Showing posts with label পার্সেল. Show all posts
Showing posts with label পার্সেল. Show all posts

27.12.23

পার্সেল

 পার্সেল

Write : Sabbir Ahmed
__________________________
ভাই ভাবীর সাথে ঝগড়া করে মাঝরাতে রাস্তায় এসে হাঁটছি। এই জনহীন শুনশান রাস্তায় দুই ধরণের প্রাণী এখনো সজাগ। একটা হলো কুকুর, আর অন্যটা হলো মানুষ। মানুষ বললে ভুল হবে তাদের কুকুরই বলা চলে। আজকাল খবরের পাতায় পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা তো ছিনতাই এর খবর। আমার মন বলছে কিছুদিন পর সাংবাদিকরা এই ছিনতাই নিয়ে লেখা বন্ধ করে দিবে। সে যা ইচ্ছে করুক, আমি বাঁচিনা আমার চিন্তায়। গ্রাজুয়েশন শেষ করে বেকার এর খাতায় সবে মাত্র নাম লিখিয়েছি। খাতায় যে কতদিন নামটা থাকবে এখন সেটাই দেখার বিষয়। পরিবারে ভাই আমাকে দেখেন। আমি বাবা মা কাউকে দেখিনি, শুনেছি আমার জন্মের এক বছর পর বাবা, আর তারপর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই মা মারা যায়। আমার বড় ভাই খুব উদার মনের মানুষ, আমার কোনো কিছুতে কখনো মানা করেনি। সমস্যা বেঁধেছে সে বিয়ে করার পর থেকে। তার বউটা দজ্জাল টাইপের, বউ এর দাপটে ভাই এখন আমাকে সকাল সন্ধ্যা কথা শোনায়৷ আমার ভাই এর এউ শহরে বড় একটা মুদি দোকান আছে। আমাকে সেখানে রাখার জন্য ভাই ভাবি উঠেপড়ে লেগেছে। মাঝরাতে রাস্তায় আসার পূর্বের ঘটনা...
-তোরে বললাম যে ভাই পরীক্ষা টা শেষ করেছিস দোকানে একটু বস৷ চাকরি পাওয়া কঠিন এই সময়ে। ব্যবসা শিখলেও তো পারিস (ভাইয়া)
-আমি তোমার দোকানে কর্মচারী হয়ে থাকতে পারবো না (আমি)
-দেখেছো দেখেছো, তোমার মুখের উপর কথা বলে। আদর দিয়ে তুমি ওকে কোনো পর্যায়ে নিয়ে গেছো (ভাবী)
-দেখেন ভাবী দুই ভাইয়ের মধ্যে আপনি কথা বলতে আসবেন না। এটা আমাদের ভাই ভাইয়ের ব্যাপার (আমি)
-তোর ভাবী তো ঠিকই বলেছে৷ কাম নেই কাজ নেই, পরীক্ষা শেষ হয়েছে সেই কবে। এতো কষ্ট করে তোকে লেখাপড়া করালাম টো টো করে ঘুরে ফিরে খাওয়ার জন্য?(ভাইয়া)
-আমি তো বলিনি যে আমি কিছু করবো না। অবশ্যই করবো। আসলে লেখাপড়া করতে করতে আমি একটু ক্লান্ত তাই রেস্ট নিচ্ছি (আমি)
-সবকিছুতে ফাজলামি করা গেলো না তোর? আমি একটা সিরিয়াস বিষয় নিয়ে কথা বলছি। তুই কিছু করলে কর না করলে বের হয়ে যা।
,,
ভাইয়ার শেষ কথাটা আমার মনে খুব লেগেছে তাই রাগে দুঃখে এখন আমি রাস্তায়। হাঁটতে হাঁটতে বাসা থেকে অনেকটা দূর চলে এসেছি। রাস্তায় নিয়ন এর আলো থাকতেও কেমন যেন ভয় ভয় লাগছিলো। ভাবছিলাম এবার ফিরতে হবে। হঠাৎ দূরে সাদা একটা চারকোণা কাগজের প্যাকেট পরে আছে এরকম দেখা যাচ্ছিলো।
কৌতুহল বশত এগিয়ে গেলাম। কাছে গিয়ে দেখতে পেলাম সাদা রং শক্ত কাগজে মোড়ানো একটা পার্সেল। পার্সেল এর উপর রক্তাক্ত একটা হৃৎপিণ্ডের ছবি আঁকা, যেটা দ্বারা ভালোবাসা বুঝিয়েছে। মানে নিজে নিজে বুঝে নিলাম আর কি৷ প্যাকেট এর একটা পাশ নষ্ট হয়ে গেছে। আর তখনই পাশে দেখতে পেলাম একটা বেলি ফুলের মালা।
,,
আমি দুটো জিনিস হাতে নিলাম। তারপর ফুটপাতের উপর বসে ভাবতে লাগলাম এইটা হয়তো কোনো প্রেমিক বা প্রেমিকের, নিজের ভালোবাসা প্রদর্শনীর জন্য এই ছোট্ট আয়োজন করেছিলো। কি কারণে তা বৃথা হয়ে এখানে পরে আছে আমার সেটা অজানা৷ প্যাকেট টা খুলতে আর তর সইছিলো না আমার। বেলীফুলের মালাটা গলায় ঝুলিয়ে প্যাকেট টা খুলেই যা যা দেখলাম তাতে তো আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো।
,,
প্যাকেট এর মাঝে কয়েকটা ছোট ছোট খোপ এর মতো অনেকটা পাখির বাসার মতো। একটাতে লাল সবুজ রঙের শাড়ী, কিছু রেশমী চুড়ি। ম্যাচিং করে দুটো দুল। আরও সাজগোজে যা যা লাগে সব আছে৷
আহারে বেচারা প্রেমিক, হয় সে রিজেক্ট হয়ে এগুলো এখানে ফেলে চলে গেছে আর নয় হয় কিছু একটা হয়েছে। কি হয়েছে সেটা চিন্তা করে লাভ নেই, জায়গার জিনিস জায়গায় রেখে আমি আমার মতো কেটে পরি। আর একটা গার্লফ্রেন্ড থাকলে মাইনসের পয়সায় গিফট দিয়ে নিজের সুনাম করে নিতাম।
,,
প্যাকেট যা যখন আমি ঠিক আগের অবস্থায় নিয়ে গেলাম তখন একটা জিনিস আমার চোখে পড়লো। সেটা হলো প্যাকেটের নিচে একটা ঠিকানা লেখা। ঠিকানা পড়ে দেখলাম এই বাসাটা এই রাস্তাতেই। আমার মনে হচ্ছে কেউ ভুলে হয়তো ফেলে রেখেছে। না হলে এটা কেউ দূরে কোথা থেকে পাঠিয়েছে। এতো সুদূরপ্রসারী চিন্তা ভাবনা করে মাথা খারাপ করে লাভ নেই যা হবার হবে আমি দেখি এই ঠিকানায় আগে যাই।
,,
যেই বলা সেই কাজ। বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। প্যান্টের পেছনে থালা ধুলোময়লা ঝেড়ে হাঁটতে থাকলাম৷ খুঁজতে খুঁজতে ঠিকানা অনুযায়ী বাসাটা পেয়ে গেলাম। এই রাতে নিজেকে কেমন যেন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা মনে হচ্ছিলো।
,,
বাসার সামনে বিশাল একটা গেট। দারোয়ান তো আছে অবশ্যই। কিন্তু তার কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছিলাম না৷ দুইবার ডাকলাম গেটে হাত দিয়ে থাপ্পড় দিলাম তারপর দেখি গেটের মাঝে ছোট্ট একটা গেট খুলে মাঝ বয়সী একজন বের হলো।
,,
উনি ঘুমের ঘোরে হাই তুলতে তুলতে বলল..
-এতো রাতে কি? কি হয়েছে? (দারোয়ান)
-ভাই একটা পার্সেল আছে (আমি)
-এতো রাতে পার্সেল? দেখি তো কার নামে? কত নাম্বার বাসা?
-নাম ইরা
-ওহ ইরা ম্যাম এর পার্সেল? আচ্ছা দেন দেন আমি তাকে দিয়ে দিবো
-আপনার ঘুম ভেঙে কোথায় গেলো? নাম শুনে এতো সজাগ হলেন কিভাবে?
-সে তুমি বুঝবে না। তুমি পার্সেল টা দাও আমি দিয়ে দিবো
-না না নিয়ম অনুযায়ী আমাকেই তার হাতে দিয়ে একটা সাইন নিতে হবে
-ওহহহ কিন্তু?
-কি??
-দেখো দোতালায় ইরা ম্যাম এর বাবা মা থাকেন, আর তার উপরের তলায় উনি।
-আপনি কথা ঘুরালেন কেনো?
-এমনিতে, আসলে ম্যাম অনেক বদমেজাজী। তুমি এতো রাতে আসছো এটা দিতে, না জানি কি হয়৷
-আরে কিছু হবে এটা ম্যাম এর ইমার্জেন্সী ওর্ডার
-ওহহহ
,,
এই উপহারের মানুষটাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো তাই মুখ দিয়ে যে মিথ্যা আসছে অকপটে বলেই যাচ্ছি, যাতে দারোয়ান আমাকে সন্দেহ না করে। দারোয়ান আমাকে এটাও বলে দিলো যে এটা পুলিশ কমিশনার এর বাসা। আর ইরা সেই কমিশনার এর মেয়ে।
,,
আমি মনে মনে বললাম সে হোক বড় মহা মুল্লক আমার তাতে কিছু যায় আসে না। আমার একটাই জানার ইচ্ছে, উপহার টা রাস্তায় কেনো পড়েছিলো।
,,
আমি সাহস করে বাসার মধ্যে ঢুকলাম। দারোয়ান এর কথামতো সিড়িঁ বেয়ে ৩য় তলায় উঠলাম। এখানে তিনটা দরজা ছিলো। দারোয়ান বলেছিলো মাঝের দরজার কলিং বেল চাপতে। আমি কলিং বেল চেপে দাঁড়িয়ে থাকলাম। কিছুসময় পার হলো কেউ দরজা খুলল না।
,,
আমি আবার চাপলাম কয়েকবার। এবার তো বেশ ভয় ঢুকছে মনের মধ্যে।
এতো রাতে কমিশনার এর বাসায় আমি এটা কি করতে আসছি। আবার আমাকে জেলে দিবে না তো?
যদি দেয় তাহলে কি আমাকে মাইর দিবে? আরে ধুরর আমি তো কিছু করিনি, আমি শুধু শুধু ভয় পাচ্ছি।
,,
হঠাৎ দরজা খুলে একটা মেয়ে চোখ কচলাতে কচলাতে..
-কি ভাই কি সমস্যা?? (মেয়েটা কথা বলতে বলতে তার পেছনে আরও দু'জন হাজির)
,,
আমার হাতে প্যাকেট টা দেখে তিনজন আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়েছিলো। একসাথে এত্তগুলা সুন্দরী মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, এটা ভাবতেই আমার মনে লাড্ডু ফাটা শুরু করলো।
,,
মেয়েগুলো বলল..
-এটা দিতে আসছেন? (তারা)
-জ্বি(আমি)
-ওহহ ভেতরে আসুন
-না আমি ভেতরে গিয়ে...
,,
কথাটা শেষ করার আগেই তারা আমার দুহাত ধরে জোর করে রুমের মধ্যে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। রুমের মধ্যে তাদের কাণ্ড দেখে আমি হতবাক হচ্ছি। একজন দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেখানেই, একজন এদিকে ওদিকে কি যেন খুঁজছে, আরেকজন ইরা ইরা বলে ডাকছে।
,,
তাদের এরকম কান্ডে আমার জান যায় যায় ভাব। ভাবছি এবার মনে হয় প্রাণ টা যাবে। তারা মনে হয় আমাকে চোর ভেবেছে। একজন চেয়ার এনে দিলো আমাকে সেটাতে বসতে বলল৷ আমি আপন মনে বসতেই একটা দড়ি দিয়ে প্যাঁচ দিয়ে বেঁধে ফেলল। বাঁধন টা খুবই দূর্বল। চাইলেই ছোটা যাবে। কিন্তু আমি কোনো প্রকার জোড়াজুড়ি করলাম না, আমি যে চোর না এটা তাদের বোঝাতে হবে। পাশের রুম থেকে একজন দৌড়ে এসে আমার কাছে দাঁড়ালো, আমাকে কয়েক সেকেন্ড দেখে বলল..
-আরে তোরা এটা কি করেছিস হ্যাঁ? এ কে? (মেয়েটি)
-এটাইতো সেই চিটার, তোর বি এফ (মেয়েটার বান্ধবী)
-আরেহহ এটা ও না
-কিহহহ!!!
,,
আমি শিওর হলাম এটাই ইরা। আমরা শরীরে লাগা দড়ি উনি ছাড়িয়ে দিলেন। তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন..
-আপনি এটা কোথায় পেলেন?
-রাস্তায়
-ওহহহ আসলে এটা পেছনে আমার এক চিটার এর সম্পর্ক আছে। আর আমার বান্ধবী তো আমার সেই চিটার ভেবে আপনাকে বেঁধে ফেলেছে
-আপনার তাকে তারা কখনো দেখেনি?
-আমিই আজ প্রথম দেখলাম
-ওহহহহ,
-তা আপনি কষ্ট করে এটা নিয়ে আসছেন কেনো?
-আমি ভেবেছি যে হয়তো ভুলে রাস্তায় পরে গেছে
-ওহহহ না শোনেন৷ আমার একজনের সাথে ফেসবুকে পরিচয় হয়৷ তো আজ দেখা করতে গিয়ে দেখি আমার অন্য একটা বান্ধবীর বি এফ। তাকে সেখানে ধোঁলাই করে বাসায় চলে আসি। এর এইটা ফেলে দিয়ে আসি
-আপনার এই বান্ধবী গুলো তো আমাকে মনে করেছিলো
-ওরা আসলে আমার ঘটনাটা জানে তাছাড়া কিছু না
,,
মেয়েগুলো আমাকে সরি বলল। আমি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালাম আর বললাম..
-এগুলো তাহলে কি করবো? (আমি)
-আপনি নিয়ে যান মাঝেমাঝে বাসায় এগুলো পড়ে বসে নিজেকে আয়নায় দেখবেন মন ভালো হবে (মেয়েটি)
-আমি তো আর ইরা না, ইরা হলে অবশ্যই পড়তাম
-আপনি নাম জানলেন কি করে?
-প্যাকেটে লেখা আছে
-ওহহহ
-আমি শুভ
-না না, আপনার কর্মকান্ডে আপনি অশুভ। এতো রাতে ঘুম ভাঙিয়ে আমার খারাপ স্মৃতি সামনে নিয়ে আসছেন
-আপনি বুঝতে ভুল করেছেন, আমার নাম শুভ
-নিজেকে বেশি পণ্ডিত মনে করেন? আমি কি বুঝি না? এই তোরা একে সত্যি সত্যি বেঁধে রাখ সকাল হলে ছেড়ে দিস, ঠিক আছে? আমি আমার রুমে গেলাম
-আরে শোনেন আমার খুব খুদা লাগছে উনাদের কিছু খাবার দিতে বলেন। বাসা থেকে না খেয়ে বেড়িয়েছি...
।।
।।
পার্সেল
Write : Sabbir Ahmed
__________________________
ভাই ভাবীর সাথে ঝগড়া করে মাঝরাতে রাস্তায় এসে হাঁটছি। এই জনহীন শুনশান রাস্তায় দুই ধরণের প্রাণী এখনো সজাগ। একটা হলো কুকুর, আর অন্যটা হলো মানুষ। মানুষ বললে ভুল হবে তাদের কুকুরই বলা চলে। আজকাল খবরের পাতায় পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা তো ছিনতাই এর খবর। আমার মন বলছে কিছুদিন পর সাংবাদিকরা এই ছিনতাই নিয়ে লেখা বন্ধ করে দিবে। সে যা ইচ্ছে করুক, আমি বাঁচিনা আমার চিন্তায়। গ্রাজুয়েশন শেষ করে বেকার এর খাতায় সবে মাত্র নাম লিখিয়েছি। খাতায় যে কতদিন নামটা থাকবে এখন সেটাই দেখার বিষয়। পরিবারে ভাই আমাকে দেখেন। আমি বাবা মা কাউকে দেখিনি, শুনেছি আমার জন্মের এক বছর পর বাবা, আর তারপর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই মা মারা যায়। আমার বড় ভাই খুব উদার মনের মানুষ, আমার কোনো কিছুতে কখনো মানা করেনি। সমস্যা বেঁধেছে সে বিয়ে করার পর থেকে। তার বউটা দজ্জাল টাইপের, বউ এর দাপটে ভাই এখন আমাকে সকাল সন্ধ্যা কথা শোনায়৷ আমার ভাই এর এউ শহরে বড় একটা মুদি দোকান আছে। আমাকে সেখানে রাখার জন্য ভাই ভাবি উঠেপড়ে লেগেছে। মাঝরাতে রাস্তায় আসার পূর্বের ঘটনা...
-তোরে বললাম যে ভাই পরীক্ষা টা শেষ করেছিস দোকানে একটু বস৷ চাকরি পাওয়া কঠিন এই সময়ে। ব্যবসা শিখলেও তো পারিস (ভাইয়া)
-আমি তোমার দোকানে কর্মচারী হয়ে থাকতে পারবো না (আমি)
-দেখেছো দেখেছো, তোমার মুখের উপর কথা বলে। আদর দিয়ে তুমি ওকে কোনো পর্যায়ে নিয়ে গেছো (ভাবী)
-দেখেন ভাবী দুই ভাইয়ের মধ্যে আপনি কথা বলতে আসবেন না। এটা আমাদের ভাই ভাইয়ের ব্যাপার (আমি)
-তোর ভাবী তো ঠিকই বলেছে৷ কাম নেই কাজ নেই, পরীক্ষা শেষ হয়েছে সেই কবে। এতো কষ্ট করে তোকে লেখাপড়া করালাম টো টো করে ঘুরে ফিরে খাওয়ার জন্য?(ভাইয়া)
-আমি তো বলিনি যে আমি কিছু করবো না। অবশ্যই করবো। আসলে লেখাপড়া করতে করতে আমি একটু ক্লান্ত তাই রেস্ট নিচ্ছি (আমি)
-সবকিছুতে ফাজলামি করা গেলো না তোর? আমি একটা সিরিয়াস বিষয় নিয়ে কথা বলছি। তুই কিছু করলে কর না করলে বের হয়ে যা।
,,
ভাইয়ার শেষ কথাটা আমার মনে খুব লেগেছে তাই রাগে দুঃখে এখন আমি রাস্তায়। হাঁটতে হাঁটতে বাসা থেকে অনেকটা দূর চলে এসেছি। রাস্তায় নিয়ন এর আলো থাকতেও কেমন যেন ভয় ভয় লাগছিলো। ভাবছিলাম এবার ফিরতে হবে। হঠাৎ দূরে সাদা একটা চারকোণা কাগজের প্যাকেট পরে আছে এরকম দেখা যাচ্ছিলো।
কৌতুহল বশত এগিয়ে গেলাম। কাছে গিয়ে দেখতে পেলাম সাদা রং শক্ত কাগজে মোড়ানো একটা পার্সেল। পার্সেল এর উপর রক্তাক্ত একটা হৃৎপিণ্ডের ছবি আঁকা, যেটা দ্বারা ভালোবাসা বুঝিয়েছে। মানে নিজে নিজে বুঝে নিলাম আর কি৷ প্যাকেট এর একটা পাশ নষ্ট হয়ে গেছে। আর তখনই পাশে দেখতে পেলাম একটা বেলি ফুলের মালা।
,,
আমি দুটো জিনিস হাতে নিলাম। তারপর ফুটপাতের উপর বসে ভাবতে লাগলাম এইটা হয়তো কোনো প্রেমিক বা প্রেমিকের, নিজের ভালোবাসা প্রদর্শনীর জন্য এই ছোট্ট আয়োজন করেছিলো। কি কারণে তা বৃথা হয়ে এখানে পরে আছে আমার সেটা অজানা৷ প্যাকেট টা খুলতে আর তর সইছিলো না আমার। বেলীফুলের মালাটা গলায় ঝুলিয়ে প্যাকেট টা খুলেই যা যা দেখলাম তাতে তো আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো।
,,
প্যাকেট এর মাঝে কয়েকটা ছোট ছোট খোপ এর মতো অনেকটা পাখির বাসার মতো। একটাতে লাল সবুজ রঙের শাড়ী, কিছু রেশমী চুড়ি। ম্যাচিং করে দুটো দুল। আরও সাজগোজে যা যা লাগে সব আছে৷
আহারে বেচারা প্রেমিক, হয় সে রিজেক্ট হয়ে এগুলো এখানে ফেলে চলে গেছে আর নয় হয় কিছু একটা হয়েছে। কি হয়েছে সেটা চিন্তা করে লাভ নেই, জায়গার জিনিস জায়গায় রেখে আমি আমার মতো কেটে পরি। আর একটা গার্লফ্রেন্ড থাকলে মাইনসের পয়সায় গিফট দিয়ে নিজের সুনাম করে নিতাম।
,,
প্যাকেট যা যখন আমি ঠিক আগের অবস্থায় নিয়ে গেলাম তখন একটা জিনিস আমার চোখে পড়লো। সেটা হলো প্যাকেটের নিচে একটা ঠিকানা লেখা। ঠিকানা পড়ে দেখলাম এই বাসাটা এই রাস্তাতেই। আমার মনে হচ্ছে কেউ ভুলে হয়তো ফেলে রেখেছে। না হলে এটা কেউ দূরে কোথা থেকে পাঠিয়েছে। এতো সুদূরপ্রসারী চিন্তা ভাবনা করে মাথা খারাপ করে লাভ নেই যা হবার হবে আমি দেখি এই ঠিকানায় আগে যাই।
,,
যেই বলা সেই কাজ। বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। প্যান্টের পেছনে থালা ধুলোময়লা ঝেড়ে হাঁটতে থাকলাম৷ খুঁজতে খুঁজতে ঠিকানা অনুযায়ী বাসাটা পেয়ে গেলাম। এই রাতে নিজেকে কেমন যেন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা মনে হচ্ছিলো।
,,
বাসার সামনে বিশাল একটা গেট। দারোয়ান তো আছে অবশ্যই। কিন্তু তার কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছিলাম না৷ দুইবার ডাকলাম গেটে হাত দিয়ে থাপ্পড় দিলাম তারপর দেখি গেটের মাঝে ছোট্ট একটা গেট খুলে মাঝ বয়সী একজন বের হলো।
,,
উনি ঘুমের ঘোরে হাই তুলতে তুলতে বলল..
-এতো রাতে কি? কি হয়েছে? (দারোয়ান)
-ভাই একটা পার্সেল আছে (আমি)
-এতো রাতে পার্সেল? দেখি তো কার নামে? কত নাম্বার বাসা?
-নাম ইরা
-ওহ ইরা ম্যাম এর পার্সেল? আচ্ছা দেন দেন আমি তাকে দিয়ে দিবো
-আপনার ঘুম ভেঙে কোথায় গেলো? নাম শুনে এতো সজাগ হলেন কিভাবে?
-সে তুমি বুঝবে না। তুমি পার্সেল টা দাও আমি দিয়ে দিবো
-না না নিয়ম অনুযায়ী আমাকেই তার হাতে দিয়ে একটা সাইন নিতে হবে
-ওহহহ কিন্তু?
-কি??
-দেখো দোতালায় ইরা ম্যাম এর বাবা মা থাকেন, আর তার উপরের তলায় উনি।
-আপনি কথা ঘুরালেন কেনো?
-এমনিতে, আসলে ম্যাম অনেক বদমেজাজী। তুমি এতো রাতে আসছো এটা দিতে, না জানি কি হয়৷
-আরে কিছু হবে এটা ম্যাম এর ইমার্জেন্সী ওর্ডার
-ওহহহ
,,
এই উপহারের মানুষটাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো তাই মুখ দিয়ে যে মিথ্যা আসছে অকপটে বলেই যাচ্ছি, যাতে দারোয়ান আমাকে সন্দেহ না করে। দারোয়ান আমাকে এটাও বলে দিলো যে এটা পুলিশ কমিশনার এর বাসা। আর ইরা সেই কমিশনার এর মেয়ে।
,,
আমি মনে মনে বললাম সে হোক বড় মহা মুল্লক আমার তাতে কিছু যায় আসে না। আমার একটাই জানার ইচ্ছে, উপহার টা রাস্তায় কেনো পড়েছিলো।
,,
আমি সাহস করে বাসার মধ্যে ঢুকলাম। দারোয়ান এর কথামতো সিড়িঁ বেয়ে ৩য় তলায় উঠলাম। এখানে তিনটা দরজা ছিলো। দারোয়ান বলেছিলো মাঝের দরজার কলিং বেল চাপতে। আমি কলিং বেল চেপে দাঁড়িয়ে থাকলাম। কিছুসময় পার হলো কেউ দরজা খুলল না।
,,
আমি আবার চাপলাম কয়েকবার। এবার তো বেশ ভয় ঢুকছে মনের মধ্যে।
এতো রাতে কমিশনার এর বাসায় আমি এটা কি করতে আসছি। আবার আমাকে জেলে দিবে না তো?
যদি দেয় তাহলে কি আমাকে মাইর দিবে? আরে ধুরর আমি তো কিছু করিনি, আমি শুধু শুধু ভয় পাচ্ছি।
,,
হঠাৎ দরজা খুলে একটা মেয়ে চোখ কচলাতে কচলাতে..
-কি ভাই কি সমস্যা?? (মেয়েটা কথা বলতে বলতে তার পেছনে আরও দু'জন হাজির)
,,
আমার হাতে প্যাকেট টা দেখে তিনজন আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়েছিলো। একসাথে এত্তগুলা সুন্দরী মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, এটা ভাবতেই আমার মনে লাড্ডু ফাটা শুরু করলো।
,,
মেয়েগুলো বলল..
-এটা দিতে আসছেন? (তারা)
-জ্বি(আমি)
-ওহহ ভেতরে আসুন
-না আমি ভেতরে গিয়ে...
,,
কথাটা শেষ করার আগেই তারা আমার দুহাত ধরে জোর করে রুমের মধ্যে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। রুমের মধ্যে তাদের কাণ্ড দেখে আমি হতবাক হচ্ছি। একজন দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেখানেই, একজন এদিকে ওদিকে কি যেন খুঁজছে, আরেকজন ইরা ইরা বলে ডাকছে।
,,
তাদের এরকম কান্ডে আমার জান যায় যায় ভাব। ভাবছি এবার মনে হয় প্রাণ টা যাবে। তারা মনে হয় আমাকে চোর ভেবেছে। একজন চেয়ার এনে দিলো আমাকে সেটাতে বসতে বলল৷ আমি আপন মনে বসতেই একটা দড়ি দিয়ে প্যাঁচ দিয়ে বেঁধে ফেলল। বাঁধন টা খুবই দূর্বল। চাইলেই ছোটা যাবে। কিন্তু আমি কোনো প্রকার জোড়াজুড়ি করলাম না, আমি যে চোর না এটা তাদের বোঝাতে হবে। পাশের রুম থেকে একজন দৌড়ে এসে আমার কাছে দাঁড়ালো, আমাকে কয়েক সেকেন্ড দেখে বলল..
-আরে তোরা এটা কি করেছিস হ্যাঁ? এ কে? (মেয়েটি)
-এটাইতো সেই চিটার, তোর বি এফ (মেয়েটার বান্ধবী)
-আরেহহ এটা ও না
-কিহহহ!!!
,,
আমি শিওর হলাম এটাই ইরা। আমরা শরীরে লাগা দড়ি উনি ছাড়িয়ে দিলেন। তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন..
-আপনি এটা কোথায় পেলেন?
-রাস্তায়
-ওহহহ আসলে এটা পেছনে আমার এক চিটার এর সম্পর্ক আছে। আর আমার বান্ধবী তো আমার সেই চিটার ভেবে আপনাকে বেঁধে ফেলেছে
-আপনার তাকে তারা কখনো দেখেনি?
-আমিই আজ প্রথম দেখলাম
-ওহহহহ,
-তা আপনি কষ্ট করে এটা নিয়ে আসছেন কেনো?
-আমি ভেবেছি যে হয়তো ভুলে রাস্তায় পরে গেছে
-ওহহহ না শোনেন৷ আমার একজনের সাথে ফেসবুকে পরিচয় হয়৷ তো আজ দেখা করতে গিয়ে দেখি আমার অন্য একটা বান্ধবীর বি এফ। তাকে সেখানে ধোঁলাই করে বাসায় চলে আসি। এর এইটা ফেলে দিয়ে আসি
-আপনার এই বান্ধবী গুলো তো আমাকে মনে করেছিলো
-ওরা আসলে আমার ঘটনাটা জানে তাছাড়া কিছু না
,,
মেয়েগুলো আমাকে সরি বলল। আমি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালাম আর বললাম..
-এগুলো তাহলে কি করবো? (আমি)
-আপনি নিয়ে যান মাঝেমাঝে বাসায় এগুলো পড়ে বসে নিজেকে আয়নায় দেখবেন মন ভালো হবে (মেয়েটি)
-আমি তো আর ইরা না, ইরা হলে অবশ্যই পড়তাম
-আপনি নাম জানলেন কি করে?
-প্যাকেটে লেখা আছে
-ওহহহ
-আমি শুভ
-না না, আপনার কর্মকান্ডে আপনি অশুভ। এতো রাতে ঘুম ভাঙিয়ে আমার খারাপ স্মৃতি সামনে নিয়ে আসছেন
-আপনি বুঝতে ভুল করেছেন, আমার নাম শুভ
-নিজেকে বেশি পণ্ডিত মনে করেন? আমি কি বুঝি না? এই তোরা একে সত্যি সত্যি বেঁধে রাখ সকাল হলে ছেড়ে দিস, ঠিক আছে? আমি আমার রুমে গেলাম
-আরে শোনেন আমার খুব খুদা লাগছে উনাদের কিছু খাবার দিতে বলেন। বাসা থেকে না খেয়ে বেড়িয়েছি...
।।
।।
পার্সেল
Part : 3
Write : Sabbir Ahmed
____________________________
-ঐ ঐ ভয় করেনা আপনার? দেখেছেন এইটা? একদম গুলি করে দিবো(ইরা)
-আপনাকে দেখে ভয় লাগে, কিন্তু গুলি দেখে ভয় হচ্ছে না (আমি)
-আজাইরা প্যাচাল বাদ দেন। আসল কথায় আসেন
-জ্বি বলেন
-আমি আপনাকে মারতে চেয়েছিলাম, সেটা করবো না মাফ করে দিলাম। এখন আপনি আমার একটা উপকার করবেন
-বলেন কি করতে পারি এই সুন্দরীর জন্য?
-বুদ্ধি দিতে হবে। আমি বাবাকে গিয়ে কি বলব?
-আচ্ছা স্যার এর সাথে দেখা করে আমি সব সত্যি কথা বলবনি তাহলেই তো হলো
-না সমস্যা আছে, আপনি বাবার সামনে যাবেন না
-কেনো?
