ছলনা
Write : Sabbir Ahmed
____________________________
-মায়ের কাছে ষাট হাজার টাকা ছিলো সেটাও নিয়ে নিলি (নিধি)
-কথা কম বল, আমার দরকার আছে তাই নিয়েছি (শুভ)
-ভাই তুই তো জানিস সংসার এর অবস্থা
-কি আবার অবস্থা? যেমন চলছে চলবে। আর আমি মায়ের টাকা পরে শোধ করে দিবো
-ভাই দেখিস আগের বার টাকা নিয়ে এমন কথা বলেছিলি, টাকা কিন্তু ফেরত দিতে পারিস নি
-আরে এতো কথা বলিস না তো চোখের সামনে থেকে যা, আমি এবার শোধ করে দিতে পারবো৷
,,
শুভর ধমক শুনে তার বোন রুম থেকে চলে গেলো। শুভ চেয়ারে বসে পায়ের উপর পা তুলে টাকা গুনছিলো। এই টাকা এখন সে বিভিন্ন অকাজে খরচ করবে। শুভ এবার অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ুয়া ছাত্র, আর তার বোন সবেমাত্র ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেছে।
শুভর থেকে ছোট হয়েও নিধি শুভকে তুই করে বলে। তাদের সম্পর্ক টা অনেক মধুর, সারাদিন দুজনের মাঝে ঝগড়া হলেও এক অপরকে ঠিকই বোঝে। তাদের বাবা বছরখানেক আগে মারা গেছেন। উনি শহরের একটা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন৷
,,
উনি বেঁচে থাকা অবস্থায় সংসার ভালোভাবেই পরিচালনা করতেন৷
তবে এখন তার ছেলে সংসার টা শেষ করতে বসেছে। শুভর মা বা বোন কেউ কিছু বললেই শুভ ভাংচুর করে রাগ দেখায়। ভয়ে কেউ কিছু বলতেও পারে না৷ এখন পরিবার চলে পেনশন আর ভাতার টাকায়।
,,
শুভর বন্ধুবান্ধব অনেক সারাদিন বন্ধুদের সাথে বাইকে নিয়ে ঘোরাঘুরি, বাজে আড্ডা আর নেশায় মগ্ন থাকে৷
আজ যে টাকাটা নিলো এটা দিয়ে সে একমাসের মতো চুপ থাকবে।
শুভর মা অসুস্থ কথা কম বলেন। উনি স্বামী হারা হয়ে ভেঙে পড়েছেন।
বলতে গেলে এখন সেই নিধিই সংসারের সবকিছু দেখে।
,,
পরিবারে কে কেমন চলেছে সে তোয়াক্কা শুভ করে না৷ শুভর মা শুভর কর্মকান্ড দেখে নিধি কে কিছু বলতে বলে । নিধি কিছু বললো শুভ তাকে ধমকের উপরেই রাখে।
,,
শুভ টাকাগুলো গুনে শেষ করে তার বন্ধু রাতুল কে কল করে। রাতুল তার ক্লাসমেট। শুভর বাসা থেকে একটু দূরেই তার বাসা। রাতুল আবার শুভর বোন নিধি কে প্রপোজ করে রাখছে অনেক আগেই৷ নিধি এখনো কোনো উত্তর করেনি৷ রাতুল যখন নিধিকে প্রপোজ করেছিলো তখন শুভর সাথে রাতুলের তেমন কোনো পরিচয় ছিলো না৷ এখন শুভর সাথে বন্ধুত্ব হওয়ায় রাতুল এ দিক থেকে সড়ে আসার চেষ্টা করে। রাতুল যখন শুভর বাসায় আসে তখন নিধির সাথে দেখা হয়। রাতুল নিধিকে দেখে না দেখার ভান করলেও, নিধি মাঝে মাঝে একদৃষ্টিতে রাতুলকে দেখে।
,,
তো সেদিন রাতপ রাতুল শুভর কল পেয়ে বাসাস আসে। বাসার দরজা খুলে দেয় নিধি। নিধিকে এক পলক দেখেই রাতুল দ্রুতগতিতে শুভর রুমের দিকে ছোটে৷ রুমে ঢুকেই...
-এড রাতে ডাকলি যে (রাতুল)
-এদিকে আয় বস, টাকা তো ম্যানেজ হয়ে গেছে (শুভ)
-কিভাবে?
-কিভাবে আবার? মায়ের কাছে থেকে নিয়েছি
-দোস্ত এমনিতে তোর পরিবারের অবস্থা ভালো না। চল এগুলা বাদ দেই আমরা
-নাহহ, মোটা অংকের টাকা নিয়েছি। এবার বিদেশি দামী মাল আনতে হবে
-....(রাতুল চুপ হয়ে আছে)
-কিরে তুই খুশি না?
-দোস্ত আমার হাতে টাকা নেই, পরিবারের অবস্থা ভালো না৷
-আচ্ছা সমস্যা নেই আমি দিবো। আমার থেকে নিস
-সেই তো আমারই দিতে হবে
-আচ্ছা শোধ করতে হবে না ফ্রি ওকে?
-আচ্ছা ঠিক আছে। আমি তাহলে এখন উঠি
-দাঁড়া আমি তোর সাথে একটু বাইরে যাবো
-বাইরে কেনো?
-সারাদিন রুমেই ছিলাম। জেলখানায় থাকতে ভালো লাগছে না।
-আচ্ছা ঠিক আছে চল তাইলে
-এ নিধি দরজা লাগিয়ে দে আমি বাইরে যাচ্ছি
,,
রাতুল শুভ বাইরে গেলো। নিধি দরজা লাগিয়ে ঘরের কাজ করতে লাগলো।
রাতুলকে তার বাসায় দিয়ে শুভ এখন ছোট্ট গলি দিয়ে হাঁটছে, হাতে তার একটা জ্বলন্ত সিগারেট। সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে এগিয়ে চলছে তার বাসার রাস্তার দিকে।
,,
রাত অনেক হওয়ায় কুকুরের উৎপাত বেড়েছে। শুভ চলার সময় দুই একটা কুকুরকে ধমক দিয়ে এগোচ্ছিলো৷ একটা কুকুর তেড়ামী ধরে পিছু নিয়েছে। কুকুরের প্রতি শুভর বক্তব্য এইরকম ছিলো "কিরে, আমার পিছু নিয়েছিস কেনে? আমি তো এই শহরের চোর না, আমি এই শহরের ছোট্ট একটা নেশাখোর, তবে আমাকে আবার সন্ত্রাসী ভাবিস না। এতো রাতক লেংটু হয়ে আমার পিছু না বাসায় যা। বাসায় গিয়ে প্যান্ট পরে শুয়ে থাক।
,,
শুভ হাঁটতে হাঁটতে সেই গলির মাথায় আসলো। সামনের বড় রাস্তা টা পার হয়ে যে গলিটা সেই গলিতে শুভর বাড়ি। শুভ রাস্তা যখন পার হচ্ছিলো তখন রাস্তায় নিয়ন এর আলো ছাড়া কিছুই ছিলো না।
,,
রাস্তা পার হয়ে তার বাসার রাস্তার গলির মুখে আসতেই দেখতে পেলো একটা সাদা ড্রেস পরিধিত একটা মেয়ে, দোকানের সিঁড়িতে বসে মুখ লুকিয়ে কান্না করছে।
,,
শুভ বিড়বিড় করে বলল " আজ তো নেশা করিনি। ভুল ভাল কিছু তো দেখার কথা না। তার মানে চোখের সামনে যা দেখছি সেটা সত্যি। আবার ভূত নয়তো৷ এই নরকের শহরে ভূত বাস করার কথা না। তাহলে এটা মেয়ে হবে। এতো রাতে একা বাইরে বসে কান্না করছে ব্যাপার টা কি? এলাকার বাইরের মেয়ে নাকি?
,,
শুভ কৌতুহল নিয়ে মেয়েটার দিকে এগিয়ে গেলো...
-কান্না করার কি আর জায়গা পান নাই? বাসায় গিয়ে কান্না করেন (শুভ)
মেয়েটা মুখ তুলে একবার শুভকে দেখে আবার পূর্বের অবস্থার মতো কান্না শুরু করলো।
-এই যে আপনি, শোনেন এত রাতে এই রাস্তা ভালো না বাসায় যান। আপনার বাসা কি এখানে? এখানেই থাকেন? নাকি আপনি হারিয়ে এখানে আসছেন? (শুভ)
-....(মেয়েটা কান্না করেই চলেছে)
-আরে পাগল টাগল নাকি? আমি বাসায় যাই এতো রাতে পাগলী ধাওয়া করলে রক্ষে নেই
-এই শুনুন আমি পাগল না
-তো আমার কথার উত্তর দিচ্ছেন না কেনো?
-আমি এখানেই থাকি
-তো বাসার মধ্য গিয়ে কান্না করেন
-আমার বাসা এখানে না
-এই বললেন এখানে থাকি, আবার বলছেন আপনার বাসা এখানে না
-হুমম আমি হাঁটতে হাঁটতে এখানে এসেছি। আমার বাসা উত্তর দিকে
-তাও কতদূর?
-এক ঘন্টা হেঁটে এসে এখানে বসেছি, এখন তাহলে বুঝে নেন কতদূর
-ওহহ তো বাসায় যান, রাত করে মেয়ে মানুষ একা
-আমি আসলে ছিনতাই করতে বের হয়েছি
-কিহহ?
-জ্বি
,,
ওমনি মেয়েটা ছুড়ি বের করে শুভর পেটের কাছে ধরলো।
-কথা কম যা আছে সব দিয়ে এখান থেকে ভাগ (মেয়েটি)
-বাহহ আপনি তো অনেক সুন্দরী, চেহারা টা লুকিয়ে রেখেছিলেন তাই দেখতে পাচ্ছিলাম না এখন তো দেখে ক্রাশ খেয়ে গেলাম
-তুই এতো কথা বলতেছিস কেনো? টাকা বাহির কর নাহলে ঢুকিয়ে দিলাম কিন্তু
-ওয়েট ওয়েট আগেই মারবেন না। হুহহ আমি তো আপনাকে...
-কথা কম, কথা কম
-ওকে ওকে টাকাটা তো বের করতে দিবেন
,,
শুভ টাকার কথা বলতেই মেয়েটা ছুড়ি পেটে থেকে সড়িয়ে ফেলে সেই সুযোগে শুভ মেয়েটার হাত থেকে ছুড়ি কেড়ে নিয়ে মেয়েটার পেটে ধরে বলে...
-এতো অবুঝ ছিনতাইকারী আমি জীবনেও দেখিনি(শুভ)
-...(মেয়েটা এখন ভয়ে কাঁপছে)
-ওরে বাবা রে কাঁপতে শুরু করেছেন কেনো? এখন ছিনতাই তো আমি করবো। তবে হ্যাঁ আমি আপনার থেকে টাকা পয়সা নিবো না। পুরো আপনাকেই নিবো। মানে যাকে বলে আজ রাতের ফূর্তি এই আর কি। (শুভর মুখে শয়তানি হাসি)
,,
শুভর কথায় মেয়েটা কান্না করেই দিলো।
-তো চলেন আমার সাথে, চিৎকার করলে পেট ফুটো করে দিবো। আর চালাকি যদি বুঝতে পারি মনে করেন আপনার জীবন এখানেই শেষ
-সরি
-হা হা হা সরি! আমার মজা শেষে আমি সরি বলে দিবো ওকে?
-আমি ভুল করে ফেলেছি, আমাকে যেতে দেন
-এই হলো মেয়েদের স্বভাব, যতক্ষণ ক্ষমতা আপনাদের হাতে থাকবে ততক্ষণ মাত্রাতিরক্ত দাপট দেখান। ক্ষমতা শেষ হলেই বিড়াল হয়ে যান
-আমাকে যেতে দেন প্লিজ
-দেখেন আপনার হাতে অপশন দুটো, আমার সাথে যেতে হবে, না হলে আপনাকে মরতে হবে। এখন পছন্দ আপনার
-....(মেয়েটি মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে)
-কি হলো?
-যাবো, তবে কখন ছেড়ে দিবেন
-রাত পোহানোর আগেই
-মেরে ফেলবেন না তো?
-আমার কথার বাইরে গেলেই মেরে ফেলবো। তো রাজি?
-হুমমম
।।
।।
ছলনা
Part : 2
Write : Sabbir Ahmed
_____________________________
-মেরে ফেলবেন না তো? (মেয়েটি)
-আমার কথার বাইরে গেলেই মেরে ফেলবো। তো রাজি? (শুভ)
-হুমমম
-তো আসেন আমার সাথে
,,
মেয়েটা শুভর পায়ের সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটছে। শুভ খেয়াল করলো মেয়েটা কেমন যেন নিশ্চুপ হয়ে গেছে। শুভ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকায়, মেয়েটি মাথা নিচু করে হাঁটতে লাগলো। শুভ বলল...
-নাম কি আপনার??? (ইরা)
-আমি শুভ। আচ্ছা টাকা কামাই করতে এই পথ বেছে নিয়েছেন কেনো?
-আমি টাকা ইনকাম এর জন্য এটা করিনি
-মানে বুঝলাম না, আপনি তো টাকার জন্যই ছিনতাই করতে বের হয়েছে
-সত্যি কথা বলব?
-অবশ্যই
-তাহলে একটু দাঁড়ান
-হুমম দাঁড়ালাম এবার বলুন
-আমার দাদীমা হসপিটালে। উনার অপারেশন করার জন্য টাকা লাগবে। আমার এতো টাকা নেই। আর টাকা ধার দেওয়ার মতো মানুষ ও নেই, তাই উপায় না পেয়ে এই পথ বেছে নিয়েছি
-আর বাবা মা?
-দাদীমা বলেছিলো আমার বাবা আমি ছোট থাকতে মারা গেছে, আর মায়ের অন্য জায়গায় বিয়ে হয়েছে। আমিও তাকে কখনো দেখিনি
-ওহহহ আচ্ছা। তার মানে আপনি দাদীমার জন্যই
-হ্যাঁ তাছাড়া কিছু না, আমাকে ছেড়ে দিবেন প্লিজ?
-সকালে ছাড়বো, না হলে বুঝতেই পারছেন কি করতে পারি৷ এখানে জবাই করে রেখে চলে যাবো
-না না, আমি যাবো আপনার সাথে
-হুমম হাঁটতে থাকুন, আর আমার কথার উত্তর দিতে থাকুন
-জ্বি দিচ্ছি, আপনি প্রশ্ন করুন
-আমি বর্তমান অবস্থা অনুযায়ী, আমি খুব খারাপ একটা ছেলে। আমি নেশা করি, পরিবারের সবার সাথে খারাপ আচরণ করি। আমি স্টুডেন্ট তবে লেখাপড়ার ধারে কাছেও বর্তমানে যাচ্ছি না
-এমন কেনো?
-উমমম সেটা একটা মেয়ের কারণে
-মেয়ে?
-হ্যাঁ, আমার তথাকথিত গার্লফ্রেন্ড ছিলো। আমি তাকে খুব ভালোবাসতাম। সে আমাকে ভালোবাসতো, তবে তার ভালোবাসা অভিনয় ছিলো। সে আমাকে ধোঁকা দিয়ে চলে যাওয়ার পর থেকে আমি এরকম
-তো আপনি একটা মেয়ের জন্য আপনার জীবন এভাবে নষ্ট করতেছেন কেনো?
-থামেন থামেন এই ধরনের জ্ঞান আমাকে দিতে হবে না৷ আমি বুঝে শুনেই এমনটা করছি
-ওহহহ
,,
কথা বলতে বলতে শুভ তার বাসার সামনে এসে দাঁড়ালো..
-এইটা আমাদের ঘর, আমি নক করলে ভেতর থেকে আমার বোন দরজা খুলে দিবে। ওর নাম নিধি।
-আপনি যে বাসায় নিয়ে আসলেন, আপনার মা বোন তো..
-আপনাকে এতো ভাবতে হবে না। আর সকালে হসপিটালে যাওয়ার আগে আমার থেকে ষাট হাজার টাকা নিয়ে যাবেন। ষাট হাজার দিয়ে হবে তো??
-চল্লিশ হাজার হলে হবে
-বাকিটা রেখে দিবেন
-আমাকে চল্লিশ দিলেই হবে
-...(শুভ বড় বড় চোখ করে তাকালো)
-ঠিক আছে ঠিক আছে, চল্লিশ ই দিয়েন
-হুমমম
,,
শুভ দরজায় টোকা দিতেই নিধি দরজা খুলে দিলো।
-আমার পেছনে একটা মেয়ে আছে দেখতে পাচ্ছিস? (শুভ)
-হ্যাঁ (নিধি)
-রাস্তায় বিপদে পড়েছিলো, তাই আমি নিয়ে আসছি। রাতের খাবার টা খাওয়াই দিয়ে তোর কাছে রাখিস। আর ওরে যেন কোনো কিছু জিজ্ঞেস করিস না কেমন?
-কিন্তু মা কে কি বলব?
-যেটা সত্যি সেটাই বলবি
-রাতের খাবার তো শুধু তোমার টাই রাখা আছে, আর তো নেই
-সেটাই দে, আমার খিদে নেই বাইরে থেকে খেয়ে আসছি
-আচ্ছা ঠিক আছে,
-আমি আমার রুমে গেলাম তুই ওকে নিয়ে ফ্রেশ করিয়ে খাবার খেতে দে
-হুমমম
,,
শুভ তার রুমে গিয়ে ফ্যান টা ছেড়ে চারদিকে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লো। নিধি ইরাকে রাতের খাবার টা খেতে দিলো। ইরা সেটা শেষ করে শুভর রুমে আসলো। শুভর রুমের দরজা খোলাই ছিলো দরজায় দাঁড়িয়ে ইরা দেখতে পেলো শুভ উপর হয়ে শুয়ে আছে। দরজায় দাঁড়িয়ে ডাকতে লাগলো..
-এই যে শুনছেন? (ইরা)
এক ডাকেই শুভ শোয়া থেকে উঠে বসলো।
-কোনো সমস্যা হয়েছে? কিছু বলবেন? (শুভ)
-আমার খাওয়া শেষ
-ওহহ এখন শুয়ে পড়ুন, সকালে আমি টাকা দিয়ে দিবো
-আমি আপনার সাথে থাকবো না?
