Showing posts with label তুমি আছো হৃদয়ে. Show all posts
Showing posts with label তুমি আছো হৃদয়ে. Show all posts

21.12.23

তুমি আছো হৃদয়ে

 # তুমি আছো হৃদয়ে

# পর্ব-১
লেখাঃ moyej uddin
যেদিন আমার গার্লফ্রেন্ড মেডিক্যালে চান্স পেয়েছিলো সেদিনই আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমাদের তিন বছরের সম্পর্কটা হয়তো শেষ হতে চলেছে। তাই হয়তো নুসরাতের মেডিক্যালে চান্স পাওয়ার খবর শুনে কেনো জানি আমি খুশি হতে পারিনি। কারণ আমি তখন গ্রামের একটা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব সাধারণ একটা ডিপার্টমেন্টে অধ্যয়ন রত। আমার ভয় হতে লাগলো নুসরাত হয়তো আমাকে ভুলে যাবে। আমার থেকে হাজার হাজার ভালো ছেলে তাঁর জন্য প্রস্তুত থাকবে,তাঁর সাথে প্রেম করার জন্য,তাকে বিয়ে করার জন্য।
তবে নুসরাত তেমন কিছু করলো না। চান্স পাওয়ার পর সে খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলো,
"আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে আমিনুল। অনেক ছোট থেকেই আমার ইচ্ছে ছিলো আমি ডাক্তার হবো। বাবা মাও আমাকে সাপোর্ট করে এসেছেন সবসময়। এই দিনটির জন্য আমি অনেক কষ্ট করেছি। আজ আমার থেকে হয়তো এই পৃথিবীতে সুখী কেউ নেই।"
আমি তখন কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। নুসরাত হঠাৎ করেই আমার কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে একটু দূরে চলে যায়। আমি বুঝলাম আবেগে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলো। সেদিনই নুসরাতের সাথে আমার শেষ দেখা হবে আমি কোনোদিন কল্পনাও করিনি। নুসরাত আমার কাছ থেকে সেদিন চলে যাওয়ার পর তাঁর সাথে কিছুদিন কথা হয় না। একসময় সে তাঁর নতুন গন্তব্যে চলে যায়। এই সময়ের মাঝেও তাঁর সাথে আমার দেখা হয়নি,কথাও হয়নি। হয়তো বা চলে যাওয়ার আগে আমার সাথে দেখা করবার প্রয়োজন মনে করেনি। তবে আমাকে ফোন দিয়ে দুমিনিট কথা বলেছিলো। এটাই আমার কাছে অনেক কিছু মনে হয়েছিলো। অন্তত যাওয়ার আগে আমাকে মনে করে কথা বলেছে।
আমি নুসরাতকে খুব বেশি ফোন দিতাম না,মেসেজও করতাম না খুব একটা। আমি কখনোই চাইতাম না আমার কারণে নুসরাত এর পড়ালেখায় কোনো ডিস্টার্ব হোক। কারণ আমি জানতাম মেডিক্যালে অনেক পড়াশোনা করতে হয় তাই ফোন দিয়ে তাঁর মূল্যবান সময়টুকু আমি নষ্ট করতে চাইতাম না। তবে মাঝে মাঝে আমি মেসেজ করতাম,ফোন দিয়ে কথা বলতাম। তখন অনেক ভালো লাগতো,সেও আমার সাথে অনেক মুগ্ধতা নিয়ে কথা বলতো অামি বুঝতে পারতাম।
তবে আমাদের খুব বেশি সময় ধরে কথা হতো না। আগে যেমন আমরা ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে কথা বলতাম। কেউ ভুলেও কখনো ফোন রাখতে চাইতাম না। এমনও রাত গিয়েছে যে রাতে আমরা দুজন না ঘুমিয়ে কথা বলে কাটিয়েছি। কিন্তু এখন দশ মিনিট কথা বললেই নুসরাত ফোন রেখে দিতে চায়। আমি যখন বলতাম এতোদিন পরপর আমাদের কথা হয় তারপরেও এতো কম সময় কথা বলে তোমার ভালো লাগে?
তখন সে বলতো কিছু করার নেই।
"এমন একটা সময় থাকে যখন চাইলেই সবকিছু করা যায় না। আমি চাইলেও তোমার সাথে লংটাইম কথা বলতে পারবো না।"
আমিও তাঁর কথাগুলো বোকার মতো বিশ্বাস করতাম। ভাবতাম হয়তো হোস্টেলে থাকে সেজন্য ফোনে কথা বলতে সমস্যা। আর সেও তো বড় আপুদের সাথে রুম শেয়ার করে থাকে। তাই কম কথা বলেই সন্তুষ্ট থাকতাম আমি। এভাবে খুব ভালোই চলছিলো আমাদের দুজনের দিনকাল। প্রায় ছয়মাস খুব ভালোভাবেই গেলো। আমি যা ভেবেছিলাম তা হয়নি। নুসরাত এখনও আমাকে আগের মতোই ভালোবাসে।
একদিন হঠাৎ করেই দেখলাম নুসরাত তাঁর ফেসবুক আইডিতে কয়েকটা ছেলে আর মেয়ের সাথে একসাথে দাঁড়িয়ে কিছু পিক আপলোড করেছে। তখন আমার বুকের ভিতরটাতে একটু ব্যাথা অনুভব করলাম। যে মেয়েটা কোনোদিন নিজের পিক ফেসবুকে দিতো না সেই মেয়েটাই আজ সাজগোছ করে খুব সুন্দর করে পিক আপলোড করেছে। ভাবলাম নুসরাতকে একবার জিগ্যেস করি কেনো সে আমার অনুমতি না নিয়ে নিজের পিক ফেসবুকে দিলো। অন্তত আমাকে তো জিগ্যেস করা উচিত ছিলো। সে তো কোনো কিছু করার আগে অন্তত আমার কাছে বলে। কিন্তু আবার মনে হলো এটাতে হয়তো সে রাগ করতে পারে,কষ্ট পেতে পারে। তাই আর এই বিষয় নিয়ে মাথা ঘামালাম না। তুচ্ছ ভেবে এড়িয়ে গেলাম। প্রথমে জিনিসটা খারাপ লাগলেও পরে কিছু মনে হলো না। কারণ শুনেছি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার সাথে সাথে মেয়েদের অনেক পরিবর্তন হয়,মেয়েরা আগের থেকে অনেক আপডেট হয়। আর সেটা যদি পাবলিক ভার্সিটি কিংবা মেডিক্যাল কলেজ হয় তাহলে তো কোনো কথায় নেই। একটু পরে হলেও জিনিসটা বুঝতে পারলাম। তাই এটাকে সাধারণ ভাবেই নিলাম।
কিন্তু কিছুদিন পর যখন দেখলাম নুসরাত মাঝে মাঝেই তাঁর ছেলে বন্ধুদের সাথে পিক তুলে,তাও খুব কাছাকাছি ঘেষে পিক উঠে আবার সেই পিক ফেসবুকে আপলোড করে তখন কেনো জানি আমার সহ্য হলো না। আমি যাকে ভালোবাসি সে কেনো অন্য কোনো ছেলের এতো কাছাকাছি থাকবে? তাঁর কিসের এতো সম্পর্ক ছেলেদের সাথে? নিজের কাছেই এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে থাকলাম আমি। আমার খুব খারাপ লাগতো। যখন দেখতাম নুসরাত কোনো ছেলের কাঁধে হাত রেখে ছবি উঠেছে। আমি নুসরাতকে ফোন দেই কিন্তু সে ফোন ধরে না।
দুইদিন পর যখন সে ফোন ধরলো তখন আমি তাকে প্রথম যে কথাটা বলি সেটা হলো,
"তুমি আর তোমার ছেলে বন্ধুদের সাথে ঘুরবে না। আমার অনেক খারাপ লাগে তোমাকে অন্য কোনো ছেলের পাশে দেখলে।"
কিন্তু নুসরাত আমার কথায় অনেক রাগ করে ফেলে। আমাকে অনেক কথা শোনায়। যে কথাগুলো প্রমাণ করে দেয় সে আমার সাথে থাকতে চায় না।
"তুমি আমাকে না করার কে? আমার জীবন,আমার যেভাবে ইচ্ছে,যার সাথে ইচ্ছে তাঁর সাথে ঘুরবো। তুমি আমাকে না করার কে? যেখানে আমার বাবা মা আমার স্বাধীনতায় কোনো হস্তক্ষেপ করে না সেখানে তুমি আমাকে এসব বলার কে? আমি যেসব ছেলের সাথে ঘুরে বেরাই তাদের যোগ্যতা,স্ট্যাটাস তোমার থেকে অনেক ওপরে। তুমি এখনও আপডেট হতে পারোনি। আমার মনে হচ্ছে আমাদের সম্পর্কটা এখানেই শেষ হওয়া উচিত। কারণ তোমার জন্য আমি আমার লাইফ স্টাইল,চলাফেরা পরিবর্তন করতে পারবো না। আমি আমার মতো করেই নিজের জীবনটাকে চালাতে চাই। আমার স্বাধীনতায় কারো হস্তক্ষেপ আমি মেনে নিবো না,সে যেই হোক না কেনো। আশা করি তুমি আমার কথা বুঝতে পেরেছো।"
নুসরাত যখন কথাগুলো বলল তখন আমি কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। কিছু বলার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। শুধু ভাবছিলাম এতোদিন ধরে এতো যত্ন করে গড়ে তোলা সাড়ে তিন বছরের সম্পর্কটা মাত্র একমিনিটেই শেষ হয়ে যাচ্ছে বিশ্বাস হচ্ছিলো না। তবে আমারও কেনো জানি এই সম্পর্কটার প্রতি বিতৃষ্ণা এসে গেছে খুব করে বুঝতে পারছিলাম। তাই হয়তো আমিও নুসরাতকে কিছু কথা বলার মতো সাহস কুড়িয়ে ছিলাম।
" যেদিন তুমি মেডিক্যালে চান্স পেয়েছিলে সেদিনই আমি বুঝতে পেরেছিলাম তোমার সাথে আমার রিলেশনটা টিকবে না। লাস্ট ছয় মাসে আমিই সবসময় ফোন দিয়েছি তোমাকে,তোমার খোঁজ নিয়েছি। তুমি কখনো নিজ থেকে আমাকে কল করোনি। কখনো মনেও করোনি যে তোমাকে একজন মানুষ অনেক ভালোবাসে। যে মানুষটা তোমার ফোন পেলে কতোটা খুশি হয় সেটা হয়তো তুমি বুঝেও বুঝতে না। তুমি জানতে আমি তোমাকে অন্য কোনো ছেলের সাথে সহ্য করতে পারবো না। তাই তুমি ইচ্ছে করেই তোমার ছেলে বন্ধুদের সাথে ঘুরে বেড়াতে। তাদের সাথে ছবি উঠতে। সেগুলো তুমি আমাকে দেখানোর জন্য আপলোড করতে। আমি কিছুটা হলেও বুঝতাম,তবে সহ্য করতাম। তুমি এটাই চেয়েছিল আমি যেনো রাগ করে তোমাকে এমন কিছু বলি যেটার সাহায্যে তুমি আমাদের সম্পর্কের ইতি টানতে পারো। আজ তুমি সফল। আর কখনো কথা হবে না,দেখা হবে না তোমার সাথে।"
কথাগুলো বলে আমি ফোনটা চিরদিনের জন্য রেখে দেই। মনে মনে একটা জেদ করি কোনোদিন আমি তাকে ফোন দিবো না।
আমি ভেবেছিলাম আমাদের পাহাড় সমান অভিমান গুলো ভুলে গিয়ে আবার আমরা কথা বলবো,দেখা করবো। কিন্তু না,এমনটা হয়নি। সেদিনের পর থেকে নুসরাতের জন্য অনেকটা দিন আমি খুব অভিমান ভরা ভালোবাসা নিয়ে অপেক্ষা করেছিলাম। নুসরাত আমাকে ফোন দিবে,সবকিছু ভুলে আবার আমাকে আপন করে নিবে। কিন্তু সে আমাকে ফোন দেয়নি। আমিও নিজ থেকে তাকে ফোন দেইনি। আমারও ইগো জিনিসটা তাঁর থেকে কম ছিলো না। আমি জানি না তাকে ফোন দিয়ে তাঁর সাথে কথা বললে সবকিছু আবার আগের মতো হয়ে যেতো কিনা কিন্তু আমার ভিতরের ইগো আমাকে এটা করতে দেয়নি। আমার ভিতরের সত্ত্বাটা সবসময় শুধু একটা কথায় বলেছে যে মানুষটা তোকে চায় না,যে মানুষটা তুই অভিমান করলে তোর অভিমান ভাঙায় না,যে মানুষটা তোর ভালোবাসাভরা শাসন গুলোতেও বিরক্তি খুঁজে পায় সে মানুষটার সাথে তুই নিজেকে কখনো সুখী দেখতে পারবি না। তবুও যদি নুসরাত একটাবার আমাকে বলতো অনেক ভালোবাসি তোমাকে,চলো সব ভুলে যাই। তাহলে হয়তো আমি সবকিছু ভুলে তাকে পরম আদরে বুকে জড়িয়ে নিতাম কিন্তু সে আমার সাথে আর যোগাযোগ করেনি।
আমিও আস্তে আস্তে নুসরাতকে ভুলে যেতে লাগলাম। একসময় ভুলেও গেলাম যে আমার জীবনে নুসরাত নামে কোনো একটা মেয়ে ছিলো যে মেয়েটাকে আমি নিজের থেকেও অনেক বেশি চাইতাম। সেদিন আমার মনে হয়েছিলো এই পৃথিবীতে যদি সবচেয়ে বড় কোন মিথ্যা থাকে সেটা হলো,
"আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না"
আসলে এই পৃথিবীতে কেউ কাউকে ছাড়া মরে না,কষ্ট হলেও বাস্তবতার সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকে। আমিও আছি। যখন নুসরাতের হাত ধরে বলতাম,
"আমি তোমাকে নিজের থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসি,তোমাকে না পেলে আমি বাঁচবো না। প্রতিটা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যেমন অক্সিজেন জিনিসটা অতীব জরুরি, ঠিক তেমনি আমার বেঁচে থাকার জন্য তোমাকে খুব করে প্রয়োজন। তুমি ছাড়া আমার এ জীবন অধরা অসম্পূর্ণ। এখন এই কথাগুলো শুনলে বড্ড হাসি পায় আমার। হয়তো নুসরাতও আমাকে ভুলে গিয়ে নতুন কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে। আমরা মানুষরা এমনই। পুরাতন ভুলে নতুনকে সাদরে গ্রহণ করে নেই।
দেখতে দেখতে নুসরাতের সাথে আমার সম্পর্কের দুইটা বছর অতিবাহিত হয়ে যায়। এই দুই বছরে আমাদের কোনে কথা হয়নি। তবে আমি তাকে দেখতাম। প্রথম প্রথম তাঁর সাথে কথা না বলে থাকতে অনেক কষ্ট হতো,তবুও থাকতাম। নিজের আত্মসম্মান বোধের কথা চিন্তা করে হলেও তাঁর সাথে কথা না বলে থাকতাম। আমি ভাবতাম আমার মতো নুসরাতেরও হয়তো আমার সাথে কথা না বলে থাকতে অনেক কষ্ট হচ্ছে,দীর্ঘ তিনটা বছর তাঁর সাথে রিলেশন ছিলো আমার। এই তিন বছরে আমি তাকে অনেক ভালোবাসা দিয়েছি। সে আমাকে এতো সহজেই চাইলে ভুলে যেতে পারবে না। সেদিন হয়তো রাগের মাথায় অনেক কিছু বলেছে সে কিন্তু আমাকে ভুল যেতে তাঁর অনেক কষ্ট পোহাতে হবে। কিন্তু যখন দেখতাম সে হাসিখুশি ভাবেই আগের মতো তাঁর বন্ধুদের সাথে চলাফেরা করছে,টুরে যাচ্ছে। আর সেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিচ্ছে। তখন বুঝতাম আমার ধারণা ভুল ছিলো সেটার প্রমাণ আমি পাচ্ছি। সে আমাকে ভুলে তাঁর বন্ধু বান্ধবীদের সাথে খুব আনন্দ উল্লাসেই দিন কাটাচ্ছে। অথচ আমি নিজেকে কষ্টের অনলে দগ্ধ করছি প্রতিনিয়ত। আমার অন্য সবার বন্ধু বান্ধবীও ছিলো না যে তাদের সাথে নিজের দুঃখগুলো শেয়ার করবো। আমার একাকিত্ব হয়তো আমার কষ্টগুলোতে তীব্রতা দান করেছিলো। তবে আলহামদুলিল্লাহ্‌ আমি সব ভুলে নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছি। আমি আর নুসরাত নামক মেয়েটাকে ভালোবাসি না,তাঁর জন্য নিজেকে কষ্ট দেই না।
