১-৫
#ভাইয়ের_বন্ধু_যখন_বর(সিজন২)
সব পর্বের লিংক https://www.facebook.com/227045534098269/posts/1873136699489136/)

||
ও হো মাএএএ.... (তিশা হাই তুলতে তুলতে ঘুম থেকে উঠে)সকাল সকাল কেনো এতো ডাকা ডাকি করো বলোতো।এতো কস্ট করে কতো জায়গা খুঁজে জানো এই এলার্ম ঘড়িটা এনেছি।কিন্তু তুমি একদিনও ঘড়িটাকে বাজতে দেওনি,তার আগেই তোমার এলার্ম শুরু হয়ে যায়।বলছি কি মা জননী,একদিন তো এই ঘড়িটাকে কস্ট করে বাজতে দেও।নিজের জমানো টাকা দিয়ে এনেছি।
||
মা পরম যত্নে আমার মাথায় হাত দিলেন,আমার মনটা ভিষন খুশি হয়ে গেলো।সকাল সকাল আজ মায়ের বকা না খেয়ে আদর পেলে যা হয় আর কি।কিন্তু এর পর যা বললো,তাতে আমি বেহুশ না হয়ে পাড়লাম না।
||
চলুন শুনি তিশার মা তিশাকে কি বললো_____
||
তিশা মা আমার শুধু ঘড়ি কিনে এনে এলার্ম সেট করে লাগালেতো হবে না,ঘড়ি চলার জন্য ব্যাটারিও লাগে,যা তুমি ঘড়িতে লাগাওনি।তাই বেচারা ঘড়িটাও তোমার মতো অলস হয়ে ঘুমিয়ে থাকে।তাইতো আমার এলার্মটা শুর করতে হয়।
||
আমি মার কথা শুনে আশ্চর্যের চরম সীমায়,ছি: কি লজ্জা।আমি ঘড়িটা চেক করে দেখলাম সত্যিই তো ঘড়িটাতে তো আমি ব্যাটারি লাগাতে ভুলেই গেছি।ও এখন মনে পরেছে,সেদিন আমার কাছে ঘড়ি কেনার পর টাকাই ছিলো না,ভেবেছিলাম বাসায় এসে ভাইয়াকে বা বাবাকে বলবো ব্যাটারির কথা,কিন্তু বাসায় এসেই ফেসবুকে গল্প পরতে বসে গেলাম আর মনেই ছিলো না।নিজের বোকামির উপর নিজেরি রাগ উঠছে।এই রাগে আরো ঘি ঢালছে,ড্রয়িংরুমে বসে আমার শয়তান রায়হান ভাই, আমার বোকামির কথা শুনে হাসতে হাসতে গোড়াগুড়ি খাচ্ছে।আমার মন চাইছে ওকে ঠান্ডা পানিতে চুবাই।
||
আসুন নিজের পরিচয়টা দিয়ে দি এর মাঝে,আমি তিশা,এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছি,কয়েকমাস পর পরীক্ষা দিয়ে কলেজ লাইফকে টাটা করবো।আমাকে এতোক্ষন ধরে ডাকছিলো আমার মা,একজন পাক্কা গৃহিণী। তার জীবনের একমাত্র প্যারা হলাম আমি।বাবা সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মচারী একজন,কিছুদিন পর রিটায়ার্ড হয়ে যাবেন।আর হাসতে হাসতে যে ব্যক্তিটি গড়াগড়ি খাচ্ছে তিনি হলো আমার একমাত্র বড় ভাই রায়হান,বর্তমানে টি.জি.এন কোম্পানিতে কর্মরত আছেন। এই কোম্পানিটা রায়হান ভাইয়ের জিগরি ফ্রেন্ড জিসানের।তবে রায়হান ভাই তার যোগ্যতায় জবটা পেয়েছে।
||
রায়হান ভাই এখনো হাসছে,আর হাসবেই না কেনো,আমি মাঝে মাঝে এমন বোকামি মার্কা কাজ করে ফেলি প্রায়ই।
||
||

||
মা রাগি একটা লুক নিয়ে আমার দিকে তাকালো,আমি মুহুর্তেই জেনো বিলাই হয়ে গেলাম,কি হলো মা,এমন
রাগ দেখাচ্ছো কেনো এই অবুজ পিচ্ছিটার উপর।
||
_______তিশা তোকে আমি কতোবার ডাক দিয়েছি,জানিস তুই।_______আমি মাথা নাড়লাম, সত্যিতো আমিতো শুনিই নাই,মা কখন ডাকলো।______শুনবি কি করে,একবার ফেসবুকে ডুকলেতো তোকে খুঁজেই পাওয়া যায় না।এবার কথা কম বলে,রান্না ঘড়ে যা।যা বলছি তা কর।দাঁতেদাঁত চেপে কথা গুলো বললো।
||
আমিও নাচতে নাচতে রান্নাঘরের দিকে গেলাম,ঠিক সে সময় আমার ফোনটা বেজে উঠলো,আমার বেস্টি,আমার জানেমান নিলু ফোন দিয়েছে।আমিতো ওর ফোন পেয়ে ওর সাথে কথা বলতে লাগলাম,আর ডিম গুলো চামুচ দিয়ে তুলে বাটিতে রেখে চলে এলাম।
||
কিছুক্ষন পর আমার মা জননি আমার নাম ধরে চিল্লাতে লাগলো।মনে হলো বাড়ীতে ভূমিকম্প শুরু হলো।আমি মাত্র একটু শুয়ে ছিলাম।লাফ দিয়ে উঠে দেখি মা আমার সামনে কোমড়ে কাছা মেরে,একহাত কোমড়ে দিয়ে,দাঁড়িয়ে আছে।তার মুখখানি দেখে তো আমি ভয় পেয়ে গেলাম,কেমন চন্ডিরুপ ধারণ করেছে।আমি ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে জিঙ্গেস করলাম কি হয়েছে মা,তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো।
||
মা দাঁতেদাঁত চেপে বললো____তোকে আমি কি বলেছিলাম।মনে আছে।
||
আরে থাকবে না কেনো,তুমিতো বলেছিলে ডিমগুলো নামিয়ে রাখতে আর আমি নামিয়েও রেখেছি,তাহলে এতো চেচামেচি কেনো করছো বলোতো।
মা এক কদম কাছে এসে বললো,ডিমতো নামিয়ে রেখেছিস,তাহলে চুলা কেনো বন্ধ করলি না,গাধা মেয়ে,তোর জন্য আমার নতুন বাতিলটা পুরে ছাড়খাড় হয়ে গেছে।জানিস।
||
দেখো মা প্রথমতো আমি গাধা না,গাধী হতে পারি।আর দ্বিতীয় তো তুমি আমাকে চুলা বন্ধ করতে একদমই বলোনি,শুধু পাতিল থেকে ডিমগুলো তুলে রাখতে বলেছো।আমিতো শুধু তোমার কথা রেখেছি এতে আমার কি দোষ।
||
তোর কি দোষ___ও আচ্ছা তোর কি নিজের জ্ঞান বুদ্ধি নেই,বলতো।নিজের বুদ্ধিটাকেও একটু খাটা তা না হলে জং ধরে যাবে।
||
উফফ মা যাও তো ঘুমাতে দেও,কতো সুন্দর স্বপ্ন দেখছিলাম।তুমি এসে সব গুড়েবালি করে দিলে।
_____________কি আমি এসে তোর স্বপ্নের গুড়েবালি করে দিয়েছি,দাড়া বুঝছি তুই এভাবে ভালো হবি না,তোকে এখন থেকে উঠতে বসতে মাইর দিতে হবে।আজতো তোকে আমি_________মা একটা খুরচুন নিয়ে আমাকে মারার জন্য ছুটে এলে,আমিও দৌঁড়ের উপর থাকি।এমন সময় রায়হান ভাইও অফিস থেকে বাসায় এসে পরে।আমাকে আর মাকে এভাবে দৌঁড়াতে দেখে ব্যাচারা কিছুক্ষন শোকড এর মধ্যে ডুবে থাকে।আমি রায়হান ভাইয়ের পেছনে লুকিয়ে পরি।________মা রায়হান ভাইকে সরতে বলে।________না ভাইয়া তুমি এক কদমও সরবে না,দেখো মা আমার সাথে সৎ মায়ের মতো ব্যবহার করছে।_________রায়হান ভাই মাকে ইশারা করে জিঙ্গেস করে কি হয়েছে।মা রায়হান ভাইকে সব বলে।এর পর রায়হান ভাই আমার হাতটা ধরে,শোফায় বসিয়ে নিজেও আমার পাশে বসে_________দেখ তিশা ব্যাপারটা তুই যতো ছোট করে দেখছিস ওতো ছোটনা,একটা পাতিলা পুরেছে এতে কোনও সমস্যা নেই,কিন্তু যদি আগুন লেগে যেতো,তখন কি হতো।মা ছিলো বলে,বেঁচে গিয়েছিস।তা না হলে তুই তো যেই ঘুমে থাকিস সব পুড়ে ছাড়খাড় হয়ে গেলোও খবর থাকতোনা।ঠিক বলছি।_______আমি মাথা নেড়ে হা বললাম,আসলেই একটা এক্সিডেন্ট হয়ে যেতো।আমার মাথাটা আসলেই মোটা।সেদিন রায়হান ভাইয়ের কথাগুলো আমি বুঝতে পেরেছিলাম।
হঠাৎ মায়ের চিল্লানিতে আমার ধ্যান ভাঙ্গলো।____তিশা উঠ,তারাতারি রেডি হয়ে নে।
আমি ও তারাতারি ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে নিলাম।সব কিছু নিয়ে বের হবো এমন সময় ফোনটাতে টু টু করে ম্যাসেজ আসলো।টাইম দেখেনিলাম,হাতে কিছু সময় আছে তাই ম্যাসেজ টা অপেন করলাম।
হ্যালো জানপাখি,
------------------------শুনেছি তুই নাকি বড় হয়ে গিয়েছিস।তাহলে কি আমি ধরে নেবো,এখন তুই আর চকলেট এর জন্য বায়না করিস না,উল্টাপাল্টা কথা বলে কারো মেজাজ গরম করিস না,কখন যে বোকা বোকা কাজ করিস তুই নিজেই জানিস না,তাহলে কি এসব ছেড়ে দিয়েছিস।যদি ছাড়িস তাহলে বলবো,আমার পাখিটি বড় হয়ে গিয়েছে।আচ্ছা... এখন কি শাড়ী পড়তে পারিস,জানিস তোকে শাড়ীতে দেখা আমার খুব শখ।কিন্তু দেখ তোকে শাড়ীতে কেনো,চোখেও দেখতে পাইনা এখন আমি।তুই কি জানিস পাখি,আমার মনপাখিটা তোর জন্য ছটপট করে।তোকে দুচোখ ভরে দেখার জন্য আমার চোখ দুটো শুধু তোকে খুঁজে।আমার এই অপেক্ষার প্রহর জেনো শেষই হচ্ছি না।কবে শেষ হবে বলতো,আমি যে আর পারছি না।
||
তিশা ম্যাসেজ টা পরে ফোনটা রেখে চলে গেলো,গতো দুবছর ধরে প্রতিদিন এমন অনেক ম্যাসেজ আছে তিশার কাছে,আর ম্যাসেজ করা ব্যক্তিটাকেও তিশা জানে,জানে বললে ভুল হবে শুধু চিনে।তাই ম্যাসেজ পড়ে কেমন অনুভুতি হওয়া উচিৎ ও জানেই না।যে মানুষটিকে গতো চার বছরের উপর হলো চোখে দেখে না সে মানুষটির প্রতি তার ভালোবাসার অনুভুতি কেমন হওয়া দরকার।ভালোবাসা কি তখনতো ও জানতোই না,তখন সেই মানুষটি ওর জীবনের সাথে নিবিড় ভাবে জরিয়ে পরলো।আর এখন যখন বুঝে,সে তো অনেক দূরে,আর তার দূরে থাকাই আমার জন্য ভালো।
||
||

||
______তাইনি তাহলে তুই আমার ভাইয়ের উপর ক্রাশ কেনো খেলিনা,সে তো তোর রায়হান ভাইয়ের থেকেও বেশি হ্যান্ডসাম, ডেসিং। আর সবথেকে বড় কথা তোর জন্য পাগল, তাহলে তুই আমার ভাইকে বাঁশ কেনো মারিস বলতো।ব্যাচারা তোর জন্য কতো দূরে পরে আছে।
||
________ক্রাশ খাওয়ার জন্য ব্যক্তিটাকে চোখে দেখতে হয়,বুঝলি,আর তোর ভাই চার বছর ধরে কারো নযরে আসছে না,তাহলে ক্রাশ কিভাবে খাই বলতো।আমার তো শুধু তার রাগগুলোর কথাই মনে আছে,সে রাগলে সামনে থাকা ব্যক্তিটাকে ধ্বংস করে দেয়,একটি বারও ভাবে না।এমন মানুষের থেকে দুরে থাকা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।________আচ্ছা দেখবোনি,একবার ভাইয়া আসুক,ভাইয়ার সামনে বলিস,তোর এই বড় বড় কথা।
||
______কেনো,আমি কি ভয় পাইনি তোর ভাইকে। মনে রাখিস আমার নামও তিশা,তোর ঐ ভাইকে আমার থেকে দূরে থাকতে বলবি,তা না হলে পচা পানিতে এমন চুবান চুবাবো,দশদিন গোসল করলেও শরীল থেকে গন্ধ
যাবেনা।
_____আচ্ছা দেখবোনি।এখন নামেন গাড়ী থেকে কলেজে এসে পরেছি।।
চলবে……… 

[গল্পটার জন্য আমাকে বার বার রিকোয়েস্ট করা হচ্ছে,তাই অবশেষে দিয়ে দিলাম।কমেন্ট করতে ভুলবেন না।
---------(#season_2)

||
||
এস এস সি পরীক্ষার পরই জিসানের পরিবার থেকে ফোনটা গিফ্ট পেয়েছিলাম।ফোনটা খুব দামি ছিলো তাই প্রথমে গিফ্টটা নিতে একদমই মন চায় নি,কিন্তু জিসানের মা রাবেয়া বেগম এর কারনে না নিয়ে পাড়লাম না।কারন আমাকে মেয়ের মতো আদর করে।কিন্তু আমি খুব ভালো করেই জানি গিফ্টটা আংটি নিজের হাতে দিলেও, গিফ্টটা অন্য কেউ পাঠিয়েছে।সে দিন বাসায় এসে মোবাইলটা অন করার সাথে সাথে একটা ম্যাসেজ এসেছিলো আমার ফোনে।
||
||
""congratulation জান,অনেক অনেক শুভেচ্ছা আমার পিচ্ছি পাখিটাকে।জীবনে আরো একধাপ এগিয়ে আসলি আমার কাছে,তোকে পাবার অপেক্ষাটাও কিছুটা কমে আসলো।আমি জানতাম আমার জানপাখিটা এভাবেই একদিন অল্প অল্প করে আমার দিকে এগিয়ে আসবে।এখন হয়তো পাখিটা আমার কিছুটা তো বড় হয়েছে।এখনতো তাহলে আমায় একটু বুঝবি।নাকি এখনো আগের মতো বাচ্চামি করে আমাকে ভুলে যাবি,এমন করার চিন্তাও করিস না পাখি।তাহলে পথভোলা পাখিকে আমি নীড়ে বেধে রাখবো।তখন কিন্তু তোর জন্য ভালো হবে না,কারন
আমার মনটা আজকাল বিষন বেহায়া হয়ে যাচ্ছে জানিস!!।তোকে দেখার জন্য,একবার হাত দিয়ে তোকে ছোয়ার জন্য,তোকে একটু জরিয়ে ধরার জন্য।
জানিস,পাখি!!আজ আমি বিষণ ক্লান্ত। এখন তোর কাধে মাথা রেখে ক্লান্ত গুলো দূর করার জন্য তোকে খুব প্রয়োজন ,রাতে শান্তির একটু ঘুমানোর জন্য, তোকে খুব প্রয়োজন।আমার এই প্রয়োজন গুলো বাক্সে বন্ধ করে রেখেছি,যাতে আমি পাগল না হয়ে যাই।একদিন তোর সামনে আমার এই প্রয়োজনের বাক্সটা খুলবো,আর এক এক করে সব অপূর্ণ ইচ্ছাগুলো তোকে দিয়ে পূর্ণ করাবো।মনে রাখিস!!!
শোন!!!তোর পিঠের মাঝবরাবর তিলটা আজকাল আমাকে খুব ঝালাচ্ছে জানিস!!, সাবধান করে দে,ঐ বেহায়া তিলকে আমার ঘুমে জেনো বার বার এসে না জালায়,তা না হলে আমি এসে ওকে পুড়িয়ে ফেলবো।
কারন আমি পুড়ছি,বিষন ভাবে পুড়ছি,মনে রাখিস আমার দহনে তোকেও আমি একদিন পুড়াবো।
আমি দূরে আছি বলে,মনে করিস না,আমি তোর ছায়া হয়ে তোর সাথে চলি,তোর ওতোটাই কাছে,ঠিক হ্রদয়ের পাশে।
হুমম,সেদিনের এই ম্যাসেজ টা আমাকে জিসানই পাঠিয়েছিলো।কি অদ্ভুত মানুষ,ম্যাসেজ এর ভেতরেও আমাকে ভয় দেখায়।ম্যাসেজটা পরে আমি দুদিন শোকড এর মধ্যে ছিলাম।
||
||
এভাবে প্রতিদিন তিশাকে ম্যাসেজ এর মাধ্যমে নিজের মনের অনুভুতি গুলো প্রকাশ করতো জিসান। কারণ তিশা এই চার বছরে একটি বারও ফোনে জিসানের সাথে কথা বলেনি।আর বলবি বা কি করে, সে মানুষটিকে দেখলে তিশার ভয়ে হাতপা কাপাকাপি শুরু হয়ে যায়,কথা বলতে গেলে গলা মনে হয় কেউ চেপে ধরে রেখেছে।সে মানুষটি থেকে দূরে থাকাই ভালো মনে করতো তিশা।কিন্তু তিশা জানেই না তিশার এই দূরে থাকাটা জিসানের ভেতরের যন্ত্রনা টা আরো অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে,আর তিশাকে দিয়েই একদিন জিসান তার সব যন্ত্রনা দূর করবে।
||
||

_____রায়হান অবাক চোখে তিশার দিকে তাকিয়ে,কি বলিস,তোর স্যারের বয়স মিনিমাম ৪০-৪৫ হবে।এখন বাচ্চা, কিভাবে পসিবল। _____ওমা স্যারের বয়স হয়েছে বলে কি হয়েছে।বাচ্চা তো উনি জন্ম দেয়নি,দিয়েছে,উনার বৌ।আর উনার বৌয়ের বয়সও কম,তাহলেও সমস্যা কি।______রায়হান আর কিছু বললো না,জানে এই মেয়েটা কথা ঘুড়াতে পটু।
তিশাও আবার চকলেট খাওয়াতে মনোযোগ দিলো।_____রায়হান যাওয়ার সময় বলে গেলো,এতো চকলেট খাইস না,একদিন ফেটে যাবি।রায়হানের কথা শুনে তিশা রেগে ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দিলো ওর ভাই যাওয়ার সাথে সাথে।এমনেই মেঝাজ গরম তার উপর আবার এসব কথা,এখন কি আমি একটু শান্তি মতো কিছু খেতেও পারবো না,যত্তোসব!!!
||
রায়হান ফোনটা কানে দিয়ে,___শুনলি,এটাকে তুই পিচ্ছি বলবি,শয়তানের খুটা হয়েছে।দিন দিন ওর বান্দরামী বেড়েই যাচ্ছে।আমাকে কিভাবে বোকা বানালো,ইয়ার আর একা সামলাতে পারবো না।তুই তারাতারি আয়।
||
______ফোনের ওপর পাশ থেকে এতোক্ষন রায়হান ও তিশার কথাগুলো শুনছিলো জিসান।এতোক্ষন হাসছিলো কথাগুলো শুনে।তুই চিন্তা করিস না, ওকে কিভাবে লাইনে আনতে হবে আমি ভালো করেই জানি।ফোনটা রেখে দিলো জিসান।
||
আজ চার বছর ধরে জিসান প্যারিস শহরে বসবাস করছে।তিন অক্ষরের একটি ছোট শব্দ "প্যারিস"।তবে এর মাঝে লুকিয়ে আছে সীমাহীন ভালোবাসা,হাজারো অনুভূতি আর শত শত স্বপ্ন পুরণ করার ক্ষমতা,সব গুণাগুণ মিলিয়ে প্যারিসকে তাই ভালোবাসার শহর বলা হয়।যদি প্রশ্ন করা হয় পৃথিবীর সবথেকে ভালোবাসাময় ও রোমান্টিক শহর কোনটি বিনা দ্বিধায় মুখে এসে পরবে প্যারিস। এই শহরটি কারো কাছে,আলোর শহর আবার কারো কাছে ভালোবাসার শহর।কিন্তু জিসানের কাছেতো এই শহরটিকে অভিশপ্ত শহর মনে হয়।কারণ এই শহরে এসে ও ওর ভালোবাসার মানুষটি থেকে এতো দূরে।তবে অনেকে মনে করে,খুব ভাগ্যবান মানুষ হলে নাকি প্যারিস শহরে যেতে পারে।কিন্তু জিসান নিজেকে ভাগ্যবান মনে করে না,কারন এমন রোমান্টিক জায়গায়ও জিসানের ভালোবাসার মতো কেউ নেই।তবে মনে সুপ্ত আসা একদিন এই রোমান্টিক শহরে ভালোবাসার মানুষটির হাত ধরে হাটার।সেদিন রাগ টাকে যদি নিয়ন্ত্রণ করা যেতো,তাহলে আজ এই শহরে নিজেকে একা মনে হতো না জিসানের।
||
সেদিনের রাগের মাথায় করা ভুলটার কারনে আজ তিশা থেকে এতোটা দূরে।এক প্রকার বাধ্য হয়েই সেদিন দেশটা ছাড়তে হয়েছিলো।তা না হলে নিজের জীবনের সাথে সাথে রায়হান এর জীবনের সংকটও বেড়ে যেতো।আর তিশাকে হয়তো সারা জীবনের জন্য হারাতে হতো।কিন্তু এখন আর কোনও বাধা নেই,তিশাকে পাবার পথে এখন যে বাধাই আসুক তার জন্য জিসান এখন একাই যথেষ্ট উপচে ফেলার জন্য।কারন গতো চার বছরে জিসান নিজের যোগ্যতায় অনেক কিছু হাসিল করে নিয়েছে,তাইতো এখন জিসানকে কেউ বাধা দেওয়ার সাহস পাচ্ছে না দেশে আসার জন্য।
||
"আমি আসছি জান,তোর কাছে,তোর এতোটা কাছে,যেখানে তোর নিশ্বাসের শব্দ গুলোও আমি শুনতে পাবো।অনেক পালিয়েছিস,অনেক ঝালিয়েছিস,এবার তোকে ধরা দিতেই হবে এই জিসানের বাহুডোরে।যেখান থেকে তুই চাইলেও মুক্তি পেতে পারবি না।অনেক উড়েছো,জান।আমি আসছি তোমার পাখাগুলো কেটে,আমার খাঁচায় প্রবেশ করাতে।"
আমি আসছি....
দেয়ালে টাঙ্গান ও তিশার একটি ছবির দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলছে জিসান।ঠোঁটে তার টেডি স্মাইল।

||
কলেজ শেষে তিশা ও নিলু কথা বলতে বলতে নিলুদের বাসার দিকে যাচ্ছে,নিলুকে নিয়ে আবার বাসায় যেতে হবে।হঠাৎ সামনে আবির এসে হাজির,(আবির নিলার কাজিন)_____হায় তিশা, কেমন আছো।______হ্যালো আবির ভাইয়া।_____ও হো তিশা,তোমাকে কতোবার বল্লাম এসব ভাইয়া টাইয়া একদম বলবে না ভালো লাগে না,you know we're just friends,so why call a brother.
||
______আরে আবাল মানুষ,তোর ভালোর জন্যই বলছি,তুই যদি জানতি,আমার আশেপাশে হিডেন ক্যামেরা আছে,যা শুধু আমাকে নযরে রাখার জন্য,সেই ক্যামেরায় তুই বন্ধি হলে,এই সুন্দর চেহারা আফ্রিকার বান্দরের মতো হয়ে যাবে।তখন আমি কেনো,কোনও মেয়েই আর তোকে দেখে পাগল হবে না। তোকে তখন চিড়িয়াখানায় রাখতে হবে।তিশা মনে মনে কথা গুলো ভাবছে।
||
_______তিশাএএএএ,কি ভাবছো।_______কিছু না,আসলে....।বাদ দেন আপনাকে না বলছি,এভাবে পাবলিক প্লেসে আমার সাথে কথা বলতে আসবেন না,ব্যাপারটা একদমই আমার পছন্দ না।আর ভাইয়ার কানে গেলে,আমার কপালে শনি নেমে আসবে।
||
_____আরে এতো ভয় পাও কেনো, তোমার ভাইকে।আর এখন তোমার ভাইতো অফিসে আমি জানি।তাহলে দেখার তো কোনও চান্সই নাই।সো নো টেনশন। _____আপনে বুঝবেন না এসব,এখন বলুন,কিছু বলার থাকলে।_____বলতে না,তোমাকে কিছু দিতে এসেছি।______কিইই!!!
||
______দেখো তোমার পছন্দের ওয়াইট রোজ।_____ওওও ওয়াও।থাংকিউ ভাইয়া, এগুলো আসলেই অনেক পছন্দ আমার।
_____ও হো তিশা,আবার ভাইয়া,
(হে অবুঝ বালিকা...আমি হতে চাই তোমার সাইয়া,তুমি কেনো ডাকো বার বার আমাকে ভাইয়া। আবির মনে মনে কথাটা বলছে)
তিশার মুখে বার বার ভাইয়া ডাকটা ওর বুকে মনে হয় তীরের মতো বাজে,কারন সেতো তার এই অবুঝ বালিকাটার প্রেমে পরে গেছে।কিন্তু এই ভাইয়া ডাকটার কারনে তিশাকে তার মনের কথা বলতে পারছে না।তিশা যদি কিছু মনে করে।ভয় পায় আবির তিশাকে হারানোর।
তিশা ফুলগুলো নিয়ে নিলুর সাথে চলে গেলো,আর আবির নিরাশ হয়ে ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে,আজ কিছু বলার ছিলো আবিরের,কিন্তু আজও তার মনের কথা মনেই রয়ে গেলো।
||
||

সব আত্মীয় স্বজন দিয়ে বাড়ীটা ভরপুর হয়ে পরেছে।সবাই আপ্যায়নে ব্যস্ত জিসানদের পরিবারদের নিয়ে,আমি জার্নি করে খুব টায়ার্ড।তাই সুযোগ বুঝে রুমে চলে আসি,আর ফ্রেস হয়ে বিছানায় শরীলটা এলিয়ে দি।তখনি ফোনের টু টু শব্দটা আমাকে খুব বিরক্ত করছে,ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি,বড় বড় অক্ষরে লিখা_____


ম্যাসেজটা পরে তিশা বুজতে পারলো না কে???কারন নাম্বারটা আননোন নাম্বার,প্রথমে তিশা মনে করেছিলো হয়তো জিসান পাঠিয়েছে।কিন্তু নাম্বারটা বাংলাদেশের, তাহলে কে আমাকে এমন উদ্ভট ম্যাসেজ পাঠালো।
চলবে………
[কেমন হচ্ছে একটু জানাবেন।আপনাদের কমেন্টগুলো পড়ার আসায় থাকি আমি।নেক্সট, নাইচ না বলে,মতামত দিন।]
-----------(#season2)

সকালের প্রথম সূর্যেই সবাই জেগে উঠেছে।আর আমি এখন রুপকদা দের বাড়ীর ছাদে দাঁড়িয়ে আছি।
||
রুপকদাদের গ্রামটা অনেক সুন্দর,চারদিকে সবুজের মেলা, ধানের মাঠ,পাশে কলাগাছ এসবই চোখে দেখার মতো।বাড়ীর পেছনে বেশ কিছু নাম না জানা গাছ আছে,ছোটখাটো জঙ্গলের মতো লাগে আমার।এই গ্রামে একটা শুটিং স্পোর্ট ও আছে,প্রতি মাসে কোনও না কোনও নাটক বা সিনেমার শুটিং নাকি চলতেই থাকে।অনেক মানুষ তখন সেখানে ভিড় জমায়।পর্দার সেসব নায়ক নায়িকাদের দেখার জন্য।কাল থেকে রুপকদার সাথে একবারও দেখা হয়নি,আজও নাকি সকাল সকাল বের হয়ে গিয়েছে কোন স্পেশিয়াল গেস্ট আসবে তাকে রিসিভ করতে।
||
হঠাৎ নিশি ও নিলা দুজনে এসে পেছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরে,ওদের এমন আচানক আসার কারনে আমি প্রথমে ভয় পেয়ে যাই।
_____কি রে এভাবে কেউ কাউকে ভয় দেখায়।______আমরা আসছি তুই বুঝতে পারিস নি তিশা।কি চিন্তা করছিস।
_____চিন্তা না, কেমন জানি অদ্ভুত একটা ফিলিংস তারা করছে সকাল থেকে,বুঝতে পারছি না।_______তাইনি,এই তুই আবার আমার ভাইকে স্মরণ করেছিস নাতো।
______তিশা মুখেচোখে বিরক্ত ভাব নিয়ে...তোর কি মাথা খারাপ নিশি,আমি আবার উনাকে স্মরণ করবো,আমার কি আর কোনও কাজ নেই।আমিতো পারলে তোর ওই উগান্ডা ভাইকে আফ্রিকার জঙ্গলে পাঠিয়ে দিতাম।
||
_____কেনোরে এমন বলিস কেনো।ভাইয়া কিন্তু তোকে অনেক ভালোবাসে তিশা।দেখলিনা চার বছর আগে তোকে হারানোর ভয়ে কি কাজটা করলো।আর তোর ভালোর জন্যই সব কিছু ছেড়ে কতো দূরে পরে আছে। আমাদের ছেড়ে গিয়ে কিন্তু ভাইও কস্টে আছে জানিস!!!চার বছর হয়েছে ভাইকে আমরা কেউ দেখিনা।।নিশি কিছুটা কস্ট নিয়ে কথাটা বললো।
||
_____ বলবো নাতো কি করবো, তুই বল।উনিতো চলে গেছে,কিন্তু আমাকে একা রেখে যায় নি,আমার চার পাশে নিজের একটা জাল বুনে গেছে,আর সেই জাল থেকে নিজেকে না মুক্ত করতে পারছি,না শান্তিতে থাকতে পারছি।দেখিস না,তোর ওই যমরাজ ভাইয়ের জন্যতো মরতে গেলেও শান্তিমতে মরতে পারবো না।
_________আচ্ছা এসব বড় বড় কথা ভাই এলে ভাইয়ের সামনে করিস।আবার ভয়ে পালিয়ে যাবি নাতো দেখিস।হ্যা হ্যা করে হেসে উঠলো নিশি।
______হুম,নিশির কাধে মাথা রেখে,পালাতে চাইলে কি তোর ভাই পালাতে দেবে।আমাকে বেধে রাখবে,কোনও ভরসা নাই।সাইকো একটা!!
____হুমমম, তা ঠিক বলেছিস।শুধু দোয়া করি ভাইয়ের রাগটা যেনো আগের থেকে একটু কমে যায়,তা না হলে দোস্ত ……………থাক। তোকে বলে ভয় দেখাতে চাই না।নিশি মনে মনে ভাবছে।
||
নিশি ও তিশা যখন কথা বলতে ব্যস্ত তখন নিলুর চোখ গেলো গ্রামের সরু পথ দিয়ে আসা ব্লাক রং এর বিএমডাব্লিউ গাড়ীটার দিকে।রুপকদের বাসার দিকেই আসছে,গাড়ীটা বাড়ীর ভেতরে প্রবেশ করেছে।
এই তিশা, নিশু দেখ কে এসেছে।
_____কে????
||
||

_____হুম।
||
গাড়ীর পেছনের দরজা খুলে রুপক নেমে আসলো।সামনে ড্রাইভিং সিটের পাশের দরজা খুলে নেমে আসলো রায়হান,ওয়াইট কালারের শার্টটিতে রায়হান কে খুব চার্মিং লাগছে,নিশির কাছে________উফফ!!মুখ দিয়ে একটু শব্দ করলো নিশি,আর চোখ দিয়ে যেনো গিলে খাচ্ছে রায়হান কে।দেখ আমার হিরো এসে পড়েছে,একটু লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে।
____তিশা নিশির কান্ড দেখে হাসতে হাসতে সামনে তাকায়,আর এবার যা দেখে তা দেখে ব্যাচারীর ছোটখাটো হার্ট ফেল হয়ে যাবার কথা।সাথে সাথে মুখের হাসিটা মনে হয় কেউ জোড় করে বন্ধ করে দিয়েছে,এমন লাগছে।কারন ওর যমরাজ ওর সামনে,এটা কি করে হলো,কেনো হলো,কিভাবে হলো।এমন আবলতাবল বলছে।কারন_____
||
রায়হান নামার পর পরই ড্রাইভিং সিটের দরজা খুলে নেমে আসলো একটা সুদর্শন পুরুষ, ব্লাক কালারের শার্ট পড়নে,হাতাটা কনুই পর্যন্ত ভাজ করা,সামনের দুটো বোতাম খোলা,আর এতে লোমেভরা ফর্সা বুকটা কিছুটা দেখা যাচ্ছে তার।হাতে ব্রান্ডেড ওয়াচ,আর সিল্কি চুলগুলো বাতাসের তালে তালে উড়ছে,মনে হয় খেলা করছে।চোখে সানগ্লাস,আর মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি তার সুন্দর মুখটাকে জেনো আরো বেশি আকর্ষণ করে তুলছে,এ যেনো একটা এটোম বোমা।ক্রাশ কেউ খেতে না চাইলেও এই ব্যক্তিটা কে দেখে না খাওয়ার উপায় নেই।কিন্তু তিশা শোকড!!!!!!!
||
জিসান এতোক্ষন গাড়ীতে বসেই বসেই ছাদে দাঁড়িয়ে থাকা তিশাকে দেখছিলো,দীর্ঘ চার বছর পর দেখলো তিশাকে।জিসানের কাছে মনে হলো ওর হার্ডটার ধুপ ধুপ শব্দ বেরে যাচ্ছে হঠাৎ ,একে শান্ত করতে না পারলে হয়তো আজ ওর মৃত্যু নিশ্চিত।আর এটাকে শান্ত করার একমাত্র ঔষুধ আছে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সেই পিচ্ছি পরীটার কাছে।
জিসান গাড়ী থেকে নেমে সানগ্লাসটা খুলে বুকের খোলা সার্টের সামনে রাখলো,ছাদের দিকে তাকিয়ে একটা বাকা হাসি দিলো।
||
জিসান ভাইয়াএএএএএএ,_______নিশির চিৎকারে তিশার ধ্যান ভাঙ্গলো।নিশি দৌঁড়ে চিৎকার দিতে দিতে নিচে গিয়ে জিসানকে জরিয়ে ধরলো,জিসানও এতোদিন পর বোনকে দেখে কিছুটা আবেগময় হয়ে পড়লো।এতোক্ষনে সবার কানে পৌঁছে গেলো জিসান এসেছে।তাই সবাই বাড়ীর বাহিরে বের হয়ে গেলো দেখতে,আসলে ঘটনা সত্য কিনা।
____জিসানের মাও কান্না করে দিলো জিসানকে এতো বছর পর দেখতে পেয়ে।সবাই সারপ্রাইজ!!!! আর সবাইকে সারপ্রাইজ দিতেই জিসানের এখানে না বলে আসা।শুধু রায়হান ভাই আর রুপকদা জানতো জিসান আসবে।সবার সাথে কুশলবিনিনয় করে জিসান।
এরপর সবাই এক প্রকার টেনে বাড়ীর ভেতরে নিয়ে গেলো,জিসানকে।আর জিসানের নযর তখনও বাড়ীর ছাদে তিশার দিকে।
||
তিশা মনে হয় এখনো কোনও ঘোরের মধ্যে আছে,ভাবছে হয়তো স্বপ্ন দেখছে।কিন্তু কি ভয়ানক স্বপ্ন,এমন স্বপ্ন তো স্বপ্নেও দেখতে চায়না তিশা।
_____হঠাৎ নিলুর ধাক্কায় ধ্যান ভাঙ্গলো,কিরে তুই এমন কাঁপছিস কেনো,চল নিচে যাই।জিসান ভাইয়া এসেছে ইয়ার তোর হিরোটা এতো হ্যান্ডসাম কেনোরে,আমিতো চোখই সরাতে পারছিলাম না তার থেকে।
______আমি নিলুর দিকে রাগি ভাবে তাকালে,ব্যাচারী ভয় পেয়ে বলে,আরে হিরো তো তোরই,আমাদের তো ভাইয়া লাগে।এখন চল নিচে,আমাকে একপ্রকার টেনে নিয়ে গেলো।
||
||

________জিসানের মা সাথে সাথে জিসানের কপালে একটা চুমু দিয়ে দিলো।
||
||
ড্রয়িংরুম এ বসে সবাই যে যার সাথে গল্প করতে ব্যস্ত,আর জিসান উনি তারিনকে কোলে নিয়ে সবার সাথে কথা বলছে আর আড় চোখে বার বার আমাকে দেখছে, আর আমি পালানোর রাস্তা খুঁজছি।তখনি রায়হান ভাই আমাকে দেখেই হাত ধরে তার পাশে বসালো।আর এখনতো পালাতেও পারবো না।কিছুক্ষন পর সব বড়রা যার যার কাজে চলে গেলো।আশ্চর্যজনক বিষয় হলো,জিসান সবার সাথে কথা বললেও আমার সাথে কোনও কথা বলে নি।এদিক দিয়ে ভয়ে আর টেনশনে আমার শরীল দিয়ে ঘাম ছুটছে।কারন এই চার বছর উনি হাজারবার চেস্টা করেছে,ফোনে একবার আমার সাথে কথা বলার।কিন্তু আমিই কোন না কোনও বাহানায় তার ফোনটা রিসিভ করিনি।তাই উনি রেগে আছেন আমার উপর আমি জানি।আমাকে তো যথারীতি হুমকিও দিয়ে দিয়েছে,উনি যেদিন দেশে আসবে সুদ আসলে সব তুলে নিবে।
||
||
______কিরে তিশা তুই এতো ঘামছিস কেনো।(রুপকদা)
আমি ভ্যাবলার মতে কিছুক্ষন তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।কি জবাব দেবো ভেবে পাচ্ছি না।হঠাৎ মা সবাইকে নাস্তার জন্য ডাকলো।বাড়ীর বড়দের নাস্তা অনেক আগেই হয়ে গিয়েছে বাকি ছিলো শুধু ছোটরা।রায়হান ও জিসান ভাইও নাস্তা করতে বসে গেলো।রুপকদা আমাকে জিঙ্গেস করে আমি নাস্তা করেছি কিনা,আমি মাথা নেড়ে না বললে,উনি তার পাশের চেয়ারে বসতে বলেন,নাস্তা করার জন্য।জিসান ভাই আমার সামনের চেয়ারে বসেই নাস্তা করছেন।একবার তার দিকে তাকাতে গেলে দেখি উনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন।তার চোখে চোখ পড়ায় আমি সাথে সাথে চোখ নামিয়ে ফেলি।এই চোখের চাওনী একদিন নিশ্চিত আমাকে খুন করে ফেলবে।কোনও রকম নাস্তা করে উঠে দাঁড়ালে,সামনে মা দাঁড়িয়ে দাঁতেদাঁত চেপে বললো
||
||
_____তিশা তুই এসব কি পরে ঢ্যাং ঢ্যাং করে ঘুড়ছিস বিয়ে বাড়ীতে,মায়ের কথায় নিজের দিকে তাকালাম,সত্যিতো!!!
আমি পায়জামা,সালোয়ার, ওড়না,তিন কালারের তিনটা পরেছি।কাল এতো বেশি টায়ার্ড ছিলাম যে ব্যাগ খুলে হাতে যা পেয়েছি তাই পরে নিয়েছি।আমি একটা জোড় পূর্বক হাসি দেয়ার চেস্টা করলাম,কি লজ্জা। সকাল ধরে আমি এসব পরেই ঘুড়ছি।
||
_____মা তোমার মেয়েকে দেখে মনে হচ্ছে এই বাড়ীর কাজের লোক।দেখোনা নিজের কি হাল করে রেখেছে।
||
আমি অসহায় ভাবে দাঁড়িয়ে রায়হান ভাইয়ের কথাগুলো শুনছিলাম,কি অপমানটা করছে আমায়,মাঝে মাঝে মনে হয় এটা কি সত্যি আমার ভাই।
হঠাৎ জিসানের দিকে চোখ পরে,উনি আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।এ তাকানোর কারন আমি বুঝে উঠতে পারছি না।উনি এমন শান্ত কেনো,নাকি বিদেশে গিয়ে ভালো হয়ে গেছে।কিন্তু আমি ভুল ছিলাম,এই জন্মে উনি কোনও দিনও ভালো হবে না।
||
||

উনি মুখ থেকে হাতটা সরিয়ে ফেললো।
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিচ্ছি।উনি আমার একদম কাছে আমাদের মাঝে হয়তো এক ইঞ্চি ফাক আছে।আমাকে উনি উপর থেকে নিচ বরাবর ভালো করে দেখলো একবার।এর পর মুখের সামনে এসে পড়া চুলগুলো কানে গুজে দিলো।আরো ও একটু কাছে এসে,ফিসফিসিয়ে বললো,শরীলের দিকেই শুধু বড় হয়েছিস, বুদ্ধির দিক দিয়ে সেই আগের পিচ্ছি তিশাই রয়ে গেলি কিরে।
||
উনি এতোটা কাছে আসায়,আমার হ্রদস্পন্দন এর ক্রিয়া চক্র মনে হয় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে,আর কিছুক্ষণ পর আমি নির্ঘাত মারা যাবো।
||
উনি আমার কপালে শব্দ করে গভীর একটা কিস করে,আমি কিছুটা কেঁপে উঠি।উনি আবার কানের কাছে গিয়ে বলে,অনেক ঝালিয়েছিস এই চারবছরে,এতোদিন পিচ্ছি ছিলি বলে ক্ষমা করে দিয়েছি,কিন্ত এখন,সব তুলবো আমি।আমাকে নিজের আসক্তে মাতাল করে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য তোকে অনেক ভুগতে হবে জান।
||
আমার একটা হাত হাতে নিয়ে নিজের গালে স্পর্শ করায়।
||
আমার মাতাল করা ভালোবাসায় তোকেও আমি মাতিয়ে তুলবো।আমার দুচোখে যে নেশা তুই ছড়িয়েছিস,সেই নেশার চাদরে তোকেও আমি জড়াবো।পাগল এতো দিন একা আমি ছিলাম,এই পাগলের পাগলামি গুলো তোকে ও দেখাবো।
____আমি তখনো চোখদুটো খিঁচে দাঁড়িয়ে তার কথা গুলো শুনছিলাম।কিন্তু শরীল মন সব অবশ হয়ে যাচ্ছে,উনার সামনে দাঁড়িয়ে থাকাই যেখানে কস্টকর আমার জন্য।সেখানে উনি আমার এতো কাছে, জিসান কানে একটা কিস করে।এর পর নিরবতা একদম।আমি চোখ খুলে দেখি কেউ নেই সামনে।এ কি কই গেলো।আমি কি স্বপ্ন দেখিছি এতোক্ষন, একদম না।উনিই ছিলেন এখানে।আমি সিউর।
||
||

__রায়হান বিরক্ত শুরে,এই তুই এখানে কি করছিস।
__নিশি বিশাল একটা হাসি দিয়ে,আমিতো দেখছি।
____তো কি দেখছিস এখানে, দেখার মতো কি এমন আছে,যার কারনে চোরের মতো পেছনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে হচ্ছে,এক মিনিট.... এই লাইটিং ম্যানদের মধ্যে কারো আবার প্রেমেটেমে পড়েছিস নি তুই আবার,সত্যি করে বলতো।
_____রায়হানের এমন কথায় নিশি কি রিয়েক্ট দিবে বুঝতে পারছে না,শুধু চিন্তা করছে,রায়হান ভাই এমন একটা কথা কিভাবে বলতে পারলো, আমার পছন্দ কি এতোই খারাপ।কি সাংঘাতিক মানুষ।নিজে দুধ, চিনি ছাড়া চা বানিয়ে ফেলছে,এখন সেই তেতো চা আমাকে গিলতে বলবে।
_____কি রে কথা বলছিস না কেনো।
_____ছিঃরায়হান ভাই কিসব বলছেন, আমার পছন্দ এতোই খারাপ না....বুঝলেন।
____রায়হান হাতের ফোনটা পকেটে রেখে,তা তো দেখতেই পাচ্ছি।
_____কি দেখতে পাচ্ছেন।
_____দেখতো তুই কি পড়ে আছিস।ছেলেদের মতো পেন্ট,ফতুয়া পড়ে আছিস।তকেতো আমার মেয়ে মেয়ে মনেই হয়না।এই তোর পছন্দ।তোর থেকে সুন্দর লাগছে,দেখ আমাদের জমিলা কে।(জমিলা বারান্দায় বসে মশলা বাটছিলো।)
||
রায়হানের কথা শুনে জমিলা বারান্দা দিয়ে রায়হানের দিকে তাকিয়ে তার পান খাওয়া বত্রিশটা দাঁত বের করে হাসি দিলো।
||
আচ্ছা জমিলা যদি তার এই পান খাওয়া লাল লাল ঠোঁট দিয়ে রায়হান ভাইকে কিস করে,তাহলে রায়হান ভাইয়ের ঠোঁট দুটো পানের পিকে লাল হয়ে যাবে নাতো,তখন দেখতে কেমন লাগবে,জমিলাতো ইতি মধ্যেই রায়হান ভাইয়ের প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে পরে গেছে,তাইতো বত্রিশটা দাঁত বের করে হাসছে।
নিশি জমিলার হাসির রহস্য বুঝে নিজেও খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো,হাসতে হাসতে রায়হান এর উপর গিয়ে পড়লো।
___এই তুই কি করছিস,আর এভাবে হাসছিস কেনো।ফাজিল মেয়ে।আমাকে কি তোর জোঁকার মনে হয়,এখুনি এখান থেকে যাবি, না হলে থাপ্পড় দিয়ে দাঁত সব ফেলে দেবো।
দাঁতেদাঁত চেপে রায়হান রাগে কথাটা বলে।
____রায়হান কে রাগতে দেখে নিশি কিছুটা চুপ হয়ে হন্তদন্ত হয়ে বাড়ীর দিকে দৌড় দিলো।

||
আমি তড়িৎ গতিতে মেহেদি আর্টিস্ট করা মেয়েটির কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম।তখন মেয়েটি হাতের ইশারা করে জিশান কে দেখিয়ে দেয়।
_____জিসান আমার দিকে তাকিয়ে এক চোখ টিপ মারে।
কি অসভ্য লোকটা।জিসান নাকি মেয়েটিকে বলেছে আমার হাতে উনার নামটা লিখে দিতে।কি আশ্চর্য!! আমাকে একবার জিঙ্গেস করার প্রয়োজনও মনে করলো না।এমন কেউ করে।
বাড়ীর কেউ দেখলে আমার হাতে উনার নাম কি বলবো আমি।কি লজ্জাটা না পেতে হবে___সবার সামনে।উফফ!!!
||

||
___রুপদাকেও সব কাজিনরা ধরে মেহেদি দিয়ে দিয়েছে। কারন রুপকদা নিজের বিয়েতে নিজেই নাকি মেহেদি দিবে না।এটি নাকি মেয়েদের দেয়ার জিনিস,তাহলে সে কেনো দেবে।কিন্তু তার কথা কেউ তোয়াক্কা না করে মেহেদি অবশেষে দিয়েই দিলো।
||
এসবের মাঝে একটা মজার ঘটনা হলো,জিসানকে দেখে রুপকদার কাজিন আশা আপু বিষন ভাবে ক্রাশ খাইছে।আশা আপু রুপকদার মামাতো বোন।অবশ্য উনাকে প্রথম দেখায় বাড়ীর সব মেয়েরাই এমনেই ক্রাশ খাইছে,কিন্তু আশা আপু একটু বেশি সিরিয়াস মনে হয়।তাই সবাইকে নাকি শাসিয়ে বলছে,জিসানের দিকে নাকি নযর দিতে না।তাহলে সবার খবর আছে।আমরা যতোগুলো মেয়ে আছি বিয়ে বাড়ীতে তার মধ্যে আশা আপুই সবার বড়।এবার অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে।তাই তার ক্রাশ কে কেউ নযর দিতে পারছে না।কিন্ত সেতো আসল ঘটনা জানেই না,জানলে কি করবে আল্লাহই জানে!!!
||
আজ অনুষ্ঠানে ও জিসানের আশেপাশের ঘুরতে দেখেছি,কয়েকবার সেধে সেধে কথা বলতেও দেখেছি, জিসান অবশ্য যতোটা পারছে এড়িয়ে চলছে।কিন্তু মেয়েটা চিপকু টাইপের।ব্যাপারটা আমার বিষন মজা লাগছে।কিন্তু জিসানের রাগ সম্পর্কে আশা আপুর ধারনা নেই,মেজাজ গরম হলে,থাপ্পর দিয়ে গাল লাল করে ফেলবে।উনার কোনও ভরসা নেই।
||

||
কেউ একজন আমার চুলগুলো খুব যত্নের সাথে পিঠ থেকে সরিয়ে এক কাধে রাখলো।কেনো জানি তার স্পর্শে আমার শরীলে শিহরণ জেগে উঠলো।আমি বুঝতে পারলাম এটা নিলার হাত না,তাহলে কে?
||
আমি লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম।পেছনে ঘুরতে ঘুরতে বললাম,কে???,এতো বড় সাহস হয় কি করে আমাকে টাচ করার।
||
সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তিটাকে দেখে আমার চোখ চড়কগাছ।একি আ...আ..পনে এখানে।
_____ কেনো অন্য কাউকে আশা করেছিস তুই।(জিসান)ভ্রুটা কুচকিয়ে।
____আ...আমি ভেবে এ ছিলাম নিলা এসেছে তাই।আমি এখনো তার দিকে তাকাতে পারছি না।
||
জিসান অনেকক্ষন ধরে তিশাকে নিচে খুঁজাখুঁজির পর যখন পেলো না,তখন উপরে আসলো ছেক করতে।কারন জিসান ভালো করেই জানে তিশা এখন একটু অভিমান করে বসে আছে।তাই ওকে খুঁজতে এসেছে।
||
জিসান তিশার সামনে এগোতে থাকলে তিশাও ভয়ে পিছিয়ে যায়।আর পেছনের আলমারীর সাথে আটকে যায়।জিসান তিশার কাছে এসে কোমড় টা ধরে ঘুড়িয়ে ফেলে।ব্লাউজের হুকটার দিকে হাত বাড়ালে,তিশা বাধা দেয়_______থাক লাগবে না।আমি এখনি চেন্জ করে ফেলছি।
_____তোকে কি আমি জিঙ্গেস করেছি,লাগবে কিনা।তাহলে কেনো নিজের ব্রেনে এতো চাপ দিচ্ছিস। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকবি।
||
হুকটা ঠিক করার সময় জিসানের হাতের স্পর্শে তিশা বার বার কেপে উঠছে।চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে।হঠাৎ তিশার মনে হলো পিঠে কারো ঠোঁটের উষ্ণ ছোয়া পড়ছে।
||
সাথে সাথে তিশা সামনে গুরে যায়।তা দেখে জিসানের মুখে বাকা হাসি ফুটে উঠে।জিসানের এই হাসির রহস্য তিশা বুঝে উঠতে পারছে না,তাই তিশা জিসানের সাইড দিয়ে চলে যেতে নিলে,জিসান কোমড়টা ধরে আবার নিজের সামনে দাঁড় করায়।জিসানের চোখে কেমন এক কামুকতা নেশা দেখতে পাচ্ছে তিশা,আজ জিসানকে একদম অন্যরকম লাগছে।কেমন নেশা ভরা চোখে তাকিয়ে আছে,তিশা বুঝতে পেরেই চলে যেতে চাইছিলো।কিন্তু এখন জিসান তাকে আটকে ফেলেছে।
||
জিসানের হাত কোমড় থেকে আস্তে আস্তে তিশার পিঠে স্লাইড করছে,তা দেখে তিশা _____পি...প্লিস চা...ড়ু ন।একি ক করছেন।
||
জিসান তিশার গলায় মুখ ডুবিয়ে, কেনো তোর ভালো লাগছে না।
||
ন... না পি প্লিস চাড়ুন।কাপাকাপা গলায়।
||
জানিস তোকে আজ খুব হট লাগছে।একদম সানি লিয়ন এর মতো।সানির মতো সুন্দর তো তুই আগেই ছিলি,আজ দেখছি সানির মতো আগুন লাগা বডিও তোর।তার উপর এতো সেজেগুজে, বড় গলার ব্লাউজ পরে আমাকে পাগল করে ফেলেছিস।ভাবছি আজ একেবারে বাসর করে ফেলি।কি বলিস।
||
তিশা এতোক্ষন চুপ থাকলেও এখন কান্না করে দেয়।রাগে মাথার চুলগুলো ছিড়ে ফেলতে মন চাইছে।তিশা ভাবতেও পারেনি জিসান ওকে এসব কথা বলবে।
||
আপনে একটা অসভ্য মানুষ।প্লিস জান এখান থেকে।তিশা চোখমুখ খিঁচে কথাটা বলে।
||
এবার জিসানের চোখ দিয়ে যেনো আগুন ঝড়ছে,এতোক্ষন ও ইচ্ছা করেই কথাগুলো বলেছিলো তিশাকে।
||
জিসান তিশার গাল দুটো চেপে ধরে_____ও আচ্ছা আমি এখন অসভ্য। আর তুই যে ফিটিং আর বড় গলার ড্রেস পরে পর পুরুষের সামনে শরীল দেখিয়ে আনন্দে ঘুরছিস সেটা কি।তোর দিকে সবাই খারাপ নযরে তাকিয়ে ছিলো জানিস।
||
আর এখন আমি বলছি বলে,অসভ্য হয়ে পরেছি।অসভ্য কাকে বলে জানিস।জিসান এক টান দিয়ে তিশার ব্লাউজ টা ছিড়ে ফেলে।
||
জিসানের এমন কান্ডে তিশা হতোভম্ভ হয়ে যায়।
||
তিশার বাহু দুটা চেপে ধরে_____আমি সেই প্রেমিক পুরুষ না,যে প্রেমিকার ভুলগুলো দেখেও চুপ হয়ে থাকবে।বা তার সব অন্যায়গুলো বাচ্চামি মনে করে মাপ করে দেবো।আমি যেমন ভালোবাসতে পারি তেমনি শাসনও করতে পারি।তাই আজ লাস্ট ওয়ার্নিং তোকে এর পরেও যদি দেখি এমন ড্রেস পরেছিস,তাহলে তোর এমন অবস্থা করবো যে নিজের দিকে নিজেই তাকাতে পারবি না।মনে রাখিস।
||
জিসান তিশাকে ছেড়ে দিয়ে ঘটঘট করে চলো গেলো রুম থেকে।আর তিশা ধপাস করে নিচে বসে পরলো।বিষন কান্না করতে মন চাইছে তিশার এখন।।
||

||
_____উফফ,ওয়াইট কালারের পান্জাবী টাতে কি জোশ লাগছে আমার হিরোটাকে।এই লোকটা ওয়াইট কালারটা একটু বেশিই পরে,অবশ্য ভালোও লাগে অনেক।
||
রায়হান ভাইকে দেখলেই আমার বুকটা ধুপধুপ করতে লাগে।এক অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করে কিন্তু এই লোকটা সবসময় আমার অনুভুতিতে এক বালতি গরম পানি ঢেলে দেয়,আর এতে আমার শরীলের জালাপুরা আরো বেড়ে যায়।
||
রায়হান ভাইয়াএএএ,একটু এদিকে আসবেন।
____রায়হান ভ্রুটা কুঁচকিয়ে জিঙ্গেস করলো কি হইছে,তুই আমাকে এভাবে ডাকলি কেনো।
||
আমার না খুব পিপাসা পেয়েছে।
||
তো আমি কি করবো।তোর পিপাসা নিবারণের জন্য কি কাউকে পঠাবো।
||
নিশি একটু বিরক্ত হয়ে,আপনে কি সহয ভাষায় কথা বলতে পারেন না।সবসময় কথায় থার্ড মিনিংস ইউস করেন কেনো।
||
সেটা আমার ব্যাপার,তোর মন না চাইলে কথা বলিস না,আমি আসি এখন।
||
আরেরেরে দাঁড়ান আমাকে একটু পানি তো পান করে দিয়ে জান।
||
কেনো তোর হাতে কি হইছে,নিশি হাত দুটো রায়হানের সামনে এনে দেখায় হাতে মেহেদি দেওয়া তাই।___এই সরা সরা তারাতারি,তোর হাত থেকে গোবরের গন্ধ আসছে,ছিঃ।নাক মুখ ছিটকিয়ে।
||
নিশি আবাক হয়ে গেলো,রায়হানের কথা শুনে।মেহেদির এতো সুন্দর ঘ্রাণটা নাকি তার কাছে গোবরের গন্ধ লাগছে।নিশি একটু বিরক্ত হলো আজ রায়হানের এমন ব্যবহারে।আচ্ছা ঠিক আছে,আমিই চলে যাচ্ছি এখান থেকে আপনাকে আর খাওয়াতে হবে না পানি,আমি অন্য কাউকে খুঁজে নেবো।নিশি রায়হানের সাইড দিয়ে যেতে নিলে,খপ করে নিশির চুল ধরে ফেলে রায়হান,আমাকে এটিটিউট দেখার সাহস করবি না,দাঁতেদাঁত চেপে বলে।না হলে থাপড়াইয়া তোর দাঁত ফেলে দেবো।
শুধু এসব কথাই বলতে পারেন,ভালো কথাতো শিখেনই নাই,বিরবির করে কথাটা বলে নিশি।
রায়হান একগ্লাস পানি মুখের সামনে ধরে,নিশিও আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খেয়ে ফেলে।
||

||
শাসন করা তারই সাজে,সোহাগ করে যে---এই কথাটি শুনেছিস নিশ্চই। জিসান ভাইও তোকে অনেক ভালোবাসে।
______কিন্তু আমি তার শাসনই দেখি,ভালোবাসাতো দেখি না।
||
উনি তোকে ভালোবাসে বলেই শাসন করে।তোর অন্যায় গুলো কখনো প্রশ্রয় দেয় না।জানিস সত্যিকারের প্রেমিক সেইই।কিন্তু তুই উনার ভালোবাসা কখনো বুঝতে চাসনি,নিজেকে ভাইয়ার কাছ থেকে গুটিয়ে ফেলেছিস।এভাবে চলতে থাকলে একদিন তুই ভাইয়াকে হারিয়ে ফেলবি।সেদিন হয়তো বুঝবি তুই কতোটা ভাগ্যবান যে জিসান ভাইয়া তোকে এতো ভালোবাসে।
||
আমাকেই দেখ,এতো ভালোবাসার পরও অবশেষে ধোকা পেলাম।
||
কিন্তু জিসান ভাইকে দেখ,এতো বছর বিদেশ থাকার পরও তোকে ভুলেনি,তার মতো ছেলের জন্য যেকোনও মেয়ে পাগল হবে,অথচ দেখ উনি তোর জন্য পাগল।তাই বলছি,উনার রাগের ভেতরে তোর জন্য যে ভালোবাসাটা আছে সেটা অনুভব করার চেস্টা কর।।
চলবে………
[বানান ভুল হলে,ক্ষমার দৃস্টিতে দেখবেন।কেমন হচ্ছে প্লিস জানাবেন
---------(season 2)

||
তিশাকে উঠাতে না পেরে রেনু বেগম চলে গেলো।এদিক দিয়ে ডাইনিং টেবিলে সবাই নাস্তা করতে বসেছে,জিসান এসে দেখে সবাই আছে কিন্তু তিশা নেই।তাই নিশিকে জিঙ্গেস করে তিশা কই।
||
_____ভাইয়া ও এখনোও ঘুমায়।আমরা অনেক ডেকেছি কিন্তু ও আসবে না।
||
জিসানের মেজাজ গরম হয়ে যায়,তিশাকে ডাকার জন্য চেয়ার থেকে উঠতে নিলে,আশা এসে বাধা দেয়।
||
আরে কোথায় যাচ্ছেন, আপনে আগে নিজে নাস্তা করে নিন।ও বাচ্চা মানুষ যখন খুধা লাগবে দেখবেন নিজেই এসে পরবে।আশা আপু জিসানকে নাস্তা বেড়ে দেয়।
||
জিসান নাস্তাটা হাত দিয়ে সরিয়ে,থাংকস্,বাট আমি তিশাকে নিয়ে নাস্তা করবো।আমার চিন্তা আপনাকে করতে হবে না।জিসান উঠে চলে গেলো,আশার মুখটা দেখার মতো ছিলো।আর ডাইনিং টেবিলে বসা সবাই মিটমিট করে হাসতে লাগলো।আশার এমন অবস্থা দেখে।
||
জিসান সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় রেনু বেগমের সাথে দেখা হয়।আরে জিসান বাবা,ভালই হলো তোমার সাথে দেখা হয়েছে।
_____কেনো আংটি।
____এই মেয়েটাকে নিয়ে আমি আর পারছি না,দেখো কাল রাতেও কিছু না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে আর এখনও নাকি কিছু খাবে না,আজ নাকি ঘর থেকেই বের হবে না।গৃহবন্দি বাসিন্দা তিনি আজ,বুঝছো কিছু।
||
____জিসানের মাথাটা সকাল সকালই গরম হয়ে গেলো,ওর মন চাইছে তিশাকে এখন মাথায় উঠিয়ে এক আছাড় মারতে পারলে, তা হলে হয়তো মনটা একটু শান্তি পেতো।এই মেয়েটা আমাকে জ্বালাতে খুব মজা পায়।পরক্ষনে নিজেকে শান্ত করে রেনু বেগমকে বলে_____আপনে চিন্তা করবেন না,আমি এখনি ওকে নিয়ে আসছি।
_____আচ্ছা যাও।
||
||

||
_____তিশা কিছুটা বিরক্ত হয়ে হাতটা সরিয়ে দেয়।আসলে ও ভেবেছে হয়তো নিশি।কারন নিশিই তিশাকে ঘুমাতে দেখলেই প্রায়ই পেছনে দিক দিয়ে জরিয়ে ধরে শুয়ে থাকে।
||
কিন্তু হাতটি আবারও তিশার পেটকে জরিয়ে ধরে নিজের সাথে আরো চেপে ধরে।
||
এবার তিশা ঘুম থেকেই বলে উঠে,এসব কি নিশি।সবসময় ভালো লাগে না,আমিকি তোর বর নি তুই আমাকে এভাবে জরিয়ে ধরবি।জরিয়ে ধরার এতো শখ থাকলে আংটিকে বল একটা বিয়ে করিয়ে দেবে।এসব বলে হাতটা আবার সরিয়ে দেয়।
||
_____এবার তিশা অনুভব করে কেউ ওকে আবার জরিয়ে ধরে চুলে মুখ ডুবাচ্ছে গভীর ভাবে।
||
_____তিশার এবার মেঝাজ গরম হয়ে যায়।লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে যায়।জরিয়ে ধরা ব্যক্তিটাকে না দেখেই বলে ফেলে,ওই তোরা ভাই বোন এতো লুচু কেনো।এ কথা বলেই তিশা মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে জিসানকে দেখে।
||
আ...আপনে এখানে ক...কি করেন।
||
জিসান মাথার নিচে দুহাত দিয়ে পায়ের উপর পা দিয়ে আরামে শুয়ে বললো_____কি করছি মানে,তোর সাথে ঘুমাতে আসছি।
_____এ কথা বলেই আমার হাত ধরে টান দিলে আমি বেসামাল হয়ে তার উপর পরি।উনিও সুযোগ পেয়ে আমাকে দুহাত দিয়ে জরিয়ে ধরে।
||
শুনলাম তুই নাকি নাস্তা করবি না,হলুদে যাবি না,এমনকি এই ঘর থেকেই আজ বের হবি না,সারা দিন ঘুমিয়ে কাটাবি।তাহলে আয় দুজনে এক সাথেই ঘুমিয়ে থাকি,তুই একলা গৃহবন্দি থাকবি কেনো।এতে বোর ফিল করবি।দুজনে একসাথে থাকলে আরো ভালো হবে।এই বাহানায় তোর সাথে আমি একটু রোমাঞ্চ ও করতে পারবো। কি বলিস!!!
||
_______এই নানানানা.....।
আমি জিসান থেকে ছুটেই_______আমার আর দুদিনও ঘুম আসবে না,থাক।আমি ছুটে ওয়াসরুমের দিকে দৌড়।কিন্তু!!
||
আর কতো পাগলী পাগল করবি আমায়,তোর দিওয়ানা হয়ে অবশেষে পাগলাগারদে না যেতে হয়।
||
জিসানের কথায় আমি পেছনে তাকাই _____উনি আমার ওড়নাটা জড়িয়ে দিয়ে রুম থেকে চলে যায়।হায় আল্লাহ এতোক্ষন ধরে তার সামনে ওড়না ছাড়াই ছিলাম।আমারতো লজ্জায় এখন এক গ্লাস পানিতে ডুবে মরে যেতে মন চাইছে।উফফফ।
||
ফ্রেস হয়ে আমি নিচে চলে আসি,ওখানে জিসান এখনো আমার জন্য অপেক্ষা করছে।আমি জিসানের পাশের চেয়ারটা ছেড়ে অন্য চেয়ারে বসতে নিলে জিসান হাতটা টান দিয়ে নিজের পাশে বসায়।আমি ভিষন অবাক জিসানের এমন আচরনে। কারন তখন আশেপাশে অনেক আত্মীয় স্বজন ছিলো।তারা যে ব্যাপারটা দেখেনি এমন না,সবাই দেখেছে।
||
জিসান উনার প্লেটটা আমার দিকে এগিয়ে দিলো,খাও।
||
আমি এতো খেতে পারবো না।আপনেই খান, আপনারটা।
||
তুই খাবি, নাকি আমি খাইয়ে দেবো।জিসানের স্থির দৃষ্টি আমার দিকে।
||
আমি জিসানের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে,আশেপাশে চোখ বুলালাম,আশেপাশে অনেক মানুষ,এখন না খেলে এই লোকটা সত্যিই সবার সামনে আমাকে খাইয়ে দিবে।কোনও বিশ্বাস নেই।তার চেয়ে ভালো নিজের হাতেই খাই।
||
আর এসব দূর থেকে দাঁতেদাঁত চেপে আশা আপু দেখছিলো।
||
||

||
আমিও বসে বসে নিশির সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম।হঠাৎ চোখ গেলো বাড়ীর গেটের দিকে।জিসান দাঁড়িয়ে আছে।রুপকদা ও তার কিছু ফ্রেন্ডসরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে,দেখেই বুঝা যাচ্ছে সবাই রুপকদাকে টিচ করছে।হয়তো সুরভি ভাবীর কথা বলছে,তাইতো ভাইয়ার মুখটা টমেটো হয়ে যাচ্ছে।
||
এসবের মাঝে আমার চোখ গেলো জিসানের উপর।স্কাই ব্লু কালারের একটা সার্ট পড়া তবে কালারটা বেশ মানিয়েছে তাকে।হাতের দু আঙ্গুলের মাঝে সিগারেট টা রেখে কপালে আসা সিল্কি চুলগুলোকে বার বার হাত দিয়ে সরাচ্ছে।অদ্ভুত বিষয় আজ কেনো জানি তাকে দেখতে আমার ভিষন ভালো লাগছে।সারাদিন তাকিয়ে থাকলেও মনে হয় ক্লান্ত হবো না।উফফ....এমন কেনো হচ্ছে।
হঠাৎ জিসানের চোখে চোখ পরে যায়।আমি সাথে সাথে চোখ সরিয়ে ফেলি।আহহহ!! কি লজ্জার বিষয়।কিন্ত ব্যাটা খাটাইশ বুঝে গেছে আমি তাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছি।
||
হঠাৎ নিলুর চিৎকারে আমার আত্মা কেপে উঠে,আর আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম।জমিলা কিছুক্ষন আগে আমার হাতে মুড়ির একটা ঝুড়ি দিয়ে গেছে।গ্রামের ভাজা মুড়ি, একটু অন্যরকম টেস্ট।কিন্ত কথার ঝুরির মাঝে মাঝে খেতে ভালোই লাগে।
||
আসলে আমি জিসান কে দেখতে,এতোটাই মগ্ন ছিলাম যে মুড়ির কথা ভুলেই গেছি।হঠাৎ নিলু এসে পেছন থেকে ভো বলায় হাতের সব মুড়ি ঝুড়িসহ নিশুর শরীলে পরে যায়।নিশিকে দেখে মনে হচ্ছে ও এই মাত্র মুড়ি দিয়ে গোসল করেছে।ঝুড়িটাও ওর মাথায়।
||
নিশি আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃস্টিতে তাকিয়ে আছে।ওর রাগ দেখে আমি কানে ধরে সরি বলে ইশারা করি।
ঠিক ওই সময় রায়হান ভাই ওখান দিয়ে যাচ্ছিলো।নিশির এই অবস্থা দেখে সামনে আসে।নিশির পুরো শরীলে মুড়ির ছড়াছড়ি। এমনকি ওর হাতের কফিটাও মুড়িতে ভরে গেছে।
রায়হান ভাই কিছু মুড়ি মুখে নিয়ে______টেস্ট তো ভালোই।তবে সাথে পেয়াজ, মরিচ, টমেটো আর চানাচুর হলে ভালোই হতো কি বলিস।তিশা ওগুলো বাদ রাখলি কেনো।
একথা বলে হনহন করে চলে গেলো।আর এদিক দিয়ে বাকি সবাই হেসে কুটিকুটি নিশির অবস্থা দেখে।
||
আমিতো আবাক,ভাইয়া এসময় এ কথা কিভাবে বললো,এমনেই নিশি ভিষন রেগে আছে।এখনতো সব জ্বাল আমার উপর তুলবে।আমি নিশির দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো হাসি দিলাম। কিন্তু ব্যর্থ হলাম নিশি এতোক্ষনে তেরে আসতে লাগলো আমার দিকে।আমি ভয়ে দিলাম দৌড়।
||
কিভাবে যেনো পুকুরপাড়ে চলে আসলাম দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে।রুপকদা দের এই পুকুরটা অনেক গভীর আর বড়।আমি আবার সাতার জানি না তাই রুপকদা আমাকে এটার সামনে আসতে মানা করেছিলো।আমি চলে যেতে নিবো ঠিক তখনিই কেউ আমাকে ধাক্কা দিলে আমি পানিতে পড়ে যাই।
চলবে………
[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।গল্প কেমন হচ্ছে তা জানাবেন

||
_________এর পুরো কেডিট রায়হান ভাইয়ের।খুবই অল্প সময় পুরো বাড়ীর নকশা পাল্টিয়ে ফেলেছে।তাইতো আজ সবার মুখে মুখে রায়হান ভাইয়ের সুনামের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে।আহা!!!!
||
__________হলুদের জন্য আমরা মেয়েরা সবাই কলাপাতা কালারের শাড়ী পরেছি,এর সাথে খোপায় বেলি ফুলের মালা,শাড়ীর লাল পাড়ের সাথে মেচিং করে চুড়ি,ব্লাউজ আর কপালে লাল টিপ পরেছি তার সাথে সাজসজ্জা তো আছেই।সবাইকেই খুব সুন্দর লাগছে।আর ছেলেরা কাচা হলুদ কালারের পান্জাবী পরেছে।
||
______এর মধ্যে জিসানের চোখ আটকে গেলো একটা রমণীর দিকে।
||
শাড়ীতে কাউকে এতো সুন্দর লাগে তাতো জিসানের জানাই ছিলো না।আজ প্রথম তিশাকে শাড়ীতে দেখলো জিসান।তিশার থেকে আজ চোখই সরাতে পারছে না জিসান।_____বুকের ভেতর মনে হয় চিন চিন ব্যথা করছে,অজান্তেই হাতটা বুকের বা পাশে চলে গেলো।জিসানের চোখে আজ তিশাকে ভয়ংকর সুন্দর লাগছে।এতোটাই সুন্দর যে,এই সুন্দর্যের বর্ণনা করতে গেলে,জিসানকে হয়তো আজ কবি হতে হবে।
||
তাই মনের অজান্তেই বিরবির করে বলে ফেললো______ সুন্দরী তোর ভয়ংকর সৌন্দর্যে আমি ধ্বংস হয়ে যাবো একদিন।দেখিস!!!
||
তিশা নিচে আসতেই চায়নি, সকালের ঘটনায় ভিষন ভাবে ভয় পেয়ে গেছে।কিছুতেই ভুলতে পারছে না,মনে পরলে এখনো হাত পা কাপে।ভাগ্য ভালো ছিলো বলে,এই যাত্রায় বেঁচে গেছে।
---------সকালে
নিশির চিৎকারে জিসান সহ বাড়ীর সবাই পুকুর পাড়ে দৌঁড়ে আসে।জিসানকে আসতে দেখে নিশি কান্না গলায় হাত দিয়ে ইশারা করে বলে_____
ভাইয়া তিশা পুকুরে পড়ে গেছে,এ কথা শুনে জিসান এক সেকেন্ড ও অপেক্ষা করেনি পুকুরে ঝাপ দিয়েছে।
||
____পুকুর গভীর ছিলো,পড়ার সাথে সাথে হাত পা চালিয়ে ও কিছুই করতে পারছিলাম না,নিশ্বাস টিকমতো নিতে না পাড়ার কারনে চোখে যেনো অন্ধকার নেমে আসছিলো। মনে হলো কোনও এক অদৃশ্য শক্তি আমাকে নিচের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।আমি হারিয়ে ফেলছি আমার সব আপন মানুষদের।চোখের সামনে ভেসে আসছে,মায়ের কান্না মাখা মুখ খানি,বাবার মলিন চেয়ারা, রায়হান ভাই,নিশি,নিলু আর সবশেষে জিসান।আমার চোখ বুঝে গেলো।
||
জ্ঞান ফিরার পর জানতে পারলাম_____
||
তখন জিসানের সাথে সাথে রায়হান ভাই ও পুকুরে ঝাপ দেয়।পুকুরটা বড় আর গভীর ছিলো।আমি পুকুরের নিচে তলিয়ে যাবার আগেই জিসান আকড়ে ধরে আমাকে।আস্তে আস্তে জিসান ও রায়হান ভাই মিলে আমাকে উপরে উঠায়।কিন্তু আমি তখনো নিস্তেজ হয়ে পরেছিলাম,পেট চেপে পানি বের করা হয়।কিন্তু নিশ্বাস তখনো আমার চলছিলো না।জিসান মুখ দিয়ে নিশ্বাস দেওয়ার কিছুক্ষন পর আমি লম্বা একটা নিশ্বাস ছাড়ি।কিন্ত শরীল খুব ক্লান্ত আর ভয়ে আমি নিজের জ্ঞান আবার হারিয়ে ফেলি।আর যখন জ্ঞান ফিরে আসে,চোখ খুলে দেখি মা বসে কান্না করছে,বাবা মাথার সামনে বসে আছে,ঘর ভর্তি মানুষ।সবার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে কোনও ছোটখাটো টর্নেডো এসেছিলো।যার কবল থেকে খুব কস্টে বেঁচে ফিরেছে।
||
||

||
_____কখন ধরে রুপকদার ফোন বেজে চলছে।সুরভি ভাবি কল করছে,কিন্তু এতো মানুষের মাঝে ফোন তুলতে পারছিলো না। অবশেষে টিকতে না পেরে ফোনটা রিসিভ করেই ফেললো।কি কথা হলো আল্লাহই জানে রুপকদার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।কিছুক্ষন পর রায়হান ভাইকে ডেকে কানে কানে যেনো কি বললো,রায়হান ভাই চোখমুখ কুচকিয়ে একটা বিরক্ত লুক নিয়ে রুপকদার দিকে তাকালো।আর রুপকদা একটা হ্যাবলার মতো একটা হাসি দিলো।
||
আমি নিশি আর নিলু এক সাইডে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলাম।হলুদের আয়োজন মোটামোটি শেষ। বাক গ্রাউন্ড এ গান চলছে----
||
একটা সময় তোরে আমার সবই ভাবিতাম,
তোরে মন পিঞ্জরে যতন করে আগলাইয়া রাখতাম।
তোর হাসি মুখের ছবি দেইখা দুঃখ পুষাইতাম,
তুই কানলে পরে কেমন করে হারাইয়া যাইতাম।
ওরে মনের খাঁচায় যতন কইরা দিলাম তোরে ঠাঁই,
এখন তোর মনেতেই আমার জন্য কোনো জায়গা নাই।
ওরে আদর কইরা পিঞ্জরাতে পুষলাম পাখিরে,
তুই যারে যা উইড়া যারে অন্য খাঁচাতে।
ও মাইয়ারে,মাইয়ারে তুই, অপরাধী রে ,
আমার যত্নে গড়া ভালোবাসা দে ফিরাইয়া দে।
আমার অনুভূতির সাথে খেলার অধিকার দিলো কে?
মাইয়া তুই বড় অপরাধী , তোর ক্ষমা নাই রে।
||
আমি ভিষন অবাক গায়ে হলুদে এ গান কে ছাড়লো,অথচ নিশি ও নিলুকে দেখে মনে হচ্ছে গানটা বেশ ভালোই লাগছে তাদের। আমি এদিক ওদিক তাকাতেই দেখলাম এক জোড়া চোখ শুধু আমাকেই দেখছে।
||
মাঝে মাঝে মনে হয়, এই চোখদুটোতে আমি যেনো বিশাল এক সমুদ্র দেখতে পাই।যার ঢেউ এর মিস্টি তরঙ্গ গুলো ক্ষনে ক্ষনে বেজে উঠে,আর আমি হারিয়ে যাই তার মাঝে।আমি বেশিক্ষণ সেই চোখদুটোর দিকে তাকাতে পারলাম। নামিয়ে ফেললাম সাথে সাথে।কেনো বুঝে না এই লোকটি_______
আমি যে দেখতে পাই তার চোখে আমারি সর্বনাশ।
||
নিলু তুই তিশার সাথে থাক আমি একটু গলা ভিজিয়ে আসি।_______আরে নিশি আমার জন্য ও একটা সপ্ট ড্রিংক নিয়ে আসিস।
_____তুই ওকে কেনো অর্ডার দিচ্ছিস, তুইও যা, যেটা পছন্দ সেটা নিয়ে আস।আর কখন ধরে দেখে আসছি তোরা দুজন কেমন চুইঙ্গাম এর মতো লেগে আছিস আমার সাথে, বলতো সমস্যা কি???
||
নিলু ও নিশু দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে মুখটা মলিন করে ফেললো,______সাধে কি আমরা চিপকু হয়েছি। আমাদের দুজনের জন্য ফরমান জাড়ি করেছে তোর ওই মেডনেস হিরো।সকালের দূর্ঘটনাটার জন্য তোকে এক সেকেন্ড একা যাতে না করি।
||
_____তুইতো বেহুশ ছিলি,আর এ দিক দিয়ে জিসান ভাই আমাদের এমন ধোয়া ধুইছে। কাপড় ধোয়াতে বসালে তখন ভাই মনে হয় সাবান ছাড়াই কাপড় পরিষ্কার করে ফেলতো।
||
এবার বুঝলাম_____আমাকে কেউ ধাক্কা দিয়েছে,এটা শুনেই জিসান টেনশনে পরে গিয়েছিলো।তাই হয়তো এ দুটো পাবলিককে আজ আমার বিনা বেতনে বডিগার্ড বানিয়ে ফেলছে।আজব মানুষ।
||
||

||
পানি নিয়ে আসার সময় কিছু একটার ছায়া দেখতে পেলাম।আমি ভয়ে চিৎকার দিতে চাইলে কেউ একজন এসে আমার মুখটা চেপে ধরে।
||
আমার সামনে তিন বান্দরে দাঁড়িয়ে আছে,রায়হান ভাই,রুপকদা আর জিসান।এতো রাতে তোমরা কোথা থেকে আসলে।
||
_______আমার কথা শুনে রুপকদা একটু লজ্জা পেলো।আ...মতা,আম...তা করে বললো,তোর ভাবির সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।
||
______ওও....তাইনি,তাহলে এই দুজন কার সাথে দেখা করতে গিয়েছে,তোমার শালিদের সাথে।আমি হেসে উঠলাম।
||
_____রায়হান ভাই আমাকে একটা ধমক দিলো,বেশি কথা বলিস তুই।আগে বল এতো রাতে এখানে কি করিস।তোকে না বলেছি একলা কোথাও যাবি না।কথা শুনিস না কেনো তুই,যা রুমে যা এখন।
____আমিতো পানি নিতে বের হয়েছি।
_____একলা কেনো আসলি,নিলু বা নিশিকে সাথে করে বের হতে পারলি না,আমরা না হয়ে অন্য কেউ হলে তখন কি করতি।আর এভাবে কখনো বের হবি না।ঠিক আছে।
রায়হান ভাই ও রুপকদা চলে গেলো।
_____আমার মেঝাজ খারাপ হয়ে গেলো।আমিও চলে যেতে নিলে,জিসান সামনে দাঁড়ায়। আমাকে হাত দিয়ে ইশারা করে বলে________পাঁচ মিনিট তোর কাছে আছে।রুমে জগটা রেখে ছাদে আস।
_____আমি ভয়ে ভয়ে জিঙ্গেস করলাম কে.....নো।
_____তোকে আসতে বলছি আসবি, এতো প্রশ্ন করতে বলেনি।
____ছাদে এতো রাতে,ভূ....ত আছে।আমি যাবো না।
_____তোর লাইফের ভূততো আমি,তাই এখন ছাদে না আসলে ঘাড় মটকে ফেলবো।বুঝলি।(জিসান দাঁতেদাঁত চেপে)
||
||

||
পৃথিবী ধ্বংস কার জন্য হবে জানিনা।কিন্তু আমাকে ধ্বংস তুই করবি।মনে রাখিস।জিসানে কন্ঠ...
||
_____আমি অবাক দৃস্টিতে এবার তার দিকে তাকালাম।কি সব বলছে।পাগল হয়ে যায়নি তো।আমি তাকে কিভাবে ধ্বংস করবো।মনে মনে।
||
হঠাৎ আমাকে টেনে ছাদের গ্রিলের সাথে চেপে ধরলো।জিসানের চোখ আজ যেনো অন্য কথা বলছে।জিসান আজ আমার কাছে কেমন রহস্যময় লাগছে।কেমন এক গম্ভীরতা ভেসে উঠছে কথায়।
||
আমার কাধের কাছে মুখটা এনে______প্রমিকার কিছু কিছু জিনিষ নাকি প্রেমিকের কাছে ভালো লাগে,আমার কাছে তোর সব কিছুই কেনো এতো ভালো লাগে বলতো।
||
________কাধে জিসানের গরম নিশ্বাস পড়ছে।আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে,আমি একটু নাড়াচাড়া করায়।হাত দুটো আরো শক্ত করে চেপে ধরলো।
||
________কাধ থেকে উঠে গলায় টুকরো টুকরো কিস করতে লাগলো,আমি চোখদুটো বন্ধ করে ফেললাম,,,,
তোর ভয়ার্ত মুখের প্রেমে আমি বার বার পড়ি,জানিস!!ভয়ে যখন তুই চোখ দুটো বার বার বন্ধ করিস আর খুলিস,সেটা দেখে আমার তোর আরো কাছে আসতে মন চায়।কেনো বলতো!!!!
______নিজের গাল দিয়ে আমার গালের সাথে স্লাইড করে
____একটু ভালোবাসা দিবি আমায়,যে ভালোবাসা পেয়ে আমি ভুলে যাবো তোকে না পাওয়ার বেদনায় কাটানো রাত গুলোর কথা।যে ভালোবাসায় থাকবে সীমাহীন ভালোবাসা,অনুভূতি। যা দিয়ে আমি পার করতে পারবো সারাটা জীবন।
||
আমার হাতদুটো ছেড়ে দিয়ে,আমার কোমড়টা ধরে নিজের সাথে চেপে ধরে।আমার চুলগুলো মুঠো করে মুখটা তুলে ধরে_______কি নিষ্ঠুর তুই!!!কেমন করে পাড়িস আমাকে ভুলে যেতে,আমি কেনো পারিনা।তাহলে তো এই দহনে এতো বছর জ্বলতে হতো না।
||
_____আমার কপালে নিজের কপাল রেখে,কি নেশা আছে তোর মাঝে বলনা,মদের নেশাও এর কাছে কিছুই না।তোকে পাওয়ার নেশা যে এতো তীব্র হবে জানা ছিলো না।কিন্তু এই নেশায় আমি ডুব দিতে চাই।আর ভাসাতে চাই নিজেকে দূর থেকে দূরান্তে।
||
জিসানের ঠোঁট আমার ঠোঁটে ছুঁই ছুঁই করছে।তার এই মাতাল করা ছোঁয়ায় আমার শরীলের শিরায় শিরায় এক অদ্ভুত শিহরণ জেগে উঠছে।জিসানের হাতের প্রতিটি স্পর্শে আমার শরীলে বিদ্যুৎ খেলে গেলো।মনের মধ্যে সমুদ্রের ঠেউ এর মতো তোরপাড় শুরু হয়ে গেলো।তার দিকে তাকাতেই আমার ঠোঁটদুটো কেপে উঠলো।
||
আর জিসান আমার দিকে নেশা ভরা চোখে একদৃষ্টিতে এখনো তাকিয়ে আছে।
||
আমার আর সহ্য হচ্ছিলো না,মনে হলো,আমি মনে হয় আজ নিজেও জিসানের নেশায় পড়ে যাচ্ছি।এখান থেকে না গেলে নিজ ইচ্ছায় বিষ খেয়ে ফেলবো।আর এই বিষের তীব্রতা অনেক তুখোড়। আমাকে মারবে না,তবে বাঁচতেও দেবে না।তাই নিজেকে জিসান থেকে ছুটানোর বৃথা চেস্টা করতে লাগলাম।কাপা কাপা গলায় বলেই ফেললাম, আ.....মি নিচে যাবো।
||
______জিসান আমার কানের কাছে নিজের মুখটা এনে ফিসফিসিয়ে বললো_____চিন্তা করিস না,আমি এতো তারাতারি আমার বিষ তোকে দেবো না।কিন্তু যেদিন দেবো,তুই নিজ ইচ্ছাই পান করবি।আজতো তোকে নিয়ে শুধু জ্যোৎনা স্নান করবো।আমি অবাক দৃস্টিতে জিসানের দিকে তাকালাম।আর উনার ঠোঁটে ফুটে উঠলো বাকা হাসি।
||
ছাদেই জিসানের হাতের উপর মাথা রেখো চাঁদ দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পরেছি।খুব ক্লান্ত লাগছিলো। জিসান আগে থেকেই একটা মাদুর বিছিয়ে রেখেছিলো আজ সারারাত ছাদেই কাটাবে বলে।অনেক চেস্টা করেও আমি যেতে পারিনি।
||
জিসান ঘুমান্ত তিশার দিকে তাকিয়ে আছে _____
||
বার বার ফিরে আসি আমি তোকে পাওয়ার লোভে,কোনও এক জ্যোৎস্নাময় রাতে তুই আমার হবি এই আশ্বাস নিয়ে।ঘুম আসে না আমার চোখে ঘোর লেগেছে মনে।তোর সুভাস ছড়িয়ে পরেছে এই যুবকের বনে।
||
জিসান তিশার কপালে এক চুমো দিয়ে,খোলা আকাশের সেই চাঁদের দিকে তাকায়।জিসানের মুখে এক রহস্যময় হাসি।
||
আমার চাঁদটাও মেঘের আড়ালে লুকিয়ে ছিলো,আস্তে আস্তে আমি মেঘগুলো সরিয়ে চাঁদকে আমার নিজের করে ফেলবো।আমি বলছিলাম না এখন আর কোনও কিছু আমাকে আটকাতে পারবে না।
চার বছর আগে আমার জিদের কারনে সবাই তোর কাছ থেকে আমাকে আলাদা করে ফেলছে,তখন আমি নিরুপায় ছিলাম, কিন্ত এখন না.....আমি আমার কোনও বোকামি কাজ দিয়ে তোকে হারাতে চাই না।
তোকে পাওয়ার জন্য কিছু শর্ত ছিলো,সেই শর্তের মধ্যে একটা শর্ত আমি কাল ভেঙ্গে দেবো।যার শুরু আমি আজ সকাল থেকেই করে দিয়েছি।হুমমমম আজ সকালে তিশাকে জিসানেই ধাক্কা দিয়েছে।
||
আমি তোকে ভয় দেখাতে চেয়েছিলাম,আরও একটা কারন আছে যা কাল সকালে বুঝতে পারবি।কিন্তু একটু ক্যালকুলেশনে ভুল হয়ে গেছে জান।আমি জানতাম না পুকুরটা এতো গভীর হবে।সরি জান,জানলে এতোটা রিক্সা নিতাম না।তিশার দিকে তাকিয়ে।
||
কিন্তু আমি যা করছি তোর জন্য,তোকে পাওয়ার জন্য,এখন তুই আমার হওয়া শর্তেও আমার না।তাই তোকে পুরো পাওয়ার জন্য যা যা করতে হবে,তা আগেও করেছি এখনও করবো।
||
তুই কি কখনো ভেবেছিস,আমি যাওয়ার পর থেকে কেনো ছেলে তোকে আজ পর্যন্ত কেনো প্রপোজ করেনি।
বিস্ময়কর হাসি দিয়ে জিসান____তোর আশেপাশে আমি কোনও ছেলেকে কখনো এলাউ করেনি।আমি দূরে থাকলেও আমার জিনিস কিভাবে সুরক্ষিত করতে হয় আমি জানি জান।আর এখন তোকে কিভাবে আমার করতে হবে তাও জানি।
জিসানের মুখে এখনও সেই ররহস্যময় হাসি।জিসান গুন গুন করে গান করছে।আর ভাবছে এখন শুধু সকাল হবার পালা_______
Humme tumse pyaar kitna Yeh Hum Nahi Jaante Magar jee nahin sakte tumhare binaa
Humein Tumse Pyaar Kitna, Yeh Hum Nahi Jaante, Magar jee nahin sakte, tumhare bina,
---------------------------------------------------------------------
----------------------------------------------------------------------
Tumhein Koi Aur Dekhe to jalta Hai dil, Badhi Mushkilon Se Phir, Sambhalta Hai dil Kya Kya Jatan Karte Hain, Tumhe Kya Pata,
Yeh Dil Beqaraar Kitna, Yeh Hum Nahi Jaante, Magar Jee Nahi Sakte, Tumhare Bina,
Hume Tumse Pyaar Kitna, Yeh Hum Nahi Jaante, Magar Jee Nahi Sakte, Tumhare Bina, Hume Tumse Pyaar...

||
____বাড়ীর পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছে কোন আদালত ঘটন করা হয়েছে, যেখানের কাঠগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে অপরাধি তিশা।আর বাড়ীর মেহমানদের এক এক প্রশ্নে তিশার চোখ দিয়ে নিরবে পানি পড়ছে।
||
কিন্তু তিশা কিছুই বলতে পাড়ছে না,কি বা বলবে,যেখানে নিজের বাবা মা আর সব বড়দের সামনে তাকে কাল রাতের কথা জিঙ্গেস করছে সবাই।
||
_____হুমমমম কাল রাত!!!কাল পুরো রাত জিসানের সাথেই ছিলো তিশা।হয়তো সবাই যা মনে করছে তেমন কিছুই না তবু কেউ বিশ্বাস করতে রাজি না।তিশার কথার কোনও দামই দিলো না কেউ।
||
কাল রাতে তিশা ও জিসান ছাদেই ছিলো।তিশা ঘুমিয়ে পড়লেও জিসান ঘুমায়নি। সারা রাতই জেগে কাটিয়ে দিলো। ভোর রাতে জিসান তিশাকে কোলে করে ওর রুমে রেখে আসলো।এসবই স্বচক্ষে দেখেছে একজন, সে হলো মিসেস সেলিনা(আশার মা)।তাই সকাল হতে না হতেই তার আহাজারি শোনে সবাই ড্রয়িংরুম এ হাজির হলো।
||
জিসানকে প্রথম দেখায় তারও ভালো লেগেছিলো।একতো ছেলে হ্যান্ডসাম, তার উপর রিচ।এতো সোনায় সোহাগা ………তার উপর নিজের মেয়ের মতিগতি দেখে বুঝতে পেরেছিলো।আশা জিসানকে পছন্দ করে।কিন্তু জিসানের তিশার সাথে এতো মেলামেশা একদমই চোখে সহ্য হচ্ছিলো না।
||
_______মিসেস সেলিনা ছলে বলে কৌশলে অনেক ভাবে জিসানের মাকে আশা আর জিসানের রিলেশনের কথা বলতে চেয়েও বলতে পারেনি।তার উপর কালকের ঘটনা।তিশাকে বাঁচাবার জন্য জিসানের এমন ছটফটানিতে তার খুব বিরক্ত লাগলো।কিন্ত তিশা নিশ্বাস নিতে পারছিলো না বলে জিসান নিজেই তিশার ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে নিশ্বাস দেওয়ার ঘটনায় উনি যেনো তেলে বেগুনে জ্বলো উঠলেন আরো।
||
_____ওখানে ওর বাবা মা,ভাই,বন্ধুবী সবাই ছিলো,তাদের থেকে বেশি এই ছেলের এতো কিসের দরদ, তা বুঝে উঠতে পারছে না মিসেস সেলিনা।এখন তিশার পানিতে পড়ার ঘটনাও তার ঢং মনে হচ্ছে।
||
মিসেস সেলিনা রুপকের মাকে উদ্দেশ্য করে বললেন____আপা তোকে বলছিলাম না, এই মেয়ের চালচলন আমার একদম ঠিক মনে হচ্ছে না,তুইতো তখন আমার কথা কানেই নিলি না।এখন দেখ।
||
____আগে যদি জানতাম,তোমাদের অনুষ্ঠানে এধরনের মেয়ে আসবে, তাহলে আমার মেয়েকে নিয়ে কখনো আসতামই না আমি।
||
______এসব কি বলছেন আপনে,কারো সম্পর্কে না জেনে কিছু বলা একদম ঠিক না।(জিসানের মা)
দেখুন আপা,আমি না জেনে কিছুই বলি না।এই মেয়েকে আমি নিজে বহুবার আপনার ছেলের সাথে ইটিসপিটিস করতে দেখেছি।আপনেই বলুন বড় ভাইয়ের বন্ধুর সাথে কিসের এতো মেলামেশা।
||
_____তার উপর একটা যুবক ছেলে আর একটা যুবতী মেয়ে সারারাত বাহিরে কাটিয়ে আসবে, আর এসে বলবে আমরা তো শুধু চন্দ্রবিলাস করতে গিয়েছি আর কিছু না।এসব কথা কি বিশ্বাসের যোগ্য বলুন।কি সম্পর্ক এদের।দেখেতো ভাই বোনের সম্পর্ক মনে হচ্ছে না,তাহলে!!!
||
মিসেস সেলিনার কথা গুলো এতোক্ষন তিশার বাবা মা চুপ করে শুনছিলো, কিছু বলেনি।কিন্তু আর চুপ থাকতে পাড়লো না।উঠে দাঁড়িয়ে কিছু বলতে যাবে তখনি দরজার সামনে জিসানের কথায় থেমে গেলো।
||
______জিসান তিশাকে রুমে রেখেই ফ্রেস হয়ে রায়হান ও রুপককে নিয়ে বাহিরে গিয়েছিলো।কালকের পর সবাই চলে যাবে।এখানে আসার পর গ্রামটা দেখা হয়নি জিসানের।তাই ওদের নিয়ে গ্রাম দেখার জন্য সকাল সকালই বের হয়ে গেলো।কিন্তু নিশির ফোনে বাড়ীর দিকে রওনা দিলো আবার।
||
____নিশি জিসানকে ফোন দিয়ে ফোনটা ওন করে রেখে দিলো।আর ফোনের ওপর পাশ থেকে জিসান এতোক্ষন কি কি হলো সব শুনতে পাচ্ছিলো।
||
||

||
_____রায়হান বোনের মাথায় হাত রেখে সান্তনা দিতে লাগলো।রাগে রায়হানের চোখমুখ লাল হয়ে গেলো।কিন্তু জিসান!!!! জিসান ভাবনাহীন।
||
জিসান ডাইনিং টেবিলের সামনের বেসিনে গিয়ে মুখটাতে পানির ঝাপটা দিতে লাগলো।কালরাত না ঘুমানোর কারনে,মাথাটা এখন ম্যাথা করছে।জিসান মনে মনে ভাবছে,তার ঘুমানো দরকার।মিনিমাম ২ ঘন্টা।
||
_____তিশার ওড়নাটা দিয়ে মুখটা মুছতে লাগলো।এটা দেখে তিশা সহ উপস্থিত সবাই হা হয়ে তাকিয়ে থাকলো।
||
আর মিসেস সেলিনা,আবারও জরে জরে চেচামেচি করতে লাগলো,দেখলা দুলাভাই(রুপকের বাবা)।কতোটা বেহায়া এ ছেলে।বড় ছোট কিছু মানে না।
||
____মুখ মুছতে মুছতে জিসান বলে উঠলো,কেনো আংটি এখানে বেহায়ার কি দেখলেন।আমি তো জাস্ট মুখটাই মুছলাম।কিস তো করেনি।নাকি জরিয়ে ধরেছি।
||
____জিসান.......(জিসানের বাবা)।
______সরি বাবা.......।শুরু কিন্তু উনিই করছে।
||
আর তাওহিদ মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।এর পর এখানে কি হবে তা ওর ভালো করে জানা আছে।ভাইয়ের রগে রগে চেনে ও।তাই নিরব দর্শক হিসেবে বসে আছে নেক্সট সিন দেখার জন্য।
||
জিসানের বাবা উঠে চলে যাওয়ার সময় মিসেস সেলিনাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,আপনার যা জানার আমার ছেলের থেকে জেনে নিন।ও আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেবে আসা করি।
||
______তার পিছে পিছে জিসানের মা,ও তিশার বাবা মা ও চলে গেলেন।মিসেস সেলিনা সহ ড্রয়িংরুম এ উপস্থিত সবাই খুব অবাক হলো।তারা ভাবছে এ কেমন পরিবার।তাদের ছেলে মেয়ে এমন একটা কাজ করলো অথচ শাসন করা তো দূরে থাক কিছুই বললো না।
||
______আর তারাই বা কি বলবে,এতোদিন যেটা কাউকে জানতে দেয়া হয়নি,এখন সবাই যেনে যাবে।কিন্তু ভাবার বিষয়,জিসান কিভাবে এটা তুলে ধরবে,কারন জিসানের স্বভাব সম্পর্কে ওর ফ্যামিলির ধারনা আছে,বরং এখানে তারা উপস্থিত থাকলে তাদেরই লজ্জা পেতে হবে।কারন তাদের ছেলে যে____তিশার সময় অনেকটা বেহায়া হয়ে যায়।তাই যে যার যার কাজে চলে গেলো।তাদের জানার কোনও ইচ্ছা নেই তাদের ছেলে মেয়ে রাতভর কি করেছে।
||
______এদিক দিয়ে জিসান তিশাকে,কিরে এতো চোখের পানি কোথায় পাস বলতো,তোকে তো মরুভূমিতে ছেড়ে দিলে সেখানে ছোটখাটো একটা সমুদ্র বানিয়ে ফেলতে পারবি।
||
_____জিসান, জাস্ট শেট আপ।দেখতে পাসনা ওর অবস্থা।(রায়হান)
||
_____আমি কি দেখবো,তুই দেখ ও কিভাবে গঙ্গা, যমুনা ছাড়ছে, মনে হয় জামাই মারা গেছে।আরে আমি মারা গেলেও ও এতো কান্না করবে না।যতোটা এখন কাঁদছে।
||
________এই ছেলে এই......তুমি মারা গেলে ও কেনো কাঁদবে, কি সম্পর্ক তোমাদের।এমন ভনিতা না করে তারাতারি বলো।বন্ধুর বোনের সাথে এমন অবাধ্য চলাফেরা করতে লজ্জা করে না।তোমার বোনের সাথে রায়হান যদি এমন করতো তাহলে....(মিসেস সেলিনা)
||
_____এবার জিসান একটু রেগে গেলো।তিশার হাতটা ধরে মিসেস সেলিনার সামনে এসে দাঁড় করালো,কি বললেন আপনে রায়হান কেনো আমার বোনের সাথে এমন করবে,আর আমারি কেনো লজ্জা পাওয়া দরকার বলে মনে করছেন।ও আমার বউ, আর আমার বিবাহিত স্ত্রীর সাথে আমি কি করবো না করবো,এখন কি আপনাকে ও বলতে হবে।নাকি লাইভ দেখাতে হবে।তিশার কোমড়টা আকড়ে ধরে নিজের সাথে চেপে ধরে কথাটা বললো জিসান।আর তিশা সেতো এখনো চুপ।তিশা খুব ভালো করেই বুঝে ফেলেছে,আজ আর জিসানকে সত্য বলতে কেউ আটকাতে পারবে না।
||
জিসানের মুখে এ কথা শুনে মিসেস সেলিনা, রুপকের বাবা-মা সহ সবাই অবাক।কি বলছে এসব।রুপকের বাবা-মা রায়হানের দিকে তাকায়,রায়হান চোখের ইশারায় বুঝায়,কথাটা সত্য।
||
_____কি যা তা বলছো,নিজের পাপ লুকাবার জন্য এখন বিয়ের ঢোল বাজাচ্ছো।তোমার সাথে ওর আবার কবে বিয়ে হলো,তুমিতো আসলেই ২দিন আগে,তাহলে বিয়ে কখন হলো।
||
রায়হান গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বললো,চার বছর আগে,মানে জিসান যেদিন প্যারিস যাবে,সেদিনই ওদের বিয়ে হয়।সম্পর্কে এখন ওরা হ্যাসবেন্ড ওয়াইফ।কি বুঝলেন আংটি।আর কোনও প্রশ্ন আছে আপনার।
||
_______মিসেস সেলিনা সহ সবার মুখ এখন বন্ধ হয়ে গেলো।এখন বুঝতে পারলো সবাই কেনো জিসান ও তিশার পরিবার ওদেরকে কিছু বললো না।
||
তিশার চাচা রায়হানের কাছে এসে,তাহলে এ কথা আমাদের কেনো বলিস নি।আমরা কি এতোটাই পর তোদের।
||
_________না চাচা,আসলে তখন পরিস্থিতিই এমন ছিলো।আর তিশার শর্ত ছিলো এই বিয়ের কথা আপাতোত কাউকে না বলতে।তিশা তখন ছোট ছিলো,আর আমরাও ভেবে দেখলাম এটাই ঠিক,তাই কাউকে কিছুই বলেনি।আমরা চেয়েছিলাম জিসান আসলে একেবারে ধুমধাম আয়োজন করে তোমাদের সবার আশির্বাদে আবার ওদের বিয়ে দেবো।তাই.....।
আর কিছুই না।আজও বলতে চাইনি,কিন্ত আজও পরিস্থিতি এমন হলো যে না বলে উপায় নেই।বিনা কারনে আমার বোনের সম্পর্কে আর কোনও আজেবাজে কথা আমি মোটেও টলেরেট করবো না।এর পর কিছু হলে আমাকে দোষ দিতে পারবেন না চাচা।রায়হান পানিটা খেয়ে চলে গেলো।
||
||

||
_____কেনো বললে কি হতো,তিশার দিকে আর চোখে তাকিয়ে,ঠোঁটের কিনারায় বাকা হাসি নিয়ে।
||
আবার জিগায়,এতোদিন জামাই আদর থেকে বঞ্চিত হতে হতো না আপনার।আর এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেমও করতে হতো না নিজের বউয়ের সাথে,আমরাই সুযোগ করে দিতাম।
||
তিশার কাজিনদের কথা শুনে জিসান হেসে উঠলো।কিন্তু তিশা!!! তিশার মাথাটা গরম হয়ে যাচ্ছে।এতোক্ষন মিসেস সেলিনার কথায়ও এতো মেঝাজ গরম হয়নি,যতোটা জিসানের ঐ বাকা হাসির পেছনে কারনটার জন্য হচ্ছে।এতোক্ষন ধরে এতো কিছু সহ্য করে কি লাভ হলো।সত্যটা বলবে না বলেইতো চুপ ছিলাম।কিন্তু এই জিসান এসে সব আশা আমার ভেনিস করে ফেললো।
||
জিসান থেকে বাঁচা এখন সহয হবে না।আগে উনার আমার রিলেশনের কথা কেউ জানতো বলে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখতো।কিন্ত এখনতো মনে হয় গ্রিনকার্ড পেয়ে গেছে। সব বেহায়াপনার লিমিট ক্রশ করে দেবে।আর ভুগতে হবে আমাকে উনার অত্যাচারে।আল্লাহ বাঁচাও আমায়।কেনো এই লোকটাকে আমার গলায় ঝুলিয়ে দিলা।
||
জিসান ভালো করেই বুঝতে পারছে তিশা মনে মনে কি ভাবছে,তিশার কাজিনদের উদ্দেশ্য করে বলে_____সমস্যা নেই আমার কিউটি শালীরা।তখন দিতে পারনি তো কি হয়েছে এখন দিবে।
_____জিসানের কথায় তিশার কাজিনরা বিস্ময় একটা হাসি দিলো,আর তিশা আবাক হলো।
||
শোনও এখন তোমরা আমার একটা উপকার করো,আমি ঘুমাবো,মিনিমাম ২ ঘন্টা,তোমরা জাস্ট খেয়াল রেখো,এই দুঘন্টায় আমাকে যাতে কেউ ডিস্টার্ব না করে ওকে।তাহলে আমি প্রমেজ করছি কাল তোমাদের আইস্ক্রিম পার্টি দেবো।সবাই একাধারে চিল্লিয়ে উঠলো।ইয়া হুহুহু......বলে।বেস্ট জিজু আমাদের।
||
জিসান ওদের সবার সামনে থেকে তিশার হাতটা ধরে তিশার কাজিনদের চোখ টিপ মেরে সিঁড়ি দিয়ে উপরে চলে গেলো।সবাই ওওওওও করে পিনছ মাড়লো।
_______আর এদিক দিয়ে তিশা জিসানের কাছ থেকে নিজের হাতটা ছুটানোতে ব্যস্ত।
_____আরেরেরে আমাকে এমন আটার বস্তার মতো কেনো টানছেন।কেউ দেখলে কি মনে করবে।
_____কেউ কিছুই ভাববে না,সবার মুখে সুপার গ্লু মেরে দেয়া হয়েছে।আর আমার বউকে আমি যেখানে খুশি সেখানে নিয়ে যাবো কার বাপের কি যায়।আর কি বললি তুই।
||
জিসান তিশাকে রুমের ভেতর এনে দরজাটা লক করে দিলো।পেছনে গুড়ে সিরিয়াসছি!! তুই কি আটার বস্তা। আয়তো দেখি,এটা বলেই তিশাকে কোলে তুলে নিলো।
_____আআআআ করছেন কি, নামান আমাকে।
_____কেনো।একটা ভ্রু উঁচু করে এমন ভাবে জিঙ্গেস করলো,মনে হয় কিছু বুঝে না জিসান।নিরীহ প্রাণী সে।
____কেনো মানে কি,নামান আমাকে,এভাবে কোলে তুলার কারন কি।
______দেখতে হবে না আমি আমার বউটার ভার সামলাতে পারিনি।তাই চেক করছি।
_____মানে কি!! আমি কিন্তু একদমই মোটা না।
_____তাইতো দেখছি,না খেয়ে,না খেয়ে যে ফিগার বানিয়েছিস, উফফফ!!!!!!এতে তো আমি আরো পাগল হয়ে যাবো।জিসান তিশাকে এক চোখ টিপ মেরে।
||
_______জিসানের এমন পিনছ মারা কথায় তিশার গা জ্বলে যাচ্ছে।তিশা জিসানের কোলেই ছটফটাতে লাগলো নামার জন্য।তিশার এসব দেখে এবার জিসান রেগে গেলো_______আর একবার যদি এমন ব্যাঙ এর মতো লাফালাফি করবি,তাহলে সোজা বারিন্দা দিয়ে নিচে ফেলে দেবো।তখন কিন্তু হাত পা ভেঙ্গে বিছানায় পরে থাকতে হবে,আমার অবশ্য সমস্যা নেই।আমি তখন কোলে করে তকে সব জায়গায় নিয়ে যাবো।কি বলিস ফেলবো।
||
______জিসানের কথা শুনে তিশা ভয়ে জিসানের গলাটা জরিয়ে ধরে মাথা নেড়ে না বললো।
||
জিসান তিশাকে বিছানায় বসিয়ে দিতে দিতে বললো,আমি একটু কনফিউজড এ আছি।জানিস!!!!
______তিশা ভ্রুটা কুঁচকিয়ে, বিশাল এক প্রশ্নবোধক চিহ্ন আনলো মুখে।
_______জিসান তিশার একদম মুখের সামনে এসে জিঙ্গেস করলো,তুই কি আমার ভার নিতে পারবি।আমি খুব চিন্তিতো এটা নিয়ে।জিসান তিশার দিকে একবার ভালো করে তাকিয়ে,তিশার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।তোকে বেশি করে খেয়েদেয়ে আরো একটি গোলুমলু করে তুলবো,তখন হয়তো সমস্যা হবে না, কি বলিস।
জিসান তিশার দিকে তাকিয়ে দেখলো,তিশার মুখে এখনো সেই প্রশ্নবোধক চিহ্ন।
||
জিসান দীর্ঘ একটা শ্বাস ছেড়ে বললো,তোকে বুঝানো আর কলা গাছে দড়ি দিয়ে মরা একই কথা।বাদ দে.....
||
শোন আমি ঘুমাবো,আমার মাথাটা টিপতে থাক।আর একটা কথা (দাঁতেদাঁত চেপে)খবরদার এখান থেকে এক পাও নড়বি না। আর উঠে তোকে না পেলে,খুন করে ফেলবো আমি।বুঝলি।
______জিসানের এধরনের কথায়।তিশার চোখ বড় বড় হয়ে যায়।
||
জিসান তিশার কলে মাথাটা রেখে কোমড়টা জরিয়ে পেটের মধ্যে একটা কিস করে______এতে তিশা কিছুটা নড়েচড়ে আসলে,জিসান আরো একটু টাইট করে ধরে।
_____তিশা মনে মনে ভাবছে,শুরু হয়ে....গিয়েছে।
আর এদিক দিয়ে তিশা জিসানের মাথা টিপতে টিপতে চার বছর আগের ভাবনায় ডুব দিলো।

||
স্কুল আমার প্রিয় জায়গাটার মধ্যে একটি ছিলো।কারন এখানে এসে আমি বিন্দাস চলতে পারতাম।বাসায় তো মায়ের বকনি থাকে ননস্টপ, আর রায়হান ভাইয়ের শাসন।উফফ!!!আমি এদের জ্বালায় হাফিয়ে উঠতাম।
ভালোর মধ্যে ছিলাম আমি আর বাবা।বাবা বরাবরই নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতো তাদের মাঝে।তবে আমায় অনেক আদর করতো।এই মানুষটিকে সব সময় আমার পাশে পেয়েছি।আমি যতোই ভুল করিনা,বাবা একটি হাসি দিয়ে শুধু বলতো………ভুলই তো করেছে,কারো খুনতো করেনি।বাদ দেও……………।
মা তখন বাবার উপর চরম বিরক্ত হতো।অথচ বাবার তাতে কোনও রিয়েকশন হতো না।
||
বাবার পরে কেউ যদি আমায় বুঝতো তারা হলো আমার স্কুল লাইফের ফ্রেন্ডসরা।আর এই ফ্রেন্ডসদের সাথেই আড্ডা,আর মাঝে মাঝে টিচারদের সাথে কিছু দুষ্টুমি করে দিনগুলো ভালোই চলছিলো।
কিন্তু একদিন ঘটলো এক অঘটন।আমি স্কুল ছুটির পর আমার কিছু ফ্রেন্ডসদের সাথে দাঁড়িয়ে ঝালমুড়ি খাচ্ছিলাম।ইউসুফ চাচার ঝালমুড়ি। আমাদের এলাকার বেস্ট ঝালমুড়ি উনি বানায়।শুধু আমাদের এলাকা না, তার ঝালমুড়ি খেতে অন্যান্য জায়গা থেকে লোকজন এসে ভিড় জমাতো।এতোদিন অবশ্য উনি ছিলেন না।শুনেছিলাম চাচা নাকি গ্রামে গিয়েছিলো।উনার একমাত্র মেয়ের বাচ্চা হবে।তাই চাচাও এতোদিন মেয়ের সাথেই ছিলো।এতোদিন পর চাচাকে পেয়ে সবাই ভিড় জমালো আবার।
||
আমিও চাচার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম, চাচা খুব প্রাণবন্ত মানুষ।সবার সাথে খুব সুন্দর করে হেসে কথা বলে।তার সাথে কথা বলে কেউ বুঝতেই পাড়বে না,উনি অশিক্ষিত। যেখানে আমাদের সমাজে শিক্ষিত লোকগুলো নিজের শিক্ষার অহংকারে এমন ভাব করে যে,অল্প শিক্ষিত মানুষ গুলো কে নগন্য মনে করে।কিন্তু তারা কেনো বোঝে না,শিক্ষিত হলেই মানুষ হওয়া যায় না,মানুষ হতে হলে আগে নিজের মনুষ্যত্বকে জাগাতে হবে।যাই হোক____আমাকে দেখে চাচা হাসিমুখে জিঙ্গেস করলেন কেমন আছো মামুনি।
||
_______আলহামদুলিল্লাহ চাচা।আপুরতো বেবি হয়েছে।কি বেবি।
______চাচা আমার দিকে তাকিয়ে হাসিটা আরো একটু বড় করে বললো,একটা রাজকন্যা হইছে।দেখতে জানো একদম তোমার মতো।টোকা দিলেই মনে হয় এহনি রক্ত ঝড়বো।
||
আমিও চাচার কথায় একটা মিস্টি হাসি দিলাম।কিন্তু আমার সেই হাসিটা হয়তো একজনের একদমই পছন্দ হয়নি।তার গায়ে জ্বালা বারিয়ে দিয়েছে।হঠাৎ কিছুর শব্দ ফেলাম।শব্দটা ছিলো থাপ্পরের।কেউ আমাকে খুব জরে একটা থাপ্পর মারলো।না চাওয়া সত্যেও চোখ দিয়ে একফোঁটা পানি পরলো।এতোগুলো মানুষের সামনে কে এটা করলো,তাকেতো আজ আমি মেরে কাবাব বানিয়ে রাস্তার কুকুর বিড়ালদের খাওয়াবো।এমন আকাশ পাতাল চিন্তা করে সামনে তাকাতেই আমার সব রাগ ফুস।
||
এই প্যারা কোথা থেকে আসলো নিজের অজান্তেই বলে ফেললাম।
||
একজোড়া রক্তিম চোখ আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে এখনি আমাকে চিবিয়ে শরবত বানিয়ে খাবে।আমি শুকনো একটা ডোক গিলে জিঙ্গেস করতে যাবো,তার আগেই জিসান নামের এই প্যারা আমার হাতটা ধরে টেনে বাইকে বসালো।উনার এমন রুড বিহেভিয়ার আমার একদম পছন্দ না।সবসময় আমার সাথে এমন করে।আমার সব বিষয় তার নাকটা না ঢুকালে কি হয় না।না সে তবুও ঢুকাবে।কেন রে ভাই তুই আমার কে।শুধু ভাইয়ের বন্ধু বলে সহ্য করি।কিন্তু সব কিছুর একটা সীমা থাকে।
||
বাইক বাসার সামনে এসে থামলে,আমি তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই দৌঁড়ে বাড়ীর ভেতরে চলে গেলাম।।
||
||

||
একটুকরো ঘনকালো মেঘ যেনো আমার মনের বাগানকে ঘিরে রেখেছে।আর যে কোনও সময় সেই মেঘ থেকে বৃস্টি নেমে পড়বে, আর আমাকে ভিজিয়ে দেবে।আর এতে আমার ঠাণ্ডা, কাশি,জ্বর হলেও কারো কিছু আসে যায় না।ঠিক যেমন আজ হলো।
||
আজকের ঘটনা জানার পরও রায়হান ভাইয়ের নিরব ভুমিকা আমার ছোট্ট মনটাকে অভিমানে ভরিয়ে দিলো।রায়হান ভাইয়ের কাছে বোনের থেকে বন্ধুর মূল্যটা মনে হয় বেশি,তাইতো এমন করলো।শুধু কি রায়হান ভাই,আমার মায়ের ও তো একই অবস্থা।জিসান বলতে পাগল।আমার মায়ের নযরে জিসান ভাই যা করে তাই ঠিক,তার কোনও কাজ ভুল হতেই পারে না।সে তো যথারীতি সবাইকে বলেই বেড়ায় তার দুটো ছেলে।রায়হান আর জিসান।
আমি যে তার এক মাত্র মেয়ে তার সামনে বার বার উঁকিঝুঁকি দিয়ে বোঝানোর চেস্টা করি,আমার নামটাও বলো,তাহলে জনসাধারণ মানুষ আমাকেও চিনতে পারবে।কিন্তু না,প্রত্যেক বারের মতো আমার ভাবনায় মা এক বালতি জল ঢেলে বলবে
_________কি এমন অসাধারণ কাজ করেছিস, যে তোর নামের ঢোল পিটাবো।আরে একবার তো ক্লাশে প্রথম হয়ে দেখা,তখন দেখবি আমি কি করি,এলাকার প্রত্যেকের ঘরে ঘরে গিয়ে তোর সুনামের জয় জয় করে বেড়াবো।দরকার পড়লে,তোর ছবিও দিয়ে আসবো,যাতে রাস্তা ঘাটে সবাই তোকে চিনতে পারে।
||
_______মায়ের এমন কথায় বারাবারের মতো আমার এই পিচ্ছি মনটা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো,আমি বুঝতে পারলাম এই জনমে আমি ক্লাশে প্রথম হতে ও পারবো না,আর মায়ের মুখে নিজের জয়ধ্বনি শোনাও হবে না।হায়রে আমার কপাল!!!উনি থাক উনার দুছেলে নিয়ে।
||
জিসান ভাইয়ের প্রতি আমার মায়ের এই অগাধ ভালোবাসার একটি কারন আছে।জিসান ভাই রায়হান ভাইয়ের বাল্যকালের বন্ধু,তারা স্কুল,কলেজ,ভার্সিটি সব জায়গায় এক সাথে ছিলো।এতো বছরেও তাদের বন্ধুত্ব্যের কোনও ফাটল ধরেনি,বরং বেরেছে।
||
মায়ের মুখে শুনেছিলাম,রায়হান ভাই আর জিসান ভাই যখন ক্লাস সেভেন বা এইটে পড়তো,তখন একদিন স্কুল ছুটির পর দুবন্ধু স্কুলের পাশের মাঠে ক্রিকেট খেলছিলো।খেলার সময় হঠাৎ বলকে জোরে মারায় বল মাঠ থেকে রাস্তায় গিয়ে পড়লো।রায়হান ভাই বেখায়াল হয়ে বলটা নিতে গেলো,সামনে আসা ট্রাকটার দিকে কোনও ধ্যান ছিলোনা।কিন্তু জিসান ভাই ঠিক সময় এসে রায়হান ভাইকে ধাক্কা মারে।রায়হান ভাইয়ের কিছু না হলেও জিসান ভাই প্রচণ্ড ব্যাথা পায় সে দূর্ঘটনায়।
এর পর থেকেই জিসান হয়ে উঠে আমার পরিবারের সরিষা ফুল।আর আমি হলাম তাদের বাগানের কাটা।আমাকে কেউ ভালোবাসে না।উমমমম।
||
হঠাৎ মনে হলো আমার পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।আমি ঘুড়ে দেখি জিসান ভাই পেন্টের পকেটে হাত ডুকিয়ে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,আমি তাকাবার সাথে সাথে চোখগুলো অন্যদিকে ঘুরিয়ে বললো,এখানে কি করছিস তুই।
||
_______আমি তার কথা শুনেও না শোনার ভান করে চলে যেতে চাইলাম,কিন্তু কপাল আমার পারলাম কই।তার আগেই জিসান ভাই আমার হাতটা ধরে ফেললো।আমাকে সামনে দাঁড় করিয়ে বলে_____এক কদমও নড়বি না,আমি না বলা পর্যন্ত।
||
____ না চাইতেও দাঁড়াতে হবে,কারন তার কথা না শুনলে,নিজের কপালে নিজের কুড়াল মারা সমান।কখন কি করে বসে আল্লাহই জানে।
||
জিসান ভাই খুব গম্ভীর কন্ঠ বললো_____বড় হচ্ছিস, শরীলের গঠনরূপে পরিবর্তন আসছে,এখনো কি তকে বলে দিতে হবে রাস্তাঘাটে তোকে কিভাবে চলা ফেরা করতে হবে।নিজের ভি বেল্টাকে ও সামলাতে পারিস না।তাহলে পরিস কেনো।
||
জিসান ভাইয়ের এ কথায় আমি উনার দিকে তাকালাম,এখন মাথার সব নাটবল্টু গুলো কাজ করতে শুরু করলো,আমি এতোক্ষনে বুঝতে পারলাম,পাবলিকের সামনে আমাকে মারার রহস্য।
||
আমি লজ্জায় মাথাটা নিচু করে ফেললাম,ছিঃ!!!এমন দূর্ঘটনা গুলো অলটাইম জিসান ভাইয়ের সামনেই কেনো হয়।তখন নিশ্চই সবাই দেখেছে কি লজ্জার বিষয়,সাথে জিসান ভাইও।আমার তো মাটি খুঁড়ে ডুব দিতে মন চাইছে।
||
আমার অবস্থা বুঝে জিসান ভাই বললো______আজ লাস্টবার বলছি,এর পরও এমন ভুল দেখলে।আর এমন বেখায়াল ভাবে চলাফেরা করলে,তোর জন্য ভালো হবে না।আমাকে ভালো করেই জানিস তুই।তোর ঘরে দুটো সাধা ওড়না এনে রেখেছি।কাল থেকে ও গুলো পরে যাবি স্কুলে।
||
আমি কি বলেছি শুনতে পেয়েছিস। (একটু চিৎকার দিয়ে)
||
আমি তার ধমকে একটু কেপে উঠলাম,মাথা নেড়ে হ্যা বললাম।
||
এখন রুমে যা,কিছুক্ষন পর সন্ধ্যার আযান দিবে,এই সময় কখনো ছাদে আসবি না।রুমে গিয়ে পড়তে বস।
||
তিশা আর এক মিনিটও অপেক্ষা করেনি,দৌঁড়ে নিচে চলে গেলো।
||

||
________যাই হোক তার বিয়ে ঠিক হয়েছে,তানজিলা আপুর সাথে।তানজিলা জিসান ভাইয়ের বাবার বন্ধুর মেয়ে।দেখতেও বেশ সুন্দর।তাওহিদ ভাই নিজের বাবা মায়ের পছন্দেই বিয়ে করবে বলে,কারো কোনও সমস্যা নেই এই বিয়ে নিয়ে।বিয়ে এক মাস পর।তাই কার্ড দেওয়া এখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে।
||
আমি মাত্র কোচিং থেকে বাসায় আসলাম,এসেই দরজার সামনে এতো মানুষের জুতা দেখে মনে মনে ভাবলাম কে আসলো। চিন্তা করতে করতে কলিং বেল বাজাতে লাগলাম।
হঠাৎ চোখ গেলো সামনের বিল্ডিং এর দিকে...... কয়েকজন প্রতিবেশি উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখছে,হয়তো তাদের মনেও আমার মতো কিউরিসিটি কাজ করছে।
||
আমি হাসতে হাসতে দরজা ধাক্কাতে যাবো তার আগেই কেউ দরজাটা খুলে ফেলে আর আমি তার উপর পরে যেতে নিলেই সে আমার বাহু দুটো ধরে ব্যালেন্স করে দাঁড় করায়।জিসান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে,আমিও তাকে দেখে একটা শুকনো হাসি দিয়ে ঘরে ডুকলাম।
||
ঘরে ডুকে জিসান ভাইয়ের পরিবারদের দেখে আমি শোকড______পরে জানতে পারলাম তারা দাওয়াত দিতে এসেছে।জিসান ভাইয়ের মা আমাকে তার কাছে বসালো,আমার মাথাটা টেনে কপালে একটা আদর দিলো,তার আমার প্রতি এতোটা ভালোবাসা খুবই মুগ্ধ করলো।উনি আসলেই অনেক ভালো,কিন্তু উনার মতো ভালো মানুষের ঘরে এই তিতা করলা(জিসান)কোথা থেকে এলো এটা বুঝতে পারছি না।
||
জিসানের মা তিশার মুখটা দুহাতে নিয়ে বললো_____আমার ছেলেটা একদম ঠিকই বলেছে,তুমি আসলেই একটা চাঁদের টুকরা।তোমার হাসিতে মায়া লেগে আসে।
||
আমিতো তার কথা শুনে অবাকের চরম সীমায়।জিসান ভাই এসব বলেছে তার মায়ের কাছে আমার সম্পর্কে ।বাট হোয়াই!!!!!
||
আমি আড় চোখে জিসান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম,সেও নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।আমি তার এই হাসির রহস্য তখন বুঝতে পারিনি।
নিশি আর তিশা তো সেম বয়স তাই না আপা।তিশার মা।
||
______হুমমম,শুধু দুতিন মাসের বড় ছোট ওরা।
জানো তিশা তুমি যেদিন হয়েছিলে_____রায়হান তো ভয়ে তোমাকে কলেই নিতে চায়নি।জিসানকে ফোনদিয়ে বলে_____জানোস জিসান,বাবা না আমার জন্য একটা পুতুল নিয়ে এসেছে।একদম তুলতুলে পুতুল।একদম রুপকথার গল্পের পরীর মতো দেখতে এই পুতুলটা।
||
তখন জিসানও জিদ করলো, সে এই মুহুর্তে এই পুতুলকে দেখবে।ওকে অনেক বুঝানোর পরও যখন শুনছিলো না,তখন বাধ্য হয়ে রাত ১১ টায় তোমার আংকেল ওকে হসপিটালে নিয়ে আসে।রায়হান কোলে না নিলেও সেদিন তোমাকে জিসান কোলে নিয়েছিলো।
আর তখনি সে আরেক আবদার করে বসে,এই পুতুল তার চাই।সে কাউকে তার পুতুল ধরতে দিবে না।এই পুতুল শুধু তার।রায়হান কে তো যতারীতি ধমকাতে লাগলো,আজ থেকে এটা শুধু তোর পুতুল না,আমার ও।আমরা দুজনি ওকে আগলে রাখবো আজ থেকে।
||
আংটির মুখে এসব কথা শুনে কেনো জানি খুব লজ্জা লাগছিলো আমার,জিসান ভাইয়ের দিকেও তাকাতে পারছিলাম।জিসান ভাইয়ের মনে আমার জন্য এমন চিন্তাতো আমি কখনো কল্পনাও করেনি।কারন আমার কাছে জিসান ভাইকে টেবিলে পড়ে থাকা সেই ডিকশনারিটার মতো মনে হতো, যেটার উপকারিতা থাকলেও পড়তে বরই বোরিং লাগে।
||
আমার কানে এখনো সেই কথাটা বাজছে,আমরা দুজনেই ওকে আগলে রাখবো।হুমমমম,আগলেই তো রেখেছে।জিসান নামক প্যারাটি আমার সমস্ত জীবনে জড়িয়ে আছে।ছোটবেলা থেকেই আমি তার কড়া শাসন পেয়ে আসছি।উনি আমার সাথে ভালো করে একটু কথা বলেছে এমন কোনও দিন মনে নেই আমার। মনে পরবেই বা কিভাবে,জিসান ভাই এমন কখনো করেনি।
||
সব সময় আমার উপর চিল্লাচিল্লি, হাউকাউ ছারা কিছুই বলতো না।এখানে যেতে পারবিনা,ওখানে যেতে পারবিনা,এটা কেনো করিস,ওটা কেনো পরিস।উফফফ.......আমার পুরো লাইফ শুধু তার বিধিনিষেধ মানতে মানতে পার হয়েছে।।উনি আমার কাছে একটা বিষাদময় মাথা ব্যাথা ছাড়া আর কিছুই না।আর এই মাথা ব্যাথা থেকে মুক্তি চাই আমি।
||
||

||
দুদিন ধরে মায়ের কানের সামনে গ্যান গ্যান করেই যাচ্ছি,সোপিং এর জন্য।সোপিং না করে দিলে বিয়েতে যাবো না বলে দিলাম।কিন্তু আমার মা বলে কথা।কথা যেনো কান দিয়ে যায়ই না তার।হতাশ হয়ে নিজের রুমে বসে হেডফোন কানে দিয়ে গান শুনছিলাম।
||
কিছুক্ষন পর মা কতোগুলো সোপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে রুমে ডুকলো,আমি মাকে কিছু জিঙ্গেস করতে যাবো তার আগেই মা বলে উঠলো,নে তিশা তোর সোপিং, গায়ে হলুদ,বিয়ে, বৌভাতে কি কি পড়বি সব আছে।
_______আমি পেকেটগুলো খুলে শোকড এর উপর শোকড খেলাম।প্রতিটা ড্রেস অসাধারন।আর আমার পছন্দের রং এর।এর সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি ও আছে।আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম,আমার মায়ের চয়েজ এতো উন্নত হলো কি করে।আর মা সোপিং করতে গেলো কখন।আর আমাকে নিলো না কেনো।

_____তিশা তুই উঠবি না।
_____আমি চোখ দুটো হালকা খুলে,উফফ মা!!এমন কেনো করছো।গায়ে হলুদ রাতে,আর এখন সকাল। এতো তারাতারি আমাকে কেনো ঐ বাসায় যেতে হবে।কাজের মেয়ের কি অভাব পরেছে।নাকি আমার বাসায় খাবারের অভাব পরেছে।
_____দেখ,তিশা। বাজে কথা বলিস না।
নিশি,জিসান,আর তোর আংটি কয়েকবার কল করেছে, তোকে পাঠিয়ে দেবার জন্য।
_____আমি আবার চোখ দুটো বন্ধ করে,আংটিকে বল আমি বিকেলে এসে পড়বো।
____ঠিক আছে,এই নে.....আমার হাতে মা তার ফোনটা ধরিয়ে চলে গেলো।আমাকে জিঙ্গেস করার সুযোগও দিলো না কে ফোন দিয়েছে।যতোসব।
______ফোনটা কানে দিয়ে,ঘুম ঘুম কন্ঠে,হ্যা...লো।
কিন্তু কেউ কথা বলছে না দেখে।আরে ভাই চুপ করে বসে কি ধ্যান করছেন।কথা বলছেন না কেনো।সকাল সকাল ফোন করে আমার ঘুম নষ্ট করেন,যতোসব আজাইরা পাবলিক।ফোনটা কাটতে নিলে...
______তিশাএএএএএ।-----সফটলি কন্ঠে।
______আমিতো শোকড,এতো সুন্দর করে কে ডাকছে।কন্ঠটা খুব চেনা চেনা লাগছে,তিতা করলার কন্ঠ না এটা।বাট এই মানুষটি কখনো আমাকে এমন মধুর কন্ঠে ডাকেনি।অলওয়েজ চিল্লিয়ে ডাকে।হঠাৎ এতো চেন্জ।
______হুমমমমম।আমার মুখ দিয়ে বের হয়ে গেলো।
______কয়টা বাজে এখনো ঘুম থেকে কেনো উঠিস নি ।উঠ তারাতারি।আর রেডি হয়ে চলে আস বাসায়।
______আরো একটু ঘুমাই না জিসান ভাইয়া।আমি এখন এসে কি করবো।বিয়েতো আমার না,যে না আসলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।যার বিয়ে সে থাকলেই চলবে।বাকি মানুষের কি কাজ ওখানে।
______কেনো!!! তোর কি বিয়ে করার শখ জেগেছে ।বিয়ে করবি।রাজি থাকলে তোর বিয়েটাও করিয়ে দেবো।আমি কিন্তু এক পায়ে রাজি।
_____আমি ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠে বসে পরি,আরেরেরে কি বলছেন।ব্রেক মারুন,আমি কখন বললাম আমি বিয়ে করবো,আমি তো জাস্ট………
আমাকে আর বলতে দিলো না।
_____এক ঘন্টা সময় আছে তোর কাছে,তারাতারি ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে নে,আমি গাড়ী পাঠাচ্ছি ভদ্র মেয়ের মতো চলে আসবি।রাতে আমাদের সাথেই সেন্টারে যাবি।আমি কিছু বলতে যাবো,তার আগেই ফোনটা কেটে গেলো।হিটলার কোথাকার, কথাও শুনলো না।
আমার আর কি করার,চলে গেলাম তাদের বাসায়।আমি না গেলে এই ব্যক্তি আমার কান ধরে নিয়ে যেতো।তার থেকে ভালো নিজের পায়ে হেটে যাই।সম্মান তো বাঁচবে।
||
||

______একে একে করে সবাই তাওহিদ ভাইকে হলুদ দিয়ে দিলো।হলুদের পর নাচ গানের আয়োজন করা হয়েছে।আর এতে সবাই খুব ইনজয়ও করছে।আমিও এক পাশে দাঁড়িয়ে গান শুনছিলাম।হঠাৎ একটা অচেনা ছেলে এসে আমার পাশে দাঁড়ালো। আমি একটু সরে দাঁড়ালাম। সে আবার আমার কাছে এসে জিঙ্গেস করলো_____
hello bab,I'm Orko... what's your name.... !
আমি তার দিকে তাকিয়ে চিন্তা করতে লাগলাম,চিনি কিনা,না আমি চিনি না।কিন্তু ছেলেটা যে আমাকে অনেকক্ষন ধরে ফলো করছে তা বুঝতে পেরেছি।এখন একা পেয়ে কথা বলতে এসেছে।
সে আবার নাম জিঙ্গেস করে,ভদ্রতার ক্ষাতিরে আমিও বলে দিলাম।আমি আবার একটু বেশি ভদ্র মেয়ে।
____তিশা,মাই নেম ইজ তিশা।আমি চলে যেতে নিলে ছেলেটা আমার হাতটা ধরে ফেলে,আমি তীক্ষ্ণ দৃস্টিতে তাকাই।হাত কেনো ধরেছেন।একটু রেগে।
_____why are you shouting, clam down.I am coming to talk to you.you look so hot.Read in any class.... bab..
_____ছাড়ুন আমার হাত,আমি কিন্তু এখন ঠিকই চিৎকার দেবো।এটা বলার পর অর্ক আমার হাতটা আরো জরে চেপে ধরলো,
_____ওয়াও,তোমার দেখি রুপের সাথে তেজও আছে,পিচ্ছি হলে কি হবে।কিন্তু এটিটিউট বড়দের মতো।
তুমি জানো আমি কে??মিনিস্টারের ছেলে,যে মেয়ের গায়ে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করবো সাথে সাথে আমার কাছে এসে পড়বে।আর আমি সেধে তোমার সাথে কথা বলতে এসেছি।তুমি আমাকে এবোয়েড করছো।সাহস তো তোমার কম না।
খুব জরে গান বাজছে,তাই এদিকে কি হচ্ছে কেউ শুনতেও পাচ্ছে না।
______হাত না ছাড়লে,থাপ্পর দিয়ে দাঁত ফেলে দেবো ফাজিল ছেলে।সাহস কি করে হলো,আমার হাত ধরার।ছাড় বলছি,এক ঝটকা দিয়ে হাতটা ছাড়িয়ে ফেলি।তুই কে আমি জেনে কি আচার বানাবো।দূরে থাক আমার থেকে।
______ও রিয়ালি, আমার সাহস দেখতে চাও।তাহলে চলো।আমার হাতটা আবার ধরতে নিলে।আমি পেছনে সরে যাই,আর পেছনে দাঁড়ানো ব্যক্তিটার সাথে ধাক্কা খাই।তাকিয়ে দেখি জিসান ভাই,অগ্নি চোখে তাকিয়ে আছে।
আমি জিসান ভাইয়ের পেছনে লুকিয়ে____ভাইয়া দেখুন না,এই ছেলেটা কতোক্ষন ধরে আমার সাথে অসভ্যতামী করছে।
_______জিসান ভাইয়া চুপ কিছুই বললো না,আমি কিছুটা শোকড!!! উনি নিশিকে কল করে আমাকে ওর সাথে নিয়ে যেতে বললো,আর জিসান ভাই অর্কের কাধে হাত রেখে সেন্টারের বাহিরে চলো গেলো।আমি এখনো তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।অদ্ভুত বিষয়!!জিসান ভাই এতো শান্ত কিভাবে।নাকি ঝড় আসার পূর্বাভাষ।
আমি নিশির সাথে চলে গেলাম।কিছুক্ষন পর উনিও কি সুন্দর মতো ফানশনে এসে হাজির হলেন।এমন বিহেভিয়ার যে কিছুই হয়নি।অবশ্য পুরো অনুষ্ঠানে অর্ককে আমি আর দেখি নাই।
_______পরের দিন বিয়েটাও ভালো মতো হয়ে গেলো,তানজিলা ভাবিকে সবাই স্বযত্নে বরন করে নিলো বাসায়।আমি অবাক হলাম যখন তানজিলা ভাবির আমাকে দেখার আগ্রহ জেনে।আরে আমিতো এই বাড়ীর কেউ না,তাহলে আমাকে দেখার জন্যও আগ্রহ কেনো।ওয়াই!!!!
তার আবার ভাইটাইয়ের গলায় আমাকে জুলিয়ে দেবার প্লানিং করছে নাতো।খুবই কনফিউজড আমি।আজ কাল কাউকে বিশ্বাস করতে নেই।
বিয়ের পর বেশ কিছুদিন কেটে গেলো,আমি সেদিনের ঘটনাটাও মন থেকে মুছে ফেললাম।কিন্তু বলে না,কিছু ঘটনা আপনার পুরো জীবনকে চেন্জ করে ফেলে,আমার সাথেও তাই ঘটলো।আমি ভুলে গেলেও একজন মানুষ ভুলে নি,আর সে হলো অর্ক।সেদিন জিসান ভাই বাহিরে নিয়ে অর্ককে অনেক মারে,পরে রায়হান ভাই ও তাদের ফ্রেন্ড রনি এসে জিসান ভাইকে আটকায়।
তবে তৌফিক আংকেল খুব রেগে যায়,জিসান ভাইয়ের উপর।কারন অর্ক কোন সাধারন ছেলে ছিলো না।মিনেস্টারের ছেলে।খুব কৌশলে এই ঘটনাটা ধামা চাপা দেন আংকেল।আর জিসান ভাইকে ওয়ার্নিং।
||
||

_______কিন্তু আমার এই খুশিটা ছিলো একদম ক্ষণস্থায়ী।আমার কপালে হয়তো অন্য কিছু লিখাছিলো। বলে না আমরা অনেক কিছু চিন্তা করে রাখলে কি হবে, আমাদের চাবিকাঠি তো অন্যের হাতে।সে যেভাবে চাইবে তাই হবে।অনেক দিনের তিলে তিলে গড়া কুড়ের ঘড়টাও হঠাৎ আসা ঝড় হাওয়ায় ভেঙ্গে যায় তারই হুকুমে।
________আমার জীবনেও এমন এক ঝড় এসে পরে,সেদিন আমার লাস্ট পরীক্ষা ছিলো।পরীক্ষা দিয়ে স্কুল থেকে বের হলাম খুশি মনে।ফ্রেন্ডস দের সাথে একটু আড্ডা দিয়ে বাড়ীর দিকে হাটা ধরলাম।মনটা অনেক খুশি।এবার রিলেক্স হবার পালা,নতুন নতুন কতো সুন্দর মুভি এসেছে তা সব দেখবো।মাকে বলবো সীমা আপুদের বাসায় নিয়ে যেতে,অনেক দিন হলো দেখিনা।
________এসব চিন্তা করতে করতে হাটছিলাম।হঠাৎ একটা মাইকো এসে আমার সামনে দাঁড়ায়। আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম।মাইকোটাকে দেখে আমি আমার হাটার গতি বাড়িয়ে দিলাম।কিন্তু শেষ রক্ষা পেলাম না।মাইকো থেকে অর্ক ও আরো দুজন ছেলে নেমে এসে আমাকে জোড় করে তুলে নিলো।চিৎকার দেওয়ার আগেই মুখ চেপে ধরলো।অনেক চেস্টা করেও ছুটতে পারছিলাম না।আমার ছুটাছুটির কারনে অর্ক রুমাল দিয়ে নাক মুখ চেপে ধরলে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।
______যখন আমার জ্ঞান ফিরে,নিজেকে একটা রুমে আবিষ্কার করি।মাথাটা এখনো ধরে আছে।চোখে এখনো কেনো জানি ঘুম ঘুম ভাব আছে।আমি কোথায় আছি ভাবতে লাগলাম।মনে পড়ে গেলো আমাকে তো অর্ক তুলে এনেছে এখানে।হঠাৎ দরজা খুলার শব্দে আমি আতকে উঠলাম।চেয়ে দেখি অর্ক ও আরো দুজন ছেলে রুমের ভেতরে প্রবেশ করলো।আমি অর্ককে দেখে চিৎকার করে উঠলাম আমাকে এখানে কেনো এনেছেন।কি ক্ষতি করেছি আমি আপনার ।
অর্ক হাসতে লাগলো,আমার সামনে মুখ এনে বলতে লাগলো,তোর অনেক তেজ তাই না,সেই তেজ আমি দূর করতে নিয়ে এসেছি।আর তোর ওই আশিককেও তো শিক্ষা দিতে হবে।আমার গায়ে হাত তুলার পরিনাম কতোটা ভয়ানক হতে পারে এটা এখন বুঝবে।
আমার চুলের মুঠি ধরে
_______তোর এমন অবস্থা করবো আজ,যাতে আয়না দিয়ে নিজের চেহারা দেখতেও ভয়ে আতকে উঠবি।আর তোর আশিক তোকে এ অবস্থা দেখে বেঁচে থেকেও মরে যাবে।আমি অর্কের কথার আগামাথা কিছুই বুঝলাম না।কোন আশিক এর কথা বলছে।আমার এমন কেউ নেই।আমি ওর হাত থেকে চুল ছুটাবার চেস্টা করে বলছি, আপনার হয়তো ভুল হচ্ছে,আমার এমন কোনও আশিক নেই।প্লিস আমাকে ছাড়ুন।আমি বাসায় যাবো।
আমার কথা শুনে অর্ক সহ বাকি দুছেলে গুলো ও হেসে উঠলো।
_______ব্রো যাই বলিস না,মাল কিন্তু****।হুমমম ঠিক বলছিস।তাহলে আজ জমিয়ে পার্টি হবে,ভাগে কি আমরাও পাবো।
_______অফকোর্স। তা আবার বলতে হবে।।
_______আমি এদের কথা শুনে বুঝতে পাড়লাম,আজ আমার সাথে ভয়ানক কিছু হবে।যার কথা হয়তো আমি কোনও দিন কল্পনাও করিনি।এসব কি সত্যি আমার সাথে হচ্ছে।নাকি এখনো আমি ঘুমিয়ে আছি।আর মা কিছুক্ষন পর আমাকে ডাকতে আসবে।তিশা তিশা করে চিল্লাবে।
আজ মাকে খুব মনে পড়ছে।মা প্লিস আমাকে ডাকো,আমি আর এই স্বপ্ন দেখতে চাই না,মা তুমি কোথায়।আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।মাথার চুলগুলো মনে হয় ছিড়ে যাচ্ছে এমন মনে হচ্ছে।
______বাকি দুটো ছেলে চলে গেলো,আর অর্ক আমাকে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।নিজের শার্ট খুলতে লাগলো,আমি এদিক ওদিক দেখতে লাগলাম কোথায় পালানো যায়।অর্ক আমার দিকে এগোতে থাকলে আমি দৌঁড় দিয়ে বারান্দায় চলে যেতে নিলাম।উদ্দেশ্য গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দেবো।কিন্তু আমি বারান্দায় যাবার আগেই অর্ক আমাকে ধরে ফেলে।ছুটতে চাইলে,আমাকে জরে কয়েকটা থাপ্পর মারে,থাপ্পরের কারনে আমার ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হয়ে যায়।আমি অনেকটা দূর্বল হয়ে পড়ি।শরীলে মনে হয় আর শক্তি নেই।আমাকে ধাক্কা দিয়ে আবার বিছানায় ফেলে দেয়।
______এখন আর উঠার শক্তি পাচ্ছি না,মাথাটাও ভো ভো করছে,চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে।রায়হান ভাইকে খুব বেশি মনে পড়ছে।আমি কোথাও যেতে চাইলে রায়হান ভাই মানা করলে, রাগ করে বসে থাকতাম।তখন রায়হান ভাই এসে বলতো তিশা বাহিরের জগৎ টা অনেক খারাপ।কখনো এর আসল চেহারা দেখলে তুই সহ্য করতে পারবি না বোন।আর আমি তোকে হারাতে চাই না।
তিশার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে,বার বার একটা কথা মনে পড়ছে,ভাই তুই কোথায়।আমি যে সত্যি সহ্য করতে পারছি না।প্লিস ভাই আমাকে নিয়ে যা।।
চলবে………
[পার্টগুলো কেমন হচ্ছে জানাবেন।তাহলে সামনে বাড়তে সহয হবে।]
---------(season 2)

জিসান ড্রয়িং রুমে বসে আছে,রাগে এখনো মাথার রগ গুলো ফুলে আছে।কিছুতেই যেনো নিজেকে শান্ত করতে পারছে না।ওর একটাই কস্ট অর্ককে নিজ হাতে খুন করতে পারলো না।তার আগেই রায়হান ওকে বাঁচিয়ে ফেলছে।তাই রাগে কটমটিয়ে রায়হানের দিকে তাকিয়ে আছে।এখনতো রায়হান কেও মারতে মন চাইছে।আজ ওর কারনে অর্ক বেঁচে গেছে।
||
______তৌফিক সাহেব এতোক্ষন ফোনে ব্যস্ত ছিলেন।ছেলেটাকে নিয়ে তিনি পরেছেন মহা যন্ত্রনায়।কারো কথা শুনে না।রাগের মাথায় একটার পর একটা সিনক্রিয়েট করে আসে,আর তা সামলাতে তৌফিক সাহেবকে ভোগান্তিতে পরতে হয়।আজ ও তার ব্যতিক্রম না।অর্ক মিনিস্টারের ছেলে,এটা সামলাবে কিভাবে সেটাই এখন সব থেকে বড় কথা।
উনি ফোনে কথা বলে সোফায় বসে পরলেন।আর মিসেস রাবেয়া বেগম ছেলের মাথা ঠান্ডা করার চেস্টা করছেন।তা দেখে তৌফিক সাহেবের মন চাইছে,মা ব্যাটা দুজনকেই আফ্রিকা জঙ্গলে পাঠিয়ে দিতে।তাদের দুজনের জন্য ওটাই সবথেকে শ্রেষ্ঠ জায়গা।মানুষের মধ্যে থাকার জগ্যতাই নেই এদের।ছেলে আকাম করবে আর মা ছেলের মাথায় পানি ঢেলে মাথা ঠান্ডা করাবে।বাহহহহ!!!!কি ফ্যামিলি আমার।
_______বুঝলাম অর্ক যা করেছে ঠিক করেনি,কিন্তু তাই বলে নিজেও কি ওর মতো ক্রিমিনাল হয়ে যেতে হবে।অর্ককে অন্যভাবেও শাস্তি দেওয়া যেতো।কিন্তু এখন,এখন কি হবে।মা ব্যাটারতো কোন টেনশন নেই।
আর এদিক দিয়ে যে আমার পিছে বাঁশ পরেছে তাতে তাদের কি।
______তুমি এটা কিভাবে করতে পারলে জিসান।(তৌফিক সাহেব আর সহ্য করতে না পেরে জিঙ্গেস করলো)
______তুই কাজটা একদম ভালো করিসনি রায়হান।(জিসান)
______আমি তোমাকে কিছু জিঙ্গেস করছি।তুমি আমার কথার উত্তর না দিয়ে রায়হানকে কেনো ধমকাচ্ছো।
______তিশা তোর বোন হয়, আর তোর বোনের সাথে ঐ জানোয়ারটা এতো নোংরা কাজ করতে চাইছে,আর তুই ওই *** কে বাঁচালি।ওয়াই....রায়হান।
||
তৌফিক সাহেব ঠাস করে জিসানের গালে একটা থাপ্পর লাগিয়ে দিলো।বেয়াদব ছেলে____ও তোকে বাঁচাবার জন্য এমন করেছে।আর কি করতে চাইছিস।হাত পা ভেঙ্গে দিয়েছিস।এখনো নাকি জ্ঞান ফিরে নাই।আর জ্ঞান ফিরলেও আর কখনো চলতে পারবে কিনা সন্দেহ।আর তুই এখনো এসব বলছিস।
______এতো কিছু নিজে করে আবার এই ছেলেটা( রায়হান) কেই ধমকাচ্ছিস।আরে ও না থাকলে তুই আরো আগে জেলের ভাত খাইতি।বার বার সব জায়গা থেকে তোকে বাঁচিয়ে আনে।তোকে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়াই ভালো।তাহলে হয়তো তোর একটু শিক্ষা হতো।
জিসান মাথা নিচু করে এখনো বসে আছে,মনে হচ্ছে কোনও লাভ হয়নি ওকে এই থাপ্পর টা মেরে,উল্টা তৌফিক সাহেবের হাত ব্যথা করছে।
______আংকেল মাথা ঠান্ডা করুন,এখন মাথা গরম করে কিছু হবে না।(রায়হান)
জিসানের কারো কথা এখন ভালো লাগছে না,তাই উঠে উপরে চলে গেলো।
||
বাবা রায়হান ঠিক বলেছে,জিসানকে পরে দেখবো।আগে এটা কিভাবে সামলাবো।অর্কের বাবা দেশে নাই।তাই হয়তো এখনো পরিস্থিতি আমাদের হাতে।কিন্তু কাল উনি দেশে ফিরছে,এসেই আগে জানতে চাইবে তার ছেলের এ অবস্থার জন্য কে দায়ী।আর তখন তিনি তার সব শক্তি লাগিয়ে দেবে জিসানকে শাস্তি দিতে।তার জানার আগেই আমাদের কিছু করতে হবে।(তাওহিদ)
_____তাওহিদ তুই তারাতারি ব্যবস্থা কর,তোকে যা বললাম।এই আপদটাকে এখান থেকে বিদায় কর।তা না হলে,আমি সহ্য করতে পারবো না আমার চোখের সামনে থেকে আমার ছেলেকে হেন্ডক্যাপ পড়িয়ে পুলিশ নিয়ে যাবে।এটা আমি সহ্য করতে পারবো না।তৌফিক সাহেব কেঁদে উঠলেন।যতোই বকাবকি করুক,কিন্তু সব বাবা মাই নিজের সান্তনকে ভালোবাসে। কিন্ত জিসানের এই রাগটাকে খুব ভয় পায় তৌফিক সাহেব।কখন কি করে বসে।
জিসান তিশার রুমে প্রবেশ করে।তিশা গুটিসুটি দিয়ে বাচ্চাদের মতো ঘুমিয়ে আছে।তানজিলা, নিশি আর তিশার মা মেয়ের পাশে বসে আছে।এতো বড় একটা দূর্ঘটনার পর মেয়েকে কিছুতেই একা ছাড়বে না আর।
______তানজিলা জিসানকে দেখে ইশারা করে তিশার পাশে বসতে।কিন্তু জিসান মাথা নেড়ে না বলে।তিশা ঘুমিয়ে আছে ঘুমাক।ওকে দেখলেই আমার অর্কের প্রতি রাগটা আরো বাড়বে।তাই জিসান নিজের রুমে চলে গেলো।
||
||

______আজ দুপুরের ঘটনা।জিসান,রায়হান ও তাদের কিছু ফ্রেন্ড রেস্টুরেন্টে এসেছিলো লাঞ্চ করতে।অনেকদিন পর একসাথে কিছু প্লান করলো।ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা ভালোই জমেছিলো।এমন সময় জিসানের একটা কল আসে।কলটা রিসিভ করতেই জিসানের মুখটা রক্তবর্ণ ধারন করে।রায়হান সহ সবাই বুঝতে পারে এমন কিছু হয়েছে হয়তো যার কারনে জিসান ভিষন রেগে গেছে।
কিন্তু তবুও জানতে হবে, তাই রায়হান জিসানের কাধে হাত রেখে জিঙ্গেস করলো কি হয়েছে?
______জিসান ফোনটা রেখে খুব শান্ত কন্ঠে বললো,তিশা কিডন্যাপ হয়েছে।এটা শোনার পর রায়হান বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো।ওয়াট!!!
হুমমম,জিসান আবার কাকে জানি ফোন করলো।এবং একটা নাম্বার দিলো।নাম্বরটা লোকেশন জানার জন্য।
||
এদিক দিয়ে রায়হানের মেঝাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে জিসানের এমন নিরব থাকার কারনে।জিসান কে করেছে, আর তুই কার নাম্বার দিয়েছিস।এভাবে শান্ত হয়ে কিভাবে আছিস, আমি চললাম।
রায়হান যেতে নিলে,জিসান হাতটা ধরে ফেলে।রিলেক্স রায়হান।আগে লোকেশন টা জানতে দে।
____কে করেছে তুই জানিস।(রায়হান)
হুমমম,অর্ক করেছে।ওর গাড়ীতে তিশাকে দেখেছে শাহিন।শাহিন জিসান ও রায়হানের ফ্রেন্ড।
লোকেশন জানার সাথে সাথে জিসানসহ বাকি সবাই রওনা দিলো।
||
অর্কের আগাত গুলো তিশা নিতে পারেনি,তাই তিশা আবার অঙ্গান হয়ে যায়।অর্ক কয়েকবার পানির ছিটা দেওয়ার পরও যখন তিশার জ্ঞান ফিরে না,তখন বাধ্য হয়ে চলে যেতে নেয়।যা করবে জ্ঞান ফিরলেই করবে।তা না হলে তিশাকে কস্ট দেওয়ার এতো প্লান সব নস্ট হয়ে যাবে।এসব ভেবে দরজাটা খুললেই,সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তিটাকে দেখে না চাইতেও অর্ক ভয় পেয়ে যায়।
______জিসানের চেহারা রাগে লাল হয়ে আছে, ভেতরে ডুকেই অর্ককে একটা লাথি মারে।অর্ক ছিটকে গিয়ে পড়ে।রায়হান আর ওদের ফ্রেন্ডরা অর্কের দুই ফ্রেন্ডদের পিটাচ্ছে। এমন সময় জিসানের ডাকে রায়হান রুমের ভেতরে যায়।
জিসান তিশার জ্ঞান ফিরানোর চেস্টা করে, কিন্তু কোনও লাভ হচ্ছে না, তাই রায়হান কে ডাক দেয় তিশাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
_____রায়হান তিশাকে নিয়ে জিসানদের বাসায় আসে।কারন রায়হানের বাবা মাও এখানে।খবর পেয়ে সবাই অপেক্ষা করছে।তিশাকে বাসায় রেখে রায়হান আবার জিসানের কাছে চলে যায়।জিসানের রাগের সম্পর্কে রায়হান খুব ভালো করেই জানে,তাই জিসানকে আটকাতে হবে।
রায়হান গিয়ে দেখে অর্ক আর ওর ফ্রেন্ডদের অবস্থা খুব খারাপ,কিন্তু জিসান তখনো মেরে যাচ্ছে,আরো কিছুক্ষন থাকলে হয়তো মরে যাবে।জিসানদের ফ্রেন্ডসরা জিসানকে ধরার সাহসও পাচ্ছে না।রায়হান গিয়ে জিসানকে আটকায়।রায়হান জিসানকে বাসায় নিয়ে আসে।আর ওদের ফ্রেন্ডদের বলে অর্ক আর ওর সাথীদের কোনও হসপিটালের সামনে ফেলে আসতে।কারন ওদের কিছু হলে কারো জন্যই ভালো হবে না।
||
||

তিশার মা তিশার পাশে ঘুমিয়ে আছ।বাবা সোফায় আর রায়হান বারান্দার ইজি চেয়ারটায় বসে ঘুমিয়ে আছে।সবাইকে খুব ক্লান্ত লাগছে।কালকের ঘটনায় তারাও খুব টেনসড ছিলো।তাদের জন্য হলেও নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে হবে।তা না হলে আমার সাথে সাথে সবার কস্ট বাড়বে।তিশা মনে মনে নিজেকে শক্ত করে নিলো।
______তিশা অনেক কিছু চিন্তা করে,মাকে ডাকদিলো।মা মা।
তিশার কন্ঠ শুনে তিশার মা ধড়ফড়িয়ে উঠলো।তিশার মুখে হাত দিয়ে, কি হয়েছে তিশা,তুই ঠিক আছিসতো,কিছু লাগবে,পানি খাবি।বল কি লাগবে।শরীল খারাপ লাগছে নাতো।কিছুতো বল মা।চুপ কেনো।
মা আমি ঠিক আছি।দেখো তুমি,আমি একদম ঠিক আছি।তুমি আগে বলো আমরা কোথায়।
||
______আমরা জিসানদের বাসায়।কাল ডাক্তার তোকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছিলো,তুই সারারাত ঘুমিয়ে ছিলি।তাই আমরাও এখানে রয়ে গেলাম।তোর বাবা আর ভাইকে কতো করে বললাম,বাসায় চলে যেতে।কিন্তু না,তোকে ছারা যাবেই না।তিশাদের কথার শব্দে তিশার বাবা ও রায়হানের ঘুম ভেঙ্গে যায়।তারা সবাই মিলে কিছুক্ষন গল্প করে।রায়হান খুশি,তিশাকে স্বাভাবিক দেখে।কালকের ঘটনা তুলে তিশাকে আর কস্ট দিতে চায়না।
কিছুক্ষন পর তিশা মাকে বললো,মা আমার না খুব ক্ষুধা পেয়েছে।
তিশা ডাইনিং টেবিলে বসে আছে,আর সবাই তিশার দিকে তাকিয়ে আছে।তিশাকে এতোটা স্বাভাবিক দেখে সবাই খুশি,কিন্তু "তবুও"রয়ে যায়।
_____তিশা সবার দিকে তাকিয়ে,কি হয়েছে।সবাই আমার দিকে এভাবে কেনো তাকিয়ে আছো।যেনো ভূত দেখছো।সব ঠিক আছে তো।
তখনি জিসান সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললো,সব ঠিকই আছে।কিছু হলেতো এতোক্ষনে মিস্টি বিলিয়ে ফেলতো।এতো তারাতারি কিছু হবার সম্ভাবনা ও নেই।
জিসানের কথায় তাওহিদ জিসানের দিকে তাকালো।কখন কি বলতে হয়,একটু ভেবেতো বল।(তাওহিদ।)
||
_____এতো ভাবার সময় নেই আমার কাছে,আর ও কি কোন দেশের পেসিডেন্ট,যে আমাকে অন

____তাওহিদ পাশে এসে দাঁড়ালো। কিন্তু জিসানের কোন রিয়েকশন নেই।ভাইয়ের এমন ভাবনাহীন মনোভাব তাওহিদ এর ভালো মনে হলো না।
____যে খেলায় মেতে উঠেছিস,কি মনে করছিস,জিত্তে পারবি।(আসলে তাওহিদ খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে জিসান এসব ইচ্ছা করেই করেছে।)
____হারার জন্য আমি কিছু করিনা ভাইয়া।
কিন্তু কি দরকার ছিলো,ওকে একটু সময় দিতি,কয়েটা বছর কি তুই ওয়েট করতে পারলি না।
বাধ্য করে সম্পর্ক গড়েছিস, কিন্তু ভালোবাসা জোড় করে হয়না জিসান।
____তোমার কি মনে হয় আমি জোড় করেছি ওকে, কখনো না।ওকে আমি কখনো আমাকে ভালোবাসতে জোড় করবো না।কিন্তু আমাকে ছেড়ে যাওয়ার পারমিশন ও দেবো না।ও চাউক বা না চাউক আমার সাথেই থাকতে হবে।
____কিন্তু এভাবে!! আর ওতো তোকে ছাড়ার কথা বলেনি,তাহলে এমন কেনো করছিস ,আর তুই যে শর্ত সব ভেঙ্গে ফেলছিস তার পরিণাম কি হবে।তিশা যদি এসব মেনে না নেয়।
জিসান একটু বাকা হাসে.......।তাওহিদ জিসানের এই হাসির রহস্য বুজতে পারেনা।তুই অনেক চেন্জ হয়ে গিয়েছিস জিসান।তোর সব কিছু কেমন রহস্যময়ী লাগে আমার কাছে।
____রিলেক্স ভাই,তোমাকে এসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।শুধু এতোটুকু মনে রেখো আমার অপেক্ষার পাল্লা শেষ।তাই আমি আর ওয়েট করতে পারবো না।ওকে এখন আমার কাছে ধরা দিতে হবে।সেটা যে ভাবেই হোক।আর আমি যা করছি ভেবেই করছি।একদিন বুঝতে পারবে।
||
||

জিসান তিশার হাতটা ধরে এমন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে, যে কিছুই হয়নি।তিশার ওড়না দিয়ে হাতটা ঢাকা বলে কেউ কিছু দেখতেও পারে নি।
এ সময় নিশি ইশারা দিলো গাড়ীতে উঠতে,তিশাও চোখের ইশারায় বুঝিয়ে দিলো----তোর হিটলার ভাই ছাড়লে না আসবো।
নিশি একটা বিশ্বজয় হাসি দিলো।মানে ও বুজতে পারলো,শুরু হয়ে গেছে আমার ভাইয়ের রোমান্টিক অত্যাচার।বেচারী তিশা!!!
আর তিশা রেগেমেগে জিসানের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে আছে।
____সেন্টারে পৌছে তিশা বের হতে নিলে দেখে, দরজা লক করা।দরজা খুলুন।জিসানের দিকে তাকিয়ে।
____জিসান তিশার দিকে তাকিয়ে বললো,খুলবো না কি করবি।
খুলবেন না, মানে কি,এখানে বসে থেকে কি করবো।
____জিসান তিশার দিকে তাকিয়ে ---রোমাঞ্চ করবো।
____কককি যা তা বলছেন।তিশা একটা শুকনো ঢোক গিলে।
_____হুমমম,কেনো কোনও খারাপ কিছু বলেছি।বিয়ে হয়তো চার বছর আগে হয়ে গিয়েছে ,কিন্তু প্রেমতো করতে পারিনি।আমার তো তোর সাথে প্রেম করার ইচ্ছা অনেকদিন থেকে।তাহলে এখন যখন সুযোগ পেয়েছি,তাহলে একটু আকটু প্রেমতো করতেই পারি।তার সাথে(তিশার কানের কাছে এসে) একটু আকটু রোমান্স। কি বলিস।
____তিশা জিসানের এসব কথা শুনে পারেনা কেঁদে দেয়।কাঁদা কাঁদা ফেস নিয়ে বলে,দরজা খুলুন প্লিস, আমি বাহিরে যাবো।সবাই হয়তো খুঁজছে আমাকে।
_____তিশাকে এমন দেখে জিসানের পেট ফেটে হাসি আসে তবু নিজেকে সামলিয়ে বলে,
___ওকে,তাহলে.. "কিস মি"।তিশার এক হাত ধরে টেনে সামনে এনে।
_____জিসানের কথা শুনে তিশা কাশতে লাগলো।কাশতে কাশতে দম যায় যায় অবস্থা।জিসান পানির বোতলটা দিলে,ঢক ঢক করে একবোতল পানি খেয়ে ফেলে,মনে হয় এক সাগর পানি খেলেও আজ তিশার তৃষ্ণা নিবারন হবে না।
এসি গাড়ীতে বসেও তিশা ঘেমে যাচ্ছে,কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে।____জিসান রুমাল দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে বললো,কি রে এতো হিট কোথা থেকে পাস।এতো ঠাণ্ডা আবহাওয়া ও তুই ঘামছিস।
তিশাকে চুপ থাকতে দেখে____নিজের ঠোট কামড়িয়ে ধরে বলে,আচ্ছা ঠিক আছে এখন কিস করতে হবে না,এটা আমি পরে নিয়ে নেবো।কিন্তু এখন আমার কিছু কথা কান খুলে শুনে রাখ।
সেন্টারে একা একা কোথাও যাবি না,সব সময় নিশি বা নিলির সাথে থাকবি।অথবা আন্টির সাথে।তোকে আমি একা কোথায়ও জেনো না দেখি,কি বললাম বুঝলি।
তিশা মনে মনে ভাবছে,এসব না মানলে,আমাকে এখান থেকে যেতেই দিবে না।আর উনার এখানে থাকা মানে মহা বিপদ।তার চেয়ে ভালো যা বলে শুনে নিই।তিশা মাথা নেড়ে হ্যা বললো।
গুড গার্ল,যা এখন।গেটটা খুলার সাথে সাথে তিশা তো দৌঁড়।তা দেখে জিসান হেসে দিলো।
||
||

