে যায় এবং দুই-তিন জন মিহিতাকে ওই অবস্তায় দেখে ফেলে। তাই আরহাম আর কিছু করতে পারে না।
এগুলোই আরহাম ভাবছিলো এবং চোখের জল ফেলছিলো।আরহাম মিহিতার কপালে গভীর চুমু দিলো এবং রুম থেকে বেরিয়ে গেলো কারণ কিছুক্ষণ পর আছরের আযান দিবে।তার আবার নামাজের আগে জ্বিনরাজ্যে থাকতে হবে।
.
.
.
.
.
চলবে।
(আস্তে আস্তে সব রহস্যের সমাধান হবে
কেমন লাগলো জানাবেন ধন্যবাদ)

আস্তে আস্তে চোখ খুলছি।উফফ মাথা ভিষণ ব্যাথা করছে।ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ৭ টা বাজে।আল্লাহ এতোক্ষণ ঘুমালাম অথচ কেউ ডাকলো না। হায় আল্লাহ আমার নামাজ?দৌড়িয়ে ওয়াসরুমে গেলাম ওযু করতে।ওযু করে এসে আলমারি থেকে জায়নামাজ নিয়ে আছরের কাজা সহ মাগরিবের নামাজও আদায় করে নিলাম।দুই ওয়াক্তের নামাজ পড়তে পড়তে এশারের আযানও দিয়ে দিলো তাই সেটাও আদায় করে নিলাম।রুমের মধ্যে বসে আছি হঠাৎ কিছু সার্ভেন্ট এসে আমায় খাইয়ে অন্য রুমে নিয়ে গেলো এবং সাজাতে শুরু করলো।আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না হচ্ছে টা কি?
---আরে আরে তোমরা আমায় সাজাচ্ছো কেন?
---নিয়ম অনুযায়ী আজ আপনার বাসর রাত বোন তাই।
আমি আর কিছু বললাম না। কিই বা বলবো আমি? বলার মতো যে কিছুই নেই।তবে উনি যদি আজ অধিকার খাটাতে আসে তাহলে আঘাত করবো হুম।বেশ কিছুক্ষণ সাজিয়ে আমায় আবার রুম টাতে নিয়ে গেলো।আমি তো অবাক পুরো রুম ফুল দিয়ে সাজানো।সত্যি অসম্ভব সুন্দর লাগছে।তারপর ওরা আমায় বিছানায় বসিয়ে দিয়ে চলে গেলো।কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।কিছুক্ষণের মধ্যেই উনি রুমে ঢুকলো।আমি মনে মনে ঠিক করে রাখলাম কি করবো।উনি আমার পাশে এসে বসলেন এবং বললেন,
---মিষ্টি পাখি এখনো আমার উপর রেগে আছো?
আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকালাম। কারণ এই মিষ্টিপাখি তো একমাত্র আরহামই আমায় বলে। তাহলে কি?
---আ....আ...র...আর....হাম।
উনি মাথা নাড়িয়ে বলে হ্যা।
---হ্যা আমি তোমার আরহাম।
আমি ওনাকে জড়িয়ে ধরলাম এবং ডুকরে কেঁদে উঠলাম।
---আগে বললে কি হতো হ্যা?এভাবে কেন কষ্ট দিলেন আমায়?জানেন আমি কি অবস্থা দিয়ে গেছি আপনাকে ছাড়া।মনে হচ্ছিল আপনাকে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলে অন্য কারো স্রী হয়ে গেছি।
---পাগলি একটা।আমি ছাড়া আর কারই বা সাহস আছে তোমাকে বিয়ে করার?
---বাবাকে কি করে সামলিয়েছেন?
---ছোট থেকেই তোমার আর আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিলো।
---কিইইইইই?কি করে আর আপনিই বা আগে বললেন না কেন আমায়?(অবাক হয়ে)
---সেইটা তোমার বাবা ভালো জানে।(মুচকি হেসে)
---হুহ।
আরহাম আমার ভেংচি তে হেসে দিলো।হঠাৎ ওনার হাসি বন্ধ হয়ে গেলো এবং সাথে সাথে চোখ অফ করে ফেললো।এতে আমি অনেকটাই ভয় পেয়ে যাই।
---ক.....ক....কি হলো...এমন ব্যভার করলেন কেন?
---তোমার বাবা ফুপি বিপদে আছে।
---মানে কি?(অবাক হয়ে)
---এতো কিছু বলার সময় নেই এখনি যেতে হবে।
---তাহলে চলুন।
তারপর আরহাম আমার হাত ধরলো সাথে সাথে আমরা আমার বাসার সামনে এসে দাড়ালাম।অবাক হলেও ওনার সাথে তাড়াতাড়ি ভেতরে গেলাম।ভেতরে গিয়ে আরো অবাক। ফুপি আর বাবা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে এবং তাদের আশে পাশে অনেকগুলো অবয়ক। অবয়ক গুলো আমার এবং আরহাম এর কাছে আসতেই ওনার বডিগার্ড গুলো ওদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে।আমি অবাক হয়ে দেখছি এবং ভাবছি, তাহলে এরাও মানুষ নয় জ্বীন?বডিগার্ড গুলো ওদের মারতে লাগছিলো তখন আরহাম তাড়াহুড়ো করে বললো,
---মিহি এদের আটকাতে হলে একটা জিনিসের প্রয়োজন আর আমি জানি সেটা তোমার কাছেই আছে।
---আমার কাছে আবার কি করে থাকবে আরহাম?আমিতো....
