নীল টিপ
Write : Sabbir Ahmed
_________________________
-থাকতে যদি না পাই তোমায়,(হাআকক থুও)
চাই না মরিলে।(থুও থুও)
আমায় কাঁদালে।(শুভ সকাল সকাল গান করছিলো, আর ব্রাশ করছিলো)
,,
তার বেশি ভালো লাগলে, কি থেকে কি করে নিজেই টের পায় না।
ছাদে এসে গান ধরছে আর ব্রাশ করছে। ব্রাশ করে থুথু কোথায় ফেলছে সেদিকে তার খেয়াল নেই
,,,
তার বেশি ভালো লাগার কারন, গতকাল রাতে একটা ছাগল চুরি করে। কবজি ডুবিয়ে খেয়েছে.।
,,
ছাদে বসে সুন্দর সকাল টা উপভোগ করছিলো...আর হঠাৎই..
এক লাত্থি...
শুভ চেয়ার থেকে পড়ে যায়...পেছন ফিরে দেখে তার জীবন এর অভিশাপ আর একমাত্র প্রতিযোগী ইরা...
-কিরে কথা নাই বার্তা নাই, সকাল সকাল আইসা লাত্থি মারলি..(শুভ)
-এগুলো কি??(ইরা)
-এগুলো তো শাবান এর ফেনা
ইরা শুভর দিকে তেড়ে এসে..
-তুই উপর ব্রাশ করে থুথু ফালাইছিস, সেটা আমার গায়ে লাগছে। আমি বারান্দায় ফুল গাছ গুলোতে পানি দিচ্ছিলাম, ফুল গাছেও তুই ফালাইছিস(ইরা)
-তো কি হইছে?? যা ধুয়ে নে
-এটা কি বাথরুম??
-হ্যা আমার কাছে এটাই বাথরুম
-এর প্রতিশোধ আমি নেবো
-যা যা যা যা যা যা আমাকে যে লাত্থি মারছিস তার প্রতিশোধ ও আমি নিবো..
(ইরা রাগ দেখিয়ে চলে গেলো)
-ধুররর বাল সকাল সকাল মুড টাই নষ্ট করে দিলো। (শুভ গেলো বাথরুম এ ফ্রেশ হতে)
,,
ইরা আবার দুপুর বেলা আসে শুভর মায়ের কাছে..
-খালামনি খালামনি (ইরা)
(ইরা শুভর মাকে খালামনি বলে। শুভও ইরার মা কে খালামনি বলেই ডাকে। ইরা আর শুভর বাবা ছিলো বেষ্ট ফ্রেন্ড। সেই সুবাদে বাড়ি গাড়ি বিজনেস সব এক জায়গায়, থাকেও একজায়গায়)
-হ্যা, বল কেমন আছিস?? (শুভর মা)
-তুমিও না কেমন যেন, দিনে যে কয়েকবার দেখা হয়, বলো যে কেমন আছিস?? আচ্ছা শোনো আমি ভালো নেই
-কেনো??
-তোমার ছেলে কি আমাকে ভালো থাকতে দেয়??
-কেন কি করছে??
-সকালে আমাকে মাইর দিছে
-সত্যি??
-তো আমি কি তোমাকে মিথ্যা বলছি
-আচ্ছা ও বাসায় আসুক আমি ওকে বকা দিবো নি
-বকা দিলে হবে না
-তাহলে??
-মাইর দিবা
-অত বড় একটা ছেলে কে মাইর দেওয়া যাবে??
-হুমম যাবে, প্লিজ প্লিজ তুমি মাইর দিবা
-আচ্ছা দিবো
-ওকে তুমি ওকে এখন ফোন দিয়ে বাসায় আসতে বলো
-এখন??
-হুমম এখনি (ইরা ছোট থেকেই এইরকম, একটু বেশি নেকামো আর ছেলেমানুষি)
,,
,,
শুভকে ফোন দেওয়ায়, কিছুসময় এর মধ্যে শুভ বাসায় ফিরলো..।
শুভ এসে দেখে ইরা বসে খাচ্ছে..
-এই জন্য তো বলি, আমার পেটে খরা চলে কেনো?? এসব রাক্ষসী পুসলে এমনি হবে(শুভ ইরা কে শুনিয়ে বলল)
-...(ইরা খাওয়া বন্ধ করলো)
-তুই এসেই শুরু করলি, আয় খেতে বস(শুভর মা)
-কি আর খাবো?? সব তো খেয়ে শেষ করে ফেলছে(শুভ)
-ইরা মা তুমি খাও
-না ওর কান ধরো
-....(শুভ চোখ বড় বড় করলো)
-পড়ে খাওয়া টা শেষ হোক
-না এখনি ধরবা তুমি
-আমার কান ধরবে মানে..
শুভর মা শুভর কান ধরলো আর বলল...
