#পতিতা পল্লী
১ম পর্ব
writer. moyej uddin
#বাসর রাতে নিজের স্বামীর জায়গায় যখন অন্য কেউ ধর্ষন করেছিল তখন বুঝেছিলাম কষ্ট কাকে বলে।আমার কথাটা শোনে হয়ত খুব অবাক লাগছে?কিন্তু এটাই হয়েছে আমার সাথে।সেদিন বুঝেছি যন্ত্রণা কাকে বলে।অসহায়ত্ত্বের মাত্রা কতটা গুরুতর হলে মানুষ এমন পরিস্থিতিতে পড়ে ।
বাবা, মায়ের খুব আদরের সন্তান ছিলাম।বলতে গেলে সোনার চামচ নিয়ে জন্মেছি।কত ভালোবাসত আমার মা।সারাদিন আমাকে নিয়েই পড়ে থাকত।কিন্তু সে সুখ বেশিদিন জুটে নি আমার কপালে।৮ বছর বয়সে ক্যান্সারে আমার মা মারা যায়।সেদিন মাকে হারিয়ে আমি খুব কেঁদেছিলাম।প্রতিটা মূহুর্তে শুধু মাকে মিস করতাম।বাবাও মায়ের জন্য অনেক কষ্ট পেত।কিন্তু আমাকে বুঝতে দিত না।কিন্তু বাবা প্রায়সময় ব্যাবস্যার কাজে ব্যাস্ত থাকত।আমাকে তেমন দেখাশোনা করতে পারত না।তাই আত্নীয়স্বজন সবাই বলতে লাগল আরেকটা বিয়ে করার জন্য।কিন্তু বাবা, মাকে অনেক ভালোবাসত আর নতুন বউ যদি আমাকে মানতে না পেরে আমাকে কষ্ট দেয় এজন্য সহজে বিয়ে করতে রাজি হয় নি।কিন্তু সবার জোরাজোরি আর আমার কথায় বাবা ২য় বিয়ে করে।
সেদিন বাবাকে বলেছিলাম বাবা নতুন মা না এনে দিলে আমি আর তোমার সাথে কথা বলব না।ভেবেছিলাম তো আমার নতুন মা টাও আমার আগের মায়ের মত হবে।কে জানত আমার কপালটা এমন হবে।সেদিন সত্যিই বাবাকে নতুন মা আনতে বলে নি এখন মনে হচ্ছে সেদিন আমি বাবাকে "খাল কেটে কুমির" আনতে বলেছিলাম।
বাবা যখন নতুন বিয়ে করে বউ নিয়ে ঢুকে আমি উঁকিঝুকি মেরে নতুন মা কে দেখতেছিলাম আর খুব খুশি হয়েছিলাম।কয়েকটা দিন হয়ত নতুন মায়ের সাথে ভালো ছিলাম।কিন্তু পর কখনও আপন হয় না আর সৎ মা কখন ও আপন মা হয় না সেটা বুঝতে পারি কয়েকটা দিন পর।যে আমাকে আমার মা খাবার নিয়ে আমার পিছনে পিছনে দৌঁড়াত আর আমি বায়না করতাম এটা খাব না ঐ টা খাব না সে আমি আজকে ঠিক মত খেতে পারছি না।এখন মনে হয় লবন, মরিচের ভাত ও অনেক মজা।যে আমি সারাদিন বসে বসে পুতুল খেলে সময় পার করতাম সে আমি এখন অনেক কাজ করি তাও আমার নতুন মায়ের মন ভরে না।নানারকম কথার বেড়াজালে আটকা পড়ে গেছি।ইচ্ছা করলেও এ কথার বেড়াজাল থেকে বের হতে পারছি না।
দিনের পর দিন মানসিক আর শারিরীক যন্ত্রনা নিয়ে বেড়ে উঠেছি।আমার বাবাও বদলে গেছে।যে বাবা আমার সুখের কথা ভেবে বিয়ে করতে চায় নি।আজকে সে বাবায় নতুন মা কে পেয়ে আমাকে ভুলে গেছে।নতুন মায়ের কথায় উঠে আর বসে।মারধর করে।নতুন মায়ের কোলে নতুন যে মেয়ে হয়েছে বাবার কাছে এখন সে মেয়েই সব আর আমি তো এক পরগাছা।৮ বছর বয়সে মাকে হারিয়ে যতটা কষ্ট পেয়েছিলাম তার থেকে বেশি কষ্ট এখন প্রতি মুহুর্তে পাই।কষ্টটা আরও বেড়ে গিয়েছিল যখন আমার বাবা মাত্র ১৪ বছর বয়সে আমার বিয়ে ঠিক করে আমার থেকে ২৬ বছরের বড় এক মধ্যবয়স্কের সাথে।সেদিন একটু প্রতিবাদ করেছিলাম আর ফলশ্রূতিতে মাইর আর মানসিক যন্ত্রনাটাই পেলাম।
না সহ্য করতে পেরে।কোন উপায় না পেয়ে বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম।ভেবেছিলাম বয়স বেশি দেখতে অসুন্দর তাতে কি হয়েছে খেতে পড়তে তো পাড়ব।সংসার কাকে বলে তখন বুঝতে পারে নি।সংসার বুঝে উঠার আগেই বাবা, আর নতুন মায়ের চাপে ১৪ বছর বয়সেই আমি বিয়েটা করে নিই।
বিয়ে করার পর যে সুখটা ছিল সেটাও চলে গেল।ঘরুয়া ভাবে চুপিচুপি লোকটার সাথে আমার বিয়ে হয়।আমাকে লোকটা গাড়ি করে তার বাড়ি নিয়ে যায়।যাওয়ার সময় লোকটার হাবভাব দেখে মনে হয়েছিল লোকটা নেশাখোর আর চরিত্রহীন।যখন লোকটার সাথে বাড়িতে গেলাম বুঝতে পারলাম লোকটা অনেক ধনী আর সম্পদশালী।আমাকে বাড়ির ভিতর ঢুকিয়ে শক্ত করে হাত ধরে রুমের ভিতর নিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলল।আর ওনি একের পর এক মদের বোতল শেষ করতে থাকল।সব আশায় তখন নিরাশ হয়ে গেল।বুঝতে পারছিলাম আমার জীবনের সব সুখ উড়ে গেছে তা আর ফিরে আসবে না।
আরও যন্ত্রণায় কাতর হলাম তখন যখন খেয়াল করলাম রাতের বেলায় আমার স্বামীর পরিবর্তে অন্য একটা লোক আমার রুমে ঢুকে আমাকে ঝাপটে ধরে।ভয়ে জোরে চিৎকার করে উঠেছিলাম।পাশের রুম থেকে আমার স্বামী এসে বলল
---কি রে হারামজাদী এভাবে চিল্লাছিস কে?
আমি ওনার এ ভাষাটা শোনে অবাক হলাম।কিছুটা বিস্মিত হয়ে শান্ত স্বরে ওনাকে বললাম
---আপনি দেখেন এ লোকটা এসে আমার সাথে অসভ্যতা করছে।
---"কর্কশ হাসি" দিয়ে বলল হারামজাদী একে খুশি কর।না হয় তোর কপালে দুঃখ আছে।যা যা করতে বলে তাই কর।
ওনার কথাটা আমার বুকটা ভেদ করে কলিজায় লাগল।তবুও বললাম
---আপনি আমার স্বামী হয়ে এমন কথা বলতে লজ্জা লাগছে না?
---হাহাহা আমি তোর স্বামী কে বলেছে?আমি তোকে তোর বাপের কাছ থেকে কিনে এনেছি।আশে পাশের লোক খারাপ বলবে তাই বিয়ের নাটক করেছি।তোর বাপ আমার কাছে তোকে বিক্রি করে দিছে।এখন আমি যা বলি তুই তাই করবি।ওনাকে খুশি কর।
এই বলে ওনি লোকটাকে ইশারা করে দরজা লাগিয়ে চলে গেল।আর লোকটা আমার উপর পশুর মত ঝাপিয়ে পড়ল।আমি বললাম
---আপনি আমার বাবার বয়সী এমন করবেন না।আপনার মা,বোন মেয়ে থাকলে কি এমন করতে পারতেন?আমাকে ছেড়ে দিন।পায়ে পড়ি আপনার।আমার ক্ষতি করবেন না প্লিজ।
কিন্তু তিনি এক পৈচাশিক হাসি দিয়ে আমাকে বলল এসব বলে লাভ নেই সুন্দরী আমাকে একটু খুশি করে দাও।এসব বলে আমার গায়ের উপর এসে আমাকে শক্ত করে ধরল।আর আমাকে খুবলে খুবলে খেল।সেদিন আমার চিৎকার শোনার মত কেউ ছিল না।মনে হয়েছিল এক হায়েনা আমার কাঁচা মাংস খুবলে খুবলে খাচ্ছে।ওনার খাওয়া শেষ হওয়ার পর আমার স্বামী আমাকে ঠিক একই ভাবে খুবলে খুবলে খেয়েছে।তারা ভুলেই গিয়েছিল আমি একটা মানুষ।আমার কষ্ট হচ্ছে।যন্ত্রনার চিৎকার যেন তাদের সুখটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল।কাজশেষে আমাকে লাথি দিয়ে ফেলে অন্য রুমে চলে গেল।আমি যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলাম।সারা শরীরে হায়েনাদের আঘাত করা ক্ষতগুলো ভেসে উঠল।সে সাথে তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাতে লাগলাম।
বড় স্বপ্ন নিয়ে বিয়ে না করলেও একটু আশা নিয়ে বিয়েটা করেছিলাম।আজ সে আশাও ভেঙে গেল।জীবনে এতটা কষ্ট ও লিখা ছিল বুঝতে পারে নি।আজকে আমার জীবনের সব শেষ।সারা শরীরটাই সক্ষী দিচ্ছে আমি আজকে কতটা নিরুপায়,অসহায়।
সেদিন বুঝেছিলাম পুরুষ মানুষ কতটা খারাপ।কতটা জঘন্য হলে একজন বাবা তার মেয়েকে এমন লোকের কাছে বিক্রি করতে পারে।কত নিকৃষ্ট হলে একজন বাবার বয়সী লোক আমার মত ১৪ বছরের মেয়েকে এভাবে হায়েনার মত রক্তাক্ত করতে পারে।কতটা কষ্ট সেদিন হয়েছিল আমি জানি।
কষ্টের শেষটা যদি সেখানেই হত তাহলে তো ভালোই ছিল।কিন্তু পরদিন সকালে.....
#পতিতা পল্লী
২য় পর্ব
কিন্তু পরদিন সকালে খেয়াল করলাম আমার শরীরটা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।সারা শরীরে ক্ষত হয়ে গেছে।তলপেটে প্রচুর ব্যাথা হচ্ছে।উঠতে পারছি না ঠিক করে।কোন রকমে উঠে দেখি বদমাইশ লোকটা আমার জন্য খাবার নিয়ে এসেছে আর আমাকে বলল
---হারামজাদী এই নে খা।খেয়ে রেডি হ।কাস্টমার আসবে দুইটা। খুশি করতে না পারলে খবর আছে।বেশি চিল্লাবি তো মাইরা তোরে ফাটাইয়া দিমু।
---দয়াকরে আপনি আর আমাকে কষ্ট দিবেন না।আমি আপনার পায়ে পড়ি।আমার শরীর ভালো না।আমি অসুস্থ এতটা কষ্ট আমাকে দিবেন না।আপনার মেয়ে হলে কি পারতেন এমন করতে।আপনি আমার বাবার বয়সী। এরকম করবেন না।
---পুরুষ মানুষ, পুরুষ মানুষেই হয় রে।ওরা বাবা,স্বামী কিচ্ছু হয় না।তাড়াতড়ি রেডি হ।
পেটে তখন প্রচন্ড ক্ষুদা ছিল।কোন রকমে খেয়ে নিলাম।তার কিছুক্ষণ পর একের পর এক লোক আসতে থাকল আর আমার ক্ষত শরীরটাকে আরও খুবলে খুবলে খেল।সেদিন মনে হয়েছিল আমি একটা তাজা মংসপিন্ড যেটাকে খাওয়ার জন্য অনেক গুলা হায়েনা প্রতিযোগিতা লেগেছে।সেদিন আমার চিৎকার কেউ শোনে নি।ব্যাথায় যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছিলাম কেউ শাত্ননা দেয় নি।কখন যে অসুস্থ হলাম খেয়াল নেই।কোন রকমে কয়েকটা ব্যাথা কমার ঔষধ এনে দিয়েছিল তা খেয়ে একটু সুস্থ হলাম।
কিন্তু অসহ্য যন্ত্রণা সহ্যের পর লোকটা কয়েকদিন পর আমাকে একটা গলিতে নিয়ে গেল।খেয়াল করলাম সেখানে আমার মত আরও অনেক মেয়ে সেজেগুজে দাড়িঁয়ে আছে।একে একে পুরুষ আসছে যাকে পাচ্ছে তাকে নিয়ে রুমে ডুকছে।বুঝতে আর বাকি রইল না এটা পতিতা পল্লী।আমাকে নিয়ে গেলো একটা মহিলার কাছে মহিলার নাম ডায়না।মহিলাটা আমার দিকে তাকিয়ে দেখে লোকটাকে বলল
---হালা এ মালরে এ হাল করলি কেন।এত চাপ দিছিস কেন এ মাল রে।সারা শরীরে দাগ করে ফেলছিস এর পিছনে এখন আমাকে টাকা ভাঙ্গতে হবে।এ মালের জন্য ৩০ হাজারের উপর এক টাকাও দিতে পারুম না।মালডার কি হাল করছিস দেখছিস?
---ডায়না জি।সবে মাত্র ১৪ বছর বয়স।আর ৫ হাজার বাড়াইয়া দেন।ঠকবেন না নিলে আর ভালো সার্ভিস দেয়।সেই মাল।
অবশেষে দর কষাকষি করে আমাকে ৩২ হাজার টাকায় বিক্রি করা হল।আমি ডায়না আন্টির পায়ে আচরে পড়লাম আমাকে ছেড়ে দিতে, দেয় নি।কেন দিবেন।উনি তো পতিতা পল্লীর সর্দারনী।আমাকে এত টাকা দিয়ে কিনেছেন ব্যাবস্যার জন্য।আমার দায়িত্ব দেওয়া হল সোবাহ কে যাতে আমাকে সব বুঝিয়ে দেওয়া হয়।সোবাহ আমাকে সব বুঝিয়ে দিল।কিভাবে কাস্টমারকে খুশি করতে হয়।সোবাহ এর পায়ে ধরলাম আমাকে যেন ছেড়ে দেওয়া হয়।কিন্তু সে ও তো এক ঘাটের মাঝি।আমারি মত ভুক্তভোগী।সে তো প্রেম করে এক ছেলেকে বিশ্বাস করে এসেছিল।আর সে ছেলে সরলতার সুযোগ নিয়ে তাকে বিক্রি করে চলে গেছে।
এভাবেই অসহনীয় যন্ত্রণাগুলো মেনে নিতে হয়েছিল।দেখতে দেখতে ২ টা বছর পার হয়ে গেল।আমি ডালিয়া থেকে হয়ে গেলাম ডেইজি।কাস্টমারকে কিভাবে খুশি করে টাকা বাড়িয়ে নিতে হয় সব শিখে গেছি।সে সাথে জেনে গিয়েছি পুরুষ মানুষের রূপ গুলা।সত্যিই পুরুষ মানুষ, পুরুষ মানুষেই হয় ওরা বাবা, ভাই কিচ্ছু হয় না।এখানে আসে না এমন কোন স্তরের লোক বাকি নেই।উচু নিচু সব স্তরের লোকেই এখানে আসে।এখানের মেয়ে গুলােকে তারা মংসপিন্ড ভাবে আর খুবলে খুবলে খায়।
এখন আমি এখানের সবচেয়ে ফেমাস।বাবুরা তো আমার জন্য পাগল।কথাগুলো বলে ডালিয়া হসছিল।আর আমি তার মুখ থেকে কথাগুলো শোনে থমকে গিয়েছিলাম।কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।মানুষের জীবনে এত কষ্ট ও থাকতে পারে জানা ছিলনা।ডালিয়া ওরফে ডেইজি মেয়েটা কথা গুলো বলে খল খল করে হাসলেও তার হাসির পিছনে একটা চাপা কষ্ট ছিল তা ঠিকেই বুঝতে পেরেছিলাম।
কিন্তু এর কিছুদিন পরেই ডালিয়ার জীবনে একটা ঘটনা ঘটে।ডালিয়ার পেটে বাচ্চা আসে।সাধারণত পতিতাদের বাচ্চাগুলোকে মাঝে মাঝে রেখে দেওয়া হয় মেয়ে জন্মানোর আশায়।ডালিয়ার বাচ্চাটাও তার অনুরোধে ডায়না রাখতে দেয়।কিন্তু ডালিয়ার এর মধ্যে কাজ বন্ধ।তাই সবকিছুতেই জামেলা হচ্ছিল।তার উপর তিন মাসের বাচ্চা পেটে।এর মধ্যে ও কয়েকটা কাস্টমারকে তার খুশি করতে হয়েছে।সেদিন খানিকটা অসুস্থ ছিল।তাই ডায়না তাকে কাজ করতে নিষেধ করে।কিন্তু হুট করে ডায়নার কাছে একটা ভদ্রলোক আসে আর ভদ্রলোকের নাম অরণ্য।অরণ্যকে নিয়ে আসে তারেই পরিচিত একজন।অরণ্যকে দেখে ডায়না বলল
---বাবু আসুন আপনি মনে হয় এখানে নতুন।বলুন কোন মাল পছন্দ আপনার।পছন্দ হলে আমাকে জানান।
অরণ্য চারপাশ ঘুরে হঠাৎ রুমের এক কোণে বসা ডালিয়াকে দেখতে পেল।অরণ্য ডালিয়াকে ইঙ্গিত করে বলল
---আমার ঐ মেয়েটাকে চাই।
---ডেইজিকে?কিন্তু বাবু ঐ মেয়েটা তো পোয়াতি আর অসুস্থ।আজকে ওকে ছেড়ে দিন।
---যত টাকা লাগে ততই দিব আমার ঐ মেয়েটাকেই চাই।আর ওকে আমার সাথে নিয়ে যাব।এক লাখ দুই লাখ কত লাগবে বলুন
ডায়না এত টাকার কথা শোনে চমকে গেল।।মনে মনে ভাবল।নিয়ে যা ইচ্ছা করুক। পোয়াতি মেয়ে এমনেই ইনকাম কম।এর থেকে কিছুদিন এর জন্য বেচে দেই এটাই ভালো হবে।
--আচ্ছা বাবু তিন লাখ দিলেই চলবে।তবে এক বছরের বেশি রাখতে পারবেন না।আর জেনে শোনে পোয়াতি নিচ্ছেন সার্ভিস খারাপ দিলে বদনাম করতে পারবেন না।
---সে নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না।এ নিন চেক।আর আমাকে আমার মাল বুঝিয়ে দিন।
ডায়না ডালিয়াকে এনে অরণ্যের হাতে তুলে দিল।আর ডালিয়াকে বলল বাবু তোকে ১ বছরের জন্য কিনেছে।বাবুর বাড়িতেই থাকবি।আর বাবু যা বলে তাই করবি
।তুই পোয়াতি এটা জেনেই বাবু তোকে নিয়েছে।বাবুকে খুশি রাখবি।এ বলে অরণ্যের হাতে ডালিয়াকে তুলে দিল।
অরণ্য ডালিয়াকে নিয়ে বাসায় গেল।ডালিয়া বুঝতে পারল না তার মত পোয়াতিকে কিনে লোকটার কি লাভ।ডালিয়া ঘরে ডোকার পর খেয়াল করল..
#পতিতা পল্লী
৩য় পর্ব
ডালিয়া ঘরে ঢোকার পর খেয়াল করল ঘরটা বেশ সাজানো গোছানো।লোকটার বয়স ও বেশি না এই তো ৩৫ -৩৭ হবে।দেখতেও বেশ সুন্দর।আর বুঝায় যাচ্ছে অনেক টাকার মালিক।আর দেয়ালে একটা লিখা দেখে ডালিয়া থমকে যায়।দেয়ালে লিখা ছিল পৃথীবীর সবচেয়ে ঘৃণিত মানুষ হল মেয়ে মানুষ।এমনটা লিখার কারন ডালিয়া বুঝতে পারল না।ডালিয়া ঘরে ঢোকার সাথে সাথে অরণ্য ডালিয়ার হাতটা ধরে আছরে ফেলে দেয়।আর বলল
--- আজকে থেকে আমি যা বলব তুই তাই করবি।আমার কথার নড়চড় হলে শেষ করে দিব।মেয়ে মানুষকে আমি সবচেয়ে বেশি ঘৃনা করি।দুনিয়ার যত মেয়ের জাত আছে সব মেয়েকে আমি ঘৃনা করি।তুই যদি আমার কথার বাইরে নড়িস তোর খবর আছে।তোকে আমি শারিরীকভাবে পাবার জন্য এখানে আনি নাই।তোকে এনেছি যখন কোন মেয়ের প্রতি আমার ঘৃণা জন্মাবে তখন তোকে একটা করে শাস্তি দিয়ে আমার রাগ মিটাবো।
---সে আপনি যায় করুন অরণ্য বাবু আজকে আমাকে একটু বিশ্রাম নিতে দিন।শরীরটা খুব খারাপ কালকে থেকে আমি আপনার সব কথা মেনে চলব।আমি পোয়াতি আপনি তো জানেনেই।
---নাহ।এখন কোন বিশ্রাম নাই তোর জন্য।আমার গা হাত পা টিপ।আমার কথার বাইরে গেলে তোর খবর আছে।
ডালিয়া শান্ত স্বরে চুপ করে বসে হাত, পা টিপতে লাগল।ক্লান্ত শরীর যেন আর কিছুই মানছে না।মনে হচ্ছে একটু চোখ বুজতে পারলে ডালিয়ার ভালো লাগত।এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ডালিয়া অরণ্যের পায়ের উপর ঘুমিয়ে গেল খেয়ালেই করে নি।হঠাৎ অরণ্য ডালিয়াকে এভাবে দেখে রেগেমেগে আগুন হয়ে যায়।জোরে ডালিয়ার পেট বরাবর একটা লাথি মারে।আর ডালিয়া খাট থেকে ফ্লোরে পড়ে যায়।সাথে সাথে ফ্লোরটা রক্তে মেখে যায়।ডালিয়ার বাচ্চাটা মিসক্যারেজ হয়ে যায়।আর ডালিয়া কাতরাতে থাকে যন্ত্রণায় আর বলে
---প্লিজ অরণ্য বাবু আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান না হয় আমার বাচ্চাটা মরে যাবে।এতটা নির্দয় হবেন না।এ বাচ্চাটা আমার কাছে অনেক কিছু।জীবনে প্রথম মা হয়েছি।অনেক কষ্ট পেয়েছি বাচ্চা হারানোর কষ্টটা আমাকে আর দিবেন না।আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান।
---হারামজাদী আমি নিয়ে যাব তোকে ডাক্তারের কাছে।আমি নিজেই একজন প্রাক্তন ডাক্তার। কিন্তু ডাক্তারি ছাড়তে হয়েছে তোদের মত নষ্টা মেয়ে মানুষের জন্য।হারামজাদী তোর বাচ্চাটা শেষ হলে তো তুই কষ্ট পাবি অনেক তাই না?
---হ্যা অরণ্যবাবু অনেক কষ্ট পাব।দয়াকরে আমার একটা ব্যাবস্থা করুন।আমার বাচ্চাটাকে বাঁচান।
---হাহাহা।তোর এ কষ্টটায় আমি উপভোগ করব।তুই কাদঁ আমি তোকে দেখি।এক ঘন্টা পর তোর বাচ্চা পুরোপুরি নষ্ট হলে তোর চিকিৎসা করব এর আগে না।হাাহাহা
ডালিয়া মেঝেতে কাতরাতে লাগল।ভাবল আর কত দুঃখ তার কপালে লিখা আছে।আর কত কষ্ট পাবে সে।শেষ পর্যন্ত নিজের বাচ্চা হারানোর যন্ত্রণাও পেতে হল।পেটের ব্যাথায় ডালিয়া চিৎকার করতে লাগল।কিন্তু সে কান্না শোনে অরণ্য শুধু হাসতে লাগল।১ ঘন্টা পর ডালিয়া নিস্তেজ হয়ে পড়ল।রক্তে সারা শরীর আর মেঝে মেখে গেল।ডালিয়া সেন্সলেস হয়ে গেল।
ডালিয়ার সেন্স ফিরার পর ডালিয়া খেয়াল করল ডালিয়ার হাতে সেলাইন দেওয়া।জেগে উঠার সাথে সাথে অরণ্য বলে উঠল
---চিন্তা করে লাভ নেই তোর বাচ্চা আর নেই।তোর বাচ্চাটা শেষ।তোর বাচ্চাটা মারা গেছে।তোকে কষ্ট দিতে পেরে কি যে আনন্দ হচ্ছে কি বলব।ইশ ডেইজির বুঝি খুব কষ্ট হচ্ছে।
---আপনি আমাকে কেন কিনে এনেছেন বলবেন?
---বললাম তো তোকে মানসিক যন্ত্রণা দেওয়ার জন্য।তোকে মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে শেষ করে দিব।
---আমাকে মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে আপনার লাভ?
---লাভ, ক্ষতি কিচ্ছু জানি না।এতে আমার শান্তি।
---কিন্তু কেন?
---কারন মেয়ে মানুষকে আমি ঘৃণা করি।মেয়ে মানুষকে কষ্ট দিতে পারলে আমি শান্তি পায়।তাই তোকে একের পর এক মানসিক কষ্ট দিব আর আমি মানসিক শান্তি নিব।হাহাহাহা।এবার খেয়ে নে।১৫ দিন তোকে কিছু করব না।যা করার ১৫ দিন পর করব।
ডালিয়া অরণ্যের কথা শোনে অবাক না হয়ে পারল না।ডালিয়া বুঝতে পারল না অরণ্যবাবুর মনে মেয়েদের প্রতি এত ঘৃনা কেন।আর ডালিয়াকে মেরে সে কি শান্তি পাবে।এসব ভাবতে ভাবতে ডালিয়া অস্থির হয়ে গেল।ডালিয়া বুঝতে পারল তার জীবনে সুখ শব্দটা আর নেই।ভেবেছিল অরণ্য বাবু হয়ত বুঝবে।কিন্তু পুরুষ মানুষ যে সব এক সেটা আবার প্রমাণিত হল।বাচ্চাটার কথা ভেবে ডালিয়া কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল।আচমকা সে জোরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগল।আর ডালিয়ার কান্না শোনে অরণ্য হাসতে লাগল।অরণ্যের হাসি শোনে যেন ডালিয়ার আরও বুক ফেটে কান্না আসল।
১৫ দিন অরণ্য ডালিয়ার আশে পাশেও আসে নি।খাবার গুলা শধু কাজের লোক দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে।এর মধ্যে ডালিয়া একটু সুস্থ হল।হাঁটতে চলতে পারছে।আচমকা ডালিয়া হাঁটতে গিয়ে সাবান পানিতে পিছলে পড়ল।ডালিয়ার মনে হল এবার কলিজাটা বের হয়ে গেল।ডালিয়া পড়ে ছটফট করতে লাগল।বুঝতে পারল না সাবানের পানিটা কে রাখল এখানে। হঠাৎ অরণ্য হাসতে হাসতে বলল
---ডার্লিং ব্যাথা পেয়েছ?সাবানের পানিটা আমি ঢেলেছি।যাতে তুমি পড়ে গিয়ে এভাবে ছটফট করতে পার আর আমি হাসতে পারি। হাহা।
---আপনি কেন আমার সাথে এমন করছেন?
---বলেছি তো মেয়ে মানুষ আমার সহ্য হয় না।তোকে কষ্ট দিতে পারলে আমার শান্তি লাগে।হাহাহা
ডালিয়া কোনরকমে মেঝে থেকে উঠে বিছানায় গেল।ডালিয়ার আজকে বুক ফেটে কান্না আসল আর কত কষ্ট তাকে পেতে হবে।আর কত কষ্ট তার কপালে লিখা আছে।এ কোন নরকে এসে সে পড়ল।ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেল।পরদিন সকালে ডালিয়া অরণ্যকে দেখে চমকে গেল কারণ..
#পতিতা পল্লী
৪র্থ পর্ব
পরদিন সকালে ডালিয়া অরণ্যকে দেখে চমকে গেল কারণ ডালিয়া ঘুম থেকে উঠে খেয়াল করল অরণ্য ডালিয়ার পাশে বসে আছে।আচমকা ডালিয়া অরণ্যকে দেখে যেন তার ঘুমের ঘোর কেটে গেল।ডালিয়া বেশ চমকে গেল অরণ্যকে এভাবে দেখে।বুঝতে পারল না অরণ্যবাবু এভাবে বসে আছে কেন?কিছুটা বিস্মিত আর কাঁপা কাঁপা সুরে ডালিয়া অরণ্যকে বলল
---অরণ্যবাবু আপনি এখানে?কিছু লাগবে?আমি কি কোন ভুল করেছি?
