পর্বঃ১ +২
লেখাঃ moyej uddin
.
ইদানীং আফতাফ চৌধুরী তার পুত্রদের নিয়ে খুব চিন্তিত হয়ে রয়েছেন। আফতাফ চৌধুরীর তিন পুত্র। আকাশ চৌধুরী, মেঘ চৌধুরী, রৌদ্র চৌধুরী। তিন পুত্রই দেখতে মাশাল্লাহ মারাত্মক সুদর্শন। বড় ছেলে আকাশ চৌধুরী পেশায় একজন ডাক্তার। বয়স ছাব্বিশ ছুঁই ছুঁই। শুধুমাত্র পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ছাত্রজীবনে প্রেম করার সময় পায়নি। মেডিকেলের অনেক সুন্দরী তরুণীরা তার পিছু পিছু ঘুরেছে। এমনকি এখনো তার বাড়িতে মেয়ের বাবারা তার সাথে বিয়ে দেয়ার জন্য বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসেন। অতিরিক্ত বিয়ের প্রস্তাব সামলাতে সামলাতে আফতাফ চৌধুরী হিমশিম খান। রোজ রোজ বিভিন্ন মেয়ের বাড়ি থেকে টেলিফোন আসে৷ কিন্তু আকাশের মতামত ছাড়া তো আর বিয়ের দিকে এগোনো যায় না। বহু নারী আকাশের মন জয় করার জন্য পাল্লা দিয়ে উঠেছে। কেউ কেউ আকাশের রুপের পাগল আর কেউ কেউ তার উজ্জ্বল ক্যারিয়ারের। তাদের একটাই লক্ষ্য আকাশের সাথে প্রেম করা।
আকাশ রুগী দেখার জন্য চেম্বারে এসে বসলো। মধ্য বয়স্ক এক ভদ্রলোক একটা অল্পবয়সী মেয়েকে নিয়ে চেম্বারের ভিতরে এসে বসলেন। উনার শুকনো মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি উনার মেয়েকে নিয়ে খুবই চিন্তিত।
সব গুলো রিপোর্ট দেখে আকাশ বলে উঠল, সব কিছু তো নরমালই আছে।
মেয়েটা আকাশের দিকে তাকিয়ে খিলিখিল করে হাসতে হাসতে বললো,আমার কোনো সমস্যা নেই তো! আপনি শুধু শুধু সময় নষ্ট করছেন।
ভদ্রলোকঃ আমার মেয়ে অহনা রুমের ভিতর একা একাই নিজের সাথে কথা বলতে থাকে।সব সময় অদ্ভুত আচরণ করে। ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ছে। সারাদিন বই নিয়ে পড়ে থাকে।পড়াশোনা ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না!কতবার বলেছি একটু বাহিরের হাওয়া বাতাস লাগা। কিন্তু কারো কোনো কথাই শোনে না।
আকাশঃ হুম বেশি পড়াশোনার চাপেই হয়তো এমনটা হয়েছে।
ভদ্রলোকঃ বাড়ি থেকে ওকে এখন বিয়ে দেওয়ার কথা বলছে। রোগ বেড়ে গেলে যদি আর কেউ পাগলী ভেবে বিয়ে না করে৷
আকাশঃ দেখুন ওরকম পড়াশোনা আমিও করেছি। আমাদের দেখতে হবে ওর আচরণের ধরনটা কেমন। তারপর সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আপাতত ওকে কয়েকদিন পড়াশোনা থেকে দূরে রাখতে হবে। আমরা উনাকে হাসপাতালে এডমিট করছি৷
অহনাঃ উফ বাবা! আমার বান্ধুবিরা আমাকে বলেছে একটা প্রেম করতে। তাহলে নাকি আমি পড়াশোনা থেকে একটু দূরে থাকব। প্রেম নিয়ে ব্যস্ত থাকবো। হিহিহি আমি তো একটা প্রেম করার চেষ্টাই করছি! হাহাহা। আচ্ছা বাবা আমি যদি অনেক গুলো প্রেম করে ফেলি তাহলে আমি অনেক ব্যস্ত থাকবো তাইনা!
ভদ্রলোকঃ দেখুন হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে যাচ্ছে আমার মেয়ে! আপনি আমার মেয়েকে ভালো করতে পারলেন না?
আকাশঃ আমি কোনো কাজে ব্যর্থ হইনা। ভরসা রাখুন।
অহনা হাসতে হাসতে বললো, বাবা ডাক্তারটা খুব হ্যান্ডসাম তাইনা! আমার সাথে চলবে? আমি উনার সাথেই প্রেম করবো৷ করবোই করবো! আচ্ছা ডাক্তার, প্রেম কিভাবে করে?
.
অহনার বাবা এবার কান্নায় ভেঙে পরলেন। টেবিলের ওপর বারি দিতে দিতে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিলেন৷ উনার কান্নার শব্দে দুইজন নার্স ভিতরে চলে এলো। অহনা খিল খিল করে হেসেই যাচ্ছে৷
অহনার বাবাঃ দেখছেন তো ওর অবস্থা! দেখলেন তো!এসব জানাজানি হলে ওকে আর কে বিয়ে করবে চাইবে। অবস্থা তো যা খারাপ হওয়ার তা তো হয়েই গেলো। বাড়িতে ওর মা ওর চিন্তায় বার বার জ্ঞান হারাচ্ছে।
আকাশঃ আচ্ছা শান্ত হন৷ কাঁদবেন না। আপনার মেয়ের দায়িত্ব আমি নেব৷
.
এই কথা শোনার সাথে সাথে অহনার বাবার মুখ উজ্জ্বল হয়ে যায়। শুকনো মুখে হাসি ফুটে ওঠে। কারণ দায়িত্ব নেওয়ার কথাটায় উনি ভেবে নিয়েছেন ডাক্তার আকাশ চৌধুরী তার মেয়ে অহনাকে বিয়ে করবেন। মেয়েকে নিয়ে গিয়ে তিনি হসপিটালের একটা কেবিনে ভর্তি করালেন। আর বাড়িতে ফোন করে অহনার মাকে বললেন, অহনার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। ফোনে কথা বলার সময় একজন নার্স এই বিষয়ের সবটা শুনে ফেললো। আর সাথে সাথে সে গিয়ে হসপিটালের ম্যানেজারকে এই সংবাদটা দিয়ে দিলো৷
.
ম্যানেজার সাহেব ডাক্তার আকাশ চৌধুরীর বাড়িতে ফোন করলেন।
ম্যানেজারঃ স্যারতো একজন মানসিক রোগীকে বিয়ে করছেন। স্যারকে আটকান।
আফতাব চৌধুরীঃ কিহ! আমাদের না জানিয়েই বিয়ে করছে!
.
পাশেই আকাশের মা মনিরা বেগম দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি চেচিয়ে বললেন, কে বিয়ে করছে!
আফতাব চৌধুরীঃ তোমার বড় ছেলে নাকি তার হসপিটালেরই একটা রোগীকে বিয়ে করছে।
আকাশের মা চিল্লিয়ে বলছেন, এইসব হয়েছে তোমার জন্য! কবে থেকে বলছি ছেলের বিয়ে দেও। বিয়ে দেও! আমার কথা শুনলে আজ এই দিন দেখতে হতো না।
আফতাব চৌধুরীঃ চুপ করো তুমি!তোমার ছেলেরা তো কখনোই কোনো কথা শোনে না। শুনবে কিভাবে! লাই লাই দিয়ে তো ছেলেদের মাথায় তুলে ফেলেছো।
মনিরা বেগমঃ একদম আমার ছেলেদের নামে উল্টো পাল্টা কিছু বলবে না বলে দিলাম।
.
ওপর পাশ থেকে চেচামেচির আওয়াজ শুনে ম্যানেজার সাহেব তাড়াতাড়ি কলটা কেটে দিলেন। আকাশের বিয়ে নিয়ে প্রেমনগরের চৌধুরী মহল এখন খুবই উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে।
.
আফতাব চৌধুরীর মেজো পুত্র মেঘ চৌধুরী। ভার্সিটির বায়োলজি ডিপার্টমেন্টের খুবই অ্যাকটিভ ছাত্র।বয়স সবে চব্বিশ। তার সুন্দর চেহারা আর আকর্ষনীয় বডির প্রতি ভার্সিটির প্রতিটি মেয়ের নজর। বাইক নিয়ে যখন সে ক্যাম্পাসের ভিতরে ঢোকে, প্রতিটা মেয়ে তখন হা করে ড্যাবড্যাবিয়ে চেয়ে থাকে। চোখে সানগ্লাস,গালে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি আর মায়া মায়া ভরা হাসিটা দেখলে মেয়েদের বুকে ঝড় উঠে যায়। ল্যাবে ব্যস্ত থাকার সময় মেঘের মোবাইল ফোন বেজে উঠল। মেঘ একটু সাইডে গিয়ে কলটা রিসিভ করে।
ফোন রিসিভ করার সাথেই...
মনিরা বেগমঃ সর্বনাশ হয়ে গেছে বাবা! তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে আয়।
মেঘঃ কেন মা কি হয়েছে? ড্যাড কি কিছু করেছে?
মনিরা বেগমঃআরে না! আকাশ নাকি তার হসপিটালেরই এক রোগীকে বিয়ে করে ঘরে আনছে।
মেঘঃ হাহাহা....মা তুমি এসব কি বলছো। ভাইয়া এমন কাজ কখনোই করবে না। সো রিলাক্স থাকো। মা আমি একটু ল্যাবে কাজ করছি।তোমার সাথে এই বিষয়ে পরে কথা বলবো৷ এখন রাখি মাই ডিয়ার সুইট মাদার।
মনিরা বেগমঃ হ্যালো হ্যালো......ধ্যাত কেটে দিয়েছে।
.
মনিরা বেগম এবার ছোট পুত্র রৌদ্র চৌধুরীকে ফোন করলেন৷ রৌদ্র চৌধুরী দেখতে যেমন স্মার্ট তেমনি কথাবার্তাতেও বেশ স্মার্ট। তার রুপ আর কথার জাদুতে কয়েক সেকেন্ডের মধ্য যেকোনো অতি রূপবতী নারীও পটে যায়। বয়স মাত্র একুশ বছর। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে৷ এখনো পর্যন্ত কোনো প্রেম না করলেও মেয়েদের সাথে তার মেলামেশা প্রচুর। কিন্তু কেউ তার মনে জায়গা করে নিতে পারেনি। ফ্রেন্ড সারকেল নিয়ে হ্যাং আউট করার সময় মনিরা বেগম তাকে কল করেছেন৷ রিং হয়েই যাচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছে না। এভাবে কয়েকবার দেওয়ার পর রৌদ্র চৌধুরী যখন পকেট থেকে ফোন বের করে সেলফি ওঠাতে যাবে তখনই মায়ের কল আসছে দেখে সাথে সাথে সেটা রিসিভ করলো।
রৌদ্রঃ উম্ম সরি মামমাম ফোন সাইলেন্ট ছিল তাই দেখতে পাই নি৷ এখন আদেশ করুন আমার মাতা আমায় কি করতে হবে!
মনিরা বেগম এবার কড়া হয়ে ধমক দিলেন,কোথাই তুই! এক্ষুনি বাড়ি আয়৷
রৌদ্রঃকেন মা কি হয়েছে!
মনিরা বেগমঃ তোর ভাই তো কান্ড বাধিয়ে ফেলেছে। বাড়িতে গন্ডগোল চলছে। আকাশ হসপিটালের একটা রোগী মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে আসছে।
রৌদ্রঃ ওয়াট!ভাইয়াকে কিছু বলোনি?
মনিরা বেগমঃ বলার সুযোগ আর পেলাম কই। ফোনে তো ওকে পাচ্ছিনা। নিশ্চয়ই আমার ভয়ে বিয়ের খবরটা গোপন রাখতেই ফোন বন্ধ করে রেখেছে।
রৌদ্রঃ ওকে ওকে। আমি আসছি।টেনশন নিও না।
.
আকাশের ফোনে চার্জ নেই। বাহিরের কিছু কাজ সেড়ে,দুপুরের খাবার খেয়ে আবার চেম্বারে এসে বসলো। আর ফোনটা চার্জে লাগিয়ে দিল। নার্সটা চেম্বারের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,স্যার আসবো?
আকাশঃ হ্যা এসো ।
নার্সঃ স্যার আপনি কি সত্যি সত্যি বিয়ে করছেন?
নার্সের কথা শুনে আকাশের চোখ কপালে উঠে যায়।
আকাশঃ আমি বিয়ে করছি মানে! কি বলছো এসব!
নার্সঃ স্যার তখন যে রোগীটা এডমিট হলো যাকে আপনি দায়িত্ব নেয়ার কথা বললেন।
আকাশঃওহ হো আমি কি বিয়ে করার কথা বলেছি নাকি! আমি তো ওকে সুস্থ করার দায়িত্ব নিতে চেয়েছি।
নার্সঃ কিন্তু উনার বাবা যে উনার বাড়িতে ফোন করে বললেন আপনার সাথে উনার বিয়ে।আপনি উনার দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছেন। আর এটা শুনে তো আমিও...
আকাশঃ কি আমিও?
নার্সঃ ম্যানেজার সাহেবকে বলে দিয়েছি।
আকাশঃ আর ম্যানেজার আমার বাড়িতে ফোন করে সবটা জানিয়ে দিয়েছেন তাই তো!
নার্সটা এবার মাথা নিচু করে উত্তর দিল, না মানে আসলে স্যার, আপনার বাবাই তো সব সময় এখানের সব খবর উনাকে জানাতে বলেন।
আকাশঃ হুম জানি। বাবা এই কাজ আগেও করেছে। ঠিকাছে তুমি যাও এখান থেকে৷ খুব ভালো গন্ডগোল বাঁধিয়ে দিয়েছো। নাউ জাস্ট গেট আউট!
নার্সটা তড়িঘড়ি করে চেম্বার থেকে বেড়ি গেল। আর আকাশ কাপালের ওপর দুই হাত দিয়ে বসে রইলো। কারণ বাড়িতে এখন এটা নিয়ে তিঁল থেকে তাল হয়ে যাচ্ছে।
.
মেঘ চৌধুরী ল্যাব থেকে বের হতেই নীলা এসে মেঘের হাত ধরে ফেললো৷
নীলাঃ এ্যাই কোথায় যাচ্ছিস? তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।
মেঘঃ এসব কি করছিস হাত ছাড়! এখানে এভাবে কেউ দেখে ফেলবে। আর আমাকে যেতে হবে। তোর কথা আমি পরে শুনবো।
নীলাঃ আজ বিকালটা তুই আমাকে সময় দে না। প্লিজ।
মেঘঃ উফ! আমাকে এক্ষুনি প্রেমনগর যেতে হবে।
নীলাঃ প্রেমনগর মানে!
মেঘঃ তোর মাথা! প্রেমনগর মানে আমার বাড়ি। বাড়িতে একটা বিষয় নিয়ে গন্ডগোল চলছে। আমাকে গিয়ে সামলাতে হবে৷ আসছি।
নীলা ভ্রু কুচকে মেঘের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
.
সময় রাত ৮ টা। আকাশ চেম্বারে বসে আছে। বাড়িতে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। হঠাৎ মনে হলো অহনাকে একবার দেখে আসা উচিত। নিজের চিন্তায় ওর ব্যপারটা মাথা থেকেই বেড়িয়ে গেছে। অহনার কেবিনে গিয়ে দেখলো। সে বেডে বসে আছে আর তার সামনে বসা কাকে যেন সে বলছে।
অহনাঃ না আমি আগে প্রেম করবো তারপর বাকিসব কিছু...
.
অহনার বাবা তখনই কেবিনের ভিতরে ঢুকতে গিয়ে আকাশকে এখানে দেখে বলে উঠলেন,ওইতো আমাদের জামাইবাবা! যাও বাবা ভিতরে যাও।অহনার খালাতো বোন এসেছে।
.
গ্রাম থেকে আসা অহনার খালাতো বোন তুলি এদিকে ফিরে চিল্লিয়ে বলে ওঠে,দুলাভাই!
এটা শুনে আকাশ জিব্বাহতে ছোট করে একটা কামড় দিল। অহনাকে দেখতে এসে আকাশ এক রকম লজ্জাজনক অবস্তুয়াতেই পড়ে যায় ।
.
আকাশ কি করবে বুঝতে পারছেনা। অহনার বাবা বিয়ের ব্যাপারটা বাড়িতে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছেন। বিয়ের প্রস্তুতিও নাকি নেয়া শুরু হয়ে গেছে৷ উনি মেয়েকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে শশুড়বাড়ি পাঠাতে পারলেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। মেয়ে যে দিন দিন পাগল হয়ে যাচ্ছে।কথায় কথায় প্রেম প্রেম করে। শেষে চরিত্রের দোষ ভেবে যদি আর কেউ বিয়ে না করে! অহনার বাবা আকাশের হাত ধরে বলছেন,তুমি আমাকে অনেক বড় বিপদের হাত থেকে বাঁচালে বাবা। বিয়েটা যত তাড়াতাড়ি সেরে নেবে ততই ভালো। আমি এখন আসি৷ বাড়িতে সব আয়োজন ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা দেখতে হবে।
আকাশ কিছু না বলে মুখে জোর করে একটু হাসি এনে মুচকি হাসার চেষ্টা করলো।
.
চলবে....
পর্বঃ২
.
অহনার বাবা তুলিকে নিয়ে হসপিটাল থেকে চলে গেলেন। আকাশ এবার অহনার দিকে তাকানোর সাথেই দেখতে পেলো অহনা আগে থেকেই আকাশের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আকাশঃ কি হলো আপনি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?
অহনাঃ আপনি অনেক ভালো। আমার বাবার একমাত্র চিন্তা ছিলাম আমি।
আকাশঃ তো?
আহনাঃ আমার বিয়ের খবর শুনে বাড়িতে সবাই অনেক খুশি! কি যে চিন্তায় ছিলো আমাকে নিয়ে!আচ্ছা আমি বিয়েতে কোন শাড়ি পরবো বলুন তো। লাল শাড়ি না নীল শাড়ি!
.
আকাশ এবার হাসতে হাসতে বললো, কে বললো আপনি পাগল! আমি তো দেখছি আপনি একদম সেয়ানা পাগল। এরই মধ্য সব ঠিক করে ফেললেন!
আহনাঃ হুম শুধু প্রেমটা কিভাবে করতে হয় সেটাই জানিনা।
আকাশ আবারও হেসে ফেললো। এভাবেই দুচারটে কথা শুরু করতে করতে আকাশ সারারাত অহনার সাথে গল্প করলো আর অহনাকে পছন্দ করে ফেললো। দুজনে সারারাত হাসি ঠাট্টা করে কাটালো। এমন একটা মেয়েকে বউ হিসেবে পেলে তো জীবন হবে রসময়।
.
সকালবেলা নার্স কেবিনে ঢোকার সাথেই তার চোখ কপালে উঠে যায়৷ সে দেখলো আকাশ চৌধুরী অহনাকে খাবার খাওয়াচ্ছে। তাও আবার নিজের হাতে৷ এটার দেখার সাথে সাথে নার্স এক দৌড়ে চলে গেল রিসিপশনের ওখানে ম্যানেজারের কাছে খবরটা দিতে।
.
ঘন্টাখানেক পর আকাশ চৌধুরী প্রেমনগরের চৌধুরী মহলে ফিরলে ড্রইংরুমে বসা বাড়ির সকলেই চোখ বড় বড় করে আকাশের দিকে তাকায়।
আফতাব চৌধুরী তার হাতে থাকা নিউজ পেপারটা সরিয়ে বলেন, কোথায় ছিলি সারারাত!
আকাশঃ নাইট ডিউটি ছিল ড্যাড!
মনিরা বেগম চেচিয়ে বললেন, কি ডিউটি ছিল তা আমরা সকলেই জানি৷ মেয়েটি এখন কোথায়?
আকাশঃ ওকে বাড়ি নিয়ে গেছে। আর পরশু আমার বিয়ে। তোমরা সবাইকে খবর দিয়ে সব আয়োজন শুরু করে দেও।
.
এই কথা শুনে সবার চোখ গুলো তাদের কোটর থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম হয়। মেঘ আর রৌদ্র চৌধুরী এক সাথে বলে উঠল, ভাইয়া তুই কি সত্যি সত্যি!
কথা শেষ করার আগেই মনিরা বেগম চিল্লিয়ে উঠলেন, একটা পাগল মেয়েকে আমি কিছুতেই আমার ছেলের বউ করবো না! তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে আকাশ!
আকাশঃ মা ও পাগল নয়! ও একদম সুস্থ মানুষ। পড়াশোনার কারনেই ওর মাথাটা একটু বিগড়ে গেছে এই আরকি। আর তাছাড়া আমি তো আছিই। আর আমি ওদের কথা দিয়ে ফেলেছি। এখন তোমরা যদি বিয়েতে মত না দেও আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাব৷
আফতাব চৌধুরী এবার হুংকার দিয়ে বলে উঠলেন, এই প্রেমনগর ছেড়ে কেউ কোথাও যেতে পারবে না। তোর বিয়ে ওর সাথেই হবে।
.
এটা শুনে বাড়ির সকলেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে৷ আফতাব চৌধুরীর একমাত্র দুর্বলতা তিনি তার ছেলেদের এই বাড়ি থেকে অন্য কোথাও যেতে দেবেন না। বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার অজুহাত দেখাতে পারলেই তিনি ছেলেদের অনেক বিষয়ই চোখ বন্ধ করে মেনে নেন। মনিরা বেগম রাগে ফুসতে ফুসতে উনার ঘরে চলে গেলেন।
.
আত্মীয় স্বজনদের খবর দিয়ে বাড়িতে আনা হয়েছে। সন্ধ্যার মধ্য অনেকেই চলে এসেছেন। হঠাৎ করে বিয়ের খবর শোনায় আনন্দে বাড়িতে দিগুন পরিমাণ হৈচৈ হচ্ছে। বাড়ি সাজানো হচ্ছে। আগামীকাল সকালে গায়ে হলুদ হবে আর দুপুরের মধ্য বিয়ের সব কাজ কমপ্লিট করে বিকেলের মধ্যেই বউ নিয়ে নিয়ে বাড়ি ফিরবে।
মেঘ আকাশের রুমে উকি দিয়ে দেখলো আকাশ হেসে হেসে ফোনে কথা বলছে। দরজা থেকে কাশি দিয়ে আকাশ বলে উঠল, ভাবী কি খুব হাসায় ভাইয়া!
আকাশ চমকে উঠে পিছনে ফিরে বললো, ইয়ে মানে তুই এখানে কি করছিস! যা নিজের কাজ কর।
মেঘঃ নিজের কাজই তো করছি৷
বলেই একটা বাঁকা হাসি দিল। আকাশ উঠে এসে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়। মেঘের হাসি মুখটা বন্ধ হয়ে গেল। দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে মেঘ চেচিয়ে বলে ওঠে,নিচে তোকে ডাকাছে। কোন পাঞ্জাবিটা পড়বি সেটা দেখার জন্য! হুহ! তোর পিরিত শোনার জন্য আসি নাই।
তখনই মেঘের ফোনের রিংটন বাজতে শুরু করে। নীলা ফোন করেছে। ফোন রিসিভ করার সাথেই নীলার ঝাঝালো কন্ঠের আওয়াজ পাওয়া যায়।
নীলাঃ কতক্ষণ আগে মেসেজ দিয়েছি! কোনো রিপ্লাই করছিস না কেন! ইচ্ছা হচ্ছে তোর মাথাটা ফাটিয়ে দেই।
মেঘঃ তুই এতো রেগে আছিস কেন। কি বলবি বল।
নীলাঃ আজ ক্যাম্পাসে আসলিনা কেন?তুই জানিস না তোকে একদিন না দেখতে পেলে আমার মাথাটা খারাপ হয়ে যায়?এ্যাই তোর বাড়িতে এতো হৈচৈ কিসের রে?
মেঘঃ কাল ভাইয়ার বিয়ে এজন্যই এতো হৈচৈ।
নীলাঃ বিয়ে? কই আগে তো কিছু বলিসনি।
মেঘঃ হঠাৎ করেই।
নীলাঃ এ্যাই শোন না তুই আমাকে নিয়ে এরকম কিছু ভাবিস না? সত্যি বলবি কিন্তু
মেঘঃ কি ভাববো?
নীলাঃ কি ভাববো মানে? তোর মন কি চায় তা তুই জানিস না!
মেঘঃ না রে জানিনা।
নীলাঃ মেঘ! তুই আমায় বুঝিস না??
মেঘঃ মানে? কি বুঝবো!
.
রাগে নীলা কলটা কেটে দেয়। মেঘ ভ্রু কুচকে ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে থেকে তার রুমে চলে গেল। নীলা এবার শ্রাবনীকে ফোন করে।
নীলাঃআরে আমি তো বোঝানোর চেষ্টা করছি কিন্তু হচ্ছেনা। কি করলে মেঘের মন পাবো বলতো?
শ্রাবনীঃ তুই এক কাজ কর। কোনো কবিরাজের কাছে গিয়ে পানি পরা নিয়ে আয়।ওই পানি পরা খেয়ে মেঘের মনটা তোর জন্য গললেও গলতে পারে।
.
পরদিন সকাল বেলা গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে কনের বাড়ি থেকে অহনার খালাতো বোন তুলি এলো।গ্রামে বড় হয়েছে সে।এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিল।অহনার বিয়ের জন্যই তাকে গ্রাম থেকে আনা হয়েছে।অহনার সাথে থেকে তার দেখা শোনা করার জন্য।
চৌধুরী মহলে ফুলের ডালি হাতে নিয়ে তুলি দরজার কাছে আসতেই দরজার অপর পাশ থেকে কেউ একজন বের হতেই তার সাথে ঢাক্কা খেয়ে ডালিসহ নিচে পরে যাওয়ার আগ মুহূর্তেই ওই ঢাক্কা লাগা ব্যক্তিটিই তুলিকে ধরে ফেললো। সে তুলির কোমরে এক হাত আর অন্য হাত তুলির কাধে দিয়ে ধরে রয়েছে। তুলি রৌদ্র চৌধুরীর সাথে ঢাক্কা খেয়েছে।রৌদ্র তুলির শরীর থেকে হাত সরাতেই তুলি নিজেকে সামলিয়ে নিতে নিতে চোখ গোল গোল করে রৌদ্রের দিকে তাকালো।রৌদ্র তুলিকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকিয়ে তাকিয়ে এক নজরে দেখছে। তুলির ভীষণ লজ্জা লাগছে। অচেনা এক ছেলে মানুষ তার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে। তার ওপর আবার কয়েক সেকেন্ডে আগে যখন তার মুখের দিকে তাকিয়েছিল তুলি,তখন দেখতে পেয়েছিলো ছোট বেলায় দাদীর কাছে শোনা কোনো এক রুপকথার কল্পিত রাজকুমারের মতোই কেউ একজন তার সামনে এসে পরেছে।ভীষণ সুন্দর ছেলের মুখের দিকে তাকাতে তুলির খুবই লজ্জা করে।বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারে না৷ তুলি চোখ নিচের দিকে নামিয়ে নিলো। লজ্জায় তুলির মরে যেতে ইচ্ছে করছে। একটু আগে আবার তার সাথেই ঢাক্কা খেয়েছে। বডি স্প্রের তীব্র গন্ধ নাকে আসছে তুলির। লজ্জায় পা দুটো আর দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে দৌড়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেল।
.
ভিতরে গিয়ে বাড়ির অনেকের সাথেই তুলির কথা হয়। তুলিকে বাড়ির ছাদে যাওয়ার জন্য বলা হলো। ওখানেই গায়ে হলুদের স্টেজ সাজানো হয়েছে। সিড়ি দিয়ে ছাদে যাওয়ার সময় তুলি মেঘ চৌধুরীর মুখোমুখি পরে যায়। মেঘ তখন সিড়ি দিয়ে নিচে নামছিলো। তুলি মেঘের দিকে তাকানোর সাথেই লজ্জায় লাল হয়ে গেল। আবারো সে আরেকজন সুন্দরমত পুরুষের সামনে পরেছে।
মেঘ বললো,মানে আপনাকে তো চিনতে পারলাম না৷ আপনি কি কনের বাড়ি থেকে এসেছেন?
লজ্জায় তুলি কিছু বলতে না পেরে আকাশের সাইড ঘেসে সিড়ি দিয়ে তারাতারি উপরের দিকে চলে যেতে লাগলো। আকাশ ভ্রু কুচকে তুলির চলে যাওয়ার দিকে একবার তাকিয়ে নিচে নেমে আসে।
.
বিকেল বেলা অহনাদের বাড়িতে বিয়ের সব কাজ কমপ্লিট হয়৷ এতক্ষন অহনা সাভাবিকই ছিল। কিন্তু এখন কেন জানি একা একাই দাঁত বের করে হাসা শুরু করেছে৷ এটা দেখে রৌদ্র মনের ভিতর কথা চেপে রাখতে না পেরে এবার মেঘের কানে কানে ফিসফিস করে বলেই ফেললো, ভাবি এভাবে হাসছে কেন রে?
মেঘঃ সেটা তো আমিও লক্ষ্য করছি। ভাইয়া কি সত্যি সত্যি কোনো পাগলী কে বিয়ে করে ফেললো নাকি!
মেঘের কথাটা একটু জোরেই ছিল তাই কথাটা আকাশের কানে যায়।
আকাশঃ তোরা তোদের নতুন ভাবীকে নিয়ে কি উল্টো পাল্টা কথা বলছিস! ক্ষমা চা! এক্ষুনি তোদের ভাবীর কাছে ক্ষমা চা!
অহনা ন্যাকামো করে বললো,এ্যাই কি হয়েছে?ওদের ওপর চিল্লাচ্ছো কেন?
আকাশঃ কিচ্ছু না জান! ওরা আমার ছোট ভাই। তোমার দুই দেবর। মেঘ আর রৌদ্র।
.
কনে বিদায়ের সময়ও অহনা দাঁত বের করে হাসছিলো।ছেলে পক্ষের মানুষ এটা দেখে একটু অবাকই হয়। প্রথমবার বাপের বাড়ি ছেড়ে শশুড়বাড়ি যাচ্ছে একটু কান্নাকাটি করবে তা নয়, নতুন বউ দাঁত বের করছে হাসছে। অহনার সাথে তুলিকে পাঠানো হচ্ছে। শশুড়বাড়িতে গিয়ে অহনাকে একটু দেখে শুনে রাখতে পারবে তাই। কিন্তু গাড়িতে ওঠার সময় তুলি বিগড়ে বসলো। আজকের সকালের কথা মনে করে তুলি এবার বলে ফেললো, আমি ওই বাড়ি যামু না! আমার শরম করে।
অহনার মাঃ ওমা, তোর আবার কিসের শরম। তুই তো যাচ্ছিস মেহমান হিসেবে।ওরা তোর খেতমতই করবে। আমি বিয়াইন সাহেবাকে আলাদা করে ফোনে বলে দিব৷ যা গাড়িতে গিয়ে ওট।
তুলি মাথা নিচু করে উত্তর দেয়, আমার শরম করতাছে খালা। আমি যাইবার পারুম না৷
অহনার মাঃ শরমের কিছু নেই। যা তো।
তুলি এবার অহনার কাছে গিয়ে বললো,আপা তুই একটু বোঝার চেষ্টা কর!
অহনাঃ কি বুঝবো? হুম? কি বুঝবো?
তুলিঃ তোর দুই দেবর...আপা আমি কইবার পারুম না। আমার শরম করতাছে।
তুলি সামনের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো, মেঘ আর রৌদ্র দুইজনই তুলির দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
অহনার মাঃ আরে যা তো। ওট।
অহনার মা জোর করে ঠেলে তুলিকে গাড়িতে তুলে দিলো।
.
প্রেমনগরে আসার পর চৌধুরী মহলে নতুন বউ অহনাকে বরণ করে ঘরে তোলা হয়। রাতে খাওয়া দাওয়ার পর আত্নীয়সজনেরা যে যার মতো শুয়ে পরেছে। তুলি শুয়েছে অহনার শাশুড়ি মনিরা বেগমের সাথে। কারণ মনিরা বেগম একাই এক ঘরে এসে আছেন। অহনার শশুড়ের সাথে তার নাকি ঝগড়া হয়েছিল গত পরশু রাতে। ঝগড়াটা ছিল ছেলের বিয়ে নিয়েই। ঝগড়ার এক পর্যায়ে কথার মাঝে নাকি অহনার শশুড় তাকে অপমান করার চেষ্টা করেন৷ সেটার জেদ ধরেই তিনি একাই এই রুমে এসে শুয়েছেন। বাড়ি ভর্তি মেহমান থাকায় বউয়ের অভিমানও ভাঙানোরও সুযোগ পাচ্ছেন না আফতাব চৌধুরী। একা একাই নিজের রুমে চিন্তা করে পায়চারি করতে করতে কোনো সুযোগ খুঁচ্ছেন।
মনিরা বেগমঃ ওহো, রাতে শোবার আগে রৌদ্রকে এক মগ কফি দেবার কথা। আমি তো ভুলেই গেছি। মা তুলি তুমি রুমে থাকো। আমি কফিটা বানিয়ে তারপর ওকে দিয়েই জাস্ট আসছি। ভয় পাবে না কেমন। এক্ষুনি আসছি।
তুলিঃ জি আচ্ছা।
মনিরা বেগম কফি বানিয়ে রান্নাঘর থেকে বের হতেই আফতাব চৌধুরী সামনে এসে দাঁড়ালো। তিনি চোখ গরম করে উনার দিকে একবার তাকিয়েই পাশ কাটিয়ে হনহনিয়ে রুমে চলে এলেন।
মনিরা বেগমঃ তুলি মা, তুমি কফিটা একটু রৌদ্রের ঘরে দিয়ে এসো তো। উপরে গিয়ে সোজা বা দিকের কর্নারের রুমটা।রৌদ্রের বাবার সাথে আমার খুবই জরুরি কথা আছে।ঝগড়াও হতে পারে। উনি দরজার বাহিরে এখনো দাঁড়িয়ে ঘুর ঘুর করছেন।
তুলিঃ আচ্ছা আমি দিয়ে আসছি।
.
তুলি উপরে গিয়ে রৌদ্রের ঘরের দরজায় এসে দাড়াঁতেই দেখতে পেলো রৌদ্র বিছানায় বসে ল্যাপটপে ভিডিও দেখছে। ভিডিওতে মেয়ে গুলো সবাই শুধুমাত্র ব্রা আর প্যান্টি পরা। এটা দেখে তুলি লজ্জায় চোখ বন্ধ করে পেছাতে গিয়ে দরজার সাথে বারি খেল। শব্দ হওয়ার সাথে সাথে রৌদ্র পিছনে তাকায়। ভিডিও চলছে। বারি খেয়ে তুলি চমকে উঠে চোখ খুলতেই রৌদ্রকে তাকিয়ে থাকতে দেখেই কফির মগ হাত থেকে ফেলে দিয়ে দৌঁড় দেয়।
.
এদিকে নতুন বউ অহনা বাসর ঘরে বসে রয়েছে।আকাশ দরজা খুলে ভিতরে আসতেই অহনা দাঁত বের করে হাসতে শুরু করে দিলো।
আকাশঃ কি হলো এভাবে হাসছো কেন?
.
চলবে....
পর্বঃ৩ +৪
অহনা হাসতে হাসতেই বলে উঠলো,হাসবো না? আজ আমার বিয়ে হলো, এখন আমার বাসর রাত! হিহিহি। এ্যাই দেখো বউ সেজে আমাকে কত্ত সুন্দর লাগছে।
আকাশঃ এভাবে পাগলের মতো হেসো না তো। তুমি এখন শশুড়বাড়ি তে আছো। নতুন বউ এভাবে এতো হাসলে সবাই কি ভাব্বে হ্যাঁ?
অহনাঃ হিহিহি। আরো হাসবো। বেশি করে হাসবো৷
আকাশ এবার বিছানায় বসে ধমক দিয়ে বললো, চুপ! হাসি বন্ধ। এখন চুপচাপ বসে আমার দিকে তাকিয়ে থাকো৷
অহনা হাসি থামিয়ে দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। আকাশও অহনার রুপে মুগ্ধ হয়ে এক দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে আছে।
.
এভাবে ড্যাবড্যাবিয়ে চেয়ে থাকতে থাকতে আকাশ অহনার পাশে এসে গা ঘেষে বসলো। অহনার হাত ধরলো। তারপর অহনার গালের সাথে নিজের গাল ঘষতে থাকে। আর গালে কয়েকটা চুমুও দিয়ে দেয়।
.
এদিকে তুলি রৌদ্রের ঘরে গিয়ে মেয়েদের ব্রা প্যান্টি পরা ভিডিও দেখে লজ্জায় কফির মগ ওখানেই ফেলে দিয়ে দৌড় দিয়ে বাহিরে আসতেই সিড়ির কাছে এসে ধপাস পরে যায়। শব্দ শুনে রৌদ্র ঘর থেকে বেড়িয়ে এসেছে। আর দেখলো তুলি তার ডান পা ধরে ফ্লোরে বসে আছে ।
রৌদ্রঃ এই মেয়ে পরে গেছো নাকি? ওভাবে দৌড় দেয়ার কি দরকারটা ছিল!
.
লজ্জায় তুলি তো রৌদ্রের দিকে তাকাতে না পেরে চোখ বন্ধ করে আছে। বুকের ধুকপুকানি চার গুন বেড়ে গেছে। এই অবস্থায় কথা বলার তো কোনো প্রশ্নই আসে না৷ রৌদ্র তুলির জবাবের জন্য আর অপেক্ষা না করেই আচমকা তুলির হাতটা ধরে তুলিকে ফ্লোর থেকে টেনে তুললো। ভয়ে লজ্জায় তুলি কাপঁতে শুরু করে। ফ্লোরে দাঁড়ানোর পর পা দুটো অসার হয়ে আসতে থাকে। রৌদ্র এখনো তুলির এক হাত ধরে রয়েছে।
.
ওদিকে আকাশ অহনাকে জড়িয়ে ধরে চুমু দেয়া শুরু করলে অহনা চেচিয়ে উঠল,
অহনাঃ এ্যাই তুমি এভাবে আমার শাড়ি গহনা খুলে দিচ্ছো কেন?
আকাশঃ এগুলো খুব ডিস্টার্ব করছে জান। এখন এগুলো খুলে ফেলো।
অহনাঃ তুমি এসব কি বলছো। আমি এগুলো খুলবো কেন? আমার সাজ নষ্ট হয়ে যাবে তো৷ আমি এসব পরে থাকবো।
.
অহনা আকাশের থেকে একটু সরে এসে বসলো।
আকাশঃ আহা এমন করছো কেন। এখন রাতে এসব পরে থাকা লাগবে না। দাও আমি খুলে দিচ্ছি। এদিকে এসো৷
আকাশ আবার এগিয়ে এসে অহনার শাড়ি গহনা খুলে দেওয়ার চেষ্টা করতেই অহনা এবার জোরে একটা চিৎকার দেয়।
.
অহনার চিৎকার শুনে চমকে উঠে বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা রৌদ্র তুলির হাতটা ছেড়ে দিলো। ওদিকে মনিরা বেগম আর আফতাব চৌধুরীও চিৎকার শুনে ঘর থেকে বেড়িয়ে এদিকেই আসছেন। বাড়ি ভর্তি আত্মীয় সজনেরাও কৌতুহলবসতো বেড়িয়ে এসেছে। চেচামেচি শুনে মেঘও তার রুম থেকে বের হয়৷ সবাই এসে আকাশের রুমের সামনে ভিড় করলো। এক পর্যায়ে দরজায় ঢাক্কাঢাক্কি শুরু হয়। আকাশ এসে দরজা খুলে দিলো। দরজা খোলার সাথেই সবাই হুড়মুড় করে ভিতরে ঢুকে পরলো৷ সবার নজর এখন অহনার দিকে। অহনা খাটে বসে নিজের শাড়ি ঠিক করতে ব্যস্ত।
এবার আকাশের চাচী আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, কিরে নতুন বৌমার গলার আওয়াজ পেলাম? কি হয়েছে!
