24.12.23

বোকা বর

 বোকা বর

writer. moyej uddin
part 1 ........................
-আজকেই চলে যাবি????(অয়ন)
[অয়ন আমার বন্ধু, আর আমি শুভ। আমি আর অয়ন একটা প্রাইভেট কোম্পানি তে জব করি।]
-হ্যা আজই চলে যাবো ৪ দিন পর ঈদ(রোজার ঈদ)
-হুমমমম
-তুই যাবি না???(আমি)
-নারে এবার এর ঈদ ঢাকাতেই করবো।(অয়ন)
-তো চল আমাদের বাড়ি
-না অন্য সময়
-ওকে। বিকালের দিকে আমি রওনা দিবো।
-বাসে নাকি ট্রেনে??
-তুই তো জানিস আমি বাসে যাতায়াত করতে পারি না। ট্রেনে যেতে হবে।
-হুমম ট্রেনে যা তবে সাবধান অনেক ভিড় কিন্তু
-ওকে বন্ধু
-ওকে
দুপুর পর পরই স্টেশনে আসলাম। ট্রেন তো ৪ টায় । একটু জিড়িয়ে নেই।
৪ টার একটু পরই ট্রেন আসলো। এত ভিড় যে উঠতেই পারছি না। আমার পেছেনে একটা মেয়ে সজোরে ধাক্কা দিয়েই চলেছে।
-এই থামেন, ভিড় কমলে তারপর ওঠেন।(শুভ)
-..[মেয়েটা কিছু বলল না, আর ধাক্কাও দিলো না ]
এদিকে ভিড় কমার কোনো নামই নেই। একটু পর ট্রেনটা ছেড়ে দিলো।আমার সাথে অনেকেই উঠতে পাড়ল না। একটা বেঞ্চে গিয়ে বসলাম...
-আপনার জন্য আমি ট্রেনে উঠতে পাড়লাম না [তাকিয়ে দেখি সেই মেয়েটি। অনেক জোড়েই বলল সেই কথাটা]
-জ্বি। আপনি না হয় আমার জন্য উঠতে পারলেন না! আর কয়েকজন উঠতে পাড়ল না সেটা কি আমারই দোষ???
-........[আর কিছু বলল না মেয়েটা। মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্ছে আমার থেকে দুই এক বছরের ছোট হবে। দেখতে খারাপ না। তবে একটু কল্লা টাইপের]
মেয়েটা আমার সামনেই দাড়িয়ে আছে। আর আমি নিচ দিকে তাকিয়ে আছি। ভাবছি এখান থেকে কেটে পড়তে হবে। নাহলে সমস্যা করতে পারে....যেই বলা সেই কাজ। তখনই উঠে এলাম। এখন কি করি?? বাসে তো যেতে পারবো না শরীর খারাপ হয়ে যাবে। রাস্তায় এসে দাড়িয়ে আছি আর ভাবছি....
-আপনি কই যাবেন??[পেছেন থেকে কে যেন বকে উঠলো। ঘুরে দেখি সেই মেয়েটা ]
-আমি দিনাজপুর যাবো
-আমিও তে দিনাজপুর যাবে
-হুমমমমম
-চলেন বাসে যাই
-আমি আপনার সাথে যাবো কেনো??
-আরে একই এলাকার মানুষ তো। তাই আমার সাথে যাবেন
-হুমম কিন্তু আমি বাসে যাতায়াত করতে পারি না
-এহহহহ। এ কি বলে! বাসে যাতায়াত করতে পারনে না! আপনি কি প্রত্যেক বার প্লেনে যাতায়াত করেন??
-না ট্রেনে
-হুহ। তাহলে আপনার সাথে যাবো না।
-হুমম আপনি একাই চলে যান
দুজনই কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকলাম চুপচাপ
-আপনি না বললেন একাই যাবেন! তো যাচ্ছেন না কেনো??(আমি)
-[আমার কথায় উত্তর না দিয়ে বলল] সামনে হাইস স্ট্যান্ড আছে। ওখান থেকে যাবো চলেন
আমি আর কিছু বললাম না। একটা হাইস পেয়ে গেলাম। আধঘন্টা পর হাইস ছাড়লো। হাইসের মধ্যে ১২ জন এর মতো ছিলাম।
রাত ৯ টার মতো বাজবে তখন। প্রায় সবাই ঘুমিয়ে গেছে। আমার আবার গাড়িতে উঠলে ঘুম ধরে না।
গাড়িটা যেখান দিয়ে যাচ্ছিলো রাস্তা টা চিনতে পারছিলাম না। আমি বললাম
-এটা কোন জায়গা????