অরণ্য এবার একরাশ হাসি দিয়ে বলল
---নাহ ডেইজি তুৃমি কোন ভুল কর নি।আমি তো এসেছি তোমার জন্য নাস্তা নিয়ে।কালকে রাতে কিছু খাও নি।এভাবে না খেয়ে থাকলে যে তোমার শরীর খারাপ করবে।এই নাও ব্রাশ, পেস্ট লাগানো আছে তাড়াতাড়ি দাঁত ব্রাশ করে আস।আর এসে খাও।খেয়ে রেডি হও আমরা একটু বাইরে ঘুরতে যাব।
অরণ্যের এরকম ব্যাবহার দেখে ডালিয়া কিছুটা আশ্চর্য হল।কাঁপা কাঁপা হাতে ব্রাশটা নিয়ে বাথরুমে গেল।আশে পাশে খেয়াল করল কোথাও সবানের পানি ফেলে রেখেছে কিনা।কিন্তু কোথাও কোন পানি নেই সব কিছু ঠিক আছে।দাঁত ব্রাশ করে রুমে আসল।খেয়াল করল অরণ্য রুটিতে জেলি মাখছে।ডালিয়াকে দেখেই অরণ্য বলে উঠল
---আরে ডেইজি তাড়াতাড়ি আস।চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে যে। তাড়াতাড়ি রুটি জেলি, চা খাও আর সাথে এক গ্লাস দুধ ও খেয়ে নিবা।তা না হলে তো ভালোভাবে সুস্থ হবা না তুমি।তাড়াতাড়ি এসে খেয়ে নাও।
ডালিয়া অরণ্যকে যতই দেখছে মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছে অরণ্যের এমন ব্যাবহার ডালিয়াকে আশ্চর্য না করে পারল না।ডালিয়া কিছুটা ভীত হয়ে অরণ্যের পাশে গিয়ে বসল।অরণ্য ডালিয়াকে খাবার খেতে দিল।কিছুটা ভয় ভয় নিয়ে ডালিয়া খেতে লাগল।পাশ থেকে অরণ্য বলে উঠল
---চা টা কেমন হয়েছে?আমি বানিয়েছিঅ কিন্তু।
---হুম অনেক ভালো হয়েছে অরণ্য বাবু।আপনি সত্যিই অনেক ভালো চা করেন।আমার জন্য এতটা কষ্ট না করলেও পারতেন।
---আরে এতে আর কি কষ্ট।আমার একটু শান্তির জন্য এটুকু কষ্ট তো করতেই পারি।আর শোন আমাকে আজ থেকে শুধু অরণ্য বলে ডাকবে।বাবু বলার দরকার নেই।
ডালিয়া এ কথাটা শোনার পর চমকে গেল।বুঝতে পারল না সে কি স্বপ্ন দেখছে নাকি সত্যি।আর বলল
---আচ্ছা আপনি যা বলবেন তাই হবে।
---আচ্ছা তোমার নাম কি ডেইজি নাকি আরও কোন নাম আছে?
---আমার নাম ডালিয়া ছিল সেখান থেকে ডেইজি হয়েছে।
---ওহ তাই বল।তোমাকে আমি ডালিয়া বলেই ডাকব কারন তোমার ডালিয়া নামটা অনেক সুন্দর।ঠিক আছে।
---আপনার যা ইচ্ছা ডাকেন।আমার কোন আপত্তি নেই।
---ডালিয়া তোমার চুল গুলো অনেক সুন্দর।তোমার চুল গুলোকে তুমি অনেক ভালোবাস তাই না?
---ভালোবাসা বলতে পৃথিবীতে কিছু আছে কিনা জানি না।তবে চুলগুলো আমার অনেক পছন্দের।শত কষ্টের মধ্যেও চুল গুলোকে আগলে রেখেছি।খুব বেশি যত্ন নিতে পারি না তবুুও যে চুলগুলা হাঁটু পার হয়েছে এটাই অনেক।
অরণ্য কিছুটা মুচকি হেসে বলল
---সত্যিই তোমার চুলগুলা অনেক লম্বা আর সুন্দর।তুৃমি রেডি হয়ে নাও।তোমাকে নিয়ে পার্লারে যাব।তোমার চুলে স্পা করাব।দেখবা চুল গুলো আরও সুন্দর হয়ে যাবে।আমি রেডি হচ্ছি তুমি রেডি হয়ে বের হও।
ডালিয়া অরণ্যের কথা যতই শোনছে ততই বিস্মিত হচ্ছে।সত্যিই কি এমন কিছু হচ্ছে নাকি সব স্বপ্ন।নিজের শরীরে নিজে একটা চিমটি কেটে আহঃ করে উঠল।সত্যিই তো এটা বাস্তব।ডালিয়া ভাবনার সাগর থেকে বের হয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হল।অরণ্য ডালিয়া দেখে বলল
---আরে তুৃমি চুল বাধলে কেন?চুল গুলা খোলা রাখ সুন্দর লাগবে।
অরণ্যের কথা শোনে ডালিয়া চুল গুলো খলল।আর খোলা চুলে অরণ্য ডালিয়াকে দেখে বলল
---বাহ বেশ সুন্দর লাগছে।এ বলে একটা টিপ কপালে পড়িয়ে দিয়ে বলল এখন আরও বেশি সুন্দর লাগছে।
ডালিয়া অরণ্যকে যতই দেখছে ততই অবাক হচ্ছে।হঠাৎ করে অরণ্যের এমন ব্যাবহার ডালিয়াকে যেন রূপকথার রাজ্যে নিয়ে গেল।তারপর দুজন মিলে একসাথে বের হল।ডালিয়ার কাছে সবকিছু যেন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগতে লাগল।গাড়ির কাচ দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আকাশটা দেখতে লাগল।কতদিন ডালিয়া এ খোলা আকাশের নীচে হাঁটে না।ছোটবেলার কথা গুলো মনে করতে লাগল।তার মা তাকে খাওয়ানোর জন্য কিভাবে দৌঁড়াত, কিভাবে সে পুতুল খেলত এসব ভাবতে লাগল।নিমিষেই যেন একটা সুখের রাজ্যে হারিয়ে গেল ডালিয়া।হঠাৎ অরণ্যের গাড়ির ব্রেকে ডালিয়ার স্বপ্নের ঘোর কাটল।খেয়াল করল অরণ্য গাড়ি থেকে নামল আর ডালিয়াকে নামার জন্য বলল।ডালিয়াও নামল।ডালিয়া দেখল অরণ্য তাকে মস্ত বড় একটা পার্লারে নিয়ে আসছে আর পার্লারের দিকে ঈশারা করে বলছে
---ডালিয়া এই যে পার্লারটা দেখছ এটাতে নিয়ে গিয়ে আজকে তোমার চুলগুলার ব্যাবস্থা করব।
অরণ্যের কথা যতই শোনতে লাগল ততই যেন অবাক হতে লাগল।অরণ্য ডালিয়াকে নিয়ে গেল পার্লারে।পর্লারে নিয়ে গিয়ে মহিলাকে বলল এর চুল গুলে কেটে ঘাড় সমান করে দিন।ডালিয়া অরণ্যের মুখে এমন কথা শোনে আৎকে গেল।আর বলে উঠল
---চুল কেটে ঘাড় সমান করবে মানে?আমি চুল কাটব না। এগুলা আমার অনেক শখের চুল।জীবনে অনেক কষ্ট করেছি কিন্তু চুল গুলাকে কখন অযত্ন করি নি।
---এজন্যই তো তোমার চুল কাটব।তুমি কি ভেবেছিলে আমি তোমাকে আদর করছি।হাহাহা।এত বোকা মেয়ে আমি আমার জীবনে দেখি নি।আরে তোকে আদর করেছিলাম যাতে তোকে কষ্টটা বেশি দিতে পারি।চুপচাপ চুল কাট।
---আমি চুল কাটব না।আপনি আমাকে যা ইচ্ছা করুন আমি চুল কাটব না।
পাশ থেকে পার্লারের মহিলা বলে উঠল
---উনি কাটতে না চাইলে আমরা জোর করে কাটতে পারব না চুল।আপনি অন্য কোথাও যান।
অরণ্য একটা হাসি দিয়ে বলল
---এ চুলগুলা কাটলে ৫০ হাজার টাকা দিব।এবার আপনার ইচ্ছা কাটবেন নাকি অন্য কোথাও যাব।
মহিলাটা ৫০ হাজার টাকার কথা শোনে লোভে পড়ে গেল আর বলল
---এ আর তেমন কি কাজ আমি এখনি কেটে দিচ্ছি।
তারপর আরও দুজন ডালিয়াকে ধরে জোর করে চুল কাটা শুরু করল।ডালিয়া চিল্লায়ে চিল্লায়ে বলে উঠল
---আল্লাহর দোহাই লাগে এত বড় কষ্ট আর ক্ষতি আপনারা করবে না। আমাকে ছেড়ে দিন।
মহিলাগুলো টাকার লোভে অন্ধ হয়ে গিয়েছিল।ডালিয়ার চিৎকার যেন তাদের কান পর্যন্ত আর পৌঁছাল না।মুঠি ধরে চুল গুলা কেটে দিল।আর অরণ্য পাশ থেকে খিল খিল করে হাসতে লাগল।চুল কাটা শেষ হলে অরণ্য মহিলাগুলাকে টাকা দিয়ে ডালিয়াকে নিয়ে বাসায় চলে আসল।ডালিয়া যতবারেই আয়না দেখছিল ততবারেই চিৎকার করে কাঁদছিল।ডায়নাকে কল করে সব বলল ডায়না বলল
---তোর জন্য ঐ লোকটা আমাকে অনেক টাকা দিয়েছে।ওনি যা করতে বলে কর।না হয় দুঃখ আছে।আর এসব প্যান প্যান করতে ফোন করবি না।আমি তোর জন্য তো নিজের ব্যাবস্যার ক্ষতি করতে পারি না।ফোন রাখ।
এ বলে ডায়না ফোনটা কেটে দিল।ডালিয়া ভিতরে ভিতরে পুরতে লাগল।চুল গুলায় হাত দিয়ে সে চিৎকার করে বলতে লাগল "দুনিয়ায় টাকা ছাড়া দাম নেই।টকার কাছে সব বিক্রি হয়ে যায়।মানুষের মন ও টাকার কাছে কিছু না।"আর পাশ থেকে ডালিয়ার চিৎকার দেখে অরণ্য হাসতে লাগল।তখন ডালিয়া অরণ্য কে বলল
---আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি?কেন এমন করেছেন আমার সাথে।আমাকে আর কত কষ্ট দিবেন আপনি?
---বলেছি তো মেয়ে মানুষ আমার সহ্য হয় না।তোরে কষ্ট দিতে পারলে আমার শান্তি লাগে।কোন মেয়ে কষ্ট পেতে দেখলে আমার শান্তি লাগে।এই যে কষ্ট পাচ্ছিস খুব শান্তি লাগছে।তোকে কিনে এনেছিই এভাবে কষ্ট দিতে হাহাহাহা।
ডালিয়ার বুঝতে বাকি রইল না অরণ্য মানসিক ভাবে অসুস্থ।আর কত কষ্ট যে ডালিয়াকে পেতে হবে সেটা ভাবতে ভাবতেই সারাদিন পার করল।রাতে হঠাৎ ডালিয়া একটা চিৎকারের শব্দ পেল খেয়াল করল শব্দটা অরণ্যের রুম থেকে আসছে।ডালিয়া অরণ্যের রুমের দিকে এগুতে লাগল আর গিয়ে দেখল......
#পতিতা পল্লী
৫ম পর্ব
আর দেখল অরণ্য কার সাথে জানি চেঁচামেচি করছে।ডালিয়া প্রথমে বুঝতে পারছিল না এভাবে জোরে চিৎকার কেন করছে অরণ্য।খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ডালিয়া বুঝার চেষ্টা করল কেন অরণ্য চিৎকার করছে।কিছুক্ষণ পর ডালিয়া বুঝতে পারল অরণ্য কারও সাথে ফোনে কথা বলছে আর ঐ লোকটাকে অরণ্য বলছে
---আমাকে আর কোনদিন ফোন দিবা না তুমি।পৃথিবীতে যদি কাউকে ঘৃণা করি একমাত্র তোমাকে।পৃথিবীর সব মেয়ে জাতি নিকৃষ্ট তার মধ্যে তুমি প্রথম।আমাকে কল দিয়ে জ্বালাবা না তুমি।জানই তো আমি তোমাকে কত ঘৃণা করি।এখন কেন ফোন দাও বলতো।যখন আমার কিছু ছিল না তখন কোথায় ছিলে তুমি।দুনিয়ার সবচেয়ে নিকৃষ্ট তুৃমি।
এসব বলে ফোনটা কেটে জোরে চিল্লাতে লাগল আর কাঁদতে লাগল।ডালিয়া পড়ালেখা কম করলেও খুব বিচক্ষণ ছিল।ডালিয়ার বুঝতে বাকি রইল না অরণ্যের ভিতরে একটা চাপা কষ্ট আছে।আর যে ফেন দিয়েছে সে একটা মেয়ে।হয়ত তার কাছ থেকেই কষ্টটা পেয়েছে।আর এজন্যই অরণ্য মানসিক রোগীর মত ব্যবহার করে।ডালিয়ার কেন জানি না অরণ্যের প্রতি মায়া হল।অরণ্যের ঘরে যাবে কি না চিন্তা করতে লাগল।কিন্তু গেলে যদি অরণ্য রেগে যায়।
তাই অরণ্য বুঝে উঠার আগেই ডালিয়া চলে আসল নিজের ঘরে।ডালিয়া নিজের ঘরে এসে খাটে হেলান দিয়ে কিছুটা ক্লান্তি নিয়ে চোখ বুজল।হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে ডালিয়া চোখ খোলল।ডালিয়ার খেয়াল করল অরণ্য তার সামনে দাড়িঁয়ে আছে।হাতে কি যেন একটা নিয়ে।ডালিয়া অরণ্যকে কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল
---অরণ্য আপনি?হঠাৎ এখানে?কিজন্য বলুন।
ডালিয়ার কথা শেষ করতে না করতেই অরণ্য পিছনে লুকিয়ে রাখা হাতটা বের করে ডালিয়াকে বেল্ট দিয়ে পিটাতে লাগল।আর ডালিয়া চিৎকার করে করে বলতে লাগল
---আমাকে আর মারবেন না।আল্লাহর দোহাই লাগে।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।আর মারবেন না দয়াকরে।আমাকে এত কষ্ট দিবেন না।আমাকে মাফ করে দেন।
---হাহাহা তোদের মত মেয়েরা সবচেয়ে খারাপ।দুনিয়াতে সবচেয়ে খারাপ হচ্ছে মেয়ে জাতি।তোরে কষ্ট না দিলে আমার শান্তি লাগবে না।
৪,৫ মিনিট বেল্ট দিয়ে পিটানোর পর অরণ্য ডালিয়াকে বলল
---এবার তুই কান ধরে এক পায়ে সারারাত দাঁড়িয়ে থাকবি।আর যদি কোন উল্টা পাল্টা করিস বুঝিসেই তো তোর কি হাল হবে।
ডালিয়া আর কোন কথা না বাড়িয়ে অরণ্যের কথা মত কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকল।আর অরণ্য ডালিয়াকে দেখে হাসতে লাগল।অনেকক্ষণ পর ডালিয়ার মনে হল পা টা ফেটে যাচ্ছে।মাথাটা ঘোরাচ্ছে।ভয়ে পা টা নামাতেও পারছে না।কারন অরণ্য সামনে দাঁড়ানো।হুট করে ডালিয়ার মাথাটা ঘুরে গেল আর ডালিয়া মেঝেতে পড়ে গেল।ডালিয়ার যখন জ্ঞান ফিরল তখন দেখল ডালিয়া বিছানায় শুয়ে আছে।ডালিয়ার বুঝতে বাকি রইল না অরণ্যই তাকে বিছানায় শুইয়ে রেখে গেছে।এটাও বুঝতে পারল যখনেই কোন মেয়ে তাকে কষ্ট দেয় তখনেই অরণ্য ডালিয়াকে কষ্ট দেয়।গতকাল হয়ত কোন মেয়ে ফোন দিয়ে কিছু বলেছে তাই হয়ত ডালিয়াকে এভাবে শাস্তি দিয়েছে।অরণ্যের প্রতি থাকা রাগটাও যেন এবার ফিকে হয়ে গেল ডালিয়ার।ডালিয়া বেশ ভালোই বুঝতে পারছিল অরণ্য কোন চাপা কষ্ট পেয়েছে।কোন কষ্ট পেয়ে অরণ্য এমন করছে।আর এজন্যই হয়ত অরণ্য ডালিয়ার সাথে এমন করছে।হঠাৎ করে ডালিয়াকে অরণ্যের বাসার চাকর রহমত চাচা ডাক দিল
---মা ডালিয়া তুমি নাস্তা করে নাও।অরণ্য এক দিন এর জন্য বাইরে গেছে।তোমাকে বাড়ির বাইরে যেতে নিষেধ করেছে।দয়াকরে বাড়ির বাইরে গিয়ে বা পালিয়ে গিয়ে ওকে কষ্ট দিও না।এর আগেও একটা মেয়ে এনেছিল অরন্যের অত্যাচারে পালিয়ে গিয়েছে।অরণ্য তোমাকে জানি অনেক কষ্ট দেয় কিন্তু ওর মনটা অনেক ভালো।দয়াকরে তুমি পালিয়ে যেও না।এখন নাস্তা খেয়ে নাও।
ডালিয়া ওনার কথা শোনে একটু বিস্মিত হল।অনেকদিন পর ডালিয়াকে কেউ এভাবে বাবার মত আদর করে কথা বলেছে।কারণ এ দুবছরে ডালিয়া শুধু পুরুষের রূপ দেখেছে।কিন্তু রহমত চাচার চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে তার চাওয়াতে কোন কুদৃষ্টি নেই।ডালিয়া রহমত চাচার দিকে তাকিয়ে বলল
---চাচা আমি আর কোথায় যাব বলেন।আমার যাওয়ার জায়গা নাই।থাকতে হলে যে এখানেই থাকতে হবে।আপনি চিন্তা করবেন না আমি যাব না।আপনি যান আমি নাস্তা খেয়ে নিচ্ছি।
---কথাটা শোনে স্বস্তি পেলাম মা।চিন্তা তো আর এমনেই করি না।তুমি আমাকে এটুকু বলে চিন্তা মুক্ত করলে মা।
এরপর এসব বলে রহমত চাচা চলে গেল।তারপর ডালিয়া নাস্তা করল আর ভাবতে লাগল অরণ্য কোথায় গেল।আবার ভাবল এ বাড়িতে আাসার পর সে এ বাড়িটাও ঘোরে দেখি নি।অরণ্য আাসার আগে একটু বাড়িটা ঘোরে দেখার খুব ইচ্ছা হল ডালিয়ার।ডালিয়া রুম থেকে বের হয়ে নীচে নামল।খেয়াল করল বাড়িটা বেশ গোছালো।কিন্তু ড্রইং রুমের প্রতিটা দেয়ালে লেখা পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃণিত মানুষ মেয়ে মানুষ।ডালিয়ার লেখাটা পড়ে কেন জানি না লেখাটার নীচে লিখতে ইচ্ছা করল পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃনিত মানুষ পুরুষ মানুষ।কিন্তু মন চাইলেও যে ডালিয়া এ কথাটা লিখতে পারবে না।ডালিয়া চাইলেও যে এটা লিখতে পারবে না।সে ক্ষমতা যে ডালিয়ার নেই।ডালিয়া চাইলেও কোন পুরুষকে শাস্তি দিতে পারবে না।ডালিয়া ড্রইং রূম থেকে আস্তে আস্তে উপরে উঠল।হঠাৎ ডালিয়ার চোখে একটা রুম পড়ল ডালিয়া খেয়াল করল এ রুমটা অন্য সব রূম থেকে একদম আলাদা ভাবে গোছানো।দেয়ালে খেয়াল করল একটা মেয়ের ছবি।মেয়েটা বেশ সুন্দরী।পাশের ছবিটায় খেয়াল করল একটা মহিলার ছবি দেওয়া।এর পাশের ছবিটা তিনজনের গ্রূপ ছবি।তার পাশের ছবিটা অরণ্যের সাথে মেয়েটার বেশ রোমান্টিক একটা ছবি।অরণ্য মেয়েটাকে চোখ ধরে নিয়ে কেকের সামনে নিয়ে গেছে আর ঠিক সে মুহুর্তে ক্লিক করা একটা ছবি।ডালিয়া বুঝতে পারল অরণ্য হয়ত মেয়েটাকে জন্মদিনের সারপ্রাইজ দিচ্ছিল।তার পাশে আরেকটা ছবি সেটাতে মেয়েটা অরণ্যের কান মুলে দিচ্ছিল।পাশের ছবিটার পাশেই একটা ফুলদানিতে তাজা গোলাপ আর রজনী গন্ধা রাখা ছিল।একের পর এক ছবি দেখতে ডালিয়া যেন স্বপ্নের জগৎ কল্পনা করে ফেলতেছিল।ছবিগুলা দেখে চোখের সামনে যেন রেমান্টিক মুহুর্ত গুলা ভেসে উঠল।কেন জানি না ডালিয়ার অরণ্যকে এবার অন্যরকম একটা মানুষ মনে হচ্ছিল।মনে হচ্ছে ছবিতে থাকা অরণ্য যেন একটা অন্য অরণ্য।
ডালিয়া বুঝতে পারছিল না এমেয়েটা আর মহিলাটা কে।ডালিয়া ঐরূম থেকে বের হয়ে পাশে অরণ্যের রুম টা খেয়াল করল আর দেখল অরণ্যের রুমের দরজা খোলা।ডালিয়ার কৌতুহল নিয়ে অরণ্যের রুমে গেল।সেখানে গিয়ে ডালিয়া কিছুটা বিস্মিত হল।কারন ডালিয়া খেয়াল করল সে মেয়েটার একটা বড় ছবি এখানে টানানো আর লাল কালি দয়ে ক্রস করে দাগ টানা অনেক গুলা।ডালিয়া আরও বিস্মিত হয় যে ডালিয়ার অনেক গুলা ছবি এখানে টানানো।কখন যে ঘুমের মধ্যে অরণ্য ডালিয়ার ছবি তুলে এখানে টানিয়েছে ডালিয়া টেরেই পাই নি।আরও খেয়াল করল এখান থেকে ডালিয়ার ৪ টা ছবি লাল কালি দিয়া ক্রস টানা আর ৬ টা ছবিতে এখনও কোন দাগ টানা হয় নি।আরও অবাক হল ডালিয়া খেয়াল করল তার লম্বা চুল গুলাও এখানে দেয়ালে টানানো।ডালিয়া কিছুটা বিস্মিত হল।হঠাৎ রহমত চাচার ডাকে ডালিয়ার ঘোর কাটল।
---ডালিয়া তুমি এ রুমে কি করছ?অরণ্য জানলে তেমাকে শেষ করে দিবে।
---নাহ চাচা হাঁটতে হাঁটতে চলে এসেছি।আচ্ছা চাচা অরণ্য এমন কেন করে।তার রুমে এসব কি?
---দেখ মা অরণ্য যদি জানতে পারে আমি তোকে কিছু বলেছি তাহলে খুব কষ্ট পাবে।শুধু এটা জেনে রাখ ও খুব কষ্ট পেয়েছে।পারলে ভালোবাসা দিয়া পাগলটাকে মানুষ বানা।আর এখন তোর রুমে যা আর ভুলেও এ রুমে আসবি না।
ডালিয়া রহমত চাচার কথা শোনে তাড়াতাড়ি নিজের রুমে চলে গেল।কিন্তু ডালিয়া বুঝতে পারছিল না ঐ মেয়ে দুইটা কে?কেনই বা অরণ্য ঐ মেয়ের ছবিতে লাল দাগ টেনেছে।আর ঐ মহিলাটায় বা কে?আর তার নিজের ৪ টা ছবিতে কেন দাগ টানা তাও বুঝত পারল না।বেশ বিচক্ষণ থাকার দরুণ খানিকক্ষণ ভাবার পর ডালিয়া বুঝতে পারল অরণ্য তাকে ৪ বার আঘাত করেছে আর এজন্য হয়ত তার ৪ টা ছবিতে দাগ কাটা।ডালিয়া বেশ বুঝতে পারল কোন একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করেই হয়ত অরণ্যের মেয়েদের প্রতি ঘৃণা জন্মল গেছে।কিন্তু কি ঘটনা।ডালিয়া চিন্তায় অস্থির হয়ে গেল।সারাদিন ভেবেও কোন কূল কিনAttention
সমস্ত ঘটনা জানবে কিভাবে তাও বুঝতে পারল না।
পরদিন ঘুৃম থেকে উঠে দেখল অরণ্য চলে এসেছে আর বসে টিভি দেখছে।ডালিয়া অরণ্যের সামনে গিয়ে দাড়াল। অরণ্য কিছুটা অবাক হল ডালিয়াকে দেখে।আর দেখে বলল
---তুমি পালিয়ে যাও নি?আমি তে ভেবেছি তুমি পালিয়ে গেছ।আমি তো তোমাকে পালানেোর সুযোগ করে দিছিলাম।তাহলে পালালে না কেন?এখানে থাকলে যে তোমাকে অনেক কষ্ট পেতে হবে ডালিয়া।এ আগের মেয়েটাও পালিয়ে গিয়েছিল।
ডালিয়া অরণ্যের কথাগুলো শোনে কিছুটা অবাক হল।এরকম শান্ত গলায়া কথা বলছে অরণ্য।আবার কোন মতলব আছে কি না সেটাও ভাবতে লাগল।কিন্তু অরণ্যের চোখের দিকে তাকিয়ে ডালিয়ার কেন জানি না মনে হচ্ছিল অরণ্য এবার কোন মতলব আটে নি।তাই শান্ত স্বরে ডালিয়া উত্তর দিল
---আমি কোথায় যাব বলুন।অনেক কষ্ট পেলেও যে আমাকে এখানেই থাকতে হবে।আপনি মেরে ফেললে ও আমাকে এখানে থাকতে হবে।আমার যে পালানোর জায়গা নাই অরণ্য বাবু।এ জীবন থেকে কতবার পালনোর চেষ্টা করেছি কিন্তু বারবার ব্যার্থ হয়েছি।এ জীবন থেকে পালানোর কোন জায়গা নেই।
এবার ডালিয়ার কথা শোনে অরণ্যের একটু মায়া হল।কিছুটা কৌতুহল নিয়ে ডালিয়াকে জিজ্ঞেস করল
---আচ্ছা তুমি এ পেশায় এসেছ কেন?
---ইচ্ছা করে কি কেউ এ পেশায় আসে বাবু।সে এক বড় কাহিনী।
---বল শোনি।
--আপনি সত্যিই কি শোনবেন?
---হ্যা বল।
তারপর ডালিয়া প্রথম থেকে ঘটে যাওয়া তার জীবনের কাহিনী বলল।অরণ্য তার কাহিনী শোনে কিছুটা থমকে গেল।ডালিয়া সমস্ত কাহিনী বলে অরণ্যকে বলতে লাগল আমারও লিখতে মন চায় পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃনিত মানুষ পুরুষ মানুষ।অরণ্য এবার ডালিয়ার চোখ দুটো মুছতে লাগল।অরণ্যের এমন আচরণ ডালিয়াকে কিছুটা অবাক করল।ডালিয়ার মনে হল অরণ্যের ময়েদের প্রতি এত ঘৃণা কেন সেটা এখন জিজ্ঞেস করলে হয়ত জানতে পারবে।ডালিয়া অরণ্যকে বলল
---আপনি মেয়েদের এত ঘৃণা কেন করেন বলবেন?
---তুমি কি সত্যিই জানতে চাও।
---হ্যা জানতে চায় বলুন।
---তাহলে শোন.....