যেহেতু আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স শেষ করেছিলাম তাই চাকরির বাজারে আমাকে অনেক বেগ পোহাতে হয়েছিল। সত্যি বলতে জাতীয় ভার্সিটির স্টুডেন্ট গুলো প্রথম থেকেই পাবলিক ভার্সিটির স্টুডেন্টদের থেকে মানুষিক ভাবে অনেকটা পিছিয়ে পড়ে। ওরা যেহেতু পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেয়েছে, আর আমরা পাইনি তাই ওরা আমাদের থেকে অনেকটা এগিয়ে। এই জিনিসটা আমার মনের মধ্যে সবসময় নেগেটিভ ভাবে কাজ করেছে। যদিও আমি কোথাও পরীক্ষা দেইনি তবুও এটা মনে হয়েছে। খারাপ লাগলেও এই কথাগুলো সত্য। তবে আমি কখনো ভেঙে পড়িনি। অনার্স শেষ হওয়ার পর বিসিএস ক্যাডার হওয়ার আশায় দীর্ঘ দুইটা বছর আমি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। দিন থেকে কখন রাত হয়েছে, রাত থেকে কখন দিন হয়েছে এসবে আমার কখনো মনোযোগ থাকতো না। আমার সমস্ত মনোযোগ থাকতো বইয়ের পাতায়। এতো পরিশ্রম করার পরেও যখন আমি বিসিএস ক্যাডার হতে পারিনি তখন আমার মনে হয়েছিলো বিসিএস আমার জন্য না। এই পৃথিবীতে কিছু বিরল প্রজাতির এক্সট্রা অর্ডিনারি মানুষ আছে বিসিএসটা তাদের জন্য। তবে বিসিএস ক্যাডার না হতে পারলেও আমি প্রথম শ্রেণীর একটা সরকারি চাকরি পেয়ে যাই। আমি এখনো বিশ্বাস করি আমি ক্যাডার হতে চেয়েছিলাম বলেই আজ প্রথম শ্রেণীর সরকারি চাকরি পেয়েছি। তাই মানুষের স্বপ্ন সবসময় বড় থাকা উচিত। স্বপ্ন বড় দেখলেই কেবল বড় হওয়া যায়। তাই সবসময় বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখা উচিত। সেই স্বপ্নটাকে সত্যি করার জন্য পরিশ্রম করা উচিত। বাকি টুকু ওপরওয়ালার হাতে ছেড়ে দিতে হবে।
আমাদের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো না থাকলেও আমি বাবা মায়ের অনেক আদরের সন্তান ছিলাম। আমার বাবা মা জানতো তাদের যা অবস্থা তারা একজনের বেশি সন্তানকে হয়তো ভালোভাবে মানুষ করতে পারবে না। তাই তারা আমি বাদে আর কোনো সন্তান নেয়নি। আমি যখনই যা চাইতাম আমার বাবা সেটা আমাকে দিতো। আমার মনে আছে আমি যখন অনেক ছোট ছিলাম তখন বাবার কাছে একটা সাইকেল চেয়েছিলাম। ছোট থাকলেও আমার এমন আবদারে মা সেদিন আমার ওপর অনেক রাগ করেছিলো,কিন্তু কিছুদিন পর বাবা আমার জন্য যখন একটা নতুন সাইকেল নিয়ে আসলো তখন মাই আমাকে সাইকেলে চড়িয়ে ঘুরাতো। আমার কাছে মনে হতো আমার বাবা মা পৃৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা মা। অথচ এমন বাবা মায়ের ইচ্ছেটাও আমি পূরণ করতে পারিনি। এতোটাই ব্যার্থ ছিলাম আমি। তারা চেয়েছিলো আমি যেনো ভালো রেজাল্ট করে শহরে পড়তে যাই কিন্তু আমি তখন তাদের কথা শুনতাম না,পড়ালেখায় মনোযোগ দিতাম না,সবসময় খেলা নিয়ে থাকতাম যার কারণে এসএসসিতে খুব একটা ভালো রেজাল্ট করতে পারিনি,ইন্টারে কিছুটা ভালো করেছিলাম,তারপর গ্রামের একটা ভার্সিটিতেই ভর্তি হই। তবুও আমার জন্য আমার বাবা মায়ের ভালোবাসা একটুও কমেনি। আমি তাদের আশা পূরণ করতে না পারলেও তারা আমাকে কখনো কোনো কিছুর অভাব দিতো না।
যেদিন আমি চাকরি পেলাম সেদিন মাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেঁদেছিলাম। সেদিন বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলাম তোমাকে আর কাজ করতে হবে না,এখন থেকে তোমরা দুজন আরাম করবে,পায়ের ওপর পা তুলে খাবে,তোমরা আমার জন্য জীবনে অনেক কষ্ট করেছো। এবার সেগুলোর প্রতিদান দিতে চাই আমি। তোমাদের এই সেবাটুকু করার সুযোগ আমাকে দিবে না? আমাকে জড়িয়ে ধরে সেদিন বাবা মাও অনেক কেঁদে ছিলো। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি ওইদিনের কান্নাটা আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ কান্না।
কিছুদিন পর বুঝতে পারলাম বাবা মায়ের কোনো কারণে আমার ওপর রাগ। তবে কারণটা খুঁজে পেলাম না। একসময় আমার ওপর রাগের কারণটা বুঝতে পারলাম। তারা আমাকে বিয়ে দিতে চায়। আমিও আর না করলাম না। বাবা মায়ের জন্য হলেও বিয়ের পিরিতে বসার জন্য আমি রাজী হয়ে গেলাম।
আমাদের গ্রামের একটা মেয়েকে মায়ের অনেক পছন্দ। অনেক আগে থেকেই মা মেয়েটাকে আমার জন্য পছন্দ করে রেখেছে। কিন্তু কখনো বলেনি। আজ সময় বুঝে মা তাঁর মনের কথাটা আমাকে বলার পর আমি মায়ের হাসিভরা মুখটা দেখার জন্য মেয়ে দেখতে যাবো বলে দেই। সেই মেয়েটাকে দেখার জন্য মা আমাকে নিয়ে মেয়ের বাসায় এসেছে। আমি মেয়েটাকে দেখে জাস্ট পাথর হয়ে বসে রইলাম। আমার নিজেকে নিরামিষ মনে হলো। এতো সুন্দর একটা মেয়ে আমার গ্রামে বাস করে অথচ আমি জানি না। তাঁর চেয়ে বেশি অবাক হলাম যখন মেয়েটার পাশেই আমার প্রাক্তন নুসরাতকে দেখতে পেলাম। আমরা যে মেয়েটাকে দেখতে এসেছি সেই মেয়েটার কাজিন হচ্ছে নুসরাত।
আমি নুসরাতকে দেখে যতোটা না সারপ্রাইজড হয়েছি তার থেকে অনেক বেশি নুসরাত আমাকে দেখে অবাক হয়েছে। সে নিশ্চয় আমার সম্পর্কে তাঁর কাজিন কিংবা তাঁর বাবা মায়ের কাছ থেকে সব জেনেছে। যে ছেলেটা কখনো পড়ালেখায় সিরিয়াস ছিলো না সেই ছেলেটাই আজ জীবনে প্রতিষ্ঠিত। আমি তখনও চুপ করেছিলাম। তবে নাটক সিনেমার মতো নুসরাতকে দেখে আমার ভিতরে কোনো আবেগ কাজ করেনি,আমি স্বাভাবিকই থাকার চেষ্টা করেছি।
আমি যে মেয়েটাকে দেখতে এসেছি তাঁর নাম রোদেলা। ঢাবিতে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে। আমার মেয়েটাকে প্রথম দেখেই কেমন জানি সন্দেহ হয়েছিলো। এতো সুন্দর একটা মেয়ে কি আর সিংগেল থাকে? তাও আবার ঢাবিতে দুই বছর রানিং। আমি নিশ্চিত এই মেয়ের বয়ফ্রেন্ড আছে। ইদানীং এই বিষয়টা খুব হচ্ছে, বিয়ের কয়েকদিন আগে মেয়ে পালিয়ে যায়,অথচ বিয়ে করার জন্য সে ঠিকই রাজী থাকে।
জগতের চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী আমাদের দুজনকে আলাদা রুমে কথা বলার জন্য পাঠানো হয়েছে। সবার কথা বিয়ের আগে ছেলে মেয়ের আলাদা কথা বলার দরকার আছে,আর তাছাড়া তারা এ যুগের ছেলে মেয়ে। ছেলে মেয়ে বিয়ের আগে পারসোনাল ভাবে কথা বলবে না এমনটা হতেই পারে না। আমার বেলাও হবে সেটা জানতাম।
আমি অজানা অপরিচিত একটা মেয়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। কি বলবো কিছু ভাবতে পারছি না। কিছুটা নার্ভাস ফিলও করছিলাম। এমনটা হওয়ার কারণ বুঝতে পারলাম না। নীরবতা ভেঙে রোদেলাই প্রথম কথা বলল।
"আপনার কয়টা গার্লফ্রেন্ড ছিলো?"
মেয়ের মুখ থেকে এমন একটা প্রশ্ন শুনে থতমতো খেয়ে গেলাম। আসলে এমন কোনো কিছুর উত্তর দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না আমি। এখন যদি বলি আমি কখনো প্রেম করিনি,আর আমার কোনো গার্লফ্রেন্ডও ছিলো না,আর সে যদি নুসরাতের কাছ থেকে সব শুনে তাহলে আমার কাছে ব্যপারটা লজ্জাজনক হবে। তাই সাহস করে বললাম।
একটা করেছিলাম।
- মাত্র একটা?
- তো কয়টা করবো? এগুলো কি খাওয়ার জিনিস নাকি যে অনেকগুলো করবো। আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে আপনি অনেকগুলো করছেন?
- না,আসলে সবাই ভাবে আমার হয়তো বয়ফ্রেন্ড আছে, আমি সিংগেল নাই। তাই কেউ প্রোপোজ করে না। সুন্দরী মেয়েদের এটাই সমস্যা। সবাই ভাবে এতো সুন্দর একটা মেয়ে সিংগেল থাকার কোনো চান্সই নাই। এটা ভেবেই অনেকে প্রোপোজ করে না।
- ভালো তো।
- হুম,আমি বিয়ে করবো না,আবার বাড়িতে নাও বলবো না। আপনি না করে দিবেন। বলবেন মেয়ে আমার পছন্দ হয়নি।
- এটা বললে সবাই আমাকে পাগল ভাববে।
- কেনো কেনো? এটা ভাববে কেনো?
- এতো সুন্দর নিষ্পাপ একটা মেয়েকে আমার পছন্দ হয়নি এটা শুনলে তো সবাই পাগলই বলবে।
- ফ্লাট করছেন?
- না,সত্যি বলছি।
- আমার এই উপকারটা করেন।
- আমি এই বিয়েটা করতে চেয়েছি আমার মায়ের জন্য। আপনার থেকে আমার মাকে খুশি করা খুব বেশি দরকার। যেহেতু সমস্যাটা আপনার সেহেতু আপনি আপনার পরিবারকে বুঝান,তাদেরকে বলেন আপনার ছেলেকে পছন্দ হয়নি। এতো ভালো মানুষ নই আমি যে আপনাকে সাহায্য করে মায়ের কাছে অপরাধী হবো।
- আপনি তো শিক্ষিত, এই সাধারণ জিনিসটা কেনো বুঝেন না। বিয়ের পরেও তো আমি আপনাকে ছেড়ে দিতে পারি। আর আমাদের বিয়েটাতে আমরা কেউ সুখী হতে পারবো না।
- আমি এতো সমীকরণ বুঝি না। আমি আমার মাকে দুঃখ দিতে পারবো না। আপনি আপনার বাবাকে বলেন।
- আরে ভাই,আমার বাবা হার্টের রোগী। আমার এমন সিদ্বান্তে কোনো দূর্ঘটনা ঘটে গেলে নিজেকে সারাজীবন অপরাধী মনে হবে।
- তাহলে আর কি করার। দেখা যাক কি হয়। আজকেই তো আর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না। অনেক সময় পাবেন। যা করার আপনাকেই করতে হবে। বিয়ে ভাঙার ব্যাপারে আমি আপনাকে কোনো সাহায্য করতে পারবো না।
আমরা চলে আসি। নুসরাতের সাথে আমার কোনো কথা হয় না। দুজন দুজনের দিকে শুধু অপলকে কিছু সময় তাকিয়ে ছিলাম। সত্যি বলতে কথা বলার কোনো সুযোগই পাইনি। তবে আজ কেনো জানি আমার মনে হলো আমি মন থেকে নুসরাতকে ভুলে গিয়েছি।
বাসায় আসার পর মা যখন,
"বলল মেয়ে কি পছন্দ হয়েছে?"
তখন মাকে বললাম,
মেয়ে মনে হয় আমাকে পছন্দ করবে না?
- কেনো? আমার ছেলে কি কম সুন্দর নাকি?
- মেয়ের ভাব টাব দেখে এটাই বুঝা গেলো।
- ওসব কিছু না। একটু লজ্জা পেয়েছে হয়তো। পছন্দ না করলে তো বলেই দিতো। মেয়ের বাবা মা তোকে খুব পছন্দ করেছে। তারা বিয়েটা খুব তাড়াতাড়ি সম্পন্ন করতে চায়।
- তার মানে কি? আমাকে না বলেই বিয়ে ঠিক করে ফেলেছো?
- আরে গাধা, না। তুই বুঝবি না।
আমি আসলেই কিছু বুঝলাম না। বুঝার চেষ্টাও করলাম না।
জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাহিরের প্রাকৃতিক দৃশ্য গুলো অনুভব করছিলাম। বাহিরে কি সুন্দর ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। ঝুম বৃষ্টি একজন মানুষের খুব প্রিয় ছিলো। হয়তো বা এখনো আছে কিংবা এখন আর তাঁর বৃষ্টি ভালো লাগে না। এই বিয়েটা হয়তো হয়ে যাবে। মাকে অনেক খুশি দেখলাম আজ। যেকোনো কিছুর বিনিময়ে মা মেয়েটাকে আমার বউ করে আনতে চায়। আমিও কি চায়? এই প্রশ্নের উত্তর জানা নাই। তবে যদি ভালোবাসার মানুষ থাকতো তাহলে বাবা মায়ের সুখের জন্য তাকেও ছেড়ে দিতে দ্বিধাবোধ করতাম না। আর সেখানে আজ আমি নিঃস্ব, আমার ভালোবাসার কোনো মানুষ নেই,ভালোবাসার মানুষ বলতে দুইজন মানুষই আছে যারা আমাকে জন্মদিয়ে এই সুন্দর পৃথিবীতে এনেছেন। তাই মায়ের কথা আমি ফেলতে পারি না। আগে বুঝতাম না তাই মায়ের অবাধ্য ছেলে হিসেবে জীবন চালিয়েছি কিন্তু এখন সব বুঝি,সব জানি। তাই জীবনের বাকিটা সময় বাবা মায়ের বাধ্য ছেলে হয়েই বেঁচে থাকতে চাই।
হঠাৎ করেই ফোনটা কেপে উঠে। বুঝলাম কেউ ফোন দিয়েছে। স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই বহু দিনের পরিচিত সেই নাম্বারটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো। নাম্বারটা এখনো খুব যত্ন করে সেভ করে রেখেছি এটা বিশ্বাসই হচ্ছে না। যে মানুষটা অনেক আগেই নিজের মন থেকে ডিলিট হয়ে গেছে,সেই মানুষটার নাম্বারটা আজও রয়ে গিয়েছে। ফোনটা ধরতেই ওপাশের সেই আগুন ঝরা কণ্ঠটা শুনতে পেলাম। যেই কণ্ঠটা শোনার জন্য একসময় পাগল ছিলাম।
কেমন আছো?
