তুমি দূরে যাও যদি
Write : Sabbir Ahmed
______________________
ফারহান আর দিয়ার দুই বছর সংসারের ইতি টানতে যাচ্ছে। আজ ফারহান এর বাসায় একটা আলোচনায় তাদের এই সংসার জীবনের ইতি ঘটবে। দিয়া তার বাবার বাড়িতে চলে যাবে। দুই পরিবারের কেউ চাচ্ছে না এই সম্পর্কটা আর সামনে এগোনোর। তবে একজন প্রাণপণে চেষ্টা করছে দিয়া কে আটকানোর, সে হলো সিয়াম। ফারহান এর ছোট ভাই সিয়াম। ফারহান এর থেকে তিন বছরের ছোট। সে তার ভাবিকে কিছুতেই যেতে দিতে চাইছে না। আলোচনায় বসার আগে সিয়াম ভাবির সাথে কথা বলার সুযোগ পায়।
,,
দিয়া সকাল সকাল ছাদে দাঁড়িয়ে দূর দৃষ্টিতে তাকিয়ে কি যেন ভাবছিলো। সিয়াম সেই সময় ছাদে গিয়ে দিয়াকে দেখে তার পেছনে গিয়ে দাঁড়ায় আর বলে..
-চলেই যেতে হবে (সিয়াম মন খারাপ করে)
-হ্যাঁ যেতে তো হবেই, তুমি তো সব জানো। (দিয়া)
-আমাদের ছেড়ে চলেই যাবেন?
-তো কি করবো? তোমার ভাইয়া তো আর আমাকে পছন্দ করেন না৷ উনি তো অন্য একটা মেয়ের সাথে রিলেশন এ জড়িয়েছেন। ইচ্ছে করে ঝগড়াঝাটি বাঁধিয়ে সংসার ভাঙানোর ব্যবস্থা করলেন
-....(সিয়াম শুধু দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে)
-আর সিয়াম আমি বুঝলাম না তুমি এভাবে দাঁড়িয়ে কান্না কেনো করতেছো? তোমার তো খুশি হওয়া উচিত, সকাল সকাল তোমাকে আর কেউ ঘুম থেকে ডেকে তুলবে না। অনেক বেলা করে ঘুমাতে পারবে
-আপনি থেকে যান না প্লিজ (সিয়াম কান্না করে)
-আরে বাচ্চাদের মতো করতেছো কেনো? এখানে থেকে সম্ভব না আমার।
-ভাইয়া তো আজ আসবে না, আজকে আপনার বাড়ি যাওয়া হবে না
-ফারহান আজ আসবে না?
-না, এক সপ্তাহ সময় লাগবে
-এক সপ্তাহ!
-হুমম
-বাপরেহহ, কষ্ট করে আরও সাতদিন এখানেই কাটাতে হবে
-এর মাঝে সব ঠিক হয়ে যাবে
-কিছুই ঠিক হবে না। আর ভালো কথা, আমি চলে যাবো সবাই যেখানে মেনে নিয়েছে সেখানে তুমি আমাকে রাখার জন্য উঠে পড়ে লেগেছো কেনো?
-জানি না
-এটা কেমন কথা?
-আপনি তো আমার বড়, আপনি বোঝেন না?
-হুমম বুঝি, ঐতো একটা ভালোবাসা কাজ করে। অনেকদিন একসাথে থাকলাম তাই তোমার মধ্যে একটু মায়া কাজ করতেছে। নতুন ভাবি আসলে তাকে পেয়ে সব ঠিক হয়ে যাবে
-নতুন নতুন করেন কেনো? আপনি থেকে যান না
-সেই পরিস্থিতি কি আর আছে? তোমার ভাইয়া আমাকে সাফ জানিয়েছে আমাকে নিয়ে আর সে সংসার করবে না। তোমার ভাইয়া যে আরেকজনকে পছন্দ করে আমার সাথে এই কাজ করতেছে এটাও তোমার পরিবারের সদস্যদের কাছে থেকে লুকিয়ে রাখছে
-আপনি সবাইকে বলেন না কেনো কথাটা?
-আগলা একটা ঝামেলা হবে। তোমার ভাইয়া যখন চাইছে তখন কিভাবে থাকি বলো? জোর করে কি এ সম্পর্ক টিকে থাকবে? এই দু বছরে তারে ভালোবাসছি, তার জন্য এটুকু কথা লুকাতেই পারি
-আর আমাকে যে ভালোবাসছেন আমার জন্য কিছু করতে পারেন না তাই না?
-কি করতে হবে তোমার জন্য?
-এখানে থেকে যাবেন
-আরে পাগল, তোমার ভাইয়া তো নতুন বউ আনবে। তো আমি কার কাছে থাকবো?
-আমার কাছে থাকবেন
,,
সিয়াম এর কথা শুনের দিয়ার চোখ কপলে উঠে গেলো। সিয়াম এর কথার সঠিক মানে সে বুঝতে না পেরে বলল....
-আমাকে কোথায় রাখবে বললে? (দিয়া)
-আমার কাছে (সিয়াম)
-তোমার ভাইয়ের সাথে তো আমার আর কোনো সম্পর্ক থাকছে না, তাহলে কিভাবে তোমার কাছে রাখবে
-আমি এই রাখার কথা বলিনি
-তাহলে?
-আমার বউ হয়ে থাকবেন
-কিহহহহ!!!!
-হুমমম
-এই ছেলে এই তোমার মাথা ঠিক আছে? আমি তো জানতাম তুমি ভালো ছেলে নেশা করো না। আজ সকাল সকাল নেশা করে আসছো?
-নাহহ আমি নেশা করে আসিনি। আমি নেশা করিও না৷ আমি সুস্থ মস্তিষ্কে বলছি, আমার বউ হয়ে থাকবেন...
,,
কথাটা শুনে দিয়া দ্রুত সেখান থেকে চলে গেলো বাসার মধ্যে। দিয়ার দ্রুত চলে যাওয়া দেখে সিয়াম ও একটু অবাক হয়। কারণ তার কাছে মনে হয়েছিলো দিয়া তাকে নিরাশ করবে না৷ এ দুবছর দুজনের মধ্যে অনেক মিল ছিলো। দিয়া এ বাড়িতে আসার আগে সিয়াম অনেক এলোমেলো ছিলো আর এখন সিয়াম একটা গোছানো ভদ্র ছেলে হয়ে গেছে। এমনকি সিয়ামের মাঝে অনেক পরিবর্তন ও এনে দিয়েছে।
,,
দিয়া রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। তারপর ফ্যান টা ছেড়ে বিছানায় গিয়ে বসে। সিয়ামের এমন কথা শুনে দিয়ার মাথা ঘুরছে। এরকম প্রস্তাব যদি সে বাড়িতে রাখে তাহলে, বাড়িতে আর পাড়া মহল্লায় বিশাল একটা কেলেঙ্কারি ঘটে যাবে। দিয়া মনে মনে ভাবলো যে কয়েকদিন সে এখানে থাকবে সিয়াম এর থেকে দূরে থাকবে। এ কথা ভাবতে দেড়ি দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ হতে দেড়ি হলো না৷ দিয়া দরজা খুলতে ভয় পাচ্ছে৷ তবুও খুলতে হবে৷ না হলে আবার বাকিরা কি না কি ভেবে বসে।
,,
দিয়া যা ভেবেছিলো তাই, সিয়াম দরজায় দাঁড়িয়ে।
-এখানে আসছো কেনো? কি চাও? (দিয়া)
-কথা আছে আপনার সাথে (সিয়াম)
-এখন এখানে এসব কথা বলা যাবে না। আর এখানে না শুধু। কোথাও এসব কথা বলা যাবে না
-নাহহ আমার বলতে হবে। না বললে আমি ঠিক থাকতে পারছি না
-তুমি পাগল হয়ে গেছে নাকি হ্যাঁ? তোমার আর আমার ভাইয়ের বিচ্ছেদ ঘটছে৷ আর তুমি উল্টা পাল্টা বলা শুরু করেছো
-আমি আপনাকে ভালোবাসি
,,
দিয়া কথাটা শোনা মাত্রই দরজা টা চটাস করে লাগিয়ে দিলো। আবার দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ। দিয়া দরজা খুলল..