-সেটা আপনার জেনে কাজ নেই
-আচ্ছা ঠিক আছে সমস্যা যেহুতু হয়েছে আমি সমাধান করে দিবো
-হবে না
-কেনো?
-বাবা বুঝতে পেরেছে আপনি আমায় অনেক ভালোবাসেন। রাত করে আমি কিছু চেয়েছি ঘুম নষ্ট করে সেটা আমার জন্য পূরণ করেছেন, দারোয়ান এসব বলেছে বাবাকে। বাবা তো ফুটেজ দেখে বুঝতে পেরেছে। যেখানে বাবার রাগ করার কথা। সেখানে উনি ভালোবাসা খুঁজে পেয়ে আপনার সাথে আমার বিয়ের কথা বলতে চাইছেন
-আরে আরে বলেন কি? আমাকে না বললেন উনি আমাকে মেরে ফেলবে
-আরে ওটা এমনি মিথ্যা বলেছি
-পেটের মধ্যে কথা লুকিয়ে রাখেন কেনো?
-বাদ দেন তো। আচ্ছা বলেন না আমি এখন কি করবো
-আমাকে বিয়ে করে ফেলেন
-নিজেকে একবার দেখেন, আমার সাথে আপনার যায় না ওকে?
-তা ঠিক বলেছেন আমি দেখতে তো সুন্দর না। লম্বায় ও প্রায় সেইম সেইম। আমি চেষ্টা করলে আপনি আমায় ভালোবাসতে বাধ্য হবেন
-রাগ উঠায়েন না৷
-সরি সরি।
,,
ইরার মুখটা রাগে একদম লাল হয়ে গিয়েছিল। দেখে মনে হচ্ছিলো এই বুঝি গুলি করে দিবে। আমি আর এলেমেলো কথা না বলে বললাম..
-আপনার কি বি এফ বা পছন্দের কোনো মানুষ আছে?
-না কেনো?
-একটাও নেই?
-না
-তাহলে আর কি হলো?
-পছন্দের মানুষ দিয়ে কি হবে?
-আপনার বাবার কাছে নিয়ে যেতেন তাকে। সমস্যা এখানেই মিটে যেতো
-ওরকম তো কেউ নেই।
-তাহলে আর কি করা
-বলেন না বাবা কে কি বলব?
-এতো টেনশন করার চেয়ে আমাকে সাথে নিয়ে চলেন
-উহুমম আপনাকে আমার পছন্দ না
-কেনো?
-সেটা তো বললেন একটু আগেই। তবুও একটু নিজের মনের উপর জোর করে দেখেন পছন্দ হয় কি না?
-আপনি কিন্তু আমার কোনো কথাই সিরিয়াস ভাবে নিচ্ছেন না
-হা হা হা আচ্ছা ঠিক এখন থেকে সিরিয়াস ভাবে নিবো। আপনি একটা কাজ করেন যারা আপনার পিছু ঘুরে তাদের একটাকে আপনার বাবার কাছে নিয়ে যান
-তারা ভালো না
-আপনি বুঝলেন কি করে?
-দেখলেই বোঝা যায়
-ওহহ আচ্ছা অনেক অভিজ্ঞতা আছে আপনার৷ দেখেন তাহলে কি করা যায় আমি আসি৷
-কোথায় যাচ্ছেন?
-আমাকে দোকানে যেতে হবে, ভাইয়া এসে যদি দেখে আমি দোকানে নেই তাহলে ঝাড়ি খেতে হবে। আবার দেখেন আকাশে মেঘ করেছে বৃষ্টিও নামবে
-তাহলে আমার ব্যাপার টা?
-আপনার তো কালো মানুষ পছন্দ না৷ ফর্সা কাউকে নিয়ে আপনার বাবার কাছে যাবেন। ভেজাল মিটে গেলো
-উফফফ কেনো যে আমার বাসায় এতো রাতে পার্সেল দিতে গেলেন
-উপকার করতেই তো গিয়েছি
-কচুর মাথা উপকার করেছেন, ধুরর কিচ্ছু ভালো লাগছে না (কথাটা বলে ইরা হাতের বন্দুক টা পানিতে ঢিল মারলো)
-আরে এটা কি করলেন? ফেলে দিলেন কেনো?
-ঘাবড়াবেন না এটা অরিজিনাল না
-ওহহ নকল জিনিস নিয়ে মিথ্যা বলে শুধু ভয় দেখালেন
-হুমমম কাজের কাজ কিছুই হলো না
-সকল চেষ্টাই বৃথা। আচ্ছা আপনার বান্ধবী গুলো মনে হয় আপনাকে ডাকছে
-ওগুলো আমার বান্ধবী না, আমার দেখাশোনা করে
-আচার ব্যবহার তো বান্ধবীদের মতো
-আমি যেমন যেমন বলি তারা তেমন তেমনি করে। আমার ইশারায়
-ওমাহহ আপনি দেখছি নাট্যশালা খুলে বসেছেন
,,
ইরা আমার কথার গুরুত্ব না দিয়ে বেঞ্চটায় বসলো। সে বসামাত্র আমি তার থেকে একটু দূরে গিয়ে বসলাম।
তাকে দেখে মনে হচ্ছিলো সে প্রচন্ড লেভেলে চিন্তিত। সামনে থাকা ছোট্ট খালটির সবুজ কালার এর চকচকে পানির দিকে তাকিয়ে গভীর মনোযোগে কিছু ভাবছে সে। তার ভাবনা দূর করার জন্য আমি দুই একটা কথা বললাম কাজ হলো না৷
এদিকে টিপ টিপ বৃষ্টি শুরু হলো সাথে দমকা বাতাস। মুষলধারে ঘন্টাখানেক বৃষ্টি হতে পারে তা মেঘের ভাব দেখেই বোঝা যাচ্ছিলে৷
,,
-এই চলেন এখন বৃষ্টি নামছে তো (আমি)
-....(ইরা আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার মুখ ঘুরিয়ে নিলো। মুখ দিয়ে একটা শব্দ ও করলো না)
-বাসায় যাবেন না?
-আমার এখানের এখনকার পরিবেশ টা ভালো লাগছে। বৃষ্টি নামুক তার ইচ্ছে মতো আপনি বসে থাকেন
-ঠান্ডা লেগে যাবে আপনার
-সে চিন্তা আপনার করতে হবে না
-আমার যে লাগবে
-সে চিন্তা ও আপনার না
-তাহলে কার?
-বৃষ্টির
-হাইরে কপাল (বিড়বিড় করে বললাম)
,,
শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। আমার বিরক্ত লাগছে তারউপর আছে টেনশন। ভাইয়া তো এতক্ষণে দোকানে এসেছে। আমাকে না পেয়ে বাকিদের জিজ্ঞেস করবে। ওরা যে কি বলবে আল্লাহ ভালো জানে।
,,
আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে বৃষ্টি দেখছি। মাঝেমাঝে উনার দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছি যে মেয়েটার আসলে সমস্যা কোথায়? মাথায় না অন্যকিছুতে। এইভাবে কেউ বৃষ্টিতে ভিজে?
আমি এই বৃষ্টিতে তার আনমনে থাকা চেহারাটার প্রেমে পড়ে গেছি। বার বার আড় চোখে তাকিয়ে তাকে দেখে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে হাসছি। হঠাৎ আমার পায়ের কাছে একগুচ্ছ অচেনা ফুল চোখে পড়লো। আমি সেখান থেকে কিছু উঠিয়ে ইরার দিকে হাত বাড়ালাম।
,,
উনি আমায় ইশারায় বোঝাচ্ছিলো যে কি করবে এটা দিয়ে। আমি ইশারায় এটা হাতে নিতে বললাম। উনি এবার বললেন...
-ফুল দিয়ে কি করবো? (ইরা)
-এটা আমার পক্ষ থেকে একটা পার্সেল আপনার জন্য(আমি)
-পার্সেল?
-হুমমম
-এটা কিভাবে পার্সেল হয়?
-আচ্ছা আমি বুঝিয়ে বলব তবে রাগ করা যাবে না
-হুমম বলেন
-আগে ফুলটা হাতে নিন
,,
ইরা ফুলটা হাতে নিয়ে নাকের কাছে ধরে সুবাস নেওয়ার চেষ্টা করলো..
-সুবাস নেই তাই না? (আমি)
-হুমমম (ইরা)
-সব ফুলে থাকেও না। যাই হোক শোনেন পার্সেল মানে আমরা বুঝি মোড়কীকরণ
-হুমমম কিন্তু আপনার এটাতে তো মোড়কীকরণ করা নেই
-আছে, সেটা আপনার চোখে পড়বে না
-তাই?
-হুমমম আমি যে আপনাকে ভালোবাসার মোড়কীকরণ করণ করে দিয়েছি এটা
-হুহহহ সহজ ভাবে বললেই হয়, এতো ঘুড়িয়ে পেঁচিয়ে বলতে হবে কেনো?
-ভালোবাসার কথা গুলো পার্সেল করেই বলতে হয় নয়তো বিপরীত পাশে থাকে মানুষটাকে বোঝানো মুশকিল
-ধন্যবাদ আপনাকে কিছু একটা শিক্ষা দেওয়ার জন্য৷ যদিও এটা আমার কাছে অপ্রয়োজনীয় মনে হচ্ছে তবুও বৃষ্টির কারণে আপনার কথাগুলো দারুণ লাগছে। তবে একটা কথা আপনার ভালোবাসার মোড়কীকরণ দেখে আমি ফুলটা হাতে নেইনি। ফুলের সৌন্দর্যে নিয়েছি
-সে আমি বুঝতে পেরেছি
-হুমমমম
-আমরা এখানে কত সময় থাকবো?
-মেঘ কান্না থামালেই এখান থেকে যাবো
-যদি আজ না থামে
-এখানেই বসে থাকবো( কথাটা বলে মুচকি হাসলো ইরা। এই নিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে আজ দ্বিতীয় বার তার প্রেমে পড়লাম)
,,
একটু আগে যে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো কে খুব বিরক্ত লাগছিলো এখন সেগুলো একটা একটা করে গায়ে লেগে নানান অনুভূতির সৃষ্টি করছে। আমার তো বার বার বলতে ইচ্ছে করছিলো আজকের দিনটার জন্য তার কাছে আমি ঋণী হয়ে থাকবো। কি এক মজার ব্যাপার আমি তার কাছে ঋণী অথচ সে জানে না। ব্যাপার টা নিজে ভেবে মনে মনে একটু হসালাম।
,,
কথায় আছে ভেতরে ভেতরে হাসলেও সেটা মুখের অবয়ব দেখে টের পাওয়া যায়৷ আমি যখন মনে মনে হাসছিলাম তখন ইরার কানের কাছে থাকা ভেজাচুল গুলো দেখছিলাম। সে হঠাৎ আমার দিকে ঘুরে আমার মুখের ভাব টা টের পেয়ে বলল..
-আচ্ছা আপনি হাসছেন কেনো??? (ইরা)
।।
।।
পার্সেল
Part : 4
Write : Sabbir Ahmed
_____________________________
-আচ্ছা আপনি হাসছেন কেনো? (ইরা)
-আমার কি ঠোঁট বেঁকেছে? (আমি)
-একটুখানি
-হুমম
-আপনার হাসি রহস্যময়
-নাহহ, আপনার সৌন্দর্য টা রহস্যময়। আপনি সত্যি দারুণ দেখতে
-আমার সাথে প্রেম করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন?
-একদমই না। আপনি হচ্ছেন সাপের মাথায় থাকা মণি, আপনার নাগাল কি আর আমি পাবো?
-প্রশংসা করলেন নাকি টিটকারি?
-আপনি যেটা ধরে নিবেন
-আমার মন যেটা ধরেছে সেটা হলে আমি আপনার অবস্থা খারাপ করে ফেলতে পারি
-আপনি নিজ হাতে আমার অবস্থা খারাপ করলে আমি তাতে রাজিও আছি
-পাগল ছাগল একটা (ইরা উঠে দাঁড়ালো)
-বৃষ্টি তো শেষ হয়নি উঠলেন যে
-আপনার বকবকানিতে
-আমি খারাপ কিছু বলিনি তো। আমি তো আপনার প্রশংসায় ব্যস্ত ছিলাম
-লাগবে না, আপনার কথা আপনার কাছেই রাখেন
,,
ইরা রাগ দেখিয়ে চলে গেলো। আমিও আর দেড়ি করলাম না ভিজতে ভিজতে বাসায় চলে গেলাম। আমি বাসায় যেতেই ভাবী বলল..
-কি ব্যাপার! তুমি দোকান থেকে আসলে?? (ভাবী)
-জ্বি না মানে, না (আমি)
-তাহলে?
-ঐ একটা কাজে গিয়েছিলাম, আর হঠাৎ করেই বৃষ্টি শুরু হলো। কাজ শেষ করে ভিজতে ভিজতে বাসায়
-ওহহহ, এদিকে আমি তোমার জন্য ভাত পাঠিয়ে দিলাম
-ঐটা ভাইয়া খেয়ে নিবে
-তোমার ভাইয়া খেয়েই গেছে
-আবার খাবে
-মানে তুমি! আচ্ছা আমার মাথা খারাপ করো না, গোসল করে আসো আমি খেতে দিচ্ছি
-আমি গোসল করে দোকানে গিয়েই খাবো।
-কেনো?
-আমার ভাত তো গাড়িভাড়া করে দোকানে গিয়েছি। আমি সেগুলো না খেলে ভাত তরকারি রাগ করতে পারে
-কি একটা ছেলে! এ কি দিয়ে কি বলে? মাথা খারাপ হলো নাকি
,,
ভাবীর কথাগুলো শুনে শেষ করে গোসলে গেলাম। সেই গোসল করতে নিয়ে উনার কথা মনে হলো। কি একটা সময় গেলো। ডেকে নিয়ে ভালোই করেছে। এরপর যদি কখনো দেখা হয় একটা বড় ধন্যবাদ জানাবো তাকে।
,,
আমি বালতিতে থাকি পানিতে হাত নাড়াচ্ছি আর ভাবছি..
-আচ্ছা আমি যে তার প্রেমে পড়েছি, এটা যদি আমি বলে দেই তাহলে কি আমাকে মেরে ফেলবে? নাহ মারবে কেনো? খারাপ কিছু তো বলিনি। আবার মারতেও পারে, এদের ক্ষমতার কারণে আলাদা একটা পাওয়ার কাজ করে, হুট করে যদি গুলি করে আমাকে গুম করে দেয় আমার চ্যাপ্টার সেখানেই শেষ। কিন্তু মেয়েটা এতো সুন্দর কেনো? আমি তো ভুলতেই পারছি না৷ সে আমার উপর রেগে কথা বললে মনে হয় এমনটাই আমার সাথে করুক সবসময়। কিন্তু কেনো?
,,
এলোমেলো কথা ভাবতে ভাবতে ভেজা শরীরে বাথরুমে আরও এক ঘন্টা পার হলো। রুমে এসে পোশাক চেঞ্জ করছি ঠিক তখনই অনুভব করলাম শরীরটা গরম হতে শুরু করেছে। এটা মোটেও ভালো লক্ষ্মণ নয়৷ নাক দিয়ে পানি পরাও শুরু করলো। এমন অবস্থা দেখে দোকানে যাওয়ার নিয়ত চেঞ্জ করে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লাম। কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না।
,,
যখন আমি চোখ খুলেছি দেখি ভাইয়া ভাবী আমার মাথায় কাছে চেয়ার পেতে বসে আছে আর তারা বলছে...
-দুপুর পর কোথা থেকে ভিজতে ভিজতে বাসায় ফিরলো। আমি জিজ্ঞেস করায় ও বলল কি যেন একটা কাজে গিয়েছিলো (ভাবী)
-দোকান ওদের জিজ্ঞেস করে দেখলাম, ওরা বলল দুই তিনটা মেয়ের সাথে গিয়েছে (ভাইয়া)
-কি বলো! তোমার ভাই আবার এসব কি শুরু করলো
-সেটাই তো ভাবছি
,,
আমি যে জেগে আছি সেটা তারা বুঝতে পারেনি৷ আমি ধীরে ধীরে উঠপ বসলাম আর বললাম..
-দুই তিনটা মেয়ে না, একটা মেয়ের সাথে গিয়েছিলাম (আমি)
-কোথায় গিয়েছিলি? কি জন্য? (ভাইয়া)
-যার সাথে গিয়েছিলাম সে পুলিশ কমিশনার এর মেয়ে
-বলিস কি! তোর সাথে উনি কি করে?
-আমাকে ভালোবাসে
-হেট কি বলিস এসব?
-সত্যি, তার বাবাও আমাকে ডেকেছে সেই বাসায়
-.....(ভাবী হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে)
-দেখ ভাই এলোমেলো কিছুতে জড়িয়ে পড়িস না,
-আমি ইচ্ছে করে জড়াইনি
-তাহলে?
-তার ভালোবাসা আমাকে জড়িয়ে ফেলেছে
-ভাই তোর মাথায় কি পানি ঢালতে হবে?
-ঢাললে ঢালো সমস্যা নেই। তুমি আমাকে কংক্রিটের বেঞ্চের উপরে শুইয়ে পানি ঢালতে পারো। মোটর চালু করে দিয়ে মাথায় কাছে পাইপ ধরে রাখতে পারো (আমি জ্বরের কারণে এলোমেলো কথা বলা শুরু করলাম)
,,
ভাইয়া আমাকে শুইয়ে দিলো। তারপর আবার ঘুম। পর পর দুইদিন আমি দোকানে যাইনি, বাসায় সারাদিন শুয়ে বসে শুধু মেডিসিন নিয়েছি। দুইদিন ভাবনায় তাকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। শুধু ভাবছিলাম সে আমার খোঁজ করতে এসেছে? তার জন্য দোকানে যাওয়ার আগ্রহটা বেড়ে গেলো। মনস্থির করলাম কাল যাবো।
,,
পরদিন গায়ে হালকা জ্বর নিয়ে দোকানে বসলাম। ভাইয়া বলছিলো এই অসুখ নিয়ে দোকানে আসার কি দরকার। আমি বললাম বাসায় বসে বসে সারাদিন ভালো লাগে না তাই আসছি। সেদিন আবল তাবল বলার পর আমাকে দ্বিতীয় বার কিছু জিজ্ঞেস করেনি৷
,,
আমি দুইদিন দোকান করলাম। কিন্তু তার দেখা তো মিলছে না৷ সে আমাকে বলেনি যে সে আসবে। কিন্তু আমার মন বলে হয়তো কোনো না কোনো কারণে আসবে। কি এক অজানা অপেক্ষায় আমি আছি। মেয়েটার প্রেমে পড়ে আমার মাথাটা ওলট-পালট হয়ে গেছে।
,,
চারদিন এর মাথায় ঠিক দোকান খোলার পরপরই একটা বোরকা পরিধিতে একটা মেয়ে আসলো। আমি শুধু তার চোখ দেখতে পাচ্ছিলাম। তবে চিনতে পারিনি। ভাইয়া তখনও দোকানে আসেনি। মেয়েটি আমার দিকে অল্প সময় তাকিয়ে থাকলো তারপর বলল..
-বাইরে আসেন কথা আছে(কণ্ঠ শুনে বুঝতে পেরেছি আমার কাঙ্ক্ষিত মানুষটি চলে আসছে)
-আমি??? (আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বললাম)
-জ্বি
,,
তারপ পিছু পিছু বাইরে আসলাম। সেদিনের মতো গাড়িতে উঠে বসলাম। সেই একই জায়গায় গাড়ি থামালো। আমি নামতো নিবো তখন বলল..
-আজ নামা যাবে না (ইরা)
-কোনো সমস্যা? (আমি)
-হুমম সমস্যা আছে
-ওহহহ
-আচ্ছা আপনার নামটা কি যেন?
-শুভ
-ওহহ ভুলে গিয়েছিলাম
-আপনার সাথে থাকা মহিলাগুলো কোথায়?
-ওদের সাথে নিয়ে আসিনি
-ওহহহ
,,
গাড়ির সামনে থাকা ছোট্ট একটা ফুলদানিতে দেখলাম আমার দেওয়া সেই নাম না জানা হলুদ ফুল। ফুল গুলো সতেজ অবস্থায় নেই। সেদিনের ভাঙা অংশ টুকুর মাপ আর আজকে যা দেখছি সেটা একইরকম ছিলো। আমার ফুলদানির দিকে তাকিয়ে থাকা দেখে ইরা বলল..
-হায়রে এগুলো তো ফেলে দেওয়াই হয়নি (ইরা এটা বলে সেগুলো হাতে নিলো)
-আরে সমস্যা নেই থাকুক (আমি)
-আচ্ছা
,,
ইরা এই ফুলগুলো নিজের কাছে রেখে দিয়েছে, তার মানে আমি কি ধরে নিবো সে আমাকে মনে মনে পছন্দ করেছে? নাকি ভালোও বাসে। নাহহ এতদূর ভাবা ঠিক
হবে না। সেদিন তো উনি সাফসাফ বলে দিয়েছিলো "আপনার সাথে আমার কোনোভাবেই সম্ভব না"
-এই হ্যালো কি ভাবছেন? (ইরা)
-ক কই কিছু না (আমি)
-আমি যেটা বলি সেটা শোনেন
-ওহহহ হ্যাঁ আপনার কথা শোনার জন্যই তো আসছি
-তাহলে বলি?
-আমি তো সেই ভেজাল টা মিটিয়ে ফেলেছি
-কিভাবে?
-আমার সাথে যে তিনজন থাকে তাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছি। সাথেসাথে দারোয়ান কে বোকা বানিয়েছি
-কিভাবে করলেন?
-আপনি তো আমার নাম বলে দিয়ে আসছিলেন। তো আমার সাথে যারা থাকে তাদের একজনের নাম ইকরা। তো আমি বাবাকে বললাম বাবা ছেলেটা ইকরার কাছে আসছিলো। দারোয়ান বলল যে আমার কাছে৷ আমরা বললাম সে শোনার ভুল করেছে। আর দারোয়ান কে পরে চাকরির ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে দিয়েছি। এদিকে বাবা অনেক কাজে ব্যস্ত থাকেন। আমি যা যা বানিয়ে বলেছি সবই বিশ্বাস করে নিয়েছেন, আগে কি কি বলেছি সেগুলো কিছুই মনে নেই তার। আর সে ফুটেজ ও চেক করতে যায়নি
-হুহহহহহ
-আপনি বড় নিশ্বাস ছাড়লেন যে
-কিছু না
-আপনি নিজের অজান্তেই আমার একটা উপকার করেছেন
-কি সেটা?
-আপনার কারণে বাবার দূর্বল দিকটা খুঁজে পেয়েছি
-হুমমমম। আপনার মা তো আছে, সে আপনার ছল চাতুরী ঠিকই ধরে ফেলবে।
-আমার মা নেই, তবে বাবা আরেকটা বিয়ে করেছে। বাবা যাকে বিয়ে করেছে তাকে আমি মা বলে ডাকি না। সেইজন্য তো তাদের থেকে আলদা থাকি
-হুমম এখন বুঝতে পেরেছি
-আমার মা যে কেনো হঠাৎ করে চলে গেলো, আমার ভালো লাগে না৷ এতো তাড়াতাড়ি আল্লাহর কাছে কেনো চলে গেলো?
-আল্লাহ ডেকেছেন তাই
-আমার যে ভালো লাগে না
-এই বাস্তব টা মেনে নিতেই হবে। উনি কত বছর আগে মারা গিয়েছেন?
-আমি যখন ক্লাস নাইনে তখন
-সে তো অনেক আগে
-হুমমমম,
-আপনার মা আছে?
-আমার মা বাবা দুজনই একজন
-মানে?
-আমার ভাইয়া। আমার মা বাবা দুজনই আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে চলে গেছেন। আর তখন আমি বেশ ছোট
-দুজনের একই অবস্থা
-হুমমম তা এখন কি করবেন?
-কি করবো?
-মানে আর কি কথা বলবেন? দরকারী কোনো কথা আছে
-আমি বন্ধুত্ব করতে আসছি
,,
ইরার মুখে এই কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা।
-আপনার সাথে আমার বন্ধুত্ব হবে না (আমি)
-কেনো?? (ইরা)
-আপনার সাথে আমার চামড়ার কালাে সমস্যা,
-আরে বন্ধুত্বে এই সমস্যা কিছু হবে না।
-হবে, আর আপনি আমার ছোটো বুদ্ধিও অনেক কম আপনার সাথে আমার হবে না বন্ধুত্ব
-কিন্তু আমি যে ভেবে নিয়েছি
-কি কারণে ভাবলেন?
-আপনার কথাগুলো আমার ভালো লাগে। যখন আমি আপনার সাথে রেগে কথা বলি তখন শান্ত থেকে যে রিয়েক্ট করেন সেইটা আমার ভালো লাগে। আর তাই....
।।
।।
পার্সেল
Part : 5
Write : Sabbir Ahmed
____________________________
-আপনার কথাগুলো আমার ভালো লাগে। যখন আমি আপনার সাথে রেগে কথা বলি তখন শান্ত থেকে যে রিয়েক্ট করেন সেইটা আমার ভালো লাগে, আর তাই.... (ইরা এটুকু বলে থেমে গেলো)
-তাই কি? (আমি)
-আমি আপনার জন্য একটা পার্সেল নিয়ে আসছি। পার্সেল টা নিয়ে আমার বন্ধুত্ব টা গ্রহণ করুন
-ধরুন আমার আপনার পার্সেল টা পছন্দ হলো কিন্তু আপনার বন্ধুত্ব আমি গ্রহণ করলাম না তখন কেমন হবে?
-তখন আমার সামনে বসে থাকা শুভ নামক এই মানুষটা দুনিয়াতে থাকবে না
-না ভাই আমি এখনো বিয়েই করিনি আমার দুনিয়াতে থাকার অনেক ইচ্ছে। আমি আপনার সব কিছুই গ্রহণ করবো
,,
আমার সম্মতি পেয়ে ইরা তার ব্যাগ থেকে একটা হাত ঘড়ি বের করলো।
হাত ঘড়িটি দেখে মনে হচ্ছিলো বেশ দামী৷ আমি ঘড়িটা হাতে নিয়ে বললাম..
-এটা কেনো দিতে হবে আমার তো আছেই (আমি)
-দেখেন শুভ সাহেব আমি আপনাকে বন্ধু মনে করে দিয়েছি। এর আগে কেউ কি আপনাকে বন্ধু মনে করে কিছু দিয়েছে? (ইরা)
-হুমমম দিয়েছে
-মানে! কোনো মেয়ে?
-না ছেলে
-ওহহ, কোনো মেয়ে বন্ধু ছিলো না আপনার?
-ছিলো, কিন্তু কিছু দেয়নি
-হুমম আচ্ছা শোনেন। আমি দুনিয়ায় মানুষের মতো স্বার্থ ছাড়া এক পা ও বাড়াই না৷ আপনার কাছে আমার যে স্বার্থ হাসিল হবে সেটা হলো আপনার সাথে থেকে সুখ দুঃখের আলাপ-আলোচনা করা
-ব্যাপার টা আমার জানি কেমন লাগছে?
-কেনো?
-আপনার কি টাকার অভাব? এতো এতো টাকা আপনার তো বন্ধুর ও অভাব থাকার কথা না৷ তাও ভালো ভালো বন্ধু পাবেন
-দেখেন মিথ্যা বলব না৷ বন্ধু ছিলো, কিন্তু তাদের চিন্তা ভাবনা আমার মতো না। তাদের সাথে আমি ঘুরেছি গিফট পেয়েছি। তবে তারা আপনার মতো এতো দামী গিফট দিতে পারেনি
-আমি আপনাকে আবার কি দামী গিফট করলাম?
-বৃষ্টির সময় সেই হলুদ ফুলটা। কি দিয়েছেন সেটা বড় কথা নয়৷ সেই মূহুর্ত টাকে আমার খুব ভালো লেগেছে। তাই আমার মনে হলো আপনার সাথে থাকলে আমার দিনকাল ভালো কাটবে। এই কারণে আজ আপনার কাছে আসা, না হলে আসতাম না
-হুমমম বুঝেছি
-তাহলে এখন দোকানে যান
-বাসায় যাবেন?
-হুমমম আমার প্রাইভেট আছে, ম্যাম মনে হয় বাসায় আসছে
-তো আমাকে একটু দোকানে নামিয়ে যান
-তা তো অবশ্যই দিবো
,,
ইরা আমাকে দোকানের সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো।
এদিকে ভাইয়া আমার সব দেখে ফেলেছে। অবাক করা বিষয় হলো সে কিছু অস্বস্তি হলেও আমাকে কিছু বলেনি।
,,
পরদিন আবার ইরা গাড়ি নিয়ে আসে আমিও তার সাথে গাড়িতে চেপে বসলাম৷ সে আজ আমার পরিবার সম্পর্কে পুরোপুরি জানতে চাইলো। আমি বললাম সবকিছু। আমি যখন ভাইয়ার কথা বললাম সে বলল..
-তাহলে আপনার ভাইয়া তো দারুণ একটা মানুষ (ইরা)
-হুমমম কিন্তু ভাবীটা কেমন যেন (আমি)
-কেমন?
-ভালো না, ভাইয়ার বউ হিসেবে অনেক খারাপ
-মেয়েরা একটু এরকমই হয়
-উহুমম আপনি বুঝতেছেন না৷ উনি আসলেই ভালো না
-ওহহহ
-আমরা কোথায় যাচ্ছি?
-রাস্তাতেই
-কতদূর?
-দেখি ফাঁকা জায়গা আসুক। তারপর গাড়ি থামাবো
-ওকে চলতে থাকেন
-গান শুনবেন?
-ছাড়ুন একটা
,,
আমরা শহর থেকে অনেকটা দূরে চলে আসছি। এখানে ফাঁকা জায়গা অনেক প্রশস্ত, দু পাশে দূরে সারি সারি গাছ দেখা যায় হয়তো সেখানেই গ্রাম। ইরা গাড়ি থামালো একটা ব্রীজ এর উপর। আমাদের এখানে আসতে আসতে বিকেল হলো। বিকেল হলেও রোদের তেজ টা ঠিক দুপুরের মতোই।
,,
ইরা গাড়ি থেকে নেমে আমার পাশে এসে দাঁড়ালো। দুজন গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়ালাম।
-তা বন্ধু এই জায়গায় তোমার ভালো লাগলো? (আমি)
-বাব্বাহহ আপনি আমার বড় হয়ে যেভাবে বন্ধু বলে ডাকলেন আমি তো লজ্জা পাচ্ছি (ইরা)
-মজা করে বললাম আর কি
-হুমমম। এই জায়গা টা ভালো কি না জানি না। আমার ফাঁকা জায়গা ভালো লাগে। দিন এর পর দিন মাসের পর মাস রুমে থাকতে থাকতে আমি ক্লান্ত হয়ে যাই। কারও সাথে যে বাইরে আসবো সে ইচ্ছেও করে না৷ এখন আপনিও আছেন ফাঁকা জায়গা আছে, সব মিলিয়ে আমি সুখী
-একটা কথা বলি?