- ভালো আছি,তুমি কেমন আছো?
- চিনতে পেরেছো তাহলে?
- না চেনার তো কোনো কারণ নেই।
- বিয়ে করছো?
- হুম কতোদিন আর সিংগেল থাকবো বলো।
- সেদিন তো বলেছিলে,তুমি আমাকে ছাড়া বাঁচবে না,বিয়ে করলে আমাকেই করবে। আমি তোমার অক্সিজেন। আমি তোমার প্রতিটা নিঃশ্বাসে থাকবো সবসময়। তাহলে সব কি মিথ্যা ছিলো?
- তুমি কি সত্যিই আমার অক্সিজেন ছিলে? যদি তাই হয়তো তাহলে কি আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারতে? তুমি তো জানতে অক্সিজেন ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না,তার পরেও কিভাবে আমাকে ছেড়ে চলে গেলে?
- এতোটা দিন গিয়েছে একটা বার খোঁজও নাওনি।
- তুমি নিয়েছো? আমি ভেবেছিলাম কোনো একদিন তুমি ফোন দিবে। তবে ভাবিনি এতোটা দেরি করবে।
- তুমি কি ভাবছো? আমি আবার তোমার সাথে নিজেকে জড়াতে চাই তাই ফোন দিয়েছি? এটা ভাবলে ভুল করবে।
- হ্যালো,ম্যাডাম। আমি আপনাকে অনেক আগেই ভুলে গিয়েছি। সো এসব নিয়ে আমিও ভাবি না। আর আমি জানি আমার সাথে ব্রেকআপ হওয়ার পর তুমি রিলেশনে জড়াবে। কারণ তুমি ছিলে মেডিক্যালে পড়া আপডেট মেয়ে।
- উপহাস করছো?
- না,তা করবো কেনো? যেটা সত্যি সেটাই বললাম। সেদিনের পর তুমি খুব ভালোই ছিলে। বন্ধুদের সাথে আড্ডা, ঘোরাফেরা। আরও কতো কি? ভালো থাকার জন্য এগুলো কি যথেষ্ট না?
- বাহির থেকে দেখে সবকিছু বোঝা যায় না। যাইহোক ভালো থাকো। বিয়ের জন্য শুভকামনা।
- তুমিও ভালো থাকো।
আমি ভেবেছিলাম এরকম কিছু একটা হবে। নুসরাত আমাকে ফোন দিবে। তবে মেয়েটার কোনো পরিবর্তন হয়নি। আজও আগের মতোই আছে। নিজের জেদটাকেই বড় করে দেখে। তবে আমি খুব খুশি সে আমাকে ভুলে গিয়েছে। নাটক সিনেমার মতো সে আবার আমার জীবনে ফিরে আসতে চায়নি।
রাতে ঘুমানোর আগে অপরিচিত একটা নাম্বার থেকে ফোন পেলাম,ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে শুনতে পেলাম কেউ একজন বলছে।
আমি রোদেলা,আপনার হবু বউ। আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই। কাল বিকেলে দেখা করতে পারবেন?
- হ্যাঁ পারবো। কখনো কোথায় আসতে হবে বলেন।
- আমি মেসেজ করে দিয়ে দিবো নি।
- আমিও ফোনটা রেখে ঘুমিয়ে গেলাম। তবে আমার কেনো জানি মনে রোদেলার সাথে দেখা করতে গিয়ে তাঁর বয়ফ্রেন্ডকে দেখতে পাবো। জানি না এমনটা হবে কি না। তবে হওয়াটা অসম্ভব কিছু না।
রোদেলা একা দাঁড়িয়ে আছে। তাঁর আশেপাশে আমি কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। তাহলে কি আমার কল্পনাটা মিথ্যা ছিলো? রোদেলা তাঁর বয়ফ্রেন্ডকে সাথে নিয়ে আসেনি। সে কি এমন বলবে যে কারণে এভাবে বাহিরে একা দেখা করতে বলেছে আমি আন্দাজ করতে পারলাম না। তবে যাই বলুক না কেনো সে আমি তাঁর কথামতো বিয়েটা ভাঙবো না,বাসা থেকে বের হওয়ার আগে খুব ভেবে চিন্তেই এসেছি। আমি জানি সে অনেক আবেগী কথা বলে আমাকে গলাতে চাইবে তবে আমি সেসবে মন দিবো না। আমার মায়ের জন্য শুধু আমি বিয়েটা করতে চাচ্ছি না। নুসরাতও এর একটা কারণ। আমি যদি এই মেয়েটাকে বিয়ে না করতে পারি তাহলে নুসরাত কোনো একদিন আমাকে উপহাস করবে। তুমি এই মেয়ের যোগ্য ছিলে না তাই সে তোমাকে রিজেক্ট করেছে। আমি জানি নুসরাত এমন কিছু বলবে। নুসরাতকে জবাব দেওয়ার জন্য হলেও আমাকে এই বিয়েটা করতে হবে।
একটা মেয়েকে এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে রাখা কি কোনো দায়িত্বশীল পুরুষের কাজ?
- আমি দুঃখিত। একটু দেরি হয়ে গিয়েছে। তবে আমার মনে হয় মেয়েরা যত্নবান, দায়িত্বশীল পুরুষ খুব একটা পছন্দ করে না।
- একটু না,ত্রিশ মিনিট দেরি করে এসেছেন। আপনি কিভাবে বুঝলেন মেয়েরা দায়িত্বশীল পুরুষ পছন্দ করে না।
- কিছুটা অভিজ্ঞতা আছে।
- পৃৃথিবীর সব মেয়ে তো আর এক না।
- আলাদা ভাবারও তো কোনো কারণ দেখি না।
- আপনাকে যে জন্য দেখা করতে বলেছি। সিরিয়াসলি একটা কথা বলেন তো,আপনি কি সত্যিই বিয়েটা করছেন?
- হ্যাঁ। বয়স বেশি হয়ে যাচ্ছে। এতো সুন্দর একটা মেয়েকে রিজেক্ট করার কোনো কারণ দেখছি না আমি।
- একটা মেয়ে আপনাকে পছন্দ করে না,তারপরেও তাকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন কেনো? এটাতে যে দুইজন মানুষের জীবন নষ্ট হয়ে যেতে পারে,একটাবারও ভেবে দেখেছেন?
- হুম দেখেছি,আর তাছাড়া আপনি আমাকে পছন্দ করেন না এটা কিন্তু একবারও বলেন নি। যদি বলতেন আমাকে আপনার অপছন্দ তাহলে হয়তো এমনটা বলতে পারতেন কিন্তু এখন আপনি এই কথাটা বলতে পারেন না।
- আমি তো ইশারা ইঙ্গিতে বুঝিয়েছি আপনাকে আমার পছন্দ না,এমন কি এটাও বলেছি আমার বয়ফ্রেন্ড আছে। বিয়ে হলেও আমি তাঁর সাথে পালিয়ে যাবো।
- আমারও গার্লফ্রেন্ড ছিলো,সো আপনার বয়ফ্রেন্ড অাছে এটাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। আর বিয়ের পর আমার বউ অন্য কারো সাথে পালিয়ে যাওয়ার মতো এতোটা সাহস দেখাতে পারবে না। আমি জানি বউকে কিভাবে নিজের কাছে ধরে রাখতে হয়।
- আপনার ছিলো বাট আমার বর্তমান। এখনো আমাদের সম্পর্কটা আছে।
- এতোই যদি আপনি আপনার বয়ফ্রেন্ডকে ভালোবাসেন তাহলে বাসায় বলে দিলেই পারেন। তারাই বিয়েটা ভেঙে দিবে। এতো নাটক করছেন কেনো?
- আমি যদি বাসায় এই কথাটা বলতে পারতাম তাহলে আপনার কাছে এতোটা অনুরোধ করতাম না। সমস্যা হলো আমার বয়ফ্রেন্ড বেকার। আপনাকেও বাবার অনেক পছন্দ হয়েছে। সেজন্যই তো এতো সমস্যা। আর নাটক করার হলে অভিনয় করতাম আপনার সামনে নাটক করে আমার দুপয়সার লাভও নেই।
- আমি তো বলেছি আমি কোনো সাহায্য করতে পারবো না,অন্তত বিয়ে ভাঙার ব্যাপারে।
- আপনি যে ছ্যাকা খেয়েছেন সেটা আপনার কথা শুনলেই বুঝা যায়। সত্যি কাউকে ভালোবাসলে তো আমার অবস্থাটা বুঝতেন,আমার পাশে দাঁড়াতেন।
- বিয়ের আগের প্রেমে বিশ্বাস করি না আমি। বিয়ের আগে প্রেম করলে ভালোবাসার মানুষটার ওপর নিজের সবটুকু অধিকার খাটানো যায় না। খাটালেও সেটা সে মেনে নিতে চায় না। তাই বিয়ের আগে প্রেম নয়,যতো প্রেম ভালোবাসা সব বিয়ের পরে।
- আপনি কি করে ভাবলেন আমাকে বিয়ে করলে আপনি হাসবেন্ড এর দাবি নিয়ে আমার ওপর সবটুকু অধিকার আদায় করতে পারবেন?
- এমনটাই তো হয়ে আসছে। প্রেমিককে না করতে পারলেও হাসবেন্ডকে না করা যায় না।
- আমাকে বিয়ে করলে আপনি সারাজীবন নরক যন্ত্রণায় ভুগবেন।
- আমি প্রস্তুত।
- আপনি পাগল।
- আপনার বয়ফ্রেন্ড এর সাথে দেখা করান,কথা বলিয়ে দিন। তাহলে ভেবে দেখবো আমি।
- ওতো এখানে থাকে না। ঢাকায় থাকে।
- আসতে বলেন।
- সমস্যা আছে। আসতে পারবে না।
- ভালোবাসার মানুষের জন্য সব সমস্যা ফেলে চলে আসতে পারে। আমার তো মনে হচ্ছে আপনার কোনো বয়ফ্রেন্ডই নাই। সব মিথ্যা বলছেন আমাকে।
- বিয়ের পর যখন পালিয়ে যাবো তখন বুঝতে পারবেন বয়ফ্রেন্ড আছে নাকি নাই।
- গেলে আগেই যেতে হবে।
- কেনো?
- বিয়ের পর সেই সুযোগটা আমি দিবো না সেটাতো আগেই বলেছি।
রোদেলা মেয়েটা আমার ওপর রাগ করে আগুন ঝরা চোখে তাকাতে তাকাতে চলে যায়। হয়তো সে অনেকটা আশা নিয়ে আমার কাছে এসেছিলো কিন্তু তাকে নিরাশ হয়ে ফিরে যেতে হলো।
রাতে খাওয়ার সময় মা হঠাৎ করেই বলল,
"বিয়েতে কি তোর মত আছে?"