---এতোকিছু বলার সময় নেই। তুমি শুধু এই ধাধাটার সমাধান করো তাহলেই হবে।
'রাতের অন্দকার এবং
দিনের আলো
দুটোতেই মনকে আলোকিত করে
অবশ্যই,রাজার ধনের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।
ধাধা টা পুরো মাথার উপর দিয়ে গেলো। রাতের অন্ধ কার এবং দিনের আলো মানে টা কি?আবার বলছে রাজার ধনের শ্রেষ্ঠ? কি সেটা কি হতে পারে?
হঠাৎই আমার এবং আরহামের উপর হামলা হয়।আরহাম দুইহাতে সব সামলাচ্ছে এবং বলছে,
---মিহি আমি ওদের বেশিক্ষণ সামলাতে পারবো না তাই বলছি যা করার তাড়াতাড়ি করো।তাড়াতাড়ি সেই জিনিসটা বের করো।
আমি আর ভাবতে পারলাম না তাড়াতাড়ি রুমে গেলাম।হয়তো সেখানেই কিছু পাবো।এদের সবাইকে এড়িয়ে রুমের দিকে গেলাম এবং সারাঘর তন্ন তন্ন করে খুজতে লাগলাম হঠাৎ কেউ জোরে আমাকে আঘাত করলো।আমি দূরে ছিটকে পড়লাম।প্রচুর ব্যথা পেলাম।একদমি আসতে পারছি না।হঠাৎ কারো হাসি শুনতে পেলাম।হাসিটা অনেক চেনা। চোখ খুলে সামনের মানুষ টা কে দেখে অবাক+অনেকটা কষ্ট পেলাম।অজান্তে চোখ দিয়ে দুইফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।
---তিথি তুই?
---হ্যা আমি। কেনো কাকে আশা করেছিলি হুম?
---তাহলে এসবের পিছে তুই.....
---হা...হা...হা...খুব ভালোই তো বুঝিস তাহলে।
---এতো বড় ধোকা দিলি?
---হ্যা হ্যা দিয়েছি ধোকা।তোদের সকলকেই শেষ করতে ধোকা দিয়েছি।
আজ শরীরের আঘাতের থেকে মনের আঘাতটা বেশি লাগছে।।যাকে নিজের বোন এর মতো মানলাম সেই আজ আমার এবং পরিবারের এতো বড় ক্ষতি চায়?
---কেন করলি? এমন কি ক্ষতি করেছি আমরা তোর?যার জন্য তুই এতো বড় ধোকা দিলি?
---উমম। হুম খুব ভালো প্রশ্ন।আচ্ছা তোর মনের খটখটানি টা দূর করি নাহয়।তাহলে শোন আমি তোর ফুপির একমাত্র মেয়ে।
---কিইইইই?
---অবাক হলি?হ তবে এটাই সত্যি আমি জ্বীনপুত্র এবং মানুষকন্যার মেয়ে।
---তাহলে কি ফুপা?.......
---হ্যা উনি একজন জ্বীন ছিলো।আএ আর ওই মহিলা মানুষ হওয়ায় আমি অর্ধেক জ্বীন আর অর্ধেক মানুষ।
---ছি সে তোর মা হয় আর তুই তার ব্যপারে এভাবে কথা বলছিস।
---মা বা বাবার দায়িত্ব হলো তাদের সন্তানকে নিজের সাথে আগলে রাখা কিন্তু তারা কি করলো যখন জানলো আমি বদ্জ্বীনদের সরদারিনী হবো তখন তারা আমায় ছুড়ে ফেলে দিলো। তারপর বদজ্বীনদের সরদার আমার সন্ধান পায় এবং আমায় লালনপালন করে।তারপর থেকেই সব জানতে পারি তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম আমি সবাইকে শেষ করে দিবো।যখন ৮ বছর বয়স তখন আমি এখানে এসে তোর সাথে বন্ধুত্ব করি।আস্তে আস্তে প্লান করি বাবাকে কি করে মারবো।এবং ভেবেও নিয়েছিলাম তবে তোর মা এসে বাধা হয়ে দাড়ালো তাই তাকেও মেরে ফেললাম।
---তার মানে তুই আমার মাকে মেরেছিস?
---হ্যা হ্যা।আমিই মেরেছি সাথে নিজের বাবাকেও আর তোর বাবাকেও মারতে চেয়েছিলাম অনেকভাবে তবে পারিনি তোর কারনে।তুই ছিলি এদের রক্ষাকবজ।তোকে অনেকভাবে মারার চেষ্টা করি তবে ওই আরহাম বারবার তোকে বাচিয়ে দেয়।তবে আজ তোকে কেউ বাচাতে পারবে না।আমি নিজে তোকে আজ শেষ করবো।আমি উঠে দাড়িয়ে একটা হাসি দিলাম এবং হাতে হাত গুজে বললাম,
---আজ আমার নয় তোর শেষ দিন। তুই ভাবতেও পারবি না তোর সাথে কি হতে চলেছে।
---মানে কি বলতে চাস?