-না
-আপনি তো বললেন আপনার সাথে থাকতে হবে
-থাকতে হবে না
-এমনি এমনি এতগুলো টাকা দিবেন
-আচ্ছা পাগলীর পাল্লায় পড়েছি তো, আমি এতোটাও খারাপ না। আর আপনি যান ঘুমিয়ে পড়েন৷ অনেক রাত হয়েছে
-হুমমম
-বাইরে থেকে দরজা টা লাগিয়ে দিয়ে যাইয়েন
-আচ্ছা
,,
এদিকে নিধির কাছে শুয়ে আছে ইরা।
নিধির মনে নানান প্রশ্ন। একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার সাহস পাচ্ছে না, কারণ তার ভাই কিছু বলতে মানা করে দিয়েছে। ইরাও তেমন কিছু বলছে না, কারণ তার মধ্যে অনেক ভয় আর টেনশন ছিলো।
এদিকে শুভর মা অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে, এটা সবার জন্যই ভালো, উনি জেগে থাকলে অনেক কিছুই জিজ্ঞেস করতো৷
,,
ভোরবেলা..
শুভ টাকাটা ইরার ব্যাগে দিয়ে বলল..
-আমি আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি, এই জন্য আমি দুঃখিত। যে টাকা বেচে যাবে সেগুলো আপনার কাজে খরচ করবেন৷ আর হ্যাঁ ধন্যবাদ জানাতে আমাদের বাসায় কখনো আসবেন না। আজকে বেড়িয়ে যাচ্ছেন এটাই শেষ ঠিক আছে?
-হুমমমম
-রাস্তায় যদি কখনো আমার সাথে দেখা হয় তাহলে দেখে না দেখার ভান করবেন।
-কথাও বলা যাবে না?
-না
-কেনো?
-আমার পছন্দ না, আর আপনি যান এখন
,,
ইরাকে রিকশায় উঠিয়ে দিয়ে, শুভ গন্তব্যহীন ভাবে, ইরার রাস্তার উল্টো দিকে রওনা হলো। আসলে তার চলাফেরা টাই এখন এমন হয়ে গেছে।
ইরা রিকশায় বসে একবার পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে "একটা অদ্ভুত মানুষ, মুখে কি বলে, আর কাজে কি করে তার বোঝার কোনো উপায় নেই"
,,
ইরা হসপিটালে গিয়ে অপারেশন এর টাকা জমা করলো। তার দাদীমার অপারেশন হলো। সপ্তাহ খানেক হসপিটালে থাকার পর বাসায় ফিরলো।
,,
এদিকে শুভর অবস্থা দিনকে দিন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। সে একদিন বাড়িতে থাকে তো দুইদিন তার কোনো খোঁজ থাকে না৷ নিধি শুভর ব্যাপারে খোঁজ নেওয়ার জন্য রাতুল কে ডাকে৷
,,
একদিন এলাকার খেলার মাঠে দুজন দেখা করে....
-কেমন আছেন? (নিধি)
-জ্বি ভালো, আপনি? (রাতুল)
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তো এখন কি অন্য মেয়ের পিছু ছুটছেন?
-না
-আমার সাথে কথা বলতে চান না কেনো? এতো ডাকার পর আজ আসলেন। যাই হোক যে কথা বলার জন্য আপনাকে ডাকা। আমার ভাইটা কোথায় থাকে? তার সাথে এখন তো কথাই বলা যায়। এদিকে মায়ের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। আমি কি করবো কিছুই তো বুঝতে পারছি না
-শুভ তো আর আমাদের সাথে মিশে না
-কেনো?
-আমি জানি না, ও আগে নেশা করতো। হঠাৎ করে সব বাদ দিয়ে এখন দেবদাস এর মতো আচরণ শুরু করেছে
-মানে?
-মানে একাই থাকে, ওর সাথে ধাক্কা লাগলেও কথা বলে না
-হুমমমম। তারপর আপনার কি অবস্থা?
-জ্বি আমি ভালো আছি
-আর যাই করেন আমাকে ভুলে যাইয়েন না৷ আমি কিন্তু আপনার অপেক্ষায় থাকবো
-আপনার ভাই মাইন্ড করবে
-আমি সেসব শুনতে চাই না৷ আপনি আমার পিছু ঘুরেছেন৷ আপনাকে পছন্দ হয়েছে, এখন আমি আপনাকে অনেকটাই ভালোবেসে ফেলেছি। লেখাপড়া মন দিয়ে কইরেন৷ কিছু একটা ব্যবস্থা করে আমাকে আপনার সাথে নেওয়ার চেষ্টা করেন
-হুমমম
-আজ আমি আসি
-আমি এগিয়ে দেই?
-জ্বি চলেন,,,
,,
রাতুল নিধিকে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিলো।
,,
একদিন সন্ধ্যায় নিরিবিলি এক রাস্তার পাশে শুয়ে শুভ ব্যাথায় কাতরাতে থাকে। কারা যেন মেরে শরীরের অনেক জায়গায় জখম করে ফেলেছে। রাস্তায় দিয়ে যাওয়ার সময় দুই একজন দেখলেও ভয়ে শুভর দিকে কেউ এগিয়ে যায়নি।
,,
ঐ রাস্তা দিয়ে ইরা টিউশনি করে বাসায় ফিরছিলো। সে ও শুভকে এক পলক দেখে চিনতে পারেনি। ভেবেছে কে না কে পরে আছে। ইরার ফেসটা একটু চেনাচেনা লাগছিলো। সে একটু দূরে চলে যাওয়ার পর আবার ফিরে আসে ভালো করে দেখতে।
,,
কাছে এসে দেখে এটা সেইদিনের সেই ছেলে। ইরা আগপাছ না ভেবে শুভকে ডাকতে লাগলো। শুভ কোনো সাড়াই দিচ্ছিলো না, ব্যাথায় কাতরাচ্ছিলো।
,,
ইরা গাড়ি ডেকে শুভকে একটা হসপিটালে নিয়ে যায়। রাতে সেখানে তার চিকিৎসা চলল। ইরা সেই রাতে বাসায় ফিরলো না। দাদীমার কাছে কল করে কথাটা জানিয়ে দিলো।
,,
শুভর জ্ঞান ফিরেছে অনেক আগেই, কিন্তু ইরা শুভকে দেখতে ভেতরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না৷ কারণ শুভ বারণ করে দিয়েছে। শুভ ভেতর থেকে খবর পাঠিয়েছে যে, তাকে যে ভর্তি করেছে সে তাকে দেখবে।
নার্স এসে ইরাকে বলেছে। কিন্তু ইরা ভেতরে যাওয়ার সাহস ই পাচ্ছিলো না।
,,
শুভ বেশ কয়েকবার ডেকে পাঠায়। শেষমেশ ইরা বাধ্য হয়েই ভেতরে ঢুকলো। শুভ এক দেখাতেই চিনে ফেলল আর বলল..
-ওহহ আপনি?? (শুভ)
-হুমমম (ইরা)
-কেমন আছেন?
-জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো। এখন আপনি কেমন আছেন?
-আগে যেমন ছিলাম তার থেকে খারাপ
-আপনাকে কেউ মেরেছে? কারও সাথে ভেজালে জড়িয়েছেন?
-আরে না, কার সাথে ভেজালে জড়িয়েছিলেন?
-আরে নাহহ আমি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। কিছু ছেলে আমার বিপরীত দিক থেকে আসছিলো, ওদের একজনের সাথে আমার গায়ে ধাক্কা লাগে। তারপর একটু গালাগালি করে। সেটা শুনে আমি মারতে যাই, পরে সবাই মিলে আমার মেরেছে
-এটাই তো ভেজাল লাগাইছেন
-আমি ইচ্ছে করে লাগাইনি
-কিছু না বলে চলে গেলেই তো হতো
-বাদ দেন। আপনি আমাকে এখানে এনেছেন এই জন্য ধন্যবাদ।
রাত অনেক হয়েছে, আপনি বাসায় না গিয়ে এখানে কেনো?
-আপনি তো একা, সেই জন্য থেকেছি
-বাসায় জানিয়েছেন?
-হুমমম। আপনার বাসা থেকে টেনশন করছে সবাই
-না,
-মানে!
-আমি গত দুইদিন বাসায় যায়নি। ওরা ভাবছে হয়তো ভালো আছি
-এ কেমন জীবন আপনার
-জানি না
-আচ্ছা এসব কথা এখন রাখেন, আমি আপনার খাবার ব্যবস্থা করি
-আপনি খেয়েছেন?
-না
-আগে আপনি খেয়ে আসুন, তারপর অন্য মানুষের কথা ভাবেন
-হুহহ আপনি সত্যি একটা..
-হুমম আমি এমনি। আর দাদীমা কেমন আছে?
-এখন একদম সুস্থ
-আপনার দিনকাল কেমন কাটছে
-হ্যাঁ ভালোই
-আচ্ছা আমাকে পেলেন কিভাবে?
-আমি টিউশনি করিয়ে বাসায় ফিরছিলাম তখন আপনাকে দেখি
-ওও
-আচ্ছা এভাবে জীবন না কাটিয়ে একটু চেঞ্জ হওয়া যায় না?
-এমনি ভালো আছি
।।
।।
ছলনা
Part : 3
Write : Sabbir Ahmed
___________________________
-আচ্ছা এভাবে জীবন না কাটিয়ে একটু চেঞ্জ হওয়া যায় না? (ইরা)
-এমনি ভালো আছি (শুভ)
-উল্টো না বুঝে, একটু বোঝার চেষ্টা করুন, ঘরে আপনার অসুস্থ মা, ছোট বোন৷ এরা তো আপনার উপরেই নির্ভর করবে। উল্টো আপনি তাদের টরচর করেন
-এগুলো আপনাকে নিধি বলেছে?
-না, আমি গিয়েই তো বুঝেছি
-ওহহহ
-আর এভাবে চলবেন না
-হুমমম, আচ্ছা আমাকে যেখানে পেয়েছেন ওখানে আপনার বাসা?
-না, রাস্তা ধরে নাক বরাবর পূব দিকে যাবেন। তারপর পাবেন একটা বটতলা, সেখান থেকে ডান দিকে মোড় নিলে পর পর তিনটা গলি পাবেন। তিনটা গলির মাঝের গলি দিয়ে গিয়ে দ্বিতীয় নাম্বার বাসা টা আমাদের
-ওহহহ, জায়গা টা আপনাদের নিজের?
-হুমমম, ভাবছি বিক্রি করে দিবো
-কেনো?
-আর বইলেন না, আশে পাশের বড়লোকের জ্বালায় এখন সেখানে টিকে থাকায় দায় হয়েছে
-হুমম বুঝেছি। এখন থেকে কেউ বাড়াবাড়ি করলে আমাকে জানাবেন আমি দেখে নিবো
-গুন্ডা হয়েছেন তাই না?
-না, কিন্তু অন্যায় তো সহ্য করা যাবে না
-নিজে কি করেন পরিবারের সাথে? আগে নিজে ঠিক হন। তারপর পরের টা দেখবেন
,,
ইরার কথায় শুভ লজ্জা পেয়ে গেলো। তখন সে অনুধাবন করলো, আসলে এতোদিন যে পাগলামি করে আসছিলো এটা করা মোটেও ঠিক হয় নি৷ শুভ কিছুক্ষণ চুপ থেকে ইরাকে বলল..
-আমি এখন থেকে আর ওরকম করবো না, ঠিক হয়ে যাবো (শুভ)
-সত্যি!!!(ইরা)
-হুমমম
-এইতো সুবুদ্ধি হয়েছে। এখন আপনি একটু ঘুমান আমি বাইরে যাচ্ছি
-এতো রাতে বাইরে থাকার দরকার নেই, আমার এখানেই বসে থাকেন
-আমি থাকলে আপনার ঘুম হবে না
-ঘুম লাগবে না, আপনি এখানেই থাকুন
-কেনো?
-বুঝবেন না সমস্যা আছে,
-আচ্ছা ঠিক আছে আমি আছি
-আপনার নাম তো ইরা তাই না?
-নাম টা মনে রেখেছেন??
-হুমমম
-বাহহহ। তবে আমি এখন ভিন্ন একটা শুভকে দেখছি
-আপনি তো দেখছি আমার নামটাও মনে রেখেছেন
-মনে রাখতে হয়নি, আপনা আপনি থেকে গেছে
-তা আমি ভিন্ন হলাম কি করে?
-আপনি খুব কর্কষ স্বরে কথা বলতেন। এখন সেটা বলছেন না
-ওহহহ। আচ্ছা একটা কথা বলি?
-জ্বি বলেন
-আমি কোনো হাত উঠাতে পারছি না৷ আমি একটা সিগারেট খাবো, একটু আগুন জ্বালিয়ে দিবেন?
-লাইটার আছে?
-হুমম। লাইটার আর সিগারেট প্যান্টের পকেটে
,,
ইরা পকেটে হাত ঢুকিয়ে দুটোই বের করলো। তারপর সেগুলো জানালা দিয়ে ছুড়ে ফেলে দিলো।
-এটা কি করলেন? (শুভ)
-এসব এখন থেকে বন্ধ। নিজের অনেক ক্ষতি করেছেন, এবার একটু সচেতন হন (ইরা)
-আমার যে এগুলো সঙ্গী হয়ে গেছে
-ব্রেকআপ করে ফেলেন
-ব্রেকআপ করে কি আপনাকে খাবো?
-দেখ কি বলে
-সরি, মানে আমি খাবো কি তখন?
-ফলমূল কিনে খাবেন
-পারবো না
-অবশ্যই পারবেন
,,
কথা বলতে বলতে ফজরের আজান হলো। ইরা শুভকে আরও কিছু কথা বলে বিদায় নিলো। সেদিন দুপুরে শুভর রিলিজ হলো। ইরা হসপিটালের সব খরচ দিয়ে গেছে। শুভ একটু অবাক হলো।
তারপর সেখান থেকে সোজা বাসায়।
,,
নিধির সাথে দেখা হলো, নিধি দেখলো শুভর পায়ে হাতে ব্যান্ডেজ করা। নিধি কিছুই বলল না। শুভর মা ও শুভকে দেখে কিছু বলল না।
শুভ রুমে আসলো। রুমটা দেখে গোয়াল ঘর মনে হচ্ছে তার। দেড়ি না তৎক্ষনাৎ পরিষ্কার করা শুরু করলো।
,,
কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছিলো তার। তবুও জেদ ধরে কাজ শেষ করে ফেলল। কাজ শেষে নিধির কাছে ভাত খেতে চায়। নিধি বলে...
-ভাত নেই (নিধি)
-কেনো? (শুভ)
-রান্না হয়নি
-রান্না হয়নি কেনো?
-দোকানে বাকি হয়েছে অনেক, দোকানদার আর বাকি দিবে না।
-টাকা নেই?
-কিসের টাকা? সব তো তুমি নিয়ে শেষ করেছো। আর মাস শেষ হয়নি যে ব্যাংক থেকে টাকা আসবে
,,
নিধির কথা শুনে শুভর চোখে পানি এসে গেলো। কোনো রকম সেটা সামলিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।
এদিকে নিধিও চোখের পানি ফেলতে ফেলতে তার রুমে চলে গেলো।
আধ ঘন্টা পর শুভ আবার বাসায় আসলো। বাসায় এসে নিধি নিধি বলে ডাকলো।
,,
নিধি রুম থেকে বাইরে এসে দেখে, তার ভাইয়ের দুই হাতে দুইটা ব্যাগ, আর ব্যাগ ভর্তি বাজার। শুভ ব্যাগ দুটো নিধির হাতে দিয়ে বলে...
-আমিও সকাল থেকে কিছু খাইনি, তাড়াতাড়ি রান্না কর। আমি হেল্প করতাম কিন্তু আমার অবস্থা তো দেখতে পাচ্ছিস। আমি রুমে আছি, রান্না হলে ডেকে দিস আমাকে। (শুভ)
-হুমমমম (নিধি)
,,
নিধি রান্না শেষ করে ভাইকে ডাকে।
অনেকদিন পর তারা একসাথে খাচ্ছে। নিধি তার ভাইয়ের হঠাৎ পরিবর্তন দেখে কিছুই বলতে পারছে এই ভয়ে যে, আবার কি না কি বলে উল্টো যদি বকা খায়।
,,
কিছুদিন পর নিধি তার ভাইয়ের পুরো পরিবর্তন টা দেখতে পেলো।
শুভ লেখাপড়ায় মনোযোগী হয়েছে, সাথে পার্ট টাইম একটা জব ও নিয়েছে। বাজে কোনো অভ্যাস তার মধ্যে দেখতে পেলো না। এখন সে তার আর পরিবার দুটোর খেয়াল ভালো ভাবেই রাখছে।
,,
শুভ আরেকজনের খেয়াল রাখার জন্য চেষ্টা করছে, কিন্তু সে যেন ধরাই দিচ্ছে না৷ সপ্তাহের শেষের দিনে শুভ দাঁড়িয়ে থাকে সেই রাস্তায় ইরার সাথে দেখা করা জন্য৷ ইরার জন্য কোনো খোঁজ মিলছিলো না।
,,
আরও কয়েক সপ্তাহ যখন পার হলো, শুভর যেন ধৈর্য বাধ মানছিলো না। একদিন সাহস করে ইরার কাছে শোনা সেই কথামতো একটা বাসার দরজার সামনে দাঁড়ায়। তখন রাত আটটা বাজে। শুভ খালি হাতে যায়নি, হাতে মিষ্টির প্যাকেট আর ইরার জন্য আলদা একটা গিফট।
,,
বাসার পেছনের দিকে একটুখানি ফাঁকা জায়গা, উঠান মনে হয় বাসার সামনের দিকে। শুভ অনেকটা ভয়ে ভয়েই দরজায় নক করলো।
,,
ভেতর থেকে মেয়েলী কন্ঠে শব্দ আসলো
-কে???
শুভ বুঝতে পারলো না এটা ইরা কি না৷ শুভ উত্তর করলো
-আমিইই
-আমি কে?
-...(শুভ কিছু না বলে চুপ থাকলো।)
,,
একজন এসে দরজা টা খুলল। শুভ দেখলো মেয়েটা ইরা না...
-কি চাই ভাই? (মেয়েটি)
-এটা ইরাদের বাসা? (শুভ)
-জ্বি, আপনি কে?
-আমি ওর ফ্রেন্ড
-ফেরেন্ড? ফেরেন্ড কি?
-আমি ওর বন্ধু
-বেডা মানুষের লগে আপা বন্ধুত্ব করছে?
-মানে আমরা পরিচিত। আচ্ছা আপনি কে?
-আমি চামেলি, পাশের বাসায় কাজ করি। রাতে ইরা আপার লগে থাকি
-ওহহহ
-শোনেন আপারে ছাড়া আপনাকে ভেতরে আইতে দেওয়া যাইবো না
-আপনার আপা কোথায়?