একটা থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিতে মন চাইছে,এতো সেজেগুজে আসার কি দরকার ছিলো।একবার এখান থেকে যেয়ে নি তার পর ওর ভিমরিতি আমি ছুটাবো।
তিশা সবার সাথে দেখা করে,এবার সুরভির কাছে এলো।
ও ভাবি তোমাকে যা লাগছে,আজ তো ভাইয়া কয়বার হার্ট এট্যাক করে আল্লাহই জানে।
_____তাইনি,তোমাকেও অনেক মিস্টি লাগছে।আজ কতো জনকে ঘায়েল করলা।
____কি যে বলো।সিংহ নিয়ে যদি ঘুরি, তাহলে কি কেউ কাছে আসার সাহস পাবে,তার গর্জনেই ভয়ে পালাবে।
_____তা তোমার সিংহ টা কই।
_____একটু চোখবুলাও আসেপাসে,আমি তাকে না দেখতে পেলেও,তার চোখ দুটো কিন্তু আমার দিকে চেয়ে আছে।
_____সুরভি সত্যিই চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখতে পেলো,ডার্কব্লু কালারের ব্লেজার পড়া,সাথে ব্লাক সার্ট।চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা একটি ছেলে রুপকের ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলছে আর আড়চোখ দিয়ে এদিকে তাকাচ্ছে।এটা আর কেউ না জিসান।
____সত্যি বলেছো।আর দেখো তোমার ডেসিং বয়কে কিন্তু আজ একটু বেশি ডেসিং লাগছে।দেখো না আশেপাশে কুমারী মেয়েগুলো চোখদিয়ে গিলে খাচ্ছে কিভাবে।সাবধান!
তিশা তাকিয়ে দেখলো ঠিকই তো।এসব মেয়েগুলোর কি আর কোনও কাজ নেই।অন্যের হ্যাসবেন্ড এর দিকে তাকায়।লুচু কোথাকার।
তিশা মনে মনে কথাটা বলেই ঠোট কামড়ে ধরলো,একি বললাম আমি, হ্যাসবেন্ড!!!তার মানে কি?আমিও কি এই সম্পর্ক টাকে মেনে নিচ্ছি এতো সহযে।
||
রুপক ও সুরভির বিয়ে হয়ে গেলো,সবাই খুশিতে একে ওপরকে মিস্টি খাওয়াতে লাগলো।জিসান খেয়াল করলো তিশা নেই।তিশাকে খুঁজতে লাগলো।
এমন সময় একটি মহিলা এসে জিসানকে জিঙ্গেস করলো।আচ্ছা তুমি তো ছেলের বাড়ীর মেহমান তাই না।জিসান মাথা নেড়ে হা বললো।
_____তাহলেতো তুমি ছেলে বাড়ীর সকলকে চিনো।
______সবাইকে না,কিন্তু অনেকেই চিনি।সমস্যা কি বলুনতো।আপনে কাউকে খুঁজছেন।
_____একদম ঠিক ধরছো,দাঁড়াও।ঐ যে ঐ মেয়েটাকে দেখছো।বউয়ের পাশে দাঁড়িয়ে আছে।গোলাপি রং এর লেহেঙ্গা পড়া।ওকে চিনো তুমি।তিশাকে দেখিয়ে।
_____হুমমম, চিনি আমি। আপনে ওকে কেনো খুঁজছেন।
_____আমার না ওর সব ডিটেলস দরকার।
_____জিসান কপাল কুঁচকে জিঙ্গেস করলো কেনো?
_____কেনো আবার আমার ছেলের জন্য সমন্ধ পাঠাবো।মেয়েটাকে আমার ছেলের বিষন পছন্দ হয়েছে।ও তো জিদ করে বসে আছে,বিয়ে করলে এই মেয়েকেই করবে।আমি আসার সময় দেখেছিলাম তোমার গাড়ী থেকে নামতে,তাই ভাবলাম হয়তো তোমার বোনটোন হবে।
জিসানের রাগে মাথার চুলগুলো ছিঁড়ে ফেলতে মন চাইছে,আমার বউয়ের জন্য প্রস্তাব আসে,তা আবার আমার কাছেই।এদিনটাই শুধু দেখার বাকি ছিলো।
____জিসান নিজের রাগটা কন্ট্রোল করে,দেখুন আংটি,ও আমার বোন না,আমার ওয়াইফ। সো আপনার ছেলেকে বলুন অন্য কোথাও চান্স মারতে,আমার বউয়ের আশেপাশে ও জাতে না দেখি।
তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না বলে দিলাম।
____ওমা কি বলছো,এতোটুকু মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে।আর তোমার লজ্জা করেনা এতোটুকু একটা পিচ্ছি মেয়েকে বিয়ে করতে।এ কথা বলে মহিলাটি চলে গেলো।
আর জিসান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে,কারন কিছুক্ষণ আগে নিজেই এই পিচ্ছি মেয়েকে নিজের ছেলের জন্য নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলো।আর এখন!!!!আশ্চর্য।
জিসান তিশার দিকে যেতে নিলে দেখে,তিশা আবার নেই।উফফ!! এই মেয়েটা কি শান্তিমতো এক জায়গায় বসতে পারেনা।
||
তিশার মা ও জিসানের মা একসাথে বসে বাকি মহিলাদের সাথে গল্প করছিলো।জিসান এসে,
____মা, আন্টি,তিশা কে দেখেছো।
____জিসান বাবা,আন্টি ছাড়ো মা ডাকার অভ্যাস করো।
____জিসান মাথাটা চুলকানো শুরু করলো,আসলে লজ্জা পেলো।আচ্ছা ঠিক আছে মা, আপনার পাগল মেয়েটা কে দেখছেন।
____নাতো কেনো কি হয়েছে।
_____আমি ওকে বার বার বলে দিয়েছি।নিশি বা নিলুর সাথে থাকতে, অথবা আপনার সাথে।কিন্তু দেখুন
ওতো কথাই শুনে না।কোথায়ও আছে খুঁজে পাচ্ছি না।
____আআ.. জিসান। তিশাকি ছোট বাচ্চা,যে মায়ের কোলে কোলে থাকবে।আছে হয়তো এখানে কোথাও এতো টেনছ নিও না।
____টেনশন নিবো নাতো কি করবো মা,কিছুক্ষণ আগে ঐ পাগল মেয়েটার জন্য প্রস্তাব এসেছে,আমার কাছে।
একথা শুনে দুজন মা-ই হেসে দিলো।
____সিরিয়াসলি তোমরা হাসছো।
তো কি করবো আমরা বল,অবশেষে নিজের বউয়ের ঘটকালি করবি তুই,এটা বলে আবার হেসে দিলো।
জিসান এসব মানতে না পেরে চলে গেলো,আবার তিশাকে খুঁজতে। তিশা নিশি ও নিলুর সাথে সেলফি তুলতে ব্যস্ত তা দেখে জিসানও রিলেক্স হলো।
নতুন বৌকে নিয়ে বাসায় পৌছাতে বেশ রাত হয়ে গেলো।কাল আবার বৌভাতের অনুষ্ঠান আছে বলে সবাই যার যার রুমে বিশ্রাম নিতে চলে গেলো।
||
||

জিসান সকাল থেকে নিজের বউকে খুঁজছে। জিসানের মনে হচ্ছে হারানোর একটা বিজ্ঞপ্তি দেওয়া উচিৎ। আমার অর্ধেক সময়তো এই মেয়েকে খুঁজতেই চলে যায়।কোথায় গিয়ে যে লুকিয়ে থাকে আল্লাহই জানে।
নিলুকে দেখতে পেয়ে____এই যে শালী সাহেবা,আমার মহারানী কোথায়।আপনারা সব এখানে তাহলে ও কোথায়।
নিলু জিসানের কথায় হেসে কুটিকুটি, ভাইজান আপনার মহারানি এখনো নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। ডাক দিতে গেলেই ঘোড়ার মতো লাথি মারে,তাই কেউ ভয়েও ডাকদিতে যায়নি।
তাই নি,আচ্ছা আমি দেখছি।জিসান রুমে গিয়ে দেখে সত্যি তিশা ঘুমিয়ে আছে,মুখটা হা করা।মুখ দিয়ে কিছুটা লালা পরছে।তা দেখে জিসান হেসে দিলো।এতোবড় মেয়ের নাকি এখনো লোল পড়ে।জিসান থুতনি ধরে মুখটা বন্ধ করে দিলো।টিসু দিয়ে মুখটা পুছে দিলো।তিশার সাথে ঘেষে শুয়ে পড়লো।পায়ের উপর পা তুলে চিন্তা করতে লাগলো,কিভাবে জ্বালানো যায়।
||
হঠাৎ চোখে পড়লো,সামনের ফুলদানিতে কিছু ময়ূর পাখনা রাখা আছে।তা দেখে জিসান শয়তানি হাসি হাসলো।জিসান ওখান থেকে একটা পাখনা নিয়ে তিশার গলায়, ঘাড়ে,কানে শুড়শুড়ি দিতে লাগলো।তিশা সহ্য করতে না পেরে পেছনে গুরে।দেখে জিসান ওর সাথেই শুয়ে আছে একদম কাছে।
_____হায় জান,গুডমর্নিং।
_____আপনে এখানে কি করছেন।
_____উমমম,তাইতো,আমি এখানে কি করছি।ও মনে পরেছে গুড মর্নিং কিস নিতে এসেছি।
জিসানের কথা শুনে,তিশা লাফ দিয়ে উঠে যেতে নিলে,জিসান কোমড় জরিয়ে তিশাকে নিজের উপরে উঠিয়ে ফেলে।এতে তিশার চুলগুলো জিসানের মুখের দপাশে পরে।চুলগুলো সরালে আবার এসে পরে।
দুজনের প্রতিটি নিশ্বাস দুজনের মুখের উপর পড়ছে।মনে হচ্ছে একজন নিশ্বাস ছাড়ছে আরেক জন পরম স্বাদে তা গ্রহন করছে।আর তিশার চুলগুলো যেনো তাদের ঘন নিশ্বাস গুলো আড়াল করে রেখেছে পর্দার মতো।জিসান ঘোড় লাগা চোখে চেয়ে আছে তিশার দিকে,আর আজ তিশাও জিসানের দিক থেকে চোখ যেনো সরাতেই পারছে না।এক অজানা ভালো লাগার অনুভূতি ফিল করছে তিশা।কিন্তু কেনো?
মন বলছে,তিশা তুইতো দেখি বেহায়া হয়ে যাচ্ছিস।কিন্তু চোখ দুটো যে মানছে না।কোনও যাদু জানে কি।এমন কেনো লাগছে।তিশা নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করছে।
তিশার এভাবে চেয়ে থাকা দেখে জিসান একটু বাকা হাসে,তিশার চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে ঘোর লাগা কন্ঠে বলে____জান এভাবে আর কিছুক্ষণ থাকলে,নিজেকে কিন্তু আমি আর কন্ট্রোল করতে পারবো না।জিসানের কথায় তিশার ধ্যান ভাঙ্গে, ভয়ে তিশা জিসানের উপর থেকে উঠেই ওয়াস রুমের দিকে দৌঁড় দিলো।
জিসানও হেসে চলে যাওয়ার সময় আবার বেক করে ওয়াস রুমের দরজায় নক করে বললো____তাড়াতাড়ি নিচে আস,আমি কিন্তু এখনো নাস্তা করিনি।লেট হলে সেকেন্ড চ্যাপটারে চলে যাবো।সো হারি আপ।
তিশা তখনো ওয়াসরুমের দরজার সামনে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো।জিসানের কথায় হেসে দিলো।মনে মনে বলে উঠলো হিটলার কোথাকার।
||
রায়হান পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে সিগেরেট টানছে,আর কারো সাথে কথা বলছে।দেখে মনে হচ্ছে খুব সিরিয়াস।
____নিশি দূর থেকে দেখে সামনে আসলো।
এতোক্ষনে রায়হানের কথাও শেষ,তাই ফোনটা রেখে দিলো।
____হ্যালো ভাইয়া কি করেন।
____রায়হান একবার নিশির দিকে তাকিয়ে,গানজা খাই, খাবি।
____নিশির হাসি মুখটা মিনিটেই চুপছে গেলো।ফাজলামি করেন আপনে আমার সাথে।
____কেনো। তোর এমন মনে হলো কেনো।আর তুই কি আমার বেয়াইন লাগস, যে তোর সাথে ফাইজলামি করবো।
____তাহলে এসব কি,আমি তো দেখলাম আপনে কার সাথে যেনো ফোনে কথা বলছেন,আর সিগেরেট টেনে বায়ু দূষিত করছেন।আর আমাদের মরণ ব্যাধি রোগের ব্যবস্থা করছেন।
_____আচ্ছা তুই আবার দেখতেও পারিস।আমিতো ভাবলাম তুই আবার দিনকানা হয়ে জাসনি তো।আন্টিকে বলতে হবে তোকে ছোট ছোট মাছ যেনো রেঁধে খাওয়ায়।শুনেছি এতে চোখের জ্যোতি বারে।
_____মানে কি।
_____ সব কিছু দেখেও এমন প্রশ্ন করা মানে,এক হয়তো তুই কানা,না হলে গর্দভ। এখন তুই চিন্তা করে বল তুই কি।
রায়হান সিগেরেটা ফেলে দিয়ে ওখান থেকো চলে গেলো।নিশি রায়হানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।ফাজিল ব্যাটা,ভালো কথা তো মনে হয় শিখেই নেই।
নিলু ছাদে বসে একটা নম্বরে বার বার কল করে যাচ্ছে।অথচ ফোনের অপর পাশ থেকে একটা মেয়ে বার বার বলো উঠছে ____আপনে যাকে কল করেছেন,তাকে এই মুহূর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব নয়।
মেয়েটার কন্ঠ ভারী মিস্টি হলেও,নিলুর কাছে বিষাদময় লাগছে।
হতাশ হয়ে ফোনটা কেটে দিলো_____ফোনের স্কিনে তার ছবিটা দেখে অজান্তেই একফোটা চোখের জল বেয়ে পড়লো।
পৃথিবীতে সবথেকে কষ্টকর জিনিষ হলো,একতরফা ভালোবাসা গুলো।ভালোবাসার মানুষটি তার কোনও দিন হবে না জেনেও,তাকে ভালোবাসা।
এতে থাকে না কোনও অধিকার,থাকেনা কোনও চায়িদা।তবু নিজের মতো তাকে ভালোবেসে যায়।
এই একতরফা ভালোবাসা গুলোতে অদ্ভুত একটা শক্তি থাকে।
সে ভালোবাসুক বা নাই বাসুক।কাছে আসুক বা নাই আসুক।তাতে কি।আমিতো ভালোবাসি।তার এই পরিপূর্ণ জীবনে আমি না হয় অপূর্ণ রয়ে গেলাম।
চলবে......।
[আজকের পার্ট কেমন হলো,আমি নিজেও জানি না।তবুও দিতে হলো।কারন একটাই।তা হলো পাঠক আপনারা।আমি শখে গল্প লিখি,প্রতিদিন দিতে না পারলেও যখন দি,একটু বড় করে দেওয়ার চেস্টা করি।কিন্তু তবুও কেনো আমাকে এতো কথা শুনতে হবে।
গল্প দেরি করে দি কেনো,এটা,সেটা বলার কারন কি।গল্প লিখা আমার পেশা না,শখ।তাই ফ্রি থাকলেই গল্প পোস্ট করি।কিন্তু কিছু পাঠক আমাকে মেসেঞ্জারে নক করে বলে,আমি চাকরি করি কিনা,বিবাহিত কিনা।সংসার আছে কিনা।আমি কিসে এতো ব্যস্ত থাকি।সিরিয়াসলি রিডার্স।আমাকে এখন আমার ব্যস্ততার কারণও কি বলতে হবে।আমার পারসোনাল লাইফ নিয়ে ডিসকাসন পছন্দ না।কারো যদি মনে হয় আমি গল্প দেরি করেদি বলে পড়তে ভালো লাগে না।তাহলে বলবো আমার গল্পটা ইগনোর করুন।ভালোভালো অনেক রাইটার আছে তাদের গল্প পড়ুন।কাউকে হার্ড করতে চাইনি,তবুও বলতে বাধ্য হলাম]
---------------(season 2)

______বরং সারা রাস্তায় তিনজন (তিশা,নিশি,ও নিলু)মিলে বকবক করতে করতে কান দুটো শেষ করে দিয়েছে।মেয়েরা যে এতো কথা কোথা থেকে পায় জিসান আর রায়হান তা ভেবেই সারা রাস্তা পার করেছে।একসময় সহ্য করতে না পেরে,রায়হান কানে তুলা দিয়ে বসে পরলো,আর জিসান কানে হেড ফোন।কারন এদের থামানো অসম্ভব।
______কাল বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে বিকেল হয়ে গিয়েছিলো।এর পর জিসান আবার সবাইকে আইসক্রিম ট্রিট দিতে নিয়ে গিয়েছিলো।ওখান থেকে এসে শুনে সবাই আজই যাওয়ার প্লান করেছে,তাও আবার ট্রেনে।তিশা ও নিশি এর আগে কখনো ট্রেনজার্নি করেনি।তাই তারা এক্সাইটেড হয়ে পড়লো।আর এক্সাইডমেন্ট এর খুশিতে সারা রাস্তা কথা বলেই পার করলো।কিন্তু বাসায় এসে আর চোখ দুটো খুলে রাখতে পারলো না।এসেই শেষ তিশা।
||
তিশা ঘুম থেকে উঠতে উঠতে ১২টা বেজে গেলো
উঠে ফ্রেস হয়ে নাস্তা নিয়ে বসলো।নাস্তা করছে আর ফেসবুকে বিয়েতে তুলা নিজের কিছু পিক আপলোড দিচ্ছে।কিছুক্ষণ পরেই লাইক আর কমেন্ট এর ধুম পড়ে গেলো।
তিশা নিশি ও নিলুকে জ্বালানোর জন্য কনফেরান্সে ফোন দিয়ে ফেসবুক দেখতে বললো।নিজের ছবিতে লাইক কমেন্ট এর ঝড় দেখে খুশিতে তিশা যেনো আত্মহারা। কিন্তু তিশার খুশি বেশিক্ষণ রইলো না।হঠাৎ করে তিশার লাইক কমেন্ট কমতে লাগলো।ফেসবুকে ফ্রেন্ড ও কমে জেতে লাগলো।
ফোনের অপর পাশ থেকে নিশি বলে উঠালো, কি রে দোস্ত তুই তো এতোক্ষন সেলিব্রেটি ছিলি এখন কি হলো।হিরো আলম থেকে জিরো আলম হয়ে যাচ্ছিস।
____আরে ইয়ার নিশি আমিও বুঝতে পারছি না।
_____আমার মনে হয় কেউ তোর আইডি হ্যাক করেছে।(নিলু।)
_____ওয়াট!!রিয়েলী।কিন্তু কে করেছে।ঠিক এসময় মেসেঞ্জারে একটা মেসেজ এসেছে।
"সবাইকে রুপ দেখিয়ে পাগল করার চেস্টা করছিস।যদি এই রুপই না থাকে,তখন।থাপ্পড় দিয়ে তোর গাল দুটো লাল করে ফেলবো,যদি আমি আরেক দিন দেখি এভাবে সেজেগুজে ছবি আপলোড দিচ্ছিস।শুধু ফ্রেন্ড ছাড়া অন্য কাউকে এড করলে,তোর ফেসবুক চালানো আমি ছুটিয়ে ফেলবো।পাসওয়ার্ড চেন্জ করার চেস্টা ও করবি না।মেসেঞ্জার এ কারো সাথে কথা বলিসনি,তাই এযাত্রায় বেঁচে গেছিস। না হলে তোর কি হতো সেটা আমিও জানি না"
তিশা মেসেজ পড়ে ৪২০ ভোল্টেজ শোকড এর উপর শোকড খেলো।
আর এদিক দিয়ে নিশু আর নিলু কতোক্ষন ধরে হ্যালো হ্যালো করে যাচ্ছে তিশার কোনও খবর নেই।
তিশা মেসেজ এর রিপ্লাই দিলো_____আপনে আমার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড নাম্বার জানলেন কি করে।
______আমিতো তোর বডির নাম্বার ও জানি,এতো শুধু পাসওয়ার্ড এর নাম্বার। আমার জন্য তেমন কিছুই না জান।
_____অসভ্য কোথাকার।
মনে মনে বলেই লগআউট করে দিলো ফেসবুক।আজ আর যাবেই না ফেসবুকে।
এখনকি আমি শান্তিমতো ফেসবুকও চালাতে পারবো না।উফফ!!!তিশার ভিষন রাগ উঠছে জিসানের উপর।
নিশি নিলি একসাথে বলে উঠলো,কি হয়েছে।
_____কি হবে আর তিতাকরলা আমার আইডি হ্যাক করেছে।এ কোথা বলেই ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে লাগলো তিশা।
আমার কতো সাধের আইডি।কতো কস্ট করে ফ্লোয়ার বাড়িয়েছিলাম,এখন সব শেষ।আমার এতো বড় সর্বনাশ কি করে করতে পাড়লো তোর ভাই।
______ফোনের অপর পাস থেকে নিশি ও নিলু একসাথে হাসতে লাগলো।যাক বাবা,এতো দিন পর ভাই একটা কাজের কাজ করলো।তোর কারনে আমাদের ফ্লোয়ার কম ছিলো,এখন আমাদের সময় তোকে জ্বালানোর।দুজনেই অট্টহাসিতে হেসে উঠলো।তিশা রাগে দুঃখে ফোন কেটে দিলো।শয়তান ভাইয়ের শয়তান বোন কোথাকার।উম...।
||
||

______হঠাৎ রায়হান এর রুমের দরজা খুলার শব্দে তিশা চমকে যায়।এবার বুঝি শেষ।কিন্তু রায়হান কারও সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে বের হয়ে সোফায় বসলো।শার্ট এর হাতা ফোল্ডার করতে করতে ফোনের অপর পাশের লোকটাকে বলছে____আরে ডোন্ট ওয়ারী, আমাকে জিসান এড্রেস সেন্ড করে দিয়েছে।তাই আমার আসতে সমস্যা হবে না।কিন্তু তুই জিসানকে কল কর।ওর মুড খুব খারাপ।(তিশার দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো)আচ্ছা আমি এসে সব বলবো। ওকে বায়।
||
তিশা চিপস খাচ্ছিল,ভাইয়ের কথা শুনে চিপটা গিলতে যেনো কস্ট হয়ে পড়লো।তিশার বুঝতে বাকি রইলো না,ভাই যে তাকে ইশারা করেই কথাটা বললো।কারন তিশা সারাদিন ফোন বন্ধ করে বসে আছে।একারনেই যে জিসান রেগে আছে তা তিশা ভালো করেই বুঝতে পারছে।নিশ্চই ভাইকেও ফোন করে কিছু বলেছে জিসান।
তিশা সাহস নিয়ে ভাইকে জিঙ্গেস করলো____ভাইয়া কোথায় যাওয়া হচ্ছে এতো রাতে।
_____রায়হান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে, তোকে কেনো বলবো।আর তুই কেনো এতো কোয়েশচন করছিস।
____আরে বাবা জানতে হবে না তুমি কোথায় যাচ্ছো,তা না হলে তোমার গার্লফ্রেন্ড যখন ফোন করে জানতে চাইবে,তখন আমি কি বলবো।
____রায়হান ভ্রকুচকে বললো,আমার গার্ল ফ্রেন্ড,সেটা আবার কে?
_____তা জেনে তুমি কি করবে।
_____বাহরে,আমি আজও কোনও গার্ল ফ্রেন্ড বানালাম না,তাহলে তুই কাকে আমার গার্ল ফ্রেন্ড বলে দাবি করছিস।আন্দাজে।
____তুমি করতে পারলে না বলেই,তোমার তরফ থেকে তোমার জন্য আমিই নিজে তোমার গার্ল ফ্রেন্ড যোগার করে ফেলেছি।আর সময় হলে তুমিও জানতে পারবে।এখন এসব বাদ দেও।
____রায়হান এর আর বুঝতে বাকি রইলো না,ইশারায় কাকে তিশা বুঝাচ্ছে।এতো বছর পর জিসান দেশে আসার কারনে ফ্রেন্ডসরা সবাই মিলে ক্লাবে পার্টির আয়োজন করছে।আজ অনেক বছর পর সব ফ্রেন্ডসরা একসাথে দেখা করবো।তাই আসতে লেট হবে।বলে দিস।
____তিশা ভ্র দুটি নাচিয়ে কাকে?
____রায়হান হচকিয়ে কাকে আবার মাকে।মা কে বলবি আমার আসতে লেট হবে।আর বড় ভাইয়ের সাথে এভাবে ফাইজলামি করতে লজ্জা করেনা তোর,ফাজিল মেয়ে।
____হুমম বুঝছি।তিশা মিটিমিটি হাসছে।তা দেখে রায়হান তিশার মাথার মধ্য হালকা চাপট মেরে চলে যায়।আর তিশাও তার সিরিয়াল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে।
||
||

রাত ১:৩০ বাজে। হঠাৎ তিশার ফোনটা বাইভ্রেট হতে লাগলো।ঘুম ঘুম চোখে না দেখে ই তিশা ফোন রিসিভ করলো।
_____হ্যা...লো।
_____জাএএএন। এভাবে ঘুম জরানো কন্ঠে হ্যালো বললে আমি নির্গাত খুন হয়ে যাবো।
_____জিসানের কন্ঠ শুনে তিশা একটু চমকে গেলো।এতো রাতে,ঘড়িতে টাইম দেখে।আপনে এতোরাতে কেনো কল করেছেন।সব ঠিক আছে তো।
____না কিছুই ঠিক নেই।আমার চাই।
____কেনো কি হয়েছে।আর কি চাই আপনার বলুন।
_____হুমমম....আমার আদর চাই....তোর হাতের নরম স্পর্শ চাই।দিবি আমায় হরেক রকমের আদর।
সকাল... বিকেল...দুপর সারাবেলা।এমন ভাবে চাই যেনো রক্তের শিরা উপশিরায় মিশে যায়।দিবি কি তুই আমাকে সে আদরের অধিকার।
আমিও চাই তোকে আদর করতে।একবার শুধু বল জান ভালোবাসি।তোর শিরা উপশিরায়,তোর শরীলের প্রতিটা ভাঁজে চুমুতে ভরিয়ে দেবো।দিবি কি আমায় বল!!জাএএএন।
||
জিসানে নেশা ভরা কন্ঠে আজ তিশাও যেনো নিজেকে হারিয়ে ফেলছে।জিসান সামনে না থাকা সত্যেও তিশার শরীল কাঁপছে এক অজানা শিহরণে।কেনো এমন হচ্ছে তিশা নিজেও জানে না।তিশাকে কেউ কখনো এভাবে বলেনি।তাই এসব অনুভূতিগুলোর সাথে তিশার একদম পরিচয় নেই।তাই অদ্ভুত ফিলিংস লাগছে মনে।এই ফিলিংস এর নাম তিশার জানা নেই। তবুও নিজেকে সামলিয়ে।আপনে ড্রিংক করেছেন।এখন হুশ নেই আপনার। কাল কথা বলবো আমরা।এখন ঘুমান।
______হুমমম, আমার নেশা ধরেছে,কিন্তু তা মদের নেশা না। তোর নেশা এতো তুখড় যে মদের নেশা আমাকে নেশাগ্রস্ত করতে পারে না।তোর ভালোবাসার নেশা এমন ভাবে ধরেছে যে চব্বিশ ঘন্টাই আমি তোমাতে বিভর থাকি।আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি জান।এরপর তো সবাই আমাকে পাগল প্রেমিক উপাধি দিয়ে দিবে।বলতো কি করি।
জিসানের এমন উদ্ভট কথায় তিশার ভালো লাগার সাথে হাসিও পাচ্ছে।আপনাকে কেউ পাগল প্রেমিক বলবে না,আপনে এখন রেস্ট নিন।সকাল হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
না না না আমি ঘুমাবো না।
_____তাহলে এই গভীর রাতে কি করবেন এখন।
____আমি চুমো খাবো।
____কককি খখখা বেন।চুমো!!!
____হুমমমম।চুইইইমো।
এভার তিশার যেনো মাথা ঘুড়াচ্ছে।মনে হচ্ছে নেশা জিসান না তিশা করেছে।তা না হলে নিজেকে এমন কেনো লাগছে।আর আজ কেনো এই মানুষটির কোনও কথাই বিরক্ত লাগছে না।যেনো সারারাত পার করতে পারবে তার সাথে কথা বলে।তিশা জিসানকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই জিসান_____
____তোর ঠোঁটে একটা নিশিদ্ধ চুমো দিবো।রাঙ্গিয়ে দেবো আমার ভালোবাসার রং তোর ঐ ঠোঁটে।
আমার নিশিদ্ধ চুমোতে তুইও আমার মতো মাতোয়ারা হয়ে উঠবি।ঠিক সে রকম একটা পাওয়ার ফুল চুমো দিতে চাই তোর সেই রক্তিম ঠোঁটে।
যে চুমোতে তুই আমার হয়ে যাবি,আমার মাঝে ডুব দিতে চাইবি।সে ধরনের একটা চুমো চাই।
যে চুমোতে আমার ভালোবাসা তোর মন,প্রাণ এমনকি মস্তিষ্কে বিরাজ করবে,তেমনি চুমো দিতে চাই।
যে চুমোতে তোর গোলাপি ঠোঁট দুটো আমার ঠোঁটে বন্দি হয়ে যাবে এমনি একটা চুমো দিতে চাই।
হে প্রিয়সী,বল।দিবো কি আমি এমন একটা চুমো,তুই পেতে কি চাস সেই চুমোর পরশ।
||
তিশা স্তব্ধ হয়ে পরেছে।শরীল দিয়ে ঘাম পড়ছে।কেন এমন হচ্ছে।এই মানুষটি নিজেতো পাগল হবে, সাথে আমাকে পাগল করে ছাড়বে।উফফ!!!
আজ কাল তার মায়ায় পড়ে যাচ্ছি আমি।কেনো?আগে তো এমন হতো না।এখন কেনো তাকে দেখলেই মনের ভেতর ধুকধুকানিটা বেড়ে যায়।
তিশা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।সকালের হালকা শীতল বাতাসেও তিশা আজ কেঁপে উঠছে।নতুন এই ফিলিংস তিশার মন মস্তিষ্কে বিচরণ করছে।কিন্তু তিশার অনেক ভালো লাগছে।
দূর আকাশ থেকে ফযরের আযানের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে।কিছুক্ষন আগে ফোনটা কেটে দিলো তিশা।কারন জিসান সারারাত বক বক করে একটু আগে ঘুমালো।আর জিসান ঘুমিয়ে পড়েছে বলেই,তিশা ফোনটা কেটে দিলো।
তিশার মুখে লজ্জামাখা হাসি ফুটে উঠলো,জিসানে কথা মনে পড়ে।জিসানের মনের মাঝে লুকিয়ে থাকা কিছু গোপন চাওয়া গুলোর কথা মনে পড়লেই তিশার মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে যায়।কিসব কথা গুলো বলেছে।লোকটা আসলেই একটা বেহায়া,তা না হলে এসব কথাও বলে।ভাগ্যিস উনি নেশায় ছিলেন।তা না হলে আমি মরেই যেতাম।এখন তো তার সামনে যেতেই লজ্জা করবে।উফফ!!
আচ্ছা ফেসাদ এ ফেলে দিয়েছে আমাকে।
চলবে.....
[নেক্সট না লিখে কমেন্ট করুন।বানান ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ]
--------(season 2)

চিরকুট টা হাতে নিয়ে দেখলো....
""কাল নাকি তুমি অনেক বেশি ড্রিংক করে এসেছো ভাইয়া।এগুলো একদম ঠিক না।নিশ্চই এখন মাথায় পেইন করছে।তাই লেবু শরবত তোমার জন্য রেখে গেলাম।আমার তরফ থেকে না।তোমার ডার্লিং সকালে ফোন করে বলেছে।তাই তার তরফ থেকে আমি রেখে গেলাম।পারলে আমার ভাবিকে একটা ধন্যবাদ দিয়ে দিও।ওকে""
চিরকুট টা পড়ে জিসানের মুখে একটা তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো।কারন তার পিচ্ছি বউ তার খেয়াল রাখতে শুরু করেছে।শরবত টা মুখে দিয়ে জিসান তিশার কথা ভাবতে ভাবতে ঘড়িতে টাইমটা দেখে নিলো।এক ঘন্টা পর তিশাদের কলেজ ছুটি হবে।তাই জিসান ফ্রেস হতে ওয়াস রুমের দিকে চলে গেলো।আজ নিজে যাবে কলেজে।
||
আমাদের কলেজ ছুটি হয়ে গিয়েছে।আমি ও নিশু কথা বলতে বলতে বাহিরে আসছিলাম।নিলুকে দেখে আমি কয়েকবার ডাক দিলাম, কিন্তু নিলু কোনও রিসপনস করলো না,চলে গেলো।তা দেখে আমি ও নিশি দুজনেই কিছুটা অবাক হলাম।আজ নিলু ক্লাশেও নিশির সাথে টুকটাক কথা বললেও কেনো জানি আমার সাথে তেমন কথা বলেনি।
_____কলেজের গেট থেকে বাহির হয়েই আমার মুখ এক হাত হা হয়ে গেলো সামনে থাকা ব্যক্তিটাকে দেখে।কি মারাত্মক ডেসিং লুক নিয়ে গাড়ীতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জিসান।আচ্ছা এই লোকটা এতো হ্যান্ডশাম কেনো।একটু কম হলে কি হতো,তাহলে আমাকে এভাবে বেহায়ার মতো তাকিয়ে থাকতে হতো না তার দিকে।
আমাকে এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিশি মুখের সামনে একটা তুরি বাজালো।সাথে সাথে মনে হলো আমি স্বপ্ন থেকে বাস্তবে ফিরে এলাম।
_____কি রে সমস্যা কি,যেভাবে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছিস মনে তো হচ্ছে গিলে খাবি।
আমি নিশুকে একটা চাপট মেরে বললাম,কি যা তা বলছিস, আর এটা বল এই তিতা করলা এখানে কেনো।তুই বলেছিস আসতে।
______আরে আমি কেনো বলবো।চল গিয়ে তোর আশিক কেই জিঙ্গেস করি।
নিশি একটা দিবো কিন্তু,কিসব বলছিস।
সত্যি বলছি....হা হা হা।এবার চল।না হলে করলা তার তিতা রস তোকে না খাইয়ে দেয়।
ছিঃ নিশি কথার কি ছিঁড়ি তোর।তুইও দিন দিন বেহায়া হয়ে যাচ্ছিস।
||
||

_____আমি তো যথারীতি অবাক,আমি আবার তার কাছ থেকে কবে টাকা পয়সা নিলাম,যে এখন তার হিসাব নিতে হবে।আশ্চর্য!!!
গাড়ী একটা আইসক্রিম পার্লারের সামনে থামলো,আমি জিঙ্গেস করেই ফেললাম এখানে গাড়ি থামানোর কারন।
______এই গরমে আইসক্রিম খেলে কেমন হবে নিশি।জিসানের কথায়,আমি আর নিশি দুজনেই খুশি হয়ে গেলাম,ভাবলাম জিসান আমাদের আইসক্রিম এর ট্রিট দিতে এখানে নিয়ে আসছে।ওয়াও....!!!
নিশি আগেই গাড়ী থেকে বের হয়ে গিয়েছে,আমি বের হতে নিলেই জিসান আমার হাতটা ধরে ফেলে।কোথায় যাস।একদম নড়বি না।
______জিসান উনার মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে নিশিকে দিয়ে বললো,তিনটা আইসক্রিম নিয়ে আসতে।পার্লারে মানুষের ভিড় তাই গাড়ীতে বসে খাওয়ার প্লান নাকি করেছে।কিন্তু আমি শোকড!!! কারন নিজে না গিয়ে,নিশিকে কেনো পাঠালো।আমি ভাবতেই লাগলাম।
হঠাৎ জিসান আমার হাতটা ধরে টান দিয়ে উনার একদম সামনে নিয়ে আসলো।আমি কিছুটা অবাক হলাম।
____এবার বল তোর সমস্যা কি?জিসান দাঁতেদাঁত চেপে।
_____আ আ আমা র আ বা র ককি সমস্যা। (ভয়ে)
_____তাহলে কাল সারাদিন ফোন বন্ধ করে রেখেছিস কেনো।
_____এ এ ম নেই।
_____এমনেই মানে।তোকে না বলেছি ফোন কখনো বন্ধ করবি না।আর তুই কোন সাহসে সারাদিন ফোন বন্ধ করে বসে ছিলি।চিল্লিয়ে।
তিশা মুখটা অন্যদিকে গুড়িয়ে, করেছি তো কি হয়েছে।এখনকি আপনাকে সব কিছুর জবাবদিহি দিতে হবে।
||
জিসান তিশার মুখটা একহাত দিয়ে চেপে ধরে আরো একটু সামনে নিয়ে আসে।এতে তিশা কিছুটা ব্যাথা পেতে শুরু করে কিন্তু জিসানের সেদিকে কোনও খেয়াল নেই।
_____একদম মুখে মুখে তর্ক করবি না আমার সাথে।আর তোর এই তেজ অন্য কাউকে দেখাবি আমাকে না।
আর কি বললি তুই____জবাবদিহি,তা তো অবশ্যই করতে হবে।
মনে রাখবি তোর দিন শুরু হবে আমাকে দিয়ে,আর রাত নামবে তাও আমার সাথে।আমার পারমিশন ছাড়া তুই একটা হাচি দিলে সেটার কারণ ও আমাকে বলতে হবে।কারন তুই পুরোটা আমার।আর তোর নিজের প্রতি নিজের কোনও অধিকার নেই এখন।তোর মাথার চুল হতে শুরু করে পায়ের নখ টাও আমার।তাই এর পর কোনও দিন এ কথা যেনো তোর মুখে না শুনতে পাই।মগজে ঢুকিয়ে রাখ ভালো করে।
_____আর কোনও দিন যদি দেখি আমাকে ইগনোর করার জন্য ফোন বন্ধ করে রেখেছিস।মনে রাখিস সেদিন তোকে আমি চিবিয়ে খেয়ে ফেলবো।আর আমাকে কিন্তু তার জবাবদিহি কাউকে করতে হবে না।
আমি তার ব্যবহার দেখে স্তব্ধ হয়ে পরলাম।এই কি সেই জিসান,যার ভালোবাসার অনুভূতির কথা গুলো কালরাতে শুনে আমি যেনো তার প্রেমে পরে গিয়েছিলাম কিছুক্ষণের জন্য।কালতো মুখে একদম মধুদিয়ে ভরা ছিলো।আজ তাহলে কথায় এতো তিক্ততা কেনো।একটা মানুষের এতোরুপ কি করে হয়।জিসানের দিকে তাকিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন যে একফোটা পানি চোখ দিয়ে পড়লো,জিসান না বললে হয়তো জানতেই পারতাম না।
_____চোখের পানিটা গড়িয়ে পড়ার আগেই জিসান পানিটা শুষে নিলো,তোর চোখের পানিটাও আমার,তাই আমিই নিয়ে নিলাম আমার জিনিষ।
নিশি আসায় জিসান তিশাকে ছেড়ে দেয়।নিশি তিশাকে আইসক্রিম দিলে সে খাবে না বলে দিলো।জিসান আইসক্রিম টার প্যাকেট খুলতে খুলতে নিশিকে বললো,নিশু ওকে খেতে বল,না হলে আজ বাড়ী যাওয়ার আশা ছেড়ে দিতে বল।
_____তিশা আড়চোখে জিসানের দিকে তাকালো,শয়তান মানুষ।একটু আগে আমাকে বকে,এখন আইসক্রিম খাওয়াতে এসেছে।আরে এতো বকে তোর শান্তি না হলেও,আমার তো পেট মন দুটোই ভরে গেছে।কিন্তু এখন কিছু বললে লাভ নেই।তিশা বুঝতে পারলো,আইসক্রিম না খেলে,জিসান আজ তিশাকে বাসায়ও যেতে দিবে না,তাই খেতে ইচ্ছা না চাওয়া সত্যেও খেতে হলো।
||
||

_____জিসান ইদানীং ফোনেও তিশাকে এটাসেটা নিয়ে বকতে থাকে।আর বকবে না কেনো,তিশার খাওয়া-দাওয়া,গোসল, ঘুম সব কিছুতেই লেট।টাইম মতো কিছুই করে না।তাই জিসানের মেজাজ গরম হয়ে যায় এসব অনিয়ম দেখে।তাইতো বকে।কিন্তু তিশার এসব কিছু অসহ্য লাগে।
||
আজও কোচিং থেকে ফিরতে তিশার লেট হয়ে গিয়েছে।কেনো জানি সাব্বির স্যার আজ কাল তিশাদের ব্যাচটাকে একটু বেশি টাইম নিয়ে পড়ায়।তিশার এসব একদম ভালো লাগে না।এতো টাইম নিয়ে পড়িয়ে কি সবাইকে বিদ্যাসাগর বানানোর প্লানিং করছে স্যার, আল্লাহই জানে।
_____বাসায় এসে তিশা দেখলো,ড্রয়িং রুমে কিছু গেস্ট বসে আছে।কিন্তু এদের মধ্যে তিশা কাউকে চিনে না।কিন্তু ভদ্রতার ক্ষাতিরে তিশা সবাইকে সালাম দিয়ে ভেতরে ঢুকলো।
রান্নাঘরে তিশার মা নাস্তা রেডি করছিলো।তিশা গিয়ে মাকে জিঙ্গেস করলো কে উনারা।মা বললো প্রতিবেশি।প্রতিবেশি তাও আবার এতোজন,দেখেতো মনে হচ্ছে মেয়ে দেখতে এসেছে।তিশা অবাক হয়ে জিঙ্গেস করতে নিবে আর ঐ সময় তিশার ফোন বেজে উঠলো।
_____তিশা ফোন রিসিভ করে কিছু বলবে,তার আগেই তিশার মা তিশাকে বলতে শুরু করলো____আমার মনে হয় কি তিশা, উনারা তোকে দেখতে এসেছে।যতোসম্ভব ঐ যে বসে আছে ছেলেটা ওর জন্যই সমন্ধ নিয়ে আসছে।
____তোমাকে কিছু বলছে উনারা।
আরে এখনো ঠিক মতো কথা হয়নি,মাত্রই তো আসলো।আগে নাস্তা দিয়েনি তার পর জানা যাবে কেনো এসেছে।তোর ভাই, বাবাও নেই যে সামলাবে।আয়তো মা আমাকে একটু সাহায্য কর।হাজার হলেও মেহমান, খালি মুখেতো বিদায় দিতে পারিনা।জলদি কর।
আমিতো ভুলেই গেছি আমি ফোন রিসিভ করে ওমনেই রেখে দিয়েছি।কে ফোন দিয়েছে তাও ঠিক মতো দেখিনি।
______তিশার মা ড্রয়িং রুমে বসে মেহমানদের আপ্যায়ন করছে।অবশেষে তাদের সাথে আসা মহিলাটি বলে দিলো তাদের আসার আসল উদ্দেশ্য, হুমম।তারা তিশার জন্যই তাদের একমাত্র ছেলের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে।তিশাকে প্রথম দেখাতেই তার ছেলের খুব পছন্দ হয়েছে।
তিশার মা কিছু বলতে যাবে, ঠিক তখনি কলিংবেল বেজে উঠলো।
তিশার মা দরজা খুলে জিসানকে দেখে ভিষন অবাক।কারন এই সময়তো জিসান আসার কথা না,অফিস টাইম।
____আসসালামুআলাইকুম মা।কেমন আছেন।
____ওলাইকুমআসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ বাবা।তুমিতো এই বাড়ীর রাস্তাই ভুলে গেছো।
_____সব কথা কি এখানেই বলবো।
_____আরে কি সব বলছো,এটাতো তোমারি বাড়ী।সন্তান কি নিজ বাড়ীতে আসতে মায়ের কাছে পারমিশন নিতে হয়।
জিসান ভেতরে ডুকেই সোফায় বসে পড়লো।রং সময় আসছি আমি।বাসায় তো মেহমান মা।কিন্তু কে উনারা চিন্তে পারলাম নাতো।
জিসান সবই জানে,তখন ফোনের ওপর পাশ থেকে তিশা আর তিশার মায়ের কথা সব শুনেছে।আর সাথে সাথে অফিস থেকে এখানে এসে পড়লো।
_____আসলে জিসান বাবা।তিশার মা কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেহমানদের মধ্যে একজন বলে উঠলো আসলে আমরা এই বাড়ীর মেয়েকে আমাদের ছেলের বৌ করে নিতে চাই।কয়েকদিন আগেই মেয়েটাকে আমার ছেলে ছাদে দেখেই পছন্দ করে ফেলেছে।তাই আমরা দেরি না করে প্রস্তাব নিয়ে এসেছি।
_____এসব শুনে জিসানের চোখগুলো লাল হয়ে গিয়েছে।বিয়ের সমন্ধ এখন বাসায় আসতেও শুরু করে দিয়েছে।এসবই হচ্ছে তিশার শর্তের কারনে।বিয়ের কথা কাউকে ও জানাতে দেয়নি।তাইতো এখন এসব মানুষ আমার জিনিষের দিকে তাকানোর সাহস পায়।বিবাহিত জানলেতো আর আসতো না।আগে এদের বিদায় করি,তার পর তোর ব্যবস্থা করবো তিশা।
_____তুমি কি হও মেয়ের।ছেলের বাবা।
_____জিসান সামনের গ্লাসে রাখা পানিটা পুরো খেয়ে নিলো একদমে।তার পর খুব শান্তভাবে উত্তরদিলো, যে মেয়ের জন্য প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন, তার বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ স্বামী আমি।
_____মেহমানরা অবাক হয়ে গেলো।ছেলেটি বলে উঠলো,আমি খবর নিয়েই এসেছি।মেয়েটি অবিবাহিত। আর আপনে নিজেকে ওর স্বামী দাবি করছে।কেনো??
_____ব্রো রিলেক্স। তুমি তাই জেনেছো যা কেউ জানে না।কিন্তু আমি তা বলছি যা সত্য।তিশা,মানে যাকে তুমি দেখতে এসেছো সে আমার ওয়াইফ। আমাদের বিয়ে ঘরোয়া ভাবে হয়েছে।তাই কেউ জানে না।বিশ্বাস না হলে,এই তো বসে আছে আমার শ্বাশুরী মা উনাকে জিঙ্গেস করতে পারো।
তিশার মাও সবাইকে বুঝিয়ে বললো,মেহমান সব শুনে চলে গেলো।জিসান এবার উঠে দাঁড়ালো,তিশার রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।
||
||

_____জিসানকে নিজের রুমে দেখেই তিশা ভয়ে কাঁপতে থাকে।জিসানকে সামনে আসতে দেখেই তিশাও ভয়ে পিছাতে তাকে।পিছাতে পিছাতে একদম দেয়ালের সাথে আটকে যায়।জিসান ও দুপাশে হাত রেখে তিশাকে আটকে ফেলে।তিশা ভয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে।
_____ছাদে কেনো গিয়েছিলি।
তিশা কি জবাব দিবে ভেবে পাচ্ছে না,কারন মাঝেমাঝে মন ভালো না লাগলে এমনেই একটু হাটাহাটি করে ছাদে গিয়ে আরতো কিছু না।
____এ এম নেই, মন ভালো না থাকলে একটু ঘুরে আসি।
_____ছাদে গিয়ে নিজের জন্য বিয়ের সমন্ধ নিয়ে আসিস।আজকাল একটু বেশি সমন্ধ আসছে না তোর জন্য।
_____আ স তে ই পারে,আসাটা স্বাভাবিক।কিন্তু আমি নিজে আনি না।
____না আসতে পারে না।আর আসাটা স্বাভাবিক ও নয়।কারন তুই সিংগেল না।নিশির জন্য আসতে পারে,নিলুর জন্যও আসতে পারে কিন্তু তোর জন্য না।
তবুও আসছে,জানিস কেনো।তোর সো কল্ড শর্তের জন্য।আমাদের বিয়ের কথা কাউকে না জানানোর জন্য।আর এ কারনে আমার জিনিষ এর উপর নযর দিতে সবাই শাহস পাচ্ছে।এটা তোর কারনে হচ্ছে।জিসানের চিল্লানিতে তিশা আরো ভয় পেতে লাগলো।
||
_____তিশার এমন অবস্থা দেখে জিসান চোখদুটি বন্ধকরে করে নিজের রাগটা কন্ট্রোল করার চেস্টা করছে।নো জিসান,এভাবে রাগলে হবে না,এভাবে কথায় কথায় রাগলে তিশা তোর কাছে আসতে চাইবে না।সো কুল....নিজেকে নিজেই সান্ত্বনা দিচ্ছে জিসান।
____জিসাম তিশার সামনের চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে,আজকের পর আর ছাদে যাবি না ঠিক আছে।
_____তিশা শুধু মাথা নাড়লো।
মন ভালো না থাকলে আমাকে কল করবি।তোর মন ভালো করার দায়িত্ব আমি নিলাম।কোথায় যেতে মন চাইলে বলবি আমি তোকে নিয়ে যাবো।তবুও কোথায় একা যাবি না।
____জিসান তিশার আরো একটু কাছে এসে কোমড়টা ধরে তিশাকে নিজের সাথে চেপে ধরলো।জিসান এতো কাছে আসায় জিসানের মাতাল করা পারফিউম এর ঘ্রাণে তিশার নিজেরি হারিয়ে যেতে মন চাইছে।
তিশার কানের সামনে মুখটা নিয়ে, আমাকে জ্বলতে দেখে তোর খুব ভালো লাগে তাই না,কিন্তু আমার এ দহনে যে তোকেও পুড়তে হবে একদিন, তখন সহ্য করতে পারবি তো।
_____তিশার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে,কি আছে তোর মাঝে,যা আমাকে প্রতিনিয়ত কাছে টানে তোর।
____জিসান তিশার ঘাড়ে নাক দিয়ে ঘষতে থাকে,কেনো তোর ঘ্রাণ আমাকে মাতাল করে।টুকরো টুকরো কিস করা শুরু করে দেয়।তিশা সহ্য করতে না পেরে জিসানের সামনে থাকা হাতদুটো দিয়ে জিসানের শার্টটাকে খামচে ধরে।হয়তো জিসানের শরীলের কিছু অংশে তিশার নকের আছর ও লেগেছে,কিন্তু জিসানের সে দিকে খবর নেই।
বলেছিলাম না,একবার ভালোবাসি বল।চুমোতে ভরে দেবো তোকে আমি।
জিসানের এ কথা শুনে তিশা শোকড,কারন সেদিন নেশা করে জিসান এসব বলেছে।তাহলে কি উনি.......উফফ!!!
চলবে......



এখন আমি জিসানদের বাড়ীর সামনে দাঁড়িয়ে আছি।আজ জিসানের দাদার মৃত্যু বার্ষিক।প্রতি বছর এই দিনটিতে মিলাদ পড়ানো হয়।এতিম বাচ্চাদের মধ্যে খাবার ও কাপড় চোপড় বিতরন করা হয়।খুব বিশেষ ভাবে দিনটি পালন করা হয়।
____এই বাড়ীতে বছরের তিনটি দিন খুব কড়া নিয়মে পালন করা হয়।একতো জিসানের দাদা সুলেমান আহমেদ এর মৃত্যু বার্ষিক,দ্বিতীয় হলো জিসানের জন্ম দিন আরো একটা দিন আছে,কিন্তু সেই দিন কার নামে মিলাদ পড়ানো হয় তা জানা নেই।এমনকি জিসানও জানে না।জিসান একদিন জিঙ্গেস করেছিলো,কেনো সেদিনটি এতো বিশেষ ভাবে পালন করা হয় কিন্তু তৌফিক সাহেব সময় হলে জানতে পাড়বে বলে এড়িয়ে যেতেন।তাই কেউ আর জানার দ্বিতীয় বার চেস্টা করেনি।
জিসানের দাদা সুলেমান। নামটা যেমন রাজকীয় তেমনি উনি দেখতে ও রাজার মতো ছিলো।জিসানদের ফ্যামিলি এলব্যামে তাকে আমি দেখেছি।মজার বিষয় হলো,জিসান অনেকটা দেখতে তার মতো।শুধু চেহারার দিক থেকে না, আচার আচরণেও নাকি দাদার মতো।জিসানের দাদা রাজকীয় বংশের না হলেও সে কালের জমিদার বংশের ছেলে ছিলেন।তার এটিটিউড,চাল চলন আর জিদের কারনে তখন তাকে সবাই খুব ভয় পেতো।লোকটি নাকি খুব জেদি টাইপের ছিলো।জিসানের দাদীকে নাকি অন্য গ্রাম থেকে তুলে এনে বিয়ে করেছিলেন। কি সাংগীতিক পারসেন তিনি।আর তার জিদ এটিটিউড সব জিসান বস্তা ভরে ভরে বংশগত পেয়ে গেছে।
||
আমি বাড়ীতে প্রবেশ করার সাথে সাথে আন্টি মানে জিসানের মা এসে আমাকে জরিয়ে ধরলেন।কেমন আছিস মা।আসতে কোনও কস্ট হয়নিতো।
____না না আন্টি আমি ভালো আছি। আর আসতেও কস্ট হয়নি।____আয়তো ভেতরে আয়।কখন ধরে দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছিস।আন্টি আমার হাতটা ধরে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসিয়ে দিলো।ড্রয়িং রুমে জিসানের দু মামী,আর ফুফু বসে ছিলো।আমি তাদেরকে সালাম করলাম।ফুফু আমাকে আদর করলেও মামীরা মনে হয় আমাকে দেখে এতোটা খুশি না তা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।আমি তাদের সাথে কিছুক্ষণ গল্প করলাম।
আন্টি নিশি কোথায়।
___আর কোথায় ম্যাডাম এখনও ঘুমায়।
____বাহ আমার ঘুম হারাম করে ম্যাডাম ঘুমাচ্ছেন।আহারে আমি বাসায় থাকলে আমিওতো এখন নাক ডেকে শান্তির ঘুম দিতাম।কিন্তু মার কারনে এখানে এতো সকাল সকাল আসতে হলো।মা সকাল সকাল ডাক দিয়েই বলতে লাগলো জিসানদের বাসায় যাওয়ার জন্য রেডি হতে।
___আমি এতো সকাল ওখানে গিয়ে কি করবো, তোমাদের সাথে বরং দুপুরে যাবো বলে আবার শুয়ে পড়েছিলাম।কিন্তু মা আমার আবার হাতটা ধরে টেনে উঠিয়ে বসালো।আমার গালটা ধরে বললো,তিশা তুই এখন ঔই বাড়ীর বউ।তাই তোরও কিছু দায়িত্ব আছে ঐ বাড়ীর মানুষদের প্রতি।তুইও জানিস এতো বছর জিসান ছিলো না বলে এই দিনটি ঠিকমতো পালন করেনি।আজ এতো বছর পর জিসান আসায় এবারের আয়েজনটাও অনেক বড় করে করা হয়েছে।এখন তুই ও ঐ বাড়ীর একজন সদস্য। মেহমান না।তোকে কখনো কোনও বিষয় উনারা জোড় করেনি।কিন্তু মা তোর ও তো বুঝতে হবে।ঐদিক দিয়ে তানজিলা হয়তো একাহাতে এতো কিছু সামাল দিতে কস্ট হয়ে পড়ছে।তোরও উচিৎ ওকে সাহায্য করা।তাই রেডি হয়ে নে।তোর শ্বশুরবাড়ী থেকে গাড়ী আসছে তোকে নিতে।
মা আমার কপালে একটা আদর দিয়ে চলে গেলো।সম্পর্ক যেহুেতু হয়েছে সম্পর্কের সাথে জড়িত দায়িত্ব গুলোকে এড়িয়ে চললে হবে না।তাই আমিও চলে এলাম এখানে।
_____তারিনকে কোলে নিয়ে আন্টি আর তানজিলা ভাবির সাথে কিছুক্ষণ গল্প করলাম।এর পর ভাবি সকালের নাস্তা রেডি করতে চলে গেলো।আমি তারিনকে সাথে নিয়ে নিশিকে ডাকতে গেলাম।প্রায় ১০ মিনিট ধরে নিশিকে ডেকে যাচ্ছি কিন্তু ম্যাডাম উঠার নামই নিচ্ছি না তাই বেড টেবিলের উপর রাখা গ্লাসের পানির ছিটা দিতে লাগলাম।বেচারী পানির ছিটায় ধড়ফড়িয়ে উঠলো।
||
আমাকে সামনে দেখে আবাক হলো।____এই তুই এতো সকালে আমার বাসা কি করছিস,হারামি।
___আমি ওর পাশে বসে,কুত্তা মুখ সামলিয়ে কথা বল,আমি আজ আমার শ্বশুর বাড়ী এসেছি।তোর বান্ধবী হয়ে আসেনি।তাই সম্মান দিয়ে কথা বলবি আজ আমার সাথে।
____ও তাই নি।তো ভাবিজান ভাইকি এখনো জানতে পারছে আপনার আগমন আমাদের বাড়ী হয়েছে।
____আমি মুখচোখ ছোট করে মাথা নাড়ামাল,মানে না।
____তাহলে নিজের সোয়ামিকে না জাগিয়ে এই অদমের ঘুম কেনো হারাম করছেন।জান আমার ভাইজানের কাছে যান।নিশি আবার ঘুমাতে গেলে তিশা টেনে উঠিয়ে ওয়াসরুমের দিকে পাঠায়।আর ঘুমাতে হবে না আমার একমাত্র ভাইয়ের একমাত্র বউ,আর আমার একমাত্র হবু ভাবি যান গিয়ে ফ্রেস হন।আপনার মিস্টার হ্যান্ডশাম যে কোনও সময় এসে পরবে।তিশার কথায় দুজনেই অট্টহাসি দিলো।এর পর নিশু ফ্রেস হতে চলে গেলো।আর তিশা তারিনকে নিয়ে আবার নিচে চলে যায়।
____তারিনকে ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে,ভাবী কোনও সাহায্য লাগবে,বলো আমি করে দিচ্ছি।তানজিলা ভাবী আমার মাথায় হাত রেখে, তোমাকে কিছু করতে হবে না তুমি এখানে বস।তুমি আসছো এতেই অনেক খুশি আমরা।ভাবী চলে যেতে নিলো,কি মনে করে আবার ফিরে এলো।তোমাকে একটা কাজ করতে হবে।পারবে তো।
_____আমি না জেনেই হ্যা বলে দিলাম।
||
||

____কি আশ্চর্য!!! রুম এখনো অনেকটা অন্ধকার।ভূতুরে পরিবেশ। কারন জানালায় পর্দা দেওয়া।রুমের টাইট অফ করা।বিছানার দিকে তাকিয়ে আমি শোকড।
জিসান খালি গায়ে উপর হয়ে শুয়ে আছে তাও আবার এই গরমে পাতলা কম্বল গায়ে দিয়ে।আর দিবেই না কেনো।এসির পাওয়ার এতো বাড়ীয়ে দিয়েছে যে আমারি কেমন ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা অনুভূতি হচ্ছে।বরফের মতো শীতল হয়ে যাচ্ছি আমি।কিন্তু কেনো?
এসির কারনে নাকি জিসানকে এই প্রথম উদাম শরীলে দেখতে পেয়ে জানি না।কনফিউশন এ ভুগছি আমি।
আমার চিন্তা এখন আমি আস্তে করে চা টা রেখে চলে যাবো।ব্যাস তাহলেই আর কোনও সমস্যা হবে না।যেমন ভাবা তেমন কাজ,আমি চা টা রেখে মাত্র চলে যাবার জন্য পা বাড়ালাম____ ওমনেই জিসান আমার হাতটা ধরে টান দিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে আমাকে জরিয়ে ধরে শুয়ে পড়লো। আমি তো এখনো শোকড এর মধ্যে আছি,কি হলো আমার সাথে।
||
জিসানের ঘন নিশ্বাস আমার গলায় পড়ছে।এক হাত দিয়ে আমার কোমড় কে আঁকড়ে ধড়ে আছে।একতো উনি এভাবে জরিয়ে ধরে আছে তার উপর এমন খালি গায়ে।আমার শরীল ঘেমে যাচ্ছে,এসির এতো শীতল টেম্পোরেজার ও আমি ঘামছি।কি আশ্চর্য!!!একটু আগেও তো আমি জমে বরফ হয়ে যাচ্ছিলাম।আর এখন ঘেমে যাচ্ছি।কিন্তু কেনো???আমার কোনও বড় রোগ হলো নাতো।
আমি আস্তে আস্তে কাপা কাপা হাতে জিসানকে সরানোর চেস্টা করছি।কিন্তু তাকে একচুলও সরাতে পারছি না।হাতির মতো মানুষটিকে আমার মতো মশা কি তুলতে পারবে।আমি জিসানকে ডাকতে লাগলাম,শুনছেন প্লিস উঠুন।কেউ এসে পড়বে।
____উমম,তিশা। একটু শান্তিতে ঘুমাতে দে "জান"।কাল অনেক লেট করে ঘুমিয়েছি।সব একা সামলাতে হয়েছে।ভোড় রাতে ভাইকে আর বাবাকে রেখে আমি এসেছি একটু রেস্ট নিতে।সো ডোন্ট ডিস্টার্ব।
তাহলে আপনে ঘুমান, আমাকে তো যেতে দিন।সবাই কি ভাববে,আমি এই রুমে এতোক্ষন কি করছি।
____জিসান মাথাটা উঠিয়ে,ঘুম জরানো কন্ঠে।তোকে ভাবি পাঠিয়েছে।
হুমমমমম।আমি মাথা নেড়ে।
____আমিই ভাবিকে বলেছি আমার বউটা বাসায় আসলে সবার আগে আমার রুমে পাঠিয়ে দিতে।তাইতো তুই এখানে।কেউ কিছু ভাববে না।আর ভাবলে ভাবুক।তুই আমার বউ।তাই করো ভাবনার কিছু যায় আসে না।
আর আমার রুমে কেউ আসার সাহস করবে না,আমার অনুমিত ছাড়া।ডোন্ট ওয়ারি।
____আর এখন চুপচাপ আমার সাথে শুয়ে থাক,আর আমাকে তোর শরীলের মিস্টি ঘ্রাণ টা নিতে দে।জিসান তিশার গলায় নাক ঘষতে থাকে।আমাকে মাতাল করতে তোর এই ঘ্রানটাই যথেষ্ট। আর আমি মাতাল হতে চাই বার বার। মুখটা উঠিয়ে জিসান আমার কপালে দুগালে কিস করে আমার গলায় নিজের মুখ ডুবালো।টুকরো টুকরো কিস করতে লাগলে।আমি আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।অদ্ভুত এক ফিলিং কাজ করছে আমার মাঝে।আমি যেনো আমার মাঝে নেই।অন্য এক সুখের রাজ্যে আমি ভাসছি ।জিসানের ঠোঁটের স্পর্শ গলা থেকে একটু নিচে নামতে নিলেই,আমি চিৎকার দিয়ে উঠি।
____নো নো নো। প্লিস।
____জিসান তিশার দিকে তাকিয়ে দেখে তিশা চোখমুখ খিচে আছে।একটু বাঁকা হেসে,তাহলো চুপচাপ আমাকে ঘুমাতে দেয়।কোনও শব্দ করবি না আর এখান থেকে যাওয়ার চিন্তা বাদ দে।এই বলে আবার শুয়ে পড়লো।তা না হলে আদরের ডুশ কিন্তু বাড়িয়ে দেবো।তখন আর কোনও বাধা শুনবো না।
পাক্কা দুঘন্টা পর আমি জিসানের রুম থেকে বের হতে পেরেছি।কিন্তু এখন আমার আন্টি আর ভাবির সামনে যেতে ভিষন লজ্জা লাগছে।তারা কি ভাবছে।আল্লাহ সব রেখে এই লোকটারে কেনো আমার গলায় ঝুলালা।এই লোক জায়গা সময় কিছু দেখে না রোমাঞ্চ করার সময়।আর বার বার আমায় লজ্জায় পড়তে হয়।
||
||

_____রাগে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে।এতো হ্যান্ডশাম হবার কি দরকার ছিলো।আমাকে বলে কারো নযরে না আসতে।নিজের বেলায় কিছু না।তিশা বির বির করে বলছে।
জিসানের চোখ এড়ায়নি ব্যাপারটা।জিসান বাঁকা হেসে তিশার পাশের চেয়ারটাতে বসে সবার সামনে তিশার ওড়না দিয়ে নিজের মাথাটা পুছতে লাগলো।তিশা কেমন রিয়েক্ট দিবে বুঝতে পাড়ছে না।
আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সবাই এই দিকে তাকিয়ে আছে।আর আমি অসহায় মুখে ভাবির দিকে তাকিয়ে আছি।ভাবিও মিটি মিটি করে আসছে।কি আজব সিচয়শেন এ আমাকে ফেললো।
||
জিসানকে নাস্তা দিয়ে আমি চলে যেতে নিলে আমার হাতটা ধরে উনার পাশের চেয়ারে বসালো।
___আরে কি করছেন সবাই দেখছে।
জিসানের যেনো কোনও রিয়েকশন নেই,সে মনে হয় আমার কথাটা শুনেও শুনলো না।অল্প একটু নাস্তা নিয়ে আমার মুখের সামনে এনে, হা কর।
____আমি আশেপাশে তাকিয়ে, আমি নাস্তা করে আসছি। আপনে করুন। আমি উঠতে নিলে আবার হাতটা ধরে ফেলে।
____একদম উঠবি না।আর এতোটুকু খেলে তুই মোটা হবি না।তাই চুপচাপ খেয়েনে।আর আমার খাবার শেষ না হওয়া পর্যন্ত উঠবি না।এখানেই বসে থাকবি।
___আমি হা করে খাবার খেয়ে নিলাম।আমি খুব ভালো করেই জানি না খেলে মিস্টার জিসানও আর খেতো না।জিসানের কাজিনরা মিটমিট করে হাসছে আর মজা নিচ্ছে।কিন্তু জিসানের মামীদের হয়তো জিনিসটা পছন্দ হয়নি।তারা মুখ বাঁকিয়ে সেখান থেকে চলে গেলেন।
___খাবার শেষ হবার পর জিসান উঠে চলে যাবার সময়,আমার ওড়নাটা মাথায় দিয়ে বললো।কে কি বলছে,কি দেখছে আমার কাছে সেটা ইম্পোরটেন্ট না।আমার কাছে শুধু তুই সবচেয়ে ইম্পোরটেন্ট। আর একটা কথা আজ আর বাড়ীর বাহিরে যাবি না।ঠিক আছে। আমি মাথা নাড়লাম।
||
মেহমানদের খাবারের আয়োজন বাহিরে করা হয়েছে।তাই সেখানে যাওয়া নিশেধ করে দিয়েছে আমার।জুম্মার নামায এর পরই মিলাদ শুরু হলো।রায়হান ভাই,বাবা ও মিলাদে অংশ নিয়েছে।মা বাবা,আর রায়হান ভাই কিছুক্ষণ আগেই এলো।আমি নিশির রুমে বসে আছি তার কাজিনদের সাথে।কিছুক্ষণ পর মোনাজাত ধরে মিলাদ শেষ করলাম।এর পরই খাওয়া দাওয়া শুরু হয়ে গেলো।এতিমখানার জন্য মিস্টি, খাবার কাপড় চোপড় জিসান ও তাওহিদ ভাই নিয়ে গেলো।সাথে জিসানের কাজিন হীরা ও নীড় ও গেলো।এসব করে আসতে আসতে প্রায় বিকেল হয়ে গেলো।
_____আমি নিশির রুম থেকে মাকে খুঁজতে বাহিরে বের হলাম,ওমনি আমার শ্বাশুরী মানে জিসানের মায়ের রুমে কিছু শুনে থমকে গেলাম।জিসানের মামী আন্টিকে অনেকে কথা শুনাচ্ছে তাও আবার আমাকে নিয়ে।ব্যাপারটা কি জানতে হবে।তার জন্য দরজার সামনে দাঁড়ালাম।
আপা কি করলেন,এতো ছোট ঘরের মেয়েকে কিভাবে আনলেন।এই মেয়েতো কোনও দিক দিয়ে জিসানের যোগ্য না।না আছে,পড়ালেখা,না আছে বাবা মায়ের কিছু।যা রুপটা আছে ওটা দিয়েই আমাদের সহয সরল ছেলেটাকে নিজের ঝালে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।
____মিসেস রাবেয়া বেগম,তার নিজের ভাইয়ের বউদের বুজাতে লাগলো।এতে মেয়েটার কোন দোষ নেই।কিন্তু জিসামের মামী রুমি এবং রোকসানা বেগম বলে উঠলো,এমন ছোট ঘরের মেয়েগুলোকে খুব ভালো করেই চেনা আছে আমাদের।এরা পরিবার থেকেই অল্প বয়সে ট্রেনিং নিয়ে নেয়।কিভাবে জালে বড় মাছ ধরবে।
আপনে আপা বড় বোকা।তাইতো এতো সহযে এসব মেনে নিয়েছেন।এখনো সময় আছে এই আপদকে বিদায় করেন।
____দেখো তোমরা ভুল.....জিসানের মা কিছু বলতে নিবে তখনি রুমের বাহিরে কিছু শব্দ পেয়ে দেখতো যায়।তিশাকে দেখে রাবেয়া বেগম ভয় পেয়ে যায়।রাবেয়া বেগম খুব ভালো করেই জানে এই মেয়েটার জন্য তার ছেলে কাউকে খুন করতেও হাত কাঁপবে না।আর সেখানে জিসান যদি এসব জানে তাহলে সুনামি নেমে আসবে বাসায়।
||
কথাগুলো শুনে তিশা স্তব্ধ হয়ে যায়।হাতে থাকা তারিনের খেলনাটা পড়ে যায়।চোখ দিয়ে পানি পরতে তাকে,হিচকিও উঠে যায়।কিন্ত শব্দ করে কাঁদতে পারছে না।
___তিশা শুন মা,আমার কথা শুন।
আমি কিছু বলতে চাচ্ছিলাম।কিন্তু আমি বেশি কস্ট পেলে আমার মুখ দিয়ে কথা বের হতে চায় না।সব কিছু দলা পাকিয়ে ফেলি।
____আমি অনেক কস্টে আন্টিকে জিঙ্গেস করলাম,মা,ভাইয়া কোথায়।
তিশা তোমার বাবা মা চলে গেছে,রায়হান জিসানের বাবার সাথে কোনও এক কাজে বাহিরে গিয়েছে।তোমার কিছু লাগলে আমাকে বল মা।আমার হাতটা ধরে।
____এতোক্ষন এ মিসেস রুমি ও রোকসানা রুমের বাহিরে আসলো দেখতে সমস্যা কি।তিশাকে দেখেই যেনো তাদের মাথা আরো গরম হয়ে গেলো।রাগে তিশাকে আরো অনেক কিছু শুনিয়ে দিলো।
দেখছেন আপা।আমি বলেছিলাম না এরা এমনি হয়।রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে আমাদের কথাগুলো শুনছিল।কেমন মেয়েরে বাবাহ!
মিসেস রুমী___এই তোমার বাবা মা কি কোনও শিক্ষা দেয়নি।কেমন মেয়ে তুমি লজ্জা সরমের মাথা কাইছো মনে হয়।
রাবেয়া বেগম ধমক দিয়ে তাদের চুপ করালো।কিন্ত এতোক্ষনে দেরি হয়ে গিয়েছে তিশা সেখান থেকে দৌঁড়ে বাড়ীর বাহিরে চলে গেলো।
চলবে......

আর এতো বছর পর কাজিনদের পেয়ে জিসানও বেশ খুশি।তাইতো তাদের সাথে গল্প করতে করতে ড্রাইভ করে বাসার দিকে আসছিলো।বাড়ীর খুব কাছাকাছি চলে এসেছে তারা।
_____এমন সময় রাস্তার ফুটে দাঁড়িয়ে থাকা একটা মেয়ের দিকে জিসানের চোখ পড়ে।।কয়েকজন বখাটে ছেলে একটা মেয়েকে ঘিড়ে রেখেছে।ওয়াইট কালারের সালোয়ার কামিজ,মাথায় ওড়না দেওয়া।চেহারাটা পুড়ও দেখা না গেলেও হাতের ডায়মন্ডের চুড়িটা দেখেই দূর থেকে জিসানের চিন্তে কস্ট হয়নি মেয়েটি কে।
কারন এই চুড়িটা জিসানই আজ সকালে তিশাকে পড়িয়ে দিয়েছিলো।প্যারিস থেকে তিশার জন্য এনেছিলো চুড়ি জোড়া।কিন্তু দিতে ভুলে গিয়েছিলো।তাই আজ নিজেই তিশাকে পড়িয়ে দিয়েছিলো।
_____সাথে সাথে গাড়ী ব্রেক করে থামিয়ে দেয় জিসান।হঠাৎ গাড়ী এভাবে থামানোর কারন জিঙ্গেস করে,তাওহিদ।
জিসান সিট বেল্ট খুলতে খুলতে সামনে ইশারা করে,তিশা এখানে কি করছে।দাঁতেদাঁত চেপে।
_____তাওহিদসহ তাদের কাজিনরাও তাকিয়ে দেখে,আসলেই মেয়েটি তিশা।কিন্তু সবার মুখে একই প্রশ্ন ও এখানে কেনো।
||
রায়হান ও তৌফিক সাহেব মাত্রই বাসায় আসলেন।এসেই শুনে তিশাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
তৌফিক সাহেব বাড়ীর সবার উপর রাগান্বিত হয়ে জিঙ্গেস করলো,খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মানে কি?....কি হয়েছে।
_____নিশি কিছু কথা সংক্ষেপে বললো,যতোটুকু ও জানে।এদিক দিয়ে রায়হান বুঝতে পারছে,তিশা আর কোথায়ও না বাসার দিকেই যাবে।কিন্তু এখানকার রাস্তা গুলো তিশার জন্য নিরাপদ না।কোনও অঘটন ঘটার আগেই ওকে খুঁজতে হবে।তাই রায়হানও গাড়ী নিয়ে বের হয়ে গেলো বোনকে খুঁজতে।
_____তিশা তখনি বাড়ী থেকে বের হয়ে যায়।হাতে টাকা পয়সা কিছুই নেই।তাই পায়ে হেটেই বাড়ীর দিকে রওনা দিলো।চোখের পানি এখনো কোনও বাধ মানছে না।একহাত দিয়ে চোখ মুজছে আরেক হাত দিয়ে মাথার ঘুমটাটা ধরে রেখেছে।এক প্রকার দৌঁড়েই যাচ্ছে।হঠাৎ পা দুটো থেমে গেলো।সামনে কিছু বখাটে টাইপের ছেলেদের দেখে।কি করবে বুঝতে পারছিলো না।সামনে বাড়বে কি বাড়বে না। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই।রাস্তাটা এমনেই নিরব থাকে।আর এখন তো আরো বেশি।তবুও সাহস করে মাথা নিচা করে সামনের দিকে আগতে লাগলো।কিন্তু তিশাকে একা পেয়ে ছেলেগুলো পথ আটকে দাঁড়ালো।তিশা এই ভয়টাই পেয়েছিলো। তিশা বার বার বলার পরও ছেলেগুলো পথ ছাড়লো না বরং ঘিরে ফেললো ওকে এবং বাজে ইংগিত করতে লাগলো।ঠিক ঐ সময়ই জিসানের গাড়ীটা ওখান দিয়ে যাচ্ছিলো।
||
_____তিশাএএএএ বলে ডাক দিলে,ছেলেগুলো পেছনে ঘুড়ে তাকায়।জিসানকে দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো।কারন জিসান এখানকার স্হানীয়।জিসানের আগের সব রেকর্ড জানা এদের।আর ছেলেগুলোও এই এলাকার তাই জিসানকে খুব ভালো করে চিনে।
ভ ভভাই আ..আপনে।আ..আপনে এখানে।কিছু লাগবে।ছেলেগুলো ভয়ে ঢোক গিলে বলে।
____তোরা যে মেয়টাকে ঘিরে রেখেছিস জানিস ও কে?
না ভাই,এলাকায় নতুন আসছে মনে হয়,আপনে চিনেন।
____ও আমার ওয়াইফ। খুব শান্ত ভাবে কথাটা বললেও চেহারাটা ভয়ংকর লাগছে জিসানের।কথায় আছে না সুন্দর মানুষ রাগলে আরো ভয়ংকর সুন্দর লাগে।
এবার ছেলেগুলো ভয় পেয়ে যায়।বিশ্বাস করেন ভাই আমরা কিছু করেনি,আর যদি জানতাম আপনার বউ তাহলে সামনেও আসতাম না। মাপ করে দেন এবারের মতো ভাই।
_____জিসান দাঁতেদাঁত চেপে তিশাকে প্রশ্ন করে,এদের মধ্যে কেউ তোকে টাচ করেছে।
তিশা এই তিন বখাটে কে দেখে যতোনা ভয় পেয়েছে,তার থেকে বেশি ভয় পাচ্ছে জিসানকে দেখে।গলা যেনো শুকিয়ে আসছে। একবার জিসানের দিকে একবার ছেলেগুলোর দিকে তাকাচ্ছে।তিশার মতো ছেলেগুলোর অবস্থা ও খারাপ।
||
তিশা কথা বলছে না দেখে,জিসান জোরে ধমক মারে।জিসানের ধমকে তিশা কেঁপে উঠে।
____না না ওরা কেউ আমাকে টাচ করেনি।
____সত্যি বলছিস।
____হে একদম সত্যি।
জিসান ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে___এবারের মতো মাপ করছি।নেক্সট টাইম যদি দেখি পথে ঘাটে মেয়েদের এমন উৎপীড়ন করছিস তাহলে পরিনাম ভালো হবে না।আমি কে, আর কি করতে পারি।অবশ্যই নতুন করে বলতে হবে না।
ছেলেগুলো ভয়ে সেখান থেকে দৌঁড়ে পালালো।মনে হচ্ছে জান হাতে নিয়ে দৌঁড়াচ্ছে।
____এবার তিশার পালা,কিন্তু তিশাতো ওদের মতো দৌঁড়তে পারবে না।তাই ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে।চোখের পানিটা যেনো আরো বেড়ে গেলো।জিসানের প্রশ্নের উত্তর ও দিতে পারছে না।
তাই জিসান আবারও বললো,তুই এখানে একা কি করছিস।বাড়ী থেকে বের না হতে মানা করেছিলাম।কথা বলছিস না কেনো।চিল্লিয়ে.....
_____তিশা নিশ্চুপ,শুধু কেঁদেই যাচ্ছে।তিশার এমন বিহেভিয়ার এ জিসান আরো রেগে যায়।কিছু বলতে যাবে তখনি রায়হান ও এসে পড়ে সেখানে।
||
রায়হান কে দেখে তিশা দৌঁড়ে ভাইয়ের কাছে চলে যায়।রায়হান কে জরিয়ে ধরে___ভাইয়া প্লিস আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো।আমি এখানে থাকতে চাইনা।প্লিস ভাইয়া আমি বাসায় যাবো।আমাকে বাসায় নিয়ে চলো।
_____রায়হান বুঝতে পারছে কিছু একটা হয়েছে,যার কারনে তিশা এমন করছে।বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে ঠিক আছে,তুই শান্ত হো আগে।বাসায় আন্টি আংকেল চিন্তা করছে, তাদের থেকে বিদায় নিয়ে আমরা বাসায় চলে যাবো।ঠিক আছে।
জিসানদের বাসায় যাওয়ার কথা শুনে___তিশা চিল্লিয়ে উঠে,না আমি যাবো না ঐ বাসায়।তুমি ফোনে বলে দিও আন্টি আংকেল কে।আমি এখন আমাদের বাসায় যাবো।
____তিশার এধরনের কথা শুনে জিসানের এবার ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে গেলো।জিসান বুঝতে পারছে,বাসায় কিছু একটা অঘটন হয়েছে,যার কারনে তিশা এমন উদ্ভট আচরণ করছে।না জানা পর্যন্ত তিশাকে কোনও ভাবেই একা ছাড়া যাবে না।জিসান তিশার হাত চেপে ধরে নিজের দিকে নিয়ে আসলো।আমার প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত তুই কোথাও যাবি না।তিশাকে নিজের গাড়ীতে বসিয়ে চলে গেলো।
তাওহিদ, হীরা,নীড়,রায়হান নিরব দর্শকের মতো রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে।রায়হান কে উদ্দেশ্য করে তাওহিদ বলে___এই ব্যাটার সাথে জীবনেও কোথাও যামু না।কিছু হলেই আমাকে মাঝ রাস্তায় ফেলে চলে যায়।এমন ভাই আল্লাহ আর কারো না দেখ।
||
||

_____হঠাৎ রাবেয়া বেগমের চোখ গেলো দরজার দিকে।জিসান তিশার হাত ধরে টেনে সবার সামনে দিয়ে উপরে নিজের রুমে নিয়ে গেলো।সবাই চেয়ে রইলো,কিন্তু ঘটনা এখনো বুঝতে পারছে না,তিশাকে এভাবে আনার।
জিসান তিশাকে রুমে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।তিশাকে বেডে বসিয়ে নিজেও একটা চেয়ার নিয়ে তিশার সামনে বসলো।খুব শান্ত ভাবে তিশাকে জিঙ্গেস করলো,কি হয়েছে খুলে বল এভ্রিথিং।
কিন্তু জিসান হাজার বলেও যখন তিশার মুখ খুলতে পারলো না,তখন চেয়ারটা লাথি মেরে ফেলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
||
_____কিছুক্ষন পর রায়হান এসে তিশার পাশে বসলো।তিশা এখনো মাথা নিচু করে বসে আছে।রায়হান তিশার মাথায় হাত রেখে.....তিশা বল বোন কি হয়েছে।তুই কেনো কাউকে কিছু না বলে এভাবে বাড়ী থেকে বের হলি।যদি তোর কিছু হয়ে যেতো।
____তিশা এখনো চুপ।তিশা জিসানের রাগ সম্পর্কে খুব ভালো করে পরিচিত। তাই ও বলতে চাচ্ছে না কাউকে কিছু।
তিশা এভাবে চুপ থাকলে হবে না,অন্তত আমাকে বল।কি হয়েছে?
এবার তিশা মুখ খুললো।ভাইয়া আমি কি খুব খারাপ। ___কি বলছিস এসব।তোকে কেউ কিছু বলছে।
ভাইয়া আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও আমি এখানে থাকতে চাই না।
রায়হান তিশার মুখটা দুহাত দিয়ে ধরে,আগে তোকে বলতে হবে,কি হয়েছে।কার জন্য আমার বোনের এ অবস্থা আমাকে জানতে হবে।না যেনে আমি এক কদমও নড়বো না, না তোকে কোথায়ও যেতে দেবো।তাই বল বোন আমার,প্লিস।
||
_____তিশা ভাইয়ের বুকে মাথা রেখে,ভাইয়া তোমার কাছে কি মনে হয় আমি লোভী।আমি লোভে পরে জিসান ভাইকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছি।আমি তাকে আমার রুপ দেখিয়ে পাগল করে তুলেছি।তিশা মাথা তুলে-----
ভাইয়া সত্যি করে বলছি তোমাদের কসম,আমি এমন কখনো কিছু করেনি।যার কারনে জিসান ভাইয়ের মনে আমার প্রতি কোনও অনুভূতি আসুক।আমিতো জানতামও না জিসান ভাইয়ের মনে আমাকে নিয়ে কি আছে।আর তাকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করার কথা কিভাবে ভাববো।তখনতো আমার মাত্র ১৩ বছর বয়স ছিলো।বিয়ে কি,ভালোবাসা কি, ছেলেদের ফাঁসাতে হয় কিভ

___খুলনায় ছিলাম।আমার বড় মামা অসুস্থ ছিলো।আজই ফিরলাম।ভাবলাম তোমাদের সাথে একটু দেখা করে যাই।তাই চলে আসলাম।
___ভালোই করেছো।আমারও খুব বোর লাগছিলো জানো।চলও তোমার সাথে কিছুক্ষণ গল্প করবো।তুমি বসো আমি আম্মুকে বলে আসছি।
রুহি তিশাদের পাশের বাসায় থাকে।রুহির মায়ের সাথে তিশার মায়ের খুব ভাব বান্ধবীর মতো। সেই সুবাদে রুহিও এই বাসায় আসা যাওয়ার ভিসা পেয়ে গেছে।কিন্তু রুহি তিশা বা ওর মায়ের জন্য এই বাসায় আসে না।আসে তো অন্য কারণে।রুহি,তিশা আর রেনু বেগম বেশ কিছুক্ষণ গল্প করলো।এর পর তিনি চলে গেলেন রাতের ডিনার রেডি করতে।তিশা চায়ের কাপগুলো রাখতে কিচেনের দিকে পা বাড়াতেই,কলিংবেল আবার বেজে উঠে।তিশা ব্যস্ত বলে রুহি দরজা খুলে।দরজারটা খুলেই রুহির মুখে এক অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠে।আর আসবেই না কেনো,যাকে এক নযর দেখার জন্য,২ ঘন্টা ধরে বসে আছে তাকে দেখে খুশির ঝলক তো ফুটবেই।
____রায়হান কখন ধরে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু ভেতরে ডুকতে পারছে না।রুহি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে বলে।এবার রায়হান মুখে একটু বিরক্তিপ্রকাশ করে বললো___রুহি ম্যাম যদি একটু সাইড দিতেন,তাহলে আমি একটু ভেতরে ডুকতে পারতাম।
রায়হানের কথায় রুহি একটু লজ্জা পেয়ে দরজা থেকে সরে ধারালো।রায়হান ভেতরে ডুকে নিজের রুমে চলে গেলো।আজ আর বের হবে না।রুহি নামক আপদ যে পর্যন্ত না যায় বাসা থেকে।মেয়েটাকে রায়হানের একদম সহ্য হয়না। দেখলেই মেজাজ গরম হয়ে যায়।রায়হানের কোনও সারা না পেয়ে রুহিও বাধ্য হয়ে চলে গেলো।
||
রাতে সবাই ডিনার করে যে যার রুমে চলে গেলো।তিশা বিরক্তবোধ করছে বলে একটু ফেসবুকে উকি মারলো।ভালো কিছু না পেয়ে চলে যেতে নিলে হঠাৎ একটা ম্যাসেজ আছে তিশার নাম্বারে,তিশা দেখলো নাম্বারটা প্রাইভেট নাম্বার।ম্যাসেজ টা ছেক করে তিশা---

"""প্রকৃতি নিজেই সব কিছুর বদলা নেয়,তাহলে তুমি কি করে ভাবলে আমি নেবো না।কিছুই ভুলিনি আমি,না ভুলতে দেবো কাউকে।আমার হ্রদয়ে রক্তক্ষরণ তুমি শুরু করেছো, আর এর খতম আমি করবো।কাঁদবে তুমি,ছটফট করবে।কিন্তু এবার বাঁচাতে কেউ আসবে না।আমি কোনও পথ খোলাই রাখবো না।আমার ছোবল দেবো তোমাকে,তবুও মারতে দেবো না।বি রেডি ---আমি আসছি।তোমার ছায়াকে তোমার থেকে কেড়ে নিতে।""

ম্যাসেজটা পড়ে তিশা শোয়া থেকে লাফ দিয়ে উঠে বসলো। ঘমতে লাগলো।ভয়ে হাতপা কাপতে লাগলো।এটা জিসান না,তাহলে কে।আর কিসের বদলার কথা বলছে।আমি কার আবার এমন ক্ষতি করলাম।উফফ!!মাথাটা ফেটে যাবে।আর চিন্তা করতে পারছি না।
____হঠাৎ বারিন্দায় কিছু পরার শব্দ শুনতে পেলো তিশা।কি দেখার জন্য তিশা সামনে বারতে লাগলো।ভয়ে যেনো হাত পা চলছে না। সামনে একটি ছায়া দেখে তিশা ভয় পেয়ে গেলো, চিৎকার করতে যাবে,তখনি ছায়াটি এসে মুখ চেপে ধরলো।
কি করছিস।সবাইকে কি জানানো খুব দরকার আমি আসছি।
____তিশা এতোক্ষন ভয় পেলেও জিসানের কন্ঠ শুনে কিছুটা রিলেক্স হলো।মুখ থেকে জিসানের হাতটা সরিয়ে জিসানকে টাইট করে জরিয়ে ধরে।তিশার এমন কান্ডে জিসান কিছুটা অবাক হয়।জিসান তিশার মাথায় হাত বুলিয়ে -কি হয়েছে জান,কোনও সমস্যা। তিশা মাথা নাড়ায় না।তাহলে ভয় পেয়েছিস,তিশা এবার হ্যা বলে।
তাইনি আমার পাগলিটা ভয়ও পেতে পারে।তো ম্যাডাম কে আপনাকে এতো ভয় দেখালো তার ঠিকানটা আমাকেও দিন।তাকে একটা ধন্যবাদ দিয়ে আসি।তার কারনেই তো আজ আপনে নিজে আমার কাছে এসেছেন।এতো খুশি আমি কোথায় রাখবো বলেন তো।আমি আবার আজ খুশিতে মরে না যাই।
____জিসানের কথায় একটু বিরক্ত হয়ে সরে যেতে নিলে,উনি আমাকে আরো জড়ে আকড়ে ধরে।ম্যাডাম আসছেন আপনার মর্জিতে কিন্তু যেতে হবে আমার মর্জিতে, চাই চেস্টা করেও লাভ নেই।যেমন আছেন তেমনি থাকেন।
জিসান আমার মাথায় একটা চুমো দিয়ে চুলের ঘ্রান নিতে ব্যস্ত আর আমি উনার হ্রদপিন্ডের প্রতিটি স্পন্দন খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছি।উনার হ্রদপিন্ডের প্রতিটি ধুপধুপ শব্দ আমার অস্তিত্বকে জানান দিচ্ছে।এখানে মনে হয় আমারি বসবাস,তাইতো এই জায়গায় মাথাটা রাখলে সব চিন্তা নিমিষে দূর হয়ে যায়।
||
____হঠাৎ আমার খেয়াল হলো উনি ফর্মাল ড্রেসআপে।তার মানে উনি অফিস থেকে সোজা এখানে চলে এসেছেন।আমি উনার থেকে সরে__আপনে বাসায় যাননি।
জিসান আমার সামনের চুলগুলো কানের পিছে গুঁজে দিয়ে____না!
আমি অফিস থেকে সোজা এখানে চলে এসেছি।তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো।সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারছিলাম না।মনটা ছটফট করছিলো।মনে হচ্ছে দম আটকে মরে যাবো,যদি এখনি আমার জানটাকে না দেখি।তাই চলে আসলাম।
তার মানে আপনে ডিনারও করেনি, ঠিক তো।
___হুমম,বাসায় গিয়ে কিছু খেয়ে নিবো নি।চিন্তা করিস না।তোকে এখন একটু মন ভরে দেখতে দে।
জিসানকে খুব টায়ার্ড লাগছে,আমি খুব ভালো করেই জানি সে বাসায় গিয়ে না খেয়েই ঘুমিয়ে পরবে।আপনে বসুন এখানে আমি আসছি।
___কোথায় যাস।আমার হাতটা ধরে।
___আমি আসছি।
আমি জিসানকে বিছানায় বসিয়ে রুম থেকে বের হলাম খাবার আনতে।কি আশ্চর্য! আজ কিছুই নেই,বলে না প্রয়োজনের সময় কিছু পাওয়া যায় না।আমি তারাতারি করে চাওমিন রান্না করে ফেললাম।আমার হাতের চাওমিন জিসানের খুব পছন্দ। আমি রান্না করে প্লেটে নিয়ে পাকের ঘর পরিস্কার করে চললাম রুমের দিকে।গিয়ে দেখি সাহেব আমার বিছানায় হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।ক্লান্তি তার চেহারায় ফুটে উঠেছে।তবুও খেতে তো হবেই।
____আমি খুব আস্তে করে তাকে ডেকে তুললাম।ঘুম ঘুম অবস্থায় আমি খাইয়ে দিলাম।উনিও চোখ বন্ধ করে খেয়ে নিলেন।আমি পানি খাইয়ে প্লেটটা রেখে এসে দেখি,জিসান বাচ্চাদের মতো গুটিশুটি মেরে শুইয়ে আছে।আমিও দরজা লাগিয়ে বাতিটা নিভিয়ে জিসানের পাশে শুয়ে পড়লাম।কিছুক্ষণ পর জিসান হঠাৎ আমার দিকে ফিরে আমার গলায় মুখ ডুবিয়ে আমাকে জরিয়ে ধরলো।আমি কিছুটা অবাক হলাম।কারন আমি মনে করেছিলাম উনি ঘুমিয়ে গেছে।নিজের অজান্তে আমার হাতটা উনার মাথায় চলে গেলো।আমি তার সিল্কি চুলগুলোতে হাত বুলাতে লাগলাম।আর উনি আমাকে নিজের সাথে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।কেনো জানি খুব শান্তি লাগছে।মনে মনে নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে।উনার মতো একটা পাগল আমার প্রেমে যে কিভাবে পড়লো,আমি আজও বুজতে পারলাম না।তবুও উনি পাশে থাকলে নিজেকে কেনো জানি পরিপূর্ণ লাগে।
তিশা জিসানকে পেয়ে,আননোন নাম্বার থেকে আসা ম্যাসেজটির কথা ভুলেই গেছে।
||
||

___হ্যা লোওও
____নিশ্চুপ
কথাতো বলবেন না তাহলে ফোন কেনো করেন বলেন তো।না নিজে ঘুমান না আমাকে শান্তি মতো ঘুমাতে দেন।আচ্ছা বলেনতো সমস্যা কি।
____নিশ্চুপ।
____ও আমিতো ভুলে গেছি,আপনিতো আবার কথা বলতে পারেন না।
আচ্ছা তাহলে আমার কথা শুনুন,আপনার ঠিকানাটা পাঠিয়ে দিন।আপনার বাসায় বাবা মা কে পাঠাবো বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে।আপনার মা বাবাকে ও জানানো দরকার তাদের মেয়ে বড় হয়ে গিয়েছে।আর আমি বা কতো দিন একা থাকবো বলেন।বয়সতো কম হয়নি।বাবা মা বুঝে না পোলা বড় হয়ে গিয়েছে।তাই নিজের বিয়ের ঢোল নিজেই বাজাতে হবে এখন।
____ভাবছি এবার বিয়েটা করে বাসরটাও সেরে ফেলি তারাতারি।আর কতো রাত একা কাটাবো।এবার কোলবালিশ কে আউট করার সময় হয়ে গিয়েছে।কোলবালিশ এর জায়গায় একটা মিস্টি বউ লাগবে।যাকে মন চাইলেই যেনো আদর করতে পারি।
কি বলেন!ঠিক বলছি।
||
____আমারতো মনে হয় আপনারও তর সইছে না বাসর করার জন্য।তাইতো শুধু রাতেই আমার কথা মনে করে ফোন করেন।কখনো কখনো দিনেও স্মরণ কইরেন এই অভাগারে।আর আমার প্রস্তাবে রাজি থাকলে ঠিকানা পাঠিয়ে দিয়েন।আপনার ঠিকানা পেলে হানিমুনের টিকেট আমি আগেই কেটে ফেলবো।হানিমুনেই আমরা ফ্যামিলি প্লানিং করে ফেলবো।আমার কিন্তু আপনার মতো একটা মিস্টি মেয়েই লাগবে।ছেলে হলে চলবে না।মেয়ে না হওয়া পর্যন্ত আমি কিন্তু আপনাকে রেস্ট নিতে দিবো না।তাই ভালো করে চিন্তা করুন আমার ইচ্ছাগুলোর।
ফোনের অপর পাশের ব্যক্তিটি ফোনটা টুস করে কেটে দিলো।
____ফোনটা কেটে যাওয়ায় রায়হান ফোনটা বুকের উপর রেখে হাসতে থাকে।ম্যাডাম আজ রাত ঘুমাতে পারবে না।
আমার জোনাকি পোকা।
ফোনের অপর পাশের মানুষটি___
অসভ্য লোক।একটা অপরিচিত মানুষের সাথে হানিমুনের আলোচনা করে।ফ্যামিলি প্লানিং ও করে ফেলছে।শয়তান,খাটাইশ,লুচু কোথাকার।দেখে নিবো আমি আপনাকে।একবার শুধু হাতে পেয়ে নি।হানিমুন করার শখ আমি মিটিয়ে দেবো।
||
হুমমম।ফোনটা নিশিই করেছিলো।শুধু আজ না,গত ২বছর ধরে ফোন করছে।ফোন করে কিন্তু কোনও কথা বলে না।শুধু রায়হানের একটু কন্ঠ শুনতে এতো কিছু।তবে রায়হান প্রথম প্রথম বিরক্ত হলেও এখন ওরও খুব ভালো লাগে।রাতে ফোনটার জন্য অপেক্ষা করে।কারন রায়হান জানে ফোনটা আর কেউ না ওর প্রিয়তম করেছে।
প্রিয়তম!!হুম রায়হানের প্রিয়তম।নিশিকে খুব ভালোবাসে রায়হান।কিন্তু ভালোবাসাটা প্রকাশ করতে চায় না।যেভাবে চলছে চলুক না।দুজন দুজনকে ভালোবাসার পরও নিজের ভালোবাসা লুকিয়ে রাখার প্রাণপ্রণ চেস্টা চলছে দুজনের মাঝে।দেখাযাক কার ধের্য আগে ভাঙ্গে।
উফফ নিশি.....নেশা লাগিলো... রে
----------------বাকা দুনয়নে নেশা তোর লাগিলো...রে.....।
রায়হান গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে ঘুমের দেশে তলিয়ে পড়লো।
||
||

গুড মর্নিং সুইটহার্ট।সকাল হয়ে গিয়েছে,তাই চলে যেতে হলো, ঘুমিয়ে ছিলি বলে তোকে ডাকিনি, তোর ঘুমটা ভাঙ্গতে ইচ্ছা হচ্ছিলো না।সরি না বলে যাওয়ার জন্য।
তবে একটু পর আমি আবার আসছি।তুইও কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নে।

তিশা চিরকুটটা পরে খুব যত্ন করে রেখে দিলো।আজকাল জিসানের সব কিছুই যেনো ভালো লাগে তিশার।এর পর নিজেও রেডি হতে চলে গেলো,কিছুক্ষণ পর জিসান আসলো তিশাকে পিক করতে।তার পর নিশি ও তিশাকে কলেজে পৌছে দিয়ে জিসান চলে গেলো অফিসে।
আজকাল অফিসে কাজের চাপটা বেশি।প্যারিস থেকে এখানে সব সেটেল করে,কাজ শুরু করছে।নতুন জায়গা,নতুন লোক তাই জিসানকেও বেশ টাইম দিতে হচ্ছে সব কিছু বুঝিয়ে নিতে।
||
আজ কলেজ ছুটির পর তিশা নিলুর বাসায় গেলো।প্রায় এক ঘন্টা ধরে নিলুকে আটকে রেখেছে তিশা।সমস্যা কি জানার জন্য।কিন্তু নিলু বার বার কথা কাটিয়ে দিচ্ছে।তার নাকি কোনও সমস্যা নেই।কিন্তু তিশা খুব ভালো করেই জানে কিছু একটা চলছে নিলুর মনে যা কাউকে শেয়ার করতে চাইছে না।তাইতো নিলু না কলেজে আসে ঠিকমতো,না কোচিং এ।এমনকি তিশার সাথেও তেমন কথা বলে না।
____নিলুও জানে তিশা না যেনে যাবে না,তাই তিশাকে এড়ানোর জন্য,তিশা বস আমি তোর জন্য পুডিং নিয়ে আসছি,তুইতো আম্মুর হাতের পুডিং খুব পছন্দ করিস।আমি নিয়ে আসছি।
তিশা বুঝতে পারছে,নিলু ওকে এড়ানোর জন্যই পুডিং এর বাহানা করছে।তিশা ভাবছে কি করবে।হঠাৎ কি মনে করে নিলুর পড়ার টেবিলটা দেখতে লাগলো।ওখানে নীল কালারের কাভার দেওয়া একটা ডাইরি পরে আছে।তিশা ডাইরি টা নিয়ে পরতে লাগলো।ডাইরিটা পড়ে তিশার সব প্রশ্নের উত্তর তিশা পেয়ে গেলো।
____অন্যকারো ডায়রি তার পারমিশন ছাড়া পড়া মোটেও ভালো না,এটাকে অভদ্রতা বলে তিশা জানে।কিন্তু বান্ধবীর মনের কস্ট দূর করার জন্য একটু অভদ্র হলেও চলে।
তিশা ডাইরিটা পরে যথাস্থানে আবার রেখে দিলো।নিলু পুডিং নিয়ে আসলে খেয়ে নিলুর সাথে টুকটাক কথা বলে চলে গেলো।নিলু অবাক হলো,কারন তিশা যা জানার জন্য এসেছে তা না জেনে চলে গেলো।ও কি আবার আমার ডাইরিটা পরেনিতো।নিলু চেক করলো ডায়রিটা ঠিক জায়গায় আছে কিনা।ডায়রি তো টিকই আছে তাহলে তিশা!!!
||
||

____মেয়েটিকে দেখে আসেপাসের মানুষগুলোও কেমন হুমড়ি খাচ্ছে।সুটবুটে বিদেশি মনে হলেও জন্মগত ভাবে সে দেশি।তবে অনেক বছর ধরে ফ্যামিলির সাথে বিদেশের মাটিতে থাকতে থাকতে বেশভূষায় অনেকটা বিদেশী হয়ে গিয়েছে।
বিজনেস জগতে হাজারো পুরুষের মাঝে নিজের যোগ্যতায় আজ টপ বিজনেস ওমেনের মাঝে নিজের নামি লিখেছে।সে আর কেউ না মিস লাবনী মেহের।
ফর্সা গায়ের রং,গ্রে কালার হেয়ার,মুখে লেগে থাকা হাসি।সব মিলিয়ে কোনও হিরোইন থেকে কম নয়।আজ এতো বছর পর নিজ দেশে ফিরেছে।তাও অন্য কারো জন্য।
____এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে নিজের ব্লাক মার্সিডিজ এ চড়ে বসে সামনের ড্রাইভার কে উদ্দেশ্য করে বললো।
আহমেদ ভিলায় আগে চলো।কারো সাথে দেখা করা খুব প্রয়োজন।।
চলবে....
[রিডার্স.... রাইটার গল্প লিখে আপনাদের জন্য,আপনাদের ভালো লাগার জন্য।রাইটার ইচ্ছা করে গল্প দিতে লেট করে,এটা ভুল ধারনা।রাইটারের ব্যস্ততা আপনাকে বুজতে হবে।যারা বলেন এতো দেরি করে দেন বলে,গল্পটি পড়তে ভালো লাগে না।তাদের বলবো গল্পটা পড়ার কোনও দরকার নেই।আপনে হয়তো গল্পটা ৫মিনিটে পড়ে শেষ করে ফেলেন,আমি কিন্ত ৫ মিনিটে লিখে শেষ করতে পারিনা।আমাকে সময় নিয়ে লিখতে হয়।]

___স্টোপ দিস নোনসেন্স তিশা।
আমি তার চিল্লানিতে কিছুটা কেঁপে উঠলাম।জিসানকে আমার দিকে আসতে দেখে,আমি ভয়ে পিছাতে নিলে।আমাকে ইশারায় সামনে আসতে বলে।
____রাইট নাউ।
আমি কচ্ছপের মতো আস্থে আস্থে পা ফেলে তার সামনে দাঁড়াই।জিসান আমার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে চেয়ারে বসিয়ে দুসাইডের হাতলে নিজের দুহাত রেখে আমাকে আটকে ফেলে।আমার দিকে একটু ঝুকে প্রশ্ন ছুড়ে মারে।
___ছেলেটা কে তিশা?দাঁতেদাঁত চেপে।
আ আআ আবি র ভাই য়য়া।আমি কাপাকাপা গলায়।
কে এই আবির ভাইয়া,যাকে আমি চিনি না।কি হয় তোর।কি সম্পর্ক তোর সাথে।স্পিক আপ ডেম। আই কান্ট হেনডেল মাইসেল্ফ।স্পিক।-----চিল্লিয়ে।
জিসানের এমন ভয়ার্ত লুকে আমার কলিজার পানি শুকিয়ে গেলো।এখনি মনে হয় কলিজাটা ফেটে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাবে।ভয়ে জিসানকে পুরো ব্যাপারটা খুলে বললাম।
____আ আবির ভভাই য়া নননিলুর কা জিন।নিলুর ব্যাপারে কথা বলতেই গিয়েছিলাম আ আবির ভাইয়ার সাথে।নিলু আবির ভাইকে খুব ভালোবাসে কিন্তু আবির ভাই নাকি অন্য কাউকে ভালো বাসে।আর সেই মেয়েটির বিয়েও হয়ে গিয়েছে।
||
(তিশা নিজের কথা জিসানকে বলতে চায়না কারন জিসান এতে আরো রেগে যাবে।তাই কথাটা লুকিয়ে ফেললো।জিসান যদি জানে আবির যাকে ভালোবাসে সে আর কেউ না তিশা।তাহলে কিছু চিন্তা না করেই আবিরকে কিছু করে ফেলবে)
_____তাই তাকে বুঝাতে গিয়েছিলাম।নিলুও তাকে খুব করে চায়।সে যেনো নিলু আর তার সম্পর্ক কে একটা সুযোগ দেয়।নিলু আজকাল খুব ডিপ্রেশনে ভুগছে।তাই জাস্ট তার সাথে………তিশাকে আর কিছু বলতে দিলো না জিসান।
তিশার দিকে আরো একটু ঝুকে গালটা খুব রুডলি ভাবে হাতদিয়ে চেপে ধরে।সাহস কি করে হলো তোর,আমার সাথে মিথ্যা বলার।তাও আবার বান্ধবীর প্রমিকের সাথে দেখা করার জন্য।
কলিজাটা মনে হয় বেশ বড় হয়ে গিয়েছে।কি ভেবেছিলি,আমি জানতে পারবো না।নাকি আমাকে বোকা ভাবিস।আমার চোখ যে সবসময় তোকে দেখে তাও ভুলে গিয়েছিস মনে হয়।তাইতো এতোটা স্পর্ধা দেখিয়েছিস।এতোবড় Business Empire চালাই আমি,আমার পিঠপিছে কোন Employee কি করে না করে সব আমার কানে আশে।আর সেখানে আমার বউয়ের খবর রাখাটাতো আমার কাছে খুবই সামান্য একটা ব্যাপার...তাই না।
কান খুলে মগজে ঢুকিয়ে রাখ,
_____তোর এমন সমাজ সেবা আমার একদম পছন্দ না।সেবা যদি করতেই বেশি মন চায়,তাহলে আমাকে বলবি,আমি চব্বিশ ঘন্টা তোর জন্য হাজির থাকবো।কিন্তু বান্ধবীর মনের কস্ট দূর করার জন্য,বান্ধবীর প্রেমিকের সাথে লুকিয়ে মিথ্যা বলে দেখা করা আমি মোটেও সহ্য করবো না।এটাই ফাস্ট আর লাস্ট ওয়ার্নিং তোর জন্য।এর পরও এমন কিছু হলে আমার খারাপ রুপটা দেখাতে কিন্তু বাধ্য হবো।আর আমি কি কি করতে পারি,তাতো নিশ্চই তোর ধারনা আছে।
তাই 'জান 'আমাকে রাগাইশ না।তোর জন্য ভালো হবে না।আমি যথেষ্ট শান্ত হতে চাই তোর ব্যাপারে।কিন্তু তুই এসব করতে থাকলে,আর আমার কথা না শুনলে আগের জিসান আবার ফিরে আসবে।জিসানের ভয়ংকর রুপটা দেখতে চাস।___তিশা মাথা নাড়ায়, না।
____আসা করি আমি কি বলছি বুঝতে পারছিস।
তিশা আবার হালকা করে মাথা নাড়ালো।তিশা কিছু বুঝে উঠার আগেই জিসান তিশার গালে একটা কিস করে চলে গেলো।
||
||

নিলুর ডাইরীটা পরে জানতে পারলাম,নিলু আবির ভাইকে ছোটবেলা থেকেই ভালোবাসে।কিন্তু আবির ভাই নাকি অন্য কাউকে ভালোবাসে।আবির ভাইয়ের ভালোবাসা পাবেনা জেনেও নিলু আবির ভাইকে একতরফা ভালোবেসে যাচ্ছে।কি অদ্ভুত মেয়ে।নিজের কস্টটা ফ্রেন্ডের সাথেও শেয়ার করেনি।আর করবে বা কি করে।ওর বেস্ট ফ্রেন্ড আমি।আর ওর ভালোবাসার মানুষটি আর কাউকে না ওরই বেস্ট ফ্রেন্ড মানে আমাকে ভালোবাসে।এটা জানার পর যেমন আমি শোকড হলাম,তেমনি নিলুও।তাইতো কিছুদিন যাবৎ নিলু আমাকে এড়িয়ে চলছে।হয়তো মনের অজান্তে আমি ওকে কস্ট দিয়ে ফেলেছি।
_____নিলুদের বাসায়ই আমার আবির ভাইয়ের সাথে দেখা হয়েছে।নিলু পরিচয় করে দেয়ার পর টুকটাক কথা বলা হতো।কথা বলার পর বুঝতে পারলাম,তার কথায় একটা যাদু আছে।খুব গুছিয়ে সুন্দর করে কথা বলে ছেলেটি,দেখতেও বেশ।তার সাথে কথা বলতে ভালোই লাগতো।তার একটা বিশেষ দিক হচ্ছে তার মুখের হাসি,যা দিয়ে যে কোনও মেয়েকে পাগল করতে পারবে।শুধু আমাকে ছাড়া।কারণ আমার লাইফে তো no entry আগে থেকেই লিখা।
এভাবে আস্থে আস্থে আমাদের কথা বারে।দেখা সাক্ষাত আমাদের মাঝে তেমন হতো না।শুধু নিলুর বাসায় ছাড়া।কিন্তু ফেসবুক, ফোনে কথা হতো মাঝে মাঝে।তাও শুধু তার আগ্রহের কারনে।আর জিসান বাংলাদেশে আসার পরতো আমি তার সাথে কথা বলাও বন্ধ করে দিয়েছি।ফেসবুক থেকে ব্লক ও করে দিয়েছি।কারন যমরাজ জানতে পারলে আমার পিঠের ছাল তুলে ফেলবে।
_____তিনি নাকি আমাকে ফ্রেন্ড ভাবেন।আমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগে।তার মনে যে আমার প্রতি কোনও অনুভূতি আছো তা তো আমি জানতেই পারতাম না,যদি নিলুর ডাইরী না পড়তাম।আর এই নিলু গাধী আমার জিসানের সম্পর্ক জানার পরও আবিরকে কিছুই বলেনি,কস্ট পাবে বলে।কি দরদ!দরদ একদম উৎলিয়ে পড়ছে।আর এদিক দিয়ে নিজে পারু সেজে বসে আছে।দেবদাস কে হারিয়ে।
তাই আমি তাদের এক করার জন্য আবির ভাইকে কল করলাম দেখা করার জন্য।কোচিং এর নাম করে বের হয়েছি।আবির ভাইকে একটা রেস্টুরেন্ট এ দেখা করতে আসতে বললাম।
||
আমার সামনের চেয়ারে আবির ভাই বসে আছে।দুজনেই নিরব আমরা।আসলে শুরু করবো কি করে বুঝতে পারছি না।যখন থেকে জানতে পারলাম,তার মনে আমার জন্য কি অনুভূতি।এর পর তার সামনে আসাটা খুবই অস্বস্তিবোধ হচ্ছে।আমার মনের কথাটা কিভাবে জানলো বুঝলাম না,তাই নিরবতা কাটিয়ে নিজেই বলা শুরু করলো।
_____এতোদিন পর মনে পড়লো আমায়।তুমিতো অমোবশ্যার চাঁদের মতো গায়েবই হয়ে গেলে।সব কিছু থেকে একেবারে আমাকে ব্লক করে দিলে,অথচ দোষটা কি তা বললে না।আমি কি জানতে পারি কি অপরাধ আমার।আমি কি কোনও ভাবে তোমাকে কস্ট দিয়েছি বা আমার কোনও কাজে তোমার পছন্দ হয়নি।প্লিস বলও তিশা।আমি জানতে চাই।
আবির ভাইয়ের কথায় নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে,আমারি ভুল ছিলো।তার সাথে এতো মিশাটা হয়তো ঠিক হয়নি।তাকে আগেই আমার অতীতটা বলে দেওয়া উচিৎ ছিলো,তাহলে হয়তো তার মনে আমার জন্য এমন কিছু উদ্ভব হতো না।আমি আবির ভাইকে আমার আর জিসানের কথা খুলে বললাম।আবির ভাই কথাগুলো শুনে, যে কস্ট পেয়েছে তা তার চেহারায় স্পষ্ট বুঝতে পারছি।কিন্তু আমার কিছু করার নেই।আশ্চর্য বিষয় হলো,উনি কোনও রিয়েক্ট করেনি,খুব শান্ত ভাবে আমার কথাগুলো শুনলো।
_____আমাকে আগেই বলতে পারতে তুমি।এভাবে লুকিয়ে রাখার মতো কিছুই নেই।যেখানে তোমার পরিবারও রাজি সেখানে তুমি কেনো তোমাদের সম্পর্কটা এভাবে আড়ালে করতে চাও।তোমার কথা শুনে বুঝতে পারলাম,ছেলেটা (জিসান)তোমাকে অনেক ভালোবাসে।হয়তো ক্রেজি ফোর ইউ।একটা কথা মনে রেখো তিশা,তুমি দেখতে মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর। তাই তোমার প্রেমে যে কেউ পড়তে পারবে স্বাভাবিক।
কিন্তু সবাই তোমার জন্য হিমালয়ের পাহাড়টা ভাঙ্গতে পারবে না।কিন্তু এই ছেলেটি পারবে।তোমার জন্য সব কিছু করতে পারবে।তাই বলবো তুমি খুব লাকি।এমন একটা সাথী পেয়ে।এমনকি সেও লাকি তোমাকে পেয়ে নিঃসন্দেহে।তাই নিজেদের পবিত্র সম্পর্কটা লুকিয়ে রেখো না।জানোই তো ভালোবাসা মরিচিকার মতো।কারো কাছে ধরা দেয়,কেউ আবার ধরতে গিয়ে হারিয়ে ফেলে।সবার কপালে প্রিয় মানুষটির ভালোবাসা জোটে না।কিছু কিছু মানুষ আমার মতো অভাগাও হয়।কিন্তু আমি তোমার উপর নারাজ না বরং খুশি।কারণ তোমার পাশের মানুষটি সত্যিই অসাধারণ। তাইতো তোমাকে ভালোবাসার চাদরে মুড়াবার আগে তোমাদের সম্পর্কটাকে পবিত্র একটা নাম দিয়ে দিয়েছে।
আমি আশ্চর্য হলাম আবির ভাইয়ের কথায়।খুব অবাক লাগলো,তার এমন বিহেভিয়ার দেখে।একজন মানুষ কতোটা ভালো হলে,এমন মুহুর্তেও শান্ত থাকতে পারে।অন্য কেউ হলে,এতোক্ষন আমাকে ধুয়ে দিতো।অথচ উনি আরো জিসানের গুণগান গাইছে।
_____আচ্ছা তুমি কি আমাকে এসবের জন্য ডেকেছো।নাকি আরো কিছু বলবে।
একচুয়েলি ভাইয়া।আমি নিলার ব্যাপারে কিছু বলতে চাইছি।নিলা!! ওর আবার কি হয়েছে।সব ঠিক আছেতো।
____না কিছু ঠিক নেই,নিলা কাউকে খুব ভালোবাসে।আজ থেকে নয়,সেই ছোট থেকে।অনেক বছরের ভালোবাসা।কিন্তু অদ্ভুত বিষয় কি জানেন,যাকে এতো বেশি ভালোবাসে সে এতো কাছে থেকেও নিলার মনের কথাটা জানতে পারেনি।আর নিলা তাকে হারানোর ভয়ে বলতেও পারেনি।
আচ্ছা কে সেই অপদার্থ।যে নিলার মতো মেয়েকে এভাবে কস্ট দিয়েছে।যদি বলি আপনে।নিলা আপনাকে অনেক ভালোবাসে আবির ভাইয়া।ও খুব কস্টে আছে।হয়তো এতোদিনের জমানো সুপ্ত ভালোবাসা গুলো জমিয়ে রেখে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।আবির ভাইয়া কথাটা মনে হয় হজম করতে পারেনি।খুব আশ্চর্য হলো।কারন নিলার বাসায় প্রায়ই আবির ভাইয়ের আসা যাওয়ার হয়।কিন্তু নিলার মনের কথা সে বুঝতে পারেনি।এসব কি বলছো তিশা।নিলা,আমাকে!কিভাবে সম্ভব।
____কেনো সম্ভব না বলুন তো।ভালোবাসাতো আগে থেকে বলে আসে না,নাহি অনুমতি নিয়ে আসে।ব্যাস হয়ে যায়।
আমি বলবো না, ওকে ভালোবাসেন। কারন ভালোবাসা জোড় করে হয়না।আমি চেয়েছি আপনে জানেন,কেউ দূর থেকে আপনাকে ভালোবেসে যাচ্ছে।আপনার একটু ভালোবাসা পাওয়ার অপেক্ষা করছে।এসব জেনে আপনে কি ডিসিশন নিবেন তা আপনার ইচ্ছা।শুধু বলবো মন ভাঙ্গার কস্টটা আপনে জানেন,তাই নিলার কস্টটাও আপনে বুঝবেন।আবির ভাইয়া এখনো চুপ।শোকড হলো নাকি কি কিছুই বুঝতে পারলাম না।কিছু একটা চিন্তা করছে।আমি আর কথা বাড়ালাম না।
বিদায় নিয়ে বের হতে যাবো,ঠিক তখনি জিসানের ফোন আসে।আর আমি তাকে ভয়ে মিথ্যা কথা বলে ফেলি।কিন্তু কে জানতো।যমরাজ যে আমার সামনে হাজির হয়ে যাবে।
_____জিসানও মিটিং এর জন্য একই রেস্টুরেন্ট এ এসেছিলো।ওয়েটারকে ডাকার জন্য পিছনে ঘুড়তেই তিশাকে আবিরের সাথে দেখে ফেলে।জিসানের মাথাটা গরম হয়ে যায়।এসময় তিশার কোচিং এ থাকার কথা।এখানে কি করছে।আর ছেলেটা কে?
ক্লাইন্টরা না থাকলে হয়তো তিশাকে সবার সামনে কষে একটা দিতো।কিন্তু চুপচাপ দাঁতেদাঁত চেপে বসে রইলো।এর পর ফোন দিলে তিশার মিথ্যা কথাটা জিসানের রাগটা আরো বাড়িয়ে দেয়।তিশার সামনে এসে তিশার হাত ধরে টানতে টানতে নিজের গাড়ীতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে।জিসানকে এসময় এখানে দেখে তিশার প্রাণ পাখিটা মনে হয় উড়ে গেছে।মনে মনে যতো দোয়া দরুদ যতো ছিলো সব পড়ে ফেলেছে।
||
||

___যা খুশি তাই করুক আমার কি,আমি তার কালকের ব্যবহার ভুলি নাই।এতো সহযে ভুলবো না মিস্টার জিসান।হঠাৎ গাড়ীর সামনে সিট থেকে একজন অপরিচিতা নেমে আসলো।ওয়েস্টার্ন ড্রেসআপে মেয়েটাকে কি সুন্দর না লাগছে।সাধারণত বাঙ্গালি মেয়েদের শাড়ীতে মানায়,কিন্তু এই মেয়েকে ওয়েস্টার্ন ড্রেসে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে।মনে হলো,অন্য কোনও ড্রেস তার জন্য মানানসই নয়,এটাই বেস্ট তার জন্য।এটা কি তাহলে সেই মেয়ে যার কথা নিশি কাল রাত ফোন করে বলছে।মেয়েটা নাকি প্যারিস থেকে এসেছে।জিসানের সাথে দেখা করতে এসেই জরিয়ে ধরেছিলো সবার সামনে।জিসানের ফ্রেন্ডস +বিজনেস পার্টনার।কিন্তু বিলাতি ম্যাম এখানে কেনো এতো সকাল সকাল।
উফফ জিসান এখানে কেনো গাড়ী থামালে।জিসানের হাতের মাঝে নিজের হাতটা ডুকিয়ে।নিলু গাড়ী থেকে বলে উঠলো,আমার বান্ধবীকে পিক করবো তাই।ওই তো ও এসে পড়েছে।নিলু গাড়ী থেকে নেমে আমার কাছে আসলো।কিন্তু আমার দৃষ্টি আপাতত জিসানের হাতের দিকে।যেটাকে মেয়েটি নিজের দুহাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে,জিসানের সাথে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। জিসান এবার মোবাইল থেকে মাথাটা তুলে তিশার দিকে তাকালো।তিশার ফেস দেখে বুঝতে পারলো,ব্যাপারটা কি।তাই জিসান নিজেই লাবনি থেকে হাতটা ছাড়িয়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।
____নিশি তিশাকে লাবণির সামনে এনে,তিশা উনি লাবনি দি।প্যারিস থেকে এসেছে।ভাইয়ার ফ্রেন্ড।
ও তিশা ইউ আর সো কিউট।একদম ডানা কাটাপরী।তিশার গালদুটো টেনে।
____রায়হান আসলে জিসান রায়হানের সাথেও পরিচয় করে দেয়।লাবণি ও হলো রায়হান।তোমাকে বলেছিলাম না।ও ইয়া রায়হান। নাইস টু মিট ইউ।হ্যান্ডসেক করে।তোমার গল্প এতো শুনেছি জিসানের মুখে কি বলবো।আমারতো খুব হিংসা হতো।মেয়ে হলে নির্ঘাত জিসান তোমার প্রেমে পরে যেতো।
বাই দা ওয়ে তিশা কিন্তু রায়হানের বোন।আর নিশির বেস্ট ফ্রেন্ড।___ও তাই নাকি।তোমার বেস্ট ফ্রেন্ডের বোন,তোমার বোনের বেস্ট ফ্রেন্ড।ওয়াও সো এমেজিং।
____তিশার খুব খারাপ লাগলো।কারণ জিসান শুধু ওর পরিচয়টা নিজের ফ্রেন্ডের বোন বলে দিয়েছে।
কিন্তু কেনো।তিশার তো খুশি হবার কথা।তিশা নিজেও চাইতো,ওর আর জিসানের সম্পর্কটা পাবলিক না করতে।তাহলে আজ যখন জিসান নিজে তাদের সম্পর্ক টা লুকালো তখন তিশার এতোটা খারাপ কেনো লাগছে।নিজের অজান্তে চোখের কোনায় জল জমে গেলো। গাড়ীতে আজ তিশার জায়গায় লাবণি বসেছে।আর তিশা নিশির সাথে পেছনে।পুরো রাস্তায় তিশা আর কোনও কথা বললো না।জিসান লাবণির সাথে কথা বলতে বলতে আর চোখে মিরর দিয়ে তিশাকে দেখলো।
তিশার বিষণ্ণতা মাখা মুখখানি জিসানের বুকে তীরের মতো লাগছে।এমন হাজারো কস্ট জিসান পেয়েছে তিশার থেকে।তাইতো আজ ইচ্ছা করেই নিজের আর তিশার সম্পর্কটা লাবণির সামনে তুলে ধরেনি।তিশাকে কস্ট দিতে চায়নি,শুধু নিজের কস্টটা বুঝাতে চাইছে।
কারন তিশাও তাদের সম্পর্কটা সবার থেকে লুকিয়ে রাখে। কারণ টা কি জিসানের আজও জানা নেই।
||
||

তাহলে কি আমি জিসানকে ভালোবেসে ফেলছি।হুমম,জিসান আমায় তার মায়ায় জরিয়ে ফেলেছে,তার ভালোবাসার বাঁধনে আমাকে বেধে ফেলেছে।নিজের অজান্তেই তিশার মুখে হাসি আর চোখে জল এসে পড়ছে।
____ক্লাশেও মন নেই তিশার।নিশি ও নিলু ব্যাপারটা খেয়াল করলো।কিন্তু তবুও কিছু বললো না।ভাবলো তিশার মন ভালো হলে তিশাই বলবে সমস্যা কি।ছুটি হবার আগ পর্যন্ত তিশা ছটপট করতে লাগলো।তিশার এমন বিহেভিয়ার দেখে নিলু কয়েকবার জিঙ্গেস করেছে,কিন্তু কোনও উত্তর পেলো না।
ছুটির পর নিশি ও তিশা গাড়ীতে উঠতে নিবে ঠিক তখনি জিসানের ড্রাইভার রফিক গাড়ী নিয়ে তাদের সামনে আসলো।আরে রফিক ভাই,আপনে এখানে কি করেন।আমরাতো গাড়ী নিয়ে আসছি।রফিক গাড়ী থেকে নেমে,আসলে নিশি আপু আমাকে ভাই পাঠিয়েছে,ভাবীকে নিতে।তিশা খুব অবাক হয়ে রফিকের দিকে তাকালো।কেনো?আর কোথায়।
ভাই অফিসে,আপনাকেও অফিসে নিয়ে যেতে বলেছে।
তিশার মেঝাজ গরম হয়ে গেলো,কি চায় লোকটা।কাল বকেছে,আজ ইগনোর করেছে।তাহলে এখন আর কি বাকি।অপমান করার বাকি আছে তাইতো।না হলে অফিসে আমার কি কাজ।ভাইয়া আমি কোথাও যাবো না,আপনে চলে যান।আমি এখন বাসায় যাবো।
আপনে না গেলে,ভাই খুব রাগ করবে আমার উপর।আমার চাকরী থাকবে না।তিশাও জানে জিসানের রাগ সম্পর্কে।তাই বাধ্য হয়ে চলে গেলো।
চলবে...
[পার্ট ছোট হয়েছে,এমন অভিযোগ করবেন না। আম্মুর ৪দিন ধরে জ্বর ছিলো।যার কারনে খুবই টেনশনে দিন কেঁটেছে আমার।এখন কিছুটা সুস্থ তাই গল্পটা যতোটুকু পেরেছি লিখেছি।মতামত অবশ্যই দিবেন।নেক্সট পার্ট বড় করে দেবো।ধন্যবাদ।]

_____জিসানের বিদেশী কিছু ক্লাইন্ট আসায় একটু ব্যস্ত ছিলো।তাই তিশার খোঁজ নিতে পারেনি।ক্লাইন্টদের বিদায় দিয়ে নিজের কেবিনে গিয়ে একটু আশ্চর্য হলো।তিশাকে রুমে আশা করেছিলো। কিন্তু তিশা নেই,তাহলে কি ও আসেনি।না আসলে রফিক অবশ্যই আমাকে একবার কল করতো।জিসান তার পি এ সোমকে ডাক দিলো।সোম এসে হাজির হলো।আমার একজন গেস্ট আসার কথা ছিলো, সে কি আসে নি।স্যার আসলে তো জানতাম।আমি নিজে রিসিপশনে গিয়ে রিনিকে বলে এসেছি, কেউ আসলে আমাকে ইনফোর্ম করতে।জিসানের মাথায় চিন্তা ভর করলো।সাথে সাথে রফিক কে কল করলো।রফিকের কথা শোনার পর,জিসান তাড়াহুড়া করে কেবিন থেকে বের হলো।পেছন পেছন সোমও ছুটলো।রিসিপশনে যাওয়ার সময় ওয়েটিংরুমের দিকে চোখ পরে জিসানের।তিশাকে দেখে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে,এতোক্ষনে চিন্তায় যেনো মাথা ফেটে যাচ্ছিলো।রফিককে ফোন দেওয়ার পর যখন বললো,তিশাকে নাকি অফিসের সামনে নামিয়ে দিয়েছে আরো আধ ঘন্টা আগে,অথচ তিশা অফিসে আসে নাই।তাই জিসান ভয় পেয়ে গিয়েছিলো।
||
জিসান তিশার সামনে হাটুগেড়ে বসলো।তিশার কপালে আসা ছোট চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে, হালকা লো ভয়েজে ডাক দিলো।তিশাএএএএ.......।কয়েকটা ডাকে তিশার ঘুম ভেঙ্গে গেলো।চোখ খুলে জিসানকে নিজের সামনে এভাবে হাটুগেরে বসে থাকতে দেখে অবাক হলো,সরি একটু চোখ লেগে গিয়েছিলো।জিসান তিশার গালে একটু ছুঁয়ে, তুই ঠিক আছিস।তিশা মাথা নারালো,ইয়া আমি ঠিক আছি।কেবিনে না বসে এখানে কেনো বসে ছিলি। জিসানের কথার জবাব না দিয়ে তিশা রিনির দিকে তাকালো।রিনিতো যথারীতি ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো।অফিসের বেশকিছু কর্মচারী কৌতূহল নযরে তাকিয়ে আছে।আসলে সবার মাঝে কিউরিসিটি কাজ করছে।তাদের রুড বস,একটা পিচ্ছি মেয়েকে এতো আদর মাখা কন্ঠে ডাক দিলো যেনো, ঘুম ভাঙ্গার অপরাধে তাকে কেউ জেলে ভরে দেবে।
_____জিসান তিশার চাহনি বুঝতে পেরে,রিনির দিকে তাকায়।ওকে আমার কেবিনে না পাঠিয়ে এখানে বসতে বলেছেন কেনো,মিস রিনি।সোম আপনাকে বলেনি কিছু।একচুয়েলি স্যার সোম স্যার বলেছেন, একজন গেস্ট আসবে।আমি ভাবলাম হয়তো কোনও ইম্পোরটেন্ট ক্লাইন্ট আসবে।কিন্তু ওকে দেখে আমি ভাবলাম তেমন ইম্পোরটেন্ট না,আর তখন আপনে আমাদের বিদেশি ক্লাইন্টদের সাথে ব্যস্ত ছিলেন তাই আর কি।
তাই আর কি,আপনে নিজেই ডিসিশন নিয়ে নিয়েছেন। মিস রিনি প্রথমত এই অফিসে ডিসিশন নেওয়ার জন্য আমি এখনো আছি।তাই আপনাকে বেশি ভাবতে হবে না।আর দ্বিতীয়ত যাকে আপনে তুমি বলে সমোন্ধন করছেন।সে ও অফিসের বস।তাই তাকে রিসপেক্ট দিয়ে কথা বলুন।রিনি সহ অফিসের সবাই কৌতূহল চোখে জিসানের দিকে তাকিয়ে আছে।
||
_____কি হলো মিস রিনি,আপনে হয়তো বুঝতে পারেননি আমার কথা তাইতো।ওকে ওয়েল...।
তিশার লিখা কার্ড টা কোথায় মিস রিনি।রিনি কার্ড টা ঝটপট খুঁজে বের করে জিসানের সামনে আনলো।পড়ুন!কার্ডে তিশার পুরো নামটা দেখে রিনি একবার জিসানের দিকে আরেকবার তিশার দিকে তাকালো।কি হলো পড়ুন।ধমক দিয়ে।
মিসেস তিশা জিসান আহমেদ,রিনি পড়লো।
মিস রিনি জরে পড়ুন।রিনি তখন জোরেই নামটা বললো।অফিসের সবাই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।সবাই তিশার দিকে তাকিয়ে আছে।কলেজ ড্রেস পড়া,মাথায় দুটো বেনি করা।গলায় একটা আইডেন্টিটি কার্ড ঝুলানো।দেখতেই অনেকটা বাচ্চা বাচ্চা ফিলিং আসে এই মেয়ের মধ্যে। আর এই মেয়ে নাকি জিসান আহমেদ এর ওয়াইফ।
_____জিসান আহমেদ এর মতো একজন বিজনেস টাইকুন।যার নিজের হাতে গড়া এতো বড় বিজনেস সাম্রাজ্য।পত্রিকায়, ম্যাগাজিনে এখনো তাকে মোস্ট এলিজিবল ব্যাচেলার বলে জানে সবাই।এমনকি তার অফিসে কর্মরত সবাই এটাই জানে।তার ওয়াইফ নাকি একজন টিনেজার।হাউ স্ট্রেঞ্জ।
ইয়েস, সি ইজ মাই ওয়াইফ।আমি আপনার বস হলে,আমার মিসেস ও আপনার বসই হবে।রাইট।রিনি মাথা নাড়ালো হ্যা।সো নেক্সট টাইম রিসপেক্ট এর সাথে কথা বলবেন।আমি একি অপরাধ দ্বিতীয় বার ক্ষমা করিনা।
_____তিশা বসে বসে এতোক্ষন জিসানের কার্যকলাপ দেখছিলো।তিশার মনে যেনো লাড্ডু ফুটেছে আজ।জীবনে এতো খুশি কখনো হয়নি।যতোটা আজ হলো।পুরো অফিসের মানুষ যে ৪২০ ভোল্টেজ শোকড খেয়েছে,তা তাদের চাঁদের মতো মুখ খানি দেখলেই বুঝা যাচ্ছে।বিশেষ করে অফিসের সুন্দরী মেয়েগুলোর।
||
তিশার ব্যাগটা নিজের কাঁধে নিয়ে তিশার হাতটা ধরে সবার সামনে দিয়ে নিজের কেবিনে চলে গেলো।তিশাকে নিজের চেয়ারে বসিয়ে নিজেও একটা চেয়ার টেনে তিশার সামনে বসে।তিশার হাতটা ধরে,তুই রাগ আমার উপর।তিশা মাথা নাড়ায়, না।তাহলে তাকাস না কেনো আমার দিকে।
____কি করে তাকাবো.... আপনার নযর যে আমাকে প্রতিনিয়ত গ্রাস করে তা কি আপনে বুঝেন।আপনার চোখের চাহনি যে আমাকে ব্যাকুল করে তুলে,ডুবে জেতে মন চায় কোনও অদূর সমুদ্রে।যাবেন কি আমার সাথে।ভাসবো আমরা দুজনে,হারিয়ে গিয়ে দুজনের মাঝে।তিশার মনের প্রথম প্রেমের প্রথম অনুভূতি গুলো বলতে চায় জিসানকে কিন্তু পারছে না।কেবল মনে মনেই ভেবে চলছে।জিসানের সামনে প্রকাশ করার ভাষা যে খুঁজে পায় না।
____এমনেই তিশার উত্তর।
জিসান একটু মুসকি হেসে,তিশার গালদুটো আলতো করে ধরলো।আমি আমার ভালোবাসাটা গোপন রাখতে পারিনা।আমি প্রকাশ করতে বেশি পছন্দ করি।সেটা ভালোবাসা হোক,বা কস্ট বা রাগ।ভেতরে রেখে ছটপট করার চেয়ে চিল্লিয়ে বলে দেওয়া ভালো।এতে মন থেকে অনেক বড় পাথর সরে যায়।মনের মধ্যে কোনও কিছু বেশি দিন রাখতে নেই,হোক সেটা ভালোবাসা,রাগ,হিংসা।মন নামের ছোট্ট পাখিটির এতে কস্ট হয়।আর এতে পাখিটি রাগ করে মনকে পাথর বানিয়ে দেয়।তাই মনে কিছু থাকলে বলে দিবি।লুকিয়ে রেখে কি হবে।হয়তো একদিন দেরি হয়ে যাবে।সামনের ব্যক্তিটি যে তোর সামনে সারাজীবন থাকবে এমনতো না।বেলা শেষে তাকেও একদিন চলে যেতে হবে।তখন হয়তো তুই অফছোস করবি কেনো বললাম না।এখনো অনেক কথা বাকি।কিন্তু শোনার মানুষটি নেই।ঠিক বলেছি।
____শেষের কয়েকটা কথা তিশার বুকে তীরের মতো লাগলো।চোখে একগাদা জল চলে এলো,যা তিশা তার ঘন পাপড়ি গুলো দিয়ে আসতে বার বার বাধা দিচ্ছে।জিসান ব্যাপারটা বুঝতে পারে।তিশার মাথাটা হলকা করে বুকে চেপে ধরে,প্লিস ডোন্ট ক্রাই ....জান।আমি তোর কান্নাটা একদম দেখতে পারি না।মনটা ক্ষতবিক্ষত হয় উঠে।প্লিস স্টোপ।আমি এখনো আছি তো।
তিশাও জিসানকে দুহাত দিয়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরতে চায় কিন্তু এখনো কিছু সংকোচ ওর মধ্যে কাজ করে যার কারণে চাইলেও পারছে না।
অফিসের লেন্ডলাইনে ফোন আসলে,জিসান ফোনটা রিসিভ করে কিছুক্ষণ কথা বলে,এর পর তিশাকে কেবিনে রেখে একটু বাহিরে যায় কিছু কাজে।তিশাকে কেবিনেই বসে থাকতে বলে যায়।
||
||

____দরজা খোলার শব্দে সামনে তাকালো তিশা, লাবণি কেবিনে ডুকে তিশাকে জিসানের কেবিনে দেখে হতোবম্ভ।তার চেয়ে বেশি শোকড জিসানের চেয়ারে বসে থাকতে দেখে।আরে তিশা তুমি এখানে,এখানে কি করছো।আর জিসানের চেয়ারে কেনো বসেছো।তিশার হাত ধরে,তারাতারি উঠো।জিসান দেখতে পেলে খুব রাগ করবে ডিয়ার।ওর রাগ উঠলে ও হিংস্র হয়ে যায়।ওকে সামলানো তখন ইম্পসিবল।আর নিজের জিনিস কেউ টাচ করুক একদম পছন্দ করে না।তিশাকে উঠিয়ে সোফায়,বসিয়ে দিলো।তিশার একদমই মন চাইছিলোনা উঠতে,কিন্তু লাবনির জোড়াজোরিতে উঠতেই হলো।
||
তুমি এখানে কি করছো তিশা।একচুয়েলি আপু আমি....তিশাকে আর বলতে না দিয়ে।ভালোই হয়েছে তোমার সাথে দেখা হওয়াতে।আমার না তোমার একটু হেল্প এর প্রয়োজন………করবে।
_____অবশ্যই আপু,আপনে বলুন কি করতে হবে।
জিসানতো তোমার ভাইয়ের বেস্ট ফ্রেন্ড তাইনা।তাহলে রায়হানতো অবশ্যই জানবে জিসানের কোনও গার্লফ্রেন্ড আছে কিনা।গতও চার বছরের ধরে চেস্টা করছি,কিন্তু ইডিয়েট আমার দিকে ঠিকমতো তাকায় তো না।বরং কাছে গেলেই পালিয়ে বেড়ায় মনে হয় আমার শরীলে কোনও ছোঁয়াচে রোগ আছে। বলতো আমি কি দেখতে খারাপ।
_____তিশা মাথা নাড়ায়,না।
হতাশ হয়ে,জানো প্যারিসে কতও ছেলে আমাকে প্রোফজ করেছে।অথচ আমার মন আটকে গেছে এই নিরামিষটার দিকে।একদমই আনরোমান্টিক একজন মানুষ।সামনে এতো সুন্দরী রমনী বসে আছে,কোথাও একটু চান্স নিবে।তা না করে এড়িয়ে চলে।তুমি কিছু আইডিয়া দিতে পারবে।না আসলে তোমরা তো অনেক বছর ধরে একে অপরকে চিনো,তাই তোমার সাহায্য চাইছিলাম।প্লিজ.....।আই রিয়েলি লাভ হিম।আই ইউল নট সার্ভাইব ইউদাউট হিম।প্লিজ হেল্প মি।
____লাবনির কথা শুনে তিশার শরীলের রক্ত যেনো গরম হয়ে বুদবুদ করছে।মাথাটা ফাটিয়ে দিতে মন চাইছে সামনে বসা লাবণির।দুনিয়াতে কি পুরুষ মানুষের অভাব পড়ছে,যে তোর আমারটার দিকেই নযর পড়ছে।সাহস কি করে হলো আমার জিসানের দিকে নযর দেওয়ার।তোর ওই চোখ দুটোতে আমি ফেবিগ্লু লাগিয়ে দিবো।আমার জিসানকে ছাড়া বাঁচবি না,তাহলে মর কোন ডোবাতে ডুবে।আর একবার আই লাভ জিসান বললে,তোকে আমি সত্যি ওই কচুরিপনা ময়লা,আবর্জনময় ডোবাতে ফেলে দেবো।দেখিস!ইউ ডোন্ট নো,হু এম আই?
এমন হাজারো কথা তিশা মনে মনে ভাবছে আর অসংখ্য গালি দিচ্ছেে লাবণিকে।ভালোবাসার যে ঈর্ষায় এতোদিন জিসান জ্বলেছিলো।আজ সেই একই ঈর্ষায় তিশা জ্বলছে।লাবণির মুখে জিসানের নামটাও শুনতে ভালো লাগছে না।তবে কিছু বলতেও পারছে না।জিসান বলেছিলো,আমার ভালোবাসার দহনে তোকেও জ্বলতে হবে একদিন।তাইতো আজ তিশা জ্বলছে।জিসান আশেপাশে থাকলে হয়তো পোড়ার গন্ধটাও পেতো।
||
রিনি কেবিনে ডুকে তিশাকে সরি বলে, ম্যাম আই এম রিয়েলি সরি।তখনকার ব্যবহারের জন্য,প্লিস স্যারকে বলবেন এবারের মতো ক্ষমা করে দিতে।স্যার খুব রেগে আছে আমার উপর।
___ইটস ওকে,আমি কিছু মনে করিনি।এন্ড ডোন্ট ওয়ারি।তিশা সান্তনা দিলো রিনি কে।
লাবণি কিছুই বুঝতে পারলো না কি হচ্ছে, তাই রিনিকে জিঙ্গেস করলো,ম্যাটার কি?
একচুয়েলি ম্যাম আমি চিনতে পারিনি।উনি যে মিসেস জিসান আহমেদ।
___ওয়াট!লাবণি একটু চিল্লিয়ে।কে মিসেস আহমেদ।আর তোমাকে কে বলেছে এসব নোনসেন্স।তিশা এসব কি?কেনো মিথ্যা বলেছো।ও এম জি তিশা!তুমি আবার জিসানের উপর ক্রাশ খাওনিতো।
তিশা কিছু বলতে যাবে, তিশাকে থামিয়ে।দেখো বেবি,আই নো জিসান খুবই হ্যান্ডশাম এন্ড ডেসিং বয়।যে কেই ক্রাশ হবে।বাট ডিয়ার তুমি এসবের জন্য ছোট।আর জিসানতো তোমার বড় ভাইয়ের ফ্রেন্ড, বয়সেও তোমার থেকে বেশ বড়।তাই এমন উদ্ভট চিন্তা মন থেকে বের করে দেও।আর জিসান জানতে পারলে তোমার অবস্থা খুব খারাপ করে তুলবে।এধরনের ফাইজলামি ও একদমই পছন্দ করে না।তিশা কিছু বলতে যাবে....
____এসময় জিসানও কেবিনে এসে পড়লো।রিনিকে দেখে, তুমি এখানে কি করছো।একচুয়েলি স্যার ম্যামকে সরি বলতে এসেছি।ওকে নেক্সট টাইম যাতে ভুল না।কেয়ার ফুল। নাউ গো।ইয়েস স্যার।রিনি চলে গেলো।
লাবণি কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না কি হচ্ছে।পরে এ নিয়ে চিন্তা করবো।এসব বাদ দিয়ে জিসানকে জিঙ্গেস করলো,তো জিসান লাঞ্চ এর কি প্লান।সামনের কোন ভালো রেস্টুরেন্ট এ চলো যাই।জিসান তিশার দিকে তাকিয়ে,সরি লাবণি লাঞ্চ আজ তোমাকে একাই করতে হবে।আমার আজকের লাঞ্চের প্লান তিশার সাথে।
____সো ওয়াট!তিশাও আমাদের সাথে জয়েন হবে।এনি প্রবলেম তিশা।তিশার দিকে তাকিয়ে।কিন্তু তিশা হ্যা না কিছুই বলতে পারলো না।কারন এমন সিচুয়েশনে কি বলবে বুজতে পারছে না তিশা, তাই জিসানের দিকে তাকিয়ে আছে।
||
But I have a problem.... জিসানের কথায় লাবণি অবাক হলো,আর বিস্মিত চোখে জিসানের দিকে তাকালো।সমস্যা কি জিসান,এমন করছো কেনো।
____জিসান তিশার ব্যাগটা হাতে নিয়ে,আজকাল অফিসের কাজের চাপে আমি তিশার সাথে একদমই সময় কাটাতে পারিনা।তাই আজকে সময় বের করে ওর সাথে লাঞ্চ প্লানিং করেছি।এই সময়টা আমি তিশার সাথে একান্ত কাটাতে চাই।আই হোপ ইউ আন্ডার্স্টান্ড।
লাবণি বসা থেকে দাঁড়িয়ে____নো, আই ডোন্ট আন্ডার্স্টান্ড।প্লিস ক্লিয়ার করে বলবে,হচ্ছেটা কি।আমি ফ্রাস্টেড হয়ে পরছি।তিশার সাথে তোমার এমন কি সম্পর্ক যার জন্য ওকে সময় দিতে হবে।
____জিসান তিশার হাতটা ধরে নিজের কাছে টেনে আনলো।
যা দেখে লাবণি,আবাক চাওনি দিয়ে তাকিয়ে আছে। জিসান বুজতে পারে,তাই একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বলে,লাবণি____
She is my wife.There is nothing wrong with wanting to spend time alone with my wife.And one more thing you did not want to know if there is anyone in my life.Then listen,this girl is spreading my mind,my life.My life stops without her.I hope you understand.....
____জিসানের কথায় লাবণি স্থব্ধ হয়ে গেলো।জিসানকে কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।অশ্রুসিক্ত নয়নে জিসানের দিকে তাকিয়ে আছে।জিসান তিশার হাতটা ধরে কেবিন থেকে বের হতে নিলো,কিন্তু লাবণির প্রশ্নে থেমে যায়।
কবে করেছো জিসান।বেশিদিন তো হয়নি প্যারিস থেকে আসলে।এতো কি তাড়া ছিলো তোমার।
____জিসান লাবণির দিকে না তাকিয়েই উত্তর দিলো,আমি তিশাকে বিয়ে করার পর প্যারিস গিয়েছি।এখানে এসে নয়।জিসান আর এক মিনিটও দাঁড়ায়নি।তিশার হাতটা শক্ত করে ধরে বের হয়ে গেলো।
জিসান যাওয়ার পর লাবণি নিজের হাতের মোবাইলটা এতো জোরে আছাড় মারে যে,মোবাইলের প্রতিটি পার্ট চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়।লাবণি চিৎকার দিয়ে নিচে বসে পড়ে।সাউন্ড প্রুফ বলে লাবণির আর্তনাদ কারো কানে গেলো না।নাএএএএএএ......।কেনো জিসানএএএ....কেনোওওওওও।
এতো সহযে আমি তোমাকে হারাতে পারবো না জিসানএএএএএ।তুমি শুধু আমার,শুধু আমার......।
শুনছোওওওওও।
||
||

_____জিসান রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার এর সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।কারন এটা জিসানের বন্ধুর রেস্টুরেন্ট। তাই ম্যানেজার নিজে এসেছে অর্ডার নিতে।
উফফ!!!কি হাসি.....এভাবে কেউ হাসে।কি দরকার এতো হাসার।একটু কম হাসলে কি হয়।উনি যদি জানতো তার এই প্রশস্ত হাসিটা আজ আমার ঠিক কোথায় গিয়ে লাগছে,তাহলে কি বন্ধ করে দিতো।
কই আগে তো ভালো লাগেনি।তাহলে আজ কেনো এতো লাগছে আমার বুকে।
উনার সিল্কি চুলগুলোকে হাত দিয়ে এলোমেলো করে দিতে মন চাইছে।তার সরু খাড়া নাক টাকেও আজ একটু স্পর্শ করতে মন চাইছে।কি অদ্ভুত সব ইচ্ছা জাগছে আজ মনে।
মনে হচ্ছে চকলেট আইচক্রিম আমার সামনে রেখে কেউ কড়া ধরে নিষেধ করছে খেতে পারবে না।শুধু চেয়ে চেয়ে দেখো।কিন্তু চেয়ে দেখলে কি মনের ক্ষুধা মিটবে।অবশ্যই একটু ছেঁকে ও দেখতে হবে।
||
_____ম্যানেজারের সাথে কথার ফাঁকেফাঁকে জিসান তিশার দিকে তাকিয়ে ইশারা করে কোনও সমস্য।তিশা শুধু মাথা নাড়ায় না।আবার নিজের ভাবণায় ডুব দেয়, উনি যখন আমার দিকে তাকায় তখন তার চোখের চাওনি যথেষ্ট আমাকে পাগল করার জন্য।এই চাওনিতে নেই কোন লোভ,কোনও কামুকতা।আছে অবিরাম ভালোবাসা,বিশ্বাস আমার জন্য।এ কেমন অনুভূতি জন্ম হলো মনে।একে কি ভালোবাসা বলে,কি অদ্ভুত ফিলিং। আজ তো এই রগচটা, রাগী,ইগুস্টেক,হিটলার জিসানকেও আমার ভালো লাগছে।মনের ভেতর কেমন প্রেম প্রেম দোলা দিচ্ছে।খুব বিশ্রী বিশ্রী চাওয়াও মনে জাগছে।এ যেমন এখন আমার খুব ইচ্ছা করছে, জিসানের গাল দুটোতে ডিপলি কিস করে দিতে।আজ তো জিসানকেই আমার চুমুতে ভরে দিতে মন চাইছে।
ছিঃ তিশা কিসব চিন্তা করছিস।তোর এসব চিন্তা ভাবণা যদি জিসান জানতে পারে তাহলে এখানেই ব্যাচারা বেহুশ হয়ে যাবে।তিশা নিজের ভাবণায় নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলো।গাল দুটো লাল হয়ে গেলো টমেটোর মতো।
জিসান ম্যানেজারকে বিদায় দিয়ে___তুই ঠিক আছিস।তিশা মাথা নাড়ায়,হ্যা।তাহলে এতো ব্লাসিং করছিস কেনো।গালদুটো টমেটোর মতো হয়ে গেছে।আমি কিন্ত খেয়ে ফেলবো।তখন কিন্তু দোষ দিতে পারবি না।তিশা গাল ফুলিয়ে জিসানের দিকে তাকালো।আর জিসান হাসতে হাসতে নিজের এলোমেলো চুলগুলো আঙ্গুল দিয়ে ঠিক করতে ব্যস্ত।যথাসময় খাবার এলে দুজনে লাঞ্চ করে নেয়।এর পর জিসান তিশাকে বাড়ীতে পৌছে দেয়।
_____গাড়ীতে থাকাকালীন সময়ও তিশার চোখটা লেগে যায়।কারণ বেশ সময় ওরা জ্যামে বসা ছিলো।বাড়ীর সামনে এসেও জিসান তিশাকে ডাক দেয়না।তিশার ঘুমন্ত চেহারাটাও যে মাতোয়ারা করে তুলবে তা তো জিসানের জানা ছিলো না।এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে জিসান তার ঘুমন্ত পরীর দিকে। তোর ঘুমন্ত চেহারাটা দেখেও আমার নেশা লাগে,তাহলে অন্য কোনও নেশা দিয়ে কি হবে বল।তুই যে আমার আসক্তিতে পরিণত হতে যাচ্ছিস তা কি জানোস।
প্রায় আধ ঘন্টা পর তিশাকে ডাক দেয়।তিশা ঘুম ঘুম চোখেই জিসানকে বায় বলে চলে যায়।আর জিসান তিশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুখে এক চিলতি হাসি এনে,আমার ঘুমন্ত পরী।
চলবে......
[ভুলত্রুটি মাপ,মতামত জানাবেন।ধন্যবাদ]
-------(season 2)
#writer_TaNiA [ ]
সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে বসে আছে লাবণি নিজের রুমে।বেশ কিছুদিন হলো রুম থেকেও বের হয় না।রুমটা পুরো লণ্ডভণ্ড হয়ে আছে।ঠিক তুফান আসার পরের অবস্থা।ফোনটি অনবরত বেজে চলছে লাবণির,স্কিনে নামটি দেখার পর তুলার কোনও ইচ্ছে নেই।হয়তো অন্যকারো ফোনের ওয়েট করছে লাবণি।কিন্তু যার ফোনের ওয়েট করছে,সে আধোও কোনও ফোন দিবে কি না,তা জানা নেই।তবুও ওয়েট করছে।বেশ কিছুদিন যাবৎ খাওয়া নাওয়া কিছুই হচ্ছে না।নিচে বসে বেডে হেলান দিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন লাবণি।
____জীবনে যা চেয়েছে তাই পেয়েছে।বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান বলে,কখনো কিছুতে বাঁধা দেয়নি।নিজের যোগ্যতায় বাবার বিজনেসকে অনেক উঁচুতে উঠিয়েছে।হার জিনিসটা কি তা তো কখনো দেখেনিই।কিন্তু জীবনের সবথেকে দামী জিনিসটা যে লাবণি হারিয়ে ফেলবে তা ধারণা ছিলো না।তাই তো মানতে পারছে না।
মানুষটিকে বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছে।এখন তাকে ছেড়ে থাকার কথা মনে পড়তেই কেঁপে উঠে বুক।কিভাবে ভুলবে সব।ভুলে যাওয়া কি এতোই সহয।
জিসান কখনোই লাবণির অনুভূতিকে গ্রাহ্য করেনি।সব সময় লাবণি থেকে এড়িয়ে চলছে।বিজনেস রিলেটেড কথা ছাড়া খুব কমই কথা হতো তাদের মাঝে।লাবণি ভেবেছিলো মানুষটি হয়তো এমনি,রোবোটিক।যার মধ্যে ফিলিংস বলে কিছুই নেই।আর লাবণি এই রোবোটিক মানুষটিকে মন প্রাণ উজার করে ভালোবেসে ফেলেছে।আর ভালো বাসবেই না কেনো,জিসানের পার্সোনালিটি ছিলোই এমন।
____প্যারিসে থাকাকালীন সময় নিজের কালচার কখনো ভুলেনি জিসান।আর মেয়ে নামক প্রাণীটিতে যেনো জিসানের এলার্জি ছিলো।তাইতো বরাবর সবাইকে এভোয়েড করতো।তবুও মেয়ে নামক প্রজাপতি তার আশেপাশে ঘুড় ঘুড় করতো।বিদেশি কান্ট্রি হওয়ায় এখানে মেয়েদের খোলামেলা পোশাকেই দেখা যায় বেশি।কিন্তু সামনের ব্যক্তিটি যতোই ছোট পোশাক পরিধান করুক,জিসানের চোখ সামনের ব্যক্তিটির চোখ ছাড়া আর কোথাও নজর যেতো না।
প্যারিসে বসবাস করার সময় অনেক মেয়ে জিসানকে নিজের দিকে এট্রাকশন করার চেস্টা করে।ফলপ্রসূ অনেক বাজে সিচুয়েশনে ও জিসানকে পরতে হয়েছে।কিন্তু অনেক খারাপ সিচুয়েশনেও জিসান নিজেকে সামলিয়ে ফেলেছে, যেখানে অন্য কোনও পুরুষ হলে হয়তো নিজেকে সংযোত করতে পারতো না।
কোনও নারী অর্ধনঙ্গ হয়ে কোনও পুরুষকে নিজের কাছে টানলে সেখান থেকে ফিরে আসা এতো সহয না।বিশেষ ক্ষেত্রে একজন পুরুষের কাছে এসব আশা করা বোকামি। তবে এধরনের বোকামি ও কিছু পুরুষ করে থাকে,আর তারাই হলো সুপুরুষ।একজন সুপুরুষ এর সব গুণই জিসানের মধ্যে ছিলো।জিসানের এসব গুণেই তো লাবণি ফিদা হয়ে পরেছে জিসানের উপর।কিন্তু জিসানের বার বার তাকে রিজেকশনের কারণটা জানতো না।তবুও মনের মধ্যে একটু আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছিলো লাবণি,হয়তো জিসানের মনে একদিন নিজের জায়গা গড়ে তোলার।কিন্তু ভাগ্য বলেও কিছু আছে।তাইতো তার ভালোবাসার মানুষটিকে আল্লাহ আরেক জনের আঁচলে বেঁধে দিয়েছে।
||
____রুমের দরজা খুলার শব্দে লাবণির ধ্যান ভাঙ্গে।সামনের ব্যক্তিটাকে দেখে নিজের চাপা কান্নাটা আর ধরে রাখতে পারলো না।বাবাকে ধরে সেই কখন ধরে কেঁদে চলছে।লাবণির পিতা আশরাফ মজুমদার মেয়ের মাথায় পরম স্নেহে হাত ভুলিয়ে দিচ্ছে।বেশ কিছুক্ষন পর লাবণি চুপ হলে,সব জানতে চায়।লাবণির নিজের পিতার সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ।সব কথাই বাবার সাথে শেয়ার করে,জিসানের ব্যাপারটাও জানে।জিসানকে তার মেয়ে যে কতোটা পছন্দ করে তা খুব ভালো করেই জানে।মেয়ের কথা শুনে মেয়েকে আশা ছাড়তে মানা করে।
এখনো সময় আছে,চেস্টা চালিয়ে যাও।বিয়েই তো করেছে,তাও আবার মেয়ের ছোট বয়সে।সংসার তো করেনি।তাহলে জিসান এখনো তোমার হতে পারে।এভাবে ভেঙ্গে গেলে হবে না।তোমাকে আমি হারতে দেখিনি।এতো সহযে হার মানার প্রশ্নই উঠে না।তোমার চেস্টার পরও যদি জিসানকে না পাও তাহলে ধরে নিবে তোমার জন্য আল্লাহ আরো ভালো কিছু রেখেছে।লাবণির চোখের পানি মুছে দিয়ে,এভাবে টিনেজারদের মতো আচরণ করা বন্ধ কর।আর নিজেকে গুছিয়ে সামনে বারো।বাবার কথায় লাবণি যেনো নতুন আশা দেখতে পেলে।তাই ও ঠিক করলো ও চেস্টা চালিয়ে যাবে,হয়তো ভাগ্যের চাকা ঘুড়তেও পারে।জিসান নামক হীরাটা তার আঁচলে আসতেও পারে।
____বার বার ফোন করার পরও যখন লাবণি ফোন রিসিভ করছে না দেখে আশরাফ মজুমদার বুঝতে পারছে কিছু একটা হয়েছে।তা না হলে এটা অসম্ভব তার মেয়ে তার ফোন ধরবে না।তাও আবার নিজের বাবার।বাড়ীর লেন্ডলাইনে ফোন করলে,বাড়ীতে কর্মরত একজন ফোন রিসিভ করে সব খুলে বলে।এর পর মারুফ সাহেব একমিনিট ও দেরি না করে প্যারিস থেকে সোজা মেয়ের কাছে এসে পরে।মেয়েকে কখনো সে এভাবে ভাঙ্গতে দেখেনি।কিন্তু আজ মেয়ের এই অবস্থা দেখে নিজেকে সামলাতেও কস্ট হয়ে পরেছে,তবু মেয়ের সামনে নিজেকে সামলিয়ে নিলো।আজ মেয়েকে এসব না বললে হয়তো, মেয়ে তার ঘুটে ঘুটে মরে যেতো।কিন্তু পিতা হয়ে এটা সে কিভাবে হতে দিবে।তাই লাবণিকে একটা লক্ষ দিলো।এতে লাবণি নিজেই বাস্তবতা দেখতে পাবে।বুঝতে পারবে।জিসানকে এর পরও না পেলে হয়তো জীবনে আফসোস থাকবে না।এর হয়তো একদিন নিজেকে সামলিয়ে ও ফেলবে।
||
||
তিশাদের ড্রয়িংরুমের শোফাতে বসে ম্যাগাজিন পড়ছিলো নিশি।মূলত তিশার জন্য অপেক্ষা করছে,কোচিং এ একসাথে যাবে বলে।তিশা রেডি হতে নিজের রুমে চলে গেলে টাইমপাস করার জন্য ম্যাগাজিনে আপাতত দৃষ্টি নিশির।হঠাৎ মুখে পানির ছিটায় চমকে দাঁড়িয়ে যায়।বাহিরে ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে নাতো,হলেও বা পানি ঘরে আসবে কেমনে।নিশি সামনে কিছু দেখতে না পেয়ে পেছনের দিকে ঘুড়তে নিলে একটা দেওয়ালের সাথে বাধা খেয়ে পরে যেতে নেয়।আর তখনি একটা শক্ত হাত নিশির কোমড়টা ধরে বাঁচিয়ে ফেলে।নিশি সামনে তাকিয়ে একটা বিশাল ঝটকা খেলো।কারণ নিশির কোমড়কে ধরে রাখা ব্যক্তিটি আর কেউ না রায়হান।তাও আবার খালি গায়ে ভেজা শরীলে।মনে হয় মাত্র শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে,তাইতো লেপটে যাওয়া ভেজা চুল বেয়ে পানি এখনো শরীলে পড়ছে।লোকটা মাথাটাও কি ভালো মতো মুছতে পারে না নিশির ভাবণা।নিশি হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
_____মাত্র শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে রায়হান।নিজের রুমের বাথরুমে কিছু একটা সমস্যার কারণে পানি আসছে না।সকালে অফিসে যাওয়ার সময় মাকে বলে গেছে,মিস্ত্রী এনে চেক করাতে।খুব সকাল সকাল আজ অফিসের কাজে গাজীপুর যেতে হয়েছিলো।সেখান থেকে আসতে আসতে রায়হান এর অবস্থা খুবই খারাপ।এক তো রাস্তা ভালো না, তার উপর জ্যাম।রায়হান ঘেমে ওখানেই এক গোছল দিয়ে ফেলেছে এই গরমে।তাই সেখান থেকে আর অফিসে যায় নি বাসায় এসে সোজা ডুকে পড়লো শাওয়ার নিতে।রুমের বাথরুমে সমস্যা আছে বলে ড্রয়িংরুমের বাথরুমে চলে গেলো।বাথরুম থেকে একটা টাওজার পরে,খালি গায়ে বের হয়ে নিজের চুলগুলো ঝাড়তে লাগলো।কারণ তোয়াল দিয়ে মাথা মুছতে একদমই ভালো লাগে না তার।আর তখনি নিশির সাথে আচমকা ধাক্কা লাগে।রায়হান নিজেও জানতো না নিশি এখন এখানে।
রায়হানের একহাত নিশির কোমড়ে,আর নিশির হাত দুটো রায়হানের উন্মুক্ত বুকের উপর।রায়হানকে এভাবে খালি গায়ে দেখে নিশি কিছুটা ফ্রিজ হয়ে গেলো।নিশির দৃষ্টি এখন রায়হানের উন্মুক্ত বুকের পশমে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু জলের দিকে পড়লো।কি মারাত্মক ব্যাপার।নিশির তো মন চাইছে লজ্জা শরমকে সাইডে রেখে কিছুক্ষণের জন্য একটু বেহায়া হয়ে যেতে।আর ছুয়ে দিতে মন চাইছে এই বিন্দুবিন্দু জল কণাগুলোকে।
||
____এসবের মাঝে নিশি ভুলেই গিয়েছে,ওর হাত দুটো কখন ধরে রায়হানের বুকের উপর।রায়হান মুখে বাকা হাসি রেখে,একটা তুড়ি বাজালো নিশির সামনে।আর অমনেই নিশি ছিটকে রায়হান থেকে দূরে সরে গিয়ে দাঁড়ালো।সাথে সাথে চোখের দৃষ্টিও সরিয়ে ফেলে।এর পরই নিশি ঝংকার দিয়ে বলে উঠে,ছিঃ রায়হান ভাই আপনে এভাবে অর্ধনঙ্গ হয়ে ঘুরছেন কেনো।লজ্জা শরমের মাথা কি খেয়ে ফেলেছেন একেবারে।এইভাবে কেউ আসে কোনও মেয়ের সামনে।
রায়হান কোমড়ে দুহাত রেখে,আমার ঘর আমি যেমনে খুশি, তেমনে ঘুরবো,এতে শরমের কি আছে। এমন তো না আমি পেন্ট পরিনি।তাহলে এতো লজ্জা পাওয়ার কি আছে।লজ্জার জায়গা তো ঢাকা আছে।তাহলো!
____নিশি কানে হাত দিয়ে,উফফ! এসব কি বলছেন রায়হান ভাই।এভাবে কেউ কথা বলে একটি মেয়ের সাথে।আপনাকে আমি ভালো মনে করেছিলাম।আপনে ও দেখি একি ক্ষেতের মূলা।লাজ শরম কিছুই নেই।খালি গায়ে থাকতে মন চাইলে নিজের রুমে থাকুন।এভাবে সবার সামনে ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন কেনো।
_____সবার সামনে মানে,এখানে তুই ছাড়া আর কে আছে।চারদিকে তাকিয়ে।
আমিও তো তাই বলছি,আপনে আমাকে কি দেখতে পান না।রায়হান একটু বাকা হেসে,তুই কিছু দেখার মতো দেখালে অবশ্যই দেখবো।তবে অবশ্যই আমার মতো ইন্টেরেসটিং হতে হবে।আপনে আবার থার্ড মিনিংস ইউস করছেন।আপনে আসলেই একটা অসভ্য।
_____নিশি রেগে চলে যেতে নিলে,রায়হান নিশির হাতটা পিছনের দিকে বেঁকিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।নিশি একটু ব্যাথা পেয়ে আ করে শব্দ করে।লাস্ট ওয়ার্নিং আমার সাথে তর্ক একদম করবি না।তর্ক করা পছন্দ না আমার।আর কি বললি... অসভ্য।তোর সাথে অসভ্যের কি করেছি আমি,যার কারনে এমন তেজ দেখাস।
এখন আমি যদি তোর এই নরম নরম গোলাপের পাপড়ীর মতো ঠোঁট দুটোতে কিস করি তাহলে সেটা অসভ্যতামি বলা হতো।কিন্তু আমিতো ভদ্র ছেলে,তাইতো তুই বেঁচে গিয়েছিস।আর কোনও দিন আমার সাথে এমন বেয়াদবি করলে গালদুটো লাল করে ফেলবো মনে রাখিস। এটা বলেই রায়হান, নিশিকে ছেড়ে দিলো।
_____রায়হান যাওয়ার আগে নিশির দিকে নিজের ভেজা তাওয়ালটা ছুড়ে মারে।এটা বেলকানিতে শুকাতে দে।ভেজা তোয়ালও আমার পছন্দ না।নিশি তোয়ালটা রেগে ফেলে দিতে নিয়েও ফেললো না।কারণ তোয়ালটা থেকে খুব সুন্দর একটা স্ম্যাল আসছে।নিশি তোয়ালটা নাকের কাছে নিয়ে ভাবতে লাগলো,লোকটি কোন সাবান ইউস করে,এতো সুন্দর ঘ্রান, কেমন মাতাল মাতাল করা ফিলিং।
দরজার আড়ালে দুটো চোখ এতোক্ষন ধরে সব দেখছিলো।আর সেই চোখের মালিক হলো রুহি।নিশি বুঝতে না পারলেও রুহি রায়হানের চাওনিতেই ঠিক বুঝে গেছে,রায়হান নিশিকে পছন্দ করে।আর এটা ভাবতেই রুহির শরীল জ্বালাপড়া করতে লাগলো।কি আছে এই মেয়ের মাঝে যা আমার মাঝে নেই,বরং এই মেয়ে থেকে বেশি সুন্দর আমার গায়ের রং।আর রায়হান এই শ্যামবর্ণ মেয়েটাকে পছন্দ করে।রাগে রুহি নিজের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে,যার ফলে কাচের চুড়ি ভেঙ্গে রুহির হাতে ডুকে যায়।আর রক্তও বের হয়।কিন্তু এই রক্ত যেনো কিছু না।মন থেকেও যে আজ রক্তক্ষরণ হচ্ছে সেটার জ্বালায় মরছে ও।
_____লাবণি ও রুহি দুজনেই ভালোবেসে আহত হয়েছে।হয়তো এখানে তিশা বা নিশির কোনও দোষ নেই,না আছে জিসান ও রায়হানের। তবুও তারা দোষী আজ।আহত মন ক্ষুধার্ত শিকারের মতো হয়।আহত মনের ব্যক্তি তার নিজের সুখের জন্য সামনের সব কিছু ধ্বংস করে দেয়।লাবণি ও রুহির কারণে তিশা-জিসান, রায়হান-নিশির কপালে কি আছে তা শুধু আল্লাহই জানে।কার ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে আর কে ভালোবেসে হেরে যাবে তা তো সময় বলবে।
||
||
সাব্বির স্যারের কোচিং ছিলো আজ।নিশি বাসায় এসেই শোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ভাবছে,কেনো যে কমার্স নিতে গেলাম।জীবনটা তেজপাতা করে তুলেছে।প্রথম প্রথম তো সহযই মনে হয়েছিলো।কিন্তু এখন বুঝতে পারছি কমার্স ইজ নট সো ইজি।তবে সাব্বির স্যার ভালো বোঝায় বলে সিলেবাস শেষ করতে পারছি।কিছুটা চিন্তা মুক্ত হয়ে।
_____কিন্ত আমি যে পরীক্ষার খাতায় ঘোলায়া খেয়ে ফেলি,সে সমস্যা দূর করবো কে?গালে হাত দিয়ে নিশি সামনের টি টেবিলে পড়ে থাকা হিসাব বিজ্ঞানের বইটির দিকে তাকিয়ে আছে।হিসাব বিজ্ঞানের জটিলতা থেকে বের হওয়া এতো সহয না।আর তো বেশি দিন বাকিও নেই।তারপর তো যুদ্ধে নামতে হবে।কিন্তু একে দেখলে যে আমার কলিজার পানি শুকাইয়া যায় তা আমি কাকে বলবো।কে যে বলছে এ প্যারা নিতে।তারে পাইলে আগে থাপড়াইতাম।এই সিচুয়েশনে নিশির খুব কান্না পাচ্ছে।
জিসান অফিস করে আজ খুব ক্লান্ত। সারাদিন একবারও তিশার সাথে কথা হয়নি।নতুন একটা প্রজেক্ট নিয়ে বিশাল জামেলার মধ্যে পরে গেছে।কিন্তু লাবণি সাথে আছে বলে,জিসান অনেকটা স্বস্তিতে শ্বাস নিতে পেরেছে।লাবনির বিজনেস সেন্স ধারুন।এটা জিসানও মানে।তাইতো লাবণিকে বিজনেস পার্টনার করেছে শুধু মাত্র বিজনেসের স্বার্থের জন্য।তবে শীঘ্রই আলাদা হয়ে যাবার প্লানিং করছে জিসান।যা লাবণির অজানা।
_____ড্রয়িংরুমের শোফায় বসে হাতের ব্যাগটা পাশে রেখে বুয়া খালার কাছে পানি চায়।জিসান শোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে।বুয়া খালা পানি রেখে চলে গেলে,পানিটা খাওয়ার সময় সেন্টার টেবিলে রাখা হিসাব বিজ্ঞান বইটির উপর চোখ পরে।যার উপরে তিশার নাম লিখা।জিসান বইটা হাতে নিয়ে ভাবতে থাকে তিশার বই এখানে কেনো।হয়তো নিশি এনেছে।ভুলে এখানে রেখে গেছে।নিশিকে দিয়ে দিই,কাল কলেজে গিয়ে দিয়ে দিবেনি,সামনে তো আবার পরীক্ষা ওদের।বইটা নিয়ে উঠতে নিলে একটা কাগজ বই থেকে পড়ে।জিসান কাগজটা উঠিয়ে বইয়ে ভেতর রাখতে গেলে একটু খটকা লাগে।তাই কাগজটি খুলে পড়তে শুরু করে।এটা একটা লাভ লেটার।লেটারটি পড়ে শরীলের রক্ত গরম হয়ে যায় জিসানের।চিল্লিয়ে নিশিকে ডাক দেয়।
নিশি নিজের রুমে শুয়ে ছিলো,জিসানের হাড় কপানো ডাকে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে।দৌঁড়ে জিসানের কাছে আসে।ক ককি হয়েছে ভাইয়া।
নিশি জিসানের দিকে তাকিয়ে দেখে জিসান রাগে লাল হয়ে গিয়েছে।জিসানকে দেখে নিশি নিজেও ভয় পেয়ে যায়।মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।
জিসান দাঁতেদাঁত চেপে,এই বইটি কার।বইটি হাতে নিয়ে এ এএটাতো তিশার বই ভাইয়া।
____এখানে কেনো।
ও ভুলে গাড়ীতে ফেলে গেছে,তাই আমি নিয়ে এসেছি কাল দিয়ে দ দেবোনি।
____সাব্বির টা কে?
এবার নিশি আরো বেশি ভয় পেয়ে গেলো।কারণ তার ভাই হঠাৎ স্যারের ব্যাপারে জানতে চাওয়ার কারণ নিশ্চই ভয়ানক কিছু,তা না হলে এতো রেগে যেতো না।সাব্বির আমাদের কোচিং টিচার।
____ঠিকানা বল।
নিশি ঠিকানা বলার সাথে সাথে জিসান বাহিরে চলে গেলো।নিশি থো মেরে বসে পড়লো।ওর মন কু ডাকছে,নিশ্চই আজ কিছু হবে।ভয়ানক কিছু।
||
||
তিশা পড়ার টেবিল থেকে উঠে ডিনার করতে যেতে নিলো।তখনি ফোনটা লাগামহীন ভাবে বাজতে শুরু করলো।তিশা ফোনটা রিসিভ করে খুব বিরক্ত কন্ঠে হ্যালো বললো___তিশা, তিশারে সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে।নিশির কথা শুনে তিশা একটু ঘাবড়ে গেলো।সর্বনাশ! তিশা অন্য কিছু মাইন্ড করে,কোথায়,কিভাবে।কে করেছে তোর সর্বনাশ। আরে দূর,আমাকে কে করবে।তুইও তোর ভাইয়ের মতো কাজের আগে ঘামিস বেশি।
____দেখ নিশি এসব ফালতু কথা বলতে ফোন দিলে,রাখ এখন।আমি ডিনার করেনি, মা ডাকছে পরে কথা বলবো।তিশা ফোনটা রাখতে নিলে,অপর পাশ থেকে আসা কথাটা শুনে তিশা আবার জিঙ্গেস করে নিশিকে,কি বললি।সত্যি বলছি,জিসান ভাই মনে হয় সাব্বির স্যারকে সাইজ করতে গেছে।
___কেনো?কি হয়েছে।
নিশি তিশাকে পুরো ব্যাপারটা বলে।কিন্তু কাগজে কি লিখা ছিলো তা নিশিও জানে না।নিশ্চই এমন কিছু ছিলো,যার কারণে ভাই রাগ করেছে।
____চুপ হারামি,সব তোর জন্য।আমার বই নিয়েছিস কেনো তুই।
আরে বাবা আমি নিলাম কোথায় তুইতো গাড়ীতে রেখে গেলি।
____আমি ভুলে রেখে গেছি,তুই কেনো বইটা নিজের কাছে রাখলি না।তাহলে তো যমরাজ কাগজটা পেতো না।আরে আমিও তো ভুলে সেন্টার টেবিলে রেখে গেছি।আমি কি জানি ওই সাব্বির স্যার তোকে লাভ লেটার দিয়েছে তাও আবার বইয়ের ভেতর।
তুই জানলি কি করে।আরে আমাকে ভাবী বললো,বইয়ের ভেতর থেকে নাকি একটা লেটার পরছে।
____তিশার আর কোনও কথা বলতে ভালো লাগছে না,তাই ফোনটা কেটে দিলো।কিছু একটা মনে করে ভাইয়ের রুমের দিকে গেলো।যা ভাবছে তাই হলো।রায়হান ভাইও নেই।নিশ্চই জিসানের সাথে।
||
ঘড়ির কাটা ১ টা ছুঁই ছুঁই। তিশা ড্রয়িংরুমে বসে রায়হানের অপেক্ষা করছে।কিছুক্ষণ পর রায়হান ফোনে কারো সাথে কথা বলতে বলতে মেন ডো