-বলেন
-আপনি বিয়ে করে নিলেও তো পারেন। তাহলে এইসব বিষয় আপনার আরো ভালো লাগবে
-বিয়ে! বাবা যাদের সাথে বিয়ে ঠিক করে তাদের সাথে পুরো জীবন আমার কাটানো সম্ভব না
-কেনো?
-তাদের বিয়ে করলে, সে তার মতো ব্যস্ত থাকবে গো। আমাকে সময় দেওয়ার মতো সময় তাদের হবে না৷ কেউ তার কাজ বন্ধ করে দিয়ে নিস্বার্থের মতো আমার পিছু ছুটবে না
-এখন অনেক ছেলে আছে পিছু ছুটবে যদি আপনি চান
-জানি, তবে তাদের ও স্বার্থ আছে, আর তাদের স্বার্থ টা খুবই বাজে। আচ্ছা একটা কথা বলুন তো আপনি কি জন্য আমার বন্ধুত্বে রাজি হলেন?
-ভয়ে
-কিহহহ?
-আপনি তো মেরে ফেলার ভয় দেখালেন
-ওহহ তার মানে মন থেকে রাজি হননি?
-হয়েছি হয়েছি
-এটাও কি ভয়ে বলছেন?
-না না সত্যি সত্যি
-হুমম আমার কাছে আপনার স্বার্থ কি?
-আমার এতো হিসেব করার সময় নেই। আমি আমার হিসেব করিনি। আমি আপনার কথা ভেবেই আসছি
-তার মানে আমার ভাবনা টাই আপনার ভাবনা?
-অনেকটা ঐরকম
-আরেকটা কথা বলি?
-আমি তো আপনার বন্ধু যা ইচ্ছে বলতে পারেন
-আপনি যদি আমার প্রেমে পড়েন তো কি করবেন?
-আমি তো অলরেডি তিনবার প্রে...
-কি কি?
-মানে প্রেমে কেনো পড়বো? আপনি তো আমার বন্ধু?
-তিনবার কি যেন বললেন?
-মান তি তি তিনবার ভেবেছি আপনার প্রেমে পড়া বারণ
-হুমমম এরকম কিছু শুনলে আপনার মাথার চুল একটাও থাকবে না
-হুমম এরকম হবে না
-গুড
-বাসায় যাবেন কখন?
-রাত হোক
-ভাইয়া তো আমাকে মেরেই ফেলবে
-ছেলে মানুষ হয়ে এতো ভয় কেনো করেন?
-ভাইয়া বকা দেয় যে, ভাইয়া কে ভয় করি
-আমাকেও তো ভয় করেন
-আপনিও তো ভয় দেখান, আর সুন্দরী মেয়ে মানেই একটা আতঙ্ক
-তাই?
-হুমমমম
-আসেন ব্রীজ এর উপর বসবো
-যদি নিচে পরে যান
-আপনি আছেন তো
-পরার পর আর আমি থেকে কি করবো?
-আপনি পরতে দিবেন কেনো?
-তাইতো আমি তো আছি
,,
ইরা আমার হাতে ধরে বসে রইলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে মিষ্টি মিষ্টি হাসছে। আমি বললাম..
-হাসছেন কেনো? (আমি)
-জানেন আমার অনেক আত্মহত্যা করার শখ ছিলো (ইরা)
-ঐ দেখ কি বলে!
-আমি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু হয়নি। এখান থেকে নিচে পরলে মরবো?
-না পানি আছে মরবেন না
-আমি সাঁতার জানি না
-তাহলে শিওর মরবেন
-দিবো ঝাঁপ
-আরে নাহহ আপনার মাথা খারাপ হয়েছে নাকি?
-আপনি তো দেখছি ভয়ে ঘেমে গেছেন একদম। এখন আমার মনের অবস্থা ভালো। তাই এখন হাজার বছর বাঁচার তীব্র ইচ্ছে আছে। কিন্তু যখন আমার
-থামলেন কেনো?
-আচ্ছা না বলি সে কথা
-বলেন আমি শুনি। আমাকে বললে আপনার মনটা হালকা হবে
-আমার মা আত্মহত্যা করেই মারা গেছে
-কি বলেন!
-হুমমম সেটা আমার বাবার জন্যই। আর বাবা সেটা ধাঁমাচাপা দিয়ে দিয়েছে
-আপনি তো প্রথমে এ কথা বলেননি
-আপনি কি কয়েকদিন আগে আমার বন্ধু ছিলেন যে এ কথা বলব
-কি হয়েছিলো আন্টির যে এমন কাজ করলো
-বাবার সাথে ঝগড়া
-কি নিয়ে?
-তা আমি জানি না
-কিন্তু আপনি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন কেনো?
-মনের অবস্থা ঠিক ছিলো না৷ বাবা খুব দ্রুত বিয়ে করেন। আর উনাকে আমার দেখতে ইচ্ছে করছিলো না
-হুমমমম
-....(ইরা কান্না করছে)
-আচ্ছা বাদ দেন সেসব কথা। আমরা অন্য কথা বলি
-হুমমম
-আমার একটা চাকরি জোগাড় করে দিতে পারবেন?
-আপনার তো দোকান আছেই, ব্যবসা করেন। চাকরি লাগবে কেনো?
-ওটা তো ভাইয়ের দোকান, আমার না
-নিজে থেকে কিছু করতে চান?
-হুমমম
-চাকরি করে কি করবেন?
-আরে লেখাপড়া শেষ হয়েছে একটা চাকরি করবো। বিয়ে করবো সংসার করবো
-না না আপনার বিয়ে এতো তাড়াতাড়ি হবে না
-কেনো?
-আমি থাকতে আপনার বিয়েই হবে না
-আমাকে বিয়ে করতে দিবেন না?
-না?
-কেনো?
কেনো আবার? আপনি বিয়ে করলে আমি একা হয়ে যাবো
-তাহলে আমি বিয়ে করবো কবে?
-আগে আমার বিয়ে হবে তারপর আপনি বিয়ে করবেন। আমি তো আমার বন্ধু কে এভাবে হারাতে পারবো না
-আপনি কবে বিয়ে করবেন?
-দেড়ি আছে
-এতোদিন একা থাকতে হবে আমার!
-একা কেনো আমি তো আছি
-আপনি তো আর বউ এর মতো হয়ে থাকতে পারবেন না
-এই এই কি বললেন?
,,
ইরা পেছন থেকে আমায় ধাওয়া করলো। আমি ছুটছিলাম সামনের দিকে আমার পিছুপিছু সে। পেছন থেকে সে শুধু বলছিলো..
-আজ যদি আপনাকে পাই আপনার খবর আছে (ইরা)
-খবর সে তো পরের কথা আগে তো ধরে নিন (আমি)
,,
ইরা একটু দৌড়াতেই হুট করে শুয়ে পড়লো। আমি তো ভয়েই শেষ কি না কি হলো আবার। দৌড়ে আসলাম তার কাছে। আর তাকে স্পর্শ করার আগেই লাফ দিয়ে উঠে আমায় ধরে ফেলল....
-এটা এটা ঠিক না, এটা চিট হয়েছে (আমি)
-আপনি যে বোকা সেটা আপনার দোষ, আর আমি যে চিট করেছি সেটা আমার বুদ্ধির কারবার (ইরা)
-এখন কি করবেন?
-আপনার নাক বরাবর কয়েকটা ঘুষি মারবো..
।।
।।
পার্সেল
Part : 6
Write : Sabbir Ahmed
__________________________
-এখন কি করবেন? (আমি)
-আপনার নাক বরাবর কয়েকটা ঘুষি মারবো (ইরা)
-শেষমেশ অকালে নাক হারাতে হবে?
,,
ইরা উঠে দাঁড়ালো। আমার হাত ধরে পূর্বের সেই জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালাম দুজন।
-এবারের মতো মাফ করে দিলাম (ইরা)
-তো হাতটা ছাড়ুন (আমি)
-না আবার এলোমেলো কথা বলে দৌড় দিতে পারেন, তাই হাত ধরেই থাকবো
-লোকে দেখলে কি বলবে?
-কিছু বলবে না৷
-হুমমম
-জানেন আমি অনেক উগ্র ছিলাম৷ মানে ছেলেদের অনেক পিটিয়েছি
-কেনো?
-ঐ যে শুধু ছেঁচড়ামি করতো
-আমি করলে আমাকেও মারতেন?
-অবশ্যই
,,
হঠাৎ ইরার ফোন টা বেজে উঠলো। আমার থেকে একটু দূরে গিয়ে ফোনটা রিসিভ করলো ইরা। কিছুক্ষণ কথা বলে মুখটা কালো করে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।
-কোনো সমস্যা? কি হয়েছে? (আমি)
-সমস্যা তো একের পর এক বেঁধেই আছে (ইরা)
-কি হয়েছে বলেন?
-আমাকে এখনি বাসায় যেতে হবে
-কেনো?
-আমি বাসায় গেলে আপনার ভাইয়া আপনার বাসায় যেতে পারবে
-মানে! কি বলেন এসব
-আপনার ভাইয়া এখন আমাদের বাসায়,
-এই আপনার বাবা তো কোনো সমস্যা করবে না
-আমি জানি না
-ভাইয়া আপনাদের বাসায় গেলো কিভাবে?
-আমি আপনি দু'জনই এখানে, আপনি যা যতটুকু জানলেন এখন আমি ততটুকুই জানি। গেলেই বুঝতে পারবো
,,
আমি ভাইয়াকে কল করলাম দেখি তার ফোন বন্ধ। সন্ধ্যার পর পর বাসায় পৌঁছে গেলাম। আমি বাসায় এসে চুপ করে আছি। ভাবী হয়তো কিছু জানে না, জানলে এতক্ষণ তুলকালাম শুরু করে দিতো।
আমি বাসায় আসার কিছুক্ষণ পর ভাইয়া আসলো।
ভাইয়া আমাকে সাথে নিয়ে তখনি বাইরে গেলো।
আমি তো ভয়ে শেষ, হয়তো নিরিবিলি জায়গায় নিয়ে মাইর দিবে।
,,
ভাইয়া বাসা থেকে একটু দূরে রাস্তার ধারে নিয়ে আমার কাঁধে হাত রেখে বলল..
-মেয়েটার সাথে তো কিছু হয়েছে? (ভাইয়া)
-সত্যি বলব? (আমি)
-সত্যি টাই তো বলবি
-হয়েছে
-কি?
-বন্ধুত্ব
-ধুরর তাহলে আর কি হলো? শোন আমি দোকানে বসে ছিলাম দুটো মেয়ে এসে আমাকে ডেকে নিয়ে কমিশনার এর বাসায় নিয়ে গেলো, আমি ঠিক তখনই বুঝতে পেরেছিলাম তুই কিছু একটা করেছিস
-কিন্তু আমি তো উনার সাথে..
-দাঁড়া আমাকে কথা শেষ করতে দে
-বলো
-উনি আমাকে ডেকে মিষ্টি খাওয়ালেন, আর উনি নিজে নিজেই একটা সিদ্ধান্ত দিলেন
-কি সিদ্ধান্ত?
-তোর আর ঐ মেয়েটার বিয়ে
-আরে কি বলো?
-উপায় নেই, কথাটা তিনি ফাইনালি বলেছেন
-এখন তাহলে কি হবে?
-তার সাথে মিশতে গেলি কেনো? এখন বোঝ। (ভাইয়া মিটিমিটি হাসছে)
-ভাইয়া তুমি হাসছে কেনো? তুমি কি হ্যাঁ বলে আসছো
-মনে মনে না করেছিলাম। তবে মেয়েটাকে দেখে রাজি হয়ে গেলাম। এখন তোর ভাবী কে এগুলো যেন কিছু বলিস না। আগে থেকেই নানান কথা শুরু করবে
-কিন্তু উনি এই ঘরে মেয়ে দিতে রাজি হলো কেনো বুঝতেছি না৷ আর ও তো রাজি হবে না (কথাগুলো বিড়বিড় করে বললাম)
,,
ভাইয়া আমাকে ডেকে বলল...
-তুই তাহলে এখানে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাক, আমি বাসায় যাই। ভাবা শেষ হলে বাসায় আসিস কেমন? (এটা বলে ভাইয়া চলে গেলো)
,,
আমি সত্যি চিন্তার সাগরে পরে গেলাম। কি করা যায় এখন? বিয়ের কথা শুনে আমার তো হাত পা কাঁপতে শুরু করলো। হঠাৎ মনে হলো ইরার নাম্বার টা আমার কাছে আছে। গাড়িতে কথা বলার সময় নাম্বার টা নিয়ে রাখছিলাম, আমি ইরাকে কল করলাম।
,,
দুবার রিং হতেই কল রিসিভ করে বলল..
-হ্যালো কে? (ইরা)
-আমি শুভ
-ওহহ আপনি, বলেন
-আমি যা শুনেছি আপনিও কি তাই শুনেছেন?
-হুমমম
-এগুলো হলো কিভাবে?
-ঐ যে আমার যারা গার্ড ছিলো তারা এসব করেছে। যদিও তাদের দোষ নেই আমার বাবার চাকরি করে তারা
-তাহলে এখন কি হবে?
-জানি না
-আপনার বাবা আমার সাথে বিয়ে দিতে কেন রাজি হলো?
-আমি হচ্ছি উনার জীবন চলার পথের কাটা, আমাকে দূর করলেই উনি ভালো থাকবেন
-আপনি যে আমায় পছন্দ করেন না
-আমি জানি না কিছু বাবা যা করে তাতেই রাজি। এবার আর আমার কথা শুনবেন না উনি। উনার ভালোর জন্য আমি তার চোখের সামনে থেকে দূর হবো৷ আমি জানি বাবার আড়ালে এই প্ল্যান গুলো তার দ্বিতীয় বউ করছে, আমি শুনেছিলাম একটা কথা সম্পত্তি দেওয়ার ভয়ে আমাকে একদম হিসাব চুকে বাসা থেকে বিদায় করবেন। আমার মনে হয় কি জানেন?
-কি মনে হয়?
-ছোট ঘরে পাঠানোর কারণ আমি যেন তাদের সাথে ক্ষমতা দেখিয়ে কথা বলতে না পারি। এটাও সেই মহিলার প্ল্যান
-তাহলে আপনি আসছেন আমার বাসায়
-হ্যাঁ তবে আমি কিন্তু আপনাকে কিছু করতে দিবো না
-মানে! বুঝলাম না
-মানে আমাদের মাঝে স্বামী-স্ত্রীর কোনো সম্পর্ক গড়ে উঠবে না৷ যেমন বন্ধুত্ব তেমনই থাকবে
-....(আমি চুপ করে আছি)
-আপনার খারাপ লাগলে আমার কিছু করার নেই। আমি আপনাকে বর হিসেবে মনে নিতে পারবো না৷ বন্ধু হিসেবে ঠিক আছে। আপনি আমার কাছে একটা জোকার এর মতো। মন খারাপ এর সময় যাকে দেখে আমি হাসবো। আমার কথায় কষ্ট পেয়ে থাকলে আমার কিছু করার নেই। কোনো মিথ্যা আশা আমি দেখাতে পারবো না৷ আপনার যদি বিয়েতে অমত থাকে বাবাকে এসে বলে যাবেন। এখন ফোন রাখছি (ইরা কলটা কেটে দিলো)
,,
আমি এক অদ্ভুত জ্বালায় পড়ে গেলাম। কোনো উপায় না পেয়ে বাসায় গিয়ে ভাইয়াকে আবার বাইরে নিয়ে আসলাম..
-আবার কি জন্য বাইরে নিয়ে আসলি?? (ভাইয়া)
-তোমাকে পুলিশ কমিশনার এর বাসায় যেতে হবে একবার (আমি)
-কেনো??
-প্রস্তাব টা প্রত্যাখান করতে
-আমি পারবো না। আর উনি কেমন মানুষ তুই ভালো করে জানিস আর আমিও। শেষমেশ মেরে গুম করে দিবে।
-তাহলে উপায়?
-এতো ভয় পাচ্ছিস কেনো বুঝলাম না৷ একটা ভালো পরিবার এর সাথে আমাদের আত্মীয়তা হতে যাচ্ছে তুই এমন করতেছিস কেনো?
-আমার যে সমস্যা আছে
-কি সমস্যা?
-সে তুমি বুঝবে না৷ আমি যে কি করি
-পাগলের মতো করতেছিস কেনো? মেয়ে তো দেখতে অনেক সুন্দর। তোর কপাল ভালো এমন পরিবারে এমন একটা মেয়ে পাচ্ছিস
-...(ভাইয়া কে বুঝাই কি করে যে এখানে বিশাল একটা সমস্যা আছে)
-দেখ আমি এখানে খারাপ কিছু দেখছি না। তুই এটাতে রাজি হয়ে যা
-আচ্ছা দেখি
,,
দুদিন আমার টেনশনে কেটে গেলো। এই দুইদিন এর মধ্যে একবার আমাকে ডেকেছিলো।সেদিন বিয়ে নিয়ে আমাদের মাঝে কথা হয়নি।
,,
তো দুইদিন পর হঠাৎ করে এক সন্ধ্যায় ইরার বাবা আমাদের ডাকলেন। দুই ভাই কমিশনার এর বাসায় গেলাম। আমরা সেখানে গিয়প বুঝতে পারি উনি বিয়ের আয়োজন করেছেন৷ এদিকে ভাইয়া উনার সাথে গিয়ে কথা
বলছেন৷ আমি একা একা সোফায় বসে আছি। আমার থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ইরার সাথে থাকা সেই তিনটা মেয়ে। আমার সামনে বসে আছে কাজী৷
,,
ভাইয়া কিছুক্ষণ পর এসে বলল..
-আজই বিয়ে হবে(ভাইয়া ফিসফিস করে বলল)
-আমিও তো বুঝতে পেরেছি কিন্তু এভাবে কেনো? আমাদের একটা প্রস্তুতি আছে না? (আমি)
-আমি কি করব? আজ মেয়ে নিয়ে যেতে বলে। উনি সব আয়োজন করে ফেলেছেন
-ভাইয়া কিছু একটা বলে আটকাও
-আমি পারবো না, তুই গিয়ে বল
-আমিও তো পারবো না
-তো চুপচাপ বসে থাক, একটু পরে আমাদের খাবার দিবে, আর খাওয়া শেষ করেই বিয়ের কার্যক্রম শুরু করবেন
-ভাইয়া আমার ভয় করছে
-তুই চিন্তা করিস না, আমি আছি, বাসায় কি কল করে তোর ভাবী কে কিছু বলব?
-না থাক, দেখি কি হয়। আমার একটু কথা বলা লাগছিলো ইরার সাথে তাকে এখন কই পাই?
-বা দে, বাসায় নিয়ে গিয়ে কথা বলিস
,,
আমার বিয়েটা যে এভাবে হবে আমি জীবনেও ভাবতে পারিনি। খাওয়া শেষ হয়ে গেলে আমার শ্বশুর আসলেন৷ আমার সাথে কথা বললেন কিছুক্ষণ। তারপর ইরার ব্যাপারে টুকটাক কিছু কথা বললেন হাসিমুখে। আমি শুধু ভাবছি তার এই হাসির পেছনে যে কতো কিছু লুকিয়ে আছে৷
,,
কিছুক্ষণ পর ইরা আসলো একদম সাদামাটা ভাবে। কোনো সাজগোজ নেই, তাকে দেখে আরও খারাপ লাগা শুরু হলো। কাজী বিয়ে পড়ালেন। ইরার মধ্যে একটুও অস্বস্তি ভাব দেখলাম না।
,,
বিয়ে পড়ানো শেষে আমি ইরার বাবার সাথে কথা বললাম। বিদায় নেওয়ার সময়ও বললাম কিন্তু ইরা তার দিকে ঘুরে তাকিয়েও দেখেনি।
,,
ইরাকে নিয়ে বাসায় আসলাম। আমি পথিমধ্যে একটা কথাও বলিনি তার সাথে। কারণ ব্যাপার গুলো এতোটাই হুটহাট স্বপ্নের মতো হচ্ছে যা মেনে নিতে আমায় হিমশিম খেতে হচ্ছে।
,,
বাসায় আসলাম দুজন ড্রয়িং রুমের সোফায় বসলাম। ভাইয়া ভাবী কে নিয়ে পাশের রুমে বসে কথা বলছে আমাদের ব্যাপারে। ভাবী প্রথমে আমাদের দেখে তো তার চক্ষু চরক গাছের মতো অবস্থা।
,,
এদিকে ভাবী ভাইয়ার উপর চিল্লানো শুরু করেছে। এরা দেখে ইরা আমাকে বলল..
-ভাবী কি ভাইয়ার হাতে মাইর খায়? (ইরা)
-আরে না, মাঝে মাঝে ঝগড়া লাগে। আপনাকে তো বলেছিলাম (আমি)
-একটু বেশি খারাপ তাই না?
-হুমম ঐরকমই
-আমাদের এ বাসায় থাকতে দিবে তো?
-কেনো দিবে না? আমার বাসা এটা
-মনে হচ্ছে না। প্রস্তুতি নিয়ে রাইখেন যখন তখন বের করে দিতে পারে....
।।
।।
পার্সেল
Part : 7
Write : Sabbir Ahmed
____________________________
-কেনো দিবে না? আমার বাসা এটা (আমি)
-মনে হচ্ছে না। প্রস্তুতি নিয়ে রাইখেন যখন তখন বের করে দিতে পারে (ইরা)
-আমার ভাইয়া আছে, এরকম করার সাহস পাবে না
-শোনেন অনেক সময় মানুষ তিল কে তাল বানায়, ভবিষ্যতে কি হবে সেটা বলা খুবই মুশকিল।
-বাদ দেন সেসব কথা, আপনার কেমন লাগছে?
-নতুন জীবন ভালোই লাগছে (একটু আনমনে হয়ে বলল)
,,
তারপর দু'জনই চুপ। এদিকে ভাইয়া ঝগড়া শেষ করে আমাদের কাছে এসে বসলো।
-রাত হয়েছে এখন ইরাকে নিয়ে রুমে যা (ভাইয়া)
-ভাবী কি বলল? (আমি)
-মেয়েদের সব কথা ধরতে নেই, এই একটু রাগারাগি করলো আর কি
,,
ভাইয়াকে ইরাকে কিছু কথা বলল যাতে কিছু মনে না করে। আমি ইরাকে নিয়ে রুমে আসলাম, আর ভেতরে ঢুকেই ইরা দরজা লাগিয়ে দিয়ে বলল...
-মশারি টা আপনি টাঙাবেন, আমি বিছানা ঝেড়ে নিচ্ছি (ইরা)
-আপনি একা থাকবেন বিছানায়?(আমি)
-নাহহ সে কি কথা? আমি একা কেনো থাকবো? আপনিও থাকবেন
-আমিও!
-অবাক হওয়ার তো কিছু নেই
-আচ্ছা বুঝেছি
-খুব ক্লান্ত লাগছে শুয়ে পড়লেই বাঁচি
,,
মাঝখানে কোলবালিশ রেখে দুজন একই কাথা নিয়ে শুয়ে পড়লাম। রুমের লাইট অফ। রাত গভীর হওয়ায় আশপাশের তেমন কোনো শব্দ ও শোনা যাচ্ছে না। ইরা ঘুমিয়েছে কি না সেটাও বুঝতে পারছি না৷ তাকে যে আমার কিছু কথা বলার ছিলো।
দেখি একটু ডেকে কথা বলা যায় কি না৷
-আপনি কি জেগে আছেন? (আমি)
-হুমমম, কিছু বলবেন? (ইরা)
-হুমমম
-জ্বি বলুন
-আজকে তো বাসর রাত
-এ কথা এখন উঠতেছে কেনো? আমি কি বলেছি মনে নেই? (একটু রেগে গিয়ে)
-রাগ কইরেন আমাকে বলতে দেন
-আমি কি বলেছিলাম সেটা বলুন আগে
-বলেছিলেন বিয়ে হবে তবে আমরা বন্ধুত্বেই থাকবো
-তাহলে বাসর ঘরের কথা এখন উঠছে কেনো?
-আসলে আমি অন্য একটা কথা বলতে চেয়েছিলাম
-কি সেটা শুনি
-না থাক, আপনি ঘুমান
-আমার কিছু বলার আছে
-হ্যাঁ হ্যাঁ বলেন
-আপনি তো আমার বন্ধু, তো আমার প্রয়োজনীয় জিনিস আমি চাইতে পারবো না৷ মানে কোনো কিছু আমি চাইবো না। আপনি সব দিক খেয়াল রেখে এনে দিবেন
-চাইলে কি সমস্যা?
-আপনাকে তো বর হিসেবে মেনে নেইনি তাই চাইবো না
-ওহহ আচ্ছা তাহলে আমার কথাটা বলি?
-যদি ভুলে ভুলে আপনার সাথে আমার স্পর্শ লাগে
-এখন?
-মানে যখন তখন
-কেমন স্পর্শের কথা বলছেন একটু খুলে বলুন তো
-মানে বর বউ যা করে
-না সেটা হবে না, নিজেকে সামলিয়ে রাখবেন
-বলতেছি যদি ভুলে....
-ভুলটাই কেনো হবে? ভুল ও হওয়া যাবে না
-আমার পা উঠিয়ে দেওয়ার অভ্যাস আছে
-উফফ বাজে বাজে অভ্যাস ভালোই চর্চা করেছেন তাই না?
-হয়ে গেছে আর কি
-কোল বালিশ অন্যপাশে নিয়ে পা তুলে দিয়েন। আমার উপর ঠ্যাঙ উঠালে সেটা কেটে ফেলে দিবো
-ওহহ এটাই জেনে নিলাম আর কি
-জ্বি, আর কিছু জানার আছে?
-আমরা এভাবে কতদিন থাকবো?
-যতদিন আপনার আমার হায়াত আছে
-তার মানে এভাবেই সারাজীবন
-হ্যাঁ কোনো সমস্যা আপনার?
-সমস্যা তো একটু আছেই
-কি সমস্যা
-উহুমম বলা যাবে না
-আচ্ছা সমস্যা চোখে পড়ুক সমাধান করা যাবে। এখন বকবক না করে ঘুমান
-আচ্ছা
,,
পরদিন সকালে ইরার ডাকেই আমার ঘুম ভাঙে। আজ ঘুম ভাঙতে বেশ দেড়ি হয়েছে। ইরা ডেকে তুলে বলল..
-ভাইয়া তো দোকানে গিয়েছে (ইরা)
-আমাকেও তো যেতে হবে (আমি লাফ দিয়ে উঠলাম)
-আরে না, ভাইয়া বলেছে আপনাকে বাসায় থাকতে আজ যেতে বারন করেছে
-কেনো?
-সেটা তো আমি জানি না, আপনার ভাই জানে
-হুমম
-জানেন সকালে কি হয়েছে? (ইরা আমার কাছে এসে বলল)
-কি হয়েছে?
-আপনি তো সকালে ঘুমিয়েছিলেন, আমার বাবা একটা লোকের কাছে কিছু বাজার পাঠিয়েছিলো
-তাই??
-হ্যাঁ আর আমার কিছু পোশাক পাঠিয়েছিলো। আমি পোশাক গুলো রেখে বাকি সব ফেরত পাঠিয়েছি
-আরে এমনটা করেছেন কেনো?
-আপনার বাসায় কি খাবারের অভাব পড়েছে যে তার পাঠানো কিছু খাবো
-উনি তো রাগ করবেন
-করলে করুক। আমার কি? আমার সাথে তার কোনো সম্পর্কই তো নেই। দেখলান তো কিভাবে মেয়েকে সড়িয়ে দিলো
-থাকুক সেসব কথা
-সব থেকে যাবে শুধু আমি থাকবো না
-কোথাও যেতে দিলে তো
-মৃত্যু কিভাবে আটকাবেন?
-আবার মুখ দিয়ে আজেবাজে কথা বলে
-আচ্ছা আসেন আমি আপনাকে খাবার দিচ্ছি। আর হ্যাঁ গোসল করে তারপর খেতে আসেন
-না, দুপুরে গোসল করবো
-এই গোসল করতে হবে
-কেনো?
-না হলে ভাবী কি মনে করবে
-আমি গোসল না করলে ভাবী কি মনে করবো?
-আরে পাগল আমাদের বিয়ে হয়েছে না? গোসল করবেন
-ওহহ বুঝেছি, কিন্তু কিছু তো হয়নি শুধু শুধু গোসল দিবো কেনো?
-বোঝাতে হবে যে কিছু হয়েছে
-আমি মিথ্যা বোঝাতে পারবো না
-কেনো?
-আগে হোক তারপর
-ঐ ঐ ওসব কিছু হবে না
-ঐতো আমি সকালে কখনো গোসল করবো না
-আচ্ছা পাঁজি তো আপনি
-একটু একটু
-প্লিজ গোসল টা করে নিয়েন, আমি করে ফেলেছি যে
-আচ্ছা ঠিক আছে
-হুমম আপনি তাড়াতাড়ি আসেন, আমি খাবার গরম করি আপনার জন্য
-ঠিক আছে বন্ধু
-বন্ধু?
-আপনি আমার যা হন তাই তো বললাম
-হুমম (ইরা মিষ্টি হাসলো)
,,
আমি গোসল করে ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে আসলাম। ইরা আমার প্লেটে খাবার দিয়ে ও নিজেও খাবার নিলো। আমি একটু অবাকই হলাম।
-আপনি খাননি এখনো! (আমি)
-আপনি উঠলেন দেড়ি করে,
-খেয়ে নিলেই হতো
-আমার মন চায়নি
-ভাবী কোথায়?
-উনি উনার রুমে
-কথা বলেছে তোমার সাথে?
-না
-ওহহ
-খাওয়া শেষ করে কি করবেন?
-কিছু না
-আপনার রুমটা সাজাতে হবে যে একটু
-হেল্প লাগবে তাই তো?
-হুমম
-সমস্যা নেই
-পুরে আলনায় আপনার কাপড় আমার টাও তো রাখতে হবে। আমি একা পারবো না মনে হয়
-আরে ঠিক আছে ওভাবে বলতে হবে না আমি হেল্প করবো
,,
খাওয়া শেষ করে দুজন রুমে আসলাম, ইরা দরজা বন্ধ করে দিলো
-দরজা লাগালেন কেনো? (আমি)
-আপনার ভাবী কাজ দেখে আবার কি না কি মনে করে (ইরা)
-এতো ভয়?
-আমি ভয় পাই না। ভয় হয় আপনার জন্য, আপনাকে যে কথা শুনাতে পারে
-বাব্বাহহ
-আরেকটা কথা
-কি?
-আমি সংসারের একটা কাজ ও পারিনা
-কোনো কাজই না?
-শুধু বিছানা টা ঠিক করতে পারি
-হায় আল্লাহ এতোদিনে একটা কাজও শিখেননি?
-উহুমমম
-তাহলে তো আমার বাঁশ
-এই কিসের বাঁশ?
-মানে কিভাবে যে বলি
-যেভাবেই হোক বলুন
-আমার তো ঘরে বাহিরে দুটোই সামলাতে হবে
-তো সামলাবেন সমস্যা কি?
-আমার ঠেকা পড়েছে
-ওহহ তাই না?
