26.12.23

অব্যক্ত কথাগুলো

 অব্যক্ত কথাগুলো

Write : Sabbir Ahmed
__________________________
"পরীক্ষার রেজাল্ট এর এ কি হাল! লেখাপড়া করিস? নাকি মায়ের টাকা উড়াচ্ছিস?" মায়ের কথার উত্তর না দিয়ে নিজেকে সজ্জিত করতে ব্যস্ত শুভ।
-আমি কি বলেছি কানে যায় না? (মা)
-সিগনাল কানে আসছে, সব শুনতে পেয়েছি (শুভ)
-তো উত্তর দিচ্ছিস না কেনো?
-আরেহহ কি উত্তর দিবো? খুশির ঠেলায় উড়তে ইচ্ছে করছে
-এই রেজাল্ট নিয়ে উড়াউড়ি?
-পাশ করেছি এই অনেক মা, কথা বলো না তো ঠিক মতো সাজুগুজু করতে দাও
-দেখ সিরিয়াস হ৷ অনার্সে সেকেন্ড ক্লাস এর সিজিপিএ তুলেছিস, আগের সব পরীক্ষার রেজাল্ট ও ভালো না। তোর সাথে কথা বলতে বলতে আমার মাথার অর্ধেক পেকে গেছে।
-মা আমি আজ খাবো না, তুমি খেয়ে স্কুলে যেয়ো আমি আসি
,,
শুভ নিজেকে পরিপাটি করে কোথায় যেন চলল, মায়ের একটা কথার উত্তর ও দিলো না। এদিকে তার মা একা একা কথা বলছি আর শুভর জন্য প্লেটে রাখা খাবার গুলো উঠিয়ে রাখছে।
,,
"খালাম্মা আমি এগুলো ঠিক করে রাখছি আপনি স্কুলে যান"
শুভদের বাড়িতে এই মেয়েটি কাজ করে অনেক ছোট থেকেই। মেয়েটার সবকিছুই এখন শুভর মা। মেয়েটিকে শুভর মা তার স্কুল মাঠেই পেয়েছিলো।
,,
শুভর মা পেশায় একজন শিক্ষিকা। নিজ গ্রামেই একটা প্রাইমারী স্কুলে চাকরি করেন। শুভর বাবা বেঁচে নেই। তিনি একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। হঠাৎ করেই একদিন পরপারে চলে যান।
,,
এখন পরিবারে শুভ, তার মা, আর সেই কাজের মেয়েটি। তিনজনের এই পরিবার টা বেশ সুখী। তবে শুভ মাঝেমাঝে বেশ সমস্যা করে। বাইরে থেকে মারামারি করে আসে, উটকো ঝামেলায় জড়ানো এসব করেই দিন পার করে সে।
,,
সেদিন রাতে মা ছেলের আবার কথা হয় রাতে খাবার টেবিলে। কাজের মেয়েটি খাবার পরিবেশন করছে৷
-সুমাইয়া আমি তোরে বলেছি তুই এভাবে খাবার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবি না। তুই বসে যা একটা প্লেট নিয়ে (শুভর মা)
-জ্বী খালাম্মা (সুমাইয়া)
-এই শুভ শোন
-হ্যাঁ বলো
-আমার তো বার্ষিক ছুটি হয়ে গেলো
-বাহহ ভালো,
-সাথে একটা দাওয়াত পেয়েছি
-কিসের দাওয়াত?
-আমার স্কুলের এক ম্যাম এর মেয়ের বিয়ে
-দাওয়াতে যাবা?
-অবশ্যই যাবো, শুধু আমি না স্কুলের সব স্যার ম্যাম যাবে
-ওহহ তা কোথায়?
-বরিশাল
-কিহহহ? সেই বরিশাল! না না না তোমার এতদূর যাওয়া লাগবে না৷ ছুটি আমাদের সিরাজগঞ্জে কাটাও
-আরে আমি তো একা যাচ্ছি না, তোকে সাথে নিয়ে যাবো
-আমি যাওয়ার তো প্রশ্নেই আসে না
-দেখ আমি কখনো এতদূর যাইনি, এরপর কখনো যাওয়ার সুযোগ আসবে কি না তাও জানি না। চল না ঘূরে আসি
-তুমি এমন ইমোশনাল হয়ে বললে, আমি কোনো কিছু মানা করতে পারি না৷ তুমি আমার দূর্বল জায়গায় বার বার আঘাত করো কেনো?
-কিছু কিছু নিষ্ঠুর বান্দার দুই একটা দূর্বল জায়গা থাকেই
-আমি নিষ্ঠুর তাই না? যাও একাই, যাবো না আমি
-আরেহহ আমি তো তোকে সেই দস্যু বনহুর এর কথা বললাম।
-সেই ডাকাত দল এর সরদার এর
-হুমমম,
-তার মনে কি দয়া মায়া ছিলো হয়তো ছিলো
-আচ্ছা মা তোমার ম্যাম এর বাড়ি তো আমাদের এখানে। বরিশাল থেকে তার মেয়ের বিয়ে কিভাবে? এটা তো বুঝলাম না৷
-শোন, আমাদের ম্যাম এর তিন তিনটা মেয়ে একটা মেয়ে তার নানীর কাছে থেকে মানুষ হয়েছে
-ওহহ বুঝেছি ম্যাম এর বাবার বাড়ি বরিশাল
-হ্যাঁ
-মা আমার একটা সমস্যা আছে
-কি?
-বরিশাল যে যাবো আমি তো সাঁতার জানি না, যদি লঞ্চ ডুবে যায়
-আরে সেতু তো আছে
-না আমি লঞ্চেই যাবো, আর লঞ্চ যদি ডুবে যায় তুমি তো আমাকে হাড়িয়ে ফেলবে তাই আমি বলি কি, আমাদের না যাওয়াই ভালো
-আমি আছি তো আমার ছেলেকে আমি বাঁচাবো। আর শয়তান এতো তাড়াতাড়ি পৃথিবী থেকে বিদায় হয় না
-তুমি কি আমাকে কিছু বললা?
,,
মা ছেলে এক কথা থেকে আরেক কথা, সেখান থেকে অন্য একটা কথায় চলে যাচ্ছে। এদিকে সুমাইয়া হা করে তাকিয়ে দুজনের কথোপকথন দেখছে।
,,
শুভ একসময় রাজি হয়ে যায়।
বিয়ের দুইদিন আগে রওনা হয় বরিশাল এর উদ্দেশ্যে। শুভর পরিবারের সাথে আরেকটা ম্যাম এর পরিবার একসাথে রওনা হয়।
,,
ঐ পরিবারে ম্যাম এর এক ছেলে এক মেয়ে। মেয়েটা লঞ্চে উঠার আগে ঘাড় ঘুরিয়ে নিয়েছে। সে নাকি বরিশাল যাবে না তার যেতে ইচ্ছে করছে না৷ এই নিয়ে মা, মেয়ে বাবা এই তিনজনের মধ্যে একটা হট্টগোল লেগে গেলো। তাদের ঝামেলা থামাতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে শুভর মা৷ শুভ এই কান্ড টা একটু দূরে দাঁড়িয়ে দেখছে। মেয়েটির ছোট ভাইটির বয়স পাঁচ বছর, ও শুভর কাছে দাঁড়িয়ে চিপস খাচ্ছে। শুভও মাঝে মাঝে পিচ্চি টার চিপস এর প্যাকেট থেকে দুই একটা চিপস চুরি করে খাচ্ছে।
,,
দীর্ঘ আধ ঘন্টা ঝগড়ার পর ঐ ম্যাম এর পরিবার ডিসিশন নিলো তারা বিয়েতে যাবে না। শুভর মা শুভর কাছে এসে বলল...
-ওরা যাবে না রে (মা)
-মেয়েটার সমস্যা কি? কেনো যাবে না? (শুভ)
-কি যে তাও মুখ খুলছে না, তার এক কথা সে যাবে না
-সাইকো নাকি?
-নাহহ হঠাৎ করে এমন করছে
-আমি কি একটু কথা বলে দেখবো?
-যা দেখ
,,
শুভ ওদের কাছে গেলো।
-আংকেল আন্টি আপনারা লঞ্চে গিয়ে বসেন আমরা দুজন আসছি
-না বাবা, তুমি আর তোমার মা যাও, আমার মেয়ে যাবে না
-আংকেল আপনি ভেতরে নিয়ে যান আন্টি কে আমি দেখি ওর সমস্যা কি
-ওরে তুমি কিছুই করতে পারবে না। ওর জেদ এর কাছে আমরা কিছু না, একবার তো না খেয়ে দুইদিন ছিলো।
-এই গুণ টা কার মধ্যে থেকে পেয়েছে?
-কার আবার? ওর মায়ের
-এই এই আমার থেকে পেয়েছে মানে? আমি কবে তোমার সাথে জেদ করেছি? তুমি ভালো না সবসময় উল্টো বুঝো, এসব গুণ ও তোমার থেকে পেয়েছে (আন্টি এবার খেঁপেছ)
-সব ডিসিশনে তো তুমি জেদ দেখাও, এখানে আসার কথা তো আমার ছিলো না, জেদ ধরেই তো আমাকে নিয়ে আসলে
-.....সমস্যা ঠিক করতে এসে তো আরেকটা সমস্যা লাগিয়ে দিলাম (শুভ মনে মনে বলল)
,,
তাদের যাওয়ার ইচ্ছেটা বেশি ছিলো তাই শুভর কথায় সবাই লঞ্চে গিয়ে উঠলো। শুধু শুভ আর মেয়েটি উঠা বাকি। আর বিশ মিনিট এর মধ্যে লঞ্চ ছেড়ে দিবে। শুভ ভাবছে যে মেয়ে রাগ করে দুইদিন কিছু খায় না তাকে বিশ মিনিটে কিভাবে ঠিক করবে।
,,
শুভ আমতা আমতা করছে, কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারছে না, কারণ মেয়েটা গভীর মনোযোগ দিয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে।
,,
শুভ এই দৃশ্য টা দেখে এই শীতের বিকেলে ঘামছে। মোটা ফ্রেম এর চশমা পরা মেয়েটি হাত গুটিয়ে দাঁড়িয়ে, পৃথিবীর সব রাগ এক জায়গায় এনেছে। ফর্সা মেয়ে হওয়ার রাগে
তার গাল ও নাক টুকটুকে লাল বর্ণ ধারণ করেছে। শুভ মেয়েটির এসব দৃশ্য দেখার মাঝেই বলল..
-সমস্যা টা কোথায়? (শুভ)
-পানি (মেয়েটি)
সে এতো তাড়াতাড়ি উত্তর দিবে শুভ ভাবতেও পারেনি।
-পানি খাবেন?
-না, পানিতে ডুবে যেতে পারি, সাঁতার জানি না
-ওহহ এই সমস্যা? আমিও তো সাঁতার জানি না। আমি তো ঠিকই যাচ্ছি
-আমি জানতাম না যে লঞ্চে যেতে হবে
-আপনারা ব্রীজ দিয়ে গেলেই তো পারতেন
-আমি তো এতকিছু জানি না
-ওহহ। আপনি এভাবে গরম হয়েই কথা বলেন?