-আপনি মেনে নিবেন না? (সিয়াম)
-তুমি যা করেছো, এজন্য তোমাকে মাইর দেওয়া বাধ্যতামূলক, আমার মাথা গরম করিয়ো না
,,
সিয়াম দিয়ার কথা শুনে না শোনার ভান করে রুমের ভেতরে ঢুকলো।
-তুমি বাইরে যাও (দিয়া)
-আমি এলোমেলো কিছু বলব না। আগে যেমন এসে গল্প করতাম, ওমন গল্প করবো
,,
দিয়া দরজা খোলা রেখে বিছানায় এসে বসে। আর সিয়াম সোফায় বসে আছে। সিয়াম প্রথমে বলা শুরু করলো...
-আপনি চলে গেলে তো আমি এলোমেলো হয়ে যাবো (সিয়াম)
-আবার! (দিয়া)
-আপনি গেলে আমার যে অসুবিধা গুলো হবে তার কথাই বলছি
-কিন্তু..
-না আমার কথা শোনেন আগে। আমাকে খারাপ ভাববেন না। আমি আপনাকে নিয়ে এরকম চিন্তা কখনো করিনি। আমার মাথায় কখনো আসেনি। কিন্তু আপনার চলে যাওয়ার কথা শুনে আমার মাথা এলোমেলো হয়ে গেছে। আমার এরকম করার কারণ আপনাকে শুধু আটকানো
-আমি যে তোমার গায়ে এখনো হাত তুলিনি, এটা তোমার কপাল। তুমি ছোট মানুষ ভুল করতেই পারো। তাই বলে আমি পশ্রয় দিতে পারি না৷ এসব কথা এখন যা শুনলাম এই পর্যন্তই। নেক্সট টাইম মুখ দিয়ে বের করবা না। এখন আমার রুম থেকে যাও
,,
সিয়ান কোনো কথা না বলে চুপচাপ রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। দিয়া সিয়াম এর এসব কাজ দেখে
অবাক হয়ে গেলো। ছেলেটা কথা বলার সময় একবারও দিয়ার দিকে তাকয়নি। সোফায় বসে মাথা নিচের দিকে দিয়ে কথাগুলো বলেছিলো।
সিয়াম রুম থেকে চলে যাওয়ার পর দিয়া আবার দরজা লাগিয়ে শুয়ে পরে। কি এক উভয়সংকটে পড়লো সে। এমনিতে তার দুঃখের সময়, এর মধ্যে সিয়ামের এলোমেলো সব কথা।
না পারছে নিজের কান কে বিশ্বাস করতে, না পারছে সিয়াম কে বিশ্বাস করতে। সিয়াম যে তাকে নিয়ে এসব ভেবে বসবে এটা কল্পনার ও বাইরে ছিলো। কারণ সিয়াম এরকম টাইপের ছেলেই না৷ এসব কথা চিন্তা করতে করতে দিয়া ঘুমিয়ে যায়।
,,
কিছুদিন পর দিয়া এই বাড়ি থেকে চলে গেলেও, বাড়ির সবার ব্যবহার দেখে বোঝার সাধ্য নেই কিছুদিন পর এদের ছেড়ে দূরে থাকতে হবে দিয়াকে। এক ফারহান বাদে সবাই দিয়ার সাথে খুব ভালো সম্পর্ক। সবাই দিয়াকে খুব পছন্দ করে। তারাও অনেক চেষ্টা করেছে এমনটা যেনো না ঘটে। কিন্তু সিয়াম উঠে পরে লেগেছে দিয়াকে সড়ানোর জন্য। দিয়াকে মানসিক টরচর থেকে বাঁচানোর জন্য এই বাড়ির সদস্য গুলো আর কিছু বলেনি এটা নিয়ে।
,,
এখনও দিয়া পূর্বের দিনগুলোর মতো সবার সাথে কথা বলে। তবে দু একজন কথা বলা কমিয়ে দিয়েছে। সেটাতে দিয়া কষ্ট পেলেও নিজের মধ্যে লুকিয়ে রেখে সবার সাথে সমান তালে কথা বলে।
,,
দিয়ার কথা একটাই বিচ্ছেদ হবে তাদের দুজনের মধ্যে হোক। কিন্তু দু পরিবারের যে সম্পর্ক সেটা থাকুক। এখানে রাগারাগি, ঝগড়াঝাটি অন্যদের মাঝে যেন না হয় দিয়া এমনটাই চায়।
,,
ঘন্টা দুয়েক পর দিয়ার ঘুম ভাঙে সবার চেঁচামেচিতে। কি হয়েছে সেটা দেখার জন্য রুমের বাইরে যায়। বড় রুমে এসে দেখে সিয়ামকে ঘিরে সবাই বসে আছে।
।।
।।
তুমি দূরে যাও যদি
Part : 2
Write : Sabbir Ahmed
___________________________
বড় রুমে এসে দেখে সিয়ামকে ঘিরে সবাই বসে আছে। সিয়ামের হাতে ব্যান্ডেজ করা। দিয়া সবার কথা শুনে বুঝতে পারলো সিয়াম একটা ছোট্ট এক্সিডেন্ট করেছে। দিয়া এগিয়ে গিয়ে সিয়ামকে বলে....
-কিভাবে হলো এটা? (দিয়া)
-রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। একটা রিক্সা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পেছন থেকে আমাকে ধাক্কা দেয়। হাত টা কেটে গেছে আর দু এক জায়গায় ব্যাথা পেয়েছি (সিয়াম)
,,
বাকি সবাই বলাবলি করছিলো রিকশাওয়ালা কে ধরবে। কিন্তু সিয়াম বলে দেয় রিকশাওয়ালার কোনো দোষ নেই, সেই ব্যাটার ও অনেক ক্ষতি হয়েছে। একে একে সবাই উঠে চলে গেলো। এখন সিয়াম এর পাশে বসে আছে দিয়া।
,,
-আর কোথায় ব্যাথা পেয়েছো? (দিয়া)
-পায়ে একটু আর পিঠে(সিয়াম)
-এখানে বসে না থেকে রুমে চলো শুয়ে থাকবে
,,
দিয়া সিয়ামের এক হাত ধরে সিয়ামের রুমে নিয়ে যায়। সিয়াম এখন বিছানায় শুয়ে আছে। দিয়া একটা চেয়ার টেনে সিয়াম এর মাথায় কাছে বসলো। এর আগেও সিয়াম যখন অসুস্থ থাকতো দিয়া এসে এভাবেই সময় দিতো।
-আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেই, আর তুমি ঘুমিয়ে যাও (দিয়া)
-নাহহ হাত বুলাতে হবে না৷ আপনি এমনি বসে থাকেন (সিয়াম)
-আচ্ছা তাহলে মন দিয়ে আমার কথা শোনো
-জ্বি বলেন
-ঐগুলো নিয়ে আর পাগলামো করো না৷ তুমি তো এখনও ছোট তাই বুঝতে পারছো না কি বলেছো তুমি আমাকে। আর কখনো ওমন বলবে না। তুমি ছোট তাই আমি তোমাকে মাফ করে দিয়ে এই যে তোমার কাছে আসছি। তোমাদের বাড়িতে থাকবোই আর মাত্র কটা দিন৷ সবার যেমন প্রিয় ছিলাম, তেমনই থাকতে দাও
-হ্যাঁ সবার প্রিয় হয়েই থাকবেন। তবে আমি যা বলেছি সেটাতে আমি অটুট। আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি, আর সেটা আপনাকে জানিয়েছি
-আবার বলছো এসব কথা!
