Showing posts with label আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা সিজন ২. Show all posts
Showing posts with label আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা সিজন ২. Show all posts

20.12.23

আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা সিজন ২

 #আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা

❤️
#moyej_uddin
❣️সিজন ১ এর পর……❣️
এত্ত কিউট একটা মানুষ কেমনে হয়! লাল লাল গাল, চোখে সোনালি রঙের চিকন ফ্রেমের চশমা। রোদে পোড়া চেহারায় খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে আমার স্বপ্নের নায়কের মতো লাগতেসে। একটা কালো প্রাইভেট কারের ড্রাইভারের সিটে বসা। সব মিলিয়ে সেই লেভেলের ক্রাশ খাইয়া আমার পাবনায় যাওয়ার টিকেট রেডি। সিএনজিতে বইসা ছিলাম জ্যামে। ভার্সিটি যাইতেসি। আজকে সিটি (ক্লাস টেস্ট), মাথা কাজ করতেসিলো না। তাই এদিক ওদিক তাকাইতেসিলাম। তখনই পোলাটার দিকে নজর পড়ল। উফ্! গালগুলা! মাত্র হাত বাড়াইতেসিলাম গাল দুইটা কচলানোর জন্য, তখনই জ্যামটা ছাইড়া দিল। ধুর, জ্যামটা ছাড়ার টাইম পাইলো না! আমার ক্রাশ পাশের রাস্তায় মোড় নিল আর আমার সিএনজি সোজা ভার্সিটির দিকে। মনে মনে সিন্ডারেলার বোনদের মতো কইলাম, এই যে শুনছেন? আমার ঝাড়ুটা একটু ধরবেন? ঝাড়ু! আমি কি সিন্ডারেলা নাকি! ধুর, একটু পর পরীক্ষা আর পাগলের মতো কি সব বকতেসি। কিন্তু মনের কাগজে ছাপাখানার মতো তাহার চেহারা ছাপা হইয়া গেল।
.
.
.
.
- সাহেদা, সাহেদা, জানিস আমি না আজকে আবার ক্রাশ খাইসি।
একটু আগে ক্লাস, পরীক্ষা সব শেষ কইরা ভার্সিটি গেটের বাইরে ওরে নিয়া দাঁড়াইলাম। সাহেদা খুব মনোযোগ সহকারে নিজের সিটি পরীক্ষার প্রশ্ন দেখতেছিল। আমার কথা শুইনা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কইলো, ছোঁয়া, তুই কখন ক্রাশ খাস না? তুই দিনে রাতে অন্তত একশবার ক্রাশ খাস। তার উপর অদ্ভুত সব জিনিসের উপর। তেলাপোকার ঠ্যাংয়ের উপর, কাউয়ার নাকের ফোরন্দার (ছিদ্র) উপর, ব্যাঙের ডাকের উপর, টিকটিকির লেজের উপর……
- এমন করে বলিস না। ওরাও কত্ত কিউট!!!
- কিউট!? আল্লাহ!!! তোরে যে কি কইতাম? তোর ক্রাশ খাওয়া দেখলে আমারও ক্রাশ খেয়ে মাটির তলে ঢুইকা যাইতে ইচ্ছে করে। ক্রাশ খাওয়ার মতো যদি তুই ভাতটা খাইতি তাহলে হয়তো এতো দিনে কয়েক কেজি ওজন বাড়াইতে পারতি।
- সাহেদা, জীবনে যদি ক্রাশই না খাইতে পারি তো আর কি করলাম!
- হ, তাও যদি একটু মটু হইতি।
- ধুর, তোর পটর পটরে ভুলেই যাইতেসি কি কইতে আসছিলাম।
- আচ্ছা বল কি বলতেসিলি। এখন কিসের উপর ক্রাশ খাইলি?
- একটা ছেলের উপর।
- যাক, এতদিনে কাউয়া, ব্যাঙ বাদ দিয়ে মানুষের দিকে নজর পড়ছে। তা কার উপর খাইলি?
- সেটা তো জানি না। একটা প্রাইভেট কারে ড্রাইভারের সিটে বসা ছিল।
- যদি গাড়ির ড্রাইভার হয়?
- সে যাই হোক, যা মিষ্টি দেখতে……
- সেই মিষ্টি দিয়ে শরবত গুলে খা।
- হি হি, আপাতত লালু খামু।
- তোর মতো পাগল ছাড়া আর কেউ গাজরের নাম রাখে!?
- ওই, শোন না। চল না বাজার, ফাইরুজের কাছে শুনসি বাজারে নাকি ইয়া মোটা গুলুগুলু গাজর বিক্রি করতেসে।
- গাজর আবার গুলুগুলু হয় কেমনে? ফাইরুজ বলসে!?
- আরে আমার লালু মিয়াগুলা হয়। গুলুগুলু লালু মিয়া জুলুজুলু চোখে আমার দিকে তাকাই থাকে। উফ্!!!
আমার চিন্তা করেই জিভে পানি চইলা আসলো। সাহেদা আমার দিকে মুখ বাঁকা করে তাকাই কইলো, হইসে, আর লালা বাইর করতে হবে না। এখুনি মুখ থেকে পড়বে। চল চল। আজকে কোন লালুর কপালে দুঃখ আছে কে জানে। আমি দাঁত কেলাই ওরে নিয়া ডানে বাজারের দিকে রওনা দিলাম।
- বুঝলি, আজকের সিটিটা! উফ! সেই লেভেলের প্যারা ছিল।
সাহেদাও আমার সাথে সম্মত হয়ে কইল, হুম, আমার তো প্রশ্ন দেখেই চক্কর আসছিল। স্যার কি যে একখান প্রশ্ন করসে! কি যে দিসি আল্লাহ ভালা জানেন। পঁচিশে মাত্র পনের মার্কস কমন পড়সে।
- তাইলে তো আমি তোর থেকে ভালোই আছি। আঠারো মার্কস ভালা মতো দিসি।
- আহা! তিন মার্কস বেশি দিয়া কি গর্ব!
আমি ভেটকি দিয়ে কইলাম, গর্বই তো। কারণ আমাদের আতিলটা শেষ তিন মার্কস আমার থেকে দেখে লিখসে অথচ সেটা আমি পুরা আন্দাজে বানাই লিখসি।
- বেচারা সৌরভ! আমার ভাগ্য ভালো আজকে স্যার পরীক্ষা শুরুর একটু পর তোর পেছন থেকে উঠাই অন্য জায়গায় বসাইছিল।
- কারন তুমি পরীক্ষার সময় বেশি পটর পটর করো।
- হ, যাহোক, রেজাল্ট দিলে দেখা যাবে।
আমি একটা বড়ো করে হাই তুলে কইলাম, হুম, বহু কষ্টে এই এক সপ্তাহ ধরে সিটি পরীক্ষাগুলা দিতেসি। চল না আজকে তোর থেকে তিন নাম্বার বেশি আনসার করা উপলক্ষে আমারে এক কেজি লালু কিনি দিবি। আহা! আমার লালু মিয়া!!!
- এই তুই লালু মিয়া বলা থামাবি? কেমন লাগে শুনতে।
- আচ্ছা বাপু, গা জ র। আমার কত ইচ্ছা লালু মানে গাজর মিয়া খামু!!!!
- ওই বেটি, এই নিয়ে তোর কত নাম্বার ইচ্ছা পূরণ হইতেসে!? গত সিটি পরীক্ষার পরও তো দেড় কেজি কিনে নিয়ে গেলি।
- আরে এতদিন থাকে নাকি? সেই কবেই ওরা টয়লেটের টাংকিতে ঘুরতে চলে গেছে। আমার লালু মিয়া……
- হায়রে!
আমি ওরে নিয়া গাজর কেনার জন্য রাস্তার পাশের দোকানটায় দাঁড়াইলাম। উফ! কতগুলা লালু মিয়া আমার দিকে জুলুজুলু করে তাকাই আছে। সবগুলা চিল্লাই বলতেসে, আমারে নাও। আমারে নাও। আহা! কি দৃশ্য! কয়েকটা তো লজ্জায় তাকাইতেই পারতেসে না। কয়েকটা গভীর ভঙ্গিতে লাল দাড়িতে হাত বুলাইতেসে। যদি সামর্থ থাকতো সব্বাইরে নিয়া আমার জাদুর পেটে ঢুকাইতাম।
- চাচা, এক কেজি গাজরের দাম কত?
- ১৮০ টাকা।
- হ্যাঁ!!! চাচা, আর কম হবে না?
- না, এবার গাজরের দাম বাড়সে।
সাহেদা কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, শুন না, আরেক সময় কিনিস। আমার কাছে এত টাকা নাই। আচ্ছা, তোর কাছে একশো টাকা হবে? ওই, ওই…… কি ভাবিস?
- কি লাল লাল গাল!
ও আমার পা চইটা দিল। আমি ব্যাথায় কল্পনার জগত থেকে ফিইরা কইলাম, হ্যাঁ!? কিছু বলছিস? ও আবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে কইল, তোর কাছে একশো হবে?
- না, পঞ্চাশটাকা ছিল। সিএনজিতে উঠার আগে বিশ টাকার ফুসকা খাই ফেলসি। বিশ টাকার সিএনজি ভাড়া। এখন একশোর দশভাগের এক ভাগ আছে।
- কেমনে কি! পরীক্ষার টেনশানে আমার গলা দিয়ে খাবার নামে না। আর তুই আসার সময় ফুসকা খাইলি!?
- ব্রো , এত টেনশানের প্যারা নেওয়ার কি দরকার? রিল্যাক্স।
- আমি তোর ব্রো হই কবে থেকে? বুঝছি। দে, দশটাকাই দে। চাচা আধা কেজি দেন।
আমি কান্না কান্না ভাব করে কইলাম, মাত্র আধা কেজি!? সাহেদা আমার দিকে তাকায়ে কইলো, শুনো, তোমার লালু মিয়ার দাম বেশি। তাই অর্ধেক নিয়া খুশি থাকো। ওর কথা শুইনা চাচা আমাদের দিকে তাকাই রইলো। ও চাচাকে নব্বই টাকা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, এই নেন, চাচা। চাচার হাত থেকে গাজরের থইলা আমার হাতে দিয়ে কইল, হ্যাপি? আমি ঠোঁট উল্টাই কাঁদো কাঁদো হইয়া মাত্র কইতে লাগলাম, মাত্র আধা……
- টাকার যেহেতু সংকট এতেই সন্তুষ্ট থাকো বাছা। এবার চল। বাসায় যেতে হবে। লেট হচ্ছে।
ও আমারে টেনে নিয়ে আসল দোকানের সামনে থেকে। আমি পিছন দিকে তাকাই দেখলাম আমার লালু মিয়ারা চোখে পানি নিয়া তাকাই আছে। আমিও কান্না চোখে মনে মনে কইলাম, সি ইউ নেক্সট টাইম বেইবি। আমি ওর হাতে গাজরের থইলা ধরাই দিয়া একটা গাজর নিলাম। তারপর খাবার পানি দিয়ে ধুয়ে ওর সুন্দর সুন্দর লাল দাড়ি পরিষ্কার কইরা রাস্তায়ই খাওয়া শুরু করলাম। খাইতে খাইতে হঠাৎ উৎসাহিত হয়ে কইলাম, ডেড কডো সুনডর বিলউ। সাহেদা আমার দিকে ফিইরা বলল, এটা কি ভাষা! আগে গাজরটা খেয়ে শেষ কর তারপর আজাইরা বকিস। আমি কোনোমতে মুখে থাকা গাজরগুলা গিলে বললাম, দেখ, বিলাইটা কি সুন্দর, মা শা আল্লাহ!
- এটা বলার জন্য গব গব করে কথা বলতেছিস!? তুই যে কেন এত গাজর পাগল!?
আরেক কামড় দিয়া কইলাম, ডানি না (জানি না)। সাহেদা বিরক্তির সুরে বলল, এইটা বড্ড বিরক্ত লাগে। মুখে খাবার রেখে ভুস ভুস করে কথা বলা। আর্ধেকও বুঝা যায় না। আমি শেষ অংশ মুখে পুরে দিয়ে কইলাম, ইডজ ওগে (ইট'স ওকে)। সাহেদা আমার দিকে মাথা নাড়াই হাঁটায় মন দিল।
সিএনজি স্টেশন বড় মার্কেটের পরে। বড় মার্কেটের কাছাকাছি আসতেই কইলাম, এই, সাহেদা, শুন না।
- হুম বল।
আমি ফিসফিস করে কইলাম, চল না মার্কেটে ঘুরে আসি। ও আমার দিকে ফিরে বলল, ঘুরবি কেমনে? টাকা আছে?
- আরে সব সময় টাকা থাকা লাগে নাকি?
- হুদা ঘুরে কি করবি? কালকে আসিস……
হঠাৎ একটা প্রাইভেট কার সাই কইরা সামনে দিয়ে গিয়া আমাদের কাদায় ভরাই দিলো। কালকে সারা রাইত ইচ্ছে মতো আকাশ বাথরুম করে মাঠে ঘাটে ছোটখাটো পুকুর বানায় ফেলসে। আর আজকে ঐ পুকুরের পানিতে আমাদের একেবারে গোসল করাই দিল। আমার সাধের সাদা জামা একেবারে কালা জামা হইয়া গেল। মেজাজ খারাপ করে গাড়ির পিছু নিলাম। সাহেদা আমাকে থামিয়ে কইল, গিয়ে কি লাভ হবে?
- খচ্চর কাউয়াটা আমাদের জামার কি হাল করসে দেখ। আমার কত সাধের জামা! ইচ্ছে করতেসে পিটাই ভর্তা বানাই পোড়া মরিচ দি মাখি খাই।
- আরে ছাড় তো। তারা এত কিছু ভাবলে সাবধানে গাড়ি চালাতো। ওই… ওই…… এত মনোযোগ দিয়ে কি দেখিস?
- ছেলে……
- ছেলে!? কোন ছেলে? কার কথা বলছিস?
- আরে যে প্রাইভেট কারটা একটু আগে কাদা পানি ছিটালো। ওইটার ভেতর থেকে একটা পোলা বের হইসে। ঐযে চলে গেল দেখ।
- দেখতেসি না।
- আরে ঐযে কালো গাড়িটা।
- এইটা তো পার্কিং এরিয়া। কত কালো গাড়িই তো আছে।
- আরে ঐযে……ধুর তোর দেখা লাগবে না। ইস্ চলে গেসে ভিতরে। সাহেদা……
- বল।
- আমার ক্রাশ। আজ সকালে যাকে দেখসিলাম গাড়িতে। ইস! কি কিউট!
সাহেদা কোমরে হাত দিয়ে কইল, তুই না ওরে ভর্তা বানাইতেছিস? আমি লাজুক ভাব করে কইলাম, এসব কি কও বান্দুপী! কেউ নিজের ক্রাশরে ভর্তা বানায়? চল না মার্কেটে। ক্রাশ দেখমু।
- এই শুন। এখন সোজা বাসায়, না গেলে আমি তোরে ভর্তা বানামু। খালি আজাইরা ক্রাশ খাস। চল।
আমি কাঁদো কাঁদো হয়ে বললাম, জ্বি দাদিআম্মা চলেন। সাহেদা জোর করে আমাকে টেনে মার্কেটের সামনে থেকে নিয়া গেল। আমি যাওয়ার সময় একটা উঁকি মারলাম। তারে প্রথম দোকানেই দেখা গেল। আমি মনে মনে চিনা হাসি দিয়া কইলাম, সাহেদার জন্য নইলে আজকে জোঁকের মতো লেগে থেকে তোমার নাড়ি নক্ষত্র বাইর করতাম। দাঁড়াও চান্দু, তোমারে আমি খুঁইজ্যা বাইর করুম।
চলবে…
আমি মনে মনে চিনা হাসি দিয়া কইলাম, সাহেদার জন্য নইলে আজকে জোঁকের মতো লেগে থেকে তোমার নাড়ি নক্ষত্র বাইর করতাম। দাঁড়াও চান্দু তোমারে আমি খুঁইজ্যা বাইর করুম।
.
.
.
.
বাসায় আইসাই চিৎপটাং। রাস্তায় বহুত ব্যাঙের বাচ্চার মতো লাফাই হয়রান হই গেসি। পেটে থাকা গাজরগুলাও হয়রান হই গেসে আমার সাথে লাফাই। কি একখান সিটি পরীক্ষা দিলাম। কালকে ইচ্ছা মতো ঘুম গেসি। পড়াশোনা কিচ্ছু করি নাই। তাই একেবারে ডাব্বা মারসি। কত সোজা সোজা প্রশ্ন আসছিল। কালকেও তো পড়তে গিয়া দেখসিলাম প্রশ্নগুলা। যা হোক পরীক্ষার প্যারার তো শেষ নাই। যাই দেখি, ফ্রিজে কি আছে। গাজরগুলা রাখি আসি। অলরেডি তিনটা খাই ফেলসি। আর চারটা আছে। কালকে সকাল পর্যন্তও হইবো না। সাহেদাটা খালি আধা কেজি কিনে দিসে। এগুলা আমার পেটের কোনায়ও যায় নাই। এখন অনেক খুদাও লাগসে। গিয়া খুলতেই ফ্রিজ থেকে ভয়ংকর রকমের অনুভূতি লাগল। তাকাই দেখলাম করলা রাক্ষস সবুজ সবুজ চোখে আমার দিকে তাকাই আছে। আমি তো দেইখাই ফ্রিজ থেকে একহাত দূরে সইরা গেলাম। এগুলা এখানে ক্যান!
- আম্মু, ও আম্মু……
আম্মা রান্নাঘর থেকে কইল, কি হইসে? এত ষাঁড়ের মতো চিল্লাস কেন?
- ফ্রিজে এগুলা কি?
- কোনগুলা?
- এই যে সবুজ সবুজ।
- সবুজ সবুজ কি আবার? পটল?
- আরে না। ঐযে লম্বা করে……দুই মাথা হুইসের (সুঁই) মতো, সবুজ সবুজ…… গায়ে কত উঁচা নিচা খাড়া পাহাড়…
- কি সব বলিস। এত বড়ো মাইয়্যা হইছিস করলা চিনিস না?
- হ্যাঁ হ্যাঁ তোমার করলা না কোকিলা ঐটাই। ফ্রিজে ক্যান?
- তো কই রাখবো?
- আমার চোখের বাইরে……
- আমি কি করলা তোর চোখের ভিতর ঢুকাই রাখসি যে বাইরে রাখবো?
- তুমি জানো না আমি করলা চার চক্ষে দেখতে পারি না। কিসব উঁচা নিচা খাড়া পাহাড় সারা গা জুড়ে, আর তার উপর তিতার আম্মা।
- বিরক্ত করিস না তো। রান্নার সময় এত জ্বালানি ভালো লাগে না। মনে কর ফ্রিজে করলা নাই।
-………
কি কমু!? চোখের সামনে করলাগুলা রাক্ষসের মতো তাকাই আছে আর আমি নাকি মনে করতাম ফ্রিজে করলা নাই। আম্মাটা আমারে পাত্তাই দিলো না। হায়রে! আমার লালু মিয়াদের ওদের সাথে রাখলে ওরাও ভয় পাইবো। আমি নিরুপায় হয়ে আবার গাজরের থইলা নিয়ে রুমে চইলা আসলাম। থইলাটা টেবিলের উপর রাইখা ড্রয়ার খুলে অনেক খুঁইজ্যা একটা ললিপপ বাইর করে মুখে পুরলাম। ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুইতেই আম্মা এসে বলল, কালকে সকাল সকাল উঠবি।
- ক্যান!?
- বাসা চেঞ্জ করবো না? ভুলে গেলি?
- আম্মু আরো পরে, আজকে মাত্র পরীক্ষা শেষ হলো।
- কোনো পরে টরে নাই। কালকে বাকি জিনিস গুছাবো। পরশু বাসা ছাড়বো।
- ঝিলিক কই?
- ও বাজারে গেসে। কিছু জিনিস কিনার ছিল তাই পাঠালাম। তুই খেতে আয়।
- না, ও আসুক তারপর একসাথে খাবো।
- আচ্ছা, চলে আসবে হয়তো এখন।
আম্মাটা চইলা গেলো। আমি ফ্যানের দিকে তাকাই রইলাম। হাতটার উপর কত অত্যাচার করসি আজকে; কালকে আবার অত্যাচার করমু। আচ্ছা, পোলাটা যদি সত্যিই ড্রাইভার হয় আমার আম্মা আব্বা কি ড্রাইভার জামাই মাইনা নিব না!? সমস্যা নাই, আমিও গাড়ি চালানো শুরু করমু নে। তখন জামাই বউ মিইলা গাড়ি চালামু। ভাবতে ভাবতে খুশিতে ঘুমাই গেলাম।
আমি পাশে তাকাই দেখলাম লাল টুকটুকে ক্রাশ বসে গাড়ি চালাইতেসে। সিট বেল্ট বাঁধা। আমার দিকে নায়ক স্টাইলের হাসি দিল। আমি তো ফিদা। উফ্! গাল গুলা! আমি হাত বাড়াইলাম কচলানোর জন্য। তখনই হঠাৎ কোথা থেকে যেন ধপাস কইরা পড়ে গেলাম। গাড়ি থেকে পড়লাম কেমনে! পিট পিট করে তাকাই দেখি আমি বিছানার পাশে মেঝেতে পইড়া আছি। কোমরটা গেল নাকি! আজকে ক্রাশের জ্বালাই কোমরটাও গেল। আমি কোনোমতে আবার বিছানায় উঠে শুইয়া গেলাম। শুনতেসি আম্মা ডাকতেসে। ঝিলিক চলে আসছে বাজার থেকে। ওর কথা শোনা যাইতেসে। কোন দোকানদার কি করসে। কিসের কত দাম। এসব নিয়া আম্মার সাথে পকপক করতেসে। মোবাইল টিপে দেখলাম আধা ঘন্টা ঘুমাইসি। ঘুমটা ভাঙসে যে মাথাটায় প্রচন্ড ব্যাথা করতেসে। ভার হয়ে গেসে আবার। বমি বমি লাগতেছিল। আম্মা দ্বিতীয় বার ডাকতেই হড়হড় কইরা বমির বন্যায় সব ভাসাই দিলাম। শব্দ শুনে আম্মা আর ঝিলিক দৌঁড়াই আসল। আম্মা মাথা চাইপা ধরল আর ঝিলিক এক দৌঁড়ে বালতি নিয়ে আসল। ইচ্ছা মতো বমি করে নিজেকে হালকা করলাম। মাথা ব্যাথাটা বাড়সে। আম্মা আমারে শোয়াই দিয়ে দুজনে মিলে কোনোমতে সব পরিষ্কার করে নিল। আমারে হালকা খাবার খাইয়ে ঔষুধ দিয়ে আম্মা বলল, আবার ব্যাথা করছে? আমি মাথা নাড়লাম। এই মাথা ব্যাথাটা কত দিন যে প্যারা দিবে কে জানে।
- ঔষুধ খাওয়ার সময় পার হয়ে গেসে। ঘুমাচ্ছিলি তাই ভাবলাম একটু ঘুমা। কি অবস্থা হলো!
- ঠিক হয়ে যাবো। চিন্তা করো না।
- একটা বছর পার হয়ে গেল……
- ডাক্তার তো বলেছে সময় লাগবে।
- হুম। তুই কদিন রেস্ট নে। পরশু যাওয়া লাগবে না। আরো পরে উঠবো নতুন বাসায়।
- আমি ঠিক আছি আম্মু। দেখবা কালই সব গুছানো হয়ে যাবে। তাছাড়া ঝিলিক তো আছে।
- হুম, আমি থাকতে ছোঁয়াপুর টেনশন নাই।
- হ্যাঁ জানি তো। আমাদের ঝিলিক একাই কাজে একশো। আম্মু, নইলে বাড়িওয়ালা আবার কোন ক্যাঁচাল পাকাবে।
- ওকে বাবা তুই রেস্ট নে। আমাকে সন্ধ্যায় বের হতে হবে।
- আজকে নাইট ডিউটি?
- হুম। আজকে কয়টা খারাপ রোগী কপালে আছে কে জানে।
- হুম, কিচ্ছু হবে না। আমার আম্মা বেস্ট নার্স ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড।
- হ, পাকনা বুড়ি।
.
.
.
.
যেতেতু ভার্সিটি শুক্র শনি বন্ধ তাই পরদিন কাজে লাইগা গেলাম। যদিও আমারে তেমন কিছু করতে হইতেসে না। মেইনলি করতে দিতেসে না ঝিলিক। কিছু হাতে নিলেই কোত্থেইকা দৌঁড়ায় আসে চোখেও দেখি না। আইসাই হাত থেকে কাইড়া নিয়া কয় আমি করতেসি। ঝিলিক প্রায় একবছর আমাদের বাসায় কাজ করে। দেখলে মনে হয় ছোট থেকেই আমাদের সাথে পরিচয়। নতুন বাসাটা সাহেদাদের বাসার নিচের তলায়। সাহেদা থাকে তিনতলায় আমরা উঠবো দোতলায়। এবার থেকে দুই বান্দর একসাথে লাফামু। মনের মধ্যে খুশির সুনামি বইতেসে। উফ্, আই এম সো এক্সসাইটেড! ভাবনার মধ্যেই সাহেদারে ফোন দিলাম। বেচারি ঘুমাইতেছিল। ফোন রিসিভ করে বলল, হ্যালো…… কে?
- তোর সুইটহার্ট।
- অ, তুই? কি খবর?
- এইতো বাসা পাল্টাবার প্রিপারেশন চলছে। আই এম কামিং বেইবি। শোন না, আমি যে ক্রাশ খাইসি……
- একটা কথা শুন।
- কি?
- তুই যদি আর ক্রাশের কথা তুলছিস তবে প্রত্যেকদিন তোরে আমি ভর্তা কইরা আচার বানামু। তোর ক্রাশ খাওয়ার কাহিনি শুনলে মানুষ চিনি খেয়ে মরবো।
- আহা শুন না, কালকে যে খচ্চর কাউয়া থুক্কু ক্রাশরে দেখসিলাম ঐটারে খুঁজমু।
- কই খুঁজবি?
- সারা শহর খুঁজমু।
- হইসে, আপনার মুরোদ জানা আছে। বিছানা থেকে ওয়াশরুম যাইতে আলসি করস আর তুই নাকি সারা শহর খুঁজবি।
- এমন করে বলিস না।
- তোর ক্রাশের চক্করে আমি পাগল হই পাবনায় যামু।
- ওকে, বুকিং ডান। এখন উঠ। বের হমু।
- নাহ, আমার ঘুম পাইতেসে।
- উঠবি না আমি আসি ডোবায় চুবামু। এক ঘন্টা দিলাম। সুপার মার্কেট চলে আয়।
সাহেদা অনিচ্ছার সত্ত্বেও উঠে গেল। আমি সাদা গেঞ্জির উপর জিন্সের কোটি পরলাম, সাথে জিন্সের প্যান্ট। চোখে সানগ্লাস আর মাথায় বড়ো ক্যাপ পরে বের হইলাম। মুখে মাস্ক পরে নিলাম যাতে চিনতে না পারে। আয়নায় নিজেরে দেইখা নিজেই চিনতে পারি না। একঘন্টায় মার্কেটে গিয়ে দেখি সাহেদা আগেই হাজির। আমার কুটুকুটু বেস্টু। ওর কাঁধে হাত দিতেই আমারে দেইখা দুই হাত দূরে লাফ দিয়ে কইল, আপনি কে?
- যাক, গোয়েন্দা সাজটা ঠিক হইসে তাইলে। তুইও চিনতে পারিস নাই।
- এমন সাজছিস ক্যান?
- গোয়েন্দাগিরি করমু। চল।
- কই যাবি?
- দেখি। এক কাজ করি, পার্কিং প্লেসে গিয়ে দেখি ওর গাড়ি আছে কিনা।
- গাড়ি খুঁজবি কেমনে।
- হে হে, কালকে গাড়ির নাম্বারটা মুখস্ত করসি। ******* চল।
ওরে নিয়া পার্কিং প্লেসে চইলা আসলাম। অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর পাওয়া গেল। আজকেও আসছে। এবার মার্কেটে খোঁজার পালা। গিয়ে দেখলাম দ্বিতীয় ফ্লোরে একটা দোকানে বসে কার সাথে কথা কইতেসে। আমি আগাই যাইতেই হঠাৎ কি হইলো জানি না। খালি ময়দানে উস্টা খাইলাম। ফলে আশে পাশের সবাই আমার দিকে হা করে তাকাই রইলো। ক্রাশও আমার দিকে তাকাইলো। হায়রে ফাডা কপাল। উস্টা খাইলি ভালা কতা তাই বলে ক্রাশের সামনে!
চলবে…
খালি ময়দানে উস্টা খাইলাম। ফলে আশে পাশের সবাই আমার দিকে হা করে তাকাই রইলো। ক্রাশও আমার দিকে তাকাইলো। হায়রে ফাডা কপাল। উস্টা খাইলি ভালা কতা তাই বলে ক্রাশের সামনে!
সাহেদা দৌঁড়ে এসে বলল, কি রে তুই? দেখি উঠ। উঠতে গিয়ে পায়ের গোড়ালি টন টন করে উঠলো। বুঝলাম, আমার গোয়েন্দাগিরির বারোটা বাজছে। ভালো মতোই আছাড় খাইসি। বান্দরের মতো না লাফাইয়াও যদি আছাড় খাই মোর কপালে আর কি আছে! সাহেদারে ফিসফিস করে কইলাম, হাঁটতে পারুম না। কি করি ক তো। খেয়াল করি নাই ক্রাশ আমার কাছে আইসা বসছে। আমার পায়ে হাত দিতেই খেয়াল হইলো। সাথে সাথে পা সরাইয়া কইলাম, কি করছেন? যদিও মনে আনন্দের লাড্ডু ফুটতে লাগল। আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে। মন আমারে কইতেসে, বেটি, মন মে লাড্ডু ফুটা? আমি মনরে কইলাম, হা, ফুটা। উফ্! ক্রাশটা এত্তো কিউট ক্যান! গালগুলা লাল লাল। রোদে পোড়া চেহারা। চিকন ফ্রেমের চশমায় সেই লাগতেসে। ঠ্যাং তোরে আমি সোনা দি মোড়াই দেয়ালে ঝুলামু। তোর জন্য আজকে ক্রাশটারে এতো কাছে থেকে দেখতেসি।
- আপনার পা হয়তো মোচকে গেছে। আমাকে দেখতে দিন।
আমি পুরা ঠ্যাং বাড়াই দিয়ে কইলাম, দ্যাখেন। আমার পা দেখে বলল, হাড় নড়ে গেছে সামান্য। ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। কয়দিন প্লাস্টার করে রাখা লাগবে। আশা করি তিন চারদিনে ঠিক হয়ে যাবে। আমি জিগাইলাম, আপনি কি হাড়ের ডাক্তার?
- না।
- তাহলে?
সে আমাকে একটা কার্ড দিয়ে বলল, এইটা নিন। উনি অর্থোপেডিক্সের (অস্থি চিকিৎসাবিদ)। ওখানে যেতে পারেন। আমি ইনিয়ে বিনিয়ে কইলাম, আমি তো হাঁটতে পারতেসি না। যদি একটু হেল্প করতেন নিচে যাওয়ার জন্য। সে আমার কথা বুঝছে কি না জানি না, যে ভঙ্গিতে দাঁড়াইলো, মনে মনে কইলাম, কোলে টোলে নিবে না তো আবার! সিনেমায় তো কত দেখি নায়িকার কিছু হইলেই নায়কের কোল ফ্রি। উফ্! আমার লজ্জায় বেহুঁশ হই যাইতে মন চাইতেসে। কিন্তু খচ্চর তো খচ্চর হয়। আমি যখন কোলে উঠার জন্য প্রস্তুতি নিতেসি তখন সে কোথা থেকে একটা লাঠি এনে হাতে ধরাই দিয়া কইল, এটায় ভর দিয়ে হাঁটতে পারবেন। আর আপনার বন্ধু তো আছেই। এই বলে চইলা গেল।
আমার রাগে দুঃখে ইচ্ছা করতেসে এই লাঠি দিয়া ওর মাথায় দুইডা বাড়ি দি। ব্যাটা খচ্চর। তোর লাঠি কে চায়? এর থেকে গরু, ছাগল বহুত ভালা। তারপর ভাবলাম, আচ্ছা, গরু ছাগলের তো সবই ঠ্যাং, তাহলে ওরা ওদের জিএফরে কোলে নেয় কেমনে!? ধুর মাথাটাই খারাপ হই গেসে। সাহেদার সাথে আমারও একটা সিট বুকিং করা লাগবো পাবনায়। আমি সাহেদারে ধরে নিচে চইলা আসলাম। খচ্চরটার কোনো চিহ্ন নাই। চইলা গেসে। আমি মুখ বাঁকা কইরা রিকশা ডাকলাম।
দরজা নক করতেই ঝিলিক দরজা খুলল। আমি মুরগীর মতো এক ঠ্যাং ঝুলাই খাড়াই আছি। কিছু বলবার আগেই খালাগো কইয়া ঝিলিক চিল্লাইতে চিল্লাইতে আম্মুরে ডাকতে গেল। আমি আর কি করুম। সাহেদা আমারে বসার রুমে সোফায় গিয়ে বসালো। আম্মুটা কালকে রাতে নাইট ডিউটি করে আসছে। এখন বলদটা ডেকে তুলে আনবে ঘুম থেকে। চোখের পলক ফেলতেই আম্মা হাজির। প্লাস্টার দেখে বলল, কি করে হলো?
- আন্টি, পড়ে গিয়েছিল।
- কেমনে?
- জানি না। বেশ হাঁটছিল। হঠাৎ ঠাস করে পড়ে গেল!
- খালি জায়গায় কেমনে পড়ে?
সাহেদা কিছু না জানার ভঙ্গি করে সোফায় বসে পা ঢুলাইতে লাগল। আম্মা বলল, এত বড় ধামড়া মেয়ে যদি খালি জায়গায় পড়ে হাত ঠ্যাং ভাঙে… ঝিলিক ওকে রুমে নিয়ে যা। ঝিলিক আর সাহেদা আমারে রুমে নিয়া গেল। চারপাশে জিনিসপত্রে ছড়াছড়ি। কালকে বাসা পাল্টাইবার কথা আর আজকে আমি ঠ্যাং ভাইঙা বসি আছি। আমাকে বসাই সাহেদা এক প্লেট আচার নিয়ে এসে বসল আমার কাছে। আমি সেখান থেকে ভাগ বসাই কইলাম, ধুর বিরক্তি। ভাবছিলাম ঠ্যাং দুইটারে সোনায় বাঁধাই ঝুলাই রাখমু। প্লাস্টার কইরাই আধা পাগল লাগতেসে। সোনায় বান্ধি লটকাই থুইলে পুরা পাগল হই যামু।
- আরো গোয়েন্দাগিরি কর।
- সাহেদা……
- বল।
- আমি আজকে আবার ক্রাশ খাইসি। উফ্ কি চেহারা! চেরি ফলের মতো দুইটা গাল। ইচ্ছে করতেছিলো ……
- থাক। তোর ইচ্ছা তোর কাছে রাখ। এমনিতে তোর ক্রাশ খাওয়ার ঠেলায় আমার অবস্থা বারোটা।
- এমন করে বলিস না। তুই না বেস্টু।
আমি আচারের প্লেটের দিকে হাত বাড়াইতেই সাহেদা কইল, হ, খবরদার…… হাত দিবি না। এটা আমার আজকের পারিশ্রমিক। অলরেডি একটা খাইছিস। আর দিমু না। তুই কবে থেকে এত ভারি হইলি? তোরে ঝুলাই আনতে আনতে ঘাড়ে ব্যাথা হই গেল। আমি মুখ ভেঙাই কইলাম, তুই কবে থেকে এতো কিপটা হইলি? সাহেদাও আমারে ভেংচি মেরে মনোযোগ দিয়ে আচার খাইতে লাগল।
দুপুরে খেয়ে সাহেদা চলে গেল। আমি রুমে বসি আছি। পাশের রুমে ক্যাত ক্যাত শব্দ হইতেসে, আম্মা আর ঝিলিক সব গুছাইতেসে। আমি আকাইম্মা বসি আছি। ফোনটা নিয়ে ঘাঁটতে শুরু করলাম। কিচ্ছু করার নাই। কি বিরক্ত লাগের। আজকে খচ্চরের রূপে পাগল হই উস্টা খাইলাম। দাঁড়াও আমি খাঁড়া হই তারপর তোমারে দেইখা নিমু খচ্চর।
.
.
.
.
পরদিন গাট্টি গোট্টা নিয়া নতুন বাসায় চলে আসলাম। আম্মার পরিচিত এক লোক সাহায্য করল। আমরা নতুন বাসায় রওনা দিলাম জিনিসপত্র নেওয়ার পর। আধা ঘন্টায় পৌঁছাই গেলাম সেখানে। দেখতে আগের বাসা থেকে একটু ছোট হলেও খারাপ না। বরং কেন জানি বাসাটাকে দেখে মায়া লাগতেসে। সুন্দর দেখতে। চেনা চেনা লাগতেসিলো কেন জানি। কিন্তু আমি আগে আসি নাই। সাহেদা অনেকবার ওদের বাসায় আসতে বলছিল, আসা হয় নাই। আমরা পৌঁছাতেই সাহেদা হাজির। এসেই বলল, চল আমাদের বাসায়।
- বোইন, আমার ঠ্যাং ভাঙ্গা। আগে ঠ্যাং সোজা হোক তারপর যামু।
আম্মু আর ঝিলিক জিনিসপত্র গোছানোয় লেগে গেছে। সাহেদাকে বলল, তুমি বসো, আমি কিছু দেই তোমাকে।
- আন্টি, আসলে আমিই দাওয়াত দিতে আসলাম। আম্মু বলসে আজকে আমাদের বাসায় খাইতে।
- এসেই তোমাদের কষ্ট দিচ্ছি।
- না আন্টি।
আমি কইলাম, চল, আমাকে রুমে নিয়ে যাবি। আজকে ঠ্যাং ভাঙা থাকার সুবিধা হলো আমার রুমটা আগে ঠিক করা হইসে। সাহেদা আমাকে রুমে নিতে নিতে বলল, আর গর্ব করতে হবে না। ভাবছিলাম এই সিটি পরীক্ষার পর তোকে নিয়ে একটু ঘুরমু৷ গোয়েন্দাগিরির ঠেলায় ঠ্যাং ভেঙ্গে ঘুরার বারোটা বাজাই দিলি। আমি বিছানায় বসে বললাম, শুননা, ফ্রিজ থেকে লালু মিয়া থুক্কু গাজর মিয়ার থলিটা থেকে গাজরগুলা ধুয়ে এনে দে না। সাহেদা মুখ বাঁকা করে চইলা গেল। ওরে আমার জ্বালাইতে বড্ড ভালা লাগে। বেস্টু হবে আর জ্বালাবো না, তা হয়? কিছুক্ষণ পর সে মাত্র একখানা লালু মিয়া নিয়া হাজির। আমি কইলাম, একটা!?
- হ, একটাই খাবা। আরো চাইলে নিজে গিয়া আনতে পারো।
- এই তুই এত কিপটা হইলি ক্যান?
- খেয়ে নে তাড়াতাড়ি। আজকে তোর ঠ্যাংটা ভালো থাকলে ছাদে যাইতাম।
আমি গাজরে কামড় দিয়া ক্রাশের চিন্তায় মগ্ন হইলাম। কেমনে কি করা যায়। সাহেদা আমার সামনে হাত নাড়াই কইল, কোন দুনিয়ায় হারাইলি?
- কোন দুনিয়ায় আর হারামু? ক্রাশের কথা চিন্তা করতেসিলাম। এত্তো কিউট! ওরে আমি বিয়া করি শো কেসে সাজাই রাখমু।
- হ, সে তো তোরে ঘরে তুলার জন্য খাঁড়াই আছে। তুই টুকি কইবি আর সে তোরে ঘরে নিয়া যাইবো।
- এমন করে বলস ক্যান? না নিলে জোর করি ঢুকমু। এত্তো কিউট বর আর কই পামু।
- কি যে দেখলি তার মাঝে!
আমি খুশি মনে লালু মিয়ারে আরেক কামড় দিলাম। ক্রাশের চিন্তার ঠেলায় লালু মিয়াও সেই মিষ্টি লাগতেসে।
.
.
.
.
ঠ্যাংয়ের জ্বালায় আরো দুইদিন ঘরে বসি রইলাম।চারদিনের দিন প্লাস্টার খুলাই আনলাম ডাক্তারের কাছ থেকে। ঠ্যাং ঠিক হইতেই ক্লাসের প্যারা শুরু। আমরা দুইটা ক্লাস শেষেই শপিংয়ে চলি গেলাম। শালার গোয়েন্দাগিরিতে ঠ্যাং ভাঙ্গার জন্য কোথাও ঘুরতেও পারতেসিলাম না। এদিক ওদিক ঘুইরা একটা মার্কেটের সামনে আসলাম। তার বিপরীতেই একটা কিন্ডারগার্টেন আছে। সাহেদা কইলো, এই শুন না, ঐ কিন্ডারগার্টেনের সামনে ফুসকা, চটপটি বিক্রি করে। অনেক মজা। আমি খাইসিলাম। চল না ওখানে যাই। ফুসকা আর চটপটির কথা শুইনা আমার পেটের ইন্দুর বিলাইগুলার জিভেও পানি চলে আসলো। আমি চোখ টিইপা কইলাম, ডান।
গিয়া বসলাম ওখানে। সাহেদা কইলো, চাচা, দুই প্লেট ফুসকা আর চটপটি। তাড়াতাড়ি দিয়েন। নাহলে ছুটি হলেই বাচ্চা কাচ্চা সব এসে ভীড় করবে। পাঁচমিনিটেই আমগো খানা রেডি। চটপটিটা মুখে দিতেই গলে যায়। ফুসকাটাও এতো মুচমুচে। ইয়াম্মি! আমি কইলাম, সাহেদা, এবার থেকে এখানে আইসা খামু। কি স্বাদ! আমি গপ গপ করে খাইতেসি। সাহেদা মুখ বাঁকাই কইলো, তুই কত বছর খাস নাই? আমি উত্তরে মন গলানো হাসি দিলাম। যদিও এই হাসি সাহেদা ধারে কাছে নিল না। আমাদের খাওয়া শেষ না হইতেই কিন্ডারগার্টেনের ঘন্টার ধ্বনি শুনা গেল। আমরা পার্সেলও অর্ডার করসিলাম। তাড়াতাড়ি চাচারে কইলাম, চাচা, পার্সেলগুলো। পার্সেলগুলা নিতে নিতে এক গাদা বাচ্চা আমাদের ঘিরে হাতে টাকা নিয়ে লাফাইতে লাফাইতে চিল্লাইতে লাগল, আমাকে দেন, আমি খাবো। আমি সবার দিকে তাকাইতে হঠাৎ একটা বাচ্চারে নজরে পড়ল। সে সবার মাঝে দুই হাতে একটা গাজর শক্ত করে ধরে খরগোশের মতো কচর কচর কইরা খাইতেসে। দেখে আমার হাসি পাইলো। আমি সাহেদাকে কইলাম, ওই, বাচ্চাটারে দেখ কেমনে ভীড়ের মধ্যে গাজর খাইতেসে। সাহেদা দেখে কইলো, হাসিস না হাসিস না, গাজর খাইতে লাগলে তোকেও ঐ বাচ্চাটার মতো লাগে। সে হচ্ছে বাচ্চা খরগোশ আর তুই হচ্ছিস বুইড়া খরগোশ।
- হ। চল।
আমরা কোনোমতে ভীড় ঠেইলা রওনা দিলাম। গিয়া ঢুকলাম মার্কেটে। সেখান থেকে দুইজনে টুকটাক কিছু কিইনা অর্নামেনস কেনার জন্য একটা দোকানে ঢুকলাম। আমি যখন এক জোড়া কানের দুল আয়নায় পরে দেখতেছিলাম তখন দেখলাম আমাদের পাশের দোকানে ঝোলানো ওড়নার মাঝে একটা বাচ্চা আমাদের লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতেসে। চেনা চেনা লাগল। আমি ভাবলাম হয়ত বাচ্চাটা কারো সাথে আসছে। আমরা কেনাকাটা করে মার্কেট থেকে বের হইতেও কেন জানি মনে হইল কেউ আমাদের ফলো করতেসে। আমি সাহেদারে কইলাম, এই, সাবধানে পিছন ফিরে দেখতো কেউ আমাদের পিছু নিসে কি না। ও তাকাই কইল, একটা কিন্ডারগার্টেনের বাচ্চা মেয়ে আমাদের পিছনে আসতেসে।
চলবে…
আমি সাহেদারে কইলাম, এই, সাবধানে পিছন ফিরে দেখতো কেউ আমাদের পিছু নিসে কি না। ও তাকাই কইল, একটা কিন্ডারগার্টেনের বাচ্চা মেয়ে আমাদের পিছনে আসতেসে।
- বুঝছি, সেই লালু মিয়াওয়ালা আন্ডাবাচ্চা।
- লালু মিয়াওয়ালা আন্ডাবাচ্চা কিতা?
- আরে ঐযে ফুসকার ওখানে দেখাইলাম একটা বাচ্চাকে খরগোশের মতো লালু মানে গাজর মিয়া খাইতেসিলো। সেই আন্ডাবাচ্চা।
- আন্ডাবাচ্চা কি আবার?
- আন্ডাবাচ্চা হলো আন্ডাবাচ্চা।
আমরা উভয়ে পিছনে ফিরতেই বাচ্চাটাও দাঁড়াই গেলো। বাচ্চাটা আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকাই আছে। উফ্! আন্ডাবাচ্চাটা এত্তো কিউট আর গুলুমুলু! গুবলু গুবলু লাল গাল। বড়ো বড়ো চোখ মেইলা আমার দিকে জুলুজুলু করি তাকাই আছে। ঠিক আমার লালুমিয়ার মতো। আমি হাঁটু ভাঁজ কইরা বইসা মিঠা হাসি দিয়া ওর গাল দুইটা কচলাইতে লাগলাম। বাচ্চাটা কিসু কইল না। চুপচাপ আমার দিকে ভেটকাই রইলো। সাহেদা আমারে ঠেলা দিয়া কইলো, কি করছিস? চল।
আমি উইঠা দাঁড়াইতেই হঠাৎ বাচ্চাটা ভেউ ভেউ কইরা কাঁইদা দিল। আমি জিগাইলাম, কি হল? বাচ্চাটা কাঁদতে কাঁদতে আমার ঠ্যাং দুইটা জড়াই ধরে কইল, আম্মু…… আম্মু……
- এই বাচ্চাটা মনে হয় ওর আম্মুকে খুঁজতেসে। আমাদের পিছন পিছন চলে আসছে।
- হয়তো ফুসকা খাবে। আমরা যে পার্সেল নিসি।
- হবে হয়তো। দাঁড়া।
আমি আমার ফুসকার প্যাকেটটা ওর এক হাতে ধরাই দিয়া অন্য হাত ধইরা কিন্ডারগার্টেনের দিকে হাঁটা দিলাম। ও ভালো মেয়ের মতো আমার হাত ধইরা হাঁটতে লাগল। চোখে মুখে আলো জ্বলকাইতেসে। সাহেদা পাশ থেকে কইল, মেয়েটা কি সুন্দর তোর হাত ধরে হাঁটতেসে। যেন তুই ওর আম্মু। আমি হেসে কইলাম, এসব কইস না। আমার জামাই কাঁনবো। আচ্ছা বাবু, তোমার নাম কি?
- আম্মু…… আমার নাম ভুলে গেসে…… এ্যাঁ…… আমাকে ভুলে গেসে…
মেয়েটা আবার ভেউ ভেউ কইরা কাঁদতে লাগল। আমি ওর চোখের পানি মুছে দিয়া কইলাম, ছিঃ, এভাবে কাঁদতে আছে? চলো তোমার আম্মুর কাছে দিয়ে আসি। কিন্ডারগার্টেনের কাছে আসতেই সাহেদা বলল, আমার কাছে কেন জানি মনে হচ্ছে ও তোকেই আম্মু ডাকছে।
- আরে ধুর পাগল, আমার এখনো বিয়া হয় নাই। জামাই হয় নাই। বাচ্চা আসবো কোত্থেকে?
- তোর……… বিয়ার বয়স হয় নাই!?
- না মানে, বিয়া হয় নাই আর কি……
আমি দারোয়ান চাচার কাছে গিয়া কইলাম, চাচা, ও আমাদের পেছন পেছন চলে এসেছিল। দয়া করে অভিভাবকদের ফোন দিয়ে বলুন ওকে এসে নিয়ে যেতে। বইলাই আমরা হাঁটা ধরলাম। মেয়েটা দারোয়ান থেকে ছুটার জন্য ছটফট করতে লাগল আর আমাদের দিকে হাত বাড়িয়ে চিৎকার কইরা কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল, আম্মু…… আম্মু……। আমি পেছন ফিরে একবার তাকাইলাম। দেখলাম আমার বয়সী একটা মেয়ে ওর দিকে দৌঁড়ে আসতেসে। ভাবলাম হয়তো সেই ওর আম্মু। আমি সামনের দিকে ফিইরা গেলাম। মনটা খারাপ হইয়া গেল।
আরো অনেকক্ষণ ঘুর ঘুর কইরা বাসায় আসলাম। সাহেদাকে বিদায় দিয়ে যখন বাসার দরজায় নক দিমু তখনই একটা বাচ্চার কান্নার শব্দ শুনতে পাইলাম। পাশের বাসার ভেতরে কাঁনতেসে। এত জোরে যে আমার মনে হইলো দেয়ালটা না ফাঁড়ি যায়। আমি সাবধানে গিয়া কান পাতলাম। বাচ্চাটা আম্মু আম্মু কইরা কাঁনতে কাঁনতে কাশি উঠাই ফেলল। আমি মনে মনে কইলাম, কি মা, বাচ্চারে ঘরে রেখে কোথায় চলে গেল! কান্না শুইনা অনেক খারাপ লাগতেসে কিন্তু কি করা!
.
.
.
.
পরদিন বিকালে সাহেদার সাথে আবার বের হইলাম। ওর নাচের ক্লাস। পিচ্চি পিচ্চি পোলাপাইনদের নাচ শিখায়। বলা যাইতে পারে পার্টটাইম জব। মনের দুঃখে কইলাম, আমি খুঁইজ্যাও একখান পার্টটাইম জব জুটাইতে পারলাম না। জীবনে কি করলাম! সাহেদা ভেংচি মেরে কইল, কেন? ক্রাশ খাইছিস না? রাস্তায় যাইতে যাইতে কইলাম, ধুর, ঐটা তো কথার কথা কইসিলাম।
- আমিও তাই কইলাম।
- তুই এত টেলেন্ট নিয়ে রাতে ঘুমাস কেমনে?
- আমার মধ্যে তুই কোত্থেইকা ট্যালেন্ট দেখলি?
- এই যে পড়াশোনার সাথে গান পারিস, নাচ শিখাস, গল্প লিখিস।
- এগুলা একটু আধটু সবাই পারে। তুইও তো পারিস। তোর গান শুনেছি আমি। তুই অনেক ভালো গান গাস। আমার থেকেও।
- হ, আমি বাথরুম সিঙ্গার।
- তোর মাথা। আমি বাজি ধরে বলতে পারি তুই আগে আরো ভালো গান গাইতি। তোর গলার কি অবস্থা?
- এইতো। মাঝে মধ্যে সামান্য অস্বস্তি লাগে গলায়। তাও ঠিক আছি এখন। তুই তো অপারেশনের পরের গলা দেখিস নাই। পুরা ফাড়া বাঁশ ছিল।
আমাদের কথার মাঝেই কতগুলা আন্ডাবাচ্চা দৌঁড়াই এসে ঘিইরা ধরল। আমি কইলাম, তুই তো ফ্যামাস। সাহেদা মুখ ভেংচাই কইল, হ। তারপর সবাইরে নিয়া নাচের জায়গায় চইলা গেল। জায়গাটা ভীষণ ভালো লাগে আমার। এই নিয়ে তিনবার আসছি। চারপাশ খোলামেলা। চার কোনায় চারটা পিলারের উপর ছাদ। বাতাসে গুডগুডি খেলে ভিতরে। পাশে একটা দিঘি আছে। আশে পাশে কিছু বড়ো গাছপালা আর টবে ফুল গাছে ভর্তি। বাতাস বয়ে গেলে অনেক আরাম লাগে। সেখানে গাছের আড়ালে একটা বেঞ্চ আছে। আমি প্রত্যেকবার আসলে সেখানে গিয়া বসি। আজকে গিয়া দেখি সিট দখল। একটা আন্ডাবাচ্চা ওখানে বসি ফ্যাত ফ্যাত করতেসে। গিয়ে দেখি সেই লালুওয়ালা আন্ডাবাচ্চা। ফ্যাত ফ্যাত করতেসে আর গাজর চাবাইতেসে। আমি পাশে গিয়া সাবধানে বসলাম। আমার দিকে তাকাইতেই আন্ডাবাচ্চাটা আমারে জড়াই ধরে মরা কান্দা শুরু করল। কি জ্বালা! এ বাচ্চা এত কাঁনদে ক্যান? সে আমার জামায় ইচ্ছা মতো নাকের চোখের পানি মুছে মুখ তুলে কইলো, আম্মু তুমি আমাকে রেখে কই চলে যাও। আমি আশেপাশে তাকাই দেখি কেউ নাই। তাহলে এ আম্মু ডাকলো কারে? সে আমারে শক্ত করে জড়াই ধরে কইল, আজকে আর যেতে দিবো না। মুসিবত! কইলাম, তোমার আম্মু কোথায়? সে আমারে আরো জাপটে ধইরা কইল, এই যে। আমি মনে মনে রবীন্দ্রনাথের মতো কইলাম, ওহে আন্ডাবাচ্চা, তোমার চক্ষে কি ছানি পড়িয়াছে? ভালো করিয়া দেখো, আমি তোমার আম্মু নহে। আমার এখনো বিয়ার বয়স হয় নাই। পরে আবার কইলাম, তওবা, তওবা, কি কই! এই কথা ক্রাশ শুনলে তো বিয়াও করবে না।
- দেখো বাবু, আমি তোমার আম্মু না।
- তুমিই আমার আম্মু। আমাকে রেখে কোথায় চলে গিয়েছিলা? কালকে মুন খাম্মি আর আব্বুকে বলসি তোমার কথা৷ কেউ বিশ্বাস করেনি। সবাই বলসে তুমি মরে গেসো। আজকে সবাইকে বলব, দেখো, আমার আম্মু মরে নাই। আম্মু……
মেয়েটা আবার ভেউ ভেউ কইরা ফের কান্না জুইড়া দিল। সাহেদা কালকে ঠিকই কইসিলো। ও আমারেই আম্মু ডাকতেসিলো। আমি ওর মাথায় হাত বুলাই কান্না থামানোর চেষ্টা কইরা বললাম, তোমার নাম কি বাবু? সে কাঁদতে কাঁদতে কইল, আম্মু…… আমি পর্ষী। তুমি আমার নাম ভুলে গেছো! এ্যাঁ……
- এমা, কাঁদে না। তুমি না নাচ শিখতে আসছো? দেখো সবাই ওখানে। তুমি এখানো কাঁদতেসো জানলে ওরা কি বলবে? যাও নাচের ক্লাসে যাও।
- উহু, গেলে তুমি হারিয়ে যাবে।
- হারিয়ে যাবো কেন?
- তাহলে আমার সাথে আসো। আমি যতক্ষণ নাচ শিখবো তুমি সামনে বসে থাকবে। তারপর দুইজনে একসাথে বাসায় যাবো।
আমি বেকুবের মতো হাসলাম। কি কমু? এ দেখি আমার পিছুই ছাড়ে না। আমি আবিয়াত্তা (অবিবাহিত) মানুষ। এখনো কারো সাথে একটা প্রেমও করতে পারলাম না। আর এখন জামাইসহ বাচ্চা ফ্রি পাইতেসে। পর্ষী আমারে টাইনা নিয়া সামনে বসাই বাচ্চাদের সাথে নাচ শিখতে লাগল। ক্ষণে ক্ষণে আমার দিকে তাকাই চেক করতে লাগল আমি আছি কি না। যেন জেলখানার পলাতক আসামি।
নাচ শেষ হইতেই পর্ষী দৌঁড়ে আমার কাছে চইলা আসলো। আমার হাত শক্ত করে ধইরা বসে রইল পাশে। সাহেদা ক্লাস শেষে আমার পাশে বসছিল। আমি ওর দিকে অসহায়ের মতো তাকাইয়া ফিসফিস করে কইলাম, সাহেদা, ঐদিন তুই ঠিকই বলছিলি। এখন এর থেকে কেমনে বাইর হমু? সে তো আমারে আম্মু আম্মু কইয়া পাগল হই যাইতেসে। সাহেদা জুসের স্ট্র মুখে ঢুকাইতে ঢুকাইতে কইল, তাইলে ওর আম্মু হই যা। আমি মুখ বাঁকা করি কইলাম, ওর আম্মু হইলে, আমার ক্রাশ কানবো। আমার কথা শুইনা বেকুবটা হাসলো। আমি বাচ্চাটার দিকে তাকাইলাম। বাচ্চাটা কি যে গুলুমুলু। ইচ্ছা করে সারাদিন গাল দুইটা টিপি। বাচ্চাটার মা হয়তো মরে গেসে তাই আমারে মা ভাবতেসে। আমি বাচ্চাটার দিকে তাকাই রইলাম। হঠাৎ বাচ্চাটা খাম্মি বলে দৌঁড়াই গেল। আমি ভাবলাম, এই সুযোগ। আমিও উঠে লুকাই পড়লাম। নইলে কখন আবার আম্মু আম্মু কইয়া টানাটানি করে। শেষে না তার বাপরেই বিয়া করতে হয়।
পর্ষীটা টানতে টানতে ওর খালামনিকে আমার বসে থাকার জায়গায় নিয়া আসলো। সাহেদা আগের মতোই জায়গায় বসে জুস খাইতেসে। পর্ষী এদিক ওদিক তাকাই আমাকে খুঁজে ডাকতে লাগল, আম্মু… আম্মু… ওর খালামনি বলল, পর্ষী, এমন করে না সোনা। চল বাসায় যাবে।
- না…… আম্মু একটু আগেও আমার সাথে এখানে ছিল। আমার গাল নিয়ে আগের মতো খেলা করছিল। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। তুমি ম্যামকে জিজ্ঞেস করো। আম্মু… আম্মু…
- পর্ষী, তোমার আম্মু বেঁচে নেই মা।
- না, বেঁচে আছে। আমি আম্মুকে জড়িয়ে ধরে ছিলাম। তুমি না আসলে আম্মু এখনো থাকতো। আমি তোমার কাছে দৌঁড়ে গিয়েছি বলে আম্মু আবার আমাকে ফেলে চলে গেছে। আম্মু……
পর্ষী কান্না শুরু কইরা দিল। ওর খালামনি জোর করে ওরে নিয়া চলে গেল। সে অনবরত আম্মু আম্মু করতেসে। ওরা চলে গেলে আমি বাইর হইলাম। সাহেদা বলল, মেয়েটাকে দেখে বড্ড খারাপ লাগতেসে। তুই এমন চোরের মতো পলাইলি ক্যান?
- যদি আমারে ওর আম্মু ভাইবা নিয়া যায়।
- হ, তার খালামনির মাথায় তো বুদ্ধি সুদ্ধি নাই। বাচ্চাটার মতো তোরেও ওর আম্মু ভাববে। তুই থাকলে ব্যাপারটা এখানেই ক্লিয়ার হয়ে যাইতো।
- আইচ্ছা আইচ্ছা, পরের বার ক্লিয়ার করমু। এখন চল। বাসায় যামু।
ওরে নিয়া বাসার দিকে রওনা দিলাম। পর্ষী বাচ্চাটার জন্য মন খারাপ লাগল। কিন্তু আমি আর কি করমু!?
