27.2.24

ভিলেন যখন কেয়ারিং বর

 #ভিলেন_যখন_কেয়ারিং_বর

চোখ খুলে নিজের হাত পা বাধা অবস্থায় নিজেকে একটি অন্ধকার ঘরে আবিষ্কার করলাম,,,,,,বুঝতে চেষ্টা করছি যে কোথায় আছি,,,মাথাটা কেমন কেমন যেন করছে ,,,,,ঠিক সেই সময় কারোর দরজা খুলে ভেতরে আসার শব্দ পেয়ে তাকাতেই শরীরের রক্ত যেন শীতল হয়ে গেলো,,,,
সায়ান(গল্পের নায়ক)এগিয়ে এসে হাটু গেরে মানহার(নায়িকা) সামনে বসতে বসতে বল্লো,,,,
হ্যালো জাাান,, কেমন আছো(সায়ান)
মানহা স্তব্দ হয়ে তাকিয়ে আছে আর অনবরত চোখ দিয়ে পানি পরছে,,,,,
আহা,,কান্না করছো কেনো,,,কান্না করে দেখোতো কি হাল করেছো সুন্দর মুখটার(মানহার গাল চেপে ধরে বল্লো)
আমাকে কেনো আটকে রেখেছিস,,,ছেরে দে আমাকে(চেচিয়ে বল্লো মানহা)
এটা কেমন কথা জাান,,তোমাকে ছেড়ে দিলে তো আমাদের বিয়েটাই হবে না(মানহার গালে স্লাইড করতে করতে বল্লো)
বিয়ের কথা শুনে মানহা যেন আকাশ থেকে পরলো,,,
বিয়ে আর তোকে,,,,(মানহা)
সায়ান হাসছে,,,,,,,,
তোকে বিয়ে করা তো দূর তোর মতো অমানুষের মুখ দেখলেও আমার ঘেন্না লাগে(চেচিয়ে তাচ্ছিল্লো সূরে বলে মানহা)
ঠাসসসসসস,,,,
থাপ্পর খেয়ে তাল সামলাতে না পেরে পরে গেল,,তারপর সায়ান তার চুলের মুঠি ধরে বসিয়ে একদম কাছে গিয়ে বলে,,,,তোর সাহস কি করে হয় আমার সাথে উচু গলায় কথা বলার,,,আর কি বল্লি অমানুষ তাই না,, এই অমানুষকেই তোর বিয়ে করতে হবে,,আর আমার সাথেই সারাজীবন থাকতে হবে,,,,বলেই সায়ান মানহাকে ছুরে ফেলে হনহন করে রুম থেকে বের হয়ে যায়,,,
মানহা ফ্লোরে পরেই কান্না করছে,,,একসময় কান্না করতে করতে জ্ঞান হারায়,,,
চলবে,,,,,,,,,
(জানি না কতটুকু ভালো হয়েছে😢,,প্লিজ কেউ বাজে কমেন্ট করবেন না,,,আর ভালো লাগলে কমেন্টে জানাবেন,,তাহলে next part দিবো)

সায়ান বারান্দায় দাড়িয়ে সিগারেট ফুকছে,,হঠাৎ সৌম(সায়ানের জিগারের বন্ধু) পেছন থেকে ডাক দিয়ে বলে,,,
সৌম: তাকে নিয়ে এসেছি,,
সায়ান: তুই তাকে পাশের রুমে নিয়ে গিয়ে বসা,,,,আর তোকে আরও একটা কাজ করতে হবে,,,
সৌম: তোর জন্য আমি সব করতে রাজি আছি,,,কী করতে হবে তুই বল,,,,
সায়ান: এক্ষুনি মার্কেট থেকে একটা লাল বেনারশি নিয়ে আয়,,,আর বিউটিশিয়ানদের আসার কথা বলেছিলাম তারা এখোনো কেনো আসছে না,,,
সৌম: আমি তাদের ফোন করে বলে দিয়েছি আসার জন্য তারা হয়ত এক্ষুনি চলে আসবে,,,,আর শারি নিয়ে আসছি,,,
সৌম শারি আনতে চলে যায়.......
সায়ান সিগারেটটা শেষ করে আরো একটা ধরায় আর মলে মনে ভাবতে থাকে.......
আমি যা করছি ঠিক করছি তো?হিতে যদি বিপরিত হয়েে যায়,,,,,না না না এসব আমি কী চিন্তা করছি,, আমি যা করছি একদম ঠিক করছি,, আমি যা করছি নিজের ভালোবোসো পাওয়ার জন্যই করছি,,এটা না করলে আমি ওকে সারা জীবনের জন্য হাড়িয়ে ফেলবো,,,
এসব কথা ভাবতে ভাবতে সৌম শাড়ি আর বিউটিসিয়ানদের নিয়ে এসে পরে,,,
সায়ান শাড়ি নিয়ে ভেতরে চলে যায়,,,দিয়ে দেখে মানহা ফ্লোকে অজ্ঞান হয়ে পরে আছে,,,সায়ান তারাতারি তরে মানহাকে কোলে তুলে খাটে শুইয়ে দেয় এবং পানি ছিটা দিতে লাগে,,,কিছুক্ষন পর মানহা চোখ খুলে তাকায়,,,তারপর সায়ান মানহাকে শাড়িটা দিয়ে তাকে পড়তে বলে,,,,মানহা কোনোমতেই শাড়ি পরতে রাজি হয়নি,,,,
সায়ান: তুনি যদি শাড়ি না পরো তাহলে আমি নিজেই পড়িয়ে দেবো বলে দিলাম(ধমক দিয়ে)
মানহা তারাতারি করে শড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়,,,
সায়ান রুম থেকে বের হলে বিউটিসিয়ানরা রুমে যায়,,তারা মানহাকে শাড়ি কোনোরকম পরাতে পারলেও সাজাতে পারেনি,,মানহার পাগলামির করনে
তারপর সায়ান, কাজী আর সৌম রুমে আসে এবং বিয়ে পরানো শুরু করতে বলে,,,কাজী যখন কবুল পরতে বলে তখন মানহা কিছুতেই বলতে রাজি হচ্ছিলো না,,তখন সায়ান মানহাকে একটি ভিডিও দেখায় যেটাতে মানহার আদরের বোনকে একটা লোক চকলেট দিচ্ছে আর তার বোন সেটা নিচ্ছে,,,
মানহা: প্লিজ আমার বোনকে কিছু করবেন না,,,ওকে ছেরে দিন,,,, আমি আপনার পায়ে পরি ওর কোনো ক্ষতি করবেন নে (কান্না করতে করতে)
সায়ান: তাহলে চুপ চাপ সেটা কর যেটা আমি করতে বলছি,,,,
কাজী সাহেব আবার মানহাকে কবুল বলতে বলে,,,
মানহা: কবুল (কান্নায় ভেঙ্গে পরে)
সায়ান: কবুল,,,
কাজী সাহেব তাদের বিয়ে পরানো হলে চলে যায়,,,
মানহা রুমে এককনায় বসে কেঁদেই যাচ্ছে,,, তার হাবা আর ছোট বোনটার কথা খুব মনে পরছে,,,(মানহার পরিবারে তার বাবা আর ছোট বোন ছাড়া কেউ নেই, তার মা ছোট বোনের জন্মের সময় মারা যান, তাই ছোট বোনকে মায়ের মতো করে ভলোবাসে)
সায়ান প্লেটে কিছু খাহার নিয়ে রুমে প্রবেশ করে,,দেখে মানহা ফ্লোরে বসে কান্না করছে,,,য়ে গিয়ে মানহাকে টেনে লিয়ে খাটে বসায়,,,খাবারের প্লেটটা দিয়ে বলে,,,
সায়ান: খেয়ে নাও,,
মানহা: খাবো না (মুখ ঘুরিয়ে)
সায়ান: খেতে বলেছি,,সকাল থেকে না খেয়ে আছ তুমি,,
মানহা: বল্লাম তো খাবো না,, কানে শুনতে পাননা(রেগে)
সায়ান: এই এত কিসের রাগ হুম,,,চুপ করে খাও নাহলে কিন্তু আমার থেকে খারাপ আর তেউ হহে না(দাঁতে দাঁত চেপে)
মানহা: আপনার থেকে খারাপ কেউ নেইও এই পৃথিবীতে (তাচ্ছিল্য স্বরে)
সায়ান: তাই না,,,
বলেই সায়ান মানহাকে জোর করে খাবার খাইয়ে দিতে লাগে,,,,খাওয়া শেষ হলে তাকে রেস্ট নিতে বলে রুম থেকে বেড়িয়ে যায় সায়ান,,,,
কিছুক্ষন পর সায়ান ফিরে এসে মানহাকে নিয়ে যায়,,,,
মানহা: কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে,,,,
সায়ান: নিশ্চুপ
মানহা: আমি কিছু জানতে চাইছি(রেগে চিৎকার করে)
সায়ান: গেলেই দেখতে পারবে,,,
সায়ান মানহাকে একটি রুমে নিয়ে যায়,,রুমটি সুন্দর করে লাল আর সাদা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে,,বিছানায় ফুলের পাপরি ছিটিয়ে রাখা হয়েছে,,রুমের চারপাশে প্রদীপ দিয়ে সাজানো হয়েছে,,
মানহা: আমাকে এখানে কেনো নিয়ে এসেছেন(রেগে)
সায়য়ন: তুমি কী ভুলে গেছো জাান যে আজ আমাদের বাসর রাত,,,,
মানহা ঝাড়ি দিয়ে তার হাত ছুটিয়ে বলে,,আমি কখনো আপনার সাথে একরুমে থাকবো না,,,সায়ান মানহাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলে,,,থাকতে তো তোমাকে হবেই,,আজ আমাদের বাসর রাত বলে কথা(ডেভিল হাসি দিয়ে) বলেই সায়ান মানহাকে কোলে তুলে নেয়,, মানহা হাত পা ছুটা ছুটি করছে নামার জন্য কিন্তু কিছুতেই পারছে না,,সায়ান মানহাকে বেডে শুইয়ে দেয়,,,তারপর মানহার ঠোটের সাথে নিজের ঠোট চেপে ধরে,,,মানহা ছুটার জন্য প্রানপন চেষ্টা করে কিন্তু পেরে ওঠে না,,সায়ান আস্তে আস্তে গলায় গালে পাগলের মতো কিস করতে থাকে,,,মানহা কান্না করতে থাকে কিন্তু তা যেনো সায়ানের কান পর্যন্ত যাচ্ছে না,, সায়ান তার কাজে ব্যস্ত,,মানহা কান্না করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে পরে,,,,
সায়ান খেয়াল করে যে মানহা ঘুমিয়ে পরেছে তাই সে মানহার কপালে একটি ভলোবাসার পরশ একে দিয়ে ওঠে বারান্দায় চলে যায়,,,
চলবে,,

