25.12.23

প্রিয় থেকেও প্রিয়

 প্রিয় থেকেও প্রিয়

writer. moyej uddin

>>>>>>>>>>>>>>>>>>


শুভ রাস্তা দিয়ে আনমনে তার গন্তব্যে যাচ্ছে হঠাৎ হোচট খায় সে...

-ও মা রেএ....

দেখে তার জুতাটা ছিড়ে গেছে। তার একটাই জুতা। এর পেছনে কিছু কারন আছে সেটা হলো....এখন থেকে ৫ বছর আগে সে লেখাপড়ার জন্য গ্রাম থেকে শহরে আসে। গ্রামে তার কাকা আছে সেখানেই সে বড় হয়। মা বাবা দুইজন দুইদিকে। পরিবারের এ অশান্তির কারনে তার কাকা ছোট বেলায় তার কাছে রেখে দেয়। এখন বাবা মা হিসেবে তার কাকা কাকী কেই চেনে। তো গ্রামের স্কুলের পড়া যখন শেষ হয় তখন সে শহরে এসে একটা কলেজে ভর্তি হতে চায়। টাকা পয়সা তেমন না থাকায় তার কাকা রাজি হয় না। আর শুভকে বলে দেয়। তুই যদি কষ্ট করে চালিয়ে নিতে পারিস তো পড়। আমি টাকা দিতে পারবো না। তবুও শুভ শহরে এসে ইন্টারমিডিয়েট ১ম বর্ষে ভর্তি হয় আর এখন সে অনার্স ৩য় বর্ষে। তার পাঁচটি বছর অনেক কষ্টে গিয়েছে। প্রথম প্রথম লেখাপড়ার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হইছে। এখন ৪ টা প্রাইভেট পড়ায় তবুও খরচ চালাতে হিমশিম খায়। তো জুতাটা ছিড়ে যাওয়ায় শুভ খুবই টেনশনে পড়ে। জুতাটা চামের ছিলো অনেক কষ্টে এটা ৪ বছর এ নিয়ে গেছে.......জুতাটা হাতো নিয়ে ভাবছে মাস তো শেষের দিকে কাছে আছে ১০ টাকা জুতা সারাতে হবে। আবার কাছে টাকা না থাকলে তাও বিপদ এদিকে জুতা ছাড়া পড়াতে যাবো কিভাবে! হঠাৎ কে যেনো ডাকে তাকে....

-এই যে মিষ্টার (একটা মেয়ে)

শুভ মেয়েটাকে দেখে জুতা হাত থেকে ফেলে পায়ে পড়ে নেয়....

-জ্বি বলেন (শুভ)

-জুতা তে এত মোনোযোগ দিয়ে কি দেখছিলেন ১০ মিনিট ধরে(মেয়েটি)

-..... (১০ মিনিট ধরে দেখছিলাম! শুভ মনে মনে বলল)

-এই হ্যালো হারিয়ে গেলেন নাকি??

-ক ক কই না।

-তো কি দেখছিলেন??

-না মানে

-হ্যা মানে

-আমার জুতাটা ছিড়ে গেছে

-তাই বলে ওভাবে দেখতে হবে

-হুমম আপনি কে??

-ইরা

-আমি তো চিনি না

-কিন্তু আমি আপনাকে চিনি

-কিভাবে??

-আমার সাথে একটু হাটেন বলতেছি

-হাটতে তো পাড়ব না

-ওহ হো। জুতাটা দেন তো

-কেনো??

(ইরা জুতাটা নিয়ে দূরে ফেলে দিলো)

-ই আল্লাহ কি করলেন আপনি (শুভ)

-বাব্বাহ কি করলাম(ইরা)

-ফেলে দিলেন কেনো?? ওটা আমার লাগবে

-আচ্ছা লাগবে ওখান থেকে পড়ে নিয়ে নিয়েন

-কেউ নিয়ে যাবে তো

-এহহহ যে জুতা। ওটা আবার কেউ নিয়ে যাবে! হাটেন এখন 


হাটতে হাটতে ইরা বলল

-আপনার নাম শুভ তাই না! (ইরা)

-হুমমম (শুভ)

-এবার অনার্স ৩য় বর্ষে পড়েন

-হুমমম

-৫ বছর আগে গ্রাম থেকে এসেছেন এখানে

-আপনি জানলেন কিভাবে??

-আমি ৫ বছর ধরেই আপনাকে চিনি

-কিভাবে??

-সেটা পড়ে বলছি। আগে দরকারি কথা টা সেড়ে নেই। আমার আপনাকে দরকার

-কি জন্য!!(অবাক হয়ে)

-আমাকে পড়াবেন। আর আপনি যে বিষয় নিয়ে পড়েন আমিও তাই। 

-তাহলে তো লাগবে না....

-লাগবে। আমি আপনার ১ বছর এর ছোট

-আমার যে সময় নেই??

-আছে

-না সত্যি নেই। ৪ টা প্রাইভেট পড়াই

-তাই?

-হুমমম

-মেয়ে আছে কয়টাতে??

-২ টাতে

-কোন ক্লাস??

-দুইটাই নাইন এ পড়ে

-হুমম ওই দুইটা বাদ। কাল থেকে আমাকে পড়াবেন

-না পাড়ব না

-পাড়বি না মানে?? ওই দুইটার সাথে লাইন মারিস নাকি??

-ছি ছি না কি বলেন এসব

-হুমম ঠিকিই বলি

-লাইন মারতে যাবো কেন?? আমি শুধু পড়াই

-গুড বয়। তো কালকে থেকে ওরা বাদ। আমার টা শুরু কেমন?

-না

-আর একবার না করলে তুই আমার বাড়ির সামনে দিয়ে যাস ওখান দিয়ে যেতে পারবি না। 

-কেনো??

-যেতে দিবো না মাইর খাওয়াবো

-আমি কি করছি?

-কিছু করেন নাই আমাকে পড়াতে হবে এটাই ফাইনাল। না হয় শহর ছাড়া করব আপনাকে

-.............

-কি হলো কি ভাবছেন??

-কিছু না

-টাকার কোনো সমস্যা নেই। যা লাগে দিবো।

-সেটা না

-তাহলে কোনটা??

-আসলে...

-থামেন। আগে আপনার জুতটা টা কিনে নেই। এই যে ভেতরে একটা বড় শপিং মল আছে ওখান থেকে

-না টাকা নেই আমার কাছে

-আমার কাছে তো আছে

-আপনি দিবেন কেনো??

-প্রাইভেট যে পড়াবেন তার অগ্রিম এইটা। আর এত বেশি প্যাচাল পাড়েন কেনো?? 

-হুমমমম


জুতটা কিনে বাইরে আসে দুজন। শুভ ইরার দিকে এখন পর্যন্ত ভালভাবে তাকায় নাই। তাকিয়ে দেখে তো শুভ খুবই অবাক এত্ত সুন্দরী একটা মেয়ে!

-এই তাকিয়ে কি দেখেন (ইরা)

-কই কিছু না (শুভ)

(ভাল করে দেখতেও পাড়লো না)

-তো স্যার আপনার নাম্বার টা দেন(ইরা)

-নাম্বার দি...