-আমি ওলে কখন মারলাম?? (শুভ)
-মেরেছিস, আর কখনো মারবি না, বলে দিলাম শুভর মা)
-খাওয়া টা শেষ করে নেই, তোর পাকনামি আমি ছুটাবো (শুভ ইরার দিকে তাকিয়ে বলল)
-খালামনি দেখো ও যেন কি বলে(ইরা)
-কিরে কি বলিস??
-কই কিছু না তো...
,,
,,
খাওয়া শেষে..
-খালামনি আমার বাইরে একটা কাজ আছে, আমি ওকে সাথে করে নিয়ে যাই??(ইরা)
-না মা আমার অনেক বড় একটা কাজ আছে, ওকে একা যেতে বলো (শুভ)
-আচ্ছা তাহলে তোর বড় কাজেই আমি যাবো
-....(শুভ চুপ)
-এই শুভ যা ওর সাথে
-হুমম এখন ঠিক আছে..(ইরা(
,,
,,
শুভ কি আর করবে?? বাধ্য হয়ে ইরার সাথে বের হলো..রাস্তায় হাটছে দুজন.
-কই যাবি??(শুভ)
-কোথাও না, এভাবে একটু হাটবো(ইরা)
-....(শুভ কিছু বলল না। শুভ ইরার সাথে বাইরে আসলে কখনো উল্টা পাল্টা আচরণ করে না।)
-রাগ করছিস??
-না
-কিছু খাবি??
-না
-ওকে
,,
,,
হঠাৎই রাস্তার কয়েকটা ছেলে বলল
-মালডা দেখছিস??
শুভ ইরাকে বলে..
-তুই একটু দাড়া আমি আসছি (শুভ)
-কই যাস??(ইরা)
-আসছি এখানেই থাক..
,,
,,
শুভ রাস্তার ওপার যায়। প্রথমে ছেলেগুলোর কাছে না গিয়ে পাশের একটা দোকানে যায়। দোকান থেকে একটা রড নিয়ে ছেলে গুলোর কাছে যায়...
-আচ্ছা ভাই, ঐ যে মেয়েটা দাড়িয়ে আছে, তাকে মাল বলল কে??(শুভ যানে কে বলছে তবুও প্রশ্ন করলো)
-আমি বলছি কি হইছে রে??
-...(শুরু হলো মাইর, মাথা বাদ দিয়ে সব জায়গায় মাইর দিলো। মাইর দেখে বাকি গুলে দৌড়)
,,
ইরা এরকম মাইর দেখে ভয় পেয়ে যায়। রাস্তার এপাড়ে আশার সাহস পায় না...
-ভাই ভাই ভাই মাফ কইরা দেন ভাই
-ওইটা কে জানিস তুই??(কান্না করে)
-না ভাই, জানি না
-আমার বউ, তোর মা হয়, আর আমি তোর বাপ, আমাকে আব্বা বল
-ভাই ভাই মাফ করে দেন
-আব্বা বল আব্বা
-আব্বা মাফ করে দেন
-হুহ এই নে, এখানে পাঁচ হাজার টাকা আছে, চিকিৎসা করে নিস, আর এই এলাকা ছাড়বি, তোকে দ্বিতীয় বার দেখলে সমস্যা আছে..
-...(লোকটি চলে গেলো)
,,
,,
যে দোকান থেকে রড নিয়ে এসেছিলো, সে দোকানী এসে বলল
-তুমি কষ্ট করে মারতে গেলে কেনো?? আমাকে বললেই পারতে
-আংকেল বউ টা তো আমার, প্রতিবাদ টা আমাকে করতে হবে...(শুভ)
,,
,,
শুভ রাস্তার এপার চলে আসে..
-বাসায় যাবো(ইরা)
-হাটবি না (শুভ)
-না আমি বাসায় যাবো
-বিকেল টা তো ভালই চল একটু হাটি
-না আমি বাসায় যাবো (ইরা ভয় পেয়ে)
-আমি জানি তুই ভয় পাচ্ছিস, কোনো ভয় নেই আমি আছি, চল হাটবো (শুভ ইরার হাত ধরে হাটতে লাগলো)
,,
,,
ইরা এত ভয় পাওয়ার কারন হলো। শুভর এরূপ কখনো দেখে নি ইরা..
একসময় ইরা প্রশ্ন করলো
-লোক টাকে মারলি কেনো??(ইরা)
-তোকে কি বলছে শুনেছিস??
-হুমম
-সেই জন্য মারছি
-তুই ঐ লোকটাকে বললি যে আমি তোর বউ
-...(শুভ একটু ভয় পেয়ে যায়)
-ইয়ে মানে এই এমনি বলছি
-তাই??
-হ্যা..
,,
,,
সেদিন সন্ধ্যায় দুজন বাসায় ফেরে..
ইরা বাসায় যাওয়ার আগে, শুভ ইরাকে ডাকলো..