ইরা গাল ফুলিয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বিছানায় বসে রইলো। আমিও তো হতভম্ব হয়ে গেলাম। আমি আসলে জানতাম সে কি পারবে। বড়লোক এর ঘরের মেয়ে এসব পারবে না এটাই স্বাভাবিক। আমি যে মজা করছিলাম সেটা তো আর সে বুঝবে না। এখন এর রাগ ভাঙাই কি করে।
আমি একটু কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমার কাছে যাওয়া দেখে উনি রেগে বলল..
-একদম কাছে আসবেন না (ইরা)
-সরি (আমি)
-আমার সরি লাগবে না
-কি লাগবে?
-আমার কিছুই লাগবে না। আমার কোনো হেল্প লাগবে না৷
-আমি আসলে মজা করছিলাম
-আমি কি মজার পাত্র যে মজা করবেন??
-আপনি তো আমার বন্ধু, বন্ধুই তো বন্ধুর সাথে মজা করবে
-আমার এমন মজা লাগবে না,
-এই যে পেছন ফিরে দেখেন আমি কানে ধরেছি
-দেখবো না
-ওঠবস করতে হবে?
-জানি না
-ও বন্ধু সরি তো
-একটা কথা দিতে হবে, তাহলে সব সরি মেনে নিবো
-বলেন কি কথা
-বিকেলে ঘুরতে যাবো
-দূরে?
-আরে না কাছে কোথাও
-হুমমম ঠিক আছে
-পরে কিন্তু মানা করা যাবে না
-করবো না
,,
ইরা আমার দিকে ঘুরে বসলো।
-কাছে আসেন (ইরা)
-কেনো? (আমি)
-মাইর দিবো
-ছোট্ট একটা কথায় এতো রাগ?
-হুমমম রাগ হইছে। কাছে আসেন আপনি
-এবারের মতো মাইরটাও মাফ করে দেন
,,
সে কিছুক্ষণ ভেবে বলল
-আচ্ছা একটা শর্তে মাফ করবো (ইরা)
-আবার কি শর্ত??
-আমাকে সংসার করানো শেখাবেন, মানে কখন কি করতে হয় রান্না কিভাবে করতে হয়, আর যত কাজ আছে সব
-আমি কি কখনো করেছি? আমি তো ছেলে মানুষ
-তবুও শেখাবেন
-আপনি ভাবীর কাছে থেকে শিখে নিবেন
-না উনাকে দেখে ভয় লাগে আমার৷ আপনি থাকতে অন্য কারও কাছ থেকে শিখবো না
-উমম আচ্ছা একটা উপায় আছে
-কি?
-আমার সাথে আপনি প্রেম করলে সব শিখে যাবেন
-ঐ আবার? বন্ধুকে প্রেম নিবেদন করার পরিণাম কিন্তু ভয়াবহ হবে।
।।
।।
পার্সেল
Part : 8
Write : Sabbir Ahmed
___________________________
-ঐ আবার? বন্ধুকে প্রেম নিবেদন করার পরিণাম কিন্তু ভয়াবহ হবে(ইরা)
-না না থাক বাবা আমি কোনো ভয়ঙ্কর মূহুর্তের সাক্ষী হতে চাই না(আমি)
-হুমম গুড। তো শুভ সাহেব আমাকে আরও কিছু হেল্প করতে হবে
-কি হেল্প লাগবে বলেন
-বিকেলে যে একটু বাইরে যাওয়ার কথা আছে, বাইরে গিয়ে বলব
-ওহহ
-জ্বি
,,
দুজনে মিলে রুমের অনেক কিছুই আগের অবস্থান পরিবর্তন করলাম।
বিকেলের দিকে দুজন বের হলাম।
ইরা বোরখা পরেই বের হলো।
বাসা থেকে একটু দূরে খেলার মাঠে বসলাম। আমাদের মতো অনেকেই এসে খেলা দেখছে গল্প করছে।
জায়গাটা অনেকটাই পার্ক এর মতো।
কয়েক টাকার বাদাম নিয়ে দুজন একটা জায়গায় বসলাম।
,,
-বাদাম খান (আমি)
-আপনি খোসা ছাড়িয়ে দেন (ইরা)
-আপনি ছাড়াতে পারেন না
-দাঁত দিয়ে পারি হাত দিয়ে না
-এখনো দেখছি বাচ্চাদের মতোই আছেন
-কিছুটা
-হুমমম
-আচ্ছা শোনেন
-জ্বি শুনতেছি বলেন
-আমি একটা কথা বলতে চেয়েছিলাম আপনাকে মনে আছে?
-হুমমম মনে আছে। আপনি বলুন আমি শুনছি
-আপনি রাগবেন না কিন্তু
-আমি বুঝেশুনে রাগ করি হুটহাট রাগ করিনা
-শোনেন তাহলে। আমি ভেবেছি যে আমি আমার অনার্স টা শেষ করবো। তারপর একটা ভালো চাকরি নিয়ে আব্বুকে দেখিয়ে দিবো যে আমিও পারি তার ছায়া থেকে বের হয়ে বাঁচতে
-ওহহহ
-কি ওহহ? আপনি কিছু বলুন
-আপনার বলা শেষ?
-হুমমম
-এখানে আমি কিভাবে হেল্প করতে পারি?
-আপনার অনুমতি লাগবে, আর্থিক সাপোর্ট লাগবে। আর আপনারও সাপোর্ট লাগবে
-হুমম বুঝলাম। এটা এভাবে বলতে হবে কেনো? আপনি সবসময় আমার সাপোর্ট পাবেন
-হুমম ধন্যবাদ
-তারপর কি আমায় ছেড়ে চলে যাবেন?
-না না যত বড় হই না কেনো বন্ধুকে ছেড়ে কোথাও যাবো না
-তাই? মানুষের অবস্থান পরিবর্তনের সাথে তার সবকিছুর পরিবর্তন হয়। পূর্বের দেওয়া কথাগুলো মনে থাকে না
-আমার বেলায় এরকম কিছু হবে না
-হলেও ভালো না হলেও ভালো
-মানে? না হলে ভালো কিভাবে হবে?
-সময় হোক বুঝতে পারবেন
,,
ইরার সাথে কথা বলে বুঝতে পারলাম এ মেয়ে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করতে চায়। তাই কিছু না ভেবে তাকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিলাম।
,,
এরপর থেকে শুরু হলো আমার জীবনের দুঃখের সময়, আর তার সুখের সময়। ভাইয়া কে ইরার ব্যাপারে এই কথাটা বলায় ভাইয়া ভাবী দুজনেই আমার সাথে ঝগড়া শুরু করে দিলো। এমনকি বলল আমাকে আলাদা কোনো পথ দেখতে।
আমি সেদিন বুঝতে পেরেছি তারা কোনো খরচ আমাকে দিবে না৷
,,
বন্ধুদের কাছে থেকে ধারদেনা করে ইরাকে একটা আলাদা বাসা ভাড়া করে সেখানে থাকার ব্যবস্থা করলাম।
আমার ভাই আমাকে দোকানে রাখেনি, এবার ভাবীর কুমন্ত্রণা শুনে আমার উপর ক্ষেপেছেন।
,,
আমি একটা কোম্পানির ডেলিভারি ম্যানের জব নিলাম। আর থাকা খাওয়া নিলাম আমার ডিলার এর গুদামে দারোয়ান এর সাথে। চাকরি টা নিতে অনেক মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়েছে।
,,
এদিকে দিনকে দিন ইরার খরচ বারছিলো। বড় ঘরের মেয়ে তার খরচ ও বেশি। সে জানতো আমি ভাই এর দোকানে হয়তো কাজ করি।
আমি আমার কাজে ফাঁকে মাঝে মাঝে ভাইয়ার সাথে গিয়ে দেখা করে আসতাম। উনি আমার সাথে জোর করে দুই একটা কথা বলতেন।
,,
আমি সেটাতেই সন্তুষ্ট ছিলাম। দেখতে দেখতে প্রায় এক বছর পার হলো। আমি তো আমার আমার মতো খেটেই যাচ্ছি। আমার সব পরিশ্রম একমাত্র তার জন্যই। আগের মতো তার সাথে আমার দেখা হয় না৷ মাসে দুই একবার, আর বাকিসময় মাঝে মাঝে ফোনে কথা হতো। আমি থাকতে চেয়েছিলাম তার সাথে। সে মানা করে বলেছিলো আমি তার কাছে থাকলে তার লেখাপড়া হবে না। তারপর আমি কখনো জোর করিনি তাকে।
,,
তার সাথে দেখা করার কথা বললে সে আমাকে এড়িয়ে যেতো। আমি বুঝতে পেরে তাকে তেমন জোর করিনি।
সময় যত বাড়তে থাকে খরচের পরিমাণ টাও বাড়তে থাকে।
এতো খরচ চালাতে আমি হিমশিম খেয়ে উঠি।
,,
আমি উপায় না পেয়ে আমার মালিকের কাছে আলাদা কিছু কাজ নিলাম। তারপর থেকে তেমন সমস্যা হয়নি, তবে শরীর স্বাস্থ্যের বারোটা বেজে যেতো।
,,
ইরার সেই বছরে অনার্স শেষ এর দিকে, সামনেই তার ফাইমাল এক্সাম, সেইসময় আমি আমার মোবাইলে তাকে দেখতে পেলাম একটা নাটকের নায়িকা হিসেবে।
,,
আমার নাটক দেখার অভ্যাস ছিলো। প্রতিদিনের মতো সব কাজ শেষে বিছানায় শুয়ে মোবাইলে নাটক দেখা শুরু করে আর প্রথমে তাকেই দেখতে পাই। আমার মাথায় তখন আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। আমাকে কিছু না জানিয়ে আমার আড়ালে এতো বড় একটা কাজ করে ফেলল।
,,
আমি ঝটপট তার নাম্বারে কল করলাম। তিনবারের বেলায় সে রিসিভ করলো..
-আজকাল খুব বেশি ব্যস্ত হয়ে গেছেন (আমি)
-ফোন সাইলেন্ট ছিলো আমি পড়িতেছিলাম (ইরা)
-ওহহ আচ্ছা
-সামনে এক্সাম তো তাই পড়ার চাপ বেশি
-হুমমমম শুটিং এর ও চাপ বেশি তাই না?
-মানে?
-মানে আপনি ইরা থেকে এখন অবন্তী
,,
ইরা বুঝতে পেরেছে আমি তার কাজটা ধরে ফেলেছি। সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর বলল..
-দেখেছেন নাটকটা? (ইরা)
-নাহহ পুরোটা দেখার সাহস হয়নি। আমার সাথে যে নাটক হয়েছে সেটা আমি পুরো ফিল নিয়ে ফেলেছি
-আমি তো..
,,
ইরা কিছু বলার আগেই আমি ফোনটা কেটে দিয়ে অফ করে রাখলাম।
পরদিন তার সাথে দেখা করতে গেলাম সেই বাসায়। সেখানে গিয়ে জানতে পারি ইরা দুইমাস আগে এই বাসাটা ছেড়ে দিয়েছে। আমি ইরার চালাকির কথা ভেবে মুচকি হাসলাম।
,,
তখন পর্যন্ত ফোনটা আমি অন করিনি। সেই বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ইরাকে কল করলাম আবার। সে রিসিভ করতেই আমি বললাম..
-ম্যাম আপনার সাথে একটু দেখা করা যাবে? (আমি)
-....(ইরা চুপ কিছু বলছে না)
-দেখা করা যাবে? সময় হবে আপনার? সেলিব্রিটি মানুষ আপনি, কল দিয়ে মনে হয় বিরক্ত করলাম। আচ্ছা সরি কল দিয়ে বিরক্ত করার জন্য।
,,
ইরা কিছু বলছে না দেখে নিজে থেকেই কল কেটে দিলাম।
আমি তার ব্যবহারে এতোটাই শকড যে রাত কখন হচ্ছিলো দিন কখন হচ্ছিলো টের পাচ্ছিলাম না। আমি কাজে যাওয়া বন্ধ করে দিলাম।
আমার সাথে মধ্যবয়সী যে লোকটা থাকতো তাকে আমি মাঝে মাঝে দুই একটা কথা শেয়ার করতাম।
,,
তবে এই কথাটা তার কাছে বলার মতো না৷ লোকটি আমায় বার বার জিজ্ঞেস করতো কি হয়েছে? আমার শরীর খারাপ বলে কথা ঘুরিয়ে নিতাম।
,,
এদিকে দুইদিন পর ইরা কল দিতে শুরু করলো। তার ফোন রিসিভ করার মতো মনমানসিকতা আমার মাঝে আর নেই৷ আমি বার বার তার কল কেটে দিচ্ছিলাম
আর সে অনবরত কল দিয়েই যাচ্ছিলো।
আমি ফোন রিসিভ করে বললাম..
-আমার কোনো অভিযোগ নেই, আপনার পার্সেলময় বন্ধুত্বে আমি মুগ্ধ (আমি)
-সরি আমি আসলে আপনাকে আগে..
-বললাম তো অভিযোগ নেই৷ আপনার তো একটা স্বাধীনতা লাগবে। মানে ডিভোর্স তো লাগবেই, চিন্তা করবেন না আমি ব্যবস্থা করে দিবো
-আমি তো ডিভোর্স চাইনি
-আরে লাগবে লাগবে। আর শোনেন সেলিব্রিটি মানুষের সাথে কথা বলতে আমার হাত পা কাঁপছে, আমার গলা শুকিয়ে আসছে, দয়া করে নেক্সট টাইম কল করবেন না৷ আর কল করার প্রয়োজন তো নেই। আপনি আপনার সাফল্য খুঁজে পেয়েছেন
-আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই
-আলহামদুলিল্লাহ আপনার কথায় আমি খুব খুশি। তবে আমি আপনার সাথে দেখা করতে পারবো না।
-কেনো?
-দেখেন আপনার এতো প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারবো না
-সরি
-আবার সরি! বেইমান এর মুখে সরি মানায় না..
।।
।।
পার্সেল
Part : 9
Write : Sabbir Ahmed
___________________________
-সরি (ইরা)
-আবার সরি! বেইমান এর মুখে সরি মানায় না (আমি)
-এগুলো কোনো কথা বললেন?
-ঠিকই বলেছি, আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না৷ আর আমাকে কল করেন কেনো? আপনি সফলতা পেয়েছেন আমি খুশি
-আপনার সাথে কিছু কথা আছে। দেখা করবেন আমার সাথে?
-আমার যোগ্যতা নেই আপনার সাথে দেখা করার৷ আপনি বড় হয়েছেন আপনার খেয়াল থাকবে সবসময় উপরে। উপরের মানুষের সাথে মিশবেন কথা বলবেন। আমায় কল করে আপনার মান কমাবেন কেনো?
-আপনি আমার উপর রেগে এগুলো বলছেন, আমি এগুলো ভাবিনি
-হয়েছে থামুন তো,
-দেখা করবেন?
-আমার কোনো দরকার নেই ইচ্ছা ও নেই। (আমি ফোন টা কেটে দিয়ে, ফোনটাকে দূরে ছুড়ে মারলাম)
,,
আবার ফোনটা কুড়িয়ে নিয়ে এসে আবার ছুড়লাম এবং আবারও। সব রাগ ফোনের উপর ঝেড়ে হুট করে বেড়িয়ে পড়লাম রাস্তায়। পকেটে কিছু টাকা ছিলো, মস্তিষ্ক বার বার বলেছিলো যেখানে মন চায় সেখানে চলে যাবো। এই শহরে আমার একজন মানুষ আছে যে স্বার্থপরের মতো কাজ করেছে। তার নিঃশ্বাস এই শহরে অনবরত পড়ছে, তাই আমার কাছে এই শহরের বাতাস দূষিত।
,,
আমি গন্তব্যহীন ভাবে হাঁটছি আর ভাবছি, প্রথমে তোমাকে হারিয়েছি, তারপর নিজেকে হারিয়েছি, ভালোবাসাটাও হারিয়েছি, বিশ্বাস টাও হারিয়েছে। এখন হারানোর মতো কিছু নেই আমার কাছে। মন যেদিকে যেতে বলে আমি যাবো।
,,
হাঁটতে হাঁটতে আমি রাস্তায় থামানো একটা বাস এর সামনে এসে দাঁড়াই। বাসের হেল্পার সুনামগঞ্জ সুনামগঞ্জ বলে ডাকছিলে আর টাকা নিয়ে এক এক করে উঠাচ্ছিলো।
,,
আমিও সেই সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে টিকিট নিয়ে বাসে উঠলাম। লোকাল বাস হওয়ায় সিট নির্দিষ্ট করা নেই যে যেখানে জায়গা পাচ্ছে বসে যাচ্ছে। আমি একদম শেষের দুই সিট আগে বাম পাশের জানালর ধারে গিয়ে বসলাম। আমি সবে মাত্র বসেছি ঠিক তখন একটা মেয়ে আমার ডান পাশের সিটটায় তাড়াহুড়ো করে বসতে গিয়ে পরে গেলো।
,,
কারও পিছলে পরা দেখে আমি হাসি থামাতে পারি না৷ আমি উচ্চস্বরে না হেসে মুচকি হেসে বাইরে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। পাশে মেয়েটা একা একা উঠে দাঁড়ালো তারপর ব্যাগ নিজের কোলের মধ্যে নিয়ে বসলো। বয়স আর কত হবে তার বিশ এর মতো৷ হয়তো সে আমাকে মনে মনে বকা দিচ্ছে কারণ সে আমার পাশের সিটের মানুষ তাকে আমি হেল্প করলাম না উল্টো অন্যদিকে ঘুরে বসে রয়েছি। সে তো আর জানে মা মেয়েদের প্রতি একটা ঘৃণার সৃষ্টি হয়েছে। যদিও এটা ঠিক না, তবে আমার কাছে এখন মনে হচ্ছে দুনিয়ায় সব মেয়েরা একই।
,,
বাসে উঠার পর আধ ঘন্টা বসে আছি একইভাবে। বাসের মধ্যে সবাই তো হইচই শুরু করে দিলো। কিছু লোক ভাষা খারাপ করে গালিও দিলো। আমার পাশে বসা মেয়েটাও সেইরকম গরম হয়ে চিল্লাতে থাকলো।
,,
পরিবেশ ঠান্ডা করার জন্য বাসের হেল্পার বিনয়ের সহিত বললেন "ওস্তাদ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে গেছে, উনি আসলে বাস ছেড়ে দিবো।"
,,
এই সুযোগে বাসে আরও কিছু যাত্রী উঠালো। পরের যাত্রী গুলোর গন্তব্য খুব কাছে তাই উঠিয়েছে। আমি জানালা দিয়ে হেল্পার এর কার্যকালপ ভালো ভাবে লক্ষ্য করছিলাম৷ মাঝে মাঝে ইরার কথা যখন মনে হচ্ছিলো তখন আমি আরও মনোযোগী হচ্ছিলাম। আমি তাকে ভুলে থাকার চেষ্টা করছিলাম।
,,
আর হঠাৎ পাশে বসে থাকা মেয়ে আমাকে ডাকলো..
-এই ভাইয়া এই (মেয়েটি)
-....(আমি তার দিকে একবার তাকিয়ে সামনে তাকালাম)
-সমস্যা কি আপনার??
-...(আবারও পূর্বের মতো করলাম)
-এই আপনি কি বোবা কথা বলতে পারেন না?
-....(আমি তবুও চুপ)
,,
মেয়েটা আমাকে অবাক করে দিয়ে বোবাদের মতো অবিকল কিছু আওয়াজ দিতে শুরু করলো। তার কর্মকান্ড দেখে প্রচুর হাসি পাচ্ছিলো।
আমি হাসলে সে হয়তো অপমানিত হবে তাই হাসি টা অনেক কষ্টে চেপে রাখলাম।
,,
কিন্তু এই মেয়ে তো সেরকম করেই যাচ্ছিলো। আমি তবুপ চুপ..
-এই আপনি পাগল টাগল নাকি? (মেয়েটি)
-না (আমি)
-আরে! আপনি তো দেখি কথা বলেন। এতক্ষণ চুপ করে ছিলেন কেনো?
-....(আমি আবার জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম)
-আওয়া এ্যা এ্যা (আবার সেইরকম আওয়াজ)
-আপনার সমস্যা কি চুপচাপ বসে থাকতে পারেন না? (ধমকের স্বরে বললাম)
-...(আমার ধমকে মেয়েটা ভয়ে চুপ হয়ে গেলো)
,,
এদিকে ড্রাইভার এসে দ্রুত গাড়ি স্টার্ট করলো। গাড়ি চলছিলো, আমি ভাবছিলাম ভাইয়ার কথা, তাকে বলে আসিনি। হয়তো আমার দেখা না পেয়ে টেনশন করতে পারে। পরক্ষণেই ভাবলাম নাও ভাবতে পারে, আমি তো এখন তার শত্রুপক্ষ।
,,
আমার ভাবনা ভাঙিয়ে মেয়েটা চবার আমাকে ডাকলো..
-ভাইয়া (মেয়েটি)
-...(আমি স্বাভাবিক ভাবেই তার দিকে তাকালাম)
-আমি একটু জানালার ধারে বসি? আপনি এইপাশে বসেন
-...(তার কথার পাত্তা না দিয়ে আমি আবার বাইরে তাকালাম)
-ভাইয়া
,,
তার ভাইয়া ভাইয়া ডাক আমার আর শুনতে ইচ্ছে করছিলো না। রাগে দুঃখে তাকে জানালার পাশে বসতে দিলাম। সে জানালার পাশে বসে আমাকে জিজ্ঞেস করলো..
-আপনি কোথায় যাবেন?? (মেয়েটি)
-বসতে দিয়েছি বসে থাকুন, এতো কথা বলেন কেনো? (আমি)
-সরি ভাইয়া
,,
এদিকে এক ঘন্টার রাস্তা পার হবার পর বাসে আবার লোক উঠানো হচ্ছে। এখানে অনেক সময় গেলো। আবার সবাই ড্রাইভারকে আজেবাজে বকছে।
আমি আমার মতো চুপ করে বসে আছি। আমার চুপ থাকা মেয়েটার হয়তো পছন্দ হয়নি। সে আমাকে ধমকের স্বরে বলল..
-নিজের ভালোমন্দ কি বোঝেন না?? গন্তব্যে যেতে তো অনেক সময় লেগে যাবে, আপনি কিছু বলেন না কেনো? সবাই তো কিছু না কিছু বলছে (মেয়েটি)
-আপনারা বলুন, আমি আছি আপনাদের সাথে (আমি)
-এই ভাইয়া আপনি কি বিবাহিত? ভাবী কি মেয়েদের সাথে কথা বলতে মানা করেছে?
-.....(আমি তার অবান্তর কথার উত্তর না দিয়ে চুপ করেই বসে রইলাম)
-বাপরেহহ কি মানুষ একটা, এতো বড় দামড়া একটা ছেলে কথা বলতে ভয় পায়
-দেখুন আমার ভালো লাগছে না, একটু চুপ থাকুন
-ওহহ আচ্ছা। তা কি হয়েছে আপনার?
-আপনাকে চুপ থাকতে বলেছি
-আমার মুখ তো এমনি চুপ থাকে না, তারউপর মানুষের সমস্যার কথা শুনলে আরও চুপ থাকতে ইচ্ছে করে না। বলেন আপনার সমস্যার কথা
,,
আমি বিরক্ত হয়ে সিট ছেড়ে দাঁড়ালাম। দাঁড়িয়ে থাকা একজনকে বললাম আপনি বসুন এই সিটে।
লোকটি সিটে বসতে যাবে, তখনই বাঁধা দেয় মেয়েটি। মেয়েটি ইশারায় আমাকে সিটে বসে বলে।
,,
আমি উপায় না পেয়ে বসলাম আর সে বলল..
-হ্যান্ডসাম দেখে একটা ছেলে দিলেই পারতেন,
-এই ছেলেটাকে দেখেছেন কেমন দেখা যায়? দেখেই তো মনে হয় গাঞ্জাখোর (মেয়েটি)
-না জেনে এমনি একজনকে একটা কথা বলা ঠিক না
-আমি তো তাকে বলতে যাইনি, আপনাকে বললাম। যাই হোক আপনার কেইস কি সেটা বলেন?
-কোনো কিছু না শরীর খারাপ
-বলেন না একটু
-আপনার মতো মেয়ে আমি জীবনে একটাও দেখিনি
-দেখবেন কি করে? আপনার সাথে তো আমার কখনো দেখাই হয়নি। যাই হোক পরিচয় টা হয়ে নেই। আমি মৃদুলা, সুনামগঞ্জ যাচ্ছি বাবা মায়ের কাছে৷ আমি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ি। এবার আমি ফার্স্ট ইয়ার গণিত বিভাগ। সুনামগঞ্জে আমরা আমাদের বাসা না, বাবা সেখানে চাকরিসূত্রে থাকেন দুই বছর হলো। এখন আপনার টা বলুন..
-...(আমি তার কথায় বিরক্ত, কিছুই বলতে ইচ্ছে করছিলো না আমার)
-আপনার অবস্থা দেখছি মেয়েদের মতো, মনে হচ্ছে আমি ছেলে হয়ে আপনার এ্যাটেনশন চাচ্ছি কিন্তু পাচ্ছি না...
।।
।।
পার্সেল
Part :10
Write : Sabbir Ahmed
__________________________
-আপনার অবস্থা দেখছি মেয়েদের মতো, মনে হচ্ছে আমি ছেলে হয়ে আপনার এ্যাটেনশন চাচ্ছি কিন্তু পাচ্ছি না (মৃদুলা)
-দেখেন আপনার মতো সবার জীবন সুখকর নয় (আমি)
-তা ঠিক, আচ্ছা ঠিক আছে ধরে নিলাম আপনি দুঃখেই আছেন, নাম টা বলা যাবে?
-শুভ
-আপনার আচরণ অশুভর মতো
,,
আমি একটু রাগি ভাব নিয়ে তার দিকে তাকাতেই..
-সরি সরি মজা করলাম। কিছু মনে করবেন না, যারা রাগে তাদের আরও রাগাতে ইচ্ছে করে আমার (মৃদুলা)
-আপনার নামের সাথে আপনার ব্যবহার ও যায় না
-বাহহ আপনি তো দেখছি আমাকে কাউন্টার এ্যাটাক দিলেন। আসলে ঠিক ধরেছেন, নামের সাথে আমার ব্যবহার যায় না
-আমার মাথাটা ধরেছে একটু চুপ করেন প্লিজ
-ওকে ওকে
,,
সুনামগঞ্জ যখন পৌঁছে গেলাম তখন মাঝরাত। সবাই নেমে যে যার গন্তব্যে যাচ্ছে। আমি বাস থেকে নেমে একটা ছোট্ট চায়ের দোকান দেখতে পাই সেখানে কিছু লোক বসে আছে।
আমি একটা বেঞ্চে গিয়ে তাদের পাশে বসলাম।
,,
আমি নামার পর মৃদুলা বের হলো। আমাদের কথা যেখানে শেষ হয়েছিলো তারপর আর কোনো কথাই হয়নি তার সাথে। আমি তার দিকে লক্ষ্য করছিলাম। মৃদুলা বাস থেকে নেমে এদিক ওদিক তাকালো।
,,
তারপর সামনে তাকিয়ে যখন আমাকে দেখতে পেলো তখন আমার কাছে এসে বলল।
-কোনো রিকশা তো দেখছি না, আপনি একটা রিকশা ঠিক করে দিবেন? (মৃদুলা)
,,
আমি কিছু বলার আগেই এখানে থাকা একজন বলল..
-আপা আসেন আমি ঠিক করে দিচ্ছি (লোকটি এই বাস স্ট্যান্ডেই থাকে। তাকে দেখে সুবিধার মনে হচ্ছিলো না)
,,
আমি মৃদুলার হাত ধরে সেখান থেকে চলে আসলাম। হুট করা হাত ধরায় মৃদুলা অবাক হয়েছে। লোকগুলো থেকে দূরে আসার পর আমি মৃদুলার হাত ছেড়ে দিলাম৷ আমার কেমন যেন পরিবেশ টা সুবিধার মনে হচ্ছিলো না৷
,,
বাসস্ট্যান্ড থেকে তখনও বের হয়নি আমরা, সেখানে একপাশে দেখতে পেলাম লোহার মোটা পাইপ কয়েকটা পরে আছে একপাশে। আমি একটা হাতে নিলাম আর মৃদুলাকে একটা দিলাম। মৃদুলাও হয়তো কিছু একটা টের পেয়েছে সে টেনশনে ঘামছে।
আমি তার অবস্থা দেখে বললাম...
-ঘাভড়াবেন না, কেউ সামনে আসার আগেই তার অবস্থা খারাপ করে দিবো (আমি)
-হুমমমম (মৃদুলা)
,,
বাসস্ট্যান্ড পার হয়ে আসার পর দুজন একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।
তিনজন সন্দেহভাজন ব্যক্তি আমাদের পিছু নিয়েছিলো। এখন তাদের দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না৷ মৃদুলা বলল..
-এখনকি আমরা সেফ? (মৃদুলা)
-জানি না, আপনি কতদূর যাবেন? (আমি)
-এইতো আর একটু
-আচ্ছা যান তাহলে
-আমাকে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দেন আমার ভয় লাগছে
-আচ্ছা চলুন
-আপনি কোথায় যাবেন??
-....(এ কথার উত্তর আমার কাছে নেই তাই চুপ করে আছি)
-বুঝেছি আপনি বলবেন না৷ আজ যে আমার কপালে কি ছিলো আল্লাহ ভালো জানেন৷ বাস টা রাস্তায় বেশি লেট করে ফেলেছিলো
-এমন বাসে কে উঠতে বলেছিলো? লোকাল বাসে উঠবেন না
-হুমম এরপর থেকে আর ভুল করা যাবে না। আচ্ছা আপনি কোথায় যাবেন বললেন না তো?