-ফোন দিবো ফোন

-ওহহ

-হুমম। আর যে জায়গায় আপনা জুতাটা ছিঁড়ছে তার ডানদিকে ৪ তালা বাসা টা আমাদের। আর না চিনলে ফোন নাম্বার তো আছে

-হুমমম

-তো স্যার বায় এখন

-ওকে


শুভ তার হোষ্টেলে চলে আসলো। রুমে এসে তার নতুন জুতাটা দেখছে আর ভাবছে কোথা থেকে একটা পরি থুক্কু মেয়ে এসে জুতা কিনে দিয়ে গেলো! ভাবতেই কেমন যেনো লাগছে....তো শুভ পরদিন ইরার দেওয়া সময় মত তার বাসার নিচে যায়। সে ইরাদের বাসার দিকে তাকাতেই দেখে ইরা তার দিকে হাত তুলে ইশারা দিয়ে ডাকছে...

-ওই এইদিকে(ইরা)

-আপনি নিচে আসেন(শুভ)

-ওকে দাড়ান আসছি


ইরা নিচে এসে বলল

-কি হয়েছে ভেতরে আসছেন না কেনো??

-প্রাইভেট যে ঠিক করলেন আপনার বাবা মা যানে??

-হুমম জানবে না কেনো??

-জানে?

-হ্যা আসেন

-হুমম চলেন


শুভ ভেতরে গিয়ে ইরার বাবা মার সাথে কথা বলল। তারপর ইরার রুমে গেলো পড়াতে...তারপর ইরা বলল

-স্যার আজ তো পড়া হবে না (ইরা)

-কেনো??

-আজ প্রথম দিন পরিচয় পর্ব হবে

-আপনি তো আমাকে ৫ বছর ধরে চিনেন। আর কি পরিচয় হবেন??

-আনুষ্ঠানিক ভাবে তো হয় নাই

-হুহ শুরু করেন

-আমি ইরা 

-আমি শুভ

-আমার মা বাবা আর পরিবারে(সব কিছু বলল)

-(শুভ তার পরিবার সম্পর্কে সব কিছু বলল)

-আপনার জি এফ আছে??

-হুমম আছে

-আপনার বি এফ আছে??

-জানি না

-তো পরিচয় পর্ব শেষ এখন পড়া শুরু করি

-...........

-প্রথমে আমাদের সিলেবাস সম্পর্কে জানতে হ...

-সত্যি কি আপনার জি এফ আছে??

-আচ্ছা নেই পড়েন এখন

-না সত্যি বলেন

-হুহ নেই

-ইয়েএএএএএএএএএএএ উম্মাম্মাম্মাহহহহহহহহহহহহ(ইরা খুশিতে শুভকে একটা কিস করে)

-এই এটা কি করলেন??(শুভ)

-কই কিছু না

-না এগুলা কিন্তু ঠিক না

-আমি ইচ্ছা করে করি নাই তো (নরম হয়ে বলল)

-এমন করলে আজই শেষ

-না কখনও আর এমন করব না প্রমিস

-হুমম পড়েন এখন

-কিছু খাবেন??

-পড়তে বলছি

-আমি খুব খুশি হইছি

-আমি কি চলে যাবো??

-না থাকেন

-উল্টা পাল্টা কিছু না বলে পড়েন

-ওকে.....ইহহহ আসছে আমায় শাসন করতে কয়েকদিন যাক চান্দু বুঝতে পারবেন(ইরা মনে মনে বলল)

-বির বির করে কি বলা হচ্ছে??

-না কিছু না

-হুমম

-আপনার প্রিয় রং কি??

-হুহ গেলাম

-না শোনেন আপনার আগে ইন্টারভিউ নিবো তারপর পরবো

-না আমি গেলাম

-তুই এক পা এগিয়ে দেখ কি করি

-কি করবেন??(ভয় পেয়ে)

-এক পা এগিয়ে দেখ আগে

-না

-এখন না করিস কেন??

।।

।।

।।প্রিয় থেকেও প্রিয়

writer. moyej uddin

Part : 2 

>>>>>>>>>>>>>>>>


-না শোনেন আপনার আগে ইন্টারভিউ নিবো তারপর পরবো (ইরা)

-না আমি গেলাম(শুভ)

-তুই এক পা এগিয়ে দেখ কি করি

-কি করবেন??(ভয় পেয়ে)

-এক পা এগিয়ে দেখ আগে

-না

-এখন না করিস কেন??

-এভাবে কথা বলছেন কেনো??

-কথা শুনলে আমার কথা এই রকমই হবে

-ওকে নেন পড়ান


১ ঘন্টা পর....

-স্যার আজকে এই পর্যন্তই (ইরা)

-আচ্ছা। ভালভাবে পইড়েন(শুভ)

-হ্যা সেটা আপনাকে ভাবতে হবে না

-আর হ্যা বসেন

-কেনো??

-কিছু খাবেন না??

-না আমি অন্যের বাড়ির কিছু খাই না

-এগুলা কোন ধরনের কথা?

-আমি এইরকমই থাকে যাই

-এই না শোনেন।


(শুভ কিছু শুনলোই না হন হন করে চলে গেলো) পরের দিন....শুভ এসে বলল

-পড়া বের করেন(শুভ)

-কাল ওভাবে চলে গেলেন কেনো?(ইরা)

-আমি কাল ই তো বললাম

-এই যে নেন(কিছু ফলমূল দিয়ে বলল)

-কি করবো?

-খাবেন

-না আমি কিভাবে যে বুঝাবো?? আমহ অন্য কারও...

-এটা তোর শ্বশুর বাড়ি এখন তো খাবি তাই না (ধমক দিয়ে)

-............

-খাচ্ছেন না কেনো?

-খা খা খাচ্ছি তো

-হুমম এখন পড়ানো শুরু করেন


ইরা পড়ার সময় তেমন কোনো কথা বলে না। শুধু তার কথা না শুনলেই সে রেগে যায়। সেদিন পড়া শেষে হঠাৎ করে বলল

-স্যার আমি যে আপনাকে মাঝে মাঝে তুই করে বলি রাগ করেন??(ইরা)

-হুমমমম (শুভ)

-তাহলে আমি যা বলি তাই শুনবেন। তাহলে বকা খাবেন না আপনার রাগ ও হবে না

-আচ্ছা ঠিক আছে আসি তাহলে 

-হুমম দেখে যায়েন আর সময় মতো আসবেন 

-হুমমম


এইভাবেই চলল কয়েক মাস। ইরার পাগলামো গুলো এখন অনেক বেশি হয়ে গেছে। কিন্তু পড়ার সময় কিছু বলে না। পড়ার আগে আর পরে। তো একদিন ইরা....

-এই শোনো না (ইরা)

-জ্বি বলেন (শুভ)

-তুমি আমাকে আপনি না তুমি করেই বলবা

-নাহ আমি আপনি করেই বলব

-যদি তুমি করে না বলো তাহলে আম্মুকে বলে দিবো তুমি আমায় জোড় করে কিস করেছো

-না না পড় তুমি।

-এই তো গুড

-হুমম

-না স্যার আপনি করেই বলবেন আমি তো একটু অভিনয় করলাম

-...........