____তখন মনের মধ্যে একবিশাল শূন্যতা কাজ করে।ভালোবাসার শুন্যতা,হারনোর শুন্যতা।আজ সেই শুন্যতা অনুভোব করছে তিশা।ভালোবাসা নামক যে ফুলটা ফুটে উঠেছিলো তিশার মনের বাগানে, সেটা যেনো কেউ ছিনিয়ে নিচ্ছে।হঠাৎ মনে হলো,তিশার নিশ্বাস নিতে কস্ট হচ্ছে।তিশা নিজেও জানে না কেনো।এগুলোতো তারই পাপ্য ছিলো।সেও তো জিসানকে এভাবে দিনের পর দিন ইগনোর করছে।অথচ জিসানের মনে ভালোবাসার কমতি হয়নি কখনো তার জন্য।কখনো কোনও অভিযোগ ও করেনি।শুধু ভালোবেসে গেছে দূর থেকে।
আজ জিসানের সামান্য ইগনোর তিশার সহ্য হচ্ছে না।এখন তিশা কিছুটা হলেও বুঝতে পারছে জিসানকেও কতোটা কস্ট দিয়েছে।ভালোবাসার মানুষের ইগনোর মেনে নেওয়া কতোটা কস্টকর আজ তিশা উপলব্ধি করতে পারছে।এই কস্ট জিসানও প্রতিনিয়ত ভোগ করেছে নিশ্চই।
তিশা ভাবতে ভাবতে বেসামাল হয়ে চলতে থাকে।রাস্তার ওপরপাশ থেকে নিশি হাত নাড়িয়ে তিশাকে তাদের কাছে আসতে ডাকে।তিশা নিজের মধ্যে ছিলো না।তাই বুঝতেই পারেনি কখন ও রাস্তার মাঝে চলে এসেছে।ডানে বামে না তাকিয়ে সামনের দিকে বাড়তে থাকে।
_____একটা গাড়ী ফুল স্প্রিডএ তিশার দিকে আসতে নিলে,জিসান আচমকা তিশার হাত টান দিয়ে সরিয়ে ফেলে।এক সেকেন্ড এর জন্য তিশা বেঁচে যায়।তিশা জিসানের বুকে গিয়ে পড়ে।খুব শক্ত করে জিসান তিশাকে বুকের মধ্যে চেপে ধরে।জিসানের বুকের ধুপধুপ শব্দটি কয়কশগুণ বেড়ে গেছে,যার শব্দ তিশাও শুনতে পাচ্ছে কান পেতে।কিছুক্ষণ আগে ভয় পেলেও তিশা এখন জিসানের বুকের মধ্যে নিজেকে সব থেকে সুরক্ষিত মনে করছে।নিজেও জিসানের সাথে লেপ্টে আছে।জিসান চোখ বন্ধ করে জোড়ে কয়েকটা নিশ্বাস ছেড়ে তিশার কপালে একটা গভীর চুমো দিয়ে দেয়।জিসানের মনে হলে ওর প্রাণটাই মনে চলে যাচ্ছিলো একটু আগে।আর একটু দেরি হলে সবশেষ হয়ে যেতো।
||
____রায়হান, নিশি দৌঁড়ে এপাড়ে চলে আসলো।তিশার মাথায় হাত বুলিয়ে তুই ঠিক আছিস।তিশা জিসানের বুকের মধ্যে মাথাটা রেখেই মাথা নাড়লো।জিসান তিশাকে নিয়ে এখনো ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছে।রায়হান বুঝতে পেরে, জিসানকে সামলাতে বললো,রিলেক্স জিসান।ও ঠিক আছে।জিসান মনে হয় এতোক্ষনে ঘোর এর মধ্যে ছিলো রায়হানের কথায় হুশ আছে।
নিশি ও তিশা লাঞ্চের সময়ই প্লান করেছিলো,আজ তিশাও নিশির সাথে ওদের বাড়ীতে যাবে।রাতে রায়হান বাড়ী যাওয়ার সময় তিশাকে সাথে করে নিয়ে যাবে।তাই রায়হানকে অফিসে নামিয়ে দিয়ে নিশি ও তিশাকে আহমেদ ভিলার সামনে নামিয়ে দিলো।নিশিকে ইশারা করে তিশার খেয়াল রাখতে বলে গেলো জিসান।কারন তিশা এখনো চুপ সারা রাস্তায় কোনও কথা বলেনি। হয়তো ভয় পেয়েছে কিন্তু স্বীকার করতে চাইছে না।
||
||

ঠিক ৭টা বাজে জিসান বাসায় আসলো।শোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে রইলো।আমি পানি নিয়ে উনার সামনে দাঁড়ালাম।উনি চোখ খুলে আমার দিকে একবার তাকালো,তারপর পানিটা খেয়ে পাশ কাটিয়ে চলো গেলো।আর আমি খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
____এতো সহযে হার মানার মতো মেয়ে আমিও না।আমি খুব ভালো করেই জানি,কাল রাতে আমার বলা কথা গুলোর জন্যই রেগে আছে।সব রায়হান ভাইয়ের দোষ।কিন্তু আমিও তাকে মানিয়ে ছাড়বো।উনি অফিস থেকে এসেই ফ্রেস হয়ে কফি চাইবে,তাই আজ আমি আগেই কফি বানিয়ে রাখলাম। তার ডাকার সাথে সাথে কফি নিয়ে ছুটলাম তার ঘরে।
জিসান মাত্রই ফ্রেস হয়ে আসলো।তিশাকে নিজের রুমে দেখে কিছুটা অবাক হলো,কিন্তু কিছু বললো না।ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো ঠিক করার বাহানায় তিশাকে আড় চোখে দেখছিলো।তিশা কফি ট্রি টেবিলে রেখে জিসানের পেছনে দাঁড়ালো।জিসান ডোন্ট কেয়ার লুক নিয়ে পাশ কাটিয়ে ট্রি টেবিলে রাখা কফিটা হাতে নিয়ে কয়েকটা চুমুক দিয়ে কি যেনো ভাবতে লাগলো।কারণ কফির টেস্টটা আলাদা।জিসানের বুঝতে বাকি নেই,কফিটা তিশার হাতের।জিসানের মুখে বাকা হাসি,কারণ ওর পিচ্ছি বউ ওকে মানাবার চেস্টা করছে।কিন্তু সেই হাসিটি তিশা দেখতে পেলো না।
কিছু না বলেই আবার আলমারীর দিকে গিয়ে কি যেনো খুঁজতে লাগলো জিসান।তিশা ও জিসানের পিছে পিছে ঘুড়ছে কখন ধরে কিন্ত খাটাইশটার তিশার জন্য একটুও মায়া হয় না।হঠাৎ জিসান পেছনে ঘুড়লে তিশাকে সামনে দেখতে পায়।
____সমস্যা কি।কখন ধরে দেখছি পেছনে পেছনে গুড়ছিস।দাঁতেদাঁত চেপে।
আম সরি....করুণ কন্ঠে
____সরি ফোর ওয়াট!চিল্লিয়ে।
তিশা বুঝতে পারে,জিসান যেনেও না জানার ভান করে।আম সরি কাল রাতের জন্য।আমি সত্যি জানতাম না স্যার এতো বাজে হবে।আমি ওভাবে বলতে চাইনি।প্লিজ ক্ষমা করে দিন।আর এমন হবে না।প্লিজ......
বলতে বলতে তিশা কান্না করে দেয়।চোখ দিয়ে পানি পড়ছে,যাকে বন্ধ করার বৃথা চেস্টা করছে তিশা।না পেড়ে হাতের উল্টা পিঠ দিয়ে চোখ মুছতে লাগলো।
_____জিসান যতোই রাগ করুক।কিন্তু তিশার কান্না একদমই সহ্য করতে পারে না।তিশার হাতটা ধরে একটানে বুকের মধ্যে নিয়ে এলো।তিশাকে পরম আদরে বুকের মধ্যে চেপে ধরলো।আর তিশা জিসানের পিঠের দিকে গেন্জীটা মুঠ দিয়ে ধরে রেখেছে।আজ তিশাও জিসানকে জরিয়ে ধরেছে।আজ কেনো জানি তিশার মাঝে কোনও সংশয় কাজ করছে না।বরং ভালোলাগা বিরাজ করছে।
স্টোপ জান।একদম চুপ।কিন্তু তিশার থামার নাম নেই বলে,একটা ধমক দিলো জিসান।স্টোপ।
____তিশা ধমকে চুপতো হয়ে গেলো,কিন্তু চোখের জল বন্ধ হবার নাম নেই।জিসান আলতো হাতে চোখ মুছে দিয়ে দুচোখে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ালো।মুহুর্তের মধ্যে তিশার পুরো শরীলে ঠান্ডা স্রোতের শিহরণ বয়ে গেলো।কারো ঠোঁটের স্পর্শ যে এতো ভালোলাগা কাজ করতে পারে তা তো জানাই ছিলো না তিশার।অদ্ভুত সেনসেশন কাজ করছে। তিশার চোখদুটো এখনো বন্ধ করে সেই স্পর্শটা অনুভোব করছে।তিশা জানে না কেনো তার সাথে এমন হচ্ছো।তবে আজকাল যে, ও জিসানকে চরম ভাবে মিস করে তা জানে।কিভাবে যেনো এই মানুষটি তিশার কলিজায় গেঁথে গেছে।এখন মানুষটি দূরে সরে গেলে,কলিজাটা ও যেনো ছিঁড়ে যাবে।
জিসানের মুখে এক চিলতি হাসির রেখা ফুটে উঠে।জিসান বুঝতে পেরেছে ওর পিচ্ছি বউটাও আজ কাল ওর একটু স্পর্শ পেতে চায়।তাই জিসানও সুযোগ পেয়ে তিশার দুগালে কপালে চুমো দিয়ে দিলো।কারো চুমো যে এতো মিস্টি হতে পারে,তা তিশা আজ অনুভোব করলো।তিশার আজ চিৎকার করে বলতে মন চাইছে...ভরিয়ে দেন না আজ আমাকে আপনার চুমোতে।আজ আমিও যে আপনার চুমো পাগল হয়ে গেলাম।এতো মিস্টি স্বাদ তো মিস্টিতেও নেই।যতোটা মিস্টি আপনার চুমোতে আছে।
তিশাকে এখনো এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে,তিশার ঘাড়ের হাড়গুলোতে ঠোঁট ছুঁয়ে জিসান আস্থে আস্থে তিশার কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলো।আমি কিন্তু এখনো মাপ করিনি।এর জন্য শাস্তি পেতে হবে তোকে।শাস্তির কথা শুনে চকিতে চোখ খুললো তিশা।
____শাস্তি!! কককিসের শশশাস্তি।ঢোক গিলে।
তিশাকে একদম নিজের কাছে এনে শাস্তি নিতে রেডিতো।তিশা জিসানের দিকে ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে মাথা নাড়লো।জিসান আলমারি থেকে কয়েকটা সোপিং ব্যাগ বের করে তিশার হাতে দিলো।এসব কি?খুলে দেখ।তিশা সোপিং ব্যাগ খুলে,মুখ একহাত হা হয়ে যায়।কারণ ব্যাগগুলোর মধ্যে সব ডিজাইনার বোরখা,হিজাব ম্যাচিং করা।প্রায় পাঁচ ছয়টা হবে,এতো বোরখা কেনো।
জিসান তিশার হাতটা ধরে নিজের কাছে টেনে এনে,এগুলো সব তোর জন্য।কোচিং, কলেজ,আর বাহিরে যাওয়ার জন্য।আজ থেকে এসব পড়েই বাহিরে যাবি।আমি চাইনা আমার তিশাকে কেউ দেখুক।আমি সবার চোখতো বন্ধ করতে পারবো না।কিন্তু আমার পাখিটাকে তো আড়ালে আঘলে রাখতে পারবো।আমি চাইনা এর পর কোনও সাব্বির তোর দিকে এভাবে নোংরা চোখে তাকাক।আমি সহ্য করতে পারবো না।আর আমাদের ধর্মেও তো পর্দা করার কথা বলেছে।আমার জন্য না হলেও নিজের জন্য হলেও পড়িস। তিশা অবাক চোখে জিসানের দিকে তাকিয়ে আছে।কি অদ্ভুত লোকটি।তাকে বুঝা বড় দায় তিশার জন্য।উনাকে দেখে বুঝা যাবে না উনার মনটা কেমন।আমি মাথা নেড়ে তাকে বললাম,আমি এগুলো পরবো।এতে আমার কোনও সমস্যা নেই।জিসানে হেসে তিশার কপালে আরোও একটা চুমো দিলো।
||
||

____তিশার সাথে কথাবলার মাঝেই একটা কল আসে জিসানের।কলটা রিসিভ করার পরই জিসানের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়।কোনও রকম তিশাকে বুঝ দিয়ে বাড়ী থেকে বের হয়ে গাড়ী নিয়ে সোজা কোথাও চলে যায়।তিশা কিছুটা অবাক হয় জিসানের এমন তড়িৎগতিতে যাওয়ার জন্য।
হালকা অন্ধকার রুমে একটা শক্ত কাঠের চেয়ারে একজন কে বেধে রাখা হয়েছে।জিসান ঘরে ডুকেই চেয়ারে বসে থাকা লোকটির বুকে লাত্তি মারে।চেয়ার সহ ছিটকে গিয়ে পড়ে লোকটি।এতে প্রচণ্ড আঘাত পায়।নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে যায়।জিসান লোকটিকে চেয়ার সহ তুলে।আমি কি বলেছিলাম, শুধু ভয় দেখাতে।আর তুই কু*****কি করছিলি।একটুর জন্য ও বেঁচে গেছে।আজ যদি ওর কিছু হতো,তাহলে জানিস কি হতো সুনামি নেমে যেতো, সব শেষ করে দিতাম আমি।সসসব........! বলেই লোকটাকে নিজের হাতের হকি স্টিক দিয়ে মারতে লাগলো।সোম এসে জিসানকে থামালো।স্যার মরে যাবে প্লিজ স্যার।
____বিশ্বাস করেন বস আমি ঠিক মতোই আইতাছিলাম।২০ বছর ধইরা গাড়ী চালাই আজও কোনও ভুল হয়নি।আপনার কতো কাজ করছি।তাহলে এটা কেমনে ভুল করি।কিন্তু ম্যাডামেরি কোনও হুস ছিলো না।সে কোনও দিকে না তাকাইয়া রাস্তা পার হইতাছিলো।আমি তো চাইছি উনার পাশ দিয়ে গাড়ীটা খুব স্প্রিডএ নিয়া যামু। আমার কোনও দোষ নাই।
জিসান কিছুটা শান্ত হলো।হাতের ইশারায় সোমকে বললো।ওকে এখান থেকে নিয়ে যাও।আজকের পর যেনো ওকে না দেখি।আর প্লান অনুযায়ী বাকি কাজ করে ফেলো।
জিসান জানালার পর্দা সরিয়ে সামনের ভিউর দিকে তাকিয়ে আছে।বাড়ীটা শহরের কোলাহল থেকে কিছুটা দূরে।যখন জিসান খুব ক্লান্ত হয়ে পরে সব কিছু থেকে তখন নিভির ভাবে একা কাটানোর জন্য এখানে চলে আসে।এই বাড়ীর ঠিকানা ওর পি এ সোম ছাড়া কেউ জানে না।
মাথাটা বিষন পেইন করছে,পেকেট থেকে একটা সিগেরেট জ্বালিয়ে বাতাসে ধোয়া ছড়াতে থাকে।সোম পিছনে এসে....
_____স্যার এটা করার কি খুব দরকার ছিলো।আজ ভাগ্য ক্রমে ম্যাডাম বেঁচে গিয়েছে।খেলাটা খুব রিস্ক ছিলো।পারমিশন দিলে একটা কথা জিঙ্গেস করতাম।জিসান একটু হেসে,তোমার আবার পারমিশন কবে থেকে লাগলো।না আসলে, ব্যাপারটা যে পারসোনাল তাই।বলো কি বলতে চাও।এসব কেনো স্যার। ম্যাডামের সাথে তো বিয়ে হয়ে গেছে তাহলে এসব কেনো।
জানো সোম,ওকে বিয়ের জন্য আমাকে কিছু শর্ত মানতে হয়েছিলো।প্রথম দুটো শর্ত আমি ভেঙ্গে দিই।কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ৩য় শর্ত।আমি যাতে ৩য় শর্ত না ভাঙ্গতে পারি তার জন্য নোটিশ জারি করেছে আমার বাবা আর শ্বাশুর।যেদিন আমি প্যারিস থেকে আসি,সেদিনই আমাকে নিয়ে একটা সভা বসে বাড়ীতে।সেখানে আমি রায়হান,আর আমার দুজন শ্রদ্ধনীয় বাবা উপস্থিত ছিলো আর কেউ না।তারা আমাকে তিশা থেকে দূরে থাকতে বলে।আমার মাথা সেদিন খারাপ হয়ে গিয়েছিলো।চার বছর পর দেশে ফিরে এসব কথা শুনে কার না মাথা গরম হবে বলো।
_____আমি তাদেরকে তিশার এইচ এসি পরীক্ষার পর তুলে দেওয়ার কথা বললে আমার শ্বাশুর কিছু চিন্তা না করেই বলে ফেলে,তিশার পড়ালেখা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা এ বিষয় নিয়ে কোনও চিন্তা করবে না।আরো চার পাঁচ বছর আমাকে অপেক্ষা করতে বলে।তুমি বলো মগেরমুল্লুক পেয়েছে।দীর্ঘ এতো বছর ওর জন্য অপেক্ষা করছি সেই ছোট থেকে ওর।এখন আবার নাকি অপেক্ষা।কিভাবে বলতে পাড়লো উনি।আমার ফ্রেন্ডদের বিয়ে হয়ে বাচ্চাকাচ্চা হয়ে গিয়েছে।আর আমি এখনো শুধু অপেক্ষা করে যাচ্ছি।তার উপর আরেক শর্ত নিজের বউয়ের কাছ থেকে দূরে সরে থাকতে।তাদের এই শর্তটা মানতে আমি নারায। তাইতো সেদিন তিশাকে পুকুর থেকে বাঁচাবার পর আমার শ্বাশুর এই বিষয় আর কোনও কথা বলেনি।মেয়ের জীবন বাঁচিয়েছি কোন মুখে বলবে মেয়ে থেকে দূরে থাকতে।ওটা অন্য কথা তিশা কে পুকুরে আমিই ফেলেছিলাম।শুধু তিশার কাছে থাকার জন্য।
সেটা না হয় বুঝলাম কিন্ত আজ আবার এটা কেনো।সব কি আজই শুনবে।ধৈর্য ধরো।ধৈর্যের ফল মিঠা হয় জানোতো।
____হুমমমম.......।
জিসান একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে জানো সোম অপেক্ষা জিনিসটা কতোটা খারাপ একমাত্র সে বুঝে যাকে এটা করতে হয়।তবুও আমি অপেক্ষা করতে রাজি হয়েছিলাম।কিন্তু আমি এখন বুঝতে পারছি তিশার বাবার মনে অন্য কিছু চলছে।আমার আর তিশার ব্যাপারটা তখন মেনে নিলেও এখন মানতে চাইছে না।কোনও না কোনো ভাবে তিশাকে আমার থেকে আলাদা করতে চাইছে,কারণটা কি আমি জানি না।তিনি হয়তো অন্য কিছু চিন্তা করছেন।সে কিছু করুক তার আগেই আমার জিনিসটি আমার কাছে নিয়ে আসতে হবে।ইচ্ছা করলে জোড় করে নিয়ে আসতে পারি।কিন্তু এতে আমি একটা মূল্যবান জিনিস হারাবো।আর তা হলো রায়হান।
রায়হান কে আমি হারাতে চাইনা।আর তিশার বাবার অমতে তিশাও আমার কাছে আসতে চাইবে না।আপসে যেহেতু কিছু হবে না তাহলে একটু আঙ্গুল বেঁকিয়ে নিয়ে নি।সমস্যা কি??কোনও অবৈধ জিনিসতো চাই নি আমার বিয়ে করা বৈধ বউকেই চাইছি।
সোম অবাক দৃস্টিতে তাকিয়ে আছে জিসানের দিকে।এই মানুষটিকে বুঝা তার জন্য অনেক কঠিন।গতো কয়েক বছর ধরে জিসানের পি এ এর পেশায় আছে।যথেষ্ট সৎ,আর কাজের প্রতি নিষ্ঠা দেখে জিসান সোমকে খুব পছন্দ করে।তার সাথে বিশ্বাস ও।তাইতো জিসানের এই রুপটা একমাত্র সোমই দেখতে পায়।
||
||

কোথায় ছিলি,ফোন কোথায় তোর।কয়টা ফোন দিয়েছি জানিস।রায়হানের কথায় জিসান ফোন চেক করে।সরি ইয়ার চার্জ নেই।এভাবে না বলে কোথাও যাবি না এর পর বুঝলি।এমনেই তোর শত্রুর অভাব নেই।জিসান মৃদ হেসে,এভাবে বউয়ের মতো জেরা করা বন্ধ কর।আমার পিচ্ছি বউটাকে এসব শিখাতে নেই।তাহলে আমার কপাল পুড়বে ।
____সেট আপ.... রায়হান হেসে।
এমন সময় রায়হানের কল আসে,বাসা থেকে।রায়হান কলটি রিসিভ করে টেনশনে পড়ে যায়।ওকে আমি আর তিশা তাড়াতাড়ি আসছি।তোমরা রেডি থেকো।তোমাদের স্টেশনে ছেড়ে দিয়ে আসবো।কলটা কেটে তিশাকে বলে,তাড়াতাড়ি চল,মা বাবা এখনি গ্রামে যাবে।তিশা প্রশ্ন করার আগে জিসানই প্রশ্ন করে বসে কেনো।মামার অবস্থা ভালো না।হসপিটালে এডমিট আছে বর্তমানে।মা শুনেই কান্নায় ভাসিয়ে দিয়েছে।ভাইকে নিজ চোখে না দেখা পর্যন্ত থামবে না,তা বাবা ভালো করেই জানে।তাই এখনি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।তিশাকে বাসায় রেখে আবার বাবা মাকে স্টেশনে দিয়ে আসতে হবে।
____তুই স্টেশনে গেলে তিশার সাথে কে থাকবে।কেউ না,আমি বাহির দিয়ে দরজা লক করে যাবো।
আর কাল!কাল যখন তুই অফিসে থাকবি তখন।রায়হান খুব ভালো করে বুঝতে পারছে,জিসান কি বলতে চাইছে।তাই ও চিন্তায় পরে গেলো।
_____সমস্যা নেই আমি একা থাকতে পারবো।
তোকে কেউ জিঙ্গেস করেছে,তাহলে রায় দিতে আসলি কেনো।কোথায়ও যাবি না তুই।যতোদিন বাবা মা না আসে।তিশার হাতটা ধরে বাসার ভেতরে নিয়ে গেলো।
তিশা ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।রায়হান মাথা নাড়িয়ে হা বলে।তাই তিশাও চুপ হয়ে গেলো।
_____রায়হান ওর বাবা মাকেও এই ব্যাপারটা বলে,তার পর উনারাও বুঝতে পারে জিসান কথাটা মন্দ বলেনি।তাই তিশা ওখানেই থাক কিছুদিন।এতে টেনশন ও কম হবে।
রায়হান ও জিসান দুজনে গিয়ে তিশার বাবা মাকে ট্রেনে উঠিয়ে দিয়ে আসে।রায়হান কে বাড়ীর সামনে নামিয়ে দিয়ে আসতে আসতে ১২টা বেজে যায়।
_____নিজের রুমের দিকে যাওয়ার সময় হঠাৎ কি মনে করে নিশির রুমে উকি মারে।তিশা নেই,গেলো কোথায়।আমার রুমে নাতো।জিসান নিজের রুমেও তিশাকে পায় না।ভাবতে লাগে কোথায় থাকতে পারে।হঠাৎ হাটা ধরে ছাদের দিকে,যা ভেবেছিলো।তিশা ছাদে দোলনাতে বসে আছে।
চাঁদের স্নিগ্ধ আলো তিশার মুখে পরে,এক অপরুপ সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে।কি যে মায়া লাগছে,তা উপলব্ধি করার মতো না।এই মায়ার জালেই তো আমি ফেঁসে গেছি।যার থেকে আমি মুক্তি পেতে চাই না।
হালকা ঠান্ডা বাতাস বইছে,হয়তো কোথায়ও ঝড় হচ্ছে।জিসানের মনেও এই মেয়েটাকে দেখলে কেমন ঝড় হতে থাকে।এই ঝড়কে শান্ত করতে তোর ঐ কাজল কালো আখি দুটির শান্ত চাওনি যথেস্ট।
____জিসান একটু মুসকি হেসে তিশার পাশে গিয়ে বসলো,তিশা আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলো,জিসানকে পাশে বসতে দেখে একবার তাকিয়ে আবার আকাশ দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
মন খারাপ
___উঁহু
তাহলে,এতো রাতে এখানে কিরছিস।
___চাঁদ দেখছি।কতো সুন্দর তাই না।
হুমমম,অনেক সুন্দর।তিশার দিকে তাকিয়ে।
___তিশা একটু হেসে, আপনেতো দেখলেনি না,তাহলে কি করে বললেন।
আমি আমার আকাশের চাঁদের কথা বলছি।ঐ আকাশের চাঁদকে তো সবাই দেখে,অনেকে কাছেও পেতে চায়।কিন্তু আমার আকাশের চাঁদটা শুধু আমার।এতে কারো অধিকার নেই।আর আমি কাউকে দেখতেও দেবো না।
___তাহলে কি করবেন।ঘরে বন্দি করে রাখবেন।এর পরও যদি দেখে ফেলে।
উঁহু, ঘরে বন্দি করবো না,তবে কেউ যাতে আশেপাশে না আসতে পারে তার ব্যবস্থা করে দেবো।এর পরও যদি দেখে আমার ভেতরে তাকে আড়াল করে ফেলবো।
____তিশা এবার জিসানের দিকে তাকালো।জিসান মাথাটা নিচু করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।কি অদ্ভুত লোকটি।বিচিত্র তার চিন্তা ভাবণা।তার অর্ধেক কথা আমি কিছুই বুঝিনা।বাকি অর্ধেক কথা বুঝেও লাভ নেই।রহস্যময় তার সব কিছু আমার জন্য।তিশা গুডনাইট বলে চলে যেতে নিলে।
জিসান হাতটা ধরে ফেলে।তিশা তাকিয়ে আছে জিসানের দিকে।কফি খাবো,খাওয়াবি।ঠিক আছে আমি বানিয়ে নিয়ে আসছি।এখানে না।রুমে নিয়ে আসিস।তিশা চলে গেলো কফি বানাতে।
____জিসান বেলকানিতে দাঁড়িয়ে, বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।হালকা মৃদ বাতাস এসে মাঝে মাঝে শরীলকে বুলিয়ে দিচ্ছে।অদ্ভুত শিহরণ জাগে পুরো শরীলে।তিশা কফি এনে জিসানের হাতে দিলো।কফিতে চুমুক দিয়ে কিছু একটা কম আছে।তিশা চিন্তায় পরে যায়,আমিতো সব দিলাম তাহলে। বিশ্বাস না হলে খেয়ে দেখ।তিশা এক চুমুক খেয়ে দেখে সব ঠিকই আছে।সব তো ঠিক,একদম পারফেক্ট।তাই দেখি!জিসান কফিতে চুমুক দিয়ে হুমম এবার ঠিক আছে।তিশা বুঝতে পারলো জিসান ইচ্ছা করে করেছে।মুখটা অন্যদিকে ঘুড়িয়ে ফেললো।কিন্তু ঠোঁটের কোনে একচিলতি হাসি ঠিকই ফুটে উঠলো তিশাী।আবছা অন্ধকারেও সেই হাসি জিসান দেখে ফেলে।অনেক রাত হয়েছে,আমি এখন আসি।বলে তিশা যেতে নিলে জিসান হাতটা ধরে ফেলে।এবার তিশার বুঝতে বাকি নেই জিসান কেনো ধরেছে।
একটানে তিশাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে।তিশার পিঠ জিসানের বুকের সাথে লেগে আছে।তিশার কোমড়টা ধরে আরো একটু কাছে টেনে নিলো।তিশার সিল্কি চুলে নিজের মুখ ডুবিয়ে দিলো।জিসানের স্পর্শে তিশার শরীলে কম্পন হতে লাগলো।তিশার এই কম্পন যেনো জিসানকে আরো পাগল করার জন্য যথেস্ট ছিলো।গাড়ের পিছের চুলগুলো সরিয়ে টুকরো টুকরো কিস করতে লাগলো।এতে তিশা চোখ দুটো বন্ধ করে কোমড়ে রাখা জিসানের হাতটি শক্ত করে ধরে ফেলে।যার ফলে তিশার নখ লেগে যায় জিসানের হাতে।কিছুক্ষণ পর কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলে,
____এই বাড়ীতে তোর নিজের একটা রুম আছে,সেই রুমের মানুষটির উপরও যখন তোর পুরো অধিকার আছে।তাহলে নিজের রুম ছেড়ে,আর মানুষটিকে ছেড়ে অন্যঘরে বসবাস কেনো।
আমার প্রতি বিশ্বাস নেই,নাকি নিজের প্রতি।
____জিসানের কথার উত্তর তিশা দিতে পারে না।তা দেখে জিসান মুসকি হেসে দেয়।
বালকনির কাউছে শুয়ে তিশাকেও টান দিয়ে নিজের উপর নিয়ে আসে।পরম যত্নে তিশার মাথাটা বুকের মাঝে চেপে ধরে।এই হ্রদপিন্ডের ধুপধুপ শব্দ শুনছিস,এসবই তোর জন্য।তুই ছাড়া এটার ক্রিয়া চক্র বন্ধ হয়ে যাবে।জিসানের কথায় তিশার চোখ দিয়ে একফোঁটা নোনা জল গড়িয়ে জিসানের বুকের উপর পড়ে।অজান্তেই তিশার ঠোট দুটো জিসানের বুকে চুম্বন দিয়ে দেয়।জিসান বুঝতে পেরে তিশাকে নিজের সাথে আরো গভীর ভাবে জরিয়ে ধরে।
জিসান বুঝে গেছে,ওর পিচ্ছি বউ যে ওর প্রেমে পড়ে গেছে।তাও আবার কঠিন ভাবে।এখন শুধু মুখে বলার পালা।
চলবে.....
[কেমন হলো জানাতে ভুলবেন না।ধন্যবাদ। ]

___হ্যালো
ওপর পাশের ব্যক্তিটি নিরব।(জিসান)
___ঘুম পেয়েছে, ঘুমান।পরে কথা বলবো নি।
উঁহু....ঘুম জরানো কন্ঠে।
___কি উঁহু....
আমি তোকে ফোন রাখতে বলেছি।
___কথা না বললে,ফোনটাতো রাখতেই হবে।
কথা না বলি,শুনতে তো পারি।
____কি?
তোর নিশ্বাস.....যা আমার শুনতে অনেক ভালো লাগে।
____নিশ্চুপ???
কি হলো কথা বলিস না কেনো।
____কি বলবো,আপনে তো বললেন নিশ্বাস শুনতে ফোন দিয়েছেন তো নিশ্বাসই শুনুন।
হুমমমম...কিছুক্ষণ পর জিসানের ঘুমজরানো কন্ঠ ভেসে উঠে,
---------------------------------------------------------------
---------------------------------------------------------------
নিশ্বাস আমার তুমি জানে এই দুনিয়া
প্রিয়া আমার প্রিয়া
নিশ্বাস আমার তুমি জানে এই দুনিয়া
প্রিয়া আমার প্রিয়া।
কিভাবে তোমায় ছাড়া আমি বাঁচি,
যেও না দুরে থাকো কাছা কাছি
তুমি দুরে গেলে যাবে প্রানটা উড়িয়া
নিশ্বাস আমার তুমি জানে এই দুনিয়া।
জিবন দিয়ে আমি ভালোবাসি তোমাকে,
এখন বাঁচাও তুমি ভালোবেসে আমাকে
শুণ্য আমার এই ভুবন,
যদি তোমায় না পাই মন
শুণ্য আমার এই ভুবন,
যদি তোমায় না পাই মন
ধংস করবো সব কিছু,
ছাড়বো না তোমার পিছু
যতোই দুরে যাও প্রিয়া,
জেনে তুমি নাও প্রিয়া
___হুমমম....।
কি হুমমম।
___সকাল হয়ে গিয়েছে উঠুন এবার, ফ্রেস হন,অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হন।বায়।
এই শুন.....যা রেখে দিলো।কতোকাল পালাবি পাখি আমার অগোচরে,একবার ধরা দিতে দে.....তার পর বুঝাবো তোকে।জিসানও উঠে ফ্রেস হতে চলে গেলো।
||
তিশা মায়ের সাথে রান্নার কাজে হেল্প করছে।আজকাল তিশার বেশির ভাগ সময় কাটে রান্না ঘরে,হয়তো বা পড়ার টেবিলে।মা যেনো পণ করেছে,এবার তিশাকে পাক্কা রাঁধুনি বানিয়ে ছাড়বে।তা না হলে তার একমাত্র মেয়ের জামাইর নাকি না খেয়ে মরতে হবে।তাইতো কোমরে কাছা বেঁধে মাঠে নেমেছে।মেয়েকেও তার মতো রান্না করতে শিখতে হবে।রেনু বেগমের হাতে নাকি যাদু আছে,সবাই বলে।এমনকি তার শ্বাশুরী ও তার রান্নার গুণগান করে।যে শ্বাশুরী মুখ ফুটে জীবনেও রেনু বেগমের সুনাম করেনি।সেই শ্বাশুরীর মুখ বন্ধ হয়ে যায় একমাত্র তার হাতের রান্না মুখে দিলে।তাইতো নিজের এই বিশেষ গুন মেয়েকেও দিতে চায়।জাতে করে মেয়ে শ্বশুর বাড়ী গেলে,মেয়ের সুনাম শুনে সেও গর্ববোধ করতে পারে।
____তিশাকে এক বাটি পিয়াজ কাটতে বসিয়ে দিলো তিশার মা।ব্যাচারী তিশা না পাড়ছে সইতে,না পারছে রইতে।চোখের পানি মনে হয় আজ সব রেকর্ড ভেঙ্গে দিবে।চোখের পানির কারণ হয়তো পিয়াজ,কিন্তু নাক দিয়েও কেনো পানি পড়ছে তা তিশার বোধগম্য নয়।হঠাৎ জিসানের ভিডিও কল আসে।তিশা উকি দিয়ে দেখে নেয় ওর মা কোথায়।রেনু বেগম অন্যকাজে ব্যস্ত।
তাই তিশা ফোনটা রিসিভ করে।তিশাকে এভাবে কাঁদতে দেখে জিসান পাগল হয়ে যায়।জান কি হয়েছে,এভাবে কাঁদছিস কেনো।কেউ কিছু বলেছে।কে কি বলেছে,একবার নাম বল।তাকে আমি দুনিয়া থেকে উঠিয়ে ফেলবো।কি হলো বল!অস্থিরতা জিসানকে জেনো পুরো ভর করে ফেলেছে।
____তিশা জিসানের কথা শুনে ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে আছে।কি বলে লোকটি।পাগল নি।সব পাগল কি আজ আল্লাহ আমার কপালেই লিখে রেখেছে।
কি বলছেন এসব।একটু শান্ত হন।
____আরে কিসের শান্ত হবো.... জিসান চিল্লিয়ে।
জিসানের চিল্লানিতে তিশারও রুহ কেঁপে উঠলো।
দেখুন……আমি।
____জিসান তাকিয়ে দেখে তিশার হাতে ছুড়ি।এই তোর হাতে ছুড়ি কেনো।দেখ তিশা কোনও রকম পাগলামি করবি না বলে দিলাম।কিছু হলে আমাকে বল আমি সব সলভ করে দেবো জান।তবুও এমন কিছু করিস না।জিসানের করুন কন্ঠ।তিশা তাকিয়ে দেখে জিসানের চোখদুটো ছলছল করছে।হয়তো যে কোনও সময় বর্ষণও নেমে পড়বে।
আমি এখনি আসছি।তুই কিছু করবি না।ফোনও কাটবি না।আমি আসছি।জিসান অফিস থেকে বের হতে নিলেই।
_____আরেরে কি করছেন কি আমার কথা শুনুন আগে।এই দেখুন আমি ছুড়ি ফেলে দিয়েছি।
জিসান থেমে যায়,কি করছিলি ওটা দিয়ে।জিসানের সামনে পিয়াজ এর বাটিটা ধরে।
____পিয়াজ!!
জি পিয়াজ!আমি পিয়াজ কাটছিলাম। তার কারণে আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।আর ছুড়ি ছাড়া কাটা যাবে না,তাই ওটা আমার হাতে ছিলো।আপনে কোথাকার জিনিস কোথায় নিয়ে গেলেন।
____তকে এসব ফালতু কাজ করতে কে বলেছে।দাঁতেদাঁত চেপে।
তিশা অবাক হয়ে গেলো,এতোক্ষন কি সুন্দর করে কথা বলেছিলো, খারুসটার এখন আবার কি হলো।
_____কি হলো কথা বলিস না কেনো।চিল্লিয়ে...।
তিশা কিছু বলবে তখনি মা রান্না করে প্রবেশ করে,জিসানকে না দেখেই।কি রে তিশা এখনো হয়নি,এতোক্ষন লাগে এ কয়েকটা পিয়াজ কাটতে।জামাই বাড়ী গেলেতো আমার নাক কাটিয়ে ফেলবি।ব্যাচারা জিসান,তোর হাতের রান্না মনে হয় এই জীবনেও ক্ষেতে পারবে না।
_____একদম ঠিক বলছেন মা,রেনু বেগম তাকিয়ে দেখে জিসান ভিডিও কলে।একটা কাজেরও না আপনার মেয়ে।দেখুন আমি কখন ধরে বলছি আমার মিস্টি ক্ষেতে মন চাইছে।তুই মায়ের কাছ থেকে আগে ওটা শিখে নে।কিন্তু আপনার মেয়ে কোনও কথা কানেই দেয় না।বলে কি পারবে না।এই জনমে মনে হয় না আমার ইচ্ছা পুড়ন হবে।জিসান হতাশ ভরা কন্ঠে কথাটা বলে।
কেনো পুরন হবে না,অবশ্যই হবে।ও করবে,ওর বাপেও করবে।না না এর মধ্যে শ্বশুর মসাইকে টানা কি দরকার।ও করলেই হবে।জিসান একটু মুসকি হেসে,আচ্ছা আমি এখন রাখি,আমার একটা মিটিং আছে।তিশাকে চিপায় ফেলে জিসান চলে গেলো।কারণ জিসান ভালো করেই জানে এখন তিশার মা তিশাকে ওয়াস করবে।
____জিসানের কথায় তিশা শোকড এর মধ্যে চলে গিয়েছিলো।এ কি বললো,এদেখি ডাহামিথ্যে কথার অস্তাদ।মা তো এখন আমাকে,কি ঝাড়াটা না ঝাড়বে।উফ!!
||
||

____আজকাল খুব কমই আসা হয় তৌফিক আহমেদ এর অফিসে।রায়হান ই সব সামলায়।ছোট ছোট ডিসিশন গুলো রায়হান নিলেও অফিসের বড় বড় ডিসিশন গুলো জন্য তৌফিক সাহেবকে হাজির হতে হয়।নিশিকে দেখে,তো মামুনি আমার জন্য লাঞ্চ ও নিয়ে এসেছো।আজতো আমার চাঁদ কপাল।তা না হলে তোমাদের ভাইবোনদের তো আমার অফিসে দেখাও যায় না।
কি যে বলো না বাবা।এমন করে বলছো কেনো।
____তো কি করবো বল মা,বড় জন ডাক্তার হয়ে নিজের পেশা বেছে নিয়েছে।ভাবলাম যাক জিসানতো আছে, এসব ও সামলাবে।কিন্তু ও নিজের বিজনেস আলাদা করে ফেললো।এই বুড়োটাকে একা ফেলে দিলো সবাই।
নিশি বাবার গলা জড়িয়ে তাতে কি হয়েছে।আমিতো আছি।আমি দেখবো সব।আমি থাকতে চিন্তা কিসের।আমি দেখলে সমস্যা কোনও।তৌফিক সাহেব হেসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে,তাহলে তো টেনশনই নেই।
দুজনেই হেসে দিলো।
___এই সময় রায়হান কেবিনে প্রবেশ করলো।নিশিকে দেখে একটু অবাক হলো।কারণ ওদের ভাইবোন কেউই এই অফিসে তেমন আসে না।আর নিশিতো আরো না।তবে অনেকদিন পর নিশিকে দেখতে পেয়ে রায়হানের ঠোটে এক তৃপ্ত হাসি ফুটে উঠলো।
ও রায়হান, কম ওন সান।এ দেখো কে এসেছে।আমাদের অফিসের বস।
___বস!রায়হান ভ্রটা কিঞ্চিৎ কুঁচকিয়ে।
হে বস!আমার এ পাগল মেয়েটা নাকি অফিস সামলাবে।আমার কাঁধের বোঝা কমাবে।
___তাহলেতো ভালোই।
হুমম আমার সব টেনশন দূর।তোমরা দুজন মিলে অফিস সামলাবে,আর আমি ওর মাকে নিয়ে ভেকেশনে ঘুড়ে বেড়াবো আইডিয়াটা কেমন।
___হুমমম ভালো।রায়হান মৃদ হেসে।
ঘুড়তে যাবে,নাকি হানিমুনে।চুপ ফাজিল মেয়ে,বাবার সাথে ফাইজলামি। হানিমুনে তো আমি তোদের পাঠাবো কানে দরে সিরিয়ালে।
আমার যাওয়ার শখ নেই,তুমি বরং তোমার ওই পাগল ছেলেকে পাঠাও। একপায়ে রাজি আছে।তা অবশ্য ঠিকই বলছিস।আচ্ছা তোরা বস,আমি একটু আসছি ম্যানেজারের কেবিন থেকে।
তৌফিক সাহেব চলো গেলে নিশি গিয়ে বাবার চেয়ারে বসে।
____ রায়হান এতোক্ষন বাবা মেয়ের কথাগুলো শুনছিলো।মেয়েটার মধ্যে এখনো বাচ্চামো আছে,তা না হলে,কেউ এভাবে হানিমুনের কথা বলতে পারে।রায়হান ও সামনের একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো।তো মিস বস বলুন আপনার সেবায় আমি কি করতে পারি।
নিশিও একটু মুডে এসে,তো মিস্টার রায়হান বলুন,কেমন চলছে আজকাল অফিস।কাজকর্ম সব ঠিকমতো চলছে তো।অলস ব্যক্তিদের কিন্ত আমার মোটেও পছন্দ না।আমার কাজ ঠিকমতো না হলে আমি কিন্তু সবাইকে ফায়ার করে দেবো।
||
____রায়হান মুসকি হেসে নিচের দিকে তাকিয়ে,অফিস পরে সামলাম মিস,আগে নিজের জিনিসটি সামলাতে শিখুন। রায়হানের কথা নিশির মাথার উপর দিয়ে গেলো।রায়হান বুঝতে পারে নিশি কিছুই বুঝেনি।হাতের কলমটা দুআঙ্গুলে নাড়িয়ে। গোলাপির সাথে কালো রংটা বেমানান জানেন।ওয়াইট বা সেম কালার হলেও চলতো।বাট আজ ব্লাক কি মনে করে পড়লেন।নিশি কনফিউজড হয়ে গিয়েছে রায়হান কি বলছে।কিন্তু রায়হানের মুখের দুষ্ট হাসিটা বলে,দিচ্ছে কিছু একটা গণ্ডগোল ও করেছে।কি বুঝে যেনো ডান সাইডে রাখা মিরর দিকে তাকালো।লজ্জায় নিশির মাথা কাটা অবস্থা।নিশির অন্তর্বাসের কালো বেল্টটা দেখা যাচ্ছে।গোলাপি জামার সাথে সত্যিই এটা বেমানান।একদম চোখে পড়ার মতো।তাইতো এই বেহায়া মানুষটি নিচের দিকে তাকিয়ে হাসছে।আমাকে লজ্জা না দিলে এই মানুষটির পেটের ভাত হজম হয়না মনে হয়।নিশি ঝটপট আপাতত ওড়না টা দিয়ে ডেকে ফেললো।আর কপাট দৃস্টিতে রায়হানের দিকে তাকালো।
মিস্টার রায়হান মেয়েদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তা মনে হা শিখেন নি।শিখে নিবেন,আর নযরটাও ঠিক রাখতে শিখুন।
____রায়হান হেসে,নিশির সামনে এসে দাঁড়ালো।একটু ঝুকে চেয়ারের হাতলে দুহাত রেখে।না দেখার জিনিস যদি এতো আকর্ষন করে দেখান,তাহলে নযরের কি দোষ ম্যাডাম।দেখানোর মতো জিনিস হলে,নযর তো দেখবেই।নির্ভর তো জিনিসটির উপর করে,আর ওর মালিকের উপর।এছাড়া এমনে দেখিয়ে দেখিয়ে অফিসে যদি কাজ করেন তাহলে পুরো অফিসই সামাল দিতে কস্ট হবে আপনার।
কি যা তা বলছেন এটা জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট। আর কিছু না।কিছুটা রেগে।
____ওকে,তাহলে একটু সাবধানে থাকবেন এমন এক্সিডেন্ট যাতে রোজ রোজ না হয়।এতে কিন্তু আপনার হবু বরের সাথে না ইনসাফি হবে।এমনেই ব্যাচারা আপনাকে বিয়ে করে কস্টে ভুগতে হবে।
নিশি, ভ্রুটা কুঁচকিয়ে মানে....
____এই যে হবু বরের জিনিস আপনে লোকেচরে প্রদর্শন করছেন।তা তো ব্যাচারার প্রতি না ইনসাফি,তাই না।
রায়হানের কথায় নিশি রেগে লাল হয়ে যাচ্ছে, নিশিকে আরো রাগাতে রায়হান আবারও বলা শুরু করলো।
নিশির কানের কাছে গিয়ে,আপনার যে হানিমুনের কোনও ইন্টেরেস্ট নেই।সেটা বরকে আগেই বলে দিবেন।তা না হলে,ব্যাচারার সব স্বপ্ন ভেনিস হয়ে যাবে।আপনার কারনে তার কস্টও বেরে যাবে।
____নিশি মুখটা অন্য দিকে ঘুড়িয়ে,সেটা আপনাকে ভাবতে হবে না।আমি আর আমার বর ভেবে নিবো নি।আপনে আপনার মুখে লাগাম লাগান।দিন দিন বেহায়া হয়ে যাচ্ছে।আপনার বউ আবার আপনাকে ছেড়ে না চলে যায়।
তাইনি,আমার একটা বিশেষ গুণ আছে,হাড় ভাঙ্গার।তার মনে কি আপনে বউ পিটাবেন।চোখ দুটো ছোট ছোট করে।রায়হান সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মারার মতো কাজ করলে অবশ্যই পিটাবো।আপনে কিন্তু মানুষটি সুবিধার না।কিঞ্চিৎ সন্দেহ নজরে তাকিয়ে নিশি।সুবিধা অসুবিধা বিয়ের পরে দেখা যাবে।এখন এসব বললে,রহস্য ভেঙ্গে যাবে।তাই ওয়েট করুন.....প্লিজ।সময়ই বলে দেবে সব।
রায়হানের কথায় নিশি মনে হয় বিরাট মাপের ভয় পেয়েছে।শুকনো কয়েকটা ঢোক গিলে রায়হানের দিকে তাকিয়ে আছে।আর রায়হান তৌফিক সাহেবের গলার শব্দ শুনে নিজের জায়গায় বসে পড়লো হেসে।
||
||

____ব্যাগের মধ্য ফিরনি রাখা বক্স টি ভরে বের হতে নিলে,রেনু বেগমের ডাকে দাঁড়িয়ে যায়।কোথায় যাশ। তিশা কিছুটা বিরক্ত হয়ে,তোমাকে কতো বার বললাম মা।কেউ যেতে নিলে পেছনে থেকে ডাক দিবে না।এটা ভালো না।বুঝছি,আর জ্ঞান দিতে হবে না।বলে গেলেই তো আর ডাকতাম না।
যার জন্য,দুঘণ্টা ঝেড়ে ফিরনি বানাতে শিখালে।তাকে খাওয়াতে।আর কিছু বলবে।রেনুর মুখে হাসি টেনে না..সাবধানে যাস।তারাতারি বাসায় ফিরে আসবি কিন্তু।
____তিশা চলে গেলো ওর গন্তব্যে।অফিসের সামনে নেমে ভাড়া মিটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গেটের সামনে।না বলে আসাটা ঠিক হয়েছে কিনা দ্বিধায় ভুগতে লাগলো।কিছুক্ষণ ভাবার পর সব দ্বিধা দন্ধ ফেলে,ভেতরে প্রবেশ করলো।রিসিপশনে দাঁড়ানোর সাথে সাথে রিনি দাঁড়িয়ে ওয়েল কাম ম্যাম।থ্যাংকু এন্ড গুড ইবেনিং রিনি আপু।স্যার আছে কেবিনে।জি ম্যাম স্যার কেবিনেই আছে ।আজ যেতে পারবো তো।রিনি হেসে পুরো অফিসটাই আপনার ম্যাম।
নিজের কেবিনের জানালার সামনে দাঁড়িয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে লাবণি।হাতে রাখা ধোয়া উঠা কফিটা চুমুক দিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন।আজকাল জিসানের ইগনোরের পরিমাণটাও বেড়ে গিয়েছে।সারাদিন একই অফিসে থেকেও ওকে চোখে দেখা যায় না।খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া আমার সাথে কথাও বলে না।হাতের এই ডিলটা বাদে বাকি সব ডিল থেকে আমাকে সরিয়ে রেখেছে।কেনো করছে জিসান এসব।এভাবে চলতে থাকলে,জিসানকে পাওয়ার স্বপ্ন ভুলে যেতে হবে।ভাবতে গিয়ে হাতে রাখা কফিটা ঠান্ডা হয়ে গেলো।তাই লাবণি কফিটা রাখতে জানালা থেকে সরতে নিলে,হঠাৎ অফিসের গেটের দিকে নযর যায়।একটা মেয়ে সম্পূর্ণ ডেকে ডুকে অফিস বিল্ডিং এ প্রবেশ করলো।এতো উপর থেকেও লাবনির বুঝতে অসুবিধা হলো না মেয়েটা কে?
||
____জিসানের কেবিনের দিকে পা বাড়াতে নিলে,কারো সাথে বাধা পায়।সামনে তাকিয়ে দেখে পথ আটকে দাঁড়িয়ে আছে লাবণি।হায় তিশা,কেমন আছো।আলহামদুলিল্লাহ আপু।আপনে কেমন আছেন।
উম,ভালো থাকতে দিলে কোথায়।আমার ভালো থাকার মানুষটিকে তো তুমি বেধে রেখেছো।তিশা একটু হেসে,ভুল বললেন আপু।আমি কাউকে বাধিনি।সেই মানুষটি আপসে এসে আমার কাছে ছ্যারেন্ডার করেছে।আমিতো শুধু একসেপ্ট করেছি,তবে জোড় করেনি।
____ওয়েল,বয়সের তুলনায় ভালোই কথা বলতে পারো।নিশ্চই এসব কথায় জিসানকে ফাঁসিয়েছো।
আমি না হয় কোথাতেই ফাঁসালাম।আপনে কেনো রুপ দিয়েও জিসানকে ফাঁসাতে পারলেন না।তিশার কথা লাবনির শরীলে কাটা দিতে লাগলো।
কারণ জিসান এখনো একটা স্বপ্নের মধ্যে আছে।তা না হলে,একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারীকে রেখে তোমার মতো বাচ্চাকে কেনো বিয়ে করলো।আর কি বা পাবে তোমার কাছে।দুদিন সংসার করার পর যখন ও বুঝবে তুমি ওকে সেই সুখটা দিতে পারছো না,যা ও একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নাড়ী থেকে পাবে,তখন এই সব ভালোবাসা গুলো পানসে হয়ে যাবে।জানোই তো চায়িদার কাছে ভালোবাসা তুচ্ছ।আর পুরুষের চায়িদা ভালোবাসা থেকে একটু বেশি।
____এবার লাবণির কথায় তিশার গা ঘুলিয়ে গেলো।কি সব বলছে মেয়েটা।নিজেকে যথাসাধ্য শান্ত রেখে,ওকে আপু তখন নয় আমরা বুঝে নেবো নি।এই নিয়ে আপনাকে টেনশন করতে হবে না।তাও আবার আমাদের বেডরুমের প্রাইভেট সময় নিয়ে।এটা বলেই তিশা পাশ কাটিয়ে চলে গেলো জিসানের কেবিনের উদ্দেশ্যে।আর লাবনি দাঁড়িয়ে তিশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।যতোটা সহয মনে করেছিলাম ওতোটা সহয না।এই মেয়েটার তেজ বলে দিচ্ছে জিসানকে নিয়ে কতোটা কনফিডেন্স। আর ওর এই কনফিডেন্সই আমাকে ভাঙ্গতে হবে।
||
||

তিশা কেবিনে প্রবেশ করে দেখে জিসান কাজে এতোটাই ব্যস্ত যে,কেবিনে কে এসেছে তা দেখারও সময় নি।প্রায় ৫ মিনিট হয়ে গিয়েছে অথচ জিসান একটি বারও তাকিয়ে দেখলো না তার সামনে কে দাঁড়িয়ে আছে।
____তিশা এবার খুব বিরক্ত হলো।কেউ কাজে এতোটা মগ্ন হতে পারে তা তো এই লোকটিকে না দেখলে জানতামই না।জিসানের ধ্যান নিজের দিকে করার জন্য,একটু গলাটা ঝাড়লো।জিসান লেপটপ থেকে চোখ সরিয়ে সামনে একবার তাকিয়ে আবার লেপটপে মন দিলো।তিশা হতোবম্ভ জিসান ওকে দেখেও কোনও রিয়েক্ট করলো না। কিন্তু কেনো?
তিশার মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেলো।হয়ত এখানে আসাটা ঠিক হয়নি।তিশা চলে যেতে নিলে,হঠাৎ হাতে টান অনুভোব করে।পেছনে তাকিয়ে দেখে জিসান কেমন সন্দেহ নযরে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
তিশা ইস ইট ইউ।তুই সত্যি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছিস।তিশার মাথাটা গরম হয়ে গেলো,এতোক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে আছে,সাহেবের নাকি এখনো বিশ্বাস হয় না।তিশা হাতটা ঝটকা দিয়ে ছাড়িয়ে, না এটা তিশার ভূত।সকালে মাকে মিথ্যা বলে আমাকে বকা খাইয়েছেন না,তাই ঘাড় মটকাতে আসছি।জিসান ভুবন ভুলানো হাসি দিলো।সামনের চেয়ারে বসে তিশাকেও টান দিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে দিলো।তিশা উঠতে নিলে কোমড়কে শক্ত করে আকড়ে ধরে রাখে।ছাড়ুন আমায়।স্টোপ জান।একদম নাড়বি না বলে দিলাম।জিসান রেগে।তিশা চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে রইলো।জিসান বুঝতে পারলো অজান্তেই তিশাকে কস্ট দিয়ে ফেলেছে।
||
____তিশাকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে,সরি জান।আমি এভাবে বলতে চাইনি।বাট কি করবো,রাগ উঠে গিয়েছিলো।তিশার হাতটা নিজের গালে লাগিয়ে।আজকাল অফিসের কাজ অনেক বেশি।মাঝে মাঝে আমি একটু ফ্রাস্টেড হয়ে পরি।তখন এক জায়গার রাগ আরেক জায়গায় ঝেড়ে ফেলি।প্লিজ তখন আমাকে ভুল বুঝিস না।জিসান অনুতপ্ত,তার থেকে বেশি ক্লান্ত ওর চেহারায় স্পট ফুটে উঠছে।তিশা মুখে হালকা হাসি এনে,ইটস ওকে।আমি কিছু মনে করেনি।জিসান তিশার হাতের আঙ্গুলে নিজের আঙ্গুল ঢুকিয়ে হাতের উল্টো পিঠে একটা কিস করলো।তিশা ব্লাসিং করতে লাগলো।
তো ম্যাডাম আজ এই অধমকে স্মরণ করলেন কি মনে করে।আমি দেখা না দিলে,আপনার দেখাতো পাওয়াই যায় না।তাহলে আমার আকাশে এই চাঁদটা দেখার কারণ কি?তিশা একবার জিসানের দিকে তাকিয়ে,ব্যাগ থেকে ফিরনির বক্সটা বের করে হাতে দিলো।আপনার মিস্টি। তিশা কিছুটা রাগ দেখিয়ে,এর জন্য মা আমাকে ২ঘন্টা ননস্টোপ ঝেড়েছে।সব আপনার জন্য।
____তাইনি,জিসান হেসে দিলো।বাহ আমার শ্বাশুরীর তো তুলনা হয় না।আমি কিন্তু বড়ই ইমপ্রেস তার উপর।উনি কিন্তু তোর থেকে বেশি আমাকে আদর করে।ঠিক বলেছি।তা আবার বলতে।মার মুখে তো রায়হান ভাই আর আপনার সুনামের পঞ্চমুখ। আমাকে তো চোখেই দেখে না।জিসান আবার হেসে দিলো।তাহলে তোর কি এখন হিংসে হয়।উঁহু....।আগে হতো এখন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।কিন্ত যাই বলিস,তুই কখনো রাগ করে বাপের বাড়ী চলে আসলে,আমার শ্বাশুরী কিন্তু তোকে বাসায় ডুকতেও দিবেনা।উল্টা পায়ে আমার কাছে পাঠিয়ে দিবে।
তিশা অসহায় দৃষ্টিতে জিসানের দিকে তাকালো।তিশার মুখটা দুহাতে নিয়ে,আমি কখনো রাগ করে তোকে যেতেই দেবো না।যতো রাগ হোক,ঝগড়া হোক তবুও যাওয়া যাবে না।ঝগড়া শেষ হলে যেতে পারবি।কিন্তু মনোমালিন্য চলাকালিন বাসা থেকে বের হওয়া নিশেধ। বুঝলি।তিশা হালকা হেসে দিলো।
____সোফায় বসে ফিরনির প্রথম চামুচ ধরলো তিশার দিকে।আমি খেয়ে এসেছি।তাতে কি,আমিতো দেখিনি।এখন আমার সাথেও শেয়ার করতে হবে,নে হা কর।তিশা মুখে দেওয়ার সাথে সাথে লাবণি কেবিনে প্রবেশ করলো।জিসানকে এভাবে আদর করে তিশাকে খাইয়ে দেওয়ার দৃশ্য লাবণির বুকটা মোচর দিয়ে উঠে।তবুও নিজেকে সংযোত রেখে,আমাদের মিটিং আছে,তা হয়তো তুমি ভুলে গেছো।জিসান তিশাকে খাওয়ার সাথে সাথে নিজেও খেয়ে নিচ্ছে।লাবণি আগেও বলেছি কেবিনে প্রবেশ করার আগে অনুমতি নিয়ে নিবে।বিশেষ করে আমি যখন আমার ওয়াইফ এর সাথে থাকি।আর আজকের মিটিং ক্যানসালড করে দেও।আমি আজ ব্যস্ত।
লাবণির মাথা বিগড়ে গেলো,মিটিং টা খুব ইম্পোরটেন্ট জিসান।আর আমি তো দেখছিনা, তুমি তেমন ব্যস্ত তাহলে।জিসান উঠে দরজার সামনে গিয়ে,কেবিনের ডোরটা খুলে,আমার ওয়াইফের সাথে কাটানো মুহুর্ত থেকে ইম্পোরটেন্ট আর কিছুই নেই আমার কাছে।আমার প্রাইভেট সময়টা আমি আমার ওয়াইফ এর সাথে একা থাকতে পছন্দ করি।লাবণি কিছু বলতে নিবে,তার আগেই। তুমি এখন আসতে পারো।লাবণি তিশার দিকে চোখ রাগিয়ে চলে গেলো।জিসান পেছন থেকে বলেদিলো,সোমকে বলবে পরবর্তী ২ঘণ্টা কেউ জাতে আমাকে ডিস্টার্ব না করে।জিসান এটা বলেই দরজাটা লাগিয়ে লক করে দিলো।তিশার মুখে আজ বিশ্বজয়ী হাসি ফুটে উঠলো।
চলবে...
[এতো এতো অভিযোগ আমার উপর।পাঠক কেনো।দুদিন পর গল্প পাবেন জানেনি। তবুও কেনো এতো অভিযোগ??]

____সন্ধ্যায় যথাসময় পার্টি শুরু হয়েছে।সবার মধ্যমনি তারিনকে সাদা রং এর ফ্রকে একদম বার্ভি ডোল লাগছে।তারিনের সাথে মেচিং করে তাওহিদ ও তানজিলা ও সাদা পরেছে আজ।তাদের তিনজনকে ভারী সুন্দর লাগছে।রেড কালারের কার্পেট বিছানো সিড়ি দিয়ে যখন তিনজন নেমে আসছিলো,তখন সবার মুখে একই কথা পার্ফেক্ট ফ্যামিলি।
জিসানের মেজাজ গরম,তাও আবার তিশার উপর।বার বার বলার পরও মেয়েটা লেট করেছে আসতে।রাগে লাল হওয়া জিসান বন্ধুদের সাথে কথা বলছিলো,আর তখনি রায়হানের ডাকে সবাই ওই দিকে তাকায়।কিন্তু জিসানের চোখ রায়হানের পিছে দাঁড়িয়ে থাকা একটা লাল পরীর উপর পরে।গাঢ় লাল রং এর গ্রাউন,সাথে মেচিং হিজাব আর মুখে আছে খুবই নরমাল সাজ।এতেই মনে হচ্ছে জিসান খুন হবে সেই নারীর প্রেমে বার বার।
____কথায় আছে না রুপ নাই যার সাজন বেশি রুপের মাইয়া সাজে না, জিসানের মনে একথা বেজে উঠেছে।রুপ মানেই সুন্দর,আর সেই সুন্দর সব ক্ষেত্রেই হয়।কালো সাদা চামরাটা ব্যাপার না।কালো মেয়েদেরও অনেক সময় এমনেই সুন্দর লাগে,সাজতে হয় না।কালো মেয়েরা তো মায়াবতী হয়।তবে তিশা কালো নয়।তিশার গায়ের রং হলদেটে সাদা।একদম সাদা নয়।দুধের মধ্যে এক চিমটি হলুদ মিক্সড করলে একটা ভিন্ন রং দেখা যায়।পুরো সাদাও নয়,পুরো হলুদও নয়।জিসানের কাছে তিশার রংটা তেমনিই মনে হয়।এর মধ্যে রেড কালারটা তিশার শরীলে অসাধারণ লাগছে।এমন রুপে তিশাকে জিসান খুবই কমই দেখেছে।তাইতো চোখ ফেরানো দায় হয়ে পরছে আজ।
তিশার ঠিক পিছনে লাবনি দাঁড়িয়ে ছিলো।আজ লাবনিও লাল পরেছে,জিসানের শাড়ী পছন্দ বলে,লাল নেটের একটা শাড়ী পরে এসেছে।সাথে দামি অর্নামেন্ট ও মুখে ভারী মেকআপ।মূলত তিশার পাশে লাবনিকে দেখেই জিসানের মনে এমন কথা এসেছে।তিশার নরমাল সাজ যেখানে জিসানকে ঘায়েল করতে পারে,সেখানে লাবণির ভারী মেকআপ কোনও কাজের না।বলে না, কেউ তোমাকে ভালোবাসলে এমনেই ভালোবাসবে।তুমি যেমন আছো তেমনি ভালোবাসবে।তোমার বাহিরের চাকচিক্য নয়,তোমার মনটাকে দেখে ভালবাসবে।সে ভালোবাসা হয় পিউর।একদম সোনার মতো খাঁটি।
||
_____জিসান রায়হানকে পাশ কাটিয়ে তিশার দিকে চলে গেলো।রায়হান তো আশ্চর্য জিসানের বিহেভ দেখে।এতো লেট করলি কেনো।কতো বার ফোন দিয়েছি,ফোনও রিসিভ করিসনি,এতো কিসের ব্যস্ত তোর।কথা বলছিস না কেনো... জিসান একনাগাড়ে বলেই গেলো।তিশা কিছু বলতে যাবে,তার আগেই রায়হান এসে, কি রে আমিও যে আসছি চোখে দেখিস নি।জিসান বিরক্ত চোখে রায়হানের দিকে তাকিয়ে,তুই কি আমার গার্লফ্রেন্ড নাকি বউ তোর দিকে নযর দিতে হবে।যা তোর দলের মানুষ সব ওই দিকে দাঁড়িয়ে আছে,ওখানে যা।রায়হান তাকিয়ে দেখলো ওদের ফ্রেন্ডসরাও ইশারা করে ওকে ডাকছে।রায়হান ভালো করে জানে বন্ধু তার বউ পাগল,তাই বলে লাভ নেই।
কিছুক্ষণ পর কেক কাটা হলো।ছোট্ট তারিন তিশাকে ও জিসানকে দুজনকে এক সাথে কেক খাওয়ালো।জিসান তারিনকে একটা বড় ডোল দিয়ে বললো,এটা তোমার ছোট চাচা-চাচীর তরফ থেকে।তিশা জিসানের দিকে তাকিয়ে বললো,আমার তরফ থেকে মানে।এটাতো আপনে দিলেন।জিসান সবার আড়ালে তিশার কোমড়টা ধরে টান দিয়ে কাছে টেনে এনে,জান আমরা কি আলাদা।এটা কেমন কথা, দুটো শরীল একি মনে গাথা।চোখ টিপ মেরে।
____লাবনি দূর থেকে সবই দেখছে,জিসান যে তিশার সাথেই চিপকে আছে।এতো কি আছে এই মেয়েটার মাঝে যে অন্য কাউকে দেখার সময় নেই জিসানের।দাঁতেদাঁত চিবে সব সহ্য করছে।ওয়েটার কে ডাক দিয়ে একগ্লাস সোপ্ট ড্রিংক নিয়ে লাবণি তিশার দিকে আসছিলো ,হঠাৎ লাবনির হাতের সোপ্ট ড্রিংকটা তিশার শরীলে পরে গেলো।আম সো সরি তিশা,আসলে স্লিপ খেয়ে তাল সামলাতে পারি নি।।আর ওমনেই ড্রিংকগুলো ব্যালেন্স হারিয়ে পরে গিয়েছে,আম সরি বেবি।তুমি কিছু মনে করোনি তো।ইটস ওকে আপু,ভুল সবারি হয়।রাইট।লাবণি একটা বিশ্বজয় হাসি দিয়ে চলে গেলো।
লাবণি যে ইচ্ছা করে কাজটা করেছে,তা তিশা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে।কিন্তু পার্টিতে কোনও সিনক্রিয়েট করতে চায় না তাই চুপ হয়ে আছে।কিন্তু দূরে থাকা দুটো চোখের মালিক সব দেখেছে।সে আর কেউ না জিসান।জিসান দেখেছে লাবণি ইচ্ছা করে যে কাজটা করেছে।জিসান কিছু বলতে নিলে,তিশা জিসানের বাহু ধরে করুন চোখে ইশারা করে,যাতে জিসান কিছু না বলে।তিশার চাওনি বুঝে জিসান আর কিছু বলে না,তবে হাত ধরে তিশাকে নিজের রুমে নিয়ে যায় জামাটা পরিষ্কার করতে।
____কিছুক্ষণ ধরে নিশিকে দুজন মহিলা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।নিশির ধারণা এরা বার্থডে পার্টিতে আসেনি,মনে হচ্ছে মেয়ে দেখতে এসেছে।নিশিকে কিসব আজব আজব প্রশ্ন করছে।নাম কি,কোন ক্লাশে পড়ছে,রান্নাবান্না জানেনি,বয়স কতো।শুধু এতোটুকুতে থামেনি,নিশিকে ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে চুল দেখছে,নিশির হাইট চেক করছে।আরো কতো আজগুবি জিনিস,যা মেয়ে দেখতে আসলে সচারচর মহিলারা করে।নিশি ব্যাচারী বুঝতে পারছে না কি করবে।মেহমান বলে কিছু বলতেও পারছে না।আশেপাশে তাকিয়ে বারবার কাউকে খুঁজছে, তাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করবে কে।
ঝড়ের গতিতে হঠাৎ কেউ নিশির কাধে হাত দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।নিশি চকিতে সামনে তাকিয়ে দেখে রায়হান।হাসি মুখে মহিলা দুটোকে সালাম দেয়।তো কেমন আছেন আন্টিরা।আমরা তো ভালো কিন্তু তোমাকে যে চিন্তে পারলাম না।আমি!আমি হলাম এই রমনীর স্বামী ,যাকে আপনারা এতোক্ষন খেলনা ভেবে নেড়েচেড়ে দেখছিলেন।আমি তো সেই খেলনা,থুক্কু এই মেয়েটির হাসবেন্ড। নিশিতো স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রায়হানের কথা শুনছিলো।এই মুহুর্তে কি রিয়েক্ট করা যায় তা নিয়ে সংশয়ে ভুগছে।কারণ এমন সিচুয়েশনে নিশি কখনো পরেনি।মুখ এক হাত হা করে রায়হানের দিকে তাকিয়ে আছে।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, নিশির পেটের মধ্যে কেমন জেনো শুড়শুড়ি করছে।এমন অদ্ভুত ফিলিংস লাগছে যা হয়তো ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। ও আচ্ছা, এই মেয়ে তুমি বিবাহিত। আগে বলোনি কেনো।শুধু শুধু আমাদের সময় নষ্ট করেছো।মহিলা দুটো চলে যেতে নিলে,রায়হান পিছন দিয়ে বলে উঠে,আন্টি নেক্সট টাইম খেলনা দেখতে বাজারে যাবেন।
||
||

____জিসান উপর থেকে সব দেখছিলো,তিশার বাবা চলে যাওয়ায় মুখে এক চিলতি হাসি ফুটে উঠলো।নিশিও অনেক খুশি, কারণ পরীক্ষার আগে এমন সময় আর পাবে না ওরা।আজ দুবান্ধবী মিলে অনেক গল্প করবে।হেব্বি মজা হবে তাইনা তিশা।তিশাও অনেক খুশি,আজকাল তিশা নিজেও জিসানের আসেপাসে থাকতে চায়।তানজিলা ও নিশির সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ উপরে চোখ যায়।জিসান প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে তিশার দিকে।কিছুক্ষণের জন্য তিশার মনে হলো,জিসান চোখের পলক ফেলতে ভুলে গেছে।কেমন ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে আছে।দূর থেকেই মনে হয় তিশাকে জ্বালিয়ে দেবে।
ছাদে পার্টি বিছিয়ে কেউ বসে আছে,কেউ কেউ আধো শোয়া হয়ে মোবাইল টিপছে।জিসান হাতের উপর মাথা রেখে শুয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে আকাশ দেখছে।রায়হান নিজের ফোনে ব্যস্ত। ব্যাকগ্রাউন্ড এ গান বাজছে.....
"বড় লোকের বেটি লো লম্বা লম্বা চুল, এমন মাথায় বেঁদে দেবো লাল গেন্দা ফুল ।
বড় লোকের বেটি লো লম্বা লম্বা চুল, এমন মাথায় বেঁদে দেবো লাল গেন্দা ফুল ।
এমন মাথায় বেঁদে দেবো লাল গেন্দা ফুল।"
___রনি-আরে ইয়ার কি গান,শুনলে মনের মধ্যে কেমন প্রেম প্রেম জাগে।এতো প্রেম রাখি কই বলতো।
তোরতো সব কিছুতেই প্রেম জাগে এটা আবার নতুন কি।প্রেমে তো তুই পিএইচডি করেছিস,আর বাকি কি আছে(জিসান)।
লাভ কি এতো পিএইচডি করে, একটাকেও ধরে রাখতে পারলো না।শালা তুই মেয়েদের ডাম্প করিস,নাকি মেয়েরা তোকে বলতো।(সোয়েল)।
সত্যি করে বলতো ক্লান্ত হোসনা তুই।(রায়হান)। আরে ভাই আমি কি করবো,আমি যাকে পছন্দ করি,কিছুদিন পর তারা আমাকে পছন্দ করেনা।আর আমাকে যারা পছন্দ কর কিছুদিন পর তাদের ন্যাকামো ভালো লাগে না আমার।
লাস্ট টাকে কেনো ছাড়লি,মেয়েটাতো ভালোই ছিলো।(জিসান)
||
আরে দূর,কি যে বলিস,এক নাম্বারের মিনমিনা শয়তান।আমাকে বলে কি, আমি নাকি কিস করতে পারিনা।চিন্তা করছিস এখন নাকি এই মাইয়া আমাকে কিস করা সেখাবে।আরে আমার কিস এর রেকর্ড শুনলে যে কেউ নির্ঘাত ষ্টক করবে।আর আমাকে বলে আমি নাকি কিস করতে জানি না।জিসান শোয়া থেকে উঠে বসলো,কাহিনী কি খুলে বলতো।রনির এক্স গার্ল ফ্রেন্ডের কাহিনী গুলো খুব ইন্টেরেসটিং হয়,তাই সবাই মনোযোগী এবার রনি কি ঘাপলা করেছে।
___অন্নাদের বাসায় সেদিন কেউ ছিলো না ইয়ার।ফোন পেয়ে আমিও চলে গেলাম।আমার মনেতো লাড্ডু ফুটতে লাগলো।কিন্তু মাইয়া বহুত ফাজিল,আমারে স্বপ্ন দেখাইয়া বলে,জানু চলো আমরা ছবি দেখি বসে বসে আর কি করবো বলো।
কি আর করার, আমি আর আমার গার্লফ্রেন্ড অন্না ইমরান হাসমির ছবি দেখছিলাম।ইয়ার ইমরান হাসমিকে তো চিনিস,শালা আমারো বাপ।ওর ছবি দেখে আমার শরীলের ইমোশন জেগে গেলো।অন্নারো মনে হয় কিছু একটা হয়েছে।দুজনে কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে গেলাম।মানে জাস্ট শুধু লিপ কিস ইয়ার তোরা আবার অন্যকিছু ভাবিস না।কিন্তু মাইয়াতো আমারে ৪২০ ভোল্টেজ ঝটকা দিলো।
এটা কি তোমার ফাস্ট কিস,জানু।নাতো কেনো সোনা।তাহলো কিস করতে পারো না কেনো।কি বলছো,কিস করতে পারবো না কেনো।এইতো একটু আগে তোমাকে কি সুন্দর করে করলাম,গাল দুটো টেনে।আরে ছুবে না আমায়,এটাকে কি কিস বলে।এতো কম সময়। কিস করতে কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ মিনিট রাখবে।কিসব বলো।এতোক্ষন তো বাসর করতেও লাগবে না।কিস করতে বলছো নাকি কিস নিয়ে গবেষণা করতে বলছো।একদম বাজে কথা বলবে না,আমি গল্পে পড়েছি নায়ক নায়িকাকে কিস করে ২০মিনিট ৩০ মিনিট পরে ছাড়ে।তারা কতোটা ভালোবাসে একে অপরকে, তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না।এ্যা এ্যা করে কেঁদে দিলো অন্না।এই মাইয়ার কথা শুনে বিশ্বাস কর দোস্ত আমার মাথা ঘুড়াইয়া গিয়েছিলো।আমিতো মাথায় হাত দিয়ে বসেছিলাম কতোক্ষন,অনেক বুঝালাম। কিন্তু ঘ্যানোর ঘ্যানোর কমছেই না।বুঝতে পারলাম একে দিয়ে আমার চলবে না।বেকুব মাইয়া।
____জিসান সহ উপস্থিত সবাই অট্টহাসিতে ফেটে উঠলো।ছাদে সবার হাসির শব্দে নিশি ও তিশা লুকিয়ে দেখতে আসলো ম্যাটার কি।এদের হাসার কারণ জেনে,তিশাতো দৌড়।আর নিশিও তিশার পিছে পিছে চলে যায়। কারন কেউ দেখলে তাদেরি লজ্জায় পড়তে হবে।
রনিতো ব্যাচারা সবার হাসি দেখে রাগে ফুসফুস করছে।থামবি তোরা।সিরিয়াসলি তুই ওই কিসের কারণে ব্রেক আপ করেছিস।(সোয়েল)।ভাই ব্যাপারটা শুধু কিসের না।মেয়েটা বড়ই অবুঝ।ফেসবুকে সারাক্ষন গল্প নিয়ে পরে থাকে।আর ঐসব গল্পে কিসব আজগুবি কথা লিখা থাকে,আমি একদিন পরে মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে।নায়ক নায়িকাকে কিস করে ২০মিনিট,এমনকি আধো ঘন্টাও পার করে ফেলে, সিরিয়াসলি!কিস করতে এতো টাইম নিলে ভাই এরা বাকি কাজ কখন করে বলতো।কেউ কেউ তো লিখে বাসর নাকি সারা রাতভর চলে,আরে ভাই আমার কথা হচ্ছে এতো এনার্জি পায় কই।এমন হলেতো বাসর রাতের পরের দিনই বউ পালাবে ভয়ে।
___সবাই আবার অট্টহাসিতে ফেটে উঠলো।এবার রনির রাগ হলো না,তবে বন্ধুদের এমন কান্ডে একটু নিরাশ হলো।লিসেন গাইস্, এটা হাসার ব্যাপার না খুবই সিরিয়াস ব্যাপার।বিয়ের আগেই সব ক্লিয়ার করে ফেলা উচিৎ। তা না হলে বউ বলবে নতুন জামাই কিছুই পারে না টাইটেল দিয়ে দেবে।
জিসান রনির কাধে হাত রেখে,দোস্ত কিস একটা অনুভূতি, আর সেখানে লিপ কিস তো খুব বিশেষ মানুষকে করতে হয়।তুই যেভাবে হাটেঘাটে কিস করে বেড়াস,এটাতো হওয়ারি কথা।এখন থেকে নিজের বিশেষ মানুষটির জন্য বাঁচিয়ে রাখিস।তাহলে আর এমন সিচুয়েশনে পরতে হবে না।আর বললি না,গল্পের কথা এটা তো জাস্ট পাঠকদের ইমপ্রেস করার জন্য,বলা হয়।এটাকে সিরিয়াস নেওয়ার কিছুই নেই।
___রায়হান-ঠিক বলছে জিসান।গল্প মানেই গল্প।গল্পে এমন হাজারো কথা লিখা হয় পাঠকদের আকর্ষণ করার জন্য।কিছু অবুজ গল্পকে অনেকটা সিরিয়াস নিয়ে নেয়।তোর এক্সগার্ল ফ্রেন্ডও এমন, মেয়েটা বুঝার দোষ। আর কিছু না।তুই ঠিকমতো বুঝিয়ে বলতি।অবশ্যই বুঝতো।
||
||

___গভীর ঘুমে তিশা,তাই হয়তো টেরও পায়নি জিসান যে কখন ওকে কোলে করে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিলো।কালো কালারের টি শার্ট আর প্লাজোতে আজ জিসানের চোখে তিশাকে অন্য রকম সুন্দর লাগছে।তিশা নড়াচড়া করে উঠলে,টি শার্টটি সরে গিয়ে সাদা পেটটা বের হয়ে যায়।জিসান তিশাকে ভালোবাসে সত্যেও কখনো খারাপ নযরে দেখেনি।নিজের ভালোবাসা আর চায়িদা কে একটা লিমিটের মধ্যে রেখেছে।কখনো ও সেই লিমিটা ক্রস করেনি।নিজেকে যথাসাধ্য কনট্রোল করার ক্ষমতা আছে,কিন্তু আজ কি হচ্ছে।এসি রুমেও জিসান ঘামছে।কেমন ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছে। তিশার সাদা পেটটা বিষন ভাবে আকর্ষণ করছে জিসানকে।না চাইতেও চোখ বার বার আটকে যাচ্ছে নাভীর সাথের তিলটার দিকে।
কখন যে জিসান তিশার অনেকটা কাছে চলে গেছে নিজেও জানে না।বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে পেটের তিলটা একটু ছুঁয়ে দিলো।ঘুমের ঘোরে কারো স্পর্শ পেয়ে তিশা আবার একটু নড়ে উঠলে,শার্টটি আরো একটু সরে যায়।জিসানের ধৈর্যের বাদ যেনো আজ ভেঙ্গে যাবে।মনের মাঝে বিশাল ঝড় ভয়ে যাচ্ছে।কখন কিভাবে জিসান নিজেও জানে না জিসানের ঠোঁট দুটো তিশার সাদা পেটটা ছুঁয়ে দিলো।
____অবশেষে মন আর ব্রেনের মধ্যে ব্রেনের জয় করে নিলো।জিসান বালকানিতে দাঁড়িয়ে সিগেরেটের ধোয়া ছাড়ছে।নিজেকে যথাসাধ্য শান্ত করার চেস্টা শুধু।আমি আমাদের বিশেষ রাতটা এভাবে করতে চাইনা জান।এতো বছরের অপেক্ষা আমার, তিল তিল করে গরে তোলা আমার রাজপ্রসাদের রানী তুই।আমাদের বিশেষ রাত হবে অনেক বিশেষ ভাবে। ঘুমন্ত তিশার মুখের দিকে তাকিয়ে, এই রানীর মনের কথা জানে রাজা তবুও মুখে শোনার প্রতিক্ষা।তোকে বলতে হবে জান,মুখে একবার।আমি শুনতে চাই তোর মুখ থেকে ম্যাজিক্যাল তিনটি ওয়ার্ড(I love u)...
কিছুক্ষণ পর হাতের সিগেরেট টা ফেলে দিয়ে,রুমে প্রবেশ করে এসির পাওয়াটা বাড়িয়ে তিশাকে নিয়ে কম্বলে ডুকে পড়লো।এসির হিম শীতল বাতাসে তিশার ঠান্ডা লাগলে,তিশা জিসানের সাথে আরো লেপ্টে যায়।জিসানও তিশাকে নিজের বাহুডোরে জরিয়ে কপালে একটা আদর দিয়ে দিলো।কিছুক্ষণের মধ্যেই রাজ্যের ঘুম জিসানের চোখে ভার করলো।
||
____নিশির ঘুম আজ তারাতারি ভেঙ্গে গেলো।তিশাকে পাশে না পেয়ে বুঝতে বাকি রইলো না,বান্ধবীকে কে কিডন্যাপ করেছে।সবাই সবার মতো খুশি,শুধু আমার গাধাটাই কিছু বুঝে না।এটাকে পটাতে পটাতে আমিই মনে হয় বুড়ি হয়ে যাবো।আর তখন সন্যাসীদের মতো গান গেয়ে বেড়াবো....
""বুড়ি হইলাম তোর কারনে।
পরানের বান্ধবরে,
বুড়ি হইলাম তোর কারনে।""
নিশি ফ্রেস হয়ে ছাদের দিকে যেতে নিলে,গেস্ট রুমের দিকে নযর পরে।রায়হান ভাইতো থাকার কথা।দেখিতো ফাজিলটা আছে নি।রুমের দরজা খুলে,আস্তে করে ভেতরে ডুকে।দিনের আলোয়ও ঘর অন্ধকারাচ্ছন্ন।বিছায়নায় কেউ উপুৎ হয়ে শুয়ে আছে।ব্যক্তিটা কে দেখার জন্য একটু সামনে গেলো।এখনো চেহারা দেখা যাচ্ছে না।তাই একটু ঝুকে দেখার চেস্টা করলো।হঠাৎ ঝড়ের গতিতে কেউ ওকে বিছায়নায় ফেলে কম্বলের মধ্যে নিয়ে খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।এতো দ্রুতো ঘটনাটা ঘটলো যে নিশি কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না।ওর ধ্যান ভাঙ্গলো কারো গভীর নিশ্বাস এসে নিশির ঘাড়ে বারী যখন খেলো।নিশি মাথাটা উঁচু করে বুঝার চেস্টা করে ব্যক্তিটা কে।তাকিয়ে দেখে রায়হান।নিশি যা ভেবেছে।
____নিশি কিছুটা বরফ হয়ে গেলো,কিছুক্ষণের জন্য।কারন রায়হানের এতো কাছাকাছি কখনো নিশির আসা হয়নি।রায়হান কেনো,আজ পর্যন্ত নিশি অন্য কোনও ছেলের পাশেও বসেনি।আজতো রায়হান ওর একদম কাছে।বুকের ভেতরের ছোট হার্ডটা দ্রুতগতিতে চলছে।শরীলে কেমন কারেন্ট লাগছে বার বার।কাপাকাপা হাতে রায়হান কে সরানোর চেস্টা করছে।নিশির নড়াচড়াতে রায়হান আরো শক্ত করে ধরে ঘাড়ে মুখ ডুবালো।উফফ,সুইটার্ট এতো নড়ছো কেনো।এমনেই তোমাকে কাছে পাইনা।বার বার পালিয়ে যাও।এখনতো একটু আদর করতে পারো। রায়হান নিশির ঘাড়ে ঠোট ছোঁয়ালো।নিশির গলা শুকিয়ে গেলো।রায়হানের ঠোঁটের স্পর্শে।হঠাৎ মনে পড়লো,রায়হান ঘুমে কাউকে আদর করছে।কিন্তু কাকে?
ওই কোন শাঁকচুন্নিকে স্মরণ করে ঘুমের মধ্যেই লুতুপুতু শুরু করেছে ।তোরে তো আমি.....নিশি খুব জোরেই রায়হান কে ধাক্কা দিলো।নিশির ধাক্কাধাক্কি তে রায়হান হালকা চোখ খুলে দেখে নিশি ওর পাশে।লাফ দিয়ে উঠে যায়।এই তুই এখানে কি করিস।আমি যা খুশি তা করি।আগে বলেন ঘুমের ঘোরে কাকে এতো আদর করে ডাকছেন।কে সে?নিশি রাগে কটমটিয়ে।রায়হান মাথাটা চুলকিয়ে কারো নাম নিয়েছি আমি।
হুমমম.....।
কককার?
সুইটহার্ট।
____রায়হান বিছানায় বসে যাক বেঁচে গেলাম এই যাত্রায়।বেঁচে গেলেন মানে।রায়হানের একদম কাছে এসে কে এই সুইটহার্ট।রায়হান ভ্রুকুচকে তোকে বলবো কেনো।যা এখান থেকে।এতো সকালে তোকে আমার ঘরে দেখলে কি মনে করবে সবাই।আমার সম্মানের ফালুদা হয়ে যাবে।ফালুদার গুষ্ঠিরে কিলাই।আমিতো একবার পেয়েনি এই সুইটহার্ট কে তারপর বুঝাবো নি।
কি করবি পেলে,ভ্রকুচকিয়ে।
___কি করব!কেটে টুকরোটুকরো করে,মরিচ লবন মেখে,রোদে শুকিয়ে কাকদের খেতে দেবো।এটা বলেই
নিশি হনহন করে চলে গেলো।
রায়হান হাফ ছেড়ে বাঁচলো।উফফ কি সাংগীতিক মেয়েরে।রায়হান,একটুর জন্য বেঁচে গেলি।এই মেয়ে যদি জানতে পারে তোর মনের কথা,তকে আঙ্গুলে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নাচাবে।সরি সুইটহার্ট এখনো সময় হয়নি বলার,সময় হলে আমিই বলে দেবো।
একটুতো অপেক্ষা করতে হবে তোকে।এই প্রেমটেম আমাকে দিয়ে হবে না।আমিতো তকে একেবারে বউ করে ঘরে তুলবো।তখন দেখবোনি এতো রাগ কোথা থেকে পাস।
||
||

___ঈদানিং রায়হান রুহি মেয়েটাকে নিয়ে বিশাল জামেলায় পরেছে।কথা নাই, বার্তি নাই হুটহাট রায়হানের সামনে চলে আসে।রায়হান যতোই এভোয়েড করার চেস্টা করে,মেয়েটা ওতোই গায়ে পরে।আজতো লিমিটই ক্রস করে ফেলেছে।রাস্তায় দাঁড়িয়ে গোলাপফুল দিয়ে রায়হান কে প্রপোজ করেছে।ভাগ্যিস রাস্তায় তেমন লোকজন ছিলো না।রায়হান ইচ্ছামত অনেকগুলো কথা শুনিয়ে দিয়েছে।রায়হানের অপমানে রুহির চোখে অশ্রু ছিলো না।ছিলো অন্যকিছু যা রায়হান দেখতে পায়নি।দেখলে বুঝতে পারতো কতো দ্রুতো একটা ঝড় আসছে তাদের দিকে।
অনেকদিন পর তিশা নিলুর বাসায় এলো।দুবান্ধবী বিছানায় শুয়ে সিলিং ফ্যানটার দিকে তাকিয়ে আছে।নিলু আবির ভাইয়া কিছু বলেছে।নিলু নিরবতা পালন করছে।কি হলো বল।তুই কেনো বলতে গেলি আবির ভাইকে তিশা।জানিস আজকাল তার সামনে জেতেও লজ্জা করে।আরে আমার লজ্জাবতী, আগে বল।সে কি বলছে।আবির ভাইয়ের বাবা মা আসবে কিছুদিন পর আমাদের এংগেজমেন্ট আর বিয়ের ডেট ঠিক করতে।সে নাকি সোজা বিয়ে করবে,প্রেমটেম করে কোন রিস্ক নিতে নারায।তাইনি এটা তো অনেক খুশির কথা।আর ফকিন্নি তুই আমাকে এতো ইন্টেরেসটিং খবর খালি মুখে শুনালি।আমার কিন্তু ডাবল ট্রিট চাই,তোর তরফ থেকে এবং আবির জিজুর তারফ থেকেও।দুবান্ধবী হেসে পুরো ঘর কাঁপিয়ে দিলো।এভাবে তিশা বেশ কিছুক্ষণ থেকে বাড়ীতে চলে আসলো।
___এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে গেলো।এর পর নিশি ও তিশার ভার্সিটির এডমিশন টেস্টের জন্য কোচিং শুরু হয়ে গেলো।দুজনেই সমান তালে পড়াশোনা শুরু করে দিলো,ভালো একটা কলেজে চান্স পাওয়ার লক্ষে।দিনগুলো ভালোই কাটছিলো তিশার।এরি মাঝে তিশার দাদী অসুস্থ হয়ে পড়লো।তাই ওর বাবাকে আর্জেন্ট গ্রামের বাড়ী জেতে হলো।তিশার মাও জেতে চাইলে তিশার বাবা মানা করে।কারণ তিশা একলা হয়ে পড়বে,তখন আবার জিসান তিশাকে নিজের বাড়ীতে নিয়ে যাবে,যা তার পছন্দ না।
||
দুবন্ধু কাক ভিজা হয়ে আজ বাসায় আসলো।রেনু বেগম দুজনকে এভাবে দেখে চিল্লাচিল্লি করতে লাগলো।তোরা কি বড় হবি না।এতো বড় ধামড়া ছেড়া দুটা এখন বৃষ্টি বিলাস করে আসছে।মা একদম না।আমরা ইচ্ছা করে করিনি।ফ্রেন্ডকে এয়ারপোর্টে ছাড়তে গিয়েছিলাম,কিন্তু জানোইতো এখন বৃষ্টির সিজন।আসার সময় তুমুল বৃষ্টি শুরু হলো।আমরা তো একটু দেখতে গাড়ী থেকে বের হলাম,বৃষ্টির স্বাদ কি আগের মতো আছে নাকি চেন্জ হয়েছে।জিসান হা করে রায়হানের দিকে তাকিয়ে আছে।কারণ রায়হান আবল তাবল বকছে।যা রেনু বেগম খুব ভালো করেই বুঝেছে।
___হয়েছে এতো নাটক করতে হবে না,তোদের মাংসের হাড়টাকেও আমি চিনি।তাই এই ড্রামা বন্ধ করে তারাতারি চেন্জ কর।তিশা এতোক্ষন ড্রয়িংরুম এ দাঁড়িয়ে ভাই আর জিসানের কান্ড দেখছিলো।রায়হান সোজা নিজের রুমে চলে গেলো।আর জিসান তিশার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।তিশা আড় চোখে একবার জিসানের দিকে তাকালো।ভেজা শার্টটা জিসানের বুকে কেমন যত্নে লেপ্টে আছে,ভিজা চুল থেকে এখনো শিশিরের বিন্দুর মতো পানি চুয়ে চুয়ে জিসানের গাল বেয়ে পড়ছে।তিশার এই বিন্দুকনার উপর খুব হিংসা হচ্ছে।জিসানকে এখনো ও একটু ছুতে পারিনি।অথচ দেখো এরা দিব্বি আমার বরকে কেমন আপন করে নিয়েছে।
জিসান তিশার চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে,এই যে ম্যাডাম।কোথায় আপনে।আছেন নাকি বিদেশ গিয়েছেন।তিশা একটু রাগ করে,কি হয়েছে।ম্যাডাম ঠান্ডা লাগছে।তাহলে আমি করবো,এই খুশিতে।জিসান একটু সামনে এসে বাকা হেসে,একটু গরম করে দিবি।তিশা এক পা পিছে দিয়ে,কক কি যা তা ববলছেন।জিসান নিজের লেপ্টানো চুলগুলো আঙ্গুল দিয়ে গুছাতে ব্যস্ত হয়ে, তুই দেখি অনেক কিছু বুঝিস।খামাখা আমি তোকে ছোট ভাবি।তিশা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে জিসানের দিকে তাকিয়ে আছে।
___রোমান্স পরে করিস,আগে রায়হানের রুম থেকে কিছু কাপড়চোপড় এনে দে।আমি তোর রুমে আছি।জিসান যাওয়ার পর তিশাও জিসানের জন্য কাপড় আর তোয়াল নিয়ে রুমে প্রবেশ করে দেখে জিসান খালি গায়ে দাঁড়িয়ে তিশার বুকশেলফ টা দেখছে।জিসানকে এমন ভাবে তিশা কখনো দেখেনি।তিশার শরীলটা বরফের মতো জমে গেলো।পকাপাকাপা পায়ে জিসানের দিকে গিয়ে তোয়ালটা এগিয়ে দিলো।
জিসান চেয়ারে বসে শান্ত হয়ে,মুছে দে।তিশা এবার পড়লো,মহাবিপদে।এই লোকটিকে এমনে দেখেই আমি জমে যাচ্ছি,এখন বলেকি মুছে দিতে।আমাকে খুন করার প্লানিং করে আসছে মনে হয়।
___তিশাএএ.....।
জিসানের মুখে আজ নিজের নামটা শুনেও কেপে উঠলো তিশা।এতো আবেগি কন্ঠে জিসান কখনো ডাকেনি তিশাকে।আজ কি হলো।
তিশা আর কিছু না ভেবে তোয়ালটা নিয়ে কাপাকাপা হাতে জিসানের মাথাটা মুছতে লাগলো।তিশার হার্ডটা এতো জোড়েই ধকধক করছে,মনে হচ্ছে জিসান নির্ঘাত আজ শুনে ফেলবে।জিসান বুঝতে পারছে,আজকাল যে ওর বউটা ওর উপর দূর্বল হয়ে পড়ছে।যেমন ও তিশার উপর।তিশার না বলা সব অনুভুতিগুলো সব জিসান বুঝতে পারে।জিসান তো চায়ই এটা তিশা জেনো ওর ভালোবাসার চাদরে জরিয়ে থাকুক।তিশা চাইলেও যাতে এই চাদরটিকে ছুড়ে ফেলতে না পারে।তিশার অবস্থা দেখে,মুচকি হেসে জিসান তিশার কোমড়টা জড়িয়ে ধরে।সাথে সাথে তিশার শরীলের পশমগুলো কাটার মতো দাঁড়িয়ে যায়।জিসান শুনতে পারে তিশার ঘন নিশ্বাসগুলো।যা প্রতিনিয়ত প্রমাণ দেয় তার বেঁচে থাকার।
রেনু বেগমের ডাকে দুজনেই চমকে যায়।জিসান তিশাকে ছেড়ে দেয়,আর তিশা দুকদম পিছে চলে যায়।জিসান কাপড়গুলো নেওয়ার বাহানায় তিশার গালে একটা কিস করে দেয়।জিসানের আচমকা এমন করায় তিশা শোকড হয়ে যায়।
সেদিন জিসান ডিনার করে তারপর বাড়ী যায়।
চলবে.

____তিশা ছাদে দাঁড়িয়ে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে,মনে আজ হাজারো প্রশ্ন উকি দিচ্ছে।আকাশে আজ চাঁদ তারা কিছু নেই,তবে আকাশ আজ ঘন কালো মেঘে ডাকা।ঠিক তিশার মনের মতো।চারদিকে শনশন করে বাতাস বইছে।সে বাতাসে তিশার চুলগুলো এলোমেলো ভাবে উড়ছে তিশার জীবনটার মতো।তিশা ভাবনাহিন ভাবে এখনো দাঁড়িয়ে আছে।হঠাৎ চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।মনের কস্টগুলো আর ভেতরে আটকে রাখতে পারলো না।কান্না করতে কারতে ছাদে বসে পড়লো।আকাশে বিজলি চমকিয়ে বৃষ্টি পড়তে লাগলো।বৃষ্টির পানির সাথে তিশার চোখের পানিও একসাথে মিশে গেলো।কাঁদতে কাঁদতে একসময় তিশা ছাদের ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লো।কখন যে জ্ঞান হারালো নিজেও জানে না।
রায়হান তিশাকে ঘরে খুঁজে না পেয়ে ছাদের দিকে এসে দেখে তিশা ফ্লোরে পরে আছে সেন্সলেস হয়ে।বৃষ্টির পানিতে অনেকক্ষণ ভিজার কারণে শরীল কেমন সাদাটে হয়ে গিয়েছে।তিশাকে ধরতে নিলে বুঝে, গায়ে বিষন জ্বরও এসে পড়েছে।রায়হান তারাতারি করে বোনকে পাঁজাকোলে নিয়ে ঘরে ডুকেই রেনু বেগমকে ডাকতে লাগলো।রেনু দৌড়ে তিশার রুমে ডুকে অবাক হয়ে যায়।রায়হান তিশার হাত গুলো ঢলতে ঢলতে মা ওকে তারাতারি চেন্জ করে দেও।বৃষ্টি তে ভিজার কারণে জ্বর এসে পরেছে।আমি দেখি কোথাও ডাক্তার পাইনি।
____ঘড়িতে ১০টা ছুঁই ছুঁই।জিসান আধো শুয়ে লেপটপে কাজ করছিলো।হঠাৎ তাওহিদ তড়িৎ গতিতে রুমে প্রবেশ করে।জিসান অবাক দৃষ্টিতে কি হয়েছে ভাই,সব ঠিক আছেতো। তোর ফোন কোথায়।আছে হয়তো কোথাও কেনো।রায়হান কতবার ফোন দিয়েছে জানিস।জিসান ফোনটা খুঁজে চেক করে দেখে ৩০+ মিস কল।জিসান ফোন দিতে নিলে,তাওহিদ থামিয়ে বলে।কথা বলার সময় নেই।এখনি যেতে হবে।জিসান ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কোথায়?কোথায় আবার রায়হানদের বাসায়,তিশার নাকি অনেক জ্বর।জ্বরে সেন্সলেস হয়ে গিয়েছে। বাহিরে যে ঝড় হচ্ছে কোথাও কোনও ডাক্তার পাওয়া যাবে না।তবে আমি একজন লেডি ডাক্তার এর সাথে কথা বলে নিয়েছি।পথে উনাকে পিক করে নেবো।তাওহিদ বের হতে নিয়েও থেমে যায় কি হলো জিসান চল।এখনকার ফিভার একদম ভালো না।পরে আবার দেরি না হয়ে যায়।
এতোক্ষন জিসান মনে হয়,কোন ধ্যানের মধ্যে ছিলো।তাওহিদ এর কথায় চমকিয়ে যায়।বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি সাথে ঝড়ও।বৃষ্টি ভিজা এই রাতে ফুল স্প্রিড বাড়িয়ে গাড়ী চলছে তিশাদের বাড়ীর উদ্দেশ্যে।গাড়ীটি শুধু একবার থেমেছে ডাক্তার ফারজানা কে নিতে।
____ড্রয়িংরুমে জিসান, তাওহিদ আর রায়হান বসে আছে।অংকেল নেই রায়হান।নাই ভাইয়া,বাবা দাদাীকে দেখতে গ্রামে গিয়েছে।ওওও!
আর জিসান রাগি চোখে রায়হানের দিকে তাকিয়ে,বাড়ীতে এতোগুলো মানুষ থাকতে ওর এমন অবস্থা হলো কি করে রায়হান।রায়হান করুন চোখে,আজকের ঘটনায় এমনেই খুব রেগে ছিলাম।কোনও খোঁজ ও নি নাই সারাদিন ঠিক মতো।আর আজ বাসাও লেট করে এসেছিলাম।তিশার রুমের দরজাটা খোলা দেখে চেক করে দেখি ও রুমে নেই।বাসায় তিশাকে না পেয়ে, খুঁজতে গিয়ে ওকে ছাদে পেলাম।অনেকক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজার কারণে গায়ে জ্বর এসে সেন্সলেস হয়ে গিয়েছে।আমারি দোষ ছিলো এতোটা কঠোর হওয়া ঠিক হয়নি।জিসানও চুপ হয়ে বসে আছে কি বলবে বুঝতে পারছে না।তাওহিদ হঠাৎ বলে উঠলো,সমস্যা কি বলতো।দেখ তোদের চেয়ারা বলে দিচ্ছে কিছু একটা হয়েছে।আমাকে সব খুলে বল।প্লিস।এর পর জিসান সব বলে ভাইকে।
___আর ইউ মেড জিসান।তুই এমন আচরণ করলি কি করে মেয়েটার সাথে।ওকে কি তুই নতুন চিনিস।ছোট থেকে দেখে আসছিস।প্রত্যেকটা সম্পর্ককে যথেস্ট রিসপেক্ট করে।এমনকি তুই যখন বিদেশ ছিলি তখনো ও তোর কথা চিন্তা করে অন্য কোনও রিলেশনে নিজেকে জড়ায় নি।আর আমিতো শুনেছি তুই নাকি ওর পিছে জাসুস লাগিয়ে রেখেছিলি।তাহলে ও এসব করলে কি তোর কানে একবারও যেতো না।নিজের জিদটা সবসময় এই বাচ্চা মেয়েটার উপর চাপিয়ে দিয়েছিস।একবার কি জানতে চেয়েছিস ও কি চায়।
জিসান আজ চুপ,ভাইয়ের কোনও কথার আজ জবাব নেই।সত্যিই তো,আমি কখনো জানতেই চাইনি তিশার থেকে, ও আমার সাথে আসলেই থাকতে চায় কিনা।ওর ইচ্ছা অনিচ্ছাগুলো।
____ডক্তার ফারজানাকে রুম থেকে বের হতে দেখে তিনজনেই দাঁড়িয়ে যায়।তাওহিদ কে উদ্দেশ্য করে বলে,স্যার ফিভারটা বেশি।মনে হয় অনেকক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজেছে।আর পেশেন্ট খুব দূর্বল মনে হয় সারাদিন পেটে কিছু যায়নি।একথা শুনে জিসান রায়হানের দিকে তাকালো,আর রায়হান বোনের প্রতি নিজের দায়িত্ব অবহেলার জন্য বিষন অনুতপ্ত।আমি ইনজেকশন দিয়ে দিয়েছি।সারারাতও পেশেন্ট জাগবে না।কাল একবার হসপিটালে নিয়ে আসবেন।কিছু টেস্ট করে ফেলা ভালো।ওকে ডক্তার এবং ধন্যবাদ এই সময় আসার জন্য।
কি বলছেন স্যার,এটা তো আমার ডিউটি।আচ্ছা জিসান,আমি ডাক্তার কে পৌছে দিয়ে আসি।
ভাই তুমিও বাসায় চলে যাও।ভাবি আর তারিন একা।আমি এখানে সামলিয়ে নেবো।বাসায় এসে তোমার সাথে কথা হবে।তাওহিদ ও মাথা নেড়ে,ওকে।তাওহিদ চলে গেলো।
||
___রায়হান ও জিসান দাঁড়িয়ে আছে তিশার রুমে।তিশার মা মেয়ের মাথায় জল পট্টি দিতে ব্যস্ত। তিশাকে এই অবস্থায় দেখে এই দুব্যক্তির রুহ যেনো কেঁপে উঠছে।
জিসান মনে আছে একবার তিশার ছোটবেলায় নিউমোনিয়া হয়েছিলো।হুমম,ওটা ভুলার মতো ছিলো না।ছোট্ট তিশার ছটফটানি দেখে তুইতো কেঁদেই দিয়েছিলি।(জিসান)
তুইও কি কম করেছিস।পুরো হসপিটালকে মাথায় তুলে ফেলেছিলি।তোর অত্যাচারে রাত দিন ডাক্তার তিশার সেবা করতে লেগে পরেছিলো।আর যেদিন ডিসচার্জ হয়ে বাসায় আসছিলাম।(রায়হান)
হুম,পেছন থেকে ডাক্তারা বলে উঠল,আমাদের যাতে এই হসপিটালে কেউ দ্বিতীয় বার ডুকতে না দেয়।জিসান হালকা হেসে বললো।
____এর পরেই তো তোর জিদের কারণে আংকেল এতো বড় হসপিটাল খুলে ফেললো।সেদিনের পর থেকে তিশাকে কখনো এতো ঠান্ডা লাগতেই দেইনি।আগলে আগলে রেখেছি।আজ দেখ একটু চোখের আড়াল করায় বোনটি আমার কি অবস্থা করেছে নিজের।রায়হানের চোখ দুটো ছলছল করছে।আর একমিনিটও এখানে থাকা সম্ভব না ওর পক্ষে।তাই ও চলে গেলো।
তিশার হাতটি ধরে বসে আছে জিসান।জ্বর কিছুটা কমেছে।তবে ইনজেকশনের কারণে তিশা ঘুমিয়ে আছে।হাতের উল্ট পিঠে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ালো জিসান।হাতটি শক্ত করে ধরে,এই মেয়ে তোর সাহস কি করে হলো।নিজেকে কষ্ট দেওয়ার।তুই কি জানিস না,তোর নিজের প্রতি কোনও অধিকার নেই।তোর সব আমার,তাহলে আমার তিশাকে কষ্ট দেওয়ার তুই কে?বল তুই কে?
____আমার তিশাকে কস্ট দিলে আমি কিন্তু তোকে আস্ত চিবিয়ে খেয়ে ফেলবো।শুনছিস আর কোনও দিন স্পর্ধা ও করবি না,এমন করার।এই মেয়েটার মাঝে আমার হদ্রপিন্ডটা পড়ে আছে।ওর কিছু হলে ওটাও যে অকেজো হয়ে পড়বে।তা কি বুঝিস না।ওর ভেতরে আমার প্রাণটা লুকিয়ে আছে।তাহলে কেনো করলি।তুই কি ভেবেছিস আমি তোকে বিশ্বাস করিনা,ভুল বুঝেছি।গর্দভ মেয়ে,আমার ভালোবাসা এতোটা ছোটনা যে সামান্য ঝড়ে উড়ে যাবে।আমি জানি,তুই এমন কিছুই করবি না,যেটাতে আমার কস্ট হবে।
আমার বিশ্বাসও কখনো তুই ভাঙ্গবিনা আমি জানি।জিসান হাতটিতে আরো একটা চুমো দিয়ে বুকের সাথে চেপে ধরলো।নিরবে কিছু চোখের জল তিশার হাতে পড়লো।
||
||

___এটা কেনো করলি তুই।একবার আমাদের কথা চিন্তা করলি না।
সরি ভাই,ইচ্ছা করে করিনি।সত্যিই!কখন যে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছি বুঝতে পারিনি।
___সারাদিন না খেলেতো এমন হবেই।রায়হান তুই বস আমি এখনি খাবার নিয়ে আসছি।রেনু বেগম চলে গেলো,খাবার আনতে।জিসান এখনো দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো।
____তিশা ভাইয়ের সাহায্যে উঠে বসলো।রেনু বেগম খাবার নিয়ে রায়হানের হাতে দিয়ে সে চলে গেলো সকালের নাস্তা রেডি করতে।তিশা এখনো জিসানকে দেখেনি।তাই রায়হান কৌশলে জিসানকে ডাকলো।জিসান তুই একটু খাইয়ে দে।আমি ওর মেডিসিন গুলো নিয়ে আসি।তিশা চকিতে দরজার দিকে তাকালো।রায়হানের মুখে কাল রাতের সব শুনে তিশা একটু আশ্চর্য হলো।কারণ তিশা জানে জিসান রেগে আছে ওর উপর। হয়তো বিশ্বাসও করেনা ওকে।তিশাতো ধরেই নিয়েছে,জিসান হয়তো ভুল বুঝে দূরে সরিয়ে দেবে।
জিসান কিছু একটা ভেবে খাবারটা তিশার মুখের সামনে ধরলো।কালকের ঘটনার পরও জিসানকে নিজের কাছে পেয়ে তিশার চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো।খাবারটা মুখে দেওয়ার সাথে সাথে চোখ বেয়ে জলগুলো গড়িয়ে পড়লো।জিসান চোখ দুটো মুছে,আর একটা জলও যাতে না পড়ে।দাঁতেদাঁত চিপে।এখনো কিন্তু কিছু ভুলি নেই আমি।তিশা ভয়ে চোখের পাপড়ি গুলো নেড়ে জল আটকাতে চেস্টা করছে।আজ তো জিসানের ধমকটার মাঝেও ভালোবাসা খুঁজে পাচ্ছে তিশা।
___রায়হান মেডিসিন নিয়ে এসে তিশাকে খাইয়ে দেয়।রায়হান তুই ওকে হসপিটালে নিয়ে ফারজানা ম্যাডাম কে দেখিয়ে আসিস।আর টেস্টগুলো করে ফেলিস।তিশার দিকে একবার তাকিয়ে আমার এখন জেতে হবে।নাস্তা করে যা,নারে দেরি হয়ে গিয়েছে।আরেক দিন।বায়।জিসান চলে গেলো।আর তিশা জিসানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়লো।রায়হান বুঝতে পারে তিশার মনের অবস্থা। তাই তিশার মাথায় হাত দিয়ে সব ঠিক হয়ে যাবে চিন্তা করিস না।এখন একটু রেগে আছে,ওকে একটু সময় দে।
||
বিকেলে নিশিও আসে তিশাকে দেখতে।তিশা এখন অনেকটাই সুস্থ।
তুই ভাইকে বলে দিস না কেনো।তিশা অবাক হয়ে, কি বলবো।তিশার গাল দুটো টেনে,তুই যে ভাইয়ের প্রেমে পড়েছিস,তাও আবার গভীর ভাবে।
কি সব বলছিস আজেবাজে। তোর ওই হিটলার ভাইকে ভালোবাসতে যাবে কে।যখন তখন হিটলারগিরি শুরু করে।রাগ তো নাকের উপর থাকেই,এখন শুধু একটা চাবুক দিলেই হয়ে যাবে।
আজকাল চাবুকের ট্রেন্ড আছে নি, ভাই নিলে চাবুক না পিস্তল নিবে।অবশ্য ভাইয়ের কিন্তু লাইসেন্স করা পিস্তল আছে।
কি বলিস,তোর ভাই ওটা দিয়ে কি করে।
কি করে মানে যারা ভাইয়ের কথা শুনে না,তাদের শুট করে।তিশা ফ্যালফ্যালিয়ে নিশির দিকে তাকিয়ে আছে।সত্যি কি জিসান এমন করে,তিশার ভয় তিশার চেহারায় ফুটে উঠেছে।তিশার ফেসটা দেখে নিশি হা হা করে হেসে দেয়।তিশা বুঝতে পারে ওকে বোকা বানানো হচ্ছে,তাই হাতের বালিশটা দিয়ে নিশিকে মারতে থাকে।
____নিশি এবার সিরিয়াস হয়ে,দেখ তিশা,সত্যি বলছি।আমার এবার মনে হয় তোকে জিসান ভাইকে বলে দেওয়া উচিৎ। এভাবে আর কতোদিন। ভাই তোকে অনেক ভালোবাসে।আর কতোদিন ভাইকে কস্ট দিবি।নিজেও কস্ট পাচ্ছিস,সাথে আমার ভাইকেও কস্ট দিচ্ছিস।সময় থাকতে নিজের প্রিয় জিনিসটিকে গুছিয়ে নে,তা না হলে দেরি হয়ে যাবে।তখন আফসোস ছাড়া কিছুই জুটবে না কপালে।
তিশা বিষণ্ণ মনে নিচের দিকে তাকিয়ে,সে আমার উপর রাগ,বিষন রাগ।তাতে কি,যাকে আমরা সবথেকে বেশি ভালোবাসি তার উপর রাগ করার অধিকারও করি।আর একবার বলে দেখ,তার পর দেখি রাগ করে থাকে কিভাবে।নিশির কথায় তিশা যুক্তি পেলো,তিশার মনও এতে সায় দিলো।এর পরই তিশা পড়লো ভয়ানক বিপদে,কিভাবে হিটলারের সামনে দাঁড়িয়ে বলবে......
এই যে মিস্টার আমি আপনাকে ভালোবাসি।আপনি কি আমার প্রোপজালটা একসেপ্ট করে নিজেকে ধন্য করবেন।আমি কিন্তু ওয়েট করতে পারবো না আপনার জন্য।তারাতারি একসেপ্ট করুন।তাহলে চুটিয়ে প্রেম করতে পারবো।কি বলেন মশাই।
___কিন্তু তিশা চিন্তিত, কালকের ঘটনার পর থেকে তো উনি আমার সাথে কোনও কথা বলছে না।তাহলে কি কালকের মিথ্যাটাকে উনি সত্য মনে করেছে।আমার প্রতি কি উনার এখন আর কোনও বিশ্বাস নেই।ভাবতেই তিশার চোখ দুটো দিয়ে জল বেয়ে পড়লো।তাহলে কি আমি কি তাকে পাওয়ার আগেই হারিয়ে ফেলেছি।
||
||

জিসান অফিসে কাজ করছিলো।এমন সময় সোম এসে বললো,স্যার ভোরের আলো পত্রিকার সম্পাদক মিঃ মাহম্মুদ আপনার সাথে দেখা করতে চায়।জিসান কপাল কিঞ্চিত কুঁচকিয়ে কেনো।আমি জানিনা স্যার,তবে তার নাকি আপনার সাথে দেখা করা খুব ইম্পোরটেন্ট, সে আপনাকেই বলবে। জিসান চেয়ারে হেলান দিয়ে কিছুক্ষণ ভেবে,ওকে পাঠিয়ে দেও।
___সোম লোকটিকে নিয়ে কেবিনে প্রবেশ করে।হ্যালো মিস্টার জিসান আহমেদ। আমি তাসরিফ মাহম্মুদ।জিসান হ্যান্ডসেক করে,হ্যালো।বসুন,আর বলুন আপনার জন্য আমি কি করতে পারি।আমি আমার জন্য না, আপনার জন্য এসেছি মিঃ জিসান।
জিসান অবাক হয়ে আমার জন্য।
জি,হাতের একটা খাম জিসানের দিকে দিয়ে এটা আপনার জন্য।
জিসান কিছু একটা ভেবে, ওটা হাতে নিলো।কারণ ভোরের আলো একটা নামকরা পত্রিকা এখন।আর সেই পত্রিকার সম্পাদক নিজে এখানে আসছে,নিশ্চই কোনও ছোটখাটো বিষয় হবে না।
____কিন্তু খামটি খুলে জিসান যা দেখলো এতে সাথে সাথে জিসানের মাথার পাশের রগ গুলো ফুলে যায়।চোয়াল শক্ত করে তাসরিফ মাহম্মুদ এর দিকে তাকিয়ে, এসব কি?
আপনে যা দেখতে পাচ্ছেন মিঃ জিসান।
___নিজেকে অনেকটা শান্ত দেখাতে ব্যস্ত জিসান।সামনে বসানো লোকটির মনের কথা বুঝতে চেস্টা করছে।কি চাই আপনার।
এবার লোকটি একটা প্রশস্ত হাসি দিলো,আই লাইক ইট মিস্টার জিসান।সোজা ম্যান পয়েন্ট এ এসে পড়েছেন।একচুয়েলি কে এই ছবি পাঠিয়েছে আমি জানি না,তবে ছবিগুলোতে মেয়েটার পিক দেখে বুঝতে সময় লাগেনি,মেয়েটি যে বিজনেস টাইকুন মিস্টার জিসান আহমেদ এর নাবালিকা ওয়াইফ।ছবিগুলো সত্য কি মিথ্যা কেউ যাচাই করবে না।সকালের চায়ের সাথে পাবলিক এমন গরম খবর পেতে খুব পছন্দ করে।এতে আমার খবরের কাগজের চায়িদাও দ্বিগুন বেড়ে যেতো।কিন্তু আমি আমার ক্ষতি করে আপনার কথা চিন্তা করেছি।তাইতো আমার এখানে আসা।
___জিসাব তীক্ষ্ণা দৃষ্টিতে মাহম্মুদ এর দিকে তাকিয়ে কথা গুলো হজম করছে।এরপর পঞ্চাশ লাখ টাকার একটা চেক সাইন করে মিস্টার মাহম্মুদের দিকে দিলো।মি:মাহম্মুদ এর হাসিটা তখনকার থেকে বেশি প্রশস্ত হয়ে গেলো।চেকটা নিয়ে উঠতে নিবে তখনি জিসান বলে উঠলো।
মিঃ মাহম্মুদ জানেন এই চেকটি কেনো দেওয়া হয়েছে।জিসানের কথা শুনে মিঃ মাহম্মুদ কনফিউজড হয়ে গেলো।আপনে কি মনে করেছেন,ছবিগুলো পত্রিকায় না দিয়ে আমার কাছে এনে আমাকে উপকৃত করেছেন।তাহলে শুনুন,আপনে এমনিও ছবিগুলো পাবলিস করতে পারতেন না।কারণ আমার ওয়াইফের ছবি এবং তাকে নিয়ে কোনও কথা মিডিয়া বা ওনলাইনে পাবলিস করা BAN করে রেখেছি আমি ।এর পরও ছবি পাবলিস হলে,তার অবস্থা কি হবে তা অবশ্যই আপনাকে বলতে হবেনা।জিসান চেয়ারে আরাম করে বসে পায়ের উপর পা তুলে।জানেন আপনাকে টাকা টা কেনো দেওয়া হয়েছে।মাহম্মুদ মাথা নাড়ায় না।আপনে যে ছবিগুলো আমাকে এসে এতো কস্ট করে দিয়ে গিয়েছেন তার জন্য।আর বুঝতেই পারছেন,ফেক হক বা আসল আমার ওয়াইফের সাথে জরিত সব কিছু আমার জন্য অনেক মূল্যবান।আশা করি আপনার ক্ষতি পূরণ হয়ে গিয়েছে।নাউ গেট আউট।
___জিসান ছবিগুলোর দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ছবিগুলোতে তিশা এবং তিশার সাথে আরো এক ব্যক্তি।যাকে তিশা জরিয়ে ধরে আছে,কোনও ছবিতে হাত ধরে বসে আছে।কোনও ছবিতে একজন আরেকজন কে খাইয়ে দিচ্ছে।জিসান ছবিগুলোর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে সোমকে কল করলো।জি স্যার।সোম খোঁজ নিয়ে দেখো আরও কোনও পত্রিকা অফিসে তিশার ছবি পাঠানো হয়েছে কিনা।ফেসবুক,টিউটার সব জায়গায় নযর রাখতে বলো আমাদের সাইবার টিমদের। কোথায়ও কোনও ত্রুটি যাতে না হয়।কিছুতেই এ ছবিগুলো যেনো পাবলিস না হয়।আর এটা কার কাজ সেটাও আমি জানতে চাই দ্রুতো। তুমি অবশ্যই জানো এখন তোমাকে কি করতে হবে।
ইয়েস স্যার আমি দেখে নিবো সব কিছু।আপনে টেনশন নিয়েন না।
||
সোমের সাথে কথা বলেই,জিসান অফিস থেকে বের হয়ে গেলো।পথে রায়হান কেও নিয়ে নিলো।
কি হয়েছে,জিসান।আমি খুব ইম্পোরটেন্ট মিটিং রেখে চলে এসেছি,এতো কি আর্জেন্ট বলতো।জিসান হলুদ রং এর খামটি রায়হানের দিকে এগিয়ে দিলো।খামটি খুলে রায়হান স্থব্ধ হয়ে গেলো।কোনও কথা যেনো মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না।এটা কিভাবে হতে পারে।তিশা কখনো এমন করতে পারেনা জিসান।আমার বিশ্বাস হয়না।কে এই ছেলে,ওকে তো কখনো তিশার সাথে দেখিনি আমি।
___আবির!আভ্রাম হোসেন আবির।তুই চিনিস ছেলেটাকে।হুম,ইভেন তিশাও চিনে।ওয়াট!কি করে,আর কে?নিলার কাজিন।কয়েকমাস আগে এই ছেলেটার সাথে তিশা কাউকে কিছু না বলে একটা রেস্টুরেন্ট এ দেখা করতেও গিয়েছিলো।সেদিন কোইন্সিডেন্টলি আমিও ছিলাম ওখানে।সেদিনই দেখেছিলাম।কিন্তু তিশা বলছে,ওদের মধ্যে এমন কিছু নেই।
রায়হান রেগে,আমাকে আগে বলিস নি কেনো।আর কিছু না থাকলে,এসব কি।কথা বলতে বলতে গাড়ী রায়হানদের বাড়ীর সামনে এসে পড়েছে।সেটাতো তোর বোনই বলতে পারবে।কিন্তু একটা কথা মনে রাখিস এটা সত্য হলে তোর বোনকে আমার থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।রায়হান এটারই ভয়ে ছিলো।এই ছবিগুলো তে বিন্দুমাত্র সত্যতা হলে,জিসান তিশাকে ছাড়বে না।আল্লাহ রহমত করো।
_____ড্রয়িংরুমের সোফাতে বসে তিশা গালে হাত দিয়ে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদছে। কারন একটু আগে রায়হান ঠাস করে তিশার গালে একটা চড় দেয়।ঘটনাটা আকষ্মিক হওয়ায়,জিসানও হতোবম্ভ হয়ে যায়।রায়হানের এমন কান্ডে,রেনু বেগমের মেঝাজ গরম হয়ে গেলো।রাহানকে সে কখন ধরে বকতে লাগলো।
মা তুমি জানো না তোমার আদরের মেয়ে কি করেছে।কি করেছে।রায়হান মায়ের হাতে ছবিগুলো দিলে,ছবিগুলো দেখে রেনু বেগম ও কেমন চুপ হয়ে গেলো।তারতো বিশ্বাসই হচ্ছে না,তার মেয়ে এমন কিছু করবে।এদিক দিয়ে মায়ের হাত থেকে ছবিগুলো নিয়ে দেখতে লাগলো তিশা।ছবিগুলো দেখে তিশাও শোকড।
____এ এএসব মিথ্যে ভাইয়া।এ ছবিগুলো সত্য না।সত্য না রায়হান আবার তেড়ে আসলে,তিশা মায়ের পিছে ভয়ে লুকিয়ে যায়।কিন্তু তিশার কান্নায় রায়হান চুপ হয়ে যায়।মাথায় হাত দিয়ে সোপায় বসে পরে।জিসান শুধু তিশার দিকে তাকিয়ে আছে,কিছু বলছে না।এতোক্ষন পর তিশাও জিসানের দিকে তাকালো।জিসানের চোখের দিকে তাকাতেই তিশা কেঁপে উঠেলো।ভয়ে মায়ের পিছে নিজেকে আড়াল করে ফেললো।
সামনে আস,তোর সাথে কথা আছে।জিসানের ডাকে তিশার শরীল নিস্তেজ হয়ে পড়ছে।জিসানের ডাকেও যখন তিশা মায়ের পিছন থেকে সামনে আসলো না, তখন জিসানের ভুবন কাপানো ধমকে জিসানের সামনে এসে দাঁড়লো।জিসান তিশার হাতটা শক্ত করে ধরে তিশার রুমে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।তিশার মাও পেছন পেছন দৌঁড়ে আসলো।কারণ জিসানের রাগ সম্পর্কে খুব ভালো করে জানে।দরজা ভেতর থেকে লাগিয়ে দেওয়ায় সাহস পেলো না,ধাক্কা দেওয়ার।
||
||

কি হলো কথা বলছিস না কেনো চেঁচিয়ে।
জিসানের ধমকে তিশা আরো কেপে উঠে।মাথা নাড়িয়ে বলে,হ্যা।
কি সম্পর্ক তোর সাথে।তিশা কান্না করতে বলে,কোনও সম্পর্ক নেই।আর এই ছবিগুলো সব মিথ্যে।আবির ভাইয়ের সাথে আমি মাত্র সেদিনই একা দেখা করেছি।এর আগে শুধু আমার নিলুর বাসাই দেখা হতো।টুকটাক হায় হ্যালো ছাড়া তেমন কথা হতো না।
জিসান বলে উঠলো,আর।আর কোনও কথা থাকলে বলে দে,আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারলে জানিস তো কি হবে।দাঁতেদাঁত চেপে।
____তিশার কেনো জানি গলা শুকিয়ে আসছে।কথাও মুখে আটকে আটকে যাচ্ছে।জিসান এক গ্লাস পানি নিয়ে তিশার সামনে ধরলো।তিশা কাপাকাপা হাতে গ্লাসটি নিয়ে পানিটি এক ডোকে খেয়ে ফেললো।
এবার বল।
এ এএকচুয়েলি আ আরো এএক টা কথা সসেদিন ববলিনি।
জিসান রেগে ত্যারে এসে তিশার গালটা চেপে ধরে।কথা বলতে এতো কস্ট হয় কেনো তোর। আর কি কি লুকিয়েছিস আমার সাথে বল।জিসানের চেপে ধরা অবস্থাই বলতে থাকে।আআবি র,ভাই যযে মমেয়ে টি কে পছন্দ করতো,ওটা আ আমি ছিলাম।
||
জিসানের এবার রাগ যেনো সাত আসমানের উপর উঠে গেলো।দাঁতেদাঁত চেপে, তাহলে সে দিন তুই নিজের আশিকের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলি।আর আমাকে মিথ্যে বলেছিস।জিসান তিশাকে ছেড়ে।নিজের হাত দুটো মুঠো করে রাগটা নিয়ন্ত্রণ করার চেস্টা করছে।আমি আপনাকে কোনও মিথ্যে বলিনি।শুধু এতোটুকু সত্য লুকিয়েছি।এছাড়া সব সত্য।আর এখনতো নিলার বিয়েও আবির ভাইয়ের সাথে ঠিক হয়ে গিয়েছে।আবির ভাই......তিশা আর কিছু বলার আগেই জিসানের পাঁচ আঙ্গুলের ছাপ পড়ে গেলো তিশার গালে।থাপ্পড় টা এতো জোড়েই ছিলো যে তিশা ছিটকে বিছানায় পড়ে গেলো।
____জিসান হাত ধরে তিশাকে আবার দাঁড় করায়।তিশার দুবাহু খুব শক্ত করে চেপে ধরে,কি মনে করিস নিজেকে খুব চালাক তাই না।আমাকে তো তোর মানুষই মনে হয় না। কুকুরের মতো তোর আগে পিছে ঘুড়ে বেড়াই অথচ আমাকে দেখারও তোর সময় নেই।জানিস চারটা বছর আমি প্যারিসে কিভাবে থেকেছি।রাতের আধারে আমার চোখের জলটি কেউ দেখেনি।তোর কথা মনে পড়লেই বুকের মাঝের ব্যাথাটা কেউ অনুভোব করেনি।তোর সাথে একটু কথা বলার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা ওয়েট করেছি।কিন্তু তোর জীবনে তো আমার কোনও ইম্পোরটেন্টই ছিলোনা।তাহলে কথা বলবি কেনো।ঠিকতো।
তিশার কান্নার মাত্রা যেনো আরো বেড়ে গেলো।জিসানের সব কস্ট গুলো তখন না বুঝলেও এখন তিশা বুঝে।কারণ দুটো মনতো কবেই এক হয়ে গিয়েছে।জিসানের দিকে করুণ দৃষ্টি দিয়ে,আম সরি।আমি জানি না বুঝে আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি,প্লিজ ফোর গিভ মি লাস্ট টাইম।
___জিসান তিশাকে ছেড়ে দিয়ে,দুকদম পিছে চলে যায়।জিসানের এভাবে যাওয়াটা তিশার ঠিক মনে হলো না।জিসান প্যান্টের পকেটে হাত দুটো রেখে,একটু হাসি দিয়ে,মাথাটা নিচু করে।আমি হেরে গেছি তিশা।
(কিন্তু এই হাসির পেছনের কস্টটা আজ তিশা জানে।)
এই জিসান আহমেদ আজ পর্যন্ত কারো কাছে হারেনি,কিন্তু তোর কাছে হেরে গেলাম।কি অদ্ভুত তাই না।আমার এতো বছরের ভালোবাসাও তোর মনে জায়গা করতে পারেনি।তাহলে তোর মনেতো আমার বসবাস কখনো হবেই না।আমিই পাগল, তোকে পাওয়ার জন্য এতোটাই এগ্রেসিভ ছিলাম যে ভুলেই গেছি জোড় করে ভালোবাসা হয়না।কিছুক্ষণ নিরব থেকে ।
ভালো থাকিস, জিসান তোকে আর জ্বালাবে না।
জিসান চলে গেলো।আর তিশা ফ্লোরে বসে পড়লো।
____আমি জানি আমি আপনাকে অনেক কস্ট দিয়েছি জিসান।কিন্ত দেখুন আজ আমিও কস্ট পাচ্ছি।ভালোবাসার কস্ট জিসান।কেনো বুঝেন না,আমিও তো ভালোবেসে ফেলেছি আপনাকে।
আপনাকে ছাড়া এখন বাঁচা আমার পক্ষে সম্ভব না।আমি মরে যাবো জিসান।আমি মরে যাবো।প্লিজ আমাকে একটু বিশ্বাস করুন।আমি আপনাকে ধোকা দি নাই।জিসানএএএএ....তিশা চিৎকার দিয়ে মাটিতেই শুয়ে পড়লো।
চলবে।
[একমাসে তিনটা আইডি, ডিসেবল হবার খুশিতে গল্পটা একদিন আগেই দিয়ে দিলাম।একমাত্র গল্পের কারণে আমার আইডিগুলোর করুন অবস্থা। তবুও পাঠক খুশি থাকুন।তবে আজকের পর্ব অনেকের কাছে হয়তো ভালো লাগবে না।গল্পের সব পার্ট যে মজার হতে হবে এমন না।গল্পকে আগে বাড়াবার জন্য রাইটারকে অনেক কিছু ভাবতে হয়।গল্প তার নিয়ম অনুসারেই আগাবে।আর যাদের মনে হচ্ছে গল্পটা একগেয়ামি লাগছে,তাদের বলবো।ইগনোর প্লিস।
বানান ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টতে দেখবেন।ধন্যবাদ]\

___স্যার, ইয়েস সোম।সব কি রেডি করেছো।ক্লাইন্টরা কিন্তু যেকোনও সময় এসে পড়বে।ইয়েস স্যার ওল সেট।সোমকে এখনো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে,জিসান বলে উঠলো।কিছু বলবে সোম।সোম হিচকিয়ে উঠলো।না মানে স্যার।জিসান হেসে,বলো সোম।আমি জানি তুমি খুব চিন্তিত।
একচুয়েলি স্যার আপনে তো সত্যটা জানেন,তাহলে ম্যাডামকে এতো কস্ট দিচ্ছেন কেনো।ম্যাডাম আপনাকে অনেক বার কল করেছে কিন্তু গতো দুদিন হলো আপনি ম্যাডামের ফোনও রিসিভ করছেন না।এটা হিতে বিপরীতও হতে পারে।
জিসান এবার হাতের কপিটা শেষ করে মগটা টেবিলে রেখে বললো,জানো সোম তোমার ম্যাডাম খুব সাংগাতিক নারী।ভাঙ্গবে তবু মোচরাবে না।ম্যাডাম ভালোতো বাসে,কিন্তু মুখ ফুটে জীবনেও বলবে না।তাই এবার উনার মুখ খোলার জন্যই একটু দূরত্ব বাড়িয়ে দিলাম।
কিন্তু স্যার এতে ম্যাডামও তো আপনাকে ভুল বুঝবে।
ও তুমি চিন্তা করো না,ওকে কিভাবে সামলাতে হবে আমি জানি।তুমি মিটিং রুমে যাও আমি আসছি।
ওকে স্যার।সোম চলে গেলো,মিটিং রুমে।
অফিসের মিটিং রুমে,কিছু জরুরী ক্লাইন্টদের সাথে মিটিং চলছে জিসানের।চলতি প্রজেক্ট টা নিয়ে জিসান এমনেই ভেজালের মধ্যে আছে।তার রাইবেল কম্পানি গুলো অনেক ট্রাই করেছে প্রজেক্টা নিতে।কিন্তু সবাইকে তাক লাগিয়ে ডিলটা জিসানের কম্পানি পেয়ে গেলো।মূলত জিসানের শর্তের আগে দেশে ফিরে আসার কারণটাই ছিলো এটা।এই প্রজেক্টটার সাথে লাবনিও জরিত, তাইতো জিসানের পিছনে পিছনে তাকেও আসতে হলো দেশে।জিসানকেও বাধ্য হয়ে লাবণিকে সাথে রাখতে হলো।
___মিটিং রুমে জিসান যখন খুব ব্যস্ত। তখনি ফোনটা বেজে উঠলো।মিটিং এ থাকার কারণে নাম্বারটা দেখে ফোনটা সাইলেন্ট করে রাখলো।লাবণি ও আর চোখে নাম্বারটি দেখে,মুখে এক বিশ্ব জয়ী হাসি ফুটে উঠলো।কারণ নাম্বারটি তিশার ছিলো।কিছুক্ষণ পর মিটিং শেষ হলে জিসান নিজের কেবিনে চলে যায়।কি মনে করে যেনো রায়হানকে কল দিলো।কিন্তু রায়হান ফোন রিসিভ করেনি,কয়েকবার দেওয়ার পর রায়হান ফোনটা রিসিভ করে।কি হলো ফোন রিসিভ করছিস না কেনো।এখন কি তোর বোনের মতো আমার তোর পিছেও গুড়তে হবে।জিসানের কথা শুনে ফোনটা কেটে দিলো রায়হান।
জিসান আবার ফোন করে,সমস্যা কি,এমন করছিস কেনো।
সমস্যা হচ্ছে, কাউকে অনেক বিশ্বাস করে নিজের কলিজার বোনকে তার হাতে তুলে দিয়েছিলাম।কিন্তু আমিতো ভুলেই গিয়েছি সে তো ইগোস্টিক ম্যান।তার ইগুতে হার্ট হলে সে কাউকে ছাড়ে না।
কি সব আজোবাজে বকছিস রায়হান।
আজেবাজে বকছি না।সত্য বলছি।আমার বোনকে যদি আর ভালোই না লাগে বলে দিলেই পারতি।আমি এখনো বেঁচে আছি ওর খেয়াল রাখার জন্য।
রায়হান প্লিজ শান্ত হো দোস্ত কি হয়েছে।
কি আর হবে,তোর কারনে আমার বোনটি দুদিন ধরে নিজেকে রুমে বন্দি করে রেখেছে।খাওয়া দাওয়া ছেড়ে।কতোবার চেস্টা করেছি ওকে বের করতে।কিন্তু ওর একই কথা আমি এখনো মরিনি ভাই।আমাকে একা থাকতে দেও।এবার বল যার বোনের এই অবস্থা সে শান্ত কিভাবে থাকবে।বিনা দোষে আমার বোনকে কেনো শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।বল আছে কোনও জবাব তোর কাছে।বিশ্বাস যদি ওকে না করতে পারিস তাহলে এই সম্পর্ক থেকে ওকে মুক্ত করে দে।
জিসানের নিরবতায়,রায়হান আর কিছু বললো না, ফোনটা কেটে দিলো।
____অনেক খেলেছো আমার জীবন নিয়ে মিসেস তিশা আহমেদ। আর না,আজ তোকে আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।আজ থেকে তোর নিজের উপর কোনও অধিকার থাকবে না।তোর উপর শুধু আমার অধিকার।আর আমার জিনিসকে কস্ট দেওয়ার সাহস তোকে বুঝাবো।পিচ্ছি মনে করে ছেড়ে দিয়েছি তো,তাইতো এতোটা মাথায় উঠেছিস।
জিসান সোমকে ডেকে আজকের বাকি সব মিটিং ক্যানসেল করে দিতে বলে।বাকিটা তুমি সামলিও,আমার এখন বেড়তে হবে।কাউকে একটু লাইনে আনা জরুরী।
এই গল্পের আপডেট জানতে জয়েন করেন
জিসান তিশার রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কিছুক্ষণ হলো।কিন্তু ভেতর থেকে তিশার কোনও রিসপন্স না পেয়ে জিসান কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।তাই বারান্দা দিয়ে রুমে ডুকে।তিশা খুব ক্লান্ত আর দূর্বল ছিলো,তাই সেন্সলেস হয়ে পড়ে রয়েছে ফ্লোরে।জিসান তারাতারি তিশাকে কোলে তুলে বিছানায় শুয়ে দিলো।বুকের ভেতরটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠলো জিসানের।মুখটা একদম শুখিয়ে গেছে তিশার,রাতে না ঘুমানোর কারনে চোখের নিচে হালকা কালিও পরে গিয়েছে।জিসানের চোখে নিরবে জল এসে পড়লো।সাথে সাথে তিশার কপালে গালে কিস করতে লাগলো।
||
___দরজা খুলে আগে কিছু খাবার নিয়ে আসলো।তিশার মুখে পানি ছিটিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে জ্ঞান ফিরে এলো তিশার।জ্ঞান ফিরে সামনে থাকা ব্যক্তিটিকে দেখে ভয়ে লাফিয়ে উঠলো।আ আ আপনে এএখানে ক কি ককরে এলেন।
জিসান তিশার বাহুু দুটো চেপে ধরে,ইম্পোরটেন্ট এটা না,আমি কি করে আসলাম।ইম্পোরটেন্ট এটা তুই এমন কেনো করেছিস।
তিশা নিরব।
কি হলো কথা বলছিস না কেনো।
তিশা এখনো নিরব হয়ে নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছে।
জিসান নিরাশ হয়ে তিশার কপালে কপাল রেখে,আমার উপর রেগে নিজেকে কেনো কস্ট দিয়েছিস।এটা অনেক বড় অন্যায় করেছিস।তোর কোনও অধিকার নেই,আমার জিনিসকে কস্ট দেওয়ার।তুই জানিস না তোর নিজের উপর কোনও অধিকার নেই।ভালোবাসতে না পারিস,একটু শান্তিতো দিতেই পারিস।আমার কপালে হয়তো আল্লাহ এই জীবনে তোর ভালোবাসা লিখে নাই।কিন্তু আমি যে পরজীবনেও তোকে চাই।জিসানও কিছুক্ষণ নিরব থেকে।খাবারটা খেয়েনে তিশা,আমার জন্য না হোক নিজের বাবা মা ভাইয়ের কথাটা ভেবে।
___জিসান তিশাকে ছেড়ে দিলেও তিশা জিসানকে ছাড়ে না।জিসানের কলারটা দুহাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে তাকে।জিসান কিছুটা অবাক হয়।আর তিশার মনে কি চলছে বুঝার চেস্টা করে।
তিশা কি করছিস।আর এতো কাঁদছিস কেনো,আমি এখনো মরিনি।আমি না হয় মরলে,যতো খুশি কাঁদিস।জিসানের কথায় তিশা জিসানকে ছেড়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদতে লাগলো।জিসান বুঝতে পারছে না কি হয়েছে তিশার।আর তিশাতো আরো শক্ত করে জিসানকে জরিয়ে ধরেছে।এবার জিসান কিছুটা অস্বস্তি ফিল করছে,কি হয়েছে তোর।প্লিজ ছাড়।আমার দিকে তাকা তিশা।
নাএএএ,আমি ছাড়বো না।ছেড়ে দিলেই আপনে চলে যাবেন আমাকে ছেড়ে।
আরেএ পাগল হয়ে গিয়েছিস।কিসব বলছিস। আর আমি চলে গেলেই বা কি আসে যায়।তোর জন্য তো ভালোই হবে।কেউ তোকে তখন আর বকবে না,শাসন ও করবে না।তোর যা খুশি তাই করতে পারবি।আমার মতো তেতো......জিসান আর কিছু বলতে পারলো না।আচমকা তিশা জিসানের ঠোঁট দুটো নিজের ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরলো।এক সেকেন্ড এর জন্য জিসান শোকড হয়ে গেলো।তিশা এটা কি করলো।
||
||

___তিশা জিসানের বুকের সামনের শার্টটি খামচি দিয়ে ধরে ,এতে জিসান একটু ব্যাথা পেয়ে আ করে উঠে।কি করছিস?
মাথাটা নিচু করেই বললো,চুপ।একদম চুপ।এটা মনে করে দিবে আমি সত্য বলেছি,নাকি মিথ্যা।
ওয়াট!(জিসান)
ভালোবাসি,বড্ড বেশি ভালোবাসি।আমি আমার এই হিটলার বরটাকে।
এই বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে চাই।আমার যে শুধু আপনাকে চাই।
একটু না পুরোটা চাই।
ছেড়ে চলে যাবেন যেদিন মরে যাবো।
কবরেও আপনার পাশেও আমি শুধু নিজেকে চাই।
ভুল করেও আমাকে ভুলে যাবেন না,সইতে পারবো না।আপনাকে ছাড়া আমি একা বাঁচতে পারবো না।
I love u, I love u so much.I can't live without u.I can't!
জিসান স্থব্ধ, তিশার বলা প্রতিটি কথা জিসানের কানে এখনো বাজছে। যে কথাগুলো শোনার জন্য এতো অপেক্ষা সে কথাগুলো আজ শুনেও যেনো জিসানের বিশ্বাস হচ্ছে না।তিশাকে নিজের সাথে খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।আজ নিজেকে একদম পরিপূর্ণ লাগছে।নিজের অনেক সাধনার জিনিসটি পেলে,মনের অনুভুতিগুলো ব্যক্ত করা যায় না।আজ জিসান আর তিশা নিরব থেকেই নিজেদের অনুভুতিগুলো প্রকাশ করছে।এই নিরব নিস্তব্ধতার মাঝে দুটো হ্রদয়ের স্পন্দন গুলো শুনা যাচ্ছে শুধু।
___কিছুক্ষণ আগে গৌধুলি পেরিয়ে নেমে এলো সন্ধ্যা।সকল ক্লান্তি কে দূরে ফেলে গৌধুলি কে বলতে মন চায়,আমি আজ ধন্য।আমার গৌধুলি যে আমার পাশে।তাকে পেয়ে আমি ধন্য,তার মাঝে উজার হয়ে ধন্য।বালকানিতে রাখা দোলনায় তিশা ও জিসান পাশাপাশি বসা।দুদিন পর খাবার পেটে যাওয়ায় শরীলটা কেমন নিস্তেজ হয়ে পড়ছে তিশার।তাইতো জিসানের কাধে মাথা রেখে পরম শান্তিতে চোখ বন্ধ করে আছে।জিসান তিশার কাধে হাত রেখে নিজের আরোও একটু কাছে নিয়ে আসলো।হঠাৎ তিশার কি যেনো মনে হলো,নিভু নিভু চোখে জিসানের দিকে তাকিয়ে।ও ছবিগুলো আমার না,আমি সত্যি বলছি।বিশ্বাস করুন।
জিসান দেখলো তিশার চোখগুলো ছলছল করছে।তিশার মুখটা দুহাতে নিয়ে, আমি জানি,জান।ওগুলো এডিট করা।
তাহলে আমাকে সেদিন বকলেন কেনো।
___সেদিন জানতাম না জান।তিশাকে বুকে জরিয়ে,তোর সাথে আমি অন্য কাউকে সহ্য করতে পারবো না।ছবিগুলো দেখে নিজের হিতহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলিছি।তাই তোর সাথে এমন খারাপ আচরন করেছি।আম সরি জান।যখন রাগ কমে তখন বুঝতে পারি,আমি ভুল করেছি।আমার তিশা এমন কাজ করতেই পারেনা।তোকে কোনও কিছু বলার আগেই তুই নিজেকে শাস্তি দিয়ে দিলি।তাই একটু রাগ হলো।
সব জানেন যখন, তাহলে ফোন ধরেননি কেনো।কারণ কিছু হলেই তুই নিজেকে কস্ট দিস,যা আমার একদম পছন্দ না।আর বলে না,যা হয় ভালোর জন্যই হয়।তাইতো দেখ,যা আমি এতোদিন চেস্টা করেও পারিনি।আজ হয়ে গেলো।
||
হুমমম।তিশাও জিসানকে জরিয়ে ধরে।
একটা গান গাইবেন।
শুনবি।
হুম।
জিসান গান ধরলো....
অনেক সাধনার পরে আমি পেলাম
তোমার মন
পেলাম খুঁজে এ ভুবনে আমার আপনজন।
♪♪♪♪♪♪♪♪
বিধাতা আমাকে তোমার জন্য
গড়েছে আপন হাতে
জীবনে-মরনে, আধারে-আলোতে
থাকবো
তোমার সাথে।।
♪♪♪♪♪♪♪♪
যাবেনা কখনও ফুরিয়ে যাবেনা
আমার ভালোবাসা
তোমাকে পেয়েছি, পেয়েছি
আবারো বাঁচার
নতুন আশা।।
তুমি বুকে টেনে নাওনা প্রিয়
আমাকে
আমি ভালোবাসি, ভালোবাসি,
ভালোবাসি তোমাকে।
[পার্সোনালি আমার এই গানটা অনেক পছন্দের।অনেকে ভাববেন এতো পুরোনও গান দেওয়ার কি আছে,কারণ আমি পুরাতন গানগুলো বেশি পছন্দ করি।এখনকার গানগুলো আমার মনে তেমন সারা দেয় না।এর আগে ও এ গানের দুটো কলি দিয়েছিলাম।আমার মনে হলো জিসানের জন্য একদম পার্ফেক্ট গানটা তাই পুরোটা দিলাম।]
___তিশা গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যায়।জিসান তিশাকে কোলে করে বিছানায় শুয়ে দিয়ে গায়ে চাদরটা দিয়ে দেয়।কপালে আলতে করে একটা ভালোবাসার পরশ দিয়ে দেয়।মায়ের কাছে সব শুনে রায়হানও বাসা এসে পড়েছিলো।তবে জিসান তিশার সাথে আছে বলে আর ডিস্টার্ব করেনি।জিসান রায়হান ও তিশার মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায় বাসায়।
পরের দিন তিশার বাবা শামসুর রহমান, নিজের মাকে নিয়ে ঢাকায় ফিরেন।বয়সের কারণে প্রায়ই অসুস্থ থাকে,তাই তার ভালো চিকিৎসার জন্যই নিজের সাথে নিয়ে আসেন।তিশা দাদীকে দেখে বিষন খুশী।রুপকদার বিয়ের সময়ও দাদী আসতে পারেনি অসুস্থতার কারণে।এবার নাকি দুনায়-নাতনীর বিয়ে দেখেই তার পর পরকালে গমণ করবেন।
___তিশার দাদী মমতা বেগম,এতোদিন পর নিজের নাতনী কে দেখে আবেশে চোখে জল চলে এলো।দেখ শামসুর নাতীতো আমার দামড়া হইয়া গেছে।এহন তো বিয়াশাদী দেওয়া লাগতো।
জি মা,কিন্তু এতো জলদির কি আছে।আরো কয়েক বছর যাক।
কি বলস শামসুর,জোয়ান মাইয়া ঘরে রাইখা কি পাপের ভাগিদার হতে চাস।
মা এসব কি বলছো।
দেখ বাজান,আমি বাচুমি বা কয়দিন।তার আগেই আমি আমার এই দুই নায়নাতনীর বিয়া দেইখা যাইতে চাই।তিশা এতোক্ষন ওর মায়ের সাথে রান্না ঘড়ে ছিলো,তাই কিছুই শুনে নাই।রায়হান কিছু বলতে নিলে,শামসুর রহমান থামিয়ে দেয়,আহা,অনেক কথা হয়েছে।এবার দাদীকে আড়াম করতে দেও।তিশা দাদীকে কে রুমে নিয়ে যাও।
রায়হান কিছুটা অবাক নিজের বাবার ব্যবহারে।
||
||

তিশা ও নিশির রেজাল্ট মোটামুটি ভালোই আসলো।কিছুদিন পর ভাগ্যক্রমে তিন বান্ধবী একই কলেজে চান্সও পেয়ে গেলো।এরি মাঝে মিসেস রাবেয়া তৌফিক সাহেবকে রাজি করিয়ে ফেললো জিসান ও তিশার ব্যাপারে।সে বিষয় কথা বলতেই তিশাদের পুরো পরিবারকে ডিনারে ডাকা হলো।শামসির রহমানের ইচ্ছা না থাকা সত্যেও ছেলেমেয়ে এবং নিজের স্ত্রীর জ্বালায় আসতে হলো।ডিনার করে বাকি সবাই আড্ডা দিলেও তৌফিক সাহেব ও শামসুর রহমানের মিটিং চলছে স্টাডি রুমে।প্রায় ঘন্টাখানিক পর শামসুর রহমান কাউকে কিছু না বলে চলে গেলো।স্বামীর এমন বিভেবিয়ারে রেণু বেগম বিষন লজ্জিত হলো।তিনিও স্বামীর পিছন পিছন চলে গেলে।
___রায়হান আর জিসান বুঝে উঠতে পারছিলো না কি হয়েছে।তিশা করুণ চোখে জিসানের দিকে তাকিয়ে আছে।আর জিসান চোখের ইশারায় আশ্বাস দিলো,টেনশন করিস না।আমিতো আছি।কিছুক্ষণ পর রায়হান ও তিশা সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।জিসান ওর বাবাকে অনেকবার জিঙ্গেস করেও কোনও লাভ হয়নি।তৌফিক সাহেব কিছু বলতে নারায।
সেদিনের পর থেকে তিশার জিসানদের বাসায় যাওয়া ও নিশেধ হয়ে পড়লো।নিজের বাবার এমন আচরণ তিশা কিছুতেই বুঝতে পারছে না।আজকাল তো জিসানের সাথে বাহিরে যাওয়াও নিশেধ ওর।রায়হান এ নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে,শামসুর রহমান বলে,সেদিনের এক্সিডেন্ট আবার ছবির কাহিনী পুনরাবৃত্তি করতে চায়না সে।তাই তিশার ভার্সিটি ছাড়া সব জায়গায় যাওয়া বন্ধ।
____কিন্তু এসব করেও তিশা আর জিসানের সম্পর্কের ঘাটতি করতে পারেনি।বরং এখন দুজন লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করা শুরু করেছে।তবে এটা তিশার পছন্দ না হলেও জিসানের কাছে কিছুটা রোমাঞ্চোকর লাগছে।বউয়ের সাথে লুকিয়ে প্রেম।ওয়াও!
রায়হান তিশাকে কলেজএ নামিয়ে দেওয়ার সময়, কলেজ গেটে নিশিকে দেখতে পায়।মেয়েটাকে অনেকদিন পর দেখলো রায়হান।আগেতো তবুও প্রতিদিন সকালে একবার হলেও দেখতে পেতো।কিন্তু আজকাল ওর বাবার হুকুম তিশাকে রায়হান ই দিয়ে আসবে।অন্যকেউ যাতে ওকে নিয়ে না যায়।বাবার হঠাৎ এমন আচরণে রায়হানও নিশির থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।রায়হান আর তিশাকে দেখে নিশি এগিয়ে এসে,কেমন আছেন রায়হান ভাই। রায়হান কিছুক্ষণ নিরব থেকে,আস্থে করে মাথা নিচু করে উত্তর দিলো ভালো না।
___কি?নিশি জিঙ্গেস করলো।
কই কিছু নাতো।আমি আসি।রায়হান চলে যেতে নিবে আর তখনি জিসানের গাড়িটি সামনে এসে দাঁড়ায়।জিসান গাড়ী থেকে নামলেই আসেপাসের সব মেয়েরা কেমন হা করে তাকিয়ে থাকে।কারণ আজ জিসান ফরমাল লুকে নেই।ব্লু জিন্স,ব্লাক শার্ট আর চোখে আছে সানগ্লাস। চুলটাও আজ জেল দিয়ে সেট করা।গাড়ী থেকে নেমে রায়হানের পাশে দাঁড়ায়।
রায়হান একটু হেসে, কিরে কাকে খুন করার প্লানিং করছিস।এমন কিলার লুক নিয়ে রাস্তায় চলাটা সেফ না ইয়ার।আজকালকের মেয়েগুলো কিন্তু খুবই dangerous...। কখন না আবার হামলিয়ে পড়ে।
জিসান সানগ্লাস টা খুলে বুকের সামনে রেখে।যাকে খুন করার ইচ্ছা সেতো আমার নেশায় পড়েই না।বাকি সবকে খুন করে কি করবো।তিশার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে।আর এদিকে তিশা লুচির মতো ফুলছে।জিসানের দিকে সবাই তাকিয়ে আছে বলে।
||
এবার বল,এখানে কি করিস।জিসান কোমড়ে দুহাত রেখে,শালা তুইতো আমার কোনও কাজে আসিস না।তাই নিজেই বউ কিডন্যাপ করতে আসলাম।
___কি?তিশা ভ্রুটা কুঁচকিয়ে।
তিশার কোনও কথা জেনো জিসানের কানেই ডুকলো না।হঠাৎ সবার সামনেই তিশার হাতটা ধরে গাড়ীতে নিয়ে বসালো।রায়হান কে বায় বলে গাড়ী স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো।
নিশি ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো।নিশি খুব ভালো করেই জানে রায়হান জিসানের ভাইয়ের মতো না।জিসান ভাইয়া ভালোবাসা প্রকাশ করা পছন্দ করে,কিন্তু রায়হান গোপনে ভালোবাসতে জানে।এরপরও নিশি এই লোকটিকে ভালবাসো।হয়তো এই জীবনে উনার মুখে ভালোবাসি কথাটা শুনা হবে না।নিশি ও চলে গেলো।
রায়হান নিশির যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে চলে গেলো।
___আপনে এমন কেনো, রায়হান ভাইয়ের সামনে এসব কি বলছিলেন।জিসান তিশার দিকে তাকিয়ে,কেনো কি হয়েছে জান।
কি হয়েছে মানে।বড় ভাইয়া আমার,আপনার লজ্জা করেনা ভাইয়ার সামনে এসব করেন।এছাড়া নিশিও ছিলো,ওতো আপনার ছোট বোন।জিসান শুধু একবার তিশার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।আপাতত ড্রাইভিং এ মনোযোগ তার।
আমরা কোথায় যাচ্ছি,কিছু বলছেন না কেনো।উফ আপনে গাড়ী ঘুড়ান আমি বাসায় যাবো।বাবা জানতে পারলে,আল্লাহ জানে কি করবে।আপনাকে তো কিছু বলবে না কিন্তু আমাকে ছাড়বে না।জিসান জোড়ে গাড়ীটা ব্রেক করে।আরে এভাবে গাড়ী থামালেন কেনো।আপনে দেখি গাড়ী টাও ঠিক.....তিশা আর কিছু বলতে পারলো না।তিশাকে টানদিয়ে কাছে এনে গালটা চেপে ধরে জিসান ওর ঠোঁট দিয়ে তিশার ঠোঁটকে আবদ্ধ করে নিলো।হঠাৎ এ ঘটনায় তিশা অবাক হলো।আর জিসান যখন তিশার ঠোঁট দুটো নিয়ে পুরো ব্যস্ত হয়ে উঠলো,আবেশে তিশা চোখ দুটো বন্ধকরে ফেললো।তিশা এতোটাই আশ্চর্য হলো যে কোনও রিয়েক্ট দেওয়া ভুলে গেছে।তিশা কিস করছে না,তবে জিসানকে বাধাও দিতে পারছে না।তিশার মনে হলো,আজ ও এতোটাই দূর্বল যে সামাম্য ধাক্কাটুকুও দিতে পারবে না।এদিক দিয়ে জিসান সুযোগ পেয়ে তিশার কোমড়টা জরিয়ে নিজের কোলে নিয়ে আসলো।কিন্তু এতোকিছুর মধ্যেও ঠোঁটের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেনি।সুযোগ পেয়ে তিশার মাথার হিজাবটাও খুলে ফেললো।অনেকক্ষণ পর জিসান তিশাকে ছেড়ে ঘাড়ে মুখ ঘষতে লাগলো।আর তিশা জিসান থেকে ছাড়া পেয়ে জোড়ে কয়েকটা নিশ্বাস নিলো।
___জিসান নেশা ভরা কন্ঠে তিশার কাধে মুখ রেখেই বললো,তোর বাবাকে বল আমার জিনিস আমাকে দিয়ে দিতে।
আ আপনার আ আবা র ককোন জিনিস।
___এই যে তুই।তুইতো পুরোটা আমার।অথচ আমার জিনিসকে নিজের ঘরে আটকে রেখে কার্ফু জারি করেছে আমার জন্য।মনে হয় আমি খেয়ে ফেলবো উনার মেয়েকে।তিশা একটু হেসে নিচের দিকে তাকিয়ে।খেয়েই তো ফেলেন।
তিশাপাখি,মিথ্যে বলা ভালো না।কানের কাছে গিয়ে।
তুই আর তোর জেলার বাবা খেতে কই দিলি।আমি শুধু টেস্ট করেছি।খেতে কেমন লাগবে।জিসান এখনো তিশার কোমড়কে জরিয়ে ছিলো।তিশা জিসান থেকে ছুটার চেষ্টা করে,ছিঃ কিসব বলছেন।আপনে দিনদিন বেহায়া হয়ে পরছেন।
___জিসান তিশার ঘাড়ে নাক দিয়ে ঘষছিলো,কিন্তু তিশার কথা শুনে ঘাড়ে জোড়ে একটা কামড় দিয়ে দিলো।তিশা আ আ করে উঠে।তিশাকে ছেড়ে দিয়ে আমি বেহায়া শুধু তোর বেলায়।তা না হলে এই জিসানকে বশে আনা এতো সহয না ম্যাডাম।আর তোর জেলার বাবাকে বলে দিস,আপসে তোকে আমার হাতে তুলে দিতে।তা না হলে তুলে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাবো।এর পর দুবাচ্চার মা করে ফিরে আসবো।তখন দেখবোনি কি করে শ্বাশুর মশাই।
জিসানের কথা শুনে তিশা হা হয়ে আছে।তা দেখে জিসান,মুখ বন্ধকর নাহলো মোশা ডুকবে।
চলবে.....।