আকাশ একটু হাসার চেষ্টা করে বললো, হাহ্! ইয়ে ওইতো টিকটিকি দেখে ভয় পেয়েছে।
অহনা শাড়ি ঠিক করতে করতেই বলে উঠলো, ও আমার শাড়ি গহনা খুলে দিচ্ছিলো। তোমরাই বলো আমার সাজ নষ্ট হয়ে যাবে না?
.
রুমে থাকা উপস্থিত লোকজন ভ্রু কুচকে একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে রুম ত্যাগ করলো। কেউ কেউ মুচকি মুচকি হেসে চলে গেল। মেঘ আর রুদ্র যাওয়ার আগে একবার বড় ভাই আকাশের দিকে তাকিয়ে এক চোখ টিপ দিয়ে বাঁকা হাসি দিতেই আকাশ ওদের ঢাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে দিয়ে তারপর ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দিলো।
.
সকালবেলা তুলি ছাদে দাঁড়িয়ে টবের বিভিন্ন রকম গাছ গুলো ঘুরে ঘুরে দেখছিলো। পাশেই মনিরা বেগম দাঁড়িয়ে থেকে ফুলের টবে পানি দিচ্ছিলেন।
তুলিঃ আমিও পানি দেই?
মনিরা বেগমঃ আরে না না! পাগলীটা বলে কি। তুমি মেহমান মানুষ তুমি কাজ করবে কেন।
তুলিঃ আপনেই তো কইছেন এইডা নিজের মনে কইরা থাকুম। তাছাড়া আপা তো এহনো ঘুম থেকেই উঠে নাই। আমি কি করুম?
মনিরা বেগমঃ হাহাহা! কোনো কাজ পাচ্ছো না? তাহলে যাও আমার বাদর ছেলেটাকে ঘুম থেকে ওঠাও। প্রতিদিন ডাকতে ডাকতে আমি আর পারিনা। সারারাত জেগে কি যে করে আর তারপর সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে যায় তারপরও তার ঘুম ভাঙে না!
তুলিঃ কেডা খালা?
মনিরা বেগমঃ কে আবার আমার রৌদ্র মশাই!
সাথে সাথে তুলির রাতের ঘটনাটা মনে পড়ে গেল।
রৌদ্র তো ব্রা প্যান্টি পরা মেয়েদের ভিডিও দেখছিলো।
মনিরা বেগমঃ কি হলো পারবেনা? ও কিন্তু একবার দুইবার ডাকলে শোনে না অনেকবার ডাকতে হয়!
লজ্জায় তুলি লাল হয়ে মাথা নিচু করে আছে। বুকের ভিতর ধুকপুকানি বেড়ে গেছে।
তুলিঃ মানে আমি এহন উনার ঘরে যামু? আমি পারুম না।
মনিরা বেগমঃ আরে আগেই হাল ছাড়ছো কেন? আগে চেষ্টা তো করো। এখনই যাও।
তুলিঃ জি আচ্ছা।
.
তুলি রৌদ্রের ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। বুকের মধ্যে কে যেন হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছে। জোরে জোরে ধুক ধুক করছে। তখনই মনিরা বেগমের গলার আওয়াজ শোনা গেল। তিনি ছাদ থেকে সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলছেন, রৌদ্রকে ডেকে ডাইনিং রুমে নিয়ে এসো ততোক্ষণে আমি নাস্তা রেডি করছি। উনার কথা শুনে তুলি এবার রৌদ্রের রুমের দরজাটা হালকা একটু ঢাক্কা দিলো। দরজাটা শুধু চাপানো ছিল।ভেতর থেকে লক করা ছিল না। তাই দরজা ঢাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায়। তুলি রুমের ভিতর উকি দিলো। উকি দিয়ে খাটের দিকে তাকাতেই চোখ দুটো কপালে উঠে যায়। রৌদ্র খালি গায়ে চিৎ হয়ে শুয়ে দুই পা দুই দিকে ছড়িয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে। দুই পায়ের দূরত্বের মধ্য রয়েছে অনেকটা ফাঁক। আর লম্বা কোল বালিশটা গিয়ে রয়েছে একদম দুই পায়ের মাঝে ফাঁকা জায়গাটায়। রৌদ্রের এই অবস্থা দেখে আর খালি গা দেখেই লজ্জায় তুলি আবারও এই ঘর থেকে দৌড় দিলো।
.
ডাইনিং রুমে এসে তুলি হাপাচ্ছে। লজ্জায় চোখ বার বার বন্ধ করছে। ডাইনিং এর চেয়ারে বসে মেঘ তখন নাস্তা করছিলো। কিন্তু তুলি সেটা খেয়ালই করেনি। তুলির এমন করা দেখে মেঘ ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তারপর একটু কাশি দেয়।
.
সাথে সাথে তুলি চমকে উঠে এদিকে ফিরে দেখলো এক জোরা চোখ ওর চেয়ে আছে। লজ্জায় তুলি চোখ দুটো বন্ধ করে ঘামতে ঘামতে এবার বড় বড় দম নিতে শুরু করলো।
মেঘ হঠাৎ পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে বলে উঠলো, এই নেও পানি খাও!
তুলিচোখ খুলে তাকিয়ে মেঘের হাতে পানির গ্লাসটা তার দিকে ধরা দেখেই দৌড় দিলো।
তুলির এভাবে দৌড় দেয়া দেখে মেঘ সেদিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। তখনই তার ফোনের রিংটন বাজতে শুরু করলে সে ফোনটা রিসিভ করে কথা কথা বলতে বলতেই বাইক নিয়ে বাহিরে বেড়িয়ে গেল।
.
অহনা ফ্রেস হয়ে নতুন শাড়ি পরে নিচে নেমে এসেছে। আকাশের চাচী রান্নাঘর থেকে বের হয়েই অহনাকে দেখে বলে উঠলেন,আরে বউমা এসেছো? আকাশকেও ডেকে আনো। এক সঙ্গে নাস্তা করবে।
অহনা চাচী শাশুড়ির কথায় পাত্তা না দিয়েই এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে খুঁজতেই উনি আবারও বলে উঠলেন,কাকে খুঁজছো?
অহনাঃ আমার বোন কোথায়?
আকাশের চাচীঃ ওকে তো অনেকক্ষণ থেকে আমিও দেখছিনা!
অহনাঃঠিকাছে আমি খুঁজে বের করছি।
.
অহনা কয়েকটা ঘর চেক করে তারপর এই ঘরে এসে তুলিকে পেল।
অহনাঃ কিরে তুই এখানে একা একা বসে কি করছিস!
তুলিঃ আপা!
অহনাঃ কি হয়েছে?
তুলিঃ আপা শোন!
অহনাঃ হুম? কি হয়েছে?
তুলিঃ আপা..... আপা তোর দুই দেবর!
আহনাঃ হুম? আমার দেবর কি? কি হয়েছে!
তুলিঃ আপা... তোর দুই দেবর খুব বেশরম!
.
মেঘ বাইক নিয়ে ভার্সিটি এসেছে। মেঘের ড্যাশিং লুক দেখে মেয়েরা হা করে তাকিয়ে ড্যাবড্যাবিয়ে মেঘের দিকে চেয়ে আছে৷ আর মেঘও একটু ভাব নিয়ে ওদের সাথে হাই হ্যালো করে লাইব্রেরির ভিতরে ঢুকে গেল। ওখান থেকে কিছুটা দূরে গাছের নিচে দাঁড়িয়ে নীলা সবটা খেয়াল করছিলো। রাগে নীলার শরীর জ্বলে যাচ্ছে। সে এবার ব্যাগ থেকে একটা ছোট্ট পানির বোতল বের করে ঝাঝালো কন্ঠে বললো, আমি এক্ষুনি খাওয়াবো, আমার আর সহ্য হচ্ছে।
শ্রাবনীঃ এখন? কিভাবে?
নীলাঃ জানিনা! ওর আশেপাশে এতো মেয়ে ঘুরঘুর করবে সেটা আমি সহ্য করবো ভেবেছিস!
শ্রাবনীঃ কিন্তু মেঘ তো এখন,নীলা এ্যাই নীলা কোথায় যাচ্ছিস, তাড়াহুড়ো করিস না। আমার কথা শোন, দাঁড়া।
.
শ্রাবনীও নীলার পিছু পিছু লাইব্রেরির দিকে ছুটতে থাকে। নীলা লাইব্রেরির ভিতরে ঢুকেছে। মেঘ যেদিকে বসেছে সেদিকে হনহন করে হেটে যাচ্ছে। নীলা প্রচন্ড রেগে আছে। মেঘের পাশে এসে দাঁড়িয়ে সরাসরি ওর কাধের ওপর এক হাত রেখে বলে উঠলো, ওঠ! ওঠ বলছি!
মেঘ ঘার ঘুরিয়ে পিছনে ফিরে নীলাকে দেখে অবাক হয়ে বললো, উঠবো মানে!
নীলাঃ বাংলা বুঝিস না! উঠে আয় এখান থেকে!
মেঘঃ মানে কি! এভাবে চিল্লাছিস কেন?
নীলাঃ আমার ইচ্ছে আমি চিল্লাবো!
মেঘঃ তোর সাথে আমি পরে কথা বলবো। এখন কাজ করতে দে। বিরক্ত করিস না।
.
রাগে নীলা পিছনে দাঁড়িয়ে থেকেই মেঘের শার্টের কলার টেনে ধরলো।
মেঘঃ আরে আরে কি করছিস, ছাড়!
নীলাঃ না ছাড়বো না।
মেঘ নীলার হাতটা ধরে ফেললো। আর তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বললো, তোর সমস্যাটা কি!
নীলা চিল্লিয়ে বললো, আমার সমস্যা তুই!
মেঘঃ আস্তে!এটা লাইব্রেরি।
নীলা পানির বোতলটা মেঘের সামনে ধরে বলছে, তাড়াতাড়ি খেয়ে নে।
মেঘঃ আমি এখন পানি খাবো না।
নীলাঃ খা বলছি!
মেঘঃ উফ আমার এখন পানি খেতে ইচ্ছে করছে না।
নীলাঃ তোকে খেতেই হবেই। খা বলছি।
নীলা বোতলের ছিপিটা খুলে জোর করেই মেঘের মুখের কাছে পানির বোতলটা ধরছে। মেঘও নীলার হাতটা ধরে তা আটকাচ্ছে৷ এভাবে হাতাহাতি করতেই বোতলটা হঠাৎ করে নিচে পরে গেল। সেই সাথে পানি গুলোও পরে যায়।
শ্রাবনী এসে ওটা দেখার সাথেই চিল্লিয়ে বলে উঠলো,আহ! সব গেল!
রাগে নীলা এবার কান্না শুরু করে দেয়! শ্রাবনী নীলার গায়ে হাত দিয়ে ওকে শান্তনা দেবার চেষ্টা করছে।
ঘটনার কিছুই বুঝতে না পেরে মেঘ অবাক হয়ে ওদের দুইজনের দিকে চেয়ে আছে। ওখানে মেঘের দুইজন বন্ধু এসে দাঁড়ালো।
শ্রাবনীঃ পানিটা খেলেই পারতে মেঘ। খুব বেশি ক্ষতি হতো না তাতে৷ কাঁদিস না নীলা! সব ঠিক হয়ে যাবে।
মেঘঃ মানে কি! কিসের পানি ছিল ওটা? আর ও এভাবে কাঁদছে কেন?
নীলাঃ প্রচুর লোভ আমার! ভালোবাসা পাবার লোভ!
বলেই নীলা কাঁদতে কাঁদতে লাইব্রেরির বাহিরে চলে গেল।
শ্রাবনীঃ কাজটা তুমি ঠিক করোনি মেঘ।ওটা কোনো সাধারণ পানি ছিলো না
মেঘের বন্ধু রবিন তখন ফাজলালো করে বললো, তাহলে কি অসাধারণ পানি ছিল! উমম...
শ্রাবনীঃ ওটা শ্যামপুর কবিরাজের পানিপড়া ছিল।
বলেই শ্রাবনী রাগ চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে তারপর হনহন করে হেটে লাইব্রেরির বাহিরে চলে গেল।
এই কথা শুনে মেঘসহ তিনজনের তিন জোড়া চোখই অলরেডি কপালে উঠে গেছে।
.
চলবে....
পর্বঃ৪
আকাশের চাচী বললেন, এটা কেমন বউ! আমি তো মতিগতি কিছুই বুঝতে পারছি না।
মনিরা বেগমঃ বিয়ে হয়ে গেছে এখন আর কিই বা করার আছে। মা হয়ে ছেলের জীবনটা এভাবে নষ্ট হতে দেখছি। আরও যে কি কি দেখার বাকি আছে আল্লাহই ভালো জানেন। এই বাড়িতে আমার কথার মূল্যই বা কই। যেমন বাবা তেমন হয়েছে ছেলে গুলোও!
আকাশের চাচীঃ ধৈর্য্য ধরেন ভাবি। দেখবেন আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে গেছে।
প্রেমনগরের চৌধুরী মহলের অনেকেই অহনার অদ্ভুত আচরণ গুলো লক্ষ্য করেছে।এবং তারা ভেবেই নিয়েছে অহনার মাথায় কিছুটা গন্ডগোল রয়েছে।বৌভাতে মেয়ে বাড়ি থেকে লোকজন এসেছে। তাদের সবার খাতির যত্ন করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অহনা সেজেগুজে আকাশের সাথে বসে রয়েছে। ঘর ভর্তি লোকজন আসছে আর যাচ্ছে। আকাশ লোকজনের সাথে কথা বলার জন্য উঠে যেতেই অহনা তুলিকে ডাক দিলো।
অহনাঃ এদিকে আয়, বস গল্প করি।
তুলিঃ আপা শোন! তোর ওই দেবরটা না কেমন কইরা যেন তাকায়। ওই দেখ এহনো তাকায় আছে৷
অহনা আর তুলি এদিকে তাকাতেই রৌদ্র অন্যদিকে চোখ ঘুরিয়ে দিলো।
অহনাঃ উফফ! কই না তো।
তুলিঃ আছিলো। আমি খেয়াল করছি। আর খুবই বেশরম। আর কাল রাইতে যা দেখছি... ছি ছি ছি ছি...ওইডা আমি কইবার পারুম না!
অহনাঃ বাদ দে তো। জানিস আমি ১০ টা প্রেম করবো! আমাকে অনেক গুলো ছেলে প্রপোজ করেছে। সবাইকে ঝুলিয়ে রেখেছি। হাহাহা। এখন আস্তে আস্তে গুনে গুনে সেগুলো একসেপ্ট করবো।
তুলি আতঙ্কিত হয়ে বললো, আপা!
ওখানে উপস্থিত থাকা রৌদ্র কথাটা অলরেডি শুনে ফেলছে।
রৌদ্রঃ ওয়াট! আর উ ম্যাড ভাবী!
অহনা হাসতে হাসতে বলছে, আমি প্রেম করবো তো,অনেক গুলো করবো। হিহিহি
রৌদ্রঃ ওয়াট!!! অনেক গুলো প্রেম করবে মানে! তাহলে আমার ভাইয়াকে বিয়ে করেছো কেন!
.
রৌদ্রের কথায় আকাশ এদিকে এগিয়ে আসে।
আকাশঃ কিরে কি হয়েছে?
রৌদ্রঃ ভাইয়া,ভাবী নাকি অনেক গুলো প্রেম করবে।
আকাশ অবাক হয়ে একটু মুচকি হেসে অহনার দিকে তাকায় আর অহনা দাঁত বের করে হাসতে হাসতে দুইহাত উপরে তুলে হাতের দশটা আঙুল দেখিয়ে বললো,করবো তো গুনে গুনে একেবারে দশটা! হিহিহি
শুনে আকাশের মুখের আকৃতি বদলে যায়। মুচকি হাসা বন্ধ হয়।
আকাশঃ এসব তুমি কি বলছো।
অহনাঃ হিহিহি...
আকাশঃ চুপ! আর কেউ যেন এই কথাগুলো না শোনে। তুমি আমায় বিয়ে করেছো। বিয়ের পর আর অন্য কারো সাথে প্রেম করা যায় না। এসব শুনলে সবাই কি ভাব্বে,ছি ছি ছি। আমার মান সম্মান সব যাবে।
অহনাঃ আমি তো..
আকাশঃ চুপ! এখানে আর কোনো কথা বলবে না তুমি। চলো ভিতরে চলো।
অহনাঃ আমি...
আকাশ অহনার মুখে আঙুল দিয়ে অহনাকে চুপ করিয়ে দিলো৷ তারপর অহনাকে ভিতরে যাবার জন্য বললেও অহনা রাজি না হওয়ায় আকাশ ওকে কোলে তুলে জোর করেই তাড়াতাড়ি ভিতরে নিয়ে গেল। কারণ এখানেই থাকলেই অহনা কোনো একটা গন্ডগোল বাধিয়ে দেবে। এখানে ঘর ভর্তি মেহমান।
.
আকাশ অহনাকে কোলে তুলে ভিতরে নিয়ে যাবার সময় মেহমানদের মধ্য একজন বয়স্ক ভদ্রমহিলা তা দেখে আরেকজনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, আজকাল পোলাপানের লজ্জাশরম একেবারেই উঠে গেছে,মুরুব্বীও মানে না,ছি ছি ছি! প্রেয়ার মহব্বত আছে বইলা কি সকলের সামনেই এভাবে ঢলাঢলি করবে নাকি? কি দিন আইলো।আগে আমাদের বিয়ে হলে তো লজ্জায় ঘোমটাই শরাইতাম না!
রৌদ্র হাসতে থাকে।
তুলি কিছুটা ক্ষেপে বললো, আমার আপারে নিয়া হাসবেন না কইলাম!
.
মেঘ বাড়ি ফিরলো। মনিরা বেগম এসে বললেন, এতোক্ষণে তোর আসার সময় হলো? এদিকে সবাই ওই বাড়ি যাওয়ার জন্য রওয়া হচ্ছে! আজকের দিনটা অন্তত তোর ক্যাম্পাসে না গেলে হতো না?
মেঘঃ মানে কি আমিও যাবো নাকি!
মনিরা বেগমঃ যাবি মানে আকাশ তোকে আর রৌদ্রকে সাথে নিয়ে যাবে বলেছে৷ আজ দিন থেকে কালই চলে আসবে। বৌমার অবস্থা ভালো না তাই আকাশ ওকে বেশিদিন ওখানে রাখবে না। নিয়ম অনুযায়ী বাপের বাড়ি যেতে হয় তাই যাচ্ছে। একদিন থেকেই চলে আসবে।
মেঘঃ আমি যেতে পারবো না। আজ একটু কাজ আছে।
আকাশ ওখানে এসে উপস্থিত হয়,
আকাশঃ যাবি না মানে! তুই যাবি ব্যাস। আর কোনো কথা নয়। ভাইয়ের বিয়ে আর তুই সকাল থেকে কোথায় ছিলি হ্যাঁ?
মেঘঃ ভার্সিটি গিয়েছিলাম।
আকাশঃ আজও! খুব জরুরী কোনো ক্লাস ছিলো নাকি?
মেঘঃ তোর জন্য ক্লাস না করেই চলে এসেছি।
আকাশঃ গেলি অথচ ক্লাস না করেই চলে এলি ? ব্যপারটা তো সুবিধার মনে হচ্ছেনা।
মেঘঃ আরে এসব কি বলছিস!
আকাশঃ হাহাহা...তা তার সাথে হয়েছে দেখা?
মেঘ এবার একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বললো...হয়েছে!
আকাশ মেঘের ঘারে চাপড় দিয়ে দিল।
আকাশঃ চল!
.
অহনার বাড়ি যাবার জন্য সবাই গাড়িতে উঠে পড়েছে। ভাগ্য ক্রমে শুধুমাত্র তুলির জায়গা হলো না। তুলিকে মেঘ আর রৌদ্রের গাড়িতে গিয়েই বসতে হলো। ছেলেদের গাড়িতে উঠে শরমে তুলি মরে যাচ্ছিলো। ওরা তুলির সাথে ফ্রি ভাবে কথা বলার চেষ্টা করলেও অতিরিক্ত লজ্জায় তুলি চুপচাপ ছিলো। অহনার বাড়িতে ফিরে অনেক গল্প গুজবের পর রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে সবাই শুয়ে পরলো। মেঘ আর রৌদ্রকে এক রুমে রাখা হয়েছে। অনেকক্ষণ থেকে মেঘের ফোনের রিংটন বেজেই যাচ্ছে। ফোনটা নিয়ে কথা বলার জন্য মেঘ এবার এই বাড়ির ছাদে চলে গেলো। রৌদ্র তার প্রিয় ল্যাপটপটা সাথেই নিয়ে এসেছে। রুমে একা একা বসে ল্যাপটপে টিপাটিপি করছে। হঠাৎ মনে হলো একটু বাগানে গিয়ে হাওয়া খেয়ে আসবে। রৌদ্র বাহিরে চলে এলো। বাগানে বসে ফেসবুকের মেসেঞ্জারে মেয়েদের সাথে জমিয়ে চ্যাটিং করছে।
.
পানি খাওয়ার জন্য তুলি ডাইনিং রুমে এসেছে। ডাইনিং রুমের জানালা দিয়ে এতো রাতে বাগানে কাউকে বসে থাকতে দেখে কৌতুহলবসতো তুলি বাহিরে চলে এলো।
মনে মনে বলছে,এতো রাতে ওইহানে কে? আবার আলোও জ্বলতাছে! ভূত নয়তো?
তুলি একটু একটু করে সামনে এগিয়ে যায়। এবার তুলির মুখ থেকে হালকা আওয়াজ বেড়িয়ে এলো,কে ওইহানে?
সাথে সাথে রৌদ্র চমকে উঠে পিছনে তাকায়। তুলিকে দেখে বলে উঠলো, তুমি! যাক এসেছো ভালোই হয়েছে।এদিকে শোনো, কাছে এসো। যদি কিছু মনে না করো একটা কথা বলবো৷
তুলি মনে মনে বলছে, ওহ! ওই বেশরমডা এইহানে? আমারে আবার কাছে যাইবার কয় ক্যান। নিশ্চয়ই কোনো খারাপ মতলব আছে!
.
রৌদ্রের কথায় ভয় পেয়ে তুলি কোনো কথার উত্তর না দিয়েই হনহন করে হাটা শুরু করলো। রৌদ্রও পিছু পিছু আসতে থাকে।
রৌদ্রঃ এ্যাই শোনো? দাঁড়াও।
ভয়ে তুলি জোরে জোরে হাটতে থাকে। রৌদ্রও ওর পিছু পিছু দৌড়ে দৌড়ে আসছে। হঠাৎ তুলির ওড়নায় টান পরে। ভয়ে জমে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেল তুলি। ভয়ে সারা শরীর কাঁপতে থাকে। রৌদ্র ওর পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। সামনের দিকে পা বাড়াতে গেলেই তুলির ওড়নাটা পিছনে চলে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ ওটা শক্ত করে ধরে আছে। লজ্জা আর ভয়ে তুলি চোখ বন্ধ করে জড়সড় হয়ে ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে। এভাবে কয়েক মিনিট কেটে গেল। তুলির কোনো নড়াচড়া না দেখে রৌদ্র এবার গোলাপ গাছের কাঁটার সাথে বেধে যাওয়া তুলির ওড়নাটা ছাড়িয়ে দেওয়া চেষ্টা করলো। ওড়ানাটা গাছ থেকে ছাড়াতেই হঠাৎ করে তুলি সাহস করে চোখ মেলে পিছনে তাকালো আর রৌদ্রের হাতে নিজের ওড়না দেখে বলে উঠলো, শরম নাই আপনের! আপনে আমার ওড়না টাইনা ধরছিলেন ক্যান! ছাড়েন আমারে!
রৌদ্র অবাক হলে ওড়ানাটা নিজের হাত থেকে ফেলে দিয়ে বললো, ওটা আমি ধরিনি তো! ওড়নাটা তো তোমার ওই গাছ....
পুরো কথা না শুনেই তুলি ওখান থেকে দৌড় দিলো।
.
এদিকে ফোনে মেঘের সাথে নীলার হালকা পাতালা ঝগড়া হয়৷ নীলার বক্তব্য সকাল বেলা মেঘ নীলার দেওয়া পানি খায় নি আর নীলার সাথে দেখার না করেই ক্যাম্পাস থেকে চলে এসেছে। মেঘ অবশ্য চেয়েছিলো সকালের ঘটনার জন্য বিকেলবেলা নীলার সাথে দেখা করতে কিন্তু এখানে আসার জন্য তা হয়নি। মেঘ রুমে আসতেই রৌদ্র বলে উঠলো, কিরে ভাইয়া কি হয়েছে, মেজাজ খুবই হট মনে হচ্ছে। তখন থেকে দেখছি তুই ফোন নিয়ে পরে আছিস।
মেঘঃ কিছুনা। মাথাটা খুব ধরেছে রে।
রৌদ্রঃ আমারও। এক মগ কফি খেতে পারলে ভালো হতো। একটু আগে এই বাড়ির একজনকে ডেকে কফির কথা বলতে চাইলাম কিন্তু সে না শুনেই চলে গেল। ভেরি আনকালচারাল!
মেঘঃ এখন হট গান শুনতে পারলে ভালো হতো! গরম হয়ে যেতাম। সেটা কফির থেকে বেশি কাজে দেবে।
রৌদ্রঃ সো লেস্টস স্টার্ট!
.
রৌদ্র তার ল্যাপটপে থাকা সেই ব্রা প্যান্টি পরা মেয়েদের ভিডিও সং প্লে করলো। মিউজিক ভিডিও দেখতে দেখতে এক পর্যায়ে দুই ভাই শার্টের বোতাম খুলে নাচতে শুরু করে। এদিকে কিছুক্ষণ আগে ওড়না টেনে ধরার ঘটনায় তুলির সব ঘুম উড়ে চলে গেছে। ঘুমই আসতে চাইছে না। বিছানায় শুয়ে ঘটনাটা বার বার মনে করে শুধু এপাশ ওপাশ করছে আর বুক ধুকপুক ধুকপুক করছে। হঠাৎ বিছানা থেকে উঠে কি মনে করে যেন বাহিরে এলো। তারপর মেঘ আর রৌদ্রের ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। দরজাটা হালকা একটু খুলে রুমের ভিতর উকি দিতেই তুলির চোখ গুলো বড় বড় হয়ে গেল। মেঘ আর রৌদ্র দুইজনই মাতালের মতো হয়ে রয়েছে। রুমের ভিতর ল্যাপটপে চলছে ব্রা প্যান্টি পরা আর একদম ছোট ছোট কাপড় পরা সুন্দরী মেয়েদের নাচ!
তুলি চোখ পিট পিট করে বলতে থাকে, ছি ছি! বেশরম কোথাকার! কত্ত খারাপ!
মেঘ আর রৌদ্র ইংলিশ ভিডিও সং দেখছিলো আর নিজেরাও হালকা কোমর দুলাচ্ছিলো। নাচতে নাচতে হঠাৎ রৌদ্রের দরজার দিকে চোখ পরতেই তুলি দৌড় দিতে গিয়ে ওড়নাটা দরজার সাথে আটকে গেল ।
.
চলবে....
পর্বঃ৫ +৬
ওড়নাটা ভালোভাবেই দরজার সাথে আটকে গেছে। টানাটানি করতেই কিছুটা ছিড়ে গেলো। রৌদ্র দরজার কাছে এগিয়ে আসতেই ওড়না ফেলেই তুলি দৌড় দেয়। ওড়নাটা দরজার সাথেই আটকে থাকে। রৌদ্র দরজার কাছে এসে দাঁড়ালো। ভিতরে মেঘ এখনো গানের তালে তালে নাচতে ব্যস্ত।
রৌদ্রঃ মেয়েটার সমস্যা কি! আমাদের ঘরে উঁকি মারছিলো কেন?
রৌদ্র দরজটা লাগিয়ে দিল। দৌড়ে রুমে এসে তুলি হাপাচ্ছে। ভয়ে শরীর ঘেমে গেছে। ওড়নাটা ওখানেই ফেলে এসেছে। ছি ছি আর একটু হলেই ওই বেশরমটা এই অবস্থায় দেখে ফেলতো। ওড়নার চিন্তায় তুলির সারারাত ঘুম হলো না। ভোর বেলা কেউ ঘুম থেকে ওঠার আগেই ওড়নাটা উদ্ধার করতে হবে। না হলে ওই রুমে তুলির ওড়না রয়েছে এটা কেউ দেখে ফেললে বড় কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে সে মেঘ আর রৌদ্রের ঘরের দরজায় সামনে এসে দাঁড়ালো। ভয়ে হাত পা জমে যাচ্ছে। হালকা করে দরজাটা ঢাক্কা দিতেই বুঝলো দরজাটা ভিতর থেকে আটকানো। ভয়ে তুলির মুখ শুকিয়ে একদম শুকনো আমসি হয়ে গেল।
.
ভোরের আলো ভালো ভাবেই ফুটেছে। রৌদ্রউজ্জ্বল অত্যন্ত সুন্দর একটি সকাল। রান্না ঘরে সকালের নাস্তা বানানো হচ্ছে। কেউ কেউ ডাইনিং রুমে বসে নাস্তা করছে। মোটামুটি বাড়ির সকলেই ঘুম থেকে উঠে গেছে৷ শুধু মেঘ আর রৌদ্রই ঘুম থেকে ওঠে নি। অনেকবার ডাকা হলেও তারা কোনো রকম সাড়া দেয় নি৷
.
এদিকে অহনার ভেজা বড় চুল গুলো দেখে আকাশ লোভ সামলাতে না পেরে অহনাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
বুঝতে পেরে অহনা সাথে সাথে চেচিয়ে ওঠে, এ্যাই এ্যাই এসব কি করছো ছাড়ো!
আকাশঃ তুমি সব সময় এমন ছাড়ো ছাড়ো করো কেন! একটু থাকতে দাও না?
আকাশ অহনাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। অহনা গা ঝারা দিয়ে দিয়ে তা ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। এক পর্যায়ে অহনার হাত পা ছোড়াছুড়ি তে আকাশ ছেড়ে দিতে বাধ্য হলো। আকাশের সাথে জোরাজুরি করার সময় অহনার শাড়ি এলোমেলো হয়ে গেছে। আয়নার দিকে তাকিয়েই অহনা নিজের এই অবস্থা দেখে চিল্লিয়ে উঠল, একি এটা কি অবস্থা করেছো তুমি আমার!
রাগে অহনা বেডের ওপর পরে থাকা বালিশটা নিয়ে আকাশকে মারতে শুরু করে। আকাশ অহনাকে আটকানোর চেষ্টা করছে। এভাবে ধস্তাধস্তি করতেই এক পর্যায়ে দুজনে বেডের ওপর উল্টে পরে গেল। অহনা নিচে আর অহনার ওপরে আকাশ। আকাশ অহনার হাত দুটো চেপে ধরে ফেলেছে।
আকাশঃ এখন কি করবে হ্যা!
অহনার মুখের আকৃতি বদলে গেছে। রাগের বদলে এখন রয়েছে ভয়ের ছাপ৷
হাত দুটো ছাড়ানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে সে বললো, ছাড়ো! ইস ছাড়ো!
আকাশ অহনার গালের সাথে নিজের গাল ঘসছে। অহনা চিৎকার দিলো বলে। তখনই অহনার ঠোঁটে আকাশ নিজের ঠোঁট দিয়ে দেয়৷
.
অনেক ডাকাডাকির পর কাজের মেয়ে এবার দরজায় জোরে জোরে বারি আর লাথি দিতে শুরু করে।
শরিফাঃ পোলা গুলা কি! কি করুম৷ দেখছোনি এহনো উঠে না? হেগোর লিগা খালাম্মা আমারে ঝাড়তাছে। আমার মুখ দিয়া নাহি কথা বাইর হয় না! আমি হেগো ডাকবার পারি নাই। হেরা আমার কতা হুনে নাই তাই উঠে নাই। আরে এই শরিফার গলা আমগোর গ্রামের মাতাত থেইকা হুনা যায়!
.
কাজের মেয়ের জোরে জোরে দরজা ঢাক্কনোতে মেঘ উঠে এসে দরজা খুলে দেয়।
শরিফাঃ ভাইজান আহেন আফনাগোরে ডাকতাছে। ব্রিক ফাস্ট করবার লাইগা।
মেঘঃ ওমমমম্ম!
মেঘ ভালো ভাবে চোখেই খোলে নি। ঘুমের ঘোরে মেঘ কিছুই বুঝলো না। আবার বেডে গিয়ে রৌদ্রের পাশে শুয়ে পরলো।
সেটা দেখে কাজের মেয়ে শরিফা বলে উঠল, দেখছোনি কান্ড! আমি আর কিচ্ছু জানিনা। এরপর খালাম্মা আইয়া হেগো দেখবো!
.
এদিকে তুলি কিছুক্ষণ পর পরই দরজার কাছে এসে ঘুরঘুর করছে। কখন দরজা খোলা হবে সেই অপেক্ষায়। এখন দরজা খোলা পেয়ে ভিতরে উঁকি দিলো। দেখলো মেঘ আর রৌদ্র উল্টে পাল্টে ঘুমাচ্ছে। ওড়নাটা দরজার সাথে নেই। রুমের চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে খেয়াল করলো ওড়নাটা রয়েছে একদম কর্নারের টেবিলে। ওটা আনতে গেলে তো রুমের ভিতরে ঢুকতে হবে। যদি এরমধ্যে ওরা জেগে যায় তাহলে তো কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। তাছাড়া কাজের মেয়ে বার বার আসছে ওদের ডাকার জন্য। কাজের মেয়ে এখন কোথায় কি করছে তার গতিবিধি দেখার জন্য তুলি নিচে নেমে এলো।
কাজের মেয়ে শরিফা নিচে এসে ঘটনার সবটা বর্ননা দেয়।
অহনার মাঃ ঠিকাছে,তাহলে ওদের খাবার রুমেই দিয়ে আয়।
তখনই তুলি চট করে বলে উঠলো, আ আ আমি দিয়ে আইতেছি! আমি দেই?
সাথে সাথে তুলির মা বলে ওঠে, তুই পোলা গো রুমে যাইবি ক্যান! শরম নাই তোর! শরিফা কইলো তুই নাকি পোলাগো রুমে উঁকি ঝুঁকি মারতাছোস! কি হইছে তোর! লজ্জাশরম খাইয়াআলছোস!!
তুলি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কি বলবে সে ও যে ওই রুমে ওড়না ফেলে এসেছে। এটা শুনলে তো ওর মা ওকে মেরেই ফেলবে।
অহনার মাঃ আহা আপা! ছোট মানুষ, যাক না, এমন করছো কেন। তুলি তুই যা।
তুলি খাবার হাতে নিয়ে উপরে চলে গেল।
অহনার মাঃ শরিফা এই কফিটা অহনার রুমে দিয়ে আয় তো৷ এটা জামাইবাবার।
শরিফাঃ জি আইচ্ছা।
.
আকাশ অহনার হাত দুটো এমন ভাবে চেপে ধরে ওকে কিস করছে,অহনা না পারছে হাত ছাড়িয়ে নড়তে আর না পারছে চিল্লাতে। আকাশের শরীরের ভরও পরেছে অহনার ওপর। অহনা নড়তে পারছে না । আকাশ অহনার ঠোঁট কামড়ে ধরে চুমুর পর চুমু দিয়েই যাচ্ছে। দরজা ছিলো খোলা। তখনই কাজের মেয়ে শরিফা রুমে ঢুকে পরলো।
কফি হাতে নিয়ে সামনে আকাশ আর অহনার এই দৃশ্যটা দেখার সাথেই চোখ বন্ধ করে ছোট করে একটা চিৎকার দিয়ে ওঠে।
সাথে সাথে আকাশ অহনার ঠোঁট ছেড়ে অহনার ওপর থেকে উঠে পরলো। অহনাও উঠে বসে। রাগে অহনা ফুলে আছে। কাজের মেয়ের দিকে তাকিয়েই বিছানায় পরে থাকা বালিশটা তার দিকে ছুড়ে দিলো। বালিশ ছুড়ে মারায় কফির মগটা শরিফার হাত থেকে ফ্লোরে পরে ভেঙে যায়। ভয়ে শরিফা রুম থেকে দৌড় দিলো।
.
আকাশঃ তুমি এমন করছো কেন! ওর কি দোষ ছিলো! আমার কফিটা তো পরে গেল।
রেগে অহনা আকাশের সাথে আবারও মারামারি শুরু করে দেয়। রুমে থাকা বইপত্র গুলো সে আকাশের দিকে ছুড়ে ছুড়ে মারছে।
আকাশঃ আরে আরে কি করছো!
.
নিচে এসে শরিফা আমতা আমতা করে বললো,খালাম্মা আমারে আরেক মগ কফি দেন।
অহনার মাঃ কেন,ওটা দিস নি?
শরিফাঃ আফা ফালায় দিছে।
অহনার মাঃ ও ফেলে দিয়েছে নাকি তুই ফেলে দিয়েছিস। একটা কাজও যদি তুই ঠিক ভাবে করতে পারিস! যা নিয়ে যা।
.
আবার কফি নিয়ে শরিফা সিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বলছে,কি যে পাগলের বাড়িত আইছি কাম করবার! বেমাগডি পাগল! হেরা পাগল তা আমি কি করতাম। আমি পরছি বেপদে!
.
আকাশ অহনাকে ধরে ফেলেছে। অহনার হাত ধরে অহনার গলায় চুমু দিচ্ছিলো। তখনই শরিফা ভিতরে আসতে আসতে চোখ বন্ধ করে বললো, আফা লন!
সাথে সাথে আকাশ চমকে উঠে আবারও অহনাকে ছেড়ে দিলো। অহনা এবার শরিফার দিকে বই ছুড়ে দেয়। সাথে সাথে শরিফার হাত থেকে আবারও কফির মগটা ফ্লোরে পরে ভেঙে গেল। ভয়ে শরিফা দৌড় দেয়। মারাত্মক গাল শোনার ভয়ে শরিফা এবার রান্নাঘরে যাওয়ার সাহস না পেয়ে ছাদে চলে গেল।
আকাশঃ কি করলে এটা! তোমাকে না বলেছি এরকম পাগলামো আর করবে না। ভালো মেয়ে হয়ে থাকবে।
অহনা রেগে উত্তর দেয়, ঠিকাছে। আমি আনছি তোমার কফি!!
অহনা রুম থেকে বের হয়ে গেল।
.
আকাশ ফ্লোরে পরে থাকা বই গুলো তুলতে থাকে। বই আর জিনিসপত্র ছোড়াছুড়ি করে রুমটা একেবারে বিধস্ত করে ফেলেছে অহনা। আকাশ আনমনেই অহনার কান্ড দেখে হাসতে থাকে। মেয়েটা উড়ে এসে জুরে বসার মতো করেই আকাশের মনে জায়গা করে নিয়েছে।
.
বই গুলো গোছাতে গোছাতেই হঠাৎ করে একটা বই থেকে কিছু ছবি বেড়িয়ে এলো। ছবি গুলো ফ্লোর থেকে ওঠাতে ওঠাতে আকাশ দেখতে পায়, একটা সুন্দরমত ছেলের সাথে অহনা দাঁড়িয়ে রয়েছে। সব গুলো ছবিতেই এই একই ছেলের ছবি। বাকি গুলোতে অবশ্য অহনা নেই। শুধু ছেলেটির বিভিন্ন স্টাইলে ছবি তোলা। বই আর ছবি গুলো টেবিলের ওপর রেখে দিয়ে টেবিলের আরও কিছু বইয়ে হাত দিতেই আরও কিছু ছবি বেড়িয়ে এলো। সেই একই ব্যাক্তির ছবি। এই ছবি গুলোর ওপর আবার রঙিন কালি দিয়ে লেখা ,"আই লাভ উ"। আরেকটা ছবির ওপর ঠোঁটের চিহ্নও রয়েছে গাড়ো লাল রঙের। সম্ভবত ছবিতে কিস করা হয়েছিলো।
.
এগুলো দেখে আকাশের মাথা ঘুরে গেলো। আকাশ একেবারে যেন আকাশ থেকে পড়লো। বাকি বইগুলো তেও হাত দিয়ে সেগুলো থেকেও অনেক গুলো ছবি পাওয়া গেল৷ সেই একই ছেলের ছবি। এই ছবি গুলোর ওপরেও "আই লাভ উ" লেখা। অহনার সাথে এই ছেলের ছবি দেখে আকাশের মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।
অহনার বইয়ের ভেতর এই ছেলের এতো ছবি কেন! ও তো বলেছিলো ওর কোনো বয় ফ্রেন্ড ছিল না। তাহলে এটা কে! সত্যি সত্যি অহনা কি আমায় ঠকালো! আমি কি তাড়াহুড়ো করে কোনো ভূল করে ফেললাম? ওহ নো! এটা হতে পারেনা!
এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ অহনার গলার আওয়াজ পাওয়া যায়, এই নেও তোমার কফি!
.
আকাশ অহনার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে কোনো কথা নেই। আকাশের হাতে ছবি গুলো দেখে অহনাও এবার থমকে গেলো। রুমে নীরবতা বিরাজ করছে।
আকাশ অহনার দিকে তাকিয়ে থেকেই নিরবতা ভেঙে হঠাৎ গম্ভীর ভাবে বলে উঠলো, কে সে?
অহনা কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
আকাশঃ কি হলো, আমি কিছু জিগাসা করছি!
অহনা আকাশের হাত থেকে ছবি গুলো কেড়ে নিয়ে ছবিতে চুমু দিতে দিতে এবার বলে উঠলো,আমার ভালোবাসা! আমি তাকে ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি!
বলেই ছবি গুলো হাতে নিয়েই কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।
.
অহনার মুখে এই কথা শুনে আকাশের মাথায় যেন বাজ পড়লো। মাথা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে আকাশের। ধপ করে বসে পড়লো বিছানায়।
.
খাবার টেবিলের ওপর রেখে দিয়ে তুলি ওড়নাটা নেওয়ার সময়ই হঠাৎ করে রৌদ্রের ঘুমে ভেঙে যায়। চোখ খুলে রুমের ভিতর তুলিকে দেখেই এবার চেচিয়ে উঠলো, এ্যাই মেয়ে এ্যাই তোমার সমস্যাটা কি! সব সময় আমাদের রুমে এভাবে উঁকি ঝুঁকি মারো কেন! এই ভাইয়া ওঠ একে আজ হাতে নাতে ধরেছি দ্যাখ!
রৌদ্র মেঘের গায়ে হাত দিয়ে ওকে ঠেলছে। মেঘও চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসলো,
তুলিঃ আমি উঁকি ঝুঁকি মারি নাকি আফনাগোর শরম নাই! রাতে আমার ওড়না টাইনা ধরছিলেন ক্যান!
রৌদ্র এবার চোখ গরম করে তুলির দিকে তাকিয়ে আছে।
.
চলবে....
#প্রেমনগর ( It's So funny and Romantic Story)
পর্বঃ৬
আকাশ অহনাকে খুঁজতে খুঁজতে ছাদে চলে এসেছে। অহনা ছাদের একপাশে দোলনায় বসে কান্না করছিলো। আকাশ অহনার পাশে এসে দাঁড়ালো। আকাশকে দেখে অহনা চোখের পানি মুছলো।
অহনার কান্না করা দেখে আকাশ ওর ওপর ক্ষিপ্ত না হয়ে নরম গলায় বললো, তুমি যখন ওকেই ভালোবাসো তাহলে আমায় বিয়ে করলে কেন? কি দরকার ছিল আমার জীবনটা এভাবে নষ্ট করার! আর ভালোবাসার মানুষকেই বা তুমি বিয়ে করলে না কেন? যাকে এতো ভালোবাসো তাকে হারালে কেন! আমার ধারণা এতোটাও অবুঝ তুমি নও।
অহনার ভেতর থেকে এবার ঠেলে কান্না বেড়িয়ে এলো। হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বললো, কি করে বিয়ে করবো তাকে? তাকে কোথায় পাব আমি? সে কি এই পৃথিবীতে আর আছে! সে আমায় ছেড়ে চলে গেছে অনেক দূরে। অনেক!
.
আকাশ কিছু বুঝে উঠতে না পেরে বলে উঠলো, মানে?
হাতে থাকা ছবিটার দিকে ইশারা করে অহনা বললো, ওর নাম মোহন সেন। আমাদের ধর্ম ছিলো আলাদা। এক সঙ্গে পড়তাম। খুব কাছের বন্ধু ছিলো আমার। ধীরে ধীরে কখন যে বন্ধুর থেকে বেশি কিছুতে পরিণত হয়েছিল বুঝতেই পারি নি। দুজনে অনেক ভালো সময় কাটিয়েছি। আমাদের বন্ধুদের গ্রুপ ওকে ছাড়া কিছু বুঝতোই না৷ সবার মধ্যমণি ছিলো ও। সব সময় সবাইকে হাসাতো। সেও মনে মনে আমায় পছন্দ করতো। আমিও তা বুঝতে পারতাম। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো ধর্ম। একজন হিন্দু ছেলে হয়ে কোনো মুসলিম মেয়েকে প্রেমের প্রপোজাল দিতে তার মন শায় দিচ্ছিলো না। সে ছিলো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। ততোদিনে আমি তাকে প্রচন্ড রকমের ভালোবেসে ফেলেছি। আমরা একে অপরের মনের কথা অবদি বুঝে ফেলতাম। মুখে কিছু বলতেই হতো না। ওকে ছাড়া কখনো কোনো ভালো খাবার আমি খেতাম না। সেও খেতো না। যা করতাম সব কিছু ওকে সাথে নিয়েই। এই ছবি গুলো ভার্সিটি থেকে পিকনিং এ গিয়ে তোলা। ওকে ছাড়া এক মুহুর্তও যেন ভাবতে পারতাম না আমি অথচ কোনো দিন তাকে বলাই হয় নি, আমি তোকে ভালোবাসি মোহন, খুব ভালোবাসি। তুই কি আমার সারাজীবনের সঙ্গী হবি!
অহনা কাঁদতে কাঁদতে আবারও বললো, শুধুমাত্র বন্ধু হয়েই ছিলো। আমার কষ্ট সে কখনো সহ্য করতে পারতো না। আমার চোখে পানি দেখলে তার মাথা খারাপ হয়ে যেত। ধর্ম আলাদা হওয়ার কারণে আমাকে তার ভালোবাসার কথা জানাতে পর্যন্ত সাহস পায় নি। জানার পর যদি আমি কোনো ভাবে কষ্ট পাই! মুখে না বললেও আমি বুঝতে পারতাম, তার চোখে ছিলো আমাকে পাওয়ার প্রবল আকুলতা। আর মনে মনে আমিও চেয়েছিলাম তাকে।
আকাশ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,তারপর?
.
অহনা আবারও বলতে শুরু করলো, আমাদের এই বন্ধুত্বের সম্পর্কটা আমি মেনে নিতে পারছিলাম না। আমি আরও কিছু চাইছিলাম। চেয়েছিলাম তাকে সারাজীবনের জন্য পেতে। কিন্তু সে তো তার মনের কথা জানাচ্ছিলো না। তাই আমার পাগলামো গুলোও দিন দিন বেড়ে যাচ্ছিলো। ওর সাথে অন্য কোনো মেয়েকে সহ্যই হতো না আমার,ইচ্ছে হতো তার চুলের মুটি ধরে আছাড় দেই। আমার দম বন্ধ হয়ে আসতো।
মোহন সব বুঝতে পারতো যে আমি তাকে খুব করে চাইছি। তাই হয়তো শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো আমাকে প্রপোজ করার। কিন্তু ঘটনাটা ঘটলো সেইদিনই।
.
আমি ভার্সির গেটে বন্ধুদের সাথে দাঁড়িয়ে আছি। সেই দিন কেন যেন সবাই মুচকি মুচকি হাসছিলো।হয়তো ওরা আগে থেকেই জানতো মোহন আজ আমায় প্রপোজ করতে চলেছে। হঠাৎ মোহনকে দেখা গেল। ও হেটে আসছে। মোহন রাস্তার ওপারে দাঁড়িয়ে আছে। ওর হাতে দেখলাম অনেক গুলো গোলাপ ফুল। আজ ওকে অন্য রকম সুন্দর দেখাচ্ছে। আমার দিকে তাকিয়ে সেও মুচকি মুচকি হাসছিলো। মায়া ভরা সেই হাসি। আমার মনের মধ্যে অজানা অন্যরকম এক অনুভূতি কাজ করছিলো।
.
মোহন এগিয়ে আসছে ভেবেছিলাম আমিও আজ ওকে আমার ভালোবাসার কথা বলে দিব। কিন্তু রাস্তা পার হতেই হঠাৎ একটা বাস এসে ওকে পিসে দিয়ে গেল। এটা দেখার সাথেই আমি ওখানেই জ্ঞান হারালাম। তিন দিন আমার জ্ঞান ছিলো না। যেদিন জ্ঞান ফিরলো তখন জানতে পারলাম মোহনকে ওই দিনই তার দেশের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে সমাধি করা হয়েছে। মোহনের বাবা ছিলো না। মায়ের একমাত্র ছেলে ছিলো মোহন । বন্ধুদের কাছে জানতে পারলাম ঘটনার আগের দিন মোহন নাকি তার বাড়িতে আমার কথা বলে ওর মাকে রাজিয়েও করিয়েছিলো। সব শুনে আমি আর ঠিক থাকতে পারলাম না। সব কিছু পাওয়ার মুহুর্তে যেন সব হারিয়ে ফেললাম। মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো। কখনো কখনো মনে হয় মোহনের মৃত্যুর কারণ আমি ৷ ভুলে থাকার শত রকম চেষ্টা চালালাম। কেটে গেল দু বছর। আস্তে আস্তে মোহনের স্মৃতি মুছে গেলেও আমার মনের কোণে সে ঠিকই রয়ে গেছে।
.
আকাশের চোখে পানি চলে এসেছে। তা দেখে অহনা বলে উঠলো,একি তুমি কাঁদছো কেন?
আকাশ চোখের কোনার পানিটা মুছে তারপর বললো, কই না তো, চোখে কি যেন পরেছিল আরকি।
অহনাও তার গাল বেয়ে পরা পানি গুলো মুছে বলে উঠলো, জানো আকাশ, মোহনের একটা কথাই আমার বার বার মনে হয়, অহনা তুই সব সময় হাসি খুশি থাকবি। তোর কষ্ট আমার সহ্য হয় না রে । তুই ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকবো। এখন আমার মনে হয়, হয়তো মোহন কোথাও থেকে দেখছে, আমি ভালো আছি! খুব সুখে আছি! হাসিখুশি আছি! এটাই তো চেয়েছিলো মোহন। আমার মুখের হাসি!
.
আকাশ চুপ করে রয়েছে। বুকের ভিতরটা কেমন যেন করছে। অহনা হঠাৎ করে বলে উঠলো, আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবে আকাশ! আমারও বুকের ভিতরটা কেমন যেন করছে।
আকাশ চমকে উঠলো। থমকে দাঁড়িয়ে আছে সে।
অহনা চোখে পানি নিয়ে আবারও বলছে, কি হলো! আমাকে নেবে না?
আকাশ এবার এগিয়ে এসে অহনাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়।
অহনা আকাশের বুকে মাথা রাখতে রাখতে বললো, আরো শক্ত করে!
আকাশ অহনাকে আরও শক্ত করে দুই হাতের বাহুতে আবদ্ধ করে ফেললো।
অহনাঃ তুমি আমায় ছেড়ে কোনোদিন যাবে না ডক্টর আকাশ!
পরিস্থিতি গম্ভীর হয়ে গেছে। তাই আকাশ এবার অহনাকে হাসানোর জন্য বলে উঠলো,আরে নাহ! তোমার বাবাকে কথা দিয়েছি না? তোমাকে সুস্থ করার দায়িত্ব পুরোপুরি আমার! হাহাহা...
অহনাও আকাশের কথা শুনে এবার হেসে ফেললো।
.
এদিকে রুমের ভিতর তুলির সাথে রৌদ্রের ঝগড়া লেগে গেছে। মেঘ বললো, আরে বাদ দে না ভাই! এতো রেগে যাচ্ছিস কেন!
রৌদ্রঃ ওয়াট রাবিশ! একটা ক্ষ্যাত মেয়ে কিনা আমায় বলে আমি তার ওড়না টেনে ধরেছি। এই মিথ্যা অপবাদ আমি কেন মেনে নেব হ্যাঁ! কত কত সুন্দরী মেয়েরা আমার পিছনে ঘুর ঘুর করে। কোনো ধারণা আছে ওর!!
অহনার মা এসে বললেন, ছাড়ো না বাবা! ওর কথায় কিছু মনে করো না। গ্রামের সহজ সরল মেয়ে। এসব বোঝে না।
অহনার মা তুলিকে এখান থেকে নিয়ে গেলেন। তুলি চলে যাওয়ার পর মেঘ বললো, তুই একটু বেশি বেশি বলে ফেললি, দেখতেই পাচ্ছিস মেয়েটা কতোটা সহজ সরল! যা সরি বলে আয়!
রৌদ্রঃ কোনো ইচ্ছে নেই ওই মাথা খারাপ মেয়েটার সাথে কথা বলার!
মেঘঃ আবার!! যা গিয়ে সরি বল। ভুলে গেছিস এটা ভাইয়ার শশুড়বাড়ি!
বলতে বলেই মেঘের ফোনের রিংটন বাজতে শুরু করে। শ্রাবনী ফোন করেছে। মেঘ কলটা রিসিভ করলো৷
মেঘঃ হ্যাঁ বলো!
শ্রাবনী হাফাতে হাফাতে বলছে, কি আর বলবো! নীলা তো অনেক গুলো ঘুমের ঔষধ খেয়ে ফেলেছে। তুমি জলদি ওদের বাড়ি যাও!
মেঘঃ ওয়াট! কি বলছো এসব!
শ্রাবনীঃ নিশ্চয়ই তোমার ওপর রাগ করেই সে এমনটা করে ফেলেছে।
মেঘঃ মানে আমি এখন ওদের বাড়ি যাব? ওর বাবা মা আমাকে আবার ফাঁসিয়ে দেবে না তো!
শ্রাবনীঃ আশ্চর্য মানুষ তো তুমি! একটা মেয়ে মরতে বসেছে আর তুমি এই সময় এমন কথা বলছে?
মেঘঃ হাহাহা..আমাকে এতো মেয়ের মাঝে একা রেখে ও মরবে। ওর সহ্য হবে?
রাগে শ্রাবনী কলটা কেটে দেয়। আর মেঘ তাড়াহুড়ো করে কাউকে কিছু না বলেই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেল।
.
চলবে....
পর্বঃ৭ +৮
আজ এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার দিন। তুলি এবার পরীক্ষা দিয়েছিলো। তুলির রেজাল্ট পাওয়া যায়। গাধী তুলি তিন সাবজেক্টে ফেল করেছে। ইংরেজি, ভূগোল এবং পৌরনীতিতে। তুলির মা মুখ দেখাতে পারছেন না। আত্মীয় সজনের সামনে মান সম্মান সব গেল। তুলির বাবাও লজ্জায় ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। তিনি ফোন করে তুলিকে গ্রামে নিয়ে যেতে বলেছেন। তুলির মা তুলিকে অনেক বকাবকি করতে করতে এক পর্যায়ে ঝাড়ু নিয়ে এসে পেটানো শুরু করলেন তখন অহনার মাসহ বাড়ির লোকজন এসে তুলির মাকে আটকায়। চিল্লাচিল্লিতে বাড়ি একদম মাথায় উঠে গেছে৷ নতুন জামায়ের সামনে এসব ঘটনায় অহনার বাবা মাও একরকম লজ্জায় পরে গেলেন। কাঁদতে কাঁদতে তুলি দৌড়ে গিয়ে ঘরের দরজা লাগিয়ে দিলো।
.
অনেকক্ষণ থেকে তার কোনো সাড়া শব্দ নেই। দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য ডাকা হলেও সে কোনো সাড়া দেয় নি।
শরিফাঃ খালাম্মা আফায় তো দরজা খুলে না। আফা খাইবো না?
তুলির মা রেগে বললেন,তোর এতো দরদ কিসের যা এখান থেকে। ওকে খাবার দেবার দরকার নেই।
.
মেঘ নীলাদের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছলো। দেখলো সেখানে ড্রইংরুমের ভিতর অনেক মানুষের জটলা বেধে আছে। মেঘকে দেখে শ্রাবনী এগিয়ে এলো,
শ্রাবনীঃ তোমার জন্যই এমনটা হয়েছে, কাল পানিটা খেলে কি এমন হতো!
শ্রাবনীর কথা শুনে মেঘের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল।
মেঘঃ নীলা ঠিক আছে তো?
তখনই নীলার মা এগিয়ে এসে বললেন, ডাক্তার এসেছিলো। ওর পেট থেকে ঔষধ গুলো ওয়াশ করে বের করা হয়েছে আর কোনো ভয় নেই কিন্তু ওর জ্ঞান এখনো ফেরেনি!
শ্রাবনীঃ তুমি পানিটা কেন খেলে না মেঘ!
নীলার মা তখনই ভ্রু কুচকে জিগাসা করলেন, কিসের পানি?
শ্রাবনী এবার মুখ ফসকে বলে ফেললো, নীলা একটা পানি এনেছিল সেই পানি।
তার পরেক্ষনেই সাথে সাথে জিব্বায় কামড় দিয়ে বলে উঠলো, কিছুনা আন্টি কিছু না!
নীলার মা কিছুই বুঝলো না,তিনি বললেন, কাল সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার সময় ওর হাতে একটা ছোট পানির বোতল দেখেছিলাম।
শ্রাবনী চোখ বড় বড় করে বললো, তার মানে নীলা কালও শ্যামপুর গিয়েছিলো?
নীলার মা ভ্রু কুচকে আবার বললেন, মানে?
শ্রাবনীও আস্তে করে আবার বলে উঠলো, না আন্টি কিছু না।
তারপর মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো, সব কিছু হয়েছে তোমার জন্য!
নীলার মা এবার মেঘের দিকে তাকালেন আর সন্দেহবসত বললেন, তুমি কিছু করোনি তো?
.
নীলার মা ভ্রু কুচকে মেঘের দিকে তাকিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকিয়ে তাকিয়ে মেঘকে দেখছেন। মেঘ একটু জোর করে হাসার চেষ্টা করে বললো, না না আন্টি,আমি আবার কি করবো!
নীলার মা তখনই নীলার বাবাকে ডাকলেন, ওগো এদিকে এসো,এই ছেলেটাই কিছু একটা করেছে।
নীলার বাবা এখানে এসে দাঁড়ালেন৷ ভয়ে মেঘের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।
মেঘঃ আংকেল আমি কিছু করি নি!
নীলার বাবা রাগী গলায় বললো, তোমায় আমি পুলিশে দেব!
মেঘঃ আংকেল এখন তো নীলার বিপদ কেটে গেছে আর কোনো ভয় নেই।
নীলার বাবাঃ তাহলে আমার মেয়ে চোখ খুলছে না কেন!
মেঘঃ আমি খোলাবো....নীলার রুমটা কোনদিকে?
শ্রাবনী হাতের ইশারায় দেখিয়ে দিয়ে বললো,ওই যে ওইদিকে...
মেঘ দৌড়ে সেদিকে চলে যায়
নীলার মাঃ এই ছেলে এই... তুমি ওইদিকে কোথায় যাচ্ছো!
বাকিরাও সবাই মেঘের পিছু পিছু এসে নীলার রুমে উপস্থিত হয়।
.
তুলি দরজা খুলছে না। ভিতর থেকে কোনো সাড়াশব্দও নেই। তুলির মা এবার ভয় পেয়ে গেলেন। ভিতরে কোনো অঘটন ঘটে নি তো! বাড়িতে কান্নার রোল উঠে গেল। দরজায় অনেক বার ঢাক্কা ঢাক্কি করার পরও কোনো কাজ হলো না। দরজা ভিতর থেকে লক৷ মিস্ত্রি এনে দরজা ভাঙা হলো।
এইসব কান্ড দেখে রৌদ্র সবার চোখের আড়ালে মুচকি মুচকি হাসছে।
.
দরজা ভাঙার সাথে সাথেই সবাই হুড়মুড় করে ভেতরে ঢুকে পরে। তুলির মা চিৎকার করে বলছেন, মা রে তুলি!
তুলি অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে পরে আছে। তাকে ধরে বিছানায় তোলা হয়। আকাশ এসে তুলির চেক আপ করছে।
আকাশঃ ভয়ের কিছু নেই, আপনারা শান্ত হন। জ্ঞান এখনই ফিরবে। ওর কিছুই হয় নি। ভয়ই মেয়েটা জ্ঞান হারিয়েছে।
পানি ছেটানোর পর তুলি চোখ খুললো।
.
মেঘ নীলার রুমে এসেই নীলাকে অনবরত ডেকে যাচ্ছে।
মেঘঃ এই নীলা ওঠ। ওঠ না? তোর বাবা তোমাকে পুলিশ দেবে বলছে। ওঠ না। আমি তোর পানি খাব। কোথায় রেখেছিস পানি বল৷ আমি এক্ষুনি খেয়ে নিচ্ছি।
মেঘ নীলার রুমে এখানে ওখানে পানির বোতল খুঁজতে থাকে,
মেঘঃ এই নীলা বল না কোথায় রেখেছিস বোতলটা আমি তো খুঁজে পাচ্ছি না৷
নীলার মাঃ এই ছেলে এই তুমি রুমের জিনিস পত্র এভাবে এলো মেলো করছো কেন!
মেঘঃ আমি বোতলটা খুঁজে পাচ্ছি না। নীলা বল না কোথায় রেখেছিস!
নীলার মাঃ আরে কিসের পানি!! কিসের বোতল!
.
কিছুক্ষণ পর নীলা চোখ খুললো। আর বালিশের নিচ থেকে সে বোতলটা বের করলো। মেঘ সেটা দেখার সাথেই কিছু না বলে নীলার হাত থেকে বোতলটা নিয়ে ঢক ঢক করে বোতলের সব পানি টুকু খেয়ে নেয়। সবাই চোখ বড় বড় করে সেদিকে চেয়ে আছে।
মেঘঃ আংকেল দেখুন আপনার মেয়ে এখন চোখ খুলেছে।
নীলাঃ তোমরা সবাই এখন যাও এখান থেকে।
.
সবাই একে একে চলে গেল। মেঘ বিছানা থেকে উঠতেই নীলা মেঘের হাত টেনে ধরে,তুই কোথায় যাচ্ছিস। তুই বস।
মেঘঃ কেন এরকম করেছিলি। তোর যদি কিছু হয়ে যেত।
নীলাঃ হলে তো তুই সব থেকে বেশি খুশি হতি।
মেঘঃ চুপ! এরকম কথা আর কখনো বলবি না৷
.
হঠাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগেই নীলা এগিয়ে এসে মেঘের ঠোঁটে চুমু দিয়ে ফেললো আর মেঘকে জড়িয়ে ধরে রইলো।
.
অহনার কে বিদায় দেয়া হয়েছে। বিদায়ের সময় অহনা প্রচন্ড রকমের হাসি হাসছিলো । তুলিরও ওই বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু তুলি পরীক্ষায় ফেল করায় তুলির মা রাগ করে তুলিকে নিয়ে গ্রামে চলে গেছেন। আকাশ, অহনা এবং রৌদ্র বেড়িয়ে পরলো প্রেম নগরের উদ্দেশ্য। গাড়িতে বসে অহনা এখনো হেসেই যাচ্ছে।
আকাশঃ কি আশ্চর্য! এভাবে পাগলের মতো হাসছো কেন?
অহনারঃ কি করবো,আমার প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে।
অহনা এবার মুখ চেপে আবারও হাসতে শুরু করলো।
আকাশঃ তোমাকে না বলেছি এভাবে পাগলের মতো যখন তখন হাসবে না! আর অবশ্যই ওই বাড়িতে গিয়ে এরকম করবে না তুমি।
.
হঠাৎ করে বিকট শব্দে গাড়ির টায়ার ফেটে গেল। আর চলন্ত গাড়িটা ব্রেক করে থেমে গেল। সবাই ঝাকুনি খেয়ে উঠলো।
আকাশঃ ওই দেখ তো কি হলো!
ড্রাইভার আর রৌদ্র নেমে দেখলো টায়ার ফেটে গেছে।
রৌদ্রঃ ভাইয়া টায়ার ফেটে গেছে। এটা চেইঞ্জ করতে হবে।
আকাশঃ ওট শিট! রাস্তা তো আরো বহুদুর। আর মেঘ কোথায় রে। সকাল থেকে ওর কোনো পাত্তাই পাচ্ছি না।
রৌদ্রঃ জানিনা ভাইয়া কোথায় গেছে। আমাকে বলে যায়নি।
ড্রাইভারঃ স্যার আমি সামনে এগিয়ে দেখছি কোনো গ্যারেজ আছে কিনা।
রৌদ্রঃ আমিও যাব।
আকাশঃ ঠিকাছে সাবধানে যাস।
.
রৌদ্র আর ড্রাইভার হাটতে হাটতে সামনে চলে গেল। রাত হয়ে এসেছে।
আকাশঃ এমন একটা জায়গায় গাড়িটা নষ্ট হলো কোনো জন মানবও নেই। আরেকদিকে আবার ঘন অন্ধকার।
অহনা এখনো হেসেই যাচ্ছে।
আকাশঃ সমস্যা কি তোমার। এমন একটা পরিস্থিতিতেও তুমি হাসছো?
অহনাঃ তো হাসবো না?
আকাশঃ কেন তোমার ভয় করছে না?
অহনাঃ ভয়? কিসের ভয়। না তো!
.
কিছুক্ষণ পর রৌদ্র আর ড্রাইভার একটা খোলা পুরোনো জিপ নিয়ে ফিরলো।
ড্রাইভারঃ স্যার সামনে কোনো গ্যারেজ নেই। এটা করেই যেতে হবে।
খোলা জিপটা দেখে আকাশ ভ্র কুচকে বলে উঠলো, এটা আবার কোথা থেকে পেলে?
ড্রাইভারঃ একটা বাংলো বাড়ির ভদ্রলোক দিলো।
জিপের ভিতরে সামনের সিটে বসা রৌদ্র বলে ওঠে, ভাইয়া ভাবিকে নিয়ে উঠে পর। আমাদের এটা করেই যেতে হবে তারপর সামনে গিয়ে একটা ব্যবস্থা করা যাবে।
আকাশঃ আরে নাহ! আমি ফোন করে গাড়ি নিয়ে আসতে বলছি।
রৌদ্রঃ ভাইয়া প্লিজ! ওই গাড়ি আসতে আসতে আমরা অনেক দূর অবদি চলে যাব।
রৌদ্রের জোরাজুরিতে আকাশ আর অহনা গাড়িতে গিয়ে উঠলো। পুরোনো জিপ প্রচন্ড শব্দ করে করে আর ঝাকুনি দিয়ে দিয়ে চলছে। ঝাকুনিতে মাথার নাট বল্টু সব ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে।
.
এদিকে মেঘ নীলার রুমে ঘুমিয়ে পরেছে। সন্ধ্যার নাস্তার পর পানি খাবার সময় মেঘের পানিতে নীলা কিছুটা এলকোহল মিশিয়ে দিয়েছিলো। আর তারপর নীলার রুমে এসে গল্প করতে করতে মেঘের চোখ দুটো আপনা আপনিই বন্ধ হয়ে আসে।
.
চলবে....
পর্বঃ৮
.
মেঘ ঘুমিয়ে যাবার পর পরই নীলা দড়ি দিয়ে মেঘের হাত পা বেডের সাথে বেঁধে ফেললো। তারপর রুমের ভিতর একা একাই হাসতে হাসতে শোফায় গিয়ে বসলো। নীলার মা রুমে ঢোকার সাথেই আঁতকে উঠলেন, একি ওকে এভাবে বেধেছিস কেন?
নীলাঃ ও হচ্ছে আসামি! তাই বেধেছি। তুমি এখন এখান থেকে যাওতো মামনি।
নীলার মাঃ আসামি তোর ঘরে রাখছিস কেন! অন্য ঘরে রেখে আয়! কাল সকালে পুলিশে দিলেই হবে।
নীলাঃ তুমি যাও তো মামনি!
.
নীলার মা রুম থেকে চলে গেলে নীলা আবারও হাসতে শুরু করে। বিছানায় চিৎ হয়ে শোয়া ঘুমন্ত মেঘের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিতে দিতে বলেছে , তুমি এবার ধরা খেয়ে গেছো মেঘ, আটকা পরে গেছো। সকাল বেলা চোখ খুলে যখন তাকাবে তখন এই নীলা ছাড়া আর কিছুই বুঝবে না তুমি। কারণ এই পানিপড়ার পাওয়ার আগেরটার চেয়েও বেশি। চোখ খোলার সাথে তুমি অন্য এক দুনিয়া দেখবে! সেখানে শুধু নীলা আর নীলা! হিহিহি.....
.
পুরোনো জিপের ইঞ্জিনের শব্দে ড্রাইভাররের মাথা ঘুরছে। রৌদ্র কানে ইয়ার ফোন গুজে দিয়ে আছে। জিপটা ঝাকুনি দিয়ে চলায় সেই ইয়ার ফোনটাও বার বার কান থেকে পরে যাচ্ছে। জিপের ব্রেকটাও ঠিকমতো হচ্ছে না। একবার এদিক তো আরেকবার ওদিক। এভাবে একেঁবেঁকে সাপের মতো চলছে। রিরক্তিতে আকাশও মুখটা এদিক ওদিক ঘোরাচ্ছে। অতিরিক্ত ঝাকুনিতে অহনা একদম গভীর নিদ্রায় চলে গেছে।
আকাশ একবার অহনার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে উঠলো, এর মধ্যেও মানুষ ঘুমায় ক্যামনে!
.
হঠাৎ জিপটা অতিরিক্ত পরিমাণে শব্দ করতে করতে বিকট শব্দ হয়ে থেমে গেলো।
রৌদ্রঃ ভাইয়া এটাতে করে বোধহয় আর যাওয়া যাবে না।
আকাশঃ নে আরও ওট! আমি গাড়ি নিয়ে আসতে বলেছি। গাড়ি আসছে। নমো সবাই।
.
অহনাকে জিপ থেকে নামার জন্য কয়েকবার ডাকা হলেও অহনা শুনলো না। অহনা মরার মতো ঘুমাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত আকাশ অহনাকে কোলে তুলে নিয়ে হাটা শুরু করলো।
রৌদ্র পিছনে ফিরে এই দৃশ্য দেখে বলে উঠলো, হোয়াট এ রোমান্টিক সিন!
আকাশ চোখ গরম করে দাঁত কড়মড় করে রৌদ্রের দিকে তাকাতেই রৌদ্র আবারও হাটতে শুরু করলো। কিছুটা সামনে এগোতেই গাড়ি চলে এলো। অহনা এখনো ঘুমাচ্ছে। গাড়িতে বসে আকাশ অহনার মাথাটা আলতো করে নিজের কাধে রাখলো। মেয়েটা একদম ছোট বাচ্চাদের মতো করে ঘুমাচ্ছে। আকাশ অহনার কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে দেয়।
.
ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নীলা আয়নায় নিজেকে দেখছে আর একা একাই আয়নার ভিতরে থাকা নিজের প্রতিচ্ছটাকে বলছে, কি! কি দেখছো! এখন মেঘ তোমার তাইনা! তুমি জিতে গেছো। আর কিছুক্ষণ পরেই তো মেঘ তোমাকে ভালোবাসি ভালোবাসি বলে পাগল করে দেবে।
নীলা এবার লাজুক ভঙ্গিতে মুচকি হাসতে হাসতে দুই হাত দিয়ে মুখটা ঢেকে ফেললো কিন্তু তারপরেক্ষনেই আবার হাতটা সরিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে বললো, কি! লজ্জা পাচ্ছো কেন!
.
নীলা ঠোঁটে লিপস্টিক আর চোখে আইলারনার দিয়ে সাজতে শুরু করে। সাজতে সাজতেই আয়নার দিকে তাকিয়ে এক চোখ টিপ মারলো আর লিপস্টিক দেওয়া ঠোঁটটা কিস দেওয়ার স্টাইলের মতো করে রয়েছে।
তখনই মেঘ চোখ খুললো। হাত পা নড়াতেই টান টান অনুভব করতেই দেখলো তাকে দড়ি দিয়ে বেধে রাখা হয়েছে। মেঘের মাথা ঘুরছে। মাথাটা কেমন যেন ঝিম ঝিম করছে। মাতালের মতো লাগছে । পাশে তাকাতেই নীলাকে দেখে বলে উঠলো, নীলা!
মেঘের কথায় নীলা চমকে উঠে এদিকে ফিরলো তারপর এগিয়ে আসতে আসতে বললো, ও মাই জান তুমি উঠে গেছো!
মেঘ রুমের চারিদিক তাকাতে তাকাতে বলে ওঠে, আমি কোথায়? আমার কি হয়েছে, আমার হাত পা বাঁধা কেন?
.
নীলা মেঘের মাথার কাছে এসে বসলো। মেঘের চুলে আলতো ভাবে হাত রাখতে রাখতে বললো, তুমি তো আমার ঘরেই আছো জান।
মেঘ শুয়ে থেকেই চোখ উপরে তুলে নীলার দিকে তাকায়। মেঘের তাকিয়ে থাকা দেখে নীলার বুকের ভিতরটা দুরুদুরু করছে।
মেঘঃ কিন্তু আমাকে এভাবে বেধে রেখেছিস কেন?
নীলাঃ আমি এখনি বাধন খুলে দেব তার আগে তো কিছু বল! আমি যে আর অপেক্ষা করতে পারছি না! আমার এখনি জানতে হবে।
মেঘ এবার একটু রেগে যায়, মানে? কি নাটক শুরু করেছিস! খুলে দে এগুলো!!
নীলাঃ তুই আমায় ধমক দিয়ে কথা বলছিস!
মেঘঃ তো?
নীলাঃ এমন তো হবার কথা ছিল না।
মেঘঃ তাহলে কেমন হবার কথা ছিল। তাড়াতাড়ি এগুলো খুলে দে বলছি!
নীলা এবার মেঘের মুখের কাছে নিজের মুখ এগিয়ে নিয়ে আসে৷ তারপর ভ্রু কুচকে মেঘের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, তুই আমায় ভালোবাসিস না??
মেঘও ভ্রু কুচকে রেগে নীলার দিকে তাকিয়ে আছে।
মেঘঃ না বাসি না!
নীলা এবার চট করে দাঁড়িয়ে গেলো, ভালো বাসিস না মানে!
মেঘঃ ভালোবাসি না মানে বাসি না। না বাসলে জোর করে বাসাবি নাকি। এখন খুলে দে এগুলো! আমার অসহ্য লাগছে।
.
নীলা মাথায় এবার বাজ পরতে শুরু করে। পানি পড়া খাওয়ার পরেও কেন মেঘ এরকম কথা বলছে। এতোক্ষণে তো মেঘের নীলার প্রেমে পরে হাবুডুবু খাওয়ার কথা। কবিরাজ তো এমনটাই বলেছিলো। পানি পড়া খাওয়ার কয়েক ঘন্টা পরেই নাকি এটি কাজ করতে শুরু করবে৷ নীলা আবার মেঘের দিকে তাকালো। এগিয়ে এসে মেঘের পাশে বসতে বসতে মেঘের গায়ে হাত দিতে দিতে বললো, তুই আমার সাথে মজা করছিস তাই না। এখন সত্যিটা বল, নীলা আই লাভ উ!
মেঘ রেগে বললো, নাটক তো তুই করছিস! তাও আমার এই রাতের বেলা। খুলে দে এগুলো আমি বাড়ি যাব।
নীলা আবারও ভ্রু কুচকে মেঘের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, মেঘ তুই আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস না?
মেঘঃ হাবুডুবু তো দূরের কথা আমার রীতিমত অসহ্য লাগছে। খুলে দে এগুলো।
.
রাগে নীলা আবারও দাঁড়িয়ে গিয়ে টেবিলে থাকা কাচের গ্লাসটা হাতে নিয়ে ফ্লোরে ছুড়ে দিলো। তাহলে কি কবিরাজের দেওয়া পানি পড়া কোনো কাজই করে নি? মেঘ তো পুরো পানি টুকুই খেয়ে নিয়েছিলো। তারপরও কেন মেঘের কোনো পরিবর্তন হলো না? কপাল ভাজ করে নীলা ভাবতে ভাবতে শোফায় বসে পরলো।
.
গ্লাস ভাঙার শব্দ শুনেই নীলাদের বাসার একজন একজন সিকুরিটি গার্ড দৌড়ে এই রুমের ভিতর চলে এসেছে। তাকে দেখার সাথেই যেন মেঘ কলিজায় পানি পেলো, ভাই আমার বাধন গুলো খুলে দেন। আমাকে বাঁচান!
সিকুরিটি গার্ডটা মেঘের বাধন খুলে দেওয়ার জন্য এগিয়ে যেতেই ভাঙা কাঁচের টুকরোতে পা দিলো। অতিরিক্ত কৌতুহলবসত মেঘকে দেখতে ব্যস্ত থাকার কারণে সে নিচের দিকে তাকিয়ে খেয়াল করে নি৷ আর নীলার রুমে আসতে গেলে তাদের সবার জুতা খুলে খালি পায়ে আসতে হয়। কাঁচের টুকরোয় পা দেওয়ায় সাথে সাথে পা কেটে রক্ত বেড়িয়ে গেল।
তখনই নীলা বলে ওঠে, খবরদার ওকে কেউ খুলে দেবে না! এখন যাও এখান থেকে।
সিকুরিটি গার্ডটা পা কেটে আহত হয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হেটে নীলার রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
.
ওর বেড়িয়ে যাওয়া দেখে মেঘ হতাশ হয়ে যায়। নীলা রাগ চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে৷ মেঘ রুমে থাকা দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকালো। সময় রাত ১ টা বেজে ৫ মিনিট। মেঘের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।
মেঘঃ আমায় একটু পানি দিবি?
নীলা রেগে চেচিয়ে বললো, তোকে এক ফোঁটাও পানি দেব না আমি!
মেঘঃ তাহলে আমাকে খুলে দে। আমি বাড়ি যাব।
রাগে নীলা এগিয়ে এসে মেঘের শার্টের বোতাম খুলে দিচ্ছে। জোরে টানাটানি করতে করতে শার্ট কিছুটা ছিড়েও গেল।
মেঘঃ আরে আরে এ্যাই কি করছিস কি! ছাড়!
নীলাঃ আমার যা ইচ্ছে তাই করবো! খুলে দিতে বলেছিস, নে খুলে দিয়েছি।
.
নীলা আবার শোফায় গিয়ে বসলো আর তারপর মেঘকে দেখিয়ে দেখিয়ে গ্লাসের পর গ্লাস পানি খেলো। তবুও মেঘকে এক ফোঁটা পানিও দিলো না৷ ঘুমে মেঘের চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। মেঘ চোখ বুঝলো।
.
আকাশ,অহনা ও রৌদ্র মাঝরাতে প্রেমনগরের চৌধুরী মহলে ফিরেছে। ওদের ফেরার চিন্তায় বাড়ির কেউই এখনো ঘুমাতে পারে নি। সবাই ড্রইংরুমে বসে গল্প করতে করতে অপেক্ষা করছিলো। আকাশ অহনাকে কোলে নিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢোকে। অহনা এখনো ঘুমাচ্ছে। অহনাকে আকাশের কোলে দেখে সবাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। রৌদ্র তার ঘরে চলে যায়।
মনিরা বেগমঃ তোরা এতো দেড়ি করলি কেন? আর বৌমার কি হয়েছে!
আকাশ কিছু না বলে অহনাকে নিয়ে ঘরে চলে গেল। সবাই ভ্রু কুচকে সেদিকে তাকিয়ে থেকে মনে কৌতুহল নিয়েই যে যার ঘরে চলে যায়৷
.
অহনাকে বিছানায় শোয়ানোর সাথেই অহনা
আকাশকে জড়িয়ে ধরলো। ঝাকুনিতে আকাশের শরীরও ক্লান্ত হয়ে গেছে। আকাশ অহনার গায়ের ওপর পরে থাকা অবস্থাতেই চোখ বন্ধ করলো।
.
