2.3.24

রহস্যময় পরী

 ___বেয়াইন চলেন আগামীকাল ঘুরে আসি একটা জায়গা থেকে ৷ অনেক চমৎকার জায়গাটা ৷ আপনার ভাললাগবে!

___চুপ করেন! আপনার সাথে কে ঘুরতে যাবে?
___বেয়াইয়ের সাথে ঘুরতে কিসের সমস্যা?
___আপনার মত ক্ষেতদের সাথে আমি ঘুরিনা! মনে করে চেহারাটা আয়নায় দেইখেন একবার ৷ আমাদের বাসার আয়নাতে ভুলেও দেখবেন না, কারণ আপনার বাংলা-পাঁচ মার্কা চেহারা দেখে লজ্জায় ভেঙ্গে যেতে পারে তাই বাসায় গিয়ে দেখবেন!
.
নিশির কথা শুনে নীলের হাস্যজ্জ্বল মুখটা কালো বর্ণ ধারণ করলো ৷ সে কখনো আশা করেনি তার বেয়াইন এমন টাইপের কথা বলবে! সে কালো, স্মার্ট নয় তবে ব্যবহারের দিক দিয়ে অনেক ভাল মনের মানুষ ৷ বেয়াইনের সাথে একটু মজা করে কথা বলছে আর এজন্য তাকে এভাবে অপমানিত করা হবে, এটা মোটেও আশা করেনি সে! নিশি মুখটা বাকা করে ভেংচি কেটে তাচ্ছিল্য ভাব নিয়ে টিভির সামনে থেকে চলে যায়! নীল মাথা নিচু করে মনে একরাশ কষ্ট নিয়ে টিভির সামনে আরাম-দায়ক সোফাতে নিরবে বসে থাকে! তার মন চাচ্ছিল নিজের গালে নিজেই জুতা পিটা করতে, কেন যে তার সাথে কথা বলতে গেল, লজ্জা নেই!
টিভিতে তখন আর্জেন্টিনা VS জার্মানির ফুটবল ম্যাচ চলছিল ৷ যে সময় সে মেসির খেলা দেখে সেই সময় তার বিষন্ন মনটাও ভাল হয়ে যায় ৷ কিন্তু তার বেয়াইন এমন ভাবে তাকে কথাগুলো বলছে যে মেসি চমৎকার একটা গোল দিলো, এরপরও তার মনটা তখনো কষ্টে ডুবেই ছিলো! তার কিছুই ভাললাগছিল না! তাকে কেউ অপমান করে কথা বলুক এটা সে সহ্য করতে পারেনা ৷ কিন্তু মেসি যখন পরপর আরো দুটা গোল দিলো তখন তার মনটা নিমিষে ফুরফুরা হয়ে গেল ৷ ভুলে গেল নিশির অহঙ্গকারে মাখা অপমানজনক কথাগুলো! প্রিয় খেলোয়ারের হ্যাট্রিকসহ গোল তার মনটাকে চাঙ্গা করে দিল ৷ খুশিতে সে গোল গোল বলে চিৎকার করতে থাকে৷ বলতে থাকে বস হ্যাট্রিক করছে, ইয়াহু ইয়াহু ইয়াহু! তার এমন আনন্দের আতিশায্যে উল্লাসে চিৎকার, চেঁচামেচি শুনে তার বোন, দুলাভাই চলে আসে রুমে! নিশিও চলে আসে! তার এমন অবস্থা দেখে নিশি আবারো বলে,
___সব পাগল ছাগল বাসায় আসছে ৷ ভাবছিলাম কয়েকটা দিন বাসায় থাকবো ৷ কিন্তু এসব পাগলদের জন্য বাসায় শান্তিমত থাকাও যাবেনা!
.
নিশির কথা শুনে তার ভাই কিঞ্চিত রেগে যায় এবং উচু গলায় বলে,
___নিশি, এভাবে কথা বলছিস কেন? সে আমার শালা হয় ৷ ভুলে গেছিস?
___তোমার শালা তাতে আমার কি? মানুষ এত ক্ষেত হয় কেমনে? দেখো তো তার দিকে চেয়ে! দেখতে মাটির পাতিলের রং অথচ লাল টুকটুকে শার্ট পড়ে আছে! চুলগুলো দেখো পাটের ফেশার মত, খুশকি দিয়ে মনে হচ্ছে চুল ভর্তি! আবর্জনায় পূর্ণ ডাস্টবিন তার মাথায়! হা হা হা! ভাদাইমা তারচেয়ে স্মার্ট! আবার ষাঁড়ের মত হাম্বা হাম্বা করে চেচাচ্ছে!
.
নিশির কথায় এবার লজ্জায় ও অপমানে নীলের মুখটা লাল টুকটুকে হয়ে গেল ৷ মনে হচ্ছিল সে কান্না করে দিবে! কান্নামাখা স্বরে তার বোনকে বলে,
___আপু, আমি কাল সকালেই চলে যাবো ৷ দুটা দিন থাকতে আসছিলাম ৷ ভার্সিটির ক্লাস করতে করতে Bore হয়ে যাচ্ছিলাম ৷ তাই ভাবছিলাম তোর সাথে দেখা করে আসি! আসলেই আমি ভুল করেছি তোদের বাসায় এসে ৷ দুলাভাইয়ের বাসায় একজন বিশ্বসুন্দরী থাকে সেটা জানলে আসতাম না!
.
এটা বলে সে কষ্টে জর্জরিত মনটা নিয়ে বাসার বাইরে চলে যায়!
.
রাত তখন ১১ টা বাজে! চারদিক নিস্তব্দ ৷ সকলেই ঘুমের রাজ্যে ব্যস্ত সময় পার করছে ৷ তাই কোথাও কোনো সাড়া শব্দ নেই! ঝিঁঝিঁ পোকার দল তাদের বৈচিত্রময় গান গেয়ে চারপাশটা মুখরিত করে তুলেছে ৷ নিঝুম রাত ৷ ঘণ কালো অন্ধকার চারপাশটাকে ভূতুরে করে তুলেছে! তবে মাঝেমধ্যে জোনাকি পোকার দল চমকপ্রদ আলো নিয়ে বেড়িয়ে পড়ছে জঙল থেকে ৷ তাদের আলোয় অন্ধকারে নিমজ্জিত হওয়া পুকুর পাড়টা একটুর জন্য হলেও আলোকিত হয়ে উঠছে ৷ দু একটা জেনাকির দল নীলের আশপাশ দিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছিল ৷ নীল তার দূঃখে ঘেরা মনকে হাসিতে খুশিতে ভরপুর করতে জোনাকি পোকা ধরার বৃথা চেষ্টা করছিল ৷ বারবার ধরতে গিয়ে সে ব্যর্থ হচ্ছে! শেষপর্যন্ত একটা জোনাকি পোকা তার মুষ্টিগত হয় ৷ সেটা দুই আঙ্গুল দিয়ে মৃদ্যু ভাবে ধরে সেটার আলো জ্বলতে ও নিভতে দেখছিল ৷ কি অসাধারণ এক বিস্ময়কর প্রাণী! আল্লাহর কি অসাধারণ সৃষ্টি! নীল জোনাকি নিয়ে ভাবতে ভাবতে তার কষ্টকে সহজেই ভুলে গেল! এরপরই হাতে থাকা জেনাকি পোকাটাকে ছেড়ে দেয়! সে মুগ্ধ নয়নে বিমোহিত হয়ে দেখতে থাকে সমস্ত জোনাকির আলো দানের আলোকজ্জ্বল পরিবেশটা! পুকুরের মাঝখানে জোনাকির দল একসময় ভিড় করে জমাট বাঁধিয়ে দেয়৷ নীলের এখন মন চাচ্ছিল পুকুরের মাঝখানে গিয়ে জোনাকির দলের সাথে মিশে যেতে! কিন্তু একটু পরই জোনাকির দলগুলো কোথায় যেনো হারিয়ে যায়? এখন সম্পূর্ণরুপে অন্ধকারে ঘিরে ধরেছে চারপাশটা ৷ নীল এমনিতেই কালো ৷ এমন নিকষ কালো অন্ধকারে তাকে দেখায় ই যাচ্ছিলনা ৷ মনে হচ্ছিল সে অন্ধকারের সাথে মিশে গেছে! সে তখন পুকুরের ডান পাশের সিড়িতে বসে ছিল! পুকুরের বাম পাশে নারিকেল গাছের সাড়ি ৷ ডান পাশে দুটা খেঁজুর গাছ! এসবের কারণে পুকুর পাড়টা আরো অন্ধকার হয়ে আছে! হঠাৎ একটি মেয়ে তার পাশ দিয়ে গিয়ে পুকুরের নিচে নেমে পড়ে ৷ নীল মেয়েটার মুখ ভালভাবে দেখতে পায়নি ৷ যতটুকু সে লক্ষ্য করেছে এতে সে বুঝতে পেরেছে মেয়েটা যথেষ্ঠ সুন্দরী ৷ ধবধবে সাদা দেখতে ৷ মুখের দিকে একটু নজর দিয়েই সে বুঝতে পেরেছে মেয়েটা লাস্যময়ী সুন্দরী! নীলের সন্দেহ হলো সে কোনো পরী কিনা? পরী হলে তো সমস্যা হতে পারে! পরী হবার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যায়না ৷ সে কোনো এক পত্রিকায় পড়েছিল, “দেশে পরীদের আগমন ঘটবে শীঘ্রই তবে তারা এলিয়েন হিসেবে পরিচিত হবে!" নীল আরও ভাবলো মেয়েটা পরী না হলে তো এতরাতে পুকুরে আসতোনা! এত রাতে কোনো মেয়ে একা একা তো গোসল করতে পুকুরে আসেনা ৷ করলে তাদের সাথে স্বামীও গোসল করে ৷ তার সাথে কেউ নেই! তবে কি মেয়েটা বিধবা? নীল গভীর চিন্তায় পড়ে গেল! সে মেয়েটাকে নিয়ে গবেষণায় ডুবে গেছে ৷ তার একটি বৈশিষ্ট্য তথা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে কোনো কিছুর সমাধান পেতে প্রথমেই মনের সাথে গবেষণা করবে ৷ কোনো কিছুর উত্তর পেতে তাকে মনের সাথে গবেষণা করতেই হয়! অন্যথায় সমাধান মেলেনা! এখন চলছে তার গবেষণা ৷ কিন্তু না সে আজ গবেষণা করেও এই প্রশ্নের জবাব পেলনা যে মেয়েটা পরী নাকি মানব নারী? তার মনটা হালকা খারাপ হয়ে গেল! আজকের রাতটা কেন যেন তার কথামত ও চাওয়ামত চলছেনা ৷ রাতটাতে সে কেবল কষ্ট পেয়েই যাচ্ছে!
.
হঠাৎ, মেয়েটা পানির ঝপঝপ শব্দ বানিয়ে ডুব দিতে লাগলো ৷ অন্ধকারে কিছুই স্পষ্ট দেখতে পারছেনা নীল ৷ কিন্তু গলা পর্যন্ত পানিতে ডুবে থাকা মেয়েটার মুখ ঠিকই দেখতে পারছে ৷ মেয়েটা যে মাপের সুন্দরী তাতে অন্ধকারকে দূরিভূত করে তার সৌন্দর্য প্রকাশমান হয়েছে! নীল মেয়েটার দিকে তাকাতে লজ্জা করছিল ৷ লজ্জার ভাব আরো বেড়ে গেল যখন দেখলো মেয়েটা একদম নগ্ন হয়ে পুকুরের পানি থেকে উঠছে ৷ এমন দৃশ্য দেখে নীলের হ্নদকম্পন হঠাৎ করে বেড়ে গেল, নিশ্বাস ঘণঘণ ফেলতো লাগলো, হাত পা কাঁপা শুরু হলো এবং লজ্জায় সে মুখ ফিরিয়ে নিল ৷ সে এবার ভাবতে লাগল এই মেয়ে পৃথিবীর কোনো নারী নয় ৷ নিশ্চিত সে পরী ৷ মানব নারী হলে নগ্ন হয়ে গোসল করতোনা কোনো পুরুষের সামনে! নাকি সে তাকে দেখতে পায়নি? না দেখতে পাবার সম্ভবানা বেশি ৷ অতিরিক্ত অন্ধকারে হয়তো মেয়েটা তাকে দেখতে পায়নি ৷ এমনিতে নীল কুচকুচে কালো, গায়ে পড়েছে লাল শার্ট ও কালো প্যান্ট সব মিলিয়ে অন্ধকারে মিশে গেছে ৷ নীল নিশ্চিত হলো মেয়েটা তাকে না দেখে ওভাবে পুকুরে নেমেছে! মেয়েটা শাড়ি পড়ে নীলের সামনে দিয়ে চলে যেতে লাগল এবং নীল একটু শব্দ করে কাশি দিলে মেয়েটা চমকে ওঠে এবং 'ও মা'রে' বলে ভয়ে চিৎকার দিয়ে ওঠে!
নীল গম্ভির গলায় বলে,
___আপনি পরী হলে কোনো কথা না বলে চলে যান ৷ আমি পরীদের ভয় পাই৷ আর কোনো নারী হলে কিছু প্রশ্নের জবাব দিয়ে চলে যান!
.
মেয়েটা ভয়ার্ত মন নিয়ে কাঁপা গলায় বলল,
___আপনি এখানে কখন এলেন?
___আপনার আসার আগে থেকে ছিলাম!
.
#বিঃদ্র গল্প পড়ে দেখি সবাই কেটে পরেন,ব্যাপার কি বলেনতো?প্লিজ কেউ কেটে পরবেন না,আপনানাদের মতামত আমাকে উৎসাহ দেয় পরবর্তী পর্ব দেওয়ার। আর সব সময় কিছু গঠনমূলক কথা লিখে কমেন্ট করলে খুশি লাগে।
ধন্যবাদ ইতিঃ (#তানিম_চৌধুরী)গল্পের মাঝে বিরক্ত করার জন্য দুঃক্ষিত।
.
মেয়েটা হয়তো লজ্জা পেয়েছে ৷ রাত বলে তার মুখের লাজুক ভাবটা লক্ষ্য করা যাচ্ছেনা ৷ সে এবার একটু রাগান্ন্যিত ভাব নিয়ে বলল,
___কিহ? কি লজ্জা কি লজ্জা! আমি তবে অচেনা এক পুরুষের সামনে....ছিঃ! কিন্তু আপনি কিভাবে এখানে বসে রইলেন? লজ্জা করলোনা আপনার? ছিঃ!
___আমার লজ্জা কম! কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি আপনার দিকে তিনবার তাকিয়েছি ৷ এর বেশি না, তাও ভুলে ৷ যদি জানতাম আপনি ওমন করবেন তবে কখনো বসে থাকতাম না!
___হয়েছে, চুপ থাকুন এবার!
___আপনার বাসা কই?
___ঐযে ঐ বাড়ি়টা! নিশিদের বাড়ির তিনটা বাড়ি পর! আমার বাবার নাম মতিন আলী!
___এত রাতে কেন গোসল করতে আসছেন?
___আপনি মনে মনে যা ভাবছেন সেজন্য নয় ৷ আমি তো বিয়েই করিনি ৷ আমি মানসিক রোগী! এই গরমে রোগটা শুরু হয় ৷ এটা থেকে বাঁচতে ডাক্তার বলছে দিনে রাতে তিন-চারবার গোসল করতে হবে ৷ সকালে একবার দুপুরে একাবার আর রাত্রে ২বার! রাত্রীর ২য় গোসল এখন করে নিলাম!
___তাই বলে এভাবে?
___আমি মনে করেছি এত রাতে কেউ পুকুরে থাকবেনা তাই অনেক দিনের শখ পূরণ করলাম!
___উলংগ হয়ে গোসল করা শখ ছিল? এবার সত্যি সত্যি আপনাকে পাগলী মনে হচ্ছে!
____লজ্জা দিয়েন না, প্লিজ!
____ঠিক আছে, আপনি এখন আসুন! আমি আরো কিছুক্ষণ থাকবো!
____আচ্ছা! তবে কথাটা কাউকে বলবেন না যে আপনি আমার গোসল করা দেখেছেন!
___ছিঃ কি বলছেন এসব? আমি কেন নিজের চরিত্রের বারোটা বাজাবো? আপনি চলে যান তো এখান থেকে!
.
নীল কথাটা বলছিল মেয়েটার দিক থেকে মুখটা ফিরিয়ে কিন্তু ফের যখন তার দিকে নজর দিল তখন দেখতে পেল মেয়েটা দাঁড়িয়ে নেই! সে কখন যে চলে গেছে সে টেরই পায়নি ৷ হঠাৎ মনে পড়লো মেয়েটার নামটা তো জেনে নেওয়া হলোনা ৷ কি নাম তার? নীল এবার চিন্তায় পড়ে গেল মেয়েটার নাম নিয়ে ৷ মেয়েটার কি নাম হতে পারে? পাগলীদের নাম খুব একটা ভাল হয়না ৷ তার নামও ভাল হবেনা ৷ সে মনের সাথে তার নাম কি হতে পারে সেটা নিয়ে গভীর গবেষণায় মেতে আছে! অবশেষে সে মেয়েটার নাম বের করতে পারলো ৷ নীল ভাবলো মেয়েটার নাম হতে পারে নীলিমা! নীলের সাথে মিলিয়ে নীলিমা ৷ নামটা বের করতে পেরে সে এখন বেজায় খুশিতে আছে! মনে মনে হাসছে সে ৷ অতিরিক্ত খুশির সময় মনে মনে হাসে সে ৷ এত রাত্রে শব্দ করে হাসলে বিষয়টা বাজে দেখাবে তাই মনে মনে হাসা ভাল!
.
কখন যে নীল সিড়ির নিচে আধশোয়া হয়ে ঘুমিয়ে গেছে নিজেও জানেনা! তার বোন নাবিলা মধ্যরাত্রে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে ওয়াশরুমে যায় এবং সেখান থেকে ফিরে তার ভাইকে যে রুমে থাকতে বলেছিল সেই রুমে নজর দিয়ে দেখে সে নেই ৷ তাকে দেখতে না পেয়ে ঘাবড়ে যায় ৷ এবং সে আতিককে (তার স্বামী) ডাকতে থাকে ৷ সেও জেগে ওঠে এবং খুঁজতে থাকে নীলকে ৷ শেষপর্যন্ত নাবিলা পুকুরের ধারে তার ভাইকে ঘুমানো অবস্থায় দেখে রেগে গিয়ে পিঠে কয়েকটা থাপ্পর লাগিয়ে দেয় ৷ নীল ঘুম থেকে জেগে ওঠে এবং ঘুম জরানো কন্ঠে তার বোনকে বলে,
___কি হয়েছে? এত সুন্দর স্বপ্ন দেখছিলাম কিন্তু জাগিয়ে দিলি কেন?
.
নাবিলা তার ভাইয়ের এক পাশের কান ধরে বলে,
___গাধা, তুই কোথায় ঘুমিয়ে পড়েছিস সেটা খেয়াল আছে? আস্ত গাধা একটা!
.
নীল ভাল করে চারপাশটা লক্ষ্য করে দেখে সে পুকুরের পাড়ে ৷ পিঠ ব্যাথা হয়ে গেছে সিড়িতে শোবার কারণে! লজ্জায় তার বোনকে বলে,
___সরি আপু, কখন যে ঘুমিয়ে গেছি মনে নেই!
.
নিশি পাশেই দাঁড়ানো ছিল ৷ সে বিদ্রুপের হাসি হেসে মুখ বাকা করে বলে,
___আমি বলেছিলাম না ভাবি, তোমার ভাই একটা ক্ষেত ৷ এবার সত্যি সত্যি প্রমাণিত হলো ৷ শুধু ক্ষেত না! মস্তবড় গাধা! হা হা হা!
.
নিশির ভাই আতিক তাকে থামিয়ে দিয়ে উচুস্বরে বলে ওঠে,
___নিশি, অনেক বলে ফেলেছিস এবার চুপ কর!
.
নীল রাগে কাঁপছিল ৷ নিশ্বাস ফেলছিল শব্দ করে ৷ নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে তুই তুকারি করে নিশিকে বলতে লাগল,
___তোর সামনে পরীক্ষা! তুই হয়তো আজও জানিস না পরীক্ষা তোর খুব খারাপ হবে ৷ তিন তিনটা সাবজেক্টে ফেল করবি! মিলিয়ে নিস!
.
নিশি এবার খিলখিল করে হাসা শুরু করে দেয় এবং তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে,
___বাহ, মিস্টার ক্ষেত সাহেব তো দেখছি, ভবিষ্যতবাণী করা শুরু করছে!
___আমি ভবিষ্যতবাণী করিনা ৷ তবে আমি যেটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলি সেটা মিলে যায় কাকতালীয় ভাবে!
___বাহ, তাই নাকি ৷ দেখা যাবে!
.
নীল খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে পুকুর পাড়ে গিয়ে এক দৃষ্টিতে টলটল করতে থাকা পানির দিকে তাকিয়ে রইলো! খুব ভোরে মাছের দল পানিতে লাফালাফি করে এবং পানির উপর অংশ দিয়ে চলাচল করে! নীল সেটাই দেখছিল মনযোগ দিয়ে! প্রকৃতির এসব সৌন্দর্য তাকে চোখের তৃপ্তি দেয় ও মনে প্রশান্তি তৈরি করে দেয়!
পুকুরের পানিতে মনে হচ্ছিস সে মিশে গেছে ৷ তখনই নাবিলা এসে তার পিঠে হাত দিয়ে বলে,
___ভাই, বাজারে যাবি?
___যাবো ৷ কিন্তু কি আনতে হবে?
___নিশির ডায়মন্ডের রিং হারিয়ে গেছে! ওরকম দেখে আরেকটা কিনতে হবে তোকে!
___কি বলছিস? আমি কি তার রিং কখনো দেখেছি? কেমনে ওরকম দেখতে আরেকটা রিং কিনবো?
___তুই তো বললি আত্মবিশ্বাস নিয়ে কিছু বললে সেটা মিলে যায়! আমার মনে হয় তুই ডায়মন্ডের রিংটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে কল্পনা করলে অবশ্যই চিনতে পারবি যে নিশির রিং'টা কেমন ছিল! তারপর জুয়েলার্সের দোকানে গিয়ে রিংটা কিনে আনবি!
___এটা কখনো সম্ভব না, আপু ৷ আমার সব কথা তো সবসময় মিলে যায়না ৷ হঠাৎ করে কিছু কিছু কথা মিলে যায়! ডায়মন্ডের রিং যেটা এই মুহূর্তে কল্পনা করছি ওটা কি নিশির হবে? যদি না হয় তখন কিন্তু কিছু বলতে পারবিনা আমাকে!
___তুই এখনই যাবি এবং ওটা কিনে আনবি ৷ ওটা না পেলে আমি নিশির সামনে মুখ দেখাতে পারবোনা!
___আগে বল তো, রিংটা কে হারিয়েছে?
___আমি!
___কেমনে হারালি?
___জানিনা, গতকাল ওর থেকে রিংটা দেখতে নিয়েছিলাম ৷ আমার হাতের আঙ্গুলেও পড়েছিলাম ৷ পরে ওকে দেবার কথা মনে ছিলনা ৷ বিকেলে তোর দুলাভাইকে নিয়ে শপিং করতে গেছিলাম রিংটা আঙ্গুলে পড়েই, তখন মনে ছিলনা রিংটার কথা, ওখানে হারালো কিনা জানিনা ৷ বাড়ি ফিরলাম তখনও রিংটার কথা মনে ছিলনা ৷ নিশিও চাইনি রিংটা ৷ আজ ভোরে এইতো একটু আগে মনে পড়লো রিংটার কথা ৷ কখন কোথায় যে হারিয়ে গেছে নিজেও জানিনা!
___বড় সমস্যা! ঠিক আছে, তুই টাকা দে!
___কত লাগবে রে?
___মিনিমাম ১লাখ ২১ হাজার টাকা! নিশিকে বলে দেখ!
___মাথা খারাপ? ওকে বললে আমাকে গিলে খাবে!
.
ঐসময় পাশের বাসার একটি মেয়ে চলে আসে তাদের নিকট ৷ এবং নাবিলা ও নীলকে দেখে মিটমিট করে হেসে বলে,
___নাবিলা ভাবি, ছেলেটা কে হয় তোমার?
.
নাবিলা কপালে ভাঁজ ফেলে ভ্রু কুঁচকে বলে,
___নীলিমা, তুমি তো এমন ছিলেনা, আতিকের দিকেই তো তাকাতে না সেভাবে ৷ আমার ভাইয়ের দিকে নজর কেন পড়লো?
.
নীল তার বোনের মুখে নীলিমা নামটি শুনে চমকে ওঠে! সে ভাবতে লাগলো রাত্রীর সেই মেয়েটা নয়তো যার নাম দিয়েছিল নীলিমা?
.
নীলিমা হঠাৎ ব্যাথায় ইশরে চেঁচিয়ে উঠে বলে,
___উহ! পায়ের নিচে কি পড়লো?
.
খালি পায়ে দাঁড়িয়ে ছিল নীলিমা ৷ সে তার পায়ের নিচ থেকে কি যেনো তুললো?
এবং হাসি মুখে বলল,
___পাইছি ভাবি পাইছি!
.
নাবিলা কৌতূহলের স্বরে বলল,
___কি পায়ছো?
___রিং ভাবি রিং!
___কিসের?
___মনে হয় সোনার রিং!
.
নীল এতক্ষণ ধরে নীলিমার দিকে কৌতূহলের দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল ৷ সে ভাবছিল এই মেয়েটাই কি সেই?
হঠাৎ সে উচু গলায় বলে ওটে,
___এই মেয়ে, তুমিই কি সেই যাকে রাত্রে দেখেছি?
.
নীলিমা তার হাতের রিংটা নাবিলাকে দেখিয়ে বলে,
___ভাবি মনে হয় এটা সোনার রিং না! আপনিই রাখেন এটা!
.
নীল আবারো বলল,
___এই মেয়ে কি বলছি তোমাকে?
___কি বললেন যেন?
___তুমি রাত্রীতে গোসল করতে আসোনি?
___আমি.....
.
.
.
.
.
.
.
.
#বিঃদ্রঃ ভুলক্রুটি ক্ষমা ও সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট করে সাথে থাকবেন। আপনাদের লাইক কমেন্ট দেখলে মনে হয় গল্পটা আপনাদের ভালো লেগেছে এবং আপনারা গল্পটা পড়েছেন,আর তাতে করে আমার ও পরবর্তী পর্বটা দেওয়ার আগ্রহ বেড়ে যায়।

নীল এতক্ষণ ধরে নীলিমার দিকে কৌতূহলের দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল ৷ সে ভাবছিল এই মেয়েটাই কি সেই?
হঠাৎ সে উচু গলায় বলে ওটে,
___এই মেয়ে, তুমিই কি সেই যাকে রাত্রে দেখেছি?
.
নীলিমা তার হাতের রিংটা নাবিলাকে দেখিয়ে বলে,
___ভাবি মনে হয় এটা সোনার রিং না! আপনিই রাখেন এটা!
.
নীল আবারো বলল,
___এই মেয়ে কি বলছি তোমাকে?
___কি বললেন যেন?
___তুমি রাত্রীতে গোসল করতে আসোনি?
___.আমি গোসল করবো রাতে? আপনার মাথা ঠিক আছে? আর যদি গোসল করেও থাকি সেটা আপনাকে বলবো? ভাবি, আপনার ভাইটা কি তাঁরছিড়া?
.
নাবিলা লজ্জিতবোধ করে নীলকে ইষৎ রাগস্বরে বলল,
___নীল, কিসব বলছিস? সে রাতে গোসল করলে তোর তাতে কি? দিনদিন তুই কি উন্মাদ হয়ে যাচ্ছিস?
.