-হুমমমম
-সবসময়?
-....(কোনো উত্তর করলো না)
,,
কিছুক্ষণ চুপ থেকে শুভ আবার বলল...
-দেখেন আপনি যদি না যান তাহলে অনেক সমস্যা হবে (শুভ)
-...(মেয়েটি শুভর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো।)
,,
মা বাবার সাথে কথা কাটাকাটি করে মেয়েটার চোখ দুটো ও লাল হয়ে গেছে। মেয়েটি কর্কশ গলায় বলল..
-আমি অনার্স পড়ুয়া মেয়ে, যথেষ্ট বুদ্ধি হয়েছে আমার, আমাকে জ্ঞান দিতে আসবেন না
-আমি অনার্স পাশ করা একটা ছেলে আমি জ্ঞান দিতেই পারি। আর বুদ্ধি আপনার থেকে একটু হলেও আমার বেশি আছে
-হয়তো আপনার রেজাল্ট খারাপ
-...হায়রে বেজায়গায় চলে গেলো(শুভ মনে মনে বলল)
-কি ঠিক ধরেছি তো?
-হুমম ঠিক ধরেছেন। তবে আমি লেখাপড়া করে নিজের শরীর এর কোনো অঙ্গ নষ্ট করিনি আপনার মতো।
-আমি কি নষ্ট করেছি?
-এই যে চোখে চশমা, লেখাপড়া বেশি করে তো চোখ টা খেয়েছেন....
।।
।।
অব্যক্ত কথাগুলো
Part : 2
Write : Sabbir Ahmed
____________________________
-আমি কি নষ্ট করেছি? (মেয়েটি)
-এই যে চোখে চশমা, লেখাপড়া বেশি করে তো চোখ টা খেয়েছেন(শুভ)
-...(মেয়েটি আবার রাগী চেহারায় শুভর দিকে তাকালো)
-প্লিজ এভাবে তাকাবেন না, হার্ট এট্যাকের সম্ভাবনা থাকে। যাই হোক শোনেন একটা কথা বলি। আপনার কারণে আপনার বাবা মায়ের মধ্যে ঝগড়াঝাটি হবে। আল্লাহ না করুক যদি এই ঝগড়া বড় হয়ে দুজন আলাদা হয়ে যায় তখন কিছু করার থাকবে নাহহ
,,
কথাটা বলে শুভ কিছুক্ষণ চুপ থেকে মেয়েটার ভাবগতি বোঝার চেষ্টা করলো। কিছুসময় পর মেয়েটা..
-লঞ্চ মনে হয় ছেড়ে দিবে, এখন উঠতে হবে (মেয়েটি)
-যাক সুবুদ্ধি হলো তাহলে। চলেন, নতুন জায়গা, দুজনে মিলে ঘুরলে খুব মজা হবে (শুভ)
-আপনি কে?
-শুভ
-আরেহহ সেটা না, আমার সাথে থাকার আপনি কে? আমার আশেপাশে যেন না দেখি
-ওকে ওকে দেখবেন না, তবুও রাগ করে যাওয়া বন্ধ কইরেন না
-....(মেয়েটি কিছু বলল না)
,,
দুজন মিলে লঞ্চে উঠছিলো। তখন শুভ বলল..
-আপনার নাম টা যেন কি? (শুভ)
-....(মেয়েটি কিছু না বলে আবার রাগী চেহারায় তাকালো)
-ওরে বাবা নামের এতো দাম, হইছে বলে লাগবে না চলেন
,,
মেয়েটি গেলো তার বাবা মায়ের সাথে একটা কেবিনে। আর শুভ আর তার মা, বোন একটা কেবিনে। লঞ্চ তখন ছেড়ে দিয়েছে। শুভ কথায় কথায় তার মা কে বলল..
-আচ্ছা মা ঐ মেয়েটির নাম কি?(শুভ)
-ইরা (মা)
-মা এ তো সত্যি সত্যি অনেক জেদি মেয়ে
-তাই?
-হ্যাঁ
-তুই ওকে রাজি করিয়ে আনলি কিভাবে?
-এটা তো বলা যাবে না
-তুই কি এভাবে মেয়েদের সাথে মিশিস?
-আরে নাহহ আমাদের ফ্রেন্ডদের মধ্যে কোনো মেয়ে নেই তো। তুমি কি আজ পর্যন্ত শুনেছো?
-না শুনিনি। তবে লুকিয়ে তো রাখতে পারিস
-নাহহ সত্যি নেই এমন কেউ
-ভাইয়া মিথ্যা বলছে
-এই তুই বেশি বুঝিস কেন? আমি যা বলেছি এটাই সত্যি
,,
এদিকে ইরা তার বাবা মায়ের সাথে কেবিনে বসে আছে। ইরার মা তো শুভর প্রশংসায় মুগ্ধ। ইরা তার মাকে থামিয়ে বলল..
-উনার প্রশংসা বন্ধ করো, আমার ডিসিশনে আমি এসেছি (ইরা)
-....(ইরার মা কিছু বলল না চুপ হয়ে গেলো)
-আমি একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি
-ছোটো কে সাথে নিয়ে যা,
-না ও থাকুক এখানে, আমি একা একটু ঘুরে আসি
-ভয় পাবি তো,
-উঠার সময়ই ভয় শেষ
,,
কথাটা বলে ইরা বাইরে এসে লঞ্চের সামনের দিকটায় দাঁড়ালো। এদিকটা এখন ফাঁকা। কারণ শীতের বিকেলে নিজের শরীরে ঠান্ডা লাগানোর জন্য কেউ আসবে না এখানে।
,,
ইরা তো নতুন যাত্রী, যাত্রা টা উপভোগ করতে আসছে। কিছুক্ষণ পর দেখা গেলো শুভ ও আসছে হাতে তার সিগারেট আর লাইটার। শুভ পেছন থেকেই চিনতে পেরেছিলো এটা ইরা। তাই লাইটার আর সিগারেট টা সামলে নিয়ে ইরার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
,,
ইরা শুভর উপস্থিতি টের পেল, আড় চোখে একবার দেখলো, তারপর সামনে দৃষ্টি রাখলো। শুভ কথা শুরু করলো...
-এই শীতের বিকেলের ঠান্ডা বাতাস খেতে আসছেন? (শুভ)
-....(ইরা জাবাবে কিছু বলল না)
-আমি তো কিছু বলেছি আপনাকে
-কোনো কারণ ছাড়া দাঁড়িয়ে আছি (ঝটপট উত্তর করলো)
-ওহহ আচ্ছা। এতো তাড়াতড়ি কথা বলেন কেনো আপনি?
-আমি যেমন করেই বলি আপনার কি?
-বাপরেহহহ আমার সাথে এমন করেন কেনো? আমি আপনার কোন পাকা ধানে মই দিয়েছি
-আমি তো আপনাকে বলেছি আমার আশেপাশে থাকবেন না
-তা বলেছেন, কিন্তু আমি আমার মায়ের কথাই শুনি না, আর তো আপনার কথা
-বদ খারাপ ছেলেরা এমনই হয়
-কত ভালো মানুষ দেখলাম পৃথিবীতে
-এই আপনি যান তো
-আমি যাবো না, আপনি যান
-আমি আগে এসেছি
-তো আমার কি? আমার ইচ্ছে আমি দাঁড়িয়ে থাকবো
-ষ্টুপিড একটা
-জানি, আমার মা ও তাই বলে
-.....(ইরা ভেংচি কাটলো)
-সুন্দরী মেয়েরা রাগী হয়
-মেয়েদের উপর কি পি. এইচ. ডি করা আছে নাকি?
-কেনো?
-আপনি যেভাবে বলছেন
-এটা সবাই জানে
-সে জানুক, আপনাকে দেখেই মনে হয় আপনি বদ
-হুমম বদ তো আছি একটু,
-ফালতু কথা বন্ধ করেন
-ওকে
,,
শুভ কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো। এর তো একজায়গায় এতো সময় নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকার অভ্যাস নেই, বকবক করাই তার স্বভাব। শুভ আবার বলল..
-একটা কথা বলব, আপনি যেমন দ্রুত করে বলেন সেইভাবে (শুভ)
-....(ইরা চুপ)
-বলি?
-...(তবুও চুপ)
-বলেই যাবো
-...(এখনো চুপ)
-বলব?
-জ্বী বলেন
-আপনি যত সুন্দর আপনার ব্যবহার ততই খারাপ। আমি আপনার সাথে লাইন মারার জন্য অপেক্ষা করি না। রাগী দেমাগী মেয়ে। আপনার চেহারার মেয়ে অনেক আছে। কিন্তু আপনার মতো ফালতু মেয়ে দুনিয়াতে একটাও নেই। নিজেকে কি মনে করেন? ভালো ছাত্রী তাই না? ঐ ভালো আপনি ধুয়ে পানি খান। থাকেন তো চুপচাপ, কিন্তু আপনি শয়তানের নানীর মতো ব্যবহার করেন। নিজের ব্যবহার ঠিক কইরেন। না হলে কোনো ছেলে আপনার থেকে সুখ পাবে না। (এটা বলেই শুভ দিলো এক ভোঁ দৌড়)
,,
একটু দূরে গিয়ে থেমে বলল..
-এই রাগী মহিলা, যা বলেছি তার জন্য সরি। তবে সব কথা সত্যি বলেছি (এক গাল হেসে শুভ চলে গেলো)
,,
এতোগুলা অপমানজনক কথা শুনে ইরা থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শুভ যা বলে গেলো সেটা তার মাথায় বার বার ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রচুর রাগ ও হচ্ছে তার৷ কিন্তু এখন অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ নেই। ইরা দাঁত কিড়মিড় করে সব রাগ নিয়ন্ত্রণ করলো। আর মনে মনে চিন্তা করলো "সময় আমারও আসবে"
,,
ভোরের দিকে পৌঁছে গেলো তারা মেয়ের বাড়ি। আজ মেয়েটার গাঁয়ে হলুদ। বরিশাল জেলার বেশ ভেতরের দিকে গ্রাম হওয়ায়, গ্রামটা অজপাড়াগাঁ এর মতো।
,,
এই বাড়ি পর্যন্ত আসতে ইরা শুভর যাস্ট চোখ দেখাদেখি হয়েছে, কথাও হয়েছে সেটা চোখের ভাষায়। শুভ যতবার ইরার চোখ দেখেছে, ততবারই দেখতে পেয়েছে সেই ফেইস টা, যেটা সে লঞ্চে উঠার আগে দেখতে পেয়েছিলো।
,,
যাই হোক সুস্থ ভাবে দুই পরিবার এই বাড়িতে আসলো। মেয়ের মা তো অনেক খুশি। উনি একটু আগেই চলে আসছিলো বিয়ের কাজের জন্য৷
স্পেশাল দুই পরিবার এর জন্য যাস্ট একটা রুম দিলো।
,,
এই বাড়িটা দোতলা, তবে পুরোনো অনেক। গ্রামের মধ্যে এমন দালান কল্পনা করাই যায় না। এই বাড়ির পুরোনো মুরুব্বি ভোগবিলাসী টাইপের ছিলো। শখ করে দালান তৈরি করেছিলেন। বাড়ির সামনের দিকে সরু একটা রাস্তা, পাশে সারি সারি সুপাড়ি গাছ। সরু রাস্তাটা গ্রামের প্রধান মেঠোপথে গিয়ে থেমেছে।
,,
বাড়ির দক্ষিণ দিকটায় একটা পুকুর, আর উত্তর দিকে বিশাল খোলা মাঠ। এখানে এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ির দূরত্ব অনেকটাই। নতুন পরিবেশে থাকতে হয়তো সবার কষ্টই হবে বিশেষ করে বাইরে থেকে যারা আসবে।
,,
এমনিতে দুই পরিবারের একটা রুম দেওয়ায় ইরা রেগে আছে। দুই পরিবারের সবাই একটা রুমে। কেউ বসে আছে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।
সেই মূহুর্তে ইরা বলল..