সময় রাত সাড়ে তিনটা। ঘুমে নীলার চোখও বন্ধ হয়ে এসেছিলো। হঠাৎ বাথরুম পেয়ে গেল। রুমের লাইটটা জ্বালানোই রয়েছে। নীলা শোফা থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়। তখন মেঘকে দেখিয়ে দেখিয়ে বেশি পানি খাওয়ার কারণেই বাথরুমটা বেশি পরিমাণে পেয়ে গেছে। বাথরুম সেড়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে টাওয়েলটা হাতে নিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়। আর বিছানার দিকে তাকাতেই চেচিয়ে ওঠে, মেঘ!!
.
বিছানার ওপর দড়ি গুলো পরে রয়েছে। ঘরের জানালা খোলা। জানালার পাল্লা দুটো বাতাসে একটার সাথে আরেকটা বারি খাচ্ছে। মেঘ পালিয়েছে।
রাগে নীলা ওয়াশরুম থেকে বালতি ভর্তি পানি নিয়ে এসে রুমের ভিতর পানি ঢালতে থাকে।
নীলাঃ নে নে। নে পানি!
বাহিরেরও এই সময় বৃষ্টির পানিতে গাছপালা, রাস্তাঘাট ভিজে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে কোথাও জোরে জোরে বজ্রপাতও হচ্ছে।
.
চলবে....
পর্বঃ৯ +১০
.
সকাল বেলা নীলার মা নীলার রুমে ঢুকতেই চিৎকার দিয়ে উঠলেন, নীলা!!
নীলা মেঝেতে পরে আছে। মেঝের মাঝ খান থেকে শুরু করে কোনা বরাবর শুধু পানি আর পানি। রুমে থাকা জিনিস পত্রের ওপরেও পানি ছেটানো হয়েছে। নরম তুলতুলে বিছানাও বাদ যায় নি। নীলাকে মেঝেতে পরে থাকতে দেখে তিনি বাড়ির অনান্য সদস্যদের ডেকে আনলেন। তারপর নীলাকে অন্য রুমে নিয়ে গিয়ে নীলার পরনে জামা কাপড় গুলো পাল্টে দিয়ে বিছানায় শোয়ানো হয়। সারা রাত মেঝেতে পরে থাকায় নীলার জামা কাপড় ভিজে চুপচাপে হয়ে গিয়েছিলো। নীলার জ্ঞান নেই। ডাক্তার নিয়ে এসে চেপ আপ করানো হয়। ডাক্তার বললেন, মানসিক চাপেই সে চেতনা হারিয়েছে।
রুমে উপস্থিত নীলার বাবা নীলার মার দিকে তাকিয়ে বললেন, এসব হলো কিভাবে?
নীলার মাঃ আসামি পালিয়েছে। তাকে বাড়ির কোথাও খুঁজে পেলাম না। নিশ্চয়ই সে পালানোর কোনো মতলব এটেছিল। আর তাই নীলার এই অবস্থা করে পালানোর পথ বের করে নিয়েছে। নীলা ওকে বেধে রেখেছিলো। সকালে পুলিশে দিব বলেছিলাম। কিন্তু তার আগেই পালিয়ে গেল।
নীলার বাবাঃ পুলিশে তো ওকে আমি দিবই। আমার মেয়ের এই অবস্থা করে ও পালিয়ে পার পাবে ভেবেছো! আমি এক্ষুনি থানায় ফোন করে ছেলেটাকে ধরার ব্যবস্থা করছি।
.
এদিকে তুলির বাবা তুলির বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন। গ্রামেরই এক বড় ব্যবসায়ীর সাথে তুলির বিয়ে। কাল তুলি বাড়ি ফেরার পর সন্ধ্যায় বিয়ের সব কিছু পাকা করা হয়। এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল করার কারণেই বিয়েটা তাড়াতাড়ি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সবার কাছে যে মুখ দেখানো যাচ্ছে না। তাছাড়া এতো বড় ব্যবসায়ী পাত্র হাত ছাড়া করা যায় না। মেয়ে বড় হয়েছে। কোন দিন কি করে ফেলে। পাছে সমাজে বাস করাই দায় হয়ে যাবে। তুলি মোটামুটি সুন্দরী হওয়ায় ব্যবসায়ী রেয়াকত আলীর আগে থেকেই তুলির দিকে নজর ছিলো। তাই বিয়ের কথা বলার সাথে সাথেই তার টনক নড়ে ওঠে এবং তুলিকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায়। তার যেন আর দেড়ি সইছে না সে আজই তুলিকে বিয়ে করে ঘরে তুলতে চায়। তুলি কলেজ যাওয়া আসার পথে সে ড্যাবড্যাবিয়ে তুলির দিকে চেয়ে থাকতো। তুলি উনাকে একদমই পছন্দ করে না। বসে থাকতে থাকতে রেয়াকত আলীর ভুড়ি খুবই বেড়ে গিয়েছে। দেখতেও খানিকটা মোটা এবং লম্বা। বলতে গেলে ছোট খাট একটা হাতি। কিন্তু তুলির মতো কচি কচি মেয়েদের দিকেই তার সময় নজর। বিশেষ করে তুলিকে তার খুবই মনে ধরেছে। ভেবেছিলো পরীক্ষার পর পরই বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবে কিন্তু তুলির মা বাবা হয়তো এতো তাড়াতাড়ি রাজি হবে না। কিন্তু রেজাল্ট দেওয়ার সাথেই সাথেই যে তারা তুলির বিয়েটা দিতে রাজি হবে এটা কল্পনাতেও ভাবে নি সে। এতো মেঘ না চাইতেই জল পেয়ে গেল মনে হয়।
.
সকাল সকাল উঠেই লেয়াকত আলী তার লোকজনদের বাড়ি সাজানোর দায়িত্ব দিয়েছে। একটু পর গায়ে হলুদ শুরু হবে।
রেয়াকত আলীর সাথে বিয়ের কথা শুনে বিগড়ে যায় তুলি। তবুও তার বাবা মা কোনো মতেই ভালো পাত্র আর হাতছাড়া করতে চায় না। একরকম জোর করেই রেয়াকত আলীর সাথে তুলির বিয়েটা হচ্ছে।
.
আকাশ হাসপাতালে গেছে রুগী দেখতে। বেলা বারতেই অহনা রান্না ঘরে গিয়ে ঢুকলো। আজ দুপুর বেলা আকাশের মায়ের বাড়ির কিছু আত্নীয়দের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। তাদের জন্যই বিভিন্ন পদের রান্না করা হচ্ছে। রান্না ঘরে আছেন আকাশের চাচী এবং দুইজন কাজের মহিলা।
রান্নাঘরে এসেই অহনা মিষ্টি করে হেসে বলছে, তোমরা কি করছো! রান্না করছো? কি রান্না করছো?
বলেই এটা ওটায় হাত দিতে শুরু করে। বাটি, কড়াই সব কিছুতে হাত দিয়ে উল্টিয়ে উল্টিয়ে দেখছে।
অহনাঃ এটা কি? আর ওটা!
আকাশের চাচীঃ আহা হাত পুরে যাবে তো এগুলো তে হাত দিও না। খুব গরম।
অহনাঃ তাই?
আকাশের চাচীঃ হ্যাঁ। তোমার শাশুড়ির বাড়ি থেকে আজকে কিছু লোকজন আসছে। অনেক কিছু রান্না হচ্ছে।
অহনা আকাশের চাচীর দিকে তাকিয়ে আবারও বললো, ওমা তাই? আমি রান্না করবো!
আকাশের চাচীঃ তোমাকে রান্না করতে হবে না। তুমি ঘরে যাও।
.
কাজের মহিলা তখনই চুলা থেকে গরম কিছু নামাচ্ছে,আফা একটু সরেন। ছ্যাক লাগবো!
অহনা এদিকে তাকিয়ে তারপর একটু সরে যায়।
অহনাঃ আমিও রান্না করবো। কিন্তু কি রান্না করবো। আমি তো রান্নাই জানিনা।
আকাশের চাচীঃ তোমাকে কোনো কিছু রান্না করতে হবে না। তুমি ঘরে যাও৷ আহা ওটাতে হাত দিও না হাত পুরে যাবে!
অহনাঃ না আমি রান্না করবো। আমি এই বাড়ির বউনা?
আরেকজন কাজের মহিলা সবজি কাটছিলো। অহনা এবার সেদিকে এগিয়ে যায়।
আকাশের চাচীঃ আহা এগুলো তে হাত দিও না। তুমি কাটতে পারবে না,হাত কেটে যাবে।
অহনা কাজের মহিলাকে বললো, এই তুমি সরো তো ওদিকে যাও!
কাজের মহিলা চোখ উল্টিয়ে উল্টিয়ে অহনার সবজি কাটা দেখছে।
আকাশের চাচীঃ নাহ আমি আর পারছিনা! এই মেয়ে কোনো কথাই শোনা দেখি৷
.
আকাশের চাচী দৌড়ে তাড়াতাড়ি আকাশের মা মনিরা বেগমের ঘরে গেলেন।
মনিরা বেগমঃ কি হলো আমি না যেতেই রান্না শেষ?
আকাশের চাচীঃ না ভাবি। রান্না শেষ মানে ওদিকে তো রান্নার তেরোটা বেজে যাচ্ছে। বৌমা রান্না ঘরে ঢুকছে। যে টুকু রান্না হয়েছিলো সেটুকুও বোধহয় শেষ!
মনিরা বেগমঃ কিহ! ওকে কে বলেছে রান্না ঘরে ঢুকতে!
আকাশের চাচীঃ তোমার বৌমা কোনো বারন শুনছে না ভাবী! আকাশ এটা কাকে বিয়ে করে এনেছে আল্লাহ! রান্নার এদিক ওদিক হলে আমি আর রান্নার কিচ্ছু জানিনা ভাবি। তোমার বৌমা তুমি গিয়ে সামলাও৷
.
সাথে সাথে মনিরা বেগম আকাশকে ফোন করলেন, কোথায় তুই?
আকাশঃ হসপিটালে! রোগী দেখছি।
মনিরা বেগমঃ তোর ঘরেই রোগী থাকতে তুই বাহিরে গিয়ে রোগী দেখছিস!
আকাশঃ ডাক্তারদের কাজই তো হচ্ছে রোগী দেখা মা। কেন মা কি হয়েছে?
মনিরা বেগমঃ তোর বউয়ের চিকিৎসা কর ভালো করে। ও রান্না ঘরে ঢুকেছে। গিয়ে রান্নার তেরোটা বাজাচ্ছে।
আকাশঃ হোয়াট! ওকে তোমরা ঢুকতে দিলে কেন? ওকে আটকাও! ও হাত কেটে ফেলবে! ও হাত পুড়িয়ে ফেলবে!
মনিরা বেগমঃ কিচ্ছু জানিনা আমি। তোর বউ তুই সামলা।
আকাশঃ আমি এক্ষুনি বাড়ি আসছি। মা তোমার পায়ে পরি, ততক্ষণে ওকে একটু আটকাও৷
.
অহনার চিন্তায় আর ভয়ে আকাশ অস্থির হয়ে গেছে। অপেক্ষাকৃত রোগীদের দেখা বাদ দিয়েই কাউকে কিছু না বলে আকাশ গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরলো।
.
থানা থেকে নীলার বাবার কাছে ফোন এসেছে, ওসি সাহেব বলছেন, ছেলেটার বাড়ি প্রেমনগর। আফতাব চৌধুরীর ছেলে মেঘ চৌধুরী। আমরা খুব শিঘ্রই সেখানে গিয়ে খোঁজ করছি৷
সারারাত পানিতে ভিজে নীলার জ্বর এসে গেছে। নীলার মাথায় নীলার মা পট্টি দিয়ে দিচ্ছেন। জ্বরের ঘোরে নীলা বির বির করে বলছে, মেঘ! তোকে আমি ছাড়বো না! ছাড়বো না.....
নীলার বাবা ফোন কানে নিয়ে তখনই নীলার মুখের দিকে তাকালেন আর নীলার বির বির করে বলা কথাটা শুনতে পেলেন আর তারপরই লাইনে থাকা ওসি সাহেবকে বললেন, ছাড়বেন না! একদমই ছাড়বেন না....ওসি সাহেব!
ওসিঃ এই আবু জাফরের হাত থেকে কেউ আজ পর্যন্ত রেহাই পায় নি৷ আমি প্রেমনগরে তল্লাশি চালাচ্ছি। দরকার হলে পুরো গোষ্ঠী শুদ্ধ জেরা করে হাজতে ভরবো।
.
রৌদ্র ক্যাম্পাসে আসার সাথেই ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মেয়েরা ওকে ঘিরে ধরলো। কয়েকজন এসে রৌদ্রের সাথে হাগও করলো। তারপর ওদের মধ্য থেকে একজন মিষ্টি করে হেসে বলে উঠলো, দুইদিন কোথায় হাওয়া হয়ে গিয়েছিলে?? তোমাকে খুব মিস করেছি!
রৌদ্রও হেসে হেসে জবাব দেয়, Mee too sweetie!
মেয়ে গুলো সবাই ছোট ছোট ড্রেস পরে আছে। হাটু, কাধ, পিঠসহ শরীরের অনেক অংশই খোলা দেখা যাচ্ছে। আর বুকে ওড়না থাকার তো কোনো প্রশ্নই আসে না। রৌদ্র হেসে হেসে ওদের প্রত্যেকের কথার জবাব দিচ্ছে। তারপর হাটতে হাটতে ওদের নিয়ে ক্যান্টিনের দিকে চলে গেল।
.
বিয়ে করার জন্য রেয়াকত আলী তুলিদের বাড়ি এসে উপস্থিত হয়। তার পরনে রয়েছে সাদা পাঞ্জাবি। হাটার সময় তার ভুড়িটা আগে আগে যাচ্ছে। গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তি রেয়াকত আলীর বিয়ের তাড়ার জন্যই তুলির বাড়ির আত্নীয়সজনদের বলা হয়ে ওঠে নি। তবে পরে আবার সব আত্মীয় সজনদের নিয়ে বড় করে একটা অনুষ্ঠান করা হবে। রেয়াকত আলী বিয়েতে তার ব্যবসায়ীর কাজে লিপ্ত থাকা দলবল গুলোকেও সঙ্গে করে এনেছেন। কাঁদতে কাঁদতে তুলি নাকের পানি চোখের পানি এক করে ফেলেছে। তুলিকে জোর করেই বেনারসি শাড়ী পরিয়ে বউ সাজানো হয়। ওই মোটা ভুড়ি ওয়ালা লোকটার সাথে আর কয়েক মিনিট পরেই বিয়ে হতে যাচ্ছে এটা ভেবেই তুলির যেন জান বেড়িয়ে যাচ্ছে। কাজী সাহেব এসে গেছেন। বাড়ির সকলে এখন বর পক্ষের খেদমত করতে ব্যস্ত। এই ফাঁকে তুলি তার ঘরের পিছনের দরজাটা দিয়ে বেড়িয়ে এলো। আর তারপরই ছুটতে থাকে। কোথায় যাচ্ছে জানে না। জঙ্গল মেঠো পথ সব কিছু পার করে শুধু ছুটছে আর ছুটছে।
.
চলবে....
পর্বঃ১০
.
আকাশ বাড়ি ফিরেই দ্রুত রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালো। এখানে দুইজন কাজের মহিলা কাজ করছে। অহনা তো সেখানে নেই। আকাশ রুমে চলে আসে। রুমে আসতেই বাথরুম থেকে পানির আওয়াজ পাওয়া গেল।
আকাশ বাথরুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়, অহনা? জান তুমি কি ভিতরে?
অহনা ভিতর থেকে আওয়াজ দেয়, হ্যাঁ গোসল করছি। তুমি কখন এলে?
আকাশঃ এইতো কিছুক্ষণ হলো। জান তুমি ঠিক আছো তো?
অহনা বাথরুমের দরজাটা একটু খুলে মাথা বের করে বললো, কেন! আমার আবার কি হবে?ঠিকই তো আছি।
মাথা বের করায় অহনার ভেজা চুল গুলো থেকে টপ টপ করে পানি পরতে দেখা যাচ্ছে। অহনাকে দেখার পর আকাশ হাফ ছেড়ে বাঁচলো। অহনা বাথরুমের দরজা লাগিয়ে দেয়। আকাশ গলা থেকে টাইটা খুলতে খুলতে বিছানায় বসলো।
.
১ ঘন্টারও বেশি সময় হয়ে গেছে অহনা এখনো বাথরুম থেকে বের হয়নি। শুধু পানি পরার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। এরমধ্যে আকাশ জামা কাপড় চেইঞ্জ করে হালকা নাস্তাও সেরে নিয়েছে।
আকাশ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বললো, কি করছে এতোক্ষন!এখনো বের হয় না? আরে বাবা আমিও তো গোসল করবো। বিকালে আবার চেম্বারে যেতে হবে৷ আর কতোক্ষন বসে থাকবো।
আকাশঃ অহনা! আর কতক্ষণ লাগবে তোমার?
অহনাঃ এইতো আর একটু।
আকাশঃ সেই কখন থেকে বলছো শুধু আর একটু আর একটু।
বাথরুমের ভিতর থেকে শুধু পানি পরার আওয়াজ আসছে। আকাশ বাথরুমের দরজার সামনে এগিয়ে গেল। আকাশ মনে মনে ভাবছে এতো কি করছে ভিতরে!
আকাশ বাথরুমের দরজায় টোকা দিলো, জান তুমি ঠিক আছো তো?
.
অহনা বাথরুমের দরজাটা খুলে আবারও মাথাটা বের করলো,কি হয়েছে! আমার আরও সময় লাগবে তো।
আকাশ দরজাটায় হাত দিয়ে আরেকটু ঢাক্কা দিতেই অহনার টাওয়েল পেচানো ভেজা শরীর দেখতে পেল। অহনাকে দেখতে খুবই সেক্সি লাগছে। ভেজা চুপসানো চুল গুলো থেকে টুপ টুপ করে পানি পরছে।
অহনাঃ কি করছো এতো! দেখি।
অহনা দরজা চাপিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু আকাশ দরজাটা ধরে আটকে রেখেছে।
অহনাঃ কি হলো সরো।
আকাশ মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলো, উহুম।
সে দরজাটা আরও একটু খুলে এবার ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করছে।
অহনাঃ আরে আরে কি করছো, সরো। আমি গোসল করছি তো৷
আকাশঃ আমিও গোসল করবো।
অহনাঃ আহা আমি একদম ঠিক আছি। তোমার এখন আসতে হবে না। তুমি গিয়ে বসো৷ আমি ঠিক আছি।
.
আকাশ এবার একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলছে, দেখি কেমন ঠিক আছো। নিজের সব কিছু ঠিক ঠাক আছে কিনা সেটাই কি ভিতরে বসে বসে দেখছো নাকি এতোক্ষন?
অহনা চোখ গরম করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
আকাশঃ দেখি কেমন ঠিক আছো তুমি।
বলেই আকাশ জোর করেই ভিতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো। শাওয়ারের পানি গায়ে পরে আকাশ ভিজে যাচ্ছে। অহনা চিৎকার দিতেই আকাশ অহনার মুখ চেপে ধরলো।
অহনাঃ আরে..আ..আ... উম..
.
এদিকে বিয়ে না করে তুলি পালিয়ে গেছে বলে রেয়াকত আলীর মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। রেয়াকত আলী তুলিদের বাড়িতে ভাঙচুর শুরু করেছিলো। বহু কষ্টে তাকে সবাই মিলে আটকায়। তারপর দলবল নিয়ে বেড়িয়ে পরলো তুলিকে খোঁজার উদ্দেশ্য। তুলিকে ধরে নিয়ে এসে আবার সে বিয়ের আসরে বসবে। তুলির চিন্তায় তুলির মা অচেতন হয়ে গেছে। তার মাথায় পানি ঢালা হচ্ছে। আর তুলি বাবা কপাল চাপড়াচ্ছে। তাড়াহুড়ো করে বিয়ে দিতে গিয়ে শেষে মেয়েটাকেই না হারিয়ে ফেলে। তুলির কোনো খোঁজ নেই। কোথায় গেছে কেউ জানে না। গ্রামের পথ ঘাটে লোকজনদের জিগাসা করা হলেও তারা জানায়,তারা তুলিকে যেতে দেখেনি৷
.
ওসি সাহেব প্রেমনগরের উদ্দেশ্য গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরলেও মাঝ রাস্তায় পথ ভুল করে অন্য রাস্তায় চলে গেছেন। এরিমধ্য নীলার জ্ঞান ফিরলো আর চোখ খুলে বাবাকে ফোনে কার সাথে যেন কথা বলতে শুনলো।
নীলার বাবাঃ ছাড়বেন না। ছেলেটাকে একদম ছাড়বেন না!
ওসিঃ আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি।
কিন্তু ওসি সাহেব যে এদিকে রাস্তা ভুল করে অন্য দিকে চলে গেছেল সেই ব্যপারটা এড়িয়ে গেলেন। তিনি এখন ঠিক কোথায় আছেন তিনি নিজেও তা জানেন না৷
নীলাঃ বাবা! তুমি কাকে ধরার কথা বলছো?
নীলার বাবা এদিকে ফিরে নীলাকে দেখে বলে উঠলেন, ও মামনি তুমি উঠে গেছো, এখন কেমন লাগছে?
নীলাঃ ভালো। কিন্তু তুমি কাকে ....
নীলার কথা শেষ না হতেই নীলার বাবা হাসতে হাসতে বললেন, তুমি কোনো চিন্তা করো না মামনি,আসামির খোঁজ পাওয়া গেছে। ছেলেটাকে আজই হাজতে ভরা হবে। কাল রাতে তোর এই অবস্থা করে পালিয়েছে। আর আমি ওকে ছেড়ে দেব?
নীলাঃ কার কথা বলছো। মেঘ!..ওকে তোমরা ধরতে যাবে কেন? ও তো কিছু করেনি। পানি আমি নিজেই ঢেলেছিলাম। ওকে নিয়ে তোমাদের মাথা ঘামাতে হবে না। ওর বিষয় আমি দেখবো। ওর গায়ে একটা টোকাও যেন না লাগে বলে দিলাম।
.
নীলার কথা শুনে নীলার বাবা ওসি সাহেবকে আবারও ফোন করলেন, কিন্তু এবার ফোনে ওসি সাহেবের কোনো কথাই আর বোঝা যাচ্ছে না এবং ওসি সাহেবও এখানকার কোনো কথা শুনতে পাচ্ছেন না। কারণ উনি এখন যেখানে আছেন সেখানে নেটওয়ার্ক নেই। উনি একচুয়ালি কোথায় আছেন উনি নিজেও জানেন না। আশে পাশে শুধু জঙ্গল৷
.
নীলাঃ ছাড়বো না আমি ওই কবিরাজকে! ভন্ড! আমার অনেক টাকা খেয়েছে। আর শেষে কিনা পানি পড়ায় কোনো কাজই হলো না? আমি শ্যামপুরে গিয়ে ওই ভন্ড কবিরাজের আস্তানাটাই ভেঙে দেব!
.
সন্ধ্যার পর ছাদের এক কোনায় দোলনায় বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে অহনা। আকাশে হাজারো তারার মেলা৷ রৌদ্র হাতে গিটার নিয়ে ছাদে উঠে এসেছে। অহনাকে এখানে চুপচাপ একা বসে থাকতে দেখে বলে উঠলো, ভাবীর কি মন খারাপ? না মানে তোমাকে তো সব সময় হাসতে দেখি। অথচ এখন দেখছি শান্ত হয়ে চুপচাপ বসে আছো।
অহনা রৌদ্রের দিকে তাকালো আর তারপর বললো, আমার বোন তুলি নিখোঁজ। সারাদিন ওর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নি৷ জোর করে বিয়ে দেওয়ায় বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে ও। তারপর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নি।
অহনার কথা শুনে রৌদ্র ভ্রু কুচকে জবাব দেয়, কিহ! ওই মেয়ে? ওই অতটুকু মেয়ের আবার বিয়ে! ওকে দেখলে তো মনে হয় কিছুই বোঝেনা।
.
অহনা দোলনায় হেলান দিলো। তারপর বললো, আমার বোনটা খুব সহজ সরল। আমার নিজের কোনো বোন নেই তাই ওকেই আমি নিজের বোন মনে করতাম।
রৌদ্রঃ ঘটনা কখন ঘটেছে?
অহনাঃ জানিনা। আমি একটু আগেই ফোনে খবরটা পেলাম। তারপর থেকেই মনটা ভীষণ খারাপ। মেয়েটা কোনো রাস্তা ঘাটই চেনে না। কোথায় আছে। কি করছে। দেশে তো খারাপ লোকের অভাব নেই। ভীষণ চিন্তা হচ্ছে ওকে নিয়ে। ওর কোনো খবরই পাওয়া যাচ্ছে না ।
.
তুলির জন্য রৌদ্রের এখন কিছুটা খারাপ লাগছে। আর সেদিন মেয়েটার সাথে খারাপ ব্যবহারও করে ফেলেছিলো।
রৌদ্রঃ আমি দেখছি কি করা যায়!
অহনাঃ তু..তুমি আবার কি করবে?
রৌদ্রঃ দেখি ওর কোনো খোঁজ বের করতে পারি কিনা। আমার নেটওয়ার্ক তো সব জায়গা জুড়ে।
.
তুলিকে খুঁজে না পেয়ে রেয়াকত আলীর মাথা গরম হয়ে গেছে। এমন হয়রানি করানোর জন্য তুলির কপালে দুঃখ আছে। রেয়াকর আলীর দলবল বন জঙ্গল বাস ট্রেন সব জায়গায় খুঁজে বেড়াচ্ছে। পুলিশের কাছেও খবর দেওয়া হয়েছে। কোনো ভাবেই তুলির কোথাও কোনো চিহ্ন মিলছে যাচ্ছে না।
.
রৌদ্র সোসিয়াল মিডিয়াতে তুলির একটা ছবি দিয়ে নিখোঁজের খবর ছড়িয়ে দিয়েছে। আকাশের বিয়ের ছবিতে তুলির ছবিও ছিলো। সেখান থেকেই এই ছবি নিয়েছে রৌদ্র। অনেকে নিউজটা শেয়ারও করছে৷ ইতিমধ্যে অনেকেই জেনে গেছে।
.
রাত সাড়ে ১০ টার দিকে রৌদ্রের ফোনে একটা কল আসে । রাফি ফোন দিয়েছে৷
রৌদ্রঃ হ্যাঁ দোস্ত বল।
রাফি হাফাতে হাফাতে বলছে, দোস্ত তুই একটা মেয়ের খোঁজ চেয়ে ফেসবুকে ওই মেয়ের ছবিসহ একটা পোস্ট দিয়েছিস তাইনা।
রৌদ্রঃ হ্যাঁ....হ্যাঁ বল...
রাফিঃ এক ভাইয়ের কাছে এসেছিলাম ওখান থেকে মামার বাসায় যাচ্ছি। খাবার কিনতে বাস থেকে নামতেই এখানে মেয়েটিকে বোধহয় আমি দেখলাম। বাসে থাকার সময় তোর ওই পোস্টটা দেখেছিলাম। মেয়েটিকে দেখে সন্দেহ হলে তোর পোস্টের ছবিটা দেখে আবার মেলালাম।
রৌদ্রঃ কিহ!! তুই এখন কোথায় আছিস বল আমি এক্ষুনি আসছি৷
.
রেয়াকত আলীর দলের লোকেরা বাস স্টপে কিছু লোকজনের কাছে তুলির মতো কাউকে থাকার কথা শুনেছে। কিছুক্ষণ আগেই নাকি তুলি এই পথ দিয়েই গেছে। এই খবর শুনে রেয়াকত আলীর মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। আর এদিকে বাস স্টপের আশেপাশে জঙ্গল থেকে শুরু করে সব দোকানপাট লন্ডভন্ড করে রেয়াকত আলীর লোকজন খুঁজতে শুরু করে দিয়েছে৷ আর রেয়াকত আলী তার বাকি দলবল নিয়ে এদিকে আসার জন্যই গাড়ি নিয়ে দ্রুত বেগে ছুটে আসছে৷ তুলিকে তার আজই পেতে হবে৷
.
রাফির কথা শুনে রৌদ্রও বাইক নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো। এখান থেকে খানিকটা দূরেই জায়গাটা। যেখানকার কথা রাফি বলেছিলো। রৌদ্র ফুল স্পিডে বাইক চালাচ্ছে। জ্যামের রোড না দিয়ে রৌদ্র এবার অন্য রোডে মোড় নিলো। শীতকাল পরতে শুরু করেছে ৷ আশেপাশে কুয়াশা এবং অন্ধকার।
.
চলবে....
পর্বঃ১১ +১২
.
তুলি ভর্য়াত চোখে রাফির দিকে তাকিয়ে আছে। রাফি তুলিকে খেতে বললো। তুলির হাতে পাউরুটি। তুলি কাচুমাচু হয়ে বাস স্টপের একটি বেঞ্চে বসে পাউরুটির দিকে তাকালো। সারাদিন এক ফোঁটা দানাও পেটে পরেনি। একটা রাস্তার মোড়ের কাছে এসে শুধু ট্যাপের পানিটুকু খেয়ে নিয়েছিলো। টাকা পয়সা সাথে কিছুই নেই। পরনে লাল বেনারসি শাড়ি। কপালে লাল টিপ। মাথার চুল গুলো খোলা। দুই হাত ভর্তি কাচের লাল চুড়ি আর এক জোড়া সোনার বালা।
.
পাউরুটিতে কামড় দিতেই তুলির চোখ দিয়ে টপ টিপ করে পানি পরতে শুরু করলো।
রাফিঃ এই মেয়ে কাদঁছো কেন? খাও। আর ভয় নেই।
পানি ভর্তি চোখ নিয়ে তুলি উপরের দিকে তাকালো। ভয়ে মুখ দিয়ে কথাও বের হচ্ছে না।
রাফির ফোন বাজতে থাকে। রৌদ্র ফোন দিয়েছে।
রাফিঃ দোস্ত আমি মোড়ের কাছে দইঘর দোকানটার সামনে আছি । মেয়েটি আমার সাথেই আছে। তুই সামনে এগোতে থাক।
.
হঠাৎ তুলির হাত থেকে পাউরুটিটা মাটিতে পরে গেলো। রেয়াকত আলীর দলবল এদিকেই ছুটে আসছে। বেঞ্চ থেকে উঠে তুলি ছুটতে শুরু করলো। ক্ষুধার্ত পেটে দৌড়াবার শক্তিও নেই। কিছুদূর যেতেই হোচট খেয়ে মাটিতে পরে যায়৷ রাফিও তুলিকে থামানোর জন্য পিছন পিছন ছুটে আসছে। তুলিকে দেখার সাথেই রৌদ্র বাইক থামিয়ে বাইক থেকে নামলো। মাটিতে পরে যাওয়া তুলিকে তোলার জন্য ওর এক হাত ধরতেই তুলি কাঁদতে কাঁদতে বলে ওঠে, ছাড়েন.. ছাড়েন আমারে.....
রৌদ্র হেলমেট খুলতেই তুলি রৌদ্রকে দেখে চিনতে পেরে বলে উঠলো, আপনে!
রৌদ্রঃ হ্যাঁ... এভাবে দৌড়াচ্ছিলে কেন!
.
তুলি এক বার পিছন ফিরে তাকিয়ে তারপর তাড়াতাড়ি উঠে দাড়ালো আর হাফাতে হাফাতে বলছে, ওরা আমারে দেইখা ফালাইছে, আমারে এহন ধরে লইয়া যাইবো! আমি যামু না!
রাফিও এখানে এসে দাড়ালো, ওরা কারা?
.
রেয়াকত আলীর দলের একজন ওদের দিকে তাকিয়ে তারপর রেয়াকত আলীকে ফোন করলো, বস এবার পাইয়া গেছি। চইলা আসেন৷
.
রৌদ্র রাফির দিকে তাকিয়ে বললো, এখন এতো কিছু জানার সময় নেই। তুলি তুমি বাইকে উঠে বসো। রাফি তুইও আয়।
রৌদ্র বাইকে উঠে বসে। তুলি বাইকের পাশে এসে দাঁড়ালো।
রৌদ্রঃ কি হলো দাঁড়িয়ে আছো কেন! উঠে বসো।
তুলি আশেপাশে তাকিয়ে আর কোনো উপায় না পেয়ে রৌদ্রকেই এখন ভরসা করছে। যেভাবে হোক রেয়াকত আলীর দলের হাত থেকে আগে বাঁচতে হবে।
.
রেয়াকত আলীর দলের লোকেরা এসে ঘিরে ধরলো, ওদের মধ্য থেকে সাদ্দাম নামের একজন চেচিয়ে ওঠে, ওরে লইয়া কইজান, কেডা আপনে!
রৌদ্র ওদের কথায় পাত্তা না দিয়ে তুলির হাত ধরলো, তোমাকে বসে বলেছি!
রাফিঃ এই আপনারা কারা! এখানে এসে অভদ্রের মতো চেচাচ্ছেন কেন।
সাদ্দামঃ ওই মিয়া গলার আওয়াজ নিচে নামান! বাঁশের কঞ্চির কোবানি খাইয়েছ কোনোদিন!
রাফিঃ হোয়াট ননসেন্স!
সাদ্দামঃ ভাগেন ভাগেন! জলদি এইহান থেইকা ভাগেন।
.
ভয়ে তুলি হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিয়েছে।
রৌদ্রঃ দেখুন আপনারা এরকম করতে পারেন না।
সাদ্দামঃ ওই মিয়া আপনে কেডা!
রৌদ্রঃ আমি কে সেটা বড় বিষয় নয়। ও আপনাদের সাথে যেতে চায় না। ওকে আপনারা জোর করে নিয়ে যেতে পারেন না৷
সাদ্দামঃ এত কথার কাম নাই। জলদি ভাগেন।
রৌদ্রঃ ও আমার সাথে যাবে৷ তুলি এসো।
সাদ্দায়ঃ আপনে ভালো কথার লোক না...কোপ না খাইয়া আপনেরাও যাইবেন না দেখি!
.
রাগে রৌদ্র এবার সাদ্দামের গালে এলোপাথাড়ি থাপ্পড় দিতে শুরু করলো। আর এক হাতে সাদ্দামের শার্টের কালার চেপে ধরে আছে। দলের লোকেরা এসে আটকাতে শুরু করলে ওদেরও হেলমেট দিয়ে মেরে আহত করে দিলো রাফি। এরইমধ্যে রেয়াকত আলী এখানে এসে উপস্থিত হয়। তুলি এখনো কান্না করেই যাচ্ছে৷ ভয়ে তার পুরো শরীর কাঁপছে।
.
রেয়াকত আলী তুলিকে দেখার সাথেই মাথা নাড়িয়ে বলে উঠলো, বহুত জ্বালালি জ্বালাইছোস ,সারাদিন মেলা খাটুনি করাইছোস এহন তোর খবর আছে, চল বাড়িত চল! বজ্জাত মাইয়া! বিয়া আসর থেইকা পালাইছোস!!
.
তুলি কাঁপতে কাঁপতে পিছিয়ে গিয়ে রৌদ্রের এক হাত ধরলো। রৌদ্র এদিকে ফিরে রেয়াকত আলীকে দেখে ভ্রু কুচকায়।
তুলিকে রৌদ্রের হাত ধরতে দেখে রেয়াকত আলী আরও তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো।
রেয়াকত আলীঃ ওই ওই...এই পোলা কেডা...তুই ওর হাত ধরসোছ ক্যা...! হ্যাহ??
.
সাদ্দাম এগিয়ে এসে বলা শুরু করে, ওই পোলা তো ওরে লইয়া ভাইগা যাইতাছিলো। আমি ধরতেই আমারে মারছে।
রেয়াকত আলীর মাথা গরম হয়ে গেছে। রেয়াকত আলী রৌদ্রের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে চোখ গুলো এখোনি কোটর থেকে বেড়িয়ে আসবে। খুবই ভয়ংকর লাগছে দেখতে।
রেয়াকত আলী দাতেঁ দাঁত চেপে বলছে, আমার বউরে লইয়া ভাইগা যাইবো কেডা...! দাঁ দিয়া তার কাল্লা ফালাই দিমু।
তারপর তুলির দিকে তাকিয়ে রেয়াকত আলী বললো, আমি আজই তোরে বিয়া করুম..! কেউ আটকাইবার পারবো না..!
.
রৌদ্রও চোখ গরম করে রেয়াকত আলীর দিকে তাকায়।
রৌদ্রঃ তুলি বাইকে উঠে বসো..!
রেয়াকত আলী এগিয়ে এসে তুলির আরেক হাত টেনে ধরতেই রৌদ্র হেলমেট দিয়ে রেয়াকত আলীর মাথায় বারি দেয়। রেয়াকত আলীর মাথা ফেটে রক্ত বেড়িয়ে আসে।
রেয়াকত আলী আরও ক্ষেপে গেলো। কপালে এক হাত দিয়ে হাতে রক্ত দেখেই হুংকার দিয়ে উঠলো,,ওই তোরা দা কুড়াল লইয়া আয়...রক্তারক্তি আজ এইহানেই হইবো....
.
রেয়াকত আলীর দলের লোকেরা ছুটে গেল। বাকিরা লাঠি নিয়ে এসেছে। রাফি কয়েকটাকে ধরে চড় থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। রৌদ্র ইচ্ছে মতো রেয়াকত আলীর পেট পাছায় লাথি দিচ্ছে। দলের লোকেরা আটকানোর জন্য এগিয়ে আসতেই তাদেরও বুক পেটে কিল বসিয়ে দিচ্ছে।
.
রাম দা, কুড়াল নিয়ে রাস্তা দিয়ে ছুটে আসছে রেয়াকত আলীর দলবল। রাফি ওদিকে তাকিয়েই চিৎকার দিয়ে উঠলো, রৌদ্র দেখ! সর্বনাশ!! এখন কি করবি?
রৌদ্রঃ ও মাই গড!
.
রৌদ্র তাড়াতাড়ি তুলির হাত টেনে ধরে তুলিকে বাইকের সামনে বসিয়ে দিলো। তুলিকে উঠেই রৌদ্র বাইক স্টার্ট দিয়ে দেয়। রাফিও বাইকের পিছনে উঠে পরলো।
রেয়াকত আলীর দলের লোকেরা দা কুড়াল নিয়ে বাইকের পিছনে দৌঁড়াতে থাকে৷
মাটিতে পরে থাকা ভুড়ি ওয়ালা রেয়াকত চেচিয়ে বলতে থাকে, আমার বউরে লইয়া ভাউগা যাইতাছে...ওরা যেন যাইবার না পারে...ধর হেগো...বিয়া আমি আজই করুম!
.
কিছুদুর দৌড়েই রেয়াকত আলীর দলের লোকেরা বাইকের সাথে আর দৌড়ে পারলো না। ভয়ে আর ক্ষুধায় তুলি অচেতন হয়ে গেছে। বাইক নিয়ে রৌদ্র অনেক দূর পর্যন্ত চলে এসেছে। এখন তারা শহরের ভিতর। রৌদ্র তুলিকে নিয়ে একটি রেস্তোরাঁর ভিতরে গিয়ে বসলো। সঙ্গে রাফিও আছে। এরকম ভয়ংকর অভিজ্ঞতা রাফির আগে কখনো হয়নি। ভয়ে গলা তার শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিলো তাই সামনে থাকা পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে ঢকঢক করে গিলতে শুরু করে।
.
এদিকে রেয়াকত আলী এখনো হাল ছাড়েনি। সে ওই রাস্তা ধরেই দলবল সঙ্গে করে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরেছে। তুলিকে তার আজ রাতেই পেতে হবে৷ মাথায় বেন্ডেজ করে প্রচন্ড রকমের ব্যথা নিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে গাড়ির ড্রাইভারের পাশে সামনের সিটে বসেছে সে।
.
রৌদ্র তুলির মুখে কয়েকবার পানি ছিটিয়ে দিতেই তুলি চোখ খুললো আর চোখ খুলে সামনে হঠাৎ করে রঙিন রঙিন আলো গুলো দেখে চিৎকার দিয়ে ওঠে।
.
চলবে....
.
পর্বঃ১২
.
চিৎকার দিয়ে তুলি আশেপাশে তাকাতে তাকাতে বলছে, আমি কই আছি! ও আল্লাহ! আমি কই আছি!
রৌদ্রঃ এই মেয়ে চুপ! এভাবে চেচিও না। মানুষজন ভাববে আমরা তোমাকে কিডন্যাপ করে এনেছি।
তুলি এবার রৌদ্রের মুখের দিকে তাকালো। তুলির মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট, আপনে আমারে কই লইয়া আইছেন?