-ও স্যার

-আমি তোমাকে পড়াবো না পাড়লে যা ইচ্ছা করো।


শুভ রাগ করে বাসা থেকে বের হলো। শুভর মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা করছে। শুভ মাথা ধরে হাটছে। আর এক সময় রাস্তায় পড়ে যায়। যখন তার জ্ঞান ফেরে দেখে হাসপাতালের একটা বেডে। ডাক্তার এসে তার সাথে কথা বলল

-হে কেমন আছো এখন?? (ডাক্তার)

-হ্যা ভালো। আচ্ছা আমি তো মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলাম তাহলে আমার হাত পায়ে ব্যান্ডেজ কেনো??(শুভ)

-কয়েকটা লোক এসে বলল আপনি একটা কার এর সাথে এক্সিডেন্ট করছেন

-না আমি প্রথমে মাথা ঘুরে পড়ে যাই। তারপর তো আমি কিছু জানি না

-আচ্ছা। মাথা কি আগে থেকেই ব্যাথা করছে

-হ্যা ব্যাথা টা অনেক আগের। শুধু ব্যাথায় ঔষধ খেয়ে কমিয়ে রাখছি

-তাহলে তো একটা পরীক্ষা করতে হয়

-হুমম

-আর তোমার ডান হাতে কেটে গেছে আর ডান পা টা ভেঙ্গে গেছে। কোনো চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে। 


তো একদিন পর শুভর মাথা পরীক্ষা করা হয়। সেখানে ব্রেইন টিউমার ধরা পড়ে। টাকা না থাকায় অপারেশন করাতে পারে না। শুভ কিছুদিন হাসপাতালে থেকে হোষ্টেলে ফিরে আসে। শুভ টাকার জন্য তার বাবার (শুভ তার কাকা কে বাবা বলে চিনে) কাছে ফোন দেয়

-হ্যালো বাবা(শুভ)

-হ্যা বল। কেমন আছিস?? (বাবা)

-হ্যা ভালো। তোমরা সবাই কেমন আছো???

-ভালো তবে একটু সমস্যায় আছি রে

-কি সমস্যা?

-তোর বড় বোনের বিয়ে ঠিক হওয়ার মধ্যে, ছেলে পক্ষ ৫ লাখ টাকা যৌতুক চাইছে। ছেলে ভালো চাকরি করে। এখন চেষ্টা করছি টাকা টা জোগাড় করার জন্য। 

-ওহহহ (শুভ তার কথা আর বলল না)

-তা তুই আসবি কবে??

-আপুর বিয়ে ঠিক হোক তারপর। আর আপুর বিয়ে এটা তো আগে বললে না

-ভাবছিলা একদম ঠিক করে তারপর বলব

-ওহহ ঠিক আছে বাবা রাখি এখন

-আচ্ছা ভালো থাকিস।(ওপাশ থেকে ফোন কেটে যাওয়ার আগে শব্দ আসে যত্তসব)


শুভ এখন যানে যাকে সে বাবা বলে সে তার বাবা না। কিন্তু ছোট বেলা থেকে তাকেই বাবা বলে আসছে। চোখের কণায় তার একটু পানি আসে। কারন বাড়ি থেকে তো একটা টাকাও চাওয়া যাবে না। তাহলে অপারেশন! হঠাৎ ই শুভর ফোনটা বেজে উঠে। শুভ দেখে ইরা কল দিয়েছে....

-হ্যালো স্যার আপনি পড়াতে আসবেন না?? আমি আর ওমন করবো না আসেন। মা বাবা আপনাকে খুঁজছে। আপনি খুব ভালো । আসেন প্লিজ।

-......(শুভ কিছু না বলে ফোনটা কেটে অফ করে রেখে দেয়)


বিকেল বেলা কি ভেবে শুভ ইরাদের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হয়। আর শুভ এখন একটা স্টিক এর উপর ভর করে হাটে। ইরার দের বাসায় গিয়ে কলিং বেল বাজাতেই ইরার মা দরজা খুলে দেয়। ইরার মা দেখে বলে

-কি হইছে তোমার??(মা)

-এই একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে এমন হইছে (শুভ)

-এখন কেমন আছো

-এইতো একটু ভালো

-হুমম। ইরা তোমার জন্য পাগল হয়ে গেছে। ও প্রতিদিন ই তোমার পড়ানোর টাইমে বসে থাকে। কিন্তু তুমি আসো না

-তাহলে ও কি এখন রুমেই আছে??

-হ্যা ও রুমেই আছে যাও 


শুভ ইরার রুমের কাছে গিয়ে দেখে দরজা আটকানো। শুভ ইরাকে ডেকে বলল

-এই ইরা (শুভ)

ইরা ভেতরে থেকে বুলেট এর গতিতে দরজা খুলে দিলো।সে কন্ঠ বুঝতে পারছিলো যে কে তাকে ডাকছে। আর চিনবেনাই বা কেনো। পাঁচটা বছর ভালবসাছে তাও অনেক দূর থেকে। আর ইরার এত তাড়াতাড়ি দরজা খোলা দেখায় শুভ অবাক। আর শুভ কে দেখে ইরা অবাক.....

-কি হইছে তোমার(ইরা)

-ভেতরে চলেন বলছি (শুভ)

-কি হইছে বলেন এখন 

-সেদিন এখান থেকে যাওয়ার পর এক্সিডেন্ট হয়। আর তার থেকে এ অবস্থা....

-........(ইরা কান্না করছে)

-ওই কান্না করছেন কেনো??

-এমনি তোমাকে কিছু কথা বলব

-পড়বেন না??

-না আগে কথা গুলো বলে নেই

-হ্যা বলেন

-তুমি তো জানো পাঁচবছর হলো তোমাকে আমি চিনি

-হ্যা

-আর আমি তোমাকে সেই প্রথম দিন থেকেই ভালো বাসি। তোমার এই কয়েকবছর যাওয়া আসা। সবকিছুই দেখছি।

-..........

-আর তোমাকে কাছে থেকে দেখার জন্য আর ভালবাসি কথাটা বলার জন্য স্যার হিসেবে রেখে দেই।(ইরা কান্না করছে)

-আচ্ছা কান্না থামান।

-হুমমম

-আপনি এখন কি চান??

-ভালবাসতে

-আচ্ছা আমি যদি কিছু বলি সেটা বোঝার চেষ্টা করবেন আর সবকিছুই স্বভাবিক ভাবে নেবেন ঠিক আছে

-হ্যা কিন্তু আমিও বলে রাখি আপনি এটা মানা করতে পারবেন না

-আচ্ছা কথা টা শোনেন আগে

-হুমম বলেন

-আমি প্রথমে এক্সিডেন্ট করি নি। মাথা ঘুরে পড়ে যাই। ডাক্তার কে একথা বলার পর উনি আমার মাথার একটা পরীক্ষা করেন। আর সেখানে ব্রেইন টিউমার ধরা পরে।

-........(ইরা একটু জোড়েই কান্না করছে)

-এই যে কান্না কইরেন না থামেন এখন কথা টা বলতে দেন।

-হুমম বলা শেষ করেন

-এখন আমি আমার এ অবস্থা পরিবারকে জানতে চাইছিলাম কিন্তু 

-কি??