-এভাবে একসাথে থাকা সম্ভব না, এটা কেমন পরিবেশ??(ইরা)
-আমি তো সমস্যার কিছু দেখি না, আমি আংকেল, আর পিচ্চি নিচে ঘুমাবো, আর আপনারা যারা মহিলা আছেন তারা খাটে ঘুমালেন, তাহলেই তো হয়(শুভ)
-শুভ ঠিক বলেছে। মেহমান তো আরও আসবে, একটা পরিবার কে তো একটা রুম দেওয়া সম্ভব না মিলেমিশেই থাকতে হবে। (ইরার মা)
-আমি পারবো না (ইরা)
-তাহলে বাইরে যান (শুভ)
-এই শুভ কি হচ্ছে? থামবি তুই (শুভর মা)
,,
ইরা দেমাগ দেখিয়ে বাইরে গেলো। তাদের রুম দোতালায়, সাথে বড় বেলকনি। ইরা বেলকনির একপাশে এসে দাঁড়ালো। শুভ ও বাইরে আসলো রুম থেকে। দেখতে পেলো ইরা গোমরা মুখ করে দূরে তাকিয়ে আছে।
,,
ইরার কাছাকাছি গিয়ে সে বলল..
-আল্লাহ জানে পুরোনো দালান টা আমাদের ওজনে ভেঙে না যায়। দালান এর যে অবস্থা ভয়েই আছি।(শুভ)
-এই শোনেন, কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করবেন না। আর আপনি আমাকে দুইবার মহিলা বলছেন এর মজা পরে বুঝবেন...
।।
।।
অব্যক্ত কথাগুলো
Part : 3
Write : Sabbir Ahmed
___________________________
-এই শোনেন কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করবেন না। আর আপনি আমাকে দুইবার মহিলা বলছেন এর মজা পড়ে বুঝবেন (ইরা)
-আপনি তো মহিলাই, এই বয়সে চোখে দেখেন না গায়ে গোস্ত নেই (শুভ)
-এই কি বললেন আপনি? (ইরা শুভ দিকে তেড়ে আসলো)
,,
শুভ একটু পিছু হেঁটে বলল..
-আপনি আসলেই মহিলা, যদি অবিবাহিত মেয়েদের মধ্যে মহিলা এওয়ার্ড দেওয়া হয় সেটা আপনি পাবেন (শুভ এই বলে এক দৌড়ে বাড়ির বাইরে চলে গেলো)
,,
ইরা তো রেগেমেগে শুভর মায়ের কাছে হাজির..
-আন্টি(ইরা)
-কি হয়েছে? তোর চোখে পানি কেনো? (শুভর মা)
-তোমার ছেলে আমাকে মহিলা বলেছে, আর বলেছে আমি নাকি মহিলা এওয়ার্ড পাওয়ার যোগ্য
,,
রুমে থাকা সবাই এক গাল হাসলো। শুভর মা হাসি থামিয়ে বলল..
-আরেহহ ও এমনি। কান্না করো না, তোমাকে যাতে কিছু না বলে আমি ওরে মানা করে দিবোনি
-হুমমম
-আর এখন সবাই ঘুমিয়ে নাও একটু, এখানে আসতে অনেক ধকল গেছে শরীরের উপর
-ম্যাম শুভ তো বাইরে গেলো, ওর রেস্ট নেওয়ার দরকার ছিলো (ইরার মা)
-ওর আর রেস্ট, এমনি সারাদিন ঘুরে বেড়াবে (শুভর মা)
-নতুন জায়গা তো
-তা না হয়
-ম্যাম ওর তো অনার্স শেষ, রেজাল্ট ও তেমন ভালো না, এখন ওকে কি করাবেন?
-দেখি চাকরির জন্য চেষ্টা করি
-আগে ওরে ঠিক করতে হবে। একটা কাজ করেন, শুভকে বিয়ে করান
-বিয়ে?
-হ্যাঁ
-তাহলে আপনার মেয়েটাকে দেন
-মজা করছেন?
-না সত্যি বলছি
-ম্যাম সরি, আসলে এটা সম্ভব না। আপনি বলেন আমি মেয়ে দেখে দিচ্ছি
-আপনার মেয়ে তো লক্ষ্মী
-তা বটে, কিন্তু আপনার ছেলে তো। সত্যি বলতে আপনাদের যা পরিবার এই পরিবারে আমি মেয়ে দিতে পারবো না। আপনারা ভালো মানুষ ঠিক আছে, তবে অন্যদিক গুলো দেখে আমি বা আমার পরিবারের কেউ রাজি হবে না।
-বুঝেছি, আমি তো এমনি মজা করলাম (শুভর মা কথা কাটিয়ে নিলো। আসলে উনি কথাগুলো মন থেকেই বলেছিলেন)
,,
এদিকে ইরা আর তার বাবা কথাগুলো শুনে তেমন কিছু বলল না। ইরার বাবা বাইরে গেলো, রুমের মধ্যে বাকি সবাউ একটু রেস্ট নেওয়ার জন্য শুয়ে পড়লো।
,,
কিছুক্ষণ শুয়ে থাকার পর রুমের সবাই ঘুমিয়ে গেলো। শুধু শুভর মায়ের চোখে ঘুম নেই উনার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে মুখ নাক ভিজে যাচ্ছে। ছেলের চিন্তায় তার মাথা ধরে আসে। ছেলেকে সে বকতেও পারে না। বকলেও সে এসব ভেবে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। সব মিলিয়ে উনি উভয় সংকটে।
,,
এদিকে শুভ বাড়ির সবার কাজ দেখছিলো দুই একজনের সাথে অলরেডি পরিচিত হয়ে গেছে। এই অঞ্চলের ভাষা শুভর বুঝতে একটু অসুবিধে হলেও তার ভালোই লাগছিলো।
,,
আর ইরা সারাদিন রুমের মধ্যে বসে থাকে, বড়জোড় বেলকনি পর্যন্ত যায় সে। খাবার টাও তার মা রুমে নিয়ে আসে তার জন্য।
,,
হলুদ সন্ধ্যায় সবাই বেশ মজা করছিলো। যে যার যার কাজে ব্যস্ত, শুভ যাদের সাথে একটু কথা বলে পরিচয় হয়েছিলো তারাও ব্যস্ত। চুপচাপ থাকার স্বভাব টা তার নেই। এতো লোকের মাঝেও সে একাকী।
হঠাৎ তার মাথায় আসলো একজন দোতালা থেকে নিচে নামে নাই এখন পর্যন্ত।
,,
শুভ গেলো দোতালায়। ইরা রুমের দরজা লাগিয়ে, বিছানায় বসে বই পড়ছিলো। শুভ বাইরে থেকে নক করল। ইরা দরজা খুলল..
-আপনি ভেতরে কি করেন? (শুভ)
-কিছু না (ইরা)
-সবাই বাইরে মজা করছে আপনি ভেতরে কেনো?
-আমার এতো লোকের মাঝে যেতে ইচ্ছে করে না
-এরকম রুমের ভেতরে পাগল রা থাকে, চলেন বাইরে চলেন।
-আমার যাওয়া না যাওয়া নিয়ে আপনার মাথা ব্যাথা কেনো?
-আমি কথা বলার লোক পাচ্ছি না
-আপনার মা বাইরে আছে, আপনার বোন ও আছে, যান তাদের সাথে গিয়ে কথা বলেন
-না আপনাকে লাগবে, তারা আমার কথা বুঝবে না। আর বড় কথা হলো তারা আপনার মতো ঝগড়াটে না
-এই কি বললেন? আমি ঝগড়াটে?
-আছেন একটু একটু
-আপনার সাহস দেখে অবাক হই, একটা অচেনা মেয়ের সাথে এমন করে কথা বলেন, মনে হয় আমি আপনার কত চেনা
-চলেন না একটু
-আপনি যান
-না না চলেন একটু
-....আজব মানুষ এভাবে বায়না করে কেনো (ইরা বিড়বিড় করে বলল)
-কিছু বললেন?
-হুমম যাবো, আপনি যান আমি আসতেছি
-না আপনাকে সাথে নিয়েই যাবো
-নাছোড়বান্দা আপনি
,,
ইরাকে সাথে নিয়ে শুভ নিচে নামলো। একসাথে হলুদ সন্ধ্যার অনুষ্ঠান দেখলো। মাঝেমাঝে দুজন তর্ক বিতর্ক করলো, হাসাহাসি করলো। অনুষ্ঠান যখন শেষ তখন শুভর রিকুয়েষ্টে ইরা তার সাথে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির বাইরে গেলো।
-আমাদের উত্তর অঞ্চলের অর্ধেক শীত ও এখানে নেই (শুভ)
-হ্যাঁ অনেক কম (ইরা)
-একটা কথা বলি?
-হুমম বলেন
-আপনার এতো রাগ কেনো?
-আমি জানি না, তবে আমি ছোট বেলা থেকেই এরকম
-ওহহ, আচ্ছা চলেন রুমে যাই। এতক্ষণ বাইরে থাকলে আমার কারণে আপনার ঠান্ডা লাগবে। আমি আবার বকা শুনবোনি, তারচেয়ে ভালো চলেন রুমে যাই।
,,
রাতে শুভর আর ইরার বাবা মেঝেতে ঘুমালো। আর বাকি সবাই মিলে খাটের উপর আঁটসাঁট হয়ে ঘুমালো।
সবার ঘুমের আগে কিছু খোশগল্প করলো। এই গল্পে শুভ আর তার মা চুপ ছিলো। ইরার পরিবার যে গল্প করছিলো সেটা ইরার বিয়ে নিয়ে। কেমন পরিবারে বিয়ে হবে, বর কেমন হবে এইসব।
,,
শুভর মা এসব শুনে না শোনার ভান করে থাকলো। উনি বুঝতে পেরেছেন তাকে শোনানোর জন্য এসব বলছে তারা। এদিকে শুভ উপর হয়ে শুয়ে সব কথা শুনছে, তবে মাথা থামাচ্ছে মা, কারণ সে জানে না এর আগের ঘটনাটা।
,,
মাঝরাতে শুভর ঘুম ভাঙলো মায়ের ডাকে।
-এই কখন থেকে ডাকছি উঠিস না কেনো? (শুভর মা)
-কি হয়েছে এতো রাতে ডাকছো (শুভ)
-উঠে দেখ মেয়েটা কান্না করছে
-সুমাইয়া কান্না করছে?
