রাগী বর
পর্ব__১+২ 

লেখা- Rafiya Riddhi
.
একটু আগেই আমাকে এক দল ভাবি, ননদিনীরা বসিয়ে দিয়ে গেছে একটা বিশাল বড় বেড রুমে। রুমটা খুবই হাল্কা ভাবে সাজানো হলেও অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে। আর রুমের প্রত্যেকটা আসবাবপত্র এতটাই সুন্দর, রুচিশীল বলেই হয়ত অল্প সাজেও রুমটা দেখতে এতো চমৎকার লাগছে। আমার খুব পছন্দ হয়েছে রুমটা। যা এতদিন শুধু আমার স্বামীর বেডরুম ছিল। আজ থেকে আমাদের দুজনার। স্বাভাবিক ব্যাপার,কিন্তু বিষয়টা ভাবতেই খুব ভালো একটা ফিলিংস কাজ করছে।
.
আমার নতুন বর তাকে আমি চিনিনা, তবে বিয়ের কথা চলাকালীন ছবি তে দেখেছি একবার কেবল। আমাদের বিয়েটা খুবই সাধারন ভাবে হয়েছে। জাঁকজমক ছিল না বললেই চলে। এমনভাবে বিয়ে কেন সম্পন্ন করা হলো তা সম্পর্কে আমি অবগত না। সবকিছু দেখেশুনে পছন্দ হওয়ার ঠিক দুদিন পরই আমাদের বিয়ের ডেট রাখা হয়। বিয়ে হয় সাদামাটা ভাবে। শুধু নিকট আত্মীয়রা উপস্থিত ছিলেন।
.
তাই আমার বরের সাথে আলাদা করে দেখা বা ফোনে কথা কিছুই হয়ে উঠেনি। আজ হবে প্রথম দেখা, প্রথম কথাবার্তা। ভাবতেই শরীরটা কেমন যেন শিউরে উঠে। ভয় হয় খুব, না জানি কেমন উনি। আচ্ছা উনার আমাকে পছন্দ হয়েছে তো! নাকি আবার হিন্দি সিরিয়ালের নায়কদের মত রুমে ঢুকেই আমাকে বলে দিবে, যাও ফ্লোরে গিয়ে শোও। মানিনা আমি তোমাকে। আমি অন্য একজন কে ভালোবাসি,,হাবিজাবি ইত্যাদি ইত্যাদি!
.
তাহলেতো আমি কষ্টে পুরাই শেষ হয়ে যাবো। আমার সেই ছোট বেলা থেকেই যে স্বামী, সংসার এসব নিয়ে অনেক স্বপ্ন। অগনিত স্বপ্ন বুনেছি এই একজন মানুষকে নিয়ে। তার সাথে জুড়ে যাওয়া আমার ভবিষ্যত দিনগুলো নিয়ে।
কত শত রোমান্টিক গল্প,উপন্যাস, নাটক পড়েছি,দেখেছি....আর আমার বরকে নিয়ে স্বপ্ন বুনেছি তার হিসেব নেই।
এসব করে করে পড়াশুনার ১২টা বাজিয়েছি। পাঠ্য বই পড়ার সময় ছিল কই আমার!
.
জানিনা কেমন হবে আমার বর।
এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাত দরজা খুলার শব্দ কানে আসল, কানে শব্দটা আসতে দেরী, কিন্তু বুকের ভেতর মোচর দিয়ে উঠতে দেরী নাই।
মনে মনে আয়াতুল কুরসী/ লা ইলাহা ইল্লা আন্তা....সব দোয়া পড়ে ফেলছি আমি।
এতো awkard ফিল হয় বিয়ে করলে,জানলে তো বিয়েই করতামনা। আল্লাহ আমার বরটা যেন খুব ভালো হয়, একদুম রাগী না হয়৷ দেখো খোদা। মাবুদ।
.
বর দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে ছিটকিনি লাগিয়ে দিল, এতে আমার ভিতরের মোচরানো যেন আরো বেড়ে গেল। এতো কেন ভয় হচ্ছে?
অবশ্য যার সাথে এই প্রথম তাও কিনা বাসর ঘরে এসে দেখা হচ্ছে, আমার প্রান প্রিয় বর ভয় তো হবেই।
আমি যে খুব বর পাগলী হবো তাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। আমি তো এই ভয়ের মধ্যেও তাকে দেখে বড়সড় একটা ক্রাশ খেয়ে ফেললাম।
কি দেখছি আমি! এতো সুদর্শন বর ও কিনা আমার মত পড়াচোর, ফাঁকিবাজ এর কপালে ছিল! যদিও আমি দেখতে খারাপ নই তারপরো কেমনে সম্ভব! হাও...হাও! how is this possible!

.
আমি তো হা হয়ে গেলাম পুরা। উনার গায়ের রঙ একদুম ধবধবে সাদা না হলেও, ফর্সা বলা যায়। ছেলেদের বেশী ফর্সা আবার কেমন যেন মেয়েমেয়ে লাগে। ইয়া লম্বা উনি। ওয়াও লম্বা ছেলেদের তো ছোট বেলা থেকেই আমার খুব পছন্দ। হুররে মনে মনে কি যে খুশি লাগছে, এতো সুন্দর ছেলের বউ হতে পেরে। উনার হাইট টা দেখেই খুশির পরিমান এতো বেড়ে গেছে।
.
ওনার নামটার মতই উনি সুন্দর। আসলে নামের থেকেও সুন্দর। উনার নাম স্পন্দন। আর আমি আরুশী। হঠাত উনার কথায় আমার অবাকত্বের সময় সমাপ্তি ঘটলো।
স্পন্দন- এতো হা করে কি দেখছো এভাবে?
স্বামী যে রুমে আসলে স্ত্রী রা তাদের সালাম করতে হয় তাও দেখি জানো না! এট লিস্ট মুখে তো বলতে। কি গাধী বউ জুটলো আমার কপালে। যত্তসব। বলে ওয়াশরুমে চলে গেলেন হাতে তোয়ালে নিয়ে।
আল্লাহ উনি কি বলে গেলেন এসব? আমি গাধী! ইয়া আল্লাহ যে ভয়টা পাচ্ছিলাম এই রাগী, বদমেজাজ ছেলেটাই আমার বর হলো। কথার ধরনে তা বুঝতে বাকি নেই আমার যে উনি প্রচন্ড রাগী। আমি তো রাগী মানুষ প্রচন্ড ভয় পাই। এ্যাঁ এবার আমার কি হবে ভেবেই খুব কান্না পাচ্ছে আর অসহায় মনে হচ্ছে নিজেকে।

.
তাকে আমি কি করে বলি, আমি যে তাকে দেখে এত বড় ১টা ক্রাশ খেয়ে ফেলেছিলাম তখন যে উনাকে সালাম দেয়ার কথাও মাথায় আসেনি। যদিও উনি আসার আগে পর্যন্ত কথাটা মাথায় ই ছিল,
ছেলেদের রূপ কি তাহলে এতটাই মারাত্মক হয়?
সে যাই হোক, উনি আসলেই আমি উনাকে আগে সালাম করব পা ছুঁয়ে।
.
আল্লাহ দেখো আবার আমাকে উনি লাথি টাথি দিয়ে উড়ায়ে না দেয় আমাকে…
চলবে…
রাগী বর ২ 

লেখা- Rafiya Riddhi
.
বেশ কিছুক্ষণ হলো, তিনি এখনো ওয়াশরুমে। কি জানি বাসর রাত মনে হয় পুরোটা এমনেই শেষ হবে। অনেক ঘুম পাচ্ছে। চোখ খুলে রাখতে পারছিনা ঘুমের জন্য। আর তাছাড়া উনি ওয়াশরুমের ভেতরেই ভালো মনে হচ্ছে। নির্ভয় মনে হচ্ছে নিজেকে…বের হয়ে আবার যদি রাগ চালু হয়ে যায়।
আচ্ছা উনি কি সত্যিই রাগী? আমি বেশি ভাবছি নাতো! শুধু এক রাতের একটা কথায় বা কথার ধরনে কি আমার উনাকে রাগী মানুষ ধরে নেয়াটা যথাযথ হচ্ছে! উমম হুমম, এখন কিছু ধরে না নেয়াই যথাযথ হবে। এমনও তো হতে পারে, রুমে আসার আগে অন্য কোন ব্যাপার নিয়ে উনার রাগটা উঠেছে। তাই এমন করলেন। আর সেটা তো স্বাভাবিক। বেশীরভাগ সময় শান্ত মেজাজে থাকা মানুষটাও একটা সময় কোন না কোন ব্যাপার নিয়ে রেগে যেতেই পারে। তাতে তো সে মানুষটাই রাগী উপাধিটা পেয়ে যেতে পারেনা।
আবার উনি আসলেই রাগী মানুষও হতে পারেন। তাই আমার সাবধানে থাকাটাই ভালো। বিয়ের রাতে গাধী শব্দটার পাশাপাশি অন্য এমন আর কোন শব্দ শুনে তা স্মৃতি হিসেবে রাখার আমার কোন ইচ্ছে নাই। আজকের জন্য এটাই যথেষ্ট। আল্লাহ মাবুদ আমার, তোমার এই নিষ্পাপ, ছোট্ট বান্দাটাকে তার বরের রাগ থেকে হেফাজত করো খোদা।
সহায় হও মাবুদ…

আরও কিছু সময় পর উনি বের হলেন। কি করছে ভিতরে এতক্ষণ আল্লাহ জানে। বিয়ের শেরওয়ানি চেন্জ করে বাসার অাবতারে এসেছেন দেখছি। ওয়াহ ভালোই লাগছে দেখতে। যত ভালোই লাগুক, আমার আর এই রূপে ভোলে গেলে চলবেনা। উনি আমাকে গাধী বলেছে, কত্তবড় কথা, তাও নতুন বউকে।
টাওয়াল দিয়ে চুল মুছে যাচ্ছেন। এদিকে কোন খেয়াল নেই।

একেবারে শাওয়ার নিয়ে এসেছেন বোধ হয়। উনার শাওয়ার দরকার ও। রাগী মানুষ তো আলয়েজ হট হয়ে থাকে মেবি মাথা। স্পেসিফিকলী রাগটা শুধু এখনকার হলেও, শাওয়ারটা উপকারেই আসবে। মাথা ঠান্ডা হবে, রাগ কমবে। তাই আমার জন্যই ভালো। মেজাজ একটু হলেও শান্ত থাকবে। তার উপর সারাদিন অনেক ধকল গেলো।
আজকাল বিয়ে করা সবচে বড় পরিশ্রমের কাজ। বিশেষ করে আমাদের মেয়েদের জন্য তো আরো বেশী। এতো মোটা করে মেকাপ, ভারী ভারী গহনা পড়ে এলিয়েন সেজে বসে থাকা। বিদায়ের সময়টার কষ্ট টা। মা বাবা, পরিবার ছেড়ে আসার কষ্টটায় তো পুড়তে থাকি আমরা সারাটাক্ষণ। কিন্তু তার প্রকাশ শুধু বিদায়ের সময়টায় ঘটে। অনেক কেঁদেছিলাম তখন। আর তাছাড়া টেনশনে খাওয়া দাওয়া তো বন্ধ থাকে সেটা আরেক। এত কান্নার পর এখনো অনেকটা ঠিক আছি তাতেই আলহামদুলিল্লাহ।
হয়ত যেটুকু ক্লান্তি, কষ্ট আছে তাও ঘুচে যেত, বর যদি একটু ভালোবাসা ভরা কন্ঠে বলত, 'যাও ফ্রেশ হয়ে আসো। এত ভারী গহনা, শাড়ী পড়ে থেকো না আর। ক্লান্তি বাড়বে।'
আমার মত বর পাগলী মেয়েদের জন্য এটাও অনেক বড় ব্যাপার, অনেক শান্তির একটা বিষয়। কিন্তু আমার সাথে তো উনি উল্টো রাগ দেখায়ে চলে গেলেন তখন। খুব খারাপ লাগছে এসব ভেবে। আপাদত এসব ভাবা যাবেনা এখন আর। তাহলে খারাপ লাগাটা আরও বাড়বে…
এর মধ্যেই উনি বললেন, ব্যাপার কি? বসে বসে, কি এতো ভাবা হচ্ছে, হ্যা? আর এসব শাড়ী, গহনা পড়ে আছো যে এখনও। যাও ফ্রেশ হয়ে নাও। আর হাল্কা কিছু পড়ো, go। উফ, সব দেখি এই মেয়েকে আমারই বলে দিতে হবে।
উনার কথাটা শুনে আমি তো সেই আকারের খুশি। মনের মধ্যে কষ্টটা আসা মাত্রই উনি এসব বলে, কষ্টটা কে 10G স্পিডে ভাগায়ে দিলেন। হয়ত, আমার কষ্টগুলোর কারনও উনি আর মলমও উনিই। হোকনা একটু রাগী। দেক না একটু কষ্ট। তাতে কি! কেয়ার ও তো একটু একটু করছেন। আল্লাদি কন্ঠে না হয় নাই বলুক। বলেছে যে সেটাই কম কিসের। ভেবেছে তো আমার কথা। নাহ, বর আমার রাগী হোক আর যাই হোক। একটু একটু ভালো ও আছে। বউ কে নিয়ে ভাবে কম করে হলেও। যাতে আরও বেশী করে ভাবে, সেটা সুনিশ্চিত করার বাকি দায়িত্ব আমার।।
আমি আর দেরী করলাম না। ধীরে ধীরে নেমে গিয়ে উনার সামনে দাঁড়ালাম। উনি আমার দিকে একটু বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকালেন, আমি উনি কিছু বলার আগেই একটু ঝুকে উনাকে ঝটপট সালামটা করে নিলাম। তারপর উঠে দাঁড়ালাম। উনি কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে আমার মাথায় হাত রাখলেন। আমি বুঝলাম না, উনি ঠিক কি করতে যাচ্ছেন। উনি বললেন।
স্পন্দন- দোয়া করি বাছা, সৌভাগ্যবতী হও। তোমার স্বামী দীর্ঘায়ুজীবী হোক। সে আরও অনেক বছর সুখে শান্তিতে বেঁচে থাকুক। (মুখে দুষ্টামির হাসি)
.
(এটা কি হল? দোয়াটাও নিজের জন্যই করল। তা না হয় করল, আমাকেও রাখত একটু দোয়াটায়
নাহ এই বর তো সুবিধার না বেশী। রাগীর পাশাপাশি তো ভালোই মজা করতেও জানে
।)


আমি- এখন আমার এই দোয়ার চেয়েও অন্য দোয়া বেশি দরকার। ওই দোয়াটা একটু করে দিবেন প্লিজ? সাহস নিয়ে বলেই ফেললাম।
স্পন্দন- তো বলেন, কি দোয়া চাই আপনার? স্বামীর দীর্ঘায়ুর চেয়ে কি এমন দরকার হয়ে গেল আপনার। আর এত যে দোয়া চেয়ে নিচ্ছ। তোমার কি আমাকে এতটাই ছেঁচড়ে মনে হয়? আগে সেটা বলো… রেগে গিয়ে
- এমা, কই নাতো। আমি তো তেমন কিছুই বললাম না আপনাকে
। ভয়টা আবার পাচ্ছি খু্ব, উনার রাগ করে কথা বলার ধরনটাই এমন। যে কোন সাহসী মানুষও ভয় পেতে বাধ্য, আর আমি তো কিছুই না। এক আঙুলে একটা বাচ্চা মেয়ে


- তোমাকে আমি বলার পর, তারপর এসে সালাম টা করলে। ব্যাপার টা কিছুটা এমন হয়ে গেলনা যে আমি সেধে তোমার থেকে সালামটা নিয়েছি? মুখটাকে বাংলার পাঁচ করে রাখছে
- প্লিজ, আমি সরি। এমন ভাববেন না। আমি ভুল করে, ভুলে গিয়েছিলাম সালাম করার কথাটা। প্রথম বিয়ে তো তাই ভুল হয়ে গেছে। আমি জানতাম সালাম করার ব্যাপারটা। বাট ক্লান্তিতে সব ভুলে গিয়েছি। প্লিজ, বিশ্বাস করেন আমি তেমন ভাবিনি আর আমি গাধীও না। চোখে মুখে ভয়

- কিন্তু কি এমন বললাম আমি কে জানে, আমার কথায় উনি হো হো করে হেসে দিলেন, আর দাঁড়ানো থেকে পাশে থাকা সোফাটায় বসে পড়লেন। আর বললেন, হুম ঠিকাছে বুঝলাম। এখন যান ফ্রেশ হোন। বলে আবার একটু হাসল…
- আমি এই দীর্ঘ ১.৫ ঘন্টার বাসরে, এই প্রথম উনার মুখে রাগী ভাবটা না দেখে উল্টো উনাকে হাসতে দেখলাম। কি অসাধারণ সুন্দর সেই হাসি। আসলে উনি যদি সত্যিই রাগী হোন, কম হেসে থাকা টাইপের হয়ে থাকেন সেটাতেই ভালো হয়েছে। নতুবা এই হাসি কত মেয়েকে যে ঘায়েল করতে পারে, তা চিন্তার বাইরে। যেমন আমি এখন ঘায়েল অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছি, ইশশ কি মারাত্মক তার রূপ, কি ভয়াভয় সুন্দর তার হাসি।
উনার দুটো ভেমপায়ার টিথ আছে সামনে
। যাকে বলে গেজ দাঁত। গেজ দাঁত থাকা মানুষের হাসি অসম্ভব রকমের কিউট হয় শুনেছিলাম। আজ তার প্রমাণও পেলাম। আমিতো এখনও চেয়ে আছি তার দিকে। ইশশ মানুষটা এতো স্বল্প কেন হাসল? আরো কিছুক্ষন কেন হাসছেনা! ইচ্ছে হচ্ছে বলি, আরেকটু হাসুন না প্লিজ। আবার একটা ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছি আমি…

নাহ, এভাবে তাকিয়ে থাকলে আবার কখন গাধী থেকে আবার লুচি বলা শুরু করে ঠিক নাই। নিজেকে সামলা আরুশী, সামলা নিজেকে।
আমি আর কিছু না বলে, আমার কাপড় গুলো Bridecake থেকে বের করে নেয়ার জন্য পা বাড়ালাম।
ঠিক তখনই উনি পেছন থেকে বলে উঠলেন,
স্পন্দন- বাই দ্যা ওয়ে, মানুষ বিয়ে কয়টা করে বলো তো?! সবারই তো বিয়েটা তার জন্য প্রথম বিয়েই হয়, নাকি বিয়ের আগে ট্রেনিং হিসেবে আরেকটা বিয়ে হয়…?
হুম? ভ্রু দুঁটো নাচায়ে, মুখে দুস্টোমি হাসি নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন…


আমি-
চলবে…
লেখা- Rafiya Riddhi
.
আমি আর কিছুই না বলাটা বেটার অপশন মনে করলাম। সবসময় এমন উল্টাপাল্টা কথা বলে, লজ্জা পেতে হয় আমাকে।

স্পন্দন- এদিকে আসো।
আমি- হু!

-বললাম আমার সামনে এসে দাঁড়াতে।
আমি উনার কথা অনুযায়ী কাজ করলাম। কিন্তু যেটা ভাবিনি একদুম, উনি সেটাই করলেন। আমাকে টান দিয়ে নিয়ে নিজের পায়ের উপর বসালেন। এতক্ষণ তো ভুলেই গিয়েছিলাম যে, এখন শীতকাল চলছে। উনি গোসল করেছেন বিধায় উনার হাত দুটো একদুম বরফ এর মত ঠান্ডা হয়ে আছে। কেমনে করছে এই রাতের বেলা গোসল! সাহসী পুরুষ…
- সেই বরফের মত ঠান্ডা হাত দুটো নিয়ে উনি আমার উন্মুক্ত কোমড়ে রাখলেন। অন্য কোন ফিলিংস আমার এই মুহূর্তে একদুম ই হচ্ছেনা উনার এই কাজে। উনার ঠান্ডা হাতের স্পর্শে কাঁপছি পুরা।
স্পন্দন- কেউ আমার কথার উত্তর না দেয়া ব্যাপারটা আমার খুবই অপছন্দের।

- তাও কিছু বলছিনা, আসলে কি বলব খুঁজে পাচ্ছিনা। ভয়ে উল্টোপাল্টা বলে ফেলব আবার লজ্জা পাব। তাই চুপ থাকলাম। দৃষ্টি দুটো ফ্লোরে। আর আমার অবস্থা
দাঁতে দাঁতে বাইড়াবাইড়ি আরকি।


- উনি হাত দুটো আমার কোমড়ে আরো চেপে ধরলেন, আর আমাকে নিজের কাছাকাছি নিয়ে গেলেন। থুতনি ধরে মুখটা উঁচু করে, এক নজর আমার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আবার বললেন, কি শীত করছে নাকি? যাই হোক, তোমার যদি এমন কোন ইচ্ছা জাগে মানে একাধিক বিয়ে করার ইচ্ছা, তাহলে আমাকে জানাবে। কেমন?
- অবাক হলাম কথাটা শুনে, কিন্তু কিছু বললাম না। মাথা নাড়লাম। মানে আমি তাকে জানাবো এমন ইচ্ছে যদি জাগে।

স্পন্দন- দাঁত কটমট করে, কেন জানাতে বলছি জানতে চাইবেনা?

-জ...জ্বি...ক..কে..ন..ন?
এখন উনার হাত দুটো একটু কম ঠান্ডা মনে হচ্ছে। খুব লজ্জা কাজ করছে উনার স্পর্শে। মাথা আবার নিচু করে নিলাম। ওই চোখে তাকিয়ে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না। বাঘের সেই চোখের চাহনীতে বাঘিনী বারবার ঘায়েল হয়ে যাচ্ছে তাহলে।
-ইচ্ছা যদি জাগে তাহলে আমি এমন কিছু একটা করব, তোমার একাধিক বিয়ের সেই ইচ্ছাটা মুহূর্তেই ঘুচে যাবে। আর ভাববে এই একটা বিয়েই বা কেন করলে।

হাত দুটো কোমড় থেকে সরিয়ে বললো, যান এবার। ফ্রেশ হোন।

আমি ১ সেকেন্ডও আর বেশী দেরী করলাম না। উনার পায়ের উপর থেকে উঠে, ড্রেসিং টেবিলের সামনে চলে আসলাম। উনার ভাবগতি তেমন বুঝছিনা আমি…গহনা গাটি খুলায় মন দিলাম। মেকাপ যে পার্লারের ওরা কয় কেজি লাগাইছে আল্লায় জানে। শুধু পানিতে কাজ হবেনা। মেকাপ রিমুভার লাগবে। আয়নায় দেখলাম উনি আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। এই তাকিয়ে থাকা দৃষ্টির ধরন বুঝলাম না…
কিন্তু অজান্তেই একটা লজ্জামাখা হাসি চলে আসল আমার।
আয়নায় দেখছি, উনি সোফা থেকে উঠে আমার কাছেই আসছে। বিচলিত হয়ে পড়লাম। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে রোমান্সের অনেক অনেক কায়দা দেখেছি মুভিতে, সিরিয়ালে। তা ভেবেই এমন হচ্ছে
স্পন্দন উঠে আমার পাশে এসে দাঁড়ালান। আমার মাথার ঘোমটা টা ফেলে দিয়ে, চুল থেকে এক এক করে ক্লিপ খুলছেন খুব যত্ন করে। পার্লারে অনেক সুন্দর করে চুলটা বেঁধেছিল আজ।
স্পন্দন- কোন কাজই ঠিক ভাবে পারো না, যা বুঝতেছি। ১ মিনিটের কাজ ১০ মিনিট লাগাও
আমি- আমার কোনকিছুই তো আপনার পছন্দ হচ্ছেনা।
একটু অভিমানী কন্ঠেই বললাম কথাটা

স্পন্দন- 
কোন কাজ, কথা কিছুই তো ঠিকভাবে বলছ না, করছ না। এর চেয়ে ভালো আর কি ভাবব। ঘুমটা না সরিয়ে গয়নাগাটি খুলতে গেছে উনি। আর ৫ মিনিটের কাজ ২০ মিনিট লাগায়ে করছো। আমার কপাল করে জুটছে তোমার মত বউ। কিছুই পারোনা।



যত যাই বলুক, অনেক সুন্দর করে, যত্ন নিয়ে উনি আমার চুলটা খুলছেন। আমি হলে হয়ত ঝট লাগিয়েই বসে থাকতাম এতক্ষনে। আসলেই আমার দ্বারা কোন কাজ ঠিকভাবে করা সম্ভব না।
আর আমি এমন অগোছালো টাইপ বলেই হয়ত আল্লাহ আমাকে এমন গোছানো বর দিয়েছেন।
আমি- কিছু না হয় নাই পারলাম। আস্তে আস্তে আপনার সাথে থেকে হয়ে যাবে সব।
এত্তগুলা ভালোবাসা নিয়ে বলে ফেললাম কথাটা। আসলে নিজেকে একটা পিচ্চি বাচ্চা মনে হয় যখন কেউ এভাবে কেয়ার করে।
উনি কোন উত্তর করলেন না আমায়
ততক্ষণে চুল খুলা শেষ। উনি আমাকে আয়নার দিকে মুখ করে ঘুরায়ে দিলেন, তারপর আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
-তবে তোমার একটা জিনিস আমার খুবই ভালো লেগেছে।

-আমি খুব আগ্রহ নিয়ে, আয়নার মধ্যদিয়ে উনার উত্তরের অপেক্ষায় উনার দিকে তাকিয়ে আছি
-উনি আমার ছাড়া চুলে একটা চুমু দিয়ে, চুলে নাক ডুবায়ে ঘ্রাণ নিলেন। তারপর বললেন তোমার এই লম্বা, কালো কেশ। আর এর মিষ্টি ঘ্রাণটা। অসম্ভব ভালো লেগেছে। উন্মাদ করে তোলা এক ঘ্রাণ যেন… বলে একটা চোখ মারলেন
উনার চোখ মারার ধরনটাও উনার মতই বিশেষ মনে হলো আমার।
-যাক বাঁচা গেলো। আমার কিছুতো পছন্দ হয়েছে আপনার…
-বাঁচাবাঁচি নাই। ফ্রেশ হয়ে আসেন তারপর দেখা যাবে বাঁচলেন কিনা…
আবার সেই দুষ্টু হাসি
-উনার এই কথার অর্থ হয়ত বুঝেছি আমি…তাই তো কথাটা ঠিক বুকে গিয়ে বিধলো আমার।
আব ব্যস ভি কার পাগলে, জান লেগা কেয়া…!
উনি আমাকে ছেড়ে বেড এ গিয়ে বসলেন টিভির রিমোট টা হাতে নিয়ে…আমার দিকে আর দৃষ্টি দিলেন না একদুম…টিভি দেখছেন।
একটা থ্রিপিস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে আসলাম। আর অনেকটা সময় নিয়েই ফ্রেশ হলাম। হাত মুখ ধুয়েছি তাতেই শীতে কাঁপাকাপি লেগে গিয়েছে আমার। উফফ…জমেই যাবো মনে হয়…
বের হয়ে দেখলাম…রুমে একটা ডিম লাইট জ্বালিয়ে রেখেছেন আর বেডে শুয়ে আছেন। ঘুমিয়ে গেল নাকি! হয়ত।…ধ্যাত! অনেকটা সময় লাগিয়ে ফেলেছি বোধ হয়…উনার সাথে তেমন কথাই হল না। লোশন দিচ্ছি আর আফসোস করে যাচ্ছি…
স্পন্দন- আরও কিছুক্ষণ থাকতে ভিতরে। এত জলদি আসলা কিভাবে!
আমি- যাক জেগে আছে…! না মানে, ক..ক...কই…
-কি পড়েছ এটা?
-জ্বি, থ্রি....পীস।
-
শাড়ি নেই?


-হুম, আছে তো!
-ওখান থেকে একটা লাল যেকোন শাড়ী পড়ে আসো যাও। আর এবার জলদি আসবে, না হয় দরজা ভেঙে দেখবো, এত সময় কিসে লাগাও তুমি

-উনার কথায় খুব খুশি লাগছে আমার। অলস মেয়েটা পুনরায় জামা পাল্টাবে, তাতেও তার বিরক্তি হচ্ছেনা। অবাক করা ব্যাপার।
কারন যা দেখছি বর তো খুব রোমান্টিকও আছে। বউ কে শাড়ি তে দেখতে চাওয়া অনেক বড় রোমান্টিকতার পরিচয়…
আমি চটজলদি একটা লাল শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে এলাম
-তখনই মাথায় একটা কথা খুব করে ঘুরপাক খাচ্ছে। আজ তো বিয়ের প্রথম রাত। এই রাতটা স্বামী স্ত্রী এর জন্য অনেক স্পেশাল। এ রাতটা নিয়ে একেকজনের স্বপ্ন একেক রকম। আমার স্বপ্ন ছিল এই রাতে আমি আমার বরের সাথে গল্প আর জোৎস্নাবিলাশ করে কাটাবো, তার সম্পর্কে সব কিছু জেনে নিব। তার পছন্দ অপছন্দ। হাতে হাত রেখে অনেক গল্প করব। আচ্ছা উনি কোনটা করবেন এই রাতে? আমাকে কাছে টেনে নিবেন! নাকি আমার স্বপ্নের মতই রাতটা পার করবেন! দেখা যাক…কি হয়!
- কোনটাতেই যে আমার আপত্তি রয়েছে তা কিন্তু নয়। তারপরও আগে পরিচিত হওয়াটা বিশেষ জরুরি মনে করছি আমি…
এসব ভাবতে ভাবতেই শাড়ি টা পড়ে নিলাম। দেরী করিনি পড়তে, কিন্তু খুব যে তারাতারি হয়েছে তাও না…বের হয়ে দেখি উনি বেড এ বসে আছেন
স্পন্দন- এখন বলো তো, তোমার বর কাজটা কি মন্দ করেছে?
-জ্বি, কোন কাজটার কথা বলছেন?

- উনি আমাকে ড্রেসিং টেবিলের কাছে নিয়ে গেলেন…এই যে থ্রিপিস পাল্টায়ে আবার শাড়ি পরতে বলার কাজটা…কি ভুল হয়েছে?
-না ভালো হয়েছে, শীত কম লাগছে।

স্পন্দন- কি উদ্ভট উত্তর তোমার! ওয়াহ!

পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে…এই দেখো, এখনই তোমাকে নতুন বউ বুঝা যাচ্ছে। আর যাতে শাড়ী বাদে বাসায় অন্যকিছু পড়তে না দেখি তোমাকে…তাহলে তোমার খবর আছে…
আয়নার দিকে তাকিয়ে বললেন।

আমি-উনার আমাকে পেছন থেকে এই জড়িয়ে ধরাটা, খুবই ভালো লাগছে আমার। এই প্রথম কোন পুরুষের স্পর্শ পেয়ে যাচ্ছি, তাও সে কিনা একান্তই আমার নিজের পুরুষ…আমার স্বামী।

স্পন্দন আমাকে উনার দিকে ফিরালেন, আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছেন। আমার তো খুব লজ্জা পাচ্ছে…উনার ঠোঁট আমার দিকে এগিয়ে আসছে, আমি আমার চোখ দুটো বন্ধ করে নিলাম। উনি আমার দু চোখের পাতায় সুন্দর করে দুটো চুমু খেলেন আর বললেন…
স্পন্দন- তোমার কেশ আর চোখ আমার প্রিয় জিনিস হয়ে গেল আজ থেকে, তাই এই দুটায় স্পেশাল যত্নে রাখবা সবসময়…
আমি সম্মতি জানিয়ে মাথা নাড়লাম…
রাগের আড়ালেও তার মধ্যে আরো অনেক অনেক বিশেষ ব্যাপার দেখতে পাচ্ছি আমি। তার প্রতিটা স্পর্শই বিশেষ লাগছে খুব…আমার মনের খুশি আজ পৃথিবীর কোন শব্দ বা কোন কিছু দ্বারাই ব্যাখ্যা করা সম্ভব না। আমার মনে হচ্ছে, আমি আমার এতবছরের লালিত স্বপ্নগুলোর চেয়েও অনেক বেশি পেতে যাচ্ছি আমার বাকিটা জীবনে।
হুট করে স্পন্দন আমাকে উনার কোলে তুলে নিলে, আমি উনার গলা জড়ায়ে ধরি। আমার মুখে সেই লজ্জা মাখা হাসি এখনও লেগেই আছে। পারছিনা উনার দিকে তাকিয়ে, উনার অভিব্যক্তি বুঝার চেষ্টা চালাতে। কি করে তাকাবো, ভিষন লজ্জা আর সংশয় আমাকে বাধা দিচ্ছে যে…
আমাকে কোলে নিয়েই উনি সামনে অগ্রসর হচ্ছেন, হয়ত একটা সুখের সমুদ্র একসাথে পাড়ি দিতে চলেছি আমরা দুজনে…
পরদিন
ঘুম ভাঙলো ভোরের দিকেই। প্রথমে চোখ খুলেই পাশে ঘুমন্ত আমার রাগী বরের কিউট চেহারাটার দেখা মিল্ল…। কি মায়া উনার মুখে। ইশশ, কে বলবে এই নিষ্পাপ চেহারার মানুষটা রাগ দেখাতেও জানে…!
আবার খুব যত্ন ও নিতে জানে তার বউয়ের।

আমার ডান হাতটা, উনার ১ হাত দিয়ে ধরে আছেন। কাল রাতেই ঘুমানোর আগে আমার হাতটা ধরে ঘুমাতে যান , বাহ এখনও ধরে আছে দেখছি। এটা দেখে, মনে অন্য এক ভরসা পাচ্ছি…
বলা বাহুল্য কাল রাতটা ছিল আমার জন্য স্বপ্নের মতই সুন্দর একটা রাত…
চলবে…
রাগী বর ৪ 

লেখা- Rafiya Riddhi
.
বেড থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে, বারান্দায় চলে গেলাম সকালটা দেখার জন্য। কিছুক্ষণ সকালের বিশুদ্ধ বাতাস গায়ে লাগালাম, হাঁটাহাঁটি করলাম। তারপর রুমে ফিরে আসলাম।
স্পন্দন এখনো ঘুমে। বাসার সবাইও হয়ত এখনো ঘুমোচ্ছে।
আমি তাই শাওয়ার নিতে চলে গেলাম। শাওয়ার শেষে একটা শাড়ি পড়ে নিলাম। নতুন বউ, না হয় কফি বানাতে চলে যেতাম। বোর হচ্ছি খুব…টাওয়াল টা হাতে নিয়ে সোফায় বসলাম।
-গুড মর্নিং। উনি আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে বললেন।
-আমিও ক্ষীণ হেসে উত্তর দিলাম, গুড মর্নিং।।
সোফায় বসে আছি আর চুল গুলো এক এক করে মুচ্ছি। এভাবে না মুছলে চুল থেকে পানি পরতে থাকে আমার…

স্পন্দন বেড থেকে উঠে আমার চুলগুলো একবার ছুঁয়ে দিয়ে বললেন যেভাবে আছো, এভাবেই থাকবে। আমি আসছি…বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলেন।
এরই মধ্যে দরজায় কড়া নড়লো…মাথায় ঘুমটা টেনে দরজা খুললাম, আমার ননদ এসেছে। নাম জানিনা আমি।
শুধু এতটুকু জানি, সম্পর্কে আমার ননদ হয়…

ননদিনী- শুভ সকাল ভাবি।

।
আমি- শুভ সকাল। কেমন আছেন আপু? মানের দিক থেকে আমি বড় হলেও, বয়সে ননদ আমার বড় হবে কিছুটা…
-আলহামদুলিল্লাহ। ভাবি চলেন আমার সাথে…নাস্তা করবেন…মা অপেক্ষা করছে…
-কিন্তু আপনার ভাইয়া তো এখনও ফ্রেশ হচ্ছেন।
-সমস্যা নেই। ভাইয়া চলে আসবে…আপনি চলুন। হাত ধরে……
আমি আপুর সাথে চলে আসলাম। উনি বিবাহিত। খুব মিষ্টি দেখতে আর কথা গুলোও খুব মিষ্টি…
ডাইনিং এ তেমন কেউ নেই কেন বুঝছিনা, সবার খাওয়া শেষ নাকি।

আমার শাশুড়ি মা বললেন,
-কাল রাতে তো তেমন খেতে পারলেনা মা। তাই এখন বসে পরো, খেয়ে নাও।
-আর কেউ খাবেনা এখন? সবাই একসাথে খাই নাহয়।
-একসাথে অনেক খেতে পারবে। বসে পরো এখন। আর এক মিনিটও ক্ষুধা পেটে থাকা যাবেনা… একটু শাসনের সুরেই বললেন
-আমি কথা না বাড়িয়ে, বসে পড়লাম। নতুন বউ মানুষ…
মা আপুকে বললেন,
-ইন্তিহা, তুই ও বসে পড়। এই অবস্থায় দেরী করে খাওয়া চলবে না কিন্তু একদুম।
বাহ ননদিনীর নাম তাহলে ইন্তিহা। নামটাও তার মতই মিষ্টি। তবে মা এটা কেন বলল? উনার কি অবস্থা আবার! কিছুক্ষণ ভালো মত পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পারলাম…ইন্তিহা আপু প্রেগনেন্ট। তেমন বুঝা যায়না।
আপু কে কংগ্রেস করতে হবে, তবে এখন না। পরে…
আমরা দুজনে নাস্তাটা করে ফেললাম। মা ইন্তিহা আপুকে বললেন, আমাকে রেডি হতে হেল্প করার জন্য…
রেডি কেন হতে বলল, জানিনা।
আপু আর আমি উনার রুমের দিকে যাচ্ছি, আপু আমার হাত ধরে হাঁটছেন, আর অনেক কথা বলছেন। আমি মন দিয়ে শুনছি সব। নতুন বউ তাই কথা কম বলছি,,,না হয় আমি আবার পেটেরপেটেরে এক্সপার্ট।
উনাকে দেখলাম রুম থেকে বের হচ্ছেন…কেমন একটা রাগ রাগ ভাব মুখে। পাশ দিয়ে চলে গেলেন, একবার তাকালেন ও না আমার দিকে…

ইন্তিহা আপু- ভাইয়ার ভাব দেখছো, ভাবি? নিশ্চয়ই রেগে আছে কিছু নিয়ে…
-আর রাগটা হয়ত আমাকে নিয়েই মনে মনে ভাবছি। আমি আপুকে জিঙ্গেস করলাম, আপু এখন রেডি কেন হতে হবে!
-তোমাকে দেখতে পাশের বাসার আন্টিরা আসবে তো। আর দুপুর বেলা ভাইয়ার বন্ধুবান্ধব দেরও দাওয়াত দেয়া হয়েছে ওরাও আসবে…তাই একটু প্রস্তুতি তো দরকার নাকি!
-ও আচ্ছা। কিন্তু মনটা আমার খচখচ করে যাচ্ছে এটা জানার জন্য যে উনি কি নিয়ে আবার রেগে আছেন…

-উদাস কেন? ভাইয়ার রাগ দেখে নাকি!
হুমম! শোন ভাইয়া কিন্তু খুব রাগী আছে…কিন্তু রাগী হলেও খুব ভালো। নিজের ভাই বলে বলছিনা কিন্তু…ভাইয়ার আদর স্নেহ আর শাসনের ছায়ায় বড় হয়েছি। যেমন তার রাগ, তেমনই তার অকৃত্রিম ভালোবাসা…পরিবারের সব সদস্যের মধ্যে ভাইয়াই তাই বেশি প্রিয় সবার কাছেই…

তুমিও বুঝতে পারবে, আমার ভাই যে একটা দামী হিরা, কুহিনূর সে…
স্বামীর প্রশংসা শুনতে ভালোই লাগছে।
-আচ্ছা এই শাড়িটা পড়ো আজ। ঠিকাছে তো ভাবি? তোমার কেমন লেগেছে?
-শাড়িটা অনেক সুন্দর। মেরুন কালারের…আমি হাসিমুখেই বললাম, হ্যাঁ গো খুব সুন্দর শাড়িটা…
-আমি পড়িয়ে দেই তোমাকে? নাকি নিজেই পড়তে পারবে…
-আপু, আমি তেমন ভালো তো পারিনা পড়তে। তুমিই দাওনা
আপু একটু মিষ্টি হেসে, আমাকে শাড়ি পড়াতে শুরু করলেন…আর বললেন, আমিও এটাই চাচ্ছিলাম
কিছুক্ষণ নিরবতার পর ইন্তিহা আপু বললেন,
-ভাবি, আমি তোমার বয়সে বড় হতে পারি। কিন্তু ননদ তো তোমার। আমাকে না বললে কিন্তু মানছি না…
-কি না বললে, মানছো না!

-ইশশ, বুঝেও বুঝেনা।
কাল রাতের বর্ণনা আরকি! 


ইন্তিহা আপুর কথাটায় বেশ অবাক হলাম। আপুটা এমন দুষ্টুমি ভঙ্গি নিয়ে এটা বলবে আমি কল্পনাও করিনি…
-এই নাও, শাড়ি পড়া কমপ্লিট। বাহ, খুব মানিয়েছে তো তোমাকে শাড়িটা।
এখন বলো বলো, কাল রাতের ঘটনা!

আমি আমতা আমতা করে যাচ্ছি…কি বলব বুঝছি না। আপু তুমি তো আগের বিবাহিতা, আগে তুমি বলো তারপর আমি ব....ল......ব,

এর মধ্যেই স্পন্দন রুমে আসলেন…
স্পন্দন- ইন্তু, তোকে মা ডাকছে। যাহ…
সিরিয়াস মুডে বলল…
ইন্তিহা- ভাবি, আমি আসছি এখন। বাকি সাজগোজ টা এসে করিয়ে দিবো। ভাইয়া, নাস্তা করছিস তো?
স্পন্দন- হুম, কমপ্লিট।
তারপর আপু চলে গেল। আমি আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নিলাম কেমন লাগছে…
আপু খুব সুন্দর করে শাড়িটা পড়িয়েছে। ওহে বর, একটু তো প্রশংসা করে স্বার্থক করো আমার সকালটাকে…ওহে…ওগো…শুনছ....মনে মনে

স্পন্দন- এই মেয়ে এদিকে আসো…কুইক…
সোফায় বসতে বসতে বললেন

এই রে, ভালোই খেপে আছে মনে হচ্ছে…কিন্তু আবার কেন রেগে গেলো…
নাস্তা করতে যাওয়ার সময়ও তো কেমনে জানি ছিল। এই আখরু তো কখনো রাগ, কখনো রোমান্টিক এর মধ্যেই লেগে আছে…আগে জানতাম নারীর মন বুঝা নাকি কঠিন, এখন তো দেখছি বর জাতির মন বুঝা আরও মুশকিল।


রাগী বর ৫+৬ 

লেখা- Rafiya Riddhi
.
আমি ভয়ে ভয়ে গেলাম উনার কাছে। উনি বললেন,
-বসো
আসি বসলাম।
- এখনই এতো অবাধ্য, বাহ! (স্পন্দন)
- বুঝলাম না।

-তখন বলেছিলাম কিনা, আমার জন্য ওয়েট করতে?
-কখন?
-
ওয়াশরুমে যাওয়ার সময়...


-ইশরে, আমার তো মনেই ছিলনা…
না মানে আপনি ওয়াশরুমে যাওয়ার পরপরই আপু নাস্তা করতে নিয়ে গেলেন। আমি তাই অপেক্ষা করতে পারিনি, সো সরি…
-নাস্তা একটু পরে করলে কিছু হতনা। বাট আমার কাজটায় তো ব্যাঘাত ঠিকই ঘটলো…
-কোন কাজটায়?
-তোমার আর জানা লাগবেনা। যাও যে কাজে ছিলা সেই কাজেই থাকো।
এটা বলেই মোবাইল হাতে নিয়ে কি যেন করছে……

নাহ, শুধুই রাগ দেখালে তো আমার আর কিছু করার নেই। আমি কি আপুকে নিষেধ করতে পারতাম নাকি তখন! বুঝার মানুষ যখন এমন করে তখন আর কি করার। করুক গে রাগ, হুহ…

আমিও সোফার একপাশে বসে আপুর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। এই আখরুর সাথে এখন একদম কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা…আমাকে কেউ শুধুশুধু বকলে খুব মন খারাপ হয়…
এভাবেই অনেক্ষণ হয়ে গেল, আপু আসছে না দেখে নিজেই একটু সাজগোজ করে ফেলি ভেবে সোফা থেকে যেই উঠলাম… তখনই স্পন্দন হঠাৎ আমাকে টান দিয়ে উনার কাছে নিয়ে গেলেন…
স্পন্দন- খুব ইগো নাহ! তোমার ভেজা চুলের ঘ্রাণ নিব ভেবেছিলাম। খুব তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে এসেও যখন তোমাকে দেখলাম না রুমে, তখন খুব রাগ হলো…সব কি ব্যাখ্যা করে বলতে হবে তোমাকে! আমি কি এমনি এমনি রাগ দেখাই আর…গাধী

ওহ আচ্ছা এই কারন তাহলে…মুখ টা কে বাংলার পাঁচ করে রাখার…

-আমি এমনই…
-তাইনা! দিনে পাঁচ বেলা মুগুর দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে…তখন ভেঙে বলা লাগবেনা কিছু। উল্টো আ…করলেই আখাউড়া বুঝে যাবে…দিব নাকি মুগুর!