-আমি বাবা কে ফোন দেওয়ার পর বলে(আগের কথা গুলো বলল। আর তার যে ওইটা কাকা তাও বলল।)

-হুমমম

-তো আমি বাঁচি কি মরি সেটারই ঠিক নাই। এর মধ্যে আপনি যেসব বলছেন। মনে হচ্ছে এখনই প্রানটা যাবে।

(ইরা কথাটা শুনে শুভর মুখে আঙ্গুল ঠেকালো আর বলল)

- আমি আছি তো

-না আপনি বু...(শুভকে আর বলতে না দিয়ে বলল)

-পাঁচটা বছর হলো ভালবাসি এমনি এমনি না। তুমি ৩০ মিনিট এর মতো এখানে বসে থা..না শুয়ে থাকো। আমি আসছি 

-কই যাবেন??

-নিচে

-কেনো?? আমি তো চলে যাবো

-প্লিজ ৩০ মিনিট সময়

-আচ্ছা ঠিক আছে

ইরা আবার শুভর গাল ধরে বলল

-কোনো চিন্তা করো না আত্মাপাখি আমি আছি তো (এটা বলে ইরা গালে একটা কিস করলো)

শুভ ভালভাবেই টের পাচ্ছে যে ইরা তাকে কত্ত ভালবেসে ফেলছে...

।।

।।

।।

।।প্রিয় থেকেও প্রিয়

writer. moyej uddin

Part: 3 

>>>>>>>>>>>>>>>>

ইরা আবার শুভর গাল ধরে বলল

-কোনো চিন্তা করো না আত্মাপাখি আমি আছি তো (এটা বলে ইরা গালে একটা কিস করলো)

শুভ ভালভাবেই টের পাচ্ছে যে ইরা তাকে কত্ত ভালবেসে ফেলছে...


ইরা দৌড়ে তার মার কাছে গেলো...

-ও মা, মা

-কিরে এভাবে ডাকছিস কেনো কি হইছে??

-বাবা কই

-তোর বাবা তো বাইরে গেছে। ফিরতে রাত হবে তার

-তাহলে তোমাকেই বলি

-কি বলবি

-চলো বসে বলি

-হ্যা বল এখন

-আমাকে যিনি পড়ান আমি তাকে অনেক বছর আগে থেকে চিনি। কিন্তু সে আমাকে চেনে না। (তারপর বাকি সব ঘটনা গুলো বলল)

-এখন তুই কি বলতে চাস??

-আমি তাকে ভালবাসি

-তারপর

-তারপর বিয়ে

-ঠাসসস ঠাসসস 

-.........

-তোর বাবা জানলে কি হবে জানিস তুই?? তোকে মেরে ফেলবে। আর কোথাকার না কে তাকে টাকা দিয়ে অপারেশন করাবো। আবার তোর সাথে বিয়ে? এটা কোনো কথা 

-মা শোনো

-আমি এটা নিয়ে কোনো কথাই শুনতে চাই না।


ইরা আবার তার রুমে চলে গেলো। রুমে গিয়ে দেখে শুভ শুয়ে ঘুমাচ্ছে...ইরা শুভর মুখ টা দেখে কান্না করে দিলো। আর মাথায় একটু হাত দিলো। হাত দিতেই শুভ জেগে উঠলো

-সরি আমি ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। (শুভ)

-.........(ইরা কান্না করছে)

-আরে কান্না কইরেন না। একটা ভালো সার রাখবেন।

-আমি তোমাকে ভালবাসি

-কি যে বলেন না। আমি এদিকে বাঁচবই কিছুদিন। এখন কি সম্ভব??(স্টিক হাতে নিয়ে বলল)

-কই যান??

-চলে যেতে হবে তো

-নাহ আর একটু থাকেন

-না এমনিতে আপনার দেওয়া ৩০ মিনিট এর বেশি হয়ে গেছে। আর হ্যা কই গেছিলেন??

-কোথাও না

-ওহ আচ্ছা আসি। ভালথাকবেন, আর হ্যা ভালভাবে লেখাপড়া কইরেন।


শুভ সেখান থেকে চলে আসে। আর পিছে ফিরে তাকায় না। এদিকে ইরা রুম আটকে দিয়ে অনেক কান্না করছে। তার ভালবাসার মানুষটি চলে যাচ্ছে কিন্তু আটকানোর ক্ষমতা নেই। 


যতই দিন গড়াচ্ছে শুভ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এখন তার অনেক জ্বর ও আসছে। হাতে টাকাও নেই। তাই মোবাইল টা বিক্রি করে দেয় বন্ধুর কাছে। আর একদিন বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার সাথের বন্ধুগুলো তাকে বাড়ি যেতে বলে।... শুভ বেশি দেরী না করে বাড়িতে চলে যায়। বাড়িতে যখন যায় শুভর এই অবস্থা দেখে তার বাবা (কাকা)

-কিরে এমন কি করে হলো??

-.....(শুভ সবকিছু বলে দেয়)


তো সেদিন সন্ধ্যার পর শুভ তার রুমে শুয়ে ছিলো। কিছুক্ষণ পর তার বাবা মা (কাকা কাকি) আসলো

-শুভ

-হ্যা বাবা বলো

-তোমাকে আমরা ছোট থেকেই লালন পালন করেছি। কিন্তু এখন সেটা আর সম্ভব হচ্ছে না

-ওহহহ

-আর তোমাকে চিকিৎসার জন্য কোনো টাকাও দিতে পারব না

-হুমমম

-তুমি কালই শহরে চলে যাও (কাকি)

-.......(শুভ কিছু বলল না শুধু মাথা নারল)

-তোমার বাবা মা তোমার এমন অবস্থার জন্য দায়ী। 

-না মা আমার ভাগ্য টাই এমন


(শুভর কাকা কাকী মা সেখান থেকে চলে আসলো)

আর এদিকে ইরা শুভকে ফোনে পাচ্ছে না। হোষ্টেলে গিয়ে খোঁজ পায় সে বাড়ি চলে গেছে। কবে আসবে কেউ বলতে পারে না। ইরা একদম ভেঙ্গে পড়ে।


শুভ পরদিন ভোরেই কাউকে না জানিয়ে আবার শহরে রওনা দেয়। আর হোষ্টেলে ফিরে আসে। বন্ধুরা সবাই দেখে অবাক

-কিরে আজকেই চলে আসলি?

-তোদের ছারা ভালো লাগে না তাই

-তোর একটা ছাত্রী ইরা নাম। তোর খোঁজে আসছিলো

-তোরা কি বলছিস??