সায়ান খেয়াল করলো যে মানহা ঘুমিয়ে পরেছে তাই সে মানহার কপালে একটি ভলোবাসার পরশ একে দিয়ে ওঠে বারান্দায় চলে যায়,,,,
.
.
.
মধ্যরাতে চারপাশে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে | সায়ান বারান্দায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে সিগারেট ফুকছে আর জানালা দিয়ে তার ঘুমন্ত মায়াবীনিকে দেখছে | তারপর সিগারেট শেষ করে সেও গিয়ে তার মায়াবীনির পাশে শুয়ে পরে,আর মানহার যেই গালে থাপ্পর দিয়েছিল সেই গালে হাত বুলাতে থাকে| একসময় সে ও মানহার সাথে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমায়,,,
সকাল ১০ টা
মানহা: ঘুম থেকে ওঠে দেখলাম যে সায়ান রুমে নেই| ওঠতে গিয়েও মনে হচ্ছে যেনো ওঠতে পারছি না, শরীর প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে তবুও ওঠে বসলাম | সামনে চোখ পরতেই দেখলাম যে সোফায় কতগুলো শপিং ব্যাগ রাখা | ওঠে গিয়ে দেখলাম যে ব্যাগে একেকরকম শাড়ী রাখা আছে,,,
সায়ান: ফ্রেশ হয়ে এখান থেকে শাড়ী পরে নাও(পেছন থেকে বলে ওঠে)
মানহা ঘুরে দেখে যে দরজার কাছে সায়ান দাড়িয়ে আছে |
সায়ান: তারপর নিচে ব্রেকফাস্ট করতে আসো আমি তোমার জন্য ওয়েট করছি(শান্ত কন্ঠে)
মানহা: আমি ব্রেকফাস্ট করবো না, আমি বাড়ি যাব(কান্না করতে করতে)
সায়ান: আমি তোমার কোনো মতামত চাইনি(রাগি কন্ঠে)
মানহা: কেনো আপনি সবসময় আমার ওপর জোর খাটান হুম ? কেনো আমাকে আটকে রেখেছেন ?(রেগে চেচিয়ে)
সায়ান রেগে মানহাকে একটান দিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলে,,,
সায়ান: কারন তুমি আমার বিয়ে করা বউ | আর তোমার উপর আমার জোর করার সম্পূর্ন অধিকার আছে(অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
মানহা: আমি এই বিয়ে মানি না, কিছুতেই মানি না | এটা একটা অবৈধ বিয়ে(কান্না করতে করতে)
সায়ান এই কথা শুনার পর তার রাগ চরম পর্যায়ে চলে যায় তাই সাথে সাথে মানহার ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোট চেপে ধরে | মানহা ছুটার জন্য অনেক চেষ্টা করে কিন্তু সায়ানের সাথে পেরে ওঠে না | কিছুক্ষন পর সায়ান নিজেই মানহাকে ছেড়ে দিয়ে বলে,,
সায়ান: এই কথা যদি আর একবার শুনেছি তাহলে এর থেকে খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম | এখন চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে নিচে এসো আমি ওয়েট করছি(রেগে)
বলেই সায়ান রুম থেকে বেড়িয়ে চলে যায়,,,
মানহা ওয়াশরুমে গিয়ে ঝর্ণার নিচে দাড়িয়ে ইচ্ছামতো কান্না করতে থাকে | কিছুক্ষন পর ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে মানহা নিচে চলে যায় | নিচে গিয়ে দেখে সায়ান টেবিলে ব্রেকফাস্ট সাজিয়ে তার জন্য ওয়েট করছে |
সায়ান: মোবাইল দেখতে দেখতে হঠাৎ চোখ যায় সিড়ির দিকে | আমি যেনো চোখ ফেরাতে পারছি না, মানহা হলুদ রঙ্গের একটা জর্জেটের শাড়ি পরে সিড়ি দিয়ে নামছে | ভেজা চুল গুলো কোমড় পর্যন্ত ছাড়া, চোখে হালকা কাজল দেওয়া, আর তার ডান গালের যেই তিলটা তা যেনো সোন্দর্যকে আরো ফুটিয়ে তুলেছে |
মানহা: সিড়ি দিয়ে নামার সময় খেয়াল করলাম সায়ান আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে | আমি আস্তে আস্তে টেবিলের সামনে গেলাম,,
সায়ান: বসো(খাবার সার্ব করতে করতে)
মানহা: আমি খাবো না | আমার খিদে নেই(অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে )
সায়ান: আমার রাগ উঠিয়ো না, বসতে বলেছি বসো |
মানহা: বল্লামতো আমি খাবো না |
বলে মানহা চলে যেতে নিলে সায়ান গিয়ে হাত ধরে টেনে এনে চেয়ারে বসিয়ে দেয় এবং নিজের হাতে মানহাকে খাইয়ে দেয় | মানহা না করলেও জোর করে সায়ান খাবার মানহার মুখে পুরে দেয় | তারপর নিজেও খেয়ে নেয় |
মানহার খাওয়া হয়ে গেলে সাথে সাথে ওপরে চলে যায়,,,
মানহার খাওয়া হলে ওপরে চলে যায়,,
সায়ান রুমে গিয়ে দেখে মানহা বেডে চুপচাপ বসে আছে |
সায়ান: তুমি রেস্ট নাও আমার বাইরে একটু কাজ আছে, কাজটা সেরে তারাতারি এসে পরবো |
মানহা: এইতো সুযোগ এর মধ্যেই আমাকে যেভাবেই হোক এখান থেকে পালাতে হবে(মনে মনে)
সায়ান: কী হলো, কি ভাবছো ?(ভ্রু কুচকে তাকিয়ে)
মানহা: কি..কিছুনা(চমকে তাকিয়ে)
সায়ান: তুমি রেস্ট নাও, আমি আসছি |
মানহা বারান্দায় দাড়িয়ে দেখলো যে সায়ান গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে গেলো | এই সুযোগে মানহা ভাবতে থাকে যে কিভাবে এই সিকিউরিটির চোখ ফাঁকি দিয়ে বের হয়ে যাবে | এই ভেবে মানহা বাড়ি থেকে বের হয়, তারপর বাড়ির পেছন দিক দিয়ে দেয়াল টপকে দেয়ালের ওপর থেকে লাফ দিয়ে নামে, সাথে পায়ে প্রচন্ড ব্যাথাও পায় | তবুও সে খুরিয়ে খুরিয়ে হাটা শুরু করে, হাঁটতে হাঁটতে অনেক দুর পর্যন্ত যায়,তারপর সে খেয়াল করে যে কিছু বখাটে ছেলে তার দিকে তাকিয়ে কি যেনো বলছে | তবুও সে তা পাত্তা না দিয়ে হাঁটতে থাকে | তারপর ছেলে গুলো তার দিকে এগোতে থাকে, মানহা বেশ ভয় পেয়ে যায় তাদেরকে এগোতে দেখে | ৌহঠাৎ একটা ছেলে তার হাত ধরে,,
ছেলে 1: কি সুন্দরি কোথায় যাচ্ছো,,
মানহা: কারা আপনারা, আমার হাত ছাড়ুন বলছি(কাঁদো কাঁদো কন্ঠে)
ছেলে 2: ছাড়ার জন্যতো আর ধরিনি মামনি |
বলেই ছেলেগুলো মানহাকে টানতে শুরু করে | মানহা চিৎকার করছে | মানহা তাদের হাত ঝাড়ি দিয়ে ছেড়ে দৌড় দেয় উলটো দিকে | দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা লাগে মানহার ওপরে তাকিয়ে যা দেখে তা দেখার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না | মানহা উপরে তাকিয়ে দেখে সায়ান ছেলেগুলোর দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে | মানহা গিয়ে সায়ানের পেছনে লুকিয়ে পরে,,,(সায়ান তারাতারি বাড়িতে ফিরে যায়, গিয়ে সে মানহাকে ডাকতে শুরু করে কিন্তু মানহার কোনো সারা পায় না, বাড়ির সব জায়গায় মানহাকে খুজতে থাকে কিন্তু মানহা কোথাও নেই,সায়ানের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে মানহা বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে, সাথে সাথে সে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরে মানহাকে খুজতে | কিছু দুর যাওয়ার পরে সে সামনে দেখলো যে একটা মেয়ে দৌড়ে আসছে | সায়ান গাড়ি থেকে নেমে সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখে যে মানহা | একমুহূর্তে যেনো সে প্রান ফিরে পায় আবার মানহার উপর রাগ ও হয়)
এই মালটাকে এই দিকে দিয়ে দে তো(ছেলেগুলো থেকে একজন)
এছাড়াও অনেক বাজে কথা বলছিলো ছেলেগুলো মানহাকে |
সায়ানের মাথায় যেনো রক্ত চড়ে গেলো তাদের এমন কথা শুনে | সায়ান ইচ্ছা মত ছেলেগুলোকে মেরে মানহাকে নিয়ে বাসায় চলে যায়,,,
বাড়িতে.......
সায়ান রুমের জিনিস পত্র ইচ্ছামত ভঙ্গচুর করছে | তার কানে বার বার ছেলেগুলোর কথা ভাসছে | মানহা এককোণায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে সায়ানের কান্ড দেখছে আর অঝোড়ে কেঁদে যাচ্ছে | সায়ান মানহার সামনে এসে মানহার দুই বাহু চেপে ধরে বলে,,,,,
সায়ান: এই মেয়ে কোথায় যাচ্ছিলে হুম ?(রেগে চিৎকার করে)
মানহা: নিশ্চুপ
সায়ান: কথা বলছো না কেনো (ঝাকিয়ে)
মানহা: কান্না করেই যাচ্ছে..
সায়ান: আজ যদি ছেলে গুলো তোমার কোনো ক্ষতি করে দিতো, তাহলে ?(অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে)
সায়ান: তুমি কি ভেবেছিলে তুমি আমার থেকে পালিয়ে পার পেয়ে যাবে ? মনে রেখো তুমি পালিয়ে যেই প্রান্তেই যাও না কেনো আমি তোমাকে খুজে বের করবোই | তাই এরকম ভুল দ্বিতীয়বার করার চিন্তা করো না লাভ হবে না,
বলেই মানহাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে রুম থেকে হনহন করে বেড়িয়ে যায় |
মানহা কান্না করতে করতে বসে পরে | আমি কী এমন পাপ করেছিলাম যে তার শাস্তি আমাকে এভাবে পেতে হচ্ছে,(নিজে নিজে বলছে আর কান্না করছে)
কান্না করে একসময় ফ্লোরেই ঘুমিয়ে পরে,,,,,
চলবে.....

