Showing posts with label চোরাবালি মন তোমার. Show all posts
Showing posts with label চোরাবালি মন তোমার. Show all posts

27.12.23

চোরাবালি মন তোমার

 চোরাবালি মন তোমার

Write : Sabbir Ahmed
____________________________
-রিদিকা রিদিকা কই গেলি রে মা??(রিদিকার বাবা)
-বাবা আমি ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি (রিদিকা)
-এই দেখ মতিউর এসেছে
,,
রিদিকা তার বেড রুমে চুল আঁচড়াচ্ছিল। বাবার মুখে ভিন্ন এক মানুষের নাম শুনে ড্রয়িং রুমে আসলো। সে এসে দেখে তার বাবার সাথে একটা ছেলে বসে কথা বলছে, ছেলেটা শ্যাম উজ্জ্বল বর্ণের, মাথার চুলগুলো উষ্কখুষ্ক। চোখে মুখে হাসি নিয়েই ছেলেটা রিদিকার বাবার সাথে কথা বলছে। রিদিকা অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। কিছুদিন পর তার ফাইনাল এক্সাম। তার বাবা কিছুদিন এর জন্য বাইরে চলে যাবেন। রিদিকার মা ও জব করেন দেশের বাইরে। সে এক্সাম এর আগে কিছুটা ব্যস্ত থাকবে। তার একটু দেখাশোনা আর কাজ করে দেওয়ার জন্য একটা পরিচিত মানুষ দরকার। রিদিকার বাবা সেটা ম্যানেজ করে নিয়ে এসে ড্রয়িং রুমে বসিয়ে কথা বলছেন।
,,
-বাবা (রিদিকা ডাকলো)
-তুই রেডি হচ্ছিলি? সরি মা (বাবা)
-এই ছেলেটা কে?
-এর জন্যই তো তোকে ডাকা
-এই ছেলেটা আমার ছোট বেলার এক বন্ধুর ছেলে। ওরে তোর জন্য নিয়ে আসলাম
-আমার জন্য মানে?
-একটু ঐদিকে চল বলতেছি...
,,
রিদিকা কে নিয়ে তার বাবা রিদিকার রুমে গেলো।
-শোন, আমি যে বলেছিলাম তোর এক্সাম এর জন্য তুই ব্যস্ত হয়ে পরবি, তোর দেখাশোনা সহ আরও তো কাজ আছে সেটা ও করে দিবে
-বাবা ছেলেটাকে সুবিধার মনে হচ্ছে না। বাসায় আর যারা থাকে, মানে ড্রাইভার বুয়া, তাদের দিয়ে আমি সব ম্যানেজ করে নিবো, এই ছেলেকে বাহির করো
-সুবিধা মনে হচ্ছে না মানে? গ্রামের ছেলেরা আদব কায়দায় খুব ভালো। তুই যেরকম বলবি সেরকম কাজ করে দিবে। আর ড্রাইভার, বুয়া তাদের কাজ করবে।
-তুমি আর মা আমাকে যে কি পেয়েছো। আমার মন মতো চলতে পারি না, তোমাদের সুবিধার্থে একটা মানুষ রেখে যাও, তাকে নিয়ে চলতে হয়। ভালো লাগে না আমার। থাকো আমি ভার্সিটিতে যাই
-সাবধানে
-ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে রেডি তো?
-হ্যাঁ ও বাইরে আছে
-ঠিক আছে, গেলাম আমি
,,
রিদিকা বের হয়ে যাওয়ার সময় ড্রয়িং রুমে বসে থাকা মতিউর এর দিকে একবার আড় চোখে তাকিয়ে চলে গেলো। রিদিকার বাবা এলো মতিউর এর কাছে।
-তুমি তো লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছো তাই না? (রিদিকার বাবা)
-হ্যাঁ চাচা (মতিউর)
-তা কোন ক্লা পর্যন্ত পড়েছো?
-চাচা আমি তো মেট্রিক পাশ দিয়েই পড়া বাদ দিলাম
-কেনো?
-বাবার কাজে সমস্যা হয়? কলেজে ভর্তি হলে তো বাবার কাজে সমস্যা হবে। তখন সংসার চালাইবো। সেই জন্য বাদ দিয়ে দিছি
-ওহহহ, তোমার বাবার আমার ক্লাস টু এর ক্লাসমেট ছিলো। তারপর হঠাৎ করেই তোমার বাবা স্কুলে আসা বন্ধ করে দেয়
-হ চাচা গল্পটা আমি শুনছি। আমার দাদা ভালো আছিলো না। আর তার দোষ দিয়াই বানি কি হইবো, দাদা একলা সংসার চালাতে পারে নাই
-হুমমম। আচ্ছা তোমার বাবা মা কেমন আছে?
-জ্বি ভালো
-যার সাথে তুমি আমার কাছে আসলে তাকো তুমি চেনো?
-জ্বি চাচা চিনি তো। উনি অনেক লেহাপড়া করে এহন বড়সড় একটা চাকরি করেন।
-হ্যাঁ সে তোমার কথাই আমার কাছে বলেছিলো। আমি তো আমার গ্রামের সব বন্ধুদের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। ওর কথায় হঠাৎ তোমার বাবার কথা মনে হলো, তারপর খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম বন্ধুর একটা ছেলো আছে। এটাই চান্স হিসেবে নিলাম। তোমাকে এখানের আনার জন্য তোমার বাবার কাছে রিকুয়েষ্ট করলাম আর সে রাজি হয়ে গেলো
-ওহহ, তয় চাচা আমার কাজ কি?
-আমার এই বাসাটা দেখাশোনা করতে হবে। একজন পরিচিত কাউকে দরকার তাই তোমাকে ডাকা
-বুঝলাম,
-তুমি শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে পারো না?
-পারি (মতিউর হেঁসে বলল)
-এখানে সবার সাথে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলবে?
-এখন থেকেই??
-হা হা হা হ্যাঁ এখন থেকেই। আচ্ছা শোনো তোমাকো একটা গোপন কথা বলি, যেটা তুমি আমার মেয়ে রিদিকা কে বলবে না
-জ্বি বলেন
-রিদিকা জানে আমি এক মাসের জন্য বাইরে যাচ্ছি। কিন্তু ও এটা জানে মা যে আমি ছয় মাসের বেশি সময়ের জন্য বাইরে যাচ্ছি। তুমি এই সময়টুকু ওরে দেখবে আর বাসার সব কাজের তদারকি করবে
-মিথ্যা কথা বইলা বাইরে যাবেন?
-ও এতদিনের কথা শুনলে যেতে দিবে না
-তারে নিয়ে যান
-ওর এক্সাম আছে
-ওহহহ তাইলে তো তার এহেনেই থাকতে হইবো
-আবার অশুদ্ধ ভাষায় কথা বলতেছো
-চাচা পরিবর্তন হতে সময় লাগবে, আঞ্চলিকতা সহজে যাইতে চায় না
-আচ্ছা ঠিক আছে, ঠিক আছে। চলো তোমার থাকায় জায়গা দেখিয়ে দিচ্ছি। আর তোমার বেতন নিয়ে চিন্তা করো না, আমি প্রতি মাসে দিয়ে দিবো
-না সমস্যা নেই, আপনারা তো নিজেদের মানুষ, এসব নিয়ে কথা বলতে হবে না
,,
দোতালায় রিদিকার রুমের পাশের রুমটা দেখিয়ে দিলো মতিউর কে।
-আমার মেয়ের রুমের পাশেই তোমার রুমে দিলাম, যাতে ও ডাকলে দ্রুত ওর ডাকা সাড়া দিতে পারো (রিদিকার বাবা)
-হুমমম (মতিউর)
-রিদিকা কিন্তু অনেক রাগী, সে যদি কোনো কিছুতে হ্যাঁ বলে সেটাতে তুমি হ্যাঁ বলবে, যেটাতে না বলবে, সেটাতে তুমি না বইলো, না হলে কিন্তু অনেক রাগারাগি করবে
-জ্বি চাচা চিন্তা করবেন না আমি তার কথামতো সব কাজ করব
-হুমম এখন তো তুমি রুমের মধ্য গিয়ে সব দেখে নাও
-চাচা
-হ্যাঁ বলো
-বাথরুম??
-ভেতরেই আছে
,,
রিদিকার বাবা চলে যাওয়ার পর, মতিউর ফ্রেশ হয় নিয়ে আবার ড্রয়িং রুমে এসে বসলো। তিন ঘন্টা পর রিদিকা বাসায় আসলো। রিদিকা ড্রয়িং রুমেই মতিউর কে দেখতে পেলো। দুজনের চোখে একবার চোখ পরতেই দুজনই চোখ সড়িয়ে নিলো। রিদিকা রুমে চলে গেলো, আর মতিউর সোফায় বসে মনে মনে ভাবতে শুরু করলো..
-কি চোখের চাহনি রে বাবা! চাচা ঠিকই বলেছে। একটু উনিশ বিশ হলেই খবর আছে। যে কাজ দিক না কেনো সাবধানে ঠিক ঠাক ভাবে করতে হবে
,,
রিদিকার বাবা যে দুদিন বাড়িতে ছিলো, এ দুদিন মতিউর এর তেমন কাজ ছিলো না। মতিউর রিদিকার বাবার সাথেই থাকত। তবে আজ রিদিকার বাবা চলে যাচ্ছে। বাবাকে এয়ারপোর্টে বিদায় জানাতে রিদিকা এসেছে সাথে মতিউর ও।
,,
চলে যাবার সময় রিদিকা বেশ কান্নাকাটি করে। এটা আজ নতুন না। প্রত্যেক বারই তার সাথে এমন হয়।
রিদিকার বাবা যখন ইমিগ্রেশনে চলে গেলো তখন রিদিকার চোখ গেলো মতিউর এর দিকে।
মতিউর হা করে তাকিয়ে এয়ারপোর্টের এদিক ওদিক তাকিয়ে সব দেখছে।
-এই ছেলে এই (রিদিকা)
-....(মতিউর তাকালো ভয় চোখে)
-ওভাবে কি দেখেন?
-সবকিছুই, এর আগে তো
এখানে আসা হয়নি। উপরের ডিজাইন টা দেখছি, এটা কিভাবে করল? অনেক সুন্দর হয়েছে
-ডিজাইন দেখা বাদ দেন, রাত অনেক হয়েছে বাসায় ফিরতে হবে
-জ্বি জ্বি চলুন
,,
বাসায় ফেরার মাঝপথে রিদিকা বলল..
-ভাইয়া গাড়িটা একটা দোকানের পাশে দাঁড় করান, কিছু আইসক্রিম কিনবো (রিদিকা)
,,
দোকানের সামনে গাড়ি দাঁড় করানোর পর রিদিকা মতিউর কে আইসক্রিম আনতে বলল। মতিউর আইসক্রিম এনে রিদিকার হাতে দিলো।
,,
বাসায় আসার পর..
-আপনার নাম মতিউর? (রিদিকা)
-জ্বি (মতিউর)
-আপনাকে নিয়ে আমার মনে একটা কৌতুহল তৈরি হয়েছে। বলব?
-বলেন
-আপনাকে দেখে বাংলাদেশী মনে হয় না, চলু আর গায়ের রং দেখে মনে হয় উগান্ডা বাসী
-উগান্ডা কি?
-একটা দেশের নাম
-ওহহ
-কিছু বুঝেলন?
-না
-শোনেন আমার থেকে দূরে দূরে থাকবেন, আমার দিকে তাকাবেন না। যদি অর্ডার করবো দূরে দাঁড়িয়ে শুনবেন আর সেটা করার চেষ্টা করবেন। আমার চোখের সামনে থাকা যাবে না। আপনি তো আমার পাশের রুমে, সেখানে থেকে শব্দ করা যাবে না। আর আমি যাই করি সব কথা আপনার চাচা কে বলা যাবে না
-আমি সব কথাই শুনবো, শেষের কথাটা শুনতে পারবো না। চাচা বলেছে আপনি যেটাই করেন না কেনো তাকে জানাতে
-ঠিক আছে, কিছু কিছু জিনিস জানানো যাবে না
-কোনো কিছু বাদ দিতে মানা করে দিয়েছেন
-আজব! আমার মুখের উপরে কথা বলেন
-চাচা এ ব্যাপারে কঠোর হতে বলেছে
-ঠিক আছে ঠিক আছে। এমনিতে কালো মানুষ দেখতে ইচ্ছে করে না, তার মধ্য বাবা এনে দিলো এটাকে। যাই হোক নিজের রুমে গিয়ে থাকেন দরকার হলে ডেকে নিবো
-জ্বি (মতিউর চলে যাচ্ছিলো
-এই দাঁড়ান
-বলেন
-আপনি কি অপরিষ্কার?
-না আমি যথেষ্ট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন
-হ্যাঁ হ্যাঁ সে তো দেখেই বোঝা যাচ্ছে, পোশাকে কোনো ডিল নেই যত্তসব (শেষের কথাটুকু বিড়বিড় করে বলল)
,,
পরদিন সকাল বেলা, বাসায় রান্নার বুয়া একগাদা অভিযোগ নিয়ে হাজির রিদিকার সামনে। রিদিকা ড্রয়িং রুমে বসে আছে। তার সামনে সামনি মতিউর আসামীর ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। বুয়াটা তার অভিযোগ শুরু করলো..
-দেখেন আপা, চাচা এই বেডারে রাখছে বাজার করতে। এই বেডায় তো বাজার চিনে না। (বুয়া)
-কি ব্যাপার? (মতিউর কে উদ্দেশ্য করে)
-আমি বাজার চিনি, কিছু বাজার করেছি, পরে আমি বাজার এর মধ্য হাড়িয়ে গিয়েছিলাম
-কিহহহ!! কিভাবে?
-বাজারে একটা গলির মধ্যে ঢুকেছি, আর বের হতে পারিনি। এদিক ওদিক যাই, ঘুরে ফিরে একই মনে হয়। তাই অর্ধেক বাজার করে চলে আসছি
-....(মতিউর এর কথা শুনে রিদিকা আর বুয়ার হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা)
।।
চোরাবালি মন তোমার
Part : 2
Write : Sabbir Ahmed
___________________________
-....(মতিউর এর কথা শুনে রিদিকা আর বুয়ার হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা)
,,
হাসি থামিয়ে রিদিকা বলল..
-বাবা কাকে যে রেখে গেলো। যাই হোক দুই একদিন ড্রাইভার কে সাথে নিয়ে যাবেন, তাহলে চিনতে সুবিধা হবে। ওকে আমার সময় নেই পড়তে হবে আমি যাই।
,,
রিদিকা দিন রাত এক করে পড়ছে, মতিউর এ বেলা ও বেলা বাজার করছে। রিদিক কিছু চাইলে সেটা এনে দিচ্ছে। দেখতে দেখতে রিদিকার পরীক্ষার সময় চলে আসলো। প্রথম দিন পরীক্ষা দেওয়া শেষে সন্ধ্যায় যখন বাসায় ফিরল তখন রিদিকার মন খারাপ ছিলো। ড্রাইভার, বুয়া, মতিউর সবাই ভাবছিলো পরীক্ষা হয়তো খারাপ হয়েছে।
,,
রাত তখন দশটা ছুঁইছুঁই, মতিউর আর বুয়া খাবার টেবিলে রিদিকার জন্য খাবার রেডি করে দাঁড়িয়ে আছে। বিগত এক ঘন্টার মধ্যে অনেক বার ডাকতে গিয়েছে বুয়া, রিদিকা একবারও আসেনি।
,,
কিছুক্ষণ পর রিদিকাকে চোখ মুছতে মুছতে নিচে নামতে দেখা যায়। সে গুটি গুটি পায়ে হেঁটে এসে টেবিলে বসে। বুয়াী রিদিকার প্লেটে খাবার দিতে ব্যস্ত হয়ে পরে। মতিউর তাকিয়ে দেখছে রিদিকার কান্না।
মতিউর মনে মনে স্থির করলো কারণ জানতে চাইবে, তবে সাহসে কুলিয়ে উঠছে না।
,,
মতিউর হুট করে বলেই ফেলল..