রৌদ্রঃ ভয় নেই। তুমি আমাদের সাথে আছো। তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেব।
.
তুলি এবার কান্না শুরু করে দিলো,আমি বাড়ি যামু না। বাড়ি গেলে আমার বিয়া দিয়া দিবো!
রৌদ্রঃ আহা এখানে এভাবে কেঁদো না। আমরা ফেসে যাবো তো। তোমাকে তোমার বোনের কাছে নিয়ে যাব। ওখানে থাকতো তোমার কোনো অসুবিধা নেই তো?
তুলি কান্না করতে করতেই বলছে, না অসুবিধা নাই?
রৌদ্রঃ তাহলে এবার কান্না থামাও।
.
রাফিঃ দোস্ত থাক আমি এবার আসি। আমাকে আবার যেতে হবে।
রৌদ্রঃ এখনি যাবি?
রাফিঃ হ্যাঁ রে। একটু কাজ আছে। লেট হয়ে গেল। পরে আবার আসবো।
রৌদ্রঃ থ্যাংকস রে। তুই ছিলি বলেই...
রাফিঃ আরে.. কেউ না কেউ তো ওকে খুঁজে পেতোই। আল্লাহ চেয়েছে তাই আমি আগে পেয়েছি।
রাফি রৌদ্রের পিঠ চাপড়ে দিলো। তারপর তুলির দিকে তাকিয়ে বললো, উ আর সো সুইট। লাল শাড়িতে তোমায় খুব সুন্দর লাগছে। সি উ এগেইন।
তুলি কৌতুহল ভরা চোখ নিয়ে রাফির দিকে তাকালো।
রাফিঃ আসি?
তুলি কথা বলতেই চায় না। সে জোর করে মুখ থেকে বের করলো, জি আচ্ছা।
.
রাফি সমানে এগিয়ে যাওয়ার সময়ও পিছনে ফিরে বার বার তুলির দিকে তাকাচ্ছিলো। সিনেমার নায়িকার মতো তুলির বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে আসা তারপর এমন একটা ঘটনার সমুক্ষীন হওয়া। এসব দেখে রাফির মনের মধ্যে প্রেমের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। সে তুলির প্রেমে পরে গেছে। এবং নিজেকে নায়ক ভাবতেও শুরু করেছে। রেস্তোরাঁর দরজার কাছে এসেও আরেকবার পিছনে ফিরে তাকালো। দেখলো তুলিও এদিকে চেয়ে আছে। মায়া ভরা দুটি চোখ। কপালে লাল টিপ। সব কিছু যেন রাফিকে পাগল করে দিচ্ছে। এভাবেই হুটহাট করে আজানা অচেনা মেয়ের প্রেমে পরে গেল সে। ভাবতেই তুলির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে রেস্তোরাঁ থেকে বেড়িয়ে গেল।
.
তুলি হা করে ওদিকে তাকিয়ে আছে। রৌদ্র তুলির সামনে হাত দিয়ে তুরি বাজাতেই তুলি চোখ এদিকে ঘোরালো। খাবারের অর্ডার দেওয়া হয়েছিলো। খাবার এসে গেছে। চোখের সামনে অচেনা অদ্ভুত অদ্ভুত খাবার গুলো দেখে তুলি চোখ বড় বড় করে ফেললো, এই গুলান আবার কি। কেডা খাইবো?
রৌদ্রঃ তুমি খাবে! নাও শুরু করো। শুকনো চেহারাটা দেখে মনে হচ্ছে সারাদিন কিছু খাও নি।
তুলিঃ এই গুলান কি। আমি ভাত খামু।
রৌদ্রঃ মহা মুশকিলে তো পরা গেল!
রৌদ্র তখন রেস্তোরাঁর ম্যানেজারকে বলে বিরিয়ানীর ব্যবস্থা করতে বললো।
.
মেঘ বাড়ি ফেরার সাহস পাচ্ছে না। পুলিশের কথা শুনেই হওয়া হয়ে গা ঢাকা দিয়েছে। লুকিয়ে বাড়িতে ফোন করে জানলো এখনো নাকি বাড়িতে পুলিশ পা দেয়নি। পুলিশের ধারণা নীলার বাড়িতে পানি ঢেলে কোনো একটা অকাজ করতে চেয়েছিলো মেঘ। তাই তারা তাকে ধরার চেষ্টা করছে। পুলিশের ফোন পাওয়া মাত্রই মেঘ এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে লুকিয়ে রয়েছে।
ওদিকে ওসি সাহেব রাস্তা ভুল করে ওখান থেকে ফেরার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
.
তুলি বিরিয়ানীর প্লেটে হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করছে। নাড়তে নাড়তে খাবার গুলো প্লেটের চারিদিকে ছড়িয়ে দিয়ে মাঝখানের জায়গাটুকু ফাঁকা করলো।
রৌদ্র ওর খাওয়া দেখে তাকিয়ে আছে।
রৌদ্রঃ তোমাকে আমি প্লেটে আর্ট করতে বলি নি। খেতে বলেছি!
তুলিঃ ওমা,এইডা কি করলাম।
রৌদ্রঃ আরে মেয়ে ঠিকঠাক ভাবে খাও।
তুলি এক লোকমা খাবার মুখে নিয়েছে। গালের এক পাশে খাবারের দলা। আর রৌদ্র অর্ডার দেওয়া খাবার গুলো খাচ্ছে। তুলি খাবার গেলার চেষ্টা করছে।
তুলিঃ আমি খাইবার পারতাছিনা। গলা দিয়া খাবার নামতাছে না।
রৌদ্রঃ খাও। যে শুকনো মার্কা শরীর। পরে আবার মাথা ঘুরে পরে যাবে।
.
অহনা রুমের লাইট অফ করে ডিম লাইট দিয়ে রুমের ভিতর পায়চারি করছে। আকাশ বিছানায় অর্ধেক শোয়া আর অর্ধেক বসা অবস্থায়। আকাশ অহনার দিকে ঘার ঘোরালো।
আকাশঃ জান আর কতক্ষণ?
অহনাঃ বললাম তো আমি ঘুমাবো না। তুমি ঘুমাও। বোনের জন্য আমার খুব চিন্তা হচ্ছে। আমাকে চিন্তা করতে দাও। বিরক্ত করো না তো!
আকাশঃ কিন্তু না ঘুমালে যে তোমার শরীর খারাপ করবে। মাথাটা আরও খারাপ হয়ে যাবে।
অহনা আকাশের দিকে ঘার ঘুরালো।
আকাশঃ কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
.
হঠাৎ বুঝে ওঠার আগেই আক্রমণ। অহনা এগিয়ে এসে বিছানার বালিশ নিয়ে আকাশকে মারতে শুরু করলো। অহনা আকশকে বারি দিতে দিতে বলছে, আমার মাথা খারাপ? মাথা খারাপ? মাথা খারাপের গুষ্টি কিলাই।
আকাশ হাত দিয়ে বালিশ আটকাচ্ছে আর অহনার কোমরটা ধরে ফেলতেই অহনা আকাশের ওপর পরে যায়।
অহনাঃ আহ! ছাড়ো।
আকাশঃ সার্কাস দেখবে? এই দেখো সার্কাস! হাহাহা...
.
আকাশ অহনাকে নিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো আর তারপর অহনাকে দুই হাতে উপরে তুলে ঘোরা শুরু করে। ভয়ে অহনা দুই হাতে আকাশের গলাটা জড়িয়ে ধরে রেখেছে।
অহনাঃ আ...আ...ভয় লাগছে..পরে যাবো..পরে যাবো... নামাও..
আকাশঃ আর এরকম করবে?
অহনাঃ না..না আর করবো না।
আকাশঃ পাগল টাইট দিয়েছি। হাহাহা
বলতে বলতেই অহনা আকাশের গালে গলায় কামড়াতে শুরু করে।
আকাশঃ আরে...আরে এসব কি....কি করছো!
.
অহনার ফোন বাজে উঠলো। আকাশ অহনাকে নামিয়ে দিতেই অহনা তাড়াতাড়ি বেজে ওঠা ফোনটা হাতে নিয়ে কল রিসিভ করলো। ওপর পাশ থেকে রৌদ্রের কন্ঠস্বর শোনা যায়, ভাবী তুলিকে পাওয়া গেছে। ও আমার সাথে আছে।
অহনা চিল্লিয়ে বলছে, কি তুলিকে পাওয়া গেছে? কিভাবে কখন কোথায় পেলে ওকে তুমি??
রৌদ্রঃ পরে সব বলবো ভাবী। এখন রাখি।
.
অহনা বড় করে দম ছেড়ে ফোনটা রেখে আকাশের দিকে তাকালো। আকাশ চোখ গরম করে অহনার দিকে তাকিয়ে আছে। সাথে সাথে অহনার মনে পরে গেল তখন আকাশেকে ও কামড়ে দিয়েছিলো। অহনা ঢোক গিললো। ভয়ের একটা শিহরণ বয়ে গেল অহনার শরীর বেয়ে। তবুও আকাশের দিকে আবারও ঘার ঘুরিয়ে তাকালো। আকাশ এখনো এক দৃষ্টিতে চোখ গরম করে অহনার দিকে তাকিয়ে আছে। অহনা আবারও ঢোক গিললো। মুখে ভয়ের ছাপ থাকা শর্তেও ঠোঁটে জোর করে একটু হাসি এনে দাঁত বের করলো তারপর বললো, এই কি হলো শুনছো.. তুলিকে পাওয়া গেছে!
.
আকাশ এখনো একই ভাবে অহনার দিকে তাকিয়ে আছে আর কামড়ের জায়গা গুলোতে হাত দিয়ে ডলছে। অহনা আকাশের কাছে এগিয়ে গিয়ে গা ঘেসে দাঁড়ালো তারপর আকাশের গালে হাত দিয়ে বলছে, বাবু তোমার কি লেগেছে?
হঠাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আকাশ অহনাকে কোলে তুলে দিয়ে বিছানায় ঝাপিয়ে পরলো।
অহনাঃ আহ আহ ছাড়ো!
অহনা আকাশের দুই হাতের মাঝে বন্দী।
আকাশঃ কামড়ের বদলে কামড়!
অহনা এবার চিৎকার দিতেই আকাশ অহনার মুখ চেপে ধরলো। আকাশও এবার অহনার গালে গলায় চুমু দিচ্ছে সাথে আবার কামড়িয়েও দিচ্ছে।
.
রৌদ্রঃ কি ব্যাপার এটা খাওয়া?
তুলিঃ কি করুম। খাইবার পারতাছিনা।
রৌদ্রঃ এতো শুকনো শরীরে খাবার না খেলে চলবে? দেখি চোখ বন্ধ করে হা করো৷
রৌদ্র তুলির প্লেট থেকে খাবার হাতে নিলো৷
তুলিঃ কি করতাছেন? কেউ দেইখা ফালাইবো তো?
রৌদ্রঃ হা করতে বলেছি। চুপচাপ হা করো।
রৌদ্র তুলিকে প্লেটের সব খাবার খায়িয়ে দিলো।
.
পানি খাবার পর তুলির ঠোঁটে কোনে অল্প একটু পানি ভরে থাকতে দেখে রৌদ্র টিস্যু দিয়ে তুলির ঠোঁটের কোনটা মুছে দিলো। মুছে দেয়ার সময় তুলি বার বার পিছিয়ে যাচ্ছিলো।
রৌদ্রঃ মুখটা একবার ধুয়ে ফেললে ভালো হতো কেমন যেন তেলতেলে লাগছে।
রৌদ্র তুলিকে ওয়াশরুমে নিয়ে যায়। তুলি মুখ ধুতেই কপাল থেকে লাল টিপ খুলে পরে গেল।
আয়নার ভিতরে টিপ খুলে পরে যেতে দেখেই অস্থির হয়ে তুলি আমার টিপ! আমার টিপ! বলতে বলতে বেসিনে হাত দিতে ধরলো। তখনই রৌদ্র তুলির হাত ধরে ফেললো।
রৌদ্রঃ ওটা আর নিতে হবে না।
তুলিঃ কিন্তু আমার টিপ?
রৌদ্রঃ উফ চলো তো।
.
রৌদ্র তুলিকে নিয়ে রেস্তোরাঁ থেকে বের হয়ে বাইকে উঠলো। তখনই রাস্তার ওপর পাশ থেকে রেয়াকত আলীর দলের লোকেরা চেচিয়ে ওঠে, বস ওই তো, বস!
রৌদ্র বাইক স্টার্ট দিতে যাবে তখনই ওরা পিছন থেকে একটা কুড়াল ছুড়ে দিলো। সেটা রৌদ্রের হাতে এসে লাগে। সাথে সাথে রৌদ্রের ডান হাত থেকে গল গল করে রক্ত বেড়িয়ে আসতে শুরু করে। রক্তে রৌদ্রের শার্ট ভিজে যাচ্ছে।
তুলি জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলো। রেয়াকত আলী এসে তুলির এক হাত টেনে ধরতেই রৌদ্র তুলিকে টান দিয়ে অন্য পাশে নিয়ে গেলো।
দলের লোকেরা রৌদ্রকে সরানোর চেষ্টা করছে। রৌদ্র বা হাতে তুলির এক হাত ধরে রয়েছে। তার ডান হাত থেকে প্রচুর রক্ত ক্ষরন হচ্ছে। টপ টপ করে রক্তের ফোঁটা রাস্তায় পরতে শরু করলো। তুলিকে নিয়ে টানাটানি হচ্ছে। রৌদ্র এবার চোখে ঝাপসা আর অন্ধকার দেখতে শুরু করলো। তুলির হাতটা ছেড়ে দিয়ে রাস্তার ওপর লুটিয়ে পরলো রৌদ্র। বাইকটাও পরে রয়েছে ওর পাশেই। অনেক জোরে চিৎকার তুলি তুলি। রেয়াকত আলী রৌদ্রের পেটে ছুড়ি বসিয়ে দিয়েছে।
.
চলবে....
( ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ
)

পর্বঃ১৩ +১৪
.
হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে রৌদ্র। রাতে অস্ত্রোপচার হয়েছে। এখনো জ্ঞান ফেরেনি। ছুড়িটা পেটের এক সাইডে লেগেছিল। মারাত্মক ভাবেই জখম হয়েছে। ডান হাতের বাহুতেও অনেকখানি ক্ষত বিক্ষত। তাৎক্ষনাত সময়মত হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছেই বলেই বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। প্রচুর রক্ত ক্ষরন হচ্ছিলো। এখনো রক্ত আর সেলাইন দেওয়া চলছে। রৌদ্র জখম হয়ে রাস্তার ওপর পরে যাওয়ার পর মেঘকে ধরতে আসা ওই ওসি সাহেবই সেখান দিয়ে গাড়ি নিয়ে ফিরছিলেন। প্রেমনগর যাওয়ার রাস্তা ভুল করে উনি উল্টো দিকে চলে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে আবার পথ হাড়িয়ে কোথায় কোথায় চলে গিয়েছিলেন উনি নিজেও জানেন না। সেখান থেকে ফেরার পথে রেস্তোরাঁর এক পাশে কিছু লোকের জটলা দেখতে পেলেন। একটি অল্পবয়সী মেয়েকে নিয়ে টানাটানি চলছে। রাস্তার ওপর একটি ছেলে পরে আছে। লোক গুলোর হাতে বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র। অবস্থা বেগতিক দেখে গাড়ি থেকে নেমে গুলি চালালেন। তার সাথে থাকা সাব ইন্সপেক্টরসহ দৌড়ে গিয়ে লোকগুলোকে আটক করলেন। রেয়াকত আলীকে দেখে ওসির সন্দেহ হলো। একবার কিছু চোরাই মাল পাচার করার জন্য এটাকে আটক করা হয়েছিল। থানা থেকে আরও পুলিশ এসে সব গুলো কে অস্ত্রসহ ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। ওসি সাহেব মেয়েটাকে নিয়েই মারাত্মক ভাবে আহত হওয়া ছেলেটাকে নিয়ে দ্রুত সেখানকার একটা হাসপাতালে ভর্তি করলেন। মেয়েটাকে জবানবন্দির জন্য কিছু জিগাসাবাদ করা হলে মেয়েটা কিছুই বলতে পারেনি। কাঁদতে কাঁদতে সেও এক সময় চেতনা হারায়। তাকেও হাসপাতালের একটা বেডে ভর্তি করে স্যালাইন দেওয়া হয়। তারপর ভোরের দিকে ওর জ্ঞান ফেরে।
.
রাতেই ওসি সাহেব আহত ছেলেটার বাড়ির লোকজনের খোঁজ করছিলেন। এক পর্যায় ছেলেটির বাড়ির লোকের খোঁজ মিললো। খবর পাওয়া মাত্রই রৌদ্রের বাবা আফতাব চৌধুরী, চাচা আজগর চৌধুরী এবং বড় ভাই আকাশ চৌধুরী সেই হাসপাতালে ছুটে যায়৷ আর সকাল হতে না হতেই রৌদ্রের মা মনিরা বেগম সহ বাড়ির বাকি সদস্যরা হাসপাতালে এসে ভির জমিয়েছে । সবাই অপেক্ষা করছে রৌদ্রের জ্ঞান ফেরার।
.
ছোট ভাইয়ের এই অবস্থার কথা শুনে মেঘও হাসপাতালে চলে আসে। মেঘকে দেখা মাত্রই মনিরা বেগম চেচিয়ে উঠলেন, কোথায়? কোথায় ছিলি এই দুইদিন! একজন মারামারি করে হাসপাতালে পরে আছে আরেকটার দুই দিন থেকে কোনো খোঁজ নেই!! আকাশের বাবা আমি তোমার ছেলেদের নিয়ে আমি আর পারছিনা। আমার মরণ দেও!
আফতাব চৌধুরীঃ এসব তুমি কি বলছো, চুপ করো। আহা ছেলেকে তো আগে সুস্থ হতে দাও।
মনিরা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলছেন, এই তোমার জন্যই সব হয়েছে। ছেলেদের মাথায় তুলে ফেলেছো। আজ ওর যদি কিছু হয়ে যেত! কি করতাম আমি।
মনিরা বেগম হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেন।
মেঘঃ মা.. মা চুপ করো..রৌদ্র ঠিক হয়ে যাবে।
আফতাব চৌধুরীঃ আহা এতো কাঁদলে অসুস্থ হয়ে যাবে তো তুমি।
.
ওসি সাহেব এসেছেন। তিনি এদিকে এগিয়ে এসে বলছেন, আপনিই আফতাব চৌধুরী?
আফতাব চৌধুরীঃ জি, হ্যাঁ বলুন।
ওসি সাহেবঃ আপনার ছেলে রৌদ্র চৌধুরী কাল রাতে মারামারি করেছিলো। সময় মতো আমি সেখানে ছিলাম বলেই ওকে বাঁচানো গেছে।
আফতাব চৌধুরীঃ আপনাকে ধন্যবাদ দেবার ভাষা আমার নেই ওসি সাহেব৷
ওসি সাহেব তখনই বললেন, ঘটনাটা কাকতালীয়। আমি যাচ্ছিলাম আপনার বাড়িতেই। আপনার আরেক ছেলে মেঘ চৌধুরীকে ধরে হাজতে ভরতে।
.
এই কথা শোনার সাথে মনিরা বেগম আহাজারি করতে শুরু করলেন,এই দিন দেখার বাকি ছিল আমার! তার আগে আল্লাহ আমাকে তুলে নিলো না কেন! এক ছেলে মারামারি করে রাস্তায় পরে থাকছে আর আরেক ছেলে যাচ্ছে হাজতে। হায় আল্লাহ! আল্লাহ আমাকে তুলে নেও।
আফতাব চৌধুরীঃ আহা তুমি থামো!
মনিরা বেগম অচেতন হয়ে গেলেন। উনাকেও ধরে একটি কেবিনে নিয়ে গিয়ে স্যালাইন দেওয়া হলো।
.
ওসি সাহেব আফতাব চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললেন, মেঘ চৌধুরীর কেস অবশ্য এখন ডিসমিস। তবে আপনার পুত্রদের একটু সাবধানে রাখবেন। দে আর ভেরি ডেঞ্জারাস! এক জনকে ধরতে এসে দেখি আরেকজন মারামারি করে পরে আছে৷ হাউ ডেঞ্জারাস!
.
তুলি ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। অহনা পেশে থেকে দাঁড়িয়ে চোখ মুছে দিয়ে চুল গুলো নেড়ে দিচ্ছে।
অহনাঃ তুই এতো ভেঙে পরছিস কেন!
তুলি আবারও কাঁদতে কাঁদতে বলছে, আমার লাইগাই তো উনার এমনডা হইলো। আচ্ছা উনারে কি এহন দেখন যাইবো?
অহনাঃ জ্ঞান ফিরলে তোকে যেতে দেবে। এখন শুয়ে থাক।
.
মেঘের ফোন বাজতে থাকে। নীলা ফোন করেছে। কলটা রিসিভ করতেই নীলার ঝাঝালো কন্ঠের আওয়াজ পাওয়া যায়।
নীলাঃ কোথায় তুই?
মেঘঃ আমি একটু ব্যস্ত আছি।
নীলাঃ ব্যস্ত? কোন মাগীর সাথে আছিস বল!
মেঘঃ দেখ তুই আমার সাথে আর কোনো রকম উল্টো পাল্টা কিছু করবি না! ফোন রাখ!
নীলাঃ কি?? কি বললি আমি পাগলামো করি? মাগীদের না দেখলে তো তোর ঘুম হয় না। যা মাগী দেখ।
মেঘঃ জাস্ট শাট আপ নীলা!
নীলাঃ তুই থাক তোর মাগী নিয়ে... তোর ওই....
নীলার কথা শেষ হওয়ার আগে রাগে মেঘ কলটা কেটে দিলো।
নীলা কাঁদতে কাঁদতে বিছানায় শুয়ে পরে। তারপর রেডি হয়ে বেড়িয়ে পরলো শ্যামপুরের উদ্দেশ্য। ওই ভন্ড কবিরাজের পানি পড়ায় কোনো কাজই হয়নি। আজ ওই কবিরাজকে শায়েস্তা করতেই হবে।
.
রৌদ্র চোখ খুলেই তুলির নামটাই আগে নিলো। চোখ অল্প একটু খুলে চারিদিকে চোখ ঘুরিয়ে সবাইকে দেখে নিয়ে তুলির কথাটাই আগে জিগাসা করলো। আস্তে করে বললো, তুলি কোথায়? ওকে কি ওরা নিয়ে গেছে।
মনিরা বেগমঃ এখন কেমন লাগছে বাবা?
অহনা তুলিকে সামনে নিয়ে আসলো, এই যে তুলি!
রৌদ্র তুলির দিকে তাকায়,তুমি ঠিক আছো তো তুলি?
তুলি সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে রৌদ্রের গায়ে হাত দিতে যাচ্ছিলো, কেমনে ঠিক থাকি কন, আপনের এই অবস্থা!
নার্সঃ আপনারা এখান থেকে যান তো। এখানে এতো জন ভীর করেছেন কেন! যান বাহিরে যান।
.
রাফিও এসেছে রৌদ্রকে দেখতে। কেবিনের বাহিরে বেড়িয়ে তুলিকে দেখে বলছে, তোমার সাথে আবার দেখা হবে জানতাম কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি হবে সেটা ভাবিনি। ওরা তোমার কোনো ক্ষতি করে নি তো?
তুলি কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়িয়ে না বোধক উত্তর দেয়। এদিকে রাফির বুকের ভিতর প্রেমের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। তুলির কথা ভেবে ভেবে তার সারারাত ঘুম হয় নি। বিছানায় শুয়ে শুয়ে এমনকি মাঝে মাঝে বিছানা থেকে উঠে রুমের ভিতরেই হাটাহাটি করে একা একাই তখন তুলির কথা ভেবে হেসে হেসে রাত পার করেছে রাফি। কোনো ভাবেই কাল রাতের ঘটনা ভুলতে পারছেনা রাফি । তবে রৌদ্রের এমন মারাত্মক অবস্থাটা সে একদমই আশা করেনি।
.
বিকালেই নীলা শ্যামপুরে গিয়ে পৌঁছালো। কবিরাজের আস্তানায় ঢোকার আগে আরেকবার মেঘের মাথাটা ঝালিয়ে পরীক্ষা করা দরকার। নীলা আবার মেঘকে ফোন দিলো।
মেঘঃ তোর সমস্যাটা কি?
নীলাঃ আচ্ছা তোর কি আমার জন্য কিচ্ছু ফিল হয় না?
মেঘঃ হ্যাঁ হয়! তোর চিকিৎসা দরকার। তোর মাথার একটু না অনেকখানি সমস্যা আছে। যা মাথার চিকিৎসা করা।
নীলাঃ কি???
মেঘঃ আমাকে আর কল দিবি না।
মেঘ কলটা কেটে দিলো। রাগে নীলা হন হন করে হাটতে হাটতে কবিরাজের আস্তানার ভিতরে ঢুকলো।
.
এদিকে আফতাব চৌধুরী নীলার বাবাকে ফোন করে বসেন,
আফতাব চৌধুরীঃ কোন সাহসে আপনি আমার ছেলের নামে কেস করেছেন!
নীলার বাবাও গলা উঁচু করে বলছে, সেটা আপনি আপনার ছেলেকেই জিগাসা করুন। ছেলেকে তো একটা লম্পট বানিয়েছেন।
এই কথা শুনে আফতাব চৌধুরী আরও ক্ষেপে গেলেন। ফোনেই তাদের দুইজনের কিছুক্ষণ তর্কাতর্কি হলো।
.
সন্ধ্যার দিকে রৌদ্র যখন চোখ খুলে তাকায়। তখন পাশেই তুলিকে বসে থাকতে দেখলো। সেদিকে ঘাড় ঘুড়িয়ে বললো, তুমি বাড়ি যাও নি!
তুলি মাথা নাড়িয়ে না বোধক উত্তর দেয়। রাফি আবার এসেছে রৌদ্রকে দেখতে। এই ফাঁকে তুলিকেও দেখে নেওয়া যাবে।
রৌদ্রঃ এই মেয়ে চেহারার এই হাল কেন তোমার! খাওয়া দাওয়া করোনি নাকি৷ যাও৷ বাড়ি যাও।
তুলিঃ আপনে আগে সুস্থ হইবেন তারপর আমি যামু৷ আমার লাইগাই তো আপনের এমনডা হইলো।
তুলি কাঁদতে শুরু করে।
নার্স এসে বলতে থাকে,আপনি বাহিরে যান। এখানে সিনক্রিয়েট করবেন না।
রাফি তুলির দিকে তাকিয়ে বললো, এসো আমি তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছি।
তুলিঃ আমি যামু না। আমি এইহানেই বইসা থাকমু।
রাফিঃ তাহলে আমিও থাকি।
.
তুলি একটু একটু করে রৌদ্রের প্রতি দুর্বল হচ্ছে। এটা ঠিক প্রেম নাকি কৃতজ্ঞতা ঠিক বোঝা যাচ্ছে।
না।
রৌদ্রের ভার্সিটির কিছু মেয়ে বন্ধুরা রৌদ্রকে দেখতে কেবিনের ভিতর ঢুকলো।
নার্সঃ আহা এই যে আপনারা এতোজন এখানে ভির করছেন কেন। উনার সাথে এখন বেশি কথা বলা যাবে না। আপনারা সবাই যান বাহিরে গিয়ে বসুন৷ বের হন।
রাফি শুধু তুলির দিকে তাকিয়ে আছে আর তুলি রৌদ্রের দিকে। রাফির বুকে প্রেমের জোয়ার ভাটা চলছে৷
.
এদিকে সন্ধ্যা নেমে রাত হয়ে গেলেও নীলা এখনো বাড়ি ফিরলো না। ফোনটাও সুইচ অফ। চিন্তায় নীলার বাবা মা পুলিশে খবর দিয়েছে৷ আর সন্দেহ করছে মেঘকে।
মেঘ এইমাত্র বাড়ি ফিরলো। বাইক থেকে নামতেই ফোন বাজতে থাকে। শ্রাবনী ফোন করেছে। বিরক্ত হয়ে মেঘ কলটা রিসিভ করলো৷
মেঘঃ তোমার আর তোর বান্ধুবীর কি আমাকে ফোন দেওয়া ছাড়া আর কোনো কাজ নেই?
শ্রাবনীঃ শোনো নীলাকে না খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ও কোথায় তুমি কি কিছু জানো??
মেঘঃ ওয়াট!! খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মানে? কোথায় না কোথায় গিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে সেই খবর আমি করে জানবো?
শ্রাবনীঃ আমি মজা করছিনা মেঘ৷ সত্যিই ওকে নিয়ে সবাই চিন্তায় আছে। ও শ্যামপুর যাবার কথা বলছিলো। জানিনা সেখানে গিয়েছে কিনা। জায়গাটা ভালো না। ওই জায়গার খোঁজ আমিই দিয়েছি তাই নীলার বাবা মাকে বলার সাহসও পাচ্ছিনা। ওর কিছু হয়ে গেলে আমাকে আর আস্ত রাখবে না।
মেঘঃ হোয়াট! এসব তুমি এখন বলছো!
.
চলবে.....
পর্বঃ১৪
.
মেঘ বাইক নিয়ে রবিনের বাড়ি চলে গেল। তারপর রবিনকে সাথে নিয়ে শ্রাবনীর কাছে থেকে শ্যামপুরের সেই কবিরাজের ঠিকানা নিয়ে সেখানে যাওয়ার উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পরলো। বাইকের পিছনে বসে রবিন বলে উঠলো, তুই নীলার জন্য এতো উতলা হচ্ছিস কেন? নীলা তো তোকে সব সময় বিভিন্ন ভাবে অপমান করে৷
মেঘঃ এখন এসব কথা ছাড়। ওকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আগে শ্যামপুর গিয়ে খোঁজ করি ও ওখানে আজ গিয়েছিল কিনা।
.
রাত প্রায় সাড়ে এগারোটার দিকে মেঘ রবিনকে নিয়ে শ্যামপুর বাজারে গিয়ে পৌঁছালো। বাজারের দোকানদারদের কাছে শ্যামপুর কবিরাজের ব্যপারে জানতে চাইলে তারা কিছুই বলতে পারলো না।
.
নীলার বাবা আবারও আফতাব চৌধুরীকে ফোন করলেন।
নীলার বাবাঃ আপনার ছেলেকে বলুন ভালোয় ভালোয় আমার মেয়েকে ফেরত দিয়ে দিতে। নইলে আমি ওকে সারাজীবন জেলের ভাত খাওবো বলে দিলাম৷
আফতাব চৌধুরীঃ আপনি আপনার সীমা অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছেন। এরপর আমার পুত্রের নামে আর একটাও উল্টো পাল্টা কথা বললে আপনার নামেই আমি কেস করতে বাধ্য হবো।
নীলার বাবা আরও রেগে গেলেন, আমি জানি ওই লম্পট ছেলেই আমার মেয়েকে কোথাও লুকিয়ে রেখেছে। এরপর ওকে সামনে পেলে আমি ছিড়ে ফেলবো।
নীলার মা নীলার চিন্তায় অচেতন হয়ে গেছেন। উনার মাথায় পানি ঢালা হচ্ছে। পুলিশ এখনও পর্যন্ত নীলার কোনো খোঁজ দিতে পারেনি। ভয়ে শ্রাবনীও মুখ খুলছেনা। শ্রাবনী মেঘকে কল করলো।
শ্রাবনীঃ হ্যালো মেঘ, নীলার কি কোনো খবর পেলে?
মেঘঃ না। আমি তো রাস্তাই খুঁজে পাচ্ছিনা। ওই কবিরাজের আস্তানায় যাব কিভাবে। এখানকার লোকেরাও তো কিছু বলছে না।
শ্রাবনীঃ একটু ভালো করে খোঁজ করে দেখো না!
.
তুলি রৌদ্রের কেবিনে রয়েছে। রৌদ্র ঘুমাচ্ছে। ডাক্তার কড়া ঘুমের মেডিসিনের ডোজ দিয়েছে। রাফি আবারও আসলো রৌদ্রকে দেখতে।
তুলি রাফিকে কেবিনের ভিতরে আসতে দেখে আস্তে করে বলে উঠলো, আপনে? এই সময়ে?
রাফি হেসে বললো, এই পথ দিয়েই যাচ্ছিলাম। তাই ভাবলাম আরেকবার দেখে যাই। ও তো ঘুমাচ্ছে।
তুলি মাথা নেড়ে বললো,হ!
রাফি তুলির প্রেমের টানেই বার বার এখানে আসছে। তখনই আফতাব চৌধুরী কেবিনের ভিতরে এসে রাফিকে দেখে বলে উঠলেন, বাবা তুমি?
রাফিঃ না মানে দেখতে আসলাম। এখন অবস্থা কেমন। ভাবলাম দেখে যাই।
.
আফতাব চৌধুরী রাফির পিঠে চাপড় দিয়ে বললেন, বড্ড ভালো ছেলে বাবা তুমি। আর আমার গুলো দেখো। সব কয়েকটা অবাধ্য। ওদের চিন্তায় চিন্তায় আমার জীবন শেষ! তোমার মতো ছেলের বাবা হওয়া তো ভাগ্যর ব্যপার।
রাফি মুচকি হাসলো।
আফতাব চৌধুরীঃ বুঝলে বাবা বড়ই টেনশনের ভিতরে আছি। এক ছেলে এই অবস্থা আবার আরেক ছেলের ওদিকে কোনো খোঁজ নেই। ওদের মা আবার ওদের চিন্তায় পাশের কেবিনে পরে আছে।
আফতাব চৌধুরী তখনই তুলির দিকে তাকালেন, আরে এই মেয়েটি আবার এখানে কি করছে। রাত হয়েছে। যাও বাড়ি গিয়ে বিশ্রাম করো।
রাফি সাথে সাথে চট করে বলে ফেললো, আমি ওকে বাড়িতে দিয়ে আসি!
আফতাব চৌধুরী আবার এদিকে ফিরে রাফির পিঠে চাপড় দিয়ে বললেন, ও হো! যাও বাবা যাও। দিয়ে এসো। খুবই ভদ্র ছেলে তুমি বাবা!
রাফি আবারও মাথা নিচু করে মুচকি হাসি দিলো।
তুলির ইচ্ছা করছিলো ওখানেই থাকতে কিন্তু মুরুব্বী মানুষ বলেছে তাই উনার কথা ফেলে দেওয়া যায় না।
.
রাফি তুলিকে নিয়ে হাসপাতালের বাহিরে বের হয়ে একটা রিকশা নিলো। রাফি রিকশায় উঠে বসে আর তুলিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো, দাঁড়িয়ে আছো কেন উঠে এসো!
তুলি মাথা নিচু করে আছে। রাফি তুলিকে ওঠার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলো। তুলি রাফির হাত না ধরেই একাই রিক্সায় উঠে পরলো।
.
আফতাব চৌধুরী বাড়িতে ফোন করে জানতে পারলেন, মেঘ বাড়িতে নেই। কোথায় আছে কেউ বলতে পারলো না। উনি এবার চিন্তায় পরে গেলেন। নীলা নামের মেয়েটিকে নাকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এই ঘটনায় কোনো ভাবে তার ছেলে আবার জড়িত নয় তো। নীলার বাবা মেঘের নামে কেস করেছেন। এদিকে রৌদ্রের এই অবস্থা। টেনশনে উনার পেশার বেড়ে গেল। আর বুকে ব্যথা শুরু হলো। উনি কেবিনের বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ সেখানে পরে গেলেন। পাশেই শাশুড়ি মনিরা বেগমের কেবিন থেকে বের হতেই অহনা শশুড়ের এভাবে পরে যাওয়ার দৃশ্যটি দেখে দৌড়ে এগিয়ে এলো।
অহনাঃ বাবা! বাবা আপনার কি হলো?
আফতাব চৌধুরী অচেতন হয়ে গেছেন। উনাকেও ধরে একটি কেবিনে ভর্তি করা হয়।
.
অহনা হাসপাতালের করিডোরে পায়চারি করছে আর একা একাই বলে যাচ্ছে, কি একটা বাড়িতে আমার বিয়ে হলো, শশুড় শাশুড়ি দেবর বাড়ির সকলেই হাসপাতালে ভর্তি! আর আমার স্বামী! উনি আছেন উনার হাসপাতালে নাইট ডিউটি নিয়ে! কি কপাল আমার! আচ্ছা উনি কোনো রোগীর প্রেমে ট্রেমে পরে যায় নি তো? বাড়ির সকলে হাসপাতালে ভর্তি আর উনার এদিকটা নিয়ে কোনো চিন্তায়ই নেই??
অহনার মাথা গেল আউলা হয়ে। অহনা আর এক সেকেন্ডও দেড়ি না করে আকাশকে কল করলো৷
আকাশঃ হ্যাঁ জান বলো।
অহনাঃ বাবা যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে সেই খবর কি পেয়েছো??
আকাশঃ কি বলো? কখন কিভাবে হলো?
অহনাঃ এ্যাই সত্যি করে বলো তো তুমি এখন কার সাথে আছো?
আকাশঃ আজকে আমার নাইট ডিউটি পরেছে জান।
অহনাঃ না। নিশ্চয়ই কোনো মেয়ের সাথে আছো তুমি। আর তাই বাড়ির কোনো খবরই তুমি রাখছো না। কেন গো আমাকে দিয়ে কি তোমার হচ্ছে না??
আকাশঃ এসব তুমি কি বলছো জান!
অহনাঃ বলো আমি কি তোমায় সুখ দিতে পারিনি। বলো কি নেই আমার!
আকাশঃ জান তুমি শান্ত হও। এসব উল্টো পাল্টা কথা কেন বলছো?
অহনা কাঁদতে কাঁদতে চেচাতে থাকে, শান্ত হবো মানে? আমি তোমায় সব দিয়েছি আকাশ!! তবু অন্য মেয়ের মধ্য কি এমন দেখলে যা আমার মধ্য নেই? কেন এমন করলে আকাশ!! কেন!! আমি তো সব ভুলে শুধু তোমায় ভালোবেসেছি আকাশ! কেন করলে! কেন!!
আকাশঃ জান??
ভয়ে আকাশ এখন ঘামতে শুরু করেছে। এই বুঝি অহনার মাথা গেল খারাপ হয়ে। অহনার কথা শিথিল হয়ে আসতে থাকে,কেন করলে আকাশ! কেন!!
আকাশ শুধু অহনার বলা এই কথাটাই বার বার শুনতে পাচ্ছে। তারপর হঠাৎ একটা শব্দের আওয়াজ পাওয়া যায়। ব্যস অহনার আর কোনো কথা এবং সাড়া শব্দ কিছুই শোনা যাচ্ছে না।
আকাশঃ হ্যালো হ্যালো!! অহনা??জান?? কি হলো তোমার?
.
অহনা চিল্লাচিল্লি করতে করতে করিডোরেই মাথা ঘুরে পরে গেছে। দুইজন নার্স এইদিক দিয়েই যাওয়ার সময় অহনাকে পরে থাকতে দেখে ওকে ধরে একটি কেবিনে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করালো।
নার্স গুলো একজন আরেকজনকে বলছে,রোগী হইলো একজন আর একজন রোগী দেখতে আইসা পরিবারের বাকি তিনজন হাসপাতালে ভর্তি হইয়া গেল! অনেক অদ্ভুত ঘটনা দেখছি কিন্তু এমন আজব ঘটনা আগে দেখি কখনো দেখি নাই।
.
মনিরা বেগমের জ্ঞান ফিরেছে। জ্ঞান ফিরেই উনি শুনতে পেলেন উনার স্বামী এবং ছেলের বউও অহনাও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এই খবর শোনার সাথে সাথে উনি টেনশনের চাপ সহ্য করতে না পেরে আবারও জ্ঞান হারালেন৷
.
এদিকে মেঘ আর রবিন শ্যামপুর বাজারের এক বৃদ্ধ দোকানির কাছে কবিরাজের আস্তানার ব্যপারে কিছুটা জানতে পেরে ওই পথেই বাইক নিয়ে এগোতে থাকে। জায়গাটা খুব নির্জন। পিচ ঢালা রাস্তা এবং দুই পাশে ঘন জঙ্গল। নীলার জন্য মেঘের চিন্তা বেড়েই যাচ্ছে। মেয়েটার সত্যি সত্যি কোনো বিপদ হলো না তো?