হঠাৎ ড্রাইভারের পাশের ছিট থেকে উঠে এসে আমার নাকে একটা স্প্রে করলো। তারপর আমার আর কিছু মনে নেই.....
-এই ওঠ ওঠ
মনে হচ্ছে কেউ পানি দিচ্ছে চোখে
-এই যার যা কিছু আছে। সব দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে যা। [ড্রাইভার সহ আরও তিনজন হাতে ছুড়ি নিয়ে বলছে]
এই তাড়াতাড়ি কর। সব কিছু দিয়ে নেমে এলাম।
-এই পেছন দিকে কেউ তাকাবি না। তাহলে গুলি করে দিবো
আমি গাড়িটার নাম্বার দেখতে চাইলাম। কিন্তহ পারলাম না। তখনও রাত ছিলো। একটু একটু ভোরের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল
আমরা ৮ জন রাস্তায় দাড়িয়ে ছিলাম।
একটু পর মেয়েটি আমার কাছে আসলো
-সব দোষ আপনার (মেয়েটি)
-আমি আবার কি করলাম??
-ওই যে ট্রেনে উঠতে পারলাম না হুহ।
-আচ্ছা আমরা সবাই হাটতে থাকি(আমি)
সবাই ভয়ে কাপছে কারও কাছে কিছুই নেই।
-এভাবে দাড়িয়ে থাকলে হবে না। আমরা কোথায় এসেছি এটা জানতে হবে।
[একজন বলে উঠলো সকাল হলে এখান থেকেই গাড়িতে উঠবো]
-ওকে আপনারা থাকেন। এই যে ম্যাডাম আপনি কি যাবেন আমার সাথে???
-হুমম চলেন(মেয়েটি)
মেয়েটি আমার বলার সাথে সাথে কি জন্য চলে আসলো জানি না। একটু পর মেয়েটি বলল
-আপনি ওখানে না থেকে হাটছেন কেনো??
-আসলে আমরা কোথায় আসছি তা জানি না। আগে জানতে হবে কোথায় আমাদের নামিয়ে দিয়েছে...তারপর তো বাড়ির পথ ধরবো তাই না??
-হুমমম ঠিক বলছেন। ওরা থাক। আমরা হাটতে থাকি।
-হুমম চলেন
১ ঘন্টা হাটার পর আমরা বুঝতে পারলাম। পাহাড়ি এলাকায় আমাদের নামিয়ে দিছে। কিন্তু কোন জায়গা এটা জিজ্ঞাস করতে হবে...
-এই শুনছেন??(আমি)
-হুমম বলেন(মেয়েটি)
-জায়গা টা দেখে মনে হচ্ছে সিলেট হবে
-রাঙ্গামাটিও হতে পারে
-তা মন্দ বলেন নি। চলুন কাউকে জিজ্ঞাস করি?
-হুমমম চলেন
হাটলাম কিছুক্ষণ কাউকে দেখতে পেলাম না। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো।
-এই বৃষ্টি শুরু হলো তো (মেয়েটি)
-হুমমম কেথায় যাই বলুন তো
-ওই যে পাশে একটা ছোট্ট দোকান দেখা যাচ্ছে। ওখানে চলেন
-হুমমম
আমরা দোকানটার মধ্যে দাড়ালাম।
১ ঘন্টা ধরে বৃষ্টি হলো। তাও ছাড়ার নাম ই নিচ্ছে না। একটু আগে একটা লোক রাস্তা দিয়ে গেলো।আমাদের দিকে একবার তাকিয়ে চলে গেলো।
-আমার খুব ঠান্ডা লাগতেছে(মেয়েটি)
-আমার ঠান্ডা +খুদা দুটোই লাগছে
-কিছুই তো নেই হাতে
-আমারও না
-কেন যে উঠতে গেলাম হাইস এ
এসব কথা বলতে বলতে কিছু লোক আমাদের দিকে এগিয়ে এলো...
-তোমরা কারা(তাদের মধ্যে একটা লোক)
-আমি শুভ
-আমি জান্নাত(ওহহ মেয়েটার নাম তাহলে জান্নাত)
-তোমরা বিবাহিতা??? (লোকটি)
-জ্বি না। আমরা একটা বিপ....(আমাকে থামিয়ে দিলো)
-আর বলতে হবে না। তোমরা বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছো।
-আরে না না (আমি)
-লুকোতে হবে না কিছু। তোমাদের বিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের। এর আগে অনেকেই এভাবে আসছে। আসো আমাদের সাথে.....
