অভিযোগ পত্র
Write : Sabbir Ahmed
____________________________
"মা, আমার সামনে ফাইনাল এক্সাম এই সময়ে বিয়ে খেতে যাওয়া কি জরুরী?" আদনান এর কথায় তার মা উত্তর করলো "তুই না গেলে থাক, আমার একটা মাত্র ভাই, তার একটা মাত্র মেয়ে,তার ফুফু আমি, তোর জন্য কি আমি এই বিয়ে মিস করবো?
,,
-তুমি গেলে যাও আমি যাবো না (আদনান)
-না গেলি, তোর বাবা যদি বেঁচে থাকতো এখন এই তেড়িবেড়ি করার মজা বুঝতি (মা)
-যত কথাই বলো আমি যাবো না
-ঠিক আছে সব রান্না করে খেয়ে নিস কেমন?
-আমি কি রান্না পারি?
-তো না খেয়ে থাক
-কি যে বলো না তুমি। আর তোমার সাথে গেলে তো এক সপ্তাহ লাগবে। ভাইয়ের বাসায় গেলে সহজে আসতেও চাও না
-তো কি? আমার ভাই কি আমায় কম ভালোবাসে? তোরেও তো ভালোবাসে তুই যেতে চাস না
-ঐ বাসায় লোকজন নেই যেতে ইচ্ছে করে না
-তুই এক কাজ কর বই নিয়ে চল
-আমি কি প্রাইমারির বাচ্চা যে আত্মীয় বাসায় গেলে কাঁধে বই ঝুলায়া নিয়ে যাবো?
-সময় পেলে পড়িস
-পারবো না
-এ ছেলে আমার মাথা নষ্ট করে দিবে। আমি রেডি হচ্ছি, তুই গেলে রেডি হ। না হলে বসে থাক।
,,
আদনান উপায় না পেয়ে মায়ের কথায় রাজি হয়ে গেলো। আদনান এবার অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। পড়াশোনায় তেমন একটা ভালো ও না, আবার খারাপ ও না, মোটামুটি একটা পর্যায়ের ছাত্র। এক্সাম এর আগে শুধু পড়ার অভ্যাস এই আর কি। আজ যে মাকে বলল সামনে এক্সাম, আসলে এটা দোহাই ছাড়া কিছু না।
,,
ঐদিকে আদনান যার বিয়েতে যাচ্ছে, সেই বিয়ের কণের নাম রাত্রি। দেখতে বেশ সুন্দরী। আদনান এর চেয়ে তিন বছরের ছোট সে। লেখাপড়ায় ও খুব ভালো। তবে রাত্রির বাবা একটা ভালো পাত্র পেয়েছে। এমন পাত্র হাতছাড়া যাতে না হয় তাই এতো তাড়াতাড়ি বিয়ের আয়োজন। রাত্রি সবেমাত্র ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষের ছাত্রী। রাত্রি বাসায় তার মায়ের কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করছে বিয়ে আটকানোর...
-ও মা (রাত্রি)
-সকাল সকাল থেকে মা, মা, মা করেই চলছিস, কি হয়েছে মুখ খুলে বলতেছিস না (মা)
-একটা কথা বলব
-আমি রান্না করতেছি, এসময় এসে আমাকে ডিস্টার্ব করিস না
-শুনো না
-তুই যাবি এখান থেকে?
-একবারে মরেই যাই তাহলে। আমার কথা শুনতে হবে না তোমাদের
-আচ্ছা কি হয়েছে বল
-আমি বিয়ে করবো না
-এ কেমন কথা? প্রথমে তো রাজি ছিলি
-সেটাতো বাবার ভয়ে
-এখন বাবার ভয়েই বিয়ে টা করে ফেল
-না মা, আমার একটুও মন চাচ্ছে না
-ছেলে ভালো আছে সমস্যা কি? আর বিয়ের কাজ সব ঠিকঠাক, সবাইকে দাওয়াত করা হয়ে গেছে, আজ তোর ফুফু আসছে
-আজকে?
-হ্যাঁ আজ বিকেলে আসবে
,,
রাত্রি মন খারাপ করে রুমে গেলো।
তার জীবনে প্রেমঘটিত কোনো ব্যাপার নেই, তবুও কেনো যেন সে এ বিয়েতে অমত। সে এখনও অনেক ছোট, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে।
,,
বিকেলের দিকে আদনান আর তার মা রাত্রিদের বাসায় আসলো। রাত্রির সাথে আদনানের সম্পর্ক তেমন একটা ভালো না। দা-কুমড়ার সম্পর্ক তাদের। তারা একসাথে যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণ খোঁচাতেই থাকবে।
,,
রাত্রি আদনানের ছোট হয়েও আদনানকে সে নাম ধরেই ডাকে। ছোটবেলায় তো একবার দুজন মারামারি লাগিয়ে এক অপরকে মেরে রক্তারক্তির মতো ঘটনা ঘটিয়েছিলো।
,,
আজ আদনান বাসায় এসে মামার সাথে দেখা করে। ছোট মামার সাথে কথা বলে জানতে পারে রাত্রির বিয়েতে নাকি বড় মামা আসতে পারবে না। উনার অফিস নাকি ছুটি দিবে না, তাছাড়া তার পরিবারের সবাই আসবে। কথাটা শুনে আদনান যেন একটু হাফ ছেড়ে বাঁচলো। কারণ এমনিতে বাসায় তেমন লোকজন নেই, তারউপর কেউ দাওয়াত মিস করলে অবস্থা আরও খারাপ হবে।
আদনান মামির সাথে দেখা করলো। সেখানে জানতে পারলো রাত্রির বিয়ের অমতের কথা।
,,
আদনান এই একটা ইস্যু নিয়ে রাত্রির কাছে গেলো। রাত্রি তার রুমে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল আঁচড়াচ্ছিলো। রাত্রি নিজ রুমে থাকায় ওড়না টা বিছানায় ফেলে রেখেছিলো, আর সেই সময়েই আদনান রুমে প্রবেশ করলো। আদনান রুমে ঢুকেই বলল..
-কি রে কি করিস?? (আদনান অনিচ্ছাকৃত ভাবেই রাত্রিকে সেই অবস্থায় দেখে ফেলল, আর সাথে সাথে উল্টো দিকে ঘুরে দাঁড়ালো।)
,,
রাত্রি দ্রুত তার ওড়না টা শরীরে ঠিক করে নিয়ে বলল..
-এভাবে কেউ কারও রুমে আসে? (রাত্রি একটু লাজুক স্বরে বলল)
-সরি আমি আসলে খুশির খবর পেয়েছি তো)
-কি খুশির খবর? বসে বলো
-তার আগে বল কেমন আছিস? (আদনান রাত্রির বিছানায় বসতে বসতে কথাটা বলল)
-জ্বি ভালো আছি
-কি রে, তোর কথার মধ্যে কোনো তেজী ভাব পাচ্ছি না ব্যাপার কি?
-কই কিছু না। তোমার খুশির খবর টা বলো।
-শুনলাম তুই বিয়েতে রাজি না?
-এখানে তোমার খুশি হওয়ার কি আছে?
-আছে আছে। তুই তো রাজি না, তার মানে জোর করেই তোর বিয়েটে হবে। আর এখান থেকে তুই যে কষ্ট টা পাবি এটাই আমার খুশি।
-খচ্চর বেডা বলে কি হ্যাঁ। ভাবছিলাম এখন থেকে তোমারে মান দিয়ে চলবো, কিন্তু নাহহ তোমার মাঝে কোনো উন্নতির লক্ষণ নেই।
-আমারে খচ্চর বললি? তুই খচ্চর আর তোর পেটওয়ালা বুইরা জামাই খচ্চর
-ঐ আদনানের বাইচ্চা আদনান আমি কিন্তু তোরে..
-এ থাম থাম তোর রাগে আবার আমার মামার নগরী ধ্বংস হয়ে যাবে
-তুমি এসেই এমন শুরু করছো কেনো? আর সরি তুই বলার জন্য। আমার মন ভালো নেই
-উমম সুন্দরীরা রাগলেই বেশি ভালো লাগে
-দেখো মজা করো না
-ঠিক আছে ঠিক আছে এবার আমি থামছি। তা বর এর ছবি দেখা
-আমার কাছে নেই
-বর দেখিস নাই?
-দেখেছি তবে ফেস মনে নেই
-ওহহ, তুই কি কাউকে ভালোবাসিস??
-না,
-তাহলে চিল, বিয়ে টা করেই ফেল। আর মামির কাছে শুনলাম ছেলে সব দিক থেকে ভালোই আছে
-তবুও আমার কেমন যেন লাগছে
-কেমন লাগছে?
-মানে সে তো অপরিচিত
-আমার মামাও অপরিচিত মেয়েকে বিয়ে করেছে,
-আবার শুরু করছো?
-হি হি হি তোর সাথে মজা না করলে ভালো লাগে নাহহ
-আমাদের মজা কোন পর্যায় পর্যন্ত গেছে এটা মনে আছে? তুমি আমার ঠোঁট ফাঁটিয়েছো
-তুই আমার নাক ফাঁটিয়েছিস
-ঐতো এখন সেই পর্যায়ে যাওয়ার দরকার নেই। আর শোনো
-কি?
-আমাকে একটু হেল্প করো
-কিসের হেল্প?
-আমি বিয়েটা করতে চাই না, এটা বাবাকে একটু বলো,
-তুই বল
-আমি তো উনার সামনে গিয়ে কথাই বলতে পারবো না
-দেখ তুই কি পারবি, না পারবি, সেটা আমার দেখার বিষয় না৷ অনেক কষ্টে মনকে শান্ত করে তোদের বাসায় আসছি। বিয়ে খেয়ে তারপর যাবো
-তোমাকে দিয়ে হবে না। আমার ইচ্ছে করতেছে মরে যেতে
-দড়ি নিয়ে আসি?
-দাঁড়াও দেখাচ্ছি তোমাকে
,,
আদনান কে ধরার জন্য রাত্রি ছুঁটলো। আদনান দিলে ভোঁ দৌড়। আর কে পায় আদনানকে? রাত্রিও কম না সেও পিছু ছাড়ছে না। প্রত্যেক বারই এমনটা হয় তাদের। বাসার সবাই তাদের এমন আচরণ দেখে অভ্যাস্ত।
,,
ড্রয়িং রুমে বসে রাত্রির বাবা আর তার বোন, মানে আদনানের মা, দুজন বিয়ের কথা না নিয়ে আলাপআলোচনা চলছিলো, এর মাঝে রাত্রি আদনান দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে সেখানে উপস্থিত। ফুফু কে উদ্দেশ্য করে রাত্রি বলল...
-ফুফু তোমার ছেলেকে যদি আমি পাই, তাহলে তার আজ খবর আছে, তুমি ওরে দেখে চিনতেই পারবে না (কথাটা বলেই চলে গেলো। আর আদনান সেখান থেকে আগেই চলে গিয়েছিলো)
,,
-দেখছিস আসতে না আসতেই শুরু করেছে (আদননের মা। উনি ভাইবোনদের মধ্যে সবার বড়, তাই তুই বলেন তার দুই ভাইকে)
-হ্যাঁ আপা ওরা আর ঠিক হলো না। একজনের দেখো আজ বাদে কাল বিয়ে তারপরও শুরু করেছে (রাত্রির বাবা)
,,
আদনানের মা একটু হেঁসে আবার কথা শুরু করলো। এদিকে আদনান চুপিচুপি ছাদের এক কোণায় গিয়ে সিগারেট ধরিয়েছে। রাত্রি খুঁজতে খুঁজতে সেই জায়গায় চলে গেলো। আর দেখলো আদনান চুপিচুপি সিগারেট খাচ্ছে।
,,
রাত্রি দৌড়ে গিয়ে রুম থেকে মোবাইল নিয়ে এসে আসলো। আর আদনানের কাছে গিয়ে একটা ফটো তুলল। ক্যাপচার এর আওয়াজ আদনানের কানে যেতেই আদনান পেছনে তাকিয়ে দেখে রাত্রি খিলখিল করে হাসতে শুরু করেছে। আদনানের হাতে থাকা সিগারেট দ্রুত ফেলে দিয়ে বলল...
-সর্বনাশ(আদনান)
-এখনো সর্বনাশ হয়নি, হবে..(রাত্রি)
-আপা, বইন, সিস্টার, সরি সরি
-আহারে বেচারা। আরও ডাক থাকলো ডাকো ডাকো
-বুবু বইন সরি
।।
।।
অভিযোগ পত্র
Part : 2
Write : Sabbir Ahmed
_____________________________
-আহারে বেচারা, আরও ডাক থাকলে ডাকো ডাকো (রাত্রি)
-বুবু বইন সরি (আদনান)
-সিগারেট টা উঠাও আর আমার হাতে দাও
-...(আদনান সিগারেট টা উঠিয়ে রাত্রির হাতে দিলো)
-একটা টান দেই??
-আরে কি বলিস! মাথা ঠিক আছে তোর?
-সমস্যা কি? একটা টান-ই তো
-গোলাপি ঠোঁটে সিগারেট মানায় না
-এই এই কি বললা তুমি? (রাত্রি সিগারেট ফেলে দিয়ে বলল)
-যা বলেছি শুনেছিস তো
-তার মানে! তুমি আমার ঠোঁট দেখো?
-ওমাহ! এতো ঢং করার কি আছে? ঠোঁট তো সামনেই আছে দেখাই যায়, এটা কি তোর পেটের মধ্যে নাকি?
-না না, তুমি দেখবে কেনো?
-আরে আজব, সামনে আছে তাই দেখছি
-না না দেখা যাবে না। দেখলেও ওভাবে দেখা যাবে না৷ মুখেও প্রকাশ করা যাবে না
-ওভাবে মানে? তুই সব কথা অন্যদিকে নিস
-হইছে হইছে, এবার কাজের কথায় আসো
-কি কাজের কথা?
-এই যে আমি ছবি টা তুললাম, এইটা এখন সবাইকে দেখাবো
-আমি সরি বলেছি তো
-সরি বলে তো কোনো কাজ হবে না মশাই। আমার কাজ করে দিতে হবে
-কি কাজ?
-এই বিয়েটা ভাঙতে হবে
-আমি পারবো না
-তাহলে আমিও ছবি লুকিয়ে রাখতে পারবো না
-দেখ দেখ এমন করিস না, ছোট মামা অনেক গরম স্বভাবের মানুষ, এসব জানতে পারলে আমাকে মেরেই ফেলবে
-বাবা কিছু জানতে পারবে না৷ আর বাবা জানতে পারলেও তোমাকে কিছু নাও বলতে পারে, কারণ বাবা আমার থেকে তোমাকে বেশি ভালোবাসে
-খারাপ কাজ করলে তখন আর ভাগনে টাগনে দেখবে না, সোজা হসপিটালে পাঠিয়ে দিবে
-সে দিলে দিবে। আমি এতো কথা শুনতে চাই না বিয়েটা ভাঙতে হবে
-আচ্ছা ঠিক আছে, এটা করতে ঠান্ডা মাথায় একটা প্ল্যান করতে হবে
-হুমমমম করো প্ল্যান
-এখানে না
-কোথায়?
-চল বাইরে কোথাও ঘুরে আসি
-বাবা যেতে দিবে তো?
-আরেহহ বিয়ে তো কয়েকদিন পর, এখন যেতে দিবে না কেনো?
-কি যে? আমাকে তো মানা করে দিয়েছে
-আমি নিয়ে গেলে কিছু বলবে না চল। বেশি দূর যাবো না আশেপাশেই
-হুমম চলো
,,
দুজন বাসার বাইরে আসলো।
-উফফ আজ একটু বাতাস নেই রে, বিকেল হয়েছে তাও কত্ত গরম (আদনান)
-হুমমম এ বছর গরম একটু বেশি পড়ছে (রাত্রি)
-গরমে কুলোতে পাড়ছি না, এখানে একটু দাড়া আমি দুইটা কোক নিয়ে আসি
,,
রাত্রিকে রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে রেখে আদনান দুটো কোক নিয়ে আসলো, একটা রাত্রির হাতে দিলো। দুজন খেতে খেতে আবার রওনা হলো। রাত্রিদের বাসা শহর থেকে একটু বাইরে, এখানে আশে পাশে বেশিরভাগ গ্রামের চিত্র ফুঁটে উঠে।
,,
রাস্তায় পুব পাশে একটা ছোট নদী, নদীর ওপারে আরও কিছু গ্রাম এলাকা। আর এখানে বাড়িঘরের ঘনত্ব অনেক কম।
-এই রাত্রি(আদনান)
-বলো (রাত্রি)
-নদীর পারে যাবি?