চলবে…
ওরে নিয়া বাসার দিকে রওনা দিলাম। পর্ষী বাচ্চাটার জন্য মন খারাপ লাগল। কিন্তু আমি আর কি করমু!?
.
.
.
.
কখন থেকে পার্কে বইসা আছি। বেকুবটা আসার নামই নাই। এদিকে ভার্সিটিতে লেট হয়ে যাইতেসে। অস্থিরতায় পা দুইটা তখন থেকে কাঁপতে কাঁপতে একটা আরেকটার সাথে ঠোকর খাইতেসে। ধুর বাপু, মাঝে মধ্যে এই সাহেদাটা এত লেট করায়! আজকে বিকালে ক্লাস, তাও লেট। কি দরকার আছিলো এত তাড়াতাড়ি বের হওয়ার। বাসা থেকে আরাম কইরা চারটা খেয়ে যাই ক্লাসটা করতাম। মাইয়াটা তাও করতে দিল না। কি এক দরকার, বের কইরা আনল সক্কাল সক্কাল। এখন কোন দিকে হাওয়া হইসে আল্লাহ মালুম। আজকে স্যারের ঠাট্টা কইরা দেওয়া লেট লতিফা নামটা শুনলে বাসায় গিয়া ওর ঘাড় মটকামু। ডানে বায়ে সমান তালে তাকাইতে তাকাইতে খুদা লাইগা গেল। ঘড়ির দিকে তাকাই দেখলাম সোয়া একটা। দুইটায় ক্লাস। যাইতে আধাঘন্টা, জ্যামের চক্করে পড়লে পুরা এক ঘন্টা। আজকে আমার কপালে খানা নাই। ক্লাসে পেটটা ষাঁড়ের মতো ডাকলে কিছু করার নাই। সাহেদাটা আমার প্রেস্টিজ রাখবো না।
- তুই আছিস!!!!!
- তো কই যামু? কোত্থেকে আসলি? এত হাঁপাছিস কেন? কোনোখানে চুরি করতে গেসিলি নাকি পুলিশ তাড়া করসে? না কুকুর ……
- হইসে আর আজাইরা বকিস না।
- তা তো বকতেসি। কয়টা বাজে?
- পানি আছে? দে তো।
পানির বোতল দিতেই ঢক ঢক করে পুরোটা শেষ কইরা ফেলল। আমার শেষ সম্বল! আমার পানি! আমি অসহায়ের মতো খালি বোতলটার দিকে তাকাই থেকে কইলাম, এক ফোঁটাও রাখলি না!?
- ছিলই বা কতটুকু? ঐ তো তলানি।
- খুদা লাগসে। আমি তোরে পানি দিসি, তুই খাওন দে।
ও আমারে একটা এলপেনলিবেন ধরাই দিয়ে কইল, এটা খা।
- এটা কি!?
- খাওন। তোর ফেবারেট। চল লেট হইতেসে।
আমি ভ্রূ কুঁচকাই ওর দিকে তাকাইলাম। ও কইলো, খাবি না? তাহলে ফেরত দে।
- না থাক। এতক্ষণ বসে থাকতে থাকতে আমার ব্রেইনের কাজ কমি গেসে। একটু চিনি পড়ুক।
- হুহ, চল চল।
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেইলা ওর সাথে সিএনজি উঠলাম। প্যাকেট খুলে চকলেটটা মুখে দিয়ে বাইরে তাকালাম। কিছুদূর গিয়া জ্যামে পড়তেই মনে পড়ল আজকে নতুন টিচার আসার কথা ক্লাসে। প্রথম দিনই কালার হই যামু। সাহেদারে, তুই আমার মান ইজ্জত রাখলি না। মনে হইতেসে আজকে কপাল খারাপ।
- এই টপিক সম্পর্কে তোমাদের আর কোনো প্রশ্ন আছে?
- আসতে পারি?
যেটা ভাবছি সেটাই হইসে। এখন দুইটা বিশ বাজে। সিড়ি বেয়ে পাঁচতলা উঠে অলরেডি হৃদপিণ্ড বের হয়ে আসতেসে। পেটে দানা পানিও নাই। আমার সাথে পেটে থাকা ইন্দুর বিলাই গুলাও মনে হয় এত পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে লাফাইতেও পারতেসে না। স্যার পেছন ফিইরা ছিল। আমাদের দিকে তাকিয়ে পুরা স্ক্যান কইরা নিয়া আমার দিকে তাকাইয়া নির্লিপ্ত কণ্ঠে কইল, তোমরা?সাহেদা কইল, আমরা ক্লাস করতে এসেছি স্যার।
- কটা বাজে?
আমরা বেকুবের মতো হাসলাম। স্যার বললেন, আজকে প্রথম দিন তাই ছেড়ে দিলাম। যাও বসো। আমরা চুপচাপ গিয়া চেয়ারে বসলাম। পেছন থেকে গুঁতা দিয়া সাহেদারে কইলাম, এই স্যারটা কি হ্যান্ডসাম, তাই না রে? সাহেদা চাপা কন্ঠে কইল, ওই চুপ করবি?
ক্লাস শেষ করার পর ফাইরুজরে জিগাইলাম, ফাইরু স্যারটার নাম কি রে?
- আয়ান স্যার।
নাম শুইনা সাহেদারে ফিসফিস করে কইলাম, তোর আয়ান স্যাররে পছন্দ হইসে? ও খাতা উল্টাইতে উল্টাইতে কইলো, সেটা আবার কোন স্যার? আমি মুখ সুঁচালো করে কইলাম, একটু আগে যে ক্লাস নিসে। সাহেদা খাতা ব্যাগে ঢুকাই কইলো, এই কাঠখোট্টা স্যাররে কে পছন্দ করবে? ওর কথা শুইনা আমি মুখ চেপে হাসতেসি আর মনে মনে কইতেসি, তোর জন্যই স্যার একদম পার্ফেক্ট। হঠাৎ বাইরে নজর পড়তেই একজন লোককে দেখলাম। কাকে যেন খুঁজতেসে। লোকটাকে বেশ চেনা চেনা লাগলো। চোখের আড়াল হতেই দ্রুত বাইর হইয়া এদিক ওদিক খু্জতে লাগলাম। খুঁজে তো পাইলাম না তবে একটা জিনিস বুঝলাম। দিন দিন লম্বা ঠ্যাংওয়ালা পোলার সংখ্যা বাড়তেসে। তাই চোখের পলকে হাওয়া হই যায় সব।
রাত সাড়ে সাতটার দিকে দরজায় নক পড়লো। খুইলা দেখি সাহেদা। ভেতরে ঢুইকা কইল, তোর জন্য একটা সুখবর আছে। তোর ক্রাশের খবর আনসি। আমি তো খুশিতে মঙ্গল গ্রহে যাইতে মন চাইল। আমি ওরে রুমে নিয়া আমার হীরার দাঁত দেখাইয়া বসলাম।
- বল বল, কি খবর?
- তুই যদি রাজি থাকিস তো সতীন সহ একটা বাচ্চার সাথে আরেকটা ফ্রি।
ওর কথা শুইনা আমার হীরার দাঁত গুলা আবার গুহায় ঢুকাইয়া ফেললাম। এ আমি কি শুনতেসি! হৃদপিণ্ডটা কয়েক টুকরা হইয়া কাঁনতসে। আমি কাঁদো কাঁদো হইয়া কইলাম, এসব কি কইলা বান্ধবী? সাহেদা ঝিলিকরে ডেকে কইল, ঝিল, আমারে একটা প্লেটে কইরা আচার দে তো। ঝিলিক আচার আনতে গেল, আমি সাহেদারে জিগাইলাম, এ খবর কেমনে পাইলি?
- ভার্সিটি থেকে আসার পর আম্মার সাথে আবার বের হইসিলাম। তখনই একটা মার্কেটের সামনে তোর ক্রাশরে দেখলাম। দেখলাম গাড়ি থেকে এক দম্পতি বের হইলো। সে সাথে তোর ক্রাশ। কাছে গিয়ে নাম জিজ্ঞেস করলাম। বলল, সাবিত। জিগাইলাম, আপনি গাড়ি চালান। বলল, জ্বি। বললাম, বাসায় কে কে আছে? বলল, বুড়া মা, বউ আর দুইটা বাচ্চা।
বউ আর বাচ্চা শব্দ দুইটা তীরের মতো আমার নরম মনে ঢুইকা গেল। আমি ফ্যাত ফ্যাত করতে লাগলাম। এতদিনে সব ফালাইয়া যাও একটা পোলার উপর ক্রাশ খাইলাম হেটাও নাকি দুই বাচ্চার বাপ। ঝিলিক আসতেই আমি ভালা মাইয়ার মতো বইসা রইলাম। হে জানলে আবার আব্বা আম্মারে কইবো। ঝিলিক যাইতেই মরা কান্না শুরু করলাম। সাহেদা পিঠে একটা কিল দিয়া কইল, চুপ কর। হুদা কাঁনদিস কা?
- আমার ক্রাশ, এ্যাঁ এ্যাঁ……
- তোর ক্রাশের গুল্লি মারি। তুই জানিস লোকটা সিগারেট খায়? আমার সামনে খাইতেসিলো।
শুইনাই আমার মুখ বাঁকা হইয়া গেল। আসলেই খচ্চর ব্যাডা। দুনিয়ায় আমার কাছে যত মানুষরে খচ্চর লাগে তার মধ্যে সিগারেট খাওয়া মানুষগুলারে বেশি লাগে। সিগারেট কস্মিনকালেও আমার সহ্য হয় না। আমি চোখ মুইছা কইলাম, ধুর, শালা জীবনে আর ক্রাশই খামু না। এখন আচার দে খাই। আচারের প্লেটে একটা খাবলা দিলাম।
.
.
.
.
যাহ! আমার ক্রাশ জীবন শুরু হইতেই শ্যাষ হইয়া গেল! আমার চেরি বর করলা বর হই গেল। ইচ্ছা করতেসে ঐ ব্যাডারে পিডি আমি কান্দি। যাহোক ভুইলা যামু নে, ক্রাশই তো। বর তো আর না। বর হইলে তো হাত ঠ্যাং ভাইঙা খাটে বইসাই রাইখা কইতাম, আর সিগারেট খাইবি?এগুলা ভাবতেসি আর কিড়মিড় করতেসি। ভাবনা শেষ হইতেই মুখ থেকে ব্রাশটা বাইর কইরা দেখলাম তার রুহানি আত্মা বাইর হই গেসে আমার দাঁতের চাপে। ব্যাডা খচ্চরের জন্য আমার ব্রাশটাও গেল। তোর থেইকা আমি আমার ব্রাশের দাম নিয়া ছাড়মু।
আজকেও বিকালে ক্লাস। আব্বা ছুটিতে আছে। আম্মা সকাল সকাল হাসপাতালে গেসে গা। ঝিলিক কাপড় দিতে ছাদে গেসে। আমি আর আব্বা সকালের ভাত খাইতে বসছি। আব্বা আমার দিকে হা কইরা তাকাই আছে। আমি করলা দিয়া একের পর এক লোকমা গিলতেসি আর বিড় বিড় করতেসি। চোখের পলকে করলার পাতিল খালি। আমি খাওয়া শেষ কইরা তিতা ঢেঁকুর তুললাম। আব্বা আমার কপালে হাত দিয়া কইলো, জ্বর তো নাই। তাহলে!?
- কি হইসে আব্বু?
- তুই করলা খাইলি কেমনে?
- করলা! কই আমি তো ক র লা……
তাকাই দেখলাম আব্বা এখনো খালি প্লেটে বইসা আছে আর এদিকে করলার পাতিল খালি। ঐ খচ্চররে গালি দিতে দিতে কখন যে করলা সব খাই ফেলসি টের পাই নাই। আব্বারে কি কমু চিন্তা করতে করতে আব্বা কইলো, দাঁড়া তোর আম্মারে ফোন দি। আমি তাড়াতাড়ি কইলাম, না না আব্বু৷ আমি ভালো আছি। আজকের করলাটা খুব মজা হইসে তো তাই খাই ফেলসি। যদিও খেয়াল হইতে বমি আসতেসিলো। পারলে এখুনি বমি কইরা দিতাম। আব্বা কি ভাইবা বইসা পড়ল। আমি আব্বারে তরকারি দিয়া কইলাম, তুমি খাও, ঠিক আছে আব্বু। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। বইলাই আমার সামনে থেকে সইরা আসলাম।
বাইর হইতেই ফোন আসলো একটা। অচেনা নাম্বার। ধরলাম। হ্যালো হ্যালো করলাম। কোনো কতা নাই। ওপাশে কোনো শব্দ নাই। মেজাজটা খারাপ হই গেলো। একে তো ক্রাশ দুঃখে কান্দন আসতেডে। তার উপর এসব ফাউ কল আইসা মেজাজটাই খারাপ হই গেসে। কতা কইবি না, যাহ কাইট্টা দিলাম। দুই পা যাইতেই আবার কল। ধইরাই কইলাম, কি সমস্যা? তাও কথা কয় না৷ ধুর, কাইটা ব্লক মাইরা দিলাম। সিএনজিতে বড় কইরা দীর্ঘশ্বাস ফেলতেই সাহেদা জিগাইলো, এত বড়ো কইরা নিঃশ্বাস ফালাইলি? ক্রাশের কথা মনে পড়তেসে? শুইনাই মেজাজটা আরো খারাপ হই গেল। কইলাম, ক্রাশ আর কইস না। বিরক্ত লাগের। সাহেদা কইল, কি হইসে?
কিসু বলার আগেই ফোন বেজে উঠল। আবার অচেনা নাম্বার। আমার নাম্বার কি কেউ ফেসবুকে ছাইড়া দিসে নাকি? এত অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসে ক্যান! ধরে কইলাম, হ্যালো? অপরপাশ থেকে একটা পোলা কন্ঠ কইল, ভালোবাসি।
চলবে…
এত অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসে ক্যান! ধরে কইলাম, হ্যালো? অপরপাশ থেকে একটা পোলা কন্ঠ কইল, ভালোবাসি। শুইনা মেজাজ আরো খারাপ করে কইলাম, আপনি কে? টুট টুট টুট… কাইটা দিল! আমি রাগে টমেটোর মতো ফুইলা আছি। সাহেদা আমারে জিগাইলো, কে ফোন দিসে?
- আজাইরা।
ভার্সিটি পৌঁছাইলাম একটার দিকে। চারদিকে চড়ুই পাখির মতো পোলাপাইন কিচির মিচির করতেসে। আমার এখন কুল হওয়ার জন্য একটা শান্ত পরিবেশ লাগবো। কিন্তু এমন জায়গা ভার্সিটিতে কই পামু? সাহেদা একটু ক্যান্টিনের দিকে যাইতেসে কি দরকারে। আমিও ওর পিছনে যাইতেসি। কিন্তু ভাবতে ভাবতে পিছাই পড়সিলাম। তখনই একটা পোলার লগে ধাক্কা খাইলাম। পোলার হাতে কি সব জানি ছিল৷ সব ছড়াই ছিটাই পড়ল। আমি সরি কইলাম। সে মাথা নিচু কইরা জিনিসগুলা তুলতেসে। আমিও সাহায্য করলাম। কাগজ দেইখা মনে হইলো ভর্তির কাগজ। নতুন মনে হয়। কাগজগুলা এগিয়ে দিতে মুখের দিকে তাকাইয়া টাসকি খাইলাম। কেমনে কি! এত বাচ্চা দেখতে পোলা হয়!? এরও গাল লাল টুকটুকে। রোদে আরো লাল দেখাচ্ছে। গুবলু গালে গোলগোল চশমা পরা। মুখে হালকা খোঁজা দাঁড়ি। মনে মনে কইলাম, লাল গালওয়ালা পোলার সংখ্যা কি বাড়সে নাকি!? নাকি আমার সামনেই খালি পড়ে!? আমি হা কইরা তাকাই আছি। পোলা মিষ্টি কইরা চোখ নামাইয়া থ্যাংকু কইল। উফ্, শুইনাই আমার কইলজা ঠান্ডা বরফ হই জমি গেসে। পোলাটা চইলা যাইতেই বরফটা একটু গললো। আমি নিজের দুই গালে চাইর চড় মাইরা কইলাম, না, ছোঁয়া, এ হয় না। আর ক্রাশ খাওন যাইবো না। জীবনেও না। কেউ সামনে ছুরি ধইরা ক্রাশ খাইতে কইলেও না। কিন্তু……
পরদিন শুক্রবার। খুব আরামের ঘুম দিতেসিলাম। কিন্তু কিসব ঢুসঢাস শব্দে ঘুমের চৌদ্দটা বাইজা গেল। ঘুম থেকে উইঠা চোখ ডলতে ডলতে আম্মুরে জিগাইলাম, আম্মু…… বাইরে এমন ঢুস ঢাস আওয়াজ হইতেসে ক্যান? আম্মু মাত্র হাসপাতালে যাওয়ার জন্য তৈরী হইতেসিলো। কইল, পাশের বাসায় ভাড়াটিয়া উঠতেসে।
- ও। তুমি কি হাসপাতালে চলে যাইতেসো?
- হুম।
আমি বারান্দা দিয়া উঁকি মারলাম কে উঠতেসে দেখার জন্য। কাউরে দেইখা বুঝলাম না কে উঠতেসে। আমরা যে বাসাটায় থাকি সেখানে এক ফ্লোরে চাইরটা ফ্ল্যাট। আমাদের সামনের ফ্ল্যাটই মনে হয় খালি হইসে। সেখানেই মনে হয় কারা উঠতেসে। কতক্ষণ পরে আম্মা ভেতর থেকে ডাক দিলো। আমি যাইতেই কইল, তোর আব্বু একটু বের হইসে। আমি কইলাম, এত্ত সকালে কই গেসে? আম্মা ব্যাগ নিতে নিতে কইল, সাড়ে দশটা বাজে।
- ঐ হইল। এটা আমার জন্য ভোর।
- শুন, কাপড় চোপড় তো সব জমাই রাখিস। সব ধুয়ে দিসি। যা ছাদে দিয়ে আয়। ঝিলিক এতগুলা আলগাইতে পারবে না।
দেখলাম তিন বালতি কাপড় নিয়া ঝিলিক দরজার সামনে দাঁড়াই ভেটকি দিতেসে। আমি মুখ বাঁকা করে কইলাম, আম্মু, এত মানুষের ভিতরে আমি এখন বাইরে যাবো!? উফ! কত ধুলাবালি, তোমার মেয়ে তো সোনা থেকে ডায়মন্ড হয়ে যাবে।
- যা তো, ঢঙ করিস না। আমি বেরিয়ে যাচ্ছি। তাড়াতাড়ি কাপড়গুলা ছাদে দিয়ে আয়। রোদ চলে যাবে না হলে।
মনে মনে কইলাম, আম্মা, বাইরে যে রোইদ, তোমার এত দামি মাইয়াও যদি এক মিনিট থাকে তো শুকাই কড়কড়ি হই যাবে। দেখবা ঘরে আসলে মুচমুচ কইরা ভাইঙা পড়মু।
আমি ইয়া বড়ো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেইলা দুই বালতি নিলাম। ঝিলিক কইলো, ছোঁয়াপু আমারে দাও দুই বালতি। তোমার কষ্ট হবে। আমি কইলাম, আগে যখন নেস নাই। এখন আর ঢং করিস না।
- সাবধানে বের হইয়ো বাইরে জিনিসপত্র নিতেসে।
- হ, তোরে কইতে হবে না।
বালতি নিয়া মাত্র দরজা খুইলা বাইর হইলাম, সাথে সাথে কিসের সঙ্গে টং করে বাড়ি খাইয়া মাথাটা চরকির মতো চক্কর দিয়া উঠল। আল্লাহ গো! আমার মাথা ফাইট্টা গেল! তাকাই দেখি পাশের বাসার আলমারি উঠাইতেসিলো। আমি বেখেয়ালে তাহার সাথেই বাড়ি খাইসি। আমি শিং উঠবে ভাইবা আবার আলমারিতে মাথা দিয়া বাড়ি দিলাম। উ…রে…… কি জোরে দিসি। আমার কান্ড দেখে লোকজন বেকুবের মতো তাকাই রইল। ঝিলিক কইল, এটা কি হইলো?
- কিছু না।
আমি দেরি না কইরা ছাদে রওনা দিলাম নাহলে কোন সময় আমারে পাগল মনে কইরা পাবনায় দিয়া আসে।
মাথা ঢলতে ঢলতে আর কোনদিকে খেয়াল নাই। এভাবে যে বাড়িগুলা খাইলাম আজকে আমার খবর আছে। এমনিও ফাটা মাথা, বাড়ি দিয়া আরো ফাটাই নিসি। মনে মনে কইলাম, আলমারি তোর কপাল ভালা আমার লগে বাড়ি খাইছিস। অন্য কেউ হইলে তোর মাথা ফুইটা যাইতো। মনের দুঃখে ঝিলিক রে কইলাম একটা গান ধরতো। সে তাহার স্পেশাল কাউয়া সংগীত গাওয়া শুরু করলো। মাথা ব্যাথার চক্করে ভুইলাই গেসিলাম। আমি তাড়াতাড়ি কইলাম, থাম মনা, যে সুর……… আজ কাউয়াদের মাঝে থাকলে এতদিনে কাউয়া রাণী হই যাইতি। ঝিলিক তার আটাইশটা দাঁত বাইর কইরা হাসল। আমার দুঃখ কেউ বুঝলো না। আমার ঘুমটা…আমি ফ্যাত ফ্যাত কইরা নাক টানতে টানতে ছাদে বালতি রাইখা কইলাম, তাড়াতাড়ি কাপড়গুলা মেইলা দে ঝিল। মাথাটা টন টন করতেসে। ব্যাথা উঠতেসে মনে হয়। ঝিলিক ঝটপট কাপড় মেলতে লাগল। আমি দেয়াল ধইরা দাঁড়াই আছি। হঠাৎ মনে হইল কেউ আমার দিকে তাকাই আছে। আশেপাশে তাকাই দেখলাম কেউ নাই। বরং আরো মাথাটা চক্কর দিয়া উঠল। তারপর আর কিসু মনে নাই।
.
.
.
.
বসার ঘরে কাদের যেন কথা শুনা যাইতেসে। বুঝলাম ঝিলিকের। কাউরে আমার এক্সিডেন্টের কথা বলতেসে। আমি কান পাতলাম। ঝিলিক ফ্যাত ফ্যাত কইরা বলতেসে, আমি খালার কাছে শুনসি এক বছর আগে ছোঁয়াপুর একটা অনেক বড় এক্সিডেন্ট হইসিলো। মেলা রক্ত বাইর হইসিলো। তারপর নাকি বড়ো অপারেশনও হইসে।
- এখন ভালো আছে?
- এখনও ছোঁয়াপুর মাথা ব্যাথা করে, বমি হয়, মাথা ঘুরায়……
আমি মনে মনে কইলাম পোলা কন্ঠটা কার? কারে এত বিস্তারিত বর্ণনা দিতেসে? আমার মাথা এখনো প্রচন্ড ব্যাথা করতেসে। তুলতে পারতেসি না। তাই সাহস হইলো না বসার ঘরে যাওয়ার। পোলা কন্ঠটা বলল, আচ্ছা ডাক্তার তো ওষুধ দিয়েছে। এগুলা ঠিকমতো খাইয়ে দিও। আমি পরে এক সময় আসবো।
- আইচ্ছা।
তারপর দরজা মারার শব্দ। আমি চোখ খুইলা দেখলাম ঝিলিক আসছে। আস্তে আস্তে কইলাম, কে ছিল রে? ঝিলিক আমার কাছে বইসা কইল, একটা ভাইয়া। পাশের বাসায় উঠসে। আজকে ছাদে তুমি যখন জ্ঞান হারাইছিলা তখন ভাইয়াটা ছাদে আসছিল৷ তোমারে কোলে করে আনসে, ডাক্তার ডাকসে। আমি বিস্ফোরিত চোখে ঝিলিকের দিকে তাকাইলাম। কাঁদো কাঁদো হইয়া কইলাম, ঝিল, আমারে একটা লালু মিয়া দে। খাই।
বিকালে সাহেদা দেখতে আইলো। আমার সামনে একটা বড়ো কালো থইলা রাখলো। আমি হেলান দিয়া ছিলাম। থইলাই উঁকি দিতেই মনটা আনন্দে একশখানা হইয়া কইল, লালু মিয়া! আমার চোখ মুখ দেখে সাহেদা কইল, অনেক ভাইবা গাজরই আনসি। তোর তো আবার গাজর টোটকার মতো কাজ করে। কেউ যদি বলে আমি তোমারে গাজরের ফ্যাক্টরি দিমু আমারে বিয়া করবা? তুই সুড়সুড় কইরা নাচতে নাচতে তারে বিয়ে করে ফেলবি।
- এমন করে বলিস না।
- তো কেমন করে কমু? চোখ দুইটা কই রাইখা হাঁটিস? ঝিলিকের কাছে শুনসি আলমারির সাথে বাড়ি খেয়ে মাথা ফাটাই এখন কোকাইতেছিস।
- আরে সব ঐ আলমারির দোষ। আমার কোনো দোষ নাই। বিশ্বাস কর।
সাহেদা আর কিসু না কইয়া মাথা নেড়ে বলল, ডাক্তার কি বলসে?
- জানি না। ঝিল, জানে।
- কি বলসে রে ঝিল?
- রেস্ট নিতে বলসে। কিসু ঔষুধ দিসে। আর বলসে যদি ঔষুধের জন্য জ্বর আসে তবে জলপট্টি দিতে।
- আন্টি আসবে কখন?
- রাতে।
- আঙ্কেল কই? দেখলাম না যে।
- কি এক কাজে সকাল সকাল বের হইসে। এখনো আসে নাই। ফোন দিসিলাম ধরে নাই। মনে হয় ছোঁয়াপুর দাদার বাড়ি গেসে। কে যেন অসুস্থ।
আমি কইলাম, আমারে তো বলে নাই। কে অসুস্থ রে? ঝিলিক কইলো, জানি না। সাহেদা আমার কানে ফিস ফিস করে কইলো, তুই নাকি কোন পোলার কোলে চড়ে আসছিস। শুইনা আমার কানটা গরম হইয়া গেল। আমি ওরে সরাই কইলাম, আরে ধুর। পরিস্থিতিতে পড়ে এমন হইসে আর কি।
- আমি শুনসি ছেলেটা নাকি অনেক কিউট। তোর সাথে নাকি মানাইসে।
আমি ভ্রূ কুঁচকে কইলাম, কে কইসে এ কথা? ঝিলিক বলল, ছোঁয়াপু তুমি যদি দেখতা। তোমাদেরকে শাবানা আলমগীরের মতো লাগতেসিলো। মনে হইতেসিলো জামাই বউ। আমি মনে মনে কইলাম, তোর শাবানা আলমগীরের খ্যাঁতা পুড়ি। কে না কে আমারে কোলে কইরা আনসে আর তারে আমার জামাই বানাই দিসে।সাহেদা আমার কপালে হালকা টোকা মাইরা বলল, ভালা হই যা তাড়াতাড়ি। কালকে আবার আসমু সকালে। আম্মু বাইরে যাবে কালকে। বলসে তোর সাথে থাকতে। এর মধ্যে আবার বাড়ি টাড়ি খাইস না। সাহেদা চলে গেল। আমি ভাবতেসি কালকে ভালো হইলে পাশের বাসায় একটা উঁকি দিমু কি না। দেখা লাগবে না কার কোলে কইরা আসছি।
রাতে আব্বা আম্মা বিরাট এক ভাষণ দিল। আমি ভিজা বিড়ালের মতো চুপ কইরা বইসা রইলাম। কালকে একবার ঐ বাসায় গিয়া আলমারিটারে ইচ্ছা মতো কেলামু। ঐটার জন্য আমার মাথার বারোটা বাজছে। রাতে আম্মু খাওয়াই দিল তাড়াতাড়ি। আমারও মাথাটা টন টন করতেসিলো তাই শুইয়া পড়লাম।
মাঝরাতে ফোনটা টিং টিং কইরা বাজতেসে। পাশে ঝিলিক ভেটকি মাছের মতো ঘুমাইতেসে। এত রাতে কে কল দিলো? আমি ঘুম ঘুম চোখে হাতড়াই কোনোমতে ফোন ধরলাম। ওপাশ থেকে কে জানি কইলো, কেমন আছো ছোঁয়া? আমি আদো আদো গলায় কইলাম, আপনি কে?
- এত সহজে আমাদের ভুলে গেলে? এত সহজে তো ভুলতে দেবো না ছোঁয়া। এগার বছর আগের ঘটনার আবার পুনরাবৃত্তি না হয় আবার হলো। তুমি এগার বছর আগেও আমার ছিলে, এখনো থাকবে। ভালোবাসি ছোঁয়া, বড্ড বেশি ভালোবাসি।
চলবে…
- এত সহজে আমাদের ভুলে গেলে? এত সহজে তো ভুলতে দেবো না ছোঁয়া। এগার বছর আগের ঘটনার আবার পুনরাবৃত্তি না হয় হলো আবার। তুমি এগার বছর আগেও আমার ছিলে, এখনো থাকবে। ভালোবাসি ছোঁয়া, বড্ড বেশি ভালোবাসি।
কে ফোন করসিলো আল্লাহ মালুম। এগার বছর আগে কি হইসিলো? কি ভুইলা গেলাম? মাথার উপর দিয়া গেল। আম্মারে জিগাইতে হইবো। কিন্তু এখন এসব ভাবার টাইম নাই, এখন ঘুমের টাইম। বড্ড ঘুম পাইতেসে।
.
.
.
.
আশেপাশে তাকাই দেখলাম কেউ নাই। তারপর কে একজন আসলো। আমি চেহারা দেখতেসি না। হঠাৎ আমারে কোলে তুইলা কই যেন নিয়া গেল। উঁচা পাহাড়ের কিনারায় দাঁড়াইয়া কইলো, ছোঁয়া উঠবি না বিছানা থেকে ফালামু? শুইনাই ধড়মড় কইরা উইঠা বসলাম। ভাবলাম এত উঁচা থেকে ফালাইলে আমি বাঁচুম না। তাকাই দেখি সাহেদা আমার দিকে তাকাই বিছানায় বসে আছে। আমি জিগাইলাম, তুই কখন আসলি?
- একটু আগে।
- এত সকালে?
- ফোনটা একটু দেখ কয়টা বাজে। এগারটা।
আমি হাই তুলে কইলাম, কালকের ঔষুধটায় ঘুম পায়। এখনো পাইতেসে। আরেকটু ঘুমাই। আমি শুই যাইতে লাগলে সাহেদা টাইনা কইল, বেশি ঘুমালে খারাপ লাগবে। আমি কাঁদো কাঁদো হয়ে কইলাম, অসুস্থ মানুষরে একটু ঘুমাইতে দে। সাহেদা ছাইড়া দিয়া কইল, ঘুমা গা। আমি আমার দামি দাঁত দেখাইয়া শুইয়া পড়লাম। এক ঘুমে দেড়টা। উইঠা দেখলাম সাহেদা আর ঝিলিক বসার ঘরে টিভি দেখতেসে। আমিও সোফায় আরাম কইরা বসলাম। সাহেদা আচার খাইতেসিলো৷ এ বেডি আমগো বাসায় আসলেই ইন্দুরের মতো শুঁকে শুঁকে আচারের ডিব্বার উপর যাই পড়ে। এখন আরো কিপটা হইসে। আচারের ভাগ বসাইতে চাইলে দিতে চায় না। আমারে দেখে কইলো, ঘুম ভাঙসে ঘুমন্ত সুন্দরীর?
- হ৷ আচার দে তো খাই।
- খালি পেটে কিসের আচার? যাহ, ভাত খা।
- একটা দে না।
- একটাও না। ভাত খাইয়া আয়। খালি পেটে আচার খেয়ে শরীর খারাপ করলে পরে আন্টি আমারে আর আচার দিবে না।
- যাহ কিপটুস।
আমি খাইতে গেলাম। খেয়ে গোসল কইরা বারান্দায় রোইদে একটু বসছি কি বসি নাই আমসির মতো শুকাই একেবারে কড়কড় করতেসি। দিনকাল কি যে হইল! একটু রোদেও বসতে পারি না গরমে। সাহেদা কইল ও চলে যাইতেসে। আন্টি নাকি চলে আসছে। আমি গিয়া দরজা মারলাম। বেচারিটা আসছে আর আমি নাক ডেকে পইড়া পইড়া ঘুমাইসি।
দশমিনিট পরে কে যেন কলিং বেল বাজাইলো। ঝিলিকরে ডাক দিলাম। কোনো খবর নাই। শেষে আমি গিয়াই দরজা খুলে হা কইরা রইলাম। ভার্সিটির সেই গুবলু পোলাটা। সাদা শার্ট প্যান্ট পরা। চুলগুলা একটু বড়ো, ভেজা। বুঝা যাইতেসে গোসল করে আসছে। চুলগুলা গোল্লা চশমার সামনে চোখের উপর। আমার ইচ্ছা করতেসিলো হাত দিয়া চুলগুলা একটু নাড়াই দিই তাইলে গাছের পাতায় জমা বৃষ্টির পানির মতো কিছু ফোঁটা টুপ করে পড়বো। তার হাতে একটা ঢাকা দেওয়া বাটি। বাটিটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়া বলল, গাজরের হালুয়া। বানিয়েছিলাম একটু। আপনি তো অসুস্থ তাই… আনলাম। আমি একটু ভ্যাবাচেকা খাইয়া বাটিটা নিয়ে কইলাম, ভেতরে আসেন।
- না, বাসায় কেউ নেই। যেতে হবে।
- আপনারা সামনের বাসায় উঠেছেন?
- জ্বি, আসি।
কিসু বলার আগেই ছেলেটা টুক কইরা গিয়া দরজা মাইরা দিল। আমিও দরজা মাইরা মাথায় হাত দিলাম। মনে মনে কইলাম, ভাবসিলাম ভার্সিটিতেই তো দেখা, আর চোখের সামনে পড়বে না। পড়লেও কচিৎ। এখন রোজ আমারে এই গুবলুটার মুখ দেখতে হবে! আমি তো পাগল হই যামু। সাহেদারে যদি বলি ও আমারে ঝাঁটা নিয়া দৌঁড়াবে। আমি যে আবার ক্রাশ খাইলাম!
বিকাল থেকে বাটিটা সামনে নিয়া মাথায় হাত দিয়া বইসা আছি। ঝিলিক এসে কইল, ওমা, গাজরের হালুয়া! বাটিটা নিয়া এক চামুচ মুখে দিতেই এমন মুখ বাঁকাইলো যে মনে হয় কেউ যেন ওরে নিম পাতার রস খাওয়াইসে। দৌঁড় দিয়া মুখ থেকে ফালাই আইসা কইল, এটা কি ছিল! এত লবণ ক্যান! কেউ এত লবণ দেয়? লবণ দিয়ে রান্না করসে নাকি? আমি এজন্যই বাটি নিয়া বইসা আছি। এক চামুচ মুখে দিয়া আর খাওয়ার সাধ জাগে নাই। কিন্তু গুবলুটা দেওয়ায় ফেলতেও মন চায় নাই। আর সে সামনের বাসায় উঠায় মাথাটা তিনশো ষাইট ডিগ্রিতে চরকির মতো ঘুরপাক খাইতেসে। ঝিলিক কইলো, বাটি দাও, এগুলা ফালাই আসি। আমি তখন গভীর চিন্তায় মগ্ন। চুলায় কি যেন দিয়ে আসছে, ও শব্দ শুইনা রান্নাঘরে চইলা গেল। আমি তখনও ভাবতেসি। পাঁচ মিনিট পর আইসা কইলো, ছোঁয়াপু, হালুয়া কই?
- কিসের হালুয়া?
- আরে, বাটিতে গাজরের হালুয়া ছিল যে।
- এইতো।
তাকাই দেখি নাই। খেয়াল হইতেই মনে হল কান বয়রা হই গেসে। এত লবণ ছিল যে আনমনে খাইয়া এখন জিহ্বা নাড়াইতে পারতেসি না। ঝিলিকরে ইশারায় কইলাম পানি দে। সে দৌঁড়ে গিয়া এক গ্লাস পানি আনলো। আমি পানি খাইয়া ধাতস্থ হইতেই ঝিলিক কইলো, তুমি এত লবণ কেমনে খাইলা ছোঁয়াপু!? মনে মনে ভাবলাম, হের লগে আমার কোন জন্মের শত্রুতা আছিল যে লবণ দিয়া গাজরের হালুয়া দিল?
- ঝিল। আমাকে একটা ব্যাথার ওষুধ দে। মাথাটা হালকা ব্যাথা করছে।
সকাল আটটায় ঘুম থেকে উঠতে বহুত আলসি লাগে। ভার্সিটি গিয়াও হাই তুলতে লাগলাম। সাহেদা প্রত্যেকবারই আমারে দেইখা হতাশায় মাথা নাড়ায়। এবারও নাড়াইতে নাড়াইতে কইলো, শরীরের কি অবস্থা?
- ঘুম অবস্থা। ইচ্ছে করতেসে রাস্তায়ই পইড়া পইড়া ঘুমাই।
- এটা তোর দ্বারাই সম্ভব। তমাল স্যারের নোটগুলা তোর কাছে আছে?
- স্যারের নোটসগু…লা……
আমি ক্লাসরুমের দরজায় দাঁড়াই ভেতরে তাকাই রইলাম। আমাদের ক্লাসরুমে গুবলুটার কি কাজ! এখানে আসলো কোত্থেকে! সে সুন্দর কইরা শার্ট প্যান্ট পরে আসছে। চশমাও বদলাইসে। গুল্লু মার্কা বাদ দিয়ে চিকন ফ্রেমের চশমা পইরা আসছে। চুলগুলাও সুন্দর কইরা আঁচড়ানো। আমি তো তার রূপে ওখানেই গইলা শেষ৷ আমি যখন তার রূপে বিভোর হয়ে ক্লাসে ঢুকতেসি তখন গুবলুটা পেছন থেকে ডাক দিয়া বলল, আমি কি ঢোকার পারমিশন দিয়েছি? আমি জঙধরা রোবটের মতো তার দিকে তাকাইলাম। একে তো তার রূপে কাইত, এখন পারমিশানও লাগবে!? আমি সাহস জুগিয়ে কইলাম, আপনি এখানে? গুবলুটা কইলো, আমি তোমাদের গেস্ট টিচার। দুইমাস পড়াবো। আমি সন্দিহান চোখে তাকাইলাম। সে তার ভাব নিয়া দাঁড়াইয়া আছে। দেখে এখন ম্যাচিউর মনে হইতেসে। সেদিনও গুল্লু মার্কা চশমায় বাচ্চা লাগসিলো। গুবলুটা বলল, নেক্সট টাইম পারমিশন নিয়ে ক্লাসে ঢুকবে।
- জ্বি স্যার।
আমি সিটে গিয়া বসতে সাহেদা কইল, চিনিস নাকি?
- হুম, আমাদের সামনের ফ্ল্যাটে উঠসে। ওই আমারে ছাদ থেকে কোলে করে আই মিন বাসায় নিয়ে আসছে।
সাহেদা উঁকি দিয়া কইলো, আর কিসু কইলাম না। শেষে স্যারের কোলে কইরা নামলি! আমি চাপাস্বরে কইলাম, আমি কি জানতাম নাকি এই পোলাটা আমাদের স্যার? আর আমার হুশ থাকতে কখনো কোনো পোলার কোলে উঠমু? সাহেদা খাতা খুলে লেকচারে মনোযোগ দিতে দিতে বলল, তবে স্যার খারাপ না দেখতে। তোর সাথে মানাবে। ঝিলিকের চয়েজ আছে৷ আমি লজ্জা পাইয়া কইলাম, সাহেদা তুইও।
বিকালবেলা বাটিটা ফেরত দিতে যামু ভাবতে ভাবতে পাগল হওয়ার অবস্থা। যত দরজার কাছে যাই বুকের ব্যাঙটা লাফাই বের হইয়া যাইতে চাই। কি এক মুসিবত! কিছুতেই শান্ত করতে পারি না। শেষে একগাদা শক্তি নিয়া দরজায় নক করতে একজন মহিলা দরজা খুললেন। আমাকে দেখেই সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বললেন, কেমন আছো ছোঁয়া?
- জ্বি আন্টি আলহামদুলিল্লাহ। আপনি?
- হুম আলহামদুলিল্লাহ ভালো। এসো ভেতরে এসো।
আমি এই প্রথম গুবলুটার বাসায় আসলাম। আন্টি বললেন, বসো। কি খাবে? আমি ভদ্রতা কইরা বললাম, কিছু খাবো না আন্টি, বাটিটা দিতে আসছিলাম। বাসায় কেউ নেই? আঙ্কেল কোথায় আন্টি?
- তোমার আঙ্কেল বাইরে থাকে। আমার ছেলেটা কাজে গেছে। আসতে লেট হবে। তুমি বসো।
- ও।
মনে মনে কইলাম, বাহ্ আঙ্কেলের সাথে গুবলুর খবরটাও ফ্রি পাইলাম। কিন্তু গুবলুর নামটা জানা হইলো না। আন্টিকে জিগামু? না থাক। কালকে ভার্সিটি গেলে জিগামু কাউরে। ঐদিন তো আমরা যাওয়ার আগেই পরিচয় পর্ব সেরে ফেলসিলো। আন্টি রান্নাঘরে কি যেন করতেসে। উঁকি দিতেই দেখলাম চুলায় দুধ দিয়েছেন। আমি জিগাইলাম, কি করেন আন্টি?
- একটু পায়েস রান্না করব তোমার জন্য।
- এত কষ্ট করার কি দরকার আন্টি?
মনে মনে ডিংকাচিকা নাচ দিয়া কইলাম, আমার আরেক বালুবাসা। তাড়াতাড়ি বানান আন্টি। খাইয়া চম্পট দেই। আন্টির সাথে অনেকক্ষণ কথা বলে, পেট ভইরা পায়েস খেয়ে তারপর বাসায় আসলাম। আম্মা জিগাইলো, কই ছিলি? সন্ধ্যা হয়ে গেছে দেখিস নাই? আমি কইলাম, পাশের বাসায় আম্মু। নতুন ভারাটিয়া আন্টির কাছে। উনি কি মজা করে পায়েস রান্না করেন। শিখে আসছি। একদিন খাওয়াবো তোমাদের।
- খাওয়াস, এখন যা ঝিল আর তোর আব্বুকে নাস্তার জন্য ডেকে দে। হালিম রান্না করেছি।
- আম্মু আমি পেট ভরে পায়েস খেয়েছি আর কিছু খাবো না।
আমি ঝিলিক আর আব্বুকে নাস্তা করতে পাঠাইয়া দিয়া একটা গাজর নিয়া নিজের রুমে আইসা বসলাম। হাতের গাজরটারে নিয়া বিছানায় গড়াগড়ি খাইতে লাগলাম খুশিতে। লালু মিয়ারে… আন্টি কত্ত ভালো। আমারে গুবলুটার নাম্বার দিসে। বলসে দরকার হইলে যাতে ফোন করি। উফ্! আন্টিটা এত ভালা ক্যান! আমি গাজর দিয়া সেভ করসি। তারপর হঠাৎ মনে হইল আন্টি আমার নাম জানল কেমনে!
পরেরদিন বান্দরের মতো লাফাইতে লাফাইতে সাহেদারে কইলাম, জানিস ঐ পোলা মানে স্যারের আম্মাটা অনেক ভালো। সাহেদা বলল, কোন স্যার? আমি কইলাম, আরে আমাদের পাশের বাসার। ধুর নামও জানি না। জানিস আমারে স্যারের নাম্বার দিসে না চাইতেই।
- নাম্বার দিসে কিন্তু নামটাও জিজ্ঞেস করিস নাই?
- কেমনে জিগামু বুঝতে পারি নাই।
- তো কি নামে সেভ করছিস?
- গাজর।
- এ্যাঁ!!!!
ঠিক তখনই পেছনে কারো উপস্থিতি টের পাইলাম। তাকাই দেখি গাজর থুক্কু গুবলুটা খাড়াই আছে। আমার আত্মা ঐখানেই উইড়া গেসে। কদ্দূর শুনসে আল্লাহ মালুম। সে কিসু বলার আগেই সালাম দিয়া ক্লাসরুমে দৌঁড় দিলাম।
চলবে……
তাকাই দেখি গাজর থুক্কু গুবলুটা খাড়াই আছে। আমার আত্মা ঐখানেই উইড়া গেসে। কদ্দূর শুনসে আল্লাহ মালুম। সে কিসু বলার আগেই সালাম দিয়া ক্লাসরুমে দৌঁড় দিলাম।
ক্লাসে গিয়া হাঁপাইতে লাগলাম। সাহেদা জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে নিতে কইল, এমন দৌঁড় দিলি ক্যান? আমি নিজেরে কোনোমতে শান্ত কইরা কইলাম, ঐ গুবলুটা যদি জানে আমি তার নাম গাজর রাখসি কি বলবে! সাহেদা পানির বোতল বাইর করতে করতে বলল, তাইলে রাখছিস ক্যান?
- নাম জানি না তো।
- তা জেনে নে। বাই দা রাস্তা, তুই স্যারকে গুবলু বলছিস?
আমি ভেটকি মারলাম। গুবলুই তো। গুবলু স্যার। গাজর স্যার। আসলেই নামটা জানা দরকার। রাইসা মাত্র এসে ব্যাগ রাখতে জিজ্ঞেস করলাম, রাইসু, গতকাল যে স্যারটা আসছে গেস্ট টিচার হিসেবে তার নাম কি রে?
- আকাশ স্যারের কথা বলছিস? আকাশ আয়মান।
- ও।
- জানিস স্যার না ডাক্তার।
আমি আর সাহেদা একে অপরের দিকে তাকাইলাম। গুবলুটা ডাক্তার! কি পিচ্চি লাগে দেখতে! আর গুল্লু মার্কা চশমায় তো লেদা বাইচ্চা। আমি জিগাইলাম, তুই ঠিক জানিস? কোন হসপিটালের?
- সেটা জানি না।
- তো জানলি কেমনে?
- শুনসি।
- ডাক্তার হলে গেস্ট টিচার হইসে ক্যান।
- জানি না।
রাইসা নিজের কাজে মন দিল আর আমি সাহেদার হাত চিইপা ধইরা ফিস ফিস কইরা কইলাম, সাহেদা, আমার গাজর ডাক্তার। সাহেদা আমার হাত ছাড়াইয়া কইল, তাই বলে আমার হাতরে চেপে মেরে ফেলছিস কেন? আমার সেদিকে মন নাই, মন তো আকাশের কাছে উড়াল দিল। এ আকাশ সে আকাশ না। এ আকাশ গাজর আকাশ। আমার ভাবনার মাঝে ফাইরুজ এসে বলল, এই ছোঁয়া কাল আকাশ স্যার যে টপিকটা পড়াইসে ঐটা তোর কাছে আছে?
- হ্যাঁ আছে তো। গাজর স্যার আই মিন ইয়ে মানে…
ফাইরুজ ভ্রূ কুঁচকে বলল, গাজর স্যার!? তুই আকাশ স্যারকে গাজর ডাকিস!? সবাই শুইনা আমার দিকে তাকাইলো। ব্যাস, আমার গাজর কাহিনী বাতাসের আগে ছুটল। ক্লাসের সবাই বলে হাসতে লাগল৷ কি লজ্জা! কি লজ্জা!
আজকেও গাজরের ক্লাস৷ আমি তার দিকে তাকাই আছি আর মনে মনে ভাবতেসি, গাজর জানলে কি বলবে আমি তারে গাজর বলসি। ধুর গাজরকে তো গাজরই বলব। না আমার গাজর তো লালুমিয়া। এত গাজরে জট পাকাইতেসে। আমার গাজরময় জীবনে তুমি আমার সেরা গাজর। আজ থেকে তোমার নাম আকাশ আয়মান গাজর। ভাইবাই মনে মনে হাসি পাইলো। বোধ করি আমি ভাবনার হাসি বাস্তবে হাসছিলাম আর তা গাজরের চোখে পড়সে। ব্যাস, ডাক পড়ল।
বাসায় ফেরার সময় আমি আড়মোড়া ভেঙে কইলাম, উফ! গাজরটা এত জ্বালাইলো আজ! কতবার বোর্ডে নিল বাচ্চা পোলাপানদের মতো। পড়াও ধরল কয়বার।সাহেদা সিএনজি খুঁজতে খুঁজতে বলল, তুই মনযোগ দিস নাই কেন পড়ায়? আমি অন্য জগতে হারাই গিয়া বললাম, গাজরের কথা ভাবলে আমার আর কিছু মাথায় ঢোকে না। সাহেদা হতাশ ভঙ্গিতে কইল, মানুষ হয়ে গেল গাজর আর গাজর হয়ে গেল লালু মিয়া। হায়রে! তোর দ্বারাই এসব সম্ভব। এখন উঠ সিএনজিতে। আমি হাসতে হাসতে উইঠা পড়লাম।
.
.
.
.
দুপুরে খাইয়া আমি বিছানায় শুয়ে গড়াগড়ি খাইতেসি লালু মিয়ার লগে আর গাজরের কথা ভাবতেসি। হঠাৎ কিসের যেন সুঘ্রাণ নাকে আইসা সুড়সুড়ি দিতে লাগল। আমি মাত্র উঠে বসে লালুমিয়ার শেষটুকু মুখে পুরতে যাইতেছিলাম এমন সময় সাহেদা পিছন থেকে পিঠে একটা বাঘিনীর মতো চাপড় দিয়া কইল, কেমন আছেন, মিস গাজর? ওর দিকে আমি কাঁদো কাঁদো হইয়া তাকাইলাম। আমার এক্সপ্রেশান দেইখা ও দ্রুত কইল, এই ব্যাথা পেয়েছিস নাকি! সরি রে, বেশি জোরে……
- আমার লালু……
- কি হইসে তোর লালুর?
- আমার লালু… তোর ধাক্কায়…… বিছানার কোণা দিয়ে…… নিচে……
-…………
আমি মাত্র বিলাপ করার জন্য মুখ খুলতে যাইতেছিলাম, সাহেদা এক চামুচ কি যেন ঢুকাই দিল। আমি সাথে সাথে খুশিতে চোখের জলে নাকের জলে এক হয়ে কইলাম, লালুর হালুয়া!!!
- হ, লালু মানে গাজরের হালুয়া। তোর জন্য আনসি। আমি বানাইসিলাম। কিন্তু তুই যেভাবে একটুকরা গাজরের জন্য শোক করতেছিস তার থেকে ভালো সেটার দুঃখে তোর এটা না খাওয়াই উচিত।
- ইহ্, না না। দে দেখি খাই। ভালোই হইসে।
- তুই তো আমার থেকে ভালো পারিস। বানাস না কেন?
- হুমমমমম। আসি লগপ……
- কিহ!?
আমি গপ গপ করে শেষ চামুচ শেষ কইরা কইলাম, আলসি লাগে। সাহেদা বিরক্তের সাথে আমার দিকে তাকাই কইল, কত বার বলসি মুখে খাবার নিয়ে কথা বলবি না। আলসি তো লাগবেই। খালি গাজর খাইতে আলসি লাগে না।
- হ, এই নে তোর বাটি আর চামুচ।
- দুই মিনিটও হয় নাই সব পেটে চালান দিয়ে দিলি! একবার সাধলিও না।
- এই সাধের ভাগ হবে না।
- ভাগ, তোর সাধের খ্যাঁতা পুড়ি। তোর সাধ তোর কাছে রাখ। আমি গেলাম।
- ওই, শোন না। রাগ করিস না। তোর জন্য একটা কাজ আছে।
- কি বলতো।
- সোনা বান্ধুপী আমার। আমাকে আমার গাজরের বায়ো আর ফ্যামিলির খবর নিয়া দে।
- ইহ্। পাত্তাম ন। (পারব না)
- সোনা তো।
- আন্টিরে বল গিয়ে। তোর গাজর যেহেতু ডাক্তার, নিশ্চয়ই ভালো খোঁজ নিতে পারবে।
- না না, এটা গোপন মিশন। দে না বইন।
- আমি কই পামু!?
- বুদ্ধি বাইর কর।
- হ। আমি এখুনি গিয়ে আঙ্কেলরে বলতেসি। এর থেকে সহজ সমাধান আর হয় না। বায়ো টায়ো সবকিছুর সাথে সোজা বাসর ঘরে চইলা যাস।
- না………
- না হইলে চুপ কইরা এখন রেডি হ। বাইরে যামু তোরে নিয়া।
- কত কষ্ট করে সারা সকাল ক্লাস করে আসছি। এখন আবার কই যাবি?
- তুই রেডি হবি না আঙ্কেলরে কমু।
- না না যাইতেসি।
আমি জামা আর টাওয়াল নিয়া ওয়াশরুম ঢুকলাম। গোসল কইরা ড্রেসিং টেবিলের সামনে বইসা সাজতেসি এমন সময় সাহেদা এসে কইল, তোরে কি গাজরের সাথে প্রেম করাইতে নিতেসি? এমন সাজতেছিস ক্যান?
- এমন করিস ক্যান? দেখবি তুইও ক্রাশ খাবি একদিন।
মনে মনে দোয়া করতে লাগলাম, আজকে ওরে ক্রাশ খাওয়াইও, আল্লাহ। আজকেই যেন ক্রাশ খায়। আজকেই যেন……
- তুই দোয়া করা বন্ধ করলে বের হমু।
- তুই জানলি কেমনে আমি দোয়া করতেছি?
- আর একটা বাক্য বলবি তো চটকানা খাবি। চল।
ও আমার হাত ধরে টাইনা বের করে আনল। কাঁদো কাঁদো হয়ে মনে মনে কইলাম, এমন জল্লাদ রসকষহীন বান্ধবী আর কারো না হোক।
.
.
.
.
সন্ধ্যার আগে সাহেদা বাসায়ই আসতে দিল না। বাপরে কত শপিং করসে! পুরা মার্কেট তুইলা আনতে পারলে হয়তো শান্তি হইতো। আমি ফ্রেশ হইয়া রান্নাঘরে গেলাম। আম্মা আব্বা এখনো আসে নাই। ঝিলিক বসার রুমে হা কইরা টিভি গিলতেসে। এই ফাঁকে আমি পায়েস বানাইলাম। ঝিলিক জেরির মতো সুগন্ধের টানে উইড়া উইড়া রান্নাঘরে আইসা কইলো, এত সুন্দর সুগন্ধ! পায়েস রানসো ছোঁয়াপু!?
- হুম।
আমি ওরে এক বাটি দিলাম। আর এক বাটি নিয়া ডাইনিংয়ে ডাকনা দিয়া রাখলাম। তারপর সুন্দর কইরা মাথা আঁচড়াই নিলাম। অপারেশনের পর এক বছরে চুলগুলা কাঁধ পর্যন্ত হইসে। সুন্দর করে একসাইডে সিঁথি করে চুলটা একটা ক্লিপ দিয়ে আটকাইলাম। একটু সাজুগুজু কইরা বাটি নিয়া বের হইলাম। দরজা টোকা দিতেই আন্টি দরজা খুলল। আমাকে দেখে হেসে বললেন, আরে ছোঁয়া, এসো। কেমন আছো?
- জ্বি ভালো আন্টি। পায়েস বানিয়েছিলাম। ভাবলাম আপনাদের একটু দেই। খেয়ে কেমন হয়েছে বলবেন।
- বাহ! ভালো করেছো। ছেলেটাও মাত্র বাইরে থেকে এল। বসো।
আন্টি বাটি নিয়া রান্নাঘরে চইলা গেল। আমি সোফায় মাত্র বসমু এমন সময় দেখলাম গাজর ওয়াশরুম থেকে বের হইসে। গায়ে হাফপেন্ট আর একটা নরমাল গেঞ্জি। মাথার চুল একটা টাওয়াল দিয়া মুছতে মুছতে রুমের দিকে যাইতেসে। আমি চিন্তা করলাম একটা গাজর যদি এমন হাফপেন্ট আর গেঞ্জি পরে সামনে দিয়া হাঁটে কেমন লাগবো। ভাইবা হাসি পাইলো৷ তবে সবচেয়ে বেশি হাসি পাইলো গেঞ্জির লেখা দেখে। সেখানে ইট মি লেখা। গাজর ইট মি লেখা গেঞ্জি পইরা হাঁটতেসে। হাসি চাপাইতে না পাইরা একটু শব্দ হয়ে গেল। ব্যাস, সাথে সাথে গাজর আমার দিকে তাকাইলো। আমি তখনো মুখ চাইপা আছি। পেটে হাসি ঘুরপাক খাইতেসে।
- তুমি?
- জ্বি স্যার, পায়েস দিতে আসছিলাম।
- তো হাসছো কেন?
- কিছু না। আমি যাই।
আমি সোফা থেকে উইঠা দরজার দিকে রওনা দিলাম। তারে দেইখা আমার হাসি আটকাইতে পারতেসি না। এখন না গেলে আমি পেটে হাসি জমাইতে জমাইতে ভেটকাই যামু। দরজাটা খুলমু এমন সময় সে আমার পিছন থেকে বাম হাত দিয়া দরজা চাইপা ধরল। আমি ফিরতেই দেখলাম গাজরটা একেবারে আমার খুব কাছে দাঁড়াই আছে। আমি বামে যাইতে লাগলে সে ডান হাত দরজায় রাখলো। যাহ! আমি তার জেলখানায় আটকা পড়লাম।
চলবে…
আমি ফিরতেই দেখলাম গাজরটা একেবারে আমার খুব কাছে দাঁড়াই আছে। আমি বামে যাইতে লাগলে সে ডান হাত দরজায় রাখলো। যাহ! আমি তার জেলখানায় আটকা পড়লাম।
আমি উপরে ওর দিকে তাকাইতেই দেখলাম ওর চুল থেকে টপ টপ কইরা পানি পড়তেসে। ইচ্ছে করতেসিলো… ধুর, আমার এতো ইচ্ছে করে ক্যান। আপাতত আগে এই জেলখানা থেকে বের হইতে হবে। সে আমার আরেকটু কাছে আইসা কইল, শুনলাম তুমি নাকি আমাকে গাজর ডাকো। শুইনাই টমেটোর মতো লাল হই গেলাম। কোন ভূত পেত্নী গাজররে এই খবর দিসে। সামনে পাইলে আমি তার মুন্ডু দিয়া ডুগডুগি খেলতাম। আমি তার দিকে না তাকাইয়া কইলাম, কি যে বলেন স্যার। আমি কেন অযথা আপনাকে গাজর ডাকবো। হে হে……। আমি সাবধানে তার বাম হাতের নিচ দিয়া জেলখানা থেকে বের হইয়া আন্টির কাছে চম্পট দিলাম। যাক আটকায় নাই। এখন এখানে থাকা নিরাপদ নয়। একটু পরে সুযোগ বুইঝা বাসায় চইলা আসলাম। নইলে তার হাতে আবার পড়লে নিস্তার নাই।
.
.
.
.