কথাটা শুনে আমি চুপ হয়ে গেলাম। আসলে এই প্রশ্নের উত্তরটা আমার নিজেরই জানা নেই।
তোর যদি মত না থাকে বল। আমরা চাই তুই সুখী হবি। তোর সুখই আমাদের সুখ। তোর জন্যই আমরা এতো কষ্ট করেছি। তোর কষ্ট দেখতে চাই না কখনো।
-তোমাদের পছন্দ হয়েছে তো মেয়ে? এতেই আমি খুশি। বাবা মায়ের পছন্দে বিয়ে করাটাও যে কতোটা আনন্দের সেটা তোমরা বুঝবে না।
-মেয়েটার বাবা আমাদের কথা দিয়েছেন। আমিও তাদের কথা দিয়েছি। আমার তো অনেক আগে থেকেই মেয়েটাকে ভীষণ পছন্দ। তোদের দুজনকে অনেক মানাবে।
সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আমাদের বিয়ে হয়ে যায়। যে মেয়েটা আমাকে পছন্দ করে না,যে মেয়েটার বয়ফ্রেন্ড আছে সেই মেয়েটার সাথেই আমার বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের দিন আমি নুসরাতের দিকে কেনো জানি তাকাতে পারিনি। তাঁর দিকে যখন তাকাতাম তখন নিজেকে অপরাধী মনে হতো। আবার মনে হতো সে তো এখন আর আমাকে আগের মতো চায় না,আগের মতো ভালোবাসে না। সে যদি ফিরে আসতে চাইতো কিংবা বলতো এই বিয়েটা করো না,তাহলে হয়তো অন্য কিছু হতে পারতো। কিন্তু সে এসবের কিছুই করেনি চুপচাপ নীরব দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমাদের বিয়েটা সে দেখেছে। তবে আমি একপ্রকার জেদের বশবর্তী হয়েই এই বিয়েটা করেছি। আমি এখন নুসরাতকে বুক ফুলিয়ে বলতে পারবো।
"তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলে তুচ্ছ একটা কারণে। ভেবেছিলে আমি তোমার যোগ্য না,তুমি আমার থেকে আরও ভালো কাউকে ডিজার্ভ করো। তাই আমাকে খুব সহজেই ভুলে গিয়েছিলে। কিন্তু তুমি হয়তো কখনো চিন্তা করে দেখোনি আমিও তোমার থেকে বেটার কাউকে ডিজার্ভ করি,আর সেটা পেয়েছিও।"
আমি যখন আমার সদ্য বিয়ে করা বউ নিয়ে নুসরাতের সামনে দিয়ে চলে আসছিলাম তখন আমি নুসরাতের চোখে হিংসা দেখেছিলাম। সে হয়তো চাইনি বিয়েটা হোক। তাঁর মনটা খারাপ ছিলো যখন আমি তাঁরই সামনে দিয়ে রোদেলার হাত ধরে তাকে নিয়ে আসি। তবে আমি এসব নিয়ে একটুও ভাবিনি। কারণ আমি আমার অতীত ভুলে গিয়েছে। আমি সৃষ্টিকর্তাকে সবসময় ধন্যবাদ জানাই আমার অতীত সম্পূর্ণ রুপে ভুলে যাওয়ার অলৌকিক ক্ষমতা দিয়েছেন সে জন্য। আমি এখন আমার বাবা মা ব্যতীত কাউকে ভালোবাসি না। যদি কাউকে ভালোবাসতে হয় নতুন করে বাসবো।
বাসর ঘরে আমার জন্য আমার বউ বসে আছে। তবে তাঁর কাছে যেতে আমার কেনো জানি ভয় লাগছে। বিয়েটা তো তাঁর ইচ্ছেতে হয়নি। তাঁর কাছে গেলে সে কি বলবে এটাই ভাবছিলাম আমি। কিন্তু যেতে তো হবেই। এছাড়া কোনো উপায়ও নেই। আমি সাহস করে রুমে ঢুকে দরজাটা এমন ভাবে লাগালাম যাতে কোনো শব্দ না হয়। কিন্তু তবুও শব্দ হলো। বিছানায় বসতেই মেয়েটার রাগেগরগর করা কণ্ঠ শুনতে পাই।
আপনি আমার কাছে আসবেন না। আপনি আমার জীবনটাকে শেষ করে দিয়েছেন। কতো স্বপ্ন দেখেছিলাম, জীবনে নিজে কিছু করবো। বড় কিছু হবো। নিজের পছন্দে বিয়ে করবো কিন্তু আপনি সব শেষ করে দিয়েছেন। আমাকে আপনি ভুলেও স্পর্শ করার চেষ্টা করবেন না।
- ওয়েট ওয়েট। ঠিক আছে,আমি জানি আমার ওপর অনেক রাগ। রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে আমাদের এই বিয়েটাতে হয়তো আমরা খুশি হতে পারিনি। কিন্তু দুই পরিবারের মানুষগুলো কতোটা খুশি হয়েছেন সেটা হয়তো আপনি জানেন না। আমার মনে হয় বাবা মায়ের ভালোবাসার কাছে এসব বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ডের ভালোবাসা খুবই তুচ্ছ। আপনি কি চলে আসার সময় আপনার বাবার দিকে একটাবার তাকিয়ে ছিলেন? তাঁর চোখে জল ছিলো তবে সেটা দুঃখের নয় সুখের। আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন। সমস্যা নেই। আমি ওতোটা খারাপ মানুষ না যতোটা ভাবেন। আমি মানুষকে ভালোবাসতে চাই কিন্তু আফসোস বাবা মা ছাড়া কেউ আমাকে বুঝতে পারে না।
যখন থেকেই বুঝি তখন থেকেই মানুষের মুখে মুখে কিংবা গল্প উপন্যাসে,নাটক সিনেমায় একটা কথা শুনেছি এসেছি। বাসর রাত অনেক পবিত্র একটা রাত। এই রাত প্রতিটা মানুষের জীবনে একবারই আসে। এই রাতে দুজন মানুষ প্রথম বারের মতো ভালোবাসা বিনিময় করে,একজন আরেকজনকে জীবনের সব না বলা গল্পগুলো বলে। তবে আমার বাসর রাতটা এতো মধুর হয়নি যতোটা এ যাবৎ কাল মানুষের মুখে মুখে শুনে এসেছি। অবশ্য আগে থেকেই জানতাম এমন কিছু হবে আমার সাথে। তাই এটা নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নই আমি। বিবাহিত জীবন বাহির থেকে সুখের দেখা গেলেও ভিতর থেকে যে সুখী না সেটা আমি খুব করে ভালো করেই জানি।
সকালে ঘুম থেকে উঠতে অনেকটা দেরি হয়ে যায়। বাহিরে বের হতেই দেখলাম মায়ের সাথে রোদেলা গল্প করছে। আমি ভেবেছিলাম আমার মতো হয়তো বাবা মায়ের সাথেও রোদেলা ভালোভাবে কথা বলবে না। কিন্তু যখন নিজে চোখে দেখলাম মার সাথে মেয়েটা খুশি মনে কথা বলছে তখন নিজের ধারণটাকে আজগুবি মনে হলো। হোক না এটা অভিনয় তবুও আমি অনেক খুশি, মেয়েটা আমার মাকে খুশি করার জন্য অভিনয় করুক কিংবা সত্যি সত্যিই মন থেকে কথা বলুক এতে আমার কিছু যায় আসে না। সে আমার মায়ের সাথে কথা বলছে এটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
মেয়েদের জীবনটা কতো অদ্ভূত? সারাজীবন যে বাড়িটাকে আপন মনে করে বেড়ে উঠে, একসময় সেই বাড়িটাকেই ছেড়ে চলে যেতে হয় নতুন ঠিকানায়। নতুন ঠিকানায় নতুন নতুন সব মানুষের সাথে মানিয়ে নিতে হয়। একসময় নিজের বাবার বাড়ি ভুলে গিয়ে নিজের স্বামীর বাড়িকেই নিজের স্থায়ী ঠিকানা মনে করতে থাকে। আমি শুধু রোদেলা মেয়েটার কথা ভাবছি। এখন প্রায় বিকেল। শহর এলাকায় নতুন বউকে দেখার জন্য মানুষ কেমন করে জানি না তবে গ্রাম অঞ্চলে মনে হয় গ্রামের সহজ সরল মানুষগুলো একটু বেশিই করে। সেই সকাল থেকে রোদেলাকে দেখার জন্য কোথায় কোথায় থেকে মানুষ আসছে। এখনো আসছেই। আমি সবচাইতে বেশি অবাক হচ্ছি রোদেলাকে দেখে,সে এসবে বিরক্ত হচ্ছে না,বরং সবার সাথেই খুশি মনে কথা বলছে। আমি নিশ্চিত রোদেলার জায়গায় আমি থাকলে অনেক বেশি বিরক্ত হতাম। এজন্যই হয়তো মানুষ বলে মেয়ে হলে অনেক কিছুই সহ্য করতে হয়।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ রোদেলা।
- ধন্যবাদ কেনো? কি এমন মহান কাজ করলাম যে ধন্যবাদ দিলেন।
- এই যে এতো কিছু খুব ভালোভাবে হ্যান্ডেল করলেন তার জন্য।
- সম্পর্কটা আমাদের মাঝেই থাকুক। শুধু আমরাই জানি আমরা এই বিয়েতে সুখী না। দুই পরিবারের মানুষ গুলো অন্তত জানুক আমরা সুখে আছি। আপনার কথা গুলো রাতে আমি অনেক ভোবেছি,তবে আমি আপনার সাথে থাকবো না। কোনো একদিন চলে যাবো। সেটা হোক ছয় মাস পর,এক বছর পর,পাঁচ বছর কিংবা দশ বছর পর। আমি আপনাকে ছেড়ে চলে যাবো এটাই সত্য।
- সেই সুযোগটা আমি আপনাকে দিবো না। আপনি আমার বিয়ে করা বউ। আপনি চাইলেই কারো সাথে চলে যেতে পারেন না। আপনার ওপর আমি জোর করে কোনো অধিকার আদায় করবো না তবে আপনাকে আমার সাথেই থাকতে হবে। আমি বিয়েটা আমার জন্য করিনি।
- তাহলে কার জন্য করেছেন শুনি? বাবা মায়ের জন্য?
- এসব নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না। আপনি তো ঢাবিতে পড়েন?
- হ্যাঁ,বলেছিলাম তো,এতো তাড়াতাড়িই ভুলে গেলেন?
- ভুলিনি,শুধু ক্লিয়ার হতে চাইলাম।
- আপনার জন্য তো আমার পড়ালেখাটা হলো না। এই গ্রামে পঁচে মরতে হবে আমাকে। কতো ইচ্ছে ছিলো অনার্সটা শেষ করে নিজের পায়ে দাঁড়াবো,একটা চাকরি করে প্রথম বেতনের টাকায় বাবা মাকে কিছু দিবো। কিন্তু এখন মনে হয় মেয়ে হয়ে জন্ম নিয়ে এমন স্বপ্ন দেখাটা পাপ।
- আপনাকে কে বলল এখানে এই গ্রামে পঁচে মরতে হবে? আমি আপনাকে পড়ার সুযোগ করে দিবো। আপনি আবার ঢাকায় যাবেন। তবে আমার একটা শর্ত আছে।
- কি শর্ত? আপনাকে আমি স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারবো না। এটা বাদে যে কোনো শর্ত আমি মেনে নিবো।
- আমাকে না বলে আপনি কারো সাথে পালিয়ে যেতে পারবেন না। আপনি যদি আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চান সেটা আমাকে বলতে হবে। আমাকে না বলে অন্য কারো সাথে আপনি চলে যেতে পারবেন না।
- আমি পালাবো না। পালানোর আগে আপনাকে জানাবো। কথা দিলাম।
- আমি আমার পোস্টিং ঢাকায় নিয়েছি। শুধু আপনার জন্য। আপনি যেনো আপনার স্বপ্ন পূ্রণের দিকে এগিয়ে যেতে পারেন,কোনোদিন যেনো বলতে না পারেন আমি আপনার স্বপ্ন গুলো পূরণ করতে দেইনি।
- আমি অনেক কৃতজ্ঞ আপনার কাছে। তবে আমার কাছ থেকে প্লিজ কখনো স্ত্রীর মতো কোনো কিছু আশা করবেন না।
- এটলিস্ট বন্ধুর মতো ব্যবহার তো আশা করতে পারি।
- হ্যাঁ,তা পারেন।
মনে মনে বললাম,এটা আপনাকে কাছে পাওয়ার প্রথম ধাপ।
আমার এমন সিদ্বান্ত বাবা সহজভাবে মেনে নিলেও মা কিছুটা মন খারাপ করলেন। তাঁর কথামতো আমার ঢাকাতে পোস্টিং নেওয়াটা মোটেই উচিত হয়নি। এখানে বাবা মায়ের সাথে থাকলেই তো পারতাম। কি দরকার ছিলো ইট পাথরে শহরে যাওয়ার। যেখানে এক ছাদের নিচে থাকলেও কেউ কাউকে চিনে না,কেউ কারো বিপদে এগিয়ে আসে না। সবাই শুধু নিজেদেরকে নিয়ে ব্যস্ত। অথচ গ্রামের মানুষগুলো কতো আলাদা। সবাই সবাইকে চিনে,সবাই সবার বিপদে এগিয়ে আসে। মাকে যখন বললাম,
" আমি আমার জন্য ঢাকা যাচ্ছি না মা। রোদেলার জন্য যাচ্ছি। মেয়েটার অনেক স্বপ্ন। আমি যদি এখানে থাকি তাহলে কি আর তোমরা তাকে একা ঢাকাতে থাকতে দিবে? আর তোমরা দিলেও তো মানুষজন অনেক আজেবাজে কথা বলবে। বলবে বিয়ের পর হাসবেন্ড এর সাথে না থেকে ঢাকায় যায় পড়তে। রোদেলার মা বাবাও এমনটা চায় না। তুমি কি চাও তোমার ছেলের জন্য কোনো মেয়ের স্বপ্ন ধ্বংস হোক? জানি চাইবে না। তাই আমি এমন সিদ্বান্ত নিয়েছি। আর আমাদের সাথে তোমরাও যাবে।"
বাবা মা আমাদের সাথে যাবে না। সেটা আগে থেকেই জানতাম আমি। কারণ তারা এই ভিটেমাটি ছেড়ে কোথাও যাবে না। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তারা এখানেই থাকতে চায়। তাই আমি তাদেরকে জোর করলাম না। তবে আমার চলে যাওয়াতে মা খুব একটা খুশি না। তবে যখন মাকে বললাম আমি প্রতি মাসেই তোমাকে দেখার জন্য চলে আসবো। তখন মায়ের মুখ কিছুটা উজ্জ্বল হলো।
কিছুক্ষণ পর আমি আর রোদেলা এতো পরিচিত জায়গাটা ছেড়ে ঢাকা চলে যাবো। শুনতে অবাস্তব লাগলেও আমি ঢাকা শহরটা খুব ভালো ভাবে চিনি না। এর আগে আমি ঢাকাতে গেলেও খুব একটা ঘুরে দেখতে পারিনি। তাই শহরটা আমার কাছে অপরিচিতই বলা যায়। তবে রোদেলার কাছে নতুন না। সে ঢাকাতে অনেক দিন ছিলো। ট্রেনে যেতে চাইলেও রোদেলার বাবা আমাদের জন্য একটা প্রাইভেট কারের সাথে একটা ছোটোখাটো ট্রাকেরও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন যেটা সরাসরি বাসার সামনে নামিয়ে দিবে। যেহেত অনেক মালপত্র নিতে হচ্ছে তাই এমন ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। অবশ্য ভালোই হয়েছে এটা করাতে।
কিন্তু কিছুক্ষণ পর যখন দেখলাম নুসরাত আমাদের দিকে আসছে তখন আমার কেনো জানি ভালো লাগলো না। তাঁর এই অসময়ে এখানে আসার কারণটা আমি বুঝলাম না। সে তো আবার কোনো ঝামেলা করতে আসেনি। ধুর কি ভাবছি আমি। তাঁর সাথে আমার তেমন কোনো কিছু নেই যে সে ঝামেলা পাকাবে।
রোদেলার বাবা যখন বলল,
" নুসরাতকে তো চেনই। আমার বোনের মেয়ে। ঢাকা মেডিক্যালে পড়ে। ওরও ঢাকা যেতে হবে। তাই ভাবলাম একা একা যাওয়ার থেকে তোমাদের সাথেই যাক।"
আমি কিছু বললাম না। নুসরাতকে দেখে রোদেলা অনেকটা খুশি হয়েছে। মনে হচ্ছে অনেকদিন পর কাছের কোনো মানুষকে দেখতে পেলো সে। নুসরাতকে দেখে আমার মনে হলো আমার যাত্রাটা ভালো হবে না। পুরো রাস্তাটা আমাকে অস্বস্তিতে ভুগতে হবে। তবে রোদেলার জন্য নুসরাত এর সঙ্গটা যে ভালো হয়েছে সেটা তাদের দুজনের দিকে তাকালেই বোঝা যাচ্ছে।
আমার পেছনে আমার প্রাক্তন এবং বর্তমান বসে আছে। হ্যাঁ আমি ড্রাইভারের পাশের সিটে বসেছি আমার পেছনের সিটে বসেছে নুসরাত আর রোদেলা। তাদের কথাগুলো কেনো জানি আমার বিরক্ত লাগছে। কি এমন বলছে যা আমি শুনতে পাচ্ছি না। রোদেলা কি নুসরাতের কাছে আমার কথা বদনাম করছে কিংবা নুসরাত রোদেলার কাছে। এই দুইজন মানুষের কাছে তো আমি ভালো মানুষ না। এই দুইজন মানুষ আমাকে কেনো জানি আপন ভাবতে পারে না। অথচ আমি দুজনকেই আপন ভাবতে চাই। নুসরাতকে একসময় কতোই না ভালোবাসতাম,নিজের করে চাইতাম কিন্তু সে আমাকে বুঝেনি তাই তাকে আমার খাঁচা থেকে মুক্ত করে দিয়েছি। আর এখন রোদেলাকে যখন নিজের মনের খাঁচায় বন্দী করতে চাইছি,তখন সে ডানামেলে আকাশে উড়তে চাইছে।
সবুজ ঘাস,লতাপাতা সবকিছু ভেদ করে পিচ ঢালা কংক্রিটের রাস্তা দিয়ে অনবরত এগিয়ে চলেছে গাড়িটা। গন্তব্য ঢাকা। কিন্তু আমাদের যাত্রা পথে যে এতোটা বিরতি নিতে হবে কখনো ভাবিনি। প্রথমে জ্যাম দেখে ভাবলাম হয়তো বেশি সময় থাকবে না। কিন্তু যখন দুপর থেকে বিকেল হয়,বিকেল থেকে সন্ধ্যা হয় কিন্তু ট্রাফিক জ্যাম কমে না তখন কেনো জানি চিন্তা হতে লাগলো। দুইটা মেয়ে নিয়ে এই অন্ধকারে রাত কাটানোটা হয়তো অনেক বেশি ঝামেলায় ফেলবে। যদিও আমার বাসা টাংগাইল তবে আফসোস এর বিষয় হলো টাংগাইলের মির্জাপুরে আমার তেমন পরিচিত কেউ নেই যার বাসায় রাতটা কাটানো যাবে। সকাল দশটার আগের গাড়ি এক চুলও নড়বে না। কুয়াশার কারণ কয়েকটা গাড়ি একসাথে এক্সিডেন্ট করেছে যার কারণে পুরো রাস্তায় জ্যাম লেগে গিয়েছে। যখন চিন্তা করছিলাম আজকের রাতটা কিভাবে কোথায় কাটাবো তখন রোদেলা বলল তাঁর নাকি এখানে এক আত্মীয় বাড়ি আছে তবে তাদের কারো ফোন নাম্বার নেই। শুধু জানে মির্জাপুরের হাঠুভাঙাতে বাড়ি।
আমরা যেখানে এখন আছি সেখান থেকে খুব বেশি দূরে নয় রোদেলার আত্মীয় বাড়ি। তাই গাড়ি থেকে নেমে গেলাম সবাই। অনেক খোঁজার পর প্রায় রাত এগারোটার সময় সেই কাঙ্ক্ষিত ঠিকানাটা পেয়ে যাই। আমরা যে বাড়িতে এসেছি সে বাড়িতে খুব বেশি মানুষ নেই। দুইজন বয়স্ক মানুষ ছাড়া আর কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। আমাদের অনেক আদর যত্ন করলো। আমাদেরকে পেয়ে তারা অনেক খুশি হয়েছে। কারণ এতো বড় বাড়ি সবসময় ফাঁকা থাকে। আমাদের পেয়ে হয়তো কিছুটা হলেও বাড়িটা পূর্ণতা পেয়েছে।
রোদেলার বিয়ে হয়েছে যেহেতু তারা জানে তাই রোদেলার কাছে যখন জানতে চাইলো আমিই তাঁর স্বামী নাকি তখন রোদেলা অনেকটা বিরক্তি নিয়ে হ্যাঁ বলল।
আমি আর রোদেলা এক রুমে থাকলেও নুসরাতকে থাকতে হলো আলাদা রুমে। রোদেলা হয়তো বলতে চেয়েছিলো সে আমার সাথে ঘুমাবে না,নুসরাতের সাথে ঘুমাবে। কিন্তু কোনো এক কারণে কথাটা বলতে পারেনি। কিন্তু যখন দেখলাম এক বিছানায় এক কাথার নিচেই ঘুমাতে হবে তখন অনেক বড় বিপদে পড়ে গেলাম। যেহেতু এখন শীতের দিন তাই কাথা ছাড়া ঘুমানো কখনোই সম্ভব না। আমি চুপচাপ কথা না বলে লেপের নিচে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।
সমস্যা কি আপনার? আমি আপনার সাথে এক লেপের নিচে ঘুমাবো?