-বলছি যে তুই বাড়ি গেছিস কবে ফিরবি জানি না

-ভালকরছিস


তো কয়কেদিন যাওয়ার পর শুভর টাকা ফুরিয়ে আসে। এখানে থাকতে তো টাকা লাগবে। একটা বন্ধুর কাছে ধার চাইতে গেলো...

-দোস্ত কিছু টাকা দে(শুভ)

-কি করবি??(বন্ধুটি)

-এই কাছে নেই একটু চলি পড়ে দিয়ে দিবো

-পড়ে কিভাবে দিবি?? তুই টাকা পাবি কই??

-প্রাইভেট পড়িয়ে যে পাই সেখান থেকে দিবো। 

-না তুই তো এখন সারাক্ষণ এখানেই থাকিস। পড়াতে তো যাস না

-একটু সুস্থ হই যাবো (ইরার টা বাদ দিয়ে আর দুটো যে পড়াতো সেটা তারাই শুভকে দেখে বাদ দিয়েছে..সেটা শুভ বলে না)

-ওকে কত লাগবে??

-২ হাজার দে

-হুমমম


টাকা নিয়ে শুভ ভাবে....( বসে থাকলে তো সন্দেহ করবে। তার থেকে ভালো প্রিতিদন কোথাও হেটে আসবো। ওরা ভাববে আমি পড়াই। এভাবে কয়েকদিন যাওয়ার পর আমি তো চলে যাবো। তখন ওত সমস্যা হবে না হুহ....


শুভ বিকেল বেলা ইরাদের বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে তার কলেজের পেছনে যাবে। কারন সেখানে একটা ভালো জায়গা আছে....শুভ যখন ইরাদের বাসার সামনে আসলো তার উপরে তাকাতে ইচ্ছা করছিলো কিন্তু তাকালো না। যদি ইরা দেখে ফেলে তাই। কিন্ত ইরা বারান্দায়ই ছিলো শুভকে দেখে দৌড়ে চলে আসে.... আর শুভর সামনে এসে দাড়ায়....আর বলে

-বাড়ি থেকে কবে আসছো(ইরা)

-এইতো তিন দিন হলো(শুভ)

-ফোন অফ কেনো??

-কেমন আছেন??

-আমার কথার উত্তর দিন

-কি??

-ফোন অফ কেনো??

-ফোন থাকলে তো অফ থাকবে

-মানে?

-বিক্রি করে দিয়েছি

-কেনো??

-খেয়ে তো বাঁচতে হবে তাই না?? টাকার দরকার ছিলো তাই বিক্রি করে দিয়েছি....

-এই রিক্সা (ইরা একটা রিক্সা ডাকলো)

-কোথাও যাবেন??

-হুমমম

-আচ্ছা যান তাহলে

শুভ এক পা এগোনোর পরে ইরা হাত টেনে ধরে বলে

-কই যান??

-এই যে কলেজে যাবো

-আমি রিক্সা কি এমনি এমনি ডাকছি। 

-না আপনি যান

-বেশি কথা না বলে রিক্সায় উঠেন

-আমি

-উঠেন বলছি


তারা রিক্সায় উঠে একটা খোলা জায়গায় গিয়ে বসে।

-তো বাড়ি যে গিয়েছিলেন কি বলল(ইরা)

-বের করে দিয়েছে। ভার হয়ে গেছি তো

-তাই বলে..?

-আমার বাবা মা হলে দিতো না

-হুমমমম। এখন কি করবেন??

-জানি না। তবে কালকের মধ্যে মৃত্যুটা হলে ভালো হবে। এত কষ্ট সহ্য করা যায় না

-ঠাসসসসসসস

-মারলেন কেনো??

-আমার সামনে মরার কথা বলবি না

-হুমমম

-আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছি মনে মনে

-কি সিদ্ধান্ত???

-আপনি সন্ধ্যায় হোষ্টেল থেকে বের হবেন একটু ঠিক আছে

-না আগে বলেন

-বের হলেই বুঝতে পারবেন

-কি যে করবেন আপনি। আমি তো মরে...(ইরা বড় বড় করে তাকালো) না মানে বোঝেনই তো থাকবো না আর।

-সন্ধ্যায় বাইরে থাকিস। আর আমার এখন অনেক কাজ আছে উঠেন এখন

-একবার আপনি একবার তুই বলেন কেনো??

-রাগান যে তাই

-কই রাগাইলাম??

-এত প্রশ্ন কিসের হ্যা?? চলেন

-হুমমমম


সেদিন সন্ধ্যা বেলা....

শুভ সরল মনে গেটের বাইরে দাড়িয়ে ইরার জন্য অপেক্ষা করছে...একটু পর ইরা একটা রিক্সা নিয়ে নামল। সাথে ২ টা ব্যাগ...

-এগুলো নিয়ে কই যাবেন(শুভ)

-পালাবো(ইরা)

-কেনো বাসা থেকে রাগা রাগি করছেন নাকি??

-না

-তাহলে

-আপনার সাথে পালাবো

-মানে?? আপনার মাথা ঠিক আছে??

-হ্যা সব ঠিক আছ? আপনার ব্যাগ কই

-নাই ব্যাগ। আমি পালাবো না

-কেনো??

-বাঁচবই কয়েকদিন এর মধ্যে দৌড়ঝাপ পাড়তে চাই না

-আমি মেয়ে হয়ে বাসা থেকে পালিয়ে আসছি। আর আপনি সাহস পাচ্ছেন না??

-পালাবো কি জন্য সেটা তো বুঝতে পাড়ছি না। আর এই হাত পা ভাঙ্গা ছেলে কে নিয়ে পালাবেন??

-হ্যা। দেড়ি কইরেন না। বের হয়ে আসেন

-ইয়ে কি যে করি

-ওই কুত্তা যাবি তুই নাকি লাত্থি মারমু

-না যাচ্ছি তো। একটা অসুস্থ মানুষের উপর টরচর(পরের কথা টা বিড় বিড় করে বলল)

-এই মনে মনে কি বলেন??

-না কিছু না

-ওকে যান নিয়ে আসেন তাড়াতাড়ি

-হুমমমম (শুভ ভেতরে ব্যাগ আনতে গেলো)

 ইরা মনে মনে বলল...প্লিজ একবার পালিয়ে দেখো। তোমার ভালর জন্যই সব ছেড়ে রেখে আসছি আমি। ইরার কথা গুলো শুভ শুনতে পায় না। শুভ চলে যাওয়ার পর ইরা বাইরে দাড়িয়ে উসপিস করছে আসছে না কেনো??? 

।।

।।

।।

।।প্রিয় থেকেও প্রিয়

writer. moyej uddin

Part : 4

>>>>>>>>>>>>>>>>

ইরা মনে মনে বলল...প্লিজ একবার পালিয়ে দেখো। তোমার ভালর জন্যই সব ছেড়ে রেখে আসছি আমি। ইরার কথা গুলো শুভ শুনতে পায় না। শুভ চলে যাওয়ার পর ইরা বাইরে দাড়িয়ে উসপিস করছে আসছে না কেনো???


