অতিথি তুমি
Write : Sabbir Ahmed
___________________________
বৃষ্টিস্নাত সকাল সাড়ে আটটায় ঘুম ভাঙে আমার। একটু আগে মা এসে ডেকে গেছে। উনি এসে আমার ঘুম অর্ধেক ভেঙেছেন। বাকিটুকু আমি নিজ প্রচেষ্টায় ভেঙে বিছানা ছেড়ে উঠলাম। আজ আমার কলেজের অফ ডে তাই এতো দেড়ি করে উঠলাম, না হলে মা সকাল পাঁচটায় আমার ঘুম ভাঙানোর ঘন্টা বাজিয়ে দিতো।
,,
আমার বাসার দোতালার একটা কর্ণার এর রুমে আমি থাকি। আসলে আমাদের বাসাটাই দোতলা। দার্জিলিং এর একটা পাহাড়ের মাঝখানটায় আমার বাসার অবস্থান হওয়ায় এখান থেকে অদ্ভুত সব প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখা যায়। পৃথিবীর এই একটা মাত্র পাহাড়ি এলাকায় এতো উঁচুতে স্টীম ইঞ্জিন এর ট্রেন চলে। আমি জানালা দিয়ে প্রায়ই সময়ই ট্রেনটা দেখি, তবে এখন পর্যন্ত সেটাতে উঠা হয়নি।
,,
স্টীম ইঞ্জিন এর ট্রেনের হর্ণ টাই বলে দেয় এখানকার পরিবেশ পৃথিবীর অন্য স্থানের তুলনায় একটু ভিন্ন।
আমি এই পরিবেশে একদমই নতুন। আমি এখানে এসেছি এখনো একবছর হয়নি। বাবা এখানে আবাসিক হোটেলের ব্যবসা করেন।
আমরা সবাই বাংলাদেশী। বাবার এই বিজনেস এর কারণে তিনি প্রায় সময় দার্জিলিং এ থাকতেন। আমি আর মা বাংলাদেশে থাকতাম।
,,
গত বছরের শেষ দিকে বাবার কথামতো আমি আর মা দার্জিলিং চলে আসি, আর বাবার জন্যই এখানে থাকার একটা স্থায়ী সমাধান হয়ে যায়। বাবা আসলে চাইছে আমি লেখাপড়ার পাশাপাশি তার কাজে একটু সাহায্য করি। এই বিজনেস এর সবকিছু যেন তাড়াতাড়ি শিখে ফেলতে পারি।
,,
আমি ঘুমের ঘোর কাটিয়ে রুমের একটা মাত্র জানালা খুললাম। এখানে ঘুম থেকে উঠে বৃষ্টিস্নাত সকাল দেখা স্বাভাবিক ব্যাপার। আজকেও তার বিপরীত হয়নি, তার মধ্যে চলছে বর্ষাকাল।
,,
এদিকে মা একের পর এক ডেকেই চলেছে। উনি কিচেনে আছেন, আমি সেখানে যাওয়ার আগেই তার হরেকরকম রান্নার ঘ্রাণে আমার জিভে পানি চলে আসলো। আজ মা একটু বেশি বেশি রান্না করছে, মনে হয় বাসায় কেউ আসবে।
,,
কিচেনে যাওয়ার পর...
-এতো ডাকাডাকির পর তাহলে উঠলি (মা)
-আমি আগেই উঠেছি, এমনি শুয়েছিলাম (আমি)
-এখন আমাকে একটু হেল্প কর
-বাসায় মেহমান আসবে??
-হ্যাঁ বাংলাদেশ থেকে
-কে?
-তোর বাবার বন্ধু
-ওহহহ
,,
ঘন্টা খানেক মায়ের কাজে হেল্প করলাম। সকালের খাবার খেয়ে আবার কম্বল এর নিচে ঢুকলাম। আজ অফ ডে তে বৃষ্টি না থাকলে বাইরে গিয়ে একটু ঘুরে আসা যেত।
মনে হয়না এই বর্ষাকালে অফ ডে তে আমার বাইরে যাওয়া হবে।
,,
কিছুক্ষণ পর কলিং বেল এর আওয়াজ। মা কিচেন থেকে বলল...
-শুভ নিচে যা, দেখতো কে এলো (মা)
আমি জোর আওয়াজ করে বললাম হ্যাঁ যাচ্ছি। নিচে নামার আগে আমার জানালা দিয়ে বাইরে উঁকি দিলাম। আমার রুমের জানালা থেকে বাসার সদর গেট দেখা যায়৷
আমি দেখলাম এক ভদ্রলোক ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার পাশেই দাঁড় করানো একটা কার। মনে হয় সেটাতে করেই এসেছেন৷
,,
আমি ভাবলাম উনিই বাংলাদেশ থেকে এসেছেন৷ তড়িঘড়ি করে নামলাম নিচে। বাসার গেট টা খুলেই বললাম...
-আংকেল আসসালামু আলাইকুম
,,
সালাম টা ঠিকই ছিলো তবে আংকেল টা বলে ভুল করে ফেলেছি। আমার সামনে দাঁড়িয়ে একটা মেয়ে বয়স ১৭ কি ১৮ হবে, মেয়েটি দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে দিয়েছে। আমি তো দেখে এলাম একটা আংকেল এখন দেখছি এক সুন্দরী মেয়ে।
,,
আমার চোখ তার হাসিতে আটকে গেছে। আমি একবার তার চোখ দেখছিলাম আর একবার তার ঠোঁট এর হাসি। হঠাৎ চোখে পড়লো সেই আংকেল কে, যাকে প্রথমে দেখেছিলাম। উনি আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন...
-এভাবে আমাদের বৃষ্টিতে ভেজাবে? (আংকেল)
-সরি সরি, আপনারা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন? (আমি)
-হ্যাঁ
-আসুন আসুন ভেতরে আসুন
,,
আমি উনাদের ড্রয়িং রুমে বসতে দিয়ে মাকে ডাকলাম আর বললাম কাঙ্খিত মেহমান এসেছে। মা তো এসে আমাকে সেই বকা বকলো কারন তাদের ভেজা অবস্থায় ড্রয়িং রুমে বসিয়ে রেখেছিলাম। আমার খেয়াল ছিলো না তাদের জন্য আলাদা আলাদা রুম ঠিক করা আছে।
,,
সুন্দরী একটা মেয়ের সামনে এতো বকা খেলাম, নিজেকে তখন পৃথিবীর সবথেকে বোকা মানুষ মনে হচ্ছে।
মেয়েটার মুচকি হাসি তে আরও অপমানিত হয়েছি৷
,,
মন খারাপ করে নিজের রুমে চলে আসলাম। এখন আমার মাথায় অপমানিত হওয়ার আর মেয়েটার হাসি দুটোই ঘুরপাক খাচ্ছে।
,,
ঘন্টা খানেক নিজের রুমে বসেই পূর্বের ঘটনা গুলো রিপিট হচ্ছিল মাথার মধ্যে। হঠাৎ মা ডাকলো।
উনার ডাক বেশিরভাগ কিচেন রুম থেকেই আসে। আমি সোজা কিচেনেই গেলাম।
,,
-উনাদের টেবিলে ডেকে নিয়ে সব খাবার পরিবেশন তুই করবি(মা)
-তুমি করো (আমি)
-আমি পারলে তোরে ডেকেছি? আমার কাজ আছে তুই এখন এই হেল্প টা কর
-আচ্ছা আচ্ছা করতেছি। তবে একটা কথা আছে আমার
-কি কথা?