-আপনি কান্না করছেন কেনো? আপনার কি এক্সাম খারাপ হয়েছে? (মতিউর)
-...(রিদিকা একবার মতিউর এর দিকে তাকিয়ে খাওয়ায় মন দিলো)
,,
একটু একটু করে খাচ্ছে, আর বার বার চোখের পানি মুছতেছে রিদিকা।
-আমি কি চাচাকে কিছু জানাবো? (মতিউর)
-নাহহ(রিদিকা)
-আপনার কি পরীক্ষা খারাপ হয়েছে?
-না
-তাহলে?
-কিছু না
-...(মতিউর আর কিছু বলল না)
,,
রিদিকা খাওয়া শেষে ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসলো। বুয়াকে বলল চলে যেতে। তখন শুধু মতিউর দাঁড়িয়ে ছিলো রিদিকার সামনে। রিদিকা এবার বলল.....
-কলেজের এক সিনিয়র বড় ভাই অনেক দিন ধরেই আমার পিছু নিয়েছে। আমি অনেক মানা করেছি তাকে, আমার কোনো কথাই শোনেনি, উল্টো আরও বেশি বিরক্ত করা শুরু করে। আজ এক্সাম শেষে আমাকে অনেকগুলো ফুল দিয়ে প্রপোজ করে।
আর সাথে সাথে আমাকে একটা কিস ও করে। আমি রেগে গিয়ে একটা চর দেই। আর তখন...
-তখন কি?
-আরেকটা কিস করে সবার সামনে (রিদিকা কান্নায় চোখ মুখ ভিজিয়ে ফেলল)
-আচ্ছা শোনেন শোনেন, আমি তার ব্যবস্থা করছি
-আপনি কিছু পারবেন না
-চাচা আপনাকে দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে গেছে, এটাই যদি না পারি তাহলে আর কি হলো
-আপনি কি করবেন?
-ওরে ধোলাই দিবো
-ভার্সিটিতে ওর ক্ষমতা অনেক
-আরে রাখেন তো ওর ক্ষমতা, ওরে তুলোধুনো করলে এক বছর বিছানা থেকেই উঠতে পারবে না
-না থাক এসব করা লাগবে না
-অবশ্যই করতে হবে। আপনার সাথে অনেক বাজে একটা কাজ করেছে
-আমি বাবাকে বলে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
-আহা! সমস্যা টা অল্পতেই চুকে যাক, আমাকে একটু সুযোগ দেন দেখেন কি করি।
-ভার্সিটিতে গিয়ে মারতে পারবেন না, মারলে আমাদের বাসার পেছনর রাস্তাটায় মারতে হবে
-এতো রাতে ঐ ব্যাটায় আছে ওখানে?
-আমি বেলকনিতে যাওয়ার সাথে সাথে ও এসে যাবে
-সেটা কিভাবে? টের পায় কিভাবে?
-আরেহহ ওর ছোট ভাই ব্রাদারস আছে। ওরা চায়ের দোকানে আড্ডাবাজি করে। আমাকে দেখলেই সেই ভাই টাকে কল দিবে। সে হুড়মুড় করে এসে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমাকে দেখবে
-আপনিও কি তাকে পছন্দ করেন?
-আরে ধুরর ও তো ভালো না। আরও মেয়েদের সাথে এমন করে
-আপনি চাচাকে কিছু বলেন নি কেনো?
-এসব লোক কারও ক্ষতি করতে কিছু ভাবে না।
-পুলিশে জানালেই তো হয়
-ব্যাপার টা বেশি বড় হয়ে যাবে বুঝলেন। এসব ছেলে নেতাদের পাওয়ারে চলে
-বুঝেছি
-কি বুঝলেন?
-কোনো স্বাক্ষী প্রমাণ না রেখে ওরে মারতে হবে। আপনি বেলকনিতে যান ওরে আনার ব্যবস্থা করুন। আমি গেটে দাঁড়ালাম
-এখনি মারবেন?
-হ্যাঁ আমার হাত চুলকাচ্ছে (এটা বলে মতিউর বাড়ির গেটে এসে দাঁড়ালো)
,,
রিদিকা একটা বই হাতে নিয়ে বেলকনিতে দাঁড়ালো। আজ আগে থেকেই সেই ছেলেটা চায়ের দোকানের সামনে ক্যারম খেলছিলো। রিদিকা কে দেখে সবাইকে সড়িয়ে দিয়ে সিগনাল পাঠায়।
,,
রিদিকা মতিউর কে কল করে গায়ের রং, উচ্চতা, পোশাকের রং সবকিছু বলে দেয়। মতিউর পুরো রাস্তাটা ঘুরে পেছনের রাস্তায় পৌঁছে যায় আর মক্কেলকে পেয়েও যায়।
,,
মতিউর পেছন থেকে ডাকে...
-ভাই (মতিউর)
-কি? কি হয়েছে কি সমস্যা? (ভাইটি পেছনে তাকিয়ে)
-আমি গ্রাম থেকে আসছি আমার একটু হেল্প লাগবে
-কি হেল্প?
-আমি একটু হিসু করবো, কোথায় করবো জায়গা খুঁজে পাচ্ছি না।
(উপরে দাঁড়িয়ে রিদিকা ভাবছে, এরা কি কথা বলা শুরু করছে। সে দেখতে পেলো সেই ভাইটাও হাসছে সাথে মতিউর ও)
,,
-ভাই সামনে যান, পাবেন কোথাও (ভাইটি)
-ভাই আমি পাচ্ছি না একটু হেল্প করেন (মতিউর)
-কি একটা ঝামেলায় পড়লাম
,,
রিদিকা কে আরও ইমপ্রেস করার জন্য ভাইটা মতিউর কে সাহায্য করার জন্য হিসু করার জায়গায় নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য হাঁটতে শুরু করে। একটু দূরে গিয়ে রাস্তা ফাঁকা পেয়ে মতিউর দাঁড়িয়ে যায়। তখনই সেই ভাইটির দুই রানের মাঝে জোরে একটা লাথি মারে। ভাইটি শুয়ে পরে। তারপর আরও একটা লাথি।
,,
মতিউর মুখ দিয়ে কোনো শব্দ না করে তার উপর বসে ইচ্ছে মতো মুখে কিল ঘুসি মারতে থাকে। কিছুক্ষণ ক্যালনোর পর আবার প্রথমে যে জায়গায় লাথি মেরেছিলো সেখানে আরেকটা লাথি মেরে চলে আসে। শেষে থুথু ও ফেলে তার মুখে।
,,
মারতে গিয়ে মতিউর এর হাতে অনেক জায়গায় ব্যাথায় পায়৷ কয়েকটা জায়গায় চামড়া কেটে রক্ত বের হচ্ছে।
বাসায় এসে রিদিকার সামনে দাঁড়িয়ে ছেলেটিকে মারার বর্ণনা দেয়৷ মতিউর এর মুখের বর্ণানা শুনে রিদিকা বলে..
,,
-আপনি জল্লাদ টল্লাদ নাকি? এতো মারতে গিয়েছেন কেনো? (রিদিকা)
-পুরোনো রাগ ছিলো (মতিউর)
-আপনি তো তাকে চিনেন না, পুরোনো রাগ কোথায় থেকে এলো?
-অনেক সময় নিউজ শুনি, নেতা খেতা এসব বড় ভাই, ভার্সিটি তে পড়ুয়া বোনদের অনেক ক্ষতি করে। লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটায় এমনকি শেষ ও করে দেয় জীবন।
যখন খবর পড়েছি তখন রাগ হয়েছে। তার মধ্যে আপনার সাথেও এমন করেছে, আমি রাগ কন্ট্রোল করতে পারিনি। ওরে দেখেই মনে হয়েছিলো এর আগে অনেক মেয়ের সাথে কিছু করেছে। তো দিলাম ইচ্ছে মতো
-যদি মরে যায়
-যাবে না, শয়তান এতো সহজে মরে না, তবে দাঁড়াতে পারবে না আর আগের মতো
-এই ঘটানায় আমাকে যদি সন্দেহ করে
-করবে না। আমি তার কাছে গিয়ে বলেছি যে আমি গ্রাম থেকে আসছি, হিসু করার জায়গায় খুঁজে পাচ্ছি না। আমাকে একটু খুঁজে দেন। ঐ তো হেল্প করতে গিয়ে মাইর খাইছে। আর বাদ দেন তো আমি এ সম্পর্কে জানি। এসব অসুস্থ রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রভাব আমাদের গ্রামেও আছে। আমি যে ঐ ব্যাটারে মাইর দিয়েছি ও তো সন্দেহ করে আরেক জনের নামে থানায় অভিযোগ করবে৷
ওদের শত্রুর অভাব নেই...
-....(রিদিকা কিছু বলছে না, ভাবছে)
-আপনাকে অনেক চিন্তিত লাগছে। আপনি চাইলে পরের এক্সাম গুলোতে আপনার সাথে যাবো
-হ্যাঁ আমার জন্য ভালো হবে। ভয় থাকবে না
-ঠিক আছে সমস্যা নেই। আর রুমে গিয়ে পড়তে বসেন। ঐ ব্যাটার কথা বাদ দেন যে মাইর দিয়েছি ও শেষ
-জোরে জোরে মেরেছেন তাই না?
-ক্ষেত খামারে কাজ করা শরীর, অনেক শক্তি আছে। ওর তো ব্রয়লার এর শরীর ঘুষি দিয়েও তেমন মজা পাই নি।
-কি যে বলেন আপনি! গ্রামে কি মারামারি করেন?
-আরে নাহহ
-তাহলে আজ ভালোই তো করলেন
-রাগের মাথায় অনেক কিছুই হয় (মতিউর মিটিমিটি হাসলো)
-ওহহ
-আপনি পড়তে বসেন
-আচ্ছা ঠিক আছে
,,
রিদিকা রুমে এসে কিছুক্ষণ আগের ঘটনা টা ভাবতে থাকে। আয়ানর সামনে দাঁড়িয়ে মুচকি হাতে থাকে।
বদ ছেলেটার উচিত শিক্ষা হয়েছে। মতিউর ইচ্ছে মতো ধোলাই করেছে।
এমন লোকের এমন ভাবেই মাইর খাওয়া উচিত।
,,
তিনদিন পর আরেকটা এক্সাম রিদিকার। এবার রিদিকার সাথে ভার্সিটিতে যাচ্ছে মতিউর। রিদিকা পেছনে বসে আছে, আর মতিউর গাড়ির সামনে ড্রাইভার এর সাথে।
মতিউর কে দেখে ড্রাইভার বলল..
-কোথায় যাবেন আপনি? (ড্রাইভার)
-ভার্সিটিতে (মতিউর)
-ম্যাম এর?
-জ্বি
-আপনি কেনো?
-চাচা আপনাকে গাড়ি চালানোর দায়িত্ব দিয়েছে, এর জন্যই তো বেতন পান তাই না
-হ্যাঁ
-তো গাড়ি চালান। সব জানার দরকার নেই
-ভাই কি ভার্সিটিতে ভর্তি হতে যাচ্ছেন?
-জ্বি না
-তাহলে?
-পেছনে যিনি বসে আছেন, উনাকে পাহারা দিতে...
-কেনো?
-আপনি গাড়ি চালিয়ে বেতন পান। আর উনাকে পাহারা দিয়ে আমি বেতন পাই। এবার তো বুঝেছেন? কথা না বলে গাড়ি চালান...
।।
।।
চোরাবালি মন তোমার
Part : 3
Write : Sabbir Ahmed
__________________________
-আপনি গাড়ি চালিয়ে বেতন পান। আর উনাকে পাহারা দিয়ে আমি বেতন পাই। এবার তো বুঝেছেন? কথা না বলে গাড়ি চালান( মতিউর)
,,
ভার্সিটির সামনে রিদিকা কে নামিয়ে দিয়ে ড্রাইভার আর মতিউর, ফুটপাতে একটা চায়ের দোকানে চা খাচ্ছে আর খোশগল্পে মেতে উঠে। ড্রাইাভার তার পরিবার আর সংসার নিয়ে কথা বলে, মতিউর তার কথার সাথে তাল মিলায়। কথা বলতে বলতে হঠাৎ রিদিকার পরিবার নিয়ে কথা বলে...
-জানেন ভাই স্যারেরা অনেক বড়লোক, কিন্তু সংসারে একটু শান্তি নাই (ড্রাইভার)
-কেনো? (মতিউর)
-আমি তো অনেকদিন হলো এখানে আছি, রিদিকার মা বাবারে একসাথে দেশে আসতে দেখিনি। বছরের এক মাথায় স্যার আসে,আরেক মাথায় ম্যাম আসে
-এটা নিয়ে কথা না বলাই ভালো
-কেন ভাই?
-বড় বড় লোকের সব বড় বড় ব্যাপার
-তা ঠিক বলছেন
,,
এক্সাম শেষে রিদিকা বাইরে বের হলো মতিউর দেখতে পায়। রিদিকার দিকে এগিয়ে যাবে হঠাৎ করেই তার আগে পৌঁছে যায় দুইটা ছেলে। মতিউর দূর থেকেই বুঝতে পারছিল তারা রিদিকাকে কিছু জিজ্ঞেস করছে।
,,
মতিউর এগিয়ে গিয়ে বলল..
-রিদিকা কি হয়েছে? (মতিউর)
-এই ছেলে দুটো বলছে আমি গুন্ডা ভাড়া করে তাদের বড় ভাইকে মেরেছি (রিদিকা)
-কিরে হুদা মিছা কথা বলিস কেন? ওর এক্সাম চলছে, পড়া নিয়ে ব্যস্ত। আর তোদের বড় ভাই কে? ভাগ এখান থেকে (ছেলে দুটো পালালো)
,,
মতিউর এর শরীর স্বাস্থ্য ভালো আর একটু লম্বা হওয়ায় তার সাথে উল্টা পাল্টা কথা বলতে যে কেউ ভেবেই বলবে।
,,
গাড়িতে বসে মতিউর এই ঘটনা নিয়ে কোনো কথা বলল না। ড্রাইভার ঘটনা স্থলে প্রথমে না থাকায় কিছু বুঝতে পারেনি। বাসায় আসার পর....
-আমার সাথে আর যাওয়ার দরকার নেই আপনার, ওরা আমাকেই টার্গেট করেছে (রিদিকা)
-না, ওরা জিজ্ঞেস করতে আসছিলো। আর আসবে না, আপনাকে টার্গেট করবে না। (মতিউর)
-তাই যেন হয়
-জ্বি
,,
রিদিকার এক্সাম শেষ হলো। এ কয়েকদিন রিদিকার সাথে নিয়মিত ভার্সিটিতে গিয়েছে মতিউর। কোনো সমস্যা হয়নি সেই ঘটনা নিয়ে। মতিউর জানে সেই বড় ভাইটার কি অবস্থা এখন।
,,
এদিকে মতিউর এর সাথে রিদিকার তেমন কথাবার্তা হয় না। মতিউর ইচ্ছে করে দুই একটা কথা জিজ্ঞেস করলে শুধু উত্তর করে এর বেশি কিছু বলে না। এক্সাম শেষে রিদিকা সারাদিন ফোন ল্যাপটপ বাসায় মেয়ে বন্ধু এনে আড্ডা মাস্তি এগুলোতে মনোযোগ দিয়েছে।
,,
রিদিকা যাই করে তার বাবার অনুমতি নিয়ে, আর সবকিছুর আয়োজন করে মতিউর। মতিউর এর এগুলো পছন্দ হয় না৷ তার ক্ষমতা থাকলে সে এসবে বারণ করতো।
,,
একদিন মতিউর কে কল করে রিদিকার বাবা। মতিউর এর খোঁজ খবর নেওয়ার পর উনি বলেন...