নীল কিছুটা লজ্জিত ও বিব্রত হলো ৷ মেয়েটার নিকট কথাটা ভালভাবে বুঝিয়ে উপস্থাপন করতে পারেনি বলে তার মনটা খুসখুস করছে! মাথা চুলকিয়ে কি যেন ভাবলো সে ৷ তারপর গলার স্বরটা নরম করে মিনমিন করে বলতে থাকে,
___আপু, আমি আসলে কথাটা সেভাবে বলিনি যা সে মিন করেছে! রাত্রীতে নীলিমা নামের একটি মেয়ের সাথে পুকুরে দেখা হয়েছিল ৷ যদিও তার নামটা জানতাম না, অনুমান করে নামটা বের করেছিলাম ৷ তাছাড়া মেয়েটা বলেছিল তার বাড়ি নিশিদের বাড়ির তিনটা বাড়ি পর! এই মেয়েটার বাড়িও তো মনে হয় তিনটা বাড়ি পর ৷ কি ঠিক বলছি?
.
নীলিমা হকচকিয়ে উঠলো নীলের কথা শুনে ৷ ভ্রুু-কুঁচকে অবাকের অভিব্যক্তিতে তাকে বলল,
___হ্যাঁ, আমার বাড়ি তিনটা বাড়ি পর ৷ কিন্তু আমি রাতে পুকুরে আসিনি, গোসলও করিনি!
.
নীল এবার ভূত দেখার মত করে মনযোগ দিয়ে মেয়েটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ৷ তারপর কিছুক্ষণ মনের সাথে গবেষণার কাজ চালিয়ে গেল!
তারপর বিডবিড় করে কি যেনো বললো ৷ তারপর হালকা শ্বাস ফেলে মেয়েটাকে গম্ভির গলায় বলল,
___আমারও সেটাই মনে হচ্ছে! তোমার সাথে ঐ মেয়েটার দেহের গড়নের মিল পাচ্ছিনা ৷ তবে দুজনই ধবধবে ফর্সা ৷ যদিও ঐ মেয়েটাকে অন্ধকারে দেখেছিলাম তাই চেহারাটা ভাল করে স্মরণ করতে পারছিনা ৷ মন বলছে তুমি নও সেই মেয়ে!
.
নীলিমা কপট রেগে গিয়ে চোখ পাকিয়ে নীলের দিকে তাকিয়ে রইলো ৷ তারপর তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নাবিলাকে বলল,
___ভাবি, শুনছেন আপনার ভাই কিসব বলল? সে আমার দেহের গড়ণ নিয়ে কথা বলছে ৷ মানুষটা আসলেই খচ্চর টাইপের!
.
নীল দূঃখবোধ করলো নিজের এমন অসৌজন্যমূলক অশোভন কথার জন্য এবং মেয়েটাকে বলল,
___আমি দূঃখিত ওভাবে কথা বলার জন্য ৷ তুমি কিছু মনে করোনা!
.
___আপনি কিসের জন্য আমাকে তুমি করে বলছেন? আপনি আমার বয়ফ্রেন্ড হউন?
.
একথা শুনে নীল লজ্জায় লালে রঞ্জিত হলো ৷ মুখ লুকিয়ে ছোট্ট করে মিষ্টি একটা হাসি দিল ৷ কালো মানুষ হাসলে দাঁতগুলোর সৌন্দর্য প্রকাশমান হয় ৷ কিন্তু নীল হাসার সময় কখনো দাঁত বের করেনা ৷ তার হাসি দু-প্রকার ১. মুখ চেপে মিষ্টি করে মুচকি হাসা ২. মনে মনে হাসা ৷ সে এখন ১নম্বর হাসিটাই হাসলো! তারপর মেয়েটার দিকে দৃষ্টি দিয়ে লজ্জামাখা স্বরে বলল,
___তোমাকে কেমন যেন চেনাচেনা মনে হয় তাই তুমি করে বলেছি ৷ আমার কোন গার্লফ্রেন্ড নাই যদি রাজি থাক....
.
এপর্যন্ত বলা হলে নাবিলা তার গালে চটাস করে একটা থাপ্পর লাগিয়ে দেয় ৷ এবং রেগে জোরেজোরে শ্বাস ফেলে বলে,
___গাধা, চল এখান থেকে!
.
নীল কান্নার নাটক করে চোখ দুটো অশ্রুভেজা করার মত বানিয়ে বলল,
___আপু মারলি কেন? যাহ, আমি ডায়মন্ডের রিং কিনতে যাবোনা ৷ তুই কিনে আনিস!
___আমার সেটা লাগবেনা ৷ লাগলেও তোর দুলাভাই এনে দিবে!
.
তাদের কথার মাঝখানে নীলিমা বলে ওঠে,
___ভাবি, আমি যে রিংটা পেয়েছি ওটা দেখতে অনেক সুন্দর ৷ কিন্তু আমার আঙ্গুলে ঢোকেনা, তাই আপনাকে উপহার দিলাম!
.
নীল তার বোনের বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুলে একটা রিং দেখতে পেল ৷ এবং বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ৷ অবাক হয়ে কৌতূহলের স্বরে তার বোনকে বলল,
___আপু, এই রিংটাই তো কল্পনা করেছি ৷ এটাই কি সেটা?
.
নাবিলা তার ভাইকে চোখ টিপ মেরে হাতের ইশারা দিয়ে বুঝায় “চুপ থাক"!
নীল ব্যাপারটা বুঝতে পারলে নিরব হয়ে যায়! নীলিমা নীলের দিকে মায়াবী চাহনী দিয়ে মিষ্টি হেসে পুকুর পাড় থেকে চলে যেতে পা বাড়ায়! নীল তার এমন চাহনী ও হাসির রহস্য বুঝলোনা ৷ এটা নিয়ে মনের সাথে গবেষণা করতে মন একটুও শায় দিচ্ছিলনা ৷ তাই গবেষণাও করলোনা!
.
নীলিমা চলে গেলে নাবিলা খুশির চোটে হাসি থামাতে না পেরে উচ্চস্বরে খিলখিল করে হাসা শুরু করে আর নীলকে বলতে থাকে,
____মেয়েটা কত বোকার বোকা, ডায়মন্ডের রিং অথচ সে বলে এটা সোনার, তাও একসময় নিজের মত পাল্টে বলে সোনারও না ৷ যাক বাবা, দিয়ে তো দিছে এতেই খুশি ৷ অন্য কেউ পেলে কখনোই দিতোনা ৷ আর বোকা, তুই যে ওভাবে বলে দিচ্ছিলি যদি আমি তোকে না থামিয়ে দিতাম তবে তো বলেই দিতিস সব ৷ সে যদি জানতো রিংটা ডায়মন্ডের তবে কি ওটা আমার হাতে দিতো? বোকা কোথাকার!
.
নীল ইশপিশ করতে করতে তার বোনকে বলে,
___যেটাই হোক, তোর কিন্তু ১লাখ ২১ হাজার টাকা বেঁচে গেছে ৷ এবার ঐ টাকাগুলো আমাকে দে!
___তোকে কেন দেবো?
___আমি যদি এখানে এসে না দাঁড়াতাম তবে কখনোই রিংটা পেতিনা৷ আমাদের সামনে মেয়েটা রিং পড়ে পাওয়ায় তোকে দিয়ে দিল ৷ যদি আমি না থাকতাম এখানে, তবে তুই এখানে আমাকে খুঁজতে আসতিনা ৷ আমরা কেউ না থাকলে মেয়েটা রিংটা নিয়ে চলে যেতো!
.
.
#বিঃদ্র গল্প পড়ে দেখি সবাই কেটে পরেন,ব্যাপার কি বলেনতো?প্লিজ কেউ কেটে পরবেন না,আপনানাদের মতামত আমাকে উৎসাহ দেয় পরবর্তী পর্ব দেওয়ার। আর সব সময় কিছু গঠনমূলক কথা লিখে কমেন্ট করলে খুশি লাগে।
ধন্যবাদ ইতিঃ (#তানিম_চৌধুরী)গল্পের মাঝে বিরক্ত করার জন্য দুঃক্ষিত।
.
.
নাবিলা তার ভাইয়ের কথা শুনে একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে হা করে তাকিয়ে থাকে তার দিকে ৷ তারপর ভাইটার কান ধরে বলে,
____আহারে ভাইটারে আমার, এত লোভ করা ভাল নয় ৷ তুই মন্দ বলিস নি কথাগুলো ৷ কিন্তু তোকে ওতোগুলো টাকা দিলে নিশি তার ভাইয়ের নিকট নালিশ দিতে পারে ৷ তারচেয়ে বরং আমি তোকে খুশি মনে ২০ হাজার টাকা দিচ্ছি!
.
___না থাক,টাকা লাগবেনা ৷ তারচেয়ে একটা কাজ কর ৷ নিশিকে বল আমার সাথে একটা জায়গায় যেতে ৷ তাকে রাজি করাতে পারলে তোর জন্য গিফট আছে!
___বুঝলামনা, হঠাৎ নিশির সাথে তোর কিজন্য এত ঘুরাঘুরির শখ হলো? জানিসই তো মেয়েটা অহংকারী, তোকে দুচোক্ষে দেখতে পারেনা, তবুও তার সাথেই কেন ঘুরতে হবে? নাকি ওর প্রেমে পড়েছিস!
.
নীল তার লাইফে এই প্রথমবার দাঁত বের করে উচ্চশব্দে খিলখিল করে হাসতে লাগলো এবং বলল,
____আপু, কিসব বলছিস? আমি ওর সাথে প্রেম করবো? ওর প্রেমে পড়বো? হাসাইলি আমায়!
____তাহলে ওর সাথে কেন ঘুরতে হবে তোকে?
____আমার কোনো মেয়ে বন্ধু নাই ৷ তাই ভাবলাম বেয়াইনকে নিয়ে আমাদের ভার্সিটিতে যাবো ৷ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে দুদিন পর ৷ নাচ ও গানের আয়োজন করা হবে ৷ সবাই বলছে আমি নাকি কোনো মেয়েকে সাথে নিয়ে কাপল ড্যান্স দিতে পারবোনা ৷ তাদের সাথে চ্যালেঞ্জ করেছি যে অবশ্যই পারবো ৷ ভার্সিটির কয়েকটা মেয়েকে বললে আমাকে সেই মাপের অপমান করে! তাই বাধ্য হয়ে তোদের বাসায় এলাম নিশিকে রাজি করাতে ৷ সে তো নৃত্যশিল্পী ৷ নাচ শিখছে ৷ তাকে যদি রাজি করাতে পারো তবে চ্যালেঞ্জে জয়ী হতে পারবো!
.
___তুই কি বলছিস একবার ভেবে দেখেছিস? এমনিতেই সে তোকে সহ্য করতে পারেনা, যদি বলি তোর সাথে একটি অনুষ্ঠানে নাচতে হবে তখন আমাকে কি বলবে? সেটা একবার ভেবেছিস? তোকে পেলে হয়তো কাঁচাই খেয়ে ফেলবে!
___তা, ঠিক বলছিস!
___ভাই, তুই আমার অনেক ছোট ৷ বড় বোন হিসেবে তোকে একটা উপদেশ দিই! আজকালকার মেয়েরা স্মার্ট ছেলেদের পছন্দ করে ৷ তুই একটু নিজেকে পরিবর্তন কর, স্মার্ট হবার চেষ্টা কর!
.
নীলের মুখটা মুহূর্তের মধ্যে ফ্যাকাশে হয়ে গেলো তার বোনের কথা শুনে ৷ তাকে কেউ নিজস্ব ব্যক্তিত্ববোধ ও বাহ্যিকতা নিয়ে কিছু বললে ভাল মনটা খারাপ হয়ে যায় ৷ তার বোন এমন কথা বলবে কোনোদিনই ভাবেনি! মুখটা ছোট করে পুকুরের সিড়িতে বসে মাথা নিচু করে রইলো!
.
ওদিকে নিশি চিন্তিত চেহারা নিয়ে নাবিলার কাছে এসে বলে,
___ভাবি, তুমি আমার ডায়মন্ডের রিংটা কি দেখেছো?
.
নাবিলা তব্দা খেয়ে যায় ৷ চুপটি করে থ মেরে দাঁড়িয়ে থেকে নীলের দিকে কপট চাপা হাসি হেসে মনে মনে ভাবতে থাকে আর নিজেই নিজেকে বলতে থাকে, “তাহলে সে ভুলেই গেছে যে আমি তার থেকে রিংটা নিয়েছিলাম, যাক এবার তবে মজা হবে!"
.
নাবিলা রহস্যের হাসি দিয়ে তার ননদকে বলে,
___কিসের রিং কোন রিং?
___ভাবি, আমার ডায়মন্ড রিং তুমি দেখোনি? তোমাকে না দেখাইলাম? আমি তোমার থেকে সেটা নিয়েছিলাম কিনা তখন, এটাই মনে করতে পারছিনা ৷ এক মন বলছে নিয়েছি ৷ আরেক মন বলছে নেইনি! ভাবি সত্যি করে বলো তো তোমাকে রিংটা দেখানোর পর সেটা আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলে কিনা?
.
নাবিলা চোখ কিড়মিড় করে এদিক সেদিক তাকিয়ে, ঢোক গিলে একদম নিচু স্বরে বলল,
___কি বলছো বোন? রিংটা তো তখনই দিয়ে দিলাম ৷ তুমি এত মন ভোলা, আগে জানলে দেখতামই না রিংটা!
___ওহ, তাহলে কই গেল রিংটা? আমার কিচ্ছু ভাললাগছেনা ৷ আন্মু, আব্বু বাড়ি ফিরে যদি দেখে আমার রিং হাতে নেই তবে মেরেই ফেলবে!
___চিন্তা করোনা ৷ ওটা পেয়ে যাবো ৷ আমার ভাই হারানো জিনিস খুঁজে দিতে পারে! তুমি ওর একটা চাওয়া পূরণ করলেই রিংটা পাবে!
.
এটা শুনে নিশি ক্ষেপে যায় আর বলে,
___ ওর সাহায্য আমি নিবো? ভাবি তুমি ভাল করে জানো তোমার ভাইকে আমার সহ্য হয়না ৷ তবুও কেন তাকে আমার বিষয়ে জড়াও?
____তাহলে তোমার রিং খুঁজে পাবেনা!
.
নিশি কিছুক্ষণ চুপ থেকে কি যেন ভাবলো! তারপর নীলকে চেঁচিয়ে বলল,
____কি? আপনি পারবেন আমার রিংটা খুঁজে দিতে?
.
নীলের মনে এবার ফূর্তি এসে জমেছে! হাসিমাখা বদনে নিশিকে বলল,
___হ্যাঁ, পারবো ৷ তবে আমার একটা শর্ত পূরণ করতে হবে!
___কি শর্ত?
___মধ়্যরাতে পুকুরে আমার সাথে সাঁতার কাটতে হবে!
.
এমনটা শুনে নিশি দারুণভাবে রেগে যায় ৷ মনে হচ্ছিল তার চোখে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে কেউ ৷ একদম লাল টুকটুক করছে ৷ চোখ দুটো মরা গরুর মত গোলগোল বানিয়ে নীলকে সে বলল,
____আপনার সাহস তো কম নয়, এমন আবদার করার সাহস কে দিল? ভাবি, তোমার ভাইকে কি পিটাবো?
.
নাবিলা তার ভাইকে চোখ মেরে বুঝায় “তুই চালিয়ে যা আমি দেখছি" কিন্তু মুখে বলে,
___ভাই, উল্টাপাল্টা বকিস কেন? যেটা বলার সেটা বলে দে!
.
নীল তখন সিড়ি থেকে উঠে পকেট থেকে কফি ক্যান্ডি বের করে মুখে দেয়৷ এটা খাওয়া তার অভ্যাস ৷ নেশাও বলা যেতে পারে ৷ সবাই সিগারেট, পান-জর্দা, গুল, মদের নেশা করে ৷ তার কোনো নেশা থাকবেনা এটা কেমন দেখায় না? নীল নিজের জন্য কফি ক্যান্ডিকে নেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে ৷ এটা অনেক দোকানে পাওয়াই যায়না ৷ তার মহল্লার আশেপাশের দশটা দোকান খুঁজেও পায়নি ৷ পরে ভার্সিটি গিয়ে তিন-চার প্যাকেট কফি ক্যান্ডি কিনে রেখেছে ৷ যাতে সহজে না ফুরোয়৷ নিশিদের বাসায় আসার সময় ক্যান্ডি আনতে ভুলে গেছিল ৷ কাল সন্ধ্যায় ওগুলোর কথা মনে পড়লে আশেপাশে দোকান খুঁজতে থাকে ৷ অনেক খোঁজার পর একটি দোকান পেয়ে যায় ৷ দোকানে ক্যান্ডিও পায় ৷ এবং পুরো প্যাকেট ধরে দ্বিগুণ দামে কিনে নেয়!
.
সে এখন ঐ কফি ক্যান্ডি মুখে নিয়ে চাবাচ্ছে!
নিশির দিকে এগিয়ে এসে তার হাতে একটা ক্যান্ডি দিয়ে বলে,
___নাও খাও ৷ আর রাগটা কমিয়ে ফেল ৷ তারপর আমার আবদারের কথা বলছি! তার আগে তোমাকে গতরাতের ঘটনা শোনায় ৷ রাতে আমি এক অপূর্ব পরী দেখেছি! দূঃখিত পরীদের আগে পিছে বিশেষণ লাগানো ঠিক না ৷ যাইহোক, সেই পরীকে আমি খুঁজছি! তার জন্য সেই তখন থেকে মনটা ব্যাকুল হয়ে আছে!
আমি....
.
নিশি তাকে থামিয়ে দিয়ে চিৎকার মেরে বলে,
___চুপ করুন! আর আমাকে তুমি করে বলছেন কেন? আপনি করে বলুন! আমাকে তুমি বলার যোগ্যতা আপনার হয়নি!
.
নীল বলে,
___বুঝেছি তুমি ক্যান্ডিটা খাবেনা ৷ তবে দাও, আমিই খাই ৷ তুমি ফেলে দিতে পারো ৷ শুধু শুধু দুই টাকা গচ্ছা দিয়ে কি লাভ বলো?
.
নিশির রাগের মাত্রা আরো বেড়ে গেল ৷ মনে হচ্ছিল সে নীলকে পুকুরের পানিতে ফেলে দিবে ৷ রাগে সে দাঁত কটমট করছিল ৷ চোখ পাকিয়ে আড়চোখে দেখছিল ৷ আর শব্দ করে নিশ্বাস ফেলছিল! হঠাৎ উচু গলায় বলে,
___পাগল ছাগলের মত ভ্যা ভ্যা না করে আপনার কি শর্ত পূরণ করতে হবে সেটা বলুন? আমার মন মত হলে শর্তটা মানার চেষ্টা করবো ৷ অন্যথায় রিংটাও লাগবেনা আপনার আবদারেও নিকুচি করবো!
.
নীল বুঝতে পারলো মেয়েটার মন মেজাজ ভাল নেই ৷ তার চোখ, মুখ দেখে সুবিধার মনে হচ্ছেনা ৷ সে ভাবলো এই মেয়েটা যদি কারো স্ত্রী হয় তবে ঐ লোকের জীবন তামাতামা হয়ে যাবে ৷ সেই ব্যক্তি কখনো কোমড় সোজা করে দাঁড়াতে পারবেনা!
.
নীল নিশিকে চাপা হাসিতে ধীর গলায় বলে,
___দু-দিন পর আমার ভার্সিটিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ৷ আমি চাই অনুষ্ঠানে তোমাকে নিয়ে নাচতে ৷ যদি শর্তে রাজি হও তবে রিংটা খুঁজে দেবো!
.
___সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যে দুদিন পর হবে সেটা আমিও জানি ৷ আমি যে ঐ ভার্সিটির ছাত্রী ভুলে গেছেন হয়তো!
___হ্যাঁ, আমি জানি ৷ জানি বলেই তোমাকে বলছি!
___আপনাকে বলছিনা আমাকে তুমি করে বলবেন না?
___পারবোনা ৷ আর আসল কথায় আসো, শর্তে রাজি কিনা তুমি?
___আজ রাতে ভাবতে হবে ৷ ভেবে আপনাকে জানাবো!
.
___ঠিকআছে!
ভেবেই জানাও!
.
তখন রাত ১১টা! আজ রাতেও নীল পুকুরের সিড়িতে বসে আছে ৷ সেই রাত্রের মানব নারী অথবা পরীকে একনজর দেখার আশায়! আজকে ঝিঁঝিঁ পোকার দল গান গায়ছেনা ৷ জোনাকির দলও পুকুরে বা আশেপাশে নেই! তবে ব্যাঙের ডাক শোনা যাচ্ছে! নীল ব্যাঙের ডাক শুনছিল মন দিয়ে ৷ আর ভাবছিল, “যে ব্যাঙগুলো ডাকছে তারা কি মেয়ে ব্যাঙ নাকি ছেলে ব্যাঙ?" মেয়ে ব্যাঙ হওয়া স্বাভাবিক ৷ কারণ মেয়েরা চিল্লাতে ভালবাসে ৷ তারা তখন বেশি চিল্লায় যখন স্বামীর সাথে ঝগড়া লাগে! যে ব্যাঙগুলো ডাকছে তারা হয়তো পুরুষ ব্যাঙের সাথে ঝগড়া লাগানোর পর এভাবে চেঁচিয়ে পুকুরের পরিবেশটা ব্যাঙের শব্দময় করে তুলেছে!
.
এসব ভাবছিল হঠাৎ নীলের পেট ব্যাথা শুরু হয় ৷ এর সমাধান একটাই পুকুরের পানি খাওয়া ৷ ঔষুধ লাগেনা ৷ পুকুরের পানি খেলেই সেড়ে যায় ৷ তাদের নিজস্ব পুকুর রয়েছে ৷ তার সমস্যাটা দেখা দিলেই পুকুরের পানি জগ ভর্তি করে নিয়ে পান করতে থাকে যতক্ষণে না সেড়ে যায়!
এখন তার প্রচন্ড পেট ব্যাথা শুরু হয়েছে ৷ নেমে পড়লো পুকুরে! কিন্তু একি পুকুরের ধারে মাটির উপর শাড়ি, ব্লাউজ, পেটিকোট পড়ে আছে কেন? সেদিনের ঐ মেয়েটা আবার আসছে নাকি?
নীল তার হাতের চউলে করে পানি তুলে পান করতে থাকে ৷ তারপরই বাসার উদ্দেশ্যে চলে যেতে লাগে!
তখনই পুকুরের পানি থেকে শব্দ করে ঝাঁপিয়ে ওঠে কে যেন? নীল অবাক চোখে হালকা ভয় নিয়ে তাকিয়ে দেখল, এ তো পরীর মত দেখতে কোন রুপবতী; কিন্তু এই পরীর ডানাটা দেখা যাচ্ছেনা কেন? হয়তো মানুষের চোখে ডানা অদৃশ্য দেখায় ৷ মেয়েটার মুখটা অস্পষ্ট লাগলেও বোঝা যাচ্ছে সে ধবধবে সাদা! একদম শাপলা ফুলের পাপড়ীর মত সাদা! এটা পরী না হয়ে অন্য কিছু হতেই পারেনা ৷ নির্ঘাত সে জলপরী! হয়তো পরীটা তার প্রেমে পড়েছে ৷ তাই বারবার দেখা দিচ্ছে! কিন্তু পরীরা কি কালো ছেলেদের প্রেমে পড়ে? পড়তেও পারে ৷ পরীদের ব্যাপার স্যাপার বলে কথা! নীল ভাবলো, কালই পরীর বৃত্তান্ত নিয়ে একটি বই কিনতে হবে ৷ তাদের সম্পর্কে তথ্য জানা অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে! নীল পরীর দিকে তাকাতে ভয় করছিল ৷ একবার তাকানোর পর দ্বিতীয়বার সে আর ওদিকে তাকায়নি!
তখন মানবী বা দানবী বলে ওঠে,
___কাল্লু সাহেব, তোমার নামটা কিন্তু বলোনি?
.
নীল তার কথা শুনে চমকে উঠে সম্ভিত ফিরে পেয়ে বলল,
___আপনিও তো আমাকে আপনার নাম বলেননি?
.
সে ভুবন ভুলানো হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
___আমার নাম তুমিই দাও!
___আমি তো দিয়েছি নীলিমা!
___তবে এটাই আমার নাম! আমি তোমাকে তুমি করেই বলবো ৷ তুমি চাইলে আমাকে তুমি করে বলতে পারো!
____আমার ভয় করছে!
___কেন?
___আপনি কি পরী নাকি মানব নারী?
___আমি সেদিন কি বললাম?
___আমি জানি ওটা মিথ্যা বলছেন!
___আমি.....
.
.
.
.
.
.
#বিঃদ্রঃ ভুলক্রুটি ক্ষমা ও সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট করে সাথে থাকবেন। আপনাদের লাইক কমেন্ট দেখলে মনে হয় গল্পটা আপনাদের ভালো লেগেছে এবং আপনারা গল্পটা পড়েছেন,আর তাতে করে আমার ও পরবর্তী পর্বটা দেওয়ার আগ্রহ বেড়ে যায়।

.
____আমার ভয় করছে!
___কেন?
___আপনি কি পরী নাকি মানব নারী?
___আমি সেদিন কি বললাম?
___আমি জানি ওটা মিথ্যা বলছেন!
___আমি পরী হলে আপনার এতে লাভ ও-ক্ষতি ও নেই ৷ আবার মানুষ হলেও আপনার কিছু আসবে-যাবেনা !
___তবুও জানতে হবে আপনি কে? মানুষ হলে আমার জন্য একটু ভাল হতো!
___মানুষ হলে কি করতেন তবে? প্রেম করতেন?
.
নীল থমকে দাঁড়ালো তার কথা শুনে ৷ তার বিস্ময়ের চাদরে জরানো কথা শুনে বিস্মিত হলো! নীল ভাবছে সে হয়তো মনের কথাটা ধরে ফেলছে! তার মনও চাই এমন রুপবতী কোনো মেয়ের সাথে প্রেম করতে, তাকে নিয়ে সারাজীবন সুখের নীড়ে কাটিয়ে দিতে! কিন্তু প্রতিটা মেয়েই কেন যেন তাকে এড়িয়ে চলে! পাত্তা দিতে চাইনা! নীলও একারণে কারো প্রেমে পড়ার সাহস পর্যন্ত করেনি! কারো প্রতি তার মনের অজান্তে প্রেমও হয়ে যায়নি! তবে এই জলপরী বা মানব নারীকে দেখে তার মনে অন্যরকম ভাললাগা তৈরি হয়েছে ৷ নীল তার মনের সাথে গবেষণা করে বের করে ফেলছে যে মেয়েটার প্রতি তার মনে কিছুটা হলেও ভালবাসা তৈরি হয়ে গেছে! এই মুহূর্তেও সে তার মনের সাথে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে ৷ ভাবছে মেয়েটা কি তার প্রেমে সাড়া দিবে? অনেকক্ষণ ধরে গবেষণা চালানোর পরও কোনো উত্তর খুঁজে পেলোনা সে!
.
এতক্ষণ ধরে পুকুরের পানিতে সাঁতার কাটার শব্দ ছিল ৷ এ মুহূর্তে সেটা আর নেই ৷ একদম নিরব চারপাশ ৷ ব্যাঙও ডাকছেনা ৷ মনে হচ্ছে বউ ব্যাঙ ও স্বামী ব্যাঙের মধ্যে বনিবনা হয়ে গেছে! তাই তারা এখন শান্ত! নীল পুকুরের পানিতে নজর দিয়ে মেয়েটাকে বা পরীটাকে খোঁজার চেষ্টা করলো কিন্তু তার কোনো চিহ্ন নেই! মাটিতে রাখা তার শাড়ি-কাপড়ও নেই ৷ তবে চুলের খোপার ক্লিপ পড়ে আছে মাটিতে! হাতে তুলে নিলো ওটা ৷ ক্লিপ দেখে তার মনে হলো তবে সে পরী নয়, কোনো মানব নারীই হবে! মেয়েটা হয়তো নীলকে চেনে, তাই হয়তো সে তার সাথে মজা করেছে মাত্র!
পরক্ষণেই সে ভাবল, নাহ; পরীই সে ৷ পরী না হলে তো কোনো সাড়া শব্দ না করে এভাবে হঠাৎ পানি থেকে উঠে কাপড় নিয়ে চলে যেতোনা ৷ সে তো বলে যেতো যে যাচ্ছি! আর চলে যাবার সময় অম্তত তাকে নজরে পড়তো! ক্লিপটা মানব নারীদের মনে হচ্ছে! হয়তো সে এটা চুরি করেছে ৷ এবং নিজের চুলের ব্যবহারে কাজে লাগিয়েছে!