-এটা সত্য
-এটা চরম পর্যায়ে তোমার বোকামি।
-নাহহ এটা ভালোবাসা
-তুমি থাকো আমি যাই
-ইচ্ছে হলে একটু থাকতে পারেন
-তুমি যে ব্যবহার দেখাচ্ছো, আমাকে সম্মান দিচ্ছো না, কোন মুখ নিয়ে থাকবো
-আচ্ছা আপাতত এসব কিছু বলব না
-হুমমম
-পরে কিন্তু ঠিকই বলব
-সে আমি জানি
-আচ্ছা একটা কথা বলি??
-হ্যাঁ বলো
-আপনি কি আমার ভালোবাসা কখনো গ্রহণ করবেন না?
-গ্রহণ করা তো দূরে থাক, এটা নিয়ে আমি ভাববোও না
,,
হঠাৎ করে সিয়াম উঠে দাঁড়ালো। দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে বলল..
-আপনি এখন আসতে পারেন (সিয়াম)
,,
দিয়া কিছু বলল না আর সিয়ামকে, উঠে চলে গেলো বাইরে। দিয়া চলে যাবার পর সিয়ান দরজা লাগিয়ে শুয়ে পড়লো। এদিকে দিয়ার বাবা এসেছে দিয়াকে দেখতে। বাবার সাথে দেখা করে কথাবার্তা বলে জানিয়ে দেয় তার বরের আসতে লেট হবে, তাই ডিভোর্স এর কাজ টা কিছুদিন পরে করতে।
,,
আজকেও দিয়ার বাবা দিয়াকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো। দিয়া যেতে রাজি হয়নি, সে তার বাবাকে বলে দেয় শেষ দিন পর্যন্ত সে এখানে থাকবে।
,,
সেদিন দিয়ার বাবা চলে যায়, আর বলে যায় এবার যেদিন আসবে সেদিন তাকে নিয়েই যাবে, যদি দিয়ার বরের আসার ডেট পিছিয়ে যায় তবুও নিয়ে যাবে।
,,
বাবার কথা শুনে মন খারাপ করে দিনের বাকি সময় টুকু বিছানায় শুয়ে কাটিয়ে দেয় দিয়া। এই বাড়ির প্রতি তার খুব টান। নিজের ভালোবাসাকেও চোখের সামনে শেষ হতে দেখেছে, আগে তার বর কল করে খোঁজ খবর নিতো এখন বেশ কয়েকদিন হলো আর কথাই হয় না।
,,
এদিকে সিয়াম দিয়ার উপর অভিমান করে দুদিন তার সামনে যায়নি। দুদিন পর সন্ধ্যায় বাসার ছাদে দেখা হয় দুজনের। আসলে সিয়াম ইচ্ছে করেই এই সময়ে ছাদে আসছে দেখা করার জন্য৷ প্রতিদিন এই সময়ে ছাদে আসার অভ্যাস দিয়ার। আজ সিয়াম কিছু ফুল নিয়ে আসছে। সেগুলো দুহাতে রেখে হাতগুলো পেছনো নিয়ে দিয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
,,
দিয়া সিয়ামকে দেখে বলে..
-কেমন আছো?? (দিয়া)
-জ্বি ভালো (সিয়াম)
-তোমাকে দুদিন দেখিনি, কোথায় ছিলা?
-সকাল সকাল বাইরে বের হয়েছি, আর অনেক রাত করে বাসায় ফিরেছি তাই দেখেননি
-মা তো তাই বলল, কি কাজে ব্যস্ত ছিলা?
-জানি না, এই যে ফুল গুলো, আপনার জন্য(সিয়াম ফুলগুলো সামনে উঁচিয়ে ধরলো)
,,
দিয়া হাতে ফুল গুলো নিয়ে সিয়াম কে ধন্যবাদ দিলো।
-এগুলো চুরি করে এনেছো নাকি টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে আসছো? (দিয়া মজা করার জন্য বলল)
-দুটোই(সিয়াম)
-কিহহহ!
-হ্যাঁ গোলাপ দুটো কিনে নিয়ে আসছি, আর এই যে সাদা ফুলগুলো নাম জানি না, এগুলো পাশের বাসার বাগান থেকে নিয়ে আসছি
,,
দিয়া সাথে সাথে সিয়াম এর কান ধরলো...
-শয়তান, চুরি করার রোগটা তোমার গেলো না, এই ফুল আমি নিবো নাহহ নিয়ে যাও (দিয়া)
-গোলাপ দুটো রাখেন, বাকিগুলো ফেরত দেন
-নাহহ থাক
-কেনো? দিয়ে দেন
-উহুমমম, আর যেন চুরি করো না
-আপনার জন্যই তো, আপনার দোষ সব
-মানে! চুরি করো তুমি দোষ দাও আমার!
-আপনাকে ফুল দিতে ইচ্ছে করে, বিশেষ করে পাশের বাসার বাগান থেকেই দিতে ইচ্ছে করে
-হইছে হইছে তোমার রেডিও থামাও, চলো বাসার ভেতরে যাই
-নাহহ দুদিন কথা হয়নি, একটু কথা বলি?
-আচ্ছা বলো
-এভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলব না, দোলনায় দোল খেতে খেতে বলি
-তোমার সাথে দোলনায় দোল খাওয়ার সম্পর্ক আমার না, দাঁড়িয়ে আছি বলো, না হলে চলে যাবো
-নাহহহ ঠিক আছে এভাবেই বলি। আচ্ছা আপনি আমাকে এ দুদিন মিস করেছেন?
-আমি তোমাকে মিস করতে কেনো যাব?
-আপনি তাহলে আমাকে ভালোবাসেন না তাই না?
,,
সিয়াম এর কথায় রেগে দিয়া সিয়ামের দুগালে সজরে দুটো থাপ্পড় মেরে ছাদ থেকে নেমে গেলো। সিয়াম বুঝলো দিয়া আগের থেকে কঠোর হয়েছে। এখন তার কথা শুনতে ইচ্ছুক না দিয়া। এটা বুঝতে পেরে সিয়াম জেদ করলো সে দিয়ার পিছু ছাড়বেই না।
,,
যেই ভাবা সেই কাজ পিছু নিলো দিয়ার। বাসার মধ্য এসে দিয়া যেখানে যায় সিয়াম সেখানেই হাজির। বাড়ির কয়েকজন ব্যাপার টা খেয়াল করলো, বিশেষ করে সিয়াম এর মা। এমন অবস্থা দেখে সিয়ামকে ডেকে নিয়ে বলল...
-তুই এভাবে বৌমার পিছু লেগে আছিস কেনো? বৌমা তো তোর উপর বিরক্ত। আর দুদিন পর সে চলে যাবে, তুই ওরকম করিস না (সিয়াম এর মা)
-আর কয়েকদিন থাকবে, তাই তো এমন করছি (সিয়াম)
-মেয়েটার মনের অবস্থা ভালো না, তুই এমন করিস না তো
-তোমার কথা আমি শুনছি না
,,
সিয়াম আবার দিয়ার পিছু পিছু, সবাই এই সিন দেখে হাসি হাসি শুরু করেছে৷ কেউ বুঝতে পারছে না সিয়াম কি কারণে দিয়ার পিছু নিয়েছে সিয়াম। এদিকে সবার সামনে সিয়ামকে কিছু
বলতে পারছে না দিয়া। আবার যদি আড়ালেও বকা ঝকা করলে হয়তো আরও কিছু করে বসবে৷
পরদিন ও একই অবস্থা। সিয়ামের এমন বিরক্তিকর আচরণ দেখে দিয়া নিজের বাসায় চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আর সেটা একেবারেই। মোবাইল করে তার বাবাকে আসতে বলে।
,,
পরদিন বাসার সবাইকে কাঁদিয়ে দিয়া এ বাসা ছেড়ে চলে যায়। দিয়া যাওয়ার সময় সিয়াম নীরব দর্শক এর মতো দিয়ার চলে যাওয়া দেখছিলো।
,,
দিয়াও শেষ সময়ে সিয়ামকে কোনো কিছু বলেনি। তার কয়েকদিন পরেই দিয়ার ডিভোর্স হয়ে যায়। দিয়ার চলে আসা থেকে ডিভোর্স এর দিন পর্যন্ত সিয়াম দিয়ার কোনো খোঁজ খবর নেয় নি।
,,
ঠিক পরদিন মিষ্টি নিয়ে দিয়ার বাড়িতে হাজির সিয়াম। সে দিয়ার বাসায় গিয়ে বলে তার মা নাকি দেখতে আসতে বলেছে তাই সে দেখতে এসেছে। দিয়া সিয়ামকে এই বাসায় দেখে চমকে যায়৷
এদিকে দিয়াকে দেখে সিয়াম ও চমকে যায়, দিয়া কান্না করে চোখের নিচে কালো দাগ ফেলেছে।
,,
সিয়াম বাসার সবার সাথে কথা বলে দিয়ার দিকে এগিয়ে যায়...