-গোসল করে, আপনি বাইরে খারায়া থাকেন।
-আচ্ছা ঠিক আছে
,,
এদিকে কাজের মেয়েটা ইরার ওয়াশরুমের কাছে গিয়ে বলছে..
-আপা(চামেলি)
-হ্যাঁ বল (ইরা)
-আপনার লগে এক বেডায় দেহা করতে আইছে
-ছেলে মানুষ?
-হ্যাঁ
-এই সময় আবার কে আসলো? তাও ছেলে!
-আপনি আইসা দেইহা যান
-তুই ভেতরে আসতে দিস না যেন, আমি আসতেছি
-না ভেতরে আইতে দেই নাই
,,
ইরা ঝটপট গোসল শেষ করলো। মাথাটা আধো ভেজা অবস্থায় তোয়ালে পেঁচিয়ে নিলো।
সবকিছু ঠিকঠাক করেই মেয়েটাকে সাথে নিয়ে দরজা খুলল।
সাথে সাথে শুভর সালাম৷ শুভকে দেখে ইরা চমকে উঠেছে। হঠাৎ করে এভাবে দেখবে কে জানতো। ইরা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে শুভর সালাম এর উত্তর নিলো। আর কাজের মেয়েকে বলল তার রুমে যেতে।
,,
শুভ মিষ্টির প্যাকেট টা ইরার দিকে এগিয়ে ধরলো। ইরা হাতে নিলো। তারপর গিফ্ট এর প্যাকেট টা হাতে নিলো।
-হঠাৎ করে আপনি, আর এগুলো কেনো? (ইরা)
-আপনার সাথে দেখা করতে আসছি (শুভ)
-কিন্তু কেনো?
-আপনি কিছু টাকা পান, সেটা দিতে আসছি
-কিসের টাকা?
-আপনি ফিসফিস করে কথা বলছেন কেনো?
-এমমম দাদীমা যদি জানে এই রাতে অচেনা একটা ছেলে আমার বাসায় আসছে আমার সাথে দেখা করতে, আমাকে বকবে
-ওহহহ তাহলে কি আমি চলে যাবো?
-আমি কিসের টাকা পাই সেটা বলেন
-ঐ যে সেদিন এর হসপিটালের বিল
,,
হঠাৎ করে দাদীমা উপস্থিত..
-কি রে এই ছেলেটা কে? তোর হাতে এগুলো কি? (দাদীমা)
।।
।।
ছলনা
Part : 4
Write : Sabbir Ahmed
_____________________________
হঠাৎ করে দাদীমা উপস্থিত...
-কি রে এই ছেলেটা কে? তোর হাতে এগুলো কি? (দাদীমা)
,,
শুভ দাদীমাকে সালাম দিলো। দাদীমা উত্তর নিয়ে ইরার দিকে তাকিয়ে বলল..
-কে??? (দাদীমা)
-দাদীমা ও শুভ আ আ আমার ফ্রেন্ড (ইরা)
-কি বললি?
-বন্ধু বন্ধু
-ওহহ তাই বল, তা বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখছিস কেনো ভেতরে আসতে বল
-আপনি আসেন ভেতরে
-তা মিষ্টি নিয়ে আসতে হবে কেনো? বান্ধবীর বাসায় এমনিই তো আসে সবাই (দাদীমা)
-আসলে দাদীমা ওর একটা জব হয়েছে তো তাই
,,
শুভকে বসার ঘরে বসতে দিয়ে ইরা হালকা নাস্তার ব্যবস্থা করলো।
-এগুলো করতে গেলেন কেনো?(শুভ)
-না সমস্যা নেই, আপনি খান (ইরা)
-আমি আসছি দেখা করতে
-সেটা আমি বুঝতে পেরেছি। আপনি বাসায় আসার সাহস পেলেন কিভাবে?
-আসলে আমি আপনার সাথে দেখা করার জন্য বেশ কয়েকদিন রাস্তার মোড়ে অপেক্ষা করেছি। কিন্তু আপনার দেখা পাইনি
-ওহহহ
-দাদীমা তো আমার কথা জানে না
-না বলিনি
-ভালো করেছেন
-আপনি এখন আসুন
-এখনি যাবো?
-হুমমম
-তাড়িয়ে দিচ্ছেন?
-তা না আপনি দিনের বেলায় আসবেন
-এখন কোনো সমস্যা?
-হুমম সমস্যা আছে। বলা যাবে না
-আচ্ছা ঠিক আছে যাচ্ছি। আমি যে ছোট্ট একটা প্যাকেট দিয়েছি ওটা শুধু আপনি দেখবেন
-আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে আমি দেখে নিবো, আপনি যান
,,
শুভ খেয়াল করলো ইরার মোবাইলে বার বার কল আসে, ইরা সেটা প্রত্যেকবার কেটে দিচ্ছে। শুভ ইরার দিকে একটু খেয়াল করতেই, ইরা একটু হেসে বলে..
-আমার একটু জরুরি দরকার তাই.. (ইরা)
-সমস্যা নেই আমি যাচ্ছি, আচ্ছা আবার কথা হবে
-ঠিক আছে ঠিক আছে
,,
শুভ বাসা থেকে বের হয়ে এলো।
ইরা এবার তার কল রিসিভ করলো।
তার ফোনের ওপাশ থেকে সেইরকম ঝাড়ি...
-কখন থেকে কল করছি, বার বার কেটে দিচ্ছিস কেনো? (ইরার বয়ফ্রেন্ড)
-দাদীমা কে ঔষধ দিলাম (ইরা)
-তোরে না বলেছি সব কাজ একটা ঠিক সময়ের মধ্যে শেষ করবি
-সাদাফ তুমি এমন বিহেভ করো কেনো? এটা তো বুঝবে আমি কাজে ব্যস্ত ছিলাম
-হুমমম ঠিক আছে
-এখন বলো
-কি বলব?
-যে জন্য কল করলা
-প্রেম করার জন্য কল করেছি
-তাই?
-কেনো তুমি জানো না?
-জানি পাগল, আচ্ছা তুমি শুরু করো
-কি শুরু করবো
-প্রেম
,,
এদের দুজনের প্রেমের বয়স এক বছর হতে চলল। ছেলেটা ইরার ক্লাসমেট। প্রথমে বন্ধুত্ব আর সেখান থেকেই তাদের এই রিলেশন। ইরা রিলেশনে প্রথম দিকে রাজি ছিলো না। সাদাফ এর পাগলামি গুলো একসময় তার ভালো লেগে যায় আর সেখান থেকেই নতুন সম্পর্ক শুরু।
,,
পনেরো দিন পর বাসের মধ্যে ইরা আর শুভর দেখা। শুভ বাসে আগে উঠেছিলো। পরের স্ট্যান্ড থেকে উঠে ইরা। আর উঠেই দেখতে পায় শুভকে।
-আরে আপনি! কেমন আছেন?? (ইরা)
-জ্বি আলহামদুলিল্লাহ, আপনি কেমন আছেন??
-আলহামদুলিল্লাহ। কোথায় যাচ্ছেন?
-একটা ইন্টারভিউ দিতে
-আমিও তো যাচ্ছি
-আপনিও?
-হ্যাঁ
-আপনি কোন ক্লাসে পড়েন?
-অনার্স ফাইনাল ইয়ার, সাবজেক্ট ইকোনোমিকস। আপনার তো মনে হয় মার্স্টাস শেষ
-না আমি সবে মাত্র সেকেন্ড ইয়ার, আমার সাবজেক্ট ম্যানেজমেন্ট
-ওহহহ, আপনাকে তো দেখে...
-আপনি যেটা মনে করেছেন আমারও তাই মনে হয়েছে। আমি ভেবেছি আপনি আমার এক বছরের জুনিয়র হবেন। এখন দেখছি দুই বছরের সিনিয়র
-হা হা হা আমি ভাবছি আপনি আমার বড়, এখন দেখছি ছোট। সে যাক গে, এখন কোথায় ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন?
-আপনার টা আগে বলেন
-আসলে আমি একটা কোচিং এ নিয়োগ এর জন্য যাচ্ছি, দেখা যাক কি হয়। আর আপনি?
-আমিও
-কিহহহ!! আপনিও?
-হুমমম
-কোন কোচিং??
-স্টুডেন্টস কেয়ার
-হায় আল্লাহ! আমিও আপনার সাথেই
-যাক তাহলে ভালোই
,,
ইতিমধ্যে কন্ডাক্টর এসে হাজির ভাড়া উঠানোর জন্য৷ ইরার ভাড়াটা শুভ দিয়ে দেয়৷
-আপনি ছোট হয়ে ভাড়া দিয়ে দিলেন! আমি তো ভেবেছি আমি দিবো (ইরা)
-ভাবতে থাকেন, (শুভ)
-টিটকারি করলেন
-না না মজা করলাম। আর আমি সেদিন যে আপনার বাসায় গিয়েছিলাম টাকা দিতে। টাকা দিবো সেটা মনেই ছিলো না৷ আপনাকে দেখে সব কথা এলোমেলো হয়ে গেছে
-আমাকে দেখে সব কথা এলোমেলো হয়ে গেছে মানে?
-মানে আমার হঠাৎ করে যাওয়া। সেটা ঠিক হলো কি না? আবার কেমন পরিস্থিতি তে যে পড়বো, দাদীমা কিছু বলবে কি না এসব দেখে আমার....
,,
শুভর কথার মাঝে ইরার কল আসে। শুভ কে থামিয়ে ইরা কল টা রিসিভ করলো। কলটা সাদাফ করেছে। সে ইরার আগে পৌঁছে গেছে কোচিং সেন্টারে। ইরা সেখানে একা যেতে ইতস্তত বোধ করছিলো তাই সাদাফ কে ডেকে নিয়েছে...
-কই তুমি (সাদাফ)
-এইতো বাসে(ইরা)
-কত সময় লাগবে?
-আর পাঁচ মিনিট
-ঠিক আছে আসো
,,
কথা বলা শেষ হওয়ার সাথে সাথে শুভ বলল।
-সেন্টারে আপনার পরিচিত কেউ আছে? (শুভ)
-না, আসলে আমি একা যাবো, কেমন যেন লাগছিলো তাই আমার একটা ক্লাসমেট কে ডেকেছি (ইরা)
-ওহহহহ
-আচ্ছা একটা কথা বলি, বাস থেকে নেমে আপনি আমাকে না চেনার ভান করে থাকবেন। আমার ক্লাসমেট টা আবার দুষ্ট প্রকৃতির, আমি আপনার সাথে কথা বলছি এটা যদি দেখে। আমাকে খেপিয়ে মারবে, আর সবাইকে বলে বেড়াবে
-আচ্ছা ঠিক আছে, তবে আপনি আমার বড় হয়ে আমাকে আপনি করে বলছেন
-সরি সরি আমার মনেই ছিলো না। আর তোমাকে দেখে মনে হয়না তুমি আমার ছোট
-হুমমম
,,
তারা বাস থেকে নেমে আলাদা হয়ে যে যার মতো কোচিং সেন্টারে গেলো।
দুজনরেই চাকরিটা হয়ে গেলো। রাস্তার পাশেই কোচিং। শুভ তার চাকরি কনফার্ম করে রাস্তার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে বাসের জন্য৷
,,
রাস্তার অন্য পাশ থেকে ইরা শুভকে ডাকলো। এক ডাকে রাস্তা পার হলো।
-তোমার কি অবস্থা? কি হলো? (ইরা)
-কাল থেকে আসতে বলেছে(শুভ)
-আমাকেও বলেছে। অভিনন্দন
-আপনাকেও
-তোমার তো দেখছি বেশ উন্নতি হয়েছে
-কিভাবে?
-কথা একদম কম বলো, চুপচাপ থাকার চেষ্টা করো
-হুমমম। আপনার সাথে আপনার ক্লাসমেট কোথায়?
-ও তো চলে গেছে
-আপনি কি আমাকে মিথ্যে বলেছেন?
-কোন কথাটা?
-সে আপনার ক্লাসমেট না বয়ফ্রেন্ড
-না না ক্লাসমেট
-হুমমমম
-হুমমম
-আপনি কিন্তু একটা কথা আমাকে জানানি
-কোনটা?
-আমি আপনাকে কিছু গিফট দিয়েছিলাম
-ওপপস সরি, দিন দিন মনভুলো হয়ে যাচ্ছি। আর হবোই না বা কেনো? নানান ব্যস্ততা। আপনার দেওয়া গিফটা অনেক সুন্দর ছিলো৷ আপনি কিছু নীল প্রজাপতি দিয়েছিলান আর রিং তাই না?
-এতো গিফট পান যে আমার গিফট এর
ব্যাপারে আবার শিওর হয়ে নিচ্ছেন
-সরি সরি আমার আসলেই অনেক কিছু মনে থাকছে না। ইদানীং এমনটা হয়েছে
-এই কথাটা সত্যি বলেছেন। আমাকে একবার তুমি করে বলছেন আবার আপনি করে বলছেন। কখন যে বলবেন আপনি কে? (শুভ মিষ্টি হেসে)
-হা হা হা এরকম টা হবে না। মেমোরি এতোটা খারাপ হয়নি
,,
একটা বাস স্ট্যান্ডে আসলো..
-এটাতে তো অনেক ভিড়(ইরা)
-হ্যাঁ যাওয়া যাবে না(শুভ)
,,
এমন করতে করতে তারা তিনটা বাস ছেড়ে দিলো। চতুর্থ বাসে অনেক ভিড় হওয়া সত্ত্বেও বাসে উঠলো কারণ তখন সন্ধ্যার পেরিয়ে রাত হয়েছে। আর দেড়ি করলে অনেক রাত হয়ে যাবে।
,,
শুভ বাসে উঠার আগে ইরাকে বলল
-আপনি তো সিট পাবেন না দাঁড়িয়ে যেতে হবে। আর মেয়ে হয়ে দাঁড়িয়ে গেলে তো নানান সমস্যা ভেতরে অনেক লোক (শুভ)
-সমস্যা নেই আমরা তো দুজন আছি, আমি একা হলে জীবনেও উঠতাম না, তুমি আছো বলেই উঠছি (ইরা)
-আমি?
-হ্যাঁ উঠো এখন
,,
বাসের মধ্যে দুজন উঠে একটু জায়গা করে নিলো। ইরার যাতে দাঁড়াতে সমস্যা না হয় সেই জন্য জায়গা করে দিলো শুভ। বাসের মধ্যে আরও কিছু মেয়ে ছিলো তবে তারা পেছনের দিকে।
,,
বাস চলতে শুরু করলো। ইরার বাসে দাঁড়িয়ে থাকতে বেশ হিমসিম খাচ্ছিলো। কয়েকবার শুভর উপর পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিলো। এমন অবস্থা থেকে বাঁচতে ইরা একটা হাত শুভর কাঁধে রাখে। আরকরা হাত দিয়ে শুভর শার্ট টেনে ধরে।
,,
-শার্ট কি ছিঁড়ে ফেলবেন? (শুভ)
-কি করবো উপায় তো নেই (ইরা)
-বললাম যে উঠেন না
-বাসায় তো যেতে হবে
-অটোতে গেলো ভালো হতো
-কি মনে করে যে উঠতে গেলাম। তোমাকে ধরে আছি সমস্যা হচ্ছে??
-সমস্যা বলতে
-আমি কি ছেড়ে দিবো?
-না ধরেই থাকে। আপনার স্পর্শে অসাধারণ কিছু অনুভূতি জমা হচ্ছে মনে মধ্যে (পরের কথাটা বিড়বিড় করে বলল শুভ)
-কিছু বলতেছো তুমি?
-না না বললাম বাসে উঠা ঠিক হয়নি..
।।
।।
ছলনা
Part : 5
Write : Sabbir Ahmed
______________________________
-কিছু বলতেছো তুমি? (ইরা)
-না না বললাম বাসে উঠা ঠিক হয়নি (শুভ)
-বললেই তো কিছু
-ওহহ হ্যাঁ
-....(ইরা মিষ্টি হাসলো)
-একটা কথা বলি?
-বলো
-হাসলে আপনাকে অপরূপ লাগে
,,
পাশে থেকে কেউ একজন বলে উঠলো..
-ভাই পাবলিক বাসে প্রেম! আহা
,,
শুভ খুব লজ্জা পেলো সাথে ইরাও।
কিছুক্ষণ পর ইরা তার গন্তব্যে নেমে গেলো শুভকে কিছু না বলেই। শুভও ইরার সাথেই নামলো..
-তুমি নামলে যে (ইরা)
-সরি বলার জন্য নেমেছি (শুভ)
-ঠিক আছে, আমি তোমার কথায় কিছু মনে করিনি
-আমি যেটা বলেছি সেটা সত্যি
-এখন কি আমাকে সরম দিতে তোমার খুব ভালো লাগছে। সিনিয়র পার্সন এর সামনে এভাবে কেউ বলে?
-আমি কি আপনার সাথে ভাবনায় কথা বলব?
-এই তোমার কি হয়েছে? এরকম কথা বলছো কেনো?
-সরি সরি। আজ পার্ট টাইম একটা জব হলো। তাই খুশিতে এরকম করছি
-তাই বলে আমার সাথে এরকম?
-সরি তো
-হুমম ঠিক আছে৷ তুমি যে এখানে নামলে বাসায় যাবা কিভাবে?
-হেঁটে হেঁটে
-কষ্ট হবে না?
-না। ভাবতে ভাবতে আমার রাস্তা শেষ হয়ে যাবে
-এরকম করে রাস্তায় চললে তুমিই ছিনতাই হয়ে যাবে
-ছিনতাইকারী আপনি হলে আমি রাজি
-মজা টা বেশি হয়ে যাচ্ছে না?
-একটু তো বেশি হচ্ছেই
-আর তুমি আমার রাস্তায় কেনো? বাসায় যাও অনেক রাত হয়েছে
-আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি
-না, লাগবে না। আমি যেতে পারবো
-রাস্তায় যদি কোনো সমস্যা হয়
-এটা আমার এলাকা
-তবুও যাই না একটু
-ভালোই বায়না করতে পারো
-আপনি রাখতেও পারেন
-বেশি বেশি কিছুই রাখবো না। তোমার সীমা এই পর্যন্তই
-সীমা অতিক্রম করলে?
-শাস্তি
-আপনি আমাকে শাস্তি দেওয়ার কে?