আজকে বিকালে ক্লাস তাই আরামে ঘুমাইতেসিলাম হঠাৎ কলিংবেলটা টং টং কইরা বেজে উঠল। বেল বাজতেসে কেউ দরজা খুলে না। সব কি হাওয়া হই গেসে নাকি বাসা থেকে? আম্মার সকালে ডিউটি। আব্বাও বের হই গেসে। এই ঝিলিকটা দরকারের সময় ওয়াশরুম ঢুইকা বইসা থাকে। আমি কোনোমতে ঘুম ঘুম চোখে মুখটা বাংলার পাঁচ করে দরজা খুইলা উঁকি দিলাম। গাজর দাঁড়াই আছে। আমি সরার সুযোগ পাইলাম না। সে আমার দিকে পেত্নী দেখার মতো তাকাই রইল। ঝিলিক ওয়াশরুম থেকে বের হইয়া জিজ্ঞেস করল, কে ছোঁয়াপু? আমি কি কমু! ঝিল, ইচ্ছা করতেসে তেঁতুলগাছে চইড়া বসি। না হলে কইবো, এই পেত্নী মনুষ্য বসতিতে কি করে? মাথা একটা কাউয়ার বাসা থেকেও খারাপ হই আছে। দেখে মনে হইবো দশবারটা কাউয়ার বাইচ্চা এই বাসাতেই ডিম ফুটি বড়ো হই উড়াল দিসে। আমার এমন হাল দেইখা গাজরটা যেভাবে তাকাইলো মনে মনে কইলাম, আল্লাহ দড়ি ফালাও। আমি উইঠা যাই। আপাতত অলৌকিক দড়ির আশা না কইরা তারে বসতে বইলাই রুমে হুসাইন বোল্টের মতো দৌঁড় দিলাম।
পাঁচ মিনিট পর ঠিকঠাক হয়ে বের হইয়া দেখি বসার রুমে কেউ নাই। আমি ঝিলিকরে জিগাইতে কইল সে নাকি চলে গেছে। আমি ভাবলাম আসলোই বা কেন আর না বইলা চইলা গেলই বা কেন!? ফাঁকে দিয়া আমার পেত্নী মার্কা রূপ দেইখা গেল গাজরটা।
দুপুরে খাইতে বসতে ঝিলিক কোথা থেকে টেংরা মাছের ঝোল আইনা দিল। আমি তো খুশিতে বান্দরের দশ নাম্বার বাইচ্চার মতো লাফাইতে লাগলাম। আমার ফেবারিট টেংরা পিনচেচ (প্রিন্সেস)। পেটে বাচ্চা লইনা জালে ঝাপ দিসে মনে হয়। ভালো করসে, ইয়াম্মি। গপ গপ করে সেগুলা দিয়া ভাত খাইয়া লম্বা একটা ঢেকুর দিলাম। ইচ্ছে করতেসে এখন একটা লম্বা ঘুম দিতে পারলে টেংরা মাছ খাওয়াটা সার্থক হইতো। কিন্তু ক্লাস আছে। আমি রেডি হইতে হইতে ঝিলিকরে বললাম, টেংরা মাছ কখন আনসে দেখি নাই যে। ঝিলিক ভাতের প্লেট নিয়া টিভি ছাইড়া সামনে আরাম করে বইসা কইল, পাশের বাসার ভালো ভাইয়াটা দিয়ে গেছে। বলসে, তোমারে দিতে। তুমি নাকি খাইতে পছন্দ করো।
- বাব্বা, ভালো ভাইয়া! ভাইয়া বললেই তো হয় আবার ভালো লাগাইলি ক্যান?
- হ, ভালো ভাইয়াই তো। সেদিন যেভাবে তোমারে কোলে নিয়া দিয়া গেল। আমি না হইলে কি যে ফ্যাসাদে পড়তাম!
- হইসে, থাক। আর বর্ণনা দেওয়া লাগবে না। চুপচাপ খেয়ে উঠ।
আমি মনে মনে কইলাম, আসছে… একটা হুতুম গাজর। কিন্তু সে জানলো ক্যামনে আমার টেংরা মাছ পছন্দ!? উফ! হঠাৎ মাথা ব্যাথা করতেসে। ইদানিং ঘন ঘন মাথা ব্যাথা করে। অদ্ভুত!
প্রথম ক্লাসটায় ইচ্ছামতো ঝুরসি। টেংরার টোটকায় আমার সেই ঘুম পাইলো। কিন্তু এর পরের ক্লাস আমার গাজরের। অতএব এখন ঝুরাঝুরি চলবে না। দুই তিন মিনিট পর আমার গাজর লাল শার্ট পইরা আইলো। আজকে সত্যিই গাজর গাজর লাগতেসে। ইস্……! আমি তার রূপে হারাই গেলাম। কল্পনায় ওরে নিয়া সংসার পাতাইলাম। আমরা বিয়া করমু, তারপর একটা ছোট ঘরে টোনাটুনির মতো সংসার পাতমু। চড়ুইবাতির মতো রান্না বান্না খাওয়া দাওয়া কইরা কতক্ষণ চিত্তই থাকুম। বিকালে ওরে নিয়া ঘুরতে যামু। এরপর আমগো বাইচ্চা কাইচ্চা হইবো। একটা গুবলু মেয়ে আর একটা গুবলু পোলা নিমু। ঠিক আমার গাজরটার মতো। হে হে…… আর ওদের নাম রাখমু…………
- ছোঁয়া… ছোঁয়া……
সাহেদা পিছন থেকে আমারে গুঁতা দিল। আমি কল্পনার সংসার থেকে বাস্তবে লাফ দিলাম। তাকাই দেখলাম সবাই আমার দিকে তাকাই আছে। সাহেদা ফিসফিস করে কইলো, স্যার তোকে ডাকতেসে। আমি গাজরের দিকে তাকাইলাম। সেও আমার দিকে তাকাই আছে। আমি আবার কল্পনায় যাওয়ার আগেই গাজরটা বোর্ডে ডাকাইলো। ধুর, আমার সাধের সংসার……
বাসায় আইসা সোফায় আরাম কইরা শুইলাম। রুমে যাওয়ার শক্তি নাই। মাথায় খালি ঘুরতেসে আমার গাজরের কথা। আমার ডাক্তার জামাইটা! গাজর বরটা! এত হ্যান্ডসাম! আজরে লাল শার্টে তো… ইচ্ছে হইতেসে তার রূপে পাবনায় গিয়া ভর্তি হই। তবে মাথার চুলগুলা সবুজ রঙ করে দিলে পুরাই আমার লালুমিয়ার মতো লাগতো। ভাইবাই একপাক হাইসা নিলাম। বিয়ার পর লালুমিয়া টেস্ট করুম। দেখমু কেমন লাগে। আমি শুইয়া শুইয়া কুটনা হাসি দিতেসিলাম। আমার কল্পনার জগতের মাঝে আব্বু এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়া কইলেন, কেমন গেল ভার্সিটি? আমি চমকাই উঠে গ্লাসটা নিয়া কইলাম, ভা…লো। আজকে এত তাড়াতাড়ি? তুমি কখন আসছো আব্বু? আব্বু কইল, কিছুক্ষণ আগে। তুই তো তাড়াতাড়ি আসতে বললি আজ। তাই কাজ শেষ হতেই চলে এসেছি। আমি বেমালুম ভুইলা গেসি। ভাবসিলাম আম্মুও আসবে তাড়াতাড়ি তাই একসাথে কিছু বানাইয়া খামু। আমি গ্লাসটা টেবিলে রাখতেই আব্বা জিগাইলো, গাজরটা কে? শুইনা হেঁচকি উইঠা গেল। আমি বেকুবের মতো তাকাই কইলাম, গা…জ…র? সেটা আ…বার কি? কো…থায় শুনসো? তুমি যে কি ব…ল না আব্বু! হে… হে……।
আব্বু আমার দিকে তাকাই আছে। আমি একটা ভেটকি মেরে কইলাম, আমি পা…নি খেয়ে নি…ই আব্বু। না হলে হেঁ…চকি বন্ধ হ…বে না। বইলাই গ্লাসটা নিয়া আব্বুর সামনে থেকে হাপিশ হই গেলাম। নিজের রুমে আইসা দরজা বন্ধ করে দরজায় হেলান দিয়া মেঝেতে বইসা পড়লাম। ইয়া বিশাল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেইলা হেঁচকি তুলতে তুলতে মনে মনে ভাবলাম বড় বাঁচান বাঁচছি। গাজরের কথা শুনলেই আমার এখন বহুত লজ্জা লাগে।
রাতে খেতে বসছি। আব্বা বলতেসে, আমি কাল একটু বাজারে যাবো বুঝলে। আম্মা জিগাইলো, যাইয়ো। আসার সময় কিছু ফলমূল আনিও। তোমার মেয়ে তো আবার গাজর ছাড়া কিচ্ছু বুঝে না। আমি বেকুবের মতো হাসলাম। আব্বা বললেন, হুম তা ঠিক। ভাবছি কাল কয়েক কেজি গাজর কিনে আনবো। তারপর হালুয়া বানিয়ে খাবো। ডালটা দাও তো। আমি শুইনা কাশতে শুরু করলাম। নাকে মুখে ঝোল উইঠা গেসে। আব্বা তাড়াতাড়ি আমারে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলেন। আমি কোনো মতে পানি খাইয়া কাশতে লাগলাম। চোখ নাক দিয়া পানি পড়তে লাগল লেদা বাচ্চাদের মতো। দশ মিনিট পর ঠান্ডা হইতে মিনমিন করে কইলাম, হঠাৎ এত গাজর কেন আব্বু? আব্বা নির্লিপ্তভাবে কইলেন, কদিন থেকে তোর আম্মু নাকি লক্ষ্য করছে তুই আনমনে গাজরের কথা বলিস৷ তাই ভাবলাম গাজর যখন এতই পছন্দ তো বেশি করেই আনি৷ আমি মনে মনে কইলাম, হ আব্বা, তুমি আমার মনের কথা বুঝছো। গাজর কাছে নাই ভাবলেই এক বোতল দুঃখের পানিতে সাঁতার কাটতে মন চায়। আইনা দাও আমার গাজররে…… আমার মিষ্টি গাজর……। আম্মা আমার মিষ্টি গাজরের মাঝে তিতা করলা ঢুকাই দিল। পাতে ভাজি করলা এক চামুচ দিয়া কইলো, আগে করলা খাওয়া শিখ। আমি কিসু না কইয়া আমার অতিসুন্দর বাংলা পাঁচ মুখ খানা দেখাইলাম।
.
.
.
.
দুই তিন দিন হইয়া গেল সাহেদা ক্লাসে আসে না। আমি ওর বাসায় গেলাম। সবই স্বাভাবিক। ওরে দেইখা মনেও হয় নাই অসুস্থ। জিগাইলাম কি হইসে, ক্লাসে যায় না ক্যান। কইলো কিছু না। ওর আধমরা মুখ দেইখাই বুঝলাম ডাল মে কুচ নেহি পুরি ডালই কালা হে। মনে মনে ভাবলাম, ঠিক মতো হিন্দিটা কইলাম!? কি জানি। থাক গা। এখন এই পাগলের পেটে সুড়সুড়ি দিয়া কথা বাইর করতে হইবো। বেটি কথা কয় না। বিকালে জোর কইরা দিঘির পাড়ে নিয়া গেলাম। সেখানে মেলা বসছে। আমি নাগরদোলা দেইখা সাহেদারে কইলাম, উঠমু, চল। তুই কিন্তু বেশি চিল্লাইতে পারবি না। বিশ টাকার টিকেট কাইটা দুইজনে উঠলাম। নাগরদোলা চালানো শুরু করতেই আমি ষাঁড়ের মতো ওর পাশে বইসা চিল্লাইতে লাগলাম। চড়া শেষে নামতেই সাহেদা কইল, কে জানি চিল্লাইতে মানা করসিলো? আমি হে হে কইরা হাইসা মাথা চুলকাইলাম।
ফুসকার দোকানে আইসা অর্ডার দিলাম। বেচারি শুকনা মুখে বইসা আছে। ফুসকা আসলে আমি নিয়া খাওয়া শুরু করলাম৷ ও নিতে লাগলে আমি প্লেট সরাই নিয়া কইলাম, আগে ক কি হইসে। সাহেদা মুখ ভেংচি মেরে কইলো, পেট শান্তি তো দুনিয়া শান্তি। আগে পেটটারে শান্তি করতে দে। তারপর দুনিয়ার ব্যাপারে কতা কমু। কি আর করা। দিলাম, খাইলাম, তারপর হাঁটা ধরলাম।
- এবার বল। কয়দিন ধরে কবিদের মতো উদাস ভাব।
- আমার বিয়ের জন্য চাপাচাপি করতেসে সবাই।
- ভালো তো। করে ফেল৷ আমি কতদিন বিয়ে খাই না।
- ছোঁয়া আমি সিরিয়াস।
দাঁত কেলাই কইলাম, আমিও। সাহেদা দিঘির দিকে তাকাইলো। আমি ওরে সাহস দিয়া কইলাম, কিচ্ছু হবে না। বিয়াই তো। ও আমার দিকে ফিরতেই হাসিগুলা এক পাক পেট থেকে ঘুইরা আসলো। সাহেদা নাকের জলে চোখের জলে হইয়া জুলুজুলু কইরা তাকাইয়া কইল, ছোঁয়া……আমি তোরে লালুমিয়া কিনে দিমু…… আমি ওরে দেইখা আর না হেসে পারলাম না। ও রাগ কইরা মুখ ফিরাই নিল।
পরদিন ওর বাসায় গিয়া আমার তো খুশিতে আনন্দে লাফাইতে মন চাইল। শুনলাম আজকে সাহেদারে দেখতে আসবে। আমার কি যে এক্সাইটেড লাগতেসে। কিন্তু সকাল থেকে বেকুবটা মুখ গোমড়া করে বইসা আছে৷ আমি দাঁত কেলাইতে কেলাইতে ওর সামনে গিয়া দাঁড়াইতেই ওর ঝারিতে উইড়া উগান্ডায় পড়বার অবস্থা।
- খুব মজা লাগতেসে না? আমার বিয়ে হয়ে গেলে তো তোর বান্দর নাচ থামানোর কেউ থাকবে না। ওটি হচ্ছে না। আম্মু আব্বু আমার বিয়ের কথা বলে ফেললো আর আমিই জানি না। এটা কেমনে সম্ভব!
- তোর কি দঃখ হইতেসে আঙ্কেল আন্টি বিয়ার কথা জানায় নাই দেইখা? তুই তো কত বিয়ার জন্য লাফাস।
- বিয়ে তো করমু, একটু ধীরে সুস্থে করমু। তা না সকালে ঘুম থেকে উঠেই বলল রেডি হ। জানতে চাওয়ায় বলল আমাকে নাকি দেখতে আসবে। পছন্দ হলে পাকা কথাও বলে যাবে। এটা কোনো কথা!? ছোঁয়া, তুই হেল্প কর।
- কি হেল্প করমু?
- দেখ আমি এখন বিয়ে করতে চাই না। পছন্দেরও একটা ব্যাপার স্যাপার আছে।
- তুই কাউকে পছন্দ করিস নাকি?
- তেমন কেউ না।
- তোর মুখ দেখে তো মনে হইতেসে…… কার উপর ক্রাশ খাইলি? কবে?
- ছোঁয়া, পিলিজ, বান্দুপি, হেল্প কর।
- আগে ক। কার উপর খাইছিস? আয়ান স্যারের উপর নাকি?
- আমারে পাগলে কামড়াইসে ঐ কাঠখোট্টার উপর ক্রাশ খামু!? আসার পর থেকে এই কদিনে যে রূপ দেখাইতেসে!
- হি হি…… তোমার চেহারা তো অন্য কিছু কইতেসে বান্দুপী। হে হে, কুচ তো হুয়া।
ও আমার দিকে বালিশ ছুইড়া মারলো। আমি ক্যাচ ধরেই দাঁত কেলাই রুম থেকে বাইর হয়ে আসলাম। রুমের ভেতরে হাওয়া গরম। ঝড় উঠলে আমারেই উড়াইয়া নিয়া যাইবো। আমি আবার বাইচ্চা মেয়ে। ঝড়ে উইড়া গিয়া কোন গত্তে (গর্তে) পড়ি ঠিক নাই। তখন আমার গাজর বর কত্তো কানবো। আমি আর রুম মুখি না হয়ে আপাতত চুলা মুখী হইলাম। সেখানে আর যাই হোক বিনা পয়সায় পেট ভোজন করতে পারমু।
চলবে…
আমি আর রুম মুখি না হয়ে আপাতত চুলা মুখী হইলাম। সেখানে আর যাই হোক বিনা পয়সায় পেট ভোজন করতে পারমু। রান্না ঘরে আসতেই দেখলাম সাহেদার আত্মীয়রা ভীষণ ব্যস্ত। ছেলেপক্ষ দেখতে আসতেসে তাতেই এত খানা! খাবারের সুগন্ধে মাছি হইতে মন চাইতেসে। সাহেদা, দোয়া করি তোর আসা পূরণ হোক তাইলে যতবার তোরে দেখতে আসবে আমার পেটের ইন্দুর বিলাই গুলা ভালোমন্দ খাইতে পাইবো। সাহেদার আম্মা আমাকে দেখেই বললেন, ছোঁয়া, তুমি তো ভালো সালাদ বানাতে পারো। ধরো, এগুলা নিয়ে বানাও।
আইলাম খাইতে, লাগাই দিলো কামে। কেমনডা লাগে। আমি মনের দুঃখে সালাদ বানাইতে বসলাম। হঠাৎ দেখলাম পলিথিনের ভেতরে কি যেন জুলুজুলু করে আমার দিকে তাকাই আছে। আমার লালু মিয়ারা! উফ্, তোদের কত্ত মিস করি জানিস? কতদিন ভালো করে তোদের খাইতে পাই নাই। খাওয়ার কথা শুনে মনে হয় গাজরগুলা একটু ভয় পাইলো। আমি আস্বস্ত করে কইলাম, ভয় পাইস না। দেখবি ড্রাকুলার মতো একটা কামড় দিমু, টেরই পাবি না । শসা কাটতে কাটতে বইসা বইসা গাজর চিবাইতে লাগলাম। পেঁয়াজ কাটলাম, টমেটো কাটলাম, কাঁচামরিচ কাটলাম। গাজর কাটতে গিয়েই……
- আন্টি…
- শেষ সালাদ বানানো?
- হুম।
- কই দাও।
- ……
- গাজর কই?
- আমার পেটে…
- ছোঁয়া……
আমি রান্না ঘর থেকেও পলাইলাম। হায়রে আমার কপাল আজকে ফুঁটা। কি জন্য যে গাজরগুলা খাইতে গেলাম! লালু লালু!
দুপুর হইতে না হইতেই মেহমান এসে হাজির। আমি আগেই শুনছিলাম সাহেদার বিয়ের কথা চলতেসে। আম্মার সাথে এই নিয়া কথা বলসিলো আন্টি গতকালকে। যদিও কথা বলার সময় আমারে খেদাই দিসিলো তাও কান পাইতা শুনসিলাম আর কি। কিন্তু ওরে জানাই নাই। এই কথা ও শুনলে আমার উপর বোমা পড়বো। কিন্তু ছেলেটা কেডা! দেখা দরকার। এক পলক বসার ঘরে উঁকি দিলাম। এটা আমি কারে দেখলাম! আমি হাসি চাইপা সাহেদার রুমে গেলাম। ও মুখ বোঁচা কইরা বসে আছে। আন্টির চিল্লাচিল্লিতে শাড়ি পড়সে। আমি গিয়া কইলাম, সাজিস নাই ক্যান? সাহেদা আমার দিকে ভয়ঙ্কর দৃষ্টিতে তাকাইলো। আমি সাহস নিয়া কইলাম, আয় সাজাই দি।
- না।
- সাজবি না তো?
- না।
- পরে আফসোস করবি না তো।
- না। যা তো, ভালো লাগতেসে না।
- আইচ্ছা।
আমি পা বাড়াইতেই সাহেদা ডাকলো, ওই ছেলে দেখছিস?
- কেন?
- দেখতে কেমনরে?
- রাজপুত্তুর।
- ধুর ফাইজলামি করবি না।
- ফাইজলামি করলাম কই। বিশ্বাস না করলে নিজে গিয়া দেখ।
আমি রুম থেকে বের হই আসলাম। হাসিতে আমার পেটে সুড়সুড়ি লাগতেসে। আজকে যদি সাহেদা ফ্যাঁত ফ্যাঁত কইরা নাকের চোখের জলে এক না হইসে তো আমার নামও ছোঁয়া না।
সবাই কথা বলতেসে বসার ঘরে। আমি খাবাররুমের চেয়ারে বসে পা ঢুলাইতে ঢুলাইতে পিঠা চাবাইতেসি। আন্টি একটু পরে আইসা বললেন, সাহেদাকে কোণার রুমে নিয়ে যাও তো ছোঁয়া। আমি আরেকটা পিঠা মুখে পুইরা উঠে ওর রুমে গেলাম। মাইয়াটা পুরা তেঁতুলগাছের পেত্নী হই আছে। আজকে আসলেই ও আমারে চিবাই খাইবো যখন ছেলেরে দেখবো।
- চল।
- কই?
- কোণার রুমে।
- ছোঁয়া…
- কিতা?
- আমাকে সাহায্য কর বইন। তুই তো জানিস আমি……
- সত্যিই তুই চাস বিয়েটা ভাঙি?
- হুম।
- দেখা যাবে।
- এমন ডাইনি লুক দিচ্ছিস কেন?
- সেটা পরে বুঝবি। আয় তোর মাথাটা আঁচড়াই দেই।
- না, থাক।
- ধুর, কেমন পেত্নী পেত্নী লাগতেসে।
- লাগুক। তাইলে বিয়ে তাড়াতাড়ি ভাঙবো।
আমি কপালে হাত দিলাম। ও উইঠাই কোণার রুমে হাঁটা দিলো। আমিও পিছন পিছন গেলাম। ছেলেকে আগেই পাঠিয়ে দিসে আন্টি কোণার রুমে। সে মুখ নিচু কইরা ফোন গুতাইতেসে। ওর সাথে রুমে ঢুকেই হাসি মুখে বললাম, কেমন আছেন স্যার? আয়ান মুখ তুলতেই সাহেদার চোয়াল ঝুলে পড়লো। আমার দিকে তাকাতেই আমি কানের কাছে ফিসফিস করে কইলাম, তোমার ক্রাশকে কেমন লাগছে বনু?
- ছোঁয়া……
আমি ওকে মাঝ সমুদ্রে ফেলে পালাইলাম, ডুবে যেতে লাগলে আয়ান ওরে বাঁচাইবো। আমি আবার খাবার ঘরে আইসা বসলাম। ওরা একটু প্রেম করুক, আমি পিঠার লগে পিরিত করি।
সবাই খাওয়া দাওয়া কইরা বিকালে চইলা গেল। শুনলাম পাকা কথাও হয়ে গেসে। সামনে আমাদের সেমিস্টার থাকায় একমাস পরে বিয়ের ডেট ফাইনাল করসে। আমি তো খুশিতে ভেতরে ভেতরে লাফাইতেসি। কিন্তু এখন ঘূর্ণিঝড়ের সামনে বইসা থাকায় কিসু কইলাম না। দশ নাম্বার বিপদসংকেত চলতেসে। রুমের উপর দিয়া অলরেডি বয়ে গেছে। বিছানা এলোমেলো, পরনের শাড়িটা মেঝেতে। সাহেদা জামা আর পেটিকোট পরে ফ্যাঁত ফ্যাঁত করতেসে।
- ছোঁয়া…… তুই আমার সাথে এমন করতে পারলি! এ্যাঁ………………
এক ঝুঁড়ি পুরাই ফেলসে নাক মুছতে মুছতে। আমি আরেকটা টিস্যুবক্স আগাই দিয়া কইলাম, আমি আগেই তো বলসিলাম একটু সাজাই দেই৷ তুই তো… সাহেদা নাক ঝাইরা বলল, আমাকে বলিস নাই কেন পোলাটা ঐ কাঠখোট্টাটা ছিল।
- বললে কি তুই সাজতে?
- তা সাজতাম আ……
- হি হি…… যাক কথা বের হইসে।
- ছোঁয়া……
ও আমার দিকে বালিশ ছুইড়া মারলো। আমি কইলাম, তোর ফ্যাঁত ফ্যাঁত শেষ হইলে বাসার দিকে আসিস। আমি তোর জন্য এক পেয়ালা লালুর হালুয়া বানামু নে।
.
.
.
.
সক্কাল সক্কাল সাহেদা আইসা হাজির। আমি তখন নাক ডেকে পইড়া পইড়া ঘুমাইতেসি৷ ও আইসাই ঘুম থেকে উঠালো। চোখ কচলাইতে কচলাইতে কইলাম, দিলি তো কাঁচা ঘুমটা ভাঙাই।
- ইস রে… সকাল নয়টা বাজে এখনো ঘুমন্ত সুন্দরীর ঘুম কাঁচা রয়ে গেছে। আয় কেমিক্যাল দিয়ে দেই। পেকে যাবে।
- তুই পাকা গা। আমি ঘুমামু। কালকেও ব্যাথার ওষুধ খাইসি। ইদানিং মাথাটা বড়ো জ্বালাইতেসে।
- তোর মাথা যে তাই। এখন উঠ তো। একলা ভালো লাগতেসে না। তাই গল্প করতে আসছি।
- এক মাস ওয়েট করো বনু। রোজ দোকলা থাকবা। আমারে তখন মনেও পড়বে না।
- হ, যে দোকলা থাকমু, ঐ কাঠখোট্টার সময় থাকবে না আমার জন্য। যে আতিলের আতিল। বুঝাই যায়। সারাদিন বইয়ের সাথে পিরিত করবে।
- তখন বই হবে তোর সতীন।
- ধুর। ভাল্লাগে না।
- বাব্বা, এখনই এত অভিযোগ! বিয়ের আগে বলা শুরু করলে বিয়ের পরে কি করবি?
- বিয়ে পর দেখা যাবে। এখন যা ফ্রেশ হয়ে নে। আমি দেখি একটু আচার খামু।
- যা যা, আচার রাক্ষসী। আচার আয়ান স্যারের সতীন।
- ছেলেদের সতীন হয় কেমনে!
- থুক্কু, সতীন তো হয় না। তাইলে কি কমু!?
- কিছু কওয়া লাগবে না এখন তাড়াতাড়ি ওয়াশরুম যা।
আমি ফ্রেশ হয়ে বের হইয়া দেখলাম ও ঝিলিকের সাথে শাবানা আলমগীরের ছবি গিলতেসে। বসছে এক গামলা আচার নিয়ে। আমিও যোগ দিলাম। যাক আজকে কিসু কয় নাই৷ বেচারি কালকে ছ্যাকা খাইয়া দুঃখের সাগরে হাবুডুবু খাইতেসে। তাই এ ফাঁকে আচারে ভাগ বসাইলাম।
কিছুক্ষণ পর কলিংবেল বাইজা উঠল। আম্মা কালকে নাইট ডিউটি কইরা আসছে তাই ঘুমে। আব্বু গেসে বাজারে। ভাবলাম আব্বু আসছে বাজার নিয়া। হাতটা ধুইয়া গেলাম দরজা খুলতে। দরজা খুলতেই আমার মাথায় ঠাডা পড়লো। আমি তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ কইরা দিয়া কাঁপতে লাগলাম। সাহেদা আচার নিতে নিতে বলল, কে রে?
- বিপদ সংকেত……
চলবে…
দরজা খুলতেই আমার মাথায় ঠাডা পড়লো। আমি তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ কইরা দিয়া কাঁপতে লাগলাম। সাহেদা আচার নিতে নিতে বলল, কে রে?
- বিপদ সংকেত……
- কিসের?
আমি পালাইবার পথ খুঁজতেসি আর এদিকে আবার বেল বাজলো। পর পর দুইবার। যে বাইরে আছে তার ধৈর্য্য নাই। আমি কই যামু! সাহেদা আচার মুখে নিয়ে চাবাইতে চাবাইতে দরজার দিকে গেল। আমি সোফার পেছনে লুকাইলাম। সাহেদা দরজা খুলল।
- ম্যাম কেমন আছেন?
- আরে পর্ষী যে। কেমন আছো?
- ভালো। ম্যাম, আম্মু কোথায়?
- আম্মু!? ও ছোঁয়ার কথা বলছো? আছে তো।
আমি মনে মনে কইলাম, সাহেদা, তুই আমারে ডুবাইলি! যদি বিলাই হইতাম জানালা দিয়া লাফ দিয়ে পালাই যাইতাম। কিন্তু মনুষ্য হইয়া এখন সোফার পেছনে লুকাইয়াও শান্তি নাই।
পর্ষী ভেতরে আইসা বলল, আম্মু… ও আম্মু… আমি জানি তুমি লুকিয়ে আছো। তুমি যদি বের না হও তাহলে কিন্তু আমি ফ্রিজের গাজর সব খেয়ে নেবো। বইলাই সে ফ্রিজের দিকে রওনা দিল। আমি কাঁদো কাঁদো হইয়া কইলাম, এই মাইয়ার তো দেখি আমার সাথে আমার লালু মিয়ার দিকেও চোখ পড়সে। আমার লালু……
পর্ষী ফ্রিজ খুইলা মাত্র হাত বাড়াইলো, আমি ইন্দুরের মতো সোফার পিছন থেকে বাইর হইলাম। সে টের পাইতেই দৌঁড়ে আইসা কইলো, আম……মু………। এমন ভাবে ঝাপাই পড়ল আরেকটু হইলেই পইড়া হাত ঠ্যাং ভাঙতাম। আমি তখন গাজরের চিন্তা কইরা কাঁদতেসি আর মনে মনে বলতেসি, গাজর তুমি কোথায়? তোমার বউরে কিডন্যাপ কইরা নিয়া যাইতেসে। তুমি কিসু করো।
ঝিলিক নীরব দর্শকের মতো টিভি ফালাইয়া হা কইরা কান্ড দেখতেসে আর আচার খাইতেসে। তারপর হঠাৎ কি বুঝতে পাইরা "খালা" কইয়া হাঁক মারলো। গেল গা আম্মার কাছে। আমি তো শ্যাষ। আম্মুরে কি কমু!? আমি নিচের ঠোঁটে কামড় দিয়া সাহেদার দিকে সজল নয়নে হাজার আকুতি মিনতি কইরা তাকাইলাম। সাহেদা দুই হাত দুই পাশে নিয়া উল্টাইলো। সে কিসু জানে না। কি এক বান্ধবী জুটাইলাম সে দরকারের সময় কিসু জানে না। আল্লাহ, এক ঢোক গাজরের হালুয়া দাও, খেয়ে অদৃশ্য হই।
আমি সোফায় বইসা টিভি দেখতেসি। টিভিতে শাবানার বর তারে ছাইড়া চইলা গেসে তাই সে কানতেসে। আমারও কান্দন আইলো। তবে শাবানার দুঃখে না। গাজররে হারাইবার দুঃখে।
(দশ মিনিট আগে)
আম্মার প্রত্যাবর্তন হইল বসার ঘরে। ঘুম ভেঙে আনায় চোখ ঢলতে ঢলতে বলল, এটা কে? পর্ষী দৌঁড়ে গিয়া জড়াই ধরে বলল, আসসালামু আলাইকুম, নানুমনি… আম্মুর সাথে আমিও চমকাই উঠলাম। নানুমনি! আম্মু ওর মাথায় হাত বুলাই দিয়ে বলল, দেখ, দেখে শেখ। কতটুকু মেয়ে কত সুন্দর সালাম দেয়। তোমার নাম কি মামুনি?
- পর্ষী।
- কোথায় থাকো?
- পাশের বাসায়।
আমার মাথায় দ্বিতীয় বার ঠাডা পড়ল। এ মেয়ে পাশের বাসায় থাকে!? তাইলে তো আমারে রজীনার মতো বনবাসে যাইতে হবে। নইলে আম্মু আম্মু কইয়া এ আমার জীবন ছিঁড়া ত্যানার থেকেও খারাপ কইরা ফেলবো। এক পাশে গাজর আরেক পাশে আম্মুপাগল। আমি কই যামু! কি মুসিবতে পড়লাম!
আম্মু পর্ষীকে নিয়ে সোফায় বসে বলল, তুমি আমাকে নানুমনি ডাকলে যে মামুনি? পর্ষী চোখে পানি আইনা কইলো, আমার নানাভাই নানুমনি নাই। আমার জন্মের আগেই মারা গেসে। আম্মুর কাছে শুনসিলাম তারা অনেক ভালো ছিল। তোমাকে দেখলে নানুমনির কথা মনে পড়ে। আমি তোমাকে নানুমনি ডাকি? আম্মা মধুর হাসি দিয়া কইলো, আচ্ছা। আমি মনে মনে কইলাম, এটা তুমি কি করলা আম্মা!? আমার কল্পনার সংসারে তুমি এভাবে জল ঢাইলা দিলা? এখন যদি আমার এই মেয়ের বাপের লগে বিয়া দি দেয় আমার গাজরের কি হইবো! সে আমারে হারাইবো। ভাইবা আমি নাক টানলাম।
আমি সোফায় বইসা কানতেসি আর তাগো সিনেমা দেখতেসি। আম্মা আর পর্ষী দুষ্টামি করতেসে। আম্মা জিজ্ঞেস করল, তুমি কার সাথে থাকো?
- খালামনি আর খালুর সাথে।
- তোমার আব্বু আম্মু?
সে ঠোঁটের সামনে আঙ্গুল দিয়া কইল, বলা যাবে না, সিক্রেট। আম্মাও মজা কইরা বলল, তাই? আমি মনে মনে কইলাম, এ্যাঁহ ঢঙের সিক্রেট। আমারে কোনদিক দিয়া ফাসাই দেয় আল্লাহ জানে।
- তা মামুনি কি খাবে বলতো?
- আমার খুব গাজর খেতে ভালো লাগে।
- ছোঁয়া, যা তো ওকে একটা গাজর ধুয়ে দে।
আমি ঝিলিকের দিকে তাকাইলাম, সে মনোযোগ দিয়া আচার চুষতেসে। সাহেদার দিকে তাকাইলাম, সেও আচার খাইতে খাইতে সিনেমা দেখতেসে। আমারেই আমার লালু মিয়ারে অন্য কারো হাতে দিতে যাইতে হইবো? অনেক কষ্টে ফ্রিজের সামনে গেলাম। আমার কলিজার ধন লালু মিয়া…… । যেই ফ্রিজের দরজা খুলমু পিছন থেকে পর্ষী কইলো, খুলে লাভ নাই, ফ্রিজে গাজর নাই। শুইনাই আমি দ্রুত ফ্রিজ খুইলা চেক করলাম। হায় হায়! আমার লালু মিয়া নাই! আমারে বোকা বানাইলো ঐ সময়! আমি লালু মিয়ারে বাঁচাইতে নিজেরে উৎসর্গ করলাম আর লালু মিয়াই নাই!? পর্ষী কইলো, নানুমনি আমি আজ আসি। আরেকদিন এসে গাজর খাবো। আমি বিড়বিড় কইরা কইলাম, আর আসা লাগবে না। আমার লালু মিয়ার দিকে নজর দেয়। আম্মু হেসে বলল, আচ্ছা এসো। সে দৌঁড় দিয়া আমার কাছে আইসা ইশারায় নিচে ডাকল। আমি বসতেই কানের কাছে আইসা ফিসফিস কইরা কইলো, আমি কিন্তু আবার আসবো। যদি আবার লুকাও তবে পরেরবার আমার সাথে নিয়ে যাবো। তখন আর লুকাতে পারবা না। বলেই বের হইয়া গেল। আমি মনে কইলাম, কি ডেন্জারাস মাইয়্যা! আমার আম্মারে পটাইয়া চইলা গেল!
.
.
.
.
আজকে সকালে ক্লাস থাকায় তাড়াতাড়ি বের হইলাম। সাহেদা নাকি আজকে যাবে না। বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে অনেক ইরিগুলার হই গেসে মাইয়্যাটা। সারাদিন ফোন টিপে আর কি জানি গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করে। আগে কইতো কাঠখোট্টা, একদিনেই এখন পিরিত উপচাই পড়তেসে। আমিই স্লো মোশন হই আছি। এত দিন হইলো এখনো গাজররে পটাইতেই পারলাম না। মনের দুঃখের কথা ভাবতে ভাবতে হাঁটতেসি, গেটের কাছে যাওয়ার আগেই কে যেন পেছন থেকে জড়াই ধরল। আমি তাকাইতেই বলল, কেমন আছো আম্মু? আহারে! সকাল হইতে না হইতে কোথায় থেকে আমদানি হইসে।
- আমি বলেছি না আমি তোমার আম্মু না।
- তুমিই আমার আম্মু। শোনো পরশু আমার জন্মদিন। তুমি কিন্তু আমার জন্মদিনের কেক বানাই দিবা।
- আমার কাজ আছে।
- আমি কোনো কথা শুনবো না। তুমি বানাবা। বুঝছো আম…
আমি মুখ চাইপা ধরলাম; আমার গাজর আসতেসে। সে যদি দেখে একটা টিডি ফোক আমারে আম্মু আম্মু কইয়া চেঁচাইতেসে তাহলে আমারে আর বিয়া করবে না। গাজর যাওয়ার সময় এক পলক আমাদের দিকে তাকাইলো। আমার তখন হার্ট ব্লাস্ট হওয়ার মতো অবস্থা। গাজর…
সে গেটের বাইরে গিয়ে বাইক স্টার্ট দিচ্ছে। আমি তার দিকে মুগ্ধ হইয়া তাকাই রইলাম। একটা ক্রিম কালারের শার্ট পরসে। কি যে সুন্দর লাগতেসে! যদি পারতাম কিডন্যাপ কইরা নিয়া আসতাম। ভাবনার মাঝে হাত ঢিলা হইতে পর্ষী সরাইয়া কইল, আমি কিন্তু বলে দিবো তুমি ঐ আঙ্কেলকে পছন্দ করো। শুইনা আবার চাইপা ধরলাম ওর মুখ। গাজর শুনলে আবার কোন মাইনকা চিপায় পড়ি। গাজর যাইতেই হাত সরাইয়া একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। যে মাইয়া, মুখ ফসকে কি যে বলে ফেলে।
- শুনো আম্মু, তুমি যদি কেক না বানাও তাহলে আমি ঐ আঙ্কেলকে বলে দিবো।
- ইহ্, এখনো নাক টিপলে দুধ বের হয় আসছে ব্ল্যাকমেইল করতে।
- নাক টিপলে হিন বের হয়, হিন। আম্মু, তুমি যে কি বলো না? দুধ বের হইলে তো মানুষের আর গরু লাগতো না।
- হইসে থাক। পন্ডিত। যাও বাসায় গিয়ে খেলা করো।
- আম্মু তুমি কি দেখো নাই আমি স্কুল ড্রেস পরে আছি।
- তাহলে স্কুলে যাও।
- ওকে আম্মু। বাই আম্মু, লাভ ইউ আম্মু। আবার দেখা হবে।
মাইয়্যা চইলা যাইতে বড় এক খান ঝামেলা গেল। যদিও বিরক্ত হই কিন্তু তাও মেয়েটার প্রত্যেক কথায় আম্মু ডাকটা শুনলে ভেতরটা ঠান্ডা হইয়া যায়৷ কি যে কিউট লাগে আম্মু ডাকলে! এমন মেয়ের আম্মু হইলে… এই না না কি বলতেসি। আমার এখন গাজর জামাই আছে অতএব এসব বলা নিষিদ্ধ। আমি আসতেসি গাজর জামাই। বইলা ভার্সিটি রওনা দিলাম।
আমাদের কোর্স কোঅরডিনেটর হচ্ছে রাবেয়া ম্যাম। প্রথমেই তার ক্লাস। আজকে সবাই ম্যামকে বলল তারা বনভোজনে যেতে চায়। একবছরে কোথাও যাওয়া হয়নি। তাই এখন পরীক্ষার আগে একবার ঘুরে আসতে চায় কোথাও। এতে মনও ফ্রেশ থাকবে যদি এরপর পরীক্ষার প্রেশার পড়বে। তাও সেটা সামলে নেবে৷ ম্যাম বললেন তিনি দেখবেন কি করা যায়।
- উফ! আজকের ক্লাসগুলা। সবকিছুর মধ্যে খালি বনভোজনের আলোচনাটা ভাল্লাগসে।
ভার্সিটি থেকে বের হইয়া হাঁটা দিলাম। আজকে গাজরের ক্লাস ছিল না। ভুইলা গেসিলাম। নাইলে আমিও আসতাম না। সাহেদাটার লগে একটু গপ মারতাম ওর বাসায় যাইয়া। আজকে গিয়া শুরুতেই ওর লগে বনভোজনের প্ল্যান করতে হইবো। সবাই বলতেসিলো বাইরে কোথাও যাবে। কক্সবাজার যাওয়ার প্ল্যান করতেসে সবাই। মোটামুটি দুইদিনের প্ল্যান বোধ হয়। আহ! আমি আর গাজর যদি একলা যাইতে পারতাম! সাগর পাড়ে হাত ধইরা হাঁটতাম। ক্যান্ডেল লাইট ডিনার। উফ! ভাইবা আমার কি যে সরম লাগতেসে। আরে!?
আজকে সিএনজিতে না উইঠা কি ভাইবা হাঁটা দিসিলাম। ভার্সিটি থেকে কিছুদূরে একটা অনেক বড় রেস্টুরেন্ট পড়ে। যে দাম খাবারের। সেখানে সাহেদারে দেখলাম মনে হইলো। একটা লোক ওর সামনে বসা। কে হইতে পারে? ভালো কইরা তাকাইতেই দেখলাম আয়ান স্যার! হ্যাঁ!? ডেইটে আসছে নাকি! আমি চুপি চুপি ঢুইকা এক কোণায় ঘাপটি মাইরা বসলাম। জিভ কেটে মনে মনে কইলাম, হে হে…… ডেইটে গোয়েন্দাগিরির মজাই আলাদা।
চলবে…
আমি চুপি চুপি ঢুইকা এক কোণায় ঘাপটি মাইরা বসলাম। জিভ কেটে মনে মনে কইলাম, হে হে…… ডেইটে গোয়েন্দাগিরির মজাই আলাদা।
- কি খাবে বলো।
- আপনার যা ইচ্ছে, স্যার।
- বিয়ের পরও কি স্যার ডাকবে?
সাহেদা একটু হাসলো। আয়ান ওর পছন্দ মতো দু কাপ কফি অর্ডার করলো। অর্ডার শেষ কইরা বললো, ফ্যামিলি আর পরিবারের একটা সমস্যার জন্য আমি এই বিয়েতে রাজি হয়েছি। না হলে আপাতত বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল না। সাহেদা কিছু বলল না। আয়ান হঠাৎ জিজ্ঞেস করল, ছোঁয়ার সাথে তোমার পরিচয় ক'দিনের?
- হঠাৎ এ প্রশ্ন?
ওয়েটার ওদের কফি দিয়া গেল। আমিও ভাবলাম করতেসো ডেইট আমারে নিয়া টানাটানি করো ক্যা? আয়ান কফিতে চুমুক দিয়ে বলল, সাহেদা, তুমি জানো আশা করি কারণ ছাড়া আমি কোনো প্রশ্ন করি না। সাহেদা কফির কাপটা নাড়াচাড়া করে বলল, ওর সাথে প্রায় একবছরের মতো পরিচয়। শুনেছিলাম ওর একটা অনেক বড়ো এক্সিডেন্ট হয়েছিল যার জন্য ওর মেমোরি লস হয়। আন্টির বিশেষ রিকুয়েষ্টে আমাদের ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হয় ছোঁয়া। তারপর থেকেই আমরা একসাথে।
- ওর বাবা মা এক্সিডেন্টের আগের কিছু বলেনি?
- তেমন কিছু শুনিনি কখনো। প্রয়োজন হয়নি তাই জিজ্ঞেসও করিনি কখনো।
- আমি আজ তোমাকে কিছু কথা বলব। আশা করি তুমি সাহায্য করবে।
- কি কথা?
ওয়েটার এসে ওদের থেকে বিল নিয়া গেল। আমি মনোযোগী ছাত্রীর মতো কান খাঁড়া করসিলাম কিন্তু সেই সময়টাতেই ওয়েটাররে আমার কাছে আসতে হইলো। এসে জিজ্ঞেস করল, ম্যাম অর্ডার? আমি মনে মনে কইলাম, টেকা নাই খানা কিনার, বিনা পয়সার পানি থাকলে দাও।
- আমি কিছু অর্ডার করবো না। একজন আসার আছে সে আসলে অর্ডার করবো।
- ওকে ম্যাম।
আমি আবার কান পাতলাম। আয়ান টেবিল থেকে উঠে কইলো, চলো। সাহেদা বলল, কোথায়?
- গোলাপ গ্রাম। সেখানেই বাকি কথা বলব।
ওররেহ! কি প্রেম, আহা! কিন্তু কি এমন গোপন কথা যে এখানে বলা যায় না? ওরা বাইরে রওনা দিল। আমিও পিছু নিলাম। কিন্তু শোকের কতা হইলো আমার তো যাওয়া সম্ভব না। মুই ফকির প্রো ম্যাক্স হয়ে আছি। আছে খালি সি এন জি ভাড়া। সেটা দিয়াও গোলাপ গ্রাম যাওয়া যাইবো না। আমি অতি দুঃখে কয়েকবার নাক টানলাম। ওরা ডেটিং করতে চইলা গেল। আমি হতাশ হইয়া বাসার দিকে রওনা দিলাম। আর গোয়েন্দাগিরি হইলো না।
.
.
.
.
ভালো কইরা ফ্রেশ হইয়া নিলাম। সুন্দর কইরা একটু সাজুগুজু করলাম। তারপর গাজরের ঘরের দিকে পা বাড়াইলাম। কলিংবেল টিপে খাম্বার মতো খাড়াই আছি৷ দুই মিনিট পর দরজা খুলতেই কইলাম, আ……ন…টি!? একটা পিচ্চি শাঁকচুন্নি খাঁড়াই আছে। কখন যে ঘাড়ে চাইপা বসে। কইতে না কইতেই আমার উপর ঝাঁপাই পরে কইলো, আম্মু……। কেউ আমারে এই শাঁকচুন্নি থেকে বাঁচার উপায় বইলা দাও।
- তুমি এখানে ক্যান?
- দাদুমনির কাছে আসছি।
- দাদুমনি!?
- তুমি যদি আঙ্কেলকে বিয়ে করো তাহলে তো আঙ্কেলের আম্মু আমার দাদুমনিই…
আমি মুখ চাইপা ধরলাম। আশে পাশে তাকাই দেখলাম কেউ আছে কি না। নাই দেইখা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে কইলা, বেশি পাকসো, না?
- হ্যাঁ আম্মু। দেখো আমার গাল টিপলে কত নরম। পাকা জিনিস তো নরমই হয়। তাই না আম্মু?
- হ, পাকনা বুড়ি। আমারে এত আম্মু আম্মু করবা না।
- আম্মুকে আম্মু ডাকবো না তো কি ডাকবো? মম?
- মা বাদে অন্য কিছু।
- আচ্ছা।
- আন্টি কই?
- রান্নাঘরে।
- কি করে?
- আমার জন্য চালকুমড়ার মিষ্টি বানাচ্ছে।
ভেতর থেকে আন্টি জিগাইলো, কে রে পর্ষী? সে উত্তর দিলো, গাজরের হালুয়া আসছে। আমি তারে কইলাম, এই গাজরের হালুয়া কে?
- কেন, তুমি।
- আমারে কোনদিক দিয়ে গাজরের হালুয়ার মতো লাগে?
- তুমিই তো বলসো মা বাদে অন্য কিছু ডাকতে।
- তাই বলে…
- ওহহো, এত কথা কিসের গাজরের হালুয়া। চলো তো ভেতরে।
সে আমার হাত টাইনা নিয়া গেল। আন্টি দেখলাম দুধ জ্বাল দিচ্ছে। আমারে দেখে কইলেন, আরে ছোঁয়া যে। কেমন আছো আম্মু? আমি মিষ্টি কইরা হেসে কইলাম, জ্বি ভালো। কি বানাচ্ছেন?
- চালকুমড়া দিয়ে মিষ্টি বানাচ্ছি।
- সেটা কিভাবে বানায়?
- তোমাকে তো খাওয়াইনি আগে। প্রথমে চালকুমড়ার চামড়া ছিলে কেটে নেবে। তারপর মাঝের অংশ যেখানে বীজ থাকে সেই অংশটা কেটে সরিয়ে ফেলবে। এরপর মোটামুটি বড়ো বর্গাকার সাইজে টুকরো করে নেবে। টুকরোগুলোকে ছিদ্র করে হালকা লবণ পানিতে সিদ্ধ করে একটা ঝাঝরিতে অনেকক্ষণ রেখে পানিটা ফেলে দেবে। এবার একটা পাতিলে পরিমাণ মতো পানি নিয়ে তাতে দুধ, চিনি, দারচিনি, এলাচ নিয়ে চুলায় দেবে। দুধটা ফুটে এলে কুমড়ার টুকরোগুলো দিয়ে দেবে। পরবর্তীতে নারিকেল কুচি ব্ল্যান্ড করে দেবে। হয়ে গেল চালকুমড়ার মিষ্টি।
আন্টির বর্ণনা শুনে আমি চালকুমড়ার মতো একটা হাসি দিয়ে কইলাম, আপনাকে একদিন বানিয়ে খাওয়াবো। আন্টিও হেসে সায় দিলেন। পিছন থেকে শাঁকচুন্নিটা কইলো, আমার কেক কখন বানাইবা, গাজরের হালুয়া?
ধুর, কি এক গাজরের হালুয়া, গাজরের হালুয়া কইরা আন্টির সামনে আমার মান সম্মান হালুয়া করে দিতেসে। সে আবার কইলো, মনে আছে তো আজকে সকালে কি বলসি? যদি কেক না বানাইসো তাহলে কিন্তু বলে দিবো তুমি……। আমি মুখ চাইপা ধরলাম। আন্টি আমাদের দিকে তাকাইলো। আমি চিনা হাসি দিয়া ওর মুখ চাইপা ধরে রান্নাঘর থেকে বের হই আসলাম। দিসিলো আরেকটু হইলে সব ফাঁস করে।
বাসায় বিছানার কিনারায় ঠ্যাং ঝুলাই লালুমিয়ার কল্লা চাবাইতেসি। বসার রুম থেকে হাসাহাসির শব্দ আসতেসে। গাজরের বাসা ছাড়ি পিচ্চি শাঁকচুন্নিটা আমাদের বাসায় আইসা ভর করসে। আম্মারে চোখের পলকে পটাই ফেলসে গতকালকে। আজকেও মাত্র ডিউটি থেকে আসছে আম্মা৷ ফ্রেশ হয়েই পাকনা বুড়ির জন্য নুডলস বানাইসে। এখন বসার রুমে বইসা গপ মারতেসে। ফাঁকে আমার লাভ হইসে, আমার জন্য এক থইলা লালু আনসে ঐ পিচ্চি শাঁকচুন্নিটা। এখন বিছানায় বইসা বইসা লালুমিয়া খাইতেসি আর চিন্তা করতেসি কি করা যায়।
একটু পরে পর্ষী এসে কইলো, গাজরের হালুয়া, আমি আসি। কাল জন্মদিন হইলে অনেক পড়া জমে যাবে। তুমি কিন্তু মনে করে কেক বানাই আনবা। আমি কিন্তু গাজর দিসি তোমারে। আমি ভ্রূ কুঁচকায় কইলাম, এগুলা কি ঘুষ নাকি? সে বিজ্ঞের মতো কইলো, ছিঃ গাজরের হালুয়া, ঘুষ খারাপ জিনিস, জানো না? এগুলা তোমার পারিশ্রমিক। অগ্রিম দিলাম। আরো এক কেজি পরে দিমু। যদি না বানাও তাইলে কিন্তু তোমার গাজর নিয়া যামু। আমি ভেটকি মাছের মতো তার দিকে তাকাই রইলাম। এই টেমা কি কয়?
- আমি আঙ্কেলরেও ইনভাইট করসি। যদি দেখি কেক ভালো হয় নাই তাইলে আঙ্কেলরে কমু, দেখসো আব্বু, আম্মু কেক বানাইতে পারে না।
বইলাই দৌঁড় দিয়া চইলা গেল। পটকা মরিচ একটা। এক মিনিট! সে গাজররে আব্বু ডাকবো ক্যান? ধুর মাথায় সবটা প্যাঁচাইতেসে হেড ফোনের মতো। সাত নাম্বার গাজরে কামড় দিয়া কইলাম, ভাল্লাগে না।
.
.
.
.
ঘুমের মধ্যেই কানের কাছে হঠাৎ ঢুস ঢুস কইরা এলার্ম বাজতে লাগল। শুইনাই নিজের কপালে নিজে বাড়ি মারতে মন চাইলো। কি কুক্ষণে এই এলার্ম টোনটা সেট করসিলাম। এই কথা অবশ্য প্রতি দিনই ভাবি কিন্তু টোনটা চেঞ্জ করা হয়ে ওঠে না। আসলে ইচ্ছে কইরাই করি না। আমি যে নাকে তেল দিয়া ঘুমাই, বাসায় আগুন লাগলেও আমার ঘুম ভাঙবো না। কিন্তু কথা হইলো আজকে তো শুক্রবার। এলার্ম সেট করতে এতো বড় ভুল কেমনে করলাম! কোনোমতে হাতড়ে হাতড়ে ঢোল পিটা বন্ধ করলাম। তারপর আরাম করে হাসিমুখে ঘুম দিতেই পাঁচ মিনিটে আবার ঢোল পিটা শুরু। আল্লাহ গো… আজকে মোবাইলের কি হইসে। এলার্মটা বন্ধ হয় নাই ক্যান। বন্ধ করে চোখ লাগাইতে না লাগাইতেই ফের ঢোল পিটা। আমি কাঁদো কাঁদো হয়ে কইলাম, তোর কি হইসে বাপ কইবি আমারে। ভালো কইরা পিট পিট করে তাকাই এলার্মটা বন্ধ করে যেই না চোখটা বন্ধ করসি কোত্থেকে ঝিলিক শাঁকচুন্নিটার আবির্ভাব হইলো। এসেই বলল, ছোঁয়াপু, উঠো উঠো। কয়টা বাজে। তোমার না কি কাজ আছে। আমি এখন কোনো কাজের কথা শোনার অবস্থায় নাই। আমি শুধু একটু ঘুমাইতে চাই। কিন্তু বেকুবটা আমার মনের কথা বুঝলো তো না আরো ঘাড়ে চেপে বইসা কইলো, উঠো, তাড়াতাড়ি। উঠো না। আমি কোনোমতে এক চোখ খুলে কইলাম, এখন কিছু শুনতে পারমু না। ঘুমামু।
- দশটা বাজে।
- বাজুক, আজকে আমি সারাদিন ঘুমামু।
- কাল যে বললা সুনামি হইলেও নাকি কেক বানাই ছাড়বা। আমি যেন তাড়াতাড়ি ডেকে দেই।
শুইনা আমার চোখের ঘুমরে গাট্টি গোট্টা বান্ধি মামার বাড়ি পাঠাই দিলাম। কেকটা যদি না বানাই তাইলে ঐ পিচ্চি ধাইন্না মরিচ আমার মান সম্মানরে কেক বানাই খাইবো। আমি ঝিলিকরে কইলাম, দশটা বেজে গেছে। আগে কইবি না?
- কতবার ডাকসি। তুমিই তো আমারে ঘুমের মধ্যে খেদাই দিসো।
- হইসে। বুঝছি।
আমি ফ্রেশ হইয়া আইসা রান্নাঘরে ঢুকলাম। আজকে ঐ মাইয়ার কেকের চক্করে আমার আরামের ঘুমটা গেল।
চলবে…
আমি ফ্রেশ হইয়া আইসা রান্নাঘরে ঢুকলাম। আজকে ঐ মাইয়ার কেকের চক্করে আমার আরামের ঘুমটা গেল।
.
.
.
.
ময়দা মাইখা একেবার ময়দাময় হইয়া গেলাম। কেউ দেখলেই বলবো ময়দা সুন্দরী। ইস্ রে…। গুইল্লা টুইল্লা কেক চুলায় দিয়া আরাম কইরা বসলাম সোফায়। ঝিলিকরে কইলাম ক্রিমটা ঠিক করতে। ডেকোরেশন করা লাগবে। ঐ পটকা মরিচের কত বছর সেটাই জানি না। অথচ নাচতে নাচতে তার জন্মদিনে নাকি যামু। কি একটা অবস্থা! গেলে জিজ্ঞেস করা লাগবে। কেকটা হোক আমি ততক্ষণে একটু ফ্যানের হাওয়া খাই।
দুমিনিট পর কলিংবেল বাজলো। আব্বা বাজারে গেসিলো। ঝিলিক দরজা খুলতেই এক বস্তা বাজার ধরাই দিল। আমি গিয়া উঁকি দিলাম। আব্বা কি যেন টের পেয়ে কইল, বাজারের ব্যাগে আধা কেজি গাজর আনসি।
- আব্বু, তুমি কি খালি মনে করো আমি বাজারের ব্যাগ ঘাটি কেবল গাজরের জন্য?
আব্বা হাসল। হাসার মানেটা আমি ভালোই বুঝলাম। যাগ্গে আমি এমনিই দেখতেসি। আব্বারে চেরি ফল আনতে বলসিলাম। কেকের উপরে দিতাম ডেকোরেশানে। হঠাৎ মন হইলো, গাজর তোমার গাল দুইটা তো চেরি ফলের মতো দেখতে। গালগুলা কাইট্টা দিয়া দাও কেকের উপর দিবো নে। ভেবে হাসতেসি। ঝিলিক আমার হাতে চেরি ফলের প্যাকেট ধরাই দিয়া কইলো, তোমারে কি কিসু ধরসে?
- কিসে ধরবে?
- না মানে, প্রায়ই দেখি হুদা হুদা হাসো।
- আরে ধুর, যা তো বাজার সামাল দে। কেক হয়ে আসলে বলিস। আমি একটু ঘষামাজা করে নেই গোসলে গিয়া।
রোদে আমার সোনার রঙ তামা হইয়া গেছে৷ তাই ওয়াশরুম ঢুইকা ইচ্ছা মতো ঝামা দিয়া ঘইষা সোনার রূপ বাইর করলাম। মাথায় ইচ্ছে মতো সেম্পু দিয়া চুলগুলারে রেশমের মতো বানাইলাম। এমন সময় ঝিলিকের ডাক পড়ল। কেক হয়ে গেছে। আমি তাড়াতাড়ি গোসল সেরে বাইর হয়ে কেক নামাইলাম। যাক ভালোমতোই হইসে। এবার ডিজাইন করার পালা। ক্রিম নিয়ে সাজাইলাম কতক্ষণ কেকটারে নয়া বউয়ের মতো। ক্রিমের ফুল বানাই কেকে বসাইলাম। চেরি দিয়া কলি দিলাম।
কেক বানুরে সাজাই এবার নিজেরে সাজাতেই বসলাম। পুরা বিছানা গোয়ালঘর বানাইয়াও নিজের জন্য একটা সুন্দর জামা বাইর করতে পারলাম না। আমি আলমারির দিকে তাকাই ভাবতেসি কি করা যায় এমন সময় দরজায় একজন উঁকি দিয়া কইল, গাজরের হালুয়া। আমি তাকাইলাম৷ পিচ্চি শাঁকচুন্নিটা আসছে আবার জ্বালাইতে। এমনিই বুঝতেসি না কি পরমু। আমি কইলাম, কিতা চাই?
- কেকটা সুন্দর হইসে।
- সুন্দর করলে তো সুন্দর হবেই। (মনে মনে) সুন্দর না করলে তো আবার তোমার মুখ দিয়া কি বাইর হয় ঠিক নাই।
- আমার মনের মতো হইসে। এখন কি করো? বিছানার এ অবস্থা কেন?
- কি পরবো বুঝতেসি না।
- এগুলা গুছাও। আমি তোমার জন্য একটা গিফট আনসি।
- কি গিফট?
- আগে গুছাও।
আমি সব কাপড় তুইলা কোনোমতে আলমারিতে পুরলাম। তারপর কইলাম, এবার বলো। ও আমার কারবার দেইখা মাথা নাড়াইলো। তারপর একটা বক্স ধরাই দিল। আমি বক্সটা খুইলা দেখলাম একটা নীল শাড়ি, একজোড়া নুপুর আর এক গাছি নীল কাচের চুড়ি। দেখেই বোঝা যাইতেসে এগুলা কেউ ব্যবহার করসে। আমি জিগাইলাম, এগুলা কার?