-কেমন আছো? (দিয়া প্রথমে বলে)
-কেমন থাকতে পারি, সেটা তো জানেন। রুমের ভেতরে চলেন কথা আছে (সিয়াম)
-আচ্ছা আসো
,,
দিয়ার রুমে যাওয়ার পর..
-মা কেমন আছে? (দিয়া)
-হ্যাঁ ভালো (সিয়াম)
-আর সবাই?
-সবাই ভালো
-দাঁড়িয়ে কেনো বসো
-চোখের এ অবস্থা করেছেন কেনো? মুখটা মলিন কেনো? হাসি কই মুখে (সিয়াম রেগেমেগেই বলল)
-তুমি জোরে কথা বলতেছো কেনো?
,,
সিয়াম আর কোনো কথা না বলে দিয়ার কাছে গিয়ে সোজা তার মাজায় হাত রেখে দিয়েকে কাছে টেনে নিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল...
-আজ কিছু বলার নেই৷ আপনার মুখে হাসি ফোটানোর দায়িত্ব টা আমি নিলাম। আমি কল দিবো রিসিভ কইরেন বাই.. (দিয়া কিছু বলার আগেই সিয়াম সেখান থেকে বিদায় নিলো)
।।
।।
তুমি দূরে যাও যদি
Part : 3
Write : Sabbir Ahmed
___________________________
-আজ কিছু বলার নেই। আপনার মুখে হাসি ফোটানোর দায়িত্ব টা আমি নিলাম। আমি কল দিবো রিসিভ কইরেন বাই... (দিয়া কিছু বলার আগেই সিয়াম সেখান থেকে বিদায় নিলো)
,,
"এই ছেলেটা আমাকে তো সত্যি সত্যি বিপদের মধ্যে ফেলে দিবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এর একটা বিহিত করতে হবে" দিয়া শুয়ে থেকে কথা গুলো ভাবছিলো। তার মনের অবস্থা ভালো না, শুধু তার না বাসার সবার মনের অবস্থা খারাপ। তার মাঝে সিয়াম আজকে যা করলো তা অনেক বেশি হয়ে গেছে।
,,
দিয়ার মনের অবস্থা খারাপ দেখে তার মা কোথাও ঘুরে আসতে বলল, কিন্তু দিয়া বলল তার নাকি রুমেই ভালো লাগে। এখন বাইরে কোথাও যেতে সে ইচ্ছুক না। আর আত্মীয় স্বজনের বাড়ি তো ভুলেও যাওয়া যাবে না, তাদের আলোচনা সমালোচনায় দিয়ার মন আরও খারাপ হয়ে যাবে।
,,
সন্ধ্যায় কল করে সিয়াম,
দিয়া কল রিসিভ করেই...
-এটাই তোমার শেষ কথা বলা, আমি ফোন ব্যবহার করব না আর (দিয়া)
-কি বলেন এগুলা! (সিয়াম)
-যা বলেছি শুনতে পেয়েছো
-আপনি আমার উপর ক্ষেপে আছেন কেনো??
-তুমি চলে যাওয়ার আগে আমার সাথে ওটা কি করলে?
-কি করলাম?
-আমাকে স্পর্শ করেছো। তাও কোথায় ভাবা যায়! ছিঃ
-আরে আমি কই স্পর্শ করলাম
-তোমার ঠোঁট আমার কপালে লাগালে কেনো? আর মাজায় কেনো হাত রাখলে?? তুমি জানো কতটা খারাপ লাগছে আমার
-সরি
-এমন পাগলামি কেনো করতেছে বলো তো
-ঐ যে ভালোবাসি, ভালোবাসার জন্য
-কচু ভালোবাসো তুমি,
-না সত্যি ভালোবাসি আমি
-শোনো আর কল করে লাভ হবে না, ফোন অফ থাকবে
-আপনার সাথে কথা না বললে, আমি ঠিক থাকতে পারবো না, আমি প্রতিদিন তাহলে আপনার বাড়ি যাব
-নাহহ এমনটা করা যাবে না
-তাহলে কল দিব
-আচ্ছা ঠিক আছে, ফারহান কেমন আছে?
-জ্বি ভাইয়া ভালো আছে
-বিয়ের কথা কিছু বলেছে?
-শুনলাম সামনে সপ্তাহেই বউ নিয়ে আসবে
-ওহহহ
-আচ্ছা তাহলে ফোন রাখো
-নাহহ
-কেনো?
-কথা বলব
-আচ্ছা কি বলবা বলো
-আমি আপনাকে বিয়ে করবো
-এটা ছাড়া কথা নেই?
-না
-...(দিয়া লাইন কেটে দিলো)
,,
সিয়াম আবার কল করে দেখলো দিয়া ফোন অফ করে রেখেছে।
মন খারাপ করে সিয়াম ঘুমিয়ে যায়।
আর দিয়ার চিন্তায় ঘুম চোখ থেকে উধাও। দিয়ার থেকে বয়সে ছোট্ট ছেলেটা তাকে ভালোবাসে, আর সেটা তাও তার ভাইয়ের সাবেক স্ত্রী কে। যদি বিয়ে হয়ে যায় এই বউ নিয়ে সেই বাড়িতে সংসার করতে হবে। এমনটা ভাবার পর দিয়া নিজে নিজেই বলে উঠলো " ছিঃ ছিঃ এসব আমার মাথায় কি ঘুরছে। সিয়ামকে একটুও পশ্রয় দেওয়া যাবে না, পারলে আমি আড়াল হবো।"
,,
নানান চিন্তা নিয়ে দিয়া ঘুমাতে যায়।
পরদিন সকাল বেলা কারও স্পর্শে দিয়ার ঘুম ভাঙে। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে সিয়াম তার গাল টিপে ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করছে। দিয়া উঠেই একটা চর বসিয়ে দিলো।
,,
চর খেয়ে সিয়াম একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। তবে মন খারাপ করলো না মিটিমিটি হাসলো।
-তুই আমাকে ভালো বাসিস না, আসলে তোর চরিত্র খারাপ। একটা মেয়ের রুমে অনুমতি না নিয়ে ঢুকিস (দিয়া)
-আপনি তো ঘুমিয়েছিলেন (সিয়াম)
-এজন্য তো রুমে ঢোকা যাবে না, আমি কোন অবস্থায় থাকি না থাকি,
-আচ্ছা সরি, মা আপনাকে দেখতে আসছে। সাথে আমাকেও নিয়ে আসছে
-হ্যাঁ আর তুই সুযোগ টা পেয়ে আমার রুমে এসে সুযোগ নিচ্ছিলি
,,
দিয়ার কথা শুনে সিয়াম একটা চেয়ার টেনে বিছানার পাশে বসলো। তারপর বিছানায় মাথা নিচের দিকে রেখে ফুঁপিয়ে কান্না করতে করতে বলল..
-আমি এখন বাইরে যেতে পারবো না, আপনি মায়ের সাথে দেখা করে আসেন (সিয়াম)
,,
সিয়াম এর কান্না দেখে দিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বাইরে চলে গেলো দেখা করতে। মায়ের সাথে দেখা করে দিয়া যখন রুমে আসলো তখন দেখলো সিয়াম সেই আগের অবস্থায়ই আছে। দিয়া বলল...