-তোমার সিনিয়র পার্সন
-সেদিণ যদি জানতাম আপনি এতো সুন্দর তাহলে কিছু একটা ভুল করেই ফেলতাম
-সেদিনের কথা আর মনে করিয়ে দিয়ো না। যা অভিজ্ঞতা হয়েছে, আর যা ভয় পেয়েছিলাম
-আমি ছিলাম দেখে বেঁচে গেছেন
-তোমারও কিন্তু খারাপ উদ্দেশ্য ছিলো
-আমি তো কিছু করিনি
-হ্যাঁ করনো। তবে ভয় দেখিয়ে অনেক বড় একটা উপকার করেছো
-আপনিও আমার অনেক বড় একটা উপকার করেছেন
-কি সেটা?
-আমাকে পরিবর্তন করেছেন
-আমিই??
-হ্যাঁ, আপনার কথা গুলো বুঝে উঠার পর সব ছেড়ে দিয়েছি
-যাক আলহামদুলিল্লাহ, আমার কথা কাজে লেগেছে।
,,
ইরাদের বাসার কাছাকাছি আসার পর..
-এখন যাও আমি যেতে পারবো (ইরা)
-আরেকটু যাই? (শুভ)
-আরও গিয়ে কি করবে?
-দেখবো
-কি দেখবে?
-আপনাকে
-কিহহ??
-না মানে আ আ আপনাদের বাসা দেখবো। কেমন আছে অসুখ টসুখ করলো কি না
-তোমার মাথা ঠিক নেই, তুমি বাসায় যাও, কাল দেখা হবে
-হুমম যাচ্ছি, তবে একটা কথা বলি?
-বলো
-আপনি দেখতে অনেক সুন্দর
-ঠিক আছে যাও তো এখন, মনে হয় আজ প্রথম দেখেছো (ইরা লজ্জা পেয়ে)
-আমি এতো কাছে থেকে মনোযোগ দিয়ে দেখিনি
-এই থাকো আমি গেলাম (ইরা দৌড় দিলো)
-এই শোনেন শোনেন...
,,
ইরাকে আর কে পায় সে অলরেডি রাস্তা পার হয়ে গলির মধ্যে ঢুকে পড়েছে। শুভ ব্যাক করলো তার বাসাট রাস্তায়। ইরাকে যে তার মনে খুব ভালো ভাবেই ধরেছে সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে।
,,
পরদিন কোচিং শেষে আবার দুজনের বাস স্ট্যান্ডে দেখা।
-কেমন আছেন? (শুভ)
-ভালো, তুমি? (ইরা)
-আমিও ভালো
-আজ কি বাসে যাবেন?
-হুমম
-বাসে তো ভিড়
-আজ এখনো সন্ধ্যা হয়নি, সন্ধ্যার পরের বাসগুলো অনেক ভিড় হয়
-ওহহ তাহলে আমার জন্যও ভালো
-প্রথম দিন কেমন লাগলো?
-খারাপ না ভালোই
-তোমার দায়িত্ব কোন ক্লাসে??
-ফাইভ আর সেভেন
-ওহহহ, আজ শুধু আমি এইট এর ক্লাস নিয়েছি
-হুমমমম
,,
ইরার কল আসলো...
ইরা রিসিভ করে..
-হ্যাঁ বলো (ইরা)
-কোথায় তুমি (সাদাফ)
-বাসায় ফিরছি
-বাসে উঠেছো?
-না স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে
-তুমি থাকো আমি আসছি
-কেনো?
-কেনো আবার? তোমাকে নিয়ে ঘুড়বো
-আমার বাসায় কাজ আছে, অন্য কেনোদিন
-আরে আমি আজ ফ্রি
-আমি তো ফ্রি না
-ওকে (সাদাফ রাগ করে কল কেটে দিলো)
-হ্যালো হ্যালো, (ইরা মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো সাদাফ লাইন কেটে দিয়েছে)
,,
শুভ কৌতুহল বশত বলল..
-কে ফোন দিয়েছে? (শুভ)
-আমার একটা বান্ধবী (ইরা)
-কি বলে?
-ঘুরতে যেতে বলে, তুমিই বলো এখন কি ঘুরতে যাওয়ার সময়? বাসায় যাবো ফ্রেশ হবো
-হুমম এখন যাওয়ার দরকার নেই। সারাদিন এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি করে এই সময় ঘুরতে যাওয়ার মুড থাকে না
-হুমমম, তুমি তো বুঝলে ও তো বুঝবে না
-আচ্ছা আপনার বয়ফ্রেন্ড আছে?
-হঠাৎ এ প্রশ্ন?
-মানে আপনি তো অনেক বড়, আছে কি না?
-না, আমি এসব এর মধ্যে নেই
-ভালোই হলো (শুভ অনেক খুশি হয়ে)
-বুঝলাম না, কি ভালো হলো?? আর তুমি এতো খুশি হলে কেনো আমার কথায়?
-না এমনি
-লুকিয়ে লুকিয়ে কিছু ভেবেছো নাকি?
-না না কি ভাববো?
-এখনকার কোনো ছেলেকে দেখে বিশ্বাস নেই
-কেনো কেনো?
-সিনিয়র দের প্রপোজ করে বসে
-আপনাকেও কেউ করেছে!
-আরে না না, এমনটা তো শোনাই যায়
-সেসব হাজারে দুই একটা।
-ওকে ওকে আমরা এসব নিয়ে কথা বলা বন্ধ করি, বাস এসে গেছে চলো এখন যাওয়া যাক
,,
আজকে বাসে সিট ফাঁকা ছিলো অনেক গুলো। দুজন একপাশের ছিটে বসলো। ইরা বসলো জানালার ধারে।
-আজ কিন্তু আমার গন্তব্যে নামবে না তুমি (ইরা)
-কেনো? (শুভ)
-কেনো মানে? তুমি কি ভেবেই রেখেছো আগে থেকে যে আমার সাথেই নামবে?
-না ঠিক সেটা না
-আমি তো তোমার কথায় সেটাই খুঁজে পাচ্ছি
-না আমি নামবো না আপনি একাই যাবেন
-তাহলে ঠিক আছে।
-হুমম
-বাসার সবাই কেমন আছে? আন্টির কি অবস্থা?
-আগের চেয়ে ভালো,
-ঠিকমতো ঔষধ দিচ্ছেন তো?
-হুমমম
-একদিন আসেন আমাদের বাসায়
-আমি?
-হ্যাঁ
-প্রথম দিনই মানা করে দিয়েছেন, আমি যেন না যাই
-তখন পরিস্থিতি ভিন্ন ছিলো
-এখন চেঞ্জ হয়েছে?
-পুরোটাই, আমি তো আপনার কথা মা আর বোনের কাছে বলি
-সত্যি?
-হ্যাঁ
-তাহলে তো একদিন যাওয়াই যায়
-কবে আসবেন বলেন
-এতো তাড়াহুড়ো করে কিছু বলতে পারবো না। আমার সময় হলে আমি যাবো
-না আগেই বলতে হবে
-কেনো?
-একটা প্রিপেরশন আছেন?
-কিসের প্রিপেরশন? তোমার আবার সেদিনের মতো মতলব আছে নাকি?
-ছিঃ ছিঃ কি বলেন এসব
-হি হি হি এমনি মজা করলাম, আচ্ছা ঠিক আছে যাবো
-কবে?
-আবার! বললাম তো যাবো
,,
কথা বলতে বলতে ইরার গন্তব্যে আসার পর..
-সাইড দাও আমি যাই (ইরা)
-চলেন পুরো পথটা যাই (শুভ)
-কি বলো?
-যাবেন?
-মাথা খারাপ, সাইড দাও যাবো
-আই লাভ ইউ
,,
ইরা শুভর দিকে রাগান্বিত ভাবে তাকিয়ে, ঠাঁটিয়ে শুভর বাম গালে একটা চর বসিয়ে দিলো। ইরা নিজেই সাইড নিয়ে বাস থেকে নেমে গেলো।
,,
শুভর চর খাওয়াটা বাসের ঐ পাশে বসা একজন দেখে ফেলেছে। শুভর চোখ গেলো সেই লোকটার দিকে। লোকটা এগিয়ে এসে বলল..
-কেইস টা কি ভাই? (লোকটি)
-কিছু না (শুভ)
-মারলো যে
-ভালোবাসি তো, তাই মেরেছে
-আহারে!
।।
।।
ছলনা
Part : 6
Write : Sabbir Ahmed
____________________________
-ভালোবাসি তো তাই মেরেছে (শুভ)
-আহারে! (লোকটি)
-হুমমমম
-ঝগড়া?
-না
-তাইলে?
-বিরক্ত করছি
-বুঝলাম না
-সম্পর্ক শুরু করবো
-ওহহ আচ্ছা বুঝলাম
,,
শুভ লোকটির সাথে কথা বলা শেষ করে জানালার ধারে বসলো। তারপর গালে হাত রেখে একটু আগে চরের কথা মনে করলো। এতে তার মন এতোটাই খারাপ হয়ে গেলো যে, যেখানে তার বাস থেকে নামার কথা তার থেকে অনেকটা দূরে গিয়ে নামলো।
,,
বাসায় ফিরতে তার বেশ দেড়ি হলো।
শুভ বাসায় ঢোকার পূর্বে গালটায় আবার হাত দিয়ে দেখলো। অনুভব করলো গাল টা ফুলে আছে। নিধি বা তার মা যদি কিছু বলে তখন কি বলবে?
এমন চিন্তা করতে করতে দরজায় নক দিয়েই বসলো।
নিধি দরজা খুলে দেখে তার ভাই গাল ধরে দাঁড়িয়ে। আর দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো মন খারাপ।
-ভাইয়া কি হয়েছো তোমার? গালে হাত দিয়ে রাখছো কেনো? (নিধি)
-আরে কিছু হয়নি। তুই যা খাবার রেডি কর (শুভ)
-উমমম বুঝতি পেরেছি, নিশ্চয়ই কোনো মেয়ের হাতে মাইর খেয়ে আসছো
-তুই যাবি?
-....(নিধি উচ্চস্বরে হাসছে)
-ঐ ঐ হাসি থামা, আমি বলি তুই শোন। মা যেন কিছু জানতে না পারে
-মা কে বলব না, কি হয়েছে বলো
-আমি সত্যি সত্যি একটা মেয়ের হাতে থাপ্পড় খেয়েছি
-আগেই বুঝেছি, তা মেয়েটা কে?
-ঐ যে একদিন রাতে বাসায় নিয়ে আসছিলাম সে
-তাই! তা তোমার মারলো কেনো?
-আমি প্রপোজ করেছিলাম
-তাই বলে মাইর দিলো! তুমি তার উপকার করেছো, আর সে তোমাকে..
-থাম তুই, এখানে একটা সমস্যা আছে
-কি সমস্যা?
-ও আমার থেকে দুই বছরের বড়, আবার এর চেয়ে বেশিও হতে পারে
-ওহহ আচ্ছা এই ব্যাপার কান্না করো না, বড় বোন হিসেবে মাইর দিয়েছে, তুমি ছোট ভাই হিসেবে মাইর টাকে শাশন মনে করে ভুলে যাও
-বেশি বুঝতেছিস কিন্তু
-এহহ নিজে মাইর খেয়ে এসে আমার উপর রাগ দেখাচ্ছো কেনো?
-আমার মেয়েটাকে খুব পছন্দ
-এর আগে একজনকে পছন্দ করে, ভুল পথে গিয়েছিলা কিছুদিন এর জন্য৷ এখন আবার?
-সঠিক পথটা এই মেয়েটা দেখিয়েছে, তাই আমি পছন্দ করে ফেলেছি। এখন কি করা যায় বল তো
-আগে আমাকে আপু বলো, তারপর বুদ্ধি দেবো
-তোরে আপু বলব কেনো?
-আমি তোমাকে বুদ্ধি দেবো, সেই কারণে আমি তোমার বড়। তাই আমাকে একবার আপু বলো, আমি বলতেছি তোমাকে কি করতে হবে
-আচ্ছা আপু বলেন আমাকে কি করতে হবে
-লেগে থাকো
-যদি তার অন্য কেউ থাকে
-তাহলে তুমি ব্যর্থ
-কিন্তু তাকে যে আমার লাগবেই
-আচ্ছা তুমি যে তাকে পছন্দ করো এটা বোঝাতে থাকো, বাকি টুকু তোমার ভাগ্য
-হুমম এখন যা খাবার রেডি কর
-তা করতেছি। তুমি একটা জিনিস ভুলে গেছো
-কি?
-আজ বাজার করার কথা
-আরেহ সত্যি তো, সরি সরি আমি এখনি নিয়ে আসছি
-ভাইয়া তুমু দিন দিন অবুঝ হয়ে যাচ্ছো
-আমি বাজার করেই রান্না করে রেখেছি
-তাহলে থ্যাংক ইউ(শুভ ওয়াশরুমের দিকে গেলো)
-গত পাঁচ ছয়টা মাস এলোমেলো থেকে মাথাটা খেয়ে ফেলেছো? (নিধি উচ্চস্বরে বলল)
,,
এত উচ্চস্বরে কথা শুনে শুভর মা এসে বলল..
-এই কি হয়েছে রে? (মা)
-কিছু না মা, ভাইয়া আসছে (নিধি)
-চিল্লাচ্ছিস কেনো?
-এই যে দেড়ি করে আসলো তাই
-দেড়ি হতেই পারে, হয়তো ওর কোনো কাজ পড়েছিলো
-তোমার ছেলে যে কি কাজে ব্যস্ত ছিলো সেটা আমি বুঝতেছি
-কি কাজে?
-সে তুমি বুঝবে না
-বল আমি বুঝবো
-মেম্বার বাড়ানোর ধান্দা
-বুঝলাম না
-আগেই তো বললাম বুঝবে না, শুধু শুধু সময় নষ্ট করলে আমার।
,,
পরদিন আবার সেই কোচিং সেন্টারে শুভর সাথে ইরার দেখা। পুরো কোচিং এর সময়টায় শুভ কিছু বলার সাহস পায়নি। যত বার ভেবেছে যে কথা বলবে, ততবারই গতদিনের কথা মনে পড়েছে। এদিকে ইরা শুভর গতিবিধির উপর নজর রাখছিলো। সে ও ভয় পাচ্ছিলো সবার সামনে যদি কিছু বলে বসে, মান সম্মান কিচ্ছু থাকবে না তার।
,,
কোচিং শেষে সেই বাস স্ট্যান্ডে..
দুজন দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে আছে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হওয়ায় সময়টা এমনিতে অন্ধকারাচ্ছন্ন, তারউপর আজ মেঘ করেছে।
,,
বৃষ্টি তখনও শুরু হয়নি,
শুভ ইরার একটু নিকটে গিয়ে বলল..
-মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে, ছাতা এনেছেন? (শুভ)
-....(ইরা একবার শুধু শুভর দিকে রাগি মুডে তাকালো, কোনো উত্তর করলো না)
-আমিও নিয়ে আসিনি, আজ যে কি হবে!
,,
ইরা কোনো কথাই বলল না। বাস যখন আসলো তখন ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। দুজন একসাথে বাসে উঠে বসলো, পূর্বের দিনগুলোর মতো একই সিটে। বাস কিছুটা দূর যেতেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো।
,,
'আপা জানালা লাগাই দিয়েন" বাসের হেল্পার উচ্চস্বরে কথাটা জানিয়ে দিলো। ইরা জানালা লাগাচ্ছিলো না।
-কি হলো? জানালা টা লাগান (শুভ)
-...(ইরা আবার সেই লুকে শুভর দিকে তাকালো)
-এভাবে তাকান কেনো? কথাটা তো আমি বলিনি, হেল্পার বলেছে
-আমি আটকাবো না, বৃষ্টির পানির ঝাপটা ভালো লাগছে
-ওহহহ আচ্ছা
,,
কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর....
-আমি আবারও বলছি, আই লাভ ইউ (শুভ)
-...(ইরা বাম হাত দিয়ে একটা চর বসিয়ে দিলো)
,,
ইরাকে অবাক করে দিয়ে শুভ আবারও তাকে এই কথাটা বলে বসে।
ইরা কিছু না বলে চুপ থাকে।
এদিকে বৃষ্টির সাথে মেঘের ডাক আর অনেক বাতাস থাকায়, বাস খুব ধীর গতিতে চলছে।
,,
বৃষ্টির পানি ভেতরে এসে ইরার জামা কাপড় ভিজিয়ে দিচ্ছিলো। শুভ তা খেয়াল করলো, আর নিজে থেকেই জানালা লাগিয়ে দিলো। সাথে সাথে ইরার প্রশ্ন..
-কে লাগাতে বলেছে? (ইরা)
-আপনি তো ভিজে যাচ্ছেন? (শুভ)
-আপনার কোনো সমস্যা? আমার তো সমস্যা হচ্ছে না
-আজ আবার আপনি!
-আমি আপনাকে চিনি না, তাই আপনি বলতেছি। জানলা খুলেন
-এতো রাগ দেখান কেনো? মাইর দিয়ে তো দুটো গাল ফুলিয়ে দিয়েছেন
-আরও মাইর দিবো, আপনি জানালা খোলেন
-না খুললে কি কি করবেন?
-আবার দুই গালে দুইটা বসিয়ে দিবো
-ওহহ আচ্ছা তাই, আপনার কিছু করতে হবে না আমিই করছি
,,
শুভ জানালার কাছে হাত নিয়ে জানালা খোলা তো দূরেই থাক আরও পর্দা টা লাগিয়ে দিলো। পর্দা লাগানো শেষে ইরার গলায় হাত রেখে তার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট টা রেখে একটা চুমু খেলো।
,,
শুভর এরকম কাণ্ড দেখে ইরা অবাক! সে কিছুই বলতে পারছে না। হয়তো মনে মনে বলছে কি হলো এটা?
,,
শুভ ঠোঁট সড়িয়ে নিয়ে বলল..
-এখন থেকে আপনি যতবার আমাকে মাইর দিবেন, আমি এমনটাই করবো (শুভ)
,,
ইরা কিছু বলছে না। ইরার চোখে পানি চলে আসছে। তার এটা ভেবে খারপ লাগছে,
তার একটা ভালোবাসা আছে। সে যদি জানতে পারে, তাহলে কি হবে!
ইরা এখন কি করবে ভেবে পাচ্ছে না৷
মাস সম্মান এর ভয়ে বাসের মধ্যে কিছু বলল না।
হঠাৎ হেল্পার এর আওয়াজ..