.
নীল আরো ভাবে সে কি তবে চোর মার্কা পরী? চোর হলে তো সমস্যা! নীল কিছুক্ষণ নিরব থেকে নিজের মাথায় থাপর মেরে ভাবল, ধুরো তাকে বলা খুব দরকারী ছিল যে সে প্রেমে বিশ্বাসী কিনা! যদি প্রেমে বিশ্বাস থাকে তবে তার সাথে প্রেম করা সহজ হবে! পরীদের সাথে প্রেম করলে লাভই লাভ৷ সারা পৃথিবী ঘুরে দেখা যাবে!
.
নীল ভাবনার জগতে ডুবে আছে ৷ একদম ধ্যানমগ্নে থাকা সাধকদের মত ৷ সে যখন ভাবনার জগতে খেলা করে তখন তার খেয়াল থাকেনা যে তার পাশে কেউ এলো কিনা!
নিশি তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে সেই কখন! অথচ সেটা তার খেয়ালই নেই! নিশি কিছু বলছেনা ৷ সে পাথরের মত শান্ত ও নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৷ সে দেখছে নীল কিছু বুঝতে পারে কিনা! কিন্তু না তার কোনো সাড়া শব্দ নেই ৷ পাশে যে একজন জলজ্যান্ত সুন্দরী মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেদিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই! নিশির মেজাজটা বিগড়ে যায় ৷ নীলের পিঠে সজোরে একটা থাপ্পর মেরে রাগ ও হাসির সমন্বয়ের অভিব্যক্তি নিয়ে তুই তুকারি করে বলে,
____আরে উজবুক, তোর পাশে দাঁড়িয়ে আছি সেই কখন থেকে আর তোর কোনো সাড়া নেই! গাধা কি আজীবন থেকে যাবি? .
আচমকা কারো হাতের মাইর খেয়ে হুড়মুড় করে ওঠে নীল ৷ এভাবে হঠাৎ করে কারো হাতের মাইর খেলে, যে কেউ ঘাবড়ে যাবে, ভয়ে আতঙ্কে কাঁপতে থাকবে, এবং টাল সামলাতে না পেরে মাতালের মত আচরণ করা শুরু করবে! নীলেরও তেমন অবস্থা হলো! নিশি হঠাৎ তার হাতটা শক্ত করে ধরে যাতে সে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে!
জীবনের এই প্রথমবার নীল কোনো মেয়ের পরশ পেল! ভুলেও কেউ কখনো তার হাত ধরেনি ৷ সেও দুঃসাহস দেখিয়ে কারো হাত ধরেনি ৷ ভয় ছিল যদি কারো হাত ধরে তবে মাইর পিঠে আঁটবেনা!
ভয়ে আতঙ্কে নীল কাঁপছিল এতক্ষণ কিন্তু সেটা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে হারিয়ে গেছে! নিশির স্পর্শে ভয় ও আতঙ্কের কাঁপন দূরিভূত হলেও, নারী স্পর্শের শিহরণে যে কাঁপন তৈরী হয়, সেটা এখন নীলের দেহে ভড় করেছে! তখনই কোথা থেকে যেন জোনাকি পোকার দল পুকুরের চারপাশে এসে ভিড় জমালো ৷ নিশি ও নীলের মাঝামাঝি জায়গা দিয়ে উড়তে থাকা জোনাকির আলোয় কিছুটা হলেও দুজনের চেহারা আলোকিত হয়ে উঠছে৷ একবার আলোকিত হয় আবার অন্ধকার হয়ে যায় ৷ চলছিল এভাবে ৷ নিশি নীলের হাত ধরে তার চেহারার দিকে চেয়ে ছিল ৷ নীলও পলক না ফেলে একনাগারে নিশির মায়াভরা বদনে তাকিয়ে ছিল এবং ভাবছিল, “এত রুপসী সে কার জন্য হলো? যার জন্যই হোক এমন রগচটা ও অহঙ্গকারী মেয়ে অন্তত আমার অপছন্দ!"
.
নিশি নীলের হাত ছেড়ে দিয়ে মিষ্টি স্বরে বলে,
___আমার ভাবা শেষ ৷ তোমার সাথে অনুষ্ঠানে নাচতে কোনো সমস্যা নেই আমার!
.
নীল অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলো ৷ রাতের জন্য স্পষ্ট বোঝা গেলোনা সে ভ্রু-কুঁচকিয়েছে কিনা? হয়তো ভ্রু-কুঁচকিয়েই সে তাকে বলতে লাগল,
___কি় ব্যাপার? আজ হঠাৎ তোমার সম্বোধন ও কথা বলার ধরণ পাল্টে গেল কেন? সবসময় কথা বলো আপনি আপনি করে ৷ এখানে এসেই তুই তুকারি করলে এখন আবার তুমি করে বলছো! তাছাড়া এখন তুমি কত শান্ত গলায় কথা বলতেছো যা আগে কখনো এমনটা করোনি! কারণ কি?
.
নিশি হালকা শ্বাস ফেলে উচু গলায় বলল,
___কোন কারণ নাই ৷ আমি যেমনে ইচ্ছা তেমনে কথা বলি!
____এত রাতে কি জন্য এখানে এলে? আমার সাথে অনুষ্ঠানে নাচতে রাজি হয়েছো এটা বলতে?
____না, এতরাতে এখানে আসছিলাম চোখে ঘুমের ভাব আনতে ৷ কিন্তু এসে দেখি তুমি উজবুকের মত দাঁড়িয়ে ৷ তাই কথাটি বলে দিলাম ৷ অপেক্ষায় রাখলাম না আর তোমাকে!
____তাহলে আমি যাই ৷ তুমি ঘুমকে ডাকতে থাকো! চোখে ঘুমের উদয় হয়ে যাবে!
____না না, এখান থেকে এক পা'ও নড়বেনা!
____তাহলে?
____আমার সাথে গল্প করো!
____ক্ষেত মানুষের মুখের কথা দূর্গন্ধযুক্ত হয় ৷ গল্প বলা শুরু করলে তোমার বমি চলে আসতে পারে!
.
নিশি এমনটা শুনে লজ্জিত হলো ৷ তাকে সবসময় এমন কঠোর অপমানজনক কথা বলেই তো সে মজা নেয় ৷ কিন্তু আজ রাতে হঠাৎ কি যে হয়েছে তার? সে নীলের সাথে মিষ্টিভাষায় কথা বলছে! নিশি মাথা নিচু করে আছে ৷ নীল কথা বলেই যাচ্ছিল ৷ সে আরো বলে,
___ক্ষেত হলেও কালকের দিন পর তোমাকে আমার সাথে ভার্সিটি যেতে হবে ৷ এখানে আমাকে যা খুশি বলতে পারো ৷ আশা করি ভার্সিটিতে তোমার মুখ থেকে ওরকম কথা শুনতে পাবোনা!
.
নিশি মাথা নেড়ে ধীর গলায় বলে,
___শুধু ভার্সিটি নয় কোথাও আর তোমাকে নিয়ে বাজে কথা বলবোনা!
___এই তো লক্ষ্মী মেয়ে একটা!
.
নিশি হঠাৎ লজ্জাবতীর মত চুপসে গেল কি কারণে যেনো! তারপর ভাঙ্গা গলায় থেমে থেমে বলল,
___আমি তোমার হাতটা ধরতে চাই ৷ কিছু মনে করবা?
___আমার হাত কেন ধরতে হবে? মতলব তো ভালোনা দেখছি!
.
নিশি হঠাৎ খিলখিল করে হেসে ওঠে তারপর তীর্যক কন্ঠে বলতে থাকে,
___এতক্ষণ তোর ভাবসাব দেখছিলাম৷ দরদ মাখিয়ে কথা বললে তোর অভিব্যক্তি কেমন দেখায় সেটা পরীক্ষা করছিলাম! আসলে ক্ষেত টাইপের মানুষদের সাথে রসিয়ে কষিয়ে কথা বলার পরও তাদের ক্ষেত ভাব থেকেই যায়, পাল্টায় না ৷ তাদের আচরণ ক্ষেতের মধ্যে গড়াগড়ি খায়!
ছিঃ কি নোংরা হাতটা ধরেছিলাম আমি৷ এখনি ওয়াশরুমে গিয়ে লাইফবয় সাবান দিয়ে ধুতে হবে হাতটা! তোকে স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই যে আমার সাথে ড্যান্স করার স্বপ্ন ভুলেও দেখবিনা ৷ আর সেই স্বপ্ন ভুলেও আমাকে বলবিনা ৷ কত বড় দুঃসাহস ওর! ক্ষেত মার্কা চেহারা নিয়ে আসবে আমার সাথে ড্যান্স করতে ৷ হাজারো মানুষের সামনে নাকি আমি ওর মত ভাদাইমার সাথে ড্যান্স করবো! লজ্জায় মরে যাই আমি!
.
এটা বলে নিশি থমথম পায়ে নীলের কাছে থেকে চলে যায়!
.
নিশির এত অপমানজনক কথা শুনেও যেন নীলের কিছুই হলোনা ৷ শুধু মুচকি হাসছে ৷ মনে হচ্ছে সে তার থেকে মজার সব কথা শুনেছে এবং হাসির মাধ্যমে প্রকাশ করছে যে তার কথাগুলো উপভোগ্যকর ছিল!
.
আজ আর নীলের ঘুম হবেনা ৷ তার মন চাচ্ছে রাতটা পুকুরেই কাটিয়ে দিতে ৷ হালকা হীমশীতল বাতাসের কারণে তার ভেতরটা প্রশান্তিতে ভরিয়ে তুলছে৷ ওদিকে ব্যাঙের দল আবারো ডাকাডাকি শুরু করেছে ৷ হয়তো ফের তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে!
কিছুক্ষণের মধ্যে বাতাস একেবারেই বন্ধ হয়ে গেল ৷ প্রচন্ড গরম অনুভব লক্ষ্য করা গেল ৷ রাত বলে বুঝতে পারা যাচ্ছেনা আকাশে মেঘ জমেছে কিনা? তবে আগের চেয়ে অন্ধকার বেড়ে গেছে ৷ নিশি চলে যাবার কিছু মুহূর্ত পরই জোনাকির দলগুলো কোথায় যেন লুকিয়ে পড়েছে!
হঠাৎ করে ঝড়ো বাতাস শুরু হয়ে গেল! এলোমেলো বাতাসে ধূলো উড়ছে! নীল ভেবেই নিলো বৃষ্টি হবে ৷ সাথে ঝড়ও হতে পারে ৷ সে বৃষ্টি বিলাস করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় ৷ ভাবছিল সেই পরী বা মানব নারী এসে যদি তার হাতটা ধরে বলতো, “চলো ভিজি, যতক্ষণ বৃষ্টি থাকবে'! এভাবে কেউ বললে ভিজতো সে মনের রাজ্যের সমস্ত আনন্দ নিয়ে! একা একা ভেজা মন্দ নয় ৷ তবে দুজনে ভেজার মধ্যে মজা অন্যরকম ৷ নীল কখনো দুজনকে নিয়ে ভেজেনি! ছোটবেলায় হয়তো মায়ের সাথে ভেজা হয়েছিল ৷ তবে সেটা মনে পড়েনা তার! অস্পষ্ট স্মৃতি!
ভাবতে ভাবতে ঝুমঝুম করে বৃষ্টি নামা শুরু হয়! নারিকেল ও খেঁজুর গাছের উপর থেকে বৃষ্টি পড়ছে একটু ধীর বেগে! তবে পুকুরের মাঝখানে যেভাবে বৃষ্টি পড়ছে মনে হচ্ছে বড় বড় পাথর অনবরত ছুঁড়ে মারা হচ্ছে! নীল মনের সুখে নিজেকে হারিয়ে ভিজছিল ৷ বৃষ্টির পানির সাথে তার গা বেয়ে সমস্ত দূঃখও বিলিন হয়ে যাচ্ছিল!
হঠাৎ মুখের ওড়না পেছিয়ে হাতে ছাতা নিয়ে কে যেন তার দিকে এগিয়ে আসছিল! একটা মেয়ে ৷ কি জন্য সে মুখ ঢেকে আছে? ফ্যাশন এটা? নাকি পর্দানশীল নারী? সে হয়তো নীলকে মুখটা দেখাতে চাচ্ছেনা বিশেষ কোনো কারণে! লজ্জা পাচ্ছে হয়তো! কিন্তু তাকে লজ্জা পাবার কি হলো? সে তো বয়স্ক কেউ নয় ৷ এবার মাস্টার্স শেষ করবে! নীলের বয়স কত আর হবে? খুব হলে ২৫! এই বয়সের কাউকে দেখে লজ্জার কি আছে? মেয়েটাই ভাল জানে! তাকে কিছু বলার আগেই সে নীলের হাতে ছাতাটা দিয়ে দৌঁড়ে চলে যায়! নীল চিন্তায় পড়ে গেল! কে সে? এভাবে ছাতা নিয়ে এলো কিন্তু বলা কওয়া নেই ছাতাটা দিয়েই হারিয়ে গেল! নীল এবারো মনের সাথে গবেষণা করতে লাগল ৷ মন উত্তর দিল সব প্রশ্নের জবাব দেওয়া অন্যায় ৷ এটার জবাব নিজে নিজে বের কর!
.
বৃষ্টি তখনও প্রচন্ড বেগে নামছিল ৷ থামার কোনো ইচ্ছা নেই মনে হয় ৷ হয়তো ব্যাঙের মত বৃষ্টিরও ঝগড়া হয়েছে আকাশ, পানি, মেঘ ও সাগরের সাথে! তাই হয়তো মনের দূঃখে ঝরছে! বৃষ্টির দূঃখ কি নীলের চেয়ে বেশি? নীল তো বলে তার দূঃখ সীমাহীন! অথচ পৃথিবীর কোন কিছুই সীমাহীন নয় ৷ কিন্তু একথাও নীলের নিকট সঠিক নয়৷ তার ভাষ্য সবকিছুরই সীমা আছে সত্য তবে শুধু তার দূঃখের সীমা নেই!
এটাও অবশ্য সত্য!
.
যখন নীলের বয়স ১১ ৷ তখন তার বাবা তার মাকে ডিভোর্স দিয়ে আরেকটা মেয়েকে বিয়ে করে! তার মা নীলকে নিয়ে নানু বাড়িতে যাবার সময় তাকে ট্রেন স্টেশনের একটি বুড়ির কাছে রাখে ৷ ঠিক যখনই ট্রেন কাছাকাছি এলো তখন চলন্ত ট্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে চোখ দুটো শাড়ির আঁচল দিয়ে বেঁধে নেয় ৷ তারপর ট্রেন তাকে আত্মহত্যা করার সম্মান দেয়! এরকম অসহনীয় বর্বরচিত মৃত্যু নিজ চোখে দেখেছিল ১১ বছরের শিশু নীল! এটার শোক সে আজও সামলাতে পারেনা ৷ মনে হলেই সে বুক ফাঁটিয়ে কান্না করে! তার মায়ের এই মৃত্যু তাকে বদলে দেয় ৷ সাধারণ মানুষের চেয়ে তার আচরণ ও স্বভাব ভিন্ন ও অন্যরকম হয়ে যায় ৷৷ তার বন্ধুর সংখ্যাও কমে যায় ৷ একাকী থাকতেই তার ভাললাগে! এজন্য সে জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলো একা একা পার করে দিয়েছে ৷ প্রচন্ড মেধাবী হওয়ায় লেখাপড়ায় সে কখনোই পিছিয়ে ছিলনা ৷ তবে সে পিছিয়ে আধুনিকতায়, মার্জিত ব্যবহারে! নীল নিজেকে স্বান্তনা দেয় এভাবে যে সে এরকমই!
.
নীল ভিজছিল বৃষ্টিতে! তার বোন চলে আসে তার কাছে ৷ ছাতা ছাড়াই এসেছে সাথে নিশিও আছে! নিশিকে দেখে মনে হচ্ছিল কান্না করছে! নীলের চোখেও সেটাই মনে হলো ৷ পরে ভাবলো, “নাহ, হয়তো বৃষ্টির পানি চোখে লাগায় ওরকম লাগছে!"
.
নাবিলা ধমকের স্বরে বলে উঠল,
___কিরে তুই কি আজীবন স্টুপিড হয়ে থাকবি? বৃষ্টি নামছে আর তুই এত রাতে বসে বসে ভিজছিস! কোনো সুস্থ্য স্বাভাবিক মানুষ এমনটা করে? প্রায় ১ঘন্টা ধরে বৃষ্টি হচ্ছে ৷ আর তুই কিনা? তোর যা করতে মন চাই কর!
.
বলেই সে নিশিকে নিয়ে রুমে চলে যায়!
নীলের ভাবভঙ্গি দেখে মনে হলো সে তার বোনের একটা কথাও শোনেনি, এক কান দিয়ে শুনেছে আরেক কান দিয়ে বের করে দিয়েছে!
সে ভিজতেই ছিল ৷ এবার গায়ের লাল শার্টটা খুলে সে পুকুরে নেমে গেলো! এবং বলতে লাগল,
___হে পরী তুমি দেখা দাও! তোমার সাথে আজ বৃষ্টি বিলাস করবো!
.
ওদিকে নিশি আবারো আসছে তার ভাইকে সাথে নিয়ে!
নীল পুকুরের পানিতে নেমে বারবার ডুব দিচ্ছে এটা দেখে নিশি তার ভাইকে বলল,
___ভাইয়া, তুমি তাকে মেন্টাল হাসপাতালে নিয়ে যাওনা কেন? আমি তো প্রথম দিন তাকে দেখেই বুঝেছিলাম সে পাগল! দু-বছরের মধ্যে সে বড়সড় পাগলে রুপ নিয়েছে ৷ কিন্তু হাস্যকর হলেও সত্য যে কেবল আমার চোখেই তাকে পাগল মনে হয়! বেশি কথা বলতে চাইনা, আমি কালই তাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে দেখতে চাই!
.
আতিক বলে উঠলো,
___চুপ থাক! যেজন্য আসছিস সেটা কর! ওকে পুকুরের পানি থেকে উঠতে বল!
___আমার কথা সে শুনবেনা বলেই তোমাকে ডেকে আনলাম ৷ ভাবির কথায় সে শোনেনি আর তো আমার কথা! গাধাটাকে কয়েকটা কড়া করে কথা বলছি হয়তো সেজন্য ফের রেগে এমন পাগলামী করছে!
____আবার কেন তাকে রাগাতে গেলি? তুইও কি ওর মত পাগল?
____সত্যি বলতে কি ওকে রাগাতে আমার খুব ভাললাগে ৷ কেন যে ভাললাগে সেটাও জানিনা!
____হুম হয়েছে এবার চুপ থাক! দেখি বোকাটাকে পুকুর থেকে তোলা যায় কিনা!
.
আতিক তার শালাকে ডাকতে থাকে! নীল তার দুলাভাইয়ের উচু গলায় কথা বলা শুনে বলে,
___দুলাভাই আসুন একসাথে পুকুরে সাঁতার কাটি ৷ বৃষ্টিতে পুকুরে সাঁতার কাটার মজায় আলাদা ৷ যদি হয় মধ্যরাত তবে তো কোনো কথায় নেই!
___শালাবাবু, পাগলামী বাদ দিয়ে পুকুর থেকে উঠে আসো ৷ তোমার বোন তোমার জন্য কান্নায় বিছানা ভিজিয়ে ফেলছে!
___কি বলেন দুলাভাই? আমি তো শখের বশে বৃষ্টিতে ভিজছি ৷ আর মাত্রই পুকুরে নামলাম!
___শালাবাবু, বয়স হয়ে গেছে তোমার কিন্তু বুদ্ধি গজায়নি ৷ এতরাতে কেউ একা একা ভেজে? কোনোদিন শুনছো কেউ এত রাতে পুকুরে নেমে সাঁতার কাটে?
.
___বুঝছি, তোমরা এতে বিরক্ত হচ্ছো৷ ঠিক আছে উঠে আসছি!
.
#বিঃদ্র গল্প পড়ে দেখি সবাই কেটে পরেন,ব্যাপার কি বলেনতো?প্লিজ কেউ কেটে পরবেন না,আপনানাদের মতামত আমাকে উৎসাহ দেয় পরবর্তী পর্ব দেওয়ার। আর সব সময় কিছু গঠনমূলক কথা লিখে কমেন্ট করলে খুশি লাগে।
ধন্যবাদ ইতিঃ (#তানিম_চৌধুরী)গল্পের মাঝে বিরক্ত করার জন্য দুঃক্ষিত।
.
নীল শেষপর্যন্ত পুকুর থেকে উঠে আসলো! ততোক্ষণে বৃষ্টির মাত্রা কমে গেছে ৷ টিপটিপ বৃষ্টি হচ্ছে!
নিশি নীলের দিকে যেভাবে তাকিয়ে আছে সেভাবে যদি দিনের বেলায় তার দিকে তাকায় তবে সে ভয়ে হার্টঅ্যাটাকও করতে পারে!
.
ভার্সিটিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দিনঃ
নীল বাসার উদ্দেশ্যে তার বোন দুলাভাইকে বিদায় জানিয়ে রওনা দেয় ৷ ময়মনসিং থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যেতে একটি বাসে উঠে পড়ে!
যে সিটের জন্য সে টিকিট বুকিং করেছে ঐ সিটের একপাশে নিশি আগে থেকেই বসে আছে! সে হয়তো আজই হোস্টেলে রওনা দিবে! তাই আগে থেকেই বাসে এসে উপস্থিত! এজন্যই নীল তাকে বাসায় খুঁজে পাচ্ছিলনা! সে তার সিটে কোনো কথা না বলে বসে পড়ে ৷ নিশি কিছু বলছেনা!
কানে হেডফোন লাগিয়ে নিমগ্নে মুগ্ধ হয়ে গান শুনছিল! হঠাৎ বলে ওঠে,
___ভাই বোন দুজনই নিজেদের চালাক মনে করে ৷ বোন হারালো আমার ডায়মন্ডের রিং অথচ বলে আমি নেইনি ৷ কেন বললো এটা? কারণ সে তার ভাইয়ের আশা পূরণ করবে আমাকে দিয়ে ৷ কিভাবে? ডায়মন্ডের রিং নিয়ে ট্রিকস কাজে লাগিয়ে আমাকে বাধ্য করাবে তার শর্ত মেনে নেবার জন্য! দেখো তো, এই মাথামোটা লোকটা নাকি হারানো জিনিস খুঁজে দিতে পারবে! সে নিজেই যদি হারিয়ে যায় নিজেকেই খুঁজে পাবেনা আর আসছে আমার মূল্যবান ডায়মন্ডের বিষয় নিয়ে!
.
নীল থ মেরে তার দিকে চেয়ে ছিল ৷ সে কৌতূহলের স্বরে তাকে বলল,
___তার মানে তুমি জানতে রিংটা কে নিয়েছে?
___বোকা পায়ছো আমাকে? আমি কচি খুকী? নিজের রিংয়ের ব্যাপারে অসতর্ক হবো? ভাবিকে একটা জিনিস দিলাম আর ওমনি সেটা ভুলে যাবো? আসলে দেখলাম তোমার বোনটা কতটা চালাক?
রিংটা আমি সেদিন রাত্রে পুকুরেই তোমার বোনের হাত থেকে চুরি করে নিয়ে নিই! তারপর নীলিমাকে রিংটা দিয়ে নাটক করতে বলি! এটা করেছি তোমাদের নাটক দেখার জন্য! খারাপ না ভালোই পারো! আমার সাথে নাচার এত শখ তবে রিংকে কাজে লাগিয়ে কেন? সরাসরি বলতে পারার সাহস হয়না? স্টুপিড স্টুপিডই থাকবে!
.
নীল খুশির চোটে হাস্যজ্জ্বল মুখে উত্তেজিত হয়ে বলে,
____তার মানে তুমি আমার সাথে অনুষ্ঠানে নাচতে রাজি?
____আস্তে! বাসের লোকজন উল্টাপাল্টা ভাবতে পারে! আর হ্যাঁ, আমার সময় নেই ৷ সামনেই অনার্স থার্ড ইয়ারের পরীক্ষা ৷ সেটা তুমিও জানো! কোনো অনুষ্ঠানে সময় দিতে পারবোনা!
.
নীলের হাস্যজ্জ্বল মুখটা নিমিষে মলিন হয়ে গেল! সে নরম স্বরে বলল,
___ঠিক আছে! পরীক্ষা ভাল করে দাও!
.
নিশি নীলের দিকে চোখ পাকিয়ে বলে,
___তুমি তো বলেছিলে আমি তিন সাবজেক্টে ফেল করবো?
.
___ওহ, ওটা এমনি বলছি ৷ মনের কথা ছিলনা!
___তাও ভাল ৷ শোনো, আমার সাথে উত্তরা যেতে হবে ৷ আমি আর হোস্টেলে থাকবোনা ৷ বাসা ভাড়া নেবো! একা ছিলাম এই জন্য বাসা ভাড়া দেয়নি ৷ বলেছিল বিবাহিতা হতে হবে ৷ স্বামী সাথে থাকতে হবে! আমি চাই তুমি বাড়িওয়ালাকে বলবে তুমি আমার স্বামী! ব্যাস রুম ভাড়া পেয়ে যাবো!
.
নিশির কথা শুনে নীল বেষম খেল মনে হলো! সে কি বলবে বুঝতে পারছেনা! ভাষা হারিয়ে ফেলছে! তবুও মিনমিন করে বললো,
___ওহ আচ্ছা!
.
নিশি তার হাত ধরে বলল,
____থ্যাংক ইউ হবু বর!
.
এটা শুনে নীলের মনে হলো নারিকেল গাছের আগা থেকে ধপাস করে পড়ে গেছে ৷ আর বাঁচার উপায় নাই ৷ ঠিক মত কানে শুনছেনা সে! কান চিনচিন করছে ৷ চোখেও ঝাঁপসা দেখছে ৷ চোখ পিটপিট করছে! কান ও চোখ চুলকিয়ে একটা কাশি দিয়ে নিশিকে বলল,
___কি বললে এটা?
___এত খুশি হবার কিছু নেই ৷ অভিনয় করতে হবে ৷ তাই আগে থেকে প্র্যাকটিস করছি ৷ তবে আর হবু বর বলা যাবেনা ৷ “ওগো স্বামী আমার" বলে ডাকতে হবে!
.
এটা শুনে নীলের মুখটা ফের ছোট হয়ে গেল! চেহারা মলিন করে গাড়ির জানালা দিয়ে দূরের গাছপালা দেখতে লাগল!
.
নীল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যেতে পারলোনা নিশির কারণে! সে তাকে নিয়ে উত্তরা একটি বাসায় গেল!
বাসার গেটে দুজন দাঁড়িয়ে আছে! দাড়োয়ান তাদের দাঁড় করিয়ে রেখেছে৷ একসময় বাড়িওয়ালা তাদের কাছে এসে দাঁড়ালো ৷ লোকটার বয়স ৫২ পার হবে! দাড়ি ও চুল পেকে গেছে ৷ চোখে পাওয়ারের চশমা পড়েছে! নীল মানুষটার দিকে বিষফোঁড়ার মত দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে ছিল ৷ মনে হচ্ছিল সে মানুষটাকে তাজা গিলে খাবে! লোকটাও নীলের দিকে আড়দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে ৷ হঠাৎ তিনি গম্ভির গলায় বললেন,
___ওহ তার মানে বিয়ে করে নিয়েছো?
.
নীল রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে উচু গলায় বলল,
___সেটা জেনে আপনার তো কোনো লাভ নেই!
.
নিশি তাদের থামিয়ে দিয়ে বলল,
___নীল, তুমি কি ওনাকে চিনো? এভাবে কথা বলছো কেন তোমরা?
.
নীল দাঁতে দাঁত চেপে রাগকে সংবরণ করে বলল,
___উনি আমার বাবা....
.
.
.
.
.
.
#বিঃদ্রঃ ভুলক্রুটি ক্ষমা ও সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট করে সাথে থাকবেন। আপনাদের লাইক কমেন্ট দেখলে মনে হয় গল্পটা আপনাদের ভালো লেগেছে এবং আপনারা গল্পটা পড়েছেন,আর তাতে করে আমার ও পরবর্তী পর্বটা দেওয়ার আগ্রহ বেড়ে যায়।

.