মানহা কান্না করতে করতে বসে পরে, একসময় সে ফ্লোরেই ঘুমিয়ে পরে,,
.
.
.
সায়ান রেগে নিচে গিয়ে সকল সিকিউরিটি গার্ডদের ডেকে পাঠায় | তারপর সায়ান সকল সিকিউরিটি গার্ডদের সাথে রাগারাগি করে যে তারা থাকতে কিভাবে একটা মেয়ে পালিয়ে যায় এবং বাড়ির পেছন দিকে কোনো গার্ড ছিলো না তাই সেখানে আরো কিছু গার্ড বারিয়ে দেয় | আর মানহার উপর বিশেষ নজড় রাখতে বলে যাতে কোনো ভাবে সে বের হলে যাতে তাকে ইনফর্ম করে তার কড়া নির্দেশ দিয়ে দেয় | গার্ডরা মাথা নিচু করে চুপচাপ শুনে চলে যায় |
সায়ান চুপ করে চোখ বন্ধ করে ড্রয়ইং রুমে সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছে | তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে সে তার রাগ কন্ট্রল করার চেষ্টা করছে | এই মুহূর্তে তার মাথা বেশ গরম হয়ে আছে | সায়ান ফোন দিয়ে সৌমকে আসতে বলেই ওপরের রুমে চলে যায় মানহাকে দেথতে | সায়ান রুমে গিয়ে দেখে যে মানহা ফ্লোরে ঘুমিয়ে আছে | সায়ান গিয়ে মানহাকে কোলে তুলে নিয়ে বেডে শুইয়ে দেয় | তারপর মানহার নিষ্পাপ চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকে এবং তার মাথায় হাত বুলাতে থাকে আর বলতে থাকে,,,
সায়ান: তুমি কেনো বুঝো না যে আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি | কেনো বুঝোনা যে আমি যা করেছি, যা করছি এবং যা করবো তা তোমার ভলোর জন্যই করছি | তুমি কবে বুঝবে আমার ভালোবাসা(মানহার ঘুমন্ত চেহারায় তাকিয়ে)
তারপর সায়ান মানহার কপালে একটি ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে চলে যায় |
সায়ান নিচে গিয়ে দেখে সৌম এসে পরেছে | সায়ান ও সৌম দুজনই সোফায় বসলো |
সায়ান: কোনো খোজ কি পেয়েছিস ?
সৌম: না, এখনো কোনো খোজ পাইনি | ও নিজেকে খুব ভালোভবেই লুকিয়ে রেখেছে যাতে সহজে কেউ খুজে না পায় |
সায়ান: যেভাবেই হোক ওকে খুজে বের করতে হবে(রাগি চোখে)
সৌম: আমি মানুষ ২৪ ঘন্টা লাগিয়ে রেখেছি | খুব শিগ্রই পেয়ে যাব তুই চিন্তা করিস না | এইবার বল ভাবির কি খবর ?
সায়ান: মানহা আজকে পালানোর চেষ্টা করেছিল |
সৌম: কি !! ভাবি পালিয়ে গেছে ?(অবাক হয়ে)
সায়ান: চেষ্টা করেছিলো, কিন্তু পালাতে পারে নি | আমি খুজে বের করে নিয়ে এসেছি |
সৌম: এখন কোথায়?
সায়ান: রুমে ঘুমাচ্ছে |
সৌম: ও সবটা জানে না তাই তোকে ভুল বুঝছে, তুই ভাবির খেয়াল রাখিস | আর আমি তোকে সকল খবর জানাবো | আজ আসি,,
সায়ান: ঠিক আছে |
সৌম ওঠে চলে যায় | সায়ান চুপচাপ সোফায় বসে থাকে |
বিকাল ৪ টা...
মানহা: ঘুম থেকে ওঠে দেখলাম পা নারাতে পারছি না | তখন মনে পরলো দেয়াল টপকে লাফ দেওয়ার সময় পরে পায়ে ব্যাথা পেয়েছিলাম | পা টা মনে হচ্ছে ফুলে গেছে | আস্তে আস্তে করে বেড থেকে নামলাম দেখলাম সায়ান রুমে নেই | তারপর আস্তে আস্তে হেঁটে বারান্দায় যেতেই দেখলাম সায়ান দাড়িয়ে আছে | শান্ত দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে | তারপর ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখি সায়ান খাবারের ট্রে নিয়ে রুমে ডুকছে,,,
সায়ান: বেডের দিকে তাকাতেই দেখলাম মানহা নেই | ওয়াশরুম থেকে পানি পরার শব্দে বুঝলাম যে ওয়াশরুমে আছে | তাই এই ফাঁকে ওর জন্য খাবার নিয়ে আসলাম,,,
সায়ান: এদিকে বসো(শান্ত কন্ঠে)
মানহা: আমি আস্তে আস্তে গিয়ে বসে পরলাম | আমি যে খুরিয়ে খুরিয়ে হাঁটছি তা সায়নের চোখ এরায়নি | তাই আমাকে প্রশ্ন করলো,,,,,
সায়ান: পায়ে কি হয়েছে ?(ভ্রু কুচকে)
মানহা: নিশ্চুপ
সায়ান: আমি একটা প্রশ্ন করেছি(রেগে ধমক দিয়ে)
মানহা: ব...ব্যাথা পেয়েছি(কেঁপে)
সায়ান: ব্যাথা কীভাবে পেয়েছো ?
মানহা: দে..য়া..ল থেকে লাফ দেওয়ার স..ম..য়(কাঁপা কাঁপা কন্ঠে)
তখন সায়ান বুঝতে পারে মানহা দেয়াল টপকে পালাতে চেষ্টা করেছে |
সায়ান: যেটা পারোনা সেটা করতে যাও কেনো(ভ্রু কুচকে)
মানহা মাথা নিচু করে আছে,,
সায়ান: এবার হা করো(মুখের সামনে খাবার নিয়ে)
মানহা: আমি নিজে খেয়ে নিতে পারবো |
সায়ান: আমি তোমাকে জিগ্যেস করেছি ? চুপচাপ হা করো(রেগে)
মানহা বাধ্য মেয়ের মতো খেয়ে নিলো কারন সে জানে যদি না খেতে চায় তাহলে জোর করে মুখ চেপে ধরে খাইয়ে দিবে |
সায়ান মানহাকে খাইয়ে দিয়ে ব্যাথার ঔষধ খাইয়ে দেয় |
রেস্ট নাও এই পা নিয়ে বেশি হাঁটাহাটি করো না | বলেই সায়ান ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করতে বসে পরে | মানহা ওঠে বারান্দায় যেতে নিলে,,,,
সায়ান: কোথায় যাচ্ছো ? হাঁটাহাটি করতে মানা করলাম না(ধমক দিয়ে)
মানহা: আমার পা দিয়ে আমি হাঁটবো আপনার কী ?(ভ্রু কুচকে)
সায়ান: বেশি কথা না বলে চুপ করে বসে থাকো(ল্যাপটপে তাকিয়ে)
মানহা: আমি বারান্দায় যাচ্ছি কোথাও পালিয়ে যাচ্ছি না(বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে)
সায়ান: তোমাকে বিশ্বাস নেই, তারপর দেখা যাবে বারান্দায় শাড়ি ঝুলছে কিন্তু তুমি নেই, পালিয়ে গেছো(ল্যাপটপে কাজ করতে করতে)
মানহা: এইসব উদ্ভট চিন্তা আপনার মাথায়ই আসে আমার মাথায় না |
সায়ান: ওহ্ দেয়াল টপকে পালানোর উদ্ভট চিন্তাটাও আমার মাথায় আসছিলো বুঝি(মানহার দিকে তাকিয়ে)
মানহা আর কিছু না বলে ওঠে বারান্দায় চলে যায় | মানহা বারান্দায় দাড়িয়ে আছে হালকা মৃদু বাতাসে চুল গুলো উড়ছে আর মানহা আগের কথা চিন্তা করছে যে কি থেকে কি হয়ে গেলো,,,
অতীত........
আহসান খান(মানহার বাবা): মানহা মা তারাতরি কর আমার যে দেড়ি হয়ে যাচ্ছে |
মানহা: এইতো বাবা হয়ে গেছে আমার | তুমি তারাতারি খেয়ে বেরিয়ে পর | আমি মানিলাকে(মানহার ছোটো বোন) নিয়ে একটু পর বেরিয়ে পরবো |
আহসান খান: ঠিক আছে মা |
মানহা: মানিলা তারাতরি রেডি হয়ে নে তোর স্কুলের সময় হয়ে গেছে(একটু জোরে)
মানিলা: এইতো আপুনি আমি রেডি |
মানহা: চল চল দেড়ি হয়ে যাচ্ছে |
মানহা মানিলাকে স্কুলে দিয়ে সেও ভার্সিটিতে চলে যায়,,,,
মানহা: আজ কতটা দেড়ি হয়ে গেলো |(নিজে নিজে)
মানহা তারাতরি যেতে নিলে হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা লাগে | ধাক্কা লেগে মানহার হাত থেকে বইটা পরে যায় | মানহা বই উঠাতে উঠাতে বলে,,,
মানহা: সরি সরি, আমি দেখতে পাইনি |
সায়ান মানহার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে | মানহা হালকা গোলাপি কার্লারের থ্রিপিজ পরেছে সাথে চোখে গারো করে কাজল দেওয়া, হালকা লিপস্টিক দিয়েছে আর তার সাথে মানহার ডান গালে একটা কালো তিল সব মিলিয়ে যেনো মানহাকে একটা পরীর মতো লাগছে সায়ানের কাছে | সে যেনো চোখ ফেরাতে পারছে না,,
সায়ান: ইট্স ওকে(অস্পষ্ট কন্ঠে)
মানহা একটি মুচকি হাসি দিয়ে চলে যায়,,
সায়ান মানহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে |
সৌম: কিরে কাকে দেখছিস এভাবে(সায়ানকে ধাক্কা দিয়ে)
সায়ান: হুম, কাউকে না(চমকে ওঠে)
সৌম: চল তাহলে |
সায়ান: কোথায়(একদৃষ্টিতে মানহার দিকে তাকিয়ে, মানহা বই লাব্রেরীতে জমা দিয়ে ক্লাসে যাচ্ছিলো কারো সাথে হেসে কথা বলতে বলতে)
সৌম: বাড়িতে আবার কোথায়(অবাক হয়ে)
সায়ান: ও হ্যা চল(নিজেকে সামলে নিয়ে)
সায়ান ও সৌম বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়,,,,,,
চলবে.......
(কোনো ভুলত্রুটি হয়ে থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)

সায়ান ও সৌম বাড়ির দিকে রওনা হয়,,,,
.
.
.
বাড়িতে.....
সায়ান সোফার মধ্যে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে | আর মানহার কথা চিন্তা করছে | মানহার কাজল কালো বড় বড় চোখ | গোলাপের পাপরির মতো ঠোঁটে সেই মিষ্টি হাসি যেনো সায়ানকে পাগল করে দিচ্ছে | সেইসব চিন্তা করতে করতেই অজান্তে সায়ানের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে |
সৌম: কিরে হাসছিস কেনো ?(অবাক হয়ে)
সায়ান: ইয়ার আমি তো ওকে ভুলতেই পারছি না(চোখ বন্ধ করেই)
সৌম: কাকে ভুলতে পারছিস না ?(অবাক হয়ে)
সায়ান: নাম জানি না | আজই প্রথম দেখেছি | তবে আজকে প্রথম দেখাতেই আমি তার সৌন্দর্যে ঘায়েল হয়ে গেছি(এক দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে মুচকি হেসে)
সৌম: বাব্বাহ | আমাদের সায়ান বাবু মনে হয় এবার কারোর প্রেমে পরেই গেলো(দুষ্টুমির হাসি দিয়ে)
সায়ান একটু লজ্জা পেয়ে মুচকি হাসি দিলো,,,,
সৌম: তো ভাবিকে কবে বিয়ে করে বাসায় নিয়ে আসছিস ?
সায়ান: খুব শিগ্রই |
পরের দিন সকালে......
সায়ান মানহার ভার্সিটির সামনে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে আর মানহার জন্য ওয়েট করছে | সায়ান আশেপাশে তাকাতেই তার চোখ একজনের ওপর আটকে যায় | দেখলো মানহা দূর থেকে একটি কালো থ্রীপিজ, সাথে কোমর পর্যন্ত চুল গুলো ছেড়ে দিয়েছে কার সাথে যেনো হেসে হেসে কথা বলতে বলতে আসছে | সায়ান মুগ্ধ হয়ে দেখছে মানহাকে,,
সায়ান: হা...হাই(ইতস্থ হয়ে)
মানহা: হাই(হাসি দিয়ে)
সায়ান: এভাবে হেসো না পাগল হয়ে যাবো(মনে মনে)
মানহা: হা করে তাকিয়ে আছেন কেনো, কিছু বলবেন?(চোখের সামনে তুরি বাজিয়ে)
সায়ান: হ্যা(নিজেকে সামলে নিয়ে)
মানহা: তার আগে আমি একটু বলি , কালকে আপনার সাথে ধাক্কা লেগেছিলো আমার | আপনি খুব ব্যাথা পেয়েছিলেন তাই না ? আমি তারাহুরার জন্য ঠিক মতো সরিও বলতে পারি নি | আই এম সরি, প্লিজ কিছু মনে করবেন না(করুন কন্ঠে)
সায়ান: মনে করবো না কিন্তু একটা শর্তে |
মানহা: শর্ত!! কিসের শর্ত ?(অবাক হয়ে)
সায়ান: আমার সাথে এক কাপ কফি খেতে হবে |
মানহা: আজ তেমন ইমপর্টেন্ট ক্লাস নেই তাই খাওয়াই যেতে পারে(মনে মনে)
সায়ান: কী ভাবছেন ? আমি কিন্তু এখনো মাফ করি নি |
মানহা: ঠিক আছে চলুন(আস্তে আস্তে)
সায়ান: আপনার ক্লাস নেই ?
মানহা: আছে, তবে তেমন ইমপর্টেন্ট না |
সায়ান ও মানহা একটি কফি শপে বসে আছে | মানহা এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছে আর সায়ান মানহাকে দেখতে ব্যস্ত | মানহা সায়ানের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো,,
সায়ান: একটা কথা বলবো? কিছু মনে করবেন না তো ?
মানহা: না না, বলুন কি বলবেন |
সায়ান: আপনার হাসিটা কিন্তু সুন্দর |
মানহা: ধন্যবাদ(মুচকি হেসে)
সায়ান আর মানহা কফি খেতে খেতে টুকটাক কথা বলছে | কফি খাওয়া শেষে তারা কফি শপ থেকে বেরিয়ে পরে |
সায়ান: আপনার সাথে কথা বলে ভলো লাগলো |
মানহা: আমারও(মুচকি হেসে)
সায়ান: চলুন আপনাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসি |
মানহা: না না আমি যেতে পারবো |
সায়ান মানহাকে রিকশা করে দিয়ে নিজেও রওনা হয় অফিসের উদ্দেশ্যে,,,,,
এভাবে সায়ান রোজ মানহার ভার্সিটির সামনে একটু আরালে দাড়িয়ে থাকে মানহাকে দেখার জন্য | মাঝে মাঝে মানহার সাথে দেখা হতো | তারা প্রায়ই কফি শপে একসাথে বসে কফি খেতো | সায়ান মানহাকে কয়েকবার ইশারা ইঙ্গিতে বোঝানোর চেষ্টা করেছে যে সে মানহাকে ভালোবেসে ফেলেছে | কিন্তু মানহা বুঝেও না বুঝার ভান করে ছিলো | এভাবে চলতে চলতে মানহার ও সায়ানকে ভলো লাগতে শুরু করে,,,
একদিন মানহা ভার্সিটি থেকে তার বান্ধুবির বাড়ি যায় তারপর ফেরার পথে সে যা দেখে তা যেনো তার চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না | সে দেখলো সায়ান কিছু মানুষদেরকে মারছে যার কারোনে তার শার্টে রক্ত দিয়ে ভরে গেছে | মানহার এই দৃশ্য দেখে মাথা যেনো ঘুরতে লাগলো | সে আর এক মূহূর্ত দেড়ি না করে তারাতারি বাসায় চলে আসে | বাসায় গিয়েও যেনো তার হাত পা কাপঁতে থাকে সেই দৃশ্য মনে করে | এরপর থেকে মানহা চেষ্টা করতো সায়ানের সামনে না যাওয়ার কারণ ওই দিনের পর থেকে মানহার মনে সায়ানের জন্য ঘৃনা জন্মে গেছে যে, একজন মানুষ হয়ে অন্য একটি মানুষকে কিভাবে মারতে পারে ? সায়ান খেয়াল করছে যে মানহা তাকে ইগনোর করছে | সায়ান বুঝতে পারছে না কেনো মানহা এমন করছে | মানহাকে কল করলেও রিসিব করে না | সায়ান একদিন মানহা ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার সময় সামনে গিয়ে দাড়ায় | মানহা পাশ দিয়ে চলে যেতে নিলে সায়ান মানহার হাত ধরে ফেলে,,,
সায়ান: কি হয়েছে তোমার(শান্ত কন্ঠে)
মানহা: কিছু হয়নি, হাত ছাড়ুন(নিচের দিকে তাকিয়ে)
সায়ান: তাহলে আমাকে ইগনোর করছো কেনো ?(ভ্রু কুচকে)
মানহা: আমার হাত ছাড়ুন |
সায়ান: আমি তোমাকে কিছু জিগ্যেস করছি(রেগে)
মানহা: কেনো আমি আপনার কথার জবাব দেব হুম ? কে আপনি ? কেনো আমাকে রোজ রোজ বিরক্ত করেন(রেগে চেচিয়ে)
আশেপাশের মানুষ গুলো তাদের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,,
মানহা: চলে যান আমার চোখের সামনে থেকে | আমি আপনার মুখটাও দেখতে চাই না(চোখ থেকে পানি পরছে)
সায়ানের মাথায় যেনো রক্ত ওঠে গেলো মানহার এমন আচরন দেখে | সায়ান মানহাকে টেনে এনে জোর করে গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয় তারপর তারা একটা ফাকা রাস্তায় এসে থামে | এর মাঝে মানহা অনেকবার সায়ানকে বলেছে গাড়ি থামানোর কথা কিন্তু সায়ান শুনে নি,,,,
সায়ান মানহাকে হাত ধরে টেনে গাড়ির বাইরে এনে গাড়ির সাথে তার দুহাত চেপে ধরে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,,,
সায়ান: তোমাকে ভালোবাসি বলে এই না যে তুমি যা ইচ্ছা তাই বলবে আর আমি মুখ বুঝে সহ্য করে নেবো(দাঁতে দাঁত চেপে)
মানহা ভালোবাসার কথা শুনে অবাক হলেও পরে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,,,
মানহা: হুহ্, ভলোবাসা | যারা মানুষকে খুন করতে পারে তারা কখনো মানুষকে ভালোবাসতে পারে না(তাচ্ছিল্য ভাবে)
সায়ান অবাক হয়ে যায় মানহার মুখে খুনের কথা শুনে,,
সায়ান: মানহাকি কিছু বুঝে গেলো(মনে মনে)
মানহা: কি এটাই তো ভাবছেন যে আমি খুনের কথা কিভাবে জানলাম | ওইদিন লেকের পাশে আপনি একজনকে খুন করেন নি ?(রেগে)
সায়ান: তুমি আমাকে ভুল বুঝছো,,,,
মানহা: ও তাই, আমি কোন সায়ানকে ভুল বুঝছি যে সায়নকে কয়েকদিন আগে খুন করতে দেখেছি তাকে নাকি যে সায়ান এখন দাড়িয়ে আছে তাকে(ঘৃনা মিসৃত কন্ঠে)
সায়ান: তুমি না জেনে বাজে কথা বলবে না বলে দিলাম(রেগে)
মানহা: আসল কথা বললে সবারই গায়ে লাগে তাই আপনারও লাগছে | সত্যি কথা হলো আপনি একটা মাফিয়ার, খুনি(রাগা চেচিয়ে)
মানহা: আর আমিই বা বোকার মতো কেনো বলছি, বাবা মা যেমন হবে সন্তান তো তেমনই হবে(তাচ্ছিল্য স্বরে)
ঠাসসসসসস....থাপ্পর খেয়ে মানহা ছলছল চোখে সায়ানের দিকে তাকায়,,,
সায়ান: তোমার সাহস কি করে হয় আমার বাবা মার নামে এসব বলার, আমাকে যা বলার বলো আমি মেনে নেবো কিন্তু আমার বাবা মায়ের নামে কিছু বললে তাকে আমি ছাড়বো না(রেগে মানহার দুই বাহু চেপে ধরে)
মানহা: ঠিকই আছে | আপনার মতো মাফিয়াররা মানুষকে কষ্ট ছাড়া আর কিছুই দিতে জানেন না(ছলছল চোখে তাকিয়ে)
বলেই মানহা কাঁদতে কাঁদতে সেখান থেকে চলে যায় | সায়ান স্তব্ধ হয়ে সেখানেই দাড়িয়ে থাকে,,
চলবে,,,,,
( ভুলত্রুটি হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)