।।


বোকা বর
Part: 2
...........................
-লুকোতে হবে না কিছু। তোমাদের দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের। এর আগে অনেকেই এভাবে আসছে। আসো আমাদের সাথে..
-শোনেন শোনেন। আমি আসলে ওনাকে চিনি না (মেয়েটি বলল)
-দেখো মেয়ে। এখন তুমি মানা করছো। কিন্তু ও যখন তোমার সব পেয়ে তোমায় ছেড়ে দেবে। তখন কি করবা???
-বুঝতেছেন না আমি ওনার সাথে...(মেয়েটি।মেয়েটি বলছি কেনো?? নাম তো জান্নাত)
-আমরা যখন বলছি বিয়ে হবে। না হলে দুটোকেই এখানে মরতে হবে।
মারার কথা শুনে দুজনেই আর কিছু বললাম না। ওরা আমাদের একটা গ্রামে নিয়ে যাচ্ছে।
একটা ঘরে নিয়ে গেলো। আর আমাদের কিছু খেতে দিলো।
-এই আপনি যেভাবে হোক আটকান (জান্নাত)
-তাহলে তো মরতে হবে (আমি)
[মেয়েটা কান্না করছে। আমারও খুব খারাপ লাগছে। এ কোন বিপদে পড়লাম রে ভাই। আমি মেয়েটাকে বোঝানোর জন্য বললাম..
-শোনেন বিয়ে টা করে, জান নিয়ে বের হই এখান থেকে পরে না হয় কিছু...
[জান্নাত এর দিকে তাকালাম চোখ লাল হয়ে গেছে ]
ভয়ে আর কিছু বললাম না
দুপুরের দিকে বিয়ে পড়ানোর কাজ শেষ। জান্নাত বলল
-রওনা দিবেন কখন।??
-আজকে এখানে থেকে যাই
-আপনার মাথা ঠিক আছে??
-কেনো??
-তিন দিন পর ঈদ আর আপনি মানে মানে করছেন???
-তো কি করবো??
-এখনি রওনা হবো চলেন
-হ্যা কিন্তু এটা কোন জায়গা এখনও জিজ্ঞাস করে দেখা হয় নাই।
-হাইরে। মাইর এর ভয়ে সব ভুলে গেছেন???
-হুমমমমমৃ
-আজব মানুষ আপনি। চলেন এখন
-হুমমম
(বিদায় হওয়ার আগেই যানতে পারলাম। এটা বান্দরবন। হায় আল্লাহ কত্তদূর নিয়ে আসছে। পকেটে তো একটা টাকা পয়সাও ছিলো না। ওদের কাছ থেকে কিছু নিয়ে রওনা হলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে। বাসে উঠছি বিকেলের দিকে। এখন সন্ধ্যা ৭ টার মতো বাজে)
-শুনেন (মেয়েটি)
-হুমম বলেন
-বাড়িতে একটা কল করতে হবে
-হুমম আমারও
-হুমমম। একটা জিনিস খেয়াল করে দেখছেন??
-কি???
-আপনি কিন্তু ধীরে ধীরে আমার কাছে আসার চেষ্টা করতেছেন।
-সরি সরি
-হুমমম শোনেন কয়েকটা কথা বলি
-হুমমম বলেন
-আপনার কি মনে আছে বিয়ের আগে কি বলছিলেন??
-কি বলছিলাম??
-বিপদ কেটে গেলে। কিছু একটা করবেন
-না থাক বিয়ে হইছে হইছেই। কিছু করতে হবে না
-চুপপপপপ
-রাগছেন কেনো?? এটা তো...(আর বলতে দিলো না)
-চোপপপপপ
(একদম চুপ হয়ে গেলাম। অনেক জোড়ে বলছে কথাটা)
-আমাদের যে বিয়ে হইছে। সেটা আমি আর আপনি জানেন। আমি চাইনা এটা আর বেশী দূর এগোক।
-তাহলে কি চান???
-বাস যে জায়গায় গিয়ে একদম থামবে সে জায়গায় তো আপনি যাচ্ছেন তাই না??
-হুমমম
-আমি ঘুমিয়ে থাকবো। চোখ খুলে আপনাকে যেনো না দেখি। আর আপনি নেমে যাওয়ার সময় হেল্পার কে বলবেন ডাক দিতে
-আচ্ছা।
-হুমম। আর আমি এই ঘুমের মধ্যেই সব ভুলে যাবো
-আচ্ছা মেনে নিলে সমস্যা কি??
-আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। আর আমি তাকেই ভালবাসি।
-ওহহহহ
-হুমমম। কি বললাম মনে থাকবে তো
-জ্বি থাকবে
-হুমমমম
-একটা কথা
-হুমম বলেন
-বাইরে ভালই বৃষ্টি হচ্ছে। ঠান্ডাও অনেক। আপনি এই শার্ট টা উপরে দিয়ে রাখেন
-না লাগবে না
-লাগবে। আমি নেমে যেতে নিয়ে যাবো
-ওকে।
[জান্নাত ঘুমিয়ে গেলো। জান্নাত যা বলল তাই কি করব?? হ্যা ও তো ঠিকি বলছে। বিয়ে টা ছিলো একটা এক্সিডেন্ট। ও যা বলছে তাই করতে হবে। এসব ভাবতে ভাবতে আমিও ঘুমিয়ে গেলাম]
হেল্পার এর ডাকে ঘুম ভাঙে।
-ভাই আইসা গেছি। নাইমা পড়েন।
-হুমমম
-ভাবি কে ডাক দেন
-না। আমি ওনাকে চিনি না। আপনি ডাক দেন।
এটা বলে নিচে নেমে এলাম। রাত আনুমানিক ৩ টার মতো বাজে।গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। কোনো গাড়িও দেখছি না। এখান থেকে বাড়ি হেটে যেতে ৩০ মিনিট এর মতো লাগবে।
কি আর করার হেটেই রওনা দিলাম। এত অন্ধকার যে কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। আন্দাজ করে হাটছি।
একটু পর মনে হলো কেউ আমার পিছে পিছে হাটছে। পিছে তাকালাম, বেশী দূর দেখা যাচ্ছে না। যতটুকু দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে কেউ নেই
ভূত নয় তো! আমি আবার ভূত দেখে অনেক ভয় করি। যদিও কখনো দেখি নাই... তবুও ভয় করে।
আর পিছে না তাকিয়ে। খুব তাড়াতাড়ি হাটা ধরলাম। ৩০ মিনিট এর কাছে বাড়ি যেতে আমার ২৫ মিনিট লাগলো। বাড়িতে দরজার সামনে গিয়ে...
- মা মা (আমি)
-কেএএএ?????(মা)
-তোমার ছেলে
-ওহহ দাড়া আসছি
-তাড়াতাড়ি ওঠো আমার ভয় করছে তো
-এইতো আসছি...
মা এসে বলল
-কিরে এত রাত করে যে! (মা)
-সব কথা পরে বলছি আগে ভেতরে চলো
-হ্যা চল.....এই না না দাড়া
-আবার কি হলো??
-তোরর হাতে ব্যাগ কই??
-আগে ভেতরে চলো সব বলছি।
-আচ্ছা এ কথা না হয় ভেতরে বলবি। কিন্তু তোর পেছনে কে??
-মাআআ এখন ভূতের ভয় বা মজা করার সময় না। ভেতরে চলো
-আমি ভূতের ভয় দেখাচ্ছি না পেছনে তাকা
-কি যে বলো না মা.... (আমি পেছনে তাকালাম চোখ তো কপালে উঠে গেলো)
-আপনিইইইইইইইইই(আমি)
-হ্যা আমি(জান্নাত)
-কিরে শুভ তুই ওকে চিনিস???(মা)
-না চিনলে কি ওর সাথে আসতাম বলেন???(জান্নাত)
-না মানে মা হয়েছি কি, ব্যাপার টা আসলে..
-তুই চুপ কর। মেয়েটা কে??
-আমার....(আমাকে থামিয়ে দিয়ে)
-ফেন্ড হই আন্টি ফ্রেন্ড
-হুমম আসো ভেতরে আসো...
মা আমাকে ফিস ফিস করে বলল
-শুধুই কি ফ্রেন্ড হয়??
-হুমম শুধু ফ্রেন্ড
-অন্য কিছু না??
-মা এখন ফিস ফিস করো না ভেতরে চলো...
এটা শুনে জান্নাত একটু হাসলো...আর আমি ভাবছি আমাকে ওই কথা টা বলে আবার, আমার পেছন পেছন আসল!!!!!!