#পতিতা পল্লী
৬ষ্ঠ পর্ব
---তাহলে শোন।মা,বাবা নিয়ে আমাদের ছোট্র সংসার ছিল।তখন এত বড়লোক ছিলাম না।বাবার এত টাকাও ছিল না।বাবা ছোটখাট একটা সরকারী চাকুরী করত।ভালোভাবেই দিন কাটতেছিল আমাদের।আমি তখন ক্লাস টু তে পড়ি।কিন্তু "মা" বাবার প্রতি মোটেও সন্তুষ্ট ছিল না।বাবাকে সবসময় "মা" বলত
---তোমার সংসারে থেকে আমি কিছুই পাই নি।তোমার পোস্টে থেকে অন্যরা ঠিকেই অনেক টাকার মালিক হয়েছে আর তুমি কিছুই করতে পারলে না।শাদাফের মা কে শাদাফের বাবা হীরার আংটি, নেকলেস কিনে দিয়েছে আর তুমি আমাকে হীরে তো দূরে থাক স্বর্ণ ও কিনে দিতে পারনি।
---ওদের মত অসৎ উপায়ে টাকা ইনকাম করি না।আর এসব টাকাই শান্তি নাই অরণ্যের মা।শুধু শুধু তুৃমি লোভ কর না।আমরা শান্তিতে আছি এটাই অনেক।
---হ্যা এখন তো বলবাই আমি লোভ করি।তুমি যদি আমাকে এসব না এনে দিতে পার আমি তোমাকে তালাক দিব বলে দিলাম।দুনিয়ায় এত ভালোভাবে চললে হয় না।
বাবা দিনের পর দিন মায়ের এমন উস্কানিমূলক কথা শোনত।এসব শোনতে শোনতে বাবা অতিষ্ট হয়ে যেত।এদিকে মা ও বাবার প্রতি ক্ষেপে তালাক দিতে চাইল।মাকে কাছে রাখতে আর আমার জন্য বাবা ঘুষ খাওয়া শুরু করে।একের পর এক ঘুষ খেত আর অনেক টাকা ইনকাম করত।অল্পদিনেই বাবা অনেক টাকার মালিক হয়ে গেল।বাবার বাড়ি গাড়ি সব হয়ে গেল।কিন্তু এতেও মায়ের শান্তি ছিল না দিন দিন মায়ের লোভ বাড়তে থাকল।মায়ের লোভের জোগান দিতে গিয়ে বিভিন্ন অন্যায় কাজ করে টাকা কামাতে লাগল।আর একদিন ঘুষ খাওয়ার অপরাধে চাকুরীচ্যুত হল।সেদিন বাবা ঘরে এসে চুপ করে বসে ছিল।বুঝতে পেরেছিলাম বাবা সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিল।যে বাবা সবসময় সততার বাণী দিত আজ সে বাবাই ঘুষের জন্য চাকুরী চ্যুত হল।বাবা এক জায়গায় চুপ করে বসে নীরব হয়ে ছিল।বাবাকে দেখে আমি বাবার কাছে যায় বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে সেদিন চুপ করে ছিল।আর মা শাত্ননার পরিবর্তে বলেছিল
---হয়েছে হয়েছে এসব নিয়ে মন খারাপ করতে হবে না।আমাদের ৭,৮ ফ্যাক্টরি আছে ঐগুলা সামলাও।এরকম ঘুষ খেয়ে অনেকেই চাকুরীচ্যুত হয়।এমন মন খারাপ হয়ে বসে থাকলে চলবে না।ব্যাবস্যা বাড়াও।
বাবা শুধু নীরবে কথাগুলা শোনে গিয়েছিল।আর মায়ের সুখের জন্য সব ভুলে আগের মত মন দিয়ে ব্যাবসা করতে লাগল।আমি তখন ক্লাস ফাইভে পড়তাম মাকে সবসময় কাছে পেতাম না।মা ক্লাব নিয়েই পড়ে থাকত। টাকার পাহাড়ে মা যেন আর মা ছিল না।প্রয়োজনেও মা আমার খবর নিত না।আমার সব দায়িত্ব পালন করত রহমত চাচা।মাকে প্রায়ই খেয়াল করতাম একটা লোকের সাথে ঘোরাফেরা করত।মাঝে মাঝে বাসায় নিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিত।বুঝতে পারি নি মা কি করছে তবে বুঝতে পারতাম মা যা করছে খারাপ করছে।মায়ের এরকম কর্মকান্ড চলতেই থাকল।আমি তখন ক্লাস সিক্স এ উঠি একদিন ক্লাস শেষ করে এসে দেখি মা,আর বাবার মাঝে তুমুল জগড়া।মা বাবাকে রেখে সেদিন সে পরপুরুষের হাত ধরে চলে গিয়েছিল।আর বাবা মাকে আটকানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু মা কথা শোনে নি।বাবাকে ছাড়ার একটা কারণেই ছিল ঐ লোকটার টাকা পয়সা বাবার থেকে বেশি ছিল।সেদিন মা আমার দিকেও তাকায় নি।আমাকে ফেলে চলে গিয়েছিল।মা চলে যাওয়ার পর বাবা অনেকটা চুপ হয়ে গিয়েছিল।বাবাকে সবসময় দেখতাম অস্থির থাকত।একটা বছর বাবা পাগলের মত করেছে।হঠাৎ একদিন বাবা আমার রুমে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল
---বাবা আমি চলে গেলেও তুই ভালো থাকিস।আর এটা মনে রাখিস মেয়ে মানুষ ছলনাময়ী হয়।ওদের সব দিলেও ওদের মন পাওয়া যায় না রে।
---বাবা তুমি এভাবে কষ্ট পেও না আমার ভালো লাগে না।
---না রে বাবা আর কষ্ট পাব না কষ্টটারে যে ছুটি দিয়ে দিব।
বাবা সেদিন কি বুঝাতে চেয়েছিল জানি না।সপ্তম শ্রেনীতে পড়তাম তখন।আবার এত বড় কথার মানে বুঝে নি তখন।সকালে উঠে দেখলাম বাবার রুমের দরজা আটকানো।রহমত চাচা আর আমি অনেক ডাক দিলাম বাবা উঠল না।শেষ মেষ দরজা ভেঙ্গে ঢুকে দেখলাম আমার বাবা ঝুলতেছে।বাবাকে দেখে বুকের ভিতরে হাহাকার শুরু হল।পাশে একটা চিঠি ছিল আর সেটাতে লিখা ছিল"মেয়ে মানুষ মেয়ে না ছলনাময়ী এক বিষাক্ত জাল।"
বাবার লাশ টা পুলিশে নিয়ে গেল ময়না তদন্ত করে ফেরত দিল।বাবাকে দাফন করে রুমে ঢুকলাম খেয়াল করলাম বাবার উকিল দাঁড়িয়ে আছে।ওনি বলল সম্পত্তির অর্ধেক আর ব্যাংকের টাকা লিখে দিয়ে গেছে আমার নামে।আমি প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর সেগুলা পাব আর সে পর্যন্ত আমার দায়িত্ব নিবে রহমত চাচা আর সব সামলাবে রহমত চাচা।আর বাকি অংশ লিখে গেছে আশালতা মানে আমার মায়ের নামে।সেদিন খুব অবাক হয়েছিলাম এটা ভেবে বাবাকে এত কষ্ট দেওয়ার পর ও মাকে সম্পত্তি লিখে দিছে এজন্য।মা ঠিকেই বাবার সম্পত্তি নিতে এসেছিল কিন্তু আমার দিকে ফিরেও তাকায় নি।কতটা স্বার্থপর হলে এমন করতে পারে সেদিন আমি বুঝেছিলাম
বাবার খুব শখ ছিল আমি ডাক্তার হই।তাই আমি পড়াশোনায় অনেক মনযোগ দেই।আর এদিকে রহমত চাচা সব সুন্দর ভাবে সামলানো শুরু করে।রহমত চাচায় ছিল আমার বাবা আর মা।আমিও মেডিকেলে চান্স পাই।মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার পর হঠাৎ ক্লাসে একটা মেয়ের উপর চোখ গেল খেয়াল করলাম মেয়টার চোখ গুলা বেশ সুন্দর আর টানা টানা।মেয়েটাকে দেখেই ভালো লেগে গিয়েছিল। খোজ নিয়ে জানতে পারি মেয়েটার নাম মাবিহা।মাবিহাকে দেখেই আমি হারিয়ে যেতাম স্বপ্নের রাজ্যে।মাবিহা লুকিয়ে ফলো করতাম।খুব ইনট্রোভার্ট হওয়ার কারনে মাবিহাকে তেমন কিছু বলতে পারতাম না খালি তাকিয়ে থাকতাম।একদিন কলেজ ফাংশনে খেয়াল করলাম মাবিহা নীল শাড়ি পরেছে কপালে নীল টিপ আর ঠোঁটে গাড় লাল টুকটুকে লিপস্টিক।মাবিহাকে দেখেই হা করে তাকিয়ে ছিলাম।খেয়াল করলাম মাবিহা আমার দিকেই আসছে। মাবিহা যতই আমার কাছে আসছিল ততই হার্টবিটটা যেন বেড়ে যাচ্ছিল।হঠাৎ মাবিহা আমার কাছে এসে বলল
---মনে হচ্ছে ইদানিং তোমার সাথে আমার দেখাটা অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে।আচ্ছা ফলোটা কি তুমি আমাকে বেশি করছ নাকি আমি তোমাকে?
আমি ভিতরে ভিতরে একরাশ হাসি দিয়ে শান্ত গলায় বললাম
---মনে হয় আমিই করেছি।আমি কোন ভুল করে থাকলে সরি।
---আরে বোকা ভুল কেন করবা কেন।আমার তো বেশ ভালোই লাগে।আচ্ছা তোমার নাম যেন কি?
---অরণ্য।
---বাহ খুব সুন্দর নাম তো।আমার নাম কি জান নাকি খোজ নিয়ে জেনে ফলেছ?
---নাহ মানে জানি।তোমার নাম মাবিহা।
---আরে এত লজ্জা পাচ্ছ কেন?লজ্জা পেলে তোমাকে খুব কিউট লাগে।আচ্ছা তোমার নাম্বারটা কি বলতো।
মাবিহা আমার নাম্বার চাচ্ছে মনে হচ্ছে কোন স্বপ্ন দেখছিলাম।আমার হার্টভিট টা যেন আরও বেড়ে চলল।মনে যে কত কিছু ঘুরতে লাগল।আনন্দের চুটে নাম্বারটাও মুখ দিয়ে বের হচ্ছিল না।তবুও নিজেকে সামলিয়ে মাবিহাকে নাম্বার দিলাম।কিন্তু মাবিহার নাম্বার নেওয়ার সাহস হলনা।কলেজ ফাংশন থেকে এসে শুধু মাবিহার কথায় ভাবতে লাগলাম।হঠাৎ একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসল।অনেকটা আগ্রহ নিয়ে কলটা ধরলাম বাবলাম হয়ত মাবিহা কল দিয়েছে।নাহ কলটা কাস্টমার সার্ভিস থেকে ছিল।এরপর আাবার কল আসল একটা নাম্বার থেকে আমি ধরলাম এবার ফোনের ওপাশ থেকে একটা সুরেলে কন্ঠ বলে উঠল
---অরণ্য আমি মাবিহা।কেমন আছ?
---হুম ভালো আছি তুমি?
---ভালো আছি।
কিছুক্ষণের মধ্যেই মাবিহার সাথে আমার কথা বেশ জমে গেল।অল্প সময়েই মাবিহা বেশ আপন করে নিল।মাবিহার সাথে একের পর এক কথা হতে লাগল।আমাদের বন্ধুত্ব টাও বেশ জমে গেল।হঠাৎ একদিন মাবিহা রাত ১২ টায় ফোন দিয়ে বলল
---অরণ্য এখনি আমার হোস্টেলের নীচে আস তো।
---কিন্তু মাবিহা মেয়ে হোস্টলে ঢুকব কিভাবে?
---আরে হোস্টেলের সামনে আস, আমি বের হচ্ছি।
---কেন তোমার কি কিছু হয়েছে।তোমার কি কোন সমস্যা হয়েছে নাকি।
---আরে তুমি একটু বেশিই ভাবছ আস তো আগে।
বুঝতে পারলাম না মাবিহা কেন ডাকছে।কোনরকমে রেডি হয়ে মাবিহার হোস্টেলের সামনে গেলাম।গিয়ে মাবিহাকে কল দিলাম।নাম্বারটা বন্ধ দেখাচ্ছে।আমি চিন্তায় অস্থির হয়ে ঘামতে লাগলাম।হঠাৎ পিছন থেকে কেউ একজন আমার চোখ চেপে ধরল।আমি বুঝতে পারলাম না কে আমার চোখটা চেপে ধরল।চোখ ধরে বলল
---বলতো আমি কে?
কন্ঠটা শোনে বুঝতে পেরেছিলাম এটা মবিহা ছাড়া আর কেউ না।আমি বললাম
---কে আর হবে তোরা নামে কোন একটা মেয়ে।
মাবিহা এবার চোখটা খুলে বেশ রেগে গেল আর বলল
---তোরাটা কে শোনি।আমাকে রেখে এখন তোরাকে মিস করা হচ্ছে।
---আরে ধুর কি যে বলনা।তোমাকে রাগানোর জন্য বললাম।তা বল কেন ডেকেছ?
মাবিহা এবার আমার হাতে এক গুচ্ছ রজনী গন্ধা ধরিয়ে দিয়ে বলল
---মনের কথা আর কত চেপে রাখবা প্রপোজটা কি তুমি করবা নাকি আমি
আমি এবার বেশ লজ্জায় পাচ্ছিলাম।মাবিহার হাত থেকে রজনী গন্ধাটা নিয়ে মাবিহাকে বলে উঠলাম
--- মাবিহা আই লাভ ইউ।
তখনি খেয়াল করলাম আশেপাশে সবাই এসে হাজির আর ট্রিট এর জন্য বায়না ধরল।আমিও সবাইকে পরদিন ট্রিট দিলাম।আস্তে আস্তে আমাদের প্রেমটা বেশ জমে গেল।মাবিহাকে সবসময় খুশি করার চেষ্টা করতাম।মাবিহা রাগ করলে ওর রাগ ভাঙ্গানোর জন্য কত কিনাই করতাম।ভালোই জমে গেল আমাদের প্রেম টা।
এর মধ্যে মেডিকেল পড়া শেষ করলাম ডাক্তার হলাম।অল্প দিনের মধ্যেই আমি বেশ পরিচিতি পেয়ে গেলাম।অল্পদিনে এত ভালো পরিচিতি দেখে অনেকে আমাকে হিংসাও শুরু করতে লাগল।এবার মাবিহাকে বিয়ে করার পালা।মাবিহাকে বললাম।মাবিহা লাজুক স্বরে উত্তর দিল
---চাচাকে পাঠাও আমি রাজি।
চাচা মাবিহার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেল আর মাবিহার মা, বাবাও মেনে নিল।খুব ধূমধামে আমাদের বিয়েটা হল।একমাস পরেই মাবিহার জন্মদিন ছিল।আমি মাবিহা কি উপহার দিলে খুশি হবে বুঝতে পারছিলাম না।অবশেষে মাবিহার জন্য ছোট ছোট জিনিস দিয়ে একটা ঘর সাজালাম।মাবিহাকে রাত ১২ টায় চোখ বন্ধ করে ঐ রুমে নিয়ে গেলাম।মাবিহার চোখ খোলে এসব দেখে বেশ খুশি হল।আমাকে জড়িয়ে ধরে সেদিন বলল
---আমি অনেক খুশি হয়েছি।কিন্তু আমি চায় তুমি আমাকে তোমার থেকে ২ টা বাড়ি লিখে দাও যাতে আমি গর্ব করে বলতে পারি আমার স্বামী আমাকে বার্থ ডে তে বাড়ি গিফট করেছে।
মাবিহার কথাটা শোনে কোনরূপ সন্দেহ ছাড়াই আমি ওকে বাড়ি লিখে দেয়।এর ঠিক এক মাস পরেই মাবিহা আমাকে বলল
---অরণ্য এই নাও ডিভোর্স পেপার সাইন দিয়ে দাও।আর আমার কাবিনের সব টাকা আমাকে দিয়ে দাও।
মাবিহার কথা শোনে আমার যেন মাথায় আাকাশ ভেঙ্গে পড়ল।মাবিহা হঠাৎ কি বলছে এসব।হয়ত মজা করছে
---মাবিহা মজা কর না তো।এসব মজা আমার পছন্দ না তুমি জান তো।তাহলে মজা করছ কেন।
---অরণ্য আমি সিরিয়াস।আমাকে ডিভোর্স দাও।
---মাবিহা এসব বলার মানে কি।কিজন্য তুমি আমাকে ডিভোর্স দিবা।কি কমতি রেখেছি তোমার।তুমি যা চেয়েছ দিয়েছি।তাহলে কেন?তোমাকে কি দেয় নি বল?
---আমি জানি তুৃমি আমাকে পাগলের মত ভালোবাস।জানি আমার জন্য তুমি অনেক করেছ।কিন্তু এছাড়া আমার কোন উপায় নাই।আমাকে ভালোবাসলে আমাকে ডিভোর্স দাও।
---কিন্তু কেন?
তারপর মাবিহা যা বলেছিল আমি আমার কানকেও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।কারন ময়ে মানুষ এতটা স্বার্থপর ও হতে পারে জানা ছিল না।মাবিহা বলেছিল.....
#পতিতা পল্লী
৭ম পর্ব
মাবিহা বলল
---অরণ্য আমি তোমাকে কখনও ভালোবাসি নি।আমি তো ভালোবাসি আকাশকে।আমি আকাশকে বিয়ে করব।তোমার সাথে যা ছিল সেটা একটা সাজানো নাটক।
---সাজানো নাটক মানে?
---হ্যাঁ সাজানো নাটক।আমি কলেজে পড়ি সময় আকাশকে ভালোবাসতাম।আকাশ ও আমাকে ভালো বাসত।কিন্তু আমাদের ভালোবাসার মধ্যে একটাই সমস্যা ছিল তা হল টাকা।আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছিলাম আর আাকাশের পরিবার ছিল নিম্নবিত্ত।তার উপর আকাশ পড়াশোনা করা ছিল না এত।স্টুডেন্ট ভালো ছিল না।অপরদিকে আমি মেডিকেলে পড়তাম।আকাশকে আমার পরিবার কোনভবেই মেনে নিবে না বুঝতে পারছিলাম।আর আমিও আকাশকে ছাড়া বাঁচব না।আমাদের রিলেশনে একমাত্র বাধা ছিল টাকা।দুজনেই খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম।এটা নিয়া দুজনের মধ্যে জামেলা হত।কি করব বুঝতে পারছিলাম না।এত টাকা কিভাবে পাব তাও বুঝতে পারছিলাম না।এটা বুঝতে পারছিলাম আমাদের ভালো থাকার জন্য টাকার খুব দরকার।
হঠাৎ একদিন খেয়াল করলাম তুমি আমাকে ফলো করছ।আমার দিকে তাকিয়ে থাক।বুঝতে পেরেছিলাম তুমি আমাকে ভালোবেসে ফেলেছ।তোমার খোঁজ নিলাম জানলাম তুমি এক বাবার এক ছেলে। বাবা,মা নেই অনেক টাকা পয়সার মালিক।আমি আকাশকে বললাম
---আকাশ জানো আমাদের মেডিকেলের এক ছেলে আমাকে মনে হয় পছন্দ করে।সারাদিন ফলো করে।আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।ছেলেটার নাম অরণ্য।খোজ নিয়া জানলাম বাবার নাকি অনেক টাকা।ছেলেটা খুব বোকাসোকা জানো।
আকাশ আমার কথা শোনে একরাশ হাসি দিয়ে বলল
---তাহলে তো আমাদের কপাল খোলে গেছে।
---কপাল খোলে গেছে মানে?
---আমি যা বলি তুমি তাই করলেই হবে।আমার কথাটা শুধু মন দিয়া শোন যদি আমাকে না হারাতে চাও।
---হ্যাঁ বল কি করতে হবে।তোমার জন্য আমি সবটা করতে পারব।তবুও তোমাকে হারাতে চায় না।
---তাহলে শোন তুমি ছেলেটার সাথে জাস্ট প্রেমের নাটক কর।যত পার তাকে ইমোশন কর।আর তার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে যত পারে টাকা নাও।যেহুত বড়লোক আর বাবা,মা নেই বোকা আর সবচেয়ে বড় কথা হল তোমার প্রতি দুর্বল সেহুত টাকা আদায় করতে সমস্যা হবে না।আর আমাদের ও প্রবলেম সলভ।
---তুমি যা বলবা তাই হবে।তবুও তোমাকে হারাতে পারব না।আমিযে তোমায় বড্ড ভালোবাসি।
তারপর আাকাশের কথা মত কলেজ ফাংশন এর দিন তোমার সাথে কথা বলে নাটক করা শুরু করি।একের পর এক নাটক করি।আকাশ ছিল নাটকের লেখক আর আমি ছিলাম অভিনেত্রী।তোমার কাছ থেকে একের পর এক বায়না করতাম আর তুমি আমার সে বায়না পূরণের জন্য মরিয়া হয়ে উঠতে।তোমার থেকে টাকা নিয়ে আকাশের সাথে ডেটে যেতাম।কিন্তু সমস্যা ছিল যে বিয়ের আগে তো তোমার কাছ থেকে বাড়িঘর লিখে নেওয়া যাবে না।তাই দুজন ঠিক করলাম বিয়ে ঠিক হলে বাড়ি লিখে নিব আর বিয়ের দিন তুমি যা গয়না দিবে তা নিয়ে পালিয়ে চলে যাব।
তাই তুমি বলার সাথে সাথে বিয়েতে রাজি হয়ে যায়। কিন্তু বাড়ি লিখে নিতে পারি নি তখন।তাই ভাবলাম গয়না নিয়েই পালাব।কিন্ত বিয়ের আগের দিন আাকাশ বলল
---আমাদের এ গয়না দিয়ে কিছুি হবে না।তুমি বিয়েটা করে নাও।
---মানে আাকাশ আমি তোমাকে ভালোবাসি।অরণ্যকে কেন বিয়ে করব?পাগল হয়ে গেছ তুমি?
---আরে বোকা বিয়ে না নাটক করবা।নাটক করে বিয়ে করে অরণ্যের কাছ থেকে সুযোগ বুঝে দুইটা বাড়ি লিখে নিবা।তাহলে আমাদের জীবনে আর টাকার কষ্ট থাকবে না।
আমিও আকাশের কথায় রাজি হয়ে গেলাম।বিয়ে করে ফেলালাম তোমাকে।বিয়ের পর সুযোগ খুজতে লাগলাম কখন তোমার কাছ থেকে দুইটা বাড়ি লিখে নিব।কিন্তু আমি সুযোগ বের করার আাগেই তুমি সুযোগ বের করে দিছ।আমার জন্মদিনে আমাকে সারপ্রাইজ দিয়েছ।আর আমিও এ সুযোগটা কাজে লাগিয়ে তোমার কাছ থেকে বাড়ি লিখে নিই।কিন্তু বাড়ি বিক্রি করতে আর ডিভোর্স পেপার রেডি করতে আর আকাশকে বিয়ে করতে আরও একমাস দেড়ি হয়।আর আজকে সব কাজ সম্পন্ন হল তাই তোমাকে জানালাম।আর শোন তুমি ডিভোর্স না দিলেও তিনমাস পর এমনি ডিভোর্স হয়ে যাবে।আর আমি আকাশকে বিয়ে করে নিয়েছি।আনরা বিদেশ চলে যাব।ও কিছুক্ষন পর আসবে ওর সাথে চলে যাব আমি।
---মাবিহা এসব কি বলছ এতদিনের ভালোবাসা আর স্মৃতি সব মিথ্যা আর সব নাটক।বিবেকে বাঁধল না আমার সাথে এত বড় নাটক করতে।আমি কি ক্ষতি করেছিলাম তোমার।
---তোমাকে যা বলেছি ঠিক বলেছি।তুমি কোন ক্ষতি কর নি কিন্তু আমাদের ভালোবাসার পূর্ণতার জন্য তোমাকে এটুকু কষ্ট দিতেই হত।তা না হলে আমরা ভালো থাকতাম না।
---তাই বলে এত বড় ধোঁকা এত বড় ছলনা।পারলে কি করে?আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি তুমি তো জান।কেন আমাকে এভাবে কষ্ট দিলে
---সরি অরণ্য এছাড়া আর কোন উপায় ছিল না।মনে কষ্ট নিও না।আর একটা সুসংবাদ দেই তোমার কাছে এটা সুসংবাদ কি না জানি না তবে আমার কাছে সুসংবাদ।বিয়ের ১ মাস পরেই জানতে পারি তোমার আর আমার বাচ্চা আমার পেটে এসেছে। ১৫ দিন আগে আমি আর আকাশ মিলে ঐটাকে নষ্ট করে দেই।
---এত বড় অন্যায় তুমি কিভাবে করলে মাবিহা।মা হয়ে নিজের বাচ্চা নষ্ট করতে কেমনে পারলে।
---কিচ্ছু কারার নেই আকাশের জন্য আমি সব করতে পারি।আকাশ চলে আসবে।আমি ওর সাথে চলে যাব।
হঠাৎ টুংটাং কলিংবেলের আওয়াজ শোনা গেল।মাবিহা দরজা খুলল। খেয়াল করলাম একটা ছেলে এসেছে।মাবিহা তাকে জড়িয়ে ধরে আমার কাছে আনল আর বলল
---অরণ্য এ আকাশ আমার স্বামী।আর আকাশ তুমি তো অরণ্যকে চিনই।
আকাশ একটা বিদঘুটে হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকাল আর বলল
---হাই ব্র জীবনে চড়াই উতরাই আসেই।আপনার জন্য আমাদের ভালোবাসা আজকে পূর্ণতা পেল।কিন্তু ব্র ভালোবাসায় অন্ধ হলেই হয় না।আর ভালোবাসা পেতে হলে বুদ্ধি লাগে টাকা আর কোয়ালিটি দিয়ে কিচ্ছু হয় না।আমি মাবিহাকে নিয়ে গেলাম ভালো থাকবেন।
এ বলে তারা চলে গেল।সেদিন আমি কতটা কষ্ট পেয়েছিলাম আমি জানি শুধু।এতটা কষ্টই পেয়ে ছিলাম যে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছিলাম।ধাক্কাটা সামলাতে অনেক সময় লাগল।তারপর আবার কাজে মনযোগ দিলাম।মাবিহার জন্য একটা হাহাকার ছিল তবুও।একদিন হাসপাতালে কেউ ছিল না আমি ছাড়া।হঠাৎ খেয়াল করলাম একটা মেয়ে আসল আর বলল
---ডাক্তার সাহেব আমার পেটে খুব ব্যাথা একটু আল্ট্রা করে দেখেন না কি হয়েছে।পেটের ব্যাথায় নড়তে পারছি।
মেয়েটার কান্না দেখে বুঝতে পারলাম মেয়েটা হয়ত অনেক কষ্ট পাচ্ছে পেটের ব্যাথায়।কিন্তু এ মুহুর্তে হাসপাতালে কোন মহিলা মানুষ নেই ওনাকে একা আল্ট্রা রুমে নিয়ে কি করে যায়।সারা হাসপাতালে একটা মহিলা নার্স ছিল না তখন।আমি বাধ্য হয়ে ওনার কান্না দেখে একাই আল্ট্রা রুমে নিয়ে যায়।আল্ট্রা রুমে নিয়ে যাওয়ার পর উনি হঠাৎ দরজা লাগিয়ে দিল।আর বাঁচাও বাঁচাও করে চিৎকার দিতে লাগল।আমি বুঝতে পারছিলাম না ওনি এমন কেন করছে।আমি ওনাকে বললাম
----আপনি এমন কেন করছেন?আমি তো কিছু করি নি।আমাকে এভাবে ফাঁসাচ্ছেন কেন।
উনি আরও জোরে চিৎকার করতে লাগল।আমিও ভয় পেতে লাগলাম ওনি এমন কেন করছেন এটা ভেবে।ভয়ে রুমের দরজা খুলে ফেললাম।দেখলাম আমার কলিগ দাঁড়ানো আরও কিছু লোক সাথে।আমার কলিগ বলে উঠল
--ছিঃ অরণ্য সাহেব আপনি এমন কাজ করলেন?
