নীরবতা
Write : Sabbir Ahmed
__________________________
-দোস্ত আমার বিয়ের কার্ড(ফাতেমা)
-কিসের বিয়ে! কার বিয়ে??(অয়ন)
-আমার বিয়ে
-তাহলে আমার ভালবাসা??
-তোর আবার কিসের ভালবাসা?
-আমি যে তোকে ভালবাসি
-তো আমি কি করবো?? আমি ভালবাসি না
-দেখ এমন করিস না, চল পালিয়ে যাই
-মাথা খারাপ তোর? আমি বিয়েতে এক পায়ে রাজি, আর যার সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে তাকে খুব পছন্দ করি আমি
-আর আমি?
-তোকে শুধু ফ্রেন্ড হিসেবে দেখছি
-ওহহহ, আচ্ছা আমি যাবো বিয়েতে অনেক দিন হলো দাওয়াত খাওয়া হয় না (অয়ন এর চোখে পানি)
-এতক্ষণ তাহলে আগলা প্যাঁচাল পারলি কেন??
-এই অভ্যাস তো আগে থেকেই
-তুই থাক, আমার অনেক কার্ড বিলি করা বাকি আছে
-আমি যাই তোর সাথে??
-না থাক তুই
-হুমমম
,,
অয়ন ফাতেমার সাথে চার বছর আগে পরিচয় হয়। পরিচয় হওয়ার কিছুদিন পরেই অয়ন ফাতেমা প্রপোজ করে বসেম,আর সেখান থেকেই ফ্রেন্ড হিসেবে আছে তারা।
,,
অয়ন বাসার ভেতরে আসে..
-কিরে তোর হাতে ঐটা কি?? (অয়নের মা)
-কার্ড (অয়ন)
-কিসের কার্ড?
-বিয়ের
-কার বিয়ে
-ফাতেমার বিয়ে
-আরে তুই না ওকে ভালবাসিস
-তো কি হইছে, তার তো কোনো সমস্যা নেই, সে আমাকে ভালবাসে না, আমি যে ভালবাসি সেটা বিশ্বাস ই করে না (অয়ন কান্না করে তার রুমে চলে যাচ্ছে)
-এই শোন কান্না করিস না, আমি দেখছি কি করা যায়
,,
মায়ের কথা শুনে অয়ন আবার ফিরে আসে।
-মা, সে তার পছন্দের মানুষ কে বিয়ে করছে, তার ভালবাসায় সমস্যা করো না
-কিন্তু তুই? ওর জন্য এত কিছু...
-আরে বাদ দাও পুরোনো কথা, তুমি কাজ করো... (অয়ন আবার তার রুমে চলে গেলো)
,,
রুমের দরজা আটকিয়ে বিছানায় যায় অয়ন। তারপর বালিশ এর নিচে মাথা রেখে খুব জোড়ে একটা চিৎকার দেয়। তারপর বর্ষণ, মানে কান্না শুরু। একটা মানুষ কে চার চারটা বছর হলো ভালবাসে। অয়ন ভাবছিলো একদিন না একদিন মেনেই নিবে, সেই একদিন আর এলো না। চারটা বছর এ কত কিছুই না ভাবছে অয়ন।..
,,
,,
হঠাৎ অয়ন এর ফোন আসলো। কান্না থামিয়ে ফোনটা হাতে নিলো, দেখে তার আরেকটা ফ্রেন্ড সজীব কল করেছে। অয়ন ফোনটা রিসিভ করতেই...
-মামা আমি জানি তুই কান্না করতাছস, আমি আসতেছি, কান্না করিস না (ওপাশ থেকে কলটা কেটে দেয় সজীব)
,,
সজীব ফাতেমারও ফ্রেন্ড হওয়ায় তাকেও ইনভাইট করে। তারপর সজীব বুঝতে পারে, অয়ন এর সাথে কি হতে চলছে।
,,
সজীব অয়ন এর বাসায় চলে আসে।
রুমে অয়ন বসে কি যেন ভাবছিলো..
তখন সজীব রুমে ঢুকে বলল
-দোস্ত.. (সজীব)
সজীব কে দেখে অয়ন দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
-এ কান্না থামা তুই, (সজীব)
-কি করব আমি??(অয়ন)
-এর উত্তর আমার কাছেও নেই
-...(অয়ন কান্না করছে)
-ওর বিয়ের আগে একটা চান্স তোকে করে দিবো আমি, দেখ কিছু করতে পারিস কি না
-কিভাবে??