- তোমার।
- মানে আমি জানতে চাইছি কার জিনিস আমাকে দিচ্ছো?
- তোমার জিনিসই। এখন চটপট এগুলা পরে নাও।
- অন্যের জিনিস আমি পরবো কেন?
- এত কথা বলো কেন? পরো বলছি। যদি দেখসি পরো নাই তাহলে সবার সামনে আম্মু ডাকবো।
আল্লাহ… কি দিনকাল পড়লো, এটুকু মাইয়্যাও খালি ব্ল্যাকমেইল করে। আজকে আমি ফান্দে পড়সি দেইখা। সে তাড়া দিয়া কইলো, কি হল পরো। আমি কইলাম, আমি কি তোমার সামনে পরমু? যাও বাইরে। সে চইলা গেল। শাড়িটায় একবার হাত বুলাইলাম। বোঝা যায় অনেক যত্ন করে রাখা। নুপুর জোড়া নতুন করে ইলেকট্রোপ্লেটিং করসে। কিন্তু অনেক সুন্দর কাজ। চুড়িগুলাও কেমন মায়ায় টানতেসে। আমি শাড়িটা সুন্দর করে পরলাম। ছোট চুলে কেমন কেমন জানি লাগতেসিলো। কিন্তু কি করা। কোনো দোয়া থাকলে এখুনি পইড়া রুপানজেল হই যাইতাম। সুন্দর করে একপাশে সিঁথি করলাম। চোখে কাজল দিলাম, ঠোঁটে হালকা রঙের লিপস্টিক দিলাম। কানে ছোট নীল দুল পরলাম। পায়ে নুপুর পরার পর চুড়িগুলো হাতে পরে আয়নায় তাকালাম। নিজেকে দেখে কি যেন চোখের সামনে জ্বলে উঠল। কাকে যেন দেখলাম কয়েক সেকেন্ডের জন্য। মাথাটা ব্যাথা করতেসে। মাথায় হাত দিয়া বিছানায় বইসা ডাকলাম, ঝিল….। আমার ডাকে ঝিলিক আসতেই কইল, কি হইসে ছোঁয়াপু?
- আমার ওষুধটা দে। মাথা ব্যাথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে।
ওষুধটা খাওয়ার পর ব্যাথাটা একটু কমল। ব্যাথা কমতে না কমতে পর্ষী হাজির। হাতে কাঠবেলির থোকা। কোথায় থেকে আনসে কে জানে। আমি বেশ বিরক্ত হইয়া কইলাম, আবার কি? সে আমারে উঠে বসাইয়া চুলের নিচ দিয়া অপটু হাতে কাঠবেলির থোকা লাগাই দিলো। সামনে আইসা কইলো, এবার হইসে। ঠিক আগের মতো লাগতেসে।
- তুমি আমারে আগে দেখসো নাকি?
সে কিসু না কইয়া রহস্যের হাসি দিল।
.
.
.
.
সাইজা গুইজা বইসা আছি। বিকালেই কেক নিয়া গেসে গা। আমি খালি চিন্তা করতেসি যামু কি যামু না। তখনই পর্ষী আসলো আবার। এসে কইলো, কি হলো গাজরের হালুয়া। সেই কখন তৈরী হইসো। সাজও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাসায় আসো না কেন? আমি কিসু না কইয়া তাকাই রইলাম। এত মানুষের সামনে যদি গাজরের হালুয়া ডাকে কেমন লাগবো! সেটা না হইলে আবার আম্মু আম্মু কইয়া মাথা পানি করে ফেলবে। কোনদিকে যে যাই!
- পর্ষী একটা কথা বলি? ভালো মেয়ের মতো শুনবা, কেমন?
- কি কথা?
- আমাকে ছোঁয়াপু ডেকো।
- ইহ্, আম্মুকে কেউ আপু ডাকে? শুনেছো কখনো?
- আমি তো তোমার আম্মু না।
- তুমিই আমার আম্মু। এই যে গলার দাগটা আমার আম্মুর।
এই রে! আমি তাড়াতাড়ি আয়নার সামনে গিয়া দেখলাম দাগটা চান্দের লাহান চকচক করতেসে ঘাড়ে। আজকে ফাউন্ডেশন দিয়া লুকাইতে ভুইলা গেসি। অনেকদিন এই দাগটা নিয়া চিন্তা করসি। কোন রাক্ষসের খপ্পরে পড়সিলাম কে জানে। একেবারে কামড়াই বারোটা বাজাই দিসে। সবাই কি কইবো এ ভেবে ফাউন্ডেশন দিয়া ডাইকা দেই। আজকে গোসলের পরে দিতে ভুলে গেসিলাম। এখন তাড়াতাড়ি কইরা ফাউন্ডেশন লাগাই দিলাম। লাগানো শেষ হইতেই পর্ষী হাত ধরে টাইনা ওদের বাসায় নিয়া গেল।
আমার নুপুরের শব্দে সবাই আমার দিকে তাকাইলো। সাথে সাথে পিন পতন নীরবতা। আমি তো লজ্জায় খালি কুচিমুচি করতেসি। সে নিয়া কেকের সামনে দাঁড় করাইলো। বাসায় বেশি মানুষ নাই। আবার কমও না। অন্তত জনা ত্রিশ তো হবে। যা বুঝলাম কাছের মানুষদেরই নিমন্ত্রণ করসে। আমি মানুষের থেকে বাসাটার দিকে তাকাইলাম। সুন্দর করে সাজাইসে। কেমন যেন আপন আপন গন্ধ। দেয়াল ছুলে অন্যরকম অনুভূতি। কানে যেন কারা হেসে খেলে বেড়ানোর শব্দ। দেয়ালে হাত দিয়া একটা রুমের দিকে আগাইতেই সাহেদা এসে হাজির। সে একটা হলুদ থ্রিপিস পড়সে। আমারে কইলো, আমি কনে হইয়া শাড়ি পড়ি নাই। হঠাৎ তুই পড়লি? আমি পর্ষীর দিকে ইঙ্গিত কইরা কইলাম, এই ধানি লঙ্কার কান্ড। আমারে খালি ব্ল্যাক না ব্লু হোয়াট সব মেইল কইরা এখন এই শাড়ি গায়ে।
- ভালা করসে। সুন্দর লাগতেসে তোরে।
- ধুর, সবাই আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকাই আছে।
- তাকানোর কারণ আছে।
- কি?
- সেটা পরে কমু।
- তা তো বলবাই। আয়ান স্যারের সাথে আমারে না জানাই ডেইটে গেসো, আর এটা কেন লুকাইবা না।
- হইসে ঢং করিস না। ডেইট ফেইট কিসু না। ঐ একটু দরকারে ডাকসিলো। বাই দা চিপা রাস্তা, তুই জানলি কেমনে?
- হে হে, তোমরা ডেইট করবা আর আমি জানমু না?
- হ।
- তুই আসলি যে? ওরা কি বিল্ডিংয়ের সবাইরে ইনভাইট করসে নাকি?
- সবাইরে করবে কেন?
- তাইলে তুই…
- আমি সম্বন্ধী তাই করসে।
- কেমনে?
- পর্ষী আমার নাচের স্টু না?
- অ। বুলেই গেসিলাম।
সাহেদা মিষ্টি করে কইলো, ছোঁয়া, এই ছোঁয়া। শুন না। এত মিষ্টি সুর শুইনা সন্দিহান চোখে কইলাম, কি?
- তুই না আমার বেস্টু। আমি ভাবতেসি আমার হবু ভাসুরের সাথে তোর বিয়ে দিবো। কেমন? আমরা দুই বেস্টু মিলে একসাথে থাকবো।
আমি কইলাম, বোইন আমার জন্য আর কত ক্যান্ডিডেট আইবো? আমার গাজর, পর্ষীর আব্বু আর এখন কস তোর ভাসুর।
- আরে, এত বেশি কোথায়? পর্ষী তো আমার হবু ভাসুরেরই মেয়ে।
আমি তো সেই শক খাইয়া চোখ বড় বড় কইরা তাকাইলাম। এটা কি শুনসি! আমি ঢোক গিলে কইলাম, কেমনে?
- আয়ান স্যার আর পর্ষীর বাবা মামাতো ফুফাতো ভাই। তার মানে পর্ষী আব্বু আমার হবু ভাসুর। সিম্পল।
আমি না বুঝা লেদা বাচ্চার মতো ওর দিকে তাকাই আছি। ও আবার মধু মিশানো হাসি দিলো। আমি ও মন গলানো হাসি দিয়া কইলাম, থাক বইন। তোর ভাসুর তোর পুটলিতে রাখ। আমার গাজর বর আছে। তারে নিয়াই হ্যাপি। সাহেদা আবার রহস্যের হাসি দিলো। কি জ্বালা, সবাই এত রহস্যের হাসি দেয় ক্যান!?
হঠাৎ কে যেন আমার উপর হামলাই পড়লো। আমি বুঝার আগে সে কাইন্দা কাইটা একসার।
চলবে…
হঠাৎ কে যেন আমার উপর হামলাই পড়লো। আমি বুঝার আগে সে কাইন্দা কাইটা একসার।
একটা পোলা এসে কইলো, কি হচ্ছে মুন। পর্ষী এসে মুখ চাইপা কইলো, খাম…মি……। এবার চিনলাম। মেয়েটারে দুইবার দেখসি। একবার পর্ষীকে যেদিন প্রথম দেখসি সেদিন ওকে আনতে গিয়েছিল। আর আরেকদিন নাচের ক্লাসে। মুন নাক মুখ মুইছা হাসিমুখে কইলো, কেমন আছিস ছোঁয়া? এমনভাবে কইল যেন অনেকদিনের সম্পর্ক। আমি কইলাম, জ্বি ভালো।
- কতদিন পর তোকে দেখলাম। অনেক শুকিয়ে গেছিস।
- আমি আপনাকে চিনি?
- যা শুনেছিলাম সত্যিই তাহলে।
মুনের চেহারা কালো মেঘের মতো হইয়া গেল। কোথা থেকে একটা পিচ্চি পোলা এসে আমার ঠ্যাং দুইটা জড়াই ধইরা কইলো, খাম্মি……খাম্মি কেমন আছো? আমি তাকাই বললাম, ভালো। তারপর ভাবলাম এটা কেডা!? মুন এসে বলল, ও লাবিব। আমার ছেলে। আর ও আমার হাজবেন্ড রেদোয়ান। লাবিব পর্ষীর কাছে গিয়া বলল, হ্যাপি বাডডে।
- থাংকু ভাই।
রেদোয়ান বলল, এই নিয়ে কতবার বোনকে উইশ করেছে! তাও শেষ হয় না। পর্ষী বলল, থাক না খালু। কিচ্ছু হবে না। আমার কটু কটু ভাইটা। বইলা গাল টিইপ্পা দিলো। আমি মনে মনে কইলাম, আমার প্রতিও যদি এমন উদার হইতো পিচ্চি শাঁকচুন্নিটা!
দরজায় কে যেন নক করল। পর্ষী গিয়া দরজা খুলতে আমার গাজর জামাইটা ঢুকলো। আমি হা কইরা আছি। কি কিউট লাগতেসে। একটা সাদা শার্ট পরা, বুকের উপর হাতের কাজ। তার সাথে নীল জিন্স। রোদে পোড়া চেহারায় দারুন লাগতেসে। চুলগুলা সেম্পু করা দেখেই বুঝা যাইতেসে। গালগুলার কথা তো বাদই দিলাম। ওগুলার কথা নতুন করে কিছু বলার নাই। আমি তো ফিদা। সে আমার দিকে তাকাইতেই লজ্জাবতীর মতো গুটাই গেলাম। গাজরের আম্মা মানে আমার কল্পনার সংসারের কিউট শ্বাশুড়ি আম্মা আমার কাছে এসে কইলেন, কতদিন পর এই সাজে দেখছি। ঠিক আগের মতোই আছিস। বলেই বুকে জড়িয়ে নিলেন। সবাই এমন বিহেভ করতেসে যেন আমি তাদের অনেক আগের চেনা। হইতে পারে। আমার যেহেতু আগের স্মৃতি মনে নাই তাই চেনা সম্ভব না। আমি কেবল হা করে সবার কথা শুনতেসি। এরপর দুজন আসলো, সম্পর্কে মুনের বাবা মা হন। আমারে অনেক আদর করলেন। তারপর মুনের বোন আর তার দুই পোলা মাইয়া। একটু পরে একজন ভদ্রলোক এলেন। তিনি চোখের কোণার পানি মুইছা বললেন, কেমন আছিস ছোঁয়া মা? আমি জিজ্ঞাসুদৃষ্টিতে তাকাইতেই শ্বাশুড়ি আম্মা কইলো, আকাশের আব্বু। আমি তড়িঘড়ি কইরা সালাম দিয়ে কইলাম, সরি আঙ্কেল চিনতে পারিনি। তিনি কিছু না বলে মাথায় হাত রেখে দোয়া করলেন। সবাই কত্ত আদর করতেসে আমারে। ভাবতেই কি যে ভালো লাগতেসে! ইস্ একবার যদি কইতো, মা তোমাকে আমার পোলার জন্য অনেক পছন্দ হইসে। উফ! সবাই নিজেদের মতো গল্প করতেসে। আমি সাহেদারে খুঁজলাম। একলা ময়দানে আমারে ফেইলা কোন চিপায় ঢুকসে। ওকে খুঁজতে গিয়া আয়ান আর তার বাপ মারে চোখে পড়ল। সাহেদাও তাদের সাথে। বুঝলাম আপাতত ঐদিকে না যাওয়াই ভালো।
সাতটা বাজতেই পর্ষী আমারে আর গাজররে টাইনা ওর পিছনে দাঁড় করাইলো। কেক কাটবে। আমার সেদিকে হুশ নাই। আমার মন কেবল মৌমাছির মতো উইড়া উইড়া বলতে, পাশে ফুল আসছে, মধু নিতে হবে। আমি আকাশের দিকে তাকাইতেই দেখলাম সে আমার দিকে তাকাই আছে। আমি একটা ভেটকি মারলাম। ভেতরটা ভয়ে কাঁপতেসে কেন জানি। পর্ষী বলল, একটা ছবি তুলে দাও। সবাই ওর কথা শুনে ফোন বের কইরা ছবি তুলা শুরু করলো। আহা, নিজেরে সেলিব্রেটি সেলিব্রিটি লাগতেসে। ছবি তোলা শেষ হইতেই কেক কাটল। সবাই তালি দিয়ে হ্যাপি বার্থডের গান গাইতে লাগলো। কাটা শেষে প্রথম পিসটা সে আমার দিকে বাড়াইলো। এত আপনজন থাকতে আমারে দিলো! কেমন একটু লজ্জা করতে লাগল আমার। পরেরটা গাজররে দিলো। এরপর সবাইরে দেওয়া হলো পিস পিস কইরা। পর্ষী আমার দিকে একটা বিশাল ভেটকি দিয়া চোখ টিইপা কইলো, অনেক ভালো হইসে, আম্ মু। আমি খালি হাসলাম। মনে মনে কইলাম, ভালো না হইলে তো আমার পিন্ডি চটকাইতা। আমি কেবল কাচুমাচু করতেসি আর ফাঁক পাইলে গাজররে দেখতেসি। মাঝে মধ্যে মনে হয় সবাই যেন আমার দিকে কেমন অদ্ভুত করে তাকায়।
আমার বাসায় চইলা যাইতে মন চাইতেসে। এত মাইনষের ভীড়ে আমি এক অবুঝ শিশু। পর্ষী আমার হাত ধইরা চিপকাই রইসে সারাক্ষণ। তাই যাইতেও পারতেসি না। গাজররে খুঁজতেই দেখলাম গল্প করতেসে সবার সাথে। আমারে একটু পাত্তাও দেয় না গাজর জামাইটা। আমি ভাবতেসি আর সোফায় আঙুল নাড়াই খেলতেসি। হঠাৎ পর্ষী আমারে কইলো, গাজরের হালুয়া, আমার গিফট কই?
- গোটা একটা কেক বানাই দিলাম না?
- ঐটা তো আমি কিনসি।
- কেমনে?
- ওমা, গাজর দিলাম না? এখন আমার গিফট দাও।
আমি কি দিমু? কিসু তো কিনি নাই। খেয়ালও করি নাই। সব কিসুর মাঝে পইড়া ভুইলা গেসি। পর্ষী কইলো, আনো নাই যখন আমি যা চাইবো দিবা। কোনো কথা নাই। আমি ঢোক গিললাম। সে হঠাৎ লালুমিয়ার মতো জুলুজুলু কইরা তাকাই কইলো, আম্মু আজকে আমি তোমার কাছে থাকবো। কতদিন থাকি না। আমি কি কমু খুঁইজ্যা পাইলাম না। মেয়েটারে দেখে মায়া লাগল। যতই মায়া লাগুক একটা পিচ্চি শাঁকচুন্নি। আমারে জ্বালাইয়া কয়লা কইরা ফেলল। আমি কিসু কইলাম না। কারণ না কইলেও চিনা জোঁকের মতো লাগি থাকবে।
রাতে অনেক কষ্টে চিনা জোঁক ছাড়াই বাসায় আসলাম। ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসলাম। শাড়ি, নুপুর আর চুড়িগুলো যত্ন করে রাখলাম আলমারিতে। কেমন মায়ার জিনিস। কার কে জানে, কিন্তু আমার দেখে অনেক মায়া লাগে। ইসরে… ওর আম্মু আব্বুর কথা জিজ্ঞেস করা হয় নাই। মাইয়াটা আমারে আম্মু বলে ক্যান? জানা লাগবে। কালকে জানমু নে ওর খালামনি থেকে। এখন ঘুম দেই। বহুত ক্লান্ত লাগতেসে। শোয়ার আগেই একটা টেডি বিয়ার নিয়া পিচ্চি শাঁকচুন্নির প্রত্যাবর্তন। আমি কিছু বলার আগেই ঝিলিক কইলো, ছোঁয়াপু, ও নাকি আজ তোমার সাথে থাকবে।
- হুম, আজকে আমি আম্মুর কাছে থাকবো। এটা আমার গিফট।
- আমি কোথায় থাকবো তাইলে?
- তোমরা শোউ না। আমি তো আম্মুর সাথে চিপকে শুয়ে পড়বো। বেশি জায়গা নেবো না।
আমি মনে মনে কইলাম, এটুকু মেয়ে, পাকনা বেশি। সে আমার সাথে এসে শুয়ে পড়ল৷ আমি আর কি কইতাম। থাকুক তাইলে। এক রাতেরই তো ব্যাপার।
.
.
.
.
সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখলাম ঝিলিক উঠে গেছে আগেই, পর্ষী আমারে কোলবালিশের মতো জড়াই ঘুমাইতেসে। মাথা আমার হাতের উপর। সরাইতে গিয়াও সরাইলাম না। মেয়েটারে কিউটই লাগে। কিন্তু এমন ঝাল তাই প্রসংশা করতে মন চাইল না। আমি তাকাই আছি হঠাৎ সে চোখ মুখ কচলাই আমার দিকে তাকাইলো। কিউটটটটটট! আমি কইলাম, ঘুম ভাঙসে? সে আম্মু কইয়া একেবারে আমার বুকে মুখ গুজে আবার ঘুম দিলো। মনে হইলো বুকের কোনো ভাঙা অংশ জোড়া লাগল। আমিও ওরে জড়াই ধইরা ঘুম দিলাম আবার।
সাহেদা আইসা দ্বিতীয়বার ঘুম ভাঙাইলো। আমি তাকাইতে দেখলাম চম্বুকের মতো বিকর্ষণে দুইজন বিছানার দুই মেরুতে শুই আছি। আরেকটুর জন্য আমি বিছানা থেকে পড়ি নাই। আমি উঠলাম আস্তে ধীরে। সাহেদা কইলো, কেন যে মরার মতো পড়ি পড়ি এত ঘুমাস!
- কি করতাম? ঘুম আসে।
- মা মেয়ে তো ভালোই ঘুম দিলি। ঝিলিক কই ঘুমাইসে কাল?
- আমাদের সাথেই।
- তিনজন আটছিস?
- বহু কষ্টে।
- কেমনে যে থাকলি। যা ফ্রেশ হয়ে নে। আমি বসার ঘরে যাই। আন্টি মাত্র এল। যাই আচারের খোঁজ করি গা।
আচারপাগলি চইলা গেল। আমি ফ্রেশ হইয়া বসার ঘরে গেলাম। বড় একটা আচারের ডিব্বা নিয়া বসছে দুই পাগল। সেই সাথে টিভিতে জসীমের ঢিসুম সিন। ঝিলিকও অতি উৎসাহে বলতেসে, মার, মার। আমি আচারের বয়ামে বড় এক থাবা মাইরা কইলাম, ঝিল, তুই তো গিয়ে একটু কয়টারে পিটাই আসতেই পারস তাইলে নায়কের কষ্ট কম হইতো। ঝিলিক দাঁত কেলাই আবার সিনেমায় মন দিল। আমি সাহেদার দিকে ফিরে কইলাম, আমাদের তো বনভোজনে যাওয়ার প্ল্যান চলতেসে ডিপার্টমেন্ট থেকে।
- কবে!?
- এইতো কদিন পর। কক্সবাজার যাবে। তুই তো গেলি না সেদিন ক্লাসে।
- বাহ ভালো তো।
- হুম, ওখানে গিয়া দ্বিতীয় ডেইট করবি।
- আরে ধুর।
এমন সময় পর্ষী টেডিবিয়ার হাতে নিয়ে চোখ কচলাতে কচলাতে বসার ঘরে এসে আম্মু আম্মু করতে লাগল। তারপর আমার কাছে এসে ঝুরতে লাগল। আমি বললাম, পর্ষী আজ তোমার স্কুল নেই? পর্ষী আমার কোলে মাথা রেখে বলল, হু। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কয়টায়? ও বলল, নয়টায়। আমি ঘড়ির দিকে তাকাই দেখলাম সাড়ে দশটা বাজে। এখন আর স্কুলে গিয়া কাজ নেই।
এমন সময় কলিংবেল বাজল। সাহেদা গিয়া দরজা খুলল। মুন এসে হাজির। সাথে লাবিব। পর্ষী আমার কোল থেকে উঠে বইসা বলল, খাম্মি আসছো? মুন সোজা আমার কাছে এসে জড়াই ধরে রইল কতক্ষণ। মনে হলো যেন কানতেসে। তারপর চোখ মুছে বলল, কেমন আছিস?
- ভালো।
- তোকে দেখে কি যে ভালো লাগছে বলে বোঝাতে পারব না। একটা বছর কি যে গেছে!
- আপনারা আমাকে চেনেন?
- তা চিনি।
আমি ভাবতে বসলাম। পর্ষী আমারে আম্মু ডাকে ওর খালামনিও আমারে চেনে। ভাইবা মনে ভয় ঢুইকা গেল। তাইলে কি এই জন্মে আমার আর গাজররে পাওয়া হইবো না!? ওর বাপরে বিয়া করা লাগবো? ওয়েট! যদি আমার আগে বিয়া হয় তাইলে তো আব্বা আম্মা জানতো। কই কখনো তো কয় নাই। বন্ধুও আমারে বলে নাই। ধুর মাথায় কিছু ঢুকতেসে না। আমি জিগাইলাম, আচ্ছা পর্ষীর আব্বু কোথায়? তাকে দেখলাম না যে কাল।
আমার কথা শুইনা পর্ষী হঠাৎ আমার কোল থেকে উইঠা বলল, খাম্মি, আমি তো ভুলেই গেছি। একটা জায়গায় আমাদের না যাওয়ার কথা? চলো চলো। পর্ষী তারে ঠেইলা নিয়া চইলা গেল। কি হইলো ব্যাপারটা? ওর তো স্কুলে যাওয়ার কথা ছিল। ঘুমের জন্য যায় নাই। এখন হঠাৎ অন্য কোথাও যাওয়ার প্ল্যান হইলো কোন সময়? ধুর বাবা, ভাল্লাগে না। আমি বেশ বিরক্ত হইয়া আচার খাওয়ায় মন দিলাম।
চলবে…
এখন হঠাৎ অন্য কোথাও যাওয়ার প্ল্যান হইলো কোন সময়? ধুর বাবা, ভাল্লাগে না। আমি বেশ বিরক্ত হইয়া আচার খাওয়ায় মন দিলাম।
.
.
.
.
আহা, কি আরাম! আমরা মেয়েরা দাঁড়াই হাওয়া খাইতেসি আর পোলারা জিনিস পত্র নামাইতেসে। এক সপ্তাহ অনেক জল্পনা কল্পনা শেষে কক্সবাজার ট্যুর দিতে আসলাম ডিপার্টমেন্ট থেকে। বাপরে কি এক জার্নি হইলো! বাসে বইসা থাকতে থাকতে হাত ঠ্যাং ব্যাথা হই গেসে। প্রায় বারো ঘন্টা মেবি, রাত নয়টা থেকে ভার্সিটি মাঠ থেকে বাস ছাড়সে। আমি হিসাব করমু ভাবতেসিলাম সেই সময় সাহেদা ডাক দিল। সাগরের কাছেই একটা হোটেলে রুম ভাড়া নিসে সবার জন্য। মেয়েদের দুইটা ফ্ল্যাট আর ছেলেদের একটা৷ সবাই সেখানে রওনা দিসে। আমিও নিজের ব্যাগ কান্দে (কাঁধে) নিয়া ওদের পেছন পেছন হোটেলের ভেতরে গেলাম। আমরা এক বাস পোলাপাইন। তার সাথে স্যার ম্যাম আর আমার কটু গাজর জামাইটা। ওরে যে কি সুন্দর লাগে সব সময়! গল্পের নায়কের মতো। একটা ল্যামন কালারের শার্ট আর সাদা প্যান্ট পরসে। চুলগুলা কেটে একটু ছোট করসে মনে হইতেসে। টিচার হওয়ার পর থেকে ওর গুল্লু মার্কা চশমাটা আর পরতে দেখলাম না। ঐটাতে তো লেদা বাইচ্চা লাগতো। খুব দেখতে শখ হইতেসে। কিন্তু দেখার সৌভাগ্য হইবো কি না কি জানি৷ খালি বিয়াটা হইতে দাও, ঐ চশমা পরাই বসায়ই রাখমু সামনে।
আমরা সাড়ে আটটায় পৌঁছাইলাম। আমাদের নয়টায় নাস্তার সময় দেওয়া হইলো। এর মাঝে সবাই ফ্রেশ হয়ে হোটেলের নিচে চইলা আসলাম। সেখানে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। সবাই সেখান থেকে নাস্তা কইরা নিলাম। তারপর বের হইলাম সাগরের উদ্দেশ্যে। বিশাল জলরাশি দেইখা মনটাও পানির মতো টলমল করতে লাগল৷ ইস, এত্ত সুন্দর! যতদূর চোখ যায় কেবল পানি। উত্তাল ঢেউ আছড়ে পড়ে তীরে ফেনা তৈরি করতেসে। পানিতে দাঁড়াইলে ঢেউ ভাঙার পর বালুগুলা সুরসুর কইরা সইরা পড়ে পায়ের তলা থেকে। তখন আমার কাতুকুতু লাগে। আমি আমার এই মনের ভাব সাহেদারে প্রকাশ করতেই সে আমার দিকে এমনভাবে তাকাইলো যেন আমিই একমাত্র ভিনগ্রহের বাসিন্দা যে এমন হাস্যকর কথা কইতে পারি। তারপর আর কি? সবাইরে পানির পাগলে কামড়াইলো। সবাই তো পারতেসে না পানিতে ভাইসা যাইতে। আমরা দুইটাও কতক্ষণ ইচ্ছামতো পানিতে চরলাম। পানিতে ভিজা বিড়াল হইয়া, বালিতে গড়াগড়ি খাইয়া, একমণ ওজন হইসে এক একটার। দুপুরে সবাই ভালোমতো গোসল কইরা নিল হোটেলে আইসা। এটা কক্সবাজারের সমুদ্রতীরের বালি। বালির যে ভার! ধুইলেও যাইতে চায় না। পানি ঢালতে ঢালতে নড়েও না। কয়েকমণ পানি ঢাইলা একের পর এক গোসল কইরা নিল তাড়াতাড়ি। তিনটায় সবাই দুপুরের খাবার খেয়ে নিল।
আমাদের প্ল্যান ছিল রাতের খাবারটা বীচে খাওয়া হবে। তাই সারা বিকাল মাল পত্র টানাটানি আর দৌঁড়াদৌঁড়িতেই সবার কাটল। বাঁবুর্চি ঠিক করা হইসে আগে থেকে। তারা কই যেন রান্না করতেসে। সেখানে নাকি বাতাস কম। আমরা সবাই সাগরের কাছে বালির উপর বসছি গোল হয়ে। এদিকটা কিছুটা নিরিবিলি। সাগরটাও খানিকটা শান্ত তবে বাতাস আছে মোটামুটি। ইচ্ছে ছিল আগুন ধরাবে কিন্তু যে বাতাস আগুন ধোপে টিকবো না। তাই আর চেষ্টাও করে নাই। চাঁদটা উঠসে বলে রক্ষা। আমি সাগরের দিকে তাকাইলাম। কি সুন্দর চাঁদের আলোয় চিকচিক করতেসে সাগরটা! মনে হয় যেন ডায়মন্ড জ্বলতেসে পানিতে। স্যার ম্যাডাম সবাই নিজেদের মতো। আমার গাজর জামাইটারে খুঁজলাম। কই যে গেল! আসার পর দেখিই না যেন। ওর চেহারাটা না দেখলে শান্তি লাগে না। সাহেদা আমার পাশেই ছিল। আমারে এদিকে ওদিকে তাকাইতে দেখে কইলো, আকাশ ভাইয়াকে খুঁজিস?
- হঠাৎ ভাইয়া ডাকলি?
- ভাইকে ভাইয়া ডাকবো না তো কি শালা ডাকবো?
- আরে ধুর, স্যার না ডেকে ভাইয়া ডাকছিস সেজন্য জিগাইলাম।
- একটা ডাকলেই হলো। আয়ানকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করব তোর গাজরের কথা?
- বাব্বা, কি বালুবাসা! থাক লাগবে না।
- ওকে।
আমি একটু পরে কানে ফিসফিস করে জিগাইলাম, সাহেদা তুই জানিস কোথায়? ও না জানার ভান কইরা কইলো, কি? আমি একটু বিরক্তিভাব করে কইলাম, আরে গাজর আর কি। সাহেদা একটু উদাস উদাস ভাব কইরা কইলো, গাজর রান্না করতেসে যে ওখানে। গিয়া খা। আমি মুখটা ভেঙাইলাম।
একটু পরে দেখলাম আয়ান আর আকাশ আইসা বসলো ছেলেদের মাঝে। কই ছিল কে জানে। হঠাৎ কথায় কথায় কটা মেয়ে বায়না ধইরা কইলো, আকাশ স্যার, আপনি নাকি রান্না জানেন। আমাদের খাওয়ালেন না যে।
- আচ্ছা একদিন খাওয়াবো।
- আজকেই খাওয়ান না স্যার, সবাই খাবো।
আমি চিল্লাই উঠলাম, না………। সবাই আমার দিকে বেকুবের মতো তাকাইলো। আমি ভেটকি দিলাম। সেদিন গাজরের হালুয়া খাইয়া আমি যে বয়রা হইসি! এখনো ভাবলে চক্কর আসে। আজকে একটু আরাম কইরা খাইতে চাই। কিন্তু জনসম্মুখে জামাইর বদনাম করাটা ঠিক না। আমি কইলাম, না মানে, আমরা এখানে সবাই মজা করবো আর স্যার রান্না করবে। ব্যাপারটা কেমন না? সাহেদা কইল, তা ঠিক, তার থেকে বরং সবাই মিলে কিছু খেলি।
- কি খেলবি?
- ট্রুথ ডেয়ার?
সবাই সায় জানাইলো। ওরা কোথায় থেকে একটা বোতল জোগাড় করল। তারপর কোথা থেকে একটা ছোট টুল আইনা রাখল সবার মাঝে। বোতল ঘোরানোর দায়িত্ব দিল সৌরভরে। সে তো মহা খুশি। আর যাই হোক খেলা লাগবে না। না হইলে ট্রুথ ডেয়ারের ফান্দে কোন চিপকায় পড়ে ঠিক নাই।
বোতল ঘুরালো। প্রথমেই ফাইরুজ আর আকিব। ফাইরুজ আকিবকে জিগাইলো, ট্রুথ না ডেয়ার? ও উত্তর দিলো, ট্রুথ।
- এ পর্যন্ত কয়বার ছ্যাঁকা খাইলি?
আকিব কাঁদো কাঁদো হইয়া কইলো, আর কিসু পাইলি না জিজ্ঞেস করবার? কালকেও একটার কাছে ছ্যাকা খাইসি। এই নিয়ে সাত বার খেয়ে সপ্তাহ পূরণ করসি। ফাইরুজ হাসতেসে আকিবের কথা শুইনা। সৌরভ আবার ঘুরাইলো। এভাবে চারবারের সময় আমি পড়লাম। আমার বিপরীতে ফাত্তাহ, ক্লাসের দুষ্ট পোলা। আমারে জিগাইলো কি নিবো। আমার ডেয়ারের ঝামেলায় কাম নাই। কি না কি করতে দেয়। তাই ট্রুথ নিলাম। সবার সামনে জিগাই বসল, তুমি কাউকে পছন্দ করো? আমি চমকাই গাজরের দিকে তাকাইলাম। চাঁদের আলোয় ওর চেহারা দেখতেসি না ভালো। কিন্তু সেও যে আমার দিকে তাকাই আছে। ভাবতে লজ্জায় আস্তে আস্তে কইলাম, গাজরকে। আমার উত্তরে সবাই হাইসা উঠল৷ ওরা জানেই আমার গাজর অনেক প্রিয় তাই আর আমারে আলাদা কিসু কয় নাই৷ কিন্তু সাহেদা পাগলি লগে বসি মুখ চাইপা হাসতেসে। আমি একটা গুঁতা দিলাম ওরে।
এভাবে খেলা চলতেসিলো। এবার সাহেদার পালা। তার সরাসরি আমার গাজর বসছিল। সাহেদা জিজ্ঞেস করল, কোনটা নিবেন স্যার? ট্রুথ না ডেয়ার? আমি বুঝি না সাহেদা একবার ভাইয়া আর একবার স্যার কয় ক্যান। ভাবসিলাম ট্রুথ নিবো। তাইলে পেট থেকে বাইর করতাম কাউরে ভালো টালো বাসে কি না। সে আমার প্ল্যানরে কাঁচ কলা দেখাই ডেয়ার নিলো। অর্থ ভালো গান গায়, তাই গিটার আনসিলো। সাহেদা ওর থেকে গিটারটা নিয়া গাজররে দিয়া কইলো, ছোঁয়ার সাথে আপনাকে সরি দীপান্বিতা গানটা গাইতে হবে। আমি চমকাই উইঠা মনে মনে কইলাম, আমারে টানস ক্যান বেডি? আমার ভাবনার মাঝেই আকাশ গিটার বাজানো শুরু করল। তার মানে তারঁ আপত্তি নাই। কি আর করা! গলাটা ঝারি দিয়া শুরু করলাম। আমি গানের উসিলায় (মাধ্যমে) গাজরটার দিকে তাকাই রইলাম।
♪সময় যখন মরু ঝড়ে, এ মন হারায় কেমন করে,
আমি তখন যোজন দূরে একাকি সঙ্গী মৌনতা।
আকাশ যখন আধার ভীষণ, এক ফোঁটা জল চেয়েছে মন,
অবহেলায় অপমানে পেয়েছে রিক্ত শূণ্যতা।♪
ওর সময় আসতেই ও গান শুরু করল। আহা! কি কন্ঠ! আমি হা কইরা শুনতেসি। কি যে ভালো লাগতেসে। আমি গানের মাঝে হারাই গেলাম।
♪সমান্তরাল পথের বাঁকে, তোমার পথের দিশা থাকে,
সে দিশা খোঁজে তোমাকে দীপান্বিতা…
গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে, তোমার ছোঁয়া মিশে থাকে,
সে ছোঁয়া খোঁজে তোমাকে দীপান্বিতা……
তুমি নীলাকাশ আপন করেছো, হঠাৎ কোন কালে কে জানে!
স্বপ্ন সীমানা ছুয়ে দিয়েছ, কোন সে জাদুতে কে জানে!
আমি ছিলাম তোমার পাশে, তোমার আকাশ ভালোবেসে,
সে বিশালে খুজেছি এটুকু ঠাঁই, তাও মেলেনি তা।
হঠাৎ যখন ছুটির খেলা, মেঘে মেঘে অনেক বেলা।
তখন সে ক্রান্তিকালে, ধুম্রজালে খুঁজছ যে বৃথা।
অশান্ত মন বোঝাই কাকে, হারিয়ে চাইছি তোমাকে,
হাতছানি দিয়ে যে ডাকে স্মৃতির পাতা…
নদীর শেষে আকাশ নীলে, স্বপ্নগুলো মেলে দিলে,
তারা বলে সবাই মিলে দীপান্বিতা……
শোননা রূপসী, তুমি যে শ্রেয়সী,
কী ভাষণ উদাসী প্রেয়সী, না না না…
জীবনের গলিতে এ গানের কলিতে,
চাইছি বলিতে ভালোবাসি।
চোখের জলের আড়ালে খেলা শুধু দেখেছিলে,
যন্ত্রণার আগুন নীলে, পুড়েছি যে বোঝোনি তা।
অভিমানে চুপটি করে এসেছি তাই দূরে সরে,
বোঝাতে চেয়েও পারিনি, তাই বোঝাতে লুকানো কথা।
ইট পাথরের শহরে, গাড়ি বাড়ির বহরে,
খুঁজেছে এ মন ভীষণ করে দীপান্বিতা…
জীবন যখন থমকে দাঁড়ায়, স্বপ্নগুলো দৃষ্টি ছাড়ায়,
তৃষ্ণা বুকের বৃষ্টি হারায় দীপান্বিতা……
কল্পনারই আকাশ জুড়ে, নানা রঙে লোকের ভীড়ে,
দুচোখ বুজেও স্বপ্ননীড়ে দীপান্বিতা…
তুমি আমার চোখের ভাষা, তুমি আমার সুখের নেশা,
তুমি আমার ভালোবাসা দীপান্বিতা……♪
আকাশ গান শেষ হইতেই হঠাৎ কইল, আমি দেখি খাবার কতদূর। বইলাই উইঠা চইলা গেল। সবাই আবার খেলায় মন দিল। সাহেদা আমার কানে ফিসফিস কইরা কইলো, যাহ, আজকে তোরে একদিনের জন্য আকাশের দীপান্বিতা বানাই দিলাম। আমি হাসলাম। কিন্তু কেন যেন মনে হইল আমার গাজরটার মন খারাপ ছিল।
নয়টার দিকে খাওয়ার জায়গায় ডাক দিল। সবাইকে ওয়ান টাইম প্লেটে খাবার বাইড়া দেওয়া হইলো। বালিতে বড় দুইটা পাটি বিছাই বসছে সবাই। আমি সাহেদার লগে আইসা বসলাম। খাবার নেওয়ার সময় কেমনে কেমনে জানি পড়তে লাগসিলাম। নিজে পড়সি না পিছন থেকে কেউ ধাক্কা দিল তা ঠাউর করতে পারলাম না। কোথা থেকে গাজরটা সামনে আইসা পড়ল তাই তার বুকের উপর গিয়া ধাক্কা খাইলাম। নইলে পড়তাম খাবার সহ বালিতে। আকাশ জিজ্ঞেস করল, তুমি ঠিক আছো? আমি মাথা নাড়লাম। এখন খাইতেসি আর মন কইতেসে, গাজরের কাছে যাওয়ায় যে ঘ্রাণটা নাকে লাগসে আমি তো ফিদা ছোঁয়া। মনরে ধমক দিয়া কইলাম, চুপ, খালি পোলা দেখস, ঐ যে লালুমিয়া দেখ, লালুমিয়া। সালাদের প্লেটে উঁকি দিয়া তোরে দেখতেসে। ঐটা দেখ। বেদ্দপ বেডি।
মাত্র দশটা বাজে। কারো হোটেলে যাওয়ার মুড নাই।সবাই ইচ্ছামতো আড্ডা দিতেসে। হঠাৎ সাহেদার শরীর খারাপ লাগল। ও আমারে বলল, ছোঁয়া, আমার সাথে হোটেল যাবি? আমার মনে হচ্ছে জ্বর আসছে।
- আচ্ছা চল।
আমি পিছন ফিইরা দেখলাম মাইয়া গুলা আয়ান আর আকাশরে ঘিইরা ধইরা গল্প করতেসে। আমি মনে মনে কইলাম, বেত্তমিজ মাইয়াগুলা। আমগো জামাইগুলার দিকে খালি নজর দেয়। আমি সাহেদার দিকে খেয়াল রাখতে রাখতে হাঁটতে লাগলাম। ওর বেশিই খারাপ লাগতেসে মনে হইল। কপালে হাত দিয়া দেখলাম বেশ গরম। সাহেদা হঠাৎ চারদিকে তাকাইয়া কইল, ছোঁয়া, কোথায় যাচ্ছিস? এটা তো হোটেলের রাস্তা না।
চলবে…
সাহেদা হঠাৎ চারদিকে তাকাইয়া কইল, ছোঁয়া, কোথায় যাচ্ছিস? এটা তো হোটেলের রাস্তা না। আমি চারদিকে তাকাইলাম। ঠিকই তো। এটা তো হোটেলের রাস্তা না কিন্তু আমি চিনি রাস্তাটা। অথচ কক্সবাজার এ প্রথম আসলাম! আমি ওরে নিয়া হাঁটতে হাঁটতে কইলাম, সাহেদা আমি চিনি রাস্তাটা। চল।
আমরা একটা বাংলোর সামনে দাঁড়াইলাম। কার কে জানে। বুঝতে পারতেসি না। গেটের কাছে যাইতেই দারোয়ান সালাম দিলো। আটকাইলো না। আমি ঢুকলাম ভেতরে। সাহেদা কইলো, আমারে কই নিয়া যাস? ভূতের বাড়ি আনছিস নাকি!? এত বড়ো কেন? আমি চিন্তায় থাকার পরও ওর কথায় হাইসা ফেললাম। তারপর আগাইলাম। আমি সব চিনি। এই রাস্তা, বাংলো। ভেতরে আসতেই হঠাৎ একটা মেয়েকে চোখে পড়লো। রান্নাঘরে কাজ করতেসে। শব্দ শুইনা ফিরতেই দেখলাম মুন। আমাদের দেখে দৌঁড়ে আসল।
- ছোঁয়া এসেছিস?
- তুমি এখানে?
- এটা তো আমাদের বাংলো। তোর তো মনে নেই।
ও আমাদের বসতে বইলা কইলো, কাল পর্ষীর কাছে শুনলাম তুই নাকি কক্সবাজার ট্যুরে আসবি৷ তাই ভাবলাম আমরাও আসি একটু। যদি দেখা হয়ে যায়! আমি চিন্তা করতেসি আমার ট্যুরের কথা পর্ষী জানল কেমনে? ওরে তো বলি নাই।
- বোস, আমি খাবার দেই।
- না, আমরা খেয়ে এসেছি। সাহেদার খারাপ লাগছিল তাই হোটেলে যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে হঠাৎ খেয়াল হলো ভুল রাস্তায় চলে এসেছি। চেনা লাগল তাই…
- চেনা তো লাগবেই কত এসে……
মুন অর্ধেক বইলা থেমে গেল। সবাই এত রহস্য করে ক্যান কে জানে। ও কথার টপিক ঘুরাইয়া কইল, কি হয়েছে ওর? আমি কইলাম, জ্বর আসছে মনে হয়। সাহেদা মাথায় হাত দিয়া বলল, গত কদিন শরীরে জ্বর জ্বর ভাব ছিল। আজকে সাগরের পানিতে ভেজায় হয়তো জ্বর চলে আসছে।
- আমার সাথে উপরে এসো। শুয়ে থাকবে।
মুন আমাদের দোতলায় নিতে নিতে বলল, পর্ষীটা একটু আগে ঘুমিয়েছে। তোর কাছে যাওয়ার জন্য কত কান্নাকাটি করছিল। আক…… মানে ওর আব্বু এসে শান্ত করল। তারপর ঘুমাতে গেল। আমি একটু অবাক হইয়া কইলাম, ওর আব্বু আসছে? মুন বলল, হুম। আমি কইলাম, এতদিন দেখিনি যে? ওর আব্বুর কথা তো জানিই না। কি নাম? কি করেন? মুন রুমের দরজা খুইলা বলল, বলা যাবে না। পর্ষীর বারণ। বলেই আমাদের রেখে নিচে চইলা গেল। যেন পলাইলো। সাহেদা গিয়া বিছানায় শুইয়া পড়ল। আমি ওর গায়ে চাদর টাইনা কইলাম, পর্ষী বাচ্চাটারে দেখতে কত সহজ সরল মনে হয়! কাছে থাকলে বোঝা যায় কত দুষ্ট। আচ্ছা ওর বাবার নাম লুকালো কেন? নিশ্চয়ই কোনো ঘাপলা আছে। সাহেদা ঘুমানোর চেষ্টা কইরা কইল, তা তো আছে। সময় হলে জানতে পারবি।
- তুই জানিস নাকি?
- ছোঁয়া ঘুমাতে দে। মাথাটা ব্যাথা করছে, চোখও জ্বলছে। সৌরভকে ফোন দিয়ে বলে দিস আমরা কোথায়।
আমি ফোন দিয়া কইলাম সাহেদার শরীর খারাপ লাগতেসিলো তাই কাছেই এক রিলেটিভের বাসায় আসছি। আজকে হয়ত এখানে থাকতে হবে। সৌরভ কইলো স্যার গো জানাইবো। আমি ফোনটা কেটে রুমের দিকে তাকাইলাম। কেন যেন চেনা সবকিছু। রুমের সাথে একটা বারান্দা। সেখান থেকে সাগরের গর্জন আসতেসে। আমি গিয়া দরজা খুলতেই বাতাসগুলা হুমড়ি খাইয়া পড়ল রুমে। আমি দাঁড়াইলাম আরাম কইরা। এত সুন্দর জায়গা! চাঁদটারে যে অনেক কাছে লাগতেসে এখান থেকে। এখন যদি গাজরটা থাকতো! আমি সরমে মুখ ঢাকলাম।
হোটেলে ঢুকতেই সবাই ঘিইরা ধরল। কোথায় ছিলাম, কি হইসে, এখন কেমন আছে, এসব। আমরা কইলাম সবই ঠিক আছে। সাহেদার এখন জ্বর নাই। সে আরামেই ঘুমাইসে। আমিই ওভারলোড হইয়া ঘুমাইতে পারি নাই। কাল রাতে এখানে খাইবার পরও মুন জোর কইরা আমারে খাওয়াইলো পরে। পেটটা দেখলে হয়ত কেউ জিগাইতো কয় মাস। আরেকটুর জন্য পেট ফুইটা খাবার বাইর হয় নাই। এত কিছু খাইবার পর যদি আমারে লালুমিয়া দেওয়া হয় কোন চিপায় তারে ঢুকাইতাম!? লালুরে না খাইতে পারার দুঃখে ইচ্ছে করতেসিলো সাগরে ডুব দিয়া আসি। এরপর আবার সকালে দেখি ঐ পিচ্চি শাঁকচুন্নিটা আমারে কোলবালিশ বানাইয়া ঘুমাই আছে। কখন আসছে কে জানে। নড়তেই জাইগা গিয়া এত জোরে জাপটে ধরল! আল্লাহ! আসার সময় কইলো, ফেরত গেলে নাকি আবার ট্যুর দিবে আমার বাসায়। কয়েক কেজি লালু কিইন্না রাখতে তার জন্য। ইহ্! আমারই কুলায় না আবার তার জন্য রাখতাম।
ফ্রেশ হইয়া নিলাম ভালোমতো। দুপুরে খাওয়া শেষে গেলাম একটু টুকটাক কিনতে। কালকে তো ঘোরাই হয় নাই আড্ডার জন্য। অনেক শামুক ঝিনুকের দোকান। এসব কেনার থেকে সাগর পাড়ে কুড়াই নিতে ভাল্লাগে। আমরা দুইটা বড়ো শামুক কিনে রাইখা আইলাম দোকানে উপর দিয়ে নাম লেখার জন্য। আমি আকাশ নামটা লিখতে কইসিলাম। আরেকটুর জন্য গাজর নামটা চইলা আসছিল মুখে। আমরা ঘুরলাম দোকানে দোকানে। কেনাকাটা কইরা সাড়ে আটটায় চইলা আসলাম হোটেলে। রাতের খাওয়া সাইরা নয়টায় রওনা দিলাম। বাসে সবাই ঘুমে কাদা। সৌভাগ্যবশত আমাদের পাশের সিটে আয়ান আর আকাশ বসছে। আমি সাহেদার কোলে মাথা রাইখা বাসের সিটে শুইয়া ওর দিকে তাকাই আছি। যখন বাইরের আলো পড়তো কয়েক সেকেন্ডের জন্য ওরে দেখতাম তারপর আবার অন্ধকার। ওরে দেখলে মনটা চঞ্চল হয় ঠিকই কিন্তু এক অজানা শান্তি লাগে! এর মাঝেই ঘুম।
.
.
.
.
বনভোজনের আনন্দ শেষ হইতে না হইতেই সেমিস্টার শুরু। কি যে প্যারা! দশদিন মাঝে পাইসি কেবল। আমি গাজর খাইতে খাইতে পড়তেসি এর মধ্যে পর্ষী আইসা হাজির। দরজায় ঢুকতেই কইলাম, খবরদার, কালকে আমার এক্সাম। বিরক্ত করবা না। আমার পরীক্ষা খারাপ হবে। সে গাজরের দিকে তাকাইতেই আমি গাজরগুলা নিজের পেছনে লুকাইয়া কইলাম, খবরদার, লালুর দিকে নজর দিবা না। আমার পরীক্ষা খারাপ হবে। আমার কথা শুইনা মুখ ভেঙচাইয়া চইলা গেল। আমি আবার পড়ায় মন দিলাম। এক ঘন্টা মন দিয়ে পড়ার পর দেখলাম লালু শেষ। আমি বই নিয়ে পড়তে পড়তে হাঁইটা ফ্রিজের কাছে গেলাম। ফ্রিজ খুইলা লালু নিয়া আবার ফিরলাম টেবিলে। বাটি থেকে একটা লালু নিয়া কামড় দিতেই কইলাম, তিতা লাগে ক্যান! বই থেকে বাটির দিকে তাকাইতেই আমার সারা মুখ কুচকাই চিৎকার মারতে মন চাইল। লালুর বদলে করলা রাক্ষস আমার পেটে পড়সে। আমি তাড়াতাড়ি ওগুলারে ফ্রিজে রাইখা লালু খুঁজতে লাগলাম। পর্ষী এখনো ঠ্যাঙ ঢুলাইতেসে সোফায় বইসা। আমারে গাজর খুঁজতে দেইখা কইল, গাজরের হালুয়া তুমি কি এটা খুঁজছো? আমি তাকাইয়া দেখি তার হাতে গাজরের অর্ধেক। আমি গিয়া দেখলাম আমার সব লালুরে সে একলা সাবাড় করে ফেলসে! কাল আব্বু মাত্র দুইকেজি আনসিলো।
- আমার সব লালু মিয়া খেয়ে ফেললি?
- কটাই বা ছিল? মোট পাঁচটা।
- কাল দুই কেজি এনেছিল।
- তো? পাঁচটা আর কতটুকু? বাকিগুলা তো তুমিই সাবাড় করেছো।
এ মেয়ের সাথে তর্ক করা মানেই নিজের পায়ে নিজে দা, কুড়াল, বটি, ছুটি সব মারা। আমি রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াইতে কইল, এটা লাগবে? অর্ধেইক্কা গাজর আমার দিকে বাড়াই রাখসে। আমি কইলাম, থাক। তারপর রুমে গিয়া পড়ায় মন দিলাম। এর কথা ভাবলে আমার পরীক্ষার বারোটা বাজি তেরোটার কাছে যাইবো গা।
পনেরো দিন পরীক্ষা চলল এক টানা। এরমধ্যে পর্ষী প্রত্যেকদিন আইসা সোফায় ঠ্যাং ঢুলাইতো, গল্প করতো আর আমার লালু সাবাড় করত। তার মধ্যে আরো একটা দুঃসংবাদ পাইলাম। আমার গাজরের মেয়াদ শেষ। দুই মাসের সময় শেষ। তারে আর ভার্সিটি দেখমু না। তার ক্লাস মিস করার কষ্টে কান্দন আইলো। তবে বাসার পাশে থাকায় শোক করা লাগে নাই। কুক করলেই দেখতে পামু। তাই টেনশন নাই। আজকে পরীক্ষা শেষ কইরা আম্মুর সাথে দেখা করতে গেলাম। অনেকক্ষণ থেকে বইসা আছি। সেই একটা থেইকা। সাহেদারে বিদায় দিয়াই হাসপাতালে চলে আসছি। আমার মতো শুকনা কিউট মেয়েটা যদি এত মানুষের মাঝে থাকে তো জেরির মতো চিলে চ্যাপ্টা হই যামু। আজকেই এত রোগী হইতে হইল? রিসেপশনিস্টের সাথে কথা বইলা জানতে পারলাম রোগীর চাপে কারোরই বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ হইতেসে না। আম্মাটাও একবার এসে আমার সাথে দেখা করতে পারতেসে না। আমি বইসা বইসা ঠ্যাং ঢুলাইতেসি আর চুইংগাম চাবাইতেসি। ভাবতেসি লালু মিয়া থাকলে বেস্ট হইতো। চাবাইতে চাবাইতে আশপাশটা উপভোগ করা যাইতো।
হঠাৎ একজনকে দেইখা টম এন্ড জেরির মতো আমার মনে ঘন্টি বাজতে লাগল! আমার গাজর! এখানে! সে হন্তদন্ত হয়ে হেঁটে যাইতেসে। গায়ে সাদা এপ্রোন, গলায় স্ট্যাথোস্কোপ। তার নতুন নতুন রূপে আমি উগান্ডায় যাইয়া পড়ার অবস্থা! আমার গাজর ডাক্তার! আমার সেই লেভেলের ডিংকা চিকা নাচ দিতে মন চাইতেসে। কিন্তু হাসপাতালে এমন নাচ দিলে সমস্যা। সবাই আমার দিকে ভেটকাই তাকাই থাকবো। আমি লজ্জায় দুই হাত দিয়া মুখ ঢাইকা ফেললাম। এত আনন্দ কই রাখি? কিন্তু চোখ ঢাকার ফল সরূপ সে আমার অজান্তেই হাওয়া হই গেল। যাহ! এদিক ওদিক তাকাই তার কোনো হদিস করতে পারলাম না। ধুর, এটা ঠিক হইলো? আমার পেয়ারের গাজরটা। নাহ, আমারে খুঁইজ্যা বাইর করতে হবে। এখন মনে হয় না আর কিছু করা যাইবো। আম্মার সাথেও দেখা করার উপায় নাই। বাসায় গিয়া লালু মিয়া খাইতে খাইতে ভাবা লাগবে কি করা যায়।
সেই একঘন্টা বিছানার সাথে ল্যাপ্টা মেরে শুয়ে আছি। কিচ্ছু মাথায় আসতেসে না। দুইকে পেটে ঢুকাই তিন নাম্বার লালু মিয়ারে কইলাম, বুদ্ধি দে। না হইলে আজকে তোর ঘাড় মটকামু। হু হা হা হা……। লালু মিয়া আমার দিকে নির্বাক হই তাকাই রইল। এক কামড়ে ওর অর্ধেকটা পেটে চালান দিয়া কইলাম, হুম…… হুম……… ঠিক বলছিস লালু মিয়া। তোকে আমার ফার্স্টে খাওয়া উচিত ছিল। তাহলে বুদ্ধিটা আরো আগে বাইর হইতো।
.
.
.
.
পরদিন সাহেদারে সকাল সকাল ডাইকা নিয়া হাসপাতালে চলে আসলাম। ও কইল, তোর কি হইসে যে সকাল সকাল হাসপাতালে আসছিস? অসুস্থ? ডাক্তার দেখাবি নাকি? আমি এদিক ওদিক তাকাই কইলাম, হুম।
- ডাক্তার দেখাইলে মাস্ক পরছিস কেন?
- হুম।
- এই তুই চগর বগর না করে বলবি কি হইসে?
- গোয়েন্দাগিরি করতে আসছি।
- কার উপর?
- গাজরের উপর।
- স্যার এখানে!? জানলি কেমনে?
- কালকে দেখসি। কি যে কিউট লাগতেসিলো!
- তোর তো সব সময় কিউট লাগে। কিন্তু মাস্ক পরছিস কেন?
- যেন না চিনে।
- আমাকে দেখলে তো চিনে ফেলবে।
- তোকে ছাড়া একলা গোয়েন্দাগিরি করতে মজা নাই।
- এজন্য আমাকে তলব করেছিস এই সাঝ সকালে? একটু পরে ভাইবা দিতে যাইতে হবে। আর তুই এখানে নিয়া আসলি! পড়াশোনা নাই?
- টুক কইরা খোঁজ নিয়া চইলা যামু।
আমি মাস্কের আড়ালে বত্রিশটা দাঁত দেখাইলাম। সাহেদা আমারে নিয়া হতাশ হই রোগীদের বসার জায়গায় বসে পড়ল। আমি সবাইরে ভালো কইরা পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম। আজকে আর মিস করা যাবে না। লজ্জা পাইলেও না।
চলবে…
আমি সবাইরে ভালো কইরা পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম। আজকে আর মিস করা যাবে না। লজ্জা পাইলেও না।
সেই সকাল আটটায় আসছি। এখন সাড়ে দশটা বাজতেসে। লোকটার কোনো খবর নাই। বাসায় কি নয়া বউয়ের মতো সাজতেসে নাকি? এত্ত লেট ক্যান? না আজকে আসবে না? আমি চিন্তায় পড়লাম। সাহেদা আমারে কইল, এবার চল বোইন, বহুত খুদা লাগসে। তোর জ্বালায় সকালে একটা রুটি খেয়েই দৌঁড় দিসি। ওর কথা শুইনা পেটের কোণায় মোচড় দিল খুদায়৷ দুই লোকমা ভাত খাইয়াই চইলা আসছি। এখন পেটটা কিসব মঙ্গল গ্রহের প্রাণীর মতো শব্দ কইরা গান শুনাইতেসে। ঘাড়টাও ব্যাথা করতেসে। একবার বামে একবার ডানে তাকাইতে তাকাইতে ঘাড় ভাঙার উপক্রম হইসে। তার থেকে ভালো দরজায় দারোয়ানগিরি করতাম। সহজে কাজ হইয়া যাইতো। আমিও নিরাশ হয়ে কইলাম, চল। ও উইঠা দাঁড়াইতেই আমি ভৌঁ দৌঁড় দিলাম। সাহেদা ডাক দিয়া বলল, কই যাস? আমার উত্তর দেওয়ার সময় নাই। গাজররে দেইখাই পিছু নিলাম।
দশমিনিট পরে দেখলাম সে চেম্বারে ঢুকলো। ওরে কি যে লাগতেসিলো মেডিকেল এপ্রোনে! ইচ্ছে করতেসিলো তুইলা নিয়া যাই কাজি অফিসে। নাহ, থাক পরে কইবো গুন্ডি বউ। উপরের টুলেটের দিকে তাকাইলাম। লেখা, ডক্টর আকাশ আয়মান। নিউরোসার্জন। আমি হা কইরা টুলেটের দিকে তাকাই থাকতে থাকতে আকাশ আবার বাইর হইলো। আমি তো হা করতে করতে আগাইতেসিলাম তো তার লগে ধাক্কা খাইলাম। সেও তাড়াহুড়োয় ছিল খেয়াল করে নাই। ঠিক নায়ক নায়িকার দেখা হওয়ার পর্বের মতো। সেই সিনগুলা জাস্ট দেখার মতো। কিছুই হইলেই ধাক্কা। বাসে গাড়িতে কলেজে ভার্সিটিতে। ধাক্কার শেষ নাই। ধাক্কা ছাড়া প্রেম শুরুই হয় না। আমিও তো ধাক্কা খাইসিলাম আকাশের লগে। তবে সেই অফারে ক্রাশ খাওয়া ফ্রি আছিলো। সে আমার দিকে তাকাইয়া কইলো, সরি। আরে ছোঁয়া! মনে মনে কইলাম, চিনলো কেমনে!? মাস্ক পইরাও লাভ হইলো না।
- আরে স্যার যে। কেমন আছেন?