একটু পর শুভ আসলো। হাতপ কোনো ব্যাগ নেই....

-আপনার ব্যাগ কই??(ইরা)

-দেখেন আমার যাওয়া ঠিক হবে না। আপনি বাসায় চলে যান (শুভ)

-...........(ইরা রাগে ফুলছে)

-দেখেন রাগ করে কাজ হবে না। আপনার একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ আছে। আর আমাকে ভালবাসেন তাই কি হইছে?? ভালবাসলেই কি আমার সাথে সবসময় থাকতে হবে?? সব কষ্ট ভাগ করে নিতে হবে??

-দেখ অনেক কথা বলছিস আর একটা কথাও তুই বলতে পারবি না। আমি বাসা থেকে একবারে চলে আসছি। আমি এখান থেকে গেলেও বাসায় আমি ফিরবো না

-কই যাবেন??

-মরবো

-না

-না কেন?? তোর কোনো সমস্যা?? তুই তো ভালবাসিস না আমাকে

-কে বলছে??

-আমি বলছি

-ভাল না বাসলে কি আমি আপনাকে বাসায় ফিরে যেতে বলতাম???

-আর তোকে ভালবাসি বলেই তোকে নিয়ে পালাচ্ছি।

-পালিয়ে কি হবে??

-আগে তুই ব্যাগ নিয়ে আয় বলছি


শুভকেক অনেক জোড়াজুড়ির পর ব্যাগ নিয়ে আসলো....

-এইতো লক্ষী ছেলে একটা (ইরা)

-কই যাবেন এখন??(শুভ)

-আমি বাসা থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে আসছি...শহর থেকে দূরে থাকব আর তোমার চিকিৎসা করাবো

-শহর থেকে দূরে কোথায় থাকবে?? আর কোথায় চিকিৎসা...

-ওই তোমার কিচ্ছু চিন্তা করতে হবে না। আমি সব ব্যাবস্থা করেই রাখছি

-আপনি আমার জন্য এত করছেন কেনো??

-তা জানি না। শুধু জানিইইই...

-কি??

-ভালবাসি

-.....চুপ চুপ আর কথা না এখন চলো


ইরা শুভকে নিয়ে শহর থেকে কিছুটা দূরে একটা গ্রামে গেলো। আর সেখান একটা বাড়িতে তারা গেলো..

-এটা কোথায় এলাম?? (শুভ)

-আমাদের গ্রামের বাসা। আগে আমরা এখানেই থাকতাম(ইরা)

-আপনাদের বাসা থেকে পালিয়ে আপনাদের বাসায় আসলাম! এটা কেমন পালানো!

-পালায় নি তো

-তাহলে আপনি যে বললেন পালিয়ে আসছি

-ওইটা মিথ্যা বলছি

-তাহলে সত্যি কোনটা??

-শোনো তাহলে...তোমার সাথে কথা বলার পর আমি বাসায় যাই। বাসায় গিয়ে আব্বু আম্মুকে আবার ব্যাপার টা বুঝিয়ে বলি। তখন তারা কি বলল যানো??

-কি বলছে??

-আমি তাদের মেয়ে না

-কিহহ!!

-হুমমম

-তাহলে আপনি..

-আমাকে তারা হাসপাতাল থেকে কিনেছিলো। সে যাই হোক বাদ দাও এসব 

-তারপর তারা কি বলল আপনাকে??

-আমাকে বলল যে তোমার জন্য মা সম্মান ডুবাতে পারব না। তুমি পারলে তার সাথে চলে যাও

-তারপর

-তারপর আর কি, ব্যাগ গুছিয়ে সোজা তোমার কাছে

-আর টাকা পেলেন কোথায়?? আর এই বাড়িটা??

-চেয়ে নিয়েছি। আর উনারা একবারে ফেলে তো দিতে পারে না। মান সম্মান এর ভয়ে এইরকম করল। হুহ

-আমার জন্য আপনার আজ এই অবস্থা। আমাকে আগে বললে আমি আসতামই না

-হ্যা তোমাকে আমি ভালভাবেই চিনি তাই সব মিথ্যা বলেছি

-হুমমমম


হঠাৎ করে ইরা কান্না শুরু করলো।

-আরে কান্না করছেন কেনো??(শুভ)

-আমার বাবা মা কেউ নেই। আপন কেউ নেই (ইরা এটা বলে জোড়ে জোড়ে ন্যাকা কান্না করছে)

-আমি আছি তো এখন আপনার পাশে

-পাশে থাকলে তো হবে না

-তাহলে??

-বুকে জায়গা দিতে হবে

-.......(শুভ চোখ বড় বড় করে ফেলছে)

-কি হলো??

-না কিছু না

-ওইখানে জায়গা দিবা না??

-হুমম আসেন


ইরা শুভকে জড়িয়ে ধরতে আবার থেমে গেলো....আর বলল

-নাহ হবে না(ইরা)

-কি হবে না??(শুভ)

-কিছুই হবে না। তোমার বুকে আমার জায়গা হবে না

-কেনো??

-তুই এখনও আমাকে আপনি করে বলতেছিস। তাহলে আমি তোর বুকের মধ্যে কিভাবে যাবো

-তাহলে তুমি বলতে হবে??

-ন্যাকামো করনে কেনো জানেন না

-আমি কোনো মেয়েকে তুমি করে বলি নি। কেমন যেনো লাগে

-বউ এর সাথে তুমি বলতে তোর কেমন যেনো লাগে তাই না??

-বউ!!

-হ্যা কয়েকদিন পর তো বি বি বিয়ে হবে আমাদের

-.........

-ওই কি ভাবছো??

-ভাবছি বউ এখনো কেনো তার জায়গা টা নিচ্ছে না

-ওরে দুষ্টু বর.... (ইরা শুভ কে জড়িয়ে ধরলো


-এই স্টিক ছাড়ো তো এখন থেকে আমি তোমার স্টিক (ইরা)

-তাই??

-হুমম তাই তো

-তা কেমন লাগছে এখন

-খুবই ভালো

-কেনো??

-কেনো আবার প্রিয়জন এর বুকে আছি তাই

-হুমমম

-তোমার কেমন লাগছে গো??

-বলে বোঝাতে পারবো না কেমন লাগছে

-কেনো??

-এরকম ভালবাসা পাই নি তো তাই

-পাগল একটা

-হুমমম

-এখন কি এভাবে বাইরে দাড়িয়ে থাকবে?? ঘরে যাবে না??

-হুমম চলো


ঘরে প্রবেশ করতে করতে...ইরা বলল

-শোনো এখন তো রান্না করা সম্ভব না। আমি রাতের জন্য কিছু খাবার এনেছি। ওগুলোই খাবো সকালে রান্না করবো ঠিক আছে??(ইরা)

-আচ্ছা ঠিক আছে

-আর হ্যা এগুলো গুছিয়ে নেই। ওপাশে বাথরুম আছে তুমি ফ্রেস হয়ে আশো। তুমি আসলে আমি যাবো ঠিক আছে??

-আচ্ছা....