-আমার মেয়ে তো রাঙামাটি ঘুরতে যাবে বন্ধুদের সাথে। এ সম্পর্কে তুমি কিছু জানো?
-না চাচা আমি কিছু জানি না (মতিউর)
-আমি চাইছি না ও যাক
-তাহলে মানা করে দিন
-ও অনেক দিন হলো এটা নিয়ে আমার সাথে কথা বলছে। আমি মানা করেছি কিন্তু ও তো রিকুয়েষ্ট করেই যাচ্ছে। তুমি একটু বলে দেখবে
-ঠিক আছে আমি বলে দেখি কি হয়
-আমাকে জানাইয়ো
-জ্বি চাচা জানাবো
,,
রিদিকা বিকেল বেলা তার বাসার সাইডের ছোট্ট বাগানে একটু ঘুরাফেরা করে। সেই সময়টা কাজে লাগায় মতিউর। সেদিন বিকেলের কথা...
-আপনাকে একটা কথা বলার ছিলে (মতিউর)
-জ্বি বলেন (রিদিকা)
-আপনি বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাচ্ছেন?
-এ কথা আপনাকে কে বলল?
-চাচা বলেছে
-ওহহহ, তো কিছু বলবেন?
-চাচা তো আপনাকে যেতে মানা করছে তো আপনি যাইয়েন না
-আমি বাবাকে ম্যানেজ করেছি তো। সে যেতে বলছে
-চাচা মন থেকে রাজি হয়নি
-তো আমি একটা জায়গায় ঘুরতে যাবো, এখানে সমস্যা কোথায়? তারা তো ঠিকই দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছে
-তা ঠিক। তবে আপনি তো ছোট, আগে বড় হন তারপর ঘুরতে যাবেন আপনিও
-আমাকে বুঝ দিতে আপনাকে বাবা পাঠিয়েছে?
-না আমি নিজে থেকেই আসছি
-এসব কথা বলার আপনি কে? বাবা রাখছে আপনাকে কাজের লোক হিসেবে। কাজের লোকের মতো থাকেন। আমার ব্যাপারে কথা বলতে আসছেন কেনো?
-চাচা বলল...
-চাচা বলল তাই আপনার আসতে হবে? এই নিয়ে যদি আর একটা কথা বলেন আমি খারাপ ব্যবহার করতে বাধ্য হবো
-জ্বি দুঃখিত আমি
,,
রিদিকা রেগেমেগে বাসার মধ্যে গেলো। আর মতিউর মাথা চুলকাতে চুলকাতে কি যেন ভেবে সে তার রুমে চলে গেলো।
,,
তারপর মতিউর এর সাথে রিদিকার বাবা কথা হয়। মতিউর সব কথা রিদিকার বাবাকে বলে দেয়। রিদিকার বাবা ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারে আর কোনো কথা বলল না৷ মতিউর ও রিদিকার কোনো ব্যাপারে কিছু বলল না। বাসায় আসছে কখন যাচ্ছে কখন এগুলো আপডেট রিদিকার বাবার কাছে দিতে লাগলো।
,,
একদিন মন খারাপ করে ড্রয়িং রুমে বসে আছে রিদিকা। ড্রয়িং রুমে বসার আগে সে ঝড় তুলে আসছে তার রুমে, সাথে ড্রয়িং রুমেও। হাতের কাছে যা পেয়েছে তাই ভেঙেছে। মতিউর বাসায় ছিলো না। সে বাসায় ফিরে দেখে সব এলোমেলো হয়ে ফ্লোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। রিদিকা গুটিশুটি মেরে ছোফায় বসে আছে আর তার সামনে বুয়া দাঁড়িয়ে রিদিকার রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করছে।
,,
মতিউর প্রথমে ভেবেছিলো মনে হয় বাড়িতে কোনো ডাকাত পড়েছিলো। সে এগিয়ে এসেই বলল..
-কি হয়েছে? বাসার এই অবস্থা কে করেছে? (মতিউর)
-...(বুয়া ইশারায় বুঝিয়ে দেয় রিদিকা এ কাজ করেছে। বুয়া ইশারায় চুপ করে থাকতে বলল মতিউর কে)
,,
মতিউর কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো। রিদিকা পূর্বের ন্যায় বসেই আছে। মতিউর দেখলো এভাবে কিছু সমাধান আসবে না।
,,
মতিউর মনের মধ্যে ভয় নিয়েই রিদিকার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল...
-ম্যাম যদি কিছু না বলেন আমরা বুঝবো কি করে কি হয়েছে? আমাদের বলেন কি হয়েছে আপনার (মতিউর)
,,
রিদিকা মাথা উঠিয়ে বাচ্চাদের মতো করে বলল..
-আমরা যে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করেছিলাম..(রিদিকা)
-হ্যাঁ করেছিলেন (মতিউর)
-সেখানে যাওয়া হবে না
-কেনো?
-ওদের বি এফ গুলো যেতে দিবে না, কয়েকজনের বাসা থেকে যেতে দিবে না
-ওহহ এটা নিয়ে সব ভেঙেছেন?
-আমি কখনো কোথাও ঘুরতে যাইনি, আমি আমার স্কুল কলেজ আর ভার্সিটি ছাড়া কিছুই চিনি না জানি না। খুব আশায় ছিলাম এবার যাওয়া টা হবে। কিন্তু হলো না
-আচ্ছা আমাদের সাথে ঘুরতে যাবেন?
-আপনাদের সাথে মানে?
-মানে আমি, আপনি, বুয়া, ড্রাইভার
-নাহহ আপনাদের সাথে যাওয়ার জন্য আমার মন টানছে না, আমি আমার বন্ধুদের সাথে
যাবো
-ম্যাম দেখেন কাদের সাথে গেলেন সেটা বড় কথা না। বড় কথা হচ্ছে আপনি বাইরে ঘুরতে যাচ্ছেন। আপনি কখনো পাহাড় দেখেননি। সেই পাহাড় দেখবেন পাহাড়ের চূড়ায় উঠবেন। ভাবতে পারতেছেন?
-আমিও যামু আমার খুব শখ, মতিউর ভাই ভালো কথাই কইছে (বুয়া হেসে)
,,
রিদিকা বুয়ার দিকে একবার তাকালো আরেকবার মতিউর এর দিকে। তারপর বলল..
-সবাই গেলে বাসায় থাকবে কে? রিদিকা)
-দারোয়ান তো আছেই (বুয়া)
-হ্যাঁ দারোয়ান আছে সে দেখবে
-তাহলে আমি ড্রাইভার ভাইরে ডাইকা নিয়ে আসি (বুয়া)
,,
ড্রাইভার এসে ছোট্ট মিটিংয়ে যোগ দেওয়ার পর বলল....
-আমার বউয়ের খুব শখ, দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার। আমাকে বলে তুমি গাড়ি চালাও আমাকে কখনো কোথাও নিয়ে যাওনি। আপনারা বললে আমার বউ আর তিন মেয়েকে নিয়ে যাবো
-ওরে বাবা রে, এ তো দেখি অনেক মানুষ হয়ে যায় (মতিউর)
-আরে সমস্যা নেই, এটাই ভালো হয়েছে, বেশি মানুষ হলে মজা বেশি (রিদিকা)
-ম্যাম আপনি রাজি এতগুলো মানুষের সাথে যেতে?
-হ্যাঁ, আচ্ছা যে যার যার কাজে মন দাও। আর এই যে আপনি (মতিউর কে উদ্দেশ্য করে) সন্ধ্যার পর আমার রুমে আসবেন ট্রুর নিয়ে প্ল্যান করতে হবে (রিদিকা এটা বলে চলে গেলো)
,,
সন্ধার পর মতিউর অপেক্ষা করছে রিদিকার ডাকের। রিদিকা ডাকছেও না। আবার যদি মতিউর না যায় ঠিক মতো বকা খাবে। মতিউর সাতপাঁচ কিছু না ভেবে রিদিকার রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। বাইরে থেকে মতিউর কয়েকবার ডাক দেয় কিন্তু ভেতর থেকে কোনো সাড়া আসে না। এবার মতিউর ধরজা ধাক্কা দিতে যাবে তখনই দেখলো দরজা অানলক। দরজা অর্ধেক খুলে যেতেই রুমের ভেতরের চিত্র মতিউর এর চোখের সামনে ভেসে উঠলো।
,,
আর যে চিত্র ভেসে উঠেছে তার দেখার জন্য মতিউর একদম প্রস্তুত ছিলো না৷ রিদিকা অর্ধ নগ্ন হয়ে ছিলো রুমের মধ্যে৷ রিদিকার হাতে শাড়ির আঁচল, মতিউর কে দেখে সেও কিছুক্ষণ এর জন্য থমকে যায়।
,,
মতিউর আর দেড়ি করলো না। দরজা টা লাগিয়ে দিলো। দরজা লাগানোর সময় চটাস করে একটা শব্দ হলো।
প্রায় আধ ঘন্টা পর রিদিকা মতিউর এর কে কল করে তার রুমে যেতে বলল। মতিউর তো ভাবছে আজকের রাতটাই মনে হয় তার শেষ রাত। কারণ সে যে অবস্থায় রিদিকাকে দেখেছে, রিদিকা তো অনেক রেগে আছে।
,,
মতিউর কোনো উপায় খুঁজে পায় না। ভয় নিয়েই রিদিকার রুমে যায়। রিদিকা তার রুমের সোফায় মতিউর কে বসতে দেয়। মতিউর মাথায় নিচের দিকে করে রেখেছে। ভয়ে তার কপাল ঘামছে। এদিকে রিদিকা স্বাভাবিক। রিদিকা তার বিছানায় বসে বলল..
,,
-তাহলে বলেন কবে যাওয়া যায়? (রিদিকা)
-আ আ আপনি বলেন ক ও কবে যাওয়া যায় (মতিউর)
-তোলাচ্ছেন কেনো?
-আসলে তখনকার জন্য সরি, আমি ইচ্ছে করে কিছু দেখিনি
-আমি কি কিছু বলেছি?(রিদিকা মুচকি হেসে বলল)
।।
।।
চোরাবালি মন তোমার
Part : 4
Write : Sabbir Ahmed
____________________________
-আসলে তখনকার জন্য সরি, আমি ইচ্ছে করে কিছু দেখিনি(মতিউর)
-আমি কি কিছু বলেছি? (রিদিকা মুচকি হেসে বলল)
-তবুও
-বাদ দেন ওগুলো কথা
-হুমমম
-কোথায় যাওয়া যায়? কিভাবে যাওয়া যায় এগুলো নিয়ে কথা বলি আমরা
-হ্যাঁ এর জন্যই তো আসলাম
-আচ্ছা তো বলুন কোথায় যাওয়া যায়
-আপনার রুমটা অনেক সুন্দর
-থ্যাংক ইউ। বাট মনোযোগ ঐইদিকে দেন,
-ওহহ সরি সরি
-কোথায় যাওয়া যায় বলুন
-গেলে মনে করেন দূরে যাওয়াই ভালো। একটা মাইক্রোবাস ভাড়া করে নিয়ে গেলাম। রাতে হোটেলে থাকলাম, আবার সেখান থেকে অন্য কোথাও গেলাম, এভাবে করে তিনদিন এর একটা ট্যুর এর আয়োজন করলে ভালো হবে
-হুমম সেটাই ভালো হবে
-তাহলে আপনার ফ্রেন্ডদের নিয়ে যেখানে যাওয়ার কথা ছিলো সেখানেই যাই। রাঙামাটি, বান্দরবান এই জায়গা গুলোতে
-ওকে ওকে আপনি আর ড্রাইভার মিলে সব ব্যবস্থা করুন। আর সবাইকে বলে দিবেন যাতায়াত খরচ আমার, আর বাকি যার যার খরচ সে সে বহন করবে
-আচ্ছা ঠিক আছে। আমি কি তাহলে এখন আসবো?
-হুমম আপনি যেতে পারেন, তবে একটু ওয়েট করেন, আপনাকে নিয়ে একটা কথা বলার আছে
-জ্বি বলেন
-আপনি কালো হলেও, ভালো মানুষ
-এগুলো কোনো কথা বললেন??
-কেনো খারাপ কিছু বললাম?
-নাহহ খুব ভালো বলেছেন
-দেখেন রাগ করবেন না। আমার ধারণা ছিলো যে কালো মানুষ অনেক রাগী হয়। আর খারাপ ও হয়। আমি তো এতো মানুষকে জানিনা। আমার ঘরে থেকে আমার ছোট্ট মাথায় ভেবে যা বুঝেছি এতোদিন সেটাই বলেছি। তবে এখন বুঝতে পারছি কালার কোনো ফ্যাক্ট না।
-যদিও ভালো বলেছেন তবুও মনটা খারাপ হয়ে গেলো
-কেনো?
-কালো বললেন তাই
-এখানে কিছু করার নেই আমার, দোষ দিলে দেন। যেটা সত্যি সেটাই বলেছি
-আচ্ছা আমি উঠি এখন
-আর যেটা দেখেছেন সেটা ভুলে যাবেন, ওকে?
-কি দেখেছি?
-ঐ যে একটু আগে
-আমি কিছু দেখিনি, আপনি শাড়ির আঁচল ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন, সেটাই দেখেছি
-আর কিছু না?
-না
-তাহলে ঠিক আছে
-জ্বি আসি
-ওকে, আর যে কাজ গুলো দিয়েছি ঝটপট সেড়ে ফেলেন। সবাইকে কথাটা জানিয়ে দেন।
-হুমমম
,,
মতিউর বাইরে চলে এসে। জোরে একটা শ্বাস ছেড়ে মনে মনে বলল...
-উনার তো আক্কেল জ্ঞান কিছুই হয়নি। আমার সামনে কি সব কথা বলে।
,,
হঠাৎ সেখামে বুয়ার প্রবেশ। মতিউর কে থম হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বুয়া বলল..
-মতিউর ভাই, আপনি আপার রুমের সামনে কি করেন? (বুয়া)
-আমাদের ট্যুরে যাওয়া নিয়ে কথা বলছিলাম (মতিউর)
-আপনে না কইলেন আমাদের ঘুরতে নিয়ে যাবেন। তাইলে আবার ট্যুরে যাবেন ক্যান?
-আরে ঘুরতে যাওয়া আর ট্যুর একই কথা
-ওহহ বুঝছি ইংরেজি কইছেন
-হ, সবাই তো এটাই বলে
-আপনারে একটা কথা কওয়ার আছে
-হ্যাঁ বলো
-চাচা তো কইছে আপনার থেকে বেতন নিতে, আপনি এই মাসে আমারে দুইডা হাজার টাকা বেশি দিয়েন। আবার পরের মাসে ঐ টাকাই কম দিয়েন
-চাচা তো আমাকে বেশি টাকা দেয় না। যা দেয় হিসেব করেই দেয়। ওখান থেকে কিভাবে দিবো? আচ্ছা আমি ম্যানেজ করে দিবোনি
-আরেকটা কথা
-কি?
-আপনে আমার একটা হেল্প করবেন
-কি হেল্প?