-পৃথিবীতেই আছি, এর বাইরে কোথাও যাবো না
-বুঝেছি আপনার পেটে বোম মারলেও কথাটা বলবেন না। ঠিক আছে, আর এইতো এইটা আমার বাসার গেট
,,
মেয়েটি গেটের বাইরে থাকা কলিং বেল চাপলো। আমি আর সেখানে দাঁড়ালাম না চলে আসলাম।
সে যাতে পিছু ডাক না দিতে পারে সেইজন্য দ্রুত হেঁটে অন্ধকারে মিশে গেলাম। মৃদুলা হয়তো পিছু ফিরে আমাকে আর দেখতে পাবে না।
মেয়েটা যে চঞ্চল তাতে আমাকে বকাঝকা একটু করবেই।
,,
রাত তো অনেক হলো এখন আমি কই যাবো? এই চিন্তা মাথায় ঘুরছে৷ শুনেছি এই অঞ্চলে ডাকাতি হয় বেশি। আর হবেই না বা কেনো? রাত হোক বা দিন প্রায় এলাকায় নিরিবিলি পরিবেশ। সে এতো চিন্তা করে লাভ নেই আমার হারানোর কিছু নেই।
হাঁটতে হাঁটতে বাসস্ট্যান্ড পার হলাম। ভাবছিলাম সেখানে থাকবো। একটু আগে আমাদের সাথে যা হলো সেখানে না যাওয়াটাই ভালো। আমি বাসস্ট্যান্ড পেড়িয়ে উত্তর পূর্বদিকের রাস্তা ধরে হাঁটছি। নির্জন শুনশান রাস্তা অন্ধকারও বেশ।
,,
কেনো জানি আজ এই ভয়ংকর পরিবেশটাকে অাপন মনে হচ্ছে।
হয়তো আমার মনের মধ্যে থেকে সব ভয় উধাও হয়ে গেছে তাই এই ভয়ংকর সুন্দর পরিবেশটাকে উপভোগ করতে পারছি।
,,
হাঁটতে হাঁটতে পা ব্যাথা হয়ে গেলো। একটু রেস্ট নেওয়ার জন্য রাস্তার উপরেই বসে পড়লাম। রাস্তার দুপাশে প্রচুর গাছগাছালী। এই পাশে এখনো বড় পাহাড় চোখে পড়েনি। তবে আমি যেদিকে যাচ্ছি সেদিকের পরিবেশ আরও ভয়ংকর আর বড় বড় পাহাড় ও আছে। একাকীত্বে অনেক সুখে মারা যাওয়ার সঠিক জায়গা হয়তো সেখানেই আছে।
,,
শুনেছি মৃত্যু অনেক যন্ত্রনাদায়ক। এখন আমার কাছে কেমন যেন কৌতুহল কৌতুহল লাগছে। হঠাৎ মনে হলো ইরার কথা, আমার মাথা আবার বিগড়ে গেলো ওর নামটা আমার মনে পড়লে কেমন যেন বিষ বিষ লাগে সহ্য করতে পারি না৷
,,
মনে জেদ নিয়ে আবার উঠে দাঁড়ালাম। হাঁটতে লাগলাম রাস্তার মাঝ বরাবর দিয়ে। এখন ঘড়িতে যে কতবাজে সেটা জানার ও উপায় নেই।
রাত দিন সব সময় হয়ে গেছে আমার কাছে। যারা মৃত্যুর দাড় প্রান্তে পৌঁছায় তাদের কাছে মনে হয় এমনই লাগে পৃথিবীটা৷
,,
রাস্তার মাঝে হঠাৎ কোনো কিছুর সাথে হোঁচট খেয়ে পরে গেলাম। হাতে খুব ব্যাথাও লাগলো। ভালো করে খেয়াল করলাম যে কেউ একজন রাস্তার মাঝে শুয়ে গোঙরাচ্ছে৷ কে শুয়ে আছে সেটা বোঝার কোনো উপায় নেই। আমার পায়ের সাথে ব্যাগ এর মতো কিছু একটা লাগলো আঁচ করলাম।
,,
হাতে উঠালাম দেখি সত্যি একটা ব্যাগ। ব্যাগ টা টাকার ব্যাগের মতো ছোট্ট। আমি ব্যাগে হাত ঢুকাতেই মোবাইল পেয়ে গেলাম আর সাথে টাকাও। মোবাইল টা বের করে ব্যাগের চেন লাগালাম। তারপর মোবাইল এর বলো জ্বালিয়ে দেখলাম এক লোক পরে আছে বয়স পঞ্চাশ বা তার একটু উপরে হবে মুখে দাড়ি ও আছে।
,,
আমি কাছে গিয়ে হাত দিয়ে লোকটিকে ডাকলাম এপাশ ওপাশ করলাম। সে একটু জাগনা পেয়ে পানি পানি করতে লাগলো। আমি তাকে রাস্তার এক পাশে রেখে পানির খোঁজ করছি অনেকটা পাগলের মতো।
,,
আশে পাশে কিছু পাচ্ছিলাম না৷ আমি তো আর জানি না এখানে কোথায় কি আছে। আশেপাশে বাড়িও নেই। রাস্তার ধার দিয়ে আরেকটা ছোট্ট রাস্তা নেমে গেছে জঙ্গলের দিকে। আমি সেদিকেই ছুটলাম যদি কোনো বাড়ি পাই সেখান থেকে পানি নেওয়া যাবে।
,,
একটু যেতেই একটা বাড়ি পেলাম, বাড়ির কোনো গেট ছিলে না, এই ছোট্ট রাস্তার ধারেই পর পর দুইটা ঘর৷
আমি প্রথম ঘরটায় গিয়ে একটু আওয়াজ করে বললাম কেউ আছেন? সাথে সাথে দরজা খুলে দুজন বেড়িয়ে আসলো। এই বাড়ির বাইরের লাইট টাও জ্বালিয়ে দিলো। আমি তাদের মুখ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম, একজন পঞ্চাশ বা তার চেয়ে একটু বেশি বয়সের মহিলা আরেকজনের বয়স বাইশ তেইশ হবে।
,,
আমি তাদের কিছু বলার আগেই মেয়েটি আমার ব্যাগ আর হাতে থাকা মোবাইল দেখে বলল..
-বাবা কোথায়? এগুলো আপনার কাছে কি করে?? বাবা কোথায়? (মেয়েটি)
-ওহহ এগুলো আপনার বাবার? উনি তো রাস্তার ধারে পরে আছেন। আমাকে ভুল বুঝবেন না৷ আমি উনাকে দেখতে পাই রাস্তার মাঝে। উনাকে রাস্তার পাশে রেখে উনাকে ডাকি উনি পানি খেতে চাইছিলো আমি পানি নেওয়ার জন্য এখানে আসছি
,,
আমাকে ফেলেই দুজন চিৎকার দৌড় দিলো রাস্তার দিকে। আমি পানি নিতে বলব সে সুযোগ দিলো না। আমি ভুল করলাম না, ব্যাগ টা তাদের ঘরে রেখেই জগ ভর্তি পানি নিয়ে দ্রুত ছুটলাম।
,,
সেখানে পৌঁছে লোকটিকে পানি পান করালাম৷ তারপর লোকটিকে কোলে তুলে নিয়ে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসলাম৷
-বাবার মনে হয় প্রেশার টা বেড়েছে, পানি ঢালতে হবে (মেয়েটি)
-হাই প্রেশার আছে? (আমি)
-হুমমম
-জলদি এক বালতি পানি নিয়ে আসুন। পানি ঢালতে হবে
,,
এইলোকটার পেছনে আমার বাকি রাতটা কেটে গেলো। এখানে আশাপাশের প্রতিবেশি আত্মীয় স্বজন সবাই আসলো ভোরের দিকে। আমি দেখলাম আমার এবার যেতে হবে।
,,
আমি সেই লোকটির বউ এর কাছে বললাম..
-আন্টি আমি তাহলে আসি, আপনারা যত তাড়াতাড়ি পারেন ডাক্তার দেখায়েন(আমি)
-তুমি আজ আমাদের জন্য যা করলে
-না আন্টি এসব বলে লজ্জা দিয়েন না আমি তেমন কিছুই করিনি। আচ্ছা তাহলে আমি আসি
-আপনি সকালে খাওয়া খেয়ে যাবেন (সেই মেয়াটা)
-না আমার হাতে সময় নেই
-বাবা যদি আপনাকে দেখতে চায়, তখন আপনাকে কই পাবো। উনি একটু সুস্থ হোক আপনাকে দেখুক তারপর যাইয়েন
-আচ্ছা ঠিক আছে
-এইজন্য বললাম সকালের খাওয়া খেয়ে যাবেন। আমি রান্না বসিয়েছি
-হুমমমমম
,,
এতো জোড়াজুড়িতে আমি আর মানা করতে পারলাম না৷ সকালে বেলা লোকটার ঘুম ভাঙলো। সবার থেকে সব শুনে আমাকে ধরে কান্না জুড়িয়ে দিলেন তিনি।
,,
তিনি আমাকে নিয়ে বাইরে চেয়ার পেতে বসলেন৷
-তুমি এতো রাতে কোথায় যাচ্ছিলে? আর তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি এখানকার না
-জ্বি আংকেল আমি এখানে নতুন
-কাজে আসছো? নাকি ঘুরতে
-ঘুরতে
-ওহহ তা একা কেনো?
-আমার একা ঘুরতেই ভালো লাগে। আচ্ছা আংকেল এখানে সবথেকে নির্জন জায়গা টা কোথায়?
-তুমি যে দিকে যাচ্ছিলে সেদিকেই, মানে উত্তরে। তবে হ্যাঁ জায়গা যত না সুন্দর তার থেকে বেশি ভয়ংকর
-কেনো আংকেল?
-শুনেছি ওখানে অনেক ডাকাত থাকে। এখানের কেউ আজ পর্যন্ত সেখানে যাওয়ার সাহস পায়নি। মাঝে মাঝে ঐ এলাকা থেকে গুলির আওয়াজ শোনা যায়
-ওহহহ আমি সেখানেই যাবো
-তুমি ওখানে গিয়ে কি করবে?
-আমি এমনি দেখতে যাবো
-যদি না ফিরতে পারো?
-সমস্যা নেই, আমার জন্য অাফসোস বা অপেক্ষা করার কেউ নেই
-তোমার কিছু একটা হয়েছে, আমি জেনেশুনে তোমাকে ওখানে যেতে দিতে পারি না, কি হয়েছে বলো তো
-না আংকেল তেমন কিছু না আমি এমনি যাবো
-তুমি বললে তোমার কিছু হয়ে গেলে অপেক্ষা করার কেউ নেই। এই কথাটা আমাকে ভাবাচ্ছে...
।।
।।
পার্সেল
Part : 11
Write : Sabbir Ahmed
____________________________
-তুমি বললে তোমার কিছু হয়ে গেলে অপেক্ষা করার কেউ নেই। এই কথাটা আমাকে ভাবাচ্ছে
-আংকেল এরকম কিছু না
-তুমি এখানে অপেক্ষা করো আমি আসতেছি
,,
হুট করে লোকটি উঠে গেলো। আমার সামনেও সুযোগ আসলো পালানোর৷ সে বাড়ির ভেতর ঢোকার পর এক মূহুর্ত দেড়ি না করে দৌড়ে সেখান থেকে পালালাম।
,,
আমার লাইফ নিয়ে কারও মাথাব্যথা হোক আমার জীবন এর শেষ মূহুর্তে সেটা আমি চাই না৷ রাস্তা দিয়ে কিছুক্ষণ দৌড়ালাম যাতে লোকটির নাগাল এর বাইরে যেতে পারি৷ তারপর আবার হাটতে শুরু করলাম।
একটা ছোট্ট দোকানে সকালের নাস্তা করে আবার হাটা শুরু৷ প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে করতে আমি যাচ্ছি আমার জীবন টা শেষ করতে।
,,
আমি টানা চারদিন একনাগাড়ে হেঁটে হেঁটে অনেক কিছুই দেখলাম। আর এখন আমি আমার মৃত্যুর জন্য এক পারফেক্ট জায়গায় চলে আসছে। আমি একটা পাহাড়ে উঠছি, এখানে আসার পর আমার দেখা সবথেকে নির্জন একটা জায়গা৷
,,
আমি উঠতে লাগলাম উপরের দিকে। হঠাৎ চোখে পড়লো পাহাড়ের এক কোণায় খড়কুটো দিয়ে তৈরি একটা ঘর৷ মানে দূর থেকে তাই মানে হচ্ছিলো। আমি সেদিকেই যেতে লাগলাম। কাছকাছি যেতে একটা মেয়েলী কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম।
,,
নির্জনতায় মেয়েলী কান্না টা অনেকটা ভূতের মুভির পেত্নীদের কান্নার আওয়াজ এর মতো লাগছে। মনে মনে ভাবছি এটা ভূতের বাড়ি নয়তো? হলে হবে আমার কি? ভেতরে পেত্নী থাকলে থাকবে আমি তো মরার জন্যই এখানে আসছি।
,,
ঘরের কাছাকাছি যেতেই কান্নার আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেলো। ঘরের কোনো দরজা ছিলো না। আমি পেছন দিক দিয়ে ঘুরে সামনে গেলাম।
আর সাত পাঁচ না ভেবে ভেতরেও ঢুকলাম।
,,
ভেতরে ঢুকে তো আমি অবাক,
দেখি একটা মেয়ে বসে আছে। আমাকে দেখে মেয়েটা ভয়ে চুপসে গেছে। মেয়েটার হাত পেছন থেকে বাঁধা ছিলো, চুলগুলো এলোমেলো। ভাবছি যে সে এখানে আসলো কিভাবে? আমি তার সাথে মজা করার জন্য বললাম..
-আপনি কি কেনো পেত্নী বা রাক্ষসীর মেয়ে? আপনি কি খুদায় কান্না করছেন? আপনার মা কি খাবার আনতে গিয়েছে? (আমি)
-আপনি কে? (মেয়ে আমাকে উল্টো প্রশ্ন করলো)
-আমি মৃত্যু পথযাত্রী
-আপনি কি তাদের দলের কেউ? (ভয়ে ভয়ে বলল)
-কাদের দল?
-ঐ সন্ত্রাসী দলের
-না
-আপনি এখানে কেনো?
-আত্মহত্যা করতে আসছি
-...(আমার কথা শুনে মেয়েটা অবাক, সেটা তার চোখমুখ দেখেই টের পাচ্ছিলাম)
-আপনি এখানে কি করে আসলেন সেটা বুঝতে পেরেছি
-আমাকে প্লিজ হেল্প করেন, আমাকে এখান থেকে নিয়ে যান
-দেখেন আমার সময় শেষ, আমি আত্মহত্যা করতে এখানে এসেছি
-প্লিজ নিয়ে যান, না হলে ওরা আমাকে... (এটা বলে হাও মাও করে কান্না শুরু করলো)
-নাহহ এই একটা বিপদ কেনো যে বার বার আমার এই কাজে বাঁধা আসে
-আপনাকে এখানে ধরে এনেছে কেনো?
-আমি আর আমার পরিবার এখানে ঘুরতে এসেছিলাম, ওরা আমার পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলেছে, দুদিন পর আমাকে মেরে ফেলবে
-আপনি এখানে নিয়ে আসছে কবে?
-গতরাতে
-তারা বাজে কিছু করেছে আপনার সাথে?
-না, তবে আজ করবে আমাকে বলে গেছে। আচ্ছা আপনি যে এখানে আসলেন আপনাকে ওরা দেখেনি?
-কারও সাথে তো দেখা হয়নি
-তার মানে দূরে কোথাও গেছে, প্লিজ সন্ধ্যা হওয়ার আগে আমাকে এখান থেকে নিয়ে যান
-হুহহহ ফেলে দিলেন তো আরেক সমস্যায়। ঠিক আছে চলুন
,,
আমি তার বাঁধন খুলে দিলাম। মেয়েটিকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম আমি তাকে উদ্ধার করতে অনাগ্রহী, কিন্তু আমার চিন্তা ছিলো ভিন্ন, কিভাবে তাকে উদ্ধার করা যায়।
,,
মেয়েটিকে নিয়ে যেখান দিয়ে উঠেছি সেখান দিয়ে না গিয়ে উল্টো দিকে যেতে লাগলাম।
-সন্ধ্যা হয়ে আসলো, আমরা এদিকে যাচ্ছি কেনো? (মেয়েটি)
-ওরা আপনাকে না পেয়ে রাস্তায় খুঁজবে, তাই আমরা আজ রাস্তায় যাবো না, এই জঙ্গলে থাকবো (আমি)
-হুমমম
-ভয় পাবেন না আমি কিন্তু তাদের মতো বাজে মানুষ নই।
-তা বুঝেছি
-আচ্ছা বয়স কত আপনার?
-সতেরো
-ওহহ আমার তো অনেক বেশি। আমি তোমাকে তুমি করে বলি?
-হুমমমম
-বুঝেছি ভয় পাচ্ছো আমাকে
-না না একদমই না, আমি আসলে চিন্তা করছি তারা যদি আমাদের দেখে ফেলে
-না দেখবে না
,,
আমরা একটা বড় গাছের নিচে কিছু জায়গা পরিষ্কার করে বসলাম। আমি মেয়েটাকে আমার পরিচয় দিলাম। এখানে আসার কারণ, এখানে এসে যা ঘটনা ঘটেছে সবই বললাম সারাংশের মতো। আমার বলা শেষে সে বলল..
-আপনি বিবাহিত? (মেয়েটি)
-হুমমম (আমি)
-তোমার যেন ভয় না লাগে তার জন্য আমার সম্পর্কে সব কিছু জানালাম। অন্য কিছু বলা যেতো মারা যাবো তো তাই মরে যাওয়ার আগে আপনাকে কিছু বলে গেলাম
-এতো সহজ নাকি? আপনি আমাকে বাঁচিয়েছেন, আমিও আপনাকে বাঁচাবো
-তোমাকে বাসায় দিয়ে আমি আবার এখানে আসবো
-সে দেখা যাবে। তবে আপনি কিন্তু হাফ পাগল হয়েছেন৷ আপনার কার্যকলাপের ঠিক নেই
-মানুষ চিন্তা করা বন্ধ করে দিলে পাগল হয়ে যায়। চিন্তা করেই মানুষ বাঁচে
-কথাটার গভীরতা বেশ। আচ্ছা একটা কথা বলি?
-বলো
-আপনাকে আমার খুব ভালো লেগেছে। আপনার আর ইরার গল্পে আপনি ব্যর্থ মানুষ, আমার গল্পে সেটা হতে দিবো না
-এখন দেখছি তুমি পাগল
-আপনাকে মরতে না দেওয়ার জন্য পাগল হওয়া লাগে হবো
-তোমার নামটা যেন কি??
-পুষ্প
-দেখো পুষ্প একটু আগে তোমার সাথে পরিচয় এর মধ্যেই এগুলো কি বলছো? আর তোমার মনের অবস্থাও ভালো নেই
-এইজন্যই তো আপনি একজন ভরসার মানুষ হয়ে আমার কাছে আসছেন। আমি এতো কিছু জানি না৷ আপনি আমায় ছেড়ে গেলে আমি আত্মহত্যা করবো
-মজা করছো আমার সাথে?
-নাহহ মজা করবো কেনো? আপনার গল্প শুনে তো আমি আপনার প্রেমে পড়ে গেছি
-আমি বিবাহিত
-ডিভোর্স হতেও তো বেশি সময় লাগবে যেহুতু আপনাদের মধ্যে কোনো মিল নেই
-যাই হোক এগুলো বলা বন্ধ করো,
-আপনি যেমন চিন্তা করা বাদ দিয়েছেন, তেমন আজ আমিও দিলাম দুই পাগল মিলে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবো
,,
পুষ্প মেয়েটার ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছিলো সে আমার মাথা থেকে আত্মহত্যার চিন্তা দূর করে ফেলবে সেটা তার কথার মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছিলো।
-আচ্ছা আপনি যখন আপনার গল্প বলছিলেন তখন একটা শব্দ উচ্চারণ করেছিলেন
-কি?
-পার্সেল
-হুমমম
-আপনি আমার জীবনে কিন্তু পার্সেল এর মতো করে এসেছেন
-আমার বুঝ আমাকে দিয়ো না
-আপনাকে রাগাতে দেখি মজাই পাওয়া যাচ্ছে
-...(আমি আগ বাড়িয়ে কিছু বললাম না)
-মিস্টার শুভ সাহেব ওরফে ব্যর্থ প্রেমিক টেনশন নিয়েন না, আমি এমনি মজা করলাম
-এই পরিস্থিতিতে কেউ মজা করে?
-আমি আপনার মতো হওয়ার চেষ্টা করছিলাম আর কি। আপনি যেমন চিন্তা ছাড়া থাকেন তেমন
-এখনকার ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলো অনেক বেশি পাকনা
-তাই??
-হুমমম। আচ্ছা তোমার বাসায় কে কে আছে?
-সব তো শেষ, এখন শুধু দাদীমা আর আপনি
-আবার আমি?
-সরি শুধু দাদীমা
-উনি কি কোনো খবর পেয়েছে?
-জানি না
,,
পুষ্প মেয়েটা আবার নিশ্চুপ হয়ে গেলো। আর কিছুক্ষণ পর ফুঁপিয়ে কান্না করতে থাকলো। আমি দুই একটা কথা বলে তাকে থামানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু সে থামছিলো না।
আমি তার কান্নার শব্দ শোনার সাথেও দূর থেকে কারও আসার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। আমি পুষ্পর কাছে গিয়ে মুখ চেপে ধরলাম। আর ফিসফিসিয়ে বললাম কেউ আসছে।
,,
আমার ধারণা সত্যি হলো আমি আলো দেখতে পেলাম৷ মনে হলো তারা এদিকেই আসছে৷ পুষ্প ভয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমরা দুজন যেখানে বসেছিলাম সেখানে শুয়ে পড়ে আরেকটু আড়াল হওয়ার চেষ্টা করলাম। পুষ্প আমার খুব কাছে এসে বলল..
-তারা কি চলে গেছে? (পুষ্প)
-আলো তো দেখতে পাচ্ছি না, চুপ করে থাকো শব্দ করো না (আমি)
-আমার একটা সমস্যা হয়েছে
-কি?
-আমার পিঠে কিছু একটা ঢুকেছে আপনি একটু বের করেন তো
-নাহহ কি বলো, তুমি বের করো
-আরে গাধা আমি পারলে তো হতোই, নিজে একটু হাত দিয়ে দেখেন না প্লিজ
-আপনার এই কথার জন্যই আজ ধরা পড়বো..
।।
।।
পার্সেল
Part : 12
Write : Sabbir Ahmed
___________________________
-আপনার এই কথার জন্যই আজ ধরা পড়বো (আমি)
-আচ্ছা একটু দেখেন না কি ঢুকলো (ফিসফিসিয়ে বলল পুষ্প)
,,
আমি ইতস্তত বোধ করছিলাম। পুষ্পর জোরাজুরিতে আমি তার পিঠে হাত রেখে বুঝতে পারি কোনো একটা পোকা ঢুকেছে। আমি সেটা বের করে ছুড়ে ফেলে দিলাম..
-কি ছিলো?? (পুষ্প)
-দেখা যায়নি তো (আমি)
-আপনি কি রাগলে আপনি বলে সমন্ধ করেন?
-না তো, কেনো?
-হঠাৎ করে আবার আপনি করে বললেন তো আমাকে তাই বললাম
-অভ্যাস নেই তাই হয়ে গেছে
-যাই হোক, আলো তো আর দেখা যাচ্ছে না, যেদিক থেকে আসছিলো ঐদিকেই চলে গেছে
-হুমমম আমারও তাই মনে হচ্ছে
,,
দুজন চুপ করে বসে থাকলাম কিছুক্ষণ। আমাদের আশেপাশে অনেক জোনাকি ছিলো পুষ্প বসে থেকে একটা একটা করে ছুয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলো। আমি তার কান্ডকারখানা দেখছিলাম।
হঠাৎ গুড়ুম গুড়ুম মেঘের আওয়াজ।
,,
-মেঘ ডাকছে তাই না? (আমি)
-হুমমম ডাকছে (পুষ্প)
-বৃষ্টি নামলে তো আমাদের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। মাটি পিচ্ছিল হলে নামতে পারবো না। এখনি বের হতে হবে এখান থেকে
-এখন তো অন্ধকারে কোনদিকে যাবেন?
-এটার পশ্চিমে তো রাস্তা, মেঘ পশ্চিমে ডাকছে, দেখি চেষ্টা করে বের হওয়া যায় কি না
-আমার কিন্তু ভয় করছে
-আল্লাহ ভরসা করে উঠে পরেন
-এমনিতে আমার অনেক খুদা লাগছে
-এখন এমন করবেন না, আমাদের এখান থেকে বের হতে হবে
-....(পুষ্প হাত বাড়িয়ে দিলো)
-....(আমি হাতটা ধরলাম)
-শক্ত করে ধইরেন কিন্তু
-হুমমম
-কি হুমমম? বলেন শক্ত করেই ধরবো
-সম্মতি তো দিয়েছি, এতো কথা বলেন কেনো?
-ওমাহ আপনি দেখি আমাকে ধমক ও দিচ্ছেন। তা দিবেন তো, আমি আপনার কাজে বাঁধা দিয়েছি। সেইজন্য রাগ দেখিয়ে তুমি থেকে আপনি বলা, অকারণে ধমক দেওয়া
-এই মেয়ে কাজের সময় অকাজের কথা বললে কিন্তু একটা মাইর দিবো বলে দিলাম
-সরি (মৃদুস্বরে)
,,
পুষ্প ভয় পেয়ে আর কিছু বলল না।
আমরা নামছিলাম গাছ ধরে ধরে, কোথায় কি বিপদ ওত পেতে আছে আমরা জানি না৷ এদিকে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে সাথে বাজ পড়ছে। আমরা অনেকটা পথ এসে একটু সমতল জায়গা দেখে দাঁড়ালাম।
পুষ্পর হাত আমার মুষ্টির মধ্যেই ছিলো। আমি অনুভব করছিলাম সে কাঁপছে৷ কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না৷ মনে মনে ঠিক করলাম ভালো জায়গায় আছি এখান থেকে নামা আর ঠিক হবে না৷ পুষ্পকে আপনি কে বলল মেয়েটা মনে হয় একটু রাগ করে। আমি তাকে বললাম..
-তোমার কি শীত লাগছে? (আমি)
-...(কথাটা বলার সাথে সাথে আমার খুব কাছে আসলো)
-দেখো এই শীতে আমিও কাঁপছি
-আপনি আমার জন্য অনেক কিছু কষ্ট করতেছেন
-আমি সেটা বলিনি, বলতেছি তুমিও কাঁপছো সাথে আমিও
,,
পুষ্প বলা নেই কওয়া নেই আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিলো। তার এমন কান্ডে আমি শকড। আমি মানা যে করবো সে উপায়ও ছিলো না, সে আমাকে ধরেই কাঁপছে।
,,
কিছুক্ষণ পর কাঁপা গলায় বলল..
-এখন একটু গরম গরম লাগছে, আপনি রাগ কইরেন না, আমি একটু চোখ বন্ধ করে থাকি? (পুষ্প)
-হুমমম (আমি)
,,
মেয়েটা আমার বুকের সাথে নাক মুখ ঘষতে ঘষতে চোখ বন্ধ করলো। বুঝতে পারলাম এটা তার অভ্যাস৷
এক ভাবে দাঁড়িয়ে আর কত সময় থাকা যায়? শার্ট প্যান্ট ভিজে চুপসে গেছে সেই কখন থেকে বৃষ্টি পড়ছে।
শুনেছি পাহাড়ের জঙ্গলে যত তাড়াতাড়ি সন্ধ্যা হয় তত দেড়িতে সকাল হয়৷
,,
সকাল হওয়ার অপেক্ষায় আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায় যায় ভাব। তবুও থাকলাম সেভাবে। পুষ্প সেভাবেই চোখ বন্ধ করে আছে। মেয়েটার শরীর অনেক ঠান্ডা। আমি ভয় পাচ্ছিলাম যে আমার মারা তো যায় নি। দুবার ডাকলাম কোনো সাড়াশব্দ করলো না।
,,
ভাবলাম অনেক ধকল গেছে ওর উপর একটু ঘুমাচ্ছে ঘুমাক। এদিকে ঝুম বৃষ্টি থেমো গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে আর আকশটা পরিষ্কার হতে শুরু করছে। বুঝতে পারলাম এটা ভোররাত। পুষ্পকে ডাকছি সে উঠছেই না৷ উঠছে না তো উঠছেই না৷
,,
আমি তার দুই বাহুতে হাত রেখে একটু ধাক্কা দিয়েই বললাম..
-এই যে (আমি)
-....(একটু নড়লো)
-....(আমি তখন স্বস্তরি নিশ্বাস ফেললাম)
-চোখ খুলে আমরা এখন রওনা হবো
-সকাল হয়েছে?
-না একটু একটু দেখা যাচ্ছে চারপাশে, চলো এই সুযোগে আমরা এখান থেকে যাই
-আমি যে পারছি না
-রাস্তা পর্যন্ত চলো, তারপর একটা ব্যবস্থা হবে
,,
পুষ্প খুব কষ্ট করে হাঁটছিলো। এর মধ্যে আমরা কয়েকবার পিছলে পড়ে গিয়েছিলাম। আমরা যখন রাস্তায় নামলাম তখন চারদিকে একদম পরিষ্কার। পুষ্প আর আমার শরীরে কাঁদা দিয়ে একাকার। আমরা আমাদের জুতোটা হারিয়েছি।
,,
-আচ্ছা এখন আমরা কোনদিকে যাবো? (পুষ্প)
-তোমার বাসা কোথায় যেন? (আমি)
-কুমিল্লা
-সেখানেই যাবো। প্রথমে আমাদের বাসস্ট্যান্ডে যেতে হবে
-আপনার কাছে কি টাকা আছে? আমার কাছে কিন্তু নেই
,,
আমি কিছুক্ষণ ভেবে বললাম...
-আমি টাকার ব্যবস্থা করে ফেলবো, চলো (আমি)
-হুমমম(পুষ্প)
,,
পুষ্প এতোটাই দূর্বল হয়ে গিয়েছিলো যে আমার উপর পুরো শরীরের ভয় দিয়ে হেলান দিয়ে হাঁটছিলো। তার মাথা আমার কাঁধে ছিলো, আর আমি বাম হাত দিয়ে পেছন থেকে তাকে ধরেছিলাম৷
,,
কিছুক্ষণ হাঁটার পর একটা লোক আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। পুষ্প লোকটাকে দেখে ভয়ে চিৎকার করে উঠে।
-এই কি হয়েছে?? (পুষ্প কে জিজ্ঞেস করলাম)
-এই সেই লোক, লোকটা ঐ দলের মধ্য ছিলো (পুষ্প)
-আমি দেখলাম লোকটা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
,,
আমি আর দেড়ি করলাম না, লোকটা হাতছাড়া হয়ে গেলে আমাদের বড় বিপদ হতে পারে। আমি একটা পাথরের টুকরা নিয়ে লোকটার মাথা বরাবর ছুড়লাম। কিন্তু পাথর টা লাগলো না। লোকটি দৌড় দিলো আমিও তার পিছু ছুটলাম আর সাথে ঢিল ছুঁড়তে লাগলাম। একটা ঢিল ও তার গায়ে লাগলো না।
,,
রাস্তার পাশে থাকা একটা মোটা ডাল দেখতে পেলাম সেটা হাতে নিয়ে দৌড়াতে থাকলাম। কোনোক্রমে লোকটাকে ধরতে পারছিলাম না। এদিকে আমার পেটে ব্যাথাও শুরু হয়ে গেছে দৌঁড়াতে পারছি না আর।
,,
হঠাৎ লোকটা পিছলে পরে যায়, সুযোগ বুঝে আমি তার দিকে এগিয়ে যাই। কোনো কিছু না ভেবে তার মাথায় কয়েকটা আঘাত করে অচেতন করে ফেললাম। এতো সকালে লোকজন ছিলো না বলে কাজ টা করতে পেরেছি।
,,
আমি লাঠি হাতে আবার পুষ্পর কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য দৌড় দিলাম। ওর থেকে অনেক দূরে চলে আসছি ও তো আমাকে দেখতেই পায়নি৷
,,
ফিরে এসে দেখি একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।
আমি ওর কাছে গিয়ে হাঁপাচ্ছি। পুষ্প আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। আমি বললাম..