"এই বটতলা, বটতলা "
ইরার গন্তব্য চলে আসছে। ইরা কিছু বলার আগে শুভ সাইড দেয় ইরাকে যেতে। ইরা বাস থেকে নামলো। পিছু পিছু শুভও নামলো।
,,
বাইরে ঝুম বৃষ্টি, ইরা এদিকে সেদিক না থেমে সোজা রাস্তায় হাঁটছে। শুভও কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে ইরার পেছনো হাঁটছে।
,,
হাঁটতে হাঁটতে শুভ একদম মাঝের গলি পর্যন্ত গেলো। ইরা ভেবেছিলো একটু এসে চলে যাবে। কিন্তু না এখন সে গলি দিয়ে তার বাসার দিকেই এগোচ্ছে।
ইরা থামলো আর বলল..
-সমস্যা কি আপনার? (ইরা)
-আপনি রাগ করেছেন? (শুভ)
-আপনি আজকে আমার সাথে যা করেছেন, আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে এই হাত পা নিয়ে হসপিটালে থাকতে হতো
-আপনার জায়গায় অন্য কেউ হলে এটা করতাম না
-ফালতু! এই ফাজিল তুই আমার পেছনে আসতেছিস কেনো?
-জানি না
-যা বাসায় যা
-বাসায় তো যাচ্ছি
-এদিকে আমার বাসা, তোর বাসায় যা
-আগে আমার দুটো কথা মেনে নিতে হবে?
-কোন দুটো কথা? অন্যায় করে আবার বড় বড় কথা বলিস। বল কোন কথা
-সরি আর ভালোবাসা, এই দুটো জিনিস মেনে নেন, তারপর আমি যাবো..
।।
।।
ছলনা
Part : 7
Write : Sabbir Ahmed
____________________________
-সরি আর ভালোবাসা, এই দুটো জিনিস মেনে নেন, তারপর আমি যাবো (শুভ)
-তোর ভালোবাসার আমি...(ইরা)
-ভাষা খারাপ করেন কেনো?
-এখনো করিনি, এরপর বাড়াবাড়ি করলে করবো
-আমার কথা মেনে নেন, আমি চলে যাবো
-কখনো না
-ওকে দেখেন আমি কি করি,,
,,
শুভ ইরাকে রেখেই ইরার বাসার দিকে হাঁটতে শুরু করে। শুভ দ্রুতই বাসার পেছনের দরজা টায় পৌঁছে যায়। ইরা পেছন থেকে শুভকে ডেকে থামতে বলে। শুভ ইরার কোনো কথাতেই কর্ণপাত করলো না।
,,
শুভ দরজায় নক দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাশে ইরাও এসে দাঁড়ায়।
-এই অনেক বেশি বেশি হয়েছে তুই যা (ইরা)
-বাব্বাহহ এ তো দেখছি অনেক রাগী মেয়ে, দাঁড়ান আগে আপনার ব্যবস্থা করি
,,
শুভ ইরার ব্যাগ টা ফেলে দিয়ে ইরার দু-হাত চেপে ধরলো। শুভর উদ্দেশ্য ইরাকে ভয় দেখানো। শুভ ইরাকে দেয়ালে চেঁপে ধরে বলল..
-সিনিয়র আছেন ভালো কথা, ব্যবহার এমন কেনো? আমি আপনাকে ভালোবাসি, এটার জন্য এমন করতে হবে? (শুভ)
-আমাকে ছাড় বলছি (ইরা)
-ব্যবহার ঠিক করলে ছাড়বো
-তুই আমার সাথে যা শুরু করছিস, তার জন্য এরকম ব্যবহারই তুই পাবি
-এমন কেনো করেন? আচ্ছা আপনার বি এফ আছে??
-না (ইরা মিথ্যে বলল)
-তাহলে আমি ভালোবাসার কথা বললে সমস্যা কোথায়??
-তুই আমার চেয়ে ছোট
-হাইট দেখেন আপনার থেকে বেশ বড়, আবার আপনিই তো বলেন৷ আমাকে দেখতে সিনিয়র সিনিয়র লাগে
-....(ইরা চুপ করে আছে, আর শুভর হাতের মুঠোয় থেকে ছোটার চেষ্টা করছে)
-ছুঁটতে পারবেন না, শক্ত করেই ধরেছি। সারাজীবন এভাবেই ধরে রাখবো
-আমাকে ছেঁড়ে দিয়ে কথা বলেন,
-না না, আপনি আমায় গালে আবার চর বসাতে পারেন। শোনেন না, বিয়ে করবো আপনাকে, আমার ভালোবাসাটা গ্রহণ করুন
-না,
-কেনো? আমি দেখতে খারাপ
-না, আপনার চরিত্র খারাপ
-কি করেছি?
-এর আগে তো খারাপ ছিলেন, তখন কয়জনের সাথে কি করেছেন কে জানে? আপনি মাদক নেন তাই আপনার সাথে সংসার হবে না
-আমি এখন কেমন? আমার বর্তমান অবস্থা তো আপনি জানেন
-আমার এতো কিছু জানতে হবে না, আপনি আমার পিছু লেগেছেন কেনো? দেশে মেয়ের অভাব পড়েছে??
-না দেশে যথেষ্ট পরিমাণ মেয়ে আছে। তবে আমি আপনাকে চাই। এর পেছনে কারণ আছে অনেকগুলো। আমি এতো বর্ণনা করতে চাই না৷ আপনাকে খুব ভালো লাগে, এটাই শুধু জেনে রাখুন
-আমি একবার বলেই দিয়েছি, আমি আপনাকে চাই না৷ ওকে???
-তাহলে তো এখন আমার ভুল করতেই হয়
-এখন যদি আমার সাথে আপনি উল্টা পাল্টা কিছু করেন তবুও না (ইরা কান্না করে বলল)
,,
শুভ হতাশ হয়ে ইরাকে ছেড়ে দিলো।
-আচ্ছা এটা নিয়ে পরে কথা হবে,আমি আসি
শুভ চলে যাচ্ছিলো সেই সময় দাদীমা দরজা খুলল।
,,
দাদীমা দেখতে পেলো, ইরা বৃষ্টিতে ভিজে একদম চুপসে গেছে। দাদীমা শুভকে দেখতে পেয়ে পেছন ডাকলো।
শুভ ফিরে এসে বলল..
-কেমন আছেন? (শুভ)
-ভালো, তোমাকে চেনা চেনা লাগছে (দাদীমা)
-আমি তো আসছিলাম সেদিন
-ওহ হ্যাঁ মনে করতে পেরেছি, তা এখন এই অবস্থায় এখানে
-ইরা একা আসতে ভয় পাচ্ছিলো তাই এগিয়ে দিয়ে গেলাম
-ওহহহ
-আচ্ছা আমি আসি
-না দাঁড়াও, বৃষ্টি তো অনেক। মনে হয়না আজ বৃষ্টি থামবে। তুমি আজ আমাদের এখানে থাকো,
-না দাদীমা আমায় বাসায় যেতে হবে
-কি রে ইরা? বন্ধুকে এই ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে থাকতে বলবি না? এমনিতে ভিজে আসছে আরও ভিজলে ঠান্ডা লেগে যাবে। ঝড় বৃষ্টির রাত রাস্তায় কোন বিপদ হয় কে জানে?
-তুমি থেকে যাও (ইরা কথাটা বলে বাসার ভেতর গেলো)
,,
ইরার সম্মতি তে শুভ একটু অবকা ই হলো। দাদীমা শুভর পরিধান এর জন্য একটা লুঙ্গি দিলেন। শুভ গোসল শেষে লুঙ্গি পড়ে নিলো। নিজের ভেজা কাপড় গুলো বাসার বারান্দায় টাঙানো দড়িতে মেলে দিলো।
,,
রাতের খাওয়াটা সবাই একসাথে খেলো। খাওয়ার সময় ঠিক হয়ে গেলো শুভ ইরার রুমে থাকবে, আর ইরা তার দাদীমার কাছে। ইরা এই কথাতে সম্মতি দিলো না৷
,,
-আমার রুমে আমিই থাকবো(ইরা)
-এই ছেমড়ি, আমার ঘর তো অতোটা ভালো না, ছেলেটা তোর রুমেই থাক, তুই আমার রুমে থাকিস (দাদীমা বিড়বিড় করে ইরাকে বলল)
-তুমি ওর থাকা নিয়ে চিন্তা করো না, ওর থাকার ব্যবস্থা আমি করবো। তোমার খাওয়া হয়ে থাকলে যাও ঔষধ খেয়ে শুয়ে পড়ো, অনেক রাত হয়েছে
-আর তো রুম নেই কই থাকতে দিবি
-সে চিন্তা তোমার না, রাতে বৃষ্টি যখনই থামুক চলে যাবে ও
-আরে কি বলিস! এতো রাতে একা
-ওর অভ্যাস আছে
-কি?
-কিছু না, যাও তো তুমি
,,
দাদীমা খাওয়া শেষ করে চলে গেলো।
শুভ খাচ্ছে আর মিটিমিটি হাসছে।
ইরা হাসি দেখে বলল..
-আপনি আসলেই একটা নির্লজ্জ(ইরা)
-আমি আবার কি করলাম? (শুভ)
-আমি বলার সাথে সাথে বাসার মধ্যে আসতে হবে কেনো?
-আপনিই বললেন তাই
-আজকে যদি চামেলী থাকতো, তাহলে আপনার অবস্থা খারাপ করে দিতাম
-কি করতেন?
-ওর সাথে থাকতে দিতাম
-এগুলো কোনো কথা?
-হ্যাঁ এগুলোই তো কথা, ওরে ভালোবেসে ওরে বিয়ে করতেন
-এগুলো বলতে হয় না
-আপনার যা চরিত্র এগুলো আপনার সাথেই মানায়
-আপনি বার বার আপনার চরিত্র নিয়ে টানাটানি করছেন কেনো?
-তুই বাসের মধ্যে আমার সাথে ঐ কাজ টা করলি কেনো? (ইরা কথাটা এতো উচ্চস্বরে বলল মনে হলো তার গলার রগ টা ফেটেই যাবে। আর হাতে থাকে স্টিলের থালা টা মেঝেতে ফেলে দেওয়ায় শব্দটা বেশ জোড়ালো হয়েছে)
,,
শুভ ভয়ে খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ইরা চোখ দেখে মনে হচ্ছে, চোখে রক্ত উঠে গেছে।
-আমাকে উপকার করেছিস বলে এসব করতেছিস তাই না? আমাকে খাটে শোয়ানোর খুব শখ? (ইরা)
-আরেহহ নাহহ ছিঃ ছিঃ এসব কি আজে বাজে বকতেছেন? (শুভ)
-আমি বুঝি। তুই এক কাজ কর, তোর থেকে কত যেন টাকা নিয়েছি? ষাট হাজার টাকা, এই টাকার জন্য তোর সাথে কয়দিন থাকতে হবে
-আপনি আসলেই একটা ফালতু, আমি আজেবাজে কোনো ধান্দা নিয়ে আসিনি। আপনার কথার কারণে আমি আজ এতোটা পরিবর্তন। আপনার কথা প্রতিদিন মায়ের কাছে বলি। যা ইচ্ছে ভাবেন। আসলে আমার কপাল খারাপ বোঝাতে পারি না কিছু....
,,
শুভ প্লেটে হাত ধুয়ে এসে বাসার মাঝের বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। তারপর কি যেন ভেবে, ভেজা প্যান্ট আর শার্ট পড়ে নিলো।
,,
খাবার রুমে এসে ইরাকে বলল..
-থাকেন, যাচ্ছি আমি(শুভ)
-কাল সকালে যাইয়েন (ইরা)
-মানুষের যা কথা, আমার এখনি যাওয়াই ভালো
-এখন ভিজলে ঠান্ডা লাগবে, আপনি চেঞ্জ করেন
-কোনো দরকার নেই, ঠান্ডা লেগে মরে গেলেও,
আপনার তো কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না
-আমি যা বলতেছি করেন, আর কথা আছে আপনার সাথে
-না আমি বাসায় যাবো
-ওকে আপনার ইচ্ছে
-না, যাবো না ওয়েট আসতেছি
,,
কিছুক্ষণ পর ইরা শুভকে নিয়ে তার রুমে বসতে দিলো।
-খারাপ মানুষকে নিজের রুমে নিয়ে আসলেন, ভয় করছে না?? (শুভ)
-ভয় তো করছেই, কিন্তু আপনাকে যা বলব এটা বলা জরুরী (ইরা)
-বাদ দেন তো আপনার কথা, আপনার রুমটা আগে দেখি।
,,
শুভ দেয়ালে অনেক গুলো ছবি টাঙানো দেখলো।
-ওরে বাবা এতো সুন্দর সুন্দর প্রকৃতির ছবি পাখির ছবি, এগুলো কিনে এনেছেন? নাকি আঁকিয়েছেন? (শুভ)
-আমার নিজ হাতে আঁকানো (ইরা)
-খুব সুন্দর তো। আপনার মধ্যে অনেক প্রেম ভালোবাসা আছে
-মানে! আপনি বুঝলেন কিভাবে?
-এই যে একটা শিল্প কে ভালোবেসে এতো সুন্দর করে এঁকেছেন। কোনো জিনিস এর প্রতি তীব্র আগ্রহ, প্রেম না থাকলে আঁকতে পাড়তেন না
-হুমমম তা ঠিক বলেছেন
-আপনার প্রতি আমার কিন্তু অনেক আগ্রহ, অনেক অপমান করলেন তারপরও আপনার সাথে আছি আমি
-আমি রেখেছি বলে আছে
-না, আমি ইচ্ছে করেছি, তাই আপনার সাথে আছি
-বললেই হলো নাকি?
,,
ইরার ফোনটা বেজে উঠলো। সাদাফ কল করেছে, ফোনের স্ক্রীনে নামটা দেখে ইরা লাইনটা কেটে দিয়ে ফোন বন্ধ করে রাখলো। শুভ ছবি দেখায় ব্যস্ত ছিলো, তাই ফোন বন্ধ করার ব্যাপার টা জানতে পারলো না৷
,,
ছবি দেখা শেষে শুভ বলল..
-বিক্রি করবেন এগুলো? (শুভ)
-না, তবে আমি আপনাকে নতুন ভাবে এঁকে দিতে পারি (ইরা)
-আমার যে এগুলোই লাগবে
-এগুলো আমার পছন্দের, আমি এগুলো বিক্রি করতে পারবো না
-আপনি আমার পছন্দের, আমি থাকতে আপনি অন্য কারও হতে পারবেন না
-কার মধ্যে কি টেনে নিয়ে আসেন?
-প্লট টা ভিন্ন, মানে টা একই
।।
।।
ছলনা
Part : 8
Write : Sabbir Ahmed
_____________________________
-কার মধ্যে কি টেনে নিয়ে আসেন? (ইরা)
-প্লট টা ভিন্ন, মানে টা একই (শুভ)
-আপনার পেঁচানো কথা বন্ধ করেন। আপনি আমার সাথে যে বেয়াদবি টা করছেন, কই আপনি তো আমাকে সরিও বললেন না
-কি করেছি আমি?
-বাসের মধ্যে যেটা করলেন
-রাগ দেখাচ্ছিলেন তাই তো অমন করলাম রাগ ভাঙানোর জন্য
-নির্লজ্জ টা বলে কি! এই এই আমি কি আপনার বউ যে ওভাবে রাগ ভাঙাবেন
-বউ না, হবেন তো একসময়
-কোনো কালেই না
-আপনার চোখ দেখেই বুঝতে পারি, আপনি যে ঝারি গুলো দেন এসব এমনি এমনি
-এমনি এমনি? দাঁড়ান লাঠি নিয়ে আসি
-যান নিয়ে আসেন
-বাইরে বৃষ্টি, লাঠি তো উঠানের মধ্যে
-ভিজে ভিজে নিয়ে আসেন
-বৃষ্টি থামুক
,,
"আমি সত্যি সত্যি আপনার মায়ায় পড়েছি গো" কথাটা বলতে বলতে শুভ ইরার একদম কাছাকাছি চলে গেলো।
ইরা উত্তরে বলল..
-তো! আমি কি করবো? (ইরা)
-একটু উদ্ধার করেন (শুভ)
-আপনি আমার ছোট
-এই দেখেন হাইটে আপনার থেকে বড় আছি
-...(ইরা মিষ্টি হাসলো)
-রাজি হয়ে যান না তাড়াতাড়ি
-কি হ্যাঁ? আপনি যা চাইছেন হবে না
-আচ্ছা বাসের ঐ ব্যাপার টার জন্য সরি, কান ধরেছি
-বাচ্চাদের মতো করলে হবে না,
-রাজি হয়ে যান না আমার ভালেবাসায়
-না
-কেনো?
-কারণ আমি...
-থামলেন কেনো? আপনি কি?
-....(ইরা ভাবলো তার বি এফ এর কথা সে লুকিয়েই রাখবে। শুভ জানতে পেরে যদি ভেজাল লাগায়)
-কি ভাবছেন?
-কিছু না
-দেখেন কান ধরেই সত্য কথা বলছি, আমি যে কাজ করি না কেনো সবসময় আপনার কথা আমার মাথায় ঘুরে। আপনি যে আমাকে বকা দেন, ঝাড়ি দেন সবকিছুই আমার ভালো লাগে। আপনার কথাগুলোতে মনোনিবেশ এতটাই করি যে, আমি হারিয়ে যায় ভাবনার রাজ্যে, ফিরে আসার পথটাও খুঁজে পাই না৷
-হুমমম বুঝলাম
-আপনি চাইলে আমি মা কে দিয়ে আপনার দাদীমার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে পারি
-না না তার দরকার নেই
-সময় নিবেন?
-আপনি একটু থামুন তো, আপনার কথায় আমার মাথা ব্যাথা করছে
,,
ইরা বিছানায় বসলো, শুভ কান থেকে হাত সড়িয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ইরা যে সাদাফ এর ভালোবাসার কথা চিন্তা করছে এটা দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো।
শুভকে সে ফিরিয়ে দিতে পারছে না, বেচারার এতো আগ্রহ, এতো আকুতি মিনতি সে কখনো কারও মাঝে দেখেনি।
,,
সাদফ কে যে ইরা ভালোবাসে, সাদাফ এর মাঝেও কখনো এতটা ভালোবাসা প্রকাশ পায়নি। সাদাফ নিয়ম অনুযায়ী দিনে দুবার কল দিবে, আর মাঝে মাঝে দেখা করবে। এ ছাড়া সাদাফ এর হদিস পাওয়াই যায় না।
,,
সাদাফ বড়লোক ঘরের ছেলে, ইরা প্রথমে সেটা জানতো না৷ ইরা সাদাফ কে পছন্দ করতো প্রথম থেকেই, আর সাদাফ ইরাকে এ ব্যাপারে একটু নক দিতেই ইরা রাজি হয়ে যায়।
,,
ইরা জানতো যে সাদাফ এর আগে অনেকগুলো রিলেশন করেছিলো। নানান কারণে সেগুলো ভেঙে যায়।
এসব জানা সত্ত্বেও ইরা তার মায়ায় জড়িয়ে যায় নিজে থেকে।
,,
আর এখন! একটা ছেলের এই অবস্থা থেকে ইরা দোটানায় পরে গেছে।
ইরা ভাবছে "আমি যদি একদম ঝেড়ে মানা করে দেই তাহলে, এ আবার উল্টা পাল্টা শুরু করবে। আবার এর কথায় রাজি হলে সাদফ এর সাথে বেইমানি করা হবে। কি করবো আমি??