এখন বৃস্টির ঋতু বলে,ছিন্নবিচ্ছিন্ন বিলগুলো পানিতে কিছুটা থৈ থৈ করছে।মনোমুগ্ধকর এমন পরিবেশ এ তিশা খুশিতে আত্তোহারা।জিসান ভাবতেও পারেনি তিশা এতোটা খুশি হবে।তাহলে অনেক আগেই নিয়ে আসতো। তিশার মন চাইছে,কাশফুলগুলোর সাথে একটু লুকচরি খেলতে।এমন পরিবেশে মনটাও কেমন শান্তি শান্তি ফিলিং আসে।
পিচঢালা পথ দিয়ে জিসান তিশার হাতটা ধরে হাটছে।এক অদ্ভুত অনুভুতি মনের দরজায় কড়া নাড়ছে।আসলে কথাটা সত্যিই প্রিয়জন সাথে থাকলে তার হাতটি ধরে অনেক দূর পথ চলা যায়।তবে তাদের আনন্দ বেশিক্ষণ টিকতে পাড়লো না,ঘন্টাখানিক ঘুড়ে কিছু খেয়েদেয়ে তিশাকে বাসায় নামিয়ে দিলো জিসান।কারন জিসানকে আর্জেন্ট অফিসে যেতে হবে।প্রজেক্ট এর কাজ নিয়ে কোনও একটা সমস্যা হয়েছে।
____জিসান ও তিশার নতুন সম্পর্কটা ভালোই চলছিলো।তবে এর মধ্যে তিশার দাদীর শরীরটা ভালো যাচ্ছিলো না,তাই পরের দিন তিশা ও তার বাবা দাদীকে ফুল চেকআপ এর জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসলো।চেকআপ করে যখন ওরা ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হলো তখন কারো সাথে দেখা হয়ে গেলো আচানক ।
অচেনা ছেলেটি শামসুর রহমান কে সালাম করলো।ভালো আছেন মামা।
কে তুমি বাবা।আমাকে চিনো।
অচেনা হেসে জবাব দিলো আপনেও আমাকে চিনেন।হয়তো মনে করতে পারছেন না।আমি নিবিড় ইসলাম।
____শামসুর রহমান এখনো ছেলেটির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
অচেনা ছেলেটি,আমার মায়ের নাম শেফালি।বাবা মুস্তাহিদ ইসলাম।
এবার শামসুর রহমান হেসে বললো,তুমি আমাদের শেফার ছেলে।
নিবিড় মাথা নেড়ে সায় দিলো।
মা ও মা দেখো,এটা আমাদের শেফার ছেলে।তিশার দাদী চশমার ভেতরদিয়ে তাকিয়ে দেখে একটা সুদর্শন ছেলে তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।ছেলেটা দেখতেও বেশ।চিনতে বেশি সময় লাগিনি তার।শেফার ছেলে হাতটি ধরে।তুই দেখি একদম তোর মায়ের মতো হইছিস।তোর মাও এতো সুন্দর ছিলো।
সবাই নিবিড়ের চেম্বারে বসে আছে।তো নিবিড় তুমি এখানে কি ডাক্তার।
জি মামা,এতো বছর বাহিরে ছিলাম।পড়াশুনা শেষ করে এই হাসপাতালে মাসখানিক হলো জয়েন করলাম।মা কিন্তু আপনাদের অনেক স্মরণ করে।
আমরাও করি।কিন্তু তোমার বাবা মা হঠাৎ করে কোথায় চলে গেলো না বলে বুঝতেও পারিনি।
আসলে মামা,বাবার একটা অপশরনের জন্য আমাদের আর্জেন্ট কলতায় যাওয়া লাগে। প্রায় ছয় মাস ওখানেই থাকতে হয়ছে।এছাড়া কলকাতায় মায়ের ফোনটাও চুরি হয়ে গেলো।যেটাতে আপনার নাম্বার ছিলো।আর এরপর এসে দেখি আপনারাও নাকি এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন, তারপর মা অনেক খুঁজার চেস্টা করেছিলো কিন্তু পাইনি।এর পর আমরাও নানুবাড়ী চলে গেলাম।কারণ বাবার রেস্ট এর প্রয়োজন ছিলো।আর তখন আমিও ছোট ছিলাম।
____হুম,আসলে আমারি ভুল হয়েছে একবার শেফার সাথে দেখা করার দরকার ছিলো।আচ্ছা তুমি আমায় চিনলে কি করে,তুমিতো অনেক ছোট ছিলে তখন।
মায়ের কাছে আপনার ছবি বেশ কয়েকদিন দেখেছিলাম।তাই চিনতে অসুবিধে হয়নি।হঠাৎ নিবিড়ের তিশার দিকে চোখ গেলো।এটা কে মামা।ও নিবিড়, তুমি ওকে চিনতে পারো নি।ও হলো তিশা আমার মেয়ে।তুমি যখন দেখেছিলে,তখন তো ও খুব ছোট ছিলো।তাই হয়তো চিনতে পারোনি।
নিবিড় হেসে, কেমন আছো তিশা।তুমিতো দেখি অনেক বড় হয়ে গেছো।
তিশাও হেসে জবাব দিলো।
পরিচয় পর্ব শেষে সবাই কিছুক্ষণ কথা বলে বিদায় নিয়ে চলে এলো।
[নিবিড় কে পরে বলে দেওয়া হবে।জাস্ট ওয়েট করুন]
||
বিকেলে কিছু জরুলি কাগজ পত্র সিগনেচার করার জন্য আহমেদ ভিলায় আসতে হলো রায়হান কে।তৌফিক সাহেব আজকাল খুব টেনশনে থাকেন।অফিসেও কম আসেন,তাই অজ্ঞতা রায়হানকেই আসতে হলো।সিগনেচার নিয়ে,কিছুক্ষণ অফিসের বেশ কিছু প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা করলও তৌফিক সাহেবের রুমে বসেই।এরপর রায়হান বিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার সময় কিছুমনে করে থেমে গেলো।
____পাঁচ মিনিট ধরে রায়হান শুধু ভাবতেই লাগলো ভেতরে ডুকবে কিনা।এভাবে একটা মেয়ের রুমে পারমিশন ছাড়া যাওয়া রায়হান কখনোই পছন্দ করেনা।তবুও মনকে জোর করে রাজি করালো,দরজার ওপাশের মানুষটি রায়হান তোর।ওই মানুষটিকে তুই যে কোনও অবস্থায় দেখতেই পারিস।আর কিছু না থাকুক,ভালোবাসার অধিকারতো আছে দুজনের মাঝে।নিশির রুমের দরজাটা খোলাই ছিলো।দরজাটা ধাক্কা দেওয়ার সাথে সাথে খুলে গেলো।তবে রুমের লাইটগুলো বন্ধ।শুধু রুমের জানালায়,ড্রেসিংটেবিল এ কিছু ছোট ছোট ঝাড়বাতি জ্বলে আছে।আর তারই আলকা মৃদ আলো জুরে আছে রুমটিতে।তবে রুমে প্রবেশ করার পর রায়হানের নাকে মিস্টি একটা ঘ্রান আসে।নিশ্চিত নিশির পারফিউম এর।
মাতাল করা এই ঘ্রাণ টা রায়হান কখনোই ভুলবে না।মনে পরে গেলো রায়হানের সেদিনের কথা।রুপকদের গায়ে হলুদের দিন,নিশি নিলুর পুরো মুখে হলুদ দিয়ে দেয়,যার ফলে নিলু বিষন রেগে যায়।আর নিলুর রাগি ফেস দেখে ভয়ে নিশি বাড়ীর ভেতরে গিয়ে পালাতে নিলে শাড়ীর সাথে পা আটকে কারো গায়ে পরে যায়।নিশি মুখ উঠিয়ে লোকটিকে দেখে লজ্জা পেয়ে যায়।কারণ নিশি রায়হানের উপর পরেছে।রায়হান অপলক দৃষ্টিতে নিশির দিকে সেদিন তাকিয়ে ছিলো।
____শুধু তাকায়নি ভয়ংকর একটা কাজ করে বসে।নিশিকে জরিয়ে ধরে ঘুরে যায়।যার ফলে নিশি নিচে,আর রায়হান নিশির উপরে। নিশির পুরো হাতে হলুদ থাকায়,হাত দুটো উঁচু করে রেখেছিলো।রায়হান নিশির হাতে হাত রেখে হলুদ নিজের হাতে নিয়ে নিশির শাড়ীর পেটের খোলা অংশে পুরো হাতের ছাপ দিয়ে দিলো।নিশিতো ৪২০ ভোল্টেজ শকড খেলো।এরপর রায়হান উঠে পরে এবং নিশিকেও টেনে উঠালো।
নিশিতো ওর খোলামুখ দিয়ে একবার রায়হানের দিকে,আর একবার নিজের পেটের দিকে তাকালো।রায়হান একটু কাছে আসার চেস্টা করলে,নিশি ভয়ে কচুমোচু হয়ে সরে যায়।
____আর কোনও দিন এই অংশটি খোলা দেখলে,গরম স্ত্রী লাগিয়ে দেবো।নিশি সেদিন সত্যিই রায়হানকে ভয় পেয়েছিলো।আর সেদিন নিশি এই পারফিউম টি ইউস করেছিলো,যার ঘ্রাণ এখনো মাতাল করে রায়হান কে।মৃদ হেসে চিন্তা থেকে বের হয়ে আসলো রায়হান।
রায়হানে চোখ পড়লো,বিছায়নায় ঘুমিয়ে থাকা নিশির উপর।নিশি একটা টেডিবিয়ার কে নিজের বুকের সাথে জরিয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো ঘুমিয়ে আছে।রায়হানে মুখে হাসি ফুটে উঠলো।টেডিবিয়ার দিয়ে খেলার বয়স হয়তো এখন নেই।তবে এই টেডিবিয়ারটা খুব স্পেশিয়াল।কারণ এটা রায়হান অনেক আগে নিশির জন্মদিনে দিয়েছিলো।রায়হান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে,এতো বছর ধরে এই মেয়েটি এই সামান্য টেডিবিয়ার টি সামলিয়ে রাখছে।
____রায়হান নিশির বিছানার সামনে হাটুগেরে বসলো।কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে,নিজেই মনে বলতে লাগলো।আমি জানি সুইটহার্ট,তুমি রেগে আছো।জিসান ও তিশাকে একসাথে দেখলে তোমার মনটা যে তখন কি চায়,আমি সবই বুঝি।কিন্তু আমি এখন নিরুপায়।দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ছেড়ে,
এই শ্যামবর্ণ মেয়েটির প্রেমে যে কি পরিমাণ পাগল আমি তা হয়তো তুমি জানোই না।আমিও চাই তোমাকে আমার ভালোবাসার রং এ রাঙ্গাতে।আর একদিন রাঙ্গাবো।একবার জিসান আর তিশার ঝামেলাটা শেষ হোক।আমি চাইনা,আমাদের সম্পর্কটা এখন কারো সামনে আসুক।তাই দূরত্ব টা জরুরী।আমি জানিনা তুমি বুঝবে কিনা।কিন্তু সবশেষে একটা কথা সত্য,আমি ভালোবাসি তোমাকে।জানি না,এই জীবনে পাবো কিনা তোমাকে,তবুও ভালোবেসে যাবো।নিশির কপালে রায়হান তার ঠোঁটের উষ্ণ ছোয়া দিয়ে দিলো।এর পর নিশির বুঝার আগেই রায়হান চলে গেলো।
কিছু মানুষের ভালোবাসা আড়ালে থাকে।রায়হান আর নিশির ভালাবাসাটাও এমন।নিশি লজ্জায় প্রকাশ করতে পারছে না।আর রায়হান তার নিজের পরিবারের প্রতি ওর দায়িত্ব প্রকাশ করতে দিচ্ছে না।তিশা ও জিসানের সম্পর্ক টা আগে সহয মনে হলে,এখন ও নিজেই জানেনা এ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কি।তার উপর পরিবার ওর আর নিশির সম্পর্ক টা কিভাবে দেখবে তাও আগে বুঝতে হবে।কারণ এখানে ওর বোনের ভবিষ্যৎ ও জরিত।
||
||

____জিসানকে কেউ পেছন দিয়ে জরিয়ে ধরলো।হঠাৎ এমন হওয়ায় জিসান কিছুটা হচকিয়ে গেলো।নেলপালিশ লাগানো হাত দুটি জিসানের বুকের সামনে।মুহুর্তে জিসানের মাথা বিগড়ে গেলো।হাতের ভাজ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে পেছনে তাকালে,ওয়াট দা হে....!আর কিছু বলতে পারলো না জিসান।কারন ওর সামনে লাবণি দাঁড়িয়ে আছে,তাও আবার থ্রী কোয়ার্টার একটা নাইটি।যার দুকাধে ফিতা সংযুক্ত লাল রং এর।জিসান সাথে সাথে নিজের দৃষ্টি সরিয়ে ফেললো।প্রচণ্ড রাগ উঠছে জিসানের।জিসানের বুঝতে বাকি নেই,লাবণি ওকে মিথ্যা বলে নিয়ে এসেছে।আর ওর উদ্দেশ্য কি।
জিসান দ্রুতি স্থান ত্যাগ করার জন্যও পা বাড়ালে,লাবণি জিসানের হাতটা ধরে ফেলে।জিসান প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না।আই লাভ ইউ।
জিসান দাঁতেদাঁত চেপে,লিভ মি লাবণি।
____না,আজ তোমাকে ছাড়বো না,আমার দিকে তাকাও।একবার ভালো করে দেখো।দেখবে তুমি সব ভুলে যাবে।আমি তোমাকে সব থেকে সুখে রাখবো।
জিসান সহ্য করতে না পেড়ে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দেয় লাবণির গালে।ছিঃ লাবণি,আমার ভাবতেও অবাক লাগছে।তুমি এ কাজটি করবে।তাও আমাকে সিডিউস করার চেস্টা।তুমি ভাবলে কি করে,এভাবে আমার সামনে এলে আমি সিডিউস হয়ে যাবো।কথাগুলো জিসান লাবণির দিকে না তাকিয়েই বলছে।তুমি ভালো করে জানো আই লাভ তিশা, এন্ড আই এম মেরিড ম্যান।তবুও এসব!
জিসান প্লিজ বোঝার চেস্টা করও আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি।থাকতে পারবো না তোমাকে ছাড়া।
জাস্ট সেট আপ।আমি আর এমন কিছু শুনতে চাইনা।
জিসান চলে জেতে নিলে লাবণি আবার জিসানের হাতটা ধরে ফেলে।
প্লিজ জিসান আমাকে ছেড়ে যেওনা।আমি তোমাকে তিশাকে ছাড়তে বলবো না,তিশা সামনে থাকুক।আমি না হয় তোমার জীবনে আড়ালে থাকলাম।কখনো কারো সামনে অধিকার নিয়ে আসবো না।তবুও আমাকে আপন করে নেও জিসান।প্লিজ।
____জিসানের মাথা পুরো গরম হয়ে গেলো।জাস্ট ডিসগাস্টিং লাবণি,তুমি ভাবলে কি করে আমি তিশাকে ধোকা দেবো।আমার লাইফে শুধু আমি একটা মেয়েকেই ইম্পোরটেন্ট দিয়েছি।আর তার জায়গা কেউ নিতে পারবে না।কেউ না।
ঐ মেয়েটা তোমাকে ধোকা দেওয়ার পরও এসব বলছো।লাবণির চিল্লিয়ে।
____এবার জিসান লাবণির দিকে তাকালো,কিন্তু শুধু ওর চোখের দিকে।জিসানের রক্তিম চোখগুলো দেখে লাবণির কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো।
তুমি যে গেম খেলতে চেয়েছো।সে গ্যাম এ এখনো তুমি কাচা লাবণি।তুমি কি মনে করেছো।আমি জানতে পারবো না।তিশার ছবিগুলো কে এডিট করেছে।ভুলে যেওনা আমি জিসান।আর আমাকে বোকা বানানো এতো সহয না।আমার জিনিস কিভাবে সুরক্ষিত করতে হয় আমি জিসান খুব ভালো করেই জানি।মনে রেখো শরীলের চায়িদা মিটানোর জন্য বাজারে মেয়ে মানুষের অভাব নেই।কিন্তু আমার কাছে শরীলের চায়িদাটা যদি ইম্পোরটেন্টই হতো,তাহলে তিশার সাথেই মিটিয়ে নিতাম।ও তো আমার বউ,মানা করার সাহসও পেতো না।কিন্তু তোমার মতো মেয়ে এসব বুঝবে না।নিজের চাহিদার জন্য অন্য কাউকে খুঁজে নেও।
___জিসান চলে জেতে নিয়েও আবার থেমে গেলো।মনে রেখো লাবণি তিশাকে নিয়ে যে নোংরা গেম খেলতে চেয়েছো।তার জন্য তোমাকে অনেক মূল্যদিতে হবে।অনেক!
লাবণি ধপাস করে ফ্লোরে বসে পড়লো।চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।কিন্তু তার শব্দ জিসানের কানে আসার আগেই জিসান চলে গেলো।
____হাতির ঝিলের ব্রিজে দাঁড়িয়ে আছে রায়হান ও জিসান।মনটা ভালো নেই,তাই কল করার সাথে সাথে চলে এলো রায়হান।বন্ধুত্ব বুঝি এমনি হয়। জিসান রায়হান কে সব খুলে বললো।রায়হান শুনে মোটেও অবাক হলো না।কারণ লাবণিকে রায়হান প্রথম দিন থেকেই পছন্দ করতো না তেমন,কিন্তু জিসানকে তা বুঝতে দেয়নি।কারণ লাবণি জিসানের কাজের সাথেও জরিত।এতে জিসানেরই ক্ষতি হবে।
এখন কি করবি ভেবেছিস।
জিসান ওর হাতের কোল্ড ড্রিংকের বোতলটা শেষ করে,কি করবো!
ছুড়ে মারবো ঠিক এই খালি বোতলটার মতো।
কিন্তু তোর প্রজেক্ট!
কাজ প্রায় শেষ।কাল প্যাকেজিং এর কাজ শুরু হবে।এই সপ্তাহই অর্ডারটা ডেলিভারি করে দিতে পারবো।তার পর ওর সাথে আমার কোনও কন্ট্রাক্ট নেই।তাহলে আমি কেনো আমার আশেপাশে এই নোর্দমা রাখবো। এমন ব্যবস্তা করবো,দ্বিতীয় বার তিশার দিকে হাত বাড়াতেও ১০০বার ভাবতে হবে।
||
||

___ওল সেট দোস্তো।
রাখ তোর দোস্তো। তুই সবসময় আমাকে এমন চিপায় ফেলিস কেনো।
____কি করবো বল,তুইতো আমার একখান মাত্র জানে জিগার,পরাণের প্রিয় বন্ধু তোকে বলবো না তো কাকে বলবো।তার উপর আমার একটা মাত্র বউয়ের একটা মাত্র ভাই। তুই আমার কস্ট না বুঝলে কে বুঝবে।
হয়েছে শালা এতো পাম মারতে হবে না।বাবা জানলে আমাকে বাড়ী থেকে বের করে দেবে।
____ও রায়হান, আমার শ্বশুর মশাইকে বলিস,ছেলেকে না।মেয়েকে বের করে দিতে।তাহলেই তো আমি আমার বউ নিয়ে আসতে পারবো।আর কোনও ভেজালো হবে না। কি বলিস।জিসান বলেই হেসে দিলো।এরপর রায়হান কে বললো,
শোন রায়হান ভালোবাসা বেশিদিন গোপনে রাখতে হয়না।এতে অনেকে সময় দেরি হয়ে যায়।প্রিয়তমা অন্যের হাত ধরার আগে তার হাতটা ধরে ফেলা উচিৎ।
রায়হান বুঝেও না বোঝার ভান করে বলে,মানে!কি বুঝাতে চাইছিস।
____কিছু না,রাখি।
রাত ১১:০০।ওয়াইট শার্ট আর ব্লাক জিন্স পরে এতো রাতে গাড়ীতে হেলান দিয়ে কারো জন্য অপেক্ষা করছে জিসান।হঠাৎ জেনো চোখগুলো আটকে গেলো।মনে মনে বলে উঠলো,জিসান তু তো আজ গেয়া।
___সাদা জামদানি লাল ব্লাউজ। দুহাতে জিসানের দেওয়া ডায়মন্ড এর দুটো চুড়ি।গলায় কিছুই নেই।না আছে কানে।চুলগুলো ছাড়া।ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। গাল দুটো লাল হয়ে আছে লজ্জায় নাকি ব্লাশনে।তা জিসানের জানা নেই।কেনো জানি এই রমনীকে দেখে জিসান শেষ আজ।নিজে নিজেই বিড়বিড়য়ে বলছে,জিসান কন্ট্রোল, কন্ট্রোল ইউর সেল্ফ। বউ হয়েছে তো কি।পরিবার এখানো আমাদের মেনে নেয়নি।কিন্ত কিভাবে নিজেকে আজ আটকাবো।এই মেয়েটিকে আজ ভয়ংকর সুন্দর লাগছে।
____জিসানের ভাবনার মাঝে তিশা কখন এসে দাঁড়িয়ে আছে,খেয়ালি নেই।তিশা কিছুটা বিরক্ত হয়ে,কি হলো কথা বলছেন না কেনো।আর তখনি জিসানের ধ্যান ভেঙ্গে এলো।এরপর কেউ দেখার আগেই তিশার হাতটা ধরে আগে গাড়ীতে বসালো।তিশাতো বকবক করেই যাচ্ছে,জানেন বাবা জানতে পারলে,আমার শনি,রবি,সোম, মঙ্গল করে ফেলবে।ঘর থেকেও বের করে দিবে ঠোঁটটা উল্টিয়ে।জিসান তিশার মুখটা দুহাত দিয়ে ধরে বলে,জান রিলেক্স।
জানিস তোকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে।এক কথায় ভয়ংকর সুন্দর।যে সৌন্দর্যের বর্ননা করা যায় না।শুধু অনুভোব করা যায়।এতো সুন্দর কেনো লাগছে বলতো।আমি যদি এখন কন্ট্রোলেস হয়ে পরি,তখন কি হবে জান।জিসানের কথায় তিশার গালদুটো মনে হয় আরও লাল হয়ে গেলো।জিসান বুঝতে পেরে তিশার কপালে একটা আদর দিয়ে সোজা হয়ে বসলো।ভয় পাওয়ার কিছুই নেই।সো রিলেক্স।
____আর শোন এতো টেনশনেরও কিছুই নেই।রায়হান সব সামলিয়ে নিবে।আর তোকে ঘর থেকে বের করে দিলেতো আমার জন্যই ভালো,আমি আমার সাথে তোকে নিয়ে যাবো।কি বলিস।ভ্রুদুটো উঁচু নিচু করে।
তিশা একটু মুচকি হাসে।একটু পর জিঙ্গেস করে, আমরা কোথায় যাবো এখন এতো রাতে।
___সারপ্রাইজ জান।জাস্ট ওয়েট।
ঘন্টাখানিক এর মধ্যে তিশা ও জিসান পৌছে গেলো।তিশাকে আজ জিসান নিজের বাড়ীতে নিয়ে এসেছে।এটা ঐ বাড়ী যেখানে জিসান একলা সময় কাটায়।কেউ জানেনা এই বাড়ীর কথা।আজ তিশাকে এখানেই নিয়ে এসেছে।বিশাল জায়গা নিয়ে বাড়ীটি বানানো।ডান এবং বাম সাইডে বিশাল বাগান।আর বাড়ীর পেছনে নাকি সুইমিংপুল ও আছে।বাড়ীতে এসে বুজতে পারে তিশা,এখানে কেউ নেই।বাড়ীর মেন গেটও জিসান নিজের ফিংগার প্রিন্ট দিয়ে খুলেছে। বাড়ীর চারপাশে এলার্ম দেওয়া।কেউ অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করার কোনও পথ নেই।
____কি আশ্চর্য, একদম বিদেশি ধাজে বাড়ীটি বানানো।কেনো জানি ভয় করছে আজ তিশার,বুকের ভেতরের ধপধপ শব্দটা বেড়ে গেলো।হয়তো জিসানও তিশার ভয়টা বুজতে পেরেছে।
আমার প্রতি বিশ্বাস আছে তো জান।জিসানের কথায় শুধু মাথা নাড়ালো তিশা।এরপর তিশার হাতটি ধরে ভেতরে নিয়ে গেলো।
____এটা কার বাড়ী।জিসান তিশার দিকে তাকিয়ে আমাদের।
আমাদের মানে!
____এটা আমি অনেক শখ করে বানিয়েছি।যখন আমার একা থাকতে মন চায় কিছু সময়ের জন্য।তখন এখানে চলে আসি।আর আমার বাড়ী মানে তোরও বাড়ী।মানে আমাদের বাড়ী।
বেডরুমের বিশাল বারান্দাটায় খুব সুন্দর ভাবে ফুল আর রেড কালারের লাভ সেফ বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে। তিশা বুঝতে পারছে না কেনো।সামনের ছোট টেবিলে একটা কেক রাখা।কেকের দিকে তাকিয়ে দেখে,হ্যাপি এনিভারসেরি লিখা।তিশার এখন মনে পড়লো,আজ তাদের বিবাহ বার্ষিক।তিশার মনটা খারাপ হয়ে গেলো আজকের দিনটি ও কিভাবে ভুলে গেলো।
_____হঠাৎ তিশাকে কেউ পেছন দিয়ে জরিয়ে ধরলো।তার মাতাল করা পারফিউম এর ঘ্রান বলে দিচ্ছে কে সে।
হেপি এনিভারসেরি জান।আজ আমাদের বিয়ের পাঁচ বছর হলো।
___রিয়েলি!
হুম।এতো বছর আমি একা এই দিনটি পালন করে এসেছি। আজ এতো বছর পর দুজনে একসাথে পালন করবো।তাইতো এতো রাতে আপনাকে এখানে লুকিয়ে নিয়ে এসেছি।
____ছলছল চোখে তিশা জিসানকে বললো আম সরি।আমার না মনেই ছিলো না।
ইটস ওকে জান,আমি আছি না।আমি মনে করে দিবো নি,যখনি তুই ভুলে যাবি।এখন চল আগে কেকটা কাটি।দুজনে একসাথে কেক কাটে,এবং দুজন দুজনকে খাইয়ে দিলো।
____জিসান নিজের পকেট থেকে একটা বক্স বের করে।বক্সটি খুলে,একটি আংটি বের করে।আংটির ডিজাইন টা তিশার কাছে অসাধারণ লাগলো।নিঃসন্দেহ এটিও হীরার।জিসান তিশার অনামিকা আঙ্গুলে আংটিটি পড়িয়ে দিলো।হাতটাতে একটা কিস করে বললো,জানিস প্রিয় মানুষটিকে এই আঙ্গুলেই কেনো আংটি পড়ানো হয়।তিশা মাথা নাড়িয়ে জানায়, না।
জিসান একটু হেসে তিশার হাতটি বুকের বামপাশে রেখে,কারণ অনামিকা আঙ্গুলটি সরাসারি হ্রদপিন্ডের সাথে সংযুক্ত।একে ভালোবাসার ধমনীও বলা হয়।দুটো ভিন্ন মানুষকে এই একটি আংটির মধ্যমে এক করার প্রথম ধাপ শুরু হয়।সবথেকে বিশেষ কি জানিস।আংটির এই গোলাকার হওয়া।কখনো ভেবেছিস এটা বৃত্তকার কেনো।তিশা এবারও মাথা নাড়ায় না।
____কারণ বৃত্তের কোনও প্রান্ত নেই,অসীম এর যাত্রা।ভালোবাসারও যাতে কোনও প্রান্ত না থাকে তারই রুপক এটি।
আপনে এতো কিছু জানেন কি করে।
____বই পড়ে ম্যাডাম।তিশার গালটা টেনে।
তিশা মাথা নিচু করে বলে,আমিতো কোনও গিফট আনিনি আপনার জন্য।জিসান তিশাকে ঘুড়িয়ে নিজের বুকের সাথে তিশার পিঠ ঠেকিয়ে জরিয়ে ধরলো।জান,আমার সব থেকে বড় গিফট তো তুই।তোর আমার পাশে থাকা,কাপাকাপা হাতে আমাকে স্পর্শ করা,তোর লজ্জায় লাল হওয়া গাল দুটো,তোর বোকাবোকা কথা গুলো।ভয়ে চুপছে যাওয়া মুখখানি এসবই তোর তরফ থেকে আমার জন্য গিফট।আমিতো এতেই ফিদা।আর আমি আমার তিশাকে এভাবেই চাই।এরপরও আরো একটা জিনিস চাই।একটা ওয়াদা করবি।এবার তিশা সামনে ঘুড়ে জিসানের দিকে তাকালো।জানতে কি?
____এই আংটিটা কখনো খুলবি না।যতো কিছুই হোক জীবনে আমাকে ছেড়ে কখনো যাবি না।
কেনো জানি জিসানের চোখে আজ তিশা অন্যকিছু দেখতে পাচ্ছে।তিশা জানে,জিসান ওকে নিয়ে খুব বেশি পজেসিভ।কিন্তু আজ আমাকে হারানোর ভয়টা জেনো বেশি জিসানের চোখে।
_____তিশা জিসানকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।জিসানের বুকে মাথা রেখে,বললো।যতোদিন বেঁচে থাকবো,স্বজ্ঞানে কখনো খুলবো না।আর বেঁচে থাকতে কখনো ছাড়বো না।জিসানও নিজের সাথে তিশাকে আরো মিশিয়ে নিলো।
চলবে.....।

আজ তিশার অন্য একটা রুপ দেখতে পেয়েছে জিসান।তিশা আজ ওর মনের অনেক অনুভুতিগুলো শেয়ার করেছে জিসানের সাথে।জিসান কখনো ভাবতেই পারেনি,এই দিনটিও কোনও দিন আসবে ওর জীবনে।যে মেয়েটি ওকে দেখলে ভয়ে কুঁকড়িয়ে যেতো,সবসময় নিজেকে ওর কাছ থেকে দূরে দূরে রাখতো।আজ সে মেয়েটিই ওর জীবনের অনেক না বলা কথাগুলো শেয়ার করছে।যা হয়তো তিশা অন্য কাউকেও করেনি এখনো।
জিসান বুঝতে পেরেছে ওর ভালোবাসার মানুষটির মন ও দখল করতে সক্ষম হয়েছে।তাইতো মানুষটি আজ এতো কাছে বিনা সংকোচনে।এটা ভেবেই একচিলতি হাসি জিসানের ঠোঁটে ভেসে উঠলো।
___দূরের আকাশটার দিকে চেয়ে আছে জিসান।চারদিকে কতো শতশত তারার মেলা।এতোগুলো তারার মধ্যে কয়টি তারাকেই বা আমরা চিনি বা জানি।আমাদের মানুষের জীবনটাও তারার মতো।এতো মানুষের ভিড়েও আমরা কেউ কাউকে চিনি না।কি অদ্ভুত!
কিন্তু একটা জিনিস তাদের খুব ভালো লাগে।বিশাল সেই আকাশটাকে সূর্য যখন ধোকা দিয়ে,তাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে তুলে,তখন এই তারাগুলোই মিটিমিটি করে জ্বলে আকাশের অন্ধকার দূর করে দেয়।কি অদ্ভুত সুন্দর লাগে তখন তাদের।
কিন্তু মাঝে মাঝে ঘন কালো মেঘ এসে সব কিছু কেমন ঘোলাটে করে দেয়।জিসানের মনের আকাশেও একফালি মেঘ জমেছে।কেনো?জিসান বুঝতে পারছে না।মনে হচ্ছে কোনও একটা ঝড় আস্থে আস্থে ধেয়ে আসছে ওদের জীবনে।কেনো এমন অনুভূতি হচ্ছে জানে না।আজ তিশাকে নিজের ভেতরে লুকিয়ে রাখতে মন চাইছে।কোন ঝড় আমাদের আলাদা করতে পারবে না জান নিজের মনেই বলে উঠছে।
অনেক রাত পর্যন্ত জিসান তিশা বারান্দায়ই ছিলো।তিশা ঘুমিয়ে থাকলেও জিসান সারারাত জাগনা ছিলো।ভোড়রাতে হালকা ঠাণ্ডা বাতাস বইলে,তিশাকে কোলে করে রুমে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দিয়ে নিজেও কিছুক্ষণ ঘুমানোর চেস্টা করে জিসান।
___অফিস থেকে বের হয়ে বাসায় আসার পথে, হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হওয়ায় রায়হান কাক ভেজা হয়ে বাসায় ফিরলো আজ।রেনু বেগম রায়হান কে এই অবস্থায় দেখেই ক্ষেপে গেলো।কারণ এর আগের বারও বৃষ্টিতে ভিজার কারণে রাতে জ্বর এসে পরেছে,আর আজতো সমানে হাচির পর হাচি দিয়ে যাচ্ছে।সামান্য বৃষ্টির পানিও এই ছেলের সহ্য হয়না।
তাই রেনু বেগম ছেলেকে বৃষ্টি থেকে দূরে থাকতে বলে।আজ রাতও নিশ্চিত জ্বর আসবে।আমার হচ্ছে সব জ্বালা।এতো বড় ধামড়া ধামড়া ছেলেমেয়েদের এখনো সেবা করতে হবে।রায়হানের জন্য মশলা চা বানাচ্ছে আর প্রলোপ করছে।
___তখনি রায়হান পাকের ঘরের সামনে এসে দাঁড়ায়,মা কি হয়েছে। আজ তাওয়া এতো গরম কেনো।সব কিছুতো পুরে যাবে।
রেনু বেগম চা টা ছেলের হাতে দিয়ে,বিয়ে করবি কবে বলতো।তোর পছন্দ থাকলে বল,না হলে আমি মেয়ে দেখা শুরু করি।মার কথা তো ভালো লাগেনা।তাহলে বউ এনে দিই।বউয়ের কথা শুনিস।
কথা নাই বার্তি নাই।হঠাৎ আমার বিয়ের প্যারা তোমার মাথায় কেনো আসলো।
___এ কেমন কথা রায়হান,এখনও বলবো নাতো কখন বলবো।বয়সতো কম হলো না।তোর সাথের বন্ধুবান্ধব দের দেখি বউ বাচ্চা নিয়ে ঘুড়ে বেড়ায়।আর আমার কি কপাল মেয়ে বিয়ে দিয়ে ঘরে বসিয়ে রেখেছি আর ছেলে বুড়ো হয়ে যাচ্ছে এখনো নাকি তারা করছি। আরে কখন করবি,চুল পাকার অপেক্ষায় আছিস।এরপরতো তোর ঘরের বাচ্চা হলে তোকে বাবা না ডেকে দাদা ডাকবে মনে রাখিস। আর সমস্যা কি বলতো।বিয়ের কথা উঠলেই মেয়ে লোকের মতো এমন পালাস কেনো।
মা কোনও সমস্যা না।আগে বাবাকে বলো,জিদ ছেড়ে তিশাকে জিসানের হাতে তুলে দিতে,অনেক হয়েছে।কেনো এমন করছে।কিছু বলছেও না।এমন তো না জিসানকে নতুন চিনে,ছোট থাকতে দেখে আসছে।আর সব থেকে বড় কথা জিসান তিশার বিয়ের সময়ও বাবার কোনও সমস্যা ছিলো না তাহলে এখন কেনো।
___রেণু বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে,একথা আমিও অনেক বার জিঙ্গেস করেছি কিন্তু কিছুই বলছে না।
না বললে বুঝাও।তা না হলে,জিসানের ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে গেলে,কারও জন্যই ভালো হবে না।
___রেণু বেগমও এটা নিয়ে চিন্তিত। জিসানকে খুব ভালো করেই জানে,সাথে ওর রাগকেও।
কালরাতে রায়হানের সত্যিই জ্বর এসে পরেছিলো।তিশার বাবা মা দাদীকে নিয়ে আজও হাসপাতালে জেতে হবে।তাই তিশাকে বাসায় থাকতে বলে গেলো,আজ ভার্সিটি যাওয়া লাগবে না।রায়হানের জ্বরের কথা শুনে নিশি নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না,চলে এলো তিশার বাসায়।নিশিকে দেখে তিশা একটুও অবাক হলো না।ভালোবাসার টানটা কি তিশা এখন ঠিকই বুঝতে পারে।তাই বিনা সংকোচে বলে দিলো,
ভাইয়া ওর রুমে,আর বাসায় কেউ নেই,সো ডোন্ট ওয়ারি।তিশার কথা শুনে নিশির মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
___আমি রুমে আছি,কিছু লাগলে বলিস।তিশা ওদের একা ছেড়ে চলে গেলো।
নিশি রায়হানের রুমে প্রবেশ করে দেখে রায়হান কাথা গায় দিয়ে শুয়ে আছে।রায়হানের মাথার সামনে বসে মাথায় হাত দিয়ে দেখে জ্বর আছে কিনা।জ্বর এখনো আছে।
মাথায় কারো হাতের শীতল স্পর্শ আর নাকে চেনা সেই পারফিউম এর ঘ্রানে রায়হান না দেখেই বুঝে গিয়েছে।এটা আর কেউ না ওরই প্রিয়তমা। রায়হান কপালে রাখা হাতটা শক্ত করে ধরেই,হঠাৎ নিশির কোলের উপর মাথাটা রেখে বলে,নিশি মাথাটা টিপে দেতো,অনেক ব্যথা করছে।নিশি কিছুটা অবাক হলো,কারণ ওতো কোনও কথা বলেনি,তাহলে জানলো কি করে রায়হান ।
___আপনে জানলেন কি করে আমি।
রায়হান নিশির হাতটি নাকের কাছে এনে,তোর শরীরের এই ঘ্রানটাতে অনেক আগেই মাতাল হয়েছি আমি।আরও মাতাল করতে এসেছিস এখানে।
___নিশি কিছুটা শোকড হয়ে বসে আছে।কিসব বলে লোকটি।
নিশির হাতটা মাথায় রেখে,নে টিপ এখন।
নিশি মাথা টিপছে আর রায়হানের বলা কথাগুলো ভাবছে।হঠাৎ রায়হান ওর দিকে ঘুড়ে কোমড়টা জরিয়ে ধরলো।রায়হানের এমন কান্ডে নিশি স্ট্যাচু হয়ে গেলো।নড়তেও সাহস পাচ্ছে না।
___রায়হানের গরম নিশ্বাস নিশির পেটে পড়লে,নিশি কেঁপে উঠে।মেরুদণ্ডের শিরধারায় জেনো একটা শীতল বাতাস বয়ে যাচ্ছে।রায়হান নিশিকে আরো একটু শক্ত করে ধরে পেটে একটা কিস করলো।নিশির মুখ দিয়ে কোনও কথা বের হচ্ছে না,তবে বুঝতে পারছে না এসব কি সত্য।একটার পর একটা ঝটকা হজম করতে কস্ট হচ্ছে নিশির আজ।
নিশি বলতো তোর এতোটুকু একটা পেটে আমাদের বাবু কিভাবে থাকবে।বাবুর কস্ট হবে না।আমার না তোর মতো একটা মেয়ে বাবু লাগবে।একদম তোর মতো।তোর মতো চোখ,নাক কান সব।দিবি বল।
___নিশি কি বলবে বুঝতে পারছে না।তবে এতোটুকু বুঝতে পারছে,রায়হান জ্বরের ঘোরে এসব বলছে।
বল না দিবি।বাচ্চাদের মতো জিদ করে।আমার বেবির মা শুধু তুই হবি।আমি বানাবো।রায়হানের কথা শুনে নিশির হাসিও পাচ্ছে সাথে লজ্জাও।নিশি জানে এই লোকটি জ্বরের ঘোরেই এসব বলতে পারবে।জ্বর ভালো হলে,আবার পুরোনও বোরিং রুপে ফিরে আসবে।তাতে কি,সত্য তো বদলাবে না।এই বোরিং মানুষটির প্রেমেইতো আমি পড়ি বার বার।নিশি তাই চুপ থেকে রায়হানে কথাগুলো শুনে। হাতের কাছে রাখা পাতলা কম্বল টা দিয়েও ঢেকে দিয়ে রায়হানের গরম কপালে,নিজের ঠোঁটের উষ্ণ পরশ দিয়ে দেয়।এসময়টা দুজনে পাবে কিনা দ্বিতীয়বার কেউ জানে না।তবে সময়টাকে ধরে রাখা গেলে হয়তো দুজনেই ধরে রাখতো আজ।
||
||

নিবিড়ের মা শেফালির নিজের কোনও ভাই ছিলো না বলে,বান্ধবীর ভাই শামসুর রহমানকে ভাই বানিয়ে ছিলো।আর এভাবেই শেফালি আর শামসুর রহমানের ভাই বোনের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো।ভাগ্য ক্রমে শেফালিও তার পরিবার নিয়ে একই এলাকায় থাকতে আসে।বেশ কয়েক বছর একসাথেই ছিলো তারা।তখন তিশা একদমই ছোট বাচ্চা ছিলো।তাই তিশার এ ব্যাপারে কোনও জানা নেই।
___আজ তিশাও খুব বিরক্ত নিবিড়ের উপর।তিশার মনে হচ্ছে নিবিড় একটু বেশিই ইন্টেফেয়ার করছে তিশার লাইফে।মাঝে মাঝে তিশার কলেজেও ভূত দেখার মতো চলে আসে।তিশাতো ভয়ে আছে জিসানের।হিটলার জানতে পারলে আমাকে তুলে একটা আছাড় মারবে।আল্লাহ বাঁচাও আমাকে।
জিসান কিছু দিন বেশ ব্যস্ত ছিলো,একতো পোডাক্ট ডেলিভারির জন্য।আরেক হলো লাবণিকে ওর জায়গা দেখানোর জন্য।জিসান তার নতুন পার্টনারসিপ নিয়ে ব্যস্ত।এই সময় লাবণি কেবিনে নক না করেই প্রবেশ করে রেগে।
___জিসান কি শুনছি,আমার কেবিন তুমি অন্য কাউকে কিভাবে দিতে পারো।
জিসান লাবণির দিকে না তাকিয়েই, মিস লাবনি আপনাকে আগেও বলেছি কেবিনে প্রবেশ করার আগে নক করে আসবেন।ম্যানারস হয়তো ভুলে গিয়েছেন।যাই হোক,সোম মিস লাবণিকে পেপার গুলো দিয়ে দেও।
___কিসের পেপার জিসান।
মিস লাবণি আপনে ভুলে গিয়েছেন মনে হয়,আপনার সাথে আমার জাস্ট এই ডিলটার জন্যই কন্ট্রাক্ট সাইন হয়ে ছিলো।আমাদের ডিলটা কমপ্লিট তাই আপনার আর আমার রাস্তাও এখন আলাদা।পেপারগুলো চেক করে নিন ভালো করে।আরো একটা কথা আপনার প্যারিসের কোম্পানিতে যে টাকা আমি লাগিয়েছি তা আমার ফিরত চাই।লাভ সহ,আশা করি আগামী একমাসের মধ্যে আপনে তা ফিরতের ব্যবস্থা করবেন।
__আর ইউ মেড জিসান,তুমি ভালো করে জানো।এখন কোম্পানি থেকে টাকা বের করা মানে কোম্পানি পুরো লসে চলে যাবে।
আই ডোন্ট কেয়ার,লাবণি।এটা তোমার সমস্যা আমার না।তোমাকে আমি ধার দিয়েছি তোমার দরকারের সময়,এখন আমারটা আমি ফিরত চাই।
___কিন্তু জিসান....নো মোর ওয়ার্ড লাবণি।আমি আর কিছু শুনতে চাইনা।টাইম মতো না দিতে পারলে,আমার উকিল আপনার সাথে কথা বলবে।আপনে এখন আসতে পারেন।
লাবনি জানে জিসান এমন কেনো করছে।তাই বলেও লাভ নেই।তাই রাগে দুঃখে চলে গেলো সেখান থেকে।
___সপ্তাহিক ছুটি আজ, সকাল থেকেই তিশাদের বাসায় কিছু একটার আয়োজন চলছে।হয়তো মেহমান আসবে।কিন্তু কে আসবে তা জানার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই তিশার।তাই কাউকে কিছুই জিঙ্গেস করেনি।নাস্তা করে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো।বিছায়নায় বসে কিছু একটা ভাবছে তিশা।হঠাৎ মোবাইলের শব্দে ধ্যান ভাঙ্গে।
ফোনের স্ক্রিনে নামটি দেখে মুখে হাসি ফুটে উঠে।তিশা ফোনটি হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে আসে।কিছুক্ষন পর তিশার মা রুমে এসে,তিশা তোর শেফা ফুফু আর নিবিড় এসেছে।তোকে ও ডাকছে ড্রয়িংরুম এ।
তিশা ফোনটা কানের থেকে একটু সরিয়ে,মা হঠাৎ উনারা কেনো এসেছে।
___কে জানে কি কারণ।কিন্তু আমারতো তাদের মতলব ভালো মনে হচ্ছে না।তুই একটু দূরেই থাকিস এদের থেকে।আমার আর কোনও ভেজাল ভালো লাগছে না।
রেনুবেগম চলে গেলে,তিশা ফোনটা কানে নিয়ে কিছু বলবে তার আগেই জিসানের প্রশ্ন,নিবিড় কে।
তিশা জানে এখন কিছু লুকানো মানে নিজের পায়ে কুড়াল মারা।তাই সব বলে দিলো।জিসান খুব মনোযোগ সহকারে সব শুনলো।
ওকে, যা ভালো মতো রেডি হয়ে তারপর দেখা করিস।তোর ফুফি এসেছে এতোদিন পর।
___তিশা তো শোকড কথা শুনে কি বলে জিসান।
কি হলো,জান।ফোন রাখ।সবাই অপেক্ষা করছে তোর জন্য।
___ড্রয়িংরুম এর সোফায় শেফালির সাথে বসে আছে তিশা।জিসান যেভাবে বলেছে,ঠিক সেভাবেই রেডি হয়েছে।তিশার এমন রুপ দেখে রায়হান ও রেণুবেগম বিষন অবাক।রেণুবেগমের ধারণা মেয়ে তার পাগল হয়ে গিয়েছে।
কথার এক পর্যায় শেফালি বলেই দিলো,সে তিশাকে নিবিড়ের বউ বানাতে চায়।
তিশা এটা শুনে মনে হয় আকাশ থেকে পড়লো।কি বলে,আমিতো অলরেডি একজনের বউ।আবার বউ হবো কেনো।আর আমার বর জানলে কেয়ামত এসে পড়বে।তিশা একবার ওর পিতার দিকে,আর একবার রায়হানের দিকে তাকাচ্ছে।
___রায়হানের নিজেরই মেঝাজ গরম হয়ে যাচ্ছে।
তিশার দাদীও শেফালির সাথে একমত হলো,এমনকি নিবিড়কে নাত জামাই বলে ডাকতেও লাগলো।তিশার ভেতরে ভেতরে বিষন রাগ হচ্ছে নিজের বাবার নিরবতা দেখে।শামসুর রহমান হা না এখনো কিছু বলেনি।রায়হান কিছু বলবে,ঠিক এসময় কলিংবেল বেজে উঠে।
___দরজা খুলে রায়হান বড়সড় একটা শোকড পেলো। জিসান তুই।এ সময়।
হুম,আমি।তুইতো দাওয়াত দিবি না।আমার বউয়ের বিয়ের কথা চলছে, তাই নিজেই শ্বাশুর বাড়ী এসে পরেছি দাওয়াত নিতে।
___রায়হান কি বলবে তা শুনার তওয়াক্কা না করেই,জিসান ভেতরে ডুকে গেলো।জিসানকে দেখে তিশাও লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো ভয়ে।এখনি মনে হায়,ছোট হার্টটা স্টোক করবে।জিসানকে দেখে শামসুর রহমানও কিছুটা অবাক হলো।কিন্তু কিছু বললো না।কারণ উনি জিসানের সামনে কিছুই বলতে পারেনা।তাইতো জিসানও যথেস্ট সম্মান করে শামসুর রহমানকে।কিন্তু রহমান সাহেব আন্দাজ করতে পারছে কি হবে এখানে,বিনা কারণে তো জিসান আসেনি।নিশ্চয় জেনেই এসেছে।জিসান সবাইকে সালাম করে সোফায় বসে পড়লো।চোখ দিয়ে তিশাকে ইশারা করলো,তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেনো।বসার জন্য ইনভাইটেশন দিতে হবে।
তিশা মাথা নেড়ে না বলে,বসতে গিয়েও বসে না।একটু সরে মায়ের পাশে গিয়ে বসে।শেফা রেণুবেগম কে ইশারা করলো ছেলেটা কে।রেনুবেগম দাঁত কেলিয়ে হাসি দিয়ে, শেফা বু ও হলো জিসান।রায়হানের ফ্রেন্ড আর..... বলে রহমান সাহেবের দিকে তাকালো।ভাবছে বলবে কিনা।
___জিসান রেণু বেগমের থেকে চোখ সরিয়ে রায়হানের দিকে তাকালো।জিসানের এই চাওনির মানে রায়হান খুব ভালো করেই জানে,তাই সব উপেক্ষা করে নিজেই বলে দিলো।ফুফু ও জিসান আমার ফ্রেন্ড আর তিশার হাসবেন্ড। রায়হানের কথায় সবথেকে বেশি আহতো হলো নিবিড়।নিবিড় এখনো রায়হানের দিকে তাকিয়ে আছে পুরো ব্যাপারটা জানতে।
মানে,মানে কি!ভাইজান তিশার বিয়ে হয়ে গিয়েছে।শামসুর রহমান মাথা নিচু করে হা বললো।
___কবে,আর এতো তারাতারি মেয়ের বিয়ে দেওয়ার কি ছিলো ভাই।
তখন পরিস্থিতি অন্যছিলো ফুফু,সেটা এখন বলে লাভ নেই।সবথেকে বড় কথা হচ্ছে জিসান তিশার হাসবেন্ড।
___আমার কিছুটা মনে আছে,এটা ঐ ছেলেটা না,রায়হানের সাথে সাথেই থাকতো।একসাথে স্কুলে যাওয়া আসা করতো।আর একদিন নিবিড় তিশাকে নিয়ে খেলা করছিলো বলে,নিবিড়কে মারতে এসেছিলো।
হুম,ফুফু,তুমি ঠিকই ভাবছো।(রায়হান)
___কিন্তু রায়হান একটু রং বলছে ফুফু ।নিবিড়কে সেদিন তিশার সাথে খেলার জন্য না,ওকে ধমক দেওয়ার জন্য মারতে চেয়েছিলাম।কি হলো নিবিড় কিছু বলছো না কেনো,নাকি মনে নেই।জিসান একটু বাকা হেসে।
নিবিড় কিছুই বললো না।উঠে চলে গেলো সেখান থেকে।
___শামসুর রহমানও শেফাকে খুলে বলল সব।সবশুনে শেফা বেগম বলে উঠলো,এতো বাল্য বিবাহ।এই বিয়ের কোনও মূল্য নেই,আইনের নজরে।আর এছাড়া তিশা তখন ছোট ছিলো,ভালোমন্দ কিছুই বুঝতো না।তোমরা জোড় করে বিয়ে দিয়ে মেয়েটার জীবন নষ্ট করে দিয়েছো ভাই।
আইনগত না হলেও ধর্মীয় মতে আমরা হাসবেন্ড ওয়াইফ ফুফু।আর এ সত্য কেউ চেন্জ করতে পারবে না।এছাড়া খুব শীঘ্রই আমাদের বিয়ে আবার সবার সামনে হবে,আর এবার আইনত ও ধর্মীও দুভাবেই, সো ডোন্ট ওয়ারি। আর বললেন না,তিশার মর্জি ছিলো না।
জিসান বসা থেকে উঠে তিশার দিকে হাতটা বাড়ালে,তিশাও বিনা সংকোচে হাতটা ধরে ফেলে।আপনার উত্তর হয়তো পেয়ে গিয়েছেন ফুফু।জিসান তিশাকে নিয়ে ওখান থেকে চলে যায়।
আর শেফালি তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
||
||

___কি সত্য বাবা।
বাবা প্লিস টেইল মি,আই ডোন্ট টলেরেট ইট।কি এমন সত্য যা আমি জানি না।প্লিস টেইল মি।আর আজ আমি কোনও এক্সকিউজ শুনতে চাই না।রাবেয়া বেগম তৌফিক সাহেবের হাতটা ধরে করুন চোখে তাকালো।এই চোখের অসহায় মায়ের অকুলতা তৌফিক সাহেব খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে।
___জিসান ও তৌফিক সাহেব সেই রুমটার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে।যেটা এতো বছর বন্ধ রাখা হয়েছিলো।আর তৌফিক সাহেব বাদে সবার প্রবেশ নিশেধ ছিলো।বছরে একদিন তিনি নিয়মমাফিক এই রুমটি খুলতেন।তা হলো দেওয়ালে টাঙ্গানো ছবিটির মানুষটির মৃত্যু বার্ষিকীতে।জিসান মুগ্ধ হয়ে ছবিটির দিকে তাকিয়ে আছে।একজন মহিলার ছবি।কিন্তু মুখে প্রচণ্ড তেজ আর লাবণ্যময় বিরাজ করছে।কেনো জানি জিসানের খুব পরিচিত মনে হলো।তৎক্ষণাৎ জিসান তৌফিক সাহেব কে প্রশ্ন করলো,মহিলাটি কে?
ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে ভাঙ্গা গলায়,উনি তোমার মা জিসান।জিসান তৌফিক সাহেবের কথা বুঝে উঠতে পারলো না।
___মা মানে!
ছেলের কাধে হাত রেখে আবারও স্বস্পোর্ট বলে দিলো।ইনি তোমার আসল মা।
___কিসব বলছো,বাবা।আর ইউ মেড।আমার মা নিচে বসে আছে।এটা সত্য হতে পারেনা।
এটাই সত্য জিসান।দেওয়ালে টাঙ্গানো এই ছবিটি তোমার আসল মা আয়েশা আহমেদ। আমার প্রথম ওয়াইফ, আমার প্রথম ভালোবাসা।তুমি আমার আর আয়েশার সন্তান জিসান।এটাই সত্যি।
___জিসান সত্যটা হজম করতে পারলো না।হঠাৎ নিচে বসে পড়লো।
তৌফিক সাহেবও ছেলের সাথে নিচে বসে বলা শুরু করলো।তোমার দাদার বন্ধুর মেয়ে ছিলো আয়েশা।খুব স্নেহ করতো আয়েশাকে।আমি পড়ালেখা শেষ করে দেশে ফিরে আসলে আয়েশার সাথে আমার বিবাহ হয়।চৌধুরী বাড়ীর মেয়ে ছিলো তোমার মা।রুপে গুণে আল্লাহ কোনও দিক দিয়ে কম দেয়নি।কিন্তু বলা হয় না,কোনও মানুষ পার্ফেক্ট না।তোমার মারও বেলাও এমন হলো।ভালোই ছিলাম তোমার মাকে নিয়ে।কিন্তু বিয়ের পাঁচ বছর পরও অনেক চিকিৎসা করার পরও যখন আমাদের কোনও সন্তান হচ্ছিলো না।তখন তোমার মা দিনদিন ডিপ্রেশন এ ভুগতে লাগলো।
___বংশের একমাত্র ছেলে ছিলাম বলে,আমার পরে আমাদের বংশের কি হবে এনিয়ে তোমার দাদাও টেনশনে দিন কাটাতো।একদিন তোমার দাদা আমাকে দ্বিতীয় বিয়ের জন্য চাপ দিতে লাগলো।আমি রাজি হচ্ছি না দেখে,তোমার মায়ের কাছে নিজের বংশ বাঁচাবার ভার দিয়ে আমাকে বিয়ের জন্য বলতে লাগলো।তোমার মাও একজন সম্ভ্রান্ত পরিবারের কন্যা ছিলেন।বংশ মর্যাদা, বংশের চিরাগ এসব খুব মানতেন।অবশেষে তোমার মায়ের আর দাদার চাপে পরে রাবেয়াকে বিয়ে করতে রাজী হয়ে গেলাম।
একবছরের মধ্যেই রাবেয়ার কোলজুড়ে তাওহিদ এলো।কিন্ত এই দুজন মহিলা আমাকে সব সময় অবাক করতো জানিস।তাওহিদ কে নিজের হাতে আয়েশার হাতে তুলে দিয়ে বললো,আজ থেকে ওর মা শুধু আয়েশা।আয়েশাকে সেদিন আমি অনেক খুশি দেখেছি।ছোট তাওহিদ কে কোলে নিয়ে খুশিতে বাচ্চাদের মতো কাঁদতেও দেখেছি।
জানিস,খুব অদ্ভুত তাদের সম্পর্ক ছিলো।আমার সাথে রাবেয়ার বিয়ের কারণে,তোমার নানার বাড়ীর মানুষ খুব রেগে ছিলো।তোমার মা আয়েশার সাথেও কোনও সম্পর্ক রাখলো না তারা।তোমার মা এতে আরো ভেঙ্গে পড়লো।কারণ তোমার নানাকে খুব ভালোবাসতো আয়েশা।
___কয়েক বছর পর আবার একটা খুশির সংবাদ এলো আহমেদ ভিলায়।বাড়ীতে আরো একজন নতুন অতিথি আসার।তবে এবার রাবেয়া না,আয়েশা মা হতে চলছে।পুরো আহমেদ ভিলা জেনো আনন্দে আত্মহারা,সবথেকে খুশি তোমার দাদা ছিলো।বাড়ীর সবাই তোমার মায়ের সেবায় কোনও ত্রুটি রাখেনি।এমনকি রাবেয়া তো তোমার মায়ের ছায়া হয়ে থাকতো।কিন্তু এতো কিছু করার পরও দিন দিন তোমার মায়ের শরীরটা খারাপের দিকে যাচ্ছিলো।কিছুই বুঝতে পারছিলাম না সমস্যা কি।
এরপর সেই সময় এলো,তুই ভূমিষ্ঠ হলি,আর আয়েশার অবস্থা আরো খারাপ হতে লাগলো।ভাগ্যের কি লিলা,তোকে নিজের হাতে রাবেয়ার হাতে তুলে দিলো আয়েশা।সারা জীবন তোর মা হয়ে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি নিলো।আমাকে ডেকে শুধু বললো,তোর খেয়াল রাখতে,তকে যাতে কোনও দিন বুঝতে না দেই,তোর মা নেই।এরপর আমার এই হাতেই মাথা রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলো আয়েশা।তৌফিক সাহেবের গলা ভার হয়ে চোখ দিয়ে জল পরতে লাগলো।
___আর জিসান সেতো এখনও মূর্তির মতো বসে আছে।কিছুই চিন্তা করার মতো অবস্থায় নেই।
তৌফিক সাহেব চোখ মুছে আবার বলতে শুরু করে।সেদিন ডাক্তারের কাছে জানতে পারি।তোর মা নাকি সবই জানতো।ডাক্তার আয়েশাকে বার বার মানা করেছিলো।বাচ্চাটা এবোরশন করে ফেলতে কারণ বাচ্চাটা রাখলে আয়েশা মৃত্যুর মুখে চলে যাবে।কিন্তু আয়েশা এ কথা শুনে সবার থেকে সত্যটা লুকিয়ে রেখেছিলো।ও ভালো করেই জানতো,আমি জানলে ওকে কখনো এই কাজ করতে দিতাম না।কিন্তু আয়েশা মা হতে চেয়েছিলো।তোর মা।তাই ও নিজের কথা চিন্তা করেনি।
আয়েশার কথা রাখার জন্য,তোকে নিয়ে আমরা শহরে চলে আসি।আর এখানেই সেটেল হয়ে যাই।যাতে করে তুই কখনো জানতে না পারিস,রাবেয়া তোর আসল মা না।
___আয়েশার মৃত্যুরপর তোর নানা বাড়ীর মানুষ অনেকবার যোগাযোগ করতে চেয়েছিলো।কিন্তু আমিই রাগ করে তাদের সাথে দেখা করিনি।কিছুদিন আগে তোর নানা বাড়ী থেকে আবার কিছু লোক আসে, কারণ তোর নানার অবস্থা টা তেমন ভালো যাচ্ছেনা।সে তোকে দেখতে চায়।আর তখনি তাদের কথা দূর্ভাগ্য ক্রমে শামসুর ভাই শুনতে পায় বলে তাকে সব সত্য বলতে হয়।
বাবা,মা আমাকে জন্ম দিতে গিয়ে মরে গিয়েছে,তাইনা।জিসান মাটির দিকে তাকিয়েই কথাটা বলে।
____না জিসান,আসলে.......বাবাকে আর কোনও কথা বলতে না দিয়ে জিসান চলে গেলো।

বাড়ীর চারপাশে সারি সারি গাছ লাগানো।একদম সবুজের সমারোহ।এমন নিরব আর সবুজে ঢাকা পরিবেশ জিসানের খুব পছন্দ। জিসানের ইচ্ছা ছুটির দিনগুলো তিশার সাথে এখানেই একান্ত সময় কাটানোর।হঠাৎ তিশার ডাকে জিসান পেছনে তাকায়।সাদা রং এর থ্রীপিসটিতে কি সুন্দর না লাগছে তিশাকে,জেনো কোনও মায়ার দেশের এক মায়াপরী।
ফুফুর সামনে দিয়ে রাগ দেখিয়ে জিসান তিশাকে ওর নিজের সেই বাড়ীতে নিয়ে এসেছিলো তখন।
___আমরা এখানে কেনো এসেছি।
তিশার কথায় জিসানের ধ্যান ভাঙ্গে,তাই জিসান হাতের ইশারায় তিশাকে সামনে আসতে বলে কিন্তু তিশা দুপা পেছনে গিয়ে মাথা নাড়ায় ও আসবে না।জিসান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তিশার দিকে তাকিয়ে,হাতের সিগেরেট টা ফেলে দিয়ে একদম তিশার সামনে এসে কোমড় ধরে নিজের দিকে টেনে আনে।
___সমস্যা কি!
গন্ধ! তিশা মুখটা কুঁচকিয়ে বললো।ছিঃ! বিছরি গন্ধ। আপনে ওই ছাইপাঁশ খেয়ে আমার কাছে আসবেন না।ছাড়ুন।
___জিসান তিশাকে আরো কাছে টেনে নিলো।তিশার গাড়ে নাক দিয়ে স্লাইড করে গভীরভাবে নিশ্বাস নিয়ে ঘ্রান নিচ্ছে।কি করে ছাড়ি জান,তুই যখন ছিলিনা তখন এটাই একমাত্র উপায় ছিলো যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার।তোর নেশায় এতোটাই আসক্তি ছিলাম যে,পুরো একপেকেট সিগেরেট এর নেশাও আমায় ধরতো না।এখন এটা অভ্যাস হয়ে গিয়েছে,ছাড়া এতো সহয না।
তবুও আপনাকে ছাড়তে হবে,এটা খুব বাজে অভ্যাস।
___আদেশ দিচ্ছিস আমায়।তিশার দিকে তাকিয়ে।
তিশা জিসানের দিকে তাকিয়ে,আমতা আমতা করে বলে,আ আদেশ না, রিকোয়েস্ট করছি।প্লিস।
___ওকে,বাট আস্তে আস্তে ছেরে দেবো।কিন্তু ছেড়ে দিলে তুই আমাকে কি দিবি।
আআমি!আমিই কি দিতে পারি।আপনার কাছে তো সব আছে।
___তবুও দেখ আমি আজ কতোটা নিঃস্ব,তোর ভালোবাসার অভাবে।আমাকে অনেক ভালোবাসবি।তাহলে আমি সব ছেড়ে দেবো।বল!
তিশার গালে নিজের খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি দিয়ে ঘষে বলছে।তিশা হালকা ব্যথায় পেয়ে সরে আসতে নিলে।জিসান থেকে নিজেকে সরাতে পারে না।তিশার পুরো মুখে জিসান নাক দিয়ে স্লাইড করছে, আবার জেনো তিশার মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে জিসান।তাই জিসানকে ডিসট্রেক করার জন্য তিশা,বলুন না এখানে কেনো এসেছি আমরা।
তিশার উদ্দেশ্য বুঝে ফেলে জিসান,তাই কানেকানে ফিসফিসিয়ে বলে,হানিমুন করতে।তিশা বড় বড় চোখ করে জিসানের দিকে তাকিয়ে, ম মমানে এ।
___তোর জেলার বাবাকে ওয়ার্নিং দেওয়া হয়েছে।আমাদের বিয়ের ডেট ফিক্সড না করা পর্যন্ত তোকে বাসায় জেতে দেবোনা।বিয়ের ডেট যতো তারাতারি ফিক্সড হবে ততো তাদের জন্য ভালো।আর দেরি হলে.....।
তিশা ভ্রুটা কুঁচকিয়ে আর দেরি হলে কি!
___কি আর হবে!তুই রিসিপশনে বড় একটা পেট নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবি।আর তোর বাবাকে সবাই ডোবল কংগ্রেচুলেশন করবে।জিসান বলেই হাসতে হাসতে ভেতরে চলে গেলো।তিশা মুখ হা করে জিসানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।প্রথমে বুঝতে না পারলে পরে বুঝতে পেরে লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।অসভ্য মানুষ।সবসময় বাজে কথা।
পুরো দুদিন হয়ে গেলো,তিশা এখনো বাসায় আসেনি।রেগে শামসুর রহমান জিসানকে ফোন করে অনেক কথা বলে।সমস্যা কি জিসান বার বার জিঙ্গেস করায়,শামসুর রহমান তৌফিক সাহেবের সাথে কথা বলতে বলে কারণ তৌফিক সাহেব জানে সমস্যা টা কি।
সত্যটা কি জানতে বলে জিসানকে,যা তার পরিবার এতোবছর ধরে গোপন করে আসছে।সত্য জানার পর দেখা যাবে ওদের ব্যাপারে কি করা যায়।তাই জিসান সেদিনই তিশাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে নিজের বাড়ীতে চলে যায়।কি সত্য,আর কি সমস্যা জানার জন্য।
||
||

___রায়হান ও বের হয়ে গেলো জিসানকে খুঁজতে। খুব ভালো করে জানে এখন জিসানের মনের অবস্থাটা কেমন।অনেক জায়গায় খুঁজে না পেয়ে নিরাশ হয়ে যখন রায়হান বাড়ীর দিকে আসছিলো।তখন একটা ব্রিজের উপর জিসানের গাড়ী দেখতে পায়।রায়হান সামনে গিয়ে দেখে জিসান দাঁড়িয়ে আছে।মাত্র কয়েক ঘন্টায় জিসান কেমন বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছে।রায়হানকে দেখেও জিসান কিছুই বললো না।কিন্তু জিসানের চোখ মুখ দেখেই বুঝতে বাকি নেই জিসানের মনের অবস্থা কেমন এখন।
রায়হান জীবনে প্রথম জিসানকে এমন অবস্থায় দেখলো।রায়হানের নিজের বুকটা জেনো ফেটে যাচ্ছে।কিন্তু মুখে বলার কিছু নেই,কারণ বন্ধুর এই অবস্থার জন্যও ওর নিজের বাবাই দায়ী।
___জিসান মানসিকভাবে কিছুটা ভেঙ্গে পরেছে।ওর ভেতরে কি চলছে রায়হান জানতে চেস্টা করছে।কিন্তু জিসান কেমন জানি চুপ হয়ে গিয়েছে।জিসানের এই নিরবতা রায়হান সহ্য করতে পারছে না।তাই জিসানকে অনেক কস্টে নিজের সাথে নিয়ে গেলো বাসায়।আজ কিছুতেই একা ছাড়া যাবেনা।রায়হান কলিংবেল টিপ দেওয়ার সাথে সাথেই তিশা এসে দরজা খুলে দিলো।জিসানকে এভাবে দেখে তিশার বুকের ভেতরটাও মোচড় দিয়ে উঠলো।রায়হান ইশারা করলে জিসানকে ভেতরে নিয়ে জেতে।তিশাও জিসানের হাতটা ধরে সোজা নিজের রুমে নিয়ে গেলো।শামসুর রহমান দরজার আড়াল থেকে সবই দেখলো,কিন্ত কিছু বললো না।এখন বলার মতে কোনও মুখ নেই তার।
জিসান হাত দুটো হাটুতে ভর করে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।আমার ভেতরটা উনাকে এ অবস্থায় দেখে ফেটে যাচ্ছে।আস্থে আস্থে করে উনার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।উনি কিছু না বলে আমার হাতটা টান দিয়ে কাছে টেনে কোমড়কে দুহাত দিয়ে জরিয়ে ধরে পেটে মুখ গুজে দিলো।তার চোখের পানি আমাকে জানাচ্ছে তার নিরবে কাঁদার কথা।তার চোখের পানিতে আমার জামার পেটের অংশটি ভিজে যাচ্ছে।আমি কিছুই বললাম না,আসলে কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না।আমার একহাত দিয়ে উনার মাথাটা ধরে রাখলাম।আরেক হাত দিয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।আমি চাই উনি কাঁদুক, উনার মনে হয়তো কিছু একটা চলছে।
___কিছুক্ষণ পর উনি একটু শান্ত হয়ে নিজেই বলা শুরু করলো,তিশা আমার মা আমাকে জন্ম দেওয়ার জন্য হাসিমুখে নিজের মৃত্যু বেছে নিয়েছে।কেনো বলতো।সে কি বুজতে পারেনি।কখনো আমি এটা জানলে কিভাবে সহ্য করবো।আমাকে জীবন দিতে গিয়ে মা নিজের জীবন হারালো।কেনো করলো, এমন।কেনো?
আমি এই গিল্ট নিয়ে কিভাবে থাকবো তিশা কিভাবে।আমার সহ্য হচ্ছে না।মায়ের চেহারাটা আমার চোখে বার বার ভেসে আসছে।
আমি কতোটা অভাগা, যে মা আমাকে বাঁচাতে নিজের জীবন ত্যাগ করে দিয়েছে।সে মাকে ভুলে গিয়েছি।মা নিশ্চয়ই আমাকে ক্ষমা করবে না।জিসান আবার ফুফিয়ে কেঁদে উঠলো।আমি কি বলে শান্তনা দেবো ভেবে পাচ্ছি না।আমি শক্ত করে তাকে জরিয়ে ধরলাম।উনার কষ্টে আমার নিজের বুকটা ভেটে যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর একটু শান্ত হলে জানেন জিসান, প্রতিদিন হাজারো মা সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায়।তবুও প্রতিটি মেয়ে মন থেকে একবার হলেও মা হতে চায়।মা হওয়ার সুখটা অর্জন করার জন্য,কতো নারী নিজেদের জীবন বিপর্যয় করে কারণ তার কিছু হলেও তার সন্তানতো থাকবে পৃথিবীতে।এই ভরসায় যে, সে মারা গেলেও তার সন্তানের মাঝে সে বেঁচে থাকবে।কোনও সন্তানেই তার মাকে ভুলতে পারেনা।জীবনের শেষ পর্যায় যখন কোন মানুষ অন্তিম মুহুর্তের অপেক্ষা করে তখন সে ব্যক্তিটিও তার মাকে একবার হলেও স্মরণ করে।আর এভাবে প্রতিটি মা তার সন্তানের মাঝে বেঁচে থাকে।তাইতো একজন মা তার জীবনের বিনিময় সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখে।আপনার মাও আপনার মাঝে বেঁচে আছে।আর আপনে নিজেকে অভাগা কিভাবে বললেন।আপনে দুজন মাকে পেয়েছেন একজীবনে।একজন আপনাকে জন্মদিয়েছে আর একজন আপনাকে নিজের আঁচলে রেখে লালনপালন করেছে।
____আমি উনার মুখটা দুহাতের মাঝে ধরে,রাবেয়া মাও তো আপনার মা তাইনা।সে কি আপনাকে কম ভালোবেসেছে কখনো।আপনার এক মা আপনাকে জন্ম দেওয়ার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ দিয়েছে,তো আরেক মা আপনার জন্য নিজের সব কিছু ত্যাগ করেছে।আমি যতোটুকু দেখেছি,মা আপনাকে তাওহিদ ভাই ও নিশি থেকেও বেশি ভালোবাসে।তাইতো আপনার এভাবে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়া উনার সহ্য হয়নি।
তিশার কথা শুনো জিসান জিঙ্গাসা দৃষ্টিতে তিশার দিকে তাকিয়ে আছে।মানে!
____আপনে বের হবার পর মার পেসার একদম লো হয়ে যায়,উনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
কি?আমাকে আগে বলিসনি কেনো।আমার এখনি জেতে হবে।আমি জানি মা আমার কারণে টেনশনে আছে।আমি কি পাগল দেখ,মৃতো মাকে স্মরণ করে জীবত মাকে মৃত্যুর দিকে কিভাবে ঢেলে দিলাম।আমার এখনি জেতে হবে বাসায়।তিশা জিসানকে একা ছাড়বে না,তাই তিশা ও রায়হান ও সাথে গেলো।
||
||

হঠাৎ কারো শব্দে সবাই পিছনে তাকালো,না খেয়ে তুমিও আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার প্লানিং করছো।জিসানকে দেখে রাবেয়া বেগমের চোখের বাধ জেনো ভেঙ্গে গেলো।জিসানকে ইশারা করলো কাছে আসতে।জিসান মার পাশে বসেই মাকে জরিয়ে ধরলো।
___আম সরি মা।আমাকে ক্ষমা করে দেও,আমি তোমাকে কস্ট দিয়েছি।আমি আসলেই একটা খারাপ ছেলে তাই না,মায়ের হাতটা ধরে।সারাজীবন তোমাকে জ্বালিয়েছি।এখনো তোমাকে শান্তি দিচ্ছি না।তুমি আমাকে মারো।খুব বকো।আমি কিছু বলবো না,রাগও করবো না আর।দেখো নিজেকে চেন্জ ও করার চেস্টা করবো।
আর কোনও দিন এসব বললে,আমি সত্যি তোকে ছেড়ে চলে যাবো জিসান।তুইতো আমার ছেলে,আমার সোনার ছেলে।আর কখনো এসব বলবি না।তুই যেমন আছিস সারা জীবন তেমনিই থাকবি।এসবের জন্য তুই নিজেকে যদি একবিন্দু ও চেন্জ করিস,তাহলে মনে করবো,তুই আমাকে মা বলে মনে করিস না।আমার জিসান যেমন আছে তেমনি থাকবে।আমার থেকে নিজেকে আলাদা করার চিন্তা করলে,আমার লাশ কিন্তু দেখবি।
___মাএএএ,এসব বলো না।মায়ের হাতে চুমু দিয়ে।তুমিই আমার মা,আর আমার মাই থাকবে।নিশি যেমন আগে নালিশ করতো,তুমি নাকি আমাকে ভালোবাসো বেশি।সারাজীবন আমাকেই বেশি ভালোবাসবে।আমি আগেও ওদেরকে তোমার ভালোবাসর ভাগ দেইনি এখনো দেবো না বলে দিও।
রাবেয়া বেগমও আবেগে ছেলের কপালে আদর করে দিলো।আয়েশা বু অনেক ভাগ্যবান,যে উনি তোর মতো একটা হীরা জন্মদিয়েছে।আর আমি তোর মতো হীরাকে ছেলেরুপে পেয়ে নিজেকে আরো বেশি ভাগ্যবান মনে করি।
পরিস্থিতিটা কিছুটা হালকা করতে,নিশি বলে উঠলো,দেখলে তাওহিদ ভাইয়া।মায়ের চোখে জিসান ভাই হীরা, আর আমরা হলাম তামা পিতল।তাওহিদ হেসে বললো,কেনো তোর হিংসা হয়।
___উম,বয়ে গেছে হিংসা করতে।থাকো তোমরা তোমাদের মাকে নিয়ে,আমার কাছে আমার বাবা আছে।আর তাকে তোমাদের কাউকে দেবো না।
জিসান হাসতে হাসতে বলে,যা দিয়ে দিলাম,পুরো তৌফিক আহমেদকে তোকে।কিন্তু আমার মায়ের সামনে তোর ঐ হিরো ভেজা বিড়াল হয়ে যায়।তখন কি করবি।রুমের সবাই হঠাৎ অট্টহাসিতে ফেটে উঠে।
____তিশা ও রায়হান রুমের বাহিরে দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে সব দেখছিলো।আসলে তাদের সামনে যাওয়ার সাহস পাচ্ছিলো না।ওর বাবার একটা বোকামির কারণে এই পরিবারটি ধ্বংস হতে হতে বেঁচে গেলো।রায়হান ভয় পাচ্ছে বাবার করা বোকামির মাশুল ওর বোনকে না আবার দিতে হয় এখন।সবাই যদি বিষয়টা ইজিলি না নেয় তখন ।
ঠিক ঐ সময় তৌফিক সাহেব ওদের সামনে এসে দাঁড়ালো। রায়হান তিশা তোমরা এখানে,কখন এলে।একচুয়েলি আংকেল আমরা জিসানকে সাথে করে নিয়ে এসেছি। তাই নাকি,ও এসেছে তাহলে।ধন্যবাদ সান,আমি জানতাম একমাত্র তুমি পারবে ওকে বাসায় আনতে।রায়হানের কাধে হাত রেখে।
___রায়হান কিছু বলতে চায়,তৌফিক সাহেব তা বুঝতে পারে।তুমি কিছু বলবে রায়হান।
একচুয়েলি আংকেল বাবার তরফ থেকে আমি সরি বলছি।আসলে আমি বুঝতেই পারছি না,বাবা এমন একটা বোকামি কিভাবে করলো।সামান্য বিষয়টা নিয়ে এতো মাতামাতির করার।প্লিজ আংকেল আপনে মনে কিছু রাখবেন না।আমি জানি বাবাও হয়তো কিছুটা অনুতপ্ত। উনিও খুব শীঘ্রই সরি বলবে।
____ইটস ওকে রায়হান,উনি একজন পিতা।তিশার কথা চিন্তা করা তার দায়িত্ব। তার ভেতরে একটা ভয় ডুকে গিয়েছিলো।যা থেকে সে নিজেকে সরাতে পারছিলো না।সেদিন আমিও তাকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছি।কিন্তু সে ছোট বাচ্চাদের মতো জিদ করে কিছুই বুজতে চাইছিলো না।তাই আমিও আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিলাম।আর তোমাকে গিল্টফিল করার প্রয়োজন নেই।এটা একদিন না একদিন জিসানের জানারি ছিলো।আমরা শুধু ভয়ে ছিলাম ব্যাপারটা জিসান কিভাবে নিবে।কিন্তু সব কিছু এতো ইজিলি হবে ভাবতে পারিনি।আর চিন্তা করো না।তোমার বাবাও বুঝে যাবে।
রায়হান ও তৌফিক সাহেবের সব কথা শুনছিলো,জিসান ও রাবেয়া বেগম রুম থেকে এতোক্ষন ।তাই রাবেয়া রুম থেকে বের হয়ে রায়হান কে উদ্দেশ্য করে বলে,রায়হান তুমি টেনশন নিও না,উনি একজন বাবা,আর সব বাবা মায়েই চায় সন্তান সুখে থাকুক।আসলে উনার মনে একটা ভয় ডুকে গিয়েছে,তুমি হয়তো জানো না,শামসুর ভাইয়ের কোন বন্ধু জানি মারা যাওয়ার পর তার প্রথম স্ত্রীর সন্তান আর তার ছেলের বউকে নাকি সৎ ভাই বোনেরা মিলে বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছে।অথচ উনার বন্ধু জীবিত থাকাকালীন নাকি সবাই মিলেমিশেই থাকতো।এসব দেখে তোমার বাবার মনেও একটা ভয় ডুকে গেছে।আর এটাই স্বাভাবিক, তার জায়গায় আমরা হলে,এমন পরিবারের কাছে মেয়ে তুলে দিতে একটু হলেও ভয় পেতাম।তাই তোমরা ছোটরা এসব বিষয় নিয়ে কোনও কথা উনার সাথে বলবে না।আমরা বড়রাই দেখে নিবো।ঠিক আছে।রায়হান খুবই অবাক হলো,তাদের এমন আচরনে।বিষয়টা কতোটা ইজিলি করে দিলো তারা।
||
||

তানজিলা ও বলে উঠলো আংকেল আমাকে দেখলে কি আপনার এমন মনে হয় আমি খারাপ জ্যাল হবো।আর আমিও তো আছি ভাবি। আংকেল আমাকেও দজ্জাল ননদ ভাবে,যে বসে বসে ভাইয়ের কান ভরবে,বউকে মারার জন্য।তাইনা আংকেল।এদের কথা শুনে রেনু বেগম ও রায়হান মুচকি মুচকি হাসছে।কিন্তু শামসুর রহমান অবাক।এসব কিছু এই পরিবারের সমন্ধে কখনো উনি চিন্তাই করেনি।
____কি বলছেন আপা,আমি কখনো আপনাদের সম্পর্কে এসব চিন্তাও করেনি।তিশার মতো তানজিলা, নিশিও আমার মেয়ের মতোই।আমি জানি আমার মেয়েরা কেমন।
তাহলে সমস্যা কি ভাই জান।আমি জানি,আমি হয়তো জিসানকে জন্ম দিনাই বলে,আপনে ভাবছেন জিসানকে আমি কম ভালোবাসি।কিন্তু ভাইজান শুধু জন্ম দিলেই কি মা হওয়া যায়।আমি এই হাতে ওকে বড় করেছি।নিজের সম্পূর্ণ ভালোবাসা দিয়ে ওকে আগলে রেখেছি।কখনো কি মনে হয়েছে আমি ওর সাথে সৎ আচরণ করেছি,বলুন।আমার নিজ সন্তান থেকেও বেশি ভালোবাসি আমি ওকে।এটা আপনে অস্বীকার করতে পারবেন না।আপনার ভয় আমি বুঝি,কিন্তু সবাইকে এক পাল্লায় মাপলেতো হবে না।আপনার বন্ধুর ছেলের সাথে হয়েছে বলে,আপনে তার জন্য আমার ছেলেকে কষ্ট দিতে পারেন না।আমি এটা একদম সহ্য করবো না।ভালো করে বলছি ভাইজান,আমার বউ মাকে আমার ছেলের হাতে তুলে দেন,তানা হলে ছেলেকে বলবো তুলে নিয়ে যেতে।আর এবার আপনারা না,আমি নিজেই আমার ছেলেকে আর বউকে প্যারিসে পাঠিয়ে দেবো একেবারের জন্য।আমার ছেলেটার জীবন আপনে আর আমার স্বামী মিলে তেজপাতা বানিয়ে ফেলেছেন।এতোদিন আমি যেমন আমার ছেলে ছাড়া ছিলাম,এখন
দেখবোনি মেয়ে ছাড়া থাকেন কিভাবে আপনে।
____শামসুর রহমান তো পুরোই শোকড।ছেলের হুমকি কি কম ছিলো, এখন মাও হুমকি দিচ্ছি।শামসুর রহমান হেসে বলে,আপা কোনও সন্দেহ নেই,জিসান আপনারি ছেলে।যেমন মা,তেমনি আপনার ছেলে।ড্রয়িংরুম এর সবাই অট্টহাসিতে ফেটে উঠলো।অবশেষে তিশার বাবার মনের ভয়টা দূর হলো।
[শামসুর রহমানের দৃষ্টতে,আজকাল আপনভাই বোনরাই পরের মতো ব্যবহার করে।রক্তের বন্ধন ছিন্ন করতে ভাবে না।সেখানে জিসানতো রাবেয়া বেগমের সৎ ছেলে।তাহলে তানজিলার মতো কি সে আদর আর ভালোবাসা পাবে তিশা।আর জিসান সেতো জানেই না কিছু,তাহলে তার উপর কোনও অন্যায় হলে হয়তো সে বুঝতেও পারবে না।আজ তৌফিক সাহেব বেঁচে আছে, কিন্তু কাল যখন উনি থাকবে না তখন ও কি এরা এমন থাকবে।আমাদের সমাজে ঘরে ঘরে এমন অনেক কিছু দেখা যায়।তাইতো তিশাকে তুলে জিসানের হাতে দিতে তার মন মানছিলো না ।]
সবাই মিলে এবার ডিসাইড করলো,এই শুক্রবারে বসে ওদের চারহাত এক করে দেওয়ার ব্যবস্তা করবে।আর এসবের কিছুই এখনো জিসান আর তিশার কানে যায়নি।নিশিকেও মানা করে বলতে।ওদের সারপ্রাইজ দেওয়া হবে বলে।
আজ শুক্র বার।জিসান তিশার পরিবারকে নিজের বাসায় দেখে খুবই অবাক হলো।তার থেকে বেশি সারপ্রাইজ হলো যখন জানলো ওদের বিয়ের ডেট ফ্রিকড করার জন্যই সবার একত্রিত হওয়া।তবে এসবের মাঝে তিশা ছিলো না।তিশা এখনো কিছু জানে না।তাই জিসানও সবাইকে মানা করলো তিশাকে বলতে।কারণ তিশাকে সারপ্রাইজ দেওয়া হবে।
চলবে....।
সবাইকে জিসান ও তিশার বিয়ের দাওয়াত রইলো।

____Destination weeding জিসানের ইচ্ছা।তাইতো নিজের ইচ্ছা পূরণ করার জন্য শহর থেকে দূরে একটা রিসোর্ট ভাড়া করে নিলো।মেহমানদের সুবিধার জন্য আশেপাশের হোটেল গুলোও বুক করে ফেললো।বিয়ের পাঁচদিন আগেই সবাই রিসোর্ট এ আসার প্লান হলো।কিন্তু এসবের কিছুই তিশার কানে এখনো পৌঁছায়নি।বিয়েতে তিশার জন্য ড্রেস হতে শরু করে জুয়েলারি সব জিসান নিজে চয়েজ করেছে।তিশাকে নিজের পছন্দ রং এ সাজাবে বলে।তবে প্রতি ক্ষেত্রে তিশার পছন্দ অপছন্দ অবশ্যই মাথায় রেখেছে।
তিশাকেও সারপ্রাইজ দেওয়ার সব আয়জন শেষ করেছে জিসান।তাদের মেহেদি হতে শুরু করে, গায়ে হলুদ,বিয়ে এখানেই হবে।আর রিসেপশনের আয়েজন ঢাকায় করা হয়েছে।
____সকাল সকাল তিশার মায়ের চিল্লাচিল্লিতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো তিশার।ঘুম ঘুম চোখেই তিশা মায়ের দিকে তাকিয়ে, কি হয়েছে মা।এমন ষাঁড়ের মতো চিল্লাচ্ছো কেনো।মায়ের কিছু বলার আগে রায়হান ও চিল্লাতে চিল্লাতে তিশার রুমে আসলো।
কি হলো মা,তেমাদের হয়নি এখনো।
আমার তো হয়েছে,তোর এই কামচোরা বোনকে বল,কখন ধরে ডাকছি উঠার নামই নেয়না।
তিশা ছোট ছোট চোখ দিয়ে মা আর ভাইয়ের কার্যকলাপ বুঝার চেষ্টা করছে।ভাইয়া কি হয়েছে।কোথাও যাবে তোমরা।বলার সাথে সাথে মা আর ভাইয়া একধমক দিয়ে,রেডি হতে বলে চলে গেলো।তাও আবার নতুন ড্রেস পরে।মাথায় আমার কিছু আসছে না,হলো কি এদের।
___দুপুরে আমাদের গাড়ী এসে পৌঁছালো,একটা রিসোর্ট এর সামনে।গাড়ীটি রিসোর্ট এর সামনে থামনোর পরই তিশার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়।এটা কি দেখছে ও।এতো সুন্দর ভিউ ওর আগে দেখেনি তিশা।বিশাল এলাকা জুরে রিসোর্ট টি বানানো হয়েছে।চারপাশে নাম না জানা হাজারো ফুল দেখা যাচ্ছে।তার উপর পুরো রিসোর্ট টিকে অসম্ভব ভাবে সাজানো হয়েছে মনে হয় কারো বিয়ে।তিশার মাথায় কিছুই আসছে না।কার বিয়ে এখানে,রিসোর্টের ভেতরে পা দেওয়ার সাথে সাথে চারপাশ থেকে গোলাপের পাপড়ি ফেলা হচ্ছে তিশার দিকে।তিশা আশ্চর্যের চরম সীমায় আছে এখন।সামনে যতো বাড়ছে,ততোই মুগ্ধ হচ্ছে।আরো বেশি অবাক হলো সামনে জিসানও তার পুরো পরিবারকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে।তিশা লক্ষ্য করলো,আজ জিসানের চেহারায় এক আলাদা উৎফুল্লতা দেখা যাচ্ছে।সাদা পান্জাবী আর চুড়িদার পায়জামা পরে আছে।মুখে তার দামী সেই কিলার স্মাইল। উফ!কি যে লাগছে না।
তিশা সামনে এসে জিঙ্গেস করলো,আন্টি কারো কি বিয়ে এখানে।এতো আয়োজন কেনো।
____আমার কথা শুনে সবাই একসাথে হেসে উঠলো,এমন কি বললাম আশ্চর্য!আমি মুখটা কচুমোচু করে তাকিয়ে আছি।সবাই এখনো হাসছে।
তখনি জিসান আমার হাতটা তার মুঠোতে নিয়ে বললো,হুম।একটা পিচ্ছি মেয়ের বিয়ে এখানে। আমি এখনো জিসানের দিকে তাকিয়ে আছি বলে,ম্যানেজমেন্ট এর এক লোককে জিসান ইশারা করলে সে ট্রেতে করে ফুলের পাপড়ির উপর একটা কার্ড আমার সামনে নিয়ে আসলো। জিসান ইশারা করে আমাকে কার্ডটা দেখতে।কার্ড টা খুলে আমার একহাত মুখে চলে যায়।তার মানে এখানে আমার আর উনার বিয়ের আয়োজন চলছে।আমি অবাক হয়ে জিসানের দিকে তাকাই।আর উনি চোখ টিপ মেরে আমার কানের কাছে এসে বলে।
wellcome, to my kingdom..... jan....
লজ্জায় তিশা পুরো লাল-নীল হয়ে গেলো।ওর বিয়ে অথচ ওরই খবর নেই।সবই নিশ্চয়ই এই হিটলারের প্লানিং।
সবাই তার পর তিশাকে ভেতরে নিয়ে গেলো।তিশার রুম দেখিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে বললো।
||
||

___সন্ধ্যার দিকে নিশি ও নিলু আসে আমার রুমে।আমি নিলুকে দেখে কিছুটা অবাক হলাম।তুই এখানে,নিশি দাওয়াত দিয়েছে তাইনা।নিশির দিকে তাকিয়ে।
না আমাকে ভাইয়া ইনভাইট করেছে,শুধু আমাকে না,আবিরকেও।
___তাই নাকি,রিয়েলি!হিটলার এতো ভালো হলো কি করে।
তিশা দেখ আমার ভাই এমনেই ভালো,তুই সব সময় উল্টা বুঝিস।আমি নিশিকে জরিয়ে ধরে,তাই নাকি।তোর ঐ খারুস ভাই যে এতোকিছু করলো,আমাকে না জানিয়ে এটা কি।
___এটাতো তোকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য।
আমি সারপ্রাইজ না শোকড হয়েছি বুঝলি।
___হুম,বুঝছি।এখন চল।
কোথায়?
___নিচে,সবাই বাগানের লনে আড্ডা দেবো বলে,আসর বসেছে।ভাইয়া তোকে নিয়ে জেতে বলেছে।ভাইয়ের ফ্রেন্ডরাও এসেছে।তিশা একটু থেমে,তোরা আমাকে এ অবস্থায় নিবি,দাঁড়া অন্তত ড্রেসটা চেন্জ করেনি।
ওকে,তারাতারি কর।
___লনে জিসানের কাজিন আর ফ্রেন্ডসদের আড্ডা চলছে।আমাকে দেখা মাত্র সবাই টোন মেরে বলছে,দেখো অবশেষে দুলহানের আগমন ঘটলো। আমরা তো ভাবলাম,আজতো দেখাই পাবো না।এদের একেক জনের একেক কথায় লজ্জায় আমার গাল দুটো ব্লাশন ছাড়াই লাল হয়ে গেলো।কয়েকজন বাদে প্রায়ই সবাই আমাকে চিনে তাইতো আমাকে টোন মারতে তাদের ভালোই লাগছে।আড় চোখে জিসানকে খুঁজতে নিলে,একি দুটে চোখ আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।তবে আজ তার এই হাসি আমার অসহ্য লাগছে।আমাকে একা এখানে রেখে বন্ধুদের সাথে আড্ডা চলছে মিঃ জিসানের।কিছুক্ষন পর নিজেই আমার কাছে এসে তার বিলাতি ফ্রেন্ডসদের সাথে পরিচয় করে দিলো।বিদেশ থেকে এলেও এদের সকলের আচরন খুবই মার্জিত ছিলো।
প্রায় বেশ রাত পর্যন্ত আমাদের আড্ডা চললো,এরপর সবাই যে যার রুমে চলে গেলো।
নেক্সট মর্নিং প্রচণ্ড হৈ চৈ আর মিউজিক এ আমার ঘুম ভাঙ্গলো।বারান্দায় এসে বাহিরে তাকিয়ে দেখি। জিসান ওর ফ্রেন্ডস আর কাজিনদের সাথে ভলিবল খেলছে বাগানে।কি লোকরে বাবা।গেমে পুরো শরীর একাকার অথচ সে মহা আনন্দে থ্রী কোয়ার্টার প্যান্ট আর ওয়াইট কালারের সেন্ডও গেন্জী পরে এই গরমে খেলায় মেতে আছে ।আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে এই লোক বিয়ে করতে আসেনি,ফ্রেন্ডসদের সাথে পিকনিক এ আসছে।উনাকে দেখেতো এমনিই মনে হচ্ছে এখন আমার।
____রায়হান ক্লান্ত হয়ে,পানি খেতে আসলে,সামনে কিছু একটা দেখে রেগে দাঁড়িয়ে যায়।জিসানও রায়হানের পিছনে পিছনে আসছিলো।রায়হান কে এমন স্থির দেখে ওর দৃস্টির বরাবর তাকালো।জিসান ওদিকে তাকিয়ে বললো,তোর বোনকে একটা আছাড় মারতে মন চাইছে আমার।রায়হান ও বিরবির করে বলে উঠলো আমারও মন চাইছে আছাড় মারতে তোর বোনকে।
তাহলে,দাঁড়িয়ে আছিস কেনো এখানে।
___রায়হান অবাক করার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জিসানের দিকে।কারণ ও যে কথাটা নিশিকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলো তা কি জিসান বুঝেছে।
আর জিসান চললো,তিশাকে আছাড় মারতে।
___তিশা ও নিশি জিসানের কাজিন নীড়, হীরা আর ওর ফ্রেন্ডসদের সাথে কথা বলছিলো।আর কিছু একটা বিষয় নিয়ে খুব হাসছিলো।সাথে আবির ও নিলুও ছিলো।কিন্তু তিশাতো ভুলেই গিয়েছিলো,যে দুটো চোখ সব সময় ওকে নযরে রাখে।হঠাৎ সামনে জিসানকে আসতে দেখে,হীরা,নীড় সহ সবাই পালালো।কিন্তু তিশা কিছুই বুঝলো না,সবাই কোথায় গেলো হঠাৎ।পিছনে ঘুরে জিসানকে দেখে তিশাও শোকড!এবার বুঝলো সবাই কেনো গেলো।
তিশাও জিসানকে না দেখার ভ্যান করে চলে জেতে নিলে,জিসান হাত ধরে তিশাকে হ্যাচকা টান দিয়ে সামনে আনে।
কি সমস্যা কি?(তিশা)
___জিসান কিছু না বলেই তিশাকে কোলে তুলে নেয়।তিশাতো ছটফট করতে লাগলো নামানোর জন্য,কিন্তু জিসান ডোন্ট কেয়ার লুক নিয়ে একটা ডেবিল হাসি দিলো।তিশা এই হাসির রহস্য বুঝার আগেই জিসান তিশাকে নিয়ে ঝাপ দিলো সুইমিংপুল এ।
তিশা চেঁচিয়ে বলে উঠলো নোওওওওও।
____কিন্তু চিৎকার করেও লাভ হয়নি।তিশা অলরেডি পানিতে।হঠাৎ ঝাপ দেওয়ায় নাকে মুখে পানি ঢুকে কাশতে লাগে তিশা।তার উপর তিশার পানিতে ফোভিয়া থাকায়,জিসানকে শক্ত করে ঝাপটে ধরে আছে।প্লিস জিসান আমাকে ছাড়বেন না প্লিস।
তিশার মুখে এই প্রথম নিজের নাম শুনে জিসান জেনো সব ভুলে গিয়েছে। তিশার কোমড় জরিয়ে একদম কাছে টেনে নিলো।মুহুর্তেই দুটো ভেজা শরীর একে ওপরের সাথে লেপ্টে গেলো।হঠাৎ দুজন সব কিছু ভুলে একে ওপরের দিকে তাকিয়ে রইলো।জেনো আজ চোখের ইশারায় মনের কথা হবে।
___কিছুক্ষণ পর মিউজিকের উচ্চ শব্দে তিশার ধ্যান ভাঙ্গে।জিসানকে ঢেলে সরাতে নিলে,এক ইঞ্চিও সরাতে পারলো না।কেমন নেশা লাগা চোখে এখনো জিসান চেয়ে আছে।
তিশা কাপাকাপা গলায় বললো,ছাড়ুন আমায়।জিসান জেনো কিছুই শুনলো না।বরং তিশার দিকে তাকিয়ে সামনে আসা ভেজা চুলগুলো কানের পেছনে গুজিয়ে দিয়ে কানে কানে বললো,আর মাত্র তিনদিন। এর পর আমি কিন্তু আর কন্ট্রোল করতে পারবো না নিজেকে জান।জিসানের কথার মানে বুঝতে পেরে, তিশা জেনো লজ্জায় পানিতেই মিশে জেতে মন চাইছে।উফ!
নিশিও তখন পালাতে গিয়ে রায়হানের সামনে পরে গেলো।মুখে একটু মেকি হাসি দিয়ে পাশ কেটে চলে যেতে নিলে।রায়হান হ্যাচকা টান দিয়ে সামনে আনে।ঘটনার আকস্মিক নিশি ভয় পেয়ে যায়।কিন্তু ভয়টা কিছুক্ষণ পর রাগে পরিণত হয়।কারণ রায়হান নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে নিশির মাথায় একবোতল পানি ঢেলে দেয়।
____এসব কি রায়হান ভাই।
গরম,প্রচণ্ড গরম তো। তাই ঠাণ্ডা করছি।
____আপনার গরম লাগলে,আপনে গিয়ে ডুব দেন কোথাও আমাকে কেনো ভিজালেন।চিল্লিয়ে।
কারণ আগুন লেগে যাচ্ছিলো,তাই সময় থাকতে নিভিয়ে দিলাম।আবার লাগলে এবার পুড়িয়ে ফেলবো।বুঝলি!
রায়হানের কথা নিশির মাথার উপর দিয়ে গেলো।কি বলে গেলো।পাগল নি।
||
||

___মেহদি দেওয়ার জন্যও আলাদা আর্টিস্ট এসেছে।আমি হাত রেখে ওয়েট করছি তারা মেহেদি না দিয়ে কারো জন্য ওয়েট করছে।হঠাৎ ডিজে মিউজিক চালু করলো।আর আমার সামনে কিছু মেয়ে নাচতে লাগলো।
ফুল ভলিউম এ গান চলছে,
O Mehandi Pyar Wali Hatho Pe Lagogi
Ghar Mere Bad Gair Ka Basaogi
Ho Mujhe Marne Se Ho Mujhe Marne Se
Ho Mujhe Marne Se Pehle Hi Yakin Tha
Ki Ye Kam Mere Bad Karogi
O Dil Tod Ke Hasti Ho Mera
Wafaye Meri Yad Karogi
O Dil Tod Ke
Haa Dil Tod Ke Hasti
Ho Mera Wafaye
Meri Yad Karogi
O Dil Tod Ke
Karti Thi Jab Baat Lagakar
Thar Thar Jaiss Fool Hain Jharte
Hoth Hai Tere Jaise Gulab Ke
Do Latte Aptte Apas Me Ladte
Mai Bhi Lada Un Logo Se..
Jo kahte The To Nakli Hai
Rishte Tode Yaar Bhi Chhode
Tere Liye Ki Tu Aski Hai
Asli Yaha Par Koi Nahi.
Teri Jaisi Firti Lakhon Hai
Dil Loot Ke Ese Hasti Hai
Tu Ladki Hai Daku Hai
Kay Yaad Wo Jamana Mere Payar Ka
Chain Lut Na Tu Dil Ke Karar Ka
Kay Yaad Wo Jamana Mere Payar Ka
Chain Lut Na Tu Dil Ke Karar Ka
Ho Jab Dunia Mein Jab Dunia
Mein Main Na Raha
To Kise Barbad Karogi
O Dil Tod Ke Hasti Ho Mera
Wafaye Meri Yaad Karkgi
Ho Dil Tod Ke
Ho Dil Tod Ke Hasti Ho
Wafaye Meri Yad Karogi
Ho Dil Tod Ke Hasti Ho
Wafaye Meri Yad Karogi
___সেই গানের মাঝেই মেয়েগুলো ইশারা করে সামনে দেখাচ্ছে, আমি তাকিয়ে তো ক্রাশড।ও মাই গোড!আমি সত্যিই উনার উপর ক্রাশ হলাম আজ।আমার বরটাও আমার সাথে মেচিং করে,গাঢ় সবুজ রং এর পান্জাবী আর উপরে কুটি পরে আমার দিকে আসছে।সবার আগে আমাকে মেহেদি দিবে বলে।আমিতো চোখেই ফেরাতে পারছিনা।সবাই বলে,বিয়ের খবর পেলে নাকি মেয়েরা সুন্দর হয়ে যায়।এদেখি উল্টা,দিন দিন বর আমার আরো বেশি হ্যান্ডশাম হয়ে যাচ্ছে।
উনি কখন যে এসে আমার হাতে উনার নামটা লিখেছে বুঝতেও পারলাম না।এর পর কি সুন্দর ফ্রেন্ডস আর কাজিনদের সাথে গানের তালে তালে নাচতে লাগলো।আমিতো চোখই ফিরাতে পারছি না।মন চাইছে নিজের চোখের থেকে একটু কাজল নিয়ে উনাকে লাগিয়ে দি।
মেহেদু অনুষ্ঠানও ভালো ভাবে শেষ হলো।বর আমার ভালোই এন্জয় করেছে।মনে হলো তার একারি বিয়ে,আমি মনে হয় মেহমান। বেড়াতে এসেছি।তবে আজ থাকে নাচতে দেখে আমি নিজেও কিছুটা অবাক।সবসময় সিরিয়াস চেহারা নিয়ে ঘোরা আমার বরের মাঝে যে এখনো এতোটা বাচ্চামি লুকিয়ে আছে,তাতো আজ তাকে না দেখলে জানতামই না।
____হঠাৎ কারো নিশ্বাস এসে আমার পিঠে বারি খাচ্ছে। তাকিয়ে দেখার আগেই আমার শাড়ীর খোলা অংশে হাত ঢুকিয়ে আমাকে নিজের সাথে জরিয়ে নিলো।তার পারফিউম এর মাতাল করা ঘ্রাণটা আজ আমাকে জেনো আরো মাতাল করছে।দুহাতে দুপায়ে মেহেদি বলে,নড়তেও পারছিলান না।স্ট্যাচু হয়ে বসে আছি।আর জিসান সেই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে।কখনো কানে শুঁড়শুঁড়ি দিচ্ছে,কখনে কোমড়ে।আর আমিতো না উঠতে পারছি,না উনাকে বাধা দিতে।আমার এ অবস্থা দেখে মিটিমিটি হাসছে সাহেবে।
সমস্যা কি? আমাকে এভাবে টর্চার করছেন কেনো।
___আমি কখন তোকে টর্চার করলাম।আমি কি তোকে মেরেছি,জাস্ট একটু....... ইশারায় দেখালো।
আমি কিঞ্চিত রাগ দেখিয়ে,আপনে বেহায়া হয়ে যাচ্ছেন দিন দিন, এভাবে চলতে থাকলে বিয়ের আগেই পালাবো আমি এখান থেকে।
___একথা শুনার পর জিসান আমার পেটটা খামচিয়ে ধরলো।আমি ব্যাথায় আ আ করে উঠলাম।কিন্তু এতে উনার কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই।আমাকে নিজের সাথে একদম মিশিয়ে,চেস্টা করে দেখতে পারিস।এটা আমার রাজ্য।আমার অনুমতি ছাড়া একটা মোশাও ডুকতে পারবেনা,না পারবে বেড়তে।এতো ইজি না জান আমার কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া।
সো এসব উল্টাপাল্টা চিন্তা বাদ দিয়ে,হা কর।অনেক সময় হয়েছে,তোর কিছুই খাওয়া হয়নি।তাই আমি খাবার নিয়ে এসেছি।
___কি দরদ,ইস!ব্যথা দিয়ে মলম লাগাতে আসে।হিটলার কোথাকার।জীবনেও ভালো হবে না।
জিসান নিজেও খেলো,আমাকেও ঢেসে ঢেসে খাওয়ালো।আজব মানুষ।
||
||

____হলুদে নাকি গোলাপজল,চন্দন ও দুধ মিক্সড করে এনেছে,জাতে কনের সৌন্দর্য আরো প্রকাশ পায়।বাহ কি আদর!প্রথমে জিসানকে হলুদ ছোঁয়ালো,কারণ বরের ছোঁয়ানো হলুদই নাকি কনেকে দিতে হয়।তবে এটাতো মিঃ জিসানের হলুদ বলে কথা।তার আগে কি আমাকে কেউ হলুদ ছোঁয়াতে দেবে,ইম্পসিবল। উনার কপালে লাগানো হলুদ থেকে হলুদ নিয়ে আমার দুগালে লাগিয়ে দিলো।ইস কি লজ্জা!আশেপাশের সব আত্মীয় স্বজন মিটমিট করে হাসছে।আর এ লোকের তাতে কিছু আসে যায় আসেনা।কিন্তু আমার কথাতো চিন্তা কর।
এরপর সবার আগে আমার বাবা মা,ও জিসানের বাবা মা আমাদের হলুদ লাগালো।অদ্ভুত বিষয় হলো,রায়হান ভাই ও নিশি দুজন একসাথে এলো হলুদ লাগাতে।কিন্তু এসে দুজন ঝগড়া করা শুরু করে দিয়েছে।কে আগে হলুদ দিবে তা নিয়ে।হঠাৎ জিসান ধমক দিয়ে বললো,এতো ঢং না করে একসাথে হলুদ দিয়ে বিদায় হো তোরা।জিসানের কথা শুনে আমরা তিনজনেই তাকালাম তার দিকে।রায়হান ভাই ও নিশি এরপর চুপচাপ একসাথেই হলুদ দিয়ে চলে গেলো। আমি আসলে বুঝি না,এই লোকটি রায়হান ভাই ও নিশির ব্যাপারটা জানে কিনা।মাঝে মাঝে একটু সন্দেহ হয়।
___নিশি হারামি কিছু হলুদ নিয়েও গেলো,এটা আর কেউ না দেখলেও আমি ঠিকই দেখেছি।খুব ভালো করে জানি কেনো।নিশি হলুদ নিয়ে কাউকে খুঁজছে। হঠাৎ পেয়েও গেলো তার কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে।রায়হান রিসোর্ট এর লোকদের সাথে কথা বলছিলো আয়েজন নিয়ে।নিশিও এসে পাশে দাঁড়ালো।নিশিকে দেখে রায়হান ভ্রকুচকে বললো,ওয়াট!
নিশি মুখে একটা বিস্তৃত হাসি এনে,জানেন রায়হান ভাই বর কণের হলুদ নাকি আন মেরিডদের লাগালে,তাদের বিয়ের ফুলও নাকি ফুটে তারাতারি।
___তাই নাকি,তোকে এসব হাবিজাবি কথা কে শিখায় বলতো।
হাবিজাবি না,সত্যি!
ওকে তুই লাগিয়ে নে বেশি করে,তাহলে তিশার বিয়ের পর তোর বিয়েটারও আয়োজন সেরে ফেলবো।কি বলিস!
___নিশি একটু হেসে,তার জন্যই তো এসেছি।
মানেএএ!
___কিছু বোঝার আগেই নিশি ওর দুহাত ভরা হলুদ রায়হানের মুখে মেখে দিলো,তার জন্য রায়হান মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।
আপনার বন্ধুর বিয়ে,আপনে কুমাড়া থাকবেন কেনো।হলুদ দিয়ে দিলাম,যাতে আপনার বিয়েটাও তারাতারি হয়ে যায়।হলুদ দিয়েই নিশিতো দৌঁড়।আজকে আর ওকে কেউ খুঁজেও পাবেনা।
আর রায়হান সেতো শোকড!
চলবে.....
[বিয়ের আয়োজন বড় করে লিখতে বলছে অনেকে,যতোটুকু সম্ভব করছি।এর থেকে বেশি লিখলে হাবিজাবি মনে হবে।ধন্যবাদ ]

জিসান ফোনটা নিয়ে সোমকে কল করে,পেয়েছো।
ইয়েস স্যার।
ওকে, সেখানকার ক্যামেরা গুলো কিছুক্ষণ এর জন্য বন্ধ করে দেও।
ওকে স্যার।
তো ম্যাডাম এখন পালাবে কোথায়।
____সকাল থেকে সবাই তিশাকে রং লাগাবার জন্য জোর করেছে।কিন্তু তিশা রুম থেকেই বের হয়নি।কিন্তু যখনি জিসানের নাম শুনেছে।ভয়ে রুম থেকে পালিয়ে রিসোর্ট এর টেরিছে লুকিয়ে আছে। তিশার বিশ্বাস এখানে কেউ তার খোঁজ পাবে না।জিসানতো একদমই না।কি সব রং খেলে।রং দিয়ে একেক জন কে পেত্নীর মতো লাগে।আমাকেও এরা পেত্নী বানাতে চায়।তিশাতো জানেই না,পুরো রিসোর্ট এ সি সি টিভি ক্যামেরা লাগানো।তাই তিশা যেখানেই লুকাক, জিসানের নযর থেকে বাঁচতে পারবে না।
রং খেলার জন্য তিশাকে রেনুবেগম ধরে বেধে একটা মিস্টি কালারের শাড়ী পরিয়েছিলো সকালে।তখন হয়তো মাকে কিছু বলতে পারেনি,পরে আর খোলার সুযোগ পায়নি।তিশা নিজের আঁচলটা ঠিক করার সময়,হঠাৎ ছাদে কারো উপস্থিত টের পেয়ে চকিতে তাকায়।আর জিসানকে দেখেই ভয়ে একটা শুকনো ঢোক গিলে।আ আ আপনে এখানে।কিভাবে?
___আলাদিনের চিরাগ ঘষে....।
মমমানে এ!
___মানেএ মানেএ করে লাভ নেই জান।শুধু চিন্তা কর এখন তোর সাথে কি হবে।
দদেখুন স সামনে আসবেন না।আমি কোনও রং লাগাবো না।আপনে গিয়ে লাগান যান।যতোসব আজাইরা জিনিস।
___এটা কি করে হয় জান,আমার রং এ তোকে রাঙ্গাবো না।যাক ভালোই হয়েছে,জিসান দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে, ওখানে মানুষের ভিড়ে ভালো করে লাগাতে পারতাম না।কিন্তু এখানে তো তুই আর আমি ছাড়া কেউ নেই।তাহলে কি কি হবে একটু ভাব।
তিশা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে,জিসান কি ইশারা করছে।তিশার এখন নিজের মাথায় নিজেরি বাড়ী দিতে মন চাইছে,গাধী আগেই বোঝা উচিৎ ছিলো।একে বোকা বানানো এতো সহয না।নিজের জালে নিজেই ফেঁসে গেলি।
তিশা মুখে একটু মেকি হাসি দিয়ে,চলুন আমরা নিচে যাই।ওখানেই সবার সাথে রং খেলা খেলি কেমন।সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।তিশা পাশ কেটে চলে যেতে নিলেই,জিসান হাতটা ধরেই তিশাকে দেয়ালের দিকে মুখ রেখে চেপে ধরে।এতো সহযে জান।আগে আমরা দুজন খেলি,বাকি সবাই পরে।
____জিসান সাথে করে রং নিয়েই এসেছিলো।তিশার কাধের চুলগুলো সরিয়ে গভীর ভাবে কয়েকটা কিস করে হাতে থাকা রংগুলো দিয়ে খোলা পিঠটি রাঙ্গিয়ে দেয়।একহাত দিয়ে আবার তিশাকে সামনে ঘুড়িয়ে দুগালে আলতো করে চুমো দিয়ে সেখানেও রং মাখিয়ে দেয়।
তিশা চোখদুটো কুঁচকে বন্ধকরে রেখেছিলো এতোক্ষন। কিন্তু জিসানের কোনও সারা না পেয়ে চোখ খুলে দেখে জিসান এখনো ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
তাই তিশাই বলে উঠলো,কি হলো সরুন।রং মাখা শেষ।এবার আমাকে যেতে দিন।
___জিসান আরো একটু সামনে এসে,এখনো কিছুটা বাকি আছি জান।
তিশা ভ্রকুচকে জিসানের দিকে তাকায়।জিসান রং মাখা হাতটা দিয়ে তিশার পেটটার মধ্যে স্লাইড করতে লাগলো।জিসানের এমন কার্যে তিশার এখন কান্না পাচ্ছে,এমন টর্চার কেনো করে লোকটি।সহ্য করার মতো না।আঘাত করে কিন্তু আঘাতের দাগ নেই।কিন্তু অসহনীয় জ্বালা বয়ে যায় পুরো শরীরে। উফ!
এর পর তিশা ও জিসান দুজন নেমে আছে,বাগানের লনে।তিশাকে এভাবে রং মাখানো দেখে সবাই মুখচেপে হাসতে লাগলো।কারণ তিশা পুরো রং মেখে ভূত হয়ে গিয়েছে।রাগে জিসানের দিকে তাকালে,জিসান একচোখ টিপ মেরে চলে যায়।এর পর সবাই এক এক করে রং লাগিয়ে দেয় ওদেরকে।রং খেলা প্রায় দুপুর পর্যন্ত চলেছে।
___এসবের মাঝে নিশি আজ রায়হানকে চরম মাত্রায় জালিয়েছে।ব্যাচারা রায়হান দাঁতেদাঁত চিপে নিশির অত্যাচার গুলো সহ্য করেছে।কারণ নিশি জিসানের বিদেশি ফ্রেন্ডসদের জন্য আনা ড্রিংকগুলো থেকে ভুলে ড্রিংক করে ফেলে।যার জন্য নিশির কোনও হুসই ছিলোনা।আর নেশায় নিশি রায়হানকে আজ আঙ্গুলে নাচিয়েছে।অবশেষে রায়হান সবার আড়ালে নিশিকে রুমে নিয়ে যায়।কারণ বড়রা দেখলে বিষন কেলেনকারী হয়ে যাবে।
আমাকে একটা চুমো দেন না,রায়হান ভাই।প্লিস।
___নিশি সেট আপ।তুই নেশায় এখন।তাই এসব উল্টাপাল্টা কথা বলছিস। রুমে চল একটু বমি করার চেস্টা কর ঠিক হয়ে যাবে।
না না আমি যাবো না।নিশি নিচেই বসে পরে।আমাকে কোলে করে নিয়ে না গেলে এখানেই থাকবো।ঠোট উল্টিয়ে বলে।
___নিশি উঠ,রাগ উঠে যাচ্ছে আমার।
উঠুক আমি কি করবো।আমিতো এখানেই থাকবো।হরতাল হরতাল।সবার মাথায় পানি ডাল।সবার আগে রায়হান ভাইয়ের মাথায় পানি ঢাল।
____উফ নিশি,মাথাটা মনে হয় পুরো গেছে তোর।চল,কেউ আসার আগে।রায়হান উপায় না পেয়ে নিশিকে কোলে তুলে নিলো।রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে দিয়ে,শরীরে চাদরটা দিয়ে বলে,বিশ্রাম নে, আমি কাউকে ডেকে আনছি।রায়হান চলে জেতে নিলেই নিশি রায়হানের পান্জাবীর কলারটা টেনে ধরে বিছানায় ফেলে দেয়।ঘটনা আকষ্মিক হওয়ায় রায়হান ঢাল সামলাতে পারলো না।নিশি রায়হানের উপর উঠে বসে।
এতে পালান পালান করেন কেনো বলেনতো।আমাকে কি ভালো লাগে না।আমি কালো বলে,আমাকে ভালোবাসেন না তাইতো।
নিশি কি বলছিস।
___হুম আমি ঠিক বলছি।আমি আপনার বাকি মেয়ে ফ্রেন্ডসদের মতো সুন্দর না বলে আমাকে ভালোবাসেন না।কাঁদোকাঁদো কন্ঠে নিশি রায়হান কে এসব বলছে।
রায়হান খুব অবাক হলো নিশির কথা শুনে।নিশি আমার ইগনোর কে মনে মনে এভেবে নিচ্ছে।নিশির মুখটা ধরে সামনে এনে, আমি তোকে অনেক ভালোবাসি নিশি, অনেক।
___নিশি ঠোঁটটা উল্টিয়ে, মিথ্যা বলছেন।
উঁহু, একদম সত্য।
____প্রুভ করুন, আপনে আমাকে ভালোবাসেন।রায়হান এর হঠাৎ জেনো কি হলো।নিশিকে বিছানায় ফেলে,নিজেই নিশির উপর উঠে নিশির ঠোঁটদুটো নিজের দখলে নিয়ে নিলো।নেশায় থাকা নিশিও রিসপনস দিতে লাগলো।রায়হানও কেমন ঘোড় এর মধ্যে চলে গেলো।ক্রমশ ঠোঁটের তীব্রতা বাড়তে লাগলো।উষ্ণা ঠোঁটগুলো আস্তে আস্তে নিচে নেমে আসতে লাগে।আবেশে রায়হান ও কিছুটা কন্ট্রোললেস হয়ে পরেছিলো।হঠাৎ নিশির শব্দ না পেয়ে রায়হান তাকিয়ে দেখে নিশি ঘুমিয়ে গেছে।রায়হান একটা মুচকি হেসে নিশিকে বুকে টেনে নিলো।নিশির কপালে একটা কিস করে,এতোটুকু আদরই সহ্য হলোনা,সুইটহার্ট।রায়হান একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে,আজকের মুহুর্তটা হয়তো তোর মনে থাকবে না।কিন্ত আমি ভুলবো না কোনওদিন।
||
||

____সকাল উঠে মায়ের বকাগুলো খুব মিস করবো এখন থেকে।সবার রাগ গুলো যখন মা আমার উপর ঝারতো তখন খুব বিরক্ত লাগতো।কিন্তু এখন এসব খুব মনে পড়ছে।রায়হান ভাইয়ের আমার সব কথায় নাক গলানো।তার শাসন গুলোও খুব মনে পড়বে।আর বাবা,তার জন্যতো সব সময় প্রিন্সেসই ছিলাম আমি।আমার বাবার রাজ্যের প্রিন্সেস। কতো না স্মৃতি জরিয়ে আছে এ মানুষ গুলোর সাথে।এসবই তো বেঁচে থাকার প্রেরণা ছিলো আমার।কি করে থাকবো আমি তাদের ছেড়ে।এসব ভেবেই তিশার চোখগুলো ভরে গেলো।
তিশার উদাসীনতা বেশিক্ষণ রাখতে পারলো না,তিশার রুমের দরজা খুলে হুরহুর করে নিশি,নিলু,তানজিলা ও জিসানের ও তিশার কাজিনরা ঢুকে পড়লো।সবাইকে একসাথে দেখে তিশা অবাক হলো।নিশি তিশার পাশে বসে,নতুন বঁধু কাঁদো কেনো।
তোকে কে বলেছে আমি কাঁদছি।
কে আর বলবে তোমার বর আমাদের ফোন করে বললো,তোমাকে একা না ছাড়তে।একা থাকলেই তুমি কান্না করবে।তাইতো আমরা গার্লস পার্টির আয়োজন করলাম।আজ রাত আমরাও পার্টি করবো।কি বলো সবাই…………সবাই চিল্লিয়ে ইয়াএএএএএ।
___কি অদ্ভুত লোক, নিজে পার্টিতে গিয়েও আমার চিন্তা করে।
সবার আবদার আজ দুলহানকেও নাচতে হবে।আমি হাজার মানা করার পরও কেই শুনলো না।আজ আমাকে নাচিয়েই ছাড়বে সবাই।অবশ্য একলা ঘরে যখন কেউ থাকতো না,আমি,নিশি,আর নিলু কতো নাচানাচি করেছি।তবে সবার সামনে ব্যাপারটা আলাদা।কিন্তু সবার জোড়াজোরিতে করতেই হলো।নিশা ছেলে সেজে আমার পাশে দাঁড়ালো নাচার জন্য।ও বরারবই এমন করে,গান চালু হয়ে গেলো।
Hai wo handsome sona sabse
Mere dil ko gaya le kar
Meri neend chura li usne
Aur khwab gaya dekar (x2)
Ab ye naina bole yaar
Bole yehi lagataar
Koi chaahe kitna roke karungi pyar..
Mere saiyaan superstar
O Mere saiyaan superstar
Main fan hui unki
O mere saiyaan superstar (x2)
Haan jabse usne akhiyon se
dil pe autograph diya
Tabse everyday maine
bas usko hi yaad kiya (x2)
Senti mere jazbaat o sunle mere dil ki baat
Saath mujhko le ke jaa main hoon taiyaar...
Mere saiyaan superstar
O Mere saiyaan superstar
Main fan hui unki
O mere saiyaan superstar (x2)
Filmy style se jab usne
kal raat mujhe propose kiya
Daayein na dekha, baayein na dekha
Usko dil ka rose diya (x2)
Huve charche chaar hazaar
Photo chhap gayi in akhbaar
Mujhko parwah nahi koi I'm with the star..
Mere saiyaan superstar
O Mere saiyaan superstar
Main fan hui unki
O mere saiyaan superstar (x2)
তিশা আর নিশির জুটিতে নাচ দেখে পুরো রুমের সবাই বেশ এনজয় করছে।কেউ ভাবতেই পারেনি তিশা এতো সুন্দর নাচবে।কিন্তু তিশা জানেই না,কেউ একজন ওদের কার্যকলাপ সব দেখছে।একচুয়েলি তিশার নাচের ভিডিও করে ওরই এক কাজিন জিসানকে সেন্ড করে দিয়েছে। ব্যাচারা জিসান নিজের বউয়ের এই রুপটাতো আগে দেখেই নি।তাই প্রথমে শোকড হলো।
ক্লাবে বসে সবাই জিসানকে ফোনে কিছু দেখতে দেখে রায়হানসহ,জিসানের ফ্রেন্ডসরা ও দেখতে এলো ব্যাপারটা কি।জিসানের পিছে দাঁড়িয়ে ওরাও চুপি চুপি তিশার নাচের পুরো ভিডিওটা দেখলো।ভিডিওটা দেখে,জিসান ফোনটা পকেটে রেখে সপ্ট ড্রিংকের গ্লাশটা হাতে নিয়ে মনে মনে বলছে।এরুপ কিভাবে অজানা রয়ে গেলে আমার বউয়ের।হঠাৎ পেছনে বন্ধুদের করতালিতে জিসানের ধ্যান ভাঙ্গলো।
ওয়াট!
আরে জিসান,ভাবি তো দেখি তোর থেকেও ফাস্ট। যাই বলিস তোর থেকেও ভালো নাচে।শালা এতোদিন ফাংশনে একা একা না নেচে বউকে সাথে করেই তো নাচতে পারতি।জিসান মৃদু হেসে বললো,আসলোই মিস করে দিয়েছি।ম্যাডাম নিজের টেলেন্ড লুকিয়ে রেখে আমাকে বোকা বানালো।সবাই হা হা করে হেসে দিলো।
||
||

জিসানকেও কোনও রাজকুমারের থেকে কম লাগছে না আজ।
____অবশেষে সেই সময় আসলো,আজ তিশাকে আবারও কবুল বলতে হবে,এর আগের বারের কবুল বলতে এতোটা কস্ট হয়নি তিশার।কারণ তিশা তখন বিয়ের মানেই বুঝতো না।কিন্তু আজ তিশার বুক ফেটে যাচ্ছে,মুখ দিয়ে কবুল শব্দটি বলতে গিয়ে।কতোটা কস্ট হয় এই সময় একজন মেয়েই জানে।এটার অনুভূতি বলে বুঝানো যাবে না।অবশেষে তিশার বাবা ভাইয়ের অনুরোধে কবুল বলেই দিলো তিশা।
"বিদায় "বিয়ের মধ্যে সবথেকে বেদনাময় একটা মুহুর্ত।নিজের কাছের মানুষগুলো ছেড়ে যাওয়ার বেদনা একটা মেয়েই শুধু বুঝে।তিশার কান্নায় আজ জিসানেরও কস্ট হচ্ছে।জিসানও বুঝতে পারে,এটা কতোটা কস্টের একটা মুহুর্ত।কিন্তু কিছু করার নেই।তিশাতো ওর বাবাকে জরিয়ে যে কাঁদছে থামার নামই নেই।সবাই অনেক কস্টে তিশাকে গাড়ীতে বসালো।গাড়ীর ভেতরে বসেও তিশা রায়হানের হাতটা ছাড়েনা।কি অদ্ভুত আমাদের নিয়ম।একটা নতুন সম্পর্ক কে আপন করতে গিয়ে পুরানো সব সম্পর্ক গুলো পিছে ফেলতে হয়।গাড়ী চলছে আপন গতিতে।চেনা চেহারা গুলোকে ফেলে।জিসান যথেস্ট চেস্টা করছে তিশাকে চুপ করাতে।একসময় ক্লান্ত হয়ে তিশা জিসানের কাধে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পরে।রিসোর্টটি যেহেতু শহর থেকে দূরে ছিলো,তাই তাদের বাড়ী যেতে বেশ সময় লেগে গেলো।
____রাত ১০টায় জিসান ও তিশা আহমেদ ভিলায় পৌঁছালো।জিসানের মা, তানজিলা আর জিসানের কিছু আত্মীয় বরণ ডালা নিয়ে ওদের অপেক্ষা করছিলো।তিশা আহমেদ ভিলার দরজার সামনে এলে,এক এক করে সাতজন বিবাহিত নারী তিশাকে আশীর্বাদ করে বরণ করলো।এটা নাকি এ বাড়ীর নিয়ম।এর পর জিসানকে তানজিলা ভাবি কি এমন ইশারা করলো,জিসান সবার সামনেই আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বাড়ীর ভেতরে প্রবেশ করে,ড্রয়িং রুমের সোফাতে বসায়।জিসানের কাজিনরা কিছুক্ষণ আমাদের নিয়ে বাকি কিছু নিয়মকানুন ছিলো,সেগুলোও করে ফেলে।রাত ১২টায় ভাবি আমাকে জিসানের রুমে রেখে চলে গেলো।
এই রুমটায় আমি আগেও এসেছি।কিন্তু আজ রুমটা অন্য রকম লাগছে।পুরো রুমটা সাদা আর রেড গোলাপ দিয়ে সাজানো হয়েছে।রুমটাও কিছু চেন্জ করা হয়েছে।রুমের আলমারিটাও চেন্জ করা হয়েছে।ড্রেসিংটেবিল এ আমার প্রয়োজনীয় সব কিছু রাখা আছে।সব থেকে যেটা আমার মনকে ছুঁয়ে দিয়েছে তা হলো। বেডের সামনের দেয়ালে আমার আর জিসানের একটা বড় ছবি বাঁধানো। ছবিটি আমাদের এবারের বিবাহ বার্ষিকীতে তোলা হয়েছিলো।চোখটা কেনো জানি পানিতে ভরে গেলো।মাঝে মাঝে মনে হয় এতো সুখ কি কপালে সইবে আমার।
___হঠাৎ জিসান তিশাকে পেছন দিয়ে জরিয়ে ধরলো।
জান,আর ইউ ওকে।
___হুম,আমি ঠিক আছি।
তাহলে কি চিন্তা কিরছিস।
___কিছু না।
টায়ার্ড লাগছে।
___উঁহু।
ওকে, আমি ফ্রেস হয়ে আসি।তিশা শুধু মাথা নাড়ালো।
___তিশা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়ীর পিন গুলো খুলতে লাগলো।মাথার ওড়নাটা ও খুলে ফেললে।গলার হারটা খুলতে গিয়ে চুলের সাথে আটকে গেলো।জিসান ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে দেখে তিশা একপ্রকার টেনে হারটা খুলার চেস্টা করছে।জিসান গিয়ে নিজেই খুলে দিলো।এক এক করে বাকি সব গহণা গুলোও খুলে দিয়ে,আস্থে আস্থে করে চুলের ক্লিপগুলোও খুলে দিলো।তিশার চুলগুলো খুলতে খুলতে তিশার চুলে নাক ডুবিয়ে নাক ঘষতে লাগলো।ইউ লুকিং সো গর্জিয়াছ জান।একদম আমার স্বপ্নের তিশার মতো।তিশার কাধের শাড়ীটা একটু সরিয়ে কাধে একটা ডিপলি কিস করে বলে,
জাএএন,আজ আমি তোকে ভালোবাসতে চাই,একদম গভীর ভাবে।আজ আমি তোকে পেতে চাই,নিজের করে।আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারবো না।আজ আমার সব ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে গিয়েছে।
তিশার লজ্জাময় হাসিতে জিসান ওর জবাব পেয়ে যায়।
___তিশাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দিলো।এরপর নিজে আধোশোয়া হয়ে তিশার ঠোঁটদুটো নিজের দখলে নিয়ে নিলো।ধীরে বেড়ে গেলো তাদের নিশ্বাসের গতি।জিসানের ঠোঁটের উষ্ণ ছোয়ায় ভরিয়ে দিচ্ছে আজ তিশাকে।ভালবাসার এক গভীর সমুদ্রে আজ দুজন ডুব দিলো।একে একে আবরণ গুলোও সরে জেতে লাগলো,ওদের ভালোবাসার মাঝ থেকে।তিশাকে আজ সত্যিই আদরে ভরিয়ে তুলছে জিসান।আস্থে আস্থে দুজনেই গভীরভাবে ভালোবাসতে লাগলো দুজন দুজনকে।এতো বছরের অপেক্ষা আর সাধনা সবই আজ ভালোবাসা রুপে প্রকাশ পেলো।হারিয়ে গেলো আজ দুজন দুজনের মাঝে।এতো বছরের পবিত্র ভালোবাসা আজ দুজনের মিলনের মাধ্যমে পূর্নতা পেলো।তাদের স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক আজ সম্পূর্ণ রুপে পরিপূর্ণ হলো।
চলবে.....

যে আজ একদম বাচ্চাদের মতো আমার বুকের মাঝে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।মনে হয় ছেড়ে দিলেই চলে যাবো কোথাও।
__জিসানের এক হাত তিশার কোমড়ে,আরেক হাত তিশার পিঠে।জিসান তিশার কোমড়টা ধরে নিজের সাথে আরো একটু মিশিয়ে নিয়ে কপালে একটা চুমো দিলো।তিশাও আড়মোড়া দিয়ে একটু জেগে গিয়ে,জিসানের উন্মুক্ত বুকে নিজের ঠোঁটাটা ছুঁয়ে দিলো।এটা দেখে জিসানের মুখেও একটা তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো।
কিছুক্ষণ পর তিশা উঠতে নিলে,জিসান তিশার হাতটা ধরে,তিশার আঙ্গুল গুলোর মাঝে নিজের আঙ্গুলগুলো ডুকিয়ে মুঠিতে করে নিলো।তিশাকে আবার নিজের কাছে টেনে নিলো,কোথায় যাওয়া হচ্ছে।
___তিশা জিসানের বুকে মাথাটা রেখেই বলে, উঠতে হবে না।
এখনো বেশ সময় আছে,এতো তারাতারি তোকে উঠতে হবে না।কিছুটা বিশ্রামের প্রয়োজন তোর।আজ আবার রাতে রিসেপশনের পার্টি আছে।তাই আরো কিছুক্ষণ ঘুমা।
___তিশা মুখটা একটু উঠিয়ে ইনোসেন্ট একটা ভাব নিয়ে,সবাই কি ভাববে।
জিসান একটু মৃদো হেসে, তিশার মাথাটা বুকের সাথে চেপে ধরে,চুলগুলো হাতাতে লাগলো।কেউ কিছু ভাববে না।দুনিয়াতে আমরাই নতুন কাঁপল না,সবার আইডিয়া আছে, তোকে চিন্তা করতে হবে না।
___জিসান নিজেই কিছুক্ষণ পর তিশাকে ডাক দিলো,তিশাএএএ।একদম সপ্ট কন্ঠে।
হুম।
___থ্যাংক ইউ জান,এমন একটা রাতের জন্য।আমার ২৭বছর জীবনের সবথেকে সুন্দর রাত ছিলো কাল।আর এসবই সম্ভব হয়েছে তোর জন্য।তিশাকে শক্ত করে নিজের সাথে জরিয়ে নিয়ে।
তিশার হাতে একটা কিস করে,আমার জীবনে আসার জন্য থ্যাংক ইউ।আমাকে এভাবে ভালোবাসার জন্য থ্যাংক ইউ।আমার মাঝে নিজেকে বিলানোর জন্য থ্যাংক ইউ জান।
সারাজীবন এভাবেই আমার পাশে থাকিক।তোর মাঝে আমি নিজের অস্থিত্ব দেখতে চাই।জীবনের বাকি পথগুলো তোকে নিয়েই পারি দিতে চাই।মরনের পরও তোকে ভুলতে চাই না আমি।
___তিশাও জিসানের বুক থেকে মাথাটা উঠিয়ে,জিসানের কপালে একটা কিস করে,আমিও আপনাকে অনেক অনেক অনেক ভালোবাসি।ডান গালে কিস করে,থ্যাংক ইউ আমাকে এতোটা স্পেশিয়াল অনুভোব করানোর জন্য।বাম গালে কিস করে,থ্যাংক ইউ আমাকে এতো ভালোবাসার জন্য।জিসানের ঠোঁটেও হালকা ছুঁয়ে লজ্জাময় মুখে থ্যাংক ইউ কাল রাতে আমাকে পরিপূর্ণ করার জন্য।জিসানও পরম যত্নে তিশাকে দুহাতের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিজের উপর উঠিয়ে শুয়ে রইলো।
জীবনটা সত্যিই অনেক সুন্দর হয় ভালোবাসার মানুষটি পাশে থাকলে।এতো সুখ সবার কপালে সয় না,কিন্তু আমি আজ সুখী।আর এটা আমার কাছে যথেষ্ট। আমার ভালোবাসা আজ তোকেও বাধ্য করলো আমার মতো বদরাগী একটা মানুষকে ভালোবাসতে।তোর ভালোবাসাই আমার জন্য পৃথিবীর সবথেকে দামী একটা জিনিস,যেটা আমি যে কোনও মূল্যে হারাতে চাই না।
জানিনা কতোদিন বাঁচবো তবে যতোদিন বাঁচবো এই বুকে তোকে নিয়ে বাঁচবো।
জিসান ও তিশা আরোও বেশ কিছু সময় একান্ত কাটালো। আর একে অপরের মাঝে নিজেদের অনুভুতিগুলো শেয়ার করলো।
||
||

__তিশা আজকে ডিজাইনার লেহেঙ্গা পরেছে।রেড কালারের লেহেঙ্গাটা গোল্ডেন কাজ করা আর গোল্ডেন ওরনা।অসম্ভব সুন্দর এটি।এটা নাকি জিসান প্যারিস থেকে আসার সময় ওরই এক ডিজাইনার ফ্রেন্ডকে দিয়ে ডিজাইন করে বানিয়ে নিয়ে এসেছে।আমি জাস্ট হতোবম্ভ।কি ধরনের মানুষ উনি।আমাকে আবাক করার কোনও পথ ছাড়ে না।লেহেঙ্গাটা দেখে সবাই প্রশংসা করছে।
গয়নাগুলো দেখে আমি আরো অবাক,কারন গহনা গুলো লেহেঙ্গার সাথে ম্যাচিং করে ক্লাসিকাল স্টাইলের মর্ডান ভার্শন গহনা ডিজাইন করা।একদম রাজকীয় লাগছে সব কিছু।টিকলি,কানের জুমকাটার ডিজাইন চোখে পড়ার মতো।তবে লেহেঙ্গা গর্জিয়াছ বলে,আমাকে জুয়েলারি শুধু টিকলি,ঝুমকা,ছোট একটা হারের সাথে কুন্দন পাথরের একটা সিতাহার আর হাতে দুটো বালা পড়ানো হয়েছে।সাজের সাথে সব কিছু একদম পার্ফেক্ট।
___যথাসময় পৌঁছালাম হল রুমে।বিশাল এক হলরুম বুক করা হয়েছে,সাথে সুন্দর ডেকোরেশন। কিন্তু এখনো জিসানকে চোখে পরেনি।গাড়ী থেকে নামতে নিলেই একটি হাত আমার দিকে বাড়িয়ে দেয় কেউ।আমি তাকিয়ে দেখি একজন সুদর্শন পুরুষ আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কালো প্যান্ট,কালো কোর্ট, ওয়াইট সার্ট এর সাথে কালো ব্লেজার।চুলগুলো আজ স্পাইক করা।এদেখি কোনও রাজ্যের রাজকুমার আর মুখে তার আজও সেই কিলার স্মাইল যা এখন আমাকে খুন করার জন্য যথেষ্ট।আমার হাতটি ধরে আমাকে বের হতে সাহায্য করলো।বাহিরে অনেক মিডিয়াও দাঁড়িয়ে ছিলো।জিসান আজ প্রথম মিডিয়ার সামনে আমাকে মুভ করালো।আমার খুব আনইজি লাগছিলো।কারন এসবের মাঝে অভ্যাস্থ নই আমি।জিসান সবার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আমাকে নিয়ে ভেতরে চলে গেলো।
হল রুমের সবার নযর আমাদের উপর।সবার মুখে শুধু এক কথা মেড ফোর ইজ আদার।চেনা অচেনা অনেক মুখই আমাদের আশির্বাদ করলো।আমার বাড়ী থেকেও সবাই এসেছে।চারদিকে সবাই খুব ইনজয় করছে।জিসান এক এক করে সবার সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলো।অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে ১২টা বেজে গেলো।আমরা বাসায় আসতে আসতে ১টা বেজে গেলো।এতো টায়ার্ড ফিল করছি যে, চেন্জ ও করতে মন চাইছে না।তবুও জোর করে চেন্জ করে ফ্রেস হয়ে গেলাম তারাতারি।জিসান এখনো রুমে আসেনি কি করে লোকটি আল্লাহই জানে।এতো কাজ কিভাবে করে।মুখে কোনও টায়ার্ডনেস নেই।আমি বিছানায় শোয়ার সাথে সাথেই চোখে রাজ্যের ঘুম এসে পড়লো।
___কিন্ত গভীর রাতে কারো ভারী নিশ্বাসের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো আমার।তবুও কেনো জানি চোখদুটো খুলতে মন চাইলো না।কিন্তু কারো ভারি নিশ্বাস কিছুতেই আমাকে ঘুমাতে দিচ্ছে না।আমি চোখদুটো খুললেই সামনে জিসানকে দেখতে পাই।আমার দিকেই অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।মুখে একটু বিরক্ত নিয়ে,ঘুমাচ্ছেন না কেনো, ঘুমান।আমাকেও ঘুমাতে দেন বলেই ওপাশ হয়ে শুয়ে পরলাম।জিসানের হাভভাব ভালো করেই বুঝেছি।ব্যাচারা কে জব্দ করার হাত কেনো ছাড়বো,আমাকে অনেক জালিয়েছে,এবার বুঝো ঢেলা।
জিসান পেছন থেকে জরিয়ে ধরে,জান।আমি জানি তুই ঘুমাস নাই।আমাকে জালাবার জন্য এমন করছিস।তুই আসবি নাকি, আমি শুরু করবো।
___কাল দেখা যাবে আজ ঘুমান।
জিসান একটানে আমাকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে,বহুকাল ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে পার করেছি ম্যাম,এখন থেকে ঘুম আমার জন্য হারাম।এখন থেকে রাতে শুধু রোমান্স হবে,এতোকাল আমাকে জালানোর পরও তোর মন ভরেনি।এখন এতো কাছে থেকেও আমাকে জালাচ্ছিস।
___আরে বাহ আমি কি করলাম।
কি করলি!প্রথমতো এতো ছোট কেনো তুই,আরও একটু আগে দুনিয়াতে আসলে কি হতো।তাহলেতো আমাকে এতোবছর অপেক্ষা করতে হতো না।তোকে আগেই পেয়ে যেতাম।আমাকে কস্ট দেওয়ার জন্য তোর বাবা মাকে জেলে দেওয়া দরকার।তারা তোকে এতো লেট করে কেনো আনলো দুনিয়াতে।
___ছিঃ আপনার মুখে কিছুই আটকায় না।কিসব বলছেন।
আমি কি বললাম।আমি জাস্ট আমার কস্টটা শেয়ার করছি তোর সাথে।তুই একমাত্র নারী যাকে দেখলে আমি কন্ট্রোললেস হয়ে পরি।কতোবার তোকে কাছে পেতে মন চেয়েছে,তা তুই যদি জানতি তাহলে আমার থেকে ১০০হাত দূরে থাকতি।
___হয়েছে ছাড়ুন আর এখন ঘুমান।
কোনও ঘুমটুম নেই,জিসান আমার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে, এখন শুধু রোমান্স হবে।আমি জানি এই লোকটি কোনও কথা শুনবে না আজ।তাই আবারও দুজনই হারিয়ে গেলাম ভালোবাসার এক অন্য জগতে।
নিয়মে আমাদের আজ আমার বাবার বাড়ী যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু মিস্টার জিসানের অন্য প্লানিং চলছে।আমি ঘুম থেকে উঠার পরই আমাকে নাস্তা করিয়ে প্যাকিং করাতে বসে পড়লো,আমি আগ্রহের সাথে তার দিকে তাকালে,সে আমাকে কাছে টেনে কানেকানে বললো,হানিমুনে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে যাও ডিয়ার। আমরা আজ রাতে প্যারিসে যাচ্ছি।আমি আবাক করা দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।এই লোক কতো কিছু প্লানিং করে রেখেছে।এতো কিছু রাখে কিভাবে পেটে।ব্যাথা করে না।
||
||

___হঠাৎ আমার সামনে একটা ব্লাক কালারের গাড়ী এসে দাঁড়ালো।আমি একটু ভয়ই পেয়ে গেলাম এভাবে গাড়ী থামার কারনে।জিসানও আমার পাশে এসে দাঁড়ালো। গাড়ী থেকে একটা ছেলে নামলো,বলাবহুল্য ছেলেটা সেই লেভেলের ড্যাসিং।জিসানের থেকে কোনও অংশে কম না।তবে তার সৌন্দর্য চোখে পড়ার কারন তার নীল চোখ।হঠাৎ জিসানের কথায় আমার টনক নরে।
তিশা ও হলো,নীলয়।আমার ফ্রেন্ড।রায়হানের পর যদি আমি কারো ক্লোজ থাকি তা হলো নীলয়।আমি একটু বেয়াক্কল মার্কা প্রশ্ন করে উঠলাম,উনার নীল চোখের কারণে কি উনার বাবা মা নীলয় নাম রেখেছে।নাকি লেন্স পরে আছে। জিসান একটু হেসে দিলো,আমার কথায়।আমাকে এক হাত দিয়ে জরিয়ে ধরে বললো,নীলয় এতো শোকড হবার কিছুই নেই।আমি আগেই বলেছি,আমার বউ একটু বোকা।নীলয় হু হা করে হেসে জিসানকে এসে জরিয়ে ধরে বললো,বস।ইউ আর রাইট।একদম সেম।যেমন তুই বলেছিস।এই কিউটের ডিব্বা কে ছেড়ে তুই কিভাবে প্যারিসে পরেছিলি।আমি হলেতো কিডন্যাপ করে সাথে নিয়ে আসতাম।
___আমি তাদের দিকে এখনো বেয়াক্কল এর মতো তাকিয়ে আছি।জিসান একটু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে,আমার দিকে তাকিয়ে সেগুলো অনেক বেদনাময় দিন ছিলো।আর কেউ না দেখলে তুইতো দেখেছিস,নীলয়কে উদ্দেশ্য করে।
হুম,বাট।এখন আমি খুশি তোদের একসাথে দেখে।আরেকটা কথা,আজ রাত তোদের জন্য পার্টির আয়েজন করেছি ক্লাবে।সো মাস্ট বি কাম।আগে চল,তোদের হোটেলে পৌঁছে দিই।তোদের রেস্ট এর প্রয়োজন।জিসান আমাকে নিয়ে গাড়ীতে বসে পরলে,কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা পুলম্যান প্যারিস বারসি হোটেলে পৌঁছে গেলাম।এটা একটা বিলাশবহুল পর্যাটক হোটেল।সাধারণত প্যারিস শহরের হোটেলগুলো নাকি ব্যয়বহুল।আর এটাতো বিশাল জায়গা নিয়ে হোটেলটি বানানে হয়েছে।প্যারিস বাসীরা একে বারসি ভিলেজও বলে।
____আমি এসেই রুমটা দেখতে লাগলাম।খুব সুন্দর করে সাজানো গোছানো।সব কিছু সাদা ধবধবা।চাদর হতে শুরু করে পর্দাগুলোও।বালকানিতে দাঁড়ালে পুরো রিসোর্টটা দেখা যায়।জিসান ঠিকই বলেছে,প্যারিসে আসলে নাকি যে কেউ এর প্রেমে পরে যাবে।রাস্তা ঘাট হতে শুরু করে সব কিছু যেমন পরিষ্কার তেমনি চারপাশের পরিবেশটা বেশ মনোমুগ্ধকর। হঠাৎ জিসান এসে জড়িয়ে ধরলো।ইউ লাইক ইট।
হুম,এটা অনেক সুন্দর। আমার অনেক ভালো লেগেছে।
___আরো অনেক কিছু আছে এখানে দেখার মতো।আমরা কাল থেকে শুরু করবো।এখন ফ্রেস হয়ে নে।আমি খাবার ওডার করছি।খেয়ে বিশ্রাম নেওয়া দরকার।রাতে আবার পার্টিতে জেতে হবে।
কিন্তু এখানে কি বাঙ্গালি খাবার পাওয়া যাবে।
___জি ম্যাম, এই হোটেলে সব দেশের খাবার পাওয়া যায়।কারণ এটা পর্যাটক হোটেল।বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ আসে।তাই সব ধরনের খাবারই পাওয়া যায়। ডোন্ট ওয়ারি।আমরা ফ্রেস হয়ে খাওয়া দাওয়া করে লম্বা একটা ঘুম দিলাম।আমার উঠতে উঠতে সন্ধা সাতটা বেজে গিয়েছে।উঠে দেখি জিসান নেই পাশে।এদিক ওদিক তাকানোর পর বালকানিতে চোখ পরে,ফোনে কথা বলছে।আমি গিয়ে উনার পিঠে মাথা রেখে জরিয়ে ধরি।জিসান কিছু এটা হচকিয়ে যায়।আমার হঠাৎ এমন করায়।এর পর হাতটা ধরে সামনে এনে বলে,ঘুম কেমন হলো।
হুম ভালো।বাট মনে হয় অনেকক্ষণ ঘুমিয়েছি।
ইটস ওকে,এটা জার্নির কারনে।তুই গিয়ে ফ্রেস হো।ইউ আর হাঙ্গরি, রাইট।আমি ঠোঁট দুটো উল্টিয়ে মাথা নাড়লাম। একচুয়েলি ক্ষুধার কারণেই ঘুমটা ভেঙ্গে গিয়েছে। ফ্রেস হয়ে দুজনেই কিছুটা খেয়ে নিলাম এর পর নয়টায় আমরা পার্টির জন্য রওনা দিলাম।একটা আশ্চর্য জিনিস হলো,সাহেব আজ আমাকে লেডিস ব্লু রং এর জিন্স, ওয়াইট লেডিস শার্ট আর উপরে একটা জেকেট পরতে দিলো।কারণ এখন বাহিরের ওয়েদার একটু ঠাণ্ডা। আমি অবাক জিসান আমাকে এসব পরতে দিলেন।কারন আমার মনে আছে একদিন আমি নিশির সাথে বাহিরে যাওয়ার জন্য জিন্স আর শর্ট কামিজ পরে বের হয়েছিলাম বলে আমার গালে জোরে একটা পরেছিলো। দুদিন পর্যন্ত কিছু ক্ষেতে পারিনি গালের ব্যাথায়।আর এই সাহেব আমার জন্য এসব নিয়ে এসেছে এখানে পরার জন্য।হাউ স্ট্রেঞ্জ!
___আশ্চর্য বিষয় জিসানও ব্লু জিন্স আর ওয়াইট শার্ট পড়েছে।উফ কি যে লাগছে।একদম আমার প্রিয় কাডভেরি চকলেট।খেয়ে ফেলতে মন চাইছে।আমার জামাইটা এতো রসগোল্লার মতো কেনো।দেখলেই কেমন লোভ লাগে।জিসান আয়নায় দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ ধরে দেখছে তিশা তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে। জিসান একটু দুষ্ট হাসি দিয়ে তিশার কাছে এসে কোমড় টা জরিয়ে নিজের সাথে চেপে ধরে বললো,ইউ নো জান।
আমরা একটু দেরি করে জেতে পারি।যদি তোর এখন শাওয়ার নিতে সমস্যা না থাকে।তিশা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে জিসানকে ঢেলে সরাতে নেয়।ছাড়ুন, সব সময় মাথায়,এসব ঘুড়ে আপনার।
হুম,হানিমুনে এসেছি, এসব ঘুরবে নাতো কিসব ঘুরব।
___কিন্তু এখন না,পার্টির জন্য লেট হচ্ছি আমরা, ছাড়ুন।
উম,কাছে যেহেতু এসে পরেছি,তাহলে কিছু না নিয়ে তো জাবো না,কিছু না কিছুতো দিতে হবে।তাইনা।
কি লাগবে।ভ্রুটা কুঁচকিয়ে।
___জিসান কিছু বলতে না দিয়ে, তিশার ঠোঁটদুটো দখল করে নিলো।হঠাৎ এমন করায় তিশাও শোকড!
আমরা যথাসময় ক্লাবে এসে পরলাম।একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম,এই শহরে বার আর নাইট ক্লাবগুলো বেশি। বিদেশি কালচার বলে কথা।কিন্তু আমি এই প্রথম এসেছি,তাই একটু ভয় আর আনইজিফিল লাগছে।জিসান আমার হাতটা ধরে,জান তোর ইচ্ছা না হলে আমরা যাবো না।আমি নীলয়কে বুঝিয়ে বল দেবনি।আমিও জিসানের হাতের উপর হাত রেখে,ইটস ওকে।আমি যাবে।নীল ভাইয়া আমাদের জন্যই এটা আয়োজন করেছে,না গেলে তার মনটাও খারাপ হয়ে যাবে।
ওকে,বাট তোর ভালো না লাগলে আমাকে বলবি,আমরা সাথে সাথেই চলে যাবো ওকে।
আমি মাথা নেড়ে হা বললাম।আমরা ভেতরে যাওয়ার সাথে সাথে জিসান ও নীল ভাইয়ের ফ্রেন্ড সার্কেল আমাদের ওয়েলকাম করে সবাই হাত মিলালো।জিসানও আমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে যতোটা পারছে কম্ফোর্টেবল করার চেস্টা করছে।
||
||

Bulaave Tujhe Yaar Aaj Meri Galiyaan
Basau Tere Sang Main Alag Duniya....
____হঠাৎ কেউ আমার কোমড় ধরে সমানে ঘুড়ালো,আমি কিছুটা ভয় পেলেও জিসানকে দেখে ঠান্ডা হয়ে যাই।এসেই আমার পনিটেল করা চুলগুলো খুলে দেয়।আমার কোমড়কে ধরে তার আরো কাছে টেনে নেয়।একহাতে কোমড়,আর এক হাত আমার হাতে রাখে।কি হচ্ছে আমর বুঝতে একমিনিট সময় লেগে গেলো।
জিসান আমার সামনে,গান এখনে চলছে
Bulaave Tujhe Yaar Aaj Meri Galiyaan
Basau Tere Sang Main Alag Duniyaa
Na Aaye Kabhi Dono Mein Jara Bhi Faasle
Bas Ek Tu Ho, Ek Main Hu Aur Koi Na
Hai Mera Sab Kuch Tera Tu Samajh Le
Tu Chahe Mere Haq Ki Zameen Rakh Le
Tu Saason Pe Bhi Naam Tera Likh De
Main Jiyu Jab Jab Tera Dil Dhadke
Tujhse Mera Ye Jee Nahi Bharta
Kuch Bhi Nahi Asar Ab Karta
Meri Raah Tujhi Se Meri Chaah Tujhi Se
Mujhe Bas Yahi Reh Jana
____তিশা জিসানের গলা জরিয়ে ধরলো,আর জিসানে হাত তিশার কেমড়ে।একজন আরেক জনের এতোই কাছে যে নিশ্বাসটুকুও অনুভোব করতে পারছে।
গানের তালে তালে জিসান আমাকে নাচাচ্ছে। এই কাপল নাচগুলো আমি অনেকবার নিশি আর আমি শখ করে শিখেছিলাম,তাই জিসানকে বেশি কস্ট করতে হয়নি।তার সাথে স্টেপ বাই স্টেপ নেচে চলতে।
Lagi Hai Teri Aadatein Mujhe Jab Se
Hai Tere Bin Pal Vi Baras Lagte
Bulawe Tujhe Yaar Aaj Meri Galiyaan
Basau Tere Sang Main Alag Duniya
Jo Hove Tu Udas Mujhe Dekh Hasde
Tu Chahe Mere Haq Ki Zameen Rakh Le
Tu Saason Pe Bhi Naam Tera Likh De
Main Jiyu Jab Jab Tera Dil Dhadke
Tujhse Mili To Shikha Maine Hasna
Aaya Mujhe Safar Mein Thaharna
Main To Bhool Gayi Duniya Ka Pata
Yaara Jab Se Tujhe Hai Jaana
____জিসান আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে।আর গানের তালে দুজন আমরা হারিয়ে যাচ্ছি।কারো কোনও হুস নেই।
Hai Tu Hi Dil Jaan Hai Meri Ab Se
Ve Zikar Tera Na Jaye Mere Lab Se
Bulawe Tujhe Yaar Aaj Meri Galiyaan
Basau Tere Sang Main Alag Duniyaa
Jo Howe Tu Udas Mujhe Dekh Hasde
Tu Chahe Mere Haq Ki Zameen Rakh Le
Tu Sanso Pe Bhi Nam Tera Likh De
Main Jiyu Jab Jab Tera Dil Dhadke
____গানটা শেষ হয়ে গিয়েছে,মুহুর্তে আবার নিরবতা। কিন্তু আমি আর জিসান এখনো এভাবেই দাঁড়িয়ে আছি।তবে কিছুক্ষণ পর করতালিতে আমাদের হুস আসলো।মুহুর্তে আমার এতো লজ্জা লাগলো,যে দৌঁড় দিতে মন চাইছে।জিসান বুঝে আমাকে তার কাছে টেনে নিলো।তার সব ফ্রেন্ডসরা সবাই চিয়ার করছে।
কিন্তু হঠাৎ কেউ করতালি দিতে দিতে আমাদের সামনে আসছে।লাইটগুলো বন্ধ বলে চেহারা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না।আস্থ আস্থে সামনে এলে,দেখে আমি চমকিয়ে যাই,লাবণি আপু।
____কংগ্রেস জিসান। বিয়ে করে ফেললে,আর দাওয়াত ও দিলে না।আমি খুবই রাগ তোমার উপর।জিসান রাগী দৃষ্টিতে নীলয়ের দিকে তাকালো,চোখের ইশারায় বোঝালও,লাবণি এখানে কি করে।
নীলয় ও ইশারায় বুঝালো ও জানে না।
চলবে........