-এই এখন? সন্ধ্যা হয়ে আসছে তো
-আরে চল আমি আছি
-আচ্ছা চলো। তবে হ্যাঁ প্ল্যান এর কথা ভুলে যেয়ো না
-সেটাই তো ভাবছি রে
-হুমম ভাবতে থাকো।
,,
নদীরপারে আসলো দুজন। এখন বর্ষার মাঝামাঝি সময় হয়েও নদীতে তেমন পানি নেই। হালকা স্রোত ছিলে নদীতে। ওরা দুজন যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো সেখান থেকে পশ্চিম পাশ টা খুব ভালো করে দেখা যাচ্ছিলো। ধীরে ধীরে পরিবেশ টা গোধূলি বেলায় পরিণত হলো।
,,
-এই ভাইয়া (রাত্রি)
-বল শুনতেছি (আদনান)
-রাত হয়ে আসছে,চলো বাসায় যাই
-আয় নৌকায় বসে প্ল্যান টা করে ফেলি
-আমি কি বলি? আর তুমি কি বলো?
-আরে আয় তো এতো ভয় পাস কেনো?
-তোমার মতো শত্রু থাকলে ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক
-আমি কি করলাম আবার?
-আমাকে যদি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দাও
-কচু, আয় বস এখানে
,,
দুজন গিয়ে বড় নৌকার মাঝামাঝি জায়গায় বসলো।
-এবার বল(আদনান)
-আমি কেনো? তুমি বলবে (রাত্রি)
-উমমম হবু বরকে কল করে যদি বলি যে আমি তোর বি এফ। যদি বিয়ে করতে আসেন তাহলে আপনার সমস্যা হবে। এমন থ্রেট দেওয়া যাবে?
-তুমি আসলেই একটা গাধা, এ কথা বললে বাবা আমায় মেরে ফেলবে
-আরে ধুররর এ আমার মাথা কাজ করছে না এখন। রোমান্টিক পরিবেশে আছি উপভোগ করতে দে। ইসসস আজকে বাতাস আর তোর জায়গায় আমার বউ থাকলে অন্য কিছু ঘটতো
-কি ঘটাতে?
-প্রেম করতাম প্রেম
-জি এফ কে কল করে আসতে বলো এখানে
-আমার জি এফ নেই তো
-তুমি যেই লেভেল এর শয়তান নিশ্চয়ই এতদিনে সেঞ্চুরি হয়েছে
-বিশ্বাস কর একটাও নেই
-ঠিকই আছে, কার এমন পঁচা রুচি হবে যে তোমার মতো ছেলেকে পছন্দ করবে
-আমাকে পঁচানো বাদ দিয়ে পরিবেশ টা একটু উপভোগ কর
,,
রাত্রি আদনান এর থেকে একটু দূরে গিয়ে বসলো। আদনান নদীর পানিতে হাত ডুবিয়ে, হাতটা ভিজিয়ে নিলো। তারপর রাত্রির মুখ বরাবর হাতটা ঝাড়লো। পানির কণা রাত্রির মুখে লাগতেই রাত্রি বলল...
-আরে কি করছো? এখনো কি তুমি ছোট আছো নাকি? (রাত্রি)
-আমি আর তুই এখনো ছোট (আদনান)
-এহহহহ আমরা বড় হয়েছি
-প্রমান দে
-এই যে আমি তোমাকে আর তুই করে বলি না৷ বলি না বললে ভুল হবে। বলি তবে মাঝে মাঝে
-হুমমম
,,
হঠাৎ নদীর ওপার থেকে কয়েকটা শেয়াল ডেকে উঠলো। রাত্রি ভয়ে এসে আদনান এর কোলের মধ্যে বসলো, আর মুখটা আদনান এর কাঁধে রেখে চোখ বন্ধ করে বলল..
-ভাইয়া ভাইয়া আমার খুব ভয় করছে, বাসায় যাবো, বাসায় যাবো (রাত্রি)
-বলা নেই কওয়া নেই, সোজা কোলের মধ্যেই উঠতে হবে? (আদনান)
-ভাইয়া ভূত আসতেছে, চলো না (রাত্রি খুব ভয় পাচ্ছে)
-আরে শেয়াল ডাকছে
-আমার কাছে ভূত ডাকার মতো লাগে চলো না চলো
-আচ্ছা তুই উঠ, আমি উঠতেছি
-না তুমি আগে উঠো
-তুই এসে কোলের মধ্যে বসেছিস, তোর হুঁশ আছে? তাও একটা ছেলের কোলে, আবার আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছিস
-সরি সরি
,,
রাত্রিকে হাত ধরে নৌকা থেকে নামালো আদনান। বাসার সামনের পাকা রাস্তা পাওয়ার আগ পর্যন্ত রাত্রি ভয়ে আদনানের একদম কাছাকাছি ছিলো। কখনো আদনান এর বাম হাতটা চেপে ধরেছিলো, আবার কখনো ভয়ে আদনান কেই চেপে ধরেছিলো। আর সেই রাস্তা উঠার পর....
-বলছিলাম যে যাবো না, যাবো না, তাও নিয়ে গেলে (রাত্রি)
-তো? তোর কিছু হয়েছে কি? (আদনান)
-আমি যে ভয় পেলাম
-সুন্দরী মেয়েরা ভয় পায়?
-হ্যাঁ অনেক
-আমি তো জানতাম তারা ঢং করতে ভালোবাসে, আর আমি ভেবেছি যে তুই ঢং করতেছিস
-ফাজলামি করো তাই না? বাসায় চলো বিচার দিমু আমি
-ওকে দিস, আর মনে রাখিস আমার নামে কিছু বললে তোর বিয়ে ভাঙতে হেল্প করবো না। যদি আমার ছবি দেখাস তাও না
-হুহহহ বলব না চলো এখন
,,
বাসায় আসার পর রাত্রির বাবা দুজনকে দাঁড় করিয়ে জেরা করলো।
আর দুজনকেই কড়া ভাবেই বলে দিলো "সামনে রাত্রির বিয়ে, এতো ঘন ঘন বাইরে যাওয়া চলবে না, সবাই কি বলবো? তোরা যাই করিস একটু সাবধানে। এখন তো বড় হয়েছিস"
,,
কথাগুলো দুজন এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দিলো। কথা শোনা দুজন এক দৌড়ে এসে সোজা রাত্রির রুমে।
-এই এফ এম রেডিও সবসময় বাজতেই থাকে বাজতেই থাকে। কবে যে যে ব্যাটারি টা ডাউন হবে (আদনান)
-এই তুমি আমার বাবা কে কি বললা?? (রাত্রি একটু ক্ষেপে)
-তোর বাবা কে বলিনি, আমার মামা কে বলেছি
-আমার বাবা তো
-তোর বাবা হওয়ার তিন বছর আগেই আমার মামা হয়েছে। সো অধিকার টা আমিই বেশি দেখাবো
-হুহহ দেখাতে থাকো পরে বুঝবা
-সে দেখা যাবে, ফ্যান টা ছেড়ে এক গ্লাস পানি নিয়ে আয় যা
-পাড়বো না, নিয়ে খাও
-বড়দের সম্মান করতে শেখ, তাহলে জীবনে ভালো কিছু করতে পারবি, না হলে..
-হইছে চুপ, আনতেছি।
-ওক্কে
,,
রাত্রি এক গ্লাস পানি নিয়ে এসে আদনান কে দিলো। আদনান পানি খাওয়া শেষে বলল..
-সকালে চকলেট খাওয়ার জন্য পাঁচ টা নিস। আমি আবার দান খয়রাত কম করি না, এ দিক দিয়ে আমার হাত অনেক বড় (আদনান)
-চাপাবাজী কম করে, আমি যেই হেল্প টা চেয়েছি, সেটা করো (রাত্রি)
-তোর কাজ হয়েই গেছে
-কিভাবে? কি করতে হবে?
-তোরে কিছু করতে হবে না, যা করার আমিই করবো
-সে তো তুমিই করবা কিন্তু কিভাবে?
-এখনি দেখবি?
-দেখাও
,,
আদনান বিছানায় বসা ছিলো আর তার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো রাত্রি। আদনান বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। তারপর হুট করেই রাত্রির মাথা ধরে কপাল টা কাছে এনে একটা চুমি দিয়ে বলল..
-আপনিই শুধুই আমার, আই লাভ ইউ (আদনান)
-.....(আদনান এর কথা শুনে রাত্রির চোখ মুখ লাল হচ্ছিলো। রাত্রি ভাবছে আদনান মজা করছে)
-আর ক্ষেপতেছিস কেনো? সত্যি যেটা সেটাই বলেছি, আর... (আদনান কথার মাঝখানে রাত্রির গালে একটা চুমু দিয়েই দৌঁড় দেয়)
,,
রাত্রি এবার অনেকটাই অবাক হয়ে যায়৷ থ হয়ে বিছানায় বসে পড়ে। আর ভাবে...
-খচ্চর বেডা এইটা কি করলো!!(রাত্রি)
।।
।।
অভিযোগ পত্র
Part : 3
Write : Sabbir Ahmed
___________________________
রাত্রি এবার অনেকটাই অবাক হয়ে যায়। থ হয়ে বিছানায় বসে পড়ে। আর ভাবে...
-খচ্চর বেডা এইটা কি করলো!!(রাত্রি)
,,
রাত্রি বিছানায় বসে ফুঁসতে থাকে, আর মনে মনে হিসাব করছে, আদনান কি তাকে সত্যি ভালোবাসার কথা বলেছে? নাকি ফাজলামি করছে? রাত্রির মনে দুইটা প্রশ্ন আসার কারণ এর আগেও এ ধরনের কথা বলেছে। তবে আগের বার হুট করে চুমু খেয়ে বসেনি।
,,
রাত্রি ভেবে কূল কিনারা পাচ্ছিলো না৷ ভাবতে ভাবতে তার মাথা আরও গরম হয়ে গেলো। পরদিন সকাল বেলা, রাত্রি ঘুম থেকে উঠেই এ রুমে ও রুমে আদনান কে খুঁজতে লাগলো। পরে ফুফুর কাছে জানতে পারলো সে এখনো উঠেনি। রাত্রি অপেক্ষা করলো। এদিকে আদনান বেলা এগারোটায় ঘুম থেকে উঠে বারোটার মধ্যে ফ্রেশ হওয়া আর খাওয়া শেষ করে নিলো। আদনান খাওয়া শেষ করে বাইরে যাওয়ার প্ল্যান করছিলো। কারণ তার একটা সিগারেট খেতে হবে। সে বাইরে যাওয়ার সময় রাত্রির সাথে দেখা হয়ে যায়, সেটা আবার ঘরের মেইন দরজার সামনে।
-নবাবজাদা (রাত্রি)
-আমাকে বললি? (আদনান)
-যে নবাব তাকেই বলেছি
-হুহ ঠিক ধরেছিস, আমি দেখতেও তেমনি
-ঢেঁড়স এর মতো (রাত্রি বিড়বিড় করে বলল)
-কিছু বললি?
-কই না তো
-আবার মিষ্টি মিষ্টি হাসতেছিস
-আরে কিছু না
-আমাকে আটকালি কেনো?
-কই যাচ্ছো?
-বাইরে, হওয়া খেতে
-ওহহহ, তোমার সাথে আমার কথা আছে। একটু সাইডে আসো
-আমার সাথে কথা?
-হুমমম
-কি কথা?
-বলতেছি একটু সাইডে আসো
-এই তুই পেছনে কি লুকিয়ে রেখেছিস?
-....(রাত্রি লাঠি বের করে দেখালো)
-হাতে লাঠি কেনো?
-হিসাব করতে হবে, আমার হিসেব মিলতেছে না
-কিসের হিসাব?
-আসো দেখাচ্ছি
,,
রাত্রিদের বাসার পশ্চিম দিকটায় গেলো দুজন। এই জায়গা টা রাত্রিদের-ই। রাত্রির বাবা অনেক বছর আগে এই জায়গা কিনে গাছ লাগিয়েছিলো আজ সেগুলো অনেক বড় বড় হয়েছে। আদনান আর রাত্রি এই বাগানের এক পাশে এসে দাঁড়ালো যেখানে ছায়া বেশি।
-কি কথা বলতে এতদূর নিয়ে আসলি? (আদনান)
-এখন বলছি। রাতে ঐটা আমাকে কি করলা? (রাত্রি)
-রাতে আমি তোকে কি করেছি? দাঁড়া একটু ভেবে দেখি। কই না তে আমার কিছুই মনে পড়ছে না৷
-এই জন্যই লাঠি এনেছি, এটার এক ডোজ দিলেই সব মনে পড়বে
-এই এই এটা দিয়ে মারলে মরেই যাবো
-রাতে ঐটা কেনো করলা
-দাঁড়া বলছি আমি, লাঠিটা নামা
-হুমম বলো
-প্রপোজ তো এমনি করছি
-সেটা ঠিক আছে, ওটাতে আমি অভ্যস্ত, কিন্তু তার পরের কাজ টা কি ঠিক করেছো?
-চুমু যে দিলাম?
-নির্লজ্জ বেহয়া, আবার মুখের উপর বলে। ওটা কেনো করলা হ্যাঁ?
-আপনা আপনি হয়ে গেছে
-কাজটা কি ঠিক করেছো?
-মনে হয় না
-আমায় কি সত্যি ভালোবাসো?
-আমাকে দেখে তোর তাই মনে হয়।
-তাহলে আমার সাথে যা করেছো ভালোই করেছো
,,
রাত্রি কথাটা বলে তার রুমে উদ্দেশ্য রওনা হলো। রাত্রির চোখে আদনান পানি দেখতে পেয়ে সে ভাবনায় পড়ে সেই জায়গাতেই অবস্থান করছে। কিছুসময় ভেবে একটা দৌঁড় দেয়।
বাসায় ঢোকার একটু আগে মামার সাথে দেখা উনি একটু আগে চেয়ার নিয়ে বসে এলাকার এক মুরুব্বির সাথে কথা বলা শুরু করেছেন।
,,
আদনান এর দৌঁড় দেখে তিনি আদনান কে দাঁড় করালেন৷
-এই তোরা কি আবার মারামারি করেছিস? রাত্রি কে দেখলাম কান্না করতে করতে বাসার মধ্যে গেলো (মামা)
-এইতো মামা একটু হয়েছে (আদনান)
-তোদের দুজনের আর মিল হলো না। এখন দৌঁড়াচ্ছিস কেনো?
-ওর রাগ ভাঙাতে
-যাহ
,,
আদনান কে যেতে দিয়ে, তিনি একগাল হেঁসে উঠলেন সাথে সেই লোকটাও। আসলে হাসবেই না বা কেনো দুজনের যা কর্মকান্ড ঘটায় আশেপাশের সবারই জানা।
,,
এদিকে আদনান রাত্রি কে খুঁজে পায় তার রুমে। রাত্রি উপর হয়ে বালিশে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে। আদনান ধীর পায়ে রাত্রির পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। বালিশে মুখ গুঁজে থাকায় রাত্রি আদনান কে দেখতে পায়নি৷ আদনান ও চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বলতে গিয়েও বলার সাহস হচ্ছে না তার৷
,,
কিছুক্ষণ চেষ্টা করলো তারপর হুট করেই বলে ফেলল..
-একটা চুমুর জন্য এতো কান্না করতে হবে? (আদনান)
-....(রাত্রি বালিশ থেকে মুখ তুলল। আদনান দেখতে পেলো কান্না করে বালিশ ভিজিয়েছে। চোখ কান নাক লাল করে ফেলেছে)
-এই অবস্থা করেছিস কেনো! এতো কান্না কেউ করে?
-তুমি আমার রুম থেকে যাও
-আচ্ছা সরি
-তোমাকে আমি যেতে বলেছি
,,
আদনান তো রাত্রির কথা শুনলোই না। উল্টো আরও রাত্রির কাঁধে হাত রাখে ঠিকঠাক ভাবে বসলো, তারপর আদনান তার মুখোমুখি বসে বলল...