আর ওদিকে পুলিশ মেঘকে ধরার জন্য খুঁজে বেড়াচ্ছে। ওকে একবার ধরতে পেলেই এবার সোজা রিমান্ডে নেওয়া হবে। কাল নীলা বাবা নীলার কথা শুনে ভুল করেছেন। মেঘকে তখনই ধরে পুলিশে দেওয়া উচিত ছিলো। তাহলে আজকে এই ঘটনা হয়তো ঘটতো না। নীলার নিখোঁজ হওয়ার ব্যপারে উনি পুরোপুরি মেঘকে দোষী কেরছেন।
.
অহনার চিন্তায় অস্থির হয়ে আকাশ গাড়ি নিয়ে দ্রুত এই হাসপাতালে ছুটে এলো। অহনা কেবিনের ভিতরে পাগলামো শুরু করেছে। একা একাই চিল্লাচ্ছে আর জিনিসপত্র ছোড়াছুড়ি করছে। ডাক্তার এসে অহনাকে দেখে গেলো। উনি নার্সকে যাওয়ার আগে বলে গেলেন, অহনাকে একটা ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে দিতে। নার্স ইঞ্জেকশন আনতে কেবিনের বাহিরে চলে গেল। তখনই আকাশ অহনার কেবিন খুঁজে পেয়ে ভিতরে ঢুকে পরে। অহনা বেডে বসে আছে। আকাশ সেদিকে ছুটে যায়। ছুটে গিয়ে অহনার হাত ধরে বলছে, জান? জান তোমার কি হয়েছে! তুমি ঠিক আছো?
আকাশকে খুব অস্থির দেখাচ্ছে। অহনা এক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
হঠাৎ করেই অহনা আকাশেকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর আকাশের ঠোঁটে চুমু দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো, তুমি! তুমি কার প্রেমে....
অহনার কথা শেষ হওয়ার আগেই আকাশ সাথে সাথে উত্তর দিলো, আমি তো শুধু তোমার প্রেমেই পরে আছি!
অহনার মাথা এলোমেলো হয়েছিলো৷ এই কথা শুনে আহনা একটু শান্ত হলো। অহনা আবারও আকাশের ঠোঁটে চুমু দেয়। আকাশ অস্থির হয়ে আছে। অহনার চুমু দেওয়াতে আকাশ আরও পাগল হয়ে গেলো। আকাশ এগিয়ে এসে অহনাকে আরও ভালো ভাবে জড়িয়ে ধরে৷ দুইজনই দুইজনের প্রেমে পাগল হয়ে গেছে। আকাশ অহনাকে জড়িয়ে ধরে গাড় ভাবে লিপ কিস করতে শুরু করে। অহনাও আকাশের শার্ট শক্ত করে আকারে ধরে আছে।
.
রিকশায় রাফির সাথে তুলির বার বার গা ঘসা লাগছিলো। তুলি রাফির থেকে সরে সরে বসছে। একবার জ্যামে পরে ঝাকুনিতে তুলি রিকশা থেকে পরে যেতেই রাফির তুলি বাহু ধরে তুলিকে পরে যাওয়া থেকে আটকালো। রাফির মনে তুলির জন্য প্রেমের ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। আর তুলির মনে রয়েছে রৌদ্রের জন্য চিন্তা। হঠাৎ করে সে বলে উঠলো,আমি বাড়ি যামু না! আমারে হাসপাতাল লইয়া চলেন।
রাফি অবাক হয়ে বললো, কেন? এখনি তো ওখান থেকে আসলে। এখন আবার ওখানে যাবে কেন?
তুলিঃ আমি উনারে ফালাইয়া বাড়ি গিয়া কি করমু? আমি শান্তি পামু না! উনি কষ্ট পাইতাছে।আমার লাইগাই তো এমডা হইছে। এহন উনারে চোক্ষের দেখোনো আমার শান্তি। আমারে হাসপাতাল লইয়া চলেন।
.
নার্স অহনার জন্য ঘুমের ইঞ্জেকশন নিয়ে কেবিনের দরজার কাছে এসে দাড়াতেই খেয়াল করলো কেবিনের ভিতরের লাইট অফ করা,একি এখানে আবার লাইটটা কে অফ করলো?
কেবিনের ভিতরে উকি দিতেই নার্স দেখতে পেল ভিতরে অন্ধকার আর বাহির থেকে জানালা দিয়ে যে টুকু হালকা আলো আসছিলো সেটুকু আলোয় বোঝা যাচ্ছিলো রুমের ভিতর দুইজন একে অপরের সাথে আলিঙ্গনে রয়েছে আর চুমাচুমি করছে এবং তারা কাপড় খুলতেও শুরু করেছে। এটা দেখার সাথেই নার্স জিব্বাহতে কামড় দিয়ে চোখ বন্ধ করে দিল এক দৌড়।
.
চলবে....
পর্বঃ১৫+১৬
.
নার্সটা আকাশ এবং অহনাকে অন্তরঙ্গ মুহুর্ত অবস্থায় দেখেই দৌড়ে এসে হাফাচ্ছে। নার্স কোনো ভাবেই নিজেকে আর স্থির রাখতে পারছে না। শুধু বড় বড় দম ছাড়ছে। নার্সের বয়স অল্প এবং অবিবাহিত। চোখটা বন্ধ করে সে কল্পনায় তার স্বামীকে ভাবছে। কিন্তু আর কত কল্পনা এবার তো বাস্তবে কাউকে চাই। নার্স করিডোরের এক কোনায় ওয়ালটা ধরে দাঁড়িয়ে আছে আর হাফাচ্ছে।
.
রাফি তুলিকে নিয়ে হাসপাতালের ভিতরে ঢুকলো। করিডোরের মোড়ে এসে দাঁড়াতেই নার্সকে ওয়ালের দিকে হেলে ঝুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাফি বলে ওঠে, আপনি এখানে এভাবে রয়েছেন কেন, আপনার কি শরীর খারাপ!
রাফির কথা শুনে নার্সটা এদিকে ঘার ঘোরায়। তার চোখ মুখ একেবারে লাল হয়ে রয়েছে। সে কিছু না বলেই আস্তে আস্তে হেটে চলে গেল।
.
রাফি আর তুলি রৌদ্রের কেবিনে এসে দেখলো রৌদ্র ঘুমাচ্ছে। তুলি রৌদ্রের বেডের পাশে চেয়ার টেনে বসলো।
রাফিঃ তুমি কি এখানেই থাকবে?
তুলিঃ আপনে এহন যান। মেলা কষ্ট করছেন৷
রাফি হেসে বললো, না না কষ্ট কিসের।
তারপর রাফি এক দৃষ্টিতে তুলির দিকে তাকিয়ে থেকে খুব আবেগ নিয়ে বললো, তোমাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না যে!
.
তখনই রৌদ্রের ঘুম ভেঙে যায়। রৌদ্র চোখ মেলে তাকায় । তুলি রাফিকে কিছু বলতে যাবে তখনই রৌদ্র আস্তে করে বলে ওঠে, তুলি!
তুলি এদিকে ফিরলো আর অস্থির হয়ে বলছে, আপনের এহন কেমন লাগতেছে?
রৌদ্রঃ তুমি বাসায় যাও নি?
তুলিঃ আমি আপনারে রাইখা কেমনে যাই কন!
রৌদ্রঃ আমি ভালো হয়ে যাবো এতো চিন্তা করো না।
রাফিঃ আমি তো ওকে বাসাতেই নিয়ে যাচ্ছিলাম। মাঝপথে গিয়ে হঠাৎ বললো, ও এখানেই থাকবে। তাই আবার নিয়ে আসলাম।
রৌদ্রঃ তুইও বাড়ি যাস নি!
রাফিঃ এভাবে রেখে কিভাবে যাই বল।
রৌদ্রঃ যা বাড়ি গিয়ে এবার বিশ্রাম কর। আমাকে নিয়ে এতো অস্থির হস না।
.
বাহিরে প্রচন্ড রকমের বৃষ্টি পড়া শুরু হয়েছে। অন্ধকার কেবিনে আকাশ আর অহনা দুইজন এক সাথে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। আর নার্সটা তখনকার দেখা দৃশ্যটা কিছুতেই ভুলতে পারছে না। ওয়াশরুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে সে। ওখান থেকে আস্তে আস্তে হেটে সামনের দিকে এগিয়ে আসতেই বেখেয়ালবসত হাসপাতালের ম্যানেজারের সাথে ধাক্কা খেল।
.
ম্যানেজারের বয়স ত্রিশের কোঠায়। বিয়ে করেছে তিন বছর হলো। কিন্তু এখনো ছেলেপুলে হয়নি। ম্যানেজারের সাথে ঢাক্কা খেয়ে নার্সের শরীর আরও খারাপ হতে থাকে। ম্যানেজার ইবরাহীম তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। নার্সের বুক ধুকপুক করছে আর চোখ ঘোলা হয়ে আসছে। হঠাৎ করে সে ম্যানেজারের বুকের কাছে মাথা এগিয়ে দিলো আর তারপর বুকে ঝাপিয়ে পরে জড়িয়ে ধরলো। ম্যানেজার বড় রকমের শকড খেয়েও সুন্দরী নার্সটা তার শরীরের সাথে আলতো ভাবে লেপ্টে রয়েছে দেখে সেও আর তাকে সরানোর ইচ্ছা মনের ভিতর আনলো না।
সেও দুই হাত দিয়ে নার্সটাকে জড়িয়ে ধরলো। সাথে সাথে নার্সের শরীরে বিদুৎ খেলে গিয়ে নার্সটা ম্যানেজারের মুখের দিকে তাকালো। নাহ আর পারছে না। নার্সের চোখের ভাষা বুঝতে বেশি দেড়ি হলো না ম্যানেজার সাহেবের।
.
দুইজনই আস্তে আস্তে দুইজনের মুখ কাছে আনতে থাকে। নার্সটা আগে থেকেই ম্যানেজারকে পছন্দ করতো কিন্তু ম্যানেজার বিবাহিত হওয়ার কারণে কোনো দিন বলতে সাহস পেতো না। আজ কোথা থেকে যে এতো সাহস সঞ্চয় হলো কে জানে। সবই হয়েছে ওই অহনার কেবিনে ঢুকতে গিয়ে। কিন্তু ম্যানেজার যে এতো সহজে তাকে আগলে নেবে আগে জানলে কবেই কতো কি হয়ে যেতে! দুইজনই মুখ কাছে আনতে আনতে পাগলের মতো চুমা চুমি করতে শুরু করে। একদম কামড়া কামড়ি অবস্থায় সেটা চলে যায়। নার্স এবং ম্যানেজার ওভাবেই চুমাচুমি করতে করতে ওয়াশরুমের ভিতর ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো।
.
মেঘ কবিরাজের আস্তানা খুঁজে পেয়েছে। ররিনকে নিয়ে ভিতরে ঢুকতেই কোথা থেকে যেন ধোঁয়া চোখে মুখে এসে লাগতে শুরু করে তারপর দুইজনেরই কাশি শুরু হয়। আস্তানাটা জঙ্গলের ভিতরে একটি পুরনো পোড়ানো বাড়িতে। চারপাশে মশাল জ্বলছে৷ ধোঁয়ার মধ্যেই দেখতে পেল কালো পোশাকে কেউ সামনে বসে আছে আর তার চারপাশে আগুন জ্বলছে। সে হঠাৎ করে আওয়াজ করে উঠলো, ফুঁ ফুঁ ফুস.....ফুস...!
তার হাতে একটি লাটি। লাটি দিয়ে সামনে কয়েকটা বারি দিলো এবং মুখ দিয়ে বিভিন্ন রকমের আওয়াজ করতে থাকলো। সেগুলো কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। ধোঁয়ার পরিমাণ আস্তে আস্তে কমতে থাকে এবং সামনের সব ধোঁয়াশা আস্তে আস্তে সব পরিষ্কার হয়ে গেল। মেঘের কেন যেন মনে হচ্ছে নীলা আজ এখানেই এসেছিলো কারণ ভিতরে ঢোকার আগে নীলার এক জোড়া ঝুমকো দুলের মতো ওটার একটা পরে থাকতে দেখেছে। নীলার ওই দুল জোড়া ছিল খুব প্রিয়। প্রায় সময়ই পরতো। তাই মেঘ সেটা খেয়াল করেছিলো। ওটার একটা পরে থাকতে দেখে মেঘ দুলটা কুড়িয়ে নিয়ে পকেটে ঢুকিয়ে রেখেছে।
.
মেঘ আর রবিন দুইজন এবার দুইজনের মুখের দিকে তাকিয়ে মুখ চাওয়া চাওয়ি করে সামনের দিকে এগিয়ে গেল। কালো পোশাক পরা দাড়িওয়ালা বুড়োর মতো লোকটা হুংকার দিয়ে ওঠে, কি চাই!!
মেঘ ভনিতা না করে সরাসরি বলে ফেললো, নীলা নামের মেয়েটি এখন কোথায়?
.
রাফি চলে যাওয়ার পর রৌদ্র তুলির সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ঘুমিয়ে পরে। তুলি খুব সহজ সরল আর আবেগ প্রবন একটা মেয়ে। রৌদ্র তাকে বিপদ থেকে বাঁচতে এসে নিজেই বিপদে পরে তার এরকম অবস্থা হয়েছে। দৃশ্যটা আরেকবার ভেবে তুলির চোখ ছল ছল করে উঠলো। তুলি রৌদ্রের দিকে তাকয়ে তারপর নিজের শাড়ির আচঁল দিয়ে রৌদ্রের মুখ মুছে দিলো। হঠাৎ করে রৌদ্র জেগে গিয়ে তুলির হাতটা সাথে সাথে ধরে ফেললো৷ রৌদ্র চোখ খুলে তাকায়। রৌদ্রকে তাকাতে দেখে তুলি লজ্জায় তার চোখটা নিচের দিকে নামিয়ে নিলো কিন্তু তার ডানটা হাতটা রয়ে গেছে রৌদ্রের হাতে।
.
রৌদ্র কিছু না বলে তুলির দিকে চেয়ে আছে। তুলি আস্তে আস্তে চোখ উপরে তুলে রৌদ্রের দিকে তাকাতেই রৌদ্রের চোখে তার চোখ পরলো। লজ্জায় তুলি আবার চোখ নিচের দিকে নামিয়ে নেয়। তুলির মুখ দিয়ে এবার আস্তে করে বেড়িয়ে এলো, ওমন বেশরমের মতো তাকায় রইছেন ক্যান? ছাড়েন আমার হাতটা ছাড়েন!
রৌদ্রঃ কাঁদছিলে কেন?
.
রাফি বাড়ি ফেরার জন্য বৃষ্টিতে ভিজে মাঝ রাস্তা পর্যন্ত গিয়েও তুলির কথা ভুলতে না পেরে আবারও হাসপাতালে চলে এসেছে। তুলির প্রতি প্রেম যেন তাকে পাগল করে তুলেছে। তুলিকে এক সেকেন্ডের জন্যও যেন চোখের আড়াল করতে ইচ্ছে করে না৷ ভেজা অবস্থার জন্য রাফি ফ্রেস হওয়ার জন্য ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে যেতেই ওখানে ভিতর থেকে একটি মেয়ের চিৎকার শুনতে পেলো।
.
চলবে....
.
পর্বঃ১৬
.
ওয়াশরুমের দরজা খুলে ম্যানেজার দৌড়ে বেরিয়ে এলেন। তারপর তাড়াতাড়ি সেই জায়গা ত্যাগ করে চলে গেলেন। রাফি ভ্রু কুচকে সেদিকে চেয়ে থেকে ভেজা অবস্থাতেই ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেল। ভিতরে উঁকি দিতেই দেখতে পেল একজন নার্স সেখানে পরে আছে। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গা উলঙ্গ। মনে হয় সে চেতনা হারিয়েছে। চিৎকার শুনে দুইজন সিকুরিটি পুলিশ চলে এসেছে। রাফিকে দেখে সন্দেহ করলো। রাফির শার্ট ভেজা এবং শার্টের কয়েকটা বোতাম খোলা। ভিতরে নার্সকে ওভাবে পরে থাকতে দেখে তারা ভেবেই নিলো এই যুবকই নার্সকে একা পেয়ে ওয়াশরুমের ভিতর নিয়ে গিয়ে রেপ করছিলো। তারা রাফিকে ধরে নিচে নিয়ে গেল। বার বার বলা শর্তেও ওরা রাফির কোনো কথাই শুনলো না। হাতে নাতে ধরা পরেছে এর থেকে আর কি বা সত্যি থাকতে পারে। এটাই বড় সত্যি।
.
কয়েকজন নার্স এসে ওই নার্সটাকে ধরে একটি কেবিনে নিয়ে গিয়ে শোয়ালো তারপর জামা কাপড় পাল্টে দিয়ে স্যালাইন দিলো। হাসপাতালের ভিতরেই রেপ করার মত বিশ্রি একটা ঘটনা আগে কখনও ঘটে নি৷ রাফিকে রিসিপশানের ওখানে বেধে রাখা হয়েছে। ম্যানেজার সাহেব চোরের মতো বসে আছেন আর আড় চোখে দেখছেন। উনি একদম চুপ করে আছেন।
.
এদিকে নীলার খোঁজ করতে আসায় শ্যামপুরের কবিরাজ খুবই রেগে গেছেন। মেঘও চেচিয়ে বলছে, আপনার ভান্ডামি আপনার কাছেই রাখুন। এখন তাড়াতাড়ি বের করে দিন নীলাকে!
কবিরাজঃ বড্ড বাড়াবাড়ি করছো তোমরা৷ এখানে কোনো মেয়ে আসেনি।
মেঘঃ এই বার কিন্তু আমি এই পুরো বাড়ি সার্চ করে দেখবো।
কবিরাজঃ এই ছোকরা তুই বেশি বাড়াবাড়ি করছিস। আমার এই আস্তানাটা হচ্ছে ঘুঘুর ফাঁদ। তোকে একেবারে ঘুঘু দেখাই দিব।
মেঘঃ দেখাবিই যখন তখন আর ঘুঘু দেখাবি কেন। ভালো পাখি দেখা। ময়ূর দেখা!
.
কবিরাজ কিছু ইশারা করতেই মেঘ তাড়াতাড়ি পকেট থেকে রিবারবারটা বের করলো।
মেঘঃ এইবার কি করবি!
কবিরাজ এবার ভয় পেয়ে বলতে শুরু করলো,ওই মেয়ে আমার সব কিছু ফাঁস করে দিতে চেয়েছে তাই ওকে আটকে রেখেছি৷
মেঘ চেচিয়ে বললো,কোথায়?
কবিকাজ হাতের ইশারায় ওদেরকে পাশের ঘরের দিকে চলে যেতে বললো। মেঘ আর রবিন সেখানে গিয়ে দেখলো নীলা মেঝেতে হাত পা বাধা অবস্থায় পরে আছে। আর ওর মুখে কসটেপ।
.
মেঘ তাড়াতাড়ি গিয়ে নীলার হাত পায়ের বাধন আর মুখের কসটেপ খুলে দেয়। মুখের কসটেপ খুলে দেওয়ার সাথে সাথে নীলা হাফাচ্ছে। মেঘ নীলাকে জড়িয়ে ধরলো।
মেঘঃ তুই ঠিক আছিস তো নীলা!
নীলা শুধু কাঁদছে কিছু বলছে না। মেঘ নীলার চোখের পানি মুছে দিলো। রবিন দাঁড়িয়ে থেকে সব দেখছে আর মনে মনে ভাবছে মেঘ মুখে যাই বলুক আর বাহিরে থেকে যতই যা কিছু দেখাক আসলে ওর মনের ভিতরে রয়েছে তো শুধু নীলা৷
মেঘ নীলার মাথায় হাত দিয়ে নীলার চুল ঠিক করে দিচ্ছে। নীলার এক কানে ঝুমকোর দুল রয়েছে অন্য কানে নেই৷ মেঘ পকেট থেকে দুল জোড়ার আরেকটা বের করে নীলার কানে পরিয়ে দিলো। নীলা অবাক হয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে৷
নীলাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেঘ বলে উঠলো, কি হলো! চল ওঠ।
.
মেঘ নীলাকে নিয়ে বেরিয়ে এলো। রবিনও পিছু পিছু আসছে। আস্তানা থেকে বেরিয়ে বাইকে উঠে বাইক স্টার্ট দিলো। ওদিকে পুলিশ মেঘকে ধরার জন্য খুঁজে বেড়াচ্ছে।
.
সকালবেলা আফতাব চৌধুরী রাফির নার্সকে রেপ করার ঘটনা শুনে কেবিন থেকে বেড়িয়ে নিচে চলে গেলেন৷
আফতাব চৌধুরীঃ আপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে। ও বড্ড ভালো ছেলে! ও ওমন কাজ করতেই পারে না৷
রাফি লজ্জায় মুখ ঢেকে বসে আছে। সে এভাবে বিশ্রিভাবে ফেঁসে যাবে কল্পনাও করেনি৷
আফতাব চৌধুরী আবারও বলছেন, ও বড্ড ভালো ছেলে। ও আমার ছেলেকেই দেখতে এসেছিলো। ওকে ছেড়ে দিন৷
.
খবর পেয়ে রাফির বাবা মাও ছুটে এসেছেন হাসপাতালে। রাফির মা এসেই আহাজারি করতে শুরু করলেন, বাবারে! বাবা! একি করলি!
বলতে বলতেই উনি অচেতন হয়ে গেলেন৷ উনাকে ধরে একটি কেবিনে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করানো হলো। রাফির বাবারও বুকটা ধরফর করছে। একদিকে রাফির মা অসুস্থ হয়ে গেছে আর আরেকদিকে রাফি। রাফি বার বার বলছে সে এই কাজ করেনি কিন্তু পুলিশ তার কোনো কথাই শুনছে না।
.
ওই নার্সের চেতনা ফিরেছে। সে এখন সুস্থ। নিচে এসে এসব ঘটনা দেখে নিজেও লজ্জায় পরে গেলো। মনে পরে গেল কাল রাতের ঘটনা। সে তো নিজেই ম্যানেজারের সাথে....
ম্যানেজারটা নার্সের দিকে তাকিয়ে আছে৷ নার্সের খুব লজ্জা লাগছে। নার্স চোখ দুটো নিচের দিকে নামিয়ে নিয়ে লজ্জা পেতে পেতে মুখে হালকা হাসির রেখা টেনে চেয়ার টেনে বসে পরলো।
পুলিশঃ কি হলো। আপনি হাসছেন কেন?
পুলিশের কথায় নার্সটা লজ্জারাঙা মুখে এদিকে ফিরে তাকালো।
পুলিশঃ বলুন কাল রাতে আপনার সাথে কি কি হয়েছিলো। সব খুলে বলুন৷
নার্সটা এরপর ম্যানেজারের সাথে সব ঘটনা খুলে বললো। বড় একটা দম ছাড়লো রাফি৷ পুলিশ রাফির কাছে ক্ষমা চেয়ে রাফিকে ছেড়ে দিলো। ছাড়া পেয়ে রাফি নিচে কথাবার্তা চলা অবস্থাতেই সিড়ি বেড়ে তাড়াতাড়ি দৌড় দিলো। কতক্ষণ থেকে সে তুলিকে দেখে না৷
.
রাফি রৌদ্রের কেবিনে ঢুকতেই দেখতে পেলো সবাই এখানে রয়েছে। আকাশ আর অহনা এক পাশে বসা। এবং অন্য পাশে তুলি আর রৌদ্রের মা মনিরা বেগম বসে রয়েছেন। মনিরা বেগমও এখন কিছুটা সুস্থ। আরও দুইদিন রৌদ্রকে কেবিনে থাকতে হবে। তারপর বাসায় নিয়ে যেতে পারবে। তুলি শুধু বার বার রৌদ্রের দিকে তাকাচ্ছে। রৌদ্র ব্যথায় কাতর অবস্থা। কি কষ্টটাই না পাচ্ছে মানুষটা। সব হয়েছে তার জন্য। হাতে কোথাও একটু খানি কেটে গেলে কি জ্বালাটাই না করে আর উনার! কত্ত রক্ত বেড়িয়ে গেছে। ভেবেই তুলির চোখে পানি চলে আসছে৷
.
এদিকে রাফি মন ভরে তুলিকে দেখায় ব্যস্ত। তুলি তার আনমনে ভাবতে ভাবতে পাশে থাকা ফল কাটার ছুড়িটা দিয়ে হাত কেটে ফেললো। কেবিনে উপস্থিত সবাই সেটা খেয়াল করার আগেই রাফিই আগে খেয়াল করলো। কারণ রাফি এদিকেই তাকিয়ে ছিলো। রাফি এগিয়ে এসে তুলির হাতটা ধরে ফেললো। তুলি হাত কেটেছে৷ এটা দেখার সাথেই কেবিনে উপস্থিত সবাই ভয়ে আঁতকে ওঠে। ব্যথায় কাতর অবস্থায় রৌদ্রও এদিকে ফিরে তুলিকে দেখে বলে উঠলো, একি ও এসব করছে কেন। কি হয়েছে ওর!
আকাশঃ এই মেয়ে পাগল হয়েছো নাকি! ফেলে দাও ওটা!
অহনা এগিয়ে এসে তুলিকে ধরলো, কি করছিস!
রাফি এখনও তুলিকে ধরে রয়েছে, আমারে ছাইড়া দেন। আমারে ছাইড়া দেন! আমার লাইগাই এমডা হইছে। আমি হাত কাইটা কুটি কুটি কইরা লামু!
.
তুলি ছোটাছুটি করছে। হাতের কাটা স্থান থেকে রক্ত পরছে। তুলিকে ধরে পাশের কেবিনে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করানো হলো। অহনাও ওর সাথে গেল। এগুলো দেখে মনিরা বেগমের মাথা ঘোরা শুরু হয়। যেটুকু সুস্থ হয়েছিলেন, পেশার বেড়ে আবারও অসুস্থ হয়ে গেলেন। উনাকে উনার কেবিনে নিয়ে গিয়ে পেশার মাপতে থাকে নার্স।
.
রৌদ্র এবার রাফি আর আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো, ভাইয়া তোরা সবাই এমন পাগলামো শুরু করে দিয়েছিস কেন? আরে আমি তো বেঁচে আছি নাকি। সারতে তো একটু সময় লাগবে আমার! আহ! এই অবস্থায় এগুলো দেখে তো আমার খারাপ লাগছে রে।
আকাশ রৌদ্রের মাথায় হাত রাখলো, কিচ্ছু হয়নি ভাই! তুই এদের এগুলো কিছু দেখিস না। মেডিসিন দিয়েছে। এখন বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা কর।
.
শ্যামপুর থেকে বেরিয়ে মেঘ নীলা আর রবিনকে নিয়ে আরিয়াপুলি বাজারের এদিকে চলে এসেছে। ওখানে নাকি মেলা হচ্ছে। নীলা যেতে চেয়েছে তাই মেঘ নিয়ে যাচ্ছে৷ সামনে ট্রেন যাওয়ার কারণে রাস্তায় জ্যাম পরলো। তখনই পুলিশ নীলাকে মেঘের বাইকে দেখে ফেললো। রাতে ভালো ভাবে ঘুম না হওয়ার কারণে নীলা মেঘের ঘাড়ে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলো৷ ট্রেন চলে যাওয়ার সাথেই জ্যাম ছেড়ে গেলে মেঘ বাইক আবারও স্টার্ট দিয়ে দিলো। নীলা বাইকের সামনে বসে ঘুমিয়ে আছে আর পিছনে রয়েছে রবিন।
.
এটা দেখার সাথে সাথে পুলিশ নীলার বাবাকে ফোন করলো,স্যার আপনার মেয়ের খোঁজ পাওয়া গেছে। মেঘ নামের ছেলেটিই ওকে অচেতন অবস্থায় নিয়ে পালাচ্ছে৷
.
চলবে....
পর্বঃ১৭ +১৮
.
নীলার বাবা চিৎকার করে বললেন,পালাচ্ছে আর আপনারা হা করে দেখছেন? ধরুন ওদের!
পুলিশঃ রাস্তায় জ্যাম পরেছিলো আর জ্যাম ছাড়তেই বাইক নিয়ে চম্পট দিয়েছে।
নীলা বাবাঃ তো এখনো হা করে চেয়ে আছেন কেন। যান খোঁজ লাগান। আর ওই মেঘকে আজই হাজতে দেখতে চাই।
নীলার বাবা আবারও আফতাব চৌধুরীকে ফোন দিলেন। কথা বলতে বলতে আফতাব চৌধুরী এক
পর্যায়ে খুবই ক্ষেপে গেলেন।
আফতাব চৌধুরীঃ আমার হিরের টুকরো ছেলের নামে কোনো বাজে কথা বলবেন না৷ আজই আমি আপনার নামে মান হানির মামলা করবো।
নীলার বাবাঃ আপনার হিরের টুকরো ছেলে নাকি সোনার টুকরো ছেলে সেসব আমার দেখার সময় নেই। আপনার ছেলে আমার মেয়ের পিছনে লেগেছে। ও জানেও না ও কিসে পা দিয়েছে.....ওকে আমি.....
রাগে আফতাব চৌধুরী ফোনটা কেটে দিলেন।
নীলার বাবাঃ ফোন কেটে দিলো! এতো সাহস ওই আফতাব চৌধুরীর। আমার ফোন কেটে দিলো।
.
কথা শেষ করতে না পারার জন্য নীলার বাবা আরও রেগে গেলেন। রুমে নীলার মা এসে উপস্থিত হয়।
নীলার মাঃ কি গো এখন রেডি হয়ে কোথায় যাচ্ছো।
নীলার বাবাঃ ওই আফতাব চৌধুরী আমার ফোন কেটে দিয়েছে। এবার আমি ওর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথা বলবো।
নীলার মাঃ প্রেমনগর?
নীলার বাবাঃ ওসি সাহেব বলেছেন, ওরা এখন গুষ্ঠি শুদ্ধ একটা হাসপাতালে রয়েছে। আমি ওখানেই যাব।
নীলার মাঃ আমিও যাব। আমার মেয়েকে ওদের ছেলে লুকিয়ে রেখেছে। ওর মায়ের সাথে আমি কথা বলবো। এমন লম্পট ছেলে বানালো কি করে! আমার মেয়ের কোনো ক্ষতি হলে ওর ছেলেকে আমিও ছাড়বো না! উনিও একজন মা৷ উনি ছেলেদের এসব মেনে নিচ্ছেন কেন!
.
এদিকে হাসপাতালে চলছে বিরাট গন্ডগোল। সব শুনে ম্যানেজারের বউ হাসপাতালে ছুটে এসেছেন। চেচাতে চেচাতে ম্যানেজারকে সে জুতার বারি মারলো। নার্সটাও এখন তার অধিকার দাবি করছে। কাল রাতে তার সর্বনাশের জন্য ম্যানেজার অপরাধী। ম্যানেজার এবার মুখ খুললেন, পুলিশের কাছে তুলে ধরলেন তার বউয়ের পরকীয়ার কথা। সে হাসপাতালে থাকা অবস্থায় বউ অন্য পুরুষের সঙ্গ লাভ করতো। রাতের পর রাত থাকতো। সব প্রমাণ পাওয়ার পরও বউকে সে তালাক দেয়নি। তবে এখন দেবে। বউ ছিলো অর্থ লোভী। অর্থের লোভে সে বিয়ে করেছিলো।
.
ম্যানেজারের মুখে এই কথাগুলো শুনে নার্সের মনে এবার প্রেমের ফুল ফুটতে শুরু করে। নার্সের মনের আশা বুঝি এবার পূরণ হতে যাচ্ছে।
ম্যানেজার নার্সের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
ম্যানেজারঃ আমি ওকে বিবাহ করতে চাই৷
এই কথা শুনে লজ্জায় নার্স চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো।
.
ভয়ে ম্যানেজারের স্ত্রীর মুখ শুকিয়ে একেবারে আমসি হয়ে গেছে। তার মাথা ঘুরতে শুরু হয়। সে অজ্ঞান হয়ে পরে গেল। তার জারিজুরি আজ সবার সামনে ধরা পরেছে। সে দুই মাসের প্রেগন্যান্ট। এটা সে ম্যানেজারকে জানায়নি। কয়েকজন নার্স এসে তাকে অচেতন অবস্থায় একটি কেবিনে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করালো। তার কিছুক্ষণ পর হাসপাতালে একজন কাজী ডেকে সবার উপস্থিতিতে ম্যানেজারের সাথে নার্সের বিয়ে হয়। ঘটনা মিটমাট হওয়ায় পুলিশ ম্যানেজারকে ছেড়ে দিলো।
.
তুলি তার পরনের শাড়ি কাপড় চেইঞ্জ করে রৌদ্রের কেবিনে আসলো। তার হাতের কাটা স্থানে ব্যান্ডেজ। কেবিনে ঢুকতেই দেখতে পেল, ছোট ছোট জামা কাপড় পরা কিছু সুন্দরী মেয়েরা রৌদ্রের বেডের চারপাশে ঘিরে রয়েছে। এরা সবাই রৌদ্রের ক্লাসমেট। তুলি মনে মনে বলছে,মাইয়া গুলার লজ্জা শরম নাই! ওড়না পরে নাই। দুধ গুলান দেখা যাইতাছে। ছি ছি! আবার হাটু বাইর করা। কাপড় পিন্দে নাই। ছি ছি!
রৌদ্র ওদের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।
.
মেলার মধ্য স্টলে দাঁড়িয়ে নীলা জিনিসপত্র দেখছিলো। ঐতিহ্যবাহী মেলা। বিভিন্ন শো পিচ আর ঘড়ি গুলোতে হাত দিয়ে দিয়ে দেখছে সে৷ তখনই হঠাৎ করে একটা নিতে গিয়ে অন্য আরেকটা চীনা মাটির শো পিচ মাটিতে পরে দুই খন্ড হয়ে গেল। সাথে সাথে নিচের দিকে তাকিয়ে দুই ভাগ হওয়া অংশটা দেখে ভয়ে নীলার মুখ শুকিয়ে যায়। কেউ দেখার আগেই সেটা মাটি থেকে তুলে দুই ভাগ হওয়া অংশটা এক সাথে করে আবার সেখানেই রেখে দিলো।
.
পিছন থেকে হেটে আসছে মেঘ। নীলাকে কিছুক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে আসলো।
মেঘঃ কিরে কি করছিস এখানে! এগুলো পছন্দ হয়েছে?
নীলা মাথা নেড়ে না বোধক উত্তর দেয়৷
মেঘঃ আরে বল বল! কোনটা পছন্দ হয়েছে! নইলে এখানে এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে কি করছিস। কোনটা নিবি বল।
স্টলের দোকানদার এদিকে এগিয়ে এলো। নীলা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে ঘামছে। একটা ঢোক গিললো।
মেঘ এবার শো পিচ গুলো তে হাত দিয়ে একটা একটা করে ওখান থেকে উঠিয়ে বলছে, কোন পছন্দ হয়েছে? এটা? ওটা? না এইটা?
.
মেঘ কয়েকটা ওঠানোর পর একটু আগের ওই দুই ভাগ হওয়া শো পিচ টায় হাত দিলো। ওটায় হাত দিতেই উপরের একটা অংশ মাটিতে পরে গেল।
এটা দেখার সাথেই নীলা দ্রুত সেখান থেকে সরে পাশের দোকানে কসমেটিকস দেখতে চলে গেল। দোকানদার এদিকে এগিয়ে এসে বলছে, আপনি এটা ভেঙে ফেললেন?
মেঘ তার হাতে থাকা শো পিচের খন্ডটার দিকে তাকিয়ে দেখতে দেখতে বলছে, এটা তো বোধয় আগেই ভাঙাই ছিল।
দোকানদার করা গলায় উত্তর দেয়, একটা জিনিসও এখানে ভাঙা নয়। সব চেক করে রেখেছি৷
মেঘঃ ইয়ে মানে আমি তো এটা ভাঙি নি৷
দোকানদার রেগে বলছে, আমি স্পষ্ট দেখলাম ওটা আপনার হাত থেকে পরে ভেঙে গেল! আর আপনি ভাঙেন নি!
মেঘঃ দেখুন আমি মিথ্যা বলছি না।
.
পাশের দোকান থেকে নীলা আড়চোখে ঘটনা দেখছে আর ওখানে হাতের চুড়ি দেখার ভান করছে। রবিন এগিয়ে এসে বললো, কি হয়েছে এখানে গ্যাঞ্জাম কিসের?
মেঘ শো পিচটা দেখিয়ে বললো, দেখ ভাই এটা ভাঙাই ছিল আর উনি বলছেন এটা আমি ভেঙেছি!
.
হঠাৎ মেঘ সামনে থাকা আয়নার দিকে তাকিয়ে খেয়াল করলো নীলার চোখ মুখ হাস্যোজ্জ্বল! সে মুচকি মুচকি হাসছে। মেঘ যে ওকে হাসতে দেখছে সেটা নীলা খেয়ালই করলো না। সে পাশের দোকান থেকে হাতের চুড়ি কেনার ভান করছে৷
.
এদিকে আকাশ অহনাকে গাড়ি করে প্রেমনগরে রেখে আসছে। আকাশ নিজেই ড্রাইভ করছে। কাল থেকে হাসপাতালে আছে। বাড়ি গিয়ে এখন একটু ফ্রেস হওয়া দরকার। অহনা আকাশের পাশের সিটে বসে এক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে চেয়ে আছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।
আকাশ সামনের দিকে তাকিয়েই ড্রাইভ করতে করতে বলছে, এভাবে দেখো না তো! ড্রাইভিং করতে মনোযোগ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে!
অহনা আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে উঠলো, কি আর হবে! বেশি কিছু তো হবে না৷
.
অহনা এগিয়ে এসে আকাশের গায়ে হাত দিলো এবং আকাশের ঘাড়, কান আর গলা শুকতে থাকে । আর গালের কাছে এসে ঠোঁটটা কিসের স্টাইল করছে।
আকাশঃ আরে... আরে এ্যাই কি করছো! থামো!
আকাশ তাড়াতাড়ি গাড়িটা ব্রেক করে থামিয়ে দেয়।
গাড়ি থামিয়েই আকাশ অহনার হাতটা ধরে ফেললো।
আকাশঃ এসব কি করছিলে!
অহনা কিছু না বলে এক দৃষ্টিতে আকাশের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশেরও আহনার মুখের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টিভ্রম হয়ে গেল।
আস্তে আস্তে আকাশ অহনার ঠোঁঠের কাছে চলে গেল । তারপর আকাশের ঠোঁট ডুবে যায় অহনার ঠোঁটে।
.
দশ মিনিট থেকে রাস্তায় গাড়ির লম্বা সিরিয়ালে জ্যাম পরে গেছে। সামনে একটা কালো গাড়ি সেই কতক্ষন থেকে দাঁড়িয়েছে আর সরে যাবার নাম নেই।
.
চলবে....
পর্বঃ১৮
.
আফতাব চৌধুরীর মুখোমুখি হতে নীলার বাবা মা এবং তাদের কিছু দলবল সঙ্গে নিয়ে হাতপাতালে এসে উপস্থিত হয়েছেন। হাতপাতালের সামনে বেশ কয়েকটা মাইক্রো এসে জড়ো হয়েছে। তারা দ্রুত বেগে হন হন করে হেটে সিড়ি দিয়ে উঠছে। তিন তলায় এসে আটকে গিয়ে এদিক ওদিক ছুটে ওদের কেবিন খুঁজতে থাকে। দলবল গুলোও হাতে লাটি গুলি নিয়ে পিছু পিছু আসছে। হাসপাতালে থাকা অনান্য রোগীরা এই দৃশ্য গুলো দেখে ভয় পেয়ে গেল। হাসপাতালের ম্যানেজার তাড়াতাড়ি পুলিশ সুপার বাহিনীকে খবর দিলেন। এদের সামলাতে দুই একটা সিকুরিটি পুলিশে কাজ হবে না। ওরা সামলাতে গিয়ে পরে হাসপাতালে না কোন বাজে ঘটনা ঘটে যায়।
.