___দরজার শব্দে তিশা তাকিয়ে দেখে জিসান মাত্রই শাওয়ার নিয়ে তোয়াল পরেই বের হয়েছে।চুলটা দিয়ে এখনো পানি পরছে,হাতে রাখা তোয়াল দিয়ে মাথাটা মুছতে মুছতে তিশাকে,গুড মর্নিং জান।অবশেষে ঘুম ভাঙ্গলো আপনার।জিসান ড্রেসিং টেবিলের আয়না দিয়ে দেখতে পায়,তিশা কেমন অদ্ভুট ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।মনে হয় মঙ্গল গ্রহ থেকে কোনও এলিয়ান এসেছে।জিসান তোয়াল টা সোফায় ফেলে,কি হলো আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো।রাতের নেশা এখনো কাটেনি মনে হয়।
এই আপনাকে কোন বিলাই এভাবে খামচিয়েছে।আর আমার কাপড়গুলো কোন চরে চুড়ি করেছে বলেনতো।আর আমি এখানে কিভাবে।আমিতো পার্টিতে ছিলাম।জিসান হাসতে হাসতে তিশার কোলে শুয়ে পড়লো। ম্যাডাম আমিতো আপনাকে খোরগোশ মনে করেছিলাম,কিন্তু কাল রাতে আপনে যে ট্রেইলার দেখিয়েছেন,তাতে আপনে প্রমাণ করলেন আপনে খোরগোশ না,জংলী বিলাই।দেখেন দেখেন আমার পিঠ এখনো চিৎকার করে সাক্ষী দিচ্ছে।তিশা জিসানের পিঠের দিকে তাকিয়ে আছে।এরপর তরিৎগতিতে বলে উঠলো,মিথ্যা বলছেন আমি এসব মোটেও করিনি।
___আচ্ছা, আমি জানতাম,আপনে এসবই বলবেন।জিসান সাইড টেবিল থেকে লেপটপটা নিয়ে তিশাকে কিছু ভিডিও দেখালো।যেখানে তিশা নিজেই নিজের কাপড় খুলে ফেলছে।এর পর তিশা আর দেখতে পারলো না।কম্বলটা দিয়ে মুখ ডেকে আবার শুয়ে পড়লো।লজ্জায় আর জিসানের দিকে তাকাতে পারছে না।ছিঃআমি এসব করছি।জিসান কোম্বল সহ তিশাকে জরিয়ে ধরে,জান কাল তো আপনে আমাকে জান্নাতের সফর করিয়ে এনেছেন।আগে জানলে আপনাকে বাশর রাতেই একটু হুইসকি খাইয়ে দিতাম।
ছিঃ কি সব বলছেন।আমি ওসব ছাইপাঁশ খাইনা।কম্বলের নিচ থেকে মাথাটা বের করে।আমি কালও এসব খাইনি।আমিতো জাস্ট কোক খেয়েছি। তাহলে!
___উম,কোকে হয়তো কেউ ফাইজলামি করে কিছু মিলিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু কে করবে।
___জানি না,সিউর না।তবে ডোন্ট ওয়ারি।আমি খবর নেবো নি।তুই উঠ নাস্তা করেই আমাদের বের হতে হবে।অনেক জায়গা আছে এখানে দেখার মতো,আর আমাদের সময় কম।
ঘুড়ার কথা শুনে তিশাও তারাতারি উঠে পড়লো।এরপর দুজন রেডি হয়ে,নিচের রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে নাস্তা করে বের হলো প্যারিস শহর দেখতে।
___এরি মধ্যে নিলয় একবার ফোনদিলো জিসানকে,তিশার অবস্থা এখন কেমন জানতে।কারন তিশা কাল পার্টিতে পুরো নেশায় আবোলতাবোল বকছিলো।সবচেয়ে বেশি বকেছে লাবনিকে।লাবনি তিশার এমন বিহেভ দেখে নিজের মাথাটা নিজেরি ফাটিয়ে দিতে মন চেয়েছিলো।কারন তিশার সোপ্ট ড্রিংকস এ লাবনিই নেশা টাইপের কিছু মিলিয়ে দিয়েছিলো,জাতে তিশা পার্টিতে সিনক্রিয়েট করে আর জিসান সবার সামনে লজ্জিত হয়।কিন্তু হলো উল্টা তিশা নেশা করে সব জাল উঠালো লাবনিকে দিয়ে।তিশার জালায় লাবনি নিজেই পার্টি ছেড়ে পালিয়েছে।আর জিসান তিশার এই নেশাগ্রস্থ রুপটাকে অনেক এনজয় করলো।তবে ব্যাচারা কে নিলয়ের সামনে একটু লজ্জাও পেতে হয়েছে।কারন তিশা গাড়ীতে বসে জিসানকে বার বার এই গালে ওই গালে কিস করছিলো।গাড়ীর লুকিং গ্লাশ দিয়ে নিলয় তিশার কান্ডে দেখে শুধু মিটমিটিয়ে হাসছিলো।
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস। প্রায় ৭কোটির জনসংখ্যা অধ্যয়ষয়িত ফ্রান্সের রাজধানীতে ২২লাখ লোকের বসবাস।তবে এতো জনসংখ্যার মাঝেও প্যারিস শহরটা চমৎকার। মনে হয় ছবির মতো সব।প্যারিসের লোক আইন শৃঙ্খলা নিয়মনীতি খুব মানে।শহরে ঘুড়ে যতোটা বুঝলাম এই শহরের রাস্তায় হোটেল,রেস্টুরেন্ট, নাইটবার,ক্লাবে ভরপুর।আর এ শহরের মানুষ ঘরে থেকে বাহিরে থাকা বেশি পছন্দ করে আর তাই এরা রেস্টুরেন্ট এ খাওয়াও পছন্দ করে।
||
||

___আমরা প্রথমেই গেলাম সিন নদীতে।ঐতিহাসিক এই নদীর উপর দিয়ে প্যারিস নগরীর চতুর্দিকে টুরিস্ট বোর্ড দিয়ে ঘুরতে কি যে মনোমুগ্ধকর লাগছে তা বলে শেষ করা যাবে না।এই সিন নদী অনিন্দসুন্দর প্যারিসকে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে আছে।এই নদীর উপর দিয়ে ৩৭টি ব্রিজ আছে।আর এখন আমরা তালার ব্রিজ এর উপর আছি।তালার ব্রিজ।কি অদ্ভুত নাম তাই না।এটাও প্যারিসের একটা দর্শনীয় স্থান।কিছু পাগলরা তাদের ভালোবাসার তালা লাগিয়ে, চাবি নদীতে ফেলে দিতো।প্রতিদিন লাগানো হতো তালা,ছোটবড় অসংখ্য তালা।প্রিয়জনকে নিজের কাছে ধরে রাখার তালা।তবে এই তালায় নাকি অতিষ্ঠ এই শহরের কর্তৃপক্ষ, কারণ তালার ভার নাকি সইতে না পেরে ব্রিজের কিছু অংশে ভেঙ্গে পরে।তাই কর্তৃপক্ষ বড় একটা সাইন বোর্ড লাগিয়ে দেন।"ফ্রি ইউর লাভ এন্ড সেভ আওয়ার ব্রিজ"।তাই এখন আর তালা লাগানো হয়না।আমারতো খুব ইচ্ছে ছিলো এখানে একটা তালা লাগানোর।
এখান থেকে বের হয়ে আমরা কয়েকটা নামকরা মিউজিয়ামও দেখলাম। এই শহরে প্রায় ১৭৩ টি মিউজিয়াম আছে।মিউজিয়াম এর জন্যও এই শহরটি অনেক খ্যাতি অর্জন করেছে।এদের মধ্যে উল্লেক যোগ্য হলো ল্যুভর মিউজিয়াম। সেখানে সংরক্ষিত আছে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির অমর কীর্তি "মোনালিসা"।সবথেকে অবাক করার বিষয় হলো এই মিউজিয়াম এর প্রতিটি শিল্পকর্ম দেখতে যদি পাঁচ সেকেন্ড সময় ব্যয় করি তাহলে পুরো মিউজিয়াম দেখতে সময় লাগবে নাকি ১০০দিন।আমি শুনেই হতোভম্ভ।তাই আমাদের পুরো দেখা হলো না।
___লাঞ্চ টাইম হয়ে গিয়েছে,তাই ভালো কোনও রেস্টুরেন্ট এ ডুকে লাঞ্চটা সেরে নিলাম।এর পর আশে পাশের বেশ কয়েকটি জায়গা ঘুড়ে খুব টায়ার্ড হয়ে হোটেলে ফিরে এলাম।এসেই আমি শাওয়ার করে ডিনার না করেই ঘুমিয়ে পরেছি।জিসানও আজ আর ডাক দেয়নি।কারণ হোটেলে আসার আগেও কিছু হালকা পাতলা নাস্তা করে এসেছিলাম।এভাবে আমরা প্যারিস গেট,বাস্তিল দূর্ঘ,প্যারিসের সবচেয়ে বড় ডিপার্টমেন্ট স্টোল,গ্যালারি লাফায়াত,পার্লামেন্ট হাউজ,কনকর্ড টাওয়ার এ কয়েকদিনে দেখেছি।এখন নাকি বাকি আছে প্যারিসের সবচেয়ে আকর্ষণী নিদির্ষন আইফেল টাওয়ার।
আস্তে আস্তে আমাদের দিনও শেষ হয়ে যাচ্ছে প্যারিসে। জিসানের সাথে কাটানো এই দিনগুলো সত্যিই স্মরণীয় হয়ে থাকবে আমার।আজ একটু তারাতারিই আমরা হোটেলে ফিরেছি।কাল যাবো আমরা আইফেল টাওয়ার দেখতে।বেলকানিতে দাঁড়িয়ে প্যারিসের হালকা ঠাণ্ডা বাতাসটা কেমন গায়ে শিরশির করে উঠে।একটা পাতলা চাদর এনে আমাকে নিজের সাথে জরিয়ে নেয় জিসান।
___ঠাণ্ডা লাগছে না,এভাবে দাঁড়িয়ে কেনো ছিলি।
আচ্ছা এই শহরটাতো অনেক সুন্দর। তাহলে একে ছেড়ে চলে এলেন কেনো।শুনেছি প্যারিস আসার সৌভাগ্য সবার হয়না,সেদিক দিয়ে আপনে তো লাকি ছিলেন।এখানেই স্যাটেল হতে পারতেন।আর এখানকার মেয়েদের দেখছেন কতো সুন্দর সুন্দর। এদের মধ্যে কাউকে পছন্দ হয়নি কখনো।
___জিসান কিছুক্ষণ তিশার দিকে তাকিয়ে থাকলো।তার পর তিশাকে ঘুড়িয়ে কোমরটা ধরে তিশার কাধে নিজের থুতনি রেখে উল্টো জিঙ্গেস করলো,তোর পছন্দের হিরো এসে তোকে যদি বলে,এখন আমাকে ছেড়ে দিতে তুই ছেড়ে দিবি।বা কেউ আমাকে ছেড়ে দেওয়ার বিনিময় তোকে এই শহরে থাকার সব ব্যবস্থা করে দেয়,তাহলে বা কি আমাকে ছেড়ে দিবি।
তিশা জিসানের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে না বলে।
___কেনো,কেনো পারবি না।
কারন আপনাকে আমি ভালোবাসি,ওই হিরো ফিরোকে না।আর আপনার সাথে আমি মরুভূমিতে থেকে যে সুখ পাবো,তা এই শহর আমাকে দিতে পারবে না।
___জিসান তিশার কাধে একটা কিস করে।এবার বুঝলি কেনো আমারও এই শহরে থাকার একদম মন চায়নি।সব ছিলো কিন্তু তুই ছিলি না।আর তোকে ছাড়া এসব কিছুই আমার কাছে বিষাদ মনে হতো
আমি আপনাকে অনেক কস্ট দিয়েছি তাইনা।সরি!তিশা নিজের একটা কান ধরে।আর দেবো না।
জিসান তিশাকে নিজের বুকের সাথে জরিয়ে,তখন আমার ভালোবাসাটা প্রখর ছিলো,কিন্তু তোর বয়সটা কম।আমার রাগটাকে ভয় পেয়ে আমার থেকে সরে থাকতি।কিন্তু কেউ একজন আমাকে বলেছে,ভালোবাসাকে ভালোবাসা দিয়েই জয় করতে হয়,সেখানে রাগ,অভিমানের কোনও জায়গা নেই।তাইতো তোকে ভালোবাসা দিয়েই আপন করে নিলাম।
___আজ আমরা আইফেল টাওয়ার দেখতে এলাম।বিশ্বমেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে ১৮৮৯ সালে গুস্তাফি আইফেল এটি নির্মাণ করে।এটা নিয়ে একটা মজার ঘটনা জিসান আমাকে বলেছিলো,২০০৭ সালে এক নাড়ী তার বিবাহিত জীবনে আশান্তির কারণে সংসার ত্যাগ করে আইফেল টাওয়ার কে বিবাহ করে।আর আইফেল টাওয়ারের নাম অনুযায়ী নিজের নামও চেন্জ করে রাখেন Erik la Tower Eiffel... কি অদ্ভুত মানুষের কাজকর্ম।টাওয়ারকে বিবাহ করার এতো কি দরকার ছিলো।আমরা চলে এলাম আইফেল টাওয়ারে।এটি নাকি ১৮হাজার ৩৮টি লোহার টুকরো দিয়ে তৈরি হয়েছে। বেশির ভাগ নবদম্পতিকে আইফেল টাওয়ারে দেখতে পাওয়া যায়।আর এখানে ১২ মাস কোনও না কোনও ছবির শুটিং চলতেই থাকে।পুরো প্যারিস শহরকে দেখতে চাইলে আইফেল টাওয়ারে উঠা চাই।একথাটা একদম সত্য ইউরোপের দর্শনীয় শহরগুলোর মধ্যে প্যারিস শহর অন্যতম।আর এই আইফেল টাওয়ার মধ্যযুগে সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে একটি ছিলো।খুব চমৎকার একটা সময় কাটালাম আমরা এখানে দুজন।
||
||

___তিশার মা রেনু বেগম বসে নিজের বড় বোন রিনার সাথে কথা বলছে।তাদের এখন ভাবার বিষয় হলো,রায়হান।সাথের বন্ধুবান্ধব সবার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে,তাহলে রায়হান কেনো বাদ যাবে।আর তিশার বিয়ের জন্যই নাকি রায়হান অপেক্ষা করছিলো।কিন্তু এখনতো তিশারও বিয়ে হয়ে গিয়েছে।তো এখন রায়হানের জন্য একটা ভালোমেয়ে দেখতে হবে।
রেণু বেগমের কথার মাঝে রিনা বলে উঠলো,আচ্ছা রেণু,তোর আমাদের নুপুরকে কেমন লাগে।
__কেমন লাগে মানে ভালোইতো।
আমি বলছিলাম কি, দেখ রাগ করিস না।আমি নুপুরের সাথে রায়হানের বিয়ের কথা ভাবছি।তোর যদি আপত্তি না থাকে।
আপা আমার কোনও সমস্যা নেই।তোমার ঘরের মেয়ে মানে একই পরিবার আমরা,তবে রায়হানের সাথে কথা না বলে কিছু বলতে পারবো না।
ঠিক আছে, বলে দেখ আমার মনে হয় রাজি হবে। রাজি না হবার কারনতো দেখি না।
__রায়হানের অফিসে কাজের চাপটা আজকাল একটু বেড়ে গেছে।বিয়ের কারনে কাজ অনেক পেন্ডিং হয়ে গিয়েছে তাই এসব কাজ আর্জেন্ট সারতে হবে।তা না হলে কম্পানির লসের মুখ দেখতে হবে।রায়হানকে সাহায্য করার জন্য আজ তৌফিক সাহেবও অফিসে চলে আসছেন।তিনিও খুব ভালো করে জানেন ক্লাইন্টদের সঠিক সময় ডেলিভারি করতে না পারলে,কম্পানির নাম বদনাম হবে।তৌফিক সাহেবের কেবিনে বসে দুজনেই কাজে মগ্ন।এমন সময় তৌফিক সাহেবের মোবাইলে কল আসে,ফোনটা রিসিভ করে তৌফিক সাহেব হ্যালো নিশি বল মা।
বাবা,তুমি কোথায়।
___আমিতো অফিসে।কেনো।
আমার কিছু বই লাগবে,আজই।কিন্তু বাসায় কোনও গাড়ী নেই।তুমি ড্রাইভার চাচাকে বল আমাকে বাসা থেকে পিক করতে।আমার নীলক্ষেত যাওয়া প্রয়োজন।
___কিন্তু তোর ড্রাইভার চাচাতো চলে গিয়েছে। কয়েক ঘন্টার ছুটি নিয়েছে।ডাক্তারের কাছে যাবে বলে।বাসার গাড়ী কি হয়েছে।তাওহিদ ভাই নিজের গাড়ী নিয়ে গিয়েছে।জিসান ভাইয়ের গাড়ীতে করে মা আর ভাবি সোপিং এ গিয়েছে।আরেকটা নাকি সার্ভিসিং এ আছে।এখন আমি কি করবো।
ওকে আমি দেখছি।
__রায়হান তুমি বরং এগুলো রাখো।বাসায় যাও একটু।না হলে এই মেয়ে একাই বের হয়ে যাবে।জানোই তো আজকাল দেশের পরিস্থিতি ভালো না।মেয়েটাকে একা ছাড়তে মন সায় দেয়না।তুমি বরং ওকে একটু নীলক্ষেত নিয়ে যাও।আমি এদিক দিয়ে সব সামলিয়ে নেবো।নিশির কথা শুনে রায়হানও আর কিছু বললো না।কারন অনেক দিন হলো নিশিকে একটু চোখে দেখে না,তাই এই সুযোগ রায়হান ছাড়তে নারায।চলে গেলো নিশির সাথে দেখা করতে।
আইফেল টাওয়ার দেখে জিসান ও তিশা আজ ডিনারের জন্য নিলয়ের বাড়ী এলো।নিলয়ের বাড়ীটা দেখে তিশা কিছুটা অবাক কারন জিসান নিজের জন্য যে বাড়ীটি বানিয়েছে এটার সেম ডিজাইন।নিলয় নিজে এসে তিশা ও জিসানকে রিসিভ করে ভেতরে নিয়ে গেলো।ওর পরিবারের সাথে পরিচয় করে দিলো।সবার ব্যবহার খুবই অমায়িক।জিসানের কিছু ফ্রেন্ডও জয়েন হলো আমাদের সাথে,কারন আজ রাতই আমাদের শেষ রাত প্যারিসে।কাল আমাদের ফ্লাইট কনফার্ম করা হয়েছে।
__আমাকে একা বসে থাকতে দেখে,নিলয় আমার সাথে জয়েন হলো।তো তিশু প্যারিস কেমন লাগলো।
ভাইয়া,আমার নাম তিশা,নট তিশু।
কিন্তু আমি তিশুই বলবো।তোমার জিসানকে জিঙ্গেস করো আমি তোমাকে তিশু বলেই ডাকি।
আপনে আমাকে আগে দেখেছেন।
হুম।
কোথায়।
জিসানের বেডরুমের দেয়ালে।
মানে।
___মানে,জিসান যখন এখানে থাকতো তখন ওর রুমে তোমার অনেক ছবি ছিলো।এমনকি তোমার লেটেস্ট ছবিও ওর কাছে এসে পড়তো।যখন খুব বেশি মন খারাপ থাকতো তখনি তোমার ছবির দিকেই তাকিয়ে থাকতো।কে জানি কি শান্তি পেতো ও।ড্রিংকস করেও ও তোমার কথাই বলতো।জানো তিশু আমি জিসানকে কাঁদতেও দেখেছি তোমার জন্য।আমার কাছে এসব ভালোবাসা আবেগ সব ফুলিসনেস মনে হতো।কিন্তু আমি জিসানকে দেখে বুঝেছি ভালোবাসা একটা মিস্টি অনুভুতি।
তিশা জিসানের দিকে তাকিয়েই নিলয়ের কথাগুলো শুনছিলো।নিজেকে ওর অনেক ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে।
হঠাৎ জিসানের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলয়ের দিকে তাকালো,কারন নিলয় একপলকে তিশার দিকেই তাকিয়ে আছে।যা তিশা নিলয়ের দিকে না তাকিয়েই বুঝতে পারছে।পরিস্থিতি নরমাল করতে তিশা নিলয়কে জিঙ্গেস করলো আপনে ভালোবাসেন কাউকে।
___নিলয় একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে,হুম বাসিতো।এমন একজনকে যাকে প্রথম দেখাতেই মনের মধ্যে একটা অদ্ভুত ফিলিং জন্ম হয়েছিলো।তখন সেই ফিলিংসটা সম্পর্কে কোনও ধারনাই ছিলোনা।কিন্তু যখন জেনেছি,আফসোস ছাড়া কিছুই জুটলো না।
কেনো।
কারন আমি জাকে ভালোবাসি,সে আমার কখনো হবে না।সে অন্যকারো সাথী।আমি তার ছায়া হতে পারবো কিন্তু তার পাশে চলতে না।
আপনে তাকে বলেছেন।
বললে কি হবে।
হয়তো একসেপ্ট করে নিতে পারে।
সে বিবাহিত। আর তার হাসবেন্ড তাকে অনেক ভালোবাসে।
ও, তাহলে ভুলে যান।মনে করেন সে আপনার কপালে নেই।আপনার জন্য আরো ভালো কেউ আছে।
তিশার কথায় নিলয় একটু হাসলো।হয়তো!
চলবে.....
[কি লিখেছি,আমি নিজেও জানি না।খুব তাড়াহুড়া করে লিখতে হয়েছে।প্যারিস সম্পর্কে কোন ডিটেইলস ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।সবশেষে কেমন হলো জানাতে ভুলবেন না।ধন্যবাদ। সামনের পার্টে ধমাকার জন্য ওয়েট করুন।]

___কি হয়েছে মা,শরীর ভালো না তোমার।রাবেয়া ছেলের কথা শুনে একটা মলিন হাসি দিয়ে বললো,আমি ঠিক আছি।তোরা হঠাৎ করে এসে পড়লি।একবার ফোন করলি না কেনো।
আমরাতো তোমাদের সারপ্রাইজ দেবো বলে,না বলে এসেছি।কিন্তু বাসায় এসে মনে হয় আমরাই সারপ্রাইজ হলাম।এতো নিরব কেনো।বাড়ীর সবাই কোথায়।
___আরে,তানজিলা ওর বাবার বাড়ীতে,আর তাওহিদ হসপিটালে।তোর বাবাকেও আজ অফিসে জেতে হলো তাই হয়তো এমন লাগছে।ওসব বাদদে তোরা অনেক জার্নি করে এসেছিস।গিয়ে কিছুক্ষন আগে বিশ্রাম নে।আমি তোদের জন্য খাবার পাঠাচ্ছি।
তিশাও রাবেয়া বেগমের কাছে আসতে নিলে, তিশাকে থামিয়ে আগে রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নেও তিশা।পরে কথা বলা যাবে।
___তিশার বিষয়টা ভালো না লাগলেও কিছু বললো না।ব্যাপারটা জিসানও খেয়াল করেছে।মা তিশার সাথে কেমন পর পর বিভেব করছে।কিন্তু কিছু না জেনে কিছু বলাটা ঠিক না।তাই জিসান এসব বিষয় মাথা না ঘামিয়ে তিশার হাতটা ধরে রুমে চলে গেলো।
রাতে সবাই ডিনার করতে একসাথে বসেছে,কিন্তু নিশি নেই।তিশা অবাক হলো,কারন তারা আসছে অনেকক্ষন কিন্তু নিশি এখনো তিশার সাথে বা জিসানের সাথে একটিবারও দেখা করতে আসেনি।স্ট্রেঞ্জ!এই মেয়ে এতোক্ষন আমাকে পাগল করে ফেলার কথা,আমরা কোথায় কোথায় গিয়েছি।ওর জন্য কি কি এনেছি।কিন্তু আজ ওর কোনও খোঁজ নেই।ডাইনিং টেবিলেও সবার মুখ কেমন বিষণ্ণ দেখা যাচ্ছে।হয়েছি কি ?
___মা নিশি কোথায়,আসার পর ওকে এখনো দেখতে পেলাম না।ও কোথায়?
জিসান নিশি রুমে,আর ও রুমেই ডিনার করবে।তোরা করে নে।
___কিন্তু কেনো।ও কি অসুস্থ মা।দাঁড়াও আমি দেখছি।(জিসান)
রাবেয়া বেগম বাধা দিতে চাইলে তৌফিক সাহেব রাবেয়া বেগমকে চুপ থাকতে ইশারা করে।আর এটা তিশার চোখ এড়ায়নি।
___জিসান নিশির রুমের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে, দেখে পুরো রুমটা অন্ধকার।রুমের লাইট জালিয়ে দেখে নিশি বিছানায় হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসে আছে।জিসান কাছে গিয়ে কিছুটা আতকে যায়।নিশি একি অবস্থা তোর।এলোমেলো চুল,চোখের নিচেও খানিকটা কালচে পরে গিয়েছে নিশির।
আর তুই এভাবে বসে আছিস কেন।জিসানও পাশে গিয়ে বসে বোনের।এতোদিন পর ভাইকে দেখে নিশি নিজেকে সামলাতে পারেনা।ভাইয়ের বুকে মাথা রেখে ডুকরে কেঁদে উঠে।জিসান বুঝতে পারছে না,ওর ছোটবোনটার হঠাৎ এমন কি হলো।ছোটখাটো বিষয় নিয়ে কাঁদার মতো মেয়ে না নিশি।নিশ্চয়ই বড় কিছু ঘটেছে।আর তা জানতে হবে।তবে সবার আগে এখন ওকে শান্ত করতে হবে।
নিশিকে অনেক কস্টে জিসান বুঝিয়ে নিচে ডাইনিং টেবিলে নিয়ে আসলো ডিনারের জন্য।নিশিকে আসতে দেখে তিশা ওর সামনে গেলে,নিশি তিশার পাশ কাটিয়ে জিসানের সাথে বসে পরে।তিশার খুব খারাপ লাগলেও ব্যাপারটা মাথায় আর নেয়নি। সবার ডিনার শেষ হলে,তিশা নিজের রুমে না গিয়ে নিশির রুমের দিকে পা বাড়ায়। আর তখনি কেউ একজন তিশার হাত ধরে ফেলে।তিশা তাকিয়ে দেখে ওর শ্বাশুরী ওর হাতটা ধরে রেখেছে।
___কি হলো মা,কিছু বলবেন।
কোথায় যাচ্ছো তুমি তিশা।
___ আমি তো নিশি…তিশার মুখের কথা ছিনিয়ে নিয়ে রাবেয়া বেগম বলে উঠলো,নিশি ঘুমায়।এখন ওকে ডিস্টার্ব করো না।তুমি তোমার রুমে যাও।
মা আমি একবার....আমি এক কথা দ্বিতীয়বার বলবো না।তুমি যাও।
___তিশা আশার পর থেকে বাড়ীর সবাই কেমন পর পর আচরণ করছে ওর সাথে।মনে হচ্ছে আমি ভুলে অচেনা এক জায়গায় এসে পরেছি।আমার আপন মানুষগুলো জেনো হারিয়ে ফেলেছি।তিশা ভাবতে ভাবতে রুমে এসে পরে।জিসান তিশার জন্যই অপেক্ষা করছিলো।কিন্তু তিশার সেদিকে কোনও খেয়াল নেই।ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।হঠাৎ জিসানের স্পর্শে সংবেদন ফিরে পেলো তিশা।আপনে ঘুমাননি।
আমিতো জাগনাই ছিলাম,তোরই কোনও খেয়াল নেই।কি চিন্তা করছিস।তিশা এবার ঘুরে জিসানের বুকে মাথা রেখে, আচ্ছা আপনার মনে হয়না বাড়ীর সবাই একটু কেমন আচরণ করছে।নিশি একটি বারও আমার সাথে কথা বলতে আসেনি।মাও কেমন আপসেট আমার প্রতি।কি হয়েছে।কিছু জানেন।
___জিসানও এসব চিন্তা করছিলো,এতোক্ষন। সবাইকে জিঙ্গেস করার পরও কারো কাছে তেমন সন্তোষ জনক উত্তর পেলো না।তিশার মাথার চুলগুলো হাত দিয়ে বুলিয়ে,তুই চিন্তা করিস না।সব ঠিক হয়ে যাবে।আমি দেখছি সমস্যা কি।সব চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে এখন ঘুমা।আমি আছিতো সব ঠিক করে দেবো।তিশাও নিশ্চিন্ত হলো,কারন তিশা জানে জিসান পাশে থাকলে ওকে আর এসব নিয়ে ভাবতে দেবে না।তাই চুপচাপ জিসানের বুকে মাথা রেখে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পরে ক্লান্ত বলে।
||
||

___আজ তিশা শাড়ী পরবে,তাই একটা মিস্টি কালারের শাড়ী হাতে নিয়ে যেই না পড়তে যাবে,তখনি জিসান রুমে এসে পরে।জিসানকে দেখে তিশা শাড়ীটা কোনও রকম শরীরে পেছিয়ে নেয়।তা দেখে জিসান ভ্রটা কুচকিয়ে তিশার সামনে এসে,কিরে ভূত দেখেছিস।আর এভাবে সং সেজে আছিস কেনো।
আ আপনে এখানে কি করেন।আমি না আপনাকে নিচে রেখে এসেছি।
___এই আমি কি কোনও আসবাবপত্র যে তুই নিচে রেখে আসবি আর আমি আসতে পারবো না।আর আমার বউ রুমে আমি নিচে একা একা কি করবো।তাই চলে এসেছি। এখন কথা কম বলে এদিক আয়।
কেনো।
___কেনো আবার শাড়ী পরিয়ে দি।
উম,সেই ঘুড়ে বালি।আমি শাড়ী পরতে পারি,তাই আপনাকে এতো পরিশ্রম করতে হবে না।আপনে আসতে পারেন।
___আর কতো আসবো জান,দেখ আসতে আসতে তোর কতো কাছে চলে এসেছি।
উফ!এই লোকটা মানুষ হবে না।
___মানুষ পরে হই,আগে তোর রোমান্টিক স্বামী হয়েনি।তিশার শাড়ী টা একটান দিয়ে খুলে নেয়।এতো সুবর্ণ সুযোগ কিভাবে হাত ছাড়া করি বল,আমারতো অনেক শখ ছিলো নিজের বউকে নিজের হাতে শাড়ী পড়াবো সাজিয়ে দেবো।কিন্ত আমার কপাল!বউ আমার শাড়ী পরতে পারে।
জিসান এমন ভাবে বললো,মনে হয় শাড়ী পরা শিখে তিশা মস্তবড় একটা অপরাধ করে ফেলেছে।তিশার এখন পেট ফেটে হাসি পাচ্ছে জিসানের কথা শুনে।
হাসবি না একদম,আজ আমিই তোকে শাড়ী পড়িয়ে নিজের ইচ্ছাটা পূরন করে ছাড়বো।
___আমার লাগবে না।
কিন্তু আমার তো লাগবে বলেই জিসান তিশার আরো একটু কাছে এসে দাঁড়ালো। তিশার খালি কোমড়টাতে হাত বুলানোর সাথে সাথে তিশার শির ধাড়া দিয়ে জেনো একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেলো।তিশা একটা শুকনো ডোক গিলে,হাতটা সরাতে নিলে,জিসান আরো একটু শক্ত করে ধরে।
___স্টোপ প্লিস,আমি নিজেই পরে নিবো।
একদম না।আর সরানোর চেস্টা করলে,আরো শক্ত করে ধরবো কিন্তু।তখন কিন্তু সমস্যা তোরই হবে।সো জান আমাকে আমার কাজ করতে দেও।
জিসান শাড়ীটা নিয়ে পড়াতে শুরু করলো।যেই প্রথমবার শাড়ীটি গুজতে লাগলো,তিশার নিশ্বাস জেনো আটকে গেলো।আজও তিশা জিসানের প্রতিটি স্পর্শে কেপে উঠে।শাড়ী পড়ার ফাঁকেফাঁকে তিশার ব্লাশিং করা মুখটা দেখে জিসানের বিষন মজা লাগছে।
কিন্তু তিশার অবস্থা ভালো না।জিসানের এমন টর্চারকেই ভয় পায় ও।ঈদানিং টর্চার একটু বেশি বেড়ে গেছে।জিসান শাড়ীটা পড়ানো কমপ্লিট করে তিশাকে আয়নার সামনো দাঁড় করিয়ে পিছন দিয়ে জরিয়ে ধরলো।এবার দেখ আজতো আমার বউকে আরো সুন্দর লাগছে।
তিশা লজ্জায় শুধু ব্লাশিং করছে,আর কিছুই বলতে পারলো না জিসানকে।
||
||

___সেদিন রায়হান নিশিকে সাথে নিয়ে নীলক্ষেত যায়।এর পর ওর দারকারি সব বই গুলো কিনে আসার সময় নিশির কিছু ফ্রেন্ডসদের সাথে দেখা হয়ে যায় রাস্তায়।
আরে নিশি, ওয়াট আপ বেব।
___ও আকাশ! তুই এখানে।
আমরাও আছি,গাড়ী থেকে উকি দিয়ে মাথাটা বের করে রোহান,ইশা আর জেনি।
___তোরা সবাই একসাথে, কোথায় যাওয়া হচ্ছে। পিকনিক!
নো ইয়ার!পিকনিক সিকনিক বড়ই বোরিং জিনিস।আই কান্ট হ্যান্ডল দিস।আমরাতো লং ড্রাইভে যাচ্ছি।
__ওয়াও! সো এক্সাইটিং..!
ও নিশি কাম, জয়েন আয।খুব মজা হবে।(রোহান)
___নিশি হাসি মুখে হা বলে,রায়হানের দিকে তাকায়।
কিন্তু রায়হান রোদ ছাড়াই লাল হয়ে গিয়েছে।
___তবুও সাহস জুটিয়ে নিশি রায়হানকে বলে,রায়হান ভাই আপনে চলে যান।ওরা আমাকে বাসায় ড্রপ করে দেবেনি।কি বলিস তোরা।
ইয়া....সিউর!আমাদের কোনও সমস্যা নেই।
___নিশি পা টা বাড়াতে নিলে,রায়হান হাতটা ধরে ফেলে।এককদম ও পা বাড়াবি না।থাপড়িয়ে গাল লাল করে ফেলবো।পাবলিকের সামনেই।নিশি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো।
রায়হান নিশির ফ্রেন্ডসদের উদ্দেশ্য করে বলে,তোমরা যাও।নিশি আজ জয়েন হতে পারবে না।
___রোহান ছেলেটা একটি জোরাজোরি করছে বলে,রায়হানের ধমকে সব গাড়ী নিয়ে পালায়।আর রায়হান নিশিকে বাইকে বসিয়ে রওনা দিলো।
কিছুক্ষণ পর নিশি বুঝতে পারলো বাইক ওর বাসার দিকে না গিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে।নিশি বুঝতে পারছে না রায়হান ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।তবুও কিছু বললো না।কারন নিশি এই সময়টাকে এখন শুধু উপভোগ করতো চায়।এই মুহুর্তটাকে নিজের মুঠোতে বন্দি করতে চায়।নিশি মনের অজান্তেই গুনগুন করা শুরু করলো....
"এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হতো তুমি বলতো"
___এমন একটা দিনের রায়হানের খুব ইচ্ছা ছিলো।প্রিয়তমার সাথে কোনও এক অজানা পথে পাড়ি দেওয়ার।কোথায় যাবে,কেনো যাবে দুজনেরই অজানা। আছে শুধু তাদের মধ্যে ভরসা আর আছে মনের মধ্যে সুপ্ত ভালোবাসা।
প্রিয়তমাকে বাইকে পাশে বসিয়ে,লং ড্রাইভে যাওয়া।প্রিয়তমার বাতাসে উড়ো উড়ো চুলগুলোর খেলা লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে পাওয়া।প্রিয়তমাকে আরো একটু কাছে টানতে মাঝে মাঝে ইচ্ছেজনক ব্রেক করা।
তাহার হাতটি বুকের বা পাশে রেখে হ্রদপিন্ডের স্পন্দন গুলো তাকে অনুভোব করার সুযোগ দেওয়া।মাংশপিন্ডের নিচে যে হার্ডটা আছে,সেটা যে তাহার জন্যই ধুপধুপ শব্দ করে,সে শব্দ তাকেও একদিন শুনতে হবে। সে যে কেনো বুঝে না।
___রায়হান বাইক নিয়ে শহর থেকে অনেকটা দূরে চলে এসেছে।
নিশি সামনে তাকিয়ে বিশাল এক নদী দেখতে পাচ্ছে। নিশি বুঝতে পারলো এটা মেঘনা নদী।কারন আসার সময় সাইনবোর্ড এ আড়াইহাজার জায়গার নাম উল্লেখ করা ছিলো।তার মনে এটা মেঘনার চর।দুজনেই বাইক থেকে নেমে পড়লো।সামনে বিশাল বালুর চর।নিশি দৌঁড়ে গিয়ে জুতা গুলো খুলে খালি পায়ে বালির চরে হাটতে লাগলো।হাটতে হাটতে কাশবন ঘেড়া বনের মধ্যে ডুকে পড়লো।কাশবনে নিশির লুকোচরি খেলা রায়হান দূর থেকেই দাঁড়িয়ে দেখতে পেয়ে তৃপ্তির হাসি দেয়।নিশিকে এতো খুশি দেখে রায়হানের মনটাও ভরে গেলো।আর নিশিতো বাচ্চাদের মতো বালি দিয়ে খেলছে,মনে হয় কতো দিনের মনের বাসনা আজ পূর্ণ হলো।রায়হান ও আস্তে আস্তে নিশির পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
___কিছুক্ষণ সামনের বিস্তৃত নদীর দিকে তাকিয়ে থেকে নিশিকে ডাক দিলো।নদী ভ্রমন করবি নিশি।
নিশি ঠোঁটদুটো উল্টিয়ে যদি পরে যাই।আমার ভয় করে।
___রায়হান হাতটা বাড়িয়ে,আমি আছিতো,তোর কিছুই হতে দেবো না।বিশ্বাস করিস তো আমায়।
মুহুর্তের মধ্যেই নিশির মনের বাগানের হাজারো প্রজাপতিগুলো জেনো তাদের রংয়ের পাখা দিয়ে নিশির গালটাকে রাঙ্গিয়ে দিলো।নিশি একটু ব্লাশিং করে রায়হানের হাতটা শক্ত করে ধরে উঠে দাঁড়ালো নদী ভ্রমন করবে বলে।
___রায়হান একটা ট্রলার ভাড়া করে নিলো নিজেদের জন্য।নিশিকে নিয়ে ট্রলারে উঠে, নিশিকে একদম নিজের কাছেই বসালো।ট্রলার চলতে লাগলো।চলতি ট্রলারে বসে থাকা নিশির চুলগুলো বাতাসে উড়ে বারংবার রায়হানের মুখে আচড়ে পরছে।অদ্ভুত ফিলিং কাজ করছে রায়হানের মনে।নিশির হাতটা ধরে,নদীর পানিতে হাতটা চুবিয়ে দিলো।নিশির আনন্দটা জেনো আরো বেরে গেলো।হাত দিয়ে নিশি পানির ঝাপটা রায়হানের দিকে ছুড়ে মারলো।
হঠাৎ নিশির ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো।চারপাশে একবার তাকিয়ে নিশি ডুকরে আবার কেঁদে উঠলো।আমি বিশ্বাস করতাম আপনাকে রায়হান ভাই।কিন্তু আপনে আমার বিশ্বাস ভেঙ্গে আমাকে নিঃস্ব করে দিলেন।কেনো করলেন আমার সাথে এমন কেনো।নিশি আবার চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।
||
||