---দেখুন আমি কিছু করে নি আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।
---আপনি যে কিছু করেন নি তা তো বুঝতেই বা দেখতেই পারছি.।আপনার বউ আপনাকে এজন্যই ছেড়ে গিয়েছে তাই না।
সেদিন আমার কথা কেউ বিশ্বাস করে নি।আমার নামে ধর্ষনের মামলা করা হল।হাসপাতালের এক নার্সকে জিজ্ঞেস করেছিল আমি কেমন?।ওনিও সেদিন মিথ্যা সাক্ষী দিয়েছিল বলেছিল
---আমি এতদিন ভয়ে মুখ খুলে নি।এ অরণ্য সাহেব আমাকে অনেকবার কুপ্রস্তাব দিয়েছে।অনেকবার আমাকে ব্যাবহার করার চেষ্টা করেছে।ওনি একজন বদমাইশ লোক।ওনার যোগ্য শাস্তি কামনা করছি।
আমি সেদিন বুঝতে পারছিলাম না ওনি কেন আমার নামে এমন মিথ্যা বলল।যে আমি মাবিহাকে ছাড়া কোন মেয়ের দিকে তাকায় নি সে আমাকে এতটা দোষারূপ করল।আমাকে ধর্ষনের জন্য শাস্তি দেওয়া হল।পত্রিকায় বড় করে হেডলাইন দেওয়া হল এক অবহেলিত মেয়েকে ধর্ষনের দায়ে ডাক্তার অরণ্যকে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে।ধর্ষক হিসেবে আমার ছবি ছাপা হল।আমাকে চাকুরীচ্যুত করা হল।দুই বছরের জেল দেওয়া হল।
পরে জানতে পারি আমার কলিগ ওদেরকে দিয়ে আমাকে ফাঁসিয়েছে কারন আমার পরিচিতি বেশি ছিল রোগীরা ওর থেকে বেশি আমার কাছে আসত।এজন্য মেয়ে দুইটারে টাকা দিয়ে এ কাজ করিয়েছে।হায়রে টাকা! সামান্য কয়টা টাকার জন্য মেয়ে দুইটা আমার জীবনটা নষ্ট করে দিল।আমার মানসম্মান সব শেষ করে দিল।বাইরে মুখ দেখাতেও আমার এখন কষ্ট হয়।কি দোষ ছিল আমার?আমার নিজের মা আমাকে ছেড়ে গেল।আমাকে ছেড়েই যদি যেতে হত আমাকে জন্ম কেন দিল?কি ক্ষতি করেছিলাম আমি তাদের?আমার ভালোবাসা আমাকে ধোকা দিল।কিভাবে পারল একটা মেয়ে শুধু মাত্র টাকার জন্য আমার সাথে এত বড় ছলনা করতে।কিভাবে পারল আমাকে কষ্ট দিতে।কিভাবে পারল আমার বাচ্চাটা আসার আগেই খুন করতে?আমার দোষটা কোথায় ছিল?ভালো ডাক্তার হয়ে ও আমি আজকে চাকুরীচ্যুত।ধর্ষণ না করেও আমি আজকে ধর্ষক।দোষটা আমার কোথায় ছিল?এ সব কিছুই হয়েছে ছলনাময়ী নারীদের জন্য।আমি দেখেছি নারীর রূপ গুলো।নারীরা শুধু ঠকাতে জানে।ছলনা করতে জানে।বাবা ঠিকেই বলেছিল নারী হল এক "ছলনাময়ী বিষাক্ত জাল"। আজকে এ কথার মানেটা ঠিকেই বুঝেছি।এখন কোন নারীকে আমার সহ্য হয় না।কোন নারী কষ্ট পেতে দেখলে আমার শান্তি লাগে।নারী আমার কাছে ঘৃনিত বস্তু ছাড়া আর কিছু না।তোমার আগেও একটা মেয়েকে এনেছিলাম সেও পালিয়ে গেছে।তোমাকে ও সুযোগ দিয়েছিলাম পালানোর তুমি পালাও নি।তাই এত কিছু তোমাকে বললাম।
ডালিয়া অরণ্যের কথা শোনে বেশ অবাক হল।অরণ্যের মনে যে এত কষ্ট লুকানো ছিল ডালিয়া বুঝতেই পারে নি।ডালিয়ার সবসময় মনে হত পুরুষ মানুষ জন্তু আর জানোয়ার আর এখন অরণ্যের কথা শোনে মনে হচ্ছে মেয়ে মানুষ ও কম না।ভালোই বুঝতে পারছিল অরণ্য বারবার প্রতারণার স্বীকার হয়েছে।আর এসব বিশ্বাসঘাতকতা আর প্রতারণা অরণ্যকে এমন বানিয়েছে।হাঠাৎ ডালিয়া খেয়াল করল অরণ্য একটা বিদঘুটে হাসি দিচ্ছে।ডালিয়া ভয় পেয়ে গেল অরণ্য এভাবে কেন হাসছে।ভয়ে ভয়ে ডালিয়া অরণ্যকে বলল
---অরণ্য বাবু এভাবে হাসছেন কেন?
অরণ্য ডালিয়ার কথা শোনে দৌঁড়ে রান্না ঘরে গেল আর রান্না ঘর থেকে এসে ডালিয়ার...
#পতিতা পল্লী
৮ম পর্ব
অরণ্য ডালিয়ার কথা শোনে দৌঁড়ে রান্না ঘরে গেল আর রান্না ঘর থেকে এসে একটা গরম খুন্তি ডালিয়ার পিঠে চেপে ধরল।ডালিয়া চেঁচিয়ে উঠল আর বলল
---ও আল্লাহ গো জ্বলে যাচ্ছে আমার।এবার আমাকে ছেড়ে দিন।
---তোকে কষ্ট দিতে পারলেই আমার শান্তি লাগে।
ডালিয়া বুঝতে পারল অরণ্যের হয়ত মাবিহার কথা মনে পড়ছে আর মাবিহার কথা মনে হলেই অরণ্যের মেয়েদের প্রতি ঘৃণা জন্মায় আর অরণ্য ডালিয়াকে কষ্ট দেয় আর অরণ্য মনে করে এ কষ্টটা সে মাবিহা কে দিচ্ছে।তাই ডালিয়া নিজেকে সামলিয়ে কাদোঁ কাঁদো কন্ঠে বলল
---আপনার যদি আমাকে কষ্ট দিয়ে শান্তি লাগে আপনি কষ্ট দিন।আমাকে কষ্ট দিয়ে শেষ করে দিন তবুও আপনি ভালো থাকুন।
অরণ্য ডালিয়ার কথা শোনে কিছুটা অবাক হল।সে ভাবল একটা মেয়েকে সে এত কষ্ট দিচ্ছে আর মেয়েটা তার সুখের জন্য এসব বলছে।হয়ত এটাও এই মেয়ের ছলনা।তাই অরণ্য ডালিয়াকে একটা লাথি দিয়ে বলল
---তুই ও ছলনা শুরু করলি।ভালো সাজার অভিনয় করছিস।আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছিস তাই না।কিন্তু আমি তো আগের মত বোকা না যে তোর কষ্টে গলে যাব।ছলনাময়ী কোথাকার।
---আপনি যা ইচ্ছা ভাবেন।আমার তাতে কিছু যায় আসে না।আপনার যদি আরও মারতে মন চায় মারুন।মেরে যদি আপনি শান্তি পান তাহলে মারুন।যত পরুন মারুন।আমাকে তো আপনি আপনার শান্তির জন্য কিনেই এনেছেন।আমার কাজেই তো আপনাকে শান্তি দেওয়া।এখন যদি আপনি মেরে শান্তি পান তাহলে মারুন।আমি তো আর কিছু করতে পারব না।সহ্য করা ছাড়া তো আমার উপায় নাই।
অরণ্য ডালিয়ার কথা শোনে কোনরূপ কথা না বলে সেখান থেকে প্রস্থান নিল।অরণ্য যাওয়ার পর ডালিয়াও ডালিয়ার রুমে চলে আসল।ডালিয়ার পিঠটাই হাতও দিতে পারছে না ডালিয়া।ডালিয়ার পিঠটা মনে হচ্ছে জ্বলে যাচ্ছে।কিন্তু তবুও আজকে অরণ্যের প্রতি ডালিয়ার ঘৃণা জন্মাচ্ছে না।কেন জানি না আজকে অরণ্যের প্রতি অদ্ভূত ভালো লাগা আর মায়া কাজ করতেছে।অনেক দিন পর ডালিয়ার কোন ছেলের প্রতি মায়া জন্মাল।ডালিয়ার কাছে সব ছেলেকেই নরপশু মনে হত।এখন ডালিয়ার মনে হচ্ছে সব ছেলে এক না।সবাই শুধু মেয়েদের মাংসপিন্ড ভাবে না।কিছু ছেলে মেয়েদের ভালোবাসা দিয়া আগলেও রাখে।এসব ভবতে ভাবতে ডালিয়া একটু চোখ বুজল।
হঠাৎ অরণ্য ডালিয়ার রুমে আসল।অরণ্যে আওয়াজ শোনে ডালিয়া চোখ খুলল আর খেয়াল করল অরণ্যের হাতে কি একটা যেন। ডালিয়া মনে মনে ভাবতে লাগল এবার হয়ত তার কপালে আরও দুঃখ আছে।ডালিয়া কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল
---অরণ্য বাবু আপনি?কিছু লাগবে?
---হুম তুমি একটু ঐদিকে ফির।
---কোন দিকে?
---পিঠটা আমার দিকে ফিরাও।
---কেন?আমি কি আবার কোন ভুল করেছি।
---এত প্রশ্ন করতেছ কেন? তুমাকে যা বলতেছি তাই কর।
ডালিয়া অরণ্যের দিকে পিঠটা ফিরাল।অরণ্য খেয়াল করল ডালিয়ার পিঠটা পুড়ে লাল হয়ে ফুসকা পড়ে গেছে।ডালিয়ার ক্ষতটা দেখে অরণ্য নিজেকে বকতে লাগল।ভাবতে লাগল এত বড় অমানুষ সে কিভাবে হল।এত বড় কাপুরুষ কিভাবে হল যে একটা মেয়ের গায়ে এত নির্মম ভাবে আঘাত করেছে।অরণ্য এসব ভেবে নিজেকে আজকে খুব পশু লাগছে অরণ্যের। অরণ্য হাত থেকে মলমটা বের করে ডালিয়ার পিঠে লাগিয়ে দিল।ডালিয়া আঃ করে করে উঠল।
ডালিয়া খেয়াল করল অরণ্য তার পিঠে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে।ডালিয়া যেন ভিতরে ভিতরে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলল।অরণ্য কে যতটা কঠোর ভেবেছিল অরণ্য তার থেকে ও নরম মনের মানুষ।হয়ত পরিস্থিতি তাকে কঠোর করে দিয়েছে কিন্তু মানুষটার ভিতরটায় খুব মায়ায় ভরা।অপরদিকে অরণ্য পিঠে মলম লাগাতে লাগাতে বলল
---ডালিয়া জানি না আমার মাথায় কি হয়।আমি তখন নিজেকে সামলাতে পারি না।নিজেকে খুব পাগল পাগল আর অস্থির লাগে তাই তোমাকে আঘাত করি।তোমাকে তো আমি সুযোগ দিয়েছিলাম চলে যেতে তুমি। চলে গেলে না কেন?এখানে থাকলে যে তোমাকে আরও কষ্ট পেতে হবে।
---কোথায় যাব বলুন।আমার যে যাবার জায়গা নাই।এখানে আছি তবু ভালো আছি।কারন এখানে শুধু শারিরীক আঘাত পাচ্ছি কিন্তু কেউ তো আর আমার শরীরটাকে খুবলে খুবলে খাচ্ছে না।আমাকে যেতে হলে তো সেই পতিতা পল্লীতে যেতে হবে আর সেখানে গেলে তো একের পর এক নরপশু আমাকে খুবলে খুবলে খাবে।এট থেকে আমি এখানে আছি ঢেড় ভালো আছি।আপনার এ সামান্য কষ্ট আমার কাছে কিছু না।আর আমাকে মেরে যদি আপনার একটু শান্তি হয়, হোক।আপনার কাছে মেয়ে মানুষ সবচেয়ে ঘৃণিত বস্তু আর আমার কাছে ছেলে মানুষ।দুজন দুজনের জায়গায় কষ্ট পাচ্ছি।একজন পুরুষের হাতের শিকার আরকেজন নারীর ছলনার হাতে।কিন্তু এটা বুঝতে পেরেছি পৃথিবীতে সব পুরুষ এক না।এদের মধ্যেও ভালো আর খারাপ আছে।শুধু এটাই বলব আমি এখানেই খুব ভালো আছি।
ডালিয়ার কথা গুলো শোনে অরণ্যের যেন আরও বেশি অপরাধ বোধ কাজ করল।একটা মেয়ের শাস্তি সে বিনাদোষে আরেকটা মেয়েকে দিল।এত বড় অন্যায় সে কিভাবে করল।এসব ভেবে ভেবে অরণ্য ভিতরে ভিতরে কষ্ট পেতে লাগল।অরণ্য কোনরূপ কথা না বলে চলে গেল।
আর এদিকে ডালিয়াও অরণ্যের এমন সহাণুভূতি পেয়ে খুশিতে আত্নহারা।কিন্তু অরণ্যকে স্বাভাবিক জীবনে যে করেই হোক ফিরাতে হবে।কিন্তু কিভাবে ফিরাবে ডালিয়া।কারন অরণ্য তো কোন মেয়েকে বিশ্বাস করেনা।মনে মনে ভাবল আগে অরণ্যের মনে বিশ্বাস আনাতে হবে ভালোবাসা দিয়া কিন্তু কিভাবে?অনেক ভেবে ডালিয়া উপায় বের করল।ভাবল অরণ্যকে স্বাভাবিক জীবনে আনতে হলে আগে অরণ্যের রুম থেকে এসব ছবি উল্টা পাল্টা জিনিস দূর করতে হবে।
ডালিয়া যা ভাবল তাই করল।মনে মনে ফাঁক খুজতেছিল যে অরণ্য কখন বের হবে।হঠাৎ খেয়াল করল অরণ্য বাইরে গিয়েছে ডালিয়া অরণ্যের রুমে গিয়ে মাবিহার ছবি ডালিয়ার কাটা চুল ডালিয়ার ছবি এগুলা খুলে ফেলে দিল।রহমত চাচা ডালিয়ার এসব দেখে বলল
---এসব কি করছ মা তুমি?অরণ্য যদি এসে দেখে তোকে যে খুব মারবে মা।
---চাচা মারলে মারুক।আমি অরণ্যের ভালোর জন্যই এমন করছি।তুমি কি চাও না অরণ্য স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক।
---তা তো চাই ই মা।ছেলেটা আমার কষ্টে পাথর হয়ে গেছে রে।
---যদি চাও তাহলে আমি যা বলি তাই কর।এসব কিছু কোথায় ফেলছি অরণ্যকে বলবা না।মাবিহার যত ছবি আছে আর অরণ্যের মা এর যত ছবি আছে সব ফেলে দাও চাচা।
---কিন্তু অরণ্য যদি রেগে যায়।আর অরণ্য রেগে গেলে তো তোকে মারবে রে মা।তোকে আঘাত দিবে, কষ্ট দিবে।তুই কি পারবি সহ্য করতে।
---চাচা তোমাকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না।আমি মেনেজ করে নিব।আমাকে যতই আঘাত করুক সহ্য করে নিতে পারব।তোমাকে চিন্তা করতে হবে না।
---আচ্ছা মা তুই যা বলিস তাই হবে রে মা।আমি মাবিহা আর আশালতার সব ছবি ফেলে দিচ্ছি।
তারপর ডালিয়া আর রহমতচাচা মিলে মাবিহা আর আশালতার সব স্মৃতি ফেলে দিল।ডালিয়া দেয়ালের লিখা গুলো মুছে দিল।বাড়িটা সুন্দর করে সাজাল।সব কাজ শেষে ডালিয়া অরণ্যের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।কখন অরণ্য আসবে এসে কি করবে এসব ভেবে ডালিয়া বারবার ভয়ে কুকরে যেতে লাগল। আবার ভাবতে লাগল যা হবার হবে অরণ্যের জন্য এতটুকু করতে ডালিয়ার সমস্যা নেই।
ঠিক সন্ধ্যার দিকে ডালিয়া ডালিয়া টুংটাং কলিংবেলের আওয়াজ শোনল।ডালিয়া দৌঁড়ে গিয়ে দরজা খোলল।দরজা খোলে দেখল অরণ্য এসেছে।অরণ্য বাড়িতে ঢুকে দেয়াল খেয়াল করে দেখল কোন লিখা নাই।চারপাশ খেয়াল করল দেখল বাড়িটা নতুন ভাবে গুছানো।তাড়াতাড়ি রুমে গেল।রুমে গিয়ে দেখল সব কিছু ওলট পালট।কোন ছবি নেই।অরণ্য এসব দখে রেগেমেগে আগুন হয়ে গেল।চিল্লায়ে চিল্লায়ে বলতে লাগল
----রহমত চাচা,রহমত চাচা,কোথায় তুমি তাড়াতাড়ি আস।
রহমত চাচা অরণ্যের চিল্লানো শোনে তাড়াতাড়ি অরণ্যের কাছে গেল।আর গিয়ে বলল
---বাবা কি হয়েছে? এভাবে চিল্লাচ্ছ কেন?
---তুমি কি সত্যিই বুঝতে পারছ না আমি কেন চিল্লাচ্ছি।আমার রুম থেকে মাবিহার ছবি কোথায় গেল।সারা বাড়ি এভাবে গুছানো হল কেন?কথা বলছ না কেন?
---নাহ মানে,নাহ মানে।
---নাহ মানে,মানে করছ কেন।উত্তর দাও কার এত বড় সাহস আমার অণুমতি ছাড়া আমার ঘরে ঢুকে আমার ঘর গুছিয়েছে?
পাশ থেকে ডালিয়া বলে উঠল
---অরণ্য বাবু আমি করেছি।
ডালিয়ার মুখ থেকে অরণ্য এ কথা শোনে আরও রেগে গেল।রেগে গিয়ে ডালিয়ার চুলের মুঠি ধরে বলতে লাগল
---তোরে এত বড় সাহস কে দিছে?সকালে তোকে একটু দয়া দেখিয়েছি বলে এত বড় সাহস দেখায়ছিস তাই না?তোর সাহস হল কিভাবে যে তুই আমার অণুমতি ছাড়া আমার ঘর গুছাইছিস।
---আপনি আমাকে যত পারুন মারুন আমার কোন কষ্ট নেই।কিন্তু আপনার জীবনটা পাল্টানোর জন্য এটুকু করা জরুরী ছিল।আমি চায় না আপনি এভাবে জীবন যাপন করুন।চায় না এভাবে কষ্ট পান।আপনার যদি আমাকে মেরে শান্তি হয় তাই করুন।
অরণ্য ডালিয়ার কথা শোনে আরও রেগে গেল চুল টানতে টানতে নিয়ে গেল সিঁড়ির কাছে।সিঁড়ির কাছে নিয়ে গিয়ে টেনে হিঁচরে ফেলল।আর ডালিয়া সিঁড়ি থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে নীচে পড়ে গেল।ডালিয়া সাথে সাথে সেন্সলেস হয়ে গেল।রহমত চাচা ডালিয়ার কাছে দৌঁড়ে গেল আর গিয়ে দেখল ডালিয়ার কোন সাড়া শব্দ নেই।রহমত চাচা অরণ্যকে বলল
---বাবা মেয়েটা যা করেছিল তেমার ভালের জন্য করেছিল।আর তুমি এ কি করলে?মেয়েটার তো কোন সাড়া শব্দ নেই।একজনের রাগ তুমি আরেক উপর ছাড়লে।বাবা দেখে যাও মেয়েটার অবস্থা ভালো মনে হচ্ছে না।শ্বাস প্রশ্বাস চলছে না।কি হয়েছে মেয়েটা বুঝতে পারছি না।তাড়াতাড়ি হাডপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
রহমত চাচার কথা শোনে তাৎক্ষনিক অরণ্যের মনে হল সত্যিই তো সে এমন কেন করল।ডালিয়াকে এতটা আঘাত করা তার ঠিক হয় নি।দৌঁড়ে নীচে নাম ডালিয়ার হাত ধরে দেখল তার পালস অনেক নেমে গেছে।শ্বাস প্রশ্বাস চলছে না।অরণ্য ভয় পেয়ে গেল।তাড়াতাড়ি করে ডালিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে গেল।ডাক্তার ডালিয়াকে ইামরজেন্সিতে নিয়ে গেল।অরণ্য আর রহমত চাচা বাইরে দাঁড়িয়ে রইল।ডাক্তার অনেক ক্ষণ চেক আপ করল আর বাইরে এসে অরণ্যকে বলল
---আপনার রোগীর অবস্থা ভালো না।ট্রিট মেন্ট চলছে।আর আপানাকে একটা ফরম ফিল আপ করতে হবে।তাড়াতরি ফরম ফিল আপ করে রোগী ভর্তি করান।না হলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হবে না।
অরণ্য ডাক্তারের কথা শোনে থমকে গেল এটা ভেবে যে তার জন্য আজকে একটা নির্দোষ মেয়ে মরতে যাচ্ছে।যে মেয়েটা কি না তার ভালো করতে গেছিল।এতটা নিষ্ঠুর সে কিভাবে হল এটাই ভাবতে লাগল।তাড়াতাড়ি গেল ডালিয়াকে ভর্তির জন্য।সেখান থেকে ফরম দিল ফিল আপ এর জন্য।অরণ্য সব ফিল আপ করে নার্সকে দিল।নার্স ফরমটা দেখে অরণ্যকে বলল
---স্যার রোগী আপনার কি হয় সেটা তো পূরণ করেন নি।এটা একটু পূরণ করে দিন।
অরণ্য বেশ বিব্রত বোধ করল। বুঝতে পারল না কি লিখবে।কিছুক্ষণ কাগজটা ধরে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল।নার্স আবার বলে উঠল
---স্যার তাড়াতাড়ি ফিল আপ করে দিন।
অরণ্য এবার শূন্যস্থান টাই লিখে দিল যে রোগীর স্বামী হয় অরণ্য।আর রোগী তার স্ত্রী। তারপর নার্স ফরমটা নিয়ে চলে গেল।আবার ডালিয়ার চিকিৎসা শুরু হল।আর এদিকে অরণ্যের বুকটা যেন হাহাকার করতে লাগল ডালিয়ার জন্য।তীব্র এক যন্ত্রণার শুরু অরণ্যের।বাবার ডালিয়ার সুস্থতা কামনা করতে লাগল।ডালিয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠল।নিজেকে খুব বেশি অপরাধী ভাবতে লাগল।আর এদিকে অনেক ক্ষন চিকিৎসা করার পর ডাক্তার এসে বলল.......
#পতিতা পল্লী
৯ম পর্ব
ডাক্তার এসে বলল
---এখন রোগী আগের থেকে একটু ভালো আছে।তবে মানসিক ভাবে আঘাত পেয়ে ছোট খাট একটা এটাক হয়েছে।আপনার স্ত্রী কে সংসারের প্রেসার দিবেন না।মানসিকভাবে ফ্রি রাখবেন।আপাদত দুদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হবে আর ২ দিন পরে বাসায় নিয়ে যাবেন।আর ওনি শারিরীক ভাবেও অনেক দুর্বল।ওনার একটু যত্ন নিতে হবে।আর এখন রোগী ঘুমাচ্ছে।আপনি চাইলে রোগীকে দেখতে পারেন।আপনাদের মধ্যে কে রোগীর কাছে যাবেন সিদ্ধান্ত নিন।
এ বলে ডাক্তার চলে গেল।পাশ থেকে রহমত চাচা বলল
---বাবা তুমি যাও।গিয়ে দেখ ডালিয়ার মায়ের কি অবস্থা।আর কোন আঘাত কর না।মেয়েটা যে অনেক কষ্ট সহ্য করছে।আর কষ্ট দিও না।
---চাচা তুমি চিন্তা কর না।আমার বিবেক বুদ্ধি সব হারিয়ে ফেলেছিলাম তাই এমন করেছি।ডালিয়াকে কিচ্ছু করব না।আমি গেলাম চাচা ডালিয়াকে দেখতে।
অতঃপর অরণ্য ডালিয়ার কাছে গেল।গিয়ে দেখল ডালিয়া শোয়ে আছে ডালিয়ার জ্ঞান এখন ফিরে নি।অরণ্য ডালিয়ার পাশে গিয়ে বসল খেয়াল করল ডালিয়ার চেহারাটা কত নিষ্পাপ। এ অল্প বয়সে কত কষ্টই তাকে সহ্য করতে হয়েছে।আর আমি কি না এ মেয়েকেই এভাবে আঘাত করেছি।এসব ভেবে অরণ্যে ভিতরে অপরাধ বোধ কাজ করতে লাগল।ভিতরে ভিতরে কষ্ট পেতে লাগল।ডালিয়ার পাশে বসে এক পলকে ডালিয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।
হাঠাৎ ডালিয়ার জ্ঞান ফিরল।জ্ঞান ফিরার সাথে সাথে অরণ্য ডালিয়াকে বলল
---ডালিয়া সরি।তোমাকে আমি এত বড় কষ্ট দিয়ে ফেলছি এজন্য সরি।আঘাত পেতে পেতে আমি যে এক অমানুষ হয়ে গিয়েছিলাম।তুমি আমাকে মাফ করে দাও।আজকে তোমার কিছু হলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না।
এ বলে অরণ্য ডালিয়ার হাত ধরল।আর ডালিয়া অরণ্যের দিকে তাকিয়ে দেখল অরণ্যের চোখে পানি ছলছল করছে।এ অরণ্য তো অন্য এক অরণ্য।ডালিয়া বুঝতে পারল এটা আর প্রথম দিন দেখা সে অরণ্য না।এ যে এক অন্য অরণ্য।যার বুকের ভিতর শুধু মায়া আর মায়া।ডালিয়া অরণ্যের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল
---আপনি দয়াকরে কষ্ট পাবেন না।এটা ভাগ্যে ছিল।আর আমি তো এখন সুস্থ।আপনি কষ্ট পেলে আমার খুব খারাপ লাগে।আপনার কষ্ট সহ্য করতে কষ্ট হয় আমার।
অরণ্য এবার ডালিয়ার কথা শোনে আরও বেশি চমকে গেল।একটা মেয়েকে সে এত কষ্ট দিল আর মেয়েটা কিছু না বলে উল্টা আরও শাত্ননা দিচ্ছে।এসব ভেবে অরণ্যের চোখের মেঘ যেন বৃষ্টি হয়ে নেমে গেল।আর ডালিয়াকে বলল
---আমি কথা দিচ্ছি আমি আর তোমাকে আঘাত করব না।তুমি আর কষ্ট পাবে না কখনও।তেমাকে আর কষ্ট পেতে দিব না।তোমাকে সবসময় খুশি রাখার চেষ্টা করব।আমি যে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলমা।তোমার জন্য আমি আমার স্বাভাবিক জীবনটা পেয়েছি।
---আপনি যে স্বাবাবিক জীবন পেয়েছেন এতেই আমি খুশি।আপনি প্লিজ কাঁদবে না।
পাশ থেকে নার্স এসে ডালিয়াকে বলল
---আপু ভাইয়া তো আপনার জন্য একদম অস্থির হয়ে গিয়েছিল।কি যে করতেছিল কি বলব।আপনি অনেক ভাগ্যবতী এমন হাসবেন্ড পেয়েছেন।আর ভাইয়া এবার আর চিন্তা নেই ভাবী তো সুস্থ হয়ে গেছে।দুদিন পরেই বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন।
এ বলে নার্স মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল।আর ডালিয়া নার্সের কথার কোন মানে বুঝল না।শান্ত স্বরে ডালিয়া অরণ্যকে বলল
---আচ্ছা নার্স কি বলে গেল আমি তো কিছুই বুঝলাম না।
---আরে বলো না তোমাকে এডমিট করানোর সময় একটা ফরম ছিল পূরণ করার জন্য ফরম টা তে রোগী আমার কি হয় এটা জানতে চেয়েছিল।আমি লিখেছিলাম স্ত্রী। আর এ নার্সটাই ফরম টা নিয়া যায়।ওনি ভাবছে তুমি আমার স্ত্রী।এজন্য একথা গুলো বলল।
ডালিয়া অরণ্যের কথা শোনে যেন থমকে গেল।জীবনে বউ হওয়ার স্বপ্ন তো কবেই ছেড়ে দিয়েছিল।অরণ্যের কথা শোনে যেন আজকে ডালিয়ার নিজেকে বউ মনে হতে লাগল।চাতক পাখির মত অরণ্যের দিকে তাকিয়ে এবার ডালিয়া কেঁদেই দিল। আর অরণ্যকে বলল
---আমার জন্য আপনি এত কিছু করবেন বুঝতে পারে নি।
---আরে বোকা মেয়ে এ আর কি। কাঁদতেছ কেন?পাগলের মত কাঁদবা না তো। হাসপাতালে আরও দুদিন থাকতে হবে।তারপর বাসায় যেতে পারবা।এখন একদম কান্নকাটি থামাও।সুস্থ হতে হবে আগে।
ডালিয়াও লক্ষী মেয়ের মত কান্না থামাল।দুদিন পর ডালিয়াকে বাসায় নিয়ে গেল।কিন্তু ডালিয়া একা একা হাঁটতে পারছিল না। অরণ্যের কাধে ভর করে ও যেন ডালিয়ার হাঁটতে কষ্ট হচ্ছিল।অরণ্য ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আচমকা ডালিয়াকে কোলে তুলে দিল।অরণ্যের এ কান্ড দেখে ডালিয়া বিস্মিত হয়ে গেল আর বলে উঠল
---অরণ্য বাবু কি করছেন কি?আপনি নামান আমাকে।কষ্ট হচ্ছে তো আপনার।
---কোন কথা না একদম চুপ।হাঁটতে পাতেছ না আবার আমার কষ্ট দেখা হচ্ছে।আমার কিচ্ছু কষ্ট হচ্ছে না।আমি ঠিকেই আছি।
ডালিয়াকে নিয়ে অরণ্য ডালিয়ার রুম নিয়ে খাটে শোয়াল আর বলল
---কি খাবা বল?