-আরে না, ইরা
,,
শুভ উঠে দাঁড়ালো। চোখ কচলিয়ে ভালো করে তাকিয়ে দেখলো ইরা ব্যাথায় কুঁকড়ে গিয়েছে। তার মা পাশে বসে চিন্তিত।
-কি হয়েছে পেট ব্যাথা? (শুভ তার মা কে বলল)
-হ্যাঁ কিন্তু কমছে না, গ্যাস এর ঔষধ খাওয়ানো হয়েছে। অনেক পানি ও খেয়েছে কিন্তু কমছে না৷
-তাহলে কি হসপিটালে নিতে হবে?
-আমি নিচে গিয়ে ম্যাম এর সাথে কথা বলেছি এখানে ওরকম কোনো হসপিটাল নেই।
-ডাক্তার ডেকে আনবো?
-তাই তো করতে হবে। আচ্ছা শোন তুই নিচে যা, এ বাড়ির কয়েকজন লোক উঠানে বসে গল্প করেছে। তাদের একজনকে নিয়ে আশেপাশে কোনো ঔষধ এর দোকান বা ডাক্তার আছে কি না সেটা একটু দেখ
-রাত তো বাজে দুটো
-আমি যাচ্ছি তোমার সাথে চলো (ইরার বাবা)
-আংকেল আপনি এখানেই থাকেন৷ আমি বাইরে গিয়ে ডাক্তার ঔষধ দুটাই আনবো।
,,
শুভ ভাইরে আসলো। উঠানের মাঝে চেয়ারে বসে থাকা লোকজনকে উদ্দেশ্য করে ছালাম দিলো আর বলল..
-উপরে মেয়েটার অবস্থা ভালো না, আশেপাশে কোনো পরিচিত ডাক্তার পাওয়া যাবে কি? বা ঔষধ এর দোকান (শুভ)
,,
বসে থাকা লোকজন নিজেদের মধ্যে বলাবলি করে বলল...
-ভালো ডাক্তার বলতে তেমন কেউ নেই। তবে মোজাম্মেল ডাক্তার এর বাড়ি যেতে হবে। উনি ডাক্তার না তবে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। বাড়িতেই একটা দোকান আছে তার৷ (একজন বলল)
-আমি তো চিনি না, আমার সাথে কেউ একজন যাবেন? (শুভ)
,,
সাথেসাথে একজন উঠে আসলো।
শুভ যাওয়ার পথে টুকটাক কথা বলছিলো সাথে আসা লোকটার সাথে। মিনিট পাঁচ হাঁটতেই সেই মোজাম্মেল এর বাড়ি।
,,
শুভর সাথে আসা সেই ব্যক্তি নাম ধরে ডাকলো। শুভ কৌতূহল বশত বলল..
-উনি কি আপনার বয়সী?(শুভ)
-হ্যাঁ
-ওহহ আচ্ছা
,,
শুভর তেমন কিছু বলা লাগলো না এখানে। সাথে আসা লোকটাই সব কিছু বলল। ডাক্তার সাহেব তার ব্যাগ পত্তর নিয়ে রওনা হলে বাড়ির উদ্দেশ্যে। ইরাকে ঔষধ খাওয়ানো হলো সাথে একটা ইনজেকশন।
কিছুক্ষণ পর ইরা বমি করল। তারপর তার পেটের ব্যাথা কমলো।
,,
ডাক্তার টাকা নিয়ে শুভকে সাথে নিয়ে আবার তার বাড়ি ফিরলেন। একা ফিরতে পারবেন না বলে শুভকে সাথে নিয়ে আসছেন। এখন শুভ বাড়ি ফিরতে পরলো বড় এক ঝামেলায়।
শীতের রাতে বৃষ্টির কবলে পড়লো।
,,
এক প্রকার কাক ভেজা হয়ে বাড়িতে ফিরলো। সে শীতে কাঁপছিলো। বেলকনিতে এসে দেখলো ইরা দাঁড়িয়ে আছে। ইরা শুভর কাঁপুনি দেখে মুচকি হাসলো। শুভ মুখ দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে ইরার কাছে এসে বলল..
-মা মা মা কে একটু বাইরে ডেকে দিবেন? (শুভ)
-তার আগে বলেন কোন সুখে আপনি ভিজতে গিয়েছিলেন? (ইরা)
-আআমি ডক্টর কে এগিয়ে দিয়ে আসলাম
-ওহহ সরি সরি আমি আন্টিকে ডাকছি, দাঁড়ান একটু...
-উহুহহহহু তাড়াতাড়ি করেন...
।।
।।
অব্যক্ত কথাগুলো
Part : 4
Write : Sabbir Ahmed
___________________________
-ওহহ সরি সরি, আমি আন্টিকে ডাকছি। দাঁড়ান একটু(ইরা)
-উহুহহহু তাড়াতাড়ি করেন (শুভ)
,,
ইরা ভেতরে গিয়ে ফিরে আসলো।
-আন্টি তো ঘুমিয়ে গেছে (ইরা)
-আমি শার্ট প্যান্ট চেঞ্জ করবো, এভাবে থাকলে তো ঠান্ডায় বাঁকা হয়ে যাবো (শুভ)
-আপনার ব্যাগ টা কোথায় বলেন আমি নিয়ে আসছি
-আপনি যাবেন?
-আপনি আনতে গেলে তো সব ভিজিয়ে ফেলবেন। আমিই নিয়ে আসি
-আপনি তো অসুস্থ
-না ঠিক আছি এখন
,,
শুভর কথা অনুযায়ী ইরা রুমের ভেতরে গিয়ে শুভর এক সেট শার্ট প্যান্ট নিয়ে আসলো। শুভ সেগুলো হাতে নিয়ে বলল...
-এই প্যান্ট টা রেখে, লুঙ্গি নিয়ে আসেন
-হুমম ঠিক আছে
,,
ইরা লুঙ্গি নিয়ে আসার পর..
-এখন আপনি ঐ কোণায় দাঁড়িয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকেন, আমি চেঞ্জ করে নেই (শুভ)
-ওহহ ওকে (ইরা)
,,
শুভর চেঞ্জ করা শেষে ভেজা কাপড় গুলো বেলকনিতে থাকা টাঙানো দড়িতে শুকোতে দেয়। একটু কাঁপতে কাঁপতে ইরার পাশে গিয়ে দাঁড়ায় শুভ আর মজার ছলে বলে...
-চোখে চশমা পরা অবস্থায় রাত টা কি আরও গভীর রাত দেখায়? (শুভ)
-গভীর রাত দেখায়? (ইরা)
-আমি প্রশ্ন করেছি
-ওহহহ, না যখন যেমন রাত তেমনি দেখায়
-ঘড়িতে দেখেন কতো বাজে, ভোররাত হতে চলল, ঘুমাবেন না?
-ডিসেম্বরের বৃষ্টি উপভোগ করি
-আমি তো একটু আগে ভোগ করে আসলাম হি হি হি
-.....(ইরাও একটু শব্দ হাসলো)
-যাই বলেন, হাসলে আপনাকে একটুও ভালো লাগে না৷ রাগলে আপনাকে দারুণ লাগে। হাসলে কেমন লাগে জানেন? অনেকটা ঐ ছোটরা যে ভূতের কার্টুন দেখে, সেখানে পিশাচিনী টাইপের যে ভূত গুলো থাকে ঐরকম লাগে
,,
শুভর মুখে এসব কথা শুনে, ইরার সেই রাগী মুড টা অন হয়ে যায়৷ তখন শুভ বলল...
-এইতো আপনি আপনার চিরচেনা রূপে ফিরেছে। এখন দেখতে বেশ লাগছে। তো পিশাচিনী উপভোগ করেন ডিসেম্বর রেইন। আমি গেলাম টাটা...
-এই দাঁড়ান দাঁড়ান
,,
ইরার কথায় শুভ না থেমে ইরার বাবার কাছে গিয়ে ঘুমালো।
,,
পরদিন সকাল বেলা...
ঘড়িতে এখন দশটা বাজে, বাড়িতে লোকজন থৈথৈ করছে। অপরিচিতরা দুই একজনের সাথে পরিচিত হচ্ছে। শুভর মা বা ইরার বাবা মা ও ব্যতিক্রম না, তারাও অনেকের সাথে পরিচিত হচ্ছে কথা বলছে।
,,
এদিকে শুভ এখনো ঘুম থেকে উঠেনি। ইরা ভোরের দিকে একটু ঘুমিয়েছিলো এখন সে সজাগ। ইরা রুমে বসেই ফোন টিপছে। মাঝে-মাঝে শুভর দিকে চেয়ে দেখে যে সে উঠেছে কি না?
,,
এগারোটার কাছাকাছি গিয়ে শুভ বড় একটা হাই তুলে ঘুম থেকে উঠলো। ঘুম থেকে উঠেই তার চোখ গেলো বিছানার উপর। সে দেখলো এক জোড়া চোখ তাকে তাকিয়ে দেখছে।
,,
ইরাকে উদ্দেশ্য করে শুভ বলল..
-মা কই? (শুভ)
-বাইরে গেছেন (ইরা)
-সবাই?
-হুমম
-আপনি বসে কি করেন? বাইরে ঘুরেন, গ্রাম টা অনেক সুন্দর তো। এখানে আর জীবনে আসতে পারবেন কি না কে জানে? ঘুরে দেখেন
-আমি আপনার অপেক্ষা করছিলাম
-আমাকে নিয়ে যাবেন?
-হুমমম
-আমি তো যেতে পারবো না
-কেনো?
-বাজে কতো?
-এগারোটা
-দুপুর পর যাবো
-আচ্ছা সমস্যা নেই
-না সমস্যা আছে?
-কি?
-দুপুরে যেতে পারবো না?
-তাহলে?
-রাতে যাবো
-রাতে?
-আপনার যেতে সমস্যা হবে?
-আচ্ছা দেখা যাক
-আরেহহ এমনি বললমা, চলেন এখনি যাবো
-আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন
-আমি ফ্রেশ হতে হতে যাবো
-কিভাবে?
-চলেন দেখাচ্ছি
,,
শুভ ব্যাগ থেকে তোয়ালে বের করে গলায় ঝুলালো। তারপর ব্রাশে টুথপেষ্ট লাগিয়ে বলল।
-আপনি এখনো বিছানায়? আমি তো রেডি, চলুন যাই (শুভ)
-রেডি?