___জিসান ও তিশা গাড়ী থেকে নেমেই,বাড়ীতে প্রবেশ করতে নিলে জিসানের একটা আর্জেন্ট ফোন আসায় তিশাকে বলে আগে বাড়তে। তিশা বাড়ীর কলিংবেল এ টিপ দিলেই কেউ একজন দারজাটা খুলে দেয়।দরজায় দাঁড়ানো মানুষটিকে দেখে তিশা কিছুটা অবাক হলো।
আরে আপু তুমি!তাও আবার এই সময়।যাই হোক ভালো আছো।
___মেয়েটিও হেসে জবাব দিলো ভালো আছে।
তিশার মা ড্রয়িংরুম এ শব্দ পেয়ে ছুটে আসে।তিশাকে দেখে মেয়েকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দেয়।এতো দিন পর দেখেছে বলে।
___তিশা সোপায় বসতে বসতে বললো,তো আপু আজও কি মায়ের সাথে গল্প করতে এসেছো।কিন্তু এই সময় কেনো।আর তোমাকে একদম নতুন বউ এর মতো লাগছে।এভাবে সেজেছো কেনো।
তিশার মা, মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।তার ধারনাই ঠিক তিশাকে ওই বাড়ীর মানুষ কিছুই বলেনি এখনো।তাইতো এতো শান্ত তিশা।রাবেয়া বেগম আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাবে তখনি রায়হান এসে পরে।
___ভাইকে এতোদিন পর দেখে তিশা খুশিতে জরিয়ে ধরে।ভাইয়া কোথায় ছিলে,কাল থেকে ফোন করে তোমাদের কাউকে পাচ্ছি না কেনো।
রায়হান ও তিশার কথার মাঝখানো মেয়েটি বলে উঠলো,তোমরা ভাইবোন বসে বসে গল্প করো,আমি তোমাদের জন্য স্পেশিয়াল কিছু বানিয়ে আনছি।
___আরেরে আপু তুমি কেনো জাবে।তুমি এই বাড়ীর মেহমান,আর মেহমানদের কাজ করাতে নেই, ঠিক মা।তিশার মা, মাথা নতো করে বসে আছে।সে অনেক কিছু বলতে চায় কিন্ত পারছে না।
মেয়েটি,তিশার হাত ধরে,এটা আমার সংসার আমি করবো না তো কে করবে।আর তুমি আমার পাঁচটা না দাশটা না একটা মাত্র ননদিনী।তোমাকে আদর সোহাগ করা তো আমার কর্তব্য।
___এতোক্ষন পর জিসান মাত্র বাসায় প্রবেশ করলো।আর এসেই এসব শুনে কিছুটা চমকে গেলো।
তিশা ভাইয়ের হাতটা ধরে,ভাই এসব কি,আর উনি যা বলছে...
____রায়হান তিশার দিকে তাকিয়ে শান্ত দৃষ্টিতে বললো,তিশা ও সত্য বলছে।
রুহি আমার বিবাহিত স্ত্রী,তোর ভাবি আর এই বাড়ীর বউ।
তিশার মনে হলো পায়ের নিচের জমিটা কেউ টান দিয়ে সরিয়ে ফেললো।এখন তিশা বুঝতে পারছে নিশি কেনো এমন করছে।
চলছে......।
[গল্পের মোর গুড়ানো হয়েছে,অবশ্যই আপনার মতামত জানাবেন।ধন্যবাদ। ]
আকাশ থেকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে,সাথে কিছু ধমকা হওয়া।ছাদের রেলিং এ পা ঝুলিয়ে বসে আছে রায়হান।হাতের জলন্ত সিগেরেট টাকে বৃষ্টিরজলও আজ নিভাতে পারছে না।ঠিক রায়হানের বুকের জ্বালাটার মতো।নিচে পরে আছে আরো অসংখ্য সিগেরেট এর শেষাংশ।জীবনে এই প্রথম রায়হান এতো সিগেরেট খেলো।কিন্তু তবুও কেনো সিগেরেট এর নেশা ধরছে না বুঝতে পারছে না।এরি মাঝে দুআঙ্গুলে রাখা সিগেরেট টিও শেষ হয়ে সেদিনের মতো আঙ্গুল দুটো পুড়ে গেলো।আবারও রায়হানকে মনে করিয়ে দিলো অতিতে ফেলে আসা সেই দিনের স্মৃতিগুলো।
___সেদিন নিশি ছিলো,আমার পুড়ে যাওয়া আঙ্গুলটিকে একটু শীতল করতে।কিন্তু আজ!আজতো কেউ নেই।
আর এই পোড়ার চেয়ে বেশি আমার মনটা পুড়ছে সেটা আমি কাকে দেখাবো।আমি যে আর পাড়ছি না,নিশি।রায়হান হঠাৎ কাঁদতে লাগলো হয়তো কষ্ট গুলোকে আর নিজের ভেতরে আটকাতে পারছে না রায়হান ।
আমি যে আর পাড়ছি না(চিল্লিয়ে)।
___আমিতো তোকে এই বুকে আগলে রেখে বাঁচতে চেয়েছিলাম।ভালোবেসে তোর সাথে বাকি জীবনটা পার করতে চেয়েছিলাম।হারাতে তোকে কখনো চাইনি,তবুও কেনো হারিয়ে ফেললাম।কেনো এমন ঝড় এলো আমার জীবনে,কেনো আমার সব কেড়ে নিলো,কেনো আজ আমি এতোটা নিঃস্ব। কেনো?
নিশিইইইই........চিৎকার করে রায়হান কাঁদতে লাগলো।
___আমি যে পারছিনা, পারছিনা তোকে ছাড়া থাকতে।কি নিয়ে বাঁচবো আমি নিশি,কি নিয়ে।তোকে কষ্ট দিয়ে আমিও যে ভালো নেই।আমার এই পুড়ে যাওয়া মনটা তোকে বলে দিবে কিভাবে বেঁচে আছি তোকে হারিয়ে।আমার ভেতরটা পুড়ে যাচ্ছে,আমি আর পারছিনা এর জ্বালা সইতে,আমি যে আর পারছি না তোকে ছাড়া থাকতে।রায়হানের ভেতরটা আজ ধুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।কিন্তু তবুও পারছে না কাউকে বলতে,না পারছে কাউকে দেখাতে।কিছু কষ্ট হয়তো এমনি হয়।
কাঁদতে কাঁদতে রায়হান হঠাৎ আবার নিজেকে সামলিয়ে নিলো।আমাকে পারতেই হবে,তা না হলে এই তুফান সবার জীবনটা লণ্ডভণ্ড করে দিবে।তোর আর আমার বিচ্ছেদ যদি সবার সুখের কারন হয় তাহলে আমরা দুজন আলাদা থাকাই ভালো।আমি না হয় আগের মতো, তোকে দূরে থেকেই ভালোবাসবো।এটাই হয়তো আমার নিয়তি।হঠাৎ পেছন থেকে কেউ রায়হান কে ডাক দিলো।
তুমি এই বৃষ্টির মধ্যে এখানে কি করছো রায়হান,ঘরে চলো।না হলে তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে।তোমারতো বৃষ্টি একদম সহ্য হয় না।
___মুহুর্তের মধ্যে রায়হানের চোখগুলো লাল হয়ে গেলো,পেছনে ঘুরে রুহির দিকে তাকালে রুহিও কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।
ভয়ংকর কন্ঠে রায়হান রুহিকে বললো,তুমি এখানে কি করছো রুহি?আমি আগেও বলেছি আমাকে একা ছেড়ে দেও।চলে যাও এখান থেকে।চিল্লিয়ে।
রায়হান প্লিস আমার কথাটা বোঝার চেস্টা করো।আমরা চাইলে সব ঠিক হয়ে যাবে,দেখো একদিন তুমি আমি অনেক সুখে থাকবো একসাথে।
___তাই নাকি!তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে রায়হান ।তোমার এমন মনে হয়।তুমি আর আমি একসাথে।রাবিশ! তুমি আমি একসাথে না ছিলাম নাহি থাকবো।আর কি মনে করেছো।আমার ভেতরে আগুন লাগিয়ে তুমি বেঁচে যাবে।এটা তোমার ভুল ধারনা।যে আগুনে আজ আমি,নিশি জ্বলছি।তোমাকেও জ্বলতে হবে।তুমি সব পেয়েও কখনো কিছু পাবে না।ব্লাকম্যাল করে বিয়ে করে বিবাহিতর পদক তো পেয়েছো। কিন্তু কোনও দিন স্বামী পাবে না।বিবাহিত হয়েও তোমাকে বিধবার মতো থাকতে হবে।নিজেকে দেখে একদিন নিজেই ঘৃর্ণা করবে।দেখো সেদিন খুব শীঘ্রই আসবে তোমার জীবনে।
তুমি এসব কি বলছো রায়হান, আমি তোমাকো ভালোবাসি।আমাকে একবার আপন করে দেখো,আমি তোমার সব কষ্ট দূর করে দেবো।
___রায়হান এবার উঠে দাঁড়ালো।রুহির একটু কাছে এসে।ইউ নো রুহি আগে তোমাকে দেখলে একটু কস্ট হতো কিন্তু এখন জাস্ট ঘৃর্ণা হয়।আর আমি হেপি,এটা ভেবে যে,তোমার মতো মেয়েকে আমি কখনো ভালোবাসিনি।কি বলেছিলে সেদিন,তুমিতো নিশি থেকেও সুন্দর।কিন্তু জানো কি রুহি!তোমার মনটা এই রাতের থেকেও কালো।আর আমার নিশি সে তো আমার চোখে পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর মেয়ে।আর তার সেই সৌন্দর্য শুধু আমি দেখতে পাই।কারন আমার নিশির সৌন্দর্য দেখতে হলে,একটা ভালো মনের প্রয়োজন যা তোমার মাঝে নেই।তুমি ওর থেকে শুধু রায়হান নামের এই জীবন্ত লাশটাকে কেড়ে নিয়েছো,কিন্তু কেড়ে নিয়েও কি লাভ হলো বলো।আমার মন প্রাণ জুরে তো সেই মেয়েটিই এখনো বিরাজ করছে।আর সারাজীবন করবেও।
ও যদি এখন অন্য কারোও হয়ে যায়,তবুও আমি দূরে থেকে ওকেই ভালোবাসবো।
আমার ভালোবাসার জন্য নিশিকে আমার হতে হবে এমন কোনও কথা নেই।আমি শুধু চাই ও সুখে থাকুক,ভালো থাকুক।আর ভালোবাসার মানুষটিকে সুখে থাকতে দেখার আনন্দ তুমি বুঝবে না রুহি।কারন ভালোবাসা কি তুমি জানোই না।
রায়হান রুহিকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিয়ে আবার থেমে যায়।রুহির দিকে না তাকিয়েই, বার বার আমার কাছে আসার চেস্টা করবে না রুহি।তুমি যদি ভাবো আবার ব্লাকম্যাল করে আমাকে নিজের কাছে আসতে বাধ্য করবে,তা হলে জেনে রেখো আমার লাশের ভারও তোমাকেই বহন করতে হবে।
___রুহি স্থব্ধ!রায়হানের বলা শেষ কথাটা শুনে।রায়হানের এক একটা কথা জেনো তিড়ের মতো বিঁধলো মনে।কান্না জরিত কন্ঠে বলে উঠলো,আমিও তো তোমাকে অনেক ভালোবাসি রায়হান। তাহলে তুমি কেনো আমার কষ্টটা দেখতে পাওনা।ভালোবেসে আমিও তো অনেক কষ্ট পাচ্ছি।আমাকে কি একটু ভালোবাসা যায় না রায়হান। রুহি কাঁদতে কাঁদতে নিচে বসে পড়লো।কিন্তু রুহির এই আর্তনাদ শোনারমত কেউ নেই এখানে।রায়হান চলে গিয়েছে আরো আগে।
|
নির্ঝন রাতে বারান্দার গ্রিল ধরে আকাশের দিকে চেয়ে আছে নিশি।মনে একরাশ অভিমান আর কস্ট নিয়ে।মাঝে মাঝে ধমকা হওয়ার সাথে একপশলা বৃষ্টি এসে নিশিকে ভিজিয়ে দিয়ে যায়।হয়তো বৃষ্টিও চাও আজ নিশির ভেতরে জমে থাকা কস্টগুলোকে ফেলে দিতে।কিন্তু তা যদি সম্ভব হতো তাহলে আজ দুইপ্রান্তে বসে থাকা দুটো মানুষকে এতো কস্ট পেতে হতো না।
___বাতাসে নিশির খোলা চুলগুলো উড়ছে।ঘরের বাতি নিভানো,বারান্দার লাইটাও জ্বালানো নেই।তবুও রাস্তার ল্যাম্প সাইডের বাতির আবছা আলোয় নিশির মায়াবী মুখটা দেখতে পাচ্ছে রায়হান। রইতে না পেরে রায়হান এখানে এসে পরেছে।প্রায় দুঘন্টা ধরে একটা গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে কখন নিশি একটিবার বারান্দায় আসবে।
আর রায়হানের মনের বাসনা পূর্ন করতে নিশি সত্যিই বারান্দায় এসে দাঁড়ালো।নিশিকে দূর থেকেই এক পলক দেখে রায়হান মনের ভেতরে এক অদ্ভুত শান্তি পেলো।
কারো ডাকে নিশি ভেতরে চলে গেলো।পরক্ষনে আবার পিছে ফিরে বাহিরে তাকালো।কেনো জানি নিশির মনে হলো কেউ ওকে দেখছে।কিন্তু নিশি কাউকে দেখতে পেলো না এই রাতের আধারে।
___কিন্তু রায়হান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখলো।দীর্ঘ একটা শ্বাস ছেড়ে সামনের দিকে হাটা ধরলো।কিছু ভালোবাসা অপূর্ণ রয়ে যায়,কিছু চাওয়ার কোনও মূল্য থাকে না।তাতে কি!আমিতো ভালোবেসে যাবো।যতোদিন বেঁচে থাকবো।তোর স্মৃতিগুলো মনে রেখে, আমি তো ভালোবেসে যাবো।হয়তো কখনো জানতে পারবি আমার পাল্টানোর কারন,সেদিন হয়তো বলবি আমি অনেক স্বার্থপর।হুম, ঠিক।আমি অনেক স্বার্থপর।
গভীর রাত,চারদিকে নিরবতা বিস্তার করছে।কেমন জেনো থমথমে পরিবেশ।হয়তো ব্যস্ত মানুষগুলো তাদের আপন নীড়ে ফিরে গিয়েছে বলে।রাস্তার ফুটপাত গুলোও ফাঁকা,কয়েটা ক্ষু্ধার্ত কুকুড় ছাড়া কাউকে দেখা যাচ্ছে না।কিছু দূরে কয়েকজন ছেলেমেয়েদের জটলা দেখতে পেলো রায়হান।এতো রাতে এদের দেখে রায়হানের অনেক কিছু ভাবতে মন চাইলেও কিছু ভাবতে পারছে না।তাদের পাশেই গাড়ীর ড্রাইভার গাড়ীটি ঠিক করার বৃথা চেস্টা করছে।আর ছেলেগুলোর হাতে গিটার,আরো কিছু বাদ্যযন্ত্র দেখতে পেয়ে রায়হান বুজে গেলো এরা হয়তো কোথাও কনসার্ট করে ফিরছে,আর এখন মাঝ রাস্তায় গাড়ী নষ্ট হওয়ায় দাঁড়িয়ে আছে।
____রায়হান কিছু না বলে,ওদের পাশ কাটিয়ে জেতে নিলে,হঠাৎ পেছন থেকে একজন ডাক দেয়।
হ্যালো ব্রো।
___রায়হান পেছনে ঘুরলে দেখতে পায় গিটার হাতে নেওয়া ছেলেটি ওকে ডাকছে।
এখানে কোথায় মেকানিক পাওয়া যাবে।একচুয়েলি আমরা অনেক দূর থেকে এসেছি।আর এখন গাড়ীটিও মাঝ রাস্তায় নষ্ট হয়ে গিয়েছি।একটু বলে সাহায্য করবেন।
___রায়হান এবার ব্যাক করে ওদের সামনে দাঁড়ালো।পকেট থেকে ফোনটা নিয়ে নিজের পরিচিত মেকানিক কে ফোন করে এড্রেস দিয়ে দিলো।রায়হানের এমন সৌজন্যমূলক আচরনে রাস্তায় দাঁড়ানো ছেলেমেয়ে গুলো খুবই খুশি হলো সাথে অবাক।
রায়হান ছেলেটির হাতের গিটারটি নিয়ে একটু বাজিয়ে জিঙ্গেস করলো কোথা থেকে এসেছো তোমরা।
____তাদের মধ্যে একজন বলে উঠলো আমরা রাজশাহী থেকে এসেছি।কাল আমাদের এখানে একটা কনসার্ট আছে,তা এটেন্ডন করার জন্যই।বাই দা ওয়ে,আমি আশফি,ও জুয়েল,কবির,নীরা,অন্তি আর আমাদের ব্র্যান্ডের রকস্টার দিহান।
রায়হান খুব পলয়েটলি সবার সাথে পরিচিত হয়ে, নিজের পরিচয় জানালো।আমি রায়হান।ঢাকারি অধিবাসী।
____রায়হানের গিটারে টুনটুন শব্দ শুনে,দিহান জিঙ্গেস করলো,আপনে গিটার বাজাতে পারেন।
রায়হান মুচকি হেসে, হুম ভার্সিটিতে পড়ার সময় আমাদেরও একটা ছোটখাটো ব্র্যান্ড ছিলো।
___তাহলেতো গানও গাইতে পারবেন।
রায়হান একটু মুচকি আসলো।
___সবাই জোর দিলো,মেকানিক না আসা পর্যন্ত রায়হান জেনো একটা গান গেয়ে শুনায় তাদের।রায়হান ও আর মানা করলো না।আজ আবার সেই দিন গুলো মনে করতে চায় রায়হার।গাড়ীতে হেলান দিয়ে এক পা ভাজ করে দাঁড়ালো রায়হান।শুরু করলো নিজের কন্ঠে একটি গান...
Tum mere ho iss pal mere ho
Kal shayad yeh aalam na rahe
Kuch aisa ho tum tum na raho
Kuch aisa ho hum, hum na rahein…
Yeh raaste alag ho jaaye
Chalte chalte hum kho jaayein…
Main phir bhi tumko chahunga… [x4]
---------------------------------------------------------
____রায়হানের চোখ দিয়ে না চাওয়া সত্যেও পানি পরছে।গানের মধ্যেই রায়হান ওর নিজের ফিলিংগুলো বলে দিয়েছে সবাইকে।আর দিহান,আশফি,জুয়েল,কবির, নীরা,অন্তি অবাক হয়ে শুনছে।গানের প্রতিটি কলিতে রায়হান এর কস্ট ওরা অনুভোব করছে।
Iss chahat mein marr jaaunga
Main phir bhi tumko chahunga
Meri jaan mein har khamoshi le
Tere pyaar ke naghme gaaunga
Mmm…
Main phir bhi tumko chahunga
Main phir bhi tumko chahunga
Iss chahat mein marr jaaunga
Main phir bhi tumko chahunga
____পুরো গানটা রায়হান চোখ বন্ধ করে নিশিকে স্মরন করেই গেয়েছে।তাইতো নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারলো না।গান শেষে চারদিকের নিরবতায় রায়হান চোখ খুলে।আশফির হাতে গিটারটা দিয়ে রায়হান আর কিছু না বলেই আবার হাটা ধরে।আর ওরা ছয়জন রায়হানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।কারো মুখে কিছু বলার জেনো ভাষা নেই।
Main phir bhi tumko chahunga
Main phir bhi tumko chshunga.......
____রায়হান অনেক রাত করে সেদিন বাসায় ফিরলো।কলিংবেল হাত দেওয়ার আগেই রেনু বেগম দরজা খুলে দিলো।হয়তো ছেলের জন্যই অপেক্ষা করছিলো।মাকে এতোরাত জেগে থাকতে দেখে,রায়হান কিছুটা অনুতপ্ত হলো।সরি মা।আর হবে না বলেই চলে গেলো।
রেনু বেগম ছেলের মুখ দেখেই বুঝে গেলো,ছেলের মনের কস্ট।সে জানতো না তার ছেলে যে মনে মনে নিশিকে ভালোবাসতো।যদি জানতো তাহলে আগেই বউ করে নিয়ে আসতো নিশিকে।তাহলে হয়তো আজ ছেলেকে এতো ভুগতে হতো না।কোন অলক্ষনে এই মেয়েটাকে আমার বাসায় আসতে দিলাম।সুই হয়ে ডুকে কুড়াল হয়ে বের হলো।আমার ছেলে মেয়েদের জীবনের সুখ শান্তি সব কেড়ে নিলো।এতো ঘর রেখে এই কালনাগিনী আমার ঘরকেই ছোবল মারতে মন চাইলো।
|
তিশার চোখেও আজ ঘুম নেই,তাই বালকানিতে দাঁড়িয়ে আজ সকালের কথাগুলো চিন্তা করছে।
___আজ সকালে
রায়হান যখন বললো,রুহি ওর বউ।তিশা বিশ্বাসই করতে চাইলো না।বার বার ভাইকে অনুরোধ করলো, এসব জেনো মিথ্যা হয়।
___ভাই,তুমি আমাকে বোকা বানাবার চেস্টা করছো।তাই না!তুমি আর নিশি মিলে নিশ্চয়ই কোনও প্লানিং করেছে।এমনি হবে।তুমি রুহি আপু কে,কিভাবে সম্ভব।এটা কখনো সম্ভব না।আর ভাবলে কি করে তুমি বলবে আর আমি বিশ্বাস করবো।এধরনের স্টুপিট মার্কা ফান আমার একদম পছন্দ না।
রেনু বেগম মেয়েকে কিছু বলতে চাইলো,কিন্তু তিশা কিছু বলতে না দিয়ে নিজেই বলা শুরু করলো।জানো মা তোমার ছেলে ডুবে ডুবে জল খায়।আর ভাবে কেউ জানতে পারবে না।কিন্তু ভুল সবাই জানে ভাইয়া।মা তোমার ছেলে আমাদের নিশিকে মনে মনে অনেক ভালোবাসে।আর দেখো আমাকে বোকা বানাবার জন্য এখন কতোবড় মিথ্যা বলছে।
____রেনু বেগম তিশার হাতটা ধরে নিজের কাছে এনে,শান্ত হো তিশা।আর রায়হান মিথ্যা বলছে না।রায়হান আর রুহি বিয়ে করেছে, এটা সত্য।তিশা নিষ্পলক মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।বুঝতে পারছে না কি বলবে।দুনিয়াটা মনে হয় ঘুড়ে গেলো।নিশির কথা মনে পড়তেই চোখ দিয়ে জেনো পানির বন্যা বয়ে যাচ্ছে।
তিশা রায়হানের সামনে গিয়ে চোখে চোখ রেখে জিঙ্গেস করলো।কেনো ভাইয়া!কেনো এমন করলি নিশির সাথে।ওই মেয়েটা তোকে অনেক ভালোবাসে,এটা জেনোও তুই এতো বড় ধোকা দিলি কিভাবে ওকে।একবারও কি ওর কথা মনে পরেনি।বল না ভাইয়া কেনো করলি।তিশা কান্না জরিত কন্ঠে।
___জিসান প্যান্টের পকেটে হাত রেখে শুধু রায়হানের দিকে তাকিয়ে আছে।কেনো জানি আজকের রায়হান কে খুব অপরিচিত লাগছে জিসানের।হুম জিসান জানতো রায়হান আর নিশির কথা।আর ও ভেবেই নিয়েছিলো হানিমুন থেকে এসে সবার সাথে এই বিষয় কথা বলবে।কিন্তু তার আগেই এসব হয়ে গেলো।
তিশাকে শান্ত করার জন্য রায়হান তিশার বাহুটা ধরে, শান্ত হো বোন।এখন এসব বলে আর লাভ নেই।যা হবার হয়ে গিয়েছে।মনে কর এটাই নিয়তি ছিলো।
তোর নিজের নতুন একটা জীবন শুরু হয়েছে,তুই এসব নিয়ে চিন্তা না করে শুধু নিজের সংসারের কথা ভাব।কথা ঘুড়ানোর জন্য রায়হান, এখন বল কেমন ঘুরলি এ কয়েকদিন।রায়হান ঠোঁটে একটা মলিন হাসি দিয়ে।
___ভাইয়া নিশি পর কেউ না।আমার পরিবারের অংশ।ওর চিন্তাতো করতেই হবে তাই না।আর পরিবারের একজন সদস্য ভালো না থাকলে পরিবারের বাকি সদস্যরা কিভাবে ভালো থাকবে।আর নিশি ভালো নেই।একদম ভালো নেই।তুমি খুব অন্যায় করেছো ওর সাথে ভাইয়া।খুব অন্যায়।তিশা আবার কাঁদতে লাগে।
রায়হান কিছু বলতে নিবে,তার আগেই জিসান এসে তিশার হাতটা ধরে বাহিরে চলে যায়।জিসান এখানে আর এক মুহুর্ত থাকতে পারবে না।হয়তো থাকলে রায়হানের উপর রাগটা কন্ট্রোল করতে পারবে না,তাই তিশাকে নিয়েই বের হয়ে গেলো।সারা রাস্তায়ও জিসান আর একটা কথাও বলেনি তিশার সাথে।আহমেদ বাড়ীর গেটের সামনে তিশাকে নামিয়ে দিয়ে জিসান চলে গেলো অফিসে।
___তিশা বাসায় এসে বেশ কয়েকবার নিশির সাথে কথা বলতে চেয়েছিলো।কিন্তু নিশি একটি বারও দারজা খুলে নি।তিশা জানে,নিশি কস্টে আছে।খুব কস্টে।কিন্তু এখানে তিশার দোষ কি।নিশি কেনো তিশার থেকে মুখ গুড়িয়ে ফেললো।তিশা বুঝতে পারছে না।
তিশাকে নিশির রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে,রাবেয়া বেগম কিছুটা রেগে গেলেন।
___তিশা তুমি এখানে কি করছো।
মা,প্লিস নিশিকে বলুন না, আমার সাথে একবার কথা বলতে।ও আমার সাথে রেগে আছে,কিন্তু কেনো।আমি কি করেছি।
___দেখো তিশা,যা হবার হয়েছে।আমি আর এ বিষয় কথা বলতে চাই না।আর তুমি প্লিস নিশি থেকে দূরে থাকো।বর্তমান পরিস্থিতিতে এটাই ভালো।ওকে একা থাকতে দাও। সময়ের সাথে ওর ঘা টা শুকিয়ে যাবে।
একটা কথা বলতো তিশা,তোমার ভাই বললো,সে রুহিকে আগে থেকেই পছন্দ করতে।তুমি কি এটা জানতে না।
___তিশা ছলছল চোখে ওর শ্বাশুরীর দিকে তাকিয়ে, মা আমি বিন্দুমাত্র যদি আভাষ পেতাম,তাহলে এসব হবার আগেই সব ঠিক করে দিতাম।শ্বাশুরীকে কথাগুলো বলেই তিশা নিজের রুমের দিকে চলে গেলো।তিশা বুঝে গেলো,ওর শ্বাশুরী ওর কথাগুলো বিশ্বাস করেনি।হয়তো সিচুয়েশন তাকে করতে দিচ্ছে না।
হঠাৎ কোমড়ে কারোর শীতল স্পর্শ পেয়ে তিশার ধ্যান ভেঙ্গে যায়।জিসান তিশাকে জরিয়ে ধরে,আপসেট।
___তিশা মাথা নিচু করেই বলে, না।
জিসান তিশাকে সামনে ঘুড়িয়ে মুখটা দুহাত দিয়ে তুলে,তাহলে কাঁদছিস কেনো।কেউ কিছু বলেছে।
তিশা মাথা নারায়, না।
___তাহলে!
আপনেও কি আমার উপর রাগ করে আছেন।বিশ্বাস করুন আমি কিছুই জানতাম না।ভাই নাকি সবাইকে বলেছে,সে রুহি আপুকে পছন্দ করে,তাই তাকে বিয়ে করেছে।আমার এগুলো বিশ্বাস হয়না।আর আমি কিছুই জানি না।সত্যিই বলছি।
____রিলেক্স জান,সমস্যা কি?আমি কখন বললাম আমি তোর উপর রেগে আছি।আমি কেনোই বা তোর উপর রাগবো।আর আমি জানি আমার তিশা কেমন, তাই এসব চিন্তা বাদ দেও।
তিশাকে নিজের সাথে জরিয়ে।আমি জানি এতে তোর কোনও দোষ নেই।কিন্তু এখন সিচুয়েশনটাই এমন।তাই একটু ধৈর্য ধর।সব ঠিক হয়ে যাবে।সবাইকে একটু সময় দে।
জিসান তিশাকে শান্ততো করিয়ে দিলো,কিন্তু জিসান নিজেও গভীর চিন্তায় মগ্ন।জিসানের মাথায় কি চলছে একমাত্র জিসানই জানে।
চলবে....
[শরীর অসুস্থ, তবুও গল্পটা দিলাম।তাই নেক্সট কবে দিবেন সেটা না বলে,কমেন্ট করবেন।
বানান ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ ]
দেখতে দেখতে কয়েক সপ্তাহ পার হয়ে গেলো।নিশি নিজের কস্টটা লুকানো শিখে গেলো পরিবারের জন্য।তবে এসবের মধ্যে নিশি আর তিশার সম্পর্কটা আগের মতো হয় নি এখনো।খুব কম কথা বলে তিশার সাথে নিশি।তাও যদি তিশা বলে।কিন্তু তিশা হার মানেনি।তিশা বার বার চেষ্টা করছে,আগের নিশিকে ফিরিয়ে আনতে।
আজ দুদিন হলো জিসানের কাজিনরাও বাড়ীতে এসেছে,আর ওরাই নিশিকে কিছুটা স্বাভাবিক করে তুলছে হাসি আনন্দের মধ্যমে।নীড়,হীরা,ঝুমুর,মিলি,মুক্তা এরা পাঁচজন মিলে নিশিকে ব্যস্ত রেখেছে। আর এসব প্লানিং আর কারো না জিসানের।নিশি জাতে ড্রিপরেশনে এর মধ্যে না চলে যায় তাই এসব ব্যবস্থা।
আজ ওরা সবাই বাহিরে যাওয়ার প্লানিং করলো।আমাকে আর জিসানকেও জেতে বললো।কিন্তু আমি জানি আমি গেলে নিশি ভালো মতো এন্জয় করতে পারবে না,আর তাছাড়া জিসানও নেই।জিসানের আজ ক্লাবে একটা পার্টির ইনভাইটেশন আছে ফ্রেন্ডসদের সাথে।তাই জিসান অফিস শেষে ওখানেই যাবে।জিসানকে ছাড়া কোথাও যাওয়া এখন কেনো জানি ভালো লাগে না।তাই আমি বাসায় থেকে গেলাম।
তানজিলা ভাবি কাপড়গুলো ভাজ করছে, আর আমি তারিনের সাথে খেলছি ভাবির রুমে বসে।
তিশা পড়ালিখা কি নেই তোমার।দিনদিন পড়ালিখা নিয়ে বেশ অবহেলা দেখছি।
জিসান জানতে পারলে কিন্তু তোমার খবর আছে।(তানজিলা)
ভাবি ভয় দেখিও নাতো।আমাকে তারিনের সাথে খেলতে দেও।
ভাবি তারিনতো বড় হয়ে যাচ্ছে আরেকটা বাবু কেনো নিচ্ছো না।তাহলে আমি আর তারিন একটা খেলার সাথি পেতাম।তাইনা তারিন।
তারিনও খিলখিলে এ হেসে দিলো কি বুঝলো আল্লাহই জানে।
দেবরানী,আমি একটাতেই খুশি।এখন তোমার পালা। তোমার স্বামীকে বলো এই কথা।তোমার জন্য একটা বেবি এনে দিবে।
ভাবি, তুমিও না....।
কি হলো,দেবরানী এখন লজ্জা পাচ্ছো কেনো।
ভাবি তোমার সাথে আর কোনও কথা নেই,সরো তো।আমার পড়া আছে,আমি পড়তে বসবো।
হুম,যাও,যাও।তোমার হিরো আসলে আবার অন্য পড়া শুরু করবে।
আমি লজ্জায় ভাবির রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে এসে পড়লাম।কি সব বলে,আল্লাহ। এই বাড়ীর সব পাবলিক একটু লাগাম ছাড়া।
তিশা পড়ার টেবিলে বসে ভাবছে,সত্যি আমার যদি একটা বেবি হয়,তাহলে কতো ভালো হতো।কিন্তু এই হিটলার যদি শুনে আমি বিয়ে হতে না হতে বেবি নিতে চাই।কে জানে কি করবে।এমনেই আমাকে বলে দিয়েছে উনাকে আর পড়ালিখা ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে আমি জেনো চিন্তা না করি,সংসার নিয়েও জেনো একদমই মাথা না ঘামাই,আমার নাকি সংসার করার বয়স হয়নি।তাহলে বিয়ে করছে কেনো হিটলার আমায়।
জিসান ক্লাবে বসে রনির সাথে কথা বলছিলো,ওই সময় রায়হান ও ক্লাবে আসে।রনি রায়হান কে দেখে ডাক দেয় এখানে আসতে।রায়হান সবার সাথে দেখা করে,রনির কাছে আসে।আর এসেই জিসানকে দেখতে পেলো।আজ অনেকদিন পর তাদের দেখা হলো।সেদিনের পর থেকে রায়হান আর জিসানের মাঝে কোনও কথা হয়নি।জিসান বসে মোবাইলে কিছু দেখছিলো।রায়হান গিয়েও জিসানের পাশে বসে হাতে একটা ড্রিংকস তুলে নেয়।
জিসান মাথা না তুলেই,তুইতো ড্রিংকস করতি না,তা আজ হঠাৎ ড্রিংকস করতে মন চাইলো কেনো।শুনেছি প্রেম করে বিয়ে করেছিস,তোর বউ কিছু বলবে না।এখনতো এসব ছাড়ার পালা,আর তুই শুরু করছিস।বউ আবার ছেঁকাটেকা দেয়নি তো।
রায়হান মলিন হাসি দিয়ে,হঠাৎ অনেক কিছু হয়ে যায়,হঠাৎ করে জীবনটা পালটিয়ে যায়,হঠাৎ সব শেষও হয়ে যায়।এতো হঠাৎ এর মধ্যে আমার হঠাৎ ড্রিংকস নেওয়াটা খুবই তুচ্ছ বিষয় তাই না।
হুম,ঠিক বলছিস।তুইতে আবার ভদ্র ছেলে,সবই খুব বেশি বুঝিস।জিসান পকেটে মোবাইলটা রেখে,নিজের হাতেও একটা সোপ্ট ড্রিংকস তুলে নেয়।
হয়তো খুব শীঘ্রই দাওয়াত পাবি।তবে তোকে দাওয়াত আগেই দিয়ে দিলাম।পরে জাতে কোনও বাহানা করতে না পারিস।
রায়হান ভ্রুকুচকে জিসানের দিকে তাকায় বাকি কথা শুনার জন্য।
জিসান রায়হানের দিকে না তাকিয়েই বলে,নিশির বিয়ের কথা আমার কাজিন নীড়ের সাথে চলছে।মা তো পারে না কালই বিয়ে দিয়ে দেখ।কিন্তু নিশির জন্য আমরা ওয়েট করছি।আই হোপ ও এবার রাজি হবে।না হবার কারণতো নেই।
রায়হান কিছুক্ষণ জিসানের দিকে তাকিয়ে থেকে,মুখটা ঘুড়িয়ে ফেলে।হাতের গ্লাসে রাখা ড্রিংকসটি এক ঢোকে শেষ করে ফেললো।ওয়েটারকে দিয়ে আরও কিছু ড্রিংক এনে সেগুলোও শেষ করে দিলো।জিসান বসে বসে শুধু রায়হানের কান্ড দেখছে। কয়েকজন ফ্রেন্ডস এসে রায়হানকে আটকানোর চেস্টা করলো,কারন রায়হানের এসব খাওয়ার অভ্যাস নেই।কিন্ত কেউ পারলো না।
নিশির বিয়ের কথা শুনেই যে ওর ভেতরে আগুন লেগে গিয়েছে।জিসান তা খুব ভালো করে বুঝতে পারছে।জিসান জানে কোথায়ও কি বলতে হয়,আর কাকে কিভাবে টাইট দিতে হয়।
রাওয়া ক্লাব,ঢাকার অভিজাত ক্লাবগুলোর মধ্যে একটি।এই ক্লাবের দ্বিতীয় তলায় কার্ডরুম বার এ জিসান আর রায়হান বসে আছে।জিসান সম্পূর্ণ তালে,আর রায়হান বেতালে।কিছুক্ষণ পর রায়হান উঠে করিডোর এ চলে যায়,একটু মুক্ত বাতাসের প্রয়োজন।চোখ বন্ধ করে কিছু একটা ভাবার চেস্টা করছে।
ঠিক তখনি জিসান প্যান্টের পকেটে দুহাত রেখে রায়হানের কাছে এসে দাঁড়ালো।
ইতিহাস তুই শুরু করবি,নাকি আমি খোঁজ নেবো।এই কথা বলেই একটা সিগেরেট ধরালো।ধূয়াগুলো বাতাসে উড়িয়ে রায়হানকে আবারও প্রশ্ন করলো,জানিস তো রায়হান আমি আর তুই কথা দিয়েছিলাম আমরা দুজন দুজনার কাছ থেকে কিছুই লুকাবো না,তুই কিন্ত বন্ধুত্বের সব শর্ত ভেঙ্গে দিচ্ছিস।
রায়হান মলিন একটা হাসি দিয়ে,জিসানের হাতে থেকে সিগেরেট টা নিয়ে নিজেও টানতে লাগলো।
দুবন্ধুর মাঝে চললো কিছু না বলা কথা অনেকক্ষণ।
আকাশপানে তাকিয়ে আছে রায়হান আর জিসান।দুজনেই চুপ,কিন্তু আজ দুজনের মন কিছুটা হলে শান্তি পেয়েছে।এতোদিন দুজন আলাদা থেকে ভেতরে ভেতরে অনেকটা ভেঙ্গে গিয়েছিলো।
|
জিসান বাসায় আসতে আজ একটু লেট করে ফেলেছে।ভেবে নিয়েছিলো তিশা হয়তো ঘুমিয়ে গিয়েছে।রুমে প্রবেশ করে দেখে ঘরটি পুরো অন্ধকার,তবে ড্রিম লাইটের আবছা আলোতে দেখা যাচ্ছে বিছানা খালি।মুখে কিঞ্চিত হাসি ফুটে উঠলো,এটা ভেবে যে তার প্রিয়তমা বউটি তারই জন্য জেগে আছে।।হাতের কোটটা আর টাইটা খুলে পাশের সোফায় রেখে দিলো।আস্থে আস্থ তিশার দিকে পা বাড়ালো।
বালকানিতে দাঁড়িয়ে আছে তিশা,হালকা বাতাসে তিশার চুলগুলো উড়ছে,সাথে শাড়ীর আচলটি।
জিসান বারান্দার দরজায় হেলান দিয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তিশার দিকে।লাল জরজেট এর শাড়ীতে পরিধান তিশাকে দেখে আজ একদম ওদের বিয়ের প্রথম রাতের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে জিসানকে।
তাদের প্রথম মিলনের রাত ছিলো,যা জিসান কোনও দিনও ভুলবে না।আজও তিশাকে সেই দিনের মতোই এতো সুন্দর লাগছে।
জিসান নিজের মনেই বলে ফেললো,জিসান তু তো গেয়া আজ।এই রমনী তার জাদু দিয়ে তোকে একদিন মেরেই ফেলবে।
জিসান তিশাকে জরিয়ে ধরে,চুলে মুখ ডুবালো।
তিশাও জিসানের হাতের উপর নিজের হাতটা রাখলো।
কখন এসেছেন।আমিতো বুঝতেই পারলাম না।(তিশা)
এতো চিন্তায় মগ্ন থাকলে কিভাবে বুঝবি।
হুম।
তিশাএএএএ
হুম
আপসেট।(জিসান)
উঁহু।
মুড ভালো না।(জিসান)
তেমন কিছু না।
জিসান তিশার ঘাড়ে নাক ঘষতে ঘষতে কানের কাছে এসে কানের লতিতে হালকা একটা কামড় দিয়ে দিলো।মুড করার জন্য কি করতে হবে এখন।
জিসানের এমন বিহেভে তিশা একটু কেঁপে উঠলো।কিছুই ককরতে হ হবে না।অনেক রাত হয়েছে চলুন ঘুমাবেন।
তিশা জেতে চাইলে জিসান আরো শক্ত করে ধরে,পালাতে চাস।তাও আবার আমার কাছ থেকে।তিশাকে এক ঝটকায় নিজের সামনে ঘুড়িয়ে।আগেই দিই নাই,আর এখন তো ইম্পসিবল।
তিশা তাকিয়ে দেখে জিসান কেমন নেশাভরা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।জিসানের এমন তাকানোতেই তিশা জেনো লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।কিন্তু জিসানের সেদিকে কোনও খবর নেই।সেতো তার প্রিয়তমার মুড বানাতে ব্যস্ত ।জিসান যখন বুঝতে পারলো,ওর পদ্ধতি কাজ দিয়েছে,সাথে সাথে তিশাকে কোলে তুলে নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালো।
এর পর কি হবে তা ভেবেই তিশা লজ্জায় মুখ লুকালো জিসানের বুকে।জিসান এমনেই আজ অনেকটা খুশি রায়হানের সাথে কথা বলে।আর নিজের এই আনন্দটাকে আরো ডাবল করবে,তার ভালোবাসার মানুষটির মাঝে আজ আবার ডুব দিয়ে।
সকালে তিশার ঘুম আগে ভাঙ্গে, চোখ খুলে নিজেকে জিসানের বুকের উপর শুয়ে থাকতে পায়। মাথাটা হালকা উঠিয়ে দেখে জিসান মুখটা হা করে ঘুমিয়ে আছে।জিসানের মুখ হা করা দেখে তিশার ভীষন হাসি পেলো।হাত দিয়ে মুখটা বন্ধ করে, গালে একটা ডিপলি কিস করে,গুড মর্নিং কানের কাছে গিয়ে।
জিসানও তিশাকে দুহাতের মধ্যে নিয়ে জরিয়ে ধরে,কপালে একটা আদর দিয়ে দিলো।গুড মর্নিং জান।তো কাল রাত আপনার কেমন কাটলো।
তিশা জিসান থেকে নিজেকে ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে,অসভ্য। মুখে কিছু আটকায় না।ছাড়েন আমাকে,আজ কলেজ এ জেতে হবে আমায়।
কিন্তু জিসানতো ছাড়ার মানুষ না,যখনি তিশা দূরে সরতে চায়,জিসানের তখন তিশাকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আরো বেরে যায়।আজও তাই হলো,তিশাকে আরো কিছুক্ষন জ্বালালো।
তিশা জিসানের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে,কিছুক্ষণ আগে জিসানের ভালোবাসার টর্চারে ব্যাচারী ক্লান্ত হয়ে পরেছে।
জিসান তিশার চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
তিশা।
হুম।
রায়হানের সাথে কথা বলিস না কেনো।
তিশা এবার মাথা উঠিয়ে জিসানের দিকে তাকায়,আপনে জানেন কি করে।
রায়হান বলেছে।(জিসান)
ভাইয়ার সাথে কথা হয়েছে।
তিশার মুখের সামনের চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে।হুম,কাল ক্লাবে দেখা হয়েছে।
তিশা চাদরটা সুন্দর করে জরিয়ে উঠে বসলো।ভাইয়ার জন্য নিশি আমার সাথে কথা বলে না।ও আমাকে ভুল বুঝে বসে আছে।আমি রাগ, তার উপর ভীষন রাগ।নিশিকে এতোটা কস্ট দেওয়ার কোনও রাইট নাই ভাইয়ার।
জিসানও উঠে বসলো,তিশার কোমড়টা ধরে তিশাকে নিজের কোলে বসালো।নিজের হাতের আঙ্গুল গুলো দিয়ে তিশার হাতটা মুঠে করে নিয়ে নিলো।
দেখ জান,মাঝে মাঝে না চাওয়া সত্যেও আমাদের এমন কিছু কাজ করতে হয়,যার ফলে আমাদের ঘনিষ্ঠ মানুষগুলো হয়তো খুব কস্ট পায়।কিন্তু তবুও সবার হিতের জন্য আমাদের করতে হয়।রায়হান খুব বুদ্ধিমান ছেলে,ও এমনেই না বুঝে এসব করবে না।হয়তো কোনও রিজন আছে।সেটা একদিন জানা যাবে।কিন্তু তুই যে ভুল বুঝে রায়হান কে কস্ট দিচ্ছিস তা একদম ঠিক না।তুই জানিস না রায়হান তোকে অনেক ভালোবাসে।হয়তো প্রকাশ করে না,কিন্তু তোর জন্য নিজের জীবনটা দিতেও ভাববে না।
তিশা জিসানকে হঠাৎ জরিয়ে ধরে,আপনে এতো ভালো কেনো বলেন তো।ভাইয়া এতো কিছু করার পরও আপনে একটি বারও আমার বা ভাইয়ার উপর রাগ করেনি। আপনার কি রাগ হয়না।
জিসান একটু মুচকি হেসে,আরে পাগলি আমি রাগ করবো তো কার উপর করবো,তোরা দুজনই আমার জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। তাহলে রাগ করার প্রশ্নই আসে না।
আর নিশি?(তিশা)
নিশি আমার বোন,ওর সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক। ও কস্ট পাক বা ওর ক্ষতি হয় এমন কিছুই করবো না।কিন্তু আল্লাহ যদি ওর কপালে রায়হান কে না লিখে তাহলে কিছুই করার নেই।আমি বলছি না, যা হয়েছে ঠিক হয়েছে।আমি বলবো সময়ের কাছে ছেড়ে দে সবকিছু।সময় বলে দিবে কি হবে।নিশির কপালে যা লিখা আছে তাই হবে।তাই এসব চিন্তাভাবনা ছেড়ে দে।
তুই আজই ফোন দিয়ে বাসায় সবার সাথে কথা বলবি।মা নাকি কান্না করে তোর জন্য।
তিশা মাথা নাড়ায়,হ্যা।
এরপর জিসান উঠে ফ্রেস হতে চলে গেলো,আর তিশা ভাবছে কতোটা লাকি আমি জিসান,আপনাকে পেয়ে।কিভাবে আমার সব কস্টও গুলো নিমিষে দূর করে দেন।আমি আসলেই অনেক ভাগ্যবতী।
|
রুহি রাত দিন চেষ্টা করছে রায়হানের মন জয় করতে কিন্তু কোনও কিছু করে কিছুই পাচ্ছে না।রায়হান রুহির সাথে কথা বলাতো দূরে থাক তাকাও না।সকালে নাস্তা রুহি বানায় বলে,নাস্তা না করেই ঈদানিং অফিসে চলে যায় রায়হান।আর রাতেও খুব দেরি করে বাসায় আসে।এমনকি রায়হান রুহির সাথে এক রুমেও থাকে না।রুহি বিয়ের পর থেকেই তিশার রুমে থাকে।রায়হান নিজের রুমেও জায়গা দেয়নি।
দিনদিন রায়হানের অবহেলা গুলো,রুহিকে বিরক্ত করে তুলছে।শুধু রায়হান না রেনু বেগমও রুহির সাথে তেমন কথা বলে না।বিয়ের আগে কতে না গল্প করতো,অথচ এখন রুহির দিকে তাকাও না।
রুহি ভাবতে লাগলো,এতো কিছু করেও কি লাভ হলো।রায়হান কে পেয়েও আজ পেলো না ও।এর অধিক অধিকার চাইলে নাকি রায়হান নিজের জীবন শেষ করে দিবে।তাইতো রায়হানকে হারানোর ভয়ে নিজের স্ত্রীর অধিকার চাইতে সাহস পায় না রুহি।কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।
বিলাশবহুল হোটেল AMARI DHAKA (আমারই ঢাকা)তে আজ একটা বিজনেস পার্টি আয়োজন করা হয়েছে।আর এই পার্টিতে পুরো আহমেদ ভিলার লোকজনও ইনভাইটেশন পেয়েছে।তাই না চাওয়া সত্যেও সবাইকে আজ পার্টিতে উপস্থিত হতে হয়েছে।কারন পার্টিতে ইনভাইট করা ব্যক্তিটি আহমেদ কম্পানির খুব পুরাতন ক্লাইন্ট।আর ক্লাইনদের মন রক্ষার্থে এসব পার্টিতে উপস্থিত থাকতে হয়।
জিসান আর তিশা বাদে সবাই পার্টিতে এসে পরেছে।কারন তারা একসাথে আসবে।
তিশা রেডি হয়ে ড্রয়িংরুম এ বসে জিসানের জন্য ওয়েট করছে,কিন্তু জিসান বাসায় এসেই তিশার উপর ক্ষেপে যায়।কারন তিশার পাড়নের শাড়ীটি একটু বেশি পাতলা।আর তিশার এতো সাজগোজ জিসানের একদমই পছন্দ না।দাঁতেদাঁত চেপে জিসান জিঙ্গেস করলো,
এসব কি পরেছিস তুই।পার্টিতে যাচ্ছিস নাকি মডেলিং করতে,ঠিক করে বলতো।
তিশা জিসানের কথার আগামাথা বুঝতে না পেরে,কেনো কি হয়েছে।আমাকে ভালো লাগছে না।সবাই যে বললো আমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।তাহলে,
জিসান আর কিছু না বলে,তিশার হাতটা ধরে রুমে নিয়ে গেলো।কাবার্ড থেকে একটা পেকেট বের করে তিশাকে দিয়ে বললো,এটা পড়ে রেডি হো তারাতারি। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
তিশা খুশিতে গদগদ হয়ে পেকেট টা খুললো,কিন্তু ওর হাসি বেশিক্ষন থাকলো না।পেকেটটার ভেতরে ছিলো একটা ডিজাইনার আবেয়া আর হিজাব।তিশা এসব হাতে নিয়ে বেড এ বসে পরেছে।
জিসান ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে দেখে তিশা এখনো বসে আছে,এগুলো হাতে নিয়ে।জিসানের রাগ উঠলেও নিজেকে সংযোত করে নেয়।তিশার সামনে হাটু গেড়ে বসে,কি হলো জান।ডিজাইন পছন্দ হয়নি।
তিশা কাঁদো কাঁদো ফেস নিয়ে বলে,আমি পার্টিতে এসব পরে যাবো।
তিশার হাতটা ধরে,আমি এসব বিজনেস পার্টিগুলো একদম পছন্দ করি না।কিন্তু বিজনেস এর জন্য সৌজন্যতা বজায় রাখতে জেতে হবে,তাও আবার তোকে নিয়ে।আমি আগেও বলেছি তোকে কেউ দেখুক সেটা আমি চাই না।যেখানে তোর কলেজে বোরকা ছাড়া জেতে দিই না, সেখানে এসব পার্টিতে তোকে এভাবে নিতেই আমার ভয় করে।
কে কিভাবে আসছে তা আমার দেখার বিষয় না,আমি চাই তুই একদম শালিন পোশাক পরে সেখানে যাবি।বল,আমি কি খুব বেশি চাইছি।
তিশা মাথা নাড়ায়,না।জিসানের দেওয়া পোশাকগুলোই তিশা পরে ভালো মতো হিজাবটা বেধে নেয়।
জিসানও রেডি হয়ে গাড়ীর সামনে অপেক্ষা করছে।
তিশা রেডি হয়ে নিচে নেমে গাড়ীর সামনে আসলে,জিসান তিশার মুখটা ধরে,মাশআল্লাহ।অসাধারণ লাগছে তোকে।এর পর দুজনেই গাড়ীতে উঠে পার্টিতে রওনা দিলো।
পার্টিতে রায়হানও আসছে।তবে যথারীতি কারো সাথে কথা না বলে বারে বসে আছে।আপাতত রায়হানের তীক্ষ্ণ নযর নিশির দিকে।কারন নিশি সেই কখন থেকে নীড়ের সাথে চিপকে আছে,যা রায়হানের একদমই সহ্য হচ্ছে না।মন তো চাইছে,হাত ধরে টেনে নিশিকে নিজের কাছে নিয়ে আনতে।কিন্তু সেই অধিকার কি আছে এখন।
এই হোটেলের রুপটপে পার্টিটা আয়োজন করা হয়েছে।কারন রুপটপ থেকে বাহিরের ভিউটা দেখতে চমৎকার।
গুলশান -২ এর ৪১নং রোডে অবস্থিত হওয়ায়,যাতায়াত তে তেমন কোনও সমস্যা নেই।তাই জিসান, তিশাও তারাতারি পার্টিতে জয়েন হতে পরেছে।তিশাকে মা আর তানজিলার কাছে রেখে জিসান বাকি বিজনেস ক্লাইনদের সাথে দেখা সাক্ষাত করতে গিয়েছে।
এতোক্ষন পর নিশিও রায়হান কে খেয়াল করলো।চোখে চোখ পড়ায় সাথে সাথে চোখ সরিয়ে ফেললো নিশি।এই লোকটির আর কোনও মায়ায় নিজেকে জরাতে চায় না ও।যে আমার না তাকে দেখারি বা কি দরকার।
কিছুক্ষন পর কাপাল ডান্স শুরু হলো,যারা ডান্স করবে তারা ডান্স ফ্লেরে এসে পরছে।জিসানও তিশার সাথে জয়েন হয়েছে।তবে সবার মুখে মাস্ক দেওয়া নিজ নিজ পছন্দ মতো।নিশিও ভেবে নিয়েছে ও ডান্স করবে,তাই নীড়কে বললো মাস্ক নিয়ে আসতে।
হঠাৎ সব লাইট নিবে গেলো।কেবল ডিজে লাইট জলছে।গানও চালু হয়ে গেলো,নিশি ওয়েট করছে নীড়ের জন্য।
হঠাৎ কেউ নিশিকে টান দিয়ে ডান্স ফ্লোরে নিয়ে আসলো।একহাত দিয়ে শক্ত করে নিশির কোমড়টা চেপে ধরলো, আরের হাত দিয়ে নিশির হাত ধরে নাচতে লাগলো।নিশি বুঝে উঠার আগেই এসব হলো।একতো ডিজে লাইট,যার কারনে সাদা কে আর কালো কে কিছুই বুঝা যায় না।তার উপর মাস্ক পড়ে থাকার কারনে নিশি চিনতে পারলো না রায়হানকে।প্রথমে নিশি নীড় মনে করলেও পরে বুঝতে পারে এটা নীড় না।তাহলে কে?
নিশি ছুটার চেস্টা করে কিন্তু রায়হান নিশির কোমড় ধরে আরো কাছে টেনে এনে শক্ত করে ধরে।নিশি অনুভব করে লোকটির নক ডুকে গিয়েছে ওর কোমড়ে।নিশি বুঝতে পারছে না কি হচ্ছেটা কি ওর সাথে।নিশি লোকটিকে যতোই সরানোর চেস্টা করছে।রায়হান নিশিকে ততোই নিজের কাছে টেনে নিচ্ছে।হঠাৎ রায়হান এর পারফিউম এর ঘ্রান নিশির নাকে আসে।নিশি একটু চুপ হয়ে যায়।লোকটির দিকে তাকিয়ে বুঝার চেস্টা করে,আসলে কে?কেনো জানি মনে হচ্ছে এটা আর অন্য কেউ না রায়হান ভাই।
চলবে......
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]
বালুকাময়ের উপর খালি পায়ে হেটে চলছে রুহি আর রায়হান।কিছুক্ষন পর পর তীরে আচড়ে পড়ছে নীল সমুদ্রের ঢেউ।প্রতিটি ঢেউ এর জলরাশি ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাদের জীবনের না পাওয়া হাজারো আনন্দ,কস্ট বেদনা গুলো।
ইন্দ্রজালিক সৌন্দর্যে ভরপুর আমাদের এই কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত।কোলাহল মুক্ত শান্ত এই সমুদ্র সৈকতে রুহি আর রায়হান ঘুরতে এসেছে।রায়হানের হাত ধরে,কাধে মাথা রেখে সূর্যাস্ত দেখছে।রুহির সব স্বপ্ন জেনো আজ সত্য হলো,তার ভালোবাসার মানুষটিকে এতো কাছে পেয়ে।
হঠাৎ রুহি দেখে ওর শ্বাশুরী রেনু বেগম সমুদ্র থেকে এক বালতি পানি এনে ওর শরীরে আচমকা মারলো।
মুহুর্তেই রুহি ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো।চোখগুলো ভালো করে কোচলে দেখলো ওতো এখনো ওর রুমেই।আর ওর সামনে কোমরে হাত দিয়ে বড় বড় চোখ করে দাঁড়িয়ে আছে ওর শ্বাশুরী।তার মানে ও স্বপ্ন দেখছিলো এতোক্ষন।
রেনু বেগমকে এভাবে দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো রুহি।বুঝে উঠতে পারছে না শ্বাশুরীর এভাবে তাকিয়ে থাকার কারনটা কি।
পরীক্ষণে বুঝতে পারলো ওতো পুরো কাক ভেজা হয়ে বসে আছে।
রেনু বেগমের দিকে তাকিয়ে,আন্টি একি করলেন।
আমাকে এভাবে পানি মারলেন কেনো।কতো সুন্দর স্বপ্ন দেখছিলাম জানেন।
ও হো আমার মহারানি। স্বপ্ন থেকে বাস্তবে ফিরার জন্যই তো পানি ঢাললাম।সেই কখন থেকে ডেকে যাচ্ছি।কিন্তু আপনে তো কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমাচ্ছেন তো ঘুমাচ্ছেন।
বলি কি সব ঘুম কি আজই ঘুমিয়ে ফেলবেন।বেলা তো কম হলো না।একটু শরীরটাকে হিলান।ঘরের কাজগুলো করবে কে শুনি।
হায়রে! আমার কপাল,ছেলের বউ থাকতে এই বয়সে আমাকে নাকি ঘরের কাজ করতে হবে।একটু ন্যাকামি করে।
রিলেক্স আন্টি,আজ হঠাৎ আপনে এমন কেনো করছেন।আর মাত্রই তো সকাল আটটা বাজে।এতো কিসের তারা।
মাত্র আটটা বাজে বলছে এই মেয়ে!
আরে তোমার স্বামীর হয়তো কোনও কাজ নেই।কিন্তু বাড়ীতে আমরা বুড়ো বুড়ি তো আছি।তাদের দিকে একটু খেয়াল তো রাখো।
রায়হানের কাজ নেই মানে।একটু বিস্মিত হয়ে।
রিনা বেগম চলে যেতে নিলে,রুহির কথায় আবার থেমে যায়।কেনো তুমি জানো না।
কি?
রায়হানের চাকরী চলে গেছে।
রুহি বিছানা থেকে চিৎকার দিয়ে উঠে দাঁড়ায়।কি?আর কেনো?
কেনো আবার,ওই বাড়ীর মেয়ের সাথে প্রেম করে, বিয়ে করবে আরেক জনকে।তাহলে তারা কি তোমার জামাইরে নিয়ে গিয়ে পূজো করবে।
রেনু বেগম আর এক মুহুর্তও দাঁড়ালো না,চলে গেলো।
আর রুহি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো।
রুহি ফ্রেস হয়ে ড্রয়িংরুমে এসে দেখে,রায়হান শোফায় বসে আপেল খাচ্ছে আর টিভি দেখছে।রুহি বুঝতে পারলো ওর শ্বাশুরী মিথ্যা বলে নি।কারন এতোক্ষনে রায়হান অফিসে চলে যাওয়ার কথা।
রুহি নাস্তা বানানোর জন ফ্রিজ থেকে ডিম বের করতে নিলে,রেনু বেগম এসেই বাধা দেয়।
কি করছো,রুহি?
কেনো আন্টি ডিম বের করছি অমলেট এর জন্য,নাস্তা করবেন না।আমি আজ আপনাদের সবার জন্য পরোটা,অমলেট,হালুয়া করবো।রায়হান যেহেতু বাসায় আছে আজ ওকে নাস্তা করিয়েই ছাড়বো দেখেন।
রুহি অনেকটা খুশি হয়ে।
রুহি ডিম নিয়ে কিচেনের দিকে যেতে নিলে,রেনু বেগম হাতটা ধরে ফেলে।দাঁড়াও রুহি।
আবার কি হলো আন্টি।
ডিম গুলো রাখো।
কেনো আন্টি।
রেনু বেগম মাত্র দুটো ডিম রুহির হাতে দিয়ে বাকি গুলো ফ্রিজে রেখে দিলো।
দুটো দিয়ে কি হবে,আমরা মানুষতো চারজন।
চারজনের জন্য দুটো ডিমই বেশি বুঝলে।
শুনো এখন পাকের ঘরে গিয়ে দেখো পান্তা ভাত আছে। কাল রাত তো অনেকগুলো ভাত বেঁচে গিয়েছে। আমি বুদ্ধি করে পানি ঢেলে রেখেছি।এখন কাজে দিবে।তুমি ডিম ভাজো,সাথে শুকনো মরিচ পুড়া,আর পেঁয়াজ এক্সট্রা দুটো ছিলে টেবিলে রাখো।আমরা আজ এটা দিয়েই নাস্তা করবো।আর শুনো মেয়ে ডিম দুটো ভেজে সমান চার ভাগে ভাগ করে ফেলবে কেমন।
আন্টি এসব কি বলছেন।আমরা পান্তা খাবো,কেনো।চিল্লিয়ে।
আরে রুহি তুমি ভুলে গিয়েছো,রায়হানের চাকরী চলে গিয়েছে।আর তোমার শ্বাশুরের পেনশনের অর্ধেক টাকা চলে যায় লোন শোধ করতে,যা আমরা তিশার বিয়ের সময় নিয়েছিলাম।
আর এখন হাতে অল্প কিছু টাকা আছে।আর এখনো মাসের অর্ধেক বাকি আছে,ঘরে বাজারোও শেষ।তার উপর এখনো কারেন্ট বিল,গ্যাস বিল,পানির বিল,আরো অনেক কিছুর বিল বাকি আছে।
তাইতো একটু হিসাব করে চলতে হবে।তুমিতো এই বাড়ীর লক্ষী বউ তুমি বুঝবে নাতো কি প্রতিবেশি বুঝবে আমাদের কস্ট বলো।
রুহি রেনু বেগমের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে,তবে এটা তো কিছুই না।
রেনু বেগম যখন বললো,কাজের লোকও এখন আর আসবে না,তাই ঘরের সব কাজ এখন থেকে রুহিকেই করতে হবে।
আর রুহির কাজের তালিকায় রেনি বেগম তাকে কাপড় ধোয়া,ঘর মোছা,রান্না করা,থালাবাসন ধোয়া এসব ভাগ করে দিয়েছে।আর বাকি যা আছে রেনু বেগম সামলিয়ে নেবে।
কেনো জানি পুরো দুনিয়া ঘুড়ছে,চোখের সামনে সব ঝাপসা দেখছে।রুহি জ্ঞান হারিয়ে নিচে পরে যায় হঠাৎ।
শব্দ পেয়ে রায়হান পিছনে তাকিয়ে দেখে,রুহি নিচে পরে আছে।ডোন্ট কেয়ার একটা লুক নিয়ে,মাকে বলে।চেক করে দেখোতো মা বেঁচে আছে কিনা মরে গেছে।
রেনু বেগমও সত্যি সত্যি রুহির হাতটা ধরে পালস্ চেক করলো বেঁচে আছে কিনা।তার পর সেও চলে গেলো রুহিকে ওখানেই ফেলে।
শামসুর রহমান শব্দ শুনতে পেয়ে ড্রয়িংরুমে চলে এসেছিলো। আর এসেই মা ছেলের কাহিনী দেখে তব্ধ হয়ে গেলো।
করছো টা কি তোমরা মা ছেলে মিলে বলোতো।
রেনু বেগম স্বামীর কথায় একটু বিরক্ত হয়ে,তোমাকে এসবে নাক গলাতে হবে না,যাও তুমি তোমার কাজে যাও।
শামসুর রহমান ও বুঝলো,এদের বলে লাভ নেই।তাই সে ও ইগনোর করে চলে গেলো।
-আহমেদ ভিলায় সবাই একসাথে বসে সকালের নাস্তা করছিলো,হঠাৎ তৌফিক সাহেব জিসানকে উদ্দেশ্য করে বললো।
তুমি সিলেট কবে যাবে জিসান।
জিসান তার বাবার দিকে একটু প্রশ্নবোধক চোখে তাকালো।এরপর নিজেই জিঙ্গেস করলো,সিলেট!আমি কবে বললাম আমি সিলেট যাবো।
আমি বলিনি তুমি বলেছো,আমিতো জানতে চাইছি।
কিন্তু কোনও কারন ছাড়া আমি সিলেটে কেনোই বা যাবো বাবা।
কারন আছে, তোমার নানা দিলওয়ার চৌধুরী।সে তোমাকে বার বার দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করছে।আমার জানা মতে সে এক বছর ধরে বিছানায় পরে আছে।কখন কি হয়ে যায় বলা যায় না।আমি চাই তুমি একটি বার তার সাথে দেখা করে আসো।তাহলে হয়তো শান্তি মতো একটু মরতে পারবে লোকটি।
যারা আমার মা বেঁচে থাকতে তার সাথে কোনও সম্পর্ক রাখেনি, তাদের সাথে এখন আমার কি সম্পর্ক।কেনো আমাকে খুঁজছে।
আমি কোথায়ও জেতে পারবো না।আর এ ব্যাপারে আর কিছু শুনতেও চাই না।
জিসান আর কিছু না বলে,উপরে চলে গেলো।তৌফিক সাহেব তিশাকে ইশারা করে জিসানকে বুঝাতে বললো।তিশাও তাই জিসানের পিছ পিছ চলে গেলো।
হাটুর উপর ভর দিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে জিসান।আবারও মনে পরে গেলো,কিছু বেদনাদায়ক স্মৃতি।মায়ের মুখটা বার বার চোখের সামনে ভেসে আসছে।চোখে কেনো জানি সব কিছু ঝাপসা দেখছে।
তিশা এসে কাধে হাত রাখার সাথে সাথে জিসান তিশার কোমড়টা শক্ত করে জরিয়ে ধরে।নিরবে যে জিসান কাঁদছে,তার উষ্ণ চোখের জলগুলো বলে দিয়েছে তিশাকে।
তিশা একহাত দিয়ে জিসানের মাথাটা ধরে রেখেছে আরেক হাতে দিয়ে জিসানের পিটে হাত বুলিয়ে জিসানকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।তিশা খুব ভালো করেই বুঝতে পারলো জিসানের নিজের মায়ের কথা মনে পরেছে।তাই তিশাও কিছু বললো না আর।
তিশা আমি ওখানে গেলে নিজেকে কিভাবে সামলাবো,ওই বাড়ীর প্রতিটি কোনায় কোনায় মায়ের অস্থিত্ব বিরাজ করছে।মায়ের স্মৃতি গুলো আকড়ে ধরতে গিয়ে আমি এর মাঝে আবার নিজেকে হারিয়ে ফেলবো নাতো।
আর ও বাড়ীর লোকগুলো,
আমার মায়ের শেষ সময় তারা কেউ ছিলো না।এখন আমাকে ওদের কেনো প্রয়োজন।আমি এদের কাউকে দেখতে চাই না।
তিশা খুব চিন্তায় পরে গিয়েছে,কিভাবে জিসানকে মানাবে।জিসানতো এখন নিজের মাঝেই নেই।কিছুক্ষণ পর তিশা,
শুনেছি আয়শা মা নাকি নানা জানের অনেক আদরে মেয়ে ছিলেন।একটি বার চিন্তা করেন,নানা জানের কতোটা কস্ট হয়েছে আয়েশা মাকে হারিয়ে।
বাবা মায়ের রাগের পেছনেও সন্তানের জন্য থাকে গভীর ভালোবাসা।তখন নানাজান তার জায়গায় ঠিক ছিলেন।সে শুধু তার মেয়ের কথাই চিন্তা করে তার উপর রাগ করেছে।কিন্তু নানাজান যদি জানতো এতে আয়েশা মাকে হারাতে হবে চিরদিনের জন্য,তাহলে হয়তো কখনো রাগ করে থাকতেই পারতো না।
হয়তো নানাজানের ভেতরেও পাহাড় সমান কস্ট জমেছে মায়ের শেষ সময় উনি মায়ের কাছে থাকতে পারেনি বলে।এখন আপনাকে একটি বার নিজ চোখে দেখে নিজের সেই কস্টটা কমাতে চায়।হয়তো এটাই তার শেষ ইচ্ছা হতে পারে।
শুনেছি,ওই বাড়ীতে নাকি আপনার মামারাও থাকে,তাদের ঘরে কোনও ছেলে নেই।তবে আপনার আরো তিনটি ছোট বোন আছে।তাদের মাথায় বড় ভাই হয়ে একবার স্নেহের হাতটি রেখে আশ্বাস দেন,তাদেরও একটা ভাই আছে।
তিশা জিসানের মুখটা দুহাতের তালুতে নিয়ে,মায়ের কথা চিন্তা করেই একবার দেখা করে আসুন।একবার মায়ের সব স্মৃতিগুলো নিজ চোখে দেখে স্পর্শ করুন।মাকে কাছে না পেলেও মাকে অত্যন্ত অনুভব তো করতে পারবেন ওখানে।
জিসান খুব মনেযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনলো,এর পর ডিসাইড নিলো ও যাবে।তবে একা না।
তাহলে কবে যাবেন পানতুমাই গ্রামে।(তিশা)
পানতুমাই!
হুম,পানতুমাই। আপনাদের গ্রামের নাম।
স্ট্রেঞ্জ! এটা আবার কোথায়।আর কি বিদঘুটে নাম।পানতুমাই!
আপনে পানতুমাই চিনেন না।পানতুমাই বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর গ্রাম।ভারত সীমান্ত মেঘালয়ের কাছে এর অবস্থান।পাহাড় ঘেষা আঁকাবাকা রাস্তা দিয়ে জেতে হয় ওখানে।অনেক সুন্দর গ্রামটি।ওখানে গেলে আসতেই মন চাইবে না।
জিসান সন্দেহ দৃস্টিতে তিশার দিকে তাকিয়ে আছে।তুই জানিস কিভাবে এতো কিছু।
বললে রাগ করবেন নাতো।
না,বল।
আবির ভাইয়া গিয়েছিলো উনার ফ্রেন্ডসদের সাথে মেঘালয় দেখতে।তখন উনি পানতুমাই গ্রামেও গিয়েছিলো।ওখানে উনারা অনেক ছবিও তুলেছে।তখন দেখেছি,আসলেই গ্রামটা অনেক সুন্দর।
-নিশি আয়নার সামনে এসে,নিজের পরনের টি শার্টটি কোমড়ের দিকে হালকা উঠিয়ে দেখে এখনো কেমন লালচে হয়ে আছে।
সেদিন পার্টি থেকে আসার পর নিশির খেয়ালি ছিলো না এটার কথা।তবে পরের দিন শাওয়ার নেওয়ার সময়,পানি আর সাবানের কারনে জায়গাটা কেমন চিনচিন করে উঠে।আর তখনি নিশি রুমে এসে চেক করে দেখে তিনটি নকের দাগ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
নিশির তখনি পার্টির সেই লোকটির কথা মনে পরে।
কে সে,তার সাথে আমার কোন জন্মের দুশমনি ছিলো যে আমার কোমড়ে তার নকের দাগ দিয়ে দিলো।
আর তার স্পর্শ গুলো সেটাতো আরো সাংঘাতিক ছিলো।কেনো জানি খুব চেনা চেনা লাগছিলো।এটা কি সত্যিই রায়হান ভাই ছিলো।
এরপর তো পুরো পার্টিতে তাকে আর দেখিনি।কোথায় চলে গিয়েছিলো কে জানে।
ফোনের শব্দে নিশির ধ্যান ভাঙ্গলো।ফোনের স্কিনে নিলার নামটা ভেসে উঠছে।
নিশি জানে কেনো ফোন করেছে,তাই ফোনটা ধরে কিছুক্ষণ কথা বলে,রেডি হতে চলে গেলো।আজ ভার্সিটি জেতে হবে বলে।
রুহি জ্ঞান ফিরে দেখে ,ও যেখানে অজ্ঞান হয়ে পরেছিলো সেখানেই পরে আছে।কেউ ওকে ধরে আর উঠায় নি।
ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে ১০টা বাজে। ও এতোক্ষন ধরে অজ্ঞান হয়ে পরেছিলো,অথচ রায়হান মানবতার খাতিরেও ওকে একবার ধরলো না।নিজেকে খুব অসহায় লাগছে আজ ওর।
রেনু বেগম রুহির সামনে দাঁড়িয়ে,যেখানে সেখানে ঘুমানোর অভ্যাস কবে থেকে হলো তোমার রুহি।আর এভাবে কেউ ঘুমায়।অন্তত একবার বলবে তো।তাহলে জায়গাটা আমি একবার ঝাড়ু দিয়ে দিতাম।
রুহি কিছুটা অবাক রেনু বেগমের আচরনে, এই মহিলার মাথায় কি কোনও সমস্যা আছে,নাকি গোবর ভরা।কিসব আবল তাবল বকছে।(রুহি মনে মনে)
আন্টি আমি ঘুমাইনি,আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম।
আর আমার ঘুম ধরলে আমি এই ফ্লোরে কেনো ঘুমাবো,রুমে চলে যেতাম না।
যত্তসব!
রুহি উঠে রুমে চলে গেলো।
রেনু বেগমও চলে গেলো ভাবতে ,রুহিকে এরপর কি শিক্ষা দেবে।
লন্ডনের এক বিলাশবহুল কেবিনের কাচের টেবিলের সামনে বসে আছে একজন অচেনা লোক।আর তারই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটিকে ইশারা কররা সাথে সাথে সে বলতে শুরু করে___
স্যার আপনার কথামতো আমরা সব খোঁজ খবর নিচ্ছি।মেয়েটির পুরো নাম তিশা রহমান। কিছু দিন আগে বিজনেস টাইকুন মিস্টার জিসান আহমদ এর সাথে ধুমধামে বিয়ে হয়েছে ।
দেশের অনেক ম্যাগাজিনে তাদের ছবি এবং প্রেম কাহিনীও ছাপা হয়েছে।এই হলো তাদের ম্যাগাজিনের পিক।লোকটা টেবিলের উপর ম্যাগাজিন গুলো রেখে দিলো।
অচেনা লোকটি তার হাতে রাখা পাথরের পেপার ওয়েটটি ঘুড়াচ্ছে আর বাজের মতো তীক্ষ্ণ নযরে ম্যাগাজিনে ছাপানো তিশার ছবিটির দিকে তাকিয়ে আছে।
চোয়াল দুটো শক্ত হয়ে যায় ,অচেনা লোকটির।তিশার ছবিটাতে আঙ্গুল রেখে,উফঃ তুমিতো দেখি আগের থেকে আরো বেশি সুন্দর হয়ে গিয়েছো ডার্লিং।
কি ভেবে ছিলে আমাকে এতো সহযে সরিয়ে দিতে পারবে তোমার জীবন থেকে।নো ডিয়ার!খেলাতো জাস্ট শুরু।তোমার উপর আমার ইন্টারেস্ট এখনো শেষ হয়নি।আর হবেও না।
যে কাহিনী তোমাকে দিয়ে শুরু হয়েছে তার শেষও আমি তোমাকে দিয়েই করবো।জাস্ট ওয়েট ডার্লিং।
হা হা হা করে লোকটি বিদঘুট ভাবে হেসে চলছে।আর তার প্রতিধ্বনি গুলো কাচের দেওয়ালে বারি খেয়ে পুনরায় চলে আসছে।
চলবে......
[গল্প দিতে লেট হয়েছে,জানি।কাউকে কস্টও করে বলতে হবে না।গল্পটা গুছিয়ে সামনে বাড়তে একটু সময় তো লাগবেই।শুধু উল্টাপাল্টা লিখলেই তো হবে না।আশা করি রাইটারের সমস্যা বুঝবেন।আর কিছু ভালো কমেন্ট করবেন।
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টতে দেখবেন।ধন্যবাদ ]
আমি নিশিকে বিয়ে করতে পারবো না।রায়হানের মুখে এধরনের কথা শুনে সবাই কিছুটা অবাক হলো।
রায়হান নিশিকে ভালোবাসে সবাই জানে।আর নিশি তো আগ থেকেই রায়হানকে খুব করে চায়।
আর ওদের দুজনের এক হওয়ার পথে যে বাধাটা ছিলো তাও তো এখন আর নেই।তাহলে!
রুহির আসল চেহারাটা সবার সামনে এসে পরেছে।তাই রুহিও বাধ্য হলো রায়হান কে ছাড়তে।বলাচলে জিসান বাধ্য করছে রায়হান কে ছাড়তে।
সমস্যা কি রায়হান, কেনো নিশিকে বিয়ে করতে চাইছিস না।তুইতো নিশিকে ভালোবাসিস বাবা।
তাহলে!
আমি তোর চোখে নিশির জন্য ভালোবাসা আর ওকে হারানোর কষ্ট দেখেছি এ কয়েকদিন।
তাহলে এখন আবার কি হলো।
নিশি দাঁড়িয়ে রায়হানের কথাগুলো শুনছিলো।একটু আগে রায়হানের সাথে রুহির সব সম্পর্ক শেষ হবার কারনে যে খুশিটা মনে উৎপন্ন হয়েছিলো।সে খুশিটা নিমিষে আবার শেষ হয়ে গেলো।
নিশি স্থির দৃষ্টিতে রায়হানের দিকে তাকিয়ে আছে।
রায়হান নিশির দিকে একবার তাকিয়ে জিসানের সামনে এসে দাঁড়ালো। আম সরি ইয়ার।
আমি জানি তুই আমার উপর রাগ করবি।কিন্তু আমি খুব ভেবেই বলছি।
আসলে ভুলটা আমার।নিজের ছোট বোনের ঘরে নযর দেওয়াটা ঠিক হয়নি।আজ আমার কারণেই বিয়ের পর পরই তিশার লাইফে এতো প্রোবলেম শুরু হয়েছে।
আমার আর নিশির সম্পর্ক আমার বোনের জীবনে এফেক্ট করছে।আর আমি চাই না এমন ভবিষ্যৎ এ আবার হোক।
রায়হান এমন কিছুই হবে না,তুই কি আমার উপর ভরসা করিস না।জিসান রায়হান কে আশ্বাস দেওয়ার চেস্টা করছে।
জিসান আমি জানি তুই তিশার হাত কখনোই ছাড়বি না।কিন্তু তুই বুঝতে পারছিস না,আমার আর নিশির বিয়ের পর যদি এমন কোনও ঘটনা ঘটে বা ঝগড়া হয় বা কোনও কারনে নিশি আমার উপর আপসেট হয় তাহলে ভাই হয়ে তোরও এসব ভালো লাগবে না।
আর না চাওয়া সত্যে তিশার সাথে তোরও একটা মনোমালিন্য সৃষ্টি হবে।আর তখন না তুই সইতে পারবি না তিশা।
আর তখন তিশার উপর একটা অভিমান জমা হবে পরিবারের সবার মনে।সম্পর্কের মধ্যেও ফাটল ধরবে।একটি সম্পর্কের জন্য আমি আমার বাকি সম্পর্ক গুলোকে নষ্ট হতে দিতে পারবো না।
ভাইয়া এসব কি বলছিস।এমন কোনও কিছু হবে না।তুমি শুধু শুধু অহেতুক টেনশন করছো।
(তিশা)
রায়হান তিসার গালে হাতটা রেখে,আমার রাগটা যে এ কয়েকদিন নিশি তোর উপর ঝাড়তো এটা কিন্তু আমার অজানা নয় বোন।
আর এটা যে ভবিষ্যৎও হবে না,তারও কোনও গ্যারান্টি নেই।তাই আমি চাই না আমার লাইফের কোনও ঝড় এসে তোকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দেখ।
ভাইয়া প্লিস.......... (তিশা)
রায়হান আর কিছুই বললো না,বের হয়ে গেলো বাসা থেকে।অনেক ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রায়হান। ও জানে এর জন্য আবার নিশি কষ্ট পাবে।কিন্তু রায়হান এবারও নিরুপায়।
আগে ও একজন ভাই পরে কারো প্রমিক।তাই নিশির কথা চিন্তা করার আগে তিশার কথা আগে ভাবতে হবে।
নিশি বুঝতে পারলো রায়হানের এমন করার কারন কি।সেদিন পার্টি শেষ হয়ে বাসায় আসার সময় নিশি তিশার সাথে খুব খারাপ আচরন করেছে।ওটাই হয়তো রায়হান দেখে ফেলেছে।
সত্যি তো আমি বিনা কারনে রায়হান ভাইয়ের সব রাগ তিশার উপর ঝেড়েছি এ কয়েকদিনে।কেনো জানি এই ঘটনার পর তিশাকে সহ্য করতে পারতাম না।রায়হান ভাইয়ের সব রাগ আমার,তিশাকে দেখলে আরো বেড়ে যেতো।
আমি এতোটা নিচ কি করে হলাম।রায়হান ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক হবার আগে, আমার তিশার সাথে একটা ভালো সম্পর্ক ছিলো।ও তো আমার বেস্টি ছিলো।আর আমি ওকেই ভুল বুঝলাম।সত্যি আমি রায়হান ভাইয়ের যোগ্য না।উনি একদম ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে।নিশিও মনে মনে এসব আওড়াতে লাগলো।
ফ্লাশব্যাক
রুহি সংসারের অভাবে অনেকটা হাফিয়ে পরেছে।কথায় বলে না,স্ত্রীর আসল ভালোবাসার প্রকাশ পায় স্বামীর অভাবের দিনে।রুহির ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।
গতো পনেরও দিন সংসারের কাজ একহাতে করতে করতে এমনেই ক্লান্ত, তার উপর খাবারের কস্ট।এসব কিছুতে রুহি অনেকটা ফ্রাস্টেড হয়ে পরেছে।
রুহি ওর পরিবারের সবার ছোট ছিলো বলে,পরিবারের সবার আদর ভালোবাসায় বড় হয়েছে।শখের বসে রান্নাটা মাঝে মধ্যে করতো কিন্তু বাড়ীর এতো কাজ কল্পনায়ও কখনো করেনি।যখন যা চেয়েছে তাই পেয়েছে।কস্ট কি তা জানতোই না।
রায়হানের সংসারে হঠাৎ আসা এই অভাব রুহি হজম করতে পারছে না।সবই তো ঠিক ছিলো।বিয়ের আগে রেনু বেগমের কাছে জানতে পেরেছিলো রায়হান নিজেদের জন্য গাড়ী কিনারও প্লানিং করছে।তার মানে রায়হান ভালোই স্যাটেল করে ফেলেছে নিজেকে।রায়হান কে বিয়ে করলে আমার লাইফও স্যাটেল হয়ে যাবে এ আশা ছিলো রুহির।
কিন্তু রায়হানের সাথে বিয়ে হবার পর রুহির কপালে শুধু নিরাশাই ঝুটেছে।প্রথমত রায়হান কে পেয়েও পেলো না।তার উপর রায়হানের অবহেলা।সাথে ঝুটেছে সংসারের অভাব।
রুহির শ্বাশুরীও শরীর অসুস্থ বলে সারা দিন শুয়ে বসে থাকে।রুহির এখন মনে হচ্ছে এই অভাবী সংসারে এই বাড়ীর মানুষ বিনা বেতনে একটা ঝি পেয়েছে।
এসব কি কম ছিলো।যখন শুনলো রায়হান নাকি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকার সব ছেড়ে ওরা গ্রামের বাড়ী চলে যাবে।এটা শুনার পরই রুহি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো।রুম বন্ধ করে ঘরে বসে আছে আজ দুদিন।
এতে রায়হান বা ওর পরিবারের কোনও মাথা ব্যাথা নেই।তবে হঠাৎ নিজ বাসায় রুহির বাবা মাকে দেখে রায়হান একটু অবাক হলো আজ।
রুহির বাবা মা রায়হান আর ওর মার মুখ দেখেই বুঝতে পারলো তাদের আসার কথা রুহি নিশ্চয়ই বলেনি।
রুহির বাবা মা ড্রয়িংরুমে বসার কিছুক্ষণ পরই রুহিও বের হয়ে আসলো রুম থেকে।ওকে একদম স্বাভাবিক লাগছে,ওকে দেখলে কেউ বুঝাবেই না এই মেয়ে দুদিন না খেয়ে ছিলো।
রুহির বাবা মা আসার কিছুক্ষণ পরই রুহি রায়হানকে উদ্দেশ্য করে বললে।
রায়হান তুমি তোমার বাবা মাকে গ্রামে পাঠিয়ে দেও।আর তুমি আর আমি এখন থেকে আমার আব্বু আম্মুর সাথে আমাদের বাসায় থাকবো।ওখানে তোমার কোনও অসুবিধে হবে না।
রুহির কথায় রায়হান রেগে যায়, আর ইউ মেড!
তুমি ভাবলে কি করে আমি আমার বাবা মাকে ছেড়ে তোমার সাথে তোমাদের বাড়ীতে ঘর জামাই হয়ে থাকবো।আর আংকেল আপনেরাও কি এসব বলতে এসেছেন এখানে।
-রুহির বাবা রায়হানের কথায় মাথা নেড়ে সায় দিলো।আসলে তাদেরও কিছুই করার নেই, রুহি নিজের বাবা মাকেও ব্লাকম্যাল করে এখানে আসতে বাধ্য করেছে।তারা এসে রুহি আর রায়হান কে তাদের সাথে নিয়ে না গেলে আত্মহত্যা করবে রুহি।নিজের মেয়ের জিদের কাছে এবারও নতো হতে হলো তাদের।
রায়হান আমি তোমার মর্জি জানতে চাইনি,আমি আমাদের জন্য যেটা ভালো হবে,সেটাই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি।আর এটাই ফাইনাল।
আমার কথা না মানলে জানোই তো কি হবে।রুহি একটা শয়তানি হাসি দিয়ে।
রায়হান রাগে স্থির দৃষ্টিতে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে। এটাতো হবারি ছিলো।রুহি কেমন মেয়ে রায়হান খুব ভালো করেই জানে। এই মেয়ে কোনও দিনও ভালো হবে না।আসলে ও একটা সাইকো।
হঠাৎ কারো ভারী কন্ঠে সবার দৃষ্টি তার দিকে।
দরজায় দাঁড়িয়ে আছে জিসান।আর জিসানের ঠিক পিছনেই তিশা, নিশি আর জিসানের বাবা মাও দাঁড়িয়ে আছে।
এই সময় মেয়ের শ্বাশুর বাড়ীর সবাইকে একসাথে দেখে তিশার মা একটু আবাক হলো।
বললে না রুহি, তোমার কথা না মানলে কি হবে।
জিসান রুহিকে প্রশ্ন করেই রুমের ভেতরে ডুকে ডাইনিং টেবিল থেকে একটা চেয়ার টেনে এনে রুহির বরাবর বসলো।
রুহি জিসানের কথার জবাব না দিয়ে উল্টো রেগে গেলো,নিশিকে দেখে।এই মেয়ে এখানে কি করে রায়হান। তোমার সাহস কি করে হলো,ওকে এই বাসায় আনার।
রায়হান কিছু বলতে নিবে তার আগেই তিশা জবাব দিলো,ও আমার ননদ আপু।আর এটা আমারও বাড়ী।আমার শ্বাশুর বাড়ীর মানুষের সাথে ভদ্র ভাবে কথা বলো।
রুহি আর রায়হান কে নিশির এখন একদমই সহ্য হয় না।তার উপর রুহির এমন আচরণে,নিশি পিছন থেকে চেঁচিয়ে উঠলো।
ভাইয়া তুমি আমাকে এখানে কেনো এনেছো।আমার এদের নাটক দেখার একদম ইচ্ছে নেই।আমি বাসায় চলে যাচ্ছি।
স্টোপ নিশি!
যেখানে আছিস,চুপচাপ সেখানেই দাঁড়িয়ে থাক।আর একটা কথাও বলবি না।
জিসানের ধমকে নিশিও চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
রায়হান তিশার শ্বাশুর-শ্বাশুরী কে বসতে নিমন্ত্রণ করলো।
তৌফিক সাহেবও তার স্ত্রীকে সাথে নিয়ে বসলো,এটা জানতে কেনো জিসান তাদের এই বাড়ীতে এনেছে।
জিসান আবারও রুহিকে একই কথা জিঙ্গেস করল।
রুহি এবার আরো রেগে গেলো।
কি করবো,সেটা তোমাকে কেনো বলবো জিসান।তোমার গুণ্ডামি অন্য কোথাও দেখাও।আমি তিশা না যে তোমার গন্ডামিকে ভয় পাবো।
আমার তিশার মতো হওয়ার যোগ্যতাও নেই রুহি তোমার।
আরেকটা কথা রায়হান কোথাও যাবে না,তোমার সাথে তো আরো আগে না।সবাই এই বাড়ীতেই থাকবে,তবে তুমি থাকবে না।তোমার বিদায়ের ঘন্টা বেজে গিয়েছে।এখন তুমি বিদায় হও।
কি যা তা বলছো জিসান।আমার মনে হয় বোনের শোকে তুমিও কিছুটা পাগল হয়ে গিয়েছো।
রুহি রায়হানের দিকে তাকিয়ে দাঁত খিটমিট করে, তুমি কিছু বলছো না কেনো রায়হান।আমার রাগ উঠলে পরিণাম কিন্তু ভালো হবে না বলে দিলাম।
তুমি আর কিছুই করতে পারবে না রুহি।
যে বীণ বাজিয়ে রায়হান কে তুমি তোমার ইশারায় নাচাতে সেই বীণ টা এখন আর নেই।বিশ্বাস না হলে চেক করে দেখো।
জিসানের কথায় রুহির সন্দেহ হলো,তাই সাথে সাথে নিজের মোবাইলটা চেক করলো।আর চেক করতে গিয়ে রুহির মাথায় জেনো বাজ পড়লো।ভিডিওটা নেই।রুহি পুরো মোবাইল হন্ন হয়ে খুঁজলো কিন্তু কোনও ভিডিও পেলো না।এটা কি করে সম্ভব। আমার মোবাইলের পাসওয়ার্ড কেউ জানে না।আর বিনা পাসওয়ার্ড ছাড়া ফাইল থেকে ভিডিও ডিলেট করা সম্ভব না।তাহলে!
রুহির রাগে মাথার চুলগুলো ছিঁড়ে ফেলতে মন চাইছে।নিশ্চয়ই এটা জিসানের কাজ।কিছুতো একটা করছে এই গুন্ডটা।
কি হলো রুহি,ভিডিওটা নেই।রায়হান সোফায় আরামে বসেই রুহিকে জিঙ্গেস করলো।
আর রুহিতো রাগে একবার জিসানের দিকে একবার রায়হানের দিকে তাকাচ্ছে।পারে না দুজনকেই গিলে খেয়ে ফেলুক।
রায়হান, জিসান আর রুহির মধ্যে কি নিয়ে কথা হচ্ছে তা ড্রয়িংরুম এ বসা কেউও বুঝতে পারছে না।তাই তৌফিক সাহেব নিজের উৎসুকতা ধরে রাখতে পারলো না।জিঙ্গেস করেই ফেললো কি চলছে এসব।
এতেদিন পর রায়হান মুখ খুললো।আংকেল আমি বলছি।আসলে রুহি আমাকে একটা ভিডিও দেখিয়ে ব্লাকম্যাল করেছে ওকে বিয়ে করতে।
এই কথা শুনে উপস্থিত সবাই সহ রুহির বাবা মাও শোকড হলো।রুহির বাবা,এসব কি বলছো রায়হান।আমরা তো জানি তোমরা একে অপরকে ভালোবেসে বিয়ে করছো।তাহলে!
সরি আংকেল আমি আপনার মেয়েকে কোনও দিনও ভালোবাসিনি।আর বাসবো ও না।একটা মেয়ে হয়ে যে অন্য মেয়েকে সম্মান করেনা।সে আমার কেনো কারও ভালোবাসারি যোগ্য না।
-মানে!মানে কি?আর কার ভিডিও দেখিয়ে তোমাকে ব্লাকম্যাল করেছে ভাইয়া।(তিশা)
তিশার এমন কথায় রায়হান নিশ্চুপ হয়ে গেলো।নিজের বোনের কাছে বলতেও একথা লজ্জা করছে রায়হানের।
জিসান তিশার এককাধে হাত রেখে,তোর ভিডিও তিশা।
-আ আআমার ভিডিও।মানে বুঝলাম না।(তিশা)
জিসানও কিছুক্ষণ চুপ থেকে,বলা শুরু করলো।বিয়ের আগে এই বাড়ীতে যখন তুই ছিলি।হয়তো কোন একদিন রুহিকে রুমে রেখে তুই ওয়াসরুমে শাওয়ার করতে গিয়েছিলি।আর রুহি তখন ওর মোবাইলের ক্যামেরা দিয়ে তা ভিডিও করে ফেলে।যাতে সুযোগ বুঝে রায়হান কে ওটা দিয়ে ব্লাকম্যাল করতে পারে।
তিশা এ কথা শুনার পর নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারেনা।প্রচণ্ড ভেঙ্গে পরে,একটা মেয়ে এতোটা খারাপ কি করে হতে পারে।তিশা বুঝতে পারে না।এটা যদি দূর্ঘটনা বসতো ভাইরাল হয়ে যেতো।বা অন্য কারো কাছে ভিডিওটা চলে যেতো।তখন কি হতো।ভাবতেই তিশা কেঁপে উঠলো।
অতিরিক্ত টেনশনে তিশা মাথা ঘুড়ে পরে যেতে নিলে জিসানের আগেই নিশি ধরে ফেলে।তিশার প্রতি সব রাগ জেনো নিমিষেই দূর হয়ে যায় এসব জানার পর নিশির।
কারো কিছু বলার আগেই তিশার মা রেনু, রুহির গালে ঠাস করে কয়েকটা চড় মারে।উপস্থিত সবাই কিছুটা অবাক হলেও কেউ কিছু বলেনা।এটা হবারি কথা!
একজন মা নিজের মেয়ের সম্মান নিয়ে খেলতে আসা মানুষটিকে সামনে পেলে উত্তেজিত হওয়াটা স্বাভাবিক।শামসুর রহমান নিজের স্ত্রী কে শান্ত করার চেস্টা করে।
-রুহির বাবা মা লজ্জায় মাথা নত করে বসে আছে।মেয়ে জেদি তা জানতো।কিন্তু মেয়ে যে এতোটা নিচে নেমে যাবে তা হয়তো স্বপ্নেও ভাবে নি তারা।
রুহি এখনো অনুতপ্ত নয় তার কর্মের জন্য,তাই সবার উদ্দেশ্যে বলে,আমি রায়হান কে পাওয়ার জন্য আর ওর বউ হবার জন্য এতোটা নিচে নেমেছি।আর আমি আমার উদ্দেশ্যে সফলও হয়েছি।তাই এখন এই ভিডিও থাকুক বা না থাকুক তাতে কিছু আসে যায় না।রায়হান আমার শুধু আমার এখন।পাগলের মতো চিল্লিয়ে।
রুহি তোমাকে একটা যাদু দেখাই,দেখবে।জিসান বলছে রুহিকে।
রুহি নিশ্চুপ।
হঠাৎ দুজন ছেলে আর একজন টুপি পড়া দাড়িমোচে ভরপুর হুজুর টাইপ একজন ভদ্রলোক প্রবেশ করলো তিশাদের ড্রয়িংরুমে।
রুহি এদের দেখেই চিনে ফেলেছে।কারন এই টুপি পড়া লোকটাই রুহি আর রায়হানের বিয়ে পড়িয়েছে।আর তার পাশের দুটো ছেলে সাক্ষী হিসেবে সই দিয়েছিলো।এই দুজন রায়হানের বন্ধু।কিন্তু এরা এখানে কি করে,তা বুঝতে পারছে না।
পরক্ষনে রুহির চোখগুলো মনে হয় এখনি বেড়িয়ে পড়বে,এটা দেখে।
টুপি পরা ভদ্রলোকটি তার টুপি,নকল দাড়ি, মোচ খুলে সম্পূর্ণ গেটআপ চেন্জ করে দাঁড়িয়ে আছে।
রুহি রায়হানের দিকে তাকিয়ে দেখে রায়হান মুচকি মুচকি হাসছে।
রুহির তাকানো দেখে,রায়হান নিজেই বলে উঠে,কি হলো রুহি।শোকড!
তুমি ভাবলে কি করে তোমার মতো মেয়েকে আমি বিয়ে করবো।তুমি যখন বার বার বিয়ের জন্য ব্লাকম্যাল করা শুরু করলে তখন আমি সত্যিই খুব ভেজালের মধ্যে পরে গিয়েছিলাম।বুঝতে পারছিলাম না কি করবো।কিভাবে তোমার থেকে ভিডিও গুলো নিয়ে ডিলেট করবো।
আর ভিডিওটা কি শুধু তোমার মোবাইলে আছে,নাকি অন্য কোথাও এর কপি রেখেছো সব না জেনে উত্তেজিত হয়ে কিছুই করা যাবে না।খুবই চিন্তায় পরে গিয়েছিলাম।
কিছুই বুঝতে পারছিলাম না কি করবো।তবে এর জন্য যে সময়ের প্রয়োজন এতোটুকু বুঝতে পেরেছি ।
আর তোমাকে চোখে চোখে রাখারও।
তুমি যতোই কাছে থাকবে,ভিডিওটা ডিলেট করতে ওতোই ইজি হবে।যেহেতু জিসান তখন বিডিতে ছিলো না,তাই সব আমাকেই করতে হয়।আমি আমার ক্লোজ ফ্রেন্ডসদের সাথে মিলে তোমার বিয়ে করার ইচ্ছাটা পূরন করি।তবে আমরা নাটক ভেবে,আর তুমি সত্য ভেবে বিয়েটা করে ফেলো।
তিশার কথা চিন্তা করে আমি জিসানকেও এই ভেজালে ঝরাতে চাইনি।মাত্রই তো কয়দিন হলো ওদের বিয়ে হয়েছে।আর বিয়ের পরেই এতো ভেজালে ঘিরে গেলো ওদের জীবন।
কিন্তু জিসান থেকে বেশিদিন লুকাতেও পারলাম না।কিছুুদিন আগে জিসান সব শুনে প্রচণ্ড রেগে যায়।ভাগ্য ভালো রুহি তোমার, জিসানের সামনে ছিলে না,তা না হলে ও তোমাকে সেদিনই মাটিতে পুতে ফেলতো।
এরপর আমাকে তেমন কিছুই করতে হয়নি,জাস্ট শুধু তোমার সাথে চাকরী যাওয়া,সংসারের অভাব নিয়ে নাটক করা ছাড়া।
আমি তোমাকে এসবে ব্যস্ত রেখেছি,আর জিসান তার কাজ চালিয়ে গিয়েছে।
সবার প্রথমে আমরা জানতে পারি ভিডিওর কোনও এক্সট্রা কপি তুমি করোনি।
তোমার মাথায় হয়তো প্রশ্ন ঘুড়ছে কিভাবে?
তাহলে শুনো,সেদিন যখন তুমি তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড টায়রার সাথে রেস্টুরেন্ট এ দেখা করতে গিয়েছিলে।তোমার ঠিক পিছনের টেবিলে আমাদের লোক ছিলো,যার কাজই ছিলো তোমাকে ফোলও করা।আর তোমাদের মাঝে কি নিয়ে কথাবর্তা হয় সব রেকর্ড করা।
আমরা সেদিনই সব জানতে পারি। তার মানে আমাদের টার্গেট এখন তোমার হাতের মোবাইল।আমরা খুব সাবধানে তোমার মোবাইল এক্সচেঞ্জ করে ফেলি আমাদের মোবাইলের সাথে।আর জিসানের পারসোনাল হেকার্স তোমার মোবাইলের সব সিস্টেম হ্যাক করে ডিলেট করে দেয় আমাদের সামনে, সাথে ভিডিওটাও।
তার মানে হলো রুহি, আমাদের বিয়ে হয়নি,আর
এখন তোমার কাছে এমন কিছুই নেই যা দ্বারা আমার উপর হুকুম চালাবে।কি?বুঝলে কিছু।
রুহি তেড়ে গিয়ে রায়হানের কলার ধরে চিৎকার করে বলতে থাকে,তুমি এটা করতে পারো না রায়হান।এতো বড় ধোঁকা কিভাবে দিলে।
রায়হান রুহির হাতটা নিজের কলার থেকে ছাড়িয়ে।তুমি যা করেছো,আমিও তা তোমাকে ফিরত দিয়েছি।আর কিছুই না।সো গ্যাম ইজ ওভার।
তোমার কাছে এখন দুটো রাস্তা আছে।নিজ ইচ্ছায় চলে যাও,না হলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবো।তোমার বাবা মার কথা চিন্তা করে তোমাকে এখনো আমি পুলিশে দিই নাই।
এর পর রুহিকে এক প্রকার জোড় করেই ওর বাবা মা না চাওয়া সত্যেও নিজের সাথে নিয়ে যায়।
দুপরিবার জেনো এখন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।এতো দিন সবার মনেই কিছু চাপা কস্ট ছিলো,যা কেউ কাউকে বলতে পারেনি।সবাই খুশি অবশেষে এটা জেনে।রায়হান রুহিকে বিয়ে করেনি।তার মানে এখন নিশি আর রায়হানের বিয়ে নিয়ে কোনও সমস্যা নেই।
কিন্তু তখনি রায়হান বিয়ের জন্য না বলে চলে যায়।
চলবে.......
[হ্যালো পাঠক কেমন আছেন।ধন্যবাদ আমাকে সময় দেওয়ার জন্য।এখন আসি গল্পে,রায়হানকে নিয়ে কোনও বাজে মন্তব্য করবেন না।আজকের পর্ব পরে আপনাদের মনে যে প্রশ্নগুলো তৈরি হয়েছে তা নেক্সট পার্টএ পেয়ে যাবেন।তবে আমি কোনও অতিরিক্ত কিছুই লিখি নাই।যা বাস্তব তাই লিখেছি।রায়হান ভাই হয়ে নিজের কর্তব্য টা পালন করছে শুধু।এখন জিসানের পালা......।দেখা যাক আমাদের হিরো কি করে।]
জিসান একহাত দিয়ে তিশার আঙ্গুলগুলো নিজের আঙ্গুলগুলোর মাঝে নিয়ে খেলছে।আরেক হাতে তিশাকে বুকের সাথে জরিয়ে ধরে আধো শুয়ে আছে।জিসানের পুরো ধ্যান এখন তিশার দিকে,আজ অনেক দিন পর সব টেনশন ভুলে প্রিয়তমাকে কাছে পেতে মন চাইছে।
কিন্তু তিশা জিসানের সব ইচ্ছায় এক বালতি পানি ঢেলে সে কখন ধরে ননস্টোপ বেজে চলছে।আসলে আজকের ঘটনায় তিশার সব কিছু জানার কিউরিসিটি আরো বেড়ে গিয়েছে।মাথায় হাজারো প্রশ্ন জমা হয়েছে অথচ জিসান কোনও প্রশ্নের জবাব না দেওয়ায় তিশার মেঝাঝ অনেকটা খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে এখন।
জিসান বুঝতে পারছে তিশার প্রশ্নের ভাণ্ডার খালি হবে না আজ।কিন্তু জিসানও ত্যারা।সে আজ জবাব দেওয়ার মুডে নেই তো নেই।সে এখন অন্য মুডে আছে।
তাই হঠাৎ ই তিশার দুহাত বিছানায় চেপে ধরে গলায় মুখ ডুবালো।
জিসানের এহেম কান্ডে তিশা খানিকটা বিরক্ত হলো।এতো টেনশনের মাঝে কারো এসব করার চিন্তা কি করে হতে পারে তিশা বুঝতে পারছে না।জিসানকে বার বার সরানোর চেস্টা করছে।
উফঃজিসান!
কি করছেন?আমার ভীষণ টেনশন হচ্ছে এখন কি হবে।
জিসান তিশার ঘাড়ে কিস করতে করতে বললো,এখন আদর হবে।তুইতো করিস না,কিন্তু আমাকে তো করতে দে।
তিশা আরে কিছু বলতে নিবে তার আগেই জিসান তিশার ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে শুশশশশশ চুপ!
আর কোনও কথা না।আমাদের ভালোবাসার মাঝে অন্য কারো কথা একদম না।
কিন্তু হঠাৎ তিশার কি হলো কে জানে,ও কিছু একটা চিন্তা করে মুহুর্তেই জিসানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ফেললো।
জিসান তিশার এহেম কান্ডে অনেকটা রেগে গেলো।কিছু বলবে তার আগেই তিশা নিজের কাপড়টা ঠিক করে জিসানকে উদ্দেশ্য করে বললো,শুনুন
আমার মনে হয় আজ নিশিকে একা ছেড়ে ভুল করেছি।আমাদের বাসা থেকে আসার পরই নিশি আজ খুব অন্য রকম আচরণ করেছে।আমি একটু দেখে আসি ও ঠিক আছে কিনা।
তিশা যেতে নিলে জিসান হাতটা ধরে ফেলে,ওও জান,তুই একটু বেশিই ভাবছিস। একটু সময়দে ওদের। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।
কিন্তু তিশা কিছুতেই জিসানের কথা মানতে পারলো না।তাই জিসানকে বুঝিয়ে নিশির রুমের দিকে চলে গেলো।
প্রায় ১০ মিনিট ধরে তিশা নিশিকে বাহির থেকে ডাকছে,অথচ নিশির কোনও সারা শব্দ নেই।এবার তিশা ভয় পেয়ে গেলো।জিসানকে ডাকতে যাবে,তার আগেই জিসানও এসে হাজির।
কি হলো,তুই এখনো এখানে কি করিস চল আমার সাথে।তিশার হাতটা ধরে।
জিসান,প্লিজ দেখুন না কতোক্ষন ধরে আমি নিশিকে ডাকছি কিন্তু নিশির কোনও সারা পাওয়া যাচ্ছে না ভেতর থেকে।আমার ভীষন ভয় করছে।
এবার জিসানও টেনশনে পরে গেলো।নিশিতো এমন করে না কখনো। তাহলে!
জিসানও ডাকতে লাগলো নিশিকে,কিন্তু কোনও সারা পেলো না।
জিসান আর তিশার চিল্লাচিল্লিতে বাড়ীর সবাই এসে পড়লো।সবাই ডাকছে নিশিকে।
অবশেষে জিসান ও তাওহিদ মিলে দরজা ভেঙ্গে ফেললো।আর সবাই রুমে ডুকে যা দেখলো তা দেখার মতো অবস্থায় কেউ ছিলো না।
নিশি ব্লেড দিয়ে নিজের বাম হাতের রগ কেটে ফেলেছে,আর তা থেকে অনেক ব্লাডও বের হয়েছে।নিশি শরীর এমনেই দূর্বলতা ছিলো,আর ব্লাড যাওয়ায় নিশি জ্ঞান হারিয়ে নিচে পরে আছে।
রাবেয়া বেগম মেয়ের এমন অবস্থা দেখে ফ্লোরেই বসে পড়লো,তাওহিদ আর জিসান গিয়ে দৌঁড়ে নিশিকে ধরলো।
তাওহিদ তৎক্ষনিক চিকিৎসা শুরু করে দেয়।বাড়ীতে সব সময় প্রয়োজনীয় সব কিছুই তাওহিদ রেখে দেয়।তাই নিশির ট্রিটমেন্ট বাসায়ই করতে পারে।
বেশিক্ষণ হয়নি,তাই এই যাত্রায় বেঁচে গিয়েছে।কিন্তু জ্ঞান এখনো ফিরেনি নিশির।
প্রায় দুঘন্টা পর নিশির জ্ঞান ফিরেছে।নিশি চোখ খুলে সবাইকে নিজের ঘরে দেখতে পায়।
নিশি জানে ওকে এখন অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে।কিন্তু এদের কি করে বুঝাবো,
ভালোবাসায় একবার হেরে,বাঁচার ইচ্ছা থাকলেও।দ্বিতীয়বার হারার পর আর নেই।
কেনো যে আমাকে বাঁচালো আমার চলে যাওয়াই ঠিক ছিলো।
কিন্তু আশ্চর্য কেউ কিছুই বললো না।হঠাৎ জিসান এসে নিশির হাত ধরে টেনে বাহিরে দিকে নিয়ে যেতে লাগলো।
কোথায়,কেনো কেউ জানে না।
সবাই পেছন থেকে অনেক ডাকলো কিন্তু কারো কথা শোনার প্রয়োজন মনে করলো না জিসান।নিশিকে নিয়ে গাড়ীতে বসাল।নিশিও এখন ভাইয়ের এহেম কান্ডে কিছুটা ভয় পেতে লাগলো।
কি করতে চাইছে ভাইয়া।রেগে আছে নাকি নাই।কিছুই বুঝা যাচ্ছে না।নিশির ভাবনার ছেদ ঘটলো গাড়ী হঠাৎ থেমে যাওয়ায়।কোথায় এসেছে তা নিশি দেখার আগেই জিসান হাত ধরে টেনে, নিশিকে গাড়ী থেকে বের করে একটি বাড়ীর ভেতরে নিয়ে গেলো।
কলিংবেল বাজানোর কিছুক্ষন পরই রায়হান দরজা খুলে। এতো রাতে জিসানকে দেখে একটু অবাক হলো।
ভ্রুটা কিঞ্চিত কুঁচকিয়ে,জিসান তুই, এই সময়।সব ঠিক আছে তো।
ঠিক এসময় তিশার বাবা মাও ড্রয়িংরুমে এসে জিসানকে দেখে যতোটা না অবাক হয় তার থেকে বেশি হয় নিশিকে দেখে।
রায়হান ওকে তো চিনিস।আমার বোন।যাকে উনিশটা বছর কতো আদর যত্নে বড় করলাম।আজ সেই বোন তার দুদিনের ভালোবাসার জন্য আমাদের উনিশ বছরের ভালোবাসাকে পায়ে ঠেলে দিয়ে আত্মহত্যা করার চেস্টা করেছে।
তার মনে কি ওর কাছে আমদের কোনও ইম্পোরটেন্ট নেই তাইতো।
আমাদের জন্য যেহেতু ও বাঁচতেই পারবে না।তাহলে আমরা ওকে দিয়ে কি করবো।ওকেও আমাদের প্রয়োজন নেই।
রেখে গেলাম আমি এখানে।রাখতে মন চাইলে রাখ,না হলে তুইও বিদায় করে দিস।গুড নাইট।
জিসান নিশিকে ওখানে রেখেই চলে গেলো।নিশি এখনো পুরো শোকড এর মধ্যে আছে। এটা কি সত্যিই সম্ভব,ভাই আমাকে এভাবে ফেলে চলে গেলো।নিশি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে এখন কি করবে কোথায় যাবে।যে আমাকে চায় না তার কাছে অত্যন্ত করুনা হয়ে থাকতে চায় না নিশি।
রায়হান নিশির হাতের ব্যান্ডিজটার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।রায়হান ভাবতেই পারেনি নিশি এমন কিছু করে বসবে।যদি ওর কিছু হয়ে যেতো।ভাবতেই রায়হান চোখদুটো বন্ধ করে ফেললো।
নিশির হাতটা ধরে রেনু ভেতরে নিয়ে গেলো।নিশিও এই মুহুর্তে কিছুই বলতে পাড়লো না।তবে মনে মনে চিন্তা করে নিলো,ভোর হলেই চলে যাবে কোথাও।এদের সবার থেকে দূরে।থাকবে না কারো কাছে।সব বেঈমান, স্বার্থপর। কেউ আমাকে ভালোবাসে না।
জিসান বাসায় এসে দেখে সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আছে।তাদের সবার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে সবাই গভীর চিন্তা রোগে ভুক্ত এখন।
কিন্তু জিসান তাদের কেয়ার না করেই তিশাকে ইশারায় ডেকে নিজের রুমে দিকে চললো।
পেছন দিয়ে রাবেয়া বেগমের উৎকিত কণ্ঠ ভেসে আসলো জিসানের কানে।
জিসান নিশি কোথায়।তুই একা যে।ওকে কোথায় রেখে এসেছিস বাবা।
জিসান সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে মাকে বললো,মা তোমার মেয়ে যেখানে থাকার কথা সেখানেই আছে।চিন্তা করো না।গিয়ে ঘুমাও।কাল সকাল হলেই চলে আসবে।
জিসানের মা ছেলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে,তৌফিক সাহেব বুঝতে পেরে রাবেয়াকে শান্ত হতে বললো।কিছুক্ষণ পর যে যার রুমে চলে গেলো।
জিসান গাড়ীর চাবিটা রেখে পিছনে ঘুড়েই দেখে তিশা কেমন সন্দেহ চোখে তাকিয়ে আছে।
কি হলো?আমাকে এভাবে দেখার কি আছে।
এই সত্য করে বলেন তো নিশিকে কোথায় রেখে এসেছেন।(তিশা)
জিসান নিজের পান্জাবীটা খুলে সোফায় রেখে বিছানায় একটু আড়াম করে বসে,তোর কি মনে হয়।
দেখুন কথা ঘুরাবেন না।(তিশা)
ওকে,কাছে আস আগে,তারপর বলি।
না,একদম না।আপনার কি যে মোতলব আমি খুব ভালো করেই বুঝি।যা বলার ওখান থেকেই বলেন।
আর এমন সিরিয়াস সময়ও আপনার মাথায় এমন উদ্ভট চিন্তা আসে কি করে।
আরে,আমি আবার কি করলাম।তুই আমাকে কেনো রাগ দেখাস।
দেখ নিশি হয়তো ড্রিপরেশনে ছিলো তাই এমন একটা পদক্ষেপ নিয়ে নিয়েছে।কিন্তু আমার মাথায় এটাই আসছে না ও এমন একটা ভোতা ব্লেড দিয়ে হাত কাটতে গেলো কেনো।আমার মনে হয় কি ও রায়হানকে একটা ধাক্কা দেওয়ার জন্য এমন একটা ঘটনা গঠিয়েছে।আত্মহত্যা করার জন্য না।
তিশা এবার জিসানের কাছে এসে, সত্যি!
জিসান তিশাকে নিজের কোলে বসিয়ে কোমড়টা জরিয়ে ধরে,
আমার মনে হয় এমনি।সকালে তোর ভাই আমার বোনকে একটা শিক্ষা দেওয়ার জন্য, নিশিকে বিয়ে করতে পারবে না বলে এমন একটা ড্রামা করলো।আর এখন নিশিও রায়হানের সাথে তাই করেছে।দুটো পুরোই নাটক বাজ।
তাই দুটোকে এক সাথে করা দরকার ছিলো।আরে ভাই নিজেদের ঝামেলা নিজেরা মিটা।
শুধু শুধু ওদের দুজনের কারনে আমার মুডেরও বারটা বাজিয়ে দিয়েছে।
মানে,রায়হান ভাই কেনো নিশির সাথে এমন ড্রামা করেছে,আপনে জানেন।
জিসান তিশার কাধে একটা কিস দিয়ে,দেখ নিশি যে রায়হানের উপর রাগ গুলো তোর উপর ঝাড়তো এটা আমাদের সবারি জানা।ভবিষ্যতে নিশি জাতে এমন আর না করে,তারই একটা ছোট ওয়ার্নিং দেওয়ার জন্যই রায়হান নিশিকে বিয়ে করবে না বলেছে।
আপনি কি করে জানেন, ভাইয়া বলেছে।
জান, এতো প্রশ্ন কিভাবে করিস।এই অধম স্বামীর উপরও একটু মায়া কর।সারা দিন অফিসের এতো প্যারা সামলিয়ে বাসায় আসি একটু রিলেক্স হতে।
তিশাকে একটু শক্ত করে জরিয়ে,আর তোর কাছে এলে সারা দিনের ক্লান্তি আমার নিমিষেই জেনো দূর হয়ে যায়।
তিশাকে নিজের দিকে গুরিয়ে,সারাদিন পর,শুধু রাতেই তোকে একটু কাছে পাই। আর আমি চাই এসময় টুকু শুধু আমরা আমাদের কথা বলি।আমাদের ভালোবাসার কথা বলি।সারা দুনিয়ার কি হয়েছে তা নিয়ে পরেও আলোচনা করা যাবে।
আর তোকে তো আগেই বলেছি,আমি বেঁচে থাকতে তোকে এসব নিয়ে একদম ভাবতে হবে না।আমি সব ঠিক করে দেবো।কোনও ঝামেলা তোর কাছে আসতে হলে,আগে আমাকে পার করতে হবে।তাই বলছি বউ আপনে নিজেকে একটু শান্ত রাখুন,আর আমাকেও একটু শান্তি দেন।
তাই নাকি,আহারে কতো কষ্ট আমার স্বামীর মনে,তিশা জিসানের গাল দুটো টেনে বলে।
আরে কি করছিস,আমি কি ছোট বাচ্চানি,আমার গাল টানিস।কই আমি মনে করলাম,আমাকে চুমো দিয়ে আমার কষ্টগুলো দূর করবি,তা না করে.....।
উঁহু, আমার বয়েই গেছে উনাকে আদর করতে।(তিশা)
তাই নাকি,দাঁড়া তোকে তো আজ.......জিসান তিশাকে আবারো আবদ্ধ করে ফেললো নিজের মাঝে।একে অপরকে ভালোবেসে আরো একটি রাত ওদের কেটে গেলো।
নিশি তিশার রুমে বিছানায় হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসে আছে। শুধু বসে আছে বললে ভুল হবে,ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদছে। ওর ধারণা ওকে কেউ ভালোবাসে না।কারো কাছে ওর প্রয়োজন নেই।
হঠাৎ মনে হলো ওর পাশে কেউ বসে আছে।ঘাড় গুড়িয়ে দেখে,সত্যি রায়হান ঠিক ওর পাশে বসে আছে।তবে রায়হানের দৃষ্টি যে এখনো নিশির কাটা হাতটির উপর তা নিশি বুঝে গেলে।
রায়হানের বুকে মাথা রেখে খুব কাঁদতে মন চাইছে নিশির।কিন্তু রায়হানতো এখন ওকে চায় না।কবেই বা নিশিকে চাইছে।তাই একটু অভিমানে রায়হান থেকে একটু দূরে সরে বসতে নিলে, রায়হান হঠাৎ নিশির কোমড় ধরে নিজের কোলে বসালো।
কিন্তু নিশি সরে যাওয়ার জন্য চেস্টা করছে,কারন এমন একটা মানুষের কোলে কেনো বসবে,যে তাকে ভালোই বাসে না।
রায়হান নিশির হাত দুটো ধরে,হাত কেনো কেটেছিস। জানিস মন তো চাইছে,তোকে কামড়িয়ে লাল করে ফেলি।কিন্তু তোর ভাই জানে,আমি অত্যন্ত ভদ্র ছেলে তাই নিজের রাগটাকে সংযোত করলাম।
জাহান্নামে জান আপনারা সব,আমার কাউকে লাগবে না।আর আমার শরীর, আমি হাত কাটি নাকি পা কাটি সেটা আমার ব্যাপার দরকার পড়লে এই মাথাটাই কেটে ফেল......নিশি আর কিছুই বলতে পারলো না।
সাথে সাথে নিশির ওষ্ঠগুলো নিজের ওষ্ঠদ্বয়ের মধ্যে নিয়ে নিলো রায়হান ।
রায়হানের এহেম আচরনে নিশি বরফের মতো জমে গেলো।এর আগে রায়হান কখনো এমন কিছু করেনি নিশির ধারণা অনুযায়ী।তাই নিশি বুঝতে পারছে না এই মুহুর্তে কি করা উচিৎ।
কিন্তু রায়হানের কোনও দিকে কোনও খেয়াল নেই।সে তো মোত্ত আজ তার ভালোবাসার মানুষের মাঝে।নিজের মাঝে দাবিয়ে রাখা, নিশির প্রতি ওর ভালোবাসা গুলো আজ প্রকাশ পেয়ে গেলো।রায়হান পারলো না আজ নিজেকে আটকাতে।নিশির আত্মহত্যা করার কথা শুনে ভীষণ ভয় পেয়ে নিশিকে কাছে টেনে নিয়েছে।পারবে না রায়হান নিশিকে হারাতে।নিশিকে হারিয়ে বাঁচবে কি করে।
কিছুক্ষণ পর রায়হান নিশিকে ছেড়ে দিয়ে কপালে কপাল লাগালিয়ে বললো,
নিশি.....খুবই সফ্ট ভয়েজে।
আই লাভ ইউ সুইটহার্ট।
অনেক ভালোবাসি তোকে,পারবো না ছাড়তে তোকে।বউ হবি আমার।লক্ষী বউ।
নিশি জেনো বিশ্বাসই করতে পারছে না।রায়হান অবশেষে ওকে আই লাভ ইউ বলেছে।
নিশির সব স্বপ্ন জেনো মুহুর্তেই পূরন হয়ে গেলো।নিশিও সব রাগ অভিমান দূরে ফেলে,রায়হানের বুকে ঝাপিয়ে পড়লো।
রায়হানের বুকে মাথা রেখেই কাঁদতে লাগলো।
রায়হান ও নিশিকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।
রায়হান জানে এই কান্না কস্টের না,বরং কিছু পাওয়ার।
চলবে....।
আহমেদ বাড়ী আজ নতুন আমেজে মেতে আছে।পুরো বাড়ীটি সিম্পল এর মধ্যে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।কাল থেকে নিকট আত্নীয় স্বজন এসে বাড়ীটিতে ভিড় জমিয়েছে।
রাবেয়া বেগমও ব্যস্ত হয়ে পড়েছে অতীতিদের আপ্যায়নে।একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা।আশা ছিলো অনেক ধুমধামে মেয়েকে বিয়ে দিবে।
কিন্তু রায়হান এসব চায় না।ঘরোয়া ভাবেই বিয়েটা সেরে ফেলতে চায়।
'নিশির আত্মহত্যার পর রায়হান আর কোনও রিস্ক নিতে রাজি না।ওর নিজের প্রাণটা লুকিয়ে আছে এই মেয়েটার মধ্যে,কিন্তু এই মেয়েটা যে কখন আবার কি করে বসে আল্লাহই জানে।তবে এই মেয়েটিকে ছাড়া যে রায়হান নিশ্বাস নেওয়ার কথা ভাবতে পারে না।তাই নিজের জন্য হলেও এই মেয়েকে যতো তারাতারি সম্ভব নিজের করে ফেলা।যাতে কেউ ওদের মাঝে আর আসতে না পারে,আর ওর পাখিটি জাতে আর উড়াল দিতেও না পারে।'
তবে এই বিয়েতে আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে কেউ কেউ যে খুশি না,তা কিছু মানুষের মুখ দেখেই বুঝে গেলেন রাবেয়া।কিন্তু এতে তার কিছু যায় আসে না।
ধন-দৌলত দিয়ে উনি কখনো কাউকে যাচাই করেন নি।তাইতো ছেলে সাধারণ ঘরের মেয়ে পছন্দ করায় কোনও আপত্তি ছিলো না তার।
আর রায়হান, তাকে তো সেই ছোট থেকে দেখে এসেছে।ধন সম্পদ কম হলেও ছেলেটি যে কোনও হীরার চেয়ে কম না।আর এমন একটি হীরাই খুঁজছিলো রাবেয়া নিজের মেয়ের জন্য।আর আজ পেয়েও গেলো।
সকাল থেকে তিশা ব্যস্ত,একমাত্র ননদের বিয়ে বলে কথা।হিসেবে একমাত্র ভাইয়েরও বিয়ে।তাইতো কাল সারা দিন নিজের বাড়ীর সব কিছু গুছিয়ে দিয়ে, আজ আবার শ্বশুর বাড়ীর দায়িত্বও পালন করছে।একটু কস্ট হলেও দুবাড়ীই সামলাচ্ছে খুব সুন্দর করে।
তবে এসবে কস্ট না হলেও কিছু আত্মীয় স্বজনের খোঁচা মারা কথাগুলো কেমন জেনো সুই এর মতো বিধছে তিশার গায়ে।তবুও নিজেকে এই মুহুর্তে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে।কারন একটাই জিসান।
জানতে পারলে বিয়ে বাড়ীতে হুলুস্থুল লাগিয়ে দেবে এই লোকটি।
তিশা রেডি হচ্ছে,কারন ওকে এখন আবার যেতে হবে ভাইকে হলুদ ছোঁয়াতে।আর সেই হলুদ আবার নিশির জন্যও নিয়ে আসতে হবে।একদিনে সব আয়োজন হওয়ায় একটু বেশিই পেরেশানিতে পরতে হয়েছে ওকে।
হঠাৎ জিসান পেছন দিয়ে জড়িয়ে ধরলো তিশাকে।
তিশা একটু বিরক্ত হয়ে--উফ জিসান ছাড়ুন তো।আমাকে রেডি হতে দিন,এমনেই লেট হয়ে গিয়েছে।
জিসান তিশাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে,নিজের সাথে চেপে ধরলো।
মিসেস তিশা।আপনে হয়তো নিজের এই স্বামীটাকে ভুলে গিয়েছেন।তাইতো দেখছি কাল থেকে কেমন এভোয়েড করছেন।সমস্যা কি।ভ্রু একটা উঠিয়ে।
আরে আমি কোথায় এভোয়েড করছি।বিয়ে বাড়ী,কতো কাজ থাকে জানেন।
ব্যস্ততার কারনে হয়তো আপনার এমন লাগছে।আর যাই হোক আপনার সব অপবাদ পরে শুনবো এখন আমাকে রেডি হতে দিন,ভাইয়া নিশ্চয়ই আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
ওকে, এবারের জন্য ছেড়ে দিচ্ছি।বাট ঘুষ দিতে হবে।
ঘুষ! কিসের ঘুষ।তিশা একটু চিল্লিয়ে।
সেটা তুই ভেবে নে,এমন কিছু যা পেলে খুশিতে আমি ছেড়ে দেবো তোকে।
তিশা কিছুক্ষণ মুচড়া মুচড়ি করেও যখন ছুটতে পারলো না।তখন ক্লান্ত হয়ে জিসানের দিকে অসহায় চোখে তাকালো।
কিন্তু জিসানের সে দিকে কোনও ইন্টেরেস্ট নেই।সে তো নিচের দিকে তাকিয়ো ভাবছে তিশা কি করবে।
হঠাৎ তিশা জিসানে মুখটা দুহাত দিয়ে ধরে দুগালে দুটো কিস করে দিলো।
প্লি জ---এবারতো ছাড়ুন।
জিসানও একটু মুচকি হেসে তিশার কপালে একটা আদর করে ছেড়ে দিলো।
আমি নিচে গাড়ীতে অপেক্ষা করছি তোর জন্য তারাতারি আস।
আপনে যাবেন আমার সাথে।(তিশা)
জিসান যেতে যেতে তিশাকে বললো,তুই হয়তো ভুলে গিয়েছিস আজ আমার জিগারীর গায়ে হলুদ।আর আমি ওকে হলুদ ছোঁয়াব না, এতো হতেই পারে না।
তিশা একটু মুচকি হেসে তারাতারি রেডি হয়ে জিসানের সাথে রওনা দিলো।
রায়হান সাদা একটা সেন্ড গ্যান্জী আর সাদা লুঙ্গী পরে পিড়িতে বসে আছে।অপেক্ষা তার ছোট বোনের।বোনের আগে কেউ হলুদ লাগাবার পারমিশন পাইনি এখনো।
তিশা এসেই দেখে এ অবস্থা, তাই তারাতারি ভাইয়ের কাছে এসে এক কানে ধরে সরি বললো আগে অপেক্ষা করাবার জন্য।
এর পর তিশা ও জিসান মিলে এক সাথে রায়হান কে হলুদ ছোঁয়ালো।সেই হলুদের কিছু পিক তুলে গোপনে নিজের হবু ভাবি মানে নিশিকেও পাঠিয়ে দিলো তিশা।
এর পর রায়হানের ছোঁয়া হলুদ থেকে অর্ধেক হলুদ নিয়ে আবার আহমেদ ভিলায় ছুটলো তিশা।
নিশিকেও রায়হানের বাসা থেকে আসা হলুদ একে একে সবাই দিয়ে দিলো।ব্যাচারী নিশি হলুদে পুরো হলুদ পরী হয়ে গেলো।আর রায়হান ভিডিওতে বসে বসে সব দেখছে আর হাসছে।যা তিশাই করেছে,কারণ রায়হানই আসার আগে বোনের কানে কানে নিশির হলুদের সময় ভিডিও কল দিতে বলে দিয়ে ছিলো।
বিয়ের কাজ শুরু হবে আসরের নামাযের পর।এরি মধ্যে নিশিকে মেহেদি দিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে নিতে বললো সবাই।
আসরের নামাযের পর পরই রায়হান ওর পুরো পরিবার এবং কয়েকজন নিকট আত্মীয়স্বজন নিয়ে এসে পড়লো তার প্রিয়তমাকে নিতে।
এতোদিন রায়হান এই বাড়ীতে দুটো পরিচয়ে আসতো।প্রথমত জিসানের বন্ধু হয়ে,পরে তিশার ভাই হয়ে।ফাইনালি আজ এই বাড়ীর একমাত্র মেয়ের জামাই হয়ে বাড়ীতে প্রবেশ করলো।তাই এবার রায়হানের খাতিরও আগের থেকে বেড়ে গেলো।
যারা বিয়েটা মানতে পারছিলো না তারাও রায়হানের আপ্যায়ন নিয়েও ব্যস্ত হয়ে পড়লো মেয়ে বাড়ী বলে কথা।
অবশেষে রায়হান ও নিশির বিয়েটা হয়ে গেলো।আজ থেকে রায়হানও হয়ে গেলো জিসানের বোনের বর।
নিশিকে বিদায় দিয়ে যে যার রুমে চলে গেলো।
কিছু আত্মীয় চলে গেলো,আর যারা দূরের তারা কাল সকালে চলে যাবে।
তিশাও রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।তিশা রায়হানের সাথে যেতে চেয়েছিলো,কিন্তু রায়হান মানা করে দিলো।কারন সারাদিন খুব ধবল গিয়েছে বোনটির উপর,তা বোনের চেহারা দেখেই বুঝে গিয়েছে।
তার উপর নিশির বিদায়ের কারনে জিসান আজ খুব আপসেট থাকবে,তাই এই মুহুর্তে তিশার জিসানের পাশে থাকা প্রয়োজন মনে করলো রায়হান।
তিশা ডিভাইন এর কাউচে শুয়ে আছে।জিসান এখনো আসেনি।
তাওহিদ জিসান মিলে মায়ের কাছে বসে আছে।একমাত্র মেয়ে চলে যাওয়ায় মা প্রচণ্ড আপসেট তাইতো মাকে সান্তনা দিতে দুভাই চলে গেলো।
ক্লান্তিতে কখন চোখ লেগে এসেছে বুঝতেই পারলাম না।হঠাৎ মনে হলো কেউ আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে আছে।ঘুমের রেশ কাটিয়ে উঠতে পারছি না।তবুও চোখ খুলে যা ভেবেছি তাই।জিসান আমাকে জরিয়ে ধরে শুয়ে আছে।
লোকটি অদ্ভুত!
আর অদ্ভুত তার ভালোবাসা।নিজে পুড়ে ছাড়খার হয়ে যাবে তবুও তার রেশ আমার ধারের কাছেও আসতে দিবে না।আমাকে কাউচের থেকে নিয়ে এসে বিছানায় শুয়ে দিয়েছে,অথচ আমার ঘুম জাতে নস্ট না হয় তাই ডাকও দিলো না।
খুব চিৎকার করে বলতে মন চায় জিসান,আপনে আমার নিশ্বাসে মিশে গিয়েছেন।
এই দেহে প্রাণ যতোদিন থাকবে,রক্তের শেষ বিন্দু পর্যন্ত আমি শুধু আপনাকে ভালোবাসবো।বিধাতার কাছে প্রার্থনা করবো নিতে হলে আগে আমাকে নিয়ে যাক।কারন আমি যে সইতে পারবো না আপনাকে হারানোর বেদনা।
নিশি ও রায়হান বালকানিতে বসে আছে।রাতের আকাশে উঠা এক ফালি চাঁদটা জেনো আজ একটু বেশিই আলোকিত করে তুলেছে পৃথীবিটাকে।চাঁদটিকে ঘিরে তারাগুলো মিটিমিটি জ্বলে চাঁদকে আরো সুন্দর আর মনোমুগ্ধকর করে তুলছে।
রায়হানও আজ তার নিজের চাঁদটিকে এক হাতে জরিয়ে ধরলো।মনের ভেতরে এক অদ্ভুত শান্তি অনুভোব করছে আজ।
নিশিও রায়হানের বুকে মাথা রেখে রায়হান কে দুহাত দিয়ে জরিয়ে ধরে আছে।চোখদুটো বন্ধ করে রায়হানের হ্রদপিন্ডের ধুপধুপ শব্দগুলো গুনছে।
হঠাৎ রায়হান নিশির মাথায় নিজের উষ্ণ ঠোঁট দিয়ে ভালোবাসার এক পরশ দিয়ে দিলো।
নিশিও চোখ বন্ধ করেই তা অনুভোব করলো।নিশির মনটাও আজ শান্তি বিরাজ করছে,কিছু পাওয়ার,কিছু অনুভূতির।
কিছুক্ষণ পর নিশি রায়হান কে এক অদ্ভুত প্রশ্ন করলো।
আচ্ছা আপনার কাছে
"ভালোবাসার মানে কি"।
রায়হান কিছুক্ষন নিশির দিকে তাকিয়ে থেকে, দৃষ্ট সরিয়ে রাতের তারাময় আকাশের দিকে তাকালো।
ভালোবাসা মানে এক অসাধারণ ফিলিং,যাকে ধরতে চাইলে ধরা যায় না,আবার ছাড়তে চাইলে ছাড়াও যায় না।কারো কাছে ধোয়াশা,কারো কাছে নেশা।
ভালোবাসার মানুষটির কপালে হালকা করে একটা চুম্বন দিয়ে,তাকে আই লাভ ইউ বলা এটি হলো পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর তিনটি ওয়ার্ড।অনেকে তার প্রিয়জনের মুখে এই তিনটি ওয়ার্ড শুনার জন্য জন্মজন্মান্তরও অপেক্ষা করতে রাজি হয়ে পরে।কারণ একটাই "ভালোবাসা"
আর যখন সেই মানুষটি কোনও কারনে অভিমান করে,তার ছোট ছেট অভিমান গুলো পরম যত্নে ভাঙ্গনোর নামই ভালোবাসা।
তাকে একদিন না দেখলে যদি মনটা উদাসীন হয়ে পরে,তাকে একটি বার দেখার জন্য মনটা যদি ছটফট করে,তাকে কাছে না পাওয়ার বেদনা যদি আকড়ে ধরে।তাহলে বুঝে নিবি এসবই সেই মানুষটির প্রতি নিজের ভালোবাসা।
তবে মাঝে মাঝে দূরে থাকার নামও ভালোবাসা হয়,মাঝে মাঝে প্রিয়জনটির মুখের হাসির জন্য তার ভালোর জন্য দূরে চলে যাওয়ার নামও ভালোবাসা।ভালোবাসার সংঙ্গা একেক জনের কাছে একেক রকম।কিন্তু অনুভূতিগুলো সবার একই।
হঠাৎ রায়হান নিশিকে কোলে তুলে নিলো,আর আস্থে আস্থে রুমের ভেতর প্রবেশ করতে লাগলো।
আজ আমিও পেতে চাই,পুরো নয় একটু খানি ভালোবাসতে চাই।
আরো কাছ থেকে দেখতে চাই তোকে,
বহুদিনের লুকানো ইচ্ছাগুলো পূরণ করতে চাই।
মনের সাধ মিটিয়ে তোকে আজ কাছে পেতে চাই।
জেগে থাকতে চাই আজ এই পূর্ণিমা রাতে,
আর ভালোবেসে আজ তোকে পূর্ণ করতে চাই।
হবি কি আমার।
একটুনা।
পুরোটা আমি তোকে চাই।
রায়হানের না বলা কথাগুলে ভালোবাসার ছন্দে নিশিকে বুঝিয়ে দিলো,আর নিশিও বুঝতে পেরে লজ্জায় রায়হানের বুকে মুখ লুকালো।
আজকের রাতে ওদের ভালোবাসা ও পূর্ণতা পেলো অবশেষে ।
দুদিন পর..
সিলেটের বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে আছে জিসান এবং তিশার পুরো পরিবার।জিসান পকেট থেকে ফোনটা বের করে ফোন দেওয়ার আগেই দুটো প্রাইভেট কার এসে দাঁড়ালো ওদের সামনে।
একজন অল্প বয়সের ছেলে গাড়ী থেকে হন্তদন্ত হয়ে নেমেই জিসানের সামনে দাঁড়ালো।
-জিসান স্যার।(ছেলেটি)
জিসান ভ্রুটা কুঁচকিয়ে মাথা নাড়লো।
-সাথে সাথে ছেলেটি পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে নিলে,জিসান হাত ধরে ছেলেটিকে দাঁড় করায়।আরে কি করছো।
-স্যার আপনারে দেখার খুব ইচ্ছা ছিলো।বড় সাহেবের মুখে আপনার এতো কথা শুনেছি যে।আমি তো নামায পইড়া দোয়াও করছি,আপনে জাতে একবার হইলেও এইহানে আহেন।
বড় সাহেব!বড় সাহেব আবার কে?জিসান ছেলেটিকে জিঙ্গেস করলো।
-বড় সাহেব,আরে আপনার নানাজান।দিলওয়ার চৌধুরী। সবাই এক নামে চেনে উনারে।আর আমি হলাম উনার চোখ, কান।মানে উনিতো বিছানা থেকে উঠতে পারেনা তাই সব কিছুর খবর উনি আমার থেকে নেন।আমাকে খুবই বিশ্বাস করে সাহেবে।
ওও,আচ্ছা তোমার নাম কি?
-আমার নাম মোকলেস ভাইজান।
মোকলেস!নিশি বলেই হেসে উঠলো।
কিন্তু জিসানের চোখ রাঙ্গানো দেখে ব্যাচারীর হাসিটা বন্ধ হয়ে গেলো।এবং রায়হানের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।
কারো নাম নিয়ে ফাইজলামি বা হাসাহাসি কোনটাই করতে নেই।জিসান কথাটা গম্ভীর কন্ঠেই বললো নিশিকে।
রায়হান চোখের ইশারায় সরি বলতে বললে,নিশিও মাথা নেড়ে সরি বলে,মোকলেস কে।
-ও কিছু না ভাইজান, আমার নামটাই এমন।না চাইতেও হাসি এসে পরে।আপনে হুধাহুধি আপাজান কে বইকেন না তো।আপাজান আমি কিছুই মনে করি নাই।
এটা ঠিক না মোকলেস। যাই হোক শুনো আর কখনো পায়ে ধরে সালাম করবে না।আমাদের ধর্মে পায়ে ধরে সালাম করার কোনও রীতি নেই।মুখের সালামই যথেষ্ট। মনে থাকবে।
-জে ভাইজান।থাকবে।
এবার চলো,সবাই গাড়ীতে উঠি।(জিসান)
দুটো মাইকোর মধ্যে একটাতে তিশা ও জিসানের বাবা মা সাথে তাওহিদ ও তানজিলাও বসেছে তারিনকে সাথে নিয়ে।
আরেক টাতে জিসান, তিশা,রায়হান ও নিশি বসেছে। আর সামনে ড্রাইভার এর সাথে মোকলেস বসে আছে।
গাড়ীটি শো শো করে ছুটে চলছে পানতুমাই গ্রামের পথে।এয়ারপোর্ট রোড দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় চোখে পরে সবার লাক্কাতুরা ও মালনিছরা চা বাগান।
পানতুমাই যাওয়ার জন্য আগে যেতে হবে গোয়াইনঘাটের সালুটিকরে।এই রাস্তা ধরেই সালুটিকর হয়ে দেড় ঘন্টা সময় লাগবে হাদারপার বাজার যেতে।
তবে এই দেড় ঘন্টায় প্রকৃতি দেখিয়ে দেবে তার অপরুপ সৌন্দর্য্য।
কারন হাদারপার বাজারে যাওয়ার আগেই মেঘালয়ে দেওয়ালের ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকা উঁচু উঁচু সারিবদ্ধ পাহাড় গুলোও স্বাগতম জানাতে থাকবে সবাইকে।গাড়ীতে বসেই দেখতে পাওয়া যাবে,পাহারের বুক চিড়ে বয়ে আসা ঝর্না গুলো। যা প্রতিনিয়ত হাতছানি দিয়ে ডাকে নিজের কাছে আসতে।
দূর থেকে আসা শাঁ শাঁ শব্দ শুভ্র জলের এক নতুন অনুভূতিতে নিয়ে যাবে।দেখলে মনে হয়, জলধারাগুলো জেনো লেপ্টে আছে সবুজ পাহারের গায়ে।
পাহারী আঁকাবাঁকা পথ পাড়ি দিয়ে গায়ের মেঠো পথ,বাশ বাগান,হাটু জলের নদী পার হয়ে আসে পতাপ্পুর গ্রাম।আর এই গ্রামের পরের গ্রামই পানতুমাই গ্রাম।
পানতুমাই চোখ জুরানো একটি গ্রাম।একে অনেকে পাংথুমাই ও বলে।
প্রকৃতির এই অপরুপ সৌন্দর্য্য দেখতে দেখতে কখন যে ওরা চৌধুরী ভিলার সামনে এসে পড়লো টেরই পেলো না।
চৌধুরী ভিলা,বাড়ীটি অনেকটা পুরাতন জমিদার বাড়ীর মতো তবে বিশাল জায়গা জুরে। হয়তো কিছুুদিন আগে বাড়ীটিতে নতুন রং করা হয়েছে,যার কারণে বাতাসে নতুন রং এর ঘ্রাণটাও নাকে এসে সাড়া দিচ্ছে।
মায়ের জন্মস্থানে এই প্রথম জিসানের পদধূলি পড়লো।এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে মনে,যা আগে কখনো হয়নি।
জিসানের আসার কথা শুনে বাড়ীর সবাই বাহিরে এসে পরে।হঠাৎ দুজন মধ্যবয়স্ক লোক এসে জিসানকে জরিয়ে ধরে।তারা যে কাঁদছে তা জিসান স্পষ্ট বুঝতে পারে।তবে এই মুহুর্তে জিসানের কি বলা উচিৎ তাই জানে না।
তৌফিক সাহেব এসে জিসানকে বয়স্ক ব্যক্তি দুজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
জিসান উনি হলো তোমার বড় মামা রুহুল আমিন চৌধুরী,আর ছোট মামা রশিদ চৌধুরী।
আর ভাইজান এ হলো আপনাদের ছেলে জিসান।
আমিন এবং রশিদ চৌধুরী তৌফিক সাহেবকেও জরিয়ে ধরে ধন্যবাদ জানায় জিসানকে এখানে নিয়ে আসার জন্য।
দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা তিন জন মেয়েকে রশিদ চৌধুরী ইশারা করলো সামনে আসতে।
মেয়ে তিনটিও দৌঁড়ে সামনে আসলো,মনে হয় ওরা এটার জন্যই অপেক্ষা করছিলো।
আমিন চৌধুরী জিসানকে সামনে দাঁড় করিয়ে মেয়েগুলোকে বলে,
ভাই চাই, ভাই চাই বলে এতো বছর মাথাটাতো খারাপ করে ফেলেছিলে।
এই দেখো ভাই এসে পরেছে।এই হলো তোমাদের ভাই জিসান।
আর জিসান ও সবার বড় ঝর্ণা আমার মেয়ে। এবার অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ছে।আর এই যে সেম চেহারা দুজনকে দেখছো।এরা হলো তোমার ছোট মামার মেয়ে মুনিয়া এবং ফাতেমা।ওরা এবার ইন্টারে উঠেছে।মুনিয়া ও ফাতেমা যমজ বোন।
ঝর্ণা, মুমিয়া ও ফাতেমা জিসানের দিকে তাকিয়ে আছে,আসলে ওরা যে জিসানকে দেখে কতোটা খুশি তা ওদের মুখই বলে দিচ্ছে।
মুনিয়া আর ফাতেমা তো জিসান কে বলেই দিলো,
ভাই কান ইউ হাগ ইউ।প্লিজ।
বোনদের এ ধরনের আবদার শুনে জিসান কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো।সাথে বোনদের জন্য কস্টও হলো।সাথে সাথে জিসান হাত বাড়ালো বোনদের দিকে।মুনিয়া ফাতেমা খুশি হয়ে জিসানকে জরিয়ে ধরলো।
সবার ছোট ফাতেমা তো কেঁদেই দিলো।এতো লেট করে কেনো এসেছো ভাই।জানো তোমার জন্য কতো অপেক্ষা করছি।
জিসান বোনের মাথায় হাত দিয়ে,সরি সিস্টার। ভুল হয়ে গিয়েছে।যদি জানতাম আমার এমন সুইট লিটল বোনেরা এখানে আমার জন্য অপেক্ষা করছে তাহলে আরও আগেই চলে আসতাম।
মুনিয়া ঝর্নাকে বলছে,আপু এখন আমাদেরও একটা ভাই আছে,আমরাও সবাইকে বলবো।আমাদের মাথাও একটা ছায়া আছে।
জিসান মুনিয়ার মাথায় হাত দিয়ে,একটা না তোমরা একসাথে দুটো ভাই পেয়েছো আজ।
জিসান তাওহিদকে ইশারা করলো সামনে আসতে।তাওহিদ কে দেখিয়ে ঝর্ণা, মুনিয়া ও ফাতেমাকে বললো।এই দেখো এ হলো আমার বড় ভাই,তাহলে তো তোমাদের ভাই তাই না।
ফাতেমা খুশি হয়ে তাওহিদের একহাত জরিয়ে ধরে বললো,ওয়াও আমরা এক সাথে দুটো ভাই পেয়ে গেলাম।
ঠিক যেমন টুথপেস্ট এর সাথে ব্রাশ ফ্রি পাওয়া যায়।
জিসান ও তাওহিদ একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে জোড়ে হেসে দিলো।
জিসান দিস এই টু মাচ।নিশি কি কম ছিলো।সাথে আল্লাহ আরেক জনকে পাঠিয়ে দিলো নিশির সাথি হিসেবে।
নিশি দুভাইয়ের কথা শুনে চেঁচিয়ে সামনে আসলো, কি বললে ভাই,আর এসব বলার মনে কি।
জিসান ফাতেমাকে ইশারা করে নিশিকে দেখিয়ে বললো,ও হলো আমার বোন আর তোমার সাথী।ছোটবেলায় নিশিও এমন আজগুবি আজগুবি কথা বলতো।ঠিক তোমার মতো।
পরিবারের সবাই দূর থেকেই ভাইবোনের খুনশুটি দেখে মনে মনেই এক শান্তি অনুভোব করছে এতোবছর পর।।
জিসান রাবেয়া বেগমের হাতটি ধরে বাড়ীর ভেতরে প্রবেশ করলো।রাবেয়া বেগম ছেলের এমন কান্ডে খুশিতে চোখে জল এসে পরলো।
রাবেয়াকে আয়েশা নিজের জায়গাটা দিয়েছিলো বলে বোনের প্রতি রাগের সাথে সাথে রাবেয়ার প্রতিও এই বাড়ীর মানুষ যে কিছুটা অভিমান জমে আছে তা কেউ না বললেও জিসান নিজ থেকে বুঝে নিয়েছে।
কিন্তু রাবেয়া কখনো কোনও কিছুর প্রভাব জিসানের উপর পড়তে দেয়নি।
তাই আজ মাকে সাথে নিয়েই এই বাড়ীর দরজায় দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো।আর সবাইকে বুঝিয়ে দিলো,জিসান তার মায়ের কোনও প্রকার অপমান কিন্তু সহ্য করবে না।
জিসানের মুখের না বলা কথাগুলো সবাই বুঝে নিলো।তাই সদরে জিসানসহ পুরো পরিবারকে চৌধুরী বাড়ীর সাবাই গ্রহণ করে নিলো।
জিসান এখন বসে আছে দিলওয়ার চৌধুরীর রুমে।নানাজানের সাথে খুব স্বাভাবিক ভাবেই কথা বললো।
দিলওয়ার চৌধুরীও তৌফিক আহমেদ ও রাবেয়া বেগমের কাছে ক্ষমা চাইলো।আর চির কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো রাবেয়ার কাছে।এমন মা পাওয়া সত্যি বিরল,যে কিনা নিজের সতীনের ছেলেকে এতো আদর যত্নে বড় করে তুলেছে।
জিসান না জানলেও দিলওয়ার চৌধুরী তার মেয়ের একমাত্র নিশানির খোঁজখবর সব সময় নিয়েছে।আর এ ও জানতে পেরেছে জিসানের প্রতি রাবেয়ার অবিরাম ভালোবাসার কথা।তাই এতো বছর দিলওয়ার চৌধুরী জিসানের সামনে আসেনি।
উনি চায়নি মা ছেলের এই ভালোবাসায় কোনও ব্যাঘাত ঘটুক।
কিন্তু জীবনের শেষ পর্যায় নিজের নাতিকে একবার দেখার ইচ্ছা জেগেছে তার মনে।আর সব থেকে বড় কথা উনি চায় তার নাতিও একবার এসে তার মায়ের সুন্দর স্মৃতিগুলো অনুভোব করুক।
জিসান তিশাকে ইশারা করলে তিশাও দিলওয়ার চৌধুরীর সামনে এসে সালাম করে।দিলওয়ার তিশাকে ইশারা করে নিজের কাছে এসে বসতে।তিশাও গিয়ে নানাজানের পাশে গিয়ে বসে পরে।
দিলওয়ার তিশার হাতটা ধরে,ধন্যবাদ ডিয়ার।আমি জানি আমার নাতির এখানে আসার পিছনে তোমারই অবদান আছে।
আমি কিন্তু সবই জানি তোমাদের সম্পর্কে।আমার নাতিটা নাকি তোমায় বলতে পাগল।তো এই পাগলের সাথে সংসার করো কিভাবে।রাগ কিন্তু একদম ওর মায়ের মতো।
তিশা একবার আড় চোখে জিসানের দিকে তাকিয়ে দেখে,জিসান নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি আসছে।
তিশাও একটু হেসে নানাজানকে বললো,
পাগলের ডাক্তার হয়ে আছি,আর ভালো করার চেস্টা করছি।যদি ভালো না হয় তাহলে এই হ্যান্ডশাম বুড়োটা তো আছে, এসে পরবো আপনার কাছে।নানাজান কে এক চোখ টিপ মেরে জিসানের দিকে তাকালো।তিশার কথায় নানাজান হাসতে লাগলো।কিন্তু!
জিসানতো চোখ দিয়ে ইশারা করে তিশাকে হুমকি দিচ্ছে…আচ্ছা এই প্লানিং। একবার পেয়ে নি একা,তারপর তোকে বুঝাবো আমার থেকে দূরে যাওয়ার মঝা।
তিশাও মনে মনে বলে কি সাংঘাতিক লোক নিজের নানাজান কেই হিংসা করে।
জিসান আবার ইশারা করে বলে আমি তোকে কারো সাথে শেয়ার করতে পারবো না।
নো মিনস নো।
চলবে...।
সিলেটের জাফলং দেশের প্রকৃতির কন্যা হিসেবে পরিচিত। খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জাফলাং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলাভুমি।
তাই আজ পুরো পরিবার মিলে ডিসাইড করলো সবাই আজ জাফলং ঘুড়তে যাবে।সাথে পিয়াইন নদী ভ্রমণও করবে।এমনেই আমাদের দেশে নদী ভ্রমণ মানে হচ্ছে রাস্তা ঘাটে ঘোড়া খোঁজার মতো।
সবাই এক সাথে জাফলং এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।জাফলং যাওয়ার পথে বেশ উঁচু উঁচু পাহাড় চোখে পরলো।যতোই আমরা কাছাকাছি চলে আসলাম বেশ কিছু ঝর্ণা ও চোখে পড়লো,যা বেশির ভাগই ভারত সীমান্তে অবস্থিত।
তবে দূর থেকে দেখলে মনে হয় সবুজ পাহাড়ের গায়ে কেউ সাদা শাড়ী বিছিয়ে রেখেছে।চোখ জুরানো শুভ্রতা জেনো ছেয়ে আছে সবুজের বুকে যার থেকে চোখ সরানো বড় দায়।
-প্রায় ৩০মিনিট এর মধ্যে আমরা সবাই জাফলং এ এসে পড়লাম।
এখানে এসে আমরা জীবনে প্রথম পানের বাগান দেখলাম।আমি আর নিশিতো এসব দেখে দাড়ুন এক্সাইডমেন্ট এ আছি।আসলে শহরে উঁচু উঁচু দলানগুলো ছাড়াতো কিছুই দেখা যায় না।তাই এখানে প্রকৃতির ছোট ছোট সৌন্দর্যও আমাদের মনোমুগ্ধ করে তুলছে।
পিছনে ঘুড়ে জিসানকে ডাকতে নিলে দেখি কি সুন্দর আমার ভাই আর জিসান নিজেদের মধ্যে গল্পে মশগুল ।
আমি উনাদের সামনে গিয়ে,কি ব্যাপার সবাই ওখানে কি সুন্দর এন্জয় করছে আর আপনারা এখানে কি করছেন।
আমার কথার পেক্ষিতে রায়হান ভাই যা বললো তাতে আমার কান দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে রাগে।
-তোরা যা এন্জয় কর,আমাদের দিয়ে কি করবি।আর এছাড়া সব বড়রা ওখানে তাই আমরা এখানে একটু বিড়ি ফুঁকতে এসেছি।
তাছাড়া এখানে দেখার মতো আমাদের কিছুই নেই।আমি আর জিসান এখানে বহুতবার এসেছি।
রায়হান ভাইয়ের কথা শুনে,আমি জিসানের দিকে তাকালাম।
শালা এক হাতে বিড়ি ফুঁকছে আর অন্যহাতে মোবাইল টিপছে।উনারে আমি এই বালছাল ছাড়তে বলেছি,অথচ উনার হয়তো আমার কোনও কথা মনেই নেই।আর এখন আমি যে একজন জলজন্তু মানুষ উনার সামনে দাঁড়িয়ে আছি তার কোনও খবরই নেই।তোকে তো আমি পরে মঝা বুঝাবো।মনে মনে ভেবেই আমিও রাগ করে চলে আসলাম ওখান থেকে।
পিয়াইন নদীর তীরে স্থরে স্থরে বিছানো পাথরের স্তূপ জাফলং কে করেছে আরো আকর্ষণীয়।নদীতে রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য পাথর।এখানে জল স্বচ্ছ আর অগভীর।হাটু থেকে কোমড় সমান।পানিতে নেমে কিছুটা আগালেই পায়ের নিচে মাটি নয় অন্য কিছুর ছোয়া পেলাম।
এখানে গুড়ো গুরো পাতরকুচি নুড়ির মতো আকারের পাথরগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।কোনওটা সাদা,কোনটা ফ্যাকাশে,কোনটা আবার কালো।আমি আর নিশি কিছু সুন্দর সুন্দর পাথর কুড়িয়েও নিয়ে নিলাম এই ফাঁকে।
এর পর ইন্জিন চালিত একটা নৌকায় আমরা সবাই উঠে পড়লাম।অনেকক্ষণ ঘুড়ে,আমরা এপারে চলে আসলাম।এখানে কিছু অস্থায়ী খাবারে দোকান আছে।আমি,নিশি,ঝর্ণাপু,মুনিয়া ও ফাতেমা ঝালমুড়ি নিয়ে খেতে লাগলাম।
এদিক দিয়ে তাওহিদ ভাই তারিন কে আইসক্রিম খাওয়াতে ব্যস্ত আর ভাবি মেয়ের কাপড় চোপড় নস্ট নিয়ে চিন্তিত।কি সুন্দর দৃশ্য একদম পার্ফেক্ট ফ্যামিলি।
এর ফাঁকে ফাঁকে জিসান কয়েকবার আমাকে ডেকেছে,তবে আমি পাত্তা দিলাম না।আমার থেকে বিড়ি তোর কাছে বেশি ইম্পোরটেন্ট তাই না,তো বিড়ি ফুক গিয়ে ফাজিল।
আর নিশি সেতো রায়হান ভাইকে ছাড়া বিন্দাস ঘুড়তাছে এন্জয় করছে।ওর এমন আচরণে ব্যাচারা ভাই আমার মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে।
বড়রা যখন চা খেতে ব্যস্ত তখন রায়হান ভাই এই ফাকে নিশিকে নিয়ে ফুরৎ হয়ে গেলো।ঝালমুড়ির শোকে কাতর নিশি বার বার পিছন গুড়ে তাকাচ্ছে।আর বলছে আমার ঝালমুড়ি!
-এখানে সামনেই একটা জায়গা আছে যেখানে পাথরের বুকে প্রিয়জনদের নামটি লিখিয়ে নেওয়া যায়।তাই রায়হান নিশিকে সেখানেই নিয়ে এসেছে।নিজেদের নাম এখানে লিখে যাবে আজ ওরা।পছন্দ মতো একটা পাথর খুঁজে দুজন দুজনের নাম লিখে নামটি চিরস্থায়ী করে দিলো আজ পাথরের বুকে।
অনেকক্ষণ ঘুড়ে ফিরে আমরা ক্লান্ত হয়ে বাড়ী ফিরলাম।বাড়ীতে ফিরেও আমি জিসানকে এভোয়েড করতে লাগলাম।বুঝুক এবার,কাউকে এভোয়েড করলে কেমন লাগে।রাতে আমরা সবাই এক সাথেই ডিনার করলাম।শরীর খুব ক্লান্ত তবুও মামীদের কাজে কিছু সাহায্য করলাম,তারা মানা করলো অনেকবার।কিন্তু নিজের বিবেক বলতেও কিছু আছে।আর ভাবীও নেই,তারিনকে ঘুম পাড়াতে চলে যেতে হয়েছে।
প্লান করলাম আজ আমরা মেয়েরা একসাথে ঘুমাবো। আর লেট নাইট জেগে গল্প করবো।যেমন কথা তেমন কাজ।নিশি,আমি,ঝর্ণাপু,মুনিয়া,ফাতেমা একসাথে বসে গল্পে মেতে উঠলাম আমরা।
-রায়হান করিডোর এর বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাগে ফুসফুস করছে।ঠিক তখনি জিসান এসে,ওই আমার বউ কে দেখেছিস।
-রায়হান একটু বিরক্তে হয়ে,তোর বউ আমার বউকে নিয়ে পার্টি করছে।
মানে!জিসান ভ্রুটা কুঁচকিয়ে।
-মানে হলো,তোর বোনেরা আর আমার বোন মিলে প্লানিং করছে উনারা আজ একসাথে থাকবে।আর আমাদের আজ একা একা ঘুমাতে বলে গিয়েছে।আরে তোর তো বিয়ে হয়েছে বেশ কিছুদিন হলো।কিন্তু আমার তো এক সপ্তাহও হয়নি ইয়ার।
আর এখনই বউকে নিয়ে চলে গেলো।আমাকে জ্বালাতে বেশ ভালোই মজা লাগছে এদের জানিস।
জিসান রায়হানের দিকে তাকিয়ে,তোর বোনটা আজ একটু বেশিই উড়ছে,বুঝলি।সকাল থেকে ওর নাটক দেখছি।সারাদিন এভোয়েড করে চলছে।একবার হাতে পাই তার পর বুঝাচ্ছি।
-রায়হান ফোনে নিশিকে ম্যাসেজ করতে করতে বলছে।আগে পেয়েনে।আজ রাত আর কেউ ধরা দেবে না।
জিসান দাঁতেদাঁত কটমটিয়ে চলে গেলো।তিশাকে দেখে নিবে আজ ও।
নিশি,তিশা,ঝর্ণা,মুনিয়া,ফাতেমা পাঁচজন মিলে তুমুল গল্পে মেতেছে।মুনিয়া আর ফাতেমার স্কুলের থাকাকালীন কি কি দুষ্টুমি করেছে এসব শুনে সবাই হাসিতে গড়াগড়ি করছে।মুনিয়া ও ফাতমা মেয়ে দুটো খুব চঞ্চল।এমন এমন কথা বলে যে না হেসে পারা যায় না।তবে ঝর্ণাপু একটু গম্ভীর প্রকৃতির। খুব কম কথা বলে।তবে না বলে পারছি না,ঝর্ণাপু দেখতে খুব সুন্দর।ঠিক পাহাড়ি ঝর্ণার মতো শুভ্রতা জেনো তার সারা মুখে বিরাজ করছে।
জিসান ফাতেমা কে ম্যাসেজ করলো।ফাতেমা ম্যাসেজটা পরে চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে তিশা ও নিশির কথা শুনছে। আসলে মাথায় কিছু একটা বুদ্ধি আঠছে এই মেয়ে।মুনিয়াকে চোখের ইশারায় কি বুঝালো আল্লাহই জানে,মুনিয়া কাশতে লাগলো হঠাৎ।বলাবহুল্য মেয়ে দুটো ধারুন স্ম্যাট।চোখ দিয়ে এক জন আরেক জনকে বুঝিয়ে দেয় কি করতে হবে।
মুনিয়ার কাশি দেখে,আমি পানি দিতে গিয়ে দেখি পানি নেই জগে।
-ঝর্ণাপু পানি আনতে বাহিরে জেতে নিলে,ফাতেমা চেঁচিয়ে উঠে।আপু তুমি কেনো যাচ্ছো। ভাবি যাবে।কি ভাবি যাবে না।
তিশা ফাতেমার কথার কোনও আগামাথা কিছুই বুঝলো না,তাই জগটা নিয়ে রুম থেকে বের হলো পানি আনতে।
--তিশা পানি নিতে কিচেনের দিকে যেতে নিলেই,হঠাৎ কেউ পেছন দিয়ে মুখটা চেপে ধরেই কানের কাছে মুখ নিয়ে হুসসস.....বলে।
একদম চুপ জান,তা না হলে বাড়ীর সবাই জেগে যাবে।আর আমাকে চোর ভাববে।
তিশার চিন্তে আর বাকি রইলো না,এটা ওরি হাসবেন্ড।
-তিশা নিজেকে ছাড়ানোর চেস্টা করছে বলে,জিসান এভাবেই তিশাকে টেনে রুমে নিয়ে গিয়ে ছাড়লো।
-তিশা তো রেগেমেগে ফায়ার।জিসানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।
জিসান তিশার রাগের কোনও তোয়াক্কা না করেই,সামনে এগোতে এগোতে বলতে লাগলো,
সমস্যা কি?
সকাল ধরে এমন নাটক করছিস কেনো।
-জিসানের এমন আগানোতে তিশা প্রথমে কিছুটা ভয় পেলেও,এখন রাগ হলো।
কি! আমি নাটক করছি।তার মানে কি আমি নাটক বাজ।আর আপনে! আপনে কি?সকালে আমাকে যে এভোয়েড করছেন সেটা কি?আপনে করলে মহৎ আর আমি করলেই দোষী।
সরুন, আমাকে যেতে দিন।আজ আমি ওই ঘরে ঘুমাবো ওদের সাথে।
তিশা রাগ দেখিয়ে যেতে নিলে,জিসান হাতটা ধরে হেচকা টান মারে।আর তিশা গিয়ে পরে জিসানের বুকে।
তিশাকে নিজের সাথে চেপে ধরে,কি বললি তুই,এখানে এসে মনে হয় মুখটা একটু বেশি ফুটে গিয়েছে।নতুন কাউকে পছন্দ হয়েছে নাকি।
--হুম,হয়েছে তো।কেনো আপনে জানেন না।কালই তো বললাম।এমনেও নানাজান আপনের থেকে বেশি হ্যান্ডশাম,আমি তো প্লানিং........।
জিসান তিশাকে আর কিছু বলতে দিলো না।এক ঝটকায় বিছানায় ফেলে দিয়ে তিশার উপর উঠে পড়লো।
-তিশা এতোক্ষন রণচণ্ডী হয়ে কথা বললেও এখন ভয়ে চুপছে গেলো ব্যাচারী।
জিসান তিশাকে বিছানায় আটকে ফেলে।সাহস দেখি একটু বেশি হয়ে গিয়েছে তোর।আমার সামনে আরেকজন পুরুষের তারিফ করছিস।
-আ আ রে ক জ জন ককই।আমি তো নানা জানের কথা বলছি।
তো,নানাজান কি পুরুষ না।
-ক কি সব বলছেন।আপনে পাগল হয়ে গিয়েছেন।নিজের নানাকে কেউ হিংসা করে।
জান,নানা হোক বা দাদা,তোর মুখে আমি অন্যকোনও পুরুষের নামও শুনতে চাই না।তোর মন,প্রাণে মস্তিষ্কে শুধু এই জিসানের বসবাস হবে।আর কারো না।
-আপনে একটা সাইকো জানেন।
জানি তো,তোর জন্য।এখন দেখ এই সাইকো কি করে।
-ক ককি করবেন।(তিশা)
কি আবার! সারাদিন আমাকে ইগনোর করেছিস, আবার এখন আমাকে রেখে ওই রুমে ঘুমাতে গিয়েছিস।আমার থেকে দূরে থাকার প্লানিং করেছিস।তার জন্য শাস্তি তো পেতেই হবে তাই না জান।
তিশা চোখ দুটো বড় বড় করে জিসানের দিকে তাকিয়ে শুকনো ডোক গিললো।
কি?
জিসান আর কিছু না বলেই,তিশার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে একটা কামড় দিয়ে দিলো।
তিশা চেঁচিয়ে উঠে জিসানকে বকতে লাগলো।
তিশার চিল্লাচিল্লিতে জিসানের মেঝাজ আরো খারাপ হয়ে গেলো।তাই তিশার আচলটা সরিয়ে আরো কয়েকটা কামড় দিয়ে দিলো।
রায়হান এর ম্যাসেজ পেয়ে নিশি নিজেই বোনদের রুমে ফেলে ছাদে চলে এলো।ছাদে এসে দেখে রায়হান রেলিং এ হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
-নিশিও গিয়ে ঝট করে রায়হানের দুহাতের মাঝে ঢুকে গিয়ে রায়হানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
কিন্তু রায়হান অভিমান করে ধরলো না নিশিকে।এখন আসার সময় হয়েছে তোর।আর আসলি কেনো।চলে যা, লাগবে না তোকে আমার।একটু রেগে।
-নিশি রায়হানের বুকে একটা কিস করে,সরি। কি করবো,আমিতো আসতেই নিয়েছিলাম।কিন্তু তিশা আমাকে টেনে নিয়ে গেলো ওর সাথে।আমি ওকে কি করে বলি,বোনরে আমাকে ছেড়ে দে।আর তোর ভাইয়ের কাছে জেতে দে।
নিশি মাথাটা উঠিয়ে,কি ভাববে ও.....।
রায়হান এবার নিশির মুখটা নিজের দুহাতে ধরে, ভাববে ওর বান্ধবী ওর ভাইয়ের প্রেমে পাগল হয়ে গিয়েছে।
নিশি লজ্জায়,মুখটা নামিয়ে, ধ্যাত কি যে বলেন।
--আকাশে বিশাল একটি চাঁদ।আর দূর থেকে ভেসে আসছে পানির শোঁ শোঁ শব্দ।একজোড়া নতুন কপতকপতি ছাদে দাঁড়িয়ে আজ জ্যোৎস্না বিলাস করছে।অদ্ভুত এক পরিবেশ।
দুজনের মনে জেনো প্রেম এসে সারা দিয়ে যাচ্ছে।কিছুক্ষণ পর নিশির ঘাড়ে রায়হানের ঠোঁটের স্পর্শে শরীরে শিহরণ জাগিয়ে তুলছে।দুজন নবো দম্পতী খোলা আকাশে আজ ভালোবাসায় নিজেকে মত্ত করে তুলছে। আর দূরের সেই চাঁদটাও জেনো আজ লজ্জায় মেঘের আড়াল হতে চাইছে।
আরো দুদিন কেটে গেলো আমাদের এখানে।এই দুদিন আমরা বিছনাকান্দি,জৈন্তা রাজবাড়ী,দিঘি,খাসিয়াপারা ও সাইট্রাস গবেষণাকেন্দ্রে ঘুড়েছি।
আজ জিসান ওর মামাদের সাথে বের হয়েছে।আশেপাশে উনাদের সব কিছু জিসানকে ঘুড়িয়ে দেখাবার জন্য।সবার সাথে পরিচয়ও করে দিয়েছে।পরিচিত অনেকেই জিসানকে দেখে চোখদুটো ছলছল হয়ে গিয়েছিলো।অবশেষে জিসানকে ওদের পারিবারিক কবর স্থানে নিয়ে যাওয়া হলো।এখানে ওর মায়ের কবরটিও আছে।জিসান সামনে যাওয়ার সাহস পেলো না।কারণ মায়ের কবরটি দেখেই দুচোখের কোনায় জল ঝমে গেলো।বুকের মধ্যে একটা ব্যাথা অনুভোব করলো।তাই ও ফিরে চলে আসলো বাসায়।
এই কয়েকদিনে এই বাড়ীর সবার সাথে একটা গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।বোনেরা তো মনো হয় চোখে হারায় জিসানকে।নানাজানও মনে হয় জিসানকে পেয়ে অনেকটা সুস্থ হয়ে গিয়েছে।মায়ের সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছে জিসান নানার থেকে।
জিসানের মনে একটু অপসোস হলো,আরো আগে জানতে পারলে হয়তো এই পরিবারের সবাই এতো কস্ট পেতো না।
-আজ আমরা ঢাকায় ফিরছি।তবে রায়হান ভাই ও নিশি কাল রাতেই চলে গিয়েছে কক্সবাজার।ওদের হানিমুনে।তাই সবার থেকে বিদায় নিয়ে আমরা চলে আসলাম ঢাকায়।তবে এ কয়েক দিনগুলো খুব সুন্দর কেটেছে।সিলেটের প্রতি কেনো জানি এক মায়া জেগে গিয়েছে।জিসান বলেছে আমরা আবার আসবো।অবশ্যই আসবো।
সুখের দিন গুলো খুব ছোট হয় সত্যিই।দেখতে দেখতে কিভাবে জেনো আমাদের বিয়ের তিনমাস পার হয়ে গেলো।এই তিনমাসে আমার আর জিসানের ভালোবাসা কমেনি বরং আগে থেকে অনেক বেড়েছে।ছোট খাটো মান অভিমানগুলো নিজেদের ভালোবাসা দিয়ে পূর্ণ করে দিয়েছি দুজনে মিলে।
এরি মধ্যে একদিন ভার্সিটি গিয়ে জানতে পারলাম, নিলুর বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে আবির ভাইয়ের সাথে।খুশিতে আমিতো লাফিয়ে উঠলাম।বেস্টির বিয়ে বলে কথা।কিন্তু পরক্ষনে হিটলার এর কথা মনে করে মুখটা চুই হয়ে গেলো।আমার চুপছে যাওয়া মুখখানি দেখে নিশি জিঙ্গেস করলো সমস্যা কি।
আমি নিশির দিকে তাকিয়ে,জিসান।তোর ভাই।
মানে।(নিশি)
মানে আবির ভাইয়ার নাম শুনলেই চেতে যায়।আমাকে কি বিয়েতে আসতে দেবে।মনে হয় না।
আরে তুই বেশি চিন্তা করছিস।ভাইকে বুঝিয়ে বললেই হবে।
হুম দেখি।চল এবার উঠি।
রাতে ডিনার করে রুমে এসে দেখি সাহেব আমার সোফায় বসে কাজ করছে লেপটপে।কেমন জেনো চিন্তিত চিন্তিত লাগছে উনাকে।তার মুখের বিষণ্ণতা দেখেতো আমার আর সাহসই হচ্ছে না বলতে।কি করি।কিভাবে বলি।বিছানায় বসে দাঁত দিয়ে নক কাটতে কাটতে ভাবছি।
-জিসানের চোখ লেপটপে থাকলেও,ওর আশেপাশের কে কি করছে সবই ও খুব নিখুঁত ভাবে পর্যবেক্ষণ করে।আর তিশাও যে কোনও বিষয় নিয়ে ছটফট করছে তা জিসানের বুঝার বাকি নেই।
হঠাৎ জিসান লেপটপে চোখ রেখেই তিশাকে ধমক দিলো।কি করছিস এসব।এভাবে দাঁত দিয়ে নক কাটছিস কেনো।আর মুখটা সেই কখন ধরে পেঁচার মতো করে আছিস।সমস্যা কি?
জিসানের ধমকে তিশার মনটা ভেঙ্গে গেলো।তাই রাগ করে চুপচাপ বিছানার অন্যপাশে শুয়ে পড়লো।বলবে না কিছু জিসানকে।
হঠাৎ তিশার সাথে এমন আচরণ করায় জিসানও অবাক হলো।রাগ উঠছে নিজের উপর এখন।শুধু শুধু মেয়েটাকে কস্ট দিলো।জিসানও লেপটপটা বন্ধ করে শুতে চলে গেলো।
তিশাকে হালকা জরিয়ে ধরে,সরি জান।মাথাটা ঠিক ছিলো না।তাই হয়তো এমন করে ফেলেছি।সরি।
ইটস ওকে,আমি কিছু মনে করেনি।ঘুমান এখন।তিশা জিসানের দিকে না তাকিয়েই কথাটা বললো।
জিসান তিশাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বুকে টেনে নিলো।রাগ না করলে এখানে ঘুমা।রাগ করে মুখ ফুলিয়ে আমার থেকে দূরে থাকার চেস্টা করলে লাভ নেই।দিন শেষে আমার বুকেই তোর জায়গা বুঝলি।
তিশা এবার হেসে দিলো,আসলেই লোকটি পাগল।
-এবার বলতো কি ভাবছিলি।
আ আস লে।
-হুম, বল।আমি শুনছি।
নিলুর বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে।
-ও গ্রেট।এটাতো খুশির কথা।তাহলে তুই এতো টেনশড কেনো।
বিয়ে আবির ভাইয়ের সাথে।
-তা তো জানি,তো।
আমি যাবো?
-তাহলে যা,তকে মানা করেছে কে?সোপিং করার হলে করে ফেল,এটা বলতে এতো ভাবার কি আছে।
তিশা মাথাটা হালাকা উঠিয়ে,জিসানের দিকে তাকালো।আমি ভেবেছিলাম,আবির ভাইয়ের কারনে আপনে আমাকে জেতে দিবেন না।
-পাগল নি।আবিরের চাপ্টার অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে আমাদের জীবন থেকে।তাহলে এসব নিয়ে আজাইরা টেনশন একদম করবি না।ঠিক আছে।
হুম,আমিও এখন জিসানকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে ঘুমানোর চেস্টা করলাম।
আর জিসান তিশার চুলে হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে।জিসান কিছু একটা নিয়ে টেনশড আছে।কি নিয়ে তা জিসানই জানে।কিন্তু এই টেনশনের ছায়া তিশার উপর পড়তে দেবে না।
নিশি ও তিশা মিলে সোপিং করে নিলো।দুদিন পর নিলুর গায়ে হলুদ।জিসান,তিশা,রায়হান ও নিশিও গেলো গায়ে হলুদে।রায়হান ও জিসান কাউকে চিনে না বলে,তেমন আনন্দ না করতে পারলোও নিশি ও তিশা বেশ আনন্দও করছে নিশুর হলুদে।পরের দিন নিলুর ও আবিরের বিয়েটাও হয়ে গেলো।
আবির ভাই খুব পলেয়েটলি জিসানের সাথে হ্যান্ডসেক করে কথাবর্তি বললো।অবশেষে আমরা তিন বান্ধবী এখন বিবাহিত হয়ে গেলাম।
এরপরও বেশ কিছুদিন ভালোই গেলো আমাদের।তবে এরি মাঝে একদিন হঠাৎ জিসান কথোগুলো পেপার এনে আমাকে বললো সাইন করতে।আমিও আর কিছু না বলে পেপারগুলো সাইন করে দিলাম।জিসান বলতে চেয়েছিলো পেপারগুলোতে কি আছে। কিন্তু আমি শুনতে চাই নি।কি দরকার।আমি জানি জিসান বিনা কারণে কিছু করে না।এর পেছনেও কোনও কারণ আছে,যা সময় হলে আমি জেনে যাবো।আর সব থেকে বড় কথা বিশ্বাস। যা উনার প্রতি আমার আছে।
এভাবে আরো একমাস কেটে গেলো।হঠাৎ একদিন মোবাইলে এক অদ্ভুট ম্যাসেজ আসলো,তাও আবার প্রাইভেট নাম্বার থেকে।সিন করে দেখি----
"গল্প যেখান থেকে শুরু হয়েছে,গল্প সেখানে এসেই শেষ হবে।তবে এবার আমার মতো করে।জাস্ট ওয়েট ফর মি"।
-আমি কিছুটা অবাক হলাম।জিসান ওয়াসরুম থেকে বের হলে,আপনে আমার সাথে আবার ফাইজলামি করছেন।
জিসান ভ্রটা কুঁচকিয়ে,কি যা তা বলছিস।কি হয়েছে বলতো।
-আমি ফোনটা জিসানের মুখের সামনে এনে,এই যে প্রাইভেট নাম্বার থেকে আবার ম্যাসেজ আসছে।
জিসান ম্যাসেজটা দেখে,এবার আমি করিনি জান।এর আগেরবার আমি ফাইজলামি করেছিলাম তোকে ভয় দেখাবার জন্য।কিন্তু এবার আমি করিনি সত্যিই ।
-তিশা একটু টেনশড হয়ে পড়লো,তাহলে কে করছে।
জিসান তিশার হাতটি ধরে কাছে টেনে নিলো,এতো টেনশড নেওয়ার কিছুই নেই।হয়তো কেউ ভুলে পাঠিয়ে দিয়েছে।বা কেউ ফাইজলামি করেছে। রিলেক্স!
তিশার বড়খালা মনি কিছুদিন হলো তিশাদের বাড়ীতে এসেছে।কিন্তু সে নিশিকে দেখতেই পারে না।আসলে তার মেয়ের জন্য রায়হান কে বলেছিলো।কিন্ত রায়হান বিয়ে করে আনলো নিশিকে।
তাই আসার পর থেকেই নিশির উপর একটু শোধ উঠাতে প্রত্যেকটা কাজে খুট ধরে চলছে।
একটু উনিশে থেকে বিশ হলেই অনেক কথা শুনিয়ে দেয়।রেনু বেগমও পড়েছে মহা জ্বালায়। বড় বোনকে বার বার নিশেধ করে ও চুপ করাতে পারছে না।এগুলো নিশি রায়হানের কানে জেতে না দিলেও,রায়হান জেনে যায় হঠাৎ একদিন।
প্রচণ্ড রেগে খালাকে নিজের বাসায় চলো জেতে বলে।খালা চলে যাওয়ার সময় রায়হান শুধু একটা একথাই বললো।
"খালা আমার বউ কালা হোক বা ধোলা।কাজ করতে পারুক বা না পারুক।এসব আমি বুঝবো।আর আমার যেহেতু এসবে মাথা ব্যাথা নেই,তাহলে আপনাদেরও থাকার কথা না।"
রায়হান এর খালামনি রাগে,অপমানে চলে গেলো সেখান থেকে।আর রেণুবেগম ও জেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে সাদা সুট বুট পরে নেমে আসলো অচেনা ব্যক্তিটি।এয়ার্পোট থেকে বের হয়ে গাড়ীর সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তিটির সাথে হাত মিলালো।
-হ্যালো ডক্তর। কেমন আছো।(অচেনা ব্যক্তিটি)
হ্যালো এ.কে।ওয়েলকাম টু বাংলাদেশ।
-থ্যাংকস।নাউ টেল মি, আমাদের প্লান কতো দূর।
অলমোস্ট ডান।খুব শীঘ্রই রেজাল্ট পাবে।এবার আর কোনও ভুল হবে না।
-রিয়েলি!এ.কে একটু বাকা হেসে।(মনে মনে ভাবছে মিসেস তিশা আহমেদ এবার আমার থেকে বেঁচে দেখিও)
বাকি কথা গাড়ীতে উঠে বলি।(ডক্তর)
-ইয়া।
চলবে........।
[সুখ,দুঃখও,হাসি -কান্না এসব নিয়েই আমাদের জীবন।জীবনের চলা পথে অনেক কিছু ভাগ্য মনে করে মেনে নিতে হয়।গল্পও জীবনের অংশ।তাই আশা করি সামনে গল্পের নতুন মোর আপনারাও মেনে নিবেন।ধন্যবাদ ]
অনেক সাধনার পরে আমি পেলাম
তোমার মন।
পেলাম খুঁজে এ ভুবনে আমার আপনজন
তুমি বুকে টেনে নাওনা প্রিয়
আমাকে
আমি ভালোবাসি, ভালোবাসি,
ভালোবাসি তোমাকে।
ড্রয়িংরুম এর বিশাল বড় এলসিডি টিভিতে গানটি বাজছে।তাও আবার জিসানের নিজের কন্ঠে।আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে তিশা ও জিসানের পুরো পরিবার।সাথে আছে ডক্তর নিড়ব।কারো অপেক্ষা করছে ওরা।সবার দৃষ্টি সিঁড়ির দিকে।
-"টিভির ভলিউম টা আরো বাড়িয়ে দেওয়া হলো।জাতে করে উপরের রুমের দরজা ভেদ করে শব্দটি সেই কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিটির কানে গিয়ে পৌছায়।"
কিছুক্ষণ পর সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিটি সিঁড়ি ধরে নিচে নামছে।
---সবার মুখে এক অদ্ভুত আনন্দের সাথে কস্টও ভেসে উঠছে।
ব্যক্তিটির পড়নে এখনো চারদিন আগের পোশাক।চোখেমুখে শরীরের ক্লান্ত প্রকাশ পাচ্ছে।গানের শব্দে ব্যক্তিটি আস্থে আস্থে নেমে টিভির সামনে দাঁড়ালো।শান্ত চোখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে টিভির স্কিনে।
বিধাতা আমাকে তোমার জন্য
গড়েছে আপন হাতে
জীবনে-মরনে, আধারে-আলোতে
থাকবো তোমার সাথে।।
তুমি বুকে টেনে নেওনা প্রিয় আমাকে
আমি ভালোবাসি,ভালোবাসি।
ভালোবাসি তোমাকে।।
এক চিলতি হাসি ফুটে উঠেছে তিশার মুখে।টিভির স্কিনে জিসানের হাস্যজল ছবিগুলো ভেসে উঠছে এক এক করে।জিসানের সিঙ্গেল ছবিসহ ওদের বিয়ের,হানিমুনের সব ছবি।সাথে জিসানের কন্ঠে গাওয়া গানটিও বাজছে।তিশা এক পা এক পা করে সামনে এগিয়ে টিভির স্কিনে ভেসে উঠা জিসানের ছবিটি কাপাকাপা হাতে স্পর্শ করছে।
যাবেনা কখনও ফুরিয়ে যাবেনা
আমার ভালোবাসা
তোমাকে পেয়েছি, পেয়েছি
আবারো বাঁচার
নতুন আশা।।
তুমি বুকে টেনে নাওনা প্রিয়
আমাকে
আমি ভালোবাসি, ভালোবাসি,
ভালোবাসি তোমাকে।
.........................................
"তিশা মুহুর্তে সব কিছু ভুলে গিয়ে হাসতে লাগলো।খুশিতে চোখ দুটো ছলছল করছে।"
---কিন্তু মুহুর্তেই অবার সব কিছু বদলে গেলো।যখন গানটি বন্ধ হয়ে গেলো,আর হঠাৎ টিভির স্কিনে যখন দেখতে পেলো,একজন লোক টিভিতে মাইক হাতে নিয়ে কিছু একটা বলছে।তার পাশেও জিসানের একটি ছবি আসছে।
টিভির স্কিন থেকে দু'কদম পিছে চলে গেলো তিশা।লোকটির কোনও কথা তিশার কানে না আসলেও ব্রেকিং নিউজে বড় বড় করে লিখাটি তিশা ঝাপসা চোখেও ঝটপট পড়ে ফেললো।
""বিশিষ্ট শিল্পপতি তৌফিক আহমেদ এর ছোট ছেলে জিসান আহমেদ এর কার এক্সিডেন্ট এ অকাল মৃত্যু।""
খবরটা পড়ার সাথে সাথে তিশার হাতের সামনে থাকা বড় ফুলদানিটি ছুড়ে মারলো টিভির দিকে।নিমিষে টিভির কাচ ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো।এতেও তিশার রাগ কমছে না।
