Showing posts with label পরিবর্তন হোক ভালোবাসায়. Show all posts
Showing posts with label পরিবর্তন হোক ভালোবাসায়. Show all posts

26.12.23

পরিবর্তন হোক ভালোবাসায়

 পরিবর্তন হোক ভালোবাসায়

Write : Sabbir Ahmed
______________________________
সকাল আটটা ত্রিশ মিনিট....
ইমতিয়াজ তার চার বছর বয়সের ছেলেটাকে খাবার খাওয়াচ্ছে। ছেলেটার নাম আরিয়ান। আরিয়ান সকালের নাশতা খেতে অনিচ্ছুক। ইমতিয়াজ নানান বাহানায় আরিয়ান কে খাওয়াচ্ছে। এদিকে ইমতিয়াজের স্কুলের সময় হয়ে গেছে। ইমতিয়াজ পেশায় একজন শিক্ষক। একটি প্রাইমারি স্কুলে ৪ বছর যাবত শিক্ষকতা করছেন৷ পরিবারে আরিয়ানের মা মিসিং। উনি এই দুইজনকে রেখে আগেভাগে পরলোকগমন করেছেন৷
,,
আরিয়ানকে খাওয়াতে যখন ইমতিয়াজ অতিষ্ঠ তখন ইমতিয়াজ বিড়বিড় করে বলে...
-তোমার এত তাড়াতাড়ি কেনো চলে যেতে হবে? এখন আমার কি অবস্থা হচ্ছে সেটা তো দেখতেছো তুমি। তুমি যেমন দুষ্ট ছিলে, তোমার ছেলেটাও তেমন হয়েছে। আর গেলে তো গেলেই ও হওয়ার ২ মাস এর মধ্যে যেতে হলো তাই না?
,,
ইমতিয়াজ এর বিড়বিড় করে কথা বলা দেখে আরিয়ান বলল...
-বাবা তুমি কি বলতেছো? (আরিয়ান)
-তোর মায়ের কাছে তোর দুষ্টামির কথা বলে দেই (ইমতিয়াজ)
-বাবা আমি খাবো না
-নে বাবা একটু মুখে নে
-না বাবা, মা আসুক তারপর
-তোর মা....
,,
হঠাৎ কলিং বেল এর আওয়াজ। ইমতিয়াজ খাবার বাটিটা আরিয়ানের সামনে রেখে দরজা খুলতে গেলো।
ইমতিয়াজ দরজা খুলতেই দেখতে পেলো অল্প বয়সী এক সুন্দরী রমণী।
মেয়েটা ইমতিয়াজ এর অপরিচিত। মেয়েটা সালাম দিলো, ইমতিয়াজ সালাম এর উত্তর নিলো। তারপর.....
-আপনি ইমতিয়াজ ভাইয়া? (মেয়েটি)
-জ্বি, তুমি কে? (ইমতিয়াজ)
-আমি মৃদুলা
-মৃদুলা! চিনতে পারলাম না
-আমি ইতি আপুর ছোট বোন
-ওহহ তুমি! ভেতরে আসো
,,
ইমতিয়াজ ইতির পরিবারের কাউকে দেখেনি। ইমতিয়াজ আর ইতির ভার্সিটিতে প্রেম ছিলো। প্রেমের বয়সের ১ বছরের মাথায় তারা বিয়ে করে। ইতির পরিবার ছিলো সম্ভ্রান্ত, আর অন্য দিকে ইমতিয়াজ এতিমখানা থেকে বড় হয়ে ওঠা মানুষ। ইতির পরিবার অনেক চেষ্টা করেছিলো ইতিকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু ইতি সবকিছু ছেড়ে তার ভালোবাসার মানুষের কাছেই থেকে গিয়েছিলো। ইমতিয়াজ কখনো ইতিদের বাড়িতে যায়নি, সে বাড়ির কোনো মানুষ ইমতিয়াজ এর সাথে দেখা করেনি।
,,
কিন্তু আজ হঠাৎ করে ইতির বোন পরিচয় দিয়ে একজন হাজির হয় তাও ইতি মারা যাওয়ার ৪ বছর পর!
ইমতিয়াজ মৃদুলা কে কোনো প্রশ্ন না করে ভেতরে আসতে বলে।
মৃদুলা ভেতরে এসে আরিয়ান কে জড়িয়ে ধরে কান্না করা শুরু করে।
,,
এই আরিয়ান এর যখন জন্ম হলো তখন ইতিদের বাড়িতে খবর পাঠানো হয়েছিলো, সেসময় কেউ আসেনি। কেউ ফোন করে খোঁজ ও নেয়নি।
ইতির হুট করে চলে যাওয়ার পরও ইমতিয়াজ ইতিদের বাড়িতে খবর পাঠায়, তখনও কেউ আসেনি।
,,
এত দূরাবস্থা, আর ছোট বাচ্চাটাকে নিয়ে জীবন কাটিয়েছে ইমতিয়াজ। আরিয়ানকে দেখাশোনা করার জন্য একটা বুয়া রেখেছিলো। কিছুদিন আগে সে চলে গেছে। সে চলে যাওয়ার পর থেকেই ইমতিয়াজের উপর চাপ আরও বেড়েছে।
,,
এদিকে ইমতিয়াজ স্কুলে ফোন করে ছুটি চেয়ে নিলো। যেহুতু মেহমান আসছে তাও আবার অচেনা। কখনো কথা হয়নি শুধু একবার নাম শুনেছিলো। তাকে এখন চলে যেতে বলে, স্কুলে যাওয়াটা খারাপ দেখায়৷
,,
মৃদুলা কান্না থামিয়েছে। আরিয়ান মৃদুলার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
মৃদুলা বাবাই শোনাই বলে আরিয়ানের গালে চোখে মুখে চুমু খাচ্ছে। হঠাৎ আরিয়ানা মৃদুলা কে বলল..
-তুমি কে? (আরিয়ানা)
-তোমার ছোট আম্মু (মৃদুলা)
-আম্মু?
-হ্যাঁ
,,
আরিয়ানা দৌড়ে তার বাবার কাছে গেলো।
-বাবা ঐটা আমার আম্মু? (আরিয়ান)
-হুমমম (ইমতিয়াজ)
,,
আরিয়ানা দৌড়ে আবার মৃদুলার কাছে গেলো, কিছুক্ষণ কথা বলে আরিয়ান নিজের মতো খেলতে লাগলো।
,,
ইমতিয়াজ আর মৃদুলা বিছানায় বসে কথা বলা শুরু করলো...
-আমি শুধু তোমার নাম শুনেছিলাম, ভুলে যাওয়ার জন্য দুঃখিত (ইমতিয়াজ)
-কি যে বলেন ভাইয়া, দোষ তো আমাদের (মৃদুলা)
-তুমি আমাকে কিভাবে খুঁজে পেলে?
-আপনারা যে ভার্সিটিতে পড়তেন, সেখানে আমি এখন পড়ছি৷ আমার সাবজেক্ট ইংরেজি, আর সবেমাত্র প্রথম বর্ষ শেষ করেছি
-হুমম ভালো, কিন্তু পেলে কিভাবে?
-এক বছরে অনেক খোঁজ করার পর, আপনার ডিপার্টমেন্ট থেকে তথ্য নিয়ে খুঁজেছি৷ আপনি তো নাম্বার ও চেঞ্জ করে ফেলেছেন
-হ্যাঁ
-সেটা চেঞ্জ না করলে আপনাকে আগেই পেয়ে যেতাম
-হুমমম
-আমি আসাতে আপনার সমস্যা হয়ে গেলো তাই না?
-আরে না না কি বলো! সমস্যা হবে কেনো
,,
হুট করেই মৃদুলা কান্না শুরু করে দিলো। ইমতিয়াজ ভাবছে বোনের কথা মন পড়েছে তাই হয়তো কান্না করছে৷ ইমতিয়াজ তাকে কি বলে সান্ত্বনা দিবে তা খুঁজে পায় না৷ সে চুপ করে বসে রইলো।
,,
পাশের রুমে খেলতে থাকা পিচ্চি আরিয়ান দৌড়ে আসলো। দৌড়ে এসে মৃদুলার কোলে উঠলো। মৃদুলা দ্রুত চোখের পানি মুছলো।
মৃদুলাকে কান্না করতে দেখে আরিয়ানের চোখেও পানি আসলো।
বয়স চার হলেও বেশ পাকনা হয়েছে সে। ঢং এর স্বরে বলল..