-কিরে কি ভাবছিস???(মা)
-কিছুনা (আমি)
-বাড়িতে মেহমান আসলে।তার আদর আপ্যায়ন করতে হয়
-কি করতে হবে??
-গাধা তুই দেখতেছিস না ওর মাথা টা ভেজা। যা তয়লা টা নিয়ে আয়
-আচ্ছা যাচ্ছি।
মা আর জান্নাত এর মধ্য কথা হচ্ছে..
-তা তোমার নাম কি???(মা)
-জান্নাত
-কি করো??
-লেখাপড়া
-হুমমম। আচ্ছা আমি একটা প্রশ্ন করি??
-হুমম করেন
-ওর সাথে তোমার বন্ধুত্ব হলো কিভাবে??
-আসলে আন্টি সত্যি কথা হলো ও আমার বন্ধু না
(আমি তখন তয়লা নিয়ে কাছাকাছি চলে আসছি আর কথাটা শুনে দাড়িয়ে গেছি)
-তাহলে কি???
-ওরর সাথে আমার.....

বোকা বর
part: 3
............................
-আসলে আন্টি সত্যি কথা হলো ও আমার বন্ধু না
(আমি তখন তয়লা নিয়ে কাছাকাছি চলে আসছি আর কথাটা শুনে দাড়িয়ে গেছি)
-তাহলে কি???
-ওরর সাথে আমার রেলস্টেশন এ দেখা হয়.... (তারপর গটগট করে সব কথা বলে দিলো। কিন্তু বিয়ের কথা বলল না)
-তাহলে এই ব্যাপার(মা)
-হুমমমমম(জান্নাত)
-এই যে তয়লা টা (আমি এগিয়ে দিলাম)
-আর আন্টি আমি শুভ কে বললাম। আজ তোমাদের বাসায় থেকে যাই। কাল সকালে চলে যাবো। তা শুনলো না। আমাকে রেখেই একাই বাড়ি চলে আসছে। আর আমি কান্না করতে করতে পিছু পিছু আসছি....
-ওই হারামজাদা(মা)
-জ্বি মা বলো
-তোর আক্কেল জ্ঞান কবে হবে রে?? একা একটা মেয়েকে এভাবে ফেলে আসা কিন্তু তোর ঠিক হয় নাই
-জ্বি মা (মনে মনে ভাবছি এ কেমন শয়তান মেয়ে)
-আচ্ছা সেহরির সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। আর আজই শেষ সেহরি খাওয়া হবে মনে হয়, আমরা এখন তাড়াতাড়ি কিছু খেয়ে নেই..(মা)
তারপর সেহরি খেয়ে শুয়ে পড়লাম। জান্নাত মার কাছে ঘুমিয়েছে। আমি আমার রুমে শুয়ে আছি। কিন্তহ ঘুম আসছে না। ভাবছি বউ হলো একটা তাও চলে যাবে থাকবে না। পুরো ঘটনা টাই অবাক বিষয়.....আমি চাইলে আটকাতে পারি কিন্তু আমার তো...................নাহ আটকানো যাবে না
সকাল ৯ টা....
-শুভ শুভ এই শুভ (মা)
-হ্যা মা আসছি(আমি)
(মার কাছে গিয়ে দেখি জান্নাত বাড়ি যাওয়ার জন্য তৈরি হইছে...)
-আমাদের এখানে ঈদ টা করেই যাও (মা)
-না আন্টি বাড়ির সবাই অপেক্ষা করছে আমার জন্য...(জান্নাত)
-শুভ (মা)
-হ্যা বলো(আমি)
-ওকে এগিয়ে দিয়ে আয়
-আচ্ছা
-আর মা তুমি সময় পেলে আবার বেড়াতে এসো...(মা)
-হ্যা আন্টি নিশ্চয় আসবো(জান্নাত)
-হুমমম
-আসি তাহলে
-ওকে এসো
আমি জান্নাত কে বললাম..
-কত দূর এগিয়ে দিতে হবে???
-বাস স্ট্যান্ড
-আচ্ছা
(দুজনেই চুপচাপ হাটছি)
-এই আপনি আপনার বউ কে আটকাচ্ছেন না কেনো??
-এমনিতেই
-আপনি কথা অনেক কম বলেন
-কিভাবে বুঝলেন??
-আপনার সাথে অনেক অভিনয়+ মিথ্যা বললাম কিছু বললেন না যে।
-এখন যে আপনি চলে যাচ্ছেন।আপনার সাথে দেখা হতেও পারে আবার নাও পারে...শুধু শুধু এটুকু সময় কষ্ট দিয়ে লাভ নেই...