- তাছাড়া কোনো উপায় দেখছি না।
- আপনারা পুরুষরা কি সবসময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন নাকি। মেয়েদেরকে কি মনে করেন?
- একটু বেশি বলেছেন। আমি আপনার থেকে যদি সুযোগ নিতে চাইতাম তাহলে প্রথম রাতেই নিতাম,এতোদিন অপেক্ষা করতাম না।
- আমি নুসরাতের সাথে ঘুমাবো।
- সেটা আগে বললেন না কেনো? তাহলে তো আর এতো ঝামেলায় পড়তে হয় না।
- ওনারা তো জানেন আমাদের নতুন বিয়ে হয়েছে। এখন যদি হাসবেন্ড এর সাথে না ঘুমাই তাহলে হয়তো নেগেটিভ কিছু ভাববে।
- ওনারা নেগেটিভ ভাবলেই কি না আর না ভাবলেই কি?
- ওনারা কে জানেন?
- কে?
- আমার মায়ের আপন খালা আর খালু,মানে আমার নানা-নানী। কোনো সমস্যা দেখলেই মাকে ফোন দিয়ে সব বলবে। বলবে মেয়ের হাসবেন্ড পছন্দ হয়নাই। নতুন বিয়ে হওয়ার পরেও হাসবেন্ড এর সাথে থাকতে চায় না।
- একটা রাতই তো এমন কিছু ভাবতো না।
- আপনি এখন চলেন নুসরাতকে ডেকে তুলবো। ওর সাথে ঘুমাবো।
- পাগল নাকি। ওর রুমে যেতে হলে তো আপনার নানা-নানীর রুমের ভিতর দিয়ে যেতে হবে।
- বলবো আমাদের রাগারাগি হয়েছে তাই আজ আলাদা ঘুমাবো।
- এই বুদ্ধি আগে কোথায় ছিলো?
- মনে ছিলো না।
- আপনি নুসরাতের সাথে ঘুমাতে পারবেন না।
- কেনো?
- সমস্যা আছে।
- কি সমস্যা?
- বলবো না। আপনি ওপরেই ঘুমান, আমার কষ্ট হলেও আজকের রাতটা কোনোমতে পাড় করে দিবো,তবুও আমি আপনাকে নুসরাতের সাথে ঘুমাতো দিবো না।
রোদেলা আমার কথা চিন্তা না করেই আরাম করে ঘুমিয়ে যায়। একজন মানুষ যে তাঁর জন্য সারারাত শীতে কষ্ট করবে এইদিকে তাঁর কোনো মনোযোগ নেই। সেদিন রাতটা আমার অনেক কষ্ট হয়েছিলো। তবুও আমি রোদেলাকে নুসরাতের রুমে যেতে দেইনি। কারণ আমি নুসরাতক বুঝাতে চেয়েছি আমি তাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করে অনেক সুখে আছি। আমি তাকে মনে রাখিনি। তাঁর জন্য চোখের জল ফেলি না। জানি না আমি সফল হয়েছি কিনা। তবে আমি নুসরাতের কাছে সবসময় নিজেকে সুখী মানুষ হিসেবে প্রতিস্থাপন করতে চাই।
দুপুরের দিকে আমরা গাড়িতে উঠি। আমি গাড়িতে উঠেই ঘুমানোর চেষ্টা করি। যেহেতু সারারাত ঘুমাইনি। তাই হয়তো ঘুম আসছিলো না। একটা জিনিস ভেবে খুব খারাপ লাগছে। আমি এমন একজন মানুষের জন্য শীতের রাতটা এতো কষ্ট করে কাটিয়েছি যে মানুষটা আমাকে ধন্যবাদ পর্যন্ত জানায়নি। হ্যাঁ আমি রোদেলার কথা বলছি। সকালে ভেবেছিলাম তাঁর ঘুম ভাঙলে আমি কিছু সময় ঘুমিয়ে নিবো কিন্তু তাঁর ঘুম ভাঙেনি। আমারও আর ঘুমানো হয়নি। একসময় গাড়িতেই আমি ঘুমিয়ে যায়। অনেকটা সময় ঘুমানোর পরে কারো ধাক্কা অনুভব করি। দেখলাম রোদেলা আমার কাঁধে হাত রেখেছে।
"ঢাকা চলে এসেছি। এবার আর না ঘুমিয়ে কোথায় যাবো ড্রাইভারকে বলেন।"
রোদেলার কথাতে আমার ঘুম পুরোপুরি চলে গেলো।
মালপত্র সব বাসার ভিতরে নিতে নিতে অনেক রাত হয়ে গেলো। বাসাটা আগে থেকেই গোছানো ছিলো। অন্তত মানুষ থাকার মতো। তাই বেশি চিন্তা করলাম না। থাকার মতো ব্যবস্থা যেহেতু আছে সেহেতু আজকের রাতটা অন্তত ঘুমিয়ে কাটাতে পারবো।
নুসরাত চলে গিয়েছে। রোদেলা থাকতে বললেও আমি চাচ্ছিলাম সে যেনো না থাকে। আমার চাওয়াটাই পূরণ হলো।
আপনার জন্য একটা সুসংবাদ আছে।
- কি?
- সত্যি বলতে আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই। আমি চাইনি এতো আগে বিয়ে করে নিজের জীবনটা অন্য কারো হাতে তুলে দিতে। তাই যেকোনো কিছু বিনিময়ে বিয়েটা করতে চাইনি। কিন্তু আপনার জন্য পারিনি।
- বিয়ে করলে বুঝি নিজের জীবনটা অন্য কারো হাতে তুলে দেওয়া হয়? আপনার যে কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই সেটা আগেই বুঝতে পেরেছিলাম।
- তাই তো। বিয়ের পর নিজের ইচ্ছার কোনো দাম থাকে না। সব কিছুতেই হাসবেন্ড অধিকার খাটাতে চাইবে। যেমনটা আপনি চান।
- বিয়ে মানে হচ্ছে একজন আরেকজনকে বুঝা। স্ত্রীরাই কি শুধু স্বামীর কথা শুনে? স্বামীরা কি স্ত্রীর কথা শুনে না? স্বামী স্ত্রীর জন্য সেকরিফাইস করবে,স্ত্রী স্বামীর জন্য সেকরিফাইস করবে এটাই তো নিয়ম। এটা না করলে দাম্পত্য জীবন কখনো সুখের হয় না।
- এসব নীতি কথা আমাকে শুনিয়ে কোনো লাভ নেই। আমার আপনাকে আগেও ভালো লাগেনি ভবিষ্যতেও লাগবে না। বিয়েটা করেছি পরিবারের চাপে পড়ে। সবসময় শুধু শুনে এসেছি অনেক মেয়ে আছে যারা শুধু মাত্র ফ্যামিলির চাপে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকেও ছেড়ে দেয়। যদিও আমার কোনো ভালোবাসার মানুষ ছিলো না। তবে আমি আমার নিজের জীবনটা কোরবানি দিয়েছি নিজের হাতে শুধু মাত্র পরিবারের জন্য। আমি আপনাকে বলেছিলাম না,আমাকে বিয়ে করলে ইহকালেই আপনি নরক যন্ত্রণা ভোগ করবেন। প্রস্তুত হন আমার খারাপ রুপ দেখার জন্য। আমি কতোটা খারাপ সেটা আপনি ভাবতেও পারবেন না। এইখানে যাই করি না কেনো কেউ দেখতে পারবে না,জানতে পারবে না। অত্যাচার কাকে বলে আপনি বুঝতে পারবেন। আমার হুদয়ে কখনোই আপনি জায়গা পাবেন না। আর একটা কথা আমি আপনাকে রান্না করে খাওয়াতে পারবো না। রান্না করে খাওয়ার জন্য আমি আপনার কাজের মেয়ে না।
আমি কোনো কথা না বলে রোদেলার ঠোঁটে চুমু খাই। জীবনে প্রথম কোনো মেয়ের ঠোঁঠের স্পর্শ নিলাম। সব সময় সিনেমায় দেখে এসেছি জোর করে আদর করতে,জোর করে ভালোবাসতে। কিন্তু কখনো ভাবিনি আমিও কাউকে জোর করে আদর করবো।
"অত্যাচার কি শুধু আপনিই করতে পারেন? আমি পারি না? এই যে আমি আপনাকে চুমু খেলাম এটা আপনি কাউকে বলতে পারবেন না। যদি বলেন আমার স্বামী আমাকে জোর করে চুমু খেয়েছে তাহলে মানুষ আপনাকেই পাগল বলবে। কারণ একজন স্বামীর স্ত্রীর ওপর এই অধিকারটা আছে। দেখা যাক ভবিষ্যতে কে কাকে অত্যাচার করে।"
কথাগুলো বলে আমি আমার মতো ঘুমিয়ে পড়ি। মেয়েটার অসহায় রাগান্বিত চেহারাটা দেখতে ইচ্ছে করছিলো না তাই তাঁর দিকে না তাকিয়ে মুখটা ঢেকে ঘুমের ঘরে তলিয়ে যাই।
জীবনটা কি থেকে কি হয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম না। ভেবেছিলাম বিয়ের পর বউকে ভালোবেসে অতীতের সব কিছু মন থেকে মুছে ফেলবো,নতুন করে নিজের জীবনটাকে রঙিন করে রাঙাবো। যদিও আমার মনে হয় আমি অতীতের সবকিছু ভুলে গিয়েছি তবুও কিছু কিছু স্মৃতি থাকে যেগুলো জীবন থেকে কখনো মুছে ফেলা যায় না। কিন্তু আমি মুছে ফেলেছিলাম অতীতের সব স্মৃতি তবুও আমি আমার সাদাকালো জাঁকজমকহীন সাধারণ জীবনটাকে রঙিন করতে পারিনি। তাহলে কি নুসরাতের কথায় সত্য? আমি এখনো নিজেকে কারো সাথে মানিয়ে নিতে পারি না। কি নেই আমার? দেখতে শুনতে ভালো,চলাফেরায়,আচার আচরণে সবকিছুতেই ভালো,মানুষ হিসেবেও ভালো। জীবনে প্রতিষ্ঠিত সফল একজন মানুষ। তবুও আমি রোদেলাকে আপন করে নিতে ব্যর্থ। তাঁর মনের মতো না,সে আমাকে ভালোবাসতে চায় না,কাছে টানতে চায় না। মেয়েরা আসলে কেমন ছেলে পছন্দ করে খুব করে জানতে ইচ্ছে করে আমার। রোদেলা কি চাইলে আমাকে ভালোবেসে তাঁর বুকে আশ্রয় দিতে পারে না? তাহলে সে কেনো এমন করে আমার জানা নেই। সে কি জানে না আমি ভালোবাসার কাঙাল। আমি তাঁর থেকে ভালোবাসা পেতে চাই,তাকে ভালোবাসা দিতে চাই। আমার হৃদয়ের সমস্ত মধু আহরণের দায়িত্ব আমি তাকে দিতে চাই। কিন্তু আমি যতোই তাঁর কাছে যেতে চাই সে ততোই আমার থেকে দূরে যেতে চায়।
সেদিনের পর থেকে সে আমার সাথে কথা বলা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। পুরোপুরি মানে একদমই,বিগত সাত দিন ধরে আমাদের দুজনের কোনো কথা হয় না। আপনার আপনজন যখন আপনার আশেপাশে থাকবে,আপনার সাথে প্রতিনিয়ত দেখা হবে কিন্তু কোনো কথা বলবে না তখন খুব খারাপ লাগবে। মনে হবে নীরবে শাস্তি দিয়ে যাচ্ছে মানুষটা। এক ছাদের নিচে বাস করলেও রোদেলা আমার থেকে যোজন যোজন দুরত্ব বিরাজ করে চলেছে প্রতিনিয়ত। যদিও ওইদিন আমার ওইভাবে তাকে চুমু খাওয়া উচিত হয়নি তবে এমনটা না করে উপায়ও ছিলো না। এটা করার কারণে অন্তত সে আমাকে একটু হলেও ভয় পাবে। এটা যদি না করতাম তাহলে হয়তো সে এমন কিছু করতো যেটা আমি কল্পনাও করতে পারতাম না কিন্তু সে এখন সেটা করতে পারবে না। কারণ তাঁর মনে হয়তো ভয় ঢুগে গেছে,তাঁর ওপর আমি চাইলেই ঝাপিয়ে পড়তে পারি,নিজের অধিকারটা আদায় করতে পারি। যদিও আমি কখনো এমনটা চাই না,আমি শুধু বুঝাতে চেয়েছি আমি চাইলে এটা করতে পারি। সারাদিন চিৎকার চেঁচামেচি করলেও এই ইট পাথরের দেয়াল ভেদ করে সেটা বাহিরে যাবে না। সে এই জিনিসটা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে।
আজ সাতদিন হয়ে গেছে কোনো বাজার করি না। ঘরে যা ছিলো সেগুলো দিয়েই কোনোমতে চলে গিয়েছে। রোদেলা নিজের জন্য শুধু রান্না করে,আমার জন্য করে না। সকালে হালকা ফল জাতীয় কিছু খেয়ে অফিসে চলে যাই,কারণ রোদেলা দশটার আগে ঘুম থেকেই উঠে না। হয়তো বা ইচ্ছে করেই ঘুমিয়ে থাকে যাতে করে আমি তাকে রান্নার কথা না বলতে পারি। দুপুরে অফিসেই লাঞ্চ করে নেই। কারণ আমি জানি বাসায় গেলে রোদেলা আমার জন্য রান্না করে রেখে দিবে এতোটা সৌভাগ্য আমার হয়নি। তাই বাঁধ্য হয়েই বাহিরে খেতে হয় আমাকে। আর রাতে বাসায় এসে নিজেই রান্না করে খাই। এভাবেই চলছিলো আমাদের সংসার জীবন। যে জীবনে কোনো সুখ নেই কোনো শান্তি নেই,আছে শুধু জেদ আর দ্বন্দ্ব। অথচ বিয়ের আগে মনে হতো দাম্পত্য জীবন অনেক সুখের হয়। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন,গল্প উপন্যাস কিংবা নাটক সিনেমায় দাম্পত্য জীবন সুখের দেখা গেলেও বাস্তবে এতো সুখের হয় না। বাস্তবে বিবাহিত জীবন মানে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। যেখান থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
সাতদিন পর আমি আমার বউ এর মুখ থেকে কোনো কথা শুনলাম। প্রয়োজনে যে নিজের চরম শত্রুর কাছেও মানুষ মাথানত করতে দ্বিধাবোধ করে না। তার প্রমাণ আমার সামনে উপস্থিত। রোদেলাও হয়তো না পেরে আমার সাথে কথা বলেছে,কারণ এখন আমাকে তাঁর ভীষণ দরকার। ঘরে বাজার না থাকার কারণে রান্না বান্না কিছু হচ্ছে না,আমি বাহিরে খেলেও রোদেলা বাহিরে খেতে পারে না। শুধু টাকা থাকলেই বাহিরে খাওয়া যায় না। পুরুষ মানুষ বাহিরে খেলে জিনিসটা যেরকম দেখায় মেয়ে মানুষ বাহিরে খেলে জিনিসটা ততো ভালো দেখায় না। আমার কাছে মেয়ে মানুষের হোটেলে ভাত খাওয়া জিনিসটা একদম বাজে দেখায়। কোথাও ঘুরতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে খেলে সেটা আলাদা কথা। কিন্তু একটা মেয়ে বাসা থেকে হোটেলে গিয়ে খাবার খাবে জিনিসটা খুব খারাপ দেখায় অন্তত আমার কাছে। রোদেলার কাছেও এই জিনিসটা হয়তো ভালো লাগে না। তাই সে বাঁধ্য হয়ে আমার সাথে কথা বলল।
আপনি বাজার করছেন না কেনো? প্রথমদিন তো খুব বাজার করলেন। আমাকে একা রেখে রাতে বাজার করতে চলে গিয়েছিলেন। আর এখন কোনো কিছু না থাকার পরেও কেনো বাজার করছেন না?