-মা, বাবা তোমাকে মেরেছে? (আরিয়ান)
-হুমমম (মৃদুলা)
-আমি কখন মারলাম? (ইমতিয়াজ)
-দাঁড়াও আমি বাবাকে মাইর দিয়ে আসি(আরিয়ান)
,,
আরিয়ান তার বাবার পিঠে কয়েকটা কিল ঘুষি দিয়ে হুংকার ছেড়ে বলল...
-এরপর আম্মুকে মাইর দিলে আমি আর আম্মু তোমার কাছে থাকবো না (আরিয়ান)
-না, বাবা তোমরা থাকবে৷ আমি তোমার আম্মুকে মারবো না (ইমতিয়াজ)
,,
আরিয়ান মৃদুলার চোখে মুখে কয়েকটা আদর দিয়ে আবার খেলতে চলে গেলো।
-আচ্ছা তুমি তাহলে বসো আমি একটু বাইরে থেকে আসি(ইমতিয়াজ)
-কই যাবেন? (মৃদুলা)
-একটু বাজার করতে হবে
-বুঝেছি, আপনি আলদা করে বাজার করতে যাচ্ছেন। কিচ্ছু করা লাগবে না,
-নাহহ তুমি আসছো কিছু তো একটা করাই লাগবে
-রান্না কি আপনিই করেন?
-মাঝে মাঝে, যখন বুয়া না আসে
-ওহহহ
-আচ্ছা তাহলে তুমি বসো
-ভাইয়া এখন বাইরে যেতে হবে না, পরে যাইয়েন
-পরে যাবো?
-হুমমম
-আচ্ছা। বাসার সবাই কেমন আছে?
-হ্যাঁ সবাই ভালো
-আমাদের নিয়ে কি তোমাদের বাড়িতে কথা হয়?
-না, শুধু আমি আর মা মাঝে মাঝে বলি। মা কান্না করে খুব
-আমি তোমার পরিবারের মধ্যে থেকে সুখ জিনিসটা কেড়ে নিয়েছি তাই না?
-সেটা না, সবাই চাইলে আপনাদের মেনে নিতে পারতো, কিন্তু কোন জেদে যে তাড়া নেয় নি। জানেন আপুর এই ঘটনার পর আমাকে নিয়ে তাদের ভয়, আমার তো পড়া বন্ধ হতেই নিয়েছিলো। হাতে পায়ে ধরে, অনেক বুদ্ধি খাটিয়ে, তাদের অনেক কথা দিয়ে এখন এই পর্যন্ত আসছি
-হুমমমমমম
-ভাইয়া আপনি কি খুব কম কথা বলেন?
-তোমার এটা মনে হলো কেনো?
-এই যে আপনার মধ্যে গম্ভীর ভাব
-না আমি যথেষ্ট পরিমাণ কথা বলি। আর বাচ্চাদের পড়াই তো। অনেক কথা বলতে হয়
-আপনি তো প্রাইমারী স্কুলের টিচার
-হুমমম
-আচ্ছা এই ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন?
-না, এটা আমি কিনে নিয়েছি
-বাহহহ,
-তোমার আপু আমাদের সংসার নিয়ে যে পরিকল্পনা করেছিলো, আমি ঠিক সেভাবেই এগোচ্ছি। ওর ইচ্ছে ছিলো একটা ফ্ল্যাট কেনার। সেই কিনলাম, কিন্তু কপালের লিখন দেখো, ও দেখে যেতে পারলো না
-হুমমম, আচ্ছা আমার আপু আপনার কাছে কেমন ছিলো?
-বিশাল সমুদ্রের মাঝে এক নির্জন দ্বীপের মতো। যে দ্বীপে শুধু আমার বসবাস ছিলো
-বাব্বাহহ, উদাহরণ টা দারুণ ছিলো
-আচ্ছা তুমি বসো, আমি তোমার জন্য চা করে নিয়ে আসি
-না ভাইয়া এখন কিছু খাবো না
-এখানে আসার পর থেকে যা বলছি তাতেই না করছো, কেনো?
-আপনাদের দেখতে আসছি দেখি, অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত হইয়েন না
-তাই?
-হুমম, আপনাদের দেখে মনে হচ্ছে আমার আপু এখানেই আছে৷ আপনাদের মাঝেই বেঁচে আছে....
।।
।।
পরিবর্তন হোক ভালোবাসায়
Part : 2
Write : Sabbir Ahmed
_____________________________
-হুমম আপনাদের দেখে মনে হচ্ছে আমার আপু এখানেই আছে। আপনাদের মাঝেই বেঁচে আছে(মৃদুলা)
-কি যে বলো না তুমি! তোমার আপু থাকলে তো, তোমাকে দেখে এলাহী কান্ড ঘটিয়ে ফেলতো (ইমতিয়াজ)
-হুমমম তা ঠিক বলেছেন
-আচ্ছা তুমি কোথায় থাকো হোস্টেলে?
-না আমরা চারজন ব্যাচমেট আর একজন বড় আপুকে নিয়ে একটা ফ্ল্যাট এর রুম ভাড়া নিয়ে থাকি
-বাহহ এক রুমে এত্তো মানুষ
-হুমমম সমস্যা হয় না আমাদের
-পড়ায় তো সমস্যা হওয়ার কথা
-আমাদের হয় না
-যাক না হলেই ভালো
,,
ইমতিয়াজ আর মৃদুলার আরও কিছুসময় কথা হলো।
দুপুর গড়ানোর একটু আগ মূহুর্তে ইমতিয়াজ বাজার করতে গেলো।
এরই মধ্যে মৃদুলা আরিয়ানের সাথে খেলতে খেলতে অনেকটাই মিশে গেলো। আরিয়ান তো একদম ভেবেই নিয়েছে যে এটা তার মা৷
,,
দুপুরে আরিয়ানের ঘুমানোর অভ্যাস আছে। আরিয়ানকে নিয়ে তার বাবা যখন স্কুলে নিয়ে যেতো সেখানেও দুপুর হলে ঘুমিয়ে যেতো।
,,
মৃদুলা আরিয়ান কে ঘুম পাড়িয়ে তার কাছেই শুয়ে আছে। কিছুক্ষণ পরই ইমতিয়াজ বাজার করে ফিরলো।
,,
-বাহহ ছেলে তো দেখছি ঘুমিয়ে গেছে (ইমতিয়াজ)
-হ্যাঁ, আপনার আসতে এতো দেড়ি হলো, আর এতো বাজার করেছেন কেনো? (মৃদুলা)
-এটা কি কোনো বাজার হলো? তোমার বোন থাকলে এই বাজার দেখে আমাকে বকা দিয়ে বলত কম হয়েছে
-জ্বি না ভাইয়া সেটা বলত না। আচ্ছা আপনি এগুলো আমার কাছে দিয়ে বসেন (মৃদুলা বিছানা থেকে নেমে আসলো)
-আরে না না তুমি এগুলো নিয়ে কি করবা? তুমি বসো, আমি তোমার জন্য রান্না করি
-আমি মেয়ে মানুষ রান্না টা আমিই করি। আপনি বসেন
-না তুমি মেহমান
-তো কি হয়েছে, দেন বলছি
-আচ্ছা আমি কিছুটা হেল্প করি
-না ভাইয়া, আপনি আরিয়ানের কাছে থাকেন
-না থাকলেও চলবে। স্কুলে ও একাই ঘুমিয়ে থাকে
,,
মৃদুলা বাজারে ব্যাগ নিয়ে কিচেনে ঢুকলো, পিছু পিছু ইমতিয়াজ ও ঢুকলো। মৃদুলা ব্যাগ থেকে জিনিসপত্র বের করতে করতে বলল...
-আপনার তো আরিয়ান কে নিয়ে খুব কষ্ট হচ্ছে, একটা বিয়ে করলেও তো পারেন (মৃদুলা)
-তুমি তো ছোটো তোমাকে কিছু আমি না বলি (ইমতিয়াজ)
-আমি ভার্সিটিতে যথেষ্ট বড় হয়েছি। আপনি বলতে চাচ্ছেন আমার বোনকে আজীবন মনের মাঝে গেঁথে রাখবেন তাই তো?
-হুমমমমম
-কষ্ট যে হচ্ছে
-তবুও
-শোনেন আপনি একটা বিয়ে করলে আপনার আর আরিয়ানের, দুজনেরই উপকার হবে। আরিয়ানের সর্বদা খেয়াল রাখার জন্য একজন তো দরকার
-আমি পারবো না,,,
-বিয়ে করলে একটু শান্তিতে থাকতে পারবেন। মাথা ঠান্ডা রেখে আমার আপুর কথা ভাবতে পারবেন
-নতুন বউ কি সেটা ভাবতে দিবে?