-কোন মুগুরের কথা বলতেছে আল্লাহ ই জানে…এত সুন্দর একটা শাড়ি যে পড়েছি প্রশংসা তো করল না। উল্টো মুগুরের ভয় দেখাচ্ছে
অতি কষ্টে আমি কান্না করে দিলাম…

-ওই কান্দো কেন? মুগুর না দিতেই ব্যা?



-আপনি খুব খারাপ, সবসময় খালি রাগ আর বকা…এ্যাঁ

একটা পচা বর। মনে মনে
-স্পন্দন আমাকে ছেড়ে দিয়ে চোখ মুছে দিয়ে আমার একটা হাত ধরে বললেন, আমার কথার অমান্য করলে এমনই করব। আর কান্না বন্ধ ক........
দরজায় কড়া নাড়লো কে যেন, স্পন্দন গিয়ে দরজা খুললেন,
ইন্তিহা আপু এসেছে,
ইন্তিহা- কি গো ভাবি, যেভাবে রেখে গেলাম এভাবেই আছ? মেহমান রা তো চলে আসবে…আসো রেডি হবে…
-হুম, চলো।
স্পন্দন রুমের বাহিরে চলে গেলেন…
আমাকে ইন্তিহা আপু রেডি করে দিলেন, এই সময়টায় আমরা অনেকটা ফ্রি হয়ে গেলাম। আর আপুর সাথে কমফরটেবল ও ফিল করছি খুব…আপু অনেক মজার মানুষ…
১০ টার কিছু পরেই মেহমানরা আসলেন আমাকে দেখতে। পাশের বাসার আন্টিরা আর কিছু আত্মীয়স্বজন ও আসলেন। সবাই খুব মজার মজার কথা বলল, আমার প্রশংসা করল, এটা সেটা জিঙ্গেস ও করল…স্পন্দন তখন গায়েব ছিল। কই ছিলো কে জানে…
অপরিচিত আন্টি- মা তোমার নাম?
-জ্বি, আরুশী।
-বাহ। তো কিসে পড়ো তুমি মা?
-ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার।
-ভাবি, আপনার বউ মা তো খুব পিচ্চি। আমি তো ভেবেছি স্কুল গোয়িং বউ....
(শাশুড়ি মাকে উদ্দেশ্য করে।)

-সমস্যা নেই ভাবি কারন আমি ছেলের বউ আনিনি, নিজের জন্য আরেকটি মেয়ে এনেছি। ইন্তিহার বিয়ের পর একা একা খুব খারাপ লাগত, তাই তো স্পন্দনের মাসটার্স কমপ্লিটের আগেই বিয়ে করালাম ওকে…
মার কথাটা আমার খুব পছন্দ হলো, একদুম হার্ট টাচিং…আমিও চেষ্টা করব, উনার ছেলের বউ নাহয়ে মেয়ের মতই থাকতে…
আন্টিরা নাস্তা করে চলে গেলেন, আন্টি গুলোও অসাধারণ ছিলো, একজন আন্টি তো বললেন…
-স্পন্দন আর আরুশীর তো বলতে গেলে বাল্যবিবাহ হয়েছে…
সবাই হাসছে…
কিন্তু এই কথার মানে আমি সাথেসাথে বুঝলাম না, কারন আমার ১৮ বছর হতে আর কিছু মাস বাকি বাট উনি তো ঠিকাছে। ২৪/২৫বছরের হাট্টেকাট্টে তরুণ…
-হাহা আপা ঠিক বলেছেন, কিন্তু বিয়েসাদীর জন্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া অবদি অপেক্ষা করার কোন মানে নেই, ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক, বয়স হলেই বিয়ে করে ফেলা উচিত…এতে স্বামী স্ত্রী উচু নিচু, দুর্গম সুগম সবরকম পথই একসাথে পাড়ি দিতে হয় হয়ত…কিন্তু দুজনের বন্ধনটাও মজবুত হয়, আমার তো তাই মনে হয়…আর ভাবি শরীয়ত মোতাবেক কাজ করলেই বুঝা যায়, বান্দা এতেই সবচেয়ে বেশী উপকৃত হয়… (মা)
মার চিন্তাভাবনা যে খুব দারুন, ভালোভাবেই বুঝতে পারছি…
আর বাল্যবিবাহ কথাটাও খুব কিউট কিউট লাগছে, হাহা…
দুপুরের দিকে উনার দেখা মিল্লো, অনেক বন্ধুবান্ধব এসেছে উনার। আমার খুব লজ্জা লাগছিলো যখন ওরা ভাবি ভাবি করছিলো। যা বুঝতে পারলাম…উনার বন্ধুরা উনাকে হঠাৎ করে অসময়ে বিয়ে করেছেন বলে taunt করছে। আর নিজেদের অবিবাহিত হওয়া নিয়েও তীব্র হতাশা প্রকাশ করলেন…
অরিন্দম- দোস্ত আঙ্কেল আন্টি কে বলনা আমার মাবাবার মাথায় এই কথাটা দিতে যে আমারও বিয়ের বয়স হয়েছে, আমারও তো দিল্লীর লাড্ডু খেতে খুব ইচ্ছে হয়…

স্পন্দন- অনেক বেশি বকিস তুই।
-ভাবি, আপনি খুব সুন্দর। আপনার কোন ছোট বোন আছে?
-এই কথার পরপরই স্পন্দন উঠে উনার বন্ধুকে মারতে উদ্যত হলেন। ভাইয়াটা দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিলো আর বলল, রে শুধু সুন্দর ই তো বললাম এতো ক্ষেপছ কেন…
আর আমি তো তোর শালীকেই চাইছি…নাকি বউও তোর আর শালীও তোর চাই…


স্পন্দন অনেকগুলো কিল ঘুষি মেরে তারপর অরিন্দম ভাইয়ার পিছু ছাড়লেন আর বললেন আমার বউ এর প্রশংসা তুই করলি কেন?
আমার বউ তোর ভাবিও হবেনা না, হলে শুধু বইন হবে। আর সেহিসেবে আমার শালীও তোর বইন…




উনার কথা শুনে খুব হাসি পাচ্ছে…আর যখন উনি আমার বউ, আমার বউ বলছিলেন তখনকার ফিলিংস টা খুব আবেগপূর্ণ। তার কারন স্কুল, কলেজে যখন আমার প্রায় সব ফ্রেন্ডরা প্রেম করতো। আমি তখন নিজেকে এসব থেকে দূরে রাখতাম। আর আমার বর কে নিয়েই স্বপ্ন বুনতাম…মাঝেমাঝে আমারও ইচ্ছে হতো কাউকে ভালোবাসার, প্রেম করার। কিন্তু আমি নিজেকে সংযত রাখতে পেরেছিলাম। আর তাই হয়ত আমাকে নিয়ে উনার বলা প্রতিটা কথা আমার কাছে এতো দামী আর অসাধারণ…বহু বছর ধরে দেখা স্বপ্নগুলো হঠাত পূরন হলে হয়ত এমনই!
উনার দুই তিনজন বান্ধবী ও এসেছে…তারা খুব সুন্দর দেখতে…আমার সাথে খুবি আন্তরিকতার সাথে কথা বললেন, কিন্তু একটা আপু এতো কথা বললনা। চুপ ছিল প্রায়। কারন কি জানিনা আমি…
ইরিন- ফিসফিসিয়ে বলল, ভাবি আমাদের স্পন্দন গতরাতে কেমন ভালোবাসা দিলো তোমাকে…আমাদেরও একটু বলোনা পিলিগ। বলে হাসছে…
ইরিন আপু উনার একটা বান্ধবী। আপু কথাটা বলার প্রায় সাথে সাথেই সবগুলো আপু যোগ দিল তার সাথে। আমি তো লজ্জায় খতম পুরা…
উনারা আমার বড় হয় তাই আরও বেশি লজ্জা করছে…সাথে ইন্তি আপু তো আছেই…
স্পন্দন- ওই মহিলা মন্ডলী। আমার বউ এর সাথে প্রথমদিনেই কিসের এতো ফিসফিসানি তোদের…আমার পিচ্চি বউ এর থেকে দূরে থাক…তোদের বান্দরনীদের উপর আমার দু পয়সারও ভরসা নেই…
কথাগুলো বলতে বলতে উনি আমি যে সোফাটায় বসেছি, সেই সোফার হাতের উপর এসে বসলেন…
ঠিক তখনই স্পৃহা আপু বললেন, (এতক্ষন চুপ ছিলেন যিনি)
স্পৃহা- আচ্ছা আজ যাই রে। আমার আর লেইট করা ঠিক হবেনা…আমার গালে হাত রেখে বললেন, ভালো থেকো আসি আজ…
কেন জানিনা, আপুটার ওই চোখে আমি তীব্র বেদনার ছাপ দেখতে পেলাম…কিন্তু সেই বেদনাটা কিসের সেটা বুঝলাম না…
আপু কে কেউ আটকালো না, এমনকি স্পন্দন ও না…
আমি- আপু আরো কিছুক্ষন থাকলে যদি সমস্যা হয় আমিও আর যেতে বাধা দিবনা, তবে আবার আসবেন কিন্তু…
স্পৃহা- মৃদু হেসে, চেষ্টা করব…
তারপর সবাই আবার আড্ডায় মেতে উঠল,
ইন্তিহা আপু অরিন্দম ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-ভাইয়া, আপুর কিন্তু একজন বোন আছে ছোট। তোমার কিন্তু সুযোগ আছে একটা…
-কি বলিস, সত্যি? খুব উৎসুক হয়ে…
-হুম, হুম সত্যি। হানড্রেট পার্সেন্ট সত্যি। তবে তুমি আরো একবার ভেবে নেও…
-ভাবাভাবির কি আছে, আমি রাজি আছি পুরোদমে…ভাবি, ওকে এখন বিয়ে দিবে তো..?
স্পন্দন-
চলবে……
রাগী বর ৬ 

লেখা- Rafiya Riddhi
.
স্পন্দন- আমার শালীর চিন্তা বাদ দে তুই…তোর এতবড় সৌভাগ্য হয়নি আমার ভায়রা হবি…আরুহী মাত্র ক্লাস ৮ এ পড়ে, এবার করো বিয়া…

-
আমার ভাগ্যটাই এমন। পাইয়াও পাইলাম না তারে, মানে তোর শালীরে…





অরিন্দম ভাইয়ার এক্সপ্রেশন গুলো দেখে একেক জন হাসতে হাসতে শেষ হয়ে যাচ্ছে, ভাইয়াটা খুব ভালোই মজা করতে পারে…আর নরমাল কথা গুলো এমন এমন ভাবে বলে খুব হাস্যকর লাগে।
বেচারী আমি, আজ নতুন বউ বলে মিটমিট করে হাসা লাগছে। প্রাণখুলে হাসতেও পারছিনা।

খাওয়া দাওয়া, আড্ডা এসবের মধ্যদিয়ে পুরোটা দিন গেল। ওনার ফ্রেন্ডরা সবাই সন্ধ্যার দিকে চলে গেলেন। রাতে ইন্তিহা আপুর সাথে আড্ডা দিলাম। ফাঁকে ফাঁকে মাও আমাদের সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছেন তখন।
রাত ৯:৩০ বাজে, রুমে একা একা ভালো লাগছেনা। স্পন্দন কে দেখতে মনটা আকুপাকু করছে। আমি বারান্দায় গিয়ে বসলাম। বাহিরের বাতাসটা গায়ে লাগাতে শীত লাগছে কিন্তু তাও এভাবেই আছি। শীতের পোশাক পড়তে আমার তেমন ভালো লাগেনা। কখন আসবে উনি। সেই সন্ধ্যা থেকে নেই। বারান্দায় আসার পর খুব করে মনে পড়ছে গতরাতে উনার সাথে বারান্দায় কাটানো মুহূর্তগুলো। এতে মিস করার মাত্রাটা আরও বেড়ে গেলো…

-হঠাৎ একটা চাদরসহ কেউ আমাকে জড়িয়ে ধরল পেছন থেকে। চমকে উঠে পিছনে মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি স্পন্দন।
স্পন্দন- এই মেয়ে শীত করেনা তোমার?
-হুম। অভিমান নাড়াচাড়া দিয়ে উঠছে আমার…
-তাহলে কিছু পড়নি কেন?
-ইচ্ছে করেনি তাই।
-ইচ্ছে করবে, যখন এই বারান্দার গ্রীলের ফাঁকা দিয়ে তোমাকে নিচে ফেলে দিব। তখন বুঝবে আমার অপছন্দের কাজ করার মজা।
-আপনার অপছন্দের কাজ আমি করি আর আপনি তো আমার পছন্দের কাজ করেন সব, হুহ।
-আমি আবার কি করলাম।
-কিছুনা। বলেই আমি বারান্দা ছেড়ে রুমে চলে আসলাম…
স্পন্দন ও আসলেন পিছুপিছু…
-আজ কিছু বলিনি, বাট নেক্সট টাইম কথা একটা যদি বলো সম্পূর্ণটা বলবে, অর্ধেক বলে রেখে দেয়া যাবেনা…
এহ আসছে, খালি থ্রেট দেয় আমাকে। নিজেরটা ষোল আনা আর আমারটা ১ আনাও না।
মিস করা পৃথিবীর চরম একটা খারাপ জিনিস…কাউকে মিস করার মত কষ্ট ২য় কোন কিছুতে নেই…আমাকে এতক্ষণ কষ্টে রেখে এখন নিজেই উল্টো থ্রেট দেয়…



-আমি উনাকে কিছু বললাম না। বেডে বসতে যাব আর উনি হাত ধরে টান দিয়ে দাঁড় করিয়ে দিল

-কি হইছে?

-মা বলছে তোমাকে নিয়ে খেতে আসার জন্য, চলো। বলেই হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে…
-আরে আরে কি করছেন…হাত ছাড়েন। আমি তো বলিনি যাবোনা।
-আমি হাত ধরলে সমস্যা তোমার!
-আরে মাবাবার সামনে কি এভাবে যাব নাকি, মাথায় ঘোমটা দিব। তাই বলছিলাম হাত ছাড়তে…
হুহ, আমাকে বলে আমি গাধী। নিজে তো দুনিয়ার গাধা একটা…আমি নাহয় বেশির থেকে বেশি গাধার বউ হতে পারি। তবে গাধী না…
মনে মনে

স্পন্দন- তো হাত তো আমারও আছে…
বলেই উনি আমার মাথায় ঘোমটা টেনে দিলেন…তারপর কেমনে জানি তাকাই আছে…
দিন গিয়ে রাত হইছে, হুক্কুর করে মনে পরছে…ব্যাপারটা এমন আরকি। সন্ধ্যা হতে রাত ৯:৩০ টা অবদি গায়েব ছিলো। এখন আসছে রোমান্টিকতা নিয়া। হুহ…

-দেরী হয়ে যাচ্ছে…খেতে চলেন।
মা, বাবা, আমি, স্পন্দন, ইন্তিহা আপু আর আমার পিচকু একটা দেবর আছে নাম স্পর্শ…আমরা একসাথে খেয়ে নিলাম…যা বুঝলাম বাসার সবচেয়ে স্ট্রিক্ট মানুষ হচ্ছেন আমার শশুড়। মা আর ইন্তিহা আপু যতটা মাথা ঠান্ডা মানুষ। এরা তিন বাপ বেটা এতটাই রাগী আর মাথা গরম মানুষ…

বাবা আমাকে অনেক প্রশ্ন করলেন…যেমন এদিকে কেমন লাগছে, আনইজি যাতে না ফিল করি। আমার পড়াশুনার ব্যাপারেও অনেক কিছু জিঙ্গেস করলেন। এই যেমন পরীক্ষা, প্রস্তুতি এসব…
খাওয়া দাওয়া শেষে ওরা তিনজন যার যার রুমে চলে গেলেন। ইন্তিহা আপুর হাজবেন্ড আসেন নি কেন বুঝছিনা। আমরা রান্না ঘরে আবার গল্প জুড়ে দিলাম আর টুকিটাকি কাজও করছি তিনজন। আমার খুব ভালো লাগছে…মা আর আপু অনেক অমায়িক মানুষ…
রুমে আসলাম রাত তখন ১১ টা ২০ বাজে…ফ্রেশ হতে চলে গেলাম ওয়াশরুমে। ওই বেডায় কেমনে জানি তাকাই রয়েছে আমার দিকে মানে স্পন্দন আরকি, আমি পাত্তা দিচ্ছিনা…একটু ভাবের উপরে আছি…
সবসময় রাগ পাত্তা দিতে নাই…


ফ্রেশ হয়ে এসে একটু রূপচর্চা করলাম ৫ মিনিট। তারপর গিয়ে বেডে শুয়ে পড়লাম। যা বুঝতেছি স্পন্দন এখনও আমার কাজকর্ম গুলো দেখে যাচ্ছে…ডানে গেলে ডানে তাকায়, বামে গেলে বামে। হয়ত বুঝার চেষ্টা করতেছে আমি চুপ কেন…যা ইচ্ছে ভাবুক…

স্পন্দন- ওইইই……

রাগী বর ৭ +৮

লেখা- Rafiya Riddhi
.
স্পন্দন- ওইইই……
তুমি শুয়ে পড়লে কেন..?

- ঘুমাবো তাই।

- এখন ঘুমালে, ইম্পরট্যান্ট কাজগুলো কখন হবে…?
-
কি ইম্পরট্যান্ট কাজ!


-দেখাচ্ছি, ওয়েট।
বলেই বেডের কাছে আসছে…আমি পুরোপুরি কম্বলের ভেতর ঢুকে যাচ্ছি। কাল রাতেও তো ছাড় পেয়েছিলাম, আজ কি পাবো…
ইশশ…লজ্জা!


শেষ শেষ আমি শেষ…উল্টোপাল্টা অনেক কিছু ভাবছি আর কম্বলের নিচে নিজেকে লুকাচ্ছি…
অনেক্ষণ হয়ে গেল, উনার কোন পদক্ষেপ না দেখে মাথাটা বের করে তাকালাম…আর তখনই উনি একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে আমাকে কম্বল সহ কোলে তুলে নিলেন…
- এই এই কি করছেন…আমাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন ?
-হুস…
তাই আমিও চুপ রইলাম…
বারান্দার দোলনায় নিয়ে আমাকে বসিয়ে দিলেন আর নিজেও বসে দুজনকে একসাথে কম্বলে মুড়ে নিলেন…
-এই শীতে, বারান্দায় কেন নিয়ে আসলেন…প্লিজ রুমে চলেন……ভেতরে ভেতরে মহাখুশি আমি, কিন্তু অভিমানটা প্রকাশে ব্যস্ত।

-অনেক বেশী বকবক করো তুমি…বারান্দায় খোলা আকাশের নিচে গল্প করার যে মজা, সেটা রুমে কই পাবো!

বাই দ্য ওয়ে, কাল তো এমন করোনি…আজ সবকিছুতেই বাঁধা দিচ্ছ, ব্যাপার টা কি?
-কোন ব্যাপার নেই…গল্প করা লাগবেনা আপনার
সন্ধ্যা থেকে তো গায়েব ছিলেন…এখন কেন গল্প করতে চাচ্ছেন…

-হাহা…রাগটা বুঝি এখানে। ওয়েট রাগটা দূর করে দিচ্ছি। বলেই আমার কপালে একটা চুমু একে দিলেন। যেন একরাশি সুখ কেউ আমার হাতে ধরিয়ে দিল…এমন মনে হচ্ছে।
-



-একটা জরুরি কাজ ছিলো, তাই যেতে হয়েছিল গো বউ।
-বুঝেছি। আহা, কি সুন্দর করে ডাকল বউ…

-তো মেম, আপনার চকলেট কেমন লাগে! বলেই অনেকগুলো চকলেট আমার সামনে রাখলেন…
-ওয়াও, এতো চকলেট!
আগে কেন দিলেন না… বলেই চকলেট নিলাম…

-কারন, এখন গল্প করব। আর চকলেট খাবো…তাই আগে দেই নি…
-আজ আবার আমাকে হাসিয়ে মারার ইচ্ছে আছে বুঝি!

-উম হুম, আজ আসি হাসব। আর তুমি হাসাবে। কাল আমার সম্পর্কে সব বলেছি। আজ শুধু তোমার সম্পর্কে কথা হবে…স্টার্ট করো।
-আমার সম্পর্কে তেমন কিছু নেই ইনটেরেস্টিং বলার মত।
-শুরু করতেছো নাকি…

চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে…রাগলে কি মারাত্মক লাগে।
উফফ…পুরাই কাফিলানা লুক…

-আমি বলা শুরু করলাম…পড়াশুনার ব্যাপার দিয়েই।
.
.
.
কাল প্রথম রাত্রটা আমার কাছে স্বপ্নের মত সুন্দর ছিল, ঠিকই। কিন্তু এজন্য নয় যে আমরা কাছাকাছি এসেছি একে অপরের। না, আমাদের মধ্যে তেমন কিছুই হয়নি। হয়ত এটাই একজন ভালো ব্যক্তিত্বের মানুষের পরিচয় যে বউ বলেই শুধু অপরিচিত মেয়েকে কাছে টেনে নেয়নি।
আমরা একে অপরকে জানিনা…বুঝিনা। আগে জানতে হবে। মনের মিলনটা আগে হওয়া চাই। এটাই মেইন। আমার এই রাগী বরটা আমাকে কাছে টেনে নিলে আমি আপত্তি করতাম না কখনো…হিন্দি সিরিয়াল দেখে দেখে তাকে সোফায়, আমি বেডে এমন কোন কাহিনীও করতাম না…
এক হাদীসে আছে, "যে স্ত্রী তার স্বামীর বিছানা পরিত্যাগ করে রাত কাটায়, ফেরেশতারা সকাল পর্যন্ত তাকে অভিশাপ দিতে থাকে।"…এই হাদীসটা কেই আমি অনুসরন করে চলব…না কোন মুভি বা টিভি সিরিয়াল।
(এসব সেম কাহিনি গুলো ইদানিং প্রচুর দেখা যায়…সব গল্পে, নাটকে, সিরিয়ালে…)
কিন্তু আমার বরটা আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সহজ করে দিয়েছেন…তিনি আগে আমাদের পরিচিত হওয়াটা কেই প্রায়োরিটি দিচ্ছেন…
আমার অভিমানটা কোথায় যেন হাওয়া হয়ে যাচ্ছে উনার সান্নিধ্যে আসার পর থেকে…
আমি উনাকে নিজের সম্পর্কে টুকিটাকি বলছি। উনি শুনছেন খুব মনোযোগ দিয়ে। আমি লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়েই বলে যাচ্ছি…উনি মাঝেমাঝে আমার মুখ থেকে কথা ছিনিয়ে নিয়ে কমেডি করে যাচ্ছেন। এটা সেটা জিজ্ঞেসও করছেন। আমার বর টা সত্যিই একটা হীরা…আর সেটা কাল রাতেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম অনেকটা…
কাল ছোট খাটো কিছু রোমান্টিসিজম দিয়ে রাতটাকে উনি খুব স্পেশাল করে তুলেছিলেন। তারপর রাত ৩টা অবদি নিজের সম্পর্কে অনেক কথা বলেছেন…আমাকে হাসিয়েছেন অনেক…আমি তখন হেসেছি আর মুগ্দ্ধতা নিয়ে আমার বরকে দেখে গিয়েছি…বরটা না একটু পাগলও আছে।
কাজিনদের দিয়ে এই শীতের মধ্যেই ছাদটা কে খুব সুন্দর করে সাজিয়েছিলেন…আর তাই তাকে অনেকগুলো টাকা বকশিশও দিতে হয়েছিল…

সেখানে তার করা অসাধারণ সব পাগলামো গুলো সারাজীবনের মত আমার মনে দাগ কেটে দিয়েছে…আর সবশেষে বিয়ের রাতে তার দেয়া প্রথম উপহার…দুটো নূপুর। নিজ হাতে পরিয়ে দিয়েছেন আমাকে…এমন রাত আরো অনেক আসুক। যে রাত শব্দে-বাক্যে নয়, শুধু অনুভবে থাকে…
স্পন্দন- এই ঘুমিয়ে গেলে নাকি!
-হু!…কিছু বললেন!
-কালকের তুলনায় আজ অনেক শীত পড়ছে…আর কষ্ট দিবনা তোমাকে। চলো ভিতরে…
বোকা বর একটা… আপনার সাথে কোন পরিবেশেই আমার কষ্ট হবেনা…
ভালো লাগে, খুব ভালো লাগে আপনাকে......

-আচ্ছা চলুন…
আজও আমার একটা হাত মুঠোয় নিয়ে, উনি ঘুমোতে গেলেন…
এভাবেই আরও দুদিন চলে গেল…তার রাগ, ছোট ছোট রোমান্টিসিজম, মা আর আপুর সাথে গল্পে, সংসারের টুকিটাকি কাজে, স্পর্শের সাথে দুস্টমিতে…মাঝেমাঝে আম্মু, আরুহী ওদের সাথে ফোনালাপে……
খারাপ তো তখন লেগেছিল যখন ইন্তিহা আপুকে দুলাভাই নিয়ে গেলেন…আমরা দুজনে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করেছি…খুব মায়ায় পরে গিয়েছিলাম যে। আপুর জন্য খুব মন খারাপ।
তাই বিকেলে বেডে শুয়ে শুয়ে চোখের জল ফেলছি…। আমি এমনি, বাবার বাসায়ও কোন মেহমান যখন বেড়ায়ে চলে যেত, তার জন্য এভাবেই কাঁদতাম। আর এখন তো আরও বেশি কান্না পাচ্ছে…ইন্তিহা আপুও যে আমার জন্য অনেক স্পেশাল…স্পন্দনকে জুড়ে সবটাই আমার কাছে দামী।
হঠাৎ কেউ একজন পেছন থেকে আমায় জড়িয়ে ধরে আমার পাশে শুয়ে পড়ল…আর চোখের পানি মুছে দিয়ে…বলল……
.
.
চলবে…
রাগী বর ৮ 

লেখা- Rafiya Riddhi
.
হঠাৎ কেউ একজন পেছন থেকে আমায় জড়িয়ে ধরে আমার পাশে শুয়ে পড়ল…আর চোখের পানি মুছে দিয়ে…বলল……
-ইন্তু তো আসবে মাঝেমাঝে, আর কেঁদো না প্লিজ। (স্পন্দন)
-
-হায়রে, ননদের জন্য এতো টান, ভালোবাসা। আর বরের জন্য বুঝি কিছুই না। এখনও ঔদিকে ফিরেই আছ। এদিকে ফিরবে না একটু!
আমি ভালো মত চোখ মুছে ফিরলাম উনার দিকে।
-ইশশ রে, কান্না করে কি অবস্থা করেছে মেয়েটা। বলেই আমার মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলেন।
-কাঁদবে না আর তাহলে কিন্ত নিয়ে যাবনা…বলে দিচ্ছি…
-
উনি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন আর বললেন,
-আর কাঁদবেনা। পরশু ই তোমাকে নিয়ে যাব ইন্তুর বাসায়। তারপরও কান্না থামাও। বিয়ে হয়ে গেছে তোমার, বাচ্চাদের মত কাঁদলে হবে কি?

এখন কান্নাটা কমে আসছে আমার।
-সত্যি তো। নিয়ে যাবেন প্রমিস?
-হুম। তোমার বর মিথ্যে বলেনা কখনো।
আমি আর কিছু বললাম না। উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে রইলাম। উনি আমার মুখটা তার বুক থেকে তুলে, আমার দুই চোখের পাতায় দুটো চুমু দিলেন। তারপর আবার আগের মত করে জড়িয়ে ধরে বললেন,
-যে পরিমান কেঁদেছ ননদের জন্য। চোখ ফুলে গিয়েছে…ব্যাথা করছে নিশ্চয়ই।
-উম হুম…
-কি উম হুম!



-ব্যাথা করছিলো, তবে এখন আর করছে না। ব্যাথা নিবারনের ঔষুধ মিলে গেছে…
স্পন্দনের ভালোবাসাই যে আমার সকল ব্যাথার মলম…হয়ত উনিও সেটা বুঝে বলেই এমনটা করে।
স্পন্দন আর কিছু বললেন না। শুধু একটা ছোট্ট করে হাসি দিলেন…কপালে আরেকটা চুমু দিয়ে তারপর বললেন,
-একটু ঘুমাও এখন…
.
.
সন্ধ্যায় সবার জন্য আমি নাস্তা রেডি করলাম। মা তো আমাকে কিছুই করতে দিতে চাননা। রান্না বান্না উনি করেন। আর বাকি সব কাজ সীমাকে বলেন। সীমা বাসায় কাজে হেল্প করে আমাদের…মেয়েটা দেখতে অনেক মায়াবী….শ্যামলিনী

-মা, আপনি আর সীমা চুপটি করে বসে থাকেন তো। নাস্তা শুধু আমি বানাবো…
-নারে মা। তোর কিছু করা লাগবেনা…তুই শুধু আমার কাছে বস। আমার মেয়েটা আমাকে সময়ই দেয়না একদুম…মুখ ফুলিয়ে বললেন
সীমা- ভাবি, আপনি বলেন শুধু…আমি সব তৈরী করে দিচ্ছি…
-মা, আজকে আমার সবটা সময় আপনার জন্য। কিন্তু প্লিজ এখন আমাকে আপনাদের জন্য কিছু একটা করতে দিন…বাবা নামাজ পড়ে চলে আসবে একটু পর। প্লিজ, মা…
-নতুন বউকে দিয়ে কাজ করাবো



-আমি না আপনার মেয়ে…
-আচ্ছা যা করে নিয়ে আয় কি করবি…

আমি দেরী না করে, রান্নাঘরে চলে আসলাম। মা আর সীমা টিভি দেখছে বসার রুমে…
আমি সন্ধ্যার নাস্তার জন্য অনেক কিছু তৈরী করলাম। রান্নাবান্না আমার খুব ভালো লাগে…আর সবকিছু যতটুকু সম্ভব জলদি জলদি করেছি।
ট্রে তে করে নিয়ে এসে দেখি বাবা আর উনি মসজিদ থেকে চলে এসেছেন। আমি তাদের সালাম দিয়ে, টেবিলে রাখলাম সবকিছু…
বাবা আর স্পর্শ তো অনেক খুশি। নাস্তায় এতকিছু পেয়ে। স্পর্শ প্রথমেই নুডলস খাওয়া শুরু করে দিলো।
-বাহ, আরুশী এতো কমসময়ে দেখো কত কি করে ফেলেছে…মেয়েটার কান্ড দেখো। আমি তো বলছিলাম, আমার সাথে বসে গল্প কর। সীমা চা আর নাস্তাটা তৈরী করুক। কিন্তু না সে করেই ছাড়লো…
মাকে খুব খুশী দেখাচ্ছে আর বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললেন কথাটা
-আমাদের জন্য কিছু করতে চাইছে আরুশী মা। তুমি বাঁধা দিলে কেন। ও যেভাবে খুশি থাকবে, সেভাই থাকতে দাও, বাঁধা দিওনা… (বাবা)
খাচ্ছেন আর বলছেন
সবাই অনেক প্রশংসা করলেন।
আমি স্পর্শের পাশে গিয়ে বসলাম আর ওর নুডুলসে সস দিলাম
-উম, ভাবি। এবার থেকে তুমি আমার জন্য সবসময় নুডুলস করবে। অনেক মজা…আমি শুধু তোমার হাতের নুডুলস ই খাবো…
-ঠিক আছে, বাবুটা… ওর একটা গাল টেনে দিয়ে…
স্পন্দন তো খাচ্ছেই খাচ্ছে। হয়ত সবাই একসাথে তাই কিছু বলছেনা…
আমি চা বসিয়ে এসেছিলাম।।তাই চা নিয়ে আসতে গেলাম…
সবাই নাস্তা করে, চা পান করলেন।
বাবা- সবকিছুই ভালো হয়েছে…তবে চা টা বেস্ট।
-ধন্যবাদ, বাবা।

-আরুশী তো শুধু নাস্তা বানিয়েই আমাদের লোভ বাড়িয়ে দিলে…এখন তো প্রতিদিন তোমার হাতের রান্না খেতে ইচ্ছে করবে…
বাসার রাগী দুজন মানুষ, যখন আমার তারিফ করে তখন কেন জানি খুব অবাকই লাগে…বাবা আর স্পন্দন আরকি
ওদের রাগটাই বেশি মানায়


-আমি আপনাদের জন্য প্রতিদিন রান্না করব বাবা। আমারও ভালো লাগবে…
-তা নাহয় করলে। তবে এখন না মা। তোমার পরীক্ষার পর। এইচএসসি ও ভর্তি পরীক্ষার পর নাহয় করলে…(বাবা)
-হুম, বাবা ঠিকই বলছে। পরীক্ষার তো আর বেশি সময়ও নেই…তিনমাসের মত আছে… (স্পন্দন)
-মেয়েটা কে তোমরা আর পরীক্ষার জন্য এতো চাপ দিও না তো। আমার মা টা এমনেই ভালো করবে…(মা)
বিয়ের পর আমি তো ভুলেই গেলাম যে আমার সামনে পরীক্ষা। বিয়ের পর মানুষ স্বামী নিয়ে ঘুরে, হানিমুনে যায়। আর আমি যাব…পরীক্ষা দিতে।
আর আমার যেই প্রিপারেশন, ফেইল করলে তো এবার ডাবল লজ্জা পাবো। শশুড় বাড়ির সবাই বলবে, ফেইল মার্কা মেয়ে বিয়ে করিয়ে এনেছে তাদের ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলেকে দিয়ে। নেহি, এ নেহি হো সাকতা…


আব, তেরা কেয়া হোগা কালিয়া…



মার আস্থা দেখে আমার ভয়টা বেড়ে যাচ্ছে আরো।
.
.
রাতে মার সাথে গল্প করলাম, উনাকে রান্না বান্নায় জোর করে করে হেল্প করলাম…মা পড়তে পাঠাচ্ছিলেন। খুব কষ্টে উনার থেকে আজকে না পড়ার ছুটি নিয়েছি।
কি লাইফ আমার।
বাবার বাড়ি, শশুড় বাড়ি সব জায়গায় পড়া পড়া আর পড়ার জন্য চাপে থাকা। কই এখন বিয়ে হয়েছে, বরের সাথে প্রেম করব, রোমেন্স হবে, সংসার করব। বাচ্চা কাচ্চা হবে
। আর সবাই আমাকেই উল্টো বাচ্চার মত ট্রিট করতেছে।
পড়ার জন্য ঠেলতেছে।



রাতে ডিনারের পর রুমে যখন আসলাম, স্পন্দন তো খুব রাগ। বরটা না পারেও।
যখন মার সাথে গল্পে ছিলাম, বারবার উঁকি ঝুকি দিচ্ছিল…আমি ভাবলাম এমনেই হয়ত আসে যায়। তখন মা বললেন,
-দেখো, তুমি রুমে নেই তাই স্পন্দন কেমন ঘুরঘুর করছে। একটু দেখা দিয়ে আসো, যাও।

মার এমন কথায় আমি খুব লজ্জা পাই…কিন্তু মার সাথেই ছিলাম। যাই নি উনার কাছে। একটু মিস করুক না আমাকে…

মা কত্ত সহজ সরল। কত অনাড়ম্বরে সব বলে ফেলে…
কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, বড় সড় একটা মাশুল দিতে হবে রুমে এতক্ষণ না থাকার
স্পন্দন আমি রুমে ডুকতেই আমার হাতটা চেপে ধরে, বেডের কাছে নিয়ে গেলেন। জোর করে বসিয়ে দিয়ে,
-আসুন, আসুন। জাহাপনা, আসুন…এতো ব্যস্ত আপনি। আপনার খেদমতে কি করতে পারি, নিসংকোচে বলে ফেলুন…জাহাপনা।
কত বিজি মানুষ আপনি আহারে…



উনার মুখে এসব শুনে আমার তো খুব হাসি পাচ্ছে। মেয়েরা কি জাহাপনা হয় নাকি!



হাসি আটকিয়ে বললাম,
-না, বেগম সাহেবা। আপনি থাকলেই হবে, আর কিছু লাগবেনা…
এটা বলেই ফিক করে হেসে দিলাম। আর হাসি আটকাতে পারছিলাম না…

স্পন্দন ও হাসছে এবার…
-অনেক দুষ্ট হয়েছো।
আমি বেগম, তুমি জাহাপনা!


-আপনি কিন্তু আগে শুরু করেছেন…
- তো আর কি করব বলবা!
আমি ঔদিন ওয়েট করিয়েছি একটু, তাই প্রতিশোধ নিলে ঠিকতো…

আমি বেড থেকে উঠে, একটু ভাব নিয়ে বললাম
-যেটা ভালো মনে করেন…
আমার কিছু বলার নেই… বলছি আর ওয়াড্রব থেকে ড্রেস বের করতেছি

হঠাৎ উনি আমাকে টান দিয়ে, একদুম উনার কাছে নিয়ে গেলেন…
স্পন্দন আমার মাথার ঘুমটা টা ফেলে দিয়ে চুল গুলোও খুলে দিলেন…
আমার খুব বেশি কাছে চলে আসলেন…দুই হাত আমার গালে রেখে, আমার নাকের সাথে উনার নাকটা একবার ঘষে দিলেন। তারপর কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে……
রাগী বর ৯ +১০

লেখা- Rafiya Riddhi
.
।
স্পন্দন আমার মাথার ঘুমটা টা ফেলে দিয়ে চুল গুলোও খুলে দিলেন…
আমার খুব বেশি কাছে চলে আসলেন…দুই হাত আমার গালে রেখে, আমার নাকের সাথে উনার নাকটা একবার ঘষা দিলেন। তারপর কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে বললেন
-এখন কেন জানিনা, এক মুহূর্ত ও তোমাকে ছাড়া থাকতে ইচ্ছে করেনা…
স্পন্দন অনেক গভীর আবেগ নিয়ে বলল কথাটা…আমার যে কত্ত সুখী মনে হচ্ছিল তখন নিজেকে।
-তো থাকতে বলেছে কে আমাকে ছাড়া। কেউ তো বলেনি তাইনা…
-মজা হচ্ছে! আমি কিন্তু একদুম মজার মুডে নেই।

এখনও আগের মতই আছি আমরা…উনার নিশ্বাস আমার মুখের সাথে বাড়ি খাচ্ছে…বুঝছি না, হঠাৎ এসব কেন বলছে। আমি তো সবসময় উনার কাছেই আছি। সংসারের টুকিটাকি কাজের সময় হয়ত থাকতে পারিনা। শুধু এতটুকুর জন্য কথাগুলো বলছেন বলে আমার মনে হচ্ছেনা…আমি উনার গালের দুপাশে হাত রেখে, উনার মুখটা তুললাম…চোখে চোখ রেখে তাকে বলছি,
-আহা, মজা কেন করব! আচ্ছা এসব কেন বলছেন হঠাৎ, বলুন তো। আমি তো সারাক্ষণই আপনার কাছে কাছে আছি। আপনিই তো উল্টো আমাকে একা করে ভার্সিটি চলে যান। তাছাড়াও কত কাজ করার থাকে আপনার……

উনি আমার হাত দুটো নিজের গাল থেকে নামিয়ে আমাকে উল্টো ফিরিয়ে, পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলেন
-আরু, তোমার চুলের স্মেল টা এতো জোস কেন।
-কথা কাটানো হচ্ছে!

-আচ্ছা, কাল চলো তোমাকে ভার্সিটি ঘুরায়ে আনি। ভালো লাগবে তোমার।
আমার কাধের উপর উনার ঠোঁট দুটো লাগিয়ে কথাগুলো বলছিলেন। তাই উনি কথা বলার সময় আমার যে কি লাগছিলো। আমি তাই উনার থেকে নিজেকে জলদি ছাড়িয়ে নিলাম। এতো কাছে কেন আসে এই লোক।
তাহলে তো নিজের মধ্যে থাকিনা আমি। হারিয়ে যাই কোথাও…

আমি এমন করায়, উনি ভ্রু দুটো নাচায়ে বললেন।
-কি? হুম?