-আমি একটু শপিং এ যামু, আপনি আমার সাথে যাইবেন
-তোমার জামইরে নিয়ে যাও
-আমার তো বিয়ে হয়নি,
-আমি যেতে পারবো না আমার কাজ আছে, তুমি তোমার আপার সাথে যাইয়ো
-আইচ্ছা (রাগ দেখিয়ে চলে গেলো বুয়া)
,,
বাসার সবার মাঝেই কয়েকদিন হলো বেশ উত্তেজনা কাজ করছে। ভ্রমনে যাওয়ার আলাপ আলোচনা হচ্ছে। শপিং করছে সবাই। এই আলোচনার মধ্যে দিয়ে মতিউর আর রিদিকার ভালো একটা বন্ধুত্ব হয়ে যায়। রিদিকা এখন তার সব কাজেই মতিউর কে ডাকে।
,,
দেখতে দেখতে সেই ভ্রমণে যাওয়ার কাঙ্খিত সময়টা চলে আসলো। তারা একটা মাইক্রোবাস ভাড়া করেছে। ড্রাইভার আর তার বৌ ছেলেমেয়ে নিয়ে সেদিন ভোরে হাজির। বুয়া রেডি মতিউর ও রেডি। রুম থেকে বের হতে দেড়ি করছে রিদিকা। সবাই বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। আর বলাবলি করছে "এখানে এতো দেড়ি করলে তো চলবে না, আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। ম্যাম যে ভেতরে কি করছে কে জানে"
,,
রিদিকা কিছুসময় পর বের হলো। সবাইকে সরি বলে সে গাড়িতে চরে বসলো। গাড়ির সামনে ড্রাইভার পাশে মতিউর। পেছনের সিটে একসাথে বসেছে বুয়া আর রিদিকা, আর তার পেছনে বসেছে রিদিকার বাসার ড্রাইভার আর তার মেয়েগুলো।
,,
যাওয়ার পথে রিদিকার একদম বোরিং লাগছিলো। মন মরা হয়ে বসেছিলো। কিছুদূর যাওয়ার পর গাড়ি থামিয়ে রিদিকা বুয়াকে সামনে দিলো আর মতিউর কে তার পাশে বসালো।
,,
মতিউর বুঝতে পারছিলো রিদিকার শরীর খারাপ করছে। মতিউর বলল..
-আপনি চাইলে আমরা ফিরে বসায় চলে যাবো (মতিউর)
-আরে নাহহ সমস্যা নেই (রিদিকা)
-আপনার তো শরীর খারাপ মনে হচ্ছে
-উহুমম আমি ঠিক আছি
-দেখেন বাইরে ঝড় শুরু হয়েছে, সাথে বৃষ্টি ও
-ড্রাইভার কে গাড়ি থামাতে বলেন, ঝড়ে আবার গাছ গাড়ির উপর পরলে সবার ক্ষতি হবে
,,
একটা নিরাপদ জায়গা দেখে গাড়ি থামানো হলো রাস্তার পাশে। যেখানে গাড়ি থামিয়েছে সেটা একটা রাস্তার মোড়। সাব রোড হয়ে সেটা ভেতর দিকে চলে গিয়েছে। মোড়ে দুই একটা দোকান দেখতে পাওয়া যাচ্ছে তার মধ্যে চায়ের দোকান ও ছিলো। মতিউর চায়ের দোকান দেখে রিদিকা কে বলল..
-ম্যাম চা খাবেন?? (মতিউর)
-হুমম খাওয়াই যায় (রিদিকা)
-দাঁড়ান আমি নিয়ে আসি
-ভিজে যাবেন তো
-সামনেই তো দোকান ভিজবো না আমার যেতে কয়েক সেকেন্ড লাগবে
-আচ্ছা ঠিক আছে
,,
মতিউর দু কাপ চা নিয়ে আসলো। একটা ম্যাম কে দিলো। চা নিয়ে এসে গাড়িতে উঠতেই মতিউর অনেকটাই ভিজে গেলো। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে তাতে চুমুক দিতে দিতে রিদিকা বলল...
-বললাম যে ভিজে যাবেন শুনলেন না(রিদিকা)
-ভাই আমার জন্য এক কাপ নিয়ে আসেন (ড্রাইভার এর সিটে বসে থাকা ড্রাইভার)
-ধুরর মিঞা আপনি নিয়ে আসেন
-ম্যাম এর টা তো সেধে গিয়ে নিয়ে আসলেন
-আপনি তো ম্যাম না তাই না? এইজন্য নিয়ে আসিনি
,,
মতিউর এর কথায় সবাই হো হো করে হেঁসে উঠলো। ড্রাইভার গাড়ি থেকে নামলো চা খেতে। পেছনে বসে থাকা রিদিকার ড্রাইভার তার বৌ বাচ্চা সামলাতে ব্যস্ত। আর সামনে বসা বুয়া এদিক ওদিক তাকিয়ে বৃষ্টি দেখছে।
,,
-চা টা তো ভালোই (রিদিকা)
-হুমম আমার কাছেও ভালো লাগছে (মতিউর)
-হুমমম
-শোনেন আরও ভালো লাগবে
-কিভাবে?
-চায়ের কাপটা বাইরে ধরে রাখেন কয়েকটা বৃষ্টির
ফোঁটা পরুক দেখবেন স্বাদ আরও বেড়ে যাবে
-সত্যি??
-হ্যাঁ ট্রাই করুন, আমিও করছি
-আচ্ছা
,,
রিদিকা মতিউর এর কথামতো চায়ের কাপ বাইরে ধরে রেখে ভেতরে নিয়ে আসলো। আর একটু খেয়ে...
-বাহহ স্বাদ তো পরিবর্তন হয়ে গেছে, আর ভালো লাগছে (রিদিকা)
-হুমমম (মতিউর)
-এরকম আইডিয়া কোথায় পেলেন?
-আইডিয়া টা আমার না, অনেকেই করে দেখেছি
-ওহহ। জানেন চা খেয়ে মনটা একদম ভালো হয়ে গেছে, আর এই জন্যই আপনাকে আমার পাশে বসানো
-উমম এটাই তো কাজ, এর জন্যই তো বেতন পাই
-খোঁচা না দিয়ে কথা না বললে হয় না?
-কোথায় খোঁচা দিলাম
-আমি কি বুঝি না?
-বোঝেন তো
-পাক্কা শয়তান আপনি
-আমি শয়তানি করিনি
-করেছেন
-কখন করলাম?
-জানি না
-এর নাম মেয়ে মানুষ, কিসের সাথে কি বলে, কখন কি বলে সে নিজেও জানে না
-হ্যাঁ এখন তো আমার জন্য পুরো মেয়ে জাতির দোষ হবে
-এটা আপনাদের দোষ না, বৈশিষ্ট্য
-আর আপনাদের বৈশিষ্ট্য কি?
-ঐতো মাত্রাতিরিক্ত অবুঝপনা করলে মাইর দেওয়া
-আপনার বউ যদি ওরকম করে আপনি মাইর দিবেন?
-আলবাত, উরাধুরা মাইর চলবে
-বউ যদি রাগ করে চলে যায়
-আরেকটা বিয়ে করবো
-আর এইটা হলো ছেলেদের বৈশিষ্ট্য।
-বাহহ আপনিও তো আমাকে কমে ছাড়লেন না,
-কেনো ছাড়বো হ্যাঁ?
-আমি ভেবেছিলাম ফর্সা মানুষ গাধি হয়, এখন দেখছি দুই একজন চালাক ও হয়
-ওরে ওরে কি মানুষ আপনি, সেদিন এর সোধ আজকে নিলেন? তাও আবার এইভাবে?
-নাহহ, বাদ দেন এগুলো, বৃষ্টি কমে আসছে এখন রওনা হওয়া যাক
-আচ্ছা
-আমি চায়ের কাপ টা দিয়ে ড্রাইভার কে ডেকে নিয়ে আসি
,,
মতিউর গাড়ি থেকে নেমে ড্রাইভার কে ডেকে নিয়ে আসলো। তারপর আবার রওনা হলো। মতিউর আর রিদিকা দুজন গাড়ির দুইপাশে বসা। মাঝখানে অনেকটা ফাঁকা জায়গা। গাড়ির মধ্যে কিছুক্ষণ চেঁচামেচি থাকলেও এখন সবাই চুপ হয়ে আছে, পেছনে থাকা কয়েকজন ঘুমিয়ে গেছে। ড্রাইভার আপন মনে গাড়ি টানছে।
,,
এদিকে বার বার মতিউর আড় চোখে রিদিকা কে দেখার চেষ্টা করছে। রিদিকা টের পেয়ে মাঝখানে এসে বসলো, আর মতিউর কে কাছে ডেকে নিলো। ফিসফিস করে বলল..
-বার বার তাকাচ্ছেন কেনো???(রিদিকা)
-ইয়ে মানে এমনি (মতিউর)
-এমনি কি??
-এমনি কি দেখছিলেন??
-কিছু না
-সেদিন দেখার পর থেকে কি লোভ জেগেছে?
-নাউজুবিল্লাহ! কি বলেন এগুলা? আমি ওরকম কিছু দেখিনি আর ভাবিওনি
-তাহলে সত্যি করে বলেন তাকাচ্ছিলেন কেনো?
-আপনার অবস্থা বোঝার চেষ্টা করছিলাম
-কেমন অবস্থা?
-হাসি খুশি নাকি মন খারাপ,
-ওহহহ আচ্ছা তাহলে ঠিক আছে, আমি তো ভাবলাম আমাকে দেখে..
-দেখেন বার বার আমাকে লজ্জায় ফেলবেন না, আমি তো ঐ জন্য সরি বলেছি
-হা হা হা বুঝেছি আমি। এমনি একটু মজা করলাম। আচ্ছা আমার এতো খেয়াল রাখতে হবে কেনো?
-চাচা বলে গেছে
-বাবা তো বলেনি মন খারাপ কি না সেটা দেখতে আর তার জন্য খেয়াল রাখতে....
।।
।।
চোরাবালি মন তোমার
Part : 5
Write : Sabbir Ahmed
____________________________
-চাচা বলে গেছে (মতিউর)
-বাবা তো বলেনি মন খারাপ কি না সেটা দেখতে, আর তার জন্য খেয়াল রাখতে (রিদিকা)
-জানি না আমি (মতিউর একটু হেসে)
-এর জন্য কি বেতন বেশি নিবেন নাকি?
-নাহহ যা দেয় সেটাই অনেক
-হুমমম
,,
পুরো রাস্তায় আর তেমন কথা হলো না কারও সাথেই। সবাই কেমন যেন ক্লান্ত হয়ে পড়লো। তবে রাঙ্গামাটিতে গিয়ে অনেক জায়গায় ঘুরেছে অনেক মজাও করেছে সবাই মিলে।
,,
মতিউর এর মন অন্যদের থেকে একটু ভিন্ন মুডে আছে। সে যে রিদিকা কে ফলো করে, লুকিয়ে দেখে আবার মিটিমিটি হাসে সব রিদিকা বুঝে গিয়েছে।
,,
একসময় রিদিকা মতিউর কে ডেকে একটা নিরিবিলি রাস্তায় হাঁটতে বের হয়। রিদিকার উদ্দেশ্য মতিউর কাছে থেকে কারণ টা শোনা৷ যে রাস্তায় তারা বের হয়েছে সেখানটা অনেক উঁচু আর এতো উঁচু থেকে দূরের অনেক পাহাড় দেখা যায়৷ রিদিকা কথার ছলে বলল...
-দেখেছন পাহাড় গুলো? (রিদিকা)
-হ্যাঁ অনেক সুন্দর দেখতে (মতিউর)
-এর টানেই সবাই এখানে আসে
-হুমম
-আপনি আমাকে লুকিয়ে কেনো দেখেন
-....(রিদিকার কথায় কি উত্তর দিবে, মতিউর সেটা খুঁজে পায় না। ভয়ে সে ঘামতে শুরু করে)
-আমি বলি, আপনি আমাকে একটু হলেও ভালোবেসে ফেলেছেন৷ সরি ভুল বললাম হয়তো আমাকে ভালো লাগে আপনার। কিন্তু শোনেন এগুলো বাদ দিতে হবে। আমি আপনার সাথে বেশি কথা বলি, কাছে কাছে রাখি তার মানে এই না যে আমি আপনাকে পছন্দ করি ঐভাবে৷ আপনি ভালো আর আপনার ব্যবহার ও খুব ভালো। কিন্তু ইদানীং আপনার আচরণ বেশ সন্দেহজনক। আমি আপনার থেকে এমনটা আশা করিনি
-ম্যাম আমি দুঃখিত
-হুমম ব্যাপার টা এখানেই শেষ করা ভালো। আমাকে নিয়ে কোনো স্বপ্ন দেখা যাবে না
-জ্বি সরি
-এই যে কথা সহজ ভাবে মেনে নিলেন, এই জন্যই আপনাকে ভালো লাগে। আপনার সাথে যার বিয়ে হবে তার কপাল খুব ভালো। আপনার সাথে ঝগড়া লাগবে কম। অল্পতেই সব মেনে নেন
-হুমমম
-মন খারাপ হয়েছে?
-আরে নাহহহ
-না হয়েছে তো একটু
-কই নাহহ
-আপনার চোখে তো পানিও চলে আসছে দেখছি
-কই না কি যে বলেন
-আচ্ছা আমরা কোথাও বসি?
,,
একটা খোলামেলা জায়গা দেখে দুজন রাস্তার পাশে পাথরের উপর বসলো।
-আমার মনে কিছু কৌতুহল জেগেছে, আপনি অনুমতি দিলে কিছু প্রশ্ন করতে পারি। তবে হ্যাঁ উত্তর গুলো দিতে হবে (রিদিকা)
-জ্বি বলেন (মতিউর)
-আমাকে কিভাবে ভালো লাগলো আপনার?
-এগুলো কথা?
-হুমম বলেন
-আপনার কথা বলা, হাসি, আর চোখ
-একটু গুছিয়ে বলুন
-এর থেকে ভালো ভাবে তো বলতে পারবো না৷ তবে আমার এগুলোই পছন্দ হয়েছিলো
-কবে থেকে?
-প্রথম যেদিন দেখেছিলাম সেদিন থেকেই
-আগে তো তাকিয়ে থাকেননি
-সাহস পাইনি
-আর এখন একটু বেশি কথা বলি, তাই সাহস পেয়েছেন
-হুমম ওরকমই
-আমার কি মনে হয় জানেন?
-কি মনে হয়?
-আমার শরীর দেখে আপনি আমাকে পছন্দ করেন। আপনি সেই মাইন্ড নিয়ে আমার দিকে তাকান
-ছিঃ ছিঃ কি বলেন এসব
-সাধু সাজতেছেন?
-সাধু না, তবে আমি
-আমি কি?
-ভালো করেই বলি?
-হ্যাঁ
-আপনি যেমনটা ভাবছেন, তেমনটা না, আমি আসলে আপনাকেই ভালোবাসি আর সেটা সত্যি সত্যি।
-শরীর দেখে না?
-না
-তাহলে আমাকে ভালোবাসবেন আমার শরীর তো দরকার নেই। এটাই তো বোঝায় তাই না?
-এগুলো কি বলেন? আপনি অনেক পঁচা পঁচা কথা বলেন। আমি যা আপনাকে নিয়ে ভাবিনি সেসব বলছেন আপনি
-ওকে ওকে শুনেন। আজ থেকে আপনি আমার সাথে ঘুমাবেন। এখানেও আর বাড়িতেও
-কেনো?
-আপনাকে নিয়ে তো ভয় নেই আমার। আপনি তো আমার শরীর স্পর্শই করবেন না। আমাকে যেহুতু ভালোবাসেন আমার কাছেই থাকবেন। ভালোবাসাটা পেলাম আবার আমার কোনো ক্ষতিও হলো না
-আপনি কি দিয়ে কি বলছেন আমি কিছুই বুঝতেছি না।
-এতোসব বুঝতে হবে না, আজ থেকে আমার সাথে ঘুমাবেন এটাই শেষ কথা। ওকে?
-জ্বি
-চা খাবো চলেন
-পেছনে দোকান ফেলে আসছি
-সামনের দিকো যাবো
-হেঁটেই
-হ্যাঁ হাঁটতেই তো আসছি
,,
হাঁটতে হাঁটতে দুজন কথা বলছিলো।
-বাবাকে বলে এখানে কিছু জায়গা কিনতে হবে (রিদিকা)
-এখানে জায়গা কিনে কি করবেন? (মতিউর)
-বাড়ি করবো, বছরে দুই একবার এসে থাকবো,
-ঢাকায় তো আছেই
-এখানে তো নেই।
-হুমম ভালো বলেছেন, চাচার তো অনেক টাকা কিনতেই পারেন
-দেখা যাক কি হয়
-আচ্ছা আপনি লেখাপড়া শেষ করে কি করবেন?