- সেদিনের ব্যাপার আর আজকের ব্যাপার অনেক আলাদা। সেদিন রান্না করার মানুষ ছিলো কিন্তু আজ নেই। সেদিনের আপনি আর আজকের আপনির মধ্যে অনেক পার্থক্য। যেহেতু আপনি শুধু নিজের জন্য রান্না করবেন,নিজে খাবেন। সেহেতু বাজারটা আপনিই করেন। আমি টাকা দিচ্ছি,আপনার দরকার হলে আপনি বাজারে যান,যা ইচ্ছা বাজার করে নিয়ে আসেন।
- আপনি তো খুব খারাপ মানুষ। মেয়ে হয়ে বাজারে যাবো? আপনি নাকি অনেক দায়িত্বশীল পুরুষ। তো কোথায় গেলো আপনার দায়িত্ব? একটা মেয়েকে না খেয়ে রেখে নিজেকে দায়িত্ববান পুরুষ ভাবছেন।
- দায়িত্ব তো আর নিতে দেন নাই। নিতে দিলে কি আর এরকম করতেন।
- কি রকম করি? আপনি যেই কাজটা ওইদিন করেছেন তাঁর জন্য আপনার সাথে কথা বলাই উচিত না। একটা নিরীহ মেয়েকে একা পেয়ে কি কাজটাই না করলেন। সেটা মনে হলেই আপনার জন্য আমার মনে প্রচন্ড ঘৃণা কাজ করে।
- আপনি নিরীহ? আপনাকে নিরীহ বলা হলে পৃৃথিবীর সমস্ত নিরীহ মেয়েদেরকে অপমান করা হবে। আপনার ভিতরে জেলাপির প্যাঁচ ব্যতীত কিছু নেই। ওই দিনের ঘটনাটা ভুলে গেলেই পারেন,শুধু শুধু মনে করে আমাকে ঘৃণা করার কোনো দরকার নেই। হাসবেন্ডকে ভালোবাসতে হয়,ঘৃণা করতে হয় না।
- আপনি বাজার করে নিয়ে আসুন। আমি দুজনের জন্যই রান্না করবো।
- কিভাবে বিশ্বাস করবো?
- এখানে বিশ্বাস না করার কি আছে? আমি বললাম তো রান্না করলে দুজনের জন্যই করবো। আপনি যদি বাজার না করেন আজকে তাহলে আমি বাসায় ফোন দিবো। বলবো আপনি আমাকে না খাইয়ে রেখেছেন। তখন আপনিই তাদের সাথে কথা বইলেন।
আমি বাজার করতে বেরিয়ে গেলাম। মেয়েটার জন্য অনেক মায়া লাগছে। সেই সকাল থেকে না খেয়ে আছে,যদিও আমিও কিছু খাইনি। তবে নিজের জন্য খারাপ লাগছে না। অতীতে টানা দুইদিন পর্যন্ত না খেয়ে কাটানোর অভ্যাস আছে আমার। তাই এক বেলা দুবেলা না খেলে খুব বেশি কষ্ট হয় না আমার। যতোটা সম্ভব বেশি করেই বাজার নিয়ে আসলাম। বাজার নিয়ে আসার সাথে সাথেই রোদেলা রান্না শুরু করে দিলো। আমি ভাবলাম কতো ক্ষুধাই না জানি লেগেছে,আমার আরও আগে বাজার করা উচিত ছিলো। এভাবে একটা মেয়েকে না খাইয়ে রাখা আসলেই কোনো দায়িত্ববান পুরুষের কাজ না।
আমি রান্না ঘরে যেতেই রোদেলা বলল,
আপনি এখানে কেনো?
- আমারও অনেক ক্ষুধা লেগেছে। তাই সহ্য হচ্ছে না,তাড়াতাড়ি রান্না করুণ।
- আপনি তো খুব স্বার্থপর একজন মানুষ।
- কি এমন করলাম যে হঠাৎ করেই আমাকে সেলফিস মানুষ মনে হলো।
- আপনি জানেন আমি সকাল থেকে না খেয়ে আছি। তাহলে বাহিরে যেহেতু গিয়েছিলেনই খাওয়ার জন্য কিছু নিয়ে আসলেই তো পারতেন। কিন্তু তা করেন নি। আপনি তো ঠিকই খেয়ে এসেছেন মনে হয়।
- আমার মনে ছিলো না। আপনি বললেই তো হতো। তাহলে নিয়ে আসতাম।
- এগুলো বলতে হয় না। আমি আপনার জন্য রান্না করবো না। যা রান্না করছি সেটা দিয়ে আমারই হবে নাকি কে জানে। আমি খাওয়ার পর বাঁচলে আপনি খাবেন না হলে আপনি নিজে রান্না করে খাবেন।
- আপনাকে দেখে মনে হয় না আপনি এতোটা খাদক। আর তাছাড়া আপনি কিন্ত বলেছিলেন,আর আমি আপনাকে বিশ্বাসও করেছিলাম। সেজন্যই এতো কষ্ট করে বাজার করে নিয়ে এসেছি।
- খুব রাগ হচ্ছে আমার ওপর? কিছু করতে মন চাচ্ছে? সেদিনও আমার অনেক রাগ হয়েছিলো,মনে হয়েছিলো আপনাকে খুন করে ফেলি। যেই জিনিসটার জন্য মানুষ এতো কিছু করে,কতোটা কাছের হতে হয়,কতোটা ভালোবাসতে হয় দুজন দুজনকে। তাহলেই কেবল লিপ কিস করা যায়। এই জিনিসটা কি আপনি বোঝেন? বুঝেন না,আপনার মতো পুরুষেরা ভালোবাসা বলতে কিছু বোঝে না,বোঝেন শুধু ভোগ করতে। আমার আর আপনার মধ্যে এসবের কিছুই ছিলো না,তবুও আপনি এই কাজটা করেছেন। খুব জঘন্য, খুব খুব খারাপ মানুষ আপনি।
- আজও যদি এমন কিছু করি?
- করেন,আমি প্রস্তুত। চুমু খাবেন তো? খেতে পারেন,সমস্যা নাই। আমি না করবো না। যেই জিনিসটা এতো যত্ন করে রেখেছিলাম নিজের ভালোবাসার মানুষের জন্য। ভেবেছিলাম পৃৃথিবীর অন্য কোনো পুরষ সেখানে কখনো কোনোদিনও অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। কিন্তু আপনি সেটাকে অপবিত্র করে দিয়েছেন। অবৈধ ভাবে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। এখন আর আগের মতো যত্ন করার কোনো মানে হয় না। আপনার জন্য উন্মুক্ত, চাইলে ব্যবহার করতে পারেন।
আমি স্তব্ধ হয়ে রোদেলার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। দিন যতো যাচ্ছে এই মেয়েটাকে ততো ডেঞ্জারাস মনে হচ্ছে আমার কাছে। অথচ এই মেয়েটা নিজেকে নিরীহ দাবি করে।
আমি রোদেলার এমন করাটা মেনে নিতে পারছি না,সে কেনো এমন করছে সেটাও বুঝতে পারছি না। সে না আমাকে ভালোবেসে নিজের স্বামী হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে,না আমার থেকে ডিভোর্স চাইছে। সে আমার সাথে থাকতে চায় অথচ আমাকে স্বামী হিসেবে মানতে চায় না। শুধু নিজের সুবিধার জন্য সে এমন করছে নাকি ভবিষ্যতে তাঁর কোনো মাস্টার প্ল্যান আছে সেটাও আন্দাজ করতে পারছি না। কোনো এক উপন্যাসে পড়েছিলাম,একজন মানুষের যে কোনো সময়ে,যে কোনো বয়সে,যে কোনো পরিস্থিতিতে যে কারো জন্য নিজের হৃদয়ে মন্দিরে ভালোবাসার জন্ম হতে পারে। ভালোবাসা সময় মানে না,বয়স মানে না,লজ্জা মানে না। যুগে যুগে অনেক মানুষের বিয়ের পরে নিজের স্বামীর জন্য কিংবা নিজের স্ত্রীর জন্য নিজের ভিতরে প্রেম সৃষ্টি হয়েছে। খুঁজলে অনেক মেয়ে পাওয়া যাবে যারা বাবা মায়ের ইচ্ছেতে নিজের পছন্দের মানুষ না হওয়া সত্ত্বেও,অনিচ্ছা থাকার পরেও বিয়ের পিরিতে বসেছেন,শুধুমাত্র আপন মানুষদের মুখের দিকে তাকিয়ে। সেসব মেয়েরাই একসময় নিজের স্বামীকে মন প্রাণ উজার করে ভালোবাসে। তারা বাবা মায়ের সিদ্ধান্তটাকেই সঠিক মনে করে। কারণ পৃৃথিবীর কোনো মা বাবাই হয়তো চায় না তাঁর মেয়েকে খারাপ কোনো ছেলের হাতে চিরজীবনের জন্য তুলে দিতে। সব বাবা মায় মেয়ের একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ চায়।
আমি ভাবতাম মেয়েরা তাঁর হাসবেন্ডকে ভালো না বেসে থাকতে পারে না। দেরিতে হলেও তারা বুঝতে পারে হাসবেন্ড ছাড়া তাদেন জীবন অধরা,অপূর্ণ। হয়তো রোদেলাও একসময় বুঝতে পারবে,সব ভুলে আমাকে হাসবেন্ড হিসেবে ভালোবাসবে। কিন্তু এমনটা হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখছি না আমি। তাকে ইমপ্রেস করার জন্য কতো কি করেছি আমি কিন্তু আমার মনে হয় সে আমার কাজ কর্মে ইমপ্রেস হয় না বরং বিরক্ত হয়। এই পৃথিবীতে কিছু কিছু মানুষ থাকে যারা কখনো কারো প্রতি সহজে ইমপ্রেস হয় না,তাদের কাছে সবকিছু সিম্পল মনে হয়,এমনকি পৃৃথিবীর সবচেয়ে আশ্চর্যময় বিষয়টাও তাদের কাছে খুব স্বাভাবিক মনে হয়। রোদেলাও হয়তো তেমন। বিয়ের পরে প্রায় দিনই অফিস থেকে ফেরার পথে আমি তাঁর জন্য একটা করে গোলাপের গুচ্ছ নিয়ে এসে বিছায়নায় রাখতাম। কিন্তু সে ইমপ্রেস হতো না,খুব স্বাভাবিক ভাবেই নিতো বিষয়টা। তাঁর কাছে মনে হতো একটা গোলাপের গুচ্ছই তো,চাঁদটা তো আর এনে দেয়নি। তাকে ইমপ্রেস করার জন্য নিজের বাবা মাকে ছেড়ে তাঁর সাথে ঢাকায় বাসা নিলাম,শুধুমাত্র তাঁর জন্য। যাতে করে সে তাঁর পড়াশোনাটা চালিয়ে যেতে পারে কিন্তু এটাতেও আমি ব্যর্থতার প্রমাণ দিয়েছি।
আজ রোদেলার জন্ম দিন। আমি কখনো তাকে জিগ্যেস করিনি,সেও আমাকে কখনো জানায়নি আজ তাঁর জন্মদিন। তবে যখন জানলাম তখন অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। তাই আমি তাকে কোনো উপহার দিতে পারিনি। বিয়ের পর নিজের বউ এর প্রথম জন্মদিনে কোনো উপহার না দেওয়া হাসবেন্ড আমি এটা ভাবতেই মনে হলো মানুষ হিসেবে আমি সফল হলেও একজন আদর্শ হাসবেন্ড হিসেবে হয়তো ব্যর্থ। রোদেলার জন্মদিনে তাঁর ভার্সিটি লাইফের সব বান্ধবীরাই এসেছে,এতো এতো খারাপ লাগার মাঝেও একটা ভালো লাগার বিষয় আছে। রোদেলার কোনো ছেলে বন্ধু আসেনি। তবে নুসরাত এসেছে। যেটা আমার ভালো লাগে নি। কারণ আমি চাই না আমার প্রাক্তন কখনো জানুক আমি আমার বর্তমানের সাথে ভালো নেই। কিছু সময় পর আমার প্রাক্তন প্রেমিকা আমার স্ত্রীর সাথে একসাথে কেক কাটবে দৃশ্যটা চমৎকার না? তবে আমার কাছে এই দৃশ্যটা অনেক কষ্টের,অনেক বেদনার। নুসরাতের জায়গায় সেতো আমাকে নিয়েও কেক কাটতে পারতো। কিন্তু তাঁর কাছে এটা গুরুত্বহীন মনে হয়েছে। তাই আমি দূরে দাঁড়িয়ে সবার দিকে তাকিয়ে আছি। অবশ্য ভালোই হয়েছে। এতোগুলো মেয়ের মাঝে থাকলে নিজেকে আনইজি মনে করতাম। একাই ভালো অাছি।
কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম,কারো কথা শুনে তাকাতেই দেখতে পেলাম আমার পাশে নুসরাত দাঁড়িয়ে আছে। আমি এতোটাই অমনোযোগী ছিলাম যে একজন মানুষ আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে অথচ আমি বুঝতেই পারিনি। নুসরাতকে দেখে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলাম আমি।
কেমন অাছো?