আমি উনার দিকে তাকাতে পারছিনা। চোখে মুখে দুষ্টোমি ফুটে উঠেছে উনার। হয়ত বুঝতে পেরেছে, তার কাছে আসাটা আমাকে অন্যরকম করে দেয়।
-কক.....কই। কিছুই না।

-হুম। কিছু যে না তা তো আমিও জানি…

-দদ...দেক....দেখি স.....সড়েন। আমি ফ্রেশ হবো। রাস্তা ছাড়েন…
উনি সড়ে দাড়ালেন, আর খুব হাসছেন…
এতো হাসার কি আছে, হুহ…

.
.
.
আজ উনি আমাকে উনার ভার্সিটি দেখাতে নিয়ে গেলেন। ভার্সিটি তে কিসের যেন প্রোগরাম চলছে। তাই ক্লাস হচ্ছেনা, উনি আর উনার ফ্রেন্ডদের সাথে ভালোই আড্ডা দেয়া হলো। উনার ফ্রেন্ডরা + উনাদের সবার গফ, বফ ও ছিলেন। তাই ভালোই লাগছিলো। স্পন্দন আমার হাতটা ধরে ছিলেন পুরোটা সময়। অনেক মজার মাঝেও কিছু একটা ছিলো যা আমাকে ভালো মত হাসিখুশি থাকতে দিচ্ছিল না। স্পর্শিয়া আপুর স্পন্দনের প্রতি…...মানে ঠিক কি বলা যায় আমি এর সঠিক ধারনা পাচ্ছিনা। কেন জানিনা, স্পর্শিয়া আপুকে দেখলে মনে হয় উনি আমাকে পছন্দ করছেন না। ব্যাপারটা কি স্পন্দন কে জুড়ে! নাহ, কিসব ভাবছি আমি। যদি এমন কিছু হয় ও তবে তা কেবল স্পর্শিয়া আপুর দিক থেকে থাকতে পারে। স্পন্দনের আমার প্রতি কেয়ার, রাগ, অভিমান আমাকে এমন কিছু ভাবতেই দিচ্ছেনা। অসম্ভব সেটা…
স্পর্শিয়া- স্পন্দন!
-হুম, বল…
-আমার তোর একটা কাজে মতামত চাই। আমি আসলে বুঝতে পারছিনা। তোর হেল্প লাগবে…
শাহিন- তো আমাদের বল। স্পন্দন কি তোর একাই ফ্রেন্ড৷ আমরা কিছুনা…! আমাদেরও বলতে পারিস তো…
ভাইয়ার এই আগ বাড়িয়ে কথা বলাটার কারন কি অন্যকিছু আছে!
শাহিন ভাইয়ার এই নরমাল কথাটায়ই স্পর্শিয়া আপু কেমন যেন বরখে গেলেন…
-দেখ, আমার তোদের বলার হলে তো বলতাম ই। কাজটা স্পন্দন ভালো বুঝবে, তাই ওকেই বলছি…
শাহিন ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে

-স্পন্দন, তুই কাল আমাদের বাসায় আসবি। তাহলে খুব ভালো হয়…আমিও তোর বাসায় আসতে পারি…তোর যেভাবে সুবিধা হয়। খুব প্রয়োজন… কথাটা বলার সময়, আপু আমার দিকে মাঝে কিভাবে যেন তাকালেন
-হুম, দেখি। (স্পন্দন)
স্পন্দন কেন স্পর্শিয়া আপুকে ডিরেক্ট নিষেধ করে দিচ্ছেননা বুঝতে পারছিনা। কারন আমাদের তো কাল ইন্তুিহা আপুর বাসায় যাওয়ার কথা। স্পন্দন কি ভুলে গেলেন…নাকি স্পর্শিয়া আপুর ব্যাপারটাই উনার কাছে বেশি…...... হায়রে, আরুশী কিসব ভাবছিস তুই…বেশি উল্টোপাল্টা ভাবছিস…
কিন্তু না, নিজেকে যতই বুঝ দিই, নিজের আপনজন কে নিয়ে যে ভয়টা মনে ডুকে গেছে। তা বের করতেই পারছিনা…...এই পরিবেশে আমি অনুভব করতে পারছি কিছু একটা…...
স্পর্শিয়া আপু সারাটাক্ষণ কেমন শুধু স্পন্দন স্পন্দন করছিলো। তাই স্পর্শিয়াকে উনার বাকি বান্ধবীরা কেমন ধমকের সুরে কথা ও শুনাচ্ছিল…আসলে ব্যাপারটা কি…একটু আগেও তো সিকিউরড ফিল করছিলাম। এখন পারছিনা কেন! সেদিন তো তেমন কিছু ফিল হয়নি, যখন ওনারা বাসায় এসেছিলেন। তবে স্পর্শিয়া আপুকে বিধ্বস্ত ঠিকই মনে হয়েছিল সেদিন…
আমি আর স্পন্দন বাসায় আসলাম বিকেলে। দুপুরের লান্চ সবাই একসাথে করেছিলাম রেস্টুরেন্টে। বাসায় আসার পর মা বললেন,
-এই তোদের সময় হল আসার। বাসায় একাএকা ভালোই লাগছিল না। যে কদিন মেয়েটা এখানে আছে, আমার কাছে থাকতে দে নারে বাবা।
-হুম। আজ একটু পর ওকে নিয়ে ইন্তিহার বাসা থেকে ঘুরে আসি, কি বলো মা! তাহলে আগামীকাল ওকে সারাদিন পাশে পাচ্ছো। আর আমারও জরুরি কাজ আছে কাল, আজকে গেলেই ভালো হয়… (স্পন্দন)
-যে কদিন আছি মানে! আমি কোথায় যাচ্ছি মা…
-কোথাও না…তুমি ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে নাও। তারপর আমরা ইন্তুর বাসায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিব…
উনি গম্ভীরভাবে বললেন, আমার মন ভালো নেই তাই আর কথা না বাড়িয়ে রুমে চলে আসলাম। মাথায় একটা ব্যাপারই ঘুরছে। স্পন্দন কি স্পর্শিয়া আপুকে সময় দিবে কাল…তাই এমনটা করল! ইন্তিহা আপুর বাসায় একদিন আগে যেতে চাওয়ার কারন সেটাই নয়ত!
স্পন্দন ও কি স্পর্শিয়া……নাহ, ফ্রেন্ড হিসেবেই হতে পারে..…

এতো ভাবাভাবির আর কাজ নেই এখন আরুশী…ইন্তিহা আপুর সাথে দেখা হবে, সেটাই সবচেয়ে বড় খবর…



.
.
.
আমরা সন্ধ্যার দিকে ইন্তিহা আপুর বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। মা আপুকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিলেন আমাদের যাওয়ার কথা। আজ আপুর বাসায় ই থাকা হবে রাতে।
যেই আপুর জন্য এতো কাঁদছিলাম, তার বাসায় যাচ্ছি। আমার খুশিটা হয়ত দেখার মত হতো আজ। কিন্তু কিছু অস্থিরতা আমাকে ভালো থাকতে দিচ্ছেনা…কেমন উদাসীন হয়েই আছি…
যাওয়ার পথে স্পন্দন অনেক কথা বলছিলেন। আমি তেমন কথা বলছিনা তাই খুব রেগেও গিয়েছিলেন মাঝে। উনার ভাষ্যমতে মানুষ ঘুরাঘুরি, আড্ডার মধ্যে থাকাকালীনও এমন মনমরা হয়ে কিভাবে বসে থাকতে পারে…
আমি চুপচাপ উনার রাগ দেখে গিয়েছি…কিছু বলিনি। মনটা আরও খারাপ লাগছে এখন।
ইন্তিহা আপুর বাসায় পৌঁছাতে এক ঘন্টার মত লাগল। আপু আমাকে দেখা মাত্রই জড়িয়ে ধরলেন। ননদ টাকে পেয়ে আমার খারাপ লাগাটাও হাল্কা কমে এল। কিছু মানুষের সংস্পর্শই এমন হয় হয়ত।
আপুর বাসায় আপু, ভাইয়া আর কাজে সাহায্য করার জন্য একটা মেয়ে আছে…আর কেউ নেই। আপুর হাজবেন্ড এর অফিসে যাওয়ার সুবিধার্থে উনারা এখানে বাসা নিয়েছেন। আমরা ফ্রেশ হতে একটা রুমে আসলাম,
স্পন্দন- মহারানী কি খুব রাগ!

-না রাগ কেন হবো। তেমন কিছুনা…...
আমি উনাকে ইগনোর করার চেষ্টায় আছি…আর তাই স্পন্দন আমাকে হুট করেই কাছে টেনে নিলেন, আমার মুখে অনেকগুলো চুমু দিলেন। তারপর আমার কানের একটু নিচে একটা চুমু দিয়ে……
.
.
চলবে……
রাগী বর ১০ 

লেখা- Rafiya Riddhi
.
স্পন্দন- মহারানী কি খুব রাগ!

-না রাগ কেন হবো। তেমন কিছুনা…...
আমি উনাকে ইগনোর করার চেষ্টায় আছি…আর তাই স্পন্দন আমাকে হুট করেই কাছে টেনে নিলেন, আমার মুখে অনেকগুলো চুমু দিলেন। তারপর আমার কানের একটু নিচে একটা চুমু দিয়ে বললেন,
-তোমাকে আজকে অনেক সুন্দর লাগছে। ঠিক যেন মায়াপুরের রাজকণ্যা।
-ধন্যবাদ
-অনেক ইয়াম্মি লাগছে তোমাকে!
-হুম, ধন্যবাদ।
-ইচ্ছে করছে, একদুম খেয়ে ফেলি!

-এ্যাঁ



-এবার ও বলতে ধন্যবাদ।

-না মানে আমি…
-হুসস… উনি আমার ঠোঁটের উপর আঙুল রেখে আমাকে চুপ করিয়ে দিলেন।
কিছুক্ষণ আগে আমাকে এতগুলো কিস করেছেন যে এখনো আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। এক দৃষ্টিতে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছেন। কেমন যেন নেশা ধরে আছে তার দৃষ্টিতে। আমারও খুব করে ইচ্ছে করছে আজ তাকে কাছে পেতে। ইনসিকিউর ফিলিংস টা তাতে কমবে এমন মনে হচ্ছে। অন্যদিকে তার আমাকে নিজের সাথে এত গভীর ভাবে চেপে ধরে থাকাটা খুব লজ্জা লাগছে…
স্পন্দন আমার ঠোঁটে আলতোভাবে ছোট্ট করে একটা কিস করল। চোখ দুটো বন্ধ করে আছি। খুব বেশি ভালোলাগা কাজ করছে। ডান চোখের এক কোনা বেয়ে একটু অশ্রু ঝরে পরল…
মন টা আজ কেমন উতলা লাগছে…
-তুমি এতো চুপ কেন আজ। কি হয়েছে! স্পর্শিয়া বা অন্যকেউ কিছু বলেছিলো ভার্সিটিতে? নাকি গাড়ীতে বকুনি দিয়েছি বলে, রাগ করে আছো!
এই মুহূর্তে কেন যে স্পর্শিয়ার নামটা তুলল উনি, ধ্যাত। সব রোমেন্সের ফালুদা করে দিল। আমি নিজেকে উনার থেকে ছাড়িয়ে নিলাম,
-ইন্তিহা আপুর কাছে যাওয়া উচিত তো নাকি! ছাড়ুন, ফ্রেশ হয়ে নিন আপনি।
-হুম, আচ্ছা যাও ইন্তুর কাছে…আমিও আসছি…
আমি রুম ছেড়ে ইন্তিহা আপুর কাছে আসলাম। আপু রান্নাবান্নায় ব্যস্ত। অনেক আয়োজন করেছে…
-আপু, তুমি এই অবস্থায় এতকিছু কেন করতে গেলে।
-আজ প্রথম আমার সুইট কিউট ভাবিটা আসলো তার ননদের বাসায়। আয়োজন করব না!
আমি আপুর হাত ধরে টেনে নিয়ে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলাম,
-বাকিটা আমি করে নিব। তুমি চুপটি করে বসো আর আমার সাথে গল্প করো। সব তো কমপ্লিট…বাকি যা আছে আমরা করে নিচ্ছি।
-ননদ কে ননসের মত ট্রিট করছো! আমি খুবই লাকি। এমন ভাইয়া আর ভাবি পেয়ে…
-আচ্ছা আর প্রশংসা করতে হবেনা। তোমার শরীর কেমন আছে সেটা বলো। বাবু আর বাবুর মা ভালো তো!
-হ্যাঁ, ভাবি। আমরা ভালো আছি।
-যাক আলহামদুলিল্লাহ।
-তুমি অনেক গ্লো করছো ভাবি। আমার ভাই কি খুব ভালোবাসছে নাকি…হুম হুম



-হাহা, সব বেসন, চন্দনের কারসাজি। তোমার ভাইয়ার এতে কোন হাত নেই…
-হু, বললেই হল। তাই তো এসেই দুজনে রুমে ডুকে আর বের হচ্ছিলে না। বুঝি গো ভাবি…
মন খারাপ টা কোথায় যেন উবে গেল…আসলেই আমি পাগল। কিসব ভাবছিলাম সারাদিন। নাহ, স্পন্দন কে নিয়ে আমি আর উল্টোপাল্টা কিছু ভাবছি না....সবে তো বিয়ে হলো এখন শুধু ভালোবাসা থাকবে, রাগ অভিমানের জন্য পুরোটা জীবন পড়ে আছে…স্পর্শিয়া আমার জিনিসে যতই নজর দিক। আমার টা আমারই…
আধা ঘন্টার মধ্যে ডিনারের সব কমপ্লিট হয়ে গেল। আপুর হাজবেন্ড অমায়িক মানুষ। আপুর প্রতি তার কেয়ার অসামান্য। ডিনারের সময় উনি আপুকে কতসুন্দর করে যত্ন নিয়ে, কোনটা খাবে না খাবে দেখেশুনে প্লেটে তুলে দিচ্ছিলেন…আমাদের ও অনেক আপ্যায়ন করলেন…
অজান্তেই তখন আমার হাতটা আমার পেটের উপর চলে গেল। স্পন্দনের আর আমার বাচ্চা যখন আসবে এখানে, তখন স্পন্দনও হয়ত এভাবেই আমাকে কেয়ার করবে যত্নাদি করবে। আবার রাগও দেখাবে ভুল করলে…



কবে আসবে সেদিন…!!! ভাবছি আর লজ্জামাখা হাসি মুখে লেগে আছে আমার। তখনই মনে পরে গেল, আসি হসচ কেন্ডিডেট। হেহ, আরুশি তুই এখনো ছাত্রী মানুষ, দূরের স্বপ্ন এখন দেখে কাজ নেই তোর…



ডিনারের পর আমরা ভালোই আড্ডা দিলাম। কথাবার্তা হলো…ইন্তিহা আপুর হাজবেন্ড আর স্পন্দনের বন্ডিংটা দেখার মত। যেন তারা বন্ধু…এমন ভাবে আড্ডা দিচ্ছে। আমি আর ইন্তিহা আপু তাদের এক একটা কথায় হেসেহেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছি। আমরা বসেছিও পাশাপাশি…আড্ডায় আড্ডায় রাত ১টা বেজে গেলো। ইন্তিহা আপুর আর জেগে থাকা ঠিক নয়, তাই আমি উনাকে রুমে নিয়ে শুয়ে দিয়ে আসলাম। আপুর হাজবেন্ড আর স্পন্দন আরও কিছুক্ষণ গল্প করলেন। তাই আমিও রুমে এসে শুয়ে পরলাম…
২০/২৫ মিনিট পর স্পন্দন রুমে আসলেন। আমি উনার অপেক্ষায় ঘুমাই নি এতক্ষণ। জাস্ট শুয়ে ছিলাম। উনি রুমে আসাতে আমি উঠে বসলাম। স্পন্দন রুমের দরজা অফ করলেন। তারপর ট্রাওজার আর টিশার্ট পড়ে নিলেন। আমি বালিশ পিঠের নিচে দিয়ে বসে আছি। স্পন্দন বেডে উঠে আমার পাশে বসলেন।
-কি হয়েছে? ক্লান্ত লাগছে নাকি?
-না। ততটা না
-তো, এক্সাম তো চলে আসছে…টেনশন হয়না!
-হুম



-কাল বাসায় গিয়ে ধুমছে পড়াশোনা শুরু করে দিবা। আর ফ্রি থাকা চলবেনা। পড়া, পড়া আর পড়া। জিপিএ ৫ না আসলে খবর আছে আপনার!



এই রে, বর কম স্যার লাগছে বেশি। কি শুরু করল
আমার যা প্রিপারেশন পাস করব কিনা তাতেই সন্দেহ। আবার তো জিপিএ৫।

-আচ্ছা এসব কথা কালকের জন্য থাকনা। আজ তো বেড়াতে এসেছি, আজ অন্তত ছাড় দেন।
উনি আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে, উনার সাথে চেপে ধরলেন। আর আমার মাথাটা তার কাধে রেখে বললেন,
-মেম, ছাড় ই তো দিচ্ছি। তবে কাল থেকে আর দিচ্ছিনা।
-



-একটা কিস দাও।
উনার হঠাৎ এই কথার মাঝে 'কিসের' কথা ঢুকিয়ে দেয়ায় বেশ অবাক হলাম। চোখ বড় বড় হয়ে গেল…
-কি হল! ভয় দেখাচ্ছো নাকি চোখ বড় করে!
-আমি পারবনা, লজ্জা করে আমার!

-এটা ঠিক না। আমি যখন দেই, তখন তো ভালোই উপভোগ করো। আর আমি চাইলে মানা
হবেনা। মানছিনা।

-
-দিবা না।

-আচ্ছা দিবো। তার আগে একটা কথা জানতে চাই। বলবেন প্লিজ…
আমার চুল গুলো কানের পেছনে গুজে দিয়ে, বললেন,
-কি কথা!
-রাগ করবেন নাতো…
-আগে দেখি কি জানতে চাও…রাগ করা না করা তখন নির্ভর করছে…
মনে খুব ভয় নিয়েই, প্রশ্নটা করে ফেললাম। কারন এটা আমার আর স্পন্দের ভালো থাকা না থাকার উপর অনেকটা নির্ভর করে…
-আপনি কাউকে ভলোবাসতেন বিয়ের আগে বা এখনো বাসেন কাউকে?
প্রশ্নটা তো করে ফেললাম ঠিকই। বাট এখন ভয় হচ্ছে, উত্তরটা কি হবে তা ভেবে…
স্পন্দন আমার অনেকটা কাছে ছিলেন, প্রশ্নটা করার পর আমাকে ছেড়ে দিয়ে একটু ডিস্টেন্স ক্রিয়েট করলেন। অন্যদিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে আছেন…
জানিনা তার এই মৌনতা কেন? কিসের জন্য!
-গুড কুয়েশ্চন। না, আমি আগে কাউকে ভালোবাসিনি আর এখনও না। facebook.com/alishasharlin.arohi.5 বিষন্নতা নিয়ে বললেন…
বাট এতকিছু ধরে কে তখন। উনার উত্তরে আমি সে যে কি খুশি! অতিরিক্ত এক্সাইমেন্টে আমি ঝট করে উনার গালে একটা কিস করে দিলাম।



-এটা কি ছিলো

-আপনিই তো বললেন, কিস দিতে!

-এটা কিস ছিলো!
এখানে দাও…


উনার ঠোঁটের দিকে ইশারা করলেন, এই রে। আজ ভালো মুছিবতে পড়ছি মনে হয়।
-কি বলছেন এসব। আমার দ্বারা হবেনা…

-দিবানা

আমি জোর করছি নিজেকে…কিন্তু না, আমার অনেক লজ্জা করছে।
উনার ঠোঁট গুলো বাচ্চাদের মত পিংক কালারের। কোন রকম সিগারেটের ধরা ছোঁয়ার বাহিরে দেখলেই বুঝা যায়। তার ঠোঁটজোড়ার দিকে চোখ দুটো আটকে গিয়েছে আমার। ইচ্ছে করছে তাকে আদর করার, কাছে পাওয়ার। কিন্তু লজ্জাটাই বেশি লাগছে…আমি উনার অনেকটা কাছে গিয়েও কিস না করেই যেই উঠে পড়ছিলাম, উনি আমার হাতটা টান দিয়ে আবার আমাকে উনার কাছে নিয়ে গেলেন। খুব কাছে। তারপর আমার ঠোঁট নিজের দখলে নিয়ে নিলেন……

.
.
.
আমি লজ্জায় তাকাতে পারছিনা উনার দিকে। মনের মধ্যে ছোট খাটো একটা তুফান বয়ে যাচ্ছে। কি দারুন সে অনুভূতি…
উনি আমার থুতনি ধরে আমার মুখটা উপরে তুললেন। আমার চোখে চোখ রেখে বললেন,
-লাল শাড়ি বদনে প্রেয়সী তোমাকে একদুম লাল টুকটুকে নতুন বউ লাগছে। সেই প্রথম রাত্রিরের মত। আমার পিচ্চি বউ…



নিজের উপর অনেক কষ্টে কন্ট্রোল করে আছি কিন্তু। আজ অনেক কাছে পেতে ইচ্ছে করছে তোমাকে…
আমি কিছু বলছিনা। তার আবেগ মাখা কথা গুলো অনুভব করতে চাচ্ছি শুধু। এমন মুহূর্ত সবসময় যদি না আসে…
-এই, ঘুমাই গেলা নাকি!
-নাহ, ঘুমাই নি!
-কিছু বলছনা কেন!

-আজ আমি অনেক হ্যাপি…তাই কিছু বলতে পারছিনা। শুধু শুনতে ইচ্ছে করছে। শুধু আপনাকেই শুনতে ইচ্ছে করছে…
উনি আমার মাথাটা উনার বুকে নিয়ে রাখলেন, আর এভাবেই শুয়ে পড়লেন আমাকে নিয়ে…
-তাহলে চোখে পানি কেন তোমার! আমি কিস করেছি তাই কাঁদছ!
-আরে, কি বলছেন…এটা তো সুখের কান্না…
-আহা, ফিল্মি ডাইলগ



-হাসবেন না একদুম।

উনি তো ভালোই মনের কথা বের করে ফেলতে পারেন। আমাকে এতো সুন্দর করে কিস করল, যে এখনও একটা আবেশের মধ্যে আটকে গিয়েছি। চোখ থেকে জল পড়ছে কখন থেকে, সেই হুশই ছিলনা আমার…
হঠাৎ উনি বললেন,
-আমার উত্তরটা তোমার খারাপ লাগেনি!
-নাহ। খারাপ কেন লাগবে! কোন স্ত্রী ই চাইবেনা বরং তার স্বামী অন্যকাউকে ভালোবাসুক…তাইনা?
-কিন্তু, আমি যে বললাম এখনও কাউকে ভালোবাসিনা…এই কথাটা খারাপ লাগেনি তোমার! এখন তো তুমি আমার স্ত্রী, আমার হয়ত বলা উচিত ছিলো যে আমি তোমাকে ভালোবাসি…
-আমাদের বিয়ের এক সপ্তাহ হয়েছে মাত্র। এতো কমসময়ে ভালোবাসা সম্ভব না আমি জানি…তাই খারাপ লাগেনি।
-ভুল জানো…
-মানে!
-এখন আমার মন খুব করে চাইছে, তোমাকে ভালোবাসতে।
-



-তোমার মায়ায় বেশ খানিকটা আটকে গিয়েছি। এক মুহূর্ত তোমাকে ছাড়া থাকতে ইচ্ছে করেনা…সবসময় আমার মন ও মস্তিষ্কে তুমি বিচরন করছ…
উনার এমন কথায় কোথাও যেন হারিয়ে যাচ্ছি আমি। আমিও তো এটাই চাই। সব স্ত্রীরাই এমন চায়…
আমি খুশিতে উনাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। ইচ্ছে করছে খুব উনার বুকে একটা চুমু দিই…
উনি তো জানেন না। আমি উনাকে ঠিক কতটা ভালোবাসি। আমার ভালোবাসাটা তার জন্য এক দুদিনের বা ১ সপ্তাহের নয়। আমি তাকে আজ বহু বছর ধরে ভালোবাসি। যেদিন থেকে স্বামী কি বুঝেছি তার জন্য ১টা ভালোবাসার রাজমহল গড়ে তুলেছি সেদিন থেকে। তাকে ছাড়া অন্য কাউকে নিয়ে ১ মেকেন্ডের জন্যও ভাবিনি। বলব, সব বলব। সঠিক সময় আসলেই বলব…
-আরুশী!
-হুম
-কি ভাবছ
-কিছুনা
-ঘুমিয়ে পর তাহলে
-আচ্ছা
আমি উনার বুক থেকে মাথাটা উঠিয়ে বালিশে মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম…তাতে উনি প্রচন্ড রেগে গেলেন
-আমার বুকে ঘুমোতে কি প্রবলেম তোমার!
দূরে গেলে কেন…


-আমি বালিশ ছাড়া ঘুমোতে পারিনা তো

-ওকে, তাহলে আমিই কাছে আসলাম…তোমার আসা লাগবেনা।
বলেই উনি আমার বালিশে এসে শুয়ে পড়লেন। আমার গলায় মুখ গুজে…সাথে হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে রাখছেন। একটা পাও আমার উপর তুলে দিয়েছেন উনি। হায় আল্লাহ…আজ আর ঘুমোতে হবেনা আমার…

.
.
সকালে এলার্মের আওয়াজে ঘুম ভাংলো। কিন্তু শোয়া থেকে উঠব কিভাবে। বর আমার এখনো আগের মত ধরে শুয়ে আছে…তবে আরো বেশি কাছে। আল্লাহ গো, শেষ আমি…
কি ভার, কি ভার। মনে হচ্ছে আমার উপর কোন বিল্ডিং ধসে পড়ছে…
-এই যে শুনছেন।
-উম
-সড়ুন একটু প্লিজ।
-উম...মম
-প্রানপণে ধাকাচ্ছি। এক তিলও সড়াতে পারছিনা। আহা,,,সড়ুন না প্লিজ।
-না, সড়ব না।
-কেন?
-কাছে থাকো। যেও না। তুমি কাছে থাকলে তোমার ওই চুলের ঘ্রাণটা পাই। থাকো প্লিজ
চোখ বন্ধ করেই এসব বলছেন। কি কিউট লাগছে উনাকে। একদুম বাচ্চা ছেলের মত লাগছে ফেসটা দেখতে। যার নাকি বাচ্চার বাবা হতে হবে কিছুদিন পর।
অথচ নিজেই একটা বাচ্চা ফেস পুরা


-দেখুন, ইন্তিহা আপুর বাসায় তো আমরা। এতো লেইট করে উঠা ঠিক হবেনা। বুঝার চেষ্টা করুন
-উহুম……উম
-প্লিজ!
-আচ্ছা, তাহলে ওয়েট।
বলেই উনি উনার সদ্য শুরু করা কাজটায় আবার ব্যস্ত হয়ে পড়লেন করে। আমার ঠোঁটে গভীরভাবে আদর দিচ্ছেন। তার হাত দিয়ে আমার হাত চেপে ধরে আছেন। বুঝতে পারছি, উনি নিজের মধ্যে নেই একদুম। কাল রাতে কথা বলতে বলতে অনেক রাতে ঘুমিয়েছেন আর এখন সকাল ৬:৩০ বাজে। ঘুমের ঘোর কাটিয়ে উঠেনি এখনও…
.
.
.
রুম থেকে পাক্কা ৮ টায় বের হতে পেরেছি। কিচেনে গিয়ে দেখি, আপু আর তার বাসার কাজের মেয়েটা নাস্তা তৈরি করে ফেলেছে। আমি কিনা শেষ হতেই আসলাম। ইশশ,,,,,স্পন্দন টাও না। আমাকে লজ্জায় ফেলেন শুধু…
।
রাগী বর ১১+১২ 

লেখা- Rafiya Riddhi
.
রুম থেকে পাক্কা ৮ টায় বের হতে পেরেছি। কিচেনে গিয়ে দেখি, আপু আর তার বাসার কাজের মেয়েটা নাস্তা তৈরি করে ফেলেছে। আমি কিনা শেষ হতেই আসলাম। ইশশ,,,,,স্পন্দন টাও না। আমাকে লজ্জায় ফেলেন শুধু…
.
.
সকালে নাস্তার পর আমরা আরো কিছুক্ষণ ছিলাম আপুর বাসায়। তারপর বাসায় চলে আসলাম যখন, তখন ১১টা বাজে। এসেই একটু রেস্ট নিব, তা না। স্পন্দন আমাকে ঠেলেঠুলে শাওয়ার নিতে পাঠিয়ে দিলেন। মার সাথে এক্টু কথাও বলতে পারলাম না ভালো করে। আর উনার ঠেলেঠুলে পাঠানো মানেই বকা দেয়া যাকে বলে....

আমি ওয়াশরুমে গিয়েই পারিনা ঘুম দেই। চোখ জলছে ঘুমে। ক্লান্তি থেকেই এতো ঘুম পাচ্ছে। আমার এতো যার্নি করে অভ্যাস নেই। অন্তত ১০টা মিনিট ও যদি রেস্ট নিতে দিত।
একটা জল্লাদ বর।


.
.
শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে উনাকে রুমে দেখলাম না। আমি একটা জলপাই রঙের শাড়ি পড়েছি আজ। উনি রুমে আসলেন একটু পর।
-মা ডাকছে। শুনে আসো
-আচ্ছা
এই নাকি উনার ভেজা চুল পছন্দ। কাছেও তো আসলো না একটু।

আমি মার কাছে উনার রুমে গেলাম। স্পর্শ এখনো স্কুলে। মা আমায় উনার পাশে বসতে বললেন।
মা- কেমন লাগলো ইন্তুর বাসায়?
- অনেক ভালো লেগেছে মা। ইন্তু আপু তো অনেক করে বললেন, আরো একটা দিন থেকে যাওয়ার জন্য।
- হুম। কিন্তু তোর তো পরীক্ষার বেশি দিন নেই মা। পড়াশুনার এমনেই অনেক গাফলতি হয়েছে। স্পন্দন কিন্তু অনেক স্ট্রিক্ট পড়ালিখার ব্যাপারে। সো, বুঝতেই পারছিস।
- জ্বি।
- তুই কিন্তু একটা কথা জানিস না।
- কি কথা মা?
- পরীক্ষা অবদি তোর বাবার বাসায় তুই থাকবি এমন কথা হয়েছিল বিয়ের সময়। যেহেতু তোর কলেজ প্রাইভেট কুমিল্লাতে তাই।
- 



- মন খারাপ করিস না। সংসারের পাশাপাশি পড়াশুনাটাও তো জরুরি বল।
-না মা। মন খারাপ করিনি। তবে আপনাদের সাথে তেমন করে থাকা হলোনা। মিস করব বাবার বাসায় গেলে……
- বুঝি মা। স্পন্দন কে তো বললাম পরীক্ষার কয়দিন আগে নিয়ে দিয়ে আসলেই হবে। এদিকেই প্রস্তুতি নিক আরুশি। কিন্তু স্পন্দন মানলো না। আর তোর বাবার সাথে যা কথা হয়েছে, তার ও তো বরখেলাফ করা ঠিক হবেনা। তাই আমিও বেশি বাধা দিচ্ছিনা…
.
.
মার রুম থেকে এসে দেখলাম স্পন্দন রেডি হয়ে বসে আছেন। দারুন লাগছে দেখতে। এমনিতেই সুন্দর মানুষ। তার উপর এতো স্মার্টলি তৈরী হয়েছেন। আগুন লাগছে পুরা....

উফফ....








কিন্তু আমি কথা বললাম না। কি কথা বলব। ভালো ও তো লাগছে না। বাবার বাসায় যাব খুশি হবার কথা তো আমার। কেন হচ্ছিনা তাহলে....!!
পরীক্ষা সহ পুরো চার মাস স্পন্দন কে ছাড়া থাকতে হবে ভাবতেই মন খারাপ লাগছে।
বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে রইলাম। দৃষ্টি অসীমে…

.
একটু পর স্পন্দন বারান্দায় এসে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন রুমে। আর পড়ার টেবিলের চেয়ারে নিয়ে বসিয়ে দিলেন।
- সব শুনলে তো মার কাছে!
- হুম
- তো আর দেরী চলবে না। বাবার বাসায় যাচ্ছ শুক্রবার। সো আজ থেকেই পড়াশোনা স্টার্ট করে দাও। দুদিন ওয়েট করার কোন মানে নেই…
- আমি পরীক্ষার কিছুদিন আগে গেলে হবেনা!
দেখুন এমনিতেও আমার প্রাইভেট নেই এখন। টেস্ট পরীক্ষার আগেই সব প্রাইভেটের পড়াগুলো কমপ্লিট হয়েছে। এখন এখানেই একটা কোচিং এ ভর্তি হয়ে যাইনা!

- এই ব্যাপারটা মা ও অামাকে বলেছেন। বাট আমি যেটা বললাম সেটাই। শুক্রবারে তুমি কুমিল্লা যাচ্ছ। ব্যস......
-



- আমি স্পর্শিয়া দের বাসায় যাচ্ছি এখন। জানো ই তো ওর সাথে আজ দেখা করার কথা।
- হুম।
- আমি বাসায় এসে চেক করব কিন্তু কতটুকু পড়া হয়েছে তোমার। সো একদুম চিটিং করবেনা। আসি…
- কিন্তু, লান্চ না করেই চলে যাবেন...??
- আন্টি জোরালোভাবে বলে দিয়েছেন, স্পর্শিয়ার সাথে দেখা করতে এতদিন পর উনার বাসায় যাচ্ছি। না খেয়ে আসা চলবেনা…
- ওহ। আচ্ছা…সাবধানে যাবেন।
- তুমি লান্চ করে নিও।
.
.
উনি চলে গেলেন। একবারো উনাকে দেখে মনে হলনা এই চার মাসের জন্য আমি যে চলে যাব তাতে উনার বিন্দুমাত্র আপত্তি আছে বা আমাকে ছাড়া তার ভালোলাগবেনা। অথচ কালও বলেছিলেন অন্যকথা…বর জাত, বড়ই আজীব!
আমি কিভাবে থাকব নিজেও আশংকায় আছি। আমার যে মন পড়ে থাকবে এখানে উনার কাছে। কুমিল্লা গিয়েও পড়াশোনা আর কি হবে…



এই নাকি ভেজা চুল ভালো লাগে তার। কতবার চুল গুলোরে এদিক সেদিক লাড়লাম তার সামনে.....যদি তার চোখে পড়ে। না কাছে আসলেন না। আমি শাওয়ার নিয়ে আসার পর একবারো না…অদ্ভুত! যাক তার ম্পর্শিয়ার কাছে।



.
পড়তে বসলাম। মাথায় তো ঘুরে অন্যচিন্তা। কিসের আর পড়া…বহু কষ্টে ১:৩০ টা অবদি পড়লাম। মা এসে বললেন, আগে খেয়ে নিতে। তাই করলাম…
.
আজ স্পর্শকেও টাইম দিতে পারছিনা। উনি এমন কেন উফফ। না আসার পর একটু রেস্ট নিতে পারলাম, না মার সাথে গল্প করতে পারলাম। বসে বসে পড়াও অনেক পরিশ্রমের কাজ…কেউ নেই রে কেউ নেই, আমার দুঃখ বুঝার।
.

.
খাটে গিয়ে বই নিয়ে শুয়ে পড়লাম। দেখিয়ে দিব আমিও তাকে হুহ, যে আমি পড়া চোর নই। যতই হোক নতুন বিয়ে হয়েছে…প্রেস্টিজ পাংচার হোক চাইনা…
.
শুয়ে শুয়ে পড়তেছি পড়তেছি। হঠাৎ ই খুব খিদে পেয়ে বসল। এই না লান্চ করে আসলাম। তার মধ্যেই আবার খিদে পায় কেমনে!
হুম, পড়তে বসছি তো। বহুত কিছুই সম্ভব…কিছু করার নেই। পড়তে থাকলাম খিদে নিয়েই।
.
.
.
হঠাৎ মনে হল কেউ আমাকে ঝাকি দিচ্ছে। আমি খুব বিরত্ত হচ্ছি। যাকে বলে প্রচন্ড বিরক্তি
- আরুহীর বাচ্চা। ছাড় আমাকে। ঘুমোতে দে…
- দুটা থাপ্পর দিব যখন, তখন পুরোপুরি বুঝবা ঘুমের মজা টা......
আমি চোখ না খুলেই পা দিয়েই দিলাম এক লাথি।
- তোর এত্তবড় সাহস বড় বোনকে থাপ্পড়ের ভয় দেখাস। বেদ্দফ…
একটু পর নিজের মুখের উপর পানির বর্ষন হচ্ছে অনুভব করতেই লাফ দিয়ে শুয়া থেকে উঠে পরলাম। উহ....কি ঠান্ডা! উ....উ.....
চোখ মুখ মুছে দেখি…সামনে স্পন্দন। এতক্ষণে কিছুটা হুশ জ্ঞান ফিরলো আমার। বই টা পাশেই পড়ে আছে। বুঝলাম না পড়তে পড়তে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম…
- তুমার এতো বড় সাহস! এতো বড়!
- বিশ্বাস করুন। আমি পড়তেইছিলাম…কি...কিন....তু কখন চোখ লেগে গেল বুঝিনি।
- চুপ, একদুম চুপ। বেডে এসে কিসের পড়া তোমার? চেয়ার টেবিল নেই রুমে? আর লাথি দিছ কারে...?
আজ বান্দার কেল্লাহ ফতেহ সিউর…
- স...স....সরি। আমি তো ঘুমে ছিলাম। বুঝতেই পারিনি এটা আপনি…
- তোমাকে পড়তে বলেছিলাম। ঘুমোতে নয়,,,,,,গাধীর মত পরে পরে এতো কিসের ঘুম! আর লাথি টার শাস্তি দিচ্ছি ওয়েট!
- সামনে এক্সাম একটুও কি ভয় হয়না যে কি করবে পরীক্ষায়?
কেউ বাঁচা আমারে.........আ..আ...আ.....ভয়, প্রচুর ভয়।



- এই, কি জিজ্ঞেস করছি





- পরীক্ষা ভা....ভা.....ভলো হবে.....
- যেমন টেস্ট এক্সাম ভালো হয়েছিল তেমন ভালো??
এই রে শারছে। এই বেডায় আমার টেস্টের রেজাল্ট জানলো কেমনে,!!!
নিশ্চয়ই আরুহীর কাজ এটা। আরুহী আসতেছি আমি। তুই পিঠে ছালা বেঁধে রেডি থাকিস কুত্তি 


- মা.....মান......মানেে??

- প্রিটেস্টে তিন সাবজেক্টে ফেইল.....আর টেস্টে টেনেটুনে পাস! তারপরও কি করে বলো যে তোমার পরীক্ষা ভালো হবে????!!!
-



- damn.....ans me! বেড সাইড টেবিলে জোরে একটা বাড়ি দিয়ে...৷৷ আমি ভয়ে কেপে উঠলাম.....কেঁপে না আসলে যাকে বলে ক্যাঙ্গারুর মত লাফ দেয়া……

রাগী বর ১২ 

লেখা- Rafiya Riddhi
.
- damn.....ans me! বেড সাইড টেবিলে জোরে একটা বাড়ি দিয়ে...
আমি ভয়ে কেপে উঠলাম উনার এই কাজে.....কেঁপে না আসলে যাকে বলে ক্যাঙ্গারুর মত লাফ দেয়া.......
.
এত রাগ তো আমার সাথে আমার টিচার অর মাবাবাও কখনো দেখাননি, যতটা উনি দেখাচ্ছে। স্পন্দনের উপর অতি ভয়ে আর কিছুটা অভিমানে কান্না চলে আসতেছে আমার।
এতো রেগে আছে কেন? স্পর্শিয়া কি খাবারের সাথে রাগ বেড়ে যায় এমন কিছু খাইয়ে দিল নাকি উনাকে.....

.
উনি আমার উত্তর না পেয়ে রাগে গজগজ করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন....আমার কিছুটা সময় লাগলো, ভয়টা কাটিয়ে উঠার। তারপর ফ্রেশ হতে চলে গেলাম......মনটা প্রচন্ড খারাপ আছে!
.
অনেকটা সময় নিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলাম। একটু কেঁদেছি, একটু মুখে পানি দিয়েছি। আবার কেঁদে, আবার পানি দিয়েছি। কেন এতো বকে উনি। আমার তো এত বকা খাওয়ার অভ্যেস নেই।
ওয়াশরুম থেকে বের হতে ইচ্ছে করছেনা। দরজা খুলে একটু ঢুঁ মারলাম রুমে,
না উনি রুমে নেই। খুব ভালো হয়েছে....নেই। হুহ...
মুখ হাত মুছে চলে আসলাম স্পর্শের রুমে। যাবনা আর তার রুমে......
.
.
…
দুদিন পর, আজ বাবার বাসায় যাবার দিনটি। বিকেলে যাব আমরা.....আমাকে দিয়ে, স্পন্দন আবার পরদিন চলে আসবেন। এই দুদিন আমাকে উনি ছাত্রীর মতই ট্রিট করেছেন। তার মতে, একজন ভার্সিটি টপারের বউ এর রেজাল্ট যেমন তেমন হলে চলবেনা। আমারও উনার কথাটা অনুচিত মনে হচ্ছেনা। ট্রাই করব, নিজের আর উনার সম্মান রক্ষার....
.
সারা সকাল উনি বিজি ছিলেন। বাসায় পাইনি তাকে। তাই পড়াশোনা বাদ দিয়ে আমি ও মা-বাবা, স্পর্শ, ইন্তিহা আপুর সাথে সময় কাটালাম। আমি চলে যাব তাই আপু এসেছে বিদায় দিতে। আবার কোনদিন দেখা হয়....
.
দুপুরে খাবারের সময় স্পন্দন ছিলেন যদিও। মা বললেন, রেস্ট নিয়ে ৪ টার মধ্যে রওনা দিতে....
রুমে এসেই গা এলিয়ে দিলাম। যেহেতু গতরাতেই পেকিং শেষ সবকিছুর। তাই কোন টেনশন নেই। ১ ঘন্টা ঘুম দেয়াই যায়…
.
চোখটা যেই লেগে আসছে, তখন পেটের উপর কারো স্পর্শ অনুভব করলাম। আর হঠাৎ এমন কাজে লাফ দিয়ে উঠে পড়লাম ঘুম থেকে। স্পন্দন হা হয়ে আছে.....আমার এমন কাজে।
- একটু শান্তিতে ঘুমোতে ও দিবেন না! এই একটু সময়ও পড়তে হবে?
- আমি কি তোমাকে তেমন কিছু বলেছি?? বলেছি উঠো, পড়তে বসো? এতো বেশী বুঝো কেন? জড়িয়ে ধরছি তাতেও লাফ দেয়া লাগে?

-আচ্ছা, সরি।
বলেই আবার শুয়ে পড়লাম একটু দূরত্ব রেখে উল্টো দিকে মুখ করে। কিন্তু ঘুম আসছে না আর। স্পন্দন রে ইচ্ছে করছে ডিশুম ডিশুম লাগাই। ঘুমটাই নষ্ট করে দিলো......

- এই (স্পন্দন)
-
- এই শুনোনা....আরুশী,,,এই
- হু বলেন.....শুনতেছি
- আজ ঘুমানো লাগবেনা আর, কাছে আসোনা প্লিজ লক্ষীটি....
এই দেখি ভূতের মুখে রামরাম। ওল্ড ভার্সন আবার ইনস্টল হইলো কেমনে.....

- ঘুমোতে আর দিলেন কোথায়? আর তো আসবেনা ঘুম......
- তাহলে কাছে আসোনা প্লিজ.....
-
- ওই.....
-
-আসবানা?

-
.
তারপর মহাশয় নিজেই আমাকে এক টানে নিজের কাছে নিয়ে গেলেন.....। এটাই করুক উনি তাইতো চাচ্ছিলাম আমি।
পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আছেন আমাকে। তার প্রতিটা নিশ্বাস আমার ঘাড়ে পড়ছে। একটা হাত দিয়ে আমার কাঁধের নিচে দিয়ে নিয়ে কাঁধ জড়িয়ে ধরেছেন, অন্য হাত দিয়ে আমার কোমড়..... facebook.com/alishasharlin.arohi.5

.
- কিছু কথা বলছি, মনোযোগ দিয়ে শোন.....
-
- রাগ করে আছো, জানি। বাট আমি চাইনা আমাদের মাঝে গড়ে উঠা নতুন সম্পর্কটার জন্য তোমার পড়াশোনা বা ক্যারিয়ারে কোনরূপ কোন ব্যাঘাত ঘটুক। তুমি খারাপ স্টুডেন্ট ছিলেনা, জানি আমি। বরাবরই এসএসসি অবদি ভালো রেজাল্ট করেছো। তাহলে এখন কেন এমন করছো? প্লিজ, পড়ালিখাটায় মনোযোগ দাও। সবকিছুর জন্য অনেক সময় পড়ে আছে, এইচএসসির রেজাল্ট নেক্সট লেভেলে যাওয়ার জন্য অনেক গুরুত্ব বহন করে.....সো আর কেয়ারলেস থেকোনা এক্সামটা নিয়ে.....
- হুম, যাচ্ছি যেহেতু এক্সামের জন্য চারমাস তো পড়াশোনাই করব.....ডোন্ট ওয়ারি.....

- বাট ইউ হেভ টু ওয়ারি! বিকজ যদি তোমার গোল্ডেন না আসে তো তোমাকে কুমিল্লায় ই থাকতে হবে....শশুড় বাড়ির চিন্তা বাদ তোমার..মাইন্ড ইট!
কিহ!!! এতো বড় কথা.....
.
আমার আর উনার বিয়েটা কি এখন একটা পরীক্ষার উপর নির্ভরশীল। এই নাকি উনি আমার মায়ায় জড়িয়ে গেছে! এই তাহলে মায়ায় জড়ানোর নমুনা। আমার তো খুব রাগ লাগছে.....শয়তান ছাড় আমারে......
মনে মনে ভাবছি আর নিজেকে তার কাছ থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি.....
- ছাড়ুন, আমাকে। রেডি হব আমি। যাবো গা একেবারে বাপের বাসায়.....লাগবেনা আর আপনাকে। ছাড়ুন....বলছি
- আরে....আরে। আমি তো মজা করছি। কাঁদছ কেন.....





হাসছেন আর বলছেন.....
আমার তো বেশি রাগে কান্না চলে আসে.......কাঁদছি আবার চোখ মুছে তার থেকে সরে আসার চেষ্টা করছি.....সে ছাড়ছেই না। আমাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে জোরে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলেন.....
- অনেক রাগারাগি হয়েছে। শান্ত হও এবার। তোমার এই জীবনে অন্তত আমার সংসার করা থেকে রেহাই নেই৷ আর গেলো শাস্তি, সেটার জন্য আরো অনেক উপায় জানা আছে আমার, বুঝছ বেবী?

-
- ফুপানো বন্ধ করো তো। আমরা এখন রোমেন্স করব.....