-বিয়ে সংসার
-ওহহহ
-আপনি বিয়ে করবেন কবে?
-কি জানি
-বয়স কতো আপনার?
-আমার আপনার একই
-তাহলে আপনাকে বয়স্ক বয়স্ক লাগে কেনো?
-কালো যে তাই
-না, আপনার কালার টা দোষের কিছু না। খেতে খামারে কাজ করে চেহারাটার বারোটা বাজিয়ে ফেলেছেন। ঐ তো দোকান, আপনি চা নিয়ে আসেন আমি এখানো দাঁড়িয়ে আছি
-হুমমমম
,,
মতিউর চা নিয়ে আসার পর।
রিদিকা চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে বলল..
-এখন বৃষ্টি হলে ভালো হতো। চায়ের কাপে দু ফোঁটা বৃষ্টির পানিতে, চায়ের স্বাদ অমৃত লাগতো (রিদিকা)
-যে রোদ উঠেছে, এখানে আসার পর তো বৃষ্টিই হয়নি(মতিউর)
-এখন এইরকম খাওয়া যাক। বৃষ্টি হলে আপনার স্টাইলে খাবো
-হুমমম
-ওহহ হ্যাঁ ভালো কথা, হোটেলে গিয়ে আপনার ব্যাগ পত্র যা আছে আমার রুমে নিয়ে আসবেন
-কেনো?
-একটু আগে কি বললাম আপনাকে?
-একসাথে থাকার কথা?
-হ্যাঁ
-সবাই কি মনে করবে??
-কিছুই মনে করবে না, আমি চেয়েছি তাই থাকবেন
-জ্বি
-এরপর দেখবো কিরকম ভালোবাসেন আমাকে
-...(মতিউর মিটিমিটি হাসছে)
-এই এই এই হাসছেন কেনো?
-একটা কথা ভেবে
-কি কথা?
-বিয়ে করে একটা ছেলে মেয়ে একসাথে থাকে। আর আমি আপনি..
-ওই ওই এটা ওরকম থাকা নয়। আপনি আমার পাশে থেকেও আমার সাথে নেই, সেইভাবে থাকতে হবে
-জ্বি আমি বুঝেছি
,,
সেদিন রাতে রিদিকার কথায় মতিউর ব্যাগপত্র নিয়ে হাজির।
রাতের খাওয়া হয়ে গেছে সবার এখন ঘুমানোর সময়।
-তো আমার ডান পাশে ঘুমাবেন নাকি বাম পাশে? (রিদিকা)
-বাম পাশে (মতিউর)
-বাম পাশ টা বেছে নিলেন কেনো? কোনো চালাকি আছে নাকি?
-কি চালাকি থাকবে? আর আপনিই তো বিপদে ফেলে দিলেন
-কিসের বিপদে ফেললাম আপনাকে?
-এই যে একসাথে
-আপনি আমাকে ভালোবাসেন কতটা সেটা আমি দেখবো না?
-এভাবে কেউ ভালোবাসা পরীক্ষা করে?
-কে কি করে সেটা আমি জানি না৷ আপনি বলেছেন আমার রূপ দেখে আমাকে ভালোবাসেননি। আমার চোখ হাসি আর কি যেন বলেছিলেন সেসব দেখে ভালো লেগেছে, আর ভালোবেসেছেন৷
এখন দেখি আপনার ভালোবাসার মধ্য কি আছে।
-আচ্ছা
,,
মতিউর বালিশ নিয়ে রিদিকার বাম পাশে বিপরীত মুখি হয়ে শুয়ে পড়লো।
-শুয়ে যে পড়লেন লাইট অফ কে করবে?(রিদিকা)
-...(মতিউর উঠে গিয়ে লাইট অফ করে দিয়ে আসলো)
-বেশ শীত লাগছে, ফ্যান এা অফ করে দিয়ে আসেন তো
-...(মতিউর ফ্যান অফ করলো)
-এখন গরম লাগছে জানালা গুলো খুলে দেন এখান থেকে আবছা আবছা পাহাড় দেখা যাচ্ছে। দূর পাহাড় থেকে বাতাস আসবে আমার জানালায় হি হি হি
,,
মতিউর এখন বুঝতে পারলো কেনো তাকে এখানে থাকতে দিয়েছে। কিছুক্ষণ পর পর একটা না একটা বায়না আছেই। এইরকম বায়না করতে করতে তখন মাঝ রাত...
-আমি বাইরে যাবো (রিদিকা)
-অচেনা জায়গা, আবার এসব জায়গা ভালো হয়না। বাইরে যাওয়া যাবে না (মতিউর)
-তার মানে আপনি আমাকে ভালোবাসেন না। আমার শরীর..
-হয়েছে থাক, আর বলতে হবে না চলেন বাইরে
,,
হোটেল এর বাইরে যাওয়া একদম নিষেধ তবুও দারোয়ান কে কিছু টাকা ঘুষ দিয়ে এটা সেটা বুঝিয়ে বাইরে বের হলো।
-আহহহ বাইরে মাঝ রাতে বাইরে দারুণ লাগছে তো (রিদিকা)
-ম্যাম আমার ঘুম পাচ্ছে (মতিউর)
-আরে রাখেন তো আপনার ঘুম, আপনাকে ধন্যবাদ এরকম একটা পরিবেশ উপহার দেওয়ার জন্য৷ দেখেন কত্ত জোনাকি
-আমি কিছুই দেখছি না আপনি দেখেন
,,
কিছুক্ষণ আশেপাশে ঘুরে রুমে চলে আসলো। এবার রুমে এসে রিদিকার ও খুব ঘুম পেয়েছে। দুজনই ঘুমিয়ে পরে।
,,
সকাল বেলা,,,
ঘড়িয়ে নয়টা বাজতে চলল দুজনের কেউই জাগনা পায়নি। কিছুসময় পরেই রিদিকা চোখ খুলল।
তাকিয়ে দেখলো মতিউর এর একটা হাত তার মাথায় ঘের দিয়ে রেখেছে, আরেকটা হাত তার পেটের উপর। মতিউর খুব কাছে এসে শুয়েছে তার।
রিদিকা অল্প সময়ের মধ্যে খুব রেগে যায়। আর মতিউর কে ডেকে তুলেই তার গালে দুইটা চর বসিয়ে দেয়। তারপর জোর গলায় কিছুক্ষণ বকাবকি করে। তখনও মতিউর এর ভালো করে ঘুম ভাঙেনি।
,,
মতিউর সেই অবস্থায় বলে..
-কিছু বুঝলাম না কি হয়েছে? মারলেন কেনো? (মতিউর)
-তোর কথার কোনো দাম নেই, তুই আমার শরীর হাত দিয়েছিস (রিদিকা)
-ম্যাম আপনার মথা ঠিক আছে? দেখেন আমি আমার জায়গায় শুয়ে আছি। উল্টো আপনি আমার কাছে এসে আমার পুরো শরীর উপর এসে বেশ কয়েকবার ঘুমিয়েছিলেন। আপনার মনে হয় এটা অভ্যাস পুরো বিছানা একা নিয়ে ঘুমানো। আপনাকে সামাল দিতে আমি আর ঘুমাতে পারিনি। ঘুমিয়েছি ভোরে। আর তারপর আপনি এতো কাছে এসেছেন কখন আমি জানি না৷
ম্যাম আমার ঘুম পাচ্ছি আরেকটু ঘুমিয়ে নেই। আপনি ফ্রেশ হয়ে নেন (মতিউর বালিশে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে ফেলল। আর এমন ভাব করলো, সে মনেই করলো না একটু আগে সে দুটো চর খেয়েছে)
,,
রিদিকা কিছুক্ষণ মতিউর এর দিকে তাকিয়ে ভাবছিলো..
-মনে হয় ও সত্যি বলেছে। ও তো ওর জায়গায় ছিলো, আমি তো ওর কাছে গিয়েছি। শুধু শুধু চর টা মারলাম। সরি বলা দরকার, ঘুম থেকে উঠুক। এর মধ্য আমি একটু ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নেই....(রিদিকা)
,,
আরও ঘন্টা দুয়েক পর মতিউর ঘুম থেকে উঠে। রিদিকা রুমে বসে মোবাইল দেখছিলো মতিউর এর জাগনা পাওয়া দেখে বলল...
-ফ্রেশ হয়ে আসেন তাড়াতাড়ি , আমি আপনার জন্য খাবার অর্ডার করেছি(রিদিকা)
-আচ্ছা ঠিক আছে (মতিউর এটা বলে বাইরে যাচ্ছিলো)
-আরে বাইরে কোথায় যান?
-ফ্রেশ হতে
-আমার ওয়াশরুম ব্যবহার করেন, আর তাড়াতাড়ি করেন। আজ সন্ধ্যায় রওনা হবো
-জ্বি আচ্ছা
-কি ঘুমের কুমির রে বাবা। দাঁড়িয়ে থেকেও ঘুমায়...
।।
।।
চোরাবালি মন তোমার
Part : 6
Write : Sabbir Ahmed
______________________________
-কি ঘুমের কুমির রে বাবা। দাঁড়িয়ে থেকেও ঘুমায় (রিদিকা)
,,
মতিউর রিদিকার কথার কোনো উত্তর না করে ওয়াশরুমে গেলো।
রিদিকা তার ব্যাগ পত্র টুকটাক গোছাতে শুরু করেছে। আর সবাইকে বলা হয়েছে তারা যেন দুপুরের আগেই সবকিছু গুছিয়ে রেডি হয়ে থাকে। কাজের বুয়া ড্রাইভার আর তার বৌ বাচ্চা সবাই এই ট্যুরে এসে খুশি হয়েছে।
,,
যদিও ড্রাইভার তার বৌ বাচ্চার জন্য তেমন একটা জায়গায় যেতে পারেনি, তবুও সে খুশি।
,,
ফেরার পথে......
আসার সময় যে যেমন বসেছিলো তেমনই বসলো। রিদিকা আর মতিউর সেই একই সিটে। ট্যুর কেমন হলো না হলো এটা নিয়ে সবাই মতামত দিচ্ছিলো। তাদের এই আলোচনার বাইরে ছিলো রিদিকা।
সে ফোনে কাকে যেন ম্যাসেজ করছে আর মিটিমিটি হাসছে। মতিউর একবার রিদিকা কে বলল..
-আপনি কিছু বলেন (মতিউর)
-আমি কি বলব? আপনাদের যেমন লাগছে তেমনই (রিদিকা আবার ম্যাসেজ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো)
-সবাই কথায় ব্যস্ত আর আপনি অন্যদিকে
-এই তুই কে রে আমাকে এসব বলার? আমার যেদিকে মন চায় আমি সেদিকে ব্যস্ত থাকবো, তুই আমার উপরে হুকুম জারি করার কে? বেয়াদব কোথাকার
,,
রিদিকার এই বকা দেওয়ায় সবাই চুপ হয়ে গেলো। গাড়ির মধ্যে থমথমে পরিবেশ। মতিউর এর চোখে পানি সে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। চোখের পানি লুকানোর চেষ্টা করছে। রিদিকা মতিউর কে গাড়ি থেকে নামিয়ে সামনে দিয়ে দিলো। আর সামনে থেকে বুয়াকে তার কাছে নিয়ে আসলো।
সেই বুয়া এসে বলল..
-ম্যাডাম আপনে মতিউর ভাইকে গালি দিলেন....(বুয়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই)
-সেই কৈফিয়ত কি এখন তোকে দিতে হবে? আমার মাথাটা গরম করে দিতেছিস তোরা। এখন বাড়ি যাই, সব কটারে বাড়ি ছাড়া করবো আমি। আমি তোদের কৌফিয়ত দেওয়ার জন্য বসে আছি???
,,
মতিউর বুয়াকে থামতে বলল। রিদিকা আবার তার ম্যাসেজ করায় মন দিলো। বাসা পর্যন্ত আর কেউ কথা বলল না। রাত হওয়ায় সবাই ঘুমিয়েছে। শুধু মতিউর, হাইসের ড্রাইভার আর রিদিকা বাদে।
,,
এখন মধ্য রাত,
রিদিকা পুরোদমে ম্যাসেজ করেই যাচ্ছে। মতিউর ভাবছে, সে যাওয়ার সময় এমন ছিলো না এমনকি আজকে রওনা হওয়ার সময় পর্যন্ত ঠিকই ছিলো, হঠাৎ কি হলো!
,,
মতিউর পুরো রাস্তা এই কথাটা ভাবতে থাকে। ভোরের দিকে গাড়ি এসে থামে রিদিকার বাসার সামনে। তার আগেই ড্রাইভার এর বৌ বাচ্চা নিয়ে তার বাড়ির সামনে নেমে যায়। বাকি তিনজন এখন গাড়ি থেকে নামলো।
,,
রিদিকা কারও সাথে কোনো কথা না বলে হুড়মুড় করে বাসার মধ্য চলে গেলো। মতিউর হাইসের ড্রাইভার কে বিদায় জানিয়ে বুয়াকে নিয়ে বাসার মধ্যে প্রবেশ করে।
-মতিউর ভাই সকালে রান্না কি কি রান্না করবো? (বুয়া)
-আপনার ম্যাম যা যা খায় তাই তাই (মতিউর)
-তাইলে বাজার লাগবো। বাজার তো নাই
-আচ্ছা তাহলে আমি বাজারে যাচ্ছি
-একটু জিড়ায়া যান
-সকাল সকাল গেলে টাটকা সবজি পাওয়া যাবে, আমি এখনই যাই
-তাইলে যান
,,
মতিউর বাজার করে নিয়ে আসলো। বুয়ার রান্নাও সাহায্য করলো। বাসার আশেপাশে একবার করে দেখে নিলো সব ঠিকঠাক আছে কি না৷
,,
এদিকে বুয়া মতিউর কে খাওয়ার টেবিলে ডাকছে।
-ম্যাম খেতে আসেনি? (মতিউর)
-সে পরে খাইবো, ডাক দিতে মানা, আপনে খাইয়া নেন (বুয়া)
-আচ্ছা, আপনিও খেয়ে নেন
-আমি খাইয়া, আপনেরে ডাক দিছি
,,
মতিউর টেবিলে বসে যখন প্লেটে হাত ধুচ্ছিল তখন বুয়া মতিউর এর দিকে একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়।
-ভাইজান, আপনার লগে তো ম্যাম এর ভালোই মিল, তাইলে আপনার সাথে অমন করলো কেন??(বুয়া)
-আমি তো জানি না (মতিউর)
-আপনারা দুজন তো গত রাত্রিরে এক সাথেই থাকছেন এক রুমে, সেখানে কিছু হয়েছে
,,
মতিউর এবার ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল..
-এই কথা আপনাকে কে বলল? (মতিউর)
-আমি দেখছি আপনাকে উনার রুমে ঢুকতে (বুয়া)
-উনার ভালো লাগছিলো না তাই গিয়েছিলাম
-আপনি কিছু করছেন তারে?
-আমি কি করতে যাবো?
-তাইলে আসার সময় ম্যাম যে ব্যবহার করলো আমি এমন ব্যবহার দেখি নাই কখনো
-হুমমমম এখন কথা থামান। আমি একটু খেয়ে নেই
-আইচ্ছা ঠিক আছে খান
,,
বেলা বারোটা বাজতে রিদিকা তার রুম থেকে বের হলো। চোখ মুখ তার ফোলা ফোলা ভাব। তার মানে ঘুমিয়েছিলো। বুয়াকে ডেকে খাবার রেডি করতে বলে রিদিকা৷
,,
রিদিকা ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে খাবার টেবিলে খাবার রেডি। টেবিলের দুই পাশে মতিউর আর বুয়া দাঁড়িয়ে আছে। রিদিকার হাতে থাকা মোবাইল হঠাৎ করে বেজে উঠে। রিদিকা ফোন টা উঠিয়ে বলে...