-নতুন বউ তো আর সবসময় আপনাকে জ্বালাবে না,
-আচ্ছা তুমি কি ঘুরতে আসছো? নাকি আমার বিয়ের বন্দোবস্ত করতে আসছো?
-দেখেন ভাইয়া, আপনার কথা ভাবছি না, আমি ভাবছি আমার বাবু সোনার কথাটা। ওরে দেখার পর আমর কত্ত খারাপ লাগছে আপনাকে বোঝাতে পারবো না
-আমি কি করবো বলো? আমার হাত পা বাঁধা
-কে বেঁধে রেখেছে?
-তোমার বোন
-আরিয়ানের কথা আপনার ভাবা উচিত
-নতুন মানুষ এসে আরিয়ানকে নাও ভালোবাসতে পারে
-বুঝেছি, সব কথার শেষ কথা আপনি বিয়ে করবেন না?
-না
-আপনার আর কি হবে, আমার বাবাই এর শুধু কষ্ট হবে৷ মায়ের আদর পাবে না
-তুমি এসে মাঝেমাঝে আদর দিয়ে যাবে
-ভাইয়া, একটা সমস্যা হয়ে যাবে মনে হয়
-কি সমস্যা?
-আরিয়ান তো আমার গলা জড়িয়ে ধরে অনেক কথাই বলল। আমাকে যেতে দিবে না৷ আমাকে নাকি অনেক খেলনা দিবে, ঘুরতে নিয়ে যাবে। আমাকে কোথাও যেতে দিবে না
-ও মুখে না বলে, আমি সামলে নিতে পারবো
-কষ্ট হবে
-তবুও পারবো
-যদি বেশি কান্না করে, আমাকে দেখতে চায়
-কোনো একটা গল্প বলে কাটিয়ে নিবো৷ তুমি চিন্তা করো না তো
-ওর যে অনেক কষ্ট হবে, আমাকে দেখতে পাবে না
-তাহলে কি তুমি ওর কাছে থাকবে নাকি?
-উহুমমম সেটা বলছি না
-আমরা বাপ-বেটা যেমন ভাবে সব মানিয়ে নিয়েছি, এখনও মানিয়ে নিতে পারবো
-হুমম আচ্ছা আপনি পেঁয়াজ মরিচ কেটে দেন, আমি বাকি সবগুলো করছি
-রান্না পারো তো?
-আমার রান্না খাওয়ার পর, আপনার মুখে লেগে থাকবে অনেকদিন
-তাহলে তো তোমাকেই বুয়া হিসেবে রাখতে হবে
-ঢং করেন তাই না? বুয়া বুয়া না করে একটা বউ নিয়ে আসেন
-বাপরেহহহ বোন জামাই এর সাথে এভাবে কেউ কথা বলে?
-এভাবেই তো বলে
,,
কিচেনে আরও অনেক কথা হলো।
রান্না শেষে দুজন এক টেবিলে বসে দুপুরের খাওয়াটা শেষ করে নিলো।
খাবার খাওয়া শেষ হতে না হতেই আরিয়ানের ঘুম ভাঙে।
,,
মৃদুলা আরিয়ানকে ফ্রেশ করিয়ে নিজ হাতে খাবার খাইয়ে দেয়৷ আরিয়েনের এক জায়গায় বসে খাবার খাওয়ার অভ্যাস নেই। সে এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি করবেই। মৃদুলা আরিয়ানের সাথে সমান তালে দৌড়াচ্ছিলো।
,,
এই দৃশ্য দেখে ইতির কথা মনে পড়লো তার। চোখের কোণে বার বার পানি আসছিলো, ইমতিয়াজ শার্টের হাতায় বার বার তা মোছার চেষ্টা করছিলো।
,,
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো। এবার মৃদুলার ফিরতে হবে। আরিয়ান মৃদুলাকে ছাড়ছেই না৷ ইমতিয়াজ বার বার মৃদুলা কে যেতে বলছিলো।
মৃদুলা আরিয়ানকে ছেড়ে যেতে চাচ্ছিলো না৷
,,
মৃদুলা ডিসিশন নিলো রাতে আরিয়ান ঘুমানোর পর সে চলে যাবে।
ইমতিয়াজ তাতে সম্মতি জানালো।
,,
সেদিন সন্ধ্যায়...
-এই মৃদুলা(মৃদুলা যখন আরিয়ানকে নিয়ে বিছানায় বসে খেলছিলো, তখন ইমতিয়াজ ডাকলো)
-জ্বি ভাইয়া বলুন (ইমতিয়াজ)
-আমি একটু আসি
-কোথায় যাবেন
-বাইরে
-কেনো?
-সারাদিন তো রুমেই ছিলাম, একটু বাইরে ঘুরে আসি
-না আপনি রুমেই থাকুন
-যাবো আর আসবো
-কত মিনিট?
-আধ ঘন্টার মতো
-আচ্ছা,
-আর এর মধ্যে যদি পারো ওকে...(ইমতিয়াজ ইশারায় বুঝালো যেন আরিয়ানকে ঘুম পাড়ায়)
,,
ইমতিয়াজ আধ ঘন্টার কথা বলে, এক ঘন্টা পর বাসায় ফিরলো।
দরজায় কলিং বেল বাজাতেই মৃদুলা দরজা খুলে দিলো। এমন মনে হচ্ছিলো যে মৃদুলা দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো।
,,
মৃদুলা দরজা খুলেই এক চিৎকার দিয়ে ইমতিয়াজ কে ঝাপটে ধরলো। মৃদুলা ইমতিয়াজকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় ভূত ভূত করে চিল্লচ্ছিলো।
ইমতিয়াজ বার বলছে থামো থামো, মৃদুলা চিৎকার করছে তো করছেই।
,,
মৃদুলা ভয়ে যে ইমতিয়াজ কে জড়িয়ে ধরেছে, তার কোনো খেয়ালই ছিলো না। ইমতিয়াজ মৃদুলাকে শেষ পর্যন্ত থামালো। মৃদুলার যখন হুশ ফিরলো যে সে ইমতিয়াজ কে জড়িয়ে ধরে আছে, সাথে সাথে ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে
গিয়ে দাঁড়ালো।
,,
-কি হয়েছে? কোথায় ভূত? (ইমতিয়াজ)
-....(মৃদুলা হাত দিয়ে ইশারা করে দেখালো কিচেনে)
-ভেতরে অনেক নড়াচড়ার শব্দ হয়েছে তাই তো?
-হুমমম
-কেউ হয়তো উপর তলায় বা পাশের বিল্ডিং এ কোনো কাজ করছে। আমিও নানারকম শব্দ পেয়েছি।
-না ওটা ভূত
-কি যে বলো না তুমি, এই দূষিত শহরে ভূত আসবে কোথা থেকে?
-ভূত নেই? (মৃদুলা ভয়ে ভয়ে)
-না নেই। আর আরিয়ান ঘুমিয়েছে?
-হুমমম
,,
বেডরুমে যাওয়ার পর...
-যাক ঘুমিয়েছে তাহলে, আচ্ছা এখন তুমি তাহলে যাও (ইমতিয়াজ)
-না যাবো না (মৃদুলা)
-যাবে না মানে?
-অনেক রাত হয়েছে, আমার একা যেতে এখন ভয় করবে। আর এমনিতে আমি অনেক ভয় পেয়েছি
-আজ দুপুরে রান্না করার সময় বলছিলে তুমি বড় মানুষ হয়ে গেছো। তুমি যে এখনো ছোটো, তার প্রমাণ এটাই
-না আমি যথেষ্ট বড় হয়েছি, ঐ শুধু ভূতে একটু ভয় পাই আর কি....
-......(ইমতিয়াজ এক গাল হাসলো)
।।
।।
পরিবর্তন হোক ভালোবাসায়
Part : 3
Write : Sabbir Ahmed
_______________________________
-না আমি যথেষ্ট বড় হয়েছি, ঐ শুধু ভূতে একটু ভয় পাই আর কি...(মৃদুলা)
-...... (ইমতিয়াজ এক গাল হাসলো)
-আপনি হাসছেন!
-হ্যাঁ
-এটা ঠিক না। একজনের খারাপ অবস্থায় এভাবে ব্যঙ্গ করে হাসতে নেই
-আচ্ছা সরি, হাসবো না আর। এখন কি করবে তুমি?
-আচ্ছা আপনি আমাকে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য এমন করছেন তাই না?