-ঐ লোকটারে মাইর দিয়েছি ও অজ্ঞান হয়ে পরে আছে। চলো তারাতাড়ি এখান থেকে (আমি)
-...(পুষ্প কিছু না বলে আমাকে জড়িয়ে ধরলো)
-এই আবার কি হলো? চলো এখন সময় নেই
-হুমমম
,,
আমরা রওনা হলাম, সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় সেই লোকটাকে দেখলাম একটু কাতরাচ্ছে, এগিয়ে গিয়ে আরেকটা মাইর দিলাম। তারপর দুজন আবার দৌড়।
,,
আমরা থামলাম সেই লোকটার বাড়ির রাস্তায় যাকে আমি আগেরদিন রাতে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে বাড়িতে রেখে আসছিলাম। পুষ্প কে রাস্তায় বসিয়ে আমি সেই বাড়িতে গেলাম।
আমাকে দেখে তো সেই বাড়ির সবাই হতভম্ব। আমি সোজাসুজি তাদের কাছে কিছু টাকা চেয়ে বসলাম।
,,
তারা আমাকে নানান প্রশ্ন করছিলো। আমি সবকিছু এড়িয়ে গিয়ে শুধু টাকাই চাইছিলাম। আমার কথা তারা শুনছিলো না। শেষমেশ আমি যখন রাগ করে চলে আসতে লাগলাম, তখন সেই লোকটা আমার হাতে কিছু টাকা দিলেন।
-আমি আপনার টাকা শোধ করে দিবো, আপনি আপনার নাম্বার টা দিন(আমি)
-লাগবে না, তুমি তো আমার একটা প্রশ্নের উত্তর ও দিলে না
-সময় নেই আমি এখন আসি, আর হ্যাঁ আংকেল বেয়াদবি মাফ করবেন আর দোয়া করবেন, বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে।
,,
আমি টাকা নিয়ে আবার ছুটছি। টাকা পেয়ে আমার মনের মধ্যে আনন্দের ঝড় বইতে থাকলো। আলাদা একটা শক্তি আর স্বস্তি পেলাম। এখন আমাকে দ্রুত পুষ্পর কাছে যেতে হবে।
,,
আমি দৌড়ে সেই জায়গায় আসলাম,
সেখানে আমি পুষ্প কে দেখতে পেলাম না৷ আমি হতাশ হয়ে মাটিতে বসে পড়লাম। আমার খুব ভয় হচ্ছিলো, ঐ লোকগুলো আবার পুষ্প কে ধরে নিয়ে গেলো না তো?
আমি কি মেয়েটাকে রক্ষা করতে পারলাম না???
।।
।।
পার্সেল
Part : 13
Write : Sabbir Ahmed
___________________________
লোকগুলো আবার পুষ্প কে ধরে নিয়ে গেলো না তো? আমি কি মেয়েটাকে রক্ষা করতে পারলাম না??
হাতের মধ্যে থেকে একটা মেয়ের জীবন শেষ হয়ে গেলো। আমি কিছুই করতে পারলাম না?
,,
হঠাৎই পেছন থেকে আমার কাঁধে হাত রাখলো কেউ। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি পুষ্প।
-কোথায় গিয়েছিলে? (উত্তেজিত হয়ে বললাম)
-আমি একটু ভেতরের..
-আমি যে এখানে রেখে গেলাম
-ভেতরের দিকে গিয়েছিলাম
-কেনো?
-বমি বমি ভাব হচ্ছিলো তাই একটু..
-তোমাকে না দেখতে পেয়ে কেমন লাগছে আমার জানো?
-সরি
-বমি হয়েছে?
-না
-খারাপ লাগছে এখনো?
-আপনার ঝাড়ি খেয়ে ঠিক হয়ে গেছে
-এলাকা ছাড়লে আপনি নিরাপদ। তারপর আপনার চিকিৎসা করানো যাবে
-হুমমম
,,
পুষ্প কে সাথে নিয়ে অনেক ঝৈ ঝামেলা পেড়িয়ে বাসে উঠলাম। তার আগে আমি আর ও দুজনই নিজেদর পরিষ্কার করে নিয়েছি পেট ভরে খেয়েছি ঔষধ ও নেওয়া হয়ে গেছে।
সবই করেছি ঐ এলাকা থেকে অনেকটা দূরে এসে।
,,
তবে বাসে ওঠার পূর্বে পুষ্পর সাথে ঝগড়া হয়। আমি বাসের একটা টিকেট কেটে ওর হাতে দিয়ে বলেছিলাম..
-তাহলে বাসায় যাও, আর পুলিশের ঝামেলায় জড়িয়ো না৷ যা হবার হয়েছে। তোমার তো দাদীমা ছাড়া কেউ নেই, দেশের আইনের অবস্থা ভালো না তেমন। এর চেয়ে ভালো ঝামেলা থেকে দূরে থাকো। ওদের বিচার আল্লাহ করবে (আমি)
-আপনি আমার সাথে যাবেন না?? (পুষ্প)
-আমি যাবো কেনো?
-দেখেন আমি ভালো করে কথাও বলছি না। আপনি এসময় আমার পাশে থাকলে আমি ভালো হয়ে যাবো।
-আমি ডাক্তার না
-আমার সাথে কিন্তু বাসায় যাওয়ার কথা আপনার
-মত পাল্টে ফেলেছি যাবো না
-ঠিক আছে আমিও যাবো না
-এমন করলে কিন্তু ভালো লাগে না৷ আপনার যথেষ্ট পরিমাণ হেল্প করেছি আমি। এবার আমাকে ছেড়ে দেন
-আমি আটকিয়ে রাখিনি যান আপনি
-তুমি বাসে উঠো
-আমি উঠি বা না উঠি সেটা তাতে আপনার কি? আপনি যেখানে ইচ্ছে যান। আমি এখানেই থাকবো।
-হুহহহ এ ভাই আরেকটা টিকেট দেন (কাউন্টারে থাকা লোকটিকে বললাম)
-ভাবী কি রাগ করেছে নাকি?? (কাউন্টার ম্যান)
-সেটা জেনে আপনি কি করবেন? টিকেট দেন
,,
এই ছিলো ঝগড়া৷ এখন বাস চলেছে কুমিল্লার উদ্দেশ্য। জানালার ধারে সিটে বসে পুষ্প আনমনে বাইরে তাকিয়ে আছে।
-বাবা-মায়ের কথা মনে পড়ছে?? (আমি)
-হুমমম (পুষ্প)
-বাসায় গিয়ে আত্মীয় স্বজনদের কি বলবে?
-সেটাই ভাবছি। দাদীমা এখনো কিছু জানে না কোনো আত্মীয় স্বজনও কিছু জানে না। গ্রামের লোকদের কি বলব৷
-যা সত্যি তাই বলবে
-গ্রামে বাবার সুনাম অনেক, আর অনেক দাপটের লোক ছিলেন৷ একটা ছোট্ট নদীর পারে আমাদের তিনতলা বাড়ি
-গ্রামের মধ্যেও?
-অজপাড়াগাঁ, বাবা ওখানকার মানুষগুলোকে বেশ আগলে রাখতো। এর আগে সেখানে দুঃখের সীমা ছিলো না। আমরা তো প্রথমে থাকতাম শহরে তখন আমি ছোট্ট। মা গ্রামে আসতে চেয়েছিলো না, বাবা জোর করে নিয়ে আসছে।
-আংকেল রাজনীতি করতেন?
-আরে না, গরিব দুঃখীদের দেখতেন, এর থেকে বেশি কিছু না
-ওহহহ
-এখন গ্রামের মানুষ এটা শোনার পর কিভাবে মেনে নিবে সেটাই ভাবনা
-হুমমমম
,,
পুরো রাস্তায় আরও কিছু কথা হলো, তাদের পরিবার সম্পর্কে জানতে পারলাম। তাতে যা বুঝলাম পুষ্পর বাবার মৃত্যুর খবরে গ্রামে শোকের ছায়া নামবে।
,,
অনেকটা পথ পেরিয়ে ভোর বেলায় পুষ্পদের বাসায় আসলাম। পূর্ব দিকে মুখ করে বাড়িটা উঠানো হয়েছে। এখানে আশেপাশের পরিবেশ খুব সুন্দর আর গোছানো। ছোট বেলায় গল্পে যে গ্রামের কথা পড়েছিলাম ঠিক তেমনি।
,,
বাসার মধ্যে ঢুকে প্রথমে দাদীমার সাথে দেখা। উনি মনে হয় নামাজ পড়ে উঠলেন মাত্র। পুষ্প দৌড়ে গিয়ে দাদীমা কে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো। একটু থেমে দাদীমাকে ঘটনা টা বলতেই চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলেন৷ পুষ্পদের বাড়ির কাজের লোকটা ছুটে গেলো দাদীমার দিকে৷ তারপর পানি ঢালা হলো তাকে।
,,
এক দুই করে সবাই আসতে শুরু করলো। খবর পৌঁছে গেলো বাতাসের আগে আগে। পুষ্প দাদীমা দুজনই অসুস্থ দুজনকে রুমে শুইয়ে রেখে আমি আর সেই কাজের লোকটা মিলে সবাইকে সামলাচ্ছি।
,,
লোকজনের চাপ যখন একটু কমলো তখন কাজের ছেলেটাকে ডাকলাম..
-এ ভাই এদিকে আসো (আমি)
-জ্বি বলেন (ছেলেটি)
-গ্রামের মসজিদে একটা মাইকিং করা দরকার
-মনে হয় না দরকার হবে, এখন তো সবাই জেনেই গেছে। আর মেম্বার চেয়ারম্যান সবাই তো আসছিলো
-হুমম এটা ঠিক বলেছো
-আচ্ছা ভাইজান আপনি কে? আপনাকে তো আগে কখনো দেখিনি
-আমি কে??
-জ্বি ভাইজান
-অতিথি, অচেনা অতিথি
-বুঝলাম না
-কোন ক্লাস পর্যন্ত পড়েছো?
-স্কুলের বারান্দায় ও যাইনি
-এইজন্যই বুঝবে না
-ওহহহ
,,
পুষ্প ঘন্টা তিনেক ঘুমিয়ে ছিলো। আমি বাইরে বসে ছিলাম। দুই একজন করে আসছিলো আর আমি মারা যাওয়ার কাহিনী টা শুনিয়ে দিতাম। গ্রামের সবাই খুব আফসোস করছিলো। এদিকে আবার থানায় মামলা করার কথা বলে গেছে গ্রামের মেম্বার। আমি ভাবছি এই মেয়েকে এসবে জড়িয়ে আবার বিপদে পড়বে।
পেছন থেকে হঠাৎ পুষ্পর ডাক..
,,
-আপনি এখানে বসে আছেন?? (পুষ্প)
-হুমমম ঘুম ভালো হয়েছে? দাদীমার কি অবস্থা (আমি)
-ঘুম হয়েছে ভালো, আর দাদীমা এখনো ঘুমাচ্ছে
,,
পুষ্প কে দেখে এগিয়ে এলো কাজের ছেলেটি...
-আপা তুলি আজ আসে নাই (ছেলেটি)
-তুলি কে?? (আমি বললাম)
-রান্নার কাজ করে আমাদের বাড়িতে
-ওহহহহ
-আচ্ছা শফিক তুমি তোমার কাজগুলো করে। কাজে ফাঁকি দিয়ো না। রান্না আমিই করবো (পুষ্প)
-আপা একটা কথা ছিলো
-বলো
-চাচায় বলছিলো যে গরু দুইটা হাটে নিতে।
-একমাস যাক সবকিছু স্বাভাবিক হোক তারপর বেচাকেনা শুরু। এখন যেমন চলছে চলতে থাকুক
-আমায় কি বাদ দিবেন?
-বাদ দিবো কেন? ব্যবসা যেমন চলছে চলতে থাকবে
-এতকিছু সামলাইতে পারবেন?
-চেষ্টা করবো
-ঠিক আছে আমি তাহলে এখন কাজ করি
-হুমমম। আর এই যে আপনি আমার সাথে আসেন
-আমি ভেতরে যাবো না, আপনি তাহলে থাকেন আমি চলে যাই
-আপনার যাওয়ার তো জায়গা নেই,
-এ দুনিয়ায় থাকার জায়গার অভাব নেই। আর এখন তো আমি ছিন্নমূল মানুষের মতো
-কথা না বলে পিছু পিছু আসুন
,,
পুষ্পর পিছু পিছু উঠলাম বাড়িটার তৃতীয় তলায়। সেখানে উঠে উত্তরের ঘরটা আমাকে দেখিয়ে বলল..
-এইটা আপনার রুম, সারাদিন খাবেন ঘুমাবেন একাকী থাকবে, আমি ছাড়া কেউ এসে ডিস্টার্ব করবে না। এই পাশে বেলকনিতে আসুন
,,
বেলকনিতে গিয়ে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। পূর্ব দিকের ছোট্ট নদীটা দেখা যাচ্ছে। বেলকনিতে থেকে পূর্ব, উত্তর আর দক্ষিণ এর পুরো জায়গা টা দেখা যাচ্ছে। দূরের গ্রাম গুলো আবছা আবছা দেখা যায়।
বেলকনিটা বেশ প্রসস্ত ছিলো। সেখানে একটা টেবিল আর চেয়ার সেই পুরোনো আমলের। সেগুলো দেখিয়ে পুষ্প আমাকে বলল...
-বাবা এখানে বসে সব কিছুর হিসাব নিকাশ করতেন (পুষ্প)
-উনার মন কেনো এতো উদার সেটা তার পছন্দের উপরেই বোঝা যায়।(আমি)
-এই ছোট্ট ছোট্ট টবে যে গাছ গুলো সব আমার। এতোদিন আমি সেবাযত্ন করেছি। এখন আপনি কয়েকদিন থাকবেন আপনি একটু দেখবেন(পুষ্প)
-তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে
-জ্বি বলেন
-ছোট হয়ে এতো কিছু সামলাবে কিভাবে?
-এখন হারানোর তো কিছু নেই। নিজের ভুলের জন্য এখন কিছু হারায় তাহলে সেটা মনে হবে না
-না আমি তা বলছি না। বাকিটা সময় কিভাবে থাকবে?
-আল্লাহ ভরসা। এখন বলেন রুম বেলকনি পছন্দ হয়েছে তো?
-আমি এমন সুন্দর পরিবেশে এর আগে কখনো থাকি নি
-যাক তাহলে ভালোই। নতুন জায়গা দিতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে
-এখানে দেখছি অনেক বাতাস লাগে
-হ্যাঁ রাতে আরও ভালো লাগবে এখানে, আর আশপাশের সবকিছু দেখা যায়। এতো বড় ফাকা জায়গা দেখলে সবারই মন ভালো হয়ে যায়
-এই কথা সে ও বলেছিলো
-সে বলতে কে? ইরা ভাবী?
-হুমমমম
-উমমম আচ্ছা তাকে ডিভোর্স না দিয়ে চলে আসছেন কেনো?
-তুমি এটা বলছো কেনো?
-আরে উনি তো বিপদে আছেন এখন। ডিভোর্স দিলে উনি আরেকজনকে বিয়ে করতে পারতো। আপনি তাকে স্বাধীনতা দিয়ে আসেননি
-তোমাকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না
-ভাবছি কারণ আমার আফসোস হচ্ছে
-কি নিয়ে?
-উনি ডিভোর্স দিলে আপনাকে রেখেই দিতাম
-মানে? বুঝলাম না
-কিছু না আমাদের বাসার কর্মচারী হিসেবে রাখতাম
-খুব মজা করতে পারো দেখছি, কথার মার প্যাঁচ ও ভালো জানো
-আমি যা বলার সোজাসুজি বলেছি
-কেমনে বলছো সেটা তো বোঝাই যাচ্ছে
-আচ্ছা যাই হোক, আপনি রুমে শুয়ে ঘুমিয়ে নেন। অনেক ধকল গেছে আপনার উপর
-আচ্ছা
-শোনেন শোনেন
-কি?
-একটা কথা বলি?
-হুমমম
-আপনাকে একটু জড়িয়ে ধরি?
-মানে এগুলো কেমন কথা?
-আসলে প্রথমবার জড়িয়ে ধরার পর থেকে আপনার উপর কেমন যেন একটা ভরসা পাই। আমার খুব ভালো লাগে। এখন আমি ভয় পাচ্ছি খুব, মনে হচ্ছে আপনাকে জড়িয়ে ধরলে ভয় টা কেটে যাবে
-....(আমি অন্যদিকে তাকিয়ে আছি, পুষ্পর কথা আমার একদম পছন্দ হয়নি। এখন বিরক্ত লাগছে)
-আচ্ছা থাকেন লাগবে না। আমি রুমে গিয়ে কান্না করবো এখন। তখন যেন সান্ত্বনা দিতে আসেন না৷
-আচ্ছা একটু বোঝা চেষ্টা করো। একটা ছেলে মানুষকে জড়িয়ে ধরার মনে বুঝো?
-আমি জানি না, আমার জেনে লাভ নেই। শুধুই তো জড়িয়ে ধরবো আর কিছু না
-হুহহহ ঠিক আছে
-এই এই এখানে না রুমে। এখানে কেউ দেখলে কি বলবে
,,
আমার হতে ধরে টেনে রুমে নিয়ে আসলো। রুমি নিয়ে আসে দুহাতে জড়িয়ে নিলো। আর সাথে কান্নাও জুড়ে দিলো..
-জড়িয়ে তো ধরলা আবার কান্না কেনো???(আমি)
-প্রথমবার আপনাকে যখন জড়িয়ে ধরেছিলাম আমি তখন খুব কষ্টে ছিলাম। আর সেটা মনেকরেই আমার এখন খুব কান্না পাচ্ছে (পুষ্প)
।।
।।
পার্সলে
Part : 14
Write : Sabbir Ahmed
____________________________
-প্রথমবার আপনাকে যখন জড়িয়ে ধরেছিলাম আমি তখন খুব কষ্টে ছিলাম। আর সেটা মনে করেই আমার এখন খুব কান্না পাচ্ছে (পুষ্প)
-যা হবার তা হয়ে গেছে, এখন সেগুলো মনে করার দরকার নেই (আমি)
-জানি না, আমার মনে পড়লে শুধু আপনাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করবো হ্যাঁ?
-না
-আবার মানা করেন কেনো?
-আমি একটা ছেলে মানুষ এটা আপনাকে বুঝতে হবে
-আমি এতোসব বুঝি না, আপনি যে আমাকে পার্সলে এর ঘটনা টা বলেছিলেন। তখনও বুঝেছি আপনি আমার কাছে পার্সলে হয়েই এসেছেন
-এমন করলে আমি চলে যাবো
-....(সাথে সাথে পুষ্প আমাকে ছেড়ে দিলো)
-.....(আমি চুপ করে আছি)
-আচ্ছা ঠিক আছে ধরবো না জড়িয়ে, তাও আপনি থাকেন। আমি আসি এখন, সময় মতো খাবার পাঠিয়ে দিবো
-...(আমি পুষ্পর চলে যাওয়া দেখছিলাম)
,,
হঠাৎ পিছন ফিরে বলল..
-যতই রাগ করি, আমার মন খারাপ হলেই আসবো। আর আপনাকে জড়িয়ে ধরবো (পুষ্প কথাটা বলেই চলে গেলো)
,,
আমি বিছানায় শুয়ে পড়লাম। কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছি জানি না। রাত আটটা কি নয়টা হবে সেই সময় কাজের ছেলেটা এসে আমাকে ডাকছিলো। আমি উঠে দেখি ও আমার জন্য খাবার এনেছে৷ আমি তাকে খাবার রেখে চলে যেতে বললাম।
,,
তারপর আলসেমি করে আরও কিছুক্ষণ উপর হয়ে শুয়ে থাকলাম।
হঠাৎ আমার পিঠটা ভারী হয়ে উঠলো। চোখ খুলে দেখতে পেলাম পুষ্প এসে শুয়ে পড়েছে।
-এগুলো কি পুষ্প?? (আমি)
-বাসায় ডাকাত আসছে(পুষ্প)
-কি বলো! কোথায় ডাকাত?
-নিচের রুমে
-দেখি উঠো তো
-না তুমি যাবে না, ওরা তোমায় মেরে ফেলবে
-আরে নামো তো তুমি
,,
পুষ্প কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে আমি বেলকনিতে গিয়ে দেখলাম পরিবেশ স্বাভাবিক। সব ঠিক আছে। শফিক তার কাজে ব্যস্ত হয়ে এদিক ওদিক হাঁটা চলাফেরা করছে। আমি পুষ্পর কাছে এসে বললাম..
-এমন মজা কিন্তু ভালো লাগে না (আমি)
-বিশ্বাস করেন আপনি কাছে না থাকলে মনে হয়, আপনাকে ডাকাত রা আমার কাছে থেকে নিয়ে যাবে (পুষ্প)
-দিন দিন তোমার যে কি হচ্ছে
-আমি কি করবো? আমার অস্থির লাগে
-আমার মনে হয় তোমাকে ডাক্তার দেখাতে হবে
-জানি না, আমি তোমাকে ছাড়া কোথাও যাবো না। তুমি আমার থেকে একটু দূরে যাবে না। আমি তোমার আশপাশে থাকবো
-কি পাগলামি শুরু করছো হ্যাঁ?
-আমি কি পাগলামি করছি?
-তাই তো করছো
-উহুমম করছি না (পুষ্প আমার কাছে এগিয়ে আসলো)
-এগুলো ঠিক হচ্ছে না
-আই লাভ ইউ (পুষ্প আমাকে জড়িয়ে ধরলো)
,,
পুষ্পর এমন করাটা আমার মোটেও ভালো লাগছিলো না। আমি ওর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে পুষ্পর গালে একটূ চর বসিয়ে দিলাম সাথে কিছু বকাও দিলাম। পুষ্প মন খারাপ করে বিছানায় গিয়ে বসলো। আমি রাগ নিয়ে আসলাম বেলকনিতে।
,,
বেলকনিতে এসে ঠিক করলাম এখনি চলে যেতে হবে এখান থেকে। না হলে এ মেয়ে আমারে ঠিক থাকতে দিবে না৷ একটু পর খেয়াল করলাম মেয়েটা রুমের লাইট অন অফ করছে। কিছুক্ষণ এমন করে একদম অফ করে দিলো। আমি রুমের ভেতরে না গিয়ে জেদ ধরে বেলকনিতেই দাঁড়িয়ে আছি।
,,
রুমের লাইট সে আবার অন করলো। ধীর পায়ে সে আমার পেছনে এসে দাঁড়ালো।
-আপনি খাবেন না? খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে (পুষ্প)
-....(আমি চুপ করেই দাঁড়িয়ে আছি)
-আমার উপর রাগ করেছেন তাই না? কি করবো আমি বলেন তো? আমার শুধু ভয় হয়, মনে হয় আপনাকে ওরা ধরে নিয়ে যাবে৷ এইজন্য আমি আপনাকে কাছে কাছে রাখতে চাই।
আচ্ছা আমি মনে হয় স্বাভাবিক আচরণ করছে পারছি না৷ আমাকে কাল একটু ডক্টর এর কাছে নিয়ে যাবেন???
-.....(আমি তবুও কিছু বললাম না)
-যাবেন না নিয়ে?
-দেখো আমার এখানে থাকাটা ঠিক হবে না৷ আমি থাকছি বলেই এতো সমস্যা। এর চেয়ে ভালো আমি চলে যাই। এখন তো তোমার সমস্যা হওয়ার কথা না
-আপনি ঐ যে বাড়ির গেট পাওয়ার আগে আমি এখান থেকে লাফ দিবো যা হবার হবে
-এমন কেনো করতেছো বলো তো?
-আপনি যাবেন কেনো?? আচ্ছা প্রমিস আর এমন করবো না। আমার মাথায় কেমন যেন সমস্যা হচ্ছে, কিছুই তো বুঝতেছি না। কাল আমাকে একবার ডক্টর এর কাছে নিয়ে যাবেন। (পুষ্প কথাটা বলেই চলে গেলো)
,,
আমি পড়লাম এক মহা চিন্তায়। পরদিন পুষ্প কে নিয়ে তার পরিবারের পরিচিত এক ডক্টর এর কাছে গেলাম। গ্রাম থেকে অনেকটা দূরে উপজেলা শহরে। ডক্টর সব শোনার পর পুষ্পর আড়ালে আমায় ডেকে বললেন...
-পুষ্পর অবস্থা একদমই ভালো না, আচ্ছা আপনি কে?? (ডক্টর)
-...(আমি আমার পরিচয় বললাম, কিভাবে পুষ্পর সাথে দেখা সেটাও বললাম)
-হুমমম বুঝতে পেরেছি
-পুষ্প আমার সাথে অস্বাভাবিক আচরণ করে
-যেমন??
-...(পুষ্প যা যা করেছে সেগুলো বললাম)
-সব শোনার পর আমার যেটা মনে হচ্ছে, হুট করে তুমি যদি ওর জীবন থেকে চলে যাও, তাহলে ও হয়তো নিজেকে শেষ করে দিবে, না হলে মানসিক যন্ত্রণায় পাগল হয়ে যাবে
-কিন্তু ডক্টর আমি এগুলো কিভাবে সহ্য করবো?
-এটা আমি জানি না, তোমাকে এটুকু করতেই হবে। ও সুস্থ হলে তখন হয়তো বুঝিয়ে সুজিয়ে চলে যেতে পারবে
-কত সময় লাগবে?
-পাঁচ ছয় মাস তো লাগবেই
-...(আমি মাথা চুলকাচ্ছিলাম)
-আর হ্যাঁ আপনিও কিন্তু একটু অসুস্থ। আপনাদের আর এখানে আসতে হবে। আমি সপ্তাহ শেষে বাড়িতে গিয়ে দেখে আসবো। কিছু ঔষধ লিখে দিয়েছি, সেগুলো কিনে নিয়ে যাবেন। আর হ্যাঁ ঔষধ এর চেয়ে আপনার সাপোর্ট ওরে সুস্থ করতে বেশি সহয়তা করবেন না৷ এমন কিছু করবেন না যাতে সে বেজার হয়
,,
ডক্টর এর সব পরামর্শ নিয়ে দু'জন বাড়ি আসলাম। বাড়ি আসতে আসতে বিকেল গড়ালো। বাড়ির গেটের কাছে এসে বললাম...
-তুমি ভেতরে যাও আমি একটু নদীর পার থেকে ঘুরে আসি (আমি)
-আমিও আপনার সাথে যাই? (পুষ্প)
-তুমি ভেতরে যাও আমি এখনি আসবো
-পালাবে?
-আরে নাহহ পালাবো কেনো? আমি এখনি আসবো
-বাড়ির তিন তলা, আর ছাদ থেকেও নদী দেখা যায়। মনে হবে নদীর পারেই বসে আছেন।
-তার মানে যেতে দিবে না তাই তো?
-গেলে আমাকে সাথে নিয়ে যেতে হবে
-আজ আর যাবো না
-আমি খুউউবব খুশি
-হয়েছে আর খুশি হতে হবে না৷ আজ সন্ধ্যায় পড়তে বসাব
-আপনি পড়াবেন?
-না, তুমি একাই পড়বে
-আমি পড়তে বসলে তুমি তো পালিয়ে যাবে
-আরে কথা দিয়েছি তো পালাবো না
-আমি তোমার কথায় বিশ্বাস করি না
-এ কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম (মনে মনে বলছি)
-আপনি কিছু ভাবছেন?
-না তোমার তুমি আপনি গজামিলে আমি শেষ
-বুঝলাম না
-বুঝতে হবে না, ভেতরে চলো
-না আগে বলেন
-বললাম যে দুজনে মিলে একসাথে বসে চা খাবো আর নদী দেখবো
-ছাদ থেকে?
-হুমম
-আমি এখনি সব ব্যবস্থা করছি
-না, আগে সন্ধ্যে হোক
-আচ্ছা
,,
সময় যত গড়াচ্ছিলো, পুষ্পর বাচ্চামিতে আমি অতিষ্ঠ হয়ে উঠছি। তাকে সামলে রাখতে গিয়ে আমাকে চরম ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হবে মনে হয়৷
,,
এদিকে সে সন্ধ্যার পূর্বে সব ব্যবস্থা করে রুম থেকে আমাকে ডেকে নিয়ে ছাদে গেলো। আমি ছাদে গিয়ে দেখি একটা টি-টেবিল সামনা-সামনি দুটো চেয়ার পেতে রেখেছে। টেবিলের উপর চা আর বিস্কুট।
-চলো বসি (পুষ্প)
-হুমমম (আমি)
-তুমি কোনটাতে বসবা?
-...(একটা চেয়ার দেখিয়ে বললাম)
-না তুমি এই চেয়ার টায় বসো, এখান থেকে নদী দেখা যায়। তুমি তো নদী দেখতে চেয়েছিলে
-থ্যাংকস
-লাগবে না লাগবে না, এখানে আমারও স্বার্থ আছে
-যেমন?
-তুমি নদী কে দেখবে, আর আমি দেখবো তোমাকে
-স্বার্থ কোথায় এখানে?
-এই যে তোমাকে দেখলাম
-আমাকে দেখে তোমার লাভ কি?
-ভালো লাগে মনের মধ্যে এটাই আমার লাভ
।।
।।
পার্সেল
Part : 15
Write : Sabbir Ahmed
____________________________
-আমাকে দেখে তোমার লাভ কি? (আমি)
-ভালো লাগে মনের মধ্যে, এটাই আমার লাভ (পুষ্প)
,,
কথা না বাড়ি আমি আশেপাশের সাজানো গোছানো দৃশ্য দেখছি। আর সে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সে তার কথামতো কাজ করছে। এতে আমার অসুবিধে হচ্ছে। আমি বললাম..
-অন্য দিকে তাকিয়ে থেকেও দৃষ্টি আর মনোযোগ তোমার দিকেই যায় (আমি)
-কেনো! আমি কি তোমার চোখে অনেক বেশি সুন্দর? (পুষ্প)
-আমি সেটা বোঝাতে চাই নি। তুমি যে আমার দিকে তাকিয়ে আছো এটা কোনো কিছু দেখতে ব্যাঘাত ঘটায়
-ওহহহহ
-আচ্ছা তোমার পরবর্তী পরিকল্পনা কি?
-কিসের?
-তোমার বাবার রেখে যাওয়া এতো কিছু সামলাবে কিভাবে?
-এগুলো যেমন আছে তেমনি থাকবে। আমি এসব নিয়ে চিন্তা করছি না৷ আমি চিন্তায় থাকি তোমাকে নিয়ে
-আমাকে নিয়ে এতো কি চিন্তা করো?
-যদি তোমাকে ওরা ধরে নিয়ে যায়
-....(ডক্টর ঠিকই বলেছে এর মাথায় সমস্যা হয়েছে। মনে মনে ভাবলাম)
-চা কেমন হয়েছে?
-হুমম দারুণ
-তুমি কিছু ভাবছো?