-আমি তো মাত্র খেতে বসলাম, খাওয়া শেষ করে কল করছি... (রিদিকা)
-....(ওপাশ কে কি কথা বলছে, সেটা শুনতে পাচ্ছিলো না মতিউর আর বুয়া)
,,
কে কল করেছে সে নিয়ে তাদের কাজ নেই। তবে মতিউর চেহারা মলিন হয়ে গেছে। তার মধ্যে অজানা একটা ভয় কাজ করছে। মতিউর তো ভেবেই নিয়েছে নিশ্চয়ই কোনো একটা ছেলের সাথে কথা বলে। তার সাথে সেই ছেলের আলাদা একটা সম্পর্ক হতে যাচ্ছে।
,,
মতিউর ভাবে হুটট করে কে কোথা থেকে এলো রিদিকার জীবনে সে বুঝতেই পারলো না। মতিউর তো রিদিকা কে অনেক পছন্দ করে। রিদিকা অন্য কোথাও কথা বলবে এটা দেখে মতিউর এর খারাপ লাগবে এটা স্বাভাবিক।
,,
প্রায় দশ বারো দিন এভাবেই চলল।
রিদিকা কে কেউ এগিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করবে সে সাহস নেই। মতিউর এর ও কিছু করার নেই, এই বাসার কেয়ার টেকার এর মালিক কি করছে সেটা খুটিয়ে দেখার সময় নেই।
,,
চলল এভাবে এক মাস,
রিদিকা সারাক্ষণ ফোনে কথা বলে।
বাইরে বাগানে আসলেও কথা বলে, ছাদে গিয়েও কথা বলে। হঠাৎ একদিন এক সুদর্শন যুবকের আগমন রিদিকার বাসায়।
,,
সেই যুবকের প্রথমে দেখা হয় মতিউর এর সাথে। তখন বিকেলবেলা, রাস্তার দুপাশে থাকা ফুলের টবে পানি দিচ্ছিল মতিউর।
-হে হ্যালো (যুবকটি)
-জ্বি বলেন (মতিউর)
-এটা কি রিদিকার বাসা
-জ্বি এটাই
-থ্যাংক ইউ
-ভাই আপনি কে?
-আমি ওর বয়ফ্রেন্ড
-ওহহ আচ্ছা, আপনি তো তাহলে স্যার হন। স্যার আসেন আমি আপনাকে ভেতরে নিয়ে যাচ্ছি
-চলো
,,
যুবককে দেখে রিদিকা সারপ্রাইজড হয়ে গেলো। বয়ফ্রেন্ড হুট করে বাসায় এসে রিদিকাকে চমকে দিলো।
এই প্রথম নিজের বয়ফ্রেন্ড কে সামনা সামনি দেখে রিদিকার মন চাচ্ছিলো জড়িয়ে ধরতে। বুয়া, মতিউর থাকার কারণে সেটা হলো না।
,,
এদিকে মতিউর এর ফোন আসলো। কল টা করেছে রিদিকার বাবা৷
মতিউর কলটা বাইরে এসে রিসিভ করলো।
-চাচা কেমন আছেন? (মতিউর)
-আলহামদুলিল্লাহ, তুমি কেমন আছো? (চাচা)
-জ্বি আলহামদুলিল্লাহ
-রিদিকা কোথায় এখন?
-চাচা রিদিকা আপার তো বয়ফ্রেন্ড আসছে, তার সাথে কথা বলছে
-কি?? বয়ফ্রেন্ড মানে!
-একটা ছেলে আসছে
-আরে গাধা তা তো বুঝেছি। ওর বয়ফ্রেন্ড হয়েছে কবে?
-আমরা তো সেটা জানি না৷ আজ উনি প্রথম আসছে
-তুমি ঘার ধাক্কা দিয়ে ছেলেটারে বের করো। আর হ্যাঁ আমি কাল দেশে আসছি। কাল এসে কালই ফিরবো। আমি যে আসছি দেশে এটা রিদিকাকে বলো না। আর হ্যাঁ ছেলেটাকে আমি যে বের করতে বলেছি এটাও বলবে না
-ঠিক আছে চাচা
-আমাকে যে এসব কথা বলেছো ও যেন না জানে
-ঠিক আছে আমি বলব না
,,
কল টা কেটে দিয়ে মতিউর বাসার মধ্যে আসলো। ড্রয়িং রুমে ছেলেটার সাথে কথা বলছে রিদিকা। এমনিতে মতিউর রেগে আছে, তারউপর চাচা ওপাশ থেকে রাগ দেখিয়ে ছেলেটাকে বের করে দিতে বলেছে। মতিউর এগিয়ে গিয়ে বলল...
-এই উঠ, বের হ (মতিউর)
-এই বেয়াদব কাকে কি বলিস(রিদিকা)
,,
মতিউর রিদিকার কোনো কথাই শোনে না, ছেলেটার শার্টের কলার ধরল নিয়ে বাসার বাইরে রেখে আসে।
বাসার মধ্যে রিদিকা সেই চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছে। ড্রয়িং রুমে মতিউর কে মেরেই ফেলবে রিদিকা এরকম অবস্থা।
,,
বুয়া চেষ্টা করছে রিদিকাকে থামানোর। বুয়ার উপরেও ঝাড়লো কিছুক্ষণ। ড্রয়িং রুম থেকে সে যখন তার রুমে চলে যাচ্ছিলো, মতিউর তখন রিদিকার হাত থেকে মোবাইল টা কেড়ে নেয়।
-ফোন নিলি কেন? (রিদিকা)
-এখানে বলা যাবে না, একটু ঐদিকে চলেন (মতিউর)
,,
ঐদিকে যেতে যেতে রিদিকার রুমেই চলে গেল দুজন৷ মতিউর দরজা লাগিয়ে বলল...
-আপনাদের কথা বলা নিষেধ। (মতিউর)
-তুই মানা করার কে? তুই ফোনটা দে আমি বাবা কে সব কথা জানাবো (রিদিকা)
-বয়ফ্রেন্ড বাসায় আসছে এটা শুনলে আপনারেই বকবে
-আমার বাবা আমাকে বোঝে। আর তোর এখানে থাকা শেষ। এটা তুই মিলিয়ে নিস
-আচ্ছা মিলিয়ে নিবোনি, এখন আমি যাই
-ফোন দে
-দিবো না
-দে বলছি
-বললাম তো না
,,
রিদিকা একটা বড় ফুলদানি নিয়ে মতিউর কে মারতে আসে। মতিউর ফুলদানি টা আটকিয়ে রিদিকাকে ধরে, আর তাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।
-বেশি শক্তি হয়েছে তাই না? (মতিউর)
-তুই আমার শরীর স্পর্শ করছিস, কত্ত বড় সাহস তোর(রিদিকা)
-সেদিন যে আমার উপরে এসে ঘুমালেন। আমি বার বার আপনার বালিশে আপনাকে রেখে দেই আপনি উঠে এসে আমার উপর ঘুমাচ্ছিলেন, সেদিন যে স্পর্শ লাগলো, তখন তো কিছু বললেন না
-তুই এখন ছাড় আমাকে
-মারতে আসছিলেন কেনো?
-তুই বেশি বেশি করছিস তাই
,,
মতিউর রিদিকার আরও কাছে যায়। দুজনের মুখ প্রায় কাছাকাছি। রিদিকা চোখ বন্ধ করে বলে..
-তুই আমার এতো কাছে কেনো? (রিদিকা)
-আমি আপনাকে ভালোবাসি তাই (মতিউর)
-কাইল্লা ভূত রে আমি ভালোবাসি না
-সেদিন একসাথে থেকেছিলেন কেনো হুমম??
-আমার একা ভয় লাগছিলো তাই
-এমনি একটা বলে। সব সময় বানিয়ে বানিয়ে কথা বলে
,,
মতিউর তার নাক দিয়ে রিদিকার নাকে একটু ঘষা দিয়ে স্পর্শ করলো।
রিদিকা চোখ বন্ধ করে একের পর একে বকে যাচ্ছে। বকা থামানোর জন্য মতিউর বাম হাত দিয়ে রিদিকার মুখ চেপে ধরে। রিদিকা ভয়ে চোখ খুলে ফেলল।
,,
রিদিকা ভাবছে মতিউর তার হয়তো কোনো ক্ষতি করে ফেলবে। এখন তো চিল্লানো যাচ্ছে না। ডাকলে কেউ শুনবেও না। রিদিকা ভয়ে হাত পা ছেড়ে দেয়।
-আমি যেহুতু আপনাকে ভালোবাসি তাই আমি আপনার পুরো শরীর স্পর্শ করবো। অন্য কাউকে করতে দিবো না (কথাটা বলে মতিউর মিটিমিটি হাসছে)
-....(রিদিকা ভয়ে আরও শীতল হয়ে গেলো)
-পাগলী টা ভয়ে কেমন হয়ে গেছে। আরে ভালোবাসার মানুষ কখনো ক্ষতি করতে পারে। আপনাকে থামানোর জন্য এটা বললাম। একটু ভয় দেখালাম। আর শোনেন কালো হাতে স্পর্শ আপনার হাতে মুখে লাগছে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিয়েন
-আপনার মনে কু মতলব চলছে
-না, আমি আপনাকে ভালোবাসি। সত্যি ভালোবাসি
-আমি এর প্রতিশোধ নিবো বলে দিলাম
,,
মতিউর আবার গিয়ে পূর্বের মতো করে রিদিকাকে দেয়ালে চেপে ধরে...
-এই দেখলাম চোখে মুখে ভয়। আবার দেখছি প্রতিশোধ৷ ব্যাপার কি হ্যাঁ?? আর কু মতলব যে বললেন। আমি আপনারে যথেষ্ট সম্মান করি। আপনি তো আস্ত একটা গাধি, আমার কথাও বোঝেন না৷ কাজের মানেও বোঝেন না....... (মতিউর)
।।
।।
চোরাবালি মন তোমার
Part : 7
Write : Sabbir Ahmed
___________________________
-এই দেখলাম চোখে মুখে ভয়। আবার দেখছি প্রতিশোধ। ব্যাপার কি হ্যাঁ? আর কু মতলন যে বললেন। আমি আপনাকে যথেষ্ট সম্মান করি। আপনি তো আস্ত একটা গাধি, আমার কথাও বোঝেন না। কাজের মানেও বোঝেন না (মতিউর)
-তোর এসব ব্যবহার আমি বাবাকে বলে দিবো দেখিস(রিদিকা)
-সে দেখা যাবে, আমি আপনার মোবাইল টা নিয়ে গেলাম আর দরজা লাগিয়ে দিলাম। বুয়া সময় মত খাবার দিয়ে যাবে খেয়ে নিয়েন বাই (মতিউর)
,,
রিদিকার বাবার কথামতো কাজ করলো মতিউর। সেদিন ভোর রাতে রিদিকার বাবা দেশে ফেরেন। বাসায় এসেই গম্ভীর একটা ভাব নিয়ে মেয়ের সামনে বসে আছেন। যে ছেলেটার সাথে কথা বলত তার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিলেন। কথা বলার সময় রিদিকা তার বাবাকে বলল ঐ ছেলের সাথে যেন তার বিয়ে দেয়। কিন্তু রিদিকার বাবা রিদিকার ঠিক বিপরীত দিকে হাঁটলেন। উনি বললেন...
-মতিউর এর সাথে তোমার বিয়ে হবে আর সেটা আজই। তোমাদের বিয়ে দিয়ে আমি সন্ধ্যায় চলে যাবো (বাবা)
-তুমি এমনটা করবে কেনো? (রিদিকা)
-এর থেকে ভালো অপশন আমার হাতে নেই। আমার সব সম্পত্তি দেখাশোনা করতে ওরে লাগবে। আর মতিউর ছেলে হিসেবে ভালো।
-আমি এই বিয়েতে রাজি না
-আমার কথাই শেষ কথা
,,
রিদিকার বাবা খুব তাড়াতাড়ি ছোটখাটো একটা বিয়ের আয়োজন করলেন৷ মতিউর এর বাবাকে ফোন করে রাজি করালেন। বিকেলের দিকে একটা হুজুর এনে বিয়ে পড়ানো হলো। আর সন্ধ্যায় রিদিকার বাবা তার পার্সোনাল ফ্লাইটে রওনা হলেন।
,,
এদিকে মতিউর এর প্রথম বাসর রাত আজ। রিদিকা আর মতিউর এখন রুমে বসে আছে। তখন মাগরিব এর আজান হচ্ছিলো, রিদিকা বলল...
-আপনি রাজি হয়ে কাজ টা ঠিক করেননি। (মতিউর)
-তাই?? (রিদিকা)
-আপনাকে আমার পছন্দ না
-জানি
-রাজি হলেন কেনো??? (দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল)
-আমার উপর রাগ দেখিয়ে লাভ নেই। আমিও রাজি হইনি। আমাকে জোর করে এই কাজ টা করিয়েছে। তবে ভালোই হয়েছে। আপনাকে জ্বালানো যাবে। আপনি তো কালো মানুষ দেখতে পারেন না৷ আমি এখন থেকে আপনার চোখের সামনে থাকবো আর আপনি জ্বলবেন
-আপনি আমার রুম থেকে বের হয়ে যান
-সেটা কেমন কথা গো? আজ তো আমার বাসর রাত
-তোর বাসর রাতের আমি....এই কুত্তারবাচ্চা তুই বের হয়ে যা
-আবার রাগ দেখায়। আমি কি করছি?
-তুই ইচ্ছে করে সব করছিস। তুই সব নষ্টের মূল
-ভালো কাজের আসলেই দাম নেই। শোনেন আপনার বি এফ একজন উবার চালক। সে এর আগেও অনেক মেয়ের সাথে রিলেশন করেছে তারপর তার চাহিদা মিটিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। আপনার সাথেও এমন করতো
-মিথ্যে ইনফরমেশন কোথায় পেয়েছিস?
-আপনার বাবা তো ক্ষমতাবান লোক সে সব তথ্য জোগাড় করেছে।
-সত্যি ছেলেটা এমন?
-তো আমি মিথ্যে বলব কেনো? আপনিও খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। বাইরর একটা পঁচা ছেলের জন্য আমাদের সাথে গত মাসে যে ব্যবহার টা করেছেন, তা কখনো ভুলবো না৷ চেহারা দেখে প্রেমে পড়েছিলেন৷ মানুষটা কেমন সেটা দেখেননি
-তারে দেখে তো ভালোই মনে হয়েছিলো
-সে আপনার কাছে সন্নাসী সেজেছে। যাই হোক আমি কি আপনার সাথে থাকবো?
-না
-আচ্ছা থাকেন তাইলে। আমি আমার রুমে যাই।
,,
রিদিকা কিছু বলল না...
পরদিন সকাল বেলা মতিউর ঘুম থেকে উঠে তার কাজ করতে লাগলো। প্রতিদিন রিদিকার সামনে যেভাবে থাকতো আজও তেমনি।
কাজের বাইরে একটা কথাও রিদিকার সাথে বলেনি। মতিউর এর আচার-আচরণে আর লোকজন ও অবাক।
,,
একসময় বুয়া ডেকে মতিউর কে বলে..
-ভাইজান আপনে কাজ করেন কেন? আপনি তো এহন মালিক (বুয়া)
-এসব মালিক টালিক কিচ্ছু না৷ আমি যে জন্য এখানে আসছি সেটা করতে দিন
-আপার সাথে যে আপনের বিয়ে হইলো
-একসময় সে ছেড়ে চলে যাবে এটা আমি শিওর তাই এই বর বউ সম্পর্ক বেশি না এগোনোই ভালো। একজনের প্রতি মায়া বাড়িয়ে লাভ আছে?