---আমি এখন কিছু খাব না।
---এসব বললে চলবে না। কিছু খেতে হবে।ডাক্তার বলল তোমাকে সুস্থ হতে হলে বেশি বেশি খেতে হবে।আর আপাদত নরম খাবার খাওয়াতে হবে।সুপ হলে ভালো হয়।কিন্তু বাইরের সুপ তো এত স্বাস্থ্যকর না।আচ্ছা দাঁড়াও আমিই রান্না করে নিয়ে আসছি।
---আপনি রান্না পারেন?
---পারি না।তবে চেষ্টা করে দেখি পারি কি না।অনেক আগে একবার মাবিহার জন্য রান্না করেছিলাম।
---আমার জন্য এত কষ্ট করতে হবে না, যা আছে তাই দিন আমি খেয়ে নিচ্ছি।
---আরে চুপ করে বসোত।এত কথা কেন বল?আমি সুপ রান্না করে আনতেছি।তুমি চুপচাপ রেস্ট নাও।
ডালিয়ার কাছে যেন সবটা স্বপ্ন মনে হতে লাগল।অরণ্য চলে যাওয়ার পর নিজের শরীরে নিজে চিমটি কেটে আঃ শব্দ করে উঠল।নাহ তে এ স্বপ্ন না এ যে সত্যি।আধা ঘন্টা পর অরণ্য আসল হাতে একটা সুপের বাটি নিয়ে।আর বলল
---এই যে সুপ রেডি।কেমন হয়েছে জানি না।তবে খেয়ে টেস্ট করে দেখ।আমি নিজেও এখন টেস্ট করি নি।হা কর দেখি।
ডালিয়া হা করল আর সুপটা খেয়ে মুখটা একটু কেমন জানি করল।অরণ্যের ডালিয়ার মুখের ভঙ্গি দেখে বলল
---সুপটা কি ভালো হয় নি?
মু্চকি হাসি দিয়ে ডালিয়া বলল
---ভালো হয়েছে অনেক।
ডালিয়ার কথা শোনে কেন জানি না মনে হল ডালিয়া মিথ্যা বলছে তাই অরণ্য সুপটা টেস্ট করলো।অরণ্য সুপটা টেস্ট করে ওয়াক ওয়াক করে উঠল কারন সুপটাতে লবনে কাটা ছিল আর ডালিয়াকে বলল
---এ পাগল মেয়ে এ সুপকে ভালো বলছ তুমি? এ সুপে লবনে কাটা হয়ে আছে।
---আপনি এত কষ্ট করে বানিয়েছেন যা বানিয়েছেন তাই হবে আমাকে দিন আমি খেতে পারব।
---হয়েছে আর এ সুপ খেয়ে পেট খারাপ করতে হবে না আমি আবার বানিয়ে নিয়ে আসছি।
---আপনাকে সুপ করতে হবে না।একটু জাউ ভাত করলেই হবে।
---কিন্তু জাউ ভাত কিভাবে করে আমি তো জানি না।
---আমাকে একটু রান্না ঘরে নিয়ে যান আমি শিখিয়ে দিচ্ছি।
---পাগল তুমি? এ শরীর নিয়ে রান্না ঘরে যাবে।আমাকে বল আমি করে নিয়ে আসছি।
---আরে আপনি আমাকে নিয়ে যান তো আমি তো আর রান্না করব না আপনাকে দেখিয়ে দিব।
---তা করা যায়। আচ্ছা আমার কাঁধে ভর দিয়ে উঠ।
ডালিয়া অরণ্যের কাঁধে ভর দিয়ে উঠল।আস্তে আস্তে রান্না ঘরে গেল।ডালিয়া অরণ্যকে বলে দিল কি করবে আর অরন্যও সেভাবে রান্না করল।রান্না করে দুজন এক সাথে খেল।অরণ্য ডালিয়ার যত্ন নেওয়া শুরু করল আর ডালিয়া আস্তে আস্তে সুস্থ হতে লাগল।এখন ডালিয়া আগের থেকে অনেকটা সুস্থ।ইদানিং ডালিয়া ঘরের কাজ ও করা শুরু করছে।আর অরণ্য ডালিয়াকে জারি দিয়া বলল
----এ শরীর নিয়ে তোমাকে এসব কাজ করতে কে বলেছে? রহমত চাচায় তো সবটা করতে পারবে।
----সারাদিন বসে শুয়ে থাকতে আমার ভালো লাগে না।আর রহমত চাচার তো বয়স হয়েছে।রহমত চাচা কি এসব একা পারবে।আমার ভালোই লাগছে একটু কাজ করতে পেরে প্লিজ আপনি আমাকে না করবেন না।
---আচ্ছা তোমার ভালো লাগলে কর কিন্তু নিজের শরীরের কথা ভুলে যেও না।
---আপনাকে ভাবতে হবে না।আমি ঠিকেই আছি।
আস্তে আস্তে ডালিয়া আর অরণ্যের সম্পর্ক টা ভালো হতে লাগল।একদিন ডালিয়ার গোসল করতে গেল।গোসল থেকে বের হয়ে এসে দেখে বিছানার উপর একটা বক্স আর চিঠি রাখা। চিঠিটাতে লিখা ছিল
"ডালিয়া আমি কি তোমাকে ডালু বলে ডাকতে পারি।এত বড় নামটা যে আমার ডাকতে খুব কষ্ট হয়।আর বক্সে একটা শাড়ি আছে তাড়াতাড়ি পড়ে রেডি হও তো আমরা আজকে সারাদিন ঘোরব।"
ডালিয়া বক্সটা বের করে দেখল একটা লাল টকটকে শাড়ি।ডালিয়া যেন শাড়িটা দেখে আনন্দে আত্নহারা হয়ে গেল।টেবিলের উপর থেকে একটা কলম নিয়ে ডালুয়া লিখতে চাইল যে
"আপনি আমাকে ডালু বলেই ডাকেন।তবে আমি আপনাকে অরু বলে ডাকব।শাড়িটা আমার অনেক পছন্দ হয়েছে""
কিন্তু অনেকদিন যাবৎ লিখে নি তাই লিখা যেন ডালিয়ার হাত দিয়ে বের হচ্ছিল না।তবুও কোন রকমে ডালিয়া লিখল।আর ঝটপট শাড়িটা পড়ে নিল।আর আয়নায় নিজেকে দেখে যেন ডালিয়ার আজকে নতুন বউ মনে হতে লাগল।হঠাৎ অরণ্য ডাকতে লাগল
---ডালিয়া তুমি কি রেডি হয়েছ।আর কতক্ষণ লাগবে।
---আসতেছি আসতেছি।
এবলে ডালিয়া বের হল।ডালিয়াকে এ রূপে দেখে অরণ্য যেন চমকে গেল।ভাবতে লাগল মেয়েটার সত্যিই অনেক মায়াবী চেহারা।আর এদিকে ডালিয়া অরণ্যের কাছে গিয়ে কাগজ টা দিল। অরণ্য ডালিয়ার লিখাটা পড়ে ডালিয়ার কানে কানে এসে বলল
---তুমি আমাকে অরু বলেই ডেক ডালু।
অরণ্যের মুখে ডালু ডাকটা শোনে ডালিয়া খুশিতে আত্নহারা হয়ে গেল।দুজন মিলে বাইরে গেল।একটা পার্কে বসল।অনেকদিন পর ডালিয়া এরকম খোলামেলা জায়গায় বসেছে।ডালিয়ার যেন অনেক ভালো লাগছে।ঠিক এমন সময় একটা পিচ্চি মেয়ে অরণ্যের কাছে এসে বলল
---স্যার এ মালাটা নিন।ভাবীকে পড়লে খুব মানাবে।
---সবগুলা কত রে?
---আপনি খুশি হয়ে যা দেন।
অরণ্য মেয়েটাকে একটা ৫০০ টাকা নোট দিয়ে বলল এ নে।মেয়েটা টাকাটা পেয়ে খুশিতে নাচতে নাচতে চলে গেল।অরণ্য ফুল গুলো ডালিয়ার হাতপ দিয়ে বলল
---ডালু সরি তোমার চুল গুলা আমি কেটে ফেলছিলাম।চুলে তো আর খোপা করে মালাটা দিতে পারবা না।তোমার হাতেই মালা গুলা পেঁচিয়ে পড় ভালো লাগবে।
অরণ্যের কাছ থেকে ডালিয়া ফুল গুলা নিয়া বলল কে বলেছে যে আমি চুলে পড়তে পারব না।এ বলে চুলের একটা ক্লিপ দিয়ে একটা মালা চুলে আটকে দিল।অরণ্য দেখে ডালিয়াকে বলল
---বাহ ডালু তেমাকে তো বেশ সুন্দর লাগছে।
অরণ্যের কথা শোনে ডালিয়া বেশ লজ্জা পেল।লজ্জায় মাথা নত করে ফেলল।তারপর অরণ্য বলল
---থাক আর লজ্জা পেতে হবে না।চলেন রেস্টুরেন্ট গিয়ে কিছু খাওয়া যাক।
তারপর দুজন মিলে রেস্টুরেন্টে গেল।ডালিয়া এমন রেস্টুরেন্ট এ প্রথম দেখেছে।চারদিক কত সুন্দর করে সাজানো।অরণ্য খাবার অর্ডার করল।খাবার চলেও আসল।কিন্তু ডালিয়া বুঝতে পারল না সে কাটা চামচ দিয়ে কিভাবে খাবে।অপরদিকে অরণ্য খাওয়া শুরু করে দিল।অরণ্যকে দেখে সেভাবে খাওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু পারল না।অরণ্য ডালিয়ার দিকে খেয়াল করে দেখল ডালিয়া এখন ও কিছু খায় নি।অরণ্য বেশ ভালোই বুঝতে পারল ডালিয়া কাটা চামচ দিয়ে খেতে পারছে না।তাই অরণ্যও চামচ রেখে হাতে খাওয়া শুরু করল।ডালিয়া এটা দেখে একটু স্বস্তি পেল।সেও খাওয়া শুরু করল।খাওয়া শেষে দুজন মিলে আরও ঘুরল।
আস্তে আস্তে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসল।রাস্তার পাশে সেডিয়াম বাতি গুলা জ্বলে উঠল।ডালিয়ার যে কি ভালো লাগছে, ডালিয়া নিজেও বুঝতে পারছে না।গুটি গুটি পায়ে সোডিয়াম বাতির নীচে দুজন হেঁটে কথা বলতে লাগল।কত কথা যে বলল হিসাব নেই।দুজনের সব কিছু শেয়ার করে দুজন যেন একাকারে মিশে গেল।রাতে বাসায় ফিরল।
ধীরে ধীরে ডালিয়া আর অরণ্যের সম্পর্কটা বেশ জমে উঠল।কিন্তু এর মধ্যে হঠাৎ অরণ্যের কল আসল।অরণ্য কল ধরে দেখল মাবিহা।মবিহা কল ধরার পর বলল
#পতিতা পল্লী
১০ম পর্ব
মাবিহা বলল
---হ্যালো অরণ্য আমাকে মাফ করে দাও।আমাকে আর কষ্ট দিও না।আমি আমার ভুলটা বুঝতে পেরেছি।আমাকে আর যন্ত্রণা দিও না।তোমার সাথে এসব করা আমার ঠিক হয় নি।সেদিন আমি আকাশের ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।বুঝতে পারি নি কি করব।না বুঝে অন্যায় করে ফেলেছি।তুমি আমাকে মাফ করে দাও অরণ্য।আমাকে আর আাঘাত কর না।আমাকে তোমার জীবনে ফিরিয়ে নাও।আমি আর এমন করব না।শেষ বাবের মত আমাকে একটা সুযোগ দাও।
---মাবিহা কতবার বলেছি তোমাকে যে, আমাকে আর কল দিবে না।আমাকে আর কল দিয়ে বিরক্ত করবে না।তুমি কল দিলে আমার বিরক্ত লাগে।পৃথিবীতে কাউকে যদি ঘৃনা করি সেটা তোমাকে।আর কতবার তোমাকে এ কথা বলতে হবে।
---অরণ্য আমি জানি তুমি আমার উপর রেগে আছ।আমি জানি তুমি আমাকে এখনও ভালোবাস।প্লিজ অরণ্য আমাকে ফিরিয়ে দিও না।আমি আমার ভুলটা বুঝতে পেরেছি।
---আমি তোমাকে ভালোবাসি না মাবিহা।আর কতবার একথাটা তোমাকে বলতে হবে?মাবিহা প্লিজ আমাকে বিরক্ত কর না।আমার একদম ভালো লাগছে না তোমার সাথে কথা বলতে।তুমি প্লিজ আমাকে আর কল দিও না।
---প্লিজ অরণ্য এরকম কর না।আচ্ছা ইদানীং তোমাকে একটা মেয়ের সাথে প্রায়ই ঘুরতে দেখা যায় মেয়েটা কে?
---ওহ আমার ব্যাপারে ইনফরমেশন নেওয়াও শেষ তোমার।মেয়েটা কে জেনে তোমার কি হবে?
---প্লিজ বল মেয়েটা তেমার কি হয়?
---মেয়েটা আমার বউ হয়।
---অরণ্য তুমি এ মেয়েকে বিয়ে করেছ?
---হ্যা করেছি।কেন কোন সমস্যা?
---তুমি কি জান এ মেয়ের পরিচয় এ মেয়ে কে?
---ওহ এ মেয়ের পরিচয় নেওয়াও শেষ।হ্যা জানি এ মেয়ে কে।জেনেই বিয়ে করেছি।
---তুমি জেনে শোনে এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করেছ।
---হ্যা করেছি।মেয়েটা আর যাই হোক তোমার মত ছলনাময়ী না।তোমার মত এত নিকৃষ্ট না।তোমার মত প্রতারক না।
---অরণ্য তুমি আমাকে এভাবে বলতে পারলে।ঐ মেয়েটার সাথে আমার তুলনা করতে পারলে।
---হ্যা পারলাম।প্লিজ মাবিহা।আমি এখন বিবাহিত।আমার বউ জানলে খুব কষ্ট পাবে।তুমি প্লিজ আর কল দিও না।আমাদের দাম্পত্য জীবনে কাটা হয়ে দাঁড়িও না।
---অরণ্য প্লিজ আমার কথাটা শোন।
আর কোন কথা শোনার নেই এই বলে অরণ্য মাবিহার ফোন কেটে দিল।আর এদিকে ডালিয়া বুঝতে পারল মাবিহা কল দিয়েছিল।ডালিয়া অরণ্যকে জিজ্ঞেস করল
---মাবিহা কল দিয়েছিল কেন?
---আমার কাছে আবার ফিরে আসতে চায় এজন্য।
---তাহলে আকাশের সাথে মাবিহার কি হয়েছে?
---আাকাশের সাথে মাবিহার ডিভোর্স হয়েছে ২ বছর যাবৎ।এরপর অনেক বার কল দিয়েছে আমার কাছে ফিরে আসতে চেয়েছে কিন্তু আমি তাকে গ্রহণ করে নি।
---আপনি তো মাবিহাকে ভালোবাসেন।মাবিহা যেহুত আসতে চাচ্ছে তাহলে ফিরিয়ে নিয়ে আসুন।
---নাহ এটা আর সম্ভব না।আমি মাবিহাকে ঘৃনা করি।কে বলতে পারে এটা তার আর আকাশের নতুন নাটক না?যে মেয়ে এত বড় ছলনা করতে পারে সে আরও বড় ছলনা করতে পারবে।মাবিহাকে আমি বিশ্বাস করি না।যে আমার সন্তান কে দুনিয়াতে আাসার আগেই খুন করে ফেলেছে তাকে আমি মরে গেলেও মেনে নিতে পারব না।
---কিন্তু মাবিহা কোন মেয়ের কথা বলল? আর আপনি তাকে বউ বলে পরিচয় দিয়েছেন।
---তোমার কথা বলেছে।
কথাটা শোনে ডালিয়া বিস্মিত হয়ে গেল।তার মত একটা মেয়েকে অরণ্য বউ বলে পরিচয় দিল এটা শোনে।কিছুটা বিস্মিত হয়ে ডালিয়া উত্তর দিল
---কিন্তু আমি তো আপনার বউ না।
---হুম জানি তুমি আমার বউ না।
---তাহলে এমন বললেন যে
---সেটা তুমি বুঝবে না।
---কিন্তু....
--- হয়েছে একদম চুপ আর কোন কিন্তু না আর কোন কথা শোনতে চাচ্ছি না এ ব্যাপারে।
এ কথা বলে অরণ্য ডালিয়ার রুম থেকে চলে গেল।হঠাৎ রহমত চাচা এসে ডালিয়াকে বলল
---ডালিয়া মা।অরণ্য জানি কেমন করছে তাড়াতাড়ি চল
ডালিয়া রহমত চাচার কথা শোনে ভয় পেয়ে গেল।তাড়াতাড়ি অরণ্যের রুমে গেল।আর গিয়ে দেখল অরণ্যের রুমের লাইট বন্ধ।ডালিয়া ঘরের লাইট জ্বালিয়ে পুরা অবাক হয়ে গেল কারন চারদিকে বেলুন আর ফুল দিয়া সাজানো।অরণ্য ড্রয়ার থেকে একটা পেপার দিয়ে ডালিয়াকে পড়তে বলল।ডালিয়া পেপারের হেডলাইন পড়ে খুশিতে আত্ন হারা হয়ে গেল।কারন পেপারে লিখা ছিল।"আজ থেকে ৬ বছর আগে ডাক্তার অরণ্যের নামে করা অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।ডাক্তার অরণ্য কোন ধর্ষক না।ওনাকে ফাঁসিয়েছেন ডাক্তার অনুরাগ।তাই অরণ্যকে পুনরায় চাকুরী প্রদান করা হল আর অনুরাগকে চাকুরীচ্যুত করা হল।"ডালিয়া সংবাদ টা পড়ে খুশিতে যেন পাগল হয়ে যাবে মনে হচ্ছে।পাশ থেকে অরণ্য বলে উঠল
---সারপ্রাইজ টা কেমন লাগল।
ডালিয়া আদো আদো কন্ঠে জবাব দিল
---এভাবে কেউ সারপ্রাইজ দেয়।আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।ভেবেছিলাম কি না কি হয়েছে।
---তুমি থাকতে আমার কিচ্ছু হবে না ডালু
---কিন্তু আপনি এটা কিভাবে করলেন?এত কিছু হয়ে গেল আর আমাকে আগে কিছু জানালেন না।
---আরে পাগলি সারপ্রাইজ দিব বলে জানায় নি।এটার মামলা আমি আগেই করেছিলাম।মাঝখান দিয়া আমার প্রবলেমের জন্য মামলাটা আর চালিয়ে যায় নি।তোমার কাছে এসে জীবনের মানেটা বুঝি নতুন করে।তারপর আবার মামলা ওপেন করি। নার্সকে জিজ্ঞেস করি।নার্স ও তার ভুল বুঝতে পেরেছে।আবার কোর্টে গিয়ে আমার পক্ষে সাক্ষী দেয় আর রায় আমার পক্ষে আসে।তা কেমন লাগল সারপ্রাইজ টা।
---সারপ্রাইজটা অনেক ভালো লাগল।অনেক খুশি হয়েছি এতটা খুশি হয়েছি বলে বুঝাতে পারব না।
----আমিও আজকে অনেক খুশি।আবার নতুন করে সব শুরু করব।ডাক্তারি প্র্যাকটিস করব।আর তোমার জন্য একটা টিচার রাখেছি।তোমাকে যেন একটু শিখাতে পারে।কালকে থেকে তোমার টিচার আসবে তোমাকে টুকিটাকি শিখাবে।
---কিন্তু পড়ালেখা তো কবেই ছেড়ে দিয়েছি।আমি কি পারব আবার সব শুরু করতে।ভয় লাগছে অনেক
--আরে পাগলি ভয় পাওয়ার কিচ্ছু নেই আমি আছি তো
ডালিয়া অরণ্যকে যতই দেখছে ততই যেন ডালিয়ার মনে হচ্ছে এ কি সত্যি অরণ্য বাবু নাকি স্বপ্ন।ডালিয়া নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছে না।পরদিন সকালে ডালিয়াকে অরণ্য ডাকতে লাগল
---ডালু,ডালু, নীচে আস।
---আসতেছি।
ডালিয়া নীচে গিয়ে দেখল একটা লোক।লোকটাকে দেখে ডালিয়া ভয়ে কোকরে গেল।আর লোকটাও ডালিয়াকে দেখে রহস্যময় হাসি দিতে লাগল।অরণ্য ডালিয়াকে বলল
---ডালিয়া ওনি রায়হান সাহেব তোমাকে আজকে থেকে পড়াবে।
---আর রায়হান সাহেব ও ডালিয়া আমার স্ত্রী আর আপনার ছাত্রী আজকে থেকে ওকে পড়ানোর দায়িত্ব আপনার
লোকটা অবাক হয়ে অরণ্যকে আবার জিজ্ঞেস করল
---ওনি আপনার স্ত্রী
---হ্যা আমার স্ত্রী। আপনি ওকে পড়ানো শুরু করুন।
---আচ্ছা আপনি যা বলবেন।
রায়হান সাহেব ডালিয়াকে পড়াতে বসল।ডালিয়াকে লক্ষ্য করে বলল
---আচ্ছা ডালিয়া তোমার হাসবেন্ড কি তোমার অতীত জানে।নাকি আমি সব বলে দিব।আমাকে একটু খুশি করে দাও। না হয় আমি তোমার স্বামীকে সব বলে দিব।
এ বলে লোকটা ডালিয়ার শরীরে হাত দিতে লাগল।ডালিয়া সেখান থেকে উঠে চলে আসল।আর রুমে এসে কাঁদতে লাগল।অরণ্য ডালিয়াকে এরকম করতে দেখে অবাক হল।ডালিয়ার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল
---ডালিয়া তুমি এভাবে চলে আসলে যে, কি হয়েছে?
ডালিয়া কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল
---লোকটা এর আগে অনেকবার পতিতা পল্লীতে গিয়েছিল।আজকে লোকটা আমাকে আবার দেখে কুপ্রস্তাব দিচ্ছিল।
ডালিয়ার কথা শোনে অরণ্য রেগে গিয়ে নীচে গেল রায়হান সাহেব কে বলল
---আপনার সাহস কি করে হয় আমার স্ত্রী কে উল্টা পাল্টা বলার।
---আমি উল্টা পাল্টা কেন বলব।আপনার স্ত্রী এর অতীত জানেন ও তো একটা নষ্টা মেয়ে।
---আর আপনি বুঝি খুব ভালো ছেলে।
---মানে?
---আপনার মত কাপুরুষরা যখন ওদের ভোগ করতে যান তখন আপনারা নিজেকে খুব সাধু মনে করেন তাই না?আর ওদেরকে নষ্টা বলতে মুখে আটকায় না।ওদেরকে ভোগ করার সময় আপনাদের নীতি বাক্য কোথায় থাকে।লজ্জা লগে না একটা টিচার হয়ে এত নোংরা কাজ করেন।আবার অন্য মেয়েকে অপবাদ দেন। বের হোন আমার বাসা থেকে
রায়হান সাহেব অরণ্যের কথা শোনে লজ্জিত হয়ে বের হয়ে গেল।ডালিয়া অরণ্যের কথা শোনে বিস্মিত হল।এ প্রথম কোন ছেলে যেন ডালিয়ার মনের কথা গুলো বলল।ডালিয়ার মনটাকে বুঝতে পারল।অরণ্যের প্রতিটা ব্যাবহার যেন ডালিয়াকে অরণ্যের প্রতি আরও দুর্বল করে দিতে লাগল।অপরদিকে অরণ্য ডালিয়ার কাছে এসে বলল
---তুমি কষ্ট পেও না।এসব মানুষের কথায় চোখের জল ফেলো না।এরা কাপুরুষ।এরা মানুষ নামে অমানুষ।
কথাগুলা শোনে ডালিয়ার চোখ দিয়ে কান্না যেন বৃষ্টি হয়ে নামল।ডালিয়া অরন্যকে বলল
---আপনার মত করে আমাকে আর কেউ কখন ও বুঝে নি।এতটা ভালো কেউ কখনও বাসে নি।
অরণ্য ডালিয়ার চোখের জল মুছে দিয়ে ডালিয়াকে জড়িয়ে ধরল আর বলল
--ধুর পাগলি এভাবে কেঁদো না তো।তোমাকে কাঁদলে একদম ভালো লাগে না।আমি চাই তুমি আমার জন্য হলেও সবসময় হাসি খুশি থাক।
ঠিক এ মুহুর্তে অরণ্যের ফোনে মাবিহার কল আসল।আর অরণ্য ফোনটা কেটে দিল।মাবিহা আবার ফোন করল।আর অরণ্য ফোনটা আবার কেটে দিল।পাশ থেকে ডালিয়া বলে উঠল
---অাপনি বারবার ফোন কাটছেন কেন?কে ফোন দিয়েছে।ধরছেন না কেন?
----মাবিহা কল দিয়েছে।
---ধরে দেখুন কি বলে।কোন দরকার আছে কি না।
---আমি চাচ্ছি না ওর কল ধরতে।নতুন কোন নাটক সাজিয়েছে হয়ত।এখন আর ফোন ধরার কোন ইচ্ছা নেই।শোন তাড়াতাড়ি রেডি হও।আজকে তোমাকে নিয়ে পার্লারে যাব।
---পার্লারে কেন?
---ভয় নেই।আজকে কিছু করব না।তোমার চুলে সুন্দর একটা হেয়ার কাট দিয়ে নিয়ে আসব।এখন চুল গুলো কেন জানি এলো মেলো লাগছে।
ডালিয়া অরণ্যের কথা শোনে তাড়াতাড়ি রেডি হল।দুজন মিলে পার্লারে গেল।পার্লারের মহিলা ডালিয়াকে জিজ্ঞেস করল কি কাট দেব বলুন। ডালিয়া চুপ করে রইল। কারন সে বুঝতে পারছিল না কি বলবে।হঠাৎ অরণ্য বলে উঠল ওর চুল তো ছোট আপনি শর্ট লেয়ারটা দিয়ে দিন ওকে মানাবে বেশ।পার্লারের মহিলা অরণ্যের কতা মত ডালিয়াকে শর্ট লেয়ার কাট দিয়ে দিল।কাটা শেষে ডালিয়া আয়নায় নিজেকে দেখে নিজে চিনতে পারল না।কারন ডালিয়াকে বেশ সুন্দর দেখাচ্ছিল।এ কাট টা ডালিয়াকে বেশ মানিয়েছিল।অরণ্যও ডালিয়াকে বলল
---বাহ তোমাকে তো বেশ সুন্দর লাগছে।একদম পরীর মত লাগছে।
ডালিয়া লজ্জায় লাল হয়ে গেল। তারপর দুজন পার্লার থেকে বের হয়ে শপিং এ গেল ডালিয়ার জন্য বিভিন্ন জিনিস কিনল।ডালিয়াও অরণ্যের জন্য একটা শার্ট পছন্দ করে দিল।শপিং শেষে রেস্টুরেন্ট এ বসে দুজন খেল।আস্তে আস্তে সন্ধ্যা হয়ে গেল।আজকে কেন জানি না ডালিয়ার খুব ইচ্ছা হচ্ছে সোডিয়াম বাতির নীচে বসে বাদাম খেতে আর আড্ডা দিতে।কিন্তু অরণ্যকে বললে কি ভাববে?সাহস করে বলবে বলবে ভেবেও যেন বলতে পারছিলনা।হুট করে বলেই ফেলল
---আচ্ছা ১০ টাকার বাদাম কিনবেন।
----তা কিনা যায়।কিন্তু হঠাৎ
---হলুদ বাতির নীচে বসে আপনার সাথে বাদাম খেতে খুব ইচ্ছা করছে এজন্য।একটু আড্ডা দিতে ইচ্ছা করছে।
---আইডিয়াটা খারাপ দাও নি।দাঁড়াও আমি বাদাম কিনে আনতেছি।
অরণ্য ডালিয়াকে দাঁড় করিয়ে রেখে বাদাম কিনে আনল।দুজন মিলে সোডিয়াম বাতির নীচে বসল।কত কথায় যে বলল তারা।অরণ্য ডালিয়ার বাচ্চা বাচ্চা কথাগুলো বেশ উপভোগ করতে লাগল।আর সত্যিই তো ডালিয়া একটা বাচ্চায়।কারন ডালিয়া তো অরণ্যের ১৮ বছরের ছোট।অরণ্য খুব মনযোগ দিয়ে ডালিয়ার কথা শ্রবণ করতে লাগল।ডালিয়া বলতেছিল
---দেখুন আমাকে আর আপনাকে এ বাতির নীচে কেমন হলুদ, হলুদ দেখাচ্ছে।হিহিহি।
----হাহাহা। ডালু এটাকে সোডিয়াম বাতি বলে।
---কি বাতি বললেন?