-উনাদের সামনে আমাকে বকবা না
-কেনো?
-আমার মান সম্মান আছে না?
-ওরে ওরে তুই গেলি এখান থেকে
,,
মা লাঠিপেটা করার আগেই রুম থেকে বের হয়ে এলাম। খাবার রুমে মেহমান দুজনকে ডেকে নিলাম। তাদের প্লেটে খাবার দিচ্ছিলাম আর আংকেল তখন প্রশ্ন করে আমার সম্পর্কে জেনে নিচ্ছিলো৷ আমি শুধু হ্যাঁ না করেই চলেছি।
,,
-তুমি খেতে বসো (আংকেল)
-না আংকেল আপনারা খেয়ে নেন, আমি খেয়েছি (আমি)
-তোমার মা কোথায়?
-এখনো উনার কাজ শেষ হয়নি৷
-ওহহহ
-আচ্ছা তুমি তো ভালোই মেহমানদারী করতে পারো
-এটা আমার মা শিখিয়েছে,বলতে পারেন আমাকে মারধর করেই শিখিয়েছে
-হা হা হা এতটা জোর করার কারণ?
-তার তো মেয়ে নেই, মেহমান আসলে আমাকে দিয়েই সব করিয়ে নেয়।
-ভালো একটা কাজ শিখে ফেলেছেন(মেয়েটি)
,,
এই প্রথম মেয়েটার কন্ঠ শুনলাম৷ কেনো যেম একটু বেশি ভাল লেগে গেলো। উনাদের খাওয়া শেষে তারা তাদের রুমে চলে গেলো। এখন পর্যন্ত জানতে পারলাম না তারা এখানে কি জন্য এসেছে। বাবা আসলে জানতে পারবো, মা কে এই কথা জিজ্ঞেস করলে তো উল্টো বকা দিবে।
যাক রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করি।
,,
বিকেলের দিকে বৃষ্টি থেমে রোদ উঠলো। এবার একটু বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম মনে মনে। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় এদিকে ওদিকে উঁকিঝুঁকি মারছিলাম মেয়েটাকে দেখার জন্য। কিন্তু নাহহ নিরাশ হয়ে বাইরে আসলাম।
,,
ফিরলাম একদম সন্ধ্যায়।
বাসায় এসে দেখি মায়ের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে মেয়েটি। আমাকে দেখে মা বলল..
-এই তুই কই গিয়েছিলি? ফোনেও তো পেলাম না (মা)
-ফোন তো রুমে (আমি)
- যাওয়ার সময় বলে যাবি না? আচ্ছা মেয়েটা একা একা বসে আছে। তুই একটু কথা
বল আমি রাতের রান্নাটা করে ফেলি।
-আচ্ছা ঠিক আছে
,,
মা চলে যাওয়ার সাথে সাথে।
-বাইরে কোথায় গিয়েছিলেন? (মেয়েটি)
-এই একটু হাঁটতে (আমি)
-বন্ধুদের সাথে?
-না, আমার এখানে বন্ধু নেই আমি একাই
-ওহহহ
-হুমম
-আমি ইরা
-শুভ, আমি শুভ
-আপনি কি ভয় পাচ্ছেন?
-কই না তো
-দেখে তো তাই মনে হচ্ছে। আর আপনার ভয় পাওয়ার সাথে অঙ্গভঙ্গি গুলো দারুণ মানায়। আসার পর থেকে বেশ কয়েকবার দেখেছি। অনেক হাসি পাচ্ছিলো আমার...
-....(আবার অপমানিত হলাম। দাঁতে দাঁত চেপে নিজের উপরেই রাগ দেখালাম)
-সরি, মজা করলাম
-না না ঠিক আছে
-আপনাদের বাসাটা অনেক সুন্দর
-থ্যাংকস। আসলে এই জায়গাটাই অনেক বেশি সুন্দর
-হ্যাঁ আসার পথে তো দেখলাম
-দিন ভালো থাকলে আমার রুমের জানালা দিয়ে দূর পাহাড়ের ঝর্ণা দেখা যায়
-তাই?
-হ্যাঁ, আবার এখানে কিছু কিছু প্লেস আছে যেখানে গেলে মনে হবে আপনি পৃথিবীর সব থেকে সুখী মানুষ
-বাহহ তাহলে তো সেইসব জায়গায় যেতেই হয়
-অবশ্যই যাবেন
-হুমমম
-চা খাবেন
-আচ্ছা নিয়ে আসেন
-এখানে না বাইরে
-এখন বাইরে?
-ভয় নেই আমি আছি
-না মানে আন্টি যদি কিছু বলে
-আরে রাখুন তো, দার্জিলিং এর চায়ের আলাদা একটা ফিল আছে। চলুন চলুন
-আন্টিকে বলে যাই
-উনি ডাকার আগেই চলে আসবো
-থাক না যাই নতুন জায়গায় এসেছি
-ভয় পাচ্ছেন কেনো?
-একটু আগে নতুন মানুষ দেখে আপনিই তো ভয় পাচ্ছিলেন আর আমি তো নতুন জায়গায় এসেছি। আপনার সাথে বাইরে যেতে ভয় তো লাগবেই
-হইছে হইছে আপনার চা খাওয়া লাগবে না। পানি খাবেন পানি?
।।
।।
অতিথি তুমি
Part : 2
Write : Sabbir Ahmed
_____________________________
-হইছে হইছে আপনার চা খাওয়া লাগবে না৷ পানি খাবেন পানি?
আমি একটু জোর গলায় কথাটা বলাতেই উনি হা করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি বুঝতে পারলাম বেশি বেশি কথা বলে ফেলেছি।
-সরি, আসলে কথা বলতে বলতে ব্রেক ফেইল করে ফেলেছি। (আমি)
-আচ্ছা ঠিক আছে চলুন তাহলে
-ইয়েএএ চলুন
,,
দরজায় আসতেই ঝুম বৃষ্টি শুরু।
ইরা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনার নামটা যেন কি?(ইরা)
-শুভ (আমি)
-আসলে আপনি শুভ না অশুভ
,,
ইরা গিয়ে পূর্বের জায়গায় বসলো। আমি কিছুক্ষণ দরজায় দাঁড়িয়ে দোয়া করেছিলাম বৃষ্টি যেন থেমে যায়। এখানকার যে বৃষ্টি একবার শুরু হলে শেষ হওয়ার নাম নেই।
,,
নিরাশ হয়ে তার কাছে ফিরলাম৷
-হুহহ আপনার কথামতো আর চা খাওয়া হলো না (ইরা)
-ওয়েট নিয়ে আসছি আমি (আমি)
-কিভাবে?