- আমি করবনা, ছাড়েন। রেডি হবো আমি.....
- হুসস একদুম।
.
বলেই আমার চোখের পানি মুছে দিলেন তিনি। তারপর আমার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট বসিয়ে দিলেন। অনেক বেশি আদর করচ্ছেন আজ আমায়। হয়ত চার মাসের ডোজ আজকেই একসাথে দিতে চাচ্ছেন......
আমাকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিচ্ছেন। আজ মনে হয় আমাকে খুন করার ইচ্ছা আছে তার।
উঠে নিজের টিশার্ট টা খুলে ফ্লোরে ফেলে দিলেন। আমি তার উন্মুক্ত পিঠে ইচ্ছে মত নখের আচর ফেলে যাচ্ছি.......
.
.
.
কিছুক্ষণ পর ইন্তিহা আপু এসে দরজায় নক করলেন। স্পন্দন বিরক্তি নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-কে?
- ভাইয়া তোরা তৈরী হয়ে নিচ্ছিস তো? ৪ টা বাজতে বেশি সময় নেই। তাই মা পাঠালো...আমাকে। তোদের তাগাদা দিতে...৷
- হুম, রেডি হচ্ছি আমরা। তুই যাহ....কিছুক্ষণের মধ্যেই রেডি হয়ে আসছি আমরা।
বলেই আমার দিকে তাকিয়ে একটা দুস্টু হাসি হাসল।
- আচ্ছা ঠিকাছে, আয়।
.
তারপর আমাকে আরও কিছুক্ষণ ইচ্ছেমত আদর করে ছেড়ে দিলেন। আমি রেডি হতে চলে গেলাম....
.
.
.
.
রাত ৯ টারও পরে আমরা বাবার বাসায় এসে পৌছালাম। বাসায় আসার পর মা, আরুহী আর সবাই তো পারেনা আমাকে পেয়ে কেঁদেই দেয়। হুট করেই মেয়ে যখন বিয়ে হয়ে অন্যবাড়ি চলে যায় তখন হয়ত এমনই হয়। আমার পরিবারের কোন মানুষই মানসিক ভাবে প্রিপেয়ার ছিলেন না আর হুট করে দুদিনের মাঝে সব ঠিক হয়ে বিয়েও হয়ে গেলো! মানুষের জীবনটাই তো এমন.....কখন কি হয়ে যায় কারো জানা থাকেনা! facebook.com/alishasharlin.arohi.5
.
আরুহী তো ছাড়ছেই না আমাকে। মেয়েটা বড্ড ভালোবাসে আমাকে। বড় আপার চেয়েও আমার জন্য পাগল সে, ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু বাচ্চু ভালোবাসা পরে, তুই যে আমার রেজাল্ট নিয়ে স্পন্দন কে সব বলছিস, তার উপহারস্বরূপ কি পরিমান ধুমধারাক্কা যে খাবি তুই তার ইয়ত্তা নেই। স্পন্দন যেয়ে নিক খালি.....
.
রাতে আমরা সবাই একসাথে অনেক মজা, ঠাট্টার মধ্যে দিয়ে ডিনার সাড়লাম। আমার বড় আপা, তার হাজবেন্ড, দুই ভাইয়া, ভাবি, আরুহী.....আর কিছু কাজিন মিলে আড্ডা হয়েছে ভালোই। যেহেতু স্পন্দন একদিনের জন্য আছেন এখানে তাই সবাই তার সাথে দেখা করার জন্য উপস্থিত। যাক, আজ কোন পড়া নেই৷ ছুটি, হুররে....
.
.
.
পরদিন দুপুরে স্পন্দন রেডি হচ্ছেন। চলে যাচ্ছেন ঢাকা.....বুকের ভেতরটা খুব অস্থির লাগছে.....
আমার মোবাইলটা পর্যন্ত নিয়ে যাচ্ছেন উনি। বউ এর পড়াশোনার জন্য বর দের এতো সেক্রিফাইস এর দেখা কম ই মিলে। মার নাম্বারে কল দিয়ে নাকি কথা বলবে। বিয়ের প্রথম প্রথম বউ ছাড়া থাকতে হচ্ছে তার.....অথচ খারাপ লাগাটা বুঝতে দিচ্ছেন না।
.
উনার জন্য কফি করে আনতে চলে গেলাম।
.
কোন কাজই ভালো লাগছেনা। কিচেন থেকে এসে যা দেখলাম তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। এটা কি দেখছি আমি........
স্পন্দনের পুরো পিঠে লাল লাল আচরের দাগ। জলদি কফিটা টেবিলে রেখে তার কাছে গেলাম, তার পিঠে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলাম,
- ইশশ, এই কি অবস্থা হয়েছে আপনার পিঠের? আর কিভাবে হলো?
- একেই বলে, ভান করা!

- মানে???
- কাল দুপুরে নিজেই তো আমার পিঠের এই অবস্থা করছ। নিজের নখ দিয়ে আমার পিঠ টা শেষ করে দিছ, রাখছো কিছু? দেখো কি করছ... আবার বলছ কিভাবে হলো...??!!
হাইস্যকর.....বড়ই হাইস্যকর..... facebook.com/alishasharlin.arohi.5


মনে পরলো কালকে দুপুরের কথা। কি করেছি আমি এটা। ফর্সা পিঠ টার এই অবস্থা করেছি যে, যে কেউ দেখলে ভয় পাবে.....আর আমাকে রাক্ষসী ভাববে......
.
আমি- আসুন, ঔষধ লাগিয়ে দিচ্ছি। বলেই ফার্স্ট এইড বক্স আনার জন্য যেই পা বাড়ালাম,
উনি আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
.
- জানেমান, ঔষুধ লাগবেনা। আগামী চারমাস অন্তত দাগগুলো থাকুক...
থাকতে দাও....তোমার দেয়া প্রথম স্মৃতি হিসেবে.....
রাগী বর ১৩+১৪ 

লেখা- Rafiya Riddhi
.
- জানেমান, ঔষুধ লাগবেনা। আগামী চারমাস অন্তত দাগগুলো থাকুক...
থাকতে দাও....তোমার দেয়া প্রথম স্মৃতি হিসেবে.....
.
.
.
.
আমার দিনগুলো চলতে শুরু করল। আমার জানটাকে ছাড়াই। প্রথম প্রথম কয়দিন খুব কষ্ট হয়েছে, এই ভেবে কিভাবে থাকব এতগুলো দিন নিজের সংসার ছেড়ে, তাকে ছেড়ে। তার উপর স্পর্শিয়া আপুকে নিয়ে বাড়তি টেনশন তো আছেই। সারাদিন বাসায় যখন থাকি দুজন হোম টিউটর আসেন। একজন ফিজিক্স ও ম্যাথ টিচার, ভার্সিটির ভাইয়া। অন্যজন আমার কলেজের প্রফেসর, রসায়ন পড়ান। এই তিন বিষয়েই প্রস্তুতি বাজে আমার তাই বাবার সিদ্ধান্তানুযায়ী হোম টিউটর রাখা হল। ভার্সিটির যে ভাইয়া পড়াতে আসেন আমাকে, উনি বরাবরই খুব ভালো স্টুডেন্ট আর আমাদের এলাকায় থাকেন। উনি নাকি বাবার খুব পছন্দের। বাবার মতে, উনি খুবই ভদ্র, ভালো, মেধাবী ছেলে। নাম প্রতীক।
৬ ফুট উচ্চতার, স্মার্ট, ফর্সা মানুষ। কিছুটা লাজুক প্রকৃতির ও মনে হল আমার। ভার্সিটিতে পড়ুয়া অথচ লাজুক। ব্যাপরটা অনেকটা রেয়ার বাট দারুন কিছু।

.
.
প্রতীক ভাইয়া আমাকে প্রতিদিনই পড়াতে আসেন, শুক্রবার বাদে। যেহেতু উনি দুই সাবজেক্ট পড়ান আমাকে, তাই জলদি সিলেবাস শেষ করানোর লক্ষে প্রতিদিন আসেন। আর কেমিস্ট্রি টিচার আসেন সপ্তাহে তিনদিন। শুক্রবার উনারা কেউ পড়ান না। কিন্তু অন্য একজন আসেন পড়াতে। স্পেশাল টিচার আমার। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত পড়ায়। এইজন আর কেউ নয়, আমার হৃদয়ের ধকধক। মানে স্পন্দন আরকি
। সপ্তাহে একদিন আসেন উনি। আমাকে দেখতে নয়, আমার পড়ালেখার খবর নিতে আসে।
মাঝোমাঝে পড়ায়ও।



.
আজ স্পন্দন আসবেন। সব পড়া কাল রাত জেগে পড়ে শেষ করেছি। আমার জান টা আসবে যে। একটু পরপর ফোন দিচ্ছি। কোথায় আছে, এতো সময় কেন লাগছে বলে বলে তাকে জ্বালিয়ে ফেলছি।
আবার ফোন দিলাম। ধরছেনা.......
৫ বারের বেলা ধরল
- এতক্ষণ লাগে কুমিল্লা পৌঁছাতে?
- এই তুমি এত অধৈর্য কেন? বলছিনা আর কিছুক্ষণ! এত কল দিচ্ছ কেন!
- কিছুক্ষণ কিছুক্ষণ তো সেই কখন থেকে করে যাচ্ছেন। কিছুক্ষণ তো আর শেষ হয়না....
- পড়তে বসো যাও। আসলে তো দেখবাই আমাকে। আর একবার যদি ফোন দিয়েছ তো, আবার ঢাকার জন্য রওনা দিব বলে দিচ্ছি। রাখো......
.
বলে কেটে দিল।
উনার তো বউ কে দেখতে ইচ্ছে করেনা। এমন তো করবেই। সেই ১২ টায় রওনা দিয়েছে আর এখন সন্ধ্যে হয়ে গেল। প্রতীক ভাইয়া ও পড়ায়ে চলে গেল। কিন্তু উনার আসার খবরই নেই কোন। একদিন সব শোধ তুলব আমি। ভালো তো বাসেনা আমাকে......যেদিন বলবে ভালোবাসি তোমাকে। সেদিন থেকে বুঝাবো আমি, ভালোবাসার মানুষটার জন্য অপেক্ষা করা কতটা কষ্টের, কতটা কঠিন।
.
তার আধা ঘন্টা পর কলিংবেল বাজার শব্দ কানে আসল। আর তাতেই দিলাম এক দৌড় দরজার পানে। দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। নাহ, খুলবোনা আমি দরজা। বুঝো কেমন লাগে....
আরুহী টিভি দেখছিল.....বললাম স্পন্দন এসেছে মেবি, দরজা টা খুলে দে। আমি পড়ি। বলেই আমার রুমে চলে আসলাম আর পড়তে বসেছি এমন অভিনয় করছি। আরুহী ভ্যানভ্যান করে কিছু একটা বলল কানে নিলাম না....
.
.
.
অনেক্ষণ চলে যাচ্ছে উনি তো রুমে আসছেন না একবারো।
না আর সম্ভব না ভান ধরে থাকা.....ড্রয়িংরুমে মারলাম একটা উকি। স্পন্দন যে সোফাটায় বসেছেন, আমার এখান থেকে তাকে ভালোভাবে দেখা যাচ্ছেনা।

অভাগী আমি.....কোন কিছুই সহজে পাইনা। কষ্ট করতে হয় তার জন্য
.
আম্মু আর ভাবী উনাকে আপ্পায়নে ব্যস্ত। একসময় আম্মু আরুহী কে বলল,
- আরুশী কে ডেকে নিয়ে আয় যাহ। মেয়েটা হয়ত টের পাইনি স্পন্দন যে এসেছে.....
আহা ঢিংকে চিকা, ঢিংকে চিকা। ও...ও...ও....
ডাক পড়েছে।
আমি নিজেকে ভালো ভাবে একবার দেখে নিচ্ছি। জামা কাপড় ঠিক করছি।
বাবার বাসায় থ্রিপিস ই পড়ি। মাবাবা, বড় ভাইয়া ওদের সামনে শাড়ি পড়তে লজ্জা লাগে।
কিন্তু আমার খুৃশিটা বেশিক্ষণ আর স্থায়ী হলনা।
- মা, ও মেবি পড়ছে। পড়ুক....
আমি রুমে গেলেই দেখা হবে। (স্পন্দন)
- হ্যাঁ, ভাইয়া তো ঠিকই বলছে। এমনেই আপু পড়তে বসেনা। এখন যাও পড়তে বসছে.....
- তুই সবসময় আরুশীর ব্যাপারে এসব বলিস। স্পন্দন ওর কথা শুনোনা ভাই। মেয়েটা কাল সারারাত পড়েছে যাতে আজকের পড়াটাও কমপ্লিট করে রাখতে পারে...বুঝতেই পারছ কি কারন এমন করার! (ভাবী)
ভাবীটা কত লক্ষী গো.....লাব ইউ সোনা ভাবী আমার....



.
কিন্তু উনি আসলে আরুহী কুত্তিটা উনাকে সবসময় আমার পড়া নিয়ে এ টু জেট বলে দেয়। কখন কি পড়া চুরি করেছি। কোচিং এর পরীক্ষায় কত নম্বর কম পেয়েছি। না পরে কোনদিন জলদি ঘুমাই গেছি.....সব বলে দেয় সব। জানিনা আরুহী কে উনি একাজের জন্য কি ঘুষ দেয়।
যেমন দুলাভাই, তেমন তার শালী.....


.
আমাকে বকা খেতে দেখতে নাকি আরুহীর ভালোলাগে, তাই এমন করে। দুলাভাই কে দিয়ে বকা খাওয়াতে উঠেপড়ে লাগে।
যেহেতু ছোটবেলা থেকে আম্মুআব্বুর সব কথা শুনতাম, তাই তারা আমাকে তেমন বকতো না। আরুহীর বাচ্চাটা বকা খেত তার দুস্টমীর জন্য আর আমাকে হিংসে করত। আমি কেন বকুনি খাইনা…...
এখন সে মানুষ পেয়েছে আমাকে বকা খাওয়ানোর আর আমাকে বকা খেতে দেখে নিজের মনটাকে পৈশাচিক আনন্দ দেয়ার....

.
আরুহীর বিচারের খাতা খুলে বসে আর উনি সব শুনে আমাকে ইচ্ছেমত বকা দেয় then আমি কাঁদি খুব। তো যাওয়ার আগে আবার আমাকে উনিই ইচ্চেমত আদর করে দিয়ে যায়, রাগ ভাঙায়।
কান্না করলে পিঠে হাত বুলায়ে শান্ত করে আমাকে.....
তো কখনো পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে চুলে মুখ গুজার ভানে আমার ঘাড়ে নিজের নাক ঘষতে থাকে। একবার নাক ঘষে, তো একবার কিস করে। আবার নাক ঘষে.....আবার কিস করে.....
আর আহ্লাদী কন্ঠে ডাকতে থাকে, আরুশী....এই আরুশী! জান....আরু….....



- বর তো চলে যাচ্ছে , কথা বলবানা এখনো! আরু....
এসব বলে আর আদর করে......

.
আমি তো জোশ উপভোগ করি যখন কেউ আমার রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করে.....আর স্পন্দন হলে তো কথায়ই নেই।
আমি ঢং করি তাকে নিজের থেকে ছাড়ানোর, আর যতবার এমন টা করি। ততবার স্পন্দন শক্ত করে জড়িয়ে ধরে......
ভালোবাসার পরশ দেয়.....


.
দুই সপ্তাহে আগে যখন এসেছিলেন উনি। তখন খুব বকেছিলেন। অসাবধান হয়ে চলে ঠান্ডা জ্বর বাধিয়েছিলাম বলে। এই শীতে আইসক্রিম খেয়েছি, দেরীতে গোসল করি সব বলে দিয়েছিল আরুহী বান্দরনী টা.....
আর তো স্পন্দনের বকা। হায়রে......
সেদিনই আমি তাকে মাত্রাতিরিক্ত রাগতে দেখেছি.....পড়া চুরি করলে হাল্কা বকে কিন্তু বউ অসুখ বাধিয়েছে তাই এতো রাগ তার......আল্লাহ, মাবুদ......
.
ঢাকা থেকে এসে একটা কথাও বলেনি সেদিন। এসেই ফ্রেশ হয়ে, আমাকে নিয়ে চলে গেলেন ডাক্তারের কাছে। যদিও ভাবি একবার নিয়ে গিয়েছিল। উনি আবার নিয়ে যায়। আমাদের বাসা চতুর্থ তলায়। উনি আমাকে কোলে করে গাড়ী পর্যন্ত নিয়ে যান, ডাক্তারের কাছ থেকে ফেরার পরও কোলে করে আবার ৪র্থ তলায় উঠান। আমি বাঁধা দিচ্ছিলাম। কিন্তু তার বিপরীতে একটা টু শব্দও করলোনা। তার চেহারা দেখে চুপসে গিয়েছিলাম। কি রাগ ছিল তখন উনার চোখেমুখে....কিন্ত কিছু বলেন নি তখনো....
যেই জ্বরটা ১দিন পর কমলো আমার, খুব বকেছিল আমাকে উনি। উনার রাগ দেখে কেউ সেদিন আর তার ধারের কাছেও ঘেষেনি...মাবাবা, আরুহী, ভাইয়া-ভাবী কেউনা। আমি অসহায়, একলা নারীর পাশে একটা কেউ ছিলনা......প্রচন্ড রাফ বিহেভ করেছিলেন আমার সাথে।
প্রচন্ড দুঃখে আমি চুপ হয়ে ছিলাম। বকে টকে তার ২ ঘন্টা পর উনি ঢাকার জন্য রওনা দিলেন। কেউ কারো সাথে ১টা কথাও বললাম না।
ভাবলাম এবার উনি আমাকে সহজে মাফ করবেন না। কিন্তু না...যেটা কখনো ভাবিনি আমি সেটাই করলের তিনি।
.
সেদিন বাস স্ট্যান্ড থেকে উনি আবার আমার কাছে ফিরে এসেছিলেন। ঢাকা না গিয়েই ফিরে আসলেন.....বাসে উঠেন নি। বাবার বাসায় ফিরে এলেন। আর এসেই আমাকে.......
চলবে.....
রাগী বর ১৪ 

লেখা- Rafiya Riddhi
.
আমি খুব কান্না করেছিলাম সেদিন। দুপুরে খাইনি পর্যন্ত। জ্বরটা এখনও আছে তবে কম। দুপুরের ঔষধ খেতে হবে, কিন্তু লান্চ করিনি সো ঔষুধও খেলাম না। নিজেকে কষ্ট দিতে ভালোলাগে যখন আপন মানুষটা কষ্ট দেয়। তখন ইচ্ছে করে নিজেকে খুব কষ্ট দিই। তার যেমন রাগটা বেশি, আমারও অভিমানটা বেশি। উনি আমাকে এতো কেন বকে। আমার মত লক্ষী বউ কয়টা আছে। বাট না বকে তো তার হয়না। শশুড় বাড়ি আসি ও বউরে সবার সামনে বকে ধুমধাম।

.
কান্না করে করে চোখ ফুলে গেছে। ব্যাথা করছে। আর শুয়ে থাকতেও ইচ্ছে হচ্ছেনা। ভাবি, আরুহী, আম্মু অনেকবার এসে দরজার বাহির থেকে খেয়ে নেয়ার জন্য জোরাজুরি করে গেছে। দরজা খুলিনি আমি।
.
উঠে দরজা খুলে দিলাম। আর ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। মুখে পানি ঝাপটা দিলাম। আয়নায় নিজেকে দেখে চিনতে পারছিনা। দুদিনের জ্বর আর কান্নায় চেহারার কি দশা যে হয়েছিল।
বের হয়ে একপ্রকার চমকেই গেলাম। যেই দরজা খুলে দিলাম খাবার আমার রুমে উপস্থিত। টেবিলের উপর রাখা। নিশ্চয়ই ভাবির কাজ। মুখ হাত মুছে নিলাম। খাবারের দিকে তাকিয়েই আছি। এত ক্ষুধা পেয়েছে অথচ খেতে ইচ্ছে করছেনা। আম্মু আসুক, খাইয়ে দিতে বলব। আবার শুয়ে পড়লাম। বেড সাইড টেবিলে রাখা স্পন্দন আর আমার ছবিটা দেখে আবার কান্না পেয়ে গেল। জানিনা আর আসবেন কিনা আমার পরীক্ষার আগে কুমিল্লা। আজ একটু দেখা করেও গেলো না। কত ভালোবাসি তাকে বলে বুঝানো সম্ভব না…
.
কাঁদছি আর চোখের জল মুছছি। তখনই আমার পেটের উপর কেউ হাত রাখল, পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় দেখতে পাচ্ছি তাকে। কিন্তু উনি তো চলে গিয়েছিলেন। ফিরে আসলেন কেন ভেবে অবাক হচ্ছিলাম। হ্যাঁ, এটা আর কেউ নয় স্পন্দন ই ছিলো। কিন্তু কথা বলিনি তখনও
স্পন্দন- আরুশী, আমি জানি তুমি খুব অভিমান করেছো। তোমার সাথে অনেক বাজে বিহেভ করে ফেলেছি। যেখানে তুমি অসুস্থ আর আমি কিনা এত কিছু বলেছি। মানুষের রাগ জিনিসটা তাকে দিয়ে অনেক ভুলভাল কাজ করিয়ে ফেলে। প্লিজ আর কষ্ট পেওনা। ভুল তো তুমিও করেছো তাই বকেছি। ফিরো না এদিকে, প্লিজ।
- কিছু বললাম না। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসল…
- খুব কষ্ট পেয়েছো? এখন সব কষ্ট দূর করে দিচ্ছি ওয়েট।
বলেই আমার ঘাড়ে কিস দিচ্ছিল একাধারে। যেন বকে ক্ষান্ত হননি। এবার মারার প্লেনিং করে এসেছে। আমি সড়ে গেলাম। পারছিনা সহ্য করতে। সারা শরীরে শিহরন বয়ে গেল। নিজেকে কোনরকমে সামলিয়ে নিলাম। উঠে বসলাম। সাধারন ভাবেই বললাম,
- আপনি তো চলে গিয়েছিলেন ঢাকার উদ্দেশ্যে। ফিরে আসলেন যে...!
- বলছি। আগে শোও আমার পাশে।
- না। সারাদিনই শুয়ে ছিলাম। আপনি বলেন…বকা দিয়ে তখন তৃপ্তি হয়নি তাই আবার বকতে ফিরে আসছেন! নাকি আরুহী আবার নতুন কোন নালিশ করেছে। তাহলে শুরু করুন…রাগ ঝাড়া। আমি প্রস্তুত। কাঁপা গলায় বললাম। আর কিছু বলতে গেলেই কেঁদে দিব মনে হচ্ছে....
.
স্পন্দন কিছু বলেনি আমার কথার প্রতিউত্তরে। আমার দুচোখের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছু বলছেনা। কেমন নিরবতা তার দৃষ্টিতে। উনি শুয়ে আছে, আর আমি উনার পাশে বসা। তার এই দৃষ্টি ভালো লাগছিল না। বেড থেকে যেই নামতে যাব, স্পন্দন আমায় টান মেরে খাটে ফেলে দিলেন। আমার হাত দুটো নিজের মুঠিতে নিয়ে নিলেন। আমি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি যত, তত শক্ত করে হাত ধরে রাখছেন। তার চোখে কেমন অনুতপ্ততা
- প্লিজ, আমার ভালো লাগছেনা। ক্ষুধা পেয়েছে। ছাড়ুন, যা শাস্তি বাকি আছে পরে দিবেন। তৃপ্তি মিটিয়ে দিয়েন তখন। আমি তো আছিই এর জন্য……বলতেই চোখের কোন বেয়ে কিছু পানি গড়িয়ে পড়ল। শত অভিমানের অশ্রু।
.
চোখের কোন বেয়ে যেই পানিটা পড়ল। স্পন্দন তার ঠোঁট দিয়ে সাথেসাথে আমার চোখের পানি মুছে নিলেন। তার ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে স্বর্গানুভুতি হচ্ছিল। এমন হাজারো অশ্রু কনা চোখে আবদ্ধ হয়ে আছে। যেকোন সময় গড়িয়ে পরবে।
- দরজা খুলা। উঠেন আমার উপর থেকে। সন্ধ্যা হওয়াররর....
আর বাহানা দেয়া হলো না। তার আগেই আমার ঠোঁটে স্পন্দন নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিল। আজ তার স্পর্শ কেমন আলাদা লাগছে। মনে হচ্ছে রাগ ভাঙানোর একটা আলাদা আদর। তার প্রতিটা স্পর্শ যেন আমাকে সরি বলছে....
একটা সময় আমিও তাকে আদর দিতে শুরু করে দিলাম। আমার স্পর্শ গুলো হয়ত তাকে বুঝাচ্ছে, হ্যাঁ সরি এক্সেপটেড।

.
অনেকটা সময় পর আমি নিজেকে তার থেকে ছাড়ালাম বহু কষ্টে। আমারো নেশা লেগে গেছে। স্পন্দনের শার্টের বোতাম গুলো খুলে ফেলছি এক এক করে। কিন্তু তার উন্মক্ত লোমশ বুকটা দেখেই ইচ্ছে হল মাথা রাখার। বুকে মাথা রেখে কান্না শুরু করে দিলাম…অশান্ত ছিলাম সারাটাদিন। এখন যেন শান্তি খুঁজে পাচ্ছি……
- আপনি সবসময় কেন এত বকেন আমাকে। আমি কি এতই রাগাই আপনাকে...? ফুঁপাতে ফুঁপাতে..
স্পন্দন আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন নিজের বুকের সাথে।
- এই দেখ, এতকিছু করেও লাভ হয়নি
- কিসের লাভ!
- আমি তো জানতাম, বউ দের খুব আদর করে দিলে তাদের রাগ ছু মান্তার ছু হয়ে যায়। এত আদর দিলাম তাও রাগ অভিমান যায়নি
- যা বকা দিয়েছেন, তার সামনে এই আদর কিছুই না
- ওহ তাইনা? আসো, যতক্ষণ বকাগুলোর থেকে আদরের পরিমান বেশি না হচ্ছে আদর দিতে থাকি। জানাবে আমায় তুমি তুষ্ট হলে…ওকে? বলেই কাছে আসছে … মুখে তার দুস্টু হাসি.....
আমি খুব লজ্জা পেলাম। স্পন্দন আমার জামার ভেতর দিয়ে নিয়ে আমার পেটে হাত রাখলেন, আর আমি লজ্জায় কুকড়ে গেলাম। আবার ঠোঁটে চুমু খাবে তখনই আমি বাধা দিলাম। মুখটা কালো করে, অন্যদিকে তাকিয়ে আছি……এতে উনি উঠে পাশে শুয়ে পরলেন আর একটা শ্বাস ছেড়ে বললেন,
- আরুশী তুমি জানতে চেয়েছিল রওনা দেয়ার পর কেন ফিরে আসলাম আবার। তো শুনো....তোমাকে আজ অযথাই অনেক বকা দিয়েছি মনে হচ্ছিল। অসুস্থ বউটা কে কিভাবে এত কথা শুনালাম ভাবতেই গিলটি ফিল হচ্ছিল খুব। আমার রাগ হচ্ছিল নিজের উপরেই। facebook.com/alishasharlin.arohi.5 তোমাকে বকি ভালোর জন্যই। তাতে আমার আফসোস নেই। বাট আজ বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গিয়েছে। তোমাকে কাঁদতে দেখে বুকে কেমন ব্যাথা...........তাই বাসে আর চড়িনি। তোমার কাছে চলে আসলাম। এখন শান্তি লাগছে......
উনার কথায় পিগলে গেলাম
- আর এত কাঁদো কি করে তুমি। চোখের কি অবস্থা করেছো? কানি হবার ইচ্ছে আছে(!)
- বাহ,,,,আবার বকছেন!!!!
- আমাকে নিজের সাথে চেপে ধরে বললেন, বকছি না সোনা বউ। জানিয়ে দিচ্ছি...কানির সাথে সংসার করবনা কিন্তু। যেই হারে কান্না করতে পারো....বলা যায় না চোখের পাওয়ার কদিন টিকে.....আচ্ছা, একটু কিছু বললেও কাঁদতে হয়¡
আপনি মোটেও একটু বলেন না। প্রচুর বলেন। আর আমি যদি কানিও হই আপনার জন্যই হবো। আপনার বকা খেয়ে খেয়ে
--আচ্ছা আর বকবনা। তুমিও এমন কিছু করোনা যাতে আমার রাগ হয়। বলেই কপালে একটা চুমু দিল
.
.
.
স্পন্দন কে আমার একএক সময় একএক রকম লাগতো। ঔদিনটা আমার উনার সাথে যত বেস্ট স্মৃতিগুলো আছে তার মধ্যে পড়ে। মেয়েরা ভালোবাসে খুব, তার প্রিয় মানুষটা তার রাগ ভাঙাক। ছোট ছোট পছন্দ গুলোকে প্রায়োরেটি দিক। রাগ না ভাঙা অবদি চেষ্টা করে যাক। এই ব্যাপার গুলোই তো মেয়েদের আশ্বস্ত করে তার স্বামী তাকে কেয়ার করে, ভালোবাসে।
সেদিন স্পন্দন আমাকে নিজ হাতে দুবেলা খাইয়ে দিয়েছেন, আমাকে সারাটা সময় দিয়েছিলেন। কখনো নিজের পায়ের উপর বসিয়ে তার কাঁধে আমার মাথা রাখতে দিয়ে গল্প করেছেন, তো কখনো জড়িয়ে ধরে চুলে বিলি কেটে দিচ্ছিলেন। মজার মজার কথা বলে হাসাচ্ছিলেন। এটা স্পন্দনের আলাদাই একটা আবতার। যেই আমি অল্প অসুখ হলেই সহ্যশক্তি হারিয়ে ফেলি। সেদিন মনেই হয়নি আমি অসুস্থ আছি। কারন আমার সকল অভিযোগে যেমন স্পন্দন, তেমনি সকল অসুখের ঔষুধিও স্পন্দন। facebook.com/alishasharlin.arohi.5
.
.
বিয়ের এই কয়েক মাসে স্পন্দন কে খুব ভালোবেসে ফেলেছি। একজন পারফেক্ট বরের সব গুনই তার মধ্যে খুজে পাই আমি। তার উপর এতো সুন্দর যে চোখ সরাতে ইচ্ছে করেনা। তবে রাগটা মাত্রাতিরিক্ত। তবে আমাকে কেয়ার করে বলেই হয়ত এতটা বকে ভুল করলে.....
.
আমার দিনগুলো চলে যাচ্ছিল এক এক করে। তবে হঠাৎ স্পন্দনকে কেমন জানি চেন্জ মনে হচ্ছিল.....
রাগী বর ১৫+১৬ 

লেখা- Rafiya Riddhi
.
আমার দিনগুলো চলে যাচ্ছিল এক এক করে। তবে হঠাৎ স্পন্দনকে কেমন জানি চেন্জ মনে হচ্ছিল.....প্রতি সপ্তাহে আসে না আর আগের মত। ফোন দিয়েও বাড়তি কথা বলবেনা। রোমান্টিক কথাবার্তা তো দূরের ব্যাপার।
ধরেই নিলাম আমার পরীক্ষা তাই এমন করছে।
.
আগের তুলনায় প্রস্তুতি ভালোই চলছে। মাবাবা সবসময় আমাদের জন্য বেস্ট ডিসিশন ই নেয় আসলে। বাসায় টিউটর রাখা না হলে আজ এতটা ইমপ্রুভ হতনা স্টাডিতে।
.
দুপুরের কিছু পর স্পন্দন কল দিলেন,
- কি করা হচ্ছে?
- প্রতীক ভাইয়ার পড়া কমপ্লিট করলাম, এখন শুয়ে আছি।
- খেয়েছো দুপুরে?
- জ্বি, আপনি?
- হুম
-
- ভিডিও কল দিচ্ছি। কাটো.....
- কোচিং এ পরীক্ষা কাল, পড়তে হবে। রাখছি



- বাহ, তুমি এত ভালো হলা কবে থেকে(!)
- আমি সবসময়ই ভালো

- কিন্তু পড়াশোনার ব্যাপারে মোটেও ভালো ছিলেনা। আমার সাথে থেকে থেকে লাইনে আসতেছো মেবি।

- আপনার সাথে আর রাখলেন কই। আচ্ছা রাখছি আমি.....
- এই আরু শুনো.......
ফোনটা কেটে দিলাম। আজ এই প্রথম সে আমাকে নয়, উল্টো আমি তাকে ইগনোর করলাম। ওয়াহ, একটা পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছি……
কোন্ স্বামী তার বিয়ে করা নতুন বউকে ছাড়া এভাবে থাকবে???!!! স্পন্দন ই থাকে। তার তো আমাকে ছাড়া ঠিকই চলে, আমার না তাকে ছাড়া শুন্য শুন্য লাগে।
আমি ঢাকা যেতে চাই...এ্যা
পরীক্ষা জলদি চলে আয় ভাই…নাহয় তো যেতেও পারছিনা।


এ প্রথম কোন পরীক্ষার্থী হয়ত চাচ্ছে পরীক্ষার দিনটি জলদি আসুক…
.
পড়া রিভিশন দিতে বসলাম আবার। কিন্তু ভালো লাগছেনা পড়তে। মন যে ভালো নেই.....একটু ঘুরে আসা যাক বাহির থেকে।
আমার একমাত্র প্রাণের বান্ধবী অথৈ কে ফোন দিলাম
অথৈ- হ্যালো, বিয়াইত্তা মহিলা। বলেন কি চাই...
- ঔ আমি মহিলা(!)
- হো।
- এমনিতেই মেজাজ খারাপ। আউলাঝাউলা পিটা লাগাবো এসব বললে।
- উপসস, সরি সরি। আপনি তো কচি খুকি। হাহা.....
- থামবি?
- আচ্ছা, তুই খুকি কেমনে? বিয়ে হয়ে গেলে তো কেউ খুকি থাকেনা। জামাইরা থাকতে দিলেইনা থাকবে.....
সব তো করেএএএ.......

আর বলতে না দিয়ে বললাম,
- ভাবছিলাম দুজনে রেস্টুরেন্টে গিয়ে খানাপিনা করব। তোর আর আমার জন্য চুড়ি কিনব, ঘুরবো। বাট আমার ঠেংগ পুল করে নিজেই মিস করি ফেললি এসব।
আরুহী পাবে তোর গুলো.....বায়.....


- এই এই এইইই আরুশি শোন না। জানুটা না আমার রাগ করেনা। আমি তোর সাথে মজা না করলে কে করবে বল....!
- তাইনা(!)
- হুম। আমাকেও নিয়ে চল জান্টুসি। প্লিজ
- ১০ মিনিটের মধ্যে আমার বাসায় আয় রাখছি
- তুই কি এত ভালো?
- ডাউট হলে আসার দরকার নেই

- এই না। কতদিন ফ্রিতে খাইনা। আজ মিস করব ভাবলি কি করে। আসতেছি আমি.......টুট টুট
.
.
একটা নীল রঙা শাড়ি পড়ে নিলাম। কপালে ছোট্ট একটা কালো টিপ। আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দিলাম। আজ নিজেকে স্বাধীন দেখতে ইচ্ছে করছে....অনেক পড়া হয়েছে। এবার শুধু চিল হবে।
.
আমি আর অথৈ রিকশা নিলাম।
- চাচা বাদুরতলা চলুন।
বিকেলে রিক্সায় চড়া আমার খুব পছন্দের। রিক্সায় চড়ার পর,
অথৈ- এতো সুন্দর লাগছে কেন তোরে? আজকেও ছেলেরা আমার দিকে তাকাবে না…



- নিজেকে আর কত আনডারএস্টিমেট করবি। অফ যা.....আমার মত বিয়াইত্তারে আর কেউ পাত্তা দিবেনা.....

- হ্যাঁ তা ঠিক।



- কুত্তি



- ভালো কথা। ভাইয়া কেমন আছে..?
- ভালোই হবে
- মানে
- মানে হল এই বৃহস্পতিবার উনি আসেন নি। ইনফেক্ট গত সপ্তাহেও আসেন নি। ফোনে কথা হয়, মনে তো হয় ভালোই আছে.....

- এর চেয়ে ভালো ছিল, এক্সামের পরই তোদের বিয়ে টা হতো। এসবের মানে কি....
- বাদ দে তো। আজ অনেকদিন পর আমরা আগের মত ঘুরতে বের হয়েছি। মোমেন্ট গুলো ইনজয় কর।
- হুম
.
বাসা থেকে বাদুরতলা এসে পৌঁছুতে ২০ মিনিট লাগল। ভাড়া মিটিয়ে বরফি তে ঢুকলাম। আমার আরো দুজন ক্লোজ ফ্রেন্ডস নিহা আর রাতিন চলে এসেছে অলরেডি।
অথৈ এর কিন্তু বিয়ের পর ওদের সাথে আজ দেখা হচ্ছে। খুব ভালো লাগছে এখন।
সবাই যার যার মত অর্ডার করলাম।
.
এতদিন পর দেখা হয়ে কি গল্প না জুড়ে দিলাম চার জনে মিলে। কে আগে বলবে, কোন কথাটা রেখে কোন কথাটা বলবে....এত কথা জমে গিয়েছে আমাদের। হঠাৎ মেসেজের টুং শব্দে ফোন অন করলাম। প্রতীক ভাইয়া মেসেজ করেছেন,
- হায় আরুশী। সরি, এখন একটু বিজি আছি। সন্ধ্যার পর আসব।
ইশশ আমি তো প্রতীক ভাইয়ার পড়াতে আসার কথা ভুলেই গেলাম। যাক ভালোই হলো দেরি করে আসবে.....
আমি রিপ্লাই করলাম,
- ইটস ওকে।
.
মোবাইল রাখতেই ওয়েটার খাবার নিয়ে উপস্থিত। অনেক খাবার অর্ডার হয়েছে.....
- রাক্ষুসীরা, এত যে খাবার অর্ডার দিছিস ফ্রি খেতে পারছিস বলে…লজ্জা করেনা তোদের.....আমি এখন শুধু আমার খাবার বিলটা পে করে যদি চলে যাই তখন তো রেস্টুরেন্ট কতৃপক্ষ টাকা না পেয়ে তোদেরই খেয়ে ছেড়ে দিবে.....



- চুপ থাক। খাইতে দে। (অথৈ)
- অথৈ এর বাচ্চা...তোর বিল আজ আমি দিচ্ছিনা, সিউর থাক।

- 



.
খাওয়া শুরু করলাম......তখনই কেউ আমার পায়ে পা লাগাচ্ছে মনে হলো। কাজটা রাতিনের ভালোই বুঝতে পারছি। কারন রাতিন আমার বরাবর বসেছে। আর আমাকে কিছু ইশারাও করছে
- এই কি করছিস..পা সড়া। সমকামী হয়ে গেলি কবে আবার.....কি করছিস এসব(!) ছি ছি.....
.
আমার এই কথায় অথৈ আর নিহার মুখ দিয়ে পুচ করে খাবার বের হয়ে গেল।
মুখ চেপে হাসছে....

নিহা- কিরে রাতিন, বফ রে মিস করতেছিস নাকি? এসব কি কান্ড করছিস
অথৈ- যৌবন মানুষকে দিয়ে কত কি করায়

তিনজনে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেয়ে যাচ্ছি.....
রাতিন- অনেক বাজে বকিস তোরা। আরুশি তোকে কখন থেকে ইশারা করে যাচ্ছি বুঝিস না তুই...!
- কি বুঝবো? কি করার ইশারা করছিস আমাকে(!)
দেখ, আমি ওরকম না....


রাতিন- থামবি! পাশের টেবিলের ওই ছেলেটা কখন থেকে তোর দিকে তাকিয়ে আছে। হাসি থামা.... একবার তো ফোন বের করে তোর ছবিও তুলে নিল....আর খেয়েই যাচ্ছিস কোন খেয়াল নেই। ফিসফিসিয়ে বলছে
আমি পাশে তাকালাম রাতিন ঠিকই বলছে...একটা ছেলে একাই বসে আছে সেখানে। দেখতে লম্বা, ফর্সা করে। চোখে চশমা…খুবই ভদ্র টাইপের লাগছে। অথচ অন্যের বউ কে ঘুরঘুর করে দেখছে..…দেখাটা তাও মান যায়। এমন তো অহরহ হয়। কিন্তু ছবি কেন তুললো। মাঝেমাঝে মানুষের বাহিরের লুকস এর সাথে তার পার্সোনালিটির যে মিল হয়না আজ বুঝতে পারলাম।
ছেলেদের সাথে ভেজাল করার ইচ্ছে নেই। ছবি তুললো কেন তা ভেবে মেজাজ তুঙ্গে উঠে যাচ্ছে।
.
বিল পে করে আমি রেস্টুরেন্ট থেকে যত জলদি সম্ভব বের হয়ে আসলাম। কারন এভাবে অন্যকোন ছেলের আমার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকাটা আমাকে খুবই বিরক্ত করছিলো। ছেলেটা একবারের জন্যও চোখ সড়াচ্ছিল না.....
.
সন্ধ্যা হয়ে আসছে তাই রাতিন আর নিহা চলে গেলো। আমি আর অথৈ সিটি পার্কে চলে আসলাম। কিছুক্ষণ ঝালমুড়ি খেতে খেতে দোলনা চড়লাম দুজনে আর হাসাহাসি তে মেতে ছিলাম। অথৈ মেয়েটার সাথে থাকলে আমার মন খারাপ করে থাকা ইম্পসিবল। তাই তো জানের দোস্ত....
সন্ধ্যে হয়ে গেছে। এই সময়টা আমার খুব পছন্দের। সন্ধ্যাবিলাস করা আমার প্রিয় কাজগুলোর মধ্যেই পড়ে। তাই আমরা সাগরপাড় এসে দাঁড়ালাম। এই জায়গাটাকে বলে গরীবের আইল্যান্ড।
অন্যনাম ধর্মসাগড়।

.
হালকা বাতাস শরীরে শিহরণ লাগিয়ে দিচ্ছে। . আরাম লাগছে। কি বিশাল আকাশ। চারিপাশে শুধু কালো আর ছাই রঙের ছড়াছড়ি। শুধু সন্ধ্যায়ই প্রকৃতি দু রঙের হয়, বাকিসময় বিচিত্র রঙা হয়। পাখিদের তাদের নীরে ফিরে যাওয়ার জন্য তড়িঘড়ি....শীতল বাতাস। প্রকৃতি প্রেমিকদের জন্য এই ব্যাপারগুলোও অনেক শান্তির ও তৃপ্তির। দেহ ও মনে আলাদা একটা প্রশান্তি বয়ে যাচ্ছে.....আকাশ থেকে দৃষ্টি নামিয়ে তাকাতেই হঠাৎ মনে হলো কেউ হাসিমুখ নিয়ে বড় বড় পদক্ষেপে আমাদের দিকে আসছে ৷ কিন্তু বুঝতে পারছিনা কে এটা.....হাসির ধরনটা চেনা মনে হচ্ছে কিন্তু মাথা কাজ করছেনা আসলে কে এটা......
.
চলবে
রাগী বর ১৬ 

লেখা- Rafiya Riddhi
.
.
কাছে আসতেই চেহারা স্পষ্ট দেখতে পেলাম। তাকে দেখে আমি কই লুকাই তা ই ভাবছিলাম। পানিতে ঝাপ দিব ভেবেও দিলাম না, শীত লাগবে। আশেপাশে কোন বড়, মোটা গাছও খুঁজে পাচ্ছিনা। শেষমেশ অথৈ নামের মানুষরূপী বটগাছ টার পিছনে লুকিয়ে পড়লাম।
অথৈ- এই কি হল তোর। আমার পেছনে কি করিস
- হুস, চুপ থাক।
- আরে কি হলো তোর.....
- প্লিজ একটু চুপ থাক।
.
কিছুক্ষণ পর আমি মুখ বাড়িয়ে মানুষটা চলে গেছে কিনা দেখার চেষ্টা করছি। নাহ, দেখা যাচ্ছেনা তো। এদিকেই তো আসছিল, হঠাৎ কোনদিক দিয়ে উদাও হয়ে গেলো। যাক বাঁচা গেলো। এখন, এখানে, এই অবস্থায় আমাকে দেখলে আবার কি না কি মনে করত।
অথৈর পেছন থেকে বেরিয়ে এসে, চোখ অফ করে বুকে হাত দিয়ে বড় করে ১টা শ্বাস নিলাম। তারপর যেই চোখটা খুললাম দেখি একটা মুখ হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মিটিমিটি হেসে যাচ্ছে.....ধরাটা খেয়েই ফেললাম বুঝতে পেরে, মুখ খুললাম।
- ভা.....ভা.....ভাইয়া, আ....আ.....আপনিও এখানে। হাসি দেয়ার ট্রাই করছি কিন্তু আসছেনা, কারন তাকে দেখে আমি লুকিয়েছি দেখে ফেলছে হয়ত....
- হুমমমম, আমি ওওওওওও এইইইইই খানে.....

- আসলেএএএএএ.......ভা..ভা....ভাইয়া
- আরে, আরে রিলেক্স। এত বিচলিত হচ্ছো কেন? ফ্রেন্ডসদের সাথেই এসেছিলাম বিকেলে। তাই তোমাদের ওখানে সন্ধ্যায় যাবো বলেছি…তোমরা কি মনে করে? ঘুরাঘুরি হুম!!