-হুমমমম আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
-কেনো??
-মন চাইছে তাই দিলাম
-মন চাইলেই দিতে হবে???
-হুমম দিতে হয়
-তাহলে আমার মনে একটা জিনিস আসছে বলি
-হ্যা বলেন
-আপনি অনেক সুন্দর। আর আমি আপনাকে খুব পছন্দ করি...
(জান্নাত কিছু বলল না। শুধু একটু হাসলো আর বলল)
-বাসস্ট্যান্ড এসে গেছি
-ওহ হ্যা তাই তো
-এবার তাহলে আসি। আর মনে হয় না কোনোদিন দেখা হবে।
-হুমম একটা লাস্ট রিকুয়েস্ট রাখবেন??
-হুমম বলেন
-আপনার হাত টা একটু ছুয়ে দেখতে পারি??? যদিও কোনো পাপ হবে না। কারন আমরা বিবাহিত
(জান্নাত কিছুক্ষণ ভেবে বলল)
-না। আসি (এটা বলে চলে গেলো)
আমি ওর যাওয়া দেখছি। আহ কি কপাল আমার। বিয়ে হলো বাট....হাহ পোড়া কপাল....বাড়ি ফিরে এলাম। ৭ দিন এর ছুটি মা বলল ঈদের পরদিন একটা বিয়ের দাওয়াত আছে। কি আর করার মা যখন বলছে যেতে তো হবেই। প্রায় সময়ই জান্নাত এর কথা মনে হয় কিন্তু লাভ নেই সে তো আর ফিরে আসবে না আসলেও.....
হুহ
ঈদ এর পরদিন মা একটা বাড়িতে বিয়ের দাওয়াতে নিয়ে গেলো..
-মা এটা কার বাড়ি??
-আমার বান্ধবির মেয়ের বিয়ে
-ওহহ ঠিক আছে
(আমি প্রায় সময়ই একা একা থাকি। তাই বিয়ে বাড়িটা একা একাই ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম)
-এই এগুলো কি করলেন হ্যা(একটা মেয়ে। ওর কাছে একটা হলুদ এর বাটি ছিলো)
-সরি সরি আমি দেখি নি(আমি)
-দেখেন নাই মানে! (মেয়েটি)
-এই কি হইছে (আরেকটা মেয়ে)
-এই যে এই লোকটা ইচ্ছা করেই ধাক্কা দিয়েছে আমাকে....
-আরে আপনি???(জান্নাত)
(এতো দেখি জান্নাত)
-আরে আপনিও তো এখানে
-হ্যা আমি বিয়েতে আসছি
-ভালই করছেন। বিয়েটা আমার
-ওহহ ভালো। আর সরি আসলে আমি ওনাকে দেখতে পাই নাই।
-হুমমম ঠিক আছে (এটা বলে জান্নাত চলে গেলো)
জান্নাত এর বিয়ে! আমার কি?? আমার কিছুই না। তাও কেমন যেনো বুকের মধ্যে খারাপ লাগতেছে....
(জান্নাত আর তার বান্ধবীদের মধ্যে কথা)
-এই ছেলেটা কে রে???
-শোন। ওর সাথে আমার দেখা হয় স্টেশনে.........আগের সব ঘটনা বলল।(তার সব বান্ধবীরা তার দিকে হাআআ করে তাকিয়ে আছে)
-এই তুই ছেলেটার সাথে এমন করতেছিস কেনো???
-ছেলেটা ভালো না খারাপ তা তো জানি না। তাই একটু পরীক্ষা করলাম। আর আমাকে তো বাড়িতে বলতে হবে তাই না!(জান্নাত)
-হুমমম তাহলে একটু আগে যে বললি তোর বিয়ে। ছেলেটা কষ্ট পেয়েছে মনে হয়
-তো কি হইছে। একটু ছেকা না দিলে ভালবাসা বারবে না
-তবে যাই বলিস। তোর বর টা কিন্তু বোকা...
-ওই ওই তোর সাহস তো কম না! আমার বর কে তুই বোকা বলিস
-বাব্বাহ এত দরদ!
-হুমম একটাই যে বর সেই জন্য
-হুমমম। তোর বর এর মা জানে??তোদের এই কথা??
-হ্যা আমি যেদিন রাতে থাকলাম তখনি বলে দিয়েছি। আর পরে যে কাজ গুলো করছি সব অভিনয়.....
-তোর বাড়িতে কবে বলবি??