,,
-আরে কি ভাবছেন এতো? (শুভ)
-এহহ নাহ কিছু ভাবছি না, আসলে আমার মাথাটা খুব ব্যাথা করছে (ইরা)
-আপনি ভাবছেন
,,
শুভ ইরার সামনা সামনি দুই হাঁটুর উপর ভর করে ফ্লোরে বসে পড়লো। তারপর ইরার ডান হাতটা নিজের দুই হাতের মধ্যে নিয়ে আলতো ঘরে ঘসতে লাগলো। ইরা শুভর কাণ্ড দেখছিলো আর বুঝতে পারছিলো, এখন সে অনেক সিরিয়াস আর কিছু একটা বলবে।
,,
-আপনি আমায় নিয়ে অনেক টেনশনে আছেন তাই না? আমি কিন্তু এতোটা খারাপ না। আমি ভালে স্টুডেন্ট, আমার রেজাল্ট ও ভালো। আমি কিছুদিনের জন্য এমন করেছি না বুঝে। আপনি তো আমাকে বলে কয়ে আবার ভুল পথ থেকে ফিরিয়ে এনেছেন। সত্যি কথা বলতে আমি নিজ ইচ্ছেয় আপনার জন্য ফিরে এসেছি। আমি আপনাকে নিয়ে সুন্দর একটা সংসার সাজাবো, আমি তখন একটুও এলোমেলো কাজ করবো না৷ আমার ভালোবাসায় রাজি হয়ে যান না। আমি আপনাকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারি না (শুভ কথা গুলো বলতে বলতে কান্না করে ফেলল)
-কান্না থামান, কান্না থামান, আপনি বাচ্চাদের মতো বায়না করা শুরু করছেন কেনো? আপনি জানেন আপনি কি বলছেন? (ইরা)
-আমি সব জেনে বুঝেই তো বলছি
-হুমমমম, আমার কিছু কথা আছে
-বলেন
-আমি যদি রাজি না হই?
-চলে যাবো
-আবার আগের মতো শুরু করবেন?
-না না, আগের মতো শুরু করলে পরিবারের মানুষ কষ্ট পাবে। তাদের কষ্ট দেওয়া যাবে না
-তাহলে কি করবেন?
-কিছুদিন পর আবার আপনার পিছু লাগবো
-ঐ দেখ কি বলে
-সত্যি যেটা তাই বলেছি
-আপনার মাথা আসলেই গেছে
-আপনার জন্যই
-হয়েছে হয়েছে। আমি রাজি
-কি!!!!
-আমি রাজি
-সত্যি!!
-হুমম
-তাহলে ভালোবাসি বলেন
-এতোকিছু বলতে পারবো না, আমি রাজি এটাই
-একটা চিৎকার দেই
-এই নাহহ দাদীমা আছে। আর হ্যাঁ আমাকে কিন্তু স্প.....
,,
ইরা "স্পর্শ" কথাটা বলার আগেই শুভ খুশিয়ে ইরাকে জড়িয়ে ধরে।
ইরা আর কিছু বলতে পারে না। ইরাকে বুকের মধ্যে নিয়েই শুভ বলল..
-আমি জানতাম তো, আপনি মনে মনে আমায় ভালোবাসেন, শুধু শুধু আমাকে এ কয়েকটা দিন কান্না করালেন (শুভ)
-আমার কথা আছে আমাকে ছাড়ুন (ইরা)
-একটু ধরে থাকি,
-আমি ছাড়তে বলেছি
,,
শুভ ইরাকে ছাড়লো। ইরা একটু দূরে বসে বলল...
-আমি আপনার কথায় রাজি কিন্তু কিছু শর্ত আছে (ইরা)
-আবার কি শর্ত?(শুভ)
-আমাকে স্পর্শ করা যাবে না, তুমি করে বলা যাবে না, ফোনে কথা বলতে পারবো না৷ যখন দেখা হবে তখন শুধু কথা হবে, আলাদা করে দেখা করতে পারবো না।
-তাহলে আমিই কালকেই মা কে এখানে আসতে বলব
-এই না না, দেখেন বিয়েটা পরে
-এতো শর্ত আমি মানতে পারবো না, আমি আপনার জন্য কি ভেবে রেখেছি, আর আপনি কি ভেবে বসে আছেন। আমি এতো শর্ত মানতে পারবো না
-তাহলে আপনার ভালোবাসা ধুয়ে আপনি পানি খান, আমি আপনার সাথে নেই
-হুহহহ ঠিক আছে রাজি আমি
-এই তো গুড বয়। বাসায় কল করেছিলেন?
-হুমমম জানিয়ে দিয়েছি যে আমি আপনাদের বাসায়
-ওহহহ আচ্ছা
-তো ঘুমাবেন না?
-না
-কেনো?
-কোথায় ঘুমাবো? আপনি ঘুমান দরজা লাগিয়ে আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে
-ওকে
-ওকে? আমাকে বাইরে পাঠিয়ে দিবেন?
-আপনিই তো বললেন
-সত্যি সত্যি তো ভালোবাসেন না বুঝি। তবে একদিন আসবে সময় আমাকে কাছে পাওয়ার জন্য
উতালা হয়ে যাবেন। কিন্তু আমাকে পাবেন না
- এরকম কখনো হবে না (ইরা মনে মনে বলল)
-তো বারান্দায় যাবো?
-আপনি না গেলে ভেতরে থাকেন আমিই যাই
-না ঠিক আছে, আপনি ঘুমান আমি বাইরে দাঁড়িয়ে
,,
শুভ বাইরে আসতেই ইরা দরজা লাগিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো। শুভ সেখানে থাকলো সে কি মনে করে ভিজে ভিজে তার বাসায় রওনা হলো।
হয়তো বুঝতে পেরেছে যে ইরা জোর পূর্বক রাজি হয়েছে।
,,
তা না হলে এতোগুলা শর্ত কিভাবে দেয়। শুভ বাসায় আসে। নিধি জিজ্ঞেস করে তার তো ইরার বাসায় থাকার কথা এতো রাতে চলে আসলো কেনো? নিধির কথায় শুভ এমনি একটা বলে কয়ে বুঝ দেয়।
,,
পরদিন কোচিং এ দুজনের আবার দেখা। শুভর জন্য একটা ব্যাপার ভালো হয়েছে যে, যাই কিছু হোক তাদের দেখা হবেই। আর দেখা হলে ইরা ভাব মেরে দাঁড়িয়ে থাকে। এমন ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে মনে হয় শুভকে সে চিনেই না। প্রতিবারের মতো শুভই আগে কথা বলা শুরু করে..
-ক্লাস কেমন নিচ্ছেন? (শুভ)
-জ্বি ভালোই (ইরা)
-আপনি এমন কেনো?
-কেমন??
-এই যে আমার...
,,
ইরার কল আসলো, ইরা শুভকে থামিয়ে বলল "একটু ওয়েট কথা বলে নেই "
ইরা কল রিসিভ করে হাঁটতে হাঁটতে এক পাশে চলে গেলো। কল করেছে সাদাফ।
-তুমি ট্যাুর এ যাচ্ছো? (ইরা)
-হ্যাঁ,(সাদাফ)
-কই আমাকে তো কিছু বললে না
-বলার জন্যই তো কল করলাম
-আমাকে আগে থেকে বলতে আমি যেতাম
-তুমি যাবে না এতদূরে
-কোথায়?
-মালদ্বীপ
-ওহহহ কবে যাচ্ছো?
-কাল সন্ধ্যায়
-কে কে?
-আমি আর আমার পাঁচ বন্ধু
-মেয়ে আছে?
-হ্যাঁ
-তুমি ওদের সাথে যাবে না
-কেনো যাবো না? ওরা ওদের টাকা দিয়ে যাচ্ছে, আমি আমার টাকায়। তুমি মানা করছো কেনো? আর তুমি এগুলো বুঝবা না। ফিরে এসে কথা হবে বায়
-আরে শোনো...
,,
ইরা কিছু বলার আগেই সাদফ লাইনটা কেটে দিলো। ইরা শুভর কাছে এসে দাঁড়ালো।
-আপনি যেন কি বলতেছিলেন (ইরা)
-আপনার মন খারাপ কেনো? (শুভ)
-আরেহহ কি বলেন? কই মন খারাপ
-কল আসার আগে ভালোই দেখাচ্ছিল, এখন আপনাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে
-আরে না, বাদ দেন। কি যেন বলতেছিলেন
-ভালোবাসায় এতো শর্ত, এতো কিছু লুকানো। আপনার রাজি না হওয়ায় ভালো ছিলো, শুধু শুধু মিথ্যে আশা দেখালেন রাজি হয়ে....
।।
।।
।।
ছলনা
Part : 9
Write : Sabbir Ahmed
_____________________________
-ভালোবাসায় এতো শর্ত, এতো কিছু লুকানো। আপনার রাজি না হওয়াই ভালো ছিলো। শুধু শুধু মিথ্যে আশা দেখালেন রাজি হয়ে (শুভ মাথা নিচু করে বলল)
-আরে ভাই কি পেয়েছিন কি হ্যাঁ? কান টা ঝালাফালা করে ফেললেন ভালোবাসি ভালোবাসি বলে। কি মনে করেন হ্যাঁ? (ইরা)
-আপনি উত্তেজিত হইয়েন না এখানে সবাই কি বলবে!
-কান খুলে শুনে রাখেন, আপনি আমার উপকার করেছেন এই জন্য আপনাকে সহ্য করেছি। আপনার টাকা আমি ফেরত দিয়ে দিবো
-আমি তো সেজন্য..
-চুপ, চুপ করেন। আমার কথা শেষ করতে দেন। আমি আপনাকে মিথ্যা বলেছিলাম গত রাতে। আমার বলাটা ঠিক হয়নি। সত্যটা এখনি বলে দিচ্ছি। আমার একজন ভালোবাসার মানুষ আছে। উনি এখন ট্যুরে যেতে ব্যস্ত তার মেয়ে বন্ধুদের সাথে। তার কথা শুনে আমার মেজাজ খারাপ হয়েছে।
এখন আমার পার্সোনাল লাইফ নিয়ে কোনো প্রশ্ন আপনি করবেন না, আর আমার পিছুও ঘুরঘুর করবেন না
,,
কথাগুলো বলে ইরা অন্য একটা ক্লাসে চলে গেলো।
,,
কোচিং টাইম শেষে বাসস্ট্যান্ডে দুজন দাঁড়ানো। শুভ কিছু বলার জন্য ইরার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ইরা সেটা বুঝতে পেরে অন্যমনস্ক হয়ে আছে।
,,
-কিছু মনে না করলে আমি একটা কথা বলব (শুভ)
-...(ইরা কিছু না বলে, শুধু বড় বড় করে তাকালো)
-বলব?
-জ্বি বলেন
-আমার ভালোবাসা লাগবে না, বন্ধু হই?
-আমার বি এফ এটা পছন্দ করে না
-তার তো ঠিকই বান্ধবী আছে
-তো!
-আমি বলতে চাইছিলাম..
-থামুন!
-দেখেন আমি শুধু বন্ধু হয়েই থাকবো, আমি এলোমেলো কিছু বলব না৷ আপনি যেটাতে মানা করবেন অমন কাজ আমি করবো না
-আচ্ছা দেখি। আর আপনি আমার সাথে যাবেন না, নেক্সট বাসে যাবেন। ওকে?
-আচ্ছা
,,
সেদিন শুভ পরবর্তী বাসেই বাসায় ফিরলো। এদিকে ইরার বয়ফ্রেন্ড পরদিন রওনা হয় মালদ্বীপ এর উদ্দেশ্য। এফবি স্টোরিতে বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে ছবি। ইরা ঘরে বসেই সাদাফ এর উপর রাগে ফুঁসতে থাকে। আগামী এক সপ্তাহর জন্য ইরা কোচিং থেকে ছুটি নিয়ে নেয়। এই এক সপ্তাহ পর সাদাফ এর সাথে দেখা করবে, তারপর সে অন্যান্য কাজে মন দিবে।
,,
এই এক সপ্তাহ শুভ নিয়মিত কোচিং এ আসলো। শুভ আগেই জানতে পেরেছিলো ইরার ছুটি নেওয়ার কথা।
ইরা কি হয়েছে সেটা জানতে ইচ্ছে করছিলো শুভর, কিন্তু সাহস পাচ্ছিলো না তার বাসায় যাওয়ার।
,,
ইরার ছুটির সপ্তাহের শেষের দিন।
সেদিন সকাল বেলা শুভ তখনও ঘুম থেকে উঠেনি, ইরা কল করলো শুভকে। ঘুম ঘুম অবস্থায় শুভ ফোন রিসিভ করে সালাম দিলো। ইরা উত্তর করে বলল..
-চিনতে পেরেছেন?? (ইরা)
-না তো, কে আপনি? (শুভ)
-ইরা
-ওহহ আ আপনি কেমন আছেন?
-আলহামদুলিল্লাহ। শোনেন
-জ্বি বলেন
-আপনি আজ কোচিং ছুটি নিয়ে নিবেন
-কেনো?
-বিকেলে আমার সাথে এক জায়গায় যেতে হবে
-আচ্ছা ঠিক আছে
-বিকেল চারটায় বটতলায় এসে হাজির হইয়েন
-হুমমম,
,,
ইরা কল দিলো।
-কি মানুষ রে! নিজের কথা গুলো বলেই কল কেটে দিলো। আর আজ যাবেই বা কোথায়? কিছুই তো বুঝতেছি না৷ সকাল সকাল ঘুম টা ভেঙে মনটা ভালো হয়ে গেলো। আহা! অনেক দিন পর হাসিমুখে ঘুম থেকে উঠলাম...(শুভ বিড় বিড় করে কথা গুলো বলে বিছানা থেকে উঠলো)
,,
সারাদিন অপেক্ষা শেষে শুভ বিকেল বেলা সেই বটতলায় ইরার দেওয়া সময়ের আগে গিয়ে উপস্থিত হলো।
ইরাও বেশি সময় দেড়ি করলো না চারটার পর পরই চলে আসলো।
,,
ইরা শুভর সামনে আসতেই..
-কেমন আছেন?? (শুভ)
-আচ্ছা একটা সি এন জি রিজার্ভ করেন (শুভর কথার উত্তর না দিয়েই কথাটা বলল)
-কতদূর যাবেন? আর কি জন্য যাবেন?
-সাদাফ এর সাথে দেখা করবো
-ওহহহ (শুভর একটু মন খারাপ হলো)
-দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? যান একটা সি এন জির ব্যবস্থা করুন
-আচ্ছা করছি, জায়গায় নাম?
,,
ইরা একটা জায়গার নাম বলল। তারপর একটা সি এন জি রিজার্ভ করে সেখানে পৌঁছে যায় দুজন।
তারা এসেছে একটা পার্কের সামনে।
সি এন জি ওয়ালা কে ভাড়া দেওয়া শেষে...
-এটা পার্ক তো তাই না? (শুভ)
-হ্যাঁ (ইরা)
-এখানে আসছেন উনি?
-হুমম ভেতরে অপেক্ষা করছেন
-আপনি উনার কাছে আসছেন কেনো? উনিই তো আপনার কাছে গেলে পারতো
-উনি যাবেন না
-কেনো?
-গেলেই বুঝতে পারবেন। কথা না বাড়িয়ে আসুন তো
-হুমমম চলুন চলুন
,,
শুভ ইরার পিছু পিছু পার্কের মধ্যে ঢুকলো। মেইন রাস্তার সাথে ছোট পার্কটায় আড্ডার বেশ সমাগম। এখানে কপোত-কপোতীর কম দেখা মিললেও বন্ধু আর বয়স্ক লোকের সমাগম বেশ দেখা যাচ্ছে।
,,
শুভ এদিক ওদিক তাকিয়ে সব দেখছিলো। এই শহরে থাকলেও এইখানে সে আসেনি কখনো।
হঠাৎ ইরা দাঁড়িয়ে গেলো ইরার দেখাদেখি শুভও দাঁড়িয়ে গেলো। ইরার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে এক হ্যান্ডসাম ছেলে। চোখে তার সানগ্লাস, শরীরের জামাকাপড় দেখে বোঝা যাচ্ছিলো দামী দামী পোশাক পরিধিত। শুভ আন্দাজ করলো এই সেই লোক।
,,
শুভকে চমকে দিয়ে ইরা ছেলেটার দুই গালে চারটা থাপ্পড় মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। সাদাফ একটু শর্ট ছিলো তাই ইরার চরগুলো দিতে অসুবিধে হয়নি।
চারটা চর খেয়ে বেচারা সাদাফ মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইলো। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর সাদাফ স্থান ত্যাগ করলো। শুভর ইরাকে কিছুই বলতে পারছে না, ভয়ে সে ও রোবট এর মতো দাঁড়িয়ে রইলো।
,,
সাদাফ চলে যাওয়ার পরে ইরা একটা বেঞ্চে বসলো। শুভ ইরার পিছু পিছু বেঞ্চ পর্যন্ত গেলো, কিন্তু বসার সাহস পেলো না। ইরা হাত মুঠো করে বেঞ্চের উপর কিল ঘুসি দিচ্ছে, আর বিড়বিড় করে বলছে..
-শালা সুন্দরী মেয়ে দেখলেই জিভে পানি চলে আসে। আমারে ও ভালোবাসেনি, আমারে ব্যবহার করার ধান্দায় ছিলো। আমি আগেই বুঝতে পারছিলাম (ইরা)
-বিড়বিড় করে কি সব বলেন? (শুভ)
-এই চুপ, চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকুন (অনেক রেগে)
-সরি সরি জ্বি জ্বি আমি দাঁড়িয়ে আছি
,,
ইরা রাগ দেখিয়ে তার ব্যাগ এর চেন খুললো। ব্যাগ থেকে টাকা বের করে শুভর হাতে দিয়ে বলল..