লোকটাও নীলের দিকে আড়দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে ৷ হঠাৎ তিনি গম্ভির গলায় বললেন,
___ওহ তার মানে বিয়ে করে নিয়েছো?
নীল রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে উচু গলায় বলল,
___সেটা জেনে আপনার তো কোনো লাভ নেই!
নিশি তাদের থামিয়ে দিয়ে বলল,
___নীল, তুমি কি ওনাকে চিনো? এভাবে কথা বলছো কেন তোমরা?
.
নীল দাঁতে দাঁত চেপে রাগকে সংবরণ করে বলল,
___উনি আমার বাবার বন্ধু ৷ দু-বছর আগেও ওনাকে সম্মান করতাম ৷ এখন উনি আমার যম!
___যম মানে? কি করছে উনি?
.
___ওনার কথায় সম্পত্তির লোভে মিস্টার তৌহিদ মানে আমার কুলাঙ্গার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন, এই যে এই পশুটার বোবা বোনকে বিয়ে করেন! ওনার বোনকে যে বিয়ে করছে এটা আমি ২বছর আগে জানতে পারি!
___তোমার বাবা তো এখনো বেঁচে আছে! কিন্তু উনি কোথায়?
.
___সবাই জানে লন্ডন থাকে! এটা বানোয়াট কথা! আসলে উনি পাগলা গারদে ধুকে ধুকে মরছে!
___কেন? কিভাবে এমনটা হলো?
___এই যে সামনে দাঁড়ানো লোকটা, ওনার কারণে! যখন তার বোন সম্পত্তি চায়লো ওনার থেকে, তখন উনি কৌশল আঁটলেন! তার বোন তো এমনিতেই বোবা ৷ তাই আইনের ভয় না করে তার সামনেই আমার বাবাকে মারধর করেছিল ৷ তারপর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করার ইনজেকশন দিয়ে বাবাকে পাগল বানিয়ে দেয়! যদিও আমি খুশিই হয়েছিলাম খবরটা শুনে ৷ সে তার পাপের ফল পেয়েছে ৷ আমার মা বড়লোক ঘরেরই মেয়ে ছিল তবে মাকে সম্পত্তি লিখে দিতে চায়তোনা ৷ আর বাবা তো গরিব ছিলেন ৷ অভাবের সংসারে খুব কষ্টে চলতো! এরপরও মা বাবাকে গভীরভাবে ভালবাসতো ৷ কখনো অভাবের কথাও বলতো না ৷ আর এমন একটা মানুষকে ফাঁকি দিয়ে জানোয়ারটা আরেকটা বিয়ে করে নিলো ৷ তাও এই অমানুষের কথামত!
.
___এসব তথ্য কে দিয়েছে তোমাকে?
___আমার সৎ মা ৷ উনি এইতো দুবছর আগে তিনটা চিঠি দিয়েছিল!
___উনি বেঁচে আছেন?
___নাহ!
___কেমনে মারা গেল?
___আত্মহত্যা করে ৷ যদিও আমি মনে করি ওটা আত্মহত্যা না, খুন! আর খুনটা এই খুনীটাই করেছে!
.
এতক্ষণ চুপ থেকে নিশি ও নীলের কথোপকথন শুনছিল শরিফ চৌধুরী! মিটমিট হেসে কথাগুলো শুনলেও তার হাতের আঙ্গুলগুলো ছিল মুষ্টি বদ্ধ করা৷ রাগে হাতের আঙ্গুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ করছিল ফের ছেড়ে দিচ্ছিল!
সে আর চুপ থাকতে পারলোনা! নীলকে ধমক দিয়ে বলল,
___চুপ বেয়াদব! অনেক কথা বলেছিস! এবার সামনে থেকে দূর হ!
.
নীলও কম যায়না ৷ সে রেগে গেলে বাঘের রুপ ধারণ করে! চোখ দুটো রক্তবর্ণ হয় ৷ মাথায় আগুন ধরে যায় ৷ মনে হয় কাউকে খুন করতে পারলে রাগ কমবে ৷ এই মুহূর্তেও তেমনটা হচ্ছে তার মধ্য! নীল চোখ দুটো রক্তিম বানিয়ে রাগান্ন্যিত ভাব নিয়ে দাঁত কটমট করে বলল,
___রাখ, তোর বাসায় কে থাকতে আসছে? যদি জানতাম এটা রাস্তার কুত্তার বাসা তবে ভুলেও আসতাম না!
.
শরিফ চৌধুরী নীলের কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল ৷ কোনো কথা তার মুখ দিয়ে বের হলোনা! শুধু রাগে ফোঁসফোঁস করছে আর শ্বাস ফেলছে!
.
নীল তাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে চলে যায় ৷ নিশির মুখে হালকা হাসির রেখা ৷ মনে হয় সে নীলের এমন ভায়োলেন্ট রুপ দেখে ব্যাপক মজা পেয়েছে! মেয়েরা পুরুষের বিড়াল স্বভাব অপছন্দ করে এবং বাঘের স্বভাবে মুগ্ধ হয়! তবে স্ত্রীদের ক্ষেত্রে একটু ভিন্নতা রয়েছে ৷ তারা ঘরে স্বামীদের বিড়ালের রুপকে পছন্দ করে, আর বাইরে তাদের বাঘের রুপে দেখতে ভালবাসে!
.
নিশি ও নীল টু-লেট বাসা বাড়ি খুঁজছে৷ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোঁজাখুঁজির পর একটা বাসা পেল! তবে ভাড়া বেশি ৷ প্রতি মাসে ৬হাজার টাকা দিতে হবে! নীলও রাজি হয়ে যায়! তবে নিশির একটু আপত্তি ছিল! কিন্তু যখন নীল বলল, “টাকা দিতে না পারলে আমি দিব" তখন সে রাজি হয়ে যায়!
.
বাসা ভাড়া মিটমাট করে, নীল তার মেসের উদ্দেশ্যো চলতে থাকে ৷ নিশিও তার সাথে সাথে যেতে লাগলে বলে,
___তুমি কই যাবে?
___তোমার সাথে যাব!
___আমার সাথে যাবে মানে? আমি তো গ্রামে যাবোনা ৷ যাব মেসে!
___তবুও যাব!
___তাহলে বাসা কেন ভাড়া নিলে?
___বাসা ভাড়া নিয়েছি তোমাকে সাথে নিয়ে থাকবো বলে!
___আমাকে সাথে নিয়ে থাকবে মানেটা কি?
___বোঝনা?
___বুঝিনা! আর মেসে যে যাবে সেখানে মেয়ে মানুষ নট এলাউ!
____মেসে মেয়ে মানুষ নট এলাউ তাতে আমার কি? তুমি বলবে বিয়ে করা বউ আসছে!
.
#বিঃদ্র গল্প পড়ে দেখি সবাই কেটে পরেন,ব্যাপার কি বলেনতো?প্লিজ কেউ কেটে পরবেন না,আপনানাদের মতামত আমাকে উৎসাহ দেয় পরবর্তী পর্ব দেওয়ার। আর সব সময় কিছু গঠনমূলক কথা লিখে কমেন্ট করলে খুশি লাগে।
ধন্যবাদ ইতিঃ (#তানিম_চৌধুরী)গল্পের মাঝে বিরক্ত করার জন্য দুঃক্ষিত।
.
নিশির কথা শুনে নীল হতভম্ব হয়ে গেল৷ অবাকের চূড়ায় পৌঁছে তাকে বলল,
___আস্তে! ভাবতে দাও আমাকে! ১ মিনিট! তুমি আমাকে নিয়ে কি উল্টাপাল্টা স্বপ্ন দেখা শুরু করছো?
___তাতে দোষের কি?
___খবরদার! এখনই সব মন থেকে ঝেড়ে ফেলো! আর আমার সাথে আগে যেমন ব্যবহার করতে তেমনি করবে!
.
নিশি হাসিমুখেই নীলের গালে একটি থাপ্পর লাগিয়ে দিয়ে বলে,
___তোমারে এমনি কি বোকা, গাধা আর ক্ষেত বলি? সাধেই বলিনা! ব্যবহার গাধার চেয়ে গাধামার্কা! আরে মিস্টার গাধা আমি যে বাসায় রুম ভাড়া নিয়েছি সেই বাড়ির প্রথম শর্ত স্বামীসহ প্রতিটা দিন থাকতে হবে ৷ কোনো কোনো দিন স্বামী বাড়ির বাইরে থাকলে তার কারণ বলে যেতে হবে! এটা প্রধান শর্ত! তোমাকে তাদের নিকট আমার স্বামী হিসেবে পরিচয় দিলাম ৷ এখন চলে গেলে কেমনে হবে?
___ও আল্লাহ! তার মানে আমাকে তোমার সাথে স্বামীর অভিনয় করতে হবে?
___করলে করবা!
___নাহ, পারবোনা ৷ তারচেয়ে চলো গ্রামে যাই! ভার্সিটি থেকে খুব দূরে নয় তো!
___দূরে নয় তবে তুমি মেসে উঠছো কেন?
___এমনি, মেসের লাইফ কেমন সেটা দেখতেই মেস ভাড়া নিয়েছি!
___ঠিক আছে ৷ তোমার সাথে গ্রামেই যাবো! তাহলে যে বাসা ভাড়া নিলাম অগ্রিম টাকাও দিলাম সেটার কি হবে?
___টাকা ফেরত নিবো!
___আস্ত গাধা! তা কি কখনো ফেরত দিবে?
___দেখা যাক!
.
নীল বাড়িওয়ালার সাথে দেখা করলো ৷ তাকে সালাম জানিয়ে বলল,
___আঙ্কেল, আমরা আন্তরিক ভাবে দূঃখিত! আমরা শহরে আর থাকছিনা৷ কারণ আমার বউ প্রেগনেন্ট ৷ সে গ্রামে চলে যাবে! আপনি টাকাটা দিয়ে দিন!
___তার আগে বলুন, বাসা ভাড়া নেবার আগে কেন বললেন না আপনার বউ প্রেগনেন্ট?
___খবরটা তো মাত্রই জানলাম!
___এখানে ডাক্তার এসেছিল?
___কি যে বলেন না আঙ্কেল ৷ গতকাল হাসপাতালে চেকআপ করিয়েছি ৷ রিপোর্ট পাইনি কাল ৷ একটু আগে গাইনী ডাক্তার ফোন করে বলল আমার বউ প্রেগনেন্ট!
___ঠিক আছে ৷ টাকাটা দেব ৷ তবে অর্ধেক! বাকি অর্ধেক টাকায় মিষ্টি কিনে খাবো!
.
নীল অর্ধেক টাকা নিয়ে চলে আসলো ৷ তার বেজায় রাগ হচ্ছিল ৷ কেউ তার থেকে ঠকিয়ে টাকা নিলে রাগে ছটফট করতে থাকে! মাথা চাপড়াতে থাকে! এখন সে জোরেজোরে নিজের মাথায় নিজেই চাপড়াচ্ছে!
নিশি তার এমন অদ্ভুত আচরণ দেখে বলল,
___কি তোমার কি মাথা ফের নষ্ট হয়ে গেছে? পাবনায় নিয়ে যাবো?
___কিসব বলছো?
___তবে ওরকম করছো কেন?
___বাড়িওয়ালা পুরো টাকা দেয়নি ৷ অর্ধেক দিছে ৷ বাকি অর্ধেক টাকায় নাকি মিষ্টি কিনে, খাটাসটা গাপুস ঘুপুস করে চৌদ্ধগুষ্টিকে সাথে নিয়ে খাবে! মেজাজটা গরম হয়ে গেছে!
___এরজন্য এত মন খারাপের কি হলো? উনি তো আমাদের অনাগত সন্তানের খবর পেয়ে খুশি হয়ে মিষ্টি কিনে খাবে!
.
নীল এটা শুনে তব্দা খেয়ে গেল ৷ সে তার কানকে বিশ্বাস করতে পারলোনা ৷ ভাবলো, “সে এটা কি বলে? আমাদের অনাগত সন্তান কেমনে আসতে যাবে? আমি কি তার সাথে ইয়ে করেছি নাকি? যে সন্তান হবে?"
নীল সম্ভিত ফিরে পেয়ে নিশিকে বলল,
___আমাদের অনাগত সন্তান মানে? আমরা বিয়ে করলাম কবে?
.
নিশি নীলের পিঠে মৃদ্যু ভাবে ঘুষি মেরে বলল,
___বোকা, বিয়ে করিনি; শীঘ্রই করবো৷ বিয়ের পর আমার পেটে যে সন্তান হবে সেটা তো অনাগত সন্তানই!
.
নীল তার কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল ৷ ভাবলো এই মেয়ে তো আগে থেকেই স্বপ্ন দেখা শুরু করছে, একে থামানো সম্ভব না! চোখ পিটপিট করে তার দিকে তাকিয়ে থেকে নরম স্বরে বলল,
___মজা করে লাভ নাই ৷ গ্রামে যেতে চাইলে সাথে চলো!
___ঠিক আছে ৷ চলো!
.
নীল ও নিশি একটি রিকশা'তে উঠে পড়লো! পিচঢালা পথে চলতে লাগলো রিকশা! নিশি নীলের গা-ঘেষে বসার পর তার হাততা ধরে আদুরে গলায় বলে,
___আমি ঘুমাবো ৷ চুপ করে থাকবে ৷ কোনো কথা বলবেনা!
.
নীলের মুখে হ্যাঁ বা না জবাব কোনোটা না শুনে নিশি তার কাঁধে মাথা রেখে একটা হাত পিছন দিক দিয়ে তার পেট বরাবর ধরে ঘুমিয়ে রইলো!
কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমের দেশে বিচরণ করলো সে ৷ নিশি এমন একজনের পাশে তাকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে যে মানুষটা তাকে নিয়ে কখনো এভাবে কল্পনা করেনি! আর নিশির মন জুড়ে সারাটাক্ষণ শুধু এই মানুষের নামটাই উচ্চারিত হয় ৷ সে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে ৷ একদম বাচ্চা মেয়ের মত করে! নীল কিছু বলছেনা ৷ কারণ মেয়েটা তাকে অনুরোধ করেছিল চুপ থাকতে ৷ আসলে অনুরোধ নয়, আদেশ ৷ নিশি কখনো অনুরোধ করেনা ৷ সবসময় আদেশ করতে সে ভালবাসে!
নীল তার মায়ায় জরানো মুখটার দিকে কয়েকবার নজর দিয়েছিলো ৷ রিকশা কখনো ভাঙ্গা রাস্তার কারণে ঝাঁকি মেরে উঠলে সে নিশিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে যাতে পড়ে না যায়! চলছিল এভাবে! রাতের আধারে মেয়েটার মুখের সৌন্দর্য অভূতপূর্ব মনে হচ্ছিল!
একসময় ঘুমের মধ্যেই নীশি নীলকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে নেয়! রিকশায় এভাবে ঘুমালে দূর্ঘটনা হবে ভেবে নীল তাকে জাগিয়ে তোলার ইচ্ছাপোষণ করলো ৷ পরে ভাবলো থাক! ঘুমোচ্ছে সে শান্তিতে ঘুমাক! নিশির স্পর্শের কারণে
নীলের এখন সেই পরীরটার কথা মনে পড়ছে! সে ভাবছে, “আমার ঐ পরী বা মানব নারীর স্পর্শ না জানি কতটা হ্নদয়স্পর্শী! তার যদি স্পর্শ পেতাম, ইশ!"
.
নীল ও নিশি গ্রামে পৌঁছে গেল ৷ রিকশা একদম নীলের বাসার সামনে ঠেকলো ৷ নিশি এখনো তাকে জড়িয়ে ধরে গভীর ঘুমে ডুবে আছে ৷ নীল বুঝতে পারলো তাকে জাগানো মোটেও ভাল কাজ হবেনা ৷ জাগালে হয়তো মেয়েটা রেগে তাকে যা তা বলে দিতে পারে! এজন্য সে নিজেকে তার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রিকশা থেকে নেমে পড়লো ৷ তারপর নিশিকে রিকশা থেকে নামিয়ে নিল ৷ এরপর তাকে বাহুতে জড়িয়ে নিয়ে তার রুমে নিয়ে গেল! বাসাটা নীলের নানুর বাড়ি ৷ তার নানু দু-বছর আগে মারা গেছে ৷ তিনিই নীলের মা সম্পর্ক যাবতীয় কথা তাকে বলতেন!
.
নিশি এখনো গভীর ঘুমে, একদম মরার মত হয়ে ঘুমাচ্ছে ৷ নীল তাকে নিজের রুমে রেখে সে চলে যায় ওয়াশরুমে ৷ ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িংরুমের সোফাতে একটু গড়াগড়ি করতে থাকে ৷ হঠাৎ নিশির চিৎকার শুনে সোফা থেকে উঠে তার রুমে চলে যায় ৷ গিয়ে দেখে নিশি কাঁদছে আর বলছে,
___আমাকে এখানে কে নিয়ে এলো?
.
নীল তব্দ হয়ে যায় তার কথা শুনে ৷ থ মেরে তার দিকে তাকিয়ে থাকে আর ভাবে, “এই মেয়ে এত নাটক কেমনে জানে? একেক সময় একেক রুপ নেয়"!
নীল আদুরে গলায় মিষ্টি করে নিশিকে বলে,
___তুমিই তো আসতে চাইলে ৷ তাই নিয়ে এলাম!
___না, আমি কখনো রাজি হয়নি ৷ তোমার সাথে কখনো এখানে আসতে চাইবোনা ৷ তুমি জোর করে আমাকে নিয়ে আসছো ৷ অজ্ঞান করে এখানে নিয়ে আসছো ৷ তুমি আমার সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করতেই এমনটা করছো, তাইনা?
.
এটা বলে নিশি আরো জোরে জোরে বাচ্চা মেয়েদের মত করে হাউমাউ কাঁদতে থাকে!
.
নীল তাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দেয় ৷ এবং উচ্চস্বরে কপট রাগ নিয়ে বলে,
___চুপ থাকো! সবসময় বাচ্চাদের মত ব্যবহার করো! আমি কেন তোমার সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করবো? শোনো তোমার সাথে কোনো কথা বলার মুড নাই ৷ একটু পর আর্জেন্টিনা VS স্পেনের খেলা শুরু হবে ৷ মাত্রই মনে পড়লো ৷ খেলা দেখবো ৷ তুমি চুপ করে শুয়ে থাকো!
আমি তোমার পাশে বসে খেলাটা শেষ করে ড্রয়িং-রুমে গিয়ে ঘুমাব!
.
নিশি কান্না থামিয়ে আবদারের স্বরে বলে,
___আমার তো ক্ষুধা লাগছে ৷ খাবার মত কিছু কি নেই? থাকলে দাও!
.
নীল ভুলেই গেছিল যে তারও ক্ষুধা লেগেছে ৷ অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগলে সে আবার খাবার কথা কাজের চাপে ভুলে যায় ৷ নিশির কথায় তার ক্ষুধার কথা স্মরণ হলো! চলে গেল ফ্রিজে! ফ্রিজ খুলে দেখে আপেল, আঙ্গুর রাখা আছে!
সেগুলো এনে কিছু নিশির হাতে দেয় আর নিজে নেয়! নিশি খাটে হেলান দিয়ে বসে আপেল ও আঙ্গুর খাচ্ছিল ৷ হঠাৎ মিটমিট করে হেসে নীলকে বলে,
___আমরা বিয়ে করবো কবে?
.
নীল এমন কথা তার মুখ থেকে শুনতে পারবে সেটা আগেই আন্দাজ করতে পেরেছিল ৷ তাই অবাক হলোনা ৷ চোখ পাকিয়ে সে নিশির মায়াভরা চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো! এই প্রথমবার সে তার চোখের দিকে মন দিয়ে নজর দিয়েছে ৷ সে তার চোখের ভাষা সহজেই পড়তে পারছে!
তার চোখ থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে বিড়বিড় করলো বলল, “সর্বনাশ এই মেয়ে তো প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে, কিন্তু কি কারণে প্রেমে পড়লো?"
মনের সাথে গবেষণা করে এর উত্তর পাবার চেষ্টা করছিল ৷ কিন্তু তার মনটা তার সাথে আপাতত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে! তাই কোনো উত্তর পেলোনা!
.
নিশি তার দিকে এগিয়ে আসলো ৷ এবং তাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
___আমি আজ রাত তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবো!
.
এটা শুনে নীলের মনে হলো সে বাস্তবে নেই, স্বপ্নের জগতে সাঁতার কাটছে আর জলপরীর মুখ থেকে এমন রসের কথা শুনছে! সে একটু রাগ নিয়ে তাকে বলল,
___বুঝলাম না কিছু, সারাক্ষণ আমাকে পাগল বলে বলে ক্ষ্যাপাতে ৷ হঠাৎ তোমার কি হলো যে নিজেই পাগলামী করছো?
___এত কথা বলতে চাইনা ৷ যেটা বলছি সেটাই হবে!
___আমরা দুজন পরিপূর্ণ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ ৷ একই রুমে রাত কাটালে যখন তখন উল্টাপাল্টা কিছু হয়ে যেতে পারে!
___হলে হবে! বিয়েটা তো একদিন করবোই!
.
নীলের এবার সত্যি সত্যি রাগ হচ্ছিল ৷ নিশির ছেলেমানুষি কথাবার্তায় মেজাজ ঠিক রাখা সম্ভব হচ্ছিলনা!
সে বিছানা থেকে উঠে চলে গেল বুয়ার রুমে! আজ বুয়া নেই ৷ তার গ্রামের বাড়ি চলে গেছে ৷ সে থাকলে পাগলীটাকে তার সাথে রাখা যেতো ৷ নীল বুয়ার রুমে ঢুকে দরজাটা যেই বন্ধ করে দিল ওমনি শোনা গেল ভাঙ্গচুরের শব্দ! মনে হচ্ছিল নিশি তার রুমের ১৪টা বাজাচ্ছে ৷ দৌঁড়ে রুমে গিয়ে দেখে বিছানা, বালিশ উল্টিয়ে, দেয়ালে লাগানো গ্লাসের ছবিগুলো ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে ফেলেছে! আয়না ভেঙ্গে চুরমার করে ফেলছে! টিভিটা ভাঙ্গতে যাবে তখনই নীল তার হাত থেকে ভাঙ্গা আয়নার গ্লাসটা নিয়ে নিল ৷ নিশির হাত কেটে রক্ত পড়ছে ৷ তার এমন পাগলামীর কারণ সে বুঝতে পেরেছে ৷ মেয়েটা অভিমানী ও রাগী সেটা আগে থেকেই জানতো, কিন্তু এতটা সেটা কখনো ভাবেনি! তাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে স্বান্তনা দিয়ে বলতে থাকে,
___কি হয়েছে? এমনটা করছো কেন? আমি কি বাচ্চা ছেলে যে তোমার সাথে থাকবো?
___এত কিছু জানিনা ৷ আমি যেটা বলছি সেটাই করবে! একটা কথাও বলবেনা!
.
নীল কোনো উপায় না পেয়ে তার কথা মেনে নিয়ে ডেটল ও তুলা এনে নিশির কাটা হাত ব্যান্ডেজ করে দিল ৷ তারপর বিছানায় শুয়ে পড়লো ৷ নিশিই টিভিটা অন করে ৷ এবং ফুটবল ম্যাচ যে চ্যানেলে হচ্ছে সেটা দেখতে থাকে! আর্জেন্টিনা ১গোলে এগিয়ে আছে ৷ এটা দেখে নীলের মুখে হাসি ফুটলো ৷ তার হাসি দেখে নিশির মনটাও খুশিতে ভরে গেল, মুখে ভুবন ভুলানো হাসি এসে জড়ো হলো!
নিশি তাকে জড়িয়ে ধরে খেলা দেখতে লাগলো ৷ আর নীল উসখুস করছিল ৷ তার স্পর্শ কেন যেন পীঁড়াদায়ক লাগছিল ৷ মনে মনে ভাবছিল কখন সকাল হবে আর এই আপদ থেকে উদ্ধার হবে?
.
আর্জেন্টিনা VS স্পেনের খেলার সমাপ্তি ঘটলো ৷ আর্জেন্টিনা ৩ গোলে জয়লাভ করেছে ৷ মেসি ১গোল দিয়ে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হয় ৷ খেলা শেষ হলে নিশি নীলের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানায় উঠে বসে বলতে লাগলো,
___থ্যাংকস সময় দেবার জন্য ৷ আমার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল প্রিয় মানুষটাকে জড়িয়ে ধরে প্রিয় দলের ফুটবল ম্যাচ দেখবো ৷ তুমি পূরণ করলে!
___ও মাই আল্লাহ! এই জন্য তুমি এত নাটক করলে? আগে বললেও তো পারতে!
___বলে দিলে মজাই তো থাকতো না!
___বুঝলাম, কিন্তু আমার মত মাটির পাতিলের কালির সাথে তোমার মত সুন্দরীকে কি মানায়? এরপরও আমি তোমার মনের মানুষ হয়ে গেলাম?
____আর কোনো কথা শোনার মুড নাই ৷ তুমি এখন চলে যাও তো!
____ওকে, তবে একটা কথা বলি; আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা বাদ দিও আগেই বলে দিলাম ৷ অন্যথায়, পরে কিন্তু কাঁদতে হবে!
.
নিশি তার এমন কথা শুনে করুণ দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো! তারপর মাথা নিচু করে চেহারা মলিন করে বসে রইলো!
নীল যখন রুম থেকে বেড়িয়ে গেল তখন সে বিছানা থেকে নেমে দরজাটা আস্তে করে বন্ধ করে দিলো!
.
নীলের বাসার সামনেও বিশাল পুকুর রয়েছে ৷ পুকুরের চারদিকে শুধু খেঁজুর গাছ! খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির দক্ষিণে লাগানো নিমগাছ থেকে ডাল ভেঙ্গে সেটা দিয়ে মেছওয়াক করতে করতে পুকুরে যায় হাতে টাওয়াল নিয়ে ৷ পুকুরের সিড়িতে পা বাড়িয়ে দেখে নিশি গোসল করছে! সে যেভাবে সাঁতার কাটছে তাতে মনে হচ্ছে সে বেশ কয়েকবার সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল ৷ নীলকে দেখতে পেয়ে নিশি লজ্জায় পুকুরের পানিতে দম নেয় কিছুক্ষণ ৷ তারপর পানি থেকে হুড়মুড় করে ওঠে ভারি শব্দ করে! এরপর পুকুর থেকে উঠে আসে ভেজা কাপড় নিয়ে ৷ মাটিতে রাখা টাওয়ালটা তুলে নিয়ে গায়ে জড়িয়ে রুমের দিকে চলে যায়!
.
নীল মেছওয়াক করছিল আর রাতে যে স্বপ্ন দেখেছিল সেটা মনে করার চেষ্টা করছিল ৷ তার মনে হচ্ছিল রাতে অনেকগুলো স্বপ্ন দেখেছে তবে মনে আছে ২টা স্বপ্ন আর ১টা স্বপ্ন অস্পষ্ট! মেছওয়াক করা শেষ করে কুলি করে হাত-মুখ ধুয়ে রুমে চলে যায় ৷ রান্না ঘর থেকে মাংস ও মশলার মিশেলে তৈরী হওয়া ঝালের ঘ্রাণ তার নাকে চলে আসে! চমৎকার এই ঘ্রাণের নেশায় মুগ্ধ হয়ে চলে যায় কিচেন রুমে! গিয়ে দেখে নিশি বাঙালী নারীদের মত করে শাড়ি পড়েছে, যে কারণে অসম্ভব রকমের সুন্দর লাগছিল তাকে! ভেজা লম্বা কালো চুল পিছনে ছেড়ে দিয়ে রান্না করায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ৷ মেয়েটা রান্না জানে নীল জানতোই না ৷ এমন কাজে পটু মেয়েকে বউ হিসেবে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার! নীল ভাবছিল তার সেই পরীটা কি রান্না জানে? নিশির চেয়ে ভাল হয় রান্না?
পরে সে ভাবলো নিশির রান্না করা খাবার তো খাওয়ায় হলোনা, বুঝবো কেমনে ভাল নাকি মন্দ? আগে খেয়ে নিই!