-মা কে গিয়ে বলি, চা বানিয়ে দিতে
-এতো কিছু থাকতে চায়ের পিছু নিয়েছেন কেনো?
-আসলে চা না অন্য একটা ব্যাপার আছে
-কি সেটা?
-আপনার সাথে চা খাওয়া
-মানে???
-হি হি হি কিছু না। একটু বসেন আমি চা নিয়ে আসি
,,
কিচেনে গিয়ে মায়ের রান্নার কাজে বিঘ্ন ঘটিয়ে আগে চা বানিয়ে নিয়ে আসলাম। চা খেতে খেতে দুজন আবার আড্ডায় মেতে উঠলাম..
-আপনি আন্টি কে খুব বিরক্ত করেন তাই না? (ইরা)
-আরে নাহহ আপনার আন্টি আমায় খুব বিরক্ত করে। কাজ নেই কাম নেই এমনি ডাকাডাকি করে(আমি)
-না না আপনিই বেশি বিরক্ত করেন
-আপনার আমার বিপক্ষে গেলেন কেনো?
-বিপক্ষে না, আপনাকে দেখলে তো এমনটাই মনে হয়
-ওহহহ বুঝেছি
-কি বুঝলেন?
-আপনাকেও অনেক বিরক্ত করে ফেলেছি
-বিরক্ত না, নতুন মানুষ হিসেবে হঠাৎ করে একটু বেশি ফ্রি হয়ে গেছেন
-আমি এমনই
-তা কয়টা মেয়ের সাথে এখন পর্যন্ত এমন ফ্রি?
-একটা
-কে সে?
-ঐ যে আপনার আন্টি
-কথা না ঘুরিয়ে সোজাসাপ্টা উত্তর করেন।
-বাইরের কোনো মেয়ের সাথে আমি ফ্রি না
-গার্লফ্রেন্ড নেই
-এখানে গার্লফ্রেন্ড কই পাবো?
-কেনো এখানে মেয়ে নেই?
-বাঙালি তো নেই
-ওহহ, তা বিদেশিনী কাউকে পছন্দ করেননি?
-এখানকার মেয়েদের চেয়ে প্রকৃতি বেশি সুন্দর
-ওহহ
-আপনি তো রিলেশন করেন তাই না?
-....(ইরা মাথা নাড়িয়ে না উত্তর করলো)
-হে হে আপনাকে দেখলেই বোঝা যায়, অবশ্যই রিলেশন করেন
-আরে নাহহ সেসব এর কি সময় আছে? আর আমার সময় তো শেষ এর মধ্যে
-মানে?
-কিছু না, আচ্ছা আমি রুমে যাচ্ছি, আবার সময় নিয়ে কথা বলবোনি
-হুমম ঠিক আছে
,,
আমি আমার রুমে আসলাম। ইরার সাথে কথা বলতে প্রথমে যে ভয়টা করতো সেটা কেটে গেছে। এখন মুখ দিয়ে অনর্গল কথা বের হবে। মেয়েটা তো আমার চব্বিশ টা ঘন্টা এখন কেড়ে নিবে। তাকে ছাড়া কিছুই তো ভাবতে পারছি না৷
,,
রাতে আর উনার সাথে দেখা হলো।
দেখা হলো পরদিন সকালে কলেজে যেতে। সে দরজা থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আর আমি তখন দরজায় ছাতা ফুটাচ্ছি। আমি এদিকে ওদিক খেয়াল করতে তাকে দেখে ফেলি। আর তার চোখে চোখে পড়া মাত্রই সে মুচকি হাসলো। আর এক হাসিতেই আমাকে আহত করার মতো অবস্থা।
,,
এখন ছাতা ফুটানোর শক্তিও পাচ্ছি না। ইরা গুটিগুটি পায়ে কাছে এসে বলল...
-কলেজে যাচ্ছেন?? (ইরা)
-হুমমম (আমি)
-কখন ফিরবেন?
-দুটোয়
-ওহহ আচ্ছা সাবধানে যাবেন। আর তাড়াতড়ি ফিরবেন। বিকেলে আপনার সাথে একটু ঘুরতে বের হবো
-বিকেলে যে কোচিং আছে
-মিস দেওয়া যায় না একদিন?
-হুমম যায়
-হুমমম
,,
আমি ছাতা নিয়ে বাইরে বের হলাম। সে দেখি দরজায় দাঁড়িয়ে আমাকে দেখছিলো। আমি হাঁটতে হাঁটতে আমাদের বাসার আড়াল হলাম। হাঁটছিলাম আর ভাবছিলাম কলেজে গিয়ে মন একদমই টিকবে না৷ কখন দুইটা বাজবে কখন বাসায় ফিরবো, কখন তার সাথে ঘুরতে বের হবো এমন উত্তেজনা কাজ করছিলো।
,,
কলেজ দুপুর দুটায় ছুটি হয়ে গেলো।
আজ খুব দ্রুত বাসায় ফিরলাম। মাথায় সেই একটাই চিন্তা একটা সময় অপেক্ষা করছে। কখন তাকে নিয়ে ঘুরতে বের হবো।
,,
বাসায় ফিরে তার দেখা পেলাম না। হয়তো তার রুমে। আমি কলেজের ড্রেস ছেড়ে মা মা করে ডাক ছাড়লাম আমার রুম থেকেই৷ মা না এসে ইরা আসলো। এসেই বলল..
-আন্টি একটু পাশের বাসায় গেছে আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন টেবিলে আমি খেতে দিচ্ছি (ইরা)
-আংকেল কোথায়?(আমি)
-উনি তো আপনার বাবার সাথে বের হয়েছে সেই সকালে। মনে হয় রাতে ফিরবে
-হুমমম
,,
খাবার টেবিলে বসলাম। ইরা আমাকে খেতে দিলো।
-আপনি খেয়েছেন? (আমি)
-হুমম খেয়েছি (ইরা)
-আমাকে ছাড়া আগেই খেলেন কেনো?
-আপনি তো বলে যাননি যে একসাথে খাবো
-আমি তো বলেছিলাম এই সময় আসবো, আপনি বুঝে নিতে পারেননি
-আন্টির সাথে খেয়ে নিয়েছে। আর খাওয়ার সময় এতো কথা বলতে হয়না খেয়ে নিন
-এখন থেকে আমায় ছাড়া কোনো বেলাই খাবেন না
-আপনি আমায় এতো জোর করেন কেনো?
-আছে একটা ব্যাপার আছে
-কি ব্যাপার?
-সময় হলেই বুঝবেন৷ যাই হোক ঘুরতে যাবেন না?
-নাহ
-কেনো কেনো?
-বাবা যেতে মানা করেছে
-ওহহ আচ্ছা ঠিক আছে
-মন খারাপ করলেন?