---সোডিয়াম বাতি।
---এটা আবার কেমন নাম।আমি হলুদ বাতি বলেই ডাকব।
---হাহাহা।তোমার যা ইচ্ছা ডেকো।এখন কি বাসায় যাবা না?অনেক্ষণ তো আড্ডা দিলা।রাত তো বেশ হল।চারপাশ ও শান্ত হয়ে যাচ্ছে।চল গাড়িতে চল বাসায় যাই
---গাড়িতে উঠতে আজকে মন চাচ্ছে না। চলেন আজকে রিকশা দিয়ে যাই।আমার রিকশা দিয়ে ঘুরার খুব ইচ্ছা।
ডালিয়াকে যত দেখছে অরন্য ততই মুগ্ধ হচ্ছে।এটা ভবেই বিস্মিত হচ্ছে কত অল্পেই মেয়েটা খুশি হয়ে যায়।তারপর হাসি মুখে অরণ্য উত্তর দিল
---আচ্ছা তাহলে ড্রাইভার কে বলি চলে যাওয়ার জন্য। আজকে আমরা রিকশা দিয়েই যাব।
---ডালিয়া লাজুক স্বরে উত্তর দিল আচ্ছা।
এরপরে দুজন মিলে রিকশায় উঠল।খোলা আাকাশের নীচে রিকশায় চড়তে দুজনের বেশ ভালোই লাগছে।হালকা মৃদু মন্দ বাতাস দুজনের মনে আর শরীরে শিহরণ দিতে লাগল।চারদিকে তাকিয়ে দেখল ব্যাস্ত শহরটা থমথমে নিস্তব্ধ হয়ে গেল।ডালিয়া হুট করে অরণ্যের কাঁধে মাথা রাখল।অরণ্য ও ডালিয়াকে বেশ আঁটসাট ভাবে জড়িয়ে ধরে রাখল।এখন ডালিয়ার নিজেকে সবচেয়ে সুখী মনে হচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর বাসায় ফিরল।বাসায় ফিরে যা যা কিনল তা বের করে ডালিয়া দেখতে লাগল।খেয়াল করল অরণ্য ডালিয়াকে একটা নীল শাড়ি কিনে দিয়েছে।ডালিয়া শাড়িটা নিয়ে আনন্দে নাচতে লাগল। ডালিয়া শাড়িটার ভাঁজ খুলে পড়ল।পড়ার পর ডালিয়া যখন আয়নায় নিজেকে দেখল ডালিয়ার মনে হল ডালিয়াকে একটা নীল পরী লাগছে।ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক পড়ল।কপালে কালো একটা টিপ পড়ল।তারপর অরণ্যের কাছে গেল
অরণ্য ডালিয়ার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে গেল।ডালিয়ার হেয়ার কাট শাড়ি আর হালকা সাজটা ডালিয়াকে এত মানিয়েছে যা অরণ্যকে বিমোহিত করে দিল। ডালিয়াকে দেখে অরণ্য ডালিয়াকে জড়িয়ে ধরে ডালিয়ার কপালে একটা চুমু দিল।ঠিক এসময় মাবিহা আবার কল দিল।এবার অরণ্য মাবিহার কলটা আবার কাটল।কাটার পর মাবিহা আবার কল দিল অরণ্য আবার কলটা কেটে দিল।বারবার কাটার পরও মাবিহা বারবার কল দিচ্ছিল।তারপর অরণ্য কলটা ধরে.....
#পতিতা পল্লী
১১ তম পর্ব
তারপর অরণ্য কলটা ধরে ডালিয়ার হাতে ফোনটা ধরিয়ে বলল আর ডালিয়াকে বলল
---তুমি কথা বল।
ডালিয়া ফোনটা হাতে নিয়ে বুঝতে পারল না কি বলবে।কিছুটা ভয় ও পেতে লাগল।ফোনটা কানে নিয়ে আবার নীচে নামিয়ে ফেলল।অরণ্যকে বলল
---আমি কি বলব?আপনিই কথা বলেন।আমি কিছু বলতে পারব না।আমার ভয় লাগছে।আর ওনি কত বড় মানুষ ওনার সাথে কতা বলে আমি পারব না।
---আরে তোমার যা ইচ্ছা বলে দাও।এমন কিছু বলবা যাতে মাবিহা আর কল না দিতে পারে।ভয় পাবার কিছু নেই কথা বলতো।আমি আছি তো।কিছু হলে আমি দেখব।
ডালিয়া অরণ্যের কথা শোনে আবার কানে ফোনটা ধরল।খেয়াল করল মাবিহা হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছে।ডালিয়া কিছুটা ভয়ে ভয়ে বলল
---হ্যালো কে বলছেন?
---কে বলছি মানে তুমি কে?
---আমি কে মানে কি?আপনি কল দিয়েছেন, কাকে কল দিয়েছেন জানেন না?আবার আমাকে জিজ্ঞেস করছেন আমি কে?
---এটা তো অরণ্যের মোবাইল তুমি কে?তুমি অরণ্যের মোবাইল নিয়ে কি করছ।
---সেটার জবাব তো আমি আপনাকে দিতে বাধ্য না।
---অরণ্যকে দাও
---অরু ব্যাস্ত।এখন কথা বলা যাবে না।আর অরু চায় ও না আপনি ওকে ফোন দিন।সুতরাং শুধু শুধু ওকে ফোন দিয়া বিরক্ত করবেন।
---তোমার সাহস কি করে হয় অরণ্যের ফোন ধরে এ টাইপ কথা বলতে।তুমি কি ঐ মেয়েটা যে অরণ্যের মাথা খেয়েছ।
---আমি কে সেটার পরিচয় দেওয়ার প্রয়োজন অণুভব করছি না।আপনার সাহস কি করে এত রাতে একজন পরপুরুষকে কল দেওয়ার।
---অরণ্য পরপুরুষ না।অরণ্য আমার স্বামী আর আমি ওর স্ত্রী।
---হাহাহা।আপনি বেশ হাসালেন।স্ত্রী এর আগে প্রাক্তন কথাটা লাগালে ঠিক ছিল।কারন বর্তমানে তো আপনি অরুর স্ত্রী না।আপনাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে অনেক আগেই।এখন কোন যুক্তিতে আপনি নিজেকে অরুর স্ত্রী বলে দাবি করছেন।আর আপনার বিয়ে তো আকাশের সাথে হয়েছে পরিচয় দিলে আকাশের পরিচয় দিন, কল দিলে আকাশকে দিন।অরু কে কেন ডিস্টার্ব করছেন?
---দেখ মেয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করছ।অরণ্যকে দাও বলছি।অরণ্যের সাথে আমার কথা আছে।
---বললাম তো দেওয়া যাবে না।আর দিব কেন?যাকে আপনি কাঁচ ভেবে ছুরে ফেলেছিলেন সে যে একটা হীরার টুকরা ছিল সেটা চিনতে পারেন নি।আর আমি সেই হীরার টুকরাটাকে যত্ন করে রেখে দিয়েছি।আর এখন আপনি এসে দাবি করছেন এটা আপনার।আজিব মানুষ তো।এতবার করে বলছি ও ব্যাস্ত দেওয়া যাবে না তবুও বারবার চাচ্ছেন।মিনিমাম লজ্জাটুকুও কি নেই আপনার।
---এই যে মেয়ে তুমি অরণ্যের কি হও যে এভাবে কথা বলছ।এত বড় সাহস তোমাকে কে দিয়েছে?
---আমি অরণ্যের স্ত্রী হই।আপনি কেন আমাদের মধ্যে জামেলা সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন বুঝছি না।আর এত বড় সাহস আমাকে আমার অরু দিয়েছে।বারবার কেন কল দিয়ে বিরক্ত করছেন।এত রাতে কেউ কল দেয়।জানেনেই তো এটা স্বামী স্ত্রী এর প্রাইভেট সময়।এ সময় কল দিয়ে কেন বিরক্ত করছেন।রোমান্টিক সময়ে কল দিবেন না তো।অরু ফোনটা বন্ধ করে দিতে চাইছিল।কিন্তু আমি ফোনটা ধরছি আপনাকে বুঝানোর জন্য।যেহুত অরণ্য বিবাহিত ওকে আর ডিস্টার্ব করবেন না।প্লিজ আমাদের মধ্যে জামেলা সৃষ্টি করবেন না।আমরা অনেক ভালো আছি।আমাদের ভালো থাকতে দিন।আপনি আপনার আকাশকে নিয়ে ভালো থাকেন।অন্যের সংসার ভাঙ্গতে আসবে না।আমাদের সুখের পথে কাটা হয়ে দাঁড়াবেন না।
একের পর এক কথা ডালিয়া বলেই চলছিল আর এদিকে অরণ্য বেশ মজা নিচ্ছিল।আর ডালিয়ার মুখে এমন কথা শোনে অরণ্যের ও বেশ ভালো লাগছে।দুজনের ঝগড়া দেখে অরণ্য বেশ মজা নিচ্ছিল।ডালিয়ার কথা শোনে তো অরণ্য হেসে লুটুপুটু খাচ্ছিল।কারন মাবিহা কোনভাবেই ডালিয়ার কথার সাথে পেরে উঠছিল না।অবশেষে ডালিয়ার কথার সাথে মাবিহা পেড়ে উঠতে না পেরে মাবিহা বলল
---আমি তোমাকে দেখে নিব মেয়ে।
---সে আপনি যা করার করেন।এখন ফোনটা কেটে আমাদের রোমান্স করার সুযোগ করে দিন।
মাবিহা রেগে মেগে ফোন কেটে দিল।আর ডালিয়ায় ফোন রাখার পর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল আর বলল
--আমি যে ওনাকে আপনার বউ বলে পরিচয় দিয়েছি আপনি রাগ করেন নি তো।
---আরে আমি অনেক খুশি হয়েছি।আমি তো চাচ্ছিলামেই তুমি এমন বল।তুমি তো পুরা ফাটিয়ে দিয়েছ ডালু।
ডালিয়া এবার লজ্জা পেয়ে মাথা নীচু করে বলল।আমি যাই তাহলে আপনি ঘুমান।এ বলে যেতে নিল।অরণ্য ডালিয়ার শাড়ির আঁচলটায় ধরে টেনে বুকের কাছে এনে বলল
---একটু আমার কাছে থেকে যাও।
---কেন কি করবেন?
---কিছুই করব না।সারা রাত তোমাকে দেখব।তোমার কপালে একটা চুমু একে দিব।জানালা দিয়ে জোস্না রাতের চাঁদটা উপভোগ করব।এখন একটা বকুল ফুলের মালা থাকলে ভালো হত।
---বকুল ফুলের মালা দিয়ে কি করবেন?
---বকুল ফুলের মালাটা নিয়ে তোমার গলায় পড়িয়ে তোমার গলা থেকে বকুল ফুলের ঘ্রাণ টা উপভোগ করতাম।
---তারপর কি করতেন।
---তারপর তোমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে রাখতাম।
এবার ডালিয়া বেশ লজ্জা পেল।লজ্জায় যেন লাল হয়ে গেল।ডালিয়ার লজ্জা পেতে দেখে অরণ্য ও বেশ উপভোগ করল আর বলল
---যাও এবার নিজের ঘরে গিয়ে ঘুমাও।কালকে আমার নতুন জয়েন।সকাল সকাল উঠতে হবে।
---আচ্ছা যাচ্ছি।কিন্তু সকালে কি খেয়ে যাবেন বলুন।
---তুমি তোমার ইচ্ছা মত কিছু রান্না কর।
আচ্ছা.... এই বলে ডালিয়া ডালিয়ার রুমে চলে গেল।ডালিয়া রুমে এসে অরণ্যের কথা ভাবতে।কত মায়া ভরা অরণ্যের বুকটা।সব কিছু যেন ডালিয়ার স্বপ্ন মনে হচ্ছিল।এসব ভাবতে ভাবতে ডালিয়া ঘুমিয়ে গেল।পরদিন খুব সকালে ডালিয়া ঘুম থেকে উঠল।উঠে রান্না শুরু করে দিল।রহমত চাচা এসে বলল
---আরে মা তোকে কষ্ট করতে হবে না।আমিই করে দিচ্ছি।বল কি করতে হবে।
---চাচা তুমি যাও তো।এতদিন অনেক করেছ।এবার আমাকে করতে দাও।চুপ করে গিয়ে বসে থাক।আরেকবার কাজ করতে চাইলে কিন্তু ভালো হবে না।
---পাগলি একটা।এমন ভাবে শাসন করছে যেন আমার মা হয়।
"মা" কথাটা শোনে ডালিয়ার চোখের জল ছলছল করতে লাগল।এভাবে তার বাবাও কোনদিন আপন করে কথা বলে নি।আর রহমত চাচা কত আপন করেই না কথা বলছে।রহমত চাচা ডালিয়ার চোখে জল দেখে বলল
---কি রে মা কাঁদছিস কেন।তোকে কি আমি কষ্ট দিয়েছি।মা বলেছি বলে রাগ করেছিস।
---রহমত চাচা এ চোখের পানি যে সুখের।তুমি যে ভালোবেসে মা ডেকেছ কতটা খুশি হয়েছি বলে বুঝাতে পারব না।আজ থেকে তুমি আমার চাচা না ববা।আমিও তোমাকে বাবা বলে ডাকব।তোমার মত করে আমার বাবাও আমাকে ভালোবাসে নি।
রহমত চাচা এক রাশ হাসি দিয়ে বলল।
---আমার লক্ষী মা তুই।তোর যা মন চায় ডাকিস।তোর মত লক্ষী ময়ের বাবা হতে পেরে যে আমি খুব খুশি।রান্না কি শেষ করেছিস নাকি আরও বাকি?
----শেষ চাচা।এবার শুধু টেবিলে দেওয়ার পালা।
হঠাৎ ডালিয়া শোনতে পেল অরণ্য তাকে ডাকছে।
---ডালু ডালু কোথায় তুমি?
---আসতেছি।কিন্তু কেন?
---আমার মানিব্যাগ আর ঘড়িটা কোথায়?
---ড্রসিং টেবিলের উপরে দেখুন।
---পাচ্ছি না তো তুমি এসে দিয়ে যাও
ডালিয়া দৌঁড়ে উপরে গেল।উপরে গিয়ে দেখল মানিব্যাগ আর ঘড়ি ড্রসিং টেবিলের সামনেই আছে।কিছুটা অভিমানী রাগী চোখ নিয়া মানিব্যাগ আর ঘড়িটা দিয়ে বলল
---এখানেই তো আছে।তাহলে না করলেন যে?
---হুম জানি আছে।কিন্তু আমি চাই ঘড়িটা তুমি পড়িয়ে দাও।তাই আসতে বলেছি।এখন তাড়াতাড়ি ঘড়ি পড়িয়ে দাও তো।
---আপনি যে মাঝে মাঝে কি করেন বুঝি না।বাচ্চাদের মত আচরণ করেন একদম।
---তুমি জানো আমি কত সিনিয়র তোমার।আবার তুমি আমাকে বাচ্চা বল। ১৬ বছরের একটা পুচকি মেয়ে আমাকে বাচ্চা বলে।সাহস কত।হাহাহা।
---সে আপনি যায় বলেন মাঝে মাঝে আপনাকে আমার বাচ্চায় মনে হয়।
---হয়েছে হয়েছে।তোমার সাথে কথা বলে আমি পারব না।এবার পাকা পাকা কথা রেখে আমাকে ঘড়িটা পড়িয়ে দাও তাড়াতাড়ি।এত বকবক করতে পারে।
----কি আমি বকবক করি।আর কথায় বলব না।
অরণ্য ডালিয়াকে টেনে বুকের কাছে এনে বলল
---তুমি কথা না বললে যে আমিই মরেই যাব।
ডালিয়া অরণ্যের মুখটা চেপে ধরে বলল
---মরার কথা বললে কিন্তু আমি সত্যিই কথা বলব না।আপনি মরে যাবেন আমার আগে এটা আমি ভাবতেও পারি না।এ কথা আর বলবেন না।
কথাটা বলে ডালিয়া একদম কেঁদে দিল।অরণ্য ডালিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল
---পাগলি মেয়ে এভাবে কাঁদে না।মরতে তো হবেই সবাইকে।আচ্ছা সরি আমি আর একথা বলব না।
ডালিয়া অরণ্যে দিকে এবার অভিমানী চোখ নিয়া তাকিয়ে বলল
---কান ধরেন তাহলে।কান ধরে সরি বলেন।
---সত্যিই কি কান ধরতে হবে।আজকে মাফ করে দেওয়া যায় না।
---কোন মাফ নেই, কান ধরেন।
অতঃপর অরণ্য কান ধরে মুচকি হাসি দিয়া বলল
---আমি আর এমন কথা বলব না।আমি আমার ডালুকে আর কষ্ট দিব না।আমার ডালুকে সবসময় খুশি রাখার চেষ্টা করব।এবার ডালু রানী আমার ঘড়িটা পরিয়ে দিন।না হয় অফিস যেতে লেট হবে যে।
ডালিয়া মুখের কোনে একরাশ হাসি নিয়ে অরণ্যকে ঘড়িটা পড়িয়ে দিয়ে বলল।
---এবার নাস্তা খেতে নীচে চলুন।
ডালিয়া ও নীচে গেল।রান্না ঘর থেকে খাবার নিয়ে এসে টেবিলে দিতে লাগল।হুট করে রান্না ঘর থেকে আাসার সময় ডালিয়া পা পিছলে পড়ে গেল।অরণ্য খেয়াল করল ডালিয়া পড়ে আছে।তাড়াতাড়ি ডালিয়ার কাছে গেল।ডালিয়াকে রগী কন্ঠে বলল
---এত তারাহুরার কি আছে।কাজ করবা আস্তে ধীরে ।এখন যদি কিছু হত।উঠ আমার কাঁধে ভর করে।
ডালিয়া অরণ্যের জারি শোনে একটু মন খারাপ করল।অরণ্যের কাঁধে ভর করে উঠে চুপ করে দাড়িঁয়ে রইল
অরণ্যও বুঝতে পেরেছে ডালিয়া অভিমান করেছ।তাই ডালিয়াকে বলল
---হয়েছে হয়েছে আর এভাবে মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না।তুমি যদি পরে ব্যাথা পেতে তাহলে কে ভুগত আমি নাকি তুমি।এখানে বস।আজকে একসাথে খাব।
---আপনি খান আমি পড়ে খেয়ে নিব।
---একটা মাইর দিব।তাড়াতাড়ি বস।
অরণ্য ডালিয়াকে টেনে চেয়ারে বসিয়ে খাইয়ে দিল।ডালিয়া যেন স্বপ্নের সাগরে ভাসতে লাগল।ভাবতে লাগল এত সুখ তার কপালে সইবে তো।নাকি আাবার সব সুখ ফিকে হয়ে যাবে।খাওয়া শেষে ডালিয়া অরণ্যকে জিজ্ঞেস করল
---আপনি কখন আসবেন?
---আজকে তাড়াতাড়ি চলে আসব।তুমি রেডি থেক।বিকেলে ঘুরতে যাব।কোথায় যাবে বলতো
ডালিয়া অনেক ভেবে উত্তর দিল
---শিশু পার্কে যাব।
অরণ্য ডালিয়ার কথা শোনে হাসতে হাসতে উত্তর দিল
--- এত জায়গা থাকতে শিশু পার্কে কেন?
---আমার খুব ইচ্ছা ছিল শিশু পার্কে যাবার।কিন্তু বাবা ব্যাস্ত থাকায় কখনও যেতে পারে নি।আর এরপর মা মরে যাওয়ার পর তো জীবনেই পাল্টে গেল।শিশু পার্কে যাব কিভাবে।এজন্য বললাম।না নিয়ে যেতে পারলে থাক।
---হয়েছে মুখ ভার করে রাখতে হবে না।আমি এসেই নিয়ে যাব।রেডি হয়ে থেকে।
ডালিয়া তো শোনে খুশির চুটে অরণ্যকে জরিয়ে ধরল।তারপর আাবার নাচতে নাচতে রুমে চলে গেল।অরণ্য ডালিয়ার খুশি দেখে ভাবতে লাগল মেয়েটা কত বাচ্চাসুলভ।আচরণ গুলা একদম বাচ্চাদের মত।আর হবেই বা না কেন বয়স ও তো একদম কম।১৬ বছরের মেয়ে আর কত বড়।পরিস্থিতি তাকে এ হাল করেছে।না হয় ডালু তো একটা বাচ্চায়।একটু ভালোবাসা পেয়েই কতটা খুশি।ডালিয়াকে একটু ভালো রাখতে পেরে অরণ্যের মনে যেন একটা শান্তি লাগছে।
এরপর অরণ্য অফিসে গেল।পুরোনো অফিসটা যেন নতুন করে পেল।সেই চেনা হাসপাতাল চেনা ঘর।অনেকটা বদলে গেছে।বদলে গেলেও যেন অরণ্যের কাছে চিরচেনা মনে হচ্ছে।অফিসটা আজ নতুন করে পেয়ে অরণ্য বেশ খুশি হল।আর মনে মনে ডালিয়াকে অণুভব করতে লাগল।কারন এ সব কিছুই হয়েছে ডালিয়ার জন্য।ডালিয়ার জন্যই আজ অরণ্য সব হারিয়ে যাওয়া জিনিস ফিরে পেয়েছে।ডালিয়ার প্রতি ভালোলাগাটা কখন যে অরণ্যের মনে ভালোবাসায় রুপ নিয়েছে অরণ্য বুঝতেই পারে নি।
সব কাজ সেড়ে বিকেল ৩ টায় অরণ্য বাসায় ফিরে দেখল ডালিয়া একদম রেডি হয়ে বসে আছে।অরণ্যের বুঝতে বাকি রইল না ডালিয়া শিশু পার্কে যাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে আছে। ডালিয়া অরণ্যকে দেখার পর বলল
---আপনি এসেছেন।আমি তো সেই কখন থেকে রেডি হয়ে বসে আছি।আপনার নাম্বার ও নাই যে কল দিব।রহমত চাচাও নাম্বার জানে না।
---ওরে আমার ডালুটাকে মনে হয় খুব বেশি অপেক্ষা করিয়ে ফেলেছি।মোবাইলটা দাও দেখি।
ডালিয়া তার ছোট্র ভাঙ্গা মোবাইলটা অরণ্যের কাছে বাড়িয়ে দিল।অরণ্য সেই মোবাইলে অরণ্যের নাম্বারটা অরু লিখে সেভ করে দিল আর বলল
---এই যে নাম্বার সেভ করে দিচ্ছি।এখন খোঁজ নিতে আর সমস্যা হবে না।আর চলেন।তাড়াতাড়ি শিশুপার্কে যায়।
----কিন্তু কি দিয়ে যাবেন।চলেন রিকশা করে যাই।
---একটু দূরে এখান থেকে রিকশা দিয়ে যাওয়া যাবে না।আমরা গাড়ি দিয়ে যাব তারপর আসায় সময় অর্ধেক রাস্তা গাড়ি দিয়ে আসব আর বাকি অর্ধেক রাস্তা রিকশা দিয়ে ওকে।
---আচ্ছা।
অতঃপর দুজন মিলে শিশু পার্কে গেল।অরণ্য খেয়াল করল ডালিয়া শিশু পার্কে গিয়ে বেশ খুশি।বাচ্চাদের মত ঘোড়ায় চড়ছে,বিমানে চড়ছে।কত কি নাই করছে।সত্যিই তো মেয়েটা তো বাচ্চায়।আর অরণ্যকে ডেকে ডেকে বলছে
---আমি একটু ফুলদানিতে উঠব।আমি একটু রেল গাড়িতে উঠব।আপনিও আমার সাথে উঠুন।
অরণ্যও ডালিয়ার সাথে ঐখানে থেকে নিজেকে বেশ বাচ্চায় মনে হতে লাগল।কারন ডালিয়ার বাচ্চাসুলভ আচরণ গুলো যেন অরণ্যের বেশ ভালোই লাগছে।
ঐখানে ঘুরা শেষে এবার বাসায় আসার পালা।অর্ধেক রাস্তা গাড়িতে এসে ডালিয়া আর অরণ্য নেমে গেল।ডালিয়া হুট করে বলে উঠল।
---হলুদ বাতি জ্বলে উঠেছে কি মজা।
অরণ্য বেশ হাসতে লাগল ডালিয়ার কথা শোনে।আর বলল
---হুম হলুদ বাতি জ্বলে উঠেছে।চল একটু হেঁটে সামনে যেতে হবে।তারপর রিকশা নিতে হবে।
অরণ্য আর ডালিয়া খানিকটা পথ হেঁটে সামনে গেল।সামনে গিয়ে ডালিয়া যা দেখল নিজের চোখ কেও বিশ্বাস করতে পারছিল না।কারন ডালিয়া দেখল......
#পতিতা পল্লী
১২তম পর্ব
ডালিয়া দেখল.....
একজন মধ্য বায়স্ক লোক রাস্তায় ভিক্ষা করছে তার একটা পা ভাঙ্গা।ডালিয়ার লোকটাকে বেশ চেনা চেনা লাগছে।ডালিয়াকে দেখে লোকটা মুখটা লুকাতে চাইল।ডালিয়া লোকটাকে ভালো করে খেয়াল করে দেখল এ আর কেউ না এ যে তার বাবা।কিন্তু তার বাবার এ হাল হল কিভাবে?ডালিয়া জটপট বাবার হাত টা ধরে বলল
---বাবা তুমি এখানে কেন?তোমার এ হাল কেন?এভাবে এখানে বসে আছ কেন।তোমার কি হয়েছে বাবা? তুমি এভাবে ভিক্ষা করছ কেন।তোমার পা ভাঙ্গছে কিভাবে?বাবা কথা বলছ না কেন?কথা বল।
---কে তুমি আমাকে বাবা বলে ডাকছ।আমি কারও বাবা না।আমি তোমাকে চিনি না।
---বাবা ভালো করে দেখ আমি তোমার ডালিয়া।কতদিন পর তোমাকে দেখলাম।
---আমার ডালিয়া নামে কোন মেয়ে নাই।আমি তোমাকে চিনি না। তুমি এখান থেকে যাও তো মা।
---বাবা এমন করে বল না।আমার সাথে চল তুমি।তোমাকে রেখে যাব না আমি।
---বললাম তো আমি কারও বাবা না।এই যে সাহেব আপনার কে হয় ওনি?
---চাচা আমার বউ হয়।
---আপনি আপনার বউকে নিয়ে যান হয়ত ওনি ওনার বাবার চেহারা গুলিয়ে ফেলছে।আমার কোন মেয়ে নাই।
---আচ্ছা চাচা আপনি অস্থির হবেন না।আমি দেখছি।
অরণ্য বুঝতে পারল না ডালিয়া হঠাৎ ওনাকে দেখে এমন কেন করছে।তাই ডালিয়াকে বলল
---দেখ ডালু ওনি তো বলল তোমাকে চিনে না হয়ত তোমার ভুল হচ্ছে।চল এবার বাসায় চল।
----নাহ অরু আমার ভুল হচ্ছে না।ওনিই আমার বাবা।
---আচ্ছা ডালু এবার চল বাসায় যায়।ওনি তো যেতে চাচ্ছে না।আমরা পরে একদিন আসব নে।
এই বলে অরণ্য ডালিয়াকে চেপে ধরে রিকশায় তুলল।আর ডালিয়া বাবা,বাবা বলে চিল্লাতে লাগল।রিকশায় উঠে ডালিয়া বেশ কাঁদতে লাগল।অরণ্য ডালিয়ার কান্না দেখে বলল
---সত্যিই কি ওনি তোমার বাবা?তোমার কি কোথাও ভুল হয়েছে কি না দেখ।
---দেখেন আমি মেয়ে হয়ে বাবাকে চিনব না।ওনিই আমার বাবা।কিন্তু আমার বাবার এ হাল কিভাবে হল।কিভাবে ওনি এখানে আসল।আমাকেই বা কেন না চিনার ভান ধরল।আমি তো ওনার কাছে টাকা পয়সা চাইব না বুঝতেই পেরেছে তবু কেন এমন করল।
---তা তো জানি না।তবে যে বাবা তোমার এত বড় ক্ষতি করেছে।এত কষ্ট দিয়েছে।সে বাবার জন্য তুমি চোখের পানি ফেলছ ডালিয়া।ওনার এ অবস্থা হয়েছে ভালোই হয়েছে।
---দেখেন আমি জানি ওনি আমার সাথে যা করেছে অন্যায় করেছে এটা করা ওনার ঠিক হয় নি।কিন্তু যতই হোক ওনি আমার বাবা।ওনার জন্য আমি এ দুনিয়া দেখতে পারছি।যত নিকৃষ্টই হোক ওনার মেয়ে তো আমি আর ওনি তো আমার বাবা।হয়ত বাবা বুঝতে না পেরে সময় আর পরিস্থিতি এর প্রেক্ষিতে একটা ভুল কাজ করেছে তাই বলে মেয়ে হয়ে বাবাকে অস্বীকার করব।বাবার এমন দুর্দিন দেখে চুপ করে থাকব।সেটা তো হয় না।
অরণ্য ডালিয়ার কথা শোনে বেশ অবাক হল।এত ছোট মেয়ে তার কত বড় বুঝ।সে ঠিকেই কতটা গভীর ভাবে চিন্তা করে কথাগুলো বলেছে।সত্যিই ডালিয়াটা একটা অসাধারণ মেয়ে।ডালিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখল ডালিয়ার চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে।অরণ্য ডালিয়ার চোখ দুটো মুছে দিয়ে বলল
---সব ঠিক হয়ে যাবে, চিন্তা কর না।
হঠাৎ রিকশা ওয়ালা বলে উঠল
---মামা চইলা আইছি।নামবেন না?