-আরেকটা চুমু খাই? (আদনান)
-...(রাত্রি এবার আরও অবাক হলো)
-আচ্ছা কিছুসময়ের জন্য আমি তোকে একটু তুমি করে বলি? মানে আমি যা বলব এখন সব সিরিয়াস কথা
-....(রাত্রি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। আর হুট করে আদনান এর সিরিয়াস হওয়াটা বুঝতে পারে রাত্রি। আর এমনিতে দুজনের মধ্যে মিল না থাকলেও একে অপরকে খুব ভালে করেই বুঝতে পারে)
-প্রথম কথা হলে আমি এই লক্ষ্মী টাকে অনেক ভালোবাসি (আদনান)
-....(রাত্রি গভীর দৃষ্টিতে তাকালো)
-সত্যি বলছি আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি৷ আমাদের মধ্যে সবসময় ঝগড়া হতো। এই ঝগড়ার কারণে ভালোবাসাটা বুঝতে পারিনি। গতকাল থেকে মনের মধ্যে ভালোবাসার একটা ফিল আসছিলো। শুধু ভাবছিলাম তুমি যদি আমায় ছেড়ে চলে যাও তাহলে আমি কার সাথে এতো ফাজলামি করবো? তুমি আমাকে যতটা বোঝো এতোটা কেউ তো বুঝবে না। আমি চাইনি এভাবে ভালোবাসার কথাটা বলতে
-যদি আমার বিয়ে হয়ে যেতো (রাত্রি)
-আমি থাকতে হবে না। আমি যখন থেকে বুঝেছি তুমিই আমার লাইফ এর এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ তখন আমি এ ব্যাপারে সিরিয়াস। এফ এম রেডিও চাইলেও অন্য জায়গায় তোমায় বিয়ে দিতে পারবে না
-তো এখন?
-এখন কি?
-মানে কি দিয়ে কি করবো?
-কিছু করতে হবে না। আজ সন্ধ্যার মধ্যে খবর খবর পেয়ে যাবা যে ওরা মানা করে দিয়েছে
-কিভাবে?
-হয়ে যাবে একভাবে
-ওহহহ
-আমি তাহলে তুমি থেকে তুই তে চলে যাই। আর হ্যাঁ ভালোবাসা দেখাবা না৷ আগে যেমন ছিলাম তেমন ভাবে থাকতে হবে
-হুমমম ঠিক আছে
-তাইলে এফ এম রেডিওর বেডি, তুই থাক আমি বাইরে যাই
-দেখ এই ভালোবাসে আবার এখনি কেমন করে কথা বলে
-আমি তো এমনি
-তাহলে এখন থেকে আমরা রিলেশনশিপে?
-কিসের রিলেশনশিপ? আগে যেমন ছিলাম তেমনই
-আর বিয়ে?
-সেটা সময় হলেই হবে
-আমাকে এমন করে জ্বালিয়ে মারবা?
-সে তুই আমাকে জ্বালিয়ে মারিস
-আমি?
-হুমম
-কবে কখন? তুমি পায়ে পারা দিয়ে ঝগড়া করতে আসো আমি না
-তুই আগে ঝগড়া করিস
-কচু
-হয়েছে হয়েছে এখন যা, তোর বাবার সিগারেট এর প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট নিয়ে আয়
-আচ্ছা ওয়েট
,,
রাত্রি কথাটা বলে বিছানা থেকে নামলো। বাইরে না গিয়ে দরজা টা লাগিয়ে আবার ফেরস আসলো আদনান এর কাছে।
-কি হলো এটা? আমি কি বললাম শুনতে পাসনি? (আদনান)
-বিছানা থেকে নামো
-কেনো?
-নামো সমস্যা আছে
-কি সমস্যা?
-আগে নামো
,,
আদনান বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো।
-এখন ফ্লোরে বসে পড়ো (রাত্রি)
-তুই কি করতেছিস কিছুই বুঝতেছি না (আদনান)
-তোমাকে সিগারেট খাওয়াচ্ছি আমি, তুমি বসো একটু
,,
আদনান ফ্লোরে পা ছড়িয়ে বসলো। একটু আলসেমির জন্য খাটের সাথে হেলান দিয়ে দু পা সামনে ছড়িয়ে বসলো।
-বসলাম তো, এখন তুই যা, সিগারেট নিয়ে আয় (আদনান)
,,
আদনান এর কথায় কান না দিয়ে রাত্রি আদনান এর উরুর উপর দু পা ভাজ করে বসলো। আদনান চমকে উঠে সে ও তার পা ভাজ করে ফেলল। এখন রাত্রি আদনান এর কোলের মধ্যে। রাত্রি কোনো পূর্বভাস ছাড়ই আদনান এর চুল, নাক গাল ঠোঁট কপাল, থুঁতনি বুলিয়ে বলিয়ে বলল..
-এত্ত সুন্দর চুল, গুলুমুলু টাইপের নাক গাল, আবার কিউট দুটো ঠোঁট। যদিও আমার থেকে একটু কম। তবুও অনেকটাই কিউট। এই কিউট কিউট জিনিস গুলোতে খারাপ কিছুর স্পর্শ যেন না লাগে। এখন থেকে এগুলোতে আমার বিচরণ থাকবে, বুঝেছেন মশাই......
।।
।।
।।
অভিযোগ পত্র
Part : 4
Write : Sabbir Ahmed
_____________________________
-এত্ত সুন্দর চুল, গুলুমুলু টাইপের নাক গাল, আবার কিউট দুটো ঠোঁট। যদিও আমার থেকে একটু কম। তবুও অনেকটাই কিউট। এই কিউট কিউট জিনিস গুলোতে খারাপ কিছুর স্পর্শ যেন না লাগে। এখন থেকে এগুলোতে আমার বিচরণ থাকবে, বুঝেছেন মশাই...(রাত্রি)
-সিগারেট আমার নেশা (আদনান)
-এখন থেকে আমি তোমার নেশা
-সম্ভব না
-কেনো?
-সে তুই বুঝবি, এখন উঠ আমি বাইরে যাবো
-না এভাবে থাকি কিছুক্ষণ। মাত্র তো নতুন সম্পর্কের শুরু করলাম। একটু রোমান্স হবে না?
-আমার যখন মন চাইবে তখন
-আমি চাইলে হবে না?
-না
-কেনো?
-আমি চাই না তোর ইচ্ছে মতো সবকিছু হোক
-এই শোনো তোমার বিয়ে ভাঙতে হবে। আমি ঐ বেডারে বিয়ে করবো
-আচ্ছা ঠিক আছে
-এই না না ভাঙতে হবে, ভাঙতে হবে
-আগে নিয়ত ঠিক কর
-নিয়ত ঠিকই আছে, তুমি যে আমার এতো আপন এটা আমি বুঝতে পারিনি। এখন বুঝেছি
-হইছে এখন নাম আমি যাই
-আরেকটু
-অন্য সময়
-একটা চুমু দিয়ে যাও
-আমার সিগারেট খেতে হবে
-আমার চুমু লাগবে
-কি এক ঝামেলা বেটির পাল্লায় পড়লাম
-ধুরররর যাও লাগবে না, (রাত্রি উঠে দাঁড়ালো)
,,
সেই সুযোগে আদনান ও রুমের বাইরে চলে আসলো। তাদের দুজনের এই কথাবলা আদনান এর মা দেখে ফেলে। উনি রাত্রির রুমের জানালা দিয়ে ব্যাপার টা খেয়াল করলেন।
,,
আদনান রাত্রির রুম থেকে বেড়িয়ে বাইরে গিয়েছিলো। বাসায় আসলে তাকে তার মা একটা রুমে ডেকে নেয়। আদনান মায়ের চোখ দেখে বুঝতে পারছিলো কিছু একটা হয়েছে, তার মায়ের চোখে রাগ দেখা যাচ্ছিলো। মূহুর্তেই ভাবতে লাগলো রাত্রি আবার উল্টাপাল্টা কিছু বলছে কি না।
,,
আদনানকে কিছু বলার আগেই দুই গালে দুটো চর বসিয়ে দেয়। আদনান দুই গাল ধরে দাঁড়িয়ে বলে....
-অনেকদিন পরে মাইর দিলে, কি হয়েছে? (আদনান)
-রাত্রির সাথে তোর সম্পর্ক কবে থেকে? (মা)
-ওহহহ তুমি মূল কাহিনী টা জানলে কিভাবে? ও জানিয়েছে?
-তা তোর মামা দেখেছে, তারপর আমাকে ডেকে নিয়ে দেখিয়েছে
-.....(আদনান বুঝতে পেরে লজ্জায় মাথা নিচের দিলে রইলো)
-এখন রাত্রির বাবা আমার উপরেও ক্ষেপেছে আর তোর উপরেও
-কেনো? আমাদের বিয়ে দিলেই তো হয় এখানে খ্যাপার কি আছে
,,
আদনানের মা আদনানের মাথায় চুল ধরে টেনে বলল...
-শয়তান তোরে আজ মেরেই ফেলতে ইচ্ছে করছে। আমি তোর মামার বড়, তবুও আমাকে কথা শুনিয়েছে। এখন রেডি হয়ে নে, এখানে থাকা যাবে না (মা)
-রাত্রি কে রেডি হতে বলি, ওরে নিয়ে যাবো (আদনান)
-আবার! ছোট বেলা থেকেই এরকম হয়েছিস, আমি সিরিয়াস হলে তুই ফাজলামো বেশি করিস
-আমার যে ওরে খুব পছন্দ
-আমারও পছন্দ ছিলো, কিন্তু আমার ভাইয়ের টাকা বেশি, আমাদের কিছু নেই
-তোমার তো পছন্দ তাও নিয়ে যাই
-দেখ আমার যে মান সম্মান টুকু আছে সেটা আর শেষ করে দিস না৷ এই টুকু মান সম্মান নিয়ে বাসায় যেতে দে
-কিন্তু মা
-বেশি বুঝলে মা হারাবি, আমি কিন্তু তোর সাথে ফাজলামি করতেছি না
,,
আদনান মনের বিরুদ্ধে গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নিলো। বাসা থেকে বের হওয়ার আগ মূহুর্তে দেখতে পেলো রাত্রিকেও তার বাবা বকা দিচ্ছে। আদনান এর দেখে রাগ হলো, আর মা কে নিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে গেলো।
,,
-এই রাত্রি যাবি আমার সাথে, আমাদের বাসায়? (আদনান)
-...(আদনান এর মা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। এতো বোঝানের পর ছেলেটার মুখ আটকানো গেলো না)
-কি হলো যাবি?
-নাহহ
-আচ্ছা তাহলে আর কি? আমাকে দোষ দিতে পারবি। আমি ভালোবেসেছি নিয়েও যেতে চেয়েছি। তো থাক, ভালো পরিবারে গিয়ে ঘর সংসার কর এই দোয়া করি
,,
আদনান রাগ দেখিয়ে মা কে নিয়ে রাত্রিদের বাসা থেকে বের হলো।
বাসায় এসে মা ছেলের লাগলো আবার ঝগড়া। কিছুসময় তর্ক চলল তারপর আদনান রাগ করে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলো।
,,
কিছু বন্ধুদের সাথে নিয়ে চলল রাত্রির হবু বরের অফিসে। রাত্রির কাছে থেকে সব ঠিকানা পরিচয় শুনে নিয়েছিলো আদনান। আদনান এখন ভাবছে যত যাই হোক রাত্রির বিয়ে হতে দিবে না। মাথায় পাগলাটে কিছু বুদ্ধি ঘুরপাক খাচ্ছিলো আদনান এর।
আদনান বন্ধুদের বলল ছেলেটাকে মেরে ফেলবে। আদনান এর রাগ দেখে বন্ধুরা তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলো। আসলে রাগ টা ছেলেটার উপর না, রাগ উঠেছে রাত্রির উপরেই।
,,
শেষপর্যন্ত আদনান বুঝলো, বন্ধুরা আদনান এর কাছে থেকে সব শুনতে পেয়ে আদনান কে এক পাশে বসিয়ে রাখলো, আর বলল তারা ঐ ছেলেটার সাথে কথা বলবে।
,,
সন্ধ্যার পর অফিস শেষ ছেলেটা বাসায় ফিরছিলো। তখনই আদনানের বন্ধুরা পাকড়াও করে ফেলল। কোনোর রকম ভয় না দেখিয়ে ঠান্ডা মাথায় ছেলেটাকে বোঝালো। শেষে বল দিলো বিয়ে না ভাঙলে তারা বড় ধরনের সমস্যা করবে। ঐ ছেলেটাকে কোনো কথাই বলতে দিলো না।
,,
থ্রেট দেওয়া শেষে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে রাত দশটার পর বাসায় ফেরে। এদিকে বাসায় এসে দেখে বাসার গেটে তালা দেওয়া। দূর থেকে ঘরের দরজাটাও দেখতে পাওয়া যায়, সেটাও লাগানো। আদনান দাঁড়িয়ে থেকে ভাবতে লাগলো যে কি হলো? মা গেলো কোথায়??
,,
হঠাৎ দেখতে পেলো তার প্রতিবেশি একজন লাইট নিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে।
-তুমি ছিলে কোথায়? (লোকটি)
-আমি একটু বাইরে.....
-তোমার মামা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, হসপিটালে ভর্তি আছেন। তোমার মা সেখানে গেছে। আর এই যে ঘরের চাবি। তুমি যদি চাও তাহলে মামার বাড়ি হয়ে হসপিটালে যেতে বলেছে তোমাকে।
,,
আদনান হসপিটালে গেলো না, বাসায় থাকলো। সব ঝামেলা এক পাশে রেখে একটা ঘুম দিলো। ভোর বেলা মায়ের ডাকে তার ঘুম ভাঙে। বাইরে থেকে মায়ের আওয়াজ আসতেই আদনান বিছানা থেকে নেমে দরজা খুলে দিলো।
-তুই রাতে কখন আসছিস? (কথাটা বলে তার মা ঘরে ঢুকলো)
-দশটায় (আদনান)
-জানিস কি হয়েছে?
-কি হয়েছে?
-রাত্রির বিয়েটা ভেঙে দিয়েছে। তোর মামার সাথে পাত্র পক্ষের অনেক ঝগড়া হয়। পরে সে উত্তেজিত হয়ে স্ট্রোক করে। আমাকে তোর মামি কল দিয়ে জানায়
-কেনো ভাঙলো?
-তারা কিছু বলেনি, মানে কোনো কারণ দেখায়নি
-ওহহ, এখন মামার কি অবস্থা?
-ডক্টর বলল সে আর একা চলতে পারবে না। কি হয় না হয় এখনো বোঝা যাচ্ছে না৷ তোর আরেক মামাও আসছে রাতে।
-ওহহহহ
-তুই একটু দেখে আয়
-না, আমি এমনিতে বেয়াদবি করে আসছি তাদের সাথে। তোমার ভাইদের সামনে আমি যাবো না
-অনেক বড় হয়েছিস, তোকে আমি জোর করতে পারবো না। বিবেকে বাঁধলে একটু গিয়ে দেখে আসিস
-রাত্রি এখন কোথায়?
-ও বাসায়
-তোমার ফোন টা দাও
-কেনো?
-ওরে একটু কল করতে হবে
-তোদের কথা না বললে হয় না?
-আমি ওসব ব্যাপারে কিছু বলব না, দাও তো ফোন টা
-ব্যাগে আছে
,,
আদনান এর মা আবার হসপিটালে যাবে, তাই আদনান এর জন্য রান্না কর রেখে যাবে। ঘরের কিছু কাজ আছে সেগুলো শেষ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
,,
এদিকে আদনান ফোনটা নিয়ে বাইরে আসলো। তারপর রাত্রির নাম্বারে কল করলো। নিজের ফোন থেকে কল করলে রাত্রি নাও ধরতে পারে তাই ঐই ব্যবস্থা নিলো।
,,
আদনান কল করলো দুইবার রিং হতেই রাত্রি কল রিসিভ করে বলল..
-হ্যাঁ ফুফু বলো (রাত্রি)
-আমি আদনান, কল কাটবি না কথা আছে (আদনান)
-.....(রাত্রি চুপ করেই ছিলো)
-বিয়েটা ভেঙে দিয়েছি
-আমার উপকার করতে গিয়ে, অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলেছেন। আসলে দোষটা তো আমারই আমি বলেছিলাম ভাঙতে। এর জন্য বাবার এই অবস্থা হবে, এটা জানলে আমি এমনটা করতে বলতাম না
-হুমমম
-আপনার সাথে কথা বললে আমার রাগ বাড়বে, আপনি ফোন রাখেন
-আমার ভালোবাসাটা?