-না না মন খারাপ হবে কেনো? আচ্ছা তাহলে আমি কোচিং এ যাই। কোচিং মিস দিয়ে তো লাভ নেই
-নাহহ বাসায় থাকেন
-না বাসায় থেকে কি করবো?
-আমরা আড্ডা দেই
-না না
,,
খাবার অর্ধেক প্লেটে রেখেই উঠে আসলাম৷ রুমে এসে নিজের কাছে খুব খারাপ লাগছিলো। ইরার উপর শুধু শুধু রাগ দেখানো টা ঠিক হয়নি৷
আসলে আমি খুব এক্সাইটেড ছিলাম তাকে নিয়ে ঘুরবো বলে। আমার আশার আলোয় পানি পড়ায় আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিলো।
,,
কিছুক্ষণ পর ইরা আমার রুমে এসে বলল...
-আমি বাবাকে রাজি করিয়ে কাল বের হবো (ইরা)
-না, সরি আমি আসলে একটু বেশি বেশি করে ফেলেছি। আপনি এখানে এসে বসেন৷
,,
ইরা বিছানায় বসলো। আমি জানালার ধারে চেয়ার পেতে বসে খাটের উপর পা তুলে রেখেছি।
-আচ্ছা আপনি কি শারিরীক ভাবে অসুস্থ? (আমি)
-আমি জানি না, বাবা জানে (ইরা)
-আপনারা এখানে কেনো আসছেন?
-আমি সেটাও জানি না
-তাহলে কি জানেন?
-আমি কিছু জানি না বাবা জানে
-আমি আপনার উপর যে রাগ দেখাই আপনার তো বিরক্ত হওয়ার কথা। বা আমার থেকে দূরে থাকার কথা আপনি সেটা করেন না কেনে?
-আমি জানি আপনি এইরকমই
-কে বলেছে??
-আন্টি
-ওহহ
,,
দুজন কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে ছিলাম। ইরা নিচের দিকে তাকিয়ে নিজের হাতের আঙুল দেখছিলো। আমি একবার জানালা দিয়ে বাইরে তাকাই আরেকবার তার দিকে তাকাই। সে কি করে সেটা দেখার
চেষ্টা করি। আমার বার বার আড় চোখে তাকানো সে টের পেয়ে যায়৷
তবে ইরা এটা নিয়ে কিছু বলে না৷
কিছুসময় চুপ থাকার পর বলল...
-কোচিং এ যাবেন না? (ইরা)
-উহুমমম (আমি)
-কেনো?
-আমি কোচিং এ গেলে আপনাকে সময় দিবে কে?
-বাসায় তো আন্টি আছে
-আমি বাসায় থাকলে আপনার কাছে বেশি ভালো লাগবে, এটা বুঝি। আন্টি আপনার কাছে থাকা আর না থাকা একই কথা
-এহহহ এমনি একটা বললেই হলো
-যেটা বাস্তব সেটাই বলেছি
-আপনি একটু বেশি বেশি বলেন
-হুমম সত্যি কথা বললেই তো দোষ
-হয়েছে হয়েছে
-এই দেখেন রোদ ডুবে গেলো, আকাশে আবার মেঘ করেছে। আবার সেই বোরিং বৃষ্টি
-বৃষ্টি আমার খুব ভালো লাগে
-আমার যে খারাপ লাগে তা না। ভালো লাগে, কিন্তু এখানে বৃষ্টি একটু বেশি হচ্ছে
-বৃষ্টি ছাড়া পাহাড় তার আসল রূপ পায় না৷
-তা ঠিক। আচ্ছা আপনি একটু বসেন আমি পাশের রুমে থেকে আসছি
-আমার একা একটা রুমে থাকতে ভয় করে
-আমি এখনই আসবো
-আচ্ছা
,,
আমি পাশের রুম থেকে দুটো ছাতা নিয়ে তার সামনে এসে বললাম।
-রাস্তায় চলুন বৃষ্টি দেখবো (আমি)
-এখান থেকেই তো দেখা যাচ্ছে (ইরা)
-বাইরে চলুন অসাধারণ একটা জিনিস দেখাবো। দেখলেই আপনার ভালো লাগবে
-বাবা যে বাইরে যেতে মানা করেছে
-বেশি দূর না৷ এখান থেকে যাস্ট এক মিনিট। রাস্তার মোড় ঘুরলেই হবে
-আচ্ছা
,,
দুজন ছাতা নিয়ে বের হলাম। আমার উদ্দেশ্য হলে তাকে একটা ঝর্ণা দেখানো যেটা রাস্তার পাশেই। কাছেই একটা বড় পাহাড় থেকে বৃষ্টির সময় প্রচুর পানি প্রবাহিত হয়। এই ঝর্না টা শুধু বৃষ্টির সময়েই দেখা যায়।
,,
ইরা আমার পাশেই হাঁটছে। তাকে নিয়ে বৃষ্টির সময় হাঁটতে কি যে ভালোলাগা কাজ করছিলো নিজের মধ্যে সেটা লিখে বোঝানো যাবে না৷
আমি তাকে নিয়ে সেই স্থানে যখন পৌঁছে গেলাম তখন সে ঝর্ণার দৃশ্য টা দেখে খুব অবাক। মুখে খুব প্রশংসা করলো। সাথে আমাকেও ধন্যবাদ জানালো।
,,
কিছুক্ষণ সেখানে দুজন দাঁড়িয়ে থাকার পর...
-আমার ভালো লাগছে তাড়াতাড়ি বাসায় চলুন (ইরা)
-আরেকটু থাকি (আমি)
-না না আরেকটু থাকলে মাথা ঘুরে পরে যাবো। আমি চোখ মেলে তাকাতে পারছি না৷ বাসায় যাবো আমি....
।।
।।
।।
অতিথি তুমি
Part : 3
Write : Sabbir Ahmed
_____________________________
-আরেকটু থাকি? (আমি)
-না না আরেকটু থাকলে মাথা ঘুরে পরে যাবো। আমি চোখ মেলে তাকাতে পারছি না৷ বাসায় যাবো আমি (ইরা)
,,
ইরার অবস্থা দেখে আর দেড়ি করলাম না। তাকে নিয়ে বাসায় আসলাম। উনি বাসায় এসে উনার রুমে গেলো। তারপর কি হয়েছে আমি সেটা জানি না৷
,,
মা বাসায় আসার পর মাকে বললাম আমাদের বাইরে যাওয়ার কথা, আর সেখানে ইরার অসুস্থ হয়ে যাওয়ার কথা। মা আমাকে যা শোনালো তার জন্য আমি একদমই প্রস্তুত ছিলাম না।
মা বলল ইরা মাত্র কয়েকটা মাস পৃথিবীতে আছে, তারপর আর থাকবে না৷ মা আরও বলল ইরা ঘুরতে খুব ভালোবাসে তাই নাকি এখানে ঘুরতে নিয়ে আসছে৷
-আচ্ছা মা ভালো কোনো চিকিৎসা করলে সে সুস্থ হয়ে উঠবে না? (আমি)
-না রে সেসময় পার হয়ে গেছে (মা)
-তাকে দেখে তো অসুস্থ মনে হয় না
-হুমমম, এখন সবটুকু আল্লাহ ভরসা। হায়াত থাকলে ক্যান্সার ভালো হয়ে যাবে, না হলে মারা যাবে।
-কিন্তু ওর তো বয়স কম, এতো তাড়াতাড়ি মারা যাবে কেনো?