ইরা আর শুভ রাতের খাওয়া শেষ করে। আর এদিকে শুভ মনে মনে চিন্তা করে একসাথে তো শোয়া যাবে না। মেয়েটা যে কি করে আল্লাই যানে...

-এই কি ভাবছো??(ইরা)

-না কিছু না (শুভ)

-তাহলে চুপ হয়ে একভাবে অন্যদিকে তাকিয়ে আছো যে! 

-ভাবছি যে আমি ঘুমাবো কোথায়?? আর তুমি ঘুামবে কোথায়??

-তুমি এখানে ঘুমাবে আর আমি এ

-না

-পুরোটা বলতে দাও

-হুমম বলো

-এখানে ঘুমাবো না। পাশে আর একটা রুম আছে ওইখানে ঘুমাবো

-হুমম ঠিক আছে।

-আচ্ছা আমার একদম কাছে এসে আমার দিকে ঘুরে বসো

-কেনো??

-যা বলছি তাই করো

-হুমমমম তারপর

-আমি তোমাকে ভাল করে দেখবো। এতদিন একটু একটু করে দেখে মন ভরে নি। আজ মন ভরে দেখবো

-হুমম দেখো


ইরা শুভর চোখের দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে....

-এই একটা কথা বলি (ইরা)

-হুমম বলো(শুভ)

-তোমার ঠোঁটে একটা কিস করি

-নাহহহহ

-কেনো??

-এখন না

-এখনই। আর আমারই তো সব

-তাও এখন না

-তাহলে কখন বিয়ের পর

-ওকে ওকে লাগবে না এখন। এহহহ আসছে

-এখন ঘুমাও অনেক রাত হইছে 

-হুমম তুমিও যাও ঘুমাও 

-ওকে


শুভ শুয়ে পড়লো ইরা সব কিছু ঠিক ঠাক করে দিলো। আর শুভ কানের কাছে গিয়ে বলল

-তুই ঘুমানোর পর রাতে এসে ঠিকই দিয়ে যাবো(ইরা)

-........(শুভ কিছু না বলেই তার ঠোঁট টা ইরার ঠোঁটের সাথে মিলিয়ে দিলো)

-এখন যাও ঘুমাও(শুভ)

-হুমম থ্যাংক ইউ (ইরার চোখে পানি)

-এই কান্না করছো কেনো??

-এমনি সুখে কান্না করছি

-পাগলি একটা যাও ঘুমাও


তারপর ইরা চলে গেলো। পরদিন সকাল বেলা... ইরা ঘুম থেকে আগে জেগে উঠলো...সে উঠে শুভর কাছে এলো। এসে দেখে শুভ বালিস ছেড়ে এক হাতের উপর ঘুমাচ্ছে...

-এই(ইরা ডাকলো)

-......

-এই যে স্যার

-উমমমম

-উমম কি উঠতে হবে না??

-সকাল হইছে??

-না একটু পর হবে। উঠো

-হুমম উঠছি। পা টা খুব ব্যাথা করছে

-একটু সহ্য করো আজ থেকেই চিকিৎসা শুরু হয়ে যাবে 

-হুমমম

-এখন যাও ফ্রেশ হয়ে আসো

-আচ্ছা....


শুভ গেলো ফ্রেস হতে...ইরা তার রুমে যাচ্ছিলো তখন শুভর ফোনে একটা ম্যাসেজ আসে....(জান কই তুমি?? কেমন আছো??)


ইরা ম্যাসেজ টা দেখে চোখ কাপালে উঠে যায়। রাগ করে সেখানেই বসে পরে। একটু পর শুভ আসে...

-এখনো যাও নি??(শুভ)

-তুই এমন করলি কেন??(ইরা)

-কি করছি 

-এইটা কি???

(শুভ ম্যাসেজ টা দেখলো)

-আমি তো চিনি না 

(শুভর কথা শুনেই ইরা মোবাইলে দিয়ে শুভর গালে জোড়ে একটা চর মারল)

-বেইমান কুত্তার বাচ্চা (ইরা)

-না শোনো আমি তো তাকে চিনি না

-এতদিন মরিচিকার পেছে ছুটছিলাম? ছিহ...

-..........(শুভ কিছু বলছে না তার গাল বেয়ে রক্ত পড়ছে)

ইরা অনেক গালা গালি করছে। হঠাৎ আবার

-টুংটুং (ম্যাসেজ আসলো। ইরা ম্যাসেজটা দেখে শুভর দিকে তাকায়। শুভ আরও ভয় পায়)

-আমি সত্যি চিনি না (শুভ কান্না করে বলে)

(ইরা আবার ফোন এর দিকে তাকালো।)ম্যাসেজে লেখা ছিলো সরি ভুলে চলে গেছে।


(ইরা বুঝতে পারলো তার এত রাগ দেখানো টা একদমই উচিত হয় নি)

ইরা বলল...

-আ আ আমি বুঝতে পারি নি (ইরা হাটু গেড়ে বসে পড়লো)

।।

।।

।।প্রিয় থেকেও প্রিয়

writer. moyej uddin

END PART

>>>>>>>>>>>>>>>>>


(ইরা বুঝতে পারলো তার এত রাগ দেখানো টা একদমই উচিত হয় নি)

ইরা বলল...

-আ আ আমি বুঝতে পারি নি (ইরা হাটু গেড়ে বসে পড়লো)

-এই কি হইছে এভাবে বসে পড়লে কেনো??(শুভ ইরার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল)

-আমি ভুল করেছি

-দেখছো আমি বললামই যে আমি চিনি না। আমার কথা শুনলে না তো

-আমাকে ক্ষমা করে দাও 

-আরে না নিজেদের মধ্যে ভুল হতেই পারে। এটা কোনো সমস্যা না। আর ভুল নিয়ে বসে থাকা ঠিক নয়

-তোমার মুখের ভেতর কেটে গেছে তাই না??

-হ্যা এই একটু কাটছে মনে হয়।

-.........(ইরা কান্না করছে)

-হ্যা আরও বেশি করে কান্না করো। আর এদিকে খুদায় আমার পেট ডাকছে। রান্না করতে হবে না??

-হুমমম করবো

-হ্যা যাও তাহলে। আর এটা নিয়ে আর কোনো কথা নয়।

-আচ্ছা


সকালের খাওয়া শেষ করে তারা একটা ভাল হসপিটালে যায়। সব ধরনের পরীক্ষা শেষ করে। এখন দুজনই রিপোর্ট এর জন্য অপেক্ষা করছে। এর মধ্যে ইরা বলে উঠলো


-দেখো তোমার কিছুই হবে না। অপারেশন করলে সব ঠিক হয়ে যাবে (ইরা)

-হ্যা জানি তো। আর তুমি তো বেশি টেনশন করছো। (শুভ)

-টেনশন তো হবেই

-টেনশন করো না। আশা করি সব ধরনের রেজাল্ট পজিটিভ হবে।


কিছুক্ষণ পর ডাক্তার শুভ কে ডেকে নিলো তার রুমে। শুভ ইরা কে সাথে নিলো না। যদি খারাপ কিছু হয় কান্না করতে পারে। অনেক বুঝিয়ে ইরা কে সেখানে বসিয়ে রেখে ভেতরে গেলো...