- আছি ভালো। এখানে?
- এইতো ঘুরতে এসেছিলাম আর কি।
- হাসপাতালে কেউ ঘুরতে আসে?
- না মানে দাঁতের ডাক্তারের কাছে আর কি।
- কি হয়েছে দাঁতে?
- দাঁতে কি হয়েছে? হয়েছে আর কি। ঐতো যা হয়। গাজর খেতে গিয়ে দাঁত নড়ে গেছে।
- দাঁত নড়ে গেছে গাজর খেতে গিয়ে! কি বলো! কিন্তু দুঃখের ব্যাপার আমার জানা মতে তো এই হসপিটালে কোনো দাঁতের ডাক্তার বসে না।
আমি বিড়বিড় কইরা কইলাম, আপনারে দেখে তো কথাই আউলাই গেসে। আপনি যেভাবে চেপে ধরসেন, আপনার কথার উত্তর দিতে গিয়া শুধু দাঁত না দাঁতের পাটি খুইলা বেরিয়ে আসবে।
- কিছু বললে?
- না না। কিচ্ছু বলিনি।
- আচ্ছা।
আকাশ চইলা যাইতে লাগলে পিছন থেকে ডাক দিয়া কইলাম, স্যার একটা সাহায্য করবেন? সে ফিইরা বলল, কি? আমি এগিয়ে এসে কইলাম, আপনার ফোনটা দেওয়া যাবে?
- কেন?
- আসলে আমি সাহেদাকে হারিয়ে ফেলেছি। ওর সাথে এসেছিলাম। আমার ফোনেও ব্যালেন্স নেই। একটু ফোনটা দিলে সাহায্য হতো।
- ওকে। একটু তাড়াতাড়ি করবে। আমাকে ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) যেতে হবে।
- জ্বি।
আমি ফোন করার বদলে ওর ফেসবুকে ঢুইকা নিজের আইডিতে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাই দিলাম। তারপর নিজের ফোনে কল দিয়া দিলাম। আমার ফোন বাজতেই ভং ধইরা কইলাম, হয়তো সাহেদা কল দিয়েছে। ধন্যবাদ সাহায্যের জন্য। কইয়াই ফোনটা ফেরত দিলাম। আমি তো মনে মনে লাফাইতেসি আর নিজের চিনা বুদ্ধির প্রশংসা করতেসি। খেয়াল করি নাই গাজর আমার দিকে অনেকটা আগাই আসছে। খেয়াল হতে সমান তালে আমিও মাথা পিছনে নিলাম৷ ও খুব কাছে আইসা কইলো, একটা কথা বলব? আমি ঢোক গিইলা কইলাম, কি? ও রহস্য দেখাই কইলো, সত্যি বলব? আমার গলা শুকাই আসলো। শুকনা গলায় বললাম, বলেন।
- তুমি না…
- আমি না?
- তুমি না…… দুই পায়ে দুই জোড়ার জুতা পরসো।
নিচের দিকে তাকাইলাম, ইচ্ছা করতেসে নিজের চুল নিজে ছিঁড়তে। উম! না থাক, ব্যাথা পামু। কিন্তু আজকেই দুই জোড়ার দুই জুতা পরতে হইলো! সকালে বের হওয়ার সময় গাজরের উত্তেজনায় খেয়ালও করি নাই। হায়রে ফুটা কপাল! আর সে যেমনে আগাইতেসিলো ভাবসিলাম…… ধুর ভাল্লাগে না। আমি একটুভাব নিয়া কইলাম, আরে এটা নতুন স্টাইল, স্যার। আপনি এখনো জানেন না! আকাশ আমার থেকে সইরা কইলো, ও আচ্ছা। এক পায়ে শু আর আরেক পায়ে স্লিপার পরার মতো স্টাইল আপাতত নজরে পড়েনি। আজ তোমার থেকে না হয় শিখে নিলাম। ভবিষ্যতে আসবো কিন্তু নতুন নতুন স্টাইল শিখতে। আসি। বইলাই আমারে এক বালতি সরম দিয়া চইলা গেল।
আমিও কম না, মনে মনে চিনা হাসি দিয়া কইলাম, গাজর তুমিও দেখবা তোমার মন্ডু কিভাবে চিবাইতে হয়। সাহেদা একটু পরে এসে কইল, কিরে, তুই এখানে? আমি তোকে সারা দুনিয়া খুঁজতেসি।
- আজকে গাজরের মুন্ডু দিয়ে চচ্চড়ি বানামু।
- আকাশ স্যারের ঠেলায় কি মাথা আউট হয়ে গেছে?
- সখী, জ্বালানি কাহারে বলে; সখী, বিরক্তি কাহারে বলে। তোমরা যে বলো আমারো মাথায় চিনা বুদ্ধির বাসা……। সখী, চিনা বুদ্ধি কারে কয়। সে বুঝিবে কত ধরণের হয়।
- ওই তুই কি পুরাই আউট হইলি?
আমি দাঁত কেলাই কইলাম, চল, আজকে খুশির ঠেলায় তোরে এক টাকার এলপেনলিবেন খাওয়ামু। সাহেদা মুখ বাঁকা কইরা কইল, থাক, তোর এলপেনলিবেন তুই খা। আমি বাসায় গিয়া ভাত গিলমু। তোর সাথে থাকলে আমার পেট স্বর্গে উড়াল দিবো। কপাল! বাসায় যামু কেমনে!? একটু পরেই তো ভাইবা!
- জ্বি সুইট হার্ট, চলেন টঙে গিয়া দুইটা খাইয়া ভাইবার প্রস্তুতি নিমু।
.
.
.
.
আমার ভাইবার সিরিয়াল এত পরে আসছে যে আরেকটুর জন্য নাক ডাইকা ঘুম দেই নাই। বিকালে ক্লাস পরীক্ষা হইলেই এই এক সমস্যা। খালি ঘুমে ঝুরায়।ঘুমে ঝুরতে ঝুরতে অর্ধেক দিন শ্যাষ৷ ফ্রিজ খুইলা এক বোতল ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল পানি ঢকঢক করে খাইতেই নাকে মুখে উইঠা অবস্থা কাহিল হই গেল। ঝিলিক ঘুম থেকে উঠে দরজা খুইলা আবার বিছানায় বসে ঝুরনি মোরগের মতো ঝুরতেসিলো। আমার কাশি শুইনা দৌঁড়ে আসলো। আমি কাশতে কাশতে সোফায় গিয়া বসলাম। একটু শান্ত হইতেই ঝিলিক জিগাইলো, ছোঁয়াপু, সারাদিনে খাইসো?
- হুম। না খাইলে পেটের ইন্দুর বিলাই গুলা আমার পিন্ডি চটকাইতো।
- খালা যাওয়ার আগে বার বার বলতেসিলো তুমি নাকি কয়টা ভাত নাকে মুখে গুঁজে বের হইসো।
- তা ঠিক বলসে আম্মু। যা হোক, খানা দানা কিছু রাখছিস না হাইন্ডা হাতিল (হাঁড়ি পাতিল) খালি করি রাখছিস?
ঝিলিক দাঁত কেলাই বলল, আইজকা রান্দা বাড়া করি নাই। খালা তো বারোটার দিকেই বের হই গেসে। খালুও সকাল সকাল গেসে গা। দুপুরে আগের কিছু ছিল তাই দিয়া পেট ভরসি। আমি হালকা কইরা কান মলে দিয়া কইলাম, চুরুনি৷ সে ঢং করে কান ডলে বলল, খুদা লাগসে।
- হ্যাঁ, রান্না না করলে খুদা তো লাগবে। আয় আমার সাথে।
দুইটা মিলা দুই প্যাকেট ঝোল ঝোল নুডুলস রান্না কইরা, ফ্যান চালাইয়া, টিভি ছাড়ি আরাম করে সোফায় বসলাম। সেই ঝাল হইসে। লম্বা লম্বা নুডুলসগুলা সুরুৎ করে টানতেই নাকে মুখে ঝোল ছিটাইয়া একাকার করে দিল। ব্যস, বান্দর নাচ কারে কয়। সাথে সাথে নাক ঝালে জ্বলে শ্যাষ। আমি কোনোমতে পড়ি মড়ি কইরা নাকটা ধুয়ে এসে দেখি ঝিলিকও লাফাইতেসে ঝালে। আমি ওরে এক গ্লাস পানি দিতেই সে পুরাটা খাইয়া নিল। তারপর দুইটা দুইটার দিকে তাকাই হাসতে হাসতে ফ্লোরে গড়াগড়ি খাইলাম কতক্ষণ। হাসি শেষ হতেই জিজ্ঞেস করলাম, পেট ভরসে?
- হ।
- এবার এগুলা ধুইতে যা। এটা তোর শাস্তি। একটু পরে ডাল ভাত তুলে দিবো। সাথে ভর্তা আর ডিম ভাজি। ব্যস, জীবনে আর কি লাগে!
ঝিলিক চইলা গেল রান্নাঘরে। এদিকে টিভি এক নাগাড়ে চলতেসে। আমি কতক্ষণ তাকাই ভাবলাম কি যেন ভুলে গেসি। হাতে গণতে শুরু করলাম, ভার্সিটি গিয়া খাইসি, ক্লাসে গেসি, সেখানে ইচ্ছা মতো ঝুরসি, বাসায় আসছি, খানা খাই ইন্দুর বিলাই গুলারে ঠান্ডা করসি আর এখন ফ্লোরের ঠান্ডায় বইসা টিভি দেখতেসি। আর কি!? ভাবতে ভাবতে হঠাৎ টিভিতে হাসপাতালের কথা বলা শুরু হলো। কোন এক হাসপাতালের কি এক সমস্যা হইসে। শুইনাই লাফ দিয়া উঠলাম। আমার গাজর ডাক্তার! দৌঁড়ে রুমে গিয়া ব্যাগ থেকে ফোন আইনা আরাম করে সোফায় বসলাম। ফেসবুকে ঢুকে দেখলাম আকাশ আয়মান নামে একটা আইডি থেকে রিকুয়েষ্ট আসছে। আমি মনে মনে হেসে মাত্র একসেপ্ট করমু এমন সময় ফোন বাইজা উঠল। দেখেই মুখের হাসিটা চওড়া করলাম। বন্ধু কল দিসে।
চলবে…
আমি মনে মনে হেসে মাত্র একসেপ্ট করমু এমন সময় ফোন বাইজা উঠল। দেখেই মুখের হাসিটা চওড়া করলাম। বন্ধু কল দিসে।
আমি ফোন রিসিভ করে বললাম, হ্যালো বন্ধু। কি অবস্থা? কতদিন পর! এক, দুই, তিন…… পুরা এক মাস পর ফোন আমাকে। কোনো খোঁজ খবর নাই।
- ছোঁয়া, তোমাকে কতদিন বলেছি আমাকে রাতুল ডাকবে।
- কিন্তু তোমাকে বন্ধু ডাকতেই বেশ লাগে। তা কি খবর?
- এই তো আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো?
- হুম, বিন্দাস। এতদিন ফোন দাওনি কেন?
- কাজে ব্যস্ত ছিলাম।
- কি এমন ব্যস্ত শুনি? বিদেশিরা কি খাটায় নাকি খুব?
- তা খাটায়। তবে দেশ থেকে ভালো। কেমন গেল এই একমাস?
- সেই।
- এই এক মাসে আবার ক্রাশ টাশ খাওনি তো?
- হুম, কত খেয়েছি।
- তা কিসের উপর খেলে এবার?
- আর বইলো না। একটা পোলার উপর খাইসিলাম, পরে দেখি বেটা খচ্চর, সিগারেট খায়।
রাতুল হাইসা বলল, তাহলে আর কোনো ছেলের উপর খেও না। আমি লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিতে কইলাম, তবে একজনরে ভালোবেসে ফেলসি।
রাতুলের হাসি হঠাৎ বন্ধ হইয়া গেল। এই এক জ্বালা। সে বিদেশে কাজ করে। দেশে মাসে একবার কইরা এসে আমারে দেইখা যায়। আজ দু তিন মাস কাজের চাপে আসে নাই। আমার সাথে কথা হয় নাই খুব একটা কিন্তু আম্মুর সাথে হয়। আমার অনেক খেয়াল রাখে। তাই সব কথাই ওর সাথে পকর পকর করি মোটামুটি। আমি তাড়া দিয়া কইলাম, শুনতেসো? জানো হইসে কি……
- ছোঁয়া, তুমি ক্রাশ খাও কিন্তু কাউকে ভালোবাসবে না।
- কেন শুনি। জানো ছেলেটা এত্তো কিউট, লাল লাল গাল। পুরা আমার লালু মিয়ার মতো। যত দেখি তত ক্রাশ খাই।
রাতুল গম্ভীর কণ্ঠে বলল, ছেলেটা কে, কি করে, কোথায় থাকে? আমি বললাম, আস্তে বাপু, সবুর করো। সব বলতেসি। বহুত কষ্টে ছেলেটার পরিচয় বাইর করসি। ছেলেটার নাম আকাশ আয়মান। নিউরোসার্জন। মা সহ আমাদের পাশের বাসায় উঠসে আর…। হঠাৎ রাতুল থম মাইরা গেল। আমি হ্যালো হ্যালো করতেই একটু পর কইল, আমি কদিন পরই দেশে আসছি। এর মাঝে ঐ আকাশের ধারে কাছে যাবে না।
- কেন?
- যাবে না মানে যাবে না। কোনোরকম খোঁজ খবরও নেবে না। আমি আসলে সব করবো।
- সত্যি?
- হুম।
- আচ্ছা, তাহলে বিয়ের ঘটকালি তুমি কইরো।
- বিয়ে? কার বিয়ে?
- কার আবার, আমার। আমি তো ঠিক করেই নিসি আমি ঐ গাজরটারে বিয়া করমু। বিয়ার পর ওরে ডাকমু গাজর জামাই।
- ছোঁয়া, আমি কাজ শেষ করেই দেশে আসছি। তারপর ফুফা, ফুফু আর তোমার সাথে কথা আছে। যেদিন আসবো সেদিন তুমি সব রান্না করবে। আর কেউ যাতে হাত না লাগায়। শুধু তুমিই রাঁধবে। আর ঐ আকাশ টাকাশের ত্রিসীমানায় যাবে না আমি আসার আগে। মনে থাকে যেন।
বলেই মুখের উপর ফোনটা কাইট্টা দিল। যা বাবা, কি হল এটা? রাগ করলো নাকি? হঠাৎ এত রাগ করলো কেন? ও বুঝছি, বন্ধু চলে যাবে দেইখা। আমি কান থেকে ফোনটা নামাইতেই একটা চারশো চল্লিশ বোল্টের ডাবল শক খাইলাম। ডিলিট! রিকুয়েষ্ট ডিলিট! আমার গাজর ডিলিট! এ্যাঁ…… আমার গাজর জামাই ডিলিট হই গেসে। কখন যে হাত লাগি একসেপ্টের জায়গায় ডিলিট টিপ পড়সে আল্লাহ মালুম। আমি কান্দি কাটি একসার হইতেসি। আমার চিনা বুদ্ধি…এ্যাঁ…। এদিকে ঝিলিক আইসা আমারে দেইখা ভ্যাবাচ্যাকা খাইলো। এই তো ও যাওয়ার আগে দাঁত কেলাই হাসতেসিলাম, এখন কানতে কানতে সাগর বানাই ফেলতেসি। ও কাছে এসে জিগাইলো, কি হইসে ছোঁয়াপু? আমি বাচ্চাদের মতো সর্দি টানতে টানতে কইলাম, আমার গাজর ডিলিট করি দিসি, এ্যাঁ……। ঝিলিক আগামাথা কিসুই বুঝলো না। আমি আবার ফ্যাত ফ্যাত করে কইলাম, আমারে একটা লালু মিয়া দে। ঝিলিক জানে, তাই কথা না বাড়িয়ে ফ্রিজ দেইখা এসে কইল, নাই।
- কি নাই?
- গাজর।
এবার আমার ইচ্ছা হইলো ডাক ছাইড়া কান্দি, আমার লালু মিয়া…… আমার গাজর……। গিয়া রুমের দরজা বন্ধ কইরা নাইকাদের মতো নিজেরে বিছানায় ছুইড়া মারলাম। আর ভ্যাঁ ভ্যাঁ কইরা কানতে লাগলাম।
আটটার দিকে দরজা খুলতেই দেখি ঝিলিক মহা আনন্দে পপকর্ণ খাইতে খাইতে বাংলা ছবি দেখতেসে। একটু পরেই শাবানার সেই চিরাচরিত কন্ঠ। না………। সেই দুঃখে ঝিলিকের গলা দিয়া পপকর্ণ আটকে গেল। ঢুকতেসে না দেখে আমি এক গ্লাস পানি দিয়া কইলাম, খা। সে টিভি থেকে চোখ না সরাই পানির গ্লাসটা নিয়া পপকর্ণগুলা পানি দিয়া গিললো। দেখে মনে হইতেসে শাবানার না হিতির জামাই মরসে। আমি ঠেলা দিতেই আমার দিকে তাকাইয়া ভূত দেখার মতো চমকাই পিছনে সইরা গেল। আমার চুল কতগুলা জটাধারীদের মতো জট পাকাই ছাতার মতো মেলি আছে। চোখ লাল হই ফুলে কইতরের ডিম হই গেসে। শরীরটারে পেত্নীদের মতো ঝুলাই রাখসি।
- তোমার কি হইসে ছোঁয়াপু?
- কিসু না। এরকম হই আছিস ক্যান। মনে হয় যেন তোর জামাই মরসে।
- তওবা তওবা, এসব কি কও। এখনো নাক টিপলে দুধ বের হইবো, সেখানে বিয়া করলাম কবে।
- তাও ঠিক। তোর তো বিয়ার বয়স হয় নাই। কিন্তু আমার তো হইসে।
ঝিলিক আনন্দে গদগদ হইয়া কইলো, ছোঁয়াপু, তুমি বিয়া করবা? আমি খালা খালুরে কমু তাইলে তোমার জন্য রাজপুত্তুর দেখতে। আমি মনে মনে কইলাম, সারসে, এই কথা আম্মার কানে উঠলে আমও যাইবো, ছালাও যাইবো। গাজররে তো হারামু, না জানি কোন বেডার লগে ধরি বান্দি বিয়া দি দেয়।
- না থাক। তোর রাজপুত্তুর তোর পুটলিতে ভরি রাখ। এই উপকার করা লাগবো না। এখন অন্য উপকার কর। বাসার নিচে গিয়া দোকান থেকে এক কেজি গাজর আন।
ওরে টাকা ধরাই দিয়া বাসা থেইকা বাইর করি দিলাম। আমার লালু মিয়া ছাড়া দিনটাই খারাপ যায়।
.
.
.
.
দুই তিনদিন হইলো পর্ষীর কোনো খবর নাই। আসে না। নাহলে তো প্রত্যেকদিন আইসা আমার লালুমিয়ায় ভাগ বসায়। মেয়েটা না আসায় যেমন স্বস্তি লাগতেসে আবার মনটা কেন জানি টানতেসে। আজ সন্ধ্যায় ঝিলিকের সাথে বইসা টম এন্ড জেরি দেখে হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাইতেসিলাম। হঠাৎ বেল বাজল। দরজা খুইলা দেখি পর্ষী দাঁত কেলাই হাসতেসে। আমারে জড়াই ধইরা কইল, নানুমনি কই? আইসাই আম্মুরে খুঁজতেসে। জিজ্ঞেসও করল না কেমন আছি।
- রান্নাঘরে।
বলতেই আমারে ছাইড়া রান্নাঘরে দৌঁড় মারল। আমার খবরও নিলো না। আমার থেইকা নানুমনিরে বেশি ভালো লাগে এখন। কি আর করুম। গিয়া টিভির সামনে বসলাম আবার। কান পাতসিলাম কিন্তু টম এন্ড জেরির ড্যা ড্যা এর জন্য কিসুই শুনলাম না। একটুপর দুইজন বাইর হইলো হাসিমুখে। হাসির কারণ না জানলেও পর্ষীরে বেশ খুশি লাগতেসে।
কতক্ষণ আমাদের সাথে টিভি দেখে হঠাৎ আমারে টানতে লাগল। পর্ষীদের বাসায় যাইতে হবে। আম্মু জিনিসপত্র গোছাইতে গোছাইতে বলল, আজকে তুই ওদের বাসায় থাকবি। আমি আম্মার চাইয়া কইলাম, কেন?
- সেটা নাকি সিক্রেট।
পর্ষী আমার হাত ধরে টাইনা কইলো, সিক্রেটই তো। চলো। আমাদের বাসায় রাতের খাবার খাবে। আমি আম্মুর দিকে তাকাইলাম। আম্মা অনুমতি দিল। আমি সোফা থেকে উঠতেই টাইনা দরজার কাছে নিয়া গেল।
কলিংবেল বাজাতে মুন দরজা খুলে হাসিমুখে কইলো, ছোঁয়াকে নিয়ে এসেছিস? পর্ষী বলল, হুম, আম্মু আজকে আমাদের সাথে থাকবে। আমি মনে মনে লাফ দিয়া দশহাত দূরে সইরা কইলাম, আবার গাজরের হালুয়া থেকে আম্মু ডাকা শুরু করসে। এই আম্মু কাহিনীর রহস্য বের করা লাগবো। মুন কিছু না বইলা হেসে কইলো, আচ্ছা। আমি মনে মনে কইলাম, আরে! কিসু কইলো না ক্যান!? আমি তো ওর আম্মু না।
রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে হঠাৎ পর্ষী বায়না ধরল শাড়ি পড়ার জন্য। কি মুসকিল! এত রাতে হঠাৎ শাড়ি ক্যান। আমি মানা কইরা দিলাম। সে একটা শাড়ির প্যাকেট আমার সামনে রাইখা এমন ভাবে তাকাইলো যে এখুনি ডাক ছাইড়া কাইন্দা দিবো। না পারতে প্যাকেটটা নিয়া পরতে চলে গেলাম। সুন্দর কাজ করা একটা লাল রঙের শাড়ি। যে কিনসে তার পছন্দ আছে৷ আমি পরার আগে কয়েকবার শাড়িটা দেখলাম। শাড়ি পইরা বাইর হইতেই পর্ষী আমারে টাইনা ড্রেসিং টেবিলের কাছে নিয়া গেল। আমারে সাজাইতে বসলো বাচ্চা হাতে। কানে দুল পরাইলো, গয়না পরাইলো। কাজল আমার হাতে ধরাই দিয়া কইলো, লাগাও আম্মু। তোমারে কাজলে সেই লাগে। আমি লজ্জা পাইলাম। ওর মাথায় হালকা চাটি মাইরা কইলাম, পাকনা বুড়ি। মুন রান্নাঘরে। রেদোয়ান নাকি কোথায় গেসে। পর্ষী আমার সাথে। তাও কেন যেন মনে হইতেসে কেউ যেন দেখতেসে আমারে। পাশে বারান্দা। ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় জানালা দিয়ে বারান্দা দেখা যায়। আমি একবার তাকাইলাম। কেউ তো নেই। তাও কেমন অস্বস্তি লাগতেসে।
সাজগোজ শেষ হতেই মুন আসলো। আমারে দেইখা কইলো, মা শা আল্লাহ। কারো যাতে নজর না লাগে তোর উপর। মনে মনে কইলাম, কারো না কারো তো নজর লাগতেসে। কেউ যেন দেখতেসে মনে হইতেসে। পর্ষীরে জিগাইলাম, বারান্দায় কি কেউ আছে? সে হঠাৎ ইতস্তত কইরা কইলো, কে থাকবে? চলো তো আম্মু।
- কোথায়?
পর্ষী আমারে ছাদের দিকে নিয়া গেল। দরজা খোলার আগে আমারে কইলো, নিচু হও। তারপর চোখে একটা কালো কাপড় বাইধা দিয়া কইলো, এগারটা আটান্ন বাজে। ছাদের দরজা খুইলা টাইনা নিয়া দাঁড় করাইয়া কইল, এখানে দাঁড়াও আমি আসতেসি।
.
.
.
.
কে একজন আমারে পেছন থেকে জড়াই ধরল। পর্ষী যে না তা ভালো কইরা জানি৷ ম্যাজিক তো না যে সে কয়েক সেকেন্ডে আমার সমান হই যাইবো। আমি হাত দিয়া সরাইতে গেলে আমার হাত চেপে ধরল আমার পেটের সাথে। স্পর্শটা চেনা অনেক। আমার ঘাড়ে তার নিঃশ্বাস পড়তেসে। আমি গুণতে পারতেসি। সে ফিসফিস কইরা বলল, শাড়িটাতে তোমাকে এত সুন্দর লাগছে যে ইচ্ছে করছে আজই নিজের কাছে নিয়ে যাই। এই দিনটাকে কি করে ভুলে গেলে? হ্যাপি বার্থডে, ছোঁয়া। সে আমার ঘাড়ে তার ঠোঁট দুইটা আলতো কইরা ছোয়ালো। সাথে সাথে শিউরে উঠলাম। এর মাঝেই তার ছোঁয়া অদৃশ্য। আমি চোখের কাপড় খুইলা এদিক ওদিক তাকাইতে দেখি আমার সামনে অনেকগুলো মোমবাতি লাভ শেইপ করে রাখা। সেখানে লিখা C+A। এত চেনা ক্যান সব? এই ফিসফিসানি আগে শোনা। এই স্পর্শ, এই মোমবাতি লেখা। কি যেন বার বার মনে পড়তে চাইতেসে। আমি মাথায় হাত দিতেই কে যেন টেনে বুকে জড়াই ধরে কইলো, তুমি ঠিক আছো ছোঁয়া? অচেনা স্পর্শ পাইতেই ঠেলে সরাই দিলাম। অবাক হয়ে কইলাম, বন্ধু, তুমি?
চলবে…
অচেনা স্পর্শ পাইতেই ঠেলে সরাই দিলাম। অবাক হয়ে কইলাম, বন্ধু, তুমি?
রাতুল আমার সামনে দাঁড়াই আছে। সে বিদেশ থেকে আসলো কখন! আমি ওর দিকে তাকাই আছি। ও জিজ্ঞেস করল, এত রাতে শাড়ি পরে এখানে কেন? আমি আমতা আমতা কইরা কইলাম, না মানে আসলে একটা বাচ্চা মেয়ে মানে… ও আমার কথার মাঝখানে পা দিয়ে সবগুলা মোমবাতি নষ্ট কইরা ফেলল। ওর এমন আচরণে একটু অবাক হইলাম। কিসু বলার আগেই আমার হাত ধইরা হ্যাঁচকা টান দিয়া ছাদ থেকে নামায় আনল। সিঁড়ি দিয়া এত দ্রুত নামতেসিলো কয়েকবার পড়তে লাগসিলাম। বাসায় আসতেই দেখি দরজার সামনে পর্ষী দাঁড়াই আছে। পর্ষী জিজ্ঞেস করল, আম্মুকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো? রাতুল কোনোকথা না বইলা পর্ষীকে সরিয়ে বাসায় ঢুইকা পড়ল। ওর মুখের সামনে দরজা মাইরা দিল। মেয়েটা আম্মু আম্মু বইলা কাঁদতেসে বাইরে। আমি যাইতে লাগলে রাতুল আমারে বাঁধা দিয়া বলল, যাবে না।
- মেয়েটা কাঁদছে আমি…
রাতুল চিৎকার কইরা বলল, বলেছি না যাবে না। রুমে যাও। আমি কিছুই বুঝতে পারতেসি না। এত রাগার কারণ কি? একটু পর কান্না থাইমা গেল। বুঝলাম পর্ষী চইলা গেসে। আমিও জেদ কইরা রুমে গিয়া দরজা বন্ধ কইরা দিলাম।
.
.
.
.
ভোরে ঘুম থেকে উইঠা চুপি চুপি বের হইয়া আসলাম। নক দিলাম পর্ষীদের বাসায়। মুন হামি তুলতে তুলতে দরজা খুইলা বলল, আরে তুই? কাল রাতে এলি না কেন? আমি জিজ্ঞেস করলাম, পর্ষী কোথায়?
- কাল তো একসাথেই বের হলি। আর তো আসিসনি। ও তোর সাথে থাকেনি?
- না, কাল একটু ঝামেলা হয়েছিল। ও আসেনি?
- না তো।
- এটুকু মেয়ে কোথায় যাবে!?
- আচ্ছা চিন্তা করিস না আমি দেখছি। বাসায় আয়।
- না, এখন আর আসবো না। পর্ষীর খোঁজ পেলে বলিও।
আমি ছাদের দিকে রওনা দিলাম। কই গেল মেয়েটা। সাহেদার কাছে? যেতেও পারে। কিন্তু তাহলে তো মুনের কাছে গেলেই পারতো। বুঝতেসি না। আর কে আছে? পর্ষী পিচ্চি হইলেও এতটা বোকা না যে মাঝরাতে বাইরে যাবে। আমি দরজা ঠেইলা ছাদে পা রাখলাম। কালকের মোমবাতিগুলা এখনো ছড়াই আছে ছাদে৷ কালকের কথা ভাবতেই কান পর্যন্ত গরম হই গেল। কে ছিল! রাতুল হবে না শিউর। ওর ছোঁয়া আমার অপরিচিত। তবে কেডা ছিল! এত পরিচিত ছোঁয়া অথচ চিনলাম না। রেলিংয়ের কাছে গেলাম। ভোরের মৃদু বাতাস বইছে। আরাম কইরা কিছুক্ষণ দাঁড়াইলাম। হঠাৎ কারো উপস্থিতি টের পাইয়া পিছনে তাকাই দেখি রাতুল দাঁড়াই আছে। আমি আবার সামনে ফিরলাম। ওর সাথে কথা বলার মুড নাই। রাতুল পাশে এসে দাঁড়াই বলল, হ্যাপি বার্থডে। আমি কিসু না কইয়া দাঁড়াই রইলাম। ও আবার বলল, হ্যাপি বার্থডে ছোঁয়া।
- কখন এসেছো?
- কালরাতে দশটায় পৌঁছেছি দেশে। এখানে সাড়ে এগারটায় পৌঁছালাম। ভেবেছিলাম সবার আগে বার্থডে উইশ করে সারপ্রাইজ দেবো। কিন্তু তার আগেই…
- কি?
- কিছু না। সরি।
- হঠাৎ?
- আসলে রাগ উঠে গিয়েছিল তাই…
- কিসের রাগ? কি এমন হল যে রাগ উঠেছিল? আর এমনই রাগ উঠেছিল যে একটা বাচ্চা মেয়ের কান্নায়ও গলেনি।
- সরি তো।
আমি কিছু না বইলা নিচে নাইমা আসলাম। ওর সাথে কেন জানি আর আগের মতো খোলাসা হইতে পারতেসি না। বাসায় নক দিমু এমন সময় দেখি পর্ষী চোখ কচলাইতে কচলাইতে আকাশের বাসা থেকে বের হইতেসে। আমি গিয়া কইলাম, পর্ষী তুমি এখানে? ও পিটপিট কইরা কইলো, আম্মু!? কাল রাতুল আঙ্কেল এমন করল কেন? আমি একটু অবাক হইয়া কইলাম, তুমি চেনো?
- চিনি তো। আমি চিনি আব্বু চেনে। আমরা সবাই চিনি। তুমি আমাদের সাথে থাকতে আঙ্কেল আগে কত আদর করতো!
আমার সব কেমন যেন ইয়ারফোনের মতো জট পাঁকাই গেলো। সবাই সবাইরে চিনে কেবল আমিই চিনি না। মেমরি লস হয়ে কি যে বিপদে পড়লাম! পর্ষী কইলো, আম্মু ভেতরে আসো। আমি কইলাম, এটা কি তোমার বাসা নাকি!? আরেকজনের বাসায় এভাবে ঢুকতে নেই। বইলাই চোখ দুইটা ভেতরে গাজররে খুঁজতে লাগল। আমার মনের কথা কেমনে বুঝল জানি না। পর্ষী কইল, ওয়াশরুমে। আমি লজ্জা পাইয়া বললাম, কে ওয়াশরুমে? যাও নিজের বাসায়। পাকনা। পর্ষী কাঁধ নাচিয়ে মুনদের বাসার দিকে আগাইলো। মুন দরজা খুইলা দিয়ে বলল, এতক্ষণে ঘুম ভেঙেছে? আয়। বইলাই ভেতরে চইলা গেল। পর্ষী ঢোকার সময় আমি ডাইকা কইলাম, কাল ছাদে কে ছিল? পর্ষী পিছন ফিরে কইলো, আব্বু। তারপর বাসার দরজা বন্ধ কইরা দিল।
.
.
.
.
আমি লালুমিয়ার মুন্ডু চিবাইতেসি আর ভাবতেসি, পর্ষীর বাপের ছোঁয়া আমার এত চেনা হইলে …… সত্যিই যদি আমি পর্ষীর আম্মু হই!? না তাহলে আব্বু আম্মু তো বলতো। আর তাছাড়া আমার তো বিয়াই হয় নাই। ধুর এসব কি ভাবতেসি। আমার এখন গাজর আছে। কিন্তু…। আমি বিছানায় আড়াআড়ি ভাবে শুয়ে মাথা ঝুলাই রাখসি। দরজা বন্ধ৷ রাতুল নক দিলো। আমার খুলতে ইচ্ছে করতেসে না। কয়েক বার নক দিয়ে সাড়া না পেয়ে চইলা গেল।
আমি চার নাম্বার লালু নিতেই আম্মু নক কইরা কইলো, ছোঁয়া দরজা খোল। আমি বেশ বিরক্ত হয়ে দরজা খুইলা কইলাম, কি?
- তোকে নাকি রাতুল রান্না করতে বলেছিল।
- কখন?
মনে পড়ল ফোনে কইসিলো ঐবার। আমার এখন ওর সাথে আড়ি চলতেসে৷ নো রান্না। আমি সাফ জানাই দিলাম আম্মারে। আম্মা আমারে বলল, যা না মা ছেলেটা আসার পর থেকে না খেয়ে আছে। কাল রাতে নাকি হোটেলে খেয়েছে। তারপর আর কিছু খায়নি। তোর রান্না ছাড়া খাবে না বলছে। কি আর করা। বন্ধু বলে কথা। গেলাম রান্নাঘরে। টানা তিন ঘন্টা রান্না কইরা বাইর হইতেই পা দুইটা টন টন কইরা উঠল। দুপুরে না খাইয়া দিলাম ঘুম।
সাহেদা তিনটার দিকে আমার ঘুম ভাঙাইলো। আমি আধো আধো গলায় কইলাম, তুই?
- হ্যাঁ উঠ।
- কেন?
- বাইরে যাবো।
- না আমার ঘুম পাচ্ছে।
- কিসের ঘুম। সামনে আমার বিয়ে আর তুই পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস?
ও আমারে জোর কইরা তুললো। ঠেইলা ওয়াশরুমে ঢুকাই দিলো। ফ্রেশ হইয়া বের হতেই দেখি সাহেদা এক প্লেট ভাত তরকারি নিয়া বইসা আছে। আমার দিকে তাকাই কইলো, খাওয়া দাওয়া তো করিস নাই।
- হুম।
হাত ধুইয়া খাইতে বসলাম। মুখে লোকমা দিয়া কইলাম, কস যববিস? সাহেদা আমার কথা না বুইঝা জিগাইলো, কি বলিস? আমি ভাত গিইলা কইলাম, কই যাবি? সাহেদা জানালার পর্দা সরাইতে সরাইতে বলল, আমার এক দূর সম্পর্কের চাচা আসবে বিদেশ থেকে। রিসিভ করতে যাবো।
- বাকিরা কই?
- আমাকেই যাইতে হবে।
- তুই বিয়ের কনে। তুই যাবি কেন?
- কারণ আছে।
কেউ শুইনা ফেলবে এমন ভাবে সাহেদা আশেপাশে তাকাই আমার কাছে এসে ফিসফিস কইরা কইলো, আমি তাদের আমার চার চোক্ষে দেখতে পারি না। একটা মেয়ে আছে আমার বয়সী। একেবারে খচ্চর। যার তার সামনে নাক খোঁচায়। সে নাকি আবার মডার্ণ। ময়দার ডিব্বা। আর…। শুইনাই খাওয়ার মধ্যে বমি আসলো। সাহেদার মুখ চাইপা ধইরা কইলাম, কওয়ার আর সময় পাইলি না?
খাওয়া শেষ কইরা তৈরী হয়ে নিলাম। বের হইতে লাগলে রাতুল ডাক দিল। বসার রুমে বইসা খেলা দেখতেসিলো। আমারে ডাইকা জিজ্ঞেস করল, কোথায় যাও ছোঁয়া? আমি কোনো উত্তর দিলাম না। পর্ষীর সাথে করা ব্যবহারটা আমি কিছুতেই ভুলতে পারতেসি না। সাহেদা বলল, ভাইয়া আমার সাথে যাচ্ছে। আমার এক চাচা আসবে আজ বিদেশ থেকে, রিসিভ করতে যাবো।
- আমিও আসছি তাহলে। রেডি হয়ে আসি।
আমি জুতা পরতে পরতে কইলাম, কাল জার্নি করে এসেছো, বিশ্রাম নাও। যাওয়া লাগবে না। বইলাই সাহেদারে নিয়া বাইর হয়ে আসলাম।
আমরা সাড়ে চারটায় এয়ারপোর্টের পৌছাইলাম। চারটায় প্লেন ল্যান্ড করার কথা। তাহলে তো এতক্ষণে বের হইয়া যাওয়ার কথা। আমরা বাইরে অপেক্ষা করতেসি। হঠাৎ আমার চোখ পড়ল একটা সাদা প্রাইভেট কারের সাথে হেলান দিয়ে থাকা একটা ছেলের উপর। গায়ে সাদা শার্ট আর জিন্স। চোখে সানগ্লাস দেওয়া। চুলগুলো জেল দিয়ে সুন্দর সেইপ করা। আমি ক্রাশ খাইলাম। হায়রে! আমার গাজরটা! এতো সুন্দর! কিন্তু এত সেজেগুজে এয়ারপোর্টে ক্যান? আমি উঁকি ঝুঁকি মারতে লাগলাম। দেখলাম একটা মাইয়া এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে ওর দিকে এগিয়ে গেল। মাইয়াটা হাসিমুখে গিয়া জড়াই ধরল। কত বড় সাহস! আমার জামাইরে জড়াই ধরে। আমি বেলুনের মতো ফুইলা কান পাতলাম।
- কেমন আছিস?
- ভালোই। তোকে তো আগের থেকেও হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছে। ব্যাপার কি? বয়স কমছে না বাড়ছে?
- তুইও মজা করতে পারিস।
- সত্যি বলছি আকাশ। তোকে যত দেখি তত মনটা পাগল হয়ে যায়।
- বাদ দে না।
- আর কত বাদ দেবো? বাদ দিতে দিতে তোকে হারিয়ে ফেলেছি। এবার তো…
- গাড়িতে ওঠ। তোকে বাসায় নামিয়ে দেবো। আঙ্কেল আন্টি আমাকে কেন বললেন? নিজেরা এলেন না?
- মম ড্যাড নিজের থেকে তোকে বেশি বিশ্বাস করে তাই। আমি সোজা আগে তোর বাসায় যাবো। পরে বাসায় যাবো।
- ওকে ওঠ।
- থ্যাংকু।
বইলাই গালে একটা কিস কইরা বসল। দেইখাই আমার ইচ্ছে করতেসে মাইয়াটার চুল একটা একটা কইরা ছিঁড়ি। কত বড় স্পর্ধা! আমার গাজরে ভাগ বসায়। আমি যাওয়ার উদ্যোগ নিতেই কে যেন হাত দিল পিছন থেকে। আমি তাকাইতেই দেখি লাল লিপস্টিক পরা ভোটকা এক মহিলা আমার কাঁধে হাত দিয়া দাঁত কেলাইতেসে। আমি সাহেদার দিকে তাকাইলাম। সে অসহায়ের মতো তাকাইতেই বুঝলাম এটা ওর চাচি। পাশেই ম্যাচের কাঠির মতো লোকটা ওর চাচা আর আয়নায় ধইরা নিজের ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাইতে লাগাইতে চামড়া তুইলা ফেলতে থাকা ময়দার কেকটা তাগো মাইয়া। আমি একটা বেক্কলের হাসি দিলাম। মহিলা ককর্শ গলায় তিতা হাসি দিতে দিতে কইলো, ওএমজি, হাউ কিউটি পাই। কি নাম তোমার?
চলবে…
মহিলা ককর্শ গলায় তিতা হাসি দিতে দিতে কইলো, ওএমজি, হাউ কিউটি পাই। কি নাম তোমার?
- ছোঁয়া।
- ওএমজি, হাউ সুইট! হানি, দেখো না, এই মেয়েটাকে আমার ইয়োর সাথে মানাবে না?
- হান্ড্রেট পার্সেন্ট ডায়মন্ড চয়েজ, সুইটহার্ট।
আমি তাদের কথা শুইনা বেকুবের মতো তাকাই রইলাম। মনে হইতেসে উগান্ডা থেকে বাংলাদেশে আসছে বেড়াইতে। সাহেদারে গুঁতা দিয়া ফিসফিস কইরা কইলাম, এই ওএমজির কি কাম? সাহেদা কইলো, অভ্যাস। কোথা থেকে একটা ভোটকা পোলা আইসা ন্যাকা কন্ঠে কইলো, মমি, হাম্বাদের খার খোতায়? আমি কইলাম, হাম্বা!? এখানে গরু কোথায় পেলেন?
- আরে হাম্বাদের খতা বলছি। হাম্বাদের খতা।
- আমিও তো সেটাই জানতে চাইছি হাম্বা কই পেলেন?
- ওহ্হো! সেইডা, ওখে বোঝাও।
সাহেদা আমার কানে ফিসফিস কইরা কইলো, আরে হাবুলি, হাম্বা না। ওদের কথা বলছে। বেশি স্টাইল করতে গিয়ে আমাদের শব্দটা হাম্বাদের হয়ে গেছে। আমি ওর কথা শুইনা ফিক করে হাইসা ফেললাম। আসলেই হাম্বা। দুইটা মোটা হাম্বা আর দুইটা চিকন হাম্বা। মহিলা খেঁকিয়ে বলল, ওএমজি, হাসছো কেন? আমাদের কার কোথায়?
- আন্টি কার তো নেই। সিএনজি বা রিক্সা…
- ওএমজি, এসব কি বল সাহেদা! আমরা আর রিক্সা! হানি তুমি কিছু বলো।
- হ্যাঁ সাহেদা তোমার আব্বুর তো কার পাঠানো উচিত ছিল।
- এ অবস্থা হলে বিয়েতে কি দেবে জামাইকে? আমি তো আমার মেয়ের জামাইকে মার্সেডিস দেবো ব্ল্যাক ব্লু কম্বিনেশনের মধ্যে। দাম কত জানো? থ্রি পয়েন্ট ফোর মিলিয়ন ডলার। ক্যান ইউ ইমাজিন?
আমি বিড়বিড় কইরা কইলাম, আপনাদের ব্ল্যাক হোয়াইট কম্বিনেশনের হাম্বা গাড়ি দরকার৷ চাচি চোখ সরু কইরা কইলো, তুমি কিছু বললে? আমি হাইসা কইলাম, না, আন্টি। সাহেদা সিএনজিতে তো হবে না। লাগেজ আছে। বরং রিক্সা নেই। তিনটা হলেই হবে।
সাহেদা আর আমি বহু কষ্টে রিক্সা যোগাড় করলাম। ভাবসিলাম সাহেদার সাথে যামু কিন্তু আন্টিটা আমার সাথে যাবে কইয়া বাম হাতটা এত জোরে চাইপা ধরল মনে হইলো আমার হাতের হাড়গুলা কয়েক টুকরা হই গেসে। আমি হাইসা রাজি হইয়া হাতটাকে গেড়াকল থেকে বাইর করলাম। ফাঁকে দিয়া উঁকি মাইরা দেখলাম গাজরটাও ঐ শিং মাছরে নিয়া চইলা গেসে।
সবাই যে যার সাথে রিক্সায় উইঠা গেল। আমি পড়লাম বিপদে। চাচি উইঠাই তো রিক্সা দখল কইরা ফেলল। আমার জন্য রাখসে চার আঙ্গুল জায়গা। তার উপর একটা বড়ো লাগেজ। আমি আর রিক্সাচালক একে অন্যের দিকে চাওয়াচাওয়ি করলাম। বেচারার আজকে জান শেষ। আমি মনে মনে কইলাম, রিকশার অর্ধেক আয়ু আজই শেষ।
আমি মনে হয় গেসি৷ আমার কোমর শেষ। যে চিপা জায়গায় বসছি অর্ধেকটা ঝুইলা ছিলাম। মনে হয় এক দশক ব্যায়াম করার পর ঐ জায়গা আমার জন্য পার্ফেক্ট হবে। ইচ্ছে করতেসিলো বলি, মামা, রিক্সাটা টাইনা মোটা কইরা দেন। এর থেকে লাগেজের উপর বইসা আসলে কিংবা রিক্সা চালাই আসলে বহুত ভালো ছিল। মাঝরাস্তায় আইসা আরেক বিপত্তি হইলো। চাকা পাংচার। তাও চাচির সাইডেরটা। এই নিয়ে তাঁকে কথা শোনানোর শেষ নাই৷ রিক্সাচালকের চোদ্দগুষ্টিও মনে হয় এত গালির নাম জানে না। আমি তো সরমে ইচ্ছা করতেসিলো তাঁর মুখটা সেলাই করে দেই। লোকটা কিছু বলল না। সারারাস্তা রিক্সায় আন্টি কেবল ইয়োর প্রশংসা করল। আমার ইয়ো এটা আমার ইয়ো ওটা। যেন তাঁর ইয়ো পৃথিবীর বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য আলাদা প্রাণী। কিন্তু আসল কথা হইলো এই ইয়োটা কে!? একঘন্টার রাস্তা দেড়ঘন্টা লাগসে। তার সাথে ইয়ো ইয়ো শুনতে শুনতে মনে হইলো কয়েক যুগ পার হই গেসে। সাড়ে ছয়টায় পৌঁছাইলাম। মাগরিবের আযান অলরেডি দিয়া মুসল্লিদের নামাজ শ্যাষ৷ চাচি আমার আগে নাইমা গেলেন৷ আমি রিক্সা থেকে নাইমা বিশটাকা ভাড়া বেশি দিলাম। তিনি অনেক কষ্ট করসেন আজকে।
আমি উপরে আইসা কি ভেবে আকাশের বাসার কলিংবেল টিপলাম। আজকে কোন শিং মাছ আমার গাজরে ভাগ বসাইসে দেখা লাগবে। তার তো এখানেই আসার কথা। আমি খাঁড়াই আছি। চাচি সিঁড়ি দিয়া উঁকি মাইরা দেইখা নিল আমি কোন বাসায় থাকি। মহিলারে কি ভুতে পাইলো নাকি? আমি দরজার দিকে মনোযোগ দিলাম। খুলে না ক্যান? আন্টি এসে দরজা খুলে বললেন, আরে ছোঁয়া এসো। বসো।
- না আন্টি। বসবো না। এমনি আপনাকে দেখেতে এলাম। মনে হয় আপনাদের বাসায় গেস্ট, এসে বিরক্ত করলাম। আন্টি ভদ্রতা কইরা কইলেন, আরে কি যে বলো।
- কে এসেছে আন্টি?
- আমার ছেলের স্কুল ফ্রেন্ড। ভেতরে আসো।
না পারতে ভেতরে যাইতেসি এমন ভাব কইরা ঢুকলাম। যদিও শরীরে শক্তির ছিঁটে ফোঁটা নাই তাও শিং মাছটার খোঁজ খবর না নিলে চলতেসে না। আন্টি কইলেন, তুমি বসো আমি নাস্তা আনি। আমি ভেটকাইলাম। আন্টি চইলা যাইতেই এদিক ওদিক তাকাইলাম। দেখলাম গাজরের রুম থেকে কথা আসতেসে। আমি চুপি চুপি গিয়া উঁকি মারতেই রাগে পুরা শরীর দিয়া আগুন বাইর হইতে লাগল। গাজরের গায়ে শার্টের অর্ধেক। এক হাতা পরা। বাকি হাতায় মেয়েটা অসভ্যের মতো তার হাত ঢুকাই ওর দিকে বাজে দৃষ্টিতে তাকাই আছে।
- চাঁদনি, এসব কি হচ্ছে?
- আজকে আর আটকিও না আকাশ। আর কত তোমার জন্য অপেক্ষা করব?
বইলা মেয়েটা গাজরের দিকে আগাইতেই আমি ঠাস কইরা দরজা খুললাম। সাথে সাথে দুইজনে চমকাই উঠল। আমি মিষ্টি কইরা হাইসা ওদের দিকে এগোইলাম। মেয়েটা অবাক হয়ে কইলো, ছোঁয়া! আমি গাজরের শরীর থেকে শার্টটা খুইলা মেয়েটার হাতে ধরাই দিয়া কইলাম, শার্টটা চাই বললেই হতো। এমন অসভ্যের মতো একটা ছেলের সাথে লেগে আছেন কেন? বলেই ওরে রুম থেকে বাইর কইরা দিলাম। চাঁদনি দরজা ধাক্কাইতে লাগল আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়া গাজরের দিকে আগাইলাম। সে খালি গায়ে দাঁড়াই আছে। গলা খাকরানি দিয়া না দেখার ভান কইরা একটা টুল ওর সামনে রাখলাম। রাগ কমায় এখন লজ্জাটা আস্তে আস্তে বাড়তেসে। নাহ, রাগটা ধইরা রাখা লাগবো। আমার গাজর হইয়া অন্য মাইয়ারে সুযোগ দেয়। আমি টুলের উপর উইঠা দাঁড়াইলাম। না হইলে ওর সমান হওয়া যাবে না। ও আলমারির সাথে দাঁড়াই ছিল। আমি ডান হাত আলমারিতে রাইখা কইলাম, আপনার কি আক্কেল নেই? মেয়েটা অসভ্যতামি করছিল আর আপনি চেয়ে চেয়ে দেখছিলেন? কিছু বললেন না কেন? আমি রাগ দেখাইতেসি আর গাজর আমার দিকে কেমন করে যেন তাকাই আছে। আমি ঢোক গিললাম। ব্যাপারটা কেমন সুবিধার লাগতেসে না। সে আমার দিকে আগাইতেই আমি সইরা গেলাম। এর আবার কি হইলো! আমি অন্যদিকে ফিইরা কইলাম, এর পরের বার এমন দেখলে শাস্তি দেবো কিন্তু।
- তাই বুঝি। হিংসে হচ্ছে নাকি?
- হি……হিংসে করব কেন?
- ও হচ্ছে না? তা কি শাস্তি দেবে ছোঁয়া?
এতক্ষণ পরে ওরকথা শুইনা আরো ঘাবড়াই গেলাম। একে তো হিংসে হইয়া হুদা রাগ দেখাইলাম। তার উপর বেশি ঢং করতে গিয়া শাস্তির কথা বইলা ফেললাম। রাগবো নাই বা কেন। আমার গাজরে অন্য কেউ ভাগ বসাবে আর চাইয়া থাকমু নাকি? আমি ভাব নিয়া কইলাম, দিলে দেখবেন। সে আমার দিকে ঝুঁকে কইলো, তাই তো দেখতে চাচ্ছি। তুমি আবার শাস্তি দিতে জানো নাকি? পিচ্চি মেয়ে।
এ্যাঁহ, আমি পিচ্চি, না? এজন্য আমার দিকে তাকাও না। ঐ শিং মাছ তোমার পছন্দ। দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা। তোমারে আমি শিং মাছ কাইটা রাইন্ধা খাওয়ামু। হঠাৎ আমি টুলের উপর উইঠা ওর গালে কামড় দিয়া দরজার দিকে দৌঁড়াইলাম। দরজা খুইলা পিছনে ফিইরা কইলাম, পরেরবার আরেক গালে কামড় দিমু। মনে থাকে যেন। বইলাই দরজা খুইলা দৌঁড়।
বাসার দরজা রাতুল খুলল। আমি এখন সরমে কারো দিকে তাকাইতে পারতেসি না। সোজা নিজের রুমে গিয়া দরজা দিলাম। বিছানায় শুইয়া খালি গড়াগড়ি খাইতেসি আর বলতেসি, আল্লাহ আমি কি করলাম! হায় হায়! গাজর কি ভাবলো! আমি উইঠা বালিশ কোলে নিয়া ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়া নিজেরে দেখলাম। মনে হইলো সরমে লাল হইয়া গেসি। এবার আমি গাজরের সামনে যামু কেমনে! আসার সময় দেখসি ওর গালে দাগ বইসা গেসে। চাঁদনির কথা মনে পড়তেই নিজেরে কইলাম, ঠিক করসি। আমার গাজররে আমি কামড়াইসি। কার কি? বইলাই আবার বালিশে মুখ ডুবাই বিছানায় গড়াগড়ি খাইতে লাগলাম।
আটটার দিকে বাইরে কি নিয়ে যেন ঝামেলা চলতেসে। আমি হুক খুইলা বের হইতেই যে যেভাবে ছিল সেভাবে চিল্লাই উঠল, হ্যাপি বার্থডে। আমি তাকাই দেখলাম আব্বু, আম্মু, ঝিলিক, রাতুল, সাহেদা, মুন, রেদোয়ান, পর্ষী, গাজরের আম্মা আর সবশেষে আমার গাজর। ওর দিকে নজর পড়তেই দেখলাম গালে একটা বার্থডে স্টিকার মারা। বুঝলাম দাগ ঢাকতে এই পদ্ধতি। আমি ওর দিক থেকে চোখ ফিরাইলাম। লজ্জায় তাকাইতে পারতেসি না। মনে মনে খালি কইতে লাগলাম, কেন করলাম এই কামটা!
কেক কাটলাম, খাইলাম। সব করলাম। কিন্তু মন থেইকা মজা করতে পারলাম না। গাজরের লজ্জায় সব মাটি। সবাই যে যার মতো মজা করল। তবে একটা ব্যাপার খেয়াল হইলো। রাতুল আর আকাশের চোখাচোখি হইলে ওরা কেমন যেন হই যায়। তাই উভয় থেকে দূরে থাকা ভালো।
রাতে ঝিলিকরে জিজ্ঞেস করলাম, হঠাৎ এই বার্থডের অনুষ্ঠান কে করল? ঝিলিক মশারি টাঙাতে টাঙাতে কইলো, পর্ষী। আমি শোয়া থেকে উঠে বইসা কইলাম, বাইরে কি সমস্যা হইসিলো রে আমি বের হওয়ার আগে?
- রাতুল ভাইয়া আর ভালো ভাইয়া তোমারে নিয়া…
সে জিহ্বা কাটল। আমি কইলাম, আমারে নিয়া কি হইসে? ঝিলিক তাড়াতাড়ি কইলো, কিসু না কিসু না।
- ঝিল বল আমাকে।
- মানা আছে সাহেদা আপুর। বলা যাবে না।
ঝিলিক লাইট নিভাই শুয়ে পড়লো। ওরে জিগাই লাভ হবে না। কালকে সাহেদারেই জিজ্ঞেস করতে হবে। হঠাৎ আবার গাজরের কথা মনে পড়তেই কোলবালিশে মুখ গুইজা দোয়া করতে লাগলাম, ঘুম দাও। আল্লাহ তাড়াতাড়ি ঘুম দাও।
.
.
.
.
আমি সকাল সকাল সাহেদার বাসায় গেলাম। ভুলেই গেসিলাম ওর চাচা চাচির কথা। দরজা খুলতেই দেখি তারা খাবার টেবিলে। এখন দশটা বাজে। সাহেদা দরজা দিয়া উঁকি দিয়া কইল, তুই? আমি কিসু বলার আগেই কইল, এখন আসিস না। মাথা খারাপ হয়ে যাবে। আমি কইলাম, কেন? ভেতর থেইকা চাচি বলল, ওএমজি, কে সাহেদা? আমি ঢুকলাম। আমারে দেইখা ওর চাচি খুশিতে আটখানা হইয়া কইলো, ও এম জি, আরে ছোঁয়া। এসো এসো। আমাদের সাথে ব্রেড খাও। আমি কিসু বলার আগেই আবার কইল, ওএমজি, তোমার জামাটার রঙটা তো বিউটিফুল।
- আন্টি, এটা কফি কালার।
- ওএমজি, সাহেদা, একটু স্মার্ট হও। এসব কফি টফি অনেক পুরানো। পোড়া কালার ওটা, বুঝলে। ঐযে পোড়া পোড়া কালার হয় না। রুটির মধ্যে হয় যে। কি কালার?
- পোড়া কালার।
আমি আর সাহেদা একজন আরেকজনের দিকে তাকাইলাম। এদের সাথে থাকলে আমাদের জীবনও পোড়া কালার হই যাবে। সাহেদার আম্মু মুরগীর ঝোল চাচিকে দিতেই দেখে কইলেন, রংটা তো অনেক সুন্দর। আমি মাত্র মুখ খুলতেসিলাম, জ্বি, কালারটা একেবারে ঘ…। সাহেদা সাথে সাথে মুখ চাইপা ধরল৷ চাচি সন্দিহান চোখে কইলেন, ওএমজি, কি বলতেসিলা? সাহেদা মেকি হাসি দিয়া কইলো, সুন্দর রং যে সেটাই বলতেসিলো। ছোঁয়া তোর সাথে কিছু জিনিস ডিসকাস করার কথা ছিল। চল চল। ও আমারে টাইনা নিয়া গেল৷ আমার আর মডার্ণ কালারের নাম কওয়া হইলো না।
চলবে…
ও আমারে টাইনা নিয়া গেল৷ আমার আর মডার্ণ কালারের নাম কওয়া হইলো না।
ওর রুমে আসতেই দরজা বন্ধ করে দিয়া সাহেদা বলল, তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? আরেকটুর জন্য তো দিয়েছিলি বিপদ করে। আমি বিছানায় বসতে বসতে বললাম, তার মানে আমি কি বলতে যাচ্ছিলাম তুই বুঝতে পেরেছিস।
- না বোঝার কি আছে। তবে ওদের মডার্ণ মাথায় হয়ত সেটা ঢোকেনি।
- মডার্ণের ঠেলায় কোনদিকে যে যাবো! আচ্ছা গতকাল থেকে আমি তোর চাচি থেকে কেবল ইয়ো ইয়ো শুনছি। এই ইয়োটা কে রে?
- কে আবার? আমার ঐ ভোটকা নাদুস নুদুস চাচাতো ভাইটা। নাম ইয়াশ রেখেছে। কিন্তু বিদেশে গিয়ে ইয়ো হয়ে গেছে। আর মেয়েটার নাম ইরিন। বিদেশে নাকি ইরি ডাকে।
- হ, ইরি মরিচ। ঠোঁটে সারাক্ষণ লাল লিপস্টিক লাগাই রাখে ইরি মরিচের মতোই। বিদেশ না বল উগান্ডা। কি কথা বলার ছিরি।
- বোইন, এদের সাথে লাগিস না তাইলে আমার বিয়ের দফারফা করে ছাড়বে।
- ইহ, আমি আছি না।
সাহেদা ভেটকি মাইরা পানির গ্লাস নিয়া টেবিলে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ঢকঢক কইরা পানি গিলতে লাগল। আমি কইলাম, সাহেদা, কালকে আমি রুম থেকে বের আগে কি হয়েছিল রে? আমার কথা শুইনা ও ভিমরি খাইল। মুখ থেইকা পানি ছিটকাই পড়ল। আরেকটুর জন্য মুখো নিঃসৃত পানির ঝরণায় আমারে গোসল করায় নাই। ও মুখ মুছে কইলো, কি হবে?