কাঙ্খিত আফতাব চৌধুরীর খোঁজ তারা পেয়েছেন। আফতাব চৌধুরীর মুখোমুখি হতে গিয়ে নীলার মা নীহারিকার এবার চোখ গেল মনিরা বেগমের দিকে। মনিরা বেগমও নীহারিকাকে দেখে উঠে দাড়ালেন। দুইজন দুইজনের দিকে তাকিয়ে আছেন৷ এবং একে অপরকে সুক্ষ্ণ ভাবে দেখে চেনার চেষ্টা করছেন। নীহারিকার চোখ গুলো গোল গোল হয়ে গেছে। নীহারিকা চিল্লিয়ে বলে উঠলো, মনিরা!!
মনিরা বেগমঃ নীহারিকা তুই!
মনিরা বেগম ছুটে এসে নীহারিকাকে জড়িয়ে ধরলেন। দুইজনের মুখেই ছড়িয়ে পরছে মুক্তোর হাসি।
নীলার বাবা আর আফতাব চৌধুরী একবার একে অপরের দিকে তাকালেন। তারা ঘটনার কোনো কিছুই বুঝতে না পেরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন।
.
মনিরা আর নীহারিকা দুইজন স্কুলের বান্ধুবি। দীর্ঘ সাতাশ বছর পর তাদের আজ আবার দেখা হলো। সেই ষোল বছর বয়সে মনিরা আফতাবের প্রেমে পরে। এবং সেই প্রেমের টানে এক পর্যায়ে ঘর ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়। ঘটনার কিছুদিন পর নীহারিকার স্কুল পাশ হলেই নীহারিকার পরিবার নীহারিকাকে নিয়ে অন্য জায়গায় চলে যায়। পররর্তীতে দুই বছর পর মনিরা তার নিজ শহরে এসে নীহারিকাকে আর দেখতে পায় নি এবং আর কোন যোগাযোগ করাও সম্ভব হয়নি৷
.
মনিরা যখন ক্লাস নাইনে ওঠে তখন থেকেই আফতাব মনিরার পিছু লাগে। আফতাব ছিল তখন সদ্য কলেজে ভর্তি হওয়া তরুণ। মনিরা স্কুলে যাওয়া আসার পথে আফতাব রোজ দাঁড়িয়ে ওর জন্য অপেক্ষা করতো৷ এভাবে ছিলো ওদের দুজনের প্রথম দেখা হওয়া৷ মনিরা ঘরে এসে আফতাবের ওই মায়াবি চোখ কিছুতেই ভুলতে পারতো না। আর আফতাব তো কিশোরী মনিরার ওই মিষ্টি চেহারায় বাধা পরেই গেছে৷ এরিমধ্যে মনিরা ক্লাস টেনে উঠে গেল। এরপর একদিন হুট করে শুরু হয়ে যায় চিঠি দেয়া নেয়া। রোজ রোজ চিঠির আশা করতো মনিরা। একদিন চিঠি না পেলে মন খারাপ থাকতো। ওইরাতে আর ঘুম হতো না। এভাবে মনিরাও আস্তে আস্তে আফতাবের প্রতি দুর্বল হতে থাকে। দুইজনই দুইজনের প্রেমে পরে গেছে। এটা ছিলো দুইজনের জীবনেই প্রথম প্রেম৷ আর মনিরার বয়স ছিল খুবই অল্প। মনিরার ষোল এবং আফতাবের উনিশ বছর চলছিলো তখন। শুরু হলে গেল তাদের রঙিন দিন। সেই মিষ্টি প্রেমের সাক্ষী নীহারিকা নিজেও ছিলো। মনিরার চিঠি দেয়া নেয়া এবং স্কুল ফাকি দিয়ে প্রেমিকের সাথে ঘুরতে যাওয়া সবই নীহারিকা জানতো। এমনকি মনিরা বাহিরে বের হতে না পারলে ওর প্রেমিকের চিঠি পর্যন্ত নীহারিকা নিজ হাতে বহন করেছিলো।
.
প্রেম এতোটাই গভীর হয়ে গিয়েছিলো যে মনিরা নিজেকে সামাল দিতে পারলো না৷ ধরা পরে গেল পরিবারের কাছে। পড়ার টেবিল,বিছানা আর বই খাতার মধ্য গাদা গাদা অনেক চিঠি পাওয়া গেল। মনিরার বাবা মনিরাকে কয়েকটা চড় বসিয়ে দিলেন। স্কুল ফাকি দিয়ে ঘুরতে যাওয়ার ঘটনাতেও ধরা পরে গিয়েছিলো মনিরা। মনিরার পরিবার সিদ্ধান্ত নেয় মনিরার স্কুল পাশের পর মনিরাকে নিয়ে অন্য কোথাও চলে যাবে৷ কিন্তু এরিমধ্যে ঘটে যায় আরেক বিপদ। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর দুইজনের আবেগ আরও বেড়ে যায়। প্রায়ই লুকিয়ে দেখা করার সময় মনিরা এসে আফতাবকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতো। দুইজনই দুজনকে হারানোর কথা কল্পনাতেও আনতে পারতো না। লুকিয়ে লুকিয়ে খুবই গভীর ভাবে দুজনের মেশামেশা শুরু হলো আর আবেগে দুইজনই দুজনের কাছে সপে দিলো।
.
এভাবেই দুই মাস চললো তাদের গোপন প্রনয়। মনিরাকে মারধর করার পর মনিরা বলেছিলো সে আর আফতাবের সাথে কোনোরকম যোগাযোগ রাখবেনা৷ কিন্ত তাই কি হয়? তার প্রাণ হারাতে হবে যে তাকে! একদিন আফতাবকে দেখতে না পেলে সে পাগলের মতো হয়ে যেত। হঠাৎ মনিরা একদিন ক্লাসে মাথা ঘুরে পরে যায়। আর কয়েকদিন থেকেই সব সময় বমি বমি ভাব আসছে। ভালোভাবে কিছু খেতেও পারছেনা আর বমি করছে। মাথা ঘুরে পরে যাওয়ার পর স্কুলের ম্যাডাম একজন মহিলা ডাক্তারকে স্কুলে আসতে বললো। উনি মনিরাকে দেখে আঁতকে উঠলেন। সঙ্গে সঙ্গে একটি টেস্ট করালেন। মনিরা সন্তান সম্ভাবনা। স্কুলের ম্যাডামও এটা শুনে ভিমরি খেয়ে গেলেন। ভয়ে মনিরা ওইদিন আর বাসায় না ফেরার সিধান্ত নেয়৷ এটা বাসায় জানলে ওকে আজ মেরেই ফেলবে৷ তাই বাড়ি না ফিরে স্কুল থেকেই মনিরা সোজা আফতাবের কাছে চলে গেল।
.
সব শুনে আফতাবের মাথায়ও আকাশ ভেঙে পরে। ভয়ে মনিরা খুবই কান্নাকাটি করতে শুরু করে দিয়েছে। আফতাবও এখন ছাত্র অবস্থায়। সবে কলেজের এক বছর পার হলো। এখনি নিজের বাড়িতে বিয়ের কথা জানানোর সাহস তারও যে নেই। বাবা মা এই কথা জানতে পারলে তাকেও চড় মেরে বাড়ি থেকে বের করে দেবে নিশ্চিত। সিধান্ত নিলো আফতাবও আজ বাড়ি ফিরবে না।
.
ছোট্ট কিশোরী মনিরা তার বড় ছেলে আকাশকে পেটে নিয়েই ওইদিনই প্রেমিক আফতাবের হাত ধরে ওই শহর ছেড়ে পালিয়ে এলো। নতুন শহরে পালিয়ে এসে আফতাব তার এক বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করে। ঘটনার সব কিছু খুলে বলার পর সে এবং আরও কয়েকজন বন্ধু মিলে ওদের বিয়ের ব্যবস্থা করলো। সেই রাতেই বিয়ে হয় মনিরা আর আফতাবের। এবং আপাতত ওরা বন্ধুর বাড়িতে গিয়েই উঠলো। সবাই সেখানে ঘর বাড়ি সুন্দর করে সাজায়। এবং বাসর ঘরের ব্যবস্থাও করলো। কিশোরী মনিরার কাছে এখন সব কিছু রঙিন রঙিন লাগছে। সে তার ভালোবাসার মানুষের সাথে পালিয়ে এসে ভালোই করেছে৷
.
কিছুদিন পর আফতাব বন্ধুদের সহায়তায় সেখানে ছোট একটি ব্যবসা শুরু করলো এবং পাশাপাশি পড়াশোনাটাও চালালো৷ এরপর কিছু টাকা হলে ছোট্ট একটি বাসা ভাড়া করে বন্ধুর বাড়ি থেকে দুজন সোজা সেই ভাড়া বাসায় গিয়ে উঠলো। তখন থেকেই শুরু হলো এই প্রেমনগরে তাদের সাজানো ছোট্ট সংসার। সেখানেই জন্ম নিলো তাদের আদরের সন্তান বড় ছেলে আকাশ।
.
আকাশের বয়স এক বছরের কাছাকাছি আসতেই মনিরা আর আফতাব নিজেদের শহরে গিয়ে বাবা মায়ের সামনে উপস্থিত হয়। এবং তাদের ভুলের জন্য ক্ষমা চায়। ছেলে মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার কারণে দুইজনের পরিবারই এতোদিন ছিলো পাগল প্রায় তাই ওদের ফিরে পেয়ে সব কিছু মেনে নিয়ে দুই পরিবারই ওদের বুকে জড়িয়ে নেয়৷ এরপর মনিরা আর আফতাব তাদের সন্তান আকাশকে নিয়ে প্রেমনগরে ফিরে আসে ওদের এতোদিনের সাজানো ছোট্ট সংসারে। ধীরে ধীরে মনিরা এবং তার সন্তানও বড় হতে থাকে এবং আফতাবও পড়াশোনা শেষ করে প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করেছে। সব কিছুই সম্ভব হয়েছে দুইজন দুইজনের প্রতি প্রেম আর সহযোগীতায়। এরিমধ্যে জন্ম নিলো ওদের মেজো ছেলে মেঘ।
.
আফতাবের সুনামে এখন বেশ খুশি মনিরার পরিবার। আফতাবের পরিবারও মনিরাকে বউ হিসেবে পুরোপুরি মেনে নিয়েছে৷ বিখ্যাত বড় বিজনেসম্যান আফতাব চৌধুরীর সুনাম এখন চারিদিকে। আফতাব প্রেমনগরই নিজস্ব অনেক জায়গা জমি কিনে ফেলেছে। বিশাল বড় বাড়িও করে ফেললো। আফতাব তার স্ত্রী মনিরা এবং দুই পুত্রকে নিয়ে সেখানে গিয়ে উঠলো। নতুন বাড়িতে উঠেই আরও একটি সুখবর এলো। মনিরা আবারও মা হতে যাচ্ছে। কিছুদিন পর নতুন চৌধুরী মহলেই জন্ম নিলো ওদের ছোট ছেলে রৌদ্র। তখন থেকেই চলতে থাকে প্রেমনগরের এই চৌধুরী মহল। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে সব এবং বড় হয় ছেলেরাও।
.
আজ এতো গুলো বছর পর আবার সেই ছোট্ট মনিরার সাথে এভাবে দেখা হয়ে যাবে ভাবতেই পারেনি নীহারিকা। মনিরাও ভাবেনি নীহারিকার সাথে এভাবে হঠাৎ দেখা হয়ে যাবে৷ তবে মনে মনে চেয়েছে কোথাও কোনো দিন দেখা হোক। অনেক খুঁজেছে সে স্কুলের বান্ধুবিদের কিন্তু যোগাযোগ করার কোনো মাধ্যম হয়ে ওঠেনি। আজ দুইজন দুইজনকে এভাবে দেখে দুইজনই আবেগে আপ্লুত। কে জানত এই আফতাব চৌধুরীই আসলে সেই আফতাব যে ছিলো মনিরার জীবনের স্কুলের প্রেমিক৷ যার সাথে মনিরা পালিয়ে গিয়েছিলো।
.
এদিকে তুলি রৌদ্রের কেবিনে বসে খুবই বিরক্তবোধ করছে। কেননা সেখানে একের পর এক সুন্দরী মেয়েরা এসে ভিড় জমাচ্ছে। রৌদ্রের সাথে যে একটু আলাদা ভাবে কথা বলবে সেই সুযোগ টুকুও পাচ্ছে না। রৌদ্রের ডিপার্টমেন্টর সব মেয়েরা এসে হাসপাতালে ভিড় জমিয়েছে। তাদের মোস্ট হ্যান্ডসাম বয় যে এখন এখানে। ওরা ভাবছে এই অবস্থায় হ্যান্ডসাম বয়ের একটু খেতমত করতে পারলে যদি মনটা জয় করে নেওয়া যায়!
.
চলবে....
পর্বঃ১৯ +২০
.
রৌদ্র হঠাৎ তুলির দিকে তাকিয়ে খেয়াল করলো তুলি চোখ মুখ ভ্যাংচাচ্ছে। ওর চোখ মুখের রেখা বলে দিচ্ছে সে যথেষ্ট বিরক্তবোধ করছে। রৌদ্র মেয়েগুলোকে কেবিন থেকে চলে যেতে বললো। রৌদ্রের সুন্দরী ক্লাসমেটরা কেবিন থেকে বের হতেই রৌদ্র চোখ বুঝলো । তুলি হা করে এখন রৌদ্রের মুখের দিকে চেয়ে আছে। জেগে থাকা অবস্থায় তো লজ্জায় তার দিকে ভালো ভাবে চাওয়া যায় না। তুলি টুলটা এগিয়ে নিয়ে এসে মুখ সামনের দিকে বারিয়ে বারিয়ে রৌদ্রকে দেখছে। রৌদ্র তার বাম চোখটা হালকা একটু খুলে তারপর আবার বন্ধ করে তুলির কান্ড দেখে ফেললো কিন্তু তুলি সেটা বুঝতেই পারলো না। হঠাৎ করে রৌদ্র চোখ মেলতেই তুলি লজ্জা পেয়ে টুল ঘুরিয়ে অন্যদিকে মুখ করে বসলো। লজ্জায় তুলি চোখ দুটো বন্ধ করে আছে। আর ঠোঁট দুটো কাঁপছে৷ রৌদ্র বললো, তুমি আমার দিকে ওভাবে তাকিয়ে থাকো কেন?
.
লজ্জায় তুলি কিছু বলতে না পেরে টুল থেকে উঠে দাঁড়য়ে কেবিনের বাহিরে দৌড় দিতেই দরজার কাছে এসে রাফির সাথে ঢাক্কা খেল। রাফি তখনই কেবিনের ভিতরে ঢুকছিলো। ঢাক্কা খেয়ে তুলি পরে যেতেই রাফি তুলিকে ধরে ফেললো। সাথে সাথে তুলি রাফিকে ঢাক্কা দিয়ে দৌড়ে কেবিনের ভিতর থেকে বেড়িয়ে গেল। ঢাক্কা খেয়ে রাফি দেয়ালের সাথে ঠেকে পরে। তুলির চলে যাওয়ার পানে সে এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো এবং মুখে হালকা বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো। তার বুকে তুলির জন্য প্রেমের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কয়েক সেকেন্ড পরেই নিজের হুশ ফিরে পেয়ে রাফি কেবিনের ভিতরে ঢুকলো। কিন্তু তার মুখের হালকা হাসিটা লেগেই আছে। রৌদ্রের বেডের দিকে এগিয়ে এসে রাফি আবারও কেবিনের দরজার দিকে চেয়ে বলে উঠলো, বরোই মিষ্টি মেয়ে!
রৌদ্রঃহুম!
রৌদ্রকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে রাফি নিজেকে সামলে নিয়ে কাশি দিয়ে উঠলো। রৌদ্র খুব চালাক ছেলে। রাফির হাবভাব দেখে সে বলেই ফেললো, প্রেমে ট্রেমে পরেছিস নাকি?
সাথে সাথে রাফির মুখটা পেঁচার মতো হয়ে গেল। রাফি চোরের মতো লুকাতে চেষ্টা করতে করতে মুখে জোর করে একটু হাসি আনার চেষ্টা করে বললো, এহ্ কই! আমি আবার করবো প্রেম! হাহাহা...
হাসপাতালের তিন তলায় জটলা পেকেছে। নীলার মা নীহারিকা চিল্লিয়ে বললো,মনিরা! মেঘ তোর ছেলে? আগে বলবি না!
মনিরা বেগম চোখ ঘুরিয়ে আফতাব চৌধুরীর দিকে তাকালেন। নীহারিকাও এবার নীলার বাবার দিকে তাকায় তারপর মনিরাকে উদ্দেশ্য করে বললো এই শুনছো, তোমাকে না বলেছিলাম। স্কুলে থাকতে আমার এক বান্ধুবি প্রেম করে পালিয়ে গিয়েছিলো! ও হচ্ছে সেই। মনিরা! আর উনি আফতাব ভাই। যার সাথে পালিয়েছিলো। আজ এত বছর পর দেখা হলো। তারপরও দেখো ওরা দুজন কত সুন্দর আছে।
মনিরা বেগম হাসতে হাসতে বললেন, কি যে বলিস, তোদের জুটিটাও তো খুব সুন্দর। অনেক সুন্দর মানিয়েছে তোদের।
নীলার বাবা রেজা খান এবার আফতাব চৌধুরীর দিকে এগিয়ে গেলেন৷ দুজন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছেন।
মনিরা বেগম বলে উঠলেন,কিন্তু মেঘের ব্যপারটা তো বুঝলাম না!
নীহারিকাঃ আরে তোর ছেলে মেঘ আমার মেয়ে নীলার পিছনে লেগেছে!
মনিরা বেগম এবার একটু ভিমরি খেলেন। তারপর হাসতে হাসতে বলেন, আমার ছেলে লেগেছে নাকি তোর মেয়েই আমার ছেলের পিছনে লেগেছে। কোনটা? মেঘ একবার অবশ্য আমাকে একটা মেয়ের কথা বলেছিলো। ওটা যে তোর মেয়ে আমি তা জানতাম না! ক্যাম্পাসের একটা মেয়ে নাকি ওকে খুব ভালোবাসে! সারাক্ষণ ওর পিছনে লেগে থাকে। হাহাহা....
.
নীলার বাবা এবার বলে উঠলেন, কিন্তু এখন ঘটনা যা দাঁড়িয়েছে। তাতে মেঘ যে নির্দোষ তা কিছুতেই প্রমাণ হয় না। আজ বাইকে মেঘের সাথে নীলাকে পুলিশ দেখতে পেয়েছে। কিন্তু ধরতে পারেনি। তার আগেই ওরা পালিয়েছে৷ আর সেই খবর পেয়েই আমরা এখানে ছুটে এসেছি।
.
এই কথা শুনে আফতাব চৌধুরী এবার জোরে জোরে হো হো করে হেসে উঠলেন। সবাই অবাক হয়ে চোখ গোল গোল করে আফতাব চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে আছে।
আফতাব চৌধুরী হাসতে হাসতে বললেন, ওই তো এক হাতে কি তালি বাজে! দুই হাতের সায় আছে দেখেই বেজেছে! আমার ছেলে যেমন নির্দোষ নয় তেমনি আপনার মেয়েও নির্দোষ নয়।
নীলার বাবা এবার আস্তে করে বলে উঠলেন, তার মানে দুইজনই দুইজনের পিছনে লেগেছে!
.
আফতাব চৌধুরী হো হো করে হাসতে হাসতে আবারও বললেন, দুইজনই দুইজনের প্রেমে পরেছে!
বলেই আফতাব চৌধুরী মনিরা বেগমের দিকে তাকিয়ে এক চোখ টিপ দিয়ে বলে উঠলেন, কি গো! আমি যখন তোমার প্রেমে পরেছিলাম তুমি তখন সায় দেও নি! সায় দিয়েছিলে বলেই তো আমরা আজ এতো দূর এসেছি৷
মনিরা বেগম লজ্জা পেয়ে হেসে উঠলেন। নীহারিকা চিল্লিয়ে বলে উঠলো, তবে আর দেড়ি করছো কেন। দুইজনে মোলাকাত করো!
.
নীলার বাবা রেজা খান আর আফতাব চৌধুরী বুক মেলালেন। তারপর নীলার বাবা হাসতে হাসতে বলেন, আমিও নীহারিকাকে প্রথম দেখে প্রেমে পরেই সরাসরি ওর বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম । প্রস্তাবের পর যখন ওদের বাসায় প্রথম যাই ওইদিনই আমাকে দেখে ও নাচতে নাচতে বিয়ের জন্য রাজি হয়ে যায়। হাহাহা... সায় না থাকলে কি আর বিয়ের পিড়িতে ওইদিনই বসতো! হাহাহা...
নীহারিকাঃ হয়েছে হয়েছে। ছেলেমেয়ের সামনে আর এখন এসব বলতে হবে না।
রেজা খানঃ বাচ্চা গুলো এখন কোথায় কি করছে কে জানে!
.
তখনই নীলার বাবা রেজা খানের ফোনের রিংটন বাজতে শুরু করে। থানার ওসি সাহেব ফোন করেছেন। ফোন রিসিভ করার সাথে সাথেই ওসি সাহেব হাসতে হাসতে বলছেন, স্যার একটা ভালো খবর আছে!
রেজা খানঃ কি খবর?
ওসিঃ ওই ছেলেসহ আর আপনার মেয়েকে ধরে ফেলেছি! মেলার মধ্য দুইজন ঝগড়া করছিলো। ঘপটি মেরে ছিলাম বুঝতেই পারে নি। সাথে সাথে ধরে হাজতে ভরেছি স্যার! হাহাহা!
.
নীলার বাবা রেজা খান তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন আর চেচিয়ে বলছেন, খুব ভালো কাজ করেছেন! কাজের সময় ধরতে পারেন না আর অকাজের সময় ধরেন! আরে ওটা আমার হবু মেয়ের জামাই।
নীলার বাবা ধমক দিয়ে আবারও বললেন,যেতে দিন ওদের!
ওসি সাহেব কিছুই বুঝতে না পেরে আবুলের মতো বলে উঠলেন, আপনার হবু জামাই? তবে আপনার জামাইকে আপনি আমাদের কেন ধরতে বলেছিলেন স্যার! হাজতে তো আপনিই ভরতে বলেছিলেন! আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা! কাহিনী কি স্যার!
রেজা খানঃ শাট আপ!
.
ওসি সাহেব এবার আমতা আমতা করে বলতে শুরু করলো, স্যার একটা সমস্যা হয়ে গেছে! ওরা এইমাত্র থানা থেকে পালিয়েছে! আমি ফোনে কথা বলার সময়ই ফাক পেয়েছে। আর সেনট্রি টাও হয়েছে গাধার গাধা। বললাম নজর রাখতে!
রেজার খানঃ খুব ভালো হয়েছে! একটা কাজও আপনারা ঠিক মতো করতে পারেন না।
রাগে নীলার বাবা কলটা এবার কেটে দিলেন।
.
এদিকে বাড়িতে অহনা শাড়ি খুলে বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। আকাশ বাথরুম থেকে বের হয়েই অহনার এই অবস্থা দেখে ফেললো। রুমের দরজা হা করে খোলা। আকাশ বির বির করে বলতে শুরু করলো, মেয়েটার কি কোনো আক্কেল নেই। দরজা খুলে এভাবে শুয়ে ঘুমাচ্ছে!
সাথে সাথে অহনা চট করে উত্তর দেয়,খুব গরম লাগছে। এসিতেও কাজ হচ্ছে না!
আকাশ চমকে উঠলো, তুমি ঘুমাও নি! এভাবে দরজা খুলে রেখে কেউ শোয়!
অহনা চোখ বন্ধ রেখেই আবারো উত্তর দেয়, বললাম তো, রুম ইস ভেরি হট! সো দরজা জানলা এখন থেকে খোলাই রাখতে হবে!
.
তখনই রুমের কাজের মহিলার গলার আওয়াজ পাওয়া যায়। সে বলছে, ভাইজান খাবার কি এইখানে আনমু নাকি নিচে আইবেন?
আস্তে আস্তে গলার আওয়াজ তীব্র হতে থাকে। সম্ভবত সে এদিকেই আসছে।
আকাশ তাড়াতাড়ি দৌড়ে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিলো।
আকাশঃ ভাগ্যিস আজ বাড়ির সবাই হাসপাতালে। নইলে কে যে এভাবে রুমে হুট করে ঢুকে পরতো!
.
ওদিকে কাজের মহিলা রুমে ঢুকতে যাবে তখনই আকাশ জোরে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। ভিতরে ঢুকতে গিয়ে হঠাৎ দরজা সামনে এসে পরায় কাজের মহিলা তার নাকে প্রচন্ড ভাবে ব্যথা পেলো। দরজাটা খুব জোরে নাকের সাথে বারি লেগেছে। সে নাকে ব্যথা পেয়ে, নাকটা ধরে আস্তে আস্তে সেখান থেকে চলে গেল।
.
অহনা শাড়ি খোলা অবস্থায় বিছানায় চিত হয়ে চোখ বন্ধ রেখেই বলে উঠলো, উমম,দরজা বন্ধ করলে কেন আকাশ! বললাম না আমার গরম লাগছে!
আকাশ চোখ তীক্ষ্ণ করে অহনার দিকে তাকিয়ে আছে।
আকাশের কথার কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে অহনা চোখ বন্ধ অবস্থাতেই মুখটা বিরক্তির ভঙ্গি করে শুয়ে থেকেই তার পরনের ব্লাউজের বোতাম গুলো এবার খুলতে শুরু করে।
.
চলবে....
পর্বঃ২০
.
আকাশ তাড়াতাড়ি দৌড়ে গিয়ে অহনাকে ব্লাউজ খোলা থেকে আটকালো। অহনা বিছানায় উঠে বসে চোখ খুলে তাকায় আর তারপর চোখ তীক্ষ্ণ করে বললো, তোমাকে আমি বললাম না আমার খুব গরম লাগছে! ছাড়ো আমার হাত ছাড়ো!
অহনার কথায় আকাশ অহনার হাতটা ছেড়ে দিলো।
আকাশঃএসব কি পাগলামো শুরু করেছো। নিচে চলো এখন। খেতে হবে না?
.
অহনা বিছানা থেকে উঠে ওভাবেই এগোচ্ছিলো। পিছন থেকে আকাশ অহনার হাতটা টেনে ধরে।
আকাশঃতুমি কি নিচে এভাবেই যাবে?
সাথে সাথে অহনা এবার নিজের দিকে তাকিয়ে চোখ বড় বড় করে ফেললো তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললো, এ্যাই তুমি এখানে বসে কি করছো?
তারপর অহনা আবার নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে বির বির করে বললো, ও আচ্ছা? তাহলে আমাকে এই অবস্থায় দেখেই তুমি দরজা লাগিয়ে দিয়েছো!
আকাশঃ মানে?
অহনাঃ মানে হলো আমাকে শাড়ি খোলা অবস্থায় দেখেই অমনি দরজা লাগিয়ে দিয়েছো। তোমার মতলবটা কি ছিল তা কি বুঝিনা ভেবেছো! শোনো এই অহনার বুদ্ধির সাথে টক্কর দিতে এসো না বুঝলে!
আকাশঃ হোয়াট!
অহনাঃ ইহ্ নেকা! এখন যেন কিচ্ছু বোঝে না!
.
অহনা কথা গুলো হাত নেড়ে নেড়ে বলছিলো।
রাগে আকাশ বিছানা থেকে উঠে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো তারপর চেচিয়ে বললো নেও তোমার দরজা হা করে খুলে দিয়ে এসেছি! এবার রক্ষা করো আমায়! কোন পাপে যে আমি তোমায় বিয়ে করে এনেছি! তোমার সাথে সাথে আমার মাথাটাও আজকাল খারাপ হয়ে যাচ্ছে!
এই কথা শোনার সাথে সাথে অহনা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো।
অহনাঃ কি বললি তুই! কি বললি!
.
আকাশ বড় ধরনের একটা ঢাক্কা খালো। ওতো স্বামীকে তুই তোকারি করতে শুরু করেছে৷ আকাশ চোখ দুটো গরম করে অহনার দিকে তাকায়। তারপর এক পা এক পা করে অহনার দিকে এগোতে থাকে।
অহনা একা একাই বির বির করতে করতে এবার আকাশের চোখ দুটো দেখেই ভয় পেয়ে গলার আওয়াজ বিড়ালের মত আস্তে আস্তে নামিয়ে আনলো,তু তু তুমি ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন আকাশ!
আকাশ এগোতে এগোতে অহনার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। ভয় পেয়ে অহনা মনে মনে বলছে, একি মারবে নাকি!
আকাশ সামনের দিকে হাত বারিয়ে দিলো। ভয়ে অহনা দুটো বন্ধ করে ফেললো। আকাশ অহনার পিছনে থাকা ফুলদানিটা হাতে নিয়ে ফ্লোরে ছুড়ে দিলো। চমকে উঠে অহনা চোখ খুললো। আকাশ এভাবে আরও কয়েকটা কাঁচের জিনিস ভাঙলো।
.
শব্দ পেয়ে নিচে কাজের মহিলা দুটো বলাবলি করতে শুরু করেছে। রহিমা বললো, আমি ডাকবার গেছিলাম ভাইজান তখন দরজা লাগায় দিছে । ভিতরে কি হইছে দেখবার পারি নাই!
কুরমুরিঃ সেইডা বুঝলাম, ভিতরে মনে হয় নতুন ভাবীজানেই জিনিস ভাঙতাছে। কিন্তু তোর নাকে কি হইছে! ফুইলা গেছে মনে হয়। দেহি দেহি!
.
কুরমুরির কথা শুনে রহিমা কোনো কিছুর জবাব না দিয়েই ছুটে গেল ফ্রিজে থাকা বরফ নেওয়ার উদ্দেশ্য।
.
অহনা কান্নাকাটি করতে শুরু করেছে৷ কান্না করে করে বলছে, তার মানে তুমি আমায় বিয়ে করে ভুল করেছো বলছো! তুমি আমায় ভালোবাসো না আকাশ?
অহনা হাউমাউ করে কান্না করা শুরু করে দেয়। আকাশের চোখ দুটো এবার শান্ত হয়ে আসে৷ পুরুষ মানুষের দুর্বল জায়গা হচ্ছে মেয়েদের চোখের পানি। অহনা কান্না করতে করতে বিছানায় বসে পরে। আকাশ এগিয়ে গিয়ে অহনার হাত ধরলো।
আকাশঃআমি তা বলতে চাইনি জান! আমি তো তোমায় ভালোবাসি৷
.
অহনা কাঁদতে কাঁদতে এবার আকাশের বুকে মাথা রাখলো। আকাশ অহনার মাথায় হাত বুলিয়ে অহনাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে৷ অহনা আকাশকে জরিয়ে ধরলো। আকাশও আস্তে আস্তে অহনার গায়ে হাত দেয়। অহনা আকাশের বুক থেকে মাথা তুলে আকাশের দিকে মায়াবি দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। আকাশও অহনার মুখটা দেখে সব কিছু ভুলে গেল। সাথে সাথে আকাশ অহনার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে অহনাকে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো৷ কিন্তু দরজা যে হা করে খোলা সেদিকে দুজনের কারোই খেয়াল নেই।
.
তখনই কাজের মহিলা কুরমুরি ওদের ডাকতে এদিকেই আসছিলো। আর দরজা খোলা পেয়ে সে ভিতরে ঢুকতেই আকাশ আর অহনার চুম্বন দৃশ্যটি দেখে ফেললো।
কুরমুরিঃ ভা....
বলতে গিয়েই কুরমুরি থেমে গিয়ে সামনের দৃশ্যটা দেখেই বড় করে একটা হা করে চোখ বন্ধ করে সেখান থেকে দৌড়ে বেরিয়ে এলো। দৌড়ে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে আসাতেই সিড়ি দিয়ে নামতেই পা স্লিপ করে সিড়িতে ধপ করে পরে গিয়ে কোমড়ে ব্যথা পেল।
.
ওদিকে হাসপাতালে জটলা পাকিয়ে ফেলেছে কেবিনে ভর্তি থাকা রোগী রৌদ্র চৌধুরীর পরিবার এবং সাথে রেজা খানের পরিবার।
আফতাব চৌধুরী হো হো করে হাসতে হাসতে বললেন, তাহলে ওই কথাই রইলো বেয়াই সাহেব। আমার ছেলে বাড়ি ফিরলেই বিয়ের ডেট ফাইনাল করবো!
এসব শুনে ওখানে উপস্থিত হাসপাতালের কতৃপক্ষ এবং ম্যানেজার সাহেবের মাথা ঘুরছে৷ হাসপাতালেও মানুষ বিয়ে শাদীর প্রস্তাব নিয়ে আসে!!
পাশে থেকে একজন বলে উঠলেন, এই পরিবারের ক্ষেত্রে সবই সম্ভব।
আর এরা আসার পরই তো ম্যানেজার সাহেবের ঝড়ের মতো নার্সের সাথে বিবাহ হয়ে গেল। হাসপাতালেই সোজা কাজি ডেকে বিয়ে! বাপের জন্মে এমনটা দেখি নি।হা হা হা....
.
নীলার বাবা রেজা খান আর মা নীহারিকা তাদের দলবল নিয়ে আফতাব চৌধুরীর পরিবারের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে চলে গেলেন৷
আফতাব চৌধুরী আর মনিরা বেগম হাসতে হাসতে রৌদ্রের কেবিনে ঢোকে। রৌদ্রের অবস্থা আগের থেকে উন্নতি হয়েছে। তাই রৌদ্রকে কেবিন থেকে বাসাতেই শিফট করতে চাইলো। এখানে নাকি রৌদ্রের একদম ভালো লাগছে না৷
.
পার্কে দাঁড়িয়ে মেঘ শক্ত করে নীলার হাতটা ধরে নীলাকে ধমকাচ্ছে।
মেঘঃ তোর জন্যই এসব হয়েছে! তোকে এতো কাহিনী কে করতে বলেছে!
নীলাঃ তুই ই তো আমার সাথে ঝগড়া শুরু করলি!
মেঘঃ রবিনটাও পুলিশ দেখে সাথে সাথে পালিয়েছে। আমাকে একবার জানালাও না।
নীলাঃ পুলিশ ধরেছিলো তো কি হয়েছে। আমরা তো পালিয়েই এসেছি।
মেঘঃ তুই জানিস না, বাড়িতে ড্যাড এটা জানতে পারলে আমাকে আস্ত গিলে খাবে?
নীলাঃ কোনটা?
মেঘঃ ন্যাকা সাজচ্ছিস!
নীলাঃ কোনটা? তুই আমার প্রেমে পেরেছিস এটা?
মেঘঃ কি!! আমি তোর প্রেমে পরেছি! আমি? কেন তুই প্রেমে পরিস নি? আমাকে একা দোষ দিচ্ছিস কেন!
.
সন্ধ্যার দিকে হাসপাতাল থেকে রৌদ্রকে বাসায় নিয়ে আসা হয়৷ রৌদ্র তার ঘরে শুয়ে আছে। তুলির রৌদ্রের ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পায়চারি করছিলো আর একটু পর পর ভিতরে উঁকি দিচ্ছিলো। তুলি রৌদ্রে ঘরে সরাসরি ঢোকার সাহস পাচ্ছে না। এটা তো আর হাসপাতালের কেবিন নয় এটা বাড়ি।
হঠাৎ ভেতর থেকে রৌদ্রের গলার আওয়াজ পাওয়া যায়, মা...মা.....
রৌদ্র মনিরা বেগমকে ডাকছে। রৌদ্রের গলার আওয়াজ শোনার সাথে সাথেই তুলি হুড়মুড় করে রুমের ভিতরে ঢুকে পরলো।
তুলিঃ কিছু কি লাগবো আপনার? কি লাগবো কন!
রৌদ্র ঘার ঘুড়িয়ে তুলিকে দেখে চমকে উঠে।
রৌদ্রঃএকি, তুমি! তুমি তো নিচের রুমের থাকো। তাহলে এতো তাড়াতাড়ি সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে এলে কিভাবে!
.
রৌদ্রের কথা শুনে তুলি মাথা নিচু করে ঢোক গিললো।
রৌদ্র ভ্রু কুচকে বললো,তুমি.....
রৌদ্রের কথা শেষ না হতেই রাফি রুমের ভিতরে এসে উপস্থিত হয়।
রুমে ঢুকেই রাফি হাসতে হাসতে বলছে,কিরে এখন কেমন আছিস! এইদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম ভাবলাম তোকে একবার দেখে যাই৷
বলেই রাফি এবার রৌদ্রের দিক থেকে চোখ সরিয়ে পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা তুলির দিকে তাকালো। এতোক্ষন পর তুলিকে দেখে যেন তার চোখ দুটো জোড়ালো। ওর বুকে যে তুলির জন্য প্রেমের জোয়ার ভাটা বয়ে যাচ্ছে।
রৌদ্র শুয়ে থেকেই ওর দিকে তাকিয়ে থেকে ভ্রু কচুকে বিষয়টা খেয়াল করলো।
.
চলবে..
পর্বঃ২১+২২
.
রাফিকে তুলির দিকে চেয়ে থাকতে দেখে রৌদ্র কাশি দিয়ে উঠলো। কাশির শব্দ শুনে রাফির হুশ হয়। রাফি কিছু বলতে যাবে তখনই মনিরা বেগম রুমে এসে উপস্থিত হলেন।
মনিরা বেগমঃ একি তোমরা সবাই এখানে এসে ভিড় জমিয়েছো কেন। আমার ছেলেটাকে এখন একটু বিশ্রাম নিতে দাও! যা ধকল গেছে ওর ওপর। ও সুস্থ হলে গল্প করো কেমন! তোমরা বরং এখন নিচে এসো। আমি নাস্তা দিচ্ছি। এসো।
.
মনিরা বেগমের কথা শুনে রাফির মুখে মুক্তোর হাসি ছড়িয়ে পরছে।
রাফি হাসতে হাসতে বলছে, জি আন্টি! ওর এখন প্রচুর বিশ্রাম নেয়া উচিত!
মনিরা বেগমঃ হ্যাঁ বাবা, তুমি ঠিক বলেছো,
মনিরা বেগম তুলির দিকে তাকিয়ে ওকেও উদ্দেশ্য করে বললো, তোমরা দুজনেই বরং এখন নিচে এসে গল্প করো৷ ছেলেটা আমার বিশ্রাম নিক।
.
রাফির কপালে এভাবে সুযোগ চলে আসবে সে কল্পনাও করতে পারেনি। মনিরা বেগম রুম ত্যাগ করার পর তুলিও নিচে চলে গেল। আর রাফি রুম থেকে বের হওয়ার আগে হাসতে হাসতে রৌদ্রের তাকিয়ে এক চোখ টিপ দিলো।
রৌদ্রঃ কি ব্যাপার! তোকে এতো খুশি খুশি লাগছে যে!
রাফি তার ডান হাতটা বুকের পা পাশে ধরে বলে উঠলো, দিল তো পাগল হ্যায়!
বলেই দরজার পর্দা সরিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। কেন যেন রৌদ্রের কাছে ব্যাপারটা অসহ্য লাগলো।
.
তুলি ড্রইংরুমে না বসে রুমে চলে গেছে। রাফি ড্রইংরুমে বসে উঁকিঝুঁকি মারছিলো। তখনই অহনা সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসছিলো। রাফিকে উঁকি মারতে দেখেই অহনা নিচে নামতে নামতে বললো, এ্যাই ছেলে তুমি কাকে খুঁজছো! হুম?
অহনার কথায় রাফি কাশি দিয়ে ওঠে। অহনা নিচে নেমে এসেছে৷
রাফিঃ মানে আন্টিকে খুঁজছিলাম!
.
মুখে রাফি এটা বললেও মনে মনে রাফি তুলিকে খুঁজছিলো। তার তো তুলির সাথে গল্প করার কথা ছিলো। কিন্তু তুলি তো এখানে না বসে ভিতরে চলে গেছে।
অহনাঃ এ্যাই ছেলে আবার কি ভাবছো?
রাফিঃ আমি আন্টিকেই খুঁজছিলাম। আমার আবার বাড়ি যেতে হবে তো। তাই ভাবছিলাম আন্টিকে বলেই যাই।
তখনই আফতাব চৌধুরী ড্রইংরুমে চলে এলো৷
আফতাব চৌধুরীঃ যাবে মানে! এখনি কিসের যাওয়া। আমার ছেলের পিছনে তুমিও কম খাটুনি করো নি। তাই আজ আমাদের সবার সাথে রাতের খাবার খেয়ে তবেই যাবে!