-একদম
-এগুলো শেষ করে যান
-আরেহহ আসুন তো, যেতে যেতে সব শেষ হবে
,,
শুভ ব্রাশ করতে করতে বাসা থেকে বের হলো। শুভর পিছুপিছু ইরা বের হলো। গ্রামের রাস্তাটায় এসে দুজন পাশাপাশি হাটতে শুরু করলো সাথে কথোপকথন।
-বের হওয়ার সময় সবাই আপনার দিকে তাকিয়ে ছিলো (ইরা)
-সমস্যা নেই, তাকাবে এটাই স্বাভাবিক (শুভ)
-ফ্রেশ হয়ে বের হলে কি হতো?
-দেখেন আমি সবসময় নিয়মের বাইরে গিয়ে চলি
-অনিয়মিত হলে নিজের জীবনের ক্ষতি
-আমার জীবনে এমন কেউ আসবে, যে আমার সব ক্ষতির ক্ষতিপূরণ দিবে
-আহা শখ কতো, বাস্তবতা এমন না
-আমি তো অবাস্তব অকল্পনীয় কাউকে চাই
-রাখেন তো আপনার চাওয়া পাওয়া পরিবেশ টা কেমন বলুন তো?
-যথেষ্ট রৌদ্রময়, তবে বাতাসের জন্য রোদ গায়ে লাগছে না। বেশ ঠান্ডা লাগছে। এখন তাপমাত্রা ২৪° এর মতো
-আমি আপনাকে আবহাওয়ার খবর দিতে বলিনি, আপনার কাছে কেমন লাগছে পরিবেশ টা সেটা বলুন
-আপনার থেকে বেশি সুন্দর না
-এই দাঁড়ান, কি বললেন?
-কই কি বললাম?
-শোনেন এমন কথা বললে আমি আপনার সাথে থাকবো না।
-না থাকলেন, আমার চোখে যা সুন্দর তা আমি বলেই যাবো
-আপনি অনেক চালাক
-কচু। দেখেন ঐ যে টিউবওয়েল। আপনি চাপবপন আমি হাত মুখ ধুয়ে নেই
-কিহহহ!! আমি? আমি চাপবো?
-তো কি হয়েছে আসুন
,,
শুভর কাজে ইরা, তার উপর রাগ দেখাবে, হাসবে নাকি বিরক্ত হয়ে কান্না করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারে না৷ শুভ হাত মুখ ধুয়ে নেওয়ার পর তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলল...
-এখন প্রি-লাঞ্চ করতে হবে (শুভ)
-এটা আবার কি? (ইরা)
-লাঞ্চের আগের খাবার খাওয়াকে তো প্রি-লাঞ্চ বলে।
-বুঝলাম, এমন নাম তো কাউকে বলতে শুনিনি
-কারণ এতদিন আপনার সাথে আমার দেখা হয়নি তাই শুনতে পাননি৷ খুব খুদা লাগছে, চলেন কিছু খাই। আর আপনি সকালের নাস্তা করেছেন?
-হুমম করেছি
-আবার কিছু খাবেন?
-নাহহ
-না খেতে তো হবে, প্রি-লাঞ্চ কে করবে?
-আরে আমার না খেলেও চলবে
,,
কে শোনে কার কথা, শুভ একটা দোকান থেকে কলা কেক আর এক বোতল পানি নিলো। ইরাকে সাথে নিয়ে আরেকটু দূর হেটে গেলো।
তারা দুজন এমন একটা জায়গায় গিয়ে বসলো যেখানে সামনে পিছনে ডানে বামে সবদিকেই বিশাল ফাঁকা জায়গা আর মাঠ৷
,,
তারা যে রাস্তার একপাশে বসে পড়লো সেই রাস্তা পুব দিকের দূর গ্রামে গিয়ে মিশেছে।
,,
শুভ ইরার হাতে কলা আর কেক দিয়ে বলল।
-খাওয়া শুরু করেন। মানা করলে ফেলে দিবো (শুভ)
-....(এক কথায় ইরা নিয়ে নিলো)
-একটা কথা বলি?
-হুমম বলেন?
-আপনি তো আমার বড়, আমাকে আপনি করে বলেন কেনো?
-তুমি করে বলব?
-ছোটদের তো তাই বলে সমন্ধ করা উচিত
-আপনাকে তুমি করে বললে, আমার মনের মধ্যে বউ বউ ফিল আসবে
-এই আবার! আমি বলেছি না এসব কথা বলতে মানা করতে
,,
ইরার দিকে একবার তাকিয়ে শুভ উঠে দাঁড়ালো।
শুভ তার তোয়ালে টা ইরার মাথায় রাখলো।
-এটা কি জন্য? (ইরা)
-রোদ লাগছে তো (শুভ)
-এই রোদে কিছু হবে না
-তবুও সেইফটি হিসেবে থাকুক। হ্যাঁ কি যেন বলছিলেন?
-কিছু না
-বলেন বলেন পরে যদি আবার না বলতে পারেন
-বলছিলাম যে..
-থাক বলতে হবে না
-আপনি সত্যি একটা অদ্ভুত টাইপের মানুষ, কথার মাধ্যমে আমাকে ক্লান্ত করে দেন
-বেশি করে পানি খাবেন, তাই আর ক্লান্ত হবেন না
-...(ইরা কথায় পেরে না উঠে মুচকি হাসলো)
-চলেন এখন বাসায় যাই
-ভালোই তো লাগছে, আরেকটু থাকি
-পথ দিয়ে যেই যায় শুধু চেয়ে থাকে, গ্রামের মানুষ অন্য কিছু ভাবছে
-সমস্যা নেই তো আমরা তো আছি আমাদের মতো
-তবুও, দৃষ্টিকটু দেখায়
-পরিবেশ টা তো ভালো লাগছে, আরেকটু থাকি
-চলেন বাসায় গিয়ে এক কাথায় মধ্যে শুয়ে দুজন গল্প করবো
,,
শুভর কথা শুনে ইরা উঠল দাঁড়ালো। আর শুভ আগেই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলো।
-এক কাথা তাই না? (ইরা)
-না যার যার কাথা (শুভ)
-দাঁড়ান বাসায় যাই৷ তারপর অান্টিকে সব বলব
-এই ছিঁ ছিঁ কি বলেন? আমি তো মজা করেছি
-আমি বলব যে, আপনি আমাকে আজেবাজে কথা বলেছেন? (মুচকি হেসে বলল)
-দেখেন এমন মিথ্যা বলবেন না৷ আর আপনাকে তো আমি কেক দিয়েছি তাই না? আমার নামে কিছু বলবেন কেনো?
-এই এই আমাকে কি পিচ্চি মনে হয় আপনার? যে কিছু দিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে রাখবেন?
।।
।।

অব্যক্ত কথাগুলো
Part : 5
Write : Sabbir Ahmed
___________________________
-এই এই আমাকে কি পিচ্চি মনে হয় আপনার? যে কিছু দিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে রাখবেন (ইরা)
-একটু আগেই তো বললেন আপনি আমার ছোট
-আমি ছোট ঠিক আছে, তবে দুধের শিশু তো না
-যাই হোক বইলেন না কিছু, প্লিজ প্লিজ
-আর যেন এলোমেলো কথা না বলা হয়
-এই কানে না ধরে বলছি, আর কখনো আপনাকে এলোমেলো কথা বলব না
-ফাজিল মানুষ, সবসময় শুধু ফাজলামি করা তাই না?
-হুমমম তাই তো
-দিবো একটা মাইর
-তা আমি সাদরে গ্রহণ করবো
-পঁচা লোক একটা, কথা না বাড়িয়ে চলেন এখন।
,,
সেদিন দুপুরে বরপক্ষের আগমণের পর থেকে যা যার যার মতো ব্যস্ত। ব্যস্ততা নেই দুজন মানুষের মাঝে। দুজন অলস রুমে বসে আছে।
-আমরা বিয়ে খেতে আসছি নাকি আড্ডা দিতে আসছি? (ইরা)
-আড্ডা (শুভ)
-চলেন বাহিরে যাই
-আপনি যান আমি যাবো না। খাবার সময় যাবো শুধু
-রুমে এভাবে বসে থেকে কি হবে?
-রুমেই থাকি সেই যে সকালে বেড়িয়েছিলাম। আবার নামাজ পড়ে আসলাম। সব মিলিয়ে অনেকটা সময় বাইরে ছিলাম
-তো আপনি থাকেন আমি একটু বাইরে যাই
-ছেলে দেখতে যাচ্ছেন, বুঝি তো
-ঐ দেখ, আমি ছেলে দেখতে যাবো কেনো?
-সুন্দর সুন্দর ছেলে আসছে তাই
-আচ্ছা যাবো না
-না যান যান, মিস হয়ে গেলে তো আফসোস করবেন
-আমি কখনো কারও জন্য আফসোস করিনি
-এহহহ আসছে
-আবার এহহ এহহ করেন কেনো, এটাই সত্যি?
-একটা কথা বলি?
-বলেন
-আপনি ঠিক এভাবেই আমার সাথে রাগ দেখাবেন, ঝগড়া করবেন। আমার খুব ভালো লাগে
-আমার তো খেয়ে কাজ নেই, আপনার সাথে ঝগড়া করবো
-দিনের শেষ সময়টুকু তো দিতেই পারেন
-হুমম সময় পেলে
-কথা দেন প্রতিদিন এভাবে ঝগড়া করবেন
,,
ইরা শুভর মুখের কাছে তার মুখটা নিয়ে আসলো। এতো কাছে যে ইরার শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ শুভ শুনতে পাচ্ছে।
-আমাকে কি বোকা মনে হয় আপনার? সারাজীবন এর জন্য কথা দিতে পারবো না, যে দুইদিন আছে সে দুইদিন। (ইরা)
-আপনার রাগ দেখে আমার সারাজীবন আপনার রাগ দেখার তৃষ্ণা হয়ে গেছে (শুভ)
-রাগ এর জন্য অনেক সম্পর্ক ভাঙ্গে এটা জানেন না?
-উহুমম আপনার মধ্যে সেই রাগ টা নেই
-সেটাই আছে
-বুঝলাম, তবে রাগ টা আমি কিভাবে গ্রহণ করছি সেটাই দেখার বিষয়,
,,
তাদের কথার মাঝে হঠাৎ ইরার মা রুমে চলে আসে। দুজন যে অবস্থায় ছিলো সেই অবস্থা দেখে সে অন্য কিছু ভেবে নেয়। ইরার মা তেড়েমেরে এসে ইরাকে একটা চর মেরে রুমের বাইরে নিয়ে যায়।
,,
শুভ পরিস্থিতি বুঝে কিছু না বলে রুমের মধ্যেই বসে থাকলো। এদিকে ইরার মা জেরা শুরু করেছে। আর ইরা তার মা কে বোঝানোর চেষ্টা করছে।
,,
-মা দেখো আমাদের মাঝে ঝগড়া হচ্ছিলো, তুমি ভুল বুঝেছো (ইরা)
-তুই ছেলেটার এতো কাছে ছিলি কেনো? (মা)
-দেখো আমি তাকে বোঝাতে গিয়েছিলাম
-এতো কাছে কেনো?