- আমার মনে হইসিলো বাইরে কি নিয়া ঝামেলা হইসিলো বন্ধু আর গাজরের মধ্যে।
- কি ঝামেলা হবে? আরে তোকে নিয়ে মানে তোর জন্মদিন নিয়ে খুব এক্সাইটেড ছিল আর কি। তুই এসেছিস ভালো করেছিস। শোন আজকে বাইরে যাবো। শপিংয়ে। তুই রেডি থাকিস। দুপুরে খেয়ে আমি নক দিবো।
- ওখে বান্ধপী। আর মাত্র চারিদন৷ উফ্! সো এক্সাইটেড। বিয়া খামু।
- হইসে আর উত্তেজিত হওয়া লাগবে না। বাসায় গিয়া রেডি হন।
- হুম হুম।
আমি রুমের দরজার বাইরে পা দিতেই চাচি আইসা খাড়াইলো সামনে৷ তার ভয়ঙ্কর খয়রী লিবিষ্টিকের হাসি দেখেই ভয়ে চিল্লাইতে লাগসিলাম। কিন্তু শেষ মুহূর্তে নিজেকে সামলাই নিয়া হাসি দিয়া কইলাম, কিছু বলবেন?
- আমার ইয়োকে তোমার কেমন লাগে?
মনে মনে কইলাম, কালা ফুটবল। বাইরে হাসি দিয়া কইলাম, ভাই তো ভালোই দেখতে। চাচি সাথে সাথে প্রতিবাদী সুরে বলল, ভাই বলো কেন? ও তো তোমারই বয়সী। ওকে ইয়ো ডেকো। আমি সম্মতি স্বরূপ মাথা নেড়ে সেখান থেকে চইলা আসলাম। কখন আবার ইয়োর গল্প শুরু কইরা আমার মাথার পোক বাইর করে ফেলে!
.
.
.
.
আমি সাহেদার দিকে তাকাইলাম। সে আমার দিকে দাঁত কেলাইলো। শপিং করতে যাইতেসি তাতে মাইক্রো ভাড়া করা লাগে? কোন গুষ্টির শপিং করতে যাইতেসি? আমি গুনতে বসলাম আমি, সাহেদা, আঙ্কেল, আন্টি, চা…… এরা ক্যান। এদের দেইখাই জ্বর চইলা আসলো। এক একটারে ভাড়ের মতো লাগতেসে। মনে হচ্ছে আলু, টমেটো, ইরি মরিচ আর ঢেঁড়স। পার্ফেক্ট সালাদ। সাহেদাকে জিগাইলাম, মাইক্রো ক্যান? সালাদের জন্য? সাহেদা জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকাইতেই ওদের দিকে ইঙ্গিত করলাম। ও বুঝতে পেরে হাইসা দিল। মাইক্রোর দরজা খুলতেই চাচি চাচা বসলো প্রথম সিটে আর ইরি ইয়ো বসলো দ্বিতীয় সিটে। ব্যাস, ফার্স্ট আর সেকেন্ড রো ফিল আপ। আমি আর সাহেদা একে অন্যের দিকে তাকাতেই বুঝলাম মাইক্রো কেন ভাড়া করা হইলো। আঙ্কেল ড্রাইভারের সাথে আর আমরা বাকি তিনজন পেছেনের সিটে গিয়া বসলাম।
মাইক্রো থামলো বসুন্ধরা সিটি শপিংমলে এর সামনে। একঘন্টার পথ। চাচিরা নামতেই মাইক্রোটা যেন হালকা হইয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। আমরা ধীরে সুস্থে নামলাম। গাড়িটা পার্কিং এরিয়ায় চইলা গেল। আমি শপিংমলে ঢুকতে যাবো তখনই সাহেদা হাত ধইরা বলল, দাঁড়া। এখন যাস না।
- কেন?
- অপেক্ষা কর।
আমি কিছু বলার আগেই সাহেদার ফোন বাইজা উঠল। ও ফোন ধরে কতক্ষণ শুনে বলল, হ্যাঁ, আমরা এসে গেছি।…… হুম হুম…… কতক্ষণ লাগবে? ……… আচ্ছা আচ্ছা। আমরা আছি। তোমরা আসো। সাহেদা ফোন রাখতেই জিগাইলাম, কে আসছে?
- আসলে দেখবি।
আমরা দাঁড়াই আছি এদিকে আলু আই মিন ইয়ো ন্যাকা ন্যাকা করে মাইয়াদের মতো বলতেসে, মমি, হাম্বারা খখোন ভিটরে ঝাভো?
- একটু ওয়েট করো ভাই।
সাহেদার কথা শেষ হতেই একটা সিএনজি আইসা আমাদের সামনে দাঁড়ালো। সেখান থেকে আয়ান ভাই, তার বাবা মা নামল। পর্ষীকে দেইখা সাহেদার কানে ফিসফিস কইরা কইলাম, এই পিচ্চি শাঁকচুন্নি এখানে ক্যান?
- তোর মেয়ে তাই।
- হুর……
সিএনজির ওপাশ থেকে গাজর নামতেই আমি আবার সাহেদার কানে কানে কইলাম, গাজ… আই মিন আকাশ এখানে ক্যান?
- তোর জামাই তাই।
ওর উত্তর শুইনা এক বালতির পানিতে ডুব দিতে ইচ্ছে হইলো। যাহোক তারে দেইখা হাত পা অযথাই মিরগী (মৃগী) রোগীর মতো কাঁপা-কাঁপি শুরু করল। লজ্জায় তার দিকে তাকাতেই পারতেসি না আবার হাসিও আসতেসে। গালে সারাক্ষণ স্টিকার লাগাই ঘুরসে কালকে বাচ্চাদের মতো। ইচ্ছে করতেসিলো গালটা টিপে দেই।
ওরা আসার পর ঢুকলাম শপিংমলে। সাহেদা ঢুকতে ঢুকতে বলল, রাতুল ভাইকে দেখলাম না যে? বাসায়? আমি কইলাম, না, সকালে কি যেন কাজে বের হইসে। ফোন দিসিলো মাঝে। আমি তোদের সাথে বসুন্ধরা আসবো শুনেই সাথে সাথে বলল সেও নাকি আসবে।
- ও।
শুরুতেই শাড়ি আর লেহেঙ্গার দোকানগুলা ঘোরা হইলো। সবগুলাই সুন্দর। পারলে পুরা দোকান তুইলা নিয়া যাইতাম। আয়ান ভাই সাহেদার জন্য একটা গাঢ় খয়রী রঙের লেহেঙ্গা পছন্দ করলো। সাহেদা পাশের আরেকটা দোকান থেকে ওর সাথে মিলিয়ে একটা সাদা পাঞ্জাবি কিনলো। এর মাঝে রাতুল আইসা হাজির কোথায় থেকে। আমাকে দেখে হাসতে হাসতে যখন আকাশের দিকে তাকাইলো সাথে সাথে টিউবলাইটের মতো হাসি অফ হই গেল। কি যে হইসে দুইটার মধ্যে! আমরা এদিক ওদিক ঘুরতেসি। ইয়োও আমাদের পেছন পেছন ঘুরতেসে। যেন চম্বুক। যেদিক যাই আকর্ষণে সেও সেদিক যাইতেসে৷
সাহেদা আমাকে একপাশে ঢেকে কানে কানে বলল, ওয়াশরুম যাবো। আমার চল। আমি ওরে নিয়া ওয়াশরুম রওনা দিলাম। ইয়োও চইলা আসল৷ আমি দরজার কাছে এসে পিছনে ফিইরা কইলাম, এটা মহিলাদের ওয়াশরুম। তুমিও যাবে? আলুটা হেসে বলল, না না, ঝাও ঝাও। হামি এখানে ওয়েট খরছি। ডোন্ট ওরি, ডোন্ট ওরি, হে হে হে…। আমরা ভেতরে চইলা আসলাম।
- এই ইয়োর কি সমস্যা? এমন ঘুর ঘুর করতেসে কেন পেছনে?
- তোর জন্য।
- আমি কি বলসি আমার পেছনে ঘুরো?
- আরে তোকে চাচির পছন্দ হইসে।
- কার জন্য? ঐ আলু? ইম্পসিবল। দেখতেই ফুটবলের আব্বা। তার উপর সারাদিন মমি, হাম্বা ছাড়া বাক্যই আওড়ায় না।
সাহেদা হাসতে হাসতে ওয়াশরুম চইলা গেল। আমি গোমড়ামুখে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলাম কেমনে এই জোঁকের পিছা ছাড়া যায়।
বের হইয়া দেখলাম আলুটা নাই। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে দোকানে গিয়া দেখি ইয়োর এক পাশে আকাশ আর অন্য পাশে রাতুল। দুইজনে তার কাঁধে হাত রেখে বলতেসে, এটা কেমন ইয়ো? ওটা কেমন? আর ওদের দুইজনের মাঝে আলু পটেটো চিপস হয়ে যাইতেসে। ভাবতেই হাসি পাইলো। যাক! আর কষ্ট করে জোঁক ছাড়াইতে হইলো না।
আমরা এটা ওটা দেখছি এর মাঝে চাচি কি নিয়া জানি দোকানদারের সাথে তর্ক লাগসে৷ একহাতে আয়ান ভাইয়ের শার্ট খামচে ধইরা আছে। গিয়া শুনলাম সে নাকি একটা লেহেঙ্গা পছন্দ করসে। একটা টুকটুকে লাল ভারি কাজ করা। আর আয়ান ভাইকে বলসে কিনে দিতে। দামই পনেরোর উপরে। আর সে দর কষাকষি করতেসে দাম কমানোর জন্য। মনে হইতেসে সাহেদার না তাঁর বিয়া। আমার মেজাজটাই খারাপ হইলো। আমি কিছু বলার আগেই সাহেদা বলল, চাচি, এখানে সব ফিক্সড প্রাইজ। দাম কমাবে না। চাচি মুখ খিঁচড়ে বলল, তাহলে যা দিতে বলসে দিয়ে দে, তোদের কথা ভেবেই তো বলসি দাম কমাইতে। আমি মনে মনে কইলাম, ছ্যাচড়া মতো কি বলতেসে জামাইর সামনে! কি রকম খচ্চর!
ইরিকে আসার পর থেকে দেখতেসিলাম আকাশের সাথে চিপকাই আছে ইয়োর মতো আর কিছুক্ষণ পর পর ঠোঁটে লিপস্টিক ঢলতেসে। পারলে মরিচ ডইলা দিতাম। কিভাবে ড্যাব ড্যাব কইরা গাজরের দিকে তাকায়। এখন ন্যাকা কান্নার ভাব কইরা আকাশের হাত ধইরা বলল, আকাশ ভাই, বলেন না কিনে দিতে। মমির খুব পছন্দ হয়েছে। আমি একবার চাচিকে ঐ লাল লেহেঙ্গায় চিন্তা কইরা ইচ্ছে হইলো হাসিতে ফ্লোরে গড়াগড়ি খাই। লেহেঙ্গার বডি সাইজ চল্লিশ। কিন্তু তার তো ছেচল্লিশেও হবে না মনে হয়। কেমনে কি! ইরির জন্য হলেও কথা ছিল। তারে বহু কষ্টে আধা ঘন্টা পর বোঝানো গেল তার সাইজে হবে না। সে ওড়নার কোনা দিয়ে চোখ মোছার ভঙ্গি কইরা বলল, বললেই তো হয় কিনে দিতে পারবি না। যা যা নিজেদের কেনাকাটা কর। বইলা ঢংয়ের কান্না করতে লাগল। এগুলারে সাহেদার বিয়ে পর্যন্ত সহ্য করা লাগবো ভাইবা কান্না পাইলো!
সবাই সবার মতো জামা কাপড় কিনছে। আমি কি করব বুঝতে পারতেসি না। কারণ আমার পকেটে এত দামী জিনিস কেনার টাকা নাই। হঠাৎ পর্ষী আইসা আমারে তার কাছে টেনে কানে কানে বলল, আম্মু তোমাকে ঐ সাদা লেহেঙ্গায় অনেক সুন্দর লাগবে।
- কোনটা?
সে আমারে একটা ঘুপচিতে নিয়া গেল। সেখানে একটা পুতুলের গায়ে সাদা রঙের লেহেঙ্গা রাখা। তাতে ছোট ছোট করে স্টোন, পুতি আর সোনালী সুতার নকশা করা। গলার দিকে আর নিচে ভারি নকশা করা। আর বাকি পুরাটায় ছোট ছোট করে নকশা। সহজে কারো চোখে পড়বে না। এত ঘুপচিতে এটা চোখে পড়ল কেমনে ওর! আমার এক নজর দেখেই ইচ্ছে করতেসে এখনই পরে বসে থাকি। লেহেঙ্গায় প্রাইস ট্যাগ লাগানো ছিল। আমি দেখেই পর্ষীকে বললাম, এটা এমন কি সুন্দর? চলো চলো ঐদিকে দেখি। বইলা ওকে নিয়ে অন্যদিকে চইলা আসলাম। আসবার সময় তিনবার তাকাইলাম। যে দাম! সাহেদারটার দেড়গুণ। এত দাম দিয়ে কিনার থেকে ফুসকা খাইয়া বাসায় যামু। পেটটা ভরবো।
জামাকাপড় শেষে গয়নার দোকানে ঢুকে মনে হইলো চোখ ঝলমল করতেসে। এত সুন্দর গয়না ক্যান? সাহেদা গলাজোড়া চোকার সেট আর কয়েকটা সীতাহার কিনল। গয়নাগুলোর ডিজাইন সুন্দর ছিল। আমি বসে বসে দেখতে লাগলাম গয়না। সাহেদা চুড়ি পছন্দ করার সময় আমাকে ডাক দিলো। আমি পছন্দ কইরা দিলাম। তখনই আমার একটা হাতের চেইনের দিকে নজর পড়ল। একটা চিকন চেইন। তাতে একটা মসৃণ লাভ সেইপ আছে। কিইনা ফেললাম চটপট। শুভ কাজে দেরি করতে নাই। কিন্তু ঐ লেহেঙ্গাটার কথা মনে পড়তেই কান্না পাইলো। এত সুন্দর ছিল!
কেনাকাটা করতে করতে বিকাল গড়াইলো। আকাশে মেঘ জমসে। শপিমলের বাইরে পা দিসি কি দেই নাই ঝুম কইরা বৃষ্টি নামল। কি একটা অবস্থা! এত জিনিস নিয়ে যাওয়াও সম্ভব না। রাতুল বলল, আমি মাইক্রো নিয়ে আসছি। বলে পার্কের দিকে ছুইটা গেল। এদিকে আকাশকে দেখতেসি না। গাজরটা আবার কই গেল!
চলবে…
রাতুল বলল, আমি মাইক্রো নিয়ে আসছি। বইলা পার্কের দিকে ছুইটা গেল। এদিকে আকাশকে দেখতেসি না। গাজরটা আবার কই গেল!
মাইক্রো আসতেই সবাই আগের মতো বসলাম। তবে রাতুলকে কই ঢুকাবে সেটা চিন্তা করতে করতে সে বলল, আমি সিএনজি ধরিয়ে চলে যাবো। তোমরা চলে যাও। আয়ান বলল, আমাদের সাথে আসতে পারো। আকাশ একটা কাজে গেছে। গাজরের কথা শুইনা মাইক্রো থেইকা কান খাঁড়া কইরা ফেললাম। কি কামে গেল? কিন্তু এর বেশি কিছু কইলো না। রাতুল রাজি হইয়া ওদের সাথে গেল গা।
.
.
.
.
সারা সন্ধ্যা ধুমাইয়া বৃষ্টি হইসে। আমি বসার রুমে সোফায় চিৎপটাং হইয়া লালু মিয়াগুলার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতেসি। আর কান খাড়া কইরা আছি। গাজরের অপেক্ষায় কত লালু আমার পেটে গেসে হিসাব নাই। আর এদিকে গাজরের খবর নাই। এত ঝড়বৃষ্টিতে কই যে গেল, কেমনে আসবে! চিন্তায় খালি খাইতেই আছি খাইতেই আছি। এক ঘন্টায় এক কেজি শ্যাষ। খেয়াল হইতেই পেটের ভেতর কেমন মোচড় দিয়া উঠল। মনে হয় লালু মিয়ারা পেটের ভেতর পানির বন্যার মধ্যে হাবুডুবু খাইতে খাইতে মিছিল করতেসে আমার বিরুদ্ধে। আমি উঠে বইসা পেট ধইরা ধানাই পানাই করতেসি। এমন সময় রাতুল আইসা বসল পাশের সোফায়। আমিও নড়াচড়া বন্ধ কইরা চুপ কইরা বইসা আছি। দশ পনের মিনিট পর রাতুল নিরবতা ভাইঙ্গা কইলো, এখানে বসে আছো? ফ্রেশ হওনি যে এখনো।
- এমনি টায়ার্ড লাগছে তাই আরকি।
- ও, আচ্ছা। আজকে কিছু কিনো নি?
- কিনেছি তো।
- আমি দেখি নি যে তাহলে। কি কিনলে?
- একটা ব্রেসলেট।
- ও, দেখাও তো।
আমার পেটে ভুটভাট করতেসে কেন বুঝতেসি না। এদিকে গাজরের টেনশন, বন্ধু আসছে ব্রেসলেট দেখতে। ভালা লাগে না। আমি কইলাম, পরে দেখামু।
- আচ্ছা, যাও ফ্রেশ হয়ে নাও। তারপর দেখবো।
- হুম।
আমি চুপচাপ নিজের রুমে চইলা আসলাম। কি কারণে যেন সেদিনের পর থেকে আগের মতো কথা বলতে পারি না। অস্বস্তি হয় বড়।
ফ্রেশ হইয়া বাইর হয়ে আম্মুর রুমের দিকে যেতেই দেখলাম দরজা ভেজানো। ভেতরে রাতুলের গলা শুনতে পাইলাম। কি যেন আম্মারে বলতেসে। আমি কান পাতলাম।
- ফুফু, প্লিজ আমার কথা রাখো।
- দেখ রাতুল, আমরা তোর কাছে কৃতজ্ঞ কিন্তু কখনোই আমাদের সিদ্ধান্ত ওর উপর চাপিয়ে দিতে পারব না। তার উপর তুই তো জানিস ওর অবস্থা।
- কিন্তু আমি যে পারছি না। বড্ড ভয় করছে। যদি হারিয়ে ফেলি। প্রতি মুহূর্তে এটা ভাবি।
- তুই ওর সাথে কথা বল। তোদের সম্মতি থাকলে অবশ্যই ধুমধাম করে অনুষ্ঠান করে তোদের চার হাত এক করে দেবো।
শুইনাই আমার মনে লাড্ডু ফুটতে লাগল। বন্ধুর বিয়া। কবজি ঢুবাই খাবো। ব্যাটা ডুবে ডুবে জল খাইতেসে আর আমাকে বলে নাই। দাঁড়া ধরমু চাইপা। আমি আবার কান পাতার আগেই পাশের বাসায় চাবির ঝুনঝুন আওয়াজ কানে আসল। শুইনাই দৌঁড় দিলাম দরজার দিকে। লুকিং গ্লাস চোখ লাগাইতেই দেখলাম আকাশ আসছে। বৃষ্টিতে ভিজে পুরো চুপসাই আছে। দরজার সামনে মাথার চুল হাত দিয়ে ঝাড়তে লাগল। উফ্! আমি পারতেসি না লুকিং গ্লাসের ভেতরে চোখ ঢুকাই দিতে। মাথা ঝাড়া শেষে সে হাতের দিকে তাকাই একটা মুচকি হাসি দিলো। আমি ভালো কইরা তাকাই দেখলাম হাতে একটা প্যাকেট। কিসের প্যাকেট যে সে এত সুন্দর কইরা হাসলো! যেন বউয়ের জন্য গিফট আনসে। হঠাৎ সে পিছন ফিরে আমাদের বাসার দরজার দিকে আগাইলো। আমি তো ভয়ে লুকিং গ্লাস থেকে সইরা দরজার সাথে হেলান দিয়া দাঁড়াইলাম। টের পাইলো নাকি!? দুই তিন মিনিটে কোনো সাড়া শব্দ না পাইয়া আবার তাকাইলাম। দেখলাম ও দরজায় মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়াই আছে। তারপর হঠাৎ মাথা তুলে তাকাইতেই আবার ভয় পাইয়া লুকিং গ্লাস থেইকা সইরা গেলাম। একটুপর দরজা বন্ধের শব্দ শুইনা তাকাই দেখলাম ও চইলা গেসে। আমি আইসা সোফায় বইসা টিভি ছাইড়া দিতেই রাতুল আম্মার রুম থেকে বাইর হইলো। আমি তাকাইতে খানিক হাইসা নিজের রুমে চইলা গেল। আর কি কথা হইলো জানা হইলো না।
সক্কাল সক্কাল ঘুম থেইকা উইঠা স্যুপ বানাইতে বসলাম। কালকে গাজর ভিজা বিলাই হই আসছে। একটু গরম গরম স্যুপ দিয়া আসি। এই সুযোগে একটু দেইখা আসমু নে। বানানো শেষ হইতেই ঘড়ির দিকে তাকাইলাম। আটটা বাইজা গেসে। আম্মা উঠতে দেরি আছে। রাতুলও এখনো রুম থেকে বাইর হয় নাই। তাই সুযোগ পাইয়া এক বাটি স্যুপ নিয়া বাইর হই আসলাম।
নক করলাম। কেউ দরজা খুলল না। কতক্ষণ ধইরা ধাক্কাইলাম। খবর নাই। তিন চারবার কলিং বেল টিপতে খট কইরা সাউন্ড হইলো। তারপর আবার দরজা খুলে না। কি মুশকিল! হালকা ধাক্কা দিতে ভারি লাগলো। কোনোমতে উঁকি মাইরা দেখি গাজরটা দরজায় হেলান দিয়া বইসা আছে ফ্লোরে। চোখ বন্ধ। আমি তাড়াহুড়া কইরা ঢুইকা বাটিটা রাখলাম। ওর কাছে আইসা কপালে হাত দিয়া দেখি জ্বরে পুইড়া যাইতেসে। কি যে করে না। কালকে ভিইজা ভিইজা কই থেকে যে আসছে!
সে ঝিমাইতেসে৷ আমি নিয়া বহু কষ্টে বিছানায় শোয়াই দিলাম৷ নায়ক নায়ক হইলে কি হইসে ওজন হাতির সমান হইবো মনে হয়। আমার হাড় গোড় সব শ্যাষ। একটা বাটি নিয়া পানি ভইরা নিলাম। ছোট একটা টাওয়াল নিয়া পানিতে চুবিয়ে ওরে জলপট্টি দিলাম। থার্মোমিটার খোঁজার জন্য উঠলাম। এদিক ওদিক খুঁজতে খুঁজতে টেবিলের ড্রয়ারটা খুললাম। সেখানে ভেতরে খুঁজতে গিয়া একটা ডায়রী চোখে পড়ল। অনেক পুরানো। কিন্তু দেখতে অনেক সুন্দর। নীল রঙের। ডায়রী পড়ার খুব ইচ্ছে হইতেসিলো কিন্তু গাজরের কথা ভাইবা আবার থার্মোমিটার খুঁজায় মন দিলাম। সব খুঁইজা অবশেষে পাইলাম। থার্মোমিটারটা ওর মুখে গুইজা দিলাম।
আধা ঘণ্টা পর জ্বরটা একটু কমলো। আমি বইসা বইসা জলপট্টি দিতে লাগলাম। আন্টি কই গেল কে জানে। দেখে তো মনে হচ্ছে কালকে ছিল না। সেই সুযোগে জ্বর বাঁধাই বইসা আছে মশাই। আমি আবার টেবিলের দিকে নজর দিলাম। ডায়রীটা…। শেষে লোভ সামলাইতে না পাইরা ডায়রীটা ড্রয়ার থেইকা হাপিশ কইরা দিলাম। বগলদাবা কইরা নিলাম। ওড়নার নীচে দেখা যাইবো না। আমি যখন টেবিলের সামনে কাউয়া মার্কা হাসি দিতেসি তখন পেছন থেকে কেউ একজন ডাকল, ছোঁয়া। আমি চোরের মতো তাকাই দেখি আকাশ পিটপিট কইরা আমার দিকে তাকাই আছে। আমি কইলাম, চোখ খুলেছেন? বাসায় স্যুপ বানিয়েছি তাই আমি আপনার জন্য স্যুপ এসেছিলাম। এসে দেখলাম জ্বর এসেছে আপনার। তাই আর কি। সাবধানে কাছে গিয়া মাথায় হাত দিয়া বললাম, জ্বর কমে গেছে। আমি স্যুপটা গরম করে আনি। তারপর একটা জ্বরের ওষুধ খেলে ঠিক হয়ে যাবেন। বইলাই রান্নাঘরে দৌঁড় দিলাম। ডায়রীটা একজায়গায় রাইখা স্যুপটা গরম কইরা নিলাম। তারপর তার কাছে নিয়া বসলাম। সামনে রাইখা বললাম, খান। সে আমার দিকে তাকাই রইলো।
- পছন্দ হয়নি?
- খেতে ইচ্ছে করছে না।
- খেয়ে নিন, ওষুধ খেতে হবে।
- উহু।
- খান বলছি।
সে খাচ্ছে না দেখে জোর কইরা এক চামুচ মুখে ঢুকাই দিলাম। ওমা! কি সুন্দর ভালো পোলার মতো খাই নিল! যত ঢং। এক চামুচ এক চামুচ কইরা মুখে দিলাম। সে আরাম কইরা খাইতে লাগল। এজন্যই ঢং কইরা বলসিলো খাইতে ইচ্ছে করতেসে না। তুমি খাইবা না মানে তোমার বাচ্চার বাপ খাইবো। জোর কইরা সব গিলাই একটা প্যারাসিটেমল খাওয়াই দিলাম। সব খাইয়া আধশোয়া হইয়া বসল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আন্টি কোথায়?
- এক বাড়ি গেছে।
- ও। একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
- করো।
- কালকে ভিজে ভিজে কোথায় গিয়েছিলেন?
- তুমি জানলে কি করে ভিজেছি? আমাকে ভেজা অবস্থায় দেখছিলে নাকি দরজা দিয়ে?
হায় হায়! মুখ ফোসকে কি কইলাম! নিজের পায়ে নিজে পাথর ফালাইলাম। লজ্জায় লাল হইয়া বললাম, শব্দ শুনে একটু উঁকি মেরেছিলাম আর কি। তখন…
- তখন কি? আমাকে দেখছিলে? কেমন লাগছিল দেখতে?
- কে কে কেমন লা গ বে আর?
- উম…… কাল তো সাদা শার্টটা পরেছিলাম। সেটা তো পাতলা ছিল। ভেজা গায়ে লেপ্টে ছিল তাই অনেক অস্বস্তি লাগছিল। তাহলে তো বডি দেখা যাচ্ছিল, তাই না?
- হ্যাঁ… এই না না না…
আমার কান দিয়া ধোঁয়া বাইর হইতেসে। আসলেই কালকে……। মনে মনে কানতেসি আর বলতেসি, গাজরটা আমারে কিভাবে ফাসাইলো। এ্যাঁ…………
- এই একটু দেখলে কিচ্ছু হয় না।
- ওমা! আমার সরম করে না বুঝি? এবার কি হবে আমার!
আমি বেকুবের মতো তাকাই রইলাম। কি কমু!? হঠাৎ সে আমার হাত টান দিল। আমি তাল সামলাইতে না পাইরা একেবারে ওর মুখোমুখি পড়লাম। ও মুখ কানের কাছে আইনা ফিসফিস কইরা কইলো, আমার তো সব দেখে ফেললে ছোঁয়া৷ এখন তোমার কি দায়িত্ব বলো তো। বিয়ে করবে আমায়? শুইনা আমার হৃদপিণ্ড যেন বাইর হই যাতে চাইলো৷ আমি এক মুহূর্তে দেরি না কইরা বাসায় দৌঁড় দিলাম। একবারও পেছনে ফিইরা ওর দিকে তাকানোর সাহস হয় নাই।
.
.
.
.
আমার কি যে খুশি লাগতেসে। লুঙ্গি ডান্ড, স্কার্ট ডান্স, শাড়ি ডান্স সব দিতে মন চাইতেসে। আমি মনের আনন্দে দরজা মাইরা ইচ্ছা মতো নাইচা নিলাম। উফ! আমার গাজরটা আমারে প্রপোজ করসে। কিন্তু…… এভাবে কেউ প্রপোজ করে!? যা হোক, করসে তো। আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে। আহা! আহা! আমি হাওয়ায় উড়তে উড়তে বিছানার উপর ধপাস কইরা পড়লাম। বিছানা মট কইরা উঠল। আমি উঁকি মারলাম নাহ! খাটখান ভাঙে নাই। যাহোক নাচানাচি শেষে আমার জাদু থইলা থেইকা ডায়রীটা বাইর করলাম। আসার সময় নিয়া আসছিলাম। মনের আনন্দে ডায়রীটা পড়ার শুরু করলাম।
প্রথম পৃষ্ঠা পইড়া আমার হাবা (বাতাস) ফুস……………… কইরা বাইর হই গেল। হায়! হায় গো! আমার গাজরের খরগোশ আছে গো! আমার কি হবে গো! সে অন্য কাউরে পছন্দ করে। এজন্যই এমনে প্রপোজ করসে। নিশ্চয়ই বিয়ার কথা বইলা আমার সাথে মজা করসে। আমি আরো ভাবসি… এ্যাঁ……। আম্মা দরজা নক কইরা কইলো, ছোঁয়া উঠছিস? রান্না করতে হবে। আমি বেরিয়ে যাচ্ছি। আমি নাক টাইতে টাইতে মনে মনে কইলাম, বন্ধু আসার পর থেইকা এই রান্নার জ্বালা আর ভালো লাগে না।
আমি মুরগী, সিম আর ভাত রান্না করসি। গাজরের উপর মেজাজ খারাপ হইতেসে। রানতে রানতে ইচ্ছা মতো বকসি গাজররে। রান্না শেষে রাতুলকে টেবিলে বসতে কইলাম। আমি পাশে দাঁড়াই বিড়বিড় করতেসি। আব্বু নাই। আম্মুর বিকালে ডিউটি তাই বাইরে গেসে গা। ঝিলিক এখনো কাউয়ার মতো গান গাইতে গাইতে গোসল করতেসে। রাতুলকে ভাত বেড়ে দিয়া সবজি আর মুরগী দিলাম। ও এক লোকমা মুখে দিতেই মুখ বাঁকাই ফেলল। মুরগীতে এক কামড় দিতেই লাফাই উইঠা বলল, ঝাল ঝাল ছোঁ য়া পা নি… আমি চিন্তার জগত থেইকা বাস্তবে আইসা তাড়াতাড়ি পানি দিলাম। জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকাইতেই কইল, সবজিতে লবনের জাহাজ দিসো আর মুরগীতে ইচ্ছামতো ঝাল দিসো। আজকে কি হয়েছে তোমার? আমি মনে মনে কইলাম, মেজাজ খারাপ হইসে। এগুলা গাজররে খাওয়াইলে শান্তি পাইতাম।
চলবে…
আমি মনে মনে কইলাম, মেজাজ খারাপ হইসে। এগুলা গাজররে খাওয়াইলে শান্তি পাইতাম।
বিকালে নিজের রুমে বিছানায় শুইয়া ফোন গুতাইতেসি। হঠাৎ কলিংবেল বাজল। আলসি লাগতেসে উঠতে। দ্বিতীয় বার বাজতে না পারতে উঠলাম। রুমের দরজার কাছে পৌঁছাইতেই দেখি রাতুল দরজা খুলসে। আমি সেখান থেকে দাঁড়াই দেখলাম আকাশ আসছে। মনে পড়ল বাটিটা তো রাইখা আসছি। ঐটা দিতে আসছে মেবি। রাতুল জিজ্ঞেস করল, কি চাই?
- জানোই তো কি চাই।
রাতুল কটমট কইরা ওর দিকে তাকাইলো। তাদের হাবভাব কিসুই বুঝি না। একটা আরেকটারে দেখলে যেন কামড়াই দিবো। আকাশ মিষ্টি হাসি দিয়া বলল, বাটিটা দিতে আসছিলাম।
- কিসের বাটি?
- স্যুপ। আমার জন্য বানিয়ে দিয়েছিল। আজকে স্যুপ দিয়েছে পরে দেখো মনটাই দিয়ে দিয়েছে। যদিও……
আকাশের কথার মাঝে রাতুল বাটি নিয়া দরজা মাইরা দিল মুখের সামনে। এটা কেমন অভদ্রতা! কিন্তু রাতুলের চেহারা দেইখা মনে হইলো সে মোটেও মজা করার মুডে নাই। আমি ভয়ে চোরের মতো বিছানায় এসে ফোনটা হাতে নিলাম। যেই না ভাব ধরলাম ফোন টিপতেসি, কিসু দেখি নাই, কিসু জানি না তখনই রাতুল আমার রুমে আসল। আমি ফোনের দিকে মনোযোগ দেওয়ার ভাব করলাম। সে ঠকাস কইরা বাটিটা টেবিলে রাখলো। আমি পিটপিট কইরা তাকাইলাম। মনে মনে কইলাম, আস্তে রাখো, ভাঙতো আরেকটু হইলে। রাতুল আমার দিকে তাকাই আছে। আমিও তাকাই আছি। তারপর সে রূঢ় গলায় বলল, স্যুপ কেন দিয়েছো?
- কাকে?
- পাশের বাসায়।
- বানিয়েছিলাম তাই…
- আমাকে তো দাও নি।
- আমি খাওয়ার পর শেষ হয়ে গিয়েছিল তাই…
- যদি শেষ হয়ে যাবে জানো তবে আমাদের জন্য রাখতে। ওকে দিলে কেন?
- দি দিলাম আর কি…… আমি একটু ওয়াশরুম যাই…
বইলাই উইঠা চইলা যাইতে লাগসিলাম। সে পিছন থেকে টাইনা দেয়ালের সাথে দাঁড় করাইলো। আমি তো ভয়ে শেষ। আজকে কেন যেন অনেক রাইগা আছে। এই পর্যন্ত আগে কখনো এমন রাগতে দেখি নাই। আজকাল বিদেশ থেকে আসার পর আমার সাথে মেজাজ নিয়ে কথা বলতেসে। কি যে হইলো আমি কিছুই বুঝতেসি না। এত রাগে ক্যান!? সে ডান হাত আমার পাশে দেয়ালে রাইখা বলল, ছোঁয়া, সব সময় সে কেন? সবকিছু ভুলে যাওয়ার পরও সে কেন? আমি না কেন? কেন তাকে তুমি বেছে নাও? আমাকে কেন না? এত ভালোবাসা দেওয়ার পরও তার কাছেই কেন তোমার মন চলে যায়? আমাকে কি এটুকু ভালোবাসা যায় না? এক বিন্দুও না? কিন্তু আমি যে ভালোবাসি ছোঁয়া। তোমাকে ভালোবাসি। বইলা আমার কাঁধে কপাল রাখলো। তার সামান্য স্পর্শে আমি অস্বস্তিতে কাঁইপা উঠলাম। সে বুঝতে পেরে হয়ত হুট করেই রুম থেকে বাইর হইয়া গেল।
.
.
.
.
সাহেদারে নিয়া বইসা আছি। দুইজনে ফুসকার দোকানের সামনে চেয়ারে। সাহেদা বের হইতে চাইতেসিলো না। আমি জোর কইরা বাইর করাইসি। নতুন বউ নতুন বউ ভাব। যা হোক এখন আইনা নিজেই চুপ কইরা বইসা আছি। ঠ্যাং দুইটা একটা আরেকটার সাথে ঠোকরা ঠুকরি করতেসে। কি করব বুঝতেসি না। মামারে বলসিলাম দুই প্লেট ফুসকা দিতে। দশ মিনিটে চইলা আসলো। প্রথম ফুসকাটা মুখে দিতেই সাহেদা বলল, কি হল? খা। কি এমন ভাবছিস? আমি ভাবলেশহীন ভাবে কইলাম, সাহেদা, কালকে আমার সাথে দুইটা কাহিনী ঘটসে। সে দ্বিতীয়টা মুখে দিতে দিতে কইলো, কি কাহিনী?
- গাজর আর বন্ধু দুইজনেই আমারে একই দিনে প্রপোজ করসে।
সাহেদা ভিমরি খাইয়া কাশি উঠাই ফেলল। আমি মামা থেকে তাড়াতাড়ি কইরা পানি নিয়া ওরে দিলাম। ও একটু শান্ত হয়ে কইলো, কবে?
- কালকে।
- হঠাৎ?
- মানুষ তো হঠাৎ করেই প্রপোজ করে।
- তা করে। আচ্ছা বল এখন কেমনে করসে? আর দুইজনই বা একইদিনে কি করে?
- কালকে আকাশকে এক বাটি স্যুপ বানাই দিসিলাম।
- ওহ্ হো…
- আরে শোননা। আসলে পরশু দেখসিলাম গাজরটা বৃষ্টিতে ভিজে আসছে। ভাবলাম একটু গরম গরম স্যুপ দিয়ে আসি।
- বাব্বা, এখন থেকেই এত প্রেম।
- তুই শুনবি?
- আচ্ছা বল বল।
- তো গিয়ে দেখি কি, গাজরের জ্বর উঠসে। তারপর তারে জলপট্টি দিলাম, স্যুপ আর ওষুধ খাওয়াইলাম। তখন আমি মুখ ফোসকে বলে ফেলেছিলাম কালকে ওকে ভিজে আসতে দেখসি। এরপরই সে বলল আমি নাকি তার এহম এহম দেখে ফেলসি।
- এহম এহম কি আবার?
- মানে শরীর আরকি।
- সেটা আবার কখন শরীরের সমার্থক হইলো?
- ধুর এখন বুঝছিস তো। তাইলেই হবে। তারপর সে বিয়ের কথা বলল।
- ওমা! তাই নাকি? তাহলে বিয়ে করে ফেল।
- ধুর, পুরা কাহিনী শোন আগে।
- আচ্ছা বল।
- এরপর আমি এক দৌঁড়ে বাসায় আসছি। খুব খুশি ছিলাম শুনে। আসার সময় ওর একটা ডায়রী আনসিলাম লুকাইয়া। সেখানে পড়ে দেখি তার ভালোবাসার মানুষ আছে। আমার সাথে মজা করসে।
- হুম, বুঝলাম। আর দ্বিতীয়টা?
- সে স্যুপের বাটি ফেরত দিতে গিয়া ক্যাঁচাল লাগাইসে। রাতুল আমার কাছে জানতে চাইসিলো কেন দিলাম গাজরকে। তাকে কেন স্যুপ দেই নাই। আমি কাটাই যাইতে চাইসিলাম। কিন্তু সে হঠাৎ আমাকে প্রপোজ করে বসল।
- এক কাজ কর।
- কি?
সাহেদা শেষ ফুসকাটা মুখে দিতে দিতে কইলো, তুই দুইজনরেই রিজেক্ট করে দে। আমি তার দিকে তাকাই কইলাম, কেন? সাহেদা প্লেটটা রাইখা বলল, কারণ আমি তোরে আমার জা বানামু। ওর কথা শুইনা আমার ফুসকা গলায় আটকাইলো। আমি তারে ইশারা ইঙ্গিতে কইলাম পানি দিতে। পানি দিয়া কোনোমতে গিলে কইলাম, না থাক বাপু। তিনজনে টানাটানি করতেসে আমারে নিয়া। আরেকজন যোগ করার ইচ্ছা নাই। পরে দেখমু দুইজনে দুই হাত আর দুইজনে দুই পা নিয়া টানতে টানতে আমারে চাইর টুকরা করে ফেলবে। সাহেদা আমার কথায় পাত্তা না দিয়া বলল, তুমি তো ফান্দে পড়েছো বগা। এখন কাইন্দা কেমনে কুল পাইবা সেটা ভাবো। আমিও ওর সাথে সহমত হইলাম। আসলেই আমি বগা হই গেলাম।
সাহেদারে নিয়া রিকশায় বইসা আছি ট্রাফিকে। বাংলাদেশে জ্যামের শেষ হইলো না। আধাঘন্টায় কচ্ছপের মতো দশ কদম আগাইসি। কি বিরক্তি! শখ কইরা বাইর হইলাম। সাহেদার সাথে কথা কইসিলাম মন হালকা হওয়ার জন্য। আর সে তার ভাসুরের কথা বইলা মনটা আরো ভারি কইরা দিল। আমি বসে বসে আশেপাশের লোকজন দেখতেসিলাম। হঠাৎ একজায়গায় চোখ স্থির হইলো। মনে হইলো গাজররে দেখলাম। আমি নাইমা যাইতেই সাহেদা বলল, কই যাস। এখুনি জ্যাম ছাড়বে।
- তুই বাসায় যা। আমার কাজ আছে।
বইলা নাইমা পড়লাম। রাস্তার পাশে আইসা আবার খুঁজতেই দেখলাম একটা রেস্টুরেন্টে ডুকল। আমিও পিছু পিছু গেলাম। যদিও ঢুকি নাই। বাইরে কাচ দিয়া তাকাই দেখলাম ঐ শিং মাছটা বইসা আছে ভেতরে। লাল রঙের টপস আর নীল জিন্স পইরা ঠ্যাংয়ের উপর ঠ্যাং তুইলা আছে। ঠোঁটে টকটকে লাল লিবিষ্টিক দেয়া আর চোখে সানগ্লাস। রেস্টুরেন্টের ভেতরেও কি রোদ পড়ে নাকি? সানগ্লাস খুলে নাই৷ আকাশ গিয়া ওর কাছে বসলো। আমার যদি অলৌকিক শক্তি থাকতো তাইলে শিং মাছটারে ওখান থেইকাই হাপিস কইরা দিতাম। আমি রোদের মধ্যে দুই চোখের উপর হাত রাইখা ভেতরে তাকাইলাম। দুইজনে হাইসা হাইসা কথা বলতেসে। হঠাৎ দেখি শিং মাছ একটা লাল গোলাপ বাইর কইরা আকাশরে দিলো৷ আমার দেইখা কান্না আসতেসে। আমি এখনো তারে কিসু দিতে পারলাম না আর এই মাইয়া গোলাপ দেওয়া, হাগ করা, গালে কিস করা। সব কইরা ফেলল। আল্লাহ আমার কি হবে! আকাশ কি করে তার জন্য আবার তাকাইতেই দেখি সে হাসি হাসি মুখ কইরা গোলাপটা নিয়া নিল হাত থেকে। দেইখাই আমি সোজা হইয়া খাঁড়াইলাম। আমি আর দেখমু না। আমার যা জানার জানা হই গেসে। আমি বাসায় যামু। বইলাই নাক চাইপা ধইরা হাঁটা দিলাম। পাছে নাকের পানি বাইয়া পড়ে।
.
.
.
.
কলিং বেল টিপলাম৷ কেউ দরজা খুলে না। বিরক্ত হইয়া টিপতে লাগলাম বাচ্চাদের মতো। ঝিলিক দরজা খুইলা একটা ধমক মারতে গিয়া বলল, ও ছোঁয়াপু তুমি? দেখো কে আস…। আমার এত কথা শুনতে মন চাইলো না। আমি পেত্মীর মতো ঝুলতে ঝুলতে রুমে চইলা গেলাম। রুমের দরজা মাইরা বিছানাই উইল্টা পড়লাম। ধুর কিচ্ছু ভাল্লাগে না। সব কেমন জট পাকাই গেসে। ইচ্ছে করতেসে গাজরের রাগটা ডায়রীটার উপর ফালাই। কুচি কুচি কইরা কাইটা নদীর জলে ওর ভালোবাসা ভাসাই দি। তুমি ভালোবাসো একজনরে আর আমারে বিয়ার কথা বইলা মশকরা করো। তোমার মশকরা আমি কাল বাইর করবো। দাঁড়াও। তোমার যদি কান দিয়া ধোঁয়া না বাইর করসি। তো আমার নামও ছোঁয়া না।
রাতে খাইতে বসলাম। কি করা যায় সেটা চিন্তা করতেসি আর একটা একটা ভাত মুখে দিতেসি। মন আছে চিন্তায়। এদিকে টেবিলে বসা চারজন মনুষ্যের চোখ যে আমার উপরে নিবদ্ধ সেটা আমার খেয়ালে নাই। আমি আপন মনে বিড়বিড় কইরা হাসতেসি আর খাইতেসি৷ আবার বিড়বিড় করতেসি৷ হঠাৎ লাফ দিয়া কইলাম, পাইসি। আমার লাফ দেওয়ায় নিরীহ চারটা প্রাণী আরেকটু হইলে হার্টফেইল করতো। হঠাৎ সেটা খেয়াল হতেই কইলাম, সবাই আমার দিকে এভাবে তাকাই আছো কেন? আব্বু বলল, তোর কি কিছু হইসে?
- কি হবে?
ঝিলিক বলল, বিড়বিড় করছিলা আর হাসছিলা। আমি ভাতের লোকমা দিয়া বললাম, ও কিছু না। আম্মু বলল, কিছু না হলে ভাত গুণে গুণে খাচ্ছিস কেন? ঠিকমতো খা।
- হুম।
রাতুল আসার পর থেইকাই চুপ কইরা আছে। আজকে সারাদিনে টু শব্দ করে নাই। আমিও যেচে কথা বলি নাই। অন্য সময় হইলে সবার আগে সেই পঁচাইতো। আমার এখন সেদিকে ভাব্বার মন নাই। আমার এখন দায়িত্ব আমার গাজরকে শিং মাছ থেকে রক্ষা করা।
চলবে…
অন্য সময় হইলে সবার আগে সেই পঁচাইতো। আমার এখন সেদিকে ভাইবা মন নাই। আমার এখন দায়িত্ব আমার গাজরকে শিং মাছ থেকে রক্ষা করা।
.
.
.
.
ভোর ভোর উইঠা কাজে লাইগা গেলাম। ফ্রিজ থেইকা আমার লালু মিয়াদের থইলাটা বাইর করলাম। ওদের ধুয়ে রাখার জন্য পেয়ালা ধুতে ধুতে ফ্যাত ফ্যাত করতেসি। আমার লালুগুলা অন্যের পেটে যাবে! ভাবতেই কান্না আসতেসে। তারাও আমার দিকে জুলুজুলু কইরা তাকাই আছে। যেন এখনই কাইন্দা দিবো। যাগ্গে, বুকের কষ্ট বুকে চেপে রাইখা ওদের গোসল করাইলাম। সুন্দর কইরা দাঁড়ি পরিষ্কার কইরা চামড়া ছিল্লাম। গ্রেটারে কুচি কইরা রান্নার সরঞ্জাম তৈরী শুরু করলাম। প্রথমে একটা পাত্রে ঘি এলাচ দিয়া কুচানো গাজরটারে নাইড়া কিছুক্ষণ পর তাতে দুধ পানিতে গুইলা দিয়া সিদ্ধ কইরা নিলাম। চিনি পরিমাণ মতো দিলাম। তারপর গুড়া দুধ আর বাদাম দিয়া পানি শুকাই গেলে নামাই ফেললাম। ব্যাস আমার গাজরের হালুয়া যুদ্ধের জন্য রেডি। এখন শুধু ঢাল তলোয়ার দেওয়া বাকি৷ আজকে আর ঝুঁকি নেই নাই। বাসার সবার জন্য বানাইসি। না হইলে পরে আবার আমারে চাইপা ধরব। এবার আসল কাজ৷ আমি চুপিচুপি বাইরে গিয়া এক শিশি জোলাপ কিইনা আনলাম বহু খুঁইজ্যা। কালকে বের হওয়ার উপায় ছিল না। নাহলে কালকে আইনা জোলাপের শিশির লগে আনন্দে নাচতাম কতক্ষণ।
আইসা দেখলাম এখনো কেউ উঠে নাই। যাক বাঁচা গেল। একটা বাটিতে গাজরের হালুয়া নিয়া অর্ধেক জোলাপ ঢাইলা দিলাম। ভালো মতো মিশাইয়া নিয়া উপরে বাদাম দিয়া সুন্দর কইরা ডেকোরেশন করলাম। মনে মনে চিনা হাসি দিয়া কইলাম, বাছা তোমার ঢংয়ের পিরিত বাইর করতেসি আমি। আমার লগে মশকরা? তোমার পেটের বারোটা যদি আমি না বাজাইসি তো আমার নামও ছোঁয়া না।
যাওয়ার আগে একটু রেডি হই নেই। জামাটা কেমন কুচকাই আছে৷ চুল কতগুলাও কাউয়ার বাসা। আমি রুমে গেলাম জামা বদলাইতে। আধাঘন্টা ধইরা জামা বাইছা একটা হলুদ জামা পরলাম। সভ্য জাতির মতো হইয়া রান্নাঘরে আইসা টাসকি খাইলাম। আমি ট্রেতে বাটিটা রেখে গেসিলাম। এখন দেখি বাটিতে হালুয়া নাই। গায়েব হইলো কই!? উপরে নিচে ডানে বায়ে কোথাও নাই। কেউ খাইলো নাকি! ই…… আল্লাহ জানেন কে খাইসে! আমি ভয়ে ভয়ে আরেক বাটিতে বাইড়া বাকি জোলাপটুকু দিয়া পা টিইপা টিইপা বাইর হইলাম। আসার সময় শুনলাম ওয়াশরুমে কে যেন ফ্যাশ টিপসে। হে হে চুরি কইরা খাইয়া নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারসো। এবার বুঝুক মজা।
কলিংবেল টিপতে আকাশ দরজা খুলল। কি কিউট লাগতেসে বাচ্চাদের মতো। মাথার চুল সব এলোমেলো। দরজা খুলতে খুলতে হাই দিতেসিলো। আমারে দেইখা হাই উধাও হইয়া গেল। আমি স্যাকারিন মিশ্রিত হাসি দিলাম। সে আমার দিকে তাকাই রইলো। আমি লজ্জা লজ্জা ভাব আইনা কইলাম, ভেতরে আসতে পারি? সে দরজা থেকে সইরা বলল, হ্যাঁ আসো আসো। আমি আশেপাশে তাকাই কইলাম, আন্টি এখনো আসেনি?
- না…… কাজ আছে তাই আসতে পারছে না।
- ও আচ্ছা। এটা আপনার জন্য।
- কি এটা?
আমি ঢাকনা তুলে কইলাম, গাজরের হালুয়া। সে আনন্দিত হইয়া বলল, তোমার মনে আছে! আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে কইলাম, কি মনে আছে? সে হঠাৎ নেতিয়ে গিয়া বলল, কিছু না। আচ্ছা রাখো। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি। মাত্রই উঠলাম। কালকে অনেক কাজ গেছে। বইলা চইলা গেল। আমি মনে মনে কইলাম, কি কাজ গেছে তো জানি। শিং মাছের লগে প্রেম করসো। আর কি কাজ থাকবে? হঠাৎ মনে হইলো, সে তো বিকালে রোগী দেখতে যাবে। কাজটা কি ঠিক হচ্ছে? নাহ, আমি নিয়া যাই। শাস্তিটা বেশি হই যাবে। আমি যাওয়ার আগেই সে আইসা বাটি নিয়া বইসা পড়ল। বলার আগেই গপগপ কইরা সব খাইয়া নিল। আমি হা কইরা ওর খাওয়া দেখলাম। খাওয়া শেষে কইলো, আমার খুব পছন্দ গাজরের হালুয়া। জানো? আমি কৃত্রিম হাইসা মাথা নাড়লাম। একটু পরেই বুঝবা ঠেলা।
- আমি আসি।
- না বসো।
- আমার কাজ আছে। কাল তো সাহেদার গায়ে হলুদ। অনেক কাজ। আসি।
আমি যাইতে লাগলেই আকাশ আইসা আমার ডান হাত ধইরা ফেলল। আমি কিছু বুঝার আগেই একটান মাইরা বুকে মিশাই ফেলল। এটা কি হইলো? আমি থাকমু না। না জানি কালকে কতবার এই বুকে মাইয়াটারে রাখসে। অন্যের জিনিস আমি ব্যবহার করি না। আমি ছুটার জন্য ধানাই পানাই করতেসি আর সে জাপটে ধইরা আছে। হঠাৎ আমি শান্ত হইয়া গেলাম। কেন জানি অনেক শান্তি লাগতেসে। আমি ওর বুকে কান পাতলাম। হার্টবিট স্পষ্ট শোনা যাইতেসে। মাত্র চোখটা বন্ধ কইরা শুনমু ভাবসিলাম হঠাৎ ওর পেট ডাইকা উঠলো৷ আমি চোখ খুইলা তাকাইলাম। সেও আমারে ছাইড়া দিলো।
- ছোঁয়া…
আবার ডাক দিলো। সে কইলো, একটু আসছি। হ্যাঁ? কোথাও যাবা না। আমি…। কথা শেষ হওয়ার আগেই দৌঁড়। হিহ হিহ হি… জোলাপের কত গুণ এবং কি কি তা আজ ভালো কইরা টের পাইবা। আমার এখানে থাকা সুবিধাজনক নয়। আমি তল্পিতল্পা গুটাই বাসায় দৌঁড় দিলাম।
রুমে বইসা আছি ফোন হাতে নিয়া। বইসা বইসা ঘাটতেসি আর একটু পরে ওয়াশরুমের ফ্ল্যাশের আওয়াজ শুনতেসি। দরজা খুলে বের হয়। আবার দুই তিন মিনিট পর দৌঁড়ে আইসা দরজা বন্ধের শব্দ হয়। আমি রুমের দরজা বন্ধ কইরা বইসা ছিলাম। একবার ভাবলাম উঁকি মাইরা দেখা দরকার চোরটা কেডা। দরজা খোলার শব্দ হইতেই আমি দরজাখান ফাঁক কইরা দেইখা এবার দরজার হুক লাগাই দিলাম। ইইই…… আমারে তো ভর্তা বানাই রোদে শুকাড় দিবো। বন্ধু চুরি কইরা খাইলো! একদিক দিয়ে ভালা হইসে। আমারে বহুত রাইগা রাইগা কথা কইসো। এখন শাস্তি ভোগ করো। নিজেই নিজের শাস্তি নিসো। হুহ।
.
.
.
.
আধা ঘণ্টা পর আম্মু দরজায় নক দিলো। আমি দরজা খুলতেই আম্মা জিগাইলো, তুই হালুয়া রান্না করেছিস? আমি দরজার ফাঁক দিয়া কইলাম, হু।
- আচ্ছা রাতুলের কি হয়েছে জানিস?
- কি কি হবে?
- উঠার পর থেকে কেবল বাথরুমে দৌঁড়াদৌঁড়ি করছে দেখলাম।
- দেখো হয়ত পেট খারাপ হয়েছে।
- হঠাৎ পেট খারাপ হলো কেন? বুঝলাম না। বাইরের খাবার তো খায় নি। তবে!?
- তাকেই জিজ্ঞেস করো।
- আচ্ছা, আয়। খাবি।
- আসি।
আমরা চারজন টেবিলে বইসা গাজরের হালুয়া খাচ্ছি আর রাতুলের ওয়াশরুমে আসা যাওয়া দেখতেসি। আম্মু খাইয়া উঠে স্যালাইন বানাইয়া দিলো। সে এক মুহূর্ত বইসা থাকতে পারতেসে না। আধা শিশি জোলাপ। ভালোই কাজ করতেসে। ওর এ অবস্থা তাহলে গাজরের কি অবস্থা!!!!!
.
.
.
.
রাতে নিশ্চিন্তে ঘুম দিসিলাম। সকালের কলিংবেলের শব্দে ঘুমের বারোটা বাজল। দরজা খুইলা দেখি সাহেদা কোমরে দুই হাত দিয়া তাকাই আছে আমার দিকে। আমি ঘুম ঘুম চোখে কইলাম, কিরে? এই ভোর রাতে?
- কটা বাজে দেখেছিস?
- কটা?
- সাড়ে পাঁচটা। আর তুই এখনো ঘুমে?
- তো কি করবো?
- আজ না আমার গায়ে হলুদ!? আর তুই এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাস!
- যাবো আর কি। বিকালে সেজে গুজে।
- তুই এখুনি যাবি।
- এখন!?
- হ্যাঁ, এখন।
- আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।
- আমার রুমে ওয়াশরুম আছে। চল।
সে আমারে টাইনা নিয়া গেল। যাওয়ার আগে গাজরের বাসার দিকে তাকাইলাম। দেখলাম দরজায় তালা মারা। গেল কই!?
ফ্রেশ হইয়া বইসা রইলাম ওর রুমে। ও আমার সামনে আচার নিয়া বসল। এ মাইয়ার আচার খানা শেষ হইলো না। আমি এক পিস নিয়া মুখে পুরতে পুরতে কইলাম, তোর আর আচার খাওয়া গেল না। তোর আচার ওয়ালার সাথে বিয়ে দেওয়া উচিত ছিল।
- তাহলে তোরেও গাজর ওয়ালার কাছে বিয়ে দিয়ে দেবো। সারাদিন রান্না বান্না করবি আর খরগোশের মতো কচকচ করে গাজর খাবি।
- হ, এককাজ করব। আয়ান ভাইকে বলবো শিক্ষকতা ছেড়ে আচারের ব্যবসা করতে।
- এমন করে বলিস ক্যান? আচারই তো।
- হুম, আচারই।
আমি মনের সুখে আচার খাইতেসি আর গুণ গুণ কইরা গান গাইতেসি। সাহেদা সেটা খেয়াল কইরা বলল, বিয়া আমার আর তোর মনে রঙ লাগসে। আমি মুচকি হাইসা বললাম, জানিস কি হইসে? সাহেদা বয়াম থেকে আচার নিতে নিতে বলল, কি? আমি আঙ্গুল চেটে কইলাম, গাজর ঐদিন শিং মাছের সাথে দেখা করতে গেসিলো।
- গাজর না হয় আকাশ ভাই কিন্তু এই শিং মাছটা কে?
- তার ভালোবাসা।
- তাই নাকি?
- হুম। সেদিন দেখসি মেয়েটা ওরে একটা গোলাপ দিসে।
- তুই তো তাও করতে পারলি না।
আমি নাক টাইনা কইলাম, সাহেদা…। আমিও তারে টাইট দিসি। সাহেদা উৎসুক হইয়া কইলো, কি করছিস ভাইয়ের সাথে? আমি তার কানে ফিসফিস কইরা কইলাম, জোলাপ দিয়া গাজরের হালুয়া খাওয়াই দিসি। সাহেদা বেকুবের মতো তাকাই থাইকা কাইন্দা কাইন্দা কইলো, আর কিসু পাস নাই? আমার বিয়ার আগের দিনই তোর এমন শাস্তি দিতে হবে?
- কেন? কি হইসে?