ও চিৎকার করতে লাগলো।হাতের কাছে যা পেলো সব ভেঙ্গে চুরমার করে ফেলছে।
আড়ালো দাঁড়িয়ে পরিবারের সবাই শুধু দেখছে চেয়ে।কিন্তু তিশা এতোই ভাইলেন্ট হয়ে গিয়েছে যে তার সামনে কেউ জেতে পারছে না।
"ক্লান্ত তিশা হঠাৎ মাটিতে বসে চিৎকার করে জি...সান.........বলে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।"
---চিৎকার করে বলতে লাগলো,
আই হেট ইউ জিসান আই হেট ইউ।আপনে আপনার কথা রাখেন নি।আপনে বলেছিলেন আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবেন না।আপনে কথা রাখেন নি জিসান।জি....সা.......ন....।
প্লিজ কাম বেক।তিশা কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো। প্লিজ.......।
আমি কি নিয়ে থাকবো।কিভাবে বাঁচবো।
জিসান প্লিজ কাম......চিৎকার করে বলতে লাগলো।তিশার আর্তনাদ কান্না পুরো আহমেদ ভিলায় ছেয়ে গিয়েছে।
---তিশাকে সান্তনা দেওয়ার জন্য রায়হান, নিড়বসহ সবাই এগিয়ে আসতে নিলে,তিশা চিৎকার দিয়ে উঠে।
আসবে না__। কেউ আমার কাছে আসবে না তোমরা।কেউ আসবে না।
আমার কাউকে লাগবে না বলেই তিশা মাটিতে পড়ে থাকা এক টুকরা কাচ নিয়ে নিজের হাতের রগটি কেটে ফেললো।সাথে সাথে গড় গড়িয়ে রক্ত বের হতে লাগলো।ঘটনা এতোই দ্রুতো ঘটলো যে কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই তিশা এমন একটা স্টেপ নিয়ে নিলো।
---' তিশা এমনেই ক্লান্ত।তার উপর আজ চারদিনের উপর তিশা একবিন্দু পানিও মুখে দেয়নি।চারদিন আগে যখন জিসানের এক্সিডেন্ট এ স্পোট ডেথ হবার কথা শুনেছে।তখন মুখ দিয়ে একটা সাউন্ড ও বের করেনি তিশা।চুপচাপ নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে বসে ছিলো।
কেউ তিশাকে রুম থেকে বের করতে পারিনি,না পেরেছে কিছু মুখে দিতে।
"সবাই অবাক তিশা কাঁদছে না বলে,যার সব কিছু শেষ হয়ে গিয়েছে সে কিভাবে না কেঁদে থাকতে পারে।কেউ কিছুই বুঝতে পারছিলো না।"
"কেমন অনুভূতি শুন্য মানুষ হয়ে গিয়েছে তিশা।ঠিক একটি রোবটস এর মতো।যার ভেতর কোনও অনুভূতির ছিটেফোঁটাও নেই।এলোমেলো চুল,বিষণ্ণ মুখ আর চেহারায় একরাশ ক্লান্ত নিয়ে চারদিন ধরে নিজেকে রুমে বন্দি করে রেখেছিলো।ও চুপ থাকলেও ওর চোখ দুটো জেনো কিছু একটা খুঁজছিলো।
ক্লান্ত চোখগুলোও এ কয়েকদিনে এক মুহুর্তের জন্যও বিশ্রাম নেওয়া হয়নি।"
-- জিসানের মৃত্যুর কথা শুনে ডক্তর নিড়ব তিশার সাথে দেখা করতে এসে এসব শুনে বুঝতে পারে, তিশা ট্রোমার মধ্যে চলে গিয়েছে।
যেভাবেই হোক তিশাকে এই ট্রোমা থেকে বের করে আনতে হবে।তার জন্য তিশাকে আগে কাঁদাতে হবে।তার ভেতরের ইমোশনাল গুলো জাগাতে হবে।তাই নিড়ব, রায়হান আর তাওহিদ মিলে অনেক ভেবে এই প্লানিং করলো।
তিশাকে একমাত্র জিসানই রুম থেকে বের করতে পারবে।আর কেউ না।তাই জিসানের নিজের কন্ঠে রেকর্ড করা একটি গান ড্রয়িংরুম এ বাজালো।
ওরা সিউর ছিলো জিসানের কন্ঠ শুনে তিশা নিজেকে আর রুমে বন্দি রাখতে পারবে না।আর তাই হলো।তিশা রুম থেকে বের তো হলো,তবে তিশা এমন কিছু করবে তা তাদের ধারণার বাহিরে ছিলো।
-- রক্ত যাবার কারণে তিশার শরীর ঢলে পড়ছে আর চলছে না।পড়ে জেতে নিলে,রায়হান আর নিড়ব এগিয়ে আসার আগেই দুটো শক্ত হাত তিশাকে ধরে ফেলে।
সবাই তাকিয়ে তাকে সেই ব্যক্তিটির দিকে।কেউ চিনতে পারছে না কে সে।
-"রায়হানের মুখে অস্ফুটভাবে বেরিয়ে এলো নিলয়।"
তিশু গেট আপ,তিশু।গেট আপ--ডেম ইট।তাকিয়ে দেখো আমি নিল।তিশু.....।নিলয় তিশার মুখে হালকা চাপড় মেরে উঠাবার চেস্টা করছে।কিন্তু তিশার কোনও রিয়েকশন নেই।
-স্যার ব্লাড পরছে অনেক, আগে ব্লাড বন্ধ করতে হবে।পিছন থেকে সোম বলে উঠলো।মূলত সোমই খবর দিয়েছে নিলয়কে।খবর পেয়ে নিলয় আর্জেন্ট টিকিট কনফার্ম করে চলে এসেছে এখানে।
--"নিলয় কিছু করবে তার আগেই তাওহিদ এসে কোনও রকম আগে তিশার ব্লাড বন্ধ করার ব্যবস্থা করে।"
-নিলয়কে তাওহিদ চিনে না,তবে এই মুহুর্তে চেনাটা ইম্পোরটেন্ট নয়।তাই নিলয়ের দিকে তাকিয়ে, ওকে হসপিটালে নিতে হবে।ওর অবস্থা ভালো না।
তাওহিদ এর কথা শুনার সাথে সাথে নিলয় তিশাকে কোলো তুলে নিলো।
নিড়ব নিরব দর্শক হয়ে দেখছে।ব্যাপারটা ওর একদমই হজম হচ্ছে না।
--হসপিটালের করিডারে দাঁড়িয়ে আছে নিলয়।চোখে মুখে ক্লান্তি আর বিষণ্ণতা তারও বিরাজ করছে।কারণ প্যারিস থেকে সোজা এখানে এসে পরেছে,দীর্গ জার্নিতে বিশ্রাম নেওয়ার সময়ও পায়নি ও।
পাশে এসে সোম দাঁড়ালে,কোনও রকম ভণিতা ছাড়াই নিলয় সোমকে সব বলতে বললো।
"সোমের ভাষ্যমতে,'গতো কয়েকদিন জিসান স্যার একটু ডিস্টার্ব ছিলো।কি নিয়ে জানি না।এই প্রথম স্যার আমার থেকে কথা লুকিয়ে ছিলো।তার মাইন্ডে কিছু চলছিলো।কিন্তু কি বুঝতে পারছিলাম না।কিন্তু এতোটুকু আন্দাজ করতে পেরেছিলাম স্যারের উপর হামলার ব্যাপারটা নিয়েই চিন্তিত।"
--নিলয় কিঞ্চিত ভ্রুটা কুঁচকিয়ে, মানে।ক্লিয়ার করে বলো সোম।
স্যারের উপর পর পর দুবার হামলা করা হয়েছে।ভাগ্য ভালোছিলো বলে দুবার বেঁচে গেলেও তৃতীয় বারের হামলায় স্যার নিজেকে বাঁচাতে পারেনি।
নিলয় রাগে সোমকে ঠাস করে একটা থাপ্পাড় মেরে দেয়।হাউ কুড ইউ সোম।কি করে পারলে।ওয়াই!
--সরি নিলয় স্যার।জিসান স্যার আমাকে মানা করেছে আপনাকে কিছু না বলতে।এমনকি তার পরিবারের কেউ এই বিষয় কিছু জানে না।এমনকি রায়হান স্যার ও না।
"নিলয় নিজের রাগটা কন্ট্রোল করার জন্য,এলোমেলো চুলগুলো আঙ্গুলের সাহায্যে গুছানোর চেস্টা করছে।
নিজেকে কিছুটা শান্ত করে,
সোম তুমি আগে আমার আন্ডারে কাজ করতে।অনেক ভরসা করি আমি তোমাকে।তাইতো জিসানের সাথে তোমাকে থাকতে বলেছি জাতে কোনও সমস্যা হলে তুমি আমাকে বলতে পারো।ওর শত্রুর অভাব নেই।যদি তখনি বলতে হয়তো জিসান.....।বাকিটা নিলয় বলতে পারলো না।"
--বাই দা ওয়ে,কি হয়েছিলো।আই মিন ওর ডেথ কিভাবে হলো।
কার এক্সিডেন্ট স্যার,স্পোট ডেথ।(সোম)
--লাশ দেখেছো।(নিলয়)
লাশ পুড়ে ছাড়খার হয়ে গিয়েছে।(সোম)
--তাহলে নিশ্চিত হলে কি করে।
গাড়ীতে স্যার এর ঘড়ি,আংটি পাওয়া গিয়েছে।(সোম)
--হুম।ওকে।
কে করতে পারে,এনি ডাউট।
কাছের কেউ,জিসান স্যারের সন্দেহ।(সোম)
-কবে কবে হয়েছিলো ওর উপর হামলা।
হানিমুন থেকে আসার পর একদিন অফিসের লিফট এর তার ছিঁড়ে নিচে পরে যায়।সেই সময় স্যার লিফট এ একা ছিলো।কিন্তু স্যার সেদিন বেঁচে যায় কোনও রকম।
---এর পর সিলেট থেকে ফ্যামিলি ট্যুর করে আসার পর স্যারের গাড়ীর ব্রেকফেল হয়ে যায়।স্যার সেদিনও নিজেকে বাঁচিয়ে ফেলে।পর পর দুবার এমন ইন্সিডেন্ট হবার পর জিসান স্যারের সন্দেহ হয়।তাই ব্যাপারটা গোপনে তদন্ত করা শুরু করে।তদন্ত করে জানতে পারে,লিফটের তার ইচ্ছা করে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে।আর গাড়ীর ব্রেকফেলটাও কারো প্লানিং।এর পর আমরা আমাদের পুরো সোর্স লাগিয়ে দিই খোঁজ নিতে এটা কার কাজ।কিন্তু বার বার ব্যর্থ হয়ে ফিরতে হয়েছে আমাদের।
"নিলয় চুপ,কিছু একটা ভাবছে।বলাবহুল্য জিসান আর নিলয় কিছুটা ক্রিমিনাল মাইন্ডের লোক।খুব সুক্ষ্ম বিষয়ও ওদের চোখের আড়ালে যেতে পারেনা।তাহলে জিসান কেনো ওর শত্রুদের খুঁজতে পারলো না,ব্যাপারটা ভাবাচ্ছে নিলয় কে।"
নিলয়কে এমন নিস্তদ্ব থাকতে দেখে,সোম হাতের একটা ফাইল নিলয়ের দিকে এগিয়ে দিলো।
নিলয় ভাবণা থেকে বের হয়ে, সোমের থেকে ফাইলটা নিয়ে চেক করতে করতে জিঙ্গেস করলো কি এটা।
---নিলয় ফাইলটা চেক করে অবাক।কি এটা!এই ছেলেটা আসলেই পাগল।
মরার আগেও নিজের থেকে বেশি তিশার চিন্তা করতো।তাইতো তিশার লাইফ সিকিউরড করে রেখে গিয়েছে।কিভাবে পারে কেউ কাউকে এতোটা ভালোবাসতে।নিলয়ের চিন্তার বাহিরে এখন জিসান।
কবে করেছে জিসান এটা,সোমকে জিঙ্গেস করলো নিলয়।
--এইতো স্যার কয়েকদিন আগে।আমি জিসান স্যারকে জিঙ্গেসও করেছিলাম এসব করার কি দরকার এখন।আর ম্যাম কি এসব সামলাতে পারবে।
"নিলয় সোমের হাতে ফাইলটা দিয়ে।তো কি বললো জিসান।"
--সময় হলে নাকি জানতে পারবো।
নিলয় একটা বাকা হাসি দিলো।
--সোম একটু চিন্তিত হয়ে নিলয় কে জিঙ্গেস করলো।এখন কি করবো স্যার আমরা।
"নিলয় নিজের কোটটা খুলে সোমের হাতে দিয়ে,জিসান তার আমানতের দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছে আমাদের উপর, তার খেয়ানত কি করে করি বলো।৪০৩ নাম্বর রুমে অচেতন হয়ে পড়ে থাকা ওই মেয়েটি জিসানের সবচেয়ে বড় আমানত।আর ওকে এখন পুরোপুরি সুস্থ করা আমাদের দায়িত্ব।আর ওকে প্রটেক্ট করাও।তোমাকে কি বলতে হবে এরপর কি করতে হবে।"
সোম মাথা নাড়িয়ে না বলে,এর পর চলে যায় ও ওর কাজ করতে।
এই দুজন ব্যক্তিকে সোম কখনোই পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারে না।একজনতো চলে গিয়েছে,ফাইলে কিছু উদ্ভট শর্ত রেখে।এসব শর্তের মানে কি।আর অন্যদিকে এখন নিলয় স্যার, সেতো আরো ভেজাল মানুষ।জিসান স্যারের মনে তবুও কিছু দয়া মায়া আছে।এর ভেতরে তো তাও নেই।আল্লাহই জানে কি হবে,যেদিন জিসান স্যারের মার্ডারারদের হাতে পাবেন কি করবে।
---"রায়হান হসপিটালের একটা বেঞ্চে চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে বসে আছে।ওর শরীরটাও ক্লান্ত।জিগরী বন্ধুর মৃত্যুর শোকও ঠিকমতো পালন করতে পারিনি।কারণ দুটো পরিবারকে সামলাতে হয়েছে।জিসান জেনো সাথে করে সবার সুখ কেড়ে নিয়ে গিয়েছে।তাইতো সবাই হাসতে ভুলে গিয়েছে।
চোখের সামনে সব শেষ হয়ে গেলো।কি করবে রায়হান কাকে কাকে সামলাবে কিছুই বুঝতে পারছে না।চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে।কিন্তু তার যে কাঁদা নিশেধ। দূর্বল হলে চলবে না।তাহলে দুপরিবারের কেউ বাঁচবে না।এই শোক থেকে কখনো মুক্তি পাবে না।"
নিলয়ও হঠাৎ রায়হানের পাশে এসে বসে পড়লো।রায়হান তখনো চোখ খুললো না,বন্ধ রেখেই বলতে শুরু করলো।
---"থ্যাংকস নিলয়।খুব প্রয়োজন ছিলো তোর।হাফিয়ে উঠছিলাম সব কিছু সামলাতে সামলাতে।জিসান থাকলে এমন হতো না।জানিস ওর কাছে না একটা যাদুর ছড়ি আছে যা দিয়ে খুব সহযে সব প্রবলেম দূর করে ফেলতে পারতো।"
"হুম,জানি।চার বছর ওর সাথে থেকেছি ওর ভালোমন্দ সবই জানি।এখন বল,পরিবারের সবাই কেমন আছে।"
---"ভালো নেই রে,কেউ ভালো নেই।দীর্ঘ একটা শ্বাস ছেড়ে, জিসানের মৃত্যুর খবর পেয়ে ওর দাদা দিলওয়ার চৌধুরী স্টোক করে মারা যান।আর জিসানের মা..উনার অবস্থায়ও তেমন ভালো না।তাওহিদ ভাই,ভাবি আর আংকেল তাকে সামলাচ্ছে।
আর আমার মা তিশার এতো অল্প বয়সে বিধবা হওয়া আর জিসানের চলে যাওয়াটা সেও মেনে নিতে পারছে না।তাই নিশিকেই ভাইয়ের যাওয়ার শোক ভুলে সব সামলাতে হচ্ছে ওদিকে।
কেউ ভালো নেই।এমনটা কি হওয়া খুব জরুরী ছিলো।না হলে কি হতো বলতো।জানিস মনে হয়," জিসান এখনি এসে বলবে,আরে শালা কাঁদিস কেনো,আমি এখনো মরিনি।মরার পর মরা কান্দাকাদিস।"
রায়হান নিজেকে আর সামলাতে পারলো না।ডুকরে এবার কেঁদেই দিলো।
নিলয় একহাতে জরিয়ে সান্তনা দেওয়ার চেস্টা করছে রায়হান কে।ওর চোখ দুটোও জ্বলে ছলছল করছে।
রাত ১২টা
--- হসপিটালের করিডোরের উল্টো পাশের বারান্দাটায় দাঁড়িয়ে আছে তিশা।এখানকার বারান্দা গুলো সব খোলা।
স্থির দৃষ্টি তার নিচে দিকে,যেখানে কিছুক্ষণ পর পর কিছু লোক হেটে যাওয়া আসা করছে।
জিসানের সাথে শেষ কিছু কথা হঠাৎ মনে পরে গেলো তিশার।
"তিশা তিশা.....জিসান বেডরুম থেকে চিৎকার করে ডাকছিলো তিশাকে।তিশা সেদিন খুবই বিরক্ত হয়ে জিসানকে অনেক কথা বলেছিলো।তিশার প্রতি উত্তরে জিসান শুধু এতোটুকু বলেছিলো,যেদিন তোকে ডাকা বন্ধ করে দিবো,সেদিন বুঝবি।আমার ডাকার মাঝেও কতো ভালোবাসা ছিলো।সেদিন জিসান তিশার কপালে একটা চুমো দিয়ে যাওয়ার সময় আবার বলে গেলো,মিস করবি তো আমায়।"
তিশার চোখগুলো ঝাপসা হয়ে গেলো,আর কিছু ভাবতে পারছে না।হঠাৎ রেলিং এর উপর উঠতে নিলে কেউ পেছন থেকে হাতটা টান দিয়ে জড়ে একটা থাপ্পাড় মারে তিশাকে।
---ঢাল সামলাতে না পেরে তিশা ফ্লোরে পরে যায়।আর ছলছল চোখে সামনের ব্যক্তিটির দিকে তাকায়।তিশার সামনে দাঁতমুখ খিঁচে দাঁড়িয়ে আছে রায়হান।রাগে মনে হয় ওর শরীরটাও কাঁপছে।
কি করতে চাইছিলি তুই।পাগল জয়ে গিয়েছিস।নাকি আমাদের সবাইকে পাগল করে ছাড়বি।এককাজ কর,তুই একা মরবি কেনো।আমরা সবাই একসাথে মরে যাই।কাহিনীই খতম।তখন তো শান্তি লাগবে তোর তাই না।
ভাইয়ের এমন বিহেভিয়ার এ তিশা ডুকরে আবার কেঁদে উঠে।
----তিশাকে এভাবে কাঁদতে দেখে রায়হান শান্ত হয়ে যায় মুহুর্তেই, বোনকে বুকে জরিয়ে নেয়।আম সরি বোন,আমি মারতে চাইনি তোকে।
মাথাটা গরম হয়ে গিয়েছে।কেনো করতে গেলি এমন, একবার কি আমাদের কথা তোর চিন্তা হয়না।বল,আমরা কি তোকে ভালোবাসি না।
"ভাই আমার জিসানকে চাই,ভাই।প্লিজ এনে দেওনা ভাই, প্লিজ।তুমি যা বলবে সব শুনবো। কিন্তু আমার জিসানকে এনে দেও।আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না,মরে যাবো।মরে যাবো আমি।আস্থে আস্থে তিশার কন্ঠের সুর নরম হয়ে থেমে গেলো।তিশা আবারও জ্ঞান হারালো"।
-- যদি পারতাম তাহলে এনে দিতাম রে বোন।এনে দিতাম তোর জিসানকে।যেখান থেকেই পারতাম এনে দিতাম।যদি একটুও আসা থাকতো ওর ফিরে আসার তাহলে আসমান জমিন এক করে দিতাম ওকে খুজঁতে।কিন্তু এখন এটা আর কিছুতেই সম্ভব নারে বোন,সম্ভব না।রায়হান ও কাঁদছে আজ ভীষণ ভাবে কাঁদছে।
চলবে......।
[অতিরিক্ত কোনও কিছুই ভালো না,ভালোবাসাটাও না।আমরা যাকে সব থেকে বেশি ভালোবাসি,তাকে হারাবার ভয়টাও বেশি হয়।আর সত্য কথা বলতে,প্রিয় জিনিসটাই মানুষ হারায় বেশি।সেটা নিজ ইচ্ছায় হোক বা না হোক।গল্পও জীবনের মতো,তাই গল্পকে গল্প ভেবে অনুভোব করুন।আর গঠনমূলক মন্তব্য করুন।রাইটার ভালো না,ইমোশনাল নিয়ে খেলে এসব বাধে কিছু বলুন।
মনে রাখবেন কারো মতে গল্প চলবে না,গল্প তার নিজ গতিতেই আগে বাড়বে।ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ]
"সাঝের আধার রাতে আমাকে একলা করে কোথায় চলে গেলেন জিসান।ওই আকাশের তারাগুলোর মাঝে আমি খুঁজি আপনাকে,সেই আকাশের কোথায় লুকিয়ে আছেন।আমার মনকে ফাঁকি দিয়ে চলে তো গেলেন,কিন্তু বলেও গেলেন না কি নিয়ে থাকবো আমি।
"আমার একলা আকাশ থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে শুধু তোমায় ভালোবেসে।"
আমার এই অস্থির হ্রদয় আর অপেক্ষা করতে পারছে না,আপনাকে ভেবে।তৃষ্ণায় যেনো বুকটা ফেটে যাচ্ছে,নিবারণ যে কিছুতেই হচ্ছে না।একবারতো বলুন জিসান ভালোবাসি তিশা ভালোবাসি তোকে।"
আজ প্রায় এক মাস হলো
------ জিসান চলে গিয়েছে।আস্থে আস্থে পরিবারের সবাই মেনে নিলেও একজন এখনো মেনে নিতে পারেনি।আর সে হলো তিশা।
তিশার ক্লান্ত আখি দুটে তৃষ্ণার্ত হয়ে এখনো যেনো জিসানকে খুঁজে। সারাদিন পরিবারের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে না পারলেও দিন শেষে যখন রাত নামে।তিশার ভেতরের চেপে রাখা আর্তনাদ গুলো বাহির হয়ে যায়।রুমে বসে তিশা সারা রাত চিৎকার করে কাঁদে।কখনো কখনো তো কাঁদতে কাঁদতে তিশা ফ্লোরেই ঘুমিয়ে পরে।
দিনগুলো যেনো এক অভিশাপের মতো কাটছে আজকাল।রাতগুলোতো আরো বিষাদময়।
তিশা নিজেকে একদম লোকোচরের আড়াল করে রেখেছে।
কারো সাথে দেখা না,কথাও বলে না।
--ডাক্তার নিবিড়ও কয়েকবার এসেছিলো তিশার সাথে দেখা করতে কিন্তু তিশা করেনি।তাই নিবিড়কে নিরাশা নিয়েই ফিরতে হয়।তিশা এখনো ডিপ্রেশন থেকে বের হতে পারেনি।
"সেদিন হসপিটালে তিশার জ্ঞান ফিরার পরও তিশার অবস্থা তেমন ভালো ছিলো না।অনেকদিন না খেয়ে থাকার কারনে কোনও খাবার খেয়ে পেটে রাখতে পারতো না তিশা।বমি করে ফেলে দিতো।
হসপিটালের পুরো সময় নিলয় পাশে থেকে তিশাকে সুস্থ হতে সাহায্য করেছে।"
কিন্তু তিশা এর পরও আরো দুবার আত্মহত্যা করার চেস্টা করেছিলো।কিন্তু প্রত্যেকবার কেউ না কেউ বাঁচিয়ে ফেলেছে ভাগ্যক্রমে।
---ডাক্তার কনফার্ম করেছে,তিশা প্রচণ্ড ডিপ্রেশনে ভুগছে। যার কারনে বার বার আত্মহত্যা করার চেস্টা করছে।
তিশাকে যতোটা সম্ভব হাসিখুশি রাখার চেস্টা করতে হবে।ওকে একা না ছারাই ভালো এখন।বেঁচে থাকার জন্য অনুপ্রেরণা দিতে হবে।তা না হলে তিশার অবস্থা আরো খারাপ হতে থাকবে।
-তিশার এমন অবস্থার কথা শুনে সিলেট থেকে জিসানের কাজিন ঝর্ণা ঢাকায় এসে পরেছে। একমাত্র তিশার দেখাশুনার জন্য।তিশাকে বাসায় আনার পর থেকে ঝর্ণা চেস্টা করছে বিভিন্ন ভাবে তিশাকে ব্যস্ত রাখতে।
এভাবে কেটে গেলো এক মাস।
"জিসানকে ছাড়া চলতে কস্ট হলেও চলছে, জীবনতো কারো জন্য থেমে থাকে না।সে তার মতো চলতেই থাকে।কিন্তু চলে যাওয়া মানুষগুলো যদি দেখতে পারতো তার চলে যাওয়াটা তার প্রিয়জন মেনে নিতে পারছে না।সেতো মরে গিয়ে বেঁচে গিয়েছে,কিন্তু তার ভালোবাসার মানুষগুলো বাঁচতে বাঁচতে মরছে।"
"ড্রয়িংরুমে বসে আছে তিশা।ওর সামনে আহমেদ বাড়ীর সবাই সহ নিলয় আর রায়হানও আছে।কিছু জরুরী কথাবর্তা বলবে বলে তিশাকে ডাকা হলো ড্রয়িংরুম এ।
---প্রথমে তিশা এক কথায় মানা করে দেয়,কারণ জিসান যাওয়ার পর তিশা কারো সামনে তেমন যায় না খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া।এমনকি ওর পরিবারের মানুষও এখন ওকে দেখতে পায় না।তিশার পুরো দুনিয়াটা বলতে এখন ওর আর জিসানের এই বেডরুমটাই।
কিন্তু আলোচনার বিষয় নাকি জিসানের শেষ ইচ্ছাটা, আর তা জানতেই তিশা ড্রয়িংরুম এ উপস্থিত হলো।"
---বোনকে এতোদিন পর দেখে রায়হানের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো,কি অবস্থা করে ফেলেছে নিজেকে।একমাসেই চেহারার লাবণ্যতা আর নেই।আগের থেকে অনেক শুকিয়েও গিয়েছে তিশা।চোখের নিচের কালো দাগগুলো চিৎকার করে বলছে তিশার রাতে জেগে থাকার কথা।
"সবাইকে চুপ থাকতে দেখে,তিশা নিজেই জিঙ্গেস করলো সমস্যা কি?"
----'তিশার কথায় নিলয় একটু নড়ে চড়ে বসলো,আর সোমের হাত থেকে ফাইলটা নিয়ে তিশাকে দিলো।
তিশা ফাইলটা হাতে নিয়ে চেক করার আগেই প্রশ্ন করলো।কি এটা।'
নিলয় ফাইলটা চেক করতে ইশারা করলো আগে।
"তিশা ফাইলটা পড়ে,বুঝতে পারছে না কি বলবে।কি এসব!আমি তো এসব কখনো চাইনি। আর আমি কি করবো এসব দিয়ে।"
---বাড়ীর কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারছে না কি আছে এই ফাইলে।তাই তৌফিক সাহেবই প্রথম প্রশ্ন করে।
"আংকেল আমি বলছি,আসলে জিসান তার সব সম্পত্তি তিশার নামে লিখে দিয়ে গিয়েছে।শুধু তাই না এখন থেকে অফিসের নতুন এম ডি তিশা।জিসানের শেষ ইচ্ছানুযায়ী তিশাকে অফিস জয়েন হতে হবে,আর জিসানের নিজের হাতে গোড়ানো সব কিছু সামলাতে হবে এখন থেকে।তিশা এতে না বলতে পারবে না।
কারণ এটা জিসানের শেষ ইচ্ছা ছিলো।আর তিশাও জিসানের শেষ ইচ্ছাগুলো পূরণ করবে আর ফাইলে লিখা সব শর্ত পূরণ করবে বলে সিগনেচারও করে দিয়েছে।
এই ফাইলে তিশা আর জিসানের দুজনেরই সিগনেচার আছে।এই সিগনেচার তোমার।আম আই রাইট তিশা।"
-----তিশা মুখে কিছুই বললো না,শুধু মাথা নাড়ালো।তিশা এখন বুঝতে পারছে জিসান সেদিন এই পেপারগুলোতেই ওর সিগনেচার নিয়েছিলো।তবে সেদিন তিশা পেপারগুলো চেক করেনি,করলে হয়তো এমন ধরনের কোনও পেপার সিগনেচার করতো না কখনোই।
--সবাই কিছুটা অবাক হলো,এমন একটা স্ট্যাপ জিসান নিলো,অথচ কারো সাথে শলাপরামর্শ ও নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি।কিন্তু সব থেকে বড় প্রশ্ন কেনো।
"-তিশা নিজের কপালে দুআঙ্গুল চেপে ধরে, মনে মনে ভাবছে।
আমি এসব চাই নি জিসান।এগুলো দিয়ে কি করবো আমি।যাকে দরকার, যখন সেই নেই,তাহলে তার সম্পত্তি দিয়ে কি করবো।
আর অফিস!কি বুঝে জিসান এমন একটা ডিসিশন নিলো।আমি কি করবো অফিসে।উফঃ আর ভালো লাগছে না মাথাটা ধরছে এখন।"
---তিশার মনে কি চলছে এখন,নিলয় তা স্পষ্ট বুঝতে পারছে,তাই শান্ত হয়ে তিশাকে বুঝাবার চেস্টা করছে।দেখো তিশা আমি জানি তুমি খুব কনফিউজড এন্ড টেনশড!
যে জিসান এমন একটা শর্ত কেনো রেখেছে।তাই না।
'তিশা নিলয়ের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।'
---নিলয় আবার বলতে শুরু করলো,জিসান যাই করে অনেক বুঝে শুনে করে।সেটা তুমিও ভালো করে জানো।ও যদি যাওয়ার আগে এটা চেয়েছিলো,তাহলে এটাই সই।
"কিন্তু তাই বলে অফিস।অফিসে আমি কি করবো।আমার এসব সম্পর্কে কোনও আইডিয়াই নেই।"
---তুমি চিন্তা করো না।আমি তো আছিই।তার উপর সোম তোমার সাথে সর্বক্ষণ থাকবে।তোমাকে কি কি করতে হবে বুঝিয়ে দেবে।
নিলয় উঠে দাঁড়িয়ে বললো, জিসানের অনেক ভরসা করে তোমাকে এই দায়িত্ব দিয়েছে।ও চায় তুমি এতোটা শক্ত হও,জাতে কেউ ইচ্ছা করলেই তোমাকে ভাঙ্গতে না পারে।আর তোমাকে জাতে কারো উপর নির্ভরশীল হতে না হয়।এমনকি তোমার বাবা মা,ভাইয়ের উপরও না।
নিলয় যেতে নিয়ে আবার থেমে বলে উঠলো,কাল খুব জরুরি একটা মিটিং আছে অফিসে,সব বোর্ড মেম্বার্সরা উপস্থিত থাকবে।কম্পানির এম ডি হবার কারণে তোমাকেও সেখানে উপস্থিত থাকতে হবে।মাস্ট বি।
তাহলে আজ আসি কাল দেখা হচ্ছে আমাদের অফিসে।
---তিশা নিশ্চুপ।
তিশার সাথে কথা বলে চলে যাওয়ার জন্য ঘুড়তে নিলেই,সামনে দিয়ে আসা ঝর্ণার সাথে আচানক ধাক্কা খায় নিলয়।ঝর্ণার হাতের ট্রেতে থাকা কিছু কফি নিলয়ের কোটে পরে যায়।
-'ঝর্ণা সাথে সাথে করুন কন্ঠে সরি বলতে গিয়ে নিলয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে থমকে যায়।কারণ নিলয়ের নীলাভ আখি দু'টি।
এই নীল চোখের গভীরে যেনো ভেসে যাবে ঝর্ণা আজ।
---মিস ওয়াসরুম টা কোথায়, নিলয় জিঙ্গেস করছে।
ঝর্ণার কোনও হেলদোল না দেখে,নিলয় রায়হান এর দিকে তাকালো।
এসব দেখে রায়হান এগিয়ে হলো।
চল আমি নিয়ে যাচ্ছি তোকে ওয়াসরুমে।
'কিন্তু ব্যাচারী ঝর্ণা এখনো নিলয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।ঝর্ণাকে এমন উদাসীন ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাওহিদ একটা ধমক দিলো,কিরে আজ কি কফি পাবো, নাকি দূর থেকে দেখেই হজম করতে হবে।
--- তাওহিদ এর ধমকে ঝর্ণা চকিতে তাকায়,নিজের এহেম কান্ডে কিছুটা লজ্জাও পায়।সবাইকে কফি দিয়ে ঝর্না আড় চোখে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।আর ভাবছে,
গল্পে সিনেমায় শুনেছি এমন হ্যান্ডশাম,সুন্দর হিরোদের কথা।বাস্তবেও এমন কাউকে দেখতে পাবো তাতো ধারণাই ছিলো না।সবথেকে সুন্দর তার ওই নীল চোখ দুটি।জীবনে এতো ছেলে দেখলাম,কিন্তু নীল চোখওয়ালা মানুষ এই প্রথম দেখলাম।আর দেখার সাথে সাথে মনে কেমন ঘন্টা বেজে উঠলো।একেই কি লাভ এট ফাস্ট সাইড বলে।
আর এদিক দিয়ে নিলয় রায়হান এর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে চলো গেলো।'
---- বেডরুমের দেয়ালে টাঙ্গানো জিসানের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে আছে তিশা।মনে আজ ওর হাজার প্রশ্ন জমা হয়েছে,কিন্তু আফসোস জবাব দেওয়ার মানুষটি নেই।তিশার ছোট মাথায় জিসানের এসব করার কারণ কিছুতেই ঢুকছে না।
কি মনে করে জিসান এমন সিদ্ধান্ত নিলো।জিসান ভালো করেই জানতো আমি বাহিরের জগৎ সম্পর্কে অবগত নই।তাহলে কেনো চায় উনি আমি অফিসে যাই।বলুন জিসান কি চলছিলো আপনার মনে।
আপনে জানতেন পাঁচ বছর আগে আমার সাথে ওই জগন্য ঘটনাটা হবার পর থেকে বাহিরের জগৎ আর অপরিচিত মানুষগুলো থেকে নিজেকে অনেকটা ঘুটিয়ে ফেলে ছিলাম।বাহিরের লোকজনের সাথে তেমন মেশা হয়নি কখনো।তাহলে এখন আমি! কিভাবে এসব সামলাবো।
যেখানে আমাকেই সামলানোর জন্য কাউকে না কাউকে আসতে হয় সর্বক্ষণ।
"---জিসান গ্রুপ অফ ইন্ড্রাসট্রি।সকাল ১১টায় বোর্ড মেম্বার্সদের সাথে মিটিং হবে।এখন বাজে ঘড়িতে ১০:৩০।অথচ তিশা এখনো অফিসে আসেনি।
নিলয় টেনশনে চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে।কিছুক্ষণ পর ওর পি এ ডেইজি এসে বলে গিয়েছে,কিছুক্ষণ এর মধ্যে মিটিং শুরু হবে,কারণ বোর্ড মেম্বার্সরা সবাই এসে পরেছে।নিলয় হতাস হয়ে উঠে দাঁড়ালো।মনে মনে ভেবেই নিলো তিশা আর আসবে না।
কেবিন থেকে বের হতে নিলেই সামনের ব্যক্তিটার সাথে অল্পের জন্য ধাক্কা লাগা থেকে বেঁচে গেলো।নিলয়ের এমনেই মেঝাঝ গরম,তার উপর এখন এমন ঘটনা।রাগে কিছু বলার জন্য সামনে তাকাতেই নিলয় বাকরুদ্ধ,
কারণ নিলয়ের সামনে তিশা দাঁড়িয়ে আছে।তাও আবার হিজাব পড়ে, নিজেকে আপাদমস্তক সম্পূর্ণ ডাকা এমন একটি পোশাক পরেছে যে কোনও ব্যক্তি চাইলেও তিশাকে চোখে মাপতে পারবে না।তবুও অদ্ভুত সুন্দর লাগছে।
নিলয়কে দেখে তিশা বলে উঠলো,আম সরি, লেট হওয়ার জন্য।আসলে রাস্তায়....
---তিশাকে থামিয়ে দিলো নিলয় আর নিজেকে সামলিয়ে,ইটস্ ওকে তিশা।মিটিং এখনো শুরু হয়নি।চলো আমার সাথে।এরপর নিলয়,তিশা এবং সোম মিটিং রুমে প্রবেশ করলো।
" তিশা নিজেকে খুব কস্টে রাজি করালো অফিসে আসার জন্য।প্রথমে ভয় পেলেও পরে বোর্ড মেম্বার্সদের আন্তরিকতায় তা দূর হয়ে গেলো।আসার সময় সোমও গাড়ীতে বসে অনেক কিছু বুঝিয়ে দিয়েছিলো।তাই তিশার নার্ভাসনেসটা অনেকটা কমে গেলো।কিন্তু তিশা জানতো না আগে কি আছে,জানলে হয়তো এখানে কখনো আসতোই না।"
---বোর্ড মেম্বার্সদের মধ্যে মিস্টার রাকিব জিঙ্গেস করলো,আমাদের সবথেকে বড় ডিলটার কি খবর।এ কে কম্পানির সাথে রাইট!
সোম মাথা নেড়ে হা বললো।
---মিঃজিসান ছিলেন যখন তখন আমাদের কোনও টেনশন ছিলো না,কিন্তু এখন একটু টেনশড লাগছে।আর তাছারা আমরা এখনো এ কে কম্পানির মালিক এর সাথে মিট করতেও পারলাম না।
কেনো,কারণ কি?সে কি আসবে না।আমাদের আজকের মিটিং এর প্রধান কারণই তো এটা তাই না।
'-জি স্যার।আমার উনার পি এ এর সাথে কথা হয়েছে, উনারা রাস্তায়,যে কোনও সময় এসে পড়বে।আজ এ কে কম্পানির মালিক নিজে আসবে।কম্পানির নতুন এম ডির সাথে দেখা করতে।
ওকে...।(রাকিব)
---তিশা সোমের দিকে তাকিয়ে,এই এ কে কম্পানির মালিকের এর নাম কি।আর আপনে তাকে মিটিং এর টাইম বলে দেননি।এতো লেট করার মানে কি।সময়ের দেখি কোনও কদরই নেই।
' জি ম্যাম আমি বলে দিয়েছি,কিন্তু তবুও কেনো এতো লেট করলো বুঝতে পারছি না।আর মালিক এর পুরো নাম জানি না,তবে সবাই উনাকে এ কে বলেই ডাকে।'
---ও...!তিশা সোমের সাথে যখন কথায় বলায় ব্যস্ত ঠিক তখনি,কেবিনের ডোর খুলে প্রবেশ করলো এ কে।
আর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,গুড মর্নিং এবরিওয়ান।
আই এম আসফিন অর্ক খান।শোর্ট নেম এ কে।
------------কারো ভারী চেনা কন্ঠ কানে আসার সাথে সাথে তিশা চকিতে ডোর এর দিকে তাকালো।সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তিটিকে দেখে তিশা যেনো স্থদ্ধ হয়ে গেলো,এসি রুমের ভেতরও তিশা ঘামতে লাগলো।শরীরটা হঠাৎ কাঁপতে লাগলো।
এতো বছর পর এই লোক এখানে কি করে তাও আবার যখন জিসান নেই।এটা কি জাস্ট একটা কোইন্সিডেন্ড নাকি অন্য কিছু।তিশার মাথা যেনো ঘুরছে।
'সবাই এ কের সাথে এক এক করে হাত মিলালো, কম্পানির এম ডি হবার কারণে তিশাকেও অর্কের সাথে হাত মিলাতে হবে,তাই অর্ক তার হাতটা বাড়িয়ে দিলো তিশার দিকে।কিন্তু তিশা যেনো সাহসী পাচ্ছে না নিজের হাতটা বাড়াতে।'
---বিষয়টা নিলয় আন্দাজ করতে পেরে নিজের হাতটা বাড়িয়ে অর্কের সাথে হ্যান্ডশেখ করতে লাগলো।
হ্যালো,মিস্টার এ কে।আমি নিলয়।জিসান গ্রুপ অফ ইন্ড্রাসট্রিরতে মরহুম জিসানের বিজনেস পার্টনার।
আর মিসেস তিশা, আই মিন আমাদের এম ডি একটু অন্যরকম।
I hope you understand what I mean..
-------অর্ক একটু বাকা হেসে তিশাকে একবার উপর থেকে নিচ বরাবর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখে নিলয়ের সাথে হাত মিলিয়ে বললো,ইয়া আই আন্ডার্স্টান্ড..।
''তিশা নিজের হাতদুটো কচলাচ্ছে, অর্কের দিকে তাকাবারও সাহস হচ্ছে না।অর্কের দিকে না তাকিয়েই তিশা বুঝতে পারছে, অর্ক যে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।আর এই চোখের চাওনি যে কতোটা অস্বস্তিকর তা শুধু তিশাই জানে।আজ নিজেকে কতোটা অসহায় লাগছে।তা তিশা ছাড়া কেউ বুঝতে পারবে না।"
-----মিটিং শুরু হলো,অনেকে অনেক কিছু বললো,আর তিশার পক্ষ থেকে নিলয় আর সোম সব প্রেজেন্টেশন করলো।
-হঠাৎ অর্ক বলে উঠলো--হুম সবই বুঝলাম।কিন্তু যার বলার সেই তো কিছু বললো না।অর্কের কথা বুঝে সবাই তিশার দিকে তাকালো।
----সবার হঠাৎ তাকানো দেখে, তিশা আরোও নার্ভাস হয়ে গেলো।
'নিলয় কিছু বলতে নিবে তার আগেই অর্ক বলে উঠলো,মিস্টার নিলয় আমি মিসেস তিশার থেকে জানতে চাই,তাই উনাকেই বলতে দিন।তিশার দিকে তাকিয়ে একটু বাঁকা হেসে।'
"--তিশা বুঝতে পারছে,অর্ক যেনে বুঝেই তিশাকে এমন একটা সিচুয়েশনে ফেলতে চাইছে,তাই তিশা শুকনো একটা ঢোক গিললো।
মনে কিছুটা সাহস জুগিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,
" আপনারা সবাই জানেন আমি এখানে নতুন,তাছাড়া আপনাদের সবার থেকে আমার অভিজ্ঞাতা আর বয়সও কম।কম্পানির হিতের জন্য আপনারা মিলে যে ডিশিসন নিবেন,আমি জানি তা ভালোই হবে।
এছাড়া এ কে কম্পানির ডিলটা সম্পূর্ণ দেখছেন মিস্টার নিলয়।তাই ডিল সম্পর্কে তার থেকে বেশি কেউ বলতে পারবে না।আর আমি আস্থে আস্থে আপনাদের সহযোগিতায় সব গুছিয়ে নেওয়ার চেস্টা করবো।আশা করি আপনারা আমাকে সহযোগীতা করবেন।
"মিটিং রুমে হঠাৎ করতালি বেজে উঠলো।সবাই খুশি তিশার চেস্টা দেখে।"
সবাই খুশি হলেও একমাত্র একজন ব্যক্তি খুশি হতে পারেনি,আর সে হলো অর্ক।তিশার এমন রুপ অর্কের একদম পছন্দ না,ও তো চায় তিশা ওকে ভয় পাক ভীষণ ভয়।
তিশা নিলয়কে বলে, মিটিং রুম থেকে বের হয়ে গেলো।আর এক মুহুর্তেও তিশা এখানে থাকতে পারবে না।সম্ভব না ওর জন্য।অতিতের কালো ছায়াগুলো আবার কেনো সামনে এলো।এখন তো জিসানও নেই আমার পাশে।এদের থেকে নিজেকে কিভাবে বাঁচাবো জিসান।কেনো চলে গেলেন,আমাকে এমন বিপদে ফেলে।কেনো?
চলবে.....।
[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ।]
দেখতে দেখতে আরো এক মাস কেটে গেলো।তিশাও নিজেকে অফিসে সেট করার চেস্টা করছে।পুরো না পারলেও অনেকটাই বুঝে গিয়েছে ওকে কি করতে হবে।আর কোনও সমস্যা হলে কাকাতলীয় হলেও নিলয় ও সোমকে সর্বদা ওর আশেপাশে পেয়েছে।এই ব্যাপারটা তিশার কাছে একটু ঝটলা লাগলোও কিছুই বলতো না।
----যেমন সে দিনেরই কথা,তিশা নিজের কেবিনে বসে একটা ফাইল চেক করছিলো,হঠাৎ অনুমতি না নিয়েই অর্ক কেবিনে প্রবেশ করে।
'হ্যালো মিসেস তিশা, হাউ আর ইউ।'
"কারো কন্ঠ শুনে তিশা সামনের দিকে তাকায়।অর্ককে নিজের কেবিনে দেখে তিশার গলা কেনো জানি শুকিয়ে গেলো।কিন্তু ও নিজেকে অর্কের সামনে দূর্বল কিছুতেই দেখাতে চায় না।তাই মনে সাহস সঞ্চয় করে অর্কের প্রশ্নের কড়া জবাব দিলো।
----ফাইন মিস্টার এ কে।
বাট আই থিংক আপনে মেনারস ভুলে গিয়েছেন।কারো কেবিনে প্রবেশ করার আগে যে তার অনুমতিটা নিতে হয়,তা কি এখন আপনাকে বলে দিতে হবে।
"তিশার কথায় অর্ক শুধু একটা বাকা আসি দিলো,আর একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো,ঠিক তিশার সামনে।
ওয়াও আই এম ইমপ্রেস মিসেস তিশা।তোমার তেজ দেখি সেই আগের মতোই আছে।তবে সত্য বলতে কি জানো, তোমার এই তেজই তো ঘায়েল করেছিলো সেদিন আমায়।আজও কি করতে চাও।"
---অর্কের এধরনের কথায় তিশা গা জ্বলে যাচ্ছে।
"আচানক অর্ক টেবিলের দু'দিকে হাত রেখে তিশার দিকে ঝুকে বললো--আফসোস! এখন কিন্তু তোমার সেই বডিগার্ড নেই,যে তোমাকে গার্ড করতো সবসময়।
ইউ নো দেট তিশা, ভাগ্য সবসময় যে সাথে দিবে এমনতো নয়।এমন হলে তো কখনো কারো সাথে খারাপ কিছু হতোই না।তাই না মাই বেবি।
হুজ নো কাল কি হবে।"
----অর্ক হঠাৎ এতো সামনে আসায় তিশা এমনেই ভয় পেয়ে গেলো,তার উপর আবার এসব কথা।
তিশা এতোটা বোকা নয় যে ও অর্কের কথার পিছনে যে ওয়ার্নিং তা বুঝতে পারবে না।
তিশার না চাওয়া সত্যেও ভয় তিশার চোখে মুখে ফুটে উঠেছে।
-"আর এই ভয়টাই তো অর্ক দেখতে চেয়েছিলো।আর তাই হলো।অর্ক খুব ভালো করেই জানে তিশা জাস্ট ওর সামনে নিজেকে ব্রেভ প্রমাণিত করতে চায়,কিন্তু তিশা কতোটা কি অর্কও ভালো করে জানে।"
---ভয়ে তিশার মুখে সেদিন কোনও কথাই বের হচ্ছিলো না।অর্ক চেয়ার ছেড়ে তিশার দিকে এগোতে নিলে,হঠাৎ কেবিনে নিলয় প্রবেশ করে।
'-অর্ককে দেখে নিলয়ের মেঝাজ গরম হয়ে যায় তাও আবার তিশার সাথে।নিলয়ের চোখ তিশার উপর পরলো।তিশার ভয়ে মাখা মুখখানি দেখেই নিলয়ের যা বুঝার বুঝে নিলো।
--অর্কের সামনে গিয়ে নিলয় জিঙ্গেস করলো,এনি প্রোবলেম এ কে।
আর আপনে এখানে কি করছেন।কোনও প্রয়োজন থাকলে আমার কাছে আসতেন।যেহেতু আপনার প্রজেক্ট এর সব দায়িত্ব আমার উপর।'
"অর্ক এবার একটু বাকা হেসে--তেমন কিছু না মিস্টার নিলয়।আমি প্রজেক্ট এর ব্যাপারে কথা বলতে আসি নি।আমি তো এসেছিলাম মিসেস তিশার সাথে পুরোনও কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে।
তাই না মিসেস তিশা।আমার আবার খুব বেড হেবিট আছে,আমি আবার কিছু বাকি রাখি না।উপকার হোক বা অপকার হোক।শোধ নিয়ে থাকি বা শোধ করেদি।সেটাই বলছিলাম।
আসলে মিসেস তিশার সাথে পুরানো কিছু হিসাব ছিলো তো।তা কিভাবে শোধ করবো এই বিষয় নিয়েই আর কি।"
--নিলয় একবার তিশার দিকে তাকালো।তিশা ভয়ে কেমন কুঁকড়িয়ে গিয়েছে।
'ও রিয়েলি!ডোন্ট ওয়ারি এ কে। যদি মিসেস তিশার সাথে আপনার পুরোনও কোনও হিসাব থেকেও থাকে তাহলে আমি তা চুকিয়ে দেবো, কেমন।
এর জন্য মিসেস তিশাকে বিরক্ত না করলেও চলবে।আফটার অল ইউ আর পার্টনার,আই মিন বিজনেস পার্টনার।
"অর্ক এবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিলয়ের দিকে নিক্ষেপ করে বললো,উইল সিউ ইউ সুন মিস্টার নিলয়।"
--ডেফিনেটলি মিস্টার এ কে।
অর্ক চলে যাওয়ার পর নিলয় তিশার কাছে আসে।আর ইউ ওকে তিশা।
'তিশা কোনও রকম মাথাটা নাড়িয়ে হা বললো।'
--নিলয় তিশাকে একগ্লাশ পানি এগিয়ে দিলো।
"তিশা পানিটা নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে ফেললো।খুব দরকার ছিলো পানিটা এসময়,গলাটা কেমন শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিলো।"
--দেখো তিশা, আমি জানি মিস্টার এ কে এর সাথে তোমার খুব খারাপ একটা অতীত জরিত।কিন্তু তুমি যদি ওকে দেখে এখনো এভাবে ভয় পাও তাহলে,ওর সাহস আরো বেড়ে যাবে।তাই তোমাকে এসব কিছু সাহসের সাথে ডিল করতে হবে।ভয় পেলে চলবে না।
ওকে,,,
"তিশা নিলয়ের দিকে তাকিয়ে মাথাটা নেড়ে হা বললো।"
---সোমের ডাকে তিশা ফিরে এলো বর্তমানে।
'আমাকে ডেকেছেন ম্যাম।'
-হুম।আচ্ছা সোম ভাইয়া,আপনে এ কে কম্পানির ডিলটার সম্পর্কে কিছু জানেন।মানে জিসান যেনে বুঝে এই প্রজেক্ট টা হাতে নিবে,এটা ইম্পসিবল।তাহলে!
'একচুয়েলি ম্যাম,এই প্রজেক্টার জন্য আমাদের তেমন কিছু করতেই হয়নি।আমাদের রাইবেল কম্পানিগুলো অনেক চেষ্টা করা সত্যেও পায়নি।তবে এতোগুলো কম্পানির মধ্যে এ কে কম্পানির মালিক আমাদের চুজ করেছেন।ডিলটা সাইন করতে এ কে স্যারের ভাই আর পি এ এসেছিলো।মুলত তারাই প্রজেক্ট টা হেনডেল করছিলো।কারণ এ কে নাকি বিজি থাকেন, তাই স্যারের এ ব্যাপারে ধারনা ছিলো না বল মনে হয়, আই হোপ।'
---হঠাৎ নিলয় হন্তদন্ত হয়ে তিশার কেবিনে প্রবেশ করলো।কিছু ফাইল সোমের দিকে ছুড়ে মেরে হুংকার দিয়ে বলে,২৪ঘন্টা সময় তোমাকে দিলাম সোম,খবর নিয়ে জানাও কে এই ব্যক্তি।
"নিলয়কে এমন রাগতে দেখে তিশা জিঙ্গেস করলো কি হয়েছে, নিলয়। (বিজনেস পার্টনার হবার কারনে নিলয়ই তিশাকে নাম ধরে ডাকতে বলেছে।)"
---আমাদের ৩০%শেয়ার কেউ উঁচু দামে কিনে নিয়েছে।আর বাকি শেয়ার হোল্ডারদেরও নাকি অফার করছে তাদের শেয়ার বিক্রি করে দিতে।
"বাট এটা কে করছে আর কেনো।"
---সেটাই তো বলতে পারছি না,সম্পূর্ণ গোপনে কাজটা করা হচ্ছে।এতো বড় একটা খবর গোপন রাখার পেছনে কার হাত বুঝতে পারছি না।
"তিশা কিছুক্ষণ ভেবে,অর্ক করেনি তো।"
---না, এটার পেছনে এ কের কোনও হাত নেই।
সামওয়ান!বাট হু?
"আবার নতুন কোন শত্রু উদিত হলো আল্লাহই জানে।
তিশা নিজের চেয়ারে বসে হাত দুটোতে থুতনি রেখে সোমকে প্রশ্ন করলো।আচ্ছা সোম ভাইয়া সত্যি করে বলুন তো আপনার স্যার অফিস চালাতো নাকি কোনও গ্যাং।তার যাওয়ার পর সবাই আমার উপর হামলা করছে কেনো।আমি কার ক্ষেতের ধান চুড়ি করছি বলুনতো।"
---সোম আর নিলয় দুজনই খুব অবাক হলো তিশার কথা শুনে।
সোম কিছু না বলে চলে যেতে নিলে,তিশার ডাকে থেমে যায়।
"আমি আপনাকে একটা কাজ দিয়েছিলাম, করেছেন।"
'জি ম্যাম, আইজি সাহেব আজই আসবে আপনার সাথে দেখা করতে।'
"ওকে,আপনে আসতে পারেন।(তিশা)"
---নিলয় তিশাকে প্রশ্ন করে আইজি কেনো আসবে।
"পক্ষান্তরে তিশা নিলয় কে বললো--জিসানের কেসটা রিওপেন করতে চাই।আমার বিশ্বাস এটা কোনও এক্সিডেন্ট কেস না,মার্ডার। আর আমার ডাউট হচ্ছে অর্কের উপর।"
--নিলয় মুগ্ধ হয়ে তিশার দিকে তাকিয়ে ভাবছে,কি আশ্চর্য!
যে মেয়ে একমাস আগে সবার সাথে কথা বলতেও ভয় পেতো,ডিপ্রেশনে নিজেকে শেষ করতে চেয়েছিলো।আজ সে কতোটা কনফিডেন্স হয়ে গিয়েছে।আর চিন্তা ধারণারও অনেকটা উন্নত হয়েছে।জিসান হয়তো তিশার এই রুপটাই দেখতে চেয়েছিলো।
---কলেজ মাঠে বসে আছে নিশি আর নিলু। নিশিকে চুপ থাকতে দেখে নিলুই বলে উঠলো, তিশা কেমন আছে রে,কলেজেও আসে না কেনো এখন।
---ওকে অফিসে যেতে হয়,তাই ক্লাশ করতে আসতে পারেনা।তবে পরীক্ষার সময় আসবে।
'অফিস,তাও আবার তিশা।কিভাবে।'
---নিশি তারপর খুলে সব বললো।
'হুম বুঝতে পারছি।কি আশ্চর্য তাই না,জিসান ভাইয়া যাওয়ার পর থেকে সব কিছু কেমন উলোটপালট হয়ে গিয়েছে তাই না।তিশার লাইফটাই চেন্জ হয়ে গিয়েছে।কতো ভালোবাসা ছিলো দু'জনের মধ্যে তাই না।জিসান ভাইয়ের মতো ভালোবাসা কি কেউ দিতে পারবে তিশাকে আর।'
---নিশিও ভাবছে,সত্যিই তো। কিন্তু তিশা কি ভাইয়ার জায়গা কাউকে দিতে পারবে।এতো কি সহয সব কিছু।
'নিশি চল এবার যাওয়া যাক।'(নিলু)
---হুম....।নিশি ও নিলু গেটের দিকে যাওয়া সময় হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা লেগে নিশির হাতের ফোনটা পড়ে যায়।নিশি বিরক্ত হয়ে চিল্লিয়ে বলে,কোন ফাজিলরে চোখে দেখতে পাস না।
'ছেলেটি নিশির ফোনটা তুলে নিশিকে সরি বলতে গিয়ে থমকে যায়।'
---ছেলেটিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিশি কিছুটা বিরক্ত হয়ে ছেলেটির হাত থেকে ফোনটি কেড়ে নিয়ে গেটের বাহিরে দিকে হাটা ধরলো নিলুর সাথে।
'পেছন থেকে ছেলেটি নিশিকে কুহু বলে ডাক দেয়।'
---কিন্তু নিশি নিলুর সাথে কথা বলতে বলতে চলে যায়।
'ছেলেটি আনমনে বলে উঠে,কুহু তুমি এখানে।আর আমি তোমাকে কোথায় না খুঁজেছি। এবার আর যেতে দেবো না,দেখে নিও।সব রাগ ভাঙ্গিয়ে ছাড়বো।'
--- বাসায় যাওয়ার জন্য তিশা অফিস থেকে বের হলে, অফিসের বাহিরে নিবিড়কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে।
তিশা কিছুটা অবাক হলেও তা মুখে প্রকাশ করলো না,কারন আজকাল তিশার সাথে অবাক করার মতো এমন কিছুনা কিছু ঘটতেই থাকে।
---------যেমন কিছুুদিন আগের কথা তিশা অফিস শেষ করে বাসায় যাচ্ছিলো।হঠাৎ রাস্তায় দু'টো মাইকো তিশাদের গাড়ীর সামনে এসে দাঁড় করালে, ড্রাইভারকে না চাওয়া সত্যেও গাড়ী থামাতে হলো।
"হঠাৎ ব্রেক মারায় তিশা কিছুটা ঘাবড়িয়ে যায়।ড্রাইভার রফিক কে জিঙ্গেস করে সমস্যা কি।"
'ভাবি আমাদের গাড়ীর সামনে আচানক দুটো মাইকো দাঁড় করিয়েছে কেউ।'
"আমি গাড়ীর সামনের কাচের দিকে তাকিয়ে দেখি,মাইকো থেকে প্রায় সাত আটজন গুন্ডা টাইপের ছেলে নেমে আমাদের গাড়ীর চারপাশে গেরো করে দাঁড়িয়ে আছে।আমারতো এদের দেখেই রুহ কেপে উঠলো।আমরা গাড়ীতে মাত্র তিনজন।আমি, রফিক আর সোম।তবে সোমকে দেখে আমি কিছুটা অবাক হলাম।কারণ এসবের কোনও রিয়েকশন দেখতে পেলাম না ওর চেহারায়।
তাই আমিই কাপাকাপা গলায় সোমকে জিঙ্গেস করলাম এরা কে,আর আমাদের এভাবে আটকিয়েছে কেনো ভাইয়া।"
---ম্যাম প্লিজ রিলেক্স।কিছু হবে না।জাস্ট একটু ওয়েট করুন।
"এমন সময় সোমের এমন কথা শুনে আমি তো মনে হয় সপ্তম আসমান থেকে নিচে পড়েছি।ছেলেগুলোর মধ্যে একজন বার বার ড্রাইভার কে ইশারা করছে গাড়ীটার লক খুলতে, আর নেমে আসতে।"
'কিন্তু রফিকও কি সুন্দর করে আড়ামে বসে আছে।কোনও চিন্তার 'চ' ও নেই এই দুজন ব্যক্তির মাঝে।'
"আসলে আমি পরে বুঝতে পারলাম,গাড়ীটা বুলেটপ্রুফ।হাজার চেস্টা করেও ওরা কিছুই করতে পারবে না,যে পর্যন্ত আমরা লক না খুলবো।"
"কিছুক্ষণ পর হুরমুর করে প্রায় দশ বারটা হুন্ডা এসে থামলো আমাদের গাড়ীর সামনে।আমারতো এবার জান যায় যায় অবস্থা এরা আবার কে।
কিন্তু আশ্চর্য এদের দেখে সোম গাড়ী থেকে বের হয়ে গেলো।হচ্ছে টা কি এসব!
ওদের মাঝে কি কথা চলছে আল্লাহই জানে,তবে কিছু যে ভালো না তা বুঝা যাচ্ছে।হঠাৎ যা দেখলান তা দেখার অবস্থায় ছিলাম না আমি,সোম তার কোমড় থেকে একটা রিভেলবার বের করে মাইকো করে আসা ছেলেদের গায়ে গুলি করে দিলো।আমি এসব দেখে সত্যি বিশ্বাস করতে পারছি না কিছুই।হুন্ডাতে আসা ছেলেদের কিছু একটা বুঝিয়ে গাড়ীতে উঠে বসলো সোম।"
----আমি সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে উঠলাম,এসব কি সোম ভাইয়া,আপনে এদের মেরে ফেললেন কেনো,আর আপনার কাছে পিস্তল আছে।কিন্তু কেনো?
'সোম ড্রাইভারকে ইশারা করলো গাড়ী স্ট্যাট দেওয়ার জন্য।আর আমাকে বললো,
ম্যাম রিলেক্স, আমার পিস্তল লাইসেন্স করা।আর জিসান স্যারই দিয়েছে আমায়।আমি উনার পি এ কাম বডিগার্ড ছিলাম।আর এখন আপনার।আপনাকে সুরক্ষা করা আমার দায়িত্ব।আর এর জন্য সব কিছুই করতে পারি।আপনে এ বিষয় নিয়ে তেমন ভাববেন না।এসব আপনার জন্য হয়তো নতুন।কিন্তু আমাদের জন্য না।'
"আমি সত্যি সেদিন দ্বিতীয়বার আবার ভাবতে শুরু করেছিলাম,আমি কি সত্যিই জিসানকে চিনতাম।"
---নিবিড়ে ভাইয়ের ডাকে আমি ফিরে এলাম বর্তমানে,আরে ভাইয়া আপনে এখানে।
হুম,তোমার তো দেখাই মিলে না বাসায় গেলে,তাই এখানেই চলে আসলাম।এবার বলো কেমন আছো।
"এই তো বেঁচে আছি,কোনও রকম।"
এসব কেনো বলছো তিশা।সামনে তোমার পুরো জীবনটা পরে আছে।তাই যা হয়েছে তা ভুলে অতীত থেকে ফিরে আসো।
"আমার অতীতই আমার বর্তমান,আর ভবিষ্যৎ ও।তাই ভোলা সম্ভব না।"
ওকে,আচ্ছা বাদ দেও।চলো তোমাকে আজ আমি বাড়ী দিয়ে আসি।
কিন্তু!
কোনও কিন্তু না,আজ আর কিছু শুনতে চাই না,প্লিজ চলো।
'ওকে,চলুন।তিশা নিবিড়ের গাড়ীতে উঠতে নিলে,হঠাৎ সোম সামনে এসে দাঁড়ায়।সরি ম্যাম,আপনে নিজের গাড়ী ছাড়া কারো সাথে যেতে পারবেন না।'
ওয়াটদা!এখন কি তোমার পারমিশন নিতে হবে। তিশা কোথায় যাবে আর কার সাথে যাবে।নিবিড় দাঁতেদাঁত চেপে।
---সোম মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।হঠাৎ নিলয় এসে বললো,ইয়েস ডক্তর নিবিড়।তিশাকে আমাকে বা সোমকে বলে যেতে হবে।কারণ তিশার সুরক্ষার পুরো ভার জিসান আমাদের উপর দিয়ে গিয়েছে।তাই আমাদের তো টেনশড করাই জায়েজ তাই না।
আর আপনার তিশার সাথে কোনও কথা থাকলে আপনে বাসায় গিয়ে কথা বলতে পারেন।বাট অফিস আওয়ার শেষে তিশাকে বাড়ী পৌঁছে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব,তাই আমাদের কাজ আমাদের করতে দিন।
তিশা আমার সাথে চলো,আমি তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিচ্ছি।
"তিশাও জানে এখানে ওর আর কিছু বলার নেই।কারণ জিসান ওর চারপাশে এক অদৃশ্য জাল করে রেখে গিয়ছে,যা তিশা অনুভোব করতে পারে,কিন্তু দেখতে পায় না।আর এখানে একা চলার সাহস করলে ক্ষতি শুধু তিশারি হবে।"
আহমেদ ভিলার সামনে তিশাকে নামিয়ে দিলো নিলয়।কাল নাকি আবার একটা বিজনেস পার্টি আছে।কোন আরিয়ান জোভান ইনভাইট করেছে দেশের সব বিজনেসম্যানদের।বিজনেস এর সুবাদে আমাকেও যেতে হবে।দেখা যাক।
next day...
" রেডিসন ব্লু-ঢাকার ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে দাঁড়িয়ে আছি।চারদিকে যেনো লালের বাহার।থিম পার্টি বলে কথা।মেয়েদের লাল এবং ছেলেদের ব্লাক পোশাক নির্ধারণ করা হয়েছে।সাথে আবার পছন্দ মতো মাস্কও।
এধরনের পার্টিগুলোতে এমনেই আমার তেমন ইন্টেরেস্ট কম,তবুও আসতে হলো।তাও আবার জিসানকে ছাড়া।"
---নিলয় অন্য বিজনেসম্যানদের সাথে কিছু একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে।
"আমার খুব বোরিং লাগছে তাই একটু হাটাহাটি করছি।
হঠাৎ সামনে বার সেকশনে অর্ককে দেখতে পেলাম।এটাকে দেখলেই মেঝাজ গরম হয়ে যায়।শয়তান লোক একটা।
আমাকে দেখার আগেই আমি সরে গেলান।হঠাৎ কানে আসলো,স্টেজ এর দিকে কিছু একটা এনাউসমেন্ট করা হচ্ছে--কাছে গিয়ে দেখলাম নামকরা সংগীত শিল্পী তাপসী কবির গান গাইবেন এখন।তাকে দেখেই চারদিকে করতালি বেজে উঠলো।"
---তাপসী মাইকটা নিয়ে বললো,অবশ্যই আমি গাইবো।কিন্তু আমার সাথে তাল মিলাতে হবে মাই ফ্রেন্ড আরিয়ানকেও।
'সবাই একসাথে আবারও করতালি দিতে লাগলো।'
"নিলয়ও এতোক্ষনে আমার পাশে এসে দাঁড়ালো।
তাপসীর সাথে স্টেজে একটা ছেলে মাস্ক পড়ে আমাদের দিকে পিঠ করে বসে আছে।যথাসম্ভব এটাই মিস্টার আরিয়ান।উনি হাতে গিটার নিয়ে গান গাওয়া শুরু করলো---
আজ বলবে হঠাৎ কেউ এসে
হেসে আলতো চোখে চোখে।
তোর জন্য এসেছি আমি
ভালোবাসতে যে তোকে।
আমি তোমাকে ভালোবাসি,
আমি তোমাকে ভালোবাসি।
আসে পাশে কোনো দেশে
চেনা অচেনা ভোরে।
চোখে চোখে দেখি তোকে
অচেনা স্বপ্নের ঘোরে।
তোকে ঘিরে খুব ভিড়ে
রয়েছে রাতের তারা।
আনমনে গোপনে
ভেঙেছে রাতের পাহারা।
মন বলেছে এবার তুই এলে
যাবো আমরা নিরুদ্দেশে।
তোর জন্য যত পাগলামি
চল হাওয়ায় যাই ভেসে।
আমি তোমাকে ভালোবাসি,
আমি তোমাকে ভালোবাসি।
" হঠাৎ সবার করতালিতে আমার ধ্যান ভাঙ্গে।কি অদ্ভুত! কতো পরিচিত সুর মনে হচ্ছে।মিস্টার আরিয়ান এর কন্ঠ এতোটা টানছে কেনো আমায়।কে সে?আমি তাকে দেখার চেস্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি।"
----ঠিক তখনি আরিয়ান নিজের মাস্কটা খুলে সামনে ঘুড়লো।
"মুহুর্তে তিশার দুনিয়াটা মনে হয় ঘুড়তে লাগলো।এতো বড় শোকড নাকি খুশি যেটাই হোক তিশা হজম করতে পারলো না।মুখ থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে পড়লো "জিসান"।
'তিশা নিজের জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে গেলো।সবাই কিছুটা অবাক হলো, কি হলো।'
---শুধু তিশা না,নিলয়ও শোকড!কেমন রিয়েক্ট করার দরকার বুঝতে পারছে না।
কিন্তু এখন আগে তিশাকে সামলাতে চলে গেলো।
আর অর্ক সেতো আরিয়ানকে দেখে পার্টি ছেড়েই চলে গেলো সাথে সাথে।
আরিয়ান আশেপাশের ভিড় ঢেল সামনে এসে দেখে একটা মেয়ে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পরে আছে।
আরিয়ান এসে ধরতে নিলে কেউ আারিয়ানের হাতটা ধরে ফেলে।
চলবে..।
[গল্প কেমন হচ্ছে কমেন্ট করে জানাবেন।আমি গল্পটা ছোট করতে চাইছি,বাট পারছি না।গল্প নিজ গতিতেই বাড়ছে।বাট কেমন সাজাতে পারছি,জানালে খুশি হবো।]
" জীবনে কিছু কিছু প্রশ্ন থাকে যার উত্তর কখনও মিলেনা,কিছু কিছু ভুল থাকে তা শোধরানো যায়না,
আর কিছু কিছু কষ্ট থাকে যা কাউকে বলা যায়না।"
' হূমায়ূন আহমেদ। '
'তিশার জীবনটাই একটা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে আজ।সময়ের স্রোত বয়ে চলছে,অথচ যতোদূর চোখ যায় শুধু ধোঁয়াশা ছাড়া কিছুই চোখে পড়ছে না।জীবনের কঠিনতম সময়ের সম্মুখীন হতে চলছে তিশা।কিন্তু তার সম্মুখীন হওয়ার সাহস বা শক্তি কোনটাই তিশার মধ্যে নেই এখন।'
----অনেক কাস্টে নিজেকে বুঝিয়েছে,মানিয়েছে জিসান আর নেই।চলে গিয়েছে ওকে এই পৃথীবীর ভিড়ে একা ফেলে।তিশার মন না মানলেও তিশা নিজেকে এসব বলেই বুঝ দিয়েছিলো।
----কিন্তু এখন! এখন তিশা নিজেকে কিভাবে সামলাবে।জিসানের মতো দেখতে এই লোকটি যাকে সবাই আরিয়ান নামে চিনে আবার তার মুখোমুখি হলে তিশা কি করবে।কিভাবে নিজেকে মানাবে এটা যে ওর জিসান না।
"সেদিন পার্টি থেকে আসার পরের দিনই সোমকে দিয়ে আরিয়ান জোবান এর পুরো ডিটেলস কালেক্ট করে তিশা।
আর ডিটেলস জানার পর তিশার মনে যে সুপ্ত আশাটুকু ছিলো যে, হয়তো জিসান বেঁচে আছে।তাও শেষ হয়ে যায়।"
---আরিয়ান জোবান,একজন কানাডার অধিবাসী।বাবা কামাল শেখ,মা কৃষমি।বাবা একজন বাংলাদেশি হলেও মা কানাডার অধিবেশী।আরিয়ান ছোট থেকেই কানাডায় বড় হয়েছে।
বিজনেসম্যান হিসেবে তুখড় মাইন্ডের মানুষ।তাইতো খুব অল্প সময় বিভিন্ন দেশে নিজের ব্যবসার বিস্তার করেছে।এবার আরিয়ান এর নযর বাংলাদেশের উপর পড়েছে।নিজের পছন্দ মতো কম্পানি চয়েজ করে নেয় প্রথমে।হোক সেটা যতো ছোট বা বড়।তারপর সেই কম্পানি নিজের করে ছাড়ে আস্থে আস্থে।এটাই আরিয়ান এর বিজনেস ট্রিক।
'সবথেকে বড় যে ব্যাপারটা যেনে তিশা হতাশ,তা হলো আরিয়ান জোবানের মেয়েদের সাথে রিলেশন তেমন একটা ভালোনা।কোনও মেয়ে তার লাইফে বেশিদিন টিকে থাকতে পারে নি।
এসব জানার পর তিশা মন প্রাণ দিয়ে বিশ্বাস করে নেয় এটা ওর জিসান না।এটা জিসান হতেই পারেনা।অসম্ভব!'
-------সেদিন পার্টি থেকে এসে অর্কের ও মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো।জিসান নামের প্যারাটা যে ওর জীবনে কতোটা ভয়ংকর ছিলো ও সেটা ভালো করেই জানে।হাতের গ্লাসে রাখা ড্রিংকস এক ঢোকে শেষ করে গ্লাসটি সামনের দেওয়ালে ছুড়ে মারলো।রাগে অর্কের মাথার রগগুলো ফুলে গেলো।
কি করে সম্ভব, এটা!
জিসান মরেও বেঁচে আসলো কিভাবে।আমাকে সত্য জানতে হবে।কে এই আরিয়ান!আমার প্লান আমি কিছুতেই নষ্ট হতে দেবো না এবার,কিছুইতেই না।
অফিস টাইম
" আজ দু'দিন পর তিশা অফিসে আসলো,আজও আসতে চায়নি।কিন্তু নিলয় সকাল সকাল তিশার বাসায় হামলা করে।
কারণ আজ নতুন শেয়ার হোল্ডার আসবে অফিসে,তাই খুব জরুরী একটা মিটিং আছে।তিশাকে সেখানে উপস্থিত থাকতে হবে।অনেক বুঝিয়ে তিশাকে অফিসে আসতে রাজি করে নিলয়।"
---আজকাল নিলয় যখনি বাসায় আসে ঝর্ণা নিলয়ের চারপাশে ঘুরাঘুরি করে।একটু যদি তাকায়।কিন্তু নিলয়ের ভাবলাশহীন ভাব ঝর্ণাকে ভীষণ পোড়ায়।
কিসে এতো মগ্ন যে একবার তাকানোও যায় না আমার দিকে।অবশেষে ঝর্ণা নিজে এসেই সেধে নিলয়কে চা কফি অফার করে।
নিলয় একবার ঝর্ণার দিকে তাকিয়ে,মিস্টি একটা হাসি দিয়ে--
থ্যাংকস,বাট আই ডোন্ট নিড এনিথিং।
নিলয়ের এতোটুকু হাসিতেই ঝর্ণার গাডেন ফুলে ফুলে যেনো ভরে গেলো।কি সুন্দর এই হাসি।একদম বুকে গিয়ে লাগে।
' মিটিংরুমে সবাই অপেক্ষা করছে নতুন বোর্ড মেম্বারের জন্য।সবাই এসে পড়েছে।কিন্তু যার আসার কথা সেই আসেনি এখনো।তিশা বিরক্ত হয়ে সোমকে কিছু বলবে তার আগেই কেবিনে নতুন কারো উপস্থিত ট্যার পেয়ে তিশা সামনে তাকালো।সামনের ব্যক্তিটিকে তিশা মোটেও আশা করেনি।এতো আরিয়ান জোবান।'
---আরিয়ান ফুল আটিটিউড নিয়ে কেবিনে প্রবেশ করলো।আরিয়ানকে দেখে সবার মুখ হা হয়ে গেলো।কেউ নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।কিন্তু আরিয়ান সব কিছু একটা ডোন্ট কেয়ার লুক নিয়ে উপেক্ষা করলো।
"বোর্ড মেম্বার থেকেতো একজন বলেই ফেললো,মিস্টার জিসান,আপনে বেঁচে আছেন।"
আরিয়ান একটা বাকা হাসি দিয়ে, সামনে বসা তিশার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো।আমি আরিয়ান।আরিয়ান জোবান।কানাডা থেকে এসেছি।আর এখন এই কম্পানির একজন বোর্ড মেম্বার।
'আরও একটা ইন্টেরেসটিং ব্যাপার ঘটেছে এই অফিসে এসে। আজই আমি জানতে পারলাম।আমি একা নই এই চেহারার মালিক।আমারই ডুবলিকেট আরো একজন এই শহরে ছিলো।আফসোস তাকে চোখে দেখতে পারলাম না।আমি মন থেকে দুঃখিত মিস্টার জিসান আহমেদ এর জন্য।"
---সবাই কিছুটা অবাক হলো।এমনও কি হয় বাস্তবে,এসব তো নাটক সিনেমায় দেখা যায়।বা গল্পে শোনা যায়।
'আারিয়ানের কারো কথা শোনার যেনো কোনও ইন্টেরেস্টই নেই।তাই নিজের দৃষ্টি তিশার দিকে স্থির করেই আবার বললো।মিস তিশা জিসান গ্রুপ অফ ইন্ড্রাসট্রির এম ডি রাইট'।
"তিশা শান্ত চোখে তাকালো আরিয়ানের দিকে,তার পর মাথা নেড়ে হা বললো।"
---ওকে,আমি এই অফিসে আমার একটা নিজস্ব কেবিন চাই,নিশ্চয়ই এতে আপনার কোনও আপত্তি হবে না।তাছাড়া কম্পানির ভারী শেয়ার আমার হাতে।তাই এতুটুকু আমি এমনেই পাই,রাইট মিস তিশা।
'তিশা নিলয়ের দিকে তাকালে, নিলয় ইশারায় হা বলে,আর সোমকে আরিয়ানের কেবিন রেডি করতে বলে।'
আরো কিছু বিষয় নিয়ে কিছুক্ষণ আলোচনা করে মিটিং শেষ করা হয়,এরপর যে যার কাজে চলে যায়।
'-ফাঁকা কেবিনে টেবিলের একপাশে বসে আছে তিশা আরেক পাশে আরিয়ান।তিশা ভেবেছিলো আরিয়ানও চলে যাবে।কিন্তু আরিয়ান যায়নি এখনো বসে আছে।তিশার খুব অস্বস্তি লাগছে আরিয়ানের সাথে এক রুমে থাকতে।
তাই নিজেই চেয়ার থেকে উঠে চলে যেতে নিলে আচানক আরিয়ান সামনে এসে দাঁড়ায়।
হঠাৎ আরিয়ানের এভাবে সামনে আসায় তিশা কিছুটা হচকিয়ে যায়।'
"মিস্টার আরিয়ান এটা কি ধরনের আচরণ।"
---আচ্ছা খারাপ বুঝি,ওকে!বাট ওটা নিয়ে পরে ডিসকাশন করবোনি।আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন মিস তিশা।
"পথ ছাড়ুন,আর আমি আপনার কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই।"
---অবেয়েসলি আপনে বাধ্য।আপনার কোম্পানির ইনভেস্টার আমি,জানার অবশ্যই রাইট আছে আমার।
'তিশা একটু বিরক্ত হয়ে, ওকে ফাইন বলুন কি জানতে চান।'
---আপনার বয়স কতো।
"ওয়াট দা...এটা কেমন প্রশ্ন।তিশা একটু রেগে।এই প্রশ্নের সাথে কম্পানির কি সম্পর্ক মিস্টার আরিয়ান।"
---আছে বলেই তো জিঙ্গেস করলাম।
"কি?"(তিশা)
---এতো বড় একটা কম্পানি একটা পিচ্ছি মেয়ের হাতে তুলে দেওয়ার কারন।
'কম্পানি আমার হাসবেন্ড জিসান আহমেদ এর।দু'মাস হলো উনি আমাদের ছেড়ে পরকালে চলে গিয়েছেন।তাই উনার অবর্তমানে কম্পানির ভার আমার কাধে এসে পড়েছে।আর আমি চেস্টা করছি সেটা সামলাতে।আপনার আর কোনও প্রশ্ন না থাকলে, সাইড প্লিজ।'
"আর হে আরেকটা কথা,ডোন্ট কল মি "মিস"।
জাস্ট কল মি 'মিসেস তিশা আহমেদ।"
---তিশা চলে যেতে নিলে,আরিয়ান আবার বলে উঠে,
বাট আমিতো আপনাকে মিস তিশাই বলবো।
"তিশা এবার খানিকটা রেগে তাকায় আরিয়ান এর দিকে।"
তিশার এমন তাকানো দেখে আরিয়ান বাকা হেসে বলে--------
"কেউ ভালোবাসার জন্য পাগল মিস তিশা,আর কেউ ভালোবাসা হারিয়ে তার বেদনায় পাগল।"
আপনার নামটিও কি সেই পাগলের দলে সম্মুখীন করতে চান।যার জন্য মিসেস হয়েছেন, যখন সেই নেই তাহলে তো আপনে আবার মিসই হয়ে গেলেন।রাইট।'
---তিশা কিছু বলতে নিবে,তখনি কেবিনে নিলয় এসে হাজির।
"-মিস্টার আরিয়ান আপনার কেবিন রেডি।সোম আপনাকে দেখিয়ে দিবে।আই হোপ আপনার পছন্দ হবে।
আরিয়ান হেসে মাথা নাড়ালো।ওকে"
"তিশাও রেগে সেখান থেকে চলে গেলো।মেঝাজ প্রচুর গরম ওর।এই লোকটির সামনে এমনেই থাকা আমার জন্য কতোটা কস্টকর,তা এই লোকটি কখনো বুঝতে পারবে না।
না চাওয়া সত্যেও বার বার আমার চোখ তার উপর পরে।আর এখনতো এই অফিসেই থাকবে।সারাদিন আমার চোখের সামনে থেকে আমার বুকের ব্যাথাটা আরো পাড়াবে।তার উপর এই লোকের অদ্ভুত কথাবর্তা।আর তার শান্ত দৃষ্টির চাওনি।আমাকে একদিন পাগল করে দিবে।
কি মতলোবে এই কম্পানিতে ইনভেস্ট করেছে আল্লাহই জানে।"
--- রায়হান বসে আছে নিলয়ের কেবিনে।ও জানতে পাড়ছে আরিয়ান আজ অফিসে জয়েন হয়েছে।মূলত জিসানের চেহারার আড়ালে লুকিয়ে থাকা আরিয়ানকে দেখতে এসেছে।
সবাই যখন আরিয়ানের কথা বলেছে,রায়হানের একদম বিশ্বাস হয়নি।তাইতো নিজ চোখে দেখতে এসেছে।
কিছু কাজের বাহানায় নিলয় আরিয়ানকে নিজের কেবিনে এনে রায়হানের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।আরিয়ান খুব পলেয়েটলি রায়হানের সাথে হাত মিলিয়ে সাধারণ কথাবার্তা বলে চলো গেলো।
আর রায়হান এখনো আরিয়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।কি আশ্চর্য! এটা কোইন্সিডেন্ট নাকি অন্য কিছু।
জিসান চলে যাওয়ার পর জিসানের মতো দেখতে এই ব্যক্তি এখানে আসার কারণ কি?এমনেই কতো কস্টে তিশাকে সামলিয়েছি।এখন কি হবে,তিশা আবার না ডিপ্রেশনে চলে যায়।আমার এখন তিশাকে নিয়ে ভয় হচ্ছে।একদিকে অর্ক আরেক দিকে আরিয়ান।কি আছে আমার বোনটির কপালে।বিধাতা কেনো ওর এতো পরীক্ষা নিচ্ছে।
----ভার্সিটির ক্লাশ শেষ করে নিশি, নিলুর সাথে কথা বলতে বলতে বের হচ্ছিলো,এমন সময় ঝড়ের বেগে একটি ছেলে এসে ওদের পথ আটকালো।ঘটনাটি হঠাৎ হওয়ায় নিশি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলেও পরক্ষনে নিজেকে সামলিয়ে ফেলে।
সামনে তাকিয়ে দেখে সেদিনের সেই ছেলেটি,যার সাথে ধাক্কা খেয়ে নিশির ফোনটা পড়ে গিয়েছিলো।
নিশি কিছুটা বিরক্ত হয়ে,সমস্যা কি?আর এটা কোন ধরনের বিহেভিয়ার।
"কুহু তুমি এমন করছো কেনো।দেখো আমি সব কিছুর জন্য সরি বলছি।প্লিজ মাপ করে দেও।এই দেখো কানও ধরছি।আর চলো এখন আমার সাথে।তোমার সাথে অনেক কথা আছে।"
---ছেলেটি নিশির হাত ধরতে নিলে,নিশি কিছুটা পিছিয়ে যায়।
আরে রে করছেনটা কি।আর কে কুহু?আমি নিশি।
কে আপনে।
'তোমাকে তো আগে দেখেনি।নতুন এসেছো,কোন ইয়ার।(নিলু)'
-ইয়া,ফাস্ট ইয়ার।(ছেলেটি)
'নাম কি?'(নিলু)
"ছেলেটি বিরক্ত হয়ে-কেনো তোমার বান্ধবী বলেনি।কুহু এসব কি,তোমার ফ্রেন্ডসদের কিছু বলোনি আমাদের সম্পর্কে।"
---ওয়াট!কি যা তা বলছো।পাগল নি।আর তুমি জানো না,সিনিয়ারদের সাথে ভালো করে কথা বলতে হয়।আমরা তোমার সিনিয়ার হই।আর আমি কুহু না,নিশি। মাথার মগজে ডুকিয়ে রাখো।
নিলু চলতো,যতোসব আজাইরা পাবলিক আমার কপালে পরে।"
'নিশি ছেলেটাকে বকতে বকতে কলেজ গেটের বাহির এসে দেখে রায়হান বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।রায়হানকে দেখে নিশির সব রাগ যেনো হাওয়ায় উড়ে গেলো।
আজ অনেকদিন পর রায়হানের বাইকে বসে আবার শহর গুড়া হবে।ক্লান্ত দুপুরে বাইকে চড়ে রায়হানের পিঠে মাথা রেখে ভালোবাসার মানুষটিকে জড়িয়ে ধরা যাবে।'
"সুখ নামের পাখিটির জন্য মানুষকে সুদূর যেতে হয় না।প্রিয়জনের সাথে কাটানো ছোট ছোট মুহুর্তগুলোই আপনাকে সুখী করে তুলবে।এটাই সুখী থাকার মন্ত্র।"
"-কিন্তু দূর থেকে দুটো চোখের মালিকের ব্যাপারটা একদমই সহ্য হলো না।রাগে নিজের হাতের কলমটাকে দু'ভাগ করে ফেললো।
ইটস নট ফেয়ার কুহু।আমার থেকে দূরে চলে যাওয়ার কারণটা তাহলে এটা।এর শাস্তি তোমাকে পেতে হবে।মাইন্ড ইট।"
----ষ্টোর রুমের ধূলোবালিতে ফাইল খুঁজতে গিয়ে বিতৃষ্ণ হয়ে পড়েছে তিশা।এতো ফাইলের মাঝে ওর কাজের ফাইলটি কি আজও খুঁজে পাবে কিনা সন্দেহ।
'তিশা আবারো চেষ্টা করলো,কিন্ত ব্যর্থ হলো।'
হঠাৎ ষ্টোর রুমের দরজা লাগাবার শব্দে তিশা আতকে উঠলো।দেখতে যাবে কে এলো এসময় ষ্টোর রুমে, তখনি পুরো রুম অন্ধকার হয়ে গেলো।
প্রথমে ষ্টোর রুমের দরজাবন্ধ হয়ে যাওয়া,এখন আবার রুমের লাইট নিভে যাওয়ায় তিশার ভয়ে সারা শরীর মনে হয় কাঁপছে।
কাঁপাকাঁপা কন্ঠে জিঙ্গেস করছে, ক কে?কে আছে এখানে।"
---হাতে করে নিজের মোবাইলটাও আনে নি,তাহলে তো ফ্লাশলাইট ওন করে দেখতে পারতো আশেপাশে কেউ আছে কিনা।
'অন্ধকারে তিশার দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম তবুও হাতড়িয়ে রুমের দরজা খুঁজার চেষ্টা করছে।'
"-হঠাৎ নিজের খুব কাছে কারো উপস্থিতি আভাষ পেলো তিশা।এতে তিশা আরো ভয় পেয়ে চিৎকার দিতে নিলে,অচেনা ব্যক্তিটি তিশার মুখ চেপে দেওয়ালের সাথে আটকিয়ে ফেলে।'
"অচেনা ব্যক্তিটি হয়ত অর্ক ভেবে তিশা নিজেকে ছুটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। কিন্তু এতো ধস্তাধস্তি করার পরও অচেনা ব্যক্তিটিকে একচুলও সরাতে পারলো না।"
---একসময় তিশা শান্ত হয়ে যায়,অচেনা ব্যক্তিটি তিশার মুখ চেপে দেওয়ালের সাথে এমন ভাবে আটকে ধরছে যে তিশা কোনও রকম নাড়াচাড়া করতে পারছে না।
"হঠাৎ তিশা নিজের মুখের উপর কারো গরম নিশ্বাস অনুভোব করলো।
তিশার ভয়ে চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে।তিশার চোখের পানি অচেনা ব্যক্তিটির হাত স্পর্শ করলে,অচেনা তিশার মুখ থেকে হাতটা সরিয়ে ফেলে।"
----তিশা সুযোগ পেয়ে চিৎকার দিতে চাইলে,অচেনা তিশার ওষ্ঠদ্বয় নিজের ওষ্ঠের মাঝে নিয়ে নেয়।আর খুব সোফ্টলি তিশাকে চুমো দিতে থাকে।
"অন্ধকারে তিশা কিছু না দেখলেও,অচেনা ব্যক্তিটির এমন আচরণ মোটেও আসা করেনি।তিশার চোখগুলো বড় হয়ে গেলো।চোখের কোনাদিয়ে এখনো জল গড়িয়ে পড়ছে।অচেনা ব্যক্তিটি তিশার সেই জলটাও খুব যত্নে শুষে নিয়ে নেয়।"
---তিশার মাথাটা হ্যাং করছে,বুঝতে পারছে না কি করে ছুটাবে নিজেকে।
জিসান ছাড়া কাউকে তিশা নিজের কাছেও ঘেষতে দেয়নি কখনো।কিন্তু আজ সেই তিশার সাথে এমন একটা ঘটনা ঘটায় তিশার শরীর কেমন নিস্তেজ হয়ে পড়ছে।তিশার অবস্থা বুঝে 'অচেনা 'তিশাকে ছেড়ে দিয়ে সাথে সাথে দুকদম পিছে চলে যায়।
"ছাড়া পেয়ে তিশা দেওয়াল ঘেষে নিচে বসে নিরবে কাঁদতে থাকে।হঠাৎ ষ্টোর রুমের দরজা খুলার শব্দ পেয়ে তিশা উঠে দেখতে যায়,কে ছিলো এতোক্ষন এই রুমে।কিন্তু আফসোস তিশা কাউকে দেখতে পেলো না।
তিশা এখনো খুব শোকড এর মধ্য আছে,কে করলো আমার সাথে এমন জগন্য একটা কাজ।কে?
----হঠাৎ তিশার খেয়াল হলো অচেনা ব্যক্তিটি কিছু একটা দিয়েছিলো ওকে।কিন্তু কি?
তাই ষ্টোর রুমে আবার গিয়ে খুঁজতে থাকে, কিন্তু কিছু না পেয়ে কাঁধে হাত দিতে নেয় ব্যাথা করছে বলে।তখনি কাঁধে একটা রুমাল পায়।রুমালটা দেখে তিশা চমকে যায়।আরে এটাই মনে হয়! কিন্তু এখানে কিছু লিখাও আছে---
"এরপর থেকে কোথায়ও একা যেতে দশবার ভাববে।না ভাবলে সমস্যা নেই,আজ যা হলো তা আবার হবে।তবে এবারের থেকে আরো বেশি।তাই মনে থাকে যেনো।আমি এক কথা বারবার বলি না।তোমার ভালোর জন্যই বলছি।প্লিজ সোনা, কথাগুলো বুঝার চেষ্টা করো।একা একা কোথাও যেওনা।"
---তিশা লিখাটা পড়ে হতোভম্ভ হয়ে গেলো।কে হতে পারে।এমন ভাবে একমাত্র জিসানই আমাকে বলে।তার কথায় যেমন রাগ থাকে তেমন ভালোবাসা, দুটোই থাকে।
এই লিখাটাও এমন।তাহলে কি জিসান!না এটা কিভাবে সম্ভব।
চোখে জল আসলেও মুখে কেনো জানি একটা তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠেছে তিশার।
"জিসান আপনে আমার রুহে মিশে আছেন। তাইতো আমার নামটাই যথেষ্ট আমার মুখের হাসি ফিরিয়ে আনার জন্য।প্লিজ কাম ব্যাক জিসান।প্লিজ।
তা না হলে আমাকেও নিয়ে যান আপনার দুনিয়ায়।আমিযে আজও আপনাতে মত্ত হতে চাই।
চলবে.....।
"গভীর চিন্তিতো মুখ নিয়ে দু'জন ব্যক্তি কখন থেকে কারো জন্য অপেক্ষা করছে।অথচ আজই তার লেট হবার কথা ছিলো।নিশি ও তিশা বসে আছে অফিসের সামনের কোনও এক রেস্টুরেন্ট এ।কাল রাতে আরিয়ানের পাঠানো ভিডিও দেখে তিশার তো ঘুমই হারাম হয়ে গিয়েছে।"
'আর নিশি সে তো নক কামড়াচ্ছে, আর ভাবছে।গভীর ভাবে ভাবছে।মনে হয় সারাজীবন এর ভাবণা আজই সব ভেবে শেষ করে ফেলবে।"
---শয়তান মাইয়া,আমাকে এভাবে ফাঁসিয়ে কি ভাবছিস এখন তুই।তোর কারণে আমি এতোবড় সমস্যায় পড়েছি।এখন বল কি করি।(তিশা)
"নিশি তিশার দিকে তাকিয়ে ---দেখ তিশা,আমার আইডিয়াতে কোনও সমস্যা ছিলো না।আর আমি কি জানতাম ওই আরিয়ান ব্যাটা এতো চালাক।মনে হয় আমাদের জন্যই জাল ফেলে বসেছিলো।কখন তার জালে আটকাবো সেই অপেক্ষায় ছিলো। তাহলে বল এখানে আমার দোষ কি।"
----হারামি তোর আইডিয়ার কারণই এসব হয়েছে।আমার আগেই বোঝা উচিৎ ছিলো এই আরিয়ান সোজা মানুষ না,একদম ত্যারা প্রকৃতির লোক।তাই আজকের পর থেকে আর কোন উল্টাপাল্টা আইডিয়া দিবি না আমায়,তোর আইডিয়াগুলো তোর কাছেই রাখ।ভবিষ্যৎ এ কাজে লাগবে তোর।এবার যা করার আমিই করবো।
"ওকে।বাট ওই আরিয়ান জোবান এখনো আসছে না কেনো রে।"(নিশি)
---কে জানে,আমি কি তার পি এ নাকি।যে তার সব খবর আমার কাছে থাকবে।আমিতো টেনশনে বাঁচতাছি না,এই আরিয়ান জোবান এর উদ্দেশ্য কি।অফিস ছেড়ে আমাকে এখানে কেনো আসতে বললো।
'দেখা যাক কি হয়,আরে এতো ভয় পাস কেনো।আমি আছি না,আমি আর তুই মিলে কতোজনকে সাইজ করেছি আর এতো কোনও ব্যাপার না।সো ডার্লিং চিল।'
"কিন্তু তিশার চিন্তা হচ্ছে ভীষণ চিন্তা।কারণ এ কয়েকদিনে তিশা বুঝে গিয়েছে আরিয়ান কি জিনিস।"
ফ্লাশ ব্যাক----
"সেদিন স্টোর রুমের ঘটনার পর থেকেই তিশার ভেতরে একটা সন্দেহ নামক রোগ জন্ম হয়।আর তিশার সন্দেহের তালিকায় যার নামটি ছিলো সে আর কেউ না মিস্টার আরিয়ান।"
---আরিয়ানের অদ্ভুত চাওনি আর তিশার প্রতি অতিরিক্ত কনসারনিং তিশাকে ভীষণ ভাবাতো।অফিসের কোন মেল কর্মচারীর সাথে তিশার কথাবর্তা একদম পছন্দ করতো না আরিয়ান।
তাই একদিন সবাইকে নাকি নিজের কেবিনে ডেকে ওয়ার্নিং ও দিয়েছে।
যার ফলে অফিসের কোন মেল কর্মচারী আমার আশেপাশেও থাকতো না।আমাকে দেখলেই মাথাটা নিচু করে ফেলতো।
শুধু কি তাই আরিয়ান অফিসে আসার পর থেকে অর্ক আমার কেবিনের সামনেও আসতে পারেনি।অনেকবার চেষ্টা করেছে আমার সাথে দেখা করতে কিন্তু ব্যর্থ হয়ে ফিরত যেতে হয়েছে।এসব কিছু শুধু মাত্র কোইন্সিডেন্ট হতে পারে না।তাহলে!
"এমনেই আরিয়ানকে আমার প্রথম থেকেই সন্দেহ হতো।এসব জানার পর থেকে সন্দেহের বীজটা যেনো আরো বেড়ে গেলো।
কেনো জানি মন বলতো আরিয়ানের নামের পিছনে লুকিয়ে থাকা লোকটি আর কেউ না আমার জিসানই।কিন্তু তার দলিল আর লিখিতো প্রমাণ আমাকে কনফিউজড করতো।"
----মন বলতো এটাই জিসান আর প্রমাণ আর দলিল বলতো না এটা জিসান না আরিয়ান।যখন কনফিউজড এ মাথা ঘুড়াচ্ছিলো তখন নিশি একটা আইডিয়া দিলো।
-'নিশির ভাষ্যমতে যদি এই ব্যক্তি জিসান হয় তার স্বভাবগুলোই বলে দিবে সব।কারণ মানুষ চেহারা পাল্টাতে পারে,নামটাও পাল্টাতে পারে কিন্তু স্বভাব বা অভ্যাস বদলাতে পারেনা।'
--তাই আমি নিশির কথামতো ডিটেকটিভ মিশন চালু করলাম।আরিয়ান জোবান এর ছোটখাটো বিষয় গুলো খেয়াল করতে লাগলাম।তার খাবার খাওয়ার স্টাইল, কথা বলার ভঙ্গিমা, সে আর কি কি করে সবই লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে লাগলাম।
বাট আফসোস তেমন কিছুই পেলাম না।এসব কিছুর চক্করে আমি আরিয়ানের আগে পিছেও কয়েকদিন ঘুরেছি। এই লোকটি মনে মনে আমাকে কেমন মেয়ে ভাবছে আল্লাহই জানে।
"কিন্তু এই লোকটি যে আমার থেকেও দশকদম আগে চলে,তা ভাবতেও পারনি।আমি ভাবলাম শুধু আমি তাকে ফোলও করছি।কিন্তু না! এই ব্যক্তিও আমার গতিবিধি নযরে রেখেছে।কি সাংঘাতিক। "
---আর তা আমি আজকে জানতে পারলাম।আজ অফিস শেষ করে যখন লিফটে উঠে বাটন ক্লিক করতে নিবো আর তখনি ঝড়ের বেগে আরিয়ান কোথা থেকে এসে লিফটে ডুকে গেলো।উনার এহেম কান্ডে আমি কিছুটা শোকড হওয়ার সাথে ভয়ও পেলাম ।
"লিফটে এখন শুধু আমি আর আরিয়ান আছি। আমি আগে আর আরিয়ান আমার ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।আমি পিছনে না তাকালেও এতোটুকু বুঝতে পারছি,আরিয়ান যে আমার দিকেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আমার আবার খুব অস্বস্তি লাগছে।"
---আরিয়ান এককদম সামনে বেড়ে আমার পাশে এসে দাঁড়ালো।আমার দিকে না তাকিয়েই প্রশ্ন করলো..
"-তো মিস তিশা আমার সম্পর্কে এতো তারাতারি জানা শেষ।নাকি এখনো কিছু বাকি আছে।"
---আমি তড়িৎগতিতে আরিয়ানের দিকে তাকালাম।তার মানে এই লোকদেখি সব জানে।আমি যে এতেদিন তাকে ফোলও করছিলাম।
কিন্তু এর সামনে কিছু প্রকাশ করা যাবে না।তিশা কেমন জাসুস তুই,ভান্ডাফাশ হয়ে গেলো এতো তারাতারি।উফ!গর্দভ কোথাকার।
"তাই আমি যেনেও না জানার ভান করে বললাম,ক ককি জানা শেষ।কি সব বলছেন।"
--- এবার আরিয়ান তিশার ঠিক সামনে এসে দাঁড়ালো।আর তিশা সাথে সাথে দু'কদম পিছে চলে গেলো।যার কারণে লিফট এর দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলো ওর।
"মিস্টার আরিয়ান এ কেমন আচরণ।"
---আরিয়ান আরো দু'কদম তিশার দিকে এগিয়ে তিশার ঠিক কাছে এসে দাঁড়ায়।
"আরিয়ান এতো কাছে আশায় তিশা এখন আরো বেশি অস্বস্তিবোধ করতে লাগে, সাথে খুব বিরক্তও হচ্ছে লিফটা এখনো খুলছে না বলে।এতো সময় তো লাগার কথা না।"
'-কি হলো মিস তিশা কিছু বলছেন না যে।'
"কল মি মিসেস তিশা আহমেদ। আমি আগেও বলেছি।আর আপনে কিসব বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।"
---আজকাল মিস্টার জিসানকে মনে হয় একটু বেশিই মনে করছেন।(আরিয়ান)
"ইভেন ইফ ইউ ডোন্ট নো ইট মিস্টার আরিয়ান।"
সবই তো আমার, তাহলে জানার অধিকারও আমার আছে তাই না।"
"মানে!"(তিশা)
---আরিয়ান একটু বাকা হেসে,আপনে একটু বেশিই বোকা।আসলে বয়সের দোষ।তাইতে আজকাল আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেন।শুধু কি চোখে দেখেই মন জুড়াবেন।
আরিয়ান তিশার দু'পাশে হাত রেখে একটু ঝুকে বললো,আপনে চাইলে আমি পুরোটাই আপনার হতে পারি মিস তিশা।আমার কোনও সমস্যা নেই।আমি ওল ওয়েজ ফ্রি আপনার জন্য।
"মিস্টার আরিয়ান আপনে কি জানেন,আপনে যে একটা চিপ মাইন্ডের লোক।আর আপনার সাহস কি করে হলো আমাকে এসব কথা বলার।"
---আরিয়ান এবার সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে...বাহরে! আপনে লুকিয়ে দেখলে দোষ নেই।আর আমি বললেই সমস্যা।
"তিশা কিছু বলতে নিবে আর তখনি লিফট এর দরজা খুলে যায়।তিশা আরিয়ানকে ক্রস করে লিফট থেকে বের হয়ে চলে যেতে নিলে,আরিয়ান পিছন থেকে বলে উঠে,-
""মিস তিশা আপনে রাগ করে যখন এভাবে দ্রুতো হাটা ধরেন তখন আপনার সেক্সি কোমড়টা কিন্তু বেশ এট্রাকটিভ লাগে।সেটা কিন্তু আমাকে প্রতিনিয়ত আকর্ষণ করে চুম্বকের মতো।তা কি জানেন""
---আরিয়ানের এমন লাগাম ছাড়া কথায় তিশার মাথাটা গরম হয়ে যায়।ভয়ংকর দৃষ্টিতে আরিয়ানের দিকে তাকায় তিশা।
করিডোরে সাজানো কৃত্রিম একটা ফুলদানি ছিলো সেটা আরিয়ানের ঠিক সামনে আছাড় মারে।
তার মানে হলো,তিশারও মন চাইছে আরিয়ানকে এভাবে আছাড় মারতে।ভাগ্যিস এই পাহাড়ের মতো মানুষটিকে তিশা তুলতে পারবে না বলে বেঁচে গেলো আরিয়ান এই যাত্রায় ।
"তিশা চলে যাওয়ার পর,আরিয়ানও বাকা হেসে শিষ বাজাতে বাজাতে হাটা ধরে পার্কিং এর দিকে।আরিয়ানের কন্ঠে ছিলো ---
""আমি যে কে তোমার
তুমি তা বুঝে নাও
আমি চিরদিন তোমারি তো থাকবো
তুমি আমার আমি তোমার""
---সেদিন অফিস থেকে আসার পর নিশিকে ফোন করে সব খুলে বলে তিশা।
"নিশিও কিছুটা অবাক!
আরে যাই বলিস না কেনো তিশা, এই আরিয়ান, জিসান ভাই থেকে কিন্তু কোনও অংশে কম না।আমি সেদিন অফিসে দেখেছিলাম তাকে।"
'নিলয় ভাইয়া পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো।তার আমার সাথে এতো সুন্দর করে কথা বলা।আমাকে বোন বলে ডাকা,এসব দেখে আমার সত্যিই মনে হয় এটাই জিসান ভাইয়া।আর এই পর্যন্ত যা উনি তোর সাথে করেছে,একটু ভেবে দেখ ভাইয়া ছাড়া তোর সাথে এমন করার সাহস কার আছে তাও আবার ভাইয়ার অফিসে।'
---কিন্তু নিশি উনি যদি জিসান হতো তাহলে কেনো এভাবে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে।আমাকে অন্তত বলতে পারতো।
"তা জানি না,কিন্তু আমাদের সত্যটা জানতে হবে।
---কিভাবে?(তিশা)
"এই আরিয়ান জোবান এর বাড়ী কোথায় রে ।"
---জানি না,কিন্তু অফিসে পেয়ে যাবো ঠিকানা।
"তাহলে ঠিক আছে,কাল উনার বাড়ীর ঠিকানা নিয়ে সোজা আমার কলেজের সামনে এসে পড়বি।আমরা তার বাড়ী গিয়ে তালাশ করবো।আই হোপ কিছুনা কিছু ক্লু পেয়ে যাবো।
---সত্যিই,কিন্তু আমার ভীষণ ভয় লাগছে নিশি।
"আরে আমি আছি না।তুই টেনশন করিস না।ঘুমা এখন।আর আমাকেও ঘুমাতে দে।"
---আর পরের দিন নিশির প্লানিং অনুযায়ী যখন তিশা আর নিশি আরিয়ানের বাড়ীতে লুকিয়ে ঢুকেছিলো।তখন বাড়ীতে লাগানো সি সি টিভি ক্যামেরাতে দুজন ক্যাপচার হয়ে যায়।আর তারই একটা ভিডিও রেকডিং কাল আরিয়ান তিশাকে পাঠায়।যা দেখে তিশার মাথায় বাঁশ পড়ে।
---রেস্টুরেন্টে তিশা ও নিশির অপর পাশে বসে আছে আরিয়ান।তিশার দিকে না তাকিয়ে নিশিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-নিশি আপনে এখানে কি করছেন।আমি তো মিস তিশাকে আসতে বলেছি,আপনাকে ইনভাইট করেছি বলে মনে হয় না।
'একচুয়েলি ভাইয়া,হয়েছে কি...।'
---লেট মি ফিনিশ নিশি,আমার কাছে কিন্তু মিস্টার রায়হানের নাম্বারও আছে,আপনে চাইলে ভিডিওটি উনাকে পাঠাতে পারি।উনি মাস্ট বি খুব গর্বিত হবে,উনার বউ আর বোন চোরিচুপি কারো বাড়ীতে প্রবেশ করেছে তা যেনে।
'রায়হানকে ফোন করার কথা শুনে, নিশি সাথে সাথে উঠে দাঁড়ায়।আসলে ভাইয়া আমার কিছু জরুরী কাজ আছে,আমি অন্যকোনও দিন আপনাদের সাথে আবার জয়েন হবো কেমন।আজ আসি।'
---নিশি চলে যেতে নিলে তিশা নিশির ব্যাগটা ধরে ফেলে,চোখের ইশারায় নিশিকে বুঝায় বোনরে আমাকে এই দানবটার কাছে একা ফেলে চলে যাস না, প্লিজ।
'নিশিও চোখের ইশারায় বলে,নিজে সামলাবি বলেছিলিনা এখন সামলা।আমি এসবে নেই।বায়।'
---তিশা অসহায় দৃষ্টিতে নিশির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
"হঠা আরিয়ানের কর্কশ কন্ঠে তিশা চমকিয়ে যায়।তাকিয়ে দেখে আরিয়ান ওরই দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে।তিশা সাথে সাথে চোখ সরিয়ে ফেলে,আরিয়ানকে জিঙ্গেস করে এখানে ডাকার কারণ।"
---কিন্তু আরিয়ান কিছু বলতে নারায,শুধুওয়েটারকে ডেকে লাঞ্চ অর্ডার করে।
"মিস্টার আরিয়ান কথা বলছেন না কেনো।আমাকে এখানে কেনো ডেকেছেন।"
---আরিয়ান স্থির দৃষ্টিতে তিশার দিকে তাকিয়ে, লাঞ্চ করার জন্য।
" মানে!মানে কি।আপনে আমাকে লাঞ্চ করার জন্য এখানে এভাবে ডেকেছেন।"
---হুম,কেনো! কোনও সমস্যা।
"অবশ্যই সমস্যা,আপনে ভাবলেন কি করে আমি আপনার সাথে বসে লাঞ্চ করবো।নো! নেভার।"
---তিশা উঠে চলে যেতে নিলে,আরিয়ান ফোনটা হাতে নিয়ে বলে,আপনার ভিডিওটা কিন্তু ধারুন হয়েছে মিস তিশা।এটা ভাইরাল হলে রাতারাতি আপনে ফেমাস হয়ে যাবেন।মিডিয়াতো ঝাঁপিয়ে পড়বে।পত্রিকায়,টেলিভিশনে শুধু আপনার খবরই প্রচার করা হবে।জিসান আহমেদ এর ওয়াইফ বলে কথা।
"তিশা রেগে আরিয়ান এর দিকে তাকায়,আপনে আমাকে ব্লাকম্যাল করছেন।"
---যদি আপনে আমার কথা এখন না শুনেন,তাহলে ব্লাকম্যালই। আপনে যা খুশি মনে করতে পারেন।তবে তার আগে বসুন এবং লাঞ্চ করুন।বাকি কথা পড়ে হবে।
"তিশাকে এখনো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আরিয়ান একটু ধমকের সুরে তিশাকে বসতে বললে,তিশাও ভয়ে চুপচাপ বসে পড়ে।
রাগে তিশার গা জ্বলে যাচ্ছে,তাই বির বির করে বলে দুনিয়ার সব হিটলার কি আমার কপালেই পড়ে।"
-----"ক্লাবে আরিয়ানের পাশে বসে আছে অর্ক।হাতে তার ওয়াইন এর গ্লাস।কিন্তু নিজের হাতের গ্লাসের চেয়ে অর্কের আরিয়ানের উপর ধ্যান এখন বেশি।অর্কের হচকচ দেখে
নিরবতা ভেঙ্গে আরিয়ানই বলা শুরু করলো,
কিছু বলবেন মিস্টার এ কে।"
'আপনে কি করে জানলেন আমি কিছু বলবো।'
"আরিয়ানে মুখের বাকা হাসিটা এ কে হয়তো খেয়াল করেনি। তাই এসব বলছে।
আমি বোকা নই এ কে।আমার চোখ সামনে থাকলেও আমার আশেপাশে কে কি করছে সবই আমি জানি।কি! বিশ্বাস হচ্ছে না।"
'আমার পেছনে তাকিয়ে দেখুন,একজন বস তার অফিসে কর্মরত একজন সাধারণ কর্মচারীকে কোন এক কারনে বকছে আর মদ গিলছে।আর ব্যাচারা কর্মচারী মাথানত করে সব শুনছে।'
"আমার রাইট সাইডে তাকিয়ে দেখুন কয়েকজন ফ্রেন্ডস মিলে সেলিব্রেশন করছে,তাদের মধ্যে একজন আজ বাবা হয়েছে বলে।আর আপনে তো আমার এতো কাছে বাম সাইডে বসে আছেন।আপনার মানিব্যাগে এখন কেশ কতো টাকা আছে তাও আমার জানা।"
---এ কে একটু ভয় পেলো,এদেখি জিসান থেকে বিপদজনক।
"আপনে বিনা সংকোচে বলতে পারেন এ কে, কি বলতে চান।"
'আপনে অসলেই স্মার্ট মিস্টার আরিয়ান।না বলে পাড়ছি না।
আচ্ছা এতো কোম্পানি রেখে আপনার নযর জিসান ইন্ডাস্ট্রির উপরই কেনো পড়লো।যতোটুকু আমি জেনেছি মিস্টার জিসান মারা যাওয়ার পর কোম্পানির শেয়ারের দাম অনেক নেমে গিয়েছিলো।কোম্পানির অবস্থায়ও তেমন ভালোছিলো না।কোম্পানিতে তো তালাই লেগে যেতো যদি না মিঃনিলায় এসে সামলাতো।এমন একটা কোম্পানিতে আপনার এতো ইন্টেরেস্ট কেনো একটু বলবেন।'
---আরিয়ান এবার নিজের হাতের গ্লাসটি টেবিলে রেখে,এ কের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে মারলেন।
তাহলেতো বলতে হয় এ কে,আমার মতো আপনেও বোকা।আপনার এই ডিলটা অনেক কোম্পানি নিতে চেয়েছিলো,কিন্তু আপনে ওই সব কোম্পানি ছেড়ে এই কোম্পানিকে কেনো চুজ করলেন বলেন তো।
"আমারতো কিছু পারসোনাল রিজেন ছিলো তাই।"
---মিসেস তিশা আহমেদ, রাইট।(আরিয়ান)
এ কে বিষম খেলো,আরিয়ানের কথায়।আপনে কি করে জানেন।
"আরিয়ান এবার এ কের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,জানিতো আমি আরো অনেক কিছু এ কে।বাট আমার আবার আপনার পারসোনাল রিজেন জানার কোনও ইন্টেরেস্ট নেই।তাই বাদ দিলাম।
কিন্তু আমার একটা কথা কান খুলে শুনে রাখুন।কোম্পানি তো আজ না হয় কাল আমার হয়েই যাবে।কিন্তু এবার মজার বিষয় কি হয়েছে জানেন,কোম্পানির সাথে সাথে কোম্পানির এম ডি কেও এখন আমার চাই।
আর এই আরিয়ান যখন কোনও জিনিসের উপর হাত দেয়,সেই মুহুর্ত থেকে ঐ জিনিসের মালিক হয়ে যায়।তাই আমার জিনিসে নযর দেওয়ার ফল আপনার জন্য হয়তো ভালো হবে না এ কে।আমি জিসান না যে, আপনাকে আরো একটা সুযোগ দেবো।"
---এ কে ভড়কে যায়।আপনে আমাকে হুমকি দিচ্ছেন মিঃআরিয়ান।
"আমি আপনাকে সাবধান করছি।"
"এ কে রেগে ওখান থেকে চলে যায়।ভেবেছিলো আরিয়ানকে ব্যবহার করবে নিজের কাজ উদ্ধার করতে।কিন্তু এই আরিয়ান দেখি আশিক হয়ে গিয়েছে তিশার।দিনদিন এই মেয়েটার পাল্লা এতো ভারি হয়ে যাচ্ছে যে,ওকে শাস্তি দেওয়ার আশা ছাড়তে হবে ভবিষ্যৎ এ।"
----হঠাৎ আরিয়ানের কাধে হাত রাখলো কেউ।আরিয়ান দেখার আগেই দুজন ব্যক্তি আরিয়ানের দুপাশে বসে পড়লো।
রায়হান আর নিলয়কে দেখে আরিয়ান কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো।
"হ্যালো আরিয়ান,কেমন আছেন।"(রায়হান)
---আরিয়ান নিজেকে সামলিয়ে,হাসিমুখে জবাব দিলো, সে ভালো আছে।
'নিলয় দুজনের জন্য ড্রিংকস অর্ডার করতে নিলে,রায়হান বাধা দেয়।'
---সরি নিলয়, আমার জন্য ওনলি সোপ্ট ড্রিংকস চলবে।
'আর ইউ কিডিং মি,তুই বারে বসে সোপ্ট ড্রিংকস খাবি।'
---ভাই তোরতো বউ নেই,তাই জ্বালা বুঝিস না।অকারণে ড্রিংকস করে বাসায় গেলে,বউ খাটে জায়গা দিবে না আজ।
একটা ড্রিংকস এর কারনে আমাকে নিশি সাতদিন বিছানায় জায়গা দেয় নি,জানিস।সোফায় ঘুমাতে হয়েছে।
'রায়হানের কথা শুনে নিলয় হাসিতে গড়াগড়ি।' "আরিয়ানেরও ভীষণ হাসি পেলো,বাট তা প্রকাশ করলো না।"
'সো রায়হান বাড়ীর সবাই কেমন আছে,ভালোতো।'
---হুম,আপাততো ভালো।তবে বাবা খুব টেনশনে থাকে আজকাল।
'কেনো কি হয়েছে।'(নিলয়)
---কি আবার!তিশা!
যার একমাত্র মেয়ে এতো অল্প বয়সে বিধবা হয়ে গিয়েছে, সে মেয়ের বাবার মনের পরিস্থিতি কেমন হওয়া উচিৎ বলতো। তার উপর তিশার জিসানের কথা মনে পড়লেই যখন তখন ডিপ্রেশনে চলে যাওয়ার কারণে বাবা তিশাকে নিয়ে খুব টেনশনে আছে।
"হুম, বুঝতে পারছি।কিন্তু কি করার আছে, সবই ভাগ্য।এটার সোলুশন তো কিছুই দেখছি না।"(নিলয়)
---বাবা অনেক ভেবে একটা সোলুশন বের করেছে।এতে তিশা হয়তো জিসানকেও ভুলে যাবে আর তিশার লাইফের গাড়ীও আবার চলে উঠবে।
"রায়হানের এমন কথায় আরিয়ান এবার বিষম খায়,আর চকিতে রায়হানের দিকে তাকিয়ে জিঙ্গেস করে।সোলুশন! কি এমন সোলুশন বের করেছেন আপনার বাবা।"
---ও মিস্টার আরিয়ান! আমি আসলে খেয়াল করেনি ,সরি।আসলে আপনে যেখানে বসে আছেন ওটা জিসানের পছন্দের জায়গা।তাই কিছুক্ষণের জন্য তো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম আপনে জিসান না আরিয়ান।আসলে আপনার আর জিসানের সব কিছু একতো তাই।
"ইটস্ ওকে!এখন বলুন।"
---কি?(রায়হান)
"মিস তিশার জন্য এমন কি সোলুশন বের করা হয়েছে যে, সব ঠিক হয়ে যাবে বলে মনে করেন।"
---ও ওটা।ওটা তেমন কিছু না।(রায়হান)
"তবুও আমি জানতে চাই।"
---কিন্তু কেনো?ওটা আপনে যেনে কি করবেন।(রায়হান)
"আরিয়ান এবার রাগি কন্ঠে রায়হান কে জিঙ্গেস করলো,রায়হান বলুন প্লিজ।"
---আসলে,বাবা তিশার আবার বিয়ের চিন্তা করছে।বাবার মতে তিশা একবার অন্যকাউকে বিয়ে করলে নিজের অতীত থেকে বের হতে সহয হবে।
নতুন স্বামীর ভালোবাসায় পুরোনও স্বামীকে হারানোর বেদনা ভুলে যাবে।আমার মতে এটাই ঠিক।
"ওয়াট"!(আরিয়ান)
---হুম,এমনকি বাবাতো ছেলেও খুঁজে রেডি করে রেখেছে।তিশার সাথেও খুব শীঘ্রই এই বিষয় নিয়ে কথা বলবে।
আমি আশা করছি তিশা বাবার কথা ফেলবে না এবার।
"ও আচ্ছা এতোতারাতারি ছেলেও রেডি করা হয়ে গিয়েছে।বাহ ভালোতো।বিয়ে আবার!বিয়ে করার স্বাদ একদম মিটিয়ে দেবো ফাজিল মেয়ের।আরিয়ান দাঁতেদাঁত চেপে মনে মনে বলছে।
---তাই নাকি,হলেতো ভালোই হবে।তো ছেলেটা কে শুনি।(নিলয়)
"কে আবার।ডাক্তার নিবিড়।উনিতো এক পায়ে রাজি তিশাকে বিয়ে করতে।মিস্টার আরিয়ান হয়তো নিবিড়কে চিন্তে পারছেন না।না চেনারি কথা।নিবিড় আমার দূর সম্পর্কের ফুফুর ছেলে।ডাক্তার মানুষ, ছেলে হিসেবেও ভালো।আর কি চাই।"
---রাগে আরিয়ানের চেহারা কেমন শক্ত হয়ে গিয়েছে,হাতে রাখা গ্লাশটিকেও চাপ দিয়ে ভেঙ্গে ফেলে।যার ফলে সাথে সাথে আরিয়ানের হাতদিয়ে রক্ত পড়া শুরু হয়ে যায়।
'রায়হান আর নিলয় ব্যাপারটা বুঝেও অবুঝের মতো প্রশ্ন করে,কি হলো মিস্টার আরিয়ান।এনি প্রোবলেম!'
----নো,আই এম পার্ফেক্টলি অলরাইট। আমার কিছু কাজ আছে,আমি আসি।আরিয়ান চলে গেলো।
"আরিয়ান যাওয়ার পর নিলয় আর রায়হান হো হো করে হেসে দিলো।"
---যা বলিস রায়হান, একদম ফাটিয়ে দিয়েছিস।ব্যাচারার আজ রাতের ঘুম হারাম।
"হুম,নিজেকে খুব চালাক মনে করে শ্যালা।ও যে কলেজের হেডমাস্টার, আমিও ওই একই কলেজের প্রফেসার হয়তো ভুলে গিয়েছে সব ও।
ওর রগে রগে চেনা আমার,আর আমাকেই বোকা বানাতে চেয়েছে।
তাইতো ওর সবচেয়ে দূর্বল জায়গাটাই আঘাত" করেছি,রিয়েকশন না করে যাবে কোথায়।"
---কিন্তু তোর কি মনে হয় ও এখনো শিকার করবে ও আরিয়ান না।
'ও করবে ওর ঘাড়ও করবে।একা একা হিরো সাঝতে চায়,ভুলে গিয়েছে এই গল্পে আমরাও আছি।'
---হুম,তাইতো...এখন কি করবে ও জানিস।
"কি আর করবে,মনে আজ আগুন লেগে গিয়েছে,নিভাতে হলে প্রিয়তমার কাছে এবার ধরা দিতেই হবে।"
---নিলয় আর রায়হান আবার একসাথে হেসে উঠলো।কারণ ওরা যেনে গিয়েছে আরিয়ানই জিসান।তাইতো তিশার বিয়ের মিথ্যা কথা বলে,জিসানকে একটু শায়েস্তা করলো দুবন্ধু মিলে।কারণ ওরা জানে জিসান নিজেকে যতোই শক্তিশালী দাবি করুক না কেনো,এই একটি জায়গায় এসে ও দূর্বল হয়ে যায়।আর আজও হলো।
চলবে....।
[খুব তাড়াহুড়া করে লিখেছি,কারণ পার্সোনালি আমি খুব ব্যস্ত সময়ের মধ্যে কাটাচ্ছি।বোনের এংগেজমেন্ট সামনে।ফ্যামিলি ফাংশন, বুঝতেই পারছেন ব্যস্ত থাকার কারণ কি।নেক্সট পার্টটা ও লেট হবে।আমি টাইম মেনটেইন করতে পারছি না।আশা করি পাঠক রাইটারের অসুবিধাগুলো বুঝতে পারবেন।
ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ।]
"তিশার মুড অফ,ভীষণ মুড অফ।কেনো?কি কারনে জানা নেই।অফিসের জানালার দিকে মুখ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে।দৃষ্টি তার মেঘলা আকাশটার দিকে।
আকাশটা কেমন মেঘে কালো হয়ে আছে,তাইতো সকাল থেকেই গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে আজ।
তিশার মন চাইছে দূরে কোথায়ও ছুটে চলে যেতে কোনও মেঘলা আকাশে।যেখানে থাকবে না কোনও পিছু টান,থাকবে না কোনও কস্ট।
আচ্ছা এই বৃষ্টিতো সব কিছু ধুয়ে মুছে প্রকৃতিকে অপরুপ সৌন্দর্যে সাঝায়,তাহলে কি এই বৃষ্টি পাড়বে আমার জীবনের কালো মেঘগুলোকে সরিয়ে ফেলতে।
আজ কেনো জানি বৃষ্টি স্নান করতে মন চাইছে।নিজেকে সম্পূর্ণ ভিজিয়ে ফেলতে মন চাইছে।হয়তো এই বৃষ্টিই পারবে আমার কস্টগুলো দূর করতে।"
---হঠাৎ দরজায় কারো নক করার শব্দে তিশার ধ্যান ভাঙ্গে।নিজেকে কিছুটা সামলিয়ে নিয়ে বাহিরে দাঁড়ানো ব্যক্তিটাকে ভেতরে আসতে বলে।
'কেবিনের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে নিবিড়।'
---এই সময় নিবিড়কে দেখে তিশা কিছুটা চমকে হয়।
আরে নিবিড় ভাইয়া,আপনে এই সময় এখানে।
'নিবিড় একটা চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলে,এখানে একটা কাজে এসেছিলাম,ভাবলাম তোমার সাথেও দেখা করে যাই।কেমন আছো তুমি এখন?'
---এই তো আছি।
'সব সময় এমন ডিপ্রেশন জড়ানো কথাবর্তা কেনো বলো তো।'
---তিশা একটু মুচকি হেসে,খুশি হবার মতো কিছু নেই যে জীবনে তাই।
'তো অফিসে সব কেমন চলছে,শুনলাম জিসানের মতো দেখতে কোনও আরিয়ান নামক ব্যক্তি এসেছে।কথাটা কি সত্য।'
---হুম,সত্য।
'তাহলে ও কি জিসান?'
---আরে না ভাইয়া,এই লোকটা একটা বদমাশ টাইপের মানুষ।আমার জিসানের চেহারাটাই মিলে শুধু আর কিছু না।
'ও!..বাট তুমি এতো কনফিডেন্স কিভাবে।'
---ভাইয়া আপনি হয়তো ভুলে গিয়েছেন,জিসান আমার ভাইয়ের বাল্যকালের বন্ধু ছিলো আর এখনতো আমার হাসবেন্ড ,সেই সুবাদে তাকে আমার থেকে কে ভালো করে চিনবে বলুন।এই ব্যক্তি জিসান হলে সবার আগে আমার কাছেই ধরা খেতো।
'নিবিড় মাথা নাড়িয়ে,রাইট।
মনে মনে নিবিড় একটু খুশিই হলো এটা যেনে।'
---নিজের গাড়ী থেকে নেমে আরিয়ান অফিসের বিল্ডিং এ প্রবেশ করলো।মোবাইলে কারো সাথে কথা বলতে বলতে নিজের কেবিনের দিকে যাওয়ার সময় হঠাৎ চোখ পরে তিশার কেবিনের দিকে।
দরজাটা হালকা খোলা ছিলো বলে,স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তিশা ও নিবিড় কিছু একটা বিষয় নিয়ে খুব হাসাহাসি করছে।
"নিবিড়কে দেখে আরিয়ান উরফ জিসানের রায়হানের কথাগুলো মনে পরে গেলো।আর তখনি মেঝাঝটা সাথে সাথে বিগড়ে গেলো।"
'এই মেয়ে কি সত্যি সত্যি এই নিবিড়কে বিয়ে করে নিবে নি।
আরে কিভাবে বিয়ে করবে,আমি ওর স্বামী এখনো বেঁচে আছি।তাহলে কিসের বিয়ে।
কিন্তু আমি বেঁচে আছি, এটা আমি জানি।তিশাতো জানে না।আমার শ্বাশুর মশাই আমার পিচ্ছি বউটাকে ইমোশনাল ব্লাকম্যাল করে আবার বিয়েটিয়ে না দিয়ে দেয়।
না না এ হতে পারেনা।তখন আমার কি হবে।
আমি এটা কিছুতেই হতে দিতে পারিনা।যার জন্য এতো কিছু করছি যদি সেই আমার জীবনে না থাকে তাহলে এসব করে লাভ কি?
সব কিছু জাহান্নামে যাক,আগে আমার বউকে আমার কাছে আনতে হবে,যেভাবেই হোক।
আরিয়ান ভাব,কি করবি।আরে ওয়াট আরিয়ান! আমি তো জিসান।হে আমি জিসান।উফ!আমার মাথাটা মনে হয় গেছে।
জিসান নিজের সাথে বির বির করে বলতে বলতে নিজের কেবিনের দিকে যাচ্ছিলো আর তখনি নিলয়ের সাথে আচানক ধাক্কা লাগে।"
---নিলয় নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখে,কেমন টেনশড মনে হচ্ছে।
'আর ইউ ওকে মিস্টার আরিয়ান।'
"আরিয়ান একটু বিরক্ত চোখে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
ইয়া, আই এম অল রাইট।আমার আবার কি হবে।"
'ওকে!বলে নিলয় একটু মুচকি হাসলো।'
---নিবিড়কে সাথে নিয়ে তিশা কেবিন থেকে মাত্র বের হলো।
নিলয় তা দেখতে পেয়ে তিশাকে একটু জোড়েই পিছন থেকে ডাক দেয় জাতে আরিয়ান শুনতে পায়।
"তিশা নামটি শুনে আরিয়ানও পিছনে তাকায়।"
---কোথায় যাচ্ছো তিশা।(নিলয়)
'এইতো নিবিড় ভাইয়ার সাথে লাঞ্চ করতে একটু বাহিরে।'
---ওকে, লাঞ্চ করে তারাতারি চলে এসো,একটা প্রজেক্ট নিয়ে কিছু ডিশকাশন করার ছিলো তোমার সাথে।
"ওকে...বলে তিশা নিবিড়ের সাথে চলে গেলো।একবার পিছনে তাকালে হয়তো বুঝতে পারতো একজোড়া রক্তিম চোখ ওকেই দেখছে।শুধু দেখছে না জ্বলে পুড়ে ছাড়খার হয়ে যাচ্ছে।"
_______________
--- তিশা কেবিনে বসে কিছু ফাইল চেক করছে।রাগে একপ্রকার শরীর জ্বলছে ওর।তখন নিবিড়ের সাথে লাঞ্চ করতে গিয়ে তারাতারি ফিরে আসতে হয়েছে।কারণটা ছিলো আরিয়ান।
আরিয়ান ফোন করে তিশাকে দশ মিনিটের মধ্যে অফিসে হাজির হওয়ার ফরমাশ জারি করেছে।অগত্যা তিশাকে না চাওয়া সত্যেও নিবিড়কে সরি বলে অফিসে হাজির হতে হয়েছে।তিশার খুব রাগ উঠলেও আপাততো এখন চুপ থাকাটা ভালো মনে করছে।
কারণ শুধু শুধু নতুন কোনও ঝামেলায় জড়াতে চায়না তিশা।তাই চুপচাপ নিজের কাজ করছে।
"কিছুক্ষণ পর নিলয় আর আরিয়ান তিশার কেবিনে আসে প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা করতে।আলোচনার একপর্যায় জানা যায় ওদের ঢাকার বাহিরের ফ্যাক্টরিতে অনেকদিন ধরে কিছু সমস্যা চলছে।সমস্যা গুলো এতোদিন চোখে না পড়লেও এখন সোলভ না করে উপায় নেই।যতো তারাতারি সম্ভব কাউকে না কাউকে ওখানে যেতেই হবে।তাই তারা ডিসাইড করবে কে যাবে তখনি কেবিনের দরজা খুলে প্রবেশ করলো নিশি।"
--- নিশিকে দেখেই তিশা অবাক,তিশা ভাবতে লাগলো আজ কি সারপ্রাইজ দিন। সবাই দেখি সারপ্রাইজ দিতে চলে আসছে।
আরে নিশি তুই এখানে....তিশা আর বলতে পারলো না।
'নিশি এতোটাই রেগে ছিলো যে ডানেবামে না থাকিয়ে তিশার উপর চওড়া হয়ে গেলো।
-তিশা তুই আর আহমেদ ভিলায় যাবিনা।যেখানে তোর সম্মান নেই সেখানে থাকার মানে হয় না।তুই অফিস শেষ করে আমাদের বাসায় চলে আসবি।আমার ভাই বেঁচে না থাকলেও তোর ভাই কিন্তু এখনো বেঁচে আছে ভুলে যাস না।'
"নিশি রিলেক্স,তুই যা আমি তোর সাথে পরে কথা বলবো এই বিষয়।"(তিশা)
---পরে কেনো,আর তোর সমস্যা টা কি বলতো।তোকে জাতে কেউ কিছু বলতে না পারে, তাইতো ভাইয়া তার সব কিছু তোকে দিয়ে গিয়েছে, তবুও কেনো তুই ওখানে পরে থেকে ওসব চিপ মানুষের কথা শুনিস।
"নিশি বড়দের সমন্ধে এসব কথা বলতে হয় না,আর তোকে এসব বলছে টা কে শুনি।"
---তুই বলবি না বলে কি,সবাই নিজের মুখে কি কুলুপ দিয়ে রাখবে মনে করেছিস।আর মামীর সাহস কি করে হলো তোকে....তিশা আর কিছু বলতে দিলো না নিশিকে টেনে কেবিনের বাহিরে নিয়ে গেলো।
'-নিলয় আর আরিয়ান দু'জন খুব মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনছিলো।নিলয় ব্যাপারটা তেমন না বুঝলেও আরিয়ানের বুঝতে বাকি রইলো না বাসায় কিছু একটা হয়েছে।
মামীরা হয়তো আবার তিশাকে কিছু একটা বলেছে,যার কারণে তিশা আবার খুব হার্ড হয়েছে।তাইতো সকাল থেকেই তিশা অনেক আপসেট ছিলো।'
" কখন কি বলতে হয় এসব কি এখন তোকে বলে দিতে হবে নিশি।"
-'কি করেছি আমি।'(নিশি)
---কেবিনে নিলয়, আরিয়ান ছিলো সেটা দেখেছিস।রাগের মাথায় কতো কিছু বলে দিলি।নিশি এটা আমাদের পরিবারের বিষয় আমি চাইনা এসব কেউ বাহিরের মানুষের কানে পৌঁছাক।(তিশা)
"সরি রে,খেয়াল করিনি।কিন্তু তুই কেনো মামীদের কথার কোনও উত্তর দিলিনা বলতো।ভাই নেই বলে এদের এতো সাহস বেড়েছে।ভাই থাকলে আহমেদ ভিলায় আসার সাহসও পেতো না।
বড় হয়েছে তো কি হয়েছে তাই বলে কি এদের যা মন চাইবে তাই বলবে।আর মা! আমিতো খুব অবাক হলাম মা কেনো একটিবার প্রতিবাদ করলো না।আর কেউ যেহেতু কিছু বলেনি অত্যন্ত নিজের জন্য তুইতো কিছু বলতে পারতি চুপ না থেকে।"
---কি বলবো? তারা খারাপ কিছুতো বলেনি,এটাতো সত্যই আমি অপয়া, অলক্ষি।তাইতো বিয়ের তিন-চার মাসেই নিজের স্বামীকে খেয়ে ফেললাম।আমার কারনেই তো জিসান আজ আমাদের মাঝে নেই।সত্যি বলতে এসব কিছু আমার কারনেই হয়েছে।আমি জিসানের জীবনে একটা অভিশাপে পরিণত হয়েছিলাম।তাইতো আমার কারণে বার বার উনার লাইফে এতো ঝামেলা হতো।আমি না থাকলে জিসান হয়তো আজ আমাদের মাঝে বেঁচেও থাকতো।
আর কি বললি মায়ের কথা। খবরদার মা সম্পর্কে একটাও উল্টাপাল্টা কথা বলবি না।জানিসই তো মা আগের মতো নেই।একদম চুপচাপ হয়েগিয়েছে।
'নিশির হাতটা ধরে তিশা,দেখ নিশি আমার কপালে সুখ নেই,তাইতো আমার সাথে এমন হয়েছে।নিজের দোষের বোঝা আমিতো অন্যের ঘাড়ে ফেলতে পারিনা,তাই না।'
"স্টোপ তিশা কিসব বলছিস।আরে জন্ম মৃত্য তো উপরওয়ালার হাতে এখানে তোর কি করার আছে।তাই এসব নোনসেনস্ কথাবর্তা একদম আমার সামনে করবি না।চড় মেড়ে দাঁত ফেলে দেবো।"
'কি?আমি কিন্তু তোর ভাবী হই,সম্পর্কে।ভুলে যাস না।'
---তাহলে আমি কি উড়ে এসে জুড়ে বসেছি।আমিও তো সম্পর্কে তোর ভাবী হই।অবশ্যই আমার অধিকার আছে তোকে মারার।(নিশি)
"ওকে আমার একমাত্র ভাইয়ের একমাত্র বউ,আর আমার একমাত্র ভাবী।এখন আপনে একটু শান্ত হোন।আর বাড়ীর এসব নিয়ে তোকে একদমই ভাবতে হবে না।আমি সামলিয়ে নিবো সব।তুই এখন বাসায় চলে যা আমি পড়ে তোর সাথে দেখা করবো নি। ওকে.."।
_________________
---তিশা ও নিশির সব কথা জিসান আড়ালে দাঁড়িয়ে শুনেছে।আগের সেই পুরানো রাগটা আবার যেনো মাথায় চড়ে উঠলো।
কিন্তু আজ জিসানের রাগটা উঠছে এখন নিজের পরিবারের উপর।তিশাকে কেউ ওরই পরিবারের সামনে অপমান করার সাহস পেলো কিভাবে।নাকি ও বেঁচে নেই যেনে,তিশাকেও এখন তাদের আপন মনে হয় না।তাহলে কি এটাই সত্য স্বামী না থাকলে শ্বশুর বাড়ীর সাবাই ও তখন পর হয়ে যায়।আমার পরিবারও কি তিশার সাথে এমন করছে।
'-এসব ভাবণার মাঝে হঠাৎ জিসানের ফোনটা বেজে উঠলো,জিসান ফোনটা রিসিভ করে,
হ্যালো সোম বলো,কি খবর।
---------------
---------------
সোম আমার অর্ককে লাগবে না।অর্কতো হাতের মুঠায় আছে।যখন তখন ওর গলা চেপে ধরতে পারবো,আর এবার ওর পালাবার পথও আমি খোলা রাখবো না।
আমার তো অর্কের পিছনে লুকিয়ে থেকে আঘাত করার ঐ ব্যক্তিটি কে লাগবে যে এসব করছে।ওই অচেনা ব্যক্তিটির জন্যইতো এতো আয়োজন।আজ আমি জীবিত থেকেও সবার নিকট মৃতো।
-------------
-------------
ওকে,কিছু জানলে আমাকে জানাবে।খুব সাবধানে কাজটা করবে।কেউ জাতে জানতে না পারে।জিসান ফোনটা কেটে পকেটে রেখে ভাবনায় ডুব দিলো,
--- হুম,অর্কের সাথে আরো এক ব্যক্তি আছে যে লুকিয়ে থেকে আঘাত করছে।ওই ব্যক্তির ইশারাই জিসানকে মারার চেষ্টা করা হয়েছে।
অর্কতো জাস্ট একটা মোহরা। কলের কাঠিতো সেই অচেনা মানুষটির হাতে।কে সে জিসান জানে না।উদ্দেশ্য কি তার।অর্ক না হয় তিশা আর আমার থেকে প্রতিশোধ নিতে এসব করছে।কিন্তু এই অচেনা ব্যক্তিটি কি চায়।আর কে?
"সবাই জানে তিশা চারবার সুসাইড করার চেষ্টা করেছে,কিন্তু এটা কেউ জানে না।এতো বছর পর অর্ককে নিজের সামনে দেখে তিশা নিজেকে সামলাতে পারেনি।
রায়হান নিলয় থেকে খবর পেয়ে তিশাকে দেখতে আহমেদ ভিলায় আসে। আর তিশাকে সামলানোর চেষ্টাও করেছিলো।তিশার মনে সাহস জাগাবারও চেষ্টা করেছিলো।কিন্তু তিশার সাথে একের পর এক ঘটে যাওয়া ঘটনায় তিশা এতোটাই ভেঙ্গে পড়েছে যে, চেষ্টা করেও সামলাতে পারছিলো না।তার উপর অর্কের প্রতি ওর ভয়টা আবার মাথায় চড়ে বসেছিলো।প্রচণ্ড ডিপ্রেশনের কারণে
সেদিন রাতে রায়হান চলে যাওয়ার পর তিশা আবার সুসাইড করার চেষ্টা করে।
"আর তখনি অন্ধকার ঘরে চাঁদের আবছা আলোয় একটি ছায়ামূর্তি দেখতে পায় তিশা।নিজের ভ্রম মনে করে তেমন পাত্তা দেয়না তখন।কিন্তু যখনি ছুড়িটা হাতে চালাতে নেয় তখনি রুমের একটা ভারী ফুলদানি পড়ে ভেঙ্গে চুড়মার হয়ে যায়।তিশা কিছু বুঝে উঠার আগেই শব্দ শুনে ঝর্ণা রুমে হন্তদন্ত হয়ে প্রবেশ করলো।"
----ঝর্ণার রুমটা তিশার রুমের সাথে,তাই এতোরাতে কিছুপড়ার শব্দ পেয়ে তিশার রুমে ছুটে আসে কি হয়েছে জানতে'।
তিশা ঝর্ণাকে দেখে হাতের ছুড়িটা লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করে,কিন্তু সরানোর আগেই ঝর্ণা তা দেখে ফেলে।ঝর্ণা সে বিষয় কিছু না বলে তিশাকে জিঙ্গেস করে ফুলদানিটা ভাঙ্গলো কিভাবে ভাবী।"
---তিশা মিথ্যা বলে হাত লেগে পড়ে গিয়েছে।
"ঝর্ণা বুঝতে পারে তিশা আজ আবার নরমাল বিহেভ করছে না।আর এতোরাতে জেগে থাকার কারণ এখনো হয়তো ওষুধ খায়নি তিশা।
তাই ঝর্ণা নিজের হাতে একটা ঘুমের ওষুধ নিয়ে তিশাকে খাইয়ে দেয় জোড় করে।আজকাল এই ঘুমের ওষুধই তিশার একমাত্র সঙ্গি।তিশার মাইন্ডকে ফ্রেশ রাখার জন্য,আর কোনও উল্টাপাল্টা ভাবনায় নিজেকে যাতে জোড়াতে না পারে তাই ডাক্তার ওকে ঘুমের ওষুধ দিয়েছে ।"
----কিন্তু তিশা জানতো না,প্রতিরাত যখন ও ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তো তখন কেউ একজন পরম যত্নে ওকে বুকে টেনে নিতো।তিশা সারারাত জিসানের বুকে মাথারেখে ঘুমিয়ে থাকতো। অথচ ও বিষয় একদমই অবগতো নয় তিশা।ভোর হলে তিশা উঠার আগেই জিসান চলে যেতো।জিসান চেয়েছিলো আড়ালে থেকে নিজের সব শত্রুদের শায়েস্তা করবে।তাইতো এতোসব প্লান।কিন্তু জিসান বুঝতে পারেনি এসবের কারণে যে তিশা এতোটা ভেঙ্গে পড়বে।
"তিশার অফিস জয়েন হবার পর যখন অর্ক সামনে আসলো,তখন কিছুক্ষণের জন্য জিসান অর্ককেই ম্যান কালপিট ভেবেছিলো।কিন্তু জিসান তার সোর্স লাগিয়ে গোপন সূত্রে জানতে পারে,অর্ক একা নয় এই খেলায়।আরো একজন আছে, কিন্তু এই আরো একজনটা কে।
জিসানের ধারনা সে ব্যক্তি অবশ্যই আমাদের চেনাজানা হবে।আর আমাদের আশেপাশেই হয়তো ঘুড়ে বেড়াচ্ছে কিন্তু আমরা তা দেখতে পাচ্ছিনা।
'অর্কের আচানক সামনে আসা, তিশার উপর হামলা,আর তিশার বার বার সুসাইড করার কারণে জিসানকেও সামনে আসতে হয়েছে আরিয়ান হয়ে।
জিসান চেনে না ওর শত্রুকে,তাইতো আরিয়ানের পিছনে লুকিয়ে থাকা জিসানকে প্রকাশ করছে না কারো কাছে আর না বলতে পারছে কাউকে ওর আসল পরিচয়।"
---এছাড়া জিসান বুঝতে পারছে যে নিলয় আর রায়হান যে ওকে সন্দেহ করছে।একচুয়েলি সন্দেহ কি,ওরা উঠে পড়ে লেগেছে আরিয়ানকে জিসান প্রমান করাতে।কিন্তু রায়হান আর নিলয়কে বলার মতো সময় হয়নি এখনো।তাইতো তাদের যতোটা পারছে ইগনোর করার চেস্টা করছে।অচেনা ব্যক্তিটি কে তা না জানা পর্যন্ত কাউকেই বলা যাবে না,নিজের আসল পরিচয়।এতে সবার লাইফই রিস্কের উপর থাকবে।আর ঐ আচেনা ব্যক্তিটিকেও আর ধরা যাবে না।
______________
---আরিয়ান আহমেদ ভিলার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আজ অনেকদিন পর নিজের কাছের মানুষগুলো দেখতে পাবে ভেবেই চোখের কোনায় জল চলে এসেছে জিসানের।কিন্তু প্রিয়জনদের দেখে দূর্বল হলে চলবে না,তাই সানগ্লাসটা লাগিয়ে নিলো চোখের জলটাকে লুকানোর জন্য।।
দারোয়ান গেটখুলে দেওয়ায় আরিয়ান গাড়ী নিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লো।
"শোফায় বসে আছে আরিয়ান,আর তারই সামনে বসে আছে তৌফিক সাহেব ও মিসেস রাবেয়া।আরিয়ানকে দেখে জিসানের কথা মনে পড়ে গেলো সবার।
বাড়ীর সবাই আরিয়ান সম্পর্কে আগেই জেনেছিলো।তাই কেউ অতোটা রিয়েক্ট না করলেও নিজের আবেগটাকে সামলাতে পারেনি মিসেস রাবেয়া,মা বলে কথা।
'তাওহিদ কখন থেকে মাকে সামলানোর চেষ্টা করছে।আরিয়ান আসবে বলে,তাওহিদও আজ হাসপাতালে যায়নি।নিজের ছোট ভাইয়ের মতো দেখতে এই লোকটিকে দেখার লোভ সামলাতে পারেনি হয়তো।"
---আরিয়ান স্থির হয়ে বসে মাকে দেখছে,খুব কস্ট হচ্ছে ওর নিজেরও।কিন্তু এই মুহুর্তে ওকে দূর্বল হলে চলবে না।নিজের লক্ষ্যের অনেক কাছে চলে এসেছে।তাই নিজেকে অনেক কষ্টে সামলিয়ে রাবেয়া বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললো---
আন্টি আমিওতো আপনার ছেলের মতো।শুধু নামটাই আলাদা।কিন্তু আমিও মানুষ,আমাকেও আপনার মতে কোনও মাই জন্ম দিয়েছে।রাবেয়া বেগমের কাছে এসে হাটুতে ভাজ করে বসে আরিয়ান।
মনে করেনিন আমিই জিসান।হয়তো আল্লাহ আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে আপনার মতো মায়ের ভালোবাসা পেতে।এতে আপনেও একটা ছেলে পাবেন আর আমিও একটা মা।কি বলেন আন্টি হবেন কি আমার মা।"
'রাবেয়া বেগম নিজেকে আর সামলাতে পারলো না।আরিয়ান নামের পিছনে লুকানো জিসানকে বুকে টেনে নিলো রাবেয়া বেগম।এতোদিন পর মায়ের ভালোবাসা পেয়ে আরিয়ানের চোখেও জল এসে পড়েছে,তবে সেটা গড়িয়ে পড়ার আগেই সবার আড়ালে লুকিয়ে ফেলেছে।'
---তিশা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে এসব কিছুই দেখছিলো।আরিয়ানের লুকিয়ে ফেলা চোখের জলটাও দেখে ফেললো।
আরিয়ান নামের ব্যক্তিটি তিশার জন্য কেমন জানি রহস্যে ঘেরা একটা ছায়া।
যা তিশার আশেপাশে থাকলেও তিশা তার আসল চেহারা দেখতে চাইলে দেখতে পায় না,ধরতে নিলে লুকিয়ে যায়।ছেড়ে দিলে কাছে টানতে চায়।
মিস্টার আরিয়ান আপনে আমার জন্য দিনদিন মিস্ট্রিম্যান হয়ে যাচ্ছেন।
তিশা মনে মনে এসব চিন্তা করেই যাচ্ছে।
"তিশা ও আরিয়ান সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ীতে গিয়ে বসলো।তিশা গাড়ীর পিছনে গিয়ে বসলে আরিয়ান লুকিং গ্লাশে তাকিয়ে তিশাকে সামনে আসতে বললো।
মিস তিশা আমি কিন্তু আপনার ড্রাইভার না।তাই প্লিজ সামনে এসে বসুন।"
---তাহলে ড্রাইভার কেনো আনলেন না শুনি।
"আমি গাড়ী নিজে চালাতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি তাই।"
---কিন্তু আপনার সাথে যে যাবে তারও তো ভালোমন্দ বোঝা উচিৎ আপনার। তাই না।
"মিস তিশা বড্ড বেশি কথা বলেন আপনি।মিস্টার জিসান আপনাকে কিভাবে যে টলেরেট করতো আল্লাহই জানে।আপনি
কি সামনে আসবেন।নাকি আমি কোলে করে আনবো।তখন কিন্তু আপনার আবার ভালো লাগবে না।"
---অসভ্য লোক কোথাকার,তিশা বির বির করে বলতে বলতে সামনে গিয়ে বসলো।আরিয়ানও বাকা হেসে গাড়ীটা স্টার্ট দিলো।
"জিসানের মনে চলছে অনেক প্লান।জান,এসে পড়েছিস আমার খাঁচায় আবার।যাবে এখন কোথায়।বন্দি তোরে এবার এমন ভাবে করবো দূরে গিয়েও কাছে থাকবি।অস্থিত্বে মিশে যাবি একেবারে।"
---গাড়ী চলছে তার আপন গতিতে,লক্ষ্য তাদের খাগড়াছড়ি। কয়েকমাস আগে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের গঞ্জপাড়ায় একটা সুতোর ফ্যাক্টরি কিনেছিলো জিসান।আশ্চর্য বিষয় হলো এই সুতা কোনও সাধারণ সুতা নয়,কারণ এটি তৈরি হয় কলাগাছের বাকল দিয়ে।খাগড়াছড়ি পাহাড়ী এলাকা,আর তাই এখানে সারাবছর কলা উৎপাদন করা হয়।কলা নেওয়ার পর পরিত্যক্ত গাছগুলো ফেলে দেওয়া হতো।কিন্তু এখন এটাকে কাজে লাগিয়ে সুতা তৈরি করা হয়,যাকে বলে কলা সুতা।
তবে এটাতে শুধু কলার বাকলটাই ব্যবহার করা হয় আর অবশিষ্ট অংশদিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি করা হয়।আমরা কাল অফিসে এই নিয়েই আলোচনা করেছিলাম।ব্যাপারটা আমার জন্য একদম নতুন ছিলো।তাইতো বলি সাহেব আমার শহর রেখে গ্রামে কেনো গেলো ফ্যাক্টরি কিনতে।
উৎপাদিত এই পণ্য এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাহিরেও রফতানি করা হয়।তবে সব থেকে ভালো যা হলো---
এই শিল্প আর ফ্যাক্টরির কারণে এখানকার মানুষের কর্মসংস্থান এর ব্যবস্থা হওয়ায় বেকারত্ব অনেক কমেছে।আর এই উৎপাদিত সুতা খুব চওড়া দামে বিক্রি করা হয় এখানে।
তবে উৎপাদনের পথে বাধা সৃষ্টি করছে এখানকার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা।বিদ্যুতের লো-ভোল্টেজ এর কারণে উৎপাদনে ধীর গতি চলে।আর এই সমস্যার কারণে শ্রমিকের মজুরি ও কমে যায়।কারণ প্রতি কেজি সুতা উৎপাদনে একজন শ্রমিক পান ১৩টাকা।প্রতিদিন একজন শ্রমিক ৫০কেজি সুতা উৎপাদন করতে পারে।কিন্তু লোডশেডিং এর কারণে তা সম্ভব হয় না।কোনও কোনও দিনতো একজন শ্রমিক ৩০০ টাকাও আয় করতে পারেনা।যার কারণে শ্রমিকরাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে কাজের প্রতি।
এখানকার এসব সমস্যা গুলো সসমাধান করার জন্যই আমাকে এখানে আসতে হয়েছে।আমাকে নিলয় একা কিছুতেই আসতে দেবে না বলে,ডিসাইড হলো আরিয়ানও যাবে আমার সাথে।সোমও নেই,হঠাৎ কি হলো কে জানে।ও আমাকে একা রেখে ছুটিতে চলে গেলো।আর নিলয় এ কের প্রজেক্ট নিয়ে ব্যস্ত তাই বাধ্য হয়ে এই আরিয়ানের সাথেই আসতে হলো আমাকে।
________________
"কলেজের ক্যাম্পাসে নিশি,নিলু আর ওদের কয়েকজন ফ্রেন্ডস মিলে বসে বাদাম খাচ্ছে আর আড্ডা দিচ্ছে।আজ আর কোনও ক্লাশ নেই বলে।"
---ঠিক ওই সময় ভূতের মতো অচেনা ছেলেটি হাজির হয়। আর নিশির হাতটা ধরে সবার সামনে থেকে টানতে টানতে কলেজ গেটের বাহিরের দিকে নিয়ে জেতে লাগলো।
"নিশি নিজেকে ছুটানোর চেষ্টা করতে লাগে,আর চিল্লাতে থাকে।"
'-ওই ফাজিল ছেলে ছাড় আমায়।তোর সাহস হলো কি করে আমাকে ধরার।আরে পাবনার পাগল কতোবার বলেছি আমি তোর কুহুনা।কালা নাকি।বয়ড়ার গুষ্ঠি ছাড় আমায়।'
---নিলুও পিছন পিছন ছুটছে নিশির।
"হঠাৎ অচেনা ছেলেটির একবন্ধু এসে ওদের সামনে দাঁড়ায়।
আশিষ কি কিরছিস ছাড় উনাকে।তোর মাথা খারাপ হয়েগিয়েছে।জানিস উনি কে?ছাড় প্লিজ ভাই।"
---সাহেদ পথ ছাড় আমার, এমনেই আমার মাথা গরম।তুই দেখিসনি ওকে কতোদিন ধরে বুঝাচ্ছি, সরিও বলেছি।কিন্তু না বারবার আমাকে ইগনোর করেই যাচ্ছে।আজ ওকে বলতেই হবে কেনো।কি দোষ আমার।
"ভাই,ও তোর কুহু না"।(সাহেদ)
'ওই বয়ড়া আমি তোর কথা কেনো শুনবো।আরে ভাই আমি তোর কুহু না।আমি নিশি।আরে বয়সে ক্লাশে তোর থেকে বড় আমি।'
---চুপ একদম চুপ।আর একটা কথা বললে এখানেই মেরে ফেলবো।(আশিষ)
---ধমকটা এতো জোড়েই ছিলো যে নিশিও ভয় পেয়ে গেলো।
'সাহেদকে সামনে থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিশিকে টেনে গাড়ীতে তুলতে নিলে,কেউ একজন এসে বাধা দেয়।
আশিষ কিছু বুঝে উঠার আগেই কারো ভারী হাত আশিষের গালে পড়ে।আর আশিষ ছিটকে গিয়ে মাটিতে পড়ে যায়।'
---এতো ভালো একটা কাজ কে করেছে দেখতে নিশি পিছনে ঘুড়লে ভয়ে একটা শুকনো ঢোক গিলে।কারণ সামনে স্বয়ং রায়হান দাঁড়িয়ে আছে।
অগ্নি চোখে নিশির দিকে তাকালে নিশিতো ভয়ে জ্ঞান হরাবার উপক্রম।
'রায়হান এমনে খুব শান্তশিষ্ট কিন্তু রাগলে অনেকটা ভয়ংকর হয়ে যায়।ও রাগের মাথায় কিছু করেনা সহযে।কিন্তু রাগ উঠলে কাউকে ছাড়ে না।এতোক্ষনে পুরো ক্যাম্পাসে ভিড় জমে গিয়েছে।'
---খবর পেয়ে কিছু সিনিয়রও চলে আসে দেখতে,তবে রায়হানকে দেখেই চুপ হয়ে যায় সবাই।কারণ রায়হানকে ওরা খুব ভালো করে চিনে।ওদের বড়ভাইদের মুখে রায়হান এবং জিসানের অনেক কর্মকাণ্ডের কাহিনী শুনেছে।
এরা ভার্সিটি লাইফে কাউকে ভয় পেতো না।অনেক আগে এই কলেজের কয়েকটা ছেলেকে রায়হান আর জিসান মিলে অনেক মেরেছে।কিন্তু কি কারণে কেউ জানেনা।ভয়ে কেউ জিঙ্গেস করার সাহসও পায়নি সেদিন।
"রায়হান আশিষকে টেনে দাঁড় করালো।আশিষের শার্টের কলারটা ঠিক করতে করতে শান্তভাবে বললো---
আজ যা করেছো তা দ্বিতীয়বার করার সাহস করোনা।মনে রেখো আমি বারবার মাপ করিনা।
আর তুমিতো এখনো বাচ্চা আমার সামনে।তাই প্রথমবার মনে করে মাপ করেদিলাম।কিন্তু মনে রেখো বাচ্চা যখন অবাধ্য হয়ে যায়,আর বাপের সাথে বেয়াদবি করে।তখন বাচ্চাকে শিক্ষার জন্য বাপকেও অন্যপথ বেছে নিতে হয়।আর আমার অন্যপথটা তোমার জন্য মোটেও ভালো হবেনা।তাই সাবধান! আমার পুরানো রেকর্ড কিন্তু ভালো না।"
---রায়হান যে আশিষকে শান্তমাথায় হুমকি দিয়ে সাবধান করছে,তা সিনিয়ারদের বুঝতে বাকি রইলো না।তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে,সিনিয়াদের মধ্যে একজন বলে উঠলো--
ভাই,ভিড় জমে গিয়েছে।আপনে ভাবীকে নিয়ে চলে যান।আমরা বাকিটা দেখছি।
"রায়হান একবার চারপাশে চোখ বুলিয়ে,নিশির হাত ধরে বাইকে বসালো।"
'নিশি ব্যাচারী এখনো ভয়ে কথা বলতে পারছে না।আল্লাহই জানে এই যমরাজ আমায় বাসায় নিয়ে আজ কি করে।আল্লাহ বাঁচাও।'
চলবে..
[নেট প্রবলেম এর কারনে গল্পটা দিতে লেট হয়েছে।আশা করি পাঠাক বুঝতে পারছেন।রি-চেক করা হয়নি।তাই ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]
"আকাশে ভিড় জমাচ্ছে ঘন কালো মেঘের দল।বৃষ্টিরা আসছে হওয়ার আঁচল উড়িয়ে।জলছবির আড়ালে কেউ কেউ হয়তো নিজের স্বপ্নগুলো বুনছে আপন মনে প্রিয়জনের সাথে।আর আমার স্বপ্নগুলো!দীর্ঘ একটা শ্বাস ছাড়ে তিশা।
যাকে গিড়ে দেখিছি তাকে যে পেয়েও যেনো পেলাম না।
আমার দিনগুলো কেটে যায় উদাসীনতায়,আর নির্ঘুম রাতগুলো কাটে শুধু তারই ভাবণায়।সে কখনো আসবে না যেনে তবুও কেনো এই চোখদুটোও তাকেই খুঁজে।শেষ যেনো হয়না এই অন্তহীন খোঁজার প্রহর।গাড়ীর জানালায় মাথা ঠেকিয়ে কিসব অদ্ভুত চিন্তা গুলো ঘর বাধছে তিশার মনের কোনায় আজ।"
--- চোখদুটোতেও ঘনকালো মেঘ জমে এসেছে,যেকোনও সময় হয়তো বর্ষণ হয়ে ঝড়ে পড়বে।
জিসান লুকিং গ্লাশ দিয়ে আড়চোখে সব দেখছে।তিশার না বলা প্রতিটি কথা জিসান অনুভোব করতে পারে।তিশাকে কষ্ট পেতে দেখলে,জিসান যে নিজেও বেঁচে থেকে মরে যায়।
এই মেয়েটিকে কিভাবে বুঝাবে জিসান।ওর এই উদাসীন চেহারা,ছলছল চোখ যে আমায় ভীষণ পোড়ায়।ভীষণ ভাবে!
"তিশার মানসিক অবস্থা তেমন ভালো না,দু'দিন আগে যখন জিসান রাতে তিশার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো লুকিয়ে,তখন তিশার অবস্থা দেখে জিসান নিজেই আতকে উঠে।
কারণ তিশা ঘুমের মধ্যই ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদছে।ঘুমের ওষুধের কারণে তিশার শরীরটা হয়তো ঘুমিয়ে আছে।
কিন্তু মন!মনকে হয়তো তিশা ঘুমের মধ্যেও শান্ত করতে পারছে না।
জিসান গিয়ে সাথে সাথে তিশাকে বুকে জড়িয়ে নিয়েছিলো।জিসানের শরীরের উষ্ণ তাপে তিশা একদম শান্ত হয়ে যায় কিছুক্ষণ পর।
তিশার এই অবস্থা দেখে জিসানের নিজেরও অনেক কষ্ট হচ্ছে।সাথে এটা ভেবে সুখও লাগছে যে, এই মেয়েটা ওকে কতোটা ভালোবাসে।"
তিশাকে নিজের সাথে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে জিসান।
---সরি জান,অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তোকে।আর না,আর তোকে কোনও কষ্ট পেতে দেবো না।আমি তোর সব কষ্টগুলো সুখে পরিণত করবো এবার থেকে।'
আর সেদিন জিসান নিজের সাথে নিজেই এক ওয়াদা করে তিশাকে পুরোপুরি সুস্থ করে তুলার।
-তানা হলে দেখা যাবে নিজের শত্রুদের দমন করতে গিয়ে না আবার নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে ফেলে চিরোতরে।
তাই জিসান প্লান করলো তিশাকে এখান থেকে দূরে কোথাও কিছুুদিনের জন্য নিয়ে যাবে।
হয়তো এই সফর তিশার জীবনের সব কষ্ট দূর করে তিশাকে আবার আগের মতো প্রাণচাঞ্চল্য করে তুলবে।
'জিসান তাই মিথ্যা বলে তিশাকে নিয়ে যাচ্ছে খাগড়াছড়িতে।'
-তবে সব মিথ্যা না,এখানে জিসানের একটা প্রজেক্ট আছে,তবে তার একার না।পার্টনারশিপে এই প্রজেক্টার সাথে জরিত জিসান।
তাইতো জিসানের এখানে আসার তেমন কোনও প্রয়োজন হয় না।খুব বেশি সমস্যা হলে সোমকে পাঠিয়ে দিতো।কিন্তু এবার আসতে হলো তিশার কারণে।
---গাড়ী ছুটছে তার আপন গতিতে উদ্দেশ্য খাগড়াছড়ি ।লম্বা রাস্তা,সাথে মেঘলা আকাশ।গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়া আবার শুরু করেছে।
জিসান গাড়ী চালাবার ফাঁকেফাঁকে তিশাকে বারবার দেখছে।
'মাঝেমাঝে বৃষ্টির কিছু ঝাপটা এসে তিশাকে ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে।তিশার কপালে গালে লেগে থাকা বিন্দু বিন্দু জলগুলো দেখে জিসানের তৃষ্ণা যেনো বেড়ে গেলো।এ যে প্রেমের তৃষ্ণা, তিশাকে কাছে পাওয়ার তৃষ্ণা।
এখন তো বৃষ্টির উপরই রাগ বাড়ছে জিসানের।ওর প্রিয়তমাকে ছোঁয়ার অপরাধে বৃষ্টিকে আজ নির্গাত মৃত্যুদন্ড দিতো,যদি দেওয়া যেতো।
হিংসায় জিসান গাড়ীর গ্লাশগুলো সব লাগিয়ে দিলো।
"গ্লাশগুলো লাগালেন কেনো,ভালোই তো লাগছিলো।প্লিজ খুলে দিন।"(তিশা)
---নো মিস তিশা,বৃষ্টির ঝাপটায় আপনে এমনেই অনেকটা ভিজে গিয়েছেন।তার উপর এই ঠাণ্ডা বাতাসে আপনার জ্বর চলে আসবে।
"না আমার কিছুই হবে না,আপনে খুলুন।"
---আরিয়ান লুকিং গ্লাসে তিশার দিকে তাকিয়ে শক্ত ভাবে বললো,নো মিনস নো।
এর আগে একবার বৃষ্টিতে ভিজে অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো মনে নেই।আবার করতে চান।
"আপনে কি করে জানলেন আমি বৃষ্টিতে ভিজে--- তিশাকে আর বলতে না দিয়ে আরিয়ান বললো,
আমি আমার আশেপাশের সবার অতীত,বর্তমান সব খবরই রাখি মিস তিশা, সো রিলেক্স।"
"কিন্তু তিশার আরিয়ানের কথা বিশ্বাস হলো না।তাই কেমন সন্দেহ নযরে তাকিয়ে রইলো।"
---তিশাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে,
মিস তিশা আমি জানি আমি অনেক হ্যান্ডশাম এন্ড এট্রাকটিভ।কিন্তু এই মুহুর্তে আপনে যদি এভাবে তাকিয়ে থাকেন তাহলে নির্গাত এক্সিডেন্ট হবে।তখন কিন্তু আমাকে দোষারোপ করতে পারবেন না।
"তিশা একটু লজ্জা পেলো,আর সাথে আরিয়ানের উপর রাগও।এই লোকটি এমন কেনো,আমাকে লজ্জায় ফেলার একটা পথও ছাড়েনা।
গাড়ী আপনে চালাচ্ছেন মিস্টার আরিয়ান আমি না।তাহলে!"
---হুম,আমিই চালাচ্ছি, কিন্তু আপনার ওই চোখ দু'টো যে কেউকে ঘায়েল করে দিতে পারে তা কি জানেন।আর এখন আপনে আমাকে ঘায়েল করছেন।ঘায়েল হয়ে গাড়ী চালাবো কি করে,তখন এক্সিডেন্ট হলে হতেও পারে। তাইনা।
"তিশা বুঝে গিয়েছে আরিয়ান সুযোগ পেয়ে আবার ফ্লার্ট করার চেষ্টা করছে।তাই চুপ থেকে একমনে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।"
---দু'জনেই এখন নিরব,কিন্তু ওদের মন দু'টি এই প্রকৃতির মতোই একবিন্দু জল পেয়ে ভালোবাসার তৃষ্ণা নিবারন করতে চায়।পাবে কি একবিন্দু জল এই তৃষ্ণার্ত মনগুলো!হবে কি ওরা আবার এক।
______________
"অফিসে এসেই নিলয় ওর পিএ ডেইজিকে ডেকে আরফান শেখকে কেবিনে পাঠাতে বললো।আরাফান শেখ কোম্পানির এক্সিকিউটিভ ম্যানেজার।"
---আরাফান শেখ দরজায় নক করে, আসবো স্যার।
"জি আসুন মিস্টার শেখ।"
---জি আপনে আমায় ডেকেছেন স্যার।
"হুম,আগে বসুন এখানে।"
---জি বলুন স্যার কেনো ডেকেছেন, কোনও বিশেষ প্রয়োজন,কোনও সমস্যা হয়েছি কি?
"এতো তাড়া কিসের শেখ সাহেব।আর আপনে এতো ঘামাচ্ছেন কেনো এসির মধ্যেও।"
---কই নাতো।
"সব ঠিক আছে তো। শুনলাম বনানীতে নতুন ফ্ল্যাট কিনেছেন।
গুড,কিন্তু আমার তথ্য মতে আপনার ছেলেমেয়েদের অনেক ব্যয়বহুল জায়গায় পড়াশুনা করান আপনে আর আপনে যেখানে থাকেন তাও অনেক নামীদামী ফ্ল্যাটে।আর বর্তমান বাসাটা আপনার নিজের না ভাড়ার,রাইট। আপনার যা বেতন ছেলেমেয়েদের খরচ, সংসার খরচ আর ব্যাংকের লোন শোধ করে যা অবশিষ্ট থাকে তা দিয়ে অন্তত বানানীতে ফ্ল্যাট কিনার মতো না নিশ্চয়ই।তবু কিনেছেন।
কোথায় কোন খাজানা পেয়েছেন আমাকেও একটু বলুন শেখ সাহেব।"
---স্যার আপনে ভুল ভুজছেন।আসলে হয়েছে কি ..... নিলয় আর বলতে দিলো না।
স্টোপ শেখ সাহেব।
আমাকে বোকা মনে করবেন না।আপনে যে আমাদের কোম্পানির কনফিডেন্টশিয়াল ইনফোরমেশন লিক করে যে রাতারাতি ধনী হবার প্লানিং করছেন,তা কিন্তু আমার জানা।
"আরাফান শেখ একটু ঘাবড়ে গিয়ে বলে---ক ককিসব ব বলছেন।কোনও প্রমান ছাড়া আমার উপর এধরনের অ্যালিগেশন লাগাতে পারেন না আপনে স্যার।"
---মিস্টার শেখ আপনে হয়তো জানেন না,আপনার ফোনকলের প্রতিটি রেকডিং আছে আমার কাছে।আপনে কি শুনতে চান।আমার কিন্তু কোনও সমস্যা নেই।আপনে এখানে শুনবেন নাকি পুলিশের সামনে।
"পুলিশের কথা শুনে আরাফান শেখ ভয় পেয়ে যায়।সাথে সাথে নিলয়ের হাত ধরে আকুতিমিনতি করতে লাগে।
Iam sorry.please don't call the police sir..."
----এমন ভুল আর দ্বিতীয় বার হবে না।
"আপনাকে এই ভুল দ্বিতীয়বার করার সুযোগটাও দেবোনা।আপনার কাছে এখন একটাই পথ খোলা,আপনে নিজের ইচ্ছায় রেজিগনেশন লেটার জমা দিন।সবাই তাহলে জানবে আপনে নিজ ইচ্ছায় জবটা ছেড়েছেন।কারণ আমি বের করলে সবাইকে সত্য কথাটা বলতে হবে,তখন আবার আপনে কোনও কোম্পানিতে চাকীরও পাবেন না।আপনার পরিবারের কথা চিন্তা করে আমি আপনাকে পুলিশে দিলাম না।
এখন বলুন কি করবেন।"
---মিস্টার শেখ নিলয়ের কথামতো সব করতে রাজি হলো।
"আজ সকালে নিলয় অফিসে আসার পর সোমের ফোন আসে।আর সোমই সব ইনফোরমিশন দেয় নিলয়কে।
নিলয় আগেই বুঝতে পেরেছে সোমের এমন হঠাৎ করে উধাও হবার কারণ।এতোদিন তিশাকে গার্ড করার কারণে ওর সব ধ্যান এখানেই ছিলো।
কিন্তু এখন যেদিন থেকে আরিয়ান অফিস জয়েন করেছে,সোমও আগের মতো তিশার দিকে নযর রাখেনা।নিলয়ের কাছে তখন একটু খটকা লাগলেও পরে সব কিছু বুঝতে পারে আস্তে আস্তে।
একদিকে আরিয়ান আসায় নিলয়ের সুবিধাই হয়েছে।এতে নিলয়ও তার সব ধ্যান এ কের প্রজেক্টাতে লাগাতে পারছে।আর এতে কাজের গতিবেড়ে গিয়েছে,কিছুদিনের মধ্যে প্রডাক্টটা লঞ্চ ও হয়ে যাবে সময়ের আগে।আর এতে এ কের এই কোম্পানিতে আসার সব ধরনের যোগাযোগ ও বন্ধ হয়ে যাবে।"
___________
"মাথার দুপাশে দুআঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরে, মাথাটা নিচু করে অফিসের শোফায় বসে আছে অর্ক।একটু আগে শেখ ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে সব।এরপর থেকেই মাথাটা অসহ্য ব্যাথা করছে।
করারি কথা একটার পর একটা প্লান ওর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।অর্ক এখন টেনশনে পড়ে গিয়েছে,এখানে এসে কোনও ভুল করে নিতো।"
---ঠিক এই সময় কেবিনের দরজা খুলে কেউ প্রবেশ করলো।
"অনুমতি না নিয়ে কেবিনে প্রবেশ করায় অর্ক মাথাটা উপরে তুলে কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলো না।
কারণ সামনের লোকটিকে দেখে অর্ক বুঝে গিয়েছে সিচুয়েশন এখন কোনও দিক দিয়েই ভালো না।"
---লোকটি এসেই অর্কের সামনে রাখা সিঙ্গেল শোফায় বসে পড়লো।
"ডাক্তার চুপ না থেকে কিছু সাজেশন করো।"
---কোন ব্যাপারে।(ডাক্তার)
"মাথা ব্যাথার।এর থেকে এখন নিবারণ কিভাবে পাবো।"
---অর্কের এমন আহাম্মক মারা কথা শুনে, লোকটি ভীষণ রেগে গেলো।ফাইজলামি চলছে এখানে এ.কে।খুব তো বড় বড় কথা বলেছিলে,এখন তো দেখি তোমার বালেরও কোনও যোগ্যতা নেই।
"ডাক্তার মুখ সামলিয়ে কথা বলো,দেখতে তো পাচ্ছো চেষ্টাতো করছি।কিন্তু প্রত্যকবার ফ্লোপ হলে আমি কি করবো।আর আমার কথা বাদ দেও,তুমি কি করেছো।একটা কাজ দিয়েছিলাম জিসানকে মারার।
কিন্তু তাও করতে পারলে কিনা কে জানে।জিসান একচুয়েলি মরেছে কিনা সেটাও জানি না।এই আরিয়ানের চেহারা বা কেনো জিসানের মতো।আরিয়ান জিসান কিনা,জিসানই আরিয়ান কিনা এসব চিন্তা করতে করতে পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি।"
---লোকটি রেগে গিয়ে,সামনের ট্রি টেবিলে একটা বাড়ী মারলো,হু কেয়ারস!
আরিয়ান জিসান কিনা তা জানার আমার প্রয়োজন নেই।আমি শুধু জানি তিশাকে আমার চাই।আর ওকে পাবার পথে যারা যারা বাধা দিবে সবাইকে আমি শেষ করে দেবো।মাইন্ড ইট, বলেই চলে গেলো লোকটি।
" অর্ক ডাক্তারের যাওয়ার পথে তাকিয়ে শোফায় হেলান দিয়ে আড়ামে বসে একটা সিগেরেট ধরালো,আর বিশ্রি একটা হাসি ফুটে উঠলো তার মুখে।
ও ডাক্তার আমিতো চাই তুমি সবাইকে শেষ করে দেও।আর আমার পথটা ক্লিয়ার করে দেও।এসব ভেবেই অর্ক ভুবন ফাটিয়ে হাসতে লাগলো।"
'অর্ক তার পিএ কে ফোন করে একটা হলরুম বুকিং করতে বললো,সামনে তাদের পোডাক্ট লঞ্চ পার্টির জন্য।অর্কের মাথায়ও চলছে নতুন কোনও প্লান।'
_______________
"খাগড়াছড়ি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের একটি পার্বত্য জেলা।ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির দূরত্ব ২৬৬ কি.মি।অসংখ্য পাহাড় আর ঝর্ণার স্বচ্ছ পানিতে ভরপুর খাগড়াছড়ি।
প্রকৃতির সৌন্দর্য নাকি মানুষের মন ও মস্তিষ্ককে শুদ্ধ করে চাঙ্গা করে তুলে।মনকে ভালো করার সবথেকে ভালো উপায় হলো নিজেকে প্রকৃতির সান্নিধ্যে নিয়ে যাওয়া।তাইতো জিসান এতো আয়োজন করে তিশাকে এখানে নিয়ে এসেছে।"
----এখানে ছোট্ট একটা রিসোর্ট ভাড়া করে রেখেছিলো জিসান আগেই।তাই গাড়ী সোজা রিসোর্ট এর সামনে এসে থামলো।
'তিশা গাড়ী থেকে নেমেই চমকে যায়।মনে মনে বলে,এসব কি?হোটেলে না গিয়ে এখানে কেনো এসেছে মিস্টার আরিয়ান।তিশার ভেতরে আরিয়ান নামক প্রাণীটির ভয় ডুকে গেলো।'
---একজন মধ্যবয়স্ক লোক জিসানের হাতে বাড়ীর চাবি দিয়ে চলে গেলো।আবার সকালে নাকি আসবে।এমনেই অনেক রাত হয়ে গিয়েছে ওদের এখানে আসতে।ওরা আসবে বলে ডিনারও নাকি রেডি করে রেখেছে লোকটি।
আরিয়ান বাড়ীর মেনডোর খুলতে যাবে তখনি বাধ সাধলো তিশা।
"ও কিছুতেই এখানে থাকবে না।আরিয়ানকে হোটেল বুক করতে বলে।"
---দেখুন মিস তিশা,এখানে আশেপাশে তেমন কোনও ভালো হোটেল নেই।আর আমরা যে কাজ করতে এসেছি তার জন্য এই জায়গাটাই বেস্ট।তাই ড্রামা না করে ভেতরে চলুন।আকাশের অবস্থা একদম ভালোনা।মনে হয় ঝড় আসবে।
"কিন্তু তিশাও কম ত্যারা না,ও একটা বাড়ীতে আরিয়ানের সাথে একা কিছুতেই থাকবে না।কেউ জানতে পারলে কি বলবে।কেউ মিস্টার আরিয়ানকে দোষারোপ করবে না।চরিত্রের দাগ তো শুধু আমার আঁচলে পড়বে।"
---বাহিরে ঝিড়িঝিড়ি বৃষ্টি বদলি হয়ে বড় বড় বিন্দুকণায় পরিণত হয়েছে, তার সাথে পাল্লা দিয়ে ঝড় হওয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে।বাড়ীর বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা তিশা বৃষ্টির ঝাপটাতে অনেকটা ভিজে গিয়েছে।নিজেকে এখন খুব বকতে মন চাইছে।কেনো যে গাড়ী থেকে নামতে গেলাম।নেমেই এখন ফেসাদে পড়ে গেলাম।চাবিটাও নেই গাড়ীর,আর থাকলেও বা কি হতো।যে বৃষ্টি আমি গাড়ীর সামনে যেতে যেতে আরো কাকভেজা হয়ে যেতাম।উফ কি যে করি,ঠান্ডাও লাগছে খুব।মনে হয় সত্যি সত্যি জ্বর আসবে এবার।
"জিসান ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে চেক করলো তিশা বাড়ীর ভেতরে এসেছে কিনা।কিন্তু না তিশা ভেতরে আসেনি,তার মানে এতো ঝড়ের মধ্যে মেয়েটি এখনো জিদ দেখিয়ে বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।মন তো চাইছে ঠাটিয়ে একটা দিতে।একবার শুধু হাতে পেয়ে নি,তোর ভীমরতি আমি এবার সব একেবারে ছুটিয়ে ছাড়বো।"
---মনেমনে জিসান এসব ভাবতে ভাবতে বাহিরে এসে দেখে,তিশা ফ্লোরে বসে ঠান্ডায় কিছুটা কাঁপছে।জিসান তারাতারি তিশার কাছে এসে বুঝতে পারে যা ভেবেছে তাই, জ্বর চলে এসেছে।আর জ্বরের কারণে কিছুটা সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে তিশা।
'জিসান আর কিছু না ভেবে তিশাকে কোলে তুলে রুমের ভেতরে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দিলো।তিশার হাতপা গুলো ঠান্ডা বরফের মতো জমে গিয়েছে।কিছুক্ষণ পর পর জ্বরের ঘোরে উল্টাপাল্টাও বকছে।সাথে তিশা কাঁপতে লাগলো।
জিসান গিয়ে বাড়ীর কেয়ারটেকার কে কল করে আশেপাশের কোনও ডাক্তার আছে কিনা জানতে।কিন্তু কেয়ারটেকারের কথা শুনে নিরাশ হয় জিসান,কারণ এতো রাতে এখানে ডাক্তার খুঁজা মানে দূর্বাঘাসে সুই খোঁজার মতো।
"জিসান মাথায় হাতদিয়ে বসে তিশার দিকে তাকিয়ে আছে।ভেজা কাপড়গুলো এখনো তিশার শরীরে।
জিসান চট করে ওর বন্ধু ডাক্তার নাঈমের কথা মনে পড়লো।সাথে সাথে কিছু না ভেবেই ফোন দিয়ে দিলো।
---হ্যালো নাঈম, আমি জিসান।
'জিসান,কোন জিসান।জিসানতো.....।(কারণ জিসানতো মরে গিয়েছে তাই)নাঈমকে বলতে না দিয়ে।'
---ওসব পড়ে বলবো।তোর একটা সাহায্যের দরকার ছিলো।
'হুম, বল।কি করতে হবে।'
---জিসান সব খুলে বললো।
'বুঝলাম,জ্বর মনে হয় শরীরে অনেক বেশি।যেহেতু কিছু নেই ওখানে।তাই ঘরোয়া ভাবে আগে ট্রাই কর,এরপরও যদি না কমে আর শরীরের উত্তাপ আরো বাড়ে তাহলে তোকেই একটু পরিশ্রম করতে হব।বুঝছিস তো আমি কি বুঝাতে চাইছি।'
---জিসান হালকা করে হুম বলে।
জিসান সোফায় বসে তিশার দিকে তাকিয়ে আছে।ওর আগে বাড়তে কোনও সমস্যা নেই।সমস্যা তো একজায়গায়।তিশা এখনো কিছুই জানে না,সত্যিটা যে এখনো ওকে বলাই হয়নি।তাই জিসান একটু অস্বস্তি ফিল করছে।
"তিশার সুস্থ হওয়া আগে জরুরি, বাকি সব পড়ে ভাবা যাবে বলেই জিসান তিশার কাছে গিয়ে একটা একটা করে তিশার ভিজা কাপড়গুলো সব খুলে ফেলে দু'টো ব্ল্যাঙ্ককেট দিয়ে ভালো করে তিশাকে ঢেকে দিলো।ওয়াসরুম থেকে বালতি ভরে পানি এনে কপালে দিয়ে দিলো,শরীরটাও মুছে দিলো,কিন্তু তিশার অবস্থার কোনও তেমন পরিবর্তন লক্ষ্য করছে না জিসান।"
----জিসান তিশার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে তিশা জ্বরের ঘোরে কাঁপছে এখনো।জিসান নিজের সব চিন্তা বাদ দিয়ে নিজের শার্টটা খুলে ফেলে দিয়ে তিশার সাথে ব্ল্যাঙ্ককেটের ভেতর ডুকে পরে।
জ্বরের ঘোরে থাকা তিশা নিজের শরীরে কারো গভীর স্পর্শ পেয়ে,প্রথমে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে।কিন্তু জিসান এখন আর কোনও বাধা মানতে নারায।তাই তিশার হাত দু'টো বিছানায় চেপে ধরে একটু জোর করেই তিশাকে পাওয়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।প্রিয়তমাকে এতোদিন পর কাছে পেয়ে জিসান আজ নিজের মধ্যে নেই।ও আজ হারিয়ে যাবে পুরোপুরি তিশার মাঝে।
"তিশার চোখের কোনা দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।এটা সুখের না কষ্টের কারো জানা নেই।তিশা তাকে গভীরভাবে এভাবে স্পর্শ করা ব্যক্তিটির সাথে না পেড়ে চুপ হয়ে যায়।তিশাকে শান্ত হতে দেখে জিসানও তার হাতের বাঁধন খুলে দেয়।
তিশা কিছুক্ষণ পরপর কেঁপে উঠছে। তবে এই কাঁপার কারণ হয়তো জ্বর না।তিশার শরীরে বয়ে যাওয়া জিসানের হাতের স্পর্শের কারণে।"
---বাহিরের ঝড় কমে যাওয়ায় রুমে দু'জনের গোঙ্গানি আর নিশ্বাসের শব্দ ছাড়া কিছুই শোনা যাচ্ছে না।সুখের এক শেষ সীমায় জিসান তিশাকে নিয়ে যাচ্ছে।এতে শুধু ওদের শরীরের না,রুমেরও উষ্ণতাও বেড়ে গিয়েছে।
এখন শুধু ভোর হবার পালা।নতুন সকাল তিশার জীবনে কি নিয়ে আশে তা দেখার পালা।
চলবে....।
[নেক্সট পার্ট ঈদের পরে পাবেন।কোরবানি ঈদটা একটু ঝামেলার হয়,বিশেষ করে যাদের বাড়ীতে কোরবানি দেওয়া হয়।তাই ঈদের এ কয়েকদিন খুব ব্যস্ততার মধ্যে কাটবে আমার।আশা করি পাঠক আমার ধৈর্য ধারণ করবেন।
সবাইকে অগ্রিম ঈদ মোবারক। 