- না, মানে......
- আরে চিল। পড়াশোনার ফাঁকে একটু ঘুরাঘুরিও জরুরি। আমিও তাই মনে করি। তোমাকে আমি বলব ভেবেছিলাম মাইন্ড রিফ্রেশমেন্ট এর জন্য একটু ঘুরে আসো। কারন পড়তে পড়তে তো আঁতেল টাইপ হয়ে যাচ্ছিলে……
ভাইয়ার কথায় কিছুটা লজ্জা পেলাম। অথৈর দিকে তাকিয়ে দেখি ও ফ্যালফ্যাল করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে....হাতের কনুই দিয়ে দিলাম এক গুতো । হুস ফিরলো মেমের....
নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলল,
অথৈ- তুই তো বলিস, পড়িস না। পড়া হয়না। এখন তো অন্য কথা শুনতেছি।

- না মানে। যখন পড়িনা তুই তখনই জিজ্ঞেস করতিস। আমি তো সত্যিটাই বলতাম


-



.
প্রতীক- ইনি কে?
- আমার বেস্টফ্রেন্ট অথৈ। আর অথৈ উনিই হচ্ছেন প্রতীক ভাইয়া।
প্রতীক- ওহ, হায় অথৈ। কেমন আছো? প্রিপারেশন কেমন চলছে?
- হ্যালো.....
জ্বি ভাইয়া। অল গুডস।

- 



.
- আমি তো তোমাদের বাসায়ই যাচ্ছিলাম আরুশি। চল তাহলে একসাথেই যাওয়া যাক.....
- একসাথে...!!!!
- কেন, কোন সমস্যা?
- না, মানে..........
- হুম, বুঝতে পারছি। তুমি আগে বাসায় ডুকো। তার ১০ মিনিট পর আমি যাব...
অথৈ- হ্যাঁ হ্যাঁ, এটাই ভালো হবে। এমনিতেও অনেক দেরী হয়ে গেছে....চল চল।
- হুম ঠিকাছে.....
অথৈ মেয়েটা নিশ্চয়ই ভাইয়ার উপর ক্রাশ খেয়ে বসে আছে। না হয় জীবনেও কোন ছেলের সাথে এতক্ষণে বাসায় ফিরার কথা ভাবতো না। ব্যাপারটা অনেকটা সাসপেক্টিয়াস টাইপের লাগছে.....

.
.
পথে অথৈর বাসা আগে পড়ে। সো ওকে ড্রপ করা হল। অথৈ যেতে যেতে আমাকে হাত দিয়ে ইশারা করে বুঝিয়ে দিল রাতে কল দিবে আমাকে.....আমি ইশারায় আচ্ছা বললাম.....
আমার বাসায় পৌঁছাতে আরো ১০ মিনিট পথ বাকি। লজ্জা লাগছে এভাবে প্রতীক ভাইয়ার সাথে যেতে। কারন আমি শাড়ি পরিধানকৃত......
.
ভাইয়ার সাথে ভালোই একটা বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক আমার। উনি পড়াশুনার ফাঁকে অনেক জোক্স ট্রিক্সের মাধ্যমে খুব হাসাতে পারেন। যাস্ট মজার একটা ভাইয়া.....হি ইজ ড্যাম এজ টিচার।
.
.
.
রাত ৯ টা নাগাদ পড়ানো শেষ করে ভাইয়া চলে গেলেন। আমি খাওয়া দাওয়ার পর্ব ঘুচিয়ে রুমে এসে আবার পড়তে বসলাম।
অনেক্ষণ পর মনে পড়ল, মোবাইল টার কথা। একটু চ্যাক করা যাক স্পন্দন কল দিল কিনা.....যদি দিয়ে থাকে তো আমার কপালে দুর্গতি আছে রিসিভ না করার জন্য…
মোবাইল স্ক্রিন অন করতেই দেখলাম ৫১ টা মিসডকল। ভেতরে ভেতরে আঁতকে উঠলাম, না জানি কলগুলো স্পন্দনের। তাহলে আজ খবর আছে.....
কিন্তু ভাগ্য সহায় হল, ৬ টা কল অথৈর। বাদ বাকি সব কল ১টা অপরিচিত নাম্বার থেকে.....বাব্বাহ কার এতো দরকার পড়ল আমাকে!!
কিন্তু স্পন্দনের ১টাও কল নেই দেখে খুব হতাশ হলাম। বউ অভিমান করে কল কেটে দিল, তাতেও তার মাথাব্যথা নেই…ধ্যাত, আই যাস্ট হেইট ইউ স্পন্দন।





অথৈ কে কল ব্যাক করলাম। নিশ্চয়ই লুচিটা প্রতিক ভাইয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবে।
.
.
.
.
যা ভাবলাম তাই। অথৈ ফিদা ভাইয়ার উপর। পাক্কা ২০ মিনিট এই নিয়েই কথা হল। কথা বলা শেষ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। টায়ার্ড লাগছে খুব.....
হঠাৎ টের পেলাম ফোন ভাইব্রেট হচ্ছে। আবার সেই আননোন নাম্বার থেকে কল। এত কল দিচ্ছে, ইমপরটেন্ট কিছু হতে পারে ভেবে রিসিভ করলাম.....এমনিতে আননোন নাম্বার রিসিভ করা হয়না।
- হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন?
অপরপাশ থেকে মেয়ে কন্ঠ ভেসে আসল,
- ওয়ালাইকুম আসসালাম। আমি কে!!
হাহা, যদি বলি আমি তোমার সতীন তখন!








মেজাজ তুঙ্গে উঠে গেলো এই কথা শুনে। কিন্তু পরিচিত কেউ মজা করতে পারে ভেবে মেজাজ ঝাড়লাম না.....ইনসাইড মি, এত্ত এত্ত গুলা বকা আর গালি দিয়ে দিলাম.......
- না, আমার জামাইর বউ একজনই।
আর সেটা আমি। সো সতীন হওয়ার প্রশ্নই আসেনা। তাই কে আপনি সেটা বললেই ভালো হয়.....

- বাহ, এত কনফিডেন্স। সতীন হওয়ার জন্য যে এখন আর বউ হতে হয়না তাকি জানোনা??
- আমার এত জানার প্রয়োজন নেই। আর এত এক্সট্রা সময় নেই আপনার এসব ফালতু কথা শুনার তাই রাখছি...
বলেই কেটে দিলাম। মেয়েটা কি মিন করেছে ভালোই বুঝতে পারছি। আমার ফ্রেন্ডস অর ফ্যামিলির কেউ না এটা সিউর।
যেমন রাগ হচ্ছে, তেমন বিচলিত ও হচ্ছি....স্পন্দন কে নিয়ে আমি এসব শুনবো না কখনই। অনেকদিনের স্বপ্নপুরুষ সে আমার.....
রাগী বর ১৭+১৮ 

লেখা- Rafiya Riddhi
.
স্পন্দন কে কল দিলাম,
স্পন্দন- জ্বি ম্যাম বলেন.....
- না মানে বলছিলাম, কাল তো বৃহস্পতিবার।
- হুম, জানি তো কাল বৃহস্পতিবার
। তো কি হইছে এখন !

- গত দুই সপ্তাহ তো আসলেন না।
কালও কি...

- না কাল আসব....

- হুম আচ্ছা।
- খুশি তো হওনি মনে হয়! আসব না তাইলে

- ভেতরে ভেতরে মহাখুশি, সেটা ফোনে কি করে বুঝাই আপনাকে...!
- কাল বুঝিয়ে দিও তাহলে

- আচ্ছা

- কি করছো ?
- শুয়ে আছি...আপনি?
- স্পর্শ আর আমি তোমাকে দেখছি...
- মানে! কি করে??
- আমার ল্যাপটপে, তোমার অনেক ছবিই আছে আরু। গায়ে হলুদের প্রোগ্রাম থেকে শুরু করে ঢাকা থাকাকালীন প্রতিদিনকার একটা করে স্পেশাল ছবি....
- ইশশ, কখন তুললেন এতো ছবি !
- তুলেছি যখন তোলার, তা নাহয় তোমাকে পিকগুলো দেখানোর সময় বলবো.....
- ওওহ...ওকে....আচ্ছা স্পর্শ কে দিন.....
- নেও কথা বলো....
-
.
.
.
কাল স্পন্দন আসবেন, কত্তদিন পর দেখবো উনাকে। খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে। বেড থেকে উঠে আলমিরা খুললাম। ভাবছি কালকে কি পড়া যায়। উফফ আমার জানটাকে কতদিন পর কাছে পাবো.....এবার ৩-৪ দিন রেখেই দিব যেমনেই হোক।
.
একটা শাড়ি, তার সাথে কিছু হালকা ডিজাইনের অর্নামেন্টস ও নামিয়ে রাখলাম। কতদিন বরটার জন্য সাজা হয়না।
.
.
.
সকালে ঘুম ভাঙল ভোরে। উঠেই স্পন্দন কে মেসেজ দিলাম।
"আজ, আসবেন সিউর তো..?"
.
ফ্রেশ হয়ে মোবাইল টা নিয়ে ছাদে চলে আসলাম। ভালো করেই জানা আছে স্পন্দন এখন রিপ্লাই দিবেনা। এখন মহাশয় ঘুমে বিভোর হবেন।
ছাদে এসে মনটা আরো ভালো হয়ে গেলো। খুশির ঠেলায়, এই ইচ্ছে করছে ১টা নাচ দেই..তা..তা..থৈ থৈ....তা...তা....থৈ থৈ, তো আবার ইচ্ছে করছে গলা ছেড়ে ১টা গান টান দেই....আ....আ.....আ...............। এমন হচ্ছে কেন ! কারনটা খুঁজতে গিয়ে উত্তর পেলাম, আমি প্রেমে পড়ে গেছি আর তাই এমন উদ্ভট সব আচার-আচরন করছি। কাউকে নিজের স্বর্বস্ব দিয়ে ভালোবেসে ফেলেছি তাই এমন করছি। আর ভালোবাসা ব্যাপারটাই এমন বিচিত্রকর। অনুভূতিটা মিষ্টি হলেও কিন্তু মানুষটাকে অনেকটা পাগলাটে টাইপ করে দেয়। হ্যাঁ হ্যাঁ.....আমি এই বিচিত্র ব্যাপারটায়ই নিজের অজান্তে ইনভলভ হয়ে গিয়েছি। তা কখন হলো, কি করে হয়ে গেলো, তার কোন বিবরন জানা নেই আমার। যাস্ট হয়ে গেছে। স্পন্দন.......স্পন্দন.......স্পন্দন, কখন আসবেন আপনি। আমি তো এবার দিশেহারা হয়ে যাচ্ছি। উফফ, কি করছি আমি। নিজেকেই নিজে চিনতে পারছিনা।
.
.
.
দুপুরের খাবার খেয়ে জলদি রুমে চলে আসলাম। ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে স্পন্দন চলে আসবেন। কিছু প্রস্তুতি দরকার। কাজে লেগে পড়লাম
.
বিকেল ৫টা যখন বাজে, আরুহী এসে জানিয়ে গেল স্পন্দন এসে পড়েছে। আমি এক মুহূর্তও অপেক্ষা করলামনা। জামাটা ঠিক করে দ্রুত পদক্ষেপে বসার রুমের উদ্দ্যেশ্যে বের হয়ে আসলাম। স্পন্দন এসেই কথা জুড়ে দিয়েছে। বড় ভাইয়ার পিচ্চি টাকে কোলে নিয়ে আদর শুরু করে দিছে। আমি তার দৃষ্টির আড়াল থেকে তাকে মনভরে ১বার দেখে নিলাম। তার সেই ঘায়েল করা হাসি।
স্পন্দন আজ ব্ল্যাক ১টা শার্ট পড়ে এসেছে। একে তো ফর্সা মানুষ, তার উপরে কালো শার্ট পড়েছে। মনে হচ্ছে প্রকৃতির সবচেয়ে চরম সুন্দর সৃষ্টিটা আমার চোখের সামনে। জানিনা আমি উনার স্ত্রী বলেই কি আমার চোখে তাকে এতো সুন্দর লাগছে নাকি আসলেই এতটাই সুন্দর তিনি। আমি সালাম দিয়ে উনার কাছে গিয়ে বসলাম। ইচ্ছে করছে হাতটা টেনে রুমে নিয়ে যাই এক্ষুনি। তৃষ্ণার্ত হৃদয়টার তৃষ্ণা কাটুক তাকে একটু জড়িয়ে ধরে। কিন্তু কিভাবে কি। সবাই তো এখানে। স্পন্দন হঠাৎ আমার কানের কাছে ফিসফিস করে কিছু একটা বলল। কিন্তু আমি তাকে দেখতে ও তার সাথে একান্ত সময় কাটানো নিয়ে ভাবনায় এতটাই বিভোর ছিলাম যে উনার কথাটা খেয়াল করা হলনা। অনেক্ষণ মাথা খাটিয়ে বুঝতে পারলাম৷ উনি বলেছেন,
- "তোমাকে আজ অন্যরকম লাগছে"।
.
আমিও ফিসফিসিয়েই জিজ্ঞেস করলাম,
-"অন্যরকম বলতে কেমন"?
- "পিচ্চি পিচ্চি লাগছে। বউ বউ ভাবটা আগের মত বুঝা যাচ্ছেনা"।
- আমি অসহায় দৃষ্টি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। উনি কি বলতে চাচ্ছেন, আমাকে কি তার চোখে আজ আর আগের মত সুন্দর লাগছে না ! আমাকে চুপ থাকতে দেখে উনি বললেন,
- "আরে পিচ্চিরা তো কিউট কিউট হয়। তোমাকে আজ কিউট বাচ্চা একটা মেয়ে লাগছে।
আর আমি এতদিন আসতে পারিনি বলেই হয়ত বউ বউ ভাবটা কমে গেছে। আজ আসছি, এতো আদর দিব, এত আদর দিব আবার আগের মত আমার লাল টুকটুকে বউটা হয়ে যাবে।"


- উহহু, উহহু, দুটা কাশি দিলাম
ইশশ পাশেই ভাবি দাঁড়িয়ে আছে, শুনলে সারাজীবন আমার সাথে মজা নিবে। আমি স্পন্দন কে নাস্তা দেয়ার বাহানায় ঔ জায়গা সাথেসাথে ত্যাগ করলাম। সাথে ভাবিও আসল। এতে স্পন্দন ভালোই মজা পাইলেন। মিটিমিটি হেসেই যাচ্ছে !
.
স্পন্দন কে নাস্তা দিয়ে, আমি চটজলদি রুমে চলে আসলাম। উনি রুমে আসার আগেই কাজগুলো সাড়তে হবে। মানে রেডি হতে হবে। শাড়িটা নিয়ে পড়া শুরু করলাম। অতি খুশিতে শাড়িটাও পড়তে পারছিনা ভালো করে। হাত পা কাঁপছে।
বহু কষ্টে শাড়ীটা পড়ে, অর্নামেন্টস গুলোও পড়ে নিলাম। শাড়িটা পুরোটা গাড় লাল, পাড় আর আচলের দিক দিয়ে কালো। বাহ, স্পন্দনের সাথে ম্যাচ হয়ে গেলো কিছুটা। হাতে লাল-কালো চুরি মিলিয়ে পড়লাম। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক দিলাম হালকা করে। পারফিউম লাগালাম। আজ রুমটাকেও অনেক সুন্দর একটা রূপ দিয়েছি। বিশেষ করে বারান্দায় অনেকগুলো ফুল গাছ ছাদ থেকে এনে রেখেছি যার কারনে বারান্দার সৌন্দর্য খানিকটা বেড়ে গিয়েছি। ২-৩ টা কালারের নানা রকমের বাতি জ্বলছে। দোলনাটাকে ফুল দিয়ে ঢেকে দিয়েছি বলতে গেলে,. মনে হচ্ছে ফুলেরই তৈরী। এসব উনি বাসায় আসার আগেই করেছিলাম দুপুরে। এখন উনার রুমে আসার অপেক্ষা কেবল। আমি জানি, আমার পরীক্ষার কথা ভেবে উনি আর নাও আসতে পারেন। তাই আজকের দিনটা মিস করা যাবেনা। তার সাথে আঠার মত লেগে থাকতে হবে।
বর যখন রাগী আর এমন ধারার ত্যাগী টাইপ হয়, তখন বউদের এমন পাগলামো না করলে চলেনা।
.
.
আমার পরিবারের মানুষ গুলোও বাব্বাহ, একেকজন। জামাই আসলে তাকে নিয়ে পারেনা মাথায় উঠিয়ে হাঁটাহাঁটি করে। এখনো বসার রুমেই আটকে রাখছে। বিরক্তি 

.
রুমের বাহিরে উকি দিয়ে দেখলাম, স্পন্দন আসতেছে। তা দেখে আগে ২টা লাফ দিলাম। তারপর দরজাটা আবজিয়ে রুমের কর্নারে একজায়গায় লুকিয়ে পড়লাম, রুমে এবার যেই আসুক তাকে আমি আগে দেখব এখান থেকে। তবে অামাকে দেখবেনা। কিছুটা নার্ভাস লাগছে বাট চলবে।
স্পন্দন দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করলেন। আমি নিজেকে আরো একটু আড়াল করে নিলাম। স্পন্দনের কার্যকলাপ দেখে হাসি পাচ্ছে। রুমে এসেই আমার খোঁজ করছে। বারান্দায়, ওয়াশরুমে খুঁজেও যখন পেলোনা। আমার ফোনে কল দিচ্ছে। ভাগ্যিস ফোনটা সাথে নিয়ে লুকিয়েছি। আমি উনার কল কেটে দিয়ে, একটা মেসেজ করলাম
"বাহ, এতদিন আসেননি এখানে, আমাকে কাছে পাননি তখন তো সমস্যা হয়নি। এখন আমাকে রুমে না পেলে না পেয়েছেন, খুঁজছেন কেন ! !"
এমন মেসেজ দেয়ার উদ্দেশ্য উনাকে বুঝানো, আমি রুমেই আছি।


স্পন্দন মেসেজটা পড়ছে, উনাকে দেখেই বুঝতে পারলাম। ইশশ জলদি খুঁজে বের করুন না আমায়। আপনার থেকে আর দূরত্বটা সহ্য হচ্ছেনা তো। আজ ফির তুমপে পেয়ার আয়া হে,,,,,

.
মেসেজ পড়ে, স্পন্দন মুখে রাগী রাগী একটা ভাব এনে জোরে জোরে বলতে লাগল, আপনি তাহলে রুমেই আছেন। এটা কি ধরনের মজা?

-
- কি হলো, আসছোনা কেন বের হয়ে!
-
- আমি ১-৫ গুনা অবদি যদি আমার সামনে হাজির না হও, তাহলে আমি যদি তোমাকে খুঁজে পাই তখন কি করব তার ধরনাও নেই তোমার। এতদিন পর আসছিই যেহেতু লুকিয়ে থাকার তো কথা না !
.
আমি আবার উনাকে আরেকটা মেসেজ করলাম,
-" যত যা থ্রেটই দেন না কেন, লাভ নেই। আমি নিজে থেকে আপনার সামনে আসছিনা। আর এতদিন পর আসছেন দেখেই তো এটা শাস্তি আপনার। এছাড়া আর কি করার থাকতে পারে !"
…
আমার এই মেসেজে উনি দাঁত কটমট করছে। হয়ত বেশ মুডে ছিল, আর তাই এত রেগে যাচ্ছে। রাগ হলে হবে, আমি যে তার জন্য সাজলাম, একটু অবাক করা লাগবেনা তাকে ! ! উনি আমাকে প্রত্যেকটা পর্দার আড়ালে, ড্রেসিংটেবিলের কোনায়, সোফার পেছনে খুঁজলেন, এমনকি খাটের নিচেও দেখলেন। উনার এই কাজে আমি ফিক করে হেসে দিলাম। খেয়ালই ছিলনা, সাবধানে থাকার। এইরে, এবার তো পেয়েই যাবে অামাকে। বুকটা ধকধক করছে। না জানি, লাইফের প্রথম এ্যাটাকটা হয়েই যায় আজ।
কপালের ঘামটা মুছতে যাবো, ঠিক তখনই আমার হাতে টান পড়ল।
অামি স্পন্দনের বুকের উপর গিয়ে পড়লাম। স্পন্দন মুখ খুলল কিছু বলার জন্য, কিন্তু বললেন না। থেমে গেলেন। তার রাগী ভাবটা ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে চেহারা থেকে। ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। অর্থাৎ তাকে বশ করতে পেরেছি আমি। ইয়েস......। কিন্তু তার চাহনি দেখে অজান্তেই একটা লজ্জা মাখা হাসি চলে আসল মুখে। কেমন ১টা নেশা যেন ভর করেছে তার দু চোখে। ঘোর কাটিয়ে উঠে উনি বললেন,
-"এটা কি করলে তুমি ! এতবড় একটা ধাক্কা খাবো কল্পনাও করিনি।" বলেই আমার একটা হাত নিয়ে উনার বুকের উপর রাখলেন।
দেখো, কেমন দ্রুতগতিতে হৃদস্পন্দন হচ্ছে।
উত্তরে আমি সেই হাসিটাই দিলাম।
.
তারপর আমার মাথাটা উনার বুকের উপর নিয়ে রাখলেন, শুনো কেমন ধকধক করছে ভেতরটা। এই মেয়ে শুনছো তো !
- আমি বহুদিন পর আজ তার বুকে মাথা রেখে শান্তি খুঁজে পেলাম। এতদিন যে মনটা বড়ই অশান্ত ছিল। আমি শক্ত করে স্পন্দনকে জড়িয়ে ধরলাম।
আর বললাম, হুম শুনছি।
- কি শুনছো !
- ধকধক....
- আর কিছু শুনতে পাচ্ছোনা?
- জানিনা বলে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
.
আসলে এখন কথা বলতে চাচ্ছিনা। আমার শান্তি চাই, এর অনেক প্রয়োজন আমার। বুকের ভেতরটা যে বড্ড খাঁখাঁ করছিল এতদিন। আর এই শান্তি শুধু প্রিয়মানুষটার সান্নিধ্যই দিতে পারে....
স্পন্দন বললেন,
- হৃদয়ের প্রত্যকটা ধকধক, স্পন্দন বা হার্টবিট যেটাই বলো....এরা যেন তোমার নামই জপে যাচ্ছে প্রতিবারে! সুন্দ্রী, এ কি রূপে ভোলালে তুমি আমায় !"
।
চলবে....
রাগী বর ১৮ 

লেখা- Rafiya Riddhi
.
স্পন্দন বললেন,
-"হৃদয়ের প্রত্যকটা ধকধক, স্পন্দন বা হার্টবিট যেটাই বলো....এরা যেন তোমার নামই জপে যাচ্ছে প্রতিবারে! সুন্দ্রী, এ কি রূপে ভোলালে তুমি আমায় ! আমি তো রাগ দেখাবো ভেবেছিলাম কিন্তু তোমায় দেখার পর রাগটাও কোথায় উবে গেলো। আমার চোখে সবচেয়ে সুন্দরী রমনী কেউ যদি থাকে, তা হচ্ছো তুমি।
" বলেই কপালে কিস করলো আমাকে......

ইশশ এতটাই সুন্দর লাগছে নাকি আমায়, নাকি উনি বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলছেন।
আমি শুধু বললাম,

- "আমি রূপে তোমায় ভোলাতে চাইনা, ভালোবাসায় ভোলাতে চাই।"

- " বাহ ! তাহলে শুরু করা যাক!
"

- "কি !"
- "ভালোবাসা শুরু করো।" মুখে দুস্টু হাসি
- "ইশশ, আমি তো সেই ভালোবাসার কথা বলিনি।" আমি নিজেকে তার বাহুডোর থেকে ছাড়িয়ে মাথা নিচু করে আছি, লজ্জা লাগছে
।

- "প্লিজ আরুশী। দাও না একটু ভালোবাসা।"
আমিও তো স্পন্দন থেকে আজ অনেক ভালোবাসা পেতে চাই, আর দিতেও চাই। কিন্তু নিজে থেকে প্রথমে, তা সম্ভবনা।
আমি বললাম,


- "আমি দিতে পারবোনা। সড়ুন...."
বলেই তড়িঘড়ি করে চলে আসছিলাম…আর তখনই পায়ের নিচে পরে শাড়ির কুচিটা টান পরে, তাই আমি ব্যালেন্স ঠিক রাখতে না পেরে পড়েই যাচ্ছিলাম আর স্পন্দন আমাকে ধরে ফেললেন। আমি বেশ ভয় পেয়ে যাই আর স্পন্দনের শার্ট মুঠি করে ধরে ফেলি পরে যাবার ভয়ে। শাড়িতে অনেক জোরে টান পরে যায়। ইশশ কতসুন্দর করে পরেছিলাম। সব ভেস্তে গেলো।

ভয় কাটিয়ে উঠার পর আমি চোখ খুললাম। স্পন্দন আমার দিকে হাসিহাসি মুখে তাকিয়ে আছে। কিন্তু চোখে লেগে থাকা সেই নেশাটা যেন আরো তীব্র হয়ে এসেছে। আর তার সেই নেশা লাগানো চোখের মোহে পরে গেলাম আমি। তার চোখ থেকে চোখ সড়াতে ইচ্ছে করছেনা। ইচ্ছে করছে তো শুধু স্পন্দনকে খুব কাছে পাবার।
হঠাৎ খেয়াল হলো, কুচিতে টান পড়ায় আমার শাড়ির কিছু কুচিও খুলে গেছে। আর তাই স্পন্দন পাজিটা কুচির দিকে তাকিয়ে হাসছে মিটমিট করে। তা দেখে আমি জলদি শাড়ির সবগুলো কুচি এক করে ধরার চেষ্টা করতেই আচলে লাগানো পিনটা কাঁধে চুবলো। অর্থাৎ পিনটাও খুলে গেছে...

আমি- আউচ
স্পন্দন আমাকে ছেড়ে দিয়ে জলদি দেখতে লাগল, ব্যাথা কেন পেয়েছি
- দেখি দেখি, কি হয়েছে !
- না মানে আঁচলের পিনটা খুলে গেছে। ব্যাথা পাচ্ছি। আমি ঠিক করে নিচ্ছি, চলবে....
- কয়টা ঠিক করবে? কুঁচিটাও তো ঠিক নেই....
- দুটাই করবো
- পারবেনা
- পারবো
বলেই আমি আচলের পিন লাগাতে যাচ্ছি আর শাড়ির কুঁচি গুলো ফ্লোরে পরে গেলো। লজ্জা আর বিচলিত থাকার কারনে সব ভুল হয়ে যাচ্ছে।
- বলেছিলাম তো !
আমি কুচি গুলো ঠিক করছি আর আঁচল টা তুমি ঠিক করে নেও নাহয়
- আরে না, তার প্র.....
- হুসস...
.
স্পন্দন আমার শাড়ির কুঁচিগুলো খুব সুন্দর করে ঠিক করে দিচ্ছেন। এই সিনটা মিস করা যাবেনা। আমি গভীর মনোযোগ দিয়ে তার কুঁচি ঠিক করে দেয়া দেখছিলাম আর মস্তিষ্কে এই সিনটা ধারন করে নিচ্ছিলাম।
স্পন্দন আমাকে কুঁচিগুলো গুজে দিলে, আমার পেটে উনার হাতের স্পর্শ লাগায় আমি কেঁপে দু কদম পেছনে চলে গেলাম। পিঠ থেকে দেয়ালটা হালকা কিছু দূরত্বে। পেট টা ভয়ঙ্করভাবে কাঁপছে। স্পন্দন উঠে দাঁড়ালেন,
- আঁচলটা তো ঠিকই করো নি...!
বলেই আঁচলে পিন লাগাতে যাচ্ছে। আমি উনার দিকে একনাগাড়ে তাকিয়ে আছি। বড্ড দিশেহারা লাগছে নিজেকে। উনি পিনট না লাগিয়ে। ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে দিলেন। তাতে অবাক হলাম.....উনাকে জিজ্ঞেস করলাম,
- পিনটা রাখলেন কেন? দিন, আমি লাগিয়ে নিচ্ছি।
- নাহ, প্রয়োজন নেই। পরে এমনেই খোলা লাগতো

বলেই আমার একদম কাছে চলে আসছেন। তাই আমি হাল্কা পেছনে যেতেই দেয়ালে গিয়ে পিঠ ঠেকে গেলো আমার....উনার ঠোঁট আমার কাছে আগাতেই আমি পাশ ফিরে গেলাম।
- এখন না

- কি এখন না
- এসব
- হুশশ, এখনই....। আমার ঠোঁট আঙুল দিয়ে চেপে ধরলেন
-
স্পন্দন আমার কপালে গভীর চুমু খেলেন। তারপর দুই চোখের পাতায় চুমু দিলেন। নেশাভরা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমার চোখ দুটো সবচেয়ে বেশি সুন্দর। আমার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা....এই চোখের গভীরতা অনেক। যখন তাকাই তখনই হারিয়ে যাই। আবার যখন এই চোখে জল দেখি তখন অপরিসীম অপরাধবোধ আমাকে শেষ করে দিতে থাকে....। জানো বুকের ভেতর কি ভয়ানক জ্বালা হয়....!
এই বলে উনি আমাকে নিজের সাথে একদম জোরে চেপে ধরলেন। যেন আমাকে নিজের মধ্যে ঢুকিয়ে নিবেন। তারপর উনি আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে, কানের লতিতে একটা লাভ বাইট দিলেন। আমি উনার পিঠে নখের আচর বসিয়ে দিলাম।
এতে উনি আমাকে ছেড়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে আমার সারা মুখে কিস দিতে শুরু করে দিলেন। আমার ঠোঁটে কিস করছেন, থুতনিতে গভীরভাবে চুমু দিচ্ছেন। আমি যেন কোন সুখের সাগরে ভেসে যাচ্ছি। ঠোঁট থেকে নেমে আমার গলায় কিস করছেন। তাতে আমার নিশ্বাস ভয়ঙ্কর ভাবে ভারি হয়ে গেলো। এই মনে হয় নিশ্বাস আটকে মরে যাবো। আমার গলায়, ঘাড়ে, কাধে সমানে কিস করে যাচ্ছেন। আবার আমার পিঠেও কিস দিচ্ছেন। তারপর আমাকে আবার উনার দিকে ঘুরিয়ে পুরো পেটে চুমু খাচ্ছেন। সারা শরীরে কাঁপুনি শুরু হয়ে গেলো আমার। উনি উঠে আবার আমার ঠোঁটে চুমু খেতে লাগলেন। আমিও উনাকে নিজের করে পাবার জন্য যেন উঠেপড়ে লেগেছি। উনি হঠাৎ আমাকে ছেড়ে দিলেন। আমার শাড়ির আঁচল টা ফেলে দেয়ার জন্য উদ্যত হলেও, দিলেন না। বরং আমার কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছেন। আমিও জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছি।
- আরু.......
- হুমমম.......!
কথা আটকে আটকে যাচ্ছিলো আমার, 'হুম' এতটুকুন বলতেই যেন কত কষ্ট হচ্ছিলো.....
স্পন্দন বললেন,
- আমি আজ তোমাকে সম্পূর্ণভাবে নিজের করে নিতে চাই। আমি কি পারি সেটা....?
আমি উত্তর দিলাম না। ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। তারপর হুট করে আবার উনাকে জড়িয়ে ধরলাম। হয়ত আমার উত্তর উনি পেয়ে গেছেন।
উনি আবার অামাকে আদর করতে শুরু করলেন। তারপর আমাকে কোলে তুলে নিলেন। বেডের উপর নিয়ে বসিয়ে দিয়ে নিজেও পাশে বসলেন। আমার হাতে চুরি গুলো খুলতে শুরু করলেন, হাল্কা যে অর্নামেন্টস পরেছিলাম সেসব একএক করে খুলছেন। আমি প্রচন্ড লজ্জায় মরে যাচ্ছিলাম। স্পন্দন আমাকে বেডে শুইয়ে দিলেন। তারপর আমার ঠোঁটে গভীরভাবে চুমু খেতে লাগলেন। আমি পায়ের আঙুল দিয়ে বিছানার চাদর আঁকড়ে ধরলাম। উনি আমার হাতের আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে উনার আঙুল ঢুকিয়ে আমার হাত চেপে ধরলেন বিছানায় । আজ প্রচন্ড সুখে মরেই না যাই যেন।
.
.
.
.
১০টা যখন বাজে একটা পাতলা কম্বল মুড়ি দিয়ে আমি আর স্পন্দন বারান্দার দোলনায় বসে আছি। আমার পিঠ গিয়ে ঠেকেছে স্পন্দনের বুকে। আজ অনেকদিন পর তার সাথে জোৎস্নাবিলাশ করছি। আমার পড়নে তার সেই কালো শার্টটা।
আজকের এই দিনটি আজীবনের জন্য একটা অপরূপ সুন্দর স্মৃতি ক্রিয়েট করে গেলো। আকাশের ঔ চাঁদটাও যেন আমাদের ভালোবাসা দেখে আজ লজ্জা পাচ্ছে। কারন আমার দৃষ্টি আকাশের সেই অসীম দূরত্বে থাকা চাঁদটায় হলেও স্পন্দনের দৃষ্টি আমার থেকে সড়ছে না। আর এখনো দুষ্টুমি করে যাচ্ছে।
.
স্পন্দন- তোমার শরীরের এই স্মেলটা আজ আমাকে আর বিরতি নেয়ার সুযোগ দিচ্ছেনা। আমি তোমার থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারছিনা.....! আরু, এত দারুন কেন তোমার সবকিছু।
- শুনেছি, কেউ যখন অনেক ভালোবাসা পায় কারো কাছ থেকে। তখন নাকি তার সবকিছু অসাধারণ হয়ে যায়। আপনার এত এত আদর আর ভালোবাসা আমার মধ্যে দারুন দারুন সব ব্যাপার গুলো এনে দিচ্ছে।
- আর তোমাকে একটু বেশিই আকর্ষণীয়ও করে তুলছে.....।
বলেই আমার ঘাড়ে নিজের নাক ঘষছে। আমি আবার মাতাল হয়ে যাচ্ছিলাম তার কর্মকান্ডে।
- এখন কিন্তু অামরা রুমে নেই। কি করছেন আপনি! ছাড়েন তো....
আমি ফ্রেশ হবো।
- উম...হুম.....
আরো পরে। আগে ঔ চাঁদটাকে দেখতে দাও, প্রকৃতিটাও দেখে নিক স্পন্দন তার আরুকে কতটা ভালোবাসা দিচ্ছে.....।
আমিও আর বাধা দিলাম না উনাকে। তার আমার কাছাকাছি থাকাটা যে আমার খুব প্রিয়.....!
.
আবার ভালোবাসার রাজ্যে পাড়ি দিলাম আমরা দুজনে।
.
.
.
রাত ১২টা ৩০ মিনিটে কিচেনে গেলাম আমার আর স্পন্দনের জন্য খাবার আনতে। উনি তার বুদ্ধিমত্তার ভালোই পরিচয় দিয়েছেন আজকে। সবাই কে বলছেন, গ্যাস্ট্রিক তাই খাবেন না আর আমি পড়ছি, আমার পড়া দেখাতে দেখাতে লেইট হয়েছে এতক্ষণ। এখন নাকি এতরাতে আর খাবেন না, গ্যাস্ট্রিক প্রবলেম করছে।
তাই মাবাবা বা বাকিরাও উনাকে জোর করলেন না। আসলে আমাদের দুজনের মাঝে প্লেন হয়েছে আজ সবার সাথে আমরা খাবোনা। রুমে লুকিয়ে আমার জন্য বলেই বেশি বেশি করে দুজনের জন্যই খাবার নিয়ে যাবো আর এক প্লেটে দুজন খাবো শেয়ার করে। মধ্যরাতের কাজ সন্ধ্যারাতে করলে যা হয় আরকি।
এসব প্ল্যানিং করে তখন লোকসমাজের সামনে চলা প্রয়োজনীয় হয়ে পরে......


রান্নাঘরে গিয়ে দেখলাম ভাবি আর রেখা কাজ করছে। রেখা আমাদের বাসার কাজে সাহায্যকারী। আমি কারো সাথে কথা না বলে চটজলদি প্লেটে খাবার নিতে শুরু করলাম।
.
হঠাৎ কে যেন আমার প্লেটে তরকারি দিতে শুরু করলো। আমি অবাক হয়ে তাকাতেই দেখি, এটা ভাবির কাজ।
।
- এটা কি হলো...!
- কই কি হলো! তোকে নিয়ে দিলাম আরকি
- হুম। আমি নিচ্ছি তো। তোমার দিতে হবেনা। আমি আমার পরিমানমত নিবো...
.
জলদি নিয়ে চলে আসছি। কারন আসার সময় আয়নায় নিজেকে দেখে নিয়েছিলাম একবার। লজ্জায় শেষ হয়ে যেতে ইচ্ছে করছিলো। স্পন্দন পাজিটা যে আজ নিদর্শনের কোন অভাব রাখেনি। ভাবি তাকালেই ধরা পড়বে তার চোখে। আমি জলদি আসতে নিলেই, ভাবি পেছন থেকে ডাক দেয়। আমি দাঁড়ালেও ভাবির দিকে ফিরলাম না। শুধু বললাম,
.
- হ্যাঁ, বলো।
ভাবি আমার কাছে এসে কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন,
- কিরে এই সময়ে তোর চুল ভেজা! কাহিনী কি
এই নি পড়ছিলি তুই...


আর এতো খাবার একাই খাবি! কখনো তো এর অর্ধেকও তোকে খেতে দেখিনি।
বলে আবার হাসছে।
ভাবির কাছে ধরা পরে যাওয়ায় আমার হাত ভয়ানক গতিতে কাঁপছে। খাবারগুলো না আবার পরে যায়.....
.
- ভাবি তুমি তোমার কাজ করো তো। এতদিকে মন কেন তোমার.....
আর এসব কি বলছো! তেমন কিছু না। আমি পড়ছিলামই।

- কই এতদিকে মন আমার। আমার যদি এতদিকে মন থাকতোই তাহলে তো আমি তোর ঠোঁটের আশেপাশের কামড়ের দাগের মত কিছু দাগগুলো লক্ষ্য করতাম। গলার কাছে লাল হয়ে থাকা দাগটাও খেয়াল করতাম, তোর অবস্থা যে ত্যানাত্যানা হয়ে গে.........
.
আমি আর ভাবির কথাটা শেষ হওয়া অবদি অপেক্ষা করলাম না। প্রায় দৌড় দেয়ার মত করে চলে আসছি। রেখাটাও দাঁত কেলিয়ে হেসে যাচ্ছিলো। ভাবির বাচ্চা.....
ভাবিটা আসলে প্রতিশোধ নিচ্ছে। কারন তার বিয়ের পরও আমি এভাবেই তাকে টর্চার করেছিলাম। সত্যিই মানুষের সব কর্ম ফিরে ফিরে তার কাছেই আসে....!


।
পর্ব : ১৯+২০
লেখা- #Rafiya_Riddhi
.
স্পন্দন কে সব বলতেই উনি হাসতে হাসতে ফ্লোরে বসে পড়ছিলেন। পারলে তো এবার গড়াগড়ি খাবেন। উনার হাসি দেখে আমার রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।
- থামবেন ! প্লিজ....

- 



- ধ্যাত, ভাল্লাগেনা.....
বলেই উঠে যাচ্ছিলাম, স্পন্দন আবার বসিয়ে দিলেন বেডে.....
- আচ্ছা সরি সরি। চলো খেতে বসো......
- হুম

.
স্পন্দন নিজেও খেলেন আর আমাকেও খাইয়ে দিলেন। আজ নাকি তার আমাকে খাইয়ে দেয়ার শখ জেগেছে।
খাওয়া শেষে প্লেট নিয়ে চলে আসছি, তখনই স্পন্দন ডাক দিলেন। আমি পেছনে ফিরতেই বললেন,
- ভাবি কি যেন বলেছে !

- কি বলেছে !

- স্পন্দন তোমাকে কি যেন করে ফেলেছে........! ত্যানাত্যা......


আমি অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে উনার দিকে তাকালাম।
উনি আরো হাসা শুরু করলেন তাতে। আমার রাগের কোনো পাত্তা আমি কোনকালেই পাইনি। আজও তার ব্যতিক্রম নয়....