ইরা বসে টেনশনে প্রচুর ঘামছে। আর দোয়া করছে "আল্লাহ ওর যেনো কিছু না হয়" 


একটু পর শুভ হাসি মুখে ডাক্তার এর রুম থেকে বেড়িয়ে আসলো। ইরা উঠে শুভর কাছে গেলো...

-ডাক্তার কি বলল(ইরা)

-বলছিলাম না তোমাকে তেমন কিছুই হবে না। (শুভ)

-কি বলল তাই বলো

-বলল যে অপারেশন করলে ঠিক হয়ে যাবে

-তো অপারেশন এর ডেট দিয়েছে??

-নাহ... ফো ফো ফোনে ডেট টা বলে দিবে

-তোতলাচ্ছো কেন??

-কই না তো 

-হুমম আমি শুনলাম তো

-হুমম

-এখন আমার অনেক ভালো লাগছে সারাজীবন এর জন্য তোমাকে পাবো।

-হ্যা চলো এখন বাসায় যাই

-হুমম চলো


বাসায় আসার পর ইরা খুবই খুশি। কি থেকে কি করবে নিজেই বুঝতে পারছেনা। রাতে ইরার পাগলামো টা আরও দিগুণ হয়...

-ওই (ইরা)

-হুমম(শুভ)

-কালকের মতো একটা দাও না গো

-কিহ?

-ওই যে

-কি যে??

-ন্যাকামো করো তাই না

-না সত্যি মনে নেই

-কাল রাতে এই সময় যে হলো ওইটা

-ওহ ওটা আমি দিতে পারব না

-কেনো??

-সব কিছু পরে হবে

-কেন পরে

-সবাইকে সবকিছু দিতে হয় না

-মানে??

-কিছু না এই সম্পর্কে আমি আর কিছু বলতে চাই না। যাও ঘুমাও

-দিতে হবে নাহ গুড নাইট (ইরা মন খারাপ করে চলে গেলো)


শুভ শুয়ে ছিলো। শোয়া থেকে উঠে বসলো। আর ভাবছে সেই হাসপাতালে ডাক্তার এর রুমের কথা

-তোমার বেঁচে থাকার এক ভাগ সম্ভবনা নেই। রোগ টা অনেক বড় হয়ে গেছে(শুভ এটা ভেবে একটা জোড়ে নিশ্বাস ছাড়ল)


শুভ ভাবছে.

-হাসপাতাল থেকে হাসিমুখে ফিরলাম। ইরা কে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বললাম। সব ঠিক আছে। কিন্তু ইরার সুন্দর একটা জীবনকে এভাবে নষ্ট করে দেওয়া যাবে না ওকে বাড়ি ফেরানোর ব্যাবস্থা করতে হবে। কি করি? কি করি?? উমমম পেয়েছি....


শুভ কি একটা ভেবে কাগজ আর কলম নিলো। অনেকসময় ধরে কিছু একটা লিখে শুয়ে পড়লো...


পরদিন সকাল বেলা...

-হাদারাম টা মনে হয় ঘুম থেকে উঠে নাই...যাই ডেকে তুলি...(ইরা)


ইরা শুভর রুমে এসে দেখে শুভ নেই.... ইরা ভাবে হয়তো বাথরুমে গিয়েছে ফ্রেশ হতে...এটা ভেবে ইরা শুভর বিছানায় বসে অপেক্ষা করতে লাগল...হঠাৎ চোখে পড়লো বালিশ এর উপর একটা সাদা কাগজ এর তার উপরে শুভর সেই মোবাইল টা...


ইরা কাগজটা হাতে নিয়ে পড়তে লাগল...

-এই যে মিস ইরা আপনাকেই বলছি। তুমি আমার জীবনে এসেছিলে একটা স্পেশাল গিফ্ট হয়ে। কিন্তু আমি এতটাই কপাল পোড়া যে তোমার মত এত্ত সুন্দর একটা গিফ্ট কে ধরে রাখতে পারলাম না। কি জন্য পারলাম না যানো??? 


হাসপাতাল এর রিপোর্ট ছিলো পুরো নেগেটিভ। আমার বাঁচার সম্ভবনা ছিলো না। আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। এদিকে তোমাকেউ ছেড়ে যেতে পারছিলাম না। আবার তোমার সুন্দর একটা জীবন আছে সেটাও নষ্ট করা যাবে না।


জানো তোমাকে আমি অনেক ভালবেসে ফেলছি। এখন আমি যে সব বলি সেসব মন দিয়ে শুনবা আর সেগুলো করার চেষ্টা করবা...


এখন উঠে সোজা বাসায় যাবা। আর সবার কাছে ক্ষমা চাইবা। আর নিজের জীবন কে হেলায় খেলায় কাটাবে না। এগুলো কেন বলছি জানো??


আমি তোমার থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছি। আমি তোমার কাছে থাকলে তোমার অনেক ক্ষতি হবে। শুধু আবেগ দিয়ে জীবন চলবে না। আর হ্যা এসব শুধু ভালবাসার মানুষ হিসেবে না তোমার স্যার হয়ে বলছি।


আমি তোমার থেকে এখন অনেক দূরে। আর বেশি সময় নষ্ট না করে এখনই বাড়ি যাবা। আর একটা কথা তোমার ঠোঁট টা অনেক মিষ্টি ছিলো। সারাজীবন সেটা আমার হলে ভালই হতো। কিন্তু ওই যে পোড়া কপাল টা হতে দিলো না।


আমাদের ভালবাসাটা এই পর্যন্তই। আমি চলে গেছি তোমার থেকে অনেক দূরে। আর মাফ করে দিয়ো না বলে চলে যাওয়ার জন্য। মোবাইলটা তোমার কাছে স্মৃতি হিসেবে রেখে দিয়ো। আর আমার মাঝে পূর্নতা ছিলো না তাই হয়তো তোমার হতে পারি নি। ভাল কাউকে বিয়ে করে নিয়ো আর ভালো থেকো... ইতি (তোমার আপনি, তুই, তুমি বলা মানুষটি)


ইরা কাগজটা পরার পর চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। কাগজটা হাত থেকে পড়ে দরজার দিকে চলে যাচ্ছে...

ইরা চিৎকার করে কান্না করে পাড়ছে না। শুধু মুখদিয়ে বিড় বিড় করে বলছে..... তুই এমন করলি কেনো???


শুভ শুনলে হয়তো তার কথার উত্তর টা দিতে দেড়ি করতো না। বলতো

"তোমার ভালোর জন্যই তো"

.

..

.............END.............


..EID MUBARAK☪️


No comments:

Post a Comment

অদৃশ্য পরী

  ----দেবর সাহেব, তো বিয়ে করবে কবে? বয়স তো কম হলোনা ৷ ----আপনার মত সুন্দরী কাউকে পেলে বিয়েটা শীঘ্রই করে ফেলতাম ৷ -----সমস্যা নাই তো, আমা...