-মা চলে যাবে এখন, আপনাকে ডাকছে (দিয়া)
,,
সিয়াম মাথা উঠায়, চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে...
-আপনার শরীর কে আমি ভালোবাসি না, আমি আপনাকেই ভালোবাসি। আপনার রুমে আসতে আমার কোনো পারমিশন লাগবে না। কারণ পুরো আপনিটাই আমার। আর আমি রুমে এসে আপনার ঘুমন্ত চেহারা টা দেখে আর ঠিক থাকতে পারিনি, তাই গাল টেনে একটু আদর করেছি, আর আপনার ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করেছি
-এমনি ভাঙানো যেতো না?
-ঘুমন্ত অবস্থায় আপনি বেশি সুন্দর, তখন যদি না স্পর্শ করতাম আফসোস থেকে যেতো
-তোমার মুখে কি কিছু আটকায় না?
-আচ্ছা তারপরও সবকিছুর জন্য সরি
-সরি বলে আর কি হবে? যা করার তা তো আগেই করেছো
-তাহলে আবার একটু..
-কি?
-গাল টেনে দেই
-এই শয়তান এই
,,
সিয়াম এক দৌড়ে বাইরে চলে এলো। রুমে দিয়া হাসছে। দিয়া এটাও বুঝতে পারছে যে তাকে ভালো থাকার জন্য সিয়াম এমন কাজ করছে। সিয়ামকে বাড়তে দেওয়া যাবে না, তাহলে বেশি কিছু করে ফেলবে, তাই সিয়াম এর সামনে কড়া মেজাজই থাকে দিয়া।
,,
সিয়াম বাড়ি গিয়ে আবার আবার কল করে দিয়াকে...
-আবার কি জন্য কল করেছো? (দিয়া)
-আপনার কণ্ঠ শুনতে ইচ্ছে করলো তাই কল করেছি (সিয়াম)
-আমার কাজ আছে, পরে কথা বলব
-পরে কখন?
-রাতে
-আচ্ছা চলেন ঘুরতে যাই
-কোথায়?
-দূরে কোথাও
-তুমি নিয়ে যেতে পারবে?
-আপনাকে নিয়ে হাজার মাইল পারি দিতে পারবো
-কবি কবি ভাব শুরু হইছে দেখছি
-ঐ যে মনের মধ্যে ভালোবাসা প্রবেশ করেছে তো তাই
-পরের স্ত্রীকে ভালোবাসা তাই না?
-আপনি এখন কারও স্ত্রী না, আপনি আমার বুঝলেন
-না বুঝিনি, শোনো তোমার সাথে এই ব্যাপারে একটা সমাধানে আসতে হবে, রাতে তাহলে বলব নি
-নাহহ এখন
-আচ্ছা ঠিক আছে। শোনো তাহলে তুমি তো বলছো তুমি আমাকে ভালোবাসো?
-হুমম সত্যি ভালোবাসি
-বিয়ে তো করবে তাই না?
-আপনি যেদিন বলবেন সেদিন-ই
-আমি তোমার সাথে কোথায় থাকবো?
-আমার বাসায়
-আমি ঐ বাসায় তোমার ভাই এর বউ হয়ে গিয়েছিলাম, এখন আবার তোমার বউ হয়ে যাবো। কেমন দৃষ্টিকটু দেখায় না? আর বড় কথা হলো আমি তোমাকে ওভাবে পছন্দ করিনা।
-পছন্দ করেন না, করবেন একসময়
-তুমি যেমনটা ভাবছো, তেমনটা কোনোদিন হবে না। আমি আর কখনো বিয়েতে বসব না৷ তুমি এসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো
-তা আপনি কি করবেন শুনি?
-জব করব, ঘুরবো। মন ভালো রাখতে যেটা করা দরকার সেটাই করব
-আমি আপনাকে ভালো রাখব, আপনি ওগুলো বাদ দিয়ে আমার কাছে থেকে যান
-না, এটাই শেষ কথা সিয়াম। এরপর আর কোনো কথা বলো না
-আপনি যদি আমার না হন, তাহলে আমি কোনোদিন বিয়ে করবো না
-এটা তোমার আবেগ
-আবেগ না, আমি আপনার ভালোবাসার অপেক্ষায় থাকব
-লাভ হবে না
-আমাকে রাগাবেন না
-রাগলে কি করবে?
-যা মন চায় তাই করবো
-ইহহহ আসছে। তোমার কান্ড কারখানা দেখলে হাসি পায়, আবার মনে দুঃখ ধরে। কি এমন দেখে যে আমার ভূত তোমার মাথায় ঢুকলো
-আমি নিজেও জানি না
-তো কে জানে?
-আমার মন জানে, কিন্তু তার থেকে আমি কোনো উত্তর পাই না
-ওরে ওরে কি আবেগি মানুষ রে
-আমি তোমাকে খুব ভালো রাখব, তুমি আমার হয়ে যাও প্লিজ
-তুমি আমাকে তুমি করে বলতেছো! এই শয়তান চুপ করবে
-তুমি আমার হলে চুপ করবো
-ফোন রাখো
-নাহহ
-আচ্ছা রাতে কল দিয়ো এখন তো রাখো
-আচ্ছা মিস ইউ
-আবার!
।।
।।
তুমি দূরে যাও যদি
Part : 4
Write : Sabbir Ahmed
____________________________
-আচ্ছা রাতে কল দিয়ো এখন তো রাখো (দিয়া)
-আচ্ছা মিস ইউ (সিয়াম)
-আবার!
,,
সিয়াম ওপাশ থেকে হাসলো। দিয়া কল কেটে দিয়ে বিড়বিড় করে বলল
"এর থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দূরে যেতে হবে। না হলে কপালে দুঃখ আছে"
,,
দিয়া বাসার মধ্যে সারাদিন একটা না একটা কাজে ব্যস্ত থাকেই। দুঃখ ভোলার জন্য ব্যস্ততা যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আজ কাজ শেষে মায়ের সাথে একটু গল্প করতে বসে। মা তার মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছিলো, তখন দিয়া বলল..
-ও মা (দিয়া)
-বল (মা)
-আমি এখানে থাকব না
-কোথায় যাবি?
-দূরে কোথাও পাঠিয়ে দাও, এখানে ভালো লাগছে না
-আমি তোর মনের অবস্থা টা বুঝতে পারছি। তোর জীবনে এমনটা ঘটবে এটা কল্পনাও করিনি। আর তুই এতো নম্র ভদ্র তাও তোর কপালে এমনটা ঘটলো
-মা, যা ভাগ্যে লেখা ছিলো সেটাই হয়েছে। আমি ভালো হলেই কি, আর খারাপ হলেই কি। হতেও তো পারে আমার জীবনে আরও ভালো সময় আসবে, তাই এমনটা হয়েছে
-তুই নিজেকে ভালো সামলে নিস সব দুঃখ থেকে। এই গুণ টা তোর জীবনে দারুণ কাজে দিলো
,,
দিয়া মুচকি হেসে বলল..
-আমার মা শিখিয়েছে সব (দিয়া)
-এই গুন টা আমার মধ্যে নেই (মা)
-আমি যে দেখি
-কই না তো
-আচ্ছা শোনো, আমাকে কোথায় পাঠাবে সেটা বলো
-কোথায় যাবি বল
-দেশের বাইরে গেলে কেমন হয়?
-বেশি দূরে হয়ে যায়, এতদূর তো পাঠানো যাবে না। তার চেয়ে ভালো তুই কোনো আত্মীয়ের বাড়ি যা
-মা তুমি জানো এই অবস্থায় অন্য কারও বাড়ি যাওয়া যাবে না৷ আমি সবার থেকে দূরে থাকতে চাইছি
-সেরকম টা কিভাবে হবে? তুই কোথাও ঘুরতে যেতে চাইছিস?
-হ্যাঁ সেটা হলেও মন্দ হয় না
-কার সাথে যাবি?
-বাবা আছে, ভাইয়া আছে
-তাদের বছরে একদিন সময় হয় না, পরিবারে সময় দেওয়ার, তারা তোকে নিয়ে ঘুরতে যাবে?