-আমার চোখে চশমা ছিলো না তো। আমি ভাবছি সে দূরে
-ওহহ তাই তো। তোর চশমা কই?
-রুমেই আছে
-আর রুমে বসে কি করিস?
-বাইরে এতো লোকজন ভালো লাগে না
-শুভ বসে কি করে?
-এমনি বসে আছে
-ছেলেটা কেমন? এলোমেলো কিছু বলে?
-তোমরা যা ভাবো সে তার উল্টো। সকালে তার সাথে আমি হাঁটতে গিয়েছিলাম। কত খোঁজ খবর নিলো আবার দেখো রাতে আমার জন্য কতকিছু করল, এই ঠান্ডায় নিজেকে ভোজালো।
-তা ঠিক বলেছিস
-ভাইয়া টা অনেক ভালো
-যত ভালো হোক, কোনো এলোমেলো কথা বললে আমাকে জানাবি
-সে এমন মানুষ না
-হুমমম, নিচে আয়
-না রুমেই যাই। আমাকে শুধু শুধু মারলে, উনি কি মনে করেছে বলো তো
-আচ্ছা রুমেই যা, আর একটু পর খেতে দিবে দুজনেই আসিস কেমন?
-ওকে
,,
ইরা রুমে আসতেই...
-আন্টি তো..
-আপনি থামেন আমি বলছি। মা ভুল বুঝেছে এটা আমি তাকে বুঝিয়ে দিয়েছি, আর দুই একটা মিথ্যা কথাও বলেছি
-কি মিথ্যা কথা?
-আপনি যে অনেক ভালো, আপনার নামে সুনাম করেছি
-তার মানে আমি খারাপ?
-কি যে বুঝে নেন
-আন্টির কাছে সত্যি টা বললেই হতো
-সত্যি বললে আপনার সামনে আর থাকতে দিতো না
-আমার সামনে না আসলে আপনার তো কিছু হতো না
-অনেক বড় মিস হতো
-কি?
-কিছু না। চলেন বাহিরে যাই একটু পর আমাদের খেতে ডাকবে
-আগে ডাকুক
-আমি একটু রেডি হবো আপনি বাহিরে যান
-আপনি রেডি হন আমি দেখি একটু
-...(ইরা মাজায় হাত দিয়ে দাঁড়ালো)
-দেখা যাবে না?
-না
-দেখলে সমস্যা হবে?
-অনেক সমস্যা হবে
-হোক না সমস্যা, তবুও দেখি একটু
-এবার কিন্তু আমি মাইর দিবো আপনাকে, বাইরে যান বলছি
-মেকাপ করবেন, এটা দেখলে সমস্যা হবে?
-এতো কথা কেনো? দাঁড়ান পানি নিয়ে আসি
,,
ইরার দৌঁড়ানিতল শুভর বাইরে গেলো
এদিকে ইরা ফ্রেশ হয়ে রুমের দরজা খুলল।
-হুহহ অনেক কিছু মিস করলাম (শুভ)
-ফাজিল একটা, আপনাকে ভালো মনে করেছিলাম (ইরা)
-আমি খারাপ কি বললাম?
-আমাকে কিন্তু ভালোই জ্বালাচ্ছেন আপনি
-তার মানে আপনি জ্বলতেছেন
-হুমমম
-যাক আমার প্রভাব আপনার উপর পড়েছে
-নিজেকে পণ্ডিত মনে করেন? এমন কথা বললে আর কথাই বলব না আপনার সাথে।
-ওকে না বললেন (এটা বলে শুভ নিচে নামছিলো)
-এই দাঁড়ান দাঁড়ান
-দাঁড়াবো না, আসতে থাকেন।
-আমি আপনার সাথে খেতে বসব।
-এতো মিশতে দেখলে আপনার মা সন্দেহ করবে
-করুক
-কিহহ??(শুভ দাঁড়ালো)
-করুক সন্দেহ সমস্যা নেই (মুচকি হেঁসে ইরা সিড়ি বেয়ে দৌড়ে নামালো)
-এই এই পড়ে যাবেন তো। এমনিতে আপনার চোখে সমস্যা
,,
কে শোনে কার কথা, ইরা দৌড় দিয়েই নিচে নামলো। ইরা আর শুভর পরিবার এক টেবিলে খেতে বসেছে। দূর্ভাগ্যবশত দুজন পাশাপাশি বসতে পারেনি।
,,
খাওয়া শেষ হলো। খাওয়ার পর থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত শুভ ইরার আর খোঁজ পেলো না। ইরা কণের কাছে ছিলো। এ সময়টুকু শুভ এদিক ওদিক দাঁড়িয়ে থেকে সময় পার করলো। রুমে এসে শুভ দেখে ইরার মা আছে, তাকে দেখে রুমে ঢোকার সাহস হয়নি।
,,
বরযাত্রী বিদায় হওয়ার পর শুভর আর ইরার দেখা হয়। শুভ ইরাকে একবার দেখে অন্যদিকে মাথা ঘুরিয়ে নেয়৷ ইরা তো বুঝতে পারেনি তারউপর শুভর একটু অভিমান হয়েছে। ইরা শুভর কাছে এসে পাশে দাঁড়িয়ে বলে...
-বউকে দেখেছেন? (ইরা)
-হুমমম(শুভ)
-কেমন সাজিয়েছি?
-দেখিনি
-বউকে দেখেছেন, কিন্তু সাজুগুজু দেখেননি! এটা কিভাবে সম্ভব
-জানি না
-আসেন রুমে যাই
-যান
-মন খারাপ?
-না
-আমি তো দেখছি মন খারাপ
-...(শুভ চুপ)
-কি হয়েছে?
-কিছু না (শুভর কণ্ঠে কান্নার স্বর)
-মা কি ঐ ব্যাপার নিয়ে কিছু বলেছে?
-নাহহ
-তাহলে?
-বললাম তো কিছু হয়নি, আপনি রুমে যান।
-কিছু তো একটা হয়েছে, আমি শুনবো বলেন
-উহুমম কিছু না,
-এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে কেমন দেখা যায়? রুমে চলুন
-আমার এভাবেই ভালো লাগছে
-ভারি চাপা স্বভাবের লোক তো আপনি। প্রশ্ন করতে করতে আমি ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি, আপনি উত্তর দিচ্ছেনই না
-উত্তর নেই তো, কি দিবো?
-বলেন কি হয়েছে, আমাকে৷ নিয়ে সমস্যা হলে আমি দেখছি কি করস যায়
,,
শুভ হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো, ইরাকে কিছু বলার জন্য সোজা হয়ে দাঁড়ালো। তারপর মাথা নিচু করে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল...
-সেই বিকেল থেকে খুঁজতেছি, কোথাও পাচ্ছিলাম না আপনাকে। আমি একা একা দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা। প্রত্যেকটা রুমে গিয়ে খুঁজেছি (শুভ)
-কণের রুমে তো জাননি (ইরা)
-সেটা ভেতর থেকে বন্ধ ছিলো
-তা আমাকে খুঁজে কি হতো?
-অনেক সময় হয়ে গিয়েছিলো আপনার সাথে ঝগড়া, কথা কিছুই হয়নি
-এভাবে বাচ্চাদের মতো করলে হবে??
।।
।।

অব্যক্ত কথাগুলো
Part : 6
Write : Sabbir Ahmed
____________________________
-অনেক সময় হয়ে গিয়েছিলো, আপনার সাথে ঝগড়া কথা কিছুই হয়নি (শুভ)
-এভাবে বাচ্চাদের মতো করলে হবে? (ইরা)
-আমি একা একা ছিলাম, আমার খারাপ লাগতেছিলো
-আচ্ছা আমি আছি এখন, নেন ঝগড়া শুরু করেন
-একটা কথা বলব
-জ্বি বলেন
-না থাক,
-উহুমমম বলেন
-না এখন না, অন্য সময় বলব
-তো চলেন এখন রুমে যাই, বাইরে তো অনেক ঠান্ডা
-তাও একটু বাইরে থাকেন কথা বলি
-ওকে
-....(শুভ চুপ করে থাকলো)
-আচ্ছা বর টা দেখতে কেমন? ভালোই তাই না?
-হুমম খারাপ না
-শুনলাম একটা ঝগড়া হয়েছে দুই পরিবারের মাঝে
-কি নিয়ে?
-আপনি বাহিরে ছিলেন তাও জানেন না? বরের বাড়িতে কতজন যাবে সেটা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছে। আমরা মনে হয় কেউ বরের বাড়ি যেতে পারবো না
-ওহহহ
-হুমমম
-আচ্ছা কথাটা বলি?
-হুমম বলেন
-...(শুভ আমতা আমতা করছিলো)
-এই বাবা ফোন করেছে। রুমে যেতে হবে। আপনার কথাটা শেষ করেন
-না পরেই বলব
-কি এমন কথা যে, বলতে এতো ভয় করছে।
-তেমন ভয়ের কোনো কথা না, আচ্ছা সময় আছে, সময় বুঝে বলবোনি
-আপনার যা ইচ্ছে,
,,
দুজন রুমে গেলো। রুমে গিয়ে তো দুজনই অবাক, সবাই ব্যাগপত্তর গুছিয়ে নিচ্ছে। শুভ তার মায়ের কাছে গিয়ে বলল...
-আমরা কি চলে যাবো নাকি? (শুভ)
-মনে হয় যেতেই হবে, বাড়ির অবস্থা তেমন ভালো না (মা)
-আরে মাথা ঠিক আছে তোমার? বাড়ির অবস্থা যেমনই হোক যাওয়া যাবে না এখান থেকে। আর আংকেল আপনিও তো দেখি রেডি
-আরে বরপক্ষে সাথে দেখলাম মারামারি ও হয়েছে, এসব ভেজালে পড়ার চেয়ে, এখান থেকে কেটে পড়া ভালো (ইরার বাবা)
-আপনাদের কি মাথা ঠিক আছে? কোনো আত্মীয় কি এখন পর্যন্ত চলে গেছে? আপনারা গেলে কেমন দেখাবে এটা বোঝেন না? হুটহাট এমনি একটা ডিসিশন নিলে তো হবে না, তাই না? যাই হোক না কেনো আমরা এখানে থাকবো আর অনুষ্ঠান শেষ করেই চলে যাবো।
,,
শুভর কথায় সবাই ব্যাগ গুছানো বন্ধ করে। এদিকে আরেকটা ঝামেলা লেগেছে। শুভ আর তার মা যখন রুমে বসে তাদের মতো কথা বলছিলো অন্যপাশে ইরার বাবা-মা কি নিয়ে যেন ফিসফিস করে আলাপ করছে।
,,
কিছুক্ষণ পর তারা শুভর মা আর শুভ কে কাছে ডেকে নিয়ে বলে...