রাফিঃ ইয়ে মানে আংকেল!
আফতাব চৌধুরী রাফির পিঠে চাপড় দিয়ে বললেন, কোনো মানে টানে নেই! বড্ড ভালো ছেলে বাবা তুমি! তুমিও তো আমার ছেলের মতোই। বাবার কথা ফেলতে নেই৷
রাফিঃ জি আংকেল।
.
মনে মনে রাফি বেশ খুশিই হলো। এই সুযোগে তুলির সাথে হয়তো আবারও দেখা হয়ে যাবে। মনিরা বেগম রৌদ্রের ঘরে কফির মগ হাতে নিয়ে ঢুকতেই খেয়াল করলেন রৌদ্র খুব মনোযোগ দিয়ে উপরে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে আছে।
মনিরা বেগমঃ কি বাবা! কি এতো চিন্তা করছিস!
মায়ের কথায় রৌদ্র এদিকে ঘাড় ঘোরালো৷
রৌদ্রঃ কিছুনা মা! রাফি চলে গেছে?
মনিরা বেগমঃ না। রাতের খাবার খেয়ে যাবে।
রৌদ্র মনে মনে ভাবছে, আগে তো বেটা আমার বাড়িতেই আসলেই নানান রকমের তাড়া দেখাতো। এখন হঠাৎ করে সেটা কিভাবে পাল্টে গেল! ওরে তো আমি ভালো করেই চিনি। ঘাবলা তো একটা নিশ্চয়ই আছে! ব্যাটার মতলবটা কি!
.
অহনা তুলির রুমটায় এসে দেখলো তুলি বিছানায় বসে বিছানার চাদরের দিকে তাকিয়ে থেকে কি যেন এক মনে চিন্তা করছে। অহনা যে রুমে এসেছে, সেটা ও বুঝতেই পারেনি৷
অহনাঃ কিরে কি এতো ভাবছিস!
অহনার কথায় তুলি চমকে উঠলো।
তুলিঃ আপা তুই? দুলাভাই কোথায়?
অহনা বিছানায় বসতে বসতে বললো,ওর আর কাজ কি, ডাক্তার সাহেব হাসপাতালে গেছেন রোগী দেখতে। কিন্তু তোর মুখটা এতো শুকনো লাগছে কেন?
তুলিঃ আপা?
অহনাঃকি?
তুলি বিছানা থেকে উঠে দাড়িয়ে একটু সামনে এগিয়ে গেল। অহনাও উঠে তুলির পিছনে পিছনে যেতে যেতে বললো, আরে কি হয়েছে?
তুলি অহনার দিকে মুখ করে ঘুরলো।
তুলিঃ আপা শোন?
অহনাঃ হুম। কি হয়েছে?
তুলিঃ আপা আমার কি জানি হইছে!
অহনাঃ কি হয়েছে?
তুলিঃ আপা! আপা আমি সারাক্ষণ তোর ছোট দেবররে নিয়া ভাবি! বড়ই শরমের কথা! আমি এক সেকেন্ডের লিগা তারে ভুলবার পারিনা। আমার লাইগাই তার এমনডা হইছে! আমার এহন সারাক্ষণ শুধু হের চিন্তা হয়! আমি কি করুম আপা?
অহনাঃ ধুর পাগলী!
তুলিঃ আপা আমি তার চিন্তায় ঘুমাইবার পারিনা। সারাক্ষণ তারে চোক্ষের সামনে দেখবার মন চায়!
অহনা এবার তার দুই ভ্রু নাচিয়ে বললো, প্রেমে ট্রেমে আবার পরিস তো! হুম?
তুলিঃ পিরিত? আমি কিছু জানিনা আপা! আমি তার চিন্তায় খাইবার পারিনা, ঘুমাইবার পারিনা, সব সময় তার সুন্দর মুখডা আমার চোক্ষের সামনে ভাসে!
অহনাঃ হুম বুঝলাম। সিরিয়াস কেস! তোর প্রেম রোগ হয়েছে।
তুলিঃ কি কস আপা! এহন আমার কি হইবো!
অহনাঃ কি আর করবি! প্রেমে ডুবে থাক। হাহাহা...
তখনই অহনার ফোনের রিংটন বাজতে শুরু করে। আকাশ ফোন দিয়েছে। অহনা কলটা রিসিভ করে কথা বলতে বলতে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
.
মেঘ নীলাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে এসেছে। নীলাদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে মেঘ নীলাকে বলছে, দয়া করে এবার বাড়ির ভিতরে যা! তোর বাবা মা নিশ্চিয়ই অনেক চিন্তা করছে। পরে এসব ব্যপার তো সেই আমার ঘারে এসেই পরে। তোর বাবা তো শুধু আমাকেই সন্দেহ করে!
তখনই উপরে দুতলায় বারান্দা থেকে দাঁড়িয়ে নীলার বাবা রেজা খান জোরে জোরে চেচিয়ে বলে উঠলেন,কে? জামাই বাবা? তা বাবা তুমি বাহিরে দাঁড়িয়ে কেন! ভিতরে এসো! আমার মেয়েকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে এসো বাবা!
.
নীলার বাবার কন্ঠস্বর শুনে ভয়ে মেঘের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। ফিসফিস করে নীলার কানে কানে বললো, সেই তো আমায় আবার বিপদে ফেললি! এতোক্ষনে তুই তোর বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেলেই পারতিস! ইয়া মাবুদ আজ আমায় রক্ষা করো। আবার না কোন বিপদে আমায় ফেলে!
রেজা খানঃ কি হলো তোমরা এখনো বাহিরে দাঁড়িয়ে কেন।
.
ভয়ে মেঘ ঘামতে ঘামতে নীলাকে নিয়ে নীলাদের বাড়িতে পা দিলো। ভিতরে যাওয়ার পরও রেজা খান মেঘকে জামাই বাবা জামাই বাবা বলেই ডেকে যাচ্ছে। ভয়ে মেঘ আরও ঘামতে শুরু করেছে। আজ নিশ্চিত জামাই আদর করেই এরা ছেড়ে দেবে।
রেজা খান চিল্লিয়ে বললেন,কই গো আমাদের জামাই বাবার খাতির যত্ন আর খাবার দাবাবের ব্যবস্থা করো।
এসব শুনে মেঘের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। নীলা তার রুমে চলে গেছে ফ্রেস হতে।
মেঘঃ এসব আপনি কি বলছেন আংকেল!
রেজা খান এবার চেচিয়ে উঠলেন, আরে, কিসের আংকেল! বাবা বলো বাবা!
.
ভয়ে মেঘ ঢোক গিলতেও পারছে না। গলায় কিছু যেন আটকে পরেছে। আজ নিশ্চিত বড় রকমের কোনো গনধোলাই দেয়ার জন্য উনি এরকম নাটক করে অভিনয় কার্য চালিয়ে যাচ্ছেন। উনাকে আজ পাকা ভিলেন মনে হতে লাগলো।
মেঘঃ পানি! আমি পানি খাব!
রেজা খান মেঘের পিঠে চাপড় দিয়ে মেঘকে শোফার দিকে ঠেলে দিলেন তারপর বললেন, আরে বসো বেটা! আরাম করে বসো!
কই গো, জামাই বাবার জন্য শরবত পাঠিয়ে দেও।
মেঘ ধপ করে শোফায় বসে পরলো। ভয়ে মেঘ প্রচুর ঘামতে শুরু করেছে। রেজা খান মেঘের এমন অবস্থা দেখে বলে উঠলো,বাবা কোনো সমস্যা?
মেঘের কথা যেন আটকে গেছে। সে শুধু মাথা নাড়িয়ে না বোধহয় উত্তর দিলো। ড্রইংরুমে সত্যি সত্যি শরবতসহ বিভিন্ন রাজকীয় সব খাবার এসে গেলো।
রেজা খানঃ নেও বাবা এবার খাওয়া শুরু করো করো! আমি নীলাকেও ডাকছি। নীলা? মামনি এখানে এসো!
.
ওদিকে ডাইনিং টেবিলে খেতে বসে রাফির চোখ শুধু তুলির দিকেই যাচ্ছিলো। তুলি একটু খেয়েই উঠে যায়। মুখটা ছিলো তার ভীষণ মলিন। সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে সোজা রৌদ্রের ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। যা হবার হবে এটা ভেবে তুলি সাহস নিয়ে ভিতরে ঢুকে পরলো। ভিতরে ঢুকে দেয়ালের দিকে চোখ যাওয়ার সাথেই লজ্জায় তুলি মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দাঁড়ালো৷ রৌদ্র শুয়ে থেকে ওয়াল টিভিতে ভিডিও গান দেখছিলো। সেদিনের মতো শুধু ব্রা পেন্টি পরা মেয়েদের নাচ দেখছিলো সে। রৌদ্র টিভিটা তাড়াতাড়ি অফ করার জন্য রিমোটটা চাল্লাচ্ছে কিন্তু ওটা কোনো কাজ করছেনা। লজ্জায় তুলি রুম থেকে বের হয়ে যেতেই দরজার কাছে এসে রাফির সাথে ঢাক্কা খেল। রাফি তখনই রুমের ভিতরে ঢুকছিলো। সেই সময়ই রৌদ্র টিভিটা অফ করতে সক্ষম হয়।
তুলিঃ আরে ধ্যাত! আপনে খালি আমার লাগে বারি খান ক্যান?
রাফি তার মুখ সামনের দিকে বারিয়ে তুলির মুখের কাছে গিয়ে বললো, কেন ভালোই তো লাগে!
শুয়ে থেকেই রৌদ্র বলে উঠলো, তুই! আর তুমি কেন এসেছিলে তুলি?
তুলিঃ আপনি ঠিকমত রাইতে খাইছেন কিনা হেইডাই জানবার আইছিলাম! আপনে না খাইলে যে আমিও খাইবার পারিনা হেইডা কি আপনে জানেন?
.
তুলির মুখে এই কথা শুনে রাফির মুখ আমাবস্যার অন্ধকারের মতো হয়ে গেলো। রাফির মুখের ভঙ্গি এভাবে বদলে যাওয়াটা রৌদ্রের চোখ এড়ালো না। কেন যেন এতে সে একটু সস্তি পেল আর তুলির দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে বললো,আমি খেয়েছি তুলি! তুমি খাওনি?
তুলি মাথা নিচু করে আছে৷
রৌদ্রঃ কি হলো! তুমি খাওনি?
রাফি তো নিজের চোখে দেখেছে তুলি অল্প একটু খেয়েছে। রাফির মনে এবার ভয় ধরতে লাগলো। রৌদ্রের প্রতি কি তুলির কোনো দুর্বলতা জন্মেছে। না তা হতে দেয়া যায় না। তার আগেই তুলিকে হাত করে নিতে হবে।
.
তখনই রৌদ্র আর রাফির ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন সুন্দরী ক্লাসমেটরা হুড়মুড় করে রুমের ভিতরে ঢুকে পরলো। যারা তাদের ক্রাশ বয়ের প্রেমে পরে ডুব সাঁতার কাটছে। ওরা রৌদ্রকে দেখতে এসেছে। কিন্তু এই মুহুর্তে রৌদ্রের মনোযোগ এখন তুলির দিকে। রৌদ্র রাফির গতিবিধি তাকিয়ে তাকিয়ে লক্ষ্য করছে৷
রাফিঃ তোরা কিছুক্ষণ গল্প কর! আমি একটু আসছি!
মেয়ে গুলোকে দেখে তুলি রুম থেকে বের হতেই রাফিও তুলির সাথে রুম থেকে বের হয়ে গেল৷ ব্যপারটা রৌদ্রের কাছে ভাল লাগলো না। রৌদ্রের খুব অসহ্য লাগছে। এরা কি বলছে কিছুই রৌদ্রের কানে যাচ্ছে না। এক পর্যয়ে বিরক্ত হয়ে এদের রুম থেকে চলে যেতে বললো। রৌদ্র বালিশের পাশে থাকা ফোনটা হাতে নিয়ে রাফিকে কল করলো,কই তুই?
রাফিঃআমি তুলিকে নিয়ে একটু ছাদে এসেছি! কেন?
এটা শুনে রৌদ্রের মেজাজ আরও খারাপ হয়ে গেল। এবার সে বির বির করে বলতে লাগলো, যা সন্দেহ করেছিলাম তাই, নিশ্চয়ই ব্যাটার তুলির দিকে নজরটা পরেছে!
.
চলবে....
পর্বঃ২২
.
তুলি আশেপাশে একবার তাকিয়ে তারপর রাফির দিকে তাকালো।
তুলিঃ আপনি কি আমারে উনার কোনো কথা বলার লাইগাই ছাদে লইয়া আইছেন?
রাফিঃ কার কথা?
তুলিঃ ওই যে উনি, আপনার বন্ধু!
এই কথা শুনে রাফি ছাদের দেয়ালে হাত দিয়ে জোরে একটা বারি দিলো আর মনে মনে কটমট করতে করতে বলছে, আমি কি ওকে ওর কথা বলতে এখানে এসেছি!
তুলিঃ আপনি এমন করতাছেন ক্যান! কি হইছে আপনের?
রাফি রেগে বললো, কি হয়েছে বোঝো না!
তুলিঃ আমি ক্যামনে বুঝবো! আচ্ছা উনার কাছে এতো মাইয়া মানুষ আসে ক্যান!
তুলির কথা শুনে রাফি আরও রেগে গেল, কেন আসে বোঝো না? তার মেয়ে মানুষ পছন্দ!
তুলিঃ তারে কইয়া দিবেন, আমার এগলা ভালা লাগে না। আমি কিন্তু সহ্য করবার পারুম না। যাই।
বলেই তুলি হন হন করে হাটতে হাটতে সিড়ি দিয়ে নেমে চলে গেল। রাগে রাফি দেয়ালে আরেকটা জোরে বারি দিলো।
.
রৌদ্র বিছানা থেকে ওঠার চেষ্টা করতেই মনিরা বেগম বলে উঠলেন, একি বাবা তুই উঠছিস কেন! তোর তো এখন ওঠা যাবে না।
রৌদ্র অস্থির হয়ে আছে।
রৌদ্রঃআমি ছাদে যাব!
মনিরা বেগমঃ এই অবস্থায় তুই সিড়ি উঠবি কেন?
রৌদ্রঃআমি যাব!
মনিরা বেগম কড়া গলায় বলেন,এখন কোথাও যাওয়া যাবে না চুপচাপ এখানে শুয়ে থাক।
.
তখনই রুমের ভিতরে তুলি এসে উপস্থিত হয়। তুলিকে দেখার সাথেই রৌদ্র মনিরা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো ,ঠিকাছে মা। আমি এখন ছাদে যাব না। তুমি এখন যাও।
মনিরা বেগমঃ হীরের টুকরো ছেলে আমার!
মনিরা বেগম রুম থেকে চলে যেতেই রৌদ্র রেগে তুলির দিকে তাকিয়ে বললো, রাফির সাথে তোমার এতো কিসের কথা,যে ওর সাথে তোমার ছাদে যেতে হবে?
তুলিও চট করে সাথে সাথে উত্তর দেয়,আপনেরও মাইয়া গুলান সাথে এতো কিয়ের কতা!
রৌদ্র চোখ তীক্ষ্ণ করে তুলির দিকে তাকালো।
.
তখনই রুমের ভিতর রাফি ঢুকে পরে। রুমের ভিতর ঢুকেই রাফি কাশি দিয়ে উঠলো। চমকে উঠে তুলি পিছিয়ে যায়। রাফি ভালো করেই জানে এখনকার ঔষধের মলমটা কি। তাই ক্লিকবাজি করতে রাফি ফোন করে ক্লাসের থাকা রৌদ্রের সুন্দরী বান্ধুবিদের এখানে আবারও আসতে বলে দিয়েছে৷ তুলি রুম থেকে চলে গেলো।
রাফি হাসতে হাসতে বলছে, তুলি মেয়েটা খুব ভালো বুঝলি! আমার সাথে অনেক গল্প করলো।
রাফির কথা শুনে রৌদ্রের গা জ্বলে যাচ্ছে।
রৌদ্রঃ হুম। খুব ভালো মেয়ে। সব সময় আমার রুমের সামনে এসে ঘুর ঘুর করে। আর উঁকি দিয়ে আমায় দেখে।
.
শোনার সাথে সাথে রাফির হাসি মুখটা বন্ধ হয়ে যায়। রাফি জোর করে মুখে হাসি আনার বৃথা চেষ্টা করে বললো, তোর ড্যাসিং চেহারা তো তাই দেখে আর কি কিন্তু তোর ওর দিকে নজর দেয়ার কি দরকার বল! সহজ সরল মেয়ে। ওকে ওর মতো থাকতে দে।
রৌদ্রঃ সে ভাবিকে বলেছে, বেচারিটা নাকি আমার প্রেমে পরেছে।
সাথে সাথে রাফি শকড খেল। চমকে উঠে বললো, কি? কি বললি তুই? মানে তুলি এটা বলেছে? তুলি এটা নিজের মুখে বলেছে?
রৌদ্র মাথা নাড়ালো। তারপর বললো, নিজের মুখে বলবে না তো কি অন্যের মুখে বলবে!
.
রাফির গলা শুকিয়ে গেছে আর মুখটা আমাবস্যার অন্ধকারের মতো করে আছে। সেই সময় রৌদ্রের ক্লাসের সুন্দরী মেয়ে গুলো রুমে হুড়মুড় করে ঢুকে পরলো।
রায়িসাঃ ও ডারলিং! তুমি এখন কেমন আছো?
রৌদ্র ওদের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললো, তোমরা!
পৃথাঃ তোমায় দেখতে এলাম জান!
রাফি বললো, তোরা গল্প কর! আমি একটু পানি খেয়ে আসি।
.
বাধ্য হয়ে মেঘ নীলাদের বাসায় ডিনার করলো। নীলার বাবা রেজা খান বললেন, আজ রাতে এখানেই থেকে যাও জামাই বাবা!
মেঘ মনে মনে বলছে, এইবারেই বোধহয় উত্তম মাধ্যম শুরু করে দেবে! কুরবানীর আগে পশুকে ভালো করে খাইয়ে দাইয়ে যেমন করে আদর যত্ন করা হয়। তেমনি আজ বলির পাঠার মতো আমাকেও এরা তাই করবে! মাবুদ রক্ষা করো!
মেঘ একটা ঢোক গিললো আর নীলার দিকে তাকাতেই নীলা তার এক চোখ টিপ দেয়।
মেঘ জোর করে হাসার চেষ্টা করে বললো, ইয়ে মানে না আংকেল!
নীলাঃ না মানে কি হ্যা! কোনো মানে টানে নেই। এখন চল তো ছাদে গিয়ে গল্প করি! চল।
নীলা মেঘের বাহু ধরে মেঘকে টানতে টানতে সিড়ি দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
.
সময় রাত সাড়ে এগারোটা।
তুলি রৌদ্রের ঘরে যাবার জন্য ড্রইং রুমের কাছে আসতেই শোফায় বাসা রাফিকে দেখতে পেলো।
রাফিও তুলিকে দেখে হাতে থাকা নিউজ পেপারটা নামিয়ে বলে উঠলো,কোথায় যাচ্ছিলে! রৌদ্রের ঘরে বুঝি? গিয়ে লাভ নেই! ও এখন বান্ধুবিদের সাথে বিজি!
রাফির কথা শুনে তুলি আহত হয়ে বললো,কি! হেরা আবার আইছে!
সাথে সাথে তুলি দৌড়ে সিড়ি দিয়ে উঠে রৌদ্রের ঘরের দিকে চলে গেল। দরজা থেকেই উঁকি দিয়ে দেখলো, ভিতরে রৌদ্রের বেডে ওর কাছে দুইজন মেয়ে এবং বাকি তিনজন মেয়ে চেয়ারে বসে আছে।
এই দৃশ্য দেখার সাথে সাথে তুলির মন খারাপ হয়ে গেল। যেন আকাশে মেঘ জমেছে। তুলি সিড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে নিচে নেমে এলো৷ নিচে আসার সাথেই রাফি খুব উৎসাহ নিয়ে জিগাসা করলো, কি দেখলে!
তুলি আস্তে করে উত্তর দেয়, হ দেখলাম!
রাফি বিজয়ের হাসি হাসতে হাসতে বলছে, বলেছিলাম না, ও এখন সুন্দরী মেয়েদের সাথে ব্যস্ত! ওকে কি আর এখন পাবে তুমি! ওসব ছাড়ো বুঝলে!
তুলির চোখ দুটো পানিতে টলমল করছে।
তুলিঃ হ ঠিকই কইছেন! উনার মতো সুন্দর পোলা সুন্দরী মাইয়ার দিকেই তো তাকাইবো! আমার মতো মাইয়ারে কি আর দেখবো!
.
কাঁদতে কাঁদতে তুলি আবারও তাড়াতাড়ি সিড়ি দিয়ে উঠে অহনার ঘরে চলে গেল।
তুলির চোখে পানি দেখে রাফির সামান্য খারাপ লাগলেও রাফি এটাই চাইছিলো। রৌদ্রের জন্য তুলির দুর্বলতা নষ্ট হয়ে যাক আর সেই মুহুর্তেই রাফি তুলিকে পাকাপাকি ভাবে প্রপোজ করবে।
.
অহনা রুমে বসে আকাশের সাথে ফোনে কথা বলছিলো।
আকাশঃ জান এখন রাখি। আমাকে এখন একবার পেশেন্টদের দেখে আসতে হবে।
অহনা আদুরে গলায় বললো, তুমি আমায় সময়ই দেও না।
আকাশঃজান আজ সারাদিন তোমার সাথেই তো ছিলাম তবুও বলছো আমি তোমায় সময় দেই না!
অহনা আবারও আদুরে গলায় বলছে, হয়েছে থাক। আচ্ছা যাও! লাভ উ!
আকাশঃ লাভ উ টু মাই জান। উম্মাহ!
.
আকাশ ফোন রাখতেই অহনা এদিকে ফিরে তাকাতেই তুলিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো।
অহনাঃএকি তুই কাঁদছিস কেন!
তুলি এগিয়ে এসে অহনাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদা শুরু করে দেয়।
অহনাঃ আরে কি হয়েছে বলবি তো!
তুলি কাঁদতে কাঁদতে বলছে, আপা তোর দেবর তো কত গুলান সুন্দরী মাইয়া গো লগে! আমার দিকে কি সে আর তাকাইবো! আপা আমার বুকটা পুইড়া যাইতাছে আপা!
.
চলবে....
পর্বঃ২৩ এবং শেষ
.
অহনাঃ তো তুই ওদের লেবুর শরবত খাওয়া!
অহনার কথা শুনে তুলির মুখের আকৃতি বদলে গেল। কান্না থামিয়ে দিয়ে ঠোঁট দুটো গোল করে অহনার দিকে চেয়ে আছে।
তুলিঃ ওরা আমার বুকটা জ্বালায় দিছে আর আমি ওদের শরবত খাইয়ে ঠান্ডা করমু?
অহনাঃ ওরাও তো জ্বলবে! মরিচের জালায় জ্বলবে! ওদের লেবু দিয়ে মরিচের শরবত খাওয়াবি!
তুলি চোখের পাতা কয়েকবার পিট পিট করে বললো, ঠিক বলছিস আপা? কিছু হইবো না তো!
অহনা হাসতে হাসতে বললো,আরে না,একদম ঠিক!যাহ্ যাহ্ রান্না ঘরে গিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বানিয়ে নিয়ে গিয়ে খাওয়া! যাহ্ তাড়াতাড়ি যাহ্!
.
তুলি রান্নাঘরে গিয়ে লেবু রসের সাথে কাচা মরিচের পেশা পেস্ট পানিতে মিশিয়ে শরবত বানালো। শরবত বানানোর সময় কাজের মহিলা কুরমুরি চোখ বড় বড় করে শরবত বানানো দেখছিলো। তুলি শরবত বানিয়ে নিয়ে ড্রইংরুমের কাছে আসতেই রাফির চোখে পরলো।
রাফিঃ এ্যাই এদিকে এসো!
তুলি রাফির সামনে এসে দাঁড়ালো৷ রাফি শোফা থেকে উঠে দাঁড়ায়। তুলির হাতে একটি ট্রে আর ট্রেতে পাঁচটি গ্লাস।
রাফিঃ কি এগুলো!
তুলিঃ লেবুর শরবত। উনার বান্ধুবিদের জন্য বানায় আনছি!
শুনে রাফির মুখ চকচক করে উঠলো, তুমি বানিয়েছো! তুমি!! দেও দেখি একটু খাই!
তুলিঃ আরে এইগুলান আপনের জন্য না! ম্যাডামদের জন্য!
রাফিঃ আরে রাখো তোমার ম্যাডাম! তোমার হাতে বানানো শরবত আমি তো একটু খাবোই!
.
রাফি লোভ সামলাতে না পেরে ট্রে থেকে একটা গ্লাস হাতে উঠিয়ে নিলো৷ আর ফোন বের করে শরবতের একটা ছবি তুলে সেটা ফেসবুকে মাইডে দিলো। সেখানে লিখলো প্রিয়তমার বানানো মিষ্টি শরবত! তারপর হাসতে হাসতে মুখটা গ্লাসের কাছে নিয়ে গিয়ে ঠোঁট গ্লাসে দিয়ে ফেললো। এক ঢোক খেতেই রাফি মুখ থেকে গ্লাস নামিয়ে ভর্য়াত দৃষ্টিতে তুলির দিকে তাকালো! তারপর সাথে সাথে বড় করে হা করে লাফাতে থাকে!
রাফি হা করে মুখের সামনে হাত দিয়ে বাতাস করছে আর জোরে জোরে লাফাচ্ছে! তখনই আফতাব চৌধুরী এদিকে আসছেন, আফতাব চৌধুরীকে এদিকে আসতে দেখে তুলি শরবতের ট্রে টা টেবিলের ওপর রেখেই দৌড় দিলো।
আফতাব চৌধুরী এদিকে এসে হাসতে হাসতে বলছেন, বুঝলে বাবা আমার ছেলে গুলো যদি তোমার মতো দায়িত্বেবান হতো!
বলতে বলতে উনি পিছন থেকে রাফির পিঠে চাপড় দিয়ে দিলেন, তুমি বড়ই ভালো ছেলে বাবা!
.
রাফি এদিকে ফিরলো।
আফতাব চৌধুরী রাফির দিকে তাকিয়ে লক্ষ্য করে বললেন,একি বাবা তুমি হা করে আছো কেন?
রাফি কিছু না বলে শুধু হা করে মুখের সামনে বাতাস করছে।
আফতাব চৌধুরী টেবিলের দিকে তাকিয়ে শরবতের ট্রে টা দেখে বললেন, এগুলো কি! শরবত?
রাফি মুখ হা করেই হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ালো।
আফতাব চৌধুরীঃ ভালোই হলো গলাটা শুকিয়ে এসেছিলো।
আফতাব চৌধুরী ট্রে থেকে একটা গ্লাস হাতে উঠিয়ে নিতেই রাফি চোখ বড় বড় করে আফতাব চৌধুরীর দিকে তাকালো!
আফতাব চৌধুরী এদিকে ফিরলেন,তুমিও একটা নেও বাবা!
রাফি মুখ হা করেই না বোধহয় মাথা নাড়ালো। আফতাব চৌধুরী গ্লাসের কাছে মুখ আনতেই রাফি বলে উঠলো, আমি এখন আসি আংকেল!
বলেই রাফি অতি দ্রুত বাড়ি থেকে বের হয়ে দৌড় দিলো৷
আফতাব চৌধুরীঃ আহা শরবত!
আফতাব চৌধুরী শরবতের এক ঢোক খেতেই ঝালে মুখ থেকে শরবতের পানি বের করে ফেলে দিলেন আর কাশতে শুরু করলেন। তারপর শরবতের গ্লাস ট্রেতে রেখে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলেন কাজের মহিলাকে শায়েস্তা করতে। এটা কি শরবত বানিয়েছে সে! কিন্তু অতিরিক্ত ঝালের কারণে রান্নাঘর পর্যন্ত না যেতেই ডাইনিং রুমে এসে আটকে গেলেন । ঝালে তার মুখ পুড়ে যাচ্ছে। উনি গ্লাসের পর গ্লাস পানি খেয়ে যাচ্ছেন আর ফ্রিজ থেকে বরফ বের করে মুখে পুরে দিলেন৷
.
তুলি ড্রইংরুমে উঁকি দিয়ে ঘটনা কি ঘটছে তা দেখার চেষ্টা করছে। রৌদ্রের ঘর থেকে ওর সুন্দরী বান্ধুবিরা মুখ কালো অন্ধকারের মত করে বের হয়ে সিড়ি দিয়ে নামছে। ওরা ড্রইংরুমে আসতেই মনিরা বেগম ঘর থেকে বের হলেন।
মনিরা বেগম ওদের দেখে বলে উঠলেন, একি তোমরা চলে যাচ্ছো নাকি! কিছু না খেয়েই যাবে!
রৌদ্র ওদের আজ চরম অপমান করেছে তাই একেক জনের মুখের অবস্থা খুবই খারাপ।
রাইসাঃ না না আন্টি কিছু খাব না!
.
তখনই কাজের মেয়ে কুরমুরি শরবতের ট্রে টা টেবিল থেকে সরাতে আসে।
মনিরা বেগমঃ এগুলো কি!
কুরমুরি মাথা উপরের দিকে না তুলেই নিচের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে উত্তর দেয়, শরবত আম্মাজান!
মনিরা বেগম সাথে সাথে বলে উঠলেন, কিছু না হয় না খেলে,শরবতটা অন্তত তোমরা মুখে দিয়ে যাও!
এই কথা শোনার সাথে সাথে কুরমুরি শরবতের ট্রে টা টেবিলের ওপর রেখেই ওখান থেকে দৌড় দিলো।
মনিরা বেগমঃ নেও তোমরা শরবত নেও!
মেয়েগুলো বিরক্ত হয়ে মনিরা বেগমের জোরাজুরিতে শরবতের গ্লাস হাতে নিয়ে মুখে দিতেই ঝালে চোখ মুখ জ্বলে লাল হয়ে যায়! তারপর এক আরেকজনকে টানতে টানতে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল।
মনিরা বেগম একা একাই বলে উঠেন,কি অসভ্য মেয়েগুলো। যাওয়ার সময় ভালো ভাবে বলেও গেল না!
.
মেঘ নীলার সাথে নীলাদের বাসার ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। নীলা কি বলছে মেঘের কানে কিছুই যাচ্ছে না। মেঘের মাথার মধ্য বিভিন্ন চিন্তা জটলা পেকেছে। হঠাৎ ফোনের রিংটন বেজে উঠতে দেখলো তার পিতা আফতাব চৌধুরী ফোন করেছেন, ভয়ে ভয়ে ফোনটা রিসিভ করতেই আফতাব চৌধুরী বলে উঠলেন, কোথায় তুই বাবা! আজ বাড়ি আসবিনা!
ভয়ে মেঘ একটা ঢোক গিললো।
মেঘঃড্যাড!
আফতাব চৌধুরীঃ মেরি বেটা, আগে বাড়ি আয়! বিয়ের ডেট ফিক্সড হোক তারপর নীলা বৌমার সাথে চুটিয়ে প্রেম করিস!
শুনেই সাথে সাথে মেঘের চোখ গুলো রসগোল্লার মতো হয়ে গেল, মানে!!
আফতাব চৌধুরীঃ নীলার বাবা মানে বেয়াইব সাহেব একটু আগে আমায় ফোন করে জানিয়েছেন তুমি ওখানে!
মেঘঃ মানে? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা!
আফতাব চৌধুরী সব ঘটনার বিস্তারিত খুলে বুলতেই মেঘ কথার মাঝেই ফোন না কেটে দিয়েই খুশিতে নীলাকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিতে শুরু করে।
আর ওপর পাশে আফতাব চৌধুরী ছেলের কান্ডতে হাসতে হাসতে ফোন কেটে দিলেন।
.
এদিকে সারাদিনের খাটা খাটুনিতে নীলার বাবা রেজা খান খুব তাড়াতাড়িই আজ ঘুমিয়ে পরেছিলেন। কিন্তু নীলা আর মেঘ তাকে ঘুম থেকে তুলেই তাকে সালাম করে তার দোয়া নিলো।
.
২ মাস পর
আজ বাড়িতে মিষ্টির বন্যা বয়ে যাচ্ছে। অহনা প্রেগন্যান্ট। আফতাব চৌধুরীর বড় ছেলে আকাশ বাবা হতে যাচ্ছে। সেই খবর পেয়ে বাড়ির সবাই আজ মিষ্টি মুখ করছে। কিন্তু তুলির মনটা খুব খারাপ। বাড়ি থেকে খবর এসেছে তাকে এবার বাড়ি ফিরতেই হবে। কিন্তু তুলি তো এতোদিনে রৌদ্রকে ভালোবেসে ফেলেছে ওকে ছেড়ে কিভাবে যাবে সে!
.
আজ চাঁদনী রাত। চাঁদটা আজ পরিপূর্ণ ভাবে গোল হয়ে রুপালী আলো ছড়াচ্ছে। মুখ শুকনো করে ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে তুলি। হঠাৎ কাধের ওপর কারো হাত পরতেই চমকে উঠে তুলি পিছনের দিকে তাকিয়ে রৌদ্রকে দেখতে পেল। রৌদ্র এখন পুরোপুরি সুস্থ। রৌদ্রকে দেখে তুলি আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারলো না!
রৌদ্রঃবাড়িতে আজ সবাই কত মজা করছে আর তুমি এখানে দাঁড়িয়ে কাঁদছো?
তুলিঃবাড়ি থেকে খবর আইছে,আমার যাইতে হইবো! আমি আপনারে ছাইড়া কোথাও যাইতে চাইনা!
বলেই তুলি কাঁদতে শুরু করলো,
রৌদ্রঃ তোমাকে যেতে বলেছে কে! আমিও তোমাকে কোথাও যেতে দেব না। ভাবি মাকে দিয়ে তোমার বাড়িতে ফোন করিয়েছিলো! আর ভাবি বলেছে তোমাকে এখন থেকে এখানেই রাখবে আর এখানেই একটা কলেজে ভর্তি করিয়ে দেবে।
তুলি জোরে চিল্লিয়ে বললো, সত্যি!!
রৌদ্রঃ হুম! আর মন খারাপ করে থেকো না প্লিজ!
রৌদ্র সাথে সাথে তুলির সামনে হাটু গেড়ে বসে তুলিকে গোলাপ দিয়ে প্রপোজ করে তুলির হাতে একটি আংটি পরিয়ে দেয়। লজ্জায় তুলি রৌদ্রের দিকে তাকাতেই পারছিলো না। কিন্তু খুশিতেই হঠাৎ করে তুলি রৌদ্রকে এবার জরিয়েই ধরলো। রৌদ্রও তুলিকে জরিয়ে নেয়। ছাদে থাকা লেবু গাছের গন্ধ নাকে আসছে। পরিবেশটা খুব ভালো লাগছে।
.
এদিকে তুলিকে আজ প্রপোজ করার জন্য রাফি আবার এই বাড়িতে এসেছে। মনিরা বেগমের কথা শুনে রাফি সোজা ছাদে চলে এলো আর ছাদে এসেই রৌদ্র আর তুলির একে অপরের জড়িয়ে ধরে থাকা অবস্থাটা দেখে ফেললো। রাফির মাথায় সাথে সাথে বাজ পরতে শুরু করে। সামনে আর তাকিয়ে থাকতে পারলো না রাফি। রৌদ্র তুলিকে জরিয়ে ধরে লিপ কিস করতে শুরু করেছে৷ রাফি আস্তে আস্তে পা পেছাতে থাকে। রৌদ্র আর তুলির চুম্বন দৃশ্য দেখে রাফি আস্তে আস্তে সিড়ি দিয়ে প্রেমে ছ্যাকা খাওয়া পাবলিকের মতো করে সিড়ির রেলিং ধরে ধরে নিচে নেমে এলো। তারপর চুপচাপ বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেল। কারণ সে ভালো করেই জানে তুলি এখন অন্যের। তাকে আর কোনদিন পাওয়া সম্ভব নয়। তুলি এখন তার ভালোবাসার মানুষের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।
.
বাবা হওয়ার আনন্দে আকাশ আজকে হাসপাতালের সবাইকে মিষ্টি খাইয়েছে তারপর অহনার জন্য এক গাদা গিফট নিয়ে বাড়ি ফিরলো। রুমে ঢুকেই আকাশ অহনাকে কোলে তুলে নিয়ে ঘুরতে শুরু করে।
অহনাঃ আরে আরে পরে যাবো তো! এবার ছাড়ো আকাশ! আমি পরে গেল কিন্তু আমার সাথে আমাদের বাবুরও ব্যথা লাগবে!
আকাশ অহনাকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে অহনার গাল টেনে বললো, ওরে আমার সেয়ানা পাগলী রে! এই পাগলীটাকেই আমি খুব ভালোবাসি। আর সারাজীবন ভালোবাসতে চাই।
অহনা হেসে আকাশকে জরিয়ে ধরলো।
.
মনিরা বেগম আর আফতাব চৌধুরী দুইজনই বারান্দায় বসে আছেন। বারান্দা থেকেই হঠাৎ নিচের দিকে তাকিয়ে মনিরা বেগম খেয়াল করলেন,মেঘ বাইক নিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে!
মনিরা বেগমঃ আরে মেঘ না, কোথায় যাচ্ছে ও!
আফতাব চৌধুরী ওদিকে তাকিয়ে বারান্দা থেকেই মেঘকে জোরে ডেকে এবার জিগাসা করলেন, মেঘ কোথায় যাচ্ছিস?
মেঘ বাইকে বসেই পিছনে ফিরে বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে হেসে জোরে চিল্লিয়ে উত্তর দেয়,তোমাদের বৌমাকে আনতে!
বলেই মেঘ বাইক স্টার্ট দিয়ে দেয়৷
বাড়িতে এতো উৎসবের মধ্য থেকে মেঘের নীলার কথা মনে হচ্ছিলো। তাই নীলাকে প্রেমনগরে আনতে মেঘ বাইক নিয়ে বেড়িয়ে পরেছে।
.
আফতাব চৌধুরী আর মনিরা বেগম দুইজনেই হেসে উঠলেন। চেয়ারে বসতে বসতে মনিরা বেগম বলে উঠলেন, ছেলে বৌমাদের প্রেম সুখে থাকতে দেখে বড়ই আনন্দ হচ্ছে!
আফতাব চৌধুরীও হেসে বললো,আর কিছু দিন পর তো বাড়িটা নাতি নাতনি দিয়ে ভরে যাবে! হাহাহা....
মনিরা বেগমঃমনে হয় যেন এইতো সেইদিন আমি তোমার হাত ধরে এই প্রেমনগরে পালিয়ে এলাম! কিভাবে যে এতো বছর পেরিয়ে গেল! বুঝতেই পারলাম না। চোখের সামনে এখনো ওই দিন গুলোই ভাসে।
আফতাব চৌধুরী চেয়ারটা এগিয়ে নিয়ে এসে মনিরা বেগমের পাশে বসে মনিরা বেগমের হাত ধরলেন তারপর বললেন,পেরোক না বছর, আমার কাছে তো তুমি সেই ছোট্ট কিশোরী মনিরাই আছো। প্রতিদিন যেন নতুন করে তোমার প্রেমে পরি!
মনিরা বেগম হাসতে হাসতে বললো, কি যে বলো না তুমি!এখন বয়স হয়েছে!
আফতাব চৌধুরীঃ প্রেম ভালোবাসার আবার বয়স কি! শুধু সময় আর বয়সটাই বেড়েছে। কিন্তু তোমার প্রতি প্রেমটা তো আমার আগেই মতোই রয়ে গেছে।
মনিরা বেগমও আফতাব চৌধুরীর হাত ধরে তার কাধে মাথা রাখলেন। তারপর দুইজনই একসাথে তাকিয়ে রইলেন আকাশের ওই সুন্দর লোভনীয় রুপালী আলো ছড়ানো চাঁদটার দিকে। তারা তাদের চোখের সামনে যেন দেখতে পাচ্ছেন, যুবক আফতাব আর কিশোরী মনিরা সেই চির চেনা পুরোনো গলি দিয়ে হাটছে,যেখানেই তাদের হয়েছিলো প্রথম দেখা অতঃপর প্রেম।
.
<<<সমাপ্ত>>>