তারপর পরীর সাথে তুলনা!
রান্না শেষ হলে নিশি তাকে খাবার টেবিলে বসতে বলে! আজ ব্রেকফাস্টে গোশতের ঝোল দিয়ে পরোটা খেতে হবে!
.
খাবার টেবিলে নীল ও নিশি!
নীলের প্লেটে নিশি কয়েক টুকরো গোশত ও সাথে ঝোল দিল ৷ সে রুটির সাথে গোশতের ঝোল মেখে মুখে তুলে নিল ৷ মুখে দিয়েই বুঝতে পারলো তার রান্না অমৃত! প্রশংসা না করলে পাপ হবে!
খাওয়া শেষ না করার আগে কিছু বলতে চাইলোনা সে! নিশিও তার সাথে খাচ্ছিল ৷ এবং তার দিকে তাকিয়ে দেখছিল বারবার!
খাওয়া শেষ হবার পর নীল তাকে বলল,
___তুমি মানুষটা ঝগড়াটে হলেও রান্না দারুণ পারো ৷ আমি চাই আমার বউটা এমনভাবে রান্না করে আমাকে খাওয়াক!
.
নিশি তার প্রথম লাইন মন্তব্য শুনে খুশি হলো ৷ পরের লাইন শুনে বেজার হলো৷ এবং ক্ষিপ্ত স্বরে বলল,
___ও তার মানে অন্য কাউকে বউ করার মতলব আছে তোমার মনে? ভুলেও এমনটা আশা করোনা ৷ একদম মেরে তক্তা বানাবো! বলে দিলাম!
___আচ্ছা নিশি, তুমি কি সত্যি সত্যি আমাকে চাও? এটা হলে তোমাকে সত্যিই কাঁদতে হবে ৷ আমাকে ভুলে যাও! সময় আছে এখনো!
.
নীলকে কি জবাব দিবে বুঝতে পারলোনা সে! মনে হচ্ছিল সে কান্না করে দিবে ৷ চোখ দুটো ছলছল করছিল অশ্রুজল গড়িয়ে পড়ার জন্য! কিন্তু না, সে কান্না করার আগেই টেবিল থেকে উঠে পড়লো!
.
নীল এখন ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বাসা থেকে রওনা দিবে! তার বদভ্যাস খাওয়ার ১ঘন্টা পর গোসল করা ৷ গোসল করে রেডি হয়ে চলে গেল ভার্সিটি! নিশিরও ভার্সিটি যাবার দরকার ছিল কিন্তু তার মনটা একদমই ভাল নেই!
.
নিশি বিছানায় গড়াগড়ি করে কিছুক্ষণ মন খুলে কান্না করেছে ৷ তারপর নিজেকে শান্ত করতে টিভিতে মিউজিক চ্যানেল চালিয়ে দেয় ৷ মিউজিকের তালে তালে নাচতে থাকে ৷ নাচে পারদর্শি সে ৷ নাচের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে দিয়ে মনের কষ্ট দূর করার চেষ্টা করছিল!
.
দুপুরে নাবিলা নিশিকে ফোন দিয়ে বলে,
___নিশি, তুমি কোথায়?
___শ্বশুর বাড়ি!
___মানে?
___মানে খুব সোজা ৷ আমি আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালিয়েছি!
___এটা কেমন কথা? তোমার সামনে পরীক্ষা তুমি কেন এমনটা করতে যাবে?
___পরীক্ষা তাতে কি ভাবি? আমার খুব মন চাইছিল বয়ফ্রেন্ডের আদর খেতে, তাই বিয়েটা করে নিলাম!
___ছিঃ কিসব বলছো তুমি? মাথা নষ্ট হলো নাকি আমার ভাইটার মত?
___ওহ, ভাবি; ভুলেই তো গেছি ৷ আমার বয়ফ্রেন্ড তো তোমার ভাই হয়!
___কিহ? এতক্ষণ তাহলে ফাইজলামী করছিলে? ঠিকআছে! এখন বলো তুমি কোথায়?
___নীলের বাসায় ভাবি!
___নীল কই?
___সে ভার্সিটি গেছে!
___ঠিক আছে ৷ ভাল থাকো!
___তুমিও!
.
এর একটু পর নিশির ভাইও তাকে ফোন দিয়ে বলে,
___কিরে বোন, তুই নাকি আমার শালাকে নিয়ে ভেগেছিস?
___হুম, সত্যিই!
___কাজটা ঠিক করিসনি!
___ভাইয়া মজা করোনা ৷ মনটা ভাল নেই! তোমার শালা একটা গাধা! আমি তাকে ভালবাসি এটা জানার পর সে কি বলে জানো?
___কি বলে?
___বলে তাকে নাকি ভুলে যেতে হবে অন্যথায় আমাকে নাকি কাঁদতে হবে!
___তুই চিন্তা করিস না! ওর মাস্টার্সটা শেষ হলেই ওর সাথে তোর বিয়েটা পাকাপাকি করে ফেলবো!
.
নিশি এটা শুনেই লজ্জায় ফোনটা কেটে দেয় ৷ তারপর বালিশে মুখটা চেপে খুশিতে হাসতে থাকে! তার মনে এখন জগতের সমস্ত আনন্দ বাসা বেঁধেছে!
.
বিকেলে নিশির ফোনে ফের কল আসে৷ অচেনা নাম্বার থেকে! জানতে পারে,
নীল....
.
.
.
.
.
.
#বিঃদ্রঃ ভুলক্রুটি ক্ষমা ও সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট করে সাথে থাকবেন। আপনাদের লাইক কমেন্ট দেখলে মনে হয় গল্পটা আপনাদের ভালো লেগেছে এবং আপনারা গল্পটা পড়েছেন,আর তাতে করে আমার ও পরবর্তী পর্বটা দেওয়ার আগ্রহ বেড়ে যায়।

.
___কিরে বোন, তুই নাকি আমার শালাকে নিয়ে ভেগেছিস?
___হুম, সত্যিই!
___কাজটা ঠিক করিসনি!
___ভাইয়া মজা করোনা ৷ মনটা ভাল নেই! তোমার শালা একটা গাধা! আমি তাকে ভালবাসি এটা জানার পর সে কি বলে জানো?
___কি বলে?
___বলে তাকে নাকি ভুলে যেতে হবে অন্যথায় আমাকে নাকি কাঁদতে হবে!
___তুই চিন্তা করিস না! ওর মাস্টার্সটা শেষ হলেই ওর সাথে তোর বিয়েটা পাকাপাকি করে ফেলবো!
.
নিশি এটা শুনেই লজ্জায় ফোনটা কেটে দেয় ৷ তারপর বালিশে মুখটা চেপে খুশিতে হাসতে থাকে! তার মনে এখন জগতের সমস্ত আনন্দ বাসা বেঁধেছে!
.
বিকেলে নিশির ফোনে ফের কল আসে৷ অচেনা নাম্বার থেকে! জানতে পারে,
নীল.... জেলখানায় বন্দি! কিসের কারণে তাকে জেলে আটকানো হলো এটা জানতে পারেনি! এমন খবর পেয়ে তার বুকটা কেঁপে ওঠে ৷ কষ্ট অনুভব হয় ৷ আবার মানুষটার প্রতি তার রাগও হচ্ছিল খুব! অবশ্যই সে অন্যায় করেছে যে কারণে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে ৷ অন্যায় না করলে তো ধরতো না! রাগে দূঃখে কাঁপতে কাঁপতে কান্না চলে আসলো তার এবং চোখ দিয়ে টপটপ করে অশ্রুজল পড়তে থাকে ৷ সে ভাবছিল, “এমন দুঃসংবাদ কি নাবিলা ভাবিকে দিব? নাকি সেও জানে? ভাইয়াকে বলা দরকার!"
সে তার ভাইকে ফোন দিয়ে কান্নামাখা স্বরে বলল,
____ভাইয়া, আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে!
____সর্বনাশ হবার ছিল তাই হয়েছে ৷ মার্ডার করেছে সে! সাজা তাকে পেতেই হবে!
.
নিশি কান্নার মাত্রা আরো বাড়িয়ে থেমে থেমে বলল,
___কাকে? কেন মার্ডার করলো?
___নীলকে তার এক শত্রু মারতে আসছিল ৷ রাগ সহ্য না করতে পেরে নীল তার উপর আঘাত করে এবং লোকটা ওর হাতে নিহত হয়! মাথায় ইট দিয়ে বারি মেরে নিহত করে ফেলে !
.
এটা শোনার পর নিশির হাত থেকে ফোন পড়ে যায় ৷ তার জ্ঞান হারানোর উপক্রম হয় ৷ সে এমন কথা শুনেছে যেটা তার বুকে তীরের মত বিঁধেছে ৷ মানুষটা তার থেকে অনেকদূর চলে যাচ্ছে এটা সে অনুমান করতে পারলো!
নীল তো এমন রাগী ছিলনা! মানুষটা ছিল কাদা মাটির মত! সহজ-সরল সাদা সিদা মানুষ ছিল সে! তাকে প্রথমবার দেখেছিল তার ভাইয়ের বিয়ের জন্য নাবিলাকে পাত্রী হিসেবে দেখতে যাবার দিন ৷ পাত্রী হিসেবে নাবিলাকে তার দারুণ পছন্দ হয়েছিল ৷ তবে পাত্রীর ভাই নীলকে তার অসহ্য লাগছিল ৷ মানুষটা এত কালোর কালো যে তার দিকে নজর দেওয়া যাচ্ছিলনা ৷ কিন্তু যখন সে কথা বলা শুরু করলো তার কথায় মুগ্ধ হতেই হলো নিশি সহ সবাইকে ৷ নীল এত সাবলিল ভাবে কথা বলে যা শুনে যে কেউ মুগ্ধ হবে ৷ তার কিছু কথা যদিও বোকাবোকা লাগে! তবে কথাগুলো বাস্তবসম্মতই এবং সেসব কথা ভাবনার জগতে মিশে যেতে বাধ্য করে!
নাবিলা ও আতিকের বিয়ের দিন নীল চমৎকার একটা সাদা পাঞ্জাবী পড়ে! যদিও ওটা ছিল তার বোনের পছন্দ করা, তার বোনের কথামত সেটা পড়ে! কালো মানুষকে সাদা রংয়ে ভালই লাগে! নিশি তাকে এমন রুপে দেখে খুশি হয় ৷ বাড়ি ভর্তি মেয়ে মানুষ অধিকাংশ নিশির বয়সী ৷ অথচ নীল তাদের কারো সাথে কথাবার্তা না বলে একাকী দাঁড়িয়ে বা বসে সময় কাটাতে থাকে ৷ কখনো বা কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে৷ সময় পেয়ে কয়েকটা ছেলেপুলের হাতে কফি ক্যান্ডি ধরিয়ে দেয় ৷ নীলের অভ্যাস হচ্ছে যখন তার মন খুব ভাল থাকে তখন শিশুদের হাতে কফি ক্যান্ডি তুলে দেওয়া!
.
বিয়ের রাত্রে ঝামেলা বাঁধে কাজী সাহেবকে নিয়ে ৷ রাত ৯টার দিকে ওনার আসার কথা অথচ উনি আসছেন না ৷ শুরু হয়ে যায় বিয়ে বাড়িতে ঝামেলা ৷ নীল বাধ্য হয়ে তার পরিচিত কাজীকে ফোন দেয় কিন্তু ফোনটা বন্ধ পায় ৷ কোনো উপায় না পেয়ে চলে যায় সেই কাজীর বাসায় ৷ দেখে তিনি অসুস্থ্য অবস্থায় পড়ে আছে! ঐ কাজী আরেকজনের নাম বললে নীল তার ঠিকানায় চলে যায় এবং সেই কাজীকে সাথে নিয়ে বাসায় ফেরে ৷ রাত তখন ১০টা বেজে গেছে ৷ উভয়পক্ষের মধ্যে তুমুল ঝগড়া শুরু হয়ে গেছে ৷ পাত্রপক্ষ তো বলছে, “এই বিয়ে আমরা করতে দিবোনা"! শুধু পাত্র বলছে, “বিয়ে না করে কোথাও যাবনা!" যখন কাজীকে সাথে করে আনা হলো তখন সবাই চুপ হয়ে যায় ৷ বিয়ের কাজ শুরু হয়ে যায় ৷ নিশি ভাবে মানুষটা কালো হলেও সঠিক সময়ের কাজ সঠিক সময়ে সঠিক ভাবে করতে পারে! নিশি তার কার্যদক্ষতা দেখে তার প্রতি প্রথমবারের মত মুগ্ধ হয়!
.
যখন বিয়ে সম্পন্ন হলো তার ঠিক ১০মিনিট পর নিশির বাবার বমির ভাব শুরু হয়ে যায় ৷ এরপর অনবরত বমি করতে থাকেন তিনি ৷ নিশি তার বাবার এমন অবস্থা দেখে ওনার মাথায় হাত দিয়ে দেখে জ্বরে একদম গাঁ পুড়ে যাচ্ছে ৷ জ্বরের সাথে মাথাব্যাথা, যে কারণে বমি শুরু হয়ে গেছে! আশেপাশে ফার্মেসি না থাকায় নীলকে আবারো ছুটতে হয় বাইরে ৷ ডাক্তারকে ফোন দিলে ফোন রিসিভ করেনা, তাই বাধ্য হয়ে ডাক্তারের বাসাতেই যেতে হয় ৷ ডাক্তারের বাড়ি পৌঁছে তাকে রোগী সম্পর্কে অনেক কিছু বলার পর অবশেষে রাজি হয় রোগী দেখার জন্য! প্রয়োজনীয় ঔষুঘ সাথে নিয়ে চলে যায় নীলদের বাসায়!
.
ডাক্তার নিশির বাবাকে দেখার পর ট্যাবলেট দিয়ে দেয় ৷ ট্যবলেট খাওয়ার ১৫ মিনিট পর উনি অনেকটা সুস্থ্য হউন!
.
রাত সাড়ে এগারোটার দিকে পাত্রপক্ষ কোনেকে নিয়ে রওনা দেয় বাসার উদ্দেশ্যে ৷ বড় বোনকে বিদায়ের বেলায় নীল আবেগকে সংবরণ করতে না পেরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে ৷ কান্নায় জর্জরিত হয়ে বোনকে জড়িয়ে ধরে ৷ ভাই বোন মিলে শিশুদের মত কান্না করতে থাকে ৷ যখন নীলের বয়স ১১ তখন থেকে বোনটা তাকে মায়ের মত ছায়া দিয়ে আগলে রেখেছিল ৷ তার জন্যই নাবিলা বিয়ে করতে এত দেরি করে ৷ তার ইচ্ছায় ছিলনা বিয়ের ৷ ছোট ভাইয়ের জোরাজুরিতে অবশেষে বিয়েতে রাজি হয় সে! এখনই সে চলে যাবে তার প্রাণপ্রিয় ভাইকে ছেঁড়ে অন্যের ঘরে!
ভাই বোনের এমন ভালবাসা দেখে নিশিও আবেগাপ্লুত হয়ে দু-ফোটা চোখের জল ঝরায় ৷ নীলের প্রতি ভাললাগার শুরু এখান থেকেই ৷ সে তার হ্নদয়ে নীলের নামটি খোদায় করে নেয় ৷ কল্পনাজুড়ে তার নামটা জপা শুরু হয়ে যায়!
.
বিয়ের পর দ্বিতীয়বার যখন নীল নিশিদের বাসায় আসে সেইবার তার পড়নে ছিল লাল শার্ট,হলুদ প্যান্ট, চোখে কালো চশমা ও মাথায় লাল ক্যাপ!
এমন রুপে দেখে নিশি প্রচন্ডভাবে রেগে যায় ৷ সে ভাবে, “মানুষটা পোশাক-আশাকে পুরোই ক্ষেত ৷ রুচিহীন মানুষ ৷ একে সোজা করার দায়িত্ব আমাকেই নিতে হবে!"
.
সেদিন বিকেলে নিশি তার কাছে গিয়ে একটু তাচ্ছিল্যকর ভাব নিয়ে বলে,
___কি ব্যাপার আপনি তো পুরাই ক্ষেত! এমন ক্ষেত মানুষ এই যুগে দ্বিতীয় কেউ আছে? একটু মডার্ণ হতে পারেন না? আমার ভাইটার কপাল পোড়া ৷ শেষপর্যন্ত একটা টোকাইমার্কা শালা পেল!
.
নিশির অপমানজনক কথা শুনে নীলের চোখ মুখ লজ্জায় লাল টুকটুকে হয়ে যায় সেই সাথে ঘেমে একাকার! তার অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল কয়েকটা ক্ষ্যাপাটে মেয়ে তাকে ধরে নাস্তানাবুদ করেছে ৷ তাই অপমানে লজ্জায় এমন অবস্থা হয়েছে ৷ যদিও নিশি একা যেভাবে তাকে নাস্তানাবুদ করলো সেটাই তার জন্য অনেক বেশি অপমানের! নিশি তার এমন চেহারা দেখে মনে মনে খুশিই হয় ৷ এবং ভাবতে থাকে বোকাটাকে নিয়ে এভাবে মজা করা যাবে, মনের মানুষের সাথে মজা করার স্বাদই আলাদা!
তারপর থেকে নিশি একাধারে নীলের সাথে মজা করা শুরু করে দেয়! নীল এতে অনেক বেশি রেগে গেলেও সে তাকে উল্টা জবাব দিতে পারেনা ৷ একসময় নিশি উপলদ্ধি করতে পারে তার সাথে এতটা মজা করা ঠিক হচ্ছেনা ৷ এভাবে চলতে থাকলে তার মনে বাজে ধারণা পোষণ হবে তাকে নিয়ে ৷ এজন্য নিজেকে নীলের নিকট ভিন্নভাবে প্রকাশ করা শুরু করে ৷ কিন্তু এতে তার কোনো লাভ হচ্ছে কিনা নিশি বুঝে উঠতে পারছেনা!
.
নীল জেলখানায় ৷ এ খবর পাবার পর নিশি বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কান্না করেছে ৷ সন্ধ্যা পর যখন আতিক ও নাবিলা বাসায় এলো তখন তার কান্নার মাত্রা আরো বেড়ে গেল ৷ ভাইকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
___আমি ওকে জেলে দেখতে পারবোনা ৷ তুমি যেভাবে পারো জেল থেকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করো ৷ আমি কালই ওকে আমার পাশে দেখতে চাই!
.
আতিক তার বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
___আরে বোকা, সকালেই ছাড়া পাবে৷ আমি মিথ্যা বলছিলাম তোকে, ওকে সামান্য কারণে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে! অনেক কষ্টে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে নাবিলার কান্না থামিয়েছি ৷ এখন যদি তুই না থামিস তবে আমি কিন্তু রাগ করে চলে যাব!
.
নিশি শাড়ির আচল দিয়ে চোখের পানি মুছে ফিক করে হাসি দিয়ে বলে,
___ঠিক আছে, আর কাঁদবোনা ৷ এই দেখো চোখে আর পানি নেই!
.
নীল জেলখানায় ঢুকে বরুণ মিয়ার সাথে গল্পে মজে আছে ৷ বরুণ মিয়া দেখতে শ্যামবর্ণের, হালকা পাতলা গড়নের ৷ ১মাস ধরে গোসল না করলে যেমন দেখা যায় তেমন দেখতে সে ৷ নাকটা একদম বোচা ও দুপাশে মোটা, চোখটা তলানিতে চলে গেছে ৷ চুল বড়বড় খুশকি দিয়ে ভরা, এলোমেলো হয়ে আছে ৷ কন্ঠস্বর একদম কর্কশ ৷ সে মার্ডারের আসামী ৷ তার বউকে পিটিয়ে হত্যা করে এখন জেলে পঁচতেছে!
বরুণ মিয়া নীলকে সেই কাহিনী শুনাচ্ছিল এতক্ষণ! সে বলছিল,
____ভাই আমারে দেইক্ষা কেউ কইতে পারবো আমি বউকে খুন কইরছি? আমার চেহারা সেইটা কয়?
.
নীল তার কথা শুনে হকচকিয়ে ওঠে এবং ভ্রু-কুঁচকে জবাব দেয়,
____না না, আপনারে একদম সিনেমার হিরোদের মত লাগে ৷ আপনারে দেখে মনে হয় সালমান খান! আপনার মত সুদর্শন লোক খুনের আসামী হতেই পারেনা ৷ আপনার মত স্মার্ট লোকের সাথে একই জেলে থাকতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি৷ আপনাকে দেখে তো আমার মনে হয় কয়েকটা মেয়েকে পটিয়ে মাত্রই জেলে আসছেন!
.
নীলের মুখ থেকে একনাগারে প্রশংসা মূলক কথা শুনে বরুণ খুশিতে আটখানা হয়ে তার সাথে করমর্দন করে এবং বলে,
___একমাত্র আপনেই আমাকে চিনবার পাইরলেন ৷ আপনের চোখ আছে ভাই চোখ আছে! তয় একটা কথা বলি ভাই?
____কি কথা বলবেন?
____রাগ কইরবেন না তো?
____নাহ, বলো ৷ আমি সবার কথায় রাগিনা! রাগ আমার সাথে বন্ধুত্ব করে নিয়েছে ৷ যখন আমি বলবো রাগ করো তবেই রাগ করবে! যদি তোমার কথায় রাগ হতেও চায় তবুও রাগকে বলবো না রাগ করিস না ৷ এখন তোর রাগ করা নিষিদ্ধ!
____ঠিক আছে, কইয়া দিই তবে! এইযে আপনে যে মাপের কাইল্লার কাইল্লা, আপনের বউ আপনের দিকে পীড়িতের দৃষ্টি লইয়া তাকায়ছে কোনোদিন? আপনেরে দেইক্ষা কিন্তু পায়খানা ছাফ করা লোকদের মত লাগে!
.
এমন কথা শোনার মত নীলের মাথায় আগুন ধরে যায় ৷ মনে হচ্ছিল মাথায় কেউ পেট্রোল তেলের সাথে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে ৷ মাথা দিয়ে ধোঁয়া উড়ছিল মনে হচ্ছিল ৷ চোখ দুটো ভয়াবহ রকমের রক্তিম হয়েছিল ৷ তার এমন অগ্নিমূর্তি রুপ দেখে বরুণ আলী ভয়ে বিড়ালের মত হয়ে যায় ৷বারবার ঢোক গিলতে থাকে সে!
নীল রাগ করবেনা বলে কথা দিয়েছিল তাই নিজের রাগকে সংবরণ করে বরুণের মাথার এলোমেলো চুলগুলো ধরে বলল,
___তুমি ঠিক বলছো ৷ আমার এই চেহারার জন্য আমার বউ তাকাতে চাইবেনা ৷ কিন্তু তুমি জানো আমার এমন চেহারার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে দুই দুটা সত্তা! একজন আমার বেয়াইন আরেকজন পরী! আমি পরীর ভালবাসায় সাড়া দিব ৷ কিন্তু দুদিন ধরে পরীর দেখা পাচ্ছিনা, হয়তো রাগ করেছে! জেল থেকে ছাড়া পেলেই পরীর সাথে দেখা করবো!
.
বরুণ আলী নীলের কথাগুলো এতটাই মনোযোগ দিয়ে শুনছিল যে মনে হচ্ছিল তাকে সম্পত্তির উইল পড়ে শোনানো হচ্ছে, তাই মনযোগ দিয়ে শুনছে, যদি এতে ঠিক মত মনযোগ দিতে না পারে তবে সমস্যা হয়ে যেতে পারে! বরুণ হঠাৎ প্রশ্ন করে বসলো কৌতূহলের চোটে,
____পরীকে কোনহানে দেখা যায়? আমিও যাইতাম একদিন! আমি তো গ্যারান্টি দিয়া কইবার পারি ঐ পরী আমার হিরো মার্কা চেহারা দেইখা প্রেমে পইড়া যাইবো!
.
নীল বরুণের কথা শুনে থ মেরে গেল ৷ মনে মনে বলল, “কোথাকার পাগলের কাছে এসে পড়লাম, এ তো চাপা মেরে পাহাড় ভেঙ্গে ফেলবে, নিজের চেহারা যে গোবরের মত সেদিকে খবর নাই, আসছে আরেকজনকে নিন্দানো নিয়ে'!
.
#বিঃদ্র গল্প পড়ে দেখি সবাই কেটে পরেন,ব্যাপার কি বলেনতো?প্লিজ কেউ কেটে পরবেন না,আপনানাদের মতামত আমাকে উৎসাহ দেয় পরবর্তী পর্ব দেওয়ার। আর সব সময় কিছু গঠনমূলক কথা লিখে কমেন্ট করলে খুশি লাগে।
ধন্যবাদ ইতিঃ (#তানিম_চৌধুরী)গল্পের মাঝে বিরক্ত করার জন্য দুঃক্ষিত।
.
তখনই আরেকজন আসামীকে এনে তাদের কক্ষে রাখা হয়! লোকটাকে দেখেই মনে হচ্ছিল মাতাল ৷ কক্ষে ঢুকেই বরুণকে বলে ওঠে,
___তুই আনারস দিয়া দুধ খায়তে পারবি? পারলে তোরে দুই কোটি নিরানব্বই লাখ নিরানব্বই হাজার নিরাব্বই টাকা কম ৩কোটি টাকা দিমু!
.
বরুণ মিয়া নতুন আসামীর কথা না বুঝেই বলল,
___অবশ্যই পারুম ৷ ওতো গুলা টাকা দিলে আরো পারুম ৷ একবার আমার বউ কইছিল দুধ খাওনের পর আমি আনারস খায়তে পারুম কিনা? কইছিলাম পারুম ৷ পরে বউ দুধ দিল তারপর আনারস খাইলাম ৷ কিচ্ছু হয়নাই তো!
___ঠিক আছে তাইলে কথা দিলি তো?
___হুম কথা দিলাম!
___তাইলে জেল থেইক্কা ছাড়া পাই লই, তারপর দেইখা লমু তোরে!
.
নীল বরুণ ও নতুন আসামীর মধ্যকার পাগলামী মার্কা কথা শুনছিল ৷ সে বুঝতে পারলো নতুন আসামী চালাক প্রকৃতির, আর বরুণ পুরোটাই বোকা!
তাদের দুজনের কথোপকথন চলছিল আর নীল জেলের এককোণে বসে মনে মনে গান গায়ছিল ৷ সে মনে মনে খুব ভাল গান গায়তে জানে! যদি সেই গানগুলো উচ্চস্বরে বলে তবে সবাই পাগলের মত হয়ে শুনতে থাকবে ৷ এই ভয়ে নীল কখনো শব্দ করে গান গায়নি৷ সে চাইনা তার গানের জন্য কেউ পাগল হয়ে যাক!
.
ওদিকে বরুণ নতুন আসামীকে কিঞ্চিৎ রাগস্বরে হঠাৎ বলে ওঠে,
___ভাই দেখেন তো আমারে নাকি নায়কদের মত লাগে?
.
নতুন আসামী বিদ্রুপের হাসি হেসে বলে ওঠে
___কোনানহার বলদ কইছে এই কথা? ঐ বলদের চোখ নিশ্চিত ট্যারা!
.
বরুণ রাগের মাত্রা বাড়িয়ে বলে,
___এইযে এই বলদটা কইছে, বলদের কথা শুইনা তখন কিছু কইনাই ৷ আমি জানি আমার চেহারা ভিলেনগো মত হেই কয় নায়কদের মত ৷ কেমনডা লাগে কন?
.
নীল হতভন্ব হয়ে গেল বরুণের কথা শুনে ৷ লোকটার এমন পল্টি মারার কারণ বুঝলোনা সে! সে ভাবলো এটা নিশ্চিত জেলখানা নয় ৷ পাগলা গারদ হতে পারে ৷ জেলখানায় এমন মানুষের স্থান হতে পারেনা!
এসব ভাবতে ভাবতে নীল ঘুমিয়ে গেল!
সকালে ঘুম ভেঙ্গে গেলে তাকে একজন খবর দেয় তাকে দেখার জন্য তিনজন মানুষ অপেক্ষা করছে জেলের মূল গেটে!