-হলুদ সন্ধ্যার পর বুঝতে পারবি
-হুমমমম
,,
তারা সবাই অনেক চেষ্টা করেছে ফাতেমা কে বোঝানোর, কিন্তু কারও বুঝ সে মাথায় নেয় নি।
,,
সেদিন হলুদ সন্ধ্যায় অয়ন বাইরে দাড়িয়ে আছে। সজীব গেছে ফাতেমা কে আনতে। কিছুসময় পর অয়ন এর মুখে হাসি ফুটে, কারন সে দেখতে পায় ফাতেমা আসছে।
,,
-কিরে তোরা আমাকে এখানে নিয়ে আসলি কেনো??(ফাতেমা)
-দেখ দোস্ত, আর হাতে সময় নেই, এই পাগল টা তোকে অনেক ভালবাসে, তুই ওকে হ্যা বলে দে (সজীব)
-হ্যা বলে দিবো তাই না? (ফাতেমা)
-হুমম বলে দে, বেচারা তোর জন্য পাগল
-তাই??
,,
ফাতেমা ধীর পায়ে অয়ন এর দিকে এগিয়ে গেলো। অয়ন একদৃষ্টিতে ফাতেমার দিকে তাকিয়ে আছে।
ফাতেমা কপালে হাত দিয়ে বলল
-শালা আমার কপাল টাই পোড়া, আজ আমার হলুদ সন্ধ্যা চলছে..এ সজীব তুই যা আমি আর ও কথা বলছি, তুই আমার রুমে আমার ফ্রেন্ড দের সাথে আড্ডা দেই, আমার খোঁজ করলে বলবি হবু বর এর সাথে ফোনে কথা বলছে (ফাতেমা)
-ঠিক আছে ঠিক আছে, তোরা কথা বল (সজীব)
-হুমমম
,,
সজীব চলে যাওয়ার পর ফাতেমা বলল
-কি যেন বলছিলাম??(ফাতেমা)
-হলুদ সন্ধ্যা চলছে (অয়ন)
-হ্যা, হলুদ সন্ধ্যা চলছে, শালা তুই কি রে, আমার বিয়েতে এসেও আমাকে বিরক্ত করবি?? চার চারটা বছর আমার জীবন কে তেতো বানিয়ে ছেড়ে দিছিস, তোর জন্য আমার হবু বর অনেক রাগ করেছে তার রাগ ভাঙিয়েছি। সেগুলো বাদ দিলাম, এখন আসছিস আবার অশান্তি করতে, আচ্ছা তুই চাস কি??? (ফাতেমা)
-তোমাকে (অয়ন)
-ঠাসসস শালা ফালতু, কত বার বলব আমি তোকে ভালবাসি না তুই আমার জীবন থেকে চলে যাস না কেনো??
,,
চর খেয়ে অয়ন দাড়িয়ে আছে একটু নড়ছে না, চোখের কোনো তো পানি বাধ মানতে চাইছে না যখন তখন বের হতে পারে। আর এদিকে ফাতেমা আবার শুরু করলো..
-তোকে কত বার মানা করছি বলতো?? তোকে আমার পছন্দ না, তোকে ফ্রেন্ড হিসেবে আমার পছন্দ না, কিন্তু আর কিছু ফ্রেন্ড দের জন্য তোর সাথে মিশেছি, (ফাতেমা)
-হুমম(অয়ন)
-এখন কি চাস বল, আমি তোকে দেবো
-তোমাকে
-ঠাসসস ঠাসস ঠাসসস ঠাসসস মাথা থেকে এই ভূত নামবে না তোর??
-ভালবাসি তো
-দাড়া ভূত নামাচ্ছি
,,
ফাতেমা পরে থাকা একটা লাঠি হাতে নিয়ে অয়ন কে মারতে শুরু করে। মার এর ব্যাথায় অয়ন আস্তে শব্দ করছে।
কিছুক্ষণ পর..
-এইবার তোর ভূত নামছে?? (ফাতেমা)
-আমাকে মারতে তোমার অনেক কষ্ট হইছে তাই না?? (অয়ন)
-তুই আমাকে বাকি জীবন টা ভালো থাকতে দে প্লিজ,
-আচ্ছা দিবো একটা কথা শুনে যাও
-...(ফাতেমা চুপ)
-আমিহ তোমাকে অনেক ভালোবাসি, তুমি ভালো থেকো, আর সবকিছুর জন্য আমি দুঃখিত, আমি না পাগল। কিছু বুঝি না আমি। আমি তোমার ভালো চাইবো, কিন্তু দেখো আমি খারাপ চেয়ে বসে আছে, তোমার ভালই আমার ভালো, তু তুমিহ যাও, আর কখনো বিরক্ত করতে যাবো না, তুমি চলে যাও, তুমি চলে যাও (অয়ন চলে যায়)
,,
ফাতেমা লাঠিটা ফেলে সেও চলে যায়। অয়ন একটু দূরে গিয়ে ব্যাথায় আর হাটতে পারে না বসে পরে।
,,
অয়ন যেখানে বসে সেখানে গাছের অনেক পাতা ছিলো। সেখান থেকে দুটো পাতা হাতে নেয়। তারপর পাতার দিকে তাকিয়ে হাসতে শুরু করে। হাসতে হাসতে কেমন যেন হয়ে যায়। নিজে থেকেও হাসি থামাতে পারে না।
,,
,,
-ফাতেমা অয়ন কোথায়??(সজীব)
-বাসায় চলে গেছে (ফাতেমা)
-ওকে তাহলে ফিরিয়ে দিলি?