-দুই প্লেট ফুচকা নিয়ে আসবেন,(ইরা)
-আমার কাছে টাকা আছে (শুভ)
-আমার কাছে কি টাকা নেই?
-না আছে,
-আমার টাকা দিয়েই নিয়ে আসুন। আর বেশি কথা বলবেন না। যা বলি এক কথায় মেনে চলার চেষ্টা করুন
-জ্বি আচ্ছা
,,
শুভ দুই প্লেট ফুচকা নিয়ে এসে হাজির হলো কিছুক্ষন পর। ইরা একটা হাতে নিয়ে খেতে শুরু করলো।
ইরার দেখাদেখি শুভও খাওয়া শুরু করলো। ইরা আবার টাকা দিয়ে বলল
-আইসক্রিম নিয়ে আসুন, আমার জন্য একটা। আপনি খেলে আপনার জন্য নিয়ে
আসেন
-আচ্ছা ঠিক আছে
,,
শুভ আইসক্রিম এনে দিলো। ইরা তার ভাগের টা আর শুভর ভাগের টা একসাথে খেলো। খাওয়া শেষে..
-ছেলে মানুষ ছ্যাঁকা খেলে মাদক নেওয়া শুরু করে তাই না? (ইরা)
-হ্যাঁ নেয় তবে সবাই না (শুভ)
-আপনি তো এগুলো তে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, আমার জন্য ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন?
-আপনার হয়েছে টা কি?
-ব্রেকআপ হয়েছে৷ আমি তাকে ভুলে থাকার জন্য নেশা করবো (ইরা উদাস হয়ে বলল)
,,
ইরার কথা শুনে শুভ মুচকি মুচকি হাঁসছে।
-আমার দুঃখ দেখে আপনার হাসতেছেন? আপনি কি মানুষ? (ইরা)
-আরে নাহহ আমি আপনার দুঃখ দেখে হাসতে যাবো কেনো? আমি তো আপনার মাতলামি দেখে হাসতেছি
-আমি কি মদ খেয়েছি?
-না খেয়েই যেমন করতেছেন
-একটু কাছে আসেন
-কেনো?
-আসেন কাছে, তারপর বলছি
,,
শুভ ইরার কাছে যেতেই কান মুচড়িয়ে ধরলো..
-আমি মাতলামি করি তাই না??(ইরা)
-না না সরি ম্যাম ভুল হয়েছে। আমার খুব লাগছে ছাড়ুন ছাড়ুন (শুভ)
-এখন কেমন লাগে? আর যদি আমার দুঃখ দেখে হাসেন তাহলে এমন মাইর দিবো, জীবনে বাবা হতে পারবো না
-বাবা হতে পারবো না!
-আপনি মারা গেলে বাবা হবেন কিভাবে?
-ওহহ হ্যাঁ তাই তো
-হুমম এখন যান সিগারেট নিয়ে আসুন
-পঁচা জিনিস খাওয়া লাগে না
-আপনি খান কিভাবে?
-আমি তো ছেড়ে দিয়েছি
-আগে খেতেন কিভাবে?
-ছেলেরা এটা পারে
-আমরা মেয়েরাও এটা পারবো। আর একটা কথা না যান এক্ষুনি নিয়ে আসেন।
,,
শুভ ইরার সামনে থেকে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর দুটো আইসক্রিম এনে ইরার সামনে হাজির হলো।
ইরা মাথা নিচের দিকে করে ছিলো।
কেউ একজন তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে সেটা বুঝতে পেরে মুখ উপরে তুলে তাকিয়ে দেখলো শুভ দুটো আইসক্রিম হাতে দাঁড়িয়ে আছে।
,,
-এই এই এগুলো কি? (ইরা)
-আইসক্রিম (শুভ)
-আমি তো সিগারেট আনতে বললাম
-মেয়েদের জন্য এগুলোই সিগারেট
-.....(ইরা হা করে এক দৃষ্টিতে শুভর দিকে তাকিয়ে রইলো)
।।
।।
।।
ছলনা
Part : 10
Write : Sabbir Ahmed
_____________________________
-মেয়েদের জন্য এগুলোই সিগারেট(শুভ)
-.....(ইরা হা করে এক দৃষ্টিতে শুভর দিকে তাকিয়ে রইলো)
-খাবেন না?
,,
শুভর হাত থেকে খপ করে ইরা দুটো আইসক্রিম নিয়ে নিলো।
ইরার আইসক্রিম খাওয়া একমনে দেখলো শুভ।
-এখন ব্যাপার টা বলা যাবে? (শুভ)
-কোন ব্যাপার? (ইরা)
-যাকে চর মারলেন সে তো আপনার বি এফ
-হুমমম ছিলো এখন নেই
-মারলেন কেনো? কি হয়েছে আপনাদের?
-ব্রেকআপ
-কেনো?।
-আপনি তো জেনেছিলেন সে মালদ্বীপ ঘুরতে গিয়েছিলো
-হুমমম
-শুনেছি
-সেখানে গিয়ে সে অাকাম কুকাম করছে
-মানে??
-বোঝেন না?
-আপনার কথায় তো কিছু বুঝতেছি না
-অাকাম বলতে সে তার একটা বান্ধবীর সাথে রুমডেট করেছে
-কি বলেন!
-হুমমম। এই জন্যই সম্পর্ক শেষ করে দিলাম। আর আপনাকে নিয়ে আসছি কেনো জানেন?
-কেনো?
-আমি মনে মনে ঠিক করে রেখেছি ওরে মাইর দিমু। উল্টা ও যদি আমারে মাইর দিতো তখন আপনি আমাকে বাঁচাইতেন। এই জন্যই আপনাকে নিয়ে আসে
-সব বুঝলাম। তাহলে এখন পাগলামো করতেছেন কেনো?
-তারে সত্যি সত্যি ভালোবেসেছিলাম যে সেই জন্য খারাপ লাগছে। তাই পাগলামি করছি
-এখন ব্যাপার টা ক্লিয়ার হলাম
-গুড
,,
সেই পার্কে তারা সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকলো। সন্ধ্যায় ইরা বায়না ধরেছে শুভর কাছে...
-আপনার বাসায় যাবো (ইরা)
-কেনো? (শুভ)
-আপনার সাথে রুমডেইট করতে
-ছিঃ ছিঃ কি বলেন
-যা শুনেছেন তাই বলেছি। এটা মনে কইরেন না যে আমি আপনাকে ভালোবাসি। সাদাফ যদি করতে পারে তাহলে আমিও করতে পারি। ও ওর বান্ধবীর সাথে করেছে আমি আমার বন্ধুর সাথে করবো
-দেখেন মাথা ঠান্ডা করেন, এসব কেউ করে হ্যাঁ
-সাদাফ তো করেছে
-সে করুক, আপনি এসব করবেন না
-আমি এতো বুঝি না আপনার বাসায় গিয়েই সব করবো
-নাহহহ
-তাহলে কি অন্য জায়গায়?
-তাও না
-তাহলে?
-আপনি কিন্তু বেশি বেশি করতেছেন। -ঐ ব্যাটা ঐ আমি এমনি এমনি বেশি বেশি করতেছি না, সাদফ রে ভোলার চেষ্টা করছি। আমি এক সপ্তাহ নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করেছি। সাদাফ এর প্রতি ঘৃণা এনে তারপর তাকে ধোলাই দিয়েছি। আর এখন আপনাকে যেটা বললাম সেটাও সত্যি
-উহুমমম এগুলো এমনি
-আপনি ভয়ে জড়োসড়ো হয়েগেছেন কেনো? আমি তো রাজি। আর দেখেন সুন্দরী ও আছি
,,
শুভ সাত পাঁচ না ভাবে ইরার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। তারপর ইরার হাত টা ধরে নিয়ে পার্ক থেকে বের হলো। শুভ ইরার হাতটা ধরে রাস্তার ফুটপাতে হাঁটছে আর ইরাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলছে...
-ব্রেকআপ হইছে ভালো কথা, আপনারে ভালো জায়গায় বিয়ে দিবো ভালো ছেলের সাথে, এমন শুরু করেছেন কেনো? এমন পাগলামি কাউকে করতে দেখিনি (শুভ)
-পাগলামির পেছনে অনেক বড় একটা কারণ আছে (ইরা)
-কি কারণ?
-আমি ভালোবেসে তাকে, আমার সবটুকু দিয়ে। তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন বুনেছিলাম গো। সে নেই ঠিক আছে কিন্তু তাকে নিয়ে দেখা স্বপ্ন গুলো বার বার আমার মনের অবস্থা খারাপ করে দিচ্ছে
-আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে
-হুমমমম। আর আমরা হাঁটছি কেনো? এতদূর কি হেঁটে যাওয়া সম্ভব?
-গাড়িতে যাবেন?
-তো?
-বাসে যাই?
-বাসে ভ্রমন করতে ভালো লাগে আপনার?
-ঠিক তা না, আপনার সাথে বাসে গেলে একটা স্মৃতি মনে পড়ে
-বৃষ্টির দিনের স্মৃতি টা?
-আরে না না আমাকে আর লজ্জা দিয়েন না। শুধু জেনে রাখেন ভালো লাগে
-আপনি সেদিন যা করেছেন, আর আমাকে কয়েকদিন যা জ্বালিয়েছেন আমার বি এফ এমনটা কখনো করেনি
-হুমমম সরি
-সরি বললে কি সব উঠে আসবে
-ওটা করার জন্য আপনি আমাকে মাইর বকা দিয়েছেন তো
-হুমমম
,,
তারা একটা বাসে চড়ে বসলো। দুজন পাশাপাশি সিটে বসে খোশগল্পে মেতে উঠলো। তাদের গল্পের টপিক টা ছিলো, ইরা শুভর বাসায় যাবে, কিন্তু শুভ নিয়ে যাবে না। এই নিয়ে তর্কের এক পর্যায়ে শুভ বলল...
-ঐ জন্য গেলে চলেন কাজী অফিসে বিয়ে করে নিয়ে যাই(শুভ)
-না বন্ধু, আমি আপনাকে ভালোবাসি না তো, বিয়ে তো দূরে থাক(ইরা)
-আমিও আপনার সাথে ওসব করার জন্য ভালোবাসি না। আজ আপনার মাথা বেশি খারাপ হয়েছে
-আপনি কি ভেবেছেন? আমি ঐগুলো করার জন্য আপনার বাসায় যাবো? আমার মন খারাপ মন ভালো করার জন্য আপনার বাসায় ঘুরতে যাবো। আন্টিকে একটু দেখে আসলাম, নিধি আছে ওর সাথে একটু কথা বললাম
-ওহহ এই ব্যাপার তাহলে তো কোনো সমস্যা নেই
-বুঝেছি বুঝেছি আপনার মনেও শয়তানি আছে
-না না আমি ওসব কিচ্ছু ভাবিনি
-আপনি আমার কাছে প্রমাণিত, আমার কাছে ভালো সাজার চেষ্টা করবেন না
-জ্বি আচ্ছা
,,
শুভ ইরাকে নিয়ে তার বাসায় আসলো। শুভ তো তার মা আর বোনকে আগেই জানিয়ে দিয়েছে যে মেয়েটাকে তার পছন্দ। তাই ইরার আদর টা এবার একটু বেশি করছে।
তবে বিয়ের আগে ইরাকে বাসায় আমায় মায়ের কাছে বকা খেয়েছে শুভ। শুভর মা তো আর জানে না মেয়েটা তার ছেলেকে পছন্দ করে না।
,,
রাতের খাওয়া টা সবাই একসাথে খেলো। খাওয়া শেষে ইরা বলল তাকে রেখে আসতে হবে। শুভ তখনই ইরাকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো। রাস্তায় দুজন...
-এতে রাতে তো বের হলাম যদি গাড়ি না পাই? (শুভ)
-হেঁটেই যাবো (ইরা)
-এতো হাঁটলে যেতে অনেক সময় লাগবে, আমি আসবো কিভাবে?
-আমাদের ওখানে থাকবেন
-একবার থেকেই যা আপ্যায়ন করেছেন আমার
-তখন ছিলেন অচেনা মানুষ এখন আপনি আমার বন্ধু
-হুমমম
-বিয়ে করবেন আমায়?
,,
শুভ থমকে দাঁড়ালো। কিছুক্ষণ আগেই তো ইরা বলছিলো যে তাকে ভালোবাসবে না৷ এখন আবার বিয়ের কথা বলছে।
,,
-কি হলো? উত্তর কই? (ইরা)
-আমি কি বলব বুঝতেছি না (শুভ)
-যা সিদ্ধান্ত নিবেন এখনি, বিয়ে করবেন আমায়?
-....(শুভ আমতা আমতা করছে)
-ভয় নেই আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসবো
-আ আ আ আচ্ছা তাহলে
-ভয় পাবেন না, আমার মাথায় যে কি ঢুকেছে আমার জানা নেই। তবে এই সময়ে আপনাকে পাশে পেয়ে ভালো লাগছে, আর আমার এটা মনে হচ্ছে যে আপনি আমার পাশে থাকলে আমি ভালো থাকবো
-আমি রাজি
-সত্যি?
-হুমম অনেক খুশি আমি আপনার কথা শুনে
,,
খুব দ্রুত দুই পরিবারের মাঝে কথা হলো। আর বিয়েটা চারদিনের মাথায় হলো। বিয়ের অনুষ্ঠান হলো মাত্র একদিনের জন্য, একদম পারিবারিক ভাবে।
,,
বিয়ের দিন রাতে...
শুভর বোন নিধি আর বন্ধু রাতুল ইরাকে বাসর ঘরে রেখে এসেছে আধ ঘন্টা হয়েছে। শুভ এখনো তার রুমে যায়নি। যাবে যাবে করতেই করতেই অনেক সময় পার হলো। এতোদিন হরহামেশাই ইরার সামনে গেলেও আজ যেতে শুভর মাঝে
ভয় আর লজ্জা কাজ করছে। একটা সময় শুভ তার রুমে ঢুকলো। শুভর রুমে প্রবেশ করা দেখে ইরা উঠে দাঁড়ালো। সালাম করতে নিলে শুভ মানা করলো আর বলল "এটা ঠিক না"
,,
-আপনি আসতে এতো দেড়ি করলেন যে (ইরা)
-বাইরে একটু কথা বললাম (শুভ)
-ভয় পাচ্ছিলেন?
-না না আমি তো...
-আপনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে, আপনি ভয়ে ঘেমে গেছেন। ভয়ের কারণে ভেতরে আসেননি
-একটু একটু ভয়ে ছিলাম এখন কেটে গেছে
-হুমমম চলুন নামাজ টা পড়ে নেই
-আচ্ছা..
,,
ইরা কথাটা বলে ঘুরে উঠতেই অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে পরে গেলো। শুভ ইরাকে ডাকতে ডাকতে তার মুখে পানি ছিটানি দিলো। সাথে সাথেই চোখ খুলল..
-এই কি হয়েছে আপনার? (শুভ)
-মনে হয় শরীর টা দূর্বল(ইরা)
-ওহহ
-আপনি আমার সাথে একটু ওয়াশরুমে আসেন ওজু করবো
-হুমমম আমি সাথে আছি চলুন
,,
ইরা অজু করতে গিয়ে অনেক বমি করলো। শুভ কিছুটা চিন্তিত হঠাৎ করে কি হলো ইরার৷ ইরা এমন অসুস্থ হয়ে গেলো নামাজ আর পড়তে পারলো না।
,,
শুভ নামাজ শেষ করে ইরার কাছে গিয়ে বসলো। ইরা শোয়া থেকে উঠতে নিলো তখন বলল..
-আপনার উঠতে হবে না শুয়ে থাকেন (শুভ)
-আপনি যে বসে আছেন (ইরা)
-সমস্যা নেই, আপনি শুয়ে থাকেন। হঠাৎ করে আপনার এই অবস্থা হলো কেনো?
-বুঝতেছি না। আপনি কাউকে এ কথাটা বইলেন না যেন
-কেনো?
-এমনি, বলার দরকার নেই
-আচ্ছা বলব না। হঠাৎ করে এমন অবস্থা হলো। কাল তাহলে আপনাকে ডক্টর এর কাছে নিয়ে যাবো
-আজ বিয়ে হলো আমাদের কাল ডক্টর এর কাছে গেলে সবাই কি ভাববে...
-আমরা যে যাবো এটা কেউ জানবে না
-থাক দরকার নেই
-এমন অবস্থা দেখে তো বসে থাকা যাবে না, যেতে তো হবেই
-আচ্ছা তাহলে বিকেলে এর দিকে
-হুমমম এখন তাহলে আপনি ঘুমান
-উহুমম আজকে আমাদের বিবাহের প্রথম দিন, আপনার তো কিছু কথা থাকতে পারে সেগুলো বলেন
-না, সময় অনেক আছে, সব বলা যাবে। এখন ঘুমান আর আমি আপনার পাশেই শুয়ে আছি ঠিক আছে?
-আচ্ছা
,,
পরদিন বিকেলে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে দুজন গেলো ডক্টর দেখাতে।
ডক্টর ইরাকে দেখে কিছু পরীক্ষা দিলো। পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পেয়ে ডক্টর শুভকে একটা কথা বললেন...
-আপনাদের জন্য একটা সুখবর আছে(ডক্টর)
-…..(ইরা আর শুভর চোখ আপনা আপনি বড় হয়ে গেছে)
-আপনাদের ঘরে নতুন মেহমান আসতে চলেছে
,,
ইরা আর শুভর বাকি রইলো না ডক্টর কি বোঝাতে চেয়েছে। শুভ একটু হেসে রিপোর্ট টা হাতে নিলো।
-আপনাদের বিয়ের বয়স কতদিন? (ডক্টর)
-এইতো দেড় বছর (শুভ)
-বাহহ তাহলে তো ভালই,
,,
দুজন বাইরে আসলো...
শুভ আর ইরার দিকে তাকাচ্ছে না। ইরা একবার ডাকলো সেটা শুনেও না শোনার মতো করে রইলো শুভ। ইরা সেখানে থাকা অবস্থায় বলল..