---হ্যা মামা নামতেছি।
---মামা মামীর মনে হয় মনডা খারাপ।
---তা একটু খারাপ।
---এত সুন্দর মামীডারে কষ্ট দিয়েন না।
---আচ্ছা দিব না মামা।আপনাকে কত দিব।
---আপনার যা ইচ্ছা দেন।
অরণ্য পকেট থেকে ৫০০ টাকা নোট বের করে দিল।রিকশাওয়ালা ৫০০ টাকা নিয়ে বলল
---এত বড় নোটের তো ভাংতি হবে না।ছোট নোট দিন মামা।
---আরে ভাংতি লাগবে না।পুরাটাই তোমাকে দিয়ে দিছি।তুমি তোমার মামীর জন্য দোআ কর।
রিকশা ওয়ালা খুশি হয়ে বলতে লাগল
---মামা আল্লাহ আপনাদের ভালো রাখুক।মামীর কোলে ফুটফুটে একটা সন্তান দিক।আল্লাহ আপনাদের মনের ইচ্ছা পূরণ করুক।
ডালিয়া রিকশা ওয়ালার কথা শোনে বেশ লজ্জা পেল।তারপর দুজন বাসায় গেল।বাসায় গিয়েও যেন ডালিয়ার মন পড়ে রইল তার বাবার দিকে।অনেক টা চুপচাপ হয়ে রইল।অরণ্য বেশ বুঝতে পারল ডালিয়া কষ্ট পাচ্ছে।আর এদিকে ডালিয়া শুধু ভাবতে লাগল,তার বাবা কেন তার সাথে এমন করল।কেন তার বাবা তাকে না চিনার ভান করল।এ হাল কিভাবে হল তার বাবার।তার সৎ মা কোথায়।এসব ভাবতে ভাবতে ক্লান্তিতে ডালিয়া চোখ বুজে আসল আর ডালিয়া ঘুমিয়ে গেল।সকালে উঠে খেয়াল করল ৮ টা বেজে গেছে।ডালিয়ার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।এত সকাল হয়ে গেছে এখনও কিছু রান্না হয় নি অরণ্য কি খেয়ে যাবে একথা ভেবে।ডালিয়া তাড়াতাড়ি রান্না ঘরে গিয়ে যা দেখল অবাক না হয়ে পারল না।দেখল অরণ্য রান্না করতেছে।ডালিয়া অরণ্য দেখে কিছুটা বিস্মিত হয়ে বলল
---আপনি রান্না করতে কেন এসেছেন।আমাকে ডাক দিলেই তো পারতেন।
---তুমি এত সুন্দর করে ঘুমিয়েছ।তোমাকে ঘুমানো অবস্থায় দেখে বেশ নিষ্পাপ লাগছিল।কেন জানি মন চাচ্ছিল না তোমাকে ডাকতে তাই ডাকে নি।
---আচ্ছা সরুন এবার বাকিটা আমি করছি।
---আর কিছু করতে হবে না।তুমি চুপ করে গিয়ে বস।আজকে আমিই রান্না করব।এখানে পাকামো করতে আসবা না একদম।
---হুহ রান্না করে একদম আমাকে উদ্ধার করে দিচ্ছে।মনে হচ্ছে ওনি একাই রান্না বিশারদ।হুহ।
ডালিয়ার বাচ্চাসুলভ উত্তর শোনে অরণ্য মনে মনে হাসতে লাগল।এর মধ্যে রান্নাও শেষ করল।তারপর টেবিলে গুছাতে যাবে ঠিক এ মুহুর্তে ডালিয়া বলল
---এবার টেবিলটা গুছাতে আমাকে দিন।
---আমি রান্না করতে পারছি টেবিল ও গুছাতে পারব। তুমি চুপচাপ বসে দেখ শুধু।
ডালিয়া আর কি করবে।বুঝতে পারল অরণ্য বেশ ঘাড় তেরামো শুরু করছে।তাই সে বসে বসে অরণ্যের কান্ড দেখতে থাকল।হঠাৎ টুংটাং কলিংবেলের আওয়াজ পেল।রান্না ঘর থেকে অরণ্য বলে উঠল
---ডালু দেখতো কে এসেছে।
হ্যাঁ আমি দেখতেছি এ বলে ডালিয়া দরজা খুলে দেখল একটা মেয়ে দাঁড়ানো।মেয়েটা বেশ সুন্দরী।ডালিয়া মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করল
---আপনি কে?
---আমি কে সেটা তোমাকে কেন বলব? অরণ্য কোথায়?
---অরু তো রান্না ঘরে।কিন্তু আপনি কে?পরিচয় না দিয়ে ঢুকে পড়ছেন কেন?
---আমার বাড়িতে আমি ঢুকব তোমার কাছে কেন পরিচয় দিয়ে ঢুকতে হবে।এখান থেকে ওদিকে যাও আমাকে ডুকতে দাও।
---আগে তো বলবেন আপনি কে?
অরণ্য রান্না ঘর থেকে বলতে লাগল
---কি হল ডালু কে এসেছে?এত কথা কিসের?
---জানি না আপনি এসে দেখেন তো কে এসেছে।চিনি না। একটা মেয়ে এসেছে।
---দাঁড়াও আমি আসতেছি।ওনাকে বসতে বল।
অরণ্য রান্না ঘর থেকে এসে চমকে গেল কারন অরণ্য খেয়াল করল মাবিহা এসেছে।মাবিহাকে দেখে অরণ্য বেশ চটেও গেল।মাবিহাকে বলল
---তুমি এখানে কি করতে এসেছ মাবিহা?
---অরণ্য আমি তোমার কাছে এসেছি তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিও না।
---মাবিহা প্লিজ তুমি চলে যাও এখন। তোমাকে মেনে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।প্লিজ যাও।
---অরণ্য আমার কথাটা শোন।
---কোন কথা শোনবা না যাও তো এখান থেকে।
পাশ থেকে ডালিয়া বলে উঠল
---ওনি কি বলতে চায় একবার শোনেন।
মাবিহা ডালিয়ার কথা শোনে আরও চটে গেল আর বলল
---এই মেয়ে আমাদের মধ্যে কথা বলার তুমি কে?তোমাকে এত বড় সাহস কে দিয়েছে এভাবে কথা বলার।তুমি সেই মেয়েটা যে অরণ্যের মাথা খেয়েছে।
ডালিয়াকে এভাবে অপমান করতে দেখে অরণ্য আরও রেগে গেল আর বলল
---ও ডালিয়া।ডালিয়ার সাথে ভদ্র ভাষায় কথা বল। তোমাকে এত বড় সাহস কে দিয়েছে ওকে অপমান করার।আর শোন ও আমার স্ত্রী।
পাশ থেকে ডালিয়া কি জানি বলতে চাইছিল।তখন অরণ্য ডালিয়ার গালে একটা কষিয়ে চড় বসিয়ে বলল
---আমাদের কথার মাঝখানে এখন তুমি কোন কথা বলবা না।আর মাবিহা দেখছ তো তোমার জন্য ডালুর সাথে আমার জামেলা হচ্ছে।আমাদের সুখের সংসারটা নষ্ট করে দিও না।প্লিজ আমাকে মুক্তি দাও।আমি তোমাকে আর ভালোবাসি না।ভালোবাসা কি জোর করে হয় বল?তুমি যেদিন আাকশের সাথে চলে গিয়েছিলে সেদিন তো আমি তোমাকে কোন বাধা দেয় নি।জোর করে তোমাকে পেতে চায় নি।তবে আজকে কেন তুমি আমাকে জোর করতেছে।আমার আর ডালিয়ার জীবনে জটিলতা সৃষ্টি করতেছ।তোমার জন্য ডালিয়ার গায়ে হাত তুললাম।প্লিজ মাবিহা আমাকে ক্ষমা করে দাও।আমাদের দাম্পত্য জীবনটা নষ্ট কর না।তুমি চলে যাও।
অরণ্যের কথা শোনে মাবিহার চোখের জল ছল ছল করতে লাগল। বুঝতে পারল তার অরণ্য এখন ডালিয়ার হয়ে গেছে তার অরণ্য এখন আর তার নেই।কিছুটা লজ্জিত আর অণুতপ্ত হল।আর বলল
---অরণ্য আমি সরি।আমি বুঝতে পারে নি যে তুমি আমাকে এভাবে পর করে দিয়েছ।বুঝতে পারে নি তুমি আর আমার অরণ্য নেই।তুমি এখন ডালিয়ার হয়ে গেছ এটা ভাবতেও পারি নি।আর তোমার জীবনে কাটা হয়ে দাঁড়াব না।যে ভুল আমি করেছি তার শাস্তি তো আমাকে পেতেই হবে।তোমরা দুজন ভালো থাকো।আর ডালিয়া মনে কষ্ট নিও না।তোমাদের মাঝে এভাবে আসা আমার ঠিক হয় নি।
এই বলে মাবিহা কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল।আর ডালিয়াও চরটা খেয়ে বেশ অভিমান নিয়া রুমে গেল আর কাঁদতে লাগল।কিছুক্ষণ পর ডালিয়া খেয়াল করল অরণ্য এসেছে।অরণ্যকে দেখে যেন ডালিয়ার অভিমানের পাল্লাটা আরও ভারী হল।ডালিয়া তার মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিল।অরণ্য ডালিয়াকে এদিকে টেনে নিজের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলল
---ডালু সরি এভাবে চড় দেওয়াটা ঠিক হয় নি।এভাবে চড় না দিলে তো তুমি বলেই ফেলতে যে তুমি আমার স্ত্রী না।
ডালিয়া অভিমানী কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
---আপনি জানলেন কিভাবে যে আমি এটাই বলব।
---আমি তোমার মনের কথা বুঝি।কিন্তু তুমি মাবিহার পক্ষ টানতেছিলে কেন?
---কারন আপনি মাবিহাকে ভালোবাসেন আমি চেয়েছিলাম মাবিহার সাথে যেন আপনার সব ঠিক হয়ে যায়।
---কে বলেছে আমি মাবিহাকে ভালোবাসি?
---আমার মনে হল।
---তুমি ভুল জান।আমি মাবিহাকে ভালোবাসি না।কিন্তু সরি তোমাকে এভাবে চড় দেওয়াটা ঠিক হয় নি।রাগ কর না।
অরণ্যের আদর পেয়ে ডালিয়ার অভিমান টা যেন আরও বেড়ে গেল।ডালিয়া এবার কেঁদেই দিল।অরণ্য ডালিয়াকে বুকে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল
---আমার পাগলিটাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলছি।আমার পাগলিটা কান্না কর না।আর এমন ভুল হবে না।আমার পাগলিটা যা বলবে তাই করব।কান্নাটাও থামাও প্লিজ।তুমি কাঁদলে যে আমার ভালো লাগে না।প্লিজ কেঁদো না।
---এখন আর আদর করে কথা বলতে হবে চড় দেওয়ার সময় হুশ ছিল না।
অরণ্য এবার ডালিয়ার গালটা টেনে একটা চুমু দিল।আর বলল সরি। ডালিয়ার অভিমানটাও বেশ কমে গেল অরণ্যের ঠোঁটের কোমল স্পর্শ পেয়ে।অরণ্য ডালিয়ার লজ্জা মাখা মুখটা দেখে বলল
---আর লজ্জা পেতে হবে না।চল এবার খেতে চল।অফিস যেতে আজকেও লেট হবে।
---যেভাবে বলছ লেট মনে হয় আমি করতেছি।হুহ।এখন সব দোষ আমার ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে তাই না।
অরণ্য হাসতে হাসতে উত্তর দিল
---আমার ডালুর ঘাড়ে দোষ চাপানোর সাহস আমার আছে নাকি।
---হুহ এখন আর ঢঙ ধরতে হবে না খেতে চলেন।না হয় আর আজকে অফিসে যাওয়া লাগবে না।
তারপর দুজন মিলে খেতে গেল।খাওয়া শেষে অরণ্য হাসপাতালে গেল।আর ডালিয়া ঘরের কাজ করতে লাগল।ডালিয়া কাজ করতে করতে খেয়াল করল সন্ধ্যা হয়ে গেছে।কিন্তু অরণ্যের আসার কথা ছিল ৫ টায় এখনও আসে নি।৭ টা বেজে গেছে এখনও কেন আসছে না ডালিয়া বুঝতে পারছিল না।ডালিয়া অরণ্যকে কল দিল দেখল অরণ্যের নাম্বারটা বন্ধ।বারবার কল দিল দেখল নাম্বার টা বন্ধ।ডালিয়া বেশ চিন্তায় পড়ে গেল।অরণ্যের ফোন বন্ধ কেন বুঝতে পারছিল না।ডালিয়া ডালিয়ার রুমে গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল কখন অরণ্য আসবে।দেখতে দেখতে ৯ টা বেজে গেল।ডালিয়ার চিন্তা যেন আরও বেড়ে গেল।ডালিয়া বুঝতে পারছিল না কি করবে।হঠাৎ রহমত চাচা এসে বলল ডালিয়া মা তোর সাথে জানি কে জানি দেখা করতে এসেছে।ডালিয়া জিজ্ঞেস করল
---কে এসেছে চাচা।
---তা তো জানি না।তুই গিয়ে দেখ মা।
---অরণ্য কেন আসছে না চাচা।
---তা জানি না।তুই নীচে গিয়ে দেখতো লোকটাকে চিনিস কি না।
ডালিয়া নীচে গিয়ে দেখল ডালিয়ার বাবা বসে আছে আর পাশে অরণ্য।ডালিয়া তার বাবাকে দেখে জড়িয়ে ধরে বলল
---বাবা তুমি এখানে কিভাবে আসলে?আর কালকে আমার সাথে কেন এমন করলে?তোমার এহাল কিভাবে হল?
ডালিয়ার বাবা হুহু করে কেঁদে আর বলল
---সব পাপের শাস্তিরে মা।তোর সাথে যে অন্যায় করেছি আমি তারেই শাস্তি পেয়েছি।তোকে না চিনার ভান এজন্য ধরেছি যে সুদিনে তোকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলাম আর এ দুর্দিনে তোকে বুকে জড়িয়ে নিলে যে তুই আমাকে লোভী ভাবতি মা।আল্লাহ আমাকে আমার পপের শাস্তি দিয়েছে।তোকে বের করে দেওয়ার কয়দিন পরেই আমার এক্সিডেন্ট হয়। আর তোর সৎ মা সব লিখে নিয়ে আমাকে বের করে দিয়েছে। এরপর থেকে আমি ভিক্ষা করে খাই মা।তোকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর অরণ্য বাবা আজকে সন্ধ্যায় আমার কাছে যায় আমাকে বুঝিয়ে এখানে নিয়ে আসে।আমাকে ক্ষমা করে দিস মা।আমি যে বড়ই অন্যায় করে ফেলেছি।
বাবার কথাটা শোনে ডালিয়া অরণ্যের দিকে তাকাল।অরণ্য একরাশ হাসি দিয়ে চোখে সম্মতিসূচক ইশারা দিল।আর ডালিয়া বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল
---আমি জানি বাবা তুমি যা করেছ না বুঝে করেছ।যত যাই হোক তুমি আমার বাবা।তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারব না।আজকে থেকে তুমি এখানেই থাকবে।
ডালিয়ার বাবা ভিতরে ভিতরে বেশ অনুতপ্ত হল।আর মেয়ের এমন আচরণ দেখে তার অণুতপ্তটা যেন আরও বেড়ে গেল।তার ভুল বুঝতে পেরে ভিতের কষ্টের ভারটা যেন আরও বেড়ে গেল।আর মা,বাবা মিলে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল।
অতঃপর ডালিয়ার বাবা এখানে রয়ে গেল।রহমত চাচা ডালিয়ার বাবাকে রুমে দেখিয়ে দিল আর খাবার খেতে দিল।আর ডালিয়া অরণ্যকে বলল
---আগে রুমে চল তোমার খবর আছে।
অরণ্য হসতে হাসতে রুমে গেল আর ডালিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলল
---তা মহারাণী বলেন কি করবেন আমাকে,?
ডালিয়ার অরণ্যের হাতটা ছুটাইয়া বলল
---আপনার ফোন বন্ধ ছিল কেন?আপনি জানেন না আমার আপনাকে নিয়ে চিন্তা হয়।আর কখন এমন করবেন।
---ইচ্ছা করেই বন্ধ করেছি।
---ইচ্ছা করে বন্ধ করেছেন মানে?
---যাতে তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে পারি।
----আমার আর কোন সারপ্রাইজ লাগবে না।আর এমন করবেন না।
---আচ্ছা বাবা আর করব না।এবার রাগ দেখানো অফ করে খবার রেডি কর অনেক ক্ষুদা লাগছে।সারাদিন তো খালি রাগ দেখাও।
---কি আমি রাগ দেখায় তাই না।আর আপনি যে কুকাম গুলো করেন সেটার বেলায় কিছু না।
---থাক আর বিস্ফোরণ ঘটাতে হবে না।আমারেই দোষ।এবার খুশি।খেতে দাও তাড়াতাড়ি
---আচ্ছা আপনি ফ্রেশ হয়ে নীচে আসুন।আমি খবার রেডি করছি।
এভাবে অরণ্য আর ডালিয়ার সম্পর্ক টা আস্তে আস্তে ভালোবাসায় রূপ নিল।মাবিহাও আর এর মধ্যে জামেলা করে নি।কারন মাবিহাও তার কাজের জন্য লজ্জিত।আর এদিকে অরণ্য আর ডালিয়ার সম্পর্টা বেশ জমে গেল।অরণ্য ও চিন্তা করল ডালিয়াকে বিয়ে করবে।
কিন্তু হঠাৎ একদিন
#পতিতা পল্লী
১৩ তম পর্ব
কিন্তু হঠাৎ একদিন রহমত চাচা এসে ডালিয়া আর অরন্যকে বলল
---কে জানি এসেছে ডালিয়ার খোজ করতে।অরণ্য বাবা আর ডালিয়া মা নীচে গিয়ে দেখে এসো তো।
অরণ্য আর ডালিয়া তখন বসে বসে গল্প করছিল।আর অরণ্য মনে মনে ভাবছিল যে আজকে ডালিয়াকে প্রপোজ করবে।আর ডালিয়াকে প্রপোজ করতে নিয়েছিল ঠিক এ মুহুর্তে চাচার এ কথা শোনে ডালিয়া আর অরণ্য নীচে গেল।নীচে গিয়ে অরণ্য খেয়াল করল একটা মধ্য বয়স্ক অপরিচিত লোক এসেছে।অরণ্য লোকটাকে ঠিক চিনতে পারল না।তাই অরণ্য লোকটা জিজ্ঞেস করল
---আপনি কে? এখানে কি জন্য?আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম।
অপরদিকে ডালিয়া লোকটাকে দেখে ভয়ে মুচরে গেল কারন লোকটা আর কেউ না লোকটা তার প্রাক্তন স্বামী।লোকটা ডালিয়াকে দেখে বলল
---তুই আমার সাথে চল।তোরে বিয়া করছি এখানে রাখার জন্য
লোকটাকে ডালিয়ার সাথে এভাবে কথা বলতে দেখে বেশ রেগে গেল।অরন্য লোকটাকে রাগী কন্ঠে জবাব দিল।
---কে আপনি? এখানে এসে এভাবে অসভ্যতা করছেন যে।আপনার তো সাহস কম না আমার বাড়িতে এসে আমার বউ এর সাথে অসভ্য ভাষায় কথা বলছেন।
লোকটা এবার বিদঘুটে হাসি দিয়ে জবাব দিল
---আপনার বউ কি করে হয়? একে তো আমি ২ বছর আগে বিয়ে করেছিলাম এ আমার বউ আপনি একে জিজ্ঞেস করেন।আমাদের ডিভোর্স ও হয় নি। আমার বউ এর সাথে আমি যেভাবে ইচ্ছা কথা বলব তাত তোর কি?আমি আমার বউকে নিয়ে যেতে এসেছি তোর বাপের কি তাতে?
অরণ্য লোকটার কথা শোনে বুঝতে পারল এ আর কেউ না এ ডালিয়ার প্রাক্তন স্বামী।এবার অরণ্য আরও রেগে গেল।অরণ্যের রক্ত যেন মাথায় চড়ে গেল।অরণ্য কিছু বলার আগেই লোকটা ডালিয়ার হাত ধরে বলল
---চল আমার সাথে চল তোরে আর কষ্ট দিমু না।তুই আমার সাথে থাকবি।
ডালিয়া হাতটা ছুটানো চেষ্টা করল।কিন্তু শক্তি সাথে পেরে উঠচিল না।তাই চিল্লায়ে চিল্লায়ে বলতে লাগল
--আমাকে ছাড়েন আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না।আমার হাত ছাড়েন।
অরণ্য লোকটার কান্ড দেখে রেগেমেগে বলল
--- ডালিয়ার হাত ছাড়ুন বলছি।তা না হলে ভালো হবে না বলছি।
লোকটা আবার ও বিদঘুটে হাসি দিয়ে বলল
--- আমার বউকে আমি ধরেছি তাতে তোর কি?আমি ছাড়ব না।ডালিয়াকে আমার সাথে করে নিয়ে যাব।বেশি তেড়িবেড়ি করলে অন্যের বউ অপহরণ করার মামলা ঠুকে দিব কিন্তু।
---হাত ছাড়ুন ডালিয়ার, না হয় ভালো হবে না।
--- ছাড়ুম না হাত।ডালিয়া আমার বউ।তুই কি করবি কর।
এ বলে ডালিয়ার হাত টেনে নিয়ে যেতে চাইল।অরণ্য বেশ রেগে ডালিয়াকে ঐ লোকটার হাত থেকে ছুটিয়ে লোকটাকে কষিয়ে চড় মারল আর বলল
---জানোয়ার,বেহায়া,নির্লজ্জ, কাপুরুষ লজ্জা লাগে না ডালিয়াকে বউ এর পরিচয় দিতে।বাপের বয়সী হয়ে একটা মেয়ের বয়সী মেয়েকে বিয়ে করেছিস।আমারে মামলার ভয় দেখাস।১৪ বছর বয়সী মেয়েকে বিয়ে করে বাল্য বিবাহ করেছিস,বিয়ের রাতে নিজের স্ত্রীকে অন্য পরুষ দিয়ে ধর্ষণ করাইছিস,নিজের বউরে নিজে ধর্ষন করছিস,কুত্তার বাচ্চা তুই তো একটা ধর্ষক,তারপর নিজের বউরে পতিতা পল্লীতে বিক্রি করে দিছিস।তুই তো একটা পাচাকারী।তুই আমার নামে কি মামলা করবি আমি তের নামে এখন বাল্যবিবাহ করার,পাচার করার আর ধর্ষণের মামলা করুম।দেখি তুই কিভাবে বাচিঁস।
এসব বলে লোকটাকে অরণ্য আরও কয়েকটা কিল ঘুষি দিল।তারপর পুলিশকে ফোন দিল।পুলিশ তাৎক্ষণিক এসে বলল
---জ্বী অরণ্য সাহেব বলেন।
---এই যে এই লোকটাকে ধরে নিয়ে যান।আপনাকে তো ফোনে সব জানিয়েছি এ লোকটার কাহিনী।একে কঠোর শাস্তি দেওয়ার ব্যাবস্থা করুন।
---ধন্যবাদ অরন্য সাহেব আমরা একে নিয়ে যাচ্ছি।আপনি সময় করে একবার থানায় এসে ফাইল করে যাবেন।আর আমরা লোকটার নামে চার্জসিট রেডি করে রাখব।
---আপনাকেও ধন্যবাদ।
তারপর পুলিশগুলো লোকটাকে ধরে নিয়ে গেল।ডালিয়া শুধু নীরব দর্শকের মত সবটা দেখল।ডালিয়ার চোখের জল যেন ছল ছল করে পড়তে লাগল।অরণ্য ডালিয়াকে কাছে টেনে বলল
---ভয় পেও না আমি থাকতে তোমার কিছু হবে না।
ডালিয়া চুপ করে সব শোনল।অরণ্যের প্রতি আরও মুগ্ধ হয়ে গেল।যতই অরণ্যকে দেখছে ততই যেন ডালিয়ার ভালোবাসাটা দ্বিগুন হতে লাগল।
কিন্তু এ ঘটনার প্রভাবটা মনে হয় অরণ্যের মনে দাগ কেটেছিল।সেদিনের পর থেকে অরণ্য ডালিয়ার সাথে খুব বেশি কথা বলত না।ডালিয়া বুঝতে পারছিল না অফিসের ব্যাস্ততার জন্য এমন করছে নাকি ডালিয়ার উপর অরণ্যের ক্ষোভ জন্মেছে এজন্য।নাকি অরণ্যের ডালিয়াকে মানতে কষ্ট হচ্ছে।এসব ভেবে ডালিয়া কিছুটা অস্থির হয়ে গেল।ইদানিং ডালিয়ার শরীরটা ও বেশ খারাপ হতে লাগল।শরীরটা যেন দিন দিন দুর্বল হতে লাগল।একটা ডাক্তার দেখানো দরকার কিন্তু অরণ্যকে বললে যদি রেগে যায়।তাই সিদ্ধান্ত নিল ডালিয়া তার বাবাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবে।ডালিয়া তার বাবার কাছে গিয়ে বলল
---বাবা আমার সাথে একটু বাইরে যেতে পারবা?
---কেন মা কোথায় যাবি?
--- ডাক্তারের কাছে যাব।
---কেন রে মা কি হয়েছে তোর?
---আরে ঐরকম কিছু না।চল যায়।
---মা রে আমার তো এক পা ভাঙ্গা আমাকে সাথে করে নিয়ে গেলে আরও জামেলা হবে।আমাকে সামলাবি নাকি ডাক্তার দেখাবি।এর থেকে ভালো তুই তোর রহমত চাচাকে নিয়ে যা।
---আচ্ছা বাবা।
ডালিয়া তার বাবার রুম থেকে বের হয়ে রহমত চাচাকে ডাকতে লাগল
---রহমত চাচা,রহমত চাচা।
---কিরে মা কি হয়েছে?
---আমার সাথে একটু চলো তো।
---কোথায় যাব আগে সেটা তো বল।
---ডাক্তারের কাছে যাব একটু
---কেন রে মা তোর কি হয়েছে।
---আরে তেমন কিছু না একটু শরীর খারাপ। ডাক্তার দেখাইয়া ঔষধ খেলেই ঠিক হয়ে যাবে।চল তো।
---অরণ্যকে বলি।
---আরে ওকে বলতে হবে জানই তো ও ইদানিং ও অনেক বিজি।শুধু শুধু ওর চিন্তা বাড়িয়ে লাভ নেই।
---আরে, আরে আমার মা টা দেখি বেশ সংসারী হয়ে গেছে।
কিছুটা লজ্জা পেয়ে বলল
---হয়েছে এবার চলো তো।
---আরে আমাকে পান্জাবীটা তো পাল্টাতে দিবি তো।আমি পান্জাবি পাল্টাইয়া আসি আগে।
---আচ্ছা তাড়াতাড়ি আস।
রহমত চাচা কিছুক্ষণ এর মধ্যে নতুন পান্জাবী পড়ে এসে ডালিয়া কে বলল
---এবার চল মা।
তারপর দুজন মিলে ডাক্তারের কাছে গেল।ডালিয়া ডাক্তারের সিরিয়াল দিল। অতঃপর ডাক্তার দেখাল।ডাক্তার দেখিয়ে চেম্বার থেকে বের হল। রহমত চাচা ডালিয়াকে দেখে বলল
---কি রে মা ডাক্তার কি বলল?কোন সমস্যা নাই তো।
ডালিয়া একরাশ হাসি দিয়ে বলল
---আরে চাচা এত চিন্তা কর না তো কোন সমস্যা নাই। সব ঠিক আছে।কিছু টেস্ট দিয়েছে।আজকে করে যাব কালকে সকালে রিপোর্ট দিলে ডাক্তারকে আবার দেখাব।এমনি সব ঠিক আছে।
---তাহলে যা টেস্ট গুলা করিয়ে আয়।আমি এখানে বসি।
আচ্ছা চাচা, এই বলে ডালিয়া টেস্ট গুলো করে বের হল।তারপর রহমত চাচা আর ডালিয়া বাসায় ফিরল।ডালিয়ার ফিরেই অরণ্যের জন্য রান্না করল।অরণ্য আসার পর ডালিয়া অরণ্যকে খেতে দিল।অরণ্য তেমন কোন কথা ডালিয়ার সাথে বলল না।ডালিয়া ভিতরে ভিতরে বেশ কষ্ট পেতে লাগল।সত্যিই কি অরণ্য ব্যাস্ততার জন্য এমন করছে নাকি অন্য কিছু।এসব ভেবে ভেবে ডালিয়া না খেয়েই ঘুমিয়ে গেল।সকালে উঠে দেখল অরণ্য ডালিয়াকে না বলেই হাসপাতালে চলে গেছে ।ডালিয়া বিষয় টা ভেবে বেশ কষ্ট পেল।তারপর রহমত চাচাকে ডাকতে লাগল
---রহমত চাচা, রহমত চাচা তাড়াতাড়ি বের হও ডাক্তারের কাছে যাব রিপোর্ট দেখাতে।
---ডালিয়া মা তুই আজকে একটু একা যা। আমার আজকে কাজ আছে।ড্রাইবারকে নিয়ে গাড়ি করে চলে যা।
--আচ্ছা চাচা
ডালিয়া রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল।ডালিয়া বাসায় এসে দেখল বাসার মেইন দরজাটা খোলা।ঘরে কোন আলো নেই।ডালিয়া এমন দেখে বেশ চমকে গেল।কারন এমন তো কখনও হয় নি।ডালিয়া ঘরে ঢুকে লাইট জ্বালিয়ে দেখল চারপাশে কেউ নেই।ডালিয়া, রহমত চাচা,বাবা,বলে ডাকতে লাগল।কেউ কোন সাড়া দিল না।ডালিয়া তাদের রুমে গিয়ে দেখল কেউ নেই।ডালিয়া বেশ ভয় পেয়ে গেল।ভাবতে লাগল কারও কিছু হয় নি তো।ভয়ে ভয়ে ডালিয়া চারপাশ তাকাল।খেয়াল করল চারপাশে কেউ নেই।ডালিয়ার ভয়টা যেন আরও বেড়ে গেল।হঠাৎ ডালিয়ার চোখ গেল অরণ্যের রুমে। ডালিয়া খেয়াল করল অরণ্যের রুমের লাইট জ্বালানে।ডালিয়া দৌঁড়ে অরণ্যের রুমে গিয়ে দেখল অরণ্য চেয়ারে বসে বসে হাসছে।ডালিয়া বুঝতে পারল না অরণ্য এভাবে হাসছে কেন।ডালিয়া বেশ চমকে গেল অরণ্যের হাসি দেখে।ভয়ে ভয়ে ডালিয়া জিজ্ঞেস করল
---আপনি এভাবে হাসছেন কেন?