মানহা কাঁদতে কাঁদতে সেখান থেকে চলে যায় আর সায়ান সেখানেই স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে থাকে,,,,
.
.
.
সায়ান ফুল স্পীডে গাড়ি চালিয়ে অফিসে না গিয়ে সোজা বাসায় চলে যায় | বাসায় গিয়ে রেগে রুমের জিনিস পত্র ভাঙ্গচুর করতে থাকে সৌম তাকে থামানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই সায়ান থামছে না | একসময় সায়ান ক্লান্ত হয়ে বেডে বসে পরে মাথা নিচু করে | সৌম তার পাশে বসে জিগ্যেস করে,,
সৌম: শান্ত হও সায়ান আর কি হয়েছে আমায় বল ?(কাঁধে হাত রেখে)
সায়ান: আমি যদের নিজের সবটা দিয়ে ভলোবাসি তারাই কেনো আমার থেকে দূরে চলে যায় ? আমার বাবা মাকে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসতাম কিন্তু দেখ তারা আমাকে ছেড়ে চলে গেলো, আর এখন মানহাকে এতোটা ভালোবাসি তবুও সে এগুলো আমাকে কিভাবে বলতে পারলো ??(চোখ দিয়ে পানি পরছে)
সৌম: তুই মানহাকে বলেছিস তুই ওকে ভলোবাসিস ??
সায়ান: এর আগে ইঙ্গিতে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, তবে আজকে কথায় কথায় বলেছিলাম |
সৌম: ঠিক করে না বললে বুঝবে কি করে | সবাই তো আর এমনেতেই বুঝে যায় না | আর কি বলেছে মানহা তোকে ??
সায়ান: ওই দিন লেকের পাশে রাসেলের লোককে মারতে দেখে ফেলেছিল মানহা তাই আমাকে ভুল বুঝে আমাকে মাফিয়ার,খুনি বলে অপমান করেছে সেটা বড় কথা না কথা হলো ও আমার বাবা মাকে অপমান করেছে | আর এটাও বলেছে সে আমার মুখও দেখতে চায় না |
সৌম: ও সবটা জানে না তাই ও এসব বলতে পেরেছে | তুই ওকে বুঝিয়ে বলতি, তাহলে ও বুঝতো ঠিকই |
সায়ান: ও আমার কোনো কথাই শুনতে রাজি ছিলো না | আমি তাই ঠিক করেছি ওর সামনে আর যাবো না(চোখের পানি মুছে)
সৌম: এমন করলে তো তুই ওকে হাড়িয়ে ফেলবি |
সায়ান: আমি ওকে দূর থেকেই দেখবো | দূর থেকে দেখেই নিজের মনকে শান্ত রাখবো |
তো এইভাবেই সায়ান রোজ মানহাকে দেখতে মানহার ভার্সিটিতে যায়, কিন্তু মানহার সামনে যায় না, আরালে দূর থেকেই মানহাকে দেখে | একদিন সায়ান দেখলো যে মানহাকে কিছু ছেলে মিলে ডিসটার্ব করছে সায়ান ভালো করে খেয়াল করতেই দেখলো যে তারা তার যম শত্রু রাসেলের লোক আর সাথে রাসেলের ছোট ভাই রনিও আছে | তা দেখে সায়ান রেগে তাদের দিকে যেতে নিলে সৌম হাত ধরে ফেলে,,,
সৌম: একবার ও তোকে মারতে দেখে যায় যার কারণে তুই এখন ওকে হারাতে বসেছিস | আবার এমন কিছু করলে চিরজীবনের জন্য তুই মানহাকে হারাবি (সামনে তাকিয়ে)
সায়ান: ওরা কিসব বাজে কথা বলছে দেখেছিস(রেগে দাঁতে দাঁত চেপে)
তারপর দেখলো যে সেখান মানহা কাঁদতে কাঁদতে তারাতারি একটি রিকশা নিয়ে চলে গেলো | তারা মানহাকে শুধু ভার্সিটিতে না বাসায়ও কয়েকদিন এমন ডিসটার্ব করেছে কারন রাসেলের ছোট ভাই রনি মানহাকে বিয়ে করতে চায় কিন্তু মানহা রাজি হয়নি তাই তারা মানহাকে কিডন্যাপ করতে চায় | আর এই সকল কিছু সায়ানের চোখ এড়ায়নি ওই দিনের পর থেকে সায়ান মানহার ওপর নজর রাখতো যাতে রাসেলের লোক ওর কোনো ক্ষতি করতে না পারে | এমনকি রাসের ছোট ভাইয়ের ওপরও নজর রাখে যার কারনে সে জেনে যায় মানহাকে কিডনেপ করার প্লান আর এইদিকে মানহা এসব কিছুই জানতো না | তাই একদিন মানহা বাইরে যায় কিছু দরকারি জিনিস কিনতে তখনই সায়ান মানহাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যায় এবং বিয়ে করে ফেলে যাতে সব সময় মানহা সায়ানের চোখের সামনে থাকে আর সেফ থাকে,,,,,,
বর্তমান......
সন্ধা হয়ে গেছে কিন্তু মানহা এখনো বারান্দায় দাড়িয়ে আছে | সায়ান ল্যাপটপের কাজ শেষ করে বারান্দায় এসে দেখে মানহা দাড়িয়ে আছে,,,
সায়ান: সন্ধা হয়ে গেছে ভেতরে চল |
মানহা চুপচাপ দাড়িয়ে আছে এমন ভাব করছে যেনো সে শুনতেই পায়নি,,
সায়ান: কি হলো শুনতে পাওনি কি বলেছি(ভ্রু কুচকে)
মানহা বিরক্তি নিয়ে ভেতরে চলে যায়,,
রাত ৯ টা....
সায়ান: মানহা,,,মানহা(জোড়ে ডাকছে)
মানহা: কি হলো এমন ষাড়ের মতো চেচাচ্ছেন কেনো(সিড়ির সামনে দাড়িয়ে ভ্রু কুচকে)
সায়ান: আমি ষাড়ের মতো চেচাচ্ছি(ভ্রু কুচকে)
মানহা: না তো কি করছেন ??
সায়ান: আমি তো তোমাকে ডাকছিলাম(স্বাভাবিক ভাবে)
মানহা: এটাকে ডাকা বলে ?? আর কেনো ডেকেছেন ??(বিরক্তি নিয়ে)
সায়ান: খেতে এসো(খাবার সার্ব করতে করতে)
মানহা: আপনি খেয়ে নিন আমার কথা আপনার ভাবতে হবে না |
সায়ান: আমি তোমার কোনো কথা শুনতে চাই নি যা বলেছি তা কর | তুমি ভলো করেই জানো আমার কথা না শুনলে আমি কি কি করতে পারি, আর আমি কার কথা ভাববো না ভাববো সেটা আমার বেপার (রেগে)
মানহা আর কোনো কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খেতে বসে পরে | এবং খেয়ে তারাতারি সোজা রুমে চলে যায়,,
সায়ান খাওয়া শেষ করে রুমে গিয়ে দেখে মানহা বেডে ওপাশ করে শুয়ে আছে,,,
সায়ান: শুয়ে আছো কেনো ??(ভ্রু কুচকে)
মানহা: তাহলে কি করবো ??(অবাক হয়ে)
সায়ান: ওঠে এই ব্যাথার ঐষধটা খেয়ে তারপর ঘুমাও |
মানহা: আমার পায়ে ব্যাথা নেই(ওপাশ হয়ে শুয়ে)
সায়ান: ভলোয় ভলোয় ঔষধটা খাবে নাকি গালে একটা গুড নাইট থাপ্পর খাবে, কোনটা ??
মানহা অবাক হয়ে ওঠে বসে বলে,,
মানহা: কেনো ? থাপ্পর দিবেন কেনো ? সরকারি গাল পেয়েছেন যে যখন ইচ্ছা থাপ্পর দিবেন ?
সায়ান: আমার বউ আমার কথা না শুনলে শাসন করবোই | এখন চুপ করে ঔষধটা খেয়ে নাও
মানহা আর কিছু না বলে চুপচাপ ওঠে ঔষধ খেয়ে আবার শুয়ে পরে | কারন সে জানে সায়ান ঔষধ না খাইয়ে ছাড়বে না | আর সায়ান বারান্দায় চলে যায় | রাত ১১টার দিকে সায়ান বারান্দা থেকে রুমে আসে দেখে মানহা ঘুমিয়ে পরেছে | তাই সেও মানহার পাশে গিয়ে শুয়ে পরে এবং মানহাকে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে কপালে একটি ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে সায়ানও ঘুমিয়ে পরে,,,,,
চলবে,,,