-ছিঃ ছিঃ কি বলো এগুলা? আমি তো আরিয়ানের জন্য বললাম। কালকে তোমাকে দেখলে আর যেতে দিবে না
-আমি ভোরে উঠেই চলে যাবো। আর আমার বাসা তো এখান থেকে পাঁচ ছয় কি.মি. দূরে, যত ভোর হোক যেতে পারবো
-আচ্ছা তাহলে থাকো
-আপনি কি করবেন এখন?
-আমি?
-হুমমম
-স্কুলের কিছু কাজ আছে সেগুলো শেষ করতে হবে
-ওহহহ। আচ্ছা আপনি কাজ করেন আমি বসে বসে দেখি
-উমম ঠিক আছে
,,
দুজনে মিলে ড্রয়িং রুমে বসলো। ইমতিয়াজ তার কাজে মনোনিবেশ করেছে আর মৃদুলা একটু পর পর আড় চোখে ইমতিয়াজ কে দেখছে।
ইমতিয়াজ বিষয় টা খেয়াল করে বলল...
-কিছু বলবে? (ইমতিয়াজ)
-না ভাইয়া কিছু বলব না (মৃদুলা)
-ওহহ, আচ্ছা বাড়িতে যাবা কবে?
-মাস খানেক পর
-একটা কথা বলি রাখবা?
-জ্বি বলেন
-আরিয়ানাকে একবার তোমার সাথে নিয়ে যেয়ো
-উমম কিন্তু আমি নিয়ে কি বলব?
-যেটা সত্যি সেটাই বলবা
-সবকিছু সামলাবো কিভাবে, যদি কেউ সমস্যা করে বসে
-আমার বিশ্বাস আরিয়ানাকে দেখে কেউ কিছু বলবে না৷ উল্টো সবাই খুশি হবে
-তাহলে আপনিও সাথে যাবেন আরও ভালো হবে
-নাহহ আমি গেলে সমস্যা হবে। তার চেয়ে ভালো একটা সময় করে তুমি ওকে ঘুরিয়ে নিয়ে এসো
-হুমমম
,,
খোশগল্পে অনেকটা সময় কাটলো।
সেদিন রাতে মৃদুলা ইমতিয়াজের বাসায় থেকে ভোরেই চলে যায়। যাওয়ার সময় ইমতিয়াজ এর কন্টাক্ট নম্বর নিয়ে গিয়েছিলো, মাঝে মাঝে আরিয়ানের খোঁজ খবর নেওয়া জন্য।
,,
এদিকে আরিয়ান প্রায় সময়ই আম্মু আম্মু বলে কান্না করে। তার বাবাকে বলে আম্মুকে এনে দিতে। মৃদুলা দুই একদিন পর পর যখন ইমতিয়াজ কে কল করে খোঁজ খবর নেয় তখন আরিয়ানের এই অবস্থার কথা জানায়৷
,,
একদিন রাতে আরিয়ান ঘুমানোর পর ইমতিয়াজ নিজে থেকেই মৃদুলাকে কল করে বসে। ঐ পাশে মৃদুলা কল রিসিভ করে বলে..
-জিপি কি কল রেট কমিয়ে দিলো নাকি? হঠাৎ কল করলেন যে!(মৃদুলা)
-এর মানে আমি কিপ্টে তাই না? (ইমতিয়াজ)
-আমি একবারও বলেছি?
-ভাবার্থ তো তেমনি
-আপনি দুলাভাই হন, তাই একটু মজা করলাম
-হুমমম। কি করো?
-এই তো পড়তেছি, আপনি?
-আমি বসে আছি
-আরিয়ান ঘুমিয়েছে?
-হুমমম একটু আগে
-আমার জন্য কি কান্না করে?
-ঐ যে ওকে যখন খাইয়ে দেই তখন একটু কান্না করে
-আমি একদিন গিয়ে আপনার জন্য সমস্যা করে দিয়েছি তাই না?
-আরে না ঠিক আছে
-আমি আর কখনো আপনার ওখানে যাবো না
-কেনো?
-আমি গেলে যে আপনার সমস্যা হয়
-ওহহহ
-....(মৃদুলা হুট করেই কল টা কেটে দিলো)
-এর আবার কি হলো? আমি তো আসার জন্য জোর করিনি। কি যে কপাল আমার, যাই করি না কেনো সবার কাছে কোনো না কোনো দিক দিয়ে খারাপ হয়ে যাই।
,,
সেদিন রাত বারোটায় ইমতিয়াজ এর কাছে কল করে মৃদুলা। ইমতিয়াজ কল রিসিভ করে বলে...
-এতো রাতে, কোনো সমস্যা হয়েছি কি? (ইমতিয়াজ)
-সরি (মৃদুলা কণ্ঠস্বর নিচু করে)
-কি আবোল তাবোল বলছো?
-তখন হুট করে কল কেটে দিয়ে আমি ফোন অফ করেছিলাম সেই জন্য
-আমি তো কিছু মনে করিনি
-সেইটা না, হুট করে কল কেটে দেওয়া ঠিক হয়নি আমার
-না ঠিক আছে
-রাগ করেননি তো?
-না, রাগ করার কি আছে?
-তবুও
-আচ্ছা ঘুমাও অনেক রাত হয়েছে
-একটা কথা বলার জন্য কল করেছিলাম
-হ্যাঁ বলো
-আমি কাল আপনার ওখানে যাবো
-কাল আসবে??
-হুমম একবারে, থাকার জন্য
-মানে!
-আমি আপনার ওখানে থাকবো, আরিয়ানকে দেখবো আর লেখাপড়া করবো
-কিন্তু তোমার বাড়ির মানুষ?
-তারা বুঝবে না
-তবুও এটা ঠিক না, আর আমার এখানে রুম তো ফাঁকা নেই
-আমি অন্য রুমে কেনো থাকবো?
আমি আরিয়ানের সাথে থাকবো
-আর আমি?
-আপনি কিচেনে ঘুমাবেন
-এটা কোনো কথা?
-এটাই কথা
-সবাই কি বলবে?
-কেউ কিছু বললে বলবেন যে, কাজের লোক রেখেছি
-সত্যি তুমি আসবে?
-হুমম এটাই ফাইনাল
-আচ্ছা কখন আসবে?
-আপনি তো বিকেলে স্কুল থেকে ফিরেন৷ আমি ব্যাগপত্র নিয়ে সন্ধ্যার আগেই পৌঁছে যাবো
-আচ্ছা ঠিক আছে
,,
পরদিন ইমতিয়াজ স্কুল থেকে ফেরার সময় বেশি করে বাজার নিয়ে বাসায় ফেরে, কারন বাসায় স্থায়ী মেহমান আসছে।
,,
সন্ধ্যার পর মৃদুলা তার ব্যাগ নিয়ে ইমতিয়াজ এর বাসার নিচে দাঁড়ায়৷ ইমতিয়াজ বাসার নিচে আসে ব্যাগ গুলো নেওয়ার জন্য৷
,,
-বলেছিলে সন্ধ্যার আগে আসবে (ইমতিয়াজ)
-একটু লেট হলো সব গোছাতে। মিস করেছেন নাকি হুমম??(মৃদুলা)
-সবসময় দুষ্টামি করা তাই না?(ইমতিয়াজ)
-কই দুষ্টামি করলাম? এখন থেকে তো আরও বেশি দুষ্টামি করবো
-.....আমার কপালে যে কি শনি আসলো আল্লাহ জানে (ইমতিয়াজ বিড়বিড় করে বলল)
-এই এই এই আপনার আমার নামে কিছু বলেছেন
-না, কই কিছু বলিনি
-বিড়বিড় করে কিছু একটা বলেছেন, আমি আপনার ঠোঁট নাড়ানো দেখেছি
-আমি ঠোঁট নাড়িয়ে হিসেব করছি
-কিসের?
-সাংসারিক হিসেব
-আমার নামে কিছু নয়তো?
-নাহহ তোমার নামে হবে কেনো?
-যদি আমাতে বিরক্ত হন আমি চলে যাবো
-না বিরক্ত হবো না
-হইছে এবার ব্যাগ গুলো নিয়ে চলেন, আমিও একটা নেই
-হুমমম
-আরিয়ান কি করে?
-রুমেই খেলছে
-আমাকে দেখলে কি যে বলবে ও
-খুশিই হবে,
-প্রথমে তো কান্না করবে কতো কথা বলবে
-সে তার মা কে যা ইচ্ছে বলুক, আপনি এতো টেনশন করছেন কেনো? এটা আমাদের মা ছেলের ব্যাপার
-আমি তো ওর বাবা
-কিন্তু আমি তো আপনার বউ না, সো এতো সিরিয়াস হতে হবে না আপনার
-ওকে ওকে
-নাকি মনে মনে বউ ভাবেন আমাকে? (মৃদুলা একটু শয়তানি ভাবে হাসলো)
-আবার!