-কই না তো
-তোমার কপালে চিন্তার ভাজ
-আরে নাহহ তুমি ছোট্ট মানুষ তারউপর অসুস্থ তাই তোমার কাছে সবকিছু বিপরীত মনে হচ্ছে
-হবে হয়তো, আচ্ছা রুমে চলো তো (পুষ্প অস্থির হয়ে)
-মাত্র তো আসলাম
-একটা কথা বলব, তারপর আবার এখানে আসবো
-এখানে বলো
-না বলা যাবে না, বাতাস শুনে সবাইকে বলে বেড়াবে
,,
এ পাগলীর মাথায় যা আসবে তাই করবে। ডক্টর বলেছে তার সব কথা শুনতে। আমি তাই করবো, কিন্তু ভয় হচ্ছে রুমে নিয়ে আবার কোন বিপদে ফেলে দেয়...
,,
আমার থাকার রুমটায় সে আমাকে নিয়ে আসলো। তারপর দরজা লাগিয়ে বলল...
-দেখো আমি যা বলব এটা শুনবা, কাউকে বলবা না (পুষ্প)
-বলব না, বলো (আমি)
-আমি আজ তোমার কাছে ঘুমাবো
-হুহহহ এগুলো কোনো কথা
-আরে শুনো না আগে
-বলো
-আমি তো দাদীমার কাছে ঘুমাই, সে ঘুমানোর পর আমি তোমার কাছে চলে আসবো
-আমার কাছে কেনো আসবে?
-আমার ভালো লাগে তোমার কাছাকাছি থাকতে
-আমার তোমার বিয়ে হয়নি,
-আমি এতোকিছু বুঝি না আমি থাকতে চাইছি থাকবো। তুমি কিন্তু রাতে দরজা খুলেই ঘুমাবে
-আচ্ছা দেখি
-আরেকটা কথা
-কি?
-আমি তোমার কাছে আসবো, আবার অন্য কিছুর সুযোগ নিয়ো না
-এই মেয়ে এই কি ভাবো কি হ্যাঁ? অন্য কিছুর সুযোগ নিবো মানে? থাকবোই না এখানে যত্তসব
-এই না না সরি সরি, আমি মজা করেছি। সত্যি আমি মজা করে বলেছি। তুমি সুযোগ নিলেও কিছু হবে না তুমি তো আমারই
-আবার আজেবাজে বকছো,
-আচ্ছা সরি, তুমি যেভাবে রাখবে থাকবো
-রাতে তুমি দাদীমার কাছেই থাকবে, উঠে আসবে না। যদি আসো আমি চলে যাবো
-না না যাইয়ো না, আমি আসবো না
-এখন যাও। আর হ্যাঁ আজ থেকে তোমার পড়তে বসার কথা, যাও পড়তে বসার জন্য প্রস্তুতি নাও
,,
আমার কথায় কান না দিয়ে সে তার মতো করে বলল..
-আচ্ছা একটা কথা বলি? (পুষ্প)
-আবার কি? (আমি)
-আমি তো চেয়েছিলাম রাতে তোমায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো, তা তো হবে না। এখন একটু ধরি?
-দেখে পুষ্প তুমি আমার ছোট, তারউপর অসুস্থ তাই আমি কিছু বলি না। এখন কিন্তু সীম অতিক্রম করছে সবকিছুর
-এর আগে তো ধরলাম তখন সীমা অতিক্রম করেনি? আমি ধরতে চেয়েছি ধরবো (এটা বলেই আমায় জড়িয়ে ধরলো)
,,
প্রায় দশ মিনিট এর মতো একভাবে দাঁড়িয়ে থাকার পর
-এই যে এখন ধমক দিয়ে কিছু বললা না, আমার ভালো লাগলো, সবসময় এরকম করবা। আচ্ছা আমি আসি এখন। রাতে একবার দেখা করে যাবো (এটা বলে পুষ্প চলে গেলো)
,,
আমি আর বাইরে বের হলাম না৷ বিছানায় শুয়ে নানান চিন্তা ভাবনা করতে লাগলাম। কোথায় ছিলাম, এখন কোথায় এসে পড়ে আছি। অচেনা একটা মেয়ের সাথে পরিচয়, যে আমায় ছাড়া কিছুই বোঝে না৷
আমি যে তাকে কি করে বোঝাই তার কোনো কিছুই আমার ভালো লাগে না৷
,,
ভাইয়া ভাবী কে ছেড়ে কতদিন হলো বাইরে। ইরার কোনো খোঁজ নেইনি৷
তারা কি আমার খোঁজ করেছে? মনে হয় না। আমি তাদের, তাদের মতো ভালো থাকতে দিয়েছি। আমার হারিয়ে যাওয়াতে তাদের জীবন চলা সহজ হয়ে গিয়েছে।
আমার ভালোবাসার মানুষটা মনে হয় অন্যের সাথে ঘর বেঁধেছে। হয়তো কোনো সাদা চামড়ার মানুষ, যার গাড়ি বাড়ি টাকা পয়সার অভাব নেই৷
,,
ভালোবাসার মানুষটা আমায় তার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্কে বেঁধেছিলো। তারপর আমাকে কথাও দিয়েছিলো জীবনে যাই হোক আমায় ছেড়ে যাবে না। আর এখন সে অল্প দিনেই চুপিচুপি অনেক দূরে চলে গেছে।
,,
আমি এতো কিছু ভাবছি কেনো? আমার তো এগুলো ভাবার কথা না৷ ভাবনা গুলো আসছে কেনো? এসব ভাবলে আমার ফিরে যেতে মন চাইবে আমি ভালো থাকবো না৷ আমাকে একটা পাথর হতে হবে।
,,
এসব ভাবতে ভাবতে আধঘুমন্ত হয়ে গেলাম। আমার কপালে কারও হাতের স্পর্শে আমি জাগনা হই৷ চোখ মেলে দেখি পুষ্প আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসছে।
-পড়তে বসোনি? (আমি)
-এখন রাত দশটা বাজে, আমি পড়ে উঠেছি সেই কখন। শফিক এসে খাবার দিয়ে গেছে খাওনি কেনো? (পুষ্প)
-ওহহ আমি ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম
-জানো আমি একটা সমস্যায় পড়েছি -কি সমস্যা?
-গ্রামের কয়েকজন মাতব্বর এসেছিলো সন্ধ্যার পর পর
-এসে কি বলছে?
-কারা যেন আমাদের বাসায় এসে দুইদিন থাকবে। তার অনুমতি চাইতে এসেছিলো
-তুমি কি বললে?
-আগে তোমার থেকে শুনি তারপর তাদের জানাবো
-আমি এখানে কি বলব?
-তুমিই তো সব বলবা, আমি ভালোমন্দ বুঝি না তো
-তারা কি বলেছো বলো(আমি উঠে বসলাম)
-শুয়ে থাকো আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেই
-নাহহ এখন লাগবে না, তারা কি বলেছে বলো
-শহর থেকে লোক আসবে। এখানে এসে শুটিং করবে।
-এই বাড়িতে?
-মনে হয় এই গ্রামে।
-ওহহ তারপর
-সপ্তাহ খানেক তারা থাকবে। আমাদের গ্রাম থেকে উপজেলা শহর তো অনেক দূরে। তো তাই তারা ডিসিশন নিয়েছে গ্রামের ভালো কোনো বাড়ি দেখে তারা থাকবে। গ্রামের কিছু লোক আমাদের বাড়ির কথা বলেছে। আর এই প্রস্তাব নিয়েই তারা আসছে। আর বলেছে ভাড়াও দিবে
-হুমমম শুটিং এর জন্য আসবে?
-তাই তো বলল
-আচ্ছা দিয়ে দাও
-সমস্যা যে একটা আছে
-কি??
-এক রুম আমাদের জন্য রেখে সব রুম ছেড়ে দিতে বলেছে
-সমস্যা নেই তুমি আর দাদীমা থাকার জন্য একটা রুম রেখে, তাদের সব দিয়ে দিবে
-আর তুমি কোথায় থাকবে?
-আমি সপ্তাহ খানেক না হয় বাইরে থাকবো
-বাইরে কোথায়?
-সেটা তো জানি না।
,,
পুষ্প ওমনি আমায় জড়িয়ে ধরলো। গালে, কপালে,
মুখে অজস্র চুমু খেয়ে বলল..
-পাগল নাকি তুমি?? তুমি দূরে যাবা কেনো? কাউকে বাড়িতে থাকতে দিবো না৷ আমি ওদের মানা করে দিবো (পুষ্প)
-....(ওর কান্ডে আমি পুরো শকড। মুখ থেকে কথাই বের হচ্ছিলো না আমার)
-পাগল তুমি রাগ করো না৷ আমি কাউকে থাকতে দিবো না এই বাসায় কাউকে না৷ তুমি মন খারাপ করো না৷ ওদের আমি মানা করে দিবো, এসব কথা উঠতেই দিবো না
-শান্ত হও বসো
-না তুমি রাগ করেছো
-না আমি রাগ করিনি তুমি একটু শান্ত হয়ে বসো
-.....(আমাকে ছেড়ে দিয়ে বসলো)
-আমি শফিক এর সাথে থাকবো, তাহলে আর সমস্যা হবে না
-ওদের বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই গো, ও বাড়িতে তুমি থাকতে পারবে না
-আমি পারবো
-পারবে না
-আরে আমি পারবো
-তুমি পারলে আমার সমস্যা হবে
-তোমার আবার কি সমস্যা?
-তুমি ওখানে থাকলে রাতে কি অবস্থায় থাকবে, অসুবিধে হলো কি না দেখতে পারবো না তো৷ যদি ওরা তোমায় ধরে নিয়ে যায়
-আবাররর!
-সরি সরি৷ শোনো রেগে যেয়ো না, আমি তুমি আর দাদীমা থাকবো হ্যাঁ?
-.....(এ মাথা খারাপ করে দিবে, এর সাথে আমিও পাগল হয়ে যাবো)
-বলো না থাকবে
-এটা হয় না। শোনো সারাদিন তোমার সাথে থেকে, রাতে গিয়ে শফিক এর সাথে ঘুমাবো
-হুমমম এছাড়া উপায় নেই তাই না?
-না নেই
-আচ্ছা কয়েকদিন রাতে তোমাকে না দেখতে পেয়ে দুশ্চিন্তা হবে। পরে আবার ঠিক হয়ে যাবে তাই না?
-হ্যাঁ হবে
-আচ্ছা তাহলে এখন খেয়ে নাও
,,
পুষ্প খাবারের সবকিছু আমার কাছে এনে দিলো হাত ধুয়ে দিলো। পাগলীর পাগলামি অন্য লেভেলে চলে যাচ্ছে। আমি বুঝতেছি না এটা ওর পাগলামি? নাকি আমার প্রতি ভালোবাসা? প্রথম টা যদি হয় তাহলে ঠিক আছে, পড়ের টা হলে ওর জন্য সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। কারণ সে আমার জন্য না৷
,,
আমি কয়েকবার ভাত মুখে দেওয়ার পর বললাম..
-তুমি খেয়েছো? (আমি)
-হ্যাঁ আমি অনেকগুলো ভাত খেয়েছি (পুষ্প)
-বাহহহ
-আচ্ছা আমি শাড়ি নিয়ে আসি
-শাড়ি দিয়ে কি করবা?
-আমায় পড়িয়ে দিবা
-...(ওর কথা শুনে আমার খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো)
-তুমি পড়িয়ে দিবা, না পাড়লে সমস্যা নেই আমি শিখিয়ে দিবো তাও পড়িয়ে দিবা
-দেখো পুষ্প আমি তোমার এতো কাছের কেউ না
-এহহহ বললেই হলো? তুমি আমার সবচেয়ে কাছে মানুষ, দাঁড়াও আমি শাড়ি নিয়ে আসি
-এই শুনো
-না আমি কোনো কিছু শুনবো না
-আরে দাঁড়াও
-আমি সব নিয়ে আসতেছি...
-...(খাওয়া বন্ধ করে আমি বসে রইলাম)
।।
।।
পার্সেল
Part : 16
Write : Sabbir Ahmed
____________________________
-আমি সব নিয়ে আসতেছি (পুষ্প)
-....(আমি খাওয়া বন্ধ করে বসে রইলাম)
,,
কিছুক্ষণ পর পুষ্প শাড়ি নিয়ে আসলো। বিছানার উপর রেখে বলল..
-এটা পড়িয়ে দিবে আমাকে (পুষ্প)
-....(আমি চুপ করে বসে আছি। প্লেটে অর্ধেক খাবার রেখে হাত ধুয়ে নিলাম)
-তুমি রাগ করেছো?
-............
-আচ্ছা আমি নিয়ে যাচ্ছি সব, তুমি রাগ করো না, খেয়ে নাও আমি আর আসবো না। তবুও তুমি রাগ করো না
-.............
-কথা বলো
-হুমমম
-কি হুমম?? বলো রাগ করোনি
-করেছি
-আমি রেখে আসি?
-আসার দরকার নেই, অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ো যাও
-হুমমমম
,,
সেদিন আমার রাগ দেখে পুষ্প আর আমার সামনে আসেনি৷ পরদিন দেখা হলেও সে আমার থেকে একটু দূরে দূরে থাকছে। আমি সারাদিন বাড়িতে বসে শফিকের কাজ দেখেছি, সাথে তাকে সাহায্য করেছি৷
,,
পুষ্প ও বাড়ির অনেক কাজ করেছে যেগুলো তার মা করতো। গ্রামের মেয়ে হওয়ায় প্রায় সব কাজই তার জানা। এই অল্প বয়সে সব কাজেই পারদর্শী সে। রান্না টাও ভালো করে। আমার জন্য সে নিজ হাতে রান্না করে। বাকি সবার জন্য কাজের মেয়েটা রান্না করে।
,,
আমি সব জেনেও মানা করিনি, সে তার মতো করতে থাকুক। যেদিন চলে যাবো সেদিন থেকে সব ঠিক হয়ে যাবে।
,,
সন্ধ্যায় বাড়িতে সেই শুটিং এর লোকগুলো আসলো। পনের জনের মতো একটা টিম হবে। তাদের রুম, বাথরুম সব দেখিয়ে দেওয়া হলো। ডিরেক্টর একা এসে কথা বলতে চাইলো পুষ্পর সাথে। পুষ্প আমাকে দেখিয়ে দিয়ে বলল...
-উনার সাথে কথা বলেন (পুষ্প)
-আরে আমি...
-ভাই কেমন আছেন? (ডিরেক্টর)
-জ্বি আলহামদুলিল্লাহ, আপনি?
-ভালো, আচ্ছা এ কয়েকদিন তো অনেক ব্যস্ত থাকবো, তাছাড়া নানান ঝামেলাও আছে। আমি আপনাদের ঝামেলা টা শেষ করতে চাই
-আমাদের ঝামেলা মানে?
-না মানে টাকা যেটা দেওয়ার কথা ছিলো সেটা এখনি দিতে চাচ্ছি
-সমস্যা নেই পরে দিলেও চলবে
-আমি এখনি দিতে চাচ্ছি
-ঠিক আছে, আপনার যখন এতই তাড়া, তাহলে দিয়ে দেন
,,
আমি টাকাগুলো গুনে নিলাম। লোকটি চলে যাওয়ার পর আমি টাকা পুষ্পর হাতে দিলাম। দাদীমা পাশেই ছিলো তখন। পুষ্প টাকা হাতে নিয়ে বলল...
-কোথায় রাখবো? (পুষ্প)
-আংকেল যেখানে টাকা রাখত সেখানেই রেখে দাও(আমি)
-আচ্ছা একটা কথা, তাহলে তুমি কোথায় থাকবে?
-শফিকের সাথেই
-আর আমি?
-আবারর
-নাহহ ঠিক আছে ওর সাথেই থাকবে
,,
এদিকে শফিকের কাজ শেষ হবে রাত নটার দিকে। এই সময় পর্যন্ত এখানেই থাকতে হবে। গতদিনের মতো পুষ্প আমার কাছে আসছে না৷ দূর থেকে একটু করে দেখেই চলে যাচ্ছে। একটু আগেও রুম থেকে বেড়িয়ে আমি কি করছি সেটা দেখে আবার ভেতরে চলে গেলো। শুটিং এর লোকজন যে যার রুমে৷ আমি ভাবলাম ছাদটা তো ফাঁকা সেখানে গিয়ে একটু সময় কাটিয়ে আসি।
,,
শফিককে বলে গেলাম, যাওয়ার সময় যেন আমাকে ডেকে নেয়।
আমি ছাদে উঠে পুব দিকে তাকিয়ে মৃদু বাতাসের স্বাদ নিচ্ছি। আকাশে চাঁদ নেই। তারার মেলা স্পষ্ট। শোঁশোঁ করে বাতাস কানের কাছে দিয়ে যাওয়ার সময় কি যেন বলে যাচ্ছে।
বাতাসের ভাষা আমি বুঝতে পারিনি। এসবের মাঝে চেনা পরিচিত একটা কণ্ঠ বলে উঠলো "কেমন আছো"?
,,
আমি ভেবেছি বাতাস বলেছিলো কথাটা। কিন্তু কথাটি যখন দ্বিতীয় বার শুনলাম তখন ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসলাম। যেদিক থেকে কন্ঠ টা আসছিলো সেদিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম, এক আবছায়া মূর্তি, তার গড়ন নারীদের মতো।
,,
মনে মনে ভাবছিলাম পুষ্পদের ছাদে ভূতটূত আছে নাকি? পুষ্প আমাকে এ ব্যাপারে সাবধান করেনি। আর ভূত বলছি কেনো! কন্ঠ টা তো আমার পরিচিত। আমি এসব ভাবতে ভাবতে সে যে কখন আমার খুব নিকটে আসছে আমি বুঝতে পারিনি।
,,
সে কাছে আসতেই আবছা অন্ধকারে পরিচিত একটা মুখের অবয়ব ভেসে উঠলো আমার চোখের সামনে। চিনতক ভুল করলাম না, এটা ইরা। সে শাড়ি পড়ে আছে, কি কালার শাড়ি সেটা বোঝার উপায় নেই৷
,,
গায়ে অনেক গয়না, বেশ সেজেগুজেই আছে৷ শুটিং এর লেকগুলোর সাথে হয়তো আসছে, আমি তখন দেখতে পেলাম না কেনো? ওভাবে খেয়াল করিনি মনে হয়৷
-কেমন আছো?? (জোর দিয়ে বলল)
-হুমমমম
-চিনতে পেরেছো?
-আপনি এখানে?
-আমাকে এই লোকগুলোর সাথে দেখতে পাওয়ার পর আর কিছু তো বুঝতে বাকি নেই তোমার
-আমি আপনাকে দেখতে পাইনি, ইচ্ছে করে সামনে আসলেন কেনো?
-তোমাকে এখানে দেখে অবাক হয়েছি, জানতে এসেছি এখানে কেনো তুমি?
-আমার একটুও জানতে ইচ্ছে করছে না যে আপনি এখানে কেনো
-আমার ইচ্ছে করছে, তুমি এখানে কেনো??
-আমি এখানে কাজ করি
-এ বাড়ির লোক তোমার কি হয়?
-কিছু না, তারা কাজ দিয়েছে সেটাই করি। তারা মালিক
-আপনি এখান থেকে যান
-আমাকে এতোদিন পর দেখে
-আপনি চুপ করুন, যে কাজে আসছেন সে কাজ করেন
-আমাকে না বলে চলে আসছিলে কেনো? আমি তোমাকে এইভাবে পাবো আমার কল্পনায় ছিলো না৷ আমার জীবন ঝুলন্ত অবস্থায় রেখে তুমি দেশে বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছো বাহহ
,,
হুট করেই আমার মাথায় রক্ত উঠে গেলো। ইরার দুই গালে দুটো চর বসিয়ে দিলাম। তার কথার কোনো উত্তর দিলাম। সাথে সাথে ছাদ থেকে নিচে নেমে আসলাম। তাকে দেখে আমার রাগ হচ্ছিলো। কি উত্তর দিবো তার কথার? যে আমায় আড়ালে এতো কিছু করেছে? আমার কষ্টের টাকায় তার লেখাপড়া করার কথা সেখানে সে আজ নাটক ফিল্ম করে বেড়াচ্ছে। আমার তো এখন আশপাশের বাতাস কে দূষিত মনে হচ্ছে, বেইমান এর নিশ্বাসে সব বাতাস দূষিত হয়ে গেছে।
,,
আমি এখনই চলে যেতাম, আরেক পাগলের জন্য এখান থেকে চলে যেতে পারবো না৷ আমি চলে গেলে যে মরণ কান্ড ঘটিয়ে দিতে পারে। উভয় সংকটে পরে শফিকের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।
-আপনি না ছাদে গেলেন (শফিক)
-ভালো লাগলো না চলে আসছি (আমি)
-শুনলাম নায়ক নায়িকা আসছে তাদের নাকি টিভিতে দেখায়, রাতে তো তাদের দেখা যাবে না। সকাল বেলা দেখমু, অনেকদিন এর আশা পূরণ হবে
-হুমমমম
-ভাইজান আপনার মন খারাপ
-না মন খারাপ হবে কেনো? আমি ঠিক আছি
,,
সেদিন শফিকের বাড়িতে থাকলাম। সারারাত আমার চোখে ঘুম নেই।
ইরা আসছে এখানে। আমি তার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করলেও পারবো না৷
ঐ বাড়িতেই তো থাকতে হবে।
,,
ইরাকে চর মারার পর কেমন যেন মনের মধ্যে খারাপ লাগছে। সারারাত বিছানার এপাশ ওপাশ করতেই গেলো।
,,
পরদিন সকালে পুষ্পর সামনে যেতেই...
-আমি জানতাম তো শফিকের বাড়িতে তোমার ঘুম হবে না, এই জন্য বলেছিলাম।
যাই হোক আমার কথা তো শুনলে না। এখন তোমার থাকার জায়গা নিয়ে আমি টেনশনে পরে গেলাম। আর জানো কি হয়েছে?
-কি হয়েছে?
-টিভিতে যে নাটক করে নায়ক নায়িকা তারা আসছে। আমি একজনের সাথে কথা বলেছি। শুনেছি সে উঠতি নায়িকা
-হুমমম ভালো
-ভালো তো হবেই এটাই তো তোমার ইরা
-তুমি জানলে কিভাবে?
-এটা জানার কি আর বাকি থাকে? আজ সকালে উনার নাম শুনেই আমি বুঝতে পেরেছি। আর তোমার কাছে থেকে তো গল্প শুনেছিলাম, তার কাছে থেকে একই কথা শুনেছি
-তারপর?
-তারপর আর কি? যাও গিয়ে কথা বলো। ওহহ সরি এখন তুমি তোমাকে তুমি বললে উনি রেগে যাবে, এখন তুমি আমার আপনি। যান গিয়ে দেখা করেন
-দেখা হয়েছে আমাদের
-কখন?
-কাল রাতে
-কথা হয়েছে???
-হুমমমম
-আপনি উনার সাথে চলে যাবেন?
-তুমি আমাকে একটু মুক্তি দিবে? আমি এখান থেকে চলে যেতাম
-না না, আমি আপনাদের দুজনকে আর আলাদা হতে দিবো না...(পুষ্প কথাটা বলে কান্না করে দিলো)
-তুমি আবার কান্না করছো কেনো?
-সে তুমি বুঝবে না। সরি আপনি বুঝবেন না
-দেখো আমি উনার সামনে যাবো না৷ আমি তাকে রাতে দুইটা থাপ্পড় মেরেছি
-কি বলেন! মেরেছেন কেনো?
-মন চেয়েছিলো মেরেছি
-কাজটা মোটেও ঠিক করেননি,
-ঠিক কাজই হয়েছে, বেইমান এর আরও শাস্তি হওয়া উচিত ছিলো। তারা কাজ শেষে চলে যাবে, তুমি এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না৷
-সে আপনাকে নিতে রাজি আছে,
-বলছি না এসব আমাকে বলবা না। খুদা লাগছে খাবার দাও
-আচ্ছা রেগে যাবেন না এভাবে আমার ভয় লাগে, রুমে বসেন।
-না আমি এখানে খাবো, খাবার নিয়ে আসো
-সবাই দেখে কি বলবে? বাইরে থেকে লোকজন আসে
-না আসে, তুমি খাবার নিয়ে এসে আমাকে খাইয়ে দিবা যাও
-কি বলেন? মাথা ঠিক আছে আপনার? এতদিন আমি জোর করেছি। আজ আপনি করছেন
-এতো কথা বলো কেনো? এখন তোমার থাপ্পড় খাওয়ার শখ হইছে???
-না না আনতেছি আমি আনতেছি....
।।
।।
পার্সেল
Part : 17
Write : Sabbir Ahmed
____________________________
-এতো কথা বলো কেনো? এখন তোমার থাপ্পড় খাওয়ার শখ হইছে? (আমি)
-না না আনতেছি আমি আনতেছি(পুষ্প)
,,
আমি চাচ্ছিলাম ইরা যেন দৃশ্য টা দেখে কষ্ট পায়৷ আমি যে তার না, এটা যেন সে বুঝতে পারে৷ ইরা তার রুমের বেলকনিতে যাওয়া আসা করছিলো।
,,
এদিকে পুষ্প খাবার নিয়ে এসেছে..
-খাইয়ে দাও (আমি)
-সে দেখলে কিন্তু মাইন্ড করবে? (পুষ্প)
-কে মাইন্ড করবে? সে বলতে কেউ নেই। তোমাকে যা বলছি তাই করো, মাইন্ড করার কিছু নেই৷ আমার হাত দিয়ে খেতে মন চাচ্ছে না তাই তোমাকে বলছি। তুমি আবার অন্য কিছু মনে করো না
-না না ঠিক আছে, আপনার কথা বুঝেছি আমি
,,
পুষ্প আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে। আমি বার বার বেলকনিতে তাকাচ্ছি ইরার আসবে দেখবে, এই অপেক্ষায়। হঠাৎ দাদীমা এসে বলল কাঁপা কণ্ঠে বলল..
-কি হয়েছে রে, তোর হাতে কি সমস্যা হয়েছে? (এখানে আসার পর থেকে দাদীমা আমাকে তুই করেই বলে)
-জ্বি দাদী একটু ব্যাথা পাইছি (আমি)
-ক্যামনে?
-আর বইলো না গরু ধরতে গিয়ে
-তুই গরু ধরতে গেছিস কেন?
-ছুটে যাচ্ছিলো তাই
,,
দাদীকে মিথ্যা বলে থামালাম। এদিকে দাদীর সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে ইরা আসলো টের পেলাম না। সে হয়তো এই দৃশ্য টা দেখেই এগিয়ে আসছে। তার চোখ মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছিলো সে রেগে আছে। আমি এই সময়টার অপেক্ষায় ছিলাম। ইরাকে দেখে পুষ্প আমাকে খাওয়ানো বন্ধ করে দিয়েছে।
,,
পুষ্পকে চোখের ইশারায় বুঝালাম আমাকে খাইয়ে দিতে। পুষ্প আমার ইশারা পেয়ে খাইয়ে দিতে লাগলো।
পুষ্প আমার পাশে ফ্লোরে বসলো৷
আমার খাওয়া শেষ হওয়ার সময় পর্যন্ত দাদীর সাথে খোশগল্প মজেছিল।
,,
আমাকে খাওয়ানো শেষ করে পুষ্প প্লেট নিয়ে ভেতরে গেলো, কি কাজে দাদী ও চলে গেলো। পুষ্প কে দেখে মনে হচ্ছিলো সে ইরা কে দেখে ভয় পেয়েছে। ইরা তার নীরবতা ভেঙে আমায় বলল..
-হাত দিয়ে খেতে কি সমস্যা তোমার??? (ইরা)
-আপনাকে কৈফিয়ত দিতে পারবো না (আমি)
-পুষ্প মেয়েটা খুব লক্ষ্মী আপনি যা বলেন সেটাই শুনে
-....(আমি চুপ করে বসে আছি)
-ওর সাথে ঘটে যাওয়া সব কথা আমি শুনেছি৷ তুমি ওকে অনেক হেল্প করেছো
-...................
-কিছু বলছো না যে?
-কি বলব? দেখেন আপনি নামীদামী মানুষ, নিচু স্তরের মানুষের সাথে কথা বলে নিজের সম্মান টা নষ্ট করবেন না
-তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে
-কোনো কথা নেই
-কাল সন্ধ্যায় তো কোনো কথা না শুনে চর মেরেই চলে আসলে। আমার কথাগুলো শুনো তারপর তুমি যা ইচ্ছে করো
-আমি পারবো না
-দেখো এমন করো না
-যা বলার তাড়াতাড়ি বলে এখান থেকে কেটে পড়েন
-একটু নিরিবিলিতে চলো
-না এখানে বলেন
-এখানে না নিরিবিলিতে
,,
পুষ্প দরজার কাছে এসে দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে৷ আমাদের কাছে আসার সাহস পাচ্ছে না৷ তার চোখে একটা ভয় স্পষ্ট। সে আমাকে হারানোর ভয় করছে৷ কিন্তু এই মেয়েটাকে কি করে বোঝাই যে আমি তার বা ইরা কারও না৷
,,
আমি ইরার সাথে উঠে বাড়ির বাইরে আসলাম। একটা নিরিবিলি জায়গা দেখে সে থামলো সাথে আমিও৷
-গ্রাম টা অনেক সুন্দর তাই না??(ইরা)
-আপনি কি বলতে আসছেন সেটা বলেন(আমি)
-আচ্ছা অস্থির হইয়ো না, আমি বলছি। আমি আজ সবকিছু ছেড়ে দিয়েছি
-সবকিছু কি??
-এই মিডিয়া জগত
-আমার সাথে আবার মিথ্যে নাটক শুরু করলেন নাকি?? আর আপনি যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন আমাকে বলে লাভ নেই
-আমি যা বলতে আসছি, সেটা বলতে দাও
-জ্বি বলেন
-তোমার হঠাৎ হারিয়ে যাওয়ার পর ভাইয়া ভাবী আমার সাথে দেখা করেন৷ আমরা তোমার অনেক খোঁজ করেও পাইনি৷ তোমার জন্য অনেক নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিলো তাও তোমাকে পাইনি।
তোমার ভাইয়া তোমাকে না পেয়ে অনেক কান্না করেছে
-হুমমম তারপর?
-তোমাকে হারানোর পর আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি৷ আমি বুঝতে পেরেছি আমি কত বড় ভুল করেছি
-ভুল কিসের? আপনার বড় হওয়ার ইচ্ছে ছিলো, এখনও সে পথেই আছেন৷ আপনার জন্য শুভকামনা
-দেখো শুভ আমি মনে মনে ঠিক করেছি তোমাকে যেদিন খুঁজে পাবো সেদিন আমি সবকিছু ছেড়ে দিবো, মানে এই মিডিয়া জগত। আমি এটা ধরে রেখেছি তোমাকে খোঁজার জন্য
-দেখেন আপনার এসব ন্যাকা কান্না আর নাটক আমার পছন্দ হচ্ছে না, আপনি শুটিং করেন, সেখানে গিয়ে ভালো অভিনয় করেন, তাতে আপনার ভক্ত বাড়বে
-একটু বোঝার চেষ্টা করো
-এখানে বোঝার কিছু নেই
-আমি অলরেডি বলে দিয়েছি যে আমি এই কাজ আর করবো না৷ ডিরেক্টর নতুন কাউকে খুঁজে নিয়েছে। আর আমি যার সাথেই কাজ করেছি আগে বলে নিয়েছি
-আরে আজব মহিলা তো আপনি এসব আমায় শোনাচ্ছেন কেনো? কষ্ট করে কে আপনাকে খুঁজতে বলেছে? কে কাজ ছাড়তে বলেছে?