"আজ সকাল থেকেই আকাশটা মেঘলা ছিলো।তাইতো বিরতি নিয়ে কিছুক্ষণ পর পর গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়েই যাচ্ছিলো।সারারাত ধরে চলেছে আকাশের এই বৃষ্টি খেলা।আকাশটা একটু বেশিই গাম্ভীর্যতার রুপ ধারণ করে বসে আছে।"
----রাত বাজে এখন ৩.৩০।কিছুক্ষণ পর রাতের তীব্রতা কমে ভোড়ের আলোয় ছেয়ে যাবে আকাশ।আর এই আধো অন্ধকার আধো আলোয় পূর্ণ সকাল দেখতে বেশ লাগছে আজ।আজকের সকালটাকেও একটু ভিন্ন মনে হচ্ছে জিসানের।
বালকানিতে দাঁড়িয়ে নিকোটিনের ধোঁয়া ছেড়ে বিদায় দিচ্ছে তুষ্ট এই রাতকে।বৃষ্টি ঝড়া এই রাতে কিছু প্রাপ্তির সুখ জিসানের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে।মন থেকে আজ অনেক খুশি।আজ কতোদিন পর তিশাকে এতোটা কাছে পেয়েছে জিসান।
হয়তো তিশার প্রতি একটু অন্যায় করে ফেলেছে।কিন্তু আজ নিজের প্রতি নিজেরি কেনো কন্ট্রোল ছিলোনা জিসানের।তিশাকে পাওয়ার লোভটা কিছুতেই সামলাতে পারেনি।এখন শুধু অপেক্ষা তিশার ঘুম ভাঙ্গার।
তিশাকে সামলানো এতো সহয হবে না জিসানের।
তবুও জিসানের কোনও চিন্তা নেই,শুধু মুখে একটা বিস্ময়কর হাসি।যার কারণ হয়তো তিশা জেগে থাকলে, তিশাও বুঝতে পারতো না।
_______
"দূরের আকাশে আযানের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে,তার সাথে পাল্লা দিয়ে এলার্মটাও বেজে উঠলো।এলার্মের শব্দে রায়হানের ঘুম ভেঙ্গে গেলো।
একহাত দিয়ে কষ্ট করে এলার্মটি বন্ধ করলো।কারন আরেক হাত দিয়ে নিশিকে জড়িয়ে ধরে আছে।ঘুমন্ত নিশির কপালে একটা চুমো দিয়ে চাদরটা দিয়ে ভালো করে ডেকে দিয়ে রায়হান ওয়াশরুমে চলে গেলো শাওয়ার নিতে।"
---শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে রায়হান নিশিকেও ডাক দিলো,নামায পড়ার জন্য।নিশি আড়মোড়া দিয়ে একবার, আবার অপরপাশ শুয়ে পড়লো।
"রায়হান নিজের কাপড়চোপড় গুলো বের করতে করতে নিশিকে একটা ছোটখাটো ওয়ার্নিং দিয়ে দিলো।"
---যা শুনে নিশি লাফ দিয়ে উঠে বসলো।
"দশ মিনিট টাইম আছে তোর কাছে তারাতারি শাওয়ার নিয়ে বের হবি।নামায কাযা হলে তোর কপালে কিন্তু খারাপি আছে।"(রায়হান)
---নিশি চাদরটা দিয়ে নিজেকে আরো ভালো করে ঢেকে নিয়ে মনে মনে বললো,
শয়তান ব্যাটা রাতে কাছে টানে,আর দিনে ওয়ার্নিং।একদম দ্বিমুখী সাপ।যখন তখন রুপ বদলায়।এখন এই ঠাণ্ডার মধ্যেও আমাকে গোসল করতে হবে।উফ!
"কি হলো এখনো বসে আছিস কেনো।ধমক দিয়ে রায়হান।"
---নিশিও মুখ ভেঙ্গচিয়ে বিছানা থেকে উঠতে উঠতে বললো,
ঠান্ডা যতোদিন থাকবে আপনি আর আমার কাছে গেসবেন না,মনে থাকে যেনো।
"নিশি চলে জেতে নিলেই রায়হান নিশির হাতটা ধরে ফেলে।
কি বললি আবার বলতো।"
---ক ককই, নাতো কিছুই বলি নেই,আমি কি কিছু বলতে পারি।দেখুন আমাকে দেখে কি আপনার এমন মনে হয়।
একদম ইনোসেন্ট একটা চেহারা করে দাঁড়িয়ে আছে নিশি।মনে হয় ভাজা মাছটাও উল্টিয়ে খেতে পারেনা এই মেয়ে।
"হয়েছে এতে নাটক করতে হবে না,তোর নাটকের সব সিনস্ আমার জানা।"(রায়হান)
---নিশি ছাড়া পেয়ে যেনো বেঁচে গেলো,ওয়াসরুমের দরজার সামনে জেতেই রায়হান বললো---
"আর হে আমার যখন ইচ্ছে হবে তোর কাছে আসবো,এতে যদি তোর গোশল করতে করতে নিউমোনিয়াও হয়ে যায়।তবুও ছাড় নেই।দরকার পড়লে ডাক্তার দেখিয়ে সুস্থ করে তুলবো।তবুও আমার থেকে মুক্তি নেই।"
'নিশি রায়হানের দিকে তাকিয়ে ভয়ংকর একটা গালি দিলো।খুবই ভয়ংকর! '
---রায়হান যদি শুনতে পারতো নিশি কি বলেছে,তাহলে আজ রায়হানের মাইর থেকে নিশিকে কেউ বাঁচাতে পারতো না।
__________
"আকাশে এখন একদম মেঘ নেই,রোদের তীব্রতাও হালকা হালকা করে বাড়ছে।চারপাশের পরিবেশটা সূর্যের আলোতে অনেকটা জ্বলমল করছে।
ঋতুটাই এখন এমন,হালকা ঠান্ডা হালকা গরম।রাতে শীত অনুভোব হলেও দিনে সূর্যের তাপ যেনো সব শুষে নেয়।"
---চারপাশ খোলামেলা একটা বালকানিতে দাঁড়িয়ে জিসান কারো সাথে কথা বলছিলো।হঠাৎ ছাদের ফ্লোরে চোখ পড়লো।
কারো ছায়ার প্রতিবিম্ব দেখা যাচ্ছে।যা আস্তে আস্তে জিসানের দিকে আসছে।প্রতিবিম্বটির হাতে কিছু একটা আছে।
জিসান নিজেকে প্রস্তুত করে নিলো,ছায়াটির সাথে লড়াইয়ের জন্য।
"হঠাৎ ছায়াটি আক্রমণ করলে জিসান আচানক সরে যায়।কিন্তু ছায়ার হাতে থাকা ধারালো অস্ত্রটি একটু লেগে জিসানের বাহুটি কেটে যায় অল্প।
জিসান আক্রান্ত করা ব্যক্তিটিকে দেখে শোকড!কারন এ আর অন্য কেউ না তিশা।"
---জিসান জানতো তিশা ঘুম থেকে উঠে পাগলামো করবে, হয়তো কান্নাকাটি। কিন্তু তিশা যে অগ্নেগিরি রুপ ধারণ করবে তা তো জিসান স্বপ্নেও ভাবিনি।
"তিশা আবার জিসানের উপর হামলা করতে নিলে,জিসান তিশার দু'হাত ধরে ফেলে।"
'কি করছিস তিশা,পাগল হয়ে গিয়েছিস।'(জিসান)
---শয়তান,অসভ্য লোক।আমি আগেই বুঝতে পেরেছিলাম তুই একটা ক্যারেক্টারলেস বেহুদা মানুষ।আমার সর্বনাশ করার জন্যই হোটেল রেখে এই নির্জন কোটেজে নিয়ে এসেছিস।আমার অসুস্থতার সুযোগ নিয়েছিস।
তোর সাহস করি করে হলো আমাকে স্পর্শ করার।আজ আমি তোকে জানে মেরেই ফেলবো।তোদের মতো কুলাঙ্গারদের কারনেই তো নারীরা সেভ থাকে না।নারী দেখলেই শুধু তোদের ভোগ করতে মন চায়।আজ আমি তোকে মেরে ফেলবো শয়তান।
"তিশার এমন তুইতোকারি করে কথা বলা আর গালাগালি শুনে জিসানের মেঝাজ ৪২০ ভোল্টেজ উঠে গেলো।
তিশার হাতটা শক্ত করে চাপ দেওয়ার সাথে সাথে তিশার হাত থেকে ধারালো ছুড়িটা পড়ে গেলো নিচে।জিসান টান দিয়ে তিশাকে একদম নিজের বুকের সাথে এমন ভাবে চেপে ধরলো যে তিশা ইচ্ছা করলেও কিছু করতে পারবে না আর।"
---তিশার মুখের সামনে নিজের মুখ এনে দাঁতেদাঁত চেপে বললো,কালকের ডুশটা মনে হয় কম ছিলো।সমস্যা নেই সব সুদে আসলে আজ আবার উসুল করে দেবো।জাস্ট রাতটার জন্য একটু অপেক্ষা করো।
"এ কথা বলেই জিসান তিশাকে একটু ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে একটু দূরে সরিয়ে দেয়।কারণ কাটা জায়গা থেকে ব্লাড বের হচ্ছে।
জিসান শরীরের তোয়ালটা দিয়ে জায়গাটা চেপে ধরে,রক্ত পড়াটা বন্ধ হলে ড্রেসিং করে নিবে।"
----তিশা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে কিছু ভাবছে।বেঁচে থাকার ইচ্ছাটা আবার যেনো শেষ হয়ে গেলো তিশার মধ্যে।তিশার মন দেহ শুধু নিজের স্বামী জিসানের জন্য।এখানে আর কারো জন্য সামান্যতম জায়গা তিশা রাখেনি।আর আজ আরিয়ান সব শেষ করে দিলো।
নিজেকে তিশার আজ খুব অপবিত্র মনে হচ্ছে।
'সাদা কাপড়ে দাগ লাগলে যেমন আগের মতো হয় না,ঠিক তেমনি নারী চরিত্রটাও।'
একবার কলঙ্কিত হলে,সেই কলঙ্কের দাগ আর মুছা যায় না।
আমি একটা নষ্টা মেয়ে এটা শুনার আগেই আমার মরে যাওয়ার উচিৎ।তিশার ভাবতে দেরি কিন্তু স্টেপ নিতে দেরি হয়নি।
বালকানির রেলিং এ দাঁড়িয়ে লাফ দিতে নিলে,কেউ একজন ধরে হেচকা টান দিয়ে ঠাস করে একটা থাপ্পড় মারে।তিশা ছিটকে গিয়ে নিচে পড়ে।"
---আরিয়ানের(জিসানের) এরুপ কান্ডে তিশা ক্রোধে আরো ফেটে উঠে।
আমার সব কিছু শেষ করে এখন আবার আমাকে মরতেও দিচ্ছেন না কেনো!আর কি চাই।একবার ভোগ করে কি শান্তি হয়নি।নাকি মনে আরো বাসনা জেগেছে আপনার।
"জিসানের মাথা এবার পুরো বিগড়ে গেলো,তিশাকে ধরে দাঁড় করিয়ে টানতে টানতে বাড়ীর পিছনের সুইমিংপুলে তিশাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলেদিলো।"
---তিশা সাঁতার জানে না,তাই বার বার বাঁচার জন্য চেষ্টা করছে।কিন্তু তবুও আরিয়ানকে ডাকছে না।
আর জিসান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তিশার কান্ডগুলো দেখছে।জিসান ভাবতে লাগলো,
এই মেয়ে এতোটা জিদ্দি কি করে হলো।ভাঙ্গবে তবুও মোচরাবে না।মারবে তবুও সাহায্যের জন্য ডাকবে না।
'কিছুক্ষণ পর জিসান সুইমিংপুলে নেমে আস্তে আস্তে করে তিশার সামনে এসে তিশাকে নিজের কাছে টেনে আনে।'
"জিসানকে আরিয়ান ভেবে তিশা আরিয়ানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।"
---আমি ছেড়ে দিলে পানিতে ডুবে যাবে।
"ডুবলে ডুববো,তার পরও আপনার সাহায্য নিতে চাইনা না।খবরদার আপনি আমাকে একদম ছুঁবেন না।আপনার ছোঁয়ার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো।"
---জিসান আর কোনও আকাশপাতাল না ভেবে তিশাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে তিশার ওষ্ঠগুলো নিজের দখলে নিয়ে নিলো।তিশাকে শান্ত করার জন্য।
তিশা যতো ছটফট করতে লাগলো,জিসান তিশাকে ওতো বেশি কাছে টেনে নিলো।
'কিছুক্ষণ পর জিসান তিশাকে ছেড়ে দিয়ে কপালে কপাল ঠেকালো।'
"তিশা শান্ততো হলো কিন্তু এই শান্তি আবার তুফান আসার বার্তা নয়তো।
রাগে পুরো শরীর কাঁপছে তিশার।ধবধবে সাদা মুখখানি লাল হয়ে গিয়েছে।জিসানের দিকে এমন ভাবে চেয়ে আছে যে,আজ ছাড়া পেলে হয়তো জিসানকে খুন না করেই ঘুমাবে না তিশা।"
---জিসান তিশার এমন রুপ দেখে হেসে দিলো।তিশার কপালে নিজের ভিজা ওষ্ঠগুলো ছুঁয়ে দিয়ে বললো,
"জান,এভাবে তাকাস না,আমি যে ঘায়েল হয়ে যাবো।একবার মৃত্যুর সাথে লড়াই করে এসেছি তোর জন্য,এবার গেলে কিন্তু মৃত্যুও আমাকে ছাড়বে না।"
"মুহুর্তে তিশার চেহারার রং বদলে গেলো,চোখ দু'টো ছলছল করতে লাগলো।
তিশা কিছু বুঝে উঠার আগেই জিসান তিশাকে কোলে করে সুইমিংপুল থেকে বাহির করে আনলো।
তিশা ছলছল চোখে জিসানের সামনে এসে একবার জিসানকে স্পর্শ করতে নিলে জিসান সরে যায়।"
---তুই আমাকে হার্ড করেছিস।তাই আমাকে ছোঁয়ার কোনও অধিকার নেই তোর।
"তিশা এবার ডুকরে কান্না করে দেয়।কান্না করতে করতে জিসানের পায়ের সামনে বসে পড়ে।
আমার সাথে কেনো এমন করছেন,একটি বার আমাকে ছুঁয়ে দেখতে দিন,প্লিজ জিসান।
এরপর যা শাস্তি দিতে মন চায় দিয়েন।আমি কিছুই বলবো না।প্লিজ।"
---জিসান তিশার প্রতি যতোটা দূর্বল,তার থেকেও বেশি কঠোর তিশার সব কিছুর ব্যাপারে।তবে তিশাকে নিজের এই কঠোরতার রুপ কখনো দেখাতো না।কিন্তু তিশার বার বার আত্মহত্যা জিসানকে খুব বেশি কষ্ট দিয়েছে এবার।জিসান এটা ভাবলেও নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়,যদি তিশার কিছু হয়ে জেতো তখন।
'তাই এবার তিশাকে একটু শিক্ষা দেওয়া দরকার।জীবনটা এতো সহয না,যে বললেই শেষ হয়ে যাবে।জীবন একটাই, আর এই একজীবনে আমাদের কাছের মানুষগুলোর প্রতি অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকে।তাই আমাদের সকলকে না চাওয়া সত্যেও জীবনের সাথে লড়াই করে নিজের দায়িত্ব গুলো সুন্দর ভাবে পূরণ করতে হবে।
আর আত্মহত্যা সে তো মানব জীবনে সবথেকে জগন্যতম একটা কাজ।না আছে ইহকাল না আছে পরকাল তার ভাগে।
তাহলে কেনো!কেনো তিশা এই জগন্য কাজ করতে গেলো।তাই জিসান একটু নারায।খুব নারায তিশার উপর।'
---তোয়াল দিয়ে তিশার ভেজাচুলগুলো মুছে দিলো জিসান,কিন্তু তিশাকে স্পর্শ করতে দেয়নি নিজেকে।
ভেতরে গিয়ে তারাতারি ভেজাকাপড় চেন্জ করে ফেল।তা না হলে কালকের মতো আজও জ্বর চলো আসবে।
'তিশাকে ওভাবেই বসে থেকে কাঁদতে দেখে জিসান এবার জোরে একটা ধমক দিলো।
জিসানের ধমকে তিশা একটু কেঁপে উঠলো।সাথে সাথে রুমের দিকে দৌঁড় দিলো।'
---ওয়াসরুমে ঢুকে শাওয়ারের নিচে বসে তিশা কাঁদছে।কেনো এতো কান্না আসছে তিশা আজ নিজেও জানে না।কিন্তু কান্নার কারণে আজ মনটা হালকা হয়ে যাচ্ছে।ভাড়ী একটা পাথর মনে হয় এতোদিন জমে ছিলো মনে,যা আজ চোখের পলকে গায়ব হয়ে গেলো।
"-জিসান এসে দেখে তিশা এখনো ওয়াসরুম থেকে বের হয়নি,তাই ওয়াসরুমের দরজা ধাক্কাতে লাগলো।
জিসানের বার বার দরজায় ধাক্কানোর কারণে তিশা ওয়াসরুমের দরজাটা খুলে দেয়।"
'জিসান তাকিয়ে দেখে তিশা একটা তোয়াল পড়ে দাঁড়িয়ে আছে,আর চুল দিয়ে এখন আবার পানি পড়ছে।তার মানে তিশা আবার শাওয়ার নিয়েছে। জিসানের রাগ উঠলেও নিজেকে শান্ত করে তিশাকে ওয়াসরুম থেকে বের করে ডেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে চুলের পানিগুলো ভালো করে আবার মুছে দেয়।তারপর হেয়ারড্রাই মেশিন দিয়ে চুলগুলো ভালো করে শুকিয়ে দেয়।
---এরপর ব্যাগ থেকে একটা শাড়ী বের করে তিশার হাতে দিয়ে, তুই পড়বি নাকি আমি পড়িয়ে দেবো।(জিসান)
'তিশা শাড়ীটা হাতে নিয়ে,আমিই পড়তে পারবো।'
"গুড....বলে জিসান রুম থেকে বাহিরে চলে যায় তিশার জন্য কিছু খাবার আনতে।
জিসান খাবার এনে তিশাকে নিজ হাতে খাইয়ে দেয়।চোখদু'টো দিয়ে এখনো পানি পড়ছে তিশার তবুও কিছু না বলে চুপচাপ খেয়ে নেয় জিসানের হাতে।
সবসময় কষ্ট পেলেই যে কান্না পায় এমন না মাঝেমাঝে সুখ দেখেও কাঁদতে মন চায়।
---জিসানও জানে এই চোখের পানি আজ কষ্টের না অনাঙ্কাকিত কিছু পাওয়ার তাইতো নিজের হাতদিয়েই বারবার চোখের পানি গুলো মুছে দিচ্ছে।
খাবার খাওয়ার পর তিশাকে ওষুধ খাইয়ে দেয় কারণ এখন আবার জ্বর আসছে তিশার শরীরে।
তিশাকে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিতে বলে জিসান চলে যেতে নিলে তিশা জিসানের হাতটা ধরে ফেলে।"
তিশা হাত ধরায় জিসান তিশার দিকে এমন ভাবে তাকায়,মনে হয় এখনি তিশাকে জ্বালিয়ে দিবে।জিসানের এমন তাকানো দেখে ভয়ে তিশা হাতটি ছেড়ে দেয় সাথে সাথে।
__________
"নামায শেষ করে রায়হান ছাদে চলে এসেছে আজকের সিগ্ধ সকালটাকে দেখতে।সূর্যের আলো মাত্র ভূমিষ্ঠে পড়তে শুরু করছে।
নিশিকেও দু'কাপ কপি নিয়ে ছাদে চলে আসতে বললো,কিছু কথা আছে বলে।"
---নিশি একটু ভয় পেলো,কারণ কালকের কলেজের ঘটনার পর রায়হান এই বিষয় এখনো কিছু নিশিকে জিঙ্গেস করেনি।তাহলে কি এখন জিঙ্গেস করবে।
এমন হাজার আকাশকুসুম চিন্তা করতে করতে নিশি দু'মোগ কফি নিয়ে হাজির হলো ছাদে।
"রায়হান একটা নিয়ে নিশিকেও খেতে বললো।"
---কিন্তু রায়হান কি বলবে এটা ভেবে নিশির গলা দিয়ে আজ আর কফি ডুকছে না।
"রায়হান কফির মগে চুমুক দিয়ে বললো,তোর হাতের কফিটা চমৎকার।"
---নিশি কিঞ্চিত একটা হাসি দিলো।
'কিছুক্ষণ পর রায়হান বলা শুরু করলো,
আশিষ একজন মানসিক রোগী।ওর থেকে একটু দূরত্ব বজায় রাখিস নিশি।'
---মানে পাগল!তাইতো বলি এমন উদ্ভট কথাবার্তা বলে কেনো ছেলেটি।(নিশি)
"পাগল না ওতো,তবে মানসিক সমস্যা আছে কিছুটা।"
---কিন্তু পাগল হলো কি করে।(নিশি)
"নিশি কারো অসুস্থতার মজা নিতে নেই।ছেলেটা কিন্তু খারাপ না,পড়ালেখায় কিন্তু বেশ ব্রিলিয়েন্ট।"
---এতো ব্রিলিয়েন্ট ছেলের এমন অবস্থা কি করে হলো পড়ালিখা করে।(নিশি)
'রায়হান একটা দীর্গ শ্বাস ফেলে,না!ভালোবেসে!'
---ভালোবেসে!মানে।
"রায়হান নিশিকে নিজের কাছে টেনে এনে নিশির পিঠ নিজের বুকে ঠেকিয়ে দু'হাত দিয়ে জরিয়ে ধরলো।
ভালোবাসা এমন একটি রোগ যার থেকে মুক্তি পেতে হয়তো বড় বড় ডাক্তারও কিছু করতে পারেনা।কোনও ডাক্তারের কাছে এই রোগের ওষুধ নেই।
ভালোবাসার রোগকে কেবল ভালোবাসা দিয়েই পরাজয় করা।
আশিষ একটা মেয়েকে খুব ভালোবাসতো,মেয়েটির নাম কুহু ছিলো।কিন্তু ছয়মাস আগে মেয়েটি একটা এক্সিডেন্টে মারা যায়।মেয়েটির মৃত্যু আশিষ কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলো না।
সারা দিনরাত মেয়েটির কবরে গিয়ে পড়ে থাকতো।আর কুহু কুহু বলে কাঁদতে থাকতো।মাঝেমাঝে বাড়ী থেকে কোথাও চলে জেতো,কোথায় জেতো বলে জেতো না।মাঝেমাঝে রাস্তাঘাটে নাকি পড়ে থাকতে দেখা জেতো।
আশিষের বাবা মা ছেলের এই অবস্থা দেখে অনেকটা ভেঙ্গে পরেছিলো,অবশেষে ডাক্তার সাজেশন করে।আশিষকে মেন্টেলহাসপাতালে পাঠানোর।তানা হলে আশিষ যেকোনও সময় একটা অঘটন গঠিয়ে দিতে পারে নিজের সাথে।
ডাক্তারের সাজেশনে আশিষের বাবা মা আশিষকে ওখানে রেখে আসে।একমাস আগে আশিষ সুস্থ হয়ে বাসায় আসে।তোদের কলেজের প্রিন্সিপ্যাল আশিষের বাবার বন্ধু বলে,বছরের এইসময় আশিষকে কলেজে ভর্তি করে নেয়।'
---ও,সো স্যাড!কিন্তু আশিষ আমাকে কুহু বলে কেনো।
"কারণ তোর চেহারা কিছুটা কুহুর সাথে মিলে।প্রথম দেখায় সবাই এটা বলবে,তুই কুহু।কিন্তু একটু খেয়াল করলে তফাত বুঝা যাবে।"
---আপনে এতোকিছু জানলেন কি করে।(নিশি)
"রায়হান কথা কাটানোর জন্য,তোর ভেজাচুল থেকে মাতাল করা ঘ্রান আসছে।আমি কিন্তু এবার পাগল হয়ে যাবো।"
---কথা কাটাতে চাইছেন।(নিশি)
"উঁহু, যতেটুকু তোর জানার বলেছি।এরপর বাড়তি কোনও কথার জবাব আমি দিতে পারবো না।শুধু বলবো আমি তোর ভাগ কাউকে দিতে রাজি না,তাই দূরে থাকবি ওই ছেলে থেকে।"
---কিন্তু আপনিইতো বললেন ও অসুস্থ।
"হুম,ও অসুস্থ! কিন্তু ওর সুস্থ হওয়ার ওষুধ তোর হওয়ার লাগবে না।
তুই শুধু আমার ওষুধ। যার ভাগ আমি কাউকে দিতে রাজি না।"
_____________
"আহমেদ ভিলায় আজ আবার জিসানের দু'মামী রুমি এবং রোকসানা বেগমের আগমণ ঘটেছে।আজকাল জিসানদের বাসায় তাদের আনাগোনা একটু বেশিই বেড়ে গিয়েছে।
এতোদিন জিসানের জন্য আসতে পারেনি,কিন্তু এখনতো কোনও বাধা নেই।"
---আর এসেই মিসেস রাবেয়া বেগমকে কানপোড়া দেওয়া শুরু করেছে তিশার বিরুদ্ধে।যে মেয়ের জন্য একদিন জিসান তাদের অপমান করে বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছিলো,সেই মেয়েকেও তারা অপমান করে বাড়ী থেকে বের না করা পর্যন্ত শান্তিতে থাকবে না।
তাইতো সেই দিন তিশাকে অনেক অপমান জনক কথাবার্তা বলে,যাতে তিশা বাড়ী ছেড়ে নিজেই চলে যায়।কিন্তু তিশা তাদের কথার কোনও রিয়েক্ট না করায়।মামী দু'জন যেনো আরো তেলে বেগুনে রেগে যায়।
'তাই আজ আবার এসেছে আহমেদ ভিলায়।
এবার নিজেদের প্রতিশোধ রাবেয়া বেগমের মাধ্যমেই নিবে বলে স্থির করলো।'
---জিসানের মৃত্যুর পর রাবেয়া বেগমের এমনেই কোনও কিছুর খবর থাকে না।চিন্তাচেতনাও দিনদিন লোপ পাচ্ছে মনে হয়।সংসারের সব কিছু থেকে নিজেকে অনেকটা গুটিয়ে নিয়েছে।
'এই সুযোগে তিশার প্রতি রাবেয়া বেগমের মনে একধরণের বিষ ঢেলে দিলো রুমি এবং রোকসানা।'
---জিসানের মৃত্যুর জন্য একমাত্র তিশাদায়ী।তিশা না থাকলে তাদের ছেলে আজ তাদের সাথেই থাকতো।জিসান তিশার কারণেই সব এধরণের ঝামেলায় জড়ায়।তাই ছেলের এমন অকাল মৃত্যু তিশার জন্যই হয়েছে।অপয়া মেয়ে বলে কথা।এসব নানা ধরনের কথাবর্তা বলে রাবেয়া বেগমের ব্রেন ওয়াশ করে ফেলে।
ছেলের মৃত্যুর শোক এখনো কাটতে না পারা রাবেয়ার মনে তিশার জন্য সামান্য হলেও তিক্ততা এসেছে।
এখন দেখার পালা এর পরিনিতি কি ঘটে।
চলবে.....।
[নাইস,সুন্দর, নেক্সট না লিখে গঠনমূলক কমেন্ট করবেন।রাইটার পাঠকদের জন্য লিখে,তাই পর্ব পরে পাঠকের মনে কি চলছে তা জানলে এতে রাইটারও লিখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।ভালো খারাপ যাই হোক নিজের মতামত জানাবেন।ধন্যবাদ।]
"বন্ধুদের সাথে ঘুড়তে গিয়ে,২০বছরের তরুণী নিজের বন্ধুদের ধারাই ধর্ষনের শিকার হয়েছে।শুধু তাই না নিজেদের অপরাধ ঢাকার জন্য ধর্ষনের পরে মেয়েটিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার চেষ্টাও করা হয়েছে।কিন্তু মেয়েটি ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়।"
---পত্রিকায় শিরোনামটি পড়ে শামসুর রহমান আর পুরোটা পড়তে পাড়লো না।পত্রিকা পড়ার সময় এধরনের ঘটনাগুলো যখনি সামনে আসে,তখনি শামসুর রহমানের তিশার সাথে ঘটে যাওয়া অতিতের সেই জগন্য ঘটনাটির কথা মনে পড়ে যায়।
সেদিন তিশাও ভাগ্য ক্রমে বেঁচে গিয়েছিলো তা না হলে তিশাও কোনো না কোন পত্রিকার হেডলাইন হয়ে যেতো।হয়তো মেয়েকে সারা জীবনের জন্য হারিয়েও ফেলতে হতো।
'ছোটকাল থেকেই মেয়েটা আমার ভুগছে,প্রথমে এমন একটা জগন্য ঘটনা,তারপর এতো ছোটবয়সে বিয়ে,আর এখন!
এখন যখন মেয়েটার ভাগ্যে কিছুটা সুখ ধরা দিয়েছিলো,আর তখনি এতো অল্প বয়সে বিধবার দাগও লেগে গেলো জীবনে।
মেয়ের কথা চিন্তা হতেই শামসুর রহমানের চোখ দু'টো না চাওয়া সত্যেও ছলছল করে উঠলো।'
---রেনু বেগম চা হাতে স্বামীর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বুঝার চেষ্টা করছে সমস্যাটা কোথায়।এরপর
ট্রি টেবিলে চা টা রেখে স্বামীর পাশে এসে বসলো।স্বামীর লুকানো চোখের জলটা তার চোখকে ফাঁকি দিতে পারেনি।এতোবছরের সংসার, কি করে পারবে।
স্বামীর কাধে হাত রেখে,
তিশার কথা ভাবছেন।
"শামসুর রহমান,চোখের চশমাটা খুলে টেবিলের উপর রেখে দিলো,উত্তরে কিছুই বললো না।"
'কিছুক্ষণ পর নিরবতা কেটে,
জানো রেনু, আজ মনে হচ্ছে আমার ডিশিসনটাই ঠিক ছিলো।জিসানের সাথে তিশাকে আমার দেওয়া উচিৎ হয়নি।আজ যদি জিসানের সাথে তিশার বিয়েটা না হতো,তাহলে তিশাকেও সারা জীবনের জন্য এমন একটা কষ্ট বহন করতে হতো না।তখন যদি একটু কঠোর হতে পাড়তাম,তাহলে হয়তো মেয়েটি কিছুদিনের জন্য কষ্ট পেতো।কিন্তু বেঁচেতো থাকতো।এখন তো জিন্দা লাশ হয়ে বেঁচে আছে।'
---এতো ধৈর্য হারালে কিভাবে হবে বলুন,মেয়ের ভাগ্যে যা ছিলো তাই হয়েছে।বাবা মা হিসেবে আমাদের যতোটুকু করার করেছি,বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।
আর আমরা হাজার চেষ্টা করে মেয়ের কপালতো পাল্টাতে পারবো না।
একটা কথা আছে না,আল্লাহ যা করে বান্দার ভালোর জন্যই করে।
হয়তো এতেও তিশার জন্য ভালো কিছু লিখা আছে,আপনে এসব ভেবে নিজের শরীর অসুস্থ করবেন না।
'হঠাৎ দু'জনের কথার মাঝে কাজের মেয়ে পলি এসে বলে,আম্মা দেহেনতো কেডা আইছে।'
---রেনু বেগম তাকিয়ে দেখে নিবিড় দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে।
আরে নিবিড় বাবা,কেমন আছো।দাঁড়িয়ে আছো কেনো। এসো ভেতরে এসো,বসো।
তোমাকে তো আজকাল দেখাই যায় না।এই মামা মামীর কথা ভুলেই গিয়েছো মনে হয়।
'নিবিড় রুমে প্রবেশ করেই প্রথমে সালাম দিলো দু'জনকে।এরপর সিঙ্গেল শোফাটায় বসে জবাব দিলো,
কর্মটাই এমন মামী,না চাওয়া সত্যেও ব্যস্ত থাকতে হয়।কিন্তু আপনাদের ভুলে গিয়েছি,এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।শুধু সময় বের করতে পারিনা।'
---আচ্ছা বুঝতে পারছি,তুমি তোমার মামার সাথে গল্প করো, আমি চা পাঠাচ্ছি তোমার জন্য।
রেনু বেগম যাওয়ার পর নিবিড়ও শামসুর রহমানের সাথে আলাপ করতে লাগলো।তাদের আলাপে তিশার কথা উঠলে,নিবিড় শামসুর রহমানকে সাজেশন দেয় তিশাকে এই বাড়ীতে নিয়ে আসতে।
"কিন্তু নিবিড় তিশা কি আসবে।"
---আসবে না কেনো মামা,ওই বাড়ীতে ওর আপন বলতে আছে কে আর।স্বামী না থাকলে শ্বশুর বাড়ীতে মেয়েদের যে দাম নেই তা জানেন না।
মুখে যতোই মেয়ে বলুক,কিন্তু সময় হলে সবার আসল রুপ দেখাবে।
আর তাছাড়া যার জন্য তিশার ওই বাড়ীতে যাওয়া,এখন যেহেতু সে ব্যক্তিটিই বেঁচে নেই তাহলে তিশা ওখানে কোন অধিকারে আছে।
তাই বলছি কি মামা,উনারা তিশাকে বের করে দেওয়ার আগে আপনে তিশাকে এখানে নিয়ে আসুন।আর তাছাড়া তিশা ও বাড়ীতে যতোদিন থাকবে জিসানকে কোনো দিনও ভুলতে পারবে না।এভাবে তো জীবন চলে না।এখন ওর বয়সটা বা কতো।
"শামসুর রহমান খুব গম্ভীর হয়ে কথাগুলো শুনলেন।মনে মনে তিনিও কিছু আওড়াতে লাগলেন।নিবিড়ের কোনও কথা তার কাছে রং বলে মনে হলো না।ঠিকই তো বলেছে নিবিড়,সময় হয়ে গিয়েছে মেয়েকে আবার নিজের কাছে নিয়ে আসার।"
_________
"জিসান তিশাকে নিজের উপর উঠিয়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরে শুয়ে আছে।পারলো না জিসান কঠিন হতে,তিশাকে শাস্তি দিতে।
কিভাবে দেবে এই মেয়েটিকে শাস্তি জিসান,মেয়েটিতো ওরই কারণে বারবার নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলো।কতোটা ভালোবাসা থাকলে একজন মানুষ এমন করতে পারে।
তিশার এই অবিরাম ভালোবাসা দেখে জিসানের কঠিন মনটা নিমিষে গলে গেলো।"
---অনেক কষ্ট পেয়েছে,অনেক শাস্তিও পেয়েছে আর না।আমি আর কোনও কষ্ট তোর ধারের কাছে আসতে দেবো না।কষ্ট তোকে ছোঁয়ার আগে আমাকে ছুঁতে হবে।এখন থেকে শুধু ভালোবাসা হবে।আমার এই প্রাণপাখীটাকে অনেক ভালোবাসবো।আর ভালোবাসা দিয়েই ওর সব কষ্ট দূর করে দেবো।জিসান তিশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর মনে মনে এসব ভেবেই যাচ্ছে।
"জিসানের বুকে মাথা রেখে তিশা চুপচাপ ছোট বাচ্চাদের মতো শুয়ে আছে।এখানে তিশা যেনো এক স্বর্গীয় সুখ অনুভোব করছে।এতো শান্তি তিশা এ কয়েকমাসে হয়তো আর পায়নি।ভাবতেই তিশার চোখের একফোটা জল গড়িয়ে জিসানের বুকের উপর পড়লো।"
---জিসান বুঝতে পারে,তিশা আবার কাঁদছে,তাই তিশাকে দু'হাত দিয়ে জরিয়ে নিজের সাথে আরো মিশিয়ে নেয়।
'জান' প্লিজ স্টোপ।তোর চোখের জল আমার বুকের ভেতরের জ্বালাটা কিন্তু বাড়িয়ে দেয়।
"তিশা কিছুক্ষণ চুপ থেকে,চোখ দুটো বন্ধ করে বললো,
আমিতো আপনার এই বুকে মাথা রেখে চিৎকার করে কাঁদতে চাই।যাতে আজ আমার ভেতরের সব কষ্ট গুলো দূর হয়ে যায়।
আমি তো আপনার বুকে মাথা রেখো চিৎকার করে কাঁদতে চাই।যাতে আপনে বুঝতে পারেন, আপনাকে ছাড়া আমি কি দহনে জ্বলেছি।
আমার প্রতিটি চোখের পানি যাতে আপনাকে মনে করিয়ে দেয়,আপনাকে ছাড়া বাঁচা এই জীবনে আর সম্ভব না।"
---অবশেষে এখন আপনাকে কাছে পেয়ে আপনার বুকে মাথা রেখে একটু ঘুমাতে চাই পরম শান্তিতে আমি।আপনি হয়তো জানেন না আমার প্রত্যেকটা দিন শুরু হতো আপনাকে ভেবে,আর প্রত্যেক রাতে আপনাকে ভেবেই পাড় হতো।
কিন্তু আজ আমার সব কষ্ট সুখে পরিণত হয়েছে আপনাকে পেয়ে।
আমি আর কিছুই চাই না।শুধু কথা দিন আমাকে এভাবে একা ছেড়ে কোথাও যাবেন না,বাঁচতে হলে একসাথে বাঁচবো,আর মরণ এলেও যেনো দু'জনকে একসাথে নিয়ে যায় আল্লাহ।
"জীবন আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে তিশা,আর এসবকিছুর মধ্যে আমার 'তুইটা' সবচেয়ে বেশি দামী।তোর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য একসময় কতোনা পাগলামী করেছিলাম,দেখ সেই ভালোবাসায় আজ তুইও পাগলামী করছিস।
অবশেষে বলা যায় আমার তিশা আমার রঙ্গে নিজেকে সম্পূর্ণ রাঙ্গিয়ে নিয়েছে।জিসানের ঠোঁটে ফুটে উঠে এক চিলতি হাসি।খুশিতে আজ মনের বাগানের প্রতিটি ফুল যেনো ফুটে উঠেছে।
---তিশাও জিসানের বুকে একটা কিস করে,জিসানকে জিঙ্গেস করে,
আচ্ছা এখন বলেনতো কোথায় ছিলেন আপনে এতোদিন,কেনো আমাদের বলেননি?আর এভাবে আরিয়ান সাজার মানেটা কি?
কি হয়েছিলো?
'জিসান তিশার কপালের উপর চুলগুলো আলতো হাতে সরিয়ে দিয়ে বললো,
সব বলবো,একটু ওয়েট কর 'জান।'
"ওকে,কিন্তু আমাকে এভাবে এতোদিন কস্ট দেওয়ার জন্য আপনাকে কিছু দিতে হবে।"
---তাই নাকি,আমার সব সম্পত্তি তো তোর নামে আগেই লিখে দিয়েছি,আর আছে এই জীবনটা! তাও তোর নামে।আর কি চাই।
"তিশা জিসানের কানেকানে ফিসফিসিয়ে বললো,আপনার অস্থিত্ব চাই আমার মাঝে।আপনার আর আমার মিলনের একটা অংশ চাই আমি।"
তিশার ইচ্ছাটা শুনে আজ জিসানের চোখদু'টোতে আনন্দের একফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।তিশাকে বুকের সাথে চেপে ধরে,
আল্লাহ চাইলে তোর এই ইচ্ছা খুব শীঘ্রই পূরণ হবে।এখন চুপ করে শুয়ে থাক।নড়াচড়া করবি না।আমি ঘুমাবো একটু।
তিশাও খুশি হয়ে জিসানকে জরিয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।
___________
"আজ ১৫দিন পর জিসান আর তিশা ফিরে এলো ঢাকায়।পরিবারের কাউকে এখনো কিছু বলতে না করে,তিশাকে আহমেদ ভিলায় পৌছে দিয়ে জিসান চলে গেলো এখান থেকে ডায়রেক্ট অফিসে।"
----তিশাকে আপাততো কিছুুদিনের জন্য অফিসে আসতে আর বাড়ী থেকে বের হতেও নিশেধ করে দিলো জিসান।কারণ হঠাৎ করে তিশা এতোদিন গায়ব থাকায় নিশ্চয়ই অর্ক খুঁজছে ওকে হারিক্যান নিয়ে।
এতোদিনে অর্ক কিছুনা কিছু নতুন প্লানতো অবশ্যই করেছে।তাই তিশাকে এখন এসব থেকে যতেটা সম্ভব দূরে রাখার চেষ্টা করবে জিসান।
'অফিসে গিয়ে জিসান সর্বপ্রথম নিলয়ের সাথে দেখা করলো।এতোদিনের কাজের সব প্রোগ্রেস রিপোর্ট যেনে দু'জনে ফ্যাক্টরির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।পোডাক্ট ডেলিভারির টাইম এসে পড়ছে।তাই লাস্ট মুহুর্তে অর্ক জাতে কোনও ঝামেলা করতে না পারে সে বিষয় নিলয় ও জিসান পুরো খেয়াল রাখছে।'
___________
---শাওয়ারের গরম জলের নিচে দাঁড়িয়ে আছে।পিঠের দিক থেকে জলের ধারা বয়ে যাচ্ছে।চোখ বন্ধ করে কিছু একটা ভাবতে ব্যস্ত অর্ক।নিজের প্লান গুলো একের পর এক ফ্লোফ হওয়ায় টেনশনের কোনও কমতি নেই ওর।তার উপর তিশার হঠাৎ করে গায়ব হয়ে যাওয়া।এসব কিছু চিন্তায় ফেলে দিচ্ছে অর্ক কে।
হঠাৎ রুম থেকে একটি মেয়েলী কন্ঠ কানে আসলে অর্ক শাওয়ারটা বন্ধ করে একটা তোয়াল পেছিয়ে ওয়াসরুম থেকে বাহির হয়ে আসলো।
'ওয়াসরুমে এতোক্ষন কি করো এ কে।শাওয়ার নিতে
নিতে আবার তিশার কথা মনে করছিলে নাতো।বলেই মেয়েটি হেসে দিলো।'
---অর্কও ছাড়ার পাত্র না,তাই নিজের ড্রেসটা পড়তে পড়তে বললো,
যদি ভেবেও থাকি তাহলে তোমার সমস্যা কি লাবণি।আমার মনে হয়না বেড পার্টনার ছাড়া আমাদের মধ্যে এমন কোনও রিলেশন আছে যার জন্য তুমি জেলাস ফিল করবে।রাইট।
'হু,জেলাস! তাও আবার আমি তোমাকে নিয়ে!নো চান্স এ কে।'
---আই নো ডিয়ার।(এ কে)
'আমি বুঝিনা এ কে ওই মেয়ের মধ্যে এমন কি আছে যার জন্য আজকাল ওর আশিকের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে দিন দিন।'
---অর্ক শ্যাম্পেইনে ভরা একটা গ্লাশ হাতে নিয়ে শোফায় আয়েশ করে বসে লাবনিকে বললো,
কিছুতো একটা আছে লাবণি ওই মেয়ের মধ্যে।যার জন্য ওকে ভিড়ের মাঝেও সবার থেকে আলাদা লাগে।
'লাবণি রাগান্বিত হয়ে অর্ককে জিঙ্গেস করলো,কি আছে এক্সট্রা ওর মাঝে যা আমার মধ্যে নেই।'
---অর্ক নিজের শ্যাম্পেইনর গ্লাশে চুমুক দিয়ে,
জানোতো লাবণি আসমানে অনেক তারা আছে,কিন্তু এতো তারাও চাঁদের জায়গাটা নিতে পারেনা।চাঁদ কিন্তু একটি।চাঁদ একটি বলেই সবাই চাঁদকেই পেতে চায়,ছুঁয়ে দেখতে চায়।
'নিজের হাতের রাখা শ্যাম্পেইন এর খালি গ্লাশটা স্বজোরে আছাড় মারে ফ্লোরে লাবণি।
তার মানে তুমি বলতে,চাইছো আমি আসমানের অগণিত তারাগুলোর মধ্যে একটি।যার কোনও ভেলু নেই।'
---না!আমি বলছি,আকাশের হাজার তারা মিলেও রাতের ঘন অন্ধকারকে দূর করতে পারেনা,যা একটি মাত্র চাঁদ পারে।আর জানোই তো সহযে যা পাওয়া যায়,সে বস্তু পাওয়ার আগ্রহ কমে যায়।তুমি হচ্ছো লাবণি তেমনি।
দেখোনা খুব সহযে তুমি আমার বেড পার্টনার হয়ে গেলে,তোমাকে আমার বিছানায় আনতে তেমন কাঠ কয়লা পুড়াতে হয়নি।কিন্তু তিশা সেতো দূর্লভ বস্তু।সহযে ধরাই যায় না।
তোমার স্পর্শে শরীরে শীতলতা বয়ে যায়,কিন্তু তিশা! তাকে ধরতে গেলেই কয়েকশো ভোল্টেজ ঝটকা আগে খেতে হবে।
আর এসব কথাই বাদ দিলাম,তোমার জিসানকেই দেখো।এতো হ্যান্ডশাম, গুডলুকিং একটা ছেলে।মেয়েরা ওকে একটু কাছে পাওয়ার কতোনা চেষ্টা করেছে।আর ও শুধু তিশার জন্য নিজের চাওয়া পাওয়া সব দূরে ঢেলে দিয়েছে বারবার।
এই মেয়েকে পাওয়ার জন্য তোমার জিসানকেও অনেক কাঠকয়লা পুড়াতে হয়েছে।যেখানে তুমি জিসানকে নিজের রুপ,শরীর দিয়েও বশ করতে পারোনি,সেখানে ওই মেয়েটির সাদাসিধে মুখটা করে দিয়েছে।
"অর্ক নিজের গ্লাশটা টেবিলে রেখে,এবার লাবণির চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
আর একটা কথা,
হয়তো তোমার খারাপ লাগবে শুনে,কিন্তু সত্য।ছেলেরা বাহিরে যাই করুক না কেনো,নিজে যতোটা নিচু হোক না কেনো।তবুও বিয়ে করার সময় এমন সাদাসিধে মেয়েই খুঁজে।যেসব মেয়েরা সহযে নিজেকে যারতার সাথে বিলিয়ে দেয়,তাদের একদিনের জন্য বেড পার্টনার করা যায়।জীবন সঙ্গী না।
'তার মানে, তুমি কি তিশাকে বিয়ে করতে চাও।'
---অর্ক তার খালি গ্লাশটি আবার ভরতে ব্যস্ত হয়ে বললো,
আরে দূর,তেমন কিছু না।বিয়ে শাদী আমার জন্য না।আমি ব্যাচেলারি ভালো আছি।আমিতো জিসানের থেকে একটু বদলা নিতে চাই।জিসান আমাকে তিশার পাশে দেখলেই ছটফট করে।আর ওর ওই ছটফটানিতে আমি শান্তি খুঁজে পাই।
আচ্ছা এখন ওসব বাদ দেও,আগে এটা বলো তুমি কি করে বুঝলে, আরিয়ানই জিসান।
'তুমি খবর নিতে না পারলেও,আমার লোক কিন্তু সব খবর দিয়েছে আমাকে প্রতিনিয়তো।
আরিয়ান আর তিশা এতোদিন খাগড়াছড়ি ছিলো।আজই নাকি ঢাকায় ফিরেছে।
আর ওরা হোটেলে না গিয়ে ওখানকার একটা রিসোর্টে উঠেছিলো।দু'জনের রোমাঞ্চের অনেক পিক আমার কাছে এসেছে,এতে আমি বুঝে গিয়েছে।
তিশা তো আবার ভদ্র মেয়ে,আর জিসানকে অনেক ভালোবাসে।তাই জিসান ব্যতিত কারো সাথে এমন ঘনিষ্ঠ হবে না কখনো।তাইতো বুঝতে সমস্যা হয়নি তেমন।'
---হুম,বুঝতে পারছি।এখন নেক্সট প্লান কি তোমার।কিছু ভেবেছো।
'লাবণি বিস্ময়কর একটা হাসি দিয়ে,যে মেয়েকে নিয়ে এতো সমস্যা সেই যদি না থাকে তাহলে!'
---লাবণি আই হোপ তুমি ভেবে বলছো তো,কারণ আরিয়ানই যদি জিসান হয়ে থাকে,আর তোমার প্লান সম্পর্কে সামন্যতম যদি ও জানতে পারে,তাহলে তোমার অবস্থা যে জিসান কি করবে তা হয়তো কল্পনায়ও করতে পারবে না।
_______________
"ড্রয়িংরুমে বসে তিশা তারিনের সাথে খেলার ছলে দুষ্টমিও করছে।তারিন তা দেখে খিলখিলিয়ে হাসছে।ছোট তারিনের ফাকা দাঁতের হাসি দেখে সাথে তিশাও খিলখিলিয়ে হাসতে থাকে।
ড্রয়িংরুম থেকে আসা হাসির শব্দ শুনে রাবেয়া আর তৌফিক সাহেব দেখতে আসে,এতোদিন পর এ বাড়ীতে কার মধুর হাসির প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে।"
---তিশাকে এভাবে তারিনের সাথে হাসতে দেখে তৌফিক সাহেব অনেক খুশী হয়ে গেলেন।এতোদিন পর যে মেয়েটি একটু স্বাভাবিক আচরণ করছে এটাই অনেক।
তৌফিক সাহেব তিশার মাথায় আদর করে হাত বুলিয়ে বললো,
এভাবেই সব সময় হাসি খুশি দেখতে চাই তোমাকে।আর কখনো তোমার গোমড়া মুখটা আমি দেখতে চাইনা।ঠিক আছে।
"তিশাও মাথা নাড়িয়ে হা বললো।তিশা একবার বলতে চেয়েছিলো,
বাবা যার জন্য মুখটা গোমড়া থাকতো,সেই মানুষটি স্বয়ং এসে পড়েছে,আমার মুখে হাসি ফুটানোর জন্য।তাহলে আমি কেনো গোমড়া হয়ে থাকবো।এখনতো আমার নাচতে মন চাইছে,গাইতে মন চাইছে।আর চিৎকার করে বলতে মন চাইছে আমার জিসান আমার কাছে এসে পড়েছে,আবার তার ভালোবাসার চাদরে আমাকে জড়াতে।"
---তিশার এই হাসিখুশি মুখটা দেখে,রাবেয়ার একদম পছন্দ হলো না।তিশার উপর একটা চাপা ক্ষোভ জন্মাতে লাগলো মনে।
স্বামী মরেছে এখনো ছয়মাসও হয়নি,অথচ এখনি সব ভুলে গিয়েছে এই মেয়েটি।
এই মেয়েকে দেখলে এখন কে বলবে,কয়েকমাস আগে ওর স্বামী মরে গিয়েছে।এখন তো মনে হয় রুমি,রোকসানা ঠিকই ছিলো।এই মেয়ে সম্পর্কে হয়তো ওদের ধারণাই ঠিক।
_______________
"হাসপাতালের করিডোরে বসে আছে নিলয়।একটু আগের ঘটনা।নিলয় জিসানকে ফ্যাক্টরিতে রেখে অফিসের দিকে যাচ্ছিলো।হঠাৎ কোথা থেকে একটি মেয়ে নিলয়ের গাড়ীর সামনে আচানক এসে পড়লো।নিলয় সাথে সাথে ব্রেক মারে।খুব বড় এক্সিডেন্ট হতে হতে বেঁচে গেলো আজ।"
---গাড়ীটি থামিয়ে কিছুক্ষণ জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিলো নিলয়,খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলো।পরক্ষনে মেঝাজ আবার বিগড়ে গেলো।কোন আজাইরা পাবলিক ছিলো।মরার জন্য কি আমার গাড়ীই পেলো।এসব ভাবতে ভাবতে নিলয় গাড়ী থেকে নামে।মেয়েটিকে কিছু কথা শুনাবে বলে।
'এদের কোন কাজ নেই।আরে মরার জন্য অন্য পথও তো বেছে নিতে পারতো, না!আমার গাড়ীর সামনেই আসতে হলো।'
---গাড়ীর সামনে এসে দেখে মেয়েটি নিচে পড়ে আছে।ইনজুরি হয়নি তো আবার এসব ভেবে নিলয় মেয়েটিকে চেক করতে নিলে দেখে এতো পরিচিত পাবলিক।মানে এতো ঝর্ণা। জিসানের কাজিন।এখানে কি করছিলো মেয়েটি।আর আমার গাড়ীর সামনেই বা হঠাৎ কোথা থেকে এলো।
'নিলয় দেখলো ঝর্ণার কোনও বহিরাগত ইনজুরি হয়নি, হয়তো ভয়ে জ্ঞান হারিয়েছে।
তাই আর অন্য কিছু না ভেবে রাস্তায় ভিড় জমার আগেই নিলয়,কোলে করে ঝর্ণাকে সাবধানে গাড়ীতে বসালো। আর গাড়ী স্টার্ট দিলো হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।'
---গাড়ী চালাবার সময় ঝর্ণার মাথাটা নিজের কাধে রেখে একহাত দিয়ে হালকা করে জরিয়ে ধরে।
হঠাৎ নিলয়ের চোখ পড়ে,ঝর্নার ওড়নাটা দিকে।যা নিচে পড়ে যাচ্ছে।তাই গাড়ী সাইড করে ওড়নাটা তুলে ঝর্ণার শরীরে দিতে নিলে,একটা জায়গায় এসে চোখ আটকে যায় নিলয়ের।
সাথে সাথে নিজের চোখ সরিয়ে ফেলে।এভাবে বেহুশ অবস্থায় কোনও নারীকে দেখা তাও আবার এ অবস্থায় এটা কোনও রকম ভদ্রতা না।
"কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা হাসপাতালে পৌছে যায়।ডাক্তার ঝর্ণাকে দেখে যায় একটু আগে।পেসার লো হয়ে গিয়েছে,সাথে আবার ভয় পাওয়ার কারনেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।কিছুক্ষণের মধ্যে জ্ঞান ফিরে আসবে বলে ডাক্তার চলে গেলো।"
'নিলয় জিসানকে ফোন করে সব বলে।জিসান তিশাকে পাঠাতে চাইলে নিলয় না করে দেয়।কারণ
আজ সকালেই নিলয় জানতে পারে আরিয়ানের আসল পরিচয়।আর ওর মতেও তিশাকে এখন বাড়ী থেকে বের না হওয়াই ভালো।তাই জিসানকে বললো,ঝর্ণার জ্ঞান ফিরলে ও নিজেই বাসায় ড্রোপ করে দিয়ে আসবে।'
---নিলয় কেবিনে প্রবেশ করে একবার ঝর্ণাকে দেখতে,
মেয়েটিকে আজ প্রথম নিলয় খুব খুটিয়ে দেখছে।এর আগেও মেয়েটিকে কয়েকবার আহমেদ ভিলায় দেখেছে।কিন্তু কখনো এভাবে দেখা হয়নি।
তিশা ঠিকই বলেছিলো,মেয়েটি দেখতে খুব সুন্দর।দুধেআলতা গায়ে রং।পাহাড়ী অঞ্চলের মেয়ে বলে,শুভ্রতা যেনো ওর চেহারা জুরে বিরাজ করছে।কেনো জানি নিলয় চোখ ফেরাতে পারছে না।তিশার পর আজ প্রথম কোনও নারীকে নিয়ে নিলয় এতো ভাবছে।
চলবে.....।
[সরি লেট করার জন্য।আসলে হঠাৎ করে প্রচণ্ড দাঁতের ব্যাথা শুরু হয়ে গিয়েছিলো,সাথে মাথা ব্যাথা তাই গল্পটি সময় মতো পোষ্ট করতে পারনি।আজকের পর্বটি হয়তো গুছিয়ে লিখতে পারিনি আর ছোটও হয়েছে।তার জন্য দুঃখীত।আশা করি পাঠক আমার সমস্যা বুঝার চেষ্টা করবে।ধন্যবাদ।]
"প্রায় একমাস হয়ে গিয়েছে তিশা অফিসে যায়না।জিসানই তিশাকে অফিসে আসতে নিশেধ করে দিয়েছে।তাই তিশার পুরোটা সময় এখন বাসায় কাটে।তানজিলার সাথে বাড়ীর প্রত্যেকটা কাজে সাহায্য করার চেষ্টা করে।
-এতোদিন অফিস নামক প্যারার কারণে বাড়ীর মানুষগুলোকে তেমন সময় দিতে পারেনি তিশা।তাই এখন যেহেতু অফিস নেই,আর কলেজেও যেতে পারছে না, তাই এই সময়টুকু বাড়ীর সবার সাথে হাসিখুশি পার করতে চায় তিশা।"
---তিশার দিনগুলো ভালোই চলছিলো,আর রাতটা মধুময় জিসানের সাথে।কারণ প্রতিরাতে জিসান ঠিক সময়মতো এসে পড়তো তিশার কাছে।তাই তিশাও এখন আগের থেকে অনেক ব্যাটার ফিল করছে।
'জিসানও যেনো ওর আগের তিশাকে পেয়ে গেলো।হাসিখুশি চঞ্চলতায় ভরপুর তিশা,এমন তিশাকেই তো জিসান ভালোবেসেছিলো।যে উদ্দেশ্যে জিসান তিশাকে খাগড়াছড়ি নিয়ে গিয়েছিলো,তা এখন সফল হতে দেখতে পাচ্ছে জিসান।'
"সবই ঠিক চলছিলো, তবুও কিছু যেনো একটা ঠিক নেই।পরিবারের সবাই তিশার এই চেন্জ দেখে খুশি হলেও একজন তিশার উপর কিছুটা ক্ষোভ জমা করে রেখেছে।আর সে আর অন্য কেউ না তিশার শ্বাশুরী রাবেয়া।"
---সে কিছুতেই মানতে পারছে না,তিশা এতো সহযে,এতো তারাতারি জিসানকে ভুলে গেলো।তাহলে এছিলো জিসানের প্রতি তিশার ভালোবাসা।
'আমার ছেলেটা এই মেয়েকে ভালোবেসে নিজের জীবনটা শেষ করে দিয়েছে,আর এই মেয়ে!এই মেয়ের মনে ঈদানিং লাড্ডু ফুটেছে মনে হয়।
এতো খুশি!এতো আনন্দো পায় কই।কিসের জন্য এতো খুশি।
-আরিয়ান নামের ওই ছেলেটার সাথে খাগড়াছড়ি গিয়ে আসার পর থেকেই এই মেয়ের মধ্যে অনেক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।তার মানে কি আমার জিসানের জায়গা এই আরিয়ান নিয়ে নেয়নি তো তিশার মনে।রাবেয়া বেগমের মনে এক অজানা ভয় শুরু হয়ে গিয়েছে।কিছুতেই মানতে পারছে না,তিশার আচানক এমন পরিবর্তন।
"তিশা এতোদিনে বুঝে গিয়েছে,শ্বাশুরী মা যে ওর উপর একটু নারায।আগের মতো আদর করে কথা বলে না।তিশার হাতের কিছু খেতে চায় না।এমনকি তিশাকে সবসময় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে।বাড়ীর কোনও গুরুত্ব পূর্ন কাজে তিশাকে শামিলও করেনা রাবেয়া।"
---.রাবেয়ার এমন আচরণ শুধু তিশা না, বাড়ীর সবাই খেয়াল করেছে।কিন্তু এই মুহুর্তে কিছু বলা মানে হিতের বিপরীত হতে পারে বলে মনে করে সবাই চুপ থাকে।
এছাড়া তিশাও চায়না এসব নিয়ে কোনও প্রকার ঝামেলা হোক।
কারণ তিশা বুঝতে পারছে ছেলের প্রতি অগাধ ভালোবাসার কারণেই শ্বাশুরী ওর সাথে এমন আচরণ করছে।তা না হলে,
যে নিজের সন্তান না যেনেও জিসানকে এতো ভালোবাসতে পারে,সে আমাকে কেনো ঘৃণা করবে।আমার বিশ্বাস যেদিন সত্য জানতে পারবে মায়ের এই অভিমান সব দূর হয়ে আমাকে কাছে টেনে নিবে আবার।আর এটা খুব শীঘ্রই হবে।"
---তিশা যখন শ্বাশুরীর মন জয় করতে ব্যস্ত ছিলো,ঠিক তখনি আসে আরেক ঝামেলা তিশার জীবনে।
বলা নেই,কথা নেই একদিন শামসুর রহমান এসে হাজির হলো তিশার শ্বশুর বাড়ীতে।তিশা বাবাকে নিজের বাড়ীতে এতোদিন পরে দেখে আনন্দে যেনো চোখে জল চলে আসলো।
জিসানের নিশেধ এর কারণে তিশা বাড়ী থেকে বের হতে পারছিলো না,যার কারণে নিজের বাড়ীও যাওয়া হয়না অনেকদিন ধরে।
তবে বাবার আচানক এখানে আসার কারণ যেনে তিশার সব আনন্দো মুহুর্তে বেদনায় পরিনত হলো।
'শামসুর রহমান তৌফিক সাহেবকে তিশাকে নিজের সাথে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছাটা জানায়।'
'-তৌফিক সাহেব সব কথা শুনে তিশাকে জিঙ্গেস করে,
তিশা মা, তুমি কি তোমার বাবার সাথে যেতে চাও।'
---তিশা কিছুক্ষণ চুপ থেকে,এবার শ্বশুরের সামনে গিয়ে বললো,
বাবা আমি যদি এখানে থাকি,তাহলে কি আপনাদের খুব বেশি সমস্যা হবে।
'কি বলছো এসব তিশা,আমাদের কেনো সমস্যা হবে।এটা তোমারও বাসা।এই বাড়ীতে তোমারও অধিকার আছে যতোটা জিসানের ছিলো।তুমি আমার জন্য আজও আমার জিসানের বউ।তাই নিজেকে কখনো এই বাড়ীতে অবলা মনে করবে না।
তুমি না চাওয়া পর্যন্ত কেউ তোমাকে এ বাড়ী থেকে বের করতে পারবে না।শ্বশুরের কথা শুনে তিশার চোখ দু'টো আনন্দে ছলছল করে উঠলো।তিশা এটাই আশা করেছিলো শ্বশুরের কাছ থেকে।'
"কিন্তু শামসুর রহমান মানতে নারায।তাই তিশার হাতটি ধরে নিজের পাশে বসিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলো।"
---কিন্তু তিশা আজ প্রথমবার বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে কথা বললো।
বাবা তুমি যখন যা বলেছো আমি করেছি।কখনো কোনও বিষয় তোমাকে প্রশ্ন করেনি।জানারও চেষ্টা করেনি।কিন্তু আজ আমাকে ক্ষমা করে দেও।আমি পারবো না তোমার কথা মানতে।
শামসুর রহমান কিছু বলতে চেয়েছিলো তিশাকে কিন্তু তখনি,
"তাওহিদ বাড়ীতে প্রবেশ করে।তানজিলা ফোন করে শামসুর রহমানের এখানে আগমনের কথা জানিয়েছিলো।আর এতে তাওহিদের তেমন কোনও মাথা ব্যাথা নেই বলে জানিয়ে দিয়েছিলো তানজিলাকে।"
'-তবে একটু পর যখন রায়হান ফোন করে,আর ফোন করে যা বলে এতে তাওহিদ কিছুক্ষণ শোকড এর মধ্যে চলে যায়।ভাইয়ের প্রতি রাগ হলেও এখন বর্তমান পরিস্থিতি সামলানো দরকার বলে মনে করে বাড়ীর দিকে রওনা দেয়।
এই সময় তাওহিদকে বাসায় দেখে সবাই কিছুটা হলেও অবাক হয়।তবে এসব নিয়ে ভাবার সময় এখন নেই তাওহিদের।তাই ও কোনো রকম ভনিতা ছাড়াই শামসুর রহমানকে বলে,
---আংকেল আমাদের বাড়ীর গার্ডগুলো দেখেছেন, তা সব আপনার মেয়ের জন্য করে গিয়েছিলো আমার ভাই।কোনো এক অজানা ভয়ের কারণে।আর ওই ভয়টা ওর সত্যও হয়েছে।এতোবছর পর অর্ক আবার ফিরে এসেছে।
শুধু তাইনা তিশা গার্ড ছাড়া জাতে কোথাও যেতে না পারে তারও ব্যবস্তা পুরোপুরি করে গিয়েছে।তারও কারণ কিছুদিন আগে তিশার উপর হামলা হবার পর জানতে পারি আমরা।
তাহলে এখন বলুন আপনার মেয়ের সুরক্ষার জন্য যে,আমার ভাই এতোকিছু করে গিয়েছে,সেই মেয়েকে আপনার সাথে নিয়ে গেলে তাকে কি পারবেন আপনি আমার ভাইয়ের মতো সুরক্ষা করতে।
তার উপর জিসানের এতোবড় বিজনেস ওর সবকিছু এখন তিশার নামে, এখনতো ওর আরো পায়ে পায়ে শত্রু বেজে গিয়েছে।এসব জানার পরও কি আপনি বলবেন,তিশা আপনার সাথে যাওয়া ঠিক হবে।আমিতো তা মনে করছি না।
তাই বলছি আবেগ দিয়ে না ভেবে,একটু চিন্তা করে দেখুন,এরপর বাকিটা আপনার ইচ্ছা।
শামসুর রহমানকে এসব বলেই তাওহিদ আবার চলে গেলো গাড়ী নিয়ে কোথাও।
এখন কাউকে খুব মারতে মন চাইছে তাওহিদের,নিজের এই ইচ্ছাটা আজ ভাইকে দিয়েই পূরণ করবে।
'শামসুর রহমানও কিছুক্ষণ ভেবে,তিশাকে ভালো থেকো বলে চলে গেলো।'
___________
"ভার্সিটির ক্যান্টিনে বসে নিশি ও নিলু কফি খাচ্ছিলো আর আজকের ক্লাশের কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলো।ঠিক তখনি হঠাৎ কোথা থেকে আশিষ এসে ওদের পাশের চেয়ারে বসে পড়লো।
-আশিষকে দেখে নিশি একটুও অবাক হলো না।কারণ এ কয়েকদিনে খুব ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে আশিষের সাথে নিশির।তবে তা একটা পরিসীমার মধ্যে।"
---রায়হানের কথায় নিশি আশিষকে এভোয়েড করার চেষ্টা করেছে,কিন্তু ছেলেটি বারবার সবার সামনে সরি বলে নিশিকে কিছুটা বিব্রত অবস্থায় ফেলে দিতো।
তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই আশিষের সরিটা একসেপ্ট করে নেয় নিশি।
"সরি একসেপ্ট করার পর নিশিকে এক নতুন ঝামেলায় পড়তে হয়।এই যেমন-আশিষ যখনতখন নিশির সাথে কথা বলতে এসে পরে।তবে আগের মতো বেড ম্যানারস করেনা,বা উল্টাপাল্টা কথাও বলে না।পড়ালিখা,ক্যাম্পাস বা টিচারদের কথা ছাড়া তেমন কথা বলেনা দেখে ওকে নিশেধও করতে পারেনা নিজের সাথে কথা বলতে।"
-আজও তাই হলো,ক্যান্টিনে নিশিকে বসে থাকতে দেখে আশিষও এসে হাজির হলো।
'আশিষ তুমি এখানে কি করছো,ক্লাশ নেই তোমার।'
---আছেতো, বাট করতে মন চাইছে না।
"এটা কেমন কথা আশিষ ,ইচ্ছে করছে না মানে।এভাবে ক্লাশ মিস করা ঠিক না আশিষ।সামনে তোমার এক্সাম চলে আসছে।পড়াশুনার প্রতি এতোটা উদাসীন হলে কি করে চলবে।"
---আশিষ একটু বিরক্ত হয়ে নিশিকে বললো,শুনেছি তোমার বান্ধবী উরফ তোমার ভাবী নাকি ক্লাশ করতেই আসে না।তাহলে তার কি কোনও সমস্যা হয় না।তাকে কেনো বলছো না নিয়মিত ক্লাশ করতে আসতে।বাড়ীতে বসে বসে করেটা কি?
'কার কথা বলছো তুমি।'
---কারো না,চললাম আমি।পরে কথা হবে বলে আশিষ চলে গেলো।
আর এদিক দিয়ে নিশি একটু ভাবনায় পরে গেলো,আশিষ তিশাকে কি চিনে।কিন্তু কি করে।তিশাতো কলেজেই আসে না।খুব কম সংখ্যক স্টুডেন্ট তিশাকে চিনে,আর আশিষ নতুন এসেছে কলেজে।আশিষ কলেজে আসার পর তিশা একদিনও কলেজে আসেনি,তাহলে আশিষ কি করে!আর তিশা আমার ভাবী এটাও কেউ কলেজে জানে না।তাহলে!
______________
"অফিসের টেরিছে পাতানো একটা চেয়ারে ক্লান্ত হয়ে বসে আছে তাওহিদ।আজ অনেকদিন পর ছোটবেলার কিছু স্মৃতি মনের জানালা দিয়ে উকি দিয়ে উঠলো।"
---তাওহীদ থেকে কিছু দূরে ফ্লোরে বসে হাফাচ্ছে জিসান।আজ বহুত বছর পর বড় ভাইয়ের হাতে মার খেয়েছে।তাই হজম করতে একটি কষ্ট হচ্ছে ব্যাচারার।
'ভাই আমি এখন বড় হয়ে গিয়েছি।দু'দিন পর আল্লাহ চাইলে বাচ্চার বাপ হয়ে যাবো,আর এই বয়সে তুমি আমাকে মারলে।তাও আবার আমার এই শয়তান বন্ধুগুলোর সামনে।মান সম্মান কিছুই রাখলে না।'
"ছাদের কর্ণার সাইডে দাঁড়িয়ে নিলয় আর রায়হান হাসছে,এদের দু'ভাইয়ের কান্ড দেখে।"
---তোমাদের সব কিছু বলাই ভুল হয়েছে।চুপ হয়ে থাকলেই ভালো হতো মনে হয়।(জিসান)
"হুম ভালো হতো তো।আর কয়েকদিন পর বললে,নিজের বউয়ের বিয়ের দাওয়াত খেতে যেতে পারতি।
তোর শ্বশুর কে তো চিনিস।আজকেতো কাছা মেরে মাঠে নেমেছিলো,তিশাকে নিজের সাথে নিয়ে যাবার জন্য।
তারপর দু'দিন পর মেয়েকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে কোনও সুপাত্রের হাতে তুলেও দিতো।আর তুই বড় একটা গিফ্ট নিয়ে বউকে নতুন জীবনের শুভেচ্ছা দিতি।তখন খুব ভালো হতো তাই না।কি বলিস!ব্যবস্তা করবোনি কোনও সুপাত্র তোর বউয়ের জন্য।"
---ভাই....!(জিসান)
"কি ভাই হে!"
'মাইর কি কম হয়েছে নাকি আরো একটু খাবি।বল!এবার কিন্তু হাড্ডিগুলোও ভেঙ্গে দেবো।'
---জিসান ভাইয়ের পায়ের কাছে এসে বসে-সরি ভাই।আর এমন হবে না।বাট একটা জিনিস তোমাদেরকেও মানতে হবে আমি কিন্তু একজন ধারুন অভিনেতা।কি বোকাটা না বানিয়েছি সবাইকে।আমারতো বিশ্বাসই হচ্ছে না।সিরিয়াসলি!
তোমরা বিশ্বাস করলে কিভাবে আমি জিসান না আরিয়ান।
এটা রিয়েল লাইফ ভাই,কোনও নাটক বা সিনেমা না যে, যেখানে নায়ক মরে বেঁচে আসবে।
বা তার কোনও ডুবলিকেট এসে তার জায়গা দখল করে নিবে।আমিতো ভেবেছিলাম প্রথম দিনই ধরা খেয়ে যাবো।কেমন স্টুপিট মার্কা আইডিয়া ছিলো তাই না।
'তাওহীদ জিসানের মাথায় হাত রেখে,মন তো মানতে চায়নি, কিন্তু ওই যে একটা কথা আছে না, আমরা প্রমাণে বিশ্বাসী।তাই তো মনকে প্রাধান্য না দিয়ে কাগজে লিখা প্রমাণগুলোকে বিশ্বাস করে নিয়েছিলাম।কিন্তু এখন তুই বল, এতো মানুষের ইমোশন নিয়ে কেনো খেলা করলি।'
"ভাই আমি কারো ইমোশন নিয়ে খেলা করতে চাইনি,বাট পরিস্থিতি এমন হলো যে আমার হাতে কিছুই ছিলো না।
আমার উপর দু'বার হামলার পর,তৃতীয়বার হামলার সময় আমি কিছুটা প্রস্তুতি রেখে ছিলাম।তাই হয়তো ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছি।"
---হয়েছিলে কি,খুলে বলতো।(তাওহিদ)
"সেদিন ফ্যাক্টরি থেকে বাসার দিকে রওনা দিয়েছিলাম গাড়ী করে।কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলাম আজও আমার গাড়ীর ব্রেক ফেল করা হয়েছে।কিন্তু আজ গাড়ীটি কন্ট্রোল করতে ভীষণ বেগ পেতে হলো।অবশেষে গাড়ী থেকে লাফিয়ে পড়া ছাড়া কোনও উপায় ছিলো না।
আমি জানতাম,হয়তো এবার আমি মরে যাবো,আর ভাগ্য ভালো হলে বেঁচেও যেতে পারি।আর তাই হলো।
আমি ভীষন ইনজুরি হয়ে গিয়েছিলাম।মাথায়ও প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছিলাম।
সোম কয়েকজন ছেলেকে আমার আড়ালে আমাকে গার্ড করতে বলেছিলো।
যাতে আমার যেকোনও বিপদের সময় ওরা আমাকে সাহায্য করতে পারে।আর সেদিন তারাই আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।খবর পেয়ে সোমও চলে আসে।সোম আমাকে নিয়ে পুরো ব্যস্ত হয়ে পরে।
আর এদিক দিয়ে মিডিয়া আমার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে দেয় চারদিকে।গাড়ীটা যেহেতু আগুন লেগে পুড়ে ছাড়খার হয়ে গিয়েছিলো তাই পুলিশও আমার ডেথ কনফার্ম করে দিয়ে কেস বন্ধ করে দেয়।"
---সোম যখন জানতে পারে এসব,সবাইকে বলতে চেয়েছিলো।কিন্তু আমার অবস্থা তেমন ভালো ছিলো না।সোম নিজেও জানতো না আমি বাঁচবো নাকি মরবো।তার উপর শত্রুর কোনও আইডেন্টি পাওয়া যাচ্ছিলো না,তাই সোমও চুপ থাকাটা ভালো মনে করলো।আর আমার জ্ঞান ফিরার অপেক্ষা করতে লাগলো।
এসবের মাঝেই সোম শুধু নিলয়কে ফোন করে বাংলাদেশে আসতে বললো।কারণ আমার মৃত্যুর খবর পাওয়ার সাথে সাথে বিজনেসের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো।সোম জানতো এটা আমার অনেক পরিশ্রমের ফসল।আর আমার অবর্তমানে নিলয়ই পারবে এটাকে সামলাতে।
"হুম,সবই বুঝলাম।আমরা না হয় জিসানকে চিনলাম না,কারণ মাত্র একবার দেখা হয়েছে আমাদের সাথে কিন্তু তোমরা নিলয় আর রায়হান।তোমদের কি একবারও সন্দেহ হলো না।"
---কে বলছে ওদের সন্দেহ হইনি।শুধু কি সন্দেহ উঠে পড়ে লেগেছিলো আমাকে জিসান প্রমাণ করার জন্য।
"তাই নাকি।তাওহিদ হেসে।"
---হুম,শুধু কি ওরা,আমার বউ,আর বোনও কম ছিলো না।দু'জনে গোপনে স্পাইগিরি শুরু করে দিয়েছিলো।
"তাই নাকি,বাহ!তাওহীদ এর সাথে সবাই হেসে দিলো।আজ অনেকদিন পর সবাই একত্রিত হলো আগের মতো।"
__________
"তিশা মাগরিবের নামায পড়ার পর, সালাম ফিরাতে গিয়ে নিশিকে নিজের রুমে দেখতে পেলো।কেমন ক্রুদ্ধ চোখে তিশার দিকে তাকিয়ে আছে।তিশা নামায শেষ করে জায়নামাজটা ভাজ করে রেখে নিশির সামনে দাঁড়িয়ে জিঙ্গেস করলেো।"
-কি হলো আমার জানটুস বান্ধবীটার। এতো রেগে আছে কেনো আমার উপর।আর কখন এলি তুই।
"নিশি মুখটা অন্যদিকে ঘুড়িয়ে, তুই কথা বলবি না আমার সাথে।আর এখন কি আমার বাসায় আসতে তোকে বলে আসতে হবে।"
---আরে! আমি কি এটা বলেছি।আগে বল কেনো রেগে আছিস।
'-তুই সত্যটা জেনোও কেনো বললি না আমায়।'
"কোন সত্যের কথা বলছিস।"
---জিসান ভাই বেঁচে আছে।এই সত্যের কথা, নিশি দাঁতগুলো কটমটিয়ে।
"তিশা এবার নিশির পাশে বসে,নিশির হাতটা ধরে বললো,
দেখ এটাতো আমরা আগেই জানতাম যে আরিয়ানই হয়তো জিসান।কোনও এক কারণে নিজের আইডেন্টিটি লুকাচ্ছে।তাই তো অনেক চিন্তা করে তাকে জিসান প্রমাণ করার চেষ্টা বাদ দিয়ে দিয়েছিলাম।"
---আর উনি আরিয়ান হয়ে যতোই নিজের আইডেন্টিটি লুকানো চেষ্টা করুক না কেনো।একটা জায়গায় এসে নিজেকে আর লুকাতে পারেনা।আর তা হলো,আমার প্রতি তার অনুভূতিগুলো।
আর উনার এই অনুভূতিগুলোর জন্যই অনেক আগেই আমার কাছে ধরা খেয়েছিলো।কিন্তু আমি চাইছিলাম উনি নিজের মুখে সত্যটা বলুক।
খাগড়াছড়িতে যাওয়া তার প্লান হলেও তাকে তার মুখে নিজের আসল স্বত্বাকে স্বীকার করতে বাধ্য করেছি আমি।আর আমি যা চেয়েছি তাই হলো,,,,।এরপর তিশা খাগড়াছড়িতে কি কি হলো সবই বললো নিশিকে।
"আম সো হেপি,তোর জন্য তিশা।আল্লাহ সত্যি মহান।চাইলে সব কিছু করতে পারে।দেখ আজ আবার তোর আঁচলে আল্লাহ তোর সব খুশি ঢেলে দিয়েছে।আল্লাহ কখনো তার বান্দাদের নিরাশ করেনা।তোকে দেখে আজ বুঝলাম।"
---হুম,ঠিক বলছিস।আমিও বুঝেছি।মন থেকে আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে,আল্লাহ কখনো তার বান্দাকে নিরাশ করেনা।
"আচ্ছা, বাবা মা জানে।"(নিশি)
"না,এখনো না। জিসানকে বলেছি সব বলে দিই আমি।কিন্তু উনি বললেন উনিই বলবেন বাবা মাকে।কিন্তু আর কিছুদিন পর।"
---হয়তো কোনও কারণ আছে,ভাই ভেবেই সব করে।তুই টেনশন করিসনা।এবার দেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে।ভাই এবার ওই অর্ক কর্ককে এমন শাস্থি দিবে যে,জীবনেও ভুলবেনা।দেখিস!
"হুম,সেটা আমিও জানি।কিন্তু মনের মধ্যে এক অজানা ভয় করছে কেনো জানি।"
-আরে তুই একটু বেশি ভাবিস।দেখবি চোখের পলকে ভাই সব ঠিক করে দিবে।
হুম,আল্লাহ চাইলে সব ঠিক হবে।(তিশা)
___________
"অফিসের ছাদের রেলিং এ পা ঝুলিয়ে বসে ব্যস্ত শহরটাকে দেখছে চারজন।কাজের চাপে নিজেদের লাইফের ব্যস্ততার কারণে হয়তো কখনো দেখাই হয়নি রাতের এই ব্যস্ত নগরীর ফাকা রাস্তাগুলোকে।
যেখানে দিনের বেলা মানুষের ভিড়ে পা রাখাও মুসকিল,সেখানে রাতেরবেলা এই পরিচিত রাস্তাগুলো ফাকা হয়ে কেমন অপরিচিত লাগে।
---হঠাৎ সবাইকে অবাক করে দিয়ে তাওহিদ জিসানের কাছে একটা সিগেরেট চাইলো।
"-জিসান সহ বাকি সবাই একটু শোকড!কারণ ভাইকে কখনো এসব খেতে দেখেনি জিসান।এমনকি বড় বড় পার্টিতে গেলে সেখানেও কখনো ভাইকে একটা ড্রিংক করতেও দেখেনি।সেই ভাই আজ তার ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে সিগেরেট চাচ্ছে,আশ্চর্য হওয়ারি কথা।"
---জিসান না বুঝার ভান করে,
ভাই তুমি একজন ডাক্তার মানুষ।তোমাকে ধূমপান মানায় না।আর তাছাড়া তুমিতো জানোই ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
'তাওহিদ একটু বিরক্ত হয়ে জিসানের দিকে তাকালো।সারাদিন চারপাঁচটা বিড়ি টানিস তুই।তখন মনে থাকেনা,স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
আর এখন তোর তেকে একটা বিড়ি চাইলাম বলে এতো কথা শুনাচ্ছিস।আমি কি তোর থেকে কম জানি।নাকি তোর ভাগে একটা কম পড়বে বলে এমন করছিস।'
---ভাই,মাপ করে দেও।আমিতো আবার ভুলেই গিয়েছি,তুমিতো ডাক্তার মানুষ,সবই একটু বেশি জানো।
"তাওহিদ বিড়ির স্বাধ নিতে গিয়ে একটু বিরক্ত হলো,আজ অনেক বছর পর নেওয়া হলো।কেনো হঠাৎ মনে এমন উদ্ভট চিন্তা আসলো বুঝলো না।
তবে এতোটুকু বুঝতে পারছে,এই বিড়ি জিনিসটা যে এখন আর তার জন্য না।অনেক আগে এটার অভ্যাস ছিলো কিন্তু এখন আর নেই,তাইতো আগের মতো স্বাদও পায়না তাওহিদ।
তবুও বিড়িটা আজ শেষ করবে।মাঝে মাঝে না চাওয়ার জিনিসগুলো করতেও কেনো জানি অদ্ভুত ভালো লাগার কাজ করে।কারণ নিশিদ্ধ জিনিসগুলোর প্রতি মানুষের বরাবরই আকর্ষণ বেশি থাকে।
---কিছুক্ষণ পর, ইচ্ছা করলে তোরাও একটা ধরাতে পারিস।আমি কিছুই মনে করবো না।(তাওহিদ)
'তাওহিদের বলতে দেরি তিনটার ধরাতে দেরি হলো না। তাওহিদ একটুও অবাক হলো না,এদের কান্ড দেখে।তিনটা প্রচুর সিগেরেট খোর।'
"কিছুক্ষণ পর তাওহিদ আবার তার গভীর কন্ঠে বললো,
আমি মনে করি এবার তোদের এটা ছেড়ে দেওয়া উচিৎ।
নিজের জন্য না হলেও নিজের প্রিয়জনদের জন্য।"
---ভাই আসলে.....জিসান কিছু বলতে চেয়েছিলো।
"আমাকে বলতেদেও জিসান,
ডাক্তারি জীবনে আমি অনেক কিছু দেখিছি।চোখের সামনে অনেকের করুন মৃত্যুও দেখেছি।তাই বলছি ছেড়ে দে।
আজ তোরা না ছাড়তে পারলে কাল নিজের সন্তানদের কি শিখাবি বল।বড় হয়ে তারাও এই অভ্যাসে পরিনত করবে নিজেদের।
এছাড়া এর জন্য যদি দেহে কোনও বিরাট মাপের রোগ বাধে,তখন চিন্তা কর,তোর পরিবারের কি হবে।
কখনো ভেবেছিস এই সামান্য জিনিসটা প্রতিনিয়ত আমাদের মৃত্যুর দিকে ঝুকে নিয়ে যাচ্ছে।তাই বলছি তোদের ছেড়ে দে,তিশার জন্য,নিশির জন্য।
তোদের আগামী ভবিষ্যৎ এর জন্য।জানি একটু কষ্ট হবে তবে ইচ্ছা থাকলে উপায়ও বের হবে।
ভাইয়ের কথা শুনে জিসান আর রায়হান কিছুক্ষণ ভেবে একত্রে সিগেরেটটা ফেলে দিলো।ওয়াদা করলো দু'জনেই ,যতোই কস্ট হোক এবার এটাকে ছাড়বেই।
__________
"ডিনার টেবিলে বসে আছে আহমেদ পরিবারের সবাই।আর আজ তাদের সাথে জয়েন হয়েছে রায়হান নিশি,নিলয় আর আরিয়ান ডিনার করতে।"
---ভাইকে এতোদিন পর পেয়ে আজকের দিনটা একটু একসাথে কাটাতে চায় বলে,তানজিলাকে ফোন করে গেস্ট আসবে বলে ডিনারের আয়োজন করতে বললো।
'-রায়হান নিশিকে ফোন করে আগেই আহমেদ ভিলায় চলে যেতে বলেছিলো।
তাই এখন সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে ডিনার এন্জয় করছে।'
-রাবেয়া আরিয়ানকে দেখে একটু খুশি হলেও,তিশা আর আরিয়ানের ব্যাপারটা মাথায় আসলে কিছুটা ডিস্টার্ব ফিল করতে শুরু করে।
"শ্বাশুরীর মনের অবস্থা তিশা আগেই বুঝতে পারছে,তাই সবার সামনে তিশা আরিয়ানকে একদম এভোয়েড করতে লাগলো।নিলয়ের সাথে কথা বললেও আরিয়ানের সাথে একদমই কোনও কথা বললো না।আরিয়ান কিছুটা অবাক হলেও কিছুই বললো না এই মুহুর্তে।"
-তিশার আরিয়ানের প্রতি এমন আচরণ দেখে মনে মনে একটু খুশিই হলো রাবেয়া।যাক তাহলে আমরা ধারণা হয়তো ভুল।তিশা কখনো আমার জিসানের জায়গায় অন্য কাউকে দিবেনা।
---কিন্তু তিশা জানে না,তিশার এই এভোয়েড এর বদলা যে কেউ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে।ডাইনিং টেবিলে তিশার ঠিক অপজিট সাইডে জিসান বসে আছে।
তিশা খাবার মুখে দিতে গিয়ে হঠাৎ তিশার ফিল হলো কেউ পা দিয়ে ওর পায়ে স্লাইড করছে।প্রথমে তিশা এটা ভুলবশত মনে করে কোনও রিয়েকশন দিলো না।
"কিন্তু কিছুক্ষণ পর যখন একই ঘটনা আবার ঘটলো,এবার তিশা খাবার টেবিলে বসা সবার দিকে তাকালো সবার মুখের রিয়েকশন দেখতে।কিন্তু কারো চেহারা দেখে কিছুই বুঝা যাচ্ছে না,এমনকি জিসানের ও না।দিব্বি কি সুন্দর করে খাবার গিলছে।"
'তাহলে করছেটা কে আমার সাথে।'
---টেবিলের নিচে তাকাতেই তিশা শোকড!যা ভেবেছিলো তাই।
জিসানের দিকে তাকাতেই, জিসান আড়ালে একচোখ টিপ মারলো তিশাকে।
তিশার রাগে গা জ্বলছে।খাবার টেবিলে বসে কেউ এমন করে।তিশাতো ভেবেই পাচ্ছে না।
"হঠাৎ নিশির কথায় তিশা ধ্যানমগ্ন থেকে ফিরে এলো।"
---কি রে খাচ্ছিস না কেনো।কখন ধরে দেখছি খাবার নিয়ে বসে আছিস।কি সমস্যা?
'তিশা অসহায় দৃষ্টিতে নিশির দিকে তাকিয়ে ভাবছে,তোকে কিভাবে বলি, কি সমস্যা।খেতে বসে কেউ এমন টর্চার করলে কি খাবার মুখে ঢুকে।'
---কি হলো, এমন বেয়াক্কলের মতো তাকিয়ে আছিস কেনো।
"কিছু না,আমার খিদে নেই।আমি চললাম বলে তিশা উঠার সময় জিসানের দিকে চোখ যায়।
কেমন ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জিসান তিশার দিকে।তার মানে-
এভোয়েড করার শাস্তি পেয়েও শিক্ষা হয়নি।এখন আবার ডিনার না করে চলে যাচ্ছিস।এবার শাস্তি কিন্তু আরো বেশি হবে।"
কিন্তু তিশা ডোন্ট কেয়ার একটা লুক নিয়ে চলে গেলো। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে ভাবছে-
মা ইমোশনাল টর্চার করে,আর ছেলে শারীরিক।এদের দু'জনের চক্করে শাস্তি শুধু আমাকেই পেতে হয়।
চলবে…।
"গভীর রাতের সাথে বিরাজ করছে চারদিকে একটা থমথমে পরিবেশ।মিটিমিটি জোনাকির সাথে দূর আকাশের তারাগুলোও আজ জলে উঠছে চুপি চুপি।
হালকা হালকা ঠান্ডা পড়ায় আকাশটা কেমন কুয়াশার চাদরে ঢেকে পড়ছে।
সুইমিংপুলের পানিটাও কেমন হীম শীতল হয়ে পড়ছে।আর এই হীম শীতল পানিতে পা ডুবিয়ে আইস্ক্রিম খাচ্ছে নিশি ও তিশা। আর ওদের কম্পানি দিতে পাশে বসে আছে ঝর্ণা।"
---ঝর্ণাতো ভেবেই পাচ্ছে না ঠান্ডার মধ্যে ঠান্ডা জলে পা ডুবিয়ে আইস্ক্রিম কিভাবে খায় মানুষ।
"'হঠাৎ নিশিই ঝর্ণাকে উদ্দেশ্য করে বললো,ঝর্ণাপু তোমার নিশ্চয়ই মনে হচ্ছে আমরা পাগল হয়ে গিয়েছি।"
-ঝর্ণা মাথা নাড়িয়ে হা বলছে,কিন্তু মুখে না।
"ও রিলেক্স ঝর্ণাপু। এতো টেনশন নিও না।একবার তুমিও ট্রাই করে দেখো,দেখবে সারা জীবন মনে রাখবে।ঠান্ডার দিনে ঠান্ডা খাওয়ার মজাই আলাদা।"
---ও তাই নাকি, তাহলে আমারও একবার ট্রাই করতে হয়, কি বলিস।আমিও একবার দেখি কি মঝা এতে।
'হঠাৎ কারো কন্ঠ শুনে তিনজনেই চমকে পিছনে তাকায় দেখার জন্য কে?।আরে যা!ভাই এখানে কি করে।
এরা এখনো যায়নি।'
-তিশা জিসানের দিকে তাকিয়ে দেখে,সাহেবের ড্রেস চেন্জ তার মানে আজ এরা প্লান করেই এসেছে এখানে থাকার।
---জিসান ওদের সামনে এসে নিশিকে সাইড দিতে বললে নিশি একটু সরে বসে।আর জিসান গিয়ে নিশি ও তিশার মাঝখানে বসে পড়েই তিশার হাতের আইস্ক্রিমটা নিয়ে নেয়।
এই রাতে আইস্ক্রিম, তার উপর ঠান্ডা জলে পা ডুবিয়ে বসা।ওয়াও ফিলিং খুব জোশ তাইনা।তিশার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ইশারা করে জিসান।
যা দেখে তিশা সাথে সাথে সামনে তাকিয়ে একটা শুকনো ঢোক গিলে।
'এমন সময় রায়হান আর নিলয় ও এসে হাজির হলো সুইমিংপুলের সামনে।ওই হারামি আমাদের রুমে একা রেখে এখানে তোর প্রেমলীলা হচ্ছে।'
---প্রেমলীলা না দোস্ত!দেখ,তোর গুণধর বউ আর বোন কি করছে।
"রায়হানও গিয়ে নিশির পাশে বসে পড়লো।হুম তাইতো দেখছি।সমস্যা নেই ইয়ার এবার এরা ঠান্ডা জ্বরে ভুগলে ওষুধের পরিবর্তে ডাক্তারকে মোটা মোটা দু'টো সুই দিয়ে দিতে বলবো।"
-সুইয়ের কথা শুনেই নিশি বিষম খেলো,সাথে কাশতেও লাগলো।
হঠাৎ কিছু একটা মনে করে পানি থেকে পা উঠিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো।সুই জিনিটার কথা শুনলেই নিশির গলা শুকিয়ে যায়।ওষুধ খেয়ে মরতে রাজি তবুও সুই দিতে রাজি না নিশি।সুই জিনিসটাকে এতোটাই ভয় পায় ও।
'তিশা চোখের ইশারায় জিঙ্গেস করলো কি হয়েছে।'
---আমার ঠান্ডা লাগছে আমি ঘুমাবো বলে বাড়ীর ভেতরে জেতে লাগলো।
রায়হানও নিশির পিছনে ছুটে গিয়ে নিশিকে একহাত দিয়ে জরিয়ে ধরে ইশারা করলো,
সুইটহার্ট কি হলো ঠান্ডা লাগছে,ভেতরে চল,তোকে পুরো গরম করে দেবো আজ।নিশিকে এক প্রকার ঢেলে ভেতরে নিয়ে গেলো রায়হান।
নিশিতো শোকড!এই লোকের মোতলব ভালোনা,দেখেই বুঝা যাচ্ছে।আজ আমার সাথে কি করে আল্লাহই জানে।
"এসবের মাঝে তিশা খেয়াল করলো নিলয় আর ঝর্ণা নিজেদের মতোই কথা বলছে।ব্যাপারটা দেখে তিশা মনে মনে খুশিই হলো।নিলয়ের চোখে তিশা নিজের জন্য কিছুটা ফিলিংস দেখেছে,তবে নিলয় একজন জেনটেলম্যান এর মতো কখনো নিজের লিমিট ক্রস করিনি।সব সময় তিশাকে প্রোটেক্ট করেছে,তবে কখনো সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেনি।
তাছাড়া ঝর্ণা যে নিলয়ের উপর ক্রাশ খেয়ে বসে আছে ওটাও খুব ভালো করে বুঝতে পারছে তিশা।তাই ও চায় ওদের মধ্যে কিছু একটা হোক।"
---এদিক দিয়ে রায়হান আর নিশিকে চলে যেতে দেখে নিলয়ও ঝর্ণাকে ইশারা করে বললো,অনেকরাত হয়ে গিয়েছে এখন আমাদেরও যাওয়া দরকার।কি বলো ঝর্ণা, তোমার ঘুম পায়নি।
'ঝর্ণা নিলয়ের ইশারা বুঝে নিলয়ের সাথে বাড়ীর ভেতরে চলে গেলো,তিশা ও জিসানকে একা রেখে।ওরা জাতে একান্ত কিছু সময় কাটাতে পারে।'
"তিশা নিজের ভাবণায় এতোই ডুবে ছিলো যে জিসান কখন ওর একদম কাছে এসে বসেছে বুঝতেও পারেনি।"
-কিন্তু হঠাৎ কোমড়ে কারো স্পর্শ পেয়ে তিশা চমকে তাকায় জিসানের দিকে।
---আর জিসানও একটা ডেবিলমার্কা স্মাইল দিয়ে বললো,আর ইউ রেডি জান?
"তিশা ভ্রুকুচকে জিসানের দিকে তাকিয়ে মানে বুঝার চেষ্টা করছে।কিন্তু কিছু বুঝে উঠার আগেই জিসান সুইমিংপুলের এই হিম শীতল পানিতে নেমে গেলো আচানক।
তিশা কিছু বলতে নিবে তার আগেই তিশাকেও একটান দিয়ে পানিতে ফেলে দিলো।পানি কম থাকায় আজ তিশা ডুবলো না।কিন্তু এই শীতে পানিতে নামা মানে পাগলামি ছাড়া কিছুই না।"
"আ.. আর ইউ মেড!ককি ক করেছেন এটা।তিশা কাপতে শুরু করে দিয়েছে।ঠান্ডায় একপ্রকার জমে যাচ্ছে।মুখটা লাল হয়ে গিয়েছে।"
---জিসান নিজের চুলগুলো নিজের আঙ্গুলের সাহায্যে সামলাতে ব্যস্ত হয়ে বললো,বলেছিলাম না শাস্তি কঠিন হবে।
'তাই বলে এভাবে কেউ করে।'(তিশা)
"আমি করি বলেই,জিসান নিজের পড়নের সার্টটা খুলে ফেলে দিয়ে,তিশার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।"
"তিশা তা দেখে সুইমিংপুল থেকে উঠে চলে যেতে নিলে,জিসান হাতটা ধরে হেচকা টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে।দু'হাত দিয়ে তিশাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে পানির মধ্যেই।"
---কি করছেন জিসান।কেউ দেখে ফেললে কেলেঙ্কারি লেগে যাবে।প্লিজ ছাড়ুন।এখনো সবাই জানে না।
"শশশশ,চুপ! একদম চুপ।কেউ দেখলে দেখুক আই ডোন্ট কেয়ার, বলেই তিশাকে নিজের আরো কাছে টেনে নিলো।
সাহস কি করে হয় তোর আমাকে এভোয়েড করার।"
-ম মা...! তিশাকে আর বলতে দেয়না জিসান।
---সে যেই হোক,আমি কখনো তোর এভোয়েডনেস মেনে নিতে পারবো না।আমাকে এভোয়েড করার শাস্তি কিন্ত তোর জন্য ভয়ানক থেকে ভয়ানক হবে বলে দিলাম।এরপর এমন করার চেষ্টাও করবি না।
"তিশা কাপাকাপা শরীরেরই জিসানের দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে।কি ডেন্জেরেস মানুষ উনি।আমাকে এতো ভালোবাসে তবুও আমার একটুআধটু ভুলে শাস্তি দিতে উনার একটুও কষ্ট হয়না।কি পাষাণ আপনি জিসান।অনেক পাষাণ!"
---তিশার কাপাকাপা ঠোঁট,সূর্যের ললাটের মতো লাল হয়ে যাওয়া মুখখানি দেখে জিসান কোনও ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছে।নিজেকে নিজেই বলে ফেললো,আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেলফ।
তিশাকে আর কিছুই বলতে দিলো না জিসান,তিশা কাঁপছে বলে ওকে কোলে করে ছাদের দিকে হাটা ধরলো।
সুইমিংপুলের পেছনের দিকে একটা সিঁড়ি দিয়ে সোজা ছাদে যাওয়া যায়।আর ওখান থেকে তিশা আর জিসানের রুমটাও কাছে তাই।
জিসান হাটতে হাটতে বলতে লাগলো,ঠান্ডা লাগছে জান।
"উঁহু, না! ভীষন গরম লাগছে,দেখেন না কিভাবে কাপছি গরমে।"
----তাই নাকি,এই কাপানিটা আরো একটু বাড়িয়ে দিই জান।
"মানে!"
---আজ চাদর হবো তোর,তোর গরমের কারণ হবো।
তোর শরীরে লেপ্টে গিয়ে তোকে ঢেকে ফেলবো।আজ তোর কোম্বল হয়ে তোকে জরিয়ে রাখবো নিজের সাথে একদম।
__________
"লেপটপে বসে কালকের শিডিউল গুলো চেক করছিলো অর্ক।সাথে পোডাক্ট লঞের পার্টির আয়োজন কতোটুকু এগিয়েছে তার ডিটেলসও চেক করছে।আর তখনি একটা ইমেল আসলো মেল বক্সে।
হয়তো ইম্পোরটেন্ট হবে মনে করে অর্ক ইমেলটা ওপেন করলো।ইমেল ওপেন করার পর অর্ক যা দেখলো এতে ওর চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো।রাগে ফর্সা মুখটা লাল হয়ে গিয়েছে।ঠাস করে লেপটপটা বন্ধ করে দিলো।দাঁতেদাঁত চেপে বললো,
তাহলে এ ছিলো মনে তোমার।আমার সাথে পাঙ্গা নিয়ে ভালো করনি।এর মুল্য তোমাকে কড়ায় গন্ডায় দিতে হবে মিস।"
---তখন ইমেল ওপেন করে অর্ক দেখতে পেয়েছিলো ওর বিশ্বস্ত কর্মচারী আর পি এ রাজ একজন মেয়ের সাথে কফি শফে বসে আছে।আর ওই মেয়েটিকে কিছু ফাইলদিয়ে তার থেকে মোটা অংকের টাকা নিচ্ছে।এছাড়া রাজ ও ওই মেয়েটার একটা ভয়েজ রেকর্ডিংও শুনেছে অর্ক,যেখানে রাজ মেয়েটিকে অর্কের সব ডিটেলস বলছে।আর অর্ক মেয়েটার কন্ঠ শুনেই চিনে ফেলেছে কে এটা।
'ইমেলটা চেক করার পর অর্ক কাউকে ফোন করে বললো,রাজ জাতে কাল সকালের সূর্য দেখতে না পায়।অর্ক বিশ্বাস ঘাতকদের মাপ করে না।এছাড়া রাজ আমার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানে।আমার এসব ব্যবসা ছাড়াও যে কয়েকটা অবৈধ ব্যবসা আছে,তা রাজ ছাড়া কেউ জানে না।তাই রাজকে বাঁচিয়ে রাখলে আমাকে ফাশতে হবে।আর ও এখন বেঈমান হয়ে গিয়েছে,তাই ওর পৃথীতে থাকা আমার জন্য সেফ না'।
---ফোনের ও পাশের লোকটি, ওকে বস বলে ফোনটা কেটে দিলো।
খেলা এখন জমবে কেউ মরবে,কেউ ফাঁসবে। অবশেষে দেখা যাবে খেলায় কে জিতবে।
__________
"দেখতে দেখতে আরো একসপ্তাহ কেটে গেলো।পোডাক্ট লঞ্চের পার্টি আজ।কম্পানির মালিক হবার ধরুন তিশাকেও আজ প্রডাক্ট লঞ্চের পার্টিতে উপস্থিত থাকতে হবে।
পার্টির জন্য যে হলরুম বুক করা হয়েছে তা শহর থেকে কিছুটা দূরে।আর গেস্টদের সুবিধার জন্য হোটেল রুমগুলোও বুক করা হয়েছে।"
-লঞ্চ পার্টির জন্য জিসান,নিলয়,আর তিশা সকাল সকালই এসে পড়েছে হোটেলে।আর হোটেলে ঢুকার সাথে সাথে তিশার সামনে অর্ক এসে দাঁড়িয়েছে।তিশা খেয়াল করলো ওর আশেপাশের জিসান বা নিলয় কেউ নেই।
'জিসান কিছুটা দূরে কাউন্টারে রুমের ব্যাপারে কথা বলছে।আর নিলয়ের একটা ফোনকল আসায় কথা বলতে বলতে কোথাও চলে গিয়েছে।'
---তিশা নিজেকে সামলে নিলো একটু।তারমানে এই অর্কের সাথে এখন ওর নিজেকেই ডিল করতে হবে।এখন তো আমার জিসানও আছে,তাই একে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই।
"সো মিস তিশা,কেমন আছো।তোমাকে তো আজ কাল দূরবিন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায়না।নতুন কাউকে পেয়েছো মনে হয়।তাইতো আজকাল একটু বেশিই ব্যস্ত থাকো মনে হয়।"(অর্ক)
who are you tell me all this?Do your own thing.And stop thinking about me.It will be good for you...A.K..
----তিশার এতো কনফিডেন্স দেখে অর্ক একটা বাকা হাসি দিলো।কিন্তু তিশা সেই হাসি তোয়াক্কা না করেই অর্ককে পাশ কেটে চলে জেতে নিলো।
তখনি অর্ক পিছন থেকে বলে উঠলো -অলদা বেস্ট তিশা।
'তিশা ভ্রুকুচকে অর্কের দিকে তাকালো।'
-অর্ক এর কারণ বুঝতে পেরে,তিশাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
আজ তোমার এটার খুব প্রয়োজন পড়বে।এরপর বিশ্রি একটা হাসি দিয়ে অর্ক চলে গেলো।
---আর তিশা অর্কের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবছে,আজ এখানে এসে কোনো ভুল করিনিতো।
হঠাৎ জিসানের ডাকে তিশার ধ্যান ভাঙ্গে।
"কিরে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো।কোনও সমস্যা।"
---তিশা জিসানকে এসব বলে,টেনশনে ফেলতে চায় না তাই মাথা নাড়িয়ে না বলে।
জিসান তিশাকে নিজের রুম দেখিয়ে দিলো।
"অপরিচিত যেই আসুক,তিশাকে দরজা খুলতে মানা করে সব কিছু বুঝিয়ে বলে দিলো।তিশাকে বিশ্রাম নিতে বলে,জিসানও চলে গেলো।দুপুরে লাঞ্চ টাইমে দেখা হবে আবার।
-তিশাও লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিলো।খুব ক্লান্ত লাগছে কেনো জানি।এমনতো নয় তিশা আগে জার্নি করেনি বা জার্নি করার অভ্যাস নেই।তাহলে কেনো এমন লাগছে।আজ যেনো রাজ্যের ঘুমও চোখে ঢেলে পড়েছে।এতো ঘুম কোথা থেকে আসছে।
তিশা এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমের দেশে তলিয়ে পড়লো খবরই নেই।
---এদিক দিয়ে চলছে এক ভয়ানক প্লানিং সবার অগচরে।যার সমন্ধে হয়তো জিসানও জানে না।জানলে হয়তো এমন একটা সময় কখনো আসতেই দিতো না।
"লাবণি তুমি সিউর,আজই করবে।"
---ইয়ায়!আজকের মতো সুযোগ আর কখনো পাবো না।আর কেউ জানতেও পারবে না কে করেছে।
"কিন্তু লাবণি তুমি হয়তো একজনকে ভুলে গিয়েছো।ও জানে সব।তাই সবার আগে ও তোমাকেই সন্দেহ করবে।আর তখন কিন্তু জিসানের আগে ও তোমাকে শেষ করে দিবে।ইউ নো ভেরি ওয়েল,হি ইজ এ মেড লাভার।"
---উফ!অর্ক ভয় দেখিও না।ডোন্ট ওয়ারি আমি সবই সামলিয়ে নেবো।
ওকে,দেখি তুমি কি করো।(অর্ক)
_____________
"পুরো হলরুম আলোকসজ্জায় সজ্জিত।চারদিকে ছোটবড় লাইট আর তাজা ফুল দিয়ে হলরুমটা সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।দেশের অনেক ছোটবড় বিজনেস ম্যানদের সাথে মিডিয়ারাও ভিড় জমিয়েছে পার্টিতে।"
---পার্টি শুরু হয়ে গিয়েছে অনেকক্ষণ হলো,তিশা নিলয়ের সাথে পার্টিতে এসেছে অনেকক্ষণ হলো। কিন্তু জিসানের খবর নেই।নিলয়ও নাকি জানে না জিসান কোথায়।এই লোকটি পার্টি রেখে গায়ব হলো কোথায় আল্লাহই জানে।
"-পার্টিতে সবাই যার যার মতো ব্যস্ত, কিন্তু আমার চোখ তো শুধু একজনকেই খুঁজছে।হঠাৎ চোখ গেলো হলরুমের দরজার দিকে-
রায়হান ভাই ও নিশি দাঁড়িয়ে আছে।তাদের সাথে ঝর্ণাপু আছে।আমি আবাক হলাম ওদের দেখে,ওরা আসবে তাতো জানতামই না।তারমানে এসব আমার উনার কারসাজি।
তাদের পিছনেই জিসান রায়হান কে সাথে করে হল রুমে প্রবেশ করলো।আমার চোখ দু'টো হঠাৎ যেনো আজ একটু বেশি বেহায়া হয়ে গেলো।জিসানের থেকে চোখ সরানো দায় হয়ে পরেছে।
কেমন ভয়ংকর হেন্ডস্যাম লাগছে ছেলেটাকে।আজ জানি কাকে খুন করার উদ্দেশ্যে এমন গেটআপ নিয়ে এসেছে।উফ!আজতো খেয়ে ফেলতে মন চাইছে।"
"ইচ্ছেতো করছে সারাক্ষণ পাশে থাকি আপনার,একটু ছুঁয়ে দিয়ে আসি কারণে অকারণে। না হয় একটু পাশে বসে গল্প করে পার করেদি আজ।আপনার সমস্ত কথা গুলো আজ শুনি আনমনে।
আপনার চোখের পলকগুলো দেখেও যেনো আজ আমি হচ্ছি দিশেহারা।এ কেমন অদ্ভুত ফিলিং হচ্ছে মনে, উড়ে জেতে মন চাইছে ডানা মেলে।"
---হঠাৎ জিসান ক্লাইনদের সাথে কথা বলার ফাকে আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রুটা উঠিয়ে ইশারা করলো কোনও সমস্যা।
আমি কেনো জানি মুখে কিছুই বলতে পারলাম, শুধু মাথা নেড়ে ইশারা করলাম কিছুনা।
কি করে বলি জিসান, আপনাকে দেখে আজ আবার আমার প্রেম প্রেম ফিলিং আসছে।
'এই ধরনের বিজনেস পার্টিগুলোতে বিজনেস রিলেটেড কথাবর্তা গুলোই বেশি হয়।জিসান নিলয়ও সবার সাথে আলাপে আর মিডিয়ার লোকদের সাথে ব্যস্ত হয়ে পরেছে।এসবের মাঝে জিসান তিশার কথা কিছুক্ষণের জন্য ভুলেই গিয়েছে।'
---অনেকক্ষণ পর জিসানের খেয়াল হলো তিশাকে আশেপাশে দেখছে না কোথাও।জিসানের কেনো জানি অস্বস্তি হতে লাগলো।ও পার্টি ছেড়েই তিশাকে খুঁজতে লাগলো।
নিশি,ঝর্নার কাছে এসে জানতে পারলো তিশা ওয়াসরুমের দিকে গিয়েছে অনেকক্ষণ হয়েছে,কিন্তু এখনো আসেনি।
'জিসান কিছু না ভেবেই লেডিস ওয়াসরুমের দিকে অগ্রসর হলো।পুরো ওয়াসরুম চেক করেও তিশাকে পেলে না।এতোক্ষন সবার কানে কথাটা পৌঁছে গিয়েছে।রায়হান,নিশি,নিলয় ও ঝর্ণা মিলে পুরো হোটেলে খুঁজতে লাগলো।'
এই সময় হোটলের পিছনের গেটের দিকে তিশার একটা জুতো দেখে ঝর্ণা চিৎকার দিয়ে সবাইকে ডাক দিলো।
ঝর্নার গলার শব্দে সবাই হোটলের পিছনে ছুটতে লাগে।
ঝর্ণা জুতোটা সবাই দেখিয়ে বলে,এটা তিশার জুতো।কিন্তু এখানে কেনো।আর ও এভাবে জুতো ছাড়া কোথায় যাবে।'
---জিসান জুতোটা হাতে নিয়ে ঝর্ণাকে জিঙ্গেস করে,আর ইউ সিউর এটা তিশার।
'হুম,ভাই।আমি নিজে আজ সকালে ওর ব্যাগে এটা রেখেছি।'
"জিসান বুঝে গিয়েছে তিশার সাথে কিছু একটা হয়েছে।ও এভাবে না বলে কোথাও যাওয়ার মেয়ে না।অর্ক আবার ওর সাথে....জিসান ভেবেই আতকে উঠে।বুকের বামপাশে চিনচিন ব্যাথাটা যেনো বেড়ে যাচ্ছে তিশার কোনও অঘটন ঘটার কথা চিন্তা করে।
নিজেকে এখন সব থেকে বেশি দোষী মনে হচ্ছে জিসানের।বিপদ যেনোও কেনো তিশাকে নিজের সাথে রাখলো না।নিজের এই ভুলের জন্য তিশাকে না আবার হারাতে হয়।
______________
"অন্ধকার একটা রুমে তিশাকে ফেলে রেখেছে হাতপা বেধে।রুমটা হয়তো অনেকদিন বন্ধ ছিলো,তাই কেমন বিদঘুটে একটা গন্ধ আসছে তিশার নাকে।তিশার গা গুলিয়ে বমি আসছে।কিন্তু বমিটাও এখন করতে পারবে না কারণ ওর মুখটাও বাধা।"
---দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করা ব্যক্তিটিকে দেখে তিশা কিছুটা শোকড!এতোই শোকড!যে তিশা কিছু জিঙ্গেস করতেই পারেনি।
লাবণি কেমন বিশ্রী ভাবে হাসছে।লাবণির চেহারাটা আজ ভয়ানক লাগছে।
লাবণি হাসতে হাসতে বললো,কি মিসেস আহমেদ ভয় পেয়ে গিয়েছেন এতো তারাতারি।এখনও তো কিছুই করলাম।আর করলে কেমন লাগবে।আমাকে রিজেক্টক করার ফল এবার জিসান কড়ায় গন্ডায় বুঝতে পারবে বলে,তিশার মাথায় স্বজোরে একটা বাড়ী মারে।
"মুহুর্তেই তিশার কপাল ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ে।চোখের পলকে সবকিছু কেমন গোলাটে দেখা যাচ্ছে।তিশা বসার চেয়ারসহ মাটিতে পড়ে গেলো।ফ্লোরটা রক্তে কেমন লাল হয়ে যাচ্ছে।
তিশা নিভুনিভু চোখে তাকানোর চেষ্টা করছে।অবশেষে থেমে গেলো গেলো সব।
চলবে…।
"হাসপাতালের করিডোরে মাথাটা নিচু করে বসে আছে জিসান।সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত লাগছে ওকে।সাদা শার্টটির জায়গায় জায়গায় এখনো ছোপ ছোপ রক্তের দাগ লেগে আছে।কেউ ভয়েও জিসানের সামনে জেতে পারছে না।
-তিশার এমন অবস্থা দেখেও জিসান একফোটা কাঁদেনি বরং নিজেকে খুব শক্ত করে রেখেছে সবার সামনে।কেউ বুঝতেই পারছে না জিসানের মনে কি চলছে এখন।
---হাসপাতালে তিশাকে ভর্তি করার সময়ও ডাক্তারকে খুব শান্ত মাথায় ওয়ার্নিং দিয়েছিলো জিসান।তিশার কিছু হলে একটাকেও বাঁচতে দেবে না।
সব ডাক্তারকে জেন্ত পুতে ফেলবো একসাথে।পুরো হাসপাতালে আগুন লাগিয়ে দেবো।
'ডাক্তারাও ভয় পেয়ে ছিলো জিসানের এমন ঠান্ডা মাথার ওয়ার্নিং শুনে।এরপর জিসানকে সান্তনা দেওয়ার জন্য বললো-
'-রিলেক্স মিস্টার জিসান!আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেস্টা করবো।কিন্তু একটা কথা মনে রাখবেন বাঁচা মরণ সব উপরওয়ালার হাতে।তাই আল্লাহকে বেশি করে ডাকুন।'
---রাবেয়া বেগম এসে জিসানের কাঁধে হাত রাখলো।আজই জেনেছে তাওহিদের কাছে সব।আর শুনেই এক মুহুর্তেও দেরি না করে হাসপাতালে চলে এসেছে ছেলের কাছে।ছেলেকে আবার ফিরে পাওয়ার ক্ষনিকের সুখ পেলেও,ছেলেকে হারাবার ভয় আবার ভর করছে তার মনে ।
"মায়ের হাতের স্পর্শ পেয়ে জিসান নিজেকে আর সামলাতে পারলো না।মাকে জরিয়ে ধরে জিসান ডুকরে কেঁদে দিলো।
জিসানকে আগে কখনো এভাবে কাঁদতে দেখেনি কেউ,তাই সবাই স্থদ্ধ হয়ে গেলো জিসানের এমন রুপ দেখে।
'-ভালাবাসা কি অদ্ভুত একটা জিনিস তাই না,পাথরের বুকেও ফুল ফোটাতে বাধ্য করে।সকল বিধি-নিশেধ,ধর্ম- কর্ম সব যেনো এই চারটি অক্ষরের কাছে খুবই অসহায় হয়ে পড়ে নিমিষেই।'
---মা আমার তিশাকে এনে দেও,আমি ওকে ছাড়া বেঁচেও মরে যাবো মা।এই দিন দেখার জন্য কি আমি বেঁচে এসেছি।তার থেকে ভালো হতো আল্লাহ আমাকে নিয়েই যেতো।
আমি পারবো না মা ওকে ছাড়া থাকতে।ও আমার জীবনের সাথে এমন ভাবে মিশে আছে যে ওকে ছাড়া বেঁচে থাকার কথা কল্পনাও করতে পারিনা।
মা আমি মরে যাবো এবার, সত্যি বলছি,মরে যাবো।
তিশাকে বলো না মা, আমার কাছে ফিরে আসতে।ও এভাবে আমাকে একা ফেলে স্বার্থপরের মতো কিভাবে যেতে পারে মা।আমিতো পারি নি।
"শুনেছি পৃথীতে মায়ের দোয়া নাকি সবার আগে কবুল হয়,মা বলোনা আল্লাহকে আমার নিশ্বাসটা ফিরিয়ে দিতে,বলোনা মা।বলোনা!
জিসান বলেই কাঁদতে থাকে।"
---হাজার বিপদেও জিসানকে কখনো এতোটা ভাঙ্গতে দেখেনি কেউ।আজ সবাই তিশার থেকে বেশি জিসানের কষ্ট দেখে কষ্ট পাচ্ছে।কতোটা ভালোবাসা থাকলে এমন কঠিন মানুষটিকে ভেঙ্গে চূরমার করতে পারে।
'-শান্ত হো জিসান,দেখিস আল্লাহ সব ঠিক করে দেবে।আল্লাহর উপর ভরসা রাখ বাবা।এভাবে ভেঙ্গে পড়লে কিভাবে হবে।
রাবেয়া বেগম নিজেও ভীষণ ভয়ে আছে,আল্লাহর কাছে বারবার সাহায্য চাইছে।
---'হে আল্লাহ তুমি আমার সন্তানকে তো আমার বুকে ফিরিয়ে দিয়েছো,কিন্তু এখন এই মেয়েটির কিছু হয়ে গেলে আমার ছেলেটি নিজেকে তিলেতিলে শেষ করে দিবে।আমি মা হয়ে এসব দেখতে পারবো না,তার থেকে ভালোছিলো তুমি ওকে নিয়েই যেতে নিজের কাছে।কমপক্ষে এমন মানসিক যন্রনা থেকে তো বাঁচতো আমার ছেলেটা।
নিজের চোখের সামনে ছেলেকে ধুকেধুকে মরতে দেখতে পারবো না আল্লাহ।আমার ছেলেটি এই মেয়েটিকে খুব ভালোবাসে।
আল্লাহ তোমার কাছে ভিক্ষে যাইছি এই মেয়েটির জীবনটা ভিক্ষে দিয়ে দেও।'
'- হাসপাতালে সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে,তিশার বাবা মেয়ের এমন অবস্থা দেখে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।তাই তাকেও পাশের কেবিনে ভর্তি করা হয়েছে।বাকি সবার অবস্থায়ও তেমন ভালো না।
জিসান এখন চুপচাপ বসে আছে।কারো সাথে কোনও কথা বলছে না আর।'
"অপরেশন থিয়েটারের লাল লাইটটা বন্ধ হয়ে গেলো।দীর্গ কয়েক ঘন্টার অপরেশনের পর তাওহিদ বের হলো কয়েকজন নিউরো সার্জনদের সাথে নিয়ে।
দেশের সবথেকে বেস্ট সার্জেনরা এসে পরেছিলো তাওহিদের একটা ফোনকলে।তাই তাদের সবাইকে আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছে তাওহিদ নিজে।"
---জিসান ভাইয়ের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে জানার চেষ্টা করছে,সব ঠিক আছে কিনা।
তাওহিদ জিসানের কাধে হাত রেখে ওকে সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করে বললো,এতো চিন্তা করিস কেনো।উপরওয়ালা এতো নিষ্ঠুর না,দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।
'সব ঠিক হয়ে যাবে মানে!
আমার ত ততিশা ঠিক আ আছে তো ভাইয়া।
জিসানের গলাটা ধরে গেলো।খুব কষ্ট হচ্ছিলো কথাটা বলতে।'
---দেখ ভাই,তোকে মিথ্যা বলবো না,আপাততো ঠিক আছে।মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।কিন্তু তিশা আঘাত পাওয়ার পর অনেকক্ষণ যাবৎ অচেতন ছিলো,এটাই ওর জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়ে।
আপাততো উপর দিয়ে সব ঠিকই লাগছে কিন্তু ভেতরে কতোটুকু ক্ষতি হয়েছে তা তিশার জ্ঞান ফিরলে বুঝা যাবে।আশা করি তারাতারি ওর জ্ঞান ফিরে আসুক।তা না হলে...
"-তা না হলে কি?"(জিসান)
---তিশা কোমায় চলে যেতে পারে বা প্যারালাইজডও হয়ে যেতে পারে অথবা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে পারে।তখন ওকে ফিরে পাওয়ার চান্স অনেকটা কমে যাবে।
এসবই নির্ভর করছে ওর জ্ঞান ফিরার উপর।যতো দ্রুতো ওর জ্ঞান ফিরবে অতোই ভালো ওর জন্য।
'জিসান নিশ্চুপ '।
---আল্লাহর কাছে দোয়া কর ভাই।তিশা জাতে নিজের সাথে নিজে লড়াই করতে পারে।ওর বেঁচে থাকার প্রবল ইচ্ছাই ওদের দু'জনকে সেভ করতে পারবে।
'জিসান আর কিছু শোনার মতো অবস্থায় ছিলো না,তাই ভাইয়ের লাস্ট কথাটাও ওর কানেই যায়নি।'
-'কিন্তু রায়হান তৎক্ষানিক প্রশ্ন করলো তাওহিদ কে,
দু'জন মানে!
'রায়হানের প্রশ্ন শুনে জিসানও তাওহিদের দিকে তাকালো।'
"তাওহিদ শান্ত হয়ে জিসানের দু'কাঁধে হাত রেখে বললো,তিশা পেগনেন্ট।
সিটিস্ক্যান এর সাথে বাকি পরীক্ষা করতে গিয়ে জানতে পারি,তিশা সিক্স উইক পেগনেন্ট।
আই হোপ কোনও ক্ষতি ছাড়াই মা ও বাচ্চা দু'জনই ফিরে আসুক আমাদের মাঝে।"
---জিসান এটা শুনার সাথে সাথে ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো।এমন একটা খুশির খবর কি এই মুহুর্তে জানাটা খুব বেশি প্রয়োজন ছিলো।
একসাথে দু'টো প্রাণ লড়াই করছে ভেতরে।একজনের মাঝে ওর অস্থিত্ব বিরাজ করছে, আরেকজনের মাঝে ওর প্রাণটা।আল্লাহ এ কেমন পরীক্ষায় ফেললে আমায়।
'-জিসান চোখ দু'টো বন্ধ করে হাসপাতালের করিডোরের ফ্লোরেই বসে দেয়ালে মাথাটা হেলান দিয়ে আছে।কোনও কিছু চিন্তা করার শক্তি এখন আর ওর মধ্যে নেই।নিজেকে আজ সব থেকে বেশি অসহায় লাগছে।মনের সাথে একপ্রকার যুদ্ধ করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
---তোকে ফিরে আসতেই হবে তিশা।তুই আমার সাথে এমন করতে পারিস না।আমার অস্থিত্বটাকেও সাথে নিয়ে যাওয়ার প্লানিং করছিস।আমি পারবো না এটা মেনে নিতে।
তোকে আসতেই হবে আমার কাছে।আমার জন্য,আমাদের সন্তানের জন্য।
চোখদু'টোও বন্ধ করেই মনে মনে এসব বলে যাচ্ছে জিসান।
মনটা যে আজ ভীষণ অশান্ত ওর,ভীষণ!
____________
"তিশাকে 'নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে 'রাখা হয়েছে।যেখানে সর্বক্ষণ দু'জন ডাক্তার ও নার্স তিশার খেয়াল রাখছে।বাহিরের কাউকে এখানে আসার এলাউড করা হয়নি।
কিন্তু তাওহিদের সাহায্যে শুধু জিসান কেবিনে প্রবেশ করার অনুমতি পেয়েছে।
তবে তিশাকে ডিস্টার্ব করা বা কোনও রকম কথা বলতে নিশেধ করে দিয়েছে ডাক্তার।"
----তিশার নিথর দেহটা পড়ে আছে বেডের উপর।বেঁচে তো আছে,তবুও যেনো বেঁচে নেই।জিসান তিশার হাতটা ধরে পাশের একটা চেয়ারে বসে আছে।
এখন শুধু অপেক্ষা ছাড়া কিছুই করার নেই জিসানের।তিশার ঘুম থেকে উঠার অপেক্ষা, তিশার জাগার অপেক্ষা।
এই অপেক্ষা আবার না দীর্ঘ হয়ে পড়ে জিসানের জন্য।
-'তিশার হাতটা ধরে কয়েকটা চুমো দিলো জিসান।চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা নোনাজল গড়িয়ে পড়লো তিশার হাতে।কলিজাটা ধুমড়ে মুচড়ে উঠছে জিসানের তিশাকে এ অবস্থায় দেখে আজ।'
---জানিস তিশা এমনি এক হাসপাতালে তোর সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিলো।সেদিন তোকে দেখে মনে হয়েছিলো ছোট একটা পুতুল আমার সামনে রেখে দিয়েছে।তবে এই পুতুল নড়তে পারতো,কথা বলতে পারতো,হাসতে পারতো।তাইতো এই পুতুলটিকে নিজের করে নিতে চেয়েছিলাম।
-ভালোবাসার মানে কি তখনতো বুঝতামও না,শুধু জানতাম এই পুতুল আমার।আর সারা জীবন আমার কাছেই রাখবো।
'-জানিস যে বয়সে ছেলেরা তাদের গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুড়তে যেতো,লং ড্রাইভে জেতো।প্রিয়জনের কলে মাথা রেখে ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করতে ব্যস্ত থাকতো তখন আমি তোর বড় হবার অপেক্ষা করেছি।'
'-এমন না আমার মন চাইতো না এসব।আমারও মন চাইতো তোর সাথে একটু গল্প করতে,তোকে মনের সব অনুভূতি গুলো বলতে,তোকে একটু কাছে পেতে,একবার ছুঁয়ে দিতে।
কিন্তু আমি পারতাম না।একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়া কিছুই করতে পারতাম না।'
'--বয়সের তুলনায় তখন তুই যে খুব ছোট ছিলি।তোকে দূর থেকে দেখেই নিজের চোখের তৃষ্ণা মিটাতাম।
তোর কাছে কাছে থাকতে ভয় পেতাম,আবেগে বশিভূতো হয়ে আমি আবার এমন কিছুনা করে ফেলি,যার জন্য আমি তোকে হারিয়ে ফেলি।
তাই তোকে ভালোবাসার বদলে শুধু শাসন করতাম।কখনো তোকে না পাওয়ার ফাস্ট্রেশনে,কখনো বা তোকে ইচ্ছে করে নিজের থেকে দূরে রাখার জন্য।
আমার এই দীর্ঘ জীবনে তোকে পাওয়ার অপেক্ষাটাও দীর্ঘ ছিলো তিশা।
আর এটা যে আমার জন্য কতোটা যন্ত্রণাদায়ক ছিলো তোকে বুঝাতে পারবো না।
আমি আবার সেই যন্ত্রণা পেতে চাই না 'জান'।আমার মধ্যে আর ধৈর্য নেই তাই বলছি ফিরে আস আমার কাছে 'জান'।প্লিজ ফিরে আস।'
_____________
---ঝর্ণা ওর বাসায় ফোন করে জিসানের কথা আর তিশার বর্তমান অবস্থার কথা জানিয়ে দিয়েছে।খবর পেয়ে জিসানের দু'মামাও ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।
হাসপাতালের করিডোরের একসাইডে দাঁড়িয়ে ঝর্না নিজেও কাঁদছে।
নিজেকে অনেকটা দোষী মনে হচ্ছে ওর।
কতোটা ভরসা করে ভাই তিশার দায়িত্ব দিয়েছিলো আমায়,বারবার বলেও গিয়েছিলো তিশার সাথে সাথে থাকিস।
কেনো কথা শুনলাম না।আজ আমার একটা অবহেলার কারণে তিশার এমন অবস্থা হলো।তিশার কিছু হয়ে গেলে নিজেকে কখনো মাপ করতে পারবো না আমি।কখনো না!
ডুকরে আবার কেঁদে উঠলো ঝর্ণা।
"কেউ খেয়াল না করলেও নিলয় ব্যাপারটা খেয়াল করলো,অনেকক্ষণ ধরে ঝর্ণাকে দেখছে না।তাই আশেপাশে খুঁজতে গিয়ে পেয়েও গেলো।দূর থেকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে ঝর্ণা যে কাঁদছে।"
'---হাসপাতালের কেন্টিনে বসে আছে ঝর্ণা।আর ঠিক অপজিট সাইডে নিলয়।
নিলয় ঝর্ণার দিকে একগ্লাশ পানি এগিয়ে দিলো।পানিটা খেয়ে নেও ঝর্ণা।
দেখো এখন এভাবে যদি আমরা সবাই ভেঙ্গে পরি তাহলে জিসানকে আর তিশার পরিবারকে কে সামলাবে বলো।
এটা একটা পরীক্ষার সময়,তাই আল্লাহতা'লার উপর ভরসা করে ধৈর্য ধরা ছাড়া আর কোনও পথ নেই আমাদের।
'একটা কথা জিঙ্গেস করি আপনাকে।'(ঝর্ণা)
--হুম বলো__
'-আপনে ভাবীকে ভালোবাসেন।'
---নিলয় মোটেও আশা করেনি ঝর্ণা এখন এই সময় এমন কোনও প্রশ্ন করবে।
তাই কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো-
'ভালোবাসি কিনা জানি না।তবে লাইফে প্রথম যে মেয়েটাকে দেখে আমি মনের ভেতর ফিলিংস অনুভোব করেছি সেটা তিশা ছিলো।তিশাকে আমি পারসোনাল ভাবে চিনতাম না।
প্রথম জিসানের মোবাইলেই ওর পিক দেখেছিলাম।বিশ্বাস করো দেখেই মনের ভেতর কেমন সুখ সুখ দোলা দিয়েছিলো।
তখনও এক মুহুর্তের জন্যও ভাবিনী তিশা জিসানের ওয়াইফ হতে পারে।
তবে পিকটা দেখেই বুঝা যাচ্ছিলো মেয়েটার বয়স একদম কম।আমি জিসানের কাজিন বা সিস্টার ভেবেছিলাম।
-এরপর কিছুদিন পর ওর নতুন নতুন পিকগুলো জিসানের ফোনে দেখতে পেলাম।আমার কিছুটা সন্দেহ হলো,প্রতিদিন তিশার নতুন নতুন পিক জিসানের কাছে এসে পড়তো।কিন্তু কেনো?
তাই একদিন কৌতূহলে জিসানকে জিঙ্গেস করেই ফেললাম, তিশার সম্পর্কে।
-জিসানের মুখে তিশার কথা আর ওদের বিয়ের কথা শুনে সত্যিই সেদিন আমি অবাক হয়েছিলাম।আর এটাও জেনেছিলাম তিশার জন্য জিসান সব কিছু করতে পারে।
-'তবে সেদিন আমার অনুভূতির কথাগুলোও জিসানকে বলে দিয়েছিলাম।সাথে সরিও বলেছিলাম।কারণ এটা সম্পূর্ণ না যেনে হয়েছিলো।
আমি সেদিন ভেবেছিলাম জিসান রাগ করে হয়তো আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটাকে নষ্ট করে দেবে।কিন্তু আমাকে অবাক করে জিসান সেদিন কিছুই বলেনি।
বরং আমাকে বিশ্বাস করেছে।
আর নিজের অবর্তমানে তিশার সম্পূর্ণ দায়িত্বও আমাকে দিয়ে গিয়েছিলো।
_____________
"অর্ক নিজের বাড়ীর ড্রয়িংরুমে বসে শ্যাম্পেইনে চুমুক দিয়ে সেলিব্রেশন করছে।আজকে ওর শত্রুদের পরিনিতির কথা চিন্তা করেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাচ্ছে।"
---তিশা বাচুক বা মরুক এতে ওর কিছু যায় আসে না।কিন্তু অর্ক এতোটুকু জানে,তিশা বাঁচলেও জিসান লাবণিকে ছাড়বে না,আর মরলেও না।লাবণিকে তো এবার জিসান শেষ করেই দেবে।
আর কোনও ক্রমে যদি জিসান থেকে বেঁচেও যায় লাবণি, তাহলে তিশার পাগল প্রমিক থেকে কিভাবে নিজেকে বাঁচাবে।ভেবেই অর্কের হাসি পাচ্ছে।
'-আমার সাথে বেঈমানি করার চেষ্টা তোমাকে অনেক ভারী পড়বে বলেছিলাম না মিস লাবণি।আমার সাথে বন্ধুত্বের অভিনয় করে আবার আমার পিঠেই ছুড়ি মারার চেষ্টা করেছো।
সেদিন ওই রেকডিং এ রাজের সাথে তোমার সব কথা শুনে চিনতে আমার একটুও ভুল হয়নি।তুমি তিশাকে মেরে আমাকে ফাঁসাতে চেয়েছিলে,তাইতো আমি জিসানকে ম্যাসেজ করে তিশার লোকেশন বলে দিয়েছি।
---আমি জানি জিসান খুব স্ম্যাট একটা ছেলে তিশার সাথে কে এমন করেছে খোঁজ নিতে বেশি সময় লাগতো না ওর।কিন্তু এতোদিনে জিসান ওর সব রাগ আমার উপর উঠাতো।তাই নিজেকে সেভ করতেই তোমার নামটা বলে দিতে হয়েছে।'
---আর যে এই খেলাটা শুরু করেছে,সেও তো সবার আগে আমার উপরি আক্রমণ করতো।
এর কারণেই তো এতো বছর পর এখানে আসা।তানা হলে খামাখা আমি জিসানের সাথে পাঙ্গা নিতে যাবো কেনো।
জিসানকে সরানোর জন্য, জিসানের শত্রুদের আবার ফিরিয়ে এনেছে এই কাহিনীতে।
কিন্তু ব্যাচারা আশিক এখন কি করছে।তিশার এ অবস্থা দেখে আবার পাগলটাগল না হয়ে গিয়েছে।
অর্কের এসব চিন্তার মাঝেই---
'হঠাৎ একজন লোক হন্তদন্ত হয়ে বাড়ীতে প্রবেশ করে,
স্যার স্যার বলে চিৎকার করতে লাগলো।'
---বাড়ীতে এমন শোরগোল অর্কের মোটেও পছন্দ না, তাই কিছুটা বিরক্ত হয়ে,
কি হয়েছে এমন চিৎকার কেনো করছো।কেউ মরে গিয়েছে।
-'স্যার আপনে এখনো এখানে কি করছেন।'
---মানে!কি বলতে চাও।আর আমি কোথায় যাবো।
'-স্যার টিভি ছাড়েন,আপনার ভাণ্ডা সব ফাঁস হয়ে গিয়েছে।তারাতারি দেখেন।'
---লোকটির কথা শুনে,অর্ক টিভিটা অন করার পর পায়ের নিচের মাটি সরে গিয়েছে ওর।
ব্রেকিং নিউজ___
"বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জিসান আহমেদের ওয়াইফ তিশা আহমেদ এর উপর হামলার অপরাধে মিস লাবণি নামক এক বিদেশি নাগরিক কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।পুলিশের জবানবন্দিতে উনি নিজের অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছে।সাথে নিজের সহযোগীতার নামও প্রকাশ করেছে।
জানা গিয়েছে তাকে প্রতিটি পদে সাহায্য করছে এ. কে গ্রুপ অফ ইন্ড্রাসট্রির মালিক অর্ক।
শুধু তাইনা উনারা মিলেই মিস্টার জিসান আহমেদকেও মার্ডারের প্লানিং করেছিলো,কিন্তু ভাগ্যক্রমে মিস্টার জিসান আহমেদ বেঁচে যায়।
এছাড়া লাবণি জানিয়েছে অর্কের অনেক অবৈধ ব্যবসাও নাকি আছে।আর তার সত্যতার প্রমাণ দিয়েছেন তারই পি এ রাজ।সেও পুলিশের কাছে সব স্বীকার করেছে।"
---অর্ক মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে শোফায়।এটা কিভাবে সম্ভব।আর এই রাজ বেঁচে আছে কিভাবে।লাবণিকে পুলিশ ধরলো কখন,ওতো প্যারিসের ফ্লাইটে থাকার কথা এখন।
সব প্লান শেষ।আমার সব শেষ।
এতো বছর ধরে যা অর্জন করেছি সব শেষ।কে বলেছিলো আমাকে এখানে আসতে।আমি একটা গাধা,আহম্মক।
না এখন আর এখানে থাকা যাবে না,পুলিশ আসার আগেই আমাকে পালাতে হবে এখান থেকে।
__________
"অন্ধকার একটা রুমে বসে আছে অর্ক।হাত পা বাধা,কিছুক্ষণ আগেই জ্ঞান ফিরলো।আর চোখ খুলেই নিজেকে এখানে পেলো।মাথায় চাপ দিয়ে মনে করার চেষ্টা করছে কি হয়েছিলো ওর সাথে।
তখন পালাবার জন্যই বাড়ী থেকে বের হয়েছিলো কিন্তু হঠাৎ কয়েকজন মুখশধারী লোক এসে ওকে অঙ্গান করে এখানে নিয়ে আসে।আর কিছুই মনে নেই ওর। এখন দিন কি রাত তাও জানে না।"
---এমন সময় রুমের দরজাটা খুলে কেউ ভেতরে ডুকলো।অর্ক মাথাটা তুলে সামনে তাকিয়ে ভয়ে আতকে উঠলো,সামনের ব্যক্তিটি কে দেখে।
তুমি এখানে ডাক্তার!তুমি আমাকে তুলে এনেছো।,কেনো?
'-অর্কের কলার ধরে,
বলেছিলাম না তিশাকে কেউ জাতে টাচ না করে,তাহলে সাহস কি করে হলো,ওকে মারার প্লানিং করার।
আমি তোদের এখানে এনেছি,জিসানকে আমার আর তিশার মাঝ থেকে সরানোর জন্য।আর তোরা আমার উপরই বাটপারি শুরু করে দিয়েছিস।
পুলিশের কাস্টাডিতে আছে বলে ওই লাবণিতো বেঁচে গিয়েছে। কিন্তু এ.কে তোমাকে কে বাঁচাবে।
আজ তোমাদের কারণে আমার তিশার এ অবস্থা,তাহলে তোমরা কেনো বেঁচে আছো এখনো।
---ডাক্তার আমার কথাটাতো শুনো....অর্ককে আর কিছু বলতে না দিয়েই ঠিক মাথার বরাবর একটা গুলি করলো অচেনা লোকটি।
সাথেসাথে অর্ক ওখানেই শেষ হয়ে গেলো।
"চব্বিশ ঘন্টা পর তিশার জ্ঞান ফিরলো।তিশা এখন আপাততো সুস্থ আছে,তবে নিউরো সার্জেনরা জিসানকে কিছু বিষয় সাবধান করে দিলো--
-দেখুন মিস্টার জিসান,আপনার ওয়াইফ এবং তার বেবিও আল্লাহর রহমতে এখন ভালোই আছে।এটা একটা চমৎকার বলতে পারেন।আমরা মিসেস আহমেদ এর ঠিক হওয়ার আসা করলেও ভেবেছিলাম বেবিটা হয়তো বাঁচবে না।
এধরনের কেশ এ এমনই হয়।
কিন্তু একটা কথা আছে না,'রাখে আল্লাহ,তো মারে কে।'
এসবই উপরওয়ালার ইচ্ছে।
---কিন্তু এখন আপনার ওয়াইফকে সাবধানে রাখতে হবে।তার মাথার ইনজুরিটা সারতে সময় লাগবে।তাই তাকে এখন থেকে সব ধরণের চিন্তা থেকে মুক্ত রাখতে হবে।সব সময় হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করবেন।উনি টেনশন পড়ে যাবেন এমন কোনও কথাবর্তা বা কাজ থেকে উনাকে দূরে রাখবেন।
মনে রাখবেন মানসিক বা শারীরিক কোনও ভাবে যেনো উনি আঘাত না পায়।
উনি বেশি টেনশন করলে উনার মাথায় আঘাত লাগবে,আর এতে হয়তো উনি কিছু পাগলামি করবে,অদ্ভুট আচরণ করবে,আপনাকে ধৈর্য ধরে তার পাগলামো গুলো সহ্য করতে হবে।
"মনে রাখবেন আপনার ওয়াইফ পাগল না,তাই উনাকে ওভাবে কখনো ট্রিট করবেন না।আপনার ভালোবাসা আর কেয়ারই হচ্ছে এখন আপনার ওয়াইফের সবচেয়ে বড় মেডিসিন।
ভালোবাসার ডোজটা এখন থেকে একটু বাড়িয়ে দিন মিস্টার জিসান।"
---জিসান একটু মুচকি হেসে ডাক্তারকে বললো,ডোন্ট ওয়ারি ডাক্তার।আমি সামলিয়ে নেবো ওকে।যদি ও পাগলও হয়ে যেতো তখনোও ওকে ছাড়তাম না।আর এখনতো ও সুস্থ। আমার ভালোবাসা দিয়ে আমি ওর পাগলামো গুলোও ভুলিয়ে দেবো।
'আমরা এটাই আশা করেছি আপনার কাছ থেকে মিস্টার জিসান।'
চলবে…।
[অনেকে জানেন না আমি গল্প কতোদিন পর দিই।তাই আবার বলে দিচ্ছি ঠিক দু'দিন পর পর আমি গল্পটা পেজে দিই।
কমেন্ট করবেন অবশ্যই।ধন্যবাদ। ]
"এক বিকট আওয়াজে বাড়ীর সবাই হন্তদন্ত হয়ে জিসানের রুমের দিকে ছুটে এলো।কারণ শব্দটা ওই রুম থেকেই আসছে তাই।
রুমের যতোই কাছে আসছে আওয়াজ ততোই যেনো বাড়ছে।রাবেয়া ও তানজিলা তাই অনেকটা দৌঁড়েই রুমে প্রবেশ করলো।আর এসে যা দেখলো তাতে তারা মোটেও শোকড নয়।কারন গতো তিন মাসে অনেকটাই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে এসবে।"
---তিশা বিছানার চাদরসহ বালিশগুলো একে একে সব ফ্লোরে ফেলে দিয়েছে।হাতের সামনে যা পাচ্ছে তাই ছুড়ে ফেলছে।পুরো ঘরটা কেমন লণ্ডভণ্ড করে ফেলেছে।
তানজিলা ও রাবেয়া কেউ সামনে যাওয়ার সাহস পেলো না।
কারণ এর আগে যতোবার তিশা ভাইলেন্ট হয়েছে,তিশার সামনে যেই যেতো তাকেও আঘাত করতো।
একমাত্র জিসানই পারে ওকে একদম শান্ত করতে। তাই রাবেয়া তানজিলাকে ইশারা করলো জিসানকে খবর দিতে।
'-খবর পেয়েই জিসান বাসায় এসে পড়লো।হাতের কোর্টটা ড্রয়িংরুমের শোফায় কোন রকম ছুড়ে ফেলে দিয়ে নিজের রুমের দিকে ছুটে গেলো।
দরজার সামনেই মা আর ভাবীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই বুঝে গেলো রুমে এখন টর্নেডো চলছে নিশ্চয়ই ।জিসান মনে মনে ভাবছে আজ আবার কেনো তিশা এতো ভাইলেন্ট হলো।
---টেবিলে রাখা একটা ফুলদানি হাতে নিয়ে ছুড়ে মারতে গেলে জিসানের ডাকে থেমে যায় তিশা।তাকিয়ে দেখে জিসান দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে।জিসানকে দেখে রাগটা যেনো আরো একটু বেড়ে গেলো তিশার।
"জিসান দরজার সামনে দাঁড়িয়েই,' জান কি হয়েছে'।আজ আবার কে কি করলো।বল আমায়।"
---তিশা জিসানের দিকে ত্যারে আসতে নিলে,জিসান তিশাকে হাতের ইশারায় থামিয়ে দেয়।
"স্টোপ জান।ফ্লোরে অনেক কাচের টুকরো পরে আছে,তাই যেখানে আছিস সেখানেই থাক আমি আসছি তোর কাছে।"
---এই একদম আসবেন না আমার কাছে,তিশা জিসানকে থামিয়ে দিয়ে।আপনি একটা খারাপ মানুষ।
"আমি!আমি আবার কি করলাম এখন।জিসান কিছুটা অসহায় মুখ করে।"
'-আপনিই তো ম্যান কালপিট। আপনি ঘরে বউ রেখে বাহিরে পরকিয়া করে বেড়ান।আর আমাকে বলেন কাজে ব্যস্ত থাকি।আমাকে এখন আর ভালো লাগে না,তাই না বলেই ফুলদানি টা জোড়ে আছার মারলো তিশা।আর একটু হলেই জিসানের গায়ে পরতো।
'তিশা ক্লান্ত হয়ে ফ্লোরে বসে পড়লো।
আমাকে আগের মতো ভালোও বাসেন না আপনি,
কাছেও আসেন না।কিছু বললে বলেন আমি অসুস্থ।
আপনার মতলোব আমি এতোদিন না বুঝলেও এখন সব বুঝতে পারছি। আপনি নতুন কাউকে খুঁজে পেয়েছেন তাইনা জিসান।
এই সত্যি করে বলেন তো,আপনি কাকে পছন্দ করেন এখন।কাকে আমার সতিন বানানোর প্লানিং করছেন।'
---জিসান শোকড!তিশার কথা শুনে।এ কোন রেকর্ড শুরু হলো আমার বউয়ের আবার। এই রেকর্ড এখন কয়েক সপ্তাহ ধরে বাজবে কানের কাছে।এবার ওকে শান্ত করতে আল্লাহই জানে কি কি করতে হবে আমায়।
'-হঠাৎ তিশা ডুকরে কাঁদতে লাগলো,আমাকে আপনি ছেড়ে দিবেন তাই না জিসান।বের করে দিবেন বাড়ী থেকে।কিন্তু আমি কোথাও যাবো না বলে দিলাম।আর আমার রুমেও কাউকে ডুকতে দেবো না বলে দিলাম।খুন করে ফেলবো সবাইকে আমি।'
---জান এসব কি বলছিস।আমি কেনো তোকে বের করে দেবো।তুই তো আমার লক্ষী সোনা বউ।আর এতো লক্ষী সুন্দর বউকে রেখে কি কেউ বাহিরে প্রেম করতে পারে।
আমি শুধু তোকে ভালোবাসি জান।আমার আর তোর মাঝে কেউ আসতে পারবে না।আমি আসতেই দেবো না কাউকে।প্রমিজ জান।
'না আপনি মিথ্যা বলছেন।'
---না জান, আমি কেনো মিথ্যা বলবো।
'-পাশের বাসার আন্টি বলছে,সব স্বামীরাই নাকি বউয়ের প্রেগনেন্সির সময় পরকিয়া করে বেড়ায়।আর বউকে এভোয়েড করে।তাহলে আপনিও নিশ্চয়ই আমার এ অবস্থায় এসব করে বেড়ান বাহিরে গিয়ে।তাইতো এখন আর আমাকে ভালো লাগে না আপনার।'
-জিসান যা বুঝার বুঝে গিয়েছে, রাগে কটমট করে মায়ের দিকে তাকালো।
রাবেয়া বেগম ছেলের রাগ উঠছে বুঝতে পেরেই ওখান থেকে পালালো।ব্যাচারী রাবেয়া ভাবতেই পারেনি তিশা এভাবে রিয়েক্ট করবে ওসব কথায়।
কিছুক্ষণ আগের কথা___
"তিশার রুমে একা একা ভালো লাগছিলো না দ্বিধায় নিচে নেমে তারিনকে খুঁজতে লাগলো।আজকাল তিশার তারিনকে নিয়েই সময় কাটে।কারণ বাড়ীর কোনও কাজ তিশাকে কেউ করতে দেয়না।
তিশা কয়েকদিন জোর করে করতে গিয়েছিলো,কিন্তু একদিন হঠাৎ অসচেতনায় ছুড়ি দিয়ে সবজি কাটতে গিয়ে,আঙ্গুলের কিছু অংশ কেটে যায়।অনেক রক্তও বের হয়।
জিসান সেদিন পুরো বাড়ী মাথায় উঠিয়ে ফেলে,কে তিশাকে রান্না ঘরে যাওয়ার পারমিশন দিয়েছে।
সেদিন তিশা সত্যিই ভয় পেয়ে গিয়েছিলো, সামান্য একটু কাটায় জিসান এমন রিয়েক্ট করবে তিশা ভাবতেও পারেনি।
এরপর থেকে তিশার জন্য কার্ফু জারি করা হয়েছে।পাকের ঘরের ত্রিসীমানায় জাতে তিশাকে না দেখে জিসান।
ম্যান কথা হচ্ছে জিসান তিশা আর ওর বেবিকে নিয়ে আর কোনও রিস্ক নিতে চায়না।"
---তিশা ড্রয়িংরুমে এসে দেখে পাশের বাড়ীর আন্টি আর তার সাথে অল্প বয়সের একটা মেয়ে বসে রাবেয়া বেগম ও তানজিলার সাথে কথা বলছিলো।সম্ভবত তারা সম্পর্কে মা মেয়ে হবে।
তিশাও গিয়ে তাদের সাথে জয়েন হলে,রাবেয়া পরিচয় করিয়ে দেয় সবার সাথে তিশাকে।
'তাদের গল্প ভালোই চলছিলো,তিশারও খুব ভালো লাগছিলো এতোদিন পর একটু গল্প করতে পেরে।আর তখনি মালিহা নামের মেয়েটি প্রশ্ন করলো ভাবী কয়মাস আপনার।
-তিশা একটু লজ্জা মুখে বললো,সারে চারমাস চলছে।
'ও ভালোই,নিজের দিকে একটু খেয়াল রাইখেন।বাচ্চা হবার সুখে আবার মুটিয়ে যাইয়েন না।তা না হলে আবার স্বামীকে হারাতে হবে।সব দিক দিয়েই ম্যান্টেইন করে চইলেন।'
-মানে!তিশা একটু কৌতুহল হয়ে।
"মালিহার মা মরিয়োম বেগম কথাটা কাটানোর জন্য রাবেয়া বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
আর বইলেন না আপা। আমার এক ভাগ্নির কয়েকমাস আগে তালাক হয়ে গিয়েছে।তাই হয়তো মালিহা এমন বলছে আপনার ছেলের বউকে, কিছু মনে কইরেন না আপনি আবার ।"
-আরে না কিছু মনে করিনি।কিন্তু কেনো তালাক হলো!মানে কোনও সমস্যা হয়েছিলো।(রাবেয়া)
"সমস্যা বলতে, ভাগ্নি আমার প্রেগন্যান্ট ছিলো। আর তখন থেকেই নাকি ওর জামাইয়ের কারো সাথে পরকিয়া চলছিলো।জানেন তো আজকালকের ছেলেরা বিয়ের পর বেশির ভাগই প্রেমে পড়ে,বউয়ের অন্তঃস্বত্বার সময়।
আমার ভাগ্নির বেলায়ও এমন হয়েছে।পরনারীর চক্করে পড়ে গিয়েছে জামাই।পরে এই প্রেম অনেক গভীর হয়ে গিয়েছে।
তার উপর ভাগ্নি আমার বাচ্চা হবার পর কেমন জানি একটু অগোছালো হয়ে পড়েছে। নিজের একটু যত্নও নিতো না।তাতে করে ওর হাসবেন্ড এর মন পুরোপুরি উঠে গিয়েছে ওর উপর থেকে।
একদিন তো বলেই দিলো মুখ ফুটে তালাকের কথা।অনেক বুঝিয়েছি জানেন কিন্তু অবশেষে তালাকটা আটকাতে পারলো না কেউ।বাচ্চাটার কথাও চিন্তা করলো না।"
---আন্টি কিছু মনে করবেন না,এসব ছেলেরা আগের থেকেই ক্যারেক্টারলেস হয়।এদের চরিত্রের দোষ থাকে বলেই এরা এমন করে।তা না হলে বউয়ের প্রেগনেন্সির সময় বউয়ের সেবা না করে যে ছেলে বাহিরে গিয়ে সুখ খুঁজে,তাদের অন্তত আমি পুরুষ বলবো না।
এতোই যদি ধৈর্য না থাকে তাহলে বউকে পেগনেন্ট কেনো করছে।নাকি বাচ্চাটা আসমান থেকে টুপ করে পড়ছে।
আর এসব পুরুষ থেকেও জগন্য হচ্ছে ওসব নারীরা। যারা বিবাহিত যেনেও এসব পুরুষের সাথে সম্পর্কে জড়ায়।অন্যের ঘর ভেঙ্গে সেই জায়গায় যদি তাজমহলও বানানো হয় থাকার জন্য।তাহলেও কোনও দিন সুখ আসবে না সেই ঘড়ে।
আরেকটা কথা,আমাদের জিসান মোটেও এমন না।ও তিশাকে খুব ভালোবাসে।তিশা ছাড়া কোনও মেয়ের কথা কল্পনাও করে না।তাই তিশাকে অন্তত এসব নিয়ে চিন্তিত হতে হবে না।
তিশার দিকে তাকিয়ে বুঝলে তিশা।(তানজিলা)
'-যাই বলেন ভাবী, পুরুষের মন পাল্টাতে সময় লাগে না।তাই আরকি একটু সাবধান করলাম ভাবীকে।বাকী তার হাসবেন্ড কেমন সেই ভালো জানে।আশা করি ভাবীর সব ঠিক থাকুক আমরা তাই দোয়া করি।'
---অবুঝ তিশা তানজিলার কথাগুলোর কিছু শুনছে কিনা কে জানে।কিন্তু তখন থেকে তার মনে একটা কথাই বাজছে।বউয়ের প্রেগনেন্সির সময় স্বামী অন্যনারীর প্রেমে পড়ে যায়।
আর এসব চিন্তা করেই তিশা ভাইলেন্ট হয়ে যায়।নিশ্চয়ই জিসানের আজকাল ওর থেকে দূরে থাকার কারণ এটাই হবে।
____________
"হঠাৎ জিসান তিশাকে কোলে তুলে নেয়।তিশা খেয়ালি করেনি কখন জিসান ওর এতো কাছে এসে পড়ছে।জিসান তিশাকে কোলে করে বারান্দায় চলে গেলো।আর যাওয়ার আগে কাজের লোকদের রুমটা পুরো পরিষ্কার করে ফেলতে বললো দ্রুতো।"
---বালকানির কাউচে জিসানের বুকের উপর মাথা রেখে শুয়ে আছে তিশা।জিসানও পরম যত্নে তিশাকে জরিয়ে ধরে রেখেছে।
'আপনি আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন নাতো।'
---জিসান হেসে দেয় তিশার কথায়,কোথায় যাবো আমি বল,আমার শেষ ঠিকানা তো তুই।তাই যেখানে যাই কিনা বেলা শেষে আমি তোর কাছেই ফিরে আসবো।আমার নিশ্বাসে বিশ্বাসে মিশে আছিস তুই।তোকে ছাড়া বাঁচবো কি করে পাগলী আমি।আর এখনতো তুই একাও না,দু'জন একসাথে তোরা।আর তোদের দু'জনের মধ্যে আমার প্রাণপাখিটি বিরাজ করছে।ছেড়ে গেলে মরে যাবো।
'সত্যি আমাকে এখনো ভালোবাসেন।'
---কেনো বিশ্বাস হয়না।
'তিশা মাথা নেড়ে না বলে।'
---জিসান ভ্রুটা কিঞ্চিত কুঁচকিয়ে বললো,সন্দেহ করিস আমার ভালোবাসার।
তিশা নিশ্চুপ।
---জিসান একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে তিশাকে নিজের সাথে আরো গভীর ভাবে জরিয়ে ধরে বলে, কি করলে ম্যাডামের সন্দেহ কমবে,শুনি।
'আদর করলে।'
---জিসান তিশার কপালে একটা চুমো দিয়ে বললো,এতো আমার জানকে আদর করে দিলাম।
'তিশা রাগি একটা লুক নিয়ে জিসানের দিকে তাকিয়ে,
আমি কি ছোট বাচ্চা,যে আমাকে এখানে আদর করলেন।'
--জিসান এবার পুরো হেসে দিলো,তুইতো বাচ্চা না,আমার বাচ্চার মা।
"থাক লাগবে না আমার আপনার আদর।আর আমি থাকবোও না আপনার কাছে।কালই চলে যাবো বাবার বাসায়,তখন দেখবোনি আমাকে ছাড়া কিভাবে থাকেন।"
---জিসান তিশাকে নিজের সাথে চেপে ধরে বললো,এই বাড়ী কেনো এই রুম থেকে বের হতেও তোর আমার পারমিশন লাগবে।তাই এসব বলে লাভ নেই জান।এসব হুমকি অন্য কারো জন্য রাখিস কাজে লাগবে তোর।
'-দেখছেন আমি ঠিক বলেছিলাম,আপনি আমাকে আগের মতো ভালোবাসেন না।বাসলে এসব বলতেন না,বরং আমাকে আদর করতেন।'
--জিসান বুঝে গিয়েছে,ওর বউয়ের সন্দেহ দূর না করা পর্যন্ত ওকে নিস্তার দেবে না।তাই আপাততো তিশাকে শান্ত করতে,
ওকে আদর লাগবে তো ঠিক আছে।রাতে দেবো অনেক আদর এখন চুপচাপ লক্ষী বাচ্চাদের মতো ঘুমা।তা না হলে এই সপ্তাহও তোর কপালে আমার আদর ঝুটবে না বলে দিলাম।
'সত্যি রাতে দিবেন।'
---তিন সত্যি।
'তিশা আবার শুয়ে পড়লো জিসানের বুকে।আর জিসান তিশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।'
--কিছুক্ষণ পর তিশা,শুনেন না।
"হুম বল।"
---একটা গান শুনাবেন প্লিজ।
তুমি আমার এমনই একজন
যারে এক জনমে ভালোবেসে
ভরবে না এ মন
এক জনমের ভালোবাসা
এক জনমের কাছে আসা
একটি চোখের পলক
পড়তে লাগে যতক্ষণ
ভালোবাসার সাগর তুমি
বুকে অথৈ জল
তবু পিপাসাতে আঁখি
হয়রে ছলছল
তোমার মিলনে বুঝি গো জীবন
বিরহে মরন বিরহে মরন
প্রাণের প্রদীপ হয়ে তুমি
জ্বলছ নিশি দিন
কোন মোহরে শোধ
হবে গো এত বড় ঋণ
এত বড় ঋণ
আমার ভালোবাসার ফুলে
তোমার ভরাব চরণ
তুমি আমার এমনই একজন
যারে এক জনমে ভালোবেসে
ভরবে না এ মন ।
"গান শুনতে শুনতে তিশা ঘুমিয়ে পড়েছে।তাই জিসান তিশাকে আবার কোলে করে রুমে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুয়ে দিলো।জিসান কিছুক্ষণ একপলকে তিশার দিকে তাকিয়ে রইলো,
কতো শান্ত লাগছে এখন।এই মেয়ে কিছুদিন পর নাকি বাচ্চার মা হবে।ওকে তো এখনো আমাকেই সামলাতে হয়,তাহলে বাচ্চা সামলাবে কি করে ও আল্লাহই জানে।
একটু টেনশন মাথায় ভর করলো জিসানের।আজকাল তিশা অল্পতেই ভাইলেন্ট হয়ে যায়।কখন কোন বিষয় ওর রাগ উঠে বুঝাই যায়না।"
---জিসান ফোনটা হাতে নিয়ে বালকানিতে এসে তিশার ডাক্তারের কাছে ফোন দিলো।ডাক্তারকে তিশার নতুন সমস্যাগুলোর কথা জানালো।
সব শুনে ডাক্তার আশ্বাস দিলো এটা কোনও ব্যাপার না।এসব মুড সুইং এর কারণে হচ্ছে।আর প্রেগনেন্সিতে মুড সইং একটা কোমন জিনিস।মুড সুইং এর কারনেই আগের থেকে একটু বেশি রিয়েক্ট করছে তিশা।আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।মেডিসিন গুলো নিয়মিত দিতে বললো ডাক্তার।
আর জিসানকে এটাও বলে দিলো তিশা শারীরিক ভাবে স্ট্যাবেল তাই ওদের স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কেও কোন সমস্যা হবে না,তবে একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
জিসান ডাক্তারের সাথে আরো কিছুক্ষন কথা বলে ফোনটা কেটে দিলো।
'-বালকানিতে দাঁড়িয়ে তিশার ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে জিসান কিছু একটা ভাবছে।কিছুটা টেনশনে আছে আজ।
তবে এই টেনশনের কারণ তিশা না।তিশা যতোই পাগলামি করুক,আর যাই করুক।জিসানের তাতে কোনও সমস্যা নেই।তিশা শুধু ওর সাথে থাকলেই চলবে।
ওর সব পাগলামি গুলো সহ্য করে নিবো,কিন্তু ওর না থাকাটা মানতে পারবো না।দরকার হলে সারা জীবন আগলে রাখবো,তবুও কোথাও জেতে দিতে দেবো না।'
____________
জিসানের টেনশনের কারণ,
---জিসান অফিসে কিছু ক্লাইনদের সাথে মিটিং করছিলো।আর তখনি সোম কেবিনে প্রবেশ করে।জিসানকে মিটিং এ ব্যস্ত দেখে চুপচাপ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে মিটিং শেষ হবার।
"মিটিং শেষ হলে ক্লাইনদের বিদায় দিয়ে,জিসান নিজেই সোমকে জিঙ্গেস করলো,কি সমস্যা আবার।
এরপর সোম যা বললো,তা শুনতে জিসান মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।
লাবণি আত্মহত্যা করেছে জেলে।কিন্তু কেনো?"
'-যতোটুকু আমি জানি ও এধরনের স্টেপ নেওয়ার মতো মেয়ে না।এছাড়া লাবণির পিতা আকাশপাতাল এক করে দিচ্ছিলো লাবণিকে ছুটানোর জন্য।
কয়েকবার জিসানের কাছেও এসেছিলো লাবণিকে মাপ করে দিতে কিন্তু জিসান কিছুতেই লাবণিকে মাপ করতে রাজি হয়নি।
এছাড়া জিসান যদি মাপ করে কেস উঠিয়েও নিতো,তাহলেও কোনও লাভ হতো না।কারণ অর্কের মৃত্যুর দায়ীও লাবণির উপর পড়েছে।'
---কিন্তু জিসানের সিক্সথ সেন্স বলছে এই খুন লাবণি করেনি তাহলে প্রশ্ন উঠে করেছে কে?
আর যদি কেউ থেকেই থাকে তাহলে লাবণি তার নাম নিলো না কেনো পুলিশের সামনে।লাবণির মৃত্যু কি আসলেই আত্মহত্যা নাকি হত্যা।
"বৃত্তকারের মতো আবার একই জায়গায় ফিরে আসতে হলো জিসানকে।
জিসানের সিক্সথ সেন্স বলছে সবচেয়ে বড় শত্রু হয়তো এখনো হাতের ধরাছোঁয়ার বাহিরে আছে।
কিন্তু আবার সবথেকে বড় প্রশ্ন থেকে যায় কে সে? আর কি বা চায় আমাদের কাছে।
নিজেকে সম্পূর্ণ আড়াল করে রেখেছে।সন্দেহজনক কোনও কাজ সে করে না।এতো গোপনতা কিভাবে ম্যান্টেইন করছে।
আর আজ এতোদিন হলো তবুও সে একবার সামনে এসে আঘাত করছে না।তার মানে এবার খুব বড় প্লানিং করে মাঠে নামবে সে।"
---এখন অপেক্ষার পালা সেটা কি?শত্রু সামনে থাকলে তার সাথে লাড়াই করা যায়।কিন্তু শত্রু অদৃশ্যমান থাকলে তাকে কিভাবে প্রতিহত করবে তা জিসানের জানা নেই।তার উদ্দেশ্য জানলেও কিছু একটা ব্যবস্থা করা যেতো।"
'-তার উপর অর্কও বেঁচে নেই।বেঁচে থাকলে সব ধোঁয়াশা পরিস্কার হয়ে যেতো।অর্কের মৃত্যুও কিছুটা রহস্য ময়। ওর লাশ পাওয়া গিয়েছে লাবণির বাড়ীতে।এমনকি ওকে যে পিস্তল দিয়ে গুলি করা হয়েছে তাও লাবণির লাইসেন্স করা পিস্তল।
কিন্তু রিমান্ড রুমে লাবণি সব কবুল করলেও অর্কের মার্ডারটা ও অস্বীকার করেছে বারাবার।কিন্তু সব প্রমাণ আর যুক্তি লাবণির দিকে ইশারা করছিলো।
অর্ক জিসানকে লাবণির প্লানিং (তিশার কিডন্যাপ) এর কথা জানিয়ে দিয়েছে বলে রাগের মাথায় লাবণি অর্ককে মার্ডার করে দেশ ছেড়ে পালাতে নিলে পুলিশ তাকে এয়ার্পোট থেকেই গ্রেপতার করে।
---জিসান চেয়ারে বসে টেবিলের উপর ভর দিয়ে নিজের মাথার দু'পাশ হালকা চেপে ধরলো।ওর টেনশন হচ্ছে তিশাকে নিয়ে।তিশার মানসিক অবস্থা তেমন ভালো না।আর এখন কোনও অঘটন ঘটলে তিশা মানসিক চাপে এমনেই শেষ হয়ে যাবে।
ওকে ছুড়ি,বা অন্য কিছু দিয়ে মারতে হবে না।
তাই জিসান চায় তিশাকে সব ধরনের ঝামেলা থেকে দূরে রাখতে এখন।
'হঠাৎ সোমের ডাকে জিসান সম্ভোধন ফিরে পায়।'
--স্যার আপনার ফোন বাজছে ।
'জিসান ফোনে বড় ভাবী নামটা দেখেই সাথে সাথে পিক করলো।তিশা আবার পাগলামো করছে শুনে জিসান তখনি বাসার দিকে রওনা দিলো।'
____________
তিনমাস আগে---
"তিশাকে সেদিন লাবনি কিডন্যাপ করে শহর থেকে একটু দূরে পুরানো একটা ফ্যাক্টরির গোডাউনে নিয়ে গিয়েছিলো বেহুশ করে।
তিশা কিডন্যাপ হয়েছে জিসান বুঝতে পেরে যখন খুঁজতে লাগলো চারদিকে।তখনি জিসানের ফোনে একটা মেসেজ আছে।মেসেজটি ওপেন করলে দেখে অর্ক পাঠিয়েছে।
তিশা যেখানে আছে সেখানকার ঠিকানা, আর কে করেছে তার নামটি সহ।
-অর্কের এমন মেসেজ পেয়ে জিসানের খটকা লাগলেও তিশার কথা ভেবে ওই ঠিকানায় চলে গেলো সাথে সাথে।
জিসানকে এভাবে যেতে দেখে রায়হান ও নিলয়ও পিছনে পিছনে ছুটলো গাড়ী নিয়ে।আর ওরা যাওয়ার সময় পুলিশকেও ফোন করে দিলো। "
---জিসান যখন আসে তখন,ফ্যাক্টরির গোডাউনে তিশার নিথর দেহটা পড়ে ছিলো।রক্ত দিয়ে পুরো ফ্লোরটা ভরে গিয়েছিলো।জিসান তিশাকে দেখেই ছুটে গেলো।
রক্ত গড়িয়ে পড়া,তিশার নিথর শরীরটাকে জিসান জরিয়ে বুকের সাথে চেপে ধরলো।কিছু মুহুর্তের জন্য নিজের হিতহিত জ্ঞান যেনো হারিয়ে ফেলেছিলো জিসান তিশাকে এমন অবস্থায় দেখে।
'রায়হান আর নিলয় মিলে জিসানকে টেনে গাড়ীতে উঠালো হাসপাতালে যাওয়ার জন্য।জিসানের কোলে তখনও তিশা ছিলো।জিসান দু'হাত দিয়ে তিশাকে বুকের সাথে চেপে ধরে বসে আছে চুপচাপ।মুখ দিয়ে একটা কথাও জিসান তখন বলেনি।'
"-এরপর তিশাকে প্রায় চার সপ্তাহ হাসপাতালে থাকতে হয়েছিলো।কারণ তিশাকে চব্বিশঘণ্টা ডাক্তারের আন্ডারে রেখেছে জিসান।তিশার মাথার আঘাতটা সারতে টাইম লাগবে,ডাক্তার আগেই বলে দিয়েছিলো।তাই জিসানও আর কোনও রিস্ক নেয়নি।"
---তিশা যখন মোটামুটি সুস্থ অনুভোব করলো,মাথার যন্ত্রনাটাও কম হতে লাগলো তখনি জিসান তিশাকে বাড়ীতে আনলো।
এই একমাস জিসানও তিশার সাথে হাসপাতালে ছিলো।কখনো একা ছাড়েনি।কিন্তু যেদিন অফিসে যাওয়াটা খুব বেশি জরুলি ছিলো।সেদিনও তিশাকে একা ছাড়েনি। তিশার কাছে নিশি,ঝর্না আর রায়হানকে রেখে গিয়েছিলো।
'জিসানের এমন পাগলামো দেখে হাসপাতালের কেউ কেউ হাসাহাসি করেছে আবার কেউবা মুগ্ধ হয়েছে।
সত্যি কথা বলতে--
আমাদের সমাজে স্ত্রী স্বামীর সেবা করলে যতেটা খুশি হয়,তার থেকেও বেশি নারায হয় এটা যেনে স্বামী স্ত্রীর সেবা করেছে।
স্ত্রীর সেবায় নিয়োজিত ছেলেদের একধরনের বিশেষ নাম দেওয়া হয় এই সমাজে।তাইতো বেশির ভাগ ছেলেরাই মন থেকে চাইলেও স্ত্রীর কাজে সাহায্য করতে পারেনা।স্ত্রীর অসুস্থতায় তাকে সেবা করতে পারেনা।'
"মনে রাখবেন সব ছেলেরা জিসান হয় না,আর সব মেয়েদের কপাল তিশার মতো হয় না।"
______________
"পার্কের একপাশে বাগানের মতো একটা জায়গায় কিছুটা দূরত্ব রেখে বসে আছে নিলয় আর ঝর্না।অনেকক্ষণ হলো,করো মুখে কোনও কথা নেই।শুধু বাগানের চারপাশ থেকে ভেসে আসা নাম না জানা হাজার ফুলের সুবাস নাকে শুড়শুড়ি দিয়ে যাচ্ছে।"
---না চাওয়া সত্যেও ঝর্ণা একটু পর পর নিলয়ের দিকে তাকাচ্ছে।নিলয়ের গম্ভীর মুখখানিই বলে দিচ্ছে কতোটুকু বিরক্তি হয়েছে এখানে এসে সে।
'এসব দেখেই ঝর্নার চোখ দু'টো ছলছল হয়ে উঠলো।মন থেকে একটা দীর্ঘ শ্বাস বের হয়ে আসলে।
'আমার মতো একজন গ্রামের মেয়েকে নিলয়ের মতো ছেলে কেনোই বা পছন্দ করবে,ভালোবাসবে! ভালোবাসার মতো কি আধো এমন কিছু আছে আমার।আমিই হয়তো ভুল করেছি---বামন হয়ে চাঁদকে পাওয়ার স্বপ্ন দেখেছি।'
"ঝর্না কিছু বলছে না দেখে নিলয়ই বললো,
কেনো ডেকেছো আমায়।কিছু বলার থাকলে একটু তারাতারি বলো।আমার আবার একটা মিটিং আছে।"
---আপনি নাকি চলে যাচ্ছেন।
"হুম"
---কবে।
"শীঘ্রই, হাতের কিছু কাজ আছে,সেগুলো শেষ হলেই।
---আবার কবে আসবেন।
"আসার মতো যদি তেমন কিছু ঘটে তাহলে,নয়তো কোনো দিনও না।"
---নিলয়ের কথা শুনে ঝর্ণার ভীষণ কান্না পেলো।তবুও নিজেকে সামলিয়ে নিলো।
আপনি আমার উপর রাগ তাই না।
নিলয় নিশ্চুপ।
---হুম, আমি জানি।যেদিন থেকে আপনি জেনেছেন আমি আপনাকে ভালোবাসি,সেদিন থেকেই আপনি আমাকে এভোয়েড করে চলছেন।
"তেমন কিছুই না।আর তুমি খুব ভালো করেই জানো সব।আমার মনে তোমার জন্য কোনও অনুভূতি নেই।"
---হুম,জানি।কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না।
আমার কাছে ভালোবাসা মানে,এ নয় হাতে হাত রেখে একসাথে চলা।
"ভালোবাসা মানে আপনি যেখানে থাকেন,যার সাথেই থাকেন সুখে থাকেন এ কামনা করা।"
---ভালোবাসা মানে এ নয় চোখে চোখ রেখে নিজের অনুভূতি গুলো জানিয়ে দেওয়া।
"ভালোবাসা মানে তো,পাই বা না পাই আপনাকে, তবুও আমার দোয়ায় আপনার জন্য সুখ চাওয়া।"
----ভালোবাসা মানে,এ নয় আমাকে আপনার ভালোবাসতেই হবে।
"ভালোবাসা মানে,আমি আমার মতো করে না হয় ভালোবেসে যাবো আপনাকে।"
'-আপনার হাতটা ধরার স্বপ্ন হয়তো দেখেছি,কিন্তু আমি এটাও জানি এটা অনেকটা দুঃসাধ্য ব্যাপার।
আমি আসা করিনি,আপনাকে ভালোবাসার বদলে আপনিও আমাকে ভালোবাসবেন।আমিতো কেবল আমার মনের কথা শুনেছি।
তাই আপনাকে মনের কথা বলে দিয়েছি।আমি জানি এসব কথা মুল্যহীন আপনার কাছে।হয়তো কিছুটা বিরক্তিকর।
কিন্তু কি করবো বলেন,এটাই হয়তো আমাদের শেষ দেখা।'
---শেষ দেখা কথাটা শুনে নিলয় একটু চমকে গেলো।আর সাথে সাথে ঝর্নার দিকে তাকালে।কেনো জানি চোখ দু'টো আটকে গেলো আজ।অপলকভাবে একবার তাকিয়ে ঝর্ণাকে পুরো স্ক্যানিং করে ফেললো নিলয়।
'সাদা রং এর সালোয়ারকামিজ পড়া,চেহারায় নেই কোনও কৃতিম মেকআপের ছোঁয়া।তবুও কেনো এই মেয়েটিকে আজ এতো সুন্দর লাগছে নিলয় বুঝতে পারছে না।
নাকি অনেকদিন পর ঝর্নাকে দেখছে বলে এমন মনে হচ্ছে।
এতো মায়া কেনো এই চেহারায়।আমার জায়গায় অন্যকেউ হলে নির্গাত আজ মেয়েটির প্রেমে পড়ে যেতো।
একমিনিট আমার জায়গায় অন্যকেউ কেনো থাকবে।কিসব কি ভাবছি আমি।উফ নিলয়!
'আপনি ঠিক আছেন।'
---নিলয় এবার ঝর্নার দিকে না তাকিয়েই বললো হুম।আম অল রাইট।বাট তুমি কি বলছিলে।শেষ দেখা মানে।
" হঠাৎ ঝর্না তার ব্যাগটা কাধে নিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,হুম শেষ দেখা।
আপনি তো কিছুুদিন পর চলে যাবেন।কিন্তু আমি পরশুই চলে যাচ্ছি ঢাকা ছেড়ে।"
---কোথায়!নিলয় অবাক হয়ে।
"কোথায় আবার আমার বাসায়।বাবা মার কাছে।তাই হয়তো আপনার যাওয়ার সময় আর দেখা হবে না।তাই ভাবলাম একটু শেষবার আপনাকে দেখে যাই।
আমি জানি এবার গেলে আপনি আর দেশে ফিরবেন না।
আচ্ছা এখন আমি আসি।ভালো থাকবেন।
ঝর্না চলে যাচ্ছিলো হঠাৎ নিলয়ের ডাকে পিছনে ফিরে তাকায়।"
---কিছু বলবেন।
'আমি তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি চলো।'
ঝর্না একটু মলিন হাসি দিয়ে,তা আর দরকার নেই।আমি ম্যানেজ করে নিবো।এমনেই বাকিটা পথ তো একাই পার করতে হবে।
এসব বলেই ঝর্না চলে গেলো।
---নিলয় ঝর্নার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।মনটা কেনো জানি হঠা বিষণ্ণতায় ভরে গেলো।বুকের ভেতর একটা ভারী কিছু আটকে গেলো।নিশ্বাস নিতেও কস্ট হচ্ছে আজ নিলয়ের।কিন্তু কেনো?
চলবে…।
[গল্পের শেষ ধামাকা নেক্সট পর্বে।ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দিবে তিশা, জিসান,নিশি আর রায়হানের জীবন।তা জানতে অপেক্ষা করুন।ধন্যবাদ]
"রায়হান ডাক্তার কোবরার চেম্বার থেকে বাহিরে এসে রাস্তা পাশ দিয়ে হাটছে।মনটা কিছুটা উদাসিনী।হাতে রাখা নীল রং এর ফাইলটা দেখে একটা দীর্ঘ শ্বাস বের হলো।
-আসলে মানুষের সব চাওয়া কখনো পুরণ হয়না এটাই স্বাভাবিক। যদি পূর্ন হয়ে যেতো তাহলে হয়তো মানুষ কখনো আল্লাহর কাছে কিছু ভিক্ষে চাইতো না।আল্লাহকেও ভুলে যেতো।আল্লাহ প্রত্যেক মানুষকে জীবনে একবার হলেও পরীক্ষা নেয়।এবার হয়তো আমাদের পালা।আল্লাহ হয়তো চায়না আমরা এখন বাবা মা হই।আমাদের ধৈর্যের পরীক্ষার পালা এখন।"
-কিছুক্ষন আগে
' রায়হান ডাক্তার কোবরার চেম্বারে বসে আছে।ডাক্তার নিশির রিপোর্ট গুলো ভালো করে চেক করছে।ডাক্তার কোবরা একজন গাইনি বিশেষজ্ঞ।
কিছুদিন আগে নিশির প্যারা সহ্য করতে না পেরে একজন বন্ধুর কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে এখানে এসেছিলো রায়হান নিশিকে নিয়ে।'
--তিশার পেগনেন্ট হওয়ার খবর শুনার পর থেকে নিশিও বাচ্চার নেবার প্লানিং করছে।রায়হান নিশিকে সময় দিতে চেয়েছিলো,কমপক্ষে ওর পড়ালিখা শেষ হক তারপর।কিন্তু নিশির একটাই কথা ও মা হবে।
"গতো কয়েকমাস ধরে ট্রাই করছে ওরা,কিন্তু প্রত্যেকবার রেজাল্ট জিরো আসছে।আর এতে নিশি ভেঙ্গে পড়ছে মানসিক ভাবে।ও মনের মধ্যে ধারনা করে বসেছে ওর হয়তো কোনও বড় ধরনের সমস্যা আছে,তাই হয়তো মা হতে পারছে না।হয়তো ওর মা হওয়ার ক্ষমতাই নেই।"
---তাই নিশিকে রায়হান গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কোবরার কাছে নিয়ে আসলো।ডাক্তার সব শুনে কিছু টেস্ট দিয়েছিলো ওদের।আর আজ রায়হান সেই টেস্টের রিপোর্ট গুলো নিয়ে এসেছে ডাক্তারকে দেখাতে।
'-দেখুন মিস্টার রায়হান,আপনার ওয়াইফের শরীর এখনো মা হবার উপযোগী নয়।কিছু সমস্যা আছে তার মধ্যে,তবে তা ক্ষণস্থায়ী।আসা করি নিয়মিত ট্রিটমেন্ট এর মধ্যে থেকে ওষুধ গুলো সেবন করলে ঠিক হয়ে যাবে।তবে এর জন্য ধৈর্যের প্রয়োজন।
আপনারা প্লিজ দয়াকরে ধৈর্য রাখবেন আর আল্লাহর উপর ভরসা।
'আল্লাহ চাইলে সব ঠিক হয়ে যাবে।তবে এক্ষেত্রে আপনাদের ধৈর্যটাই বেশি কাজ করবে।আশা করি আপনি বুঝতে পারছেন ব্যাপারটা।
রায়হান ডাক্তারের কথায় সায় দেয়।এরপর আরও কিছুক্ষন কথাবর্তা বলে রায়হান ডাক্তার থেকে বিদায় নিয়ে কেবিন থেকে বাহিরে এসে পরে।'
---তখন থেকেই রায়হান একটা কথাই ভাবছে,
আচ্ছা দাম্পত্য জীবনে একটা বাচ্চাই কি সব।হয়তো সব!সন্তান স্বামী স্ত্রীর মাঝের এক অটুট বাঁধন যাকে কোনও ক্রমে ছেড়া যায়না।কিন্তু যাদের কপালে আল্লাহ সন্তান লিখে না তাই বলে কি ওরা অসুখী।
কখনোই না।সুখ দুঃখ সব নিজেদের উপর ডিপেন্ড করে।
আর ভাগ্যও মেনে নেওয়া শিখতে হয়।
পরম করুনাময় আসীম দয়ালুর মালিক আল্লাহ।সে তার বান্দার কপালে যা লিখেছে তা কখনো অমঙ্গল হতে পারেনা।যা কপালে আছে তাই হবে।
যদি কোনও দিন আমাদের সন্তান না দেয় আল্লাহ তবুও আমি কখনো নিশিকে অসুখী রাখবো না।আমার হ্রদয়ের সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে ওর সব কস্টগুলো দূর করে দেবো।
"রায়হান এসব ভাবতে ভাবতেই অনেকটা দূর চলে এসেছে।হঠাৎ ফোনের শব্দে রায়হান সম্বিৎ ফিরে পায়।
ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে নিশির কল।রায়হানের মুখে একচিলতি হাসি ফুটে উঠে।মনে মনে নিজেই বলে,
সব কস্টকে আমি দূরে ফেলে দেবো।তোকে ভালোবাসায় এতোটাই পরিপূর্ণ করে দেবো যে সন্তান যদি আল্লাহ তাআলা আমাদের নাও দেয় তবুও তোর জীবনে যাতে কোনও অপূর্ণ বলতে কিছু না থাকে।রায়হান মুচকি হাসি দিয়ে ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো বললো,
--কোথায় আপনি।
"এইতো রাস্তায়'।
--রাস্তায় কি করেন।
"টাংকি মারি"।একটু হেসে।
--টাংকি মারেন কেনো।গামলা মারেন,জুতা মারেন।হাতের কাছে যা আছে সব মারেন।
'বাকিতো শুধু শরীরের কাপড়গুলো থাকে।ওগুলো মারলে কেমন হয় বলতো'।
--এই খবরদার।ওসব আমার।মারতে মন চাইলে আমাকে মাইরেন।
'নিশির কথা শুনে রায়হান হেসেই দিলো।
আচ্ছা বাসায় এসে মারবো নি।একটা একটা করে ঠিক আছে।এখন বল কি করছিস।'
'-কিছু না।এমনেই বসে আছি। কিছু করার নেই। আর আপনার কথা মনে পড়ছিলো তাই কল দিলাম।কিন্তু আপনি অফিসে না থেকে রাস্তায় কি করেন।'
---রায়হান একটু ভেবে,ত্রিশ মিনিট সময় দিলাম তোকে।রেডি হো তারাতারি।
"কেনো?"
'-কেনো আবার আমি আসছি তোর কাছে।আজ আবার আমরা লংড্রাইভে যাবো।এই গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শরীরে মেখে বৃষ্টি স্নান করবো।দুজনে একসাথে ভিজবো।কি বলিস,যাবিনা।'
"হুম।আমি এখনি রেডি হচ্ছি।"
---শুন নিশি।
"হুম"।
'শাড়ী পড়িস।লাল রং এর শাড়ী।সাথে কাচের চুড়ি।চোখে মোটা করে কাজল।আর আমি আসার সময় তোর জন্য বেলি ফুল নিয়ে আসছি।'
---সত্যিই।
"হুম।আচ্ছা রাখি।তুই রেডি হো তারাতারি।"
---এই শুনেন না।
"হুম বল আর কিছু লাগবে।"
---না।
"তাহলে"।
---ভালোবাসি।
"রায়হান সাথে সাথে মনে হয় একটা হার্ট বিট মিস করলো।হাসিমাখা মুখেই বললো আমি আসছি।"
জীবনটা দেখতে গেলে অনেক ছোট।এই ছোট জীবনে প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে সুখে থাকার প্লানিং করা উচিৎ। বাকি সব চিন্তা দিয়ে কি হবে।উপরওয়ালা যা ঠিক করে রেখেছে তাই হবে। আমরা তো শুধু নিজের কাছের মানুষগুলোর সাথে কিভাবে সুখি হওয়া যায় তাই ভাববো।আর তাকে কিভাবে সুখী রাখা যায় তা নিয়েও।ভবিষ্যৎ এ কি আছে কে জানে।তাই বর্তমানের কথা চিন্তা করে জীবনটাকে একটু উপভোগ করাই ভালো।
___________
"সকাল থেকেই আকাশটা আজ মেঘলা।কিছুক্ষণ পর পর গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পরে আবার থেমে যায়।নিলয়ের এধরনের বৃষ্টি খুবই অসহ্য লাগে।কেনো জানি বৃষ্টি জিনিসটাই বিরক্তিকর।"
---তার উপর নিলয়কে বিরক্ত করতে যোগ দিয়েছে ঢাকার এই ট্রাফিক জ্যাম।এতো কিছু ডিজিটাল হচ্ছে তবুও বাংলাদের কিছু জিনিস আজও চেন্জ করার সাধ্য কারো হয়নি।
ঢাকার এই ঐতিহাসিক জ্যামের কথা বাবার মুখ থেকে শুনেছিলো নিলয়।আর এবার বাংলাদেশে এসে দেখেও নিয়েছে স্বচোখে।মাঝে মাঝে নিলয়কে ভাবায় এই দেশের মানুষগুলো এতো ধৈর্যশীল কিভাবে।ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যামে বসে থাকা অসহ্য কর।
'-দু'আঙ্গুলের ফাঁকে রাখা সিগেরেটির নিকোটিনের ধোঁয়া ছাড়তে ব্যস্ত নিলয়ের হঠাৎ চোখ পড়লো রাস্তার অপজিট সাইডের একটা ফুচকা দোকানের দিকে।
একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছে আর তার সাথে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটির সাথে কথা বলছে।'
---নিলয় একটু খেয়াল করে তাকালো মেয়েটির দিকে,চেনা চেনা লাগছে।মেয়েটির শুধু একসাইড দেখা যাচ্ছে।
হঠাৎ মেয়েটি হাসতে হাসতে পুরো গুড়লে নিলয় কিছুটা শোকড হলো।
কারণ মেয়েটি আর কেউ না ঝর্না।
"নীল রংএর একটা জামদানি শাড়ী পড়া, হালকা ভেজা চুল গুলো খুলে রেখেছে।তবে আজ হালকা সেজেছে মেয়েটি।এই বৃষ্টির মাঝেও মেয়েটিকে কেমন সিগ্ধ লাগছে।গুড়িগুড়ি বৃষ্টিগুলো ছুঁয়ে দিচ্ছে ঝর্নার গাল,কপাল,ঠোঁটসহ পুরো শরীর।নিলয়ের যেনো চোখ আটকে গেলো।পলক ফেলতে ভুলে গেলো।কেমন ঘোর ঘোর লাগছে আজ ঝর্নাকে দেখে।মনে যেনো কিছু অবাধ্য চাওয়া বাসা বাধছে।
---গাড়ীর হর্ণের শব্দে নিলয় সম্বিৎ ফিরে পায়।আর তখনি নিলয়ের মাথায় সর্বপ্রথম যে প্রশ্নটি আছে তা হলো এতো সেজেগুজে গিয়েছিলো কোথায় এই মেয়ে।আর এই ছেলেটি বা কে।নতুন কাউকে!
না না ঝর্না এমন মেয়ে না।আর ও কাউকে পেলেই বা আমার কি?
আমি এতো ভাবছি কেনো।
কিন্তু এতো তারাতারি নতুন কাউকে পেলো কোথায়।না আমার জানতে হবে।
এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ আবার চোখ গেলো ঝর্নার দিকে।কিন্তু এখন যা দেখলো তাতে নিলয়ের মাথার মগজগুলো গরম হয়ে গেলো মুহুর্তেই। "
---আসলে ঝর্না ফুচকা খেতে এতোই ব্যস্ত ছিলো যে খেয়ালি করেনি ওর শাড়ীর আচলটা যে মাটিতে ছুঁইছুঁই করছে।কারন আচলটা বেশ বড় করে রাখা ছিলো।
ঝর্নার সাথে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটি আচলটা উঠিয়ে ঝর্নার কাধে রাখে।
আর এটা দেখেই নিলয়ের শান্ত থাকার সব লিমিট যেনো ভেঙ্গে গেলো।সাথে সাথে ঝর্নাকে কল দেয়।
ঝর্না ফোনটা রিসিভ করে,হ্যালো আসসালামুআলাইকুম।
"অলাইকুমআসসালাম,কোথায় তুমি।"
---কে বলছেন?আসলে ঝর্না নাম্বারটি খেয়াল করেনি।
"এখন আমার নাম্বারটিও সেভ করা নেই তোমার কাছে।"
---ঝর্না কিছুক্ষণ ভেবে,নিলয়!
"থ্যাংকস গড,তাহলে মনে রেখেছো আমায়।আমিতো ভাবলাম নতুন কাউকে পেয়েছো বলে পুরানটাকে ভুলেই গিয়েছো।"
---ঝর্না বেকুব হয়ে গিয়েছে কিসব বলছে ছেলেটা।নিলয় আপনি ঠিক আছেন তো।
"ইয়াপ,আম অল রাইট।তোমাকে যা জিজ্ঞেস করেছি সেটা বল।কোথায় তুমি এখন।"
--আ আমিতো একটু বাহিরে।
বাহিরে কোথায়,লোকেশন বলো।
--ঝর্না লোকেশনটা বললো।
তুমি ওখানে কি করো।
--এইতো ফ্রেন্ডসদের সাথে একটু আসছি।
ঝর্না যতোটুকু আমি জানি,তোমার এখানে কোনও ফ্রেন্ডস নেই।তাহলে ফ্রেন্ডসদের সাথে ওখানে কি করে গেলে।
--ঝর্না কি বলবে বুঝতে পারছে না,আসলে কলেজের একজন সিনিয়ার ভাইয়ের সাথে আচানক রাস্তায় দেখা হয়ে যায়।একসময় ছেলেটি কলেজে থাকাকালীন ঝর্নাকে অনেক সাহায্যও করেছে।তাই কথা না বলে থাকতে পারলো না।ঝর্নার সাথে ফুচকার দোকানেই দেখা হয় যায়।তাই দুজনই খেতে খেতে কথা বলছিলো।আর তখনি হয়তো নিলয়ের গাড়ীটিও ওখান দিয়ে যাচ্ছিলো।
কিন্তু নিলয়কে এখন কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না ঝর্ণা।তাই চুপ হয়ে শুনছে আর ভাবছে।এভাবে চট জলদি কি মিথ্যা বলা যায়।
'তোমার ফ্রেন্ডটার নাম কি ঝর্না।'
--ওর ন নাম এ,নাম?ঝর্না চিন্তা করছে কি বলবে।
নাহিদ,হুম নাহিদ তার নাম।
'ওয়াও। আম ইম্প্রেস!যাই বলো তোমার ফ্রেন্ড নাহিদ হ্যান্ডশাম আছে।তো কোথায় দেখা হয়েছে।আই মিন কিভাবে চেনো।'
---নিলয়ের কথা শুনে ঝর্নার বিষম উঠে গেলো।হঠাৎ খুব কাশতে লাগলো।ঝর্না বুঝে গিয়েছে এই লোক আশেপাশে থেকেই ওকে এতো জেরা করছে কিন্তু কেনো? এতো জেরা করার কারণ কি?
ঝর্নার কাশি দেখে সাথের ছেলেটি পানি আনতে ছুটে যায় দোকানের দিকে।
'ঝর্নার সামনে একবোতল পানি ধরে।ঝর্না না দেখে পানি টা নিয়েই ঘটঘট করে কয়েক ঢোক খেয়ে ফেলে।আর অজান্তেই বলে ফেলে ধন্যবাদ বাপ্পি ভাইয়া।'
---তোমার ফ্রেন্ডের নামতো নাহিদ তাহলে বাপ্পিটা আবার কে।
নিলয়ের গলা শুনে চকিতে তাকায় ঝর্না।ন ননিলয় আপনি এখানে।এ এখা নে কি করেন।
'ঝর্নাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে, পানির বোতলটা ফেলে ঝর্নার হাতটা ধরে টেনে গাড়ীতে উঠালো নিলয়।ঘটনা এতো দ্রুতোই ঘটেছে যে ঝর্না কিছুই বুঝলো না।
কি হলো।
নিলয় আপনি আমাকে এভাবে গাড়ীতে কেনো উঠালেন।আপনার জন্য আমার ফুচকাও খাওয়া হলো না।এখানকার ফুচকা খুব নামকরা জানেন।
আজই এই শহরে আমার শেষ দিন ভাবলাম আর কিছু না হোক পছন্দের ফুচকাটাতো খেয়ে জেতে পারি।তাও আপনার জন্য হলো না।'
---ঝর্নার কথায় নিলয় একটু রাগি চোখে তাকায়,যা দেখে ঝর্না চুপছে যায়।
এই লোকের আবার কি হলো।বিহেভ তো এমন করছে মনে হয় কতো জনমের প্রেমিক আমার।যতোসব!
"রেস্টুরেন্ট এ বসে আছে নিলয় আর ঝর্না। আর ঝর্নার সামনের টেবিলে রাখা পাঁচ প্লেট ফুচকা।যা দেখে ঝর্না কিছুটা ভয় পেয়ে গিয়েছে।নিলয়ের মতলোব কি কিছুই বুঝতে পারছে না।
নিলয় চোখ দিয়ে ইশারা করে খেতে।"
---না আমার লাগবে না।আমার পেট ভরা।
'তা বললে তো হবে না।যে ফুচকার জন্য এতো সেজেগুজে শাড়ী পড়ে রাস্তায় ছেলেদের সাথে ডেটিং করছিলে।সেই ফুচকা তো তোমায় খেতেই হবে।
নিলয় নিজেই ঝর্নার মুখে একটা ফুচকা জোর করে দিয়ে দিলো।'
---ফুচকার ঝালে ঝর্নার বেহাল দশা।ছুটে চলে গেলো লেডিস ওয়াসরুমের দিকে।নিলয়ও ঝর্নার পিছনে ওয়াসরুমের দিকে ছুটে আসলো।
এখানে এসেই ঝর্নার বমি করার মতো অবস্থা কিন্তু বমি করতে পারছে না বরং আরো কস্ট হচ্ছে।
বমি করতে কস্ট হচ্ছিলো বলে নিলয় হঠাৎ শাড়ী নিচে থাকা ঝর্নার সাদা পেট টিতে হালকা চাপ দিলেই গরগর করে বমি করে দেয় ঝর্না।ব্যাচারী ঝর্না সারাদিন যা খেয়েছিলো সব বের করে দেয় একসাথে।
'-নিলয় পিছনের দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কেবল তাকিয়ে দেখছে।ঝর্নার এমন অবস্থায় ওর কোনও রিয়েকশন নেই।
কারন ওতো ইচ্ছা করেই ফুচকাতে লাল মরিচ সহ আরো কিছু দিয়েছে যাতে করে ঝর্না এতোক্ষন বাহিরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যা গিলছে সব যেনো বের করে দেয়।
ঝর্নার এমন বেহাল দশায় অদ্ভুত শান্তি লাগছে মনে।খুব শখ না সেজেগুজে ছেলেদের সাথে ডেটিং এ যাওয়া।এবার বুঝো কেমন মজা লাগে।'
"ঝর্নার কিছুটা রাগ উঠে যায়,এভাবে কেউ করে।ফুচকার ভেতর লাল মরিচের গুড়া,আর কি যেনো দিয়ে রেখেছিলো।ছিঃকি বিশ্রি ওটার টেস্ট ছিলো।
তাইতো মুখে দেওয়ার সাথে সাথে ওয়াসরুমের দিকে ছুটে আসতে হলো।"
ঝর্না একটু তেরে গিয়ে, এই মিয়া সমস্যা কি আপনার।কোন জনমের বদলা নিলেন এমন করে আমার উপর।আপনার কোন ক্ষেতের ধান চুড়ি করেছি আমি।কি হলো কথা বলছেন না কেনো।"
---নিলয় কিছু বলবে তখনি ঝর্নার ফোনটা বেজে উঠে।ফোনটা সিনের উপর রাখা ছিলো।ঝর্নার হাতদু'টো এখনো ভিজা বলে,নিলয় গিয়ে ফোনটা রিসিভ করে স্পিকারে দিয়ে দেয়।ইশারা করে ঝর্ণাকে কথা বলতে।
"হ্যালো ঝর্না,মা বলছি।"
--হে মা বলো।
"কাল তুই আসছিস।"
হুম, কালই ছেড়ে যাবো এখানকার সব কিছু।নিলয়ের দিকে তাকিয়ে।
"শুননা,একটা কথা ছিলো।"
--বলো কি বলবে।
তোর জন্য একটা ভালো সমোন্ধ এসেছে।খুব ভালো জায়গা থেকে।তুই যদি বলিস।
'মা তোমরা যা ভালো মনে করো কর।আমার কোনও সম... ঝর্না আর বলতে পারলো না।নিলয় ফোনটা আছাড় মেরে ভেঙ্গে ফেললো।'
---ঝর্না তো শোকড!পারেনা এখনি কান্না করে দিক।এই আপনি এটা কি করলেন।আমার ফোন কেনো ভেঙ্গেছেন।
এই আপনি ঠিক আছেন তো।নাকি আবার কিছু খেয়েটেয়ে এসেছেন।কখন ধরে অদ্ভুত বিহেভ করছেন।সত্যি করে বলেন তো সমস্যা কি?
"সেটআপ! জাস্ট সেটআপ!নিলয় চিৎকার করে।
ঝর্নার দু'বাহু ধরে,কোথাও যাবিনা তুই।বুঝলি।কোথাও না।খবর দে তোর বাবা মাকে।তিনদিন পর আমার গার্ডিয়ান আসছে।তুই শুধু আমার সাথে যাবি প্যারিস।বুঝলি।
তাই চুপচাপ এখন বাসায় যাবি।বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত তোকে যেনো বাড়ীর বাহিরে না দেখি আমি।তাহলে কিন্তু খুন করে ফেলবে।
জরাতে চেয়েছিস না আমার জীবনে,তাহলে এখন থেকে তোকে আমার মতো চলতেও হবে।
তোকে জাতে আমি কোনও ছেলের আশেপাশেও না দেখি।ফ্রেন্ড হয়,কাজিন হয়,প্রতিবেশী লাগে এসব সম্পর্ক শেষ এখন থেকে।
আমার কথার বাহিরে কাজ করলে কিন্তু খুব খারাপ হবে।বুঝলি।মাথায় ডুকিয়েনে ভালো করে।"
---নিলয় ঝর্নার আরো একটু কাছে আসে।এতে ঝর্নার মুখে নিলয়ের প্রতিটি নিশ্বাস বারি খাচ্ছে।
আমাকে ভদ্র ভাবা ছিলো তোর জন্য ভুল।আমি কিন্ত মোটেও ভদ্র না।আমার অত্যাচার সহ্য করার জন্য তৈরি হয়ে যা।
'-নিলয়ের এমন শান্তশিষ্ট চেহারার পিছনে এমন ভিলেনমার্কা রুপ দেখে ঝর্না ভীষন ভয় পেয়ে গেলো।শুকনো একটা ঢোক গিলে,মনে মনে ভাবছে।
না রে ভাই,তুই আমার টাইপের না।আমিতো তোকে আম ভেবেছিলাম।কিন্তু এতো কাঁঠাল।পুরো কাটা দিয়ে ভরা।হাত দিতে গেলে প্রতিবার আমাকেই ব্যাথা পেতে হবে।
না না তার চেয়ে আমি একাই ভালো।কালই চলে যাবো।ঝর্না নিজের ভাবনায় একদম মশগুল।'
---কিন্তু হঠাৎ পেটে কারো স্পর্শ পেয়ে সম্বিৎ ফিরে পেলো।তাকিয়ে দেখে নিলয় একদম ওর কাছে দাঁড়িয়ে আছে।এক ইঞ্চি ফাঁকও নেই ওদের মাঝে।তার উপর নিলয়ের হাত ঝর্নার পেটে পড়ায় ব্যাচারী শিহরিত হয়ে উঠলো।
-কোমড়টা খুব সেক্সি তোমার।আর বডিটা তো আরো হট।প্রথম দিনেই আমি খেয়াল করেছিলাম।কি খেয়ে এমন আকর্ষন করে তুলেছো বলতো কন্ট্রোল করতে মুশকিল হয়।
"ঝর্না এবার মনে হয় পাগল হয়ে যাবে,কিসব বলছে এই লোকে।একে আমি ভালো মনে করেছিলাম।কিন্তু এই ব্যাটা দেখি এক নাম্বারের লুচ্ছা।
ঝর্না ঝটপট নিলয়ের হাতটা সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করে বলছে দূরে সরেন আমার থেকে।আপনি মানুষ সুবিধার না।আ আমারি ভুল হয়েছে।ছ ছা ড়ুন প্লিজ।
আমিতো আপনাকে ভদ্রচোর ভেবেছিলাম।কিন্তু এখন দেখি আপনি একটা বাজে লোক।সরুন আমার কাছ থেকে।"
---নিলয় একহাত দিয়ে ঝর্নার পেট চেপে ধরে,আরেক হাত দিয়ে চুলের মুঠি ধরে একদম নিজের কাছে টেনে নেয়।
বাজে হই আর যাই হই।এখনতো এই বাজে ছেলেটার সাথেই থাকতে হবে।
আর হে ভুলতো করেছিস।আমার এতোবছরের ব্যাচেলার জীবনে নিজেকে যে সংযোত করে রেখেছিলাম।তার রেকর্ড তুই ভেঙ্গে দিয়েছিস।তাই এখন তোকে আমার কাছে আসতেই হবে।
আর নিজের যা কিছু লুকিয়ে রেখেছিস সবই আমায় সপে দিতে হবে।তা না হলে আমি লুট করে নিয়ে যাবো।
ঝর্না কিছুক্ষন চুপ থেকে কাপাকাপা কন্ঠে বললো,
ভা লোবাসেন আমায়।
"জানি না,কিন্তু এতোটুকু জানি তোমাকে অন্য কারো হতে দিতে পারবো না।তোমার মনে আর শরীরে শুধু এই নিলয়ের বিচরণ হবে।আর কেউ না।"
_____________
"ডাইনিং টেবিলে বসে তিশা জুশ খাচ্ছে আর জিসান তিশার জন্য কিছু ফল কাটতে ব্যস্ত।
কিন্তু তিশার ধ্যান এখন ড্রয়িংরুমে বসে থাকা মেয়েটির উপর।
বারবার আড় চোখে তিশা ড্রয়িংরুমে বসে থাকা মেয়েটির দিকে তাকাচ্ছে। মেয়েটিও যে বারবার ওদের দিকে তাকাচ্ছে তা তিশা খুব ভালো করে বুঝতে পারছে।কিন্তু এটা বুঝতে পারছে না মেয়েটি কাকে দেখছে এদিকে তাকিয়ে।"
---আচ্ছা ওই মেয়েটি কে?
'জিসান শুনেও না শুনার ভান করে,নিজের হাতে কাটা ফলগুলো থেকে একপিস নিয়ে তিশার মুখের কাছে এনে বললো,হা কর।'
---আমার না খেতে ভালো লাগছেনা।
'একদম কোনও কথা না,খেতে বলছি খেতে হবে।মন না চাইলেও খেতে হবে।কথা কম বলে হা কর।'
---তিশা মুখে নিয়ে আবার জিঙ্গেস করলো কে সে?
রোজ, তানজিলা ভাবীর কাজিন।
---আপনি চিনেন।না মানে আমার মনে হচ্ছে মেয়েটি আপনার দিকে তাকাচ্ছে বারবার।
'-হুম,তিশার মুখে খাবার দিতে দিতে।আমরা একই ভার্সিটিতে ছিলাম।আর...
"আর কি?তিশা সন্দেহ নযরে তাকিয়ে"
'জিসান মনে মনে ভাবছে,তিশা ইদানীং আমাকে নিয়ে খুব বেশি পজেসিভ হয়ে গিয়েছে।সামান্য বিষয়ও অনেক রাগ করে।ওকে বলা যাবে না,রোজ যে একসময় আমার পিছে অনেক ঘুড়েছে।জানলে হয়তো আজও আবার ও ভাইলেন্ট হয়ে যাবে।তাই জিসান কথা কাটানোর জন্য, আর ও আমার জুনিয়ার ছিলো ভার্সিটিতে।তাই কিছুটা চিনা জানা ছিলো।
আর তাওহিদ ভাইয়ের বিয়ের পর জানতে পারলাম রোজ তানজিলা ভাবীর কাজিন।ব্যাস আর কিছু না।'
---ও! তিশা লম্বা একটা 'ও 'বলে আবার মেয়েটির দিকে তাকালো।জরজেটের একটা পাতলা শাড়ী পড়া মেয়েটির স্লিম বডির সেপ প্রায়ই লক্ষণীয়।ব্যাপারটা তিশার একদম ভালো লাগেনি।
'জিসান যখন তিশাকে সব ফলগুলো খাওয়াতে ব্যস্ত ঠিক তখনি এক চেনা কন্ঠে কেউ বলে,
কেমন আছো জিসান।'
-কন্ঠ শুনে জিসান না তাকালেও তিশা ঘুড়ে তাকায় মেয়েটির দিকে।তিশা কিছুটা অবাক,জিসানকে এই মেয়ে তুমি বলে সম্ভোন্ধন করছে।কিন্তু কেনো!
মেয়েটি তো জিসানের জুনিয়ার ছিলো।তিশার এই ব্যাপারটাও ভালো লাগেনি।
'আলহামদুলিল্লাহ রোজ।তুমি কেমন আছো।'
-আছি কোনও রকম।শুনলাম বিয়ে করেছো।তো তোমার বউয়ের সাথে পরিচয় করাবে না।
'-অবশ্যই। তিশা ও হলো রোজ।ভাবীর বোন।আর আমার জুনিয়ার আমরা একই কলেজে পড়তাম।তোকে তো একটু আগে বললামই।
আর রোজ ও হলো আমার তিশা।আমার স্ত্রী। জীবনসঙ্গী, আমার অর্ধাঙ্গিনী।'
---তিশা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে জিসানের দিকে।এভাবে কেউ পরিচয় দেয়,ওর জানা ছিলোনা।কি অদ্ভুত ছেলেটা।
আজকাল তিশা যতোই দেখে জিসানকে মনে হয় প্রতিবার নতুন করে প্রেমে পড়ে।
'রোজ একটু বিরক্ত হলো,জিসানের বউয়ের প্রতি এতো ভালোবাসা দেখে।ওর কাছে এসবই ন্যাকামি মনে হয়।তবুও কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে,তো কি করা হচ্ছে বউয়ের সেবা।
---হুম,আমি সেবা করছি আর আমার বিবি সেবা গ্রহণ করছে।এইতো!
তিশা হেসে দিলো জিসানের কথায়।
---তিশা শুয়ে আছে আর জিসান তিশার চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।হঠাৎ জিসানের মনে হলো তিশার একটা ওষুধ এখনো বাকি।ওষুধটা নিয়ে তিশাকে জাগাতে যাবে,তখনি মনে পরলো মেয়েটি আজ তেমন কিছু খেতেই পারেনি।
আর যা একটু খেয়েছিলো তাও বমি করে ফেলে দিয়েছে।আজকাল তিশা পেটে কিছুই রাখতে পারেনা।প্রচুর বমি হয়।যার কারনে ও খুব ক্লান্তও হয়ে পড়ে অল্পতেই।
পেটতো এখন প্রায় খালি।খালি পেটে ওষুধ খাওয়ানো ঠিক হবে না।
তাই জিসান রুম থেকে বের হলো,তিশার জন্য একগ্লাশ দুধ আনতে।সাথে একটু চকলেট পাউডার দিয়ে দিতে হবে তাহলে আর খেতে সমস্যা হবে না ওর।এসব ভাবতে ভাবতে সিড়ির দিকে যাচ্ছিলো।
"কিন্তু হঠাৎ জিসানকে টান দিয়ে নিজের রুমের ভেতরে নিয়ে এসেই জরিয়ে ধরে রোজ।
জিসানের ব্যাপারটা বুঝতে একসেকেন্ড সময় লাগে।সাথে সাথে রোজকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নেয়।"
---কি করছো কি রোজ তুমি।এসবের মানে কি।
'আই লাভ ইউ জিসান।তুমি খুব ভালো করেই জানো।'
"প্লিজ রোজ স্টোপ।তোমাকে আগেও বলেছি,আই ডোন্ট লাভ ইউ।আমি শুধু তিশাকে ভালোবাসি।আর কাউকে না।
জিসান চলে জেতে নিলে রোজ আবার জিসানের হাতটি ধরে ফেলে,প্লিজ জিসান ডোন্ট লিভ মি।"
-আর তখনি রোজের গালে ঠাস করে একটা চড় পরে।ঘটনা আকস্মিক হওয়ায় জিসান ও রোজ দুজনই বুঝে উঠতে পারেনি কি হয়েছে।
"রোজ থেকে জিসানের হাতটি ছুটিয়ে তিশা,
সাহস কি করে হলো আমার হাসবেন্ডকে স্পর্শ করার।ফাজিল মেয়ে আসার পর থেকেই আমি দেখছি জিসানের আগেপিছে কেমন ঘুরঘুর করছিস।আমার তো তখনি সন্দেহ হয়েছিলো।কিন্তু ভাবীর বোন বলে,কিছু বলেনি।তা না হলে তোর মুখ ভেঙ্গে দিতাম এতোক্ষনে।"
---তিশার চিল্লাচিল্লিতে বাড়ীর সবাই রুম থেকে বের হয়ে আসে।
তানজিলা ঘটনা না জেনে তিশার উপর রেগে গেলো।সমস্যা কি তিশা।এতোরাতে চিল্লাচ্ছো কেনো ওর সাথে।ও এবাড়ীর মেহমান ভুলে গেলে চলবে না।
'ভাবী আমি সরি,কিন্তু তোমার এই বোনকে বলো,আমার স্বামী থেকে দূরে থাকতে।তা না হলে ভালো হবেনা।
---কিসব বলছো তিশা।
"-কি আর বলবে আপু,ওতো একটা পাগল।আর পাগলে কিনা বলে একটা কথা আছেনা।এধরনের পাগলকে তোমরা বাড়ীতে ছেড়ে রেখেছো কেনো।ওকে তো রুমে আটকে.... আর কিছুই বলতে পারলো না।তার আগেই একটা ভারী হাত এসে পড়লো রোজের গালে।
'হাউ ডেয়ার ইউ।আমার বউকে পাগল বলার আগে তোমার দশবার ভাবা উচিৎ ছিলো।ভাবীর বোন বলে,না হলে এতোক্ষনে জেন্ত পুতে ফেলতাম।
আর ভাবী শুনো তোমার বোন কি করেছে।জিসান সব বলে।
সব শুনে তানজিলা ভীষণ লজ্জিত হয়ে বোনের দিকে রেগে তাকায়।
জিসান আর কিছু না বলেই তিশার হাত ধরে রুমে চলে আসে।
----জিসান বিছানায় বসে তিশাকে দেখছে।মেয়েটি কখন ধরে এদিকওদিক পায়চারী করছে।আর বিড়বিড় করে যেনো কিসব বলছে।নির্গাত রোজকে বকছে।
জিসান খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে,ম্যাডাম ভীষণ রেগে আছে।আজ কপালে আমার কি আছে আল্লাহই জানে ।
"জান,কি করছিস।তোর শরীরটা এমনেই ভালো না।একটু হাটাচলা করলেই ক্লান্ত লাগে।তার উপর কখন ধরে এভাবে পায়চারী করছিস।প্লিজ স্টোপ। এখানে এসে একটু বস রেস্ট নিবি।"
-'তিশা রেগে জিসানের দিকে তাকালো,আপনি আগেই জানতেন এই মেয়েটি এমন তাইনা।তবুও আমায় বলেন নি।
আপনি অনেক খারাপ জিসান। তিশা ক্লান্ত হয়ে সোফায়,বসে পরে বলে।
---জিসান তিশার সামনে গিয়ে হাটুগেরে বসে,জান ওটা অনেক আগের কথা।তখন আমি ভার্সিটিতে পরতাম।আর রোজ আমায় তখন অনেকভাবে প্রপোজ করেছিলো।কিন্তু এতো বছর পরও যে রোজ এমন করবে তা আমি বুঝতে পারিনি।
আমিতো তোর জন্য একগ্লাশ দুধ আনতে কিচেনের দিকে যাচ্ছিলাম।আর তখনি এই মেয়ে ঝড়ের গতিতে কোথা থেকে এসে আমাকে টান দিয়ে রুমে নিয়ে গিয়ে জরিয়ে ধরে।আমি সত্যি এমন কিছু আশা করিনি।
"কি...? "
"-আধ ঘন্টা ধরে তিশা জিসানকে খালি গায়ে শাওয়ারের নিচে দাঁড় করিয়ে রেখেছে।আর সবান দিয়ে জিসানের পুরো শরীরটাকে ঘষছে। রোজের কোনও স্পর্শ জিসানের গায়ে থাকতে দেবে না তিশা।জিসানের শরীর জুড়ে শুধু তিশার ছোঁয়া থাকবে,এখানে অন্যকাউকে একদম সহ্য করবে না তিশা।"
---জিসান শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে তিশার পাগলামি গুলো দেখছে।তিশাকে কোনও রকম বাধাও দিচ্ছে না।শরীরের কিছু অংশ রীতিমতো লাল হয়েগিয়েছে,তবুও জিসান শান্ত দৃষ্টিতে চেয়ে আছে তিশার দিকে।
"কি দেখছেন এভাবে।চেয়ে আছেন কেনো।আপনি একটা খারাপ লোক জানেন।ওই মেয়ে আপনাকে জড়িয়ে ধরেছে,আর আপনি ওকে একটা চড় মারলেন না কেনো।আপনি বলতে পারলেন না কেনো,আপনার এই শরীর,মন সব আমার। আর আমার জিনিসে রোজের ছোঁয়া কেনো লেগে থাকবে।আমি দেবো না থাকতে।"
---জিসান খেয়াল করলো তিশা ক্লান্ত হয়ে পড়ছে।তাই তিশাকে টেনে নিজের কাছে এনে জরিয়ে ধরলো।জান আমাকে একবার শক্ত করে জড়িয়ে ধর দেখবি তোর স্পর্শ, ছোঁয়ায় রোজেরটা দূর হয়ে যাবে।
"সত্যি।"
---একদম সত্যি জান।তোর একটু পরশই যথেষ্ট আমার ভেতরে তোলপাড় করতে।আমার সকালটাকে সিগ্ধ করতে।তোর ছোঁয়ায় আমার প্রতিটি রাত যেনো পবিত্র হয়ে যায়।আমার চেতনাজুড়ে শুধু তুই আছিস তাইতো আমার ভাবণাটাও যে তোমাতে মেতে থাকতে চায় বারবার।
_______________
"হাসপাতালের করিডোরে দেয়ালে হেলান দিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে জিসান।পাশেই নিলয় ও সোমও আছে।দুজনই চুপ কারো মুখে কোনও কথা নেই।
কিছুক্ষণ আগে নিশিও এসে পড়েছে ওর শ্বাসুর শ্বাশুরী কে নিয়ে।
কান্না করতে করতে নিশির অবস্থা খুব খারাপ হয়ে পড়ছে।রাবেয়া বেগম কিছুতেই নিশির কান্না বন্ধ করতে পারছে না।
শামসুর রহমান যেনো পাথর হয়ে গিয়েছে।বারবার তার সন্তানদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো খুব গভীরভাবে আঘাত করছে তাকে।মিসেস রেনু তো ডাক্তারদের কথা শুনেই বেহুঁশই হয়ে গিয়েছে।পাশের একটা কেবিনে তাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।"
একটুআগে,
----তিশাকে ঘুম পাড়িয়ে জিসান লেপটপ নিয়ে বসেছিলো অফিসের কিছু কাজ করার জন্য।আর তখনি সোমের ফোন আসে।ফোনে ঘটনা শুনার পর জিসান আর এক মুহুর্তও দেরি করিনি।ঝর্নাকে ডেকে সব বুঝিয়ে জিসান চলে আসে হাসপাতালে।
'হাসপাতালে এসে ডাক্তারের কথাশুনে জিসানের পায়ের নিচের জমি মনে হয় সরে গেলো।
এটা কি করে হতে পারে,রায়হানকে কেউ গুলি করেছে,তাও আবার একটা নয় তিন তিনটা।'
---ডাক্তার কোনও রকম আশা না করতে বলে গিয়েছে।রোগীর অবস্থাও তেমন ভালো না।
এটা শুনার পর থেকেই জিসানের ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে যা ও কাউকে দেখাতে পারছে না।
নিজেকে শক্ত করে পরিবারের সবাইকে খবরটা দিলো,শুধু তিশা ছাড়া।
"-জিসানের ভাবনা এখন রায়হানের কিছু হলে,নিশির কি হবে।আর তিশা?ও সহ্য করতে পারবে না।
হে আল্লাহ এ কেমন কঠিন পরীক্ষার মধ্যে ফেললে।তোমার কাছে আমার বন্ধুর জীবনটা ভিক্ষে চাইছি আল্লাহ।ও অনেক ভালো একটা ছেলে।দয়া করো আল্লাহ আমাদের উপর।"
---সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে, কারো মুখে কোনও কথা নেই।সবাই অধির আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে কখন ডাক্তার অপরেশন রুম থেকে বের হবে।
"ঠিক ওই সময় কয়েকজন পুলিশ এসে হাজির হলো।পুলিশদের দেখে তৌফিক সাহেব এগিয়ে গেলো।এটা পুলিশ কেস,তাই পুলিশ আসাটাও সবার কাছে স্বাভাবিকই লাগলো।
---কিন্তু পুলিশের কথাশুনে সবাই যেনো আকাশ থেকে পড়লো।
মিস্টার জিসান আমরা আপনাকে এরেস্ট করতে এসেছি।আপনাকে আমাদের সাথে থানায় জেতে হবে এখনি।"
---ওয়াট!কিসব রাবিশ বলছেন।আর আমাকে কেনো গ্রেপতার করবেন।কিসের ভিত্তিতে!কেস কি?
'মিস্টার জিসান, আপনি মিস্টার রায়হানকে হত্যা করার চেষ্টা করেছেন।আপনার নামে মামলা করা হয়েছে।'
---কিসব আজেবাজে বলছেন।জানেন আপনি কি বলছেন।রায়হান আমার বন্ধু,একমাত্র বোনের স্বামী।আর আমার ওয়াইফের ভাই হয়।আর আপনি বলছেন আমি ওকে মার্ডার করার চেষ্টা করেছি।কিসের ভিত্তিতে এসব বলছেন।প্রমাণ কি?আর কে সে আমার নামে মামলা করছে।"
"হুম,অবশ্যই।স্বাক্ষী প্রমাণ ছাড়া আমরা কিছুই করিনা।"
---কে সে?
'আপনার ওয়াইফ মিসেস তিশা আহমেদ।উনি আপনার নামে মামলা করেছে।আপনি নাকি রাগের মাথায় রায়হানের উপর হামলা করেছেন।'
--সবাই শোকড!সাথে জিসানও!
চলবে…।
[কমেন্ট করবেন ধন্যবাদ।]
" মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে তিশা।কারো দিকে তাকাবারও সাহস পাচ্ছে না।হাত দু'টো একত্রিত করে কোচলাচ্ছে কখন ধরে।চেহারায় স্পষ্ট ফুটে উঠেছে অস্থিরতা।"
---জিসান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তিশার কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছে।জিসানের এখন একটাই ভাবনা,ওকে তো আমি ঘুম পাড়িয়ে রেখে এসেছিলাম।তাহলে ও বাহিরে বের হলো কিভাবে।আর গার্ডরাই বা বাঁধা দেয়নি কেনো।চলছে কি ওর মনে আল্লাহই জানে জিসান এসব মনে মনেই বলছে।
তিশা এই কোন বিপদে পা দিলি জান,জানি না কি হবে।আমি নিজেকে নিয়ে ভয় পাইনা।ভয়টা তো তোকে নিয়ে।
'-তখনি শামসুর রহমান তিশার কাছে এসে তিশার গালে একটা থাপ্পাড় মারে,কিন্তু ভাগ্যক্রমে থাপ্পরটা জিসানের গালে পড়ে।সাথে সাথে সবাই চমকিত! কি হলো এট।
আসলে তিশার বাবা যখন তিশাকে থাপ্পড় মারতে নেয় আচানক জিসান তিশার সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায় তিশাকে প্রোটেক্ট করতে।তাই থাপ্পড়টা জিসানের গালে পড়ে।'
"শামসুর রহমান নিজেও চমকে গিয়েছে কি হলো ব্যাপারটা।"
---জিসান তিশাকে নিজের পিছনে রেখে প্রোটেক্ট করছে এখনো, তা দেখে সবাই কিছুটা নারায জিসানের উপর।পাগলামির একটা সীমা থাকে কিন্তু এই মেয়ে যে সব সীমা পার করে দিচ্ছে এটা কি জিসান বুঝতে পারছে না।এভাবে চলতে থাকলে পুরো পরিবার শেষ হয়ে যাবে একদিন।সবার মনে এখন এসবই চলছে।
"জিসান তুমি এখনো ওকে প্রোটেক্ট করছো।এই মেয়ে পুরো পাগল হয়ে গিয়েছে।তা না হলে রায়হানের এমন অবস্থায় ও এমন কিছু কিভাবে করতে পারে।"
'-জিসান মুচকি হেসে,বাবা আপনি জানেন কি, আপনি শুধু আপনার মেয়েকে না আমার সন্তানকেও আঘাত করতে চেয়েছিলেন।
শামসুর রহমান স্থদ্ধ জিসানের কথা শুনে।সত্যিতো কিছুকক্ষের জন্য উনি ভুলেই গিয়েছিলো মেয়ে যে তার প্রেগন্যান্ট।
কিন্তু তবুও নিজের দোষ স্বীকার করলো না শামসুর রহমান।তুমি যাই বলো জিসান,আমার মনে হয় ওর মাথাটা পুরো গেছে।'
---বাবা আপনি শান্ত হোন।এই সময় আপনার এতো হাইপার হওয়া আপনার শরীরের জন্য একদম ঠিক না।এখনতো আপনাকে আরো স্ট্রোং হতে হবে।রায়হানকে, নিশিকে, মাকে আপনাকেই সামলাতে হবে।তাই আপনি রিলেক্স হয়ে বসুন।জিসান শামসুর রহমানকে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলো।
আর বাবা চড়টা কিন্তু একটু ভারী ছিলো।যদি তিশার গালে লাগতো,হয়তো ও পড়ে যেতে নিজেকে সামলাতে পারতো না।তখন আমার সন্তানের কি হতো বলুন তো।
তাই রাগের মাথায় এমন কিছু করতে নেই জাতে করে পরবর্তীতে এর ক্ষতির পরিমান আমরা সামালাতে না পারি।
"শামসুর রহমান লজ্জায় মাথা নত করে ফেললো।এই ছেলেটাকে কতো ভুল বুঝেছিলো একসময়,কিন্তু এই ছেলেটি আমার মেয়ের ভালো মন্দতে সব সময় ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছে।আর মেয়েটি কি প্রতিদান দিলো আজ।ভাবতেও অবাক লাগে।"
---জিসান অনেক হয়েছে, প্রত্যেকটা কিছুর একটা সহ্যের সীমা থাকে।কিন্তু তিশা আজ সেই সীমাও পার করে দিয়েছে।কি চাও তিশা তুমি।তিশার সামনে এসে তিশার দু'বাহু ধরে রাবেয়া বেগম।
সমস্যা কি তোমার।যখন থেকে আমার ছেলের জীবনে এসেছো একটার পর একটা ঝামেলা লেগেই থাকে।একটা রাতও শান্তির ঘুম ঘুমাতে পারছি না।আসলে সবাই সত্যিই বলছে তুমি একটা অলক্ষনি।
আমার ছেলেমেয়েদের জীবন তোমার কারণে এমন বেহাল দশা হয়ে পড়ছে।এখনতো মনে হচ্ছে সেদিন তুমি মরে গেলেই ভালো হতো।
"মা....চিৎকার করে। এসব কি বলছো।"(জিসান)
---ব্যাশ জিসান! আর না।এই মেয়ের ছায়াও আমি আমার পরিবারের উপর আর পরতে দিবো না।আজ তোকে আমার কসম।দূরে থাক এই মেয়ে থেকে।একবার ভাগ্যের জোরে বেঁচে এসেছিস।কিন্তু এই মেয়ের সাথে থাকলে দ্বিতীয় বার আর বাঁচবি না তুই জিসান।বাঁচবি না।কেঁদে কথাটা বলে রাবেয়া বেগম।
'নিশি, শামসুর রহমান,তৌফিক সাহেব কারো মুখে কোনও কথা নেই।তারা কেবল রায়হানের কথাই চিন্তা করতে ব্যস্ত।এসব এদের কাছে এখন বিষাদ মনে হচ্ছে।'
"-আর তিশা সে তো যেনো রোবট হয়ে গিয়েছে।মুখে বলার মতো কিছু না থাকলেও চোখগুলো ঠিকই কষ্টটা জানিয়ে দিচ্ছে।কিন্তু তিশার কষ্টটা দেখার সময় কি কারো আছে।
শ্বাশুরীর কথাগুলো তিক্ত হলেও সত্যতা আছে।তিশা নিজেও মানে, তিশা জিসানের জীবনে অভিশাপ। আর এই অভিশাপ থেকে যতো দূর থাকবে জিসান ততোই ভালো থাকবে।
আর আল্লাহ হয়তো স্বয়ং নিজেই চায়না আমি আর জিসান একসাথে থাকি।
তাইতো আমাদের মাঝের দূরত্ব দিনদিন যেনো বেড়েই চলছে।আর এবার হয়তো আমাকে আর জিসানকে আলাদা হতে কেউ আটকাতেও পারবে না।
মাথানিচু করে শ্বাশুরীর দেওয়া সব অপবাদ গুলো মেনে নিলো তিশা। কষ্টে চোখ দিয়ে অভিরান পানি পড়ছে।চোখের জলগুলোও আজকাল বেহায়া হয়ে যাচ্ছে।প্রয়োজন অপ্রয়োজন সব জায়গায় দেখা যায়।"
---জিসান মায়ের কাছ থেকে তিশাকে সরিয়ে মায়ের সামনে দাঁড়ালো।
কি সব বলছো মা তুমি।কি করে বলতে পারলে সব দোষ ওর।ও কি করেছে?
দোষ যদি কারো থাকে তাহলে আমার।আমার জিদের কারনে তিশা আজ আমার সাথে।আমি ওর জীবনের সাথে নিজেকে জড়িয়েছি।ও সেধে এসে জড়ায়নি।তাহলে কি করে বললে ও অলক্ষনি।
এই মেয়েটিকে ছাড়া যে তোমার ছেলে বাঁচবেনা তা কি জানো না।তাহলে ওর মরনের কথা কিভাবে চিন্তা করলে।আর আমার সন্তান মা।
তিশাকে রাবেয়ার সামনে এনে,দেখো মা।ওর পেটে আমার সন্তান।ওর কিছু হলে আমার সন্তানও যে চলে যাবে মা।
মা হয়ে তুমি তোমার সন্তানের কষ্ট সহ্য করতে পারো না তাহলে আমিও তো এই সন্তানের বাবা কি করে পারি সহ্য করতে।
"আমি এভাবে বলতে চাইনি জিসান,কিন্তু বাধ্য হয়েছি আজ বলতে।জিঙ্গেস কর ওকে,কেনো ও তোর নামে মিথ্যা মামলা করলো।কেনো ও মিথ্যা বলেছে পুলিশের কাছে,তুই নাকি ওকে টর্চার করতি।
এতো ভালোবাসার মূল্য এই মেয়ে এইভাবে দিলো।তুই মানলেও আমি মানতে পারবো না।আর ওর ছায়াও আর আমার সন্তানদের উপর পড়তে দেবো না।"
---আচ্ছা ঠিক আছে,ওর ছায়াও তোমাদের উপর পরবে না আজকের পর থেকে।খুশি!
কিন্তু মা তুমি এতোটুকু মনে রেখো,ওকে কিছু বলার অধিকার আমি কাউকে দিই নাই।বউটা আমার,যদি ও অন্যায় করে তাহলে তাকে কিছু বলা এবং শাস্তি দেওয়া সব আমার অধিকার আর কারো না।
তাই এখন থেকে ওকে আর একটা কথাও কেউ বলবে না।এমনকি মা তুমিও না।যদি ছেলেকে হারাতে না চাও।
'-তিশা এতো কিছু আর নিতে পারলো না।ব্রেনে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হচ্ছিলো অনেকক্ষণ ধরে।মাথার যন্ত্রনাটাও অনেক বেড়ে গিয়েছে।তবুও তিশা এতোক্ষন ধরে নিজেকে ঠিক রাখার চেষ্টা করেছে কিন্তু আর পারলো না।মাথা ঘুড়ে নিচে পড়ে যেতে নিলেই জিসান ধরে ফেলে।
পুলিশের দিকে তাকিয়ে,তিশাকে কোলে তুলে নিয়ে বললো,আমি আমার ওয়াইফকে সেভ মতো বাড়ীতে পৌঁছে না দেওয়া পর্যন্ত সেলেন্ডার করছি না।
আপনারা চাইলে আমাকে ফোলও করতে পারেন বলেই জিসান তিশাকে নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করলো।
_________________
"নিলয়কে রায়হানের সব দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে জিসান তিশাকে সাথে নিয়ে বের হয়ে গেলো হাসপাতাল থেকে।
রায়হানের জন্য পুরো হাসপাতালে গার্ডের ব্যবস্থা করতে বললো।রায়হানের বিপদ এখনো কমেনি জিসান মনে করে।"
---জিসান জানে রায়হানের অবস্থা ভালো না।বন্ধুকে শেষবার দেখতে পাবে কিনা তাও জানে না।কিন্তু রায়হানের পাশে সবাই আছে আপাততো।
কিন্তু তিশা!
ও একলা এখন।কারো সাপোর্ট নেই।এই অবস্থায় আমি ওকে একা কিছুতেই ছাড়তে পারবো না।আর ওর কিছু হলে এই মুহুর্তে, পরে রায়হান জানতে পারলে কাউকে মাপ করবে না।যতো যাই কিছু করুক,তিশা রায়হানের কলিজা।বোনকে ও কতোটা ভালোবাসে আমার থেকে বেশি কেউ জানে না।
তার উপর ও একা না,আমাদের সন্তানও ওর সাথে সাফার করবে।বাবা হয়ে আমি এটা কিছুতেই দিতে পারিনা।
"-তিশাকে বুকের সাথে চেপে জড়িয়ে ধরে বসে আছে জিসান।সোম গাড়ি চাল্লাচ্ছে।
লুকিং গ্লাসের দিকে তাকিয়ে জিসানকে জিঙ্গেস করলো,কোথায় যাবো স্যার।আহমেদ ভিলা।
জিসান তিশার দিকে একবার তাকিয়ে দীর্ঘ একটা শ্বাস ছেড়ে,না বললো।
সোম তার কৌতুহল ধরে রাখতে পারলো না,তাই জিঙ্গেস করেই ফেললো স্যার!
----জিসান চোখদুটো বন্ধ করে তিশাকে জড়িয়ে ধরেই গাড়ীর সিটে হেলান দিয়ে বসে ছিলো।
কিছু বলবে সোম।
"আপনার রাগ হয়না তিশা ম্যাডামের উপর।এমন একটা কাজ করলো।"
-জিসান হেসে দিলো,সোমের কথায়।তা দেখে সোম কিছুটা অবাক হলো।
সোম কাউকে ভালোবেসেছো কখনো নিঃস্বার্থ ভাবে।কিছু পাওয়ার আসা না করে দিনের পর দিন কারো জন্য অপেক্ষা করেছো।ভালোবাসার হারানোর ভয়ে বুকের ভেতরের চিনচিন ব্যাথাটা কখনো অনুভোব করেছো।চোখের জল লুকিয়ে মুখে কখনো নকল হাসি হেসেছো।
এসব না করলে তুমি কখনো বুঝবে না আমার কথা।যেদিন কারো প্রেমে পড়বে গভীর ভাবে তখন বুঝবে প্রিয়জনের একটি হাসির জন্য যদি ফাঁসিতে ঝুলতে হয় তাও হেসে হেসে কবুল করে নিতে মন চাইবে।
"কি বলছেন স্যার।এসবও কি সম্ভব।"
---কেনো সম্ভব না সোম।আজকাল দেখো না।কতো আত্মহত্যা বেড়ে গিয়েছে।বেশির ভাগইতো প্রেমে প্রতারণা খাওয়া আশিক।এরা কেনো আত্মহত্যা করে জানো ভালোবাসা নামক অসুখটার কারণে।
এই অসুখ ছাড়াবার ওষুধটাই যখন চলে যায় বা ধোকা দেয় তখন সেটার যন্ত্রনা সহ্য করার মতো সাহস বা ধৈর্য অনেকের থাকে না। তাইতো তখন মৃত্যুকে বেঁচে নেয় তারা।এটা জানা সত্ত্বেও আত্মহত্যা কতো গুনাহ আমাদের ধর্মে।আল্লাহ তাআলা আত্মহত্যাকারীকে কখনো ক্ষমা করেনা।
কিন্তু মজার বিষয় কি জানো,এই আত্মহত্যার পথ মেয়েরা তেমন বেছে নেয়না।কারণ তারা পরিবারের দিকে তাকিয়ে মেনে নেয় সব কিছু।
কিন্তু আমরা ছেলেরা পারিনা।না পারি মানতে,না পারি কাঁদতে।অসহ্য যন্ত্রনা থেকে মুক্তির কেবল একটা পথই দেখা যায় তখন,তা হলো মৃত্যু।
আর এই মেয়েটি তো আমার পৃথিবী জুড়ে আছে।জানি না ও এমন কেনো করেছে।কিন্তু ওর জন্য ফাঁসিতে ঝুলতেও হয়তো ভাববো না একবারও।
"হুম,বুঝতে পারছি স্যার। কিন্তু এখন কি করবো।"
'-তিশার দিকে নযর রাখো।কেউতো আছে যে আমার তিশাকে দাবার গুটির মতো ব্যবহার করছে।ও মুখে যাই বলুক।ওর চোখ বলে দিচ্ছে ওর মনের পীড়া।
আমি স্পষ্ট তা দেখেছি হাসপাতালে থাকতে।আর কে সে তাকে খুঁজে বের করো।
তিশা এতোকিছু একা কখনো করতে পারবে না।ওকে থানা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিটি কে বের করো।ওকে একা ছাড়বে না কখনো।ওর সকল আপডেট আমাকে জানাবে প্রতিদিন।'
---আর স্যার আপনি?আপনি চাইলে আমি কালই জামিনের ব্যবস্থা করতে পারি।
"হুম,জানি।কিন্তু একটু ওয়েট করো।আমি বলা না পর্যন্ত কিছুই করবে না।"
--- ওকে স্যার।
'তিশাকে জিসান নিলয়ের বাসায় নিয়ে এলো।ঝর্ণাকে ফোন করে এড্রেস সেন্ট করে দিয়েছিলো আগেই।তাই ঝর্ণাকে ড্রয়িংরুমেই বসে থাকতে দেখলো।
তিশাকে একটা রুমে শুয়ে দিয়ে জিসান ঝর্নার কাছে এলো জিঙ্গেস করতে কি হয়েছিলো।'
--ভাই আমি ভাবীর সাথেই ছিলাম।কিছুক্ষণের জন্য আমি ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম।বের হবার সময় দেখি ওয়াসরুমের দরজা বাহির দিয়ে লাগানো।আমার চিল্লাচিল্লিতে অনেকক্ষণ পর তানজিলা ভাবী এসে দরজা খুলে দিলো।বাহির হয়ে দেখি তিশা ভাবী নেই।তোমার ফোন ট্রাই করলাম ব্যস্ত দেখাচ্ছে।উপায় না পেয়ে নিলয়কে ফোন করে হাসপাতালে কি কি হয়েছে জানতে পারলাম।আমাকে ক্ষমা করে দেও ভাই।তুমি আমাকে বারবার বিশ্বাস করে দায়িত্ব দিয়ে যাও আর আমি প্রতিবার কোনও না কোনো ভুল করে বসি।
'জিসান বোনের মাথায় হাত রেখে,আরে কাঁদিস কেনো।আমি কি তোমাকে কিছু বলছি।আর যা হয়েছে তাতে তোমার কোনও দোষ নেই।তাই এসব ভুলে যাও।তুমি কিছুুদিন এখানেই থাকো তিশার সাথে।আপাততো তিশার জন্য আহমেদ ভিলাও সেভ না।
তাই ওকে এখানে এনেছি।তুমি কিছুদিন ওর সাথেই থাকো।
ঝর্ণাকে সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে জিসান চলে গেলো পুলিশের সাথে।
_____________
"অপরেশন রুম থেকে ডাক্তার বের হলো।ডাক্তারকে বের হতে দেখে সবাই একসাথে ডাক্তারকে ঘিরে ধরলো।
ডাক্তার তৌফিক সাহেবকে খুব ভালো করে চিনে,তাই তৌফিক সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বললো।
আমরা অপরেশন করে,দু'টো গুলি বের করেছি।কিন্তু আরো একটি গুলি এখনো রায়হানের শরীরের ভেতরে রয়েছে।সেটা বের করা আমাদের পক্ষে আর সম্ভব না।আর এইগুলিটা বের করা অত্যন্ত জরুরি,তা না হলে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
তখন পেশেন্ট এর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যাবে।তাই বলছি আপনারা পেশেন্টকে ইন্ডিয়া নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন।যতোদ্রুতো পারেন।এটার অপরেশন একমাত্র ওখানেই সম্ভব।
এখন একটু ভালো আছে পেশেন্ট ,তবুও দিন যতো যাবে পেশেন্টের অবস্থা আরো খারাপ হবে।রিস্ক আরো বাড়বে।"
---তৌফিক সাহেব সব শুনে রায়হানকে ইমার্জেন্সি ভিসায় ইন্ডিয়া নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে লাগলো।নিলয় রায়হানের নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করে ফেললো।রায়হানের সাথে সবাই একবার দেখা করতে চেয়েছে।তবে রায়হানকে দেখার অনুমতি কেবল নিশি পেলো।
"-অক্সিজেন মাস্ক লাগানো রায়হানকে দেখে নিশির বুকটা যেনো ফেটে যাচ্ছে।চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে।একবার মানুষটিকে জড়িয়ে ধরতে মন চাইছে।কিন্তু সব চাওয়া যে পূর্ণ হয়না মানুষের। তাই আজ নিশিরও হবেনা।তবুও নিশি রায়হানের হাতটি আলতো ধরেই চোখের পানি ছেড়ে দিলো।
কি থেকে কি হয়ে গেলো।এমনতো হবার কথা ছিলো না রায়হান।সবই তো ঠিক ছিলো।আজ কতোনা স্বপ্ন দেখেছি দু'জন একসাথে।কতো না বলা কথা শেয়ার করেছি দু'জন দু'জনার সাথে।।আজকের দিনটি কতোনা সুখের ছিলো আমাদের।
নদীর পাড়ে পা ভিজিয়ে দু'জনের বৃষ্টিতে ভেজা কি আর হবে না আমাদের।চোখে চোখে কথা বলে,মনের অনুভূতি গুলো কি শেয়ার হবে না আর।আপনার বুকে মাথা রেখে ঘুমানোর ইচ্ছা কি আর পূরণ হবে না আমার।বলুন না রায়হান।
আপনি তো আমার অভ্যাসে পরিনত হয়েছেন।কি করে থাকবো আপনাকে ছাড়া।আমি মরেই যাবো রায়হান,আমি মরেই যাবো।
অনেক কষ্ট হচ্ছে জানেন।বুকের ভেতর কেমন চিনচিন করে ব্যাথা করছে।খুব অসহনীয়। আমি সইতে পারছি না।আপনি কি বুঝতে পারছেন না।আপনার নিশি ওয়েট করছে আপনার জন্য রায়হান।আপনাকে সুস্থ হতেই হবে।আমার জন্য, আমাদের জন্য।"
________
"আশিষ নিজেই নিজের হাতে ইনজেকশন পুশ করছে নেশার।
আশিষের বন্ধু সাহেদ তা দেখে অবাকের চরম পর্যায়।এসব কি আশিষ। তুই নেশা করছিস।এতোটা অধঃপতন কবে হলো ভাই তোর।"
---আশিস হাসতে লাগলো সাহেদ এর কথা শুনে।কিসব বলছিস।অধঃপতন কই।এটাকেই তো লাইফ বলে।একবার নিলে অন্য এক জগতে চলে যাবি।সেখান থেকে আর ফিরে আসতে মন চাইবে না।সব কিছুই সুন্দর লাগবে।মন থেকে সব কষ্ট,দুঃখ নিমিষেই দূর হয়ে যাবে।জীবনকে অন্যভাবে উপভোগ করতে পারবি।নে একটা।সাহেদ এর দিকে একটা ইনজেকশন এগিয়ে দিয়ে।
'নারে ভাই,আমার এসব লাগবে না।আমিও জীবনকে উপভোগ করতে চাই তবে এভাবে না।মানুষের মতো মানুষ হয়ে।অমানুষ তো সবাই হতে পারে,কিন্তু সত্যিকারের মানুষ কতোজন হতে পারে বল।তার জন্য লাগে অসীম ধৈর্য,সহনশীলতা, দায়িত্ববোধ।'
---কিসব বলছিস।এসব আজকাল কার মধ্যে আছে।
"তাইতো সমাজটা দিনদিন ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে।আর একে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তোর মতো কিছু যুবসমাজ।"
---মানে!
"মানে হলো,এই যে তুই নেশা করে সমাজ, দেশের নাম উজ্জ্বল করছিস।এটাই তো মানে।
'-আমি করলে আমার বাপের টাকায় করছি,তাহলে অন্য কারো কি সমস্যা হতে পারে।
---হুম, ঠিক বলছিস।কিন্তু এই টাকাটি কি তুই নেশার কাজে ব্যয় না করে,অন্য কাজে তো ব্যয় করতে পারতি।একজন গরীব মানুষকে সাহায্য করতে পারতি।একজন অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে পারতি।
"বাদ দে তো সাহেদ,আমার আর কোনও ইচ্ছা নেই ভালো হওয়ার।"
---একটা মেয়ের জন্য এভাবে নিজের জীবনটা শেষ করে দিবি।আর বন্ধু হয়ে তুই চাস আমি তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখি।
'তুই বুঝবি না,সাহেদ।ভালোবাসার নেশা হচ্ছে পৃথিবীতে সব থেকে কড়া নেশা।ওই নেশার কাছে বাকি সব নেশাই যেনো ফিকে হয়ে যায়।আমি কুহুর নেশার থেকে মুক্তি চাই কিন্তু পারছি না।তাইতো এক নেশাকে ভুলতে আরেক নেশাকে হাতিয়ার করেছি আমি।'
---সাহেদ একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।আর ওর কিছুই করার নেই।বন্ধু হয়ে বন্ধুকে সুপথে আনা দায়িত্ব ওর।আর সাহেদ তা খুব চেষ্টা করেছে।কিন্তু প্রত্যেকবার ব্যর্থতা পেতে হচ্ছে।
এই তোর হাত কাটছে কিভাবে।
"আশিষ নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে,এক্সিডেন্ট করেছি।"
---কিভাবে?
"বাদ দে তো।"
'চুপ থাক।দেখিছিস কতো রক্ত পরেছে।তোর শার্ট টাও ভরে গিয়েছে।উঠ আমি ড্রেসিং করেদি জলদি।'
__________
"তিনদিন কেটে গেলো।এই তিনদিনে তিশা কারো সাথেই আর কোনও কথা বললো না।সারাদিন কাঁদতো।ভাইকেও একটি বার দেখতে পারেনি।কতোবার হাসপাতালে যেতে চেয়েছে কিন্তু নিলয় মানা করে দিয়েছে।কারণ ওখানে তিশাকে কেউ সহ্য করতে পারে না।তাই জিসানের নিশেধ তিশাকে হাসপাতালে জাতে যেতে না দেওয়া হয়।"
'-তিশা বাবাকে কয়েকবার ফোন করে ভাইয়ের কথা জিঙ্গেস করতে চেয়েছিলো,কিন্তু তিশার বাবা তিশার কন্ঠ শুনেই ফোনটা কেটে দিলো।এসব আর নিতে পারছে না তিশা।দিন দিন মনে হয় আবার ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছে।ঝর্না অনেক চেষ্টা করছে তিশাকে এসব থেকে বের করতে কিন্তু কিছুই করতে পারছে না।অনেকবার জানারও চেষ্টা করেছে সমস্যা কি?কেনো ও এমন করেছে কিন্তু তিশা কিছুই বলতে নারায। "
---একটু আগে রায়হানকে নিয়ে তার পরিবার ইন্ডিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।নিলয় নিজে তাদের এয়ার্পোটে ড্রপ করে দিয়ে সবেমাত্র বাসায় আসলো।শরীরটা বড্ড ক্লান্ত লাগছে।আজ অনেক ধবল গেছে ওর উপর।জিসান নেই, সোম নেই। রায়হান তো থেকেও নেই তাই সব কিছু একা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে নিলয়।শোফায় শরীরটা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসেছিলো।হঠাৎ মাথায় কারো ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেলো।
নিলয় চোখ খুললো না কারণ এই তিনদিনে অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে এই ছোঁয়ার এখন।
"প্রতিদিন নিলয় এসে শোফায় বসলেই ঝর্ণা এসে মাথাটা টিপে দেয়।কিছুটা মালিশও করে দেয়।সত্যি বলতে নিলয়ের খুব ভালো লাগে ঝর্ণার এই ছোটছোট ভালোবাসা গুলো।নিলয়ের চোখে ঘুম এসে পড়ে।কিন্তু নিলয় জানে ঝর্ণা ওকে না খাইয়ে ঘুমাতেও দিবে না।আর তাই হলো।মেয়েটি এমনি,কিছুদিনের মধ্যেই যেনো আমার সব কিছু দখল করে ফেলেছে।"
-এই উঠুন, না খেয়ে ঘুমানো যাবেনা।একটা শাওয়ার নিয়ে আসুন দেখবেন আরো ভালো লাগবে।"
----নিলয় একটা মুচকি হেসে মাথা থেকে ঝর্ণার একটা হাত টান দিয়ে সামনে এনে চুমো দিলো।
মুহুর্তে ঝর্ণার শরীরে যেনো ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে গেলো।কেমন এক ভয়ংকর অনুভূতি ফিল করছে ঝর্ণা।জীবনে এই প্রথম কোনও পুরুষের স্পর্শ ঝর্ণা এতো কাছ থেকে পেয়েছে।তাইতো নিলয়ের প্রতিটি ছোঁয়ায় ঝর্ণার হার্ডটা কেমন দ্রুতোগতিতে চলে।কম্পন সৃষ্টি হয় পুরো শরীরে।এ কেমন অনুভূতি!তবে এই অনুভূতির সাগরে যে ঝর্ণা একবার হলেও ডুব দিতে চায়।
"তুমি খুব ভালো ঝর্ণা জানো।আমি তোমার মতো মেয়ে খুব কম দেখেছি। তুমি খুব সহযে সব কিছু মেনে নেও।কোনও অভিযোগও করোনা।কারো প্রতি কোনো রাগও রাখো না মনে।আমাকেও আজকাল খুব ভালো করে বুঝতে শিখে গেছো।সব কিছু এতো ভালো হলে আমি কিন্তু তোমার প্রেমে পড়ে যাবো।ঝর্নার হাতটা ধরেই কথাগুলো বললো।"
---ঝর্ণা হাতটা নিলয়ের থেকে ছুটিয়ে তার মানে এখনো পরেন নি আপনি।
'-নিলয় আচানক ঝর্ণার দু'হাত ধরে একসাথে টান দিলে ঝর্ণা ঢলে পড়ে নিলয়ের মুখের উপর।এতে করে দু'জনের নাকের সাথে নাক বারি খায়।এতোটা কাছাকাছি কখনো দুজন দুজনার আসা হয়নি।ঝর্ণার হার্ডটা মনে হয় ট্রেনের গতিতে ছুটছে।পায়ের মধ্যে কম্পন সৃষ্টি হচ্ছে,মনে হয় কিছুকক্ষন পর নির্ঘাত ঢলে পড়ে যাবে।
ঝর্ণা নিজেকে কিছুটা সামলিয়ে নিলয়ের কাছ থেকে হাতদুটো ছুটানোর চেষ্টা করলো কিন্তু সব বৃথা।বরং নিলয়ের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি যেনো ঝর্ণাকে আরো ঘায়েল করছে।নিশ্বাসে নিশ্বাস যেনো আজ মিশে যাচ্ছে।'
---নিলয়ও যেনো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ঝর্ণাকে আজ দেখছে।লজ্জায় লাল হওয়া ঝর্ণাকে দেখে আরো একটু গভীর ভাবে ছুঁয়ে দিতে মন চাইছে নিলয়ের।কিছু সীমা অতিক্রম করার জন্য মনটা কেমন চাতক পাখির মতো ছটফট করছে।এ কেমন অনুভূতি!আগেতো কখনো এমন অস্থিরতা আসেনি কাউকে একবার ছোঁয়ার জন্য।নিলয়ের দৃষ্টির গভীরতা যেনো আরো বেড়ে যাচ্ছে।এবার ঝর্ণা একটু ভয় পাচ্ছে নিজেদেরকে নিয়ে।সীমালঙ্ঘন এর ভয়।'
"নিলয় খুব ভালো করেই ঝর্ণার চোখের ভাষা বুঝতে পারছে।তাই ঝর্ণাকে ছেড়ে দিয়ে বললো,ভয় পেও না।আমি আমার সীমা জানি।বিদেশি মাটিতে বড় হলেও আমার কালচার আর ধর্ম কিছুই ভুলিনি।তাই আমি এমন কিছুই করবো না যাতে তুমি হার্ট হও।
নিলয় এসব বলেই চলে গেলো নিজের রুমে ফ্রেস হতে।"
---ঝর্ণা নিলয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকেই ভাবছে,সবইতো বললেন,কিন্তু যা জানতে চাইলাম তা বাধে।
চলবে…।
| অন্তিমপর্ব|
"রাত প্রায় ১২ টা ছুঁই ছুঁই। তিশা গভীর ঘুমে মগ্ন।আজকাল একটু বেশিই ঘুম পায় তিশার। কারণটা একদম অজানা।
রাতে ঝর্ণা জোর করে ডিনার করিয়ে ওষুধ খাইয়ে দিয়ে যায়।এর কিছুক্ষণ পরই যেনো রাজ্যের ঘুম এসে পড়ে তিশার চোখে।কারণটা হলো ডাক্তারকে বলে ওষুধের সাথে ঘুমের ওষুধও দেওয়া হয় তিশাকে।না হলে তিশা সারারাত কেঁদেই কাটিয়ে দেয়।যা তিশা আর বেবির জন্য মোটেও ভালো না।"
---আজও তিশা ঘুমিয়ে গিয়েছে তারাতারি,কিন্তু হঠাৎ আজ ঘুমের ঘোরে অনুভোব করতে পারছে কেউ থাকে গভীর ভাবে স্পর্শ করছে।
খুব চেনা চেনা লাগছে তার প্রতিটি স্পর্শ। মাতাল করা পারফিউম এর ঘ্রাণে তিশা ঘুমের মধ্যেই যেনো আরো মাতাল হয়ে যাচ্ছে।খুব পরিচিত সেই ঘ্রাণ।
খুব কষ্টে তিশা চোখদুটো হালকা খোলার চেষ্টা করে দেখতে চাইলো কে সে।আর তখনি কেউ কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বললো,
"কি নিষ্পাপ চাওনি তোর--প্রত্যেকবার যেনো বলে দেয় তোর মনের কথা।ভালোবাসি, ভালোবাসি তোমায়।
কানে একটা চুমো দিয়ে।"
---তিশা একটু মুচকি হেসে আবারও চোখ বন্ধ করে ফেললো।কি সুন্দর স্বপ্ন,এই স্বপ্ন জেগে উঠে ভাঙ্গতে চায় না তিশা।কতোদিন পর মানুষটিকে অনুভোব করছে তিশা।থাকুক না এমনেই।
তিশা গলায় কারো ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে আবারও চমকে যায়।এবারও তিশা কিছু একটা শুনতে পেলো।
'তৃষ্ণাই মিটেনা যতোই তোকে দেখি,আরো যেনো তৃষ্ণা দিনদিন বেড়েই যায়।আমার এই তৃষ্ণা মিটিয়ে দেনা জান।
এ কেমন নেশা।ঘোরই কাটেনা।এ যেনো এক মরণ নেশা।তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে আমায় তোর এই ভালোবাসার নেশা।'
---তিশা ঘুমের মধ্যেই কেঁদে দিলো।খুব মনে পড়ছে জিসানকে আজ।খুব করে ভালোবাসতে মন চাইছে।কিন্তু তিশার ভয় হয়,হাত বাড়ালে যদি চলে যায়।চোখ খুললে যদি গায়ব হয়ে যায়।তবুও যে মন চাইছে একবার ছুঁয়ে দিতে মানুষটিকে।দু'চোখ ভরে একবার হলেও দেখতে যে খুব মন চাইছে।খুব করে চাইছে।
'-জিসান তিশাকে টান দিয়ে নিজের কাছে এনে বুকের সাথে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।
হঠাৎ এমন হওয়ায় তিশা চমকে চোখ দুটো খুলেই বড়সড় ধাক্কা খেলো।
এটা কিভাবে সম্ভব। কাপাকাপা কন্ঠে আ আপনি! এখানে! সত্যিই!
---জান বিশ্বাস হচ্ছে না,ছুঁয়ে দেখ।তিশার একটা হাত দিয়ে গালে স্পর্শ করে।
"তিশা সাথে সাথে জিসানকে ঝাপটে ধরে কাঁদতে লাগলো।জিসানও বাঁধা দিলো না।মাঝে মাঝে কিছু সুখও কান্নার কারণ হয়। আজ তিশা সেই কান্নাই করছে।
জিসানের বুকে কয়েকটা চুমো দিয়ে,আপনি আমাকে ছেড়ে যাবেন নাতো আর।আমি থাকতে পারবো না আপনাকে ছাড়া।বিশ্বাস করুন আমি এমন কিছুই করতে চাইনি।আমিতো.... তিশাকে আর কিছুই বলতে দিলো না জিসান।"
---তিশার নরম ঠোঁটদুটি দখল করে নিলো নিজের মাঝে।আজ যেনো কোনও কথা হবে না,শুধু ভালোবাসা হবে।দুটি মানুষ আজ নিজেদের সবটুকু দিয়ে কেবল ভালো বাসবে।হারিয়ে যাবে সুখের সে জগতে যেখানে কেবল সুখ আর সুখ।জিসান যেনো প্রতিজ্ঞা করে এসেছে তিশাকে আজ সেই জগতের রানী করে তুলবে।নিজের সবটুকু ভালোবাসা আজ প্রিয়তমাকে দিয়ে প্রিয়তমার সব কষ্টগুলো শুষে নিবে।
এতোদিনের না বলা কথা,কষ্ট সবই যেনো দূরে ঢেলে দিয়ে বিলীন হয়ে যাবে দুজন দুজনার মাঝে।শরীর মন উজার হয়ে যাবে আজ।
মনের সুখের সাথে যখন দৈহিক সুখটাও মিলে যায় তখন সেই সুখটা হয় স্বর্গীয় সুখ।তবে সেই সুখ কেবল প্রিয় মানুষটির সাথেই অনুভোব করা যায়।তিশা ও জিসান আজ সেই সুখেই পারি দিলো।
________
"সকালের সূর্যের আলো জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে উঁকিঝুঁকি দিয়ে তিশার মধুর ঘুমটা নষ্ট করে দিলো।চোখ দুটো খুলেই জিসানকে সামনে দেখতে পেলো তিশা।ঘুমের মধ্যেও একহাত দিয়ে তিশাকে জরিয়ে ধরে আছে।জিসানের ঘুমন্ত মুখটির দিকে তাকিয়ে তিশার খুব মায়া হলো।
কতোনা কষ্ট দিয়েছে এই মানুষটিকে ও।কতো অবহেলা,কতো পাগলামি করেছে।কিন্তু সবই হাসি মুখে গ্রহণ করে নেয়। কিভাবে পারে।তিশার খুব অবাক লাগে।
মাঝে মাঝে তো মনে হয় জিসান কোনও মানুষই না।আল্লাহ যেনো মানুষরূপী কোনও ফেরেশতা পাঠিয়েছে ওর জীবনে।তা না হলে কেউ কাউকে এভাবে ভালোবাসতে পারে।"
---তিশা উঠে যেতে নিলেই,জিসান আবার কাছে টেনে নেয়।তাই বাধ্য হয়ে তিশা আবারও জিসানের বুকের উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।ঢিপঢিপ শব্দ শোনা যাচ্ছে। জিসানের বুকের এই স্পন্দনের ধ্বনি শুনতে বেশ ভালোই লাগছে তিশার।কিন্তু হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়ে তিশা লাফ দিয়ে উঠে বসলো।
"তিশার এমন আচানক উঠার কারণে জিসানেও ভয় পেয়ে গেলো।জিসান দেখলো তিশা ঘামছে এই ঠান্ডার মাঝেও।শরীরের চাদরটাকে কেমন খামচে ধরে রেখেছে।
-কি হয়েছে জান।জিসান আতংকিত হয়ে।
'তিশা করুন চোখে জিসানের দিকে তাকালো।ত তাওহিদ ভাইয়া!'
-সব ঠিক আছে জান।
'না কিছু ঠিক নেই।আপনি জানেন না। ও ভাইয়াকে কিডন্যাপ করে রেখেছে।বলেছে....'।
-শশশশ!একদম চুপ।তিশাকে টেনে নিজের কোলে বসাতে চাইলো।
'আমি অনেক ভারী হয়ে গিয়েছি আজকাল।'
-তাতে কি? তোকে আর আমাদের সন্তানকে একসাথে কোলে নেওয়ার শক্তি এখনো আছে আমার।কাছে আস।
'তিশাও চুপচাপ জিসানের কোলে বসে পড়লো।একটা চাদর দিয়ে জিসান দুজনের শরীরটা ভালো করে ঢেকে দিলো।'
-আচ্ছা আপনি কি করে জানেন।
'আমাদের বাড়ীর সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে।'
-কি?
'হুম।'
-তোকে যখন এই বাসায় নিয়ে আসছিলাম,তখনি গার্ডরা ফোন করে।গার্ডদের নাকি ধুঁয়ার মতো কিছু একটা দিয়ে বেহুঁশ করা হয়।অন্য গার্ডরা এসে পরে ওদের জ্ঞান ফিরিয়ে আমাকে কল করে।
আমি পুরো বাড়ীর সিসিটিভি ফুটেজ আমাকে ইমেল করে পাঠাতে বলি।তোকে বাসায় রেখে থানায় যাওয়ার সময় আমি ফুটেজে সব দেখতে পাই।কিভাবে তোকে ব্লাকম্যাল করেছে সব।
'খুব খারাপ, খুব বাজে একটা লোক।আমি তাকে কতো বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্তু উনি কিভাবে করলো।'
-ডাক্তার বাবু পাগল হয়ে গিয়েছিলো তোর প্রেমে।
'কিসব বলছেন।একদম বাজে বলবেন না।ও পাগল হোক, ছাগল হোক যা খুশি হোক একদম সামনে জাতে না আসে আমার।
এবার সামনে পেলে খুন করে ফেলবো আমি।'
-রিলেক্স জান,আর কেউ আসবে না।তিশাকে নিজের সাথে আরো গভীর ভাবে জরিয়ে ধরে,
না কোনও অর্ক,না কোনও লাবনি আর নাহি কোনও নিবিড়।কেউ না।কেউ তোকে আমার কাছ থেকে দূরে সরাতে পারবে না।
'কি করেছেন তার সাথে আপনি।তিশা একটু বিস্মিত চোখে জিসানের দিকে তাকালো।'
-কিছু না। ব্যাটাকে বিনা টিকেটে উপরে পাঠিয়ে দিয়েছি।
'উপরে মানে।'
-শালার সাহস কি করে হয়,তোর নাম করে আমাকে থানায় ডিভোর্স পেপার পাঠানোর।আর তোকে নিয়ে নাকি একেবারে অস্ট্রেলিয়া চলে যাবার পুরো বন্দোবস্তও করে ফেলেছে।এসব জানার পর আমাকে জেল খানায় আটকে রাখা কারো সাধ্য আছে কি।সোমকে বলার সাথে সাথে আমার জামিনের ব্যবস্থা করে ফেলে।
আর নিবিড়কে তোকে ছাড়াই অস্ট্রেলিয়া পাঠিয়ে দিই।
'উনি এতো সহযে মেনে গিয়েছে।'
-না, সহযে কই।অনেক অনুরোধ করে বুঝানোর পর মানছে।
'সত্যি'।
-কেনো আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না তোর।
'আচ্ছা নিবিড় ভাইয়া কি রায়হান ভাইকে গুলি করেছে।'
-না,তবে গুটির চালটা ওই চালছে।
'মানে, কিভাবে।'
-তোকে এতো কিছু জানতে হবে না।আমার বেবির উপর খারাপ প্রভাব পড়বে এসবের।ভালো ভালো কথা শুনবি,বই পড়বি,কুরআন হাদিস এই সময় বেশি বেশি করে পড়বি।এতে করে আল্লাহ তাআলা আমাদের একটি নেক সন্তান দান করবে।আমাকের বেবিও একজন নেক মানুষ হয়ে বড় হতে পারবে।তাই আজ থেকে সব বাজে চিন্তা বাদ।
_________
ফ্লাশব্যাক
" জিসান সিসিটিভিতে দেখেছে তিশার সাথে সেদিন নিবিড় দেখা করতে এসেছে।আর নিবিড়ই তিশাকে ব্লাকম্যাল করেছে ওর সব কথা মানতে।
আর তিশা তখন কোনো উপায় না পেয়ে তাই করেছে।কারণ নিবিড় তাওহিদ কে কিডন্যাপ করে নিজের কাছে আটকে রেখেছে।তাইতো এতো বিপদের মাঝেও কেউ তাওহিদ কে দেখতে পায়নি এতোদিন।"
----তিশার কাছে আর কোনও অপশন ছিলোনা তখন।কারণ রায়হানের অবস্থা ভালো ছিলোনা,তাওহিদ কিডন্যাপ হয়েছিলো।আর জিসান সে সময় তিশার পাশে ছিলো না।আর নিবিড়ের বার বার হুমকি রায়হানের মতো তাওহিদের অবস্থায়ও এমন হবে।এমনকি আরো ভয়ানক হবে।ওর লাশটাও খুঁজে পাবেনা কেউ।
তিশা প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলো।কোনও কিছু ভাবার মতো অবস্থায় ছিলো না তখন,তাই তিশা তাই করেছে যা নিবিড় বলেছে।
"-ঢাকার বাহিরে এক কনফেরান্সে গিয়েছিলো তাওহিদ। তানজিলাকে অবশ্য বলে গিয়েছিলো,বেশি ব্যস্ত থাকলে ফোন ধরবে না।টেনশন জাতে না করে।
তাই রায়হানের এক্সিডেন্টের দিন অনেকবার কল করেও তাওহিদকে পায়নি তানজিলা।ম্যাসেজ দিয়েও রেখেছিলো।
কিন্তু দুদিন হবার পরও যখন কোনও খবর আসছিলো না,তখন তানজিলা খুব ভয় পেয়ে গেলো।বাড়ীতে কেউ ছিলোও না যে কাউকে জানাবে।কি করবে কিছুই তখন মাথায় আসছিলো না।"
---আর তখনি সোম এসে জিসানের ম্যাসেজ দিয়ে যায় তানজিলাকে।
টেনশন করতে মানা করেছে,তাওহিদ ভাই ঠিক আছে।কিছু কাজের জন্য নেটওয়ার্ক থেকে সরে আছে।সময় হলে এসে পড়বে।
জিসানের ম্যাসেজ পেয়ে তখন তানজিলাও কিছুটা আশ্বস্ত হলো।
"নিবিড় ভেবে ছিলো জিসানকে রায়হানের হত্যার দায়ে জেলে দিয়ে দেবে।আর ও তিশাকে ব্লাকম্যাল করে জিসান ও তিশার ডিভোর্স করিয়ে তিশাকে একেবারের জন্য অস্ট্রেলিয়া নিয়ে যাবে।জাতে করে তিশাকে আর কেউ খুঁজে না পায়।সবাই ভাববে তিশা মানসিক যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে পাগল হয়ে কোথাও চলে গিয়েছে।"
---সবই ঠিক ছিলো,নিবিড়ের প্লানিং একদম পার্ফেক্ট ছিলো।রায়হানকে মারার জন্য চারা হিসেবে ব্যবহার করলো আশিষকে।
নিবিড় আশিষের সাইক্রিয়াটিস্ট ছিলো।আশিষের মানসিক অবস্থা যখন আবার খারাপ হচ্ছিলো, তখন তার বাবা মা একজন ভালো সাইক্রিয়াটিস্ট এর স্মরণার্থ হলো।আর দূর্ভাগ্য ক্রমে সে ছিলো নিবিড়।আশিষের বাবা মা অনেক ভরসা করে আশিষকে সুস্থ করার দায়িত্ব দিয়েছিলো নিবিড়কে। কিন্তু নিবিড় তার পেশার সাথে বেঈমানি করেছে ।
ট্রিটমেন্ট এর সময়ই নিবিড় জানতে পারে,আশিষ,কুহু আর কুহুর সাথে নিশির মিলের কথা।নিবিড় যেনো না চাওয়া সত্যেও চাঁদ হাতে পেয়ে গেলো।
তিশার যখন কোনও খবর পাচ্ছিলো না তখন নিবিড় কৌশলে আশিষকে নিশির পিছনে লাগিয়ে দিলো। আশিষও নিবিড়ের কথা শুনতে এতো দিনে বাধ্য হয়ে গিয়েছিলো।কারণ নিবিড় আশিষকে ঠিক করার বাহানায় এমন একটা ড্রাগ এর অভ্যস্ত করে ফেলে যা আশিষকে নিবিড়ের গোলাম বানিয়ে ফেলে।ড্রাগসের নেশায় অভ্যস্ত আশিষ নিবিড়ের হাতের পুতুল হয়ে গিয়েছিলো তখন।"
---তাইতো তার কথা মতো নিশির থেকে তিশার খোঁজ খবর নেওয়ার চেষ্টা করতো।আর নিবিড়ের ইশারায়ই সেদিন রায়হানকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলো একটা জনমানব শুন্য ব্রিজের উপর।আর সেখানেই রায়হানকে আশিষ তিনটা গুলি করে।গুলি করে পালিয়ে যাওয়ার সময়ই হোচট খেয়ে পড়ে গিয়ে হাতে ব্যাথা পায়।
'-জিসান ভিডিও ফুটেজে নিবিড়কে দেখেই বুঝতে পারছে কিভাবে ঠান্ডা মাথায় নিবিড় এমন গেম খেলছে।নিবিড় একজন সাইক্রিয়াটিস্ট তাইতো ও উত্তেজিত হয়ে কিছুই করেনি।বুঝে শুনে ঠান্ডা মাথায় প্লানিং করছে।তাইতো জিসানের সন্দেহও তালিকাতে নিবিড়ের কোনও নামই ছিলো না।'
---তাওহিদ এর কিডন্যাপ হওয়ার কারণেই জিসানও এতোদিন চুপ ছিলো।শত্রুকে কিছুই বুঝতে দিতে চায়নি।সোমকে গোপনে তাওহিদ কে খুঁজার কাজে লাগিয়ে দিলো।
কিন্তু তিনদিনের দিন একজন উকিল আসে জিসানের সাথে দেখা করার জন্য।উকিলকে দেখে জিসান কিছুটা অবাক হয়েছিলো কারণ ওতো কাউকে হায়ার করেনি। তাহলে!
"হ্যালো মিস্টার জিসান।আমি এডভোকেট আনিসুল ইসলাম।"
-জি বলুন।কি করতে পারি আপনার জন্য।আই মিন আপনাকে এখানে কে আসতে বলেছে।
"কিছু কাগজ জিসানের দিকে এগিয়ে দিয়ে,আমাকে আপনার ওয়াইফ তিশা আহমেদ পাঠিয়েছেন। উনি আপনার কাছ থেকে মিচ্যুয়েল ডিভোর্স চায়।"
---জিসানের হাতের কাগজ গুলো ডিভোর্সের পেপার ছিলো।যা দেখে জিসান কিছুতেই নিজের রাগ সামলাতে পারেনি।কলার চেপে ধরে উকিলটির।সাহস কি করে হয় আমাকে ডিভোর্স পেপার পাঠানোর।
বলে দে তোর ম্যাডামকে গিয়ে এই জনমে তো আমি ওকে ছাড়ছি না।আমার থেকে মুক্তি চাইলে আবার জন্ম হতে হবে ওকে।
'উকিল ভয়ে চলে গেলো।আর উকিল যাওয়ার পর পরই সোম এসে হাজির হয়।কারণ তাওহিদকে নিবিড় কোথায় রেখেছে তা জানা গিয়েছে।জিসান খবরটা শুনেই হেসে দিলো।
আর আজও সোম সেই হাসির রহস্য বুঝলো না।'
______________
"জিসানের সামনের চেয়ারে বসে আছে নিবিড়।আর জিসান নিবিড়ের সামনে চেয়ারের উপর এক পা তুলে টেবিলের উপর বসে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিবিড়ের দিকে।"
---নিবিড়ের দাঁত কিড়মিড়ি করছে।কিভাবে ওর সব প্লান এভাবে শেষ হয়ে গেলো কিছুই বুঝতে পারছে না।
--তো ডাক্তার তুমি বলবে নাকি আমি।
'নিশ্চুপ।'
--কেনো করলে এমন।
'আমার ওকে চাই।আর আজ পর্যন্ত যে জিনিসটির উপর আমার নযর পড়েছে তা আমি হাসিল করে নিয়েছি।আর না পেলে নিজের হাতেই ধ্বংস করে দিয়েছি।'
---জিসান চেয়ারে একটা লাথি দিয়ে,তিশা কোনও জিনিস না।
'কিন্তু তবুও ওকে চাই আমার।'
--মগেরমুল্লুক পেয়েছো।তুমি চাইবা আর আমি হাততালি দিয়ে দিয়ে দেবো।ডাক্তার তুমি এবার ভুল মানুষের দিকে চোখ দিয়েছো।তুমি আমার রেকর্ড জানো না।জানলে সাহস হতো না আমার তিশার দিকে নযর দেওয়ার।চার বছর বাহিরে থেকেও যার আশেপাশে কাউকে আমি আসতে দিই নাই।ভাবলে কি করে এতো সহযে ওকে পেয়ে যাবে।
'সহযে কোথায়,কতো কাঠ কয়লা পুড়াতে হয়েছে জানো।তোমার দুশমনদের এক এক করে খুঁজে বের করতে হয়েছে।তাদের আমার প্লানে শামিল করতে হয়েছে।
সব ঠিকই চলছিলো কিন্তু ওই লাবণি সব শেষ করে দিয়েছে তিশার উপর হামলা করে।তাই একে একে ওদেরকেও আমি শেষ করে দিয়েছি।আমি আগেই বলে দিয়েছিলাম ওদের তিশার দিকে জাতে ওদের হাত না আসে কিন্তু শুনেনি। তাই অর্ককে মেরে লাবণিকে ফাঁসিয়েছি আর লাবণিকেও জেলখানায় শেষ করে দিয়েছি।'
--কিন্তু লাবণি তোমার নাম নেয়নি কেনো।
'কারণ আমি ওকে বলেছিলাম। আমার নাম না নিলে আমি ওকে ছাড়িয়ে আনবো।পাগল মেয়ে আমার প্রতিটি কথা বিশ্বাস করেছে।'
--জিসান এসব শুনে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো।ডাক্তার সামান্য একটা জিদের কারণে তুমি তোমার লাইফটা নষ্ট করে ফেললে।সাথে আশিষের ও।
ব্যাচারা এমনেই নিজের ভালোবাসাকে হারিয়ে দহনে জলছিলো।আর তুমি এখন ওর পুরো লাইফটাকে নষ্ট করে দিলে।ভালোবেসে করতে তবুও মনকে সান্তনা দিতাম।কিন্তু তুমি তো তোমার মিথ্যে জিদ,আর অহংকারের বশে এসব করেছো।
"জিসান আর ওখানে থাকতে পারলো না,সোমকে বলে গেলো।ওর ব্যবস্থা করে দেও।ওকে আমি আর আমার লাইফে দেখতে চাইনা।আর আশিষকে আগে একটা রিহেভসেন্টারে পাঠানোর ব্যবস্থা করো।তারপর ওর শাস্তি ঠিক করবো।"
---নিবিড় চিৎকার করে বললো,তোমার ভাই আমার কাছে জিসান,বাঁচাতে চাইলে আমাকে মুক্ত করে দেও।
"-জিসান মুচকি হেসে ওটা তোমার ভুল ধারণা নিবিড়।জিসান আর এক মুহুর্তেও দাঁড়ালো না চলে গেলো তিশার কাছে।নিবিড়কে এখানে আনার সময় নিবিড়ের কাছে দুটো প্লেন টিকিট পেয়েছিলো।তা দেখে জিসান বুঝে গিয়েছে নিবিড় তিশাকে নিয়েই উড়াল দিতে চেয়েছিলো।"
____________
"এক বছর পর।জিসান বিছানায় উপর আধো শুয়ে লেপটপে কিছু কাজ করছে।আর তার পাশেই বসে আছে আমাদের ছোট ইশান।বাবার সাথে বুলিবুলি কথা বলছে আর হাসছে।মাঝে মাঝে জিসানের লেপটপ ধরে টান দিতে চাইছে।
জিসানও কাজের ফাঁকেফাঁকে ছেলের সাথে খেলছে।এই সময় নিলয়ও ভিডিও কল দিলো। জিসান ফোন ধরেই দেখে নিলয় মুখটা বাংলা পাঁচের মতো করে রেখেছে।
--কিরে শালা তোর আবার কি হলো।
"ইয়ার বলিস না,বউ পেগনেন্ট হলে এতো জালা জানলে বউরে পেগনেন্টই করতাম না।দারকার পড়লে মেডিকেল সোপে সোপে গিয়ে ঘুড়তাম।"
--হা হা কেনো কি হয়েছে।
"আরে বলিস না, ঝর্ণা রাত তিনটায় আমারে ঘুম থেকে ডেকে বলে ওর ফুসকা খেতে মন চায়।বল ভাই,প্যারিস শহরে রাত তিনটায় আমি এসব কই পাই।"
--ব্যাপার না দোস্ত,তিশা আমাকে দিয়ে রাতে গরুর মাংশ দিয়ে ভুনাখিচুড়ি রান্না করিয়েছে জানিস।
"ইয়ার এই মেয়েদের এই সময় এমন নাই নাই জিনিস খেতে মন চায় কেনো বলতো।"
--আমি কি করে বলবো,আমি কি পেগনেন্ট হইছি।কিন্তু জানিস,তখন একটু কষ্ট হতো কিন্তু এখন এই দেখ এই দুষ্টটাকে দেখে সব ভুলে গিয়েছি।ঈশানকে দেখিয়ে।
"হুম ঠিক,বলেছিস।আচ্ছা বলতো আমার ঘরে কি হবে।গেস কর।"
---তোর ঘরে ঝর্ণার মতো সুন্দর একটা মেয়ে হবে।আর তোর মেয়েকে আমার ছেলের বউ করে নিয়ে আসবো।কি বলিস।
"হা হা শালা মনে মনে এসব প্লানিং করে রেখেছিস।কিন্তু তোর ছেলে তোর মতই হিটলার হবে।কিন্তু আমার মেয়েকে আমি তিশার মতো হাবা বানাবো না।"
'-এটা শুনে ঈশানও দুহাত নেড়ে হাসতে লাগলো কে জানে কি বুঝলো ও।'
---ঈশানের কান্ড দেখে নিলয় ও জিসানও হাসতে লাগলো।আচ্ছা রায়হান কেমন আছে,আর নিশি।
"সবাই ভালো।নিশির দুমাস চলছে। পেগনেন্সিতে একটু জটিলতা আছে বলে তিশা আর আমার শ্বাশুরী সারাক্ষণ ওর আশেপাশে থাকে।"
---ও,তুই বাড়ী যাবি না আর।একবছর তো হলো।আন্টি আংকেলও তো অনেক বার এসেছে তোকে নিতে।
"নারে এখনোও সময় হয়নি।ও বাড়ীতে আমি চাইনা তিশাকে কেউ আর অপমান করুক।"
---হুম বুঝছি।আচ্ছা রাখি,পরে আবার ফোন দিবো।
"জিসান ফোন রেখে তাকিয়ে দেখে ঈশান ঘুমিয়ে গিয়েছে।ঈশানের চারপাশে বালিশ দিয়ে জিসান বালকানিতে চলে আসলো।রাতের তারাভরা আকাশটার দিকে তাকিয়ে ভাবনার জগতে ডুব দিলো জিসান।
সেদিন জেলখানা থেকে বের হয়েও জিসান আর আহমেদ ভিলায় ফিরেনি। মাকে দেওয়া কথা জিসান রেখেছে,তিশার ছায়াও আর তার সন্তানদের উপর পড়তে দেয়নি।অবশ্য পরে রাবেয়া বেগম নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমাও চেয়েছিলো আর তিশা ও জিসানকে আহমেদ ভিলায় ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিলো।কিন্তু জিসান যায়নি।
ও বাড়ীতে তিশাকে অনেকবার অপমান সহ্য করতে হয়েছে,কিছু না করেও।কিন্তু কেনো?জিসানের বউ বলে।তাহলে আমার বউয়ের সম্মান রক্ষা করাও আমার দায়িত্ব।আমি চাই না তিশার সাথে এমন ঘটনা আর ঘটুক।তখন হয়তো সম্পর্কে বিষাক্ত আরো বাড়বে।তার চেয়ে দূরে থাকা ভালো।
তাই জিসান নিজের একটা ফ্ল্যাট কিনে এখানেই তিশা আর ঈশানের সাথে ছোট একটা সংসার সাজিয়েছে।
রায়হান সব শুনে প্রথমে এর বিরোধিতা করলেও পরে জিসানের দিক দিয়ে চিন্তা করে বুঝতে পারলো ব্যাপারটা।
কিন্তু বোনকে আর বন্ধুকে এভাবে একা ছাড়তে রাজি ছিলো না।তাই জিসানের পাশের ফ্ল্যাটটি রায়হান কিনে নিয়ে পুরো পরিবারসহ এখানেই সিপ্ট হয়ে যায়।"
---হঠাৎ তিশা জিসানকে পিছন দিয়ে জরিয়ে ধরে,জিসানের পিঠের উপর মাথা রাখে।জিসানও প্রিয়তমার হাতটি ধরে একটা চুমো দিয়ে দেয়।
"আচ্ছা জীবনটা এতো সুখ সুখ লাগে কেনো।"
--প্রিয়জন পাশে থাকলে জীবনটা এমনেই সুখেরই হয় জান।
"ভালোবাসেন কতো আমায়।"
--এতোটা যে মাপতে গেলে মাপতে পারবি না।পরিসংখ্যাও আসবে না।
"কেনো এতো ভালোবাসেন সত্যি করে বলেন তো।"
--কেনো ভালোবাসি বলতে পারবো না,তোকে ছাড়া বাঁচতেও পারবো না।দূরে চলে গেলে মরে যাবো।বার বার তোকে কাছে টেনে নিবো।এতো কাছে যে আমার ভালোবাসার বাঁধন ছেড়ে যাওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাববি না।কারণ
তুই যে আমার এমনি একজন যাকে এক জনমেও ভালোবেসে ভরবে না এ মন।
পৃথিবীতে এমন ভালোবাসা পাওয়া যায়না আজকাল।এমন করে কেউ তার প্রিয়তমাকে ভালোবাসতেও পারবে না।তাই আমরা দোয়া করবো ওদের এই ভালোবাসা চিরকাল অটুট থাকুক।
------------------------------সমাপ্তি-------------------------
[আসসালামুআলাইকুম পাঠক।কেমন আছেন। অবশেষে শেষ হলো আমাদের দীর্ঘ ছয়মাসের জার্নি।১৮ই মার্চ গল্পটা শুরু করেছিলাম আজ ২৬শে আগষ্ট গল্পটা শেষ হলো।জানতে চাইবো না কেমন হয়েছে।শুধু বলবো এতোদিন পাশে থাকার জন্য আমাকে সাপোর্ট করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।কেউ বলবেন না দয়াকরে গল্পটি আরো কয়েক পর্ব লিখতে পারতেন।সত্যি বলতে লিখার মতো আর কিছুই নেই।আবার যদি ভালো থিম মাথায় আসে তাহলে আবার ফিরিয়ে আনবো জিসান,তিশা,রায়হান ও নিশিকে।
খুব শীঘ্রই ফিরে আসবো এখনো ভালোবাসি গল্পটা নিয়ে,যা আমি আগেই কয়েক পর্ব দিয়েছিলাম।যারা পড়েন নাই তারা আমার পেজ থেকে গল্পটা পড়ে নিবেন।
সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।ধন্যবাদ।
গল্প শেষ বলে আমাকে আবার ভুলে যাবেন নাতো।]
No comments:
Post a Comment