-মৃত্যুর কোনো বয়স নেই, সময় নেই
-হুমমম
-তুই ওকে নিয়ে যেন বের হস না, দেখিস না ও একদম আস্তে ধীরে কথা বলে।
-হুমমম
,,
আমি আমার রুমে এসে থ হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। মেয়েটাকে যে ভাবতে ভাবতে অনেকটা ভালোবেসে ফেলেছি সেটা এখন বুঝতে পারছি। আমার তো এখন হারানোর ভয় করছে।
,,
হার্টবিট আগের চেয়ে বেড়েছে। স্বাভাবিক হয়ে শুয়ে থাকতে পারছি না৷ কিছুক্ষণ শুয়ে থাকার পর উঠে বাইরে চলে যাবো তখনই রুমে ইরার প্রবেশ..
-কোথাও যাচ্ছেন? (ইরা)
-...(কিভাবে তাকে বলব যে তার জন্য আমার মন এখন এলোমেলো হয়ে গেছে)
-কি হলো?
-না না কোথাও যাচ্ছিলাম না
-আসলে সরি, হুট করে বাইরে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লাম
-সমস্যা নেই, আগেই বাসায় এসেছি এটাই ভালো হয়েছে। আপনি এখন কেমন আছেন?
-এখন ভালো লাগছে। আর জানেন বাবা কল করেছিলো
-কি বলল?
-আজ আংকেল এর সাথে কোথায় যেন গেছে, কাজে ব্যস্ত হয়ে গেছে।
ফিরতে ফিরতে কাল সন্ধ্যায়। আমি বললাম আমরা তো ঘুরতে আসছি, আর তুমি আংকেল এর সাথে ঘুরে সময় নষ্ট করছো
-পরে কি বলল?
-সরি বলল। আর আমি বলেছি আমি কাল আপনার সাথে ঘুরতে যাবো
-রাজি হয়েছে?
-হুমমম
-আমার কলেজ?
-আবার ছুটি যাক
-হুমমম
-কাল সকালে তাহলে বের হবেন হ্যাঁ?
-আচ্ছা, আপনি এখন ভেতরে এসে বসুন
-না, সমস্যা নেই
-না আসুন
-আপনি মনে হয় বাহিরে যাচ্ছিলেন,
-বললাম তো না
-হুমমম
,,
ইরা ভেতরে এসে বসলো।
তাকে পাশে বসিয়েও আমি স্বাভাবিক থাকতে পারছিলাম না৷ তার কথা ভেবে বার বার চোখে পানি চলে আসছিলো। নিজেকে একটু স্বাভাবিক করে বললাম..
-চা খাবেন? (আমি)
-আবার চা? আপনি কি খুব চা পছন্দ করেন? (ইরা)
-নাহহ
-তাহলে এতো চা চা করেন কেনো?
-আপনার সঙ্গে খেতে ভালো লাগে
-এখন আমার চা খেতে ইচ্ছে করছে না
-তাহলে কি খাবেন?
-খাওয়ার চ্যাপ্টার বাদ, আপনার সাথে একটু গল্প করি
-হুমমম
-আমার দিকে ঘুরে বসুন, উল্টো পাশে বসে থাকলে কথা বলে মজা পাবো না
,,
তার কথামতো ঘুরে বসলাম। সে আমাকে দেখে বলল...
-আপনার কোনো কারণে মন খারাপ? (ইরা)
-কই না তো (আমি)
-আপনার চোখ দেখে মনে হচ্ছে এখনি কান্না করে দিবেন
-আরে না না এমনি
-এখানে আসার পর আপনার এমন ফেস আমি দেখিনি, সবসময় হাসি মুখেই দেখেছি
-এখনো তো হাসিমুখেই আছি (আমি একটু হাসার চেষ্টা করে)
-হয়েছে জোর করে হাসতে হবে না। নিশ্চয়ই জি এফ এর সাথে ঝগড়া হয়েছে
-এহহহ জি এফ পাবো কই?
-আমার থেকে লুকোতে হবে না৷ আমার সাথে এতো তাড়াতাড়ি মিশে গেছেন, না জানি কতো মেয়ের সাথে মিশেছেন কে জানে
-না না আমি এমন না
-হে হে আমি জানি কেমন
-আপনাকে দেখেই আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি
,,
আমার কথাটা শুনেই ইরার হাসিমাখা মুখটা মলিন হয়ে গেলো। আমি আরও বললাম..
-আপনার অসুস্থতার কথা আমি জানি। কিন্তু আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। আপনি এভাবে আমার জীবনে আসবেন, আবার হুট করেই....(পুরে কথা বলার আগেই ইরা রুম চলে গেলো)
,,
আমি ছুটলাম তার পিছু, এমনকি তার রুম অব্দি চলে গেলাম।
-আপনি এসব কথা আমাকে কেনো বলছেন? আপনি আপনার মতো থাকেন(ইরা)
-আমাকে একটু বোঝার চেষ্টা করেন(আমি)
-দেখেন আমি এখানে আসছি কিছুদিন এর জন্য৷ আর আমি অসুস্থ আমার কি হবে আমি জানি না। এর মধ্যে আপনি এসব কি বলছেন??
-আমি কথাটা না বলে থাকতে পারছিলাম না
-আপনি এসব কথা বলবেন না আপনি চলে যান
-আচ্ছা বলব না। চলেন আড্ডা দিবো
-এখন কিছুই ভালো লাগছে না, আপনি যান এখান থেকে
-না আমি যাবো না
,,
ইরা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসলো।
আমি তেড়ি ধরে রুমেই দাঁড়িয়ে থাকলাম। কিছুক্ষণ পর পর সে বলছিলো "আপনি যাচ্ছেন না কেনো "
তার কথার প্রত্যেক বারেই আমার উত্তর ছিলো "আপনায় ছেড়ে কোথাও যাবো না"
-আমার এমন অবস্থা যেনেও আমার সম্পর্কে এসব আপনার মনে ধারণ করলেন কিভাবে? (ইরা)
-যখন আপনি আমার মনের মধ্যে এসেছেন, তখন এসব আমি জানতাম না
-এখন তো জেনেছেন। এখন আপনার উচিত এগুলো থেকে দূরে সড়ে যাওয়া
এতে আপনারই ভালো হবে
-নাহহহ
-আপনি এমন করলে আমি কিন্তু খারাপ ব্যবহার করতে বাধ্য হবো
-করেন খারাপ ব্যবহার তবুও যাবো না
-এমন শুরু করলেন কেনো?