-আমি ডক্টর এর সামনে কিছু বলতে পারিনি, কিন্তু এই রিপোর্ট কোথাও ভুল আছে, আমি এমন কিছু করিনি (ইরা)
-মুখ টা বন্ধ রাখলে ভালো হয় (কথাটা বলে শুভ চোখের পানি ফেলল)
।।
।।
ছলনা
END PART
Write : Sabbir Ahmed
____________________________
-মুখটা বন্ধ রাখলে ভালো হয় (কথাটা বলে শুভ চোখের পানি ফেলল)
,,
ইরা শুভর কাছে গিয়ে বিনয়ের সাথে বাম হাতটা তার দুহাতের মধ্যে নিলো।
শুভ সাথে সাথে ইরার হাতের মধ্যে থেকে তার হাত ছাড়িয়ে নিলো।
,,
পুরো রাস্তায় কোনো কথা হয়নি দুজনের৷ শুধু গড়িয়ে গড়িয়ে চোখের পানি পড়েছে।
বাসার মধ্যে ঢুকবে এর আগেই শুভ ইরাকে থামিয়ে বলল...
-এটা যে হয়েছে আমি লুকিয়ে রাখবো, যখন প্রকাশ পাবে তখন আমিই সব সামলে নিবো। (শুভ)
-আমি সত্যি কিছু...(ইরা)
-আপনি আপনার এই কথা গুলো বন্ধ রাখেন, আমার শুনতে ইচ্ছে করছে না
,,
ইরা শুভকে আর কিছু বলতে পারলো না৷ বাসার কেউ এই ব্যাপারে জানতে পারলো না। সবার সামনে দুজন হাসি মুখে থাকলেও নিজেদের রুমে এসে দুজনের একজনের মুখেও হাসির চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যেতো না।
,,
সেদিন রাতে.....
-আপনি উপরে ঘুমান, আমি নিচে ঘুমাবো (শুভ)
-কেনো? (ইরা)
-উত্তর দিতে ইচ্ছে করছে না (শুভ কড়া মেজাজ নিয়ে বলল)
-বিছানায় তো অনেক জায়গা আছে
-হ্যাঁ আছে, বিছানায় আরেকজনকে জায়গা দিয়েছেন দেখেই তো আজ এই অবস্থা হলো।
,,
ইরা হুঁহুঁ করে কান্না শুরু করলো।
-চুপ করুন তো, আপনার কান্না টাও ছলান মনে হচ্ছে (শুভ)
,,
শুভ বিছানা থেকে বালিশ নিয়ে নিচে শুয়ে পড়লো। ইরা না ঘুমিয়ে বিছানা থেকে নামলো। শুভ ততক্ষণে আধঘুমন্ত অবস্থায় গিয়েছে। ইরা বিছানা থেকে নেমে শুভর পায়ের কাছে গিয়ে বসলো। শুভর এক পা ইরা উরুর উপর নিয়ে পায়ের আঙুল বুলাতে লাগলো।
,,
ইরার এই কাজে শুভ জাগান পেয়ে দেখলো ইরার অবস্থা।
-আবার কি শুরু করছেন? (শুভ)
-আমার ভালো লাগছে না, চলুন না আমার সাথে ঘুমাবেন (ইরা)
-রুচি নেই
-আমি সত্যি কিছু করিনি তার সাথে
,,
শুভ বিরক্ত নিয়ে উঠে বসলো আর বলল..
-তাহলে কি বাচ্চা পেটের মধ্যে এমনি এমনি আসছে? (শুভ)
-আমি জানি না (ইরা)
-আমার মেজাজ খারাপ করাইয়েন না, যা ঠকার আমি ঠকেছি মেনেও নিয়েছি। আমি আপনাকেও মেনে নিবো, আপনার পেটে থাকা সন্তান কেউ মেনে নিবো। আপনি টেনশন মুক্ত ওকে?
-আপনি আমায় ভুল বুঝছেন
-ভুল তো আগেই বুঝেছি। আমাকে ঠকিয়ে তো আপনার ভালো লাগছে, একটা জায়গা পেয়েছেন। অন্য কেউ হলে তো...
-আর বইলেন না, আমি সহ্য করতে পারছি না। আমি এমন কিছুই করিনি।
-হইছে হইছে যান তো ঘুমান
-আপনি আমার সাথে এমন কইরেন না
-কেমন করতেছি আমি? খারাপ ব্যবহার করতেছি?
-আপনি উঠুন আমার কাছে ঘুমাবেন
-তাহলে এখানেই আপনার কাছে ঘুমাবো
-না,
-কেনো?
-বললাম তো রুচি নেই
-আমি তো জানি আমি কেমন, আপনি আপনার সাথে ছলনা করিনি, আপনাকে ঠকাইনি। একদিন ভুল বুঝতে পেরে ঠিকই আমাকে মেনে নিবেন।
-লেকচার বাদ দিয়ে যান ঘুমান
-হুমমমম
,,
এরপর থেকে যতই দিন যাচ্ছিলো ইরা শুভর কাছে টিকে থাকা ততই কঠিন হয়ে যাচ্ছিলো। ইরার পেট ব্যাথা বমি বাড়তে থাকে। খাবার খাওয়া তো একদমই ছেড়ে দেয় ইরা। শুভও কোনো কেয়ার করে না।
,,
ইরার এমন অবস্থা দেখে শুভ ইরাকে দাদীমার কাছে পাঠিয়ে দেয়। শুভ পরিবারের লোকজনের কাছে কি জবাব দিবে এই ভয়ে ইরাকে দূরে রাখে। তবে শুভ দূরে যায়নি ইরার থেকে। শুভ কাজ শেষে ইরার কাছে গিয়েই থাকতো। আর কাছে থেকে ইরাকে অনেক কথা শুনাতো রাগ ঝাড়তো ইরার উপর।
,,
মাস খানেক যাওয়ার পর হসপিটালে চেক-আপ করতে যাওয়ার কথা দুজনের। ইরা ডেট মনে করিয়ে দেয় শুভকে। সেদিন শুভ কাজে নিয়ে গিয়ে ইরার বাসাতেই থাকে।
,,
চেক-আপ করতে যাওয়ার দিন সকাল বেলা...
-মা, বোন চাপ দিচ্ছে আপনাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার (শুভ)
-তে নিয়ে যান (ইরা)
-হুমম আজ আগে হসপিটাল থেকে ঘুরে আসি
-আপনার যেতে তো সমস্যা হবে
-কেনো সমস্যা হবে?
-আমার পাশে বসবেন, আমার প্রতি আপনার তো কোনো রুচি নেই
-বেশি কথা বলবেন না
-কই বেশি বললাম?
-আজ হসপিটাল থেকে এসে তারপর দেখা যাক আপনাকে নিয়ে একটা ডিসিশন নিতে হবে
-ছেড়ে দেওয়ার?
-বাসায় ফেরার
-ওহহ আচ্ছা
,,
সেদিন বিকেল বেলা হসপিটালে ইরার পরীক্ষা হলো।
-আপনি এখন বসায় যান আমি রিপোর্ট নিয়ে যাবো (শুভ)
-আজ বিকেলে একটু ঘুরবো আপনার সাথে (ইরা)
-না, বাসায় যেতে বলেছি বাসায় যান
-হুমমম (ইরা মন খারাপ করলো)
-সাবধানে যাইয়েন
-আচ্ছা, একটা কথা
-কি?
-কিছু সিগারেট কিনে দেন
-কিহহহ!
-সিগারেট
-আজে বাজে বকছেন কেনো?
-আরে ভুল বোঝেন কেনো? আপনি তো বলেছিলেন আমার সিগারেট হলো আইসক্রিম
-ওহহহ, টাকা দিয়ে দিচ্ছি যাওয়ার সময় নিয়ে নিয়েন
-আপনি পছন্দ করে আনবেন
-আমার ইচ্ছে হয়না নিতে
-তাহলে থাক দরকার নেই (ইরা চলে গেলো)
,,
এদিকে শুভ ডক্টর এর রুমে। ডক্টর রিপোর্ট এর কাগজপত্র দেখে মাথায় হাত রাখলো। ডক্টর কে দেখে শুভও কিছুটা অবাক, এমন আচরণ কেনো করছে। ডক্টর কিছুক্ষণ চুপ থেকে মুখ খুললেন...
-আমি আগেই বলে নিচ্ছি সরি! আপনার স্ত্রী গর্ভবতী না। তার পেটে একটা টিউমার আছে। দ্রুত সেটার অপারেশন করতে। যত দ্রুত সম্ভব এটা করতে হবে, না হলে এটা ক্যান্সার হয়ে যাবে।
-কি বলছেন এসব??
-হ্যাঁ আমরা দুঃখিত, জানি না এটা কিভাবে হলো, আপনি যা করার দ্রুত করুন। অপারেশন এর জন্য মোটা অংকের টাকা লাগবে আপনি তার ব্যবস্থা করুন
,,
শুভ ডক্টর এর চেম্বার থেকে বের হয়ে বাইরে চেয়ারে বসলো। নিজের কান কে সে বিশ্বাস করতে পারছিলো না।
ইরাকে সে ভুল বুঝেছে, কত কষ্ট দিয়েছে তাকে। বিয়ের পর থেকে ভালো করে একটা কথাও বলেনি। এসব ভাবতে ভাবতে সেখানে বসেই কান্না করে দেয়। শুভ সেখান থেকে বাসায় আসার শক্তি পাচ্ছিলো না৷
,,
একসময় নিজেকে শক্ত করে হসপিটাল থেকে দ্রুত প্রস্থান করে। একটা রিকশা নিয়ে বসার উদ্দেশ্য রওনা হয়। শুভ হাসছে আর চোখের পানি মুছছে। আবার কোনো সময় মুখ ফুলিয়ে বসে রয়েছে। এরকম অবস্থা দেখে বোঝা যাচ্ছিলো মনের মধ্যে, ভয়, আনন্দ দুটোই কাজ করছে।
,,
রিকশায় থাকা অবস্থায় শুভর মনে পড়লো ইরা সিগারেট মানে আইসক্রিম খেতে চেয়েছিলো। শুভ রিকশা থামিয়ে এক বক্স আইসক্রিম নিয়ে নিলো।
,,
শুভ বাসায় ঢুকে দেখলো ইরা বারান্দায় বসে একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। মনটা তার বড্ড খারাপ। ইরার হঠাৎ মনে হলো কে যেন তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সে সাইডে ফিরে তাকাতেই দেখে শুভ আইসক্রিম এর বক্স নিয়ে দাঁড়িয়ে কান্না করতেছে।
,,
ইরা চেয়ার থেকে উঠে দৌড়ে শুভর কাছে গেলো।
শুভর এমন অবস্থা দেখে ইরা নিজেই ভয় পেয়ে যায়। শুভকে রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। ছেলে মানুষ এমন করে কাঁদে দাদীমা দেখতে পেলে তো নানান প্রশ্ন করে বসবে। ইরাও বুঝতে পারছে না বেচারার হয়েছে টা কি? এক নাগারে কান্না করেই চলেছে।
,,
ইরা অনেকবার থামানোর চেষ্টা করেও যখন শুভ তার কান্না থামাচ্ছিলো না তখন ইরা শুভর কাছে এসে তার মাথা আর দুই গালে আলতো করে ছুঁয়ে, সব মায়া আর ভালোবাসা ঢেলে বলল..
-কি হয়েছে তোমার?? বলো আমাকে, এমন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে একনাগাড়ে কান্না করেই যাচ্ছো। তোমার কান্না দেখে আমারও কিন্তু কান্না পাচ্ছে বলো না কি হয়েছে (ইরা)
,,
শুভ এবার ইরাকে জড়িয়ে ধরলো। ইরা শুভর পিঠ বুলিয়ে বলল.
-এই পাগল কি হয়েছে তোমার?? (ইরা)
-...(শুভ কান্না করতে করতে সব কথাই বলল)
,,
ইরা সব শুনে শুভর মাঝে থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল..
-আমার অপারেশন করাতে হবে না গো। শুধু শুধু তোমার টাকা নষ্ট হবে (ইরা)
-তুমি পঁচা কথা বলো কেনো? (শুভ)
-সত্যি কথাই বলছি। টাকা গুলো নষ্ট করার কোনো দরকার নেই। আমি আমার শরীরের অবস্থা বুঝেই বলছি আমি মনে হয় বাঁচবো না। তুমি টাকা গুলো রেখে দাও। আমি মারা গেলে এই টাকা দিয়ে আরেকটা বিয়ে করে নিয়ো
-দেখো এমনি কিন্তু আমার মাথা ঠিক নেই, উল্টা পাল্টা কিছু বলো না
-আমি সত্যি বলছি এবারও
-তোমার সব আন্দাজ সত্যি না
-এহহ আমি যা বলি তাই ঠিক হয়
-বাদ দাও এগুলো, তোমার জন্য অনেক আইসক্রিম নিয়ে আসছি
-আমি তো খাবো না
-কেনো?
-আমি অভিমান করেছি
-আমি সত্যি বুঝতে পারিনি সরি
-তোমার কোনো দোষ নেই। আমার কপালে যা ছিলো তাই হয়েছে আর হবে
-এমন করে কথা বলছো কেনো?
-এমনি,
,,
কথা বলতে বলতে হঠাৎ করে ইরার বমি শুরু হয়। বমি তো হয়না ইরার কারণ সে কিছু খেতেই পারেনি। কেউ তাকে খাওয়ানোর চেষ্টাও করেনি। রাত হলে শুরু হয় ইরার পেট ব্যাথা।
শুভ সাঁত পাঁচ না ভেবে বাসায় ফোন করে টাকা আনতে বলে। শুভ রাতেই ইরাকে হসপিটালে ভর্তি করে।
পরদিন সন্ধ্যায় অপারেশন হয় ইরার।
,,
অপারেশন শেষে ডক্টর জানায়, অপারেশন টা হলেও ঝুঁকি কিছুটা আছে তাই সাবধানে থাকতে হবে। তবে এখন অনেকটাই টেনশন মুক্ত থাকতে বলেছে।
,,
এদিকে শুভর মা বোন পুরো ঘটনটা শুনে সেই রকম বকাঝকা করে শুভকে। হসপিটালে ভর্তি করার পর থেকে ইরার সামনে যায়নি শুভ। বলতে হয় সেও একটু অভিমান করেছে।
,,
হসপিটালে শুভর মা আর বোন ইরার সেবাযত্নে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। ইরার দাদীমা, আত্মীয় স্বজন, শুভর কিছু আত্মীয় সবাই এসে দেখা করে গেছে ইরার সাথে শুধু শুভই দেখা করেনি।
,,
ইরা তার শ্বাশুড়ির কাছে থেকে শুভর খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, শুভ রাত দিন হসপিটালে পাশের রুমেই থাকে।
যখন যেটা দরকার এনে দেয় কিন্তু কি কারণে যেন এই রুমে আসে না। ইরার খুব ইচ্ছে হলো শুভকে দেখতে। নিধি কে দিয়ে তার ভাইকে ডেকে পাঠালো ইরা।
,,
নিধি পাশের রুমে এসে দেখে, শুভ একটা বেডে শুয়ে আছে।
-ভাইয়া (নিধি)
-বল (শুভ)
-ভাবী ডাকে
-কেনো কোনো সমস্যা?
-তুমি যাও দেখা করো ভাবীর সাথে
-আরে দেখা করার কি আছে। বাসায় গেলে তো দেখা হবেই
-তোমার আচরণ আমার ঠিক সুবিধার মনে হচ্ছে না, তুমি এখানে শুয়ে থাকো কেনো? গত দুইদিন হলো এখানে আছো। কিছু আনতে বললে ঠিকই নিয়ে আসো। আবার এসে এখানেই শুয়ে থাকো
-একটা কথা বলব তুই কাউকে বলিস না যেন৷
-কি কথা?
-আমি আমার একটা কিডনি বিক্রি করে দিয়েছি
-মানে! কি বলছো এসব
-এই চিল্লাস কেনো? যেটা বলি শোন। ইরার অপারেশনে অনেক টাকা লেগেছে। ঔষধেরও অনেক খরচ লাগবে সামনে। আমার কাছে ক্যাশ টাকা তো নেই। আবার কারও কাছে যে ধার নিবো সে মানুষটাও নেই। তাই এই কাজটা করেছি। আর দেখ আমি ওরে বুঝতে পারিনি তাই ওর এই অবস্থা। আর ওর জন্য এটুকু করতেই পারি তাই না?
-তাই বলে নিজের এতো বড় রিস্ক নিলে?
-হাতে কোনো উপায় ছিলো না
-হুমমমম বুঝেছি।
-তুই কান্না করে ব্যাপার টা ছড়িয়ে দিস না বোন
-আচ্ছা যাও ভাবীর সাথে দেখা করো
-হুমমমম
-তুমি তো উঠতেই পারছো না। তাহলে আমরা যা যা আনতে বললাম আনলে কিভাবে? আর এই অবস্থায় এখানে কেনো?
-তোরা কিছু বুঝবি না তাই কষ্ট করে এখানেই থেকে গেছি। মনের জোড়েই সব কাজ করেছি
-তুমি পারও... যাও এখন দেখা করো
-রুমে মা আছে?
-মা বাসায় গেছে। আমি এখানে আছি। রুম ফাঁকা, তুমি গিয়ে দেখা করে আসো
,,
শুভ বেড থেকে উঠে ইরার কাছে গেলো। ইরার বেডের কাছে একটা চেয়ার ছিলো গুটিগুটি পায়ে সেখানে গিয়ে বসলো।
-চুপ করে থাকবেন? (ইরা)
-নাহহ, কিছু বলব(শুভ)
-আমার শোনার জন্য প্রস্তুত
-প্রথমত সরি
-কেনো?
-আমি আপনাকে একবারও দেখতে আসিনি
-সরি না বলে কারণ টা বলুন
-দেখতে না আসার কারণ?
-হুমমম
-আ আ আসলে আমি...
-কিডনি বিক্রি করে আমার চিকিৎসা কে করাতে বলেছে? নিজের জীবনের রিস্ক নিলেন কেনো?
-আপনাকে এসব কে বলল?
-ডক্টর
-আমি তো মানা করেছিলাম
-আমি যে অবস্থায় থাকি না কেনো আপনাকে বোঝার চেষ্টা করি। হুট করে এতো টাকা কোথায় পেলেন এটা কি আমি জানবো না? ডক্টর কে একটু বলতেই উনি সব আমাকে বলে দিয়েছেন
-ওহহহ
-একটু কাছে আসেন৷ থাপ্পড় মারবো
,,
শুভ কাছে গিয়ে গাল টা এগিয়ে দিলো। ইরা দুহাত দিয়ে পাগলের মতো শুভর চোখ মুখ গাল বুলিয়ে বলল..
-এতো ভালোবাসতে কে বলেছে??
-তুমিই তো..........
,,
,,
,,
,,
,,
,,
,,
,,
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,END,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,