-ম্যাডাম আমি তো একটা কাজ করে ফেলেছি, এখন এটা কেমন হবে জানি না (ইরার মা, শুভর মা কে উদ্দেশ্য করে বলল)
-ম্যাডাম কি করেছেন আপনি? (শুভর মা)
-যে মেয়েটার বিয়ে হলো তার ফুফাতো ভাই, মাশাআল্লাহ একদম হিরের টুকরো ছেলে। ছেলেটা ঢাকায় থাকে, বড় বিজনেস করে। আমাদের ম্যাম বলল ইরার সাথে ছেলেটাকে ভালোই মানাবে। পরিবার ও অনেক ভালো.... (কথার মাঝে শুভ উঠে দাঁড়ালো)
-তুই কই যাস? (শুভর মা)
-আমি এই কথা শুনে কি করবো? বাইরে আছি
-....(ইরা রুমে বসে শুভর মন খারাপ করে বাইরে যাওয়া দেখলো)
-হ্যাঁ ম্যাম আপনি কথা শেষ করুন (শুভর মা)
-তো ঐ ছেলের জন্য মেয়ে দেখতেছে, আমাদের ইরাকে একটু দেখাই। পরিবার ভালো, এ পরিবারে গেলে খারাপ হবে না। আপনি কি বলেন? (ইরার মা)
-পরিবার ভালো হলে তো কথাই নেই। তাহলে দেখান মেয়েটাকে
-আমি এতক্ষণ ইরার বাবা কে সেটাই বোঝাচ্ছিলাম। উনি বলতেছেন এতদূর মেয়ে দিবে না
-তাই তো এতদূর কেন মেয়ে বিয়ে দিবো? (ইরার বাবা)
-আরে আপনি বোঝেন না কেনো? ছেলের গ্রামের বাড়ি এখানে হলেও, সারাবছর তো ঢাকায় থাকে। (ইরার মা)
-হ্যাঁ, আর ছেলে যদি ভালো হয়, তাহলে খারাপ কি। আর ভাইজান ঢাকা থেকে আমাদের সিরাজগঞ্জ দূরে না। ও তো সারাবছর ঢাকায় থাকবে
-এই তো ম্যাডাম আমার মনের কথাটা বুঝেছে। আচ্ছা এখন যেটা করতে চাইছি সেটা হলো মেয়েটাকে এখনি দেখাই
-বাড়িতে তো সমস্যা চলছে
-সে চলছে চলুক, আমি শুধু মেয়েটাকে দেখাবো
-আচ্ছা ঠিক আছে, যেটা ভালো হয় ম্যাডাম এর সাথে কথা বলেন
-হুমমম আমি একটু শুনে আসি
,,
ইরার মা ম্যাডাম এর কাছে যায়। সেখান থেকে শুনে আসে যে মেয়েকে রাতেই নাকি দেখাবে। ইরার মা রুমে এসে মেয়েকে তড়িঘড়ি করে রেডি করালেন।
,,
এদিকে ছেলে একা আসতে লজ্জা পাওয়ায় শুভকে জোর করে ডেকে আনা হলো ছেলের সাথে থাকার জন্য৷ ছেলের মা অসুস্থ তাই সে ঢাকা থেকে আসতে পারেনি। পরিবার থেকে শুধু ছেলেই আসছে।
,,
এদিকে ইরা থ্রি পিস পড়েই একটু টিপটাপ হয়ে বসে আছে। শুভর সাথে ছেলেটে এসে এক পলক ইরার দিকে তাকিয়ে থাকে, তারপর চেয়ারে বসে।
ইরার মা ইশারায় শুভকে জিজ্ঞেস করতে বলে। শুভ ইশারায় ইরার বাবাকে জিজ্ঞেস করতে বলে ছেলের সম্পর্কে। ইরার বাবা বলল....
,,
-আচ্ছা বাবা তোমার নাম কি? (ইরার বাবা)
-রোহান (ছেলেটা বলল)
-বাহহ। আমি তোমাদের সম্পর্কে তো আগেই জেনেছি। এখন তুমি আমাদের সম্পর্কে জানো। এই হলো আমার মেয়ে ইরা...(ইরার বাবা পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলো)
,,
এরই মাঝে শুভ উঠে দাঁড়ালো। মায়ের ইশারায় সে আবার বসে পড়ে। পরিচয় পর্ব শেষ হওয়ার পর তাদের কথা বলার জন্য সময় দেওয়া হয়।
,,
ইরা আর রোহান ছাড়া রুমে কেউ থাকার কথা না, কিন্তু শুভকে ইরা রেখেছে। রোহান আর ইরা কথা বলছিলো আর শুভ মোবাইলে গেইম খেলছিলো। দু চারটে কথা বলার পর ছেলেটা নিজে থেকে উঠে চলে গেলো।
,,
সাথে সাথে রুমে ইরার বাবা মা সহ বাহিরের সবাই প্রবেশ করলো। ইরার সাথে কি কথা হয়েছে সেটা জানতে চাইলো। ইরা শুধু বলল.. "আমাকে পছন্দ করেছে। কিন্তু তার পছন্দই শেষ না। তার পরিবারের সবাই দেখবে, এটুকুই বলল)
-শুভ, রোহান কি এটুকুই বলেছে?(ইরার মা)
-উনি যা বলল, তাই বলেছে
-ওহহহ। আমার মনে হয় ছেলের পছন্দকে সবাই প্রাধান্য দিবে। আমার মেয়ে ভালো একটা পরিবার পাবে। আল্লাহ এই পরিবারে আমার মেয়ে কে কবুল করুক।
,,
শুভ এসব কথা একদমই সহ্য হচ্ছিলো না, তাই সে বেলকনির চেয়ারে বসে ফোনে গেইম খেলা শুরু করলো। একটু পর ইরা একটা চেয়ার নিয়ে তার পাশে বসল। ইরার আশাতে শুভ একটুও তার দিকে তাকালো না৷
,,
-আমি তো আপনার মনের মানুষ, বা জি এফ না যে আমার বিয়ে হওয়া দেখে আপনার রাগ করতে হবে (ইরা)
-আমি কখন রাগ করলাম? (শুভ)
-আপনার ফেইস দেখে তা বোঝাই যাচ্ছে
-রেগে নেই
-ফোনটা রেখে আমার দিকে তাকান
-আমি অন্যের বউ এর দিকে তাকাই না
-এখনো আমার বিয়ে হয়নি
-ছেলে তো পছন্দ করেছে
-আমি পছন্দ করেছি কি না, সেটা তো শুনলেন না
-আপনার পছন্দ বা অপছন্দের দাম আপনার পরিবার দিবে না
-তাও ঠিক
-হুমমম
-আপনি একটু স্বাভাবিক হয়ে কথা বলেন
-আমি ঠিক আছি,
-না আপনি ঠিক নেই। আমার আর ঐ ছেলের মাঝে কথা বলার সময় আপনি বার বার উঠে যেতে চাইছিলেন কেনো হ্যাঁ? বার বার ইশারা করে রাখতে হয়েছে।
-কেনো রেখেছেন?
-আমাদের মাঝে যা কথা হয়, সেটা আপনার জানা দরকার
-আমি জেনে কি করব?
-কারণ আপনি....
-কি?
-আমার চোখের ভাষা কি বোঝেন না?
-আপনার চোখে চশমা আছে, ভাষা নেই
-আমি মজা করছি না
-আমিও মজা করছি না
-আপনি তুমি, তুমি, না না আপনি এমন করলে আমার কি গতি হবে?
-আমি রাগ করলে আপনার কি?
-আমার কারণে আপনার মন খারাপ রাগ হবে কেনো?
-কই হচ্ছে না তো
-তাহলে আপনার মাঝে আমি দেখতে পাচ্ছি কেনো?
।।
।।

অব্যক্ত কথাগুলো
END PART
Write : Sabbir Ahmed
___________________________
-কই হচ্ছে না তো (শুভ)
-তাহলে আপনার মাঝে দেখতে পাচ্ছি কেনো? (ইরা)
-আমি জানি না
-কিন্তু আমি জানি
-কি জানেন?
-সেটা বলে লাভ নেই
,,
রাগ দেখিয়ে ইরা রুমে গেল।
পরদিন শুভ বরের বাড়িতে না গিয়ে বাসায় থাকলো। আর বাকি সবাই গিয়েছিলো। শুভর দিন কাটলো একদম একাকী। মায়ের সাথেও একটু কথা কাটাকাটি হয়েছে। ইরার জন্য তার মনের মধ্যে থাকা বিন্দু বিন্দু ভালোবাসা থেকে অসম্ভব সুন্দর এক ভালোবাসার সৃষ্টি করেছে। এটা শুধু একজনের মধ্যেই হয়নি। বিপরীতে থাকা ইরার মধ্যেও হয়েছে।
,,
একে অপরকে কিভাবে বোঝাবে এই কথা, এটা নিয়ে যত রাগ আর অভিমান। সন্ধ্যার একটু আগে শুভর মা, আর ইরাদের সবাই চলে আসে।
ইরা এসে শুভকে বাড়ির বাহিরে নিয়ে যায় কি যেন বলবে বলে। শুভ কে বাহিরে আনতে নানান কথা খরচ করতে হয়েছে ইরাকে। শেষমেশ বাইরে এনে প্রথমেই কথা শুনানো শুরু করলো।
,,
-একটা মানুষ এতো ত্যাড়া কিভাবে হয়? আমি যে এত করে বললাম, আসতে চাইলেন না কেনো? (ইরা)
-শেষ পর্যন্ত এসেছি তো(শুভ)
-অনেক বলার পর। আর আমার দিকে ঘুরে কথা বলেন। আগে তো এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলতেন, এখন কি আমি অসুন্দর হয়েছি?
-না আগের মতোই রয়েছেন
-তো আমার দিকে তাকান না কেনো
-.....(শুভ চুপ)
-বুঝেছি এটার উত্তর আমি পাবো না
-বরের বাড়ি গিয়ে কেমন লাগলো?
-ভালো
-ভালো লাগবেই, আপনার সে ছিলো
-হ্যাঁ সেই জন্যই ভালো লেগেছে, এখন খুশি? (ইরা রেগে বলল)
-তো বাইরে ডেকে কেনো আনলেন বললেন না তো
-কাল তো আমরা সবাই চলে যাচ্ছি তাই না?
-হুমমমম
-আপনার কন্টাক্ট নাম্বার টা দেন
-....(শুভ ফোনটা হাতে দিয়ে দিলো)
,,
ইরা নাম্বার কালেক্ট করে বলল...
-ফোনটা আমার কাছে থাকলে আপনার কি সমস্যা হবে?(ইরা)
-আমার ফোন দিয়ে কি করবেন? (শুভ)
-গেইম খেলবো, যা ইচ্ছে তাই করবো
-ওকে রাখতে পারেন
-চা খাবেন?
-কোথায়?
-দোকানে
-এখানকার দোকানে অনেক লোকজন থাকে৷ আপনি থাকেন আমি নিয়ে আসি
-এই ওয়েট
-জ্বি
-আপনি সিগারেট খেয়েছেন?