-তোমার এগুলো পছন্দ না, সেটা প্রথমেই বুঝেছিলাম
-আমার পছন্দ অপছন্দ দিয়ে আপনার কিছু আসবে যাবে না। আমি আসি
-দেখো প্লিজ যেয়ো না, তুমি যা বলবে, যেমন বলবে আমি মেনে নিবো। আমায় ক্ষমা করে দিয়ে আমাকে মেনে নাও
-বেইমানকে আমি মাফ করতে পারবো না
-আমি বলতেছি আমার ভুল হয়েছে, আমি স্বীকার করছি (আমার হাত ধরে ফেলেছে)
-হাত ছাড়ুন, স্পর্শ করবেন না৷ আপনি এখন সেলিব্রিটি আপনার কোনোকিছুরই অভাব হবে না
-একজন তুমিটার অভাব
-আমি আপনার জন্য না,
-প্লিজ শোনো
,,
ইরা আমার হাত ধরতেই ওর গালে আবার দুটো থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম৷
তারপর আর একটি কথাও বলেনি।
আমি চলে আসলাম বাড়ির মধ্যে, আমার পিছুপিছু ও আসলো।
আমি এসে বাড়ির একপাশে এসে দাঁড়ালাম, ও আমার পাশে এসে দাঁড়ালো।
,,
এদিকে ডিরেক্টর সাহেব তার টিম নিয়ে শুটিং এ চলে গেছেন৷ বাড়িটা এখন ফাঁকা। শফিক এসে তার কাজ শুরু করেছে। পুষ্প আমাদের থেকে একটু দূরে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ইরার দিকে তাকিয়ে আছে।
,,
পুষ্প বেলকনিতে থেকে নেমে ইরার কাছে আসলো। হয়তো ইরার গালে হাত রাখা দেখে কিছু একটা আঁচ করতে পেরেছে। সে কাছে এসে ইরাকে বলল...
-মেরেছে আপনাকে? (পুষ্প)
-হুমমম (ইরা মুখ চেঁপে কান্না করে বলল)
-মেরে তো গাল টা ফুলিয়ে ফেলেছে
,,
পুষ্প আমায় চোখ রাঙালো, মনে হচ্ছে আমি ইরাকে মেরে অন্যায় করে ফেলেছি। পুষ্প মেয়েটার মধ্যে এতোটাই মায়া এখন সে ইরার পক্ষ নিয়ে আমাকে শাসানো শুরু করেছে।
,,
-আপুকে মেরেছেন কেনো? (পুষ্প চোখ রাঙিয়ে)
-....(আমি এর অবস্থা দেখে চুপ করে আছি)
-সাহস তো কম না আপনার, আমার আপুর গায়ে হাত তুলেন। আপনার হাত টা আমি কেটে ফেলবো। আমার আপু যা বলবে সেটাই আপনাকে শুনতে হবে। না হলে কি হবে জানেন???
-....(আমি কিছু না বলে শুধু তাকিয়ে আছি)
-এখন সেটা বললাম না।
,,
পুষ্প ইরাকে নিয়ে তার রুমে চলে গেলো। এই পুষ্প মেয়েটাকে নিয়ে আমি পড়েছি বিপদে। তাকে তো কিছুই বলা যাবে না এটা ডক্টর এর মানা৷ তাই সবকিছু মনের মধ্যে চাপা দিয়ে রেখেছি।
,,
তাকে ধমক দিয়ে কিছু বললে হিতে বিপরীত হবে। কিছুক্ষণ পর পুষ্প তার রুম থেকে বের হলো। পুষ্প ইরাকে তার রুমে বসিয়ে রেখে এসেছে।
পুষ্প আমার কাছে এসে বলল..
-একটা দরকারি কথা ছিলো (পুষ্প)
-হ্যাঁ বলো (আমি)
-এখানে না রুমে যেতে হবে, বাতাসের কান আছে বলেছি না আপনাকে?
-কোথায় বলবে?
-আসেন আমার পিছু
,,
পুষ্প আমাকে তার রুমের পাশের রুমটায় নিয়ে গেলো।
-বলো কি বলবে?? (আমি)
-...(পুষ্প চোখের পানি ফেলে নিঃশব্দে কান্না শুরু করলো)
-কি হলো?
-....(সাথে সাথে আমায় জড়িয়ে ধরলো)
-আরে কি হয়েছে তোমার?
-সরি
-সরি কেনো?
-তোমায় বকেছি? তুমি কষ্ট পেয়েছো তাই না? আমি আসলে বকতে চাইনি। তুমি ইরা আপুকে মেরেছো কেনো? আপু তো কষ্ট পেয়েছে। আর মারবে না তুমি
-আচ্ছা বুঝলাম, কিন্তু
-কোনো কিন্তু না, জানো আমার একটুও ভালো লাগে না। ইরা আপু যদি তোমায় নিয়ে যায় আমি কার কাছে থাকবো? কে আমাকে তোমার মতো ভালোবাসবে?
-আমি কখন তোমাকে ভালোবাসলাম?
-আমি তো ছোট্ট না, আমি বুঝি। ইরা আপু তোমায় অনেক ভালোবাসে তাই না?
-না
-না বাসে তো, আমি তার চোখ মুখ দেখে বুঝতে পেরেছি। আমিও কিন্তু অনেক ভালোবাসি তোমাকে। কিন্তু তোমায় ছেড়ে দিতে হবে তাই না? তুমি আমায় ছেড়ে চলে যাবা তাই না? তুমি আমাকে ছেড়ে যাইয়ো সমস্যা নেই। আপুকে ছেড়ে যাইয়ো না। আপু অনেক ভালোবাসে তোমায়..(পুষ্প কান্না করে আমার শার্ট ভিজিয়ে দিয়েছে)
-একটু থামো
-নাহহ থামবো না, এতো কষ্ট আমার ভালো লাগে না৷ আমি উভয়সংকটে পড়েছি,
।।
।।

পার্সেল
END PART
Write : Sabbir Ahmed
____________________________
-একটু থামো(আমি)
-নাহহ থামবো না, এতো কষ্ট আমার ভালো লাগে না। আমি উভয়সংকটে পড়েছি(পুষ্প)
-এমন কেনো করো?? আমি তোমার কথামতো তোমার সাথে আছি। এতো অস্থির হইয়ো না আবার শরীর খারাপ করবে
-তুমি তাহলে বলো ইরা আপুকে কষ্ট দিবো না
-যেটা ভালো আল্লাহ সেটাই করবেন
,,
পুষ্প আমাকে ছেড়ে দিয়ে এক দৌড়ে বাইরে চলে গেলো। আবার তৎক্ষনাৎ ফিরে এসে বলল..
-আমি যে জড়িয়ে ধরেছি এটা আপুকে বলো না, উনি কিন্তু আমায় বকবে, আমি আপুর কাছে যাচ্ছি হ্যাঁ??
,,
আমার মুখ থেকে কথা হাড়িয়ে গিয়েছে। কাকে কি বলব কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না৷ সারাদিন কোনোরকমে পার করে সন্ধ্যায় পড়লাম আরেক বিপদে।
ইরার যিনি ডিরেক্টর ছিলেন তিনি নাকি আমার সাথে দেখা করবেন। যদিও একবার কথা হয়েছে তখন তো আর জানতেন না আমি ইরার বর, তাই এখন একবার কথা বলতে চাচ্ছে।
,,
সে সহ আরও সবার সাথে কিছুক্ষণ গল্প হলো। সব জায়গায় আমাকে শুধু ইরাকে নিয়েই প্রশ্ন করলো। আমাদের পূর্বের কাহিনী শুনলো আরও কতো কথা।
,,
রাতে খাবার আমি পুষ্প, ইরা, দাদীমা একসাথে খেলাম।
খাওয়া শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর যখন শফিক এর সাথে তার বাড়িতে যাবো তখন পুষ্প আমাকে থামিয়ে শফিককে পাঠিয়ে দিলো।
-কই যাও??? (পুষ্প)
-ঘুমাতে (আমি)
-আজ ওখানে ঘুমাতে হবে না। আজ নিজের বউ এর সাথে ঘুমাবা
-বাড়াবাড়ি হচ্ছে,
-কোনো কিছু বাড়াবাড়ি হচ্ছে না, আপু রুমে অপেক্ষা করছে তোমার জন্য
-আমি রুমে গিয়ে কি করবো?
-ঢং করো তাই না? আপু তার ভুল বুঝতে পেরেছে, যাও সব ভুলে তাকে মেনে নাও
-আমি কোনো বেইমান এর সাথে থাকতে পারবো না
-তুমি তো দেখছি গাধা, আপু এখন পুরোপুরি তোমার। সে তোমাতে এতটাই মনোনিবেশ করেছে যে তুমি মুগ্ধ হয়ে যাবে
-তুমি তার হয়ে এতো গুণ গাইছো ক্যান?
-আপুর কষ্ট টা আমি বুঝেছি
-আমার কষ্ট টা বুঝলে না
-আমি তো তোমাকে চিনি পাগল, তুমি আমার একটা কি বলব কি বলব? মানে ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। আমি তোমাকে বুঝি, আর সারাজীবন এভাবে চললে হবে? এক হতে হবে না? অনেক পাগলামি করেছো এখন চলো আপুর কাছে যাবে, সে অপেক্ষা করছে
-আমি যাবো না
-এমন করো না তো, যাও
-আচ্ছা তুমি এটা বলো, তোমার চোখে পানি কেনো?
-এটা খুশিতে। তোমাদের সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে
-তুমি তো আমাকে ভালোবাসো
-না না এ কথা আর মুখে এনো না। এটা বাতাস শুনবে, বাতাস চুপি চুপি আপুর কানে পৌঁছে দিবে। আপুর কষ্ট হবে। আর বড় কথা তুমি তো আমায় ভালোবাসো না
-আমি ভালোবাসি, কিন্তু ঐরকম ভাবে না
-হুমমম আমি তোমাকে বুঝি, জানি। আর আপু তোমাকে নিয়ে যাবে। তোমার ভাইয়া ভাবী অপেক্ষা করছে তোমার জন্য,
-আমি স্বার্থপর মানুষ এর কাছে ফিরবো না। আর আগামী ছয় মাস ডক্টর তোমার পাশে আমাকে থাকতে বলেছে। আমি এখান থেকে এক চুল ও নরছি না৷ আর বেইমান কে বলো একা রুমে থাকতে ওর সাথে আমি থাকবো না
-এই পাগল এমন করো না, এমন করলে আপনি কান্না করেই মারা যাবো না। যাও না প্লিজ। যাও না
,,
পুষ্প এক প্রকার জোর করেই ইরার রুমে আমাকে পাঠিয়ে দেয়৷
পুষ্প বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে দিয়ে চলে যায়৷ ইরাকে দেখলাম খাটের এক কোণে গুটিশুটি হয়ে বসে আছে।
,,
আমি কি করবো আর তখন তাকে দেখলেই আমার রাগ উঠছিলো তাই অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে থাকলাম।
এদিকে পুষ্প হঠাৎ করে দরজা খুলে প্রথমে আমার দিকে তারপর ইরার দিকে তাকিয়ে বলল...
-আপু ভাইয়া কে কিছু বলার আছে, একটু পর এনে তোমার কাছে দিয়ে যাচ্ছি হ্যাঁ?? (পুষ্প)
-...(পুষ্প মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সম্মতি দিলো)
,,
আমি পুষ্পর সাথে বাইরে আসলাম।
পুষ্পকে দেখে মনে হচ্ছিলো এখনি কান্না করে দিবে। কান্না করার জন্য ফুঁসতেছিলো। দুই একবার কথা বলল সেটা তাও স্পষ্ট। গলা টা পরিষ্কার করে কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল...
-তু তুমি এখন আপুকে স্পর্শ করবে তাই না? না না আমি তোমাকে তুমি বলব না। একবার বলেছিলাম বলব না, আবার বলছি। সরি হ্যাঁ?
শুনেন না আমার কথা আপনি তাকে জড়িয়ে ধরবেন তাই না? আমাকে আর তো ধরবেন না। আমার দুঃখ হলে আমি কার কাছে যাবো? আপনার মতো দুজন তো হবে না৷ আপনার বুকটাও আমার জন্য না৷ আমার এখন কি হবে? বলেন না আমার কি হবে?
-শান্ত হও, শান্ত হও এমন করো না৷
-আমি জানি আমি অসুস্থ, আপনার জন্য আমি অনেক হাইপার হয়ে যাই। আপনাকে যখন রুমে দিয়ে আসলাম আমার মাথা কাজ করছিলো না। আমার শুধু মনে হচ্ছিলো আমি ছাড়া আপুকে আপনি স্পর্শ করবেন তখনই আমার মাথা ঘুরে গিয়েছিলো। তাই আপনাকে বাইরে নিয়ে আসলাম। আচ্ছা আমি কি ঠিক করেছি? আচ্ছা আমি এমন করছি কেনো? আমি কি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি? নাকি আমি অসুস্থ দেখে এমন করছি? দেখেছো আবার তুমি করে বলে ফেলছি। আমার মাথা ঠিক নেই তাই না?
,,
মেয়েটার এমন পাগলাটে অবস্থা দেখে কি মনে করে নিজে থেকেই তাকে বুকে জড়িয়ে নিলাম। আর এমনা আমি তার সাথে প্রথম করলাম।
পুষ্প যে এতক্ষণ ফোঁপাচ্ছিল সেটা কমেছে। আমি জানি মেয়েটা আমার কাছে থাকলেই সুখী থাকে।
,,
কিছুক্ষণ ওকে জড়িয়ে ধরেই রাখলাম। ও বুকের মধ্যে থেকেই বলল..
-আর কখনো নিবেনা না আমায় বুকে তাই না? (পুষ্প)
-নিবো তো (আমি)
-মিথ্যে আশা দিয়ো না। আপু জানলে তোমার ঠ্যাঙ ভেঙে ফেলবে, ছাড়ো আমাকে
,,
পুষ্প আবার স্বাভাবিক হলো। পূর্বের ন্যায় আবার জোর করে ইরার কাছে পাঠালো। আমি রুমে এসে সেই আগের মতো দাঁড়িয়ে থাকলাম আর সে খাটের এক কোণায় বসে।
,,
ইরা নীরবতা ভেঙে বলল...
-ভাইয়া ভাবী কে কি এখানে আসতে বলব? (ইরা)
-না আমার কিছু কথা আছে (আমি)
-হুমম বলুন
-পুষ্প অসুস্থ, ডক্টর বলেছে ওর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে ছয় মাসের বেশি সময় লাগবে। এই সময়টা আমি তাকে ছাড়া কোথাও যেতে পারবো না
-হুমমম
-আর আপনার সাথে আমি থাকতে পারবো না। এর একটা সমাধা হওয়া উচিত
,,
কথাটা বলার সাথে সাথে ইরা এসে আমার পায়ে পড়লো। আমি টেনে উঠালাম আবার দু পা জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো।
-আপনি উঠবেন? এতো বড় হয়ে ছোট লোকের পা ধরেছেন? সমাজ জানলে কি বলবে? (আমি)
-আর এসব বইলেন না, আমাকে মেনে নিয়ে যত শাস্তি আছে দিয়েন (ইরা)
-কি শাস্তি দিবো? তোর দিকে তাকাতেই আমার ঘৃণা করে। না জানি কতো ছেলের সাথে শুয়েছিস
-ছিঃ কি বলো এগুলা?
-চুপ থাক, মুখের উপর কথা বলবি না। টাকার লোভে পড়ে, আমার আড়ালে আমাকে না জানিয়ে তুই যা করেছিস অন্য পুরুষের সাথে শুইতে তুই তো দুইবার ও ভাববি না
-তুমি কি বলো এসব? আমি এতোটা খারাপ হই নাই৷ তুমি এসব বলো না৷ বিশ্বাস করো আমাকে আমি এসব কিছু করিনি। আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি৷ তুমি কষ্ট করে আমাকে পড়িয়েছো, আর আমি সেটার আড়ালে এইটা করেছি। এর বেশি কিছু না
-তুই বল এটা হলো কিভাবে?
-শুনো আমি বলতেছি। একদিন আমাদের ভার্সিটিতে একটা নাটকের শুটিং হচ্ছিলো, আমি আর আর আমার কিছু বান্ধবী মিলে সেটা দেখছিলাম৷ হঠাৎ একজন ছেলে এসে আমার নাম জানতে চাইলো। তারপর আমার অভিনয় করার ইচ্ছে আছে কি না সেটা শুনতে চাইলো। আমি তখন ভাবলাম এটাই আমার সুযোগ বাবাকে দেখিয়ে দেওয়ার। তো তারপর আমি ডিরেক্টর এর কাছে যাই তবে এক যাই নি। আমার দুইটা বান্ধবী আমার সাথে ছিলো। চাইলে তুমি ওদের জিজ্ঞেস করতে পারো
-তুই আমার পা ছেড়ে দিয়ে কথা বল।
-প্লিজ বিশ্বাস করো আমায়
-তো এখন তুই কি চাস?
-তোমাকে
-শুটিং করে তো ভালোই টাকা ইনকাম হচ্ছিলো আবার ভালো একটা অবস্থানে যাওয়া যেতো, আমার কাছে ফিরে আসতে হবে কেনো?
-মনের মধ্যে শান্তি ছিলো না, তোমার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছিলাম।
-আমি কিন্তু অনেক আগে মরে গেছি, তোকে আমি ভালোবাসতে পারবো না
-সমস্যা নেই আমি বাসব
-আমাকে লাগবেই?
-হুমমমম,
,,
ইরার কান্নাকাটি দেখে আমি অনেকটাই দূর্বল হয়ে পড়লাম৷ ও যেহুতু ওর ভুল বুঝতে পেরে সবকিছু ছেড়ে দিয়েছে এখন আমার উচিত তার উপর একটু রাগ কমানো। তবে হ্যাঁ তার শাস্তি স্বরূপ আমি তাকে ভালোবাসা দেখাতে যাবো না। এসব ভেবে আমি তাকে বললাম....
-আমার কিছু কথা আছে(আমি)
-বলো (ইরা)
-আমি তোর সাথে থাকবো, কিন্তু তোকে ভালোবাসতে পারবো না
-আচ্ছা সব আমিই বাসবো
-হুমমম এটাই কথা
-একটু বুকের মধ্যে নিবে?
-না, পা ছেড়ে দিয়ে বিছানায় গিয়ে বসেন
,,
ইরা গিয়ে বিছানায় বসলো। আমিও তার পাশে বসলাম। ভাবতে লাগলাম আমাকে তো ইরা এখানে রাখবে না, সাথে নিয়ে যাবে। তখন পুষ্পকে কে সামলাবে? পরামর্শ নেওয়ার জন্য ইরাকে সব বললাম পুষ্প যে আমাকে ভালোবাসে পাগলামি করে সেগুলো ও বললাম৷
,,
আমাকে ভালোবাসে শুনে ইরা একটু রাগই করলো।
-তাহলে এগুলো হচ্ছে আপনাদের মধ্যে তাই না???(ইরা রেগে বলল)
-দেখো আমি তাকে পশ্রয় দেইনি(আমি)
-এহহ আসছে সাধু সাজতে নিশ্চয়ই আপনি কিছু করেছেন
-না আমি কিছু করিনি
,,
ইরা রাগ দেখিয়ে আমাকে উঠে দাঁড়াতে বলল। আমি উঠে দাঁড়ালাম। সে আমার বুকের মধ্যে এসে বলল..
-কে পুষ্প সেটা আমি জানি না, কাল সকালে আমরা আমাদের বাসায় ফিরছি ঠিক আছে? (ইরা)
-কাল সকালে?? (আমি)
-হ্যাঁ কাল সকালেই ফিরতে হবে। তুমি একটা বিপদ এর মাঝে আছো এই মেয়ে আমার কাছে থেকে তোমাকে ছিনিয়ে নিবে
-কি যে বলো না তুমি
-আর তুমি তাকে নিয়ে এতো চিন্তিত কেনো?
-কারণ ওর অবস্থা টা আমি কাছে থেকে দেখেছি, কেমন কেমন যে করে ও বলে বোঝাতে পারবো না
-ওর প্রতি দেখছি তোমার ভালোই টান আছে
-আমি তার পরিস্থিতির কথা বলছি
-হুমমমম
,,
পরদিন সকাল বেলা,,,,,
ইরা তড়িঘড়ি করে রেডি হয়েছে আজই আমায় নিয়ে রওনা হবে। এদিকে বেলা অনেক হলেও পুষ্প একবারের জন্যও দেখা করতে আসেনি। শুনলাম সে রুম থেকে বের হয়নি। শফিক এর কাছে জানতে পারলাম তার পেট ব্যাথা করছে অনেক। ইরাকে কথাটা জানালাম।
ইরা বলল আমাকে রেডি হয়ে নিতে যাওয়ার সময় দেখা করে যাবে।
,,
ইরার কথামতো আমিও তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিলাম। তারপর গেলাম পুষ্পর সাথে শেষ বারের জন্য দেখা করতে। ইরা আমি দুজন একসাথে গিয়েছি তার কাছে।
রুমে গিয়ে দেখি পুষ্প শুয়ে আছে, তার গায়ে কাথা। দাদীমা পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। চেহারাটা মলিন হয়ে আছে তার।
,,
সকালে উঠে তার সাথে দেখা না করায় নিজের মধ্যে কেমন যেন অপরাধবোধ কাজ করছিলো। পুষ্প আমাদের দুজনকে একসাথে দেখে একটু হাসার চেষ্টা করল, আর বলল..
-আপনারা মনে হয় চলে যাচ্ছেন তাই না??? (পুষ্প)
-হুমমমম (ইরা)
-আচ্ছা সাবধানে যাইয়েন
-তোমার হঠাৎ কি হলো?
-কই কিছু না, এই একটু পেট ব্যাথা করছে ঠিক হয়ে যাবে
-ঔষধ খেয়েছো?
-হুমমমম। আচ্ছা আপনারা যান আপনাদের দেড়ি হয়ে যাচ্ছে
-আচ্ছা (ইরা)
-শোনেন শোনেন এই যে আপনি (পুষ্প আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল)
-হ্যাঁ বলো(আমি)
-আপু আপনি একটু বাইরে যাবেন, উনার সাথে আমার একটু কথা আছে। দাদী তুমিও একটু যাও।
,,
পুষ্পর অনুরোধে তারা দুজন বাইরে গেলো। তারপর বলল...
-তোমার কপালটা একটু এগিয়ে নিয়ে আসো (পুষ্প)
,,
আমি পুষ্পর কথা ফেরাতে পারলাম না, আপনি আপনি কপাল টা তার কাছে নিয়ে গেলাম। সে আমার কপালে চুমু খেলো, একটু অস্থির হয়ে গালে মুখে হাত বুলিয়ে বলল..
-আমি পাখিটা ভালো থেকো হ্যাঁ? আপুকে কোনো কষ্ট দিয়ো না। আমি তো তোমায় রাখতে পারলাম না। তুমি যার সে তোমায় নিয়ে যাচ্ছে। (কথাটা বলে কান্না করে দিলো)
-....(এসময় আমার কি বলা উচিত আমি জানি না। তাই চুপ করে ছিলাম)
,,
আমি এখানে বেশিক্ষণ থাকতে পারলাম না। পুষ্পর কান্না দেখে আমার চোখেও পানি চলে আসছিলো। আমি বাইরে চলে আসার জন্য রওনা হলাম। দরজায় এসে আবার তাকালাম পুষ্পর দিকে, দেখি মেয়েটা ফুঁপিয়ে কান্না করছে।
মনে হচ্ছে অনেক বড় কিছু সে হারাতে চলেছে। তার খুব আগ্রহ ছিলো আমার প্রতি।
,,
চোখের পানি আড়াল করে বাইরে আসলাম। দাদীমার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে দুজন রওনা হলাম৷ বাড়ির বাহিরের রাস্তায় এসে শেষ বারের মতো বাড়িটা দেখে নিলাম।
এখন বাড়িটাকে দেখে সেই প্রথম দিনের কথা মনে পড়লো, যেদিন ভোরে আমি এখানে এসেছিলাম।
,,
আমরা মেঠো রাস্তা ধরে এগোতে থাকলাম। এক পা দু পা করে পুষ্পদের বাড়ি থেকে অনেকটাই দূরে চলে আসলাম। হঠাৎ করে ইরা থামলো।
-কি হলো থামলে যে?? (আমি)
-....(ইরা কান্না করছে)
-তোমার আবার কি হলো?
-এটা আমার করা ঠিক হচ্ছে না
-কি ঠিক হচ্ছে না?
-তুমি পুষ্পর কাছে যাও
-কি যা তা বলছো?
-আমি ঠিকই বলছি, আমি আড়াল থেকে সবকিছু দেখেছি। মেয়েটা তোমায় পাগলের মতো ভালোবাসে সেটা আমার থেকেও বেশি
-কিন্তু আমি তো তোমায়
-দেখো আমাদের বিয়ে হওয়ার পর ও আমরা বন্ধুত্বে ছিলাম। আমি তখনও তোমাকে ভালোবাসিনি। তোমার অজান্তে আমি ডিভোর্স এর জন্য একটা উকিল ও ধরেছিলাম। পরে তোমার অনুপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত বদলে আমি এমন হয়ে যাই। নতুন একটা ভালোবাসার সৃষ্টি হয় আমার মনের মধ্যে। আর পুষ্প মেয়েটা! তার ভালোবাসায় কোনো খাদ নেই। তুমি ওর কাছে ফিরে যাও। আমার কষ্ট হোক তারপরও তুমি ওর কাছে ফিরে যাও
-আমি কিন্তু তাকে...
-প্লিজ মেয়েটার এই সময়ে তুমি ছাড়া কেউ সাপোর্ট দিতে পারবে না। তুমি তো এখন আমাকে ভালোবাসো না ঘৃণা করো। আর সবকিছু সবসময় বিবেচনায় আনার দরকার নেই। আমি বেড়িয়েছি আমি চলে যাচ্ছি তুমি পুষ্পর কাছে যাও
-আমি তাকে একটুও ভালোবাসিনি
-তার কান্না দেখে তোমার চোখে ও পানি আসছিলো। তুমি তার দুঃখের ভাগ নিতে রাজি। এর মানেই ভালোবাসা এখন এসব বোঝানোর সময় না। তুমি ওর কাছে যাও। ও যেমন করতেছিলো না জানি কি হয়
,,
ইরা কথা শুনে আমার ভয় লাগলো। পুষ্পর যদি কিছু হয় তাহলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।
,,
-আমি এখন কি করবো? (আমি)
-দৌড় দাও, আর পেছন ফিরে তাকাবে না। আমি নামক কোনো অনুভূতি তোমার জীবনে থাকবে না৷ তুমি যাওয়ার সময় একবারও পিছু ফিরে তাকাবে না। যদি তাকাও তাহলে পুষ্পর কাছে পৌঁছাতে পারবে না
,,
আমি ইরার কথামতো এক দৌড়ে পুষ্পর বাড়িতে চলে আসলাম।
আমি পেছনে তাকাইনি আর। জানি না ইরার কি অবস্থা। সে আমাকে পুষ্পর কাছে আসার কথা বলার পর নিজেকে কেন যেন বেশ স্বাধীন মনে হচ্ছিলো।
,,
যাক গে সে-সব কথা৷ পুষ্পর রুমে এসে দেখি সে শুয়ে থেকে ঠিক আগের মতোই চোখের পানি ফেলে ফুঁপিয়ে কান্না করছে।
,,
আমাকে দেখে পুষ্পর কান্না যেন আরও বেড়ে গেলো। তাকে থামানোর জন্য বুকের মধ্যে নিলাম
-শান্ত হও, এমন করে কান্না করলে বাঁচবে না, শান্ত হও আমি আসছি তোমার কাছে (আমি)
,,
পুষ্প কান্না করতে করতে বলল..
-তু তুমি আসছো কেনো? আপু কোথায়? (পুষ্প)
-আমি জানি না, সে আমাকে তোমার জন্য রেখে গেছে (আমি)
-তার মানে তুমি আমার?
-হুমমমম
,,
পুষ্প কথাটা শুনে আমাকে আরও জোড়ে জাপটে ধরে বলল....
-আপু এতো বড় একটা গিফট পার্সেল করে পাঠালো আমার জন্য (পুষ্প)
-তুমি একটু শান্ত হও (আমি)
-না না আমি আপুকে দেখবো
-সে নেই চলে গেছে
-তুমি যেতে দিলে কেনো?
-আমি বললে সে থাকতো না,
-আপু অনেক কষ্ট পাচ্ছে তাই না?
-হুমমম তাই মনে হয়
-তাহলে আসলে কেনো?
-ঐ যে তোমার আপু আমাকে তোমার কাছে দিয়ে গেলো
-কিন্তু তুমি আসলে কেনো?
-আমি জানি না কেনো আসছি
-আচ্ছা থাকুক সে প্রশ্নের উত্তর অজানা। ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি
-....(আমি চুপ করে রইলাম তার কথাতে)
-তুমি ভালোবাসোনা আমায়?
-হুমমমম
-তো বলো না কেনো?
-ভালোবাসি
-আমার প্রিয় পার্সেল টা আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি। অনেকটা পাগলের মতো। আপু তোমাকে গিফট করেছে আমাকে। আমি কিন্তু কাউকে গিফট করতে পারবো না
-আমি কি বলেছি?
-না তবুও বলে রাখলাম
-আচ্ছা এখন কি করবে?
-বিয়ে, চলো বিয়ে করবো
-তুমি আগে সুস্থ হও
-না এখন বিয়ে করবো এখন, আমি তোমার কাছে থাকবো সবসময়
-সে থেকো, কিন্তু আগে সুস্থ হও
-বিয়ে করলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবো
-কে বলেছে??
-আমার মন বলছে
-তোমার মন বললে হবে?
-আমার মন বলেছে দেখেই তুমি এখন আমার কাছে
-তাই?
-তাই তো। আরেকবার ভালোবাসি বলো
-বললে কি দিবে?
-চাওয়ার চেয়ে বেশি কিছু
-সত্যি?
-হুমমম সত্যি
-ভালোবাসি
-আমি তোমার ঠোঁটে ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি আঁকবো এখন। এটাই তোমার পুরষ্কার, হি হি হি হি....
,,
,,
,,
,,
,,
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,END,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,



অদৃশ্য পরী

  ----দেবর সাহেব, তো বিয়ে করবে কবে? বয়স তো কম হলোনা ৷ ----আপনার মত সুন্দরী কাউকে পেলে বিয়েটা শীঘ্রই করে ফেলতাম ৷ -----সমস্যা নাই তো, আমা...