-ভালো আছি, অনেক ভালো।
-কিন্তু তোমাকে দেখে তো মনে হয় তুমি ভালো নেই।
-মানুষের বাহিরে দিকটা দেখে কখনো কোনো কিছু বিবেচনা করা উচিত না। পৃৃথিবীর সবাই এক না। কেউ চায় নিজের হ্যাপিনেসটাকে সবার সাথে শেয়ার করতে,সবাইকে দেখাতে চায় সে খুব ভালো অাছে। আবার কেউ তাঁর দুঃখগুলোর মতো নিজের ভালো থাকার দিনগুলোকেও একাকিত্ব দান করে।
-তোমার ভিতরটা ভালো নেই আমি জানি। রোদেলা তোমাকে পছন্দ করে না।
-হাহাহাহা,হাসালে। তুমি অনেক বেশি হিংসুটে। আমি তোমার থেকে ভালো কাউকে নিজের জীবন সঙ্গীনি হিসেবে পেয়েছি এটা তোমার মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে, সহ্য হচ্ছে না তোমার। তাই এমন বলছো তুমি। আচ্ছা তোমরা মেয়েরা এমন কেনো বলো তো? ব্রেকআপ এর সময় খুব মমতা ভরা আকাশ সমান ভালোবাসা নিয়ে বলো,"ভালো থেকো,তুমি আমার থেকে বেটার কাউকে পাও এটাই চাইবো আমি।" আসলে কি তোমরা মন থেকে এই জিনিসটা চাও? যদিও তুমি আমাকে এমন কিছু কখনো বলোনি। তবে আমার মনে হয় এটা তোমরা নিজের ভিতর থেকে চাও না,জাস্ট সান্ত্বনার জন্য বলো। আসলে তোমার চাও তোমাদেরকে থেকে খারাপ কাউকে যেনো নিজের জীবনে পাই আমরা। যাতে করে তোমাদেরকে না পাওয়ার জন্য সবসময় আফসোস করি।
- তোমার হাসিটা তুমি ইচ্ছে করে হেসেছো সেটা কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছি। আমি তোমার খারাপও চাই না,ভালোও চাই না। তবে তোমার সাথে হুট করে ওভাবে সম্পর্কটা শেষ করা উচিত হয়নি। তবে যা হয় সবার ভালোর জন্যই হয়।
- যাক অন্তত একটা জিনিসের জন্য হলেও তুমি আফসোস করো। হয়তো আমাকে না পাওয়ার জন্যও একদিন আফসোস করবে। আর এজন্য আমি মনে প্রাণে চাই তুমি আমার থেকে খারাপ কাউকে নিজের জীবনসাথী হিসেবে পাও।
- অভিশাপ দিচ্ছো নাকি দোয়া করছো বুঝতে পারছি না।
- কোনো টাই না,আমি শুধু আমার মনের ভাবটা প্রকাশ করলাম।
- তোমার কথা আমার কাছে কেমন জানি অস্বাভাবিক মনে হয়। বিয়ের পর থেকে হয়তো তুমি ডিপ্রেশনে ভুগছো। তোমার ভালো একজন সাইকায়ট্রিস্ট দেখানো উচিত।
- ওরে বাবা,আমার জন্য দেখি এখনো তোমার অনেক চিন্তা। তো তুমি তো ডাক্তার। তুমি দেখলেই পারো।
- ডাক্তার বলেই মানুষের ভিতরটা পড়তে পারি। তোমার ভিতরের সত্ত্বাটা বলে দিচ্ছে তুমি ভালো নেই।
- সেদিন তাহলে আমার ভিতরটা কেনো পড়তে পারোনি। যদি পড়তে পারতে তাহলে এতো সহজেই তিন বছরের সম্পর্কটা শেষ করতে না। সো এসব আজাইরা লজিকের কথা বাদ দাও। কিছু কিছু জিনিস থাকে যেগুলো অন্য মানুষ তো দূরের কথা নিজেই কখনো বুঝতে পারে না কেনো সে এমন করে।
- দুদিন আগে হোক আর পরে হোক তোমাদের সম্পর্কটার পরিসমাপ্তি ঘটবে। রোদেলাকে আমি চিনি,সেই ছোট থেকে তাঁর সাথে থেকে এসেছি। তাঁর প্রথম যে জিনিসটা পছন্দ হয় না,সেটা পরেও কোনোদিন পছন্দ হয় না। সো ভবিষ্যতে তোমাদের ডিভোর্স নিশ্চিত। অথচ ভবিষ্যতে আমি আমার হাসবেন্ড কে নিয়ে যুগ যুগ ধরে সুখে শান্তিতে বসবাস করবো। তাহলে ভেবে দেখে আফসোস টা কার হবে? তোমার নাকি আমার। তুমি তোমার বউকে ভালোবেসে ধরে রাখত পারবে না,বাট আমি আমার হাসবেন্ডকে ভালোবাসার সমুদ্রে ডুবিয়ে রাখবো। আর একটা কথা সবসময় মনে রাখবে। রোদেলা কিন্তু আমারই বোন। তাকে আমি তোমার কথা কিছুই বলিনি। এমনিতেই সে তোমাকে চায় না। আর যদি আমি তাকে বলি তুমি আমাকে ঠকিয়েছো তাহলে সে তোমাকে কতোটা ঘৃণা করবে আন্দাজ করতে পারো?
- কিন্তু আমি তো তোমাকে কোনো ধোঁকা দেইনি,তোমাকে ঠকায়নি।
- সেটা তো তুমি আর আমি জানি। রোদেলা তো জানে না। সে আমাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে। আমি যা বলবো সেটা মিথ্যা হলেও কোনো যাচাই বাচাই না করেই সে সত্য ভেবে নিবে। তবে ভয় পেয়ো না,আমি এমন কিছু বলবো না।
- তবে আর যাইহোক আমাদের ডিভোর্স হবে না। তোমার এই স্বপ্নটা কোনোদিন পূরণ হবে না।
- তুমি কি কখনো কোনোদিন দেখেছো কিংবা শুনেছো পাথরে ফুল ফুটে? ফুটে না। রোদেলাও তোমার জন্য ঠিক পাথরের মতো। তাঁর মনে কোনোদিন তুমি ভালোবাসার ফুল ফোটাতে পারবে না।
- সে তোমার কাজিন হলেও, তোমাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করলেও সে কিন্তু আমার বিয়ে করা বউ এই কথাটা সবসময় মনে রাখবে।
- সেজন্যই বুঝি নিজের জন্মদিনে তোমাকে এভাবে এতোটা দূরে রেখেছে?
- দূরে থাকলেই যে দুজন মানুষের মাঝে ভালোবাসা নেই এটা ভাবা চরম বোকামি। তোমাকে একটা গোপন কথা বলি শোনো। আমি রোদেলাকে চুমু খেয়েছি,কোথায় জানো? ঠোঠে চুমু খেয়েছি। তারপরেও কিন্তু সে আমার ওপর রাগ করে থাকতে পারে নি। কাল তো বলল তোমার যখন ইচ্ছে তখন তুমি চুমু খেতে পারো। আমার কোনো সমস্যা নেই। তাহলে ভাবো কতোদূর গড়িয়েছে। অথচ এটার জন্য তুমি কতোবার চেষ্টা করেছো কিন্তু আমার কাছ থেকে পাওনি।
- আমিনুল,চুপ করো। কি জঘন্য তুমি। কোনোকিছুই তোমার মুখে আটকায় না?
- রাগ করছো কেনো? আচ্ছা বলবো না। এতো হিংসা করা ভালো না। রোদেলা আসছে। যদি বিশ্বাস না হয় জিগ্যেস করে দেখতে পারো। তবে আমি জানি তুমি এসব বলবে না। এসব গোপন কথা কাউকে বলতে নেই।
রোদেলাকে দেখে আমরা দুজন স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলাম।
রোদেলা আমাদের দেখে খুব একটা অবাক হলো না। আমার পাশ থেকে শুধু নুসরাতকে দূরে ডেকে নিয়ে গেলো। কি বলল আমি বুঝতে পারলাম না। তবে বুঝলাম সে নুসরাতকে কিছু বলছে। সবাই চলে যাওয়ার পর যখন রোদেলা বলল,
"সরি,আসলে সবার সাথে এতো খুশি ছিলাম যে আপনার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। কিছু মনে করবেন না।"
আমি কিছু বললাম না,শুধু মনে মনে হাসলাম আর ভাবলাম আপনি আমাকে কখনো মনেই করেননি,ভুলে যাবেন কি করে?
ইদানীং কেনো জানি মনে হচ্ছে আমি আর বেশি দিন বাঁচবো না। মাঝে মাঝে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করি আমি। রক্ত মাংসের শরীরের কোনো এক কোণে ব্যাথাটা হলে হয়তো ডাক্তার দেখিয়ে কিংবা মেডিসিন দিয়ে সারিয়ে ফেলতাম কিন্তু ব্যাথাটা যে মনের। মনের ব্যাথার কোনো ওষুধ এই মন ভাঙার পৃথিবীতে আজও আবিষ্কার হয়নি,হলে হয়তো অনেক মানুষ এই অসহ্য ব্যাথা থেকে মুক্তি পেতো। কি জন্য এমন হয় জানি না। তবে সহ্য হয় না। মাঝে মাঝে মাথার মধ্যেও ব্যাথা অনুভব করি,শুনেছি ব্রেইন টিউমার হলে মানুষের মাথায় অনেক বেশি পেইন হয়। তাহলে কি আমারও? না আমার ভাবতে ইচ্ছে করছে না এসব। সৃষ্টিকর্তা আমাকে এতোটা পছন্দ করেন না যে এতো আগেই তিনি আমাকে তাঁর কাছে নিয়ে যাবেন। হয়তো বা এগুলো আমার মনের ভুল। আমার কোনো অসুখ নেই। যা অাছে এগুলো সব মনের অসুখ,শরীরের নয়। আমি পুরোপুরি সুস্থ্য একজন মানুষ।
দেখতে দেখতে বিয়ের অনেকটা দিন পাড় হয়ে গেলো তবুও রোদেলার সাথে আমি ফিজিক্যালি ফ্রী হতে পারিনি। আমি যদি চাই তাহলে হয়তো এই কাজটা করতে পারবো তবে সেখানে কোনো ভালোবাসা থাকবে না। আর ভালোবাসা ব্যতীত এই কাজটা আমার দ্বারা কোনোদিন সম্ভবও না। এই সমাজের মানুষ খুব খারাপ। বিয়ের পর যদি কারো বাচ্চা কাচ্চা না হয় তাহলে ছেলে মেয়ের দোষ খুঁজে বেড়াবে সবসময়। আমার ক্ষেত্রেও এমন হবে ভবিষ্যতে সেটা আস্তে আস্তে করে হলেও আমি বুঝতে পারছি। সেদিন মা ফোন দিয়ে বলল তাড়াতাড়ি একটা নাতির মুখ দেখতে চায় তারা। অথচ তারা জানে না বাচ্চা হওয়ার মতো এতো ঘনিষ্ঠ কোনো সম্পর্ক আমাদের মাঝে এখনো গড়ে উঠেনি।
অফিসে কতো বোরিং টাইম পাড় করি। মাঝে মধ্যে খুব ইচ্ছে করে কাউকে ফোন দিয়ে কথা বলি। নিজের মনের একান্ত গোপন কথা গুলো একান্তে কারো সাথে শেয়ার করি। কিন্তু কেনো জানি বলা হয় না। ফোন দেওয়ার মতো কাউকে খুঁজে পাই না। যদি কেউ একজন কখনো খুব ভালোবাসা নিয়ে ফোন করে বলতো,
" তুমি কি দুপুরে খেয়েছো? না খেলে কষ্ট করে খেয়ে নাও,না হলে শরীর খারাপ করবে। আমি তোমার জন্য রাতে অপেক্ষা করবো। একটা সারপ্রাইজ অাছে তোমার জন্য।"
কিন্তু এতোটা ভালো কপাল আমার এখনো হয়নি। আমার বিয়ে করা বউ থাকলেও আমার ভালো কিংবা খারাপ লাগাতে তাঁর খুব একটা মনোযোগ নেই। সে শুধু নিজের ভালো থাকা,ভালো লাগাতে মনোযোগী। আমার দিকটা নিয়ে তাঁর ভাববার সময় হয় না।
অফিস শেষ করে রাতে যখন বাসায় গেলাম তখন দেখলাম মেঝেতে কেউ একজন মরার মতো পড়ে আছে। বুঝতে পারলাম রোদেলা,কারণ সে ছাড়া তো আর কেউ নেই। মনের ভিতর কেনো জানি প্রচন্ড ভয় কাজ করতে লাগলো। কেউ কি রোদেলার রুমে ঢুগেছিল কিংবা রোদেলার সাথে খারাপ কিছু করেছে? এসব ভাবতেই মনে হলো আমি কি সব ভাবছি? ছি, আমি ডিপ্রেশনে কি সব উল্টাপাল্টা চিন্তা করছি। আমার রোদেলাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। না হলে বড় ধরণের কোনো দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আমি তাকে সে রাতেই হাসপাতালে নিয়ে যাই। তাঁর হঠাৎ করে এমন হওয়ার কথা আমি সবার কাছে গোপন করলাম। কারণ রোদেলার অনেক বড় একটা রোগ হয়েছে। আমি যখন ডাক্তারের কাছে জানতে চাইলাম সেতো আগে কখনো এমন হঠাৎ করে অসুস্থ হয়নি। এমনটা হলে তো সে কিছু জানতো। তখন ডাক্তার বলল,হয়তো সে বুঝতে পারেনি। সাধারণ ভাবে নিয়েছে সব কিছু। বর্তমানে তাঁর দুইটা কিডনিই ড্যামেজ হয়ে গেছে। বেঁচে থাকার জন্য অন্তত একটা কিডনি তাঁর দরকার। আর সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো তাঁর রক্তের গ্রুপ এ নেগেটিভ। পৃৃথিবীর খুব কম মানুষেরই রক্তের গ্রুপ এ নেগেটিভ। সেখানে রোদেলার অপারেশন এর জন্য অনেক রক্ত দরকার। ডাক্তারকে যখন বললাম আপনি ব্যবস্থা করেন যতো টাকা লাগে আমি দিবো। তখন ডাক্তার আমাকে একটা কথায় বলেল,এই পৃথিবীতে সবকিছু টাকা দিয়ে হয় না।
যখন দেখলাম রোদেলার মৃত্যু নিশ্চিত তখন কেনো জানি আমার মনে হলো আমি তাকে বাঁচাতে পারি। তখন হয়তো বা আমার বাঁচা নিয়ে সাত পাঁচ তৈরি হবে। কিংবা মারা যাবো আমি। তবে আমি চাইলে রোদেলাকে বাঁচাতে পারি। আমার তো দুইটা কিডনিই এখনো ভালো। আমার বেঁচে থাকার জন্য তো একটা কিডনি হলেই হয়। আরেকটা দিয়ে আমি রোদেলাকে নতুন জীবন দিতে পারি। আমি তাকে নিজের চোখে এভাবে মরতে দেখতে পারি না। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি আমি রোদেলাকে আমার একটা কিডনি দিবো। সে আমাকে ভালো না বাসলেও আমি তাকে আমার ভালোবাসায় সারাজীবন বাঁচিয়ে রাখতে চাই।
কিন্তু যখন ডাক্তারকে কিডনি দেওয়ার কথা বললাম তখন সে রাজি হলো না। কারণ আমার রক্তের গ্রুপও এ নেগেটিভ। অপারেশন এর সময় দুজনের জন্যই রক্ত লাগবে যেটা জোগাড় করা সম্ভব না। আমি ডাক্তারের হাতে পায়ে ধরে অপারেশন করার জন্য অনুরোধ করলাম। একটা জীবনের বিনিময়ে তারা আর একটা জীবন বাঁচাতে চায় না। তবুও তারা আমার কথা রেখেছিলো,এর জন্য আমি তাদের কাছে অনেক অনুরোধ করেছিলাম। ডাক্তাররা রোদেলার অপারেশন করার জন্য রাজি হয়ে যায়। আর আমিও নিজের মৃত্যুর দিকে এক ধাপ এগিয়ে যেতে থাকি।
রোদেলার অপারেশন হয়ে যায়। তাঁর শরীরের সমস্ত রক্ত আমার শরীর থেকেই নিয়েছিলো ডাক্তাররা। একজন মানুষ নিজের শরীর থেকে যে পরিমাণ রক্ত দিতে পারে তাঁর থেকেও অনেক বেশি দিয়েছিলাম আমি,শুধুমাত্র রোদেলার জন্য। কারণ আমি চাইনি মেয়েটা এতো আগেই এই সুন্দর পৃৃথিবীর মায়া ছেড়ে অজানার পথে পাড়ি জমাক। ডাক্তাররা ভেবেই নিয়েছিলো আমার হয়তো আর বেঁচে থাকা হবে না। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা যদি কাউকে বাঁচিয়ে রাখতে চান তাহলে সে মৃত্যুর দোয়ার থেকেও ফিরে এসে পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পারে। এটা আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি।