সায়ান মানহাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে কপালে একটি ভলোবাসার পরশ একে দিয়ে সেও ঘুমিয়ে পরে,,
.
.
.
সকালে.....
মানহা: সকালে আমি আজ সায়ানের আগেই ঘুম থেকে ওঠে নিজেকে তার বুকের ওপর আবিষ্কার করলাম | ঘুমের মধ্যে তাকে একদম নিষ্পাপ শিশুদের মতো লাগছে | সিল্কি চুল গুলো কপালে এসে পরেছে | তাকে অসম্ভব মায়াবী লাগছে | হঠাৎ করে সেই দিনের মার্ডারের কথা মনে পরতেই সাথে সাথে নিজেকে তার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ওঠে বসি | আর দেড়ি না করে ওয়াশরুমে চলে যাই ফ্রেশ হতে | ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখি সায়ান এখনো ঘুমিয়ে আছে তাই আমি বারান্দায় চলে যাই এবং টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে থাকি, চুল মুছার সময় হঠাৎ করে সায়ান পেছন থেকে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে | প্রথমে চমকে গেলেও পরে বুজতে পেরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দূরে গিয়ে দাড়াই,,,
সায়ান: এই তোমার সমস্যা কি হুম ??(বিরক্তি নিয়ে)
মানহা: একদম ছোবেন না আমাকে(এক পা করে পিছিয়ে)
সায়ান: আমি তোমার হাসবেন্ড | আমি ছোবো না তো কে ছোবে হুম ??(এক পা করে এগিয়ে)
মানহা: যেহেতু আমি এই বিয়েটাই মানি তাই আমি আপনাকে আমার হাসবেন্ডও মানি না(অন্যদিকে তাকিয়ে)
সায়ান: তুমি মানো আর না মানো | আই ডোন্ট কেয়ার, কিন্তু এটাই সত্য যে আমাদের বিয়ে হয়েছে আর আমরা দুজন হাসবেন্ড ওয়াইফ(মানহার একদম সামনে গিয়ে)
মানহা: হুহ্,যেই বিয়েটাই বৈধ না একটা অবৈধ বিয়ে | সেখানে আবার কিসের হাসবেন্ড ওয়াইফ(তাচ্ছিল্য কন্ঠে)
সায়ানের রাগ এবার চরম পর্যায়ে ওঠে গেলো | একে তো মানহাকে জড়িয়ে ধরাতে তার ওমন আচরন তার ওপর আবার এইসব কথা যার কারনে সায়ান নিজেকে আর সামলাতে পারলো না | মানহার হাত চেপে ধরে টানতে টানতে রুমে নিয়ে যায় | তারপর তাকে বেডে ফেলে দু হাত বেডের সাথে চেপে ধরে পাগলের মতো কিস করতে থাকে মানহার ঠোঁটে,গলায়,বুকে | সায়ান এতোটাই রেগে ছিলো যে তার করা কিস গুলো কামড়ে পরিণত হচ্ছিলো | মাঝে মাঝে বেশ কয়েকটা কামড়ও দিয়েছে জোড়ে | মানহা প্রানপনে চেষ্টা করছে ছুটার জন্য কিন্তু সব সময়ের মতোই সায়ানের শক্তির সাথে পেরে ওঠে না | সায়ান কামোড় গুলো এতো জোড়ে দিয়েছিলো যে এর দাগ গুলো স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিলো | শেষে আর না পেরে মানহা কান্না করে দেয় | মানহাকে কান্না করতে দেখে সায়ান থেমে যায়,,,
সায়ান: বলেছিলাম না এই কথা আবার বললে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না(রেগে দাঁতে দাঁত চেপে)
মানহা: কান্না করছে,,
সায়ান: বলেছিলাম কি না(ধমক দিয়ে)
মানহা: শুধু মাথা নাড়িয়ে বলে হ্যা(ধমকে চমকে)
সায়ান: তাহলে কেনো বললে ??কেনো সব সময় এই সব কথা বলে আমাকে রাগিয়ে দেও ?? লাস্ট বার বললাম কান খুলে শুনে রাখো | এসব আবার কখনো বললে নিজের বাবা ও ছোট বোনকে আর দেখতে পাবে না কখনো(রক্তবর্ণ চোখে তাকিয়ে)
বলেই মানহার কামোড় দেয়া জায়গায় কিস করে দেয় তারপর তাকে ছেড়ে দিয়ে সায়ান ওয়েশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে | আর মানহা ওই ভাবেই শুয়ে সায়ানের বলা কথা গুলো চিন্তা করছে আর অনবরত চোখের পানি ফেলছে,,,
সায়ান ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখে মানহা বারান্দায় চেয়ারে বসে আছে চুপচাপ | সায়ান কতক্ষন তাকিয়ে থেকে একটা ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে নিচে চলে যায় ব্রেকফাস্ট রেডি করতে,,
সায়ান: কী কপাল আমার, মানুষের বিয়ের পরে বউরা কত কিছু রান্না করে আদর করে খাওয়ায় স্বামীদের | আর আমার বউকে রান্না করে খাওয়াতে হচ্ছে, তাও ঝগরা করে(নিজে নিজে বিড় বিড় করে আর ব্রেকফাস্ট করছে)
ব্রেকফাস্ট রেডি করে সায়ান রুমে এসে দেখে মানহা এখনো বারান্দায় বসে আছে,,
সায়ান: এইযে নিচে এসো ব্রেকফাস্ট করতে(শান্ত ভাবে)
মানহা কিছু না বলে চুপচাপ নিচে চলে যায় ব্রেকফাস্ট করতে | সায়ানও পেছন পেছন চলে যায় | দুজনই চুপচাপ ব্রেকফাস্ট করছে | অনেকক্ষন চুপচাপ থাকার পর নিরবতা ভেঙ্গে সায়ান বললো,,
সায়ান: খেয়ে রেডি হয়ে নাও |
মানহা কিছু বললো না,,,
সায়ান: কি বলেছি শুনেছো ??
মানহা: যেহেতু কান আছে সেহেতু শুনেছি নিশ্চই |
সায়ান আর কিছু বললো না | খাওয়া শেষে রুমে গিয়ে দেখে মানহা এখনো রেডি না হয়ে বসে আছে,,,
সায়ান: কি হলো এখনো রেডি হওনি কেনো ??(ভ্রু কুচকে)
মানহা: আমার যখন ইচ্ছা হবে তখনই রেডি হবো (অন্যদিকে তাকিয়ে)
সায়ান: তোমার ইচ্ছা মতো সব হবে না | তাছাড়া আমার দেড়ি হয়ে যাচ্ছে তারাতারি রেডি হও |
মানহা একরাশ বিরক্তি নিয়ে চুপচাপ একটি শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় রেডি হতে | এই ফাঁকে সায়ানও রেডি হয়ে যায় ,,,,,
এই ফাকে সায়ানও রেডি হয়ে যায় অফিসের জন্য,,,,,হ্যা সায়ান মানহাকে নিয়ে তার অফিসে যাচ্ছে কারন ওই দিন মানহার পালানোর চেষ্টা করার পর থেকে সায়ান চায় না ও আবার একই চেষ্টা করুক তাই ওকে হারানের ভয়ে সায়ান ওই দিনই ডিসিশন নিয়ে নিয়েছে যে প্রতিদিন সায়ান অফিসে যাওয়ার সময় ওকে সাথে করে নিয়ে যাবে,,
মানহা রেডি হয়ে বের হলে সায়ান তার হাত ধরে নিয়ে অফিসের জন্য রওনা হয়,,,
সায়ান গাড়ি ড্রাইভ করছে আর মানহা চুপচাপ বাইরে তাকিয়ে আছে, সায়ান একটু পর পর মানহাকে দেখছে কিন্তু মানহা একবারও তার দিকে তাকায়নি | অফিসে পৌছে তারা দুজনই গাড়ি থেকে নামলো,,,
মানহা: আমাকে এখানে কেনো নিয়েসেছেন ??(ভ্রু কুচকে তাকিয়ে)
সায়ান: সেটা তোমার না জানলেও চলবে,,,
বলেই মানহাকে নিয়ে অফিসের ভেতর হাটা ধরলো | সায়ান মানহাকে নিয়ে তার কেবিনে যাওয়ার পর তার পিএ আসে,,,
রিয়া: স্যার মিটিংয়ের টাইম হয়ে গেছে | ক্লাইন্টরা এসে পরেছে,,
সায়ান: ওকে তুমি যাও আমি আসছি |
সায়ান: আমার একটা মিটিং আছে, আমি মিটিংটা সেরে তারাতারি আসছি | ততক্ষন পর্যন্ত এখানে চুপচাপ বসে থাকবে(মানহার দিকে তাকিয়ে)
মানহা: এখানে বসেই যেহেতু থাকতে হবে তাহলে তো আমাকে বাসায়ই রেখে আসতে পারতেন | ঢং করে এখানে নিয়ে আসার কি দরকার ছিলো(ভ্রু কুচকে তাকিয়ে)
সায়ান: হ্যা যাতে তোমার আবারও পালাতে সুবিধা হয় |
মানহা: এতো অবিশ্বাস করেন কেনো আমাকে ??
সায়ান: ঔই দিনের পর থেকে তোমাকে অবিশ্বাস করাটা মনে হয় যায়েজ হয়ে গেছে(ফাইল নিতে নিতে)
মানহা: এতোই যখন অবিশ্বাস করেন তাহলে ছেড়ে দিচ্ছেন না কেনো আমাকে (রেগে)
সায়ান: সেটা আমার বেপার | আমিই বুঝবো |
বলেই সায়ান চলে গেলো আর মানহা সায়ানের যাওয়ার দিকে হয়ে তাকিয়ে রইলো,,,,
চলবে,,,,
(আমি আমার লেখাপড়া নিয়ে একটু ব্যাস্ত তাই পার্ট গুলো বেশি বড় দিতে পারি না)''