-আপনার কথা আমি বুঝি না
-আপনি বুঝবেন না৷ এখন ব্যাগ টা নিয়ে আসেন আমি বাজার করে নিয়ে আসি
,,
মতিউর তার স্বাভাবিক কাজ করেই দিন পার করতে লাগল৷ নিজের বউ এর আলদা একটু কেয়ার নেওয়ার জন্য রিদিকা যেদিন ভার্সিটি যায় সেদিন মতিউর তার সাথে যেত।
,,
একদিন এই নিয়ে মতিউর আর রিদিকার সাথে অনেক ঝগড়া হলো। ঝগড়া এক পর্যায়ে রিদিকা গায়ে হাত তুলে বসে। আর এটাও বলে সে যেন আর তার সাথে ভার্সিটিতে না যায়৷
,,
রিদিকার কোনো কথাই মতিউর কানে নেয় নি। পরদিন সে রিদিকার সাথে ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য বের হয়। যখন তারা ভার্সিটির সামনের রাস্তায় হাঁটছে তখন দুজনের আবার ঝগড়া লাগে...
-আপনাকে যে কাল মারলাম তাও আপনার লজ্জা লাগে না? (রিদিকা)
-আপনাকে যেন কেউ বিরক্ত না করে এই জন্যই তো আসি (মতিউর)
-তুই আমার পাশে থাকলে মনে হয় আমি জম নিয়ে ঘুরতেছি। আমার মুখ দিয়ে আবার খারাপ ভাষা বের হবে, আপনি চলে যান
-না যাবো না
,,
হঠাৎ দুই একটা ছেলে রিদিকার কাছে আসলো সাথে কয়েকটা মেয়েও ছিলো। আসলে তারা রিদিকার ক্লাসমেট, রিদিকার চেঁচামেচি তে আসছে তারা৷
-দোস্ত কি হয়েছে? এই ছেলেটা কে? (একে একে জিজ্ঞেস করলো)
-আমি চিনি না প্রতিদিন আমাকে ডিস্টার্ব করে (রিদিকা)
-আমিও খেয়াল করেছি, প্রতিদিন তো পিছু পিছু আসে (বন্ধুদের মধ্য একজন বলল)
-এরে উচিত শিক্ষা দিয়েই ছাড়তে হবে তা না হলে এ সোজা হবে না
,,
মতিউর কিছু বুঝে উঠার আগেই কয়েকজন মিলে মতিউর কে মারতে লাগলো। কেউ জুতা খুলে মারছে কেউ এমনি ঘুষি মারছে। এদের মাইর দেখে আশপাশের বখাটে কিছু ছেলে এসে তারও মাইর দেওয়া শুরু করলো।
,,
পরিস্থিতি যখন খুবই খারাপ তখন ফ্রেন্ডরা মিলে রিদিকাকে ভার্সিটির ভেতরে নিয়ো যায়। এদিকে মতিউর মার খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পরে আছে।
প্রায় মারা যাওয়ার মতো অবস্থা। কিছু লোক মতিউর কে হাসপাতালে রেখে চলে যায়।
,,
রোগীর কোনো আত্মীয় স্বজনের দেখা না পাওয়ায় সেটা পুলিশ এর আওতায় চলে যায়। তারপর তাদের রেফারেন্সে চিকিৎসা হতে থাকে।
রিদিকা ক্লাস শেষে বাসায় ফেরে।
,,
তার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। বাসার মধ্যে আসতেই বুয়া জিজ্ঞেস করে...
-মতিউর ভাই আসে নাই? (বুয়া)
-সে তো আ আমার সাথে যায় নি(রিদিকা)
-এ লোক গেলো কোথায়?
,,
রিদিকা রুমে আসলো, ব্যাগ রেখে বিছানায় ধপাস হয়ে বসে পড়লো।
মতিউর এর কিছু হলো কি না, সেটা নিয়ে চিন্তা করছে। দিনের বাকি সময়টুকু মতিউর এর চিন্তায় চলে গেলো। বাসার সবাই মতিউর এর ফেরায় বসে আছে শুধু রিদিকা বাদে।
,,
সে রুমে বসে ভাবছে হয়তো মার খেয়ে চলে গেছে। এদিকে কিছুক্ষণ পর পর বুয়া এসে রিদিকাকে মতিউর এর কথা জিজ্ঞেস করে। রাতে খাবার টেবিলে অনেক বার জিজ্ঞেস করেছে। ড্রাইভার দারোয়ান সবাই মতিউর এর অপেক্ষায়। যে ছেলে সবসময় সবার খোঁজ খবর নেয়, সবার কাজে হেল্প করে, সে সবাইকে না বলে কোথায় যাবে।
,,
রাত তখন এগারোটা...
রিদিকা ঘুমাতে পারছে। ঘটনাস্থলে যে ক্লাসমেট গুলো তার সাথে ছিলো তার মধ্যে একজন কে কল করে...
-কি রে দোস্ত এতো রাতে কল করছিস কেনো সমস্যা?? (ক্লাসমেট)
-আচ্ছা সেই লোকটার কোনো খবর জানিস? (রিদিকা)
-না তো, আমরা তো তখনই চলে এলাম। এখন পাবলিক কি করেছে সেটা তো জানি না। তুই ঐ লোকটারে নিয়ে চিন্তার পড়েছিস কেনো?
-না এমনি আর কি
-মনে হয় পাবলিক মাইর দিয়ে পুলিশ এর হাতে তুলে দিয়েছে
-হুমম আচ্ছা দোস্ত রাখি...
।।
।।
চোরাবালি মন তোমার
Part : 8
Write : Sabbir Ahmed
______________________________
-মনে হয় পাবলিক মাইর দিয়ে পুলিশ এর হাতে তুলে দিয়েছে (ক্লাসমেট)
-হুমম আচ্ছা দোস্ত রাখি (রিদিকা)
,,
রিদিকা অনেক চিন্তিত, তার বাবা যদি কল করে সে কি বলবে। বা মতিউর এর কাছে কল করলে মতিউর যদি সব বলে দেয় তখনই বা কি করবে।
সে চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে যায়।
,,
এদিকে এখন পর্যন্ত মতিউর এর জ্ঞান ফিরে নি৷ ডাক্তার রা সম্ভাবনা কম দেখছেন। তারা মনে করছেন ছেলেটা মারা যাবে। মতিউর এর জ্ঞান ফিরে আসার জন্য তারা সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করবে।
,,
পরদিন সকালে মতিউর এর জ্ঞান ফিরে। টানা দুইদিন তাকে ভালো করে চিকিৎসা করা হয়। মতিউর এর ফোন পুলিশ এর কাছে জমা রয়েছে। তারা ফোনটা অফ করে রেখেছে।
দুইদিনে এখন পর্যন্ত রিদিকার বাবা কল করেনি।
,,
বাসার দারোয়ান, ড্রাইভার, বুয়া সবাই শুধু রিদিকাকে জিজ্ঞেস করে মতিউর এর কথা। রিদিকা তাদের কোনো কথার উত্তর করে না।
,,
মতিউর পুরোপুরি সুস্থ হতে চারদিন সময় নেয়। পুলিশ তাকে যখন জিজ্ঞাসাবাদ করে তখন জানতে পারে, পাবলিক না বুঝে তাকে পিটিয়েছিলো, মতিউর এলোমেলো একটা বুঝ দিয়ে তাদের হাত থেকে বেঁচে যায়।
,,
পঞ্চম দিনে হসপিটাল থেকে ছাড়া পায় মতিউর। তারপর সোজা রিদিকার বাসায়। বাসার লোকজন মতিউর এর হাতে মুখে ব্যান্ডেজ আর আঘাত এর চিহ্ন দেখে জিজ্ঞেস করতে শুরু করে। তার এরকম কিভাবে হলো?
মতিউর একটা কথাই সবাইকে বলে "সে মলম পার্টির হাতে পড়েছিলো"
,,
একে একে সবার সাথে দেখা হওয়ার পর দেখা হয় রিদিকার সাথে।
রিদিকার দিকে একবার তাকিয়ে সে নিজের রুমে যায়৷
,,
মতিউর তার বিছানায় বসতে না বসতেই বুয়া এসে হাজির৷
-ভাই চা খাইবেন?? (বুয়া)
-না না আমি কিছু খাবো না৷ বাসায় কি বাজার ঠিক মতো হয়েছে এ কয়েকদিন? বাজার না থাকলে বলেন আমি নিয়ে আসি এখনি
-না না আপনি অসুস্থ। আর একয়েকদিন বাজার আমি করেছি
-আমি এখন সুস্থ, আমি সব করতে পারবো
-আচ্ছা কি যেন পার্টির কথা বললেন, তাদের হাতে কেমনে ধরা খাইলেন
-কি যে আমি জানি না, বাদ দেন এসব কথা
-হুমম আপার সাথে কথা কইছেন?
-হ্যাঁ বলেছি
-ঐ যে আপা আসছে আমি যাই (রিদিকা এসে দরজায় দাঁড়িয়েছিলো। বুয়া দেখে রুম থেকে চলে গেলো)
,,
রিদিকা কে দেখে মতিউর উঠে দাঁড়ালো।
-কিছু বলবেন? আর বাসার সব ঠিক আছে তো? কোনো কাজ বাকি থাকলে বলেন.. (মতিউর)
-.....(রিদিকা কিছু বলল না, মতিউর কে কিছুক্ষণ দেখলো আর রুম থেকে চলে গেলো)
,,
মতিউর এর মনে অনেক অভিমান জমা হয়ে গেছে। যে মনে মনে ঠিক করেছে রিদিকা কে নিয়ে আস ভাববে না৷ সে সবার সামনে আর আড়ালে শক্ত হয়ে থাকবে, কোনো কিছু প্রকাশ করবে না।
,,
রিদিকার সাথে কথা না বলে দুদিন চলল৷ বাসার আর সবাই তেমন কিছু বুঝতে পারলো না৷ এদিকে রিদিকা ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বুয়ার কাছে থেকে জানতে পারে যেদিন থেকে সে বাসায় ছিলো না তারপরদিন থেকে রিদিকা ভার্সিটি যায়নি৷
,,
মতিউর একটা ফ্রি সময় বের করে রিদিকার রুমে গেলো..
-আপনি ভার্সিটিতে যান না কেনো? আংকেল শুনলে আবার আমাকে বকা দিবে (মতিউর)
-....(রিদিকা একবার শুধু তাকালো, কিছু বলল না)
-আচ্ছা কাল থেকে নিয়মিত যাবেন
-...(রিদিকা তবুও চুপ)
,,
রিদিকার চুপ থাকা দেখে মতিউর আর কথা বাড়ালো না৷ সে হাঁটতে শুরু করলো রুমের বাইরে যাওয়ার জন্য৷ হঠাৎ পেছন থেকে রিদিকার ডাক..
-শুনুন (রিদিকা)
-কিছু বলবেন? (মতিউর ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল)
-আমি আপনার রুমে গিয়েছিলাম, ডক্টর তো অনেক ঔষধ লিখে দিয়েছে। তো সেগুলো আনেনি কেনো?
-বাইরে যাওয়া টা আলসেমী৷ আর আমি মনে করে যে দুই এক জায়গায় ব্যাথা আছে, আপনা-আপনি ঠিক হয়ে যাবে
-বড় ডাক্তার হয়েছেন?
-না তাই কি আর হওয়া যায়?
-হুমম
,,
রিদিকা তার পার্টস হাতে নিয়ে বলল...
-চলুন আমার সাথে বাহিরে যাবেন (রিদিকা)
-আর মার খাওয়ার ইচ্ছে নেই, আপনার পিছু ছোটার ইচ্ছে নেই। আমরা একই বন্ধনে আবদ্ধ হয়েও আপনি সেটা থেকে আমাকে দূরে রেখেছেন৷ আবার ইচ্ছে করে মার ও খাওয়ালেন। আসলে আপনার দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমি আসলে আপনার লেভেল এর না৷ বিয়েতে আমার রাজি হওয়াটা হয়েছে আমার বোকামি।
-এগুলো বলার সময় এখন না
-ম্যাম আমি আপনার সাথে যাবো না আর আমার ঔষধ লাগবে না
,,
মতিউর রুম থেকে চলে আসলো।
রাতে রিদিকা আবার মতিউর এর রুমে। মতিউর বিছানায় হেলান দিয়ে বসে কি যেন ভাবছিলো। রিদিকার রুমে আসা দেখে সে সোজা হয়ে বসল।
-কিছু লাগবে? মানে কোনো কিছু করতে হবে? (মতিউর)
-কাজ করার জন্য উত্তেজিত হবেন না। আমি এমনি আসছি (রিদিকা)
-ওহহহ
,,
রিদিকা কিছুক্ষণ চুপ থেকে হুট করেই বলে উঠলো...
-সরি (রিদিকা)
-কি জন্য? (মতিউর)
-আপনার এই অবস্থার জন্য
-আরে এতে আপনি সরি বলছেন কেনো? সরি বলব তো আমি। আমি গাধার মতো আপনার পিছু ছুটেছি। বুঝতে পারিনি আমার উপর আপনি কতটা বিরক্ত। আমি পূর্বের কথা সব ভুলে গিয়েছি। এসব নিয়ে আপনি কোনো চিন্তা করবেন না।
-চলেন আজ আমার সাথে থাকবেন
-আপনার কাছে কেনো?
-আপনি তো আমার বর
-বিয়ে হয়েছে ঠিকই, তবে সেরকম সম্পর্ক আমাদের না হওয়ায়ই ভালো
-আপনি যাবেন না?
-আমার অসুস্থতায় আপনি দরদ দেখাতে আসছেন৷ না হলে চাচার ভয়ে আসছেন। যদি কখনো ভালোবেসে আসেন, যদিও আসবেন না। যদি আসেন সেদিন দেখা যাবে
-আচ্ছা ভালোবাসি
-আপনার কি ঘুম পেয়েছে নাকি? কি আবল তাবল শুরু করলেন
-এ কয়েকদিন আপনাকে অনেক মিস করেছি
-সেটার কারণ ও আমি জানি। আসলে আমাকে মিস করেননি। আপনি ছিলেন টেনশনে। যদি আমি মারা যেতাম একটা বড় ঘটনা ঘটে যেতো এই জন্য
-না সেরকমটা না
-আমি বুঝি। ম্যাম এগুলো কথা বলে লাভ নেই। আমি আপনি একদিন আলাদা হবো। এখন আপনি যান ঘুমিয়ে পড়েন
,,
মতিউর এর কোনো কথাই রিদিকা শুনলো না। সে মতিউর এর পিঠের নিচ থেকে বালিশ নিয়ে তার পাশে শুয়ে পড়লো।
-আরে করেন কি? আপনি এখানে ঘুমাতে পারবেন না। এসি তে থেকে আপনার অভ্যাস। এই ফ্যান এর নিচে গরম বাতাসে আপনি থাকতে পারবেন না
-.....(রিদিকা কোনো উত্তর করে না। সে জেগে আছে, তবে চোখ বন্ধ করে আছে)
-এই যে শুনছেন?
-না শুনছি না আমি। বুয়া কে ডাকেন
-বুয়াকে কেনো??
-ডাকতে বলেছি ডাকেন
,,
মতিউর দরজায় গিয়ে বুয়াকে ডেকে আবার বিছানায় এসে বসলো।
একটা পর বুয়া এসে বলল..
-আপা আপনি এইখানে
মতিউর ভাই তো দিনে এই রুমে থাকে। আর রাতে আপনার রুমে। এখন দুজন এই রুমে ক্যান??(বুয়া)
-তোমাকে এসব কথা কে বলেছে?(রিদিকা)
-কে আবার মতিউর ভাই
-আচ্ছা তুমি এক কাপ চা বানিয়ে নিয়ে আসো
-এই জন্য ডেকেছিলেন?
-হ্যাঁ যাও
-আইচ্ছা
,,
বুয়া চলে যাওয়ার পর..