-জানি না, মনে হয় সেটা মিথ্যে ছিলো
-বার বার তুমিই কিন্তু আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছো
-আপনাকে ভালোবাসলে আমি ভালো থাকতে পারবো না এটা আমি বুঝে গিয়েছি, তাই এই ব্যাপারে আমি আর....(রাত্রির কথা শেষ হওয়ার আগেই আদনান কল টা কেটে দিলো)
।।
।।
।।
অভিযোগ পত্র
Part : 5
Write : Sabbir Ahmed
____________________________
-আপনাকে ভালোবাসলে আমি ভালো থাকতে পারবো না এটা বুঝে গিয়েছি, তাই এই ব্যাপারে আমি আর... (রাত্রির কথা শেষ হওয়ার আগেই কল টা কেটে দিলো আদনান)
,,
আদনান এর ইচ্ছে হচ্ছে ফোনটাকে ঢিল মারতে, পরক্ষণেই মনে হলো এটা তার মায়ের। চিন্তা ভাবনা পরিবর্তন করে সে একটা টং দোকান থেকে একটা সিগারেট ধরিয়ে উদাস মনে কিছুক্ষণ টানলো। তারপর সেখান থেকে বাসায়।
,,
আদনানের মায়ের রান্না শেষ, উনি আবার হসপিটালে যাবেন৷ হসপিটালে যারা ছিলো তাদের জন্য খাবার নিয়ে নিলেন এক বাটিতে। আর একটা বাটি আদনান এর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন..
-এটা তুই নিয়ে তোর মামার বাসায় যাবি। গতকাল কি হয়েছে সেটা ভুলে যা। ওখানে রাত্রি ছাড়াও আরও দুই একজন থাকতে পারে। হয়তো সকালের রান্না এখনো হয়নি। তোর যেতে বিশ মিনিট সময় লাগবে। তুই তাড়াতাড়ি রওনা দে। আর হ্যাঁ রাতে ওখানেই থাকবি (মা)
-আমি যাবো না (আদনান অন্য দিকে তাকিয়ে মেজাজ দেখিয়ে বলল)
-হাত তুলতে বাধ্য করবি না, যেটা বলেছি সেটা কর,
,,
আদনান মায়ের কথাতে আবার মামার বাসায় গেলো। সেখানে গিয়ে দেখলো বাসায় রাত্রি আর একটা ছোট পিচ্চি মেয়ে দুজন চেয়ার পেতে বাসার ভেতরে দোতালার বেলকনিতে বসে আছে।
,,
আদনানকে দেখে রাত্রি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। আদনান দোতালায় রাত্রির কাছে গিয়ে বলল..
-কিছু খাবার, মা পাঠিয়েছে (আদনান)
-...(রাত্রি কিছু না বলে খাবারের ব্যাগ টা হাতে নিলো)
,,
আদনানের দৃষ্টি গেলো ছোট্ট সেই মেয়েটার উপর। বয়স সাত আট এর মতো হবে। আদনান দাঁত বের করে একটা হাসি দিয়ে বলল..
-নাম কি তোমার? (আদনান)
-নিঝুম (মেয়েটি)
-উনি তোমার কি হয়? (রাত্রি কে দেখিয়ে বলল)
-আমি কখনো দেখিনি তাকে, আম্মু উনার কাছে আমাকে রেখে গেছে
-এই মেয়েটা কে? (আদনান রাত্রি কে বলল)
-পাশের বাসার মেহমান, ওর মা এতক্ষণ এখানেই ছিলো। আমি একা তাই ওকে রেখে গেছে
-হুমম, আর তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? যা খেয়ে নে
-তুমি খেয়েছো?
-হ্যাঁ, না
-বুঝিনি
-দুটোই হ্যাঁ আবার না। তুই যা খেয়ে নে। আর শোন মা বলেছে পেছনে যা হয়েছে আমাকে ভুলে যেতে৷
-হুমমম
-দুপুরের রান্না তোর করতে হবে, কোনো কিছু লাগলে বলিস আমি এনে দিবো
-ঠিক আছে
,,
রাত্রি খেতে গেলো, আর আদনান পিচ্চি মেয়েটার সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো। রাত্রির খাওয়া শেষে তাদের দুজনের কাছে এসে দাঁড়ায়৷ আদনান রাত্রি কে দেখে বলে...
-আমি বাসার বাহিরের দিকে আছি। তোদের সামনের আম গাছের নিচে বেশ ছায়া। তোর কিছু লাগলে আমাকে ডেকে নিস (আদনান)
-ভেতরে থাকো
-...(আদনান রাত্রির কথার কোনে উত্তর করলো না)
,,
বাইরে এসে সেই জায়গায় অবস্থান করলো আদনান। এটা আবার রাত্রির রুমের পুব পাশের জানালা থেকে দেখা যায়। সেখানে থাকা কংক্রিটের বেঞ্চের উপর হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লো আদনান। গেটে থাকে দারোয়ান একবার এসে কথা বলতে নিলে তার কথা থামিয়ে দিয়ে সেখান থেকে পাঠিয়ে দেয়। আসলে আদনান এর কোনো কিছুই ভালো লাগছিলো মা, সে এখন যাই করছিলো তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে।
,,
গতকাল যা ঘটেছে তারপর আজ এই অবস্থায় এখানে আসতে হবে সেটা ভাবতেও পারেনি। আদনান মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলো ইহ জীবনে এ বাসায় সে আসবে না৷ কিন্তু এখানে আসতেই হলো তার।
,,
এদিকে রাত্রি সেই মেয়েটাকে পাশের বাসায় দিয়ে আসার সময় দেখে আদনান চিত হয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। রাত্রি ফেরার পথে আদনান এর কাছে গিয়ে বলল..
-ভেতরে ঘুমানোর অনেক জায়গা আছে, ভেতরে চলো (রাত্রি)
-আমি এখন তোদের শত্রু, শত্রু কে ভেতরে ডাকতে নেই, তুই যা ভেতরে ডিস্টার্ব করিস না (আদনান চোখ বন্ধ করেই বলল)
-এখানে অনেক গরম, ভেতরে চলো
-কি রে? আমি একটা কথা বললাম তোর কানে গেলো না? (এবার আদনান চোখ খুলে বলল)
,,
রাত্রি আর কোনো কথা না বলে আদনান এর পায়ের কাছে গিয়ে বেঞ্চে বসলো।
-রুমে যা, বাইরে অনেক রোদ৷ বড়লোক মানুষের ঝলসে যাওয়া ত্বক মানায় না (আদনান)
-তুমি তো এখানে শুয়ে আছো (রাত্রি)
-মা বলেছে তাই এখানে আছি
-ওহহহহ,
-আর আমরা বড়লোক না, তোদের টাকায় আমরা চলি। আমি জানি বাবা মারা যাওয়ার পর মামাই সব দেখছে। আমাদের কিছু আছে বলতে ঐ বাসাটাই
-এমন ভাবে বলতে হয় না
-এ তুই যা তো ঘ্যান ঘ্যান করিস না, আর তোর গিরগিটি মার্কা চরিত্র চেঞ্জ করিস
-আমি কি করলাম?
-সকালে কল করলাম, তখন আপনি করে বললেন। আমার সাথে হবে আপনার, আপনার ক্ষতি করে ফেলেছি হেন তেন, এখন আসছেন কথা বলতে তাই না? টাকা পয়সাওয়ালা মানুষ হইছেন, সেইরকম টাইপের বিহেভ দেখাবেন। আমাদের ভাই টাকা নেই আমরা নিচু হয়ে চলি
-তুমি আপনি করে কেনো বলতেছো
-দরকার আছে, আপনি যান ভেতরে গিয়ে রান্নার ব্যবস্থা করেন। আমার দুপুর হওয়ার আগেই খুদা লাগবে
-কি খাবে?
-যা আছে তাই রান্না করেন। আপনার আলাদা কিছু লাগলে বলেন আমি নিয়ে আসছি
-আচ্ছা দেখি কি আছে
-আর বেশি কথা বলবেন না আমার সাথে
-কেনো?
-আমার কষ্ট লাগে
-আমি কি করবো? সব দোষ তে আমারই হবে, আমি সব দিক থেকেই আটকানো। যাই হোক সে দুঃখ তুমি বুঝবে না
-আমার দুঃখ বুঝে লাভ নেই। যাবেন ভালো ঘরে, আনন্দ সুখে দিন কাটবে আপনার
-হইছে অনেক কথা শুনাইছো এখন উঠো, আমার সাথে আসো
-কেনো?
-আমি একা রান্না করতে পারি না একটু হেল্প করবে
-আমিও পারি না
-দুজনে মিলে করলে পারবো। আর দুপুর পর বাবাকে দেখতে হসপিটালে নিয়ে যাবা
-সত্যি রান্না পারিস না? (আদনান শোয়া থেকে উঠে বসলো)
-পারি একটু একটু
-তোর যে এখন বিয়ে হইতে নিয়েছিলো, তুই শ্বশুর বাড়ি গিয়ে কি করতি? ওহহ সরি, তোর তো বড় ঘরে বিয়ে হতো, সেখানে রান্না করার জন্য বুয়া আছে কয়েকটা
-আমি জানি না
-তোরে তো বিয়ে দেইনি জানবি কি করে? ভেঙেই তো দেওয়া হলো
,,
দুজন কথা বলতে বলতে কিচেনে আসলো। বাজার আগে থেকেই কিছু করা ছিলো তাই নতুন করে কিছু করতে হলো না৷ দুজনে মিলে রান্না শুরু করলো। রান্না করার সময় দুজনের মধ্যে হঠাৎ এক মধুর ঝগড়া শুরু হলো৷ আদনান তরকারি পাতলিয়ে নাড়া দিতে দিতে বলল..
-তুই যে রান্না পারিস না, এটা আগে জানলে তোকে ভালোবাসার কথাই বলতাম না (আদনান)
-কেনো? আমি এখন না হয় রান্না করতে পারি না, পরে শিখে নিতাম (রাত্রি)
-না হবে না, আমার বউ আগে থেকেই রান্নায় অনেক পটু থাকবে। ওমন মেয়ে দেখেই বিয়ে করবো
-মা তো আমাকে কিচেনে আসতে দেয় না
-আমার উনির সাথে আমার মন খারাপ হলে, আমার ইচ্ছে নতুন কোনে রেসিপি দিয়ে আমার রাগ ভাঙাবে, মন ভালো করে দিবে
-আচ্ছা এখন থেকে রান্না শেখার ট্রাই করবো, আর সাথে নতুন নতুন রেসিপি ও
-আমার আর আমার বউ এর কথার মধ্যে বার বার তুই ঢুকতেছিস কেনো? কথা গুলো কি আমি তোরে বলেছি?
-আমি কি তোমার কেউ না?.
-তুই আমার মামাতো বোন, ওকে?
-হুমম কিন্তু তুমি যে আমাকে ভালোবাসো
-বেসেছিলাম, এখন নেই আজ সকালে সব উড়িয়ে দিয়েছি
-আমি তোমার ভালোবাসা টা বুঝতে পারি, তোমার কথায় তোমার চলনে, আমার প্রতি তোমার রাগ, তোমার চোখের চাহনি সবকিছুতে ভালোবাসার প্রকাশ ঘটে
-ভুল বুঝেছিস
-না ভুল না। তুমিই বলো আমি তোমাকে বাবার কথার উপর রিজেক্ট করে দেওয়ার পর ও কেনো আমার বিয়েটা ভাঙলে?
-হুহহ, আগে কথা দিয়েছিলাম তাই
-সবকিছু মনের মধ্যে চাপা রেখে বড় বড় মিথ্যা কথা বলো কিভাবে?
-আমি এমনই
-তা জানি, সবসময় এমন হলে আমার কি হবে?
-আমি বুঝতেছি না, তুই আমার কথার মধ্যে নিজেকে আনতেছিস কেনো?
-আমি যে বুঝতে পারি তুমি আমার কি
-দেখ তোর এ বেলায় এক কথা, অন্য বেলায় আরেক কথা আমার ভালো লাগে না। তোর মাথা খারাপ তোর কথার কোনো ঠিক নাই৷ তুই ভাত টা ভালো ভাবে দেখ, পুড়িয়ে ফেলিস না যেন। না হলে সব তোকেই খেতে হবে
,,
আদনানের কথায় কান দিয়ে রাত্রি বলল....
-আচ্ছা একটা কথা বলি?(রাত্রি)
-বল (আদনান)
-আমার যদি অন্য কারও বিয়ে হয়ে যায় তুমি কি করবে?
-আমি বেঁচে থাকতে হবে না
-বিয়ের সময় আমাকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে?
-বাচ্চাদের মতো কথা বলিস কেনো? আমি কোনো নায়ক না, যে বিয়ে বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে। আর নিয়ে গেলে মামার যা অবস্থা এখন আধমরা তখন তো....
-তাহলে তুমি বেঁচে থাকতে বিয়ে আমার বিয়ে হবে না কেনে?
-কারণ আপনার বিয়ে হওয়ার আগেই আমি দুনিয়া থেকে বিদায় নিবো
-এটাকে কি ভালোবাসা বলে?
-হুমমম
-তোমার ভালোবাসা এমন কেনো?
-কারণ আপনার প্রতি আমার পাহাড় পরিমাণ অভিযোগ
।।
।।
।।
অভিযোগ পত্র
Part : 6
Write : Sabbir Ahmed
_____________________________
-তোমার ভালোবাসা এমন কেনো?(রাত্রি)
-কারণ তোমার প্রতি আমার পাহাড় পরিমাণ অভিযোগ (আদনান)
-হুমমম বুঝেছি
-আমার সামনে আর এ ধরনের কথা উঠাবেন না
-ঠিক আছে
,,
দুপুরের খাবার শেষ করার পর দুজন হসপিটালের উদ্দেশ্য রওনা হলো। দুজন দুটে রিকশা নিয়েছে, এ কাজ টা আদনানের ছিলো। দুজন হসপিটালের সামনে নামলো। রাত্রিকে ভেতরে পাঠিয়ে সে বাইরে দাঁড়িয়ে রইলো। আদনানের ভেতরে যেতে অভিমান এর চেয়ে বেশি লজ্জাই করছিলো। মামার সাথে এরকম করে আবার তার সামনে যাওয়া, তাই আদনান ভেতরে যায়নি।
,,
চারদিন পর রিলিজ হয় রাত্রির বাবার। ডক্টর বলে দিয়েছে সে কখনো আর পুরোপুরি সুস্থ হতে পারবে না৷
কথা বললেও অতি অল্প। চলা ফেরা করা একদম নিষেধ, শুধু দরকারে হসপিটালে যাওয়ার কথা বলেছে।
,,
রাত্রির ভাই না থাকায় তাদের পরিবারের টুকটাক কাজ করতে বেশ সমস্যা সমস্যা হচ্ছিল, তবে আদনান থাকায় তা অনেকটাই লাঘব হয়েছে।
,,
আদনান তাদের দেখাশোনা করলেও ও বাসার কারও সাথেই তেমন কথা হতো না। কোনো প্রয়োজন হলে আদনান কে ডাকা হতো সে কাজ করে দিয়ে চলে যেতে প্রয়োজন হলে এখানে থাকতো।
,,
মামাকে ডক্টর এর কাছে আনা নেওয়া ঔষধ এনে দেওয়া, আর মামার দুটো গুরুর ফ্রামের দেখাশোনা করতো, এমনিতে সেগুলো তে আত্মীয়স্বজনরা কাজ করতো। তাই এতোটা পরক্ষ করে দেখার ছিলো না৷
,,
একদিন রাত্রি কলেজ থেকে বাসায় ফিরছিলো, আদনান সেদিন একটা কাজে তাদের বাসায় ছিলো। রাত্রি বাসার গেট দিয়ে ঢুকছে আর আদনান বাসার ভেতরে এক কোণা থেকে দাঁড়িয়ে দেখতে পেলো রাত্রি চোখের পানি মুছতে মুছতে ভেতরে ঢুকলো।
,,
আদনান ভাবলো হয়তো বাবার কথা মনে করে ভাবছে। আবার পরক্ষণেই তার মন কেমন যেন করে উঠলো, সায় দিলো না। সাথে সাথে আদনান ডাক দিয়ে থামালো..