সায়ান মিটিংয়ে চলে গেলো আর মানহা সায়ানের যাওয়ার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো,,,
.
.
.
মানহা সায়ানের কেবিনটা ঘুরে ঘুরে দেখছে | কেবিনটা বেশ বড় আর খুব সুন্দর করে গোছিয়ে রাখা | মানহা হাঁটতে হাঁটতে কেবিনের বারান্দায় চলে গেলো | বারান্দাটা ও খুব বড় | মানহা বারান্দায় চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো | সায়ান মিটিং থেকে এসে দেখে মানহা কেবিনে নেই | সায়ান এক মুহূর্তের জন্য ভয় পেয়ে গেলো,,
সায়ান: মানহা,,,মানহা,,(চেচিয়ে ডাকছে)
মানহা: কি হলো চেচাচ্ছেন কেনো ??(শান্ত ভাবে বারান্দা থেকে এসে)
সায়ান: কোথায় ছিলে ??(ভ্রু কুচকে)
মানহা: দেখতেই তো পেলেন যে বারান্দা থেকে আসলাম(শান্ত ভাবে)
সায়ান: তোমাকে না বলেছি এই পা নিয়ে বেশি হাঁটা হাঁটি করবে না(রেগে)
মানহা: আমার পা আমি বুঝবো(অন্যদিকে তাকিয়ে)
সায়ান: হ্যা পরে কিছু হলে তোমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে আমারই যেতে হবে,,,,
মানহা: এটা নিয়ে আপনার চিন্তা না করলেও চলবে(বিরক্তি নিয়ে)
সায়ান: এই সব সময় এভাবে কথা বলো কেনো | একটু ভালো করেও তো কথা বলতে পরো(কপাল কুচকে)
মানহা: আমি ভালো করে কথা বলতে পারি না |
সায়ান: সেটা তোমাকে দেখলেই বুঝা যায়(চেয়ারে বসতে বসতে)
মানহা: আমি বাসায় যাবো(রেগে)
সায়ান: এখন না,আমার কাজ শেষ হলে তারপর যাবো(ফাইল খুলতে খুলতে)
মানহা: আমি এখনই যাবো |
সায়ান: বায়না করো না শুধু শুধু(ফাইলের দিকে তাকিয়ে)
মানহা এক রাশ বিরক্তি নিয়ে সোফায় বসে পরে | সায়ান কিছুক্ষন পর পর মানহার বিরক্তি মাখা মুখের দিকে তাকাচ্ছে আর মুখ টিপে টিপে হাসছে |
সায়ান: মানহা,,,,(কাজ করতে করতে)
মানহা: নিশ্চুপ
সায়ান: মানহা(জোড়ে)
মানহা: কি হয়েছে কি(বিরক্তি নিয়ে)
সায়ান: ডাকছি যে শুনতে পাও না(কপাল কুচকে)
মানহা: আপনি দেখতে পান না আমি যে সামনে বসে আছি | এতো ডাকার কি আছে বলে ফেলুন কি বলবেন |
সায়ান: আমার খুব ক্লান্ত লাগছে(চেয়ারে হেলান দিয়ে)
মানহা: তো আমি কি করবো(অন্যদিকে তাকিয়ে)
সায়ান: একটা কিস করে যাও(মানহার দিকে তাকিয়ে)
মানহা: আমি পারবো না |
সায়ান: তুমি দিবে নাকি না(ভ্রু কুচকে)
মানহা: বললাম তো দিবো না |
বলেই মানহা ওঠে বারান্দায় যেতে নিলে সায়ান পেছন থেকে তার হাত ধরে টেনে একদম সায়ানের বুকের সাথে চেপে ধরে এবং মানহার ঠোঁট জোড়া নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেয় | মানহা সায়ানকে ধাক্কা দিচ্ছে কিন্তু সায়ানকে একচুল ও সরাতে পারে নি | এভাবে অনেক্ষন থাকার পর সায়ান নিজেই ছেড়ে দেয়, মানহা সায়ানের বুকেই ঢলে পরে হাপাচ্ছে | সায়ানও মানহাকে জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে থাকে,,
সায়ান: চলো লাঞ্চ করবে(শান্ত ভাবে)
মানহা সাথে সাথে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় ||
সায়ান আর মানহা একসাথে লাঞ্চ করছে কেউ কোনো কথা বলছে না | লাঞ্চ করা শেষ হলে সায়ান আবার কাজে ব্যস্ত হয়ে পরে আর মানহা কখনো সোফায় বসছে তো কখনো বারান্দায় যাচ্ছে | এভাবে পায়চারি করে বেড়াচ্ছে যা সায়ান অনেক্ষন যাবৎ খেয়েল করছে,,
সায়ান: এভাবে তেলাপোকার মতো দৌড়াদৌড়ি করছো কেনো ??(ল্যাপটপে তাকিয়ে)
মানহা বেশ খানিকটা রেগে ভ্রু কুচকে বললো,,
মানহা: আমি তেলাপোকা ??
সায়ান: যা, আমি তোমাকে কখন তেলাপোকা বললাম | আমি তো বললাম তেলাপোকার মতো দৌড়াদৌড়ি করছো কেনো(মানহার দিকে তাকিয়ে)
মানহা: আমি যদি তেলাপোকার মতো দৌড়াই ||তাহলে তো আপনিও মহিষের মতো এক জায়গায় বসে আছেন(কপাল কুচকে )
সায়ান: কি তুমি আমাকে মহিষ বললে(অবাক হয়ে)
মানহা: হায়হায় | আমি কখন আপনাকে মহিষ বললাম | আমি তো বললাম আপনি মহিষের মতো এক জায়গায় বসে আছেন(অন্যদিকে তাকিয়ে)
সায়ান: আমি কাজ করছি |
মানহা: আমিও তো হাঁটছি(আবার হাঁটা শুরু করে)
সায়ান: তোমার সাথে কেউ তর্ক করে পারবে না(ল্যাপটপে তাকিয়ে)
মানহা: তাহলে আসেন কেনো তর্ক করতে(হাঁটতে হাঁটতে)
সায়ান আর কিছু না বলে কাজে মন দিলো | আজ বিকেলের মধ্যে কাজ শেষ করে মানহাকে নিয়ে বেড়িয়ে পরে | তারা একটি বড় শপিং মলের সামনে এসে থামে | দুজনই গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে চলে যায় | সায়ান মানহাকে বেশ কিছু সুন্দর সুন্দর শাড়ি কিনে দেয়এবং শপিং শেষে বাসায় চলে আসে,,,
মানহা বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নেয়,আর সায়ান চলে যায় ডিনার রেডি করতে | ডিনার রেডি করে মানহাকে ডাকতে আসে,,,,
সায়ান: ডিনার করতে এসো(দরজায় দাড়িয়ে)
মানহা: খেতে ইচ্ছা করছে না |
সায়ান: তারাতারি খেতেআসো,তোমার আাবার ঔষধ খেতে হবে,,
মানহা আর কিছু না বলে চলে যায়,,,
এভাবেই চলছে মানহা আর সায়ানের দিনকাল | মানহার কিছু হলে সায়ান পাগলের মতো করে | মানহাও যেনো সায়ানের প্রতি আস্তে আস্তে দূর্বল হয়ে পরছিলো | একদিন সায়ান জরুরি কাজে অফিসে যাওয়ার পর মানহা ড্রয়ইং রুমে বসে টিভি দেখছিলো হঠাৎ কেউ কলিং বেল বাজালে মানহা না দেখেই গেইট খুলে দেয় | দেখে যেই লোক গুলো তাকে তার বাড়িতে ডিসটার্ব করেছিলো তারা,,,,
মানহা: আপনারা কেনো এখানে এসেছেন(ভয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে)
ছেলে১: তোমাকে ছাদনা তলায় নিয়ে যেতে(শয়তানি হাসি দিয়ে)
বলেই তারা মানহাকে জোড় করে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায় | এর কিছুক্ষন পরই সৌম আসে সায়ানের সাথে রাসেলের বিষয়ে কথা বলতে এসে দেখে বাড়ি পুরো ফাকা,মেইন দরজা খুলা আর মানহা কোথাও নেই | সৈম সাথে সাথে সায়ানকে ফোন দেয় | সায়ান এ কথা শুনে এক মুহূর্তে জন্য থমকে যায় এবং তারাতারি বাসায় এসে পরে,,
সৌম: রাসেল জেনে গেছে যে মানহা তোর কাছে আছে | আর ওরা চেষ্টা করবে ওকে এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার তাই তোকে সাবধান করতে এসেছিলাম,এসে দেখি এই অবস্থা,,
সায়ান: অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে রাসেল,এর মাশুল ওকে দিতেই হবে | ওর শাস্তি কতটা ভয়াবহ হতে চলেছে তা ও নিজেও জানে না(চোখ দুটো রক্তবর্ণ করে)
বলেই সায়ান আর সৌম গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরে মানহাকে খুজতে,,,
মানহাকে একটা চেয়ারের সাথে বেধে রেখেছে আর তার সামনেই বসে আছে রাসেল আর তার ছোটো ভাই রনি,,,
মানহা: আমাকে এখানে কেনো নিয়েসেছিস(রেগে)
রাসেল: বদলা নিতে |
মানহা: কিসের বদলা হুম ??কি করেছি আমি ??(কান্না করতে করতে)
রাসেল: বারে,,তোমার জন্য সায়ান আমার ভাইয়ের হাত ভেঙ্গেছে আর আমি এর বদলা নেবো না,,,
রনি: বেশি কিছু করতে হবে না শুধু অামাকে বিয়ে করে নাও তাহলেই হবে |
মানহা: কখনো না,,আমি সায়ান চৌধুরির ওয়াইফ | আমি কেনো তোকে বিয়ে করবো(রেগে)
রনি: তাহলে আর কি আমি যদি তোমাকে না পাই তাহলে ওই সায়ানও তোমাকে পাবে না,,,
মানহা: মানে ??(অবাক হয়ে)
রাসেল: মানেটা খুব সহজ,,সায়ানের আর ভলোবাসার মানুষের মতো তোমাকেও সরিয়ে দেবো ওর জীবন থেকে,,,
মানহা: আর ভালোবাসার মানুষ মানে ??(অবাক হয়ে)
রাসেল:আহা মেয়েটা বড্ড অবুঝ | ওর সব থেকে ভলোবাসার মানুষ ছিলো ওর বাবা-মা | তাদেরকে পৃথিবী থেকে বিদায় করেছি বলেই তো উঠে পরে লেগেছে আমার পেছনে | আমার লোকদেরকে মেরে ফেলছে সুযোগ পেলেই,,,
মানহা বুঝতে পারলো যে ওইদিন যাদের সায়ান লেকের পাশে মারছিলো তারা রাসেলের লোক ছিলো | আর মানহা শুধু শুধু এতোদিন সায়ানকে ভুল বুঝেছে,,
মানহা: আমার কিচ্ছু করতে পারবি না তার আগেই সায়ান চলে আসবে(রেগে চেচিয়ে)
রাসেল আর রনি সহ সবাই হেসে ওঠে,,,,,,
চলবে,,,,,
(একটা প্রবলেম এর কারনে গল্পটা দিতে দেড়ি হয়ে গেছে তার জন্য সরি,,)

মানহা: তোরা আমার কিচ্ছু করতে পারবি না তার আগেই সায়ান চলে আসবে(রেগে চেচিয়ে)
রাসেল ও রনি সহ সবাই হেসে ওঠে,,,,
.
.
.
রনি: তো সোনামনি তুমি তোমার সায়ানের অপেক্ষা করতে থাকো আমরা তাহলে আসি(শয়তানি হাসি দিয়ে)
মানহা: তোরা ইচ্ছে করে তোদের বিপদ ডেকে এনেছিস, তোরা কেউ আমার সায়ানের হাত থেকে বাঁচতে পারবি না(দাঁতে দাঁত চেপে)
রাসেল: যা,,আমরা তো ভয় পেয়ে গেলাম(অভিনয় করে)
মানহা ঘেন্নায় অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়,,
রাসেল: শোনো আমরা বিপদ ডেকে আনি না | বিপদ আমরা সাথে নিয়েই ঘুরি আর কিভাবে এর মোকাবিলা করতে হয় তাও আমাদের জানা আছে(চেয়ার থেকে ওঠতে ওঠতে)
মানহা: এটাই মনে করে তোর জীবনের শেষ বিপদ বেঁচে থাকলে আবার বিপদ মোকাবিলা করে নিস,,,
ঠাসসসস,,
রনি: তোর সাহস কি করে হয় আমাদের হুমকি দেয়ার(মানহার মুখ চেপে ধরে)
রাসেল: আহা, কি করছো কি(রনিকে টেনে পেছনে নিয়ে)
মানহা: হুমকি দিচ্ছি না | শুধু যেটা হতে যাচ্ছে সেটা বলছি(রেগে)
রনি: কেনো তুই কি ভবিষ্যৎ বলতে পারিস নাকি,,
মানহা: তা বলতে পারি না তবে আমার সায়ান কি করতে পারে তা আমি খুব ভালো করেই জানি |
রনি রেগে মানহার সামনে যেতে নিলে রাসেল তাকে ধরে জোড় করে রুম থেকে বের করে নিয়ে যায়,,,
মানহা: সায়ান আপনি কোথায় ??ওরা আমাকে আপনার তাছ থেকে দূরে সরিয়ে ফেলবে | প্লিজ তারাতারি চলে আসুন আমার কাছে(কান্না করতে করতে)
অন্যদিকে,,,,,
সায়ান ও সৌম পাগলের মতো মানহাকে খুজে বেড়াচ্ছে | কোনো জায়গা বাদ রাখে নি | তাদের জানামতে রাসেলের যেই আস্তানা ছিলো সেখানে গিয়ে সেখানে যারা ছিলো সবাইকে মেরেছে কিন্তু কেউ বলতে পারে নি ওরা মানহাকে কোথায় নিয়ে গেছে | সারাদিন মানহাকে খুজে না পেয়ে তারা বাসায় চলে আসে | সায়ান ড্রয়ইং রুমে সোফায় মাথা নিচু করে বসে নিরবে চোখের পানি ফেলছে | সৌম পাশে এসে বসে,,,
সৌম: চিন্তা করিস না আমরা মানহাকে ঠিক খুজে বের করবো(সায়ানের কাধে হাত রেখে)
সায়ান: আমি ওদের কাউকে ছারবো না প্রথমে ওরা আমার বাবা মাকে আমার জীবন থেকে সরিয়েছে, এখন আবার মানহার ক্ষতি করতে চাইছে(চোখ থেকে পানি পরছে)
সৌম: এর শাস্তি ওরা পাবে | এখন চল কিছু খেয়ে নিবি সকাল থেকে কিচ্ছু খাসনি |
সায়ান: আমার খিদে নেই | তুই যা খেয়ে নে(সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে)
সৌম: তুই বললেই হবে | তুই না খেয়ে অসুস্থ হয়ে গেলে মানহাকে বাঁচাবি কি করে ?? তারাতারি চল খেয়ে নিবি | আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না |
সৌম একপ্রকার জোড় করে সায়ানকে খাওয়ায় | তারপর সায়ানকে রুমে পাঠিয়ে দেয় রেস্ট নিতে | সারাদিন অনেক ধকল গেছে | হঠাৎ সৌমের ফোনে কল আসে,,
সৌম: বল, কোনো খবর পেলি ??
---------------
সৌম: ঠিক আছে | আমরা কাল ভোর সকালে বেরিয়ে পরবো | তোরা খেয়াল রাখিস যেনো ওরা কিছু বুঝতে না পারে |
---------------
সৌম: এখন রাখছি |
সায়ানের কিছুতেই ঘুম আসছে না, সে কিছুতেই শান্ত থাকতে পারছে না | তার বার বার মনে হচ্ছে যে যদি মানহার কিছু হয়ে যায় | হঠাৎ সৌম এসে দরজায় নক করে,,,
সায়ান: আয়, ভেতরে আয়(শান্ত ভাবে)
সৌম: রাসেলদের আরেকটা আস্তানার খোজ পেয়েছি(ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে)
সায়ান: কোথায় সেটা ?? আমি এখনই যাবো(ব্যস্ত হয়ে)
সৌম: না না এখন না আমরা কাল ভোরে যাবো | জায়গাটা এই শহর থেকে কিছুটা দূরে তাই এই রাতে যাওয়া ঠিক না রিস্ক আছে | (সায়ানকে শান্ত করে)
সায়ান: কিচ্ছু হবে না | আমরা যত তারাতারি যাবো ততই মানহার জন্য ভালো হবে | নাহয় ওরা মানহার কোনো ক্ষতি করে দিলে আমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবো না(অতি ব্যস্ত হয়ে)
সৌম সায়ানের পাগলামি দেখে না করতে পারলো না, কারন সে জানে এখন না করলে সায়ান মানবে না সে দরকার হলে একাই বের হয়ে যাবে | তাই ওরা দুজন রাতেই বেরিয়ে পরে রাসেলের আরেক আস্তানার উদ্দেশ্যে | ওরা পৌছাতে পৌছাতে ভোর হয়ে যায় | রাসেলের সেই আাস্তানায় মানহাকে যারা নিতে এসেছিলো তাদের মধ্যে দুজন ছিলো | সায়ান আর সৌম একজনকেও বাদ রাখে নি প্রত্যেককে ইচ্ছামতো ধোলাই দিয়েছে কিন্তু কেউ বলতে রাজি হচ্ছিলো না শেষে মার সহ্য করতে না পেরে একজন বলেই দেয় যে মানহা কোথায় আছে | সায়ান ও সৌম দেড়ি না করে তারাতারি চলে যায় সেখানে | যেতে যেতে দুপুর হয়ে যায় |
এইদিকে........
মানহার না খেয়ে খেয়ে শরীর দুর্বল হয়ে পরছিলো | একজন এসে কিছু খাবার দিয়ে যায় কিন্তু মানহা খায়নি | কান্না করে করে অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো তার |
মানহা: এখনো কেনো সায়ান আসছে না ?? ও কি এখনো জানতে পারে নি যে আমি এদিকে আছি(মনে মনে)
অন্যদিকে........
সায়ান: আমি আসছি জাাান | আমি বেঁচে থাকতে তোমার কিচ্ছু হতে দেবো না(গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে)
রনি খাবার দেওয়ার কিছুক্ষন পর রুমে এসে দেখে মানহা এখনো খায় নি,,
রনি: কি হলো এখনো খাবারটা খাসনি কেনো ??(ভ্রু কুচকে)
মানহা অন্যদিকে তাকিয়ে আছে,,,
রনি: কথা কানে যায় না নাকি(মুখ চেপে ধরে)
মানহা: আমি খাবো না(দাঁতে দাঁত চেপে)
তোকে,,,,,,আর কিছু বলতে নিলে একজন লোক এসে রনিকে ডেকে নিয়ে যায়,,
রনি: তোকে আমি পরে দেখে নেবো(রেগে)
বলেই রনি চলে যায় | মানহা কান্না করতে থাকে,,
মানহা: কোথায় আছেন আপনি, আমি আর পারছি না এখানে থাকতে(কান্না করতে করতে)
অন্যদিকে.......
সায়ান ও সৌম রাসেলের মেইন আস্তানায় পৌছে যায় যেখানে মূলত মানহাকে রাখা হয়েছে | পৌছেই রাসালের লোকদেরকে মারতে শুরু করে | তারপর ভেতরে গিয়ে মানহাকে জোড়ে জোড়ে ডাকতে থাকে | কিন্তু মানহার কোনো সারা শব্দ নেই,,,,,
রাসেল: ওয়েলকাম মি.সায়ান চৌধুরি(সামনে চেয়ারে বসে)
সায়ান: আমার মানহা কোথায় ??(রক্তবর্ণ চোখে তাকিয়ে)
রাসেল: যাক ভলোই হয়েছে তুই এসেছিস | ভেবেছিলাম ওকে মেরে ওর লাশটা গুম করে ফেলবো | তুই যেহেতু এসেছিস তাই তোর বাবা মার মতো তোর বউয়ের লাশটাও তোকে দিয়ে আমার দায়িত্ব শেষ করবো(চেয়ার থেকে ওঠতে ওঠতে)
এই কথা শুনে সায়ানের মাথায় রক্ত চড়ে গেলো | সায়ান ও রাসেল ইচ্ছেমতো মারামারি করছে আর আরেক দিকে সৌম ও রনি | তাদের মধ্যে মারামারির একপর্যায়ে রনির অবস্থা আগেই খারাপ হয়ে গেছে এদিকে রাসেলের অবস্থাও মরার মতো হয়ে গেছে | তারপর পুলিশ এসে সকলকে নিয়ে যায় | সায়ান মানহাকে খুজতে খুজতে শেষে একটি রুমে ওকে বাধা অবস্থায় পেয়ে যায় এবং দেখে যে মানহা অজ্ঞান হয়ে গেছে | সায়ান তারাতারি মানহার কাছে গিয়ে ওকে ডাকতে থাকা |
সায়ান: মানহা,,মানহা(দু হাতে মুখ ধরে)
মানহা: নিশ্চুপ
সায়ান: মানহা দেখো আমি এসে পরেছি | তোমার কেউ কোনো ক্ষতি করতে পারবে না(কান্না জড়িত কন্ঠে)
সৌম: সায়ান ওকে এক্ষনি হসপিটালে এডমিট করতে হবে | আমাদের এখন রওনা দেওয়া উচিৎ,,
সায়ান আর কিছু না বলে মানহাকে কোলে তুলে গাড়িতে নিয়ে আসে এবং গাড়ি স্টার্ট দেয় ঢাকার উদ্দেশ্যে | সৌম গাড়ি ড্রাইভ করছে আর সায়ান মানহাকে নিয়ে পেছনে বসেছে | তাদের ঢাকা পৌছাতে পৌছাতে রাত হয়ে যায় |
চলবে,,,,,,,
(আমি আগেই বলেছি যে আমি আমার লেখাপড়া নিয়ে একটু ব্যস্ত তাই পার্টগুলো বড় করে দিতে পারি না | আর গল্পটা তারাতারি শেষ করে দিবো)