-তাহলে আর কি? রুমে গিয়ে বসে থাকি (দিয়া উঠে চলে যেতে লাগলো)
-এই দাঁড়া, তেল দেওয়া শেষ হয়নি তো
-লাগবে না তুমি দাও
,,
দিয়া রুমে এসে মোবাইল টা হাতে নিলো। বেশ কয়েকটা কল এসেছে, সবগুলো কল করেছে সিয়াম।
দিয়া সিয়াম কে কল না করে এফ বিতে গিয়ে গিয়ে সময় কাটাতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর সিয়াম আবার কল করলো। দিয়া ফোন পেয়ে রিসিভ না করে ভাবতে লাগলো। ছেলেটাকে এবার ঠিক মতো বকতে হবে, না হলে শুধরাবে না।
,,
দিয়া কল ধরে চুপ করে রইলো।
-হ্যালো (সিয়াম)
-হুমম (দিয়া)
-কি করেন?
-বসে আছি (একটু কড়া গলায়)
-কোনো কারণে রেগে আছেন?
-তোকে সেটা বলতে হবে?
-আমি তো বলতে বলিনি
-জানতে তো চাইছিস
-এতো রেগে কথা বলছেন যে
-তোর সাথে আর কিভাবে কথা বলব? এর থেকে ভালো ব্যবহার তুই পাবি না
-শেষ যখন কথা বললাম, ভালো করেই তো তখন কথা বললেন
-....(দিয়া চুপ)
-আপনার কোনো কিছুই আমি বুঝতেছি না
-তোর কিছুই বুঝতে হবে না। ফালতু ছেলে একটা। বড়দের সন্মান দিতে জানিস না। তোরে তো ভালো মনে করে স্নেহ করতাম। কিন্তু তুই কি করলি? সুযোগ পেয়ে আমার পিছু লাগা শুরু করলি। তবুও তোকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম তাও বুঝলি না। আমার মনের অবস্থা বুঝেও তুই এরকম করেছিস। শোন তুই আর আমাকে কল দিবি না...(দিয়া কল কেটে দিলো)
,,
সিয়াম আর কল করলো না। নিজের রুমে বসে ভাবতে লাগলো দিয়া হঠাৎ এতো রেগে গেলো কেনো তারউপর। সেদিন আর কল দিয়ে ডিস্টার্ব করলো না সিয়াম।
পরদিন সকাল সকাল দিয়ার বাড়ির রাস্তায় সিয়াম হাজির। সিয়াম দিয়াকে কল না দিয়ে ম্যাসেজ করলো "বাইরে আসেন, আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি"
,,
ঘন্টা খানেক অপেক্ষা করার পর সিয়াম রেসপন্স পেলো।
-সরি (দিয়া)
-আপনাকে দেখতে ইচ্ছে করছে (সিয়াম)
-আবার বেয়াদবি শুরু করছিস
-হুমম শুরু করেছি বাইরে এসে শাশন করেন
,,
দিয়া আবার রেগে গিয়ে কল করলো..
-এই তুই বাসায় যা, রাস্তায় যেন না দেখি (দিয়া)
-আপনাকে না দেখে যাবো না (সিয়াম)
-আমি রেগে গেলে কিন্তু...
-যা ইচ্ছে করবেন, তবুপ আমার সামনে আসেন। আমি জানি সামনে থেকে আপনি আমায় বকা দিতে পারবেন না
-এখন সামনে পাইলে তোরে থাপ্পড়াইতাম
-আমি তাহলে বাসার মধ্যে আসি
-আবার উল্টা পাল্টা কথা বলিস
-আপনাকে একটু দেখবো
-না
-একবার দেখেই চলে যাবো
-ফোন রাখলাম
-প্লিজ একবার দেখবো
-না
-আপনাকে না দেখা পর্যন্ত আমি এখান থেকে যাবো না
-...(দিয়া কোনো উত্তর না করে কলটা কেটে দিলো)
,,
আরও এক ঘন্টা পার হয়ে গেলো সিয়াম সেখানেই একটা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। দিয়ার রুম থেকে বাড়ির সামনের রাস্তা টা দেখা যায় না। তবে বাবার রুম থেকে দেখা যায়। তার বাইরে যেতেও ইচ্ছে করছে। কি করবে সে বুঝতে পারছে না, তার মন বলছে সিয়াম বাইরে সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে।
,,
আরও কিছুক্ষণ পর তার বাবার রুমের জানালা দিয়ে দেখতে পেলো সিয়াম চা খাচ্ছে সেই দোকানে বসে।
,,
দিয়া তার রুমে এসে কল করলো সিয়াম কে...
-এখনো যাস নি কেনো? (দিয়া)
-আপনাকে দেখিনি তো (সিয়াম)
-তুই বাসায় যা
-উহুমমম
-তাহলে বসে থাক
-আচ্ছা
,,
দিয়া কল কেটে দিয়ে স্থির হয়ে যেন বসতেই পারছিলো না, কিছুসময় পর আবার কল করে..
-তুই কি এখনো আছিস দোকানের সামনে? (দিয়া)
-হুমমম (সিয়াম)
-আমি বাসার গেটে কয়েক সেকেন্ড এর জন্য দাঁড়াবো। তুই দেখেই চলে যাবি
-আচ্ছা, কয়েক সেকেন্ডই যথেষ্ট
-হুমমমম
,,
দিয়া তাদের বাসার গেটের সামনে যেতেই সিয়াম এর চোখে চোখ পড়লো। সিয়াম দিয়াকে দেখে মুচকি হাঁসলো। সিয়ামের হাসি দেখা মাত্রই দিয়া বাসার মধ্যে চলে গেলো। আর সিয়াম খুশি হয়ে দিয়াকে কল করলো..
-এভাবে প্রতিদিন একবার দেখা দিলেই হবে (সিয়াম)
-নির্লজ্জ (দিয়া)
-আপনার জন্য
-বেহায়া, লম্পট
-এগুলো আপনার জন্যই
-ফোন রাখ
-রাতে কল দিবো কিন্তু রিসিভ কইরেন
-...(দিয়া নিজে থেকে কল কেটে দিলো)
,,
দিয়া আবার ভাবতে লাগলো "এই ছেলেকে তো সামলানো যাচ্ছে না। এই যে বকা বকলাম তবুও কাজ হচ্ছে না। এর জন্য আমার চিন্তা টা বেড়েছে। যদি কিছু একটা করে বসে, মান সম্মান তো যাবেই, সাথে দুই পরিবারের ভালো সম্পর্ক টাও শেষ হয়ে যাবে।
,,
সিয়াম এর প্রতিদিন এই দেখা করার রুটিন চলতে থাকলো। দিয়ার হাজার টা বকা শুনা হজম করে সে দেখা করেই তবে ছাড়তো। একদিন রাতে কল দিয়ে সিয়াম বলে...
-আমি কিন্তু কাল দেখা করবো না (সিয়াম)
-কেনো? (দিয়া)
-ভোরে রওনা হচ্ছি কক্সবাজার এর উদ্দেশ্য
-হঠাৎ!
-হঠাৎ না, কলেজ থেকে আগেই পোগ্রাম করেছিলো
-ওহহহ, ফিরবি কবে?
-চারদিন পর
-আমার একটা কথা ছিল
-হ্যাঁ বলেন
-সিরিয়াসলি নিবি
-আপনি শুধু বলেন
-তোদের সাথে আমায় নিবে কি?
-না বাইরের লোক তো এ্যালাও করবে না
-আমি বাসায় থাকতে থাকতে বোরিং ফিল করছি। বাইরে কোথাও ঘুরতে যেতে পারলে ভালো হতো। আচ্ছা ঠিক আছে ঘুরে আয় তুই
-আপনি চাইলে, আমি আপনি ঘুরতে যেতে পারি
-আমি যাবো তোর সাথে? তুই এটা ভাবিস?