-কি?
-দুষ্টামি শুরু হয়েছে
-কোথায় দুষ্টামি করলাম? এটা তো আপনার মনের কথা
-আমার মনে এসব ভাবনা আসেনি
-সুফি
-বেশি বেশি হচ্ছে কিন্তু (ইমতিয়াজ একটু গরম হলো)
-সত্যি সত্যি আমি দুষ্টামি করেছি ভাইয়া সরি
-হুমমম
,,
মৃদুলা রুমে আসলো, আরিয়ান তার মা কে দেখে যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো সেখানে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ ফোঁপানোর পর হু হু করে কান্না করে দিলো।
মৃদুলা দৌড়ে গিয়ে এলোপাথাড়ি চুমু খেয়ে এটা ওটা বলে কান্না থামানোর চেষ্টা করলো।
,,
ইমতিয়াজ এই কান্ড দেখে মুচকি হেসে কিচেনে গেলো রান্না করতে।
সবে মাত্র কাজ শুরু করেছে..
-এই এই আমার রুমে আপনি কি করেন? (মৃদুলা)
-তোমার রুম! আমি রান্না করছি (ইমতিয়াজ)
-এখন থেকে এই রুমে আপনাকে যেন না দেখি। বের হন এখনি
-কি বলছো এগুলা?
-এখন থেকে রান্না আর ঘরের কাজের দায়িত্ব তো আমার
-আরে নাহহ ঘরের কাজ বুয়া এসে করে যাবে, সকালের রান্না বুয়া করবে। রাতের টা আমি
-তাহলে আমি আসলাম কি জন্য?
-লেখাপড়া আর আরিয়ানাকে একটু দেখার জন্য
-আমি আরিয়ানের কি হই?
-খালা মণি
-ও কি আমাকে খালা মণি বলে?
-না,
-কি বলে?
-আম্মু
-তো আপনি আরিয়ানের আম্মু কে মানে আমার বোনকে কেমন করে রাখতেন? সে কি সব কাজ করতো না?
-হুমমম করতো
-তো আমি কি করলে কি সমস্যা? আমি তো আরিয়ানের আম্মু
-সব কাজ করলে তোমার লেখাপড়ায় সমস্যা হবে
-কিচ্ছু হবে না, আমি সামলে নিবো। আপনি এখন যান
-একটু হেল্প করি
-একটুও না, যান আরিয়ানাকে দেখেন আমি রান্না করছি
-আচ্ছা যাচ্ছি
-এই শোনেন
-হ্যাঁ বলো
-এখন থেকে আমাকে আমার নাম ধরে ডাকবেন না
-কি বলে ডাকবো
-আরিয়ানের আম্মু.....
।।
পরিবর্তন হোক ভালোবাসায়
Part : 4
Write : Sabbir Ahmed
______________________________
-কি বলে ডাকবো? (ইমতিয়াজ)
-আরিয়ানের আম্মু (মৃদুলা)
,,
মৃদুলা পেছন ফিরে দেখলো ইমতিয়াজ একটু বিরক্তি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
-আমি কি ওর আম্মু না? (মৃদুলা)
-হুমমম (ইমতিয়াজ)
-তো এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?
-ঠিক আছে যাচ্ছি
-জ্বি যান এখন
,,
রাতের পুরো রান্নার কাজ এক হাতে করলো মৃদুলা। এবার যদি ইমতিয়াজ এর স্বস্তি মিলে।
,,
সমস্যা টা বাঁধলো রাত দেড়টায়। ইমতিয়াজ ঘুমিয়েছিলো, হঠাৎ কে যেন তার চোখে পানির ছিট দিলো।
চোখ খুলে দেখতে পেলো মৃদুলা তার সামনে দাঁড়িয়ে হাসছে।
,,
ইমতিয়াজ ভালো ভাবে খেয়াল করে দেখলো তার হাত পা একটা চেয়ার এর সাথে শক্ত করে বাঁধা৷ সে বিছানায় নেই ফ্লোরে চেয়ারে বসে আছে। বিছানায় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আরিয়ান।
,,
ইমতিয়াজ মৃদুলার চোখ দেখে বুঝতে পারলো, কাজটা মৃদুলা করেছে।
মৃদুলা ফ্লোরে বসলো। তারপর বলল...
,,
-আমার আসার একমাত্র কারণ হলো...(মৃদুলা থামলো)
-প্রতিশোধ নেওয়া (ইমতিয়াজ)
-রাইট,
-কিসের প্রতিশোধ
-আমি শুনেছি, আমার বোনকে তুই মেরে ফেলেছিস
-আমি তো প্রথম দিনই বললাম সব ঘটনা
-সেটা মিথ্যা ছিলো। আমি এখানে অভিনয় করে আসছি। তোকে খুঁজে পেতে আর এখানে স্থান নিতে আমার অনেক কষ্ট করতে হয়েছে রে
-এখন কি করতে চান আপনি?
-আপনি! আপনি করে বলছেন? ভয়ে তুমি থেকে আপনি
-এখন কি আমাদের দুজনকে মেরে ফেলতে চান
-না না, মারবো তো তোকে। আরিয়ানাকে আমি নিয়ে যাবো, আমাদের গ্রামের বাড়ি
-আচ্ছা শোনেন আপনার বাসার লোকজন আমার নামে ভুল ছড়িয়েছে
-না সেটা একদমই ছড়ায়নি।
-আমার সব কথা শুনে, সব দেখে অবিশ্বাস মনে হচ্ছে আপনার?
-হ্যাঁ, আর আমি তোকে খুন করবো
-কিভাবে?
-রান্না ঘর থেকে বটি নিয়ে এসে
-আচ্ছা শোনেন এতো কষ্ট করতে হবে না আপনার। আপনি বিষ কিনে নিয়ে আসেন। আমি নিজে খেয়েই মারা যাবো। আমাকে মেরে আপনার খুনি হতে হবে না
-তোর ভয় হচ্ছে না? এখনো স্বাভাবিক হয়ে আছিস কিভাবে?
-আপনার মধ্যে থেকে তো ভুল তাড়াতে হবে। আমি আমার প্রিয়তমা কে মারিনি এটা প্রমাণ করার জন্য মরতে হলেও এখন মরতে হবে উপায় নেই। শোনেন এতো টেনশন নিয়েন না৷ আপনি সকাল হলে কোনো বিষ বা কীটনাশক নিয়ে আসেন আমি খেয়ে মারা যাবো। আপনার প্রতিশোধ নেওয়াও হবে। আমিও কষ্ট আর মিথ্যা থেকে বেঁচে যাবো।
-সত্যি তুই আমার আপুকে মারিসনি?
-আমি জানি না, এ সম্পর্কে আমি কিছু বলতে চাই না৷ যা বলার আমি আগেই বলেছি৷ আপনি এমন কিছু করবেন যা আমার কল্পনাতীত ছিলো
-হুহহ আমার আপুর তাহলে কি হয়েছিলো
-আমি আগে যেটা বলেছি সেটাই
-....(মৃদুলা চুপ করে ফ্লোরে বসে আছে)
-আমার টেবিলের ড্রয়ারে একটা নীল কাভারের ডায়েরী আছে। ওটা তোমার বোনের, সেখানে সবকিছু লেখা আছে। আরিয়ানাকে পৃথিবীতে আনতে তার জীবন ঝুঁকির কথা আমার কাছে থেকে লুকিয়েছিলো।
,,
মৃদুলা এক ঘন্টা যাবত ডায়েরি টা পড়লো। তারপর চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল...
-সত্যি আমার বাড়ির মানুষজন বড্ড খারাপ, আপনার নামে মিথ্যা ছড়িয়েছে৷ সেটা পুরো গ্রামেই (মৃদুলা)
-কি জন্য এমনটা করেছে সেটা বুঝতে পেরেছেন? (ইমতিয়াজ)
-না
-আপনার বাড়ির সম্মানে কোনো যেন আঘাত না লাগে। আপনার বোনের যে আমার সাথে বিয়ে হয়েছিলো এটা শুধু আপনার বাড়ির মানুষ জানতো গ্রামের মানুষ না৷ এখন সে মারা যাওয়ার পর আমার নামে মিথ্যা ছড়িয়েছে। সবাইকে বলেছে আমি নাকি মেরে ফেলেছি
-.....(মৃদুলা চুপ করে বসে আছে)
-আমি আমার শ্বাশুড়ি আম্মার সাথে কথা বলেছি, উনি সব আমাকে জানিয়েছেন
-আম্মার সাথে তোমার যোগাযোগ আছে
-হুমমম আছে, আপনি যে আমার এখানে আসছেন সেটাও জানে উনি
-কিহহহ! আমাকে আগে বলেননি কেনো?