.
.
রাতে স্পন্দনের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছি। স্পন্দন এটা সেটা বলে যাচ্ছেন। হঠাৎ মনে পড়ল সেদিনের সেই মেয়েটির কথা। যে কিনা কল দিয়ে উল্টোপাল্টা বকেছিল। আমার তো পরিচিত না। উনাকে নাম্বারটা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করি, উনার পরিচিত কেউ মজা নিল কিনা।
.
কিন্তু ফোনটা কই যে রাখছি। আশেপাশে চোখ বুলাতেই ডিম লাইটের হাল্কা আলোয় বেড সাইড টেবিলের উপর পেলাম। আমি স্পন্দনের কাছ থেকে সরে ফোন নিব। স্পন্দন দুই হাত দিয়ে আমার কাধ জড়িয়ে ধরল।
- আরে, কিহলো। ছাড়ুন
- হুশশ কোন ছাড়াছাড়ি নাই। বুকে থাকবা। যাবানা....
- আহা, যাচ্ছিনা তো। মোবাইলটা নিচ্ছি শুধু। পাশেই আছে.....আপনাকে দেখানোর আছে ১টা জিনিস।
স্পন্দন আমাকে ছেড়ে সোজা হয়ে বসলেন,
- ওহ, দেখাও তাইলে...
আমি মোবাইল নিয়ে, কল লগ থেকে নাম্বার টা উনাকে দেখালাম ।
স্পন্দন - এটা তো নাম্বার। এখানে দেখানোর কি আছে !
- আছে, এটা একটা মেয়ের নাম্বার ।
- হুম তো ?
- এই মেয়ে আমাকে ফোন দিয়ে গতকাল বলতেছে সে নাকি আমার সতীন ।
এই কথা শুনতেই স্পন্দন আবার হাসতে শুরু করে দিছে ।
- এতো হাসার কি আছে! আপনি নাম্বার দেখে বলুন তো আপনার পরিচিত কারো নাম্বার কিনা !
- হুম 





স্পন্দন হাসতে হাসতেই নাম্বারটা দেখছেন আর বলছেন,
- ট্রুলি সেয়িং, আরেকটা বউ থাকলে কিন্তু মন্দ হতোনা। দুটাকে দুপাশে নিয়ে ঘুমাতাম।
আমার ছোটবেলা থেকে দুটো কোলবালিশেরই অভ্যেস ছিলো....সমস্যা হতোনা

।




আমি কিছু বললামনা,
কিন্তু নাম্বার ভালো করে খেয়াল করতেই উনার মুখ থেকে হাসিটা উধাও। এটা বেশ অবাক করলো আমাকে
আমি- কি হলো! নাম্বারটা কি আপনি চিনেন! মানে আপনার পরিচিত কারো ?
- নাহ, চিনিনা আমি ।
আর এসব কি এখন দেখানো বেশি জরুরি !
নাম্বার টা ব্লকলিস্টে দিয়ে দিলাম। আর এসব ফাজলামো কথাবার্তা শুনতে হবেনা। বেশ সিরিয়াস ভাবে বললেন.....
- হুম, আচ্ছা ঠিকাছে। কিন্তু আপনি এতো রেগে......
- আমি ঘুমালাম। গুড নাইট
- 

আমিও আর কথা না বাড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। দজন দুদিকে মুখ করে। কিন্তু মাঝরাতে ঘুম কিছুটা হাল্কা হতেই খেয়াল করলাম, স্পন্দন আমাকে নিজের বুকের মাঝে নিয়ে ঘুমিয়ে আছেন।
.
.
.
.
.
এভাবেই স্পন্দনের ভালোবাসা, আমার প্রতি তার কেয়ার, পড়ালেখার জন্য তার শাসন করা এন্ড আম্মু, আব্বু, ভাইয়া, ভাবি, আরুহী কে নিয়ে দিনগুলো এক এক করে চলে যেতে লাগলো। মা মানে আমার শাশুড়ি মা স্পর্শকে নিয়ে দুএকবার থেকে গিয়েছেন আমার কাছে। প্রস্তুতিও খু্ব ভালো হয়েছে। প্রত্যেকটা প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষায় হাইয়েস্ট নাম্বার পেতাম।
.
পরীক্ষার সময় স্পন্দন কুমিল্লায়ই ছিলেন বেশি। আমাকে পরীক্ষার হলে দিয়ে আসতেন। আর মেয়েরা ড্যাবড্যাব করে তাকাই থাকত উনার দিকে। কেউ কেউ জিজ্ঞেস করতো আমার বড় ভাই কিনা, তাহলে যাতে ওদের সাথে প্রেম করাই দেই। তখন ইচ্ছে করত ঘুশি দিয়ে একএকটার চেহারা বিগড়ে দেই। বড় ভাই ই কেন হতে হবে ! বয়ফ্রেন্ডও তো হতে পারে । বয়ফ্রেন্ড কিনা জিগাইতে ওদের এত সমস্যা কেন । যত্তসব, লুচি মেয়ে কোথাকার।
.
লাস্ট কয়েকটা পরীক্ষার সময় অবশ্য উনি ছিলেন না। উনার মাস্টার্স এর পরীক্ষা, তাই নিয়ে বিজি ছিলেন।
পরীক্ষা শেষ হতেই স্পন্দনের সাথে আমার চারমাসের দূরত্বের অবসান ঘটলো। অনেক বেশি খুশি ছিলাম লাস্ট এক্সাম দেয়ার পর।
.
.
.
দুদিন পর স্পন্দন আমাকে নিয়ে চলে এলেন ঢাকা। এতদিন শুধু অপেক্ষায় ছিলাম কবে স্পন্দনের কাছে যাবো। কিন্তু আম্মু, আব্বু, আরুহী সবার জন্য এতটা খারাপ লাগবে ভাবিনি। আর এখন বুক ফেটে কান্না আসছে। সারা রাস্তা কেঁদেছি। স্পন্দন আমাকে এভাবে কাঁদতে দেখে ঘাবড়ে যান। আরো কিছুদিন থেকে যেতে বলছিলেন। কিন্তু জানি, উনি নিজেও আমাকে ছাড়া আর ১টা দিনও থাকতে চান না। কিন্তু আমার চোখের জলও যে তার সহ্যের বাহিরে।
তাই এমনটা বলছেন।
.
আমি ঢাকা ফেরার পর সবাই খুব খুশি। স্পর্শ স্কুল অফ করে দিতে চাচ্ছে। সে আমাকে ছাড়বেনা একমুহূর্ত। আর বলছে, ভাবি তোমাকে আগের থেকেও অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। এত্ত এত্ত কিউট লাগছে।
তখন মনে মনে খুব খুশি লাগত।
আর স্পন্দন তো একদুম বউ পাগলা টাইপ হয়ে গিয়েছে। উনি যে আমাকে এতো ভালোবাসা দিবেন আমি কল্পনাও করিনি। আগের মত হুটহাট রেগে যান না এখন আর। কিন্তু যখন রাগেন, তখন ভয়ঙ্কর অবস্থা।

তার রোমেন্স যেন দিনদিন শুধু বাড়ছে। আমি যখন কিচেনে থাকি একা, সেও কিচেনে যাবে। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আমার হাত ধরে, আমার সাথে সবজি কাটে, রুটি বেলে, রান্না করে। আমি যা যা করি, উনিও তা করে। এটা কি হচ্ছে জিজ্ঞেস করলে বলে, রোমান্টিক রান্না কিভাবে হয় শিখাচ্ছি তোমাকে। আর দেখবা এই রান্না কত্ত টেস্টি হয়।

উনার এমন অদ্ভুত অদ্ভুত সব ব্যাপার স্যাপারের জন্য অনেক লজ্জার সম্মুখীনও হয়েছি। স্পন্দনের নানু একদিন ধরে ফেলছেন যখন বেড়াতে ঢাকা আসছিলেন। 

স্পন্দন আমাকে যখন একা না পান, স্পর্শ / অন্যকেউ আমার সাথে থাকে....তখন বারবার আমাকে ইশারা করবে বাহানা দিয়ে ঔ জায়গা ত্যাগ করার জন্য বলবে। কিন্তু আমি তার ইশারা বুঝেও, না বুঝার ভান ধরে থাকি।
মজাই লাগে, তখন উনার ফেসটা দেখে।

.
কিন্তু পরে ধুনাটাও আবার আমাকেই খাইতে হয়। উনার এতো পাগলামো কই ছিলো এতদিন তাই ভাবি।
আসলে আমি সত্যিই খুব সুখী আমার জীবনে উনার মত কাউকে পেয়ে।
.
উনি মাস্টার্স কমপ্লিট করে এখন বাবার ব্যবসা দেখছেন। বিদেশে গিয়ে হাইয়ার ডিগ্রী নেবার ইচ্ছা ছিল উনার। কিন্তু আমাকে ছেড়ে যাবার কথা নাকি উনি ভাবতেও পারেননা। তাও ভালো। আমিই বা কিভাবে থাকতাম তখন উনাকে ছাড়া।
অফিস থেকে আসার সময় প্রতিদিন আমার জন্য কিছুনা কিছু নিয়ে আসবেনই উনি।
.
সেদিন স্পর্শকে ওর রুমে হোমওয়ার্ক করাচ্ছি। উনি সীমাকে দিয়ে মিথ্যে বলিয়ে স্পর্শকে মার রুমে পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন। আমি তো অবাক আজ এত জলদি স্পন্দন অফিস থেকে এসেছে তাই। এটা সেটা জিজ্ঞেস করছি, উত্তর দিচ্ছেনা। উল্টো আমাকে কোলে করে রুমে নিয়ে চলে আসলেন। এটা উনার একটা বদঅভ্যাস হয়েছে, যখন তখন আমাকে কোলে তুলে রুমে নিয়ে চলে আসেন। যখন উনার রোমেন্স জাগে মনে তখনই। ধৈর্য্য বলতে কিছু উনার মধ্যে আজও খুঁজে পেলামনা।

তো রুমে নিয়ে চলে আসার পর, আমি মুখ ফুলিয়ে রেখেছি। সবসময় উনি এমনটাই করে। কখন মাবাবা কেউ দেখে ফেলে মোটেও ভাবেনা এসব। উনি আমার ফুলা গাল দুটা টেনে দিয়ে বলে,
- লাগবেনা?
-
- আমি তাহলে এটা নিজের কাছেই রেখে দিলাম। কেউ তো আর কথা বলছেনা তার লাগবে কিনা...সেটাও বলছেনা....
- কি রেখে দিবেন আর কি লাগবে কিনা জানতে চাইলেন !

- একটা জিনিস......
- তা কি সেটা.....(!)
- ওভাবে গাল ফুলিয়ে রাখলে তো আর দিতে পারছিনা.....

- আহা, কিসের কথা বলছেন! দেখান না কি জিনিস....
- আগে হাসো তাহলে
- পারবোনা

- তো আরকি! দেখতে হবেনা......

- হি হি.....
হাসলাম।



এবার দেখান।
.
- হবেনা। চোখ বন্ধ করো......
- চোখ বন্ধ থাকলে দেখব কি করে....!

- দেখবে...আমি যখন চোখ খুলতে বলব তখন দেখবে।
- হুম আচ্ছা।
বলেই আমি চোখ অফ করলাম। উদ্দেশ্য ছিল চুরি করে দেখব কি জিনিস....
কিন্তু তা আর হলো কই। স্পন্দন চোখে রুমাল বেধে দিলেন আমার.......তারপর আর কোন সাড়া শব্দ নেই উনার। হঠাৎ মনে হলো, উনি আমার শাড়ির আচল টা পেট থেকে সড়াচ্ছেন। আমি কেঁপে উঠলাম। আমি এমন কিছুর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। উনি শাড়ির আঁচল সরিয়ে আমাকে কিছু একটা পরিয়ে দিচ্ছেন। হাত দিয়ে ছুঁয়ে বুঝলাম এটা কোমরবন্ধনী। আমার ইনফ্যাক্ট সব মেয়েদের ভালোলাগার মধ্যে কোমরবন্ধনী থাকবেই। খুব এক্সাইটেড তাই চোখ থেকে রুমাল খুলে ফেললাম আর আয়নার সামনে গিয়ে দেখছি। সিম্পল ডিজাইনের মধ্যেই কোমরবন্ধনীটা। আর গোল্ডেনের সেটা। চেইন থেকে অনেকটা মোটা। সবসময় পড়ার জন্য বেস্ট। খুব সুন্দর তার পছন্দ বলতে হবে। তার থেকে পাওয়া সব গিফটই আমার জন্য অনেক মূল্যবান। কিন্তু এটা ছিল সবচেয়ে বেস্ট গিফট। এটা আমার হৃদয়ের খুব কাছের।
- পছন্দ হয়েছে !
পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে, আমার কাঁধে থুতনী রেখে মিস্টি একটা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন।
- খুব পছন্দ হয়েছে। সত্যিই অসাধারণ পছন্দ আপনার। অনেক অনেক অনেকগুলো...…...থেংক্স....
- pleasure is mine.....বউ। আমি কিন্তু দেখিনি ঠিক করে। দেখতে দাও।
বলেই হাটু গেড়ে ফ্লোরে বসে পরলেন।
- তোমার কোমরে অনেক মানিয়েছে। এটা যেন সবসময় এখানে থাকে.....
বলেই আমার পেটে হাত বুলাচ্ছে। তার দুস্টমি আবার শুরু হতে যাচ্ছে বুঝতে পারলাম। স্পন্দনের ঠোঁটজোড়া আমার পেটের দিকে এগিয়ে আসছে ক্রমশ।
উনি আমার নাভির আশেপাশে, নাভিতে চুমু খেতে শুরু করলেন। আর আমি উনার কাঁধ চেপে ধরলাম...............
.
.
.
.
আজ স্পন্দন ব্যবসার কাজে ব্যস্ত, চিটাগং গিয়েছেন। আগামীকাল রাতে ফিরবেন। ভালোলাগছেনা কিছু। রুমে একা শুয়ে আছি......ডিনার শেষ করে।
উনাকে ফোনেও পাচ্ছিনা...।
.
.
হঠাৎ মেসেজের টুং শব্দে দ্রুত মোবাইল টা হাতে নিলাম, স্পন্দনের মেসেজ হবে ভেবে।
কিন্তু যা দেখলাম তাতে আমার....................
.
.
(চলবে.....)
পর্ব : ২০
লেখা- #Rafiya_Riddhi
.
হঠাৎ মেসেজের টুং শব্দে দ্রুত মোবাইল টা হাতে নিলাম, স্পন্দনের মেসেজ হবে ভেবে।
কিন্তু যা দেখলাম তাতে আমার কি রিয়েক্ট করা উচিত বুঝতে পারছিলাম না। ছবিগুলো কিছুটা অন্যরকমের।
স্পন্দন আর মেসেজদাত্রীর ছবি পাঠিয়েছেন মেসেজে। সাথে কিছু মেসেজ। এসব দেখে বুকের ভেতরটায় যেন কেউ হাতুড়ি দিয়ে বারবার আঘাত করে যাচ্ছে এমন যন্ত্রণা অনুভব হচ্ছে।
আমিও ঔ ব্যক্তিকে মেসেজ করলাম,
-"আপনাদের বন্ধু-বান্ধবদের ছবি আমাকে হঠাৎ কি মনে করে!"
ওপাশ থেকে রিপ্লাই,
-"মেয়ে, তুমি কি বোকাই নাকি বোকা হওয়ার ভং ধরেছো!"
-"মানে!"
-"আমার আর স্পন্দনের এই পিকগুলো ও তোমার ফ্রেন্ডলি পিক মনে হলো কি করে!"
-"তো ফ্রেন্ডদের পিক দেখে ফ্রেন্ডলি ভাববো না!"
-"না ভাববে না, কাপল পিক কে ফ্রেন্ডলি পিক ভাবার কোনো মানে হয়না।"
-"দেখুন স্পর্শিয়া আপু, ফ্রেন্ডরা মজা করেও অনেক সময় অনেকভাবে পিক তুলে থাকে। আর আপনারা সেখানে বেস্ট ফ্রেন্ডস। তা হঠাৎ এতদিন বাদে আমাকে এসব ছবি কেন পাঠালেন(!)"
হ্যাঁ মেসেজ স্পর্শিয়ারই ছিলো। মেসেজে এসব লিখলাম যাতে স্পর্শিয়া যদি মিথ্যা বলে থাকে, তাহলে আমাকে বুঝাতে অক্ষম হয়ে যেন ধৈর্য হারিয়ে ফেলে....কিন্তু পিকগুলো কাপলরা যেভাবে পিক তুলে সেরকমই। খুব জ্বালা হচ্ছিল বুকের ভেতর। আর প্রত্যেকটা পিকে দুজন খুব হাসিখুশি। যেকেউ পিক দেখে বলবে, হ্যাপি কাপল.....এমন টাইপ ছবি। facebook.com/roudmilariddhi
আবার তার মেসেজ,
-"আমরা ক্লাসমেট ছিলাম, তারপর ফ্রেন্ড, তারপর বেস্টফ্রেন্ড, তারপর প্রেমিক-প্রেমিকা। তাই শুধু বেস্ট ফ্রেন্ড কথাটা পুরোপুরি যায়না।"
-"আপনার চালচলন, ব্যবহারে আমার আগেই সন্দেহ হয়েছিলো। দেখুন স্পন্দন কে আপনি অন্যভাবে দেখতে পারেন। বন্ধুত্বের মাঝে অনেকসময় ভালোলাগা কাজ করে যায়। আপনার ফিলিংস এর কদর তাই আমি কিছুটা হলেও করছি। কিন্তু তাই বলে বন্ধুত্বও ভুলে গিয়ে আপনি আমার স্বামী কে মিথ্যা অপবাদ দিবেন তা আমি কখনো মেনে নিবনা। আপনি আর নিজর সীমা অতিক্রম করবেন তো, আমি স্পন্দন কে সব মেসেজ দেখাবো আপনার।"
-"তাই? আরে বোকা মেয়ে, যা করার করো। স্পন্দন কে বললে দেখো ও আবার নিজেই আমতাআমতা করা শুরু না করে দেয়। স্পন্দন এর সাথে যেটুকু বন্ধুত্ব আছে তাও আমি ওর সাথে কথাবার্তা না বলে থাকতে পারিনা তাই রেখেছি। কিন্তু তোমাকে জানিয়ে রাখলাম কারন সে আমাকে ছেড়ে যেমন তোমার মাঝে এখন সুখ খুঁজে পেয়েছে, তোমাকে ঠকিয়ে আবার কোন ১দিন অন্যকারো মাঝে সুখ খুঁজে পাবে। তাই বলছি স্পন্দনকে এক্সেপশনাল ভেবে ভুল করোনা। ভালো থাকো।" facebook.com/roudmilariddhi
.
স্পর্শিয়ার এসব লেইম কথাবার্তার উপর আমার ভরসা হচ্ছিল না। আবার পিক গুলো কে ইগনোর করতে পারছিলাম না। তাই স্পর্শিয়াকে আর মেসেজ না দিয়ে আমি কল করলাম। সে যা বলল তা কিছুটা এমন ছিলো,
"স্পর্শিয়ার আর উনার রিলেশনশিপ নাকি অনেক ডিপ ছিলো। রোমান্টিক রিলেশন টাইপ। ৬ মাসের রিলেশনের পর স্পন্দন মাবাবার কথায় তাকে ছেড়ে আমাকে বিয়ে করে নিজেকে আদর্শবাদী ছেলে প্রমাণ করতে। স্পর্শিয়া অনেক অনুনয় বিনয় করে। স্পন্দন শুনেনা। চিট করে চলে আসে। এমনকি উনি আমাকে ওপেন চ্যালেন্জ করেছে তাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের কাউকে তাদের রিলেশন ছিল কিনা জিজ্ঞেস করতে। তারপর ঔ নাম্বার থেকে ঔদিন উনিই নাকি আমাকে ফোন দিয়েছেন। আরও বলছেন এই ফোন দেয়া নিয়ে স্পন্দন উনাকে অনেক কথা শুনিয়েছে যা নাকি মূলত আমার কাছে ধরা পরার ভয়ে।"
তখন আমি তাকে বললাম, স্পন্দনের আমার প্রতি এতো ভালোবাসা আর কেয়ার দেখার পর আপনার এসব কথা আমাকে আশ্বস্ত করতে পারবেনা যে স্পন্দন আমাকে মিথ্যে বলেছে। উনি শুধু আমাকে ভালোবাসে। আমার স্বামী মিথ্যেবাদী নয়। আপনি বানানো কথা বন্ধ করুন। facebook.com/roudmilariddhi
তখন স্পর্শিয়া বলেছে তোমার স্বামী তোমাকে কখনো বলেছে কি সে তোমাকে ভালোবাসে! তখন আমি কিছু বলতে পারিনি, চুপ ছিলাম। আর স্পর্শিয়া তাই অট্টহাসি হেসেছিলো, যে হাসি একদুম আমার বুকে গিয়ে বাড়ি খায়।"
সারারাত দুচোখের পাতা এক করতে পারিনি। স্পন্দনকে ছোট খাটো কোন মিথ্যে বলতেও কখনো দেখিনি। তাহলে এমন মিথ্যে উনি বলবেন তা কি করে হজম করি। নাহ, আমি উনার থেকেই সব শুনবো। বাহিরের কোন মেয়ের কথা বিশ্বাস করে ভুল করবনা। তাদের ছবিগুলো আর স্পর্শিয়ার কথাগুলো, হাসিগুলো বারবার আমার কানে বাজছে।
.
পরদিন পুরোটাই অস্থিরতায় অস্থিরতায় কাটলো। রাত ৯টার দিকে স্পন্দন আসলেন। এসেই আমায় পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আছেন।
,
-কি সাহেব আসতে পারলেন তাহলে(!)
-আরু তোমাকে বলে বুঝাতে পারবনা কত মিস করেছি তোমায়।
নেক্সট থেকে যেখানেই যাই তোমাকে ছাড়া যাবইনা। ১ দিনের জন্যও নাহ....আই মিসড ইউ এ লট বউটা।


আমি উনার দিকে ফিরে, দুহাত দিয়ে উনার গলা জড়িয়ে ধরে উনার কপালে কপাল ঠেকালাম। উনি আমার কোমড়ে নিয়ে হাত রাখলেন।
-আমিও আপনাকে অনেক মিস করেছি। আপনাকে ফোনে লক্ষাধিক বার ট্রাই করেছি কিন্তু পাইনি। নেটওয়ার্ক বিজি আসছিল....
-নেটওয়ার্ক উইক ছিলো ওখানে তাই পাওনি। সরি বউটা......
.
রাতের খাবারের পর আমি আর স্পন্দন প্রায় ছাদে/বারান্দায় যাই। আজ ছাদে আসলাম। মোবাইলটা সাথে করে নিয়ে এসেছি। ভাবছি ছবিগুলোর কথা কিভাবে জিজ্ঞেস করি। facebook.com/roudmilariddhi
স্পন্দন- আররররররররররু.....
-হুমমমমমমমমমম...
-১টা কিসি দেও.....
-তার আগে আমার কিছু কথা ছিলো.....
- আগে দেও....তারপর ১টা না হাজারটা বলতে পারবে.....
-কথাটা খুব ইম্পরট্যান্ট বুঝার চে......
আর কিছু বলতে দিলেন না। আমার ঠোঁটে কিস করতে শুরু করলেন.....
ছাড়ার নাম নেই। নিজের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে আছেন.....
একসময় আমাকে কোলে তুলে নিলেন। গন্তব্য আমাদের রুম। তার চোখে আমি আমাকে দেখতে পাচ্ছি। আমি বারবার কথাটা বলতে চাচ্ছি উনি কিছুতেই বলতে দিচ্ছেন না। রুমে এসে আমায় খাটে ফেলে দিলেন আর দরজা লক করে দিলেন। উনাকে এতটা উন্মাদের মত হতে দেখলে লজ্জায় ইচ্ছে করে দৌড়ে পালাই। কিন্তু সেটাও সম্ভব না.....
উনি আমার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলেন। নিজের উপর কন্ট্রোল হারানোর আগে আমার উনাকে এটা বলতেই হবে। এখন বলতে না পারলে দেরি হয়ে যাবে। কিন্তু আমি তো জলদি সস্থির নিশ্বাস নিতে চাই। facebook.com/roudmilariddhi
-প্লিজ থামুন। আগে আমার কথাটার উত্তর দিন প্লিজ।
উনি কিছু বললেন না। উল্টো গলা ছেড়ে ঠোঁটে আদর দিতে শুরু করলেন। দুই মিনিট ইচ্ছেমত আদর করার পর বললেন,

-জ্বি ম্যাম বলেন।
কি এমন জরুরি কথা যা আমাদের প্রাইভেট মোমেন্টেও আপনার বলতেই হবে...

.
আজ স্পর্শিয়া আপু মেসেজ দিয়েছিলেন।
এটা বলতেই স্পন্দনের মুখের ভাব চেঞ্জ হয়ে গেলো। বিরক্তি নিয়ে বললেন,
-কি মেসেজ করেছে
-আপনিই দেখে নিন......
.
স্পন্দন স্পর্শিয়ার সাথে আমার কিছু মেসেজ আর সব পিক দেখেছেন। যদিও কিছু মেসেজ আমি ডিলেট করে দিয়েছিলাম যেখানে আপু বলেছিলেন স্পন্দন আর উনার রিলেশন নিয়ে জিজ্ঞেস করার কথা....আর জিজ্ঞেস করলে উনি উত্তর দিতে পারবেনা। আমতাআমতা করবে এসব মেসেজ ডিলেট করে বাকিগুলো দেখাই.....
.
স্পন্দন মেসেজ দেখার পর রাগে গজগজ করতে শুরু করলেন। আর বললেন,
-স্পর্শিয়া এবার লিমিট ক্রস করেছে। ওকে আমি ছাড়বনা। আরু দেখো, তুমি এসব বিশ্বা........
-দেখুন উত্তেজিত হবেন না। আমি শুধু জানতে চাই আপনারা কখনো রিলেশনশিপে ছিলেন কিনা...?
-আরু, তুমাকে আমি সবটাই বলছি ওর ব্যাপারে....তুমি শুনো আমার কথা..
-আমার সব জানতে হবেনা স্পন্দন...। আপনারা রিলেশনশিপে ছিলেন কিনা তাই বলেন.....প্লিজ। উত্তর হ্যাঁ অথবা না......এর মধ্যে দিবেন। এর বেশি শুনতে পারার মত সহ্যশক্তি এখন জোগাড় করতে পারছিনা......
-
-আমার সব জানতে হবেনা স্পন্দন...। আপনারা রিলেশনশিপে ছিলেন কিনা তাই বলেন.....প্লিজ। উত্তর হ্যাঁ অথবা না এর মধ্যে দিবেন। এর বেশি শুনতে পারার মত সহ্যশক্তি এখন জোগাড় করতে পারছিনা......
-হ্যাঁ। আমরা ৬ মাস রিলেশনে ছিলাম। কিন্তু এটাকে আদৌও রিলশন বলে কিনা তুমি আমার সব কথা শুনে তারপর ডিসাইড করো.....
"হ্যাঁ। আমরা ৬ মাস রিলেশনে ছিলাম।"--এই বাক্যটা ভয়ঙ্কর কন্ঠে, ভয়ঙ্করভাবে বারবার প্রতিধ্বনিত হতে লাগল আমার কানের কাছে। আমি তো জানতাম, স্পন্দনের জীবনে আমি প্রথম! আর যদি অন্যকেউ ছিলই তাহলে কেনো সেদিন ইন্তিহা আপুর বাসায় আমাকে মিথ্যে উত্তর দিয়েছিলেন তিনি! বুকের ভেতরটা মোচর দিয়ে উঠল, এই পৃথিবীতে কি কারো মুখের কথা বিশ্বাস করে নিতে নেই!
খুব বেশি কষ্ট হলে মানুষের গলায় কথা আটকে আটকে যায়। আমারও তাই হচ্ছে। নিজের চোখের জলগুলো অনেক কষ্টে আটকে রেখেছি। কত না বড়াই করেছিলাম স্পন্দন কে নিয়ে স্পর্শিয়ার কাছে। আমার বড় কথা কখনোই সয় না....
স্পন্দন আমার পরবর্তী কথা শুনার অপেক্ষায় আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,
-আপনার প্রতি আমার বিশ্বাসটা ভাঙা কি খুব জরুরী ছিলো স্পন্দন! তাহলে সেদিন কেনো মিথ্যে উত্তর দিয়েছিলেন!
-আরুশি শুনো তু....
-আচ্ছা আপনার কি মনে হচ্ছে, আপনার রিলেশন ছিলো তা শুনে আমার কষ্ট হচ্ছে?
-মনে কেনো হবে। তুমি কষ্ট পাচ্ছো তা আমি........
-হ্যা আমি কষ্ট পাচ্ছি ঠিকই। তার কারন আমি প্রতারিত হয়েছি। স্পর্শিয়া আপুও প্রতারিত হয়েছে....
একসাথে দুজন কে কষ্ট দিয়েছেন আপনি। কেনো সেদিন আপনার রিলেশনের কথা জিজ্ঞেস করায় আপনি সত্যিটা বললেন না। তাহলে এখন হয়ত সব স্বাভাবিক থাকত। বিয়ের আগে আপনার রিলেশন ছিল তা আমাকে কষ্ট দিচ্ছেনা। কষ্ট দিচ্ছে এই ব্যাপারটা যে আপনি আমাকে এটা জানান নি। বরং ভুলটা জানিয়েছেন। আমি জিজ্ঞেস করার পরও আমাকে অসত্যি বলেছেন.....
-তুমি আমার কথাটা শুনবে তো নাকি!
-সেই কথায় যে কোনো মিথ্যের ছোঁয়া থাকবেনা তা আমি কি করে বুঝব !
-বিশ্বাস করো আরুশি তোমাকে যা যা স্পর্শিয়া বলেছে তার অনেকটাই মিথ্যা। আজ স্পর্শিয়া যা করল, তার প্রতি তাতে আমার ঘৃণাটা আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। ওর মত একটা ক্ষতিকর মেয়ের সাথে আমার বন্ধুত্ব রাখাটা........
-আচ্ছা স্পন্দন আপনি যদি তাকে ঘৃণাই করেন। তাহলে কিছু মাস আগেও কেনো তার বাসায় গেলেন। দুপুরে একসাথে খাবার খেলেন। এসবের কোন উত্তর দিতে পারবেন কি আপনি !
আমি কোনকালেও প্রতারণার আঘাতটা সহ্য করার ক্ষমতা রাখিনি। আর আজ তো আমার ভালোবাসার মানুষটির কাছে প্রতারিত হচ্ছি। কিভাবে সহ্য করবো এই আঘাত। উনি যে আমার কাছে সত্যটা লুকিয়েছেন তা ভেবেই আমার কষ্ট হচ্ছে। আর বারবার মনে হচ্ছে, স্পর্শিয়ার মত আমাকেও যদি উনি ছেড়ে অন্যকারো কাছে চলে যান বা আমাকে যদি সবসময় এমন ভালো না বাসেন। যদি আমিও কখনো তার ঘৃণার পাত্রী হয়ে যাই! আমি স্পন্দন এর খুব কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। উনার গালের দুপাশে হাত রেখে, তার দৃষ্টি আর আমার দৃষ্টি এক করে বললাম,
-স্পন্দন জানেন, স্পর্শিয়া আপু না বলেছে একটা সময় পর আপনি আমাকেও ছেড়ে দিবেন তার মত। এখন আমার মধ্যে সুখ পেয়েছেন বলে আছেন। বেশিদিন নাকি আপনার আমাকে ভালো লাগবেনা।
আচ্ছা স্পন্দন আসলেই কি তখন আপনি আমাকে ছেড়ে যাবেন। নাকি কাছে থাকলেও ভালোটা আর বাসবেন না!
আমার দুচোখ দিয়ে অনবরত জল পড়ছে ভেবে ভেবে....আমি তো তেমন বিশেষ কিছুনা। তাহলে স্পন্দন কি করে আমাকে সারাটা জীবন ভালোবাসবেন! আর যদি না বাসেন তখন আমি কিভাবে ঠিক থাকব!
আমি গাল বেয়ে পরা চোখের জল হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে নিয়ে আবার তাকে প্রশ্ন করলাম,
-আপনি কি আমাকে সত্যিই চান! নাকি ক্ষণিকের আকর্ষণ। আমি কিন্তু আপনাকে খুব করে চাই। প্লিজ বলেন না স্পন্দন আপনি কি আমাকে সবসময় ভালোবাসবেন না! প্লিজ বলেন.......
-আরুশি তুমি অযথা বেশি রিয়েক্ট করতেছো। পিচ্চি মেয়েদের এই স্বভাব আবেগে বেশিবেশি কথা বলে। বিষয়টা যাচাই বাছাই না করেই কান্না চালু।
স্পন্দনের কাছে কোন সন্তোষজনক উত্তর না পেয়ে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। আমি উনার কলার কখন ধরে ফেললাম সেই হুশ ঠিক নেই আর। তীব্র রাগান্বিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে উনাকে বলে বসলাম,
-সোজাসাপ্টা উত্তর দিতে পারেন না! আমি পিচ্চি, ছোট এসব বিয়ে করার সময় খেয়াল ছিল না? আপনার একটা মিথ্যে যে ধরা পড়ে গেছে, তাতে কি আপনার একটুও লজ্জা/ভয় করছে না!
-আরুশি কলার ছাড়ো.....

-উনার কথায় খেয়াল হলো আমি উনার কলার ধরে আছি।
আমি জলদি হাত সড়িয়ে নিলাম। স্পন্দন রাগে খাট থেকে নেমে চলে যেতে লাগলেন।
-এখানে আর একমুহূর্ত থাকলে কিছু একটা অঘটন ঘটে যেতে পারে। তুমি থাকো তোমার স্পর্শিয়া আপুর কথা মাথায় নিয়ে। গুড বায়.....(স্পন্দন)
-দাঁড়ান....
-আরো কিছু বলা বাকি আছে! কিন্তু সরি আমার আর কিছু শুনার ইচ্ছা নাই।
-এই একটা কথা শুনে যান। এই কথাটা সারাজিবন মাথায় রাখবেন....
কারন কাল থেকে স্পর্শিয়া আপুকে নিয়ে আর কোনরকম আলোচনা আমি করব না।
-তা কি কথা বলে আমাকে উদ্ধার করেন।
-আপনি আমার থেকে নেক্সট টাইম কিছু গোপন করবেন না। কোনো মিথ্যে বলবেন না।
-আমি আগে এবং এখনও কিছুই মিথ্যা বলিনাই তোমাকে। আরুশি, প্লিজ বিশ্বাস করো আমাকে।
-তা তো আপনি স্বিকারই করলেন। রিলেশন যে ছিলো অথচ এর আগে বলেছেন ছিলো না। যাই হোক, আপনার যদি আবার অন্যকাউকে ভালোবাসার থাকে। তো আপনি আমাকে অন্ধকারে রাখবেন না। তাহলে হয়ত আমি সেই কষ্ট টা সহ্য করে নিতে পারবনা। সেক্ষেত্রে আমাকে মুক্তি দিয়ে যা করার করবেন...এটাই বলার ছিলো। আমি আপনাকে ১ মিনিটও দেরি করব না তখন মুক্তি দিতে। কিন্তু প্লিজ আমাকে অন্ধকারে রেখে কিছু করবেননা।
-মুক্তি বলতে তুমি কি বলতে চাচ্ছো?

-ডিভো........
পুরোটা বলার আগেই স্পন্দন আমার গালে স্বজোড়ে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিলেন। আর আমি ব্যালেন্স ঠিক রাখতে না পেরে বেড এর উপর গিয়ে পরলাম। আর বেড সাইড টেবিলে বাড়ি খেয়ে এক হাতের কনুই তেও প্রচন্ড ব্যাথা পেলাম। ব্যাথার স্থান ধরে খুব করে চাপা কান্না কাঁদতে লাগলাম। ভিতরের আত্মচিৎকারগুলোও প্রতিযোগিতা করে বের হতে চাচ্ছে। স্পন্দন দোয়ালের সাথে নিয়ে তার হাতটা বাড়ি দিলেন আর প্রচন্ড রাগে গর্জে উঠে বললেন,
-এই মেয়ে তোমার সাহস কি করে হয় মুক্তির কথা বলার! বেশি ভালোবাসা পেয়ে ভালো লাগতেছে না তাইনা! তাই অন্যের কথা কানে নেয়ার নেশা চড়েছে! আমি যে তোমাকে এত ভালোবাসি, কেয়ার নেই ওটা তোমার মনে ধরেনা! মনে ধরে স্পর্শিয়ার কথা! আমি কখন থেকে সব ক্লিয়ারলি বলতে চাচ্ছি ওটা শুনতে সমস্যা! স্পর্শিয়ার সাথে আমার যেটা ছিলো ওটাকে আমি রিলেশন মনে করিনা। আর ওরে কোনকালেই ওকে আমি ভা........
স্পন্দনের কথার মাঝেই উনার ফোনে কল আসলো। আর উনি কল রিসিভও করলেন। ওপাশ থেকে কি বলা হলো জানিনা। উনি আসছি বলে একমুহূর্ত দেরি না করে বাসার ড্রেসে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। বিচলিত লাগছিলো। চেহারায় চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। আমার ব্যাথা চোখের জল আর উনার চোখে পড়ল না....!
.
প্রচন্ড ব্যাথা পাচ্ছিলাম। ব্যাথা হচ্ছিল তবে তা চড়ের স্থানে না। ব্যাথা হচ্ছিল আমার হৃদয়ে। কিছু ঘন্টা আগেও সবকিছু কি সুন্দর ছিলো ! স্পন্দনের সাথে মিষ্টি মধুর একটা সম্পর্ক ছিলো। যা এখন তিক্ততায় রূপ নিয়ে নিয়েছে প্রায়। কিছৃ সময় আগেও স্পন্দন আমার নেশায় মত্ত ছিলেন। উনার ঘন নিশ্বাসের বাতাস এসে এসে লাগছিলো আমার শরীরে। আর এখন আমার ব্যাথাটাও তার চোখে পড়ল না। না অন্তরের ব্যাথা চোখে পড়ল। আর না বাহিরের ! স্ত্রীদের কত সীমাবদ্ধতা ! তারা স্বামীদের কাছে ভালোবাসার হিসেবটাও বুঝে নিতে পারবেনা। আমি তো তাকে ভালোবাসি। তার একটা মিথ্যাও যে আমার কাছে ভয়ঙ্কর লাগে খুব। আর তাই অন্ধকারে না রেখে মুক্তি দেয়ার কথাটা বলেছিলাম।
ঘড়িতে দেখলাম অনেক রাত। রাত্রি ১ ঘটিকা। এই সময় কার দরকার পড়ল তাকে! সারাটা রাত একভাবে শুয়ে থেকেই কেঁদে কেঁদে কাটালাম। একটা ইতিহাস রচিত ছিল আমার কাছে। যে আমাকে কখনো কেউ ফুলের টোয়াও দেয়নি। আজ স্বামীর সংসার করতে এসে সেটা আর ধরে রাখা হলোনা !
সারারাত কেঁদে কেঁদে রাতের শেষভাগে ঘুমিয়ে পরেছিলাম। কেউ একজন ডাকছে বুঝতে পারছি। কিন্তু প্রচন্ড চক্ষুব্যাথায় চোখ খুলে উঠতে পারছিনা। শরীরের তীব্র ব্যাথায় কুকিয়ে কুকিয়ে উঠছিলাম। এমতাবস্থায় কারো একটা কথা কানে স্পষ্ট শুনতে পেলাম,
-"ইশশ মেয়েটার তো অনেক জ্বর হয়েছে। জ্ঞানটাও সম্পূর্ণ নেই। এই অবস্থায় ওকে কি করে বাসায় একা রেখে যাবো!"
চলবে।
পর্ব : ২২
লেখা- #Rafiya_Riddhi
.
মার কন্ঠ শুনে আমি উঠে বসার চেষ্টা করলাম। মা ও সীমা আমাকে ধরে বসালেন। শরীরে দুর্বলতা ভর করেছে খুব। প্রচন্ড খারাপ লাগছে। প্রথমেই ঘড়িতে চোখ গেলো। ভোর ৬:০০ টা বাজে। এত ভোরে মা কোথায় যেতে চান, সেই প্রশ্নই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
-মা, আপনি কি বের হবেন?
-হ্যাঁ, মা....কিন্তু তুমি হঠাৎ এতো অসুস্থ হলে! তোমাকে সাথে নিয়ে যাব তাই ডাকতে এলাম। আর এসে দেখি তুমি জ্বরে কাঁপছ! তার উপর এসিটাও অন করা ছিল। তখন আমি আর সীমা তোমায় জলপট্টি দিলাম। হঠাৎ এতো জ্বর! বৃষ্টিতে ভিজেছিলে নাকি!
-তা কিছুনা। ভাইরাল ফিভার হবে। মা তার আগে বলুন, কোন সমস্যা হয়েছে কি! এতো সকালে কোথায় রওনা দিলেন। নাকি হাটতে বের হবেন?
-স্পন্দন তোমাকেও কিছু জানায়নি!
-নাহ মা। কি জানাবে? আর কি হয়েছে!
-আসলে মা, তোমার জন্য মানে আমাদের সবার জন্যই একটা খুশির সংবাদ আছে।
-তাই! প্লিজ প্লিজ সেটা কি জলদি বলুন !
-ইন্তিহার কাল মধ্যরাতে ডেলিভারি হয়েছে। তুমি মামী হয়ে গেছো!
খবরটা শুনে, সব ব্যাথা-যন্ত্রণা ভুলে গেলাম। বেড থেকে ঝট করে নেমে মাকে জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানালাম। আমার খুব খুশি লাগছে। এই পরিবারে একটা বাচ্চা এসেছে।
-মা, এটাতো অনেক বড় একটা খবর। আর কাল রাতে বাবু হলো আর এতক্ষণে পেলাম খবরটা!
এটা কি ঠিক হলো....!
-আরুশি সব আমার ছেলের কারবার। রাতে স্পন্দন কে জামাই ফোন দিয়ে বলেন ইন্তুর লেবার পেইন শুরু হয়েছে। আমি ও তোমার বাবা তখন ঘুমে তাই আমাদের নাকি কিছু না জানিয়ে। আগে বোন কে হসপিটালাইজড করে, আর ডেলেভারী হবার পর আমাদের খবরটা ফোনে দিয়ে বলে দেয় সকালে আসতে। তোমার বাবাও ভোর হতেই চলে গেছে নাতি দেখতে ।
-মা একটু বসুন। আমি ঝট করে রেডি হয়ে এখনই আসছি।
মার মুখে সব কথা শুনে আর অপেক্ষা না করে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। আমার কথা শুনে মা অবাক হলেন। আমি কিছু না শুনেই জলদি শাড়ি পাল্টে নিলাম। এতক্ষণে আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না কেনো স্পন্দন কালরাতে এভাবে চলে গেলেন! আর কেনো আমার ব্যাথাটাও তখন তার চোখে পড়েনি।
ছোট খাটো বিপদের সময়ও স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মস্তিষ্ক কাজ করা অফ করে দেয়। সেখানে উনার নিজের বোনের মধ্যরাতে লেবার পেইন!
শাড়ি পাল্টানোর পর,
-মা চলুন।
-তুমি যেতে পারবে! তার চেয়ে ভালো রেস্ট নিতে! আমরা তো ১০-১১টার মধ্যে ইন্তু কে নিয়ে বাসায় উঠব। নরমাল ডেলিভারি তে হাসপাতালে রাখে না বেশিদিন।
-মা, কিচ্ছু হবেনা। খবরটা শোনার পর আমি পুরোপুরি সুস্থ। প্লিজ চলেন....
.
.
.
কাল রাতে স্পন্দনের দেয়া চড়টার দাগ গালে এখনও অনেকটা স্পষ্ট। সীমা বারবার ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করছিলো গালে কি হয়েছে। মা ততটা খেয়াল করেন নি। ভালো হয়েছে....
সীমাকে মিথ্যা বলে সেড়ে যেতে পারলেও মাকে পারতাম না।
হসপিটালে আধা ঘন্টা লাগল পৌঁছুতে। আপুর কেবিনে ডুকতেই সবার আগে স্পন্দনের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো। সেকেন্ডের মধ্যে চোখ সড়িয়ে নিলাম। ইন্তিহা আপুর সাথে কুশল বিনিময় শেষ করে বাবুকে আদর করছিলাম। আপু আল্লাহর রহমতে সুস্থ আছেন। তিনি আমার কোলে বাবুকে দিলেন। ছেলে বাবুর মামি হয়ে গেলাম। বাবুটা খুব সুন্দর মাশাল্লাহ !
একটু পর এখানেই সবাই সকালের নাস্তাটা শুরু করলেন। অরিন্দম ভাইয়াও আছেন ততক্ষণে খেয়াল করলাম। ভাইয়ার সাথে কুশল বিনিময় করলাম। একবারের জন্যও স্পন্দনের দিকে তাকালাম না। কিন্তু আমার কেনো জানি বারবার মনে হচ্ছিল উনি সবটুকু সময় আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন!
১১টার দিকে আপুকে ডিসচার্জ করা হলো। সারা শরীরে এখনও খুব ব্যাথা আমার। হাঁটতে গেলে মনে হচ্ছে এখনই পা ছিড়ে পরে যাবে। তারপরও কাউকে বুঝতে দেইনি। বাবুকে সারাটাক্ষণ কোলে নিয়েই বসে ছিলাম। বাসায় ফিরে আসার সময় মা বললেন,
-আরুশি মা আসো, হসপিটাল এসেছিই যখন একেবারে তোমাকেও ডাক্তার দেখিয়ে নিয়ে যাই।
মাকে নিষেধ করব যে, ডাক্তার দেখাতে হবেনা। আমি বেটার আছি। তার আগেই স্পন্দন মাকে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন,
-ডাক্তার কেনো! মা, কি হয়েছে ওর। (স্পন্দন)
-আরে কালরাত থেকে তো আরুশির প্রচন্ড জ্বর। অজ্ঞানও হয়েছিল খুব সম্ভবত। ভোরে অনেক ডাক দেয়ার পর যখন উঠলনা তখন দেখি গা পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে। এরপর জলপট্টি দেয়ায় জ্বর কিছু কমলে জ্ঞান ফিরল। (মা)
-কিহ!! আরুশি কি বলছে এসব মা! তোমার এত জ্বর তো এখানে কি করছো। আবার বলছো ডাক্তার দেখাতে হবেনা। (স্পন্দন)
ধমকাচ্ছে আর কপালে হাত দিয়ে জ্বর মাপছে....
-আরুশি তো জোর করে আসল এখানে। আর আমিও ভাবলাম একেবারে ডাক্তার দেখিয়ে নিয়ে যাব তাই আর তেমন নিষেধ করিনি। (মা)
-মা, দেখেন আপনারা আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হবেন না। সবাই গাড়িতে ওয়েট করছে চলেন....
-এই মেয়ে এক মাইর দিবনা। মা কিছু বলিনা দেখে তাইনাহ! এক রাতের জ্বরে কি অবস্থা হয়েছে তোমার শরীরের, চেহারার! দেখেছো কিছু? আবার বলো ডাক্তার দেখাবেনা। স্পন্দন তুই ওকে ডাক্তার দেখিয়ে নিয়ে আয় তো বাবা। গাড়ি তোর বাবা বা অরিন্দম ড্রাইভ করবে। তুই আরুশিকে ডাক্তার দেখিয়ে নিয়ে আয়। আমরা রওনা দিলাম। (মা)
মার বকা খেয়ে আমি একদুম চুপ হয়ে গেলাম। আর কিছু বলার সাহস জুটলো না। এই প্রথম মা আমাকে বকা দিলেন। আমি জানি এটা ভালোবাসার শাসন। কিন্তু তিনি তো জানেন না, আমি যে উনার ছেলের সাথে একদুম ই কোথাও যেতে চাচ্ছিনা এই মুহুর্তে।
.
.
স্পন্দন আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন। মা পেছন থেকে চেয়ে আছেন বলে হাত ছাড়িয়ে নিতেও পারছিনা।
নিজেদের ঝামেলা কাউকে দেখাতে চাইনা।
ডাক্তার দেখানো শেষে বাসায় চলে এলাম। সারা রাস্তায় স্পন্দন অনেক পেনপেন করলেন, ভাবটা এমন যেন গতরাতে কিছুই হয়নি। আমি উনার একটা কথাতেও মন দিলাম না। গাড়ি বাসার সামনে থামতেই উপরে উঠে ফ্রেশ হয়ে বাবুকে দেখতে ইন্তিহা আপুর রুমে যেই যাব...স্পন্দন সামনে দিয়ে গিয়ে দরজা লক করে দিলেন। চোখ রাঙানি দিয়ে বললেন,
পর্ব : ২৩+২৪
লেখা- #Rafiya_Riddhi
.
গাড়ি বাসার সামনে থামতেই উপরে উঠে ফ্রেশ হয়ে বাবুকে দেখতে ইন্তিহা আপুর রুমে যেই যাব...স্পন্দন সামনে দিয়ে গিয়ে দরজা লক করে দিলেন। চোখ রাঙানি দিয়ে বললেন,
-"যেখানে যাবার পরে যাবে। আগে কিছু খেয়ে তারপর ঔষুধ খেয়ে যাবে।" (স্পন্দন)
আমি কিছু বললাম না। উনার দিকে তাকালামও না। লক খুলতে দরজার কাছে গেলাম। তখন স্পন্দন আবার বললেন,
-যেটা বলেছি সেটা করবে নাকি আমি মাকে ডেকে সব বলব যে তুমি ডাক্তারের প্রেসক্রিপ করা ঔষুধ নিচ্ছনা!
উনার এই কথায় আর সাহস হলোনা না খেয়ে যাওয়ার। হসপিটালে মার বকা খেয়ে ডাক্তার দেখাতে যাই। তাই ঔষুধ খাওয়া নিয়েও স্পন্দন মার নাম নিয়ে ভয় দেখাচ্ছেন। আর বকা খাওয়ার ইচ্ছে নাই। তারচেয়ে ভালো খেয়ে নিব। কিন্তু খুব অরুচি হচ্ছিল আর তেতো লাগছিল সব। একবার কোনরকমে খেয়ে এখান থেকে বের হতে পারলেই আর সহজে আসব না রুমে। চড় খাওয়ার জ্বালা এত সহজে যাবেনা আমার....
সারাটাদিন কিচেনে, স্পর্শের রুমে আর ইন্তিহার আপুর বাবুর কাছে...এভাবেই গেলো। রাতে আবার প্রচন্ড জ্বর আর শরীর ব্যাথায় অসহ্য কষ্ট হচ্ছিলো। রুমে এসেই দেখতে পেলাম তাকে। কিছু না বলে শুয়ে পরলাম কম্বল মুড়ি দিয়ে। মনে হচ্ছিল স্পন্দন কিছু বলতে চেয়েও আমতাআমতা করছেন। তাতে পাত্তা না দিয়ে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিলাম।
রাতে যতটুকু মনে আছে প্রচন্ড শীতে কাঁপুনি ধরে যায় আমার। তখন কেউ একজন আমার গায়ে একাধিক কম্বল চড়িয়ে দেন। মাথায় পানির স্পর্শ পাই। তারপর আর কিছু মনে নেই.....
সকালে ঘুম থেকে যখন উঠলাম দেখলাম স্পন্দন বসে ঘুমিয়ে আছেন। তার মানে সারারাত উনি আমার পাশে বসে ছিলেন। এটা দেখার পর যেনো আমার সবটা রাগ পানি হয়ে যেতে লাগল। কিন্তু চড়ের কথা মনে হতেই আবার কঠিন হয়ে গেলাম।
ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে চলে আসলাম। সীমা নাস্তা বানাচ্ছে। আমি চুলায় চা চড়িয়ে দিলাম.....
নাস্তা করার পর সবাই যার যার কাজে বের হয়ে গেলেন। বাবা আর ইন্তু আপুর হাজবেন্ড অফিসের উদ্দেশ্যে। আর স্পর্শ স্কুলের। কিন্তু স্পন্দন গেলেন না। রুমে যেয়েই আমাকে ডাকছেন। আমি তখন আপু আর মার সাথে ডাইনিং এ। তাদের সামনে ডাক পরায় রুমে না গিয়ে উপায় ছিলনা।
রুমে যেতেই স্পন্দন আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে বেডে বসালেন। তারপর মেডিসিন আর পানি নিয়ে আমার সামনে দাঁড়ালেন। আমি কথা না বাড়িয়ে ঔষুধ খেয়ে চলে আসছিলাম। তখন স্পন্দন পিছু ডাকলেন,
স্পন্দন - আরুশী.......
আমি দাঁড়ালাম উনি কি বলবেন শোনার জন্য কিন্তু কিছু বললাম না।
-নাহ, মানে কিছুনা.....আচ্ছা যে কাজে যাচ্ছিলে যাও.....(স্পন্দন)
আমি চলে আসলাম। সেই ঘটনার পর থেকে কিছু বলতে গেলেই উনি আমতাআমতা করছে। বুঝিনা এতো কাহিনী করার কি আছে! যেখানে চড় মারতে দ্বিধা কাজ করেনি সেখানে সামান্য একটা কথা বলতে এতো কিসের দ্বিধা....
.
.
পরদিনও এভাবেই কাটল। সারাদিন তেমন অসুস্থ না থাকলেও রাতে ভয়ানক জ্বর হয়। তখন কই থাকি, কি বলি করি কিছু মনে থাকেনা। এতদিন আর এত জ্বর আমার এর আগে কখনো হয়নি। শরীর এত ব্যাথা থাকে যা অসহনীয় লাগে.....
ইন্তিহা আপু বাবু হওয়ার পর ৩ দিন এখানে ছিলেন। যেহেতু দেখাশোনার জন্য উনার ফ্ল্যাটে কেউ নেই। কিন্তু আজ গ্রাম থেকে উনার শশুড় শাশুড়ি আর ননদ আসলে উনি ফ্ল্যাটে ফিরে যান। বরাবরের মতই কান্না করে বিদায় দেই আপুকে। বাবুটাকে খুব বেশি মিস করব....
ইন্তিহা আপুদের সাথে মা আর স্পর্শ ও গিয়েছেন। মা কিছুদিন থেকে আসবেন আপুর কাছে। আর বাবা ব্যবসার কাজে বাহিরে গিয়েছেন। বাসায় আমি, স্পন্দন আর সীমা ছাড়া কেউ নেই।
খালি বাসায় সারাদিন কোনমতে পার হল আমার। স্পন্দন ল্যাপটপ নিয়েই পরে ছিলেন। সমস্যা হয়নি তেমন। কিন্তু আমার মাথা ধরে যাচ্ছিল এই ভেবে ভেবে এভাবে আর কতদিন! আমাদের মধ্যের যে দূরত্বটা সৃষ্টি হচ্ছে তা মোটেও সম্পর্কটার জন্য ঠিকনা।
সিড়ি দিয়ে উঠছি আর ভাবছি, স্পর্শিয়াকে কি এভাবে জিতে যেতে দেয়াটা উচিত হচ্ছে। কুমিল্লা থেকে আসার পর আমাদের দিন গুলো কেমন ছিলো আর এখন কেমন হয়ে যাচ্ছে।
রুমে যখন আসলাম, স্পন্দন কে দেখলাম শুয়ে আছে। আমি টু শব্দ না করে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে সোফায় শুয়ে পড়লাম। উনাকে ডিস্টার্ব করতে চাইনা। কারন গত কিছু রাত ধরে উনি না ঘুমিয়ে সারারাত আমার কেয়ার করেছেন। আজ জ্বরটা কম। ঘুমিয়ে নিক ভালোভাবে।
আমার রাগ উবে যায় যখন মনে পড়ে সারারাত উনি এক রকম বসে থেকে আমার মাথায় জলপট্টি দিয়ে গেছেন। আমি সময়মত ঔষুধ খেলাম কিনা লক্ষ্য করেছেন।
কিন্তু যখন সেদিনের চড়টার কথা মনে পরে তখন স্পন্দন কে নিয়ে কিছু ভাবার ইচ্ছেটাও হারিয়ে ফেলি। সেদিন যদি আমার কোন দোষ থাকত তাহলে চড়টা আমাকে এভাবে কষ্ট দিতনা। দোষ তো ছিল বরং উনারই। মিথ্যের চেয়ে বড় ভুল আর কি হতে পারে.....! আজ রাতটা কতটা ভিন্ন। অথচ আগে প্রতিটা রাত উনার সাথে ছিল অসম্ভব সুন্দর। ঘুমোতে যাওয়ার আগে তার আমার হাত ধরার কথা তিনি কখনো ভুলতেন না। আগের সেই মোহনীয় রাতগুলোও আসেনা আজ অনেকদিন.....
আমি বুঝতে পারি, স্পন্দন সবসময় আমার আশেপাশে ঘুরঘুর করেন। আমাকে কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারেন না। আর আমি কিছু বলিনা কারন আমার আত্মসম্মান আমাকে বাধা দেয়....টুকটাক রাগ সম্পর্কের জন্য ভালো। কিন্তু বেশিদিন রাগারাগি চলতে থাকলে দূরত্ব বাড়ে। সম্পর্কে ফাটল ধরে....
এসব ভেবে ভেবে কখন যেন চোখ থেকে নোনাজল গড়িয়ে পরতে শুরু হলো টের পেলাম। চোখদ্বয় মুছে নিয়ে ঘুমাতে মন দিলাম। আর সিদ্ধান্ত নিলাম আগামীকাল থেকে আমি নরমাল বিভেব করব। জানিনা কতটুকু সঠিক ডিসিশন নিলাম....
অনেক্ষণ সময় পার হয়ে গেলেও ঘুম আসছিলো না....চিন্তারা আজ মাথা থেকে নামতেই চাচ্ছেনা...
.
.
খানিক পর চোখটা যেই লেগে আসল মনে হলো আমি শুন্যে ভাসছি, ভাসছি। আর এখন নিচে নামছি......
.
To be continue...
পর্ব : ২৪
লেখা- #Rafiya_Riddhi
.
খানিক পর চোখটা যেই লেগে আসল মনে হলো আমি শুন্যে ভাসছি, ভাসছি। আর এখন নিচে নামছি......
হকচকিয়ে গিয়ে চোখ খুললাম। দেখি স্পন্দন আমাকে উনার কোল থেকে বেড এ নামাচ্ছেন আর মিটিমিটি হাসছেন। হয়ত আমাকে এভাবে ভয় পেতে দেখে হাসি আসছে উনার। আজকের উনার এই হাসিটা দেখে আমাদের সেই প্রথমরাতে উনাকে প্রথম হাসতে দেখে যেভাবে ঘায়েল লাগছিল নিজেকে আজকেও তেমনটা মনে হলো। সদ্য ঘুম থেকে উঠা এই ভুলন্ত আমিও তাই উনার সাথে হাল্কা হেসে দিলাম।
আমাকে হাসতে দেখে স্পন্দন মনোযোগী হয়ে আমাকে দেখতে লাগলেন। আর আমি তাকে। একসময় উনি চোখেমুখে হতাশা নিয়ে বলে উঠলেন,
---"বেড ছেড়ে তুমি সোফায় কেনো শুয়েছিলে আরু? আমাদের মধ্যে কি এখন এতটাই মনোমালিন্য হয়ে গেছে যে তুমি আমার সাথে বেডও শেয়ার করতে চাওনা !"
উনার কথা শুনে তখনই আমার মনে পরে গেলো আমাদের রাগারাগি চলছে । আমি উত্তর দিলাম,
---"তেমন কিছুনা।"
তারপর বিপরীত দিকে মুখ করে শুয়ে পরলাম। কিন্তু স্পন্দন আমাকে ছেড়ে উঠলেন না। আমাকে পেছন থেকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলেন। তারপর আমার একটা হাত ধরে উনার হাত সহ আমার পেটের উপর রাখলেন সাথে ঘাড়ে মুখ গুজলেন। আমি উনাকে বাধা দিলাম না তাতে। জানিনা কেন, উল্টো আমার স্বস্তি বোধ হচ্ছিল....।
কিন্তু কিছুক্ষণ পর যখন আমার কাঁধ বেয়ে উষ্ণ জল গড়িয়ে পড়তে শুরু হলো তখন বেশ অবাক হলাম। পেট থেকে স্পন্দনের হাত টা সরিয়ে উনার দিকে ফিরে যা দেখলাম তাতে আমার আত্মা কেঁপে উঠল। স্পন্দন কাঁদছেন....(!) আমার বর যাকে কিনা কখনো রাগ দেখানো ছাড়া দেখা যায়না। অথচ আজ কেমন নিঃস্ব, নিস্তব্ধ লাগছে। নিশ্চুপ কেঁদে যাচ্ছেন....! এতটাই কেঁদেছেন যে উনার দুগাল ভিজে আমার কাঁধসহ ভিজে গেছে।
আমি উনাকে এইভাবে দেখে সহ্য করতে পারছিলাম না। উনার দুগালে হাত রেখে প্রশ্ন করলাম,
---"কি হল? কাঁদছেন কেনো আপনি?"
-নিশ্চুপ
---"বলেন কি হইছে!"
-নিশ্চুপ
---"আরে বাবা হলোটাহ কি?"
উনি এবারো কোন উত্তর না করে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন শুধু। তার খানিক পর বললেন,
---"আজ আমাকে এভাবে দেখে হয়ত তোমার মনে হচ্ছে এটা আমার দুর্বলতা বা নাটক। কিন্তু তুমি বুঝবেনা আরুশী কতটুকু কেয়ার করলে একজন মানুষ তোমার জন্য চোখের জল ফেলে।"
আমি উনার কথা শুনে মুখের ভাষা হারিয়ে ফেললাম। স্পন্দনকে আজ একদুম অচেনা মনে হচ্ছে আমার। উনাকে এভাবে দেখে অসস্থি হচ্ছে অনেক। আনকমফরটেবল ফিল করছি....
উনার রাগটা সয়ে গেছে ঠিকই কিন্তু উনার কষ্টটা আমার মধ্যে ছটফটানি শুরু করিয়ে দিচ্ছে। স্পন্দন আবার বললেন,
---"আরুশি আমি রিয়েলি ভেরী সরি সেদিনের জন্য। বিশ্বাস করো আমি তোমাকে মারার কথা কখনো কল্পনাও করতে পারিনা।"
আমি উনার চোখের জল মুছে দিয়ে বললাম....
---"আচ্ছা ঠিকাছে। আগে কান্না থামান। বাচ্চাদের মত এভাবে কাঁদছেন!"
---"তুমি কথা বলোনা, আমার দিকে তাকাও পর্যন্ত না। আমি ভেবেই নিয়েছিলাম তুমি আমাকে ঘৃণা করতে শুরু করেছো।
.
আরুশি তোমাকে আমি সেরাতের ব্যবহারের জন্য অনেকবার সরি বলতে গিয়েও পারিনি। রাগী মানুষের এই একটা সমস্যা। আমরা নিজেদের রাগটা যতটা সহজে প্রকাশ করে দিই, কষ্ট-অনুতপ্ততা ততটাই আড়াল করতে চাই। প্লিজ আরুশি আমার ভুলের শাস্তি তুমি এভাবে আর দিওনা আমাকে। তুমি আমার দূরে গেলে সেটা আমার একদমই সহ্য হয়না..."
-হুম আচ্ছা বুঝলাম। কান্না থামান। আপনাকে রাগেই মানায়। কাঁদলে একদুম বাজে লাগে...
স্পন্দন চোখ মুছে নিয়ে বললেন,
-তাহলে প্রমিস করো, এভাবে আর কখনও ইগনোর করবে না আমাকে....!
তোমার ইগনোরেন্স, আমার সাথে কথা না বলা আমি নিতে পারিনা। তার উপর তুমি এক চড় খেয়ে যে অসুখ বাঁধিয়েছো। বিশ্বাস করবে কিনা জানিনা গতরাত গুলো থেকে তোমার জ্বরের ঘোরে যা যা বলতে আমার চোখের পানি চলে আসত অপরাধবোধ থেকে। এই ইনসিডেন্ট টা যদি না হতো, আমি বুঝতেই পারতাম না আমি তোমাকে কতটা.....!
তারপর তোমার দূরত্ব এতটা রক্তক্ষরণ করবে আমার বুকে.......
স্পন্দনের কথাগুলো আমাকেও তার সাথে সাথে ব্যথিত করে দিচ্ছে। কিভাবে জানিনা আমি উনার প্রত্যেকটা বাক্যের গভীরতা, সত্যতা উপলব্ধি করতে পারছি। উনার চোখ তার কথার সত্যতা জানান দিচ্ছে। আমি কিছুটা অভিমানী ভাব নিয়ে উনাকে বললাম,
---"কিন্তু আপনি যে আমাকে চড় মেরেছেন। জানেন আমাকে কেউ এর আগে কখনো মারা তো দূরে বকাও দেয়নি। আর কোনো দোষ ছাড়া সেদিন আপনি হাত তুলেছেন আমার উপর। এইবার নাহয় কেঁদে আমার মন গলিয়ে দিতে পেরেছেন। কিন্তু নেক্সট টাইম যদি এমন করেন সত্যি বাপের বাড়ি চলে যাব একেবারে। কোন কিছুতে তখন ফিরে আসব না....."
---"সেরাতে তুমি দোষ করেছো বলেই চড় দিয়েছি। এই মেয়ে তোমার সাহস কি করে হয় আমাকে ডিভোর্স এর কথা বলার! এটা না বললে তো আমি কন্ট্রোল হারিয়ে চড় মারিনা। "
---"হুমম। সরি। আর বলব না.....
কিন্তু দোষ আপনারও ছিল। মিথ্যে বলা আপনার উচিত হয়নি।"
---"আমিও সরি কিন্তু তোমাকে মারার জন্য শুধু আর আমি কোনো মিথ্যা বলিনাই। তোমাকে সব ব্যাখ্যা করতে চেয়েছি বাট তুমি শুনতে চাওনি। ওয়েট আমি সব ক্লিয়ার করছি। তুমি ইন্তুর বাসায় আমাকে কি জিজ্ঞেস করেছিলে মনে করো বলোতো?"
---"এই, যে আপনার রিলেশন ছিল কিনা বিয়ের আগে।"
---"No. You are wrong! তুমি জানতে চেয়েছিলে আমি কাউকে ভালোবাসতাম কিনা..মনে করে দেখো।"
---"হু, রাইট। কিন্তু ঘুরেফিরে তো একি। ভালোবাসলেই তো রিলেশনে জড়ায় মানুষ তাইনা!"
---"ট্রু বাট আমাদের ক্ষেত্রে না।
না স্পর্শিয়া আমাকে আর না আমি স্পর্শিয়াকে কখনো ভালোবেসেছি। যদিও একবার ভেবেছিলাম স্পর্শিয়ার সাথে থাকা আমার সো কল্ড রিলেশনটা নিয়ে তোমাকে বলি কিন্তু সেটা আমার জীবনের এমন একটা তমসাচ্ছন্ন অধ্যায় যেটা নিয়ে তোমাকে জানাতে আমার আগ্রহ হয়নি।"
---"কি বলছেন কিছুই বোধগম্য হলোনা। উল্টো মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে।"
---"পরে আরেক সময় বিস্তারিত বলব নাহয়। অনেক রাত, এখন ঘুমাও তুমি পাখি।"
বলে উনি আমার যে গালে চড় দিয়েছিলেন সেখানে হাত দিয়ে মালিশ করে তারপর চুমু খেলেন....চুমু খাওয়া শেষে আমার কপালে হাত রেখে বললেন,
---"এই তোমার তো এখনও ভালোই জ্বর আছে!"
---"হু, ভালো লাগছেনা আর এই জ্বর।"
---"কাল বিকেলে আবার ডক্টরের কাছে যাব। ঘুমাও এখন। এসিটা অফ করে দিচ্ছি। আকাশের অবস্থাও তেমন ভালো না। ঘোর বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে....
ওয়েট জানালাটা অফ করে দিয়ে আসি। তুমি ঘুমাও....."
আমি স্পন্দনের টিশার্ট খামচে ধরে বাঁধা দিয়ে বললাম,
---"জ্বর সেটা আর নতুন কিছুনা। আর প্লিজ জানালা টা খোলা থাকুক। ঝড়ো হাওয়া আসতে দিন রুমে...."
স্পন্দন আমার কথা রাখলেন। জানালা অফ করলেন না। আমাকে নিজের বুকে নিয়ে ঘুমাতে গেলেন। কিন্তু আমার জানিনা কি হলো, ঘুমাতে ইচ্ছে করছিল না মোটেও। দুষ্টুমির দিকে মন যাচ্ছিল। বারবার দৃষ্টি কেড়ে নিচ্ছিল স্পন্দনের লোমশ বুক । স্পন্দনের লোমশ বুকে হাত বুলিয়ে চুমু খেতে খুব ইচ্ছা হচ্ছিল।
বাহিরে তুফানের ঘনঘটা....সাথে আমার মনেও। কিছু সেকেন্ড পরপর বিদ্যুত চমকাচ্ছে, বজ্রপাত হচ্ছে। রুমের দক্ষিণা জানালা দিয়ে দক্ষিণা বাতাস সাথে এক পশলা বৃষ্টির ছিটা এসে আমাকে আর স্পন্দনকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। খুবই ভয়ানক একটি বজ্রপাতের আওয়াজে ভয় পেয়ে স্পন্দনের শার্ট খামছে ধরে উনার বুকে মাথা লুকালাম। স্পন্দনও আমার ভয় বুঝতে পেরে খুব শক্ত করে নিজের বাহুডোরে আমাকে বন্ধি করে নিলেন।
আমি জড়ের ঘোরে চলে গিয়েছিলাম। তাই স্পন্দন কে ছেড়ে দিয়ে উঠে উনার টিশার্ট খুলে দিতে চাইলাম। উনি বাধা দিলেন,
---"এই কি করছ? শীত করবে আমার।" (হাল্কা হেসে)
আমি উনার কথা না শুনে উনার টিশার্ট খুলে, নাক দিয়ে ঘ্রাণ নিতে লাগলাম উনার শরীরের। তারপর বুকে চুমু খেতে লাগলাম। যখন কামড় দিতে শুরু করলাম। তখন স্পন্দন আমাকে উনার উপর থেকে নামিয়ে আমার উপর উঠে বললেন,
---"কি হয়েছে, হুমম? জড়ে উন্মাদ হয়ে গেলে নাকি?"
আমি উনার একটা হাত আমার কোমড়ে নিয়ে রেখে বললাম,
---"আদর করো আমাকে.....
ভালোবাসা চাই আমার!"
---"আজ না। তোমার জড়টা ভালো হোক তারপর একেবারে পুষিয়ে দিব। এখন লক্ষি মেয়ের মত ঘুমাও। আমি জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছি তোমাকে....."
আমি উনার কথার তোয়াক্কা করলাম না। হয়ত নিজের মধ্যে নেই আমি.....
স্পন্দন কে কাছে পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম। আবার উনার উপর উঠে উনার দুগালে, কপালে সারা মুখে চুমু খেতে লাগলাম। প্রথমে স্পন্দন রেসপন্স না করলেও পরে আমার কর্মকান্ডে বাধ্য হোন আমার সাথে পাগলামিতে মেতে উঠতে। আমি পাগলের মত উনার বুকে চুমু দিতে থাকলে আমার মুখ উচিয়ে ধরে উনি আমার দু ঠোঁট নিজের ঠোঁট দ্বারা আকড়ে ধরেন। আমার ঠোটের নেশায় মত্ত স্পন্দন আর আমি পাগলপ্রায়। আমি তাকে, সে আমাকে পাগলের মত ভালোবাসা দিচ্ছিলাম।
যা মনে করলে আগামি ১০০ বছরেও আমার নিজের কাছেই লজ্জায় পরতে হবে!...
ঝড় যেন থামার নামই নিচ্ছিল না সেদিন। না প্রকৃতির ঝড় আর না আমাদের মধ্যের......!
.
.
সকালে উঠে নাস্তা তৈরি করছি আমি আর সীমা। এমনসময় কল আসল আমার ফোনে..........
প্রথমবারে কল রিসিভ করা হলনা। দ্বিতীয়বার বাজতেই ফোন হাতে নিয়ে দেখি ইন্তু আপুর কল.....
রিসিভ করার পর,
-'আসসালামু আলাইকুম ভাবি।' (ইন্তিহা)
-'ওয়ালাইকুম আসসালাম আপু। কেমন আছো? বাবু কেমন আছে?'
-'আমরা সবাই ভালো আছি আল্লাহর রহমতে। আচ্ছা শোনোনা তুমি আর ভাইয়া সীমাকে নিয়ে আজ রাতে আমাদের এখানে চলে এসো। মাবাবার কথা আছে তোমাদের সাথে।'
-'তাই? আসব কিন্তু তোমার ভাইয়া কি জানে....!'
-'নাহ, তুমি বলে দিও। আর শোনো তোমাদের জন্য দারুন প্ল্যান হচ্ছে এখানে।
-কি প্ল্যান! বলনা বলনা....
-তোমার আর ভা-ই-য়া---র
-আমার আর উনার কি?
-তোমার আর ভাইয়ার বিয়ের প্ল্যান...
প্রথমে আমি ভাবলাম আমি ভুল শুনছি।
-"কি বললা! আবার বলো....."
-"তোমাদের বিইইইইয়েএএএরররর প্ল্যান...."
-"এহহ!! বিয়ের প্ল্যান মানে? বিয়ে তো হলই...."
-"আরেহ তখন তো তোমার এইচএসসি পরীক্ষা, ভাইয়ার মাস্টার্সের পরীক্ষার জন্য নরমালি অনুষ্ঠান ছাড়া বিয়ে হইছে।"
-"তো পরীক্ষা তো সেই কবে শেষ হলো। এতদিনে কেনো বিয়ের প্ল্যান করা হচ্ছে! আমি তো পুরাতন বউ হয়ে গেছি।
"

-"হাহা। আমার প্র্যাগনেন্সির লাস্ট কয়েকমাস চলছিল তাই মাবাবা আর ভাইয়া ডিসাইড করেন বাবু হওয়ার পর অনুষ্ঠান করা হবে। তোমার মাবাবাও সম্মতি জানান তাতে....."
-"এমা আমার পেছনে এতো প্ল্যান হচ্ছে আর আমি কিছুই জানিনা....!"
-"হুম। তার চেয়ে বড় প্ল্যান কি জানো, তোমাদের এবার হানিমুনও হচ্ছে। অবশ্য হানিমুনের সব কাজ আগেই সাড়া হয়ে গেছে। তারপরও ফরমালিটির জন্য নাহয় দেশের বাহিরে গিয়ে আবার করবা.....
হাহা।"
আমি অনেক লজ্জা পেলাম। কোনমতে আপুকে রাখছি বলে ফোন রেখে দিলাম। ভাবতেই অন্যরকম লাগছে যে বিয়ে নিয়ে সব স্বপ্ন এবার আমার পূরণ হবে। আমার রাজকুমার আমাকে সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা করে তার রাজ্যে নিয়ে যেতে আসবে।
রুমে গেলাম দৌড়ে। স্পন্দন এখনও ঘুমে। অনেক ডাকাডাকি করলাম। নড়ছেও না। বুঝতে বাকি রইল না ঘুমের ভান ধরে আছে। তাই আমি উনাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললাম, "পানি ঢেলে ঘুম ভাঙাতে হবে বুঝছি। পানি আনতে গেলাম আমি।" তারপর যেই বেড থেকে উঠলাম। উনি ধরফরিয়ে উঠে পরলেন,
-"আহ আরুশি একটু কি ঘুমাতেও দিবেনা।"
-"নাহ, দিবনা।"
-"বাব্বাহ সকাল সকাল এতো রাগ কেনো আমার সাথে। কি হয়েছে
!"

-"আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান হবে প্ল্যান চলছে। অথচ আপনি আমাকে কিছু জানানও নি। কেনো?"
-"না মানে....সবকিছু কনফার্ম হলে তোমাকে সারপ্রাইজ দিব ভেবেছিলাম। তাই আগে বলিনি। তা আমার সারপ্রাইজটা ভেস্তে দিল কে?"
-"ইন্তিহা আপু ফোন করেছিলেন। আপনাকে আর আমাকে আজ মাবাবা আপুর বাসায় যেতে বলেছেন। বাবা কাজ শেষে হয়ত ওখানেই ব্যাক করেছেন।"
স্পন্দন আমাকে উনার পায়ের উপর নিয়ে বসালেন আর বললেন,
-"আমাদের আবার বিয়ে হবে! তুমি আবার লাল টুকটুকে বউ সাজবে আমার জন্য। গতবার যা যা হয়নি সব এবার হবে। আমি তো খুব এক্সাইটেড। আর তুমি!?"
-"মোটেও না। আপনার মত রাগীলা কে একবার বিয়ে করেই জীবন কপার কপার। আবার বিয়ে করতে হবে এটা আমার কাছে মোটেও এক্সাইটিং/দারুন ব্যাপার না।"

আমার কথায় স্পন্দন বুঝে গেলেন আমি তার সাথে মজা নিচ্ছি। উনি নাক দিয়ে আমার ঘাড়ে কাতুকুতু দিতে লাগলেন আর বললেন,
-"তাইনাহ! কি বলছো আবার বলো দেখি...!"
-"আপনাকে বিয়ে করে ফেসে গেছি আমি"।

এবার রাগান্বিত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। উনার ফেইস দেখে আমি দুষ্টামি করার সকল কনফিডেন্স হারিয়ে বসি।

-"ইয়ে মানে....না মানে। আপনার মত স্বামীকে পেয়ে আমি ধন্য। আপনাকে পেয়ে তো আমি চিরসুখী...!"
-"তাহলে বলো, U will marry me again!"
-"Ommmmmmm
Yeah, I will."


-"আরো বলো, হানিমুনে যাবা আমার সাথে?"
-"ওমমমম....




"






-"এতো ভাবার কি আছে। বিয়ে যখন আমাকে করবা, হানিমুনেও তো আমার সাথেই যাবা।"
-"হাহা তা যাবো। কিন্তু একটা শর্ত আছে....."
-"কি আবার শর্ত!"
-"হানিমুন থেকে ফিরে এসে
।"


-"ফিরে এসে কি বলো?"
-"
ফিরে এসে আমি এখানে (আমার পেটের দিকে উদ্দেশ্য করে) ইন্তু আপুর বাবুর মত ছোট্ট একটা স্পন্দন চাই।
"



আমার শর্ত শুনে স্পন্দন কিছুক্ষণ থমকে গেলেন। আমার লজ্জা মাখা হাসিহাসি মুখের দিকে চেয়ে থাকলেন। তারপর নিজের মুখে দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে বললেন,
-"তার জন্য হানিমুনে যাওয়া অবদি অপেক্ষা করতে হবে নাকি। এখনই প্রসেসিং শুরু করা যাক। কি বলো....!
"

-"এই এই নাহহহ। আমি মাত্র গোসল করছি আবার পারবববববব নাআআআআ।"
-"চিন্তা নাই। আমি করিয়ে দিইইইইবববববব।"
বলেই সেই তথাকথিত দুষ্টুমিতে মেতে উঠলেন তিনি।

.
.
রাতে ইন্তু আপুর বাসায় যাওয়ার পর সব ঠিক হলো। আমার রেজাল্টের পর ৩১ জুলাই আমাদের বিয়ের ডেট রাখা হয়। স্পন্দনের দেশের বাড়ি কুমিল্লা সেখান থেকে বরযাত্রী যাবে আমাদের বাড়িতে। তারপর সেখান থেকে ঢাকার উদ্দ্যেশ্যে পরদিন যাত্রা করা হবে। সব আলাপ আলোচনার পর রান্নাঘরে মা আর ইন্তু আপু, ইন্তু আপুর ননদ তাদের এক্সাইমেন্টের কথা বলছিলেন। তখন ইন্তিহা আপু আমাকে চুপিসাড়ে বললেন,"জানো তোমার বিয়ের কথা আমাদের পরিবারে কিভাবে হয়?"
আমি চমকে উঠলাম। এই কথাটা এর আগে কখনও আমার মাথায়ই আসেনি।
-"নাহ আপু। কিভাবে হয়?"
-"তাহলে শুনো, বলছি।
ভাইয়া যখন এতজলদি বিয়ে করতে মোটেও রাজি নন। মা ভাইয়াকে একের পর এক মেয়ের ছবি দেখাচ্ছে আর ভাইয়া রিজেক্ট করছে। তখন তোমাকে মা আর আমি দেখি এক আত্মিয়ের বিয়েতে। অবশ্যই সেটা কুমিল্লাতে। তোমার নম্রতা, ব্যবহার আর মায়াবি মুখটা দেখে আমি আর মা সেখানেই তোমাকে পছন্দ করে ফেলি। তার পরদিন ঐ বিয়ের অনুষ্ঠানে ভাইয়াও গিয়েছিলো। তখন আমি ভাইয়াকে দেখাই তোমাকে। বিশ্বাস করো ভাবি ভাইয়া যে তোমাকে দেখে কতটা ফিদা হয়ে গিয়েছিলো তা নিজের চোখে দেখেছিলাম। তখন তুমি ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে ছিলে। পুরো বিয়ে বাড়িতে ভাইয়ার পিছনে মেয়েরা ঘুরঘুর করছিল মূলত ইন্জিনিয়ার ছেলে আর তার উপর এত লম্বাচড়া, সুদর্শন। কিন্তু তুমি তাদের মত ছিলেনা দেখেই ভাইয়া এতটা পাগল হয়ে গিয়েছিল তোমার জন্য। আমাকে বলেছিল, বিয়ে যদি করে তোমাকেই করবে নাহয় করবেনা।
ইন্তু আপুর কথায় আমি একাধিক বার আকাশ থেকে পড়লাম।

-"কিন্তু আমি তো এসবের কিছুই জানিনা। আর তোমাদের কাউকে কোনো বিয়ে বাড়িতে দেখেছি বলেও মনে পরেনা।"
-"সারাক্ষণ নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলে দেখবে কি করে....!
"


-













-"তারপর কি হয়েছে শুনো। আমি মাকে জানালাম ভাইয়ার তোমাকে কতটা পছন্দ হয়েছে। তারপর মা বাবার সাথে কথা বলে ঘটকের মাধ্যমে তোমার বাড়িতে প্রস্তাব পাঠান।"
-"যখন আমি ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি তখনি?"
-"হ্যাঁ। কিন্তু আঙ্কেল মানে তোমার বাবা রাজি হননি। বলেছেন মেয়ে ছোট এখনও। এত জলদি বিয়ে দিবেন না।"
-"তারপর কি হলো?"
-"তারপর বাবা আর বড় জেঠু গিয়ে কথা বললেন।"
-"তখন সবকিছু শুনে খানিক রাজি হলেও আঙ্কেল দূরে মেয়ে বিয়ে দিতে ইতস্তত করছিলেন।"
-"তারপর তারপর?"
অতক্ষণে খেয়াল করলাম। মা, ইন্তু আপুর শাশুড়ি রান্নাঘরের অন্যদিকে আড্ডায় ব্যস্ত। ইন্তিহা আপু তারপর বললেন,
-"তোমার বাবা বলেছিলের পরে জানাবেন।"
-"তখন আমরা আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম যে উনি রাজি হবেন। ভাইয়ার তোমাকে খুব পছন্দ হয়েছিল। সারাক্ষণ বিয়েতে চুপিসারে তোলা তোমার ছবিগুলো গ্যালারিতে ঘাটাঘাটি করত, উদাসীন থাকত।"
-"আমাদের বিয়ের পিছনে এত ঘটনা ঘটেছে। অথচ আমি কিছুই জানিনা। তোমার ভাই কখনো বলেওনি। উল্টা বিয়ের পর এমন আচরন করেছেন বুঝাই যায়নি আমাকে আগে কখনো দেখেছেন তিনি।"
-হাহা...হুম ভাইয়া এমনি। কখনো নিজের আবেগ অনুভূতি সহজে কারো কাছে তুলে ধরতে চান না। তোমাকে যে পছন্দ তা তোমাদের বিয়ের ১ বছর আগে থেকেই বুঝেছো নিশ্চয়ই!
-হ্যাঁ।

কিন্তু ভালোলাগা আগে হলেও, ভালোবাসাটা বিয়ের পরই বেসেছেন। মনে মনে
-"আর আজ তুমি না বললে হয়ত জানাই হত না। তারপর আমাদের বিয়েতে আব্বু মত দিলেন কি করে?"
-"ভাগ্যের লেখন কে ঠেকায় তাইনা। তোমার বাবার আমাদের ফ্যামিলির সবাইকে পছন্দ হয়েছিল তাই একদিন ঢাকা আসার পর উনি নিজে থেকে আমাদের ঢাকার বাড়িতে যান ভাইয়াকে দেখতে। তখন ভাইয়াকে উনার পছন্দ হলে সবকিছুর কথাবার্তা আগায় আর তোমার বরটাও জান ফিরে পায়...।"
.
.
চলবে.....
পর্ব : ২৬
লেখা- #Rafiya_Riddhi
.
আপুর কাছ থেকে সব জানার পর নিজেকে অনেক লাকী মনে হচ্ছিল। অপরিচিত একটি মেয়ে প্রথম দেখায় ভালোলাগা তারপর তার জন্য ১ বছর অপেক্ষা করে থাকা কম কিছুনা। যদি আব্বু তখন রাজি না হতেন স্পন্দন কি এখনো আমার অপেক্ষায় থাকতেন(!)
প্রশ্নটা তুলে রাখলাম। স্পন্দন কে একসময় জিজ্ঞেস করা যাবে। রান্নাঘর থেকে আমার আর স্পন্দনের রুমের দিকে যাচ্ছি। আজও গতরাতের মত ঘন বর্ষন। যা আমাকে কাল রাতে আমার পাগলামির কথা মনে করিয়ে দিল আর আমি প্রচন্ড লজ্জায় শেষ হয়ে যেতে লাগলাম।
আর তখনই মোবাইলে মেসেজ টোন বেজে উঠলো। মেসেজ ওপেন করে যা দেখলাম, তাতে আমার সব খুশির উপর কষ্টের কালিমা লেপ্টে গেলো। স্পর্শিয়ার মেসেজ,

"এমনই কোনো এক বর্ষার রাত্তিরে আমি আর স্পন্দন নিজেদের কন্ট্রোল হারাই। আবেগের কাছে হার মেনে প্রথমবারের মত মিলিত হই আমরা। এখনও এমন বৃষ্টির রাত যখন আসে আমার সেদিনকার উন্মাদিত রাতের কথা মনে পরে যায়। আর বিষণ মিস করতে থাকি আমার স্পন্দনটাকে। সে কথা নাহয় থাক, তখন স্পন্দনের জন্য আমি ছিলাম। এখন তুমি আছো। একসময় হয়ত অন্যকেউ থাকবে! শরীরের প্রতি চাহিদা যাদের তারা কখনো একটা দেহ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারেনা। তাদের এক একদিন এক এক শরীর চাই...!"
স্পর্শিয়ার মেসেজটা পরে নিজের চিন্তাশক্তি থেকে যেন সমস্ত কন্ট্রোল হারালাম। মাথা কাজ করা অফ করে দিলো। রুমের দরজার কাছে পৌঁছেও রুমে ঢুকলাম না। সিড়ি বেয়ে চলে এলাম ছাদে। হাটু ভেঙে ছাদের ফ্লোরে বসে কান্নায় ফেটে পড়লাম। আমার বর, আমার আগে অন্য মেয়ের সাথে মিলিত হয়েছে। শারিরীক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছে সেটা আমার সহ্যের বাহিরে। পারছিলাম না কোন ভাবে ঠিক থাকতে। অতিরিক্ত কান্নার ফলে কপালের রগগুলো ফুলে ফুলে উঠছিলো। মনে হচ্ছিল এই বুঝি মাথার সব রগ ছিড়ে যাবে। বৃষ্টিতে ভিজে কাকভেজা হয়ে গেলাম। বর্তমানে নিজেকে একটা বরফের বড় খন্ড ছাড়া আর কিছু মনে হচ্ছিল না। শরীরের সমস্ত শক্তি হারিয়ে লুটিয়ে পরলাম ছাদের ফ্লোরে। তবুও কান্না থামেনি। বৃষ্টির পানি ঝড়া থেমে গেলেও আমার দুচোখের নোনাজল বাধ মানতে চাইনি। স্পন্দের এই কোন দিক সম্পর্কে আজ স্পর্শিয়া জানিয়ে দিল আমাকে!
.
তখনই মন আমাকে আমার চিন্তাশক্তি ফিরিয়ে দিল। মস্তিষ্কে অনেকগুলো কথা খেলে গেলো। নিজেকে সামলে নিয়ে অভ্যন্তরীণ শক্তি জোগাড় করে উঠে বসলাম। পলিথিনে পেচানো ফোনটা বের করে স্পর্শিয়াকে মেসেজ করলাম,
"স্পন্দন থেকে আমি মুক্ত হতে চাই। আমাদের ডিভোর্সের ব্যাপারে আপনার হ্যাল্প প্রয়োজন। Can we meet?"
মেসেজ সেন্ড করে স্পর্শিয়ার রিপ্লাইর অপেক্ষা করতে লাগলাম। মিনিট দুয়েকের মধ্যে রিপ্লে আসলো, "Oh, sure. Why not! We can...."
মৃদু হেসে ফোনটা আবার পলিথিনে পেচিয়ে নিলাম। উঠার চেষ্টা করতেই স্পন্দন ছাদে এলেন। আর চেচিয়ে উঠে বললেন,
----Oh God! What happened Arushi? তোমার এই অবস্থা কেনো! এভাবে কেনো পড়ে আছো তুমি! তোমার কি শরীর খারাপ করেছে? তাহলে রুমে না গিয়ে ছাদে কি তোমার.....!!!!!
বলতে বলতে আমাকে ধরে উঠালেন। আমি স্পন্দনের গলা জড়িয়ে ধরে বললাম,
----বাব্বাহ এত্তো প্রশ্ন একসাথে! বৃষ্টিতে ভেজার শখ হয়েছিল গো হাজবেন্ড। আজ আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না তাই। চলে এলাম ভিজতে।
বলে দুস্টু হাসি হেসে স্পন্দনের নাক টেনে দিলাম।
স্পন্দন আমার ভেজা শরীরের মোহ কোনভাবে কাটিয়ে আমাকে কোলে তুলে নিলেন। আর পে-পু করে যাচ্ছেন জড় ভালো হতে না হতেই কেনো বৃষ্টিতে ভিজলাম।
আর আমি সব এক কান দিয়ে শুনে, অন্য কান দিয়ে বের করে দিলাম....

.
.
সকালে স্পন্দন রেডি হচ্ছেন। আমি আগেই রেডি যেহেতু আমার সকাল স্পন্দের আগে হয়।
স্পন্দনের শার্টের কলার ঠিক করে দিতে দিতে উনাকে বললাম "এখন আমরা বাসায় যাচ্ছিনা।" স্পন্দন প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। আমি খানিক হেসে স্পন্দনকে স্পর্শিয়ার গতরাতের মেসেজ দেখিয়ে বললাম,
----একে কি আপনি জব্দ করবেন নাকি আমাকেই করতে হবে..?
স্পন্দন কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে, কিছু একটা চিন্তা করে বললেন,
----আমরা দুজনে করব।
প্রতিউত্তরে আমি যাস্ট একটা হাসি দিলাম।
.
.
অনেক্ষন হল একটা প্রাকৃতিক ও কোলাহল মুক্ত পরিবেশে অপেক্ষা করে যাচ্ছি স্পর্শিয়ার আগমনের। এমন একটা জায়গা নির্বাচন করেছি কারন আজ এখানে বড় রকমের একটা সিন তৈরি হতে যাচ্ছে.....
মিনিট বিশেক পর আগমন ঘটলো কালপ্রিট মেডামের । আমি, স্পন্দন, অরিন্দম ভাইয়া সহ উনার ৩-৪ জন ফ্রেন্ড আড়াল থেকে তা দেখলাম। আমরা স্পন্দনকে উনার পরবর্তী কাজের জন্য অল দা বেস্ট জানিয়ে বিদায় দিলাম । স্পর্শিয়ার নিকট স্পন্দন যাওয়া মাত্রই স্পর্শিয়া বিচলিত হয়ে গেলেন। মুখ ঢেকে স্পন্দনকে না দেখার ভান করে চলে যেতে লাগলেন। স্পন্দন তখন উনার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে উনাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
----আরে আরে কই যাচ্ছিস। সরি, কই যাও তুমি। বলোনা মাই ডিয়ার এক্স প্রেমিকা......! আমার আর আরুশীর ডিভোর্স ফাইনাল না করিয়েই চলে যাচ্ছ কেনো বাবু...।
স্পর্শিয়া থতমত খেয়ে, খানিক আমতাআমতা করে বললেন,
----মানে! কি বলছিস এসব। আর আমি কেনো তোদের ডিভোর্স করাতে যাব!
----তাইনা? গতকাল রাতে করা তোর এসএমএস আরুশি নয় আমি সিন করেছিলাম। আর রিপ্লাইটাও আমিই করেছি। এসব কেনো করছিস তুই। কিসের জন্য! সমস্যা কি তোর?
----ওহ জেনেই গিয়েছিস তাহলে । তো জানু তুমি জানোনা কেনো করছি এসব?
----হুম জানি তো। হিংসায় করছিস সব। আরুশির সাথে জ্বলিস তুই তাই এমন করছিস।
স্পর্শিয়া স্পন্দনের শার্টের কলার ধরে স্পন্দনের কাছাকাছি গিয়ে বললেন,
----হ্যাঁ ঠিক জানো তুমি। আরো একটু জানো তাহলে, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি তাই এমনটা করছি। তোমাকে ছাড়া আমি নিজেকে ভাবতে পারিনা বলে এসব করতে বাধ্য হয়েছি। তোমাকে অন্য কোনো মেয়ের হতে দেখতে পারিনি বলেই করেছি, ফিউচারে আরো করব।
প্লিজ স্পন্দন প্লিজ ফিরে আসো। বিশ্বাস করো গতবারের মত ভুল আমি আর কখনো করবনা। আমি বুঝে গেছি আমার শুধু তোমাকেই চাই।
----ইম্পসিবল।
----কোনকিছু ইম্পসিবল না স্পন্দন। প্লিজ কাম ব্যাক টু মি। দরকার হলে আমি আরুশি....আরুশিকে খুন করতে রাজি আছি। তুই চিন্তা করিস না ওকে নিয়ে। তারপরও ফিরে আয়।
----কক্ষনো না। যে মেয়ে আমার চরিত্র নিয়ে বাজে কথা বানিয়ে বলতে পারে তাকে কখনো আমি ভালোবাসতে পারিনা। আই যাস্ট হেট ইউ রিমেম্ভার দেট.....
স্পর্শিয়া স্পন্দনের দুগালে হাত রেখে,
----দেখো স্পন্দন এভাবে বলোনা। আমি মানছি আমি তোমাকে আমাকে নিয়ে, তোমার চরিত্র নিয়ে আরুশির কাছে অনেক মিথ্যা বলেছি। কিন্তু তা শুধুই তোমাকে পাওয়ার লোভে। আমাদের শারিরীক সম্পর্ক হয়েছে বলে আরুশিকে মেন্টালি ভেঙে দিতে চেয়েছি তাও তোমাকে পাওয়ার নেশায়। প্লিজ স্পন্দন প্লিজ, ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড মাই ফিলিংস ফর ইউ।
----কি ফিলিংস বুঝব? কি ফিলিংস বুঝবো হে! চার বছর আগে জোর করে রিলেশন করেছিস আমার সাথে। তারপর অন্য ছেলেদের সাথে সুযোগ পেলেই অশ্লীলতায় জড়িয়েছিস। এমনিতে কোন খবর থাকত না রিলেশনের কিন্তু আমি রিলেশন ব্রেক করতে চাইলে ব্ল্যাকমেইল করতিস, সুইসাইড এটেম্পট করার নাটক করতিস, ভালোবাসি ভালোবাসি করে মাথা খাইতিস। পরে রিলেশনের ৬ মাসের মাথায় আবার নিজে থেকেই ব্রেক আপ করলি। যাক এবার হাফ ছেড়ে বেঁচেছি মনে করেও তোর হাত থেকে সম্পূর্ণ রেহাই হলোনা। যেখানে তোর চেহারা দেখতে চাইনা, সেখানে জোর করে ফ্রেন্ডশিপ রাখালি। তোর মায়ের একমাত্র অবলম্বন তুই মানবিক ভাবে এসব বিচার করে তোর মত একটা নিকৃষ্ট মেয়ের সাথে আমার বন্ধুত্ব নামক সুন্দর একটা সম্পর্ক রাখতে হয়েছে পাছে কখন কি করে ফেলিস। কারন মেন্টালি সিক না তুই! তোর দ্বারা যে নিজের ক্ষতিটাও সম্ভব! তাতে আমার কিছু যায় আসত না, শুধু তোর মার কথা ভেবে তোকে সেফ রাখার ট্রাই করতে হতো আমাকে.....
----হ্যাঁ আমি মেন্টালি সিক। পাগল আমি। ঠিক বলেছো তুমি। কিন্তু তোমার ব্যাপারে আমি অবসেসড। তোমার প্রতি আমার সব ফিলিংস ট্রু ইনডিড। প্লিজ স্পন্দন প্লিজ আগের সবকিছুর জন্য ক্ষমা কর তুই আমাকে। প্লিজ জান তখন ছোট ছিলাম। কে আমার ভালোবাসা আর কে আমার প্রয়োজন বুঝতে পারিনাই। কিন্তু যখন তোর বন্ধুত্বটা এতো সুন্দর লাগতে লাগলো আমার মনে হল, না জানি তোর ভালোবাসা, তোর স্পর্শ কত সুন্দর। তুই আমাকে ইগনোর করতি বলে তোকে জব্দ করার জন্য আমি তোকে বাধ্য করি আমার সাথে রিলেশন করতে। কিন্তু বিশ্বাস কর স্পন্দন এখন আমি বুঝতে পারি, তোকে আমি কতটা লাভ করি। আরুশি বাচ্চা মেয়ে আমি তাকে যেভাবে যা বলেছি সেদিন বিশ্বাস করে যেতে পারত। কিন্তু করেনি। স্পন্দন শোন, তুই আর আমি রিলেশন কেন যাই করিনা কেনো ওই বোকা মেয়ে কিছু টের পাবেনা। স্পন্দন বাবু আসোনা আসোনা আমার কাছে ফিরে। আমি তোমাকে সবদিক দিয়ে সন্তুষ্ট রাখব, ভালোবাসা আদর সবদিক দিয়ে। আর যদি কখনো আরুশি বাধা হয়ে দাঁড়ায়, আমি...আমি নিজে হাতে ওর মৃত্যু নিশ্চিত করবো।
স্পন্দন তুমি বুঝতেছো তো আমি কি বলতে চাচ্ছি। তুমি আরুশিকে নিয়ে সম্পূর্ণ সুখী না আমি জানি। হাহ, ঔ বাচ্চা মেয়ে আর কি জানবে কিভাবে আদর করে ভালোবাসার মানুষকে খুশি করতে হয়, সন্তুষ্ট করতে হয়।
.
স্পর্শিয়া পুরা পাগলামির মত করতে শুরু করলো স্পন্দনকে পেয়ে, এমনকি নিজের সব গোপন কথা গুলোও বলে দিয়ে নিজেই নিজের বিপদকে আমন্ত্রণ করে দিল। যৌনতা নিয়ে পর্যন্ত স্পন্দন কে বশ করতে চাইল। স্পর্শিয়ার এমন একটা দিক থাকতে পারে আমি ভাবতেও পারিনা আর আজ স্বচক্ষে দেখলাম।
স্পন্দন রাগে লাল হয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে যেকোন সময় স্পর্শিয়ার উপর ফেটে পড়বেন। কিন্তু সব কথা স্বীকার করানোর জন্য এখনও নিশ্চুপ। জানিনা, এরপর স্পর্শিয়ার কি হতে চলেছে.......
পর্ব : ২৭+২৮(শেষ)
লেখা- #Rafiya_Riddhi
.
স্পর্শিয়ার কথা শেষ করা মাত্রই স্পন্দন স্পর্শিয়ার গালে কষে তিনটা চড় মারলেন। অন্যকেউ হলো হয়ত ১টা দিত। যেহেতু আমার বর রাগী তাই ২টা এক্সট্রা দিয়েছে
। উনাকে আটকাতে আমাদের আড়াল থেকে বের হয়ে আসতে হলো। কিন্তু অরিন্দম ভাইয়া, আমি, উনার বাকি ফ্রেন্ডরা মিলেও আমরা উনাকে শান্ত করতে পারছিনা। উনি বারবার ক্ষেপে স্পর্শিয়ার দিকে মারতে উদ্যত হচ্ছেন আর বলছেন,

----তোর সাহস কি করে হয় আমার আরু কে মারার কথা মুখে আনার। এতক্ষণ কিছু বলিনাই। অনেক্ষণ রাগটা কন্ট্রোল করে ছিলাম তোর মুখে সব স্বীকার করাতে হবে সেই বাধ্যবাধকতায়। এখন আর না। নোংরা মেয়ে একটা..........*****..........
এর মধ্যে ঘটনাস্থলে একজন মহিলা উপস্থিত হলেন আর স্পর্শিয়া আপুকে মেরে বকাঝকা করতে লাগলেন। আমি কোনভাবে স্পন্দনকে শান্ত করলাম।
----আন্টি এই দেখলেন তো আপনার মেয়ের কুকর্ম। আমরা সব ভিডিও ও করেছি। এখন আপনিই বলেন একে পুলিশের কাছে দেয়ার সিদ্ধান্ত কি আমাদের ভুল....! স্পর্শিয়া আরুশির জন্য কতটা হার্মফুল হয়ে উঠেছে দেখেছেন। একে ফ্রিডমলি কি করে ঘুরতে দেয়া যায়। এই অরিন্দম পুলিশ কোথায় পৌঁছেছে.....কল কর। (স্পন্দন)
----প্লিজ, শান্ত হোন আপনি।
----কি শান্ত হব বলছো? দেখছো না ও তোমাকে নিয়ে কি বলছে! তাছাড়া এর আগেও আমার থেকে তোমাকে আলাদা করতে চেয়েছে এই মেয়ে।
----আমি এসব না করে, একেবারে এই আরুশিটাকে মেরে ফেলতাম সেটাই ভালো ছিলো। I will kill you, damn arushi....
বলছে আর আমার দিকে তেড়েতেড়ে আসছে স্পর্শিয়া। স্পন্দন আমার সামনে দিয়ে দাঁড়িয়ে আমাকে প্রটেক্ট করলেন আর স্পর্শিয়াকে আবার আরেকটা চড় মারলেন। এতে সে পুরোপুরি চুপ হয়ে গেলেও চোখেমুখ ভরা হিংস্রতা।
উপস্থিত মহিলাটি স্পর্শিয়ার এই অন্যায়ের জন্য স্পন্দন ও আমার কাছে বারবার ক্ষমা চাইতে লাগলেন। তিনি আকুতি মিনতি করে স্পন্দন কে বললেন,
----প্লিজ, বাবা। আমাকে যদি একবারের জন্য মন থেকে আন্টি বলে ডেকে থাকো, তাহলে ওকে তুমি পুলিশে দিওনা। আমার মেয়েটাকে নিয়ে আমি প্রবাসে চলে যাব কথা দিচ্ছি তোমাদের। ও আর কোনো ক্ষতি করতে পারবেনা তোমাদের। ওকে তোমরা পুলিশে দিওনা বাবা। ও যেমনই হোক আমার একটা মাত্র সন্তান। তোমাদের আঙ্কেলও বেঁচে নেই। একা মানুষ আমি কাকে নিয়ে বাঁচব। ওকে নিয়ে তো আমি চলেই যাব আর তারপরও যদি সে কোনভাবে তোমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করে আমি নিজে ওকে পুলিশের কাছে সমর্পন করব।
বুঝতে পারলাম ততক্ষণে যে মহিলাটি স্পর্শিয়ার মা।
----ক্ষতি করে ফেলার পর পুলিশে দিয়ে কি হবে আন্টি! আমি আপনার কথা ভেবে অনেক ভুল করে ফেলেছি এর আগে। আর কোনো ভুল করতে চাইনা। আরুশির লাইফ নিয়ে কোনো রিস্ক নিবনা আমি.....সরি!
----প্লিজ বাবা আরুশির কিচ্ছু হবেনা। আমি হতে দিবনা। আমি সব কাগজপত্র ঠিক হওয়া মাত্রই ওকে নিয়ে বিদেশে পারি দিব।
----নো ওয়ে....স্পর্শিয়াকে শাস্তি পেতেই হবে।
স্পন্দন স্পর্শিয়ার মার কথা শুনতে নারাজ। তখন আমি উনাকে রিকোয়েস্ট করলাম যাতে স্পর্শিয়াকে পুলিশে না দেন।
----স্পন্দন, আপনি এতদিন যেহেতু আন্টির কথা এতো ভেবেছেন আজ নাহয় আরেকবার ভাবুন। আন্টি তো বলছে উনারা দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। (আমি)
----কিন্তু....
----প্লিজ, এই ব্যাপারটা এখানেই শেষ করেন। আর ভালো লাগছেনা এসব।
.
----ওকে আন্টি, এই শেষ সুযোগ আপনাদের। (স্পন্দন)
----হাহা অনেক বড় ভুল করলে আজ তুমি স্পন্দন। এবার নিজের আরুশিকে তুমি কিভাবে বাঁচাবে! আর মেসেজিং গেইম খেলব না বরং যা করার এবার ডিরেক্টই করব। (স্পর্শিয়া মনে মনে)
.
.
.
স্পর্শিয়াকে নিয়ে উনার মা চলে গেলেন। আর স্পন্দন আমার হাত শক্ত করে ধরে বললেন,
----তোমাকে আমার থেকে কেউ আলাদা করতে পারবেনা।
আমি মৃদু হাসলাম।
----ওওহ হিরো, আমরা ও আছি এখানে; রিপাপু (স্পন্দনের বান্ধুবী) বলে উঠলেন আর বাকিরা সবাই হাসাহাসিতে মেতে উঠল। আমি লজ্জা পেয়ে চুপ করে রইলাম।
.
হ্যাঁ কাল স্পর্শিয়ার মেসেজটা পাওয়ার পর খুব ভেঙে পরেছিলাম। কোন মেয়ের দ্বারা কখনো এটা ইজিলি মেনে নেয়া সম্ভব না যে তার স্বামী অথবা ভালোবাসার মানুষটি অন্যকারো সাথে ফিজিক্যালি ইনভল্ব ছিল। প্রথমে সেই কথার সত্যতা বিবেচনা না করেই ভেঙে পরাটা আমার সহজ সরল মনের দুর্বলতা ছিল। কিন্তু যখনি স্পর্শিয়ার মেসেজের লাস্ট কথাটা মাথায় আসল যে "স্পন্দনের শরীরের প্রতি চাহিদা, আর উনি তাই একজনের শরীর পেয়ে কখনো সন্তুষ্ট হতে পারেন না" তখনই মনে হলো, লাইক সিরিয়াসলি! যে নিজের বিয়ে করা বউটাকেই অনেকটা সময় দিয়ে তারপর আপন করে নিয়েছেন। যে শুধুমাত্র আমার এইচএসসি পরীক্ষা বলে ৪ মাস নিজের থেকে আমাকে দূরে রেখেছেন! যেখানে আমি নিজেও উনাকে ছেড়ে কুমিল্লা এসে থাকতে চাচ্ছিলাম না! বিয়ের প্রথম দিনগুলোতেই যে বউকে ছাড়া থেকেছে, শরীরের প্রতি চাহিদা থাকলে কি এমনটা করতে পারতেন কখনো! ইম্পসিবল.....
ব্যস তখনই বুঝে যাই স্পর্শিয়ার মোটিভ। আর স্পন্দন কে মেসেজ দেখানোর পর উনি & আমরা সবাই মিলে সবকিছু প্ল্যান করি। কারন আমরা জানতাম স্পর্শিয়া স্পন্দনকে সামনে পেলে নিজের উপর কন্ট্রোল হারিয়ে অনেককিছুই বলে দিতে পারে। কারন হিংসা, বিদ্বেষ, রাগ মানুষকে সম্পূর্ণ ভাবে পতনের দিকে নিয়ে যায়।
কাজটা ফুলফিল হবে কিনা সেই আশঙ্কায় থাকলেও এখন মনে হচ্ছে আজ আসলেই আল্লাহ সহায় ছিলেন আমাদের উপর।
.
.
ফ্ল্যাশব্যাক থেকে বের হয়ে, একটা প্রশ্ন করলাম স্পন্দনকে।
----আচ্ছা উনি এমন ভয়ানক জেনেও আপনি কিভাবে উনার সাথে রিলেশনে গেলেন! (আমি)
----আর বলোনা, আমি কখনো স্পর্শিয়ার সাথে রিলেশন নিয়ে রাজি ছিলাম না। স্পর্শিয়া যখন আমাকে প্রপোজ করে তখন ওর মনমানসিকতা সস্পর্কে আমাদের কোন ধারনাও ছিলনা। তারপরও আমি রাজি ছিলাম না। কিন্তু স্পর্শিয়া তখন সুসাইড করবে, এই করবে সেই করবে বলে হুমকি দিত। একবার হাতও কেটেছিল। তখন ওর মা বারবার নিজের মেয়ের প্রাণ ভিক্ষা চায় আমার কাছে এই সেই বলতে থাকে। আমরা তখন ভার্সিটি ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল দিব সবে। এর সামাধান কি, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না......তারপর.........
তারপর আমি বলছি,
----তারপর আন্টির কান্নাকাটি আর উনার এই পৃথিবীতে স্পর্শিয়া ছাড়া কেউ নেই শুনে আমরা মানে স্পন্দনের ফ্রেন্ডরা সবাই খুবই ইমোশনাল হয়ে পরি। তাছাড়া তখনো আমাদের মনে হয়েছিল সে স্পন্দনকে মন থেকে ভালোবাসে দেখেই এমন করছে। আমরা স্পন্দনকে অনেক জোর করে স্পর্শিয়ার প্রোপজাল এক্সেপ্ট করাই। (রিচি)
----আচ্ছা ভাবি, আপনাদের বিয়ের পর আমরা যেদিন ফার্স্ট আপনাকে দেখতে যাই তখন তো স্পর্শিয়াও গিয়েছিল। সেদিন প্রথমবার দেখেছিলেন ওরে। আপনাদের হাল্কা কথাও হয়েছিল। তখন কি তাকে দেখে আপনার একটুও মনে হয়েছে মনের দিক থেকে সে এতটা খারাপ? এতো জঘন্য সে! (অরিন্দম)
----নাহ, তো। উল্টো উনাকে আমার খুব সুশীল মনে হয়েছিল।
----এক্সেক্টলি। আমাদেরও তাই মনে হয় আর তাই স্পন্দন কে ফোর্স করি রিলেশনে যেতে। ভয়ানক ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে সে আর তার মা আমাদের। আর আ.....ম.....রা.......স্পন্দনকে।
(অরিন্দম ভাইয়া)

----আর আরুশি তুমি সেদিন বলেছিলে না। আমি স্পর্শিয়াকে ঘৃণা করার পরও কেনো ইন্তুর বাসা থেকে জলদি এসে ওর বাসায় চলে গেলাম। কারন সেদিন ভার্সিটিতে স্পর্শিয়া কি করেছিলো তা তো নিশ্চয়ই মনে আছে তোমার! সেজন্যই নেক্সট টাইম যাতে এমন কোন সিন ক্রিয়েট না করে তাই ওকে হুশিয়ার করে আসি গিয়ে। That's all.....
আর তোমাকে স্পর্শিয়া যে পিক সেন্ড করেছিল আমাদের। লাইক হ্যাপি কাপল পিক ওই পিক গুলো রিয়েলই ছিল। রিলেশনের একদুম প্রথম দিকে তোলা। রিলেশন যেহেতু হয়েই গিয়েছিলো তাই একবার চেষ্টা করেছিলাম নরমাল কাপলদের মত বিহেভ করতে, ওকে মেনে নিতে তখনকারই দু তিনটে ছবি। (স্পন্দন)
----আচ্ছা বুঝলাম, সব ক্লিয়ার হলো। আমরা প্লিজ এবার এই ব্যাপারে কথা বলা অফ করি। (আমি)
----হুমম একদুম ঠিক। বাদ দেও তো সবাই। এতো সুন্দর একটা জায়গায় এসেছি চল ঘুরি কিছুক্ষণ। বেহুদা ব্যক্তিকে নিয়ে আর আলাপচারীতা করে লাভ নাই। (তন্নী আপু)
----ইউ গাইজ আর টোটালি রাইট। ওকে চল তাহলে ঘুরি। আর আজ আমার পক্ষ থেকে তোদের জন্য ট্রিটও থাকবে। (স্পন্দন)
----Whoa! স্পর্শিয়া যেতে যেতে খাওয়ার সুযোগ করে দিল। Thanks to sporshiya! (অরিন্দম)
----Hey, dude! Nothing like that. এই মাসের ৩১ তারিখ আমার আর আরুশির আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হতে যাচ্ছে। That's why!
----Ohh wow! Really great news...Congratulations to both of u! (উপস্থিত সবাই)
----Thanks yaars.....(স্পন্দন)
----Thank you!
(আমি)

.
.
চলবে.....
ঘড়িতে রাত ১১টা বাজে। পুরো বাড়িতে আমি আর সীমা ছাড়া কেউ নেই। সীমা তার টিভি সিরিয়াল নিয়ে ব্যস্ত। আর আমি আমার বরের অপেক্ষায়। ১০টা থেকে রেডি হয়ে বসে আছি। জানিনা কোথায় উনি বলছেন রেডি থাকতে। কোথায় নাকি নিয়ে যাবেন। ১ ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করছি রেডি হয়ে অথচ উনারই কোনো হদিস নেই আসার।
আর ভাবতে ভাবতেই দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি স্পন্দন দাঁড়িয়ে আছেন আর অপলক দৃষ্টি দিয়ে আমার দিয়ে আছেন আমার দিকে। খানিক লজ্জা পেলেও চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
স্পন্দন আমার কাছে এসে কপালে একটা চুমু খেয়ে বললেন জানতাম এই হোয়াইট গ্রাউনটায় তোমাকে সুন্দর লাগবে। কিন্তু এতটা সুন্দর লাগবে ভাবিনি। আমার পরী। বলে আমার কপালে চুমু একে দিলেন।
এই প্রথম স্পন্দনের বাইকে উঠেছি। প্রচন্ড ভয় আমার বাইকে। তাই স্পন্দনকে খুব শক্ত করে ধরে আছি। উনি অবশ্য গাড়ি নিয়ে বের হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমার অনেক দিনের বাসনা। বরের সাথে নির্জন রাত্রিতে অথবা খুব ভোরে শীতের সকালে বাইকে ঘুরবো।
আর তাই স্পন্দন বাধ্য হয়েই বাইক নিয়ে বের হলেন। খুব ভয় হলেও এমন ভরা পূর্ণিমার রাতে সৌন্দর্য আমাকে বারবার প্রকৃতি আর স্পন্দনের প্রেমে পরিয়ে দিচ্ছে। কেননা চাঁদের আলোয় স্পন্দনকে অন্যরকম সুন্দর লাগছে। হঠাৎ স্পন্দন বলে উঠলেন।
এত ভয় পাও যেহেতু বাইকে কেনো চড়লা। --- ক... ক... ক... এ...এ ভয় পায়। আমি মোটেও ভয় পাচ্ছিনা।
হাহা তা তো বুঝতেছি। যেভাবে আমাকে ধরে আছো। কত সুন্দর করে রেডি হয়েছিলাম। আমার সব সাজ নষ্ট করে দিতেছো।
তো কি ছেড়ে বুঝব আপনাকে।
আরে না না। কোট নষ্ট হলে আবার কিনতে পারব। কিন্তু বউ কিছু হলে পাবো কই। আমাকে ছাড়বা আর বাইক থেকে উধাও হয়ে যাবে। তারচেয়ে বরং আরো শক্ত করে ধরো আমাকে। আমার কিন্তু এইভাবে দারুন লাগছে।
আচ্ছা কই যাচ্ছে আমরা এখন তো বলেন।
তোমাকে খুন করতে নিয়ে যাচ্ছি। আপনার হাতে তো আমি কবেই খুন হয়েছি। আজ না হয় আমাদের বিয়ের আগে আরেকবার খুন হবে।
উনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন জানিনা। প্রায় ১ ঘণ্টা বাইকেকে চড়ার পর গন্তব্যস্থলে পৌঁছিলাম আমরা। বাইক থেকে নেমেই উনি আমার চোখে রুমাল বেঁধে দিলেন।
জানেন স্পন্দন আজ নিজেকে ফিল্মের নায়িকার চেয়ে কম কিছু মনে হচ্ছেনা। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য।
এত জলদি ধন্যবাদ দিলে। সারপ্রাইজ তো আরো অনেক বাকি।
আসো ধীরে ধীরে নিচে নামো। আর আমার হাত শক্ত করে ধরে রেখো।
ওকে ডিয়ার বর।
স্পন্দন আমাকে সেই স্থান থেকে খানিকটা নিচে নামিয়ে নিয়ে আসলেন। কিছু কদম হাঁটার পর আমার চোখ থেকে রুমাল খুলে দিলেন। চোখ খোলার পর যা দেখলাম, সাথে সাথে চোখের পানি চলে আসলো। এত সুখ, এত সৌন্দর্য উপভোগ করাও কি আমার কপালে ছিল।
একটা বড় মাঠের মতো জায়গা। অনেক বড় মাঠটা। কিছুটা দূরে ছোট ছোট ঘর বাড়ি দেখা যাচ্ছে। সাথে অনেক অনেক গাছপালা সাথে নাম না জানা অনেক ফুল ফোটে আছে। ফুলের গন্ধ চারপাশ রমরমা। সাথে সেই সব ফুলে অসংখ্য প্রজাপতির আনাগোনা। আর এমনিতেই পুরোটা মাঠ খালি হলেও মাঠের মাঝে অনেক বড় একটা তুলা গাছ যেটা কিনা নুয়ে আছে। মাঠের একপাশে নদী। আর উঁচু জায়গাটার একপাশে নিঃসন্দেহে রেলপথ। ভরাট চাঁদটা একদম আমাদের মাথার উপর। এত সুন্দর একটা জায়গা তার উপর স্পন্দন এখানে কিছুটা লাইটিং করছেন। ফুল, নেট দিয়ে দারুন একটা সজ্জা দিয়েছেন। সবচেয়ে সুন্দর লাগছে তুলা গাছটা। আমি দৌড়ে গিয়ে গাছটার নুয়ে যাওয়া স্থানটায় বসলাম। মাঠের কখনো এদিকে তো কখনো অন্য দিকে দৌড়ে যাচ্ছি। জোনাকি পোকা গুলোকে, প্রজাপতি গুলোকে ছোঁয়ার চেষ্টা করছি। একসময় হাপিয়ে ওঠে স্পন্দনের কাছে চলে এলাম। উনাকে জড়িয়ে ধরে বললাম।
আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর উপহার। সবচেয়ে সুন্দর রাত। সো সো সো সো ম্যানি থ্যাংকস।
Pleasure is mine fairy
এখন বসুন এখানে।
মাঠের মাঝখানে রাখা টেবিলটার কাছে নিয়ে গিয়ে চেয়ার টেনে দিয়ে বললেন।
আমি চেয়ারে বসতে বসতে বললাম, ওকে স্যার, এই নিন বসলাম।
এখন আপনি যদি অনুমতি দেন কিছু কথা বলতে চাই আপনাকে ম্যাম। So can l?
Yes for sure sir.
তার আগে তোমার জন্য দু লাইন গাইতে চাই।
বলে সন্ধান গিটার বাজিয়ে সুর তুললেন।
আমার সকল অভিযোগে তুমি
তোমার মিষ্টি হাসিটা কি আমি?
আমার না বলা কথার ভাজে
তোমার গানের কত সুর ভাসে।
তোমায় নিয়ে আমার লেখা গানে
অযথা কত স্বপ্ন বোনা আছে
আমার হাতের আঙুলের ভাজে
তোমাকে নিয়ে কত কাব্য রটে....হে
ভুলিনিতো আমি তোমার মুখের হাসি
আমার গাওয়া গানে তোমাকে ভালোবাসি আসো আবারো কাছে হাতটা ধরে পাশে তোমায় নিয়ে যাব আমার পৃথিবীতে.... এই পৃথিবীতে....
গান গাওয়া শেষ করে স্পন্দন আমার দিকে নিজের হাতটা এগিয়ে দিলেন। আর আমি তো একদম ঘোরের মধ্যে চলে গেছি। শরীরের পশম দাঁড়িয়ে গেছে। কি সুন্দর স্পন্দনের গানের গলা। অথচ আমি কিনা বিয়ের ৬ মাসে আজ এই প্রথম জানলাম সেটা..
আমি স্পন্দনের হাতে হাত রাখলাম। স্পন্দন আমাকে নদীর কাছাকাছি নিয়ে গেলেন। আমার দু হাত নিজের হাতে নিয়ে খালি গলায় আরেকটি গান টান দিলেন। আর এবারও ওনার সুরেলা কন্ঠ আমার সারা শরীরে শিহরন বইয়ে দিয়ে গেলো,
তোমার চোখে দেখলে বন্ধু
আকাশের নীল ভালো লাগে না
তোমার চোখে দেখলে বন্ধু
সাগরের নীল ভালো লাগে না
তোমার মুখের হাসি দেখলে চাঁদ যে আমার ভালো লাগে না,
তোমার দু হাত ধরলে বন্ধু
অন্য ছোঁয়া ভালো লাগে না
তোমার মুখের কথা শুনলে
অন্য সুর যে ভালো লাগে না
তোমার মুখের হাসি দেখলে চাঁদ যে আমার ভালো লাগে না,
তোমার চুলের গন্ধে আমার ফুলের সুবাস ভালো লাগেনা
তোমার বুকে ঠাঁই পেলে স্বর্গে যাবার সাধ জাগে না
তোমার মুখের হাসি দেখলে চাঁদ যে আমার ভালো লাগে না।
গান গাওয়া শেষে স্পন্দন বলতে লাগলেন।
গানের প্রতিটা লাইন যেন তোমাকেই উৎসর্গ করে লেখা হয়েছে এমন মনে হচ্ছে আমার।
আরশি তুমি হয়তো জানো না। কতটা প্রতীক্ষার ফল তুমি আমার। তোমাকে যেদিন প্রথম দেখি তোমার মায়াবী মুখটা দেখে মনে হয়েছিল পবিত্র কিছুর দেখা পেয়েছি আমি। তোমাকে না পেলে জীবনের সার্থকতা হাসিল করতে পারব না। এমনটা মনে হয়ছিল। তুমি এমন একজন যার সাথে রাগলে নিজের কাছে নিজেকে দোষী মনে হয়। আমি মানুষটা তোমাকে ছাড়া, তোমার ভালোবাসা ছাড়া বড়ই নিঃস্ব মনে হয় তখন নিজেকে। আর যখন তুমি সাথে থাকো, পাশে থাকো জীবন সুন্দর মনে হয়। ধন্যবাদ, সব কিছুর উর্ধ্বে গিয়ে আমাকে বিশ্বাস করার জন্য। এত ভালোবাসা দেওয়ার জন্য। তোমার মত একটা পিচ্চি, পুতুল বউ পেয়ে, যে এই কয়দিনে আমাকে এতটা বুঝে তাতে আমি নিজেকে লাকি মনে করি। আমি জানিনা তুমি আমাকে নিয়ে কি ফিল করো। তবে একটা কথা কি জানো। রাগী মানুষ ওয়াদা করে কখনো ওয়াদা ভাঙ্গে না, কথা দিয়ে কখনো কথার খেলাপ করে না। আমি তোমাকে আজ একটা ওয়াদা করছি, তুমি আমাকে সবসময় ভালোবাসো আর না বাসো আমি তোমাকে ভালোবাসা কখনো ছাড়বো না। আর আমারা রাগী মানুষরা যে প্রচন্ড রকম ভালবাসতে পারে তা তুমি দেখছো। সামনে থেকে আরো দেখতে পাবে। আমার দুচোখ বেয়ে পানি পড়ে যাচ্ছে। আজ যে পৃথিবীর সকল সুখ হার মেনে যাবে আমার সুখের কাছে। আমাকে এতটা আবেগাপ্লুত হতে দেখে স্পন্দন আমার চোখ মুছে দিলেন আর বললেন।
কেঁদোনা। জানি এটা তোমার সুখের কান্না। সব মেয়েরাই অতিরিক্ত সুখে কাঁদে। তারপরও কান্নাটা তোমাকে মানায় না। আমার বউ সব সময় মুখে হাসি ফুটিয়ে থাকবে।
আমি কান্না থামিয়ে চোখ মুখ মুছে সাথে সাথে মুখে হাসি ফুটালাম। স্পন্দন আমার সামনে এক হাঁটু গেড়ে বসে পড়লেন। আর দুই হাত দু পাশে ছড়িয়ে দিয়ে বললেন।
এখন যেটা বলব সেটা তোমাকে এই পুরো গল্পে একবারও বলা হয়নি। দ্যাট থ্রী ম্যাজিক্যাল ওয়ার্ডস।
বলে উনি আংগুল উঁচিয়ে আকাশের দিকে ইশারা করলেন। আমি সেখানে তাকাতে দেখলাম নদীর ওপারের আকাশে কতগুলো বর্ণমালা মিলে লেখা উঠেছে,
l LOVE YOU, ARU!
এই লেখা পড়ে আমি সাথে সাথে স্পন্দনের দিকে তাকালাম। স্পন্দন বলে উঠলেন।
হ্যাঁ ভালোবাসি তোমাকে।
I love you. l love you a lot...!!
আমি স্পন্দন কে কি বলব বুঝতে পারছিনা। আসলে এমন মুহূর্তে কিছু বলা যায় না। শুধু অনুভব করা যায়। বরাবরই খুব আবেগপ্রবণ আমি। তাই স্পন্দনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম আর বললাম।
আগে বুঝিনি প্রিয় মানুষটার মুখে এই তিনটে ওয়ার্ড এত তৃপ্তির, এত অমৃত সুধা আছে এতে! আমিও আপনাকে ভালোবাসি। আপনার সবকিছু কে ভালবাসি। আপনার রাগটাকে অনেক ভালোবাসি। l love u too, spondon!
স্পন্দন বুক থেকে আমার মুখটা তুলে কপালে চুমু খেলেন তারপর আবার আমাকে নিজের বাহুডোরে নিয়ে নিলেন। আমি স্পন্দনকে জড়িয়ে ধরে শান্তি কুড়িয়ে নিয়েছিলাম। তখন স্পন্দন আমার কানের কাছে নিজের মুখটা লাগালেন। আমার সুড়সুড়ি পেলে বললাম।
আহা স্পন্দন এখানে এসব না। এখানে আর এখনই এসব।
Because it's 12'o clock' HAPPY BIRTHDAY SWEETHEART' Many many happy returns of the day. আজ আমার জন্মদিন অথচ মনেই ছিলনা আমার। অবশ্য মনে থাকবেই কিভাবে এতদিন তাে স্পর্শিয়াই মাথায় ছিল। আমি বিস্মিত হয়ে স্পন্দনের বুক থেকে মুখ তুলে হা করে উনার দিকে তাকালাম। উনি এই ফাকে আমার ঠোঁটে ছােট্ট একটা চুমু একে দিলেন। যতক্ষণে মাথায় ঢুকলাে, ততক্ষণে উনার চুমু খাওয়া শেষ। আমার জন্মদিন উদযাপনের পর, মােমবাতিতে ফু দেয়া , কেক কাটা, একজন আরেকজনকে খাইয়ে দেয়ার পর আমরা সেই স্থান ত্যাগ করলাম। স্পন্দন আর এখানে থাকা সেফ নয়, চলাে অনেক রাত হয়েছে । তােমার গিফট আর লেইট নাইট পার্টি সব বাসায় গেলে পাবা। অরিন্দম ওর সব গ্যাঙ ( বন্ধুবান্ধব ) নিয়ে আশেপাশে আমাদের পাহারা দিচ্ছে। আমি তাে একের পর এক উনার কথা শুনে অবাই হচ্ছি কি বলছেন এসব। উনারা এর সব জানে! তাে কি মেম! ওই যে ৷ love u লিখাটা উঠল আকাশে সেটা কি এমনি এমনি উঠেছে। হেল্প তাে লাগে। এই নাহহহ ! তাে উনাদের রাজি করলেন কি করে।শুনাে আমরা ছেলেরা বন্ধু বান্ধবের জন্য অনেক কিছুই করে থাকি রাজি করা লাগেনা। শুধু রিটার্ন গিফট দেয়া লাগে আরকি।
– তাে সেই গিফট টা কি শুনি !
ইয়ে মানে, তাদের বিয়ের পর আমাদেরকে ও মাঝে মাঝে ডেকোরেটর আর দারােয়ানগিরি করা লাগবে আরকি! উনার কথা শুনে আমি পেট ধরে হাসতে লাগলাম। হাসি আর থামছেনা। এভাবে কথা বলতে বলতে আমরা বাইকের কাছে চলে এলাম। স্পন্দন বাইক স্টার্ট দিলেন। বাসায় মা বাবা কেউ নেই।সারারাত ভালােই জন্মদিন পালন হল। এর জন্য স্পন্দন অবশ্যই অনুমতি নিয়েছিলেন। অনেক গুলাে গিফটও পেলাম। মেসেজ করে অথৈ , প্রতীক ভাইয়া , ইন্তিহা আপু সহ অনেকেই ১২টায় উইশ জানায়। এখন মনে হচ্ছে। আসলেই জীবনটা কত রঙীন। মানুষের ভালােবাসাগুলােই তাে যথেষ্ট একটা জীবনে রঙ এনে দেয়ার জন্য। চারদিন পর আজ আমরা সবাই কুমিল্লা যাচ্ছি ৯ দিন পর আমাদের বিয়ে চাচা, জেঠুরা বিয়ের অনেকটাই প্রস্তুতি এগিয়ে রেখেছেন। আজ স্পন্দন থেকে কিছু সময়ের জন্য আলাদা হতে হবে ভালােও লাগছে এই বিরহ , আবার লাগছেও না। আমার অবস্থা বুঝতে পেরে স্পন্দন আমাকে অনেক বুঝলেন যেন মন খারাপ না করি আর। বিয়ের প্রতিটা মােমেন্ট এনজয় করি। সাথে অনেক অনেক ভালােবাসার পরশ দিয়ে মনটাকে প্রফুল্লিত করে দিলেন। পাক্কা ৬ ঘন্টা জার্নির পর আমরা সবাই কুমিল্লা , স্পন্দনের দেশের বাড়িতে পৌছালাম মা, বাবা সহ সবার থেকে বিদায় নেয়ার পর স্পন্দন আমাকে আব্বুর বাসায় দিয়ে আসার জন্য আমরা রওনা হলাম। সারা রাস্তায় কেউ কোনাে কথা বললাম না। ৪৫ মিনিট সময় লাগলাে পৌঁছুতে গাড়ি থেকে নামার পর, আপনি ভিতরে আসবেন তাে ! নাহ , আজ আর আসব না। আম্মু আব্বুর সবার সাথে দেখা করবেন না ! একেবারে তােমাকে নিতে আসব। এখন আর আসব না।ওহহ ! আচ্ছা আরুশি তুমি কি আমার একটা কথাও শুনবেনা আর ! কি কথা শুনলাম না আবার এই যে বলছি মন খারাপ করবা না। তারপরও এভাবেই আছাে। প্লিজ একটু তাে হাসাে। আমি তাে চলে যাব এখন। আমি মুখে হাসি ফোটালাম।স্পন্দন বললেন, প্রমিস করাে আর মুখ গােমড়া করে রাখবেনা হুম প্রমিস। স্পন্দন আমার কপালে চুমু খেয়ে বললেন, মনে থাকে যেনাে, আমি স্পন্দনের দুহাত ধরলাম। তারপর বললাম , হুম , থাকবে মনে। আমার আরও কিছু বলার ছিল আপনাকে ! বলাে নাহ তােমার কথাই তাে শুনতে চায় সারাক্ষণ এই কান দুটো। আমি হাল্কা কেশে ভাব নিয়ে, মুখে মিষ্টি করে একটা হাসি ফুটানাের চেষ্টা করে স্পন্দনকে বললাম, ” ম্পন্দন !
আমি ভালােবাসি আপনাকে। ভালােলাগে আপনাকে নিয়ে কল্পনার রাজ্যে উড়ে বেড়াতে।আপনাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে ! ভালােলাগে নিজের লাজুক চেহারার সামনে । আপনার মুগ্ধদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা ! ভালােলাগে আপনার হাতে আমার হাত। ভালােলাগে আমার হাতে পড়া চুড়ি নিয়ে আপনার খেলা করা ! আপনাকে নিয়ে জোৎস্না বিলাসের স্বপ্ন দেখি, আপনার সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে চাই। আপনার কাঁধ মাথা রেখে পূর্নিমা রাতের ভরাট চাঁদটাকে দৃষ্টিবন্দী করতে চাই । আপনার হাতে হাত রেখে , হাওয়ায় শাড়ির আঁচল উড়িয়ে স্বচ্ছ পানিতে পা ভেজাতে চাই । আপনার হাত ধরে কাশবন ঘুরতে চাই। পাহাড়ে চড়ে মেঘ ছুঁতে চাই, সব কিছুতে, সবসময় আমার আপনাকেই চাই ! সবসময় আমি আপনাকে নিয়েই কল্পনাতে ভাসি। আর আপনাকে নিয়েই ভাসবাে বলেন, আমার ইচ্ছেগুলাে পুরন করবেন তো?সবসময় থাকবেন তাে সব কিছুতে, আমার সকল বিলাসিতায় আপনি ! যখন আমি বৃষ্টিবিলাসী হব তখন আপনি হবেন কি আমার বৃষ্টিবিলাস ? যখন হব সন্ধ্যাবিলাসিনী তখন হবেন তাে আমার সন্ধ্যাবিলাস আপনি? হ্যাঁ , হব । কারন তুমি যেভাবে আমাতে মত্ত, আমিও তাে সেভাবেই তােমাতে মত্ত প্রেয়সী ! ভালােবাসি আপনাকে অনেক জলদি আসবেন . . . . !
এই কিছুটা সময় বিরহের হলেও বিরহটা আবার আমাদের সারাজীবন একসাথে হওয়ারই। জলদি আসব তােমাকে নিয়ে যেতে। তোমাকে তাে জলদি আনতে হবে। তোমার কোনাে ইচ্ছা তাে আমি অপূর্ণ রাখতে পারিনা। আমার পেটে হাত রেখে বললেন আর চোখ টিপ দিলেন। আমি লজ্জা পেয়ে তাকে ছেড়ে চলে এলাম। পিছু ডেকে সে বলল দাঁড়াও , আমি দাঁড়ালাম । বললেন , – – – তােমার লজ্জাটাও আমার খুব প্রিয় প্রেয়সী । শুধু তােমার বিরহটাই ভালাে লাগেনা । সমস্যা নেই ততদিন না হয় প্রেমিক প্রেমিকার মত ফোনে প্রেম করব । জলদিই আসব , অপেক্ষায় থেকো ।
আমি মৃদু হেসে উত্তর দিলাম , অপেক্ষায় রইলাম . . . . . . ! তিন তলার বেলকনি থেকে স্পন্দনের যাওয়ার পানে চেয়ে আছি। এখন আর অতটা মন খারাপ করছেনা । মৃদু বাতাস শরীরে এসে লাগছে। স্পন্দনের প্রিয় চুলগুলাে ভিষন এলােমেলাে হচ্ছে তাতে আমি হাসছি আর চুল গুলাে ঠিক করছি। মনে হলাে মৃদু হাওয়া কানে কানে বলে গেলাে , ভাবিস না । তােরা আবার এক হবি । তাের বর তােকে দেয়া কথা রাখবে । জানিস তাে রাগী মানুষেরা তাদের কথা রাখে . . . ! আমি আবারও মৃদু হেসে কানের পেছনে চুল । গুজলাম । মন আমার মনকে উত্তর দিলাে , হ্যাঁ জানি তাে ! ” সমাপ্ত ”
(জানিনা শেষটা আপনাদের মন মত হয়েছে কিনা শরীর ভালাে নেই তাই লেইট হলাে কি লিখেছি নিজেও জানিনা। দয়া করে ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এতদিন পাশে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনাদের সাথে আমার জার্নি শেষ হলাে আজ। সবাই ভালাে থাকবেন অনেক)
No comments:
Post a Comment