-বুয়ার সাথে এসব কথা শেয়ার করেন কেনো? (রিদিকা)
-জানতে চেয়েছিল (মতিউর)
-সব কথা বলতে নেই
-ওরকম মিথ্যে না বললে সন্দেহ করতো
-হুমম সেটা বুঝেছি
-বুয়া চা নিয়ে আসলে,সেটা খেয়ে আপনার রুমে চলে যাবেন
-বুয়া চা নিয়ে আসলে আপনি চা টা আমাকে দিয়ে, বুয়া কে বের করে দিয়ে দরজটা লাগিয়ে লাইট অফ করে আমার পাশে এসে ঘুমাবেন
-এটা ঠিক হবে না, আমি অসুস্থ
-সেই জন্যই তো থাকবো
-আমি আপনাকে আমার পাশে চাই না
-পাশে চাইতে হবে না, বুকের উপর রাখবোনি কেমন?
-কি যা তা বলেন?
-বিয়ের পর বাসর করিনি আজ করব
-দেখেন ভালো হবে না
-বিয়ে করেছি তো ভালো হবে
-আমি অসুস্থ, আমাকে এরকম টরচর করবেন না। আর আলগা পিরীতি দেখাতে আসছেন কেনো?
-আলগা পিরীতি না৷ আমি ভুল সংশোধন করে নিবো
-এ ভুল সংশোধন না করে, এটার চ্যাপ্টার ক্লোজ করা উচিত
-আহা,বললেই হলো।.. (রিদিকা পুরো কথা শেষ করার আগেই বুয়া এলো)
,,
মতিউর চা হাতে নিতেই বুয়া চলে গেলো।
-আপনি আপনার রুমে গিয়ে চা খান(মতিউর)
-দরজা বন্ধ করে, চা এখানে নিয়ে আসেন (রিদিকা)
-আপনি যা করতে চাচ্ছেন সেটা আমি চাই না
-কেন? আমি আপনার বউ না? আপনি আমাকে ভালোবাসেন না?
-আপনি আমার বউ, আমি আপনাকে ভালোবাসি, কিন্তু আমি চাই না আপনার সাথে থাকতে
-আচ্ছা আগে চা নিয়ে আসেন পরে দেখছি। চা নিয়ে আমার পাশে বসেন
,,
রিদিকার দিকে এগিয়ে গিয়ে মতিউর চা সামনে বাড়িয়ে দিলো। কিন্তু রিদিকা চা না নিয়ে বলল..
-এটা আপনি খান, আপনার জন্য নিয়ে আসতে বলেছি (রিদিকা)
-আমি তো এখন খাবো না (মতিউর)
-আপনার মনে অনেক রাগ অভিমান আছে, স্বাভাবিক ভাবে আপনার কোনো কিছুই করতে মনে চাইবে না। তবে করতে হবে৷
,,
রিদিকার জোড়াজুড়িতে মতিউর চা খাওয়া শুরু করলো। হঠাৎ রিদিকা শোয়া থেকে উঠে বসলো। তারপর মতিউর এর দিকে পিঠ দিয়ে বলল..
-পিঠ চুলকাচ্ছে, পিঠে একটু হাত রাখুন তো...(রিদিকা)
।।
।।
চোরাবালি মন তোমার
END PART
Write : Sabbir Ahmed
______________________________
-পিঠ চুলকাচ্ছে, পিঠে একটু হাত রাখুন তো (রিদিকা)
,,
রিদিকার কথা শুনে মতিউর চায়ে চুমুক দেওয়া বন্ধ করে তাকিয়ে আছে রিদিকার দিকে।
-কি হলো? (রিদিকা)
-আমি কেনো?
-আপনি ছাড়া কে আছে? আপনি দেন
-নাহহ
-উফফ আমি সহ্য করতে পারছি না কিন্তু
-আপনি একা একা করেন
-পারমু না আপনি দেন
-......(মতিউর পূর্বের অবস্থার মতো বসে আছে)
-দিবেন? নাকি আমি এ্যাকশনে যাব?
-না দিচ্ছি দিচ্ছি
,,
মতিউর চায়ের কাপ টা রেখে, কাঁপা কাঁপা হাতে রিদিকার পিঠে হাত রাখলো। রিদিকার নির্দেশে সে পিঠ চুলকিয়ে দিলো। একটু পরেই রিদিকা বলল...
-আচ্ছা আমি সত্যি এখানে থাকতে পারবো না, আপনি আমার সাথে আমার রুমে চলেন (রিদিকা)
-নাহহ এটা হয়ে গেলে আপনি চলে যাবেন৷ (মতিউর)
-আপনি এমন করলে আমার রুমে যাওয়া হবে না। এখানেই থাকতে হবে।
আপনি কিন্তু ভালোই পারেন চুলকিয়ে দিতে। আমার তো ভালোই লাগছে।
-....(মতিউর চুপ)
-আজ কিন্তু অন্য রকম কিছু সময় কাটাবো
-যেমন??
-আমি আমার ভুলের জন্য ক্ষমা চাইবো৷ তারপর আপনার কাছে আমার ভালোবাসার প্রস্তাব রাখবো। সেটাতে আপনি রাজি হওয়ার পর, আপনাকে জ্বালাব, তারপর ঘুম
-আমার সাথেই এতোকিছু কেনো?
-আমি বুঝি না, আমাকে এতই ভালোবাসেন তবুও কেনো বার বার আমার কথার জের টানছেন? সহজে মেনে নিলে কি হয়?
-আপনি তো সহজ ভাবে নেননি
-তখন আমি বুঝতে পারিনি। ভুলগুলোর জন্য আমি আপনার কাছে মাফ চাইছি
-হুমমম
-কি হুমমম?
-না ঠিক আছে এটা বললাম
-ওহহহহ এখন শুনেন
-বলেন
-আমি আপনাকে ভালোবাসি
-আচ্ছা
-কি আচ্ছা?
-আপনি যা বললেন সেটাতে সম্মতি দিলাম তো
-এভাবে কেউ সম্মতি দেয়?
-সম্মতি টা কিভাবে দিবো?
,,
রিদিকা ঘুরে মতিউর এর দিকে মুখ করে বসলো। মতিউর এর ডান হাতটা নিজের দুহাতের তালুর মধ্য নিয়ে বলল...
-কিভাবে সম্মতি দিতে হয় আমি শিখিয়ে দেই? (রিদিকা)
-হুমম, তবে এই হাত টা ছাড়ুন, এই হতাটা ঠিক হয়নি, এটাতে অনেক ব্যাথা(মতিউর)
-সরি সরি (রিদিকা বাম হাত নিলো আবার)
-এখন ঠিক আছে
-চোখ বন্ধ করুন
-কেনো?
-শিখিয়ে দিবো, বন্ধ করুন
-আচ্ছা
,,
মতিউর চোখ বন্ধ করে মিটিমিটি হাসছিলো। হঠাৎ মতিউর অনুভব করলো তার ঠোঁট এর সাথে আর দুট ঠোঁট এসে লেপটে গেছে। একটা উষ্ণ বাতাস তার নাকে মুখে লাগছিলো।
মতিউর এর শরীর একবার কেঁপে উঠলো। রিদিকা তখনও ঠোঁট একই ভাবে রেখেছে। মতিউর আগের অবস্থা থেকে অনেকটা থমকে গিয়েছে। হয়তো কম সময়ে একটু বেশি পেয়েছে সে তাই সামলে নিতে পারছে না৷
মতিউর ভেবেছিলো রিদিকা কোনো কথা বলবে হয়তো।
,,
কিছুক্ষণ পর...
-আমার সম্মতি শেখানো শেষ (এটা বলে রিদিকা হাসলো)
-....(মতিউর ও লজ্জায় চোখ নিচের দিকে করে রাখলো)
-এ এবার আপনার সম্মতি দেবার পালা
-আচ্ছা পরে দিলে হবে না? (একটু মুচকি হেসে)
-এখন লাগবে এখন
-আচ্ছা আচ্ছা দিচ্ছি চোখ বন্ধ করুন
,,
রিদিকা চোখ বন্ধ করেছে, মতিউর তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে না৷
-চুপ করে আছেন কেনো? সেই কখন থেকে চোখ বন্ধ করে আছি (রিদিকা)
-আমার কিছু কথা ছিলো যে (মতিউর)
-আমি এখন কোনো কথা শুনবো না, যে কাজটা করতে দিয়েছি সেটা করেন
-আচ্ছা চেষ্টা করি
-চেষ্টা করি মানে? দেখুন আমি যদি চোখ খুলি আপনার ভালো হবে না কিন্তু
-আচ্ছা আমি করছি
,,
মতিউর তার ঠোঁট দুটো এগিয়ে রিদিকার ঠোঁটের সাথে স্পর্শ করলো।
মতিউর একটু স্পর্শ করেই ঠোঁট সড়িৈ নিলো। রিদিকা চোখ খুলে মুচকি হাসি দিলো। তারপর মতিউর এর কপালে, দুই গালে, থুতনিতে এলোমেলো চুমু খেতে খেতে বলল...
-ধন্যবাদ মশাই আমার ভালোবাসায় সম্মতি দেওয়ার জন্য৷ এখন ঐ রুমে চলেন (রিদিকা)
-কেনো? (মতিউর)
-আপনি যেন কি বলতে চাইলেন সেগুলো শুনবো
-এখানেই বলি
-নাহহ একটু ভিন্ন পরিবেশে বলবেন
,,
রিদিকার রুমে এসে রিদিকা এসি অন করলো। রুমের একটা জিরো বাল্ব ব্যতিত সবগুলো বন্ধ করে দিলো। রুমে এখন নিবুনিবু আলো।
,,
মতিউর কে সাথে নিয়ে এক কম্বল এর মধ্যে শুয়ে পড়লো রিদিকা৷
-আপনার তো ডান হাতে সমস্যা, আমি ভুলে গেলে আমাকে আবার মনে করিয়ে দিয়েন। হুট করে ব্যাথা পেলে আমাকে বকবেন না (রিদিকা)
-ব্যাথা পাবো না আপনি তো বাম পাশে ঘুমালেন (মতিউর)
-তবুও যদি অসাবধানতা বসত লেগে যায়
-হুমমম
-আচ্ছা ওয়েট আমি একটু আসছি
-কোথায়?
-রুমেই, আচ্ছা আপনি একটু কম্বল এর নিচে মাথা দেন তো
-কেনো?
-আমি ড্রেস চেঞ্জ করবো
-হঠাৎ?
-দাঁড়ান বলছি, চোখ বন্ধ করেছেন তো?
-হ্যাঁ
-ওকে চিটিংবাজি করবেন না একদম। তবে আপনি করলে সমস্যা নেই। তবুও করা যাবে না
,,
রিদিকা একটা ট্রাউজার আরেকটা টি-শার্ট পরে এসে কম্বল এর মধ্যে ঢুকলো।
-এখন আমার দিকে ঘুরে আমাকে একটু দেখেন তো (রিদিকা)
,,
মতিউর রিদিকাকে দেখে বলল..
-ভালো লাগছে কিন্তু...(মতিউর)
-কি? (রিদিকা)
-মানে এভাবে বেশি খোলামেলা হয়ে যায় না?
-আরে গাধা, আমি কি সবার সামনে গিয়েছি হ্যাঁ, আপনার সামনেই তো
-তবুও
-এই আপনি কি নিরামিষ নাকি? কিছু বোঝেন না?
-সরি
-দেখ আবার সরি বলে। আচ্ছা এলোমেলো কথা বাদ। এখন কাছে আসেন জড়িয়ে ধরেন। আর তখন যেন কি বলতে চেয়েছিলেন সেগুলো বলেন
-এখান থেকেই বলি
-আমি কাছে এসে জড়িয়ে ধরতে বলেছি
,,
মতিউর কাছে আসতেই রিদিকা তার অর্ধেক শরীর মতিউর এর উপর রাখলো। হাত দিয়ে একদম জাপটে ধরেছে৷ একবার মতিউর এর নাক ধরছে। আবার পেটে সুরসুরি দিচ্ছে।
,,
-আপনাকে আজ বেশি খুশি লাগছে (মতিউর)
-আপনি আমাকে মাফ করে দিয়েছেন তো তাই। আমি ভাবতেই পারিনি আপনি আমাকে মাফ করে দিবেন, আমি তো অনেক ভয়ে ছিলাম
-মাফ করেছি, তবে পুরোপুরি নয়। আংশিক বাকি আছে
-বাকি রেখেছেন কেনো?
-আমার কিছু কথা রাখতে হবে
-হুমম বলেন আমি শুনবো
-আপনাকে চোরাবালি হতে হবে।
-চোরাবালি?
-হুমম
-কেনো, হারিয়ে যাবেন?
-ঠিক ধরেছেন
-বুঝেছি, আমি আপনার চোরাবালি। আর আমার মাঝে আপনি লুকিয়ে থাকবেন তাই তো?
-হুমমম
-দেখেছেন আমি আপনাকে অনেকটাই বুঝি ফেলেছি। আমি আপনাকে পড়তে পারি
-হুমম এটা আমার জন্য ভালো
-আর কি কথা বলেন
-এটুকুই?
-হ্যাঁ শুধু এটাই
-আর কিছু না?
-না
-কিছু চাওয়ার নেই?
-কি চাইবো?
-আমাকে?
-আপনি তো আমার হয়েই আছেন
-কত্ত সুন্দর কথা, তবে আপনি ট্যাগটা বাদ দিতে হবে।
-কথাটা তুমি মিশ্রিত করে বলেন তো
-বলব আবার?
-হ্যাঁ রে গাঁধা
-তুমি তো আমার হয়েই আছো
,,
রিদিকা মতিউর এর নাক টেনে বলল...
-নাও এখন কিছু চাও আমার কাছে থেকে (রিদিকা)
-কি চাইবো? (মতিউর)
-সেটা কি আমি বলে দিবো?
-এখন তো আমার কিছু চাওয়ার নেই
-তবুও চাইতে হবে?
-কি যে বিপদে ফেললেন। আচ্ছা কাল চাইবো, এখন চলেন ঘুমাই
-নাহহ, ঘুমানো নিষেধ। আপনি যেহুতু কিছু চাইতে পারছেন না, তো আমি চাই?
-হুমমম
-দিবেন তো?
-পারলে অবশ্যই
-সময়
-সময় দিয়ে কি করবেন?
-রোমান্স করবো
-এখন?
-হুমমম
-ভয় পাবেন না, আমি জানি আপনি এখন অসুস্থ। আপনার একটু সেবা যত্নের প্রয়োজন। সেটা আমি কাল থেকে পুরোদমে করে যাবো। তবে এখন একটু রোমান্স দরকার।
-আচ্ছা ঠিক আছে
-এই যে বর মশাই, এমন নিরামিষ হলে একদম চলবে না। আমি কিছু বলার আগেই সব বুঝে নিতে হবে। না হলে আমি চোরাবালি না হয়ে কাঁদা মাটি হবো। শুধু শুধু গায়ে লেগে সব নষ্ট করে ফেলবো
-আমি হুট করে আপনাকে পেয়ে কি থেকে কি করবো বুঝতে পারছি না। আপনি অনেকসময় হলো আমাকে সারপ্রাইজ দিয়েই যাচ্ছেন। আমি এগুলো নিয়েই একটু বেশি খুশিতে আছি, আর সেটা মনে মনে
-হুমম বুঝলাম। আপনার একটা জিনিস আমার খুব ভালো লাগে।
-কি?
-আপনার আপনি বলা
-আপনিই বলব
-আপনি তে যদি আপনি এরকম গাধা থাকেন, তবে এই আপনিই আমার কাছে ভালো.... 🥰
,,
,,
,,
,,
,,
,,
,,
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,END,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,














অদৃশ্য পরী

  ----দেবর সাহেব, তো বিয়ে করবে কবে? বয়স তো কম হলোনা ৷ ----আপনার মত সুন্দরী কাউকে পেলে বিয়েটা শীঘ্রই করে ফেলতাম ৷ -----সমস্যা নাই তো, আমা...