-প্রয়োজন মনে করিনি
-আমার আম্মা আপনার সাথে কেনো যোগাযোগ রেখেছে?
-এই যে তার আত্মা টা তো আমার কাছে (আরিয়ানের কথা বলব)
-আচ্ছা মা কে এখনি কল করছি
-না শোনেন, আমি যে তার সাথে কথা বলি, এটা আপনাকে জানালাম সেটা যেন উনি জানে না৷
-জানলে কি হবে?
-তাকে কথা দিয়েছি, যে কাউকে জানাবো না। সময় হলে আপনার আম্মা আপনাকে জানাবে
-হুমমম
-এখন কি আমাকে এভাবেই বসে থাকতে হবে?
-নাহহহ দাঁড়ান খুলে দিচ্ছি
,,
মৃদুলা দড়ির বাঁধন খুলছিলো তখন ইমতিয়াজ বলল...
-আপনি আমাকে বিছানা থেকে নামিয়ে চেয়ারে বসিয়ে বেঁধে ফেললেন, কষ্ট হয়নি? (ইমতিয়াজ)
-অনেক কষ্ট হয়েছে, আপনি অনেক ভাড়ি (মৃদুলা)
-কি করেছিলেন আমাকে, আমি তো জেগে উঠলাম না
-স্প্রে করেছিলাম
-শহরে কি এভাবে ছিনতাই করে বেড়ান নাকি
-ছিঃ ছিঃ কি বলেন
-বেশ সাহস আপনার তাই বললাম
-রাগে এমনটা করে ফেলেছি। সরি..
,,
ইমতিয়াজ চেয়ার ছেড়ে দাঁড়াতেই মৃদুলা জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।
,,
-আপনি এখন আমাকে মারবেন তাই না? আপনি এখন আমার উপর প্রতিশোধ নিবেন তাই না? (মৃদুলা)
-এই এতো ভয়ের কিছু নেই, আপনার ভুল ভেঙেছে এটাই অনেক কিছু৷ আর আপনার কান্ড দেখে আমি ভয় পাইনি, আমি শুধু মনে মনে হাসছিলাম
-সরি সরি, সত্যি ভুল করে ফেলেছি। আমার আর আপনার চোখের দিকেই তাকাতে পারবো না৷ কি নিচু একটা কাজ করে ফেললাম আমি
-এটা আপনি না বুঝে করেছেন। আর এখন ছাড়ুন, জড়িয়ে ধরেছেন কেনো?
-আমার ভয় লাগছে
-ভয় নেই। আপনার কাজ গুলো বাচ্চাদের মতো খেলা হিসেবেই নিয়েছি আমি। আর আম্মা বলেছেন আপনি খুব রাগি। একটুতে অনেক বেশি রেগে যান
-না তবুও ভয় করছে। আমাকে কি চলে যেতে বলবেন?
-না, এখানেই থাকবেন
-মাফ করে দিয়েছেন তো?
-হ্যাঁ
-তাহলে তুমি করে বলেন
-এইভাবে ছেলেমানুষী করলে কেমন লাগে। বলতেছি তো আমি কিছু মনে করিনি। আর এভাবে জড়িয়ে ধরেছো কেনে? তোমার বর জানলে কি ভাববে?
-আমি কবে বিয়ে করলাম?
-আরে করবে তো
-পরের কথা আগে উঠছে কেনো? আর আমি তো আরিয়ানের আম্মু। আরিয়ানের আব্বুকে জড়িয়ে ধরেছি। ইমতিয়াজ কে তো ধরিনি
-হইছে অনেক হইছে, আর কোনো কথা না। বিছানায় যাও ঘুমাও। আমার সকালে অফিস আছে
-আচ্ছা ঠিক আছে
,,
মৃদুলা তড়িঘড়ি করে বিছানায় গেলো। লজ্জায় আর ইমতিয়াজ এর দিকে তাকয়নি, বিছানার বালিশে মুখ লুকিয়ে ঘুমিয়ে যায়।
,
ইমতিয়াজ আর দেড়ি না করে অন্য একটা রুমে গিয়ে ঘুমায়।
,
পরদিন সকালে সবার আগে উঠে আরিয়ান। আরিয়ানের সাথে উঠল মৃদুলা। আরিয়ানকে সাথে নিয়ে সকালের নাস্তা রেডি করে
,,
আরিয়ানকে খাবার খাইয়ে দিয়ে ইমতিয়াজ কে ডাকতে পাশের রুমে যায় মৃদুলা।
,,
-এই উঠেন উঠেন (মৃদুলা)
-...(ইমতিয়াজ চোখ খুলল)
-উঠেন
-কি হয়েছে বলো (চোখ বন্ধ করে বলল)
-স্কুলে যাবেন না?
-কোথায় স্কুল
-আরে আপনার স্কুল
-আমার তো স্কুল নেই
-এ তো দেখছি ঘুমে মাতাল হয়ে গেছে। এই ভাইয়া এই উঠেন
-উমমম উঠতেছি তো
-চোখ খুলেন
-দেখা যাক
-পাগল হয়ে গেলো নাকি। আমি বলি উঠেন আর উনি বলেন "দেখা যাক"।
রাতে মনে হয় ঘুম হয়নি৷ ওহ হ্যাঁ আমিই তো অনেকক্ষণ জাগিয়ে রেখেছিলাম। পানি মারবো নাকি?
,,
মৃদুলা এটা ওটা ভাবতে ভাবতে ইমতিয়াজ এর মাথায় হাত বুলিয়ে ডাকতে শুরু করে। ইমতিয়াজ ঘুমের ঘোরে তার বউ ইতি কে মনে করে বলে...
-অনেকদিন হলো আমার বুকে এসে ঘুমাও না, একটু আসবে? (ইমতিয়াজ)
-আ আ আমি তো ইতি আপু...(মৃদুলা আর কোনো কথা বলতে পারলো না)
,,
ইমতিয়াজ হাত ধরে তাকে কাছে টেনে নিলো। মৃদুলা মানা করার কোনো চান্স পাচ্ছিলো না। ভয়ে তার গলা শুকিয়ে যাচ্ছিলো। শেষমেশ ইমতিয়াজ মৃদুলাকে ইতি মনে করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকে। মৃদুলার কপালে ঘাড়ে চুমু খেতে থাকে।
,,
যখনই ঠোঁটের চুমু খেতে নিবে তখনই মৃদুলা ইমতিয়াজ এর মুখে হাত রাখে।
ইমতিয়াজ চোখ খুলে দেখে মৃদুলা।
-আমি ইতি আপু নই। আমি মৃদুলা (মৃদুলা বলল)
-....(সাথে সাথে ইমতিয়াজ দূরে সরে গেলো)
-সকালের নাস্তা তৈরি করেছি। তাড়াতাড়ি এসে খেয়ে নিন
-সরি আমি আসলে ভেবেছি....
-রাতে আপুর কথা খুব ভেবেছেন তাই না? আমি বুঝতে পেরেছি
।।
।।
।।
।।

পরিবর্তন হোক ভালোবাসায়
END PART
Write : Sabbir Ahmed
____________________________
-সরি আমি আসলে ভেবেছি... (ইমতিয়াজ)
-রাতে আপুর কথা খুব ভেবেছেন তাই না? আমি বুঝতে পেরেছি (মৃদুলা)
-...(ইমতিয়াজ কথা না বলতে পেরে আমতা আমতা করছে)
-ভয় নেই, এটা আপনি ইচ্ছাকৃত ভাবে করেননি। অনেক বেলা হয়েছে ফ্রেশ হয়ে খেতে আসুন
,,
খাবার টেবিলে ইমতিয়াজ আর মৃদুলা খাচ্ছে। এই রুম থেকে ঐ রুমে খেলা করছে আরিয়ান। খাবার সময় মৃদুলা বলল..
-ভাইয়া একটা কথা বলব (মৃদুলা)
-হ্যাঁ বলো(ইমতিয়াজ)
-দেখো আমি একদম খোলামেলা ভাবেই বলছি। মনের মধ্যে একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে গত রাতের ঐ ঘটনার পর থেকে
-কথাটা কি? সেটা তো বলো
-আমি তোমাকে ভালোবাসি, বিয়ে করবে আমাকে?