ওর ফোন বাইজা উঠল, উঁকি দিয়া দেখি আয়ান ভাই ফোন দিসে। আমি কইলাম, ভাই কি শান্তি মতো কথাও কইতে দিবে না দুইজনরে? সাহেদা হাইসা দিয়ে কথা বলতে লাগল। দরজার দিকে তাকাইতেই মনে হইলো কে যেন দরজার বাইরে দাঁড়াই আছে।
(স্যাকারিন মিষ্টি জাতীয় জৈবপদার্থ যা চিনির থেকে ৫০০ গুণ বেশি মিষ্টি।)
চলবে…
দরজার দিকে তাকাইতেই মনে হইলো কে যেন দরজার বাইরে দাঁড়াই আছে।
আমি সাবধানে গিয়া দরজা খুলতেই ধড়াম কইরা সাহেদার রুমের ফ্লোর ফাইটা গেল। আমি নিজেও ভয় পাইয়া গেলাম। তারপর তাড়াতাড়ি কইলাম, আপনি ঠিক আছেন? চাচি কোকাইতে কোকাইতে গলা ফাটা চিৎকার কইরা কইল, মা গো, বাবা গো, মাজাটা গেল গো। গেল গেল, আমার মাজা আর নাই। গেল…। সাহেদা দৌঁড়ে এসে বলল, কিরে!? কি করে হলো?
- দরজাটা খুলতেই আর কি…
আমি আর সাহেদা উঠানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু আমাদের দুইজনের ঘাম ছুটে গেল তাকে এক ইঞ্চি নড়াইতে৷ এত বড় ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল দেখতে সবাই দৌঁড়াইয়া আসলো। সবাই মিলে ঠেইলা তুললাম তারে। মনে হইতেসিলো এই বুঝে তলায় পইড়া প্রাণ পাখি উইড়া যাইবো৷ সাথে কানে তালা লাগানো বাবা গো মা গো চিৎকার। তারে কোনোমতে ধইরা রুমে নিয়া গেল সবাই।
- সে কান পেতে কি শুনতে আসছিল আল্লাহই জানেন।
- জানতে আসছিল তার হবু বউ মা কতটা চিনা বুদ্ধির টাইটানিক জাহাজ।
- হুর। কিসের হবু বউ? ঐ পোলারে বিয়ে করা আর জেনেশুনে পাহাড় থেকে ঝাঁপ দেওয়া একই জিনিস।
- তুমি তিনজনের যে হাল করসো।
- তিনজন কোত্থেকে আসলো?
- এই যে মাজা ভেঙে বিছানায় শোয়াই দিলি।
- এটা তো এক্সিডেন্ট। তাও ভালো হইসে। কান পাতার শাস্তি। করবে না বউমা? করুক। বুঝবে মজা। আর বাকি দুজন তো ওদের অপরাধের শাস্তি পাইসে। বেশ হইসে।
- হায়রে! এখন কি অবস্থা কে জানে!
- বন্ধু অলরেডি কালকে হাফ সেঞ্চুরি করে ফেলসিলো ওয়াশরুমে যাওয়ার। পরে টনে টনে স্যালাইন খাওয়াই হুঁশ আসছে।
- এমন খারাপ অবস্থা! তাহলে আকাশ ভাইয়ের কি অবস্থা!
- আমি কেমনে জানি। বাসায় নাই। তালা দেখসি। সর তো। আমি ঘুমাবো। কি যে ঘুম পাইতেসে। পরে ডাক দিস দরকার হইলে।
আমি বিছানায় ল্যাটকাই (শুয়ে) গেলাম। আরাম কইরা সকালে না ঘুমাইলে সারাদিন ঘুমে পাগল হয়ে পাবনা যামু।
কথার কিচিরমিচিরে ঘুমটা ভাইঙা গেল। তাকাই দেখি মানুষে গিজগিজ করতেসে রুমের মধ্যে। পাশে সাহেদাও মরার মতো ঘুমাইতেসে। আমি গুতাই গুতাই কইলাম, ওই বেডি, উঠ। বিয়া তোর আর তুই পড়ি পড়ি ঘুমাস।
- ছোঁয়া আরেকটু।
ওর ফোন বাজতেই কইলাম, ওই আয়ান ভাই কল দিসে। সে লাফাই উইঠা বলল, ফোন কই? ফোনটা ঠ্যাংয়ের তলে বাজতেসে৷ সে খুঁইজ্যা নিয়া কইলো, ধুর, আর সময় পাইলো না সিম কম্পানির লোকগুলা।
- একেবারে ঠিক টাইমে ফোন দিসে। যা ফ্রেশ হয়ে নে।
- আর তুই আরো ঘুমা।
আমি দাঁত কেলাইলাম। ঘুম কি আর সে যাইতে দিবে? সে যাওয়ার আগে আমারে ঠিকই টাইনা উঠাইলো। আমি হামি দিতে দিতে দেখলাম কত মানুষ! বাচ্চা কাচ্চা সব এদিক ওদিক ছুটতেসে, খেলতেসে। ফোনটা দেখে বেকুব হই গেলাম। সাড়ে দশটা বাজে! ফ্রেশ হয়ে বের হইতেই পেটটা ষাঁড়ের মতো ডাক দিলো। খুদা লাগসে। খাবারের সন্ধানে রান্নাঘরে যেতেই আন্টি বলল, উঠেছো? সাহেদা উঠেছে?
- জ্বি আন্টি।
- ধরো এগুলা খেয়ে নাও দুজনে।
আমারে চা বিস্কিট ধরাই দিয়া আবার কাজে লাইগা গেলেন। আমিও ভালো মেয়ের মতো চইলা আসলাম। সাহেদারে ডাইকা বসতে বসতে কইলাম, মানুষে তো এখনই গিজগিজ করতেসে৷ বাকিরা আসলে কই বসাবে? ও বিস্কিট চুবাইতে চুবাইতে কইলো, ছাদে স্টেজ করবে।
- বেয়ে বেয়ে পাঁচ তলা উঠবো!?
- কি করা? ছাদে করলেই সুবিধা হবে। একপাশে স্টেজ অন্য পাশে খাবারের আয়োজন।
- হুম। বুঝলাম।
আমি তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করতেই জিগাইলো, কই যাস? আমি কইলাম, তোর স্টেজ দেখতে যাই। সে কিছু বলার আগেই কয়েকজন আত্মীয় আইসা ওর লগে গল্প জুইড়া দিলো। আমি রুম থেকে বের হইয়া কাপ পিরিচ রাইখা ছাদের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়া দিলাম।
ছাদে কাজ চলছে। বাঁশ লাগানো হইতেসে এক পাশে। আরেক পাশে স্টেজ সাজানো শুরু হই গেসে। কাপড় দিয়ে স্টেজ বানাই ফেলসে। এখনো অনেক কাজ বাকি। আঙ্কেল তদারকি করতেসেন। আমি এক চক্কর দিয়া নিচে চইলা আসলাম। সোজা বাসায়৷ এখন সাহেদার আত্মীয়রা আসবে। ব্যস্ত থাকবে। সন্ধ্যার দিকে সাইজা যামু নে। কলিংবেল টিপতেই রাতুল দরজা খুলল। তারে দেইখা ঢোক গিললাম। সাবধানে এক পাশ কইরা ঢুইকা রুমে চইলা গেলাম। আম্মার সকালে ডিউটি, তাই সে সকাল সকাল চইলা যাওয়ার কথা। আব্বাও কাজে গেসে গা। ঝিলিক রান্নাঘরে খুটখাট করতেসে। আমি চুপচাপ বিছানার এক কোণায় বইসা আছি। খিদা লাগসে আবার খুব।
বিয়ে বাড়িতে সবাই ব্যস্ত। বলতে তো পারি না আমারে খাওন দেন। খিদায় আমার পেট ব্ল্যাকহোলে পরিণত হইয়া গেসে। এখন যা সামনে পামু তাই গিইলা ফেলমু। বাসায় হাঁটাহাঁটি করতেও ভয় লাগতেসে। কখন বন্ধু ঘপাৎ কইরা টুটি চাইপা ধরে বলে, আমারে জোলাপ খাওয়াইসো ক্যান!? আমি এসব ভাবতেসি এদিকে বসার ঘর থেকে টম এন্ড জেরির শব্দ আসতেসে। ঝিলিক টিভি ছাড়সে। আমিও গিয়া খাবার নিয়া বসলাম। পাশের সোফায় রাতুল বসা। আমি নিঃশব্দে খাবার গিলতেসি আর মনে হইতেসে সে আমার দিকে তাকাই আছে। আমার খাওয়ার মাঝে সে দুইবার ওয়াশরুম গেল৷ তার মানে এখনো এফেক্ট যায় নাই!
আমি খাওয়া দাওয়া শেষ কইরা রুমে ঢুইকা বিশাল ঢেকুর দিলাম। যাক এতক্ষণে পেটটা শান্তি হইসে। আমি পিছন ফিইরা দরজা মারবো এমন সময় দেখি পাহাড়ের মতো রাতুল আমার পিছনে দাঁড়াই আছে। আমি মেকি হাসি দিয়া কইলাম, কিছু বলবে?
- কাল হালুয়ায় কি ছিল?
- কই কি ছিল?
- বাটির হালুয়ায় কি ছিল?
- যাই থাকুক তুমি চুরি করে খেয়েছো কেন?
- খেয়েছি বেশ করেছি। বাসার মানুষকে না দিয়ে বাইরের মানুষকে কেন দেবে?
- আমি তো সবার জন্যই বানিয়েছিলাম। ফাঁকে তুমি ওগুলো খেয়ে অসুস্থ হলে।
- কি ছিল বাটির গুলোয় যে কেবল আমিই অসুস্থ হলাম!?
- সেটা তোমার শাস্তি। চুরি করেছো কেন? এখন যাও তো। আমার কাজ আছে। রেডি হতে হবে।
আমি তারে ঠেইলা দরজা লাগাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। বেশ হইসে অসুস্থ হইসো। খাইবা আর অন্যের জিনিস?
আমি মনের আনন্দে আলমারি খুইলা বসলাম। কিছুতেই কিছু পছন্দ হয় না। একটা একটা কইরা শাড়ি খুইলা দেখতে লাগলাম৷ একটাও মানানসই মনে হইতেসে না। মনে মনে আফসোস করতেসি ঐ লেহেঙ্গাটার জন্য। কি যে সুন্দর ছিল! আমি শাড়ি দিয়া পুরা বিছানার বারোটা বাজাই দিলাম। দুই ঘন্টা পরে ঝিলিক দরজা নক করলো। আমি উঁকি মাইরা কইলাম, কি রে?
-তোমাকে খুঁজতেসে।
- কে?
- একটা লোক। পাসেল না কি যেন…
- পার্সেল হাবা। কি হয়েছে? পার্সেল এসেছে?
- হ্যাঁ।
আমি গিয়া দেখলাম এক ছোকড়া দাঁড়াই আছে। আমাকে একটা বর্গাকার বাক্স ধরাই দিয়া একটা কাগজে সাইন করতে বলল। আমি সাইন কইরা দরজা মারলাম। ঝিলিক উৎসাহিত হইয়া বলল, কি গো ছোঁয়াপু?
- খুললে তো জানবো৷ দেখি দাঁড়া।
রুমে আইসা দেখলাম পুরা বিছানা শাড়িতে ভর্তি কইরা রাখসি। এবার শাড়িগুলা গুছানো লাগবে। আমি আর ঝিলিক মিইলা গুছাই ফেললাম। তারপর বাক্সটা নিয়া বসলাম। উপরের প্যাকিং খুইলা বাক্সটা খুলতেই কয়েকটা বাক্স বের হইলো। বড়ো বাক্সটা খুইলা আমি খুশিতে আত্মহারা হই গেলাম। সেই সাদা লেহেঙ্গাটা। তার উপর একটা চিরকুট। সেখানে লেখা, তোমাকে দেখার অপেক্ষায় থাকবো আগের মতো। পরের বাক্সটা ঝিলিক খুলল। একটা চকার সেট। সাদা পাথরের সুক্ষ্ম নকশা করা। তার সাথে হাতের চুড়ি আর টিকলি। সেখানেও একটা চিরকুট। সে কইলো, ছোঁয়াপু দেখো একখান কাগজ। আমি চিরকুটটা নিলাম। লেখা, তোমাকে এটায় দারুণ মানাবে। আরেকটা বাক্সে একটা রজনীগন্ধার থোকা আর তিনটা হলুদ গোলাপ। চিরকুটে লেখা, ভালোবাসি ভালোবাসি শুধু যে তাকে, ভালোবেসে ভালোবাসায় বেঁধে যে রাখে। ভালোবাসি।
আমি চিরকুটটা নিয়া বইসা আছি। ঝিলিক বলল, কি লেখা গো ছোঁয়াপু? আমি চিরকুটটা লুকাই কইলাম তেমন কিছু না।
- কে দিসে?
- আমার একজন পরিচিত। ঝিল, যা তৈরী হয়ে নে। আমাকে হতে দে।
- এত তাড়াতাড়ি!
- আরে, ঠিক কর কোনটা পরবি। যা যা…
আমি ওরে বাইর কইরা দিলাম। তারপর জিনিসগুলা আবার দেখতে লাগলাম৷ কে হইতে পারে!? মাথায় আসতেসে না। বন্ধু? না, সে কেমনে হবে? সে তো জানেই না আমি এটা পছন্দ করসি। কে জানে, কে জানে!? পর্ষী ছাড়া তো আর কেউ জানে বলে মনে হয় না। তাহলে কি পর্ষীর কাজ! কিন্তু এত ছোট পুচকি কি করে এত কিছু করবে। আর চিরকুটগুলা দেখে তো মনে হচ্ছে অন্য কেউ। কে হইতে পারে? ধুর।
সাহেদা চিন্তার মাঝে ফোন দিল। আমি রিসিভ করতেই কইলো, কি রে? সেই যে গেলি আসার নাম নাই। আসিস না কেন? আমি কইলাম, সন্ধ্যায় আসমু রেডি হয়ে।
- না তুই এখুনি আয়৷
- কিন্তু …
- কোনো কথা নাই। এখন আসবি মানে। এখুনি।
- আচ্ছা আচ্ছা। আসছি।
সে ফোনটা কাইটা দিল। মাইয়াটা বিয়ার আগেও শান্তি দিল না গো। আমি সব গুছাই বাক্সটা নিয়া রওনা দিলাম উপরে। এত মানুষের মাঝে বাক্স নিয়া কোনোমতে আস্তো ওর রুমে পৌঁছাইলাম। ও আমারে কইলো, এটা কি? আমি কানে ফিসফিস কইরা কইলাম, সিক্রেট।আমার কথা শুইনা ও সবাইরে বের কইরা দিয়া দরজা মাইরা বলল, এবার বল কি। আমি সব খুইলা দেখিয়ে সব কইয়া বললাম, কে হতে পারে বলতো?
- তোর জামাই।
চলবে…
আমি সব খুইলা দেখিয়ে সব কইয়া বললাম, কে হতে পারে বলতো?
- তোর জামাই।
- এ্যাঁহ… আমার জামাই আসবে কোথা থেকে?
সাহেদা গোয়েন্দাদের মতো রহস্য কইরা কইলো, আছে মনা, তুমি তো জানো না। এখন এটা পরে নাও। একটু পরে সাজানোর লোক আসবে। আমি গ্লাসে পানি নিয়া কইলাম, তো মুই কি করবো? তারা তো তোকে সাজাবে।
- আগে তোকে সাজাই নিমু তারপর আমি।
- আমি কি বউ নাকি? পার্লারের লোক আমাকে সাজাবে কেন? টাকা কে দিবে?
- তোর জামাই৷ এখন যা তো। লেহেঙ্গাটা পরে নে। সন্ধ্যা হতে বেশি দেরি নেই।
আমারে জোর কইরা ওয়াশরুমে পাঠাই দিলো। বের হইয়া দেখি সাজানোর লোক চইলা আসছে। সাহেদা আমারে বসাই দিয়া বলল, ওকে সাজিয়ে দিন আগে। ব্যাস, আমার সাজগোজ শুরু। তারা আমাকে হালকা মেকআপ করিয়ে দিলো। চোখে সাদা আর সোনালি আইশেডো; ঠোঁটে খয়রি লিপস্টিক। কাঁধ পর্যন্ত চুলগুলো খোলা। তাতে একপাশে তিনটা হলুদ গোলাপ। গয়না পরিয়ে দেওয়ার পর এক হাতে চুড়ি আর অন্য হাতে রজনীগন্ধার থোকাটা পরলাম। আমার সাজ কমপ্লিট। সাহেদা আমাকে ওর দিকে ফিরিয়ে বলল, তোকে লেহেঙ্গা আর গয়নায় দারুণ মানিয়েছে রে। তোর জামাইর চয়েস আছে বলতে হবে। আমি বেশ বিরক্ত হয়ে বললাম, কি রে বোইন? বিয়েই হইলো না জামাই জামাই করছিস কেন? তার মানে তুই জানিস কে দিয়েছে। সাহেদা তাড়াতাড়ি আমাকে উঠিয়ে দিয়ে বলল, আরে আমার লেট হয়ে যাচ্ছে না? সন্ধ্যা হয়ে গেল। দিন, আপনারা এবার কনেকে সাজিয়ে দিন। বলেই চোখ মুখ বন্ধ করে বোবার মতো বইসা রইলো। বুঝলাম বিয়েটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওরে বাঘে আনা যাইবো না। আমি বিছানায় বইসা বইসা ওর সাজ দেখতে লাগলাম।
আমি সাহেদার সাথে রুম থেকে বের হইলাম। স্টেজে নিয়া গেলাম ওরে সবার ঠেলাঠেলির মধ্যে। ওরে বসাইয়া দশ মিনিট যাইতে না যাইতেই দেখি আমার পেছনে চাচি নেংচাইতে নেংচাইতে কোথা থেকে আসলো। আমি একটা হাসি দিতেই সে লাল লিবিষ্টিকের এমন হাসি দিলেন আমার এক মুহুর্তের জন্য মনে হইসিলো তার রূপে আমি বেহুশ হই যামু। যাহোক আমি ভাবসিলাম এখানেই শেষ। কিন্তু তিনি আমার বাম হাত চাইপা ধইরা চেয়ারের দিকে নিয়ে গেলেন বসার জন্য৷ আমার মনে হইলো আমার হাতের আজই সলীল সমাধি হয়ে যাবে। সে আমাকে একটা চেয়ারে বসাইয়া সে নিজেও বসতে গেল। চেয়ারটা কড়কড় কইরা উঠলো। আমি ভয়ে ভয়ে ছিলাম কখন চেয়ারটা ভাঙে।
- ছোঁয়া ওএমজি, কি অবস্থা তোমার?
- জ্বি ভালো। আপনার?
- ওএমজি, আমি তো সব সময় হট এন্ড চিল মুডে থাকি।
হট শুইনাই কাশি আসলো আমার। সে আমার পিঠে চাপড় দিতে দিতে বলল, ওএমজি, কাশছো কেন? তার চাপড়ে আমার মনে হইলো আমার পাজরের সব হাড় বুঝি মিহি দানা হই যাবে। তার সাথে সে নড়তেই চেয়ারটা যেভাবে কড়কড় করতেসে। আমি কোনোমতে কাশিটা থামালাম নইলে রুহ নিয়ে বাসায় ফিরতে পারব না। কাশি থামলেও তার পিঠ চাপড়ানো থামলো না। আমি কইলাম, আন্টি আমি একটু বাসা থেকে আসছি। আমি উঠতেই চাচি হাত ধইরা কইলো, ওএমজি, শুনো শুনো। একটা হেল্প করে দাও।
- কি আন্টি?
- আমার চশমাটা সাহেদার রুমে ওএমজি। একটু এনে দাও তো।
- আচ্ছা।
আমি যাওয়ার সময় পিছন ফিইরা দেখলাম চাচি কার সাথে ফোনে কথা বলতেসে। সিঁড়ি দিয়া নামতে নামতে কইলাম, টমেটো আবার চশমা পরে কবে থেকে! আমি সাহেদার রুমের সামনে আইসা দেখি রুম অন্ধকার। ঢুকতে যাচ্ছিলাম এ সময় রাতুল হাত টাইনা একপাশে নিয়া আসলো। সে আমার দিকে কেমন করে তাকাই আছে। আমার অস্বস্তি লাগতেসে। কতক্ষণ তাকাই থেকে কইলো, তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে ছোঁয়া।
- থ্যাংক ইউ।
- কখন এই লেহেঙ্গা কিনলে? দেখিনি তো।
- আমার কাজ আছে।
- এড়িয়ে যাচ্ছো?
- আন্টি আমার জন্য অপেক্ষা করছেন উপরে। আমাকে তার চশমা নিয়ে যেতে হবে।
- কোথায় চশমা? আমি এনে দিচ্ছি।
- সাহেদার রুমে।
রাতুল সাহেদার রুমে ঢুকতেই সাথে সাথে দরজা বন্ধ হইয়া গেল। চশমা আনতে দরজা বন্ধ থাকা লাগে নাকি! আমি কান পাততেই শুনলাম কে যেন বলতেসে, হোমা! থুমি হ্যাতো লম্ভা এন্ড শখতো খখন হোলে ছোঁয়া!? শুইনাই বুঝতে পারলাম আলুটার গলা। আমার কাহিনী বুঝতে একমুহূর্ত দেরি হইলো না। আজকে রাতুল না থাকলে আমার ইজ্জতের ফালুদা হইতো। আমার কান পাতলাম। কয়েক মুহুর্ত নীরবতা আর তারপর কেবল ডিসুম ডুসুম সাউন্ড আর "আ", " মমি" এগুলাই শুনতে পাইলাম। ভেতরে আলুর ভর্তা তৈরী হইতেসে। বাইরে আসলে বোঝা যাবে রাতুল কেমন আলু ভর্তা বানায়। দশমিনিট পর রাতুল বেরিয়ে আসলো। তার পাঞ্জাবি কয়েক জায়গায় ছিঁড়ে গেছে। গালের একপাশ লাল হই আছে। মেবি খামচি মেরেছে। আমাকে দেখে আমার হাত ধইরা একটানে বাসায় নিয়া আসলো। সোফায় বসিয়ে বলল, এখানে চুপ করে বসে থাকো। আমি চেঞ্জ করে আমি। আমি মাথা নাড়লাম। রাতুল এখন রাগে বোম হয়ে আছে। বুঝা যাচ্ছে আলু ভর্তার বেশ ভালোভাবেই বানিয়ে আসছে।
আমি বইসা আছি আর মনে হইলো উপরে শোরগোল চলতেসে। আমি ভয় পাচ্ছি সাহেদার জন্য। আজকে ওর গায়ে হলুদ আর এ রকম বিচ্ছিরি একটা ব্যাপার ঘটলো! রাতুল চেঞ্জ হইয়া বের হইলো। একটা সাদা শার্ট পড়সে আর জিন্স প্যান্ট। বেচারা শখ কইরা নীল পাঞ্জাবি পড়সিলো সেটার অবস্থা খারাপ হই গেল। সে আমারে নিয়া উপরে আসতেই দেখি আলু ভর্তা সোফায়। দুই গাল রসগোল্লা ভর্তি। কপালেও আছে একটা। বাকি আর কোথায় কোথায় কি হইসে তা জানি না। তবে পাঞ্জাবির অবস্থা সেই লেভেলের খারাপ। সবাই ঘিরে দাঁড়াই আছে আর মাঝে টমেটো সুন্দরী তার নিত্য করতেসে। সাহেদার আম্মু একব্যাগ বরফ এনে ইয়োর মুখে লাগাইতে লাগল। তার মুখেও দুশ্চিন্তার ছাপ। মেয়ের বিয়েতে এমন কান্ড। আঙ্কেল মেবি উপরে।
আমারে দেইখাই চাচি দাঁত মুখ খিঁচিয়ে তেড়ে আসতে আসতে বললেন, ওএমজি, তোর জন্য এ অবস্থা আমার ছেলের ব্লা* বি*। আমার কাছে আসতেই রাতুল আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।
- প্ল্যানটা কার ছিল?
চাচি ওকে দেখে একটু থতমত হইয়া গেল। তারপর আবার চিৎকার কইরা কইলো, ওএমজি, কিসের প্ল্যান? ঐ মেয়ে আমার ছেলের এ অবস্থা করেছে। ঐ মেয়েকে আমি দেখে নেব। বইলা আমার দিকে হাত বাড়াইতে লাগলে রাতুল তার হাত চেপে ধইরা বলল, অন্ধকার রুমে নিজের ছেলেকে রেখে ওখানে ছোঁয়াকে পাঠানোর প্ল্যানটা কার ছিল? চাচি একটু ঘাবড়াই গেল। চাচা এসে বলল, আরে বাবা তুমি ভুল ভাবছো। এসব…
রাতুল ইয়োর দিকে তাকাতেই ইয়ো বেচারা কাঁদো কাঁদো হইয়া বলল, মমি হামাকে ভলেছিলো রুমে লাইট অফ খরে থাকটে। ছোঁয়া হেলে ওখে ঝড়িয়ে ধরটে হার……
- আর কি?
- আর খিস খরতে।
চাচি চিৎকার করে বলল, ওএমজি, তোকে এসব কে বলতে বলেছে? এই ছেলে? এ…। রাতুল আরো জোরে তার হাত চাইপা ধরল। আমি দেখলাম, ময়দার ডোতে চাপ দিলে যেমন হাত ডুবে যায় তেমনি চাচির হাতের মাংসের মধ্যে রাতুলের হাত ডুইবা গেল। ব্যাথায় চাচি কথা বলা বন্ধ হই গেল। বেচারি অনেক ব্যাথা পাচ্ছে। আমি রাতুলকে অনেক বার ইশারা করার পর ও হাতটা ছাইড়া দিল। দেখলাম হাতে লাল পাঁচ আঙ্গুল স্পষ্ট বইসা গেসে। রাতুল সাহেদার আম্মুকে বলল, আজকে আমি না থাকলে ছোঁয়ার কি হতো বুঝতে পারছেন। এখন সিদ্ধান্ত আপনাদের। আন্টি ইতস্তত হয়ে বলল, আমি কি বলব বাবা, এমন যে হবে আমি ভাবতেই পারছি না। সাহেদার আব্বুর সাথে আমি এ ব্যাপারে কথা বলব। রাতুল নম্রভাবে সম্মতি জানিয়ে আমাকে নিয়া ছাদে চইলা আসলো।
আমি মলিন মুখে বইসা আছি। সাহেদা স্টেজে। রাতুলকে দেখলাম আঙ্কেলের সাথে কথা বলতে বলতে নিচে বাসায় চইলা গেল। সাহেদার আমার দিকে নজর পড়তেই স্টেজ থেকে নাইমা আসলো।
- কি রে? এভাবে বসে আছিস?
- ভালো লাগছে না।
- কেন? কিছু হয়েছে?
- না, তেমন কিছু না। তুই এখানে কি করিস? স্টেজে বোস।
- হুম। জানিস ইরি বার বার তোর গাজরের কথা জিজ্ঞেস করছিল।
- তাদের আর কি কাজ? ছেলে ঘুরছে আমার পেছনে আর মেয়ে ঘুরছে আমার গাজরের পেছনে।
- তোর কি হয়েছে বলতো? অনেকক্ষণ তোকে দেখিনি।
- বাসায় গিয়েছিলাম। যা না স্টেজে। তোর গায়ে হলুদ চলছে।
- তুই আয় আমার সাথে স্টেজে।
সাহেদা আমারে জোর কইরা স্টেজে নিয়া গেল। ওর সাথে থেকে মুড ভালো হয়ে গেল। কিন্তু আশেপাশে সবাই কি নিয়ে যেন ফিসফিস করতেসে। নিচে কি হইলো কে জানে।
সাহেদার জোরাজুরিতে আমারেও মেহেদী পরা লাগলো। আমার মনোযোগ অন্যদিকে। মেহেদীর লাগানোর মেয়েটা কিছু জিজ্ঞেস করছিলো আমাকে। আমার তো মন নাই তাই শুনি নাই। সাহেদা কি যেন বলে দিল। সে আবার মেহেদী লাগানো শুরু করল। মেহেদী পরানো শেষ হইলো বারোটার দিকে। ব্যাস হলুদ শেষ।
সাহেদারে নিয়া বাসায় আসতেই আবহাওয়া কেমন কেমন জানি লাগল। সাহেদা আমারে জিজ্ঞেস করল, এই চাচা, চাচি, ইয়ো, ইরি কাউকে দেখছি না যে? জানিস কিছু?
- না।
- ইরি তো সারাক্ষণ স্টেজের চারপাশে ঘুরঘুর করছিলো। গেল কোথায় তারা? আম্মু?
আন্টি কাজ করতেসিলো রান্নাঘরে। সাহেদার ডাকে তাকাইলো। চাচিদের কথা জিজ্ঞেস করতেই বললেন তারা নাকি চলে গেছে। সাহেদা জিজ্ঞেস করল, এমন গায়ে হলুদের ভেতর হুট করে চলে গেল কেন? আন্টি সবটা খুলে বলতেই সাহেদা শান্ত কন্ঠে বলল, যাওয়ার সময় আমাকে একটা ডাক দিতা। ঐ ইয়োর আমি মুন্ডু চিবিয়ে খেতাম। তুই আমাকে বলিসনি কেন?
- তোর হলুদের বারোটা বাজানোর শখ ছিল না তাই।
- ওলে আমার বান্ধবী। আর আসুক আমাদের বাসায়। তখন মুন্ডু না হাড়গোড়সহ সব চিবিয়ে খাবো। ফালতু লোক।
- ওকে ওকে। এখন চল ঘুমাবি।
সাহেদারে রুমে নিয়া গেলাম। মানুষ তো উপরে নিচে ভরা। দুইজনেই চিপা চাপায় গিয়া শরীরটা এলিয়ে দিলাম।
চলবে…
সাহেদারে রুমে নিয়া গেলাম। মানুষ তো উপরে নিচে ভরা। দুইজনেই চিপা চাপায় গিয়া শরীরটা এলিয়ে দিলাম।
.
.
.
.
রাত দুটো ছুঁই ছুঁই। ঘুমে আমি বেহুশ। এমন সময় সাহেদার গুতায় জাইগা উঠলাম। আমি চোখ কচলাতে কচলাতে কইলাম, কি হইসে? ও ফিসফিস কইরা কইলো, নিচে চল।
- এত রাতে নিচে কেন?
- ও আসবে?
- ওটা কে? ও……. ঐ ও। তা এত রাতে কেন?
- ধুর এত কথা বলতে পারবো না। সে আসছে। তুই আমার সাথে নিচে চল।
- কালকে বিয়ে করে তো একেবারেই চলে যাবি৷ এখন এই রাত বিরাতে দেখা করার কি দরকার পড়ল?
সাহেদা কিছু না বইলা একটানে আমারে নিয়া বাসার বাইরে আসলো। হলুদের অনুষ্ঠান শেষে এমনিতেও অনেক ক্লান্ত ছিলাম। এর মধ্যে কই থেকে যে এত শক্তি আসলো মেয়েটার আল্লাহ জানে! বাসার নিচে আইসা শুনলাম জামাই বাবু নাকি বাইকে কইরা আসবে দেখা করতে। আহা! কি পিরিতই না হয়ে গেছে ওদের মধ্যে। ক'দিন পরে তো ভার্সিটি খুলবে। তখনও দেখমু ওদের পিরিতের ঠ্যালায় আমি পরীক্ষায় ব্যাকলগ খামু।
আমরা নিচে দাঁড়াই আছি। আমি কিছুক্ষণ পর পর দীর্ঘশ্বাস ফালাইতেসি। সাহেদা জিজ্ঞেস করল, তোর জামাইরে মিস করছিস নাকি? আমি দাঁত কেলাইলাম। সোনা পাইসি তোমারে। জিগাইলাম, সাহেদা। ও রাস্তার এদিক ওদিকে তাকাইতে তাকাইতে বলল, বল।
- আমার জামাই কে রে?
- কে জানিস না?
- না। কার কথা বলিস?
- কেন? আকাশ ভাই।
- ধুর মজা করিস ক্যান?
- মজা করলাম কই? তুই তো ওরে বিয়ে করার জন্য পাগল।
- হুহ। করমু না ওরে বিয়ে। পঁচা গাজর।
- দেখা যাবে।
আমি কিছু বলার আগেই দুইজনরে দেখা গেল বাইকে করে আসতেসে। দেখেই আমি টাসকি খাইয়া আরেকটুর জন্য বাইকের তলে পড়ি নাই। আমার পঁচা গাজরটাও আসছে জামাইর সাথে। একটা সাদা পাঞ্জাবি পরা। তাতে সোনালি কাজ করা। চোখের সোনালি ফ্রেমের চশমা। সিল্কি চুলগুলা বাতাসে নড়তেসিলো। যেকেউ দেখলে মনে করবে আমরা দুইজন কাপল ড্রেস পড়সি। উফ! ভেবেই আমার সাগরে ডুব দিতে মন চাইতেসে। এত লজ্জা লাগতেসে যে মনে হয় সাগরও নীল থেকে লাল রঙ হই যাবে।
সাহেদা আয়ান ভাইয়ের সাথে কথা বলার জন্য এক সাইডে চইলা গেল। আকাশ আমার পাশে আইসা দাঁড়াইলো। সে ওদের দিকে তাকাই আছে আর আমি নিচের দিকে তাকাই পায়ের নখ দিয়ে জুতা খুটতেসি। হঠাৎ সে বলল, খুব সুন্দর লাগছে। শুনতেই আমার কান দিয়া ধোঁয়া বাইর হইতে লাগল।
- থ্যাংকস।
- হুম। দুইজনকে আসলেই অনেক মানিয়েছে।
আমি ওর দিকে তাকাইয়া বললাম, দুই জন? আপনি কাদের কথা বলছিলেন? সে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আয়ান আর সাহেদা। তুমি কার কথা ভাবছিলে? আমি ভাবসিলাম আমারে বলসিলো ভালো লাগতেসে। এখন দেখি……হুহ……কথাই কমু না। আমি চুপ কইরা রইলাম। হঠাৎ মনে হইলো একটু জিজ্ঞেস করা দরকার ঠিক আছে কিনা। রাতুলের যে অবস্থা দেখসিলাম। আমি ইতস্তত কইরা কইলাম, পেট ভালো হয়েছে?
- হুম।
- সত্যিই ঠিক আছেন?
- হ্যাঁ, কেন বলো তো? তুমি কি জানো নাকি আমার অনেক পেট খারাপ হবে?
- না এমনিই জিজ্ঞেস করলাম আর কি।
- আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তুমি জানতে। ঐ গাজরের হালুয়ায় কিছু মিশিয়েছিলে নাকি!? হু?
- না মানে আমি…
জিজ্ঞেস করে দেখি বিপদে পড়লাম৷ ধুর কেন যে সবসময় নিজের ঠ্যাংয়ে নিজে কুড়ালটা মারি! আমি কি জবাব দিমু সেটা ভাবতে ভাবতে হাতের নখ কাটতেসি। সে হঠাৎ বলল, হাতে মেহেদী পরেছো? দেখি। আকাশ আমার দুইহাত ধরে নিজের দিকে বাড়াইলো। আমি তো শুধু তাকেই দেখতেসি। আকাশ আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আমাকে ভালোবাসো?
আমি ওর কথা চমকে উঠলাম। তোতলাইতে তোতলাইতে বললাম, আআআমি? ককই না…তো। সে আমার দুই হাত দেখিয়ে বলল, আমার নাম লিখলে যে? আমি নিজের হাতের দিকে তাকাই দেখলাম আমার দুই হাত একসাথে জোড়া লাগালে আকাশ নামটা লেখা। এটা কখন লিখলো! আমি দেইখা চোরের মতো পালাইনোর পথ খুঁজতে লাগলাম। ও আমার দিকে তাকাই আছে। আমি তার দিকে তাকাইতে পারতেসি না। সে আরো কিছু বলার আগেই হঠাৎ পিছন ফিইরা দৌঁড় মারলাম। ওর একবার ছোঁয়া ডাক শুনসিলাম। কিন্তু কে শোনে কার কথা। এক দৌঁড়ে বাসায়।
.
.
.
.
সকালে সাহেদার ডাকে ঘুম ভাঙল। আমি চোখ কচলাইতে কচলাইতে উঠতেই সে রাগ কইরা কইলো, ছোঁয়া কালকে আমাকে রেখে চলে এসেছিলি কেন? আমি হাই তুলতে তুলতে কইলাম, তুমি পিরিত করছিলে। আমার অনেক ঘুম পাচ্ছিলো তাই তোদের বিরক্ত না করে চলে আসলাম।
- ঢং। এখন উঠো। এত গিজগিজের মধ্যে কেমনে যে মরার মতো ঘুমাস! ও হ্যাঁ, রাতুল ভাই এসেছিল তোর খোঁজে। তুই তো পড়ে পড়ে ঘুমাস। তাই আবার চলে গেছে।
- আচ্ছা।
- এখন তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নে তো। আমাকে নিয়ে পার্লারে যাবি।
- তা তো যাবো। এই কাহিনী কার দ্বারা সম্পন্ন হইলো আমাকে একটু তার নামটা বলতো।
আমি নিজের দুই হাত দেখাইলাম। সেখানে টকটকে খয়রি রঙে আকাশের নামটা ফুটে আছে। সাহেদা চোর চোর ভাব কইরা কইলো, ওমা ছোঁয়া! তোর হাতের রঙটা কি গাঢ় হয়েছে!? আর আমারটা কত হালকা হয়েছে।
- তোরটা আর আমারটা তো সেইমই।
- ধুর তোর ঘুম চোখে এমন মনে হচ্ছে। যা যা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নে।
সাহেদা বেটিটা আমারে জোর কইরা ওয়াশরুম পাঠাই দিলো। বের হয়ে দেখলাম সাহেদা সব গোছগাছ কইরা রেডি। আমারে কলা পাউরুটি ধরাই দিয়া বলল, চটপট খেয়ে নে। কি আর করা? পেটটারে ওগুলা খাওয়াই শান্তি করার পর পরই আমারে নিয়া সাহেদা পার্লারে দৌঁড় দিলো।
পার্লারের লোকেরা ওকে সাজাইতে বসছে। আমি দেখতেসি। সাহেদা এর ফাঁকে জিজ্ঞেস করল, কিরে, তুই সাজবি না?
- আমি কি সাজবো? তুই আমাকে পরার জন্য কিছু আনতে দিয়েছিস?
- এমা! আচ্ছা দাঁড়া। এখুনি ব্যবস্থা করছি।
সাহেদা কাকে একটা ফোন করে বলল, হ্যালো?… হুম একটা সমস্যা।… ছোঁয়ার শাড়ি আনতে ভুলে গেছি।… আচ্ছা, পুচকিকে দিয়ে পাঠিয়ে দিন।… আচ্ছা আচ্ছা। হ্যাঁ তৈরী হচ্ছি।…… হ্যাঁ হ্যাঁ পৌঁছে যাবো। ফোনটা রাখতে জিগাইলাম, এমন হ্যাঁ হ্যাঁ আচ্ছা আচ্ছা বলে কার সাথে কথা বললি? সে চোখ টিপে বলল, তোর জামাইর সাথে।
- ধুর, সারাক্ষণ জামাই জামাই করিস। বিয়া ঠিক হওয়ার পর থেকে জামাই ছাড়া আর কিচ্ছু মুখ দিয়ে বের হয় না।
- তোর বিশ্বাস হচ্ছে না? ফোন দিয়ে দেখাবো?
- না থাক। আমার শাড়ি আসলেই হলো।
একঘন্টা পর দরজায় নক হলো। দরজা খুলতেই কেউ একজন আমার উপর ঝাঁপাই পড়ল। আমি হতাশ ভাব কইরা সাহেদার দিকে তাকাইলাম। সে মিটি মিটি হাসতেসে। এদিকে পর্ষী 'আম্মু আম্মু' করতে করতে শেষ। এবার বুঝলাম ফোনের পুচকিটা কে ছিল। সে আমাকে একটা প্যাকেট ধরাই দিয়া বলল, আম্মু এটা তোমার। আমি প্যাকেট থেকে একটা শাড়ি বের করলাম। লাল কাঞ্জিভরম তসর সিল্কের একটা শাড়ি। সোনালি ফ্লোরাল কাজ করা। সোনালি পাড়ে লাল নকশা করা। দেখে খুব ভালো লাগলো। পর্ষী খুশিতে গদগদ হইয়া বলল, আম্মু যাও পইরা আসো। আব… মানে আমি কেমন পছন্দ করসি দেখতে হবে না? যাও যাও। পর্ষী এক প্রকার জোর কইরা ঠেলে পাঠাই দিল চেঞ্জ করার জন্য। পার্লারের লোকরা সুন্দর কইরা শাড়িটা পরাই দিল। এক ঘন্টায় আমার মেকআপও কমপ্লিট। পর্ষী পার্লারের লোকদের আরেকটা প্যাকেট ধরাই দিয়া বলল, এগুলা আম্মুকে পরিয়ে দাও। মহিলা কতগুলো গয়না বের করলো। দেখে বুঝলাম সোনার। আমি পর্ষীরে জিগাইলাম, এগুলো কার?
- তোমার। এখন তাড়াতাড়ি পরো।
- আমার মানে?
- উফ্! এত কথা বলো কেন আম্মু। পরো তো।
মহিলা আমাকে একটা চেইন চকার সেট পরালো। হাতে মোটা বালা। নাকে নথ। মাথায় টিকলি৷ বুঝলাম না আমার বিয়া না সাহেদার! পুরাই বউ বউ লাগতেসে সব মিলাই। আমি পার্লারের মহিলাকে বললাম, নথটা খুলে ফেলুন। পর্ষী কাঁদো কাঁদো হয়ে কইলো, আম্মু, সব পরো না হলে আমাকে খুব বকবে।
- কে বকবে?
- সেটা বলা যাবে না।
- না বললে আমিও পরবো না।
আমার কথায় সাথে সাথে পর্ষী ভ্যাঁ কইরা কাইন্দা দিল। আমি মানা করতেসি শুনতেসে না। সবাই তাকাই আছে আমাদের দিকে। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেইলা কইলাম, আচ্ছা আচ্ছা, সব পরবো। সাথে সাথে কান্না হাওয়া। চোখ মুইছা পিচ্চি শাঁকচুন্নিটা দাঁত কেলাইলো। মহিলা আমার খোলা চুলের দুইপাশে দুইটা কইরা লাল গোলাপ গুইজা দিল। আজ আমার বড়ো চুল নাই দেখে। থাকলে খোঁপা কইরা পুরো খোঁপায় গোলাপ গুইজা দিতাম। সাহেদার সাজ আমার আগে শেষ। আমারে দেইখা বলল, যাহ!
- কি?
- তুই আমার পাশে থাকলে আমার দিকে কেউ তাকাবেই না।
- ঢং।
পর্ষী আমারে জড়াই ধইরা বলল, আমার আম্মু বেস্ট আম্মু। সাহেদা ওর নাক টিপে দিয়া বলল, একদম ঠিক। আমি আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ছাইড়া মনে মনে কইলাম, এ মাইয়ার আম্মু ডাকটা বন্ধ করা গেল না।
.
.
.
.
আমরা কমিউনিটি সেন্টারে আড়াইটার দিকে পৌঁছাইলাম। আয়ানরা তিনটার দিকে চইলা আসলো। বরপক্ষে দেখলাম গাজরটাও আছে। হয়ত কলিগ হিসেবে আসছে। কিন্তু তার সাথে শিং মাছটা কেন আসলো বুঝলাম না। টকটকে লাল রঙের একটা লং স্কার্ট পরে আসছে আর সারাক্ষণ গাজরের সাথে চিপকাই আছে। কি বিরক্তি! আজকে সাহেদার বিয়ে দেখে কিছু কইলাম না। খাওয়া দাওয়ার পার্ট শেষ হইতে হইতে চারটা। এরপর আয়ান ভাইকে সবাই খুঁজতে লাগল বিয়ে পরানোর জন্য। সে কোনদিকে যেন হাওয়া হই গেল। গেলটা কই!
চলবে…
আয়ান ভাইকে সবাই খুঁজতে লাগল বিয়ে পড়ানোর জন্য। সে কোনদিকে যেন হাওয়া হই গেল। গেলটা কই!
আমিও খুঁজতেসি। হঠাৎ দেখি একটা রুমের ভেতর থেকে আয়ান আর আকাশের কথা কানে আসতেসে। নক দিতে যামু এমন সময় আয়ান বলল, তুই সব বলে দে ওকে।
- কি করে বলব! তুই তো সব জানিস। আমি ডক্টরের সাথে কথা বলেছিলাম। ওর ব্রেইনের ফ্রন্টাল লোব অনেক ড্যামেইজ হয়ে গিয়েছিল। এখন যদি চেষ্টা করি আরো বড় ক্ষতি হতে পারে।
- তুই তো ওকে নিজের কাছে নিয়ে আসতে পারিস।
- সেই পথটা বন্ধ করে দিয়েছে দুইজন মিলে। এত জঘন্য কাজ কি করে করতে পারল!? বাচ্চা মেয়েটার কথা ভাবলো না!
- এখন কি করবি?
- আমার কাছে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করব। এমনিতেও…
দরজা ভেজানো ছিল। আমি কান পাততে গিয়ে দরজাটা ক্যাঁচ ক্যাঁচ কইরা খুইলা গেল। আমি সটাং কইরা দাঁড়াই পড়লাম। দুইজনে আমার দিকে তাকাই আছে। আমি দাঁত দেখাইয়া কইলাম, সবাই আপনাকে খুঁজছে আয়ান স্যার। আয়ান তাড়াতাড়ি বলল, হ্যাঁ চলো। সে এক প্রকার চোরের মতো বাইর হয়ে গেল। আমিও আয়ানের পিছু নিসিলাম। হঠাৎ আকাশ আমারে টাইনা নিয়া দরজা বন্ধ কইরা দিল। আমি কাঁপা গলায় বললাম, আমাকে যেতে দিন।
- যদি না দেই?
- না দিলে কিন্তু শাস্তি দিবো।
- কি শাস্তি দেবে? আমার আরেক গালেও কামড়ে দেবে? তোমার যে কামড়! কচ্ছপের মতো। দেখো দাগটা এখনো আছে।
শুইনা আমার আপাদমস্তক লজ্জায় গরম হইয়া ধোঁয়া বের হইতে লাগল। সে আমার দিকে তাকাই আছে। ইচ্ছে করতেসে এখানেই গর্ত খুঁইড়া লুকাই পড়ি ইন্দুরের মতো। সে হঠাৎ দুই হাত দিয়ে ধরে আমার মুখ উঁচু করল। আমার চোখ গিয়া পড়ল তার চোখে। ওর চোখ পানিতে টলমল করতেসে। কইলো, তোমার এই লাল মুখটা কত দিন দেখিনি! বইলাই আমার কপালে আলতো চুমু এঁকে বেরিয়ে গেল। কি হইলো!? কোনোকিছুরই মাথা মুন্ডু বুঝলাম না। তবে একটা জিনিস ঠিকই বুঝলাম। গাজরের চোখের পানি দেখে আমার ভেতরটা ধক কইরা উঠছিলো।
.
.
.
.
রুমে বইসা আছি। শাড়ি খুইলা ফ্রেশ হওয়ায় কি যে শান্তি লাগতেসে। সবকিছু সুন্দর করে তুইলা রাখসি। পর্ষী আসলেই দিয়ে দেবো। কার না কার জিনিস। বইসা বইসা ফোন গুতাইতেসি আর লালু মিয়া খাইতেসি এমন সময় রাতুল দরজায় নক কইরা বলল, আসবো?
- আসো।
- কি অবস্থা?
- শরীর ক্লান্ত লাগছে। তোমার পেট ঠিক আছে?
- হ্যাঁ।
দুইজনেই চুপ। আমি ফোন টিপতেসি। রাতুল হঠাৎ আমার পাশে এসে বইসা বলল, আজকে তুমি আর আকাশ ঐ রুমে কি করছিলে? আমি অবাক হওয়ার ভান কইরা কইলাম, কোকোন রুমে?
- কমিউনিটি সেন্টারের ঐ রুমটায়।
- ও, আয়ান স্যার ছিল তো আকাশের সাথে…
- আকাশ?
- মানে আকাশ ভাইয়ের সাথে।
- কিন্তু আমি যে দেখলাম আকাশ রুম থেকে বের হয়েছে তারপর তুমি বের হয়েছো।
- আয়ান স্যার চলে যাওয়ার পরই আমরা বের হয়েছি আর কি।
রাতুল কিছুক্ষণ চুপ থেকে কইলো, ছোঁয়া, রাতে খাবারের পর সবার সাথে কথা আছে। তুমিও থাকবে। বইলা চলে গেল। হঠাৎ সবার সাথে কি কথা!?
বিয়েতে কে কয় মণ আটা ময়দা মাখসে, কারে পেত্নীর আম্মা লাগতেসিলো এগুলা নিয়া আমি আর ঝিলিক খ্যাক খ্যাক করতেসি খাবার টেবিলে বইসা। হাসির ঠেলায় খাইতেও দেরি হইলো। খাওয়া শেষ হইতে হইতে এগারোটা। আমি তো ভুলেই গেসিলাম রাতুলের কথা। রুমের দিকে পা বাড়াইতেই সে আমারে আইনা সোফায় বসাইলো। আব্বু বসে বসে খবর দেখতেসে। আম্মুও আইসা বসল। ঝিলিক রান্নাঘরের কাজ শেষ কইরা আমার পাশে বইসা টিভি দেখতে লাগল। একটু পর রাতুল রুম থেকে আসতেই আব্বা টিভি বন্ধ কইরা বলল, বলো কি বলবে।
রাতুল কোনোরূপ ভণিতা না করেই কইলো, আমি আগামী শুক্রবার ছোঁয়াকে বিয়ে করতে চাই। রাতুলের কথা শুইনা আমি আকাশ থেকে পড়লাম। এটা কি কইলো! আব্বা কিছু বলার আগেই আমি দাঁড়াই গিয়া বললাম, এসব কি বলছো বন্ধু!?
- ছোঁয়া তুমি জানো আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর তোমাকে কখনো আমি অন্যের সাথে মিশতে দেখতে চাই না। আর আমি কেমন তা তুমি জানো। কোনো খারাপ কিছু কি আছে আমাকে রিজেক্ট করার মতো?
- আমি জানি তুমি অনেক ভালো। আমার অনেক কেয়ার করো। তাই বলে বিয়ে? আমি কখনো তোমাকে তেমন চোখে দেখিনি।
- তাহলে আমাকে কি চোখে দেখেছো তুমি?
- আমি তোমাকে বন্ধু হিসেবে পাশে চেয়েছি সব সময়…
- আর আকাশকে?
- ওর ব্যাপার আলাদা।
- কি করে আলাদা?
- আলাদা কারণ তুমি আমার মামাতো ভাই।
রাতুল হঠাৎ রেগে গিয়ে বলল, আমি তোমার মামাতো ভাই না। না তুমি আমার ফুফাতো বোন। আমি অবাক হয়ে বললাম, মানে!? রাতুল শান্ত হয়ে বলল, কিছু না। আমি তোমার অনুমতির জন্য এখানে ডাকিনি। শুধুমাত্র জানিয়ে দিলাম। আমার এবার মেজাজ খারাপ হলো।
- মানে কি? আম্মু? তুমি কিছু বলো।
- রাতুল ওর যদি……
- ফুফু, আশা করি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ এই বিয়েতে রাজি হবে। আমি আর কিছুই চাই না। কাল থেকেই বিয়ের সব কাজ শুরু হবে। ছোঁয়া, সাহেদা যেহেতু নেই। তোমার বিয়ের আগে পর্যন্ত বাইরে যাওয়া বন্ধ।
- আমাকে আটকে রেখে বিয়ে করবে জোর করে?
- দরকার হলে তাই। তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি যতটুকু যেতে হয় যাবো। এত বছর অপেক্ষা করেছি। আর ধৈর্য্য ধরতে পারবো না।
আমি আব্বু আম্মুর দিকে তাকাইলাম। হঠাৎ যেন বোবা হয়ে গেলেন তারা। কিসের কৃতজ্ঞতা কিসের কি? আমাকে যেন বোবা পুতুল পেয়েছে। আমি রেগে বইলা উঠলাম, আমি এই বিয়ে করবো না। বইলাই গিয়া রুমের দরজা মাইরা দিলাম।
.
.
.
.
বৌভাতটা কাইটা গেল। সাহেদাও আসলো আয়ান ভাইয়ের সাথে। সাহেদাকে সারাদিনে কিছু বলার সুযোগ পাই নাই। তাই ওদের বাসায় বইসা আছি বলার জন্য। ও ছাড়া আপাতত কাউকে বলার মতো নাই। কাকেই বা বলব? আব্বু আম্মু কেন এমন করতেসে বুঝতেসি না। তারাও রাতুলের কথা এত সহজে রাজি হইয়া গেল। রাতুলও কি যেন এড়াই গেল। আগে তো এমন ছিল না। বিদেশ হতে আসার পর তেকে আমারে যে রুপ দেখাইতেসে মনে হইতেসে আমারেই পাগল হইয়া পাবনা যাইতে হবে। সাহেদাটা এত ব্যস্ত! ঠিক করলাম আজকে সাহেদার বাসায় থাকমু। কিন্তু এখন তো ম্যাডামের জামাই আছে। আমার কাছে থাকবে কোন সুখে?
আমি সোফায় বসে ওদের ব্যস্ততা দেখতেসি। সাহেদার সাথে পর্ষীটাও চইলা আসছে। অন্য বাচ্চারা কি সুন্দর খেলতেসে। সেও খেলবে। তা না। আমার সাথে চিপকাই বসে আছে। কোনো জ্বালাতন করছে না। বরং বুড়া মানুষের মতো আমার পাশে বইসা খেলা দেখতেসে আর একটু পর পর ওদের কান্ড কারখানা দেখে হেসে কুটি কুটি হইতেসে। কতক্ষণ পর সাহেদা আইসা আমার পাশে বইসা একটা পেয়ারায় কামড় দিতে দিতে কইলো, কিরে? একদিনে এমন আমসি হয়ে গেছিস কেন? আমি পর্ষীরে বললাম, পর্ষী, তুমি ওদের সাথে গিয়ে খেলা করো। এখানে আমরা কথা বলব। সে অনিচ্ছার সত্ত্বেও উইঠা খেলতে গেল। ও চলে যেতেই আমি সাহেদার দিকে ফিরে কইলাম, আমার বিয়ে ঠিক হইসে। সাহেদা এক প্রকার শক খেয়ে বলল, কিহ!? আমার বিয়ে এখনো শেষ হলো না তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে মানে! কার সাথে? আমি মলিন মুখে বললাম, রাতুলের সাথে। ও বলেছে আগামী শুক্রবার আমাদের বিয়ে।
- বলেছে মানে? তুই কিছু বলিসনি?
- সে আমার অনুমতির অপেক্ষা রেখেছে নাকি? সে নাকি শুধু জানিয়েছে। আমি যদি বিয়ে না করি সে জোর করে বিয়ে করবে।
- এটা কি ধরণের কথা!? আঙ্কেল আন্টি কিছু বলেনি?
- না। তারাও কিসের জন্য যেন চুপচাপ রাজি হয়ে গেছে। আজকে সকালে এসেও আমাকে অনেক বুঝিয়েছে। আমি জানি রাতুল ভালো ছেলে। চাকরি করে বিদেশে। বিয়ে হলে আমাকেও নিয়ে যাবে। কিন্তু আমি তো… কিছুই ভালো লাগছে না।
- চিন্তা করিস না। আমি ব্যবস্থা করছি।
- তুই কি করবি?
- অনেক কিছু করার আছে। সময় হয়ে গেছে। আর দেরি করা ঠিক হবে না।
- কিসের সময়? সাহেদা সত্যি করে বলবি আমার চারপাশে কি হচ্ছে? মাঝে মধ্যে মনে হয় সবাই সব জানে কেবল আমিই যেন কিছু জানি না।
- জানবি। তুই চিন্তা করিস না। শুধু আমাদের উপর ভরসা রাখ।
- আমাদের মানে!? আর কে?
- দেখিস।
- কেন আমাকে সবাই এমন অন্ধকারে ফেলে রেখেছে? আমার কি নিজের ব্যাপারে জানার অধিকার নেই!?
আমি এক প্রকার রাগ কইরা চইলা আসলাম বাসায়। কলিংবেল টিপতেই রাতুল দরজা খুলল। সে কিছু বলতে চাচ্ছিল। তার আগেই আমি রুমে গিয়া দরজা মাইরা দিলাম।
রাতে কিছু খাইলাম না। আম্মু, আব্বু, রাতুল, ঝিলিক সবাই ডাকল। আমি কিছুতেই দরজা খুললাম না। শুধু চোখের পানি ফেললাম। মাথাটাও যন্ত্রণা করতেসে। একটা ব্যাথার আর একটা ঘুমের ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়লাম। কখন যে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেলাম টের পাইলাম না।
সকালে চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙল। বাইরে হঠাৎ চেঁচামেচি হচ্ছে কেন বুঝতেসি না। কান পেতে শুনার চেষ্টা করতেই বুকটা ধক কইরা উঠল। গাজর আসছে। তার সাথে রাতুলের কি নিয়ে যেন তর্ক হচ্ছে। আমি দরজা খুইলা রুম থেকে বের হতেই দুজনে আমার দিকে তাকালো।
চলবে…
গাজর আসছে। তার সাথে রাতুলের কি নিয়ে যেন তর্ক হচ্ছে। আমি দরজা খুইলা রুম থেকে বের হতেই দুজনে আমার দিকে তাকালো।
আমি তাদের দিকে তাকাই আছি। আকাশে গাল দুইটা টকটকে লাল। দেখেই বুঝা যাইতেসে বেশ রেগে আছে। আমি কিসুই বুঝলাম না এত রাগারাগি হইতেসেটা কি! ঝিলিক কাচুমাচু হইয়া একপাশে দাঁড়াই আছে। বাচ্চা মাইয়াটা ভয়ে শেষ। আকাশ আমার কাছে আইসা বলল, ছোঁয়া তুমি এ বিয়েতে রাজি? আমি তার প্রশ্ন শুইনা ভাবলাম সে জানলো কেমনে! সাহেদার কাজ! এজন্য বলসিলো আমাদের! বেদ্দপ মাইয়া, আমারে বললে কি হইতো!? কিন্তু আমার বিয়ে হইলে কি ওর কিছু যায় আসে? যেভাবে রাগে লাল হই আছে। বুঝতেসি না। আমি কাচুমাচু কইরা কইলাম, আসলে…
- হ্যাঁ বা না।
আমি তার দিকে তাকাই কইলাম, না। আমি…। সে আমারে পাত্তা না দিয়া আবার রাতুলের লগে তর্ক জুড়াইলো। কি জ্বালা! তাদের ঝগড়ার আগা মাথা যদিও কিছুই বুঝতেসি না তবে একটা জিনিস বুঝলাম যে তারা আমারে নিয়া ঝগড়া করতেসে। আমি দুইজনের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকাই ঝগড়া দেখতেসি। আহা! দুই সুদর্শন যুবক আমাকে নিয়া ঝগড়া করতেসে। নিজেরে নায়িকা নায়িকা লাগতেসে। দুই নায়ক নায়িকাকে পাওয়ার জন্য ঝগড়া করতেসে। হঠাৎ মিনার জাদুর চেরাগের দৈত্যের কথা মনে পড়ল। সে আমার কানে কানে কইতেসে, তুমি কি সিনেমার নায়িকা হতে চাও? আমি মনের আনন্দে হ্যাঁ বলবার আগেই হঠাৎ আমার উপর সুনামি বয়ে গেল। কি হইলো!? আমি ভাবনার জাগত থেকে বাস্তবে ফিরে ওদের দিকে তাকাই রইলাম। আকাশ গ্লাস হাতে। আমাকে পানি মারার কারণ কি? আকাশ আমার কাছে এসে ঘাড়ের কাছে কাপড় দিয়ে ঘষতে লাগল। আমি মনে মনে কইলাম, আরে এত ঘষতেসো ক্যান? আল্লাহ! ঝামা দিয়া ঘষে চামড়া তুইলা ফেলতেসে। কিন্তু ঘষতেসে ক্যান!? আকাশ ঘষে বলল, এই দেখো। রাতুল তাকিয়ে দেখলো আমার ঘাড়ে একটা কামড়ের দাগ। আমি লজ্জায় ফাউন্ডেশন দিয়া রাখি। আর গাজরটা সেটা দেখাইতেসে। আকাশ বলল, আমি আমার ছোঁয়াকে চিনতে ভুল করি না রাতুল। আর এই দাগটা আমি ভালো করে চিনি। এটা আমাদের ভালোবাসার চিহ্ন। ওর শরীরে আমার চিহ্ন। শুইনাই কাঁইপা উঠলাম। এতদিন চিন্তা করতাম এমন রাক্ষসের মতো কামড়টা কে দিসে। এখন দেখি এটা গাজর রাক্ষসের কাম! আমি ভিতরে ভিতরে গাল ফুলাই রাখলাম৷ পঁচা গাজর। আমার এত সুন্দর ঘাড়টারে কামড়াই খাই ফেলসে। ভাবতেই লজ্জায় লাল নীল বাত্তি জ্বলতে লাগলো আমার মুখে। কিন্তু সে! কেমনে কি! কথা হইলো এই কামড়টা সে দিলো কবে!?