-হুমমম
-কয়টা?
-সারাদিনে যতবার আপনাকে মনে পড়েছে ততবার
-কতবার মনে পড়েছে?
-সে হিসেব করে রাখিনি
-ঠিক আছে যান চা নিয়ে আসেন
,,
শুভ চা আনতে গেলো। ইরা শুভর মোবাইলের গ্যালারিতে গিয়ে দেখলো ইরার অনেক ছবি। প্রথমে যে ছবিটা তুলেছিলো সেটা সেই লঞ্চে উঠার আগ মূহুর্তে। কিছু ছবি লঞ্চের মধ্যে। যখন ইরা লঞ্চের শেষ মাথায় দাঁড়িয়ে ছিলো। আর সবগুলো ছবি এখানকার।
,,
একটুপর শুভ আসলো। ইরারে হাতে একটা চায়ের কাপ দিলো।
ইরা চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলল...
-ছবি তো ভালোই তুলেন (ইরা)
-সরি, ডিলিট দিয়ে দিবোনি (শুভ)
-বদমাইশ, এক লাইন বেশি বুঝেন কেনো? আমি কি ডিলিট দিতে বলেছি? ছবি গুলো ভালো হয়েছে সেটাই বললাম
-ঘোড়ার ডিম
-আচ্ছা এলোমেলো কথা রাখুন, কাজের কথা বলুন
-কোন কাজের কথা বলব? চুপচাপ দাঁড়িয়ে চা খান৷ আপনি আমার সাথে থাকবেন এটাই আমার কাজ
-আমি তো আপনার কেউ না
-তাই না?
-হুমমম
-আমার মাথায় যে কিসের ভূত চেপেছে আল্লাহ ভালো জানেন। তা না হলে আপনার কাছে বার বার আমি আসতে চাইবো কেনো? কেনো বার বার আপনার মন রক্ষা করবো
-আপনি বৃথা এগুলো করছেন, আমি এসব আপনাকে করতে বলিনি
-সব হয়েছে আপনার সাথে থেকে। আপনাকে সময় না দিলে আজ আমি আপনাকে...
-কি?
-কিছু না
-বলেন বলেন
-কিছু না
-রোহান ছেলেটা কিন্তু ভালোই।
-হুমম জানি
-আপনার সাথে মানাবেও ভালো। আর আসল কথা সে ভদ্র মার্জিত। টাকাকড়িও আছে অনেক, সুখেই থাকবেন
-যাকেই বিয়ে করুক, হয়তো তাই থাকবে
-তার হবু বউ তো আপনিই
-কিন্তু আমার ভা...
-কি? থামলেন কেনো? পিছুটান?
-হুমমম
-পরিবার তাই না?
-আপনি সব জানেন তাহলে?
-হ্যাঁ মায়ের কাছে থেকে শুনেছি
-ওহহ
-সমস্যা নেই। আমরা তো রিচ ফ্যামিলি না, আপনার বাবা মা সুখের ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে, তাই সেখানেই আপনাকে যেতে হবে
-...(ইরা চুপ)
-বাদ দেন তো, মা একটা কথা বলেছে, এখন এটা হওয়ার কথা না তাই হয়নি। মন খারাপ করে থাকবেন না৷ মন খারাপ থাকলে চেহারায় তা স্পষ্ট ফুঁটে উঠে। আপনি শুধু রাগবেন, রাগলেই আপনাকে বেশি সুন্দর লাগে। জানি না রোহান সাহেব আপনার কোন মুডটা পছন্দ করবে
,,
শুভর বার বার রোহান কে নিয়ে কথা বলা ইরার পছন্দ হলো না। শুভর হাতে মোবাইল টা দিয়ে চলে গেলো।
,,
পরদিন ভোরে সবাই লঞ্চ ঘাটের উদ্দেশ্য রওনা হলো। আটটায় লঞ্চ ছাড়বে। বিদায়ী পরিবার হিসেবে এই দুই ম্যাম এর পরিবার প্রথম হলেন। একে একে সবাইকে বিদায় জানিয়ে রওনা হলো।
,,
সাতটায় তারা লঞ্চ ঘাটে পৌঁছে টিকেট কাটলো। লঞ্চ তখনও আসেনি। শুভ আর ইরা দুজন দুই দিকে থাকছে গতরাত থেকে। রাত থেকে এখন পর্যন্ত একবারও কথা হয়নি তাদের।
,,
শুভর মা যখন ইরার মায়ের সাথে কথায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো তখন শুভ একাকী দাঁড়িয়ে ছিলো। সুযোগ বুঝে ইরা শুভর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো কিছু কথা বলার জন্য।
-আমার কিছু কথা ছিলো (ইরা)
-হুমমম বলেন (শুভ)
-এটাই আমার আপনার শেষ কথা, এরপর আপনার সাথে আর কথা হবে না
-হুমমম সমস্যা নেই, আপনার ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য শুভ কামনা (শুভ একটু হেসে বলল)
-খারাপ লাগবে না আপনার?
-নাহহহ
-আপনার চোখে পানি!
-শীতকালে উত্তরে হীম শীতল বাতাসের কারণে এমন হচ্ছে।
-আর কতো লুকাবেন?
-লুকানোর কিছু নেই, আপনার কাছে সবই প্রকাশিত
-ঠিক আছে ভালো থাকবেন
-হুমমম, আপনিও
,,
এরপর দুজনের মাঝে আর কোনো কথা হলো না। শুভ যে টুকুও তাকিয়ে থাকতো এখন তাও থাকছে না। তবে ইরা আগের চেয়ে বেশি দেখছে তাকে। তার ধ্যান মনোযোগ সব শুভর দিকে।
প্রত্যেকটা মূহুর্ত শুভকে দেখছে আর ভাবছে " মানুষটার কিছু থাকুক আর না থাকুক, আমার ভালো থাকার জন্য মানুষটাকে লাগবে"।
,,
আটটায় লঞ্চে উঠলো সবাই। লঞ্চ ছাড়তে আরও আধ ঘন্টা দেড়ি হলো।
দুই পরিবার দুইটা কেবিন নিয়েছে।
শুভ কেবিনে ঢোকেনি। সে তার মা কে বলেছে পুরোটা সময় সে বাইরে থাকবে।
,,
এদিকে ইরা কেবিনে ঢুকে কান্না করছে। ইরা কি কারণে কান্না করছে, সেই কারণ শোনার জন্য ইরার মা বার বার প্রশ্ন করে জানতে চাইছেন। কান্নার মাঝে ইরার মা বলে ফেলল " তোর সমস্যা টা কি? বল আমাকে। কেউ কিছু বলেছে? তোর এমন কান্না দেখে আমার তো বুক ফেঁটে যাচ্ছে।
তুই আমাকে বল, আমি তোর সব কথা শুনবো। তোর সমস্যা দূর করে দিবো, এভাবে কান্না করিস না"।
,,
শেষমেশ ইরা কান্না থামিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলল...
-আমার একজনকে ভালো লাগে অনেক(ইরা)
-কে? (ইরার মা)
-শুভ
-কি বলিস? তোর ভালো লাগে?
-হুমমম, সে ও আমাকে পছন্দ করে। কিন্তু আমাকে কিছু বলেনি। এখন লঞ্চে উঠার আগে আমি তাকে বলেছি সে যেন আমার সাথে কথা না বলে। তারপর থেকে আমার মনকে আমি নিজেই শান্ত করতে পারছি না৷ ছেলেটাকে আমি বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি
-কি বলিস! এমন তো হওয়ার কথা ছিলো না
-....(ইরা আবার কান্না শুরু করলো)
,,
ইরার মুখের কথা শুনে, ইরার মা স্তব্ধ। সে নিশ্চুপ বসে আছে। চিন্তিত হয়ে পড়েছে ইরার বাবাও। ঘন্টা খানেক পর ইরার মা মুখ খুললেন...
-আমরা বাসায় গিয়ে সব সিদ্ধান্ত নিবো। আর সেটা তোর পক্ষেই যাবে (ইরার মা ইরাকে উদ্দেশ্য করে বলল)
-আমি একটু বাইরে যাই? (ইরা)
-হুমমম যা
,,
কেবিনের দরজা খুলেই দেখতে পেলো তাদের লঞ্চ মাঝ নদীতে দাঁড়িয়ে আছে। আর লঞ্চের সামনের দিকে অনেক লোকজন জড়ো হয়েছে।
-মা লঞ্চ তো থেমে আছে?(ইরা)
-কখন থামলো? (ইরার মা)
-কি যে? মনে হয় কোনো ঝামেলা হইছে, লঞ্চের সামনের দিকটায় অনেক লোকজন
-এই সেখানে যাওয়ার দরকার নেই
-না যাবো না
,,
ইরা একটু সামনে গিয়ে একজনকে জিজ্ঞেস করলো...
-আচ্ছা আংকেল ওখানে হয়েছে টা কি? লঞ্চ থেমে আছে কেনো? (ইরা)
-একটা ছেলে ঐ সামনে থেকে পানিতে পড়ে মারা গেছে (লোকটি)
-কি বলেন! কিভাবে?
-সবাই বলছিলো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিলো, হঠাৎ মাথা ঘুরে পানিতে পড়েছে। কেউ বলছে ইচ্ছে করে পড়েছে
-লঞ্চ ছাড়বে কখন? আর ছেলেটাকে কি উঠানো হয়েছে?
-হ্যাঁ উঠানো হয়েছে, একটু পরেই ছাড়বে
,,
ইরা আরেকটু এগিয়ে গিয়ে দেখতে পেলো, লঞ্চের ফ্লোরে বসে ছেলের মা হাওমাও করে কান্না করছে। দৃশ্য টা দেখে ইরার চোখর পানি অঝোরে পড়তে থাকলো। চোখের সামনে যে মা টা কান্না করছে, সে আর কেউ না? এটা তার শুভর মা৷
,,
ইরার আর এক হাত সামনে আগানোর শক্তি শরীরে পায় না। সেই জায়গায় সে বসে পড়ে। ভাবতে থাকে শুভর কথা। ইরা ভাবতে থাকে...."আমার মানা করাতেই সে এমন করলো। আমি তার কষ্ট দূর করতে গিয়ে তাকেই হারিয়ে ফেললাম। বিশ্বাস করো আমি এমনটা চাইনি৷ আমি অল্প সময়ে অনেকটা বেশি ভালোবেসে ফেলেছিলাম। আমাদের হয়তো মিল ঠিকই হতো। নিজের ভুলে তোমাকে হারিয়ে ফেললাম। আমার না বলা কথা গুলো কাকে বলব পাখি? আমি যে তোমাকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি"।
,,
,,


,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,END,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

No comments:

Post a Comment

অদৃশ্য পরী

  ----দেবর সাহেব, তো বিয়ে করবে কবে? বয়স তো কম হলোনা ৷ ----আপনার মত সুন্দরী কাউকে পেলে বিয়েটা শীঘ্রই করে ফেলতাম ৷ -----সমস্যা নাই তো, আমা...