-....(মৃদুলার কথায় ইমতিয়াজ এর খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়)
-হ্যাঁ বা না বলবা
-অবশ্যই না, এগুলো কি বলো তুমি?
-আজকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাওয়ার আগে এই কথা মনে ছিলো না?
-আমি জানতাম না তো এটা তুমি
-এটার কথা বাদ দেন হি হি এমনি মজা করলাম। এখন বিয়ের কথাটা বলেন
-আমি কিন্তু মজা করছি না
-মজা আমিও করছি না
-তোমার মাথা ঠিক আছে? আমি দ্বিতীয় বিবাহ করবো না৷ আর যদিও করি তোমাকে কেনো করবো? তোমার এই কথাটা বলাই ঠিক হয়নি৷
-আমি শুধু আমার কথা চিন্তা করে বলছি না৷ আমি আপনার আরিয়ান আর আমাদের পরিবারের কথা চিন্তা করেই বলেছি
-তুমি কিন্তু বেশি বেশি বলছো। আমি তোমার বাড়ি থেকে একজনকে কেড়ে নিয়েছি। আর দোষী হতে চাই না। আর তোমার ভালো একটা জীবন নষ্ট হবে। তুমি আমার থেকে বয়সেও অনেক ছোট
-আর আমি বলি সেটা শোনেন। আপনি আর আরিয়ান এভাবে কয়দিন থাকবেন? ছেলেটা দিন দিন বড় হয়ে উঠছে। আপনি সবদিক খেয়াল রেখে চলতে পারবেন না৷ আপনি তো অন্য কাউকে বিয়ে করবেন না। তো এর থেকে ভালো আমাকে বিয়ে করুন
-এরপর তোমার আমার জীবন আরও সমস্যায় পড়ুক তাই না?
-কে সমস্যা করবে? আমার পরিবারের মানুষ? সব পরিবর্তন হয়ে যাবে
-এই এসব কথা রাখো
-লজ্জা পাচ্ছেন?
-কি যে বলো, আমার কিন্তু খুব রাগ হচ্ছে
-আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে না
-দেখো অন্য জায়গায় বিয়ে করবো আমি, তাও তোমাকে না
-এই তো পয়েন্টে আসছেন। অন্য জায়গায় বিয়ে করলেই। সেই মেয়ে আমার বাবাই সোনাকে আমার মতো দেখে রাখবে না। আমার পরিবার আর আপনার মধ্যে আমার বাবাই সোনাই এর মধ্যে অনেক দূরত্ব সৃষ্টি হবো। সো আমি যা বলছি এটাই বেটার
-তুমি অনেক ছোট
-ঢং করেন তাই না? রাজি হয়ে যান
-আমার ব্যাগ টা কই?
-এই খাবার শেষ করে যান
-নাহহ আমি যাচ্ছি
-আরে মাস্টার মশাই আসার সময় বাজার করে নিয়ে আইসেন কিন্তু
-....(ততক্ষণে ইমতিয়াজ চলে গেছে)
-কি যে একটা মানুষ। এত ভালো বুদ্ধি দিলাম তারপর ও উনি রাজি হলেন না৷ দেখি মা কে একটা কল করে...
,,
মৃদুলা তার মা কে কল করে...
ওপাশ থেকে তার মা কল রিসিভ করার পর..
-মা কেমন আছো? (মৃদুলা)
-ভালো, তুই কেমন আছিস? (মা)
-ভালো, তবে একটা সমস্যার মধ্যে আছি
-কি সমস্যা? তুই এখন কোথায়?
-কোথায় আবার তোমার বড় মেয়ের জামাই বাড়ি। মা তুমি তার সাথে যোগাযোগ রেখেছো আমাকে জানাও নি কেনো? যাই হোক শোনো..
-দেখ আমি তোকে জানাতে চেয়েছিলাম...
-আচ্ছা বাদ দাও শোনো
-হ্যাঁ বল
-উনাকে নতুন বউ এনে দিলে কেমন হয়? উনার তো থাকা খাওয়া অনেক সমস্যা
-সেই জন্য তো তুই ওখানে গেছিস
-আরে আমি আর কতদিন? পার্মানেন্ট কাউকে তো লাগবে
-বাইরের মেয়ে এসে কি আরিয়ানকে ভালোবাসবে?
-আমার কাছে ভালো একটা মেয়ে আছে
-কে?
-আমি
-তুই! মানে?
-মানে মা আমি তোমার মেয়ের জামাই এর নতুন বউ হতে চাই
-কি বলিস এগুলো?
-তুমি একটু ভেবে দেখো
-এটা ভাবার আগেই ভুলে যেতে হবে। এমন হলে তোর বাবা ভাইয়েরা অনেক সমস্যা করবে
-আমি ওদের পাশে না থাকলে জানি না তারা কোথায় থাকবে। আমি চাচ্ছি ওরা আমাদের সাথেই থাকুক
-তুই জামাই কে কিছু বলেছিস
-হুমম আমি সরাসরি বলে দিয়েছি
-সে কি বলল?
-রাগ দেখিয়ে স্কুলে চলে গেছে
-দেখছিস সে ও রাজি না
-তাকে রাজি করাতে পারবো, সে আরিয়ানের জন্য রাজি হবে
-দেখ তুই যা করছিস এটা আমার ভালো লাগছে না৷ এটা কেউ মানবে না
-তুমি মানলেই হবে
-তোর বাবা?
-আমি সবাইকে মানিয়ে নিবো
-যদি মেনে না নেয়
-তাহলে আর কি আপুর মতো বাইরে থাকবো
-আমি বুঝলাম না তোর মাথায় এই ব্যাপার টা কেনো চাপলো
-কারণ তোমার মেয়ের জামাই অনেক ভালো। দেখেতেও অনেক সুন্দর। আর তার চেয়ে বড় কথা হলো, আচরণ চরিত্র অনেক অনেক ভালো। প্লিজ আমাকে এই কাজ টা করতে দাও
-আমি কিভাবে রাজি হই?
-তুমি এমন করতেছো কেনো? তুমি চাও না তোমর বড় মেয়ের ছেলে তোমার কাছে থাকুক
-হুমমম
-ওর জন্য হলেও তো তোমার রাজি হওয়া উচিত
-আচ্ছা ঠিক আছে, কিন্তু আমার ভয় করছে
-ভয়ের কিছু নেই। আমি তাকে রাজি করিয়ে তোমাকে জানাবো
-আচ্ছা, আরিয়ান কেমন আছে?
-আছে ভালোই
-কি করে ও?
-খেলছে
-তুই কি করিস?
-খাচ্ছি
-জামাই খেয়ে গেছে? নাকি তোর কথায় না খেয়েই চলে গেছে
-একটু খেয়ে গেছে
-খাবার খাওয়ার সময় বলেছিস তাই না?
-হ্যাঁ। তার খাবার খাওয়া দুপুর রাতে সব একদম উঠেই যাবে
-আচ্ছা রাখ এখন
-ওকে ভালো থাকো
,,
বিকেলে ইমতিয়াজ বাজার করে ফিরলো।
-যাক আপনি তাহলে বাজার এর কথাটা শুনতে পেয়েছিলেন(ইমতিয়াজের হাতে বাজার দেখে মৃদুলা বলল)
-....(ইমতিয়াজ কোনো উত্তর করলো না)
-মাস্টার মশাই কি আমার উপর রেগে আছেন?