-এই বিয়েটা শেষ হোক তারপর..
-হুমমমম
-চল হলুদ লাগানোর সময় হয়ে গেছে
-হুমম হুমম চল চল
শুভ আর তার মায়ের কথা....
-মা একটু বাড়ি যেতে হবে(আমি)
-কেনো???(মা)
-আবার সেই মাথা ব্যাথাটা
-আবার!!
-হুমমম আমি যাই তুমি থাকো
-না আমিও যাই তোর সাথে চল
-না মা তুমি থাকো। সব ঠিক হয়ে যাবে
-আচ্ছা দেখে যাস। আর আমি সন্ধ্যার পর পরই বাড়ি যাবো
-আচ্ছা ঠিক আছে.....
জান্নাত শুভ কে খুঁজছে পাচ্ছে না। হঠাৎ তার মায়ের সাথে দেখা
-আন্টি (জান্নাত)
-আরে তুমি এখানে?? (মা)
-আমিও বিয়ের দাওয়াত এ আসছি। কণে আমার মামাতো বোন হয়
-ওহহ ভালই তো
-আন্টি শুভ কোথায়??
-ওর সাথে কি দেখা হইছিল তোমার???
-হ্যা বিকেলের দিকে দেখা হইছে
-হুমম ও মাত্রই বাড়ি চলে গেলো
-কেনো??
-শরীর টা খারাপ তাই
-আজ আসবে না??
-মনে হয় না
-আপনিও কি বাড়ি যাবেন??
-হুমমম একটু পরেই যাবো
-কাল কখন আসবেন??
-সকাল সকালই চলে আসবো
-ওকে একটু তাড়াতাড়ি পাঠায়া দিয়েন
-দেখতে ইচ্ছে করছে??
-হুমমম
-হা হা হা ঠিক আছে। তাহলে কাল দেখা হবে বউমা
-আচ্ছা আন্টি
-আমি বউমা বললাম আর তুমি আন্টি বললে!
-সরি সরি। আম্মা। ঠিক আছে এখন??
-হুমমম ঠিক আছে। আরেকটা কথা
-কি???
-তোমার বাড়িতে কি এ বিষয়ে সব জানিয়ে দিছো??
-না। আজ রাতে সবাইকে জানাবো।
-হুমম ঠিক আছে বউমা। তো কাল দেখা হবে।
-ঠিক আছে আম্মা....


বোকা বর
END PART
-না। আজ রাতে সবাইকে জানাবো।
-হুমম ঠিক আছে বউমা। তো কাল দেখা হবে।
-ঠিক আছে আম্মা....
সেদিন রাতে মা যখন বাসায় ফেরে তখন....
-কিরে কি হইছে তোর???
-না মা কিছু না
-মাথা ব্যাথা কমছে???
-হুমমমম
-কি জন্য মাথা ব্যাথা করছিলো??
-মা একটা কথা তোমাকে বলা হয় নাই
-কি কথা বল
-আগে বলো তুমি ভেঙ্গে পরবে না।
-হুমম বল
-আমার ব্রেইন ক্যান্সার হইছে।
-.......(মা অঙ্গান হয়ে যায়)
মাকে পানি ঠালার পর, যখন তার জ্ঞান ফেরে...
-তুই আগে বলিস নি কেনো??(কান্না করে)
-আমি বুঝতে পারছিলাম না তোমাকে কি ভাবে বলব। তাই বলতে পারি নাই
-.......(মা কান্না করেই চলছে)
-মা মা ও মা কান্না করছো কেনো?? আমার যা হইছে ঠিক হয়ে যাবে কান্না করো না তো
-তোর কি অনেক কষ্ট হয়??
-না মা এখন মাথা ব্যাথা করছে না। আর ডাক্তার এর রিপোর্ট ভুল হতে পারে। আমি ঢাকায় গিয়ে আবার পরীক্ষা করাবো।
-হুমমমম
-আর হ্যা কাল কিন্তু সক্কাল সক্কাল বিয়ে বাড়ি যাবো
-হুমমম
-এখন তুমি ঘুমাও। আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেই
-আচ্ছা। কিন্তু তুই ঘুমাবি না??
-তুমি আগে ঘুমাও তারপর
-আচ্ছা...
মা ঘুমিয়ে গেলো। মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে। সহ্য করতে না পেরে চোখ বন্ধ করে ফেললাম....
সকাল ৬:৩০....
-এই শুভ ওঠ ওঠ বিয়ে বাড়ি যাবি না??