-ভালোবাসি
-আবার!
-হুমমম
-আমাকে আরও অসুস্থ করে দিবেন আপনি
-....(আমি একটু থামলাম)
-আপনি এমন করলে আমরা কালই চলে যেতে বাধ্য হবো
-যেতে দিবোই না, আমি আটকে রাখবো
-আন্টি জানলে ধরে মাইর শুরু করবে
-কিছু হবে না
-আমাকে যে ভালোবাসেন এটা আন্টিকে গিয়ে বলেন দেখেন আপনার অবস্থা কি করে। আপনি বলারই সাহস পাবেন না
-আচ্ছা আমি বলব। তবে শর্ত আছে
-কি শর্ত?
-আমি যা বলব তাই করতে হবে
-ওকে ওকে, আন্টি কে বলে দেখান
-হুমম যাচ্ছি
,,
আমি মায়ের কাছে যাচ্ছিলাম সে পেছন থেকে ডাকছিলো এই ছেলে এই। কে শোনে কার কথা। আমি যাচ্ছিলাম মায়ের কাছে। আমি জানি এসব কথা এই সময়ে গুরুজনদের বলা কেমন যেন দেখায়। তবে কিসের টানে, কি এক অদ্ভুত কারণে এসব পাগলামো করছিলাম, তার সঠিক কারণ বের করতে পারছিলাম না৷
,,
-একটা কথা ছিলে (মায়ের কাছে গিয়ে বললাম)
-কি বলবি বল (মা)
-আমি ইরাকে ভালোবেসে ফেলেছি
,,
মা আমার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলো। উনার হাতে একটা চামচ ছিলো সেটা এখন আমার দিকে ছুঁড়বে কি না আমি সেই ভয়ে ছিলাম।
অবাক করা বিষয় হলো উনি কিছু ছুঁড়লেন না৷ আমার চোখে সিরিয়াসনেস দেখে হয়তো উনিও সিরিয়াস ভাবে নিয়েছেন।
মা এগিয়ে এসে বলল..
-কি সব বলতেছিস? এসব বিষয় নিয়ে মজা করবি না (মা)
-মা আমি সত্যি বলছি, তুমি আমার কথা শুনে বুঝতে পারছো না?
-তোর বাবা শুনলে কি হবে বুঝতে পারছিস?
-আমি বাবাকে বলব
-আরে শোন শোন তোর বাবা শুনলে সে যাই করুক। ইরার বাবা শুনলে কি ভাববে? এমনিতে ওরা একটা বড় বিপদের মধ্যে আছে৷ মেয়েটা আসছে এখানে ঘুরতে তুই এসব কথা তোর বাবাকে বলিস না
,,
মায়ের কথা শুনে আমি অবাক৷ এর আগে যাই বলেছি উনি আমাকে তেড়ে মারতে আসছেন। আর আজ কত সুন্দর করে বুঝিয়ে বলছেন সব। মায়ের সব কথা আমার মাথায় উপর দিয়ে যাচ্ছিলো। বাবাকে কথাটা বললে পরবর্তী ফলাফল কি হবে সেটা উনি বলেই যাচ্ছিলো। আমি শুনে না শোনার ভান ধরলাম। কিছুক্ষণ বক্তব্য শুনে আবার ইরার কাছে চলে গেলাম।
-আমি মা কে সব কথা বলেছি(আমি)
-আড়াল থেকে আমি সব শুনেছি (ইরা)
-এখন আমার কথা শুনতে হবে
-তার আগে বলেন, এভাবে কেউ কিছু করে? এতো উতালা কেউ হয় না
-আমি আপনার থেকে কোনো জ্ঞানমূলক কথা শুনতে চাই না
-তাহলে কি চান?
-ভালোবাসতে দিবেন???
।।
অতিথি তুমি
END PART
Write : Sabbir Ahmed
____________________________
-তাহলে কি চান? (ইরা)
-ভালোবাসতে দিবেন? (শুভ)
-আবারও সেই একই কথা। দেখেন আমি সুস্থ না, ডাক্তার এর রিপোর্ট অনুযায়ী আমার বাঁচার সম্ভাবনা কম
-রিপোর্টে ভুল আছে, আপনাকে যে ঔষধ গুলো দিয়েছে সেগুলো খেলেই ঠিক হয়ে যাবে
-আপনি বেশি ছেলেমানুষী করছেন৷ এটা কিন্তু ঠিক না। আমি আপনাদের মেহমান। মেহমানের সাথে কেউ এমন করে?
-আমাকে কি বাচ্চা পেয়েছেন? ভুলভাল একটা বুঝ দিয়ে থামিয়ে রাখবেন? পৃথিবীতে যদি আপনি চারদিনও বেঁচে থাকেন সেই চারদিনই আমি আপনার পাশে থাকবো আপনার হয়ে
-মানে?
-আমি বিয়ের ব্যবস্থা করবো, আপনি শুধু একবার রাজি হন
-আরে কি বলেন আপনি! মাথা ঠিক আছে আপনার? আমি আগে সুস্থ হয়ে নেই তারপর
-সুস্থ হওয়া লাগবে না,
-দেখেন এমন করলে আপনি অনেক কষ্ট পাবেন। কিছুদিন পর তো আমি মরেই যাবো
-বললেই হলো নাকি?
-রিপোর্ট তো সেটাই বলে
-ভুল বলে, আপনি সুস্থ হয়ে উঠবেন
-হ্যাঁ সে সম্ভাবনা আছে, তবে খুব কম
-কমটাই কাজে দিবে
-আচ্ছা আমি সুস্থ হলে আপনার বিষয় টা ভেবে দেখব
-আর এখন?
-এখন কিছু বলতে পারবো না
-না না আমি এখন বিয়ে করবো
-এমন কেনো আপনি?
-আপনার জন্য?
-এতো উতালা হয়েছেন কেনো?
-আপনার অনেক সেবাযত্ন দরকার। আর আমি সেটা আপনার খুব কাছে থেকে করতে চাই
-হুহহহ, আপনি যেটা চাচ্ছেন সেটাতে কেউ রাজি হবে না
-রাজি করানের দায়িত্ব আমার, শুধু আপনি হ্যাঁ বলেন তাতেই হবে
-এখানে এসে আরেক বিপদে পড়েছি আমি
-বিপদ না, আপনিও আমাকে ভালোবাসেন
-কচু বাসি
-জানি আমি
-আপনি বিশাল এক ভেজাল লাগিয়ে দিবেন। বাবা এটা শুনলে কি যে করবে কে জানে। এসব শুনে নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হয়। উনি রাজি না হয়ে যদি এখান থেকে আমাকে নিয়ে যায় তখন?
-আপনিও ভয় পাচ্ছেন। আমি আমার উত্তর পেয়ে গেছি। আমি বিয়ের ব্যবস্থা করি
-এই না না ওয়েট ওয়েট
-বলেন
-তাড়াহুড়ো কেনো করেন?