-এই দাঁড়ান (আদনান সেদিনের পর থেকে এখনো আপনি বলেই ডাকে)
-....(রাত্রি দাঁড়ালো)
-কি হয়েছে? চোখে পানি কেনো?
-কিছু না
-কলেজে কিছু একটা হয়েছে, আমি জানতে চাচ্ছি কি হয়েছে
,,
রাত্রি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করে বলল..
-একটা ছেলে আমার পিছু পড়ে আছে অনেকদিন হলো। আমি বেশ কয়েকবার মানা করেছি আমাকে যেন ফলো না করে। তারপর ও আমাকে ফলো করতো এবং আমাকে জ্বালাতো। আজ আমাকে সে প্রপোজ করে বসে, আর আমি মানা করতেই আমার গালে থাপ্পড় দেয় (রাত্রি)
-মেয়েরা তো ছেলেদের দেখলেই বুঝতে পারে ছেলেটা কেমন। বলেন তো ছেলেটা কেমন? সত্যি কি ভালোবাসে?
-না, ও বখাটে, দেখতে বাজে লাগে আর মনে হয় নেশা করে।
-আপনার ক্লাস এর
-না, হয়তো কোনো বড় ভাই বা অন্য কিছু আমি জানি না৷ তবে সকাল সন্ধ্যা কলেজেই থাকে
-চলেন
-এখন কই যাবো?
-কলেজে
,,
আদনান রাত্রির হাত শক্ত করেই ধরলো। বাসার বাইরে এসে দুজন রিকশায় তারপর কলেজে পুরো সময়টাতেই আদনান রাত্রির হাতটা শক্ত করে ধরেছিলো।
কলেজ ক্যাম্পাসে আসার পর রাত্রি দূর থেকে সেই ছেলেটাকে দেখিয়ে দিলো। এটাও বলে দিলো যে লাল খয়েরী কালার শার্ট পরিধিত।
-আপনি একটু দাঁড়ান আমি আসতেছি (আদনান)
-এই কই যাও তুমি? ওরা অনেকজন, আর ভালো না ওরা, যা হবার হয়েছে বাসায় চলো (রাত্রি)
-আমি কোনো সিনেমার নায়ক না যে ঢিসুম ঢিসুম সবাইরে পেটাবো, একটু দাঁড়ান আসতেছি
-আবার যদি সমস্যা করে
-সমস্যা যাতে না করে সেই ব্যাপারে কথা বলতে যাচ্ছি
,,
রাত্রি আরও মানা করলো, কিন্তু নাছোড়বান্দা আদনান তার কথায় কোনো কর্ণপাত করলো না। ভদ্রতার সহিত সেই ছেলেগুলোর সামনে গেলো। আদনান তাদের দেখে বুঝলো এরা অনেক সিনিয়র, এখানে এমন কিছু করতে হবে, যাতে এক ঢিলেই সব শেষ হয়। আদনান তাদের সামনে হুট করে এসে দাঁড়ানোর পর ছেলেগুলো বলল..
-কি রে কিছু বলবি? (অন্য একজন)
-জ্বি ভাইয়া বলব (আদনান)
-তো বল
-ভাইয়া আমি আসলে রং চিনি না
-কি বাজে বকছিস? কিসের রং চিনিস না?
-ঐ যে ভাইয়াটা যে শার্ট পরে আছে সেটা কি লালা খয়েরী??
-হ্যাঁ কি সমস্যা??( রাত্রিকে উত্যক্ত করা ছেলেটা)
,,
আদনান এর পায়ের কাছে কিছু ইট ছিলো সেগুলো ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প আাকারে সাজানো। আদনান সেখান থেকে একটা ইট নিয়ে গিয়ে খুব দ্রুত গতিতে সেই ছেলেটার মাথায় মারলো। আদনান খ্যাপাটে পাগলের মতো হয়ে গেলো, তার এমন খ্যাপাটে ভাব দেখে বাকিগুলো গালি দিতে দিতে দৌড়ে পালায়।
,,
সেই ছেলেটার মাথা ফেঁটে রক্ত বের হচ্ছে। শুয়ে সে কাতরাচ্ছে। আদনান এর খ্যাপাটে ভাবটা এখনো যায়নি, বোঝাই যাচ্ছিলো মনের মধ্যে কি পরিমাণ রাগ জমাছিলো। আদনান আবার ইট ফেলে দিয়ে সেই ছেলেটাকে দুই গালে দুটো থাপ্পড় দিয়ে চলে আসে, আর সেখান থেকে দ্রুত রাত্রিকে নিয়ে বাসায় ফেরে।
,,
বাসায় আসার পর....
-এগুলো কোনো কাজ করলা??(রাত্রি)
-কি এমন করলাম? (আদনান)
-আমার তো কলেক যাওয়ার বন্ধ হয়ে যাবে?
-কেনো বন্ধ হয়ে যাবে?
-আজ যেটা করলা৷ সেটার জন্য
-আরেহহ গাধি, সরি। শোনেন তারা তো জানে না আপনি আমার কে? আমি গিয়ে কিছু বলিনি শুধু শার্টের কালার দেখেই মেরে দিয়ে আসছি। শালার সাহস কতো আমার পরিবারের মেম্বার কে ডিস্টার্ব করে।
-....(রাত্রি মুচকি মুচকি হাঁসছে)
-আর এই যে আপনি, কি মনে করেন? সারাজীবন আপনাদের ক্ষতি করেই যাচ্ছি তাই না? আমি যাই করি না কেনো আপনাদের জন্য খারাপ হয়ে যায়। তো আমি এখানে থেকে কি করবো? আসি
,,
আদনান রাগ দেখিয়ে গেট থেকে বের হয়ে যায়, রাত্রি কয়েকবার ডাকলেও পেছন ফিরে তাকায় না৷
রাত্রি একটু ভয় নিয়ে বাসার ভেতরে ঢুকলো, কারণ এতক্ষণ যা হয়েছে তা কেউ জানে না দুজন ছাড়া।
,,
রাত্রিকে কলেজ থেকে দেড়ি করে ফিরতে দেখায় রাত্রির মা বলল..
-আজ এতো দেড়ি কেনো? (মা)
-ঐ একটু হয়ে গেছে (রাত্রি)
-আচ্ছা অনেক বেলা হয়ে গেছে, আয় ফ্রেশ হয়ে নে
-আচ্ছা
-আর আদনান ছেলেটা কই গেলো? সেই কখন থেকে দেখছি না ওকে। আজ তোর বাবাকে ডক্টর এর কাছে নিয়ে যেতে হবে
-হায় হায় মশাই তো আমার উপর রাগ দেখিয়ে কেটে পড়েছে এখন কি হবে?(রাত্রি মনে মনে ভাবছে)
-তুই কি বাইরে ওকে দেখছিস?
-না মা
-ছেলেটা গেলো কই?
-সমস্যা নেই, আজ আমি যাবোনি
-তুই তোর বাবাকে টানতে পারবি? ঐ ভালো পারে৷ আচ্ছা দেখি আসে কি না? ওর তো জানায় কথা যে আজ যেতে হবে
,,
মা কে পাশ কাটিয়ে রাত্রি রুমে আসলো। সে আর কি ফ্রেশ হবে, একসাথে দুটো টেনশন কাজ করছে তার।
একে তো আদনানের মারামারি করে আসে। আর এখন বাসা থেকে উধাও হওয়া। রাত্রি ফ্রেশ হওয়ার কথা বলে বিছানায় শুয়ে থাকে, কলেজের ড্রেসটাও সে চেঞ্জ করেনি। নানান চিন্তা ভাবনা করতে করতে সে ঘুমিয়ে যায়।
,,
ঘন্টা খানেক পর রাত্রির মা এসে ডাকাডাকি শুরু করে। রুমের বাইরে থেকে উনি একনাগাড়ে রাত্রিকে কথা শোনাতে থাকে..
-মেয়েটা যে দিন দিন কি হচ্ছে আল্লাহ ভালো জানে। কলেজ থেকে এসে নাওয়া নেই খাওয়া নেই ঘুম। আমি এদিকে ছাদে কাপড় মেলে দিয়েছি, ভর দুপুরে বৃষ্টি এসে কাপড় গুলো ভিজিয়ে দিয়ে গেলো, এতো ডাকলাম তাও ওর উঠার নাম নেই। সব কি আমাকেই করতে হবে? এই শুনিস না তুই? (রাত্রির মা চিল্লাতে চিল্লাতে কথা গুলো বলল)
-আরে উঠেছি তো। বৃষ্টি হবে আগে বুঝতে পারলে ভিজতাম।
রাত্রি কথাটা বলে তার রুমের জানালার পর্দা সড়িয়ে দেখলো বৃষ্টি হয়েছে আর এখনো গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।
,,
বৃষ্টির দৃশ্য দেখা শেষে পর্দা লাগাতে যাবে এমন সময় চোখ যায় তার বাসার সামনের সেই আরামদায়ক কংক্রিটের বেঞ্চ টায়। আদনান কাঁক ভেজা হয়ে শুয়ে আছে আর আপনমনে সিগারেট টানছে।
,,
রাত্রি একটু রাগ করে পর্দা লাগিয়ে দেয়। আদনান এর খারাপ কিছু সে দেখতে পারে না, আবার সেটা যে আদনান কে বলবে সে সাহস ও তার হয়না৷ কথা বলতে নিলে অনেক কথা শুনিয়ে দেব সে।
,,
রাত্রি ফ্রেশ হয়ে খাওয়া শেষ করে আবার রুমে আসলো।
সে রুমে আসার পরপরই তার মা এসে বলল..
-আদনান আসছে (মা)
-হুমম দেখেছি (রাত্রি)
-ছেলেটা আমাদের সাথে রাগ করে আছে তাই না?
-জানি না আমি
-দেখ আমি ভেতরে আসতে বলি, ও বলে কি কাজ করতে হবে। আমি যাই বলি তার উল্টো টা বলে। পরে আবার বলে বেয়াদবি মাফ করবেন। আমার মনে হয় ছেলেটা তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে আমাদের সাহায্য করছে। সে যাই করুক অন্য কেউ থাকলে ওকে বাসায় তাকতাম না। আচ্ছা একটা কথা
-বলো
-যদিও এটা বলা ঠিক না
-বুঝেছি কি বলাব, আমার আর ওর মধ্যে কিছু নেই। এখন সে বোন হিসেবেই আমাকে দেখে, সে তার ভুল বুঝতে পেরছে
-আমি তো এটা..
-মা এসব কথা ছাড়ো
,,
মা চলে যাওয়ার পর রাত্রি জানালার ধারে আসে, এবার পর্দা পুরো না সড়িয়ে একটু ফাঁক করে রেখে আদনানকে দেখতে থাকে।
ছেলেটার সিগারেট খাওয়া শেষ। ওভাে শুয়ে থেকে দুহাতের আঙুল দিয়ে কি সব বানাচ্ছে সে৷ আঙুলের বিভিন্ন আঁকার দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করছে। ছোটবেলা থেকেই আদনান এর অনেক ছেলেমানুষী দেখেছে রাত্রি, ছেলেটার সব কিছু তার ভালো লাগে। তবে ঝগড়ার সময় দুজন এতোটাই রেগে যায় তাদের আর কিছুই মাথায় থাকে না৷ একে অপরকে আঘাত করলে বাঁচে।
,,
এসব ভাবতে ভাবতে রাত্রি পরক্ষণেই ভাবে তাদের মাঝে ঝগড়া টা আর নেই। আদনান তাকে এখন অনেক সম্মান দেখিয়ে আপনি বলে ডাকে।
এটা তো আদনান এর অভিমান। মনে মনে সে অনেক ভালোবাসা রাত্রিকে না হলে আজ যা করলো সে।
,,
বিকেলে ডক্টর এর কাছে মামাকে নিয়ে গিয়ে সন্ধ্যায় বাসায় ফেরে আদনান। ডক্টর ঔষধ চালিয়ে যেতে বলেছে আগের মতোই, আর যা যা বলেছিলো সব তার মামিকে বলে এখন বাসার উদ্দেশ্য রওনা হবে তখন মামি বলল..
-কিছু খেয়ে যাও (মামি)
-বেশি দরকার হলে কল কইরেন আমি তাড়াতাড়ি চলে আসবো (আদনান)
,,
রাত্রির মা আদনান কে কিছু বলল না৷ বাসা থেকে বের হওয়ার আগে আদনান কে ঠেকায় রাত্রি..
-চলে যাচ্ছো? (রাত্রি)
-হুমম, তবে একবারে না(আদনান)
-তুমি আজ ওরকম বৃষ্টিতে ভিজলে কেনো?
-বৃষ্টিতে ভেজার কৈফিয়ত কি আপনাকে দিতে হবে?
-হুমমম
-কেনো?
-কারণ আপনি অসুস্থ হলে আমাদের দেখে রাখবে কে?
-আল্লাহ
-উনি তো আপনার মাধ্যমে আমাদের সাহায্য করছেন, সেই আপনি অসুস্থ হলে আমাদের সমস্যা। আর সিগারেট খান কেনো? আমি না ফেলে দিলাম
-ইচ্ছে হয়েছে খেয়েছি, আর খাওয়া আমি বাদ দেইনি
-দিবেন
-না
-গন্ধ মুখে আমি আমার ঠোঁট রাখতে পারবো না...
।।
।।
।।
অভিযোগ পত্র
Part : 7
Write : Sabbir Ahmed
_____________________________
-ইচ্ছে হয়েছে খেয়েছি, আর খাওয়া আমি বাদ দেইনি (আদনান)
-দিবেন (রাত্রি)
-না
-গন্ধ মুখে আমি আমার ঠোঁট রাখতে পারবো না
-আমি কখনো রাখতেও দিবো না
-আচ্ছা হয়েছে, এখন কই যাচ্ছো?
-আমার বাসায়
-মা যে খেয়ে যেতে বলল, কথা শুনলে না কেনো?
-আমার মা রান্না করে বসে আছে
-প্রচন্ড জেদ তোমার
-জেদের তো কিছু নেই, সামনে থেকে সড়ে দাঁড়ান, আমি যাবো
-আমি যতই তোমার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছি তুমি ততই দূরে যাচ্ছে
-দেখেন মেজাজ গরম করানো কথা বলবেন না। আপনি যে কি সেটা আমার জানা হয়ে গেছে, আপনি আমায় ফিরিয়ে দিয়েছিলেন আমি সেদিন হারিয়ে গিয়েছি... (রাত্রিকে ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে দিয়ে আদনান বাসা থেকে বের হয়ে যায়)
-কাল যখন আসবা তখন ধাক্কা দেওয়ার মজা বুঝাবো বুইড়া বেডা একটা। আমাকে ভালোবেসে একজনকে হসপিটালে পাঠিয়ে দিয়েছে আর এখন বলে আমার মাঝে থেকে নাকি হারিয়ে গেছে। মিথ্যুক এর বস্তা একটা৷ (রাত্রি কথাগুলো উচ্চস্বরে বলল যাতে আদনান শুনতে পারে)
,,
তবে আদনান এতো দ্রুত বের হয়ে গেছে যে রাত্রির কথা আর শুনতে পায়নি। আদনান বাসায় গিয়ে দেখে তার মা বিছানায় শুয়ে আছে, তবে তাকে দেখে মনে হচ্ছে, সে অস্বস্তিতে আছে। আদনান মায়ের মাথার কাছে বসে বলল....
-রান্না হয়েছে? (আদনান)
-রান্না হয়েছে, তুই খেয়ে নে, সব টেবিলে রাখা আছে (মা)
-তুমি খাবে না?
-আমার যেন কেমন লাগছে, তুই খেয়ে নে
-তোমার শরীর খারাপ? জ্বর হইছে? (আদনান শরীরে হাত রেখে বলল)
-আরে না পাগল, তেমন কিছু না এমনি একটু অস্থির অস্থির লাগছে
-ওহহহহ
-আচ্ছা যা তুই খেয়ে নে
-আচ্ছা
,,
আদনান খাবার টেবিলে যাচ্ছিলো, তখন তার মা আবার ডেকে বলল..
-এই শোন একটু (মা)
-হ্যাঁ বলো (আদনান কাছে এসে)
-তোর মামার কি অবস্থা? কেমন আছে?
-আজ সন্ধ্যায় গিয়েছিলাম, আগের চেয়ে সুস্থ
-সে কি আর পুরোপুরি সুস্থ হবে না?