ওদের পৌছীতে পৌছাতে রাত হয়ে যায় | এরপর তারাতারি করে মানহাকে হসপিটালে ভর্তি করে | ডাক্তার এসে মানহাকে ভালোভাবে চেক আপ করে নেয়,,,,
সায়ান: ডক্টর কি হয়েছে ওর(ব্যস্ত হয়ে)
ডক্টর: বেশি কিছু না | না খাওয়ার কারনে শরীর দুর্বল হয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে | একটু রের্স্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে |
সায়ান: ওর জ্ঞান ফিরবে কখন ??
ডক্টর: আমি ইন্জেকশন দিয়েছি, কিছুক্ষনের মধ্যেই জ্ঞান ফিরবে |
বলেই ডক্টর চলে যায় | সায়ান মানহার হাত ধরে ওর পাশেই বসে একদৃষ্টিতে মানহার দিকে তাকিয়ে থাকে | সারারাতের অর্ঘুম আর টায়ার্ড থাকার কারনে সায়ান মানহার হাতের ওপরই ঘুমিয়ে পরে |
২ ঘন্টা পর........
মানহা: আস্তে আস্তে চোখ খুলার চেষ্টা করছি | মাথাটা ভার ভার লাগছে | শরীরটাও প্রচন্ড দুর্বল লাগছে | মনে হচ্ছে হাতের ওপর ভারী কিছু আছে পাশে তাকাতেই দেখি সায়ান আমার হাতের ওপর ঘুমিয়ে আছে | আমি অন্য হাত ওর মাথায় রাখতেই ও সাথে সাথে জেগে যায় |
সায়ান: কখন ওঠলে ??(দু হাতে মানহার গাল ধরে)
মানহা: এই মাত্রই(নিচে তাকিয়ে)
সায়ান: এখন কেমন লাগছে ??(কপালে কিস করে)
মানহা: ভলো লাগছে,(মুচকি হেসে)
ডক্টর এসে আরেকবার চেক করে নিলে সায়ান মানহাকে নিয়ে বাসায় চলে যায় |
বাসায়......
সায়ান: তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও | আমি এদিকে আছি(হাতে শাড়ি দিয়ে)
মানহা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে | মানহা ফ্রেশ হওয়ার পর সায়ানও ফ্রেশ হয়ে নেয় |
সায়ান: তুমি রেস্ট নাও | আমি আসছি(মানহাকে বেডে বসিয়ে)
মানহা: কোথায় যাবেন ??(সায়ানের দিকে তাকিয়ে)
সায়ান: ডিনার রেডি করতে |
মানহা: আপনার করতে হবে না | আমি করবো(বেড থেকে ওঠতে ওঠতে)
সায়ান: চুপচাপ বস | রেস্ট নাও, আমি করে নিতে পারবো(মানহাকে বসিয়ে)
সায়ান চলে যায় ডিনার রেডি করতে আর মানহা বসে বসে রাসেলের বলা কথা গুলো ভাবতে থাকে যে রাসেল সায়ানের বাবা মাকে খুন করেছে, কিন্তু কেনো?কি এমন শত্রুতা ছিলো যে দুজন মানুষকে খুন করতে হলো | সায়ানকে জিগ্যেস করবো | কিছু আবার মনে করবে না তো | হঠাৎ সায়ানের ডাকে মানহা ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে আসে |
সায়ান: কি এতো ভাবছো যে এতক্ষন ডাকছি শুনতে পাও না ??(ভ্রু কুচকে)
মানহা: কিছুনা(নিচে তাকিয়ে)
সায়ান: ডিনার করতে এসো(দরজায় দাড়িয়ে)
মানহা চুপচাপ চলে যায় সায়ানের সাথে |
দুজনই চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে | কেউ কোনো কথা বলছে না,,
মানহা: সায়ানকে কি জিগ্যেস করবো ওর বাবা মার কথা | না থাক যদি কস্ট পেয়ে আবার খাওয়া ছেড়ে ওঠে চলে যায় | এমনেতেই আজকে অনেক ধকল গেছে ওর ওপর দিয়ে(খেতে খেতে মনে মনে)
দুজনই খাওয়া দাওয়া করে রুমে চলে যায় |
সায়ান: তুমি শুয়ে পর |
মানহা: আপনি কোথায় যাচ্ছেন ??(বসা থেকে দাড়িয়ে)
সায়ান: আমি বারান্দায় আছি | তুমি ঘুমিয়ে পর(শান্ত ভাবে)
মানহা: বলছিলাম যে আপনিওতো অনেক ক্লান্ত | তাই শুয়ে পরুন(করুন চোখে)
সায়ান: সেটা তোমার চিন্তা করতে হবে না | আর হ্যা তোমাকে বলেছিলাম না যে দরজা খুলার আগে দেখে খুলবে | বলেছিলাম কি না ??(রেগে)
মানহা: হ্যা বলেছিলেন(মাথা নিচু করে)
সায়ান: তাহলে দেখে খুলোনি কেনো ??(দাঁতে দাঁত চেপে)
মানহা: খেয়াল ছিলো না(নিচু স্বরে)
সায়ান: তাহলে কি খেয়াল থাকে তোমার | কিভাবে পালাতে হয় সেটা খেয়াল থাকে আর নিজের জন্য ভালো কোনটা খারাপ কোনটা সেটা খেয়াল থাকে না(রেগে চেচিয়ে)
মানহা: সরি(চোখ দিয়ে পানি পরছে)
সায়ান: হুহ্,সরি | আজ তোমার কিছু হয়ে গেলে আমার কি হতো তোমার কোনো আইডিয়া আছে | আসলে তুমি বুঝবে না | তুমি বুঝলে এতো দিনে আমাদের মধ্যে সব কিছু স্বাভাবিক থাকতো | কিন্তু আমারই ব্যর্থতা যে আমি এতো দিনেও তোমার মনে নিজের জায়গা করতে পারি নি(মানহার দুই বাহু চেপে ধরে)
বলেই সায়ান বারান্দায় চলে যায়,,,
মানহা: ঠিকই তো আমার জন্য উনি কস্ট পাচ্ছেন | আমি কেনো সব কিছু মেনে নিচ্ছি না(কান্না করতে করতে)
সায়ান অনেক্ষন পর রুমে এসে দেখে মানহা না ঘুমিয়ে বেডে হেলান দিয়ে বসে আছে |
সায়ান: ঘুমাও নি কেনো এখনো ??(ভ্রু কুচকে)
মানহা: ঘুম আসছে না(অন্যদিকে তাকিয়ে)
সায়ান আর কিছু না বলে ওপাশ ফিরে শুয়ে পরে |
মানহা: আপনি আমার ওপর রেগে আছেন?
সায়ান: নিশ্চুপ
মানহা: কি হলো কিছু বলছেন না কেনো |
সায়ান: ঘুমিয়ে পর(অন্যপাশে ঘুরেই)
মানহা: আমি কিছু জিগ্যেস করেছি,,
সায়ান: বললাম তো শুয়ে পর(শান্ত ভাবে)
মানহা কিছু না বলে শুয়ে পরে |
সকালে.......
মানহা: খুব সকালে আমি ঘুম থেকে ওঠে দেখলাম সায়ান আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে | অজান্তেই আমার মুখে হাসি ফুটে ওঠলো | আমি সায়ানের কপালে একটা চুমু একে দিয়ে ওঠে ফ্রেশ হতে চলে যাই | ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখলাম সায়ান এখনো ঘুমিয়ে আছে তাই চিন্তা করলাম সকালের নাস্তা আমিই বানাবো | যেই কথা সেই কাজ | চলে গেলাম নাস্তা বানাতে, নাস্তা বানাতে বানাতে ভাবলাব আজ থেকে রান্না বান্না আমিই করবো | নাস্তা বানিয়ে রুমে গিয়ে দেখি সায়ান ওঠেনি,,,
মানহা: এইযে শুনছেন(সায়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে)
সায়ান: নিশ্চুপ
মানহা: শুনছেন(হাত ধরে ঝাকিয়ে)
সায়ান: উমম
মানহা: উঠুন অনেক বেলা হয়ে গেছে |
সায়ান: এখন না পরে(ঘুম ঘুম কন্ঠে)
মানহা: না এখনি উঠুন | বলেই সায়ানকে টেনে তুলে |
সায়ান বাধ্য হয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়,,
মানহা: শুনছেন(দরজায় ধাক্কা দিয়ে)
সায়ান: না আমি তো বয়রা, কানে শুনতে পাই না |
মানহা:বেশি কথা বলেন আপনি | তারাতারি নাস্তা করতে আসুন |
সায়ান: কি আমি বেশি কথা বলি(অবাক হয়ে)
মানহা: না আমি বলি, এবার তারাতারি আসুন |
বলেই মানহা চলে যায় সায়ানও ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে যায় নাস্তা করতে,,
সায়ান: তুমি কেনো এই শরীর নিয়ে নাস্তা বানাতে গেলে(ভ্রু কুচকে)
মানহা: আমার শরীর ঠিক আছে | এবার বসুন ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে সব,,
সায়ান ও মানহা একসাথে নাস্তা করছে | নাস্তা শেষে দুজনই রুমে চলে যায়,,
মানহা: আপনার আজ অফিস নেই |
সায়ান: আজ শুক্রবার |
মানহা: একটা কথা জিগ্যেস করবো(সামনে বসতে বসতে)
সায়ান: কর(ফোনের দিকে তাকিয়ে)
মানহা: রাসেল কেনো আপনার বাবা মাকে খুন করেছে ??(ইতস্ত করে)
সায়ান: তোমাকে এ কথা কে বলেছে ??(মানহার দিকে তাকিয়ে)
মানহা: রা..রাসেল(ভয় পেয়ে)
সায়ান দীর্ঘনিস্বাস ছেড়ে বলা শুরু করলো,,,
সায়ান: আমাদের ছোট্ট ফেমিলি ছিলো, আমি একাই ছিলাম আমার কোনো ভাই বোন ছিলো না | বাবা আমাদের কোম্পানি একাই চালাতেন | আমাকে আমার লেখাপড়া শেষে অনেক বার বলেছে তার কোম্পানিতে জয়েন করতে কারন বাবার বয়স হয়ে যাচ্ছিলো বাবা একা পেরে ওঠতো না | যেহেতু আমি একা ছিলাম তাই আমাকেই দেখতে হতো কিন্তু আমি রাজি ছিলাম না তখন জয়েন করতে | আমি বন্ধুদের সাথে ঘুরা ফেরায় ব্যস্ত হয়ে পরেছিলাম | তো একদিন আমি বন্ধুদের সাথে মালদীপ গিয়েছিলাম ঘুরতে তখন রাসেলের লোকেরা আামাদের বাসায় গিয়ে অনেক হুমকি দেয় বাবাকে | আসলে গ্রামের সাইডে রাসেলের যেই কারখানা ছিলো সেটার সাথে আমাদের জায়গা ছিলো | রাসেল বলেছিলো সেই জায়গা তার কাছে বিক্রি করে দিতে যাতে তার কারখানা বড় করতে পারে কিন্তু বাবা রাজি হয়নি | রাসেল জোড় করে নিতে চেয়েছিলো কিন্তু বাবা অপমান করে বের করে দেয় | তবুও বার বার বাবাকে হুমকি দিতো জায়গাটা তার কাছে বিক্রি করার জন্য কিন্তু বাবা তার ডিসিশনে অটুট ছিলো | আর এই সব বিষয় বাবা আমাকে কিছুই বলে নি কারন বাবা চাইতো না আমি কোনো ঝামেলায় জড়াই | একদিন বাবা মা দুজনই বাবার বন্ধুর মেয়ের বিয়েতে যায় আমি যাইনি বাসায় ছিলাম | তখন সেখান থেকে ফেরার পথে রাসেল আর তার লোকেরা বাবা মাকে রাস্তায় খুন করে বাবার টিপ সইয়ের মাধ্যমে জায়গা লিখে নিয়ে চলে যায় | সকাল হয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু বাবা মা আসছিলো না আমার টেনশন বেরেই যাচ্ছিলো তখন থানা থেকে কল করে জানায় যে দুজনের লাশ পাওয়া দেছে একজনের পকেটে ফোনে কল লিস্টে আমার নাম্বার ছিলো তাই আমাকে কল করেছে | আমার যেনো পুরো দুনিয়াটা থমকে গেলো | আমি কিছু বলার ভাষা হাড়িয়ে ফেলেছিলাম | আমি কোনো মতে ফোন রেখে সৌমকে নিয়ে চলে যাই | গিয়ে দেখি যাদের লাশ পাওয়া দেছে তারা আর কেউই না আমার বাবা মা | সৌম রাসেলের ব্যাপার কিছু কিছু জানতো কিন্তু বাবা মানা করেছিলো আমাকে বলতে তাই সৌম আমাকে বলে নি | ওই দিনের পর থেকে আমি প্রতিজ্ঞা করেছি যে যারা আমার বাবা মাকে আমার জীবন থেকে সরিয়েছে তাদের আমি নিজে শাস্তি দেবো | আমার বাবা মার জন্যই আমি ভিলেন হয়েছি | তারপর আমি বাবার কোম্পানি সামলানো শুরু করি | ওইদিন যদি আমি বাবা মার সাথে যেতাম তাহলে বোধয় আমি বাবা মাকে বাঁচাতে পারতাম |
বলেই সায়য়ন কান্না করে দেয় | মানহা গিয়ে সায়ানকে জড়িয়ে ধরে কারন মানহার ও মা নেই তাই সে কস্টটা বুঝতে পারছে | সায়ান অনেক্ষন এভাবে মানহাকে জড়িয়ে ধরে থেকে বলে,,,
সায়ান: আমার বাবা মা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে | প্লিজ তুমি আমাকে ছেড়ে যেও না(চোখ দিয়ে পানি পরছে)
মানহা: আমি কক্ষনো আপনাকে ছেড়ে যাবো না(সায়ানের চোখের পানি মুছে দিয়ে)
মানহা সায়ানের কপালে একটি চুমু দিয়ে দেয় |
মানহা: আপনি রেস্ট নিন আমি নিচে গেলাম,,
মানহা নিচে চলে গেলো আর সায়ান ওঠে বারান্দায় চলে গেলো |
চলবে,,,,