-আমি আপনার থেকে দূরে থাকতে চাই না৷
-শোনেন বাবা আংকেল তো কাল বিকেলে আসবে তখন বইলেন। এখন একটু শান্ত হন
-হুমমম
-চেয়ার দেই বসবেন???
,,
ইরার কথায় চেয়ারে বসতে যাবো ঠিক তখনই মা এসে হাজির...
-শুভ একটু আমার রুমে আয় (মা)
-এখন যাবো না (আমি)
-আমি আসতে বলেছি
-এখন গেলে তুমি আবার মাইর দিতে পারো, আমি যাবো না
-তোর কেনো মনে হলো তোরে মাইর দিবো?
-আমি পূর্বাভাস বুঝতে পারি
-ভালোই বুঝেছিস। আমি আড়াল থেকে তোদের কথা শুনলাম। তুই ওরে এতো বিরক্ত করছিস কেন? (অনেক রেগে)
-না না আন্টি আমি রা রাজি (ইরা ভয়ে ভয়ে বলে ফেলল)
,,
আমি আর মা দুজনই অবাক। ইরা এইভাবে রাজি হওয়ার জন্য। ইরা এখন কিছু না বললে মা সত্যি সত্যি কেলানি দিতো।
মা আর দাঁড়িয়ে থাকলো না চলে গেলো। আমি মনে মনে খুব ভয়ে আছি। কারণ কাল যে কি ঘটবে। ইরার বাবার মনের অবস্থা ভালো নেই। মেয়েকে নিয়ে টেনশনে তার মধ্যে আমি এসব পাকিয়ে ফেলেছি। আমার চুপচাপ থাকা দেখে ইরা বলল...
-এই কি ভাবছেন? (ইরা)
-কই কিছু না (আমি)
-আবার পিছু হটবেন নাকি?
-এহহহ আমি এ ব্যাপারে সিরিয়াস
-....(ইরা মুচকি হাসছে)
-হাসেন কেনো?
-আপনার হাব ভাব সিরিয়াসনেস দেখে
-কেনো? আপনি সিরিয়াস না?
-একটু একটু
-একটু কেনো? অনেক হওয়া লাগবে
-আপনি ঘূর্ণিঝড় এর মতো যা শুরু করছেন আমি যে আপনাকে নিয়ে কিছু একটা ভাববো তার সময় কই?
-বিয়ে টা হোক তারপর ভাববেন
-আর যদি না হয়। ধরেন বাবা আমাকে নিয়ে দেশে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে, তখন কি করবেন?
-আমার রুমের জানালা থেকে যে দূর পাহড়ের ঝর্ণা টা দেখা যায়, সেখানে যাওয়ার খুব ইচ্ছে আমার। সেখানে গিয়ে পাহাড় থেকে লাফ দিয়ে হারিয়ে যাবো
-ওরে ওরে ওরে ভালোবাসা। হয়েছে এসব কথা বলতে হয় না৷ এখন রুমে যান
-না আমি আপনার সাথেই থাকবো
-আমার ভালো লাগছে না আমি একটু শুয়ে থাকবো
-আপনি শুয়ে থাকেন, আমি আপনার পাশে বসে থাকবো
-আপনি যাবেন না?
-না
-নাছোড়বান্দা
-হুমম অনেক আগে থেকেই
,,
পরদিন সকাল সকাল ইরাকে নিয়ে ঘুরতে বের হই। আগের দিনই ইরা তার বাবার কাছে থেকে অনুমতি নিয়ে রাখেছিলো। বেশ কয়েকটা জায়গা ঘুরে দেখার পর দুজন ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরি দুপুরের পর পর।
,,
-কয়েকদিন হলো কলেজ নেই লেখাপড়া নেই, তুই আছিস শুধু তার পেছনো (মা)
-সে বেশি ইম্পর্টেন্ট (আমি)
-আমি বললে তো শুনবি না, তোর বাবা আসুক আজ বুঝবি
-আমি বাবাকে ম্যানেজ করে নিবো
-হে দেখবোনি কত পারিস
,,
বাবা আর আংকেল সন্ধ্যায় বাসায় ফেরে। মা আগেই বাবাকে আগাম কিছু বলে রেখেছিলো আমার আর ইরার ব্যাপারে। এখন রাত নয়টা ইরা আর আমাকে নিয়ে আলোচনায় বসেছে মা, বাবা আর আংকেল।
আমি আমার রুম থেকেই তাদের আলোচনা শুনছিলাম।
,,
প্রায় আধ ঘন্টা আলোচনা হলো।
ইরার বাবা এ ব্যাপারে কোনোমতেই রাজি হলেন না। আমার বাবাও নারাজ। তবে মা ঠিকই রাজি ছিলো।
শেষমেশ ইরার বাবা ডিসিশন নিলো তারা কাল পরশু চলে যাবে।
,,
বাবার মুখের উপর কিছু বলার সাহস নেই। পরিস্থিতি যা দেখছি সেটা উন্নতি হওয়ার কোনো চান্স নেই।
আমার শেষ ভরসা ইরা। ও যদি আমার সাথে থাকতে রাজি হয় তাহলে ঠিকঠাক হবে।
,,
কিন্তু ওর মত নেওয়ার জন্য ওরে ডাকছে না কেউ। সবাই আলোচনা শেষ করে যখন উঠে যাচ্ছিলো তখন ইরা তাদের মাঝে প্রবেশ করলো। সে যা বলছিলো...
-আমার কিছু কথা আছে, আন্টি শুভ কে ডাকুন (ইরা)
,,
আমি দরজা থেকে সড়ে গিয়ে বিছানার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। তাদের কথা যে আমি শুনছি না এটা বোঝানের চেষ্টা করলাম।
মা রুমে আসলো আর আমাকে সাথে ড্রয়িং রুমে নিয়ে গেলো।
,,
রুমে গিয়ে দেখি ইরা তার বাবার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। ইরার বাবা আর আমার বাবা একবার করে লুক দিলেন আমার দিকে। আমি অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে রইলাম।
-আচ্ছা যে কথাটা আমি বলতে চাচ্ছিলাম সেটা বলি? (ইরা)
-হ্যাঁ তুমি বলো (মা)
-বাবা তোমার কাছে থেকে আমি যা চেয়েছি সেটাই পেয়েছি। আমি এতদূর ঘুরতে আসতে চেয়েছি তুমি নিয়ে আসছো। আরও অনেক জায়গায় নিয়ে গেছো। এখন আমার শেষ একটা চাওয়া,এই ছেলের সাথে আমার বিয়েটা দিয়ে দাও। আমার মনে হচ্ছে সে আমার কাছে থাকলে আমি ভালো থাকবো (ইরা তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল)
-কিন্তু মা তোমার তো সমস্যা, তুমি তো সুস্থ না। এর মধ্যে যদি ওর জীবন টা পেঁচিয়ে নাও তাহলে..