-হ্যাঁ আমি এটা মনে করি। কারণ বর্তমানে আমি আপনার সবচেয়ে কাছে থাকি
-এহহহ আসছে, তুই আমার থেকে অনেক অনেক দূরে থাকিস
-বললেই তো আর হলো না৷ শোনেন আপনি যদি বলেন তো সময় নিয়ে আমরা কোথাও ঘুরে আসতে পারি।
-তোর সাথে যে যাওয়া যাবে না
-আমি কি করছি?
-বড়দের সম্মান করিস না
-আপনাকে তো সম্মান করি
-সম্মান করলে পঁচা কথা বলতে পারতি না
-"ভালোবাসি" এটা কোনো পঁচা কথা?
-তোর মুখ থেকে পঁচাই শোনা যায়
-তো যাবেন কি না সেটা বলেন। যদি রাজি হন তাহলে কাল সকালে আমি যাবো না।
-যদি ছোট ভাই এর মতো থাকিস তাহলে যাবো
-তীর এমন ভাবে মারলেন একদম কলিজার মধ্যেই মারলেন। তাই বলে ভাই! বন্ধু ভাবলে নিয়ে যাবো। ডিসিশন আপনার
-উমম ঠিক আছে রাজি,
-তাহলে ডাকবো কি কাজি?
-বাঁদরামি শুরু হয়েছে?
-ছন্দ মিলিয়ে দিলাম
-কঁচু৷ তাহলে বল কোথায় যাওয়া যায়
-আপনি বললে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া ঘুরতে রাজি। শুধু খরচ টা আপনি দিবেন হি হি হি
।।
।।
তুমি দূরে যাও যদি
END PART
Write : Sabbir Ahmed
____________________________
-কঁচু, তাহলে বল কোথায় যাওয়া যায় (দিয়া)
-আপনি বললে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া ঘুরতে রাজি। শুধু খরচটা আপনি দিবেন হি হি হি (সিয়াম)
-সে দেখা যাবে, রওনা হবো কবে?
-আমরা কালদিন পর রওনা হই।
-ঠিক আছে, তুই তোর মতো সবকিছু গুছিয়ে নিস
-আচ্ছা
,,
দিয়ার কথামতো, দিয়ার বাসা থেকে একটু দূরের একটা জায়গায় তারা প্রথমে এক হবে। তারপর সেখান থেকে রওনা হবে।
সিয়াম সেই জায়গায় ব্যাগপত্র নিয়ে হাজির। দিয়াও বেশি দেড়ি করলো না, সে ও ঝটপট চলে এলো। দিয়াকে দেখে সিয়াম এর একটু মন খারাপ হলো, কারণ দিয়ার হাতে ব্যাগ ছিলো না। তার মানে কি দিয়া যাবে না তার সাথে। এরকম ভাবতে ভাবতে দিয়া একদম কাছাকাছি এসে দাঁড়ায়।
,,
ফোনে তুই বলে সমন্ধ করলেও এখন তুমি বলেই ডাকলো সিয়ামকে..
-কখনো আসছো? (দিয়া)
-এইতো কিছুক্ষণ হলো। আপনার ব্যাগপত্র কই? (সিয়াম)
-তুমি নিয়ে আসছো তো?
-হ্যাঁ এই যে দেখেন সব নিয়ে আসছি
-তাতেই চলবে
-আপনি যে নিয়ে আসলেন না
-তোমার টা পরে ঘুরবো
-সে কেমন কথা
-এমনই। আচ্ছা শোনো রাস্তার ওপাশে তো স্টেশন আছে ওখানে চলো
-চলেন আমরা বাসে যাই
-আগে স্টেশনে বসি
-হুমম আচ্ছা..
,,
সিয়াম বেশ আগ্রহ নিয়ে দিয়ার সাথে ঘুরতে যাওয়ার জন্য বেড়িয়েছিলো। এখন সিয়াম ভয় করছে দিয়া যাবে কি না। সিয়াম যে ভয় পাচ্ছে এটা দিয়া বুঝে যায়। হাঁটতে হাঁটতে দিয়ে বলে...
-আমি যাবো কি যাবো না এটা নিয়ে সংকোচ হচ্ছে?(দিয়া)
-না আপনি যাবেন তো, এটাই মনে হচ্ছে (সিয়াম)
-যদি না যাই
-না আপনি যাবেন (সিয়াম হেসে বলল)
,,
স্টেশনে এসে প্লাটফর্মে পা ঝুলিয়ে বসে পড়লো। তারা যেখানে বসে ছিলো সেখানটায় বট গাছের ছায়া ছিলো। এই স্টেশনের ব্যস্ততা তেমন নেই। শহরের পাশে স্টেশন হলেও এর একটু সামনে বড় স্টেশন থাকায় এখানে লোকাল ট্রেন ছাড়া তেমন কোনো ট্রেন দাঁড়ায় না৷
,,
আধ ঘন্টা হতে চলল দিয়া আর সিয়াম এর মাঝে কোনো কথাই হলো না। সিয়াম এবার শিওর হয়ে গেছে যে দিয়া তার সাথে যাবে না। এই আধ ঘন্টা পর সিয়াম মন খারাপ করে বলল..
-আপনি যাবেন না আমার সাথে তাই না? (সিয়াম)
-যাক শেষ পর্যন্ত আমার চুপ থাকাটা তুমি বুঝে নিয়েছো। হ্যাঁ আমি যাবো না তোমার সাথে
-তাহলে রাজি হলেন কেনো?
-তোমাকে বোঝাতে
-কি বোঝাতে চান আমাকে?
-তোমরা স্বপ্ন ভাবনা এগুলো ভুল
-এতো করে বোঝালাম আপনাকে তারপরও আমাকে বোঝানোর জন্য এভাবে ডেকে নিয়ে এসে ফাঁকি দিতে হবে। আবার বোঝাতে হবে?
-দেখো রাগ করো না, তুমি যেটা করতে চাচ্ছো সেটা ভুল
-আমি কি ভুল করেছি?
-এই যে আমাকে ভালোবাসো, এরকম উল্টা পাল্টা কথা বলা
-কেনো আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারিনা?
-আমি একজনের বউ
-হ্যাঁ সেটা ছিলেন। এখন তো নেই
-সেটাও তোমার ভাইয়ের
-তো কি হয়েছে?
-সমাজের চোখ কপালে উঠবে
-উঠলে উঠুক, আমি কি অন্যের বউ ভাগিয়ে নিয়ে এসেছি? নাকি আপনার আর ভাই এর সম্পর্ক থাকার সময় আমি আপনার সাথে প্রেম করেছি। তখন তো আপনাকে নিয়ে আমার অনুভূতি ছিলো না
-এটা আমি বুঝলেও আর সবাই বুঝবে না
-আর সবার বোঝার তো দরকার নেই
-না দরকার আছে, মানুষের কথা অনেক ধারালো, জীবন চলায় তোমাকে ক্ষত বিক্ষত করে ছেড়ে দিবে। তুমি ছোট, সামনে তোমার পুরোটা জীবন পরে আছে, এগুলো রেখে আমার পেছনে পরে আছো
-আমাকে এতো বুঝ দিতে হবে না৷
আমি আপনার দুঃখ দেখে আপনাকে ভালোবেসেছি, আপনি দূরে চলে যাবেন এটা ভেবে আপনাকে ভালোবেসেছি, এখন সেটা অন্য পর্যায়ে চলে গেছে। আমি এখন যাই করি না কেনো আপনার কথা আমার মাথায় মধ্যে ঘুরতে থাকে।
-এ পাগল রে আমি আর কিভাবে বুঝাই? তোমার সাথে খারাপ আচরণ করলে তুমি বুঝবে?
-যত যাই করেন কাজে হবে না এখন। আর আপনি এমন করতেছেন কেনো? আপনি তো একদিন না একদিন বিয়ে করবেন তাই না? সেটা না হয় আমার সাথে হোক
-আরে কারে কি বুঝাই।
,,
দিয়া কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর, নিজের ব্যাগ থেকে টাকা বের করে সিয়াম এর হাতে দিয়ে বলল..