মানহা নিচে চলে যায় আর সায়ান ওঠে বারান্দায় চলে যায়,,,
.
.
.
মানহা রুমে এসে দেখে সায়ান রুমে নেই সে এখনো বারান্দায় দাড়িয়ে আছে |
মানহা: খেতে আসুন(দরজায় দাড়িয়ে)
সায়ান কিছু না বলে চলে যায় নিচে |
সায়ান খাওয়ার সময় মানহার সাথে কোনো কথা বলছে না যেটা মানহার ঠিক হজম হচ্ছে না |
মানহা: না না মানহা তোকেই কিছু করতে হবে | এভাবে থাকলে চলবে না | (মনে মনে)
মানহা: আপনি আমার উপর এখনো রেগে আছেন ??(খাওয়া থামিয়ে করুন ভাবে)
সায়ান: চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে |
বিষয়টা মানহার কাছে খুবই খারাপ লাগে কারন সায়ান তার কোনো কথারই উত্তর দিচ্ছে না | তাই মানহাও তখন আর কিছু বললো না | সায়ান খাওয়া শেষে ওঠে রুমে চলে যায় | মানহা বসে বসে ভাবতে থাকে কিভাবে ওর রাগ ভাঙ্গানো যায় |
বিকেলে সায়ান বসে ল্যপটপে কাজ করছিলো মানহা অনেক চেষ্টা করে তার দৃষ্টি আকর্ষন করার, তার সাথে কথা বলার জন্য কিন্তু কাজ হয়নি,উল্টে সায়ানের কল আসার কারনে সে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরে এমনকি বলেও যায় নি যে কোথায় যাচ্ছে |
রাতে সায়ান বাসায় ফিরে রুমে গিয়ে দেখে পুরো রুম অন্ধকার | সে লাইট অন করতেই বেশ খানিকটা অবাক হয় পুরো রুম লাল গোলাপে সাজানো, রুমের চারপাশে ক্যান্ডেল জ্বালানো মেঝেতে গোলাপের পাপরি দিয়ে লাভ একে তার মধ্যে মানহা ও সায়ানের নামের অক্ষর লিখা | আর সায়ানের ঠিক বরাবর লাল শাড়ি পরে, কোমড় পর্যন্ত চুল ছেড়ে দিয়ে,ঠোটে হালকা লিপস্টিক দিয়ে সেজে একটা সুন্দর হাসি দিয়ে দাড়িয়ে আছে মানহা,,
সায়ান: এসবের মানে কী ??(চোখ মুখ শক্ত করে)
এ এক কথায়ই মানহার মুখের হাসি উরে যায় |
মানহা: এমন করছেন কেনো ? মানছি যে আমি অপরাধ করেছি,তার জন্য এভাবে শাস্তি দিচ্ছেন কেনো ??(কান্না জড়িত কন্ঠে)
সায়ান: অপরাধ তুমি করনি,অপরাধ আমি করেছি | আসলে তোমার প্রতি আমার ভালোবাসাটা এতোই প্রখর ছিলো যে কখনো তোমার মতামত জানতে চাইনি(মলিন ভাবে)
মানহা: প্লিজ এভাবে বলবেন না(কান্না করতে করতে)
সায়ান: তুমি চিন্তা করো না, কালই আমাদের ডিভোর্স পেপার পেয়ে যাবো | তোমাকে আর কস্ট করে এখানে থাকতে হবে না | তুমি আমার থেকে সারা জীবনের জন্য মুক্তি পেয়ে যাবে | (অন্যদিকে তাকিয়ে)
বলে সায়ান চলে যেতে নিলে মানহা হাত ধরে ফেলে |
মানহা: আমাকে এভাবে শাস্তি দিবেন না | আমি সহ্য করতে পারবো না,আমি নিজেকে শেষ করে দেবো | (কান্না করতে করতে)
তবুও সায়ান চলে যেতে নেয় মানহা পেছন থেকে ডাকে কিন্তু স্বারা না পেয়ে তখনি মানহা সাথে সাথে ড্রয়ার থেকে কতগুলো ঘুমের ঔষধ বের করে খেতে নিলে সায়ান ধাক্কা দিয়ে ওর হাত থেকে ঔষধ গুলো ফেলে দেয় |
সায়ান: কী করছো কী ?? পাগল হয়ে গেছো তুমি ??(রেগে চেচিয়ে)
মানহা: আপনাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না | বলেই মানহা সায়ানের বুকে মাথা রেখে কান্না করতে থাকে | সায়ানও ওকে জড়িয়ে ধরে ওভাবেই দাড়িয়ে আছে,মানহা বুক থেকে মাথা তুলে,
মানহা: একজন স্ত্রী হিসেবে আজ আমি আমার অধিকার চাই( এখনো কান্না করছে)
সায়ান একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মানহার দিকে,কারন সে জানে আজ আর নিজেকে কনট্রল করতে পারবে না, তাই মানহার কপালে একটি চুমু দিয়ে ওকে কোলে তুলে নিয়ে বেডে শুইয়ে দেয় | আজ কোনো রকম বাধা ছাড়াই তাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পায় যার সাক্ষী থাকে দূরের সেই চাঁদটা,,
২ মাস পর.....
কয়েকদিন ধরেই মানহার শরীর খুব খারাপ যাচ্ছে যা সায়ানের নজর এড়ায়নি তাই সে মানহাকে নিয়ে যায় ডক্টরের কাছে | ডক্টর বেশ কিছু টেস্ট দেয়,সেগুলো করিয়ে চলে আসে বাসায় | দুইদিন পর তারাই রিপোর্ট বাসায় পৌছে দেয় | তার মধ্যে প্রেগনেন্সি টেস্টের রিপোর্টও ছিলো সেটা খুলে দেখার পর মানহা যেনো নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে | কারন মানহা মা হতে চলেছে,খুশিতে তার চোখ থেকে অজান্তেই পানি চলে আসে | রাতে সায়ান বাসায় ফেরার পর খাওয়া দাওয়ার পর রুমে বসে মোবাইল দেখছিলো | মানহা সামনে বসতে বসতে বললো,
মানহা: আমাদের বেডটা মনে হয় বড় করতে হবে,,
সায়ান: এতো বড় বেড তাতে তোমার জায়গা হয় না(অবাক হয়ে)
মানহা: আপনি কোথায় ঘুমাবেন তার জন্য বলছিলাম ||আমার আর আমাদের বেবির জন্য এতুটুকু বেড ঠিক আছে,,(মুচকি হেসে)
সায়ান: আমাদের বেবি মানে !!(অবাক হয়ে)
মানহা সায়ানের হাতটা ওর পেটের ওপর রেখে বলে,, এদিকে যে আমাদের ভালোবাসার অস্তিত্ব বেড়ে ওঠছে | সায়ান বড় বড় চোখ করে অবাক হয়ে তাকিয়ে,,
সায়ান: স... সত্যি !!
মানহা মুচকি হেসে মাথা নাড়ায়,সায়ান সাথে সাথে মানহাকে জড়িয়ে ধরে | সায়ানের চুপ করে থাকার মানে মানহা বুঝতে পারছে যে সায়ান কান্না করছে | মানুষ সব থেকে বেশি খুশি হলে এভাবেই তার প্রকাশ পায় | তাই মানহাও চায় সায়ান তার খুশকে উপলব্ধি করুক |
--------- সমাপ্ত ----------

No comments:

Post a Comment

অদৃশ্য পরী

  ----দেবর সাহেব, তো বিয়ে করবে কবে? বয়স তো কম হলোনা ৷ ----আপনার মত সুন্দরী কাউকে পেলে বিয়েটা শীঘ্রই করে ফেলতাম ৷ -----সমস্যা নাই তো, আমা...