-বাবা আমি সবদিক থেকে শুভকে
বুঝিয়েছি। সে সব জেনেশুনেই আমার কাছে থাকতে চেয়েছে।
-কিন্তু এটা...
-বাবা আমি রাজি। এই তুমি কিছু বলো না কেনো? (ইরা আমাকে উদ্দেশ্য করে)
-হ্যাঁ আমি আপনার সাথে থাকতেই রাজি
-..(দেখ আমি বলি তুমি আর সে বলে আপনি) [ইরা দাঁড় কিড়মিড়িয়ে বিড়বিড় করে বলল]
,,
এরপর আরও কিছু কথা হলো। শেষ পর্যন্ত আমি আর ইরা জিতে গেলাম। তারা আমাদের প্রস্তাবে রাজি হয়েছে।
ইরার বাবা ইরাকে এখানে রেখেই কাল দেশের উদ্দেশ্য রওনা হবে।
,,
উনি কিছুদিন পরে এসে আবার আমাদের সবাইকে দেশে নিয়ে যাবেন। আমি আর ইরা তো খুব খুশি৷
পরদিন ইরার বাবা চলে যাওয়ার পর মা বলল..
-তুই অনেকদিন হলো কলেজ যাচ্ছিস না, আজকে যেতে হবে (মা)
-ইরাকে নিয়ে যাই??(আমি)
-সব জায়গায় বৌমাকে নিয়ে যেতে হবে কেনো? ও অসুস্থ ও বাসায় থাকুক
-বাইরে নিয়ে গেলেও আমি খেয়াল রাখবো
-ইরাকে নিয়ে গিয়ে ক্লাস করবি তো? নাকি ফাঁকিবাজি করবি?
-না না আমি ক্লাস করবো
-ঠিক আছে তাহলে নিয়ে যা
,,
দুজন বাসা থেকে বের হয়েই কলেজের বিপরীতমুখী রাস্তায় নেমে পড়লাম। দুজন একটা নিরিবিলি জায়গা দেখে রাস্তার পাশে বসলাম।
এই রাস্তায় গাড়ি চলাচলের সংখ্যা অনেক কম হওয়ায় ভালোই সময় কাটানো যায়।
-যাক আমাদের একটা ব্যবস্থা হলো তাই না? (ইরা)
-হুমম একটা ব্যবস্থা হলো। আর আপনি তো পুরো আমাকে সারপ্রাইজ দিয়ে দিলেন (আমি)
-সব তো আমি করলাম। আপনি তো পারেন শুধু আমার সাথে জোর খাটাতে বড়দের সামনে তো কিছুই বলতে পারলেন না। আমি যদি না বলতাম এতক্ষণে আমি দেশে থাকতাম
-হুমমম তা ঠিক পুরো ক্রেডিট টাই আপনার
-কোনো ক্রেডিট দিতে হবে না। আপনি আরেকটা মেয়ে খোঁজা শুরু করুন
-কেনো?
-কিছুদিন পর তো আমি শেষ হয়ে যাবো
-ঐ দেখ আবার এলোমেলো কথা শুরু করেছে। ইনশাআল্লাহ কিছু হবে না
-আর আমার ভালে করে সেবা যত্ন করবেন৷ না হলে আপনার কপালে দুঃখ আছে। আপনি গতপরশু রাতে এসব কথা বলেছেন। কোনো কথাই যেন ভুলে যান না আবার
-না আমি ভুলিনি, আর ভোলার প্রশ্নই উঠে না
-আরেকটা কথা
-কি??
-আমাকে অতিথি করে রাখতে হবে
-যেমন??
-অতিথিদের তো অনেক আদর আপ্যায়ন করে। তবে দূর থেকে, আমাকে ঠিক সেভাবেই করবেন। আর আমি তো কিছুদিন পর মারা সেই হিসেবে আপনার জীবনে তো আমি অতিথি তাই না?
,,
আমি ইরার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। তার মুখে বার বার চলে যাওয়া মারা যাওয়া শব্দ গুলো সহ্য হচ্ছিলো না আমার৷
সেই জায়গা থেকে পুরো রাস্তা ইরা আমার রাগ ভাঙাতে ব্যস্ত ছিলো।
সে বার বার বলছিলো এমন কথা সে আর বলবে না, কিন্তু কেন জানি আমি তার কথার কোনো উত্তর করলাম না।
,,
রাত টা কথা না বলেই পার হলো। আমি ইচ্ছে করে তার রুমে যাই নি রাতে। মা সকালে আমাকে ডেকে তুললেন। আমি ঘুম থেকে উঠে বিছানায় বসে বললাম..
-কি হয়েছে বলো (আমি)
-রুমে ইরা (মা কথাটা বলে থেমে গেলো)
-কি হয়েছে?
-ইরাকে ডাকলাম কথা বলছে না, অনেক ডেকেছি তবুও কথা বলছে না। মেয়েটার হাত পা অনেক ঠান্ডা
,,
মায়ের কথা শুনে ইরার রুমে গেলাম।
ইরাকে দেখে মনে হলো সে আর নেই।
মা কান্না করতে লাগলে। মায়ের কান্নায় বাবার ঘুম ভাঙে উনি আসলেন ডক্টর কে কল করলেন।
আমি শুধু মনে মনে বলছিলাম এমন কিছু যেন শুনতে না হয়। বার বার দোয়া পড়ছিলাম।
,,
কিছুক্ষণ পর ডক্টর এলেন আর ইরাকে মৃত ঘোষণা করলেন।
আমার এতটুকুই মনে ছিলো সেইদিন আর কি হয়েছিলে আমার জানা নেই।
মায়ের কাছে শুনেছিলাম ইরাকে সেইদিন নাকি দেশে নিয়ে যাওয়া হয় আর সেখানে তার দাফন কাফন সম্পন্ন হয়।
,,
ইরা মারা যাওয়ার ছয়দিন এর মাথায় আমি স্বাভাবিক হই। আমি আমার অতিথিকে ছাড়া আধো পাগল হয়ে সেইদিন যেখানে শেষ তার সাথে কথা বলছিলাম সেখানে বসে থাকি।
প্রতিটা সেকেন্ড তার কথা মনে পরে আর আমার ভেতরটা পুড়তে থাকে। আমি সেদিন কেনো তার কথার উত্তর করলাম না। সে কতো অনুনয়-বিনয় করলো আমি তবুও শুনিনি তার কথা।
হয়তো আমার সাথে অভিমান করে চলে গেছে। আমি এখন কিভাবে বাঁচবো আমার অতিথি কে ছাড়া?
তার কথা ভাবতে ভাবতে হয়তো একদিন দূর পাহাড়ে সেই ঝর্ণার কাছে যাবো। আমি বলেছিলাম সেটা আমার প্রিয় জায়গা। হয়তো অতিথি সেখানে আসে আমার সাথে দেখা করতে।
তাই মনে মনে আমিও ঠিক করি আমিও চলে যাবো অতিথির কাছে একেবারে......
,,
,,
,,
,,
,,
,,
,,
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,END,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,