-তো কি করবো? ওর মতো ছোট লোকের বাচ্চাকে আমি ভালবাসবো! ওকে দেখলেই তো আমার গা জ্বলে যায়
-হ্যা জ্বলবেই তো, তুই অসুস্থ হলে ও বাসায় বসে নিজে ঠিক থাকতে পারতো না, হয় তোকে কল দিয়ে খোঁজ নিতো, আর তুই বিরক্ত হয়ে ওর কল কেটে দিলে আমার কাছ থেকে খোঁজ নিতো।
তোর প্রত্যেকটা বার্থডে তে তোকে উইশ করার জন্য তোর বাসার সামনে মধ্যরাতে দাড়িয়ে থাকতো। কিন্তু তোকে ফোন করে বললে একটু বাইরেও আসতি না। তোর যা যা ভালো লাগে সেটা ও কিনে বাসায় রেখে দিছে, তুই যেগুলো ব্যবহার করে ফেলে দিতি সব কুড়িয়ে রাখছে ও। ও বলেছে যেদিন ওর ভালবাসার জয় হবে সেদিন তোকে ঐগুলো দিয়ে তোকে প্রপোজ করবে। যাই হোক এসব বলে এখন আর লাভ নেই। ভালো থাক, বিয়ে করে বরের সাথে সুন্দর জীবন কাটুক তোর এটাই দোয়া করি। (সজীব চলে গেলো)
,,
,,
সজীব বাইরে এসে অয়ন কে কল করে, অয়ন এর ফোন বন্ধ। সজীব ভাবলো হয়তো বাসায় চলে গেছে।
,,
পরদিন অয়ন এর বাসার লোক অয়ন কে খুঁজে পায় না। রাতেও সে বাসায় ফেরে নি। সজীব যখন জানতে পারে অয়ন কে কোথায়ও পাওয়া যাচ্ছে না তখন সে অনেক খোঁজ করে। কিন্তু কোথাও অয়ন কে খুঁজে পাওয়া যায় না।
,,
,,
সেদিন সন্ধ্যা বেলা..
ফাতেমার বিয়ে হয়ে যায়। বর এর সাথে দাড়িয়ে আছে ফাতেমা। এখন গাড়িতে উঠে রওনা দিবে। বাবা মা কে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে। হঠাৎ তার চোখ যায়, রাস্তার ফুটপাতের দিকে।
,,
সেখানে বসে আছে অয়ন, আর হাতের মোবাইল দিয়ে গাড়ি বানিয়ে খেলছে ভুমমমম ভুমমমম। অয়ন একবার ফাতেমার দিকে তাকালো। তখন অয়ন এর চোখে কি যে মায়া ছিলো সেটা শুধু ফাতেমাই বুঝতে পেরেছে। কারন তার আত্না কেঁপে উঠে।
,,
দাড়িয়ে বেশি সময় থাকতে পারে না ফাতেমা, কারন এখন তাকে যেতে হবে। সে গাড়িতে উঠলো, চোখ তার আটকে আছে অয়ন এর দিকে, অয়ন আবার মোবাইল দিয়ে গাড়ি খেলছে ভুমমম ভুমমমম। আর বলছে "আমি আর আমার পাখি ভুম যাবো ভুমমম।
,,
বর এর গাড়ি চলে যায়। সাথে সাথে অয়ন ও উঠে দাড়ায় মোবাইল টা সেখানেই রেখেই হাটতে শুরু করে।
পথে দেখা হয় সজীব এর সাথে।
সজীব দেখে বুঝতে পারে অয়ব আর স্বাভাবিক নেই। সজীব কে দেখা মাত্রই অয়ন বলছে..
-আই লাভ ইউ আত্না (অয়ন)
-বাসায় চল (সজীব)
-আগে লাভ ইউ বলো
-লাভ ইউ, চল বাসায় যাই
-চলো
,,
অনেক পাগলের ভালবাসা গুলো অপূর্ণতায় থেকে যায়। পাগল গুলো কি বোঝাতে চায় সেটা বুঝতে চায় না। ভালবাসার নীরবতা হয়তো একেই বলে। পাগল গুলোর ভালবাসা যদি বুঝতো হয়তো অনেক ভালবাসা খুঁজে পেতো। আর আজ এই পাগলটার জন্য দায়ী হয়তো তার অতিরিক্ত ভালবাসা। পাগল গুলোর ভালবাসা থেকে যায় গভীর নীরবতায়

,,
,,
,,
,,
,,
,,
,,
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,END,,,,,,,,,,,,,,,,,