-........(কোনো সারা শব্দ নেই)
মা হাত টা গায়ে দিয়ে দেখলো অনেক ঠান্ডা। মা বুঝতে পারলো তার শুভ আর নেই।
১ ঘন্টার মধ্য বিষয় টা জান জানি হয়ে গেলো...
এদিকে বিয়ে বাড়িতে জান্নাত অপেক্ষা করছে কখন শুভ আসবে...?? কারন সে একটু কষ্ট দিয়েছে তাকে। এবার এমন সারপ্রাইজ দিবে শুভ ভাবতেই পারবে না। এসব কথাই ভাবছিলো জান্নাত
হঠাৎ
কেউ একজন বলে উঠলো..
-এই শুনছো সবাই,শুভ ভাইয়া আর নেই
জান্নাত কথাটা অস্পষ্ট ভাবে শুনল। আর কাছে গিয়ে বলল
-কি হইছে??
-ওই যে শুভ ভাইয়া আছে না! সে কাল রাতে মারা গেছে
-কোন শুভ ভাইয়া???(জান্নাত এর মুখে ভয়ের চিহ্ন)
-মেয়ের মায়ের বান্ধবীর ছেলে
-কিভাবে!!
-শুনলাম ব্রেইন ক্যান্সার
জান্নাত এর সেই স্মৃতি গুলো মনে পড়লো যা সে শুভর সাথে কাটিয়েছে।
আমি ওর বউ। ও আমাকে রেখে কোথায় যাবে হ্যা।
-এই তুমি মিথ্যা শুনছো তাই না(মেয়েটিকে উদ্দেশ্যে করে)
-আরে না ভুল শুনবো কেনো??
-না তুমি বলো তুমি ভুল শুনছো (চিৎকার করে)
-না ভুল শুনি নি
জান্নাত বুঝতে পারলো। এরা আর কেউ নয়। এটা তার শুভ। জান্নাত বেশি দেরি না করে শুভর বাসায় চলে গেলো....
জান্নাত গিয়ে দেখল শুভর পাপাশে তার মা বসে আছে। আর জান্নাত এর বর টা শুয়ে আছে। জান্নাত ফুপিয়ে কান্না করতে করতে শুভর পাশে গেলো আর বলল
-এই যে শুনছেন???
-.............
-আপনি আমার সাথে রাগ করছেন তাই না!
-............
-আমি কিন্তু আপনাকে ভালবাসি।
-............
-আপনি উঠবেন নাকি আমি চলে যাবো??
-...........
-আপনি সেদিন আমাকে একটু টাচ করতে চেয়েছিলেন। এইতো আমি আসছি দেখেন।
-..........
-আমি কিন্তু সত্যি আপনাকে ভালবাসি। আপনি বোকা আপনি বোঝেনা নাই।
-..........
-নেন এবার আমাকে একটু ছুয়ে দেখেন (একটা হাত এগিয়ে দিয়ে)
-..........
-বউ কে কেউ এত কাঁদায় হুমম। আমহ কিন্তু দেইখো অভিমান করবো। উঠো এখন অনেক ঘুম হইছে আর ঘুমাতে হবে না
-.............
-ওই আমার বোকা বর টা উঠবা না তুমি! দেখো আমার দিকে তাকাও
-............
জান্নাত অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করে। সে বুঝতে পারে নাই তার সাথে এমন হবে। সে নিজেকে কোনো ভাবেই সামলে নিতে পারছিলো না...
শুভকে কবরে নিয়ে যাওয়ার সময়...
-তাহলে ঘুম থেকে উঠবা না তুমি? চলেই যাবে তাই না?
-...........
-আরে যাও যাও আমি তোমার কে?? আমি তো তোমার কেউ না
জান্নাত আর কিছু বলার সময় পায় না
সে চোখ দিয়ে দেখছে। তার বোকা বর টাকে মানুষ কোথায় যেনো নিয়ে যাচ্ছে......
জান্নাত পাগল এর মতো হয়ে যায়
আর মাঝে মাঝেই বলে
বোকা বর একটা। আর মুচকি মুচকি হাসে......
...................END..................
।।




No comments:

Post a Comment

অদৃশ্য পরী

  ----দেবর সাহেব, তো বিয়ে করবে কবে? বয়স তো কম হলোনা ৷ ----আপনার মত সুন্দরী কাউকে পেলে বিয়েটা শীঘ্রই করে ফেলতাম ৷ -----সমস্যা নাই তো, আমা...