সেখানে গিয়ে দেখে তাকে দেখতে আসছে তার বোন, দুলাভাই ও নিশি! নিশির চোখে পানি ৷ বারবার চোখের পানি মুছেও চোখের জল শেষ করতে পারছেনা ৷ নাবিলা ভাইকে দেখে খুশিতে হাসছে!
১৫ মিনিট পর তাকে ছাড়া হয়!
নীলকে জেলে আটকানোর কারণ হলো রাস্তায় একটা লোকের বাইক ধরে রেখে পুলিশ লাইসেন্স চাইছিল ৷ সেটা দেখানোর পরও ছেলেটাকে পুলিশ বাইক দিতে চাইছিলনা ৷ ঘুষ চেয়ে বসে ৷ কিন্তু ছেলেটা বারবার শুধু বলছে, “লাইসেন্স তো দেখালাম টাকা কিসের?" তবুও পুলিশ নাছোরবান্দা সে ঘুষ নিবেই! নীল এটা দেখে পুলিশকে বলে,
___স্যার, এমন করছেন কেন? তাকে ছেড়ে দিন!
.
এটা কেন বলল সে, ওমনি কয়েকটা পিঠে লাগিয়ে দিল ৷ তারপর আশেপাশে দাঁড়ানো দুটা পুলিশকে ডেকে এনে মানহানী মামলার কথা বলে নীলকে ধরে নিয়ে যায় ৷ ছেলেটাকে আগেই ছাড়া হয় ৷ সে কিছু না বলে বাইক নিয়ে চলে যায়!
.
নীলের এই ঘটনা শুনে নিশির মনে তার প্রতি ভালবাসা বেড়ে যায় ৷ মানুষটা যে সত্যিই ভাল মনের সেটা সে আরেকবার প্রমাণ পেয়ে যায়!
.
বাসায় ফিরে নীল তার বোনকে বলে,
____আপু, এখানে থাকবোনা, তোদের বাসায় যাব!
.
নাবিলা খুশি হয়ে বলে,
____তাহলে চল!
.
বিকেলের দিকে নিশিদের বাসায় রওনা দেয় নীল ৷ নিশি এজন্য কষ্টই পায় ৷ কারণ সে চাই নীলের সাথে তার বাড়িতে থাকতে ৷ কিন্তু নীলের ভাবনা তো অন্যরকম ৷ তার কল্পনায় সেই পরীর ছবি ভাসছে! তার দেখা পাবার জন্য মনটা ছটফট করছে! সে ধরে নিয়েছে নিশিদের পুকুরে সেই পরীর বাস ৷ তাকে পুকুরটাতেই দেখতে পাওয়া যাবে!
.
রাত ১২টার দিকে নীল পুকুরে গিয়ে সিড়িতে বসে পরাীর দর্শন পাবার জন্য অপেক্ষা করছিল ৷ কিন্তু তার দেখা নেই! আজ পুকুরের পরিবেশটা কেমন যেন খাপ ছাড়া লাগছে তার নিকট ৷ না ব্যাঙ ডাকছে, না ঝিঁঝিঁপোকার দল গান গায়ছে, না জোনাকির দল আলো দিচ্ছে কিছুই নেই আজ পুকুরে বা পুকুরের আশেপাশে! তাই নীলের মনটা পুকুরে বসতে চাইছে না!
.
হঠাৎ নীল দেখতে পায় শাড়ি পড়া একটি মেয়ে মুখটা ঢেকে হাতে কলসি নিয়ে আসছে ৷ বুঝতে পারলোনা সে কে?
নীল তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
___তুমি কে?
.
মেয়েটা কোনো জবাব দেয়না ৷ চুপ করে মাথা নিচু করে কলসি কোমড়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে!
নীল জোর করেই মেয়েটার মুখ থেকে শাড়ির আঁচলটা সরিয়ে নেয় এবং দেখে এ তো নীলিমা!
সে লজ্জায় লজ্জাবতীর রুপ ধারণ করে আছে বলে মনে হলো ৷ অন্ধকারেও ফর্সা মেয়েটার মুখের ভাবসাব অস্পষ্ট হলেও বুঝা যাচ্ছিল অনেকটা!
.
নীল অস্ফুট স্বরে বলে,
___এত রাতে পুকুরের কেউ পানি নিতে আসে?
.
নীলিমা সহজ ভঙ্গিতে জবাব দেয়,
___আমার দরকার তাই!
___ঠিক আছে, পানি নিয়ে চলে যাও ৷ এখানে তুমি বেশিক্ষণ থাকলে আমার লস!
___কেন?
___তুমি এখানে থাকলে আমার সেই পরীটা লজ্জায় আসতে চাইবেনা!
___কিসের লজ্জা? পরীরা কেন মেয়েদের দেখে লজ্জা পাবে?
.
নীল বানোয়াট একটি কথা বলে দিল খুব সহজে ৷ বলল,
___তুমি হয়তো জানোনা, পরীরা পুরুষ মানুষের সামনে তখন আসে যখন আশেপাশে কোনো মেয়ে মানুষ থাকেনা ৷ আমার পরীটা মেয়েদের দেখে লজ্জা পায় খুব! এইযে দেখো তুমি আসছো বলে এখনও পরীটা আমার সাথে দেখা দিচ্ছেনা!
.
____ঠিক আছে, পানি নিয়েই চলে যাচ্ছি!
____ধন্যবাদ, তোমাকে!
.
নীলিমা কলসি পূর্ণ করে পানি নিয়ে চলে যায় ৷ কিন্তু সে যাবার একটু পরই নিশি চলে আসে! গায়ে সাদা টিশার্ট পড়া ৷ হয়তো ঘুম থেকে জেগে ওঠছে! তাকে বিদেশী রগরগে দেহের গরম আইটেম গার্লের মত লাগছিল!
সরাসরি সে নীলের পাশে এসে বসে ৷ এবং আচমকা তাকে জড়িয়ে ধরে! আদুরে গলায় নীলকে বলে,
___ঘুম আসছেনা তোমার?
.
নীল উসখুস করতে করতে তার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ইষৎ রাগস্বরে বলল,
____ছাড়ো তো আমাকে! তুমি এভাবে জড়িয়ে ধরে আছো দেখলে আমার সেই পরীটা রাগ করবে ৷ সে আর আমার সাথে দেখা করতে চাইবেনা!
.
নীশি এটা শুনে তার গা থেকে টি-শার্ট এক টানে খুলে তার হাতে ধরিয়ে দেয়! তারপর জিন্স খুলে ফেলে পুকুরের নিচে চলে যায় এবং ঝাঁপ দিতে গিয়ে থেমে যায় ৷ নীলের দিকে নিজের দেহটা দৃশ্যমান করে দিয়ে মডেলদের মত করে দাঁড়িয়ে থাকে!
.
নিশির দেহের দিকে তাকিয়ে নীল কি যেন ভাবছিল? পরে তার দিক থেকে লজ্জায় চোখ ফিরিয়ে নেয় ৷ ভাবতে থাকে তার পরীর কথা ৷ নিশির প্রতি তার প্রচন্ড রাগ হয় ৷ তার জন্য হয়তো আর পরীটাকে দেখতে পারবেনা! নিশিকে এভাবে দেখে থাকলে হয়তো কখনো আর পরীটা আসবেইনা ৷ রাগে, অভিমানে তাকে ছেড়ে চলে যাবে!
.
নিশি হঠাৎ উচু গলায় বলে ওঠে,
___কি? অামি কি পরীটার মত নই? নাকি পরী আমার চেয়ে সুন্দরী? তার দেহের চেয়ে আমার দেহ বেশি আকর্ষণীয় নয়?
.
নীল তার এমন কথা শুনে নিশির টিশার্ট ও জিন্স ফেলে চলে যায় তার রুমে!
নিশির পুকুর থেকে উঠে পোশাক পড়ে চলে যায় নীলের রুমে ৷ দরজাটা বন্ধ করে দেয় সে ৷ নীল ঘাবড়ে যায় তার এমন আচরণ দেখে!
.
নীলকে নিশি মিষ্টি হাসির সাথে হালকা আদুর গলায় আবদারের স্বরে বলে,
___আজ আমার দুটা আবদারের যেকোনো একটা পূরণ করতে হবে! হয় আমার সাথে পুকুরে সাঁতার কাটতে হবে ৷ নাহয় তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাব এটা মেনে নিতে হবে!
.
নীল আগে থেকেই রেগে ছিল ৷ তার এমন আবদারের কথা শুনে রাগে ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেল! অগ্নিমূর্তিরুপ ধারণ করে নিশির হাত ধরে রুম থেকে বেড়িয়ে তার দুলাভাইয়ের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে দরজায় কড়াঘাত করতে থাকে!
নীলের বোন দরজা খুলে দুজনকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে ঘুম জরানো কন্ঠে কৌতূহলের স্বরে বলে,
____কি হয়েছে ভাই?
.
নীল রাগান্ন্যিত ভাব নিয়ে বলে,
____দুলাভাই কে ডাকো!
.
আতিক এসে নীল ও নিশিকে দেখে খুশি মনেই বলে,
___কিরে কি হয়েছে তোদের? নিশি, তুই কেন মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছিস? তোর চুল ভেজা কেন? ভিজে গেছিস মনে হচ্ছে?
.
নিশি কোনো জবাব দিলোনা ৷ নীল রাগের মাত্রা বাড়িয়ে উচ্চস্বরে বলতে লাগল,
____আপনার বোন দিনদিন বেহায়া হয়ে যাচ্ছে ৷ আমার সামনে একদম বস্ত্রহীন হয়ে পুকুরে গোসল করে ৷ আবার বলে রাত্রে আমার সাথে ঘুমাবে! সে আমাকে পাগল বলতো এতদিন উল্টা নিজেই পাগলী হয়ে গেছে!
.
নীলের মুখে বোন সম্পর্কে এমন কথা শুনে মুখের হাস্যজ্জ্বল ভাবটা কেটে গিয়ে ফ্যাকাশে রং ধারণ করে!
.
নিশি নিরবতা ভেঙ্গে নীলকে ঝাঁপটে ধরে চেঁচিয়ে কান্নামাখা স্বরে কাঁপতে কাঁপতে বলে,
___আমি আরো করবো এমন, পারলে তুমি ঠেকাও ৷ আমি তোমাকে ভালবাসি৷ তাই যা খুশি করবো!
.
নীল তার থেকে নিশিকে সরিয়ে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে,
___তোমার নষ্টামী অনেক সহ্য করছি আর না! বেয়াইন ভেবে সব সহ্য করছি এতদিন ৷ এরপর যদি গায়ে একটু ছোঁয়া দাও তবে থাপড়িয়ে দাঁত ফেলে দিব!
.
নীলের কথা শুনে নাবিলা ও আতিক বাকরুদ্ধ হয়ে যায় ৷ নিশি কাঁপছিল আর নিঃশব্দে কান্না করছিল! নীলের চোখে মুখে আগুন লেগে গেছে বলে মনে হলো, সে নিশিকে তুই তুকারি করে ফের বলতে লাগল এবার,
___তোর মত মেয়ের সাথে প্রেম করবো আমি? বারবার তোকে বলেছি আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা ভুলে যা অন্যথায় কাঁদতে হবে! বেয়াইনকে বেয়াইনের দৃষ্টিতে দেখেছি ৷ ভার্সিটির অনুষ্ঠানের জন্য একটু দরকার ছিল তোকে ৷ অন্যথায় তোর মত দেমাগী মেয়ের নিকট আমি আসতাম রিকুয়েস্ট করতে? কখনো না!
.
নিশিকে কথাগুলো বলতে পেরে নীলের খুব ভাললাগছে ৷ নিশির মুখ থেকে দুটা বছর ধরে অসংখ্যবার তাচ্ছিল্যকর ও অপমানজনক কথা সহ্য করে গেছে মুখ বুজে ৷ সেসবের জবাব আজ দিতে পেরে ভাল্লাগছে খুব! তবে চিন্তা হচ্ছে পরীকে নিয়ে ৷ ভাবছে যে বেহায়াটার জন্য সে রাগ করে চিরতরে চলেই গেল কিনা?
.
নীল তার রুমে চলে যায়! পরীকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে নীল ঘুমের রাজ্যে ডুবে যায়!
.
১ঘন্টা পর কে যেন তার দরজায় কড়া নাড়ে ৷ ঘুম ভেঙ্গে যায় তার ৷ দরজা খুলে দেখে কেউ নেই, চারপাশ অন্ধকার ৷ বারান্দায় বিদ্যুতের বাতি বন্ধ করা হয়েছে যে কারণে কিছু দেখা যাচ্ছিলনা! কাউক না দেখতে পেয়ে দরজাটা বন্ধ করে শুয়ে পড়ে বিছানায়৷ মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে দেখে ধবধবে সাদা সেই পরী বা মানব নারী তার পাশে শুয়ে আছে ৷ তার চিনতে কষ্ট হয়না এটাই তার সেই পরী!
কিন্তু সে রুমের ভেতর কেমনে এলো?
হয়তো দরজা খোলার সাথে সাথে ঢুকে পড়ছে ৷ পরীকে কিছু বলতে গেলে নীলকে থামিয়ে দেয় এবং তার ঠোঁটে আঙ্গুল চাপিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করে কোনো কথা না!
পরী তাকে শক্ত করে জড়িয়ে নেয় বুকে!
নীলের শরীর এখন প্রচন্ড বেগে কাঁপছে! শিহরণে তার হ্নদয়টা সুখের সাগরে ভাসছে! সে হারিয়ে যাচ্ছে সুখের অতল গহবরে!
.
নীল কখন যে ঘুমিয়ে গেছে সে জানেই না ৷ ঘুম থেকে জেগে উঠে সে নিজেকে আবিষ্কার করে পুকুরের সিড়ির পাশে ৷ নিশিকে জড়িয়ে ধরে আছে! তখনও সূর্য ওঠেনি ৷ হালকা অন্ধকার রয়েই আছে!
সে কেন নিশিকে জড়িয়ে ধরে আছে এর কোন উত্তর পেলোনা?
.
নাবিলা তার ননদকে ডেকে বলে,
___আমার ভাবিটা, অনেক হয়েছে এবার জাগো!
.
নিশি তার ভাবির ডাক শুনে জেগে উঠলো ৷ এবং ঘুম জরানো মুখে একটা হাই তুলে বলল,
____কিছু বলবা ভাবি?
____কি আর বলবো? বিয়ের আগেই এত প্রেম তোমাদের ৷ বিয়ের পর না জানি কি হবে! গোসল করে রান্নাঘরে আসো! আমার শ্বশুর শ্বাশুরি আসছে আজ ৷ ১৫দিন পর গ্রাম থেকে ফিরবে! তাই তাদের জন্য স্পেশাল রান্না করতে হবে!
.
নীল ভাবনায় ডুবে আছে ৷ সে তার রুমে ছিল পরীর সাথে, পুকুরে সিড়ির পাশে কিভাবে এলো?...
.
.
.
.
.
.
#বিঃদ্রঃ ভুলক্রুটি ক্ষমা ও সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট করে সাথে থাকবেন। আপনাদের লাইক কমেন্ট দেখলে মনে হয় গল্পটা আপনাদের ভালো লেগেছে এবং আপনারা গল্পটা পড়েছেন,আর তাতে করে আমার ও পরবর্তী পর্বটা দেওয়ার আগ্রহ বেড়ে যায়।

.
বিয়ের আগেই এত প্রেম তোমাদের ৷ বিয়ের পর না জানি কি হবে! গোসল করে রান্নাঘরে আসো! আমার শ্বশুর শ্বাশুরি আসছে আজ ৷ ১৫দিন পর গ্রাম থেকে ফিরবে! তাই তাদের জন্য স্পেশাল রান্না করতে হবে!
.
নীল ভাবনায় ডুবে আছে ৷ সে তার রুমে ছিল পরীর সাথে, পুকুরে সিড়ির পাশে কিভাবে এলো?
.
এটা ভাবতে গিয়ে তার মনে পড়ে গেল গত পরশু রাতের স্বপ্নের কথা! সে দেখেছিল,
“কালো একটি কিশোর ছেলেকে দৌড়ানি দিচ্ছে দুটা রুপবতী মেয়ে ৷ দৌড়াচ্ছিল সমুদ্রের ঢেউ খেলানো অথৈ পানির উপর দিয়ে ৷ অথচ কেউই ডুবছেনা! সমুদ্রের মাঝখানে পৌঁছাইলে সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটি কোথায় যেন হারিয়ে যায়! অন্য মেয়েটি কালো ছেলেটিকে শেষপর্যন্ত ধরেই ফেলে! তখনই স্বপ্নের ভেতর নীল বুঝতে পারে কালো ছেলেটা অন্য কেউ নয় সে নিজে! মেয়েটি তাকে হাতেনাতে ধরার পর খুব শক্ত করে জড়িয়ে নেয় বুকের সাথে ৷ হঠাৎ নীল বুঝতে পারে সে মরুভূমির মাঝখানে তৈরী করা ছাউনীতে একটি অচেনা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আছে ৷ সমুদ্রে যে মেয়েটি তাকে জড়িয়ে ধরেছিল সেই মেয়েটি তার পাশে নেই, সে যাকে জড়িয়ে ধরে আছে সে অপর মেয়েটি, যে দেখতে খুব বেশি সুন্দরী! মেয়েটি নিজেকে নীলের থেকে ছাড়িয়ে নেয় এবং মরুভূমিতে দল বেঁধে চলতে থাকা উটগুলোর পিছু নেয় ৷ নীল মেয়েটিকে বারবার ডাকা সত্যেও সে সাড়া দেয়না ৷ সে মেয়েটিকে ধরার জন্য সামনে পা ফেলতে গেলে এক বিন্দুও নড়তে পারেনা ৷ অনেক চেষ্টার পর এক কদম বা দু-কদম পা সামনে ফেলার শক্তি পায় ৷ মেয়েটিকে হারানোর শোকে ও সামনের দিকে পা ফেলতে না পারার দূঃখে কাঁপতে থাকে সে ৷ ঘাবড়ে গিয়ে ঘামতে থাকে অনবরত! চিৎকার করে মেয়েটিকে ডাকতে থাকে! কিন্তু এরপরও মেয়েটি কিছুই শোনেনা ৷ হঠাৎ কোথা থেকে যেন একটি সাদা ভাল্লুক তার দিকে তেড়ে আসতে থাকে! সমুদ্রে যে মেয়েটি তাকে জড়িয়ে ধরেছিল সেই মেয়েটি এসে ভাল্লুককে তাড়িয়ে দেয় ৷ মেয়েটি হিংস্র রুপ ধারণ করলে ভাল্লুক ভয়েই পালিয়ে যায়!
এরপরই নীলের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়! কিছুক্ষণ জাগ্রত থাকার পর আবারও যখন ঘুমিয়ে যায় তখন সে আরেকটি স্বপ্ন দেখে! সে দেখে নিশিকে বিয়ে করেছে৷ বিয়ের পরদিনই নিশি তার গায়ে হাত তোলে, মারধর করে ৷ এই জন্য নিশির উপর রাগ করে জোর জবরদোস্তি করে নীলিমাকে নিয়ে অজানা উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ৷ নীলিমাকে নিয়ে সে পালিয়ে গেছে শুনে নিশি অঝোর নয়নে কাঁদতে থাকে! জোস্ন্যালোকিত রাতে নদীর পাশে তৈরী করা উদলা ছাউনীতে নীল নীলিমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে যায়! কিন্তু ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখে চলন্ত ট্রেনে নিশির কাঁধে মাথা রেখে আছে সে! আর নিশি তার মুখের দিকে রাজ্যের সমস্ত মায়া নিয়ে তাকিয়ে আছে! নীলের গালে মশা পড়লে নিশি সেটা মারতে তার গাল বরাবর চড় মারে ৷ তখনই নীলের স্বপ্নটা ভেঙ্গে যায়!
.
নীল কিছুটা হলেও স্বপ্নটার সাথে বাস্তবের ক্ছিু মিল খুঁজে পায় ৷ তবে সে এখনো দ্বিধায় রয়েছে যে রাত্রে কি সত্যিই তার রুমে পরীকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে ছিল কিনা? নাকি পুকুরে নিশির পাশেই বসে রাত কাটিয়ে দিয়েছিল?
.
নীল বুঝতে পারছেনা ৷ সে বিষয়টা নিয়ে বড় ধরণের চিন্তায় পড়ে গেল! মনের সাথে গবেষণার কাজ করার ইচ্ছাও তার এখন নেই৷ বিষয়টাকে ভুলে যাবার চেষ্টা করলো ৷ এদিকে নিশি এখনো তাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে ৷ নিশি তাকে ছাড়তে চাইছেনা ৷ নীলেরও কেন যেন মন চাচ্ছেনা তাকে বলতে যে, “ছাড়ো অনেক হয়েছে!"
.
নিশিই তাকে বলে ওঠে,
____জামাই সাহেব, এত টেনশনের কিছুই নাই, আমি আপনাকে এখনই ছেড়ে দিচ্ছি! গোসল করবো ৷ আপনি এখানেই বসে থাকবেন ৷ দূঃখিত তোমাকে আপনি করে বলছি হঠাৎ ৷ হ্যাঁ, আমি গোসল করবো আর তুমি আমার গোসল করা হা করে দেখবে, এক পা'ও নড়বেনা!
.
নীল নিশির কথাকে গুরুত্ব দিলোনা ৷ মনে হলো সে তার একটা কথাও শোনেনি ৷ তার চেহারাতে প্রকাশ পাচ্ছে জগতের যাবতীয় দুশ্চিন্তা ৷ দুশ্চিন্তা তার মাথায় জড়ো হয়েছে মৌমাছি চাকের বাসার মত! নীল জড়ো পদার্থের মত স্থিরভাবে বসে চিন্তায় ডুবে আছে ৷ ওদিকে নিশি পুকুরের পানিতে ঝাঁপ দিয়েছে! রৌদ্রের কারণে পানি চকচক করছিল ৷ পুকুরের উপর দিয়ে ফড়িংয়ের দল উড়ছিল দল বেঁধে, মনে হচ্ছিল তারা হরতাল কার্যক্রম সফল করতে এখানে ভিড় জমিয়েছে ৷ নিশি ফড়িং দেখে নীলকে ঠাট্টাচ্ছলে বলল,
____মিস্টার, আপনার বউকে ফড়িংয়ের দল হা করে দেখছে আর আপনি কিনা মুখটা এতটুকু বানিয়ে চিন্তায় ডুবে আছেন, এগুলো তো ঠিক না!
সরি আবার, আপনি করে বলছি, শোনো ৫ পর্যন্ত গুণবো এর মধ্যে যদি তুমি আমার পাশে এসে না দাঁড়াও তবে তোমাকে দেখাবো মজা!
.
নীল নিশির কোনো কথাতেই কান দিলোনা ৷ বোবা ও বধিরের মত হয়ে আছে সে!
না শুনছে নিশির কথা, না তার কথার কোনো জবাব দিচ্ছে!
.
ওদিকে পুকুরের দক্ষিণ দিকে দুটা হাঁস সাঁতার কাটছে! নিশি এটা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছিল ৷ সে ভাবতে থাকে, “নিশ্চয় হাঁস দুটোর একটা মেয়ে হাস আরেকটা ছেলে হাস ৷ কত চমৎকার তাদের রসায়ন ৷ অথচ আমাদের মধ্যে রসায়নের ছিঁটেফোঁটাও নেই! বেরসিক লোককে ভালবেসেছি!"
এটা মনে মনে বলার পর চেঁচিয়ে উঠে নীলকে বলে,
___এইযে স্টুপিড, কি বলছি কানে যাচ্ছেনা তোমার? উঠবো আমি পুকুর থেকে? যদি আমি পুকুর থেকে উঠি তখন কিন্তু তোমার খবর করে ছাড়বো!
.
নীল তার কোন কথাকে তোয়াক্কা না করে সিড়ি থেকে উঠে চলে যায় রুমের দিকে ৷ নিশি রাগে ফুলছিল লুচির মত ৷ রাগ সহ্য করতে না পেরে পুকুর থেকে উঠে রান্নাঘরে যায় ৷ সেখান থেকে বালতি এনে পুকুরের পানি দিয়ে বালতি পূর্ণ করে নীলের কাছে যায় ৷ নীল বারান্দায় চেয়ারে বসে আগের মতই ধ্যান ধরে বসে আছে ৷ নিশি তার মাথায় আচমকা পানি ঢেলে দেয় ৷ তার এমন আচরণে একটু বিরক্তই হল সে! রাগের দৃষ্টি নিয়ে তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো! কিন্তু নিশি নীলের রাগকে উপেক্ষা করে তার হাতটা ধরে টানতে থাকে চেয়ার থেকে ওঠানোর জন্য ৷ সে চেয়ার থেকে ওঠে ৷ এবং তাকে পুকুরে নিয়ে যাবার জন্য জোরাজুরি করতে থাকে ৷ শেষপর্যন্ত নীলকে পুকুরেই নিয়ে যায় সে ৷ কোনো কথা না বলে ধাক্কা দিয়ে পুকুরে ফেলে দেয় তাকে!
নীল কিছুই বলছেনা, রাগ ভেতরে চেপে রাখছে শুধু ৷ নিশি তার একদম কাছাকাছি হয়ে তার হাতটা ধরে এরপর তার বুকের সাথে নিজের বুকটা লাগায় এরপর আলতো করে জড়িয়ে ধরে!
.
নীল তাকে বারবার ছাড়িয়ে দিতে গেলে নিশিও তাকে বারবার জড়িয়ে ধরে!
নীলের ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায় ৷ এবং নিশির গালে কষে একটা থাপ্পর লাগিয়ে দেয়! সে এটা কখনোই কামনা করেনি ৷ থাপ্পর খেয়ে পাথরের মত স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে করুণ দৃষ্টিতে নীলের দিকে তাকিয়ে থাকে ৷ তার চোখ, মুখ লালবর্ণ ধারণ করেছে ৷ চোখ টলমল করছিল আঁখিজলে ৷ হঠাৎ করে নিশির চোখের কোণ বেয়ে ধীরবেগে অশ্রু সজল ঝরতে থাকে!
নীল ততোক্ষণে পুকুর থেকে উঠে পড়েছে! নিশি তখনও দাঁড়িয়ে ৷ কাঁদতে পারছেনা সে ৷ পাহাড় সমান কষ্ট তাকে কাঁদতেও দিচ্ছেনা ৷ তবে চোখের জল না ঝরিয়ে নিজেকে ধরে রাখতে পারছেনা ৷ কিছুক্ষণ গম্ভির ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে নিজের মনকে শক্ত করে পুকুর থেকে উঠে আসে!
তারপর রুমে গিয়ে ভেজা কাপড় পাল্টিয়ে নিঃশব্দে কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে যায়!
.
বিকেলে নিশির বাবা, মা বাড়ি ফেরে ৷ অনেকদিন নিশির নানা বাড়িতে কাটিয়ে আসার পর তারা বাড়ি ফিরে আসলো!
রাত্রে ডিনারের সময় সবাই একসাথে খাবার টেবিলে বসে ডিনার করছিল!
নিশি বসা ছিল নীলের পাশের সিটে ৷ নিশি যতক্ষণ ধরে তার প্লেটের ভাত নাড়াচাড়া করছিল ততোক্ষণ নীলের দিকে মায়াভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে ছিল৷ এবং বাম হাত দিয়ে পেটে স্পর্শ করছিল ৷ নীল তার এমন পাগলামী মুখ বুজে সহ্য করছিল!
হঠাৎ নিশির বাবা সুজা আলী নাবিলাকে সম্বোধন করে বলে ওঠে,
___বউমা, পাকাপাকি করে এলাম!
___কি আব্বা?
___আরে শোনোইনা! অনেক ভাল সমন্ধ পেয়েছি ৷ এতদিন ধরে এমন একটা ছেলেকেই মেয়ের জামাই হিসেবে খুঁজছিলাম ৷ পেয়েও গেলাম! ছেলেটা ডাক্তার! সে নাকি নিশিকে আগে থেকে চেনে ও পছন্দও করতো! তাদের ভাষ্য যখন তখন নিশিকে তাদের ঘরের বউ করে নিতে চাই! আমি ও রেহনুমা রাজি হয়েছি ৷ জানি তোমাদেরও ছেলেটাকে পছন্দ হবে ৷ পছন্দ না হলেও তার সাথেই আমার মেয়েটার বিয়ে দিয়ে দিবো! এরপরও তোমাদের মতামত জানতে চাই!