-....(মৃদুলার কোনো কথায় কান না দিয়ে আরিয়ানকে কোলে নিয়ে আদর করে একটু কথা বলে, ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে গেলো)
-মাস্টার মশাই ভীষণ রেগে আছেন, বেটাকে পরে ধরবো, এখন আমার কাজ গুলো সেড়ে নেই
,,
বাজার গুলো কিচেনে সাজিয়ে রাখলো মৃদুলা।
এদিকে ইমতিয়াজ গোসল শেষ করে বের হলো।
-আমি একটা কথা বলব (মৃদুলা)
-চা নিয়ে আসো (ইমতিয়াজ)
-আমার যে কিছু বলার ছিলো
-চা নিয়ে আসতে বলেছি
-ঢং এমনি রাগ দেখায়(দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল মৃদুলা)
-...(ইমতিয়াজ মৃদুলার রাগ দেখে না দেখার ভান করে থাকে)
,,
এইভাবে ইমতিয়াজ মৃদুলাকে এড়িয়ে চলল কয়েকদিন। মৃদুলা যেন তার কথা বলার কোনো সুযোগই পাচ্ছিলো না৷ মৃদুলা দেখলো এইভাবে আপোষে কিছু হবে না৷ যা করার জোর জবরদস্তি করেই করতে হবে।
,,
রাতে ইমতিয়াজ এর বাহিরে যাওয়ায় অভ্যাস আছে। এই সুযোগ টা কাজে লাগালো মৃদুলা। মৃদুলা তো আরিয়ানের কাছে ঘুমায়।
,,
আজ আরিয়ানের পাশে না শুয়ে সেখানে একটা কোলবালিশ রেখে কম্বল দিয়ে ঢেকে রাখে। রুমের মেইন দরজা খোলা রাখে। তারপর ইমতিয়াজ যেখানে একা ঘুমায় সেই রুমে এসে খাটের আড়ালে লুকিয়ে থাকে।
,,
ইমতিয়াজ বাহিরে থেকে এসে দেখে মেইন দরজা একটু খোলা। রুমের ভেতরে ঢুকে দেখে আগের দিনের মতো মৃদুলা আরিয়ান ঘুমিয়েছে।
,,
ইমতিয়াজ তার রুমে গিয়ে দরজায় ছিটকিনি লাগিয়ে বিছানায় এসে বসতেই, খাটের এক পাশ থেকে আওয়াজ আসে..
-হ্যালো মাস্টার মশাই (মৃদুলা বের হলো)
-এই তুমি এখানে! তাহলে আরিয়ানের সাথে কে? (ইমতিয়াজ)
-কোলবালিশ
-কিহহহ!
-হ্যাঁ
-এই তুমি বের হও
-একদম চেঁচাবেন না রাগ দেখাবেন না
-...(ইমতিয়াজ দরজা খুলতে সামনে এগিয়ে যায়)
-এই এই দরজা খুললে আমি কিন্তু আপনার সাথে উল্টা পাল্টা কিছু করে ফেলবো। এই আপনি বুঝেন না কেনো? আমি যা বলি একটু তো শোনেন
-আমি জানি তুমি কি বলবে
-প্লিজ একটু বসেন আমি বুঝিয়ে বলছি
-তোমার এতো আগ্রহ কেনো? সমস্যা কি তোমার?
-বিছানায় এসে বসেন আমি বলছি
,,
ইমতিয়াজ বিছানায় এসে বসলো। সামনা সামনি বসলো মৃদুলা।
-বলো (ইমতিয়াজ)
-আপনাকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি (মৃদুলা)
-এটা মিথ্যে (ইমতিয়াজ)
-সত্যি সত্যি
-আমি তো এরকম কোনো ইঙ্গিত দেখাইনি তোমাকে
-ভালোবাসতে আবার ইঙ্গিত লাগে! আমি আপনার এই সংসার কি পরিপূর্ণতা দিতে চাই। আমি আপনার সাথে যুক্ত হয়ে আমার পরিবারের সাথে মিল করতে চাই
-তুমি ছোট মানুষ এসব তুমি বুঝবে না। এটাতে ঝামেলা বাড়বে। দেখো মৃদুলা তুমি এখানে আর থেকো না। কালই চলে যেয়ো
-মা রাজি হয়েছে
-কিহহ!
-হ্যাঁ মা কে কল করেছিলাম। উনি রাজি
-মা রাজি!
-হুমমম
-তবুও আমি রাজি না
-কেনো? সমস্যা কি?
-আমি দ্বিতীয় কোনো মেয়েকে ভালোবাসতে পারবো না
-আচ্ছা ভালোবাসতে হবে না৷ বিয়েটা করেন ভালোবাসার দায়িত্ব আমার
-....(ইমতিয়াজ চোখের পানি ফেলছে)
-চোখে পানি কেনো?
-প্লিজ জোর করো না, আমার ভয় হয় তোমার বোনকে যদি আমি ভুলে যাই
,,
মৃদুলা ইমতিয়াজ এর একদম কাছে গেলো। মৃদুলা ইমতিয়াজ এর চোখে হাত দিতেই ইমতিয়াজ বাঁধা দেয়। মৃদুলা সেটা তোয়াক্কা না করেই চোখের পানি মুছে দিতল দিতে বলে।
,,
-আমি আপুর ভালেবাসায় ভাগ বসাবো না। প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিয়েন না৷(মৃদুলা)
-আমাদের হারিয়ে যেতে দিবে না তাই না? (ইমতিয়াজ)
-হ্যাঁ এইতো বুঝেছেন
-মা রাজি হয়েছে??
-হুমমম
-আর সবাই?
-তাদের আগেই জানাবো না৷
-তাহলে বিয়ে?
-আপুকে যেভাবে বিয়ে করেছেন সেভাবে আমাকে করবেন
-আবার তো সেই সমস্যা
-সমস্যা হবেই, সমাধানের পথ জটিল, তবে অসম্ভব না
-....(ইমতিয়াজ চুপ)
-কিছু ভাবছেন?
-নাহহ
-এতো চিন্তা নেই। কেউ মেনে না নিলেও আমি আপনাদের সাথেই থাকবো। আমি আপনাদের হারিয়ে যেতে দিবো না
-আমি তোমার কথাটা বুঝেছি। আচ্ছা যাও এখন ঘুমিয়ে পড়ো
-আপনি তাহলে রাজি?
-দেখি
-এই দেখি মানে কি হ্যাঁ? এখন রাজি হবেন আপনি
-আমি ভেবে দেখি
-ভাবার কি আছে? আমি কি একদমই পর মানুষ। আমার আপুর অর্ধেক অভ্যাস আমার মধ্যে আছে। আমাকে আপনি ফ্রিতে পাচ্ছেন তাও ভালো লাগছে না তাই না?
-আমি কি মানা করেছি?
-তাহলে বলেন হ্যাঁ আমি রাজি
-...(ইমতিয়াজ চুপ)
-এই
-হ্যাঁ বলো
-এতো কি ভাবেন মাস্টার?
-ভাবছি আরিয়ানের ভালোই হবে
-হ্যাঁ এটা সবার জন্যই ভালো হবে। আরেকটা কথা
-কি?
-আমি তো বলেছি আমাকে ভালোবাসতে হবে না তাই না?
-হ্যাঁ
-হুমম ভালো না বাসলেন, আমার কিন্তু দুই তিনটা বেবি লাগবে
-মানে!
-মানে একদম সোজা, আমি বাচ্চার আম্মু হবো
-আমি পারবো না
-....(মৃদুলা চোখ বড় করে তাকালো)
-পারবেন না মানে? সমস্যা কোথায়?
-আমি তোমাকে কিভাবে স্পর্শ করবো?
-যেভাবে কয়েকদিন আগে সকালে আমায় জড়িয়ে ধরে চুমু খেলেন। উফফ ফিলিংসটা সেই ছিলো গো
-তুমি এমন নির্লজ্জ কেনো?
-এই আপনি আমার হবু বর, আমি যা ইচ্ছে বলবো। আর ওরকম মন প্রাণ উজাড় করে ভালোবাসতে হবে না। আমার বাচ্চার আম্মু হবো এটাই শেষ কথা। এখন আমি যাচ্ছি
,,
মৃদুলা দরজা পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে আসলো।
-এই একটু দাড়ান (মৃদুলা)
-কি জন্য? (ইমতিয়াজ)
-জড়িয়ে ধরবো
-না
-আমি ভালোবাসি আমি জড়িয়ে ধরবো, আপনাকে তো ধরতে বলিনি মাস্টার মশাই
,,
জোড়াজুড়িতে এক প্রকার দাঁড়াতেই হয় ইমতিয়াজকে। মৃদুলা ইমতিয়াজ কে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কান্না করা শুরু করে।
,,
-কান্না করো কেনো? (ইমতিয়াজ)
-একটা সংসারের অংশীদার হতে পারার খুশিতে (মৃদুলা)
-....(ইমতিয়াজ কিছু বলল না)
-একটু ভরসা রেখো আমার উপর, দেখো আমি সব ঠিক করে ফেলবো
-আচ্ছা
-একটু তুমি করে বলি তোমাকে?
-অনুমতি দেওয়ার আগেই তো বলে ফেলেছো
-হি হি হি.......(মৃদুলার মুখে হাসির খই ফুঁটতে থাকলো)
,,
,,
,,
,,
,,
,,
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,END,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,










অদৃশ্য পরী

  ----দেবর সাহেব, তো বিয়ে করবে কবে? বয়স তো কম হলোনা ৷ ----আপনার মত সুন্দরী কাউকে পেলে বিয়েটা শীঘ্রই করে ফেলতাম ৷ -----সমস্যা নাই তো, আমা...