---হারামজাদী হাসব না তো কাঁদব?
অরণ্যের কথা শোনে ডালিয়ার মথায় যেন আকাশ ভেঙে গেল।কারন এ কোন অরণ্যকে ডালিয়া দেখছে।আর অরণ্য এভাবে কথা বলছে কেন?তাহলে কি অরণ্য আগের রূপে ফিরে গেছে।ডালিয়া ভয়ে ভয়ে স্তব্ধ স্বরে অরণ্যকে জিজ্ঞেস করল
----আপনি এভাবে কেন কথা বলছেন?
অরণ্য আবার বিদঘুটে একটা হসি দিল।আর বলল
---এভাবে কথা বলব না তো কিভাবে বলব।তুই কি ভেবেছিস আমি ভলো হয়ে গেছি।আমি তোর সাথে এতদিন অভিনয় করেছি।হারামজাদী তোর কথায় ভালো হয়ে যাব ভাবলি কি করে?
অরণ্যের কথা শোনে ডালিয়ার মাথাটা যেন ঝিমঝিম করতে লাগল।ডালিয়া হঠাৎ দাঁড়ানো থেকে বসে পড়ল।অরণ্য খেয়াল করল ডালিয়া নীচে বসে পড়েছে।অরণ্য তাড়াতাড়ি ডালিয়ার কাছে গেল।আর বলল
---ডালু ডালু কি হয়েছে তোমার? আমি তো মজা করছিলাম। আমার কিছু হয় নি।দেখ আমি ঠিক আছি একটু চারদিকটা তে খেয়াল করে দেখ।
ডালিয়া অরণ্যের কথা শোনে মাথা তুলে চারদিক খেয়াল করে দেখল বেলুন আর ফুল দিয়ে পুরা রুম সাজানো।এতক্ষণ ডালিয়া এগুলা খেয়ালেই করে নি।হঠাৎ রহমত চাচা আর ডালিয়ার বাবা আর অরণ্য বেলুন ফাটাতে লাগল আর বলতে লাগল হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ।ওহ ডালিয়ার আজকে জন্মদিন ডালিয়া নিজেও ভুলে গিয়েছিল।আর ভুলবেই বা না কেন যে পথে সে গিয়েছে সেখানে এসব আবেগে কোন মূল্য নেই। ডালিয়া বেশ বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করল
---আমার জন্মদিন আপনি জানলেন কিভাবে?
---তোমার বাবা বলেছে।
কিন্তু ডালিয়া এবার কাঁদতে কঁদতে তার রুমে চলে গেল।অরণ্য বুঝতে পারল না ডালিয়া এভাবে কেন কাঁদল।অরণ্য ও দৌঁড়ে ডালু ডালু বলে ডালিয়ার রুমে গিয়ে বলল
---ডালু কাঁদছ কেন?কি হয়েছে?আমি কি তোমাকে খুব বেশি কষ্ট দিছি।
ডালিয়া অরণ্যের কলার ধরে বলল
---আপনাকেকে কতবার বলেছি এসব মজা আমার সাথে করবেন না।তবুও কেন এসব মজা করে আমাকে কষ্ট দেন।আমাকে কেন আপনি যন্ত্রণা দেন।।এসব মজা আমার ভালে লাগে না।এসব মজা করলে যে আমি ভয় পেয়ে যায় আমার কট হয় সেটা কি আপনি বুঝেন না।তবুও কেন এমন করেন বলেন।
এটা বলে ডালিয়া অরণ্যের বুকে মাথা রেখে কাঁদতে লাগল।আর অরণ্য ডালিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল
---ডালু সরি আমি আর কোনদিন এমন মজা করব না।আমি বুঝতে পারি নি তুমি এতটা কষ্ট পাবে।আমি তো সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য এমন করছিলাম।তুমি বল আজকে আমার থেকে কি চাও আমি তাই দিব,সেটা মানার চেষ্টা করব।কিন্তু প্লিজ তুমি কান্না কর না।প্লিজ তুমি কান্না থামও এভাবে কাঁদলে যে আমার অনেক কষ্ট হয়।তুমি বুঝ না আমি তোমাকে ভালোবাসি ডালিয়া।
ডালিয়া কান্না থামিয়ে অরণ্যকে আরও জোরে জড়িয়ে ধরে বলল
---আপনি আমাকে কথা দিন আপনি সবসময় এমন থাকবেন।আপনাকে কোন মেয়ে বা আমিও যদি ছলনা করে ঠকায় তবুও আপনি আগের মত হবে ন না।আমি আপনার কাছে শুধু এটাই চাই।
অরণ্য ডালিয়ার কথা শোনে বেশ অবাক হল।ডালিয়া তার নিজের জন্য কিছুই চাইল।উল্টা অরণ্যের ভালো চাইল।অরণ্য ডালিয়ার কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল
---কথা দিলাম ডালু আমি আর কোনদিন আগের মত হব না।প্লিজ তুমি ঐ রুমে চল সবাই অপেক্ষা করছে।আর কান্নাকাটি কর না।
ডালিয়া চোখ মুছে বলল
---চলেন।
তারপর ডালিয়া আর অরণ্য ঐ রুমে গেল।একসাথে কেক কাটল।অরণ্য ডালিয়ার হাতে রিং পড়িয়ে দিল।আর ঠিক করল ৭ দিন পরেই বিয়ে করবে।ডালিয়ার বাবা আর রহমত চাচাও বেশ খশি হল।সবাই সিদ্ধান্ত নিল ঘরুয়া ভাবেই বিয়ে হবে।আর ডালিয়াকে অরণ্য একটা কাগজ দিল আর বলল এটা হল ঐ লোকটার সাথে তোমার ডিভোর্স এর কাগজ সাইন করে দাও।তাহলে আর কোন সমস্যা থাকবে না।আমাদের মাঝে তাহলে কেউ আর বাধা দিতে পারবে না।ডালিয়াও সাইন করে দিল।অরণ্য ডালিয়াকে বলল
---বিয়ে ঘরুয়া ভাবে হলেও আমি চাই তুমি পরীর মত সাজ।তোমাকে নিয়ে এ কয়দিন শুধু শপিং করব।
ডালিয়াও বেশ খুশি হল।রাতে নিজের রুমে এসে ডালিয়া আংটি টা দেখতে লাগল।পরদিন দুজন মিলে শপিং এ গেল।ডালিয়া আর অরণ্য শাড়ির দোকানে গেল।ডালিয়াকে অরণ্য একটা নীল শাড়ি দেখিয়ে বলল
---ডালু তুমি এ নীল শাড়িটা নাও তোমাকে বেশ মানাবে।
ডালিয়া মুচকি হেসে জবাব দিল
---আমি জানি আপনার নীল পছন্দ তাই বলে বিয়ের দিন নীল পড়ব।আমি বিয়েরদিন লাল শাড়ি পড়ব।লাল টুকটুকে বউ সাজব।আমি একটা লাল শাড়ি কিনব।
---আচ্ছা আমার ডালুর যা ইচ্ছা হয় তাই কিনে দিব।
ডালিয়া একটা টকটকে লাল শাড়ি কিনল।রকমারী গহনা কিনল।অরণ্য ও শেরওয়ানি কিনল।আস্তে আস্তে সময় ও পার হল।সপ্নের মত যেন সুখের সময় টা পার হতে লাগল।আর কালকে ডালিয়া আর অরণ্যের বিয়ে।বিয়ের কথা মনে হয়ে অরণ্য বেশ আনন্দ পেতে লাগল।ডালিয়াকে আপন করে পাবে এটা ভেবেই যেন অরণ্যের মনটা খুশি হয়ে যেতে লাগল।এসব ভাবতে ভাবতেই অরণ্য ঘুমিয়ে গেল।পরদিন সকালে রহমত চাচার ডাকে অরণ্যের ঘুম ভাঙ্গল।রহমত চাচা হাপাঁতে হাঁপাতে বলতে লাগল
----অরণ্য ডালিয়া,ডালিয়া!!!
---কি হয়েছে চাচা তুমি এমন করছ কেন? ডালিয়ার কি হয়েছে?
---ডালিয়াকে কোথাও পাচ্ছি না।সারা বাড়ি তন্ন তন্ন খুজেছি ডালিয়া কোথাও নেই
---এত সকালে কেথায় গেছে।কি বলছ চাচা
---হ্যা বাবা সত্যি বলছি তুমি এসে দেখে যাও।
অরণ্যও সারা বাড়ি খুজে ডালিয়াকে পেল না।ডালিয়ার রুমে দেখল ডালিয়া নেই।সাথে ডালিয়াকে কিনে দেওয়া শাড়ি আর গহনা গুলোও নেই।হঠাৎ অরণ্যের চোখ গেল ডালিয়ার টেবিলের উপর।দেখল একটা কাগজ গ্লাসের নীচে চাপা দেওয়া।কাগজটা খুলে দেখল ডালিয়ার অগোছাল হাতের লেখা আর সেখানে ডালিয়া লিখল
"আমাকে মাফ দিন।আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারব না।শাড়ি আর গয়না গুলো নিয়ে গেলাম।আর আপনার সাথে যা করেছি সবটা আমার ছলনা।আপনি মাফ করে দিন আমাকে"
চিঠিটা পরে অরণ্যের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।ডালিয়া এমন একটা কাজ করল বিশ্বাসেই করতে পারছে না।দিন গড়িয়ে রাত হল ডালিয়া আর আসল না।অরণ্য মনে মনে ভাবল ডালিয়া তাকে ঠকালেও সে ডালিয়াকে ঠকাবে না।ডালিয়ার কথা সে রাখবে।সে আর আগের জীবনে যাবে না।সবকিছু ঠিক মত করবে।তবে এটা আবার ও প্রমাণ হল"মেয়ে মানুষ ছলনাময়ী বিষাক্ত জাল"
আস্তে আস্তে দিন পার হতে লাগল অরণ্যও অরণ্যের গতিতে চলতে লাগল।কেটে গেল ৩ টা মাস।হঠাৎ একদিন অরণ্য খেয়াল করল মাবিহা এসেছে।মাবিহাকে দেখে অরণ্য বেশ চমকে গেল।আর মাবিহা দেখার পর অরণ্যের ও একটা ক্ষুদ্র মায়া জন্মালো।মাবিহা কে অরণ্য জিজ্ঞেস করল
---মাবিহা তুমি হঠাৎ।
---ভয় পেও না আমি তোমার সাথে জোর করে থাকতে আসি নি।আমি তোমাকে একটা কথা বলতে এসেছি।
মাবিহার শান্ত স্বরের জবাব শোনে অরণ্যের একটা মায়া কাজ করল মাবিহার প্রতি।অরণ্য মাবিহাকে জিজ্ঞেস করল কি কথা বল।
মাবিহা অরণ্যের দিকে একটা.....
#পতিতা পল্লী
১৪তম পর্ব/শেষ পর্ব
মাবিহা অরণ্যের দিকে একটা হাত বাড়িয়ে দিয়ে অরণ্যের হাতটা ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল
---আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না?একটা শেষ সুযোগ কি দেওয়া যায় না?।আমি যে অণুতপ্তের আগুনে পুড়তে পুড়তে ছাই হয়ে গেছি।আমাকে মাফ করে দাও।আমাকে তোমার করে নাও।আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখ আমার চোখে কোন ছলনা নেই।আমায় মাফ করে দাও অরণ্য।
অরণ্য মাবিহার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখল মাবিহাকে বেশ নিষ্পাপ লাগছে।আজকে মাবিহার চোখে অরণ্য কোন ছলনার ছাপ দেখতে পারছে না।আজকে মাবিহাকে অনেক পবিত্র লাগছে।আর সত্যিই তো মাবিহা একটা ভুল করেছে তাকে তো সে ভুল শুধরানোর সুযোগ দেওয়া উচিত।মাবিহার প্রতি হঠাৎ একটা মায়া জন্মালো অরণ্যের।এ মায়ার জাল ছিড়ে যেন অরণ্য বের হতে পারছিল না।তাই অরণ্য মাবিহাকে জড়িয়ে ধরে বলল
---আমার এ ছন্নছাড়া জীবনে কেন জড়াতে চাও? তুমি যে কষ্ট ছাড়া কিছুই পাবে না।
মাবিহাও কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল
---তুমি আমাকে যত পার কষ্ট দাও তবুও আমাকে ফিরিয়ে দিও না।
পাশ থেকে রহমত চাচা বলে উঠল
---অরণ্য বাবা মাবিহা মা যেহুত ভুল বুঝতে পেরেছে তাকে ক্ষমা করে দাও।তাকে আর কষ্ট দিও না।তাকে শুধরানোর একটা সুযোগ দাও।তোমরা আজকেই বিয়ে নাও।
অরণ্য, মাবিহার কথা ভেবে রহমত চাচার কথা ফেলতে পারল না।অতঃপর তারা বিয়ে করে নিল।মাবিহাও আগের থেকে বদলে গেল।মাবিহা ডাক্তারি করা ছেড়ে দিয়েছিল আরও আগেই।অরণ্য চাই না মাবিহা জব করুক।আর মাবিহাও অরণ্যের বউ বলে পরিচয় দিতেই বেশি ভালো বোধ করত।মাবিহা বেশ মানিয়ে নিল অরণ্যের সাথে।মাবিহাকে পেয়ে অরণ্যও বেশ খুশি ছিল।একমাস পর মাবিহা অরণ্যকে বলল
--একটা কথা বলার ছিল
অরন্য মাবিহার কোমরে হাত দিয়ে কানে কানে বলল
---কি কথা?
মাবিহা অরণ্যের দিকে ফিরে অরণ্যের কানে একটা চুমু দিয়ে বলল
---তুমি বাবা হতে চলেছ। আমাদের পরিবারে নতুন অতিথি আসতে শুরু করেছে।
অরণ্য মাবিহার কথা শোনে খুশিতে আত্নহারা হয়ে গেল।মাবিহাকে কোলে নিয়ে ঘুরাতে লাগল।মাবিহা বলল
---আরে আস্তে আস্তে।বাবু ব্যাথা পাবে যে।
অরণ্য জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলল
---ওহ সরি। আজকে থেকে তোমার বাড়ির সব কাজ করা বন্ধ।আজকে থেকে শুধু রেস্ট নিবা।আমি চাই না বাবু আর বাবুর মায়ের কোন ক্ষতি হোক।
মাবিহাও সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল।অরণ্য আর মাবিহার জীবন বেশ ভালোয় কাটতে লাগল।তারা বেশ ভালোই সময় কাটাতে লাগল।অরণ্য মাবিহার একটা বিষয়ে প্রথমে আপত্তি করলেও অরণ্য পরে আর এ বিষয় নিয়ে আপত্তি করে নি।কারন মাবিহা প্রতিমাসে ১৫ হাজার টাকা আলাদা করে কি করত সেটা অরণ্যকে বলত না।প্রথম প্রথম অরণ্য জানতে চাইলেও পরে ভাবল হয়ত সংসারের কোন কাজের জন্য রেখেছে তাই পরে আর এটা নিয়া মাবিহাকে কিছু বলে নি। আস্তে আস্তে মাবিহার ডেলিভারীর সময় আসল।একদিন হঠাৎ মাবিহা ব্যাথায় চিল্লাতে লাগল।অরণ্য মাবিহাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেল।ডাক্তার মাবিহাকে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে গেল তাড়াতাড়ি ।আর বের হয়ে বলল
---অরণ্য সাহেব আমরা আপনার স্ত্রী কে বাঁচাতে পারি নি সরি।আপনার সন্তান ভালো আছে।আর আপনার কন্যা সন্তান হয়েছে।
অরণ্যের ভিতরা টা যেন একথা শোনে দুমরে মুচরে গেল।অরণ্য দৌঁড়ে মাবিহার কাছে গিয়ে দেখল মাবিহার নিথর দেহটা পড়ে আছে।মাবিহাকে জড়িয়ে ধরে অরণ্য চিল্লায়ে কাঁদতে লাগল।হঠাৎ অরণ্য খেয়াল করল কেউ একজন তার কাঁধে হাত রেখেছে।অরণ্য পিছন ফিরে যা দেখল নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছিল না।খেয়াল করল ডালিয়া দাঁড়ানো।অরণ্য ডালিয়াকে দেখে আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল
---ডালিয়া তুমি এখানে?তুমি এতদিন কোথায় ছিলে।দেখ মাবিহা মরে গেছে।
---হুম জানি অরণ্য মাবিহা মরে গেছে।আর এটাই যে হওয়ার ছিল
---মানে?
---তাহলে শোন। সেদিন আমি রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলাম।হঠাৎ খেয়াল করলাম মাবিহা ডাক্তারের কাছে গেছে আর বেশ আচ্ছন্ন মনে ছিল। মাবিহার চেহারাটা দেখে কেন জানি না আমার মনে হচ্ছিল কিছু একটা হয়েছে।আমি দৌঁড়ে মাবিহা যেখানে ডাক্তার দেখিয়েছিল সেখানে গেলাম।সেখানে গিয়ে যা শোনলাম নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।কারন জানতে পারলাম মাবিহার বড় একটা রোগ ধরা পড়েছে আর মাবিহা বাঁচবে মাত্র ২ থেকে ৩ বছর।একথা শোনে আমি বেশ চমকে গেলাম।পরদিন মাবিহার সাথে যোগাযোগ করলাম।মাবিহা বেশ কষ্ট পাচ্ছিল।নিজের এ রোগের জন্য বারবার নিজেকে দায়ী করছিল।ভাবছিল যে, তোমাকে কষ্ট দিয়েছে তাই তার এমন হয়েছে।কিন্তু তার খুব শখ ছিল তোমার ভালোবাসা নিয়ে মারার।আমি মাবিহাকে অনেক করে বললাম তুমি অরণ্যকে বিয়ে কর আমি অরণ্যের জীবন থেকে চলে যাব। মাবিহা রাজি হল না।কিন্তু এদিকে আমি জানতে পারলাম আমি কখনও মা হতে পারব না।তাই মাবিহাকে বললাম
---মাবিহা আমি অরণ্যকে কখনও বাচ্চা দিতে পারব না।তুমি ওকে বিয়ে কর আর একটা বাচ্চা নাও।তারপর তোমার কিছু হলে আমি তোমার বাচ্চার দায়ভার নিব।আমি চাই তুমি অরণ্যের ভালোবাসা পাও।প্লিজ না কর না।
মাবিহা হতাশ কন্ঠে বলল
---কিন্তু সে তো আমায় ভালোবাসে না ডালিয়া।সে তো তোমাকে ভালোবাসে।আমি চাই না তোমাদের মাঝে আসতে।
---আমাদের মাঝে তুমি আস নি বরং তোমাদের মাঝেই আমি এসে পড়েছি।অরণ্য তোমাকে ভালোবেসেই বিয়ে করবে।শুধু আমার কথাটা শোনে যেও।
সেদিন আমার জোরাজোরি তে মাবিহা রাজি না হয়ে পারল না।সে রাজি হলো।সে ডাক্তারে কাছে জানতে পারল এসময় সে বাচ্চা নিতে পারবে কিনা।ডাক্তার তাকে বলল বাচ্চা নেওয়া যাবে।তবে এতে ঝুঁকি বেশি হয়ত ডেলিভারীর সময় মৃত্যু ঘটবে।মাবিহা এটাই স্থির করল সে তোমাকে বিয়ে করে বাচ্চা নিবে।কিন্তু আমি তোমার জীবনে থাকলে মাবিহা কখনও তোমাকে পেত না তাই এত বড় নাটক করেছি।আর আমি যদি তোমাকে এ ঘটনা বলতাম তাহলে তোমার মাবিহার প্রতি শুধু দয়া আসত ভালোবাসা না।
"আমি চেয়েছি মাবিহাকে তুমি ভালোবাস।চেয়েছি সে তোমার ভালোবাসা পেয়ে মরুক।মাবিহা নিজের ভুল শুধরে নিয়েছিল।আমি চেয়েছি সে তার ভুল শুধরানোর পুরুষ্কার পাক।"
তার জন্যই এত বড় নাটক করা।আর মাবিহা ১৫ হাজার টাকা নিয়ে আমাকে পাঠাত আমার খাওয়া খরচের জন্য।তুমি হাজারবার জানতে চাইলেও সে বলে নি।আর আমাকেও সে একলা ছাড়ে নি।তার বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছে।প্রতিদিন কথা হত আমাদের।আর আজকে যখন মাবিহার পেইন উঠল আমাকেই প্রথম ফোন দিয়েছিল।মাবিহা ডাক্তারকে আগেই বলে দিয়েছিল তোমাকে যেন না জানানো হয়।ডাক্তার তাই করল।এবার তুমি যা শাস্তি দিবে আমি মেনে নেব।যদি মনে কর আমি আর মাবিহা তোমাকে ঠকিয়েছি তাহলে তুমি যা শাস্তি দিবে তাই মেনে নিব।
ডালিয়ার কথা শোনে অরণ্য নিস্তব্ধ হয়ে গেল।কারন মাবিহা এত বড় একটা রোগ নিয়ে ছিল কত যন্ত্রণায় না তাকে সহ্য করতে হয়েছে।কিন্তু অরণ্যকে বুঝতে দেয় নি।হাসি মুখে সবসময় কথা বলেছে।আর ডালিয়া নিজের ভালোবাসাকে অন্যের হাতে তুলে দিল সেটাও কাউকে বুজতে দিল না।বরং আরও নিজেকে ছলনাময়ী প্রমান করে গেল।
"সত্যিই মেয়েরা ছলনাময়ী এ ছলনা কিছু কিছু মানুষের জীবনে সুখ এনে দেয় আাবার কিছু কিছু মানুষের জীবন শেষ করে দেয়।"
অরণ্য যেদিন প্রথম ছলনার শিকার হয়েছিল তখন তার জীবন নষ্ট হয়ে গিয়েছিল আর ২য় ছলনা তো অরণ্যের জীবন পাল্টে দিল।
"মেয়েরা যেমন ছলনাময়ী বিষাক্ত জাল তেমনি ছলনাময়ী মায়ার বাধন।"
এ বাধন ছিড়ে যাওয়ার ক্ষমতা কারও নেই।মাবিহার লাশটা অরণ্য জড়িয়ে ধরে বলতে লাগল
---একটা বার তো বলতে পারতা।দুজনে কষ্টটা ভাগ করে নিতাম।তাহলে না বলে কেন চলে গেলে।না বলে কেন ধোকা দিলে।এ কোন ছলনার মায়ায় আমায় ফেলে গেলে যেখান থেকে বের হতে পারছি না।দেখ তো একবার আমাদের কন্যা সন্তান হয়েছে।তুমি আরেক মায়ার ছলনা রেখে গেলে মাবিহা।মাবিহা দেখ ডালিয়া এসেছে।তুমি তো তাকে কিছু বল।এ মেয়েটা যে তোমাকে অনেক ভালোবাসে।
এদিকে ডালিয়াও কাঁদতে লাগল।ডালিয়া মাবিহার বাচ্চাটা কুলে জড়াইয়া নিয়ে বলতে লাগল
---তোর এক মা চলে গিয়েছে তো কি হয়েছে আমি আছি তো।তোর মায়েরা যে কষ্ট গুলো পেয়েছে তোকে সে সব কষ্ট থেকে আগলে রাখব মা।তোর কাছে কোন কষ্ট আসতে দিবনা।আর অরণ্যকে বলল-তোমার বাচ্চার মা হিসেবে কি আমাকে গ্রহন করবে।
অরণ্য ডালিয়ার কাছে এসে বলল
---তুমি ছাড়া আমার মেয়েকে কে দেখবে বল।মাবিহা তো আমার মেয়ের ভার আগেই তোমাকে দিয়ে গেছে।এত বড় ছলনায় করেছ যে এ ছলনার মায়া থেকে বের হতে পারব না।
ডালিয়া আর অরণ্য কাঁদতে লাগল।মাবিহাকে তারা কবর দিল।কিছুদিন পর অরণ্য ডালিয়াকে বিয়ে করে নিল।আর ডালিয়াও তার ভালোবাসা ফিরে পেল।অরণ্য আর ডালিয়া সুখে সংসার করতে লাগল।
সেদিনের ঘটনার পর ডালু আর অরুর জীবন পাল্টে গেল।ডালিয়া এখন সুবিধাবঞ্চিত নারীদের নিয়ে একটা সংগঠন খুলেছে।সেখানে সুবিধাবঞ্চিত বিভিন্ন নারীদের কাজের ব্যাবস্থা করে দিয়েছে।
আর #পতিতা পল্লীর যেসব মেয়েদের জোর করে জিম্মি করে রাখা হয়েছিল তাদেরকেও উদ্ধার করে কাজের ব্যাবস্থা করে দিয়েছে। ডালিয়ার বেশ সময় পার হয়ে যায়,বাচ্চা,সংসার আর এসব সামাজিক কাজ করে।আর ডালিয়া আর অরণ্যের মেয়ের নাম রেখেছে "মালিয়া" মাবিহা নামের প্রথম অক্ষর মা আর ডালিয়ার নামের শেষ অক্ষর লিয়ার সম্বনয়ে।মাবিহায় এ নাম টা ডালিয়াকে বলে গিয়েছিল।বলেছিল যদি তাদের মেয়ে হয় এ নাম যেন রাখা হয়।।অরণ্য ডালিয়ার মোড় পাল্টে গিয়ে তারা সুখে সংসার করতে লাগল।
#পতিতা পল্লীর নাম শুনলেই আমরা সভ্য সমাজের লোকরা তাদের প্রতি একটা ঘৃনার চাদর মুড়ে দিয়ে কথা বলি।কিন্তু তাদের এ পথে আসার আগের গল্পটা আমরা কখনও শুনি না।কখনও এটা জানতে চাই না তারা কেন এখানে কেন এসেছে।তাদের এখানে আাসার আগে যে হাজারটা কারণ,হাজারটা গল্প আর কাহিনী থাকে তা আমারা না জেনেই তাদের নিকৃষ্ট বলতে আমাদের সভ্য সমাজের মুখে আটকায় না।
একটু সহানুভূতি আর ভলোবাসা পেলে যে তারাও কারও কারও জীবনের মোড় বদলাতে পারে তা আমরা বুঝি না।গল্পের ডালিয়ার মত হাজারটা নয়িকা সমাজে থাকলেও অরণ্যের মত নায়কের বেশ অভাব
(আশা করি ইন্ডিং টায় সবাই খুশি।আমি জানতাম সবাই ভাববে ডালিয়া অসুস্থ তাই এমন করেছিল তাই একটু ভিন্ন ভাবে ইন্ডিং দিলাম।আশা করি এমন কেউ সহজে ভাবতে পারি নি।কারণ পাঠকের মনের ভাব পাঠক পড়ার আগেই আমি বুঝতে পারি।আাশা করি গল্পটা ভালো লেগেছে।পরের গল্প এর থেকে ভালো হবে ইনশাআল্লাহ)