.
সবাই চুপ ৷ কেউ কিছু বলছেনা ৷ নিশি তার বাপের মুখের এসব কথা শুনে নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে রাগে প্লেট মেঝেতে ফেলে দিয়ে নীলের গালে একটা থাপ্পর দিয়ে রুম থেকে চলে যায়!
.
সুজা আলী তার মেয়ের এমন আচরণ দেখে স্তব্দ হয়ে যায় ৷ রাগের প্রতিচ্ছবি ওনার চোখে মুখে লক্ষ্য করা যায় ৷ গম্ভির গলায় উত্তেজিত হয়ে তিনি বলেন,
___ওর কি হলো? এমন বেয়াদবির মানেটা কি? নীল কি দোষ করছে?
.
নীল গালে হাত দিয়ে আছে ৷ সে ভাবছে আজকের থাপ্পরটা সে খুব জোরেসোরে দিয়েছে, খুব ব্যাথা লাগছে!
নীল নিরবতা ভেঙ্গে গালে হাত বুলাতে বুলাতে তার বোনের শ্বশুরকে বলল,
____আমি কিছু মনে করিনি, তার ছেলে মানুষী আচরণের জন্য আপনি উত্তেজিত হবেননা! থাপ্পরটা মেরেছে তার একটা কাজ করে দেইনি তাই ৷ একটা শাড়ি কেনার টাকা দিয়েছিল সে কিন্তু কিনে আনতে পারিনি সেই রাগে থাপ্পরটা মেরেছে!
.
সুজা আলী নীলের আর কোনো কথা না শুনে খাবার টেবিল থেকে চলে যায়!
রেহমুমা বেগমও ওনার সাথেই চলে যায়!
.
নাবিলা নীলের পাশের চেয়ারে বসে নরম স্বরে বলতে থাকে,
____ভাই, নিশি তোকে খুব ভালবাসে, ওকে তুই ফিরিয়ে দিসনা ৷ তুই রাজি হলেই নিশিকে তোর হাতে তুলে দিতে পারবো! শ্বশুর আব্বা আমার সব চাওয়া পূরণ করেছে এই চাওয়াটাও পূরণ করবে! তুই রাজি হয়ে যা ৷ নিশির খুব জেদ ৷ যদি তোকে না পায় তবে সে যা তা করতে পারে!
.
নীল তার বোনের কথাগুলো শুনছিল মন দিয়ে ৷ তার কথা শেষ হলে নীল রাগান্ন্যিত ভাব নিয়ে উচু গলায় বলতে থাকে,
____তোমরা আমাকে কি একেবারেই বোকা, বলদ মনে করো? আমার কোনো পছন্দ থাকতে পারেনা? প্রথমত আমি নিশিকে পছন্দ করিনা ৷ দ্বিতীয়ত ওকে আমি বোনের চোখে দেখি ৷ আর আমি কারো অপেক্ষায় আছি, তার দেখা পেলে তাকে রাজি করিয়েই বিয়েটা করবো! আশা করি তোমরা বিশেষ করে আপু তুই আমার বিয়ে নিয়ে অযথা টেনশন করবি না! প্লিজ!
.
নাবিলা তার ভাইয়ের কথা শুনে হতাশ হলো ৷৷একরাশ হতাশা নিয়ে সেও খাবার টেবিল ছেড়ে চলে গেল ৷ আতিক নীলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
___তোমার মন যেটা চাই সেটা করবে ৷ অন্যের কথামত চলে নিজেকে দূঃখী করোনা! তবে আমি চাই তুমি নিশিকে নিয়ে শান্ত মাথায় ভাবো!
.
এটা বলে আতিকও চলে যায় ৷ নীল খাবার টেবিলে বসে থ মেরে বসে আছে! ভাবছে তার কি করা উচিত?
.
৭দিন পর!
রাত তখন ১১টা ৷ রাতের আকাশটা চাঁদের আলোয় জ্বলজ্বল করছে ৷ জোস্ন্যালোকিত রাত নীলের খুব প্রিয় ৷ পুকুরের পানিতে চাঁদের প্রতিচ্ছবি ৷ পানিতে ঢিল ছুঁড়ে মারার কারণে জল নড়ছিল আর চাঁদ দুলছিল ৷ আর সেটা পুকুরের পানিতে দৃশ্যমান হচ্ছিল ৷ এমন মনমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতেই নীল পুকুরের পানিতে বারবার ঢিল ছুঁড়ছে!
চাঁদের আলোয় তার পরীর কথা মনে পড়ছিল খুব ৷ ভাবছিলো, “সে যদি দেখা দিতো তবে তার কোমল ও নরম হাতজোরা আলতো করে ছুঁয়ে দিতাম আর বলতাম আমার হয়ে যাও!" নাহ, নীল পরীর দেখা কিছুতেই পাচ্ছেনা!
৬দিন হলো সে বাসায় এসেছে ৷ একাকী ছয়টা দিন সে কাটিয়েও দিলো ৷ আজকে তার মনটা এতটাই খারাপ যে মন ভাল করার অনেক চেষ্টা করেও মন ভাল করতে পারছেনা ৷ ৬টা দিনের একটা মুহূর্তেও সে তার ঐ পরীর দেখা পায়নি ৷ হয়তো পরীটা তাকে ছেড়ে চলে গেছে ৷ বারবার সে কামনা করেছে অন্তত পরীটা স্বপ্নে এসে যেনো ধরা দেয় ৷ এজন্য সে দিনের বেলাতেও ঘুমিয়েছে কিন্তু পরী আসেনি!
.
আজকে রাত্রে একটু বেশিই তার পরীকে মনে পড়ছে! পুকুরে ঢিল ছুঁড়ে চাঁদের দুলুনি দেখছিল আর ভাবছিল এই বুঝি পরীটা তার কাছে এসে ধরা দিলো!
ভাবতে ভাবতে আর ঢিল ছুঁড়তে ছুঁড়তে নীলের নতুন কেনা সেলফোনে রিং বেজে ওঠে ৷ তার বোন কল দিয়েছে! ফোন রিসিভ করে সে বলে,
___হ্যাঁ, কিছু বলবি?
.
তার বোন চিন্তিত গলায় বলে,
___নিশি ২৫ মিনিট হলো তোর বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিছে ৷ ভাই, মেয়েটার গায়ে হাত তুলবিনা যতই পাগলামী করুক তোর সাথে ৷ রাত ৯টার দিকে পাগলীটা গলায় দড়ি দিতে যাচ্ছিল ৷ ভাগ্যিস আমি ঠিক সময়ে ওর রুমে প্রবেশ করি ৷ একটু দেরি হলেই গলায় ওড়না পেছিয়ে ফাঁস নিতো!
.
নীল ফোনটা কেটে দেয় ৷ নাবিলা এরপর আরো কয়েকবার ফোন দিলে নীল ফোন রিসিভ না করে শুধু কেটে দিতে থাকে ৷ নিশি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল এটা শুনেও তার কোনো প্রতিক্রিয়া হলোনা ৷ বরং মনে মনে সে বলছিল, “পাগল ছাগল মরলেই তো ভাল হতো!"
.
#বিঃদ্র গল্প পড়ে দেখি সবাই কেটে পরেন,ব্যাপার কি বলেনতো?প্লিজ কেউ কেটে পরবেন না,আপনানাদের মতামত আমাকে উৎসাহ দেয় পরবর্তী পর্ব দেওয়ার। আর সব সময় কিছু গঠনমূলক কথা লিখে কমেন্ট করলে খুশি লাগে।
ধন্যবাদ ইতিঃ (#তানিম_চৌধুরী)গল্পের মাঝে বিরক্ত করার জন্য দুঃক্ষিত।
.
নিশি নীলের বাড়ির উঠোনে পা রেখেছে ইতোমধ্যে! নীল পুকুর পাড় থেকে উঠে তার রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালে নিশির সামনে পড়ে যায় ৷ তাকে দেখে মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে নিয়ে কপট রাগস্বরে বলে,
___লজ্জা করেনা একটা মানুষকে এভাবে বিরক্ত করতে? কতবার বুঝাবো যে তোমাকে অপছন্দ? এরপরও যদি বেহায়ার মত পিছু পিছু ঘোরো তবে আর কিছু বলার নেই!
.
নিশি তার কথার জবাব না দিয়ে পড়নে থাকা শাড়িটা খুলে ফেলে! তারপর ব্লাউজটা খোলে ৷ পড়নের বাকি কাপড় খুলে ফেলার পর নীলের দিকে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে রাগের অভিব্যক্তি নিয়ে বলে,
____সেই পরীটার নগ্ন দেহ দেখেই তো তোমার মনে তার প্রতি এত আকর্ষণ জেগেছে, তাইতো? নাও, আমিও দেখাচ্ছি ৷ ভাল করে দেখো! দেখে নিজেই চিন্তা করো কার দেহ বেশি আকর্ষণীয়? আমি একবার যখন বলেছি তোমাকে চাই, সূতরাং, যেকোনো মূল্যে তোমাকে আমি আপন করে নিবো! কতবার ফিরিয়ে দিবে? তারচেয়ে বেশিবার আমি তোমার কাছে ফিরে আসবো! আমি তোমার মন পেতে এই দেহ কেন জীবন বিলিয়ে দিতে সবসময় প্রস্তুত! আমি তোমার মত নই, আমি ভালবাসতে জানি ৷ ভালবাসা প্রকাশও করতে জানি! বাবা মা আমার বিয়ে পাকাপাকি করে ফেলছে ৷ কাল তারা আংটি পড়াতে আসবে ৷ কিন্তু আমি কিছুতেই ঐ বাড়িতে যাবনা ৷ তুমি পারলে তাদের জবাব দিবে যে কেন আমি তোমার কাছে চলে আসলাম?
.
নীল বাকরুদ্ধ হয়ে নিশির অনবরত বলে যাওয়া প্রতিটা কথা মন দিয়ে শুনছিল!
তার উপর রাগ করবে নাকি খুশি হবে বুঝতে পারছেনা!
নীল তার কথার জবাব না দিয়ে মাটিতে পড়ে থাকা শাড়িটা হাতে নিয়ে নিশির বস্ত্রহীন দেহে জড়িয়ে দেয় ৷ তারপর রুমে চলে যায়!
.
নীল তার রুমে শুয়ে থেকে পরী বৃত্তান্ত বই পড়ছিল ৷ দরজা খোলা থাকায় নিশি তার রুমে চলে আসে!
তাকে দেখে নীল ঘাবড়ে যায় ৷ সে ভাবে, “দরজাটা বন্ধ করা উচিত ছিল"
.
নিশি কোনো কথা না বলে এয়াককন্ডিশনারের স্পিড বাড়িয়ে সহজ ভঙ্গিতে নীলের পাশে শুয়ে পড়ে চাদর জড়িয়ে!
.
নীল বই পড়া বন্ধ দিয়ে নিশিকে উদ্দেশ্য করে বিদ্রুপের স্বরে বলে,
___লজ্জা না থাকলে মানুষ যা খুশি তা করতে পারে ৷ বিয়ে সাধীর খবর নেই অথচ পর-পুরুষের বেডে এসে ঘুমিয়ে আছে ৷ এমন নষ্টা চরিত্রের মেয়ে কি দ্বিতীয়জন আছে?
.
নিশি এটা শুনে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতে থাকে! অনেকক্ষণ ধরে তার কান্না চলতে থাকে ৷ নীল রাগকে সংবরণ করে চুপ মেরে শুয়ে থাকে!
নিশি তার কান্না থামিয়ে ভাঙ্গা হলায় বলে,
____কাল থেকে আমার পরীক্ষা ৷ এটা কেবল আমিই জানি ৷ বাসায় থাকলে পরীক্ষাটা দিতে পারতাম না ৷ কোনো প্রস্তুতি ছাড়ায় পরীক্ষা দিতে হবে ৷ ১মাস পরে পরীক্ষা হবার কথা ছিল কিন্তু ডেট পরিবর্তন করে ১মাস অাগে করা হলো ৷ আমারও সর্বনাশ হবার উপক্রম হলো!
তোমার বাসায় এসেছি বিয়ের ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে আর পরীক্ষাটা দিতে৷ এখানে এসে যদি তোমার নিকট খারাপ লাগে এতে আমার কিছু করার নেই! তোমার বাসায় এসে কেন একা একা থাকবো? আমি তোমাকে প্রেমিক নয় স্বামীর দৃষ্টিতে দেখি, তাই তোমার সাথে রাত কাটাতে আমার লজ্জা লাগেনা!
.
নীল আর কোনো কথা বললোনা ৷ ধীর ভাবে বেড থেকে উঠে পড়ে ৷ এরপর রুম থেকে বেড়িয়ে যায় ৷ তারপর রুমের বাইরে থেকে তালা দেয়!
.
ফজরের আযান দেওয়ার পর ঘুম থেকে ওঠে নিশি! তারপর ফজরের নামাজটা পড়ার জন্য রুম থেকে বের হবার চেষ্টা করে ৷ কিন্তু দরজা বন্ধ দেখে অবাক হয় ৷ বুঝতে পারে এটা নীলেরই কাজ! চেঁচিয়ে নীলকে ডাকলে নীল দরজাটা খুলে দেয়!
ওয়াশরুম থেকে ওযূ করে এসে নামাজটা পড়া শেষ করে নিশির পাগলামী আবারো শুরু হয়ে যায়!
নীল ড্রয়িংরুমের সোফাতে শুয়ে ঘুমাচ্ছিল ৷ নিশি তাকে ঐ অবস্থায় জড়িয়ে ধরে! নীল জেগে উঠে তার এমন পাগলামী দেখে কোনো কিছুই বলেনা ৷ নিশির যন্ত্রণা সহ্য করে এবং যেমন ছিল তেমন অবস্থায় থাকে!
.
নিশি নীলের কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে তার বুক থেকে উঠে কিচেন রুমে গিয়ে দু-কাপ চা বানিয়ে আনে ৷ এবং এক-কাপ নীলের হাতে দেয়! কিন্ত নীল চায়ের কাপটা মেঝেতে ঠাস করে ফেলে দেয়! নিশি খিলখিল করে হাসি দিয়ে তার হাতের কাপটাও মেঝেতে ছুঁড়ে ভেঙ্গে ফেলে ৷ তারপর শব্দ করে হাসতে থাকা হাসিটা থামিয়ে নীলের দিকে চেয়ে মিটমিট করে হাসি দিয়ে রুম থেকে চলে যায়!
.
ব্রেকফাস্ট করে নিশি রওনা দেয় পরীক্ষার হলে! পরীক্ষা দিয়ে নীলের বাসায় ফিরলে দেখে তার বাবা, মা এসে তার জন্য অপেক্ষা করছে!
তাদেরকে দেখে নিশি সহজভঙ্গিতে বলে দেয়,
___আমি নীলকে ভালবাসি ৷ বিয়ে করলে তাকেই করবো ৷ সে যদি বিয়ে না করতে চাই তবুও আমি তার পাশেই সারাজীবন থাকবো ৷ অন্য কাউকে স্ত্রী হিসেবে বেছে নিলে তবুও আমি তাকে ছেড়ে যাবোনা! তোমরা আমার বিয়ে ঠিক করে ভুল করছো ৷ মরে গেলেও আমি অন্য কাউকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করবোনা!
.
নিশির বাবা, মা তার এমন কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রয় ৷ তারা কোনো জবাবই দিতে পারেনা তার কথার!
.
নিশি নীলের রুমে গিয়ে দেখে সে তার ডায়েরীতে কি যেন লিখছে? ডায়েরীটা তার হাত থেকে জোর করেই নিয়ে নেয়৷ এবং দেখে নীল এক বয়স্ক মহিলার ছবি এঁকেছে ৷ চেষ্টাটা ভাল ছিল ৷ নিশি বুঝতে পারলো এটা নীলের মায়ের ছবি হবে ৷ তাকে কৌতূহলের স্বরে বলল,
___এটা কি তোমার মায়ের ছবি?
.
নীল শান্ত গলায় বলল,
___হুম, মাকে খুব মিস করছিলাম!
.
নিশি নীলের পাশে শান্ত হয়ে বসে রইলো কিছুক্ষণ ৷ তারপর ধীর গলায় স্পষ্ট ভাষায় বলতে লাগল,
___তোমার আম্মা বেঁচে থাকলে আজ হয়তো আমাকে এত কাঁদতে হতোনা ৷ তুমিও এত ঘোরের পিছু দৌঁড়াতেনা ৷ যাকে পাবার আশায় বসে আছো তাকে কখনো পাবেনা ৷ তবে আমাকে কেন ফিরিয়ে দিচ্ছ বলোতো?
.
নীল দীর্ঘশ্বাস ফেলে মন খারাপের অভিব্যক্তিতে বলল,
___আবার শুরু করলে সেই ক্যাচাল? মনটা ভাল নেই সেটা দেখতেই পারছো, এরপরও শুরু করলে?
___আজ আমি তোমার মুখে স্পষ্ট ভাবে শুনতে চাই আমাকে তুমি ভালবাসো কি বা না? উত্তর না হলে তোমার সামনে কখনোই আসবোনা! আমি উত্তর শুনতে চাই!
.
নীল তার কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো তারপর সহজ ভঙ্গিতে বলে দিল,
___কখনোই না, আমি কখনোই তোমাকে ভালবাসবো না!
.
নিশি নীলের জবাব শুনে বড়সড় আঘাত পেল ৷ বুকে বিষাক্ত তীরের মত বিঁধলো ৷ মুখটা মলিন বানিয়ে তার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে রইলো যে মনে হচ্ছিল সে তার মুখ থেকে জগতের সবচেয়ে বড় কষ্টে জর্জরিত কথাটি শুনেছে, যেটা তার বুকটাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দিচ্ছে! তাকে কিছু না বলে আঁখিজল ফেলে ধীর পায়ে তার রুমে চলে গেল! তারপর তার বাবা, মাকে সাথে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ৷ নীল নিশির বাবা, মাকে বিদায় দিতে বাড়ির বাইরে বের হয় ৷ যাবার সময় নিশি তার দিকে তাকিয়ে ছিল মায়াবী দৃষ্টিতে ৷ হয়তো ভাবছিল, “যদি মানুষটা একবারের জন্যও বলতো ভালবাসি! তবে তাকে কখনোই ছেড়ে যেতাম না"" কিন্তু না নীল তার দিকে ভুলেও তাকায়নি, কথা বলা তো দূর!
.
নিশি চলে যাবার পর নীলিমা তার বাসায় এসে হাজির হয়!
নীল বুঝতে পারলোনা সে কেন এখানে এলো? সে পুকুরের সিড়িতে বসা ছিল৷ মেয়েটা তার পাশে এসে দাঁড়ালো এবং ঘণঘণ শব্দ করে শ্বাস ফেলে অস্থির গলায় বলল,
____আমাকে একটু হেল্প করতে পারবেন?
.
নীলিমার মুখ থেকে এভাবে কথা বলা শুনে নীল হকচকিয়ে উঠলো, এবং কপালে ভাঁজ ফেলে অস্ফুট স্বরে বলল,
____কি হেল্প? আমি কি হেল্প করবো তোমাকে?
.
মেয়েটা তার চেহারাটা নীলের দিক থেকে ফিরিয়ে থেমে থেমে বলল,
____আমাকে আজ পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে ৷ আমি চাই তারা আমাকে না দেখেই চলে যাক! এজন্য আমি আপনাকে নিয়ে বাসায় যেতে চাই ৷ আপনি শুধু আমার প্রেমিক হিসেবে অভিনয় করবেন!
.
নীলিমার কথা শুনে নীল তব্দা খেয়ে গেল ৷ আশ্চর্যজনক মেয়ে সে ৷ তার এমন অদ্ভুত ধরণের আবদার শুনে সে থম মেরে রইলো! এবং তাকে উচু গলায় উত্তেজিত হয়ে বলল,
____কিহ? পাবনা থেকে পালিয়ে এসেছো নাকি? আমি কেন এটা করতে যাবো?
____প্লিজ ভাইয়া, আমার জীবন, মরণের প্রশ্ন ৷ আমার বয়ফ্রেন্ডের জন্য বিয়ে করতে চাচ্ছিনা! আর তাকে ছাড়া অন্য কাউকে তো কখনোই না, কল্পনাতেও না!
আপনি যদি একটু হেল্প করতেন তবে বেঁচে যেতাম!
.
নীল এবার চমকে ওঠে তার বয়ফ্রেন্ড আছে শুনে ৷ অবাকের পর্বতে আরোহন করে সে তাকে জবাব দেয়,
____তোমার বয়ফ্রেন্ডও আছে! তবে তার থেকেই হেল্প চাও! আমি কেন?
____বয়ফ্রেন্ডকে সাথে নিয়ে আসতাম যদি সে দেশে থাকতো!
____তার মানে বিদেশী?
____প্রবাসী!
____সব বুঝলাম ৷ কিন্তু আমি তো হেল্প করতে পারবোনা!
.
নীলিমা তার পড়নের ওড়ানাটা মাটিতে ফেলে দিল ৷ তারপর বুকের দিকে টান দিয়ে সালোয়ারের একটুখানি কাপড় ছিঁড়ে ফেলল! তারপর রাগান্ন্যিত স্বরে বলল,
____লোক ডাকবো, আর বলবো তুমি আমাকে রেপ করতে চাইছো ৷ যদি রাজি না হও তবে এটাই করবো! কি চিৎকার দিবো?
.
নীলিমার এমন সাহস দেখে বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে অবাকের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো এবং ভাবলো, “এই মেয়ে সত্যিই পাগলী, পাগলীর হাত থেকে বাঁচা কঠিন, তার চেয়ে রাজি হয়ে যাই"!
নীল কাশি দিয়ে জোর গলায় বলল,
____ঠিক আছে, যাবো!
.
নীল রাজি হওয়া মাত্রই মেয়েটা তাকে জড়িয়ে ধরে এবং থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ বলে জপতে থাকে!
.
দুপুরের দিকে নীল নীলিমার বাসায় গিয়ে হাজির হয়! বাসায় পাত্রপক্ষ এসে বসে আছে ৷ হয়তো নীলিমার জন্য অপেক্ষা করছে ৷ নীলিমা নীলের হাত ধরে বাবা, মাকে বলে,
____এটা আমার বয়ফ্রেন্ড! বিয়ে করলে তাকেই করবো!
.
নীল জানে এটা অভিনয় তাই বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবেই নিলো!
.
নীলিমার বাবা তার কথা শুনেই চলে যায় আতিকের কাছে ৷ তাকে না পেয়ে নাবিলাকে ডেকে নিয়ে আসে ৷ নাবিলা দেখে তার ভাইকে নীলিমা ঝাঁপটে ধরে আছে! এটা দেখে নাবিলা হতভম্ব হয়ে যায় ৷ তার হাত পা কাঁপা শুরু করে ৷ মুহূর্তের মধ্যে চোখে পানি এসে যায় তার ৷ সে এটা কখনো কামনা করেনি ৷ সে নীলিমার বাবাকে বেশি কিছু না বলে শুধু বলল,
____আপনার যা ইচ্ছা তাই করুন ৷ আমার ভাই বলতে আজ থেকে কেউ নেই!
.
এটা বলেই নাবিলা হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে নীলিমার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়!
.
বিকেলে নিশি পরীক্ষা দিয়ে বাসায় ফেরে ৷ এবং যখন জানতে পারলো নীল নীলিমাদের বাসায় তখন সে নিজেকে শামলাতে পারলোনা! রাগান্ন্যিত ভাব নিয়ে নীলের কাছে গেল৷ এবং দেখতে পেল নীলিমা ও নীল একই রুমে দুজন দুজনের কাঁধে কাঁধ রেখে বসে আছে!
নিশি তার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা ৷ নীল এত নিচু মনের মানুষ এটা কখনোই ভাবেনি! সে খুব করে চাচ্ছিল গলা ছেঁড়ে কান্না করতে! কিন্তু তার চোখের পানি হারিয়ে গেছে ৷ এমন মানুষের জন্য কান্না শোভা পায়না! কষ্টে জর্জরিত মন নিয়ে সে চলে যায় নীলিমার বাড়ি থেকে!
.
ওদিকে নীলিমার বাবা কাজীকে নিয়ে আসছে!
তার বাবার চোখে মুখে তৃপ্তির প্রতিচ্ছবি, হাস্যজ্জ্বল মুখ!
.
নীল কাজীকে দেখে দুশ্চিন্তা মাখা স্বরে ঢোক গিলে নীলিমাকে বলে,
____কাজী কেন?
.
নীলিমা খিলখিল করে হেসে বলল....
.
আগামিকাল শেষ হবে।
.
.
.
.
.
#বিঃদ্রঃ ভুলক্রুটি ক্ষমা ও সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট করে সাথে থাকবেন। আপনাদের লাইক কমেন্ট দেখলে মনে হয় গল্পটা আপনাদের ভালো লেগেছে এবং আপনারা গল্পটা পড়েছেন,আর তাতে করে আমার ও পরবর্তী পর্বটা দেওয়ার আগ্রহ বেড়ে যায়।
.
বিকেলে নিশি পরীক্ষা দিয়ে বাসায় ফেরে ৷ এবং যখন জানতে পারলো নীল নীলিমাদের বাসায় তখন সে নিজেকে শামলাতে পারলোনা! রাগান্ন্যিত ভাব নিয়ে নীলের কাছে গেল৷ এবং দেখতে পেল নীলিমা ও নীল একই রুমে দুজন দুজনের কাঁধে কাঁধ রেখে বসে আছে!
নিশি তার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা ৷ নীল এত নিচু মনের মানুষ এটা কখনোই ভাবেনি! সে খুব করে চাচ্ছিল গলা ছেঁড়ে কান্না করতে! কিন্তু তার চোখের পানি হারিয়ে গেছে ৷ এমন মানুষের জন্য কান্না শোভা পায়না! কষ্টে জর্জরিত মন নিয়ে সে চলে যায় নীলিমার বাড়ি থেকে!
.
ওদিকে নীলিমার বাবা কাজীকে নিয়ে আসছে!
তার বাবার চোখে মুখে তৃপ্তির প্রতিচ্ছবি, হাস্যজ্জ্বল মুখ!
.
নীল কাজীকে দেখে দুশ্চিন্তা মাখা স্বরে ঢোক গিলে নীলিমাকে বলে,
____কাজী কেন?
.
নীলিমা খিলখিল করে হেসে বলল..
.
___কাজী কেন বোঝনা?
___সত্যিই বুঝতেছি না!
___তোমার আমার বিয়ে পড়াতে আসছেন তিনি!
.
নীলিমার কথাকে সিরিয়াস ভাবে নিতে পারছেনা নীল ৷ সে ভাবছে হয়তো এসব তার অভিনয় ৷ বিষয়টাকে স্বাভাবিক হিসেবে নিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকে বলল,
___এমন ইয়ার্কি ভাললাগেনা ৷ নাটক বন্ধ করলে খুশি হবো!
___কিসের নাটক? তোমাকে কখনো বলা হয়নি যে আমি তোমাকে পছন্দ করি ভালবাসি, আজ বললাম ৷ জানি তোমার সাথে স্বাভাবিক ভাবে বিয়ে হবেনা কারণ তুমি স্বাভাবিক মানুষ নও৷ তাই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করলাম ৷ বিয়ে তোমাকে করতেই হবে ৷ নাহলে আমার বাবাকে তো চিননা, খবর করে দিবে!
.
নীল বাকরুদ্ধ ৷ তার বাক রুদ্ধ করে দিয়েছে লম্বা কেশের অধিকারী লাল টুকটুকে মেয়েটা ৷ কথা বলতে পারছেনা সে ৷ এরমধ্যে তার আবার কথা বলার ইচ্ছাটাও হারিয়ে গেছে ৷ তাই চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো ৷ আর গজব থেকে উদ্ধার কেমনে হওয়া যাবে ভাবতে লাগল!
.
নীল নীলিমার কাছে থেকে এক কদম সরে দাঁড়াবে এটার সুযোগও পাচ্ছেনা ৷ যখন নীলিমার বাবা নীলকে ডাকলো তখন তার পাশ থেকে একটুর জন্য হলেও প্রস্থানের সুযোগ পেল!