-ডাক্তার তো আগেই না বলেছে, এখন সবকিছু আল্লাহর হাতে
-হুমম ঠিক বলেছিস। তুই একটু ওদের দেখে রাখিস,
-তাদের দেখে রাখতে হবে না, টাকাপয়সা আছে, টাকাপয়সা তাদের দেখে রাখবে
-দেখ বাবা টাকাপয়সা সবসময় কাজে লাগে না।
-আচ্ছা তোমার এমনিতে ভালো লাগছেনা, তুমি কথা বলো না আর৷ ওদের নিয়ে টেনশন করো না, টেনশন করে তোমার শরীরের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে
-আচ্ছা যা এখন খেয়ে নে
-হুমমম
,,
আদনান খাবার খেয়ে মায়ের রুমে আরেকবার আসলো। দেখলো মা ঘুমিয়ে আছে। দূর থেকে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ মাকে দেখে কি যেন ভেবে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো৷
,,
পরদিন সকাল বেলা...
প্রতিদিন মায়ের ডাকে ভাঙে তার, কিন্তু আজ মনে হয় আগেই উঠে পড়লো এমনটা মনে হচ্ছিলো আদনান এর। হঠাৎ তার মনে পড়লো মা বলেছিলো তার একটু খারাপ লাগছে৷ আদনান ভাবলো জ্বর মনে হয় আসছে৷ মা মা ডাকতে ডাকতে মায়ের রুমে ঢুকে বলল...
-এখনো উঠোনি অনেক বেলা হয়েছে, রান্না করবা না??? (আদনান)
-....(মায়ের কাছে থেকে কোনো উত্তর পেলো না)
-বললাম যে জ্বর আসবে, এখন তো তাই হলো...
,,
মা যখন কিছু বলছিলো না তখন আদনান এর মনে খটকা লাগলো। আদনান কাছে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে কয়েকবার ডাকলো তবুপ সাড়া দিলো। আদনান এর কণ্ঠস্বর এবার নিচু হতে থাকলো ভয়ে। মায়ের হাত দেখলো অনেক ঠান্ডা, নিশ্বাস নেওয়ার অাওয়াজ ও পাওয়া যাচ্ছে না, সে সবকিছু বুঝে একটা চিৎকার করলো।
,,
আশেপাশের বাসা থেকে কয়েকজন মহিলা আসলো তারা দেখে বুঝতে পারলো আদনান মা আর বেঁচে নেই। পরিচিত কয়েকজন এসে কান্নাকাটি শুরু করলো। আদনান অনেকক্ষণ একজায়গায় চুপ মেরে বসেছিলো। তারপর নিজের ফোনটা বের করে দুই মামার বাসায় খবর জানালো, বন্ধুদের খবর দিলো।
,,
ঘন্টা খানেক এর মধ্যে বাসায় অনেক পরিচিত লোকের আগমন, রাত্রি আর তার মা ও আসছে। আদনান কান্না করতে পারছিলো না, কথাও বলতে পারছিলো না, শুধু হাঁসফাঁস করছিলো কিছুক্ষণ পর পর। মায়ের মৃত্যুতে কষ্ট তার ভেতরে হয়তো সহ্য করতে পারছে না।
,,
সেদিন দুপুর পর মায়ের দাফন কাফন সম্পন্ন হয়। বিকেল নাগাদ একে একে সবাই চলে যেতে শুরু করে। এখন বাসায় শুধু রাত্রি, আদনান এর বড় মামা আর তার পরিবার আছে। ঐদিকে বোনের মৃত্যুর খবর শুনে আদনান এর ছোট মামা অসুস্থ হয়ে গেছেন আরো। অসুস্থতার কারণে উনি আসতে পারেননি। সে বাসায় একা, তাই রাত্রির মা আগেই চলে গেছে।
,,
এদিকে বড় মামা বলল, তার নাকি পরিবার নিয়ে আজই যেতে হবে। আদনান কে রাত্রিদের বাসায় থাকতে বলল। পরে আদনান এর একটা ব্যবস্থা করে দিবে। এটা বলে সে ও বিদায় হলো সন্ধ্যার পর পর।
,,
বড় মামার কথা মানতে নারাজ আদনান, সে বাসায় বসেই আছে আর রাত্রি তাকে তার বাসায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
-রাত হয়ে এলো, চলো যাই। যেতে তো সময় লাগবে (রাত্রি)
-আপনি যান, আমি যাবো না (আদনান)
-মামা কি বলে গেলো?
-উনি যাস্ট বলার কথা বলে গেছে, না বললে কেমন দেখা যায় এই জন্য বলে গেছে
-আচ্ছা উনার কথা বাদ দাও, জানোই তো কেমন মানুষ। তুমি চলো
-নাহহ আমার মা আসবে
-এরকম করে না, তুমি ভেঙে পরো না, ফুফুর জন্য দোয়া করো
-মা ভাত নিয়ে আসবে মনে হয়, ভাত আনতে গেছে
-আচ্ছা সে আসুক, এখন চলো
-এখানে এসে আমাকে না পেলে বকা দিবে
-আমি ফোন করে আমাদের বাসায় যেতে বলব
-আমায় মিথ্যে আশ্বাস দিচ্ছেন কেনো? মা তো আসবে না
,,
কথা বলতে বলতে অনেক রাত হয়ে গেলো। রাত্রি বুঝতে পারলো আজ একে নিয়ে যাওয়া হবে না। রাত্রি একটা চেয়ার পেতে আদনান এর থেকে কিছুটা দূরে বসলো। দুজন বাসার সামনের বেলকনিতে বসে আছে, রাত তখন বারোটা ছুঁইছুঁই।
,,
-এভাবেই বসে থাকবে? (রাত্রি)
-আপনি আমার রুমে গিয়ে ঘুমান (আদনান)
-আর তুমি?
-ঘুম পেলে আমি মায়ের রুমে গিয়ে ঘুমাবো
-তুমি এখন চলো, কখন থেকে মাটিতে পা মেলে বসে আছো
-আমার এমনই থাকতে ইচ্ছে করছে
-ভেতরে চলো, বাইরে থাকতে ভয় করছে
,,
আদনান কিছুক্ষণ বসে থেকে উঠলো।
-তুমি মায়ের রুমে যেয়ো না, আমার একা একা ভয় লাগবে আমরা একই রুমি থাকি(রাত্রি)
-হুমমম(আদনান রাত্রির অবস্থা বুঝে রাজি হলো)
,,
আদনান এর বিছানায় শুয়ে পড়লো রাত্রি।
-আমি এখানেই থাকবো? (আদনান)
-হুমমম এখানেই
,
আদনান বিছানায় শুয়ে বিপরীতমুখী হয়ে মুখ চেঁপে কান্না করতপ থাকে।
আদনান এর কান্নার শব্দ রাত্রির কানে পৌঁছাতে সে ও কান্না করে ফেলে
,,
এভাবে কিছুসময় পার হওয়ার পর...
-এভাবে কান্না করলে মাথা ব্যাথা করবে, একটু ধৈর্য ধরো(রাত্রি)
-...(রাত্রির কথা শুনে আদনান এর কান্না যেন আরও বেড়ে যায়)
-তুমি এমন করলে হবে? আর আমরা আছি তো তোমার সাথে, তুমি একা না। আর কাউকে পাও আর না পাও আমি আছি
-.....(আদনান কিছু বলল না)
-তুমি আমার সাথে কাল যাবে হ্যাঁ?
-এখানে কে থাকবে? (কান্না করে)
-এটা ফাঁকাই থাকবে, তুমি একা থাকতে পারবে না। একা থাকলে সমস্যা হবে।
-আপনাদের বাসায় থাকলেও সমস্যা হবে
-কেনো হবে? তুমি পর মানুষ?
-হুমমমম
-আমরা তো কখনো মনে করিনা
-এখন ঠিকই করবেন
-কি যে বলো না তুমি
-আপনি কাল সকালে চলে যাবেন। আমি এখানে একাই থাকবো। এখানে থাকলে মনে হবে মা আমার সাথেই আছে
-একটু বোঝার চেষ্টা করো ফুফু নেই
-আমি বুঝি, কিন্তু আমি কিভাবে বাঁচবো বুঝতেছি না। আমার মাথা কাজ করছে না বুকের মধ্যে চাপ দিয়ে আসছে
-তুমি এমন করলে আমার কি হবে?
-আপনার তো পরিবার আছে
-তুমি আমার জীবনের একটা অংশ
-এ স্বপ্ন আর দেইখেন না আপনি
-এটা স্বপ্ন না, তুমিই আমার জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ৷ তোমাকে ভালো থাকতে হবে...
।।
।।
অভিযোগ পত্র
Part : 8
Write : Sabbir Ahmed
___________________________
-এটা স্বপ্ন না, তুমিই আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ। তোমাকে ভালো থাকতে হবে (রাত্রি)
-অনেক রাত হয়েছে, এখন কথা না বলে ঘুমিয়ে পড়াই ভালো (আদনান)
-কথা বলব না, আগে বলো তুমি আমার সাথে যাবে কাল
-হুমম যাবো
-যাক খুশি হলাম। আমি ছোট বেলা থেকে তোমার কাছে থেকে যত দুষ্টামি করছি এখন তার বিপরীত টাই করবো। তুমি আমায় এড়িয়ে চলো না যেন। আর নিজেকে একা মনে করবে না
,,
রাত্রির কোনো কথাই আদনান কানে তুলল না, আর উত্তর ও করলো না।
এদিকে রাত্রি কথা বলতে বলতে কখন যে চোখ বন্ধ করে ফেলে সেটা বুঝতে পারনি।
,,
রাত্রি যখন চোখ খুলল তখন সকাল বেলা। বিছানার অন্য পাশে খেয়াল করে দেখলো আদনান নেই। রাত্রি আলসেমি ভেঙে বিছানা থেকে নামলো। বাইরে এসে দেখে বেলকনির এক কোণে চেয়ার পেতে মন মরা করে বসে আছে। রাত্রি যানে এই শোকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কিছু নেই।
,,
রাত্রি ভেতরে গিয়ে মুখ ধুয়ে আবার আদনান এর নিকটে আসে।
-চলো আমাদের বাসায় (রাত্রি)
-হুমমম (আদনান)
,,
একবার বলতেই আদনান উঠে দাঁড়ালো, রুম থেকে তালা এনে দরজায় আর গেটে লাগিয়ে দিলো। তারপর বলল..
-আমি কিন্তু সন্ধ্যায় এখানে আসবো, না হলে আমার ভালো লাগবে না (আদনান)
-এখানে একা আসবে? (রাত্রি)
-সমস্যা নেই আমি থাকতে পারবো। আপনার কথা আমি শুনছি, আপনিও আমার কথা শুনবেন
-আচ্ছা ঠিক আছে, মা যদি আটকায় তবুও তোমার এখানে ব্যবস্থা আমি করব। এখন তুমি আপনি আপনি করে বলো না তো। গত এক মাসের বেশি সময় হলো এটা বলছো
-আমি তো বলেছি তুই তে আর যাবো না
-তাহলে তুমি করে বলো
-না, আপনাদের টাকা বেশি আপনি করেই বলব
-হুহহ আমি জানি তুমি আমার কথা শুনবে না, আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি যখন যা খুশি বলতে পারো।
,,
দেখতে দেখতে দশ দিন পার হয়ে গেলো আদনান এর মা মারা গেছে।
আদনান এর এই শোকের সময় রাত্রি আর রাত্রির মা পাশে দাঁড়িয়েছে।
আদনান এখন একটু স্বাভাবিক চলাফেরা করে, এই বাসার দুই একটা কাজ করে। তার মন খারাপ হলে একবেলা খায় তো অন্য বেলা হাজার বললেও খেতে চায় না। আদনান আর একটা সমস্যা করে, সেটা হলো সন্ধ্যা হলেই সে একা একা নিজের বাসায় চলে যাবে। সারারাত কান্না করে চোখমুখ ফুলিয়ে সকাল বেলা রাত্রিদের বাসায় হাজির হবে। রাত্রিও নিয়ম করে প্রতিদিন সকালে বকা দিতো। কিন্তু আদনান তার কোনো কথায় কানে তুলতো না।
,,
দেখতে দেখতে দু মাস পার হয়ে গেলো আদনান এখন তার মামার ব্যবসার হাল ধরেছে। পারিশ্রমিক হিসেবে সে কিছু বেতন চেয়ে নিয়ে থাকে। তার মামা বলেছিলো ব্যবসা টা আদনান এর সে যেমন ইচ্ছে চালাবে। কিন্তু আদনান মুখের উপর বলে দিয়েছিলো আমি এ ব্যবসার কর্মচারী মাত্র তাছাড়া কিছু না৷
,,
আদনান একদিন কাজ থেকে বাসায় ফিরে দেখে, তার বড় মামা এসেছেন, সাথে একজন যুবক ছেলে। ছেলেটিকে চিনতে পারেনা সে। বড় মামা আদনান কে ডেকে ছেলেটার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। আদনান পরিচিত হবার পর মামার কাছে থেকে জানতো পারলো এই ছেলেটা রাত্রিকে দেখতে এসেছে।
,,
এদিকে মামী আদনান কে ডেকে আলাদা ডেকে নিলো।
-ছেলেটাকে দেখেছিস? (মামী)
-জ্বি (আদনান)
-কেমন দেখতে?
-মাশাআল্লাহ ভালোই
-ছেলে একটা ব্যাংকের শাখা অফিসের ম্যানেজার। আবার শুনেছি ছেলের বাবা বড় কোম্পানি আছে, সেখানে ছেলেরও কিছু শেয়ার আছে। আবার তার একটা মাত্রই ছেলে
-....(টাকার পেছনে যে সুখ বসে থাকে এটা মামীর ছটফটানি দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো)
-কি রে তুই কিছু বলছিস না যে
-আমি বললে হবে? ও রাজি?
-না
-কেনো?
-ও আমাকে সোজা বলে দিয়েছে, তোকে ছাড়া বিয়ের কথা সে চিন্তায় ও আনবে না। আমাতে তে থ্রেট দিয়েছে যে আমি জোর করলে সে উল্টাপাল্টা কিছু করে বসবে
-এগুলো কোনো কথা?
-ও কই?
-কই আবার ওর রুমে
-আচ্ছা ছেলেটা রাত্রিকে দেখেছে?
-হ্যাঁ দেখেছে আর পছন্দ হয়েছে, রাত্রির জন্য আমরা কথা এগোতে ভয় পাচ্ছি, তুই একটু বোঝা
-হুমমম, তবে মামী আপনাকে একটা কথা বলি। আমি কিন্তু ওর সাথে এমন কোনো কথা বলিনি।
-আমি সেটা বুঝেছি, পুরোনো কথা বাদ এখন তুই গিয়ে ওরে একটু বোঝা
,,
আদনান গেলো রাত্রির রুমে। দরজা খোলাই ছিলো। ভেতরে ঢোকার আগেই দেখতে পেলো মোবাইলের স্ক্রীনে কিছু একটা দেখছে আর খিলখিল করে হাসছে।
,,
-ঐদিকে সবাই চিন্তায় কাত হয়ে পরে আছে, আপনি এদিকে কি দেখেন? ও টম জেরী দেখা হচ্ছে? (আদনান)
-নাহহ আমি তো আমার তোমার কার্যকলাপ দেখছি। আমরা তো এমনি করে থাকি তাই না? (রাত্রি)
-বড় মামা একটা ছেলে নিয়ে আসছেন..
-আমাকে বিস্তারিত বলতে হবে না, আমি জানি। আমি মা বাবা দুজনকেই জানিয়েছি তুমি ছাড়া দ্বিতীয় কেউ আমার চিন্তায় আসবে না। ছেলের টাকা দেখছে আর ওমনি উনারা রাজি হয়েছে
-এটাই ঠিক, তারা চাইবে আপনি সুখে থাকেন
-তারা কি জানে না? যে আমি আপনাকে ভালোবাসি? এটা তো সবাই জানে অনেক আগে থেকে
-এটা ছিলো, এখন নেই
-এটা ছিলো, আছে, সারাজীবন থাকবে।
-আমার পরিবার নেই, আপনি আমার কাছে কিভাবে থাকবেন? আমি কাজ করি না, টাকা পয়সা নেই। আপনি কেনো আমাকে নিয়ে এতদূর চিন্তা ভাবনা করবেন
-এ মশাই লেকচার বন্ধ করেন। আপনার ব্যালেন্স জিরো থাকলেও আমি আপনার
-এরকম পাগলামির কোনো মানেই হয়না
-তুমি এগুলো আমাকে শিখিয়েছো। আর পাগল তোমার চোখের ভাষা আমি বুঝতে পারি। চিন্তা করো না আমি এ বিয়েতে কেনো? কোনো বিয়েতে রাজি হবো না। তুমি যদি জেদ করে একটা মেয়েকে বিয়ে করো তবুও আমি তোমার। আবার সিরিয়াস হয়ে আরেকটা বিয়ে করো না৷ কাজ থেকে আসছো ফ্রেশ হয়ে খেয়ে বাসায় যাও
-আমি আসলাম আপনাকে বোঝাতে আর আপনি...