-যাও ঝালমুড়ি নিয়ে আসো (দিয়া)
-আচ্ছা
,,
সিয়াম ব্যাগ টা রেখে উঠে দাঁড়ালো, প্যান্ট এ থাকা ধুলো ঝেড়ে চলে গেলো ঝালমুড়ি আনতে। কিছুক্ষণ পর ঝালমুড়ি নিয়ে আসলো।
-ঝাল বেশি দিয়ে আনতে বলবো মনেই ছিলো না কথাটা বলার (দিয়া)
-আমি জানি আপনি ঝাল পছন্দ করেন, তাই বেশি দিয়েই এনেছি (সিয়াম)
-বাহহ অসাধারণ কাজ করেছো
,,
ঝালমুড়ি খেতে খেতে কথা শুরু আবার..
-এখন এখান থেকে উঠে আমি বাসায় যাবো। আর তুমি বাড়ি গিয়ে একটা ঘুম দিবা। মনের মধ্যে আমাকে নিয়ে যত চিন্তা সব ঝেড়ে ফেলবা (দিয়া)
-যত কথাই বলেন, কাজ হবে না। আপনাকে আমার মাথা থেকে নামাতে পারবো না (সিয়াম)
-তাহলে আমাকেই বিদায় নিতে হবে দুনিয়া থেকে, এ ছাড়া উপায় দেখছি না
-নাহহ এগুলো কেমন কথা বলেন? এগুলো বলতে হয় না। আমরা অনেকদিন বাঁচবো, আমরা বিয়ে করবো, আমাদের বাচ্চা কাচ্চা হবে। ওদের বিয়ে দিবো নাতিপুতি হবে..
-ওরে ভাবুক রে, শুধু ভাবলেই হলো নাকি? এসব সম্ভব না। দেখো আমি আবার বলছি তুমি যদি আমার পিছু না ছাড়ো আমি আত্মহত্যা করবো। সেটা এই স্টেশনে
-আমি থাকতে আপনাকে মরতে দিবো না
-তাহলে বাড়িতে গিয়ে আত্মহত্যা করবো না৷ তুমি ভেবো না আমি এটা নিয়ে মজা করছি। আমি তোমাকে নিয়ে আলাদা একটা মানসিক যন্ত্রনায় আছি এটা থেকে আমার মুক্তি পেতে হবে
-....(সিয়াম চুপ)
,,
দিয়া তাকালো সিয়াম এর দিকে, দেখতে পেলো সিয়াম এর চোখে পানি গাল গড়িয়ে পড়ছে৷ তার ঠোঁট কিছু বলতে চায়। দিয়া বলল....
-এভাবে কান্না করলে সমাধান আসবে না, কিছু বলো (দিয়া)
-....(সিয়াম কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারছে না)
-এই বলো, চুপ করে থেকো না
-আমি চেয়েছিলাম আপনার দুঃখ গুলোকে নিজের করে নিতে, আপনার দুঃখে ভাগ বসাতে
-না, কোনো দরকার নেই
-আপনিই আমার জীবনের প্রথম পছন্দের মানুষ, খুব করে চেয়েছিলাম আপনার সব অতীত ভুলিয়ে একটা সংসার করবো..
-সেটারও কোনো দরকার নেই, আমি তো বিয়েই করবো না
-আমাকে সাথে নিয়ে থাকা যায় না একটু?
-না
-ভেবে দেখেন একটু
-উহুমমম
-জানেন আমার বুক ফাঁটছে, আমি কিভাবে আপনাকে বোঝাই আপনাকে আমি হারাতে পারবো না
-আমাকে বোঝাতে হবে না
-আমাকে একটু সুযোগ দেয়া যায় না?
-তুমি কেনো? কাউকে দিবো না আমি
-আমি কিন্তু তোমাকে অনেক ভালোবাসি
-আবার আপনি থেকে তুমি! বাহহ ভালোই তো
সিয়াম যত কাকুতিমিনতি করছিলো দিয়া ততই তার মনকে শক্ত করছিলো।
-তুমি একটু বোঝার চেষ্টা করো (সিয়াম)
-না (দিয়া)
-আমি তো ভুল কিছু করছি, তোমাকে বিয়ে করতে চেয়েছি
-এটাই ভুল। তোমার কথা শেষ হয়েছে??
-হুমমম
-তাহলে বলো, তুমি আমাকে বাঁচতে দিবে কি না? যদি আমাকে বাঁচতে দিতে চাও তো আমার জীবন থেকে চলে যাও
-না, তোমার বেঁচে থাকাটা দরকার। এমনকি তোমার মানসিক প্রশান্তিও দরকার যেটা আমি কেড়ে নিয়েছি
-এইতো বুঝতে পেরেছো
,,
তাদের কথার মাঝে স্টেশন মাষ্টার লোহার বেল বাজালো।
-মনে হয় একটা ট্রেন পাস হবে, তো আমি উঠি এখন? (দিয়া)
-হুমমম (সিয়াম)
-তুমি উঠবে না? বাড়ি যাবে না?
-বাড়ি গিয়ে আর কি হবে আপনি যান
-একা একা এমন অভিমান করতে নেই
-এসব অভিমান দেখারও কেউ নেই। আপনি চলে যান, আমি সঠিক সময়ে চলে যাবো
-ঠিক আছে,,,
,,
দিয়া উঠে দাঁড়ালো আর বাড়ির উদ্দেশ্য হাঁটতে লাগলো। এদিকে সিয়াম প্লাটফর্ম ছেড়ে স্টেশন এর দ্বিতীয় লাইনে এসে, লাইনের ঠিক মাঝখান টায় দাঁড়ালো। এখন দিয়ে এখন একটা ট্রেন থ্রু পাস করবে।
,,
দিয়া একটু দূরে যাওয়ার পর ট্রেনের হুইসেল শুনতে পায়৷ সিয়াম উঠেছি কি না সেটা দেখার জন্য দিয়া পেছন ফিরে তাকায় ততক্ষণে ট্রেনটি সিয়ামের খুব কাছে চলে এসেছে। ট্রেন এর মধ্যে থেকে লোকোমাষ্টার বার বার হুঁইসেল দিচ্ছে। সিয়াম তার সিদ্ধান্তে অটল থেকে, ট্রেনের বিপরীত দিকে ঘুরে দাঁড়ায় সে। এদিকে দিয়ার মুখ থেকে কথা বের হওয়ার আগেই ট্রেনের ধাক্কায় সিয়াম এর শরীর কয়েক টুকরো হয়ে যায়। দিয়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পুরো সিন টা দেখছিলো। ট্রেন চলে যাওয়ার পর দিয়া সেখানেই বসে পরে৷ আশে পাশে থেকে লোকজন আশা শুরু করে সিয়াম কে দেখতে। সিয়ামের শরীরে কিছু টুকরো এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটে ছিলো সেগুলো কুঁড়িয়ে একসাথে করলো এক লোক।
,,
দিয়া সেই জায়গা তে বসে আছে এখন, উঠার শক্তি আর পাচ্ছে না। মনের ভেতরে অন্য রকম একটা ঝড় বইতে শুরু করে। হঠাৎ তার মনে পড়ে সিয়াম বলেছিলো "আমি সঠিক সময়েই চলে যাবো"
কথাটা বুঝে উঠতে পারেনি দিয়া। দিয়া নিজের মনকে জিজ্ঞেস করে, এখন কি সে মানসিক প্রশান্তি পাবে সে? নাকি এ জ্বালা তার সারাজীবন মনের মধ্যে থেকে যাবে। কোনো উত্তর খুঁজে পায় না সে, পাগলের মতো করতে থাকতে মনের ভেতর।
অতঃপর একটা একতরফা ভালোবাসার সমাপ্তি ঘটলো। দিয়া বুঝতে পারলে না সিয়াম এর ভালোবাসা আর তার প্রতি আগ্রহ তার দরজায় কড়া নেড়েছে কি না।
যদি কখনো বুঝতেও পারে, যাকে বলবে সে তো হারিয়ে গেলো।
,,
,,
,,
,,
,,
,,
,,
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,END,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,