আমি রোদেলাকে একা রেখে কিছুদিনের জন্য দূরে কোথাও চলে যাই। কারণ আমি চাই নি রোদেলা কখনো জানুক আমি তাকে নতুন জীবন দিয়েছি। যে মানুষটাকে সে এক মুহূর্তের জন্যও নিজের স্বামী হিসেবে কখনো মেনে নিতে পারেনি,একটু ভালোবাসা দিতে পারেনি,সবসময় দূরে দূরে রেখেছে সেই মানুষটাই নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাকে বাঁচিয়েছে এটা যখন সে জানবে তখন হয়তো আমাকে ভালোবাসার জন্য সে মরিয়া হয়ে উঠবে। যেকোনো কিছুর মূল্যে সে আমার কাছে আসতে চাইবে। কিন্তু আমি তাঁর কাছ থেকে কখনো করুণার ভালোবাসা চাই না। তাই নিজেকে তাঁর কাছ থেকে কিছুদিনের জন্য দূরে সরিয়ে নিচ্ছি। যদি বেঁচে থাকি তাহলে আবার তাঁর কাছে ফিরে আসবো। আর যদি মরে যাই তাহলে কারো কোনো অভিযোগ থাকবে না আমার বিরুদ্ধে। কেউ কখনো জানতে পারবে না আমার এই মৃত্যু রহস্য।
প্রায় পনেরো দিন পর আমি রোদেলার কাছে ফিরে আসি। সে জানে আমি অফিসিয়াল কাজের জন্য বাহিরে গিয়েছিলাম। আমি এটাই তাকে জানাতে বলেছিলাম তাই সে এটাই জেনেছে। আমি জানি সে আমাকে আগের থেকে আরও দূরে ঢেলে দিবে তবে এটা ভেবে অনেক ভালো লাগছে সে যখন জানবে আমিই তাঁকে নিজের বাম পাশের কিডনিটা দিয়ে আমার জন্য বাঁচিয়ে রেখেছি। তখন হয়তো সবকিছু ভুলে সে আমাকে নিজ থেকে ভালোবাসতে চাইবে। তবে আমি এটা তাকে নিজ থেকে কোনোদিন বলবো না। সে যদি সত্যিই আমাকে ভালোবাসে তাহলে কোনো একদিন এই অপ্রকাশিত সত্যটা সে জানতে পারবে। আর যদি আমার ভালোবাসাটা মিথ্যা হয় তাহলে কখনো জানতে পারবে না আমার এই ত্যাগের কথাটা। কিংবা কখনো জানবার চেষ্টায় করবে না।
হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারলাম দুদিন আগেই রোদেলাকে ডিসচার্জ দেওয়া হয়েছে। সে এখন অনেকটা সুস্থ্য। তাই সেখান থেকে সোজা বাসায় চলে গেলাম আমি। বাসায় এসে যখন কলিংবেল বেলে চাপ দিলাম তখন একটা সুন্দরী মেয়ে দরজাটা খুলে দিলো। বুঝতে পারলাম না মেয়েটা কে। পরক্ষণেই মনে হলো এই মেয়েটাকে কোথায় যেনো দেখেছি আমি। হ্যাঁ রোদেলার জন্মদিনে এসেছিলো মেয়েটা। রোদেলা আমাকে দেখে কিছুটা করুণার চোখে তাকালো। আমি তাঁর চোখের দিকে না তাকিয়ে ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে চলে গেলাম।
রাতে যখন রোদেলার বান্ধবী চলে গেলো তখন আমাদের দুজনের প্রথম কথা হলো। প্রথম কথাটা রোদেলায় বলল।
এতোদিন কোথায় ছিলেন? আমাকে এভাবে একা রেখে যাওয়াটা কি আপনার উচিত হয়েছিলো? আমি মরে গেলে মনে হয় আপনি অনেক খুশি হবেন। কারণ আমি থাকাকালে তো আর কোনো মেয়েকে বিয়ে করতে পারবেন না।
- এভাবে বলছো কেনো? অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিলো তাই যেতে হয়েছে। আমি না থাকলেও তোমার সেবা যত্নের কোনো কমতি হয়নি আমি জানি।
- আমাকে যে মানুষটা একটা কিডনি দান করেছে আমি তাঁর কথা ভাবছি প্রতিনিয়ত। মানুষটাকে আমি চিনি না,জানি না আর সে আমাকে জলজ্যান্ত নতুন একটা জীবন উপহার দিলো। এমন মানুষও পৃথিবীতে আছে আমি বিশ্বাসই করতাম না। আর আপনি আমার পাশে থাকারই প্রয়োজন মনে করেননি। দুজন মানুষের মাঝে কতো তফাৎ।
- মানুষটা হয়তো বা আপনাকে অনেক ভালোবাসে। কারণ রিয়াল লাভ ছাড়া মানুষ কারো জন্য এতোটা ত্যাগ স্বীকার করতে পারে না।
- আমি ডাক্তারকে বলেছিলাম কিন্তু তারা আমাকে জানায়নি। যে মানুষটা এটা করেছে সে নাকি গোপন রাখতে বলেছে। আমি ভেবে পাচ্ছি না একজন মানুষ কতোটা মহান হলে এতো বড় মহৎ একটা কাজ করেও গোপন রাখতে পারে। তবে আমি তাকে খুঁজে বের করবো। আমার বেঁচে থাকার জন্য যে মানুষটা এতো কিছু করলো একটা বার আমি তাকে খুব কাছ থেকে,দেখতে চাই।
আমি কিছু বলি না,চুপ করে বসে থাকি। সেও কিছু বলে না। একসময় দুজনই ঘুমিয়ে যাই।
সকাল বেলা নুসরাতের ফোন পেয়ে ঘুম ভাঙে আমার। এমন সময়ে তাঁর ফোন দেওয়ার কারণটা আমি খুঁজে পেলাম না। নুসরাতের বিয়ে ঠিক হয়েছে, কালকে তাঁর আংটি বদল। ছেলে ঢাকাতেই থাকে। সে আমাকে আর রোদেলাকে যেতে বলেছে। তাঁর হবু হাসবেন্ড এর সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিবে। এই কয়েকটা দিনে এতো কিছু হয়ে গেলো জানতেই পারলাম না। তবে নুসরাতকে শুভকামনা জানানোর জন্য হলেও আমাকে যেতে হবে,মন না চাইলেও যেতে হবে। রোদেলাকেও হয়তো নুসরাত ফোন দিয়েছিলো তাই আমার আর তাকে নতুন করে বলতে হলো না। পরের দিন আমরা দুজন নুসরাতের আংটি বদল অনুষ্ঠানে গেলাম।
আমি কখনো ভাবিনি এতো বড় আয়োজন করা হবে। বুঝতে পারলাম নুসরাতের এমন কারো সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে যার টাকা পয়সার কোনো অভাব নেই। আমি সেখানে যাওয়া মাত্রই রোদেলা আমার কাছ থেকে আলাদা হয়ে গেলো। নুসরাত আমাকে দেখে আমার কাছে এসে দাঁড়ালো।
কেমন আছো তুমি?
- আছি, তুমি কেমন আছো?
- ভালো,অনেক খুশি। তোমার অভিশাপটা কাজে লাগেনি। আমি তোমার থেকে বেটার কাউকে নিজের জীবনে পেয়েছি।
- অনেক অনেক শুভকামনা রইলো তোমার আর তোমার হাসবেন্ড এর জন্য।
- তুমি তোমার বউ এর কাছ থেকে কোনো সময় অবহেলা ছাড়া কিছু পাওনি,তাকে নিজের করে নিতে পারোনি। অথচ দেখো আমার হাসবেন্ড আমাকে কতোটা ভালোবাসে,তাঁর ছোট্ট একটা নমুনা। সে এসব আমার জন্য করেছে। সো আমি তোমাকে না পাওয়ার জন্য কোনোদিন আফসোস করবো না।
- আমি করি,তবে কাউকে না পাওয়ার জন্য না। নিজেকে নিয়ে অনেক আফসোস হয় আমার। কারণ তোমাদের মতো আমার জীবনটা বেশি দিনের না। আমাকে চলে যেতে হবে নতুন ঠিকানায়। যেখান থেকে মানুষ কখনো ফিরে আসতে পারে না। তবে জানো? আমিও আর সবার মতো নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে নিয়ে হাজার বছর বাঁচতে চাই। হোক সেটা কল্পনায় তবুও আমি বাঁচতে চাই।
- কি হয়েছে তোমার? তুমি এমন ভাবে কথা বলছো কেনো?
আমি নিজের অজান্তেই নুসরাতকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেই। আমি কেনো জানি নিজের চোখের পানিটাকে ধরে রাখতে পারিনি।
তুমি সেদিন ঠিকই বলেছিলে,আমি তোমার সাথে কখনো মানিয়ে নিতে পারবো না। তুমি কেনো দুনিয়ার কারো সাথেই আমি নিজেকে মানিয়ে নিতে পারিনি। আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমার প্রতি কোন রাগ রেখো না। মানুষ বেঁচে থাকলে তাকে ঘৃণা করা যায় কিন্তু মরে গেলে তাকে ঘৃণা করবে কিভাবে?
- সেদিন আমাদের সম্পর্কটা ওভাবে শেষ করা উচিত হয়নি। আমি তোমার প্রতি অনেক অন্যায় করেছি। তুমি যে রোদেলাকে নিজের একটা কিডনি দিয়ে বাঁচিয়েছো সেটা আমি জানি। কিন্তু আমি তাকে বলিনি। কিন্তু এখন এই মুহূর্তে আমি তাকে সব বলে দিবো।
আমি তখনো নুসরাতে জড়িয়ে ধরে কেঁদে যাচ্ছিলাম। আমাকে পেছন থেকে টান দিয়ে কেউ একজন আমার গালে বিদ্যুৎ গতিতে দুইটা চড় বসিয়ে দিলো। আমার মনে হলো আমি কোনো ঘোরের মধ্যে ছিলাম,সেখান থেকে বেরিয়ে আসলাম।
"ঘরে বিয়ে করা বউ থাকার পরেও তুমি কিভাবে পারলে এতো মানুষের সামনে অন্য একটা মেয়েকে এতো অন্তরঙ্গ ভাবে জড়িয়ে ধরে থাকতে? আমি না আসলে তো মনে হয় জনম জনম এভাবে জড়িয়ে ধরে থাকতে।"
আমি কিছু বলি না। নুসরাত যখন কিছু বলতে যাবে তখন রোদেলা নুসরাতকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সে নুসরাতকে কথা শোনাতে থাকে। লজ্জায় অপমানে সেখান থেকে আমি চলে আসি।
আমি বাসায় আসার কিছুক্ষণ পরেই দেখলাম রোদেলা দৌড়ে চলে এসেছে। বুঝতে পারলাম সে সবকিছু জেনে গেছো।
"একজন মানুষ কিভাবে এতোটা ভালোবাসতে পারে? আর আমি তোমাকে সবসময় ঘৃণা করতে চেয়েছি। কেনো আমার মতো স্বার্থপর মেয়েকে এতো ভালোবাসতে গেলো। আমি তোমার ভালোবাসার মূল দিতে পারিনি।"
আমি কিছু বলি না,রোদেলার কান্নারত কণ্ঠটা শুনতে থাকি,তাঁর জলে ভেজা চোখটা জানান দিয়ে যাচ্ছে সে অনুতপ্ত। সে ভুল করেছে।
সবসময় তোমাকে ছেড়ে যাওয়ার কারণ খুঁজতাম আমি আর তুমি আমাকে নিজের কাছে রাখার জন্য নিজের জীবনটাও বাজি লাগিয়েছিলে? তুমি কি মনে করেছো? তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে চাইলে আমি তোমাকে যেতো দিবো?
-ওপরওয়ালার ওপর আমাদের কারো হাত নেই।
-কি হয়েছে তোমার? এমন করছো কেনো?
-কয়েকটা ঘুমের ওষুধ খেয়েছি। এতো যন্ত্রণা নিয়ে ঘুমানো যায় না বাট আমাকে যে ঘুমাতে হবে। তবে ভয় পেয়ো না,আমি আত্মহত্যা করবো না,আত্মহত্যা করার মতো কাপুরুষ আমি নই।
রোদেলার আমার গালে তাঁর নরম দুইটা হাত রাখে আমি বুঝতে পারি,অনুভব করি তাঁর শীতল স্পর্শ।
আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি না? আমি খুব খারাপ মেয়ে। তুমি আমাকে কষ্টগুলো ফিরিয়ে না দিয়ে আমাকে ছেড়ে যেতে পারবে না। তুমি আমাকে একটা সুযোগ দাও। শুধু একটাবার সুযোগ দাও। আমি তোমাকে পৃৃথিবীর সব ভালোবাসা দিবো। আমার ভালোবাসা দিয়ে আমি তোমার সব কষ্ট ভুলিয়ে দিবো। আমাকে এভাবে ছেড়ে তুমি যেতে পারো না।
- হয়তো বা সৃষ্টিকর্তা চান না আমরা দুজন পৃৃথিবীর বুকে একে অপরকে ভালোবেসে হাজার বছর বেঁচে থাকি। মৃত্যুর পরেও কিন্তু ভালোবাসা যায়। আমি যদি মরে যাই তাহলে তুমি তোমার অধরা স্বপ্ন গুলো পূরণ করে নিও। তুমি বলেছিলে আমার সাথে বিয়ে হওয়ার কারণে তুমি তোমার স্বপ্নগুলো পূরণ করতে পারবে না। কিন্তু এখন আর সেই বাঁধা থাকবে না। পরের জনমে আমি তোমাকে আমার সৃষ্টিকর্তার কাছে চেয়ে নিবো। আমি জানি সেদিন আমাকে আমার পালনকর্তা না বলতে পারবে না। তবে জানো আমার খুব ইচ্ছে ছিলো তোমাকে ভালোবেসে শক্ত জড়িয়ে ধরে আজীবন বেঁচে থাকবো। আমার প্রথম ভালোবাসা নুসরাত হলেও আমি তাকে ভুলে গিয়েছিলাম,তোমাকে নিজের করে নিতে চেয়েছিলাম,ভালোবেসেছিলাম। কিন্তু তোমাকেও আমার পাওয়া হলো না। জীবনে দুইজন মানুষকে ভালোবাসলাম অথচ একজন মানুষকেও নিজের করে নিতে পারলাম না। এতোটাই অভাগা আমি।
রোদেলা আমাকে শক্তু করে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে আমি বুঝতে পারছি। তবে আমার চোখের আলোটাও ঘুমের কারণে নিভে যাচ্ছে।
পরের দিন বিকেলে ঘুম থেকে জাগা পেয়ে কারো কাঁদার শব্দ শুনতে পাই। মনে হলো অনুভূতিরা গুমড়ে গুমড়ে কাঁদছে। কিন্তু না,রোদেলা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। সেও হয়তো বুঝতে পেরেছে আর কিছু দিন পর আমি এই পৃৃথিবী ছেড়ে চলে যাবো। আমার মনের অসুখের থেকে এখন শরীরের অসুখটা বেশি।
আমাদেরকে যখন কেউ খুব ভালোবাসতে চায় তখন আমার তাঁর ভালোবাসাটা অনুধাবন করতে পারি না। তাঁর ভালোবাসাটাকে তুচ্ছ মনে হয়,অবহেলা করি। কিন্তু সেই মানুষটা যখন চলে যায় তখন আমরা তাঁর ভালোবাসার গভীরতাটা বুঝতে পারি। কিন্তু তখন অনেকটা দেরি হয়ে যায়। হয়তো বা রোদেলাও হয়তো আমার ভালোবাসাটা বুঝতে পেরেছে কিন্তু সে অনেকটা দেরি করে ফেলেছে।
সমাপ্ত।
 

অদৃশ্য পরী

  ----দেবর সাহেব, তো বিয়ে করবে কবে? বয়স তো কম হলোনা ৷ ----আপনার মত সুন্দরী কাউকে পেলে বিয়েটা শীঘ্রই করে ফেলতাম ৷ -----সমস্যা নাই তো, আমা...