-এই শোন, কাল ভার্সিটি তে যাওয়ার সময় আমাকে একটু ডেকে দিস, আমার ঘুম ভাঙে না (শুভ)
-আচ্ছা ঠিক আছে
-ওকে যা
,,
,,
রাতে ঘটলো একটা কান্ড..ইরা শুভ কে ফোন করলো..
-কিরে ফোন দিয়েছিস কি জন্য??(শুভ)
-আমার খুব জ্বর হইছে(ইরা)
-কি বলিস! দাড়া আসতেছি আমি
,,
,,
শুভ এক দৌড়ে ইরাদের ফ্লাট এ..
-কি বাবা এত রাতে তুমি (ইরার বাবা)
-ওর জ্বর হইছে(শুভ)
-কার জ্বর হইছে??
-ইরার
-কই আমরা তো জানি না
-আমাকে ফোন করে তো বলল
-চলো তো দেখি
,,
,,
ইরার বাবা আর শুভ ইরার রুমে যায়...
-কিরে মা তোর জ্বর হইছে??(বাবা)
-হুমমম (ইরা)
-সত্যি তো (কপালে হাত দিয়ে)
-...(শুভ দাড়িয়ে কিছু বলছে না)
-দারা আমি ঔষধ নিয়ে আসছি (ইরার বাবা ঔষধ আনতে গেলো)
ইরার বাবা যাওয়ার পর ইরা লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠলো..আর শুভকে জড়িয়ে ধরলো..
-এটা কি করছিস??(শুভ)
-ভালবাসি (ইরা)
-তোর না জ্বর
-হয়নি, আমি কিছুক্ষণ রুমের ভেতর দৌড়া দৌড়ি করে গরম হয়েছি
-হায় আল্লাহ..
-বল ভালবাসি টু
-এটা বলতে হবে কেনো?? ছোট বেলা থেকেই তো ভালবাসি
-উম্মাহহহহহহ(ইরা শুভর গাল ধরে ঠোঁটে একটা কিস করে)
-আ আ আংকেল চলে আসবে
-আগে বল ভালবাসি
-হুমম ভালবাসি
,,
,,
সেদিন রাতে নাটক টা শেষ হওয়ার পর। পরদিন সকাল বেলা..
ইরা নীল শাড়ি, নীল চুড়ি, আর শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে সব কিছু নীল কালারের জিনিস পড়েছে...
,,
,,
সেজেগুজে ম্যাডাম শুভর রুমে হাজির...শুভ তখন রেডি হচ্ছিলো
-স্যার দেখেন তো আমাকে কেমন লাগছে..(ইরা)
-...(শুভ লাফ দিয়ে উঠে) এ শোন ভেতরে আসার আগে নক দিয়ে আসবি
-পারবো না, আগে বল কেমন লাগছে?
এবার শুভ ভালো ভাবে খেয়াল করে দেখে তো হা হয়ে গেলো...
,,
,,
কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর শুভ হাসতে লাগল..
-হা হা হা হা হা হা হা
-হাসছিস কেন কুত্তা (ইরা)
-একটুও ভালো লাগছে না
-কিহহ?? তোর জন্য ২ ঘন্টা বসে বসে সাজছি
-তাই??
-হুমমম
-তোর ২ ঘন্টার সাজাই বৃথা, দেখ আমি দুই মিনিট এ কি করি...
,,
,,
শুভ একটা নীল কাগজ এর ছোট্ট একটা টুকরো আনলো,,,এনে টিপ এর মতো ছোট করলো..
-পাগলি সব ঠিক আছে, খুব সুন্দরি লাগছে, তবে টিপ টা দিতে ভুলে গেছো, আমার কাছে তো আর নীল টিপ নেই, আপাদত এই নীল কাগজ দিয়ে টিপ দিয়ে দিলাম...
,,
,,
ইরা মিটি মিটি হাসাছে..
-আরে টিপ কপালে থাকছে না কেনে??(কাগজা টা পড়ে যাচ্ছে)
-....(ইরা শুভর পাগলামি দেখে আরও হাসছে)
-আরে টিপ থাকছে না কেনো?? ও হ্যা বুদ্ধি পেয়েছি..
,,
শুভ জিভ থেকে একটু পানি নিয়ে কাগজ টা লাগিয়ে দেয়।
-পাগল একটা (ইরা শুভকে জড়িয়ে ধর)
-....(শুভও খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে)
-আচ্ছা শোনো(ইরা)
-হুমম বলো(শুভ)
-আমাকে অনেক গুলো নীল টিপ এনে দিবা
-এত নীল নীল করলে নীল বাচ্চা হয়ে হতে পারে
-হলে হবে, আমার নীল বাচ্চা চাই, নাহলে তোমার খবর আছে
-কিহহহহহ????
-জ্বিইইই..
..
..
..
..
..
.................END..................
..