.
নীলিমার বাবার সাথে নীল দেখা করেই তাকে মিনমিন স্বরে বলল,
___দেখুন, আপনার মেয়ের সাথে কিছুই হয়নি ৷ আমি তাকে বিয়ে করবো না ৷ বিয়ে করার কথাও ছিলনা কখনো! তাই কাজীকে বিদায় করে দিন!
.
নীলিমার বাবা নীলের কথা শুনে হকচকিয়ে উঠলো কিন্তু পরক্ষণেই হাস্যজ্জ্বল মুখে বলল,
___কি? ও বুঝেছি, আমার মেয়ের সাথে ঝগড়া হয়েছে! আরে ঠিক হয়ে যাবে! তোমার শ্বাশুরির সাথেও আমার ঝগড়া হতো ৷ কিন্তু সময় মত সব ঠিক হয়ে যেত!
.
নীল একরাশ বিরক্তি নিয়ে ওনাকে ফের বলল,
___দেখুন, আমি আপনার সাথে মশকরা করার মুডে নাই ৷ আমি পরিষ্কার করে বলছি আপনার মেয়ের সাথে আমার কিছুই নেই! তাই দয়া করে আপনার মেয়েকে বুঝান সে যেনো পাগলামী না করে ৷ আমাকে সে জোর করে এখানে নিয়ে আসলো তার বিয়ে ভাঙ্গতে আর এখন আমিই তার হবু জামাই হয়ে যাচ্ছি ৷ আজব কাহিনী!
.
নীলিমার বাবা নীলের কথাতে কান দিলো বলে মনে হলোনা ৷ তিনি তার কথাকে পাশ কাটিয়ে গম্ভির গলায় বলল,
___আমি বিয়ের সবকিছুর আয়োজন করেছি ৷ তোমাদের দুজনের বিয়ের কাজটা সম্পন্ন না করলে আমার মান-সম্মান শেষ হয়ে যাবে!
.
নীল উত্তেজিত গলায় বলল,
___কি বলছেন এসব? আজ আপনার মেয়েকে দেখতে এসেছিল পাত্রপক্ষ ৷ তারা চলে গেছে ৷ এরমধ্যে আপনি বিয়ের আয়োজন করে ফেলছেন? মজা নেন আমার সাথে? ঘন্টা খানেকের মধ্যে সব আত্মীয় স্বজনকে জানিয়ে দিছেন?
___হ বাবা হ, ফোনে দাওয়াত দিছি, তারা আসলো বলে! বিয়েটা তো তোমাকে করতে হবেই, কোনো ভক্ষরচক্ষর চলবেনা! এখন যাও, আমার মেয়ের রুমে যাও!
.
নীলের প্রচন্ড রাগ হচ্ছিল ৷ রাগের কারণে গা গরম হয়ে যাচ্ছিল ৷ মাথা দিয়ে মনে হচ্ছিল ইটের ভাটার ধোঁয়া বের হচ্ছে ৷ রাগকে কন্ট্রোল করা কঠিন হলেও বাধ্য হয়ে নীলিমার রুমে গেল সে ৷ রুমে ঢোকার সাথে সাথে দরজাটা বন্ধ করে দেয় নীলমা! এটা দেখে নীলের হাত পা অবশ হওয়া শুরু করে ৷ হাত পা কাঁপতে থাকে!
নীলিমা তার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে আর নীল পিছাতে থাকে ৷ একপর্যায়ে নীলকে খাটে শুয়ে দেয় সে৷ নীল ধমক দিয়ে উঠে চোখ দুটো রক্তিম বানিয়ে উচ্চ আওয়াজে বলে,
___মানে কি এসবের, হুম?
.
শুধু এতটুকু বলছে নীল ৷ এটা শোনার সাথে সাথে নীলিমা দরজা খুলে দেয় ৷ আর তব্দা খেয়ে কোমায় চলে যাওয়া রোগির মত হয়ে থ মেরে বসে থাকে!
নীল কিছু বলতে গিয়ে থেমে যায় ৷ কারণ যাকে কথাগুলো বলবে সে বর্তমানে অজ্ঞান অবস্থায় রয়েছে ৷ অচেতন না হয়েও অচেতন অবস্থা হয়েছে মেয়েটার ৷ এজন্য তাকে আর কিছু না বলে রুম থেকে বেড়িয়ে যায় ৷ এবং নীলিমার বাবাকে বিদায় বলে তার বোন নাবিলার সাথে দেখা করে ৷ নাবিলা রেগে আগুন হয়ে আছে ৷ নীল ঠিক ভাবে তার দিকে তাকাতে পারছেনা ৷ ভয় করছে সে! চুপ করে থেকে নাবিলা কিছুক্ষণ নীলের দিকে তাকিয়ে রইলো ৷ তারপর গরম আওয়াজে বলল,
___কই তোর বউ কই? আসলো না? নাকি তার লজ্জা লাগছে বলে আসছেনা?
.
নীল জবাব দিল ভাঙ্গা গলায়,
___কিসের বউ? কার বউ? কে বিয়ে করলো?
___ভান ধরিস আমার সাথে? বদমাইশ একটা!
___আপু তুই যা দেখছিস সেটা আমার অভিনয় ছিল ৷ নীলিমা আমার নিকট হেল্প চেয়েছিল যাতে তার বিয়ে ভেঙ্গে যায় ৷ কিন্তু এখানে এসে দেখি সে পল্টি মেরেছে! আমাকে বিয়ে করার জন্য সে আমার সাথে উল্টা নাটক করেছে ৷ তার বাবাও আমাকে মেয়ের জামাই বানাতে ব্যাকুল হয়ে উঠেছে ৷ কিন্তু তাদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে চলে আসছি!
.
___আমি বিশ্বাস করিনা!
___সেটা তোর ব্যাপার! তবে মনে রাখবি আমি আমার মনের মানুষকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবোনা!
___কে সে?
___সময় হলে জানতে পারবি!
.
নীলিমার বাবা নীলিমাকে রাগান্ন্যিত স্বরে বলে,
___তুই বললি ওটা তোর মনের মানুষ ৷ কই সে তো বিয়েতে রাজি হলোনা?
.
নীলিমা কান্না মাখা স্বরে বলল,
___সে আমাকে ভালবাসতো না, আমিই শুধু বাসতাম ৷ যদি আগে থেকে মনের কথাটি বলতে পারতাম তবে হয়তো তাকে পেতাম চিরদিনের জন্য!
___জানতাম এমন কিছু হবে ৷ আমিও পরীক্ষা করেছি ৷ আর কাজীকে ডাকা হয়েছে যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে তার জন্যই! এখন তো মাত্র বিকেল! পাত্রপক্ষ আসবে সন্ধ্যা পর ৷ তোর বিয়ে আজই হবে ৷ তারা আংটি পড়িয়ে দিতে আসতে চাইছিল ৷ আমি গতকাল বলে দিছি আংটি নয় যদি রাজি থাকেন আপনারা তবে মেয়েকে কালই আপনাদের হাতে তুলে দিবো!
তারা রাজি হয়েছে ৷ আমি তো নীলের সাথে কথা বলে একটু শিওর হলাম সে তোকে চাই কিনা? সত্যটা তো প্রমাণিত হয়ে গেল! আর যেসব লোক বাসায় এসেছিল তারা অন্য পাত্রপক্ষ ৷ তোকে দেখতে আসছিল! তাদের বলে দিয়েছি যে আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে৷ এটা শুনে তারা চলে গেছে!
.
নীলিমা তার বাবাকে শান্ত গলায় বলল,
___ঠিক আছে, আমি বিয়ে করবো তবে নীলকে শেষ একটা কথা বলবো যদি সে কথাটা মেনে নেয় তবে আমি তার হাত ধরবো সারাজীবনের জন্য ৷ আর যদি কথাটা অগ্রাহ্য করে তবে তোমাদের কথাই মেনে নিবো!
____ঠিক আছে ৷ দেওয়া হলো সুযোগ!
.
নীলিমা নীলের কাছে গেল ৷ নীল পুকুরের সিড়িতে বসে ছিল ৷ তার মন জুড়ে শুধু পরীকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা ৷ তার জন্যই নিরন্তর অপেক্ষা, প্রতিক্ষা ৷ কবে তার দেখা পাবে সেই প্রতিক্ষায় আছে সে!
.
নীলিমা তার সামনে দাঁড়িয়ে ৷ নীল বিষন্ন মনে মাথা নিচু করে বসে আছে ৷ সে টেরই পায়নি নীলিমা তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে! মাথা তুলতেই নীলিমাকে দেখে চমকে গেল ৷ মেয়েটার চোখের কোণে পানি ৷ কাঁদছে সে! দূঃখের কান্না ৷ মনের মানুষকে হারিয়ে ফেলার শোকে অগ্রিম কান্না কাঁদছে সে৷ এখনো পুরোপুরি নীল তার থেকে হারিয়ে যায়নি ৷ এর আগেই চোখের জল ফেলছে সে!
চোখের পানি মুছে নীলকে বলল,
___তোমাকে আমি অনেক আগে থেকেই ভালবাসি! কখনো বলতে পারিনি ৷ আমার রুপে তোমাকে ঘায়েল করতে পরীর রুপ ধারণ করি ৷ যদিও আমি ভুলেও ভাবতে পারিনি আমাকে দেখে তুমি সত্যি সত্যি পরী ভেবে নিবে ৷ আমি তো বান্ধবীর বুদ্ধিমত তার সাহায্য নিয়ে তার হাতের চমৎকার মেকাপে মধ্যরাত্রে পুকুরে আসতাম ৷ বান্ধবী আমাকে অন্যরকম ভাবে উপস্থাপন করতো ৷ তার পার্লারের সবচেয়ে দামী মেকাপ ব্যবহার করতাম ৷ পানিতেও অনেকক্ষণ মেকাপ ঠিক থাকতো! তবুও আমি পানিতে ডুব দেবার সময় পলিথিনের কাগজ দিয়ে মুখটা ঢেকে নিতাম! সবচেয়ে দামী শাড়ি পড়ে আসতাম তোমাকে আকৃষ্ট করতে ৷ তুমি আমার রুপে ঘায়েলও হলে কিন্তু আসল নীলিমাকে চিনতে পারলেনা ৷ নীলিমাই যে তোমার পরী ছিল সেটা একবারও বুঝতে পারলেনা!
.
#বিঃদ্র গল্প পড়ে দেখি সবাই কেটে পরেন,ব্যাপার কি বলেনতো?প্লিজ কেউ কেটে পরবেন না,আপনানাদের মতামত আমাকে উৎসাহ দেয় পরবর্তী পর্ব দেওয়ার। আর সব সময় কিছু গঠনমূলক কথা লিখে কমেন্ট করলে খুশি লাগে।
ধন্যবাদ ইতিঃ (#তানিম_চৌধুরী)গল্পের মাঝে বিরক্ত করার জন্য দুঃক্ষিত।
.
নিশি ততোক্ষণে তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ৷ নীলিমার কথা শেষ হলেই নিশি তার গালে সজোরে থাপ্পর লাগিয়ে দেয় ৷ রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে নীলিমাকে বলল,
___মিথ্যুক কোথাকার, কতবড় মিথ্যা বলছে ৷ ও নাকি নীলের সেই পরী ৷ সে জানতোই না নীল কোনো এক পরীর মায়ায় পড়ে গেছে ৷ আমিই ওরে জানালাম যেদিন ওর নিকট হেল্প চাইতে গেলাম ৷ আর আজ সে আমার সাথে ধোকাবাজি করছে আমার বুকে চাকু মেরে! আমার মনের মানুষকে ছিনিয়ে নেবার চেষ্টা করছে ৷ আরে ডাইনী, আমি তোর মত মিথ্যা বলে তাকে নিজের করে পেতে চাইনা ৷ আমি বলবো না যে আমি সেই পরী! কখনোই বলবোনা ৷ কারণ, আমি তার সেই পরী নই ৷ তবে সে যদি ভালবেসে আমার হাতটা ধরে তবে আমি অবশ্যই তার সামনে পরীর রুপে হাজির হবো!
.
নীল দুজনকেই থামিয়ে দিল এবং চোখের জল ফেলে বলল,
___চুপ থাকো তোমরা ৷ আমি খুব ভাল করে জানি আমার পরী তোমাদের কেউই না ৷ আমার সেই পরী তো ১বছর আগেই মারা গেছে ৷ তার শোকে আমি প্রতিটা রাতে মানসিক ভাবে বিকারগ্রস্ত হয়ে যাই ৷ প্রতিটা রাতে আমার এমন হয় যে নিজেই নিজেকে চিনতে পারিনা৷ আমার পরী আমার দোষেই রাত ১০টার দিকে গাড়ি দূর্ঘটনার কবলে পড়ে ৷ কিন্তু সে প্রাণ হারায় শেষ রাত্রে ৷ আমার বুকে মাথা রেখে সে প্রাণ হারিয়েছিল ৷ এটা আমি মেনে নিতে পারিনি!
সবাই জানতো আমি কারো সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়নি ৷ এমনটা জানার কারণ সঠিকই ছিল৷ কারণ, আমাদের প্রেমটা খুবই গোপনে চলছিল, চেয়েছিলাম বিশেষ দিনে প্রকাশ করবো সম্পর্কটার কথা ৷ এর আগে কাউকে বিষয়টা বলার ইচ্ছাপোষণ করিনি ৷ এমনকি আমার বোনটাকেও বলিনি! মানুষটাকে এতটাই ভালবাসতাম যে তার কোনো কথার অবাধ্য হতাম না ৷ দেখা করতাম সঠিক সময়ে ৷ কিন্তু যেদিন সে আমাকে ছেড়ে চলে গেল ৷ ঐদিন আমি আগে থেকে তার জন্য রাস্তার পাশে অপেক্ষা করছিলাম ৷ রাত তখন ১০টা বাজে! তার আসতে ১ঘন্টা লেট হয়েছিল ৷ সে রাস্তা পার হয়ে আমার কাছে আসে কিন্তু তার কান থেকে স্বর্ণের দুল রাস্তার মাঝখানে পড়ে গেলে তাকে সেটা জানিয়ে দিই ৷ সে দুলটার দিকে নজর দিলে রাস্তার দুদিকে না তাকিয়ে সেটা নিতে যায় ৷ আর তখনই আমার কলিজাটাকে ট্রাক এসে পিষ্ট করে দিয়ে যায় ৷ আমার ভুলেই জানপাখিটাকে হারিয়ে ফেলি! সেদিনের পর সে আমার সাথে মাত্র ৫বার দেখা করেছে আর সেটা নাকি কল্পজগৎ ছিল ৷ অথচ আমার নিকট বাস্তবের চেয়েও সত্য মনে হতো ৷ এখনো তার স্পর্শ আমার দেহে জড়িয়ে আছে ৷ ৪বার পুকুরে দেখা হয়েছিল, প্রতিবারের ঘটনা আমার চোখে এখনো ভাসছে ৷ আর ১বার সে এসেছিল স্বপ্নে, মধুর সময় পার করেছিলাম সেই রাত্রে! তাকে আমি পরী বলে ডাকতাম, সত্যিই সে পরীর মত দেখতে ছিল ৷ প্রথম তিনবার সে যখন দেখা করেছিল ঐসময় তার মুখটা অস্পষ্ট ছিল ৷ শুরুতে তো ভাবতাম অন্য কেউ হবে হয়তো ৷ কিন্তু শেষবার সে নিজের রুপে এসে হাজির হয়! যখন তাকে আসল রুপে দেখলাম তখন তাকে কাছে পেয়ে ভুলেই গেছিলাম যে সে আমাকে ছেড়ে সত্যি সত্যি ওপারে চলে গেছে ৷ তার সাথে প্রেম শুরুর আগে যেমন আচরণ করে তাকে নিজের করে নিয়েছিলাম, ভ্রমের জগতেও তার সাথে দেখা হবার পর তেমনই আচরণ করেছি৷ সে যে শুধুমাত্র আমার কল্পনাতেই এসেছিল সেটা এ মনটা বুঝলেও নিজেকে বুঝাতে পারিনি ৷ ভেবেছিলাম আমি পাগল হয়ে গেছি ৷ সাইক্লিয়ার্টিস্টের কাছে গিয়ে বিষয়টা খুলে বললে তিনি বলেন, “পরীকে নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা ও রাত্রে না ঘুমানোর কারণে এমনটা হয়েছে!"
.
এপর্যন্ত বলা হলে নীলিমা তাকে ছেড়ে চলে যায়!
কিন্তু নিশি পাথরের মত রুপ নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল ৷ সে অনবরত চোখের পানি ফেলে যাচ্ছে ৷ নিঃশব্দে কাঁদছে আর বুকে অজস্র কষ্ট নিয়ে ভাবছে, “মানুষটা এতবড় মিথ্যা বলতে পারলো কেমনে? নাকি আমাকে কষ্ট দিতে সে এরকম মিথ্যা বলে মজা নিচ্ছে?"
.
নিশি চোখের পানি মুছে ফেলার পরও ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে নীলকে বলল,
___এভাবে একটা মানুষ কেমনে মিথ্যা বলতে পারে? আমি নাহয় নিজেকে জাহির না করার জন্য বলা থেকে বিরত হয়েছি যে তোমার সেই পরীটা আমিই ৷ তাই বলে কি তুমি বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলবে?
.
নীল রাগস্বরে বলল,
___তুমি আমাকে ঠকিয়েছো! আমি ভাল করে জানতাম মধ্যরাত্রের সেই পরীটা অন্য কেউ নয় তুমিই! আমি জেনেও না জানার ভান করেছিলাম ৷ কারণ, তুমি আমাকে অনেকবার রিজেক্ট করেছো প্রেমের প্রস্তাবে ৷ অনেক চিঠি লিখেছি তোমাকে একটারও জবাব দাওনি ৷ ভার্সিটির ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কলেজের বাইরে থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তোমার ক্লাসরুমের ভেতর নজর দিয়ে তোমার দিকে অপলকে তাকিয়ে থাকতাম অথচ তুমি একটাবারও ফিরে তাকাওনি!
তুমি কি করতে? আমার বন্ধুর সাথে ক্যাম্পাসে বসে গল্প করতে ৷ একদিন তো বৃষ্টিতে দুজনে ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে গল্প করেছিলে ৷ তবুও তখন তোমার প্রতি ফিলিংস ছিল ৷ কিন্তু যেদিন দেখলাম তুমি আমার বন্ধুর প্রেমপত্র হাতে নিয়ে খিলখিল করে হাসছো, ঐদিন আর সহ্য হলোনা ৷ পরেরদিন সেই বন্ধুর সাথে তোমাদের আলাপচারিতা দেখে মন থেকে তোমাকে মুছে ফেলি ৷ চিরতরে মুছে ফেলি!
.
নিশি রাগস্বরে বলল,
___তোমার বন্ধু চিঠি দিয়েছিল? আচ্ছা যদি দিয়েও থাকে সেটা কেমনে জানলে?
___সেদিন ক্যাম্পাসে যে জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে চিঠিটা পড়ার পর তুমি সেটা ফেলে দিয়েছিল ওটা আজও আমার হাতে আছে! চিঠিটা আমি আজও যত্নে রেখেছি! বৃষ্টির পানিতে যাতে না ভেজে এজন্য আমি পলিথিনে করে রেখেছি!
___ঠিক আছে দেখাও তোমার চিঠি!
.
নীল সেই চিঠিটা বের করে নিশির হাতে দেয়!
নিশি চিঠিটা পড়তে থাকে জোরে জোরে ৷ ওতে লেখা ছিল,
“প্রিয়তমা নিশি,
আমি জানি তুমি আমাকে দুচোক্ষেও দেখতে পারোনা ৷ তবুও আমি তোমাকেই ভালবাসি ৷ বেশি কিছু লিখবোনা ৷ আমি তোমাকে ভালবাসি এতটুকুর বেশি আমি লিখতে পারছিনা৷ আশা করি আমাকে গ্রহণ করবে!
ইতি,
তোমার সেই
.
নিশি বলে উঠলো ৷ ছিঃ এটা কোনো চিঠি হলো? আর এমন চিঠি আমাকে কেউ দিলে সেটা আমি পড়বো, কেমনে ভাবলে? আরে বোকা, ভার্সিটিতে তো অনেক মেয়ের নামই নিশি ৷ এটা অবশ্যই অন্য কাউকে নিয়ে লেখা হয়েছে ৷ আবরার আমাকে যে চিঠিটা দিয়েছিল ওটা তোমার ঘটকালি করে, হাদারাম একটা ৷ সে ওতে লিখেছিল তুমি আমাকে কতটা ভালবাসো, আমাকে নিয়ে তুমি কি কি ভাবো? এবং সে লিখেছিল আমি যেন তোমাকে গ্রহণ করি ৷ ভাবছো তার সাথে সামনাসামনি কথা হয় আবার চিঠি কেন? চিঠি কেন কারণ সে আমার সামনে তোমার বিষয় নিয়ে কথা বলতে ভয় পেতো ৷ যদি থাপ্পর মারি সেই ভয়ে সামনাসামনি বলেনি ৷ পরেরদিন তার সাথে দেখা করলে বিষয়টা যখন তাকে খুলে বললাম তখন সে সাহস পেল তোমার ব্যাপারে কিছু বলার! আর তুমি তাকে নিয়ে কি উল্টাপাল্টা ভেবে নিলে!
ঐদিন পর তোমার সাথে দেখা করতেও পারিনি ৷ ভাবিকে কতবার বলেছি যেন তুমি আমাদের বাসায় আসো, তবুও আসোনি ৷ ১বছর পর বাসায় এলে কি জন্য? আমাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নাচাতে! লজ্জা করা উচিত ছিল তোমার!
.
এখন খুব রাগ হচ্ছে তোমার উপর ৷ যাও তোমার সাথে কথায় নেই!
.
নীল এবার বড়সড় দুশ্চিন্তার মধ্যে ডুবে আছে ৷ সে সত্যিই বোকামী করেছে ৷ এরকম বোকামী করা মোটেও ঠিক হয়নি!
.
রাত ১১টা বেজে গেছে ৷ এখনো নীল নিশির দেখা পায়নি ৷ সেই যে অভিমান করে আছে তার অভিমান ভাঙ্গার খবর নেই ৷ নিশির বাবা এর মধ্যে জোরে জোরে ফোনে কথা বলছিল, তিনি বলছিলেন,
___জাহিদুল ভাই, বিয়েটা হচ্ছেনা ৷ আমার মেয়ে এখনই বিয়ে করবেনা ৷ সে আরো ৩বছর পড়তে চাই, মাস্টার্স কম্প্লিট করবে ৷ আপনার ছেলে কি এতদিন অপেক্ষা করবে? হ্যাঁ আমি জানতাম ৷ তাহলে ভাল থাকবেন ৷ কিছু মনে করবেন না!
.
নিশির বাবার এমন কথা শুনে নীলের মনে আনন্দের জোয়ার শুরু হলো ৷ সে দৌড়ে পুকুরের সিড়িতে গিয়ে গুণগুণ করে গান গায়তে লাগলো! ওদিকে ঝিঁঝিঁ পোকার দলও শুরু করে দিয়েছে তাদের মাতাল করা গান গাওয়া ৷ নিঝুম রাতের ঘণ কালো অন্ধকারে জোনাকির দলও ভিড় জমিয়েছে পুকুর জুরে! একদম আলোয় আলোকিত করে তুলেছে পুকুরের চারপাশ! ওদিকে ব্যাঙের দলও ডাকা শুরু করেছে ৷ নীলের মনে হলো আজকে ব্যাঙগুলো ঝগড়া করছেনা, আনন্দে তারা ডাকছে!
হঠাৎ, পুকুরের পানি ঝপ করে উঠলো ৷ কে যেন সাঁতার কাটছে? নীলের ভয় করছে, অজানা ভয় ৷ এটা নিশি নয় ৷ নিশি তো তার রুমে শান্তিতে ঘুমাচ্ছে ৷ আর পুকুরে যে সাঁতার কাঁটছে তার শরিরে তো পাখা দেখা যাচ্ছে! তবে সে কি সত্যিই পরী? নীল কি করবে বুঝতে পারছেনা ৷ পুকুর থেকে চলে যাবার শক্তি সে পাচ্ছেনা ৷ পা নড়ছেনা ৷ কে যেন পা শক্ত করে চেপে ধরেছে মনে হলো!
নীলের চোখ ছানাবড়া হয়ে আছে ৷ হা করে তাকিয়ে আছে ৷ কারণ তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে বস্ত্রহীন এক নারী! সে কি পরী? নাকি মানব নারী? নীল গবেষণা করছে মনের সাথে!
গবেষণা করা শেষ হলে সে সিড়ি থেকে উঠে পড়ে ৷ তারপর হাত বাড়িয়ে দেয় তার দিকে ৷ সে হাত ধরে পুকুরের নিচে নিয়ে চলে ৷ তারপর দুজনেই পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়ে ৷ তারা এখন পুকুরে ডুবের নেশায় মেতে উঠেছে একে অপরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ৷ বাতাস আসছিল ৷ বাতাসের বেগ প্রবল হচ্ছিল ৷ বাতাসের স্পর্শে দুজনেই শিহরিত ৷ নীল তো এমনিতেই তার পরশে শিহরণের আবেশে থরথর করে কাঁপছে, তার ওপর শীতল বাতাস তার শরীরের কাঁপন বাড়িয়ে দিল আরো! বাতাসের বেগ অতিরিক্ত বেড়ে গেলে তখনই বৃষ্টি নামা শুরু হয়ে যায় ৷ অঝোর বৃষ্টি নামা শুরু হয়েছে ৷ নীল চাইছে সারাটা রাত যেনো বৃষ্টি নামে ৷ থামেনা যেনো! বৃষ্টিরা হয়তো তার কথা শুনতে পেয়েছে ৷ খুব জোরে নামা শুরু হয়েছে বৃষ্টি ৷ বিরামহীন বৃষ্টি নামার পূর্ব লক্ষ্যণ জোরেজোরে নামতে হবে, সেটাই হচ্ছে ৷ পুকুরের পানিতে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছিল আর পুকুরের পানি দুলছিল ৷ নীল ও তার গায়ে বৃষ্টির পানি পড়ার পর কেঁপে কেঁপে উঠছিল ৷ নীলের অনেক দিনের স্বপ্ন মনের মানুষকে নিয়ে বৃষ্টির রাত্রে পুকুরে ডুব দেওয়ার!
.
নীল তাকে ছেড়ে দিয়েছে ৷ তার ইচ্ছা জেগেছে একা একা কয়েকটা ডুব দিবে৷ হঠাৎ তার কল্পনার পরী বাস্তবের মানব নারী “নিশি" তীক্ষ্ণ স্বরে বলে ওঠে,
___এই আমাকে বুকে জড়িয়ে নাও তো!
.
নীল হাসি মুখে কাঁপা গলায় বলে,
___ ফের কেন?
___এতক্ষণ মনে ছিলনা একটা জিনিস পরীক্ষা করার!
___কি সেটা?
___তোমার বুকে মাথা রেখে শুনতাম যে হ্নদকম্পনের সময় কার নামটা উচ্চারিত হয়? কিছুদিন পর নীল আরর নিশির বিয়ে হইয়ে যায়।এখন তারা অনেক হ্যাপি।
.
------সমাপ্ত-----
(হ্যাপি এন্ডিং দিলাম,নেন)
.
.
.
.
.
#বিঃদ্রঃ ভুলক্রুটি ক্ষমা ও সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট করে সাথে থাকবেন। আপনাদের লাইক কমেন্ট দেখলে মনে হয় গল্পটা আপনাদের ভালো লেগেছে এবং আপনারা গল্পটা পড়েছেন,আর তাতে করে আমার ও পরবর্তী পর্বটা দেওয়ার আগ্রহ বেড়ে যায়।

No comments:

Post a Comment

অদৃশ্য পরী

  ----দেবর সাহেব, তো বিয়ে করবে কবে? বয়স তো কম হলোনা ৷ ----আপনার মত সুন্দরী কাউকে পেলে বিয়েটা শীঘ্রই করে ফেলতাম ৷ -----সমস্যা নাই তো, আমা...