আকাশ রাতুলের কলার চেপে ধরে বলল, এত স্বার্থপর কি করে হলে? কি করে? ছোঁয়া প্রেগনেন্ট ছিল। বুঝতে পারো ছোঁয়া আর আমার সন্তানকে হারিয়ে আমি কতটা কষ্টে ছিলাম? পর্ষীর মুখের দিকে তাকাতে পারতাম না। না খেয়ে মেয়েটা শুকিয়ে শেষ হয়ে যেতে বসেছিল। তুমি জানতে, তাই না? মিথ্যে চোখের জল দেখাতে এসেছিলে। সব জেনে শুনে চাদনির সাথে মিলে ছোঁয়াকে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলে আমার থেকে। ওর স্মৃতি নেই জেনে নিজেকে ওর মনে বসাতে চেয়েছিলে। আমাকে আর আমার মেয়ে চিরতরে ভুলিয়ে দিতে চেয়েছিলে।
আকাশের কথা শুইনা আমি আকাশ থেকে পড়লাম! এসব কি বলতেসে!? আমি নিজের পেটে হাত দিলাম। আমার সন্তান ছিল এক্সিডেন্টের সময়! আর পর্ষী আসলো কোথায় থেকে! পর্ষী সব সময় আমাকে আম্মু আম্মু ডাকতো কিন্তু আমি পাত্তা দেই নাই। কিন্তু তাকে আশেপাশে দেখলে খুব ভালো লাগতো। সে জড়াই ধরলে অন্য রকম শান্তি পাইতাম। আর ঐ পিচ্চি শাঁকচুন্নির সাথে আকাশের কি সম্পর্ক! রাতুল চুপ কইরা দাঁড়াই আছে। আকাশ আবার বলল, আর কত লুকাবে ওর থেকে সত্যি? আমার ভয় হতো ওকে পুরানো স্মৃতি মনে করাতে। ওর লাইফ রিস্ক হতে পারে ভেবে কিছু বলিনি। তাও চেষ্টা কম করিনি। ওর সামনে এসেছি, বার্থডেতে একইভাবে উইশ করেছি, ওর মতো লবণ দিয়ে গাজরের হালুয়া বানিয়ে দিয়েছি, পর্ষী এসেছে, ওর সবচেয়ে প্রিয় শাড়িটা দিয়েছি। তাও কিছুই মনে করাতে পারিনি। তার মানে এই নয় যে সে আমাদের ভুলে গেছে। আমার ভালোবাসা ভুলে গেছে। সুযোগ দিয়েছি বলে ভেবেছিলে নিজের করে নেবে?
আমি রাতুলের দিকে তাকাই আছি। হঠাৎ নিজের গাল বেয়ে কিছু পড়ার অনুভূতি হইতেই হাত দিলাম। আমার চোখ থেকে পানি পড়তেসে। বুঝতে পারতেসি না এসব কি বলছে আকাশ! আমি রাতুলের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কি বলছে এগুলো বন্ধু? আমাকে বলো। আমি কি ভুলে গেছি? আমি কেন আমার ছোটবেলার ছবি পাই না? তোমাদের জিজ্ঞেস করলে কথা ঘুরিয়ে ফেলতে। আব্বু আম্মু সবাই কি লুকাচ্ছো? আমাকে বলো। কি হল?
রাতুল সোফায় বইসা পড়ল। কাঁদতে কাঁদতে বললো, আমি তোমাকে আবার হারাতে চাই না ছোঁয়া। আমি রাতুলের কাছে গিয়া বললাম, প্লিজ তোমরা আমাকে বলো সবটা। প্লিজ…। আকাশ আমাকে এক বছর আগের ঘটে যাওয়া ঘটনা বলা শুরু করল।
.
.
.
.
(একবছর আগে)
- পর্ষী…, আরে দাঁড়াও। এমন দুষ্টামি করে না। ভালো মেয়ের মতো খেয়ে নাও।
- না। আমি খাবো না। তোমার জামাইর হাতে খাবো।
বইলাই মাইয়াটা দৌঁড়াদৌঁড়ি করতে লাগল। এই মেয়েটা এত চটপটে হইসে না! পাকনা পাকনা কথা। অল্প বয়সে পাইকা টসটস করতেসে। বাপেও সমান তাল দেয়৷ আরেকটু বড় হোক একেবারে বিয়ে দিয়া বিদায় কইরা একটু শান্তি হবো। তখন জামাইরে বলব, বাবা এই পাগলকে তুমি সামলাও। আমি আর দুইটা পাগলকে সামলাইতে পারবো না।
আমি মেয়েটার পেছনে পেছনে খাবার নিয়া ছুটতেসি। এদিকে মহাশয়ের ডাক। আকাশ ওয়াশরুম থেকে ডাইকা উঠলো, ছোঁয়া…, এই ছোঁয়া………। কি কুক্ষণে এই পাগলাটার প্রেমে পড়সিলাম! বাপ মাইয়া একসাথে আমার ত্যানা জীবনে আগুন লাগাইয়া কয়লা কইরা দিলো।
- কি হয়েছে?
- টাওয়ালটা দাও না।
- ওয়াশরুমে ঢুকার সময় নিয়ে নিতে পারো না?
- কি করব? মনে থাকে না। দাও না।
আমি একটা লাঠিতে টাওয়ালটা নিয়া কইলাম, ধরো, দরজা খুলো। সে দরজা খুলতেই আমি টাওয়াল আগাই দিলাম। সে টাওয়ালটা শক্ত কইরা ধইরা এমন টান মারলো যে লাঠিটা শুদ্ধ নিয়া গেল। সে ওয়াশরুম থেকে বলল, এটা কি!? আমি তখন বাইরে হাসতে হাসতে শেষ।
- কি আবার? তোমার ধান্দা আমি বুঝি না? আজকে তো টাওয়াল ভেতরেই রেখে এসেছিলাম। এটা বাইরে আসলো কেমনে?
- নিয়ে বের হয়েছিলাম আর কি। ভুলে গিয়েছি নিতে।
- হ্যাঁ, তোমার সাথে এতদিন সংসার করছি আর আমাকে তো বোকা পেয়েছো। মেয়েটা এত বড় হয়েছে তাও লজ্জা সরমের বালাই নেই।
- এমন করো কেন?
- মেয়েটা বড়ো হচ্ছে তো নাকি? তোমাকে দেখে দেখেই পেঁকে গেছে কাঁচা বয়সে।
আকাশ ওয়াশরুম থেকে বের হইতে দেখি মাথা না মুইছা বের হই গেসে। আইসাই আমাকে জড়াই ধইরা কইলো, হইলে হইসে। দেখবা আমার মেয়ে তার জামাইকে অনেক ভালোবাসবে আমার মতো। আমি তাকে ছাড়াই কইলাম, হ, তোমার মতো ভালোবাসলে আমার মেয়ে না খেতে পেয়ে মরবে।
- কেন!? কেন!?
- তোমার মেয়ে ভালোবাসার ঠেলায় তাকে যে সারাদিন ঘরে বসাই রাখবে। তখন জামাই তোমার মেয়েকে খাওয়াবে কেমনে?
সে আমার হাতে টাওয়াল ধরাই দিয়া বলল, সেটা তারা বুঝবে। আমি আমার বউকে ভালোবাসবো৷ এটাই ফাইনাল। এখন আমার মাথার চুল মুছে দাও। সে গিয়া বিছানায় বসলো বাচ্চা ছেলের মতো। আসছে ঢং করতে, বইলা ওর মাথার মুছতে শুরু করলাম। ও আমারে জড়াই ধইরা পেটে মুখ ডুবাই দিলো।
- আরে করছোটা কি! ছাড়ো। মেয়েটা বসার রুমে।
- না তো। নো ছাড়াছাড়ি। তোমার শাস্তি আছে। আমাকে বলো নাই কেন?
মাথার চুল মুছা শেষ। এখন চুল নিয়ে খেলতে খেলতে বললাম, বলার আগেই তো জেনে ফেললে। ভেবেছিলাম তোমার উজ্জ্বল মুখটা দেখবো খবরটা দিয়ে। সে আমার পেট থেকে মুখ সরিয়ে বলল, দেখলি বাবা? তোর কথা তোর মা আমাকে না জানিয়ে সবাইকে জানিয়ে বেড়িয়েছে।
- আরে! সবাইকে কই জানালাম!? কেবল মুন জানে। ও… মুন তো আবার তোমার স্পাইগিরির চাকরি নিয়েছে। ভুলে গিয়েছিলাম। ওকে দিয়ে ক্লাস এইট থেকে বিয়ের আগে পর্যন্ত স্পাইগিরি করিয়ে শান্তি হয়নি। আমাকে এত জ্বালিয়েছো তোমরা!
সে আবার আমার পেটে মুখ ডুবিয়ে বলল, যাকে ভালোবাসি তাকে না জ্বালালে শান্তি আছে? মেয়েটাকে বসার ঘরে টম এন্ড জেরি ছেরে দিয়ে এসেছি৷ দরজাও খোলা। হঠাৎ এসে গেলে কি হবে! আমি তাকে জোর কইরা সরাই দিয়া বললাম, আরে ছাড়ো। কটা বাজে? নয়টা তো বেজেই গেল। যাবে না আজ চেম্বারে? আসো আমি নাস্তা দিচ্ছি। আমি আসার সময় তার দিকে এক পলক তাকাইলাম। ওর রোমান্সে পানি ঢাইলা যে মজা পাই সেই মজা হাসির গল্প পইড়াও পাই না। ওর গোবেচারা মুখ দেইখা হাসতে হাসতে রান্নাঘরে গেলাম।
নাস্তা দিলাম টেবিলে। রুটি আর গরুর ঝোল। প্লেটে দিচ্ছি মেয়েটা বায়না ধরল চিনি দিয়ে খাবে। পর্ষীটা আমার মতো মিষ্টি পাগল হইসে। আমি চিনি আইনা দিলাম। আকাশটা ওরে খাওয়াই দিতে লাগল। পর্ষী হঠাৎ কইলো, আব্বু, আম্মুকে খাওয়াই দিবা না?
- আসছে পাকনা বুড়ি। নিজে খেয়ে শেষ করো।
- আহা, বকছো কেন? আসো খাইয়ে দেই।
- আমি খেতে পারবো। তোমরা খেয়ে বের হও তাড়াতাড়ি। দেরি হচ্ছে।
- আরে, বসো তো। পর্ষী মামুনির ছোট ভাই বোনটা আব্বুর হাতে খেলে তাড়াতাড়ি আমাদের কাছে চলে আসবে।
পর্ষী শুইনাই চেয়ার থেকে উইঠা লাফাতে লাগল আর আনন্দে তালি দিয়ে বলতে লাগল, আমার ভাই হবে। আমার বোন হবে। কি মজা! আমি ওকে চুপ করাই বসাই বললাম, হয়েছে। এখন খেয়ে নাও। দশটায় স্কুল এখনই সাড়ে নয়টা বাজিয়ে ফেলছে।
খাওয়া শেষে ওর এপ্রোন আর স্ট্যাথোস্কোপটা এনে দিলাম। বের হওয়ার সময় আকাশ জিজ্ঞেস করল, তোমার কিছু লাগবে? আমি অনেক ভেবে বললাম, আলুবোখারার চাটনি পেলে এনো। এখন খেতে ভালো লাগবে।
- আচ্ছা, সাবধানে থেকো।
- টাটা আম্মু।
দুইজনে বেরিয়ে যেতেই আমি আরাম কইরা সোফায় বসলাম। শরীরটা কেন যেন ছেড়ে দিতেসে। দুইদিন পরই আমাদের ম্যারেজ এনিভার্সারি। দেয়ালে টাঙানো ছবিটাগুলোর দিকে তাকাইলাম। আব্বু আম্মুর ছবিটা দেখে মনে মনে বললাম, আম্মু তোমার মেয়ে বড় হয়ে গেছে। অথচ মনে মনে এখনো তোমাদের খুঁজি। কতদিন হয়ে গেল!
.
.
.
.
সবাই অপেক্ষা করতেসে রেদোয়ানদের বাংলোয়। আজকে আমাদের ম্যারেজ এনিভার্সারি। বাংলোয় সেলিব্রিট করার কথা মুনই বলল। তাই সবাই ওখানে একসাথে হবে আজ। আর আজকেই আমরা আমাদের বাবুর কথা জানাবো সবাইকে। আমি একটু বের হইসিলাম। একটা দরকার ছিল। দুপুর দেড়টা বাজে আমার কোনো খবর নাই। তারপর একটা ফোন আসলো আকাশের ফোনে।
- হ্যালো কে বলছেন?
- আপনি আকাশ আয়মান?
- জ্বি।
- আপনার স্ত্রীর এক্সিডেন্ট হয়েছে। আইডি কার্ড দেখে শনাক্ত করা হয়েছে। আপনি এখুনি হাসপাতালে আসুন। অবস্থা খুবই খারাপ।
চলবে…
#পর্ব_৩০ (বোনাস পর্ব)
- আপনার স্ত্রীর এক্সিডেন্ট হয়েছে। আইডি কার্ড দেখে শনাক্ত করা হয়েছে। আপনি এখুনি হাসপাতালে আসুন। অবস্থা খুবই খারাপ।
শুনেই আকাশ দৌঁড়ে হাসপাতালে চলে আসলো। রেদোয়ান, আয়ানও ওর পেছন ধরল। আশে পাশে রোগীতে গিজ গিজ করছে। কাছেই একটা বাস এক্সিডেন্ট হয়েছে। চারদিকে সবাই ছোটাছুটি করছে। লাশের সারি করিডোরে। আকাশ পাগলের মতো আমাকে খুঁজে চলছে আহতদের মধ্যে। একবারও মনে হয়নি যে এদের মধ্যে নাও থাকতে পারে। নিহতের কাতারেও মানুষ থাকে। আয়ান রিসেপশনে গিয়ে আমার খোঁজ করল। রিসেপশনিস্ট বলল, সাতশ তিন নং কেবিন। পেশেন্টের অবস্থা অনেক খারাপ ছিল। কিছুক্ষণ আগে তাকে মৃত বলে জানিয়ে গেছে। আমরা খুবই দুঃখিত স্যার।
এই কথা শোনার সাথে সাথে আকাশের যেন দুই পায়ের শক্তি চলে গেল। বসে পড়ল ফ্লোরে। আয়ান ওর কাছে এসে বলল, ভাই, ভাবিকে দেখতে যাবি না? ওর মুখে কথা নেই। পাথর হয়ে বসে আছে ফ্লোরে। রেদোয়ান জড়িয়ে ধরতেই ওর শরীর কাঁপুনি দিয়ে কান্না এল। বাচ্চার মতো কাঁদতে লাগল আর বলতে লাগল, আমার ছোঁয়াকে এনে দে। আমার পৃথিবী না দেখা সন্তানটা! আমার পর্ষীকে কি জবাব দেবো? মেয়েটা এখনো মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমায়। না হলে তার ঘুমাতে চায় না। আমি কি করব!? সামনের দিনগুলো কিভাবে বাঁচবো!?
সবাই খবর পেয়ে ছুটে চলে আসল। কেবিনে ভীড় করে আছে। ঢেকে রাখা সাদা কাপড়টা তুলতেই সবার বুক মোচড় দিয়ে ওঠে। চেহারা বিভৎস হয়ে আছে। চেনার উপায় নেই। সারা শরীরে রক্ত শুকিয়ে আছে। কেবিনের ভেতরে চলছে কান্নার রোল। আকাশ ঠায় বসে আছে পাথরের মতো কেবিনের বাইরে। পর্ষী এখনো জানে না তার আম্মু আর ফেরত আসবে না ওর কাছে। ওকে বাংলোয় রেখে আসা হয়েছে বাকি বাচ্চাদের সাথে।
রাত দশটার আগেই লাশটাকে কবর দেওয়া হয় আমার আব্বু আম্মুর কবরের সাথে। চারদিকে সবাই কাঁদছে। পর্ষীর কপালে তার আম্মুকে শেষ বারের মতো দেখা হলো না। বরং সেই বিভৎস চেহারার ভয়ঙ্কর স্মৃতির নিয়ে ঘুরতো সারাজীবন। একটার দিকে সবাই বাংলোয় ফিরলো। বাচ্চারা সব ঘুমিয়ে গেছে। সবাই যে যার মতো ঘুমাতে চলে গেল তাদের রুমে। কেবল আকাশের ঘুমহীন চোখ দুটো খোলা। পাশে পর্ষী ঘুমাচ্ছে। মেয়েটা জানেও না।
আকাশের চোখটা লেগে এসেছিল। পর্ষীর ঠেলায় জেগে উঠে বলল, কি হয়েছে আম্মু? পর্ষী ঘুম চোখ কচলাতে কচলাতে বলল, আম্মু কোথায়? আকাশ কি বলবে বুঝতে পারল না। বোবার মতো মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইল। পর্ষী বার বার জিজ্ঞেস করতে লাগল। শেষে ওকে শান্ত করার জন্য বলল, আসবে আম্মু, তুমি ঘুমাও। ঠিক আসবে। পর্ষী আবার শুয়ে পড়ল আকাশকে জড়িয়ে ধরে। আকাশ দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছাদের সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। চোখের নোনা জল বালিশ ভিজছে। কিন্তু অন্তরের ক্ষত কবে শুকাবে!
রাতুল কবর দেওয়ার সময় গিয়েছিল। কেঁদেছিল। কিন্তু ঐ চোখের জল বাড়ি থেকে বের হওয়ার পরই মুছে ফেলল। যে মারা যায়নি তার জন্য কেঁদে কি হবে? রাতুল সোজা হসপিটালে চলে গেল। যেখানে আমি শুয়ে আছি। দুই হাতে ক্যানোলা লাগানো। মাথায় কাচও ঢুকে গিয়েছিল। তাই মাথা নেড়া করে ফেলা হয়েছে অপারেশনের আগে। পুরো মাথায় ব্যান্ডেজ। গলায় সার্ভিক্যাল কলার বেল্ট লাগানো। মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো। হার্টরেট দেখা যাচ্ছে মেশিনে। মরার মতো শুয়ে আছি।
কালকে লম্বা সময় ধরে অপারেশন হয়েছে। বাসে থাকায় সামনের সিটের সাথে প্রচন্ড জোরে বাড়ি খেয়ে জ্ঞান হারা ছিলাম। রাতুল বেড়াতে গিয়েছিল। সেদিনই ওর কাজিনের সাথে কক্সবাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলো। পথিমধ্যে জানতে পারলো রাস্তায় এক্সিডেন্ট হয়েছে। তাই জ্যাম বেঁধেছে। সে এক্সিডেন্ট স্পটটা দেখতে গিয়েই আমার দিকে ওর নজর পড়ে। স্ট্রেচারে করে এম্বুলেন্সে তোলা হচ্ছিলো। তখন থেকেই রাতুল আমার সাথে। সিটি স্ক্যান করে ডাক্তার ইমিডিয়েট অপারেশন করার পরামর্শ দেয় এবং বলে আমার ফ্রন্টাল লোবের অনেক ড্যামেজ হয়েছে। এতে স্মৃতি শক্তি হারানোর সম্ভাবনা ৮০%। বলে ডাক্তার অপারেশন থিয়েটারে চলে যায়।
রাতুল বাইরে বসে আছে। অপারেশন শুরু হয়েছে আধা ঘন্টা। হঠাৎ চাদনি এসে বলল, তুমি রাতুল না?
- জ্বি। আপনি?
- আমি আকাশের ফ্রেন্ড। এখানেই ডক্টর হিসেবে আছি। তোমাকে আমি দেখেছিলাম কয়েকবার ছোঁয়ার সাথে।
- জ্বি, আমি ওর স্কুল ক্লাসমেট ছিলাম।
- এখানে? কেউ অসুস্থ?
রাতুল সব খুলে বলল চাদনিকে। সে বলল, সো স্যাড! আচ্ছা আপনাকে একটা ব্যাক্তিগত কথা জিজ্ঞেস করব? রাতুলের সব বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিল। চোখ মুছতে মুছতে বলল, বলুন।
- আপনি ছোঁয়াকে ভালোবাসেন?
- হঠাৎ এ প্রশ্ন?
- আপনার কান্না দেখেই বুঝতে পারছি। আমিও একজনকে ভালোবাসি। জানেন কাকে? আকাশকে। আমার মাথায় একটা প্ল্যান এসেছে। আপনি যদি রাজি থাকেন তাহলে আপনি আপনার ছোঁয়াকে পেয়ে যাবেন আর আমি আমার আকাশকে। এমনিতেও ছোঁয়ার কিছু মনে থাকবে না। ৮০% মানে অনেক। ইউ ক্যান ট্রাই ইট।
- কি প্ল্যান?
চাদনি তার প্ল্যান বলার পর বলল, যদি আপনি আপনার ভালোবাসাকে পেতে চান তাহলে এটাই সুযোগ। তবে হ্যাঁ খেয়াল রাখবেন যাতে ছোঁয়া আকাশের সামনে না আসে। এটা আমার কার্ড। রেখে দিন। প্ল্যানে রাজি থাকলে জানাবেন। ছোঁয়াও আকাশকে ভুলে যাবে আর আমিও আমার আকাশকে আপন করে নিতে পারব। পর্ষীও মা পেয়ে যাবে। বলেই চাদনি হেঁটে চলে গেল। রাতুল অনেক ভাবার পর মনে হল এতে কারোরই ক্ষতি হবে না। সে তার ছোঁয়াকে পাবে আর চাদনি আকাশকে। পর্ষীরও মায়ের অভাব হবে না। সে রাজি হয়ে ফোন দিয়ে চাদনিকে জানিয়ে দিল।
চাদনি একজন লোককে দিয়ে ফোন দিয়ে আকাশকে আমার কথা জানিয়ে দিল। তারপর সদ্য মৃত একজন মেয়ের পরিচয় আমার নামে দিয়ে রিসেপশনে জানিয়ে দিল সে কিছুক্ষণ আগে মারা গেছে। আকাশও এসে জানতে পারল ছোঁয়া নামে যে ছিল সে মৃত। মেয়েটির শরীর আমার মতো হওয়ায় আর চেহারা দেখতে না পাওয়ায় সবাই ধরেই নিয়েছিল আমি মারা গেছি। সবাই সেই মৃত লাশ দাফনে ব্যস্ত হয়ে গেল। অন্যদিকে রাতুল অপারেশনের পর তার ফুফা ফুফুকে হাসপাতালে আসতে বলল। তারা আসতেই রাতুল বলল আমি অনাথ। সে আমাকে চিনে। এখন তারা যদি চায় তবে আমাকে এডাপ্ট নিতে পারে।
ফুফা ফুফু নিঃসন্তান ছিল। একটা মেয়ে ছিল কিন্তু অনেকদিন আগে মারা গেছে। তাই সন্তানহীন জীবনে একটা ছেলে বা মেয়ের খুবই অভাব ছিল তাদের। তাই তারা কোনোকিছু চিন্তা না করেই রাজি হয়ে যায় এবং ওর কাছে কৃতজ্ঞ থাকে। জ্ঞান ফেরার পর জানা গেল সত্যিই আমার পুরানো কিছু মনে নেই। রাতুল তার ফুফা ফুফুকে আমার বাবা মা হিসেবে পরিচয় করে দিল। তারা আমাকে অনেক যত্ন করে সুস্থ করে তোলে। আমাকে ভার্সিটি ভর্তি করায়। আমি ওদের সব কথা অন্ধের মতো বিশ্বাস করে নেই। সব স্বাভাবিক থাকলেও রাতের বেলা কি যেন দেখে ভয়ে জেগে উঠতাম। আবছা কাদের যেন দেখতাম। মাঝে মধ্যে শরীর খারাপ হয়ে বমি হতো। মাথা ব্যাথাটা নিত্য সঙ্গীর মতো হয়ে গেল।
এদিকে পর্ষী যখন জানতে পারল আমি আর নেই তার খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। চাদনি বহু চেষ্টা করে আকাশের মনটা নরম করতে পারলেও পর্ষীকে বাঘে আনতে পারলো না। তাই অন্য প্ল্যান করল। দুই মাসের মাথায় পর্ষীর দোহাই দিয়ে চাদনি আকাশকে লন্ডন চলে যাওয়ার প্রস্তাব করল। আকাশও তাতে রাজি হয়ে যায় কারণ এখানে আমার স্মৃতি তাকে আর পর্ষীকে তাড়িয়ে বেড়ায়। তবে যাওয়ার আগে কৌশল করে আকাশ থেকে একটা ডিভোর্স পেপারে সাইন নিয়ে নেয়। রাতুলও আমাকে এটা ওটা বুঝিয়ে সাইন নিয়ে নিল। ফলে আমার সাথে আকাশের আর কোনো সম্পর্ক রইলো না।
.
.
.
.
একবছর পর আকাশ পর্ষীকে নিয়ে দেশে ফিরল। বাসায় যাওয়ার আগে একবার দেখতে এল আমার কবর। আসার সময় জ্যামে পড়ল ওরা। গাড়িতে থেকে হঠাৎ পর্ষী চেঁচিয়ে ওঠে, আম্মু আম্মু। আমি সেদিন সাহেদাকে নিয়ে নাচের ক্লাসে যাচ্ছিলাম। ও আমাকে ঠিকই দেখেছিল। আকাশ দেখার আগেই আমি ভবনে ঢুকে গেলাম৷ তাই ও কাউকে দেখতে না পেয়ে পর্ষীকে শান্ত করার চেষ্টা করে বলে, তোমার আম্মু নেই সোনা। সে গাড়ি থেকে বের হওয়ার জন্য ছটফট করছিল। কিন্তু আকাশের জন্য বের হতে পারল না। এদিকে জ্যাম ছেড়ে দিল।
পর্ষী বের হতে পারিনি ঠিকই কিন্তু নাচের স্কুলের নামটা ঠিকই মুখস্ত করে নিল। বাসায় আসতেই মুন দরজা খুলল। আকাশের অনুরোধেই মুন আর রেদোয়ান ওদের বাসায় থাকে এখন। ও চায় না ছোঁয়া জিনিসগুলো অযত্নে অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাক। পর্ষী মুনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। মুন জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে পর্ষী সোনা? কাঁদছো কেন? আম্মুকে মনে পড়ছে?
- আমি আম্মুকে দেখেছি। আমি যাবো আম্মুর কাছে।
- ও কি বলছে আকাশ ভাইয়া?
- রাস্তায় কাকে দেখে ছোঁয়া ভেবেছে। তখন থেকে কেঁদেই চলেছে। কি করব বলো?
- না, আমি আম্মুকেই দেখেছি। এ্যাঁ……
- আচ্ছা আগে ফ্রেশ হয়ে নাও, অনেক জার্নি করেছো। তারপর সব শুনবো।
মুন পর্ষীকে নিয়ে রুমে চলে গেল। রেদোয়ান বলল, মেয়েটা এখনো ছোঁয়ার মায়া থেকে বের হতে পারেনি। আকাশ দরজা মারতে মারতে বলল, আমিই পারিনি আর ও তো বাচ্চা। মেয়েটার জন্যই ভয় হয়। দেখ কেমন শুকিয়ে গেছে এক বছরে। দুইজনই দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
দুইদিন পর লন্ডন ফেরার কথা ছিল। কিন্তু পর্ষী রাজি নয়। সে বাংলাদেশে থাকবে বলে জেদ ধরল। মেয়েটার এমনিতেও মন খারাপ থাকে প্রায়ই। তাই আর জোর করল না। ভর্তি করিয়ে দিল একটা কিন্টারগার্ডেনে। আমরা এর মধ্যে একদিন ফুসকা খেতে গিয়ে পর্ষী দেখে ফেলল। আমাদের পিছে হেঁটে চলেও এল। আমি যখন পৌঁছে দিলাম আবার কিন্ডারগার্ডেনে তখন মুন এসে ওকে নিয়ে গেল। মুন আমাকে পিছন থেকে দেখে চিনতে পারল না। বাসায় যাওয়ার পর গলা ফাটিয়ে কান্না করতে লাগল পর্ষী। কেউই ওকে শান্ত করতে পারল না। আকাশ হসপিটাল থেকে আসার পর শান্ত হলো।
আকাশকে বলে ভর্তি হয়েছিল নাচের স্কুলে শুধু আমাকে খুঁজে পাওয়ার আশায়। যতবার যেতো ততবার চারদিকে তাকিয়ে কেবল আমাকে খুঁজতো। আমি যেদিন গেলাম সেদিন পর্ষীর মন খারাপ ছিল। মনে মনে বলছিল, আজ যদি আম্মু আসতো! ঠিক তখনই আমি তাকে দেখতে পেয়ে কথা বলতে গেলাম। আর সে আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করল। তাকে বুঝিয়ে নাচ শেখার জন্য নিয়ে এলাম। একটু পর পর আমাকে দেখতে লাগল যদি আবার হারিয়ে যাই।
মুন যখন এলো আমি ভয়ে সরে গেলাম। পর্ষী অনেক বলেও বোঝাতে পারল না যে আমি বেঁচে আছি। বাসায় গিয়ে আকাশকেও বার বার বলল আমাকে দেখার কথা। কিন্তু তারা কি করে বিশ্বাস করবে যে আমি বেঁচে আছি যেখানে নিজ হাতে আমাকে দাফন করে এসেছে।
কদিন পর আয়ান ভার্সিটিতে আমাদের ডিপার্টমেন্টে নতুন জয়েন করল। আর সেদিনই আমি লেট করে গেলাম। আমাকে দেখে ভেতরে ভেতরে চমকে উঠলেও বাইরে প্রকাশ করল না। ক্লাস শেষ হতেই বাইরে এসেই আকাশকে কল দিল।
চলবে…
আমাকে দেখে ভেতরে ভেতরে চমকে উঠলেও বাইরে প্রকাশ করল না। ক্লাস শেষ হতেই বাইরে এসেই আকাশকে কল দিল।
- হ্যালো, ভাইয়া, কেমন আছো?
- হুম আলহামদুলিল্লাহ। তোর কি অবস্থা?
- ভালো। কিন্তু একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে।
- তাই নাকি? কি? আজকে তো তোর ভার্সিটি টিচার হিসেবে জয়েন করার কথা।
- হ্যাঁ, আর আমি কাকে দেখেছি তুমি বিশ্বাস করতে পারবে না।
- কাকে দেখে এত উত্তেজিত হয়ে গেছিস?
- ভাবিকে।
- হোয়াট? না না, মজা করছিস। ছোঁয়া নেই আয়ান। তুই…
- আমি সত্যি বলছি। এবং সে এখানে পড়ে।
- তুই ভুল দেখেছিস। এটা কি করে…
- এটাই। ওকে দাঁড়াও। আমি তোমাকে ভিডিও কল দিচ্ছি। কোনো কথা বোলো না। ওকে?
- হুম।
আয়ান আকাশকে ভিডিও কল দিল। ব্যাক ক্যামেরা ওপেন করে ক্লাসের সামনে গিয়ে জানালা দিয়ে ফোন ধরল। আমি তখন সাহেদার সাথে আয়ানকে নিয়ে মজা করছি। আমাকে দেখে ও একমুহূর্তের জন্য আটকে গেল। তারপর হঠাৎ করে বলে উঠল, আয়ান ওর কাছে ফোন নিয়ে যা। আয়ান ওর কথা শুনে সাথে সাথে জানালা থেকে সরে এসে ফোন কেটে দিল। ভয়েজ কল দিয়ে বলল, রিল্যাক্স ভাইয়া।
- কি করে রিল্যাক্স হবো!? ও ছোঁয়া। আমি এখুনি আসছি। ওয়েট।
- এই না না না। আমি আরো খোঁজ নেই। অপেক্ষা করো।
- হ্যাঁ। কর। একই দেখতে দুজন মানুষ থাকতেই পারে। তুই আজই খোঁজ নে।
- হুম, ডোন্ট ওরি ব্রাদার।
- হুম।
আয়ান ফোন কেটে দিল। আকাশ ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে রইল। বাংলাদেশে থাকবে বলে আবার ডাক্তারী শুরু করেছিল ও। চেম্বার শেষ করে যতদ্রুত সম্ভব বাসায় চলে আসল। কলিংবেল টিপতেই রেদোয়ান দরজা খুলে বলল, কেমন গেল আজ?
- ভালো, পর্ষী কোথায়?
- ঘুমিয়ে গেছে।
আকাশ পর্ষীর রুমে এল। মেয়েটা কোলবালিশ জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। কোনোকিছু জড়িয়ে না শুলে ঘুমাতে পারে না। এই দুমাস এভাবেই ঘুমানোর অভ্যাস করে নিয়েছে। আকাশ হালকা ডেকে বলল, আম্মু? রেদোয়ান বলল, মেয়েটা মাত্র ঘুমালো।
- ইট’স আর্জেন্ট। পর্ষী আম্মু।
পর্ষী ওর ডাকে জেগে গেল। উঠে বসে চোখ ঢলতে ঢলতে বলল, কি আব্বু? আকাশ ওর পাশে বসে বলল, তুমি তোমার আম্মুকে দেখেছিলে?
- হুম আব্বু।
- কোথায়?
- আমাদের নাচের ম্যাডামের সাথে। এ জন্য আমি নাচের স্কুলে ভর্তি হয়েছি।
- তাই? তারপর আর দেখেছো?
- হুম। আম্মু ওখানেই ছিল। কিন্তু খালামনি আমাকে নিতে আসতেই কোথায় যেন চলে গেল।
- তোমাদের ম্যাডামের নাম কি আম্মু?
- সাহেদা ম্যাম।
- আচ্ছা। এখন ঘুমাও।
- আব্বু?
- হুম।
- আম্মু আসবে না আমাদের কাছে?
- আসবে তো। ওয়ানা প্লে এ গেম?
- হুম হুম।
- ওকে। এখন ঘুমাও, কালকে থেকে আমরা একটা গেম খেলবো।
- কি গেম আব্বু?
- তোমার আম্মুকে ফিরিয়ে আনার গেম।
- সত্যি?
- তিন সত্যি।
পর্ষী খুশিতে শুয়ে পড়ল। চোখ বন্ধ করতেই আকাশ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। ও ঘুমিয়ে পড়লে রেদোয়ানকে নিয়ে রুমের বাইরে চলে এল। এতক্ষণ মুন রুমের বাইরে থেকে সব শুনছিল। আকাশ বেরিয়ে আসতেই জিজ্ঞেস করল, এসব কি বললে!?
- ঠিকই বলেছি।
- কিচ্ছু ঠিক বলোনি। মেয়েটাকে মিথ্যা আশা দেওয়া ঠিক হয়নি। ছোঁয়া নেই। এটাই সত্যি।
আকাশ ফোন এগিয়ে দিয়ে বলল, আমাকে এটা খুঁজে বের করতে হবে। ওর ফোনে ভিডিও কলের একটা স্ক্রিনশট রয়েছে যেখানে আমি সাহেদার সাথে কথা বলছি। মুন দেখে অবাক হয়ে বলল, এটা কে!?
- সেটাই দেখার বিষয়।
- কিন্তু কিভাবে!? আমরা আমরা…
- আমরা মুখ দেখিনি মুন। লাশ দেখেছি। তাই আমাকে সবটা জানতে হবে। সত্যিই কি ছোঁয়া মারা গেছে? না এই মেয়ে কেবল ছোঁয়ার মতো দেখতে?
মুন আর রেদোয়ান শক কাটিয়ে উঠতে পারছে না। আকাশ নিজের রুমে চলে গেল। অপেক্ষায় রইলো আয়ানের জন্য।
সকালে আয়ান থেকে একটা ম্যাসেজ এল। নাম্বার একটা। ম্যাসেজে লেখা, এই নাম্বারটা ছোঁয়ার নাম্বার হিসেবে অফিসে লেখা ছিল। আকাশ নাম্বারটা ডায়াল কলে তুলে নিল। কতক্ষণ ধরে নাম্বারটা দেখতে লাগল। ভেতরে অস্থির লাগছে। সত্যি ছোঁয়া তো? ফোন করবে কি করবে না করতে করতে ফোন করে ফেলল। তখন আমি মাত্র বাসা থেকে ভার্সটির জন্য বের হচ্ছি। ফোন ধরতেই ও চুপ করে রইলো। আমি হ্যালো হ্যালো করছি। কোনো আওয়াজ না পেয়ে কেটে দিলাম। আমার কন্ঠ শুনে ও ঠাঁই বসে রইলো বিছানায়। শিউর হয়ে গেল এটা আমি। তারপর উঠে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল। আধা ঘন্টা পর আবার ফোন দিয়ে বলল, ভালোবাসি।
তারপর সে আমাদের ভার্সিটিতে গেস্ট টিচার হিসেবে দুই মাসের জন্য এল। পাশের বাসায় এসে উঠল। পর্ষী আর আকাশ এমন ভাব করতে লাগল যেন তারা কেউ কাউকে চিনে না। কারণ স্বভাবতই যদি বলা হয় আমার বিয়ে হয়েছে এবং এত বড় বাচ্চা আছে অবশ্যই আমি বিশ্বাস করব না।
আকাশের সব কাহিনী বলা শেষ হইতেই আমার মাথায় সব জটপাকাই গেল। আসলে জট পাকানো না জটটা এতটাই স্বচ্ছ হয়ে গেল যে আমার মাথা হ্যাঙ হইয়া গেল। আকাশ কইলো, তারপর আস্তে আস্তে সব খবর নিয়ে জানতে পারি সবকিছুর পেছনে রাতুল আর চাদনি রয়েছে। আমি চুপ কইরা রইলাম। তারপর কইলাম, আমাকে রুমে যেতে হবে।
- ছোঁয়া…
- প্লিজ… আমার সময়ের প্রয়োজন।
আমি রুমে চইলা আসলাম৷ সব শোনার পর নিজেকে কেমন যেন লাগতেসে। কি বিশ্বাস করে এতদিন ছিলাম আর কি ছিল! ঘোলাটে অন্ধকার থেকে আলোতে আসায় চোখে সইছে না। মনে হচ্ছে ঘোলাটে অন্ধকারই ঠিক ছিল।
.
.
.
.
ঘুম আসছে না। এপাশ ওপাশ করতেসি। রাতে খাওয়া দাওয়াও করি নাই। এখন রাত একটা বাজে। এই রাত বিরাতে পেটটা ডাকতেসে ষাঁড়ের মতো। কি করা যায়! সবাই তো ঘুমে। আমি উঠে গিয়া দরজাটা ফাঁক করলাম। সবাই ঘুমাচ্ছে যে যার মতো৷ যাক, এবার খানাটা নিয়া কাইটা পড়লেই হয়। ফ্রিজ খুইলা আমার লালু মিয়ার থইলাটা নিয়া মাত্র রুমে ঢুকতেসি। এমন সময় রাতুল ডাক দিল। পিছন ফিরে দেখি সে নিজের রুমের সামনে দাঁড়াই আছে। ফ্রিজ খোলার শব্দে বের হই আসছে। তার মানে ঘুমায় নাই।
সে কিছু বলার আগেই রুমে ঢুইকা দরজা মাইরা দিলাম। এতকিছুর পর আমার এখন কথা বলার মুড নাই। রাতের আন্ধারে ফকফকা লাইট জ্বালাইয়া বসলাম টেবিলটায়। লালু মিয়াকে এক কামড় দিতেই হঠাৎ আকাশের নীল ডায়রীটার কথা মনে পড়ল৷ ও বলল ও আমাকে ভালোবাসে তাহলে ডায়রীতে কার কথা বলল? আমি লালু মিয়া খাইতে খাইতে ড্রয়ারের ঘুপচি থেকে ডায়রীটা বের করলাম। পৃষ্ঠা উল্টাতে দেখলাম কি সুন্দর করে লেখা! ডায়রীতেও কেউ এত সুন্দর কইরা লেখে? হেডলাইন দিয়া লিখসে রচনার মতো। আহা! আমার গাজরের হাতের লেখা! কি সুন্দর! নিচের দুই গালে থাপড় দিয়া কইলাম, কনসেন্ট্রেট ছোঁয়া, কনসেন্ট্রেট। আমি পড়া শুরু করলাম।
পড়তে পড়তে গাল দুইটা ওর মতোই লাল হই গেল। গাজরটা একটা মিচকা শয়তান। দেখতে কি ভদ্র। যেন ভাজা মাছ উল্টাই খাইতে জানে না। আর ভেতরে ভেতরে ভাজা মাছ না শুধু ভাজা গরুও একলাই উল্টাই খাইতে পারবে। হুহ।
লেখা পড়া শেষ হইতেই মনে মনে হাসতে লাগলাম। আরেক পৃষ্ঠা উল্টাতে দেখলাম আমাদের দুইজনের একটা ছবি। দুষ্টুমি কইরা তোলা। ছবিটা দেখেই মনে হইলো অনেক ভালো একটা মুহূর্তের তোলা।
আমি ভাবছিলাম এখানেই লেখা শেষ। তাই এমনিই পৃষ্ঠা উল্টাইতেছিলাম যদি আর কোনো ছবি থাকে। হঠাৎ দেখলাম ডায়রীর শেষের দিকে আরো কিছু লেখা আছে। শিরোনাম পইড়া এক মুহূর্ত থামলাম। তারপর পড়া শুরু করলাম।
(ডায়রী)
💔 তুমিহীনা আমি:
কতদিন পর লিখতে বসলাম গুণতে ইচ্ছে হচ্ছে না আজ ছোঁয়া। হবে সাত আট বছর বা তার থেকেও বেশি। যখন তুমি আমার কাছে ছিলে না। তোমার পাগলামো গুলো লিখে রাখতাম এখানে। কিন্তু আজ দুটো দিন পার হয়ে গেছে তুমি নেই। কেউ এসে বলে না আজ টাওয়ালটা নাওনি কেন ওয়াশরুমে? কেউ বলে না মেয়েটা আছে দেখবে। আমার মাথার পাশের বালিশটা খালি পড়ে আছে। বুকটা তোমার খোঁজ করছে ছোঁয়া। তোমাকে বুকে টেনে না নিলে আমার বুকটা যে ফাঁকা হয়ে থাকে। এই দুটো দিন কত বড় মনে হচ্ছে। যে দুই দশক কেটে গেছে! কেন এত তাড়াতাড়ি হারিয়ে গেলে? মেয়েটা তোমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। আমাকে প্রশ্ন করছে, আম্মু কবে আসবে? আম্মু আসে না কেন? কি বলব তাকে আমি? বলে দাও আমাকে। এড়িয়ে যেতে পারি না। বলে ওর প্রশ্নের উত্তর না দিলে খাবে না ঘুমাবে না। তুমি ছাড়া আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি ছোঁয়া। সব এলোমেলো হয়ে গেছে তোমাকে ছাড়া। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বেঁচে আছি না হলে হয়ত তোমার কাছে চলে যেতাম। ছোঁয়া… আমি……
লেখাগুলোর কিছু জায়গায় কালি ছড়িয়ে গেছে। হয়ত কেঁদেছিল অনেক লেখার সময়। আমি কতক্ষণ লেখাটার দিকে তাকিয়ে রইলাম। কত আর্তনাদ বেরিয়ে আসছে লেখাগুলো থেকে। শূণতায় ভর্তি। আমি হাত দিয়ে স্পর্শ করলাম লেখাটুকু। আমি হীনা না জানি কত কষ্ট সহ্য করেছে মানুষটা। যদি আজ আমি মরে যেতাম! বুকের বাম পাশটায় কেমন যন্ত্রণা করে উঠল। যে কষ্ট ও একলা সহ্য করেছে সে কষ্ট এখন ভাগ করে নেওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করলাম। নিজেকে শক্ত করে পড়া শুরু করলাম।
চলবে…
#পর্ব_৩২ (শেষ পর্ব)
যে কষ্ট ও একলা সহ্য করেছে সে কষ্ট এখন ভাগ করে নেওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করলাম। নিজেকে শক্ত করে পড়া শুরু করলাম।
💔 পর্ষীর জ্বর:
গত দুইদিন ধরে মেয়েটার জ্বর চলছে। আম্মু এসেছে দেখার জন্য। কিন্তু মেয়েটা জ্বরের ঘোরে কেবল তোমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। আজ একমাস মেয়েটার খাওয়া দাওয়া নেই ঠিকমতো। স্কুলে বাসায় সব সময় চুপচাপ। তুমি চলে যাওয়ার পর আমুল পরিবর্তন হয়ে গেছে যেন। আগের মতো হাসে না। খেলে না। দৌঁড়াদৌঁড়ি করে না। রুমে বসে থাকে বই খুলে। যেন পড়ছে। কিন্তু আমি জানি বইটা কেবল বাহানা। বই খুলে তাকিয়ে থাকে তোমার ছবির দিকে। হাসতে যেন ভুলে গেছে। রাতে আমার দিকে তাকিয়ে মলিন হাসি দিয়ে শুয়ে পড়ে। হঠাৎ ঘুম ভাঙলে দেখি পাশে নেই। রুমের এককোণায় বসে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। এভাবে করলে আমার মেয়েটাকে বাঁচাবো কিভাবে!
💔 বিদায়:
আজ দুই মাস হয়ে গেছে। আমরা আর পারছি না ছোঁয়া। তোমার স্মৃতি আমাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। আমার মেয়েটা আধমরা হয়ে গেছে। সারাদিন তোমার ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে। স্কুলে যায় না ঠিকমতো। খাওয়া দাওয়া জোর করে করাতে হচ্ছে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি সব ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাবো। লন্ডন চলে যাবো ওকে নিয়ে। আর থাকা সম্ভব না। আমরা চলে গেলে কি তুমি অভিমান করবে? ভালোবাসি খুব। বড্ড বেশি……
তারপর আর কিছু নাই। এরপর ওরা হয়ত লন্ডন চইলা গেসিলো। পর্ষীকে দেখলে মনেই হয় না সে এতটা অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল। এখন যে লাফালাফি করে! পাকনা থেকেও পাকনা। এটুকু মেয়ের বুদ্ধি কত! আমার মেয়ে কি না। বলতেই ভেতরে একটা অদ্ভুত শান্তি পাইলাম। পর্ষী আমার মেয়ে। আর গাজরটা মানে আমার লাল চেরি বরটাও কেবল আমার। উফ! আমি বিছানায় গিয়া ঝাঁপ মারলাম। লজ্জা পাইতে পাইতে কখন মরার মতো ঘুম দিলাম আর খেয়াল নাই।
.
.
.
.
সকালে ঘুম থেকে জেগেও উঠতে ইচ্ছে হইতেসে না। শুয়ে শুয়ে সিলিংয়ের দিকে তাকাই রইলাম। কাল রাতে যে কি শুনলাম এগুলা! আল্লাহ! মাথাটা এখনো চক্কর কাটতেসে। গাজরটা, চেরিটা আমার এককালে জামাই ছিল। উফ! ভাবতেই লজ্জা লাগতেসে। আবার মনে পড়ল তার ভাষ্যমতে আমাদের বিচ্ছেদ হইয়া গেসে। এ্যা……
আম্মু ডাক দিলো বাইরে থেকে। উঠবো না উঠবো না করে উইঠা গেলাম। এমনিতেও কালকে না খেয়ে আছিলাম ঢং দেখাইতে গিয়া। এখনো না খাইলে আমার পেটটারে আর খুঁইজ্যা পাওয়া যাইবো না। দরজা খুলতেই আম্মু একটা ম্লান হাসি দিলেন। বললেন, খেতে আয়।
- ফ্রেশ হয়ে আসছি আম্মু।
আম্মু ডাকটা শুনে মুখটা আরো ম্লান হই গেল। আমি বুঝলাম কিন্তু কিছু কইলাম না। তাদেরই সব বলে দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু হারানোর ভয় বলে তো একটা জিনিস আছে তাই অনেক সত্যি কথা মিথ্যার ভয়ে চাপা পড়ে যায়।
আজকে নাস্তায় দেখলাম মেলা খানা। আমি ইচ্ছে মতো খাইলাম। খাওয়া শেষ হইতেইই মন চাইলো একটা লম্বা ঢেঁকুর দিতে। কিন্তু আব্বা আম্মার সামনে থাকায় দিলাম না। সবাই চুপচাপ খাইতেসে। আমি চইলা যাইতে লাগলেই আব্বু কইলেন, বসো। তোমার সাথে কথা আছে। আব্বুর গলাটা কেমন যেন ধরা। আমি কোনো আপত্তি না কইরা বসলাম।
- তুমি তো সব জেনেই গেছো। রাতুলের কাছে যখন শুনেছিলাম তোমার বাবা মা কেউ নেই তখন আর লোভ সামলাতে পারিনি। আমাদের মেয়েটা মারা গেছে একেবারে ছোট থাকতে। কয়েক মাস বয়স তখন। ডাক্তার আগেই বলেছিল আমরা এখন বাচ্চা না নিলে আর নিতে পারবো না। মেয়েটা মারা যাওয়ার পর অনেক চেষ্টা করে যখন বাচ্চা নিতে পারলাম না তখন বুঝলাম আমাদের সন্তানের আশা ত্যাগ করতে হবে। সেভাবেই কাটাচ্ছিলাম। কিন্তু তোমাকে পেয়ে আমাদের সব অভাব পূরণ হয়ে গেছে। এজন্য আমি রাতুলের কাছে অনেক কৃতজ্ঞ। আমাদের ক্ষমা করে দিও।
আব্বু কান্না করে দিলেন। আম্মুও নীরবে কাঁদতেসে। আমি আব্বুর সামনে গিয়া বললাম, কে বলেছে আমার আব্বু আম্মু নেই? এই যে আমার সাথে বসে আছে। খাচ্ছে, কথা বলছে।
- ছোঁয়া…
- হতে পারে তোমরা আমার আসল আব্বু আম্মু না। কিন্তু তোমরা তাদের থেকে কি কম করেছো? আমি অসুস্থ থাকাকালে কি না করেছো। আমার সব সময় খেয়াল রেখেছো। আমার আসল আব্বু আম্মুর কথা মনে নেই। কিন্তু যা মনে আছে তা তোমাদের স্মৃতি। তোমরাই আমার বাবা মা।
এতক্ষণ পর আব্বু আম্মুর মুখে হাসি দেখতে পেলাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম, রাতুল কোথায়? ঝিলিক কইলো, ছাদে গেসে সকালে। এখনো আসে নাই।
- আচ্ছা।
- তুমি কি বিয়ে করবা?
- তুই চুপচাপ খা। কারবারি একটা৷
আমি বাসা থেকে বের হয়ে ছাদে চইলা আসলাম। চারতালা বাইতে বাইতে হাত ঠ্যাং সব গেল। উঠে হাঁপাইতে হাঁপাইতে চারদিকে তাকাইলাম। রাতুল ছাদের রেলিংয়ে হাত রেখে তাকাই আছে নিচের দিকে। আমি গিয়া পাশে দাঁড়াইলাম। ও কিছু কইলো না। আমিই শুরু করলাম।
- পাখিটা দেখো। কি সুন্দর লাগছে আকাশে দেখতে।
- হুম।
- বলতো পাখিদের কোথায় দেখতে ভালো লাগে? আকাশে বেড়িয়ে গান গাইতে না খাঁচায় বন্দি রাখতে?
- ছোঁয়া, আমি…
- উ হু। যা বলছি তার উত্তর চাই।
- আকাশে।
- তাহলে বাঁধতে চাইলে কেন?
- ছোঁয়া আমি তোমাকে ভালোবাসি সেই স্কুল লাইফ থেকে। তোমার সাথে হওয়া সেই ক্রিকেট ম্যাচটা আমি আজও ভুলতে পারি না।
- ক্রিকেট ম্যাচ!?
- হ্যাঁ, ও তোমার তো মনে নেই। আমার সাথে তোমার বাজি হয়েছিল। যদি তুমি তিনটা বলের একটায় ছক্কা মারতে পারো তবে আমি একজনকে খেলতে নিবো। প্রথম দুই বলে পারোনি। কিন্তু শেষ বলে…
- কি?
- চেরি বলে একটা ছক্কা মারলে।
- তাহলে তোমার আগেই আমি আকাশকে ভালোবাসতাম।
রাতুল চুপ কইরা গেল। আমি কইলাম, ভালোবাসা এমন একটা জিনিস যা জোর করে পাওয়া যায় না। আবার এমনও হয় যে দুইজন দুজনকে প্রচন্ড ভালোবেসেও ভাগ্যে না থাকায় হারিয়ে ফেলে। আমি সব ভুলে গেলেও আমার ভেতরটা আকাশের ভালোবাসা ভোলেনি। হাজারের মাঝেও তাকে খুঁজে নিয়েছে। রাতুল, এক তরফা ভালোবাসাটা খুবই কষ্টের। তুমি আমাকে ভালোবেসে আগলে রেখেছো এতদিন। আমি সেজন্য অনেক কৃতজ্ঞ কিন্তু নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না।
- আমি এই ভয়ে প্রতি মুহূর্তে ছিলাম। যদি আকাশ ফিরে আসে। তাও নিজের উপর আত্মবিশ্বাস ছিল। কিন্তু এত কিছু করেও তোমার মন জিততে পারিনি। তবে…
- তবে?
- বিয়েটা হবে।
আমি আর রাতুল দুজনে বাসায় আসলাম। আব্বু আম্মু বসার রুমে বসে আছেন চিন্তিত অবস্থায়। ঝিলিক দরজা খুইলা দিলো। আমরা দুইজন তাদের সামনে গিয়া দাঁড়াইলাম। কেমনে কমু সেই চিন্তায় আর লজ্জায় মুখে চেইন টানসি। হাতে দুইটা কচলাইতেসি, কাচুমাচু করতেসি। যত সহজে বিয়েতে মানা করা যায় তত সহজে বিয়ের কথা বলা যায় না। রাতুল বলল, ফুফা ফুফু বিয়ের আয়োজন করো। আগামী শুক্রবার বিয়ে। আম্মু আব্বু একে অপরের দিকে তাকাই কইলো, ছোঁয়া বিয়েতে রাজি?
- হুম। বিয়েটা হবে তবে আমার সাথে না।
- তাহলে কার সাথে?
- ওর আগের স্বামী আকাশ আয়মানের সাথে।
আমি এক দৌঁড়ে রুমে দৌঁড় দিলাম। ইস্ নামটা শুনলেই এখন লজ্জা লাগে। আমি নাকি এক বাচ্চার মা!
.
.
.
.
দুইবছর পরে,
- দেখো না পরশ কাঁদছে।
- তো আমি কি করব?
- যাও না। কোলে নাও।
আকাশ বেশ বিরক্ত হইয়া গেল। পরশ হওয়ার পর থেকে কাম করাই জ্বালাই মারতেসি। এত ভালোবাসে আর একটু বাবু সামলাবে না? এখন বাচ্চাটা কানতেসে। বাচ্চাদের দুইটা কাজ। খাওয়া আর বাথরুম। একটু আগেই আকাশের গায়ে বাথরুম করসে। বেচারা ওকে চেঞ্জ করে, ঘুম পাড়িয়ে, গোসল করে এসে আমাদের সাথে টিভি দেখতে বসছিল। এখন খাওয়ার দরকার। সে আমার কাছে আইসা কইল, ওর খাওয়ার সময় হইসে। আমি টিভির দিকে তাকাই কইলাম, তো খাওয়াও। পর্ষী ঝিলিককে বলতো আমাকে আরেকটু পপকর্ণ ভেজে দিতে।
- আমি খাওয়াবো!?
- হুম।
আকাশ আমার দিকে ভেটকাই তাকাই রইসে। আমি ওর দিকে তাকাই কইলাম, কি হল? আকাশ আমাকে হঠাৎ কোলে তুলে রুমে নিয়া গেল। আমি চার হাত ঠ্যাং নাচাইতে নাচাইতে কইলাম, আরে ছাড়ো। মেয়েটার সামনে কি শুরু করসো? ও আমারে নামাই কইলো, করবো না? দুই মাসের দুধের শিশু আর আমি নাকি তাকে খাওয়াইতাম। আমি হাসি চাপতে চাপতে কইলাম, ও সরি সরি।
আকাশ বসার ঘরে পর্ষীর পাশে গিয়া বসে বলল, তোর মায়ের মাথাটা গেছে বুঝলি? পর্ষী মুচকি মুচকি হাসতে লাগল। হঠাৎ কলিংবেল বাইজা উঠল। মুন রেদোয়ান লাবিবকে নিয়া তাদের দাদার বাড়ি গেসে। আব্বু আম্মুদের আসার চান্স আছে। আকাশ দরজা খুইলা দেখেলো রাতুল আসছে।
- তুমি? এসো ভেতরে।
রাতুল ভেতরে আসলো। সোফায় বসতে বসতে বলল, ছোঁয়া কোথায়? আকাশ বলল, আছে ভেতরে।
- বাচ্চারা কেমন আছে?
- ভালো।
- হুম, এটা বাচ্চার জন্য। জন্মের সময় তো আসতে পারিনি। তাই ছোট একটা উপহার আনলাম।
আকাশ উপহারটা নিল। পর্ষী এসে জিগাইলো, কেমন আছো আঙ্কেল? রাতুল হেসে বলল, ভালো। তবে আজ আমি একটা জিনিস দিতে এসেছিলাম।
- কি?
ও একটা বিয়ের কার্ড দিয়ে বলল, আমার বিয়ে। সামনের শুক্রবার। বাচ্চাদের নিয়ে অবশ্যই এসো। আমি তখন পরশকে ঘুম পাড়িয়ে বসার রুমে আসলাম। রাতুলকে দেখে হাসলাম। সেও একটা মলিন হাসি দিয়ে বলল, উঠি। আমি বললাম, একটু নাস্তা করে যাও। সে বলল, নতুন বউকে নিয়ে একদিন আসবো না হয় তোমার হাতের গাজরের হালুয়া খেতে। বলে রাতুল চলে গেল।
আকাশ বলল, ওর উপর যতটা রাগ ছিল তার থেকে বেশি আমি কৃতজ্ঞ। ও না থাকলে হয়ত আমি তোমাকে ফিরে পেতাম না। আমি ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম, তোমার ভালোবাসার টানেই আমি আজ ফিরে এসেছি। ও আমার কপালে একটা চুমু এঁকে দিলো। পর্ষীও আমাদের জড়িয়ে ধরল। এমন মুহুর্তে পরশের আবার কান ফাটা চিৎকার। আমি মুচকি হেসে বললাম, তোমার ডাক পড়েছে। আকাশ হতাশ ভঙ্গিতে এগিয়ে যেতে যেতে বলল, বাচ্চাগুলা তোমার কাছে দুদন্ড থাকতে দেবে না। আমি পেছন থেকে হাসি চাইপা রেখে কইলাম, সাবধানে পরষ্কার কোরো। আগের মতো জামা কাপড়ে ভরিয়ে ফেলো না।
সমাপ্তি……… 🥰

অদৃশ্য পরী

  ----দেবর সাহেব, তো বিয়ে করবে কবে? বয়স তো কম হলোনা ৷ ----আপনার মত সুন্দরী কাউকে পেলে বিয়েটা শীঘ্রই করে ফেলতাম ৷ -----সমস্যা নাই তো, আমা...