-তুমি বুঝিয়েছে আমি বুঝেছি, রাত হয়ে যাচ্ছে, যাও খেয়ে নাও। শরীর খারাপ করবে
,,
আদনান মামীর কাছে এসে ঘটনাগুলো বলল। মামী একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল..
-একটা তেঁতো সত্যি কথা কি জানিস? তুই আমাদের অনেক উপকার করলেও, অনেক আগেই একটা বড় ক্ষতি করেছিস। আমার মেয়েটাকে তুই শেষ করেছিস
,,
মামীর কথায় আদনান খুব কষ্ট পায়। কথাটা শুনে মামীর সামনে একটু হেসে সেখান থেকে চলে আসে। আজ না খেয়ে বাসায় রওনা হয় আদনান।
মামীর কথাটা বার বার তার কলিজায় গিয়ে লাগছে। আদনান এর এসব সহ্য করা ছাড়া উপায় নেই কারণ তাদের দিক থেকে তারা ঠিক কথাই বলেছে।
,,
আদনান বাসায় এসে ঐ শার্ট প্যান্ট পরা অবস্থায় বিছানায় উপর হয়ে শুয়ে পড়লো। শুয়ে থেকে মায়ের কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে তার চোখে ঘুম চলে আসলো সে বুঝতেই পারলো না।
,,
ঘুমিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই দরজায় খটখট আওয়াজে আদনান এর ঘুম ভাঙলো। আদনান ভাবলো এই সময় এখানে কে আসবে? রুমের লাইট অফ, কেউ আসতেও তো ভয় পাওয়ার কথা।
,,
পরক্ষণেই ভাবলো হয়তো বেশি ঘুমের কারণে এমনটা শুনতে পেয়েছে। আদনান আবার যখন ঘুমাতে যাবে তখন আবার আওয়াজ আসলো। আদনান ধারণা ঠিক হলো।
,,
রাত বেশি হয় এখন তার একটু ভয় ভয় করছিলো। তবুও সাহস করে দরজা খুলল। আর দরজা খুলেই দেখলো রাত্রি টিফিনবক্স নিয়ে দাঁড়িয়ে।
-আপনি এতো রাতে এখানে! আসলেন কিভাবে? এই এতো রাস্তায় এতো রাতে কোনো সমস্যা হয়নি তো? (রাত্রির এখানে আসা দেখে ভয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়লো)
-আমি বলছি সব৷ আগে বলো না খেয়ে আসছো কেনো?
-এমনি
-মা কিছু বলেছে??
-না
-তুমি আমাদের ক্ষতি করেছো এটা বলেছে
-হুমমম
-আমার কাছে থেকে কথা লুকানোর কি আছে?
-মামী তো কথার কথা বলেছে, এসব কথা ধরে বসে থাকলে হবে?
-মা অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছো৷ আমি মাকে বকা দিয়ে এসেছি
-আপনি এতো রাতে আসলেন! এসব পাগলামি করা ঠিক না। কার সাথে আসলেন
-পাশের বাসার চাচার সি এন জি নিয়ে আসছি।
-মামী আসতে দিলো?
-আপনার কাছে আসছি, মানা করবে কেনো?
-যাকে নিয়ে আসছেন সে চলে গেছে?
-হুমম চলে গেছে। এখন ভেতরে চলো
-আপনি এভাবে আসলেন, আমার কেমন যেন লাগছে
-তুমি না খেয়ে আসছো, আবার মা তোমাকে কষ্ট দিয়েছে এটা শুনে কি আমি বসে থাকতে পারি? যাও ফ্রেশ হয়ে আসো
-....(আদনান রাত্রির দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছে)
-কান্না করো না, আমাদের ভালো দিন সামনে আসবে...
।।
।।
অভিযোগ পত্র
Part : 9
Write : Sabbir Ahmed
____________________________
-কান্না করো না, আমাদের ভালো দিন সামনে আসবে (রাত্রি)
,,
আদনান ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার টেবিলে বসলো। পাশে চেয়ার টেনে বসলো রাত্রি। টিফিনবাক্স রাত্রি নিজ হাতে খুলতে খুলতে বলল..
-আমি তোমাকে খাইয়ে দেই? (রাত্রি)
-আমি পারবো খেতে (আদনান)
-তা তো জানি, তবুও দেই??
-আচ্ছা
-এইতো গুড বয়।
,,
ভাতের মধ্যে তরকারি ঢেলে সেটা মাখাতে মাখাতে বলল রাত্রি বলল...
-আমি যে এখানে আসছি, মা কিন্তু আমাকে মেরেছে, বড় চাচা কথা শুনিয়েছে। (রাত্রি)
-কেনো?? (আদনান)
-বুঝতে পারছো না? খাবার টা মুখে নাও বলছি
,,
আদনান খাবার মুখে নেওয়ার পর রাত্রি কণ্ঠস্বর নিচু করে বলল...
-আমি তো তোমার জন্য পাগল, তোমায় ছাড়া আমার কিছুই মাথায় আসে না৷ এটা মাকে বললাম মা মাইর দিলো। বড় চাচা যেনে আমার মা কে কথা শুনালো। তবে আমি এসব এর ধার ধারছি না। বড় চাচা রাতেই রওনা হয়েছে। আমি বলে দিয়েছি তুমিই আমার প্রথম তুমিই আমার শেষ (কথাটা বলে রাত্রি হুট করে থেমে গেলো)
-থামলেন কেনো?
-আগে খাবার শেষ করতে হবে, খাবার শেষ করে বলব
,,
আদনানের খাওয়া শেষে দুজন বিছানায় মুখোমুখি বসলো। দুজনের কোলে একটা করে বালিশ ছিলো।
রাত্রি একটু মুচকি হেসে বলল..
-কোথায় যেন কথা থামিয়ে রেখেছিলাম? মনে আছে? (রাত্রি)
-তুমিই প্রথম তুমিই শেষ, এখানে(আদনান)
-বাব্বাহ কথা শোনায় তো তোমার খুব মনোযোগ ছিলো।
-হুমমমম
-আচ্ছা শোনো তারপর মা আরও কিছু কথা শোনালো, আমি ততক্ষণে তাদের কথায় কান না দিয়ে তোমার কথা ভাবছিলাম। কারণ তুমি না খেয়ে চলে আসছো আমার মাথা কি আর ঠিক থাকে?
-মামী কষ্ট পেয়েছে
-সে সমস্যা নেই ঠিক হয়ে যাবে
-হুমমমম
-একটা কথা বলি?
-বলেন
-আমি তো বড় মুখ করে তোমার কাছে এসেছি এভাবে, আমায় ফিরিয়ে দিবে না তো
-....(আদনান চুপ হয়ে রইলো)
-চুপ থাকলে ভাববো তুমি আমায় ফিরিয়ে দিবে
-না আমি..
-বলো বলো, বলতে হবে তোমাকে, মনের মধ্যে অনেক কথা চেপে রেখেছো
-আপনি আমাকে..
-এই ওয়েট আপনি না, তুমি। এখন শুধু তুমি
-আচ্ছা
-ওরে বাবা কতো সুন্দর করে "আচ্ছা" বলে। এই আগে তো এতো কিউট করে বলতে না। এমন করে বললে আমি আগেই তোমাতে ফিদা হয়ে যেতাম
-এখন কথাটা বলি? (একটু মুচকি হেসে)
-হুমমম বলো
-তোমাকে তো বিয়ে করতে হবে তাই না?
-ওরে বাবা কত্ত ভালো লাগে তোমার মুখ থেকে তুমি শুনতে
-আমাকে তো কথা বলতে দিবে
-বলো, শুনতেছি আমি
-কথা যে অন্যদিকে বলো
-আর বলব না, বলো
-বিয়ে তো করতে হবে?
-হুমমম
-আমার সাথে এখানে থাকবে?
-অবশ্যই
-যদি পরে কষ্ট পেয়ে চলে যেতে চাও
-কখনো চাইবো না, যদি চাই তাহলে তুমি আমাকে মেরে ফেলবা। পারমিশন দিলাম
-এহহ পঁচা কথা কেনো বলো
-সত্যি বললাম গো
-আমার কিছু কথা আছে
-বলো
-তুমি আমাকে একবার ফিরিয়ে দিয়েছিলে। আমি তোমাকে ভাবতে গিয়ে সেই ভয়টা এখনো পাই। যদি আবার..
-তুমি তো জানো পরিস্থিতি টা কেমন ছিলো। আর কখনো এত বড় ভুল করবো না
-হুমমমম। জানো আমি তোমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে কত দেখেছি
-হুমম জানি আমি, খুব মনোযোগ নিয়ে দেখেছো। তোমার দেখায় যেন সমস্যা না হয় সেই জন্য, তুমি যখন আমাকে দেখতা আমি তখন তোমার দিকে তাকাতাম না
-তুমি বুঝলে কিভাবে আমি তোমাকে দেখেছি
-এটা মেয়েদের প্রতিভা, তোমরা ছেলেরা এটা বুঝবে না
-ওহহ আচ্ছা আমি তোমার কাছে থেকে কিছুদিন সময় নিয়ে নেই?
-কিসের?
-বিয়ের
-কতদিন
-এই এক দুইমাস
-সে তো অনেক সময়, আমি এতোদিন দূরে দূরে থাকতে পারবো না। আমি একা বিছানায় তোমার জন্য টেনশনে না ঘুমিয়ে রাত কাটাতে পারবো না৷ আমার ঘুমের প্রতিটা মূহুর্ত এখন তোমার বুকের মধ্যে কাটবে
-একটু তো সময় দিতে হবে, আমি একা মানুষ, টাকা পয়সা গুছিয়ে তারপর তো বিয়ে..
-আচ্ছা আমি ধার দিবো নি
-তুমি কোথায় পাবে?
-আরে আছে আমার কাছে
-আরেকটা কথা
-কি?
-মামা মামী কি আবার বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে?
-তার আগেই তোমার এখানে আমি চলে আসবো
-তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো?
-যদি বলি "না"
-তাহলে ডাহা মিথ্যা কথা হবে
-তো জিজ্ঞেস করছো কেনো?
-শুনতে ইচ্ছে করে
-ভালোবাসি, ভালোবাসি
-হুমমম, চলো এখন ঘুমানো যাক
-আমার কথা শেষ হয়নি
-বলো
-আমার কিছু আবদার এখন পূরণ করতে হবে
-কি আবদার?
-বিছানায় বালিশ একটা থাকবে, কথাটা একটা থাকবে, রুমের লাইট অফ থাকবে। আর তুমি আমার এতোটা কাছে থাকবে যেন দুজনের মাঝে কোনো সুতো না ঢুকে
-এতোটা কাছাকাছি কেনো?
-কিছু কথা বলার জন্য এতো কাছাকাছি আসা খুবই প্রয়োজন
-বেশি বেশি হবে না?
-কি হবে? যেমনটা বলেছি করো
-আচ্ছা ঠিক আছে
,,
আদনান মশারি টাঙিয়ে, রুমের লাইট অফ করে বিছানায় এসে বসলো। রাত্রি ততক্ষণে কাথা নিয়ে বালিশের এক পাশে মাথা রেখেছে। আদনান কাছে না যাওয়ায় রাত্রি বলল..
-আসবা? নাকি জোর করে আনতে হবে? (রাত্রি থ্রেট দিয়ে)
-না, আসছি তো
,,
আদনান কাথার মধ্যে পা ঢুকালো। তারপর পুরো শরীর টা কাথার মধ্যে নিতেই রাত্রির শরীর সাথে স্পর্শ লাগলো। বালিশে মাথা রাখতেই রাত্রি বলল..
-তোমার গাল আমার গালের সাথে লাগিয়ে, হাতদুটো দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকো, আমি যা যা বলি শুনবা। পরে কিন্তু আবার ধরবো ঠিক আছে? তাই মন দিয়ে শুনবা (রাত্রি)
-ঠিক আছে (আদনান)
-এখন কেমন লাগছে তোমার??
-আমি এটা ব্যাখ্যা করতে পারবো না
-আচ্ছা। আমরা ছোট বেলা থেকে ঝগড়াঝাটি করে বড় হয়েছি তাই না?
-হুমমমম
-তাহলে আমার সাথে ঝগড়া করো না কেনো?
-ঐ যে তোমার প্রতি সেই অভিমান টা
-আমাকে ভালোবাসি বলার পর থেকে এতোদিন দূরে দূরে ছিলে, কেনো?
-ঐ একই কারণে
-অভিমান ভাঙাতে চেষ্টা করোনি কেনো?
-সেটা অভিমানের কারণেই
-আমার কত্ত রাগ জমা হয়েছে, তোমার হয়তো জানা নেই। আমার মন বার বার চাইতো তোমার ফাঁটাতে
-কি বলো এগুলা?
-সত্যি সোনা, আমি তোমার মাথা ফাঁটাতে চেয়েছি। কারণ ভালোবাসি বলে ভালোবাসবে না। অভিমান করে থাকবে। চোরের মতো লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখবে। রাতে বিছানায় শুয়ে আমার কথা ভেবে কান্না করবে। আবার আমাকে কান্না করাবে। কেনো কেনো কেনো??
-আমি কি করবো? হয়ে গেছে এরকম
-বিয়ের পর কোনো কারণে যদি ঝগড়া হয়, তখন কি করবা?
-তোমার কাছে তখন একটা অভিযোগ পত্র লিখবো। তুমিও একটা আমার কাছে লিখবা। দুজনে মিলে একটা শান্তি চুক্তি করবো
-বাহহ দারুণ বুদ্ধি তো
-হুমমম, সে পত্রে অভিমান এর কারণ সহ ব্যাখ্যা থাকবে। অভুিমান ভাঙানোর উপায় থাকবে। এরকম হলে ঝগড়া বেশি হলেও সমস্যা হবে না৷
,,
আদনান এর কথা শুনে রাত্রি আদনান এর দিকে মুখ ফেরালো। রুমে আধো আলোয় দুজনের ফেস টা সামান্যই দেখা যাচ্ছিলো। রাত্রি আদনান চুলে, আর গালে মুখে হাত বুলাতে বুলাতে বলল..
-তোমার মনের মধ্যে আমার জন্য ঘৃণা, রাগ যাই ছিলো আমি নির্লজ্জ হয়ে আমি শেষ করার চেষ্টা করবো।(রাত্রি)
-এখন তো তোমার উপর কোনো রাগ নেই। আমি তোমার ভালোবাসায় মুগ্ধ (আদনান)
-তাহলে আগের মতো কথা বলো না কেনো? আগে আমাকে তুই করে বলতা। (রাত্রি)
-কিছুটা পরিবর্তন আসছে, তবে তোমার প্রতি ভালোবাসায় কোনো পরিবর্তন আসেনি
-হুমমম। তুমি এই নিশ্চুপ হওয়ার পর অনেক কিউট হয়েছো
-কিভাবে?
-কথায় কেমন বাচ্চা বাচ্চা ভাব আসছে। আর ফেসটাতেও হি হি। মনে হয় বিয়ের পর অন্যরকম একটা তুমিকে দেখবো
-হয়তো,
-তুমি গিরগিটি হয়ে গিয়েছো গো
-...(আদনান অভিনয় করে একটু মন খারাপ এর ভান করলো)
-ওরে বাবা পাগলটা দেখি আবার মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে
-তুমি গিরগিটি বললা কেনো?
-ওমাহহ! আমার জামাই আমি যা ইচ্ছে আদর করে বলব। রাগ হইছে?