---আমার ধাধার উত্তর।
বলেই মার্কেট থেকে কেনা সেই লাইট আর মিনি কুরআন টা নিলাম এবং মনে মনে আয়াতুল কুরসি পড়ে বাতিটার মধ্যে ফু দিলাম। সাথে সাথে সেটা খুব সুন্দর এবং বড় তলোয়ার এ পরিণত হলো।আমার এক হাতে কুরআন টা এবং আরেক হাতে তলোয়ার।তলোয়ার টা হাতে আসতেই নিজের শরীরের আঘাত গুলো চলে গেলো।তিথি চমকে উঠলো তবুও হেসে বললোক্স
---এগুলো তোর কোন কাজেই আসবে না কারণ এর থেকেও বেশি শক্তি আমার।
---সেটা সময়ই বলবে।
তিথি কি পড়ে আমার দিকে ছুড়ে মারলো।তলোয়ারটি নিজে নিজেই সেটা সরিয়ে দিলো।বুঝলাম না কিছুই। মনে হচ্ছে আমি তলোয়ারকে নয় তলোয়ার আমায় চালাচ্ছে।তবে তিথিকে আমি ছাড়বো না আজ ওর জন্য আমার মা এবং ফুপাকে হারিয়েছি।তলোয়ারটা দিয়ে একেবারে তিথির মাথায় আঘাত করলাম।তিথি আস্তে আস্তে করে মোমের মতো করে গলতে লাগলো।তারপর ছাই হয়ে গেলো।আমি এতোক্ষণ চুপচাপ কাদছিলাম।যতোই হোক তিথিকে অনেক ভালোবাসতাম।আর আজ আমার হাতেই ওর মৃত্যু হলো।হঠাৎ কাধে কারো স্পর্শ পেলাম, পিছে তাকিয়ে দেখি আরহাম আহত অবস্থায়।
---তুমি পেরেছো মিহি।
---আমি তো নিজের....
---যারা প্রতারণা করে তাদের এই হালই হয়।
আমি কিছু বললাম না।
---আচ্ছা তুমি এগুলো কি করে করলে?
---জানিনা একটা অদৃশ্য কন্ঠস্বর আমায় এইগুলো বলেছে।আমি তার কথা অনুযায়ীই সব করেছি।
---কিন্তু কে এইসব সম্পর্কে জানে?
---আমি।
আবার সেই কন্ঠটা কানে ভেসে আসলো। আরহামের দিকে তাকালাম তার চেহারা দেখে বুঝতে পারলাম সেও শুনতে পেরেছে।আমাদের সামনে একটা অবয়ক আস্তে আস্তে ভেসে উঠেছে আর সেটা হচ্ছে ফুপা।
---ফু..ফুপা আপনি?(অবাক হয়ে)
---হ্যা মা আমি।
---আপনি কি করে?(আরহাম)
---সেটা বলা যায়, মিহিকে সঠিক পথ দেখাতে।(ফুপা)
---ফুপা আপনার সাথে সত্যিই খারাপ হয়েছে।
---শোন মিহি মা আরহাম আমার ভাইয়ের ছেলে।ওকে আমি দায়িত্ব দিয়েছি তোমার রক্ষা করার।(ফুপা)
---আর সেই থেকেই আমি সবসময় তোমার আশে পাশেই ছিলাম।(আরহাম)
---মা তুমি অনেক বড় একটা কাজ করেছো।আমি তোমার জন্য এখন নিশ্চিন্ত। আমি মুক্তি। তোমরা তোমাদের নতুন জীবন সুন্দর ভাবে কাটাও দোয়া করি।
বলেই ফুপা উধাও হয়ে গেলো। আমি তলোয়ার টা আরহাম কে দিলাম। আরহামের হাতে যেতেই তলোয়ার টা আরও সতেজ হউএ গেলো এবং আরহামও সুস্থ হউএ গেলো।
--- এইটাই আমাদের জ্বিন তলোয়ার মিহি এটাকে খুব যত্নে রাখতে হবে দাড়াও আমি কিছুক্ষণের মধ্যে আসছি।
বলেই আরহাম অদৃশ্য হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ এর মধ্যে ফিরে আসলো এবং আমায় জড়িয়ে ধরলো।
--- এখন আমরা সুরক্ষিত মিস্টিপাখি আমাদের কোন শত্রু নেই তুমি আর আমি দুজনে মিলে সৎ ভাবে জ্বিনরাজ্য পরিচালনা করবো। কি থাকবে তো আমার পাশে?
আমি ওনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম হ্যা শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত আপনার পাশে থাকবো আপনিই যে আমার অনুপ্রেরণা, আমার বাচার একমাত্র কারণ।
--- ভালোবাসি খুব তোমায় মিস্টি পাখি।