-একটু তো হইছেই
-এইদিকে তাকাও, তোমার ঠোঁটে কিছু চুমু এঁকে দেই
-না না এমনি রাগ কমে যাবে এখন। এসব কিছু করতে হবে না
-চলবে না চলবে না৷ চুমু খাবো, চুমু খাবো
-তুমি তো বাচ্চাদের মতো করছো।
-কিচ্ছু শুনবো না আমি, চুমু খাবো
,,
রাত্রির আবদার আর ফেরাতে পারলো না আদনান। তার কথা মতো ছোট্ট একটা চুমু খেতে দেয়। রাত্রি আদনান এর ঠোঁট থেকে তার ঠোঁট টা একটু দূরে সড়িয়ে বলল...
-আমি তোমাকে ইচ্ছে করে রাগাবো, রাগ ভাঙানোর এই কাজ টা বার বার করবো (রাত্রি)
-তুমি চাইলে এমনিতে তো করতে পারবে (আদনান)
-কোনো কিছু এমনিতে পানসে পানসে লাগে। তোমার রাগ ভাঙানোর জন্য এটা করলে রিয়েল একটা ফিল আসবে। হি হি হি হি.....
।।
।।
।।
অভিযোগ পত্র
END PART
Write : Sabbir Ahmed
______________________________
-কোনো কিছু এমনিতে পানসে পানসে লাগে। তোমার রাগ ভাঙানোর জন্য এটা করলে রিয়েল একটা ফিল আসবে.. (রাত্রি কথাটা বলে অট্টহাসি দেয়)
-আজ অনেক কিছু হয়েছে, আর না (আদনান)
-আর হলে সমস্যা কোথায়?
-আমার রাগ নেই তো, আর কিছুর দরকার নেই। চলো এখন ঘুমাই
-আমি এভাবেই তোমার উপরে ঘুমাবো
-আমার দম আটকে আসতেছে
,,
আদনান এর কথা শুনে রাত্রি আদনান এর বুকের উপর থেকে নামলো। রাগ দেখিয়ে বিপরীত মুখী হয়ে শুয়ে পড়লো।
-এই কথাতে এতো রাগ! (আদনান)
-আপনার কথা বলতে হবে না, আপনি ঘুমান (রাত্রি)
-আচ্ছা আমি ভুল করেছি। আমি আমার ভুল স্বীকার করছি সরি
-লাগবে না (বিড়বিড় করে)
,,
আদনান রাগ ভাঙানোর জন্য রাত্রির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তার কাছে যাওয়ার ধরণ ছিলো খুবই ধীর গতি। কারণ তার মধ্যে ভয় কাজ করছিলো। সাহস করে যখন একদম কাছাকাছি চলে গেলো তখন রাত্রির মাথায় একটা হাত রাখলো আরকটা তার পেটে।
-হাত সড়ান বলছি (রাত্রি)
-...(আদনান পেছন থেকেই জড়িয়ে ধরলো রাত্রিকে)
-ঢং করেন?
-সরি বলেছি তো
-আপনার সরি আমার লাগবে না
-তাহলে কার সরি লাগবে?
-কারও সরি লাগবে না
-এতো রাগ কেনো!
-আপনার উপরে ঘুমালে আপনার দম আটকে আসে। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। তো এখন ভালে করে শ্বাস নেন। বেঁচে থাকেন। আমার কাছে আসছেন কেনো? দূরে যান বলছি
,,
আদনান পেছন থেকেই রাত্রির কানে কাঁধে চুমু খেতে থাকে। এদিকে রাত্রি লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। হঠাৎ করে ঘুরে নিজে থেকেই আদনান করে জড়িয়ে ধরে বলে।
-এই থামো থামো(রাত্রি চোখ বন্ধ করে বলল)
-উহুমমম আরও দিবো (আদনান)
-না গো, অনেক দিয়ে ফেলেছো। এখন আমাকে বুকের মধ্যে নিয়ে লম্বা একটা ঘুম দিব
-আরেকটু
-এই পাজি আর একটুও না, পরে
-এখন একটু
-বললাম তো নাহহ,
-একটু
-দেখ কেমন করে। আমি যে এতো কাছে আসছি এটাই বেশি হয়ে গেছে বুঝলেন। এখন কোনো আবদার না, সমস্যা হয়ে যাবে। কাল তুমি বিয়ের জন্য পাকাপোক্ত একটা কথা বলবা মায়ের সাথে। এই চিন্তা নিয়ে একটা ঘুম দাও
-আমি তো এমনিতে তোমাকে পাবো
-আরে দিন তারিখ নিয়ে কথা বলতে হবে তো
-উমম ঠিক বলেছো
-তোমার তো আবার সময় লাগবে
-হুমম লাগবেই তো
-ঐতো চলো এখন ঘুমাই
-হুমম চোখ বন্ধ করো
,,
এরকম কথা বলতে বলতে দুজন ঘুমিয়ে যায়। পরদিন সকালে রাত্রির বাসায় দুজন হাজির। বাসায় গিয়ে আদনান দেখলো মামী অনেক রেগে আছে।
-এই তুমি আমার পিছু পিছু থেকো না, রুমে যাও। মামী রেগে আছে(আদনান)
-তুমি এখন বিয়ের কথা বলবা
-আরে এই সময়?
-হ্যাঁ এখনই
,,
রাত্রির মা একবার রান্না ঘরে যাচ্ছে বের হচ্ছে। রাগ দেখিয়ে পা দূরে দূরে ফেলে হাঁটছে। যখন রাত্রি মা তার রুমে ঢুকলো তখনই রাত্রি আদনান কে নিয়ে সেই রুমে ঢুকে।
,,
রুমে রাত্রির বাবা শুয়ে আছে। মেয়েকে দেখে নিচুস্বরে রাত্রি তার পাশে গিয়ে বসতে বলে। রাত্রি গিয়ে বাবার কাছে বসলো। রাত্রির মা সেই রাগ রাগ ভাব নিয়প কাপড় কাথা ভাঁজ করছিলো। সেগুলো ভাঁজ করতে করতে বলল...
-মেয়ে দিবো ঠিক আছে, কিন্তু টাকা দিয়ে কোনো হেল্প করতে পারবো না (রাত্রির মা)
-....(আদনান চুপ করে দাঁড়িয়ে কথা গুলো শুনছিলো)
,,
রাত্রির মা আরও বলল..
-আমার মেয়েটাকে বলছি, যদি কপালে একবেলা ভাত জুটে, বাকি দু'বেলার জন্য এ বাসার দরজা বন্ধ। সপ্তাহে দুইদিন এখানে আসতে পারবে সে।
,,
মায়ের কথা শুনে রাত্রি তার বাবার দিকে তাকালো, দেখলো বাবা মুচকি মুচকি হাসছে। বাবার মুখের হাসি দেখে রাত্রি বুঝতে পারলো তার মা যা বলছে রাগেই বলছে, সত্যি সত্যি কিছু বলেনি। হয়তো দুজনে মিলে তাদের জন্য ভালো কিছুর বন্দোবস্ত করেছে, না হলে এরকম কথার পর বাবা ওরকম হাসবে কেনো? রাত্রি এসব ভাবছিলো। কিছুক্ষণ রাত্রির মা চুপ থেকে আবার বলতে শুরু করলো...
-আদনান আমাদের এখানে ফার্ম দেখে তাকে যে বেতন দেওয়া হতো সেটা ডাবল করে দেওয়া হবে। সে যেন টাকা জমিয়ে কয়েকবছরের মধ্যে একটা ব্যবসা দাঁড় করায়। আর না করালে সমস্যা নেই আমরা তো আছি (কথাটা বলে রাত্রির মা বাইরে চলে গেলো)
,,
মায়ের মুখের কথাগুলো শুনে রাত্রি খুশিতে কান্না করে দেয়। এদিকে আদনান এর চোখেও পানি৷ রাত্রির বাবা আদনান কে ইশারায় পাশে ডাকে। কাছে ডেকে নিয়ে মাথায় গালে মুখে হাত বুলিয়ে দেয়, আর মুখ চেঁপে কান্না করতে থাকে। হয়তো আগের করা আদনান এর সাথে ব্যবহার টা মনে পড়েছে তার। মা মরা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে তার খুব মায়া হচ্ছ, তাই হয়তো এরকম করছে।
,,
রুমে রাত্রির মা আবার আসলো।
-এই তোরা খেতে আয়, অনেক বেলা হয়েছে (রাত্রির মা)
,,
দুজন উঠে খাবার টেবিলে গেলো।
রাত্রির মা তাদের খাবার দিয়ে তার কাজে মন দিলো। এদিকে খাবার ঘরে দুজন খাওয়া বাদ দিয়ে মারামারি শুরু করছে
,,
-এই মাছের বড় চাকা টা ভুলে তোরে দিছে ঐটা আমাকে দে (আদনান)
-ইয়ার্কি করো তাই না? আমার টা থেকে তোমার চাকা বড় (রাত্রি)
-এই দেখ আমার টা ছোট হয়ে গেছে (আদনান মাছের চাকা দেখিয়ে বলল)
-তুমি খেয়েছো তাই কমে গেছে
-তুই খাস নাই, তাই বড় আছে। এখন তোর টা আমাকে দে
-না দিবো না
-না দিলি, যা তোর সাথে কথা নাই
-এমন করো কেনো?
-তুই মাছ টা দিলে আর ওমন করবো না
-শয়তান একটা
,,
রাত্রি তার মাছ আদনান কে দিয়ে দিলো। কিন্তু আদনান শুধু ভাত খাচ্ছিলো মাছ খাচ্ছিলো না এমনকি তার টা যতটুকু ছিলো ততটুকুই আছে। রাত্রি আদনানের হাবভাব কিছুই বুঝতে পারে না। আদনান ঝটপট রাত্রি আগে ভাত শেষ করে, মাছ দুটো রাত্রির প্লেটে দিয়ে বলে..
-অনেক খেয়েছি, আর ইচ্ছে করছে না। আমি আবার খাবার ফেলে দেই না বুঝলি। আশেপাশে তো হতদরিদ্র মানুষের অভাব নেই। তাদের দিয়ে দেই, আসলে আমার মন টা অনেক বড় তো। এসব মানুষের জন্য আমার মনটা সবসময় কাঁদতে থাকে (আদনান)
-...(আদনান এর কথায় রাত্রি রাগে ফুঁসতে থাকে)
,,
রাত্রির রাগের অবস্থা খারাপ দেখে আদনান দ্রুত সেখান থেকে কেটে পরে। এরপর রাত্রি কি যেন ভেবে মিটমিটিয়ে হাসে আর খাবার গুলো খেতে থাকে।
,,
দুমাস পর....
-আজ আমার বিয়ের দ্বিতীয় দিন। কিন্তু দ্বিতীয় দিনে আমার সংসারে যে উনি ভেজাল লাগিয়ে উনি সুখের ঘুম ঘুমাচ্ছে সেদিকে খেয়াল আছে তার? (রাত্রি ওয়াশরুমের ভেতরে কাপড় কাচছে আর কথা গুলো বলছে)
-সকাল সকাল কি শুরু করলা? (আদনান বিছানায় শুয়ে)
-বলি কি, আমাকে একটু হেল্প করলেও তো পারেন তাই না? সেই কখন থেকে ডাকতেছি। (রাত্রি কান্না করে)
,,
আদনান রাত্রি কণ্ঠে কান্নার স্বর পেয়ে বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে যায়।
-কি হয়েছে? (আদনান)
-আমার হাতে ফসকা পড়েছে(রাত্রি কান্না করে)
,,
আদনান দেখলো সত্যি সত্যি রাত্রির হাতে ফোসকা পড়েছে।
-আরে আমাকে ডাকবা না? এটা হলো কিভাবে? (আদনান)
-এখন দরদ দেখাতে আসছো তাই না? এতক্ষণ ডাকলাম আমি (রাত্রি হুঁ হুঁ কান্না করে দেয়)
-সরি সোনা৷ আমি ভাবছি যে তুমি এমনি ডাকছো আমাকে। ফোসকা পড়ার পর এখানে বসে আছো কেনো? আমার কাছে গেলেই তো হতো
-না, তোমার কাছে যাবো কেনো? তুমি উঠবে না কেনো? আমি ডেকেছি তোমার উঠে এখানে আসতে হবে
,,
রাত্রির কথা শুনে আদনান ধপাস হয়ে ফ্লোরে বসে পড়লো, আর বিড়বিড় করে বলল..
-এরে বিয়ে করে ভুলই করলাম নাকি? (আদনান)
-এই তুমি কিছু বললা?? (রাত্রি)
-বলছিলাম যে কেনো যে আগে উঠলাম না)
-হুমম দেখো আমি এখন রান্না করতে পারবো না
-বাবা বাড়ি যাবা?
-হুমমম
-হুহহহ বুঝেছি তো। এই জন্যই মামী বলেছিলো
-মা কি বলেছিলো?
-কিছু না
-বলো বলছি
-এই যে তোমাকে নিয়ে সমস্যা হবে
-...(রাত্রি আরও রাগ করতে থাকে)
-সাইড হয়ে বসো আমি এগুলো ধুয়ে দিচ্ছি
,,
আদনান এর হাতে থেকে হেঁচকা টান দিয়ে ভেজা কাপড় হাতে নিয়ে বলল..
-আপনি ঘুমান, আমি ধুয়ে দিচ্ছি। আমার বাবা বাড়ি যাওয়া লাগবে না। আমাকে হেল্প ও করতে হবে না (রাত্রি)
-ওরে পাগলিটা কত্ত রাগ করে (আদনান)
-আমি আপনার পাগলি না। আপনি কথা বলবেন না আমার সাথে। আপনি জানেন যে আমি সংসার এর কাজ পারি না। আমি কি আগে কখনো এসব করেছি?
-এইজন্যই তো হেল্প করি
-আপনি সেটা বিরক্ত হয়ে করেন, মন থেকে করেন না
-আচ্ছা পিচ্চি টা সরি
-কি বললেন? আমি পিচ্চি?
-আপনি পিচ্চি, আপনার চৌদ্দ গোষ্ঠী পিচ্চি
-সরি
-লাগবে না, আপনি বিছানায় যান
,,
আদনান জোরাজোরি করে রাত্রির হাত থেকে কাপড় নিয়ে নিলো। তারপর দুইএকটা কথা বলে রাত্রির রাগ ভাঙালো। এদিকে রাত্রি আদনান কে কাপড় ধুতে না দিয়ে তার হাঁটুর সাথে হাঁটু মিলিয়ে বলল।
-আপনি পা ছড়িয়ে বসেন, আমি আপনার পায়ের উপর বসব
,,
আদনান সেটাই করলো। তারপর রাত্রি পায়ের উপর বসে আদনান এর টিশার্ট খুলতে লাগলো।
-এই কি করছো??(আদনান)
-আপনার বুকে আমি সাবান মাখাবো (রাত্রি)
-কেনো?
-আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই
-বাচ্চাদের মতো করো কেনো?
-আমার ভালো লাগে তাই
-ঠান্ডা লেগে যাবে আমার
-লাগুক
-টিশার্ট যে খুলছে আমার মান ইজ্জত শেষ করে ফেলবা
-এহহহ নিজে আমাকে কি করেন হ্যাঁ?? তখন মনে থাকে ন
-কখন কি করলাম?
-রাতে আমার সাথে
-এই থামো থামো। (আদনান রাত্রির ঠোঁট চেপে ধরলো)
-সত্যি কথা বলছি আর ওমনি আমাকে থামিয়ে দিলেন
-আচ্ছা তোমার যা মনে চায় করো
-আপনি না বললেও করবো
,,
রাত্রি আদনান এর পুরো বুকে সাবান মাখিয়ে দেয়।
-এখন কি করবা? (আদনান)
-লিখবো (রাত্রি)
-কি?
-অভিযোগ
-এখানে?
-হুমমম তিনটা অক্ষরে
-দেখি লেখো তো
,,
রাত্রি লিখলো "Why"
-এটার মানে? (আদনান)
-আমার জীবনে আসলে কেনো? আমাকে বিয়ে করলে কেনো? আমার কথা শুনো না কেনো? রাতে আমার ঘুমের এতো ডিস্টার্ব করে সকালে আমাকে উঠিয়ে দিয়ে তুমি বেলা করে ঘুমাও কেনো? তুমি মন থেকে আমাকে কাজে হেল্প করো না কেনো?(রাত্রি)
-এর উত্তর একটা প্রশ্নের মধ্যেই আছে (আদনান)
-কোন প্রশ্ন?
-আমায় ভালোবাসো কেনো???
,,
,,
,,
,,
,,
,,
